অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ০২
– আবির খান
মেয়েঃ এই যে কই যাচ্ছেন দাড়ান বলছি দাড়ান… আবিরের পিছন থেকে জোরে বলে উঠলো..আর আবির সাথে সাথে ঠায় দাঁড়িয়ে যায়…
কারণ আবিরকে আজ পর্যন্ত কেউ এভাবে উচ্চস্বরে দাড়াতে বলে নি…মেয়েটি আবিরের সামনে এসে দাঁড়ায়…
এবার আবির ভালো করে মেয়েটির দিকে তাকায়..
চোখ দুটো মায়াবী, নাকের গঠনটা একদম মনকারা,ঠোট দুটো খুব মিষ্টি, চুল গুলো একদম কোমর পর্যন্ত, গায়ের রঙ যেনো দুধের মতো… এ যেনো এক অপ্সরা…আবির মেয়েটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে… আর মেয়েটি বলতে শুরু করল…
মেয়েঃ এই যে মিস্টার আপনি কি চোখে দেখেননা??আর আপনার মধ্যেতো নুন্যতম মেনারস নাই…একটা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে আবার সরি না বলেই চলে যাচ্ছেন হুম…কি ভাবেন কি নিজেকে??
আবির শুধু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে…আবিরকে এই ক্যাম্পাসে কোন কিছু বলার কারো সাহস নেই…কারণ এই ভারসিটিতে আবিরের অনেক বড় কন্ট্রিবিউশান আছে..কিন্তু এই মেয়ে সবার সামনে আবিরকে বকেই যাচ্ছে…সবাই আবির আর মেয়েটির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে..কিন্তু আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে…মেয়েটার কড়া কথা গুলোও কত মিষ্টি লাগছে আবিরের কাছে…
আমাদের আবিরও কিন্তু দেখতে খারাপ না..৫’১০ হাইট,হ্যান্ডসাম, অনেক ফরসা,চাপ দাড়ি,চুল গুলো উল্টিয়ে আচড়ানো..একদম হলিউডের নায়ক…এই প্রথম পুরো ক্যাম্পাসে আবিরের কাউকে ভালো লাগেছে…এই মায়াবী চোখে যেনো আবিরের মনটা আটকে গেছে…
মেয়েঃ কি হলো চুপ মেরে আছেন কেন??দেখেত ভদ্র ঘরের ছেলে মনে হচ্ছে… তাহলে আপনি এতো অভদ্র কেন???
হঠাৎ মেয়েটার এক বান্ধবী দৌড়ে এলো..
বান্ধবীঃ কিরে মায়া কি কিরছিস কি??
আবিরঃ মায়া…আহ কি সুন্দর নাম একদম মিলে গিছে ওর সাথে..মনে মনে বলল..
মায়াঃ আরে অনু দেখনা ধাক্কা দিয়ে সরি না বলেই চলে যাচ্ছে..কি অভদ্র ছেলে একটা…
অনুঃ ভাইয়া সরি…ও বুঝতে পারেনি আপনি কে..মায়া চলতো…
অনু মায়াকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলো… হঠাৎ..
আবিরঃ দাড়াও…
অনুঃ এইরে এবার মনে হয় খবর আছে…
মায়া বোকা হয়ে যাচ্ছে অনুকে দেখে…
আবির ওদের সামনে গিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে…
অনুঃ ভাইয়া আমি ওর হয়ে সরি বলছি..ওকে কিছু বইলেননা…ও নতুন…
আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে একটা মনমুগ্ধকর হাসি দিয়ে…
আবিরঃ সরি…
আবির সরি বলেই তারাতাড়ি চলে গেলো…
অনু আর মায়া সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে.. অনু ভাবছে এটা কি হলো…
অনুঃ এটা কি হলো?? অবাক কন্ঠে…
মায়াঃ অনু উনি কে আমাকে প্লিজ বলবি??আর তুই ওনার কাছে এভাবে মাফ চাচ্ছিলি কেন??
অনুঃ মায়া…আবির ভাই তোকে সরি বলছে…মানে তোকে…
মায়াঃ তো কি হইছে… ভুল করছে সরি বলবেনা…
অনুঃ তুই জানিস পুরো ক্যাম্পাসের সবাই তাকে কত ভয় পায়…সে কতটা ক্ষমতাবান তুই জানিস…সেই আবির ভাই তোকে সরি বলছে…মানে হাউ ইজ ইট পসিবল?? হাউ??
মায়াঃ কেন সে এমন কি যে তাকে সবাই ভায় পায়??গুন্ডা নাকি??নাহ দেখলেতো মনে হয়না..
অনুঃ আবির ভাইয়ার মতো আর একটা মানুষ হয়না বুঝসিস??দাড়া আগে ওইদিকটায় চল তোকে সব বলছি..
মায়া আর অনু ক্যান্টিনে গিয়ে একটা টেবিলে বসলো..অনু বলতে শুরু করলো…
অনুঃ আচ্ছা মায়া বলতো তুই যেদিন প্রথম ভারসিটিতে আসিস তোকে কি কেউ র্যাগ করে ছিল??
মায়াঃ কই না তো…
অনুঃ জানিস আগে করতো..এই র্যাগের কারণে অনেক ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হয়েছে.. কিন্তু যেদিন আবির ভাইয়া এই ভারসিটিতে আসে সে দিনের পর থেকে আর এখানে কেউ র্যাগ করার সাহস পায়নি..
মায়াঃ কেন?
অনুঃ আবির ভাইয়া যেদিন প্রথম ক্যাম্পাসে আসে সে দিনও তাকে কিছু বখাটে ছেলেরা র্যাগ করে…র্যাগের এক পর্যায়..আবির ভাইয়া নাকি একটা ছেলেকে জাস্ট একটা ঘুষি মেরেছিল.. ছেলেটির নাকি এক সপ্তাহে হুস আসে নি…আর বাকিরা ভয়ে পালিয়ে যেতে নেয়..কিন্তু লাভ হয়নি…প্রত্যেকটা কে নাকি এমন মারা মারছে যে কারো হাত,কারো পা, কারো কোমর ভাংছে…
মায়া রীতিমত কাপতে শুরু করল অনুর কথা শুনে..
অনুঃ এরপর সব গুলাকে পুলিশের কাছে দিয়ে দিসে…এরপর থেকে তাকে সবাই অনেক রেস্পেক্ট করে প্লাস ভয়ও পায়…
অনু খেয়াল করলো মায়া কাপছে…
অনুঃ আরে এই গরমে কাপছিস কেন??
মায়াঃ দোস্ত সে যদি এখন আমাকেও মারে..
অনু মায়ার সাথে একটু মজা আর ভয় দেখানোর জন্য বলল..
অনুঃ মারতেও পারে…তুই সাবধানে থাকিস…
মায়াঃ কিকক বলিস কি…
অনুঃ আরে বোকা ভয় পাসনে..আবির ভাই এমন না..অনেক ভালো…আরেক দিন কি হইছিল শুন…
কিছু নতুন ছেলে পেলে কয়েক দিন যাবত কয়েকটা মেয়েকে ইভটিজিং করছিল…যখন আবির ভাইয়া জানতে পারে…প্রত্যেকটা ১ মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিল…হাহা…
মায়াঃ দোস্ত ওনিতো অনেক ডেঞ্জারাস…
অনুঃ হুম একটু..কিন্তু দোস্ত সেই আবির ভাইয়ের মতো মানুষ তোকে সরি বলছে..আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না…
মায়াঃ দোস্ত আমিতো ওনাকে অনেক কিছু বলছি…উনি যদি আমাকেও মারে…
অনু মায়ার কথা শুনে হাসছে…আর মায়া চিন্তায় পরে গেলো..
আর এদিকে আবির শুধু মায়ার কথাই ভাবছে…চোখটা বন্ধ করলেই মায়ার মায়াবী মুখটা ভেসে উঠে…হঠাৎ আবিরকে পিছন থেকে….
চলবে…?