#অন্ধকার_পল্লী
Part:৫
#Tabassum_Riana
সকালে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো অবনী।সকাল থেকে অাফিন বারবার কল দিয়ে যাচ্ছে।তাই অগত্যা উঠতে হলো ওকে।আফিনের কল রিসিভ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।সকালে উঠে বারান্দায় গাছ গুলোকে দেখতো এতোটা মায়াময়ী লাগে বলার মতো না।বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি গাছের ছোট্ট পাতা গুলোয় জমে আছে।
হ্যালো!!!!!অপর পাশ থেকে নেশা ধরানো কন্ঠে বলে উঠলো আফিন।আফিনের কন্ঠ শুনে কেমন যেন একটা ঘোরে পৌছে গেলো অবনী।নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে ওকে ভীষন ভাবে।ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে অবনী আর নিশ্বাস গুলো আফিনের বুকের গভীরে গিয়ে লাগছে।কারোর নিশ্বাস এতোটা মাতালতায় ভরপুর হতে পারে আজ বুঝতে পারলো আফিন।দুজনেই চুপ হয়ে গেছে।নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেই আফিন বলল কিছুক্ষনের মাঝেই আপনার বাসার নিচে আসবো।রেডি হয়ে যান।আফিনের কথায় ঘোর কাঁটলো অবনীর।জি!!!!!কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে প্রশ্ন করে উঠে অবনী।বললাম রেডি হয়ে নাও ইন হাফ এন্ড আওয়ার।আমি আসতেছি তোমার বাসার নিচে।ওকে।অবনী বলে উঠে।আফিন কিছু না বলে ফোন কেঁটে দিলো।,,,,,,,,,,,,,,
অবনী ফোন সামনে এনে নম্বরের দিকে তাকিয়ে আছে।ওনার সাথে কথা বলার মুহূর্ত টা সেকেন্ডেই শেষ হয়ে গেলো।ইচ্ছে হচ্ছিলো কথার মাঝেই ডুবে থাকতে।কেন এমন হলো?বুঝতে পারছেনা অবনী।লোকটা যেন ওকে কাছে টানছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায় অবনী।চুলের খোপা খুলে লম্বা চুল গুলোকে পিঠের ওপর ছেড়ে দিলো অবনী।ঝড়নার প্রত্যেক ফোঁটা পানি ওর শরীরকে শিহরিত করছে।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে চুলগুলো সাদা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে নিলো।আকাশী রংয়ের একটি স্যালোয়ার কামিজে নিজেকে অাবৃত করলো অবনী।সাদা ছোট্ট পাথরের টিপ অবনীকে একদম সাদা পরীতে পরিনত করেছে।চুল গুলো কে আঁচড়িয়ে ব্যাগ কাঁধে নিতেই ফোনে মেসেজের টোন বেজে উঠলো।অবনী ফোন অন করে সামনে ধরলো।
আফিনের মেসেজ”I’m waiting ”
আর অপেক্ষা না করে নিচে নেমে এলো।অবনী।গাড়িতে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আফিন।সাদা শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।সাথে ব্লু ডেনিম প্যান্ট সেই মায়াবী চোখ জোড়া আর মুখে মন ভোলানো মিষ্টি হাসি ফুঁটে উঠেছে আফিনের।উফ কি যে হ্যান্ডসাম লাগছে লোকটাকে বলার মতোনা।সাদা পরী লাগছে আজ আফিনের জলপরীকে।অবনী আফিনের কাছে এসে দাঁড়াতেই আফিন গাড়ির গেট খুলে দিলো।অবনী ঢুকে পড়লো গাড়িতে।আফিন ও বসে পড়লো ড্রাইভিং সিটে।গাড়ি চলতে শুরু করলো।কলেজে পৌছে দিয়ে আফিন অফিসে চলে এলো।
অন্তরা আর অবনী পাশাপাশি বসে আছে।অবনী তোকে কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো।কিছুদিন ধরে বলবো ভাবছিলাম কিন্তু হয়ে উঠেনি।কথা গুলো বলে একটু থামলো অন্তরা।কি বলবি বল?টেবিলের ওপর হাত রেখে সেখানে মাথা এলিয়ে বলে উঠলো অবনী।ঐ লোকটার সাথে তোর কিছু চলছে?অন্তরা বলে উঠলো।
মানে?কোন লোকটা?কার কথা বলছিস অন্তরা? মাথা উঠিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।যার সাথে বাসায় যাচ্ছিস, যে তোকে আজ নিয়ে এলো সেই লোকটা।মুচকি হাসলো অন্তরা।আ আরে না কিছুনা অন্তরা।সে তো জাস্ট ড্রপ করে দিচ্ছে।আর কিছু না।কথাটা বলেই মলিন হাসলো অবনী।সে যদি এতোই অপরিচিত হতো তাহলে এভাবে তোকে নিয়ে যেতোনা বা নিয়ে আসতো ও না।বা তুইও ওনার সাথে এভাবে ইজিলি যেতে পারতিনা।নিশ্চয়ই কিছু আছে।ওনার প্রতি কোন গভীর বিশ্বাস কাজ করছে তোর মাঝে।একনাগাড়ে বলল অন্তরা।সে নিজেই হয়ত তৈরি করে নিয়েছে। বিড়বিড় করে বলল অবনী।কি বললি?অন্তরা শুনতে না পেয়ে আরেকটু কাছে এগিয়ে প্রশ্ন করলো।টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অবনী।কিছুনা!! বলেই বেরিয়ে গেলো অবনী।অন্তরা অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে অবনীর পিছু নিলো।
আকাশ ডাকছে।কিছুক্ষনের মাঝেই ধূসর বর্ন ধারন করলো আকাশ।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।ছাতাটা আনা হয়নি অবনীর।ভালোই হলো ভিজা যাবে বৃষ্টিতে।মুখ তুলে বৃষ্টির পানির মজা নিচ্ছে অবনী।অাফিন সেই একই জায়গায় এসে গাড়ি থামালো।খুব বৃষ্টি হচ্ছে।গাড়ির জানালা দিয়ে অবনীকে দেখার চেষ্টা করলো আফিন।কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলো অাফিন।সত্যিকারের জলপরী দেখতে পাচ্ছে আফিন।আফিনের গাড়ি দেখতে পেয়ে অবনী ছুটে এলো আফিনের কাছে।আফিন ঘোরের মাঝেই গেট খুলে দিলো।অবনী ঢুকে বসলো।অবনীর ঠোঁট বেয়ে পানি পড়ছে।চুল গুলো গালে লেপ্টে আছে।ঠোঁটের পানি গুলোর ওপর ভীষন হিংসে হচ্ছে আফিনের।অবনী আফিমের দিকে তাকালো।লোকটা ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।কেমন যেন একটা মাতালতা কাজ করছে আফিনের মাঝে।অবনীর একটু কাছে এগিয়ে এলো আফিন।অবনীর বুক ধুকপুক করছে।আফিন আরেকটু কাছে এগিয়ে আসতেই অবনী চোখ বুজে নিলো।
অবনীর ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি ওর থুতনিতে আসতেই আফিন অবনীর থুতনিতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। পানি গুলোকে শুষে নিতে শুরু করলো অাফিন।আফিনের কোটের হাতা খামচে ধরে আছে অবনী।আফিন একটু সরে এসে অবনীর দিকে তাকালো।অবনী একটু তাকালো।নড়ার শক্তি পাচ্ছেনা কেউই।অবনীর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সরে এলো আফিন।অবনী ও সোজা হয়ে বসলো।কি হচ্ছিলো কেউই বুঝতে পারছিলোনা।অবনী মাথা নিচু করে বসে সময় টাকে ভাবছিলো।স্টিয়ারিংয়ের ওপর হাত রাখলো আফিন।আ’ম সরি!!কি হয়ে গেছিলো বুঝতে পারিনি।বলে উঠলো আফিন।অবনী কিছুই বলতে পারলোনা।মাথা নিচু করে বসে আছে।দুজনের মাঝে আর কথা হয়নি।অবনীর গলির সামনে আসতেই নেমে গেলো অবনী।বৃষ্টি ও থেমে গেছে।আফিনের দিকে এক নজর তাকালো অবনী।হয়ত কিছু শোনার অপেক্ষায় ছিলো।
আফিন কিছু না বলে চলে গেলো আফিন।কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেলো অবনীর।ধীরে ধীরে বাসার দিকে এগোলো অবনী।
চলবে