অন্তরালের অনুভূতি
মিলিকে বিয়ে করার পর বাসর রাত থেকে অবাক হওয়া শুরু হয়েছে,সেটা এখনো চলছে।
আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাসর রাতে ঘরে ঢোকার আগে আমাকে খুব করে বলল,,,
–বউকে যতটা সম্ভব হাতের মুঠোয় রাখবি ?
•
–কিভাবে ?
•
–খুব ভয় দেখাবি,,,,আর কঠিন গলায় কথা বলবি,,,,
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,,,,,
–ভার্সিটি পড়ুয়া একটা মেয়ে,আমি তাকে এভাবে ভয় দেখাবো আর সে পাবে,,,,
•
–হুম,,,,পাবে,,,,
আমার বন্ধু হয়তো ভুলেই গেছে যে, বিয়ের পর থেকে ওর বউ ওকে এখানো হাতের মুঠো করে রেখেছে সেটা আমি যানি না।
যে মানুষ নিজের বউকে হাতে রাখতে পারেনি। এখনো নিজের বউয়ের কথায় উঠ বস করে।
এরকম একজন মানুষের থেকে টিপস নিয়ে নিজের বউকে হাতে রাখার চিন্তা করা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
তাই এসব চিন্তা বাদ দিয়ে বাসর ঘরে ডুকলাম,,,
মিলিকে আগে থেকেই হালকা চিনতাম।মিলি আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে দু একবার আমাদের বাসায় এসেছিল।
আমি বিছানায় গিয়ে বসতেই মিলি বলল,,,,
–কোন বুদ্ধি করে আসছ ?
•
–কিসের বুদ্ধি ?
•
–আমাকে হাতে রাখার ?
•
–নাহ,,,
•
–সত্যি,,
•
–আসলে, খুঁজেছি কিন্তু কোন বুদ্ধি পাইনাই।
•
–আর কখনো খুঁজবাও না কোন বুদ্ধি।
•
–কিন্তু তুমি কিভাবে বুঝলা ?
•
–সব ছেলেরাই এমনই হয়,,,বাসর রাতে বিড়াল মারার চিন্তা ভাবনা করে আসে।যাতে মেয়েরা তাদের সব সময় ভয় পায়।
•
–ওহ্,,,,তোমার তো দেখি ভালো অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাপারে।আগে কি কখনো বিয়ে হয়েছিল নাকি ?
•
–আজব,,,এসব জানতে হলে কি বিয়ে করা লাগে নাকি।
•
–তাহলে,,,
•
–যে বান্ধবী গুলির বিয়ে হয়েছে তাদের থেকে জেনেছি।
•
ওহ্
•
–কেন তোমার বন্ধুরা তোমাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনাই,,,
•
–ওরা আর কি বলবে,,,নিজেদের বউকে হাতের মুঠোয় আনতে গিয়ে নিজেরাই বউদের হাতের মুঠোয় চলে গেছে,,,
•
–তাই,,,নাকি,,,
•
–হম,,
সেদিন থেকে মিলিকে একটু কঠিনই মনে হত।তবে এখন অতটা মনে হয়না।
কিছুদিন আগের ঘটনা,,,
রাতে বাসায় ফিরে দেখি মিলি বই পড়তেছে,,,
ওর কাছে গিয়ে বললাম কাল তো আমার অফিস বন্ধ।চলো কাল কোথাও ঘুরতে যাই,,,
আমার কথা শুনে মিলি কোন উওর দিল না।
মিলির কাছ থেকে আশা অনুরূপ কোন উওর না পেয়ে খুব হতাশ হলাম।
পরের দিন বিকেল বেলা মিলি আমাকে দুটি শাড়ি দেখিয়ে বলল কোন শাড়িটি পরলে আমাকে মানাবে,,,,
–দুটি শাড়িই খুব ভালো।তুমি যাই পরবে তাতেই তোমাকে ভাল লাগবে,,,
আধা ঘন্টা পর মিলি রুম থেকে বেরিয়ে এল নীল শাড়িটা পরে।ও নীল শাড়িটা পরাতে আমি একটু আবাকই হলাম।
কারো প্রতি ভালবাসা থাকলে হয়তো তার মনের কথা জানা যায়।আর মিলিও হয়তো এভাবেই আমার মনের কথাটা জেনেছে।
মিলি আমার কাছে এসে বলল,,,
–কেমন লাগছে আমাকে ?
•
–ভাল,,
•
–শুধু ভাল,,,আর কিছু না।
আমি মিলির কপালের টিপ টা ঠিক জায়গাতে বসিয়ে তারপর বললাম এখন পারফেক্ট লাগছে।
–আমি কপালের টিপ টা ইচ্ছা করেই ঠিক জায়গাতে পরিনি।
•
–কেন ?
•
–তোমাকে পরীক্ষা করে দেখলাম আমার সবকিছু তোমার নজরে পরে কি না।
•
–হম বুঝলাম,,,কিন্তু এত সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছ তুমি ?
•
–ঘুরতে,,,
•
–কার সাথে ঘুরতে যাবে ?
•
–তোমার সাথে,,
•
–কাল রাতে যখন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছিলাম তখন তো কিছুই বললে না।
•
–তখন বলিনি তো কি হয়েছে এখন তো বলছি,,,
যাও তারাতারি রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছি,,,,
আমি রেডি হয়ে এসে দেখি মিলি আমার জন্য বসে আছে।তারপর দুজন একসাথে বের হলাম।
–এই রিক্সা যাবে ?
•
–কোথায় যাবেন ‘স্যার’
•
–যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে নেই।তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী এই শহরের অলিতে গলিতে সন্ধ্যা নামার আগ পযন্ত আমাদের কে তোমার রিক্সায় নিয়ে ঘুরবা।
•
–আচ্ছা ‘স্যার’,,,, রিক্সায় উঠে বসেন।
রিক্সা চলতেছে তার আপন গতিতে।মিলি তাকিয়ে আছে প্রকৃতির দিকে আর আমি তাকিয়ে আছি মিলির দিকে।
এভাবেই চলুক না কিছুটা সময়,,,,,,,,,,,,
•
(সমাপ্ত)
লেখা || Tuhin Ahamed