Thursday, July 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 207



সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১৫

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১৫
৩৬.
নিরার পাশ ঘেসে কফির কাপ নিয়ে বসে আছে রুদ্র। রুদ্রর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে তার কারন নিরা তার সাথে কথা বলছেনা যা তার মন টাকে ধীরে ধীরে অশান্ত করে তুলছে।

—নিরা কি হয়েছে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেন?

নিরার মনে আগে থেকেই অভিমানের পাহাড় জমে ছিলো রুদ্রর মুখে আপনি শুনে যেনো অভিমান টা গাঢ় হলো আরও। তবুও স্বাভাবিক রাখলো নিজেকে

—কই কিছুনাতো আকাশ টা আজ কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে মনে হয় বৃষ্টি নামবে।

রুদ্র নিরার গলা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো সে ভেবেই নিলো ঘুম থেকে উঠায় নিরা তেমন কথা বলছেনা। রুদ্রর হালকা হেসে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলো।দুইজনার দৃষ্টি দুই দিকে। রুদ্রর দৃষ্টি নিরাতে আবদ্ধ কিন্তু নিরার দৃষ্টি আকাশে আবদ্ধ।হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হওয়াই রুদ্র উঠে পড়লো

—নিরা ভিতরে চলুন বৃষ্টি এসেছে।ভিজে যাবেন তো। অবেলাই ভিজলে অসুখ বাধবে।

রুদ্রর বেলকোনির উপর ছাদ না থাকাই বৃষ্টির পানি অনায়াসে নিরাকে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো

—আপনি যান রুদ্র এই বৃষ্টির পানি কখনোই আমার ক্ষতি করেনি বরং সময়ে অসময়ে আমার পাশে ছিলো আছে।কেউ না থাকুক এই প্রকৃতি কখনো কাউকে ভুলেনা ছাড়ে না আগলে রাখে।যেমন সন্তানকে তার মা আগলে রাখে।

নিরা চোখ বন্ধ করে বসে রইলো সে বন্ধ চোখজোড়া বেয়েই গড়িয়ে পড়লো অশ্রুকোণা। বৃষ্টির পানি আর অশ্রুতে মিলেমিশে গড়িয়ে পড়তে থাকলো নিরা গাল বেয়ে। রুদ্রর কেন যেনো নিরাকে অস্বাভাবিক লাগছে কারন এর আগেও বৃষ্টিতে ভিজেছে সে কিন্তু তখন তার মধ্যে উৎফুল্লতা দেখতে পেয়েছে।এমন মন মরা হয়ে সে কখনোই ছিলোনা।
রুদ্র এবার নিরার সামনে বসলো হাটু মুরে।

—জানপাখি আমার দিকে তাকাও।

রুদ্রর আদরমাখা ডাকে নিরা চোখ মেলে তাকালো স্থির চোখজোড়া দেখে রুদ্রর বুকের পাশটা ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো

—কি হয়েছে তোমার কি কোন কারনে মন খারাপ বা আমার কাজে খারাপ লাগেছে বলো আমাকে আই এম সরি প্লিজ।

নিরা কিছুনা বলে রুদ্রর বুকে মাথা এলিয়ে দিলো

—আমি কারো একদিনের ভালো লাগাই সীমাবদ্ধ নই রুদ্র। আমি কারো প্রয়োজনে আবদ্ধ হই আমি প্রিয়জনে সমৃদ্ধ।

—কি বলছো তুমি জানপাখি।
—কিছুনা ভিজে গেছেন চলেন।
—তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দিবা।

নিরা রুদ্রকে রেখেই ভিতরে ওয়াসরুমে চলে যায় অগাত্য রুদ্রকেও যেতে হয় বাসর রাতেও এই মান অভিমানের পাল্লা যেনো কমার নাম নিচ্ছেনা।

নিরা বের হতেই রুদ্র তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রুদ্র এখনো ভিজা অবস্থাতেই আছে
—কি সমস্যা বলো না রে বাবা। না বললে বুঝবো কিভাবে আমি হ্যা। আমি কি তোমার মাইন্ড রিড করতে পারি নাকি আজব তো।আমাকে বলবা ত কি হয়েছে আমি কি করেছি

নিরার ধৈর্যর বাধ এবার ভাংগলো
—কি বলবো হ্যা বলেন আমি কি বলবো এইটা বলবো আমার স্বামি আমাকে বিয়ে করে খুশি না তার আফসোস হচ্ছে আমাকে বিয়ে করে বলেন এইটা বলবো সে তার বউ এর দিকে একবার ও তাকায়নি চোখ তুলে এইটা বলবো নাকি কোলে তুলে নিতে তার বিবেক এ বাধছিলো এটা বলবো।নিজের বাসর অব্দি সাজায়নি নিজের অনিহায় এইটা বলবো।

রুদ্র থমকে গেলো দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে নিরার গলাই মুখ গুজলো। মাত্র অগ্নিরুপে দাঁড়ানো নিরা শান্ত হয়ে গেলো। কেপে উঠলো তার সমস্ত স্বত্তা। রুদ্রর নেওয়া একেকটা শ্বাস যেনো তার শরীরে অদ্ভুত কম্পণ তৈরি করছে।এ কি আজব অনুভূতির মাঝে ফাসলো সে।

—মানে নিলাম তোমার সমস্ত অপবাদ জানপাখি কিন্তু তুমি দেখলানা আড়চোখে আমার চোখ সম্পূর্ণ তোমার দিকেই ছিলো।তোমার লাল শাড়িতে দেখে আমার সমস্ত শরীর অদ্ভুত ভাবে আমাকে জানান দিচ্ছিলো আমার জানপাখি আমার রাজ্যের রানী আমার বউ আমার প্রিয়সী আজকে বিনাশকারী লাগছে। তার দিকে তাকানো মানেই আমার সর্বনাশ। তাইতো সরাসরী তাকানোর সাহস পাইনি।আমি চাইনি তুমি অস্বস্তি বোধ করো প্রথম দিনেই তাই আমি তোমাকে কোলে নিতে চাচ্ছিলাম না।আর বাসর আমার জীবনের ফুল ত তুমিই জানপাখি।আমি পারিনা নিজের খুশি গুলা বাকীদের মতো হৈইহুল্লুর করে দেখাতে বা জোড়ে হাসতে তাই বলে তোমাকে ভালোবাসিনা বা তোমার প্রতি অনিহা কিভাবে ভেবে নিলা জানপাখি।তুমি যে আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন আমার এক চিলতি সুখ আমার #সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা তোমাকে আমার জীবনে পাওয়া আমার সৌভাগ্য। নিজের সৌভাগ্যর উপরে কেউ কোনদিন।আফসোস করতে পারেনা জানপাখি সে সাধ্য এই অধমের নেই।

কথা শেষ করেই নিরা গলায় চুমু খেলো রুদ্র। রুদ্রর ভিজা শার্টের সাথে লেপ্টে থাকায় নিরার পরণের শাড়িও ভিজে গেছে পুনিরায়।রুদ্র আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে নিরার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট পুরে নিলো

—ভালোবাসি জানপাখি অনেক বেশি ভালোবাসি।

৩৭.
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভেংগে গেলো অভ্রর চোখ খুলে পাশ ফিরতে নিলেই বুকে ভারি কিছু থাকায় ফিরতে সক্ষম হলোনা।বুকের দিকে তাকাতেই চোখ জোড়া আটকে গেলো তার। তার বুকে গুটিশুটি মেরে চাদর লেপ্টে শুয়ে আছে রুহানী। ঘুমের কারণে মুখ জোড়া আগের থেকে আরেকটু ফুলে গেছে ঠোঁট জোড়াও কেমন ফোলা ফোলা হয়ে আছে।
অভ্র আলতো হাতে রুহানীর চুল গুলা কানের পিঠে গুজে দিলো কি মনে করে দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসতেই আঙুল দিয়ে গাল বেয়ে গলায় ঘাড়ে শুড়শুড়ি দিতে শুরু করলো ঘুমন্ত রুহানী কানে পিঠে বিরবির করে উঠতেই লাফিয়ে উঠে বসে অভ্রর বুকে।আচমকা রুহানীর এমন উঠে বসায় অভ্রও ব্যাথা পেলো

—আহ্

অভ্রর ব্যাথার আওয়াজে রুহানী নিজের দিকে না তাকায়ে ওই ভাবেই অভ্রর বুকে বসেই তার দিকে ঝুকে গেলো অভ্র ব্যাথায় চেচাবে কি তার আগেই অভ্র রুহানীর তার দিকে ঝুকে পড়ায় তার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেই।।
দুইজনে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

রুহানীর ঘুম ভাংগে নয়টা নাগাদ। তড়িঘড়ি করে উঠে গোসল করে গোল একটা জামা পড়ে মাথায় কাপড় টেনে নিচে নেমে যায়। ডাইনিং টেবিলে সব মেহমান নাস্তা করছিলো রুহানীকে নামতে দেখে মিসেস তালুকদার মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন।

—ঘুম হয়েছে সোনামা?

রুহানী সম্মাতি জানাতেই হাসি দিয়ে মিসেস তালুকদার তাকে চেয়ারে বসায় দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।উপস্থিত সবাই ততক্ষনে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেছে তাদের খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি উঠলোনা অভ্রর ছোট ফুফু তিনি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে রুহানীর দিকে।তিনি চেয়েছিলেন অভ্রর বিয়ে তিনি তার বড় মেয়ের সাথে দিবেন কিন্তু মিসেস তালুকদার রাজি না হওয়াই তার মেয়ের বিয়ে অন্য জায়গায় দিতে হয়েছে অবশ্য সেখানে সে ভালোই আছে কিন্তু তবুও চাপা একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে উনার মনে।

মিসেস তালুকদার আসতেই রেহেনা বেগম বলে উঠলেন

—হে ভাবি আমার সোনার মতো মেয়েটাকে না করে দিয়েছিলেন বুঝি এই মেয়ের জন্য যে কি না বিয়ের পরের দিনই বেলা নয়টা অব্দি ঘুমাই তাও শাড়ি না পড়ে জামা পড়ে। কই প্রথম দিন নিজে হাতে সবাইকে রান্না করে খাওয়াবে সেখানে সে নিজেই খেতে বসে গেছে।

রুহানী কেবল মুখে খাবার দিতে যাবে তখন ই কানে কথা গুলা আসাই হাতে খাবার নিয়েই মাথা নিচু করে বসে রইলো।আশেপাশে অভ্রকে খুজতে শুরু করলো শিকদার বাড়ি হলে নিশ্চয় এতোক্ষন তার হয়ে তার বাবা ভাই তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিতো।সে নিজেও বা চুপ থাকতো।কিন্তু হাজার হোক এটা শশুড় বাড়ি।
মিসেস তালুকদার অসস্তিতে পড়ে গেলেন। কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে অভ্র শান্ত স্বরে বলে উঠলো

—আপনার মেয়েকে আম্মু নই আমি না করেছিলাম ফুফু জান কারন সে আমার কাছে বোনের মতোই ছিলো আর সেও আমাকে ভাইয়ের নজরেই দেখতো আর রইলো আমার বউ এর রান্না নিয়ে আমি যতোদূর জানি আমাদের বাড়িতে যথেষ্ট কাজের মেয়ে আছে যার কার‍ণে আমার বউ বা মায়ের রান্না করার প্রয়োজন নেই আর রইলো পোষাক নিয়ে সে শালীন পোশাক ই পরিধান করেছে এখানে খারাপ কিছু আমি দেখছিনা তাই দয়া করে নিজের ভাই এর অন্ন ধ্বংস করে বেরিয়ে যান। রুহ আমার জন্য কফি নিয়ে রুমে আসবা এখন ই।

রুহানী নিজের কফিটা হাতে নিয়েই দৌড় দিলো।কারন রেহেনা বেগমের ফেস এক্সপ্রেশান দেখে রুহানীর হাসি কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছিলোনা।

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১৪

0

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১৪

৩৩.
নিরা বিছানাই হাত পা গুটিয়ে বিলায়ের ছানার ন্যায় শুয়ে আছে।রুমের লাইট বন্ধ করে দেওয়া থাকলেও জানালার পর্দা টেনে দিতে ভুলে গেছে ব্যালকনি থেকে আসা আলোতে পুরো ঘড় আলোকিত হয়ে আছে।সে আলোতেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রুদ্র নিরাকে।
রুদ্র নিরার পাশে যেয়ে তার নাকে ছোট ডায়মন্ডের একটা নাকফুল পড়িয়ে দিলো সাথে হাতে ডায়মন্ডের দুই জোড়া চিকন চুরি গলায় সিম্পল এক পেন্ডেন্ট। অনেক শখ করে রুদ্র এই সেট টা কিনেছিলো লন্ডনে যেয়ে এক প্রজেক্টের কাজে।আলতো করে নিরার কপালে চুমু দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। খাবারের প্লেট টা ওইখানেই টি টেবিলে রেখে দিলো ঢেকে।যদি খিদার তারণাই রাতে নিরা জেগে উঠে তাহলে তাকে যেনো খাবার খুজতে না হয়।সেও ফ্রেশ হয়ে নিরাকে দেখতে দেখতে ঘুমে চোখ বুজে নিলো।

৩৪.
অভ্র রুমে ঢুকতে নিলেই কাজিনরা তাকে আটকে ন্যায়।অভ্রর চাচাতো বোন কমরে হাত দিয়ে বলে উঠে
—কি মশাই বউ চায়।
—তো কি তোর জামাই চাইবো।(চোখ ছোট ছোট করে)
—নাহ আবার চাইতেও পারো আমরা তো আর জানিনা তোমার(কথাটা সম্পূর্ণ্য না করেই হেসে দিলো সবাই)।
—হেহে দারুন জোক্স ছিলো এবার আমাকে যেতে দে সর।
—না না তা হবেনা আমাদের পাওয়না দেও (হাত বারিয়ে দিয়ে)
—আমার জানা মতে আমি কোন কালে তোদের জামাই বা বয়ফ্রেন্ডদের থেকে টাকা ধার নেই নাই তোদের থেকে নেওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা নিজেরাই এক একটা ফকিন্নি আবার আমাকে কি দিবি সেখানে পাওনা আসে কই থেকে(চোখ ছোট ছোট করে)
—ইহ এতো কষ্ট করে তোমার খাট সাজালাম বউ সাজালাম আমাদের একটা হক আছে না।
—ওহ তাইনাকি আমি বলেছিলাম আমার খাট সাজা আমার বউ সাজা। এইযে বউ এর মুখে এক গাদা আটা ময়দা মেখেছিস ওইটা খায়ে আমার পেট খারাপ হলে হস্পিটাল বিল গুলা তোরা দিবি না তাইনা (ঠোঁট দিয়ে ভেংচি কেটে)
—মুখে লাগাম দে আর টাকা খোসা আমরা কিছু জানিনা নাহলে তোর আজকে আর বউ এর কাছে যাইতে হবেনা থাক এখানেই সারারাত।

কি আর করবে অভ্র বউ কে বউয়ের সাজে দেখার থেকেই পুরুষালী মনটা বাধা মানতে নারাজ। একে হলুদে শাড়ি পড়েই অভ্রর মাথায় আগুন জ্বালায় দিসে রুহানী আজ আবার লাল লেহেঙ্গাই নিজেকে সাজায়ে অভ্রর সমস্ত ধৈর্য বাধ ভেংগে ফেলেছে। আর কোন সুযোগ না দেখে পকেট থেকে পাচশ টাকার বান্ডেল ধরায় দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।

সমস্ত রুমে লাইটিং করা ফেরি লাইট দিয়ে সাথে ফুলে ফুলে ভরানো। বিছানার মাঝখানে ইয়া লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে রুহানী অভ্র কপাল কুচকাই রুহানীকে কেমন চিকন চিকন লাগছে কই বিয়ের সময় কলে নিতে যায়ে ওজন ত ঠিক ই ছিলো তাহলে কয় ঘন্টাই চিকন হয়ে গেলো কি করে। আবার এত লম্বা ঘোমটাই বা টানা কেন যে হাত অব্দি ঢাকে গেছে।

অভ্র বেশি কিছু না ভেবেই রুহানীর পাশে এসে বসে
—কি ব্যাপার মিসেস রুহানী তালুকদার এতো লজ্জা কেমনে পাইলেন আপনি হ্যা। লজ্জার ও তো লজ্জা লাগবে দেখি ঘোমটা খুলেন এবার। (রুহানীর ঘোমটাই হাত দিতে গেলেই রুহানী মুখ ঘুরায় নেই)
—কি হলো এটা এমন চিঙড়ি মাছের মতো নড়ো কেন দেখি ঘোমটা খুলো নাহলে খুলতে দেও।

অভ্র আবার রুহানীর কাছে আসতে নিলেই রুহানী উঠে যায় আর অভ্র মুখের বলে বিছানাই পড়ে যায়।অভ্র তো এবার রেগে আগুন অভ্র আবার রুহানীকে ধরতে যাবে তার আগেই তার চোখ পড়ে আয়নায় চোখ পড়ে কাবাডের পাশেই রুহানী শাড়ি পড়ে দাঁড়ায় থেকে মিটি মিটি হাসছে। অভ্র এবার লেহেঙ্গা পড়া মেয়েটার দিকে তাকালো এবার অভ্র মাথাতেও দুষ্টু বুদ্ধি আসলো সুন্দর করে মেয়েটার দিকে আগাতে থাকলো মেয়েটাও পিছাতে লাগলো পিছাতে পিছাতে কাবার্ডের সাথে লেগে গেলো রুহানীও এবার ভয়ে চোখমুখ খিচে দাঁড়ায় রইলো ভয়ে অভ্রর দুই হাতের মাঝে আটকে পড়ে গেলো মেয়েটা অভ্র একহাত দিয়ে মেয়েটার ঘোমটা খুলে অন্যহাত দিয়ে রুহানীকে ধরে নিজের বুকে নিয়ে আসে। দুইজনেই এবার ভয়ে চিৎকার করে উঠে।

অভ্র সাথে সাথে ধমক দিতেই দুইজন চুপ মেয়েটার দিকে তাকায়ে চোখ ছোট ছোট করে নেই অভ্র কারণ মেয়েটা আর কেউনা অভ্রর খালাতো বোন রিমিসা।

—ছোট হয়ে বড় ভাইয়ের রুমে কি হ্যা এক থাপ্পড়ে সব দাত ফেলে দিবো বে*দ্দপ বের হো ফারদার আমার রুমের আশেপাশে যেনো না দেখি।

—কিন্তু স্যার এক থাপ্পড়ে ৩২ দাত পড়বেনা তো পড়লে একটা কি দুইটা পড়বে।

রুহানীর কথায় চোখ গরম করে তাকাতেই রুহানী ঘাপটি মারে পরে রইলো অভ্র বুকে। এদিকে রিমিসাকে যেতে না দেখে পুনরায় চোখ গরম করে তাকাতেই রিমিসা দৌড় মারলো।

—এইসব কোন ধারণের বেয়াদবী আমি জানি এই শয়তানী বুদ্ধি তোমার যদি আমি ভুল ভবিষ্যতে তুমি ভাবে ওকে ছুয়ে দিতাম তাহলে।

—তাহলে আমি থামাই দিতাম আমি তো এখানেই ছিলাম আমি কি জানি আপনি আমাকে চিনবেন না।

—আমি চিনিনাই তাইনা দিবো থাপ্পড়।

রুহানী কিছু না বলে আরও গভীর ভাবে জড়ায় ধরলো। অভ্র শরীর থেকে আসা ঘ্রাণ যেনো রুহানীকে পাগল করে দিচ্ছে একে সকালের অভ্রর বেসামাল ছোয়াতে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া রুহানীর মন টাকেও বেসামাল করে দিয়েছে।

অভ্র রুহানীকে নিজের সাথে করেই দরজা অব্দি এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুহানীকে দরজার সাথে আটকে ধরে। রুহানীকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে রুহানীর থুতনি ধরে উপরের দিকে তুলে রুহানীর কম্পীত ঠোট জোড়া দখল করে নেয়। হাত অবাধ্য বিচরন চালাতে থাকে রুহানীর কমড় পিঠ জুড়ে। অভ্র বেসামাল ছোয়া যেনো রুহানীকে পাগল প্রায় করে তুলছে। এক পর্যায়ে রুহানীর ঠোঁটে ছেড়ে গলায় চুমু আর কামড়ে ভরায় দিতে শুরু করলো রুহানী আর না পেরে সে নিজেও অভ্রর ঘাড়ে দাত বসায় দেয় এতে অভ্র থামা বাদ দিয়ে রুহানীকে কলে তুলে বিছানাই নিয়ে ফেলে দেয় রুহানীর উপর আধশোয়া হয়ে রুহানীর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে উঠে

—আই ওয়ান্ট ইউ রুহ আই ওয়ান্ট ইউ বেডলি জানপাখি।

অভ্রর নেশালো কন্ঠে রুহানীর গলা শুকায়ে কাঠ হয়ে আসলো চোখ বন্ধ করে অভ্রর পাঞ্জাবী খিচে ধরে। অভ্র তা নিরব সম্মতি মেনে নিয়ে রুহানীকে নিয়ে ভেসে যায় এক আলাদা সুখের সন্ধ্যানে।

৩৫.
রাত ২টা বাজে অদ্ভুত আওয়াজে ঘুম ভেংগে যায় রুদ্রর চোখ টিপটিপ করে খুলে বুঝার চেষ্টা করে রুদ্র আওয়াজ টা কিসের। রুদ্র পাশে তাকায়ে দেখে নিরা নেই ধরফড়িয়ে উঠে বসে রুদ্র উঠতেই তার চোখ যায় সোফার দিক সোফায় দুই পা গুটিয়ে কোলে প্লেট নিয়ে বসে আরামে পোলাও খাচ্ছে নিরা।দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুদার তাড়ণাতেই ঘুম ভেংগে গেছে।

রুদ্র উঠে নিরার পাশে বসে পড়লো।নিরা সেটা দেখলো অভিমান হলেও কিছু বললো না তার কথা মতে যে ভালোবাসবে সে নিজ থেকে বাসবে কাউকে বলার প্রয়োজন নেই তার সামনের মানুষ টা অভিমান হয়েছে সেটা ভাংগাতে হবে।

—আমিও সকালে থেকে কিছু খাইনি আমাকেও খাইয়ে দেও

নিরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখে পাশে আরও একটা প্লেট নিরা আর কিছু না বলেই খাওয়াতে শুরু করে দিলো। কিন্তু একবারের জন্যও রুদ্রর চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। এদিকে রুদ্র নিরাকে অবাক করে দিয়ে নিরার ঠোটের পাশে লেগে থাকা পোলাও এর দানা নিজের মুখ দিয়ে খেয়ে নিতেই নিরা শকড হয়ে বসে থাকে সোফা উপরে পাথরের ন্যায়।।

চলবে??

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১৩

0

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১৩

৩১.
বউ সেজে বসে আছে নিরা নিজের ঘরে। বুকের ভিতরে আলাদায় এক আন্দোলন জারি করেছে।ভাইয়া বাবা মা সবার চোখেই কেমন একটা বিষন্নতা ছেয়ে আছে যা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে নিরা। তার নিজের ও তো কষ্ট হচ্ছে যে বাড়িতে তার বেড়ে উঠা সে বাড়ি ছেড়েই আজ যেতে হবে অন্য আঙিনায়। যতোই পরিচিত হোক তবুও সে বাড়ি তার শশুড় বাড়ি। সে লোক গুলো এতোদিন ভালোমা বাবাই নামে চিনলেও সম্পর্ক বদলাবে। দ্বায়িত্ব বদলাবে।নিশ্বাস কেমন যেনো আটকে আসছে। মন চাচ্ছে ছুটে পালিয়ে যায়। এদের ছেড়ে সারাজীবন থাকতে হবে ভাবতেই গলায় কান্না গুলো দলা পেকে যাচ্ছে।চোখের পাপড়ি গুলোতেও ঠায় হয়েছে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে কিন্তু পরক্ষণে এটা ভাবেও শান্তি লাগছে প্রিয় মানুষ কে পাবে হালাল ভাবে নিজের করে সকালে উঠেই শ্যামাপুরুষ
এর ঘুমন্ত মুখ দেখার অদম্য ইচ্ছাটাও যে নারীর মনে রয়েছে।এরই মাঝে তার কাজিন, বান্ধবীরা বর – বউ এসেছে বলে হৈইহুল্লুর শুরু করে দিলো। নিরার তার পরণের ভারি লেহেঙ্গা তুলে এসে দাড়ালো বেলকনিতে। গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে বধূ সেজে রুহানী আর তার প্রেমিক পুরুষ লাল গোল্ডের শেড়ওয়ানিটাই যে দারুন মানিয়েছে বিনা দ্বিধাই যেকেউ তা মেনে নিতে বাধ্য।
ইতিমধ্যে রুহানীকে নিয়ে তার দুই কাজিন উপরে নিরার রুমে রুহানীকে রেখ্ব পুনরায় নিচে এসে দাড়িয়েছে রুহানীও নিরার পাশে এসে তাকে হালকা ভাবে সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে সেও দৃষ্টি রাখলো নিচে অভ্রতে। দুইপক্ষের মেয়ে মন্ডলী আর পুরুষ মন্ডলী মিলে দাঁড়িয়েছে গেটে টাকা উশুল করতে। অভ্র দুষ্টুমি করতে চাইলেও রুদ্র গম্ভির মুখে তাদের পাওনা মিটিয়ে দিলো।রুদ্রর গম্ভির মুখ দেখে কেউ আর তাকে ঘাটলোনা অভ্রও আর কি করবে এখন সে যদি দেরি করে তাহলে কি আর সম্মান থাকবে তাকে সবাই কিপটা ভাববে না। নিরার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস তার কপালে যে এক বেরসিক মানুষ ছিলো তা আজ বুঝলো।তার বান্ধবীরা সবসময় তাকে বলতো “তুই যতোটা প্রানবন্ত দেখিস তোর জামাই গুমরোমুখো কুমরোপটাশ হবে দেখে নিস” আজ নিরার সত্যি তাদের গালে থাপ্পড় দিতে মন চাচ্ছে।

—রুহি সত্যি করে বল তো তোর ভাইকে কি জন্মের পরে মধু খাওয়ানো হয়নি যে এরকুম গুমড়ো হয়ে থাকে। কই বাবাই তো এমন না বাবাই এর মুখ থেকে তো হাসিই সরে না তাহলে উনি এমন কেন।(ভ্রু কুচকে)

রুহানী ফোস করে শ্বাস ছাড়ে
—আমি নিজেই মাঝেমধ্যে ভাবি আমার ভাই হয়ে সে এমন হয় কিভাবে রাগলেও এমন হাসলেও এমন প্রাণখুলে আজ অব্দি হাসতে দেখলাম না আজব কাহিনী। আম্মু বলে ভাইয়া নাকি দাদুর মতো হয়েছে দাদাও নাকি এমনই ছিলেন। কিন্তু আজব কথা কি জানিস তোদের মতো দাদা দাদির এরেঞ্জ না লাভ ম্যারেজ ছিলো দাদুর আব্বু বলে অনেক অবাক হয়েছিলো তিনি কোনদিন ভাবেন নি তার গুমরো মুখো ছেলে কাউকে এইভাবে তুলে আনবে।

নিরা ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ে তার ও বিশ্বাস হয়না এই গম্ভির পুরুষ এক নির্জন রাত্রীতে চাঁদকে সাক্ষি রেখে তাকে তার মনের কথা জানিয়েছিলো। সবটাই তার ভ্রম মনে হয়।এই বুঝি রুদ্র তাকে বললো “আমি এমন কিছুই বলিনি সব তোমার ইমিজিনেশান তোমার মতো মেয়ে আমি আমার নিরামিষ লাইফে চাইনা বুঝলে “।

৩২.
নিরা দাঁড়িয়ে আছে শিকদার বাড়ির গেটের কাছে।মিসেস শিকদার বরণ ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির চৌকাঠে। মিস্টার শিকদার চোখের ইশারায় ছেলেকে কিছু ইশারা করছে বারবার। নিরা সেটা বুঝতে পারছেনা আবার তারা যে ঠিক দশ মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে তার মানেও বুঝসে না নিরা। হঠাৎ নিজেকে শূন্যতে উঠতে দেখেই অবাক হয় রুদ্রর গম্ভির মুখ দেখে তার খারাপ লাগে তার এমন ভাবের কারণ বুঝে উঠতে পারেনা খারাপ লাগে তার মনে হচ্ছে সব কিছু তাকে জোড় করে করানো হচ্ছে নিরা সাইডে তাকায়ে দেখে মিস্টার শিকদার খুশি মনেই পিছন পিছন আসছে সাথে তার কাজিন গুলোও মুখ টিপে হাসছে।কিন্তু নিরার মনে অভিমান জন্মায় সামান্য তাকে কোলে নেওয়ার অনিহা দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার কারণ বুঝলো।মিসেস শিকদার খুশিমনেই দুইজনকে বরণ করে নিলেন।

বাসর ঘরে প্রবেশ করতেই নিরা অবাক পুরা রুম খালি কোথাও কোন ফুলেএ ছিটা অব্দি নাই। এমন ও বাসর ঘর হয় জানা ছিলোনা নিরার।নিরাকে এমন অবাক চোখে তাকাতে দেখে রুদ্রর বড় ফুফুর মেয়ে অরিন বলে উঠে
—ভাবি তোমার জামাই এর হুকুম তার রুমে যেনো এইসব অযথা সাজাসাজি না করে তার পছন্দ না কেউ তার রুমে ঢুকে এইসব নোংরা করুক আমরা অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু সে তো মানতেই নারাজ।

নিরা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো
—আরে ব্যপার না। আমার ওইসব এ অস্বস্তি হতো।

অরিন বুঝলো নিরার মনের অবস্থা সে মনে করলো এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়তো রুদ্রকে জোড় করেই করানো হচ্ছে তাই রুদ্রর এমন ব্যবহার। নিরা ঘরে ঢুকেই ওয়াসরুমে চলে গেলো লাগেজ থেকে নরম সুতির লাল শাড়ি নিয়ে।যার বাসরের প্রতি তার প্রতি এতো অনিহা তার জন্য এইরকম সঙ সেজে বসেও তো লাভ নেই। হয়তো একমাস আগে ঝোকের তালে নিরাকে ওইসব বলে ফেলেছিলো কিন্তু এখন হয়তো বুঝেছে এইসব যা হয়েছে সব ভুল কিন্তু কিছু করার ছিলোনা বলেই হয়তো চুপচাপ সব করে গেছে এই ধারণা নিয়ে দুই ফোটা অশ্রু বসর্জন দিয়েই ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো কখন ঘুমিয়ে পড়লো টের পেলোনা সারাদিনের ধকল মনের অবস্থা যেনো নিরার মস্তিষ্ক আর নিতে পারলোনা।

রুদ্র তার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ছাদে বাবা ছেলে দুইজনার হাতেই সিগারেট। রুদ্র কোন চেন স্মোকার না বা নিয়মিত সেবন না করলে কোন সুবিধাও হয়না মাস সপ্তাহ পরে ইচ্ছা হলে একটা ধরায়। মিস্টার শিকদার আবার দুই একদিন পরপরই বউ মেয়ের চোখ থেকে আড়াল করে টান দেন। আজ এই সিগারেট এর আসর বসানোর কারণ ছেলের সাথে কিছু আলোচনা।
নিস্তব্ধতা ভেংগে রুদ্র সিগারেটে একটা টান দিয়ে সেটা পা দিয়ে পিষে বলে উঠলো

—কি বলতে চাও আব্বু বলো।এতো ভাবার কিছু নেই।

মিস্টার শিকদার জোড়ালো এক নিশ্বাস ত্যাগ করে তিনিও সিগরেট ফেলে দেন
—দেখো রুদ্র ছোট থেকেই তুমি গম্ভির আর রাগী ছিলে ম্যাচুয়ার ও ছিলে যার কারণে তোমার আম্মু তোমাকে নিয়ে চিন্তিত হলেও আমি চিন্তিত ছিলাম না আমি সবসময় তোমার সকল মতামত যা তুমি তোমার জীবনকে ঘীরে নিয়েছো তাতে আমি কখনো বাধা দেয়নি সম্মান করেছি পাশে দাড়িয়েছি এমনকি বিয়েতে অসম্মতি জানানোর সময় ও। কিন্তু দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করায় তুমি নিজেই নিরব সম্মতি জানিয়েছো তাই দেখেই বিয়েটা হয়েছে।কিন্তু তোমার নিরামাকে ঘীরে এই অনিহাটা কিন্তু উচিত না এটা সবার মনেই প্রশ্ন তুলছে যা নিরা মায়ের জন্যেও অসম্মানজনক আর আমি চাইবোনা আমার ছেলে দ্বারা আমার একান্ত প্রিয় বন্ধুর মেয়ে কষ্ট পাক আমি নিজে রুহুল কে কথা দিয়েছি তার মেয়ের সুখের দায়ভার আমি নিলাম তার মেয়ে যেমন সেখানে হাসি মুখে ছিলো এখানেও থাকবে আর আমি চাইবো ছেলে হিসেবে তুমি আমার কথার মর্যাদা রাখবে।যাও রুমে যাও নিরা মা অপেক্ষা করছে।

কথাটা বলেই মিস্টার শিকদার চলে গেলেন রেখে গেলেন অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্রকে

সে কাকে কিভাবে বুঝাবে সে এমনই ছোট থেকেই হঠাৎ করে সে পারছেনা তার গম্ভির আবরণ থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা সেও করছে কিন্তু পেরে উঠছেনা সে বাকি দশটা ছেলের মতো সে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেনা

—আচ্ছা নিরাও কি ভাবছে আমি তাকে বিয়ে করে খুশিনা উফফ নিশ্চয় অভিমানী কণ্যা অভিমানের পাহাড় জমায়ে বসে আছে চল ভাই রুদ্র বউ এর রাগ ভাংগানোর কাজে লেগে পড়।

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে পা বারায়। একবার উকি দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে নেয় নিজের অবস্থান মিসেস শিকদার কে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে উপরে উঠতে দেখে বুঝতে বাকি নেই নিরা কিছু খাইনি দীর্ঘশান ফেলে মায়ের হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিজেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিল।ওপর পাশ থেকে সারাশব্দ না পেয়ে দরজা খুলে ভিতরে তাকাতেই অবাক।রুদ্র হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছেনা।

চলবে??

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১২

0

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১২

২৭.
সাত সকাল বেলাই তালুকদার বাসায় হাজির শিকদার পরিবার।উদ্দেশ্য রুহানী আর অভ্রর বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলবে কিন্তু তার আগে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুনরায় রুদ্র আর নিরাকে জিজ্ঞেস করবে যে তারা কি আসলেই একে অপরকে বিয়ে করতে চায়না তাহলে তাদের জন্যেও মেয়ে/ছেলে খুজবে।কারন বয়স তো তাদের ও হচ্ছে।

সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে রুদ্র আর নিরা।রুদ্রর মুখের কাঠিন্য ভাব আর নিরার মুখে লজ্জার রক্তিমা আভা।
তাদের দিকে পরক্ষ করে নিয়ে মিসেস শিকদার বলে উঠলেন
—নিরু মামনি আমার পাশে এসে বসো।

নিরা মাথা নিচু করে বসে পড়লো মিসেস শিকদারের পাশে।মিসেস শিকদার নিরার হাত নিজের হাতে পুরে নিলেন
—আমরা কি খুব খারাপ মামনি??
—না না ভালো মা তুমি এমন ভাবে বলছো কেনো?
—তাহলে আমাদের বাড়িতে চলে আসো আমার মেয়ে হিসেবে একেবারের জন্য আমার কাছে।আপত্তি আছে মা??
—নাহ ভালোমা(মাথা নিচু করে নিম্ন সুরে)

নিরার কথায় সবাই অবাক হয়ে বসে রইলো ডাইনিং রুমে জেনো কথাটা বজ্রপাতের ন্যায় শুনালো।কেউ ভাবেনি নিরা সম্মতি জানাবে।এবার সবার দৃষ্টি রুদ্রর উপরে পড়তেই রুদ্র হাসফাস করতে লাগলো এমন পরিস্থিতিতে এর আগে পরেনি সে হাজার ক্লাইন্টের সাথে বিনা দ্বিধাই কথা বলা রুদ্র আজ নিজের পরিবারকে নিজের মনের কথা জানাতে ইতস্তত করছে।সে বুঝছেনা যেখানে নিরা মেয়ে হয়ে এতো সহজে স্বিকারউক্তি দিয়ে দিলো সেখানে সে ছেলে হয়ে কেনো এমন করছে।

—আমার বিয়েতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু বিয়ের পরেও রুহ আর নিরা পড়াশুনা কন্টিনিউ রাখবে (গলা পরিষ্কার করে)

রুদ্রর কথায় নিরা স্বাভাবিক থাকলেও রুহানী চিল্লায়ে দাঁড়ায় যায়
—ভাই এটা কেমন কথা আমি বিয়ে করছিনা আবার পড়াশুনা কেন।শশুড় বাড়িতে কত কাজ থাকে তাই না আমি সিরিয়ালে দেখেছি(কাদো কাদো হয়ে)।

সাথে সাথে মিসেস তালুকদার রুহানীর কান চেপে ধরে

—তবে রে তোর কি আমাকে সিরিয়ালের জল্লাদ শাশুড়ী মনে হয় পাজি মেয়ে যে তোকে দিয়ে আমি কাজ করায় নিবো।

—আহা মামনি আমি ত মজা করচ্ছিলাম(হেসে দিয়ে)।

২৮.
দুই পরিবারের মতামতেই এক মাস পড়েই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।রুদ্রর জাকজমক পছন্দ না বলেই শুধু হলুদ আর বিয়ে হবে তাও বাসায় রুদ্রর চাচা ফুফুদের কিছু আত্নীয় কিছু ফ্রেন্ডস আর কলীগ দের নিয়েই। অপরদিকে পুরা তালুকদার বাড়ি আজ হলুদ ফুলে সজ্জিত। সে হলুদ ফুলের সজ্জিত স্টেজে বসানো হয় অভ্র আর নিরাকে। হলুদ সাজে সজ্জিত নিরাকে যেনো কোন হলদে দেশে রাজকুমারীর ন্যায় লাগছে।হলুদ ফুলের ভীড়ে হলদে পরিকে দেখে নিশ্বাস যেনো আটকে গেছে ফোনের অপাশে থাকা রুদ্রর। রুহানী ভিডিও কলে দেখছিলো তার প্রিয় পুরুষ কে পাশেই নিরা থাকায় রুদ্র খুব সহজেই দেখতে পাচ্ছিলো তার হলদে পরিকে। আজ প্রথম তার প্রিয়সীর ঠোঁটে লাজুক হাসি।রুদ্রর মন চাচ্ছে এই মহূর্তে ছূটে তার প্রিয়সিকে নিজের বুকের মাঝে আটকে নিতে।অদম্য ইচ্ছাটাকে মনের মাঝেই দমন করে বসে রইলো নিজের বোনের পাশে আসনে। আগে তার হলুদ হবে তারপর তার বোনের সেজন্য বোন তার পাশেই বসা।

রুদ্র আর অভ্রর গায়ে হলুদ একসাথে শেষ হলো আর সে সাথেই অভ্রও উধাও হলো তালুকদার নিবাস থেকে। নিরা বুঝতে পেরে আপন মনেই হেসে উঠলো। ভাইযে তার হবু বউয়ের কাছে রওনা হয়েছে তা বেশ বুঝলো সে।আগে অভ্রর হলুদ তত্ব যাবে রুহানীর জন্য তারপর রুদ্রর হলুদ ছোয়ানো নিয়ে আসবে নিরার কাছে।

২৯.
রুহানীর শাড়ির কুচি নষ্ট হওয়াই সে নিজের রুমে যায়। কারন ততোক্ষনেও অভ্রর বাসা থেকে কেউ আসেনি নিশ্চিন্তে শাড়ি আর মেকআপ ঠিক করে আসতে পারবে বলেই দৌড় দিলো সে। মিসেস শিকদার মেয়ের এমন কান্ডে রেগে গেলেও কিছু বললোনা। থাক না কিছু অবাধ্যতা কিছুদিন পরে এই অবাধ্যতা দেখার যে আর নসিব হবেনা মেয়ে তার পরের ঘরের আলো হয়ে যাবে। যে দুষ্টুমিতে এতোদিন শিকদার নিবাস মুখরিত থাকতো কাল থেকে অন্যবাড়িতে হাসির ঝিলিক শুনা যাবে ভাবতেই চোখ দুইটাই পানিতে টইটম্বুর করে উঠলো মিসেস শিকদারের।

রুহানীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অভ্র। রুহানী উলটো দিকে ফিরে শাড়ি ঠিক করচ্ছিলো মুখের সামনে এসে যেনো পাহাড়া দিচ্ছে তারাও চায়না এই বিনাশীনি রুপের ঝলক দেখে অভ্র অকালে হৃদস্পন্দন রোদ করে মারা যাক।কিন্তু তা আর হলো কই রুহানীর পিছনে ঘুরার সাথে সাথেই যেনো বুকের মাঝে ধক করে উঠলো অভ্রর শিরায় শিরায় বেয়ে গেলো মুগ্ধতা। অবাক নয়নে তাকায় রইলো তার মায়াবিনীর দিকে।

এদিকে রুহানী হঠাৎ অভ্রকে দেখে চমকে উঠেছে চোখ মুখে ফুটে উঠেছে লজ্জার লাল আভা।নিজেকে ধাতস্থ করে দরজা দিয়ে যেতে নিলেই অভ্র রুহানীর কমড় আকড়ে ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। চোখ মুখে তার নেশার ছড়াছড়ি এই নেশাই যেনো মাতাল হয়ে গেলো রুহানীর হৃদ স্পন্দন বেরে গেলো স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুন ঢিপঢিপ আওয়াজ গুলো যেনো অভ্রর কান অব্দি পৌঁছানোর সরযন্ত্রে নেমেছে তার হৃদয়। অভ্র ধীরে ধীরে পকেটে থাকা হলুদের পটলি বের করে এক হাত দিয়ে দাতের সাহায্যে নিয়ে খুলে হাতে মেখে রুহানীর শাড়ি ভেদ করে তার উমুক্ত মসৃণ কোমড়ে ছোয়াতেই রুহানী চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে খিচে ধরে অভ্রর পাঞ্জাবী। বড় বড় নখ গুলো অভ্রর গলায় বেধে রক্ত বের করতে চায়।রুহানীর গাল থেকে গলা অব্দি হলুদ মাখিয়ে রুহানীর ঠোঁটের মাঝে ডুব দেয় অভ্র। রুহানী ছটফট করতে শুরু করে কিন্তু তাতে যেনো অভ্রর নেশা দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে।এতোদিন রুহানীকে বাচ্চা লাগতো যার বাচ্চামো গুলতে ভালোবাসা তৈরি হতো আদর দিতে মন চাইতো কিন্তু শাড়ি পরিহিত সদ্য যৌবনে পা রাখা প্রিয়সীকে দেখে যেনো অভ্র নিজের উপর থেকে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে আছে।
প্রিয়সীর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে গলায় উষ্ণ ছোয়া মেখে দিতে শুরু করে অভ্র এদিকে প্রেমিক পুরুষ এর অবাধ্য আচারণে যেনো রুহানীও নিজেকে সামলাতে ব্যার্থ ইতিমধ্যে দরজাই করাঘাত পড়তে শুরু করেছে।

—অভ্র প্লিজ ছাড়ুন দেখুন অলরেডি সবাই ডাকাডাকি করছে আজ রাতেই ত বিয়ে তারপর আমি আপনার কিন্তু এই ভাবে না। প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।

রুহানীর কথায় টনক নড়ে অভ্রর নিজেকে কোনমতো সামলে রুহানীর গলায় গাঢ় এক চুমু খেয়ে সরে আসে সে।

রুহানীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে কপাল নিজে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে ব্যালকনী দিয়ে চলে যায়। রুহানী নিজেকে সামলে টিস্যু দিয়ে কোনরকম কিছুটা হলুদ তুলে বেরিয়ে যায় বাহিরে।

৩০.
হলুদ মাখা অবস্থায় ব্যলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে নিরা। আজ এক সাথে দুই বিয়ে তাই কমিউনিটি সেন্টারেই হবে তবুও বউ তো এই বাড়িতেও আসবে বলে এলাহি আয়োজন চলছে।একটুপরেই হয়তো আসবে সবাই নিরাকে গোসল করতে। কিন্তু তার মনের মধ্যে ছেয়ে আছে এক রাশ বিষন্নতা। সব মেয়ের মতো তার ও কিছু ইচ্ছা ছিলো তার প্রেমিক পুরুষ এর হাতেই সে প্রথম হলুদ এ রাঙ্গাবে নিজেকে। কিন্তু তার প্রেমিক পুরুষ একটাবার তাকে দেখার জন্য কল অব্দি করেনি। মানছে সে গম্ভির তাই বলে কি হলুদের সাথে প্রিয়সীকে দেখার ব্যকুলতাটাও তার মাঝে কাজ করেনা। কিন্তু তার ইচ্ছা করে হলুদ পাঞ্জাবিতে তার প্রিয় মানুষ কে দেখার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুহানীর নাম্বারে কল দেয় নিরা

—হুম জান বল তুই এখনো রেডি হতে শুরু করিস নি(ভিডিও কলে স্পষ্ট রুহানীর হাস্যজ্বল মুখ দেখে খুশি হয় নিরা সে জানে তার এতো হাসির একটাই কারণ সে হলো তার ভাই অভ্র। পার্লারের মেয়েরা যত্নে রুহানীকে তৈরি করতে ব্যস্ত।নিরা একবার চাইলো রুহানীকে বলবে রুদ্রর হলুদের ছবি দিতে কিন্তু পরের মহূর্তে মন বদল নিলো অভিমানের পাহাড় গাঢ় হলো)

—হুম এখন তৈরি হবো তুই হয়েছিস কি না তা জানার জন্যই কল দেওয়া। আচ্ছা রাখি।

রুহানী বুঝলোনা কিছু কিছু নিরার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে পড়া রুদ্র ঠিক বুঝলো নিরার অভিমানী কন্ঠ।রুদ্র হাসলো স্থান ত্যাগ করে চলে গেলো নিজের রুমে প্রিয়সীর নাম্বার ডায়াল করে মুখের সামনে ধরলো। কিন্তু ওইপাশ থেকে ধরার নাম নাই ৪ বারের মাথায় ফোন রিসিভ করে সামনে এসে দাড়ালো নিরা

—কল ধরো না কেন কি সমস্যা (ভ্রু কুচকে)
—ইচ্ছা করেনি তাই ধরিনি কি বলবেন বলুন আমি গোসলে যাবো(শান্ত কন্ঠে কথা গুলো বললেও একবার চোখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকালো না অভিমানী নিরা)
—আমার দিকে তাকাও
—প্রয়োজন মনে করছিনা কিছু প্রয়োজনী কথা না থাকলে আমি ফোন রাখলাম।
—ভালোবাসি আমার অভিমানী হলদে পরি।হলুদ ফুলের মাঝে হলদে পরীর বসবাস যে আমার হৃদয়ে ঝড় তুলেছে।সে ঝড় থামাতেই তো প্রিয়সীকে কল দেওয়া হলুদ রঙ পড়তে মানা করেছিলাম তো এইজন্যই প্রথম যেদিন হলুদ শাড়িতে সামনে এসেছিলা সেদিন ই তো আমার কাল ছিলো।এক রমনীর কাজল চোখে আমার খুন হয়েছিলো। হলুদ চুড়ি ঝংকারে আমার মন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলো। আজ পুনরায় সে হলুদ শাড়িতে হলুদ ফুলের সাজে তার মায়া চেহারায় যে আমার মন আবারো বিদ্রোহ জাড়ি করেছে আমার মন তো কিছু মানতে নারাজ এই বিদ্রোহী মন আমার লাগবেনা প্রিয়সী একে নিয়ে নেও। আমার অবধ্যতা পছন্দ না কিন্তু প্রিয় নারী যেমন অবাধ্য মনটাও তেমন মীরজাফর এটা কোন ধারণের ন্যায়।

নিরা চোখ তুলে তাকাতেই যেনো সর্বনাশ ডেকে আনে নিজের। শ্যমা পুরুষের মায়া মাখা চেহারায় হলুদ রঙ যে এতো সুন্দর মানায় তা আগে জানা ছিলোনা তার খট করে কল কেটে বুকের সাথে ফোন চেপে ধরে নিরা ওইপাশ থেকে উচ্চস্বরে হেসে উঠে রুদ্র নিরার লজ্জায়।

চলবে??

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১১

0

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১১

২৪.
রুহানী শুয়ে শুয়ে ড্রামা দেখচ্ছিলো “Hidden love”। টানটান উত্তেজনার মহূর্ত নায়ক নায়কার ঠোঁটের দিকে এগুচ্ছিলোই এমন সময় সিন কেটে ফোনের স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করে উঠে হলদে শয়তান নামটা সাথে স্ক্রীনের পিছনে ভেসে উঠে শুভ্র পাঞ্জাবীতে অত্যন্ত সুদর্শন এক পুরুষের ছবি রুহানীর হলদে শয়তানের ছবি। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ০৫ মিনিট এই সময়ে অভ্র এর আগে কখনো ফোন করেনি হঠাৎ ফোন করার কারণ বুঝলোনা। কিন্তু ততোক্ষনে ফোন বাজতে বাজতে কেটেও গেছে।ইতিমধ্যেই পুনরায় ফোন বাজতে আরম্ভ করে। এবার আর রুহানী দেরি করে না ফট করে ফোন ধরে নেই।

—আমি নিচে আছি তোমার কাছে শুধু ১০ মিনিট আছে নিচে নামার জন্য ইজ দেট ক্লিয়ার?

প্রশ্ন করেই কল কেটে দেয় অভ্র। রুহানী কি বলে তা শুনার বিন্দু মাত্র আগ্রহ দেখায়না। কারন সে জানে আসবেনা আসবেনা করলেও সে ঠিকই আসবে হলোও তাই ১২ মিনিটের মাথায় লং শার্ট আর ধুতি পায়জামা সাথে অর্ণা গলায় পেচিয়ে বেরিয়ে এলো পিঠ অব্দি খোলা চুল গুলো উড়তে লাগলো হাওয়াই। বৃষ্টির সূচণা পর্ব চারিদিকে বৃষ্টি হওয়াই আবহাওয়াটা বেশ রোমাঞ্চকর আর ঠান্ডা। বাসায় অনেক মেহমান থাকায় অভ্র বেরিয়ে পরেছিলো একা ঘুরবে ভাবলেও মনে পড়ে তার তো একটা ছোট কালের বিবাহিত একটা বউ আছে আবার বড় কালের হবু বউ তাহলে সিংগেল এর মতো ঘুরার প্রশ্নই আসেনা।

—আপনি এখানে কেনো?

হালকা তেজি গলায় বলে উঠে রুহানী। কিন্তু রুহানীর তেজী গলাকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করেই অভ্র বাইকের সামনে রাখা লেডিস হেলমেট টা পড়িয়ে দিলো রুহানীর মাথায়। কিন্তু হেলমেট টা ঠিক পছন্দ হলোনা রুহানীর নাক মুখ কুচকে বলে উঠলো

—এটা কেমন রঙ পছন্দ হয়নি আমার খুলেন এটাকে।
—এখনকার জন্য পড়ো রাস্তাই হেলমেট শপ থেকে তোমার জন্য একটা কিনে দিবোনি এখন উঠো।

রুহানী বাচ্চাদের মতো মাথা দুলিয়ে বসে পড়লো বাইকের পিছনে। অভ্র বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে উঠলো

—আন্টি বা আঙ্কেল দেখেনি তোমাকে বের হতে??
—আম্মু নিজেই তো আমাকে গেট অব্দি রেখে গেলো।

রুহানীর কথায় চমকাই না অভ্র যেনো এইটা অস্বাভাবিক কিছুই না।রুহানীকে দেওয়া কথা মতো তাড়া হেলমেট শপ এ এসেই বাইক থামাই। রুহানী ঘুরে ঘুরে দেখছে সব হেলমেট গুলো ইতিমধ্যে একটা পছন্দও হয়ে গেলো তার হাতে নিয়ে লাফাতে লাফাতে অভ্রর সামনে এসে দেখাতেই অভ্র হাসিমুখ সেটা নিয়ে কেশ কাউন্টারে চলে যায় সেটা কিনে ফিরে এসে রুহানীকে পুনরায় নিজ হাতে যত্ন সহকারে পরিয়ে দেয়।

দুইজনে এসে থামে বানিজ্য মেলাই বিশাল আওয়োজন। বেশির ভাগ এই সময়টা এমন ভাবে বানিজ্য মেলা বসেনা কিন্তু এবার বসেছে বলেই রুহানীকে নিয়ে এসেছে এখানে রুহানীর আবার এইসব মেলা খুবই পছন্দের। অভ্র যতোটা ভীর ভেবেছিলো আজ তেমনটা অতিরিক্ত ভিড় চোখে পড়লোনা তার এতে অবশ্য লাভ টাই হলো। এমনিতে রুহানী যে বাচ্চামো গুলো করে হাত ছেড়ে এদিকে সেদিক দৌড় দিবেনা তার গ্যারান্টি নাই।

মেলাতে প্রবেশ করতেই রুহানীর চোখ গেলো চুড়ির দোকানে রুহানীর একমাত্র দুর্বলতা এই চুড়ি।দেরি না করে অভ্রর হাত ধরে দৌড়ে গেলো সেইখানে। হাত ভরে লাল নীল কালো চুড়িতে ভড়িয়ে অভ্রর সামনে হাত বাড়িয়ে দিলো অভ্র আলতো হেসে চুড়ির দাম মিটিয়ে হাটা ধরলো।

২৫.
রুদ্র শহরের অনেকটাই দূরে এসে বাইক থামালো। অনেকটাই নিরিবিলি চারিপাশ। না গ্রাম না কোন শহুরে বাড়ি। একটা কি দুইটা গাড়ি চলা চল করছে তাও অনেক সময় পর পর।

নিরা অবাক হলো চারিপাশ দেখে জায়গাটা নিরিবিলি হলেও অসম্ভব সুন্দর। রাস্তার চারিপাশে সুন্দর হলুদ ফুল ফুটে আছে। নিরা এগুলোকে ছোট সূর্যমুখী ফুল বলেই ডাকে আসল নাম তার জানা নেই আর সে কখনো জানার চেষ্টাও করেনি। সব কিছুকে তার নির্ধারিত নামে ডাকতে হবে আদৌও কি তার কোন মানে আছে উহু কই না তো।

হঠাৎ করে মাথায় কিছুর স্পর্শ পেয়ে হাত দিয়ে বুঝলো ফুলের ক্রাউন অবাক হয়ে রুদ্রর দিকে তাকাতেই তার বুক ধক করে উঠলো রুদ্রর চোখে মুখে আলাদাই নেশা ফুটে উঠলো কেপে উঠলো নিরার সমস্ত স্বত্বা। নিরাকে আরেকটু কাছে টেনে নিতেই রুদ্র হাত দিলো নিরার কমড়ে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসতেই আখিদ্বয় বন্ধ হয়ে এলো তার কম্পনের ফলে দাঁড়িয়ে থাকাও যেনো দ্বায় হয়ে গেলো তার রুদ্রর শরীরেই ছেড়ে দিলো তার ভর।রুদ্র আলতো হাতে নিরার চোখে মুখে আছড়ে পড়া চুল গুলো গুজে দিলো নিরার কানের পিঠে

—আমি নিজের মনে কথা ব্যক্ত করতে পারিনা আর না কাউকে বুঝাতে পারি আমি ঠিক কি অনুভব করি। কিন্তু আপনার বেলাই ব্যাপারটা ভিন্ন হয়ে যায় আমি চাইলেও পারিনা নিজের অনুভূতি গুলো অপ্রকাশিত রাখতে আর না পারি আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখতে আমি সর্বদা চেয়েছিলাম আপনাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে আর সেজন্যই বিয়েতে না করা কারন আমি আপনার মতো প্রানচ্ছ্বল না আমি পারিনা আপনার মতো মন খুলে হাসতে কান্না করতে রাগ করতে আমি চুপচাপ সব অনুভূতিতেই।আর তাই চায়নি আপনাকে নিজের সাথে জড়াতে।কিন্তু আপনি তা হতে দিলেন না আমাকে আমার মধ্যই থাকতে দিলেন না আমার বাধ্য মনটাকে করে তুললেন অবাধ্য অপরাগ আপনার প্রতি তার অনুগত্য প্রকাশ করায় যেনো তার নিত্যদিনের কাজ তার এই কাজে আমি অশান্তিতে আছি মিস নির তাই এই অবাধ্য মনটাকে তার এই অবাধ্য মালিকের কাছেই হস্তান্তরিত করতে চাচ্ছি আমার এই অবাধ্য মনটা আপনাকে ভীষন ভালোবেসে ফেলেছে ভেবেছিলাম আপনার থেকে দূরে গেলে হয়ত এই অবাধ্যতা গুলো ফুরিয়ে আসবে কিন্তু তা আর হলো কই।

হবেন আমার বাধ্য জীবনের অবাধ্য ফুল
আমার শান্ত বাগানের অশান্ত প্রজাপতি
দিনশেষের ক্লান্তির হাসি
বৃষ্টিময় দিনের অবাধ্য পাখি
আমার আকাশের এক ফালি চাঁদনি
আমার #সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
আমার নিরা??

নিরা চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কনা সে ভাবেনি তার গম্ভির মশাই তাকে এতোটা ভালোবাসে। রুদ্রর বুকে মাথা রাখা অবস্থাতেই বলে উঠলো

—হবো আমি আপনার #সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা।

রুদ্র আলতো হাসলো নিরার মাথায় নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিতে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রাখলো নিরাকে নিজের সাথে।

২৬.
ধ্রব আজ দুইজায়গায় কন্সার্ট হওয়াই ভিষন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাত্র এক জায়গা থেকে কনসার্ট শেষ করে গাড়ি নিয়ে ছুটছে ঢাকা বানিজ্য মেলাই আরেক কনসার্ট করতে। নিড়িবিলি রাস্তা হওয়াই গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরে দৃষ্টি দিলো ধ্রুব সাথে সাথেই বুকের মাঝখান টাই চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো। নিজের প্রিয় মানুষ কে পড়ে থাকতে দেখলো অন্যকারো বুকে।শাড়ি পরিহিতা নিরাকে চিনতে বেশি অসুবিধা হয়নি তার সাথে রুদ্রকে দেখে সে আরও কনফর্ম হয়ে গেছিলো এটা আর কেউ না তার সুরঞ্জনা। কিন্তু দৃশ্যটা সে মানতে পারেনি। পুরুষ মানুষ এর নাকি কাদতে নেই কিন্তু ধ্রুব পারলোনা সমাজের এই রিতি টা মানতে চোখ বেয়ে বেরিয়ে এলো অশ্রু কণা বিষাদের।পাওয়ার আগেই হারিয়ে গেলো যে সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা।মেঘলা করে দিয়ে চলে গেলো অন্যের আকাশে কিন্তু এই ব্যাথাটা সহ্য হলোনা তার।সেদিন বাস এ চোখ মেলতেই সে চেয়েছিলো নিরাকে দেখতে কিন্তু সেদিন দেখা হয়নি তার পাশে অপরিচিত একটা মেয়েকে দেখে অবাক হয়েছিলো বাস থেকে নেমে অনেক খুজেছিলো সে পায়নি।আর আজ এই একটা মাস পরে পেলো তাও অন্যকারো বুকে।

ধ্রুবের দুখ বিলাসের মাঝেই পৌছে গেলো সে তার গন্তব্যতে চারিদিকে প্রচন্ড মানুষ এর ভিড় ঠেলে কোনপ্রকার উঠে গেলো স্টেজে।

রুহানী অভ্রর হাত ধরে এদিকে ওদিক ঘুরছিলো হঠাৎ সবাই দৌড়ে একদিকে যেতে দেখে দেও কৌতুহল বশত সেদিকে দৌড় লাগায় অভ্রর হাত ধরেই। ভীড়ের মাঝে ঠেলেঠুলেই সামনে এগিয়ে দেখলো ধ্রুব সাথে সাথে বাকিদের মতো সেও চিৎকার করে উঠলো যা দেখে ভ্রু কুচকালো অভ্র।রুহানীর কানের কাছে ঠোঁট এনে জিজ্ঞেস করলো
—এইভাবে পাগলের মতো চিল্লাও কেন আজব?
—আরে চিল্লাবোনা আমার ক্রাশ ধ্রুবতারা ইউটিউব চ্যানেল এর ধ্রুব উনি হায় উনার ভয়েজ জাস্ট অসাম।

রুহানীর মুখের বাক্যগুলো যেনো সহ্য হলো অভ্রর তাকিয়ে রইলো অতি সুদর্শন যুবোকটির দিকে। কিছু মহূর্তে পরেই মাইক হাতে বলে নিজের সুরোল কন্ঠে ধ্রুব বলে উঠে

—আজকের এই গান আমার অপ্রেমিকার জন্য আমার না হওয়া প্রেমের জন্য।

ধ্রবের কথাটাই যেনো চারিদিকে শোরগোল আরও বেশি বারিয়ে দিলো। মহূর্তে শান্ত হয়ে গেলো চারিপাশ ধ্রুবের কন্ঠে

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

চোখে চোখে চেয়ে থাকা
কবে হবে বলো কথা বলা?
আবেগী মন বাঁধা মানে না
তুমি ছাড়া কিছু চাই না

(ধ্রবর চোখে ভেসে উঠলো মময়সিংহে নিরার সাথে কাটানো মহূর্ত পুনরায় আখি জোড়া বন্ধ করে নিলো সে।)

চোখে চোখে চেয়ে থাকা
কবে হবে বলো কথা বলা?
আবেগী মন বাঁধা মানে না
তুমি ছাড়া কিছু চাই না

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

জানি তুমি আছো একা
তবে কেন বলো দূরে থাকা
সময় তো থেমে থাকে না
দ্বিধা ভেঙে কাছে এসো না

জানি তুমি আছো একা
তবে কেন বলো দূরে থাকা
সময় তো থেমে থাকে না
দ্বিধা ভেঙে কাছে এসো না

(গানের মাঝে কখন রুহানী অভ্রর বুকে মাথা এলিয়ে দিয়েছে টের পেলোনা সে। অভ্রও নিজের বাহুর মাঝে আগলে নিয়েছে রুহানিকে)

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

ধ্রুবের চোখের পানির দিকে তাকিয়েই অন্য এক কিশোরীর হৃদয়ে ব্যাথার এক পাহাড় তৈরি হয়ে গেলো।

চলবে??

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১০

0

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১০

২৩.
অভ্র যতোটা সহজে মেনে নিয়েছিলো বিয়ের কথা রুহানীর কানে পড়তেই তারচেয়ে দ্বিগুন ভাবে নাকোচ করে বসেছে বিয়ের জন্য সে কোনমতেই ওরকুম লোককে বিয়ে করবেনা যে ছোট ছোট পাতলা ড্রেস পড়া মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করে।কখনোই না ওরকুম উজবুক মার্কা খাটাস লোককে বিয়ে করবে না।

রাগে গজগজ করতে করতেই ফোন লাগালো রুহানী নিরাকে।নিরা তখন রুদ্রর দেওয়া ফাইল শেষ করতে ব্যস্ত দুইবার এর মাথায় ফোন কানে নিতেই নিরার মাথা ঘুরে গেলো রুহানীর কথা বলার ধরণে। তার কথার তালে কিছু না বুঝলেও গালী গুলা যে অভ্রকে ইঙিত করেই ছুড়েছেন মহারানী তা বেস বুঝে গেলো নিরা।

—আচ্ছা শান্ত হো। এবার বল আসলে ভাইয়া করেছে কি।

নিরার প্রশ্নে গাল ফুলায় রুহানী

—তোর ভাইয়াকে নাকি এখন আমাকে বিয়ে করতে হবে এটা কোন কথা।আমি করবোনা ওই বেয়াদ্দপটাকে বিয়ে সারাদিন ওই মাইশার সাথে ঢলাঢলি আজ কলেজেও মাইশার দিকে তাকায় ছিলো জানিস ওই খচ্চরের নাতি হলদে টিকটিকি টা।একটু সুন্দর হইসে তো কি হইসে তাই ভাব দেখাই আমাকে হলদে বিড়াল লেজ কাটা বানর কোথাকারা।

নিরার হাত কপালে নিরার আর বুঝতে বাকি নেই পরিবার এবার নিরা রুদের পিছন ছেড়ে রুহানী আর অয়নের পিছনে লেগেছে তাও কমড় বেধে নিজের ভাইকে সে চিনে আর রুহানীর প্রতি ভাইয়ের সফট কর্ণার সম্পর্কেও সে অবগত সে যে এই বিয়েতে দ্বিমত পোষণ করবেনা নিরা তা জানে আর রুহানীর মনেও তার ভাইকে পছন্দ করে বিধায় তাকে নিয়ে জেলাস হয়েই এইসব কথা বলছে সেটাও বুঝতে বাকি নেই কিন্তু এই ত্যাড়া মেয়েটাকে সোজা ভাবে হেন্ডাল করাও যাবেনা কারন নিরা জানে রুহানী সোজা কথায় মেনে নেওয়ার মানুষ না নিজের রাগ এর সামনে সে কাউকে দেখেনা দেখা যাবে রাগের বশেই বিয়েতে মানা করে দিয়ে পড়ে নিজেই কান্না কাটি করে নিরার মাথা পাগল করে দিবে।

—তাহলে তো তোর উচিত বিয়ে করে ফেলা। দেখ এখন ভাইয়া তোর টিচার সেজন্য তুই চাইলেও ভাইয়াকে কিছু বলতে পারবিনা আর সম্পর্কেও কেউ না এখন তুই যদি অন্যমেয়ের সাথে মিশতে মানা করিস সে শুনবেনা বরং আরও বেশি বেশি করবে কি তাইনা?

রুহানী নিরার কথায় বোকার মতো হ্যা বলে বোকা বোকা চেহারায় তাকায় থাকলো
—তাহলে এখন আমার কি করা উচিত (ঠোঁট উলটে)
—বেশি না বিয়েতে হ্যা বলে দে বিয়ের পরে তুই জ্বালাবি আর তখন তুই তাকে তোর কথার ইশারায় চালাতে পারবি ব্যাস আর তখন ভাইয়া কিছু বললে আমি আব্বু আম্মু,ভালো মা বাবাই সবাই তোর হয়ে ভাইয়াকে বকে দিবো।

—কিন্তু আমি যে না করে দিলাম এখন কি হবে?(কাদো কাদো স্বরে)।

—বেশি কিছুনা দরজা খুল ভালো মায়ের সামনে যা যায়ে বল আম্মু আমি অনেক ভাবলাম তোমরা আমার জন্য আর যায় করো খারাপ কিছু চাইবা না এইজন্য তোমার কথাতে আমি এই বিয়েতে রাজি।এটা বললে ভালো মা বাবাই তো ভাববে তুই তাদের কথা মাথায় রেখেই রাজি হয়েছিস পাল্লা আরও ভারি হবে বুঝলি।

—থ্যাংক ইউ মেরি জান আই লাভ ইউ তোরে আমি আমার ভাইয়ের বউ বানাবো দেখে নিস তুই উম্মমাহ।

রুহানী খুশিতে নাচতে নাচতে কল কেটে চলে গেলো নিচে। নিরা হতবাক হয়েই ফোন কানে নামিয়ে কাজ করতে শুরু করার আগেই সামনে তাকালো কি ভেবে আর তাকাতেই নিরার জান যায় যায় অবস্থা। সে রুহানীর সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছিলো তার অবস্থান টা এই মহূর্তে কোন জায়গায় সে যে এই মহূর্তে রুদ্রর কেবিনে বসে আছে তাও ঠিক রুদ্রের চোখের সামনে তা মনে পড়তেই তার গলা শুকায়ে কাঠ হয়ে গেলো।

এদিকে রুদ্র হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলো নিরা আর রুহানী ফোন কথন শুনে। নিরা মাথায় যে ঠিক কি পরিমানের শয়তানী বুদ্ধি রয়েছে তা বুঝতে বাকি নেই আর এটাও বুঝে গেলো তার সহজ সরল বোন কে খুব সহজেই কথার জালে ফাসিয়ে বিয়েতেও রাজি করায় দিয়েছে মাঝে মধ্যে মন চায় মেয়েটার মাথা খুলে দেখতে আসলেই কি মানুষ এর ব্রেন নাকি কোন বানরের আর শিয়ালের মিকচার করা ব্রেন লাগানো আছে।আজব একটা মেয়ে।

রুদ্র কিছু না বলেই কাজ করতে মন লাগালো আজকে যে বাড়িতে সেই ড্রামা চলবে তা বেশ বুঝতে পারলো হয়তো কালকে সকালেই তার মা সপরিবার নিয়েই হাজির হবেন তালুকদার বাড়িতে।মিসেস শিকদারের বাবা বাড়ি নাই ছোট থেকেই এতিম খানাতেই মানুষ তিনি সেখানে মিস্টার তালুকদারকেই নিজের বড় ভাই বলেই রুহুল তালুকদারেকে চিনিয়েছেন রুহুল তালুকদারের বাবা আজমত তালুকদার সে এতিমখানার নির্মাতা ছিলেন তিনি।

অফিস টাইম অভার হতেই রুদ্রকে সব কাজ বুঝিয়ে বেরিয়ে যায় মায়া আর রুহানী। মায়াকে বিদায় জানিয়েই রুহানী হাটতে শুরু করে আশপাশ দিয়ে নানা রিক্সা চলাচল করলেও উঠতে ইচ্ছা করছেনা তার পড়নে গোলাপি শুতি শাড়িটা হাওয়ার তালে তালে নড়ছে ইচ্ছাকৃত ভাবেই বেধে রাখা খোপা উমুক্ত করে দিলো পিঠ জুড়ে। আজ তার বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই কারণ বাড়িতে আজ প্রচুর মেহমান ওতো মানুষ এর ভীড় নিরার পছন্দ নয় বলেই মিসেস তালুকদার তাকে আজ শিকদার বাসায় নয়তো মায়ার সাথে থাকতে বলেছিলো। কিন্তু তার মন এই মহূর্তে ভিষন খারাপ হওয়াই নিজ ইচ্ছাতেই হেটে চলেছে সে। ঢাকার প্রতিটি অলিগলি তার ভীষণ চেনা এই রাস্তাই বহুবার এভাবে হাটা হয়েছে কিন্তু উদাসীন ভাবে এই প্রথম হেটে চলেছে সে অজানা উদ্দেশ্য নিয়ে।

হঠাৎ বাইকের আওয়াজে হাটার বিগ্ন ঘটে বলে দাঁড়িয়ে যায় নিরা।সে এক সাইড দিয়েই হেটে চলেছে কিন্তু বাইকের হর্ণ টাও যেনো তার সাথেই এগুচ্ছে বলে চরম।বিরক্ত হলো আজব এক শহর মানুষ এর কি উদাসীন হিসেবে হাটাও মানা নাকি আজব।

বিরক্ত নিয়েই পাশে তাকাতেই বিরক্তিকর চোখ জোড়া শিথিল হলো নিরার। সামনেই হালকা নেবি ব্লু শার্টে কালো বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। গম্ভির কপাল খানি ঘামে ভিজে আছে।নিরার অবাধ্য মন আবার বলে উঠলো
“এইযে রঙ করে শাড়ি পড়েছিস শাড়ির আচল টা দিয়ে যদি তার কপালের ঘাম টাই না মুছে দিতে পারিস তাহলে ব্যর্থ তোর শাড়ি পড়া। যে শাড়ি দিয়ে তার গম্ভির মশাই এর ঘাম না মুছা যায় সেই শাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া উচিত সে শাড়ির অস্বস্তি থাকা সাজে না এটা অন্যায় ভয়ংকর অন্যায়”

—কি ভুলে গেছেন আমাকে যে এইভাবে তাকিয়ে রয়েছেন মিস নিরা।

রুদ্র কথায় ধ্যান নাই তার তার দৃষ্টিতো এখনো রুদ্রর ললাটের দিকে তাতে আছড়ে পড়ে থাকা চুলের দিকে।ঘামাক্ত অবস্থাতেও যেনো শ্যামা পুরুষটিকে আরও সুন্দর লাগছে কই এর আগে তো নিরার এইভাবে কাউকে দেখা হয়নি এইভাবে কারো চেহারাতে মুগ্ধও হয়নি কাউকে নিয়ে এতোটা ভাবনাও ভাবেনি তাহলে এই গম্ভির লোককে নিয়ে তার এতো কেন ভাবনা।

নিরার অবাধ্য মনের সাথে হাতটাও অবাধ্য হয়ে উঠলো শাড়ির আচল নিয়ে রুদ্রর দিকে এগিয়ে নিঃশব্দে রুদ্রর ললাটের ঘাম মুছে দিলো।নিরার শাড়ি থেকে আসা মাতাল ঘ্রাণে চোখ মুজে নিলো রুদ্র। আলাদা শিহরণে কেপে উঠলো তার সর্বঙ্গ সত্ত্বা।

—পুরুষ মানুষ কে এতোটা সুন্দর মানায় না রুদ্র সাহেব। আপনি যে মেয়েদেরকে হিংসায় মেরে ফেলবেন। যে কবিরা চাদের সাথে নারীদের তুলনা করতো সে আপনাকে কেনো দেখেনি রুদ্র সাহেব তাহলে তো আজ পুরুষদের নিয়েও হতো কাবের পর কাব্যে।

রুদ্র মুগ্ধ হলো তার সারা শরীরে কম্পন তৈরি হলো এমন না সে নিজের প্রসংসা প্রথম শুনছে প্রায়শই সে প্রেম প্রস্তাব পাই। কিন্তু কখনো কারো চোখে এতটা ঘোড় দেখেনি সে আর না তো কারো কন্ঠে এতটা মাতাল হয়েছে সে।নিজেকেএ ধাতস্থ করেই নিরার উদ্দেশ্য গম্ভির কন্ঠে বলে উঠলো

—বাসায় যাওয়ার তাড়া আছে মিস নিরা?

নিরা মাথা নাড়ালো যার মানে নেই। রুদ্র পুনরায় জিজ্ঞেস করে উঠলো
—বাইকে বসতে ভয় লাগে?

নিরা এবারও মাথা নাড়ালো। রুদ্র মুখ ঘুরিয়ে হাসলো।
—তাহলে উঠে পড়ুন।

—কেনো?
—ঘুরবো তাই।
—কই ঘুরবেন?
—উঠলেই বুঝবেন।

নিরাও আর কিছু না বলে উঠে পড়লো সে হেয়ালী করে চায়না তার মিস্টার গম্ভিরের সাথে কাটানো মহূর্ত গুলো মিস করতে। হলো নাহলে একটু ব্যাহয়ায় বা ছ্যাছড়া তাতে কি। সবজায়গায় আত্নসম্মান রাখতে নেই যেখানে নিজে থেকেই তার মিস্টার গম্ভির তাকে ডাকছে।সে না করতে পারে কিভাবে।

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৯

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৯

২১.
ঢাকায় ফিরার আজ এক মাস পেরিয়ে গেছে। এই একমাসে রুদ্রর সাথে নিরার সাক্ষাত প্রায় না এর মতোই ছিল।কখনো কলেজ যাওয়ার পথেই ট্রাফিকের জন্য চোখাচোখি হয়ে যেতো দুইজনার বা কখনো কফি শপে নিরা যেতো বন্ধুমহলের সাথে আর রুদ্র আসতো ক্লাইন্টের সাথে মিটিং এটেন্ড করতে সেখানেও তাদের চোখাচোখি হলেও কথা বলা হয়ে উঠতোনা। হাজার হোক একই শহরে বাস তাদের। এতোদিন তেমন ভাবে সাক্ষাৎ না থাকার দরুন চোখে পড়লেও তেমন একটা পাত্তা দেওয়া হতোনা কিন্তু হঠাৎ এক ঘটনার জোড়েই ত আজ অপরিচিত দুই সত্ত্বা বহু পরিচিত।

কিন্তু আজ হঠাৎ করেই মুখোমুখি হলো দুইজন। নিরা আর তার বান্ধবি মায়া দুইজনেই আর্কিটেক্ট নিয়েই পড়াশুনা করছে বিধায় দুইজনই “দা সান রাইজ ইন্ডাস্ট্রি”তে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে ইন্টার্ন হিসেবে।এর পিছনে দুইটি কারণ রয়েছে এক হলো এই ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে বাংলাদেশের নামকরা ইন্ডাস্ট্রি আর এর অনেক ব্রাঞ্চ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাই আর আরেকটি কারন হলো তাদের কলেজ এর নির্মাতা এই কাম্পানির ওনার৷ ইন্ডাস্ট্রির দুইজন সিনিয়র আর্কিটেক্ট এ পার্সোনাল এসিস্টেন্ট হিসেবেই তাদের কাজ করতে হবে।আর যেহেতু দুইজনই ” দা সান রাইজ ইন্ডাস্ট্রির ” মালিক মিস্টার হেভেন শেখ এর ভার্সিটিতে অধ্যায়নরত সেজন্য তাদের চাকরির অগ্রাধিকার ছিলো বেশি।আর হলোও তাই যেহেতু নিরার বানিয়ে আনা ডিজাইন গুলো চমৎকার আর ইউনিক ছিলো সেজন্য সে খুব সহজেই চান্স পেয়ে যায়। আর মায়ার মৌখিক পরীক্ষাতেও চমৎকার ভাবে উত্তির্ন হওয়াই সেও নিজের জায়গা ধকল করে নেয় শ খানেক ক্যান্ডিডেটদের মাঝখানে।

কিন্তু তখন ও নিরা জানতোনা সে যার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে সিলেক্ট হয়েছে সে আর কেও না বরং রুদ্র শিকদার। ম্যানেজমেন্ট কমিউনিটি দুইজনকে পাঠালেন দুই সিনিয়র আর্কিটেক্টদের কেবিনে। দুইজনার রুম পাশাপাশি। দুইজন এর রুমের নাম্বারের নিল চিরকুট তাদের হাতে।

নিরা দাঁড়িয়ে আছে ১০২ নাম্বার কেবিনের সামনে কেবিনের দরজার উপরে স্পষ্ট ইংরেজি এলফাবেট দিয়ে গাঢ় কালো কালি দিয়ে লিখা আছে
“RUDRO SIKDAR”।
নিরা থমকালো সে ভাবেনি সে দাঁড়িয়ে যাবে আবার সে গম্ভির মানুষটির সামনে। এই একমাসে ভিষন জালিয়েছে এই গুমরো মুখোটা তাকে অত্যন্ত বাজে ভাবে। ঘুমতে গেলেও তার গম্ভির চেহারা মনে পড়তেই রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়,খাওয়া গলা দিয়ে নামে না। সামনে না থেকেও যে সারাক্ষন সামনে ঘুরাঘুরি করার ব্যাপারটা তাতে যে বেশ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নিরা এই এক মাসে মাঝেমধ্যে মন চায় লোকটার সামনে যেয়ে কাঠাকাঠ গলায় বলে উঠতে
”শুনেন মিস্টার গম্ভীর লোক আপনি এইভাবে একটা মেয়ের স্বপ্নে সয়নে খাওয়া দাওয়াই হস্তক্ষেপ করতে পারেন না এটা অন্যায় ঘোর অন্যায় এই অন্যায় আপনি করতে পারেন না আপনি একজন ভয়ংকর গম্ভীর অপরাধী আপনার শাস্তি পাওয়া উচিত “।

যার থেকে পালাই পালাই করে ঘুরে বেরাচ্ছিলো শেষ মেষ তার কাছে এসেই তাকে থামতে হবে জানাছিলোনা তার ধুরুধুরু বুক নিয়ে নক করে উঠলো রুদ্র শিকদারের কেবিনের দরজা।দুই থেকে তিনবার নক করার পরেই ওপর থেকে গম্ভীর কন্ঠে ভেসে উঠে পুরুষালি কন্ঠ

—কাম ইন।

রুদ্রর অনুমতি পেয়েই নিরা ভিতরে প্রবেশ করলো কিন্তু রুদ্রর চেহারা দেখার সৌভাগ্য হলোনা তার কারন রুদ্র উলটো দিকে ফিরে কারো সাথে কথা বলতে ব্যস্ত কথার ধাচে নিরা বুঝলো কোন ক্লাইন্টের সঙ্গেই কথা বলছে সে ভাবে কথা বলতে বলতে রুদ্র নিরাকে না দেখেই পিছন ফিরেই বলে উঠলো

— এক কাপ কড়া কফি নিয়ে আসুন তো।

রুদ্র জানে এই মহূর্তে তার একজন নিউ ইন্টার্ন আসবে সেজন্যই সে এই হুকুম টা যারি করলো কিন্তু পিছন ফিরে দেখা হলোনা মানুষটিকে।

নিরা আর কি করবে হাতের ফাইলটি সোফাই রেখেই হাটা ধরলো কফির খোজে।।ইতিমধ্যে রুদ্র ফোন কল শেষ করে কম্পিউটারে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো নিরা পুনরায় কেবিনে প্রবেশ করে ধোয়া উঠা কফির মগ এনে রাখলো রুদ্রর সামনে। রুদ্র এবার মেয়েলী হাত দেখে মাথা উপরে তুলে তাকায় সামনে নিরাকে দেখে ভ্রম মনে করে আবার পুনরায় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
কারন এইটা তার সাথে প্রায় হচ্ছে। কিছুটা ফিল্মি ভাবেই সবার মাঝেই কেন যেনো নিরার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছে সে। এইতো কিছুদিন আগের কথা। ঘুম থেকে উঠতেই সে তার সামনে লাল শাড়ি পরিহিত নিরাকে দেখে কফির মগ হাতে নিয়ে ভিজা চুলে তোয়ালে পেচানো অবস্থায় নিরাকে আস্তো বিবাহিতা বউ বউ লাগছিলো তার কাছে।কিন্তু ফট করেই তার মিসেস শিকদারে গলার আওয়াজে বুঝতে বাকি থাকেনা এটা তার ভ্রম ছিলো এমন ই বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে রুদ্রর সাথে সেজন্য অনেকবার তাকে বেশ লজ্জাতেও পড়তে হয়েছে।কিন্তু রুদ্র আর এই কাজটা করলোনা।

অপরদিনে নিরা রুদ্রর ব্যবহারে অবাক হয়ে গেছে রুদ্র একবার তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতে বেশ হতাশ হলো নিরা। তবে রুদ্র কি এই একমাসে ভুলে গেলো তাকে। অবশ্য ভুলার ই কথা অপছন্দের মানুষকে মনে রাখার কথাও না। নিরার বুক চিড়ে অজান্তেই বেরিয়ে এলো এক তপ্ত নিশ্বাস হলদে ফর্সা মুখখানা টা হালকা লাল হয়ে উঠলো বিষন্নতাই। নিরা কি করবে ভেবে না পেয়ে সোফায় রাখা ফাইলটি নিয়ে রুদ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে খুব ভদ্রতা সহিত বলে উঠলো।

—স্যার এইটা আমার ফাইল সাথে কিছু বানানো ডিজাইন। আপনি যদি দেখে আমার কাজটা বুঝিয়ে দিতেন।

রুদ্র এবার চমকালো এতোদিন নিরাকে দেখলেও কথা বলতোনা নিরা কিন্তু আজ তো কথাও বলছে।নিরা মিষ্টি আওয়াজে যেনো রুদ্রর তালগোল পাকানোর উপক্রম।
কাপাকাপা হাতে নিরার ফাইল নিয়ে নাম পড়তেই থমকে উঠলো ফাইলের প্রথম পেজ উল্টাতেই ইংরেজি শব্দে ছোট ছোট অক্ষরে লিখা “NIRA TALUKDER”।
রুন্দ্র যেনো এবার আকাশ থেকে পড়লো তার সামনে যে স্বয়ং নিরা নিজে উপস্থিত আর সে তার এসিটেন্ট সেটা বুঝতে বাকি থাকলোনা তার। কিন্তু তার এই অবাক বিস্ময় কিছুই বুঝতে দিলোনা সে নিরাকে বরং শান্ত ও গম্ভির ফেস নিয়েই সম্পূর্ণ ফাইলটা চেক করে নিজের টেবিলের ডয়ারে রেখে দিলো সযত্নে।কিছু ফাইল টেবিল থেকে উঠিয়ে নিরার দিকে বাড়িয়ে দিলো

— মিস নিরা এই ফাইল গুলোতে বেশ কিছু বিল্ডিংস এর ছবি আছে সেখানে কি কি ভুল আছে সেগুলো মার্ক করবেন এবং সে জায়গায় কি ব্যবস্থপনা নিলে ভালো হলে তার উপরে একটা ডিটেইল তৈরি করে আমাকে দেখাবেন ইজ দেট ক্লিয়ার।

নিরা সম্মতি জানিয়ে ফাইল আর লেপটপ নিয়ে সামনে থাকা সোফায় গিয়ে বসে পড়লো বেস মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে লাগলো।আর সেই দৃশ্য মনোযোগ সহকারে দেখতে থাকলো রুদ্র। বেশ কিছুক্ষন সময় পেরিয়ে যেতেই নিরা লেপটপ থেকে মাথা তুলতেই রুদ্র মাথা নিচু করে নিলো। নিরা চোখ যেয়ে আটকালো রুদ্রর নাকে থাকা তিলটাই।

—আজব এই দুনিয়ার নিয়ম পছন্দের জিনিস গুলা হয় দামী নয়তো অন্যকারো। কিন্তু আমার টা তো আমাকে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে। আচ্ছা আমি যদি শান্ত ভদ্র হতাম তাহলে কি এই গম্ভির লোকটা আমাকে পছন্দ করতো আমাকে মনে রাখতো নাকি তখন ও এইভাবেই আমাকে ভুলে যেতো কিজানি বাবা লোকটার মতিগতি বুঝা দায়।

কথাগুলো মনে মনে আওড়ালেও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা হলোনা।

২২.
অভ্রর সামনে বসে আছে তার মা অর্থাৎ মিসেস তালুকদার। বেশ কিছুক্ষন ধরেই ছেলেকে পাশে বসিয়ে রেখেছে মিসেস তালুকদার কিন্তু কিছু বলা হয়ে উঠছে।এমন না যে তার ছেলে রাগী বা অন্যকিছু তার দুই ছেলে মেয়েই ভীষণ শান্ত শিষ্ট।রাগারাগী করা তাদের ধাচে নেয়। শান্ত হয়েই সব কিছু হেন্ডেল করে ফেলে হাসি মুখে। বিশেষ করে নিরা মেয়েটি কথার জাদুতেই কঠিন থেকে কঠিন সমস্যা সমাধান করে ফেলতে পারে।মিসেস তালুকদার অভ্রর এই ব্যাপারটাও নিরার হাতেই দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু গত একমাস হলো নিরা তার এক্সাম কলেজ ইন্টারভিউ নিয়ে খুব বেশিই ব্যস্ততাই থাকায় তাকে ঘাটানোর সময় পাননি মিসেস তালুকদার এদিকে মিসেস শিকদার আর মিস্টার তালুকদার উভয় খুব বেশিই তাড়াতাড়ি করছেন। তাদের মধ্যে ধৈর্য না দেখেই আজ মিসেস তালুকদার ছেলের মুখোমুখি হয়েছে কলেজ শেষ করে বাসায় ফিরতেই নিজের ছেলে রুমে এসে ঘাপটি মেরে বসে আছেন কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

দীর্ঘ নিরাবতা ভেংগে অভ্র তার মায়ের হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে আদুরে শান্ত কন্ঠে
—কি ব্যাপার মা তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন। তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছো। নিজের ছেলের সাথে এতো ভয় পাওয়ার মানে কি মা।

মিসেস তালুকদার ছেলের এমন গলায় সাহস পেলেন

—বাবা আমরা চাচ্ছি এবার তোর বিয়েটা করায় দিতে দেখ তুই যথেষ্ট বড় হয়েছিস বিয়ের বয়স হয়েছে সাথে কলেজের প্রফেসার আবার নিজের বাবার ব্যবসা টাও খুব দারুন ভাবে সামলে নিচ্ছিস কিন্তু তোকেও ত সামলানোর কাউকে চায় তাই না বল।

অভ্র হাসলো সে বুঝেছিলো মা তার এমন কিছুই বলতে চাচ্ছে।

—কে সে মেয়েটা যার জন্য এতো তাড়াহুড়ো তোমার ছেলের বিয়ে নিয়ে।

মিসেস তালুকদার আমতা আমতা করে বলে উঠলো
—রুহানী

অভ্রর ঠোঁটের হাসি প্রসস্থ হলো
—ভেবে বলছো ত মা। তুমি খুব ভালো করেই জানো রুহানীর বাচ্চামো টা সে এখনো ঠিক সে ছোট মেয়েই থেকে গেছে তার ছোট হাত তোমার সংসার সামলাতে পারবেনা। আর না তো তোমার বাকী দশটা মেয়ের মতো আদর্শ বউমা হয়ে উঠতে পারবে। তার রাগ সম্পর্কে ছোট বেলা থেকেই ধারণা আছে।আমি সারাদিন কাজে থাকবো মা সে তোমার সাথেই সারাটা সময় কাটাবে। এবার বলো তুমি পারবে সামলাতে ছোট জেদী শিকদারদের আদরের রুহানীকে।

মিসেস তালুকদার মন দিয়ে শুনলেন এবং বুঝলেন ছেলের কথা গুলো তিনি এইসব সম্পর্কে অবগত আর এতে তার বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই কারন সে বউ না আরেক মেয়ে আনতে চাচ্ছে।আর রুহানীর বাচ্চামো স্বভাব টা তার দারুন লাগে।আর একসময় না একসময় ঠিক দেও বিয়ের বন্ধনে বেধে গেলে ঠিক সাংসারিক হয়ে উঠবে বলেই তার ধারণা। আর অভ্রর যে বিয়েতে অসম্মতি নেই তাও বুঝে গেলেন তিনি অভ্রর হাসি দেখে।

—আমার আপত্তি নেই তাকে আমার পুত্রবধু করে আনতে।

অভ্র মায়ের হাত ছেড়ে উঠে রওনা দিলো ওয়াসরুমের উদ্দেশ্য বেশ গরম পড়ায় গোসল না করা অব্দি শান্তি নেই তার। কিন্তু যেতে যেতে মায়ের উদ্দেশ্য বলে গেলো
—তাহলে আমার ও আপত্তি নেই বিয়ের পিরিতে বসতে।

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৮

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৮

২০.
রুদ্রর হাতটা লাল হয়ে আছে নিরা বুঝলোনা বাসে উঠার সময় তো ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ এমন লাল বা হলো কিভাবে তার থেকে বড় কথা রুদ্রকে তার কাছে স্বাভাবিক লাগছেনা বরং স্বাভাবিকের চেয়ে একধাপ বেশিই গম্ভির মনে হচ্ছে তার। গম্ভিরতার কারণ টের পেলোনা তার আগেই এক সুন্দরী কিশোরী তার পাশে এসে দাঁড়ায়।

—এক্সকিউজ মি। আমার সিট এটা যদি আপনি আপনার নির্ধারিত সিটে যেতেন।

ভদ্রভাষী মেয়েটির দিকে তাকালো সে একবার পুনরায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রুদ্রর মুখের গরণের দিকে।রুদ্রর কান জোড়াও যে রাগে ইতিমধ্যে লাল বর্ণ ধারণ করেছে তা বেশ বুঝলো নিরা কিন্তু এইসবের মানে কিছুই আন্দাজ করতে পারছেনা শুধু মন তাকে বলছে “এই মহূর্তে এইখান থেকে উঠে গেলে তোর পাশে বসা গম্ভীর রাগী মানুষ টা বোমা হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাবে যা তোর জন্য ক্ষতিকর চরম ক্ষতিকর তাই নিজের জীবনকে ভালোবাসলে এইখান থেকে নরিস না ” মনের কথাকেই প্রাধান্য দিলো নিরা। কারণ সে তার জানকে খুব ভালোবাসে সে মোটেও চায়না এই অল্প বয়সে তার জানপাখি উড়ে পালায় যাক।

—আপু আপনি কিছু মাইন্ড না করলে আপনি আমার জায়গায় বসবেন কষ্ট করে।(পিছনের দিকে ইংগিত করে ফিসফিস করর)

নিরার কথায় মেয়েটি পিছনে ফিরে তাকালো। সেখানে ধ্রুবকে একবার পরক্ষ করে নিলো ধ্রুব কানে হেডফোন গুজে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। মেয়েটি আর কিছু না বলে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে বসে পড়লো ধ্রুবর পাশে।কারো বসার শব্দ পেয়ে ধ্রুব ভাবলো নিরা বসেছে তার পাশে।তাই চোখ বন্ধ করেই মাথাটা এলিয়ে দিলো অগুন্তিক সে মানুষ টার কাধে।মিষ্টি এক ঘ্রাণে এবার সত্যি সত্যি ঘুম চলে এলো ধ্রুবোর আখীজোড়ায়।কিন্তু সে টের পেলোনা পাশের ব্যাক্তিটির মাঝের তোলপাড়। উত্তেজনাই ছটফটিয়ে উঠা সদ্য কিশোরির অবাধ্য মনের বেপরোয়া ভাব।

নিরা পুনরায় মন দিলো রুদ্র দিকে। কানের লালভাব টা কমে স্বাভাবিক বর্ণ ধারণ করেছে।কিন্তু মুখের গম্ভীর্যতা কমেনি মাঝেমধ্যে নিরার মনে হয় ভালোমা ভুল করে মধুর জায়গায় নিম পাতা খাওয়াই দিয়েছে এই অত্যাধিক গম্ভীর একরোখা লোককে।এমন ভাব যেনো হাসলেও ট্যাক্স লাগে।

—এইযে গম্ভির মশাই হাসতে কি ট্যাক্স লাগে।

নিরার এমন কথায় হচকচিয়ে তাকায় রুদ্র তার দিকে
—কি বলতে চান।
—বাংলা কথা বলতে চাইছি। হাসতে কি ট্যাক্স লাগে?
—নাহ তো(থতমত খেয়ে)
—তাহলে হাসেন না কেন সবসময় এই গম্ভির ডাকুর মতো মুখ করে থাকেন কেন আজব।
—আমি ডাকু(চোখ ছোট ছোট করে)
—এইযে আপনি নিজেই স্বিকার করলেন আপনি ডাকু আমার কি করার।
—আপনার সমস্যা কি?
—আপনার এই করল্লা মার্কা ফেস। সকাল দুপুর রাত কি করল্লা কাচা চাবায়ে খান আজব।
—তাতে আপনার কিছু যায় আসার তো কথা না মিস আপনি যায়ে হাসাহাসি করুন না আমার দিকে খেয়াল দিতে কে বলেছে।(বিরক্ত নিয়ে)

নিরার মাথায় টনক নড়ে। তারমানে এই গম্ভির বেডা এইজন্য গাল গুলো টমেটো করে রেখেছে। আচ্ছা নিরা অন্যকারো সাথে কথা বললে উনার সমস্যা হয় কিন্তু কেনো নিরা বেশি কিছু না ভেবেই জিজ্ঞেস করে উঠে

—আপনি কি জেলাস রুদ্র সাহেব।

রুদ্র এবার শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিরার দিকে।নিরা যেনো আলাদাই ঘোরে চলে যায়।রুদ্রর চোখ যেনো চিল্লায় চিল্লায় তাকে বলার চেষ্টা করছে
“হ্যা মিস নিরা আমি জেলাস আমার চোখ জোড়া সহ্য করতে পারেনা আপনাকে কারো পাশে একদম না একবিন্দু না আপনি কারো সাথে হাসবেন খেলবেন তা এই মন মানতে নারাজ”।

কিন্তু রুদ্রর এমন ভাবনা কেনোই বা আসবে। রুদ্রর তো অপছন্দের নিরা।তার পছন্দের ঠিক যে বিপরীতে সে। তাহলে এই অনুভূতি এই গম্ভিরতা এই হাসফাস কিসের। তবুও পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো
—বুঝলেন রুদ্র সাহেব মায়া মায়া চেহারার অধিকারী ছেলেদের গম্ভীরমুখে মানায় না তাদের তো এক চিলতি হাসিতে মানায়। ঠোঁটের কোনে খিলে উঠা আনন্দতে মানায়। এমন বিষন্নভাব মায়া মায়া মুখের জন্য ভয়ংকর কথা।আপনার এই ভয়ংকর কাজে আমার মতো নিশপাপ মেয়ের হার্ট এট্যাক ফ্যাটাক হয়ে মৃতুও বরণ করতে পারি সেজন্য আপনার এই পাপের চরম শাস্তি হওয়া উচিত আপনি অপরাধী।

—আপনিতো চরম সাংঘাতিক মানুষ আপনি কই থেকে বিষয় কই নিয়ে গেলেন আপনাকে এই চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া উচিত আপনি কি সেটা জানেন(চোখ পাকিয়ে)।

—এই মায়া মায়া লোকটির হাতে খুন হতে একবার কেনো সহস্রবার প্রস্তুত গম্ভীরবাবু।

—মিস নিরা আপনি কি কোনভাবে ফ্লার্ট করতে চাচ্ছেন আমার সাথে।(চোখ বড় বড় করে)

—নাহ তাজমহল বানাতে চাচ্ছি সাহায্যে করবেন নাকি। (দুষ্টু হেসে)

রুদ্র হচকচিয়ে উঠে এই মেয়েটির। সাথে কথায় পারা দুস্কর মেয়েটি কখন কোন কথার আড়ালে কি বলে ফেলে বুঝা দায়। তাই কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো রুদ্র। নিরাও হেসে রুদ্রর মুখ পানে তাকালো। কিছুক্ষন পরে বিরক্তিতে কপাল কুচকে রুদ্র চোখ মেলে তাকালো।তখন ও নিরা একইভাবে তার দিকে চেয়ে আছে দেখতেই তেতে বলে উঠলো
—সমস্যা কি এইভাবে তাকায় আছেন কেনো। আমার অসস্তি হচ্ছে চোখ সড়ান সরান বলছি।

—আমার চোখ আমার ইচ্ছা আমি আপনার দিকে তাকাই নাকি অন্যদিকে আপনার কথা শুনবো কেন এখন আমার ইচ্ছা নেই অন্যদিকে তাকানোর বুঝলে মায়ামুখো ছেলে।

—মিস নিরা আপনি কি জানেন আপনাকে এখন রাস্তার বখাটে ছেলেদের ন্যায় লাগছে যার যাওয়া আসা মেয়েদের উক্তত্ত করে।

—আর আপনাকে লাগছে ঠিক সে মেয়েদের মতো যারা উক্তক্তের শিকার হয়।
(চোখ টিপ দিয়ে)

—আপনি আমাকে রীতিমতো ইফটিজিং করছেন।(অসহায় কন্ঠে)
—আমাকে কি ইভটিজার মনে হচ্ছে সুন্দরী এক নারীকে ইভটিজার বলার অপরাধে আপনাকে দেশ থেকে বিতারিত করা উচিত।

রুদ্রর এবার মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে। কিন্তু বেচারার চুল তার খুব প্রিয়। তারউপরে সামনে রোজা ঈদ এই মহূর্তে চুলে হাত দেওয়া যাবেনা টাক মাক পড়লে সমস্যা সামনে ঈদের জন্য মেলা প্ল্যানিং তার। তার থেকে বড় কথা এখনো বিয়ে করেনি এই মহূর্তে টাক হলে মেয়ে পাওয়া দুস্কর।তখন কিহবে তার জন্য দেশের অর্থনীতি পিছিয়ে যাবে ভেবেই চুল ছিড়ার প্ল্যানিং বাদ।

—বেশ তবে আমিও আপনার দিকে তাকাবো।
—তাকান তাকান মানা নেই আমি যথেষ্ট সুন্দরী একটা মেয়ে তাকানো টাই স্বাভাবিক বরং না তাকানোটাই অস্বাভাবিক।

রুদ্রর এবার কপালে হাত এই মেয়েকে নাস্তানাবুদ করতে যেয়ে সে নিজেই নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে।যা মোটেও সভনিয় না একে তো ছেলে হয়ে একটা মেয়ের কাছে ইভটি*জিং এর শিকার হচ্ছে। এরচেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে বলে তার মনে হচ্ছেনা। ছেলে জাতি যে তার উপর হায় হায় করছে তা সে টের পাচ্ছে।কিন্তু কিছু করার নেই কারণ সামনের মেয়েটির দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকাও তার পক্ষে সম্ভব না আর গম্ভীরতার খোলস ছাপিয়ে নিরার মতো মজা করাও তার ধাচের বাহিরে। এখন তো নিজের উপর তার নিজের ই রাগ লাগছে।এরচেয়ে ভালো হতো নিরা ওই ধ্রুবের পাশে বসতো কিন্তু তাতেও বিপত্তি সাধলো রুদ্রর মন। তার মন কিছুতেই নিরাকে ধ্রুবের পাশে বসতে দিতে রাজি না কোনভাবেই না।

—শা* মন মস্তিষ্ক দুইটাই আমার সাথে মীরজাফর গীরি করছে।তার উপর নতুন মুসিবত হয়েছে এই অসম্ভব অসভ্য এক নারী।তার চোখ মুখে থাকা দুষ্টুমী ভাব যে তার প্রতি আমাকে আরও টানে নিচ্ছে সে কি এই নারী বুঝেনা নাকি বুঝে শুনে এমন করে আজ থেকে এই নারী অসভ্য নারি। মায়াবতী রহস্যময়ো বাচ্চা সব নাম বাদ আজ থেকে এই নারী অসভ্য নারী যার রন্ধে রন্ধে আমাকে জ্বালানোর ফন্দি যার প্রতিটি কাজই আমার পছন্দের বিরুদ্ধে তবুও আমাকে তার দিকে টানে সব ছাড়িয়ে সব কিছু ভুলিয়ে।

রুদ্র নিজের মনে কথা বলতে বলতে যে এতোক্ষন সে তার অসভ্য নারীরদিকেই তাকিয়ে ছিলো সে টের ই পায়নি।তার অসভ্য নারীটির দুষ্টু চোখের হাসি যে এখন একরাশ নেশায় পরিনত হয়েছে তা আর বুঝলোনা রুদ্র।

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৭

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৭

১৭.
বাশের নির্মিত ব্যলকানিতে ধোয়া উঠে এক কাপ চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিরা। তার দৃষ্টি দূরে থাকা জঙ্গলের দিকে অদ্ভুত কিছু ডাক ভেসে আসছে সূদুর বন থেকে।অন্ধকারে আচ্ছন্ন বনটাতে চাঁদের আলোতে ভয়ংকর এর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে হয়তো সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতেই শিয়াল আর নিশাচর পাখিগুলার এই উল্লাস।আজ স্বাভাবিক দিনের ন্যায় চাঁদ টা সাদা নয় বরং লালচে।চন্দ্রগ্রহণ যাকে বলে।এই চন্দ্রগ্রহণ টা বেশ লাগে নিরা তার মনে আছে ছোট থাকতে একবার সে এই চন্দ্রগ্রহণ এর রাতে গেছিলো “রুহানী সদন” তখন তার বয়স আনুমানিক ৬কিংবা ৭ হবে ঠিক মনে করতে পারলোনা সে। সে রাতে ছিলো রুদ্র আর রুহানীর জন্মদিন অদ্ভুত ভাবেই দুই ভাই বোনের জন্মদিন একই মাসে একই দিনেই। যেখানে তাদের বয়সের তফাৎ ৪ বছরের। লাল টকটকা শাড়িতে নিরা আর রুহানী নিজেকে সজ্জিত করেছিলো খুব উল্লাস নিয়ে।
কিন্তু সে উল্লাস বেশিক্ষন টিকেনি কারণ হিসেবে ছিলো রুদ্রর গম্ভির বানী
“খবরদার আমার বউ না হওয়া অব্দি এই লাল রঙ তুমি পড়বা না পড়লে তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো আমি ”। ঠিক সেদিন থেকেই অদ্ভুত কারণে লাল রঙ টা তার পড়া হয়না সে নিজেও জানেনা কেন কিন্তু এই লাল রঙ যেনো এক প্রকার নিষিদ্ধ হয়ে গেছে তার কাছে।

ঠিক ছোট বেলা থেকে রুদ্রর এই গম্ভির স্বভাবের সাথে সে পরিচিত সেজন্যই সে ওই বাড়ির মুখো হতো কম। ছোট বেলা থেকেই রুদ্র তাকে বলে আসতো
“আমার বউ হবা তুমি সেজন্য আমার পছন্দ অপছন্দ গ্রহণ করবা বুঝলা”

—আচ্ছা রুদ্র সাহেব এর কি এখনো মনে আছে তার বলা কথা গুলো।নিশ্চয় নেই আর হয়তো থাকলেও তিনি বলবেন না কারণ আমি পারিনি তার মতো গম্ভির হতে তার পছন্দ অপছন্দ গুলো গ্রহন করতে।

মনে মনে কথা গুলো আপনমনে বলেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো নিরার অজান্তেই।ছোট থেকেই নিরা চঞ্চল প্রানবন্ত কিন্তু রুদ্র ছিলো ছোটথেকেই গম্ভির আর চুপচাপ স্বভাবের। ছোট বেলাই কতোবার এইজন্য রুদ্রকে কামড়েছে তার হিসাব নেই নিরার কাছে।

হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে নিরা পাশে তাকাতেই চোখ পড়ে রুদ্রর বাম গালে থাকা কালো তিলের উপর। আপন মনেই হাত বারিয়ে ছুয়ে দিতে নিলেই রুদ্র মুখ ফিরায় যার কারণে হাত যায়ে ঠেকে রুদ্রর মসৃন ঠোঁটে।

অপ্রত্যাশিত ঘটনাই দুইজনেই চমকে উঠে।নিরা হাত না সরিয়েও ডেব ডেব করে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে।রুদ্রও আহাম্মক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে একই জায়গায় নড়াচড়া না করে। হঠাৎ শিয়ালের ডাকে ভয় পেয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে নেই নিরা।

—আসলেএ আমি দুঃখিত আমি ওইভাবে আপনাকে ছুতে চায়নি।

নিরার নিচু কন্ঠে কথা বলেই সেখান থেকে চলে যায় পিছনে রয়ে যায় রুদ্রর অবাক চাহনী আর ধোয়া উঠা এক কাপ চা। রুদ্র কি ভেবে চা ঠোঁটে ঠেকাতে চেয়েও ঠেকাই না ।

—অপ্রিয়তমার হাতের স্পর্শ না হওয়াই তুলা থাক।কখনো অ টা উঠে গেলে নাহয় ফেরত দেওয়া যাবে আর না উঠলে প্রথম ও শেষ পাওয়া হিসেবে থেকে যাবে।কিছু না পাওয়াতেও যে পরম তৃপ্তি।

রুদ্র আজকাল নিজের কথার মানে নিজেই বুঝেনা। কি চলছে আসলে তার মনে কি ভাবছে সে নিজেও জানেনা। আদৌ কি সময় থাকতে বুঝবে সে নাকি তার বুঝতে খুব বেশিই দেরি হয়ে যাবে।

১৮.
রুহানীর দিকে অভ্র ঝুকতে নিলেই রুহানী অভ্রর বুকে ধাক্কা দেয়

—আপনি ভিষণ খারাপ মানুষ। আপনাকে জাস্ট আমার সহ্য হয়না ছোট থেকে আপনি আমাকে জ্বালিয়ে আসছেন। কেনো হ্যা।

—কথাটা তো তুমি ভুল বললা। ছোট থেকে তুমি আমাকে জ্বালিয়ে আসছো।কিন্তু আমাকে জ্বালাতে যেয়ে সে জ্বালার শিকার তুমিও হয়েছো। এখানে আমার দোষ ত নেই মিস রুহানী। উপস মিসেস অভ্র তালুকদার।(রুহানীর দিকে চোখ টিপ দিয়ে অভ্র বেরিয়ে যায়)

লজ্জাই রুহানীর গাল লাল হয়ে যায়।মনে পরে ছোট বেলাই করা তাদের বিয়ের কথা।
আসলে সেটা বিয়ে বলা চলেনা যেমন ছোট বেলাই সবার ই একটা পাতানো বর /বউ থাকে তারাও ঠিক তেমন ই বর বউ খেলতো। একদিন খেলতে খেলতে হঠাৎ অভ্র বলে উঠে

—এই শুনো তুমি আমার বউ কিন্তু দাদী বলেছে এইভাবে বউ হয়না

রুহানী ছোট ছোট চোখ তুলে অভ্রর দিকে তাকায়ে বলে উঠে
—তাহলে কিভাবে বর বউ হয় অভ্র ভাইয়া?

অভ্র কিছুটা ভেবে বলে উঠে
—উম কিজানি ওহ হ্যা কবুল কবুল বললে সত্যিকারে বিয়ে হয়

রুহানী খিলখিল করে হেসে বলে উঠে
—আরে শুধু এইটুকু আমি এখন ই বলছি কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে শুরু করে।
অভ্র কিছু একটা ভেবে বলে উঠে

—আরে এইভাবে না আমি দেখেছিলাম টিভিতে আবার খালামনির বিয়েতে। ওইখানে বর বউ কে উদ্দেশ্য করে একটা লোক বলে আর তারা সেইটাতে সায় জানাই তারপর বলে কবুল।

—কিন্তু এখানে ত কেউ নেই তাহলে আমাদের কি বিয়ে হবেনা।

—আরে নাহ কেউ নাই ত কি হয়েছে আমি বলছি তুমি আমার সাথে রিপিট করো আচ্ছা
—আচ্ছা।
—আমি রুহানী শিকদার হাবিব শিকদার আর জামিলা শিকদারের একমাত্র মেয়ে
রুহুল তালুকদার এবং নিশিতা তালুকদারের একমাত্র বড় ছেলে অভ্র তালুকদারকে নিজের বর হিসেবে কবুল করলাম এবার বলো তিন কবুল

রুহানী অভ্রর কথামতো সব বলে উঠলে অভ্রও বলে উঠে।ব্যাস হয়ে যায় তাদের বিয়ে ছোট অবুঝ দুই বাচ্চা নিজের অজান্তেই বিয়ে করে ফেলে।রুহানীর আবছা আবছা মনে থাকলেও ব্যাপারটা যে অভ্রর স্পষ্ট মনে আছে ভাবতেই লজ্জাই আড়ষ্ট হয়ে গেলো রুহানী।

বৃষ্টি হওয়াই রুহানীকে বাসায় ফিরতে দিলেন না নিশিতা তালুকদার। যার কারণে রুহানীকে এই থেকে যেতে হলো।

১৯.
সাত সকাল বেলাই বেরিয়ে পড়লো রুদ্র আর নিরা। সালেমান হাইদার এগিয়ে দিতে চাইলেও রুদ্র নাকোচ করে দিয়েছিলো।রুদ্র দুইজনার টিকিট কেটে নিয়ে আসে। দুইটা পাশাপাশি সিট পায়নি এবার তারা কেউ একজন অনলাইনে আগে থেকেই একটা টিকিট বুক করে রাখাই দুইজন সামনাসামনি সিট পেয়েছে।কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই ঢাকাই যাওয়ার বাস এসে থামে তাদের সামনে। রুদ্র প্রথমে উঠে পড়ে নিরা উঠতে নিলেই পিছন থেকে পুরুষালী কন্ঠে তার নাম ভেসে আসতেই পিছনে ফিরে তাকায়।
তাকাতেই নিরার ঠোঁটের হাসি চওড়া হয় ধ্রুবকে দেখে।

—আরে গায়ক সাহেব আপনি যে।
—আরোও একবার অপ্রত্যাশিত ভাবে তাহলে আমাদের সাক্ষাৎ হয়ে গেলো মিস নিরা।
—তাইতো দেখছি গায়ক সাহেব।
—চলুন উঠা যাক।

এতোক্ষন দুইজনার আলাপ চুপচাপ দেখছিলো রুদ্র কেন যেনো সহ্য হচ্ছিলোনা তার এই দুইজনার হাসি হাসি কথা গুলো।তার উপরে নিরার আবার ❝গায়ক সাহেব❞ ডাকটা তাকে আরও রাগিয়ে তুলছে। আর সে রাগকে আরও একধাপ বারিয়ে দিতেই
নিরা সিট পেয়েছিলো ধ্রুবের সাথে।

ব্যাস গম্ভির রুদ্রর মুখটা আরও গম্ভির হয়ে গেলো আর পিছ থেকে ভেসে আসতো লাগলো দুইজনার আড্ডার স্বর হঠাৎ করে নিরা আবদার করে উঠে

—গায়ক সাহেব একটা গান শুনায় দেন তাহলে সফর টা আরও ভালো কাটবে।
—গাইতে পারি এক শর্তে।
—সব শর্তে রাজি।
—আগে শুনেন তো।
—হুম।
—আপনাকেও আমার সাথে গাইতে হবে বলেন রাজি?

নিরা হাসলো আর সে হাসিকেই ধ্রুব সম্মতি হিসেবে ধরে গায়তে শুরু করলো।

আমি জানি না, কেন আমাকে.
ভিড়েতেও একা করে দিস।
আমি জানি না, কেন আমাকে.
এতটা নিজের করেছিস।
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে,
মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে আজ তোর সাথে.
বারে বার…
থাকি একপাশে আমি
আর একপাশে তুই
আমি তার থেকে আর বেশি চাই না কিছুই…
থাকি একপাশে আমি
আর একপাশে তুই
আমি তার থেকে আর বেশি চাই না কিছুই.
তারা গুলো জ্বলেছে আবার…
মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে খালি তোর সাথে
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে…
বারেবার
আমারই ঘরে তোকে রেখেছি লুকিয়ে,
চাহিদা সবই তোকে দিয়েছি বুঝিয়ে।
কতটা দূরে যাবি পালিয়ে পালিয়ে,
তোকে না পেলে আমি যাব হারিয়ে।
থাকি একপাশে আমি
আর একপাশে তুই
আমি তার থেকে আর বেশি চাই না কিছুই
তারাগুলো জ্বলেছে আবার…
মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে খালি তোর সাথে
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে…
বারেবার.

মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে খালি তোর সাথে
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে…
বারেবার…

দুইজনার গানের গলাই বাসে থাকা সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিকে।গান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই করতালির আওয়াজে বাস ভরে উঠে।হঠাৎ কই থেকে ৩ ৪ জন মেয়ে এসে ধ্রুবকে চিনে ফেলাই নিরাকে রিকুয়েষ্ট করে সামনে রুদ্রর পাশে যেয়ে বসতে সে ধ্রুবের সাথে ছবি তুলবে। নিরা হেসে উঠে রুদ্রর পাশে যেয়ে বসে পরে কিন্তু রুদ্রর দিকে তাকাতেই চমকে উঠে নিরা কারন,,,,,

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৬

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৬

১৫.
নিরা আর রুদ্রর কথার মাঝেই কিছু গ্রামবাসী তাদের দিকে এগিয়ে আসে। বয়স্ক লোকদের তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দুইজন একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।রুদ্র কথার মাঝে নিরার খুব কাছে চলে এসেছিলো। বয়স্ক লোকরা এগিয়ে এসে তাদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো

—এই তোমরা কে। আর এখানে কেনো।

রুদ্র এগিয়ে এসে বিনয়ী ভাবে বলে উঠলো
—জ্বি আমরা এখানে কাজের উদ্দেশ্য এসেছিলাম আজ ফিরছি কিন্তু বাস না আসায় ট্রেনের খোজে যাচ্ছিলাম।

অপরজন বলে উঠলো
—আজকে কোন ট্রেন বা বাস এই গ্রাম দিয়ে যাবেনা ভারি বর্ষনের জন্য বাস আটকে গেছে আর রেললাইনে মোটা গাছ ভেংগে পড়েছে ঝড়ের কারণে। আপনাদের জন্যেও এই মহূর্তে বাহিরে থাকা উচিৎ না।

রুদ্র আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই সালেমান হাইদার নামক এক বয়স্ক বলে উঠলেন
—পাশের মাইয়া ডা কেডা(পাশের মেয়েটা কে)

রুদ্র নিরার দিকে তাকালো নিরাও এতোক্ষন রুদ্রর দিকে চেয়ে ছিলো তার উত্তরের আশাই। রুদ্রকে উত্তর দিতে না দেখে তারা পরস্পরের মাঝে বলে উঠে

—আমার তো মনে হচ্ছে দুইজনে এখানে অন্য মতলবে এসেছে।
—আমার ও মজিদের কথা ঠিক মনে হচ্ছে।নাহলে কাজের উদ্দেশ্য এসেছে এখানে মেয়ের কি কাজ থাকবে। আর দেখোনাই কতো কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলো আমাদের দেখেই তো আলাদা হইলো।

সালেমান হাইদার দুইজনার কথা শুনে বলে উঠলো
—দেখো এটা আর আমাদের যুগ নেই এখন ছেলে মেয়ে উভয় কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়।

জাহিদ হোসেন নামক লোকটি বলে উঠে
—তা যাই বলেন কিন্তু এদের হাবভাব আমার ভালো ঠেকছে না।

সালেমান হাইদার এবার কড়া গলায় বলে উঠলেন
—এইভাবে কারো জীবন নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।

সালেমান হাইদার এবার রুদ্র নিরার উদ্দেশ্য বলে উঠে
—আজকের রাতে তোমরা আমাদের বাসায় থাকো। এই বৃষ্টিতে তোমরা বেরুতে পারবা না আর যুবতী মেয়ে নিয়ে এই রাতের বেলা বাহিরে থাকাটা সুবিধার নই।

রুদ্র দ্বিমত করলোনা কারন তাদের কথাটা ফেলে দেওয়ার নই।যেহেতু ট্রেন ও পাবেনা তাই এটাই ভালো উপায় হবে বলেই মনে করলো। নিরাও মাথা নিচু করেই হাটা ধরলো।

বাশের এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিরা রুদ্র।নিরা হা হয়ে বাসাটা দেখছে বাশের যে এতো সুন্দর বাড়ি হয় তা নিরা এই প্রথম দেখলো।এর আগেও দেখেছে কিন্তু এতোটা সুন্দর দেখেনি।এ যেনো বাশের তৈরি রাজপ্রাসাদ এর মতো। নিরা আর রুদ্রকে নিয়ে সালেমান নিজের বাসার ভিতরে যেয়ে তার বউকে ডাক দিলো

—রিহানা বউ দেখো বাসায় মেহমান এসেছে।বের হও দ্রুত।

সালেমান হাইদার এর কথায় বেরিয়ে এলো একজন বৃদ্ধা।বৃদ্ধার দিকে চোখ যেতেই নিরা কিছু মহূর্তের মাঝেই চিনে ফেললো বাস স্টেশানে দেখা সে বৃদ্ধ কপত–কপতী জোড়া। নিরা হাসলো আসলেই পৃথিবী ছোট।

—এরা কারা গো এভাবে ভিজে আছে কেন।
—এরা শহর থেকে এসেছিলো কাজে কিন্তু বৃষ্টির জন্য আটকা পড়ে গেছে তুমি এক কাজ করো নাতনিডারে তোমার একটা শাড়ি দিয়ে দেও।

বৃদ্ধা হেসে নিরার হাত ধরে নিয়ে গেলো। রুদ্র তাকিয়ে রইলো নিরার যাওয়া দেখে।রুদ্রর চাহনী দেখে সালেমান হাইদার হেসে রুদ্রর কাধ জড়িয়ে ধরলো

—কি ব্যাপার দাদুভাই নাতনিরে পছন্দ করো নাকি।

রুদ্র আনমনেই বলে উঠলো
—জানিনা এইটা পছন্দ নাকি অন্যকিছু কিন্তু সে পাশে থাকলে সে সামনে থাকলে কেমন এক ঘোর কাজ করে।বুকের ঠিক বামসাইডাই স্পন্দন গুলোর গতিবেগ বেরে যায়।তাকে আমার পছন্দ করা বারণ হওয়ার স্বর্তেও তার ভাবনা আমার মস্তিষ্ক জুরে ছড়িয়ে রয়েছে।তার কালো রেশমী চুলের ছন্দ তার হাসি মাখা মুখ তার বাচ্চাদের মতো প্রানচ্ছল হয়ে ঘুরা সব কেমন একটা,,,,

রুদ্রর হুশ ফিরে সে এতোক্ষন কি বলছিলো পাশে তাকাতেই দেখে দাদু তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে।রুদ্র হচকচিয়ে উঠে। আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই সালেমান হাইদার বলে উঠেন

—বুঝসি দাদুভাই আর কিছু বলতে হবেনা। তোমার এই নাম না জানা অনুভূতির নাম গুলো খুব শীগ্রই যেনে যাবা। কিন্তু দাদুভাই বেশি দেরি করোনা জানোই তো শাহজাহানের তৈরি তাজমহল সবাই দেখলেও মমতাজ কিন্তু দেখেনি দাদুভাই। শাহজানের এই আক্ষেপ তার শেষ নিশ্বাস অব্দি ছিলো।

রুদ্র কিছু বললোনা নিজের মনে আওড়ালো
—এতো সম্ভব না দাদু তার প্রতি আমার কোন অনুভূতি সাজে না।

রুদ্র সালেমান এর দেওয়া জিন্স আর পাঞ্জাবী পড়ে বেরিয়ে এলো।এইটা নেওয়া হয়েছিলো সালেমান এর নাতির জন্য যার এইবার আসার কথা ছিলো কিন্তু সে আসেনি যার দরুন পোষাকটা রুদ্রের পরনে।

রুদ্র পাঞ্জাবীর হাত গুটাতে গুটাতে তার চোখ পড়ে নিরার দিকে। বাঙ্গালী স্টাইলে শাড়ি পড়ে চুল ছাড়া অবস্থায় বেশ লাগছে নিরাকে হালকা বেগুনী রঙের শাড়িটা দারুন ভাবে মানিয়ে গেছে নিরার সাথে।

—আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গুলো ভঙনের কি অদ্ভুত পরিকল্পনা এটেছে এই মেয়ে।

রুদ্রর দিকে তাকাতেই নিরা কিছু মহূর্তের জন্য থমকালো।উজ্জ্বল শ্যামা পুরুষের শরীরে কালো পাঞ্জাবী দারুন ভাবে মানিয়েছে।পাঞ্জাবীটা একটু টাইট হওয়াই পেশি গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।মায়া মায়া চেহারার সুদর্শন পুরুষ টিকে দেখে আবার ও বলে উঠলো
—পুরুষের জন্য মায়া না উহু মৌটেও না। মায়া মায়া পুরুষকে দেখলে যেকোন মেয়ে পাগল হতে রাজি হবে বিনা স্বর্তে তখন যে সুদর্শন পুরুষ রা পাত্তা পাবেনা এটা যে অন্যায় ঘোর অন্যায়।

নিরা আর রুদ্রর মনোভব হয়তো বৃদ্ধা বুঝতে পারলেন তার চোখে থাকা কাজল নিয়ে লাগিয়ে দিলেন দুইজনার কানের পিঠে।

১৬.
সোফার উপরে গাল ফুলিয়ে বসে আছে রুহানী এই গাল ফুলানোর একমাত্র কারণ হলো সামনে বসে থাকা মাইশা আর অভ্র।রুহানী ভেবেছিলো আজকে হয়তো মাইশা বৃষ্টির জন্য আসবেনা কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করে দিতে মাইশা আজকে ঠিকই এসেছে তাও শাড়ি পড়ে পাতলা শাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভিজে গায়ে লেপ্টে গেছে যার দরুন শরীরের ভাজ স্পষ্ট পরিলক্ষিত। অভ্র তাই তার শার্ট মাইশাকে দিয়েছে।কিছুক্ষন পর পর ই মাইশা সেটাই নিজের নাকে লাগিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস নিচ্ছে যা রুহানীর রাগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

রুহানীর মন চাচ্ছে দুইজনার মাথা একেঅন্যের সাথে ঠুকে দিতে।রুহানী দাতে দাত চেপে উঠে গেলো অভ্রর ওয়াসরুমে।আজ বাড়িতে বাবাই থাকাই সবাইকে নিয়ে অভ্র নিজের ঘরেই পড়াচ্ছে হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসতেই ঠোঁটের কোণাই হাসি ফুটে উঠলো

—খুব শখ না চান্দু মেয়েদের সাথে ৩২ পাটি দাত বের করে হাসাহাসি করার এবার দেখাচ্ছি মজা। পড়ানোর নামে ভন্ডামি হু রুহানী থাকতে তা সম্ভব নহে।

রুহানী বের হতে নিতেই অভ্রর বুকের সাথে বাড়ি খাই
—উফ এই গন্ডারের মতো দেওয়াল আসলো কই থেকে মাথার জিবন টাই ত্যানা ত্যানা সব হইসে ওই অভ্র লুচুটার জন্য উগান্ডার বাসিন্দা লাল হনুমান টিকটিকির চাচা বিড়ালের চাচাতো মামা,ইদুরের খালা,জলহস্তি কোথাকারা

—তারপর?

অভ্রর কথা শুনে রুহানী ভয়ে ঢোক গিলে মাথা তুলতেই তার চোখ চরকগাছ যাকে দেওয়াল ভেবে এতোক্ষন এতো সুন্দর সুন্দর উপমা দিচ্ছিলো সে যে অভ্র বুঝতে পেরেই তার বর্তমান অবস্থা
“ছেড়ে দে অভ্র কেদে বাচি” টাইপ

অভ্র রুহানীকে চুপ থাকতে দেখে তার দিকে এক পা এক পা করে এগুতে এগুতে বলে উঠলো

—কি হলো চুপ হয়ে গেলা যে তারপর বলো আর কি কি উপাধী দেওয়া যায় আমাকে।
—উপাধী আরে কিসের উপাধী ওহ হ্যা আপনি ভালো আপনি কত মহান একজন মানুষ আ আপনি আপনি(আমতা আমতা করে)
—হ্যা আমি তারপর??

রুহানী মুখের উপর অভ্রর নিশ্বাস পড়তেই রুহানীর তালগোল পেকে যেতে শুরু করলো।।

চলবে?