Friday, July 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 206



এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৯

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৯

অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিতা আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনীর দিকে। আর বাকিরা নিরাশ হয়ে এগিয়ে আসলো। আশরাফ বললো,
“কক্সবাজার যেতে তোর আবার কারণ লাগবে?”

আদ্রিতা বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বললো,“তাহলে আবার কি! কারণ ছাড়া কেন যাবো?”

মৃদুলের ইচ্ছে করছে আদ্রিতার গালে ঠাস করে একটা চড় বসাতে এই মেয়েটা বরাবরই কোথাও যাওয়ার কথা শুনলেই নাক মুখ কুঁচকায়। মৃদুল নিজেকে দমালো যথেষ্ট শান্ত স্বরে আদ্রিতার সোজাসুজি চেয়ারে বসে বললো,“দোস্ত ঘুরতে যামু। ঘুরতে। সমুদ্র বিলাসে খালি চিল হবে।”

আদ্রিতা নাক মুখ কুঁচকে বললো,“এত চিল করার কি আছে। সমুদ্রে দেখার মতো কি আছে খালি পানি আর পানি।”

আদ্রিতার কথা শুনে রনি বললো,“ওই পানি দেখতেই যাবো সঙ্গে তুইও যাবি।”

আদ্রিতা বললো,“আমার কাজ আছে। আমি যাবো না। তোরা যা?”

মৃদুল আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। সে আচমকাই আদ্রিতাকে ধমক দিয়ে বললো,
“ওই ছ্যামড়ি তোর কাজের কেতায় আগুন। এমন বাইরান বাইরামু যে জামাইর নাম মনে থাকবে না। এত ভাব নেস ক্যা।”
“আরে বাবা এতজন একত্রে যাওয়া যাবে নাকি?”
“খুব যাবে (চাঁদনী)
“সজল স্যারের সাথে কথা হয়েছে।” (মুনমুন)

আদ্রিতা অবাক হয়ে বললো,
“কি বললেন?”
“উনি রাজি হয়েছে তিনদিনের কথা বলেছিলাম কিন্তু দু’দিনের ছুটি দিয়েছে।” (রনি)

আদ্রিতা বেশ চমক খেয়ে বললো,“সত্যি দিয়েছে।”
মৃদুল বললো,“হুম দিয়েছে। আজ রাতের বাসে যাবো দশটার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবি।”

আদ্রিতা বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
“এত দ্রুত।”
“হুম দ্রুত গিয়ে দ্রুত আসবো।” (আশরাফ)

সবার কথার মাঝে মৃদুল আচমকাই টেবিলের উপর মাথা এলিয়ে দিলো। বললো,“উফ্ দোস্তরা কবে যামু লাবনী বিচে? আমি খালি সমুদ্রের মইধ্যে চিত হইয়া ঘুমাইয়া থাকমু।”

মৃদুলের কথা শুনে সবাই হেঁসে ফেললো। চাঁদনী বললো,“তারপর একটা কাউয়া এসে তোর মুখে ইয়ে করে চলে যাবে। বেশ হবে।”

মুহুর্তের মধ্যে মৃদুলের মগজ এলেমেলো হলো। সে ধমকের স্বরে বললো,“এই মাইয়াডার মুখে কোনো ভালো কথা নাই। কাউয়া না বলে বলতি একটা মাইয়া এসে গায়ে পড়বে।”

রনি নাক মুখ কুঁচকে বললো,“ছিঃ দোস্ত এডি তুই কি কস?”

মৃদুল অবাক হয়ে বললো,“এখানে ছিঃর কি আছে?”

সবাই হেঁসে দিলো। মৃদুল কিছুক্ষণ পর বিষয়টা বুঝতেই রনির পেটে একটা ঘুষি মেরে বললো,“শালা নোংরা।”

সবাই হেঁসে ফেললো। আদ্রিতাও হাসলো। তার এই বন্ধুবান্ধবের কান্ড দেখলে সে বরাবরই আনন্দ পায়। বিশেষ করে মৃদুল। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবচেয়ে হাসিখুশি আর মিশুক টাইপের ছেলে। পুরো বন্ধুমহলটা এই ছেলেটাই মাতিয়ে রাখে বেশি।
—–
লাগাতার ফারিশের রুমে নক করছে আদিব কিন্তু ফারিশের কোনো হুস নেই। বেঘোর ঘুমে মগ্ন ফারিশ। সচরাচর ফারিশ দরজা আঁটকে ঘুমায় না কিন্তু কাল রাতে ঘুমিয়েছে। কাল নেশার ডোজটা বেশি হয়ে গেছিল তার। আদিব আবার দরজায় নক করলো। তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। ফারিশের জন্য চিন্তা হচ্ছে। ঘড়িতে দুপুর বারোটা ছাড়িয়ে। এত বেলা অবদি ফারিশ ঘুমায় না। সেই কখন থেকে আদিব ডাকছে তাকে কিন্তু ফারিশের খবর নেই। আদিব আবারও দরজায় নক করলো। বললো,
“ভাই আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন,ফারিশ ভাই!’

এবার ফারিশ নড়েচড়ে উঠলো। আবারও কানে দরজা টাঁকানোর শব্দ কানে ভাসলো। ফারিশ আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো। গড়া খাগাড়ি দিয়ে বললো,“কি হয়েছে আদিব?”

এতক্ষণে ফারিশের কণ্ঠটা কানে আসতেই আদিবের দেহে প্রাণ ফিরে এলো। সে বললো,“ভাই আপনি ঠিক আছেন তো সেই কখন থেকে ডাকছি?”

ফারিশ তার চোখ মুখ ডলতে ডলতে বললো,“আমি ঠিক আছি।”

আদিব ওপাশ থেকেই আবার বললো,“ভাই গাড়ি কি রেডি করবো? কক্সবাজার কি আজ যাবেন?”

ফারিশ চটপট জবাব দিলো,
“হুম রেডি করো। দু’ঘন্টার মধ্যেই আমরা বের হবো।”
“আচ্ছা ভাই।”

আদিব চলে গেল। ফারিশ বিছানা সাতরে মোবাইলটা নিয়ে বললো,“কাজটা কি হয়েছে?”

উত্তরে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটিও বললো,
“জি বস।”
“ঠিক আছে। রাত দশটা কি এগারোটার মধ্যে কক্সবাজার ঢুকবো কাল সকালেই ওর সাথে কথা বলবো। তোমরা ওর গায়ে কোনো হাত দিবে না। আমি আগে কথা বলবো।”
“ঠিক আছে বস।”

ফোন কাটলো ফারিশ। এবার তো সে জেনেই ছাড়বে তার সাথে ষড়যন্ত্র করছেটা কে? ফারিশ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঢুলতে ঢুলতে চলে গেল ওয়াশরুমের দিকে। লম্বা একটা সাওয়ার নিবে তারপর হাল্কা কিছু খেয়ে বেলা দু’টো কি আড়াইটার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। গাছ আর বিশ্বাসঘাতক দুটোর সাথেই কাল সকালে যোগাযোগ করবে ফারিশ।
—-
বিকেলের ফুড়ফুড়ে আলোতে নিজের রুমে ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে আদ্রিতা। সে মাত্রই হসপিটাল থেকে এসেছে। বর্তমানে তার জায়গাটা ডক্তর সুস্মিতা সেন পালন করছেন। উনি একজন সিনিয়র ডক্টর। মূলত এই দু’দিনের ছুটিতে সেই আদ্রিতার দায়িত্ব পালন করবে। মহিলাটি যথেষ্ট ভালো আদ্রিতাকে খুব স্নেহ করেন। আদ্রিতাও পছন্দ করেন ওনায়। আদ্রিতার মা ভিতরে ঢুকলেন। মেয়েকে ব্যাগপত্র গোছাতে দেখে বললো,“কোথাও যাবি?”

আদ্রিতা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“হুম।”
“কোথায়?”
“কক্সবাজার।”
“হঠাৎ কক্সবাজার কেন?”
“একটু ডাক্তারির কাজেই দু’দিনের মধ্যে চলে আসবো।”
“ওহ। কিন্তু আমি যে কাল আরাফাতকে আসতে বলবো ভাবছিলাম?”

আদ্রিতা বেশ অবাক হয়ে বললো,
“আরাফাত কে?”
“ওই যে তোকে বলেছিলাম না তোর মামা তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছে ওর নামই আরাফাত।”
“ওহ আচ্ছা কিন্তু আমার যে সময় হবে না মা। তুমি একটা কাজ করো ছেলেটাকে ফোন করে আর কিছুদিন পর আসতে বললো। আমি কক্সবাজার থেকে ফিরি তারপর।‘

আদ্রিতার মাও নিরাশ হয়ে বললো,“ঠিক আছে। আর কি করার।”

আদ্রিতার মা বেরিয়ে গেলেন। আদ্রিতা সস্থির নিশ্বাস ফেললো। ভাগ্যিস রাফিন বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই তাকে এই বিষয়টা বলেছিল নয়তো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে কথাটা বললে কখনোই তার মা যেতে দিত না। আদ্রিতার ফোনটা বেজে উঠলো। মৃদুল কল করেছে। আদ্রিতা ফোনটা তুললো। বললো,
“বল,
“তুই কি ব্যাগ গোছাতে শুরু করেছিস?”
“হুম।
“ঠিক আছে। আচ্ছা শোন রাত দশটার মধ্যে সায়দাবাদ থাকতে হবে। সাড়ে এগারোটার বাসে যাবো। টিকিট কাটা আছে তোকে তোর বাসা থেকে আমিই নিয়ে আসবো। আমি যাবার আগে বের হবি না।”

আদ্রিতা মৃদু হেঁসে বললো,
“ঠিক আছে।”

আচমকাই মৃদুল উত্তেজিত হয়ে বললো,
“উড়ে দোস্ত সমুদ্র বিলাস করমু।”

আদ্রিতা দাঁত বের করে হেঁসে ফেললো। বললো,
“করিস ছাগল। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে করিস সমুদ্র বিলাস।”
“তা তো করমুই সঙ্গে তোগো নিমু দেখিস।”
“আচ্ছা তা না হয় পরে দেখছি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফোন কাটলো মৃদুল। এর পরপরই গ্রুপ কলে এলো সবাই। চাঁদনী আর মুনমুনের সমস্যা তারা কি পড়ে যাবে তা বুঝতে পারছে না। তাদের নাকি জামা নেই। মৃদুল এদের কথোপকথন শুনে বললো,
“মাইয়া মানুষের এই এক সমস্যা এরা কোথাও যাইতে নিলেই এদের জামা থাকে না।”

মৃদুলের কথা শুনে রনি আর আশরাফও বললো,“ঠিক কইছোস দোস্ত।”

রনি ছোট্ট স্বরে বললো,“চাঁদ, মুন তোরা সত্যি কিছু খুঁজে না পাইলে আমার একটা লুঙ্গি আর ফতুয়া পড়ে চল।”

চাঁদনী আর মুনমুন চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো রনির কথা শুনে। আর বাকিরা উচ্চস্বরে হেঁসে ফেললো।”

কথাটা মতো সায়দাবাদ থেকেই সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার বাসে উঠে পড়লো আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি, চাঁদনী আর আদ্রিতা। মৃদুল আবারও বললো,“উড়ে দোস্ত কক্সবাজার যামু সমুদ্র বিলাসে খালি চিত হইয়া শুইয়া থাকমু। উফ! খালি মজা আর মজা!’

অন্যদিকে ফারিশ সে প্রায় ঘন্টাখানেক আগেই পৌঁছে গেছে কক্সবাজার। মাথায় একটাই ভাবনা তার যড়যন্ত্র কারীকে খোঁজা?” ধরতে পারলে যেখানে পাবে সেখানেই খতম।”

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। ]

#TanjiL_Mim♥️

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৮

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৮

হতভম্ব হয়ে পিছনে তাকালো আদ্রিতা। সামনেই মুখে মাস্ক পড়ে, চুল এলেমেলো করে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে। আদ্রিতা খানিকটা থমকালো। বললো,“কে আপনি?”

ছেলেটি উত্তর দিলো,“কেউ না। তা মাঝরাতে এমন একা একা হেঁটে যাচ্ছেন কোথায়? অসভ্য ছেলে পেলে তুলে নিয়ে গেলে কি করবেন?”

আদ্রিতার রাগ উঠলো। তাও নিজেকে দমালো। বললো,
“আমি মাঝরাতে হাঁটবো না দিনে হাঁটবো আপনার পারমিশন নেয়া লাগবে।”
“তা লাগবে না। কিন্তু সাবধান, অঘটন ঘটতে তো সময় লাগে না।”

কথাটা বলে ছেলেটা এগোলো। আদ্রিতা তড়িৎ তার ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে বললো,“আর এক পা এগোলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।”

ছেলেটি দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,
“বাহ্ সেফটির যন্ত্রটা তো দারুণ।”
“ফাজলামো হচ্ছে আমার সাথে বেশি কথা বললে এক্ষুণি ঢুকিয়ে দিবো ঘাড়ে।”

বলেই যেই না আদ্রিতা এগোতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক পড়া ছেলেটি তার মুখের মাস্ক খুলে থর থর করে বললো,“আপু দাঁড়া আমি সিফাত।”

সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লো আদ্রিতা। এতক্ষণে কণ্ঠটা যেন চেনা চেনা লাগলো। আদ্রিতা তাকালো সিফাতের দিকে। অবাক হয়ে বললো,
“তুই এই সময় এখানে?”

সিফাত হেঁসে ফেললো। বললো,“হুম আমি। চাচাতো ভাইকে তো ভুলেই গেছো।”

আদ্রিতা আচমকা কান ধরে বসলো সিফাতের। সিফাত ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো। বললো,
“আপু লাগছে কিন্তু।”
“মাঝরাতে বড় আপুর সাথে কণ্ঠ পাল্টে ফাজলামো করার আগে মনে ছিল না।”
“ওটা তো একটু মজা ছিল।”
“এটা একটু মজা। আমি যদি ইনজেকশনটা দিয়ে বসতাম তখন।”
“দেও নি তো।”
“দিলে কি হতো জানিস?”
“কি আর হতো জ্ঞান হারিয়ে এখানে পড়ে থাকতাম।”

আদ্রিতা চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো সিফাতের দিকে। সিফাত বললো,
“রাগ করো না আপু। সেই সন্ধ্যায় আসলাম তোমাদের বাসায় জানতাম তুমি থাকবে না। অপেক্ষায় ছিলাম এখনও খাই নি জানো। তোমার অপেক্ষা করতে করতে বেজে গেলো বারোটা তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম তোমার চেম্বারে এসে সারপ্রাইজ দিবো। বাসা দিয়ে বের হলাম একটায় চাচি কিছুতেই আসতে দিতে চায় নি। তাও এসেছি। এসে দেখি তুমি নাই মাথাটাই খারাপ হয়ে গেল। গাড়ি নিয়ে আবার ব্যাক করি এখানে এসে দেখি তুমি একা একা হাঁটছো ব্যস শয়তানে লাড়া দিল। মাস্ক পড়ে, চুল এলেমেলো করে সোজা তোমার পিছনে। কেমন দিলাম ভয় পেয়েছিলে নিশ্চয়ই।”
“ভয় পাই নি। তবে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।”

হাসে সিফাত। ততক্ষণে আদ্রিতা কান ছেড়ে দিয়েছে সিফাতের। সিফাত আর আদ্রিতা হাঁটছে। সিফাত বললো,
“আপু হাঁটছিস কেন আমার কাছে গাড়ি আছে তো। আর তুমিও বা মাঝরাতে এভাবে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছো কেন? তোমার তো গাড়ি আছে গাড়ি কই?”
“আসলে আজ দু’দিন হলো গাড়িটা নষ্ট হয়েছে। ড্রাইভারকে বলেছি সারাতে। কাল চলে আসবে।”
“তাই বলে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাবে।”
“আরে বিষয়টা তা না আমার আবার এই রাতের বেলা জোৎস্না দেখে দেখে বাড়ি ফিরতে দারুণ লাগে। ভেবেছিলাম আর একটু সামনে গিয়ে গাড়ি ধরবো কিন্তু তার আগেই তো তুই,

আদ্রিতার কথার মাঝেই বলে উঠল সিফাত,
“না আপু এটা তুমি ঠিক করো নি। এভাবে একা একা রাতের বেলা চলাফেরা করা ঠিক হয় নি তোমার। যতই হোক তুমি তো মেয়ে আপু, সবই তো জানো।”
“আরে চিন্তা নিচ্ছিস কেন দেখলি না সেফটির জন্য সঙ্গে ইনজেকশন নিয়ে ঘুরি। আরও একটা জিনিস আছে আমার। দেখবি?”

এই বলে ব্যাগ থেকে একটা স্প্রের বোতল বের করলো আদ্রিতা। সিফাতকে দেখিয়ে বললো,“এটা কারো মুখে স্প্রে করলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে।”

আদ্রিতা আর সিফাত উল্টোদিকে হাঁটা দিল। সিফাত বললো,“সবই ঠিক আছে তাও আপু এভাবে একা একা বের হবে না। ধরো তুমি হাঁটছো আচমকা পিছন একটা গাড়ি এসে তোমার সামনে দাঁড়ালো তুমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তোমার মুখে রুমাল চেপে ধরলো। তখন এইসব জিনিস কি তোমার কোনো কাজে আসবে বলো।”

সিফাতের কথায় টনক নড়লো আদ্রিতার। তার মনে পড়লো কাল রাতের ঘটনা ফারিশের তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মুহুর্ত। সত্যিই তো তখনও এসব তার কাছে ছিল। কিন্তু সে কিছু করতে পারে নি। আদ্রিতার ভাবনার মাঝেই সিফাত আবার বললো,“আর কিন্তু এভাবে একা একা হাঁটবে না আপু।”

আদ্রিতা মৃদু হাসলো। সিফাতের গাল চেপে বললো,“ আচ্ছা ছোট ভাই আর হাঁটবো না।”

সিফাত খুশি হলো। অতঃপর আদ্রিতা আর সিফাত উঠে বসলো গাড়িতে। সিফাত গাড়ি স্টার্ট দিলো। আদ্রিতা প্রশ্ন করলো,“তা বাসায় কি তুই একাই এসেছিস নাকি লায়লা’কেও এনেছিস।”

সিফাত গাড়ি চালাতে চালাতে বললো,
“ধুর ওর কথা বাদই দেও আপু লায়লা আপুকে আসতে বলে ছিলাম। সে বলে কি জানো?”
“কি?”
“তার নাকি তোমাদের বাড়িতে আসতে লজ্জা লাগে। রাফিন ভাইয়ের সাথে প্রেম করার সময় লজ্জা পেল না ওদিকে তোমাদের বাড়িতে আসতে নাকি লজ্জা লাগে। ফাউল মাইয়া বুঝলে আপু।”

আদ্রিতা হেঁসে ফেললো। সিফাত ইন্টার শেষ করে কেবল অর্নাসে ভর্তি হয়েছে। রাফিনের চেয়ে দু’বছরের ছোট। তবে আদ্রিতার সাথে খুব মিশুক টাইপ সে। আদ্রিতার হাসির মাঝে সিফাত আবার বললো,“আমি ভেবে পাই না আপু লায়লা আপুর মতো ওমন অলস টাইপ মাইয়াডারে রাফিন ভাই কি দেখে পছন্দ করলো। তুমি দেখে নিও আপু বিয়ের পর রাফিন ভাইয়ার জীবন পুরো তেজ পাতা করে দিবে।”

আদ্রিতার হাসি থামলো না। সে হাসতে হাসতে বললো,
“এভাবে বলিস না দেখবি বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে গেছে।”
“হইলে ভালো না হলে রাফিন ভাইর জীবন গেছে আপু।”

আবারও হাসে আদ্রিতা। এক্ষেত্রে তার কিছু বলার নেই। এটা পুরোপুরিই রাফিনের সিদ্ধান্ত।”
—–
রাত প্রায় তিনটে। নিজের বিছানার পাশের চেয়ারে বসে আছে ফারিশ। হাতে সিগারেট আর পাশের টেবিলের ওপর মদের গ্লাস। তার খুব রাগ লাগছে। বার বার না চাইতেই ওই মেয়েটার সাথে তার দেখা হচ্ছে। আর দেখা হতে দেয়া যাবে না। এক সপ্তাহ পর যে যাওয়ার কথা বলেছে তা সে যাবে না। লাগলে নিজে নিজেই সেলাই কাটবে তাও মেয়েটার কাছে আর যাবে না। রুমের দরজায় নক করলো কেউ। ফারিশ মদের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বললো,
“তুমি এখনো ঘুমাও নি আদিব?”

আদিব দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। ফারিশের সামনে গিয়ে বললো,
“একটা কথা ছিল ভাই খবরটা মাত্রই পেয়েছি।”

ফারিশ সিগারেটের টান দিয়ে ধুঁয়া উড়ালো। আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বিছানায় বসো।”

আদিব বসলো। ফারিশ বললো,
“এখন বলো কিসের খবর?”
“ভাই সেই পালিয়ে যাওয়া নতুন যুক্ত হওয়া ছেলেটার হদিস পেয়েছি ছেলেটা কক্সবাজার আছে। কাল সকালের মধ্যেই ধরে ফেলতে পারবো।”
“খুব ভালো।”

আদিব কিছুটা দোনামনা হয়ে বললো,
“ভাই আর একটা খবর ছিল?”
“কি? বলো।”
“ভাই কক্সবাজারের গাছগুলোর নাকি হঠাৎই পচন ধরছে।”

সঙ্গে সঙ্গে ফারিশের মুখভঙ্গি পাল্টে গেল। সে বললো,
“হঠাৎ এমনটা হচ্ছে কেন?”
“বুঝতে পারছি না ভাই। একবার কি যাবেন কক্সবাজার?”

ফারিশ তিন সেকেন্ডের মতো চুপ থেকে বললো,“হুম যাবো।”

আদিব বললো,
“তবে কি কক্সবাজার গিয়েই নতুন ছেলেটার সাথে কথা বলবেন ভাই নাকি এখানে নিয়ে আসবো।”
“ওখানের গোডাউনে আঁটকে রাখতে বলো আমরাই যাবো।”
“ঠিক আছে ভাই। এখন তাহলে ঘুমান।”
“হুম তুমিও যাও।”
“আচ্ছা।”

আদিব চলে গেল। ফারিশ মদের গ্লাসে চুমুক দিলো। কেউ তো আছে যে চাইছে ফারিশকে মেয়ে পাচারে জড়িত করতে তাকে ফাঁসাতে কিন্তু কে সে? ফারিশ তাকে ছাড়বে না কিছুতেই ছাড়বে না। ফারিশকে মিথ্যে কাজে ফাঁসানোর পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা সে হারে হারে বুঝাবে। ফারিশের সাথে গান্দারির ফলও দেখিয়ে ছাড়বে। ফারিশকে চিনতে ভুল করেছে তারা। ভয়ংকর ভুল! আর ফারিশের কাছে ভুলের একটাই শাস্তি ভয়ংকর মৃত্যু!’
—-
তুমুল উত্তেজিত হয়ে আদ্রিতার কেভিনে ঢুকছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী। সবাইকে একসাথে ঢুকতে দেখে আদ্রিতা হতভম্ব হয়ে বললো,“কি ব্যাপার তোরা একসাথে এভাবে এখানে? কি হয়েছে?”

তখনই মৃদুল উচ্চ স্বরে চেঁচিয়ে বললো,“দোস্ত কক্সবাজার যামু?”

আদ্রিতা তড়িৎ চমকে উঠলো। বললো,“হঠাৎ কক্সবাজার। কেন?”

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]

#TanjiL_Mim♥️.গল্পের

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৭

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৭

“আপনার যদি আমাকে দেখা শেষ হয়ে থাকে তাহলে বলবেন প্লিজ। এভাবে কতক্ষণ আপনায় ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো?”

আচমকাই এক পুরুষালির কণ্ঠে এহেম কথা শুনে চমকে উঠলো চাঁদনী। দ্রুত আদিবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো,“আই এক্সট্রিমলি সরি আমি বুঝতে পারি নি।”

আদিব তিন সেকেন্ড সময় নিয়ে বললো,“ইট’স ওকে। কিন্তু কাল থেকে একটু খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিবেন এভাবে হুটহাট কোনো ছেলের গায়ে গিয়ে পড়লে সে তো আলুভর্তা হয়ে যাবে।”

আদিবের কথা শুনে চোখ মুখের ভাব পাল্টে গেল চাঁদনীর। রাগী রাগী কণ্ঠে বললো,
“আপনি কি আমায় অপমান করছেন?”
“মোটেও না।”
“আপনি তো ভাড়ি পাঁজি মানুষ।”

আদিব হাসে। কেন যেন মেয়েটাকে রাগাতে তার দারুণ লাগছে। প্রথম দেখায় এমনটা করা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত ধরতে পারছে না আদিব। কিন্তু চাঁদনীর চোখ দুটোর দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না আদিব। কিছু একটা চলছে তার মাঝে।”
—–
“আচ্ছা আপনার কি সত্যি ব্যাথা ট্যাথা করছে না? নাকি আমার সাথে ভাব নিচ্ছেন?”

ফারিশ বিরক্ত হলো আদ্রিতার কথা শুনে। সে বিরক্ত নিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাব নেয়াটা ফারিশের পারসোনালিটির সাথে যায় না তাই বাজে না বকে নিজের কাজ করুন।”

আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তুলো দিয়ে ফারিশের পিঠটা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হলো। নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে শান্ত স্বরে বললো,
“একটা কথা ছিল মিস্টার বখাটে?”

ফারিশ চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
“আমি বখাটে নই।”
“আচ্ছা শুনন কাল রাতের আমার ব্যবহারের জন্য আমি খুব দুঃখিত আসলে আমি খুব ঘাবড়ে গিয়ে ভুলভাল বলে ফেলি। আমি সত্যি জানি না কাল রাতে আমার ঠিক কি হয়েছিল আমি খুব অনুতপ্ত।”

ফারিশ হাসে। বলে,
“বাহ্ দারুণ তো। কাল আপনি ভয়ে ভুলভাল বকছিলেন আর ভাবটা এমন নিচ্ছিলেন যেন সাহসের বস্তা নিয়ে ঘুরেন।”
“দেখুন এভাবে বলবেন না আপনায় আমার সত্যি ভয় লাগে আপনি সত্যি মাফিয়া নন তো।”
“আমায় দেখে তা মনে হয়।”
“ঘরে বন্ধুক রাখেন, আবার মানুষ খুন করার হুমকিও দেন তাহলে মনে না হওয়ার কারণ তো দেখি না।”
“আমি কি তা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।”

আদ্রিতা চুপ হয়ে গেল। ফারিশের কথাটা খানিকটা গায়ে লাগলো তার যদিও গায়ে লাগার মতো কথা নয়। একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কেনই বা ফারিশ তার নিজ কাজ বা পেশা সম্পর্কে বলবে।’

নীরবতা চললো দুজনের মাঝে। আদ্রিতা ফারিশের পিঠ সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দিল। বললো,
“এবার উঠতে পারেন। সাতদিন পর আবার আসবেন। সেলাই কাটার জন্য।”

ফারিশ উঠলো আস্তে আস্তে তার শার্টটা গায়ে জড়ালো। বললো,
“না আসলে হবে না।”
আদ্রিতা তার চেয়ারে বসতে বসতে বললো,“আপনি যদি একা একা সেলাই কাটতে পারেন তাহলে আসতে হবে না।”

ফারিশ কিছু বলে না। আদ্রিতা প্রেসক্রিপশনে কিছু ঔষধের নাম লিখতে লিখতে বললো,“নিজের যত্ন নিবেন। যে ঔষধগুলোর নাম লিখছি তা রেগুলার ব্যবহার করবেন। নিজের প্রতি যত্নশীল হবেন। আপনায় দেখে মনে হয় না আপনি নিজের একটুও যত্ন করেন।”

ফারিশ আদ্রিতার সামনের চেয়ারে বসলো। মৃদু হেসে বললো,
“নিজের যত্ন নেই আমি।”
“কিন্তু আপনায় দেখে তা মনে হয় না। আপনার প্রিয় মানুষদের বলবেন আপনার যত্ন নিতে।”

ফারিশ কিছু বলে না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে আচমকা একটা প্রশ্ন করে বসে আদ্রিতাকে। সে বলে,
“আমাকে কি ভালোবাসা যায় ডাক্তার ম্যাডাম?”

আদ্রিতা তড়িৎ চমকে উঠলো ফারিশের এহেম প্রশ্নে। সে থতমত খেয়ে বললো,
“কেনো যাবে না?”
“না আমার কেন যেন মনে হয় আমাকে ভালোবাসা যায় না।”
“এমনটা মনে হওয়ার কারণ।”
“কারণ জানা নেই শুধু মনে হয় আমাকে ভালোবাসা যায় না।”
“পৃথিবীর সব মানুষকেই ভালোবাসা যায় শুধু সেই মানুষটাকে ভালোবাসার মর্মতা বুঝতে হয়।”
“ভালোবাসা নিয়ে আপনার মনে হয় অনেক জ্ঞান আছে।”

আদ্রিতা হাসে। বলে,“না তেমন কোনো ব্যাপার নেই।”

ফারিশ উঠে দাঁড়ায়। কেমন একটু করে যেন বলে,
“আমার সামনে আর আসবেন না। আপনাকে কেন যেন আমার ভালো লাগে না।”

আদ্রিতা আবার থমকে যায়৷ এই ছেলেটা বার বার তাকে সামনে যেতে বারণ করে অথচ সে নিজেই গত তিনদিন যাবৎ তার কাছে আসছে। তাকে তুলেও নিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত! আদ্রিতার কড়া কণ্ঠে বলতে ইচ্ছে করলো,“শুনুন মিস্টার বখাটে আমি একবারও আপনার কাছে যায় নি উল্টো আপনি নিয়ে গেছিলেন।”

কিন্তু কথাটা আর বলা হলো না। আদ্রিতার খারাপ লাগলো ফারিশের শেষ কথাটার জন্য। সে কি সত্যি ভালো লাগার মতো একজন মানুষ নয়। অনেকেই তো বলে, তাকে তাদের ভালো লাগে। কত পেশেন্ট আদ্রিতার অপেক্ষায় থাকে। তার সাথে কথা বলতে চায়। অথচ এই ছেলেটা বললো তাকে ভালো লাগে না। কি এমন করলো সে ফারিশের সাথে যে তাকে খারাপ লাগছে ফারিশের কাছে। তার মতে ফারিশের তাকে ভালো খারাপ কোনোটাই লাগা উচিত না। তাহলে কেন বললো ভালো লাগে না?” আদ্রিতা ঠায় বসে রইলো। গভীর ভাবনায় মগ্ন।

আদ্রিতার রুমের দরজাটা খুলতেই ফারিশ দেখলো আদিব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া করছে। মেয়েটা বলছে,
“শুনুন মিস্টার খবিশ আমি মটেও মোটা নই আপনার গায়ে শক্তি নেই তা বলতে পারেন না।”
“হা কত যে মোটা নন তা তো দেখতেই পাচ্ছি আর দশ মিনিট অভাবে থাকলে আমি তো নাই হয়ে যেতাম।”

চাঁদনী রাগে ফুসলো ছেলেটা পদে পদে তাকে অপমান করছে। চাঁদনী জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো,“আমার মতো ছিলিম বডি ফিগারের মেয়েটাকে ধরতেই আপনার হাওয়া বেরিয়ে গেল। আপনি জানেন পুরুষ মানুষদের গায়ে কত শক্তি থাকে। তারা চাইলে আমার মতো দু’চারটে মেয়েকে তুড়ি মেরে কোলে তুলে নিতে পারে আর সেখানে আপনি সামান্য আমাকে ধরতেই এত কথা বলছেন। আপনাকে পুরুষ বলতেও লজ্জ লাগছে।”

এবার আদিবের রাগ উঠলো। তার পুরুষত্ব নিয়ে কথা বলছে মেয়েটা। আদিব কিছু বলবে তখনই ভাড়ি কণ্ঠে বললো ফারিশ,“আদিব।”

আদিব চমকে উঠলো। মুহুর্তের মধ্যে সে পাল্টে গেল। সে প্রায় ভুলতেই বসে ছিল এখানে সে কেন এসেছে। আদিব দ্রুত এগিয়ে আসলো। থরথর করে বললো,“আপনার হয়ে গেছে ভাই?”

ফারিশ মাথা নাড়িয়ে বললো,“হ্যাঁ চলো।”

এমন সময় দরজার কাছে আসলো আদ্রিতা। কারণ ফারিশ প্রেসক্রিপশন না নিয়েই চলে যাচ্ছিল। আদ্রিতা বললো,“আপনি প্রেসক্রিপশন না নিয়েই চলে যাচ্ছেন কেন?”

ফারিশ বিরক্ত নিয়ে পিছন ঘুরলো। মেয়েটাকে একদমই তার সহ্য হচ্ছে না। ফারিশ একবার আদ্রিতার মুখ আর একবার আদ্রিতার হাতে থাকা প্রেসক্রিপশনটা দেখে আদিবকে বললো,“নিয়ে আসো দ্রুত।”

ফারিশ বড় বড় পা ফেলে চলে গেল। আদিব আদ্রিতার রোগী দেখার ফি দিয়ে আর প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে চলে গেল। চাঁদনী থ মেরে দাঁড়িয়ে ছিল সামনে। ফারিশকে কে সে দেখেছে। অবাক হয়েছে প্রচুর এই ছেলে এখানে কি করছিল?”

আদ্রিতা তাকালো চাঁদনীর দিকে। বললো,“তুই ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিল এদিকে আয়।”

চাঁদনী ঢুকলো। বললো,
“তোকে নিতে আসছিলাম কিন্তু ওই ছেলেটা এখানে কেন?”
“আহত ছিল চিকিৎসা করলাম।”

উত্তরে এতটুকু বললো চাঁদনী, “ওহ।”
—-
হসপিটাল থেকে বের হতেই একটা এম্বুলেন্সের সাথে সাক্ষাৎ হলো ফারিশ আর আদিবের। তাদের পাশ কাটিয়েই চলে গেল এম্বুলেন্সটি।

মৃদুলের ডাক পড়লো। একটা মৃত মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে হসপিটাল। জঙ্গলের মধ্যে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেছে তাকে। এমনিতেই আজকের আড্ডায় আদ্রিতা না আসায় খুব একটা জমে নি তার ওপর চাঁদনী আদ্রিতাকে ডাকতে গিয়েও লাপাত্তা। মৃদুল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো,“আজকের আড্ডা তবে এই পর্যন্তই কাল আবার দেখা হবে।”

বাকি সবাইও হাসলো। রনি বললো, “হুম যা এখন। মাইয়া মানুষের মৃত্যুর খবরাখবর নে।”

মৃদুল আফসোসের স্বরে বললো,“হ আমার জীবনে খালি মরা মাইয়াই আছে জেতা মাইয়া একটাও আইলো না।”

আশরাফ বলে,“আসবে আসবে অপেক্ষা কর।”
মৃদুল যেতে বললো,“হ আসতে আসতে আমিই না বুড়া হইয়া যাই। গেলাম।”

বলতে বলতে চলে গেল মৃদুল। এরপর একে একে সবাই বের হলো। আদ্রিতা আর আসলো না। সবাইকে মেসেজে সরি বললো আসতে না পারার জন্য। তারাও কিছু মনে করলো না। যতই হোক মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজটা আগে বাকি সব পড়ে।”
—-
রাত প্রায় দু’টো। নিরিবিলি রাস্তায় একা একা হাঁটছে আদ্রিতা। আজ তার কিছু ভালো লাগছে না। এই মুহূর্তে ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই। তবুও আদ্রিতা বুঝচ্ছে তার কিছু ভালো লাগছে না। পুরো রাস্তাঘাট নীরব কেউ নেই আশেপাশে। আদ্রিতা হাঁটছে একটা ব্রিজের ওপর দিয়ে। হঠাৎই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল,“হেই সুন্দরী কোথায় যাচ্ছো একা একা?”

#চলবে….

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৬

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৬

ভোরের ফুড়ফড়ে আলো ফুটেছে ধরণী জুড়ে। আদ্রিতা কিছু ভাবছে, ঘুমের ঘোরে কাল রাতের কথা মনে পড়ছে। কাল রাতে তার আচরণ কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। সে যেমনটা নয় তেমনটা আচরণ করেছিল ফারিশের সাথে। কোথাও গিয়ে একটা গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েদের মতো সে আচরণ করেছে। আদ্রিতা চোখ খুলে চাইলো তার মনে পড়লো সে ফারিশের সাথে কাল রাতে যে ব্যবহার করছে সেটা বেশিই আবেগ এবং ন্যাকামো টাইম। যেটা সে মোটেও নয়। ফারিশ কি তাকে বাজে মেয়ে ভাবলো! ভাবতেই পারে কাল রাতে মদ’টদ খেয়ে ফেলেছিল নাকি আদ্রিতা, নাকি ঘাবড়ে গিয়ে উল্টো পাল্টা বলেছে, নাকি অত্যাধিক সাহসী দেখাতে গিয়েছিল। আদ্রিতা চরম বিরক্ত নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো তার মাথা ঘুরছে। দু’দিন যাবৎ তার সাথে সব উল্টো পাল্টা ঘটছে। কাল রাতে আদ্রিতার কিছু হয়েছিল কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে ফারিশের ওপর তার অধিকার আছে। অথচ এমনটা মনে হওয়ার আধও কোনো কারণ নেই। আদ্রিতা অবাক হয়ে বললো,“কাল আমার হয়েছিল কি?” এই ফারিশ নামক ছেলেটার ধারে কাছেও আর ঘেঁষবে না আদ্রিতা। ছেলেটার আচরণ অদ্ভুত টাইপ। বাড়িতে রিভলবার নিয়ে থাকে। আদ্রিতার টনক ছেলেটা সত্যি মাফিয়া ছিল না তো, কিন্তু পুলিশ তো বললো একজন ব্যবসায়ী। না আদ্রিতা আর ভাবতে পারছে না।

দরজায় কলিং বেল বাজলো। আদ্রিতা দ্রুত বিছানা ছেড়ে নামলো। বাবা মা আর ভাইটা বুঝি এলো। আদ্রিতা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল্লো সত্যি তার বাবা মা আর ভাই এসেছে। আদ্রিতা সব ভুলে মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বললো,“কেমন আছো তোমরা?”

মেয়ের হাসি দেখে তিন’জনেই মুগ্ধ হলো
বললল,“ভালো আছি তুই?”

“আমিও ভালো” বলতে বলতে বাবার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে ভিতরে যেতে যেতে বললো আদ্রিতা,“তোমাদের তো কাল বিকেলে আসার কথা ছিল এলে না কেন?”

আদ্রিতার মা ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় বসলেন। গায়ের বোরকা খুলে বললেন,
“আর বলিস না তোর মামা আসতেই দিতে চায় নি। তুই যাস নি বলে রাগ করেছে।”

আদ্রিতা তাকালো অন্য সোফায় বসে থাকা তার অনার্স পড়ুয়া ছোট ভাই রাফিনের দিকে। মাথায় একটা টোকা মেরে বললো,
“কিরে এসে থেকে তো কথাই বলছিস না ব্যাপার কি তোর?”
“আর বলো না আপু লায়লা আমার সাথে দু’দিন যাবৎ কথা বলছে না।”

হোঁচট খেলো আদ্রিতা। হাসতে হাসতে বললো,
“কেন বলছে না?”
“জানি না।”

হাসলো আদ্রিতা। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,“টেনশন নিস না বলবে নে।”

রাফিন কিছু বলে না। লায়লা রাফিনের চাচার মেয়ে দুজনেই সেইম ইয়ারে আছে। তারা রিলেশনে আছে বাড়ির সবাই এটা জানে। তাদের কোনো আপত্তি নেই বিয়েতে। ভাবা হয়েছে এদের পড়াশোনা শেষ হলেই এদের বিয়ে দেয়া হবে।”

আদ্রিতা রান্নাঘরে এগিয়ে গেল। চুলায় চা বসিয়ে বাবা আর মাকে পানি দিল। পানি খেয়েই আদ্রিতার মা বলে উঠলেন,“তোর মামা তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তোর কি মত?”

আদ্রিতা কিছু বলে না। অনেকক্ষণ চুপ থাকে। আদ্রিতার মা বলে,
“কি হলো তুই কথা বলছিস না কেন?”
“কবে দেখা করতে হবে?”

আদ্রিতার মা খুশি হলেন। বললেন,“শীঘ্রই।”

আদ্রিতা আর কিছু না বলে চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। এই মুহূর্তে মাকে বিয়েতে না করার মতো কোনো অজুহাত নেই আদ্রিতার। ডাক্তার হওয়ার আগে অনেক কারণ ছিল এখন আর নেই। বিয়েটা এবার করতেই হয়। এই এখন যদি আদ্রিতা বিয়েতে না করতো মায়ের সাথে ঝগড়া হতো। যা আদ্রিতার এই মুহূর্তে পছন্দ হচ্ছে না। দীর্ঘশ্বাস ফেললো। জীবনটা পুরো ডাক্তার হওয়া আর পড়াশোনা করতে করতেই চলে গেল। আদ্রিতা মনে মনে লাভ ম্যারেঞ্জ করবে এমন পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মনের মতো পুরুষ এখনো পায় নি। হয়তো তার ভাগ্যে পারিবারিক ভাবে বিয়েই লেখা আছে।’
——
বিকেল ৫ টা! হসপিটালের ক্যান্টিনে গোল হয়ে বসে আছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী। আদ্রিতা এখনও আসে নি। বিকেলের এই সময়টায় প্রায় একসাথে কাটায় তারা। মাঝে মধ্যে একটু সিরিয়াস কন্ডিশন হলে হয় না। আর সপ্তাহের শুক্রবারটা হসপিটালের বাহিরে কাটে। তবে ঢাকার বাহিরে যাওয়া হয় না। নিরবতা কাটিয়ে মৃদুল বলে উঠল,
“দোস্তরা জীবনের অর্ধেক সময় তো ডাক্তারি আর পড়াশুনা করেই কাটিয়ে দিলাম এবার আমাদের উচিত এক এক করে বিয়ে করা। আর দুটো করে মুরগীর রোস্ট খাওয়া।”

চাঁদনী তেতে উঠলো। বললো,
“তোর তো সারাদিন খালি খাওন আর খাওন। তোর আসলে খাবারের ডাক্তার হওয়ার উচিত ছিল ফরেনসিক ডক্টর হতে কে বলেছিল।”
“তোর আব্বায়?”

চাঁদনী রেগে গেল। বললো,
“একদম বাপ তুলে কথা বলবি না মৃদুল।”
“বাপ তুলে কি বললাম?”
“আমার বাপে বলেছিল তোকে ফরেনসিক ডাক্তার হতে?”
“কইছিল তো। খালি যেদিন কইছিল ওইদিন তুই বাসায় ছিলি না।”

মৃদুলের কথা শুনে হেঁসে ফেলে সবাই। চাঁদনীও না চাইতেই হেঁসে ফেলে এই ছেলে চরম পাঁজী। এবার রনি বললো,“বিয়ের কথা যেহেতু উঠেছে তখন আমার আর মুনমুন দিয়ে শুরু করলে কেমন হয়?”

মুনমুন মুখ খুললো। বললো,“তোকে কে বিয়ে করবে?”

রনি ভাব নিয়ে বললো,“কেন তুই?”
মুনমুন নাক ছিটকে বললো,“ইয়াক থুঁ।”

আশরাফ বললো,“তোদের থুঁ টুঁ শেষ হলে ভালো কথা বলা যায়?”

সবাই দৃষ্টি রাখলো আশরাফের দিকে। বললো,
“কিসের ভালো কথা?”
“না ভাবছি সবাই মিলে তিনদিনের একটা সফরে গেলে কেমন হয়?”

শুরুতে সবাই খুশি হলো। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো, একসাথে এতজনকে ছুটি দিবে।”

মুখ কালো হয়ে গেল সবার। হসপিটালে জয়েন্ট হওয়ার পর তারা কেউই তেমন ছুটি পায় না। যার ফলে বহুদিন হলো তারা একসাথে কোথাও যেতে পারে না। মৃদুল মুখ কালো করে বললো,
“একবার সজল স্যারের সাথে কথা বললে কেমন হয়?”
“স্যার কি মানবেন?” (মুনমুন)
“একবার বলে তো দেখা যায়। আমরা তো এতদিনে একবারও ছুটি নেই নি। ট্রাই একটা করাই যায়।” (রনি)
“সবই বুঝলাম কিন্তু আদু এখনও আসছে না কেন?” (আশরাফ)
“হয়তো কোনো ইমারজেন্সি পড়ে গেছে।” (চাঁদনী)
—–
বিস্মিত নজরে তাকিয়ে আছে আদ্রিতা ফারিশের দিকে। ঘড়িতে পাঁচটা পনের বাজে। আদ্রিতা মাত্রই নিজের কক্ষ থেকে বের হতে নিয়েছিল এরই মাঝে ঝড়ের গতিতে ফারিশ হাজির। পাশেই আদিব দাঁড়ানো। আদ্রিতা নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললো,“আপনারা এখানে?”

আদিব মুখ খুললো। বললো,“ফারিশ ভাইকে একটু দেখবেন আপনি। ওনার পিঠের ক্ষতটা দিয়ে আপনাআপনি রক্ত পড়ছে।”

আদ্রিতা দ্রুত এগিয়ে গেল। তাকে উত্তেজিত দেখালো। ফারিশ ঠায় দাঁড়িয়ে। সে আসতে চায় নি আদিব একপ্রকার জোর করেই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। কতক্ষণ আগে আদিব আর ফারিশ কোথাও একটা যাচ্ছিল। ফারিশের পড়নে নেভি ব্লু কালার চেক শার্ট আর কালো জিন্স। গাড়িতে বসেই ফারিশ বলছিল,“আদিব সে হারামিটা পালিয়েছে তার কি কোনো খবর পাওয়া গেছে?”

আদিব গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললো,
“না ভাই। তবে চিন্তা করবেন না খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবো।”
“আচ্ছা আদিব তোমার কি মনে হয় গাড়িতে মেয়ে রাখার বিষয়টায় শুধু কি পালিয়ে যাওয়া ছেলেটারই হাত আছে নাকি তার পাশাপাশি অন্য কারোও হাত আছে।”

আদিব কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
“আমার তো মনে এর পিছনে অন্য কারোও হাত আছে।”
“আমারও তাই মনে হয়।”

হঠাৎই আদিব খেয়াল করে ফারিশের শার্ট বেয়ে রক্ত পড়ছে সঙ্গে সঙ্গে সে গাড়ি থামালো আতঙ্কিত স্বরে বললো,“ভাই আপনার পিঠ।”

ফারিশ হাত দিলো। রক্ত দেখেও বললো,“কিছু হবে না তুমি গাড়ি চালাও।”

কিন্তু আদিব শোনে না একটু জোর করেই নিয়ে আসে ফারিশকে হসপিটাল।”

“কি করে হলো?”
হঠাৎই আদ্রিতার কণ্ঠ শুনে ভাবনায় ছেদ পড়লো ফারিশের। সে সরাসরি তাকালো আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতাও তাকালো। চোখাচোখি হলো দুজনের। আদিব বললো,“আপনাআপনি ঘটেছে গাড়ি করে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখি পিঠ বেয়ে রক্ত ঝড়ছে।”

আদ্রিতা খানিকটা রাগান্বিত কণ্ঠে বললো,“ঝড়বেই তো ওনায় বলেছিলাম ক্ষতটা গভীর সেলাই করতে হবে কিন্তু উনি শোনে নি হন হন করে ভাব নিয়ে চলে গেছিল।”

আদিব কিছু বলে না। ফারিশ বলে,
“আমি এখানে আসতে চাই নি নেহাত আদিব নিয়ে এসেছে তাই এসেছি।”
“তা আসবেন কেন ডাক্তারদের কাছে আসতে তো আপনার মেইবি এলার্জি আছে।”

ফারিশ কিছু বলে না চুপ থাকে। এই মেয়েটার সাথে কথা বলতেই তার বিরক্ত লাগে। অবশ্য শুধু আদ্রিতা না পুরো মেয়েজাতির সাথেই কথা বলতেই বিরক্ত লাগে ফারিশের।”

আদ্রিতা একটা বেড দেখিয়ে বললো,“ওখানে শুয়ে পড়ুন?”

ফারিশ শুতে চাইলো না কিন্তু আদিব শোয়ালো। ফারিশের শার্ট খোলা হয়েছে। আদ্রিতা হাতে গ্লাভস পড়ে। পুরো জায়গাটা দেখলো দু’দিনে একটুও সারে নি উল্টো আরো ঘা হয়ে গেছে। আদ্রিতা বুঝে না এই ছেলের ব্যাথা ট্যাথা কিছু করে না নাকি। না হলে এমন আহত হয়ে কি করে স্বাভাবিক থাকতে পারে। আদ্রিতা হাতে ইনজেকশন নিলো। তা দেখেই আদিব ঘাবড়ে গেল। বললো,“আমি বাহিরে আছি আপনি প্লিজ ওনায় পুরোপুরি চিকিৎসা না করে বাহিরে যেতে দিবেন না। আমি এসব দেখতে পারি না। আমি দরজার কাছেই আছি। ভাই আপনি কিন্তু পুরোপুরি চিকিৎসা না করে বের হবেন না।”

কথাগুলো থরথর করে বলেই বেরিয়ে গেল আদিব। ফারিশ হেঁসে বললো,“ছেলেটা এত ভীতু কেন?”

আদ্রিতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আদিবের কান্ড দেখলো। আদিব বের হতেই বললো,
“উনি এমন পালিয়ে গেলেন কেন?”
“আপনি ইনজেকশন নিয়েছেন না ওর ইনজেকশনে ভয় খুব।”
“দেখেই ভয় পেল।”
“হুম।”

আদ্রিতা অবাক হলো। ইনজেকশন দেখেই ভয় পেয়ে গেল। সত্যি সত্যি দিলে তো মনে খবর হয়ে যেত।”
—–
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে চাঁদনী সামনের পুরুষটির দিকে। এভাবে দৌড়ে আদ্রিতাকে ডাকতে এসে তারই কেভিনের সামনে একটা পুরুষের গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে আগে জানলে কখনোই আসতো না। লোকটা কি ভাবলো তাকে?” নিশ্চয়ই নিলজ্জ টাইপ কিছু!’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। ]

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৫

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৫

অন্ধকার রুম। ঘুটঘুটে আঁধারে ভরপুর চারপাশ। মৃদু মৃদু আলোতে শেষ হবে এমন মোমবাতি জ্বলছে। আদ্রিতা নড়েচড়ে উঠলো। তার জ্ঞান ফিরছে। আদ্রিতা পুরোপুরি হুসে আসতেই চমকে উঠলো পুরো। সে কোথায় আছে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ। আদ্রিতা কোনো কক্ষের খাটের ওপর বসে। আদ্রিতা আশেপাশে চাইলো, না কেউ নেই। মৃদু মৃদু আলোতে মোমবাতি জ্বলছে তাও শেষ হবে প্রায়। আদ্রিতা অবাক হলো সে এখানে কি করে এলো। হাতের হাত ঘড়িটা দেখলো কোনোরকম বুঝলো রাত তিনটে দুই বাজে। আদ্রিতা তক্ষৎনাৎ খাট থেকে নামলো। মনে করলো তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। কিছু লোক তার মুখে রুমাল চেপে ধরায় জ্ঞান হারায়। তারপর কিছু মনে নেই। কিন্তু এখানে নিয়ে আসার মানে কি? আদ্রিতা আওয়াজ করলো। আতঙ্কিত স্বরে বললো,“কেউ কি আছেন?”

শব্দ করার দু’সেকেন্ডের মাথাতেই কাঁচের গ্লাস পড়ার শব্দ আসলো। আদ্রিতা ঘাবড়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। বললো,“কে, কে ওখানে?”

মুহুর্তের মধ্যে পুরো রুমে লাইট জ্বালানো হলো। আদ্রিতা বিস্মিত নজরে সামনে তাকালো। তার সামনেই সোফার ওপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে ফারিশ। আদ্রিতা আতঙ্কিত স্বরেই পুনরায় বললো,“আপনি?”

ফারিশ নিরুত্তর। এমনকি সে এখন পর্যন্ত তাকায়ও নি আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা কি করবে বুঝতে পারছে না। সে আবার প্রশ্ন করলো,“আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে?”

ফারিশ এবারও কোনো উত্তর দিলো না। পাশেই টি-টেবিলের ওপর থেকে মদের বড় বোতল থেকে কাঁচের গ্লাসে মদ ঢালতে লাগলো। আদ্রিতার বিরক্ত লাগছে। বিতৃষ্ণায় চারপাশ বুঝি ধেঁয়ে আসছে। চরম বিরক্ত নিয়ে তৃতীয় বারের মতো প্রশ্ন করলো আদ্রিতা,“আপনি কথা কেন বলছেন না? এভাবে বখাটেদের মতো আমাকে তুলে এনে উত্যক্ত করার মানে কি?”

ফারিশ এবার মুখ খুললো সরাসরি আদ্রিতার দিকে না তাকিয়েই বললো,
“বখাটে! দারুণ নাম তো।”

আদ্রিতার ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে ফারিশের গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসাতে। কিন্তু করলো না। নিজেকে সংযোত রেখে বললো,
“এই গভীর রাতে মশকরা করছেন আমার সাথে?”

ফারিশের দৃষ্টি তখনও মদের গ্লাসের দিকে। সে বললো,“আপনার কি এখনো মনে হচ্ছে না আমাকে মনে রেখে আপনি ভুল করেছেন?” আমার নাম নিয়ে পুলিশ স্টেশন গিয়েছেন কাজটা কি ঠিক করেছেন ডাক্তার ম্যাডাম?”

আদ্রিতা দমে গেল। তার মানে ফারিশ জেনে গেছে সে পুলিশ স্টেশন গিয়েছিল। আদ্রিতা চুপ করে রইলো। ফারিশ এবার তাকালো আদ্রিতার মুখশ্রীর দিকে। ভয়ার্ত মুখ, এলেমেলো চুল, ক্লান্ত শরীর। বোঝাই যাচ্ছে অনেক খেটেখুটে বাড়ি ফিরছিল। ফারিশ সোফার ওপর আয়েশ করে বসলো। মদের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বললো,“এবার আপনি কেন কথা বলছেন না?”

আদ্রিতা তাকালো ফারিশের দিকে। অপরাধী স্বরে বললো, “আমি দুঃখিত ওই বিষয়টার জন্য।”

ফারিশ কিছু বলে না। চুপ করে রয়। আদ্রিতা আবার বলে,
“আমি বুঝতে পারি নি আমি খুবই দুঃখিত।”

ফারিশ ফটাৎ করেই বলে উঠল,“আপনাকে আমার মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি বেঁচে থাকলে পরবর্তীতে আমার সমস্যা হবে।”

ফারিশের কথা শুনে তাজ্জব বনে গেল আদ্রিতা। অদ্ভুত স্বরে বলে,
“সমস্যা হবে মানে এখানে সমস্যা হওয়ার কি আছে?”
“কিছু নেই তাও মনে হচ্ছে।”
“আপনার আচরণ আমার কাছে অদ্ভুত লাগছে আপনি সত্যিই মাফিয়া নন তো।”

ফারিশ হাসে। অদ্ভুত দেখতে লাগে সেই হাসি। আদ্রিতা বলে,
“এখানে হাসার কি আছে?”
“সত্যি কি, কিছু নেই?”
“আমি তো দেখছি না।”
“আমি মাফিয়া হলে আপনি কি আমায় ভয় পাবেন?”

আদ্রিতা বিরক্ত নিয়ে বললো,
“দেখুন মিস্টার বখাটে আপনি মাফিয়া হন বা মাফিয়ার দাদা হন তাতে আমার কিছু যায় আসে না আমায় যেতে দিন।”
“যেতে দেয়ার জন্য তো ধরে আনি নি।”

আদ্রিতা কি ঘাবড়ালো মটেও ঘাবড়ালো না উল্টো বললো,
“তো কিসের জন্য ধরে এনেছেন?”
“যদি বলি খু*ন করার জন্য?”
“তো করে ফেলুন।”

ফারিশ অবাক হলো। এই মেয়ে তাকে ভয় কেন পাচ্ছে না। ফারিশ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আদ্রিতা ঠায় দাঁড়িয়ে। ফারিশ আসতে আসতে আদ্রিতার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,
“আমার মতে আপনার আমাকে ভয় পাওয়া উচিত?”
“কিন্তু আমি পাচ্ছি না কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।”

ফারিশের খাপছাড়া লাগছে। কেমন সবটা এলেমেলো। ফারিশ পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করলো। আদ্রিতার কপাল বরাবর রেখে বললো,“আপনি আমায় সাহায্য করেছিলেন সেই খাতিরে আপনায় সাবধান করেছিলাম আমায় মনে রাখবেন না কিন্তু আপনি মনে রেখেছেন। যে ফারিশ কখনো পুলিশ স্টেশনের ধারে কাছে যায় নি সেই ফারিশের নামে আপনি মাফিয়া ট্যাগ বসিয়েছেন। আপনার ওপর চাপা রাগ জন্মেছে আর আমার রাগ জন্মানো মানে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত।”

আদ্রিতা ফারিশের চোখে চোখ রেখেই বললো,“আমি ভুল করেছি মানছি। সরিও বলেছি কিন্তু আপনি নিচ্ছেন না। এখন আমায় মেরে আপনি শান্তি পেলে মেরে ফেলুন। তবে আজ মারবেন না কাল আমাকে চারটে পেশেন্টের অপারেশন করতে হবে দুটো সকালে আর দুটো রাতে। আমাকে মারার আগে তাদের বাঁচাতে দিন।”

ফারিশ কি বলবে বুঝতে পারছে না। এ মেয়ে কি পাগল নাকি অন্য কিছু। নিজে মরতে বসেছে আর অন্যকে বাঁচানোর কথা বলেছে। অবশ্য ডাক্তার। মানুষ বাঁচানোই তো এদের কাজ। ফারিশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,“আপনায় আরেকটা সুযোগ দিতে ইচ্ছে করছে। এটাই লাস্ট ওয়ারিং আমাকে মনে রেখে নিজের বিপদ আর বাড়াবেন না। ভালো থাকুক নিজের মতো। ফারিশ কাউকে ওয়ারিং দেয় না কিন্তু আপনায় দ্বিতীয় বারের মতো দিচ্ছি এর অবহেলা করবেন না।”

ফারিশ কপাল থেকে পিস্তল সরালো। হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আদ্রিতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ফারিশ বের হতেই আদ্রিতা জোরে নিশ্বাস ফেললো ভয়ে তার হৃদপিণ্ড বুঝি বাহিরে বেরিয়ে আসার উপত্রুম ছিল। ফারিশ যখন কপালে পিস্তল ধরেছিল ভেবেছিল এই বুঝি শেষ। কিন্তু না বেঁচে গেল। বার কয়েক আরো জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো আদ্রিতা।”
——
নিচের সোফায় বসে আছে ফারিশ। তার ভীষণ অবাক লাগছে মেয়েটাকে খুন কেন করতে পারলো না। কাউকে খুন করবে ভেবেও খুন করতে পারলো না এই ঘটনা এই প্রথম ঘটলো ফারিশের সাথে। এমনটা তো আগে কখনো হয় নি। তবে আজ কেন এমন হলো? আদ্রিতা যখন অজ্ঞান ছিল তখনই ফারিশ ভেবেছে জ্ঞান ফিরলেই মেরে ফেলবে কিন্তু পারলো না। মেয়েটার চোখের দিকে তাকালেই কেমন যেন লাগে ফারিশের। ফারিশ পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বালালো। মুখে নিয়ে ফুঁ উড়ালো। কেমন যেন লাগছে তার, খুন না করতে পারার অশান্তি হচ্ছে। আদিব এগিয়ে আসলো। বললো,
“ভাই মেয়েটাকে কি খু*ন করেছেন গুলির তো কোনো শব্দ পেলাম না?”

ফারিশ আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“খু*ন করি নি।”

আদিব অবাক হয়ে বললো,
“কেন?”
“জানি না। মেয়েটা আমায় সাহায্য করেছে তাই জন্যই বোধহয় সংকোচ হচ্ছে।”

আদিব কিছু বলে না। বিষয়টা প্রায় অপরিকল্পিত ছিল। আদ্রিতা নিচে নেমে এলো। আটপাঁচ কিছু না ভেবেই বলে উঠল,
“এই যে মিস্টার বখাটে দ্রুত চলুন। আমায় বাসায় পৌঁছে দেবেন।”

আচমকাই মেইলি কণ্ঠটা কানে আসতেই আদিব ফারিশ দুজনেই চমকে উঠলো। আদিবের চোখ তো বেরিয়ে আসার উপক্রম ফারিশ ভাইকে বখাটে বলে ডাকছে মেয়েটার তো দারুণ সাহস। ফারিশ বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়ে বাড়াবাড়ি করছে। আদ্রিতা আর একটু এগিয়ে আসলো। পুনরায় বললো,“আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন মিস্টার বখাটে?”

ফারিশ তার রাগী দৃষ্টি নিয়ে বললো,
“আমি বখাটে নই আমাকে ওই নামে ডাকবেন না।”
“কোন নামে ডাকবো নাকি ডাকবো না সেটা পরের কথা আগে আমায় বাড়ি পৌঁছে দিন।”

ফারিশ আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আদিব মেয়েটাকে পৌঁছে দিয়ে এসো।”

আদিব ঘাবড়ানো স্বরে বললো,“আমি..
ফারিশ তাকালো আদিবের দিকে। বললো,“হুম তুমি।”

এদের মাঝে আদ্রিতা বলে উঠল,
“উনি যাবেন কেন? গেলে আপনি যাবেন। আমায় তুলে কি উনি এনেছেন নাকি আপনি?”
“আপনি বড্ড কথা বলেন শুনতে আমার বিরক্ত লাগে। কথা কম বলে ওর সাথে চলে যান। নয়তো ঘরে বসে থাকুন।”
“ঘরে বসেও থাকবো না, ওনার সাথেও যাবো না। আপনিই নিয়ে যাবেন আমায়?”

ফারিশ এবার রেগে গেল। আচমকা বসা থেকে উঠেই আদ্রিতার গালে হাত উঠাতে গিয়েও থেমে গেল। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,“বেশি কথা বললে যে ওয়ারিং দিয়েছি তাও ফিরিয়ে নিবো তৃতীয় বার যদি আমার ধারে কাছেও আপনায় দেখেছি তবে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। নাউ আউট।”

আদিব মাঝে দাঁড়ালো। থর থর করে বললো,“আমি নিয়ে যাচ্ছি ভাই, আপনি রেগে যাবেন না।”

এই বলে কোনো মতে আদ্রিতাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল আদিব। আর ফারিশ গিয়ে বসলো সোফায়। চরম রাগ উঠছে তার।’
—-
গাড়ি চড়ে বাড়ি যাচ্ছে আদ্রিতা। ফারিশের লাস্ট কথাটা বেশ অদ্ভুত লেগেছে তার। সে কি যেচে পরে ফারিশের সামনে গেছিল নাকি? ফারিশ নিজেই তো তুলে নিয়ে গেল আবার বললো পরে যেন তার ধারে কাছে না দেখে আদ্রিতার বয়েই গেছে ফারিশের ধারে কাছে ঘেঁষতে। আদ্রিতা বির বির করে বললো,
“পাঁজি বখাটে ছেলে একটা। নিজেই ধরে নিয়ে শাসিয়ে কথা শুনিয়ে পাঠিয়ে দিলো। তোর কপালে বউ নাই। অভদ্র ছেলে কোথাকার!’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। ]

#TanjiL_Mim♥️

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৪

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৪
____________
পুলিশ স্টেশনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে তিনটে বাইক। আর থানার ভিতরে ওসির জন্য অপেক্ষা করছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি,চাঁদনী আর আদ্রিতা। তারা শুধু এতটুকু বলেছিল কাল রাতে একজন আগন্তুক তাদের হসপিটালে যায় এবং আদ্রিতার পিঠে ছুরি দিয়ে কিছু মিথ্যে কথা বলতে বলে। তাদের মনে হয় ওই ছেলেটাই মাফিয়া। আদ্রিতা তার চেহারা দেখেছে। নাম বলেছিল ফারিশ মাহমুদ। এরপরই ওসি যেন কোথায় চলে যায় আর খবর নেই। মৃদুল বিরক্ত নিয়ে বললো,
“ওসি গেল কই? ওনার কি এই বিষয়টায় ইন্টারেস্ট নেই। অদ্ভুত তো!’

আদ্রিতা মৃদুলকে ধাতস্থ করতে বললো,“তুই একটু শান্ত হয়ে বস। নিশ্চয়ই কোনো জরুরি কাজের জন্য গেছেন।”

চাঁদনী বেশ বিস্মিত স্বরে বললো,“এই মুহুর্তে মাফিয়ার হদিস জানতে পারা ছাড়া আর কি জরুরি কাজ থাকতে পারে।”

রনি একটু উঠে গিয়ে দেখলো ওসি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। সে বেশ বিরক্ত নিয়ে বললো,“ওসি সাহেব তো কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন।”

সবাই বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়লো। কতক্ষণ পরই ওসি সাহেব হাজির। সে চেয়ার ঠেলে সামনে বসলো। বললো,“এবার বলো তোমরা কি বলতে আসছিলে?”

মৃদুল বিরক্ত হলো প্রচুর। গুজগুজ করে বললো,“হালায় এতক্ষণ পর জানতে আইছে আমরা কেন আইছি। আগেই তো কইলাম হালায় কি শোনে নাই।”

আশরাফ চোখের ইশারায় মৃদুলকে চুপ হতে বলে। মৃদুল চুপ হয়ে যায়। আশরাফ বলতে শুরু করে,“আমরা সেই মাফিয়া নিয়ে কথা বলতে এসেছি স্যার।”

অফিসার তার কান গুঁতিয়ে বলে উঠল,
“কোন মাফিয়া?”

মৃদুলের এবার ইচ্ছে করছে পুলিশের টাকওয়ালা মাথাটা বারি মেরে ফাটিয়ে দিতে। সে নিজেকে সংযোত করলো। শান্ত গলায় বললো,“টিভিতে যে দেশ বিরোধী মাফিয়ার কথা বলা হয়েছিল আমরা সেই মাফিয়া সম্পর্কে বলতে এসেছি।”

অফিসার একটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো,“হুম বলো কি বলার আছে তোমাদের?”

পুলিশের এই গা ছাড়া ভাবটা কেউ নিতে পারছে না। মনে হচ্ছে পুলিশ তাদের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হচ্ছেন। কোনো মজা পাচ্ছেন না। অথচ তারা কতটা সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।”

আদ্রিতা সবাইকে সামলে বললো, “স্যার কাল রাতে একটা ছেলে আমার চেম্বারে ঢুকে, তার কতক্ষণ পর কিছু মানুষ আসে আমায় জিজ্ঞেস করে এখানে কেউ এসেছিল কি না। কিন্তু আগন্তুক আমার পিঠে ছুরি ধরে রাখায় আমায় মিথ্যে বলতে হয়। ছেলেটির নাম খুব সম্ভবত ফারিশ মাহমুদ। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা, চোখের পাশে একটা কাটা দাগ আছে।”

পুলিশটি আদ্রিতাকে থামিয়ে দিলেন নিজের ফোনটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে। মিনিট দুই যেতেই পুলিশটি একটা লোকের ছবি দেখিয়ে বললো,“আপনি কি এনার কথা বলছেন?”

আদ্রিতাসহ প্রায় সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো মোবাইলে থাকা ছেলেটির ছবির দিকে। আদ্রিতা বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে। বাকি সবার দৃষ্টি ততক্ষণে ছবি থেকে সরে আদ্রিতার দিকে নিবদ্ধ হলো। পুলিশটি আবার বললো,“কি হলো কথা বলছেন না কেন আপনি এই ছেলের কথা বলছেন তো ফারিশ মাহমুদ।”

আদ্রিতা নিরুত্তর। চাঁদনী আদ্রিতার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,“কি হলো আদু কথা বলছিস না কেন উনিই কি ফারিশ মাহমুদ। কাল রাতে এই ছেলেই কি তোর পিঠে ছুরি ধরে ছিল?”

আদ্রিতা এবার মুখ খুললো মাথা নাড়িয়ে বললো, “হুম উনিই।”

মুহুর্তের মধ্যে সবার মনোভাব পাল্টে গেল। বিস্মিত হলো সবাই। আদ্রিতার কথা শুনেই ওসি সাহেব তার মোবাইল সরিয়ে ফেললেন। বললেন,“উনি একজন নামকরা ঔষধ কোম্পানির মালিক। শত শত মানুষের চিকিৎসার কাজে ওনার কোম্পানির তৈরিকৃত ঔষধ মানুষের সেবা করে আসছে। আর আপনি কি না তাকে দেশ বিরোধী মাফিয়া বলে দাবি করছেন। আপনারা তো ডক্টর অথচ ফারিশ মাহমুদকে চেনেন না। অবশ্য উনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই তেমন। তবুও নামটা তো জানা উচিত ছিল।”

পুলিশের কথা শুনে তাজ্জব বনে গেল সবাই। দারুণভাবে লজ্জায় পড়লো তারা। পুলিশ খানিকটা হাসলেন। বললেন,“ইট’স ওকে। মাঝে মধ্যে ভুল হয়। আসলে কাল ওনার উপর এটাক হয়েছিল আপনাদের হসপিটালেই গিয়েছিল মেইবি।”

আদ্রিতা কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। লজ্জিত স্বরে বললো,“আমাদের ক্ষমা করবেন স্যার আমরা ভুল বুঝে এখানে এসেছিলাম।”

পুলিশটিও মেনে নিলেন। বললেন,“ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না। এখন আপনারা বাড়ি যেতে পারেন নাকি আরো কিছু বলবেন।”

আশরাফ বললো,
“নো স্যার আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। এভাবে আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য।”
“কোনো ব্যাপার না কিন্তু আপনারা ফারিশ মাহমুদকে চিনেন না এটা জেনে আমি খুব বিস্মিত হয়েছি।”

আর কেউ কিছু বললো না তারা। একে একে বেরিয়ে গেল পুলিশ স্টেশন থেকে। ওরা যেতেই ওসি সাহেব জোরে নিশ্বাস ফেললেন। একটা ফোন করে বললেন,“ওনারা চলে গেছেন স্যার।”

অপরপ্রান্তের মানুষটি কি বললো তা শোনা গেল না। কিন্তু ওসি সাহেব বললেন,“ভালো থাকবেন।”

ফোন কাটলো ওসি সাহেব।”

পুলিশ স্টেশনের বাহিরে বেশ বিভ্রান্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি,চাঁদনী আর আদ্রিতা। সবার চোখে মুখেই বেশ বিভ্রান্তের ছোঁয়া। সবার বিভ্রান্তের মাঝেই মুনমুন বলে উঠল,
“দেখলি তো বলেছিলাম ছেলেটা মাফিয়া হবে না।”

মুনমুনের কথা শুনে আশরাফ বললো,“কিন্তু আমার কেন যেন এখনো খটকা লাগছে।”

চাঁদনী বললো,“খটকা লাগার কি আছে বাড়ি চল ডিউটিতে কি আজ যাওয়ার তোদের কোনো প্ল্যান নেই নাকি।”

সবার টনক নড়লো। দ্রুত আশরাফ, রনি আর মৃদুল তাদের বাইকে চড়ে বসলো। তারপর রনির বাইকে মুনমুন, আশরাফের বাইকে আদ্রিতা আর মৃদুলের বাইকে চাঁদনী বসে চললো ছয়জন তাদের গন্তব্যের দিকে। হুদাই টাইম নষ্ট।”

তারা বের হতেই একটা পুলিশের গাড়ি ভিতরে ঢুকলো। ওরা পুলিশদের তেমন খেয়াল না করলেও পুলিশগুলো তাদের খেয়াল করলো। একজন মহিলা পুলিশ বললো,“কালকের ডাক্তারটা এখানে কি করতে আসলো?”

আদ্রিতা বেশ চিন্তিতভাবে বসে রইলো বাইকে। তার বেশ খারাপ লাগছে। অপরিচিত এক ছেলের নামের এমন মাফিয়া ট্যাগ দেয়াটা কি ঠিক হলো? আদ্রিতার কিছু মনে পড়লো। কাল যাওয়ার পথে ফারিশ তাকে বলেছিল, আপনি আমায় মনে রাইখেন না। কিন্তু আদ্রিতা রেখেছে উত্তেজনার বসে পুলিশ স্টেশন এসে তার নামে মিথ্যাচার করে বসলো। কাজটা ঠিক হয় নি একদমই ঠিক হয় নি। লোকটা জানলে নিশ্চয়ই রেগে যেত। আদ্রিতা জোরে নিশ্বাস ফেললো। গিল্টি ফিল হচ্ছে তার।”

আশরাফ আদ্রিতাকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে “বাই” বলে চলে গেল। আদ্রিতাও “বাই” বলে আনমনে হেঁটে বাড়ির ভিতর ঢুকলো। গোসল করে তাকে হসপিটাল যেতে হবে আজ তাকে দুটো অপারেশন করতে হবে। আদ্রিতা নিজেকে ধাতস্থ করলো। কাল রাত থেকে সবকিছু কেমন যেন উলোট পালোট হচ্ছে।’
—-
নিজের রুমে একহাতে সিগারেট অন্যহাতে মদের গ্লাস নিয়ে নড়াচড়া করছে ফারিশ। সামনেই আদিব দাঁড়ানো। সে বললো,
“ভাই আজ রাতে কি মালগুলো বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিবো।”

ফারিশ দু’মিনিট চুপ থেকে সিগারেটে টান দিলো। মুখ দিয়ে ফুঁ উড়িয়ে বললো,“না আগামী একসপ্তাহ কোনো মাল বিদেশ কেন, দেশেও দেয়া হবে না।”

আদিব বেশি না ভেবেই বললো,
“আচ্ছা ভাই।”
“হুম। ঔষধ বিক্রি কেমন হচ্ছে?”
“ভালো।”
“গাছগুলোর সেবাযত্ন ভালোভাবে হচ্ছে তো?”
“জি ভাই। আপনি কি কাল একবার যাবেন?”
“কাল নয় দু’চারদিন পর যাবো। কাজে গাফলতি যেন না হয় আদিব।”
“হবে না কিন্তু একসপ্তাহে মাল না দিলে ব্যবসায়ীরা রেগে যাবে না ভাই?”
“যেসব তুমি ভেবো না। বিদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে আমি নিজে কাল কথা বলবো।”
“ঠিক আছে। তবে ভাই কাশ্মীরের ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি করছে। কালকে মাল না পাওয়ায় বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যে মাল না পাঠালে খারাপ হয়ে যাবে নাকি।”

ফারিশ হাসে। মগের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে,
“ওদের দু’সপ্তাহের আগে কোনো মাল পাঠাবে না।”

আদিব তাজ্জব বনে গেল। বললো,
“কিন্তু ভাই,
“কোনো কিন্তু নেই। যা বলেছি তাই বেশি কথা উঠলে আমি নিজে দেখবো এটা।”
“ঠিক আছে।”
“হুম।”

আদিব বেরিয়ে গেল। ফারিশ ঠায় বসে রইলো। পিঠের যন্ত্রণাটা আবার বেড়েছে। কিন্তু ফারিশ তা উপেক্ষা করলো ভাবলো কাল রাতে তার সাথে ঠিক কি ঘটেছিল?”

কাল রাতে কিছু মাল নিয়ে ট্রাকে করে ফারিশ কোথাও যাচ্ছিল। গন্তব্যে কোনো রিস্ক না নেয়ার জন্য সে নিজেই মাল নিয়ে যায়। ফারিশ বরাবরই কোথাও বের হলে মুখে মাস্ক পড়ে থাকে। কাল রাতেও ছিল। আচমকা কিছু লোক তার কাছে আসে। ফারিশ এতে অবাক হয় নি। কারণ এগুলো বরাবরই হয়। সে টোটালি পুরো বিষয়টাকে ইগনোর করে চলে গেল। এরপরই কোথা থেকে যেন হাজির হলো পুলিশের গাড়ি। ফারিশ বিরাট চমকায় এতে তার জানা মতে এখানে এই মুহূর্তে পুলিশ থাকার কথা না। ফারিশ দ্রুত উল্টোদিকে ছুট লাগায় ধরা পড়লে চলবে না। সে গাড়ি ছুটে বহুদূর। পুলিশগুলো সিভিল ড্রেসে আসে। অনেকদূর যাওয়ার পর হঠাৎ ফারিশের গাড়ি থেমে যায় কারণ গাড়ির তেল শেষ। ফারিশ বুঝেছিল তাকে ট্রাপে ফেলা হয়েছে। ফারিশ গাড়ি থেকে নামে হঠাৎ ট্রাকের ভিতর কিসের যেন আওয়াজ আসে। মানুষের মতো। ফারিশ অবাক হয় কারন ট্রাকে মানুষ বলতে সে হীনা অন্য কেউ ছিল না। ফারিশ কৌতুহলী ট্রাকের দরজা খোলে তখনই দেখে ট্রাকে মালের পাশাপাশি কতগুলো মেয়ে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসা। সে চরমভাবে চমকায় এতে ঠিক সেই মুুহুর্তেই পিছন থেকে কেউ তার পিঠে ছুরির পোঁচ বসায়। ফারিশ শুধু তার হাতের ব্যাচটাই দেখে। এরই মাঝে হাজির হয় পুলিশ। ফারিশ কোনো মতে নিজেকে বাঁচাতে জঙ্গলের ভেতর ছুট লাগায় আর তার পিছু পিছু পুলিশ। কতদূর যেতেই জঙ্গল পেরিয়ে রাস্তা আসে আর রাস্তা পেরিয়ে বিশাল হসপিটাল। ফারিশ হসপিটালে পা রাখতেই লোডশেডিং হয়। ফারিশ কোনোরকম সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আদ্রিতার চেম্বারে হাজির হয়। মুখের মাস্ক কখন পড়ে যায় খেয়াল করে নি। কিছু আহাম্মকদের থেকে নিজেকে বাঁচাতে ফারিশ পালিয়েছে কথাটা ভাবলেই রাগে গিজ গিজ করছে শরীর। ফারিশ শক্ত করে মদের গ্লাসটা চেপে ধরলো। তার রাগ হচ্ছে, প্রচন্ড রাগ। তার ওপর ওই ডাক্তার ম্যাডাম। ফারিশ মদের গ্লাসটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,“কাজটা ঠিক করেন নি। ফারিশের নাম নিয়ে পুলিশ স্টেশন গেছেন একদম ঠিক করেন নি।”
—-
রাত একটা নিজের কাজ সেরে বাড়ির পথে হাঁটছিল আদ্রিতা। রাস্তাঘাট ফাঁকা কোনো রিকশা নেই। আচমকা একটা কালো গাড়ি তার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো আদ্রিতা খানিকটা চমকে উঠলো এতে। কিছু বলবে তার আগেই কিছু লোক তার মুখে রুমাল চেপে ধরলো। আদ্রিতা জ্ঞান হারালো।’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৩

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৩

চোখ বড় বড় করে টিভির পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রিতা। তার যেন এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। রাতের ওই ছেলেটি দেশ বিরোধী এক মাফিয়া হবে। ছেলেটাকে দেখে তো তেমন মনে হলো না। হ্যা শুরুতে একটু ছেলেটাকে দেখে ভয় পেয়েছিল আদ্রিতা। তার গলায় ছুরি ধরার বিষয়টাতেও বেশ চমকে যায়। কিন্তু তার কেন যেন মনে হয়েছিল ছেলেটা মেইবি বিপদে পড়েছে। আর ওই লোকগুলোই বাজে ছিল বোধহয়। কিন্তু এখন কি বের হলো। ওই লোকগুলো সত্যিই পুলিশ ছিল। ইস তারা যদি একবার বলতো তারা পুলিশ তাহলে চোখের ইশারায় হলেও আদ্রিতা দেখিয়ে দিত পিছনের ছেলেটিকে। আদ্রিতার আফসোস হলো আবার ভাবলো এমনটা নাও হতে পারে। অন্যকেউ তো হতে পারে। তাদের হসপিটালেই ঢুকেছিল এমনটাও তো বলে নি অন্য হসপিটালও হতে পারে। মুখ নাকি ঢাকা ছিল কিন্তু ফারিশের মুখ তো ঢাকা ছিল না। খানিকটা বিপর্যস্ত ছিল কিন্তু মাফিয়া টাইপ এমন কিছু মনে হয় নি। আদ্রিতার ফোনে তখন লাউড স্পিকারে মৃদুল ওরা সবাই ছিল। অনেকক্ষণ যাবৎ হ্যালো হ্যালোও করছে কিন্তু আদ্রিতা কিছু বলছে না। মৃদুলের বিরক্ত লাগলো সে একটা ধমক দিয়ে বললো,“ওই হালার পো হালা তুই কি আছিস নাকি মইরা ভূত হইয়া গেছিস। সামনে পাইলে এমন বাইরান বাইরামু যে জামাইর নাম মনে রাখতে পারবি না। আদ্রিতার বাচ্চা।”

আদ্রিতার হুস আসলো। স্তব্ধ সুরে থমথমে গলায় বললো,
“হুম বল।”
“মইরা গেছিলি নাকি?’
“আমার তেমনটাই লাগছে।”

আদ্রিতার কথা শুনে সবাই চিন্তিত হলো তবে কি তাদের ধারনাই ঠিক হলো। মাফিয়াটি কি তাদের হসপিটালেই গিয়েছিল। কাল সবাই একটু ব্যস্ত থাকায় যে যার বাড়ি চলে যায় আদ্রিতা কাল অনেক রাত অবদি হসপিটাল ছিল তাই তারা চিন্তিত হয়ে তাকে ফোন করে। মুনমুন ধীর স্বরে বললো,
“আমরা কি তোর বাসায় আসবো আদু?”

আদ্রিতা আনমনেই বলে উঠল,“আয়।”
ফোন কাটলো আদ্রিতা। চেয়ে রইলো টিভির পর্দার দিকে। এখনো যেন কানে বাজছে দেশ বিরোধী মাফিয়া,,
—-
নিজের কক্ষে আয়নার সামনে কালো শার্টের অর্ধেক খুলে পিঠটাকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে ক্ষত স্থানটি দেখার চেষ্টা করলো ফারিশ। অনেকটা জখম হয়েছে। তার মনে পড়লো কেউ একজন ধারালো ছুরি দিয়ে তার পিঠে খুব গভীরভাবে পোঁচ দিয়েছিল। লোকটি পিছন থেকে পোঁচটা দেয় ফারিশকে। ফারিশ তার গায়ে শার্টটা জড়ালো। উচ্চ স্বরে ডাক দিয়ে বললো,“আদিব।”

ফারিশের এক ডাকেই দরজা না খুলেই আদিব ঢুকতে নিলো কক্ষে সঙ্গে সঙ্গে একটা বারি খেল মাথায়। ‘আহ্’ শব্দ বের হলো মুখ দিয়ে। সে কপাল ডলতে ডলতে বললো,“ভাই দরজা বন্ধ তো।”

ফারিশ বিরক্ত নিয়ে বললো,“উল্টোদিকে টান দেও ইডিয়েট।”

আদিব ঠোঁটে কামড় দিল। যে বার বার ভুলে যায় ফারিশের রুমের দরজার সাইড বাহির দিকে। আদিব দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,“সরি ভাই।”

ফারিশ তাকালো আদিবের দিকে। বললো,
“নতুন যুক্ত হওয়া সব কয়টাকে আধঘন্টার মধ্যে আমার চাই আদিব।”

আদিব মাথা দুলিয়ে বললো,
“আচ্ছা ভাই। কোথায় আনবো?”
“অফিসে নিয়ে আসো।”
“ঠিক আছে।”

বেরিয়ে গেল আদিব। আদিব হলো ফারিশের এসিস্ট্যান্ট। ছোট বেলা থেকেই তারা দুজন একসাথে আছে। আদিব প্রথম প্রথম ফারিশকে তুই তুই করে বলতো। কিন্তু চোখের সামনে একটা ঘটনা দেখার পর থেকে সে তুমি করে বলে অজানা কারণে ফারিশকে সে ভয়ংকরভাবে ভয় পায়। ফারিশ তার সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করলেও আদিবের ভয় আর কাটে না। ছোটবেলার ভয়টা কিছুতেই যাচ্ছে না। তবে ফারিশ জানে এই দুনিয়ায় তাকে যদি নিজের থেকেও কেউ বেশি ভালোবেসে থাকে সে হলো আদিব। এমনও দিন গেছে তারা দুটো জুতো পালিশ করে একটা রুটি কিনে দুজনে ভাগ করে খেয়েছে।

ফারিশ তার ফোনটা তুললো। কাউকে কল করে বললো,“কালকের কিছু সিসিটিভি ফুটেজ আমার চাই রফিক। আধঘন্টার মধ্যে জোগাড় করে আমায় পাঠাও।”

ফারিশের কথা শুনে রফিকও বললো,“আচ্ছা বস।”
—-
চিন্তিত চেহারা নিয়ে সোফায় গোল হয়ে বসে আছে পাঁচজোড়া চোখ। তাদের সবার চেহারাই থমথমে। তারা তাকিয়ে আছে আদ্রিতার মুখশ্রীর দিকে। কিছু যে একটা ঘটেছে এটা বুঝতে তাদের বাকি নেই। আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী এরা সবাই একেকজন একেক বিষয়ের ডক্টর। আশরাফ অর্থোপেডিস্ট, মুনমুন ডার্মাটোলজিস্ট, মৃদুল ফরেনসিক ডাক্তার, রনি পেডিয়াট্রিশিয়ান, চাঁদনী ডেন্টিস্ট, আর আদ্রিতা সার্জারীর ডাক্তার। সব ধরনের সার্জারীর কাজই সে করে। মৃদুল নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠল,
“তুই কি কিছু বলবি নাকি ঠাটিয়ে একটা দিবো গালে?”

আদ্রিতা অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো মৃদুলের দিকে। মুনমুন আর চাঁদনী আদ্রিতার দু’পাশে বসলো। দুজনে দুইদিক দিয়ে দুইহাত ধরে বললো,
“এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন কিছু কি হয়েছে?”

আদ্রিতা এবার মুখ খুললো। বললো,
“কাল রাতে।”

সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিতার দিকে। রনি বললো,
“কি হয়েছে কাল রাতে?”

আদ্রিতা রনির দিকে তাকিয়েই বলা শুরু করলো,
“কাল রাতে আমি তিনটা অবদি হসপিটাল ছিলাম তারপর হঠাৎ লোডশেডিং হয়। তখন আমার কেভিনে একটা ছেলে আসে। যতটুকু জেনেছি ছেলেটার নাম ফারিশ মাহমুদ। কিন্তু ছেলেটাকে কোনো এঙ্গেল থেকে মাফিয়া মনে হয় নি।”

সবার চোখে মুখে বিস্ময়ের চাহনী। আদ্রিতা ধীরে সুস্থে কাল রাতের সব ঘটনা খুলে বললো সবাইকে। আশরাফ তো বলেই উঠলো,“আমাদের এক্ষুণি পুলিশ স্টেশন যাওয়া উচিত।”

আশরাফের কথা শুনে মুনমুন বললো,
“কিন্তু ছেলেটা তো মাফিয়া না হয়ে অন্যকেউও হতে পারে।”

আবার ভাবনায় পড়লো সবাই। মৃদুল বললো,“আমি তো ৯০% শিওর ওই ছেলে মাফিয়াই হবে। আদু তোর কি ছেলেটার চেহারা মনে আছে?”

আদ্রিতা দু’মিনিট ভেবে বললো,“হুম।”

চাঁদনী এক্সাইটিং নিয়ে বললো,“কেমন দেখতে রে শয়তান টাইপ। দাঁতগুলো নিশ্চয়ই কালা, হাতে ট্যাটুম্যাটু ছিল আদু। আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম মাফিয়াদের সারা শরীরে নাকি ট্যাটু থাকে। ফারিশ মাহমুদের গায়ে ছিল নাকি।”

আদ্রিতা বেশি সময় না নিয়েই বললো,“না ওসব তো ছিল না। মাথায় ঝাকড়া চুল, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের অধিকারি পুরুষটির বড় বড় চোখ ছিল, চোখের মনির অত্যাধিক কালো,গাল ভর্তি চাপ দাঁড়ি, চোখের পাশে কাটা দাগ, গায়ে কালো জ্যাকেট জড়ানো ছিল। সুদর্শন যুবক বলা যায়।”

মুনমুন চেঁচিয়ে বললো,“আরেহ বাস আমি তো বর্ণনা শুনেই প্রেমে পড়ে গেলাম। না এ ছেলে মাফিয়া হতে পারে না।”

মুনমুনের কথা রনি চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
“তুই থামবি মুন কথা নেই বার্তা নেই যারে দেখে তারই প্রেমে পড়ে। এটায় তো না দেখেই প্রেমে পড়ে গেছে।”

মৃদুল হেঁসে বললো,“ওটা তো ওমনই পাগল যেন কোথাকার। মাফিয়ারও প্রেমে পড়ে কিছুদিন পর দেখবি ঝালমুড়ির বিক্রেতারও প্রেমে পড়ছে।”

সবাই হেঁসে দিল। শুধু হাসলো না আশরাফ। সে একটু সিরিয়াস টাইপ ছেলে। কোনো বিষয় মাথায় একবার ঢুকলে সেটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তার মাথা শান্ত হয় না। আশরাফ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,“তোরা হাসাহাসি বাদ দিবি।”

সবাই চুপ হয়ে গেল। আশরাফ আবার বললো,“আদু আর দেরি নয় এক্ষুণি আমরা পুলিশ স্টেশন যাবো। তুই তৈরি হয়ে আয়।”

আদ্রিতা চিন্তিত স্বরে বলে,
“সত্যি যাবি।”
“হুম তাড়াতাড়ি যা।”

আদ্রিতা উঠে গেল। চাঁদনী বললো,“কিন্তু ওই ছেলেটা সত্যিই যদি মাফিয়া না হয় তখন?”

আশরাফ বললো,“আমার এমনটা মনে হয় না চাঁদ। কেননা ছেলেটা আদুর পিঠে ছুরি ধরেছিল যাতে ওর কথা পুলিশদের না বলে। যদি কোনো অপরাধ না করে থাকে তবে এমনটা করবে কেন?”

আশরাফের কথায় যুক্তি আছে। মৃদুলও সায় দিয়ে বললো,“আমারও মনে হয় পুলিশদের এই বিষয়টা জানানো উচিত। দেশ বিরোধী মাফিয়া। চেহারা চিনে রাখলেও তাদের খুঁজতে সুবিধা হবে।”

সবাই সায় দিয়ে বললো,“ঠিক।”
রনি আবার বললো, “টিভিতেও ছেলেটার ছবি দেখালে সাধারণ মানুষও সতর্ক হয়ে যেতে পারবে।”
—–
একটা বড়সড় অফিস কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে ফারিশ। তার সামনেই গত মাসে আসা দশজন ছেলে দাঁড়ালো। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। সবার মুখেই একটাই কথা তারা কিছু করে নি। আদিব ফারিশের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,“ভাই টোটাল এগারোজন ছিল একজনকে কাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।”

ফারিশ তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“কোথায় গেছে?”
“জানি না ভাই তবে খোঁজ লাগিয়েছি আশা করি দু’চারদিনের মধ্যে পেয়ে যাবো।”
“হুম।”

আদিব সরে গেল। ফারিশ এবার এগিয়ে গেল ছেলেগুলোর দিকে। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,“ট্র্যাকে মেয়ে আসলো কোথা থেকে?”

একজন ভয়ে ভয়ে বললো,“আমরা কিছু জানি না বস আমরা তো শুধু ওই ঔষধের মালগুলোই ট্র্যাকে উঠিয়ে ছিলাম মেয়ের ব্যাপারটা সত্যি জানি না।”

ফারিশ শুনলো কিছু বললো না। আবার হাঁটলো ছেলেগুলোর চারপাশে। কিছু সময় যায় কিন্তু কিছু বলে না শুধু পায়চারি করে। হঠাৎ একটা ছেলের হাতের ব্যাচলেটের দিকে নজর পড়লো ফারিশের এটা যেন চেনা চেনা লাগছে। ফারিশ তার জুতোর ঠক ঠক শব্দ করে এগিয়ে গেল ছেলেটার কাছে। ছেলেটা থর থর করে কাঁপছে। ফারিশ বললো,
“নাম কি?”

ছেলেটা চমকে উঠলো। ভয়ে ভয়ে বললো,
“জি।”
“নাম কি?”
“কাওসার।”
“বাড়ি কই?”
“টাঙ্গাইল।”
“হাতের ব্যাচটা কোথা থেকে কিনেছো?”
“কিনি নাই আপা গিফট করছিল।”

মনে মনে হাসলো ফারিশ। কপাল চুলকে বললো,
“কাল রাতে ব্যাচটা পড়েছো ঠিক আছে কিন্তু আজ পড়ে এসে মনে হচ্ছে না ভুল করেছো।”

সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীর সমেত কেঁপে উঠলো কাওসারের। সে ধরা পড়ে গেছে। উত্তেজনার চক্করে সে ভুল করে কাল রাতের হাতের ব্যাচটা পড়ে এসেছে। কাওসার আচমকাই পায়ের কাছে পড়লো ফারিশের। বললো,“ভুল হইয়া গেছে বস আর এমন হইবো না।”

হাসলো ফারিশ। বললো,“তার মানে আমার পিঠের পোঁচটা তুই দিয়েছিলি?”

ছেলেটা আরো ভয় পেয়ে গেল। বললো,“আর কোনোদিন এমন হইবো না বস আমারে মাফ কইরা দেন।”

ফারিশ শুনলো না। পকেট থেকে পিস্তল বের করে পরপর তিনটে গুলি পিঠে ঢুকিয়ে দিলো কাওসারের। ছেলেটা গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে লাগলো নিচে। বাকি সবাই তা দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলো। ফারিশ হাতের ইশারায় বাকিদের যেতে বলে সবাই চলে যায়। শুধু দাঁড়িয়ে থাকে আদিব। ফারিশ সামনের চেয়ারে বসে। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। ফারিশ পকেট থেকে সিগারেট বের করে সেটা জ্বালিয়ে কয়েকটা টান দিলো। ফুঁ উড়িয়ে আদিবকে বললো,“যেটা পালিয়েছে ওটাকে আমার কালকের মধ্যে চাই আদিব। বেইমানদের জায়গা আমার কাছে নেই।”

আদিব থরথর করে বললো,“দেখছি ভাই।”

ফারিশের ফোনটা বেজে উঠলো। ফারিশ সিগারেটে আবার টান দিয়ে ফোনটা তুললো। বললো,“কি হয়েছে?”

অপরপ্রান্তের লোকটি কিছু বললো। সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ আরো শক্ত হয়ে গেল ফারিশের। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বললো,“আপনায় বলেছিলাম আমায় মনে না রাখতে কিন্তু আপনি রেখেছেন। এখন এর পরিণাম কতটা ভয়ানক হতে পারে তা কি আপনি বুঝচ্ছেন ডাক্তার ম্যাডাম!”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০২

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০২

নিভু নিভু আলোতে জ্বলছে মোমবাতি। অন্ধকারে প্রায় ভরপুর চারপাশ। ফারিশ ক্ষীপ্ত মেজাজে বললো,
“আমায় একদম স্পর্শ করবেন না?”
“আশ্চর্য তো স্পর্শ না করলে সেবা করবো কি করে।”
“আপনি মেয়ে বহুত ভেজাল করছেন। বলছি তো ফারিশ কারো সেবা নেয় না।”
“এমন উদ্ভট লজিক আপনার কাছেই রাখুন।”

ফারিশ তাও শুনলো না। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আদ্রিতাও উঠে এগিয়ে গেল তার দিকে। রাগী রাগী চেহারা নিয়ে বললো,
“আপনি এমন বাচ্চাদের মতো করছেন কেন?”
“আপনি আমার কথা শুনছেন না কেন!”

আদ্রিতা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো। চিন্তিত স্বরে বললো,
“কেন বুঝচ্ছেন না এভাবে থাকলে আপনার ক্ষত স্থানটায় আরো সমস্যা হবে। ইনফেকশন হবে। প্লিজ আমার কথা শুনুন।”
“দেখুন আমার চিকিৎসা পছন্দ নয়।”
“প্লিজ এভাবে বলবেন না। রোগ হলে চিকিৎসা করতে হয়। আমার কথা মানুন নয়তো সমস্যা হবে। কষ্ট পাবেন অনেক।”

আদ্রিতা শেষ কথাটা এমনভাবে বললো যে ফারিশ না চেয়েও আর বারণ করতে পারলো না। নীরব স্বরেই বললো,“ঠিক আছে।”

আদ্রিতা খুশি হলো। ফারিশ আস্তে আস্তে বসে পড়লো সামনের চেয়ারে। আদ্রিতা বললো,“টিশার্ট খুলুন?”

ফারিশ অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
“খুলতেই হবে?”
“জি। না খুললে চিকিৎসা করবো কি করে!”
“না আমার সমস্যা নেই কিন্তু তখন জ্যাকেট খুলেছিলাম বলে কেউ একজন ঘাবড়ে গেছিল।”

আদ্রিতা আবার লজ্জা পেল। না এ ছেলে তাকে বার বার লজ্জায় ফেলার জন্যই এইসব বলছে। আদ্রিতা মাথা নিচু করে বললো,“তখন তো…

থামিয়ে দিলো ফারিশ। বললো,“থাক বলতে হবে না।”

আদ্রিতা থেমে গেল। ফারিশ তার টিশার্ট খুললো। আদ্রিতা দেখলো পিঠে বেশ জখম হয়েছে। আদ্রিতা তার হাতের বামদিকটা দেখিয়ে বললো,“ওইখানে বেড আছে আসুন আমার সাথে।”

ফারিশের বিরক্ত লাগলো। কিন্তু তাও কিছু বললো না চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গেল বেডের কাছে। আদ্রিতা তার হাতের মোমবাতিটা এক সাইডে রেখে বললো, এখন উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ুন।”

ফারিশ বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা ফারিশের দৃষ্টিটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে বললো,“শুয়ে পড়ুন দ্রুত।”

ফারিশ চেয়েও কিছু বলতে পারলো না। শুয়ে পড়লো। বললো,“আচ্ছা আপনি সত্যিই ডাক্তার তো নাকি আবার ভুল চিকিৎসা করে আমাকে মারার প্লান করছেন।”

আদ্রিতা তার ডাক্তারি বাক্সটা খুলে তুলো বের করে আস্তে আস্তে ক্ষত জায়গাটা পরিষ্কার করতে লাগলো। একটা লম্বা আকৃতির ক্ষত হয়েছে পিঠে। মনে হচ্ছে কেউ দাঁ, বটি, বা বড় ধারালো ছুঁড়ি দিয়ে পিঠে বারি দিয়েছিল। ফারিশ আবার বললো,
“আপনি কিন্তু কোনো উত্তর দিলেন না। আপনি সত্যি ডাক্তার তো?”
“আমার পোশাক দেখে কি আমাকে ডাক্তার মনে হয় না।”
“পোশাক পড়লেই ডাক্তার হয় নাকি?”
“রাত তিনটা বাজে কোন সুখে আমি অন্যের চেম্বারে ডাক্তারি পোশাক পড়ে বসে থাকবো বলুন তো।”

ফারিশ দ্বিধাহীন ভঙ্গিতে বললো,
“তাও ঠিক।”
“জি। তা ক্ষতটা কি করে লাগলো?”
“আপনায় বলতে চাচ্ছি না।”

আদ্রিতা আরো একবার প্রশ্ন করলো,
“লোকগুলো কারা ছিল?”
“কি জানি এদেশেরই কেউ হবে হয়তো।”
“ভয়ংকর কি তারা ছিল নাকি আপনি ছিলেন?”
“কেউ একজন হবে জানা নেই।”
“তাদের দেখে পুলিশ টাইপ লাগলো চুরি ডাকাতি করছিলেন নাকি?”
“আমায় দেখে তা মনে হয়?”
“না হওয়ার মতোও তো কোনো কারণ দেখছি না।”

ফারিশ হাসে। বলে,“আমি চোর ডাকাত নই কিন্তু তার চেয়েও বড় কিছু।”

আদ্রিতা কিছু বললো না। ছেলেটা যে ত্যাড়া এ বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কোনো অপরাধী বলে মনে হচ্ছে না।

ডা. আদ্রিতা। পুরো নাম ওয়াজিহা আদ্রিতা। সে ঢাকার একটা সরকারি হসপিটালের কর্মরত আছে। পরিবারে বাবা মা আর ছোট ভাই আছে। তারা বর্তমানে বাড়িতে নেই। আদ্রিতার মামাতো ভাইয়ের ছেলের আকিকায় গেছেন। আদ্রিতাকেও নেয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আদ্রিতার সময় হবে না বলে আর যায় নি। বাড়িতে কেউ ছিল না বিদায় আজ বাড়ি যাওয়ার তেমন তাড়া ছিল না আদ্রিতার। তাই পেশেন্ট দেখা শেষ করে রাউন্ড থেকে ঘুরে এসে চুপচাপ নিজ চেম্বারে বসে ছিল অনেকক্ষণ। কখন রাত তিনটা বেজে গেল টের পায় নি। হঠাৎ লোডশেডিং হয়। আদ্রিতা তার সাইলেন্ট করে রাখা ফোনটা খোঁজে। কিছুক্ষণের মাঝে ফোনটা পেয়েও যায়। ফোনটা অন করে লাইটটা জ্বালাতেই সেই মুহুর্তেই রুমে এসে হাজির হলো ফারিশ। তাকে দেখেই ঘাবড়ে যায় আদ্রিতা। এরপর কত কি ঘটে গেল তার সাথে! আদ্রিতা পর পর কথাগুলো ভেবেই তাকালো ফারিশের ক্ষতের দিকে। অনেকটা কেটে গেছে সেলাই লাগতে পারে। আদ্রিতা বললো,“ক্ষতটা জোড়া লাগানোর জন্য সেলাই করতে হবে। আপনি একটু বসুন আমি যন্ত্রপাতি আর ইনজেকশন নিয়ে আসি। একটু অপেক্ষা করুন।”

ফারিশ তক্ষৎণাৎ উঠে বসলো। টিশার্টটা গায়ে জড়িয়ে জ্যাকেকটা গায়ে দিলো। বললো,“ওসব সেলাই ফেলাইলের আমার প্রয়োজন নেই। আমায় এখন যেতে হবে। শুনুন আমায় আর মনে রাখবেন না। এতে বিপদ আপনারই হবে।”

কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো ফারিশ। তার গাড়ি চলে এসেছে। আদ্রিতা বললো,“ক্ষতটা এভাবে রেখে দিলে আপনার খুব কষ্ট হবে।”

ফারিশ আবার হাসে। বলে,“এসব কষ্ট ফষ্ট ফারিশের হয় না আমি ঠিক আছি।”

ফারিশ বেড থেকে নেমে সামনে যেতে লাগলো একটু দূর গিয়েই আবার দাঁড়িয়ে আদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আর একটা কথা এভাবে রাত জেগে চেম্বারে বসে থাকবেন না। ফারিশ কাউকে ধন্যবাদ দেয় না তাই আপনাকেও দিলাম না। তবে সাহায্য করেছেন এটা মনে রাখবো আমি। কিন্তু আপনি আমায় মনে রাইখেন না বিপদ হবে আপনার। গুড বাই। আমাদের আর দেখা না হোক। ভালো থাকবেন।”

ফারিশ বেরিয়ে গেল। আদ্রিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ফারিশ যাওয়ার তিনমিনিটের মাথাতেই কারেন্ট চলে আসলো। পুরো হসপিটাল আবার উজ্জ্বল হলো। আদ্রিতা কিছুক্ষণ থ মেরে দাড়িয়ে থেকে বললো,“কারা ছিল ওই লোকগুলো আর এই ছেলেটাও বা কে ছিল? কেমন যেন অদ্ভুত ছেলেটা।”

আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এবার সে বাড়ি যাবে পুরো বিষয়টাই যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। ছেলেটা কি ভয়ংকর কেউ ছিল? নাকি যারা খোঁজ করছিল তারা ভয়ংকর ছিল? দুটো প্রশ্ন নিয়েই আজ বাড়ি ফিরবে আদ্রিতা।”

আকাশ তখন একটানা অল্প কিছুক্ষণ বৃষ্টি দিয়ে থেমে গেছে। ফারিশ আকাশ পানে তাকায়। হসপিটাল থেকে অনেকটা দূরই চলে এসেছে সে। আজ কেমন যেন নিজেকে অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে। কথায় কথায় হাসছে। এটা ভাড়ি অদ্ভুত বিষয়। এমন হচ্ছে কেন!’

ফারিশের সামনে সেই মুহূর্তে গাড়ি আসলো। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। অদ্ভুত সব ভাবনা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে ভাবলো সবার আগে সেই বেইমানকে খুঁজতে হবে যার কারণে আজ প্রথম তাকে পালাতে হলো। তাও কি না পুলিশনামক আহাম্মকের দলের থেকে। ফারিশ গাড়িতে উঠে বসলো। সে বসতেই গাড়ি ছুটে গেল সুদূরে।
—–
সকাল দশটা। লাগাতার ফোনে কল আসছে আদ্রিতার। বার বার কল এসে কল কেটে যাচ্ছে কিন্তু আদ্রিতা ফোন ধরছে না। কারণ সে গভীর ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ হুস ফিরলো আদ্রিতার। টেবিলের উপর থেকে সাঁতরে ফোনটা নিলো সমানে তার পাঁচ বন্ধু আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী কল করছে। তাঁরা পাঁচজন একসাথেই আছে। একজনের কল কেটে যেতেই আরেকজন কল করছে। শেষে গিয়ে মৃদুলের কলটা তুলতে পারলো আদ্রিতা৷ ঘুম জড়ানো গলায় বললো,
“হ্যালো।”

সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রী ভাষায় একটা গালি দিয়ে রাগী কণ্ঠে বললো মৃদুল,“ওই ছ্যামড়ি এতক্ষণ সময় লাগে ফোন তুলতে কতক্ষণ থেকে আমরা ফোন করছি জানিস।”

তক্ষৎনাৎ ঘুম উড়ে গেল আদ্রিতার। ফোনটা কান থেকে সরিয়ে নাম্বার দেখে বললো,“কি হইছে?”

এবার মৃদুলের থেকে চাঁদনী ফোনটা নিয়ে বললো,“তুই ঠিক আছিস তো আদু?”

আদ্রিতা অবাক হয়ে বললো,
“সকাল সকাল মদ খেয়ে কল করলি নাকি আমার আবার কি হবে?”

এবার আশরাফ ফোনটা নিয়ে বললো,
“তুই নিউজ দেখিস নি?”
“কিসের নিউজ?”

মুনমুন তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“টিভি দেখ হারামি।”

আদ্রিতা এবার লাফিয়ে উঠলো সকাল সকাল হলো কি এদের! আদ্রিতা তার ফোনটা দেখলো সকাল দশটা বাজে। সঙ্গে সঙ্গে আরো যেন চমকে উঠলো আদ্রিতা। এত বেলা অবদি সে ঘুমিয়ে ছিল। আদ্রিতা ফোনটা কানে ধরে বললো,“দোস্ত সকাল দশটা বাজে এদিকে আমি এখনও ঘুমিয়ে ছিলাম।”

রনি বললো,“বোইন টিভি খুলে নিউজ দেখ?”

আদ্রিতা বিছানা থেকে নামলো। চলে গেল সোফার রুমে দ্রুত টিভিটা অন করে নিউজের চ্যালেন ধরলো। একজন ভদ্রমহিলা বলছেন,
“দেশ বিরোধী এক মাফিয়াকে পুলিশ আটক করতে গিয়েও একটুর জন্য বেঁচে যায়। জানা যায় কাল শেষরাতের দিকে কোনো এক হসপিটালে গা ঢাকা দেয় মাফিয়াটি। পরে আর খোঁজ পাওয়া যায় নি। ছেলেটির মুখ ঢাকা থাকার কারণে চেহারা দেখা যায় নি।”

আদ্রিতা থ মেরে সোফায় বসে পড়লো হাত থেকে অটোমেটিক রিমুটটা পড়ে গেল। সে অদ্ভুত শব্দ করে বললো,“তবে কি কাল রাতের ফারিশ নামের ছেলেটিই দেশ বিরোধী মাফিয়া ছিল?”

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]

#TanjiL_Mim♥️

এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০১

0

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০১

অন্ধকার রুমে বলিষ্ঠ এক পুরুষকে নিজ চেম্বারে দেখতেই চমকে উঠলো আদ্রিতা। চেঁচাতে যাবে তার আগেই বলিষ্ঠ পুরুষটি দৌড়ে এসে তার মুখ চেপে ধরলো। তীক্ষ্ণ স্বরে শুধালো,
“হুস! শব্দ না। ভয় নেই আমি আপনার কোনো ক্ষতি করতে আসি নি। আমাকে অল্প কিছুক্ষণ সহ্য করুন আমি একটু পরই চলে যাবো।”

আদ্রিতা চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো পুরুষটির কুচকুচে কালো চোখ জোড়ার দিকে। তার হাতে জ্বলতে থাকা মোবাইলটা উল্টে পড়ে গেল নিচে। আগন্তুক পুরুষটি মুহুর্তের মধ্যে তার গলায় একটা ছুরি ধরে বললো,“যা বলছি তাই করুন, নয়তো।”

আদ্রিতা ভয়ে ঢোক গিললো। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,“কি করতে হবে?”

আগন্তুক পুরুষটি তাকে কিছু বললো। পুরো হসপিটালে লোডশেডিং হয়েছে। রাত তখন প্রায় তিনটে ছাড়িয়ে প্রায় মানুষই ঘুমে বিভোর। আদ্রিতার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। আচমকা কোথা থেকে কি হচ্ছে তার সাথে? কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছু মানুষের পদধ্বনি শোনা গেল। আদ্রিতা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে সামনে তাকালো এক লোক তার মুখের ওপর নিভু নিভু আলো থাকা টর্চলাইট মারলো। আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে নিলো এতে। স্বাভাবিক গলায় বললো,“আপনারা কারা?”

পর পর পাঁচজন পুরুষ আর একটা মহিলা ঢুকলো রুমে। একজন খুব ক্ষীপ্ত হয়ে বললো, আমরা কারা তা পরে বলছি আগে বলুন এখানে কি কেউ এসেছে?”

আদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার পিছনেই পিঠে ছুরি দিয়ে বসে আছে আগন্তুক পুরুষটি। আদ্রিতা স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“না তো।”

মহিলাটি প্রশ্ন করলো,
“আপনি শিওর?”
“জি। আমি অনেকক্ষণ থেকেই এখানে আছি এখানে কেউ আসে নি।”

লোকগুলো মেনে নিলো। বললো,
“ঠিক আছে। বিভ্রান্ত করার জন্য দুঃখিত।”
“ইট’স ওকে। কিন্তু আপনারা কারা বললেন না তো।”
“একজন বলতে নিলেও মহিলাটি বললো এটা হসপিটাল স্যার বিভ্রান্ত করা ঠিক হবে না পেশেন্টরা ঘাবড়ে যেতে পারে।”

লোকটি শুনলো। মৃদুস্বরে বললো,কেউ না।”

লোকগুলো চলে গেল। আদ্রিতা থ মেরে বসে রইলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর্যন্ত তারা দুজন ওভাবেই বসে। পরিবেশ তখন শান্ত। আচমকা মেঘ কেঁপে বর্ষণ শুরু হলো। ফারিশ তার পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। কল করে বিশ্রী ভাষায় বললো,“আধ ঘন্টার মধ্যে আমার গাড়ি চাই নয়তো তোদের সব কয়টাকে আমি দেখে নিবো। ফারিশ মাহমুদের সাথে বেইমানি এর ফল কতটা ভয়ংকর হতে পারে তোরা হয়তো ভুলে গেছিস। আমায় শুধু ফিরতে দে।”

অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি ফারিশের কথা শুনেই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো,“আসছি ভাই, আসছি।”

ফোন কাটলো ফারিশ। রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে। আদ্রিতা তখনও স্বাভাবিক হয় নি। সে চুপচাপ বসে ছিল চেয়ারে। ফারিশ একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল সে কোনো মেয়ের পিঠে ছুুরি ধরে আছে। হঠাৎই হুস আসলো ফারিশের সঙ্গে সঙ্গে সে ছেড়ে দিল আদ্রিতাকে। আদ্রিতারও হুস আসলো দ্রুত চেয়ার থেকে সরে উঠে দাঁড়ালো। ফারিশ কর্নার থেকে বের হলো। আদ্রিতা ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারিশের মুখশ্রীর দিকে। যদিও অন্ধকারে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হন্তদন্ত হয়ে মোমবাতি খুঁজলো আদ্রিতা। কারণ নিচে পড়ে তার ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে।

হসপিটালে লোডশেডিং এর বিষয়টা দু’দিন যাবৎ হচ্ছে তার রুমের জেনারেটরটা কাজ করছে না। আদ্রিতা দ্রুত ড্রয়ার থেকে মোমবাতি বের করলো
এরপর খুঁজতে ছিল লাইটার। দ্রুত আলো চাই তার। ফারিশ তার পকেট থেকে লাইটার বের করে জ্বালালো। মেয়েটা যে হন্তদন্ত হয়ে ভয়ে দৌড়াচ্ছে তা বেশ বুঝতে পেরেছে ফারিশ। আদ্রিতা লাইটারের আলো দেখতেই এক জায়গায় দাঁড়ালো। তখনই লাইটারের আলোতে দেখতে পেল সেই পুরুষটির মুখশ্রী। মাথায় ঝাকড়া চুল, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের অধিকারি পুরুষটির বড় বড় চোখ, চোখের মনির অত্যাধিক কালো,গাল ভর্তি চাপ দাঁড়ি, চোখের পাশে কাটা দাগ, গায়ে কালো জ্যাকেট জড়ানো। সে বসে আদ্রিতার রুমের দেয়ালের পিঠ ঠেকিয়ে।

আদ্রিতার হাত কাঁপছে, এভাবে হুট করে একটা পুরুষ তার চেম্বারে ঢুকে গলায় ছুরি ধরবে ভাবতেই পারে নি। ফারিশ চোখের ইশারায় ডাকলো। লাইটার তখনও জ্বলছিল তার হাতে। আদ্রিতা কাঁপা কাঁপা হাতে তার হাতের মোমবাতিটা এগিয়ে দিলো ফারিশের দিকে। ফারিশ লাইটার দিয়ে মোমবাতি জ্বালালো। আদ্রিতা মোমবাতিটা রাখলো তার রুমে থাকা টেবিলের ওপর। কাউকে ডাকার চেষ্টা করতেই আদ্রিতার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল ফারিশ,“শব্দ করবেন না এই মুহূর্তে শব্দ চাচ্ছি না।”

আদ্রিতার দাঁড়িয়ে পড়লো চুপচাপ আর কাউকে ডাকার সাহস করলো না। ফারিশ পকেট থেকে এবার বের করলো একটা সিগারেট। সেটাকে লাইটারের সাহায্যে জ্বালিয়ে মুখে দিয়ে ধুঁয়া উড়ালো। আদ্রিতা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ফারিশের দিকে। ফারিশও এবার দৃষ্টি রাখলো মেয়েটার দিকে। গায়ে ডাক্তারি পোশাক পড়ে মেয়েটা কাঁপছে। ফারিশের খুব মজা লাগছে। তার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে হাসতো কিন্তু সে হাসছে না কারণ ফারিশ সহজে হাসে না। ফারিশের এবার বিরক্ত লাগছে। সে আরেকবার সিগারেটে ফুঁ দিয়ে ধমক দিয়ে বললো,“এত ভয় পাওয়ার কি আছে আমি কি আপনায় মেরেছি?”

আদ্রিতা স্থির হয়ে দাঁড়ালো তাও তার হাত পা কাঁপছে। সে কাঁপা কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করলো,“কে আপনি?”

ফারিশ জবাব দেয় না। আদ্রিতা আবারও প্রশ্ন করে,“এখানে কি করতে এসেছেন?”

এবার মুখ খুললো ফারিশ। বললো,
“কিছুই তো করতে আসি নি, দেখছেন না চুপচাপ বসে আছি।”
“লোকগুলো কারা ছিল?”
“বললোই তো কেউ না।”
“যাচ্ছেন না কেন?”
“গাড়ি আসুক চলে যাবো।”
“আমার কি আপনাকে ভয় পাওয়ার উচিত?”

হাসি আসলো ফারিশের। ভয়ে কাঁপছে ওদিকে জিজ্ঞেস করছে ভয় পাওয়া উচিত কি না। ফারিশ হাসি দমিয়ে উত্তর দিলো,
“আপনার ভয় পাওয়া উচিত কি না বলতে পারছি না কিন্তু আপনি যে ভয়ে কাঁপছেন তা কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি।”

আদ্রিতা লজ্জা পেল। ভুল প্রশ্ন করার লজ্জা। আদ্রিতা স্বাভাবিক হলো। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে দু’পা এগিয়ে এসে বললো,“আমি মটেও ভয় পাই নি সে তো আচমকা নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মস্তিষ্কের উপর দিয়ে যাচ্ছিল বিধায় ঘাবড়ে গেছিলাম একটু।”

ফারিশ হাতে থাকা সিগারেটটায় লাস্ট টান দিয়ে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিসে ফেললো। তারপর আয়েশ করে বসে বললো,“ওহ আচ্ছা বুঝেছি।”

আদ্রিতা থরথর করে বললো,
“কি বুঝেছেন?”

জবাব দেয় না ফারিশ। এত কথা সহ্য হচ্ছে না। শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে। ফারিশ তার জ্যাকেটটা খুললো। সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিতা আবার দু’পা পিছিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,“আপনি জ্যাকেট খুলছেন কেন?”

ফারিশ নিরুত্তর। ফারিশ তার জ্যাকেটটা খুলে পিছনে টিশার্টের উপর দিয়েই পিঠে হাত দিলো। জ্বলে উঠলো বোধহয়। হাতটা সামনে আনতেই দেখলো ফারিশ রক্ত। ফারিশের হাতে রক্ত দেখে আদ্রিতা দ্রুত দৌড়ে আসলো আচমকা হাত ধরে বসলো ফারিশের চিন্তিত স্বরে বললো,“রক্ত আপনি কি আহত?”

ফারিশ জবাব দেয় না। এবার বিরক্ত লাগছে আদ্রিতার এ ছেলে প্রশ্নের জবাব কেন দেয় না। আদ্রিতা বিরক্ত নিয়ে বললো,“কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”

ফারিশ স্থির দৃষ্টিতে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো,“পানি আছে?”

আদ্রিতা একঝলক ফারিশকে দেখলো। বললো,
“আছে।”
“নিয়ে আসুন তাহলে।”

আদ্রিতা দেরি না করে টেবিলের উপর থাকা বোতলটা নিয়ে গ্লাস ভরে পানি নিয়ে এসে দিলো ফারিশের হাতে। ফারিশ নিলো। পানি না খেয়ে তার রক্তে ভেজা হাতটা ধুলো। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“ফারিশ আহত হয় না।”
“এটা কেমন কথা আপনার শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে আর আপনি বলছেন ফারিশ আহত হয় না।”

ফারিশ হাসলো। খুব নিদারুণ দেখালো সেই হাসি। ফারিশ বললো,“আমি কে এটা আপনি জানলে বোধহয় আপনিও আমায় আঘাত করতেন।”

আদ্রিতা কথাটায় বেশি গুরুত্ব দিলো না। দ্রুত ডাক্তারির সরঞ্জাম রাখার বাক্সটা নিয়ে বসলো ফারিশের পাশে। বললো,“আপনি কে এটা আমার জানার প্রয়োজন নেই আমি একজন ডক্টর আর আমার দায়িত্ব আহত মানুষদের সেবা করা। আপনি উল্টোদিক ঘুরুন আমি আপনার চিকিৎসা করবো।”

ফারিশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মুখশ্রীর দিকে। শক্ত কণ্ঠে বলে,
“দরকার নেই ফারিশ কারো সেবা নেয় না।”
“অদ্ভুত তো শুয়ে পড়ুন দ্রুত।”

ফারিশ বসে রয়। আদ্রিতার এবার রাগ ওঠে। সে নিজেই ঘুরাতে নেয় ফারিশকে। ফারিশ রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।”
“চুপ থাকুন তো। কথা বেশি বলেন। যখন কথা বলার প্রয়োজন তখন চুপ থাকেন আর যখন কথা বলার প্রয়োজন নেই তখন বেশি বলেন। আহত হয়ে ভুল করে হলেও যখন ডাক্তারের কাছে এসেছেন তখন সেবা তো নিতেই হবে।”

ফারিশ কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই প্রথম যেন মনে হলো কারো প্রশ্নের পিঠে সে কথা বলতে পারছে না। অবাক হলো ফারিশ। মেয়েটা তাকে ভয় পেয়েও কেন ভয় পাচ্ছে না?”

#চলবে….

#TanjiL_Mim♥️

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১৬(সমাপ্ত)

৩৮.
সাত সকাল বেলাই কমোড় বেধে রান্না করতে লেগে গেছে নিরা। বিভিন্ন রকমের নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে রেখে পুনরায় কিচেনে চলে আসে ক্ষির বানাবে বলে।ভোরের দিকেই রুদ্রর থেকে জেনে নিয়েছে সবার পছন্দ সে হিসেবেই আজ তৈরি করেছে এই খাবারের আইটেম।

রান্না ঘর থেকে টেবিলের কাছে আসতেই নিসেস শিকদার নিরার দিকে এগিয়ে গেলেন নিজের আচল দিয়েই যত্ন করে মুছে দিলেন নিরার ঘেমে থাকা মুখটা

—কি অবস্থা করেছিস নিজের ঘেমে মানা করলাম কতো করে করিস না এতোসব কাজ। কিন্তু কে শুনে কার কথা।(শাসনের স্বরে)

—উফফ ভালোমা সামান্য রান্নাই তো ব্যাপার টা আমি কি নিজের বাড়িতে রান্নাও করতে পারিনা নাকি পর হ্যা(কাদো কাদো হয়ে)

—নাটক ভালোই শিখেছিস যা হাত মুখ ধুয়ে রুদ্রকে ডেকে নিয়ে আই বাকী কাজ আমি আর লিমা (রুদ্রর ফুফু) করে নিবো।

নিরা মাথা দুলিয়ে উপরে চলে গেলো। রুমে যেতেই তার চোখ আটকে গেলো ঘুমন্ত রুদ্রর দিকে ধূসর রাঙা চাদরে মুড়িয়ে থাকা প্রেমিক পুরুষ টাকে দেখে মনে পড়ে গেলো রুদ্রর বলা ভালোবাসার কথা গুলো রুদ্রর দেওয়া অবাধ্য ছোয়া গুলো।লজ্জায় রাঙ্গা মুখটা আচলে লুকিয়ে চলে গেলো ওয়াসরুমে নিরা নিজের আচারণে নিজেই অবাক নিরা তো এমন লজ্জাবতি ছিলোনা তার কথা বা কাজে লজ্জা টা তো কম পরিলক্ষিত হতো।

মাথা নিচু করে দাঁড়ায় আছে রুহানী।তার সামনে অভ্র বেত হাতে নিয়ে দাঁড়ায় আছে।রুহানী ভয়ে ঢোক গিলছে

—অভ্র ভাইয়া(আমতা আমতা করে)

—ভাইয়া??(শান্ত সুরে)

—নাহ মানে স্যার(তোতলে)
—স্যার??(রাগী চোখে)

রুহানীর অবস্থা এবার ছেড়ে দে স্বামি কেদে বাচি এদিকে অভ্রও রেগে আগুন একে তো ওর ফুফু ওকে এতো গুলা কথা শুনিয়ে দিলো আর সেও চুপচাপ শুনে নিলো যা তার একদম পছন্দ হয়নি।

—কি হলো কথা বলোনা কেন এমনি সময় তো খুব মুখ চলে আর যখন সে তোমাকে এতো কথা শুনাচ্ছিলো তখন মুখে তালা লাগানোর মানে কি আমাকে বুঝাও।

—তিনি আপনার ফুফু ছিলেন আমার ফুফু শাশুড়ী। আমাদের বয়সে বড় কিভাবে তাকে আমি।পালটা জবাব দিতাম।উনার অসম্মান হতোনা হ্যা মানছি আমার আমি অনেক রাগী বা শ*য়তান কিন্তু তাই বলে আমি কখনো কাউকে অপমান করবো ওতোটা বেদ্দব ও না।

রুহানীর কথায় শান্ত হলো অভ্র। রুহানীকে বুকে জড়ায়ে নিলো।

—সরি রাগ উঠে গেছিলো

—হু আপনাদের রাগ রাগ আর আমার রাগ। আপনি তো আমাকে ভালোওবাসেন না। এইজন্য আমাকে বকলেন।
(কাদো কাদো কন্ঠে)

—তোমাকে ভালোনা বাসলে আমি ভালোবাসার মানেও জানিনা তুমি আমার রুহ আমার সব। বুঝতে শিখার আগে থেকেই তোমার এই রাগী চেহারায় নিজেকে হারিয়েছি তোমার পাগলামিতে পাগল হয়েছি। তোমার_সন্ধ্যা_আকাশের_তারা হয়েছি নিজের অজান্তেই।ভালোবাসি পাগলিটা অনেক বেশিই ভালোবাসি।

—আমিও ভালোবাসি খুব খুব ভালোবাসি। (অভ্রর বুকে আরও নিবিড় ভাবে মুখ গুজে)

৩৯.
–এইযে শুনছেন উঠুন ভালোমা নিচে ডাকে

নিরার ডাকে রুদ্রর কোন হেলদোল দেখা গেলোনা। নিরা আরও জোড়ে ধাক্কা দিতেই এবার নড়ে চড়ে উঠলো

—উঠুন না রুদ্র আমাকে নিচেও তো যেতে হবে এই যে শুনছেন।

রুদ্র এবার চোখ মেলে তাকায়। নিরাকে টেনে নিজের বুকে টেনে নেই
—আরে কি করছেন ছাড়ুন নিচে এতো মানুষ উঠুন ফ্রেশ হন।

রুদ্র নিরার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবায়ে কিছুক্ষন ওইভাবেই পড়ে রইলো।নিরার রুদ্রর সাথে তাল মিলালো।অনেকক্ষন পর রুদ্র নিরাকে ছেড়ে নিরার কপালে গভীর এক চুমু একে বলে উঠলো

—ভালোবাসি বউ।

—ভালোবাসি।(রুদ্রর গালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে)

৪০.
মিস্টার শিকদার চিন্তিত ভঙিতে চেয়ারে বসে আছে মিস্টার শিকদারকে ওতো চিন্তিত দেখে উনার পাশে এসে বসলেন মিসেস শিকদার।

—কি হলো এমন চিন্তাই কেনো? কিছু হয়েছে?

—আমি রুদ্র আর নিরা মার বিয়ে নিয়ে চিন্তাই আছি ।

—কেনো।
—আমার মনে হয়না রুদ্র এই বিয়েতে খুশি
—এমন ধারণা হলো কেন তোমার রুদ্রত নিজেই বিয়েতে মত দিয়েছে
—হ্যা দিয়েছে কিন্তু কালকে তার আচারণ দেখলে না
—আরে বিয়ের প্রেশারে এতো হৈ-হুল্লোড় তার পছন্দ না যানোই ত সেজন্য হয়তো।
—তোমার কথায় যেনো সত্যি হয়।

হঠাৎ মিসেস শিকদার এর চোখ পড়ে সিড়ির দিকে খুশিতে নিজের স্বামির হাত বাড়ি মেরে ডাক দেয়

—ওইখানে দেখো।

হাতের ইশারা দিয়ে সিড়ির দিকে দেখায়ে। মিস্টার শিকদার দেখে তিনিও খুশি হয়ে গেলেন।
রুদ্র নিরাকে কোলে করে নিচে নামিয়ে আনছে। আসলে বের হওয়ার সময় নিরার পায়ে লেগে যায় যার কারণে রুদ্র তাকে কোলে তুলে নেই।
—এবার তো নামান আমরা এসে গেছি ভালোমা বাবাই দেখছে।
—দেখুক আমার বউ আমার কোলে তার বউকে সে কোলে নিয়ে রাখুক আমার তাতে আপত্তি নেই।
—ছি লজ্জা নাই

রুদ্র এবার নিরা লজ্জা পাওয়াই সজোড়ে হেসে উঠে।রুদ্রর এমন হাসিতে বাড়ির সবাই সিড়ির দিকে তাকায় সবার চোখ জেনো কৌটা থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম কারন কেউ রুদ্রকে এমন জোড়ে জোড়ে হাসতে দেখেনি।রুদ্রর চাচাতো ভাই এই মহূর্তের ছবি তুলে রেখে দেয়। হাস্যজ্বল রুদ্রর কোলে লজ্জাই লাল হয়ে থাকা নববধূকে দেখতে আসলেই দারুন লাগছে।

৪১.
৩০ বছর পরে,

স্টেশান বসে আছে এক বৃদ্ধা মহিলা। বয়স তার ৬০ উর্দ্ধে। চেহারায় স্পষ্ট বয়সের ছাপ।হাতে তার লাঠি। কুচকে যাওয়া চামড়ায় কারো অপেক্ষার ছাপ। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে এক পুরুষালী বৃদ্ধর কন্ঠে

—নিরা

(হুম বৃদ্ধা নিরা)

রুদ্রর ডাক শুনে নিরা তার দিকে তাকাই ৬৭ বছরের বৃদ্ধ রুদ্রর চেহারার তেজ এখনো ওমন ই আছে যা দেখে এই বয়সে এসেও নিরা তার প্রেমে পড়তে ভুলেনা। রুদ্রকে এগিয়ে আসতে দেখে গাল ফুলাই নিরা

—কি হলো তুমি বাড়ি ছেড়ে বাস স্টেশানে কি করছো হ্যা সে কখন থেকে খুজছি তোমাকে রাইসু(রুদ্রর একমাত্র ছেলের ছোট মেয়ে) আমাকে বললো “দিদা নাকি রাগ করে বাড়ি ছেড়ে স্টেশানে বাড়ি বানাবে বলে ঠিক করেছে”। এইসব কোন ধারণের বাচ্চামো চলো বাড়ি চলো।

—যাবোনা আমি। তোমার জীবনে আমার ত দরকার ই নেই হু থাকবে কেন আমি তো এখন বুড়ি হয়ে গেছি না। এখন তো আমাকে ভালো লাগবেনা যাও তুমি যাবোনা আমি ওই বাড়ি থাকবো না তোমার সাথে করবোনা সংসার। (গাল ফুলিয়ে)

—আরে বাবা হয়েছি কি বলবা তো না বললে বুঝবো কিভাবে।
—হ্যা বুঝবা না তো আমাকে বুঝতে যাবা কেন।(গাল ফুলিয়ে)
—দেখো
—দেখান

রুদ্র চোখ বড় বড় করে তাকাই নিরার দিকে
—বুড়ো বয়সেও তোমার অসভ্যতামি কমলোনা নিরু।এখনো সে ৩০ বছর আগের ন্যায় আমাকে টিজ করছো।
—করবই তো আমার জামাই আমার বুড়ো আমার জিনিস আমি দেখবোনা আমার ইচ্ছা হলে সারাদিন পাঞ্জাবী ছাড়া রাখবো কার কি বলার আছে হ্যা।(রেগে)
—জ্বি মহারানী কারোর কিছু বলার নেই কিন্তু এখানে সবাই দেখছে। মানুষ কি বলবে বলো ত এই বয়সে এসেও এরা এইভাবে ঝগড়া করবে বাড়ি যায়ে যতো ঝগড়া করার করো চলো।

—নাহ আমি যাবোনা দেখুক লোকে তাদের ও জানা উচিত আমার জামাই এই ৩০ বছরেও তার ম্যারেজ ডে মনে রাখে না। (গাল ফুলিয়ে)

রুদ্র এবার জ্বিহবায় কামড় বসায় আসলেই তার মাথা থেকে বের হয়ে গেছিলো আজ তাদের বিবাহবার্ষিকী।৩০ টা বছর কিভাবে চোখের পোলকে পার হয়ে গেলো। এখনো মনে হয় এই বুড়ি একসময় যুবতী ছিলো যার প্রেমে মেতেছিলো তার মন।শান্ত রুদ্রকে অশান্ত করে ক্ষেন্ত হয়েছিলো সে। রুদ্র এদিকে ওদিকে তাকিয়ে টুপ করে নিরার গালে নিজের ঠোঁট ছোয়াই।নিরা লজ্জাই রুদ্রর বুকে মুখ লুকাই চোখে ভেসে উঠে ৩০ বছর আগে এই বাস স্টেশানে দেখা বৃদ্ধ কপোত-কপোতীর কথা।সেদিন হয়তো তিনিও এইভাবেই লজ্জাই রাঙ্গা হয়েছিলো এইভাবে হয়তো উনার স্বামির বুকে নিজের লাজুক মুখ লুকিয়েছিলেন।হঠাৎ ই নিরার কাণে রুদ্রর কথা ভেসে উঠে

—ভালোবাসি আমার সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা।

নিরার কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলো

—ভালোবাসি।

সমাপ্তি!!