এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৪

0
140

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৪
____________
পুলিশ স্টেশনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে তিনটে বাইক। আর থানার ভিতরে ওসির জন্য অপেক্ষা করছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি,চাঁদনী আর আদ্রিতা। তারা শুধু এতটুকু বলেছিল কাল রাতে একজন আগন্তুক তাদের হসপিটালে যায় এবং আদ্রিতার পিঠে ছুরি দিয়ে কিছু মিথ্যে কথা বলতে বলে। তাদের মনে হয় ওই ছেলেটাই মাফিয়া। আদ্রিতা তার চেহারা দেখেছে। নাম বলেছিল ফারিশ মাহমুদ। এরপরই ওসি যেন কোথায় চলে যায় আর খবর নেই। মৃদুল বিরক্ত নিয়ে বললো,
“ওসি গেল কই? ওনার কি এই বিষয়টায় ইন্টারেস্ট নেই। অদ্ভুত তো!’

আদ্রিতা মৃদুলকে ধাতস্থ করতে বললো,“তুই একটু শান্ত হয়ে বস। নিশ্চয়ই কোনো জরুরি কাজের জন্য গেছেন।”

চাঁদনী বেশ বিস্মিত স্বরে বললো,“এই মুহুর্তে মাফিয়ার হদিস জানতে পারা ছাড়া আর কি জরুরি কাজ থাকতে পারে।”

রনি একটু উঠে গিয়ে দেখলো ওসি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। সে বেশ বিরক্ত নিয়ে বললো,“ওসি সাহেব তো কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন।”

সবাই বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়লো। কতক্ষণ পরই ওসি সাহেব হাজির। সে চেয়ার ঠেলে সামনে বসলো। বললো,“এবার বলো তোমরা কি বলতে আসছিলে?”

মৃদুল বিরক্ত হলো প্রচুর। গুজগুজ করে বললো,“হালায় এতক্ষণ পর জানতে আইছে আমরা কেন আইছি। আগেই তো কইলাম হালায় কি শোনে নাই।”

আশরাফ চোখের ইশারায় মৃদুলকে চুপ হতে বলে। মৃদুল চুপ হয়ে যায়। আশরাফ বলতে শুরু করে,“আমরা সেই মাফিয়া নিয়ে কথা বলতে এসেছি স্যার।”

অফিসার তার কান গুঁতিয়ে বলে উঠল,
“কোন মাফিয়া?”

মৃদুলের এবার ইচ্ছে করছে পুলিশের টাকওয়ালা মাথাটা বারি মেরে ফাটিয়ে দিতে। সে নিজেকে সংযোত করলো। শান্ত গলায় বললো,“টিভিতে যে দেশ বিরোধী মাফিয়ার কথা বলা হয়েছিল আমরা সেই মাফিয়া সম্পর্কে বলতে এসেছি।”

অফিসার একটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো,“হুম বলো কি বলার আছে তোমাদের?”

পুলিশের এই গা ছাড়া ভাবটা কেউ নিতে পারছে না। মনে হচ্ছে পুলিশ তাদের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হচ্ছেন। কোনো মজা পাচ্ছেন না। অথচ তারা কতটা সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।”

আদ্রিতা সবাইকে সামলে বললো, “স্যার কাল রাতে একটা ছেলে আমার চেম্বারে ঢুকে, তার কতক্ষণ পর কিছু মানুষ আসে আমায় জিজ্ঞেস করে এখানে কেউ এসেছিল কি না। কিন্তু আগন্তুক আমার পিঠে ছুরি ধরে রাখায় আমায় মিথ্যে বলতে হয়। ছেলেটির নাম খুব সম্ভবত ফারিশ মাহমুদ। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা, চোখের পাশে একটা কাটা দাগ আছে।”

পুলিশটি আদ্রিতাকে থামিয়ে দিলেন নিজের ফোনটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে। মিনিট দুই যেতেই পুলিশটি একটা লোকের ছবি দেখিয়ে বললো,“আপনি কি এনার কথা বলছেন?”

আদ্রিতাসহ প্রায় সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো মোবাইলে থাকা ছেলেটির ছবির দিকে। আদ্রিতা বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে। বাকি সবার দৃষ্টি ততক্ষণে ছবি থেকে সরে আদ্রিতার দিকে নিবদ্ধ হলো। পুলিশটি আবার বললো,“কি হলো কথা বলছেন না কেন আপনি এই ছেলের কথা বলছেন তো ফারিশ মাহমুদ।”

আদ্রিতা নিরুত্তর। চাঁদনী আদ্রিতার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,“কি হলো আদু কথা বলছিস না কেন উনিই কি ফারিশ মাহমুদ। কাল রাতে এই ছেলেই কি তোর পিঠে ছুরি ধরে ছিল?”

আদ্রিতা এবার মুখ খুললো মাথা নাড়িয়ে বললো, “হুম উনিই।”

মুহুর্তের মধ্যে সবার মনোভাব পাল্টে গেল। বিস্মিত হলো সবাই। আদ্রিতার কথা শুনেই ওসি সাহেব তার মোবাইল সরিয়ে ফেললেন। বললেন,“উনি একজন নামকরা ঔষধ কোম্পানির মালিক। শত শত মানুষের চিকিৎসার কাজে ওনার কোম্পানির তৈরিকৃত ঔষধ মানুষের সেবা করে আসছে। আর আপনি কি না তাকে দেশ বিরোধী মাফিয়া বলে দাবি করছেন। আপনারা তো ডক্টর অথচ ফারিশ মাহমুদকে চেনেন না। অবশ্য উনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই তেমন। তবুও নামটা তো জানা উচিত ছিল।”

পুলিশের কথা শুনে তাজ্জব বনে গেল সবাই। দারুণভাবে লজ্জায় পড়লো তারা। পুলিশ খানিকটা হাসলেন। বললেন,“ইট’স ওকে। মাঝে মধ্যে ভুল হয়। আসলে কাল ওনার উপর এটাক হয়েছিল আপনাদের হসপিটালেই গিয়েছিল মেইবি।”

আদ্রিতা কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। লজ্জিত স্বরে বললো,“আমাদের ক্ষমা করবেন স্যার আমরা ভুল বুঝে এখানে এসেছিলাম।”

পুলিশটিও মেনে নিলেন। বললেন,“ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না। এখন আপনারা বাড়ি যেতে পারেন নাকি আরো কিছু বলবেন।”

আশরাফ বললো,
“নো স্যার আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। এভাবে আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য।”
“কোনো ব্যাপার না কিন্তু আপনারা ফারিশ মাহমুদকে চিনেন না এটা জেনে আমি খুব বিস্মিত হয়েছি।”

আর কেউ কিছু বললো না তারা। একে একে বেরিয়ে গেল পুলিশ স্টেশন থেকে। ওরা যেতেই ওসি সাহেব জোরে নিশ্বাস ফেললেন। একটা ফোন করে বললেন,“ওনারা চলে গেছেন স্যার।”

অপরপ্রান্তের মানুষটি কি বললো তা শোনা গেল না। কিন্তু ওসি সাহেব বললেন,“ভালো থাকবেন।”

ফোন কাটলো ওসি সাহেব।”

পুলিশ স্টেশনের বাহিরে বেশ বিভ্রান্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি,চাঁদনী আর আদ্রিতা। সবার চোখে মুখেই বেশ বিভ্রান্তের ছোঁয়া। সবার বিভ্রান্তের মাঝেই মুনমুন বলে উঠল,
“দেখলি তো বলেছিলাম ছেলেটা মাফিয়া হবে না।”

মুনমুনের কথা শুনে আশরাফ বললো,“কিন্তু আমার কেন যেন এখনো খটকা লাগছে।”

চাঁদনী বললো,“খটকা লাগার কি আছে বাড়ি চল ডিউটিতে কি আজ যাওয়ার তোদের কোনো প্ল্যান নেই নাকি।”

সবার টনক নড়লো। দ্রুত আশরাফ, রনি আর মৃদুল তাদের বাইকে চড়ে বসলো। তারপর রনির বাইকে মুনমুন, আশরাফের বাইকে আদ্রিতা আর মৃদুলের বাইকে চাঁদনী বসে চললো ছয়জন তাদের গন্তব্যের দিকে। হুদাই টাইম নষ্ট।”

তারা বের হতেই একটা পুলিশের গাড়ি ভিতরে ঢুকলো। ওরা পুলিশদের তেমন খেয়াল না করলেও পুলিশগুলো তাদের খেয়াল করলো। একজন মহিলা পুলিশ বললো,“কালকের ডাক্তারটা এখানে কি করতে আসলো?”

আদ্রিতা বেশ চিন্তিতভাবে বসে রইলো বাইকে। তার বেশ খারাপ লাগছে। অপরিচিত এক ছেলের নামের এমন মাফিয়া ট্যাগ দেয়াটা কি ঠিক হলো? আদ্রিতার কিছু মনে পড়লো। কাল যাওয়ার পথে ফারিশ তাকে বলেছিল, আপনি আমায় মনে রাইখেন না। কিন্তু আদ্রিতা রেখেছে উত্তেজনার বসে পুলিশ স্টেশন এসে তার নামে মিথ্যাচার করে বসলো। কাজটা ঠিক হয় নি একদমই ঠিক হয় নি। লোকটা জানলে নিশ্চয়ই রেগে যেত। আদ্রিতা জোরে নিশ্বাস ফেললো। গিল্টি ফিল হচ্ছে তার।”

আশরাফ আদ্রিতাকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে “বাই” বলে চলে গেল। আদ্রিতাও “বাই” বলে আনমনে হেঁটে বাড়ির ভিতর ঢুকলো। গোসল করে তাকে হসপিটাল যেতে হবে আজ তাকে দুটো অপারেশন করতে হবে। আদ্রিতা নিজেকে ধাতস্থ করলো। কাল রাত থেকে সবকিছু কেমন যেন উলোট পালোট হচ্ছে।’
—-
নিজের রুমে একহাতে সিগারেট অন্যহাতে মদের গ্লাস নিয়ে নড়াচড়া করছে ফারিশ। সামনেই আদিব দাঁড়ানো। সে বললো,
“ভাই আজ রাতে কি মালগুলো বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিবো।”

ফারিশ দু’মিনিট চুপ থেকে সিগারেটে টান দিলো। মুখ দিয়ে ফুঁ উড়িয়ে বললো,“না আগামী একসপ্তাহ কোনো মাল বিদেশ কেন, দেশেও দেয়া হবে না।”

আদিব বেশি না ভেবেই বললো,
“আচ্ছা ভাই।”
“হুম। ঔষধ বিক্রি কেমন হচ্ছে?”
“ভালো।”
“গাছগুলোর সেবাযত্ন ভালোভাবে হচ্ছে তো?”
“জি ভাই। আপনি কি কাল একবার যাবেন?”
“কাল নয় দু’চারদিন পর যাবো। কাজে গাফলতি যেন না হয় আদিব।”
“হবে না কিন্তু একসপ্তাহে মাল না দিলে ব্যবসায়ীরা রেগে যাবে না ভাই?”
“যেসব তুমি ভেবো না। বিদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে আমি নিজে কাল কথা বলবো।”
“ঠিক আছে। তবে ভাই কাশ্মীরের ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি করছে। কালকে মাল না পাওয়ায় বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যে মাল না পাঠালে খারাপ হয়ে যাবে নাকি।”

ফারিশ হাসে। মগের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে,
“ওদের দু’সপ্তাহের আগে কোনো মাল পাঠাবে না।”

আদিব তাজ্জব বনে গেল। বললো,
“কিন্তু ভাই,
“কোনো কিন্তু নেই। যা বলেছি তাই বেশি কথা উঠলে আমি নিজে দেখবো এটা।”
“ঠিক আছে।”
“হুম।”

আদিব বেরিয়ে গেল। ফারিশ ঠায় বসে রইলো। পিঠের যন্ত্রণাটা আবার বেড়েছে। কিন্তু ফারিশ তা উপেক্ষা করলো ভাবলো কাল রাতে তার সাথে ঠিক কি ঘটেছিল?”

কাল রাতে কিছু মাল নিয়ে ট্রাকে করে ফারিশ কোথাও যাচ্ছিল। গন্তব্যে কোনো রিস্ক না নেয়ার জন্য সে নিজেই মাল নিয়ে যায়। ফারিশ বরাবরই কোথাও বের হলে মুখে মাস্ক পড়ে থাকে। কাল রাতেও ছিল। আচমকা কিছু লোক তার কাছে আসে। ফারিশ এতে অবাক হয় নি। কারণ এগুলো বরাবরই হয়। সে টোটালি পুরো বিষয়টাকে ইগনোর করে চলে গেল। এরপরই কোথা থেকে যেন হাজির হলো পুলিশের গাড়ি। ফারিশ বিরাট চমকায় এতে তার জানা মতে এখানে এই মুহূর্তে পুলিশ থাকার কথা না। ফারিশ দ্রুত উল্টোদিকে ছুট লাগায় ধরা পড়লে চলবে না। সে গাড়ি ছুটে বহুদূর। পুলিশগুলো সিভিল ড্রেসে আসে। অনেকদূর যাওয়ার পর হঠাৎ ফারিশের গাড়ি থেমে যায় কারণ গাড়ির তেল শেষ। ফারিশ বুঝেছিল তাকে ট্রাপে ফেলা হয়েছে। ফারিশ গাড়ি থেকে নামে হঠাৎ ট্রাকের ভিতর কিসের যেন আওয়াজ আসে। মানুষের মতো। ফারিশ অবাক হয় কারন ট্রাকে মানুষ বলতে সে হীনা অন্য কেউ ছিল না। ফারিশ কৌতুহলী ট্রাকের দরজা খোলে তখনই দেখে ট্রাকে মালের পাশাপাশি কতগুলো মেয়ে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসা। সে চরমভাবে চমকায় এতে ঠিক সেই মুুহুর্তেই পিছন থেকে কেউ তার পিঠে ছুরির পোঁচ বসায়। ফারিশ শুধু তার হাতের ব্যাচটাই দেখে। এরই মাঝে হাজির হয় পুলিশ। ফারিশ কোনো মতে নিজেকে বাঁচাতে জঙ্গলের ভেতর ছুট লাগায় আর তার পিছু পিছু পুলিশ। কতদূর যেতেই জঙ্গল পেরিয়ে রাস্তা আসে আর রাস্তা পেরিয়ে বিশাল হসপিটাল। ফারিশ হসপিটালে পা রাখতেই লোডশেডিং হয়। ফারিশ কোনোরকম সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আদ্রিতার চেম্বারে হাজির হয়। মুখের মাস্ক কখন পড়ে যায় খেয়াল করে নি। কিছু আহাম্মকদের থেকে নিজেকে বাঁচাতে ফারিশ পালিয়েছে কথাটা ভাবলেই রাগে গিজ গিজ করছে শরীর। ফারিশ শক্ত করে মদের গ্লাসটা চেপে ধরলো। তার রাগ হচ্ছে, প্রচন্ড রাগ। তার ওপর ওই ডাক্তার ম্যাডাম। ফারিশ মদের গ্লাসটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,“কাজটা ঠিক করেন নি। ফারিশের নাম নিয়ে পুলিশ স্টেশন গেছেন একদম ঠিক করেন নি।”
—-
রাত একটা নিজের কাজ সেরে বাড়ির পথে হাঁটছিল আদ্রিতা। রাস্তাঘাট ফাঁকা কোনো রিকশা নেই। আচমকা একটা কালো গাড়ি তার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো আদ্রিতা খানিকটা চমকে উঠলো এতে। কিছু বলবে তার আগেই কিছু লোক তার মুখে রুমাল চেপে ধরলো। আদ্রিতা জ্ঞান হারালো।’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে