এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০৫

0
137

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৫

অন্ধকার রুম। ঘুটঘুটে আঁধারে ভরপুর চারপাশ। মৃদু মৃদু আলোতে শেষ হবে এমন মোমবাতি জ্বলছে। আদ্রিতা নড়েচড়ে উঠলো। তার জ্ঞান ফিরছে। আদ্রিতা পুরোপুরি হুসে আসতেই চমকে উঠলো পুরো। সে কোথায় আছে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ। আদ্রিতা কোনো কক্ষের খাটের ওপর বসে। আদ্রিতা আশেপাশে চাইলো, না কেউ নেই। মৃদু মৃদু আলোতে মোমবাতি জ্বলছে তাও শেষ হবে প্রায়। আদ্রিতা অবাক হলো সে এখানে কি করে এলো। হাতের হাত ঘড়িটা দেখলো কোনোরকম বুঝলো রাত তিনটে দুই বাজে। আদ্রিতা তক্ষৎনাৎ খাট থেকে নামলো। মনে করলো তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। কিছু লোক তার মুখে রুমাল চেপে ধরায় জ্ঞান হারায়। তারপর কিছু মনে নেই। কিন্তু এখানে নিয়ে আসার মানে কি? আদ্রিতা আওয়াজ করলো। আতঙ্কিত স্বরে বললো,“কেউ কি আছেন?”

শব্দ করার দু’সেকেন্ডের মাথাতেই কাঁচের গ্লাস পড়ার শব্দ আসলো। আদ্রিতা ঘাবড়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। বললো,“কে, কে ওখানে?”

মুহুর্তের মধ্যে পুরো রুমে লাইট জ্বালানো হলো। আদ্রিতা বিস্মিত নজরে সামনে তাকালো। তার সামনেই সোফার ওপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে ফারিশ। আদ্রিতা আতঙ্কিত স্বরেই পুনরায় বললো,“আপনি?”

ফারিশ নিরুত্তর। এমনকি সে এখন পর্যন্ত তাকায়ও নি আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতা কি করবে বুঝতে পারছে না। সে আবার প্রশ্ন করলো,“আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে?”

ফারিশ এবারও কোনো উত্তর দিলো না। পাশেই টি-টেবিলের ওপর থেকে মদের বড় বোতল থেকে কাঁচের গ্লাসে মদ ঢালতে লাগলো। আদ্রিতার বিরক্ত লাগছে। বিতৃষ্ণায় চারপাশ বুঝি ধেঁয়ে আসছে। চরম বিরক্ত নিয়ে তৃতীয় বারের মতো প্রশ্ন করলো আদ্রিতা,“আপনি কথা কেন বলছেন না? এভাবে বখাটেদের মতো আমাকে তুলে এনে উত্যক্ত করার মানে কি?”

ফারিশ এবার মুখ খুললো সরাসরি আদ্রিতার দিকে না তাকিয়েই বললো,
“বখাটে! দারুণ নাম তো।”

আদ্রিতার ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে ফারিশের গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসাতে। কিন্তু করলো না। নিজেকে সংযোত রেখে বললো,
“এই গভীর রাতে মশকরা করছেন আমার সাথে?”

ফারিশের দৃষ্টি তখনও মদের গ্লাসের দিকে। সে বললো,“আপনার কি এখনো মনে হচ্ছে না আমাকে মনে রেখে আপনি ভুল করেছেন?” আমার নাম নিয়ে পুলিশ স্টেশন গিয়েছেন কাজটা কি ঠিক করেছেন ডাক্তার ম্যাডাম?”

আদ্রিতা দমে গেল। তার মানে ফারিশ জেনে গেছে সে পুলিশ স্টেশন গিয়েছিল। আদ্রিতা চুপ করে রইলো। ফারিশ এবার তাকালো আদ্রিতার মুখশ্রীর দিকে। ভয়ার্ত মুখ, এলেমেলো চুল, ক্লান্ত শরীর। বোঝাই যাচ্ছে অনেক খেটেখুটে বাড়ি ফিরছিল। ফারিশ সোফার ওপর আয়েশ করে বসলো। মদের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বললো,“এবার আপনি কেন কথা বলছেন না?”

আদ্রিতা তাকালো ফারিশের দিকে। অপরাধী স্বরে বললো, “আমি দুঃখিত ওই বিষয়টার জন্য।”

ফারিশ কিছু বলে না। চুপ করে রয়। আদ্রিতা আবার বলে,
“আমি বুঝতে পারি নি আমি খুবই দুঃখিত।”

ফারিশ ফটাৎ করেই বলে উঠল,“আপনাকে আমার মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি বেঁচে থাকলে পরবর্তীতে আমার সমস্যা হবে।”

ফারিশের কথা শুনে তাজ্জব বনে গেল আদ্রিতা। অদ্ভুত স্বরে বলে,
“সমস্যা হবে মানে এখানে সমস্যা হওয়ার কি আছে?”
“কিছু নেই তাও মনে হচ্ছে।”
“আপনার আচরণ আমার কাছে অদ্ভুত লাগছে আপনি সত্যিই মাফিয়া নন তো।”

ফারিশ হাসে। অদ্ভুত দেখতে লাগে সেই হাসি। আদ্রিতা বলে,
“এখানে হাসার কি আছে?”
“সত্যি কি, কিছু নেই?”
“আমি তো দেখছি না।”
“আমি মাফিয়া হলে আপনি কি আমায় ভয় পাবেন?”

আদ্রিতা বিরক্ত নিয়ে বললো,
“দেখুন মিস্টার বখাটে আপনি মাফিয়া হন বা মাফিয়ার দাদা হন তাতে আমার কিছু যায় আসে না আমায় যেতে দিন।”
“যেতে দেয়ার জন্য তো ধরে আনি নি।”

আদ্রিতা কি ঘাবড়ালো মটেও ঘাবড়ালো না উল্টো বললো,
“তো কিসের জন্য ধরে এনেছেন?”
“যদি বলি খু*ন করার জন্য?”
“তো করে ফেলুন।”

ফারিশ অবাক হলো। এই মেয়ে তাকে ভয় কেন পাচ্ছে না। ফারিশ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আদ্রিতা ঠায় দাঁড়িয়ে। ফারিশ আসতে আসতে আদ্রিতার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,
“আমার মতে আপনার আমাকে ভয় পাওয়া উচিত?”
“কিন্তু আমি পাচ্ছি না কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।”

ফারিশের খাপছাড়া লাগছে। কেমন সবটা এলেমেলো। ফারিশ পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করলো। আদ্রিতার কপাল বরাবর রেখে বললো,“আপনি আমায় সাহায্য করেছিলেন সেই খাতিরে আপনায় সাবধান করেছিলাম আমায় মনে রাখবেন না কিন্তু আপনি মনে রেখেছেন। যে ফারিশ কখনো পুলিশ স্টেশনের ধারে কাছে যায় নি সেই ফারিশের নামে আপনি মাফিয়া ট্যাগ বসিয়েছেন। আপনার ওপর চাপা রাগ জন্মেছে আর আমার রাগ জন্মানো মানে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত।”

আদ্রিতা ফারিশের চোখে চোখ রেখেই বললো,“আমি ভুল করেছি মানছি। সরিও বলেছি কিন্তু আপনি নিচ্ছেন না। এখন আমায় মেরে আপনি শান্তি পেলে মেরে ফেলুন। তবে আজ মারবেন না কাল আমাকে চারটে পেশেন্টের অপারেশন করতে হবে দুটো সকালে আর দুটো রাতে। আমাকে মারার আগে তাদের বাঁচাতে দিন।”

ফারিশ কি বলবে বুঝতে পারছে না। এ মেয়ে কি পাগল নাকি অন্য কিছু। নিজে মরতে বসেছে আর অন্যকে বাঁচানোর কথা বলেছে। অবশ্য ডাক্তার। মানুষ বাঁচানোই তো এদের কাজ। ফারিশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,“আপনায় আরেকটা সুযোগ দিতে ইচ্ছে করছে। এটাই লাস্ট ওয়ারিং আমাকে মনে রেখে নিজের বিপদ আর বাড়াবেন না। ভালো থাকুক নিজের মতো। ফারিশ কাউকে ওয়ারিং দেয় না কিন্তু আপনায় দ্বিতীয় বারের মতো দিচ্ছি এর অবহেলা করবেন না।”

ফারিশ কপাল থেকে পিস্তল সরালো। হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আদ্রিতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ফারিশ বের হতেই আদ্রিতা জোরে নিশ্বাস ফেললো ভয়ে তার হৃদপিণ্ড বুঝি বাহিরে বেরিয়ে আসার উপত্রুম ছিল। ফারিশ যখন কপালে পিস্তল ধরেছিল ভেবেছিল এই বুঝি শেষ। কিন্তু না বেঁচে গেল। বার কয়েক আরো জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো আদ্রিতা।”
——
নিচের সোফায় বসে আছে ফারিশ। তার ভীষণ অবাক লাগছে মেয়েটাকে খুন কেন করতে পারলো না। কাউকে খুন করবে ভেবেও খুন করতে পারলো না এই ঘটনা এই প্রথম ঘটলো ফারিশের সাথে। এমনটা তো আগে কখনো হয় নি। তবে আজ কেন এমন হলো? আদ্রিতা যখন অজ্ঞান ছিল তখনই ফারিশ ভেবেছে জ্ঞান ফিরলেই মেরে ফেলবে কিন্তু পারলো না। মেয়েটার চোখের দিকে তাকালেই কেমন যেন লাগে ফারিশের। ফারিশ পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বালালো। মুখে নিয়ে ফুঁ উড়ালো। কেমন যেন লাগছে তার, খুন না করতে পারার অশান্তি হচ্ছে। আদিব এগিয়ে আসলো। বললো,
“ভাই মেয়েটাকে কি খু*ন করেছেন গুলির তো কোনো শব্দ পেলাম না?”

ফারিশ আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“খু*ন করি নি।”

আদিব অবাক হয়ে বললো,
“কেন?”
“জানি না। মেয়েটা আমায় সাহায্য করেছে তাই জন্যই বোধহয় সংকোচ হচ্ছে।”

আদিব কিছু বলে না। বিষয়টা প্রায় অপরিকল্পিত ছিল। আদ্রিতা নিচে নেমে এলো। আটপাঁচ কিছু না ভেবেই বলে উঠল,
“এই যে মিস্টার বখাটে দ্রুত চলুন। আমায় বাসায় পৌঁছে দেবেন।”

আচমকাই মেইলি কণ্ঠটা কানে আসতেই আদিব ফারিশ দুজনেই চমকে উঠলো। আদিবের চোখ তো বেরিয়ে আসার উপক্রম ফারিশ ভাইকে বখাটে বলে ডাকছে মেয়েটার তো দারুণ সাহস। ফারিশ বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়ে বাড়াবাড়ি করছে। আদ্রিতা আর একটু এগিয়ে আসলো। পুনরায় বললো,“আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন মিস্টার বখাটে?”

ফারিশ তার রাগী দৃষ্টি নিয়ে বললো,
“আমি বখাটে নই আমাকে ওই নামে ডাকবেন না।”
“কোন নামে ডাকবো নাকি ডাকবো না সেটা পরের কথা আগে আমায় বাড়ি পৌঁছে দিন।”

ফারিশ আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আদিব মেয়েটাকে পৌঁছে দিয়ে এসো।”

আদিব ঘাবড়ানো স্বরে বললো,“আমি..
ফারিশ তাকালো আদিবের দিকে। বললো,“হুম তুমি।”

এদের মাঝে আদ্রিতা বলে উঠল,
“উনি যাবেন কেন? গেলে আপনি যাবেন। আমায় তুলে কি উনি এনেছেন নাকি আপনি?”
“আপনি বড্ড কথা বলেন শুনতে আমার বিরক্ত লাগে। কথা কম বলে ওর সাথে চলে যান। নয়তো ঘরে বসে থাকুন।”
“ঘরে বসেও থাকবো না, ওনার সাথেও যাবো না। আপনিই নিয়ে যাবেন আমায়?”

ফারিশ এবার রেগে গেল। আচমকা বসা থেকে উঠেই আদ্রিতার গালে হাত উঠাতে গিয়েও থেমে গেল। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,“বেশি কথা বললে যে ওয়ারিং দিয়েছি তাও ফিরিয়ে নিবো তৃতীয় বার যদি আমার ধারে কাছেও আপনায় দেখেছি তবে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। নাউ আউট।”

আদিব মাঝে দাঁড়ালো। থর থর করে বললো,“আমি নিয়ে যাচ্ছি ভাই, আপনি রেগে যাবেন না।”

এই বলে কোনো মতে আদ্রিতাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল আদিব। আর ফারিশ গিয়ে বসলো সোফায়। চরম রাগ উঠছে তার।’
—-
গাড়ি চড়ে বাড়ি যাচ্ছে আদ্রিতা। ফারিশের লাস্ট কথাটা বেশ অদ্ভুত লেগেছে তার। সে কি যেচে পরে ফারিশের সামনে গেছিল নাকি? ফারিশ নিজেই তো তুলে নিয়ে গেল আবার বললো পরে যেন তার ধারে কাছে না দেখে আদ্রিতার বয়েই গেছে ফারিশের ধারে কাছে ঘেঁষতে। আদ্রিতা বির বির করে বললো,
“পাঁজি বখাটে ছেলে একটা। নিজেই ধরে নিয়ে শাসিয়ে কথা শুনিয়ে পাঠিয়ে দিলো। তোর কপালে বউ নাই। অভদ্র ছেলে কোথাকার!’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। ]

#TanjiL_Mim♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে