Friday, August 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2456



বসের সাথে প্রেম পর্ব-১১

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-১১

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ভালোবাসা মানে হলো ভালোবাসার মানুষটির সুখের জন্য ত্যাগ,ভালোবাসা মানে দুর থেকে প্রিয় মানুষটির জন্য শুভকামনা…..
ভালোবাসা মানে পাবো না জেনেও তার মঙ্গলের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা….
সেই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই না হয় আমি আমার না পাওয়ার বেদনাকে সুখের পরম প্রাপ্তি মনে করে, ওর জন্য মন থেকে দোয়া করব।
সেদিন অফিসে নতুন করে জয়েন করেছিলাম ওর পি.এ হয়ে। অফিস শেষে ওনার সাথে ওনার গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলাম। মাঝরাস্তায় ওনাকে গাড়ি থামাতে বললাম। ওনি রাস্তার পাশে গিয়ে গাড়ি থামালেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে ওনাকে চলে যেতে বলে পাশের পার্কটার বেঞ্চে গিয়ে চুপটি করে বসে রইলাম। ওনি যে কখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারিনি। যখন বুঝতে পারলাম তখন ওনার দিকে তাকালাম। ওনি আমার পাশে নিঃশব্দে বসে পরলেন। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর ওনি’ই মুখ খুললেন-
‘ আগে কখনো এসেছ?’
-‘ একবার নয়, অনেকবার এসেছি। মন খারাপ হলেই আমি এখানে আসি। চারপাশের সতেজ প্রকৃতি আর এই ফুলবাগান দেখলে মনটা আর খারাপ থাকে না। ভালো হয়ে যায়। আমার মন খারাপের সাক্ষী এই পার্ক….
চারপাশে এই যে এত বৃক্ষলতা, ফুলের বাগিচা এই সবকিছুর সাথে আমার অনেক অনেক সখ্যতা।
ওরা আমায় খুব বেশী আপন করে ফেলেছে। এই দেখেন না আসতে না আসতে কেমন বাতাস শুরু করে গেল…..
-‘ অপূর্ব!(সিয়াম)
-‘ কি?!!!
Ufff! দেখেন না ভাইয়া কেমন বাতাস বওয়া শুরু করে দিয়েছে।(চুল সামলাতে সামলাতে মায়া)
-‘ ওয়াও……(সিয়াম)
-‘ কি?(মায়া)
-‘ তোমার চুল……..(সিয়াম)
-‘………
আচ্ছা, চলেন যাওয়া যাক এবার……..(মায়া)
-‘ আরেকটু বসি না?!?(সিয়াম)
-‘ আচ্ছা…….(মায়া)
-‘ হুম………….(সিয়াম)
-……….(মায়া চুপচাপ)
-‘………(সিয়ামও চুপচাপ)
-‘ ভাইয়া একটা কথা বলব? ওনার দিকে তাকিয়ে আমি কথাটা বলছিলাম…
ওনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল- জি, বলো।
-‘ আপনি কি সত্যি’ই কাউকে ভালোবাসেন?কথাটা বলতে গিয়ে গলা আটকে আসছিল আমার। তবুও বললাম।
ওনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না, তাই নিচে তাকিয়ে আছি প্রশ্নটা করেই। ওনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বললেন, হুম। বাসি।
-‘ কতটুকু বাসেন?(M)
-‘ যতটুকু ভালোবাসলে বুকে হাত দিয়ে বলা যায়, আমার মত ভালো বোধ হয় পৃথিবীর আর কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকাকে বাসতে পারবে না।(S)
-‘ আর বসে থাকতে পারছিলাম না। বসা থেকে উঠে পরলাম। ওনি এখনো বসে আছেন। চোখে জল, মুখে হাসি নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করলাম-
” ম্যাডাম নিশ্চয় আপনাকে খুব ভালোবাসে?!!!
-‘ নির্লিপ্ত কন্ঠে ওনার জবাব-
জানি না, তবে ভালো না বাসলেও ও আমায় ঘৃণা করে না।’
-‘ একতরফা ভালোবাসা?
কিছুটা গম্ভীর হয়ে ও বলল,
আপাতত একতরফা’ই বলতে পার। তবে খুব শিগ্রয় মনের কথা’টা ওকে বলে দিব….(S)
-‘ সেটাই ভালো।
মনের কথা যত তাড়াতাড়ি পারেন বলে দিবেন, ভাইয়া। না হলে পরে প্রস্তাতে হবে….
ও হাসোজ্জল মুখে বলল,
সেটাই করতে হবে।
কেন জানি না চোখ দিয়ে পানি পরতেছে। কন্ঠ আটকে যাচ্ছিল। বহুকষ্টে কান্না থামালা।
আচ্ছা!
ওনি কি অনেক সুন্দর,ভাইয়া?
-‘ সিয়াম জোর গলায় বলল,
হুম, অনেক সুন্দর।
…..দেখতে কেমন? আমার থেকেও বেশী মায়াবী?
– হুম, তোমার থেকেও অনেক সুন্দর সে। তবে সে নিজেও জানে না সে কতটা সুন্দর। ওর ঐ মায়াবী মুখের পানে যতবার’ই তাকাই, ততবার’ই ওর প্রেমে পরে যায়। মায়া জানো, খুব ভালোবাসি আমি আমার ঐ মায়াপরিটাকে।
এতটাই ভালোবাসি যে যা ও কখনো কল্পনাও করতে পারেনি, পারবেও না…..
কেন জানি এবার আর কান্না আটকাতে পারছিলাম না।
অবস্থা বেগতিক দেখে মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরলাম…..
ছেলেটির ডায়েরী_
সে রাতের পর থেকে ও কেমন যেন হয়ে গেল। হাসি-ঠাট্টা, গল্পে-আনন্দে ও কেমন যেন একটু বেশীই মেতে থাকত। আমার সাথেও হেসে হেসে কথা বলত। আগের মত আর চুপ করে থাকত না। পুরো ব্যপারটা’ই আব্বু-আম্মু কিংবা বোনের কাছে স্বাভাবিক হলেও আমার কাছে কেন যেন ব্যপার’টা অস্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশীই মনে হতো। মনে হতো, এই যে ওর এত হাসি-ঠাট্টা, গল্প-আনন্দ সবকিছুই যেন মেকি। কেন জানি মনে হতো- আমি/আমরা যা দেখছি তা সত্যি নয়, আর যা সত্যি তা আমরা দেখছি না। সেদিন ও নতুন করে আমাদের কোম্পানিতে আমার পি.এ হয়ে জয়েন করেছিল। বাবার কড়া নির্দেশ অফিসে নেওয়া এবং আসার সময়ও যাতে ওকে সাথে নিয়ে আসি। সেদিন আসার সময় মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ও গাড়ি থেকে নেমে পরে। তারপর আমাকে চলে যেতে বলে। ওর আসতে দেরী হবে তাই ওকে রেখেই চলে আসতে বলে। আমি সেদিন গাড়িতে রাস্তার পাশে রেখে ওর পিছু নিলাম। যেতে যেতে ও রাস্তা থেকে ক্ষাণিকটা দূরবর্তী স্থানে যে পার্কটা রয়েছে ঐখানে হাজির হলো। পার্কটার এককোণে একটা বেঞ্চ ছিল, ও খুঁজে খুঁজে সেখানটাই গিয়ে বসল। আমি যে পিছনে দাড়িয়ে আছি সেটা বোধ হয় ওর দৃষ্টিগোচর হয়নি এতক্ষণ। আর যখন বুঝতে পারল পিছনে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে, তখন মাথা তুলে একবার পিছনে তাকালো। তারপর চোখ আগের জায়গায় সরিয়ে নিল। আমি ওর সাথে গিয়ে চুপটি করে গিয়ে বসলাম। ও একটা কথাও বলেনি। মৌনতা ভেঙে আমি’ই সেদিন প্রথম প্রশ্ন করেছিলাম।
-‘ এই পার্কটার সাথে ওর পূর্বপরিচয় আছে সেটা সেদিন’ই জানতে পারলাম। আর এটাও জানতে পারলাম পার্ক’টাতে ও তখনি আসে, যখন ওর মনটা খুউব, খুউউব বেশী খারাপ থাকে। ও সেদিন আমায় অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছিল। বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,
– আমার কল্পনার রাজকুমারীকে আমি কতটা ভালোবাসি?! ও দেখতে ওর থেকেও মায়াবী কিনা?!!!
~আমি সহাস্যে বলেছিলাম,
হ্যাঁ, ও তোমার থেকেও সুন্দর! কিন্তু ও নিজেও জানে না ও কতটা সুন্দর…!!!??
-‘ সেদিন মায়াকে আরেকটু বসতে বলেছিলাম, কিন্তু ও নাকি একটু ক্লান্ত ছিল। তাই
ও আমায় রেখে ছুটে গাড়ির কাছে চলে গেল। আমি আসার আগেই গাড়িতে উঠে বসে পরল। আমি গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম। পুরো রাস্তা ও চুপচাপ গিয়েছিল, একটা কথাও বলেনি। কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হ্যাঁ, না জবাবটাই দিয়েছে।
এভাবেই চলে গেল আরো একটা বছর। মায়া এখন আর সেই আগের মায়াটি নেই। দৈহিক ওও মানসিক গঠনে ও হয়ে উঠেছে এখন একজন পরিপূর্ণ মানবী। একজন পরিপূর্ণ নারীতে যা যা বিদ্যমান থাকে সেটাই ওর মধ্যে ফুটে উঠেছে। ওর চলায়-বলায়, ওর আকার-আকৃতিতে পরিপূর্ণ নারী ছাপ স্পষ্ট….
মায়া এখন আর মামার সংসারের অবহেলিত সেই মায়াটি নেই, ও এখন বিশিষ্ট শিল্পপতি খন্দকার মো. আশিকুর রহমান সাগরের মেয়ে। সেই হিসেবে দেশের নামী-দামি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মহলের অনেকেই মায়া’কে পুত্রবধূ করে নেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। বাবা দক্ষ ব্যবসায়ীর মত মায়ার বিয়ে দেওয়া নিয়েও দক্ষতার পরিচয় দিবেন, এটাই আমার পরিবারের সবাই নিশ্চিত জানে।
-‘ একটা ভয় সারাক্ষণ আমায় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, আর সেটা হলো মায়া’কে হারানোর ভয়। বাবা যখন মায়ার জন্য উপযুক্ত পাত্রনির্বাচন করে ফেলবে তখন আমার কি হবে?!!! আর মুখ থেকে সকালের ঘুম থেকে উঠব, আর কি নিয়ে আমি বাঁচব?!!!
আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাব একেবারে….
আর পারছিলাম না।
আবার মনের কথাটি ওকে বলতেও পারছিলাম না। যতবার’ই বলতে চেয়েছি ততবার’ই ওর ভাইয়া ডাকটার কাছে হেরে গিয়েছি। ফিরে এসেছি মনের লুকানো কথাটি না বলেই…..
সেদিন জীবনের প্রথম নেশা করেছিলাম। নেশাটা বোধ হয় একটু বেশী’ই হয়ে গিয়েছিল। নেশার বোতল হাতে নিয়ে মাতলামি করতে করতে কখন যে মেইন রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি। হুশ হয় তখন যখন মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়। মাথায় হাত দিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই দেখি বন্ধু আতিক আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছল জানতে চাওয়ার আগেই গালে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম। ও আমায় রাস্তা থেকে তুলতে তুলতে ৩টা চড় মারল। তারপর বাসায় নিয়ে আমার মাথায় পানি দিল, আমায় টক খাইয়ে। চোখ থেকে নেশা অনেকটাই চলে গেছে। এখন আশেপাশের সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এখন আর মায়াকে দেখতে পাচ্ছি না চারদিকে।
রাত আনুমানিক ১১টা কি সাড়ে ১১টা বাজে। বন্ধু আতিক ও ওর মা-ভাবির জুরাজুরিতে ডিনার’টা ওদের বাড়িতেই করে নিলাম। ও বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে, আমি ওদের বাসায় থাকব, তাই টেনশনের কোন কারন নেই। রাত ১২টা_
গালটা ব্যথা করতেছে।
গালে হাত বুলাতে বুলাতে মায়ার কথা ভাবছি। ও কি করছে, খাইছে কি না ইত্যাদি, ইত্যাদি। তখন’ই আতিক প্রবেশ করে রুমে।
-‘ ব্যথা করতেছে?(আতিক)
~’ হুম…?(আমি)
-‘ শালা, দে আর কয়টা লাগিয়ে দেই।?(আতিক)
~’ নে…বলে গালটা বাড়িয়ে দিলাম। গাক বাড়াতে দেরী গালে আরেকটা বোনাস পরতে দেরী না….
-‘ শালা! তুই কিরে? মানুষ না গন্ডার?!!! এভাবে আর কত? আর কত কাঁদবি?!!!(আতিক)
~তো, আমি কি করব??(আমি)
-‘ কি করব মানে? কাল ভালোবাসা দিবস না?!!!
তুই সরাসরি কাল গিয়ে ওকে প্রপোজ করবি। :/ (আতিক)
~’ আমি কি পারব বলতে? আর ও যদি রিজেক্ট করে দেয়? তখন! তখন কি হবে? ওকে তো হারিয়ে ফেলব আমি। অদৃশ্য যে অধিকারে ওর বিষয়ে খবরদারি করতে পারি, তাও হারিয়ে ফেলব…(আমি)
-‘ একসেপ্ট কিংবা রিজেক্ট সেটা পরে দেখা যাবে। তোর বন্ধু আতিক আছে তোর পাশে। তুই শুধু কাল ওকে আই লাভ ইউ’টা বলে দেখ কি হয়। বাকিটা আমি দেখব।
সেদিন সারারাত ভর একটা নিদারুণ ভয় আর উত্তেজনার মধ্যে ছিলাম।
তারপর শেষরাতে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙলো কারো কলের আওয়াজে। ফোনে তাকিয়ে দেখি ১২টা বাজে। বাবা আরআর সাইমা মিলে ৭৪টা কল দিয়েছে। সর্বনাশ! এত বেলা অবধি ঘুমালাম?!! তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আতিকের ভাবিকে বলে ছুটে চললাম ফুলের দোকানের দিকে। একটা সুন্দর ফুলের তোড়া কিনে বাবাকে কল দিলাম। স্যরি বললাম। জরুরী কাজের কথা বলে গাড়ি পাঠাতে বললাম। বাবা, ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিল। তারপর গাড়ি নিয়ে ছুটে চললাম অফিসের দিকে। সেখানে গিয়ে মায়াকে খুঁজে পায়নি। মেনেজার আংকেলের থেকে খবর নিয়ে জানতে পারলাম, অসুস্থতার কথা বলে ও নাকি একটু আগেই বাসায় চলে গেছে। বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম, মায়া বাসায় পৌঁছালে আমায় জানাতে।
১ঘন্টা,
২ঘন্টা,
৩ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেল। বাসা থেকে রোকসানা ফোন করেনি। আমি আবারো কল দিলাম। জানতে পারলাম,
ও তখনো বাসায় পৌঁছায়নি।
টেনশনে পরে গেলাম।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলাম। এই মুহূর্তে নানান বাজে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
,
মলিন মুখে হাসি ফুটে উঠল।
বসা থেকে উঠে পরলাম।
তারপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। গন্তব্য-
‘ মায়ার মন খারাপের সাথী পার্কটা…..’
আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম সেই পার্কটাই। বেঞ্চের এককোণে চুপটি করে বসে একজোড়া দম্পতির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফুলগুলো হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক ভালোভাবে তাকালাম। ও হাসোজ্জল মুখে বলল__
‘ আরে সিয়াম ভাই আপনি? কাকে খুঁজছেন?’
~’ এই তো আমার মায়া-পরিটাকে…….'(আমি)
-‘ ওহ, আপু কি এখানে আসবেন বলেছিল? (মায়া)
~’ বলেছিল তো আসবে।'(আমি)
-‘ তো কোথায় ওনি, ভাইয়া?(মায়া)
~এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম,
ও মনে হয় আজকে আসেনি মায়া…….
ও আমার হাতে রাখা ফুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ আপুর জন্য এনেছিলেন বুঝি?’
-‘ হুম, ও তো আসে নি। আমি এ ফুল দিয়ে কি করব? তার চেয়ে বরং এগুলো তুমি’ই নিয়ে যাও মায়া…….(আমি)
মায়া মিষ্টি হেসে ফুল নিতে নিতে বলল-
‘ফুল সৌন্দর্য এবং পবিত্রতার প্রতিক। এ ফুল উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই….’
ও ফুলগুলো হাতে নিয়ে বসা থেকে উঠে পরল। আসি বলে আমাকে রেখে’ই ফুলগুলো নিয়ে চলে গেল……
আমি গাধা হা করে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
রাত্রে আতিকের সাথে দেখা।
-‘ কিরে?! বলতে পেরেছিস মনের কথাগুলো?
★আমি:- নারে! আমি পারলাম না। কি করব বল? যতবার’ই বলতে চাই ততবার’ই ওর ভাইয়া ডাকটার কাছে হেরে যায়।
★আতিক:- বুঝতে পারছি তোকে দিয়ে হবে না। যা করার আমাদের করতে হবে।
★আমি:- কি করবি তোরা?
★আতিক:- শুন তাহলে…..(……….)……???
এটাই শেষ।
★আমি:- কিন্তু ও যদি বুঝে যায়?!!!
★আতিক:- বুঝার জন্য তো আমরা এ পরিকল্পনা করিনি। যত বুদ্ধিমতি’ই হোক না কেন, ও তোকে ধরতে পারবে না।তুই শুধু কাজটা শুরু কর…
★আমি:- অতঃপর…
★আতিক:- অতঃপর ওর মনের ঘরে প্রবেশ করে ভালোবাসার বীজ বপন করে বেরিয়ে আসবি। বেরিয়ে আসার সময় ও যদি তোকে চিনতে পারে, বুঝতে পারে তোর ভালোবাসাকে তাহলে ও তোর, সাথে সাথে ভালোবাসার শিকল পরিয়ে দিবি ওর পায়ে…..
★আমি:- আর যদি না বুঝতে পারে?
★আতিক:- আর যদি না বুঝতে পারে তাহলে উড়িয়ে দিবি শূন্যে। মুক্তবিহঙ্গের মত উড়ে যাক দুর অজানায়। তবে, এটা যেন কখনো না হয়……
★আমি:- ওকে, তাহলে তাই হবে………..
মেয়েটির ডায়েরী_
ওর দেওয়া ফুলগুলো যতনে রেখে দিয়েছি আমার বেডরুমে। রাত ১১টা……
ফুলগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে সেই সন্ধ্যা থেকে তাকিয়ে আছি। রাত্রি গভীর। চোখ থেকে অঝোরে জল গড়িয়ে পরছে আর বুকের বামপাশটাই অজানা চিনচিনে এক ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। ঠিক তখনি এ রুমের টেলিফোন’টা বেজে উঠল। চোখের জল মুছে রিসিভারটা উঠালাম। হ্যালো! বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে উঠল।
★মিস মায়া বলছেন?
~হুম, কিন্তু আপনি কে?
★মানুষ…..
~ হুম, জানি আপনি মানুষ। এর ছাড়া তো প্রাণী ফোন করতে পারে না। তো আপনার নাম’টা কি?(কর্কশ কন্ঠে)
★ মিস মায়া!
আপনি বোধ হয় রেগে যাচ্ছেন! আচ্ছা, এখন তাহলে রাখি। আপনার সাথে আমি পরে কথা বলব।
– কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না আমি। তার আগেই ফোনটা কেটে দিল লোকটা…..
কে হতে পারে লোকটা? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। সারাদিনে একবারও সিয়াম ভাইয়ার সাথে কথা বলতে পারিনি। ও কেমন যেন এড়িয়ে যাচ্ছে আমাকে। সেদিন আর লোকটা কল দেয়নি।
২দিন পর……..
ঠিক একই টাইমে টেলিফোন’টা বেজে উঠে।
ছোঁ মেরে ফোন’টা রিসিভ করলাম। এতরাত্রে সজাগ থাকার একটাই কারন। সে হলো সিয়াম ভাইয়া……
যাকগে!
রিসিভারটা উঠিয়ে হ্যালো বলতেই আবারো সেই কন্ঠ ভেসে আসল।
★কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন বুঝি?
~ না……
★ তাহলে এত রাত্রে জেগে আছেন যে?
~আমার ভালো লাগছে তাই।
★ আমার কিন্তু মোটেও ভালো লাগছে না আপনার ভেঁজা কন্ঠ। আচ্ছা, কেউ কি আপনাকে ছ্যাঁকা-ত্যাকা দিল নাকি?
~ You…….বকতে গিয়েও বকলো না। রেগে রিসিভারটা উপুরমুখী করে রাখল মায়া।
অসহ্য লোকটা…….
ঘুমিয়ে পরে মায়া।
৪,৫দিন পর__
মনটা ভিষন ভিষন খারাপ। আগে কখনো এতটা কাঁদেনি মায়া, যতটা এখন কাঁদে।
– ইদানিং ও আমায় খুব বেশী ইগ্নোর করছে। আগের মতমত কথা বলছে না, অফিসে যতকক্ষণ থাকি, ওনার দিকেই তাকিয়ে থাকি। অথচ ওনি?!!!
একটাবারও চোখ তোলে দেখে না।ডাকে না আমায়। সেরাতে আবারো কল আসে। রিসিভার উঠিয়ে কান্না ভেঁজা কন্ঠে হ্যালো বলতেই ওপাশ লোকটি বলে উঠল-
★ আহারে! বেচারি…..
ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে।
~’ দেখুন, আমি কোনো ছ্যাকা ত্যাকা খায়নি। ব্যাকা হওয়া তো অনেক দুরের কথা…
★প্রেম করবেন, কিন্তু ছ্যাকা পরুটা খাবেন না, তা কি হয়?
না, না। আর যায় হোক, আমি
আমি অন্তত সেটা বিশ্বাস করি না। এ কথা অন্য কাউকে বলবেন, আমাকে নয়। মিস মায়া পরি।
~ আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন এটাই সত্যি। আমি প্রেম করি না….
★ Hurreh! তাহলে লাইন ক্লিয়ার…….
ওকে, ঘুমাও মায়া-য়া-পরি।
~’ লাইন ক্লিয়ার মানে?
,
হ্যালো, হ্যালো।
নাহ, ফোনটা কেটে দিল।
একসপ্তাহ পর_
হ্যালো মায়া পরি?!!!
~হ্যালো……….
★ সেকি! তোমার গলা তো বসে গেছে ঠান্ডায়। নিশ্চয় ঔষধ খাওনি? এক্ষণি কিছু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নাও…
~ খাবো না…..
★ একদম ঘাড় ত্যাড়ামি করবা না লক্ষ্মী! যা বলছি তাই করো….
~’ আপনি আমার কে যে আমাকে আপনার কথা শুনতে হবে? আর আপনিই বা কেন আমার কেয়ার করছেন?
★ আমি তোমার কেউ না হতে পারি, কিন্তু তুমি আমার অনেক কিছু………
আর কেয়ারের কথা বলছ?
ভালোবাসি তোমায়, অনেক বেশী ভালোবাসি।তাই কেয়ার করি।
~ কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না।
★ বাসো না,বাসবে।সমস্যা কি?!!!
~কখনো বাসব না। কখনো না।
★ এত গ্যারান্টি দিও না।
আজ না হয় কাল ভালো তোমাকে বাসতেই হবে।
~আপনি ভুল করছেন….
৬মাস পর_
হ্যালো………
মায়া-পরি প্লিজ ফোনটা কেটো না।
~আপনাকে আর কতবার বলব আমি আপনাকে ভালোবাসি না। বাসতে পারব না।
★ কেন বাসো না? কেন বাসতে পারো না?
~ কারন, আমি একজনকে ভালোবাসি।
★বিশ্বাস করি না।তুমি আমায় ছাড়া অন্য কাউকেই ভালোবাসতে পারো না। তুমি শুধু আমায় ভালোবাসো…
~না, আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
★না, তুমি আমায় ভালোবাসো।
~না, আমি বাসি না।
★ না, তুমি আমায় ভালোবাসো।
~না, আমি বাসি না।
★জি,তুমি আমায় ভালোবাসো।
~জি, না। বাসি না।
★জি, হ্যা! বাসো। তুমি আমাকেই ভালোবাসো।
~Ufff! বাসি না।
★জি, বাসো।আমায় ভালোবাসো ডেয়ার……..
~আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আমি সিয়াম ভাইয়াকে ভালোবাসি। বিশ্বাস করেন আমি সিয়াম ভাইয়াকে…(.?.)
এটুকু বলে মায়া আটকে গেল। একি বলে ফেললাম আমি।
এদিকে ফোনের ওপাশ থেকে লোকটি-
★জানি তো সিয়ামকেই ভালোবাসো।স্যরি, তোমার সিয়াম ভাইয়াকে।
~আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।প্রতিউত্তরে কিছুই বলতে পারিনি। এদিকে ফোনের ওপাশ থেকে অদ্ভুতসব হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে……

চলবে…..

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ১০

0

♦মহাসপ্তাহ♦
বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ১০

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ছেলেটির ডায়েরী_
সেদিন আমি ইচ্ছে করে বাথরুমে ঢুকিনি, তবুও ও কেমন যেন হয়ে গেল। সবসময় আমার থেকে দুরে দুরে থাকত, আমি কথা বলতে গেলে আমায় এড়িয়ে চলত, কথা বলত না, আমার দিকে তাকাতো না। যদি ভুল করেও কখনো সামনাসামনি পরে যায় তখন অন্যদিকে তাকিয়ে চলে যায়। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কি এমন অন্যায় করলাম যার কারনে ও আমার সাথে এমন করতেছে। সেদিন ভাবতেছিলাম আর ডায়েরী লিখতেছিলাম।
আচ্ছা, ও লজ্জায় এমন করছে না তো?!!!
যদি তাই হয় তাহলে তো ও আর আমার সাথে কথায় বলতে পারবে না, বলবে না।আচ্ছা, ওর দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি হাসি-আনন্দ যদি আমি আর না দেখতে পাই?!!!
না, না….
যে করেই হোক ওকে কাছে আনতে হবে আর স্যরি বলতে হবে।
সেদিন মাথা ব্যথার অভিনয় করে সারাবিকেল কান্না করছি। আম্মু খবর শুনে আসছিল ঔষধ খাওয়াতে, আমি খাইনি। রাত্রে যখন গিয়ে বলি মাথাটা টিপে দিতে, তখন আম্মু শুয়েছিল। আম্মুর শরীরটা এমনিতেই বেশী ভালো লাগছিল না সেদিন। তাই আমি জানতাম আম্মু আমার মাথাটা টিপে দেওয়ার জন্য মায়াকেই পাঠাবে।
হ্যাঁ, তাই হলো। আমি যখন শুয়ে শুয়ে কানে হেডফোন গুজে দিয়ে গান শুনছি, তখন’ই ওর আগমন ঘটে। রুমের সামনে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। কান থেকে হেডফোনটা তাড়াতাড়ি খুলে ফোনটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখে জোরে জোরে কান্না জোড়ে দিলাম। আমার কান্না শুনে মায়া আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেনি, তাড়াতাড়ি করে রুমে প্রবেশ করে। আমি চোখ’টা মিটমিট করে দেখছি ও দেখছি ও কি করে?!!!??
ও রুমে এসে, আমার দিকে একটু তাকালো। তারপর ধীরপায়ে আমার দিকে’ই এগিয়ে আসতে থাকে। আমি এবার চোখটা পুরো বন্ধ করে দিলাম।☺☺
ও আমার পাশে এসে বসল।
আমার কান্না একটু কমে গেল। ও চুপটি করে বসে আছে ৪,৫ মিনিট হয়ে গেলো তারপরও কিছু করছে না/বলছে না দেখে আমার আর ভালো লাগছিল না। তাই জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম। মনে হচ্ছে, কৌটা জাতীয় কিছু খুলছে, তারই শব্দ হলো। তবুও চোখটা একটু ফাঁক করে দেখে নিলাম। হ্যাঁ, আমার আন্দাজটাই ঠিক। ও কৌটা খুলেছে। মলমের কৌটা। আঙুল দিয়ে একটু মলম নিয়ে কৌটাটা বন্ধ করে আমার কপালের চারিপাশে মলম দিয়ে তা মালিশ করে দিয়েছে। যদিও আমার কিচ্ছু হয়নি তারপরও ও অর্ধেক রাত পর্যন্ত আমার মাথার পাশে বসে থেকে আমার মাথা’টা টিপে দিয়েছে। সেদিন কি যে সুখ পেয়েছিলাম ওর নরম হাতের ছোয়ায় তা বলে বা লিখে বুঝানো যাবে না। বেচারী!
যতবার’ই চেয়েছে উঠে চলে যেতে ততবার’ই আমার কান্না শুনে থমকে গেছে। শেষমেষ যখন বুঝতে পারলাম, ওর চোখ দুটো লাল টকটক হয়ে আছে তখন কান্নাটা থামিয়ে চুপ করে রইলাম। ও তখনো আমার পাশেই বসে আছে। আমি বারবার আড়চোখে ওকে দেখছিলাম। হঠাৎ’ই মনে হলো ও নেই। চোখ যায় নিচে, আমার বিছানায়। হুম, ও আমার বিছানার এককোণে ঘুমিয়ে পরেছে। আধঘন্টার মত আমি শুধু ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়েই বসেছিলাম। তারপর কেন জানি শরীরটা গরম অনুভূত হতে থাকে। আর মাথাটাও একটু একটু করে ব্যথা করতেছে। আর পারছিলাম না। ওকে বিছানার এককোণ থেকে টেনে বিছানায় আনলাম। তারপর বুকের মধ্যে ওর মাথা’টা রেখে শুইয়ে দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম টের পায়নি। সেদিন স্বপ্নে মায়াকে দেখেছিলাম। ও আমার পাশে বসেছিল। মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে এসেছে কিন্তু বলেনি। কিছু না বলে কি মনে করে যেন উঠে চলে যাচ্ছিল। আমি ওর হাতটা ধরে ফেললাম। ও যতবার উঠতে চেষ্টা করেছে ততবার আমি ওর হাত ধরে ওকে আমার বিছানায় বসিয়ে দিয়েছি। হঠাৎ করে মনে হলো,
কেউ যেন কানের খুব কাছে এসে বলছে,
ভাইয়া, কি করছেন এসব? ছাড়েন….ছাড়েন প্লিজ।
শালার কপাল….
ভাইয়া ভাইয়া শুনতে শুনতে আমার মাথাটা গেল আর সেই ভাইয়া ডাকটাই স্বপ্নে এসে ব্যঘাত ঘটালো?!!
চোখ মেলে তাকালাম।
একি?!
এ যে স্বপ্ন নয়, বাস্তব।
আর আমি ওর হাত নয়, ওর মাথাটা চেপে ধরে আছি বুকের সাথে….
তার মানে আমি এতক্ষণ…. (…..?…….)
ভাবতে পারছিলাম না, উঠে বসলাম বিছানায়। ও ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে, মনে হয় ভয় পেয়েছে। ওর দিকে তাকালাম, চোখে চোখ পরতেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। তারপর মাথা নিচু করে স্যরি বললাম।
জানি না, ও কি মনে করেছে তবুও স্যরি বললাম। ও যাতে আমায় নিয়ে বাজে কোনো কিছু না ভাবে তাই বলে ফেললাম,
মায়া—
আমি তোমায় ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরিনি। আসলে স্বপ্নে দেখলাম আমার রাজকুমারী পাশে বসে আছে, তাই ওকে মনে করে তোমায় অনেকগুলো কথা বলে ফেলেছি।আমি সত্যি’ই লজ্জিত মায়া। তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ। আমি কথাগুলো একনিঃশ্বাসে বলে ওর দিকে ফিরে তাকালাম। ও মনে হচ্ছে এতক্ষণ ধরে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখে চোখ পরতেই চোখটা সরিয়ে নিল। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরল। অন্যদিকে তাকিয়েই বলছে,
মনে করার কি আছে, ভাইয়া? আমি কিচ্ছু মনে করিনি, কিচ্ছুই মনে করিনি। আমি তারপরও কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম ও আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি……
মেয়েটির ডায়েরী_
সেরাতে ঘুমুতে পারিনি। সারা রাত গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছি। চোখের জল যেন কিছুতেই বাঁধা মানছিল না। গড়িয়ে গড়িয়ে পরছিল দু’চোখের জল। তারপর মনকে এটা বলে শান্তনা দিলাম যে,
পৃথিবীর সব সুখ তো শুধু পাওয়ার মধ্যে না,
মাঝে মাঝে না পাওয়ার মধ্যেও এক নিদারুণ সুখ নিহিত থাকে। আর ভালোবাসা মানেই কি শুধু কাছে পাওয়া?!
না, তাতো নয়।

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৯

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

♦গল্পের নতুন মোড়♦
ছেলেটির ডায়েরী_
সেদিন আমার জন্মদিনে মায়া’কে দেখে যতটা না অবাক হয়েছিলাম তার থেকেও বেশী অবাক হয়েছিলাম মায়া’কে বোন হিসেবে বাবা যখন আমার হাতে সমর্পণ করে দিল। আর অবাক না হয়ে’ই বা যাব কোথায়? মনে মনে যাকে হৃদমাজারে স্থান দিয়ে ফেলেছি, তাকে’ই বোন বানিয়ে দেওয়া হলো..!!!
বাবা যখন কিছু না বলে ওর হাতটা আমার হাতে দেয়, তখন ও নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল আর আমি তাকিয়ে ছিলাম ওর মায়া মায়া মুখের দিকে। সেদিন বাবা যখন বলেছিল,
সিয়াম–
আজ থেকে মায়া এ পরিবারের’ই সদস্য। ও যেখানে যে অবস্থায় থাকুক সবসময় তোর ওর পাশে ছায়ার মত থাকতে হবে, ওর খুঁজ নিতে হবে, যেমন’টা তোর বোনের ক্ষেত্রে এখনো করিস। সেদিন কিছুক্ষণের জন্য মন খারাপ হলেও সেই মন খারাপ’টা বেশীক্ষণ স্থায়ি হতে পারে নি। কারন, একটাই চোখের সামনে আমার মায়া পরিটা হাঁটাচলা করে, হাসি-আনন্দ, গল্পে মেতে থাকে বাবা-মায়ের সাথে। এটা দেখে মনটা শান্ত হয়ে যেত। মনটাকে এই ভেবে শান্তনা দিতাম,
যাক-
ও সবসময় আমার বাড়িতে আমার সামনে থাকবে, এটাই অনেক….?
বাবা বোন বানিয়ে দিয়েছে, আমি তো আর বোন মানি না, মানব না….??
ও আমার কল্পরাজ্যের রাজকন্যা ছিল, আছে, থাকবে….??
ভালো যখন বেসেছি, বেসে যাব আজীবন।
বসে বসে এই কথা গুলো’ই লিখছিলাম ডায়েরীর পাতায়। হঠাৎ’ই রোকসানা রুমে প্রবেশ করল-
– স্যার-
আপনাকে বেগমসাহেবা ডাকতেছে। সবাই ডাইনিং টেবিলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি চলেন….
~ঠিক আছে, তুই যা। আমি আসতেছি। কাজের মেয়ে চলে গেল। ডায়েরী’টা রেখে নিচে গেলাম। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম সকালের ব্রেকফাস্ট করার জন্য….
বাবা-মা দু’জনে’ই বসে ছিল।
আমার মায়াপরীটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আশেপাশে তাকালাম। নাহ, আশেপাশেও কোথাও নেই। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে?!!!
কি দেখছিস?
এবার’তো খাওয়া শুরু কর!!!
হ্যাঁ, খাচ্ছি….
আচ্ছা মা!!!!
ও কোথায়?
কে?কার কথা বলছিস?….
-‘ আমি আসলে ওর…(.?.)….
কথাটা পুরো’টা বলতে পারলাম না, তার আগেই মায়া এসে উপস্থিত হলো। চেয়ার’টা ফাঁক করে মায়ের পাশে বসে পড়ল। মা হাসোজ্জল মুখে জিজ্ঞেস করল,
কিরে?!!!
হয়েছে তোর কাজ?!!
-‘ হুম, মা। হয়েছে।(মায়া)
-‘ মা, বাবার প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বলছে__
” এই নাও…
তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও…
তারপর গোসল করে তোমার না কি জরুরী কাজ আছে ঐখানে যাও।”
বাবা তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পরল।
-‘ আজ আর গোসল? খেয়ে কেউ গোসল করে?”
বাবা চলে গেল মেনেজার আংকেলের সাথে….
মাকে জিজ্ঞেস করলাম__
” মা! বাবাকে গোসল না করিয়ে খেতে দিলে কেন?”
মা হেসে বলল, আমি কি করব বল? তোর বাবাকে তো পাঠাইছিলাম গোসল করতে, এরই ভিতর গিয়ে দেখি তোর বোন একবালতি কাপড় দিয়ে বাথরুমে ঢুকেছে। সেটা দেখে তোর বাবা চলে এসেছে…
-‘ মানে কি মা? ও উপরে বাথরুম রেখে নিচে কেন গেল??
-‘ সেটা’ই তো! আমিও বুঝতে পারছি না। কতবার করে বলেছি, তুই সাইমার বাথরুমে যাবি, না।।।
কে শুনে কার কথা….?!!!
-‘ স্যরি, আম্মু….?
আর কখনো এমন হবে না।(মায়া)
-‘ এই মেয়ে! মন খারাপের কি হলো এতে? চুপ করে খেয়ে নে….মায়ের কথা শুনে আচ্ছা বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে পরল মায়া। আমিও খেয়ে-দেয়ে রুমে চলে গেলাম।
-‘ অাজ শুক্রবার,
অফিসে যায় নি। তাই রুমে চুপটি করে শুয়ে আছি। অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে আছি কিন্তু ঘুমাতে পারছি না কিছুতেই।Uff!আর পারছি না। অসহ্য গরম….
এখন’ই গোসল করতে হবে।
শরীর থেকে গেঞ্জী’টা খুলে তাওয়াল হাতে নিয়ে ছুটে চললাম বাথরুমের দিকে। ধাক্কা দিয়ে দরজা’টা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। তারপর দরজাটা ক্ষাণিক’টা মিশিয়ে যেই না ঘুরে দাঁড়ালাম ওমনি আমি কুপোকাত…..
‘থ’ হয়ে গেলাম।
এ ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি….
বুঝতে পারিনি এখানে এসে মায়াকে দেখব।
তাও এইভাবে….
ও লজ্জায় শরীরটা কোনোরকম ঢেকে চোখ’টা বন্ধ করে ফেলল।
আমি ততক্ষণে হাতে রাখা তোয়ালে’টা দিয়ে আমার চোখ দুটো ঢেকে নিয়েছি। তারপর-
স্যরি, আমি রিয়েলি স্যরি….
আসলে বুঝতে পারব তো দুরের কথা কল্পনাও করিনি তুমি আমার বাথরুমে গোসল করছ। বুঝতে পারলে আমি এখানে আসতাম না। বিশ্বাস করো,
আমি সত্যি’ই জানতাম না…
মায়া, চোখ খুলে আমার দিকে তাঁকালো। আমার দিকে কিছুক্ষণ ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে, চোখটা ফিরিয়ে নিল। ও লজ্জা পাবে কি? আমি নিজে’ই লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে গেলাম, যখন বুঝতে পারলাম আমি এতক্ষণ উন্মুক্ত শরীর নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। লজ্জায় কোনোরকম ইয়ে, মানে স্যরি
বলেই ঐখান থেকে বেরিয়ে এলাম……☺☺

মেয়েটির ডায়েরী_
সেদিন ওনার জন্মদিনে ওনি কতটা সারপ্রাইজড হয়েছিলেন জানিনা, শুধু এটুকু জানি….
সেদিন ভালো আংকেল আমায় খুব বড় সারপ্রাইজ দিয়েছিলেন। আমায় ওনার বাড়িতে ওনার মেয়ের সম্মানে থাকতে দিয়েছিলেন। আর দিয়েছেন সিয়ামের মত একজন ভালো মানুষের বোন হওয়ার সুযোগ। আজ আর আমার মনে কোনো কষ্ট নেই, ওনাকে হয়ত আপন করে পাওয়াটা আমার জন্য অসম্ভবের চেয়ে বেশী, সারাজীবন বোন হয়ে ওনার পাশে ছায়ার মত থাকতে পারব। পারব, ওনাকে প্রতিটা মুহূর্ত দেখতে, সেটাই অনেক বেশী প্রাপ্তি আমার জন্য।
ওনাকে পাশবালিশে পাওয়া কিংবা ঘুম ভাঙলে ওনার মুখটা আগে দেখা সেটা না হয় স্বপ্ন হয়েই থাক….
……..
অনেকদিন পর ডায়েরীটা আবার হাতে নিলাম…..
আজ লিখব….
হ্যাঁ, আজ লিখব…..
আমার প্রিয় ডায়েরী আমি আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করব কিভাবে সেদিন দুপুরে ওনি আমার বাহুগুলো দেখেছিলেন, আর আমি দেখেছিলাম আমার স্বপ্নের রাজকুমারের উন্মুক্ত বুক। যা ছিল ঘন লোমে ঘেরা…..
আচ্ছা, শুনো তাহলে কিভাবে কি হলো……
সেদিন ছিল শুক্রবার।
বরাবরের মত সেদিন দুপুরে আর বাবার বাথরুমে যায়নি, যেতে চেয়েছিলাম আমার বাথরুমে। যেটা আগে সাইমা ইউজ করত। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আর সাইমা এবং স্যারের স্যরি ভাইয়ার বাথরুম একসাথে থাকায় ভুল করে সেই বাথরুমেই ঢুকে পরি। তারপর…
তারপর…………
মনে হচ্ছে আম্মু ডাকছে। ডায়েরী’টা হাত থেকে রেখে আম্মুর রুমের দিকে ছুটে চললাম। নিচতলায় আম্মুর রুমে গিয়ে আম্মুর পাশে বসলাম। আম্মু তখন শুয়েছিল, আমাকে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসল। তারপর বলল,
ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম মা?
আমি আম্মুর হাত’টা ধরে বললাম, এইসব কি বলছো আম্মু?!!! ঘুমের ডিস্টার্ব হবে কেন?? তুমি আমার ‘মা’…..তুমি আমায় ডেকেছ, অন্য কেউ তো নয়। আর তাছাড়া আমি এখনো ঘুমাইনি। এখন বলো কি বলবে?
-‘ তোর ভাইটার না অনেক মাথা। বিকেল থেকেই প্রচন্ড মাথা ব্যথা। ঔষধও খাচ্ছে না, তুই গিয়ে মলম লাগিয়ে ওর কপালের চারপাশটা একটু টিপে দিবি?!!!!
আমার শরীরটা বেশী ভালো লাগছে না তাই তোকে বলছিলাম। না করিস না…….
-‘ মা তোমার মুখের উপর না করব এটা তুমি কল্পনা করলে কিভাবে? তুমি বলবে আর আমি তা শুনব না তা ভাবলে কিভাবে? তুমি নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকো, আমি আসছি। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেলাম। উপরে গিয়ে ওনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেদিনের ঘটনায় এতটাই লজ্জা পেয়েছিলাম যে, ওনার সামনে আর যাওয়া হয়নি। গেলেও ওনার দিকে তাকাতে পারিনি। ওনার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওনার রুমে ঢুকব কি ঢুকব না সেই দ্বিধা-দ্বন্ধে ছিলাম। হঠাৎ’ই ভেতর থেকে একটা পেলাম। কারো গোঙ্গানির আওয়াজ। আর কিছু না ভেবে’ই ছুটে চললাম ওনার রুমের দিকে। যা ভাবছিলাম তাই……
ওনি চোখ বোজে কান্না করতেছে মাথা ব্যথায়। আমি গিয়ে ওনার কাছে বসলাম। ওনি আরো জোরে কান্না করছে। হাতে রাখা মলমটার কৌটা থেকে কিছু মলম আঙুল দিয়ে নিয়ে ওনার কপালের চারিপাশে লাগিয়ে দিলাম। তারপর আস্তে আস্তে টিপতে শুরু করলাম। ওনি কান্না করতেছে আর আমি ওনার মাথা’টা টিপে দিচ্ছি। আস্তে আস্তে কান্নার মাত্রাটা একটু একটু করে কমে আসে। কপাল থেকে হাত সরিয়ে আমি যখন চলে আসি তখন ওনার কান্নার মাত্রাটা দ্বিগুন বেড়ে যায়।
সাহস হয় না এভাবে রেখে চলে যাওয়ার। আরেকটু টিপে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যায় ওনার দিকে। ওনি কান্না করে আর আমি মাথা টিপে দিচ্ছি। আর ভাবছি-
আহারে! বেচারা মাথা ব্যথার যন্ত্রণায় কত্ত কষ্ট পাচ্ছে। ওনার মাথা টিপতে টিপতে কখন যে সে স্থানেই ঘুমিয়ে পরি, বুঝতে পারিনি। ঘুম ভাঙলে নিজেকে ওনার বুকে আবিষ্কার করি। এত্ত রাত্রে ওনার বুকে এভাবে…….
ভয় পেয়ে গেলাম।
ভয়ে ওনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য যেই না মাথা উঠাতে গেলাম ওমনি ওনি আমার মাথাটা ওনার বুকে চেপে ধরলেন। আবারো উঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম।
এবার ওনি আমায় আরো শক্ত করে জাপটে ধরলেন-
– কি করছেন এসব? (আমি)
~শুনো, এই বুকে কান পেতে শুনো আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস তোমার কথায় বলছে…..
হৃদকম্পন টের পাচ্ছ কি? বুঝতে পারছো কি আমার না বলা কথাগুলো? (সিয়াম)
-‘ ভাইয়া,কি বলছেন এইসব?
মাথা ঠিক আছে আপনার?(আমি)
-‘ ওনি ধপাস করে বিছানা থেকে উঠে বসলেন। তারপর আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। মাথা নিচু করে বললেন, স্যরি…….

চলবে….

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৮

0

বসের সাথে প্রেম

পর্ব- ০৮

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ছেলেটির ডায়েরী_
মায়াকে রাগের বশে থাপ্পরটা মেরেছিলাম, হঠাৎ করে কোথা থেকে এই রাগ’টা চলে আসল বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারিনি কেন’ই বা ওর গায়ে হাত তুললাম। আর যখন বুঝতে পারলাম তখন মনে হলো খুব বেশী অন্যায় করে ফেলেছি। ও না হয় অচেনা, অজানা ছেলেদের সাথে কথা বলছে, তাই বলে আমি কেন ওকে মারলাম? ওকে মারার তো আমার কোনো অধিকার নেই। ও যার সাথে কোনো তার সাথেই কথা বলবে, হাসাহাসি করবে। তাই বলে আমি ওকে মারব কেন? তাও আবার অনেক মেহমানের সামনে। কি রকম অপমানিত’ই না হলো মেয়েটি। দৌঁড়ে গেস্টরুমে, মায়াকে খুঁজলাম। নাহ, ও এখানে নেই। তারপর দৌঁড়ে গেলাম সাইমার রুমে। নাহ, ও এখানেও নেই। মা-বাবা সবার রুমে গিয়েও ওকে খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ’ই মনে সাইমার রুমের বিছানায় কি যেন একটা দেখে এসেছি। দৌঁড়ে গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখি বিছানায় একটা নূপুর পরে আছে। খেয়াল করে দেখলাম মায়াবতীর নূপুর। হয়তো ওর অজান্তেই পা থেকে পরে গেছে, ও খেয়াল করেনি। নূপুর’টা হাতে নিলাম। নূপুরের গায়ে হাতের স্পর্শ বুলিয়ে দিলাম। তারপর সেটা আমার পকেটের ভিতর রেখে দিলাম। রুম থেকে বের হওয়ার সময় আরো একটা জিনিস চোখে পরে। সেটা হলো বোনের ফোন। ফোন’টা দিতে গিয়ে দেখি বোন’টার কাছে গে’ষার তিল পরিমাণ জায়গা নেই। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত এখন। কন্যা সমর্পণের শেষে ওকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো। ভীর ঠেলে ওর কাছে গেলাম। ফোন’টা এগিয়ে দিত যাব, তখন’ই আবির বলল। ভাইয়া মাথা খারাপ হয়েছে আপনার? এই মেয়েকে এখন ফোন হাতে দিবেন তো দেখবেন সারারাত ফেবুতে গুঁতাগুঁতি করছে। আপনি বরং ফোন’টা আপনার কাছে রেখে দেন। ৬টা Y প্রেস করে আনলক বাটনে চাপ দিবেন। ব্যস, হয়ে যাবে।
বোনকে আর ফোন’টা দেওয়া হলো না।
ফোন’টা হাতে নিয়ে বন্ধুকে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। টেবিলের উপর ফোনটা রাখতে যাব ঠিক তখন’ই দেখি মেসেজ ফর্ম মায়া….
লকটা খুলে মেসেজটা ওপেন করলাম। লিখা—
‘ সাইমা….
রাগ করিস না।
শরীর’টা একদম ভালো লাগছিল না, তাই চলে এলাম। আফসোস, বিদায় বেলায় তোর ঐ চাঁদবরণ মুখটা দেখতে পারলাম না। সে যায় হোক।
শোন, তোর ফোনে আমার যে ছবিগুলো আছে সব চোখ বোজে ডিলিট করে দিস। ছবিগুলো খুব বাজে হয়েছে…. “
মায়ার মেসেজ পরে তাড়াতাড়ি অতি আগ্রহ নিয়ে গ্যালারীতে ঢুকলাম। গ্যালারীতে ঢুকে হাজারখানেক ছবি দেখলাম। এর মধ্যে মায়ার একক ছবি শ’খানেক। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ড্রেসে তোলা। নববধূর মত লাজে রাঙা মুখে একটা ছবি তুলেছে, সেটা বোধ হয় আজকেরই। ছবিগুলো দেখে কেন যেন মায়া সামলাতে পারলাম না। আমার ফোনের শেয়ারইট’টা চালু করে নিয়ে গেলাম শত এর অধিক ছবি। তারপর বোনের ফোন’টা রেখে দিলাম আলমারিতে…
ছবিগুলো যতই দেখছিলাম ততই দূর্বল হয়ে পরছিলাম ওর প্রতি। কেন জানি, ছবিগুলো না দেখলে আমার ঘুম আসতো না রাত্রে। মায়ার ঐ মায়াবী মুখটা দেখেই রাত্রে ঘুমুতে যেতাম, ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। অফিস থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। কারন, খুব বেশী দুর্বল হয়ে পরছিলাম। বাবাকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি সারাদিন একলা রুমের মধ্যে শুয়ে থাকি। ধীরে ধীরে শরীরটা দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। ব্যপার’টা বাবা-মা লক্ষ করল। লক্ষ করল ওনার ছেলে একটা চাঁপা কষ্টের মধ্যে আছে। সেদিন বন্ধুর সাথে রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
আড্ডার টপিক ছিল ‘মায়া’।
আতিক আমার বাল্যকালের একমাত্র বন্ধ হওয়ায় তার সাথে সবকিছু শেয়ার করতাম। সেদিন রুমে শুয়ে কান্না করছিলাম আর হাতে জোরে জোরে আঘাত করছিলাম। ঘটনাক্রমে আতিক এসে উপস্থিত হয় এবং আমার হাত’টা ধরে ফেলে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কান্না করতে করতেই বলি,
বাধা দিস না তুই…
আমি এ হাত দিয়ে ওকে আঘাত করেছিলাম, এ হাত আমি রাখব না। রাখব না আমি এ হাত।
শেষ করে ফেলব আমি আজ….
আতিক আবারো আমার হাতটা ধরে ফেলে। তারপর আমাকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করে….
‘ কাকে আঘাত করেছিস?’
আমি মায়া বলতে গিয়ে আতিকের দিকে চেয়ে থেমে গেলাম। আতিক বলল__
” মা বলে থেমে গেলি কেন? বল। বলে ফেল মায়া’কে আঘাত করেছি। তার জন্য কষ্ট পাচ্ছি। আরে ইয়ার! ঐ মেয়েটার সাথে না তোর কোনো সম্পর্ক নেই? তবে কাঁদছিস কেন?!!! নিজেকেই বা কষ্ট দিচ্ছিস কেন? আতিকের কথা শুনে বলে ফেললাম, আছে সম্পর্ক। আছে…
মায়ার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। আতিক চোখ বড় বড় করে বলল,
তাই?! তা কিসের সম্পর্ক আছে শুনি? জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না। চোখ বোজে উত্তর দিলাম। আতিক আমার মুখটা ওর দিকে ঘুরালো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি…
ও বলছে-
এবার বলতো?!!!
সত্যি’ই কি তুই কিছুই জানিস না? আমি এবার আতিকের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম,
না…
আতিক রেগে গিয়ে আমায় বললো বলবি না তো?!!!
এবার আর সত্যি গোপন করতে পারলাম না। বলে দিলাম মায়াকে আমি ভালোবাসি। ভিষণ রকম ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমার চলবে না।
বলেই হু হু করে কেঁদে দিলাম। কান্না’টা এত জোরেই করে ফেলেছিলাম যে, আমার কান্না শুনে বাবা-মা ছুটে আসল রুমে।
কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে পাগল করে ফেলল।
আমি কান্না থামিয়ে চুপ করে আছি। ওদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সাহস আমার নেই। আমি ভয়ে চুপসে আছি। ঠিক তখন’ই আতিক এর উপযুক্ত জবাব দিয়ে দেয়।
আতিকের উপস্থিত বুদ্ধির কাছে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। আতিক বলেছিল, সাইমাকে ভিষন রকম মিস করি আমি। বোনের শূন্যতায় আমার ভেতর’টা হাঁহাকার করে। বাবা-মা চুপ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সেদিন আমার জন্মদিন ছিল…..
সবাইকে ইনভাইট করলেও মায়াকে করিনি। করিনি বললে ভুল হবে করতে পারিনি। কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিয়ে বাবা’কে যখন বললাম, বাবা! আমার এবারের সারপ্রাইজ কি?!!! বাবা আমায় চোখ বেধে উপরে নিয়ে গেলেন। উপরে আমার জন্য এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমি বুঝতে পারিনি। আমার জীবনের সেরা সারপ্রাইজ বাবা আমায় সেদিন দিয়েছিল। আমার সামনে মায়া দাঁড়িয়ে…..

মেয়েটির ডায়েরী_
অসুস্থ্যতার জন্য ছুটি নিয়েছিলাম অফিস থেকে। বাসায় শুয়ে শুয়ে ছুটি কাটাচ্ছি আর একদৃষ্টিতে দুরের ঐ জানালার দিকে তাকিয়ে আছি। জানি জানালাটায় দেখতে পাব মানুষটাকে নয়। ভাবতে ভাবতেই চোখ’টা ঝাপসা হয়ে এলো, চোখের জল মুছতে যাব ঠিক তখনি ভালো আংকেলের কল। রিসিভ করে সালাম দিতেই ওনি আমায় ২ঘন্টার মধ্যে ওনার বাড়িতে যেতে বললেন। কেন জানি স্যারের সামনে যেতে মন সাই দিচ্ছিল না, তাই অসুস্থ্যতার অজুহাত দেখিয়ে না যাওয়ার কথা বলছিলাম। কিন্তু ওনার কড়া নির্দেশ ওনার ছেলের জন্মদিনে আমায় উপস্থিত থাকতেই হবে। ভালো আংকেল আমার জীবনের আশীর্বাদসরুপ। তিনি আছেন বলেই হয়তো আমি এখনো বেঁচে আছি। তাই ওনার কথা অমান্য করার মত দুঃসাহস আমার ছিল না। ছুটে গেলাম ওনার বাসায়।
আজ সিয়াম স্যারের জন্মদিন। অনেক সুন্দর করে বাড়িটা সাজানো হয়েছে। স্যারকেও আজ অনেক সুন্দর লাগছে নীল পাঞ্জাবীতে। ওনার চোখের নিষ্পাপ চাহনী যেন কাউকে খুঁজছে। একবার ঘড়ি আরেকবার বাইরের দিকে তাকাচ্ছেন ওনি।
যায় হোক….
যথাসময়ে কেক কাটা শুরু হলো। সবাই হাত তালি দিয়ে ওনাকে ওয়িশ করলেন।আমি দুর থেকে মনভরে শুভকামনা করলাম।
অনেক অনেক সুখী হোন স্যার, অনেক অনেক সুখী।
শুভকামনা নিরন্তর……..
আমি ঠিক এভাবেই আপনার জন্য দুর থেকে দোয়া করব।
কাছে কখনো পাব না জানি,তাই দুর থেকেই ভালোবেসে যাব। নিরবে ভালোবেসে যাব।
চোখের পানি মুছতে মুছতে রুমে চলে গেলাম। ক্ষাণিক বাদেই ভালো আংকেলের গলার স্বর শুনতে পেলাম।মনে হচ্ছে এদিকেই আসছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম। একি?!!!
ভালো আংকেল স্যারের চোখ বেঁধে নিয়ে আসছে কেন? আমার রুমে এনে স্যারের চোখের বাঁধনটা খুলে দেওয়া হলো। স্যার হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও স্যারের দিকে….
কি?!!! চমকে গেলেন বাপজান? স্যার কাঁপা গলায় জবাব দিলেন-
” এসবের মানে কি বাবা?”
আংকেল হেসে বলে উঠল-
” এটুকুতেই চমকে গেলে?
——————
বাবা, এসবের মানে কি?!!!
দাঁড়া বলছি বলে আমাকে
আংকেল ওনার সামনে নিয়ে গেল। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আংকেল আমার একটা হাত ধরে আরেক হাতে সিয়াম স্যারের একটা হাত ধরলেন।
তারপর আমাকে ওনার হাতে তুলে দিলেন। অবাক হওয়ার মাত্রাটা এবার বহুগুনে বেড়ে গেল। আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি, আর আমার হাত স্যারের মুঠোবন্দি। স্যার এভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
এবার কি করতে হবে বাবা?
আংকেল বললেন-
তুই না বোন হারিয়ে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলে? উদাসী হয়ে গিয়েছিলি? বোনের চিন্তায় চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি? তার জন্য এই ব্যবস্থা। আজ এখন থেকে তোরা দু’জন ভাই-বোনের সম্পর্কে আবদ্ধ হইলি। মায়া তোর বোন। সাইমার মত’ই আরেক বোন। এখন থেকে ও এ বাড়িতেই থাকবে। কি বলো সিয়ামের মা?
রুমে ঢুকতে ঢুকতে আন্টির মিষ্টি জবাব,
সে আর বলতে হয়?
আমার মেয়ে হয়ে সে কি ভাড়া বাসায় থাকতে পারে?
কখনো না…..
আর তাই ও এখানেই থাকবে।
-‘ সিয়াম-মায়া…….
তোরা ভাই-বোন কথা বলা শেষ করে নিচে আয়।
নিচে সবাই অপেক্ষা করছে। আংকেল-আন্টি চলে গেল। আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি মাথা নিচু করে। আর ভাবছি কি থেকে কি হয়ে গেল….
ভাবনাচ্ছেদ ঘটে স্যারের ‘মায়া’ ডাকে।
জি স্যার বলে স্যারের দিকে তাকালাম।
————+++++————–
ওনি রেগে গিয়ে বললেন,
স্যার নয়, ভাইয়া ডাকবা…..
ভাইয়া……………..
বুঝছ মায়া পরি???
আমি তোমার ভাই হয়……
ভাই………..✌✌

– মাথা নিচু করে মনে মনে মুখস্থ করতে লাগলাম—
ভাইয়া…………??

চলবে।

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৭

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৭

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

মেয়েটির ডায়েরী_
সেদিন(বিয়ের) সারাটা দিন আর স্যারের সামনে যায়নি। শুধু যায়নি বললে ভুল হবে, লজ্জায় যায়নি। রাতের ঘটনায় ভিষণ লজ্জা পেয়েছিলাম। ফোন’টা আমি ভালো নিয়তেই নিয়েছিলাম আর স্যার কি না আমায় চোর ভেবে নিল….!!!!
কি লজ্জা! কি লজ্জা!!!
সত্যি’ই ব্যপারটা চরম লজ্জাকর ছিল আমার জন্য। সকাল থেকেই একমাত্র বান্ধবীটার সাথে বসে আছি। ওর মেহেদি দেওয়া,খাওয়া-দাওয়া, গোসল সবকিছুতেই আমি। আমি ছাড়া যেন ওর চলবেই না। বেলা এগারো’টা। ওকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে চারটা মেয়ে এসেছে। ও ওর বাবা’কে বলল, মাত্র চারটা মেয়ে কেন? আমার কমপক্ষে ১০,১২টা মেয়ে লাগবে। ওর বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল__
১০,১২টা মেয়ে দিয়ে কি করবা সাইমা? বলিষ্ঠ কন্ঠে ওর জবাব- বিয়ের জন্য যেমন ৬টা বেনারসি কেনা হয়েছে, ঠিক তেমনি সাজানোর জন্যওও কমপক্ষে ১২জন মেয়ে তো লাগবেই। কেন লাগবে সেটা এখন জিজ্ঞেস করবা না একদম, উত্তর দিতে পারব না। ওর বাবা আর কথা বাড়ালেন না। সাথে সাথে ফোন দিয়ে ঢাকা শহরের সেরা পার্লার থেকে সেরা ১০জন মেয়েকে আনা হয়। তখন কে জানত ওর মাথার ভিতর এত প্যাচগোচ ঘুরপাক খাচ্ছে?! ওর ইচ্ছে, আবিরের থেকে আমরা টাকা উদ্ধার করি অন্দরমহলে। আর সেটা চেয়ে কিংবা জোর করে নয়। ও যাতে ফাঁদে পরে আপনাআপনিই দিয়ে দেয়, সেই ব্যবস্থাই করল। আমি সহ ওর ৫টা বান্ধবীকে একই সাজে বধূ সাজানো হলো। সেদিন বধূ সেজে আমি গিয়েছিলাম স্যারের রুমে। একা একা নিজেকে বধূরূপে দেখতে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজেই চিনতে ভুল করছিলাম। লজ্জা পেয়ে দৌঁড়ে চলে যাচ্ছিলাম রুম থেকে। ঠিক তখন’ই স্যারের সাথে ধাক্কা খায়। স্যারের কনুই দিয়ে প্রচন্ডরকম এক আঘাত পেলাম বুকে। ওনি স্যরি বলতে সামনে আসলে আমার বধূবেশটা খেয়াল করে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আমার দিকে। জিজ্ঞেস করে আমার এই বধূবেশে থাকার কারন। আমি জবাব দিতে ইতস্তত বোধ করছিলাম। ঠিক তখনি সাইমা এসে আমায় টানতে থাকে। সাইমাকে একটা কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থেমে যায় স্যার। তাকিয়ে দেখি সাইমার পাশে ইরা, প্রিয়া, মুক্তা,জান্নাত এবং দিপাও এসেছে। সম্ভবত ওদের বধূবেশ দেখে স্যার কথা বলতে গিয়েও আটকে যায়। হা করে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। কিছুক্ষণ পর মাথা ঘুরে পরে যায়। সাইমা দৌঁড়ে গিয়ে ওনাকে ধরে। সাথে আমরাও দৌঁড়ে যায়। ওনাকে খাটের উপর শুয়ানো হয়। সাইমা ভাইয়া, এই ভাইয়া করে ডাকার পর চোখ খুলে স্যার। সাইমা চিৎকার করে বলে, ভাইয়া তুই ঠিক আছিস তো?!!! ওনি আমার দিকে তাকিয়ে কি মনে করে যেন একটা মুচকি হাসি দিল। তারপর বলল,
এতক্ষণ ঠিক’ই ছিলামরে, এখন আর ঠিক নেই। মনে হচ্ছে, মাথাটা ঘুরছে তো ঘুরছে। সাইমা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই মায়া! একটু পানি এনে দে তো!!! আমি দৌঁড়ে গিয়ে পানি নিয়ে এলাম। সাইমাকে গ্লাস’টা দিতে যাব, তখন’ই স্যার বলল-
ওকে দিবেন না মায়া…..
ওর সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। পানিটা বরং আপনি আমায় খাইয়ে দিন। আমার হাত’টা কেন যেন কাঁপছিল। তবুও গেলাম। স্যার’কে উঠিয়ে ধরে পানিটা খেতে দিলাম। স্যার পানি’টা খেয়ে আবার শুয়ে পরল। সাইমা কান্না স্বরে বলল,
-‘ এই ভাইয়া! কি হলো তোর?!
~স্যার মাথা উচু করে বলল, কিছু হয়নি তো। সাইমার পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে এভাবে শুয়ে আছিস কেন? উঠ… না….
-‘ উঠব, তার আগে বল, তোদের এইরকম সাজার মানে’টা কি?(স্যার)
-‘ এটা বলা যাবেনা। (সাইমা)
-‘ তাহলে আমিও উঠব না….(স্যার)
ওকে, একমাত্র বোনের বিয়েতে তুই যদি শুয়ে থাকতে পারিস, তাহলে তাই কর। এই তোরা আয়’তো কথাটা বলেই সাইমা চলে গেল। সাইমার সাথে সাথে ওরাও গেল। আমি স্যারের পাশ থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলাম, তখন’ই আঁচলে টান পরল। লজ্জায় এবং ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম। স্যারের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম। আস্তে করে ডাক দিলাম স্যার……
স্যার আমার দিকে তাকালো।
মাথা নিচু করে বললাম,
আঁচল’টা আপনার পাঞ্জাবীর বোতামে। ওনি আমায় খুলে আনতে বললেন,আমি তাই করলাম। তারপর দৌঁড় দিলাম রুম থেকে।

ছেলেটির ডায়েরী_
যদিও অজ্ঞান হওয়াটা সত্যি নয়, ছিল অভিনয়। তবুও কেন জানি মনে হলো, অভিনয়’টা করে ভালো’ই হলো। সেদিন আমি আমার পি.এর চোখে আমার জন্য মায়া দেখেছিলাম। ওকে যখন পানি আনার কথা বলা হলো, ও দৌঁড়ে পানি নিয়ে এসে পানির গ্লাসটা সাইমার হাতে তুলে দিতে যাবে, ঠিক তখন’ই আমি সাজ নষ্টের মিথ্যে অজুহাত দিয়ে পানি’টা ওকে খাইয়ে দিতে বললাম। ও যখন আমায় বিছানা থেকে তুলে আধশোয়া অবস্থায় পানি খাইয়ে দিচ্ছিল, তখন ওর চোখে আমার জন্য যে মায়া দেখেছিলাম, সে মায়া আমি এর আগে আমি একজনের চোখেই দেখেছিলাম। তিনি ছিলেন আমার ‘মা’… মায়া যখন আমায় পানি খাওয়াচ্ছিল তখন খেয়াল করলাম ওর শাড়ির আঁচল’টা কাধে নয়, আমার দিকে ঝুলে আছে। খেয়াল করে দেখলাম সেটা আমার পরনের পাঞ্জাবীর বোতামের সাথে আটকে আছে যা মায়া কিংবা ওর বান্ধবীদের কারো চোখে পরেনি। আমি তখন’ই পানি খেয়ে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে বোনের সাথে তর্কে মেতে উঠি। বোন আমার সাথে রেগে একপর্যায়ে মায়া ছাড়া সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সবশেষে মায়া বিছানা ছেড়ে ফ্লোরে দাঁড়ালো। চলে যাওয়ার জন্য যেই না পা বাড়ালো, তখনি আঁচলে টান পরল ওর। ও থমকে দাঁড়ায়। আঁচল ধরে ভীরু পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আমি ইচ্ছে করেই চোখ’টা বন্ধ করে ফেলি। কাছে এসে ছোট্ট করে কাঁপা স্বরে স্যার ডাক দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে পরল। চোখ খুলে ওর দিকে জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে তাকালে, লজ্জায় মাথা নিচু করে বেচারি আস্তে করে জবাব দেয়-
” আঁচল’টা……
আপনার পাঞ্জাবীর বোতামে….”
আমি ইচ্ছে করেই নিজে না খুলে ওকে বললাম, খুলে নিতে। ও আঁচল’টা খুলতে পারছিল না কাঁপার জন্য। বহুকষ্টে আঁচলটা খুলল। আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দৌঁড়ে পালালো রুম থেকে…..

মেয়েটির ডায়েরী_
বিয়ে পরানো শেষ হলে বর-কণে’কল একরুমে দেওয়া হলো। যাকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় অন্দরমহল বলে থাকে সবাই। অন্দর মহলে বর এবং বরের একজন বন্ধু প্রবেশ করে। আর আমাদের পক্ষের সিয়াম স্যারকে জরুরী ভিত্তিতে ডেকে আনা হয় বর প্রবেশ করার আগেই। ওনাকে আগেই ওনার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর আর বরের বন্ধু রুমে প্রবেশ করতে দেরি স্যার রুমের দরজা আটকাতে দেরি করল না। একসাথে ৬টা বউ দেখে বর হতবাক….
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে,
এসবের মানে কি ভাইয়া?
স্যার জবাব দেয় মানে একটাই। এখানে তো সবাই আপনার বউ না, বউ হলো একজন। এখন আপনাকে মুখ না দেখে চিনে নিতে হবে কোন’টা আপনার বউ????
কাজটা পারলে ভালো,
না পারলে আরো বেশী ভালো…
-স্যারের কথা শুনে বর বাবা জীবন বোধ হয় ভয় পেয়ে গেছে, আর আমরা?!!! আঁচলের নিচে মুখ লুকিয়ে হাসছি….???
এবার বাছাধন…!!!
টাকা না দিয়ে যাইবা কোথায়?☺
-‘ তো এবার শুরু করা যাক….(স্যার)
-‘ ভাইয়া, কিভাবে চিনব আমি? সবগুলোই যে একইরকম, একই ডিজাইনের শাড়ি পরা।?(বর)
-‘ তুমি কিভাবে চিনবা সেটা তো আমার দেখার বিষয় না, আমি আমার কাজ বুঝিয়ে দিলাম। এখন তুমি তোমার বউ চিনে নাও।☺☺☺(স্যার)
-‘ যদি ভুলে অন্য কাউকে ধরে ফেলি, তাহলে কি আমায় বউ ছাড়া বাসায় যেতে হবে ভাইয়া???। নাকি আমার কাধে অন্যকে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে….???(বর)
বরের কথা শুনে আমরা মুখটা শক্ত করে চেপে রাখছি। আমরা জানি, ওনি আমাদের হাসানোর জন্য এমনটি বলেছেন। স্যার তাড়া দিয়ে বলল, বোকা ছেলে! বউ ছাড়া বাসায় যাবে কেন? বউ নিয়েই যাবে। তবে তার আগে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে যেতে হবে বাকি শ্যালিকা’দের….
আবির(বর) আমাদের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। শেষমেষ স্যারের সামনে পরপুরুষে জড়িয়ে ধরবে আমায়? এটাও দেখার ছিল?!!! যাকগে, আল্লাহর নাম নিয়ে বর কি করে সেটা দেখার জন্য চুপ করে বসে রইলাম। হঠাৎ’ই আমাদের সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে সাইমার চালাক-চতুর বর’টা রুমের লাইট নিভিয়ে দেয়। সবাই ভয়ে শিউরে উঠে। এ ঘটনায় স্যারও প্রস্তুত ছিল না। সবাই ভয়ে উঠে পরল। শুধু আমি আর সাইমা বসে আছি। বর আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি ভয়ে বসা থেকে উঠে দৌঁড় দিলাম। বর সাইমা’কে গিয়ে ধরল আর আমি কার সাথে যেন ধাক্কা খেলাম। মুহূর্তেই রুমের লাইট জ্বলে উঠে…..
বরের মুখে বিজয়ের হাসি আর আমাদের মুখে লজ্জার ছাপ….
বরের উপস্থিত বুদ্ধির কাছে হার মেনে গেল দুষ্টু সাইমার দুষ্টু চাল….

ছেলেটির ডায়েরী_
বিয়ের যাবতীয় কাজ শেষে বর-কণেকে অন্দরমহলে ডাকা হলো। আবির অন্দরমহলে এসে একসাথে ৬টা বউ দেখে একটা বড়সড় ধাক্কা খেল। অনেক কান্নাকাটি করেও যখন মেয়েদের সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়াতে পারল না, তখন’ই আবির বুদ্ধি আটতে থাকে কিভাবে জয়ী হওয়া যায়। হঠাৎ’ই আবিরের মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠে। একবার সাইমা আরেকবার মায়ার দিকে তাকাতে থাকে। মনে মনে ভাবছে,
সর্বনাশ! এই ছেলেকি তাহলে দুই শুকনোকে চিনে ফেলেছে?! ধরে ফেলেছে সাইমাকে? বুঝে গেছে এই দুই বধূর একজন সাইমা আরেকজন মায়া?!!!
যাহ, ধারনা করছিলাম ঠিক তা নয়। বর পুরোপুরি চিনতে পারে নি। তবে এটা বুঝে নিয়েছিল যে, এই দুইজনের মধ্যেই ওর বউ আছে। কিন্তু দুজনেই একই স্বাস্থ্যেরর অধিকারী হওয়ায় চিনতে পারেনি। তাই উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে লাইট’টা অফ করে দেয় আবির। মুহূর্তেই পুরো রুমে ওদের ছুটাছুটি শুরু হয়। আবির বসে থাকা দুই মেয়ের দিকে এগিয়ে আসছে, এটা দেখে মায়া উঠে একদৌঁড়। ব্যস!
কেল্লাফতেহ…..
আবির তার আসল বউকে পেয়ে যায়। সেদিন উপস্থিত বুদ্ধির জোরে আবির ওর সম্মান বাঁচাতে পারলেও পারেনি বাঁচাতে পকেটের টাকাগুলোকে। বোনের নাকফুলানো, মুখফোলানো তারপর কান্না দেখে পকেটে রাখা ১৫হাজার টাকা দিয়ে দেয় মায়ার হাতে।
আহ্, আমার বোনের কি হাসি…
বরটা কানের কাছে গিয়ে হয়তো বলছে হলোতো? কিংবা এই রকম টাইপের’ই কিছু….
আমার বোন মুখ বাকা করে বর্ডার থেকে ইন্ডিয়া নিয়ে গেছে।
হা, হা, হা,????
যাক, টাকা তো পেল। এটাই এনাফ। রুম থেকে বেরোতে যাব, তখনি দৃষ্টি পরে আবিরের(বর)বন্ধুর দিকে। যার সাথে একটু আগে মায়া ধাক্কা খেয়েছিল। এখন ছেলেটা কেমন ঢ্যাবঢ্যাব চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে, মায়াও কি যেন কথা বলতেছে। খুব রাগ হলো। পারছিলাম না থাকতে এখানে। চলে গেলাম বাইরে। কিছুক্ষণ পরে দেখি এই ছেলের সাথেই মায়া বাইরে হাসাহাসি করতেছে। এবার রাগের মাত্রা’টা বহুগুনে বেড়ে গেল। মায়ার সামনে দিয়ে দুইবার করে হেঁটে গেলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য!!!
দুরে গিয়েও দেখি একই ভাবে হেসে কথা বলতেছে। এবার আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলাম না। দৌঁড়ে গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে ছেলেটা পরে কথা হবে, আসি বলে চলে গেল।
তারপর মায়াকে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলাম….
খুব বেড়ে গেছ তাই না?
অচেনা অজানা ছেলেদের সাথে আড্ডা দেওয়া শিখে গেছ, তাই না? কথাগুলো বলে আরেকটা থাপ্পর মারলাম। মায়া চোখ বন্ধ করে কান্না করা শুরু করে দিল। আর আমি?!!!
রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলাম সেখান থেকে….

মেয়েটির ডায়েরী_
আজ আমায় স্যার মেরেছে। খুব জোরে জোরে দুইটা থাপ্পর দিয়েছে আমার গালে। অপরাধ কি আমি নিজেও জানি না। আমি শুধু জানি, আমি আমাদের ভার্সিটির ভালো ভাইয়াটার সাথে কথা বলছিলাম। যে কিনা আমায় আপন বোনের মত স্নেহ করত। এর ছাড়া ছেলেদের সাথে কথা আমি কোনো কালেই বলিনি। আর অচেনা, অজানা ছেলে?!! সে তো কল্পনার বাহিরে…..
স্যারের বলা কথায় এতটা কষ্ট পেয়েছি যা বলার মত না। কান্না আটকাতে না পেরে দৌঁড়ে চলে গেলাম সাইমার রুমে….
ওখানে গিয়ে দরজা আটকিয়ে ইচ্ছেমত কাঁদলাম। তারপর শাড়ি পাল্টিয়ে ভীড়ের ভিতরেই আংকেলকে বলে বাসা থেকে চলে গেলাম……

চলবে…..

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৬

0

বসের সাথে প্রেম

পর্ব- ০৬

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

আমি হাত-পা ছুড়া শুরু করলাম। দেখতে পেলাম অন্ধকারেই একটা ছায়া রশি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসেই আমায় ধাক্কা দিয়ে ছাদের মধ্যে ফেলে আমার হাত’টাও বেঁধে ফেললেন।
ভয় এবং কষ্টে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
হঠাৎ’ই ছায়া’টা বলে উঠল__
আমার বাসায় চুরি করতে এসেছিস? দাঁড়া চুরি করার মজা আজ বের করব…….
কন্ঠ’টা শুনে চমকে উঠলাম। এ যে আমার বস….
” স্যার আমি চোর নয়, আমি মায়া…”
বলতে গিয়েও পারলাম না। শুধু পা গুলো ছুড়তে লাগলাম। আর আল্লাহ’কে ডাকতে লাগলাম। সাথে সাথে’ই ছাদের আলো জ্বলে উঠল। পুরো ছাদ মুহূর্তেই আলোকিত হয়ে গেল। ওনি আমার দিকে দৌড়ে আসতেছে আর বলছে মায়া তুমি?!!!?? চোখটা বন্ধ করে ফেললাম। মনে হচ্ছে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি;
তারপর জ্ঞান হারালাম…………
ছেলেটির ডায়েরী_
সে রাতে চোর ভেবে অন্ধকারে একটা ছায়া মানবিকে ধাক্কা দিয়ে ছাদে ফেলে ওর হাত সেই সাথে নাক-মুখ বেঁধে যখন চলে যাচ্ছিলাম, তখন শুনতে পাই ও পাগুলো ভিষণ রকম ছুড়াছুড়ি করছে। আলো জ্বালিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টিতে চোরটার দিকে তাকাতেই দেখি আঁতকে উঠলাম। শিউরে উঠল ভেতর’টা। চোর ভেবে যার নাক,মুখ, হাত বেঁধে ছাদে ফেলে যাচ্ছিলাম সে আর অন্য কেউ নয়, আমার’ই অফিসের পি.এ,বোনের প্রাণের বান্ধবি ‘মায়া’। একমুহূর্তের জন্য আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না।মায়া মায়া বলে ছুটে গেলাম ওর কাছে। ওকে ধরে উঠালাম। তারপর ছাদে রাখা চেয়ারটায় বসালাম। বলতে লাগলাম-
‘ মায়া তুমি? আমি তো ভাবছিলাম…(..?..)….
বুঝতে পারলাম মায়া কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। ওর বাঁধনটা খুলে দিলাম। ও ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে, আমি ওর দিকে চেয়ে আছে।৪,৫মিনিট পর স্বাভাবিক হয়ে ও উত্তর দিল,
‘ আসলে তাহাজ্জদ নামাজ পড়ার পরও যখন দেখলাম ফজরের আযান দিচ্ছে না, তখন কয়টা বাজে এটা দেখার জন্য আপনার ফোন’টা আনতে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম আযান দেওয়ার আগ পর্যন্ত ফোন’টা আমার কাছে’ই রাখব। কিন্তু তার আগেই যে…..(…..)….
মায়া এটুকু বলেই থেমে গেল। I am sorry,maya.আমি আসলে বুঝতে পারিনি….
-‘ ইটস ওকে, স্যার।(মায়া)
ওকে চলো বলে আমি ওকে রেখেই বসা থেকে উঠে পরলাম, কিন্তু একি?!!!
ও এখনো বসে আছে কেন? মায়াকে জিজ্ঞেস করলাম, কি? যাবে না আজকে? নাকি এখানেই ঘুমাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
মায়া মাথা নিচু করে জবাব দিল, সিদ্ধান্তের আর কি আছে? হাতের বাঁধন খুলে না দিলে তো এখানেই ঘুমুতে হবে। ওহ, শিট! বলে ওর হাতের বাঁধন’টা খুলে দিলাম। ও আমার দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চেয়ার থেকে উঠে ছাদের রেলিং ধরে দুরে তাকিয়ে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রায় ১০,১৫মিনিটের মত দাঁড়িয়ে আছি, ওর সেদিকে কোনো খেয়ালি’ই নেই। ওর দৃষ্টি দুরে কোথাও আটকে আছে। কেন জানি ওর হাত’টা ধরতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে আবার পারছিও না। অবশেষে ধরেই ওর হাত’টা। ও চমকে তাকালো আমার দিকে…..
মেয়েটির ডায়েরী_
স্যার আমার দিকে মায়া মায়া করে ছুটতে এসে বসল। তারপর আমার মুখের বাঁধন না খুলেই জগতের প্রশ্ন জুড়ে দিল। এদিকে আমার নিঃশ্বাস খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি শুধু স্যারকে ইশারা করছিলাম নাক-মুখের বাঁধনটা খুলে দিতে। স্যার আমার ইশারা বুঝতে পেরেছে কি না জানিনা, তবে ওনি আমার নাক-মুখের বাঁধন’টা খুলে দিয়েছিল। স্যরি, বলে আমাকে রুমে যেতে বলে একবার আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। লজ্জিত ভঙিতে ওনি আমার হাতের বাঁধন’টা খুলে দিল। ওনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম ৪,৫মিনিট। ওনার দৃষ্টি যখন আমার চোখে পরে তখন আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই। বসা থেকে উঠে ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালাম। কোথায় তাকিয়ে আছি আমি নিজেও জানি না। মনে হচ্ছিল, আমি একটা ঘোরের মধ্যে আছি। হঠাৎ’ই আমার হাতে একটা উষ্ম ছোয়া অনুভব করলাম। চমকে গিয়ে ‘বাম’ পার্শ্বে তাকালাম। অবাক হলাম সিয়ামকে দেখে। মানে আমার শ্রদ্ধেয় সিয়াম স্যারকে দেখে। একবার হাত, আরেকবার ওনার দিকে তাকাচ্ছি আমি। এটাও কি সম্ভব? একি বাস্তব নাকি কল্পনা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঘোর কাটে ওনার ডাকে। মায়া আযান দিচ্ছে রুমে চলো। নাহ, এ স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ওনি আমার হাতটা বাস্তবেই ধরেছে। আমি জানি, কখনো আমার মনের গুপ্ত বাসনা কারো সামনে প্রকাশ করতে পারব না,পারব না বলতে-
” স্যার, আমি আপনাকে ভালোবাসি,ভিষণ ভালোবাসি। কি করে বলব? আমার মত ছিন্নমূল, যার কোনো অস্তিত্ব নেই তার আবার স্বপ্ন থাকে নাকি? আর আমি তো তেমন সুন্দরও না, শ্যামবর্ণের। এই শ্যামবর্ণ নিয়ে কত মুখের কত কথা যে শুনেছি তার কোনো হিসেব নেই। আর ওনারা তো অনেক বড়লোক, ওনারা কি আর একটা ছিন্নমূল, অস্তিত্বহীন মেয়েকে ওনাদের ঘরের বউ করবে? না, করবে না। এসব কথা ভাবতে ভাবতে অজান্তেই কখন যে দু’চোখ ভিঁজে গেছে বুঝতে পারিনি। চোখের জল মুছে নিচে গেলাম……
ছেলেটির ডায়েরী_
ওর হাত’টা ধরতেই ও চমকে উঠল। আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। এদিকে চারদিক থেকে ফজরের নামাজের আযান ভেসে আসছিল। মায়া’কে নিচে আসতে বলে আমি চলে এলাম ছাদ থেকে। পরদিন সকাল হলো, সকাল গড়িয়ে দুপুর। মায়াকে একটা বারের জন্য দেখিনি। বিয়ে বাড়ির এত্ত কাজের মধ্যেও আমার দুটি চোখ কেন যেন ওকে’ই খুঁজছিল। ওকে না দেখতে পেয়ে ভেতর’টা কেমন যেন অস্থির লাগছিল। বোনকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করিনি, যদি উল্টা-পাল্টা বকার শুরু করে?! ওতো আবার একটু বেশীই ইচড়ে পাকা স্বভাবের। সবকিছুতেই এক লাইন বেশী বুঝে। দুপুরে আমার সব বন্ধুরা আমায় ধরে রেডি করে দিল। এদিকে বর আসারও সময় হয়ে গেছে। বিছানার বালিশের নিচে সকালে ফোন’টা রেখেছিলাম। ফোন’টা আনার জন্য রুমের দিকে ছুটে যাচ্ছিলাম আর কনুই উঁচু করে পাঞ্জাবীর হাতা ঠিক করতে করতে রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই একজন ‘উহ্’ করে উঠলাম। বুঝতে পারলাম আমার অসাবধানতায় কুনো’ই গুতো লেগে এমন’টি হয়েছে। চোখ বোজে স্যরি বলতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। এ যে কোনো এক অপ্সরী বধূবেশে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। কিন্তু এও কি সম্ভব?! স্বর্গের অপ্সরী কি মাটিতে আসে কখনো?!!! হয়তো, আসে। না হলে ও আসবে কিভাবে। চলে যাচ্ছিলাম ওকে পাশ কাটিয়ে। হঠাৎ মনে হলো মায়াপরী’টাতো এখনো চোখ বোজেই আছে। ওকে তো ভালো করে স্যরি বলাটাও হয়নি। স্যরি বলার জন্য এবার ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এবার আমার ঘোর কাটলো।
একি?! মায়া এখানে এই সাজে? এই সাজে তো বোনকে দেখেছি মাত্র। ঠিক একই রকম সাজে, শাড়ি, গহনা সবকিছু একই রকম।এবার ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
-‘ সেকি?! মায়া তুমি? তুমি বধূবেশে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ও চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো মায়া?! জবাব দাও। তুমি এ সাজে কেন?
-‘ স্যার ইয়ে মানে বলতে গিয়েও পুরোটা বলতে পারল না। তার আগেই আমার বোন ওকে ধরে টানতে লাগল। আমি বোনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়ে ‘থ’ হয়ে গেলাম। একি?! মায়া ছাড়াও বোনের ৫, পাঁচটা বান্ধবী একই সাজে বধূ বেশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর নিতে পারছিলাম। কেন জানি আমার মাথা’টা ঘুরছিল। মাথা ঘুরে পরে জ্ঞান হারালাম আমি…….

চলবে….

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৫

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৫
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
ছেলেটির ডায়েরী_
শুয়ে শুয়ে ফোন টিপা-টিপি করছিলাম। প্রায় আধঘন্টার মত ফোন টিপার পর সবার ঘুমের অসুবিধা হবে ভেবে ফোন’টা বালিশের নিচে রেখে কপালে হাত রেখে শুয়ে পরলাম। হঠাৎ’ই মনে হলো কেউ যেন ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে, আমার খুব কাছ থেকে’ই শব্দটা আসছে। ভাবলাম বোন শিমু নয়তো?!!!!
বালিশের নিচ থেকে ফোন’টা এনে টর্চটা এনে তার আলোয় দেখার চেষ্টার করলাম। তারপর যা দেখলাম—
‘ নিশ্বাস’টা শিমুর নয়, মায়ার।’
মনে হচ্ছে চোখগুলো শক্ত করে বোজে আছে, ইচ্ছে করে’ই। ফোনের টর্চ’টা নিভিয়ে ডিসপ্লের আলো’টা একটু কমিয়ে নিলাম। ডিসপ্লের মৃদ্যু মৃদ্যু আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম, কাঁপা কাঁপা চোখে ও চোখ মেলে তাকাচ্ছে। চোখ মেলে তাকিয়েই ও ফোনের স্কিনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। একটানা ৪মিনিট স্কিনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মায়া। তারপর আলতো করে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। নিঃশ্বাসের শব্দ’টা ধীরে ধীরে কমে আসতে লাগল। ডিসপ্লে’টা অফ করে ফোন’টা হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পরলাম। মাঝ রাত্রে ঘুম ভেঙে যায়। কেন জানি মনে হচ্ছিল, কেউ আমার মাথার নিচের বালিশ’টা ধরে উপড়ে ফেলতেছে। মনে হচ্ছে, বালিশসহ’ই যেন কেউ আমায় ফেলে দিতে চাচ্ছে। চোর-টোর নয়তো?!!! :O
দেখার জন্য এক চোখ একটু একটু করে খুললাম। ঐ একটুখানি দৃষ্টি’তেই বুঝতে পেলাম চোর’ই আসছে। আমার ফোন’টা চুরি করতে আসছে বোধ হয়। ?
হুহ, আমার ফোন চুরি?! :/
দেখে নে চুর?!!!
আজ একা’ই আমি তোর কি অবস্থা করি….?
চোরটা যখন ফোন’টা নিয়ে চলে রুম থেকে বের হয়ে গেল, তখন আমিও আলমারি থেকে বোনের একটা ওড়না বের করে ওর পিছু পিছু ছুটলাম। কিন্তু একি?!!! চোরটি ছাদে যাচ্ছে কেন??
আর এতো দেখছি মেয়ে চোর?!!!?।ওর হাঁটা দেখে তো সেটা’ই বুঝে যাচ্ছে….
ওহ্, তারমানে চোরটা বিয়ে বাড়িতে মেহমান হয়ে ঢুকেছে। ওর ধান্ধা বিয়ে খাওয়া নয়, চুরি করা। যায় হোক, আজ তোর রক্ষা নাই। ছাদ দিয়ে পালাবে ভেবেছিস? দাঁড়া। তোকে আজ রাত’টা ছাদে’ই বেঁধে রাখব। ☺☺☺
মেয়েটির ডায়েরী_
ভীরু এবং কাঁপা দৃষ্টিতে চেয়ে দেখি আমার চোখের সামনে একটা ফোন। তার স্কিনের মধ্যে আমার সিয়ামের ছবি। স্কিন’টা থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না। আবার তাকিয়েও থাকতে পারছিলাম না। ঘুমিয়ে পরি একসময়। মাঝরাত্রে ঘুম’টা ভেঙে যায়। কিছুতেই ঘুম চোখে আসছিল না। ভিতর’টা অস্থির অস্থির লাগছিল। তাহাজ্জদ নামাজ’টা না হয় এখন পরে নিলেই ভালো হয়। উঠলাম নামাজ পরার জন্য। অযু করে ড্রয়িংরুমে গিয়ে নামাজ’টা পরে নিলাম। তারপর ছাদে গিয়ে বেশকিছু ক্ষণ বসে থেকেও যখন দেখলাম ঘুম আসছে না, তখন কয়’টা বাজে দেখার জন্য রুমের দিকে পা বাড়ালাম। মনে হলো ফোন’টা সন্ধ্যারাত্রে সাইমা নিয়েছিল। এতরাত্রে সাইমা’কে ডাকা তো সম্ভব না, তাই মামির কাছে গেলাম। ওনাকে ডাকতে গিয়েও ডাকলাম না ঘুমের ডিস্টার্ব হবে ভেবে। নানুর কাছে এসে বালিশের নিচে হাত দিয়েও ওনার ফোন পেলাম না। এবার মনে হলো স্যার তো ওনার ফোন’টা সাথে নিয়েই ঘুমাইছে। ভীরু পায়ে হেঁটে চলে গেলাম ওনার কাছে। আশেপাশে কোথাও ফোন’টা পেলাম না। বালিশের নিচে থাকতে পারে ভেবে ওনার মাথাসহ বালিশ’টা একটু উপরে তুললাম।হ্যাঁ, ফোনটা বালিশের নিচেই। লুকিয়ে, সাবধানে ফোন’টায় হাত দিলাম। ফোন’টা হাতে আসলে সেটা নিয়ে ছাদে চলে যায় এই ভেবে, ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত ফোন’টা আমার কাছেই থাকবে। এত রাত্রে ওর মুখ দেখা’তো সম্ভব না, তাই স্কিনে থাকা ওনাকেই দেখব। ছাদে যাচ্ছি, কেন জানি মনে হচ্ছে আমায় কেউ অনুসরন করে আমার পিছু পিছু আসতেছে। কিন্তু এত্ত রাত্রে কে আমায় অনুসরন করবে? বিষয়’টা ভ্রম ভেবে উড়িয়ে দিলাম। এগিয়ে যেতে লাগলাম ছাদের দিকে।
হঠাৎ কেউ আমার মুখটা চেপে ধরল। প্রথমে মুখ চেপে ধরলো। তারপর মুখ’টা বেঁধে ফেলল কাপড় দিয়ে। আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছিলাম না। মুখের সাথে সাথে আমার নাক’টাও কাপড়ে ঢেকে গেছে। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।

চলবে….

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৪

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৪
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
মেয়েটির ডায়েরী_
দিন যতই গড়িয়ে যেতে থাকে, ততই সিয়ামের প্রতি খুব খুউউব দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। শয়নে-স্বপনে, নিশিথে-জাগরনে, কাজে-কর্মে মানের আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ও যেন মিশে আছে। আমার প্রতিটা রাত ভোর হয় ওর কথা ভেবে, ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। আবার রাত্রে ঘুমুতেও যায় ওকে নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন চোখে নিয়ে। আজকাল সিয়াম স্যার’টা যেন কেমন হয়ে গেছে। ওনাকে দেখলে মনে হয় একটা অসহনীয় যন্ত্রনা ওনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা, ওনি কি ঠিক আছেন? ওনার কিছু হয়নি তো? সেদিন রাত্রে হাজার চেষ্টা করেও যখন ঘুমুতে পারছিলাম না, তখন মনটাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য জানালা দিয়ে ওনার রুমের দিকে তাকালাম। কিন্তু একি?! একটা কিছু মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের লাইট জ্বালানো নেই, তাই শুধু আবছায়া’টাই দেখা যাচ্ছে। আচ্ছা, এ আমার সিয়াম, স্যরি সিয়াম স্যার নন’তো?! সেদিন ছাদে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি পাশের ছাদে কেউ একজন অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদের কর্নারে গিয়ে খেয়াল করে দেখতে যাওয়ার সময় বুঝলাম- এ আমার স্যার’ই।শুধু আমার স্যার। সেদিন একদৃষ্টিতে ওনার দিকে আধঘন্টা তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছে ওনি এদিকেই তাকাচ্ছে। ওনার দৃষ্টির আড়াল হওয়ার জন্য বসে পরলাম নিচু হয়ে। ওনি চলে গেলেন। ইদানিং রাত জেগে থাকা’টা আমার নেশা হয়ে গেছে। প্রতি’টা রাত্রে কখনো ছাদে কখনো বা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। কখনো কখনো সেখানের চেয়ারেই ঘুমিয়ে পরি। সেদিনও ওনার রুমের জানালায় একটা আবছায়া নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল। বুঝতে পারলাম এ আমার স্যার’ই দাঁড়িয়ে আছে। বোধ হয় রাতের শহর দেখছে। ওনার মত আমিও ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত রাতের শহর’টাকে দেখার জন্য নিচে তাকালাম। কিন্তু বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। এর থেকে যে আমার রাজপুত্র’টা স্যরি শ্রদ্ধেয় স্যার’টা অনেক সুন্দর,সুদর্শন। ওনি রাতের শহর দেখছে, আর আমি ওনাকে দেখছি। দু’চোখ ভরে দেখছি…..
এ দেখার যেন কোনো শেষ নেই।
ছেলেটির ডায়েরী_
হে আল্লাহ! আমার কেন এমন লাগে? কেন?!!! আল্লাহ, তুমি আমায় মনের শান্তি ফিরিয়ে দাও প্লিজ। আর পারছিলাম না। এক বন্ধুর কথা মতো তাহাজ্জত নামাজ পড়া শুরু করলাম। নামাজ শেষে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, ওনি যাতে আমার মনের শান্তি ফিরিয়ে দেয়। একটু রহম করে। ছোট বোন’কে দেখে পছন্দ হয়েছিল পাত্রপক্ষের। আসছে পহেলা বৈশাখ বিবাহের দিন ধার্য করা হয়েছে। দেখতে দেখতে ওর বিয়ের দিনটা গড়িয়ে এলো। আমার অফিসের সব কর্মচারী এবং আমার সব ব্যবসায়ী বন্ধু ও স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি লাইফের সব বন্ধু-বান্ধবদের বিয়েতে দাওয়াত করলাম। মায়াও এলো। কিন্তু সেটা আমার দাওয়াতে নয়, বোনের দাওয়াতে। ওকে দাওয়াত দেওয়ার আগেই মায়া’টা কার কাছ থেকে যেন দাওয়াত পেয়ে গেছে। ও বিয়ের তিনদিন আগেই চলে আসছে। আমি তো মনে মনে ভয় পাচ্ছি, ও তিনদিন আগে কেন চলে আসল। পরে জানতে পারি, এই মায়া’টাই আমার একমাত্র বোনের ভার্সিটির একমাত্র প্রিয় বান্ধবী। অবাক হলাম এই ভেবে, বাবা একজন দক্ষ ব্যবসায়ী হয়ে কি করে তাহলে এই পিচ্চি’টাকে কোম্পানিতে নিল। মায়া’টা শুধু নামেই মায়া না, ওর চেহেরায় অদ্ভুত এক মায়া ছিল। ওর নিষ্পাপ মুখপানে তাকালে বুকের ভেতরটা শীতল হয়ে যেত, সেই মুহূর্তের জন্য ভূলে যেতাম ও শ্যামবর্ণের একটা তরুণী। আমার তখন ওকে কেবলি এক মায়া পরি মনে হতো। কি দারুণ এক মায়ায় আবৃত ওর মুখ, আর মুখের মায়ায় যে কেউ পরে যেতে পারে। আমার বাবাও পরে গেল। আমার মা তো ওকে মা বলেই ডাকতো।
আর বাবা?!!!
বাবা ডাকতো ছোট মা বলে।
কেন জানি আমার ওকে মায়া পরি মনে হতো….
পিচ্চি মায়া পরি।
সেদিন ছিল বোন’টার হলুদ সন্ধ্যা।দুপুর থেকেই মেহমান’রা আসা শুরু করছে। আর বিকেল গড়িয়ে যাওয়ার একটু পরেই বরের বাড়ি থেকে ছেলে-মেয়ে চলে আসছে। হলুদ দিয়ে চলে যাওয়ার আগে বরপক্ষের বাড়ি থেকে আসা একটা ছেলে মায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। মায়া কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর গালে হলুদ ভরিয়ে দেয়। তারপর সবার কি হাসাহাসি। আমার ভিতর’টা হাহাকার করে উঠল। মায়া দৌঁড়ে চলে গেল রুমের ভিতরে। সেদিন রাত্রে সব আমন্ত্রণিত মেহমানে বাড়ি ভরে গিয়েছিল। থাকার জায়গা সংকুলান হবে না ভেবে কর্ণারের রুমের ফ্লোরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। উপরে খাটে দুই মামি এবং তাদের দুইটা বাচ্চা, নিচে আমি, ১৬বছরের মামা’তো ভাই, পুচকি মামা’তো বোন, নানু শুইলাম। ছোট্ট বোন’টাকে ঠিক করে শুয়াতে গিয়ে দেখি ওর সাথেই মায়া শুয়ে আছে…..
মেয়েটির ডায়েরী_
অফিস থেকে এসে সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকলাম, তরকারি গরম করে খাব বলে। ঠিক তখনই মনে হলো পিঠে যেন ভাদ্র মাসের তাল পরছে। কিন্তু এখনো তো বৈশাখ মাস আসেনি, ভাদ্র মাসের তাল কোথা থেকে আসলো। পিছনে তাকালাম বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে। হায়রে!
একি?! এ যে সাইমা। পরাণের বান্ধবী সাইমা….?
এসেছো কলিজা?!!!!
-‘ রাখ তোর কলিজা। কত্তগুলো কল দিয়েছি, দেখছনি একটাও? :/
~সেকি কখন কল দিলি?? দাঁড়া দেইখা লই…. ?
-‘ ঐ কু্ত্তি হাসবি না। আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না, সেটাই বলতে পারিস। যাহ, আর বললাম না। শত্রু চিরকালের জন্য বিদায় হইলো। এই নে বিদায়ী মানপত্র। আসি। আল্লাহ হাফেজ।
????
সাইমা চলে গেল হাতে বিয়ের কার্ড দিয়ে। জানতাম, ওর বিয়ের কার্ড’ই হবে। না খুলেই বুঝে গিয়েছিলাম পাত্র আবিরের সাথে বিয়ে’টা হচ্ছে, দীর্ঘ ৭বছরের প্রেমের মিলন হতে যাচ্ছে; না চাইতেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
ভালো থাকুক ওরা,
ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা’রা…..
ওর আবদার বিয়ের একসপ্তাহ আগেই যাতে ওর বাসায় চলে যায়, কিন্তু তাতো আর সম্ভব না। তাই বিয়ের তিনদিন আগে ভালো আংকেলের আদেশে চলে এলাম ওনাদের বাসায়। ছোট বেলায় বাবা-মা মরে গিয়েছিল, তাই বাবা-মায়ের আদর কি বুঝিনি। সাইমার বাবা-মা মানে বসের বাবা-মায়ের আদর পেয়ে কেন জানি মনে হচ্ছিল বাবা-মা থাকলে মনে হয় এভাবেই আদর করত।
সাইমার হলুদ সন্ধ্যার দিনে বরের বাড়ি থেকে অনেক ছেলে-মেয়ে আসে। এর মধ্যে ৪টা ছেলে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। বুঝি না ওরা কালো মেয়ের মধ্যে কি এমনটা দেখেছে। সাইমাকে হলুদ দিয়ে চলে দেওয়ার সময় একটা ছেলে আমার গালে এনে হলুদ ভরিয়ে দেয়। আমি বিরক্ত হয়ে আশেপাশে তাকালাম। সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ওনি আমার দিকে চেয়ে আছে, মুখটা অমাবস্যার কালো অন্ধকারের মত হয়ে গেছে। দৌঁড়ে চলে গেলাম ওনার থেকে। রুমে গিয়ে বালিশ বুকে জাপটে ধরে ভাবতে লাগলাম, ওনি আমার দিকে এভাবে তাকালো কেন?
তবে কি ওনিও আমায় ভালোবাসে….?
সেদিন সিড়ি থেকে তাড়াহুড়ো দৌঁড়ে নামতে গিয়ে ওনার সাথে ধাক্কা খেলাম, ওনি তখন উপরে উঠছিল। আমি নিচের দিকে হেলে যায়। ওনি ধরে ফেলেন আমায়। কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে বড়দের মত ভাব নিয়ে বললেন,
দেখে চলতে পারো না?!!! যদি পরে যেতে?!!!
আমি বললাম, আপনি তো আছেন। আমার ভরসা, আমার বিশ্বাস। আমি পরে গেলে আপনি ধরবেন যে… তবে কথাটা প্রকাশ্যে নয়, মনে মনে বলছিলাম।
অধিক মেহমানের কারনে সে রাতে জায়গা হচ্ছিল না থাকার। ঠিক করলাম নানু মামিদের সাথে ফ্লোরে থাকব। ফ্লোরের একদম কর্ণারে শুইলাম। হঠাৎ করে চোখের মধ্যে একটা আলো এসে পরল। তাকিয়ে দেখি, আমার ঠিক পাশেই স্যার শুয়ে ফোন টিপছে, কাছেই, খুব কাছেই। মাঝখানে শুধু পিচ্চি বোন’টা দেয়াল হয়ে আছে….
ভিতর’টা কেমন যেন করে উঠল। চোখ’টা বন্ধ করে ফেললাম। মনে হলো আলো’টা নিভে গেছে। কিন্তু আমার হৃদকম্পন একটু একটু করে বাড়ছে। একটা সময় ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া শুরু করি। হঠাৎ’ই চোখের উপর একটা আলো এসে পরে……
ভীরু এবং কাঁপা চোখে তাকালাম। তারপর যা দেখলাম……..

চলবে……

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৩

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৩
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ছেলেটির ডায়েরী…..
পরদিন সকাল সকাল অফিসে পৌঁছলাম। কারন, ও যেন লেইট করে এসে বলতে না পারে তাড়াতাড়ি এসেছে। একটা জিনিস আমি আজো বুঝতে পারলাম না, আমার কর্মচারীরা আমায় দেখলে ভয়ে চুপসে যায় কেন? কেন’ই বা আমায় দেখে তাড়াতাড়ি যার যার মতে কাজ করা শুরু করে। যাকগে। যে কথাটি বলছিলাম। সকাল ১০টা বেজে ০২মিনিটে মেয়েটি মানে আমার পি.এ অফিসে ঢুকে। ওর চেম্বারের দিকে যেতে গিয়ে ও মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে পরল। কারন, আমি তখন ওর চেম্বারেই বসে ছিলাম। ওকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। ও মাথা নিচু করে ফেলল। তারপর বলতেছে- আমি স্যরি স্যার। ০১মিনিট ৫৮সেকেন্ড লেইট হয়ে গেল। ওর দিকে একবার তাকিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। যাওয়ার সময় বলে গেলাম আমার রুমে আসতে। আমি রুমে আসার ক্ষানিক বাদেই অনুমতি নিয়ে মাথা নিচু করেই আমার রুমে প্রবেশ করে। আমি ওর সাথে তেমন কোনো কথায় বললাম না। শুধু ওর দিকে ৯টা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললাম, আজকে রাত্রের ভিতর যাতে এগুলো কমপ্লিট করে দেয়। ও জল ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার! এত্তগুলো ফাইল একসাথে একরাত্রের ভিতর কমপ্লিট করা সম্ভব না। দয়া করে কাজ’টা আমায় আরেকটু কমিয়ে দিলে ভালো তো। ওর কথা শুনে কাল সারাদিন থেকে মনের ভিতর পুষে রাখা রাগ’টা দ্বিগুন বেড়ে গেল। ড্রয়ার থেকে আরো তিনটা পুরনো ফাইল বের করে ধরিয়ে দিলাম ওর হাতে। ওর অবাক হওয়ার মাত্রাটা যেন বহুগুনে বেড়ে গেল এবার। ফ্যালফ্যাল চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল, ফাইলগুলো নিয়ে চলে গেল আমার রুম থেকে। সেদিন লাঞ্চের সময় সবাই যখন লাঞ্চ করতে ব্যস্ত, মায়া তখন ফাইল নিয়ে ব্যস্ত। এই শীতের মধ্যেও মেয়েটি ঘামছে। খুব হাসি পেলো আমার। বেচারি!!!!???
হঠাৎ করে মায়া আমার রুমের দিকে তাকালো। আমি দরজার কাছ থেকে পর্দার আড়ালে সরে যায়।

মেয়েটির ডায়েরী_
সে রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি। একে তো সারাদিন পরীক্ষা আর জার্নির ভিতর গেছে, তার উপর রাত্রে কিচ্ছু না খেয়েই ঘুমানোর কারনে শরীর’টা একটু দূর্বল হয়ে যায়। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মরিচ বর্তা দিয়ে কয়টা পান্তাভাত খেয়ে নিলাম। এটা রোজকার খাবার। মামি, মামাতো ভাই-বোন’রা খাওয়ার পর যে উচ্ছিষ্ট থাকে সেটাই খেয়ে নেই। কোনো কোনো সময় সেটাও জোটে না কপালে। ওহ,যে কথাটি বলছিলাম। ভোরে রান্না করে বাড়ির যাবতীয় কাজ করে গুছিয়ে রেখে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। অফিসে যেতে যাতে লেইট না হয় সেজন্য অন্যদিনের চেয়ে আধঘন্টা আগে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে। কিন্তু বিধি বাম। গাড়িটা মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে যায়। অন্য গাড়ি আসার অপেক্ষা করতে গিয়ে অফিসে পৌঁছতে লেইট হয়ে যায় ২মিনিট। ভয়ে ভয়ে ভিতরে প্রবেশ করি। কথায় আছে, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। সেটাই হলো। সামনে তাকিয়ে দেখি বস আমার সামনে আমার চেম্বারে বসে আছে। থমকে দাঁড়ালাম সেখানেই। ভিতর’টা শুকিয়ে আসছিল ভয়ে। ওনি বসা থেকে উঠে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি মাথা নিচু করে স্যরি বললাম। তারপর ওনি অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেলেন। বলে গেলেন,আমি যাতে ওনার রুমে যায়। না জানি, আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে ভাবতে ভাবতে ওনার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ওনি রাগে ভাব নিয়ে আমায় ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিল। কোনো কথা-বার্তা নাই সেদিন ওনি আমার সামনে ৯টা ফাইল এগিয়ে দেয়, রাতের ভিতর এগুলোর সব অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করে দিতে হবে। এই ভেবে ভেতর’টা শুকিয়ে গেল, মামির সংসারে আমাকে তো রাত্রেও গাঁধার মত খাটতে হয়, তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ওনার এই ফাইলগুলো দেখতে যে বাড়তি সময় দরকার সেটা আমি কই পাব?! এসব ভেবে কান্না চলে আসছিল তাই আমি ফাইলের কাজের ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করলে ওনি আমার হাতে আরো ৩টা ফাইল ধরিয়ে দিলেন। আমি যেন এতক্ষণ সপ্ত আকাশে ছিলাম আর এখন হঠাৎ করেই সেখান থেকে মাটিতে পরে গেলাম। ওনাকে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। চলে গেলাম ওনার রুম থেকে। সিদ্ধান্ত নিলাম অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফাইলগুলোও একটু একটু দেখে নিব। লাঞ্চের সময় সেদিন আর বাইরে যায় নি খেতে। কি দরকার আছে সময় নষ্ট করার? তারচেয়ে বরং লাঞ্চের সময়’টা কাজে লাগাব। হঠাৎ’ই মনে হলো সামনে থেকে কিছু একটা সরে গেল। স্যারের রুমের দিকে তাকালাম। নাহ, কেউ নেই……

ছেলেটির ডায়েরী_
দেখতে দেখতে তিন’টা বছর চলে গেল। মায়াকে এখন আর আপনি নয়, তুমি’ই সম্বোধন করা হয়। এই তিন’টা বছরে একটু একটু করে আমি মায়াকে চিনলাম। ওর দক্ষতা সম্পর্কে জানলাম। সত্যি, দেখতে পিচ্চি হলেও মেয়েটি সাংঘাতিক বুদ্ধিমতি এবং কাজের। যাক, এতদিনে এটা বিশ্বাস করতে পারলাম বাবার মন্তব্যগুলো সম্পূর্ণ অমূলকও নয়। হঠাৎ করে মেয়েটা কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে গেল। আগের মত হাসে না, বেশী কথাও বলে না। সবসময় কেমন যেন গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকে। জিজ্ঞেস করলে বলে, সে কিছু না। ব্যাপার’টা আমার কেন যেন ভালো ঠেকছিল না….

মেয়েটির ডায়েরী_
সেদিন স্যারকে নিয়ে বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেল। সেদিনও স্যার আমায় একা ছাড়তে সাহস পায়নি। ওনার গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়ে আসলেন আমার বাসার সামনে। গাড়ি থেকে নেমে চলে যাওয়ার সময় ওনি আমার সাথে মজা করে বলছিলেন, বাব্বাহ! চলে যাচ্ছ? আমায় একটু সাধলে কি চলে যেতাম নাকি?! আমি মৃদ্যু হেসে বললাম, আরেকদিন স্যার। কি করব?! আমার যে হাত পা বাঁধা। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সাহস হয়নি স্যার’কে বাসায় নিয়ে যেতে। সেরাতে বাসায় পৌঁছে দেখি মামির ভাই’টা আমার রুমের পাশের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ফ্রেশ হয়ে আমি যখন রুমে শুতে যাব, তখন’ই ওনি আমার পিছু পিছু রুমে প্রবেশ করে। ঝাপিয়ে পরে আমার উপর। প্রাণপনে বাঁচার চেষ্টা করেও যখন ওনার সাথে পারছিলাম না, তখন সতর্কতাসরুপ বালিশের কাভারের ভিতর যে চাকু’টা লুকিয়ে রেখেছিলাম, সেটা দিয়ে ওনাকে আঘাত করি। ওনার হাত কেটে রক্তাক্ত হয়ে যায়। ছেড়ে দেয় আমাকে। সে রাতেই মামির হাত থেকে বাঁচার জন্য মামাতো বোনের সহযোগীতায় বাড়ি ছেড়ে পালাই। প্রথম দিন আমার একটা চিনা আন্টির বাসায় আশ্রয় নিলেও সে বাসায় ২দিনের বেশী থাকতে পারলাম না। ঐ বাসার আংকেল’টার বাজে দৃষ্টি সবসময় আমার উপর ছিল। সেদিন ঐ বাসা ছেড়ে চলে আসি। অনেক দেখে শুনে এবং একমাত্র বান্ধবীর সহযোগীতায় একটা ভালো বাসা খুঁজে পায়। আমার কোম্পানির মালিক ভালো আংকেলের বাসার সাথের বাসা’টায় আমি ভাড়াটিয়া থাকতাম। দেখতে দেখতে আরো একটা বছর চলে গেল। একসাথে কাজ করতে, চলতে চলতে কখন যে সিয়াম’কে নিয়ে বুকের গভীরে ভালো লাগার বীজ বপন করে ফেললাম বুঝতে পারিনি। সেই ভালো লাগা’টা কি শুধু’ই ভালো লাগা নাকি অন্য কিছু সেটা দেখার জন্য স্যারের থেকে ছুটি নিলাম তিনদিনের। স্যারের থেকে তিনদিন দুরে থাকতে পারি কি না সিদ্ধান্ত নিলাম। একদিনও থাকতে পারিনি। কেন জানি দুরে থাকার কথা ভাবতে’ই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আর থাকতে পারলাম না। ছুটে গেলাম অফিসে। সেদিন স্যার আমাকে দেখে এতটা অবাক হয়েছিল যা বলার মত না। অবাক হওয়ার’ই কথা। বহু অনুনয়-বিণয় করে তিনদিনের এই ছুটি নিয়েছিলাম আমি। তারপর কেটে গেল আরো একটি বছর। আমার এম.বিএ’টাও কমপ্লিট হলো। পড়াশোনার কোনো চাপ নেই, বাড়তি কোনো টেনশন নেই। সারাদিন শুধু অফিস আর রাত্রে রুমের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ওর রুম’টার দিকে তাকিয়ে থাকা। আজকাল ওনার বাড়ির ছাদেরও প্রেমে পরে গেছি আমি। প্রেমে পরে গেছি ছাদের ফুলগাছগুলোর। প্রেমে পরে গেছি ওনার রুমের জানালার। যা দেখে’ই প্রতি রাত্রে’ই আমার ঘুমুতে যাওয়া। সময় বয়ে যেতে লাগল, আর আমি ওনার ওনার প্রেমে ভেঙে চূড়ে পরলাম। ওনার প্রতি আমি যেন ভিষন রকম দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম। আজকাল তেমন কথাও বলি না কারো সাথে। ভাবতে ভালো লাগে। ওনাকে নিয়ে ভাবতে…..

ছেলেটির ডায়েরী_
আজকাল রাত্রে ভালো ভাবে ঘুম হয় না। ছাদে গেলে কেন যেন মনে হয় ওপাশের ছাদ থেকে একটা অস্পষ্ট ছায়া আমার দিকে চেয়ে আছে। তাকালে শূন্যতা ছাড়া আর কিছু’ই দেখতে পায় না। মাঝ রাত্রে ঘুম ভেঙে যায়। জানালার পাশে দাড়িয়ে রাতের যান্ত্রিক শহর’টা দেখতে যাব, তখন’ই কেন যেন মনে হয় ওপাশের বিল্ডিংয়ের জানালা দিয়ে কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণে ঐদিকে তাকায়! নাহ! এবারো শূন্যতা ছাড়া কিছু’ই দেখতে পায় না। ভ্রম ভেবে এসব চিন্তা মাথা থেকে তাড়িয়ে দেয়….. সেদিন সারা রাত ধরে বিছানায় ছটফট করে ঘুমুতে পারলাম। কিসের যেন এক শূন্যতা ভেতর’টাকে অস্থির করে তুলছিল। কিন্তু কিসের শূন্যতা? আমার তো সব আছে। মা-বাবা, ছোট বোন, বন্ধু-বান্ধব। সবাই আছে। তারপরও কিসের এত শূন্যতা?!!! ভাবতে পারছিলাম না, আবার শত চেষ্টা করার পর ঘুমও আসছিল না। বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম। নাহ, কিছুতেই ভালো লাগছে না। রুমে চলে আসলাম। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভেতর’টা এতক্ষণে শীতল পরশে ঠান্ডা হয়ে গেল। আহ! কত শান্তি…!!!
নাহ, এখন আর খারাপ লাগছে না। আচ্ছা, আমার কি হয়েছে? কেন রোজ রোজ এমনটি হয়? কেন আমার ভিতর’টা এমন লাগে। কিসের জন্য এত হাহাকার বুকে। হঠাৎ’ই আমার এক কাব্যিক বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। যে প্রায়’ই একটা কথায় ওর গার্লফ্রেন্ড’কে বলত, যদি কখনো কোনো রাত্রে ঘুম ভেঙে যায়, হাজার চেষ্টা করেও ঘুমুতে না পারো, ভিতর’টা যদি অজানা এক শূন্যতা’য় ছটফট করে, ভেবে নিও তোমার পৃথিবীর আরেক প্রান্তে তোমার জন্য অন্য একজন রাতজেগে স্বপ্ন বুনছে। যার কারনে তোমার ঘুম আসছে না। আচ্ছা, আমাকে নিয়েও কি কেউ রাতজেগে স্বপ্ন বুনছে?
-‘ ধূর! এসব কি ভাবছি? এ যুগে এমন ভালোবাসা হয় নাকি? ?
নিজের মাথায় নিজেই হাত দিয়ে থাপ্পর দিলাম। হঠাৎ মনে হলো ওপাশের বিল্ডিংটার রুমের জানালার পর্দা’টা নড়ে উঠল। মনে হচ্ছে, কোনো আবছায়া সরে গেছে ওখান থেকে…….
চলবে।

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০২

1

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০২
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ছেলেটির ডায়েরী_
অফিসের পুরনো হিসেবের খাতা’টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম গত তিন বছরের লাভ ক্ষতির ক্ষতিয়ান। কারন, গত তিন বছর পড়াশুনার স্বার্থে আমায় দেশের বাহিরে থাকতে হয়। এর আগে অবশ্য এখানে ৪বছর কাজ করে গেছি, সেটা অন্য বিষয়। পড়াশুনা শেষ করে দ্বিতীয়ববারের মতো আজ’ই প্রথম বাবার ব্যবসায়ে জয়েন করলাম। হঠাৎ করে’ই শুনতে পেলাম দরজার সামনে মেয়েলি কন্ঠে কেউ একজন বলছে, আসতে পারি স্যার? সামনের দিকে না তাকিয়েই বললাম- Yes, coming. তারপর আমি আবারো লাভ- ক্ষতির দেখতে লাগলাম। হঠাৎ করেই মনে হলো কেউ একজন যে রুমে এসেছে সে বাবার সিলেক্ট করা পি.এ মায়া নয়তো। অতি আগ্রহ নিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। কিন্তু একি?! এ যে সেই মেয়ে যাকে কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে একটু দুরে ছেড়ে দিয়ে আসছিলাম। ও এখানে কেন এসেছে? আর আমার অফিস’টায় বা চিনল কিভাবে? মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলাম-
‘ আপনি? আপনি এখানে কেন?’ মেয়েটি বেশ কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জবাব দিল-
‘ স্যার, আমি মাত্র’ই অফিসে এসেছি। এসে শুনলাম আপনি আমায় ডেকেছেন স্যার। তাই এলাম।’ তার মানে আপনি..?!!!!!
মেয়েটি আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল- স্যার, আমি মায়া। আমি ভ্রু-কুচকে বললাম, মানে আপনি আমার পি.এ মায়া?! মেয়েটি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। মেয়েটির আপাদমস্তক দেখে কেন যেন মনে হলো এই মেয়েটি খুব বেশী হলে ১৬ কি ১৭ বছরের পিচ্চি। এর বেশী নয়। যাকগে। ওকে বললাম, তা মিস/মিসেস মায়া কতদিন ধরে এমন ফাঁকি দেওয়া চলছে কাজে? আই মিন কতদিন ধরে কাজের প্রতি এই অবহেলা চলছে? মেয়েটি কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলল- না, স্যার! আমি কখনো লেইট করি না। আজ’ই প্রথম লেইট হলো। প্লিজ স্যার আজকের জন্য মাফ করে দেন। আর কখনো এমন হবে না। আমি বললাম হুম, মাফ করে দিলাম আজকের জন্য’ই। এখন আসতে পারেন। মায়া চলে গেল।

মেয়েটির ডায়েরী_
স্যারের রুমের সামনে গিয়ে বললাম- আসতে পারি স্যার? রুম থেকে কেউ একজন বলল- Yes, coming. কেন জানি কন্ঠস্বর’টা খুব বেশী চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। বুকের ভিতর যে কম্পন’টা এতক্ষণ ধরে চলছিল, সেটি মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে গেল যখন দেখতে পেলাম বসের চেয়ারে বসে থাকা লোকটি আর কেউ নই। কিছুক্ষণ আগে যে যুবকটি আমায় হেল্প করেছিল এ সেই যুবক। কিন্তু এও কি সম্ভব? হয়তো সম্ভব! অবাক দৃষ্টি নিয়ে বসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম। যদিও ছুটে এসেছিলাম স্যরি বলার জন্য। কিন্তু এখানে যে আমার জন্য এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে বুঝতে পারিনি। ২২বছরের জীবনে আজ’ই প্রথম এত বড় ধাক্কা’টা খেলাম। ৫মিনিট পর বস আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু একি?! ওনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? ও বুঝেছি। আমার মত ওনিও টাস্কি খেয়েছে। ??
‘ আপনি? আপনি এখানে কেন? কিভাবে এসেছেন? এমন আরো কতগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলো আমার দিকে। একসাথে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো আর সম্ভব না। তাই ছোট্ট করে উত্তর দিলাম, আমি মায়া। কলিগ মুক্তা আমায় পাঠিয়েছি। ওনি আমার শেষ করার আগেই ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকা করে প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলেন বোধ হয়, আপনি মায়া? তার আগেই আমিও ওনার কাছ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম, আমি মায়া। আপনার পি.এ মায়া। ওনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে মুখটা কেমন যেন করল। তারপর কেন লেইট হলো, এই ফাঁকি কতদিন ধরে চলছে এসব প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। ?
আমি ভয়ে চুপসে গেলাম, কারন ওনার হাতে তখন কর্মচারীদের হাজিরা খাতা। বোধ হয় আমার নামের পাশে কলম ঘুরাচ্ছেন। তাই ভয়ে স্যরি বলে কৃতকর্মের জন্য মাফ চেয়ে নিলাম। খাতায় লেইট মার্ক উঠে গেলে আমি শেষ। কিন্তু না। ওনি খাতা’টা রেখে দিলেন। আর কখনো যাতে এমনটি না হয় সেটা বলে আমায় যেতে বললেন। আমি খুশিতে লাফিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ?

ছেলেটির ডায়েরী_
মেয়েটিকে দেখে কাজের মনে হলেও কেন যেন ওর বয়স দেখে মনে হলো না ও কাজের যোগ্য। আর তাছাড়া এই চাকরী করার ক্ষেত্রে যে শিক্ষগত যোগ্যতা’টা থাকে সেটা আদৌ যে আছে সেটাই আমার সন্দেহ হচ্ছে। সে যায় হোক! দেখি এই মেয়ে কতটা কাজের। বাবার কথা তো আর পুরোপুরি মিথ্যে হতে পারে না…
সেদিন ১০টা বাজার আগেই অফিসে পৌঁছলাম। আসা মাত্রই সবাই নিজ নিজ আসন থেকে উঠে আমায় গুডমর্নিং ওয়িশ হলো। হঠাৎ—
একি?! এই মেয়ে তো দেখি আজ’ও লেইট করছে। তার মানে এই মেয়ে রোজ রোজ এমন করে। আজ আসুক, ওর চাকরীর বারো’টা বাজাবো। মনে মনে ভাবতে ভাবতে রুমে চলে গেলাম। আসার আগে বলে এলাম, মায়া আসার সাথে সাথেই সাথে আমার রুমে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো। মায়া আর আসল না। আমি তো রেগে আগুন। বাবা’কে না জানিয়েই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, এই মেয়েকে এর উপযুক্ত শাস্তি দিব’ই।

মেয়েটির ডায়েরী__
অফিসের খাটাখাটি শেষে বাসায় এসেও একদন্ড রেস্ট নিতে পারি না। মামির অসহনীয় অত্যাচার দিনকে দিন বাড়তে থাকে। তারউপর আবার কালকে অনার্স ৪র্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। যদিও অফিসের বড় কর্মকতার থেকে পারমিশন নেওয়ায় আছে পরীক্ষার দিনগুলোতে কাজে যেতে পারব না তবুও কেন যেন ভয় ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল বসকে বলে আসলেই ভালো হতো। ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রান্না-বান্না করে রেডি হয়ে নিলাম পরীক্ষার জন্য। ১০টা থেকে পরীক্ষা। একটু আগেই যেতে হবে। দেখতে দেখতে সময় চলে গেল। পরীক্ষা দিয়ে এসে যেই না একটু বিছানায় গা এলিয়ে শুইলাম, ওমনি মামি এসে রাজ্যের ঝাড়ি ঝেড়ে নিলেন। ছুটে গেলাম রান্না ঘরের দিকে। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। কাজ সেরে রান্না ঘর থেকে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলাম। মনে মনে ভয় হচ্ছে, না জানি আগামীকাল অফিসে গিয়ে বসের কি ঝাড়িটায় না খেতে হয়…..

চলবে….