সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১১

0
125

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১১

২৪.
রুহানী শুয়ে শুয়ে ড্রামা দেখচ্ছিলো “Hidden love”। টানটান উত্তেজনার মহূর্ত নায়ক নায়কার ঠোঁটের দিকে এগুচ্ছিলোই এমন সময় সিন কেটে ফোনের স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করে উঠে হলদে শয়তান নামটা সাথে স্ক্রীনের পিছনে ভেসে উঠে শুভ্র পাঞ্জাবীতে অত্যন্ত সুদর্শন এক পুরুষের ছবি রুহানীর হলদে শয়তানের ছবি। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ০৫ মিনিট এই সময়ে অভ্র এর আগে কখনো ফোন করেনি হঠাৎ ফোন করার কারণ বুঝলোনা। কিন্তু ততোক্ষনে ফোন বাজতে বাজতে কেটেও গেছে।ইতিমধ্যেই পুনরায় ফোন বাজতে আরম্ভ করে। এবার আর রুহানী দেরি করে না ফট করে ফোন ধরে নেই।

—আমি নিচে আছি তোমার কাছে শুধু ১০ মিনিট আছে নিচে নামার জন্য ইজ দেট ক্লিয়ার?

প্রশ্ন করেই কল কেটে দেয় অভ্র। রুহানী কি বলে তা শুনার বিন্দু মাত্র আগ্রহ দেখায়না। কারন সে জানে আসবেনা আসবেনা করলেও সে ঠিকই আসবে হলোও তাই ১২ মিনিটের মাথায় লং শার্ট আর ধুতি পায়জামা সাথে অর্ণা গলায় পেচিয়ে বেরিয়ে এলো পিঠ অব্দি খোলা চুল গুলো উড়তে লাগলো হাওয়াই। বৃষ্টির সূচণা পর্ব চারিদিকে বৃষ্টি হওয়াই আবহাওয়াটা বেশ রোমাঞ্চকর আর ঠান্ডা। বাসায় অনেক মেহমান থাকায় অভ্র বেরিয়ে পরেছিলো একা ঘুরবে ভাবলেও মনে পড়ে তার তো একটা ছোট কালের বিবাহিত একটা বউ আছে আবার বড় কালের হবু বউ তাহলে সিংগেল এর মতো ঘুরার প্রশ্নই আসেনা।

—আপনি এখানে কেনো?

হালকা তেজি গলায় বলে উঠে রুহানী। কিন্তু রুহানীর তেজী গলাকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করেই অভ্র বাইকের সামনে রাখা লেডিস হেলমেট টা পড়িয়ে দিলো রুহানীর মাথায়। কিন্তু হেলমেট টা ঠিক পছন্দ হলোনা রুহানীর নাক মুখ কুচকে বলে উঠলো

—এটা কেমন রঙ পছন্দ হয়নি আমার খুলেন এটাকে।
—এখনকার জন্য পড়ো রাস্তাই হেলমেট শপ থেকে তোমার জন্য একটা কিনে দিবোনি এখন উঠো।

রুহানী বাচ্চাদের মতো মাথা দুলিয়ে বসে পড়লো বাইকের পিছনে। অভ্র বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে উঠলো

—আন্টি বা আঙ্কেল দেখেনি তোমাকে বের হতে??
—আম্মু নিজেই তো আমাকে গেট অব্দি রেখে গেলো।

রুহানীর কথায় চমকাই না অভ্র যেনো এইটা অস্বাভাবিক কিছুই না।রুহানীকে দেওয়া কথা মতো তাড়া হেলমেট শপ এ এসেই বাইক থামাই। রুহানী ঘুরে ঘুরে দেখছে সব হেলমেট গুলো ইতিমধ্যে একটা পছন্দও হয়ে গেলো তার হাতে নিয়ে লাফাতে লাফাতে অভ্রর সামনে এসে দেখাতেই অভ্র হাসিমুখ সেটা নিয়ে কেশ কাউন্টারে চলে যায় সেটা কিনে ফিরে এসে রুহানীকে পুনরায় নিজ হাতে যত্ন সহকারে পরিয়ে দেয়।

দুইজনে এসে থামে বানিজ্য মেলাই বিশাল আওয়োজন। বেশির ভাগ এই সময়টা এমন ভাবে বানিজ্য মেলা বসেনা কিন্তু এবার বসেছে বলেই রুহানীকে নিয়ে এসেছে এখানে রুহানীর আবার এইসব মেলা খুবই পছন্দের। অভ্র যতোটা ভীর ভেবেছিলো আজ তেমনটা অতিরিক্ত ভিড় চোখে পড়লোনা তার এতে অবশ্য লাভ টাই হলো। এমনিতে রুহানী যে বাচ্চামো গুলো করে হাত ছেড়ে এদিকে সেদিক দৌড় দিবেনা তার গ্যারান্টি নাই।

মেলাতে প্রবেশ করতেই রুহানীর চোখ গেলো চুড়ির দোকানে রুহানীর একমাত্র দুর্বলতা এই চুড়ি।দেরি না করে অভ্রর হাত ধরে দৌড়ে গেলো সেইখানে। হাত ভরে লাল নীল কালো চুড়িতে ভড়িয়ে অভ্রর সামনে হাত বাড়িয়ে দিলো অভ্র আলতো হেসে চুড়ির দাম মিটিয়ে হাটা ধরলো।

২৫.
রুদ্র শহরের অনেকটাই দূরে এসে বাইক থামালো। অনেকটাই নিরিবিলি চারিপাশ। না গ্রাম না কোন শহুরে বাড়ি। একটা কি দুইটা গাড়ি চলা চল করছে তাও অনেক সময় পর পর।

নিরা অবাক হলো চারিপাশ দেখে জায়গাটা নিরিবিলি হলেও অসম্ভব সুন্দর। রাস্তার চারিপাশে সুন্দর হলুদ ফুল ফুটে আছে। নিরা এগুলোকে ছোট সূর্যমুখী ফুল বলেই ডাকে আসল নাম তার জানা নেই আর সে কখনো জানার চেষ্টাও করেনি। সব কিছুকে তার নির্ধারিত নামে ডাকতে হবে আদৌও কি তার কোন মানে আছে উহু কই না তো।

হঠাৎ করে মাথায় কিছুর স্পর্শ পেয়ে হাত দিয়ে বুঝলো ফুলের ক্রাউন অবাক হয়ে রুদ্রর দিকে তাকাতেই তার বুক ধক করে উঠলো রুদ্রর চোখে মুখে আলাদাই নেশা ফুটে উঠলো কেপে উঠলো নিরার সমস্ত স্বত্বা। নিরাকে আরেকটু কাছে টেনে নিতেই রুদ্র হাত দিলো নিরার কমড়ে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসতেই আখিদ্বয় বন্ধ হয়ে এলো তার কম্পনের ফলে দাঁড়িয়ে থাকাও যেনো দ্বায় হয়ে গেলো তার রুদ্রর শরীরেই ছেড়ে দিলো তার ভর।রুদ্র আলতো হাতে নিরার চোখে মুখে আছড়ে পড়া চুল গুলো গুজে দিলো নিরার কানের পিঠে

—আমি নিজের মনে কথা ব্যক্ত করতে পারিনা আর না কাউকে বুঝাতে পারি আমি ঠিক কি অনুভব করি। কিন্তু আপনার বেলাই ব্যাপারটা ভিন্ন হয়ে যায় আমি চাইলেও পারিনা নিজের অনুভূতি গুলো অপ্রকাশিত রাখতে আর না পারি আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখতে আমি সর্বদা চেয়েছিলাম আপনাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে আর সেজন্যই বিয়েতে না করা কারন আমি আপনার মতো প্রানচ্ছ্বল না আমি পারিনা আপনার মতো মন খুলে হাসতে কান্না করতে রাগ করতে আমি চুপচাপ সব অনুভূতিতেই।আর তাই চায়নি আপনাকে নিজের সাথে জড়াতে।কিন্তু আপনি তা হতে দিলেন না আমাকে আমার মধ্যই থাকতে দিলেন না আমার বাধ্য মনটাকে করে তুললেন অবাধ্য অপরাগ আপনার প্রতি তার অনুগত্য প্রকাশ করায় যেনো তার নিত্যদিনের কাজ তার এই কাজে আমি অশান্তিতে আছি মিস নির তাই এই অবাধ্য মনটাকে তার এই অবাধ্য মালিকের কাছেই হস্তান্তরিত করতে চাচ্ছি আমার এই অবাধ্য মনটা আপনাকে ভীষন ভালোবেসে ফেলেছে ভেবেছিলাম আপনার থেকে দূরে গেলে হয়ত এই অবাধ্যতা গুলো ফুরিয়ে আসবে কিন্তু তা আর হলো কই।

হবেন আমার বাধ্য জীবনের অবাধ্য ফুল
আমার শান্ত বাগানের অশান্ত প্রজাপতি
দিনশেষের ক্লান্তির হাসি
বৃষ্টিময় দিনের অবাধ্য পাখি
আমার আকাশের এক ফালি চাঁদনি
আমার #সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
আমার নিরা??

নিরা চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কনা সে ভাবেনি তার গম্ভির মশাই তাকে এতোটা ভালোবাসে। রুদ্রর বুকে মাথা রাখা অবস্থাতেই বলে উঠলো

—হবো আমি আপনার #সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা।

রুদ্র আলতো হাসলো নিরার মাথায় নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিতে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রাখলো নিরাকে নিজের সাথে।

২৬.
ধ্রব আজ দুইজায়গায় কন্সার্ট হওয়াই ভিষন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাত্র এক জায়গা থেকে কনসার্ট শেষ করে গাড়ি নিয়ে ছুটছে ঢাকা বানিজ্য মেলাই আরেক কনসার্ট করতে। নিড়িবিলি রাস্তা হওয়াই গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরে দৃষ্টি দিলো ধ্রুব সাথে সাথেই বুকের মাঝখান টাই চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো। নিজের প্রিয় মানুষ কে পড়ে থাকতে দেখলো অন্যকারো বুকে।শাড়ি পরিহিতা নিরাকে চিনতে বেশি অসুবিধা হয়নি তার সাথে রুদ্রকে দেখে সে আরও কনফর্ম হয়ে গেছিলো এটা আর কেউ না তার সুরঞ্জনা। কিন্তু দৃশ্যটা সে মানতে পারেনি। পুরুষ মানুষ এর নাকি কাদতে নেই কিন্তু ধ্রুব পারলোনা সমাজের এই রিতি টা মানতে চোখ বেয়ে বেরিয়ে এলো অশ্রু কণা বিষাদের।পাওয়ার আগেই হারিয়ে গেলো যে সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা।মেঘলা করে দিয়ে চলে গেলো অন্যের আকাশে কিন্তু এই ব্যাথাটা সহ্য হলোনা তার।সেদিন বাস এ চোখ মেলতেই সে চেয়েছিলো নিরাকে দেখতে কিন্তু সেদিন দেখা হয়নি তার পাশে অপরিচিত একটা মেয়েকে দেখে অবাক হয়েছিলো বাস থেকে নেমে অনেক খুজেছিলো সে পায়নি।আর আজ এই একটা মাস পরে পেলো তাও অন্যকারো বুকে।

ধ্রুবের দুখ বিলাসের মাঝেই পৌছে গেলো সে তার গন্তব্যতে চারিদিকে প্রচন্ড মানুষ এর ভিড় ঠেলে কোনপ্রকার উঠে গেলো স্টেজে।

রুহানী অভ্রর হাত ধরে এদিকে ওদিক ঘুরছিলো হঠাৎ সবাই দৌড়ে একদিকে যেতে দেখে দেও কৌতুহল বশত সেদিকে দৌড় লাগায় অভ্রর হাত ধরেই। ভীড়ের মাঝে ঠেলেঠুলেই সামনে এগিয়ে দেখলো ধ্রুব সাথে সাথে বাকিদের মতো সেও চিৎকার করে উঠলো যা দেখে ভ্রু কুচকালো অভ্র।রুহানীর কানের কাছে ঠোঁট এনে জিজ্ঞেস করলো
—এইভাবে পাগলের মতো চিল্লাও কেন আজব?
—আরে চিল্লাবোনা আমার ক্রাশ ধ্রুবতারা ইউটিউব চ্যানেল এর ধ্রুব উনি হায় উনার ভয়েজ জাস্ট অসাম।

রুহানীর মুখের বাক্যগুলো যেনো সহ্য হলো অভ্রর তাকিয়ে রইলো অতি সুদর্শন যুবোকটির দিকে। কিছু মহূর্তে পরেই মাইক হাতে বলে নিজের সুরোল কন্ঠে ধ্রুব বলে উঠে

—আজকের এই গান আমার অপ্রেমিকার জন্য আমার না হওয়া প্রেমের জন্য।

ধ্রবের কথাটাই যেনো চারিদিকে শোরগোল আরও বেশি বারিয়ে দিলো। মহূর্তে শান্ত হয়ে গেলো চারিপাশ ধ্রুবের কন্ঠে

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

চোখে চোখে চেয়ে থাকা
কবে হবে বলো কথা বলা?
আবেগী মন বাঁধা মানে না
তুমি ছাড়া কিছু চাই না

(ধ্রবর চোখে ভেসে উঠলো মময়সিংহে নিরার সাথে কাটানো মহূর্ত পুনরায় আখি জোড়া বন্ধ করে নিলো সে।)

চোখে চোখে চেয়ে থাকা
কবে হবে বলো কথা বলা?
আবেগী মন বাঁধা মানে না
তুমি ছাড়া কিছু চাই না

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

জানি তুমি আছো একা
তবে কেন বলো দূরে থাকা
সময় তো থেমে থাকে না
দ্বিধা ভেঙে কাছে এসো না

জানি তুমি আছো একা
তবে কেন বলো দূরে থাকা
সময় তো থেমে থাকে না
দ্বিধা ভেঙে কাছে এসো না

(গানের মাঝে কখন রুহানী অভ্রর বুকে মাথা এলিয়ে দিয়েছে টের পেলোনা সে। অভ্রও নিজের বাহুর মাঝে আগলে নিয়েছে রুহানিকে)

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

রাতেরই এ আঁধারে
অজানা ছোঁয়া
মায়াবী চোখে কি মায়া
যেন গোধূলি আবীর মাখা

কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?
কি নেশা ছড়ালে!
কি মায়ায় জড়ালে?

ধ্রুবের চোখের পানির দিকে তাকিয়েই অন্য এক কিশোরীর হৃদয়ে ব্যাথার এক পাহাড় তৈরি হয়ে গেলো।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে