সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১০

0
127

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১০

২৩.
অভ্র যতোটা সহজে মেনে নিয়েছিলো বিয়ের কথা রুহানীর কানে পড়তেই তারচেয়ে দ্বিগুন ভাবে নাকোচ করে বসেছে বিয়ের জন্য সে কোনমতেই ওরকুম লোককে বিয়ে করবেনা যে ছোট ছোট পাতলা ড্রেস পড়া মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করে।কখনোই না ওরকুম উজবুক মার্কা খাটাস লোককে বিয়ে করবে না।

রাগে গজগজ করতে করতেই ফোন লাগালো রুহানী নিরাকে।নিরা তখন রুদ্রর দেওয়া ফাইল শেষ করতে ব্যস্ত দুইবার এর মাথায় ফোন কানে নিতেই নিরার মাথা ঘুরে গেলো রুহানীর কথা বলার ধরণে। তার কথার তালে কিছু না বুঝলেও গালী গুলা যে অভ্রকে ইঙিত করেই ছুড়েছেন মহারানী তা বেস বুঝে গেলো নিরা।

—আচ্ছা শান্ত হো। এবার বল আসলে ভাইয়া করেছে কি।

নিরার প্রশ্নে গাল ফুলায় রুহানী

—তোর ভাইয়াকে নাকি এখন আমাকে বিয়ে করতে হবে এটা কোন কথা।আমি করবোনা ওই বেয়াদ্দপটাকে বিয়ে সারাদিন ওই মাইশার সাথে ঢলাঢলি আজ কলেজেও মাইশার দিকে তাকায় ছিলো জানিস ওই খচ্চরের নাতি হলদে টিকটিকি টা।একটু সুন্দর হইসে তো কি হইসে তাই ভাব দেখাই আমাকে হলদে বিড়াল লেজ কাটা বানর কোথাকারা।

নিরার হাত কপালে নিরার আর বুঝতে বাকি নেই পরিবার এবার নিরা রুদের পিছন ছেড়ে রুহানী আর অয়নের পিছনে লেগেছে তাও কমড় বেধে নিজের ভাইকে সে চিনে আর রুহানীর প্রতি ভাইয়ের সফট কর্ণার সম্পর্কেও সে অবগত সে যে এই বিয়েতে দ্বিমত পোষণ করবেনা নিরা তা জানে আর রুহানীর মনেও তার ভাইকে পছন্দ করে বিধায় তাকে নিয়ে জেলাস হয়েই এইসব কথা বলছে সেটাও বুঝতে বাকি নেই কিন্তু এই ত্যাড়া মেয়েটাকে সোজা ভাবে হেন্ডাল করাও যাবেনা কারন নিরা জানে রুহানী সোজা কথায় মেনে নেওয়ার মানুষ না নিজের রাগ এর সামনে সে কাউকে দেখেনা দেখা যাবে রাগের বশেই বিয়েতে মানা করে দিয়ে পড়ে নিজেই কান্না কাটি করে নিরার মাথা পাগল করে দিবে।

—তাহলে তো তোর উচিত বিয়ে করে ফেলা। দেখ এখন ভাইয়া তোর টিচার সেজন্য তুই চাইলেও ভাইয়াকে কিছু বলতে পারবিনা আর সম্পর্কেও কেউ না এখন তুই যদি অন্যমেয়ের সাথে মিশতে মানা করিস সে শুনবেনা বরং আরও বেশি বেশি করবে কি তাইনা?

রুহানী নিরার কথায় বোকার মতো হ্যা বলে বোকা বোকা চেহারায় তাকায় থাকলো
—তাহলে এখন আমার কি করা উচিত (ঠোঁট উলটে)
—বেশি না বিয়েতে হ্যা বলে দে বিয়ের পরে তুই জ্বালাবি আর তখন তুই তাকে তোর কথার ইশারায় চালাতে পারবি ব্যাস আর তখন ভাইয়া কিছু বললে আমি আব্বু আম্মু,ভালো মা বাবাই সবাই তোর হয়ে ভাইয়াকে বকে দিবো।

—কিন্তু আমি যে না করে দিলাম এখন কি হবে?(কাদো কাদো স্বরে)।

—বেশি কিছুনা দরজা খুল ভালো মায়ের সামনে যা যায়ে বল আম্মু আমি অনেক ভাবলাম তোমরা আমার জন্য আর যায় করো খারাপ কিছু চাইবা না এইজন্য তোমার কথাতে আমি এই বিয়েতে রাজি।এটা বললে ভালো মা বাবাই তো ভাববে তুই তাদের কথা মাথায় রেখেই রাজি হয়েছিস পাল্লা আরও ভারি হবে বুঝলি।

—থ্যাংক ইউ মেরি জান আই লাভ ইউ তোরে আমি আমার ভাইয়ের বউ বানাবো দেখে নিস তুই উম্মমাহ।

রুহানী খুশিতে নাচতে নাচতে কল কেটে চলে গেলো নিচে। নিরা হতবাক হয়েই ফোন কানে নামিয়ে কাজ করতে শুরু করার আগেই সামনে তাকালো কি ভেবে আর তাকাতেই নিরার জান যায় যায় অবস্থা। সে রুহানীর সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছিলো তার অবস্থান টা এই মহূর্তে কোন জায়গায় সে যে এই মহূর্তে রুদ্রর কেবিনে বসে আছে তাও ঠিক রুদ্রের চোখের সামনে তা মনে পড়তেই তার গলা শুকায়ে কাঠ হয়ে গেলো।

এদিকে রুদ্র হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলো নিরা আর রুহানী ফোন কথন শুনে। নিরা মাথায় যে ঠিক কি পরিমানের শয়তানী বুদ্ধি রয়েছে তা বুঝতে বাকি নেই আর এটাও বুঝে গেলো তার সহজ সরল বোন কে খুব সহজেই কথার জালে ফাসিয়ে বিয়েতেও রাজি করায় দিয়েছে মাঝে মধ্যে মন চায় মেয়েটার মাথা খুলে দেখতে আসলেই কি মানুষ এর ব্রেন নাকি কোন বানরের আর শিয়ালের মিকচার করা ব্রেন লাগানো আছে।আজব একটা মেয়ে।

রুদ্র কিছু না বলেই কাজ করতে মন লাগালো আজকে যে বাড়িতে সেই ড্রামা চলবে তা বেশ বুঝতে পারলো হয়তো কালকে সকালেই তার মা সপরিবার নিয়েই হাজির হবেন তালুকদার বাড়িতে।মিসেস শিকদারের বাবা বাড়ি নাই ছোট থেকেই এতিম খানাতেই মানুষ তিনি সেখানে মিস্টার তালুকদারকেই নিজের বড় ভাই বলেই রুহুল তালুকদারেকে চিনিয়েছেন রুহুল তালুকদারের বাবা আজমত তালুকদার সে এতিমখানার নির্মাতা ছিলেন তিনি।

অফিস টাইম অভার হতেই রুদ্রকে সব কাজ বুঝিয়ে বেরিয়ে যায় মায়া আর রুহানী। মায়াকে বিদায় জানিয়েই রুহানী হাটতে শুরু করে আশপাশ দিয়ে নানা রিক্সা চলাচল করলেও উঠতে ইচ্ছা করছেনা তার পড়নে গোলাপি শুতি শাড়িটা হাওয়ার তালে তালে নড়ছে ইচ্ছাকৃত ভাবেই বেধে রাখা খোপা উমুক্ত করে দিলো পিঠ জুড়ে। আজ তার বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই কারণ বাড়িতে আজ প্রচুর মেহমান ওতো মানুষ এর ভীড় নিরার পছন্দ নয় বলেই মিসেস তালুকদার তাকে আজ শিকদার বাসায় নয়তো মায়ার সাথে থাকতে বলেছিলো। কিন্তু তার মন এই মহূর্তে ভিষন খারাপ হওয়াই নিজ ইচ্ছাতেই হেটে চলেছে সে। ঢাকার প্রতিটি অলিগলি তার ভীষণ চেনা এই রাস্তাই বহুবার এভাবে হাটা হয়েছে কিন্তু উদাসীন ভাবে এই প্রথম হেটে চলেছে সে অজানা উদ্দেশ্য নিয়ে।

হঠাৎ বাইকের আওয়াজে হাটার বিগ্ন ঘটে বলে দাঁড়িয়ে যায় নিরা।সে এক সাইড দিয়েই হেটে চলেছে কিন্তু বাইকের হর্ণ টাও যেনো তার সাথেই এগুচ্ছে বলে চরম।বিরক্ত হলো আজব এক শহর মানুষ এর কি উদাসীন হিসেবে হাটাও মানা নাকি আজব।

বিরক্ত নিয়েই পাশে তাকাতেই বিরক্তিকর চোখ জোড়া শিথিল হলো নিরার। সামনেই হালকা নেবি ব্লু শার্টে কালো বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। গম্ভির কপাল খানি ঘামে ভিজে আছে।নিরার অবাধ্য মন আবার বলে উঠলো
“এইযে রঙ করে শাড়ি পড়েছিস শাড়ির আচল টা দিয়ে যদি তার কপালের ঘাম টাই না মুছে দিতে পারিস তাহলে ব্যর্থ তোর শাড়ি পড়া। যে শাড়ি দিয়ে তার গম্ভির মশাই এর ঘাম না মুছা যায় সেই শাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া উচিত সে শাড়ির অস্বস্তি থাকা সাজে না এটা অন্যায় ভয়ংকর অন্যায়”

—কি ভুলে গেছেন আমাকে যে এইভাবে তাকিয়ে রয়েছেন মিস নিরা।

রুদ্র কথায় ধ্যান নাই তার তার দৃষ্টিতো এখনো রুদ্রর ললাটের দিকে তাতে আছড়ে পড়ে থাকা চুলের দিকে।ঘামাক্ত অবস্থাতেও যেনো শ্যামা পুরুষটিকে আরও সুন্দর লাগছে কই এর আগে তো নিরার এইভাবে কাউকে দেখা হয়নি এইভাবে কারো চেহারাতে মুগ্ধও হয়নি কাউকে নিয়ে এতোটা ভাবনাও ভাবেনি তাহলে এই গম্ভির লোককে নিয়ে তার এতো কেন ভাবনা।

নিরার অবাধ্য মনের সাথে হাতটাও অবাধ্য হয়ে উঠলো শাড়ির আচল নিয়ে রুদ্রর দিকে এগিয়ে নিঃশব্দে রুদ্রর ললাটের ঘাম মুছে দিলো।নিরার শাড়ি থেকে আসা মাতাল ঘ্রাণে চোখ মুজে নিলো রুদ্র। আলাদা শিহরণে কেপে উঠলো তার সর্বঙ্গ সত্ত্বা।

—পুরুষ মানুষ কে এতোটা সুন্দর মানায় না রুদ্র সাহেব। আপনি যে মেয়েদেরকে হিংসায় মেরে ফেলবেন। যে কবিরা চাদের সাথে নারীদের তুলনা করতো সে আপনাকে কেনো দেখেনি রুদ্র সাহেব তাহলে তো আজ পুরুষদের নিয়েও হতো কাবের পর কাব্যে।

রুদ্র মুগ্ধ হলো তার সারা শরীরে কম্পন তৈরি হলো এমন না সে নিজের প্রসংসা প্রথম শুনছে প্রায়শই সে প্রেম প্রস্তাব পাই। কিন্তু কখনো কারো চোখে এতটা ঘোড় দেখেনি সে আর না তো কারো কন্ঠে এতটা মাতাল হয়েছে সে।নিজেকেএ ধাতস্থ করেই নিরার উদ্দেশ্য গম্ভির কন্ঠে বলে উঠলো

—বাসায় যাওয়ার তাড়া আছে মিস নিরা?

নিরা মাথা নাড়ালো যার মানে নেই। রুদ্র পুনরায় জিজ্ঞেস করে উঠলো
—বাইকে বসতে ভয় লাগে?

নিরা এবারও মাথা নাড়ালো। রুদ্র মুখ ঘুরিয়ে হাসলো।
—তাহলে উঠে পড়ুন।

—কেনো?
—ঘুরবো তাই।
—কই ঘুরবেন?
—উঠলেই বুঝবেন।

নিরাও আর কিছু না বলে উঠে পড়লো সে হেয়ালী করে চায়না তার মিস্টার গম্ভিরের সাথে কাটানো মহূর্ত গুলো মিস করতে। হলো নাহলে একটু ব্যাহয়ায় বা ছ্যাছড়া তাতে কি। সবজায়গায় আত্নসম্মান রাখতে নেই যেখানে নিজে থেকেই তার মিস্টার গম্ভির তাকে ডাকছে।সে না করতে পারে কিভাবে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে