সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১২

0
116

সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১২

২৭.
সাত সকাল বেলাই তালুকদার বাসায় হাজির শিকদার পরিবার।উদ্দেশ্য রুহানী আর অভ্রর বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলবে কিন্তু তার আগে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুনরায় রুদ্র আর নিরাকে জিজ্ঞেস করবে যে তারা কি আসলেই একে অপরকে বিয়ে করতে চায়না তাহলে তাদের জন্যেও মেয়ে/ছেলে খুজবে।কারন বয়স তো তাদের ও হচ্ছে।

সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে রুদ্র আর নিরা।রুদ্রর মুখের কাঠিন্য ভাব আর নিরার মুখে লজ্জার রক্তিমা আভা।
তাদের দিকে পরক্ষ করে নিয়ে মিসেস শিকদার বলে উঠলেন
—নিরু মামনি আমার পাশে এসে বসো।

নিরা মাথা নিচু করে বসে পড়লো মিসেস শিকদারের পাশে।মিসেস শিকদার নিরার হাত নিজের হাতে পুরে নিলেন
—আমরা কি খুব খারাপ মামনি??
—না না ভালো মা তুমি এমন ভাবে বলছো কেনো?
—তাহলে আমাদের বাড়িতে চলে আসো আমার মেয়ে হিসেবে একেবারের জন্য আমার কাছে।আপত্তি আছে মা??
—নাহ ভালোমা(মাথা নিচু করে নিম্ন সুরে)

নিরার কথায় সবাই অবাক হয়ে বসে রইলো ডাইনিং রুমে জেনো কথাটা বজ্রপাতের ন্যায় শুনালো।কেউ ভাবেনি নিরা সম্মতি জানাবে।এবার সবার দৃষ্টি রুদ্রর উপরে পড়তেই রুদ্র হাসফাস করতে লাগলো এমন পরিস্থিতিতে এর আগে পরেনি সে হাজার ক্লাইন্টের সাথে বিনা দ্বিধাই কথা বলা রুদ্র আজ নিজের পরিবারকে নিজের মনের কথা জানাতে ইতস্তত করছে।সে বুঝছেনা যেখানে নিরা মেয়ে হয়ে এতো সহজে স্বিকারউক্তি দিয়ে দিলো সেখানে সে ছেলে হয়ে কেনো এমন করছে।

—আমার বিয়েতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু বিয়ের পরেও রুহ আর নিরা পড়াশুনা কন্টিনিউ রাখবে (গলা পরিষ্কার করে)

রুদ্রর কথায় নিরা স্বাভাবিক থাকলেও রুহানী চিল্লায়ে দাঁড়ায় যায়
—ভাই এটা কেমন কথা আমি বিয়ে করছিনা আবার পড়াশুনা কেন।শশুড় বাড়িতে কত কাজ থাকে তাই না আমি সিরিয়ালে দেখেছি(কাদো কাদো হয়ে)।

সাথে সাথে মিসেস তালুকদার রুহানীর কান চেপে ধরে

—তবে রে তোর কি আমাকে সিরিয়ালের জল্লাদ শাশুড়ী মনে হয় পাজি মেয়ে যে তোকে দিয়ে আমি কাজ করায় নিবো।

—আহা মামনি আমি ত মজা করচ্ছিলাম(হেসে দিয়ে)।

২৮.
দুই পরিবারের মতামতেই এক মাস পড়েই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।রুদ্রর জাকজমক পছন্দ না বলেই শুধু হলুদ আর বিয়ে হবে তাও বাসায় রুদ্রর চাচা ফুফুদের কিছু আত্নীয় কিছু ফ্রেন্ডস আর কলীগ দের নিয়েই। অপরদিকে পুরা তালুকদার বাড়ি আজ হলুদ ফুলে সজ্জিত। সে হলুদ ফুলের সজ্জিত স্টেজে বসানো হয় অভ্র আর নিরাকে। হলুদ সাজে সজ্জিত নিরাকে যেনো কোন হলদে দেশে রাজকুমারীর ন্যায় লাগছে।হলুদ ফুলের ভীড়ে হলদে পরিকে দেখে নিশ্বাস যেনো আটকে গেছে ফোনের অপাশে থাকা রুদ্রর। রুহানী ভিডিও কলে দেখছিলো তার প্রিয় পুরুষ কে পাশেই নিরা থাকায় রুদ্র খুব সহজেই দেখতে পাচ্ছিলো তার হলদে পরিকে। আজ প্রথম তার প্রিয়সীর ঠোঁটে লাজুক হাসি।রুদ্রর মন চাচ্ছে এই মহূর্তে ছূটে তার প্রিয়সিকে নিজের বুকের মাঝে আটকে নিতে।অদম্য ইচ্ছাটাকে মনের মাঝেই দমন করে বসে রইলো নিজের বোনের পাশে আসনে। আগে তার হলুদ হবে তারপর তার বোনের সেজন্য বোন তার পাশেই বসা।

রুদ্র আর অভ্রর গায়ে হলুদ একসাথে শেষ হলো আর সে সাথেই অভ্রও উধাও হলো তালুকদার নিবাস থেকে। নিরা বুঝতে পেরে আপন মনেই হেসে উঠলো। ভাইযে তার হবু বউয়ের কাছে রওনা হয়েছে তা বেশ বুঝলো সে।আগে অভ্রর হলুদ তত্ব যাবে রুহানীর জন্য তারপর রুদ্রর হলুদ ছোয়ানো নিয়ে আসবে নিরার কাছে।

২৯.
রুহানীর শাড়ির কুচি নষ্ট হওয়াই সে নিজের রুমে যায়। কারন ততোক্ষনেও অভ্রর বাসা থেকে কেউ আসেনি নিশ্চিন্তে শাড়ি আর মেকআপ ঠিক করে আসতে পারবে বলেই দৌড় দিলো সে। মিসেস শিকদার মেয়ের এমন কান্ডে রেগে গেলেও কিছু বললোনা। থাক না কিছু অবাধ্যতা কিছুদিন পরে এই অবাধ্যতা দেখার যে আর নসিব হবেনা মেয়ে তার পরের ঘরের আলো হয়ে যাবে। যে দুষ্টুমিতে এতোদিন শিকদার নিবাস মুখরিত থাকতো কাল থেকে অন্যবাড়িতে হাসির ঝিলিক শুনা যাবে ভাবতেই চোখ দুইটাই পানিতে টইটম্বুর করে উঠলো মিসেস শিকদারের।

রুহানীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অভ্র। রুহানী উলটো দিকে ফিরে শাড়ি ঠিক করচ্ছিলো মুখের সামনে এসে যেনো পাহাড়া দিচ্ছে তারাও চায়না এই বিনাশীনি রুপের ঝলক দেখে অভ্র অকালে হৃদস্পন্দন রোদ করে মারা যাক।কিন্তু তা আর হলো কই রুহানীর পিছনে ঘুরার সাথে সাথেই যেনো বুকের মাঝে ধক করে উঠলো অভ্রর শিরায় শিরায় বেয়ে গেলো মুগ্ধতা। অবাক নয়নে তাকায় রইলো তার মায়াবিনীর দিকে।

এদিকে রুহানী হঠাৎ অভ্রকে দেখে চমকে উঠেছে চোখ মুখে ফুটে উঠেছে লজ্জার লাল আভা।নিজেকে ধাতস্থ করে দরজা দিয়ে যেতে নিলেই অভ্র রুহানীর কমড় আকড়ে ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। চোখ মুখে তার নেশার ছড়াছড়ি এই নেশাই যেনো মাতাল হয়ে গেলো রুহানীর হৃদ স্পন্দন বেরে গেলো স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুন ঢিপঢিপ আওয়াজ গুলো যেনো অভ্রর কান অব্দি পৌঁছানোর সরযন্ত্রে নেমেছে তার হৃদয়। অভ্র ধীরে ধীরে পকেটে থাকা হলুদের পটলি বের করে এক হাত দিয়ে দাতের সাহায্যে নিয়ে খুলে হাতে মেখে রুহানীর শাড়ি ভেদ করে তার উমুক্ত মসৃণ কোমড়ে ছোয়াতেই রুহানী চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে খিচে ধরে অভ্রর পাঞ্জাবী। বড় বড় নখ গুলো অভ্রর গলায় বেধে রক্ত বের করতে চায়।রুহানীর গাল থেকে গলা অব্দি হলুদ মাখিয়ে রুহানীর ঠোঁটের মাঝে ডুব দেয় অভ্র। রুহানী ছটফট করতে শুরু করে কিন্তু তাতে যেনো অভ্রর নেশা দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে।এতোদিন রুহানীকে বাচ্চা লাগতো যার বাচ্চামো গুলতে ভালোবাসা তৈরি হতো আদর দিতে মন চাইতো কিন্তু শাড়ি পরিহিত সদ্য যৌবনে পা রাখা প্রিয়সীকে দেখে যেনো অভ্র নিজের উপর থেকে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে আছে।
প্রিয়সীর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে গলায় উষ্ণ ছোয়া মেখে দিতে শুরু করে অভ্র এদিকে প্রেমিক পুরুষ এর অবাধ্য আচারণে যেনো রুহানীও নিজেকে সামলাতে ব্যার্থ ইতিমধ্যে দরজাই করাঘাত পড়তে শুরু করেছে।

—অভ্র প্লিজ ছাড়ুন দেখুন অলরেডি সবাই ডাকাডাকি করছে আজ রাতেই ত বিয়ে তারপর আমি আপনার কিন্তু এই ভাবে না। প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।

রুহানীর কথায় টনক নড়ে অভ্রর নিজেকে কোনমতো সামলে রুহানীর গলায় গাঢ় এক চুমু খেয়ে সরে আসে সে।

রুহানীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে কপাল নিজে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে ব্যালকনী দিয়ে চলে যায়। রুহানী নিজেকে সামলে টিস্যু দিয়ে কোনরকম কিছুটা হলুদ তুলে বেরিয়ে যায় বাহিরে।

৩০.
হলুদ মাখা অবস্থায় ব্যলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে নিরা। আজ এক সাথে দুই বিয়ে তাই কমিউনিটি সেন্টারেই হবে তবুও বউ তো এই বাড়িতেও আসবে বলে এলাহি আয়োজন চলছে।একটুপরেই হয়তো আসবে সবাই নিরাকে গোসল করতে। কিন্তু তার মনের মধ্যে ছেয়ে আছে এক রাশ বিষন্নতা। সব মেয়ের মতো তার ও কিছু ইচ্ছা ছিলো তার প্রেমিক পুরুষ এর হাতেই সে প্রথম হলুদ এ রাঙ্গাবে নিজেকে। কিন্তু তার প্রেমিক পুরুষ একটাবার তাকে দেখার জন্য কল অব্দি করেনি। মানছে সে গম্ভির তাই বলে কি হলুদের সাথে প্রিয়সীকে দেখার ব্যকুলতাটাও তার মাঝে কাজ করেনা। কিন্তু তার ইচ্ছা করে হলুদ পাঞ্জাবিতে তার প্রিয় মানুষ কে দেখার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুহানীর নাম্বারে কল দেয় নিরা

—হুম জান বল তুই এখনো রেডি হতে শুরু করিস নি(ভিডিও কলে স্পষ্ট রুহানীর হাস্যজ্বল মুখ দেখে খুশি হয় নিরা সে জানে তার এতো হাসির একটাই কারণ সে হলো তার ভাই অভ্র। পার্লারের মেয়েরা যত্নে রুহানীকে তৈরি করতে ব্যস্ত।নিরা একবার চাইলো রুহানীকে বলবে রুদ্রর হলুদের ছবি দিতে কিন্তু পরের মহূর্তে মন বদল নিলো অভিমানের পাহাড় গাঢ় হলো)

—হুম এখন তৈরি হবো তুই হয়েছিস কি না তা জানার জন্যই কল দেওয়া। আচ্ছা রাখি।

রুহানী বুঝলোনা কিছু কিছু নিরার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে পড়া রুদ্র ঠিক বুঝলো নিরার অভিমানী কন্ঠ।রুদ্র হাসলো স্থান ত্যাগ করে চলে গেলো নিজের রুমে প্রিয়সীর নাম্বার ডায়াল করে মুখের সামনে ধরলো। কিন্তু ওইপাশ থেকে ধরার নাম নাই ৪ বারের মাথায় ফোন রিসিভ করে সামনে এসে দাড়ালো নিরা

—কল ধরো না কেন কি সমস্যা (ভ্রু কুচকে)
—ইচ্ছা করেনি তাই ধরিনি কি বলবেন বলুন আমি গোসলে যাবো(শান্ত কন্ঠে কথা গুলো বললেও একবার চোখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকালো না অভিমানী নিরা)
—আমার দিকে তাকাও
—প্রয়োজন মনে করছিনা কিছু প্রয়োজনী কথা না থাকলে আমি ফোন রাখলাম।
—ভালোবাসি আমার অভিমানী হলদে পরি।হলুদ ফুলের মাঝে হলদে পরীর বসবাস যে আমার হৃদয়ে ঝড় তুলেছে।সে ঝড় থামাতেই তো প্রিয়সীকে কল দেওয়া হলুদ রঙ পড়তে মানা করেছিলাম তো এইজন্যই প্রথম যেদিন হলুদ শাড়িতে সামনে এসেছিলা সেদিন ই তো আমার কাল ছিলো।এক রমনীর কাজল চোখে আমার খুন হয়েছিলো। হলুদ চুড়ি ঝংকারে আমার মন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলো। আজ পুনরায় সে হলুদ শাড়িতে হলুদ ফুলের সাজে তার মায়া চেহারায় যে আমার মন আবারো বিদ্রোহ জাড়ি করেছে আমার মন তো কিছু মানতে নারাজ এই বিদ্রোহী মন আমার লাগবেনা প্রিয়সী একে নিয়ে নেও। আমার অবধ্যতা পছন্দ না কিন্তু প্রিয় নারী যেমন অবাধ্য মনটাও তেমন মীরজাফর এটা কোন ধারণের ন্যায়।

নিরা চোখ তুলে তাকাতেই যেনো সর্বনাশ ডেকে আনে নিজের। শ্যমা পুরুষের মায়া মাখা চেহারায় হলুদ রঙ যে এতো সুন্দর মানায় তা আগে জানা ছিলোনা তার খট করে কল কেটে বুকের সাথে ফোন চেপে ধরে নিরা ওইপাশ থেকে উচ্চস্বরে হেসে উঠে রুদ্র নিরার লজ্জায়।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে