Wednesday, July 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 208



সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৫

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৫

১২.
সকাল সকাল রুদ্র বেরিয়ে গেলো বিজয়কে তার প্রজেক্ট দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে।আজকে আর নিরা হলোনা তার পথের সাথি।রুদ্র অবশ্য মানা করেনি কিন্তু নিরা নিজেই মানা করে দিলো।সে আজ নিজের মতো করে ঘুরবে।

আজ শখের বসে হলুদ শাড়িতে নিজেকে ফুটিয়ে তুললো নিরা রঙ টা তার তেমন পছন্দ না তবুও আজ শখ হলো অপছন্দের জিনিসে নিজেকে রাঙাতে।শাড়িটা মিসেস রহমান দিয়েছে।ময়মনসিংহ এর যাত্রাই সে সঙ্গে করে তার পার্স ব্যতিত আর কিছু এনেছিলনা। হাত ভরে পড়লো হলুদ কাচের চুরি। কপালে ছোট কালো টিপ সচারাচর এই টিপ তার পড়া হয়ে উঠেনা।তবে আজ বেশ খুশি মনেই সে তা ধারণ করলো।পায়ের নুপুর জোড়া দেখে উঠে দাড়ালো সে আয়নায় খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে দেখেই বেরিয়ে পড়লো অজনা উদ্দেশ্য। সে জানেনা পথ জানেনা কিছু শুধু এক সরু রাস্তার পথে নিজের পা বারাতেই এক দমকা হাওয়াই তার সারা শরীরে এক অদ্ভুত ভালো লাগা ছেয়ে গেলো।

আরেকটু সামনে এগুতেই তার চোখ গেলো এক দল বাচ্চার দিকে।বাচ্চারা কাউকে ঘিরে খেলছে।গিটারের মধুর তালে বাচ্চাগুলোর উল্লাসের ছবি দেখে মহূর্তে নিরার ঠোঁটের হাসি চওড়া হলো।এক পা এক পা করে এগুতেই সামনে পড়লো এক সুদর্শন পুরুষ তাকে ঘিরেই বাচ্চাদের এই উল্লাস।হলুদ পাঞ্জাবীতে ঝাকড়া চুলে একদম হিমুর মতোই মনে হলো লোকটাকে তার কাছে।
আচ্ছা লোকটাও কি হিমুর মতো নিজের জীবনের প্রতি উদাস তার জীবনেও কি কোন রুপা আছে।

কতোশত প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরতেই তার মনে হলো কেউ তার হাত ধরে টানছে। নিরা নিচে তাকাতেই দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে তার হাত ধরে টানছে।অসম্ভব মায়া এই মুখটাই শরীরের নোংরা বস্ত্রের ভিরে উসকোখুসকো চুলের মাঝে এই সুন্দর চেহারাটা কেমন জ্বলজ্বল করছে।

নিরা বাচ্চাটার সামনে হাটুমুরে বসে বাচ্চাটার জামা পরিষ্কার করতে নিলেই বাচ্চাটা খিলখিল করে হেসে বলে উঠে।

—আপামনি পরিষ্কার করে লাভ নাই আবার ধুলাবালী ভইরা(ভরে) যাইবো(যাবো) থাকগে(থাক) আপনি উঠেন আপনার শাড়িতে ময়লা ভরবেনি।

নিরা উঠতেই এক পুরুষালী হাত দেখে থমকে গেলো মাথা উঠিয়ে লোকটার চেহারা দেখে মনে হলো এই লোকটাকে আগেও সে দেখেছে অনেকবার দেখেছে কিন্তু তার মনে পড়ছেনা। নামটা মনে করার চেষ্টা করতেই সামনে থেকে একটা নাম কানে এসে বারি খেলো তার

—হাই আমি ধ্রুব।

নামটা শ্রবণ হতেই নিরার বুঝতে বাকি রইলোনা এই ধ্রুব আর কেউ না ধ্রুব তারা ইউটিউব চানেলের সিঙ্গার। লাক্ষ লাক্ষ ফেন ফলোয়ার তার কতো মানুষ তার গানের সুরে পাগল। নিরাও যে তাদের ভীড়েই একজন তা মানতে তার কোন দ্বিধা নেই। কারণ আসলেই লোকটার গলা চমৎকার।

নিরাকে জবাব দিতে না দেখেই ধ্রুব পুনরায় হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই নিরার ধ্যান আসে।হচকচিয়ে বলে উঠে

—আমি নিরা তালুকদার।
—নাইস টু মিট ইউ। বাহ আপনি তো দেখি আমাকে কপি করেছেন বেশ দারুন ভাবে।

নিরা অবাক হলো। নিরাকে অবাক হতে দেখে ধ্রুব হাসলো। তার পরনের শাড়ির দিকে ইশারা করতেই নিরা বুঝলো সে তার শাড়ির দিকে ইঙ্গিত করছেন।

—হুম কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।
—একদম হিমু আর রুপা লাগছে।

কথাটা বলেই ধ্রুব হেসে দিলো।কিছুক্ষন আগেও লোকটাকে দেখে সে হিমুর উপাধি দিয়েছে। আর কাকতালীয় ভাবে সেও তাকে রুপার সাথে তুলনা করছে।

—আমি যতোদূর জানি আপনি ঢাকাতেই থাকেন তাই না গায়ক সাহেব।

ধ্রুব হাসলো ইউটিউবার হওয়ার সুবাদে যে তার পার্সোল জীবনটা অনেকটাই পাবলিক হয়ে গেছে তা সে জানে।

—জ্বি হঠাৎ এই কৃত্রিম ভীর থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই অজনা এই প্রকৃতির ভীড়ে চলে আসা হয়েছে।সেখানেই এই বাচ্চাদের সাথে দেখা হয়ে একদম নিজেকেও এদেরর সাথে মিলিয়ে আড্ডাই মেতে উঠেছিলাম কিন্তু আমি জানতাম না ময়মনসিংহেও আমার ফেন আছে।

নিরাও হাসলো ধ্রুবের কথা শুনে

—আমিও ঢাকার মেয়ে গায়ক সাহেব। আপনার মতোই প্রাকৃতির টানেই অজানাই ছুটে ছিলাম আর সে অজনা রাস্তা আমাকে এখানে এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে।

—তাহলে আমাদের মধ্যে বেশ মিল আছে তাইনাকি।
—তাইতো দেখছি গায়ক সাহেব।

বাচ্চাগুলো ইতিমধ্যে তাদের কে টেনে নিয়ে গেলো খোলা মাঠের মাঝে। বাচ্চা গুলো গোল করে ঘিরে রেখেছে তাদের। কোথায় থেকে একটা বাচ্চা অর্না যোগার করে আনলো। অপর একটি বাচ্চার চোখ বেধে দিলো সে। তার একমাত্র কারণ
হলো কানামাছি খেলবে।

বাচ্চাদের ভীরে কখন সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলো টেরই পেলো না কেউ।
বাচ্চাদের নিয়ে পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে আছে নিরা ধ্রুব।

—মিস নিরা চলুন কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। বাচ্চাদের ও মনে হয় খিদা লেগে গেছে।

খাওয়ার কথা শুনে নিরা তার হাত ঘরির দিকে তাকালো দুপুর দুইটা বেজে গেছে।জিহবায় কামড় দিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লো নিরা।

—মাফ করবেন ধ্রুব সাহেব আমাকে রওনা দিতে হবে কখন এতো সময় পেরিয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। ক্ষমা করবেন আমি আজ আসি ভাগ্যতে থাকলে পুনরায় কোন এক জায়গায় দেখা হবে।

কথাটা বলে আর দেরি করলোনা নিরা শাড়িটা একটু উচু করেই দৌড় দিলো।
ধ্রুব এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো অগুন্তিক এক নারীর দিকে। ভিজা আচল হাওয়ার তালে তালে দোল খাচ্ছে সাথে পায়েল আর চুরির রিনঝিনিয়ে বাজিয়ে তুলছে আলাদাই সুর ।কোমড় অব্দি খোলা চুলে যে ধ্রুবের বুকে দাগ কেটে গেছে তা ধ্রুবের চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে নিমিষেই।

হঠাৎ করে দেখাই হঠাৎ এক অনুভূতির নাম দেওয়ার সাহস হলোনা তার বুকের মাঝখানে ভালোলাগার এক হাওয়া নিয়েই বাচ্চাদের সাথে চলেগেলো অন্য পথে।কি অদ্ভুত একই জেলাই থেকেও যাদের কখনো দেখা হয়নি আজ অন্য জায়গায় এসে সে যে এতো সুন্দর কিছু মহূর্ত উপহার পাবে সে ভাবতেও পারেনি।নিজের ঝাকড়া চুল গুলোতে পুনরায় হাত বুলিয়ে পিছন ফিরে তাকালো ধ্রুব কিন্তু দেখা পেলো না তার মনে প্রথম দেখাই বাজিয়ে দেওয়া প্রেমের সুর তৈরি করা সুরঞ্জনার।

—আপনার সাথে নামটা খুব মানিয়ে গেলো নিরা “সুরঞ্জনা”। (ধ্রুব)

এখানেই কি শেষ হবে তাদের দেখা নাকি আরও বাকী তাদের সাক্ষাৎ। ধ্রুব কি আবার পাবে সুরঞ্জনার দেখা।নাকি তার মনের অনুভূতির সাথে সুরঞ্জনা নামটাও কোন এক কোনায় দেবে থাকবে।

১৩.
রুদ্র বাসায় আসতেই দেখে নিরা সেখানে নেই। অনেক অপেক্ষা করার পরেও যখন নিরা ফিরলনা তখন তার চিন্তা হলো। সে পুনরায় তার জেকেট পরে বেরিয়ে যেয়ে রাস্তাই দাড়াতেই তার চোখ গেলো ছুটে আসা এক যুবতীর দিকে দূর থেকেই তার চোখ আটকে গেলো হলুদ রাঙা হলদে মায়াবিনীর দিকে।

রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়েই হাফাতে শুরু করলো সে।

—ক্ষমা করবেন রুদ্র সাহেব আপনাকে মনে হয় চিন্তাই ফেলে দিলাম বাচ্চাদের সাথে কখন সময় চলে গেলো টের ই পেলাম না।

রুদ্র কিছুনা বলে গম্ভির মুখ নিয়েই বলে উঠলো

—এরপরে কখনো হলুদ পরে আমার সামনে আসবেন না মিস নিরা।

কথাটা বলেই হনহন করে ভিতরে চলে গেলো সে নিরা রুদ্রর কথার আগা মাথা বুঝলোনা। তাকে কি খারাপ লাগছে যার কারণে রুদ্র তাকে হলুদ পড়তে মানা করলো।

নিরা বেশিকিছু না ভেবে ভিতরে চলে গেলো।

১৪.
বৃষ্টির মাঝে বাস স্টেশানে দাঁড়িয়ে আছে নিরা রুদ্র। হঠাৎ এই ঝুম বৃষ্টির কারণ বুঝলোনা তাড়া অনেকক্ষন হওয়ার পরেও যখন বৃষ্টি থামার নাম না দেখে রুদ্র নিরাকে বলে উঠলো

—মিস নিরা আরেকটু সামনেই স্টেশান আপনি কি সেখানে যাবেন বৃষ্টি মনে হয়না থামবে আর এই বৃষ্টিতে বাস ও আসবেনা। আর স্টেশানে৷ গেলে ভিজার চান্স ও কম হবে বলেই আমার ধারণা।

নিরা সম্মতি জানাতেই দুইজনে হাটা ধরলো বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ রুদ্র জিজ্ঞেস করে উঠলো

—সেদিন বিয়েতে রাজি না হওয়ার কারণ কি ছিলো মিস নিরা আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন।

নিরা হাসলো আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন পুনরায় হাটা ধরে রুদ্রর উদ্দেশ্য বলে উঠলো

—হুম পছন্দ করি বড্ড পছন্দ করি এই প্রাকৃতি এই স্বাধীনতা আমার চার দেওয়াল পছন্দ না রুদ্র সাহেব কখনো আকাশে উড়ন্ত পাখিকে খাচায় খুশিমনে বন্দি হতে দেখেছেন। দেখেন নি।আমিও সে খোলা আকাশের পাখির মতো আমিও চায়না বন্দি হতে আর এই বিয়ে মানেই একটা খাচা তারমানে এই না আমি বিয়ে করবোনা অবশ্যই করবো কিন্তু যে আমাকে এই খোলা আকাশ দিবে উড়তে তাকে।আমি জানি ভালোমা,বাবাই(রুদ্রর বাবা মা) আমাকে কখনো বন্দি করবেনা কিন্তু তাও ভয় হয় সে ভয়ের জন্যই আপনাকে বিয়েতে অস্বিকার করেছিলাম রুদ্র সাহেব।

একদমে কথাগুলো বলে থামলো নিরা।রুদ্রর কোন ভাবাগতি নেই রুদ্রের মনে কি চলছে ঠিক বুঝলোনা নিরা সে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো

—আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ রুদ্র সাহেব

নিরার কথাটা শুনেই রুদ্র নিরার দিকে তাকালো হুট করে রুদ্রের এইভাবে তাকানোই হচকচিয়ে উঠলো নিরা

—শান্তশিষ্ট গম্ভির ম্যাচুয়ার,যে সংসার কে এক সুতাই বেধে রাখার ক্ষমতা রাখবে।অদ্ভুত হবে তার ব্যক্তিত্ব। যে নিজের কথা দ্বারা মানুষ কে আপন করে ফেলবে।

নিরা হাসলো

—একদম আমার বিপরিত।

নিরার কথায় হাটা বন্ধ করলো রুদ্র তার দিকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় বলে উঠলো

—ঠিক আমরা একে অন্যের বিপরিত আমাদের মাঝে কোন মিল নেই। আমাদের ইচ্ছা আকাঙ্খা চাহিদা চাওয়া পাওয়া স্বপ্ন সব ভিন্ন দুই মেরুর বাসিন্দা আমরা।

(তবুও কেন আপনাকে দেখলে আমার সব গুলিয়ে যায় সব বিপরীত কে একই দিকে আনার ইচ্ছা করে মন।এইটাকে শুধুই আমার ভুল ধারণা আবার ঢাকা চলে গেলে কি আমার মনে আপনার জন্য যা কিছু আছে সব মুছে যাবে। আচ্ছা আমিও যা ভাবি আপনিও কি তাই ভাবেন নাকি এই ব্যাপারেও আমরা ভিন্ন।)

মনের কথা গুলো আর মুখে এলো না তার হুট করেই তাদের সামনে,,,,

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৪

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৪

১০.
কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুহানী।অভ্র একবার ভ্রু কুচকে রুহানীর হাসির দিকে তাকাছে একবার তার হাতে থাকা কফির মগের দিকে।রুহানীর শয়*তানী মার্কা হাসি দেখে তার সন্দেহ হচ্ছে।তাও কাপা কাপা হাতে তার থেকে কফির মগ নিয়ে তাকে টেবিলে বসতে দিলো। রুহানী ভালো মেয়ের মতো চুপচাপ বসেও অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। অভ্র এক চুমুক কফি মুখে দিতেই তার বুঝতে বাকি রইলোনা রুহানীর মুখে এমন হাসি থাকার কারণ কি।

রুহানী কফির মগে লবন মিশিয়ে নিয়ে এসেছে তাও এক দুই চামচ না পুরা একটা ছোট কৌটার।অভ্র তাও রিয়েকশান না দিয়ে স্বাভাবিক মুখো ভঙ্গি করেই আরও দুই ঢোক দিয়ে পাশে রেখে দিলো।রুহানী ত অবাক। সে ভেবেছিলো অভ্র চুমুক দিয়েই বেসিনের দিকে দৌড়াবে।কিন্তু তার চিন্তা ভাবনা কে ভুল প্রমাণিত করে অভ্র স্বাভাবিক রিয়েকশান নিয়েই রুহানীর দিকে বই ধরে কিছু কনসেপ্ট দাগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো

—এগুলো পড়ে রেডি করো আমি একটু আসছি।

অভ্র উঠে যেতেই রুহানী কফির মগ নিয়ে একটা ঢোগ দিতেই তার ভিতরে সব গুলিয়ে উঠলো কোনরকমে মুখ চেপে ওয়াসরুমে যেয়ে বমি করে দিলো।
বাহির থেকে অভ্রর হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।সে যে ইচ্ছা করেই এমন করেছে বুঝতে পেরে রাগে তার শরীর রি রি করছে।হন হন করে বের হয়ে অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে কমরে হাত দিয়ে রাগে চিল্লিয়ে উঠলো

—আপনার সমস্যা কি হ্যা আপনি ইচ্ছা করে আমার সাথে এমন করলেন তাইনা। আপনাকে আমি টিকটিকির কিমা যদি না খাওয়ায়েছি তাহলে আমার নাম ও রুহানী শিকদার না বলে দিলাম।

অভ্র হেসে রুহানীর দিকে এগুতেই রুহানী দেওয়ালের সাথে লেপ্টে গেলো
—নাম বদলে মিসেস রুহানী অভ্র তালুকদার রাখবে নাকি।

অভ্রর কানের কাছে বলা কথাটা শুনেই রুহানীর হাত পায়ে কাপন ধরে গেছে।সে ছটফট করছে ছুটার জন্য। অভ্র মুচকি হেসে রুহানীর চুল এলোমেলো করে চেয়ারে যেয়ে বসে পড়লো।রুহানী এখনো ওইখানেই দাড়িয়ে আছে তার কানে বাজছে অভ্রর কিছুক্ষন আগের বলা কথাটা সে বুঝছে না এটা সত্যি অভ্র বলেছে নাকি নিতান্তই তার ভুল ধারণা।

—ওইখানে দাঁড়িয়ে থেকে রাত পার করার শখ হইচে নাকি তুমি চাইলে বিছানাতেও থাকতে পারো আমার কোন সমস্যা নেই। কোলবালিশ লাগবেনা আমার তাহলে আজকে।(দুষ্টুমি করে)

রুহানী রাগে হন হন করে এসে অভ্রর চুল টেনে দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।অভ্র হতবাক। রুহানী যে হঠাৎ করে এমন কিছু করবে বুঝতেই পারেনি।

—এখনো ছোট বেলার অভ্যাস যায়নি টানাটানির এতো টানাটানি করো কেন হ্যা।

—তাতে আপনার কি আমার হাত আমি যা ইচ্ছা তাই করি আপনাকে কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে নাকি।(গাল ফুলিয়ে)

রুহানীর ফোলা গাল টানে বলে উঠলো অভ্র

—এখন আমি তোমার বাবাই এর ছেলেনা তোমার টিচার তাই আমাকে কৈফিয়ত দিতেই হবে।

অভ্রর কথা ভেংচি কেটে বলে উঠলো
—আমার বয়ে গেছে আপনার কাছে পড়তে পড়ার নামে রঙলিলা করে বেরাচ্ছেন আবার যতোসব বড় বড় কথা।

অভ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে উঠে।
—তখন থেকে রঙলিলা রঙলিলা যে বলছো কার সাথে আমি রঙলিলা করলাম শুনি।

—রঙলিলা বলবো না তো কি বলবো শুনি পড়ানোর নাম করে কোলের উপর বসায় রাখেন।
বসেছিলো তাও আবার ড্রেসআপের কি ছিড়ি ছি ছি আমার তো দেখতেও লজ্জা করচ্ছিলো আর উনি সরতে বলা বাদ দিয়ে পারচ্ছিলোনা আরও কাছে নিয়ে আসতে।যতোসব আবার বলে রঙলিলা করছি কেন কই ওইখানে ত কোন ছেলে ছিলোনা সব মেয়ে।আমার জানা মতে আমাদের ক্লাসে ছেলেও আছে।

রুহানীর বলা কথায় অভ্র হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছেনা। সে অনেকবার মাইশাকে সরতে বলেছে কিন্তু মাইশা কোন কথা শুনে না দেখে বিরক্ত হয়ে কিছু না বলে ওই ভাবেই তাড়াতাড়ি পড়ানো শেষ করে তাদের বিদায় দিয়েছে।

—হয়েছে বুঝেছি এবার বই বের করেন পড়া বুঝাই দেয় নাহলে পড়ে আবার ডাব্বা মারবেন।
—এইযে আমি আজ অব্দি ডাব্বা মারিনি ঠিক আছে।

রুহানীর গাল ফুলানো দেখে মুচকি হেসে অভ্র পড়ানো শুরু করলো।

১১.
সকাল সকাল রুদ্র বসে গেছে কাজ নিয়ে। মিস্টার বিজয় এর আগের ডিজাইন পছন্দ হয়নি তিনি চাচ্ছেন তার প্রিয়তমার জন্য নতুন কিছু একটা উপহার দিতে। এই নিয়ে ১০টার মতো ডিজাইন সে তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু সেগুলো তার নিজের ই মন মতো হচ্ছেনা এই মহূর্তে এক কাপ কড়া কফি হলে বেশ হতো কিন্তু এই অচেনা জায়গায় তাকে চা করে দিবেই বা কে ভেবে পুনরায় কাজে মন দিলো সে। কিন্তু নাহ কিছুতেই মাথা খুলছে না দেখে চেয়ার থেকে উঠতে নিতেন সামনে নিরাকে দেখে থমকে যায় সে।

গাঢ় গোলাপি রঙ্গের শাড়ি পড়ে ভিজা চুল কোমড় অব্দি ছড়িয়ে হাতে ধোয়া উঠা চায়ের কাপ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে সে। ঠোঁটের কোণে সব সময়কার মতোই ঝুলছে মন কারা মিষ্টি হাসি। রুদ্র মাঝে মধ্যে ভাবে মেয়েটা কি হাসি ছাড়া কখনোই থাকেনা। যখন ই সে তাকে দেখে ঠোঁটের কোনে এই হাসি সহই দেখে।আচ্ছে হাসি ছাড়াও কি নিরা কে এতোটাই নজর কারা লাগবে এই যে নিরার মুখে পড়ে থাকা বিন্দু বিন্দু পানি সূর্যের আলোই চিকচিক করছে যা তার সৌন্দর্য কে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।নিজের ভাবনাই নিজেই অবাক রুদ্র। এর আগে কোন মেয়েকে নিয়ে সে এইভাবে ভাবেনি আর না তো এতো খুটিনাটি পর্যবেক্ষন করেছে তাহলে নিরার বেলাই এমন অদ্ভুত কাজের মানে কি। রুদ্রর এইসব ভাবনার মাঝেই নিরা তার হাতে গরম ধোয়া উঠা চায়ের কাপ এগিয়ে দিতেই হুশ ফিরে রুদ্রর।

রুদ্র আমতা আমতা করে বলে উঠে
—আমি চা পান করিনা মিস নিরা।
—চা কে না করতে নেই রুদ্র সাহেব আজ একদিন পান করেই দেখেন আপনার মাথা ব্যাথাও চলে যাবে আর হুরহুর করে ডিজাইনও মাথায় চলে আসবে।

রুদ্র কিছুক্ষন নিরার মুখের দিকে তাকালো হুরহুর শব্দটা কইবার উচ্চারণ করেই চায়ের কাপে চুমুক দিতেই তার স্বাদে চোখ মুখ চিকচিক করে উঠলো তার।নরমাল চায়ের থেকে কিছুটা আলাদা বলেই মনে হলো তার।নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরেই জিজ্ঞেস করে উঠলো।

—চায়ের স্বাদ টা স্বাভাবিকের থেকে আলাদা লাগছে এর কি স্পেশাল কোন কারণ আছে নাকি আমি অনেকবছর পরে খাচ্ছি বলেই আমার এমন মনে হচ্ছে।

নিরা হাসলো

—এই চায়ে পুদিনা পাতা আর আদা একসাথে বেটে ফুটন্ত গরম পানিতে ছেড়ে দিয়ে তার রস সম্পূর্ণ পানিতে ছড়িয়ে যাওয়ার পরে সেটা ছেকে নিয়ে চা পাতা দেওয়া হয়েছে।আমার দাদী আগে এইভাবে বানিয়ে দিত যখন আমার বা ভাইয়ার পরিক্ষা চলতো তার বানী অনুযায়ী “এই চা মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই মাথা ব্যাথা ছু হয়ে যায় আর মন মস্তিষ্ক একদম ফুরফুরা হয়ে যায় পড়াও মাথায় ঢুকে হুরহুর করে।”

রুদ্র হাসে চা খাওয়াই মনযোগ দিলো “হুরহুর” শব্দটার উৎপত্তি তার জানা হয়ে গেছে। নিরা ডিজাইন গুলোর দিকে তাকায়

—রুদ্র সাহেব এতোগুলা ডিজাইনের কারণ কি। আপনি ঠিক বানাতে চাচ্ছেন টা কি।

রুদ্র এবার চা রেখে নিরার কথায় মনোযোগ দেয়

—আসলে মিস্টার বিজয় চান তার ওয়াইফের জন্য এমন একটা বাগান বাড়ি বানাতে যেখানে গেলেই মন ভালো হয়ে যাবে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার জন্য বেস্ট একটা জায়গা হবে। কিন্তু এর আগের ডিজাইন উনাদের পছন্দ হয়নি আর আমার ও অন্যকিছু মাথায় আসছেনা।

—আমি কি জায়গা টা দেখতে পারি।

রুদ্র ফোন থেকে একটা ছবি বের করে দেখায়

—আমি কি একটা বুদ্ধি দিবো আপনি যদি কিছু মনে না করেন?

রুদ্র সম্মতি জানাতেই নিরা বলে উঠলো

—দেখুন মিস্টার বিজয় এর কথা অনুসারে তিনি মন ভালো করার মতো একটা জায়গা চান সে জায়গা টা যে বাড়ির হতে হবে তার কি কোন কারণ আছে বলেন। একদম না। এরকুম দালান না বানিয়ে একটা গাছ বাড়ি বানালেই তো হয়।এখানে গাছ অনেক যারকারণে বেলকনি বানালেও তেমন একটা দৃশ্য চোখে পড়বেনা কিন্তু গাছ বাড়িতে ভিউ টা অসাধারণ হবে কারণ সেটা মাটি থেকে অনেকটাই উচুতে হবে।

রুদ্র মনোযোগ দিয়ে সব শুনে বলে উঠলো

—আপনার মাথায় কি কোন বুদ্ধি আছে মিস নিরা।

নিরা মুচকি হেসে কাগজ পেন্সিল নিয়ে মনোযোগ লাগায়ে আকাতে শুরু করলো।রুদ্র চা খেতে খেতে সবটুকু দেখতে লাগতো কখন যে নিরার ভাগের চা টুকুও খেয়ে ফেলেছে।

কিছুক্ষন পরেই রুদ্রর সামনে নিরা এক ছবি তুলে ধরলো।রুদ্র হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নিরার হাতের ছবির দিকে।

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৩

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৩

৮.
রুহানী “তালুকদার নিবাসে”পৌঁছাতেই তার আখিজোড়া আটকে গেলো বসার ঘরে মেয়েদের ভীড়ে।তার আর বুঝতে বাকি নেই সব গুলো অভ্রর কাছে বায়োলজি পড়ার বাহানাই তাকে চোখ দিতে গিলে খেতে এসেছে।রাগে শরীর জ্বলে উঠলো রুহানীর । সে বুঝে পায় না মেয়ে গুলো এই হলুদ বানরের চেহারায় কি এমন মধু খুজে পেয়েছে যে মৌমাছির মতো তার আশেপাশে বিন বিন করে বেরায়। ক্লাসেও পড়া বাদ দিয়ে সব গুলা যে অভ্রকে চোখ দ্বারা গিলে খাই তা খুব ভালো করেই জানে সে অভ্রও কথাটা জানেও তবুও রোজ একদম নতুন বরের মতো তৈরি হয়ে আসার কারণ টা বোধগম্য হয়না তার।এখন তো বাড়িতেও এসে জুটেছে।

রুহানীর বকা থামে অভ্রর কন্ঠে।

—মিস রুহানী আপনাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য নিশ্চয় মামনি(জামিলা শিকদার) এখানে পাঠায়নি।
—আপনাকেও নিশ্চয় মেয়েদের সাথে ঢোলাঢলি করতে বাবাই (রুহুল তালুকদার) আপনাকে পড়াশুনা করায়নি।

রুহানী কথাটা মনে মনে বললেও জোড়ে বলা আর হয়ে উঠলোনা। চুপচাপ সোফার এক কোণে যেয়ে বসে পড়লো বই নিয়ে।

রুহানী অভ্রর থেকে বেশ খানিকটা দূরেই বসে আছে তার কারণ অভ্রকে ঘিরে বসে আছে প্রায় বিশ জনের মতো মেয়ে। এদের ভীড়ে যে অভ্র তাকে দেখতেও পাবেনা তা বেশ জানা আছে তার। অভ্রর দিকে তাকাতেই তার চোখ গেলো তার পাশে বসে থাকা শার্ট আর জিন্স পড়ে থাকা মাইশার উপরে শার্টের অবস্থা দেখে রুহানীরই লজ্জাই মুখ লাল হয়ে গেলো । মাইশা নামের মেয়েটি এমন খোলামেলা পোশাক পড়েই অভ্রর একদম কাছে যেয়ে বসে উঠে। অভ্র তবুও চুপচাপ বসে আছে বলে রুহানী ব্যাগ রেখেই উঠে গেলো।

অভ্র পিছ থেকে ডেকে উঠলো

—মিস রুহানী কই যান।
—জাহান্নামে যায় আপনার এইসব পড়া নামক রঙলিলা শেষ হলে ডাক দিয়েন।

রুহানীর কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির যাওয়ার দিকে।অভ্র কিছুনা বলে হেসে পড়ানোই মন দিলো বিরবির করে বলে উঠলো

—ঝাসির রানী।

রুহানী সোজা কিচেনে যেয়ে মিসেস তালুকদার কে জড়ায় ধরলো।আচমকা জড়ায় ধরায় প্রথমে অবাক হলেও পড়ে ঠিকই টের পেলো পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি রুহানী

—খুদা লাগেছে মামনি কিছু খাইতে দেও তো পেটের ভিতরে হাতি গুলা লাফাতে লাফাতে আমার ছুডু(ছোট) পেট টাকে ফাটায় দিবে যানো।ঘুম থেকে উঠেই তোমার ওই অসভ্য বাদর ছেলের জন্য দৌড়ায় দৌড়ায় আসতে হয়েছে খাইতেও পারিনি।

মিসেস তালুকদার হেসে দিলেন রুহানীর কথায় বয়সে বড় হলেও স্বভাবে এখনো সেই বাচ্চাটিই রয়েগেছে যার কারণে দুই পরিবারে অতিরিক্ত আদরের রুহানী।

রুহানীর গালে আলতো হাতের থাপ্পড় দিয়ে হাতে ক্ষিরের বাটি ধরায় দিলো।রুহানী খুশীতে আত্নহারা হয়ে মিসেস তালুকদারকে জড়ায় ধরতেই তিনি হেসে বলে উঠলেন

—তুই আরামে বসে খা লাগলে ওইখানে আছে তুলে নে।তুই আজ না আসলেও অভ্র বা তোর বাবাই এর হাতে তোর জন্য ক্ষির পাঠাতাম এসেছিস ভালো করেছিস।

রুহানী হেসে খেতে শুরু করলো এর মাঝেই অভ্রর ডাক শুনা গেলো

—মা আমি রুমে যাচ্ছি রুহানীর সাথে এক মগ কফি পাঠিয়ে দিও ত।

কথাটা শুনে রুহানী ভেংচি কাটলো। আসতে ধীরে পুরো বাটি শেষ করে উঠে দাড়ালো কফির মগ মিসেস তালুকদারের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাইনিং টেবিলের দিকে নজর দিতেই চোখে খুশির ঝিলিক দেখা গেলো মাথায় ভড় করলো দুষ্টু বুদ্ধি।

৯.
বাস থেকে নামতেই নিরা আর রুদ্রর সামনে এসে পড়লো এক প্রাইভেট কার হঠাৎ আগমনে নিরা কিছুটা পিছনে সরে গেলো।গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো এক হ্যাংলাপাতলা টাইপের লোক। উজ্জ্বল শ্যামা লোকটির ঝাকড়া চুলের ভীড়ে কপাল আর চোখ দেখা মুশকিল।নিরা বেশি প্রচেষ্টাও করলোনা।রুদ্র কি করা দেখাই তার এখন একমাত্র কাজ বলতে গেলে রুদ্রের পদক্ষেপই সে অনুসরণ করবে বলেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।

লোকটি রুদ্রের সামনে এসে হাত বারিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো

—আপনি কি মিস্টার রুদ্র শিকদার “দা সান রাইজ ” এর সিনিয়র আর্কিটেক্ট।

রুদ্র সম্মতি জানাতেই ঝকঝকে দাত বের করে হেসে উঠলো লোকটি।

—আমি সাকিল ইসলাম। আপনাকে নিতে এসেছি আমাদের স্যার আপনাকে নিতে আমাকে পাঠিয়েছে আমি “বিজয় গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে ” কর্মরত।

রুদ্রও হেসে হাত মিলাতেই সাকিল নামের ছেলেটির নজর পরে নিরার উপরে নিরা বুঝছেনা তার এখানে থাকা উচিত নাকি চলে যাওয়া উচিত।

—স্যার আমাকে জানানো হয়েছে আপনি একাই আসবেন। ম্যাম কে ঠিক চিনলাম না উনি কি আপনার সাথে।

রুদ্র মাথা দুলিয়ে বলে উঠলো

—মিট নিরা শিকদার আমার ওয়াইফ। সেও আমার সাথেই থাকবে।

সাকিল হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো

—ঠিক আছে।আপনারা একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি।

শাকিল একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফোন দিলো কাউকে।

সাকিল যেতেই নিরা রুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র বলে উঠে
—দেখুন আমি জানি আপনি কি বলতে চাচ্ছেন।আসলে মিস্টার বিজয় রহমান একটু পুরানো দিনের ভাবনা পোষণ করেন অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের একসাথে তিনি ভালো নজরে দেখেন না সেজন্য আমার এসিস্ট্যান্ট ও ছেলে এবং এর আগে তিনি তাকে দেখেছে সেজন্য আপনাকে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে পরিচয় করাতে পারলাম না। আমি এইজন্য দুঃখিত।

—ঠিক আছে।আমিই আপনার সাথে আসার কথা বলেছিলাম।

রুদ্র আর নিরা আর কোন কথা বলবে তার আগেই সাকিল ছেলেটি ফিরে আসলো তাদের আর কোন কথা বলা হলোনা তারা দুইজন নিশ্চুপ থেকেই উঠে পড়লো গাড়িতে।সারাদিনের ক্লান্তিতে নিরা গাড়িতেই রুদ্রের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।রুদ্র একবার তাকিয়ে ইচ্ছা করলো সরাতে কিন্তু পরক্ষণেই কি মনে করে সরালোনা।

মাথা ঘুরিয়ে চাঁদের আলোতে নিরার মুখের দিকে তাকাতেই পুনরায় ধক করে উঠলো তার বুকে।কাপা কাপা হাতে কপালে এসে পড়ে থাকা চুল গুলো আলতো হাতে কানের পিঠে গুজে দিতেই কেপে উঠলো নিরা।মাথাটা আরেকটু শান্তি করে এলিয়ে দিলো রুদ্রের প্রসস্থ কাধে।

বিরাট বড় অট্রালিকার সামনে গাড়ি থামতেই নিরার মাথা সামনে এগিয়ে পড়তেই রুদ্র সামলে নিলো কিন্তু নিরার তবুও ঘুম ভেংগে গেলো।নিরা নিজেকে ঠিক করে উঠে বসে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।

নিরা আর রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে ঢুকিতেই এক মাঝবয়েসী লোক তাদের দিকে হাসি মুখ এগিয়ে এলো।

—ওয়েলকাম মিস্টার এন্ড মিসেস তালুকদার আশা করি আপনাদের এখানে আসতে অসুবিধা হয়নি।

বিজয় রহমান এর মুখে এই কথা শুনে বিরল হাসলো রুদ্র। রুদ্রকে আলিঙ্গন করে নিরার উদ্দেশ্য বলে উঠলো

—ইউ আর ভেরি লাকি মিস্টার তালুকদার আপনার ওয়াইফ অনেক সুন্দরী রমনী আই মাস্ট হেভ টু সে ইট।

রুদ্র হাসলো।

—আজ রাতে আপনারা আমাদের বাসায় স্টে করবেন মিস্টার রুদ্র।আপনি প্রথমবার আপনার ওয়াইফকে নিয়ে এসেছেন আমি না শুনবোনা।
—কিন্তু মিস্টার রহমান আমি অলরেডি হোটেল বুক করে ফেলেছি।
—কেন্সেল ইট মিস্টার রুদ্র আমি কোন কথা শুনতে প্রস্তুত নই।

রুদ্র করুন চোখে তাকালো নিরার দিকে।তার একটা মিথ্যাই যে এতো খারাপ ভাবে ফেসে যাবে সে বুঝেনি।

রহমান ভিলাই প্রবেশ করতেই মিসেস রহমান নিরারকে টেনে নিয়ে চলে গেলেন। চারজনে খাবার সম্পূর্ণ করে উঠে পড়লো। কিন্তু বিপত্তি বাধলো রুম নিয়ে যেহেতু রুদ্র বলেছে তারা স্বামি স্ত্রী সেহেতু মিস্টার রহমান যে তাকে এক ঘড়েই থাকতে দিবেন এইটাই স্বাভাবিক ছিলো।এইজন্য রুদ্র আসতে দ্বিধা বোধ করচ্ছিলো।

বেডের দিকে দুইজনে তাকিয়ে আছে।

—আমি বেড ছাড়া ঘুমাতে পারবোনা।

রুদ্রের কথা শুনে হাসলো নিরা।ওইটুকু সোফায় যে রুদ্র ঘুমাতে পারবেনা তা বেস জানা আছে নিরার।

—রুদ্র সাহেব এক রুমে ঘুমাতে আপনার আমার দুইজনের অসস্তি হবে চলুন আজ ময়মনসিংহ এর পরিবেশ এ তাজা হাওয়া খেয়ে নেওয়া যাক। বর্ষা আর শীতের এই মেলবন্ধণে পরিবেশ টাই আলাদায় মাধুর্যতা ছড়িয়েছে চলেন আজ নাহয় এই পরিবেশে নিজেদের বিলিন করা যাক।

নিরার কথা সায় জানালো রুদ্র এই অস্বস্তিকর চার দেওয়ালের ঘরের চাইতে খোলা আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করাটা অনেক ভালো বলেই মনে করলো রুদ্র।

দুইজনে পাশাপাশি হেটে চলেছে।নিস্তব্ধ রজনীতে দুইজন মানুষ এর হাটার শব্দ ব্যতীত কোন শব্দই শুনা যাচ্ছেনা যেহেতু জায়গাটা একটু গ্রাম্য সাইটে সেজন্য খুব অল্প সময়ে সবাই বাসার ভীতরেই রয়েছে।হয়তো এতোক্ষনে ঘুমিয়েই গেছে।

হঠাৎ নিরা রুদ্রর শার্টের হাতার কাছের দিকে খামছে ধরতেই রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকাতেই নিরা হাতের ইশারায় সামনের দিকে ইশারা করতেই সেদিকে চোখ যেতেই থমকে গেলো রুদ্র।

তাদের সামনেই ছোট একটা পদ্মফুলের পুকুর। সেখানেই ঝি ঝি পোকার আলোই চারদিকে আলাদা এক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে।বিষ্ময়ে নিরা বাচ্চাদের মতো লাফাতে শুরু করে দিয়েছে।

রুদ্র অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার পাশে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের মতো লাফানো এক যুবতীর দিকে।পরণে শাড়ি পরিহিত মায়াবী এক নারী তার হাতের শার্ট খামচে ধরে বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছে ভাবতেই তার চোখে ছেয়ে গেলো আলাদা এক মুগ্ধতা।

এমন না যে রুদ্র এর আগে সুন্দরী কোন মেয়ে দেখেনি কিন্তু তা না এরচেয়েও সুন্দরী মেয়ের সাথে তার কাজের জন্য উঠাবসা করতে হয়েছে কিন্তু এই মেয়েকে সুন্দরীর তালিকায় ফেলা যায়না অদ্ভুত রকমের এক মায়া কাজ করে নিরার মাঝেই বলেই ধারণা তার। নাহ ফর্সা না শ্যমলা অদ্ভুত এক রঙ্গের অধিকারীনি সে। পানির ছিটায় জল জল করতে থাকা মুখশ্রী দেখে কেমন এক প্রশান্তির বাতাস ঘিরে ধরলো তাকে।আলাদা ঘোরের মাঝেই পা বারালো নিরার দিকে।নিরা ততোক্ষনে ছুট লাগিয়েছে পদ্ম ফুলের লোভে কিন্তু সে টের ও পেলোনা কেউ একজন তার সৌন্দর্যর কবিতাও বানিয়ে রটে ফেলেছে ইতিমধ্যেই।

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০২

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—২

৫.
দুই পরিবার চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে রয়েছে সোফার উপরে। তাদের কপালের চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে একই কারণে। মৌনতা ভেংগে জামিলা শিকদার বলে উঠলেন

—এরা তো বিয়ের কথা শুনেই পালিয়ে গেলো। এদের দুইজনকে যদি জোড় করে বিয়ের পিড়িতেও বসায় দিলেও এরা যে বিয়ের দিনে পালাবেনা সে বিষয়ের কি আদৌ কোন গ্যারেন্টি আছে?

জামিলা শিকদারের কথায় একমত জানালেন নিশিতা তালুকদার। তাদের কথার প্রতিউত্তরে বলে উঠলেন রুহুল তালুকদার

—আমরা কি বলি তাদের টপিক টা বাদ দিয়ে আমরা অভ্র আর রুহানীর বিয়ে দিয়ে দেই তাহলেই ত হয়।

রুহুল তালুকদারের কথায় তিন জোড়া চোখ রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই ঢোক গিলেন রুহুল তালুকদার। কিছু একটা ভেবে হুট করে জামিলা শিকদার বলে উঠেন

—বুদ্ধিটা খারাপ বলে আমার মনে হলোনা কারণ আমরা এমনিতেও রুহানীর জন্য ছেলে দেখছিলাম আর আমরা সবাই রুহানীর রাগ সম্পর্কে জানি যে অতিরিক্ত রাগী সে। আর সেখানে অভ্র খুবই শান্ত একজন ছেলে। আর রুহানীকে অন্য পরিবারে দিলে আমাদের ও চিন্তার শেষ থাকতোনা।

তাদের কথা এতোক্ষন চুপচাপ শুনলেও এবার মুখ খুললেন হাবিব শিকদার

—একেই দুই ছেলে মেয়ে পলাইতন করেছে তোমরা কি চাও এই দুইজন ও চলে যাক।

স্বামির কথার বিপরীতে বলে উঠেন জামিলা শিকদার

—দেখো আমার আর রুহুল এর অনেক দিনের ইচ্ছা বেয়াই—বেয়াইন হওয়ার আমি চাইনা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে ওরা গেছে ত কি হয়েছে আরও দুইজন ত আছেই।
আর আমার মনে হয়না অভ্র এমন কিছু করবে রুদ্রর মতো আর রুহানী রাগী হলেও এই বিষয় এ সেও আমাদের বিরুদ্ধে যাবেনা।

জামিলা শিকদারের কথায় সবাই সহমত হলো কিন্তু তাদের একটাই কথা এবার তাদের মতামত নিয়েই এগুবেন তারা এবার জোড়জবস্তি করবেন না।

৬.
ময়মনসিংহের বাসের সিটে জানালার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে নিরা দৃষ্টি তার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক জোড়া বৃদ্ধ কপোত কপোত-কপোতীর উপরে।বৃদ্ধা গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আর তার পাশেই এক বৃদ্ধ লোক হাতে ফুল নিয়ে বসে আছে এটা ওটা বলে কত কি বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু বৃদ্ধার রিয়েকশান দেখে মনে হচ্ছে সে মানবেনা মানতে নারাজ। আজ বুড়ো যা করুক না কেনো সে মানবেনা। কিন্তু বৃদ্ধার এই দৃঢ় শপথ বেশিক্ষন টিকলোনা বৃদ্ধ লোকটি এদিক ওদিক তাকিয়ে লোকজনের অবস্থান বুঝে নিজের শুষ্ক ঠোঁট ছুয়ে দিলো বৃদ্ধার কুচকে যাওয়া গালে।বৃদ্ধা কিছুক্ষন বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে কিছু বলবে তা দেখার আগেই নিরার পাশে ধুম করে বসে পড়লো কেউ। নিরা বৃদ্ধাদের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই চমকে গেলো।পাশের জন ও যে দারুন ভাবে চমকেছেন তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলোনা কারণ পাশের জন চিৎকার করে বলেই উঠলো

—আপনি এখানে আমার পিছনে চলে এসেছেন মানে কি?

রুদ্রর কপাল কুচকে বলা উঠা কথায় যে মারাত্নক বিরক্ত হয়েছে নিরা সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।অতি বিরক্ত সহিতই বলে উঠলো সে

—দেখুন মিস্টার রুদ্র আমার আপনার পিছন নেওয়ার কোন ইচ্ছা নেই আপনার আগেই আমি এখানে এসে বসেছি আপনি আমার পরে এসেছেন সে হিসেবে আমি না আপনিই আমার পিছা করছেন বলেই আমার মত।এমন ত নই যে আপনি বিয়ে ভাংগার মত পালটে আমার পিছনে ঘুরার মতলব আটছেন?

—দে,,,

রুদ্র দেখুন বলতে যেয়েও থেমে গেলো মনে পড়ে গেলো নিরার তখনকার দেওয়া জবাব টা ঢোক গিলে এদিক ওদিকে তাকিয়েও যখন কোন সিট খালি দেখলোনা তখন ধপ করে পুনরায় বসে গেলো নিরার নামক কণ্যাটির পাশে।

নিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে নিজের মাথা হেলিয়ে দিয়ে রুদ্রর উদ্দেশ্য বলে উঠলো

—দেখুন মিস্টার রুদ্র আমার আর আপনার মাঝে বা আমাদের পরিবারের মাঝে কোন শত্রুতা নেই এই যে আপনি আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠলেন বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেললেন তার কি আদৌও কোন যুক্তি আছে মিস্টার রুদ্র।

রুদ্র এবার ভাবনাই পড়ে গেলো আসলেই তো নিরার সাথে তার কোন শত্রুতা নেই তাহলে কেনোই বা তার সাথে এমন ব্যবহার।এমন তো না বিয়েটা নিরা জোড় করে করতে চাচ্ছে। এটা ত সম্পূর্ণ তাদের পরিবারের ইচ্ছা। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো

—আসলেই তো আমি এইভাবে ভেবেই দেখিনি।আমার ব্যবহারের জন্য আসলেই আমি দুঃখিত।

—হুম বুঝতেই পেরেছি যে আপনার ভাবার শক্তিটা কম।

—ভাবার শক্তি কম বলতে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছেন।

ভ্রু কুচকে কথাটা বলে উঠলো রুদ্র। নিরা হেসে বলে উঠলো

—এই দেখুন সামান্য ভাবার শক্তি কম কি আপনি সেটাই ভাবলেন না উলটো আমাকে জিজ্ঞেস করলেন এতেই প্রমানিত আপনার ভাবনার শক্তি আসলেই অনেক কম।

—আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছেন? (ভ্রু কুচকে)
—নাহ কারণ আপনিই আমাকে বার বার প্রমান করে দিচ্ছেন এতে আমার ই বা কি করার আছে।যে মানুষ ভাবে কম সে নির্ঘাত ঝগড়া করতে গেলেও ভাবা ভাবি করবেনা।

নিরার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলা কথা শুনে রুদ্রর মন চাচ্ছে নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিড়ে ফেলতে একটা মেয়ে এতোটা শ*য়তান কেমনে হয় বুঝে পাইনা। রুদ্র রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিরার ফোন বেজে উঠলো দেখে রুদ্র আর কিছু বললোনা ।

—হ্যালো আব্বু।
—নিরা মা ফিরে আই । আমরা তোর বিয়ে দিবোনা। তাও ফিরে আয় মা আমার।
—সত্যি বলছো নাকি ফিরে আনার জন্য বলছো কোনট?(সন্দিহান কন্ঠে)
—সত্যি মা আমার তুই তাও বাসায় আয়।(করুন কন্ঠ)
—আমি ময়মনসিংহ যাচ্ছি সেখানে ২ কি ৩ দিন ঘুরে আমি চলে আসবো।অনেক দিন এর ইচ্ছা ছিলো ঠিক আছেনা?
—ঠিক আছে তুই যেটা ভালো মনে করিস টাকা না থাকলে আমাকে বা ভাইয়াকে জানিয়ো আচ্ছা।

নিরা সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিলো।নিরা ফোন রেখে পাশে ঘুরতেই দেখলো রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে তাকায় আছে।

—এইভাবে তাকানোর প্রয়োজন নেই দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা আর এগিয়ে নিয়ে যাবেনা বিষয়টা এখানেই স্থগিত।

নিরার কথা শুনে শান্তির নিশ্বাস নিলো রুদ্র। তার এই শান্তি দেখে নিরা হাসলো।

—ময়মনসিংহ যাওয়ার কারণ কি রুদ্র সাহেব।
—তেমন বিশেষ কোন কারণ নেই অফিসের কাজেই আরকি। একদিনের কাজের জন্যই এতোদূর ছুটতে হচ্ছে আমাকে।
—একদিনের কাজ তারপর?
—তারপর দুইদিন ওইখানে থেকে কিছু পর্যবেক্ষন করতে হবে তারপর বাসায়।
—ওহ আমাকে সাথে নিবেন রুদ্র সাহেব।
—বিরক্ত হবেন না আপনি?
—আমি যতোদূর শুনেছি আপনি আর্কিটেক্ট। আর আমিও এই বিষয় নিয়েই পড়াশুনা করছি সেজন্য আরকি আপনার সাথে যাওয়ার ইচ্ছা হলো। কিন্তু আপনার যদি অসুবিধা থাকে তাহলে প্রয়োজন নেই।এমনিতেই আমাকে দেখে আপনি বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেলেন।

নিরার কথা বলার ভঙ্গিতে রুদ্র হেসে উঠলো।এখন আর সে প্রথমকার মতো বিরক্তি কাজ করছেনা প্রথম দেখাই যাকে ঠোঁট কাটা অসভ্য বলে মনে হয়েছে এখন সে মেয়েটাকে ওতোটাও মনে হচ্ছেনা বরং প্রানিচ্ছ্বল একটা মেয়ে বলে আক্ষা দিতে ইচ্ছা করছে তার।আসলেই যে মেয়েদের অনেক রুপ থাকে তা নিরাকে দেখলেই বুঝা যায়।কিন্তু অন্যসব মেয়েদের মতো ন্যাকা বা গায়ে পড়া স্বভাব নেই এই মেয়ের মধ্যে তা এতোক্ষনে বুঝে গেছে রুদ্র।

—সমস্যা নেই মিস নিরা আপনি আমার সাথে আসতে পারেন এতে যদি আপনার হেল্প হয় তাহলে আমি স্বাচ্ছন্দে আপনাকে আমার সাথে নিতে প্রস্তুত।

নিরা আর কিছু না বলে বিনিময়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো।সে হাসিতে রুদ্র কিছুক্ষন চেয়ে থেকে সাথে সাথে আখিজোড়া বন্ধ করে নিলো।জোড়ে দুইটা শ্বাস ফেলে বলে নিজের মনেই নিজেকে প্রশ্ন করে বসলো

—এতোটা নির্মল ও বুঝি কারো হাসি হয় চমৎকার।

কথাটা রুদ্রর মনেই থেকে গেলো পাশের মানুষটি শুনতে পেলোনা তার ছোট হাসি কারো বুকে অজনা ঢেউ খেলাতে সক্ষম হয়েছে সে।নিরা তো ব্যাস্ত প্রাকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।আলাদা এক মিষ্টি ঘ্রান এসে তার নাকে লাগছে বরং বার। ঠান্ডা হাওয়াই কাপিয়ে তুলছে তার সমস্ত শরীর।আলাদা এক ভালোলাগা কাজ করছে নিরার মনে।

৭.
আজানের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো রুহানীর।কলেজ থেকে এসেই ঘুমিয়ে গেছিলো সে।আরমোর ভেংগে ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে যায় রুহানীর সন্ধ্যা ৬টা বাজে। এইদিকে সাড়ে ছয় টার দিকে অভ্র স্যারের কাছে পড়তে যাওয়ার কথা তার বায়োলজিতে কাচা হওয়াই জামিলা শিকদারের কঠিন নির্দেশেই তাকে আজ থেকে অভ্রর কাছে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তিনি। কথাটা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে ছুট লাগালো সে তালুকদার ভবনের দিকে।জানে সে আজ দেরি করবে আর কোথাও শুনবে।
মনে মনে নিজেকে হাজার টা কথা শুনেই তালুকদার ভবন পৌছে গেলো সে আর যেতেই সে অবাক হয়ে বৈঠক খানার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাই রইলো।

চলবে?

সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০১

0

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১
১.
ছেলে পক্ষের সামনে বসে থাকতে থাকতে হাফিয়ে উঠেছে নিরা।কিন্তু তার সামনের মানুষ এর হেলদোল নাই বললেই চলে।নিরা আড় চোখে বার বার পর্যবেক্ষ্ণ করে চলেছে তার সামনে বসে থাকা শ্যামা পুরুষটির দিকে। ঘণ কালো চুলের লম্বা তীর্যক মুখটাই দারুন এক মায়া রয়েছে বলেই মতামত নিরার।কিন্তু নিজের এই মতামতের কারণ সে জানেনা। তার ধারণা এই মায়া জিনিসটা পুরুষদের জন্য নয় বরং মেয়েদের জন্য বরাদ্দকৃত কিন্তু তার এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভাবে বদলে দিয়েছে তার সামনে থাকা সুদর্শন পুরুষ। নিশ্বব্দে যেকোন মেয়ে প্রথম দেখাই তার প্রেমে পরতে বাধ্য।কিন্তু নিরার এই মহূর্তে লোকটার প্রতি প্রেম নয় বরং বিরক্তিতে কপাল কুচকে আসছে।

অবশেষে নীরাবতা ভেংগে নিরাই প্রথম তার মুখ খুলে

—দেখুন মিস্টার রুদ্র আপনার যদি কিছু বলার না থাকে তাহলে আমি এই মহূর্তে উঠার অনুমতি চাচ্ছি।

নিরার সোযা সাপ্টা উক্তিকে নড়েচড়ে বসলো রুদ্র। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো খুবই সাবধানে মুছে নিলো রুদ্র।

—আসলে আমি এই বিয়েটা করতে চাচ্ছিনা। আপনি যদি আপনার বাবাকে বলেন যে আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি তাহলে তিনি এই বিয়েটা ভেংগে দিবে বলেই আমার ধারণা।

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলেই থামলো রুদ্র। এতোক্ষণ যেনো দম ফিরে পেলো সে।নিরা হাসলো।সে আন্দাজ করেছিলো এমন কিছু কথায়।

—গার্লফ্রেন্ড আছে বুঝি

নিরার হাস্যজ্বল ভাবে বলা কথাটিতে রুদ্র অবাক হলো তার ধারণা ছিলো নিরা অবাক হবে বা চমকাবে অথবা রাগ করবে কারণ এমন একটা কথায় যেকোন মেয়ের আত্নসম্মানে লাগবে বলেই তার ধারণা।নিজেকে ধাতস্থ করেই বলে উঠলো রুদ্র

—নাহ।

নিরা পুনরায় হেসে উঠলো সে জানেনা কিন্তু কেনো যেনো তার খুব হাসতে মন চাচ্ছে।কেনো সে জানেনা কিন্তু তার সামনে সুদর্শন পুরুষ এর এমন ভীতু চেহারা যে তাকে খুব উল্লাস দিচ্ছে সে তা মহূর্তে বুঝতে পেরেছে।

পুনরায় নিরা বলে উঠে

—তাহলে আপনি আপনার পরিবারকে জানিয়ে দেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না ব্যাস হয়ে গেলো।

—মা আপনাকে খুব পছন্দ করেছে। আর আমি না করে মা কে কষ্ট দিতে চায়না

—আমার বাবাও আপনাকে পছন্দ করেছে।এখন আমি যদি না করে দেয় এখানে আমার বাবাও নিশ্চয় কষ্ট পাবে।আমিও আমার বাবাকে কষ্ট দিতে চায়না মিস্টার রুদ্র

—দেখুন

—দেখান। আমার দেখতে অসুবিধা নেই আপনি যদি দেখাতে ইচ্ছুক হন।

নিরার মজার ছলে বলা কথাটাই যে রুদ্র লজ্জা পেয়েছে তা রুদ্রর কান দেখেই বুঝে গেলো নিরা।নিরার এমন ঠোঁট কাটা স্বভাব রুদ্র আশা করেনি।

—দেখুন মিস নিরা আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।

—আমিও আপনাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয়।

—তাহলে ত ভালোই না করে দেন বিয়েই।

—সে কাজটা আপনিও করতে পারেন মিস্টার রুদ্র।নিজের কাজ নিজে করা ভালো বলেই আমার ধারণা বুঝলেন।এখন হয় আপনি না করে দেন নাহলে বিয়ের পিড়িতে বসে পড়েন দুইটাই সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা।

কথা গুলো বলেই সেখান থেকে চলে গেলো নিরা।রুদ্র তপ্ত নিশ্বাস ফেলে তরুনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো শুভ্র শাড়ি পড়া নারীর দিকে।লম্বা বিনুনী তার কোমড় ছড়িয়ে নিচে ঝুলছে।নিসন্দেহে রূপবতী এক নারী বেরিয়ে যাচ্ছে তার চোখের দৃষ্টির বাহিরে।

২ দিন হলো রুদ্রর মা গিয়েছিলেন নিরাদের বাড়ি।অনেক পুরনো দিনের সাক্ষাৎ রয়েছে মিসেস জামিলা শিকদার (রুদ্র শিকদারের মা) আর রুহুল তালুকদারের(নিরার বাবা)।
প্রায় যাতায়াত রয়েছে দুই পরিবারের একে অন্যের বাড়িতে।কিন্তু সে মেলামেশা শুধু বাবা মায়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো এতোদিন কিন্তু হঠাৎ করেই দুই পরিবার সিধান্ত নেন শিকদার বাড়ির বড় ছেলের জন্য তালুকদার বাড়ির এক মাত্র মেয়ের সাথে বিবাহ দিয়ে তাদের সম্পর্ককে আরও পাকাপোক্ত করবে।সে জন্যই আজকে রুদ্র আর নিরা একে অন্যের সামনে মুখোমুখি হয়েছিলো নিরার কলেজের পাশের কফি শপে।

এখন দেখার পালা পরিবারের পছন্দে কি আসলেই মিলবন্ধন হবে দুই মেরুর এই দুই মানুষ এর নাকি তাদের পথ এইভাবেই আলাদাই রয়ে যাবে।

২.
প্রোফেসার অভ্র তালুকদারের ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৯ বছরের এক তরুনী।তার দোষ এটাই প্রায় এক সপ্তাহ হলো সে প্রতিদিন অনিয়মিত ভাবে ক্লাসে প্রবেশ করছে।তার কারণ যানতে চাইলে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয় তার ঘুম ভাংগে নি। প্রতিনিয়ত এমন একটা উত্তর নিশ্চয় অভদ্রতার মাঝেই পড়ে।সেজন্য এই শাস্তি দিয়েছে তাকে অভ্র তালুকদার।

অভ্র তালুকদার ক্লাস শেষ করে বের হয়েই তার চোখ দাঁড়িয়ে থাকা ঘুমন্ত এক বাচ্চা তরূনীর দিকে।বাচ্চা বলার একটা অদ্ভুত কারণ অভ্র নিজের মাথায় সাজিয়েছে তা হলো তরুনীর মুখের আদল।আর তার পোশাক আশাক।চোখ দুইটি যেনো কোন পুতুলের ন্যায় গোল গোল হালকা গলুমলু তরুনীটিকে যেকেউ প্রথম দেখায় বাচ্চা হিসেবেই ভেবে নিবে। পরণে একটা ফ্রক উচু করে দুই ঝুটি করে গলাই শুভ্র স্কার্ফ পেচানো।

অভ্রর তাকানোর মাঝেই চোখ মেলে তাকায় রুহানী শিকদার। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ।তা দেখে হাসে অভ্র।ছোট মেয়েটার যে নাকের ডগায় রাগ থাকে সেটা তার এই এক সপ্তাহে জানা হয়ে গেছে।

অভ্রকে দেখে শ খানেক ভয়ংকর গা*লি নিজের মনে মনে আওড়ালো রুহানী। রুহানী ঠোঁট নাড়ানো দেখে অভ্র বেশ বুঝতে পারলো এই কোমল ঠোঁটের মাঝে উঠা ধ্বনি গুলো যে ভয়ংকর কিছু শব্দের অর্থ প্রকাশ করছে।অভ্র সেদিকে খেয়াল না করে বলে উঠলো

—সারা রাত প্রেম না করে ঘুমাবেন মিস রুহানী।কালকে আমার ক্লাসে লেট হলে আপনার বাবার কাছে কল দিতে আমার দেরি হবেনা কথাটা মাথায় রাখবেন।

রুহানী কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভ্র রুহানীর নাক টেনে সেখান থেকে চলে গেলো।

৩.
বাস স্টোপে বসে আছে নিরা।পড়নে শুভ্র শাডিটা দোল খাচ্ছে বাতাসের তালে তালে।বাড়ি ফেরার মন নেই তার। অজনা কোথাও কইদিনের জন্য পালাতন করার উদ্দেশ্যে নিয়েই বাসের অপেক্ষাই বসে আছে সে। সে জানেনা কই যাবে কোথায় যাবে কিন্তু সে জানে এখন বাসায় গেলে তার বাবা তার মা তাকে ইমোশনাল কথা বলেই তাকে যেভাবে হোক এই বিয়েতে রাজি করিয়ে ফেলবে। আর সেও তার বাবা কে না করতে পারবেনা।

হঠাৎ নিরার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বেজে উঠলো তার ফোন খানা বাজখাই গলাই।ফোনের স্ক্রীনে তাকাতেই ভেসে উঠলো রুহানীর মায়াভরা বাচ্চা চেহারা হেসে দিলো নিরা। এই মেয়েটাকে দেখে চট করে কেউ বলতে পারবে না মেয়েটা এবার অনার্সের ছাত্রী। নাকের ডগায় জমে থাকে যার সর্বদা রাগ।

নিরা ফোন তুলে কানে নিতেই ভেসে উঠলো রুহানীর রাগী কন্ঠ

—ওই তোর ভাই নিজেকে কি ভাবে হ্যা কোথাকারা প্রেসিডেন্ট নাকি সে।আমাকে পুরা ৪৫ মিনিট ক্লাস রুম থেকে বের করে দিয়েছে বেয়াদব টা। আমার পা ঝিম ধরে গেছে। নিম পাতা, করল্লার চাচা,পচা আলু,মরা টিকটিকর দশ নাম্বার বাচ্চা, ছাগলের ঠ্যাং আর আর আর ধ্যাত মনে পড়ছেনা তুই তোর ভাইরে বুঝাই দিবি যেনো আমার সাথে এমন না করে নাহলে ওর চোখ তুলে আমি মুরগীকে খাওয়াই দিবো বলে দিলাম।

রুহানী নিজ মনে কথা গুলো বলেই কল রেখে দিলো এদিকে নিরা হতদম্ভ হয়ে বসে আছে।ফোন কান থেকে সরায়ে দুই তিনবার অপরকানে বারি দিলো। তবুও যেনো মাথা হ্যাং হয়ে আছে তার এই মেয়ে এতোক্ষন কথা বললো নাকি চিৎকার করলো বুঝতে পারছেনা নিরা।

কিছুক্ষন সেভাবে থম মেরে বসে থেকেই হু হা করে হেসে উঠলো নিরা।


রাগে গজগজ করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে রুদ্র। বাসায় কেউ তার কথা শুনতে প্রস্তুত নই। সবার একই কথা

“তোর যদি কেউ বউ হয় তাহলে সেটা নিরা হবে ব্যাস ”

মায়ের সোজাসাপ্টা জবাবে হতাশ হয়েই বেরিয়ে পড়লো রুদ্র এখন সে তার মাকে কিভাবে বলবে নিরার মতো ঠোঁট কাটা মেয়ের সাথে দুই দন্ড বসা সম্ভব না সারাজীবন কাটানো অসম্ভব প্রায়।

বাড়ি থেকে বের হতেই তার ফোন বেজে উঠে। ফোন তুলে দেখে তার অফিস থেকে ফোন এসেছে।রুদ্র নিজের রাগ কমিয়ে জোড়ে কইটা শ্বাস নিয়ে ফোন কানে নিলো

—হ্যালো।

—হ্যা রুদ্র আমাদের আর্জেন্ট একটা প্রজেক্ট এর জন্য তোমাকে এই মহূর্তে ময়মনসিংহ যেতে হবে।

—ঠিক আছে স্যার আমি এখুনি বেরিয়ে যাচ্ছি।

ফোন টা কান থেকে রেখে বেরিয়ে গেলো।বসকে হাজার খানেক ধন্যবাদ দিতে ভুললোনা সে।কিছুদিন এইসব ঝামেলা থেকে দূর থাকতে পারবে ভেবেই তার শান্তি।

শিকদার পরিবারের বিরাট ব্যাবসা থাকলেও রুদ্র নিজের পায়ে দাড়াতেই ” দা সান রাইজ ইন্ডাস্ট্রিতে” সিনিয়র আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করছে।

চলবে?

চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৬০ এবং শেষ পর্ব

0

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৬০+অর্ন্তিম পর্ব
১৫৮.
পুতুলের জ্ঞান ফিরে আসতেই অর্পনের অসহায় মুখটা দেখতে পায়।নিজ থেকে উঠে বসার চেষ্টা করতেই অর্পণ,পুতুলকে ধরে বসায়।

এখন কেমন লাগছে?

পুতুল আস্তে করে বলল,

ভালো।

এত বড় শাস্তি কেনো দিলে আমায়?এত বড় শাস্তি কি আমি সত্যি ডির্জাভ করি?

পুতুল অসহায় চোখে তাকিয়ে মাথাটা নিচের দিকে নামিয়ে রাখে।

তোমার এই মাথা নিচু করাকে আমি কি ধরে নিবো?

তুমি নির্বোধ।না-কি অতি চালাকচতুর নারী?আমি শুনে এসেছি নারী যখন মায়ের আসনে যায়।তখন দুনিয়া উল্টে গেলেও তার সন্তানের কথা সবার আগে মাথায় থাকে।যা কিছু হয়ে যাক সন্তানের নিরাপত্তার কথা আগে ভাবে।কিন্তু তুমি যেটা করেছো সেটা ঠিক করো নিই।একজন বাবা হিসেবে মায়ের পরে তার সন্তানের কথা তার বাবা জানবে।কিন্তু আমি তার কথা জানতামই না।এমনকি আমার সন্তানের পুরো ব্যাপারটা তুমি লুকিয়ে গেছো।এক,দুই মাস নয়,পুরো ছয়টা মাস তুমি আমাকে ধোঁকার মধ্যে রাখলে।এটা করে তুমি কি প্রমাণ করলে?ইউ আর সেলফিশ।

অর্পণের কথায় পুতুল শব্দ করে কেঁদে ওঠে।চোখের পানি মুছতে মুছতে ব’লে

আমি কি করতাম?চারদিকে করোনার জন্য এত মৃত্যু আমার ভিতরটা ভয়ে গুটিয়ে গেছে।তার ওপর নিজের অনাগত সন্তানের আগমনে ঘাবড়ে যাই।একদিকে দায়িত্ব ফেলে ছুটে আসতে ইচ্ছে করে তোমার কাছে।আর দায়িত্ব ব’লে নিজের সত্তাকে বাহিরে ফেলে লড়াই করতে।

চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু এখনও ভাসে।আমার মা কষ্ট পেতে পেতে মারা গেলো।বিনা চিকিৎসায় তার প্রাণটা গেলো।তখন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলে হয়তো আমার মা’টা আজ বেঁচে থাকতো।আমি আর আমার ভাই মা বিহীন হতাম না।বাবা শব্দটা আমার কাছ থেকে বিলীন হয়ে গেছে।স্কুল,কলেজ।সব জায়গায় শুনি বাবা ইউ আর দ্যা বেস্ট হয়।বাবা তার রাজকন্যাকে আগলে রাখে।তার সকল বায়না আবদার পূর্ন করে দেয়।সেই বাবার কাছে দিন শেষে তার ঠাঁই হয়।দিন শেষে মায়ের নামে শত শত নালিশ বাবার কাছে করা।যাতে বাবা,মা’কে মিছে মিছে হলেও খুব করে বকে দেয়।তার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর স্বাদ আমার এই জম্মে থেকে গেলো।আমার ভাই আজও জানতে পারলোনা সে যাকে ফুপুর মেয়ে হিসেবে জানে।সে তার আপন বোন।তার মা আর কেউ নয়।সে যাকে ফুপু ব’লে জানে সে আসলে তার জম্মদাত্তী।তার নিজের মা।
কিন্তু আমাদের বেলা কেন এমন হলোও?খুব কি ক্ষতি হতো আর দশটা বাচ্চাদের মতো আমরাও একটা সুখি পরিবার পেতাম।সেখানে সুখ থাকতো কানায় কানায় ভরপুর।এই ছোট্ট জীবনে আমার অপূর্ণতার গল্পটা বেশি।সব কষ্ট ভুলে গিয়ে এক বুক আপসোস বুকে চাপা দিয়ে এই তোও আছি বেশ।আমি আমার ক্যারিয়ারকে বেশি পাধান্য দিচ্ছি।তোমার সাথে যে অন্যায় করেছি।এটা ক্ষমার যোগ্য নয়।তবুও বলব,

তুমি আমায় ক্ষমা করো না।আমার ভয় হয়।তোমার কাছে থাকার ভয়।তোমাকে হারানোর ভয়টা মনের মাঝে কা*মড়ে ধরে।মাঝে মাঝে মনে হয় এই সুখ আমার জন্য নয়।আমি এসব পাওয়ার যোগ্য নই।আর যে আসছে।তাঁকে সারা দুনিয়ায় থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা।কারণ আমার বাবা তোও আর দশটা বাচ্চাদের বাবার মতো নয়।সে একজন অমানুষ,একজন রাক্ষস।আমি ঘুমের মধ্যে দেখতে পাই।আমার খুব সুন্দর একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয়েছে।সে কি সুন্দর করে হাসে।তার যখন হাঁটার বয়স হলো।সে হাঁটি হাঁটি পা চলাতেই আমি সুখ খুঁজে পাই।
তাঁকে আমার কাছে আসার জন্য যখন হাত মেলে অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।অপেক্ষা করছি সে আমার কোলে এসে বসবে।আমাকে আদরের বুলিতেই মাম্মা ব’লে ডেকে উঠবে।কিন্তু সে আমার কাছে আসার আগেই তাঁকে নিয়ে গেলোও।ওই অমানুষটা আমার চোখের সামনেই আমার মেয়েকে জীবন্ত কবর দিচ্ছে।আর আমি এক অদৃশ্য লোহার শিকলে বন্দি।আমার মেয়েটা চিতকার করে কাঁদছে।সে ব্যাথা সইতে না পেরে মাম্মমা,বাপা ব’লে ডাকছে।আমি শত চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না।আমার মেয়েকে মে*রে ফেলছে।আর আমি মা হয়ে সন্তানের মৃত্যু দেখতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি।পারিসা ব’লে চিতকার করে উঠে বসতেই কানে আসে ফজর আজানের শব্দ।আমি শুনেছি ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়।আর জেনে বুঝেও চুপচাপ ভয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে চাইছি।আমি আমার মেয়ে কে কলিজা ভেতর রেখে দিব।আমার মেয়ে কে কারো কাছে দিব না কারো কাছে না।পুতুল হাইপার হয়ে যাচ্ছে।অদ্ভুত বিহেভিয়ার জন্য অর্পণ নিজেও চমকে উঠে।পুতুলকে নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

পুতুল রিলাক্স।শান্ত হও।তোমার সন্তানকে কেউ নিবে না।আমি আছি তোও।আমি আর তুমি মিলে আমাদের মেয়ে কে সেইভ করব।সে নিরাপদের সাথে থাকবে।কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।অর্পণ পুতুলের সাড়া শব্দ না পেয়ে মুখটা তুলতেই দেখে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।অর্পণ পুতুলের দিকে তাকিয়ে ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারে মেয়েটা নিজের যত্ন নেয় না।মাথার চুলগুলো উসকখুসক।চোখের নিজে কালি পড়েছে।পুতুললের বি
প্রেগন্যান্ট বিষয়টি নিয়ে অন্য ডাক্তার সাথে কথা বলল,এবং আজকের ঘটনা বিস্তারিত জানালো।মায়ের থেকে পুতুলের রিপোর্ট নিয়ে দেখালোও।ডাক্তার নন্দিতা সবটা দেখে এবং শুনে বলল,

তার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।তার মানসিক এবং শারিরীক অবস্থা ঠিক নেই।তার সাথে পূর্বে যা হয়েছে সেইসব এখন তাকে ভাবতে বাধ্য করে।এবং মুড সুয়িং এর একটা ব্যাপার আছে।এটা বেবি পেটে আসলেই অনেক মায়েদের একটুও বেশিই হয়ে থাকে।আর সবচেয়ে বড় কথা উনার মন থেকে ভয় নামক জিনিসটা দূর করতে হবে।উনি বেবির চিন্তায় আরো নাজুক হয়ে গেছেন।উনার বিশেষ খেয়াল রাখুন।

ডক্টরের সাথে কথা শেষ হতেই অর্পণ মাথা নাড়িয়ে কেবিনে পা রাখে।পুতুল এখন ঘুমিয়ে আছে।ওর দুই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মেয়েটা ঘুমের ঘোরেও কাঁদছে।অর্পন নিজের ডান হাত দিয়ে পুতুলের দুই চোখের লেগে থাকা অশ্রুটুকু মুছে নিলো।বউয়ের ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাতে হালকা ঠোঁটের স্পর্শ একে বলল,

আই এম সরি।আমাকে প্লিজ মাফ করে দেও।তোমার পরিস্থিতিটা না বুঝেই আমি মিস বিহেভ করে ফেলেছি।যা আমার করা উচিত হয়নি।আজকের পর থেকে তোমার চোখ থেকে আর কখনোই পানি জড়তে দিবোও না।তোমার ভয় দূর করতে আমাকে যা করতে হয়।আমি তাই করব।প্রয়োজনে তোমার বাবাকে খুঁজে বের করবোও।সে আদৌও বেঁচে আছে।না-কি মা-রা গেছে।আমাকে জানতে হবে।আমাদের সন্তানকে নিয়ে আমি কোনো রিস্ক নিবো না।তোমার স্বামী বেঁচে থাকতে তোমাদের গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দিবে না।অর্পণ পুতুলকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ির পথে গাড়িতে করে রওনা দিলো।পুতুলকে সাবধানে বসিয়ে আস্তে ধীরে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।

১৫৯.
অর্পণ থানার ওসির সাথে ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলতে লাগল।ওসির কথা মতে,

পুতুলের দাদী আর বেঁচে নেই।আর পুতুলের বাবা জেল থেকে বেশ কয়েকবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।এবং শেষ মুহূর্তে সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।কিন্তু বেশি দূর পালিয়ে যেতে পারেনি।তার আগেই পুলিশ তার পায়ে গুলি করে বসে।এবং সে মা*রাত্মকভাবে আ*হত হয়।এবং তার জেলের সাজা শেষ না হওয়া।তার চিকিৎসা দরকার হয়।যার কারণে তার একটি পা অপারেশন করে কে*টে ফেলতে হয়েছে।তার একটি পা নেই।আর অপর পায়ে পচন ধরেছে।শত চিকিৎসা নিয়েও পা ভালো হয়নি।

বর্তমানে সে ঢাকার পুরোনো জেলখানায় রয়েছে।তবে সে খোলা বাতাসে যাওয়ার চেষ্টা করতোও।তার বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাইতোও।অন্ধকারে থাকতে চাইতোও না।তার অন্ধকার কয়েদীদের মতোও জীবনটা এতগুলো বছর পার করা।তার ওপর মায়ের মৃত্যু।বউ,বাচ্চা দিন শেষে কেউ নেই তার পাশে।সে নিঃশ্ব।সে অন্ধকারে পড়ে আছে।অন্ধকারে দেখলেই মনে হয় কেউ তাকে গিলে খেতে আসছে।তার গ*লা টি*পে ধরছে।এক রকম ভয় পেতে পেতেই আজ সে পাগল উন্মাদ।কোনো কিছু সে মনে করতে পারে না।নিজের চুল টেনে ধরেন।জেলের মধ্যে মাথা ঢুকতে থাকেন।আর চিতকার করে কাঁদতে থাকেন।

অর্পণ ওসিকে বলল,সে একবার ওখানে যেতে চায়।এবং সবকিছু নিজের চোখে দেখতে চায়।ওসির পারমিশন নিয়ে অর্পণ ঢাকায় পা রাখে।এবং যেখানে পুতুলের বাবাকে রাখা হয়েছে সেখানে আসে।আজ থেকে আঠারো,উনিশ বছর আগের মোস্তফা সরোয়ারের সাথে এই মোস্তফা সরোয়ারের কোনো মিল নেই।আগে জুয়ার নেশা,টাকার লোভ,বউয়ের ওপর অত্যাচার করা।বাপের বাড়ি থেকে টাকা না আনার জন্য তালাক দেওয়া নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে।সেই অমানুষের আজ কি হাল হয়েছে?কথায় আছে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। পাপ কখনো বাপকে ছাড়েনা।তার করা পাপে আজ তার এই পরিনতি।এখন সে পাগল হয়ে গেছে।আর এই পাগলের বেশেই একদিন এই জেলের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটবে।যাবজ্জীবন কারাদন্ড জন্য আজ তার ফাঁসির রায় হলো না।বরং তিলে তিলে মেরে দিতে আজীবনের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামী করে দিলো।যতদিন বাঁচবে এভাবেই থাকবে।

ঘুম ভাঙ্গতেই অর্পণকে দেখতে না পেয়ে পুতুলের মুখটা চুপসে গেলো।মন খারাপ করে নিজের রুমে পা বাড়াতে নিলেই অসীম তালুকদার পুতুলকে ডাক দিলো।

আম্মু ওখানে দাঁড়িয়ে আছোও কেন?নিচে আসোও।তোমার অপেক্ষা এতখন ধরে ড্রয়িরুমে বসে আছি।

পুতুল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।অসীম তালুকদারের সামনে বসতেই তিনি মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলল,

আমার আম্মুর মন খারাপ কেন?আপনার এই সময় মন খারাপ করা মানায় না।সব সময় হাসিখুশিতে থাকবেন।আপনার হাসিতে আমার এই বাড়িটা আলোয় ভরে উঠবে।ঘুম থেকে উঠেছেন।নিশ্চয় খিদে পেয়েছে।আপনার শ্বাশুড়ি আম্মা আজকে আপনার পছন্দের সব রান্না করে গেছেন।আসুন।আমি খাবার দিচ্ছি।অসীম তালুকদার সোফা ছেড়ে চলে যেতে নিলেই পুতুল ডাক দিলল,

বা..বা!আমায় মাফ করে দিন।আমি না বুঝে একটা ভুল করে ফেলেছি।আর কখনো এমন ভুল করবো না।এই যে কানে ধরেছি।নাকে চিমটি কা*টছি!অসীম তালুকদার পুতুলের কাজে হেঁসে দিলেন।

দূর বোকা মেয়ে।রাগ কেনো করব?মায়েদের ওপর সন্তান কখনোই রাগ করে থাকতে পারে?পারে না।তাহলে আমি রাগ করি কি করে?আমি তোও খুব খুশি তোমার জন্যই আমাদের ঘরে আমার খেলার সাথী আসছে ব’লে।অসীম তালুকদার আরো অনেকখন গল্প করতে লাগলেন।সেই ফাঁকে খাবার বেড়ে পুতুলের সামনে বসে তাঁকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে দিতে বলল,

আমার এবং অর্পণের মায়ের একটা মেয়ের খুব শখ ছিল।কিন্তু তোমার শ্বাশুড়ি মায়ের সমস্যা দেখা দেওয়া সেটা আর পূরণ হয়নি।অর্পণের মাধ্যমে একটা বউ আনতে চাই নিই।আনতে চেয়েছিলাম।নিজের মেয়েকে।অবশেষে আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছি।আমার বাঁদর ছেলেটা তোমার আগমনে এক পলকেই বদলে গেছে।না হলে এই ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে আমি খুব চিন্তায় থাকতাম।ভাবতাম এই বাঁদরের গলায় কে মুক্তার মালা পড়াবে?কথায় কথায় পুতুলের খাওয়া শেষ।এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।অসীম তালুকদার পুরনো দিনের অর্পণের শৈশব,কৈশোর দুষ্টুমি কাহিনিগুলো বলতে লাগল।আর পুতুল হেসে কুটিকুটি হলো।এই লোকটা এত পাঁজি ছিল।পুতুলের মনে পড়ে গেলো অর্পণ তাদের বাড়িতে রানীকে চুরির করার কথা।তখন সে কি-না অচেনা অজানা ছেলেকে জুতা খুলে ছুড়ে মেরেছিল তার মুখে।বেচারা কি ব্যাথাটা নাই পেয়েছিল?ইস ভাবতেই লজ্জা লাগে।আজ সেই মানুষটাই তার স্বামী।তার সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছে।

অসীম তালুকদার অর্পণের ছোট বেলা থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত সকল ছবি এক ফ্যামিলি এলবাম থেকে বের করলেন।পুতুলের সামনে অর্পণের ছবিগুলো দেখালো।একটা ছবিতে এক বছর,দেড় বছরের ছবিটা তোলা হয়েছে।অর্পণ সাহেবের গায়ে কোনো পোশাক নেই।খালি গায়ে ডায়াপার চেঞ্জ করে সবে নতুন ডায়াপার পড়াবে ঠিক তখনই হিসু করে বসে অর্পণের ছোট মামার মুখের ওপর।বেচারা চোখ মুখ কুঁচকে তাকাতেই ওই অবস্থায় বড় মামা ছবিটা তুলে ফেলেন।ছোট মামার ওপর হিসু করে বিশ্ব জয়ের হাসি তিনি দিয়েছিলেন।আরো অনেক ঘটনার ছবি সামনে আসতেই অসীম তালুকদার প্রত্যেকটা কাহিনি বলতে লাগল। আর ভাবতে লাগল যারা বাবা এতটা পাঁজি ছিল।না জানি তার কন্যা কি করে?পুতুল নিজের পেটের ওপর হাত রেখে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।

এমন সময় অর্পণের গাড়ির শব্দ বাহির থেকে শুনা যায়।পুতুল অস্থির হয়ে ওঠে।তাড়াহুড়ো করে বাহিরে আসতে চাইলে অসীম তালুকদার সাবধানে যেতে বলেন।

১৬০.
গাড়ি সাইড করে রেখে বউকে সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও কিছু বলো না।চুপচাপ বাড়িতে ঢুকে পরে।অর্পণের কাজে পুতুলের মুখটা চুপসে গেলো।মন খারাপ করে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।অর্পণ চুপচাপ নিচ তলার একটি রুমে ঢুকে গোসল সেরে বের হয়ে আসে।পুতুলের সামনে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলল,

মুখ থেকে হাসি গায়েব কেন?আমি বাহির থেকে এসেছি।তার ওপর অনেক বড় লম্বা জার্নি ছিল।বেশ ক্লান্ত আমি।কথা বলতে একদমই সায় দিচ্ছিলো না।ভাবলাম গোসল করে বাহিরে জীবানু পরিষ্কার করে আসি।ফ্রেশ লাগবে।ওহ আরেকটা কথা আজকে থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা নামা করতে হবে না।আমরা নিচ তলায় শিফট হচ্ছি।

সারাদিন কোথায় ছিলেন?পুতুলের প্রশ্নে অর্পণ সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে যায়।ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে বলল,

আগে নিচে শিফট হই।তারপর না হয় শুনো আজ কি কি করেছি?পুতুলের উওরের আসা না করেই রুমে চলে যায়।একে একে প্রয়োজনী জিনিসপত্র নিচে শিফট করে।

আজকের দিনে কথাগুলো পুতুলকে বলতেই পুতুল নিরব রইলো কোনো কথা সে বললো না।অর্পন পুতুলের কপালে চুমু একে বলল,যা কিছু হয়ে যাক।মৃত্যু ব্যতিত তোমার পিছু ছাড়ছি না।তোমাদের ছাড়া আমার এক বিন্দু চলবে না।আমাদের কন্যা তার বাবার রাজত্বে নিরাপত্তেই থাকবে।ভরসা রাখ,প্রিয়তমা।

দেখতে দেখতে পুতুলের নয়মাসে পড়েছে।সে দেখতে বেশ গুলুমুলু হয়েছে।হাত,পায়ে পানি এসেছে।ঠিক মতো হাঁটা চলা করতে পারে না।বেবি এক একটা কিকে তার জানটা বের হয়ে যায়।এত কষ্ট মা হওয়া তা তো আগে জানা ছিল না।পুতুলের কষ্ট দেখে অর্পণের মন খারাপ হয়ে যায়।অসহায় চোখে তাকিয়ে রয়। পুতুল রাতে ঘুমাতে পারেনা।মেয়েটা কাঁদে যন্ত্রণা ছটপট করে।অর্পণ,মিথ্যে রাগ নিয়ে পুতুলের পেটে চুমু বসিয়ে ব’লে।

আম্মু এত লাথি মেরো না।তোমার আম্মা ব্যাথা পায়।তুমি না আব্বুর ভালো মেয়ে।ভালো মেয়েরা এমন করে বলো।চুপচাপ গুড গার্ল এর মতো থাকোও।অর্পণের মিথ্যে কাজে কাজ হয় না।কয়েক সেকেন্ড যেতেই আবার কিক মারে।পুতুল ব্যাথা সইতে না পেরে অর্পনের বুকে মধ্যে কামড় বসিয়ে দেয়।
বেচারা বউয়ের প্যারা পাগল হওয়ার দশা।এই কয়েকমাসে বউ নিজেও ঠিক মতো ঘুমাইনি তাকে-ও ঘুমাতে দেয়নি।পুতুলের মতে তার মেয়ে তাকে জ্বালিয়ে মারে।তাকে শান্তি দেয়না।আর বাপ রাতে বিছানায় আরাম করে পরে পরে ঘুমাবে।তাই মায়ের সঙ্গে বেবির বাপও জেগে থাকবে।

নতুন অতিথি জন্য পুরো বাড়িতে খেলনার মেলা বসেছে।পুতুলের দুই ভাই এবং মামা,মামী এসেছেন বেশ কয়েকবার।যতবার আসবে কিছু না কিছু নিয়ে আসবে।বেবি জন্য খেলনা,টয়েস।আর বেবির মায়ের জন্য বিভিন্ন টক আচার,বাবুর জন্য নকশিকাঁথা।আরো কত কি?পুতুল কে তাদের কাছে নিয়ে রাখতে চাইলেও পুতুল নিজেই যায়নি।আর অর্পণ এবং অর্পণের মা,বাবা যেতে দিতে রাজি হয়নি।বেবি হোক তারপর না হয় মামা,মামী কাছে কয়েকদিন গিয়ে থাকবে।

আজ অর্পণ বাগানে বসে মিটিং করছে।রাবেয়া ওহ বাড়িতে এসেছেন মাত্র।হাসপাতাল থেকে এসেই সোজা গোসল করতে গিয়েছেন।অসীম তালুকদার নিজের খামার বাড়িতে গিয়েছেন।পুতুল না-কি বড় মাছের মাথা খাবে।তা ওহ আবার মুগডাল দিয়ে।এই মেয়ের পছন্দের তালিকার জায়গায় সব অপচ্ছন্দের খাবার যোগ হচ্ছে।যা সে কখনোই মুখে তুলেনি।আজ সেগুলো খাওয়া বায়না করে।তাই মেয়ের আবদার মিটাতেই ভরদুপুরে বের হয়েছেন গাড়ি নিয়ে।

পুতুল আমের আচার বাটিতে করে নিয়ে হাঁটছে আর খাচ্ছে।অর্পণ বার বার বলছে বসে খাও।কিন্তু এই মেয়ে কোনো কথা শুনলে তোও।পুতুল থেকে চোখ সরিয়ে আবার মিটিং বসে মনযোগ দিতেই পুতুল হঠাৎ চিতকার করে উঠে।পুতুলের চিতকারে অর্পণ চমকে পুতুল দিকে তাকিয়ে সেও পুতুল ব’লে চিতকার করে দৌড় দেয় ।

রাবেয়া দৌড়ে নিচে বাহিরে আসেন।দেখেন আচারের তেল ফেলে সেই তেলের ওপর পুতুল পড়ে গেছে ।

হায় আল্লাহ এসব হলো কি করে?

অর্পণ তাড়াতাড়ি গাড়ি বের কর।পুতুলকে হাসপাতালে নিতে হবে।

হাসপাতালে আসার পথেই রাবেয়া ওটি রুম রেডি করতে বলেন।স্বাধীনদের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়।রাবেয়া তাড়াহুড়ো করায় বাসা থেকে বেবি এবং মায়ের প্রয়োজনী কোনো জিনিস আনতে পারেন নিই।তাই রেনুকে তাদের বাসায় যেতে বলেন।আর কি লাগবে।তা বলে দিলেন।সব রেডি করা ছিলো।শুধু নিয়ে আসবে।

পুতুলকে ওটিতে নেওয়া হলো।অর্পণের ভয়ে হাত,পা কাঁপছে।তার সাদা গেঞ্জিতে পুতুলের রক্ত।তার আরো সর্তক থাকা উচিত ছিলো।তার জন্যই পুতুল এত কষ্ট পাচ্ছে।ওটির ভেতর থেকে পুতুলের চিতকার শব্দ ভেসে আসছে।অর্পণ পড়ে যেতে নিলেই অসীম তালুকদার ছেলেকে ধরে ফেলেন।বউয়ের ফোন পেয়ে বাসা না গিয়ে সোজা হাসপাতালে আসছেন।এখন পরিস্থিতি ভালো হলেই হয়।মা এবং সন্তান দুইজনই সুস্থ থাকুক।

১৬১.
আল্লাহ্‌ অনেক খুশী হলে মানুষকে কি উপহার দেয় জানেন? কন্যা সন্তান!হ্যাঁ এটাই ইসলাম এটাই সত্য।

কন্যা সন্তান হলো একজন বাবার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার।আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি একজন কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছি।
অর্পণের হাতের ওপর তার মেয়ে।তার দিকে তাকিয়ে অর্পণের কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে।

ওটিতে তার আগমনে জানিয়ে দিয়েছে গলায় ফাটিয়ে চিতকার করে।যখন ডাক্তার তার কান্না বন্ধ শুনে।পিঠের মধ্যে হালকা থাপ্পড় দেয়।এরপর কান্না আর বন্ধ হওয়ার নাম নেই।তাঁকে পরিষ্কার করে তোয়ালে করে বাবা কাছে দিতেই সে একদম চুপ।বাবা-র কোল সে ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে।তাই তোও কান্না বন্ধ করে একদম শান্ত বাচ্চা হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে হেঁসে দিয়েছে।মেয়ের ওই হাসিতে অর্পণ কেঁদে ওঠে।মেয়ের কপালে চুমু বসিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

আম্মু দেখোও।আমার আরেকটা মা হেসে গেছে।আমাদের ভালোবাসার অংশ।আমার রাজকন্যা।আল্লাহ কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।তিনি আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে সুস্থ রেখেছেন।

রাবেয়া নাতনীর মুখে দিকে তাকিয়ে বলল,

মাশা-আল্লাহ।বাপকা বেটি।একদম বাপের কোলে এসেই শান্ত।আর দেখতেও একদম তোর মতো হয়েছে।অর্পণ মায়ের কথা শুনে তাকাতেই রাবেয়া মাথা নাড়িয়ে বলল।

হুম তোর কার্বন কপি।একদম বাবা-র মুখের আদলেই তার তৈরি।আমি তাঁকে দেখেই প্রথমে অবাক হলেও এখন ভালো লাগছে। এরজন্যই পুতুল বাবুকে পেটে নিয়ে তোমাকে দিন,রাত দেখতোও।

দুই হাজার তেইশ সাল….

তন্নী,অন্তর,তন্ময় তাদের সাথে দিহান সাহেব,এবং জেনিফা বাংলাদেশে এসেছে।কোভিট নাইনটি সময় যে বিপদ তাদের ওপর দিয়ে গেছে।এখন আলহামদুলিল্লাহ সবাই সুস্থ আছে।আর আজ নিজের পরিবারকে দেখতে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে।রাত পোয়ালেই আকাশে চাঁদের রাত।তারপরই ঈদ।এবার ঈদ নিজের পরিবার সাথে মানাতে আসছে।

তালুকদার বাড়িতে খুশির আমেজ বইছে।পুতুল ফজরের নামাজ পড়ে রান্না ঘরে রান্না করতে ব্যাস্ত।শ্বাশুড়ি মা তার সাথে রান্না ঘরে রয়েছে।অসীম তালুকদার গোসলে গেছেন।ছেলেরা একসাথে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে যাবেন।আর তার জনাবের কোনো খবর নেই কোথায় গেছে জানা নেই।আর এই বাঁদর মেয়ের বাঁদরামি কমে না।পুরো বাড়ির মধ্যে তার পায়ের কদম চলবেই।সিঁড়িতে হাঁটতে গিয়ে একশ একটা ব্যাথা পাবে।আর বাপের কাছে নালিশ থাকবে।দাদু ভাইয়ের বাড়ি ভাল্লা না।তাকে দুঃখ দিয়েছে।এখন নবাবের বেটি কোথায় আছে কে জানে?

তন্ময় গোসল সেরে কেবল রুমে ঢুকেছে।কোমড়ে তোয়ালে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করছে।এমন সময় দরজা ঠেলে তার ঘরে পারিসা আসে।
খাটে বসে আঙুল গুনতে গুনতে কিসের হিসেব করতে লাগল তন্ময় খেয়াল করেনি।কিন্তু তারপর যা হলো তন্ময় শেষ।পারিসা তার কোমড় থেকে তোয়ালে টান দিতেই সেটা খুলে নিচে পড়ে গেলো।আর তন্ময় চিতকার করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলল।

পারিসা ততখনে নিজের কাজ করে তন্ময়ের ঘরের বাহিরে দৌড়।তন্ময় চিতকার দিয়ে একদম স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পারিসা তখনো হাসছে।আবার দরজা বাহিরে দাঁড়িয়ে
ভেতরে উঁকি মে*রে বলল,

তন্ময় ভাইয়ের পক্ষী দেখে ফেলেছি।পারিসা কথাটা ব’লেই নিজের ঘরে দৌড়।

পারিসার কথায় তন্ময় শেষ।লজ্জায় বেচারার মুখটা চুপসে গেলো।ইতিমধ্যে তন্নী কি হয়েছে,কি হয়েছে ব’লে ছেলের রুমে আসতেই দেখে ছেলে হাফ প্যান্ট পরে খাটে বসে কাদঁছে।

কি হয়েছে আমার আব্বু?কাঁদছো কেনো?

তন্ময় শরমে মা’কেও কিছু বলতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে।তন্নী ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে কান্না বন্ধ করতে বলল।কিন্তু তার কান্না বন্ধ হওয়ার নামই নেই।এই ঈদের দিনে এই রকম করে কেউ কাঁদে।

পারিসা তালুকদার পরী।অর্পণ আর পুতুলের ভালোবাসার অংশ।
তন্ময় চিতকার শুনে পুতুল বুঝে গেছে এই মেয়ে কিছু তোও অবশ্যই করেছে।পরশু দিন থেকে ছেলেটা আসছে পর থেকেই তার পিছে লাগছে।পুতুল নিজের রুমে যাচ্ছে।আজকে এর পিঠে থাপ্পড় একটা লাগিয়ে ছাড়বে।সবার আদরে একটা বাঁদর হচ্ছে।

পুরো রুম তন্ন তন্ন করেও মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে বাগানের দিকে গেলো।

বাহ।কি সুন্দর দৃশ্য মেয়ে একদম সাধু সেজে বাবার কোলে চড়ে বসেছে।

এই যে নিচে নামেন।তন্ময়েয় রুমে গিয়ে কি করেছেন?ওহ এমনই এমনই চিতকার দেয় নিই।নিশ্চয়ই কিছু করেছো।সত্যি করে বল।কি করেছো?পুতুলের কথায় মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের না করলেও বাবার জিজ্ঞেস করতেই রুমের ঘটনা ব’লে দিল।মেয়ের কান্ডে অর্পণ শব্দ করে হেঁসে উঠে।আর পুতুল রেগেমেগে আগুন।

আম্মু এসব কেনোও করেছো?সে তোমার বড় ভাই হয়।ভাইয়ের সাথে এসব কেউ করে।

তাহলে সে আমার সাথে কথা কয় না কেন?

অর্পণ মেয়ের কথাটার মানে বুঝতে পারে।বাড়ির সবাই তার সাথে কথা ব’লে এমনকি তন্নি পুরো পরিবারও।কিন্তু তন্ময় বাদে।সে পারিসা সাথে কথা ব’লে না।আর পারিসা তার এটেশন চায়।যার জন্য তাঁকে বিরক্ত করে।

পুতুল রেগে আছে।তাই মেয়েকে নিয়ে চুপচাপ সরে যেতে নিলেই পুতুল,বাপ বেটিকে ইচ্ছে মতোও ঝাড়ে।

আরোও লাই দেও।মেয়ে আদরে আদরে বাঁদর হয়েছে।আমার কথা শুনেনা না।ওর মা আমি নই।ওই আমার মা আর আমি তার মেয়ে।সে আমার পেট থেকে হয়নি।আমি তার পেট থেকে হয়েছি।মেয়ে আমার কথা শুনেনা।মেয়ের বাপেও আমার কথা শুনেনা।একদিন এই মেয়ে বড় কিছু করে ফেললে বুঝবে মজা।থাকোও তুমি তোমার মেয়ে নিয়ে। পারিসা মায়ের কথায় বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে বসে রইলো।পুতুল চলে যেতেই পারিসা মাথা তুলে।

আব্বা।আম্মু রাগ করছে?

হুম খুব রাগ করছে।

আচ্ছা,আর দুষ্টমি করবো না।এই যে তোমার কানে হাত দিলাম।আর করবো না।

অর্পণ বাড়ির সকল পুরুষদের সাথে নামাজ পড়তে ঈদগাহে গেছে।তন্ময়ের মান ভাঙ্গাতে খুব কষ্ট হয়েছে।মেয়েটার জন্য ছেলেটার ঈদ মাটি হোক সে চায় না।কষ্ট হলে-ও অবশেষে হেসেছে।তার পাঞ্জাবি পকেটে কচকচে পাঁচ টাকার নোট অর্পণ দিয়েছে।এটা তার ঈদের সালামী।

পুতুল চুপচাপ মেয়েকে গোসল করিয়ে নতুন ড্রেস পরিয়ে দিতে লাগল।পারিসা ঈদে নতুন
ড্রেস পেয়ে খুব খুশি।এই ড্রেস তার নানাভাই দিয়েছে।কিন্তু মায়ের মন খারাপ দেখে তারও মন খারাপ হয়ে গেলো।মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু বসিয়ে বলল,

আম্মু আর করবো না।

আপনি প্রত্যেকবার এভাবে বলেন।আর সেই একই কাজ বারবার করেন।কিন্তু আজ আপনার কথায় আমার মন গলছে না।

পুতুল মেয়েকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিতে চাইলেও পারিসা সরলো না।মা’কে শক্ত করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখল।পুতুলের মন নরম না হওয়া পারিসা কান্না করে দিল।চোখের পানি নাকের পানি এক করে বলল,

তুমি কথা না ব’লে নানু বাড়ি চলে যাব।আর আসব না।

পুতুল তবুও চুপ।এবার পারিসা মা’কে ছেড়ে উল্টো দিকে ফিরে কাঁদতে লাগে।এই ঈদের দিনে তার মেয়েটা কাঁদুক সে মা হিসেবে এটা চায় না।তাই মেয়েকে বুকে টেনে আদর করতে করতে বলল,

এবারের মতোও মাফ করে দিলাম।আর কখনো এমন কাজ করবেনা।যার ধারায় অন্য মানুষ কষ্ট পায়।মনে থাকবে।পারিসা মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলল।

পুতুল মেয়েকে তৈরি করে নিজেও গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিলো।পারিসার দাদুজান আসতেই তার কোলটা দখল করে বসলো।দাদাজান তাকে খুশি হয়ে এক হাজার টাকার নোট দিলো।কিন্তু সে সেটা নিলো না।তার পাখি ওয়ালা টাকা লাগবে।অসীম তালুকদার এখন চিন্তায় পড়লেন।সে পাখি ওয়ালা টাকা কই পাবে?এই টাকা তোও তার কাছে নেই।

রাবেয়া পারিসাকে বলল,

চলো দাদু ভাই আমরা সেমাই খাবোও।তোমার ফেবারিট খাবার তৈরি হয়েছে।

না।আমি গোশত খাব।হাম্বা খাব।

খাবে তোও।আগে মিষ্টি পরে ঝাল খেয়েও।

রাবেয়া নাতীকে কোলে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিলো।

বিকেলে তার নানু বাড়িতে যাবে।তার নানা ভাই তাকে পাখি ওয়ালা টাকা দিবে।এরমধ্যে অর্পণ পারিসার নানা বাড়ির সবাইকে নিয়ে হাজির হলো।তার সাথে তন্ময় গিয়েছিল।এখন ফিরে এসেছে।স্বাধীনকে দেখতেই নানা ভাই ব’লে চিৎকার শুরু করে।রাবেয়া কোল থেকে নেমে দৌড়।এক দৌড়ে নানা ভাইয়ের কোলে।নানা ভাইয়ের পাকা লাল দাঁড়িতে হাত দিয়ে টেনে ধরে বলল,

নানু ভাই আমার পাখি ওয়ালা টাকা দেও।আমি চকলেট খাব।চকলেট মজা মজা।

পাকাবুড়ি কথায় সবাই হেসে উঠে।নানার থেকে কচকচে পাখি ওয়ালা টাকা নিয়ে দুই মামার কোলে গেলো।তাদের কাছে টাকা না চেয়ে সোজা পাঞ্জাবি পকেটে হাত ঢুকিয়ে পাখি ওয়ালা টাকা নিয়ে নিজের জামার মধ্যে রাখল।তার মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি।কারণ সে জানে তার মামারা তার জন্য পাখি ওয়ালা টাকা সব সময় পকেটে রাখে।

মেয়ের হাসিতেই অর্পনের কলিজা ঠান্ডা। পারিসা বাবাকে দেখে বাবার কোলে চড়ে বসে।

আব্বু আমার পাখি ওয়ালা টাকা।

তুমি খুশি?

হুম,খুব?

অর্পণ পাঞ্জাবি পকেট থেকে পাখি ওয়ালা নতুন কচকচে টাকার বান্ডিল বের করে মেয়ে জামার মধ্যে রাখল।পারিসা পাখি ওয়ালা টাকা দেখে খুশি হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

আম্মু তুমি পঁচা।আমার আব্বু ভালা।অর্পনের গালে চুমু খেয়ে সে হেসে উঠে।মেয়ের কথায় অর্পন সহ পুরো পরিবার হাসে।পুতুল হেসে এগিয়ে আসে অর্পনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

হুম আপনার আব্বু ভালো।আর আমি পঁচা হয়েছে।খুশি।

পারিসা মাথা নাড়িয়ে বলল,না আমার আম্মু ভালো।
পুতুল মেয়ের একগালে চুমু বসিয়ে দিতেই অর্পণ পারিসার অপর গালে চুমু বসিয়ে দিলো।সেই মুহূর্তে একটা সুন্দর ছবি তোলা হলো।একটা সুন্দর পরিবার।সুখী পরিবার।তাদের ভালোবাসার ঘরে পারিসা একটা জান্নাতের টুকরো।

নিঃসন্দেহে কন্যা সন্তান একটি পরিবারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। তাই আপনার কন্যা সন্তানকে আগলে রাখুন।

(সমাপ্ত)

চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৫৮+৫৯

0

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৮
১৫৫.
পুতুল এই প্রথমবার তালুকদার বাড়ি চৌকাঠে পা রেখেছে।শ্বাশুড়ি মা তাকে সাধরে ঘরে তুলে নিতে চাইলে অর্পণ,পুতুলের হাত ধরে আ*টকে দিল!বলল,

আমার বউ।আমি বাড়িতে নিয়ে ঢুকবো।অর্পন কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে পুতুলকে কোলে তুলে চৌকাঠ পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।এইদিকে এতো মানুষের সামনে তাকে কোলে নেওয়া লজ্জা পেয়ে স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে।অর্পন বউকে নরম সোফায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে।রাবেয়া ছেলে এবং ছেলের বউকে মিষ্টি মুখ করায়।অর্পণের নানা বাড়ির লোকেরা সবাই এসেছে।তার নানি হুইল চেয়ারটায় বসে আছেন।পুতুল তাদের সবাইকে মুখে সালাম দিলো।পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে নিই।আত্মীয় স্বজনেরা নতুন বউয়ের মুখ দেখে বেশ প্রশংসা করলো।ভাইয়ের বিয়েতে তন্নী তার স্বামীসহ নিজের শ্বশুর বাড়ি সবাইকে নিয়ে এসেছে।সময়ের সাথে স্বামী এবং শ্বাশুড়ির মাঝে বেশ পরির্বতন এসেছে।তাদের আগের রাগ ডাকটা নেই।তন্নী ছেলের বয়স পাঁচ বছর চলছে।ছোট ছেলে পুতুলের কোলে চড়ে বসেছে নামার নাম নেই।এইদিকে জামাই মশাই তন্নীর ছেলের পিঠে চিমটি কাটে।মামা,ভাগ্নে একসাথে ইশারায় কথা বলছে।

অর্পণ তার বউয়ের কোল থেকে নামতে ব’লে কিন্তু তন্নী ছেলেও কম দূষ্টু নয়।মামাকে রাগাতে মাথা নাড়িয়ে না করে মামী গলা জড়িয়ে ধরে গালে গাপুসগুপুস কয়েকটা চুমু খেয়ে বসে।এগুলো অর্পণ দেখে দাঁত খটমট করে তাকিয়ে মনে মনে বিরবির করে বলল,

ওরে শালা,বউ আমার আর চুমু খাও তুমি।দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।অর্পণ তন্নী ছেলের কানের সামনে গিয়ে বলল,

মামা তন্ময়।হবু শ্বাশুড়িকে এত চুমু খেতে নেই।এতে আমার মেয়ের আদরের ভাগটা কম পরে যাবে।

তন্ময় কপাল কুঁচকে বলল,কেন,তোমার মেয়ের আদরের ভাগ কমবে পরবে কেন?

আরে তোকে ভবিষ্যতে আমার মেয়ে জামাই বানাবো।এত আদর হবু শ্বাশুড়িকে করলে তোমার শ্বশুরের কলিজা কাপেঁ বাপ।তাড়াতাড়ি নাম।আমি আমার বউকে নিয়ে কেটে পড়ি।যদি বউ নিয়ে ঘরে যেতে না দিস।আমার মেয়েকে তোর মতো ছেলের কাছে বিয়ে দিতাম না।

মামা,ভাগ্নের ফিসফিস করে কথা বলা দেখে তন্নী এগিয়ে আসে।

কি’রে মামা ভাগ্নে কি এত ফিসফিস করে কথা বলিস?আমাদের কেউ বল।

তন্ময় গালে হাত দিয়ে ভাবুকের মতো করে বলল,

তোমাকে বলা যাবেনা।এটা মামা ভাগ্নের সিক্রেট।

ছেলের কথায় তন্নী কি বলবে বুঝতে পারলোনা?ছেলেকে টেনে ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,আব্বু এবার নেমে এসো।মামা-মামীকে ঘরে যেতে হবে।আপনি আমার সাথে নিজ ঘরে তাড়াতাড়ি আসুন।রাত কম হয়নি।ঘুমাতে হবে।তন্ময় চলে যাওয়ার সময় মামার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কিছু ব’লে চলে যায়।

রাত তখন বারোটা পুতুলকে ঘরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।কিছুখন পর অর্পণ রুমে প্রবেশ করে।মাথায় পাগড়ি খুলে নিজের রমনীর পাশে বসে।নরম গলায় ব’লে উঠে ধন্যবাদ আমাকে ভালোবেসে আমার জীবনে আসার জন্য।আমাকে এতটা আপন ভাবার জন্য।আমার জীবনে এত সুখ শুধু তোমারই জন্য।আমার ভালোবাসা শুধু আমার আদূরনী বউয়ের জন্য।আজ এই পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য চলো দুইজন মিলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ি।স্বামীর কথায় পুতুল মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।স্বামীর হাতে হাত রেখে ওয়াশরুমের দরজা অবধি গেলো।তাকে ফ্রেশ হতে ব’লে অর্পণ বাহিরে রইলো।পুতুল চলে যেতেই অর্পণ গায়ের পোশাক চেঞ্জ করে নিলো।অর্পণ তৈরি হতেই পুতুল ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বের হয়।গায়ে কোনো সাজ্জসজ্জা নেই।একদম সিগ্ধতায় ঘেরা।

পুতুল দুইজনের জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।অর্পন ওযু করে পুতুলের সামনে দাঁড়িয়ে যায় নামাযের জন্য।আর পুতুল স্বামীর পিছনে দাঁড়িয়ে যায়।দুইজনই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিলো।আল্লাহ দরবারে হাত তুলে মোনাজাতে লাখ লাখ শুকরিয়া করলো।

১৫৬.
আকাশ জুড়ে বিশাল তারাদের মেলা বসেছে। সারা আকাশটা জুড়ে তারা জ্বলজ্বল করছে।তাদের মনে হয়তো নতুন সুখ পাখির আগমন ঘটেছে।অর্পণের মতো করে কি তাদের মনেও কেউ কড়া নাড়ছে।যা সয়ণে স্বপ্নে মনের জাগরণে তার প্রিয় মানুষের ছবি একে যায়।আজ চিতকার করে বলতেই চাই।হে আকাশ,হে বাতাস,হে মাটি তোমরা দেখে যাও।আমার হ্রদয় শুধু তার কথা ব’লে।তাঁকে ভালোবাসে আমার এই হ্রদয়।পুতুলকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

আজ আমি পূর্ণ্য পুতুল।তোমায় ভালোবেসে আমি আমাকে তোমার মাঝে সেই কবেই হারিয়ে ফেলেছি।আজ আমি সত্যি খুশি।তোমার স্বপ্ন পূরণ করা তোমার মুখের কথা বলা সবটা আমি ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।আমার ভালোবাসা আজ আমার ঘরে।তার ছোঁয়ায় পূর্ণ হোক আমার জীবন।অর্পন,পুতুলকে কোলে তুলে বলল,

সো মিসেস আর ইউ রেডি।পুতুল লজ্জা পেয়ে স্বামীর বুকে মুখটা লুকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।পুতুলের কাজে অর্পন শব্দ করে হেঁসে এগিয়ে চললো নতুন দিনের সূচনার জন্য।

তন্ময় নিজের রুমে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।তন্নী ছেলেকে টেনে শুয়াতেই সে আবার উঠে বসে থাকে।

কি হলো?ঘুমাচ্ছ না কেন?

মামার কাছে যাব।

কি?এত রাতে মামার কাছে যাবে মানে।

মামা ব’লেছে আমায় বউ দিবে।কিন্তু আমায় বউ না দিয়ে সেই ঘরে নতুন বউকে নিয়ে আমার মুখের ওপর দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিয়েছে।

তন্নী ছেলের সামনে বসে বলল,

তোমার মামা কাল সকালে উঠলে তার থেকে জেনে নিও।সে এখন ঘুমাচ্ছে।তুমিও ঘুমাও।

না ঘুমাবো না।আগে মামাকে বলো আমার বউ এনে দিতে।

তন্ময় শেষবারের মতো করে বলছি।এবার কথা না শুনলে খুব বকবো।পরে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবে না।তন্ময় মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ে।যার মানে আম্মু বকা দিবে কেন বলল,সে রাগ করেছে।ছেলের রাগ দেখে তন্নী পিছন থেকে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে পরে।

তন্নী,তন্ময় ঘুমিয়ে পড়তেই অন্তর রুমে প্রবেশ করে চুপিচুপি।তন্নীর পিছনে সুয়ে মা,ছেলেকে একসাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।এইদিকে স্বামীই চোখ বুঝতেই তন্নী চোখ মেলে মুচকি হেসে আবার চোখ দুটো বুঝে নিলো।কোনো শব্দ করলো না।

রাত্রি কেটে ভোর হলো সূর্যের নতুন আলোর ছোঁয়ায়,সেই আলোর ছোঁয়ায় শুরু হলো নতুন দিন।পুতুল ফজরের নামাজ পড়ে নিয়েছে।অর্পণ নামাজ পড়ে রুমে প্রবেশ করে পুতুলের হাতটা টেনে বিছানায় বসিয়ে বলল,

আমার জন্য সারারাত ঘুমাতে পারো নিই।এখন একটু ঘুমিয়ে নেও।পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বলল।কিন্তু অর্পণ বউয়ের কথায় পাত্তা দিলো না।বউয়ের ভেজা চুলের ভাজে হাত বুলিয়ে দিতেই পুতুল আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।পুতুল সুয়ে পড়তেই।অর্পন বউয়ের পাশে সুয়ে পরে।

টেবিলের ওপর অনেক রকম নাস্তা দেওয়া হয়েছে।তন্ময় সেগুলো ছুয়ে দেখছে না।তন্নী ছেলের জন্য প্লেটে নাস্তা সাজিয়ে প্লেট এগিয়ে দিতেই সে বলল,

খাব না।

কেনো?

রাগ করেছি।

খাবার সাথে রাগ করেছো।

না।

তাহলে।

মামার সাথে আর তোমার সাথে।

ছেলের রাগের কারণ বুঝতে পেরে তন্নী ছেলের সামনে একটা গিফটের প্যাকেট রাখে।

তন্ময় গিফটের প্যাকেট দেখে খুশি হয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো।

দরজায় কেউ কড়া নাড়তেই পুতুলের ঘুম ভেঙে যায়।ঘড়ি দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা এগারোটা বেজে গেছে।পুতুল তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে কারো বাঁধনের মধ্যে নিজেকে পেলো।পুতুল নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করতেই অর্পণের ঘুমটা ভেঙে যায়।সে চোখ দুটো বুঝে থেকেই বলল,

বউ ডিস্টার্ব করে না।আমি ঘুমাচ্ছি।

আপনি ঘুমাচ্ছেন ভালো কথা আমাকে ছাড়ুন।কত বেলা হয়ে গেছে।আল্লাহ বাড়ির সবাই কি ভাববে?এত বেলা করে বাড়ির বউ ঘুমায়।

কেউ কিছু ভাববে না।কারণ সবাই জানে কাল আমাদের বিয়ে হয়েছে।আর স্বামী,স্ত্রী একান্ত সময় কাটানোর পর নিশ্চয়ই এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।এটা স্বাভাবিক।

দূর,আপনি আমাকে ছাড়ুন।আমি উঠবো।অর্পণ আরো কিছু বলার আগেই দরজায় ঠকঠকের শব্দ হলো।অর্পণ কপাল কুঁচকে বলল,

শালার জামাই।শ্বশুরের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাশ।অর্পণ পুতুলকে ছেড়ে দরজাটা খুলে দাড়াতেই।সুরসুর করে তন্ময় রুমে মধ্যে চলে আসে।খাটের ওপর পা দু’টো ঝুলিয়ে বসলো।

পুতুল ভেবেছিল।বড় কেউ এসেছে,মাথায় তাড়াতাড়ি কাপড় টেনে বসতেই তন্ময়ের প্রবেশ দেখে।

কি ব্যাপার আপনি এত সকালে আমার রুমে কেন?তন্নী এই তন্নী।

তন্নীর সাড়া শব্দ না পেয়ে বিরবির করে বলল,

এই তন্নীর বাচ্চাটা কই গেলো?

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৯
১৫৬
দেখতে দেখতে অর্পণ আর পুতুলের সংসার সাত বছরে পরে গেলো।পুতুল নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে যেমন ব্যাস্ত তেমনি সংসারের কাজে যতটুকু পারে সময় দেয়।এতে তার শ্বাশুড়ি মা তাকে কখনোই কিছু ব’লে না।নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস দিতে ব’লেছেন।পুতুল কপাল করে মনের মতো ঘর,এবং বর দুটোই পেয়েছে।সবাই তাকে পেয়ে যেমন সন্তুষ্ট ঠিক তেমনই সে নিজেকে খুব সুভাগ্যবতী মনে করে।এমন একটা পরিবার কয়জনের ভাগ্যে জুটে।অর্পণ নিজের রাজনীতির নিয়ে পড়ে আছে।হোম মিনিস্টার অর্পনের নানুজান তার কাজ থেকে নিজ উদ্যোগে ইস্তফা নিয়েছেন।বর্তমানে বউ নিয়ে হজ্জ করতে মক্কায় যাচ্ছেন।এখন সব সময় নামাজ কালাম নিয়ে পরে থাকেন।আল্লাহ ইবাদতে মশগুল থাকতে যান।

হাসপাতালে রোগীগুলোকে দেখতে কয়েকজন ডাক্তার মিলে পুরো দুই তলার বেশ কয়েকটা ভবন পরিদর্শন করেন।পুতুল গলায় স্টেথোস্কোপ সব রোগীর সাথে কথা বলে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে।রিপোর্টগুলো চেক করে একে অপর ডাক্তারের সাথে কথা ব’লে।সিস্টার,নার্সকে ডেকে কখন কোন সময়ে ওষুধ দিতে হবে তা বিস্তারিত বুঝিয়ে দেয়।

নিজের চেম্বারের বসে ফাইলপত্রগুলো চেক করে কিছু কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে থাকে।এমন সময় কেবিনে আন্নাফ চৌধুরী পারমিশন নিয়ে রুমে প্রবেশ করেন।পুতুল দাঁড়িয়ে যায়।সুনামধন্য নাম করা একজন ডাক্তার সাথে কথা ব’লে ভালো লাগলো।মানুষটা গম্ভীর চুপচাপের হলেও ব্যবহার,শিক্ষা সবকিছুতেই ভদ্রতা বজায় রেখেছে।এমনকি পুতুলকে ঠিকঠাক নোটিশ না করে নিজের হাতের ঘড়ি দিকে তাকিয়ে বলল,

আজকে জরুরি বৈঠক বসবে।সেখানে সব ডাক্তার উপস্থিত থাকবে।

সময়টা দুই হাজার বিশ সাল বিদেশের মাটিতে ভয়ংকর রোগের আগমন ঘটেছে।নাম তার কোভিট নাইটিন।এই রোগ সাড়া বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।এমনকি নিজ দেশের মাটিতে এই রোগের রোগী দেখা না-কি মিলছে।পুতুল মিটিং রুমে মনিটরের দিকে তাকিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।সবাইকে সর্তক থাকতে বলা হচ্ছে।হাতে সিনিটাইজড করতে এবং মুখে মার্কস ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে।আর প্রয়োজন ব্যাতীত ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করছে।দেশের কিছু জায়গায় লকডাউন ঘোষণা হয়েছে।সব কর্মজীবি মানুষ এখন ঘরে বসা।চাকরি নেই পেট কি করে চলবে তাদের জানা নেই।অনেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।আবার অনেকে না খেয়ে মরতে বসেছে।মাস শেষে ঘর ভাড়ার টাকাগুলো জমা হচ্ছে।ঋণ পরিশোধ করার জন্য উর্পাজনের সুযোগ নেই।সবার কর্মস্থল বন্ধ।কিন্তু ডাক্তারদের কোনো ছুটি নেই।দিন, রাত হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে।চারদিকে মানুষের আহাজারিতে পুতুলের হ্রদয় ভারাক্রান্ত।নিজের চোখের সামনে এত মানুষের মৃত্যু দেখছে।যারা করোনায় মারা গেছে।তাদের লাশটা নিতেও পরিবার কেউ এগিয়ে আসছে না।তাদের মনে ভয় ঢুকেছে।যদি করোনা হওয়া ব্যাক্তির জন্য সবার বিপদ হয়।সেই ভয়ে কেউ এগিয়ে না আসায় লাশগুলো বে আরিশ লাশ হিসেবে একসাথে মাটিতে দাফন করছে কর্তিপক্ষ।পুতুল অর্পণের সাথে ফোনে কথা ব’লে বারবার সবাইকে নিয়ে সাবধানে থাকতে বলছে।পুতুল এই কোভিট নাইটিন জন্য বাড়িতে ফিরতে পারছে না।হাসপাতালে চব্বিশ ঘণ্টা ধরে থাকতে হচ্ছে। অর্পণ পুতুলকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে।রোগীর সেবায় নিয়োজিত থেকে না আবার নিজের কোনো বিপদ বাড়ায়।অর্পণ বেশ কয়েকবার পুতুলের সাথে দেখা করতে চাইলেই পুতুল সরাসরি না করে দেয়।এই মুহূর্তে তার কাছে কেউ আসুক সেটা সে চায় না।সে তার পরিবারকে জেনে-বুঝে বিপদে ফেলতে পারেনা।অর্পণের সাথে বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে তর্কাতর্কি হয়।অর্পণ মন খারাপ করে বসে থাকে।অর্পণের খারাপ লাগাটা বুঝতে পারে।কিন্তু কি করবে পুতুল? নিজের পরিবার এবং নিজের পেশা কোনোটাই সে তার জীবন থেকে ছুড়ে ফেলতে পারে না।ফোনটা ডিসকানেকটেড করে পেটে হাত রেখে পুতুল নিরবে কেঁদে ওঠে।তার অনাগত সন্তান আসতে চলেছে।কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যেখানে কাউকে কিছু বলার সাহস হয়নি।অর্পণ তার সন্তানের কথা জানতে পারলে কখনোই এত বড় রিস্কের মধ্যে থাকতে দিবে না।সে যে করেই হোক এখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাবে।পুতুল নিরুপায়।তাই নিজের ক্যারিয়ারকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।নিজের পরিবারকে এমনকি নিজের স্বামীর থেকে নিজের অনাগত সন্তানের বিষয়টা লুকিয়ে রাখলো।এই দিকে মিলন,সাজুর পড়াশোনা বন্ধ লোক ডাউনের জন্য।তাদের অবসর সময় কা*টাতে কৃষি কাজে হাত লাগিয়েছে।পুকুরের মাছ চাষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে কাজ করছে।স্বাধীন ছেলেদের কাজে আগ্রহ দেখে খুশি হলো।সময় কা*টানোর জন্য হয়তো এই মুহূর্তে এটাই বেস্ট অপশন।স্বাধীনের ছোট ছেলে রিফাত হাফেজি পড়া পড়তে ইন্ডিয়া গেছে এক বছর হলো।তার পড়া শেষ হতে এখন কয়েকবছর বাকি আছে।লক ডাউনের জন্য সেও ইন্ডিয়ার মাটিতে পড়ে আছে।

১৫৭.
অপর্ণ নিজের গ্রামে থেকে পুরো এলাকায় লক ডাউন জারি রেখেছে।অচেনা কেউ গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেনা।আর গ্রাম ছেড়ে কেউ বের হতে পারবে না।গরিবদের জন্য খাবার,পানি,চিকিৎসা ব্যবস্থা রেখেছে।নিজের রাজনীতির প্রয়োজনী কাজ কর্ম সব এখন ঘরে বসেই সাড়ছে।অসীম তালুকদার এখন বিজনেসের কাজগুলো ছেলের থেকে নিয়ে নিজেই ঘরে বসে করেন।যাতে ছেলের ওপর প্রেশার কম পরে।আর নিজেরও সময়টাও কে*টে যায়।রাবেয়া,পুতুল এরা কেউ বাড়িতে আসে না।দুইজন দুই হাসপাতালে রয়েছে।বাড়িতে কোনো কাজের লোক রাখেনি। সবাইকে অগ্রীম বেতন দিয়ে কাজের জন্য লম্বা ছুটি দিয়েছে।বাপ,ছেলে ঘরে বসে নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত।সাফিন তালুকদার খুলনা রয়েছে।মাসুদা বেগম তার বাবার বাড়িতে আ*টকা পড়েছেন।এই দিকে মেয়ে এবং মেয়ে জামাই দুইজনের করোনা ধরা পড়ছে।তন্ময় তার দাদা,দাদু কাছে থাকে।তাকে মা,বাবার কাছে যেতে দেয় না।তন্ময় মা,বাবার কাছে যাওয়ার জন্য কান্নাকা*টি করে।খাবার খেতে চায় না।তাঁকে নিয়ে দিহান সাহেব এবং তার বউ জেনিফার চিন্তায় আছেন।তন্ময় দাদা,দাদুর নামে নালিশ করে অর্পণের কাছে।তাকে মামার কাছে নিয়ে যেতে ব’লে।কিন্তু লক ডাউনের জন্য অর্পণ তাকে নিয়ে যেতে পারেনি।এরজন্য মামুর ওপর সে বড্ড অভিমান করেছে।ফোন দিয়ে মামাকে ইচ্ছে করে লাইনে রাখে।কিন্তু কথা বলে না।ভাগ্নের কর্মকান্ড দেখে অর্পণ চুপচাপ তার সকল অভিযোগ মেনে নেয়।তার হাতেও এখন কিছু নেই।মনে মনে আল্লাহ কাছে দোয়া করে।এই পরিস্থিতি কে*টে যাক।সব কিছু আবার আগের মতো হয়ে যাক।চারদিকে মানুষের কষ্টগুলো তাকে পীড়া দিচ্ছে।একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার কেউ নেই।

সময় যত যাচ্ছে পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে।মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে চলছে।মানুষের ভেতরে একটা আতঙ্ক ঢুকে গেছে।এইদিকে পুতুলের আড়াই মাসের পেটটা আর ছোট নেই।তার পেটের মাঝে ছোট প্রাণটা আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে।তার হাঁটাচলা বেশ ধীর গতিতে চলে।বলতে গেলে নিজেকে পোটেক্ট রাখার চেষ্টা।কোনো খাবার ঠিক মতো মুখে তুলতে পারেনা।যা-ই মুখের সামনে নেয়।আশটা আশটা গন্ধে তার ঘা গুলিয়ে আসে।
এইদিকে অর্পণ তাকে বারবার বাড়িতে ফিরে আসতে ব’লে।কিন্তু নিজের স্বামীর ভয়ে সে বাড়িতে পা রাখে না।কারণ তার স্বামী তাদের অনাগত সন্তানের কথা জানলেই কিছুতেই বাড়ির বাহিরে পা রাখতে দিবেনা।

রাবেয়া নিজের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আরেক হাসপাতালে আসে।যেখানে পুতুল কাজ করে।তার হাতে পুতুলের রির্পোট রয়েছে।যেখানে উল্লেখ্য করা হয়েছে।পুতুল
প্রেগন্যান্ট।পুতুলের ছয় মাস চলছে।

তার দাদু ভাই আসছে অথচ মেয়েটা তাদের একবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলো না।কিন্তু ঊনি আজকে পণ করে এসেছেন। পুতুলকে ইচ্ছে মতো বকা দিবেন।মেয়েটার সাহস কি করে হয়?এই ভংয়কর কাজটা করার।

নতুন কুড়ি আর কচি পাতার মিষ্টি সবুজ রঙে ভরপুর হয়ে উঠছে বাগান।ছোট্ট পরিসরে ওপর করা এই বাগানটা।কিন্তু শান্তির পরিসরটা অনেকটা বেশি।হাসপাতালের এই কণারটাতে পুতুলের শান্তি প্রিয় জায়গায়। ওর একঘেয়েমী লাগাটা অশান্ত মনের ঠান্ডা করার মতো জায়গায় এটা।পুতুলের শান্ত প্রিয় জায়গায় হঠাৎ শ্বাশুড়ি আম্মার আগমনে গলার মধ্যে মাছের কা*টাঁ আটকে গেলে যেমন হয়।ঠিক তেমনই হয়েছে তার চেহারার অবস্থা।কিন্তু পুতুলের জন্য আজ বিন্দু মাত্র মায়া হলো না।যে মেয়ে নিজের সন্তানের চাইতে নিজের ক্যারিয়ারকে ধ্যান জ্ঞান দিয়ে বসে।তাঁকে তোও আর এমনই এমনই ছেড়ে দেওয়া যায় না।

আসসালামু আলাইকুম মা।কেমন আছেন?

আমি কেমন আছি এটা জিজ্ঞেস আমাকে না করে নিজেকে কর?তুমি কি করে এটা ভাবলে এমন পরিস্থিতি এত বড় রিস্ক নেওয়ার?আর চাই হোক কোনো মা তার সন্তানের থেকে অন্য কিছুতে বেশি প্রায়োরিটি দিতে পারে না।আমি হলেও আমার সন্তানের কথা আমার কাছে সর্বপ্রথম মাথায় আসতো।বাকি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাক।তবুও আমার সন্তান ঠিক থাকুক।আমি অর্পণকে সবটা জানিয়ে দিয়েছি।এতখনে হয়তো সে খবর পেয়ে গেছে।রাবেয়ার কথায় পুতুল চমকে উঠে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নিলেই রাবেয়া পুতুলকে ধরে ফেলেন।এটা কি হচ্ছিল?

অর্পণের ফোনের স্পষ্টে পুতুলের প্রেগন্যান্ট রির্পোটের আসল কপির ছবিটি জ্বল জ্বল করছে।নিজের অনাগত সন্তান আসছে।বাবা হওয়ার অদ্ভুত অনূভুতি কাজ করছে।কিন্তু তার বউ তাকে আরো আগে কেনোও জানালো না।এই খুশির সংবাদ পাওয়ার জন্য কতটা দিন অপেক্ষা করছে।তার মুখের আদোও বুলিতে বা.বা…বাবা ডাকটা শুনতে বড্ড অথৈয্য সে।তার সন্তান আসছে।তাঁকে বাবা ডাকতে কেউ আসছে।অসীম তালুকদার ছেলের পিঠে হাত রাখতেই অর্পণ ঘুরে বাবা জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।বলল,

বাবা,তুমি দাদা ভাই হচ্ছো।আম্মু দাদিজান হচ্ছে।তোমাকে কেউ দাদা ডাকতে আমাদের এই তালুকদার বাড়িতে আসছে।তোমাদের খেলার সাথি আসছে।আমাদের নতুন মেহমানের আগমন ঘটেছে।
আমি…আমি বাবা হব।আমার… আমার পুতুল মা হচ্ছে।

ছেলের কথায় অসীম তালুকদার চমকে উঠেন।ছেলের কম্পিত শরীরের অনুভূতি বুঝিয়ে দিচ্ছে এই সন্তান তার কাছে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।আল্লাহ থেকে চেয়ে নেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।

আমি পুতুলের কাছে যাচ্ছি।তুমি গ্রামের সবাইকে জানিয়ে দেও অর্পণ তালুকদার বাবা হচ্ছে।অর্পণ ফোনটা পকেটে রেখে মুখে মার্কস লাগিয়ে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ি থেকে হাসপাতালের গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে।ছেলের খুশি দেখে অসীম তালুকদার খুশি হন।তাদের খেলা সাথি আসছে।মিষ্টি মুখ অবশ্যই হওয়া উচিত।অসীম তালুকদার পুরো গ্রামে মিষ্টিমুখ করার জন্য লেগে গেলেন।

ইয়াহু,হুড়রে।আমি মামা হচ্ছি।সাজু আমি মামা হচ্ছি রে।আমাদের নতুন মেহমান আসছে।মিলন লুঙ্গি কাচাঁ মে*রে উরাধুরা উঠোনের মধ্যে ঢোল পিঠিয়ে নাচানাচি শুরু করেছে।স্বাধীনকে অসীম তালুকদার ফোন করে সবটা জানালেন।সেই খুশির মহল রাজীব হকের বাড়িতে বসেছে।রেনুর চোখে আনন্দের অশ্রু।স্বামীর হাতটা শক্ত ধরে বলল,

তাদের পুতুল মা হচ্ছে।সেই ছোট পুতুল মা হবে।তাদের কন্যা আর ছোট নেই।বড় হয়ে গেছে।তার মাঝে আরেকটি প্রান রয়েছে।

নতুন অতিথির আগমনে পুরো গ্রামে মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে।এত এত খারাপের মাঝে এক চিলতে রোদ্দুরে দেখা অবশেষে মিলছে।

চলবে….

চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৫৫+৫৬+৫৭

0

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৫
১৪৯.
ডাক্তার রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই অর্পন ছুটে আসে।ডাক্তারের কথা অনুযায়ী পুতুলের অপারেশন করতে হবে এবং সেটা খুব শীঘ্রই।অর্পন ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে বলল,

অপারেশন কখন শুরু করবেন।

আগামীকাল রাতে অপারেশন শুরু হবে।আজ রেস্টে থাকবে।

আচ্ছা ডাক্তার আপনি আপনার কাজ করুন।আমি যদি না ওহ থাকতে পারি।আমার পরিবার থাকবে।ইনফেক্ট আজকে তাদের লন্ডনে আসার কথা।কোনো সমস্যা হলে আপনি তাদের জানাবেন।ডক্টর চলে যেতেই অর্পন মা’কে ফোন করে।

রাবেয়া জানান তারা এই মাত্র লন্ডন এয়ারপোর্টে আছে।অর্পন হাসপাতালের ঠিকানা।আর এই মুহূর্তের অবস্থানের কথা জানালো।তারা ড্রাইভার দিয়ে জিনিস পত্র অর্পনের ফ্ল্যাটে পাঠাতে ব’লে নিজেরা অন্য গাড়িতে করে হাসপাতালে রওনা হলো।

দরজা খুলে অর্পণ ভীরু পায়ে রুমে প্রবেশ করে।নিজের এত কাছে কারো নিশ্বাসের উপস্থিত পেতেই পুতুল চোখ মেলে তাকায়।হাত বাড়িয়ে স্বামী গাল ছুয়ে দিয়ে জানতে চায় সে ঠিক আছে কি না।অর্পন নিজের গাল থেকে পুতুলের হাতটা নামিয়ে শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

আমি ঠিক আছি।তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।আব্বু,আম্মু আসছে।এখন থেকে তোমার পাশে তারা থাকবে সবসময়।অর্পনের কথায় পুতুল চুপচাপ সবটা শুনতে লাগল।কোনো প্রত্তিউত্তর করে নিই।

চোখ বুঝে ঘুমাও।আমি তোমার পাশেই আছি।অর্পণের কথায় পুতুল চোখ মেলে রাখতে চাইলেও পারিনি।ঘুমের ইনজেকশন ডক্টর আরো আগেই পুশ করে দিয়েছিল।তাই না চাইতে ঘুমে তলিয়ে যায়।পুতুল ঘুমিয়ে গেলে।অর্পণ তার কপালে চুমু বসিয়ে আস্তে আস্তে হাত হালকা করে নেয়।

রুম ছেড়ে বাহিরে বের হতেই মায়ের মুখোমুখি হয়।মা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।রাবেয়া ছেলের শুকনো মুখটা দেখে ভীতু হয়ে পড়েন।ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

আমার আব্বুটার কি হয়েছে?

অর্পন মায়ের কথার উত্তর দেয়নি।বরং মায়ের কপালে দ্বিতীয় চুমু বসিয়ে বলল,

আমি বাড়িতে যাচ্ছি।কিছু প্রয়োজনী জিনিসপত্ত আনতে।তোমরা ওর পাশে বসো।

তাহলে আমিও যাই তোর সাথে।

না বাবা।তুমি মায়ের সঙ্গে থাকো।তোমার পুতুল আর মায়ের সঙ্গে থাকাটা বেশি প্রয়োজন।আমি যাব আর আসব।অসীম তালুকদারকে জড়িয়ে ধরে।কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে নিজেই হাঁটতে হাঁটতে আরাভ খান এর বর্ডিগাডদের বলল,

-চলুন!অর্পন চলে যাওয়ার পর একবার পিছন ফিরে তাকায় নিই।

ছেলের এমন কাজে রাবেয়া চিন্তিত হয়ে পড়ে।মনে মনে আল্লাহকে ডাকেন।তার সন্তানের কোনো ক্ষতি না হোক।

আরাভ এর ডেরায় অর্পণ দাঁড়িয়ে আছে।আরাভ খান পায়ের ওপর পা তুলে অর্পণকে পরক্ষ করছে।ছেলেটা তার কথা রেখেছে।

মিস্টার আরাভ খান আমি প্রস্তুত।শুট হিম।

আর ইউ শিয়র।ভেবে বলছো?

হুম।আমি আপনার কথার খেলাফ করিনি।জীবনে সব পাওয়ার আশা আকাঙ্ক্ষা হাতে মুঠোয় নিয়ে মরতে এসেছি।আমি জানি।আমি কারো সাথে কোনো অন্যায় করিনি।সব সময় চেষ্টা করেছি সবাইকে ভালো রাখার।সবাইকে নিয়ে বাঁচার।জীবনের প্রাপ্তির খাতায় কি পেয়েছি?সেইসব মনে করতে চাই না।তবে আমার লক্ষ্য আমার পরিবার কিংবা আমার ভালোবাসা মানুষটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইনি।দশের ভালো করতে এবং ভালো রাখার প্রচেষ্টায় রাজনীতির মাঠে নামি।
রাজনীতি আমার রক্তে মিশে গেছে।তাই চাইলেও ছুড়ে ফেলতে পারিনি।আজকে আমি যতটুকু করেছি।আমার জনগনের কথা চিন্তা করেই সাফল্যের প্রথম কয়েকধাপ পার করার পর পরই সবার রংচঙ দেখতে পাই।আমাকে সরাতে যেখানে আমার আপন মামা জড়িত।আমার রাজনীতি মাঠের লোকেরা যেখানে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।সেখানে আপনাকে কি বলব?মরতে আমি ভয় পাই না।রাজনীতি মাঠে নামার সময় শপথ নিয়ে মাঠে নেমেছি।দেশে এবং দশের ভালো করতে গিয়ে যদি আমার প্রাণ যায় তো যাক।তবে আপসোস আমি আমার দেশকে একটি সুন্দর এবং উন্নয়ন অধ্যায় দিয়ে যেতে পারব না।

যদি তোমাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়।তাহলে দেশের মাটিতে পাপী দের ধ্বংস করে ফেলতে পারবে।দেশের মাটিতে সাধারণ মানুষের এক মুঠো সুখ ফিরিয়ে দিতে পারবে।বর্তমান বাজারে যে যাকে পারছে লুটপাট করে খাচ্ছে।এই দেশে জোর যার মুলুক তার।ধনীদের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মরছে গরিব।গরিবের কষ্ট দেখার কেউ নেই।পারবে দেশ শাসন করে সৈরাচারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।পারবে বাঙালির মুখে এক মুঠো হাসি ফিরাতে।

যদি বলি পারব!

এতটা কনফিডেন্স ভালো নয়।বুঝে শুনে কথা বলো।

অর্পণ তালুকদার পারবে।তার মায়ের দোয়া তার মাথার ওপর সব সময় রয়েছে।বাবা-র ছায়া তার পিছু।বাবা নামক বটগাছের আবরণে তার শরীর ঢাকা।আর তার বউয়ের চোখে তার জন্য তৃষ্ণা।যা এ জম্মে মিটবে না।বউটা তার একটু ভালোবাসা পেতেই ভীষণ খুশি।মেয়েটি তাকে বড্ড ভালোবাসে।

অর্পণের কথা শেষ হতেই তার কাঁধে আরাভ খান হাত রাখে।মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল,

যা-ও দেশের মাটিতে ফিরে।শেষ কর আসো পাপী দের।তাদের বিনাশ করায় তুমি মুক্ত।তোমাকে শুট কিংবা প্রানে মারলাম না।একজন বেঁচে যদি দেশ টাকে অমানুষগুলোর হাত থেকে বাঁচাতে পারে তবে ক্ষতি কি?কোনো ক্ষতি নেই।

আরাভ খান এর কথায় অর্পণ চমকে উঠে।পুরো বিষয়টা বুঝতেই মুখে হাসি ফুটে।আরাভ খান তার বক্তব্য জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।আর অর্পন নিজের দায়িত্ব পালন করতে ফিরে যায়।গাড়িতে বসে ভাবতে থাকে।তাঁকে দেশে ফিরতে হবে।এখন সে নিশ্চিতে যেতে পারে।মা এবং বাবা তার বউয়ের পাশে রয়েছে।তারা ওর দেখভাল সুষ্ঠুভাবেই করবে।কিন্তু সে এ-ই মুহূর্তে রওনা না হলে তার মামা এবং রাজনীতির চেনা মাঝে অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে না।অনেক হয়েছে ছাড় দিতে দিতে মাথায় উঠেছে।এবার তা নামিয়ে ফেলা দরকার।

১৫০.

অর্পন আজ রাতের টিকিট কে*টে কাউকে না জানিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার জন্য রাত বারোটায় এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলো।এইদিকে পুতুলের কোনো হুস নেই।সে ঘুমে বিভোর।সকাল হতে এখনো রাতের অর্ধেক প্রহর বাকি।এইদিকে রাবেয়া হাতের ফোনে ছেলের নামে একটা মেসেজ আসে।যেখানে অর্পন এর গুটিকয়েক শব্দ লিখা রয়েছে।

আসসালামু আলাইকুম আম্মু।আমি চলে যাচ্ছি!শেষবার আপনাকে একবার ব’লে না যাওয়া আমি দুঃখিত। আর ব’লে ওহ আপনি আমায় কখনোই যেতে দিবেন না।তাই না জানিয়ে দেশের মাটিতে ফিরছি।কেনো ফিরছি?কি কারণে ফিরছি?হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন।যাই হোক। আপনারা ওর পাশে আছেন।আমি এক দিক দিয়ে শান্তি পাচ্ছি।অন্য দিক দিয়ে কষ্ট লাগছে। এটা হয়তো আমার শেষ কথা।বেঁচে থাকলে অবশ্যই আপনার কাছে ফিরে আসব আর যদি কিছু হয়ে যায়।আব্বু,আপনার যত্ন নিবেন।আর আমার আমানতকে হেফাজতে
রাখবেন।তার সব সপ্নগুলো পূর্নতা পাক।তাকে আমার বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলবেন না।সে মানসিক চাপের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমার কথা ব’লে তার ক্ষত আর বাড়াবেন।সে দেশে ফিরে আজ না হয় কাল জেনে নিবে।এখন জানলে তার ক্যারিয়ার।তার না বলা কথাগুলো বন্ধ পড়ে রবে।সে লন্ডন থাকতে চাইবে না।তাই আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ তাকে এখন সত্যিটা বলবেন না।সময় করে পরে ব’লে দিয়েন।সবাই ভালো থাকবেন।

ইতি আপনার আদরের সন্তান অর্পণ তালুকদার।

পাঁচ বছর পর…

অভিনন্দন পুতুল।তোমার স্বপ্ন আজ অবশেষে সত্যি হলো।ফাইনালি তুমি ডাক্তার হলে গেলে।তোমার জন্য আস্ত ভালোবাসা জানেমান।রুমি কথায় পুতুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।রুমি, পুতুলের ক্লাসমেট।একসাথে পড়াশোনা শেষ করলো।

পুতুলের গায়ে ডাক্তারী এপ্রোন।সবাই তাকে নিয়ে কত খুশি।রাবেয়া তালুকদারের বুকটা গর্বের ভরে গেলো চোখের পানিটুকু লুকিয়ে বলল,

আম্মু বাসায় চলেন।পুতুল নিজের এপ্রোন খুলতে খুলতে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।

যার মানে সে যাবে না।বাংলাদেশে সবার সাথে তার যোগাযোগ হয়।কিন্তু যে মানুষটা তার জীবনে না আসলে লক্ষ্য অবধি পৌছাতে পারতোনা।সে মানুষটা কথা ব’লেই সবাই চুপ হয়ে যায় কেন?তারা কেন বুঝতে চায় না।পুতুল তার স্বামীকে দেখতে চায়।কথা বলতে চায়।তার দুই চক্ষে অনেক তৃষ্ণা।এই সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে।ততোই পুতুলের তৃষ্ণা বাড়ছে।সে পাগলামি করছে।তাইতো পড়া শেষ হতেই দেশে ফিরে চাওয়ার বন্ধবস্ত কম্পিলিট।বাবাকে টিকিট কে*টে আনতে ব’লেছে।তিনি টিকিট নিয়ে এই আসলো ব’লে।পুতুল অপেক্ষা করছে।তার অপেক্ষা অবসান ঘটিয়ে অসীম তালুকদার গাড়ি থেকে নামতেই পুতুল ছুটে আসে।তার চোখের সামনেই বিডি টিকিট দেখাতেই মুখে চমৎকার হাসি ফুটে।

পুতুলের এই হাসি দেখে রাবেয়া দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে আসে।পুতুল আজই রওনা হবে।তাই বাসায় পৌঁছে নিজের মতো করে সবকিছু গুছিয়ে নিতে ব্যাস্ত।এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর অর্পণ তার এখানে আসার দিনগুলো চোখ বুঝে স্মরণ করতে লাগল।ইশ কি মিষ্টি অনুভূতি ছিল?যা এখনো তার মনে দোলা দেয়।

তিনদিন পর…

বাংলাদেশ নিজ গ্রামে সেই রাঙ্গা মাটির পথ।আঁকাবাকা কাঁচা মাটির রাস্তাগুলো আজ ইট পাথরের তৈরি হয়েছে।ক্ষেত খামারে জায়গায় নতুন নতুন বাড়ি ঘর উঠেছে।কত কিছু পরির্বতন হয়েছে এই পাঁচ বছরে।পুতুল নিজের গ্রামের দৃশ্যগুলো মনে করতে করতে নিজ মামুর বাড়িতে প্রথম পা রাখলো।সবার সাথে কথা শেষ করে,সাজুকে টেনে এক কিনারে নিয়ে গিয়ে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করে।তার স্বামী কোথায়?

আপু,ভাইয়া আর নেই।সাজু কেঁদে দিল।চোখের পানি মুছে বলল,

তোমাকে ওখানে রেখে আশার পর এখানে অনেক কিছু ঘটে গেছে।আমি নিজের চোখে এই গ্রামে লা*শ দেখেছি।র*ক্তের স্রোত বয়েছে।আর ভাইয়াকে ওরা সবাই মিলে মিথ্যে মামলা ফাঁসিয়ে….!

সাজুর বাকি কথাগুলো তার কানে ঢুকে নিই।ভাইয়া আর নেই এই কথাটা বারবার কানে বাজছে।সে ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো।
পুতুলের এমন রিয়াকশনে রাবেয়া তাকে ছুঁতে চাইলে তাকে ছুঁতে দিলো না।পুতুল রাস্তার পথে দৌড় দিলো।পুতুলের এমন আচরণে সবাই ভয় পেয়ে যায়।

আপনি বিহীন আমার কিছু নেই।আমি অপূর্ণ।আমি শূন্য।আপনাকে দেখা’র জন্য আমার দুই চক্ষে যে তৃষ্ণা তা আমি কি দিয়ে মিঠাবো?আপনি এত নিষ্ঠুর প্রিয়তম কেন?কেনো আমায় একা ফেলে চলে গেলেন? একটিবার কি আমার কথা আপনার মনে পড়েনি?কি নিয়ে বাঁচব আমি।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৬
১৫১.
স্বাধীন,পুতুলের হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসতেই পুতুল কান্না ভেঙে পড়ে।

আমি যাকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই।সেই আমায় ফাঁকি দিয়ে কেনো চলে যায়?আর চলে যদি যাবে,তবে এত মায়া কেন বাড়ায়?কেনো একটু সুখের আশায় আমায় নতুন করে বাঁচতে শিখায়?কেনো এতটা পথ চলে আসার পর মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায়।একটিবার কি আমার কথা মনে পড়েনি।তাঁকে ছাড়া আমি বাঁচব কি করে?

আম্মা তুমি শান্ত হও।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি বলছি।তুমি আমার কথা শুনো।তুমি অনেক কিছুই জানো না।এই পাঁচ বছরে কি কি ঘটেছে?সবাই জানলেও তোমায় সেসব বলার সাহস কারো ছিল না।অর্পন বারবার সবাইকে নিষেধ করেছে।যেনো তুমি কিছু জানতে না পারো।কিন্তু আজ তোমার থেকে কিছু লুকিয়ে রাখা হবে না।তুমি সব জানতে পারবে।তোমার স্বামীকে মিথ্যে মামলার আসামি করা হয়।তাকে দুই বছর জেলে থাকতে হয়।তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে।সে ভালো ছিল না।তাকে বাঁচানো জন্য সাফিন সাহেব কম চেষ্টা করেনি।অনেকবার ছাড়িয়ে আনতে চাইলো সে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
কারণ অর্পণ ফিরে আসতেই চায়নি।কারণটা তুমি ছিলে।তোমাকে বাঁচাতে অর্পণ নিজেকে আসামি করেছে।আর এসবের পিছনে কলকাঠি তার মামা করেছে।জেলের মধ্যেও তার ওপরের মানসিক,শারিরীক টর্চার চলতো।বিনা অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হ’য়েছে।তার রাজনীতি ক্যারিয়ারে লাল কালির দাগ পড়েছে।পার্টি লোকেরা তার ওপর থেকে সব দায়িত্ব সরিয়ে নিয়েছে।এমনকি তাদের মধ্যে কিছু লোক জেল হাজতে অর্পণকে একেবারে মেরে ফেলার চেষ্টা করে।কিন্তু অর্পণের নানার জন্য কেউ বেশি সুবিধা করে উঠতে পারিনি।দুই বছর পর জেল থেকে প্রমাণসহ মুক্তি মিলে।যে সরকারি টাকার জন্য মিথ্যে মামলা হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়।তার জন্য দুই বছর পর বের হয়ে আসতে পারে।আর প্রমান যদি না হতো তাহলে আরো বেশি শাস্তি ভোগ করতে হতো।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার মামা তাকে মেরে ফেলতে চায়।সে অর্পণকে গুলি করে দেয়।

পুতুল হতভম্ব হয়ে গেছে।সে আর কিছু শুনতে চায় না।বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে।নিজেকে সামলাতে পারছেনা।মানুষটা কতটা অসহায় ছিল।কতটা কষ্ট পেয়েছে।তাঁকে দেখার জন্য পুতুল মামার হাতদুটো ধরে কেঁদে ওঠে।পুতুল অতিরিক্ত কান্নার ফলে কথা বলতে পারছে না।স্বাধীন,পুতুলের চোখের পানি মুছে বলল,

অর্পণ ভালো নেই।তুমি যখন এসে গেছো।তখন সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

১৫২.

রাবেয়া নিজের চোখের পানি আড়ালে মুছতে মুছতে বলল,

অর্পণ বেঁচে আছে।সেইদিন আমার বাবা
জামশেদ উল্লাহ খান ঠিক সময় হাসপাতালে না নিলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।গুলিটা অর্পনের বুকে করা হয়।দ্বিতীয় গুলি অর্পণকে করতে নিলেই পুলিশ অফিসার শাফাকাত খানের হাতে গুলি করে দেয়।কিন্তু শাফাকাত দমে যায় নিই।একের পর এক গুলি ছুঁড়ে।তাকে থামাতে পুলিশ গুলি করেন।এক পর্যায়ে শাফাকাত পালিয়ে যাওয়ার পথেই পুলিশের গুলিতেই প্রাণ হারায়।

রাবেয়া কথা শেষ করে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

হ্যা।আমার ছেলে বেঁচে আছে।কিন্তু আগের অর্পণের সাথে এই অর্পণ সম্পূর্ণ আলাদা।আমার ছেলে আগে সবার মন জয় করে চলেছে।কখনোই গম্ভীর ছিল না।ওর মুখে একটু মুচকি হাসি যেটা সবসময় লেগেই থাকতো।কিন্তু জেলের ঘটনা তার ওপর নিজের সাথে এত বড় বিপদ।চোখের সামনে মামার মৃত্যু।নানুর বিছানায় পড়ে যাওয়া এসব মেনে নেওয়াটা ওর পক্ষে কষ্টের ছিল।সময় চলার সাথে সাথে অর্পণ বদলে গেলো।সে এখন গম্ভীর হয়ে থাকে।বাবার বিজনেস সামলায়।যে রাজনীতির জন্য এতকিছু হলো সে রাজনীতি থেকে বিন্দু মাত্র সরেনি।বরং রাজনীতির মাঠটাকে গরম করে রাখে।তার ভয়ে কেউ ভুল কাজ করতে পারে না।পার্টির লোকের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা ব’লে না।যতটুকু বলে তা কাজের জন্য।আর যাদের জন্য জেলে গেলো।তাদের পার্টি থেকে বাদ করে।এবং শাস্তির ব্যাবস্থা করে।নতুন করে পার্টি লোকের কাজ শুরু করে।এখন সময়ের সাথে সাথে রগচটা হয়েছে।কোনো কথা মাটিতে পড়তে দেয় না।সঙ্গে সঙ্গে ওটার সমাধান করবে।তার চিতকার চেচামেচি জন্য পার্টির কেন্দ্রীয় লোকেরা বিরক্ত হয়।কিন্তু যার ধারা সমাজ উন্নয়ন হচ্ছে।তাকে কিছু বলার সাহস হয় না।পুতুল আমার ছেলেটাকে আবার আগের রুপে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।ওকে এভাবে দেখতে ইচ্ছে করছে না।ছেলেটা আমার বাড়িতে ফিরে না।কাজের মধ্যে পুরো সময় ডুবে থাকে।তার খাওয়ার কথা,বিশ্রামের কথা মনে থাকে না।এভাবে জীবন চলবে না।তাকে বুঝতে চেষ্টা কর আম্মু।তুমি তাকে সময় দেও।দেখো তুমি এতদিন নিজের ক্যারিয়ার করতে চেয়েছো।আমরা কেউ বাঁধা দেয়নি।কিন্তু তুমি এখন আমার ছেলের দিকে একটু মনযোগ দেও।ওর কষ্টগুলো বুঝতে চেষ্টা কর।নিজের স্বপ্নের পাশাপাশি নিজের ঘর,আর বর দুটোর খেয়াল রাখো।মেয়েরা চাইলে সব কিছুই সম্ভব।তুমি পারবেনা অর্পনকে আবার আগের মতো করতে।ওর কষ্টগুলো ভুলিয়ে নতুন করে চলার পথ দেখাও।আমি জানি আমি ছেলের মা হিসেবে একটু রুড হচ্ছি।কিন্তু কি করব বলো,চোখের সামনে আমার ছেলে শেষ হয়ে গেছে। আর আমি সবটা জেনেও চুপ করে ছিলাম।তোমাকে সময় দিয়েছি।আমার সাধ্য মতো তোমাকে গড়ে তুলতে চেয়েছি।কতটুকু পেরেছি জানি না।এখন শুধু আমার সন্তানের কথা মাথায় আসছে।আর কিছু ভাবার মতো সময় নেই।অর্পণ এখন ঢাকায় আছে।তুমি চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।পুতুল রাবেয়া হাত ধরে বলল,

আমি আমার স্বামীর কাছে যেতে চাই।প্লিজ, আমাকে নিয়ে চলুন।তাঁকে অনেক কিছু বলার আছে।আমি তাঁকে ছাড়া আর একটা মুহূর্ত থাকতে চাই না।পুতুলের কথায় রাবেয়া মত দিল।এবং অর্পণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হলো।

নিজ অফিস রুমে কাগজপত্র পড়ে নিয়ে সাইন করতে করতে বলল,

সামনে রোজা মাস আসছে।কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজের লাভ খুঁজতে চওড়া দামে বিক্রি করবার চিন্তা ভাবনা করবে।তাই তাদের সাবধান কর।যদি রোজার মাসে জনসাধারণের মুখে খাবার না উঠে।তাহলে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।আমি চাই জনগনের মানুষ ভালো থাকুক।খেয়ে,পড়ে বাঁচুক।

হাতের কাজগুলো শেষ করে শহরের খবর এবং পরিস্থিতি জানতে নিজেই বের হয়।নিজের গাড়িতে চড়ে নয়।মুখে মার্কস লাগিয়ে মাথা ক্যাপ পড়ে রিকশার হুডি টান দিয়ে শহর ঘুরে দেখতে দেখতে রিকশাওয়ালা সাথে কথা বলতে লাগল নিজ পরিচয় গোপন করে।আর রিকশাওয়ালা তার বর্তমান পরিস্থিতি খুলে বলতে লাগল।ইট,পাথরের শহরে অলিগলিতে পা রেখেছে।বাজারের মধ্যে প্রবেশ করে সব খবর নিলো।পরিস্থিতি সব কিছু হাতের মুঠোয় আছে।এটা ভেবেই শান্তি লাগছে।সারাদিন পরিশ্রমে শরীরটা নুইয়ে গেছে।এখন একটু বিশ্বাম প্রয়োজন।বাড়িতে ফিরে নিজ ড্রইংরুমে বসে পড়ে।চোখ দুটো বুঝে ঘাড় ঢলতে লাগলো।গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়েছে।এক গ্লাস ঠান্ডা পানি হলে ভালো লাগতো।কিন্তু দিবে কে?সে তোও কোনো কাজের লোক রাখেনি।নিজেরটা নিজে করে খায়।অর্পণের ভাবনার মাঝেই চুরির টুং টাং শব্দ কানে লাগে।সন্দেহের গন্ধ পেতেই চোখ দুটো হুট করে খুলে ফেলে।চোখের সামনে নিজের রমনীকে দেখে অবাক হয়।নিজের কল্পনা ভাবে।বিগত কয়েকবছর ধরে তার সাথে এগুলো হয়।আর সে তা নিরবে গ্রহণ করে।এতটুকুতে যে তার শান্তি খুজে পায়।তাই প্রতিবারের মতো এবারও বউকে বুকে টেনে নিলো।বউয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ একে জড়িয়ে ধরে।

আর কত জ্বালাবে?তোমার যন্ত্রণা আমি একটু সুখ খুঁজে নিই।কবে আসবে তুমি?আমি জানি না।তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে।অনেক কিছু বলার আছে।কিন্তু তুমি তোও আমার পাশে নেই।এখন তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার কথা।আমি চাই না আমার জন্য তোমার ক্যারিয়ারে কোনো বাঁধা হোক।তাই তো ও সব কষ্ট লুকিয়ে তোমার থেকে আড়ালে আছি।প্লিজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসো।আমি তুমি হীন কষ্টে আছি।তোমাকে যে আমার বড্ড প্রয়োজন।পুতুল,আমার কষ্টগুলো ভুলিয়ে দেও না।আমার দমটা বন্ধ হয়ে আসে।মাঝে মাঝে মনে হয় তোমাকে আমি আর দেখতে পাব না।তোমার আমার পথচলা মনে হয় অতটুকুই সীমানা ছিল।

জানো পুতুল মা যখন জানতে পারে আমি জেলে তখন খুব কান্না করতো। অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাও তোমাকে ব’লে নিই।আমি বারণ করি।তখন তোমার প্রথম সেমিস্টারে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।আমার জন্য তোমার পড়ার ক্ষতি হোক তা চাইনি।তুমি তোমার লক্ষ্য থেকে সরে আসো এটা আমি ভাবতেই পারতাম না।তখন তুমি চলে আসলে আমার সবচেয়ে বড় হার হতো।সবাইকে যে গর্ব করে বলেছিলাম,মেয়েরা বিয়ে পরও স্বামী করে পড়তে পারে।তার শ্বশুর বাড়ি লোকেরা এবং স্বামী সার্পোট পেলে।সেটাতো প্রমান হতো না তুমি চলে এলে।তাই বলিনি।আর বলব না।তুমি আসবে যখন তখন না হয় যেনো।ততদিনে তোমার সুন্দর ভবিষ্যৎ হয়ে যাবে।

চলবে….!

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৭
১৫৩.
অর্পণের বুকে মাথা রেখে পুতুল চুপচাপ নিজের অশান্ত বুকের শান্তি ফিরে পায়।এতগুলো দিন তাকে ছাড়া দিবাস্বপ্ন দেখেছে।মন কতটা পুড়ত এই মানুষটির একটু শান্থিধ পাওয়ার।আজ তাঁকে পেয়ে সব ভয়,কষ্ট দূরে দেশে পালিয়ে গেছে।অনেক তোও হলো দূরে থাকা।এখন থেকে না হয় দুইজন পাশাপাশি একসঙ্গে পথ চলব।

পুতুল নিজের মুখটা তুলে ওই গম্ভীর মুখের মানবটিকে দেখতে দেখতে নিজের ডান হাতটা তার গালে রাখে।স্বামীর গালে চুমু বসিয়ে দিলো।নিজের সব জড়াতে কাটিয়ে স্বামীর ওষ্ঠ জোড়া দখলে নিয়ে নিলো।অর্পণের গালে চুমু পেতেই চমকে উঠে।কিছু বলতে নিলেই নিজের অধরের অন্য কারো বিস্তার ঘটে।অর্পন হতভম্ব হয়ে যায়।পুতুল আখিঁ জোড়া মেলে তাকাতেই অর্পনের চোখের সাথে মিলন হলো।লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিলো স্বামীর বুকে।অর্পন,পুতুলের মুখটা তুলে দুই হাতের মাঝে নিয়ে নিলো।

ব.উ…উ..উ!আমার বউ।আমার পুতুল ফিরে এসেছে।এই পুতুল বলো না। তুমি সত্যি আমার কাছে ফিরে এসেছো।আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি না তোও।আমার সবটা কেমন যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে?অর্পন নিজের হাতে চিমটি কাটে।জোরে চিমটি কেটে হাতে ব্যাথা পেয়ে মুখ দিয়ে শব্দ করে উঠে।না সে কোনো স্বপ্ন দেখছে না।তার বউ তারই হ্রদয় মাঝে রয়েছে।সে সত্যি ফিরে এসেছে।পুতুলকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তার কম্পিত বুকের উঠানামার পুতুল চুপচাপ টের পেলো।মানুষটা তাকে কাছে পেয়ে অস্থির হয়ে গেছে।এই পাগল লোকটা তাকে কোন মায়া জড়িয়ে নিলো।নিজে থেকে চাইলেও পালিয়ে যাওয়ার সাধ্য নেই।আর না সে পালাতে যায়।অনেক হলো লুকোচুরি খেলা।এবার একটা সংসার হোক।তাদের ভালোবাসার ঘর হোক।তাদের টোনাটুনির সংসারে নতুন অতিথি আসুক।যার ছোঁয়া সব কালো দিনগুলো ডাকা পরুক।হাসি,আনন্দ ফিরে আসুক তালুকদার বাড়িতে।পুতুল নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে অর্পনের দিকে তাকিয়ে বলল,

এ-তোই যখন ভালোবাসেন।তখন দূর দেশে ফেলে একা চলে আসলেন কেন?আপনি ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।সবটা জেনেও কেনো চলে আসলেন।একটি বার নিজ থেকে খোঁজ নেন নিই।আমি আমার এই পাঁচ বছরের জার্নিটাতে আপনাকে পাশে চেয়ে ছিলাম।খুব ইচ্ছে করতো আপনার কাছে ছুটে আসতে কিন্তু আম্মু আসতেই দিতোও না।তার পিছনে এতো এতো কারণ ছিল আমি কি আর তা জানতাম?কেনো কষ্টগুলো একা একা বয়ে বেড়ালেন।একটিবার কি আমার কথা মনে পড়েনি?যদি মনেই পড়ে তবে এতটা দিন যোগাযোগ করলেন না কেন?

পুতুলের মাথার সাথে নিজের মাথাটা লাগিয়ে বলল,

কে বলল,আমি তোমার কোনো খোজ নেয়নি।সব খবর আমি টাইম টু টাইম পেয়ে যেতাম।আর তোমার পাশে মা,বাবা দু’জনকেই রেখে এসেছি।যাতে তোমার অসুবিধা না হয়।নিজের যতটা কষ্ট হতো তার চেয়ে বেশি শান্তি পেতাম।তুমি মা,বাবা একসাথে আছো।নিরাপদে আছো।এতেই আমার শান্তি হতো।নিজের কথা যদি বলি,তাহলে বলবো।আমার কোনো কষ্ট নেই। এখন এই মুহূর্তে আমি সবচেয়ে সুখী মানুষ। কারণ পাশে তুমি আছো তাই।পুতুলের কপালে দীর্ঘ একটা ভালোবাসার চুম্বন একে বললো,

কখন এসেছো?একা এসেছো না-কি কার সাথে এসেছোও।

হুম এসেছি অনেকখন হলো।আম্মু নিয়ে এসেছে।মায়ের নাম শুনতেই অর্পণ চারদিকে তাকায়।কোথাও দেখতে না পেয়ে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল।

কোথায়?

পাশের রুমেই আছে।বউকে সোফা বসিয়ে মায়ের কাছে যেতে যেতে বলল,

তুমি বসোও।আমি আম্মু সাথে দেখা করে আসি।

পুতুল মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রাবেয়া।পিছনে ছেলের আসা টের পেয়েই মুখটা ঘুড়িয়ে আকাশ দিকে তাকিয়ে রইলো।

পিছন থেকে মা’কে জড়িয়ে ধরে নরম স্বরে ডাক দিলল।

আম্মু।তুমি কেমন আছ?

কে আম্মু?কার আম্মু?আমি কারো আম্মু নই?আমার কোনো ছেলে নেই।

হুহ,তুমি ব’লেই হলো।তুমি আমার আম্মু।আর আমি তোমার ছেলে।যতই অস্বীকার কর!আমি তোও জানি তুমি আমার মা জননী।আমার জম্মদাত্তী।পৃথিবীর সবকিছু বদলে গেলেও মায়ের মমতা কখনো বদলায় না।মা গো আমি তোমারই খোকা।তোমার অর্পণ বাবা।রাবেয়া ছেলের ওপর বেশিখন রাখ করে থাকতে পারলোনা।ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।ছেলের দিকে অশ্রু নিয়ে তাকাতেই টলমল জল টুপ করে ঝড়ে পড়ে।মায়ের চোখের পানিটুকু নিচে পড়ার আগেই হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

এই চোখে দূঃখের কান্না মানায় না।এই চোখে আনন্দ অশ্রু থাকবে।যা আমার মনে কষ্টের ঘোরাক আনবে না।আনবে খুশির মহল।প্লিজ আম্মু কেঁদোও না।আমার লক্ষ্মী আম্মু।মায়ের চোখের পানিটুকু নিজ হাত দিয়ে মুছে দিলো।

তাহলে কথা তে,আর কখনো এমন করবি না।যদি করিস তাহলে আমি কিন্তু তোর জন্তনায় সত্যি সত্যি মরেই যা…মায়ের শেষ কথাটুকু বলার আগেই হাত দিয়ে মুখ আঁটকে বলল,

এমন কথা বলো না।তোমাদের জন্যই মৃত্যুর ঘর থেকে শত লড়াই করে বেঁচে ফিরেছি।তোমরা আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।তোমাদের কিছু হয়ে গেলে আমি যে এতিম হয়ে যাব।মা বিহীন এতিমদের প্রতি কেউ ভালোবাসার চোখে দেখে না।তারা অবহেলায় বাঁচে।আমি সেই অবহেলা মানতেই পারবো না।আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি ওই রকম পরিস্থিতি আর কখনো আসবে না।প্রমিস।

১৫৪.
দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষ করে।দুইটি মানুষের অপেক্ষার সমাপ্তি মিলে একই সুতোই আবার বাঁধা পড়ে নতুন জীবনে।পুতুল আর অর্পণ বিয়ে করছে।এটা তাদের দ্বিতীয়বার বিয়ে।একই প্রিয় দুটো ব্যাক্তি।ভালোবাসাটাকে আজ নিজ থেকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়েছে দুইজনই নতুন দিনে।তাদের
এই ভালোবাসা বেঁচে থাকুক আজন্মকাল।বেঁচে থাকুক পুতুল আর অর্পন মতো হাজার হাজার জুটিগুলো।ভালোবাসাগুলো দেখাতেও এক প্রকার শান্তি লাগে।এই বিয়েতে কোনো গর্জিয়াস সাজ নেই।নেই কোনো হৈ-হুল্লোর।যা আছে তা শুধু মধুর সুরে কোরআনের বানী।দশ হাজার এতিমের কন্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের মধুর সুর ভাসে চারদিকে।এমন আয়োজন কখনো কোনোদিন কেউ দেখে নিই।এই প্রথম বিয়ের আয়োজন সাধারণের মাঝে ওহ অসাধারণ হয়েছে।কনের গায়ে সাদার উপর ভিত্তি করে শাড়ি।মাথায় সাদা হিজাব পরিধান।গায়ে ফুল হাতার ব্লাউজ।তার দুই হাতে সাদা চকচকে অনেকগুলো চুড়ি।কনেকে মহিলাদের সাথে আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে।বড় পর্দার আড়ালে তার প্রেমিক পুরুষ তার স্বামী বউয়ের সাথে মিলিয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরেছে।মাথায় সাদা পাগড়ি।হাতে মায়ের দেওয়া দামী ঘড়ি।পর্দার আড়াল থেকে বউকে দেখা’র জন্য উঁকিঝুকি মারছে।বউকে চোখের দেখা দেখতে না পেয়ে সবার সামনেই ব’লে ফেলল,

এই আমার বউ কই?ছেলের কাজে অসীম তালুকদারের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।এইদিকে কনে পক্ষের লোক জামাইয়ের এই কথায় হেঁসে উঠে।ঠিকই তোও বেচার বউকে সবাই মিলে লুকিয়ে রাখছে কেন?সামনে নিয়ে আসা হোক।অবশেষে তাকে বরের সামনে নিয়ে আসা হয়।মাথার ওপর আলাদা ওড়না দিয়ে মুখটা ঢাকা।তবুও বউকে কাছ থেকে দেখতে পেয়ে মাশা-আল্লাহ ব’লে বুকে হাত দিয়ে বাপের ওপর ঢলে পরে।ছেলের কাজে অসীম তালুকদার হতভম্ব হয়ে বিরবির করে বলল,

এই ছেলে কার মতো হইছে?আমি তোও কখনোই বিয়ে করতে গিয়ে এমন বেশরমের মতো বউকে খুঁজি নিই।উল্টো খিদা লাগছে জামাইয়ের খাওন দেন ব’লে বন্ধুদের নিয়ে বিয়ের আসরে চিল্লিয়ে শ্বশুর মশাইয়ের বারোটা বাজায়ছি।না এখানে থাকা যাবে না।বেশরম ছেলের মুখে লাগাম নেই।দূরে থাকাই ভালো।অসীম তালুকদার ছেলের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালেন।এইদিকে অর্পণ কাজকর্মের পুতুল লজ্জা পেয়ে যায়।মিলন,সাজু, রিফাত বোনের জামাইয়ের কাজে উচ্চস্বরে হেসে বলল,

দুলামিঞা এতেই এই অবস্থা।আপুকে পুরোপুরি দেখলে ঠিক থাকবেন তো।শেষে আপনার নজর লেগে যাবে আমার আপুর ওপর।

আরে আমার বউ আমি নজর দিব না তোও।নজর দিবে কে আমার বাপ?অসীম তালুকদার খুকখুক করে কেশেঁ উঠেন।বাপের কাশি শব্দ শুনে সেই দিকে তাকিয়ে বলল,

কি হয়েছে এমন যক্ষ্মা রোগীর মতো কাশি দিচ্ছো কেন?
কাজি সাহেব বিয়ে তাড়াতাড়ি পড়ান।বউয়ের মুখ দেখার জন্য বুকটা আমার আকুপাকু করছে।কাজি সাহেব সাদা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে বিয়ে পড়াতে শুরু করেন।

ইসলামি শরীয়ত মতাবেগ বিয়ে শেষ করে কনে,বরকে পাশাপাশি বসিয়ে দিলো।বড় আয়না মধ্যে নিজের প্রেয়সীকে দেখতেই অর্পণ বিরবির করে ব’লে উঠে সুবহানাল্লাহ।আল্লাহ আমাকে উত্তম জীবনসঙ্গী দান করেছেন।তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।স্বামীর কথাগুলো কানে আসতেই পুতুল আয়না দিয়ে বরের মুখের দিকে তাকায়।বউ তার দিকে মায়া মায়া দৃষ্টিতে তাকাতেই অর্পণ মুচকি হেসে উঠে।স্বামীর হাসিতে পুতুল লাজুকলতা হয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।এই লোকটার চাহনিতে আজ নিজের জন্য সর্বনাশ দেখতে পাচ্ছে।পুতুলের ভাবনার মাঝেই নিজের হাতের ওপর কারো স্পর্শ পেতেই হাতের দিকে তাকায়।স্বামীর ছোঁয়া অদ্ভুত সুখ সুখ লাগে।

বিয়ে করে কন্যা চলে যাওয়ার সময় এসেছে।আজ পুতুলের বিদায়।এই ঘর,এই মায়ের সঙ্গে কাটানো দিনগুলো মনে পড়ে গেলো।আরো মনে পড়ে মামার কথা যার হাত ধরে ছোট ছোট পায়ে নিজের লক্ষ্যে ঠিক পৌঁছে গেছে।মায়ের পরে মামার অবদান বেশি।যা পুতুল কখনোই কোনো কিছুর বিনিময়ে এই মামার ঋণ কোনোদিনই শোধ করতে পারবে না।মামার ছায়া তার শৈশব,কৈশোর কেটেছে।।এই মাটিতে বড় হয়ে হেসে খেলেছে।ছোট্ট ছোট্ট ভাই গুলো বড় ভাইয়ের মতো তাকে আগলে রাখতে চেষ্টা করেছে।মায়ের ভালোবাসা পেতেই মামী সর্ব প্রথম তার মাথায় হাত রেখেছে।কখনো পর ভাবেনি।সবসময় নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছেন।কোনো অভাব,কিংবা অভিযোগের সুযোগ দেয়নি।আজ সেই আপনজনদের ছেড়ে কন্যা পরে বাড়ির বউ হয়ে যাচ্ছে।যেটা তার আসল ঘর।তার স্বামীর ঠিকানাই এখন তার বর্তমান ঠিকানা।মেয়েরা এত তাড়াতাড়ি কেন বড় হয়ে যায়।তাদের ছাড়া মা,বাবা কেমনে থাকবে?সেসব ভাবতেই বুকের ভেতর কিছু একটা কামড়ে ধরে।বিধির লিখা নিয়ম মেনে চলায় আমাদের জীবন।এখানে হাসি,কান্না সবকিছুই মিলিয়ে আমাদের এই ছোট্ট জীবনের চাওয়া পাওয়া।

এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে
জীবন দরিয়ায়।
বাপের বাড়ি ছাইড়া কন্যা
শ্বশুরবাড়ি যায় হায়
পুতুল খেলার ছেলেবেলা
মনে পইড়া যায়

চলবে….

চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৫২+৫৩+৫৪

0

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫২
১৪৩.
আম্মু তোমার মনে আছে।ছোট্ট বেলায় আমার যখন জ্বর আসতো।তখন তুমি আমার মাথায় পানি দিয়ে দিতে।পলিথিন, বালতি,মগ সবকিছু খাটের ওপর নিয়ে আসতে আমার কাছে ওগুলো খুব ইন্টারেস্টিং লাগত।এরপর স্লো ফ্লোতে পানির মধ্যে দিয়ে আমার মাথায় চুলের মধ্যে আঙুল চালিয়ে বিলি কাঁ*টার ব্যাপারটা ভীষণ ভালো লাগত।একটু পর পর কাঁথা টেনে একদম ঠোঁট পযন্ত ঢেকে দেওয়া অদ্ভুত আরাম লাগত।আজ-ও জ্বর আসুক।আর তুমি আমার মাথায় ওইভাবে হাত বুলিয়ে দিতেই আমি ঘুমে তলিয়ে যাই।
এই শরীরটা কা*টাছেঁড়া।সব জায়গায় বেন্ডেজ।মাথাটা যন্ত্রণা করছে।কিছু ভালো লাগছে না আম্মু।

তারজন্য জ্বর আসতে হবে না।তুই সুয়ে চোখ বুঝে থাক।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।দেখবি সব খারাপ লাগাটা সরে গেছে।অর্পণ চোখ বুঝতেই রাবেয়া ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

অর্পন ঘুমিয়ে গেছে।রাবেয়া ছেলের মাথায় চুমু বসিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।আজ তার আদরের সন্তানের এই অবস্থার জন্য দায়ী তার ভাই শাফাকাত খান।বোনের সন্তানকে মেরেছে।একটিবার তার কলিজা কাপে নিই।সে কতটা নিষ্ঠুর,আর বর্বর।

পুতুল রুমে আসতেই রাবেয়া নিজের চোখের পানি তারাতাড়ি মুছে নিলো।পুতুল আম্মু এইদিকে আসো।পুতুল আসতেই ওর হাত দুটো একসাথে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

আমার অর্পন তোমায় খুব ভালোবাসে।জীবনে যা কিছু হয়ে যাক না কেন?কেউ কারো সঙ্গ কখনো ছাড়বে না।তোমাদের সুখ দেখে অনেকেই হিংসা করবে।তোমাদের সুখের পথে অনেকেই আসবে কা*টাঁ বিছাতে।তোমরা যদি নিজেদের কে শক্তভাবে একে অপরের ওপর বিশ্বাস,ভরসা,আস্থা রেখে চলতে পার।জীবনটা সুখময় হবে।আমি দোয়া করি তোমরা সুখে থাকো।ভালো থাকো।রাবেয়া,পুতুলকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।পুতুল চুপচাপ তার বুকের মধ্যে মাথা রেখে চোখ বুঝে নেয়।সেই পুরনো অতীতে মায়ের সঙ্গে মিশলেই যেমন আরামদায়ক এবং শান্তি লাগত।ঠিক তেমনই এখন লাগছে।

অর্পনের ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের বউকে দেখতে পায়।উঠে বসতেই তাকে ধরে বসায়।হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করে।

এখন কেমন লাগছে?

অর্পণ আস্তে করে বলল,

ভালো।

পুতুল,আম্মু কোথায়?

হাতের ইশারা বলল,

চলে গেছে।ইমারজেন্সিতে রোগী এসেছে।

ওহ।

রাবেয়া খান বাড়িতে এসেছে।ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

এই তুই এই বাড়িতে কেন?কি গল্প শুনাতে এসেছিস?তুই আর তোর ছেলের নাটকের তো শেষ নেই।মা,ছেলের যতসব ঢং।

মুখ সামলে কথা বলো ভাইজান।এত বড় অন্যায় করে আবার জোড় গলায় কথা বলছো।তুমি কোন সাহসে আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছো?তুমি কি মানুষ?এতদিন অনেক অন্যায় করেছো!মুখ বুঝে সয়ে গেছি।কিন্তু এখন তুমি সব সীমা পার করে ফেলেছো।আমার সন্তানের গায়ে আঘাত করে।আমার মানিকের গায়ে হাত তুলে তুমি নিজেকে পাপের ভাগীদার করে নিয়েছো।আগেরকার মুরব্বিদের মুখে শুনতাম।মামা,ভাগ্নে যেখানে বিপদ নেই সেখানে।মামা তার ভাগ্নের গায়ে একটা আচর কাটতে দেয় না।কিন্তু তুমি আমার সন্তানের ওপর আঘাত করলে।তুমি এক মায়ের কলিজায় আঘাত করলে।তোমার লজ্জা করে না।বিন্দু মাত্র লজ্জা নেই।আমার সন্তানের গায়ে দ্বিতীয়বার আঘাত করলে আমি ভুলে যাব সম্পর্কে তুমি আমার ভাই হও।কোনো ক্ষমা তুমি পাবে না।এক মায়ের অভিশাপ নিও না।এক মায়ের অভিশাপ নিয়ে তোমার ধ্বংস ডেকে এনো না।রাবেয়া চোখের পানি নিয়ে বের হতে নিলেই রাবেয়া মা,মেয়েকে ডাকেন।রাবেয়া চোখের পানি মুছে বলল,

আমায় পিছু ডেকো না মা।তোমার ডাক ফেলে দেওয়া আমার সাধ্যের বাহিরে।তুমি যেমন তোমার সন্তানের ক্ষতি হলে হাহাকার করে মর।ঠিক তেমনই আমি মরছি ক্ষনে ক্ষনে।আমার সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে। তাও আমার আপনজনদের দ্বারা।আমি মেনে নিতে পারছি না।তুমি মা হয়ে তোমার সন্তানের কথা ভাবছো।আর আমি আমার সন্তানের কথা ভাবছি।

রাবেয়া খান বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে আসে।স্বাধীনদের বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই,অসীম তালুকদারের সামনে পড়েন।স্বামী গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।তার ওই চোখের ভাষা বুঝতে পেরে চোখে চোখ মিলাতে পারেনি।

তুমি কখন এলে?

কোথায় ছিলে?তুমি আজ কোনো রোগী দেখতে যা-ও নিই।মিথ্যে বলেছো।বাড়িতে আসতেই শুনতে পেলাম আমার সন্তানের সাথে এতবড় ঘটনা ঘটে গেছে।আর আমাকে জানানোর প্রয়োজনটুকু করোনি।কি চলছে তোমাদের সাথে।আমার কি জানার কোনো অধিকার নেই?আমার ছেলের এত বড় ক্ষতি হলো।আর তুমি একটিবার খবর দিলে না।কি হয়েছে রাবেয়া?তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

কি লুকিয়ে যাচ্ছো আমার থেকে?আমাকে বলা যায় না।দেখ রাবেয়া আমার কাছ থেকে লুকিয়ে লাভ নেই।আমি কোনোভাবে ঠিকই জেনে যাব।সেটা আজ কিংবা কাল।সেটা সময়ের ব্যাপার।তুমি বলো আমায়?কি হচ্ছে? আর আমার অর্পনের এই হাল কে করেছে।বলো আমায়।চুপ থেকো না।রাবেয়া স্বামীর বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব বলতে লাগল।অসীম তালুকদার সবটা শুনে বউয়ের থেকে সরে দাঁড়ালেন।তার চোখে ক্রধের আগুন।

এসব আমায় আরো আগে কেন ব’লে না? আমার ছেলের সাথে এতকিছু হয়েছে আর আমি আজ জানতে পারলাম।আমার ছোট শালা আমার ছেলে কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।আমি কি এতটাই অর্দম যে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারবনা?তোমার ভাই নিজেকে কিভাবে?তার মাথার ওপর তার মন্ত্রী সাহেব বাবা থাকলেও,আমিও আছি আমার ছেলের পাশে।আমার ছেলের কিছুও হতে দিবনা।অর্পনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ করো।আমি ওকে এই দেশের মাটিতেই রাখব না।বউ নিয়ে দেশের বাহিরে থাকবে।আমি সব ব্যবস্থা করছি।

একমাস পর….

অর্পন এখন পুরোপুরি সুস্থ।এবং আজ পুতুলকে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছছে।পুতুল জিজ্ঞেস করছে কথায় যাচ্ছি?কিন্তু অর্পন তার কথার উত্তর দেয়নি।এয়ারপোর্টে সব কাগজপত্র চেকিং করিয়ে প্লেনে উঠে বসে।

পুতুল এই প্রথম নিজের গ্রাম,এবং নিজের দেশ ছেড়ে দূরে অচেনা দেশে পা রাখতে চলেছে।নিজের অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।অর্পনের হাতটা শক্ত করে ধরেছে।প্লেন উপরে তোলার আগেই সিট বেল বেঁধে নিয়েছে।

পুতুল ভয় পেও না।আমি আছি।চোখ বুঝে না থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো।দেখবে ভয় নেই।অর্পনের কথা পুতুলের কানে ঢুকলেই মস্তিষ্কে যাচ্ছে না।ভয়টা তাঁকে কাবু করেছে।পুতুলের ভয় কাটাতে অর্পন দুষ্টমী করে কানের সামনে গিয়ে বলল,

তুমি তখন জিজ্ঞেস করছিলে না।আমরা কোথায় যাচ্ছি?

আমরা হানিমুনে যাচ্ছি।এবং দুই থেকে তিনজন হয়েই দেশে ফিরব।অর্পনের কথায় পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়।পুতুলের এমন অদ্ভুত রিয়াকশন দেখে অর্পন শব্দ করে হেঁসে উঠে।

কি দুই জন থেকে তিনজন হতে আপত্তি আছে মিসেস?অর্পনের এমন কথায় পুতুলের গাল দু’টো লজ্জায় লাল হলো।মুখটা দুই হাতের সাহায্যে ডেকে ফেলো।অর্পন,পুতুলকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল।মনে মনে বলল,

আই এম সরি পুতুল।তোমাকে পুরোপুরি সত্যিটা বলতে পারলাম না।তোমার চিকিৎসা শেষ হলেই আমি দেশে ব্যাক করব।তুমি পড়ার জন্য ওই দেশের মাটিতে পড়ে থাকবে।তোমার নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে যাব।আমি তোমায় নিয়ে রিক্স নিতে পারব না।ব’লেই অচেনা দেশে রেখে যাচ্ছি।দেশের এই রাজনীতির মাঠের খেলা এবং আমার মামাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া জন্যই নিজ দেশের মাটিতে ফিরে যাব।ততদিনে তোমার ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে।তারপরে তুমি আর আমি মিলে আমাদের স্বপ্নের ঘর সাজাবো।

রাবেয়া এবং অসীম তালুকদার নিশ্চিত মনে বাড়িতে পা রাখলেন।কারণ ছেলে এবং ছেলের বউকে দেশের বাহিরে পাঠিয়েছেন।কিন্তু তাদের ধারণা পাল্টে দিচ্ছে তাদের ছেলে অর্পন তালুকদার।তার মাথায় অন্য প্ল্যান চলছে।কি করতে চাইছে?সেটা দেশে আসলেই জানা যাবে।

তোমাকে ভালোবাসা ছিলো আমার জন্য অভিশাপ।না তোমাকে ভালোবাসতাম।আর না তোমাকে নিজের করে নিতাম।তুমি আমার লাইফটাকে হেল করে রেখেছো।

আমি তোমার লাইফটাকে হেল করেছি।না তুমি করেছো?প্রেম করার সময় মনে ছিল না।এখন আমার দিকে আঙুল তুলছো।আর এই যে আমার গর্ভে যে বেড়ে ওঠেছে।তার কথা তোমার ভাবার সময় আছে।নিজেকে কি ভাব তুমি?আমার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব তোমার।কারণ তুমি তার পিতা অন্তর।

এই শোনো আমি তোমার এবং তোমার এই বাচ্চার দায়িত্ব আর নিতে পারব না।ওকে এর্বোশন করাতে চেয়েছি দেও নিই।এখন তুমি বুঝো।আর সর আমার সামনে থেকে।অন্তর নিজের শার্টের কলারের থেকে তন্নী হাত সরিয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই তন্নী সোফায় উল্টে পড়ে যায়।পেটে আঘাত লাগতে মা ব’লে চিৎকার করে উঠে।ওয়াটার ব্রেক যেতেই অন্তর চমকে উঠে।

হায় আল্লাহ এটা কি করলাম?

তন্নী এই তন্নী।তন্নীর লেবার পেইন উঠেছে।যন্ত্রণা ছটপট করছে।এরমধ্যেই জেনিফা এবং তার হাসবেন্ড পার্টি থেকে ফিরে আসতেই এসব দেখে চমকে যান।ইমারজেন্সিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চলবে…

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৩
১৪৫.
ইমারজেন্সিতে তন্নীকে নেওয়া হয়েছে।অপারেশন রুম থেকে তন্নীর চিতকার ভেসে আসছে।দিহান সাহেব অন্তরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

এসব কি করে হলো?অন্তর চুপ থাকায় দিহান সাহেব ছেলের গালে ঠাসস করে থাপ্পড় লাগিয়ে বসেন।জেনিফার এগিয়ে আসতে নিলেই চোখ রাঙিয়ে ইশারায় সরে দাড়াতে বলেন।

কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেনো?যার দুই দিন পরে বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল।আজ তার এই অবস্থা কে করলো?তোমার মা,আর আমি দরকারি কাজে বাহিরে গিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি বাড়িতে থাকা অবস্থায় মেয়েটার সাথে এসব হলো কি করে?অন্তর চুপ করে থেকো না।জবাব দাও।আমি না হয় আমার পছন্দের মেয়েকেই তোমার ঘরের ঘরণী করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তাতে তোমার আপত্তি ছিল মেনে নিয়েছি।নিজের পচ্ছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেও সুখে রাখতে পারলে না?তাহলে সারাজীবন কি করবে তুমি?এতদিন ভাবতাম ছেলেটা আর যাই হোক।ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে জানে।সেই ধারণা তুমি আজ পাল্টে দিলে।তুমি একজন সঠিক মানুষ হওনি।তুমি তোমার মায়ের মতোই নির্দয় এবং কুৎসিত মনের মানুষ হয়েছো।যার মনে ভালোবাসা তোও দূরের কথা।সামান্য মনুষ্যত্বটুকু নেই।তোমার এই মায়ের মন পেতে আমাকে দিন রাত পরিশ্রম করতে হয়েছে।কারণ তার মুখে একটাই শব্দ ছিল।আর সেটা হলো টাকা।সে টাকা ছাড়া কিছু বুঝতে চাইতো না।তাকে অন্ধের মতো ভালোবাসতাম ব’লেই সব সময় তার আবদার,বায়না মিটিয়ে এসেছি।তবুও মন গলেনি।ভেবেছিলাম একটা সন্তান গর্ভে আসলে নারী পূর্ণ হয়।মা হওয়ার মাঝে তার পরিবর্তন আসবে।সে-ও একই কাজ করে।তোমার মতোই এর্বোশন সিদ্ধান্ত নেয়।এবং তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চায়নি।কিন্তু আমি যখন জানতে পারি।তখন তার হাতে পায়ে ধরে অনেক কেঁদেছি।সে যেন আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি না করে।তার এই সন্তানের কোনো দায়িত্ব নিতে হবেনা।সব আমি নিজ হাতে করব।সে মেনেছিল।তার বিনিময়ে জার্মান শহরে একটা ফ্ল্যাট করে দিতে হবে।যেটার মালিক সে থাকবে।তখন আমিও টাকা উর্পাজনের ধান্দায় থাকতাম।কত রাত নিঘুম কে*টেছে তা একমাত্ত আমি এবং আমার আল্লাহ ভালো জানে।
তার শর্ত মতাবেগ পালন করেছি।বিনিময়ে সে আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে।এরপর তার কোনো দায়িত্ব সে পালন করেনি।সে নিজের পার্টি আর বন্ধুদের সাথে মেতে ছিল।এই যে তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।জিজ্ঞেস কর তাকে।যখন তোমার বয়স দেড় বছর।তুমি ফ্লোরে বসার চেষ্টা কর।গড়িয়ে খেলা কর।আমি ছিলাম তোমার বাবা।তোমার ছোট বেলার খেলার সাথী।আমাকে বাবা শব্দ বলার চেষ্টা,আমাকে আলতো হাতে আদর করে খিলখিল করে হাসি দিয়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখা।এসব দেখতে দেখতে তার মাঝে মায়া কাজ করে।মমতা জেগে ওঠে।তোমার প্রতি তার টান দেখেই আমি ওপর ওই আসমানে যে বসে আছে। তার দিকে তাকিয়ে দুই চোখের পানি ফেলেছি।সময় চলতে চলতে তুমি বাবাকে একজন কঠোর পুরুষ হিসেবে দেখে এসেছো।তোমার দুনিয়ায় তখন তোমার মা’ই সব।কিন্তু আজ সেই একই জিনিস তুমি পুনরাবৃত্তি করে ছাড়লে।লোভ তোমাদের সব কিছু শেষ করছে।তোমাদের চাহিদা মতো সব
পেতে পেতে লোভ বেড়ে গেছে।যত পা-ও ততই চাও।তোমাদের চাওয়া শেষ নেই।একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো।ভালো ছেলে এবং ভালো স্বামী তুমি কখনোই হতে পারো নিই।ভালো বাবা হবে কি না।তাতেও সন্দেহ রয়েছে।আর তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।তোমার সম্পত্তি আমি সব তোমার সন্তানের নামে করে দিবো।তাও তোমাকে এক কানা করি দিব না।যে সম্পর্কে মূল্য বুঝতে পারে না।তাকে আর বুঝাতেও চাই না।দিহান সাহেব কথা শেষ হতেই বেবি কান্না ভেসে আসে।দিহান সাহেব আলহামদুলিল্লাহ বলে এগিয়ে যান অপারেশন রুমে দরজা সামনে।ডাক্তার বেবিকে তোয়ালে করে নিয়ে আসেন।দিহান সাহেবের কোলে দিয়ে বলেন।

ছেলে হয়েছে।দিহান সাহেব নাতির মুখে চুমু দিয়ে বলেন,

-;আলহামদুলিল্লাহ।আমার অন্ধকার রাজ্যের আসল রাজা এসেছে।এবার আমার কোনো চিন্তা নাই।দাদু ভাই তুমি কেমন আছো?ছোট্ট নাদুসনুদুস বাবুটা গোল গোল চোখে চেয়ে আছে।তার দুই চোখের ভ্রু দ্বয়ের সামনে অল্প কুঁচকে,কেমন ডেবডেব করে তাকিয়ে।ভাবছে।সে কই আসলো?মায়ের পেটের ভিতর ভালো ছিল।এমন অদ্ভুত জায়গায় বের করে আনার মানে কি?

নার্স বেবি নিয়ে যাওয়ার সময় বললো,

মা এবং বেবি দুইজনই সুস্থ আছে।

১৪৬.
অর্পন,পুতুলকে ডাক্তার কাছে নিয়ে এসেছে।
ডাক্তার পুতুলকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে কাগজে লিখতে থাকেন।কিছু সময় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর পুতুলকে তার জায়গায় বসতে বলেন।

মিষ্টার অর্পণ।আমি আপনার স্ত্রী’র সমস্যা বুঝতে কিছু টেস্ট করেছি।রির্পোট আসলেই বুঝতে পারব।এবং আপনাকে জানানো হবে।

জি।ডক্টর।ধন্যবাদ।আবার কবে আসতে হবে?

দুইদিন পর আসলেই ভালো হয়।আমার আপনার ওয়াইফের রির্পোট নিয়ে বাকি ডাক্তার সাথে একটা আলোচনা করব।তাই দুইদিন পর আসবেন।

ওকে।

পুতুলকে নিয়ে বেরিয়ে আসতেই একটা পরিচিত কল আসতেই রিসিভ করে।

আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?

শেষ পর্যন্ত আমার ভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে পারি জমালি।কিন্তু পালিয়ে কতদূর। ওখানে পৌঁছাতে আমার সময় লাগবে না।

অর্পন নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলল,

ওকে আই এম ওয়েটিং।তাড়াতাড়ি আসলে খুশি হব।বাংলাদেশে বাপের জন্য থাকতে পারলাম না।বউ নিয়ে হানিমুন করতে ঠিক পাঠিয়ে দিয়েছে।সেখানে মামা যদি নিজে থেকে ফোন দিয়ে আসার জন্য এতটা কৌতুহল দেখায় তাহলে আসতেই পার।আমি আরো ভাবছিলাম তাড়াতাড়ি ঢাকায় ব্যাক করব।ইনফেক্ট দুইদিন পরই আমরা ব্যাক করছি।তুমি এখানে আসতে আসতে আমি দেশের মাটিতে থাকব।সো গুড বায়।অর্পন ফোন কেটে চিন্তায় পরে গেলো।তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরতে হবে।পুতুলকে এখানে দূর দেশে রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই।পুতুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে যাব।

চাচী এত রাতের বেলা নারকেল কুড়াও কেন?

আর বলিস না।তোর চাচার রাতের বেলা সেমাই খাওয়ার নেশা উঠছে।এত রাতে আমার শান্তি নাই।তাই করতাছি।

ওহ।তা চাচি সামনে তোও রোজা।তুমি আর চাচা কয়টা রোজা রাখবা।

দেখি আল্লাহ যদি তৌফিক দেন।তাইলে সবগুলো রাখার ইচ্ছা আছে।রিফাত তুই বাড়িত যাইস না।বস। সেমাই খাইয়া যাইস।

আইচ্ছা।

দুইদিন পর।মাহে রমজানের চাঁদ উঠেছে।আকাশের চাঁদ দেখে মিলন,সাজু লাফিয়ে উঠে।

ওই আম্মা আকাশে চাঁদ উঠেছে।আজ রাতে ভাত খাইয়া কাল থেকে রোজা শুরু।

রেনু রাতের বেলা হারিকেনের সাহায্যে রান্না শেষ করতে ব্যাস্ত।ভোরে আবার উঠতে হবে।এখনো এশার নামাজটুকুও পড়তেই পারেনি।গরমের জন্য কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা।

ভোর রাতের জন্য দুই মুইখা মাটির চুলায় রান্না বসিয়েছে।ভাত,তেলাপিয়া মাছ ভুনা আর ডাল গনো করে রান্না করছে।তাতে লাল দুইটা গাছ থেকে পাকাঁ টমেটো আরো আগেই পেরে নিয়েছিল।টমেটো টুকরোগুলো তাতে ছেড়ে দিয়েছে।হালকা ঝাল করতে কতগুলো কাঁচা মরিচ ফালি করে ছড়িয়ে দিল।তার একটু পড়ে ধনেপাতা কুচি ছেড়ে নেড়ে নামিয়ে নিয়েছে।সবশেষে দুধ গরম করে নিলো।তিনজনের শেষ পাতে দুধ মাখা ভাত খাবে।তা ওহ আবার বেশি করে চিনি দিয়ে।এটা ছাড়া তাদের চলে না।

রান্না শেষ করে রেনু এশারের নামাজ পড়ে নিলো।মেয়েটার কথা মনে পড়ছে।কি খাচ্ছে? কি করছে?কে জানে?একটু কথা বলতে পারলে শান্তি লাগতো।এই প্রথম আমাদের ছাড়া একা একা রোজা পালন করছে।যদিও জামাই আছে।তারপরেও মনটা মানে না।কথা বলার জন্য মনটা আনচান করে।দেখি উনি আসুক একটু কথা বলার একটা ব্যাবস্থা করা যায় কি না?

পুতুলের এই প্রথম রোজা তা-ও আবার দুর দেশে হয়েছে।ফজরের নামাজ পড়ে পুতুল বেলকনিতে বসেই বাহিরে পরিবেশ দেখতে থাকে।এমন সময় ভেতর থেকে সুন্দর কোরআন তিলাওয়াত ভেসে আসছে।পুতুল রুমে প্রবেশ করতে দেখে তার স্বামী মসজিদ থেকে ফিরেছে।আর এত সুন্দর করে কোরআন তিলাওয়াত সেই করছে।প্রতিদিন ভাইয়েদেরটা শুনেই অভস্ত্য।নিজে এমন করে তিলাওয়াত করতে পারেনা ব’লে আফসোস লাগে।আজ স্বামীর কন্ঠে কোরআন তিলাওয়াত তার কাছে মধুর লাগছে।পুতুল চুপচাপ স্বামীর পাশে বসে।তার ডান কাঁধে মাথা রাখল।অর্পন,একপলক বউকে দেখে আবার কোরআন তিলাওয়াতেই ব্যাস্ত রইল।

অর্পন দুই পাড়া পরে শেষ করতেই দেখে পুতুল ঘুমিয়ে গেছে।পুতুলকে ঠিক করে বিছানা ঘুম পাড়িয়ে মাথা হালকা ফু দিয়ে দিল।

চলবে…..

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৪
১৪৭.
ছেলেকে মায়ের কাছে একই রুমে আলাদা বেডে শোয়াতেই তন্নীর জ্ঞান ফিরে।সে চোখ মেলে নিজের পেটে হাতটা রেখে চমকে উঠে।অন্তর তার স্বামী তাকে ধাক্কা মেরেছিল।আর তখনই প্রসব বেদনা উঠে।ব্যাথা সয্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তারপর কি হয়েছিল?পেটে হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলল,

আ..মা..র বাচ্চা।আমার সন্তান কোথায়?শেষের কথাটা চিতকার করে ব’লে।হঠাৎ চিতকার শুনে বেবির ঘুমটা ভেঙে যায়।সেও চিতকার করে কান্না জুড়ে দেয়।বেবির কান্না শুনে তন্নী আরো ছটপট করে।বেড থেকে নামতে চেষ্টা করে।এরমধ্যেই দিহান সাহেব তন্নীর চিতকার শুনে রুমে ঢুকেন।দিহান সাহেবকে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,

বাবা,আমার বেবি।সন্তানের জন্য এক মায়ের আকুলতা বুঝতে পারেন।নার্সকে ডেকে বেবি কে কোলে তুলে দিতে বলেন।ছোট বাচ্চাটা তখনও কান্না করছে।তন্নী ছেলেকে দুই হাতে তুলে নিয়ে পাগলের মতো সন্তানের গালে,কপালে চুমু বসিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।

আমার সোনামানিক।আমার বাবা।মা খুব পঁচা না,তাই তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।আমাকে মাফ করে দেও।তোমাকে কষ্ট আর দিব না।আর কখনো না।ছেলে,মায়ের স্পর্শ পেয়ে কান্না বন্ধ করে চেয়ে থাকে।মায়ের আদর পেতেই সেও চুপ।ছোট ছোট হাতের সাহায্যে কয়েকটা চুল টেনে ধরেছে।তন্নী ওর হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে,নিজের সন্তানকে বুকে নিয়ে বিছানায় পিঠটা লাগিয়ে বসে পড়ে।
দিহান সাহেব আর কিছু না ব’লে বাহিরে চলে যান।

এতখন থাই গ্লাসের ওইপাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু অন্তর দেখছিল।স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের ওই পাশে এক মায়ের ভালোবাসা অবিরাম অন্তহীন হতে দেখেছে।তার সন্তান কি সুন্দর ফুটফুটে হয়েছে?অথচ একেই বারবার এর্বোশন করাতে চেয়েছে।চেয়েছে একটি ভ্রুণ পৃথিবীতে না আসুক।সে সত্যিই পাপী।তার স্ত্রী যোগ্য স্বামী নয়।নার্সের ডাকে কল্পনার জগত ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে।নিজেকে স্বাভাবিক করে তন্নীকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে প্রবেশ করে।অন্তর আসতেই তন্নী মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,

দুইদিন পরই আমাদের ডির্ভোস।এতদিন সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে পৃথিবীতে আনার জন্য।তোমার সকল অন্যায় সাথে লড়াই করেছি।
কিন্তু আজ থেকে তুমি মুক্ত।আমি মুক্ত হয়ে তোমাকে মুক্তি দিয়ে খেলাম।সন্তান তুমি কখনোই চাও নিই।আমার জন্যই তার আগমন হয়েছে।তাই তার সকল দায়িত্ব আমার।তাকে নিয়ে তোমার কোনো চিন্তা নেই।ডিভোর্স পেপারে সইটা করে দিলেই আমি চলে যাব নিজ দেশের মাটিতে।আর তুমি তোমার পছন্দ মতো।যাকে তোমার পারফেক্ট লাগে তাকে বিয়ে কর।আমি তোমার যোগ্য ছিলাম।কিন্তু তার কদর করো নিই।সব সময় ব’লে এসেছো।আমার জন্য তোমার লাইফটা নাকি হেল হয়ে গেছে।এখন তুমি মুক্ত মিষ্টার অন্তর।

তন্নীর কথায় অন্তর চমকে উঠে।চোখ দু’টোতে বিস্ময়।যে মেয়েকে হাজার কটুক্তি করার পরেও দূরে সরে যায় নিই।আজ তার সন্তানের আগমনে তাকে মুক্তি দিয়ে দিলো।এই মুক্তি সে তো চাই নিই।সে তো সব ভুলে আগাতে চাইছিল।তবে তন্নী তাকে এ কোন মুক্তি দিয়ে গেলো।যেখানে পাপ,আপসোস ক্ষমা মিশে আছে।সব ভুলে কি আরেকটিবার সুযোগ দেওয়া যায় না।না যায় না।তন্নী একবারও তার দিকে ফিরে তাকায় নিই।নিজের সন্তানের ভাবনা হয়তো বিভোর।অন্তর এক পা,দুই পা করে পিছনে বাড়িয়ে নিতে চাইলে,তন্নী এবার তার দিকে ফিরে তাকায়।তার চোখে চোখ রেখে বলল,

কি ভেবেছিলে?তোমায় মুক্তি দিচ্ছি!হুহ,সেগুরে বালি।তোমায় মুক্তি দিব এত সহজেই!তুমি কি ভেবেছিলে?এত সহজেই তোমার পিছু ছাড়বো।মৃত্যু আগ পর্যন্ত তোমায় ছাড়ছি না।আর না আমার সন্তানের হোক নষ্ট করব।মা হিসেবে আমি সবটুকুই ভালোবেসেই করব।কিন্তু তার বাবা বিহীন সে পৃথিবীতে বড় হোক আমি তা চায় না।তার হোক তাকে আমি পাইয়ে দিব।এতে যদি তোমার সাথে আমাকে হাজারবার লড়তে হয়।তবে লড়বো।প্রয়োজন পড়লে তোমার নামে মামলা করব।আমার ছেলের প্রাপ্ত হোক থেকে বঞ্চিত করলে।তোমার নাম,দাম এক নিমিষেই বরবাদ করে দিব।তুমি আমার ছেলের সুখ কেঁড়ে নিয়ে ভালো থাকবে।তা আমি মেনে নিবো না।একজন মা হিসেবে তো কখনোই নয়।আমার সাথে করা অন্যায় ছাড় তুমি পাবে না।তার শাস্তি ভোগ করবে।একই ছাদের নিচে দুইজন থাকব ঠিকই কিন্তু তা আলাদা কক্ষে।আলাদা বেড রুমে।আমরা নামেই আর কাগজ কলমে স্বামী,স্ত্রী থাকব।কোনো মনের আদান-প্রদান থাকবে না।তোমার সামনেই তোমার বউ,বাচ্চা থাকবে।কিন্তু তুমি চাইলেও নিজ থেকে তাদের ছুয়ে দিতে পারবে না।তোমাকে আমি যখন অনুমতি দিব।তখনই সন্তানের কাছে আসতে পারবে।কিন্তু আমায় ছোঁয়া চেষ্টা করলে, কিংবা স্বামী অধিকার দেখানোর চেষ্টা করলে তোমার খবর আমি করে ছাড়ব।কথাটা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নেও।তন্নী কথায় অন্তর বেকুব হয়ে গেছে।তার মুখে কোনো কথা নেই।তন্নী নিজের কথা শেষ করে আবার উল্টো দিকে ঘুরে বাচ্চাকে নিয়ে বসে রইলো।

১৪৮.
এশারের আজান পড়তেই পুতুল নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।অর্পন বউকে ফ্ল্যাটে রেখে বিল্ডিং বাহিরে আসতেই বিদ্যুৎ বেগে একটা গুলি ছুটে আসে।অল্প জন্য নিশানা ভুল জায়গায় পড়লো।অর্পন সর্তক হয়ে যায়।চোখ দু’টো চারদিকে বুলিয়ে আবার কয়েক কদম ফেলতেই তার পায়ে দিকে শুট করে।যা দেখে অর্পন সাথে সাথে সরে যায়।নিজের সামনে,পিছনে এত সন্দেহ জনক মানুষ দেখে তার কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে।নিজেকে বাঁচাতে কি করবে তা ঠান্ডা মাথায় ভেবে উল্টো দিকে ঘুরে ইউটান নিতেই ভেসে উঠে গম্ভীর কন্ঠ।কার কন্ঠ তা দেখতে পিছনে ঘুরতেই চোখের সামনে পরে একজন লম্বা চওড়া একজন পুরুষ।যার চোখের ছাওনি প্রচন্ড দূর্গর।বাম হাতে সুন্দর দামী ঘড়ি,সেই হাতের দুই আঙুলের ফাঁকে দামী ব্রান্ডের সিগেরেট।অন্য হাতে রয়েছে এম আর আই গান।গায়ে বড় লেদার কালো জ্যাকেট।পায়ে কালো ব্রুট জুতা।চেয়ার সাথে কার যেন মিল রয়েছে।হ্যা এই তোও সেই মাফিয়া কিং মিষ্টার আরাভ আব্রহাম খান।

চারদিকে তার লোকেরা এসে দাড়িয়ে আছে।মাঝেই সে আর মাফিয়াটা দাঁড়িয়ে আছে।অর্পন কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই মাথায় গানটা পয়েন্টের ওপর রাখে।তার এই কাজে
অর্পনের মাথাটা গরম হয়ে যায়।মাথার ওপর গানটা সরিয়ে বলল,

আমার অপরাধ কি?

তোকে শেষ করার সুপারিশ এসেছে।তুই এখন আমার হাতে মরবি।আরাভ গুলিটা করতে নিলেই পুতুল সামনে এসে দাড়ায়।স্বামীকে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মাথা নাড়িয়ে বারবার বলতে লাগল।

আমার স্বামীকে মারবেন না।তার কথাটা মুখ দিয়ে বের হয়না।নিজের কথাটা না বলাটা পাপ।আজ পুতুল নিজের ওপর অসন্তুষ্ট।আল্লাহকে কাছে অভিযোগ তার।কেনো তাঁকে এতোটাই অসহায় বানিয়েছে।তার গলায় কথা বলার সুর টুকু কেনো পেলো না?অতিরিক্ত ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

পুতুল অজ্ঞান হয়ে যেতেই অর্পন চমকে উঠে।ডাক্তার বারবার ব’লেছিল।তাঁকে কোনো খারাপ পরিবেশের উপস্থিত না করানো হয়।কারণ ছোট বেলার যে ট্রমাগুলো সে দেখেছে।এবং দেখে যাচ্ছিলো।এতে তার অবস্থা খারাপ হয়েছে।তার মনে বিশাল ক্ষত রয়েছে।

পুতুলের এমন অবস্থায় অর্পন বসে পড়ে।তুমি যেখানে আসতে বলবে আমি আসব।কিন্তু এখন আমার বউয়ের পাশে থাকাটা জরুরি।মেন্টালি শোক পেয়েছে।যা এই মুহূর্তে ক্ষতি কারক।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আমি কথা দিচ্ছি।আগামীকাল সূর্য উঠার আগেই আপনার সামনে আত্মসম্মপণ করব।আপনার যদি তাতে সন্দেহ হয়।আপনি আমার সাথে আপনার বডিগার্ড কিংবা আপনি নিজে থাকতে পারেন।আমার তাতে কিছু বলার নেই।আরাভ খান অর্পনকে যেতে দেয়নি উল্টো তার গাড়িতে করে রওনা হয় হাসপাতালে।

অর্পণ,পুতুলকে কোলে তুলে নেয়।হাজার ডাকলেও সারা দেয়নি।অর্পন কোনো দিশা পায়না।পাগলের মতোও বউকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যায়।ডাক্তার পুতুলের কন্ডিশন বুঝতে পারছে না।এমন হলো কি করে?অর্পন পুরোটা খুলে বলতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

রুমের বাহিরে অর্পন টেনশন করছে।তার পায়চারি পরক্ষ করছে আরাভ।একটা মেয়ে এবং তার ওপর সে অর্পন তালুকদারের বিয়ে করা বউ।বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে নিয়ে টেনশনে পায়চারি করছে।সবগুলো দেখে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সে বউ পাগল ছেলে।এমন হ্যাংলামী আদোও তার জীবনেও সম্ভব নয়।কারণ সে নারী জাতিকে প্রচন্ড ঘৃনা করে।এসব নারীদের জন্য তার মনে কোনো ফিলিংস আসে না।এরা ছলনাময়ী হয়।এদের মায়ার ফাঁদে আরাভ খান কোনোদিনই পা দিবে না।আরাভ মুখটা গম্ভীর শক্ত করে অন্য দিকে ঘুরিয়ে তাকায়।এসব মেলোড্রামা তার দেখতে একটুও ভালো লাগছে না।সে হাটতে হাঁটতে বলল,

সময় মতো তার কাছে আত্মসমর্পন করতে।না হলে কথার খেলাফ করার জন্য কোনো অর্পসণ সে রাখবে না।নিজ গার্ডকে ইশারা কিছু ব’লে নিজের দামী বি এম ডাবলিও গাড়িতে বসে পড়ে।একটানে ছুটে চলে নিজ অজানা গন্তব্যে।

চলবে….

চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৯
১৩৭.
চালের গুড়ার রুটি সাথে গরুর গোশত স্বাদ অসাধারণ।অর্পণের খুব পচ্ছন্দের।তাই চারটা টা রুটি এবং বাটির অর্ধেক গরুর গোস্ত এর সাথে খেয়ে নিয়েছেন।বাকিটা পুতুলের জন্য রেখে গেছে।পুতুল,চুপচাপ দেখে মুচকি হাসি দিলো।আজ পবিত্র শবেবরাত।আল্লাহ নাম নিয়ে বাহিরে সব পুরুষরা গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে গেছে।আর মহিলা সবাই বাড়িতে ওযু করে নামাজ দাঁড়িয়ে গেলো।

শবে বরাত হলো মুসলমানদের জীবনে অত্যন্ত ফযিলতপুর্ন একটি উৎসব।এ রাত ক্ষমা লাভের বা নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার একটি রাত।এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ডাকে সারা দিতে চতুর্থ আসমানে নেমে আসেন।শবে বরাত মূলত হিজরী সালের শাবান মাসের পনের তারিখে।এটি মুলত ইসলামি বছরের অষ্টম মাস।সারা বছরে একবার মুসলমানদের মাঝে এই উৎসবটি পালিত হয়। শবে বরাতের মুসলিমরা দিনের রোযা পালন করে এবং রাতে সারারাত ধরে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে। যেহেতু শবে বরাত মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত সেহেতু সবার উচিত এ রাত টি আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেওয়া। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনের সব ভুল গুলো ক্ষমা করে দিয়ে আমাদেরকে তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করে দিবেন।

নামাজ শেষ হতেই রাতের একটার সময় অর্পন,স্বাধীন,মিলন,সাজু,বাড়িতে পা রাখে।রিফাত এখনো সুস্থ হয়নি।তবে ঘরে শুয়ে সে-ও হালকা জিকির এবং দোয়া,দূরদ পাঠ করতে থাকে।স্বামী ঘরে পা রাখতেই পুতুল নামাজের সালাম শেষ করে মোনাজাতে দুই হাত তোলে।তার বিরবির করে কথাবলার চেষ্টা সবটাই নজরে পড়ে।পুতুল জানেও না।তার ডানে তার স্বামী দাঁড়িয়ে তাঁকে অনেকখন পরক্ষ করছে।

সকালে কাক ডাকা ভোরের জেগেছে অর্পণ।ফজরের নামাজ পড়ে এসে মাঠে গেছে লুঙ্গি পরে।অনেকদিন হলো অভ্যাস নেই।আবার নতুন করে লুঙ্গি পড়ায় হিমশিম খাচ্ছে।তবুও আজ ক্ষেতে নামল।সেখানে স্বাধীন ভুট্টা ক্ষেতে দাঁড়িয়ে গরুর জন্য ঘাস কাটছে।অর্পনকে এখানে আশা করেননি।এই ছেলে এখানে কি মনে করে?স্বাধীন ঘাস কা*টা বন্ধ করে এগিয়ে আসে।

-;কিছু বলবে তুমি।

অর্পণ লুঙ্গিটা হাঁটু অবধি টেনে কোমড়ে গিট্টু মেরে কাচি নিয়ে সে-ও ঘাস কা*টতে লাগল।
অর্পণ চুপ থাকায়।স্বাধীন চুপ করে কাজে মনযোগ দিলো।কাজের এক ফাঁকে অর্পণ বলল,

আমি পুতুলকে নিয়ে লন্ডনে যেতে চাই।ওর ডাক্তারি পরীক্ষা জন্য।এবং আরেকটি কারণ আছে?

কি কারণ?

পুতুল কানে শুনতে পায়।কিন্তু মুখে বলতে পারে না।আপনি আপনার মতো করে অনেক চেষ্টা করেছেন।এবার আমি তার স্বামী হিসেবে আরেকটিবার শেষ চেষ্টা করতে চাই।যদি আল্লাহ তায়া’লা রহম করেন।সবটা ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ।

অর্পণের কথায় স্বাধীনের হাত থেমেছে।ওর দিকে তাকিয়ে রয়।মেয়েটা নিজের পরিচয় গড়ুক তাতে আপত্তি নেই।কিন্তু পুতুল কি কোনোদিন কথা বলতে পারবে?ওকে আগেই আশা দেওয়া ঠিক হবে?পরে যখন ভালো কিছু না হবে।ওর মন ভেঙে যাবে।ওহ কষ্ট পাবে।

অর্পণ ঘাস কাটতে কাটতে আত্ম বিশ্বাসের সাথে বলল।কিছু হবে না।বরং সবকিছু ঠিক হবে।আমার ওপর ভরসা রাখুন।

সেটাই তোও ভয়ের কারণ!আমি তোমাকে ভরসা করব কি করে?তুমি তোও তোমার ছোট্ট মামার আদরের ভাগ্নে।

স্বাধীনের কথায় অর্পণ এর হাত কয়েক সেকেন্ড জন্য থামালেও আবার কাজ করতে করতে বলল,

সে সম্পর্কে আমার মামা হলেও আমি তাকে মামা হিসেবে মানি না।যে অন্যের ক্ষতি করে আনন্দ পায়।সে কখনোই ভালো মানুষ হতে পারে না।যার একদিন পরের ক্ষতি করতে হাত কাপেঁ নিই।সে নিজের পরিবারকে কতটা ভালো রাখবে।হ্যা,আমি মানছি।আমার শৈশব একটু অন্য রকম কে*টেছে!আমি আর দশটা বাচ্চাদের মতো নই।একটু দূরন্ত এবং চটপটে ছিলাম।ভুলভাল কাজ কর্ম যেমন করতাম।তেমনই আব্বু হাতে খুব বকা এবং মা’র খেতাম।সময়ের সাথে সেসব বদলেছে।আমি আর ছোট্ট নেই।এখন বড় হয়েছি।দায়িত্ব কি? সেটা বুঝতে শিখেছি।এখন মা,বাবার পাশাপাশি আমার একটা মিষ্টি বউ আছে।যার ভালো থাকাতেই আমার স্বস্তি।আমার অন্য রকম শান্তি।তারজন্য বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা মানেটাকে।তার ছোঁয়া আমার এই আমিটাকে বদলে নিয়েছি।বাকি যে বদ মেজাজ রয়েছে সেটা তার সঙ্গপর্ণে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

আমি দুই,একদিনের মধ্যে আমার এবং পুতুলের জন্য পার্সপোট তৈরি করতে কাগজপত্র অফিসে জমা দিতে যাব।পার্সপোট দ্রুত তৈরি করা জন্য বলব।তারা আজেন্ট পনেরো দিনের মধ্যে করে দিবে।অর্পণ হাতের কাজ শেষ করে ভ্যানগাড়িতে সবটা তুলে দিলো।লুঙ্গির গিট্টু খুলে নামিয়ে নিলো।চললাম।

কল চাপার শব্দে পুতুল ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি দিতেই দেখতে পায়।অর্পণের ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে।মনে হয় রোদের মধ্যে ছিল।পুতুল হাতে করে গামছা নিয়ে এগিয়ে যায়।অর্পন হাত মুখ ধুয়ে নিতেই পুতুলকে সামনে দেখতে পায়।গামছাটা এগিয়ে দিতেই চুপচাপ নিয়ে সেটা দিয়ে মুখ এবং হাত,পা মুছতে লাগল।

১৩৮.
মিলন তুমি বল তোও বড় হয়ে কি হতে চাও?

স্যার,আমি বড় হয়ে বিয়ে করতে চাই?

কি?

হ্যা,স্যার।আমার মা,বাবার জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ আনতে চাই।

আমি বিয়ের কথা বলিনি।বলছি,বড় হয়ে কি হতে চাও।মানে পুলিশ,ডাক্তার,ইন্জিনিয়ারি আরকি?

কেনো স্যার?আমি ওগুলো হব কেন?পুলিশ হলে তোও পাবলিককে বিনা কারণে মে*রে মে*রে জেলে দিবো।এসব ফালতু কাজে হাত চুলকায় বেশি।আর পাবলিক আমায় এসবের জন্য ডিটারজেন্ট পাউডার ছাড়া ধুয়ে দিবে।আর যদি ডাক্তার হতে যাই।একবার ভাবুনতো,রোগীর মুখ বন্ধ।আমার হাত চলবে বেশি।একশ বিশটা সুই লাগাবো।সেটা কোথায় আর কোথায় ফেলবো আমি নিজেই জানিনা।যার ওপর সুঁইয়ের বর্ষণ চলবে।সে না পারবে কাউকে বলতে আর না পারবে দেখাতে।এবার ভাবুন কোথায় কোথায় পড়বে?আর ইন্জিনিয়ারিং পড়লে অটো পাশের মতো উল্টো বিল্ডিং বানাবো।যার না থাকবে দরজা আর না থাকবে সিঁড়ি।

তাহলে তুমি বিয়ে করবে?

হ্যাঁ,অবশ্যই করব।

বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি?

কেন,আমি যা খাব তাই খাবে।

আরে বাবা,তুমি এখন তোমার বাবার টাকায় খাচ্ছো,পড়ছো,ঘুমাচ্ছ।তাঁকে কি করবে?

সে যেহেতু আমার বউ হবে।তাহলে সে-ও আমার মতো আমার বাবা-র টাকায় খাবে,পড়বে,ঘুমাবে।

আরে,আমি বলতে চাইছি।তুমি নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে তারপরে বিয়ে কর?

কেনো?স্যার,আমি তোও আমার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।আপনার পায়ে ওপর তোও দাড়াইনি।তাহলে নিজের পায়ে ওপর দাঁড়িয়ে থাকার কথা আসছে কেন?

এই ছেলে বড্ড বেশি কথা বলো।বেয়াদব।যা-ও বাহিরে গিয়ে কান ধরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকো।

যা বাবা আমি আবার কি করলাম।আজকাল দেখছি ভালো কথার দাম নেই।দূর যাতার মাথা।

মিলন বিরবির করে চলে যেতেই স্যার আস্তে আস্তে ব’লে উঠল,

সুখে আছো, সুখেই থাকো!
ভু’তের কাছে যাওয়ার দরকার নাই,কি”ল খা’বি।

শাফকাত খান বাংলাদেশে আসছে দুইদিন হলো।বউ,ছেলে,মেয়ে বিদেশে রেখে দেশের মাটিতে ফিরেছে।তার আদরের ভাগ্নের খবর নিতে রুহিতপুরে মাটিতে হক সাহেবের বাড়িতে পা রাখে।পুতুল তখন পুকুর পাড়ে বসে গোসল করার জন্য গায়ে সাবান মাখছে।
এমন সময় পিছন থেকে কেউ তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই চমকে উঠে।রাগে শরীর কাঁপতে থাকে।পিছনে মানুষটিকে ঘুরেই ঠাসস করে থা*প্পড় মেরে বসে।এইদিকে পুতুলের সাথে একটু দুষ্টুমি করতে গিয়ে বউয়ের হাতে থাপ্পড় খাবে।এটা তার কল্পনাতে ছিল না।গালে হাত দিয়ে উজবুক মতো তাকিয়ে বলল,

বউ তুমি আমাকে মারতে পারলা।তোমার দশটা না পাঁচটা না মাত্র একটা জামাই।তার ওপর থাপ্পড় মেরে দিলে।এটাতো পুরুষ নির্যাতন হলো।হায় হায়।অর্পণ শেষমেষ বউয়ের হাতের মা’র খেলি।আমি দেখি সবকিছুতে অলরাউন্ডার হয়ে খেলাম।বউয়ের হাতে কিল,ঘুষি,খামচি,জুতার বারি,শেষে থাপ্পড়।আহারে আমি এই দুঃখ কথায় রাখব।বউ শুধু কথায় কথায় রাগ,বকাঝকা ছাড়ে।একটু আদর করে ভালোবেসে কাছে টানে না।ছেহহ শালা জীবনটা আমার গেলো বউয়ের বিরহে।

এইদিকে রাগের বসে না দেখেই থাপ্পড় মেরে বসেছে পুতুল।যখন দেখল এটা তার স্বামী তখন মুখে অলরেডি হাত চলে গেছে।চোখ পিটপিট করে লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও লাভ হলো না।জামাই তাঁকে ঠিকঠাক কথা শুনিয়ে বিস্মিত করে দিলো।ইস কি বিচ্ছিরী কান্ড ঘটে গেলো?

পুতুল কোনো দিশা না পেয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দিতে নিলেই অর্পন পিছন থেকে হাত টান মা’রে।এক টানে অর্পনের বুকের মধ্যে এসে পরে।

বউ শুধু পালাই পালাই করে।কিন্তু আজ ছাড়ছি না।

রেডি ওয়ান,টু,থ্রি।অর্পন,পুতুলকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে।হঠাৎ লাফিয়ে পড়তে পুতুল অর্পনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।পানির মধ্যে থেকে দু’জনে মাথা তুলতেই পুতুলের নাকে,মুখে পানি যেতেই কাশি উঠে।
রাগী চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রয়।আর অর্পন মিষ্টি হেঁসে বউয়ের কপালে চুমু বসিয়ে দেয়।বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে খালি গলায় স্বর তুলতে তুলতে কানে হাত রাখে।

লক্ষী সোনা রাগ করে না একটু হাসো প্লিজ
ভাল্লাগে না আর হবে না করছি যে প্রমিস।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫০
১৩৯.
অর্পণ কাপড় চেঞ্জ করে রুম থেকে বের হতেই শাফাকাত খানের মুখোমুখি হলো।হঠাৎ ছোট্ট মামাকে সে এখানে আশা করেনি।

তুমি,তুমি এখানে কেনো?তোমাকে কে আসতে ব’লেছে?

একমাত্র ভাগ্নেকে দেখতে কি কারো অনুমতি লাগে?শুনলাম সুন্দরী রমনীকে ঘরে তুলেছো!তাও আবার আমার জিনিসের কার্বন কপি।তা কোথায় সে?ডাকো তাকে, দেখে একটু ধন্য হই।

মুখ সামলে কথা বলুন?আপনি ভুলে যাচ্ছেন কার সম্পর্কে কথা বলছেন।সে আমার প্রিয়তমা।তাকে কটুক্তি করা মানে আমাকেই করা।আপনি আমার গুরুজন এবং সম্পর্কের মান আপনার কাছে নাই থাকতে পারে।আমি গুরুজন এবং সম্পর্কে মান রাখতে জানি।প্রথমবার নিজেকে সংযোজত করেছি।তারমানে এই নয় বারবার নিজেকে সংযোজত করব।এখানে কোনো তামাশা হোক আমি চাই না।চলে যান এখান থেকে।অর্পন ঠান্ডা মাথায় মুখ গম্ভীর করে কথাগুলো ব’লে।শাফাকাত খান আরো কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু বলতে পারলেন না।

ঠিক আছে!এখানে কথা না বলতে চাইলে খান বাড়িতে আসো কথা আছে।

হুম।

শাফাকাত খান বেরিয়ে যেতেই অর্পন দুই হাতের মুঠো বন্ধ করে রাগে ফুঁসতে লাগলো।

মিলন,সাজু আমি একটা কাজে বাহিরে যাচ্ছি ফিরতে দেড়ি হবে।তোমার আপুর খেয়াল রেখো।অর্পনের কথায় দুই ভাই মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।

অর্পন গাড়িতে চড়ে বসতেই ড্রাইভার খান বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।
শহর একটি কোলাহল পরিবেশ।গ্রামের মানুষ হঠাৎ করে শহরে আসলেই কেউ কেউ অবাক হয়।আবার কেউ এত কোলাহল পরিবেশ পচ্ছন্দ করে না।তারা গ্রামে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।সেই কোলাহল পরিবেশ ছেড়ে অর্পন নিজের পরিবার এবং বউয়ের সাথে গ্রামে দিব্যি শান্তিতে কা*টাছিলো!আজ আবার তাকে ফিরতে হচ্ছে।যথাযথ সময়ে খান বাড়ির বড় গেইটের সামনে গাড়ি আসতেই দুই দিকে গেট ভাগ হয়ে সরে যেতেই গাড়িটা ভিতরে ঢুকে।এতগুলো বছর পর খান বাড়িতেই রাজপুত্র আগমন ঘটে।দারোয়ান আব্দুর চাচা অর্পনের গাড়ি দেখতে পেয়ে চিতকার করে বড় সাহেবকে ডাকতে থাকে।

বড় সাহেব,বড় সাহেব আমাদের রাজপুত্র আসছে।আপনার আদরের নাতি এসেছে।
আব্দুর কথায় জামশেদ উল্লাহ খান খুশি হয়ে বাহিরে নামতেই নিজের নাতিকে দেখতে পান।

অ.র্প.ন!নানাভাই আমার।আজ কতগুলো বছর পর খান বাড়িতেই পা রাখলে।আয় আমার বুকে আয়।জামশেদ উল্লাহ জড়িয়ে ধরেন।কিন্তু অর্পনের সেই দিকে মনযোগ নেই।সে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে।তার মধ্যে আনন্দের কোনো ছিটেফোঁটা নেই।এইদিকে অর্পনের আসার খবর পেয়ে তার নানী জান ছুটে আসেন।নাতীকে জড়িয়ে কান্না ভেঙে পড়েন।আজ তার খুশির দিন।তার ছোট ছেলে অনেক বছর পর বাড়িতে পা রাখতেই তার নাতির মুখ দর্শন হলো।

বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন?আয় ভেতরে আয়।নানীজান তার হাত টেনে ভিতরে টেনে নিয়ে সোফায় বসায়।

এই কে কথায় আছিস।তাড়াতাড়ি টেবিলে খাবার সাজা।আজ আমি নিজের হাতে আমার নাতিকে খাওয়াবো।

নানী জান আমি এখানে বসতে কিংবা খেতে আসি নিই।যার জন্য আমাকে এতদূর আসতে হয়েছে তাকে ডাকুন।আমি কথা ব’লে চলে যাব।

কি বলছিস তুই?আমি তোকে এত তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে দিব না?কয়েকটা দিন থাক আমার কাছে।

এক সময় সেই পরিবেশটা ছিল।কিন্তু আজ সবটা ভিন্ন।আমার আমিটাকে তোমার আদরের ছোট ছেলে ভাঙ্গা আয়নার মতো আমার মনটা ভেঙে দিয়েছে।যেটা কখনোই জোড়া লাগবে না।আমিও চাই না এই ভাঙা সম্পর্কে কোনো নাম দিতে।তাকে ডাকো।কথা আছে।

আমাকে ডাকতে হবে না।আমি এখানেই আছি।শাফাকাত খান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে ব’লে।

অর্পন পাঞ্জাবি হাতা গুটিয়ে নিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আঙুল তুলে বলল,

অতীতে যা করেছেন।তার শাস্তি ভোগ করা এখনো বাকি মিস্টার শাফাকাত খান।আপনার কারণে একটা সংসার ভেঙেছে।শুধু মাত্র আপনি দায়ী।রাজিয়া মা’কে আমি বাঁচাতে পারিনি।কিন্তু তার কন্যাকে বাঁচাতে।যদি আমার জান চলে যায় তবে যাবে।কিন্তু রাজিয়া মায়ের পরিনতি আমার প্রিয়তমার সঙ্গে করতে দিবো না।কিছুতেই না।তার সম্মান,তার ইজ্জত হেফাজত করতে তার স্বামী জনাব অর্পন তালুকদার এখনো বেঁচে আছে।তাই আমার প্রিয়তমার দিকে হাত বাড়াতে হলে আমার মুখোমুখি আগে হতে হবে।

বাহা,বউ দেখছি ভালোই বশ করেছে।তা বউ কি মন্ত্র পড়ালো?যে বউয়ের পালিত কুত্তা হয়ে গেলি।ওই মেয়ের তোও একটা ব্যাবস্থা করতে হয়।শাফাকাত খানের কথা শেষ হতে দেড়ি তার নাক বরাবর ঘুষি মারতে দেড়ি হলো না।অর্পনের হঠাৎ আক্রমণে শাফাকাত খান দিশা না পেয়ে সোফায় পড়ে যান।অর্পন সেই সোফার একপাশে পা রেখে আঙুল তুলে বলল,

ওহ আমার প্রিয়তমা,আমার বউ।আর তালুকদার বাড়ির আমানতের দিকে তুমি চোখ তুলে তাকানোর কথা ভাবলেই বা কি করে।কোন সাহসে তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা মুখে আনলে।আমার ইচ্ছে করছে তোমার ওই জিহ্বা কে*টে দিতে।যে জিহ্বা দ্বারা আমার প্রিয়তমাকে অসম্মান করে।

অর্পনের কাজে জামশেদ উল্লাহ খান এবং তার বেগম দুই মামা,ভাগ্নেকে আলাদা করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু অর্পন রাগে ফুঁসছে।তাকে সামলানো দায়।বাড়ির গার্ড ডেকে তাদের আলাদা করা হলো।শাফাকাত খান ঠোঁটের কিনারে র*ক্ত মুছতে মুছতে বলল,

তুই আমার গায়ে হাত তুলি।

হ্যা,তুললাম।তোমার এতখনে শুকরিয়া করা উচিত ছিলো।তোমাকে আ*ঘাত করেছি।কিন্তু জানে মা*রিনি।দ্বিতীয়বার তোমার ওই নোংরা মুখে আমার বউয়ের নাম নিবেনা।যদি চেষ্টা করেছো।খোদার কসম।তোমাকে ধ্বংস করে দিব।

অর্পন গার্ডদের ধাক্কা দিয়ে খান বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।অর্পনের নানী জান সেই কখন থেকে কান্না করছেন।এসব কি হলো?তার সুন্দর সংসারের কোন কা*লনাগিনী ছায়া পড়লো।

অর্পন এর রাগ দেখে ড্রাইভার বুঝতে পারলো।এবারেও গন্ডগোল হয়েছে।যবে থেকে অর্পনের হয়ে কাজ করে তবে থেকেই এমন ঝগড়াঝাটি দেখতে পায়।এতদিন মুখে মুখে চলতো।আজ সরাসরি হাতাহাতি হয়ে গেছে।স্যারের রাগ প্রচুর।এই রাগ না কমা পর্যন্ত তার সামনে যাওয়া যাবে না।অফিসের সামনে গাড়ি থামতেই অর্পন নেমে গেলো।ফোন করে পার্টি লোকদের খবর দিল।এবং জরুরি মিটিং বসার আহ্বান জানালো।

১৪০.
পুতুলের দুপুরের ভাত ঘুম ভেঙে যেতেই অর্পনকে দেখতে পেলো না।পুতুল নিজের লম্বা চুলগুলো হাত খোপা করে বের হয়ে পুকুর পাড়ে গেলো।চারদিকে তাকিয়ে কোথায় তাঁকে খুঁজে পেলো না।লোকটা তাঁকে না ব’লে কথায় চলে গেলো।কখনো না ব’লে কোথায় যায় না।পুতুল মন খারাপ করে নিজের ঘরে বসে পড়ে।পানির গ্লাসের নিচে ছোট্ট চিরকুটটা দেখে কপালে চিন্তা ভাজ ফেলে।চিরকুটটা খুলে পড়তেই মুখটা চুপসে গেলো।তার জনাব তাকে না জাগিয়ে ঢাকায় একা চলে গেছে।হঠাৎ কী না-কি কাজ পড়ে গেছে।একবার ডেকে বলে গেলে কি হতো?লোকটা তাকে ঘুমে দেখে একবার ডাকলো না।এটা কোনো কথা।দূর ভাল্লাগে না।

অর্পন চলে যাওয়া পুতুলের খারাপ লাগাটা আরো বেশি করে ঝেকেঁ ধরে।স্বামীকে সে এখনই মিস করছে।তাহলে তাকে ছাড়া বাকি দিনগুলো কা*টাবে কি করে?

জামশেদ উল্লাহ খানের দিকে তাকিয়ে শাফাকাত খান বলল,

পিপীলিকা পাখা গজায় মরিবার তরে।তোমার নাতিকে এর মূল্য দিতে হবে।এতদিন বোনের ছেলে ব’লে কিছু বলিনি।কিন্তু আজ যেটা করলো তারপর ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না।ওহ খুব বেড়েছে।রাজনীতি নিয়ে ওর খুব সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গায়।সেই গদিই যদি কেঁড়ে নেই।তাহলেই ওকে উচিত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব।তুমি এতদিন কিছু যখন করতে পারোনিই।তখন যা করার আমি করব।হয় ওহ থাকবে।আর না হয় আমি থাকব।দুই রাজা একসাথে রাজ্য পরিচালনা করতে পারে না।শাফাকাত কথায় অর্পনের নানীজান আঁতকে ওঠেন।তার নাতি কিছু হলে মেয়ে এবং মেয়ে জামাই বাঁচবে না।ছেলেকে বোঝাতে তার পিছনে ছুটে।এইদিকে জামশেদ উল্লাহ খানকে ছেলে কিসের আভাস দিল?বুঝতে পারছেন না।তবে খারাপ এবং ভয়ংকর কিছু হওয়ার পূর্ব আভাস এখনই পাচ্ছেন।

অর্পনকে শেষ করতেই তার শত্রুর সাথে হাত মিলিয়েছে শাফাকাত খান।উদ্দেশ্য একটাই অর্পনের রাজনীতির ক্যারিয়ারে লাল কালির দাগ বসিয়ে দেওয়া।যাঁর ফলে অর্পন এর ক্যারিয়ার শেষ।তাঁকে দূর্বল করেই তার প্রাণনাশ করা।তার আপন জনই তার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।অর্পন জন্য মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি হচ্ছে।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫১
১৪১.
মেশিনের সাহায্যে পুকুরের পানি সেচে
ধানের ক্ষেতে দিয়েছে।সেখানে এত মাছ পানির সাথে আসবে ভাবনার মাঝেই ছিল না।সেই পানির সাথে মাছ আসছে।এগুলো দেখে তাদের খুশি ধরে না।মিলন,সাজু বরশি দিয়ে মাছ ধরছে।স্বাধীন ক্ষেতে নেমেছে বাইন মাছ,শিং মাছ,কই,পুটি হাড়িতে জায়গায় করেছে।রেনু লাকড়ি ঘর থেকে চিকন কঞ্জি নিয়ে আসছে ক্ষেতে এসেই দুই ছেলেকে ধমক মেরে বলল,

তোদের দুই ভাইকে বললাম স্কুলে যেতে আর তোরা দুইজন কি করলি?ব্যাগ বাড়িতে ফেলে এসে মাছ ধরা হচ্ছে।জলতি ওঠ।কথা না শুনলে মা’র খাবি।

আম্মু আজকে স্কুলে যামু না।কালকে যামু নিই।

চুপ।বেশি কথা ব’লেই মা’রবো!ওঠ।ব্যাগ কাধেঁ নিয়ে স্কুলে যা।আজকে স্কুলে না গেলে তোদের খাওয়া বন্ধ।পড়াশোনা না করলে কোনো কথা শুনব না।রেনুর কথায় দুই ভাই গাল ফুলিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাটতে হাটতে ইচ্ছে করে কাঁদা পানিতে পড়ে গেলো।ছেলেদের কৃতি কলাপে রেনু কঞ্জি দিয়ে দৌড়ানি দিতেই বাবার পিছনে লুকিয়ে পড়ে।

কত বড় পড়াচোর হয়েছে।ইচ্ছে করে পরে এমনটা করলো যাতে স্কুলে না যেতে হয়।আজ তিন বাপ পুত্রের খাওয়া বন্ধ।বাপের আহ্লাদে বাদর হয়েছো না।থাক মাঠে পরে বাড়িতে আসতে হবে না।আসলেই হাড্ডিগুড্ডি গুড়া গুড়া করে ফেলব।বউয়ের বকাঝকা দেখে স্বাধীন নিজেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।ছেলেদের জন্য আজ তার কপালেও ভাত নেই।

আব্বু আজকে আম্মু ভাত দিবেনা বলেছে।তাহলে চলো বিরিয়ানি খাই।

চুপ।আর তাড়াতাড়ি বাসায় চল।

রাজনীতি এমন একটা জায়গায় সেখানে সবাই রাজ করতে চায়।লুটপাট তাদের ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়।অসৎ সঙ্গ বেশিই থাকে।এই রাজনীতিতে সবাই স্বার্থপর।গদিতে বসে জনগনের হোক নষ্ট করে।আর জনগন কষ্টে ম*রে!তাতে গদিতে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কিছুই যা আসে না।একজন সৎ এবং নীতিবান নব্য রাজনীতিবিদ এগিয়ে আসবে।জনগণে সুখে,দূঃখে পাশে দাড়াবে।তা তারা যায় না।সাহায্য করবে এগুলো পচ্ছন্দ হয় না।সৎ সাথে কাজ করতে দিতে চায় না।একজনের ভালো করতে দেখলেই কথা উঠে।হয় গদি ছাড়।আর নয় হয় ম’র!সহজেই গদি ছাড়লেই অসৎসঙ্গের বসবাস।আর সৎ মানুষের সর্বনাশ।জনগনের করুন পরিহাস ঘটে।তিন শেষে খারাপ লোকগুলোই রাজত্ব করে।আর ভালো লোকের ঠাঁই হয় কবরের ঘরে।আর নয় হয় পঙ্গুতো হয়ে সারাজীবন পড়ে থাক বিছানায়।

বোরহানীবাগ মোহম্মদ নইমুদ্দিনের আট তলা বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে।আগুনের উৎসটা শুরু হয় নিচ থেকেই।তাই ওই বিল্ডিং থেকে কেউ বের হতে পারেনি।যারা চেষ্টা করেছে।তারা বেলকনিতে কিংবা দরজার ভিতরে আটকে পরে,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে।কালো বিষাক্ত ধোঁয়া অজ্ঞান হয়েছিল।দেহখানিকে আগুনে ঝলসে দিয়ে যায়।ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।এই পযন্ত সত্তুরের বেশি মৃত্যর লাশ।আর পুড়া,অর্ধশতাধিক।সরকার থেকে সাহায্য জন্য বলা হয়।তারা সাহায্য জন্য নিহত পরিবারকে দুই লাখ।এবং আহত পরিবারকে নব্বই হাজার টাকা দেওয়া কথা দেন।কিন্তু সময় বয়ে যায়।টাকা আসে না।অর্পন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মৃত্যু মিছিলটি বাড়ছে।একশ ঘর ছাড়িয়েছে।আহতদের অবস্থা আশঙ্কা জনক।আর এইদিকে তাদের পার্টি লোকেরা দুই নাম্বারি করে টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে।সে প্রতিবাদ করায় পার্টিলোকই তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।অর্পন চুপচাপ থাকবে না।সে এটার শেষ দেখে ছাড়বে।অর্পন পার্টি লোকজনের সাথে তর্কাতর্কি করে বেরিয়ে আসে।তার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে।আল্লাহ নাম নিয়ে কাগজে লিখিত বয়ান এবং পার্টি লোকদের বিরুদ্ধে কেস করতে বের হয় প্রমাণসহ।

মেইন সড়ক পথ ধরে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টায় যখন ব্যাস্ত।তখনই গুলির শব্দ শুনা যায়।অর্পনের ড্রাইভার হাতে গুলি লাগতেই ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে।অর্পন নিজের হাতের মোটা ফাইলটা পিছনে রেখে গাড়ি ঘুড়াতে শুরু করে।তাকে সরাতে পারলেই কাদের লাভ হবে তা এতখনে খুব ভালো করে বুঝে গেছে।

কিন্তু অর্পন আজ হার মানবে না।ড্রাইভারকে সরিয়ে নিজে গাড়ি চালাতে শুরু করে।আকাঁ বাকাঁ পথের মতো গাড়িটা ঝুটতে থাকে।কোথায়ই গাড়ি গন্তব্যে ছুটে চলছে জানা নেই।নিজেকে এই মুহূর্তে নিরাপদে রাখাটা জরুরি।তার ওপর নির্ভর করছে তার বউ,পরিবার,আপন মানুষগুলোর ভালো থাকা।তার কিছু হলে তারা ঠিক থাকবে না।চোখের সামনে মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে।বাবার বকাঝকাগুলো আজ খুব করে মনে পড়ে।বউয়ের জন্য কলিজা কেঁপে ওঠে।তাকে কথা দিয়েছিল।জীবনে যা কিছু হয়ে যাক।সারাটি জীবন ছায়ার মতো পাশে রবে।অর্পন একটুও অমনোযোগ হতেই তিন রাস্তার মোড় থেকে একটা বড় গাড়ি এসে ধা*ক্কা মারে।অর্পনের গাড়িটা বারি খেয়ে উল্টে পাশের খাদে পরে গেলো।তার কয়েক সেকেন্ড মধ্যে গাড়িটা গরম হয়ে ব্লাস্ট হয়ে যায়।
১৪২.
রাত দু’টো বাজে।কোনো শোরগোল নেই।অর্পন হাসপাতালে বেডে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।মাথাটা ঝিমঝিম করছে।পা নাড়াতে পারছে না।শরীরে বিভিন্ন জায়গায় কা*টাছেঁড়া দাগ।ভিতর থেকেই দ্বীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।আজ দুইদিন হয়েছে সে হাসপাতালে ভর্তি।বাড়ির কারো সাথে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি।জিহান,রিহানের সাথে তার শেষ কথা হয়েছিল।ওরাই অর্পনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।ড্রাইভার অবস্থা ভালো নয়।সে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।

বলছিলাম কি ভাই?একটিবার বাড়িতে তোমার খবরটা দেই।

অর্পন আস্তে করে বলল,

না।বাড়িতে খবর দিলে ওরা চিন্তা করবে।আর আমার মা’কে খুব ভালো করেই জানা আছে। যদি শুনে আমার এই অবস্থা।তাহলে কেঁদেকে*টে বাড়ি মাথায় তুলবে।মায়ের মনটা নরম।আদরের সন্তানের কিছু হলে ঠিক থাকে না।তারচেয়ে বরং কয়েকটা দিন যাক সবটা আমি সামলে নিব।

তোদের ভাবীর কি খবর?

ভালো নেই ভাই।তুমি আসার পর আরো চুপচাপ হয়ে গেছে।তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে।সে তোমায় প্রচুর মিস করে।তোমার সাথে কথা বলার জন্য ছটপট করছে।

অর্পন অস্যয়নীয় ব্যাথা সয্য করার মাঝে একটু মুচকি হাসি দিলো।কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলল,

ওখানকার কি খবর?

ভাই তোমাকে আ*ঘাত করার পেছনে ওদের কোনো মোটিভেশন আছে।শুধু শুধু তোমাকে আঘাত করেনি।

জানি আমি।আর এসব কে বা কারা করছে?সবটা জানা আছে।ওরা চায় আমি সরে যাই।
কিন্তু আমি এত সহজে হার মানবো না।নিজের কথা ভেবে এই পথে আসা হয়নি।আমি এসেছি জনগনের কথা ভেবে।তাদেরকে একটা সুন্দর দেশ গড়ার লক্ষ্যে।আর আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরবো না।এইসব বাদ দে গাড়ি বের কর!এখানে ভালো লাগছে না।বউটাকে খুব মিস করছি।গ্রামে যাব।

কিন্তু ভাই তুমি গ্রামে গেলে চাচী মা তোও এমনই জেনে যাবে।

তোরা না ব’লে জানতে পারবেনা।আপাদত সে নিজের প্রফেশন নিয়ে ব্যাস্ত আছে।রোগীর সেবা করাটাই তার ধর্ম।সে রোগীর সাথে কোনো ক্নফোমাইজ করবে না।আর বউকে আমি সামলে নিতে পারব।

ওকে,ভাই ব্যাবস্থা করছি।

লেবু গাছ থেকে লেবু পারতে গিয়ে হাতের মধ্যে কাঁ*টা ফুটেছে।পুতুল বুড়ো আঙুল চেপে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে।এমন সময় বাড়ির সামনে একটা বড় গাড়ি আসতেই পুতুলের কপালে চিন্তা ভাজঁ পরে।ডান হাত ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে গেলো।গাড়ির দরজা খুলতেই পুতুল চমকে উঠে।হাতের লেবু ফেলে ছুটে আসে।অর্পনের গালে হাত বুলিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।এসব কি করে হয়েছে? জানতে চায়।

ভাবী আপনি প্লিজ শান্ত হন।তেমন কিছু হয় নিই।ওই ঢাকায় একটা গাড়ির সাথে ভাইয়ের গাড়ির ধাক্কা লাগে।আর তারপর গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে যায়।ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট আরকি।

পুতুল এক্সিডেন্ট শব্দটা শুনে ভয় পেয়ে যায়। অর্পনকে শক্ত করে জড়িয়ে কান্না ভেঙে পরে।পুতুলের জড়িয়ে ধরায় অর্পনের ব্যান্ডেজ করা জায়গায় আবার ব্যাথা লাগে।তবুও প্রিয় মানুষটির এত অস্থিরতা দেখে তার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে।পুতুলের মুখটা তার বুক থেকে তুলতে চাইলেও।পুতুল মাথা তুললো না।আর না ছাড়লো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।পুতুল তাঁকে জড়িয়ে ধরতেই জিহান,রিহান অন্য দিকে তাকিয়ে রয়।বাড়ির উঠনে এরমধ্যেই স্বাধীন,রেনু,আসে।মামা,মমীকে দেখে পুতুল তাকে ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।অর্পন এর এই অবস্থার কথা শুনে।তাকে সাবধানে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে।স্বাধীন,জিহান,রিহান সাহায্যে পুতুলের ঘরের বিছানায় তার ঠাঁই হয়।মাথার আঘাতের জায়গায় এখনো ঝিনঝিন করছে।বিশ্রাম নিলে হয়তো সেরে যাবে।পুতুল অর্পনের হাত ধরে বসে রইলো।আর অর্পন চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।একটুও পরেই ঘুমের মেডিসিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে।

আছরের আজান পরতেই অর্পন চোখ মেলে তাকায়।পুতুল নামাজ পড়ছে।ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে আবার চোখটা বুঝতে চাইলে মায়ের মুখটা দেখতে পায়।ভাবে হয়তো কল্পনা।কিন্তু তার কল্পনাকে মিথ্যে করে রাবেয়া ঠাসস করে ছেলের হাতের বাহুতে থাপ্পড় লাগিয়ে বসেন।অর্পন হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে ডাকে।

আম্মু তু…মি?

কি ভেবেছিস?মায়ের কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটা লুকিয়ে যাবি।আর আমি বুঝতে পারব না।বলি তোকে পেটে আমি নিয়েছিলাম।না-কি তুই আমায় নিয়েছিলি।হারামজাদা এত বড় এক্সিডেন্ট করে আমার কাছে বলার প্রয়োজনবোধ করলো না।আমি যে তার মা সেটা তার মনেই ছিল না।মায়ের কষ্ট তুই কি বুঝবি?মায়ের কষ্ট বোঝার মতো তোর বয়স হয়েছে।আমাকে চিন্তা রাখতে আর কাঁদাতে খুব ভালো লাগে না রে।রাবেয়া ছেলেকে বকছেন আবার নিজেই ভ্যা,ভ্যা করে কাঁদছেন।পুতুলের নামাজ শেষ করে ছুটে আসে।অর্পন মায়ের রাগ ভাঙ্গতে মা,মা ব’লে ডাকতে লাগল।কিন্তু রাবেয়া থামছে না।

এই যে আমার এই অবস্থা দেখে কান্না করছো।আমার কি ভালো লাগছে বলো।
তুমি কান্না করবে ব’লেই আমি বলতে চাইনি।প্লিজ আম্মু কেঁদো না।আমার কষ্ট হচ্ছে।তাছাড়া তোমাকে খবরটা দিল কে?আমি জিহান,রিহানকে বারবার বলতে বারণ করেছিলাম।

তুই বারণ করলে কি হবে?যে খবর দেওয়ার সে ঠিকই দিয়েছে।

কে দিয়েছে?

কে আবার?আমার পুতুল মা দিয়েছে।

অর্পন হা করে তাকিয়ে রইল।

ওরেব্বাস।যার জন্য করলাম চুরি।সে দিল আইকা গলা বাঁশ।

অর্পনের রিয়াকশন দেখে পুতুল,রাবেয়ার পিছনে লুকিয়ে পড়ে।অর্পন যে তার পরিবারকে পুরো বিষয়টি ইনর্ফম করেনি।তা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

চলবে…