সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০২

0
126

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—২

৫.
দুই পরিবার চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে রয়েছে সোফার উপরে। তাদের কপালের চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে একই কারণে। মৌনতা ভেংগে জামিলা শিকদার বলে উঠলেন

—এরা তো বিয়ের কথা শুনেই পালিয়ে গেলো। এদের দুইজনকে যদি জোড় করে বিয়ের পিড়িতেও বসায় দিলেও এরা যে বিয়ের দিনে পালাবেনা সে বিষয়ের কি আদৌ কোন গ্যারেন্টি আছে?

জামিলা শিকদারের কথায় একমত জানালেন নিশিতা তালুকদার। তাদের কথার প্রতিউত্তরে বলে উঠলেন রুহুল তালুকদার

—আমরা কি বলি তাদের টপিক টা বাদ দিয়ে আমরা অভ্র আর রুহানীর বিয়ে দিয়ে দেই তাহলেই ত হয়।

রুহুল তালুকদারের কথায় তিন জোড়া চোখ রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই ঢোক গিলেন রুহুল তালুকদার। কিছু একটা ভেবে হুট করে জামিলা শিকদার বলে উঠেন

—বুদ্ধিটা খারাপ বলে আমার মনে হলোনা কারণ আমরা এমনিতেও রুহানীর জন্য ছেলে দেখছিলাম আর আমরা সবাই রুহানীর রাগ সম্পর্কে জানি যে অতিরিক্ত রাগী সে। আর সেখানে অভ্র খুবই শান্ত একজন ছেলে। আর রুহানীকে অন্য পরিবারে দিলে আমাদের ও চিন্তার শেষ থাকতোনা।

তাদের কথা এতোক্ষন চুপচাপ শুনলেও এবার মুখ খুললেন হাবিব শিকদার

—একেই দুই ছেলে মেয়ে পলাইতন করেছে তোমরা কি চাও এই দুইজন ও চলে যাক।

স্বামির কথার বিপরীতে বলে উঠেন জামিলা শিকদার

—দেখো আমার আর রুহুল এর অনেক দিনের ইচ্ছা বেয়াই—বেয়াইন হওয়ার আমি চাইনা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে ওরা গেছে ত কি হয়েছে আরও দুইজন ত আছেই।
আর আমার মনে হয়না অভ্র এমন কিছু করবে রুদ্রর মতো আর রুহানী রাগী হলেও এই বিষয় এ সেও আমাদের বিরুদ্ধে যাবেনা।

জামিলা শিকদারের কথায় সবাই সহমত হলো কিন্তু তাদের একটাই কথা এবার তাদের মতামত নিয়েই এগুবেন তারা এবার জোড়জবস্তি করবেন না।

৬.
ময়মনসিংহের বাসের সিটে জানালার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে নিরা দৃষ্টি তার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক জোড়া বৃদ্ধ কপোত কপোত-কপোতীর উপরে।বৃদ্ধা গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আর তার পাশেই এক বৃদ্ধ লোক হাতে ফুল নিয়ে বসে আছে এটা ওটা বলে কত কি বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু বৃদ্ধার রিয়েকশান দেখে মনে হচ্ছে সে মানবেনা মানতে নারাজ। আজ বুড়ো যা করুক না কেনো সে মানবেনা। কিন্তু বৃদ্ধার এই দৃঢ় শপথ বেশিক্ষন টিকলোনা বৃদ্ধ লোকটি এদিক ওদিক তাকিয়ে লোকজনের অবস্থান বুঝে নিজের শুষ্ক ঠোঁট ছুয়ে দিলো বৃদ্ধার কুচকে যাওয়া গালে।বৃদ্ধা কিছুক্ষন বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে কিছু বলবে তা দেখার আগেই নিরার পাশে ধুম করে বসে পড়লো কেউ। নিরা বৃদ্ধাদের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই চমকে গেলো।পাশের জন ও যে দারুন ভাবে চমকেছেন তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলোনা কারণ পাশের জন চিৎকার করে বলেই উঠলো

—আপনি এখানে আমার পিছনে চলে এসেছেন মানে কি?

রুদ্রর কপাল কুচকে বলা উঠা কথায় যে মারাত্নক বিরক্ত হয়েছে নিরা সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।অতি বিরক্ত সহিতই বলে উঠলো সে

—দেখুন মিস্টার রুদ্র আমার আপনার পিছন নেওয়ার কোন ইচ্ছা নেই আপনার আগেই আমি এখানে এসে বসেছি আপনি আমার পরে এসেছেন সে হিসেবে আমি না আপনিই আমার পিছা করছেন বলেই আমার মত।এমন ত নই যে আপনি বিয়ে ভাংগার মত পালটে আমার পিছনে ঘুরার মতলব আটছেন?

—দে,,,

রুদ্র দেখুন বলতে যেয়েও থেমে গেলো মনে পড়ে গেলো নিরার তখনকার দেওয়া জবাব টা ঢোক গিলে এদিক ওদিকে তাকিয়েও যখন কোন সিট খালি দেখলোনা তখন ধপ করে পুনরায় বসে গেলো নিরার নামক কণ্যাটির পাশে।

নিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে নিজের মাথা হেলিয়ে দিয়ে রুদ্রর উদ্দেশ্য বলে উঠলো

—দেখুন মিস্টার রুদ্র আমার আর আপনার মাঝে বা আমাদের পরিবারের মাঝে কোন শত্রুতা নেই এই যে আপনি আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠলেন বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেললেন তার কি আদৌও কোন যুক্তি আছে মিস্টার রুদ্র।

রুদ্র এবার ভাবনাই পড়ে গেলো আসলেই তো নিরার সাথে তার কোন শত্রুতা নেই তাহলে কেনোই বা তার সাথে এমন ব্যবহার।এমন তো না বিয়েটা নিরা জোড় করে করতে চাচ্ছে। এটা ত সম্পূর্ণ তাদের পরিবারের ইচ্ছা। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো

—আসলেই তো আমি এইভাবে ভেবেই দেখিনি।আমার ব্যবহারের জন্য আসলেই আমি দুঃখিত।

—হুম বুঝতেই পেরেছি যে আপনার ভাবার শক্তিটা কম।

—ভাবার শক্তি কম বলতে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছেন।

ভ্রু কুচকে কথাটা বলে উঠলো রুদ্র। নিরা হেসে বলে উঠলো

—এই দেখুন সামান্য ভাবার শক্তি কম কি আপনি সেটাই ভাবলেন না উলটো আমাকে জিজ্ঞেস করলেন এতেই প্রমানিত আপনার ভাবনার শক্তি আসলেই অনেক কম।

—আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছেন? (ভ্রু কুচকে)
—নাহ কারণ আপনিই আমাকে বার বার প্রমান করে দিচ্ছেন এতে আমার ই বা কি করার আছে।যে মানুষ ভাবে কম সে নির্ঘাত ঝগড়া করতে গেলেও ভাবা ভাবি করবেনা।

নিরার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলা কথা শুনে রুদ্রর মন চাচ্ছে নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিড়ে ফেলতে একটা মেয়ে এতোটা শ*য়তান কেমনে হয় বুঝে পাইনা। রুদ্র রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিরার ফোন বেজে উঠলো দেখে রুদ্র আর কিছু বললোনা ।

—হ্যালো আব্বু।
—নিরা মা ফিরে আই । আমরা তোর বিয়ে দিবোনা। তাও ফিরে আয় মা আমার।
—সত্যি বলছো নাকি ফিরে আনার জন্য বলছো কোনট?(সন্দিহান কন্ঠে)
—সত্যি মা আমার তুই তাও বাসায় আয়।(করুন কন্ঠ)
—আমি ময়মনসিংহ যাচ্ছি সেখানে ২ কি ৩ দিন ঘুরে আমি চলে আসবো।অনেক দিন এর ইচ্ছা ছিলো ঠিক আছেনা?
—ঠিক আছে তুই যেটা ভালো মনে করিস টাকা না থাকলে আমাকে বা ভাইয়াকে জানিয়ো আচ্ছা।

নিরা সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিলো।নিরা ফোন রেখে পাশে ঘুরতেই দেখলো রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে তাকায় আছে।

—এইভাবে তাকানোর প্রয়োজন নেই দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা আর এগিয়ে নিয়ে যাবেনা বিষয়টা এখানেই স্থগিত।

নিরার কথা শুনে শান্তির নিশ্বাস নিলো রুদ্র। তার এই শান্তি দেখে নিরা হাসলো।

—ময়মনসিংহ যাওয়ার কারণ কি রুদ্র সাহেব।
—তেমন বিশেষ কোন কারণ নেই অফিসের কাজেই আরকি। একদিনের কাজের জন্যই এতোদূর ছুটতে হচ্ছে আমাকে।
—একদিনের কাজ তারপর?
—তারপর দুইদিন ওইখানে থেকে কিছু পর্যবেক্ষন করতে হবে তারপর বাসায়।
—ওহ আমাকে সাথে নিবেন রুদ্র সাহেব।
—বিরক্ত হবেন না আপনি?
—আমি যতোদূর শুনেছি আপনি আর্কিটেক্ট। আর আমিও এই বিষয় নিয়েই পড়াশুনা করছি সেজন্য আরকি আপনার সাথে যাওয়ার ইচ্ছা হলো। কিন্তু আপনার যদি অসুবিধা থাকে তাহলে প্রয়োজন নেই।এমনিতেই আমাকে দেখে আপনি বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেলেন।

নিরার কথা বলার ভঙ্গিতে রুদ্র হেসে উঠলো।এখন আর সে প্রথমকার মতো বিরক্তি কাজ করছেনা প্রথম দেখাই যাকে ঠোঁট কাটা অসভ্য বলে মনে হয়েছে এখন সে মেয়েটাকে ওতোটাও মনে হচ্ছেনা বরং প্রানিচ্ছ্বল একটা মেয়ে বলে আক্ষা দিতে ইচ্ছা করছে তার।আসলেই যে মেয়েদের অনেক রুপ থাকে তা নিরাকে দেখলেই বুঝা যায়।কিন্তু অন্যসব মেয়েদের মতো ন্যাকা বা গায়ে পড়া স্বভাব নেই এই মেয়ের মধ্যে তা এতোক্ষনে বুঝে গেছে রুদ্র।

—সমস্যা নেই মিস নিরা আপনি আমার সাথে আসতে পারেন এতে যদি আপনার হেল্প হয় তাহলে আমি স্বাচ্ছন্দে আপনাকে আমার সাথে নিতে প্রস্তুত।

নিরা আর কিছু না বলে বিনিময়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো।সে হাসিতে রুদ্র কিছুক্ষন চেয়ে থেকে সাথে সাথে আখিজোড়া বন্ধ করে নিলো।জোড়ে দুইটা শ্বাস ফেলে বলে নিজের মনেই নিজেকে প্রশ্ন করে বসলো

—এতোটা নির্মল ও বুঝি কারো হাসি হয় চমৎকার।

কথাটা রুদ্রর মনেই থেকে গেলো পাশের মানুষটি শুনতে পেলোনা তার ছোট হাসি কারো বুকে অজনা ঢেউ খেলাতে সক্ষম হয়েছে সে।নিরা তো ব্যাস্ত প্রাকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।আলাদা এক মিষ্টি ঘ্রান এসে তার নাকে লাগছে বরং বার। ঠান্ডা হাওয়াই কাপিয়ে তুলছে তার সমস্ত শরীর।আলাদা এক ভালোলাগা কাজ করছে নিরার মনে।

৭.
আজানের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো রুহানীর।কলেজ থেকে এসেই ঘুমিয়ে গেছিলো সে।আরমোর ভেংগে ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে যায় রুহানীর সন্ধ্যা ৬টা বাজে। এইদিকে সাড়ে ছয় টার দিকে অভ্র স্যারের কাছে পড়তে যাওয়ার কথা তার বায়োলজিতে কাচা হওয়াই জামিলা শিকদারের কঠিন নির্দেশেই তাকে আজ থেকে অভ্রর কাছে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তিনি। কথাটা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে ছুট লাগালো সে তালুকদার ভবনের দিকে।জানে সে আজ দেরি করবে আর কোথাও শুনবে।
মনে মনে নিজেকে হাজার টা কথা শুনেই তালুকদার ভবন পৌছে গেলো সে আর যেতেই সে অবাক হয়ে বৈঠক খানার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাই রইলো।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে