সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০১

0
146

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১
১.
ছেলে পক্ষের সামনে বসে থাকতে থাকতে হাফিয়ে উঠেছে নিরা।কিন্তু তার সামনের মানুষ এর হেলদোল নাই বললেই চলে।নিরা আড় চোখে বার বার পর্যবেক্ষ্ণ করে চলেছে তার সামনে বসে থাকা শ্যামা পুরুষটির দিকে। ঘণ কালো চুলের লম্বা তীর্যক মুখটাই দারুন এক মায়া রয়েছে বলেই মতামত নিরার।কিন্তু নিজের এই মতামতের কারণ সে জানেনা। তার ধারণা এই মায়া জিনিসটা পুরুষদের জন্য নয় বরং মেয়েদের জন্য বরাদ্দকৃত কিন্তু তার এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভাবে বদলে দিয়েছে তার সামনে থাকা সুদর্শন পুরুষ। নিশ্বব্দে যেকোন মেয়ে প্রথম দেখাই তার প্রেমে পরতে বাধ্য।কিন্তু নিরার এই মহূর্তে লোকটার প্রতি প্রেম নয় বরং বিরক্তিতে কপাল কুচকে আসছে।

অবশেষে নীরাবতা ভেংগে নিরাই প্রথম তার মুখ খুলে

—দেখুন মিস্টার রুদ্র আপনার যদি কিছু বলার না থাকে তাহলে আমি এই মহূর্তে উঠার অনুমতি চাচ্ছি।

নিরার সোযা সাপ্টা উক্তিকে নড়েচড়ে বসলো রুদ্র। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো খুবই সাবধানে মুছে নিলো রুদ্র।

—আসলে আমি এই বিয়েটা করতে চাচ্ছিনা। আপনি যদি আপনার বাবাকে বলেন যে আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি তাহলে তিনি এই বিয়েটা ভেংগে দিবে বলেই আমার ধারণা।

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলেই থামলো রুদ্র। এতোক্ষণ যেনো দম ফিরে পেলো সে।নিরা হাসলো।সে আন্দাজ করেছিলো এমন কিছু কথায়।

—গার্লফ্রেন্ড আছে বুঝি

নিরার হাস্যজ্বল ভাবে বলা কথাটিতে রুদ্র অবাক হলো তার ধারণা ছিলো নিরা অবাক হবে বা চমকাবে অথবা রাগ করবে কারণ এমন একটা কথায় যেকোন মেয়ের আত্নসম্মানে লাগবে বলেই তার ধারণা।নিজেকে ধাতস্থ করেই বলে উঠলো রুদ্র

—নাহ।

নিরা পুনরায় হেসে উঠলো সে জানেনা কিন্তু কেনো যেনো তার খুব হাসতে মন চাচ্ছে।কেনো সে জানেনা কিন্তু তার সামনে সুদর্শন পুরুষ এর এমন ভীতু চেহারা যে তাকে খুব উল্লাস দিচ্ছে সে তা মহূর্তে বুঝতে পেরেছে।

পুনরায় নিরা বলে উঠে

—তাহলে আপনি আপনার পরিবারকে জানিয়ে দেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না ব্যাস হয়ে গেলো।

—মা আপনাকে খুব পছন্দ করেছে। আর আমি না করে মা কে কষ্ট দিতে চায়না

—আমার বাবাও আপনাকে পছন্দ করেছে।এখন আমি যদি না করে দেয় এখানে আমার বাবাও নিশ্চয় কষ্ট পাবে।আমিও আমার বাবাকে কষ্ট দিতে চায়না মিস্টার রুদ্র

—দেখুন

—দেখান। আমার দেখতে অসুবিধা নেই আপনি যদি দেখাতে ইচ্ছুক হন।

নিরার মজার ছলে বলা কথাটাই যে রুদ্র লজ্জা পেয়েছে তা রুদ্রর কান দেখেই বুঝে গেলো নিরা।নিরার এমন ঠোঁট কাটা স্বভাব রুদ্র আশা করেনি।

—দেখুন মিস নিরা আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।

—আমিও আপনাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয়।

—তাহলে ত ভালোই না করে দেন বিয়েই।

—সে কাজটা আপনিও করতে পারেন মিস্টার রুদ্র।নিজের কাজ নিজে করা ভালো বলেই আমার ধারণা বুঝলেন।এখন হয় আপনি না করে দেন নাহলে বিয়ের পিড়িতে বসে পড়েন দুইটাই সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা।

কথা গুলো বলেই সেখান থেকে চলে গেলো নিরা।রুদ্র তপ্ত নিশ্বাস ফেলে তরুনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো শুভ্র শাড়ি পড়া নারীর দিকে।লম্বা বিনুনী তার কোমড় ছড়িয়ে নিচে ঝুলছে।নিসন্দেহে রূপবতী এক নারী বেরিয়ে যাচ্ছে তার চোখের দৃষ্টির বাহিরে।

২ দিন হলো রুদ্রর মা গিয়েছিলেন নিরাদের বাড়ি।অনেক পুরনো দিনের সাক্ষাৎ রয়েছে মিসেস জামিলা শিকদার (রুদ্র শিকদারের মা) আর রুহুল তালুকদারের(নিরার বাবা)।
প্রায় যাতায়াত রয়েছে দুই পরিবারের একে অন্যের বাড়িতে।কিন্তু সে মেলামেশা শুধু বাবা মায়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো এতোদিন কিন্তু হঠাৎ করেই দুই পরিবার সিধান্ত নেন শিকদার বাড়ির বড় ছেলের জন্য তালুকদার বাড়ির এক মাত্র মেয়ের সাথে বিবাহ দিয়ে তাদের সম্পর্ককে আরও পাকাপোক্ত করবে।সে জন্যই আজকে রুদ্র আর নিরা একে অন্যের সামনে মুখোমুখি হয়েছিলো নিরার কলেজের পাশের কফি শপে।

এখন দেখার পালা পরিবারের পছন্দে কি আসলেই মিলবন্ধন হবে দুই মেরুর এই দুই মানুষ এর নাকি তাদের পথ এইভাবেই আলাদাই রয়ে যাবে।

২.
প্রোফেসার অভ্র তালুকদারের ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৯ বছরের এক তরুনী।তার দোষ এটাই প্রায় এক সপ্তাহ হলো সে প্রতিদিন অনিয়মিত ভাবে ক্লাসে প্রবেশ করছে।তার কারণ যানতে চাইলে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয় তার ঘুম ভাংগে নি। প্রতিনিয়ত এমন একটা উত্তর নিশ্চয় অভদ্রতার মাঝেই পড়ে।সেজন্য এই শাস্তি দিয়েছে তাকে অভ্র তালুকদার।

অভ্র তালুকদার ক্লাস শেষ করে বের হয়েই তার চোখ দাঁড়িয়ে থাকা ঘুমন্ত এক বাচ্চা তরূনীর দিকে।বাচ্চা বলার একটা অদ্ভুত কারণ অভ্র নিজের মাথায় সাজিয়েছে তা হলো তরুনীর মুখের আদল।আর তার পোশাক আশাক।চোখ দুইটি যেনো কোন পুতুলের ন্যায় গোল গোল হালকা গলুমলু তরুনীটিকে যেকেউ প্রথম দেখায় বাচ্চা হিসেবেই ভেবে নিবে। পরণে একটা ফ্রক উচু করে দুই ঝুটি করে গলাই শুভ্র স্কার্ফ পেচানো।

অভ্রর তাকানোর মাঝেই চোখ মেলে তাকায় রুহানী শিকদার। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ।তা দেখে হাসে অভ্র।ছোট মেয়েটার যে নাকের ডগায় রাগ থাকে সেটা তার এই এক সপ্তাহে জানা হয়ে গেছে।

অভ্রকে দেখে শ খানেক ভয়ংকর গা*লি নিজের মনে মনে আওড়ালো রুহানী। রুহানী ঠোঁট নাড়ানো দেখে অভ্র বেশ বুঝতে পারলো এই কোমল ঠোঁটের মাঝে উঠা ধ্বনি গুলো যে ভয়ংকর কিছু শব্দের অর্থ প্রকাশ করছে।অভ্র সেদিকে খেয়াল না করে বলে উঠলো

—সারা রাত প্রেম না করে ঘুমাবেন মিস রুহানী।কালকে আমার ক্লাসে লেট হলে আপনার বাবার কাছে কল দিতে আমার দেরি হবেনা কথাটা মাথায় রাখবেন।

রুহানী কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভ্র রুহানীর নাক টেনে সেখান থেকে চলে গেলো।

৩.
বাস স্টোপে বসে আছে নিরা।পড়নে শুভ্র শাডিটা দোল খাচ্ছে বাতাসের তালে তালে।বাড়ি ফেরার মন নেই তার। অজনা কোথাও কইদিনের জন্য পালাতন করার উদ্দেশ্যে নিয়েই বাসের অপেক্ষাই বসে আছে সে। সে জানেনা কই যাবে কোথায় যাবে কিন্তু সে জানে এখন বাসায় গেলে তার বাবা তার মা তাকে ইমোশনাল কথা বলেই তাকে যেভাবে হোক এই বিয়েতে রাজি করিয়ে ফেলবে। আর সেও তার বাবা কে না করতে পারবেনা।

হঠাৎ নিরার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বেজে উঠলো তার ফোন খানা বাজখাই গলাই।ফোনের স্ক্রীনে তাকাতেই ভেসে উঠলো রুহানীর মায়াভরা বাচ্চা চেহারা হেসে দিলো নিরা। এই মেয়েটাকে দেখে চট করে কেউ বলতে পারবে না মেয়েটা এবার অনার্সের ছাত্রী। নাকের ডগায় জমে থাকে যার সর্বদা রাগ।

নিরা ফোন তুলে কানে নিতেই ভেসে উঠলো রুহানীর রাগী কন্ঠ

—ওই তোর ভাই নিজেকে কি ভাবে হ্যা কোথাকারা প্রেসিডেন্ট নাকি সে।আমাকে পুরা ৪৫ মিনিট ক্লাস রুম থেকে বের করে দিয়েছে বেয়াদব টা। আমার পা ঝিম ধরে গেছে। নিম পাতা, করল্লার চাচা,পচা আলু,মরা টিকটিকর দশ নাম্বার বাচ্চা, ছাগলের ঠ্যাং আর আর আর ধ্যাত মনে পড়ছেনা তুই তোর ভাইরে বুঝাই দিবি যেনো আমার সাথে এমন না করে নাহলে ওর চোখ তুলে আমি মুরগীকে খাওয়াই দিবো বলে দিলাম।

রুহানী নিজ মনে কথা গুলো বলেই কল রেখে দিলো এদিকে নিরা হতদম্ভ হয়ে বসে আছে।ফোন কান থেকে সরায়ে দুই তিনবার অপরকানে বারি দিলো। তবুও যেনো মাথা হ্যাং হয়ে আছে তার এই মেয়ে এতোক্ষন কথা বললো নাকি চিৎকার করলো বুঝতে পারছেনা নিরা।

কিছুক্ষন সেভাবে থম মেরে বসে থেকেই হু হা করে হেসে উঠলো নিরা।


রাগে গজগজ করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে রুদ্র। বাসায় কেউ তার কথা শুনতে প্রস্তুত নই। সবার একই কথা

“তোর যদি কেউ বউ হয় তাহলে সেটা নিরা হবে ব্যাস ”

মায়ের সোজাসাপ্টা জবাবে হতাশ হয়েই বেরিয়ে পড়লো রুদ্র এখন সে তার মাকে কিভাবে বলবে নিরার মতো ঠোঁট কাটা মেয়ের সাথে দুই দন্ড বসা সম্ভব না সারাজীবন কাটানো অসম্ভব প্রায়।

বাড়ি থেকে বের হতেই তার ফোন বেজে উঠে। ফোন তুলে দেখে তার অফিস থেকে ফোন এসেছে।রুদ্র নিজের রাগ কমিয়ে জোড়ে কইটা শ্বাস নিয়ে ফোন কানে নিলো

—হ্যালো।

—হ্যা রুদ্র আমাদের আর্জেন্ট একটা প্রজেক্ট এর জন্য তোমাকে এই মহূর্তে ময়মনসিংহ যেতে হবে।

—ঠিক আছে স্যার আমি এখুনি বেরিয়ে যাচ্ছি।

ফোন টা কান থেকে রেখে বেরিয়ে গেলো।বসকে হাজার খানেক ধন্যবাদ দিতে ভুললোনা সে।কিছুদিন এইসব ঝামেলা থেকে দূর থাকতে পারবে ভেবেই তার শান্তি।

শিকদার পরিবারের বিরাট ব্যাবসা থাকলেও রুদ্র নিজের পায়ে দাড়াতেই ” দা সান রাইজ ইন্ডাস্ট্রিতে” সিনিয়র আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করছে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে