Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1483



তোমায় ঘিরে পর্ব-১৩

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_13
.
.
🥀এই চুপ!!একদম চুপ!!
.
কথাগুলো কানেই যাচ্ছে না আমার।ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।এখন কি কারো কথা কানে যাওয়ার সময় নাকি!
.
এ তো থামবেই না!উফফ!!এখন পুরো বাসার লোক জেগে যাবে।তাই ধমকের সুরে বলে উঠলাম আমি….চুপ করো!!এবারও কোনো কাজ হলো না ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়েই যাচ্ছে।উফ!এই মেয়ে এত ভীতু কেন…?কোনো উপায় না পেয়ে একহাতে ওর মুখ চেপে ধরলাম আমি।
.
হঠাৎ কেউ মুখ চেপে ধরায় চোখ খুলে তাকালাম আমি।এ কি আআ….আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে….এই তুমি এত ভীতু কেন…?এইটুকু তেই এভাবে চেঁচালে।মাই গড!কানে আঙ্গুল ঢুকাতে ঢুকাতে আমার কানের পোকা মরে গেছে।
.
চেঁচাবো না!!আপনি এমন বেয়াক্কল মার্কা কাজ করবেন আর আমি ভয় পেলেই ভীতু!কে বলেছিলো এই শেষ রাতে নিজেকে সাদা কাপড়ে আবৃত করে সামনে আসতে আমার।আমি তো তাও একটু ভয় পেয়েছি।আমার জায়গায় আপনি থাকলে এর থেকে বেশি ভয় পেতেন।
.
ভয় আর আমি হাহা!!আমি তোমার মতো ভীতু নই।এরকম দশ-বারোটা ভূত আসলেও সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস আছে আমার।
.
হুহ আপনি যে কতটা সাহসী সেটা আমি জানি!!
.
হুম!জানা থাকলেই ভালো!আচ্ছা এত রাতে এখানে কি করছো…?স্পেশাল কারোর কথা ভাবছিলে বুঝি নাকি দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিলো কোনটা…?
..
উনার এই ফালতু কথাগুলো শুনতে একদম ইচ্ছুক নই আমি।তাই চুপচাপ ছাদ থেকে নামার উদ্দেশ্যে ঘুরে দাঁড়ালাম।
.
কি হলো চলে যাচ্ছ যে…?বললে না!
.
তেমন কিছু নয়!ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো তাই!আচ্ছা আপনি এত রাতে এখানে…?
.
আমি!আমি তো এখনও ঘুমাই নি।নিচে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ তোমার ছায়া আমার সামনে পড়লো চেয়ে দেখলাম তুমি দাঁড়িয়ে আছো তাই ভাবলাম একটু ভয় দেখাই।আচ্ছা তুমি কাঁদছিলে কেন…?
.
আমার কান্নাও দেখেছেন উনি।তার মানে আমি ভুল ছিলাম না তখন উনিই ছিলেন।আমতা আমতা করে ককই ননা তো!
.
আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি কাঁদছিলে!!সো মিথ্যা বলো না।কেন কাঁদছিলে বলো না…?আর না ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।সো যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
.
আপনাকে বুঝানোর সাধ্য কোনোকালেই ছিলো না আমার।সেদিনও ছিলো না আর আজও নেই।”বিয়ে”!আমার সাথে বিয়ে হয়েছিলো আপনার।সেটা যেভাবেই হোক হয়েছিলো তো।কিন্তু মেনে নিতে পারেন নি আপনি।নিজেকে খুব মহৎ ভাবেন তাই আমাকে ফিরিয়ে দিলেন।।যখন ভাবার কথা ছিলো তখন ভাবেন নি তাহলে এখন কেন আমার ব্যাপারে ভাবছেন।ভাবতে হবে না!তাছাড়া এখন নতুন করে জীবনও শুরু করেছেন তাহলে!এত দরদ দেখানোর কোনো মানে হয় না!চোখ মুখ কঠিন করে বলে উঠলাম…..আমার কাঁদতে ইচ্ছে করেছিলো তাই কেঁদেছি।জেগে থাকতে ইচ্ছে করছে তাই রাত জাগছি তাতে আপনার কি!আমার শরীর ভালো থাকলেও আমার না থাকলেও আমার।এটা নিয়ে আপনাকে ভাবার প্রয়োজন নেই।শুনুন আমার ব্যাপারে এত নাগ গলাবেন না।ওয়েল ইউর ওউন মেশিন।
.
বাবা রে বাবা!!মেয়েটা ক্ষেপে গেলো কেন..?কি এমন বললাম যে এত রাগ দেখাচ্ছে।তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন…?আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বললাম।
.
আমার ভালো আমাকেই বুঝতে দিন।অনেক তো ভালো করেছেন,ভালো চেয়েছেন আর নাই বা করলেন ভালো।
.
আমার কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন উনি।প্যান্টের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন….তুমি এখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারো নি তাই না মেহরীমা।
.
জানি কথাটা খুব গায়ে লেগেছে উনার।সেই এর থেকে বেশি বুঝার ক্ষমতা নেই আপনার।ক্ষমা করতে পারোনি হুহ!লোকটাকে এখন ছাদ থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে আমার।যদি সম্ভব হতো তাহলে এটা ঠিক করতাম আমি।কিন্তু না কিছু করার নেই।
.
মেহরীমা!বললে না তো!!
.
দম আটকে যাচ্ছে আমার।ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।কিন্তু নিজপর এই অসহায়ত্ব কিছুতেই আপনার সামনে প্রকাশ করবো না আমি।এখন কথা বাড়াতেও ইচ্ছে নেই।ক্ষমা সেটা তো সেই কবেই করে দিয়েছি।আপনার সাথে থাকতে থাকতে আপনাকে মেনে নিয়েছিলাম আমি।আপনাকে ভালোওবেসে ফেলেছিলাম।কিন্তু আপনি!আপনি তা পারেন নি।আপনি বুঝতে পারছেন না আপনার উপর অভিমান জমেছে,রাগ করেছি এর থেকে বেশি কিছু নয়।ওয়াইফ হিসেবে আমি জি এইটুকুও করতে পারিনা।।আচ্ছা আপনি কি কখনও বুঝবেন না আমায়।সেদিনও বুঝেন নি,আজও বুঝছেন না আর হয়তো ভবিষ্যতেও পারবেন না।উনার চোখে অসহায়ত্ব ফুটে আছে।ওই চোখে বেশিক্ষণ তাকানোর সাহস নেই আমার।আচ্ছা আসছি আমি।
.
এড়িয়ে যাচ্ছ…?
.
নাহ্!!অনেক আগেই তো বলেছি আপনাকে মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছি আমি।তাও বারবার এই কথাটা টানেন কেন…?এখন আমি আসি এই রাতের বেলায় যদি কেউ দেখে তাহলে উল্টা পাল্টা ভাববে।
.
কথাটা টানতাম না!!কিন্তু তোমার ব্যবহার বাধ্য করে।
.
আমার ব্যবহার!!আমি আবার কি করলাম।
.
নাহ্ কিছু না!!যাও ঘুমিয়ে পড়ো ভোর হয়ে যাচ্ছে।ছাদ থেকে নেমে গেলো মেহরীমা আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।জীবনটা বড়ই অদ্ভুদ!
.
.
.
সকাল বারোটায় ঘুম ভাঙ্গলো আমার।তাও আবার রিদির গুতাগুতি আর বকবকানির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও বিছানা ছাড়তে হলো আমায়।আমি ঘুমে এটা যেন সহ্য হচ্ছিলো না মেয়েটার।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হলাম আমি।আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে নাদিরা আর আরাভ।আমাকে দেখেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসতে শুরু করলো দুজনে,হাসছে তো হাসছেই থামার নামই নেই।আচমকা এমন হওয়ায় বোকা বনে গেলাম আমি।বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে।একেবারে সামনে গিয়ে নাদিরাকে উদ্দেশ্য করে…..
.
কি হয়েছে এভাবে হাসছো কেন তুমি…?
.
হাসবো না!বলে আবারও হাসতে লাগলো মেয়েটি।মুখ চেপে আরাভও হাসছে। কিন্তু এদের হাসির কারণ বোধগম্য নয় আমার কাছে।আচ্ছা আপনাদের হাসির কারণ কি আমি…?
.
অভিয়াসলি বউমণি তুমি!!
.
অবাক হয়ে আমি!!আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলেন উনি…..

নাদিরা আজকাল প্লাজু অরণা হিসাবে ব্যবহার হয় কই জানতাম না তো!আচ্ছা এটা তোদের নিউ স্টাইল নাকি!
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।কিসব ফালতু কথা বলছেন।প্লাজু অরণা হিসাবে ব্যবহার হয় পাগল নাকি!!
.
বউমণি একটু নিজের দিকে তাকাও বলে আবারও খিলখিল করে হাসতে লাগলো!
.
কেন কি হ…..নিজের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি।ছিঃ ছিঃ এ আমি কি করেছি।অরনার জায়গায় প্লাজু পড়ে এসেছি।এখন নিজেকে ড্রেনের পানিতে চুবিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে আমার।উনার বলা কথাটা কানে বাজছে। “এত কেয়ারলেস কেন তুমি”…?সত্যি এত কেয়ারলেস কেন আমি….!!চারিদিক তাকিয়ে চোরের মতো দিলাম এক দৌড় আমাকে আর কে পায়।কি সাংঘাতিক কান্ড!প্লাজু ছিঃ!
.
সব মেয়েকেই পার্লারে সাজতে হবে আজ।কোনো মতে পালানো চলবে না।রিদি আজকে আমায় ছাড়বে না।বিকেলে পার্লারে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছি।আমাদের জন্য আরাভের গাড়িটাই বরাদ্দ।ওটা দিয়েই যেতে হবে।কিন্তু ওই রাক্ষস টার সাথে যাবো না আমি।কিন্তু আজকে আমায় যেতেই হবে না গেলে চলবে না।রিদি নাদিরা গাড়ীতে উঠে বসে পড়েছে।পেছনের সিট ফুল সেই সামনে রাক্ষসের সামনে বসতে হবে আমায়।আমি পেঁচার মতো মুখে করে দাঁড়িয়ে আছি। তখনই আহান আসলো।
.
আরে তোমরা সবাই সাজতে যাচ্ছ বুঝি…?আমাকে উদ্দেশ্য করে তুমিও যাচ্ছ নাকি…?
.
প্রশ্নের উওরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম আমি।
.
ওহ!!তা গাড়ীতে দেখছি জায়গা নেই।চলো তোমাকে আমি বাইক দিয়ে পৌঁছে দিই।
.
আমি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে বলে উঠলেন উনি…..কাউকে কিচ্ছু করতে হবে না।ওর জন্য যথেষ্ট জায়গা খালি আছে।মেহরীমা গাড়ীতে উঠে বস হারি আপ!!
.
আসলে সামনে বসলে আমার গা গুলোয়।আমি অসুস্থ ফিল করি।তাই বলছিলাম রিদি তোরা চলে যা আমি উনার সাথেই বাইকে আসছি।
.
কি বলছিস আমরা তোকে ছাড়া যাবো। না না! এটা হবে না!!
.
বউমণি আমি সামনে বসছি তুমি পেছনে এসো।
.
আমার কথা শুনে সাপের মতো ফুঁস করে উঠলেন উনি….দাঁতে দাঁত চেপে বললেন…. কাউকে কোথাও যেতে হবে না।অসুস্থ হলে ডক্টর দেখাবো চলো।তাড়াতাড়ি গাড়ী তে উঠো সিট বেল্ট পড়ে নাও।আহান আঙ্গেল একা মানুষ উনাকে হেল্প করো।মেহরীমার জন্য আমি আছি।আমি থাকতে ওর কারোর হেল্পের প্রয়োজন পড়বে না।
.
বাধ্য মেয়ের মতো সত্যি সত্যি গাড়ীতে উঠে বসলাম আমি।উনার মুখই বলে দিচ্ছে কতটা রেগে আছেন উনি।আহানের সাথে কিছুতেই যেতাম না শুধুমাত্র উনাকে রাগানোই ছিলো মেইন উদ্দেশ্য আমার আর সেটাতে সাকসেস আমি।আপনি রীমা মাথায় নিয়ে সারাদিন ঘুরলে সমস্যা নাই আর আমি ছেলেদের সাথে কথা বললেই দোষ হুহ!পুরো গাড়ীতে টু শব্দটিও করিনি আমি।উনিও রেগে ফায়ার হয়ে আছেন বিধায় কথা বলেন নি।জানালার গ্লাস নামিয়ে মুখ গুড়িয়ে বসে আছি আমি।বাইরে মনোরম দৃশ্য সামনে হালকা বাতাস আহা!কি মনোমুগ্ধকর পবিবেশ।রিদি আর নাদিরা পুরোটা সময় বকবক করেই পার করে দিয়েছে।কিছুক্ষণেই পৌঁছে গেলাম পার্লারে।রিদি আর নাদিরা চলে গেলো ভিতরে।আমিও নেমে ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম…..
.
আহানের সাথে ঘোরাঘুরির খুব শখ তোমার তাই না…?হাতের উপরে হাত ভাঁজ করে সামনে দাঁড়ালেন আমার।
.
উনার কথার প্রতিওোরে কোনো জবাব দিলাম না আমি।এমন ভাব করলাম যেন কথাটা কানেই আসেনি আমার।
.
কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়…?
.
এসব ফালতু কথার উওর দেওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট আমার নাই।
.
চোখে মুখে কঠিন ভাব ফুটিয়ে চোয়াল শক্ত করে তোমার এই সিরিয়াস কথাকে ফালতু মনে হচ্ছে…!!তুমি বুঝ কোনটা ফালতু আর কোনটা ইম্পর্ট্যান্ট!
.
নাহ!!বুঝি না।এসব বুঝা আমার কম্যও নয়।ওগুলো আপনার মতো জ্ঞানী-গুণীরা বুঝবে।
.
তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন…?ভালোভাবে কথা বলতে পারে না।সবার সাথে খুব তো হেঁসে হেঁসে কথা বলো।আর আমার বেলায়ই যত রাগ,ইগনোর তোমার।কেন বলতে পারো…?
.
কই না তো!!আপনার উপর কোনো রাগ নেই আমার।সকলের সাথে যেভাবে কথা বলি আপনার সাথেও সেভাবে বলি।সে যাইহোক আর এই কাক ফাঁটা রোদের মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না আমার আসছি বলে ভেতরে চলে গেলো মেহরীমা…..মেয়েটা বার বার অবাক করে আমায়।আচ্ছা কাল রাত থেকে একটু বেশিই রাগ দেখাচ্ছে না।যখন থেকে “রীমা” নামটা লিখেছি।তার মানে কি আমাকে ভালোবাসে ও।এরজন্য জেলাস ফিল করছে।এই প্রথম কারোর মন বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছি।আচ্ছা যদি ভালোই বাসে তাহলে এত রাগ দেখায় কেন…?উল্টা পাল্টা ছাড়া সোজাসাপ্টা কথা বলে না।সত্যিই কি ভালোবাসে আমায় নাকি সবটাই আমার বুঝার ভুল…..!!
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-১২

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_12
.
.
🥀দুই হাতে মেহেদী দিয়ে পুতুলের মতো হাত দুটো টান টান করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে রিদি।আন্টির কড়া হুকুম মেহেদী না শুকানোর আগে যেন হাত না ধুয়।এই আদেশের একটা ব্যাখাও দিয়েছেন উনি।কারণ হাতের রং যত গাঢ় হবে তার বর তাকে তত ভালোবাসবে।এই কথাটা ভালোভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছে রিদি।এখন যদি পাঁচ মিনিটেই হাত ধুয়ে নেয় তাহলে রং বসবে কি করে।তাই কষ্ট করে বরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হলেও এই অসহ্য সময়টা পার করতে হবে ওকে।আমি ওর পাশে বসে কান্ড দেখে চলেছি।মেয়েটা কথাগুলো সত্যি মনে করে বসে আছে।নাদিরা মেহেদী দিতে ব্যস্ত।ওর দেওয়া শেষ হলেই আমার হাতে মেহেদী পড়ানো হবে।যদিও না করেছিলাম কিন্তু বেস্টুর কথা আমাকেও পড়তে হবে।এক হাত পুড়েছে তো কি হয়েছে অন্য হাতে পড়বো।নাদিরাকে পড়িয়ে আমার হাতে মেহেদী পড়াতে শুরু করলো পার্লারের মেয়েটি।কিছুটা পড়াতেই এক প্রকার দৌড়ে এসে আমার হাতের সাথে টেস দিয়ে হাত রাখলেন আরাভ।পেছনে রামীম ভাইয়াও আসছেন।উনার এমন ব্যবহারে শকড আমি।ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি।কারণ ছেলেদের মেহেদীর প্রতি ইন্টারেস্ট আছে এই প্রথমবার দেখলাম আমি।রিদি আর নাদিরাও বেশ অবাক।দুজনে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে উনার দিকে।সেদিকে নজর না দিয়ে মেয়েটি কে বলে উঠলেন উনি…..
.
একটা নেইম আর্ট করো তো ফার্স্ট!!
.
নেইম!!উনার কথায় ৩৬০ ভোল্টেজের শক খেলাম আমি।উনি হাতে কারো নেইম আর্ট করবেন!এটা ঠিক শুনছি তো আমি।আমার সাথে সাথে অবাক রিতি আর নাদিরাও।কিন্তু কার নাম হাতে আর্ট করবেন উনি।কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছেন নাকি।
.
উনার কথায় হাসলো মেয়েটি!!স্যার কি নাম হবে বলুন।
.
রিতিঃভাইয়া কার নাম আর্ট করবে তুমি…?ভ্রু নাচিয়ে গার্লফ্রেন্ডের বুঝি…?
.
ধুরর না!গার্লফ্রেন্ড না।নিশ্চয়ই বউমণি হবে।
.
তোরা থামবি!!ওদের কথায় কান না দিয়ে আপনি আপনার কাজ করুন তো!!
.
কি নেইম বললেন না তো!!
.
কিছুটা ভেবে “রীমা”!!খুব সুন্দর করে আর্ট করবেন কিন্তু।যাতে আমার মন মতো হয়।
.
নামটা শুনে আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না আমি।শুধু যে আমি আশ্চর্য হয়েছি তা কিন্তু নয় সাথে রিদি আর নাদিরাও।আমরা কেউ ভাবতে পারিনি উনি এরকম একটা নাম আর্ট করতে পারেন।”রীমা” নামটা বেশ ভালো কিন্তু কে সে…?কবে উনার মনে জায়গা দখল করলো।আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই কি উনার প্রেম চলছিলো।নাহ!নাদিরা তে বলেছিলো কোনো রিলেশন নেই উনার।উনার আচার ব্যবহারে আমারও তাই মনে হয়েছে।তাহলে কি এই ছয় মাসে কেউ এন্ট্রি নিয়েছে উনার লাইফে।সে যাইহোক এটা নিয়ে এত ভাবছি কেন আমি।কেন কষ্ট হচ্ছে আমার।উনি যা ইচ্ছা তাই করবেন তাতে আামর কি!আমার তো কষ্ট হওয়ার কথা না।তাহলে কেন কোথাও খারাপ লাগা কাজ করছে।জানি না!কিচ্ছু জানিনা আমি।
.
ভাইয়া তুমি বউমণি কে রেখে শেষ পর্যন্ত অন্য একটা মেয়ের নাম হাতে লিখছো…?দিস ইজ নট ফেয়ার।
.
রিদিঃএই বউমণিটা ওই যাকে তুলে এনে বিয়ে করেছিলো সে না…!!
.
হুমম!!
.
আহারে!!বেচারির কপাল টা পুড়লো।আচ্ছা ভাইয়া “রীমা” মেয়েটা কে..?
.
মাই লাইফ লাইন!!আমার দিকে তাকিয়ে বউ বা গার্লফ্রেন্ড সেটা ফ্যাক্টর নয় মোটকথা আমার ভালোবাসার মানুষ। আর কিছু জানতে চাস না তোরা।ছোট ছোটদের মতো থাকবি।বড়দের মতো পাকামি করবি না ওকে…!!
.
উনার কথা শুনে দুজনেই চুপ।আমি নিজের হাত গুটিয়ে ওখানে থেকে উঠে দাঁড়ালাম।এখানে থাকার একফোঁটা ইচ্ছেও নেই আমার।হয়তো থাকলে নিজের মনের কোণে চাপা পড়া কষ্ট গুলো বেড়িয়ে আসবে সবার সামনে।কি দরকার নিজের কষ্ট অন্যকে দেখানোর।চাই না আমি!!নিজের কষ্ট গুলোকে নিয়ে না হয় নিজেই বাঁচি।আমি উঠতেই রিদি নাদিরা আমাকে বসার জন্য বলছে কিন্তু কারো কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার।নিজের মনেই চলে যাচ্ছি।
.
নাদিরাঃযাহ!চলে গেলো!!ভাইয়া তুমি কি কাজটা ঠিক করলে…?
.
রামীমঃতোমার কাছে ঠিক না হলেও ওর কাছে ঠিক।এটা নিয়ে কথা বাড়িও না।একটু মাথা খাটাও ব্যাপারটা বুঝতে পারবে।অবশ্য মাথামোটা রা আর কিই বা মাথা খাটাবে।
.
কিহ!তুমি আমায় মাথামোটা বললে…?
.
তোকে এটাই বলা উচিৎ।এরইমধ্যে কমপ্লিট আমার মেহেদী দেওয়া।খুব সুন্দর হয়েছে ম্যাডাম।থ্যাংকস!!রিদি তোর ফ্রেন্ড কোথায় রে চলে গেছে নাকি…?
.
হুম!তুমি যেভাবে তোমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিজি তাই হয়তো রাগ করে চলে গেছে।
.
ওহ্!ঠিক আছে।মেহেদী না পড়লে খুব একটা ক্ষতি হবে না।
.
আচ্ছা ভাইয়া তুমি ওর পিছনে লাগছো কেন…?কি সামথিং সামথিং!!
.
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে সেটা তুই বুঝবি না!!বোঝার বয়স বা বুদ্ধি কোনাটাই হয়নি কিনা। আরেকটু বড় হ তারপর বুঝবি।
.
অবাক হয়ে ভাইয়া কাল আমার বিয়ে!!আর তুমি বলছো আমার বোঝার বয়স হয়নি…?
.
বিয়ে তো ১০ বছরের খুকীকেও দেওয়া যায় তাই বলে কি সে বড় হয়ে গেলো।যাকগে তোরা থাক আমার কাজ কমপ্লিট আমি আসছি।
.
.
রুমে বসে গুম হয়ে আছি আমি।হাত ধুয়ে ফেলেছি সেই কবে।কিন্তু তবুও গাঢ় রং বসেছে হাতে।সেই হাত দিয়ে গবেষণায় বসেছে দুজনে।তাদের কথা অনুযায়ী আমার বর খুব ভালোবাসবে আমায়।রিদিও খুব খুশী কারণ ওর হাতে গাঢ় রং বসেছে যে।কিন্তু নিজের দিকে বিশেষ খেয়াল নেই ওর।শুধু উল্টে পাল্টে আমার হাত দেখছে।এখন ওর মনে আমার বর দেখারও ইচ্ছে জেগেছে খুব।কিন্তু আমার বরকে কোথায় পাবে…?
.
আচ্ছা তোর ওই রাক্ষস বরটার কোনো ছবি আছে তোর কাছে…?
.
ওর কথায় চরম আশ্চর্য আমি!!ও আমার রাক্ষস বরের ছবি দিয়ে কি করবে…?
.
নাহ্!!কেন…?
.
না!!আজ ওই রাক্ষস বরটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আমার।দেখ তুই কত লাকি এখনও রাক্ষস তোকে ভালোবাসে।আসলে দূরে থেকেও ভালোবাসা হয়।
.
নাদিরাঃহুম দূরে গেলে আপনজনের শূন্যতা অনুভব করা যায়।আর সামনে থাকলে তাদের অবহেলা করি আমরা এটাই বাস্তব।।হয়তো এখন উনি খুব ভালোবাসেন তোমাকে।
.
এই মেয়ে দুটোর কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে যাচ্ছে আমার।কিন্তু থামার নেমই নেই।এতক্ষণ ধরে একই টপিকে কি করে আছে ওরা।যেখানে এক টপিকে পাঁচ মিনিটের উপরে কথা বলতে নারাজ আমি।রীমা যেই হোক এত কথা বলার কি আছে বুঝি না বাপু।উফফ!!থামবে তোমরা,…কি টপিক নিয়ে এখনও পড়ে আছো!অসহ্য লাগছে আমার।
.
আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো দুজনে।এমন ভাব করছে যেন কথাটা বলা উচিৎ হয়নি আমার।দুজনের এমন চাহনী দেখে বোকা বনে গেলাম আমি।কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেন তোমরা…?
.
তাকাবো না!!তুই জানিস এই ভাইয়া আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি আর সেই কিনা একটা মেয়ের নাম লিখলো…..!!
.
তো কি হইছে!একসময় তাকায় নি কিন্তু এখন তাকাচ্ছে।মানুষের সারাজীবন কি এক রকম যায় নাকি।মানুষের মন মিনিটের মধ্যে পাল্টে যায়।
.
এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস!!তবুও একটা খটকা থেকেই যায়।
.
ধুরর ভাল্লাগেনা!প্লিজ তোমরা এইবার চুপ করো।
.
নাদিরাঃআহা!!বউমণি তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি।কিন্তু তোমাকে জ্বালানোর জন্য আরো বেশি করেই বলছি আমি।
.
রাত তিনটা হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।এপাশ ওপাশ ফিরে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু ঘুমের উপর কি জোর চলে,চলে না তো!!তাই নিজেকে ঘুম পাড়াতে ব্যর্থ হলাম আমি।নিজেকে ব্যর্থ হতে দেখে প্রচন্ড রাগ লাগছে আামার।কেন ঘুম আসবে না।কিসের জন্য আসবে না।আজ রাতের ঘুম যদি নাই হয় তাহলে কাল এত দখল নেব কি করে।যেখানে ঘুমিয়েই ছিলাম আধঘন্টা মতোন আগে যদিও এখনও অনায়াসে চার-পাঁচ ঘন্টা ঘুমাতে পারি।কিন্তু ঘুম সেটা এভাবে উবে যাবে ভাবতেই পারিনি।কিছুক্ষণ বিছানায় ছটফট করে উঠে বসলাম আমি।দম বন্ধ লাগছে আমার।এতক্ষণে বুঝে গেছি আজ দু-চোখ এক করতে পারবো না আমি।ঘুম নেই সে হাওয়া হয়ে গেছে।কিন্তু এখানে একা একা বসে থাকা তো যায় না।নাহ ছাদে যাই।কিন্তু এই রাতের বেলায় একা একা যাবো কি…..
.
ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছি।আকাশে আজ তারার মেলা বসেছে।অনেকগুলো তারার মাঝখানে এক টুকরো চাঁদ।চাঁদের আলোয় চারিদিক চিক চিক করছে।চাঁদটাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ।ওই চাঁদের মুগ্ধতায় মুগ্ধ আমি।কাল রিতির জীবনে সবথেকে সুন্দরতম দিন।স্বামী,শশুর,শ্বাশুড়ি নিয়ে ভরা সংসার ওর।আমিও তে সব পেয়েছিলাম কিন্তু….চেয়েছিলাম মানিয়ে নিতে,উনাকে মেনে নিতে কিন্তু উনি!উনি কোনো সুযোগই দেন নি আাময়।হয়তো উনার লাইফে আগে থেকেই “রীমা” নামের অস্তিত্ব ছিলো তাই।বেশ ভালোই হয়েছে উনার পছন্দের মানুষের সাথে জীবন সাজাতে পারবেন উনি।আর পিছুটান রেখে লাভ নেই এবার উনার আমার সেপারেশন খুব জরুরি।কথাগুলো ভাবতেই চোখ দুটো ভরে আসছে আমার।চোখ বুঝে চোখের পানিগুলো ফেলছি তখনই সামনে কারে উপস্থিতি টের পেলাম আমি।এই গভীর রাতে কে হতে পারে আমার সামনে।তাহলে কি ভূত!না ভূত বলে তো কিছু নেই।ভয়ের চোটে চোখ খোলার সাহস পাচ্ছি না আমি।ভেতরে দম নিয়ে দোয়া দুরুদ পড়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম আমি।কিন্তু সামনে কেউ নেই।হয়তো আমার মনের ভুল ছিলো।এখানে থাকাটা উচিৎ নয় তাই আবারও রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম আমি।কিন্তু সামনে এমন কিছু দেখবো ভাবতেও পারিনি আমি।দু’হাতে চোখ কছলে বড় বড় চোখ করে আবারও তাকালাম কিন্তু না ভুল নয়!ঠিকই দেখছি।আআআ বলে চিৎকার করে উঠলাম আমি…….!!
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-১১

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_11
.
.
🥀সকলের রাতের ডিনার শেষে রাতের বেলা ছাদে বসে গল্প করছি আমি,নাদিরা,রিদিতা সাথে ওর কাজিনগুলো।রিদি ওর বিয়েটা নিয়ে খুব এক্সাইটেড।এক্সাইটেড হবেই বা না কেন বিয়ে ঠিক হওয়ার চারমাস পর ছুটিয়ে প্রেম করে তবেই বিয়ে করছে ওরা।রিদির বর পেশায় ইন্জিনিয়ার,তবে বেশ রোমান্টিক।রিদি বিয়ের পর কি করবে কোথায় যাবে এই সব কথা বেশি প্রাধান্য পায় ওর মুখে।ওর কথাগুলো শুনে আমরা হাসছি।তখনই ছাঁদের কোণে দাঁড়ালেন উনি সাথে রামীম ভাইয়াও আছেন।উনাকে দেখেও না দেখার ভান করে গল্পে মনোনিবেশ করলাম আমি।তখনই বলে উঠলেন উনি….
.
আচ্ছা রিদি সবাইকেই তো মোটামুটি চিনি কিন্তু এই মেয়ে টা কে…?ওকে তো চিনলাম না।
.
উনার কথায় অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছালাম আমি।আমাকে চিনেন না উনি ঢং।উনার কথা শুনে মিটিমিটি হাসছে নাদিরা আর রামীম ভাইয়া।
.
রিদিঃওহ্!!ভাইয়া তোমার সাথে পরিচয় করানোই হয় নি।ও আমার বেস্টু মেহরীমা।মিহু উনি আমার কাজিন নাদিরার ভাই..!!
.
ওহ্!হ্যালো মিহু আমি আরাভ(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)।
.
উনার এমন ব্যবহারে রাগে ফুঁসছি আমি।”হ্যালো মিহু আমি আরাভ” নিকুচি করেছে তোর পরিচয়ের।যত্তসব ফালতু লোক একটা।একটু আগে চিনলো কিন্তু এখন সবার সামনে চিনলো না কেমন খাডাশ হুহ!!
.
ছাঁদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে এক পা দেয়ালে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি।ব্যাপারটায় অস্বস্তি ফিল হচ্ছে আমার।আমি কেন যে কারোরই হওয়ার কথা।এমন করে যদি কেউ চোখ দিয়ে গিলে খায় তাহলে তো অস্বস্তি হবেই।বার বার নিজের ওরণা ড্রেস ধরে টানছি।আমার এমন কান্ড দেখে মৃদু হাসছেন উনি কিন্তু যেই ছিলেন সেই একই ভগ্নিতে এখনও আছেন তিঁনি।উনার এই বেহায়াপনা মোটেও নিতে পারছি না আমি।তাই নিজ আসন ত্যাগ করে উঠে দাঁড়িয়ে আমি।গল্পের আসর ছেড়ে আচমকা উঠায় অবাক সবাই।কিরে উঠছিস যে….কোথায় যাবি…?
.
ভালো লাগছে না!!মাথা ব্যাথা করছে একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
রিদিঃখুব কি খারাপ লাগছে আমি আসবো তোর সাথে…?
.
উহুম আমি পারবো!!তুই থাক।উনার দিকে তাকিয়ে এখনও সেই অবস্থায় অটল উনি একটা মুখ ভেংচি কেটে নিচে নেমে এলাম আমি।নিচে নামতে মাথায় কারো সাথে টোকা খেলাম আমি।সামনের ছেলেটাকে দেখে রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমার।আহান রিদির কাজিন ওদের বাসায় থেকে লেখাপড়া করছে। ছেলেটার চরিএে সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি।দেখলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে তাকে আমার দিকে। যেন কোন জন্মে তাঁর বউ ছিলাম আমি।ছেলেটা বএিশ দাঁত বের করে যেই কথা বলতে যাবে তখনই তাড়াহুড়ো করে ওকে এড়িয়ে গেলাম আমি।যাক বাবা বাঁচা গেলো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি…!!
.
.
.
আজকে রিদিতার গায়ে হলুদ+মেহেন্দি।সকাল থেকে সবাই যে যার মতো বিজি।আমিও কম বিজি নই।আন্টি নাদিরার হাতে হাতে কিছুটা কাজ এগিয়ে দিচ্ছি।সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ তাই নাদিরা আর রিদি ওদের পার্লারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।রিদিতা আমাকে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু আমি যাই।শেষমেশ মেয়েটা মুখ কালো করেই চলে গেলো।আমি না যাওয়ার একটাই কারণ “আরাভ”!! এই লোকটার জন্য এই বাড়ীতে কোথাও একফোঁটা ও শান্তি পাই না আমি।যেখানেই যাই সেখানেই উনি।বিরক্তি লাগে সেটা কেন বুঝেন না উনি।রিদি কে নিয়ে পার্লারে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছি তখনই জানতে পারি আরাভের সাথে উনার গাড়ী করেই আমাদের পৌঁছে দেবেন উনি।পেছনে রিদি আর নাদিরা সাথে ওদের কাজিন আমার জায়গা নাই।তাই আমাকে সামনে উনার পাশে বসতে বললেন উনি কিন্তু কিছুতেই উনার পাশে বসে যাবো না আমি।যেখানে উনার মুখ দেখতেও নারাজ আমি সেখানে উনার পাশে বসার প্রশ্নই উঠে না।তাই রিদিকে বুঝিয়ে অসুস্থতার ভান করে আটকে যাই আমি।আমার না যাওয়ায় বেশ ক্ষেপেছেন উনি।সেটা উনার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি আমি।যা হয়েছে বেশ হয়েছে…!!
.
একটু আগেই পার্লার থেকে ফিরেছে রিদি!!মেয়েটাকে আজ যেন আরো মায়াবী লাগছে আমার কাছে।হলুদ কালারের শাড়ি,কানে গলায় ফুলের অর্নামেন্টস ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, হাত ভর্তি চুড়ি…!!নাদিরাকেও দারণ লাগছে আজ।কিন্তু আমার এখনও রেডি হওয়া হয় নাই।সেই দেখে রিদির কি রাগ।ওর আর আন্টির বকা শুনে তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে একটা শাড়ী জড়িয়ে নিলাম গায়ে।শাড়ী এই জিনিসটা আমার বিরক্তির তালিকায় প্রথম।কিন্তু রিদির ইচ্ছে তার বিয়েতে আমি যেন শাড়ী পড়েই থাকি।ওর এই আবদার টা ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারি নি।তাই শাড়ী পড়ে হালকা মেক-আপ,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে হাঁটা ধরালাম স্টেজের দিকে আমি।চারিদিক সেজে উঠেছে খুব সুন্দর করে।লাল নীল আলোর কি ছড়াছড়ি।আমকে দেখেই মিষ্টি হেঁসে উপহার দিলেন আন্টি…..খুব সুন্দর লাগছে তোকে…!!
.
উনার হাসির বিপরীতে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলাম আমি।তখনই দাঁত বের করে আমার সামনে দাঁড়ালো আহান খচ্চর!উফফ!!একে দেখলেই মেজাজ বিগড়ে যায় আমার।মিহু তোমাকে না সত্যি খুব সুন্দর লাগছে একদম পরীর মতো লাগছে।তোমার দিক থেকে কেউ চোখই ফিরাতে পারবে না।
.
উনাকে থ্যাংকস জানালাম আমি।বার বার তো মানুষকে ইগনোর করা যায় না।তাছাড়া আমি যে উনার সাথে কথা বলছি সেটা নজর রাখছে আর রাগে ফুসছে কেউ।তাঁকে আরেকটু রাগানোর জন্য না চাইতেও উনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম আমি।একসময় ক্লান্ত হয়ে উনাকে কাটিয়ে সামনে হাঁটা ধরালাম আমি।স্টেজে গিয়ে রিদির সামনে দাঁড়ালাম।রিদিও প্রসংশা করলো সাথে নাদিরাও।বেশ ভালোভাবেই হলুদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেলো।অনুষ্ঠান শেষে ড্রয়িংরুমে ঢুকছি তখনই আমার হাত টেনে ধরলো কেউ।কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথায় যেন পৌঁছে গেলাম।ব্যাপারটা এতটা তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে কিছুই টের পাইনি আমি।আমার সামনে রাগী লুকে তাকিয়ে আছেন আরাভ।এই রাগের কারণগুলো অজানা নয় আমার কাছে।উনার সাথে পার্লার যাই নি এটাই সবথেকে বড় রাগের কারণ উনার।কারণ ইগনোর জিনিসটা একেবারে পছন্দ করেন না উনি।সেটা উনাদের বাসায় থাকাকালীন জানতে পেরেছি।উনি যেটা বলেন সেটাই শুনতে হবে সবাইকে।উনার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে রুক্ষ কন্ঠে বললাম…..
.
এটা কি ধরণের অসভ্যতা আমাকে এখানে এভাবে নিয়ে আসলেন কেন….?
.
মুখে কথার খই ফুটেছে তাই না!!(দাঁত কটমট করে)ওই ছেলের সাথে এত কথা কিসের তোমার…?কিসের এত হাসাহাসি…?(চোখ রাঙিয়ে)
.
আজব!কোন ছেলেটার কথা বলছেন আপনি…?আর যার সাথেই হাসি না কেন তাতে আপনার কি…?আমার যখন যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে কথা বলবো,হাসবো।তাঁর কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নই।
.
বাধ্য তুমি!(চিৎকার করে)।তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ আইনত এখনও তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী।হ্যাঁ আমরা আলাদা থাকি এটা ঠিক কিন্তু আমাদের ডিভোর্স এখনও হয় নি।
.
বিবাহিতা স্ত্রী!!হাসালেন।যেই বিয়ে আপনিই মানেন না,আমিও মানি না।নিছক জোর করে,ভুল করে হওয়া একটা সম্পর্ক সেখানে আমাকে স্ত্রী দাবি করাটা কি বোকামি নয় মিঃ আরাভ।আপনার কাগজে কলমের স্ত্রী আমি কিন্তু মন থেকে নই।যাগগে এসব ফালতু কথা শোনার টাইম বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নাই।
.
নাহ বোকামি নয়!!আমার বউকে আমি বউ বলবো তাতে কার কি!আমি মানি কিনা সেটা আমি জানি!আজকের পর থেকে আর ওই আহানের সাথে কথা বলবে না।কথাটা মাথায় রেখ ইডিয়ট বলে চলে গেলেন উনি।আসছে বউ কইতে হারামজাদা!!আমি না তুই ইডিয়ট,তোর চৌদ্দ গুষ্টি ইডিয়ট হুহ!!কিসের এত জ্বালাপোড়া তোর।আমি কথা বলবো আরও বেশি করে কথা বলবো তুই আটকাইস আমারে…!!কথাগুলো কানে যাওয়ার আগেই ওখান থেকে চলে গেলেন উনি।থাকলে হয়তো কথাগুলো গলা দিয়ে বেরই হতো না আমার।ওই ফালতু লোকটার ফালতু কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ড্রয়িংরুমে ঢুকছি তখনই নাদিরার সাথে ধাক্কা খাই আমি।বেখালি হয়ে হাঁটার ধরুন ওর হাতে থাকা কফির মগ আঁচড়ে পড়ে আমার হাতে।সাথে সাথে আহ্ বলে চিৎকার দিয়ে উঠি আমি।হাতটা খুব জ্বালা করছে আমার।রান্নাঘর থেকে সদ্য নিয়ে আসা হয়েছে যার ধরুন তাপটা এখনও টাটকা আছে।আমি আহ্ বলার সাথে সাথে একজন সামনে এসে দাঁড়ালো আমার।ধমকের সুরে বলে উঠলো…..
.
এত কেয়ারলেস কেন তুমি…!!একটু দেখে শোনে চলতে পারো না এই চোখ কোথায় থাকে তোমার পায়ের নিচে…?
.
একে তো হাত জ্বলছে তার উপর এর গাঁ জ্বালানো কথা দুইয়ের সংমিশ্রণে দুকছি আমি।নাদিরা মন করে সরি!সরি!আমি দেখতে পাই নি।
.
এখানে দাঁড়িয়ে সরি না বলে আইস ব্যাগ নিয়ে আয়….দৌড়ে গিয়ে বরফ নিয়ে এলো নাদিরা।উনি বরফ নিয়ে আমার হাতে দিতে যাবেন তখনই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলাম আমি।
.
কি হলো হাত দাও…!!
.
আমার কাছে দিন আমিই দিয়ে দিতে পারবো।আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
.
ফটাফট হাত বার করো নইলে…..
.
বললাম তো…!!
.
রাবিশ!!বলে জোর করে এক টানে আমার হাতে উনার কাছে নিয়ে গেলেন উনি।বরফ দিয়ে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলেন আমার হাতে।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ।এত রাক্ষুসী শক্তির সাথে আমার মতো মেয়ে পারবে কি করে।অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন উনি….ফিসফিস করে কানের কাছে বলে উঠলেন…..
.
আর কখনও যদি দেখেছি বেখেয়ালে হেঁটে কিছু ঘটিয়েছো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।মাইন্ড ইট!!আর আমার কাজে কখনও বাধা সৃষ্টি করো না।কারণ আমার যা করার তা থেকে তুমি আমায় আটকাতে পারবে না উল্টে আমার কঠিন রূপ দেখবে তুমি যেটা আমি কখনও তোমার উপর এপ্লাই করতে চাই না।বুঝেছো “বউ” বলে চলে গেলেন উনি।”বউ” এই বউ শব্দটা বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমার কানে।এসব কি বলছেন উনি আর কেনই বা বলছেন।যেই সম্পর্ক ছয় মাস আগে মাটি চাপা দিয়েছেন নিজেই সেই সম্পর্ক কেন আবার নতুন করে টানছেন উনি।কেন এই বর বউয়ের খেলায় মেতেছেন।আমাকে কি পুতুল মনে হয় উনার নাকি।যখন যা হচ্ছে তাই করছেন।কখনও ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন তো কখনও দরদ দেখাচ্ছেন।কি চাইছেন কি উনি…..!!
.
.
#চলবে……

তোমায় ঘিরে পর্ব-১০

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_10
.
.
🥀নাদিরা!!
.
বউমণি বলেই আমাকে জাপটে ধরলো মেয়েটি।হালকা হেসে জড়িয়ে ধরলাম আমিও।আমাকে দেখে ওর খুশী যেন ধরছেই না যেটা ওর চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।চোখ গুলো খুশীতে চিকচিক করছে ওর।কিছুক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিলো।তারপর খুলে বসলো ওর কথার ঝুড়ি….!!
.
জানো বউমণি আমি তো ভাবতেই পারিনি তোমার সাথে আমার এভাবে দেখা হয়ে যাবে।তুমি চলে আসার পর তোমাকে খুব মিস করতাম এখনও করি।কেন চলে আসলে গো।আচ্ছা তুমি এখানে কি করছো…?
.
আমি আমার বান্ধবীর বিয়েতে এসেছি।আসার ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু ওই বান্দরনীর কড়া হুকুম ওর বিয়ের এক সপ্তাহ আগে যেন ওর বাসায় আসি।কিন্তু তা কি সম্ভব!!সম্ভব নয়।তাই আজকে এসেছি।
.
ওহ্হ তাই বলো…!!তার মানে তুমি রিদিতা আপুর বান্ধবী +আমার বউমণি।রিদিতা আপু হলো আমার কাজিন।তাই আমি এসেছি।আম্মু আসতে পারেনি তুমি তো জানোই ভাবির কথা।এই মাসেই ডেইট দিয়েছি তাই আম্মু ওকে একা ফেলে আসেনি।
.
তাই নাকি এটা তো খুব ভালো খবর!শেষমেশ একটা বাচ্চা আসছে তাহলে তোমাদের বাসায়।আচ্ছা নীলাভ ভাইয়া এখন কেমন আছেন…?
.
আরেহ তুমি তো জানোই না!!অবশ্য জানবেই বা কি করে তুমি চলে আসার পর তো কোনো যোগাযোগ ছিলো না আমাদের।তুমি আসার একমাস পরই ভাইয়া বাসায় এসেছে।এখন পুরো সুস্থ।ভাবির সাথে ছুটিয়ে সংসার করছে….!!জানো ওরা খুব হ্যাপীলি দিন কাটাচ্ছে। বাচ্চাটার আগমন নিয়ে খুব এক্সাইটেড ওরা।কবে আসবে সেই চিন্তায় বিভোর।ভাইয়ার যেন তরই সইছে না।
.
ওহ্হ ভালো তো!!বাচ্চা জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে।ওদের ওই ছোট ছোট আঙ্গুল ধরে থাকতে খুব ভালো লাগে আমার।আচ্ছা আন্টির খবর কি…?
.
হুমম!!আম্মু তো ভালোই আছে।জানো আম্মু আর ভাবি সবসময় তোমার কথা বলে।ভাবি সবসময় এটা বলে ওর জন্য সাফার করলে তুমি।আচ্ছা ভাবি সবার কথা জিজ্ঞেস করলে কই যার জন্য আমাদের সাথে তোমার পরিচয় সেই আরাভ ভাইয়ার কথা একটিবারও জিজ্ঞেস করলে না তো…!!
.
“আরাভ” এই একটা নাম আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে৷ভালো আছে নিশ্চয়,ভালো থাকবেই তো!থাকারই কথা!অতীতের কথা ভাবতেই ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ভেরিয়ে এলো আমার।উনার কথা আলাদা করে জিজ্ঞেস করার কি আছে,ভালোই আছেন নিশ্চয়ই।
.
তুমি জানো না বউমণি ভাইয়া ভালো নেই।তবে এটা আমি তোমাকে বলছি না।সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।
.
কি হলো চলো রিদির কাছে যাই।আর একটা কথা আমার যে তোমাদের সাথে একটা সম্পর্ক ছিলো সেটা প্লিজ ওকে বলো না।বুঝতেই তো পারছো কথাগুলো শুনলে এ্যা টু জেড বলতে হবে।আমি চাই না এগুলো নিয়ে কোনো কথা হোক।আসলে পুরনো কথা আমি আর মনে করতে চাই না।
.
ভাইয়ার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছ…?
.
আমতা আমতা করে ককই না তো!!চলো আমার আবার দেরি হলে রিদি গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।
.
ওকে চলো!!মনে মনে মুচকি হেসে বউমণি এইবার তোমার খবর আছে!!
.
রিতির কাছে যেতেই গাল ফুলিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলো আমায়।মেয়েটা সত্যি পাগলী!কেন আসতে দেরী হলো সেটা নিয়ে পড়েছেন উনি।এদিকে দুদিন পর সবাইকে ছেড়ে একা একা ডেং ডেং করে যে শ্বশুর বাড়ী চলে যাবেন সেটা কিছু না হুহ মুখ ভেংচি দিয়ে…!!
.
ওই একদম গাল ফুলাবি না তো…!!গাল ফুলালে এক্ষুনি চলে যাবো।তোর বিয়েতেই থাকবো না বান্দরনী!!
.
……
.
রিদির সামনে গিয়ে কোমড়ে দুহাত চেপে রাগী লুকে চুপ থাকবি তো!কথা বলবি না।ঠিক আছে বলে চুলের গুছি ধরে এক টান মেরে আসছি বলে যেতে লাগলাম আমি।তখনই মুখে কথা ফুটলো উনার।আমার হাত ধরে মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো…..
.
তুই সত্যি চলে যাবি নাকি…?
.
হুম!!ছাড় আমায়।
.
করুণ কন্ঠে যাস না প্লিজ…!!
.
কেন যাবো না!!তুই হাড়ির মতো মুখ করে আমার সাথে কথা বলবি আর আমি তোর বিয়েতে থাকবো নো ওয়ে বস আমি আসছি।
.
সরি! সরি!!আর হবে না।এই দেখ কান ধরছি বলেই কান ধরলো রিদি।ওর এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে খুটি খুটি আমি।আজ বাদে কাল যার বিয়ে সে কিনা কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে হাউ ফানি!
.
ওকে ঠিক আছে আর কান ধরতে হবে না শাঁখচুন্নি!!আমাদের কথার মাঝেই বেজে উঠলো রিদির ফোন।ফোন হাতে লজ্জা রাঙ্গা হাসি উপহার দিলো সে….ওর মিষ্টি হাসি দেখে বুঝতে বাকী নেই ফোনটা কার।একগাল লজ্জা নিয়ে আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ব্যস্ত সে।আমি অবাক হয়ে দেখে চলেছি ওকে….
.
কতটা খুশী নিয়ে মনের আনন্দে কথা বলছে রিদি।আজ বাদে কাল যে হবে ওর পৃথিবীর সব থেকে আপন মানুষ।আমার জীবনটাও তো এরকম হতে পারতো!!গল্পটা পারতো সুন্দর কোনো রূপ নিতে।কিন্তু না তা হলো না।
.
আরাভ আমাকে আমার বাড়ী ফিরিয়ে দিয়ে নিজের করা অন্যায়ের প্রাশ্চিত্য করে গেছেন।সেদিন আমার সামনে দুইটা অপশন রেখেছিলেন তিনি….এক.হয় উনার সাথে থাকবো নয় উনাকে ছেড়ে দিবো তার মধ্যে দুই নাম্বার টাকেই মেনে নিয়েছি আমি।অবশ্য মানি নি,মানানো হয়েছে আমায়।এক প্রকার বাধ্য হয়েই মেনে নিয়েছি।পরেরদিন সকালে আমাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন উনি।তারপর বাবা মা’কে সবটা খুলে বলেন।আব্বু আম্মু নিজেদের ব্যবহারে অনুতপ্ত।বিনা দোষে নিজের মেয়েকে ভুল বুঝেছেন উনারা।কিন্তু সবটা শোনার পর আরাভের উপর রেগে দুই-একটা চড় থাপ্পড় ও বসিয়েছেন আব্বু কিন্তু তাতে কোনো রিয়াক্ট করেন নি উনি বরং মাথা নিচু করে মেনে নিয়েছেন তিনি।উনার সাথে থাকার ব্যাপারে আমার উপরে সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছিলেন আব্বু কারণ জীবনটা আমার।তাই আমার ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন উনারা।সেই থেকে বদলে গেলো আমার জীবন।আরাভের সাথে বা ওর ফ্যামিলির সাথে আর দেখা বা কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার।তাই হঠাৎ এখানে নাদিরাকে দেখে অবাক হই আমি।উদাস মনে নিজের জীবন নিয়ে ধ্যান মগ্ন আমি তখনই কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।আচমকা এমন হওয়ায় চমকে উঠলাম আমি…..
.
রিদিঃকি রে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলিস….?এতক্ষণ ধরে ডাকছি হুশই নেই।
.
উহুম কিছু না!!একটু অন্য মনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম।
.
তা কি ভাবছিলিস!!ভ্রু নাচিয়ে জিজুর কথা বুঝি।
.
ওর কথায় হালকা হাসলাম আমি!!নাহ তোর জামাইয়ের কথা।এখন তুই থাক আমি আন্টির সাথে দেখা করে আসছি।
.
সন্ধ্যা সাতটা কি আটটা….চারিদিকে আত্মীয় স্বজনে গিজগিজ করছে।এই হট্রগোলে মাথা ধরে গেছে আমার।শরীরটাও ভালো লাগছে না।এই সময়ে নিরিবিলি একটু স্পেস চাই আমার যেখানে এই শোরগোল থেকে একটু শান্তিতে থাকতে পারি আমি।বাগানের পাশটা নীরব থাকায় ওইদিকে হাঁটছি আমি হঠাৎ কিছু একটার সাথে পা আটকে পড়ে যাচ্ছি তখনই কোমড় জড়িয়ে ধরলো কেউ।চোখ খিঁচে বন্ধ করে সামনে থাকা লোকটাকে আঁকড়ে ধরে আছি আমি।তখনই কানে কিছু কথা এলো আমার।
.
হেই লেডি এত কেয়ারলেস কেন তুমি…?দেখে মনে হয় এখনও হাঁটতে শিখ নি…!!বার বার পড়ে যাওয়ার অভ্যাসটা এবার ত্যাগ করো ইয়ার!
.
লোকটার কন্ঠটা খুব চেনা আমার।এমন শীতল মিষ্টি গলা আগেও শুনেছি আমি।চোখ খুলে সামনে থাকা লোকটাকে দেখে আমার চেখ ছানাবড়া!…..হোয়াইট শার্ট,চোখে কালো সানগ্লাস,সিল্কি চুলগুলো বেশ কিছুটা স্থান দখল করে নিয়েছে কপালের,মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে আমাকে ধরে আছে আরাভ।উনাকে দেখে আনমনেই বলে উঠলাম আপনি…..!!
.
হুম আমি!!গম্ভীর ভাব নিয়ে কেন তুমি অন্য কাউকে এসপেক্ট করেছিলে নাকি…?
.
ধুরর ছাড়ুন আমায়!!মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।
.
আমি তোমায় ধরে রেখেছি নাকি!!সেই কবে ছেড়ে দিয়েছি।তুমিই তো আমাকে ধরে আছো…!!উনার কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।নিজেকে একনজর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম সত্যি বলছেন উনি।তাড়াতাড়ি করে উনাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম আমি।
.
মেহরীমা নূর!!অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা।এখানে তোমাকে পাবো ভাবতে পারিনি।বাই দ্যা ওয়ে কেমন আছো তুমি…?
.
দেখতেই তো পাচ্ছেন ভালোই আছি!!অসুস্থ হলে কি আর এই বিয়ে বাড়ীতে আসতে পারতাম নাকি।
.
সানগ্লাস হাতে নিতে নিতে হুম তাও ঠিক!!তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি ভালোই আছে।বেশ মোটাও হয়ে গেছো ইদানীং।
.
কিহ!!আমি মোটা হয়েছি।যেখানে সবাই বলে দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হচ্ছি আর উনি কিনা বলছেন আমি মোটা…!!আর ইউ ওকে মিঃ আরাভ…?
.
জ্বী!!আচ্ছা তুমি এখানে কেন…?বিনা দাওয়াতে নাকি দাওয়াতে এসেছে…?
.
আপনি কি আমায় অপমান করছেন…?
.
নাহ না!!তোমাকে অপমান করার সাধ্য আমার আছে নাকি!জাস্ট মজা করে বলেছি ডোন্ট মাইন্ড!
.
ওহ্হ!!রিদিতা আমার বান্ধবী।
.
ওহ্হ আচ্ছা!!আমাকে জিজ্ঞেস করলে না তো আমি এখানে কেন…?
.
জানার প্রয়োজন নাই তাই।ওকে বাই বলে এক সেকেন্ডও সেখানে না দাঁড়িয়ে উল্টো পথে হাঁটছি আমি।লোকটাকে কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না আমার।গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে।কেন উনার উপর এতটা রাগ হচ্ছে তার কারণটা নিজেরই অজানা আমার।এই বিয়েতে আসাই ভুল হয়েছে আমার,মারাত্মক ভুল!এখানে যদি আসতাম তাহলে না এই রাক্ষস আর না নাদিরার দেখা পেতাম।এতদিন যেভাবে ওদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম তেমনই ভালো ছিলাম।শালা কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।আমি নাকি হাঁটতে শিখিনি।না আমি হাঁটা শিখি নি রোজ তুই আমায় হাত ধরে ধরে হাঁটতে বের হস খচ্চর কোনহানের…!!
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-০৯

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_09
.
.
🥀সবাই অবাক হয়ে একসাথে বলে উঠলেন মেহরীমা…!!
.
হুমম মেহরীমা!!ও ই নীলাভকে বাঁচিয়েছে।
.
অবাক হয়ে উনাদের কথা শুনে চলেছি আমি।এরমধ্যে এতকিছু হয়ে গেছে।ইসস!!লোকটা কতটা কষ্টই না সহ্য করেছে।কিছুটা থেমে আবারও বলতে শুরু করলেন উনি…..
.
সেদিন মেহরীমা নীলাভকে এডমিট করে চলে আসার পর হসপিটালে পৌছাই আমি তখনও সেন্সলেস ছিলো নীলাভ।আমি পৌছানোর কিছুক্ষণ পর সেন্স ফিরে আসে ওর।তখন ওকে অটিতে শিফট করার আগে আমার হাত ধরে বলে…..
.
★ফ্লাশব্যাক

_______ভাই আমি হয়তো আর বাচঁব না!!কিন্তু কিছু কথা জানা প্রয়োজন তোর।আমার এই অবস্থা কেন…?কারা করলো…?কেন করলো…?সবকিছু তোর জানা প্রয়োজন।আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি।নাদিরা জানে ব্যাপারটা।এতদিন জানতাম মেহরুও আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু আজ জানতে পারলাম ও আমাকে ভুলে নিজের বাবার ঠিক করা ছেলেকে বিয়ে করছে।ভাই ও আমার সাথে ছলনা করেছে,ঠকিয়েছে আমায়।সব মেয়েরাই লোভী!!তার প্রমাণ পেয়ে গেছে আমি।শুনেছি আমার থেকে এস্টাবলিশ ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে যার কারণে আমাকে ভুলে গেছে।তাই এখন আমাকে মেরে ফেলার জন্য ওর বাবাকে বলেছে।কারণ ও জানে আমি থাকতে ওর বিয়ে পৃথিবীর কারো সাথে হতে দেবো না আমি।তাই আমাকেই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো।আমরা যে একে অপরকে ভালোবাসি আগে থেকেই ওর বাবা ব্যাপারটা মানতে পারেন নি।তাই ওকে ছাড়ার জন্য আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে এসেছেন কিন্তু আমি পিছু হটি নি।এখন মেহরু প্রেগন্যান্ট আমার রুমে ওর প্রেগন্যান্সি রেস্টের রিপোর্টও রয়েছে।ওই সন্তানকে তুই বাঁচিয়ে রাখিস প্লিজ।তুই আমায় কথা দে ওর কোনো ক্ষতি হতে দিবি না।যেভাবেই হোক ওকে পৃথিবীর আলো দেখতে দিবি।জানিস!! মেহরু ওর আগমনে অনেক খুশী হয়েছিলো অনেক স্বপ্ন দেখেছি ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে কিন্তু এখন জানিনা কি হলো ওর।আরেকটা কথা ওকে জন্ম দেওয়ার পর মেহরু যা চায় তাই ওকে করতে দিস আটকে রাখিস না।আর আমার সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করিস প্লিজ!!
.
তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না ভাই!!কিচ্ছু হবে না তোর।আর তোর সন্তানেরও কিচ্ছু হতে দেবো না আমি।নীলাভের অবস্থা দেখে চোখে পানি চলে এসেছে আমার।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে…..এতদিন আমাদের কেন জানাসনি ভাই।তাহলে এসব কিছুই হতো না!
.
আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিস না!!আমি জানি আমার সাথে কি হতে চলেছে।তোকে না জানিয়ে ভুল করেছি।ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু হলো না।কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে রে ভাই।গলায় জড়িয়ে যাচ্ছে বারবার।চোখগুলো বুঝে আসছে আর চেয়ে থাকতে পারছিনা।ভাই তুই আমার বাচ্চাটাকে বাঁচাবি তো!!
.
হুম বাঁচাবো তোকে কথা দিচ্ছি আমি।আচ্ছা মেয়েটার নাম কি…?বাসা কোথায়…?ওর কোনো ছবি আছে তোর কাছে…?
.
ওওর নাম মেহরু!!উওরায় থাকে।সামনের মাসের ১২ তারিখ ওর বিবিয়ে।আমার ফোনে ওর অনেকগুলো ছবি ছিলো কিন্তু ওরা ভেঙ্গে দিয়েছে।আরেকটা কথা ওর সাথে আমার রে…….
.
★বর্তমানে……
.
আর কিছু বলার আগেই আবারও সেন্সলেস হয়ে যায় নীলাভ!!তারপর আর চোখ খুলেনি।আমি চিৎকার করে পাগলের মতো ওকে ডেকেছি কিন্তু সেই ডাক ওর কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি।কি ভয়ংকর সেই দিনগুলি এখনও মনে হলে শিউরে উঠি আমি।এরপর কেটে গেছে অনেকদিন।এখন নীলাভ অনেকটাই সুস্থ।কয়েকদিন পর বাড়ীও ফিরে আসবে।
.
কিন্তু সেই মেহরু যাকে খুঁজে বার করা কঠিন হয়ে পড়েছিলো আমার জন্য।শুধুমাএ একটা নাম আর উওরায় থাকে এইটুকুই জানতাম আমি।এইটুকু দিয়ে কি আর মানুষ খোঁজা যায়…?কিন্তু তাও হাল ছাড়িনি আমার সব লোক লাগিয়ে খোঁজে চলেছি।পুলিশও তদন্ত করে কিছু বলতে পারেনি।
.
দুইদিন পর রিসেপশনিস্টের কাছ থেকে জানতে পারি একটা মেয়ে তার হবু বরকে নিয়ে নীলাভকে এডমিট করে গেছে।কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়ায় নি প্রচন্ড রকমের তাড়াহুড়োয় ছিলো তারা।এডমিট ফরমে দেখতে পাই মেয়েটির নাম মেহরীমা নূর!!তাড়াতাড়ি করে বাসায় ফিরে আসি নীলাভের রুম থেকে তন্নতন্ন করে প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট বের করি আর সেখানেও পেশেন্টের নাম “মেহরীমা”!!ব্যস ঝটলা বাধে ওখানেই।হসপিটালের লিস্টের “মেহরীমা” আর প্রেগন্যান্সি রিপোর্টের “মেহরীমা” আমার কাছে মনে হয়েছিলো একই।আমি এটা ভেবেই নেই যেহেতু উডবি হাসবেন্ড নিয়ে এসেছিলো সেহেতু মেয়েটি নীলাভের গার্লফ্রেন্ড মেহরুই ছিলো।তারপর একজন আর্টিস্টকে ডেকে এনে রিসেপশনিস্টের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী মেয়েটির ছবি আঁকাই।সেই ছবিটা আর কারোর নয় মেহরীমারই!!
.
চুপচাপ উনার কথাগুলো শুনছি আমি।সবাই বেশ চুপচাপ!!কারো মুখে কোনো কথা নেই।সবার দৃষ্টি এখন উনার উপরেই স্থির।কিছুক্ষণ শ্বাস টেনে আবারও বলতে লাগলেন উনি……
.
আমার সব লোক লাগিয়ে দেই উওরার অলিতে গলিতে।১২ তারিখ কোন মেহরীমার বিয়ে সেটা জানার জন্য।এরপর খুঁজে পাই মেহরীমাকে।হ্যাঁ বর্তমানে যে আমার স্ত্রী সেই মেহরীমা নূর কে!!
.
নাদিরাঃভাইয়া তার মানে তুই মেহরু ভেবে বউমণিকে…..
.
হুমম!!নীলাভের অবস্থা তখন খুব খারাপ ছিলো।কোমায় চলে গিয়েছিলো ও। ডক্টর এটাও বলে দিয়েছিলো ওর বাঁচার আশা একদম নেই বললেই চলে।তাই বাচ্চাটাকে পৃথিবীর সামনে নামহীন ভাবে আসতে দিতে চাই নি আর ওর বাবার উপরে রাগ থাকায় ওর বাবাকে কিডন্যাপ করে মেহরীমাকে বিয়ে করি আমি।ভেবেছিলাম নীলাভের কথা মতো বাচ্চা জন্মানোর পর ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।আর যদি এরমধ্যে নীলাভ সুস্থ হয়ে যায় তখন মেহরু ওর সাথে থাকতে চাইলে থাকবে সেটা ওদের সিদ্ধান্ত।মেহরীমা কে কিছু খুলে বলতে চাই নি।যেহেতু আমি নীলাভের কিছু হই জানে না সেহেতু নীলাভের পরিচয় দিতে চাই নি।তাই এই ব্যাপারে কখনোই ওর সাথে কথা বলিনি আমি।চেয়েছিলাম নীলাভের সাথে অন্যায়ের প্রত্যেকটা আঘাতের বদলা নিতে কিন্তু পারিনি।বার বার হিংস্র হতে গিয়েও কোথায় যেন আটকে গেছি।কিন্তু ওর রোজকার ব্যবহার অবাক করতো আমায়।যখন কনফিডেন্টলি বলতো ও প্রেগন্যান্ট নয় তখন কিছুটা সন্দেহ হতো আমার।প্রথমে ব্যাপারটা নজর না দিলেও পরে ওর আচার ব্যবহার আমাকে বাধ্য করে ভাবতে কোনো ভুল করে ফেলি নি তো আমি।আমার ধারণার সাথে রামীমও একমত জানায়।তাই আবারও মেহরুর খোঁজ শুরু করি।নীলাভের বন্ধুদের সাথে এ নিয়ে কথা বলি কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না।অবশেষে নীলাভের এক বান্ধবীর কল্যাণে ওর সম্পর্কে জানতে পারি।সে মেহরুর ঠিকানা দেয় এবং জানায় যে ১২ তারিখ ওর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তার দুইদিন আগে মেহরু পালিয়ে ওর কাছে আসে।কয়েকদিন থাকার পর পরশু ওকে ওর বাবা তুলে নিয়ে যায়।বাচ্চার ব্যাপারটা ওর ফ্যামিলি জানতো না মেহরু ভয়ে জানায় নি।কিন্তু যখন জানতে পেরেছে তখন অ্যাবরশনের জন্য অনেক অত্যাচার করে।হসপিটাল পর্যন্ত নিয়ে যায় সেখানে ডক্টরের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে কোনোমতে ওকে বাঁচিয়েছে।সব প্ল্যান রেডি করে ঠিকানা জোগাড় করে দুপুরে রামীম কল দেয় তখনই ওদের বাসায় গিয়ে আজ ওকে তুলে এনেছি আর তখনই আরেকটি সত্যি সামনে এসেছে আমার।
.
সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।আর কোন সত্যি জানতে পেরেছেন উনি…..!!
.
নীলাভ আর মেহরু বিবাহিত!!নীলাভ আমাকে যেই কথাটা শেষে বলেছিলো রে….কিন্তু আর বলতে পারেনি।সেটা হলো ওরা লুকিয়ে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করেছিলো আর ওদের ভালোবাসার ফসল ওই বাচ্চা।যেহেতু মেহরু আমাদের বাড়ীর বউ সেহেতু তেমন ঝামেলা করতে পারে নি।ইজিলি ওকে নিয়ে আসতে পেরেছি পুলিশ ওর বাবাকে এরেস্ট করেছে।উনার কৃতকর্মের ফল এবার পাবেন উনি।
.
উনার কথা শুনে অবাকের পর অবাক হচ্ছি আমি।আমাকে এখানে আনার পেছনে এত কাহিনী।তার মানে আমার সাথে যা হয়েছে বিয়ে, প্রেগন্যান্ট সব উনার মিস্টেকের কারণে হয়েছে।উনার একটা ভুল আমার পুরো লাইফ শেষ…!!
.
এই হলো মেহরীমা নূর আর মেহরু নীলাভের কাহিনী।যেই কাহিনী শুরু হয়েছে মেহরুকে নিয়ে আর আমি শেষ করেছি মেহরীমাকে দিয়ে।শুধু নামটাই এক মানুষ ভিন্ন।এই সবকিছুর মধ্যে আমাদের উপকার করেও বিনা দোষে শাস্তি পেয়েছে মেহরীমা!!যা ওকে দিয়েছি আমি।অন্যায় করেছি,চরম অন্যায়!!জোর করে বিয়ে করেছি,ওর বাবা মা’র কাছে ওকে খারাপ প্রমাণ করে দিয়েছি।বিয়ে ভেঙ্গেছি কিন্তু বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আমার কোনো আক্ষেপ নেই কারণ রাফি ছেলেটার ক্যারেক্টার ভালো ছিলো না।তাই এইজন্য আমি অনুতপ্তও নই।কিন্তু বাকী সবগুলো কাজের জন্য ওর কাছে অপরাধী আমি।আজ ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখও নেই আমার।কারো জীবন নষ্ট করে ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাওয়াটাও নিতান্তই হাস্যকর।তবে এটাও ঠিক মানুষ মাএই ভুল।ভুল করা মানুষের সহজাত প্রবৃওি।কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয়!!

“যার ভুল হয় সে মানুষ,যে ভুলের উপর স্থির থাকে সে হলো শয়তান।আর যে ভুলের পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়,সে মুমিন”…!!

মেহরীমার সাথে অন্যায় করেছি তার জন্য অনুতাপ অনুশোচনায় ভুগছি আমি।যা করেছি একদম ঠিক হয়নি আামর।মেহরীমা আমায় করবে তো ক্ষমা তুমি…?
.
উনার কথা শুনে বাকরুদ্ধ আমি!!এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ যেন সেই বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছি আমি।মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে আমার।আমি জানি ক্ষমা মহৎ গুণ।অনেক সময় ক্ষমার অযোগ্য লোককেও ক্ষমা করতে হয় এই প্রত্যাশায়….

” যে আল্লাহ তা’য়ালাও আমার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধগুলোও ক্ষমা করে দেবেন”….!!
.
আমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে আমার কাছে এগিয়ে আসলেন আন্টি….মাথায় হাত রেখে বলে উঠলেন….!!
.
তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা জানা নেই আমার মা।তুমি আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছো।কিন্তু প্রতিদানে আমরা কি দিয়েছি বলেই আমাকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলেন উনি….উনাকে জড়িয়ে চোখের পানি ফেলছি আমিও।এতক্ষণ নিজেকে পাথরের মূর্তির ন্যায় রাখলেও এখন নিজেকে আটকাতে ব্যর্থ আমি।খুব শব্দ করেই কেঁদে উঠলাম আমি। আমার সাথে সুর মিলাচ্ছেন উনিও।অনেকক্ষণ কান্নাকাটির পর আমাকে ছেড়ে দু’হাতে চোখে মুছে দিলেন উনি….
.
আমি জানি মা যা হয়েছে ভুল হয়েছে।কিন্তু একটা বিয়ে তো মুখের কথা নয়।আরাভ এখন তোমার স্বামী।একজন স্ত্রী হিসাবে তুমি কি পারো না তোমার স্বামীর অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো ক্ষমা করে ওকে নিয়ে সুন্দর করে বাঁচতে।আর যদি চাও তুমি এই জোর করে হওয়া সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে যেতে তাহলে…..আরাভের মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বললেন না উনি।আমার অনুরোধ থাকলো তোমার কাছে তুমি ওকে ক্ষমা করে দিও।
.
রামীম ভাইয়া নাদিরা সবারই এক কথা।উনাকে যেন ক্ষমা করে দেই আমি।সবকিছু ভুলে উনার সাথে নতুন করে শুরু করি।কিন্তু তা কি আদৌও সম্ভব…….!!
.
.
সকালে সোনালি আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানায় উঠে হাই তুলে বসলাম আমি।এরইমধ্যে কেটে গেছে ছয় ছয়টি মাস।ছ’টা মাস হয়তো খুব কম সময় কিন্তু এই ছ’মাসে আমার সাথে ঘটে গেছে অনেক কিছু।আনমনে এসব ভাবছি তখনই ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো রিদিতার নাম।ওহ্ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম মেয়েটার বিয়ে পরশু।আজকে ওর বাসায় যাওয়ার কথা আমার।ফোন তুলে ওর ঝাড়ি খাওয়ার আগেই বলে উঠলাম আধঘন্টার মধ্যে আসছি।আমার কথায় মিষ্টি হাসলো রিদি।ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে আম্মুকে বিদায় জানিয়ে ভাইয়ার সাথে রিদিতার বাসার পাড়ি জমালাম আমি।বিয়ে বাড়ী চারিদিকে আত্মীয় স্বজনে ভরপুর।উৎসবের আমেজে মেতে উঠেছে পুরো বাড়ীর লোকজন।হঠাৎ পেছনে কারো ডাক পেয়ে থেমে গেলাম। পেছনে তাকিয়ে এমন কাউকে দেখবো কখনও ভাবতেও পারিনি আমি….!!
.
.
#চলবে…….

তোমায় ঘিরে পর্ব-০৮

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_08
.
.
🥀
এভাবে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন।প্রয়োজন ছাড়া এখন আমার সাথে খুব একটা কথা বলেন না উনি।সকালে অফিস যান রাএে এসে খেয়েই শুয়ে পড়েন।এই ক’দিনে বাচ্চার ব্যাপারটা একেবারে ধামাচাপা পড়ে গেছে।যার কারণে অনেকটা বেটার ফিল করছি আমি।তবে একটা জিনিস লক্ষণীয় আমার সাথে এখন খারাপ আচরণ করেন না উনি।বাসায় ফিরলেও কেমন একটা দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুরেন ।প্রায়ই একা একা কি যেন বিড়বিড় করতে থাকেন।তাছাড়া রামীম ভাইয়ার সাথে ফোনে বাসায় কি যেন ফুসুরফুসুর করেন আমাকে দেখলেই দুজনে চুপ যা নজর এড়ায়নি আমার এটা নিয়ে কখনও জিজ্ঞেস ও করা হয়নি উনাকে।হয়তো উনাদের পারসোনাল কোনো কথা বার্তা হবে।যা শোনার প্রয়োজন নেই আমার।হঠাৎ একদিন আমার কাছে এসে আমার বাবার নাম জানতে চাইলেন উনি…..উনার এমন প্রশ্নে চরম আশ্চর্য আমি।হঠাৎ আমার বাবার নাম নিয়ে পড়লেন কেন উনি….উনার দিকে হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছি আমি।শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে আবারও বলে উঠলেন উনি…..
.
আমি জানতাম কিন্তু এখন ভুলে গেছি….কি যেন নাম তোমার বাবার…?
.
আকাশ আহমেদ!
.
ওহ্হ!!আই নো!আচ্ছা ভালো করে দেখে বলতো তুমি এনাকে চিনো কি না….?বা কোথাও দেখেছো এরকম টাইপ কিছু বলে ফোন এগিয়ে দিলেন উনি।ফোন হাতে নিয়ে স্কিনে তাকালাম আমি।ইয়াং সুদর্শন একজন যুবক।মুখে একগাল হাসি নিয়ে গাড়ীর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।চেহারার কোথাও যেন উনার সাথে ছেলেটার কিছুটা মিল আছে।আমি কিছুক্ষণ পিকটা পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠলাম “না আমি উনাকে চিনি না”!!
.
ওকে নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে ছেলেটা কে…?আর ওর ছবি তোমাকেই বা দেখালাম কেন আমি।বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আমি উনি কি করে জানলেন এই প্রশ্ন ঘোর পাক খাচ্ছে আমার মাথায়!!
.
কি তাই তো!!
.
হুমম!!
.
ও হলো নীলাভ!নাদিরার ভাই!বয়সে আমার বড় তবে আমরা সমবয়সী।তোমাকে দেখানোর উদ্দেশ্য এটাই যেহেতু তুমি এখন এই বাড়ীর সদস্য তাই সবার সাথে তোমার পরিচয় থাকা উচিৎ।ভেবেছিলাম নাদিরা ওকে তোমায় দেখিয়েছে কিন্তু এখন দেখছি না দেখায় নি।আচ্ছা তুমি সিওর তুমি ওকে চিনো না…?ভেবে বলো!!
.
ভালোভাবে মনে করার চেষ্টা করলাম ” নাহ” চিনি না তো আমি।
.
আচ্ছা কিছুদিন আগে হাইওয়ে থেকে একটা ছেলেকে তুমি হসপিটালে এডমিট করেছিলে মনে আছে তোমার….?
.
মাথায় চাপ দিতেই মনে পড়ে গেলো আমার হুম মনে আছে তো!এটা কি ভুলার কথা নাকি!জানেন একদিন আমি আর রাফি মিলে একটা ছেলেকে হাইওয়ে তে পাই রক্তাক্ত কি ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিলো উনার।তারপর উনাকে নিয়ে এডমিট করি এবং উনার ফর্ম ফিল আপ করে রাফির তাড়াহুড়ায় চলে আসি।সামনে আমাদের বিয়ে তাই ও নিজেকে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় নি।তারপর কোনো খোঁজ নেই নি মাথা থেকেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো।তবে এটা মনে আছে ডক্টর রা বলে দিয়েছিলো বাঁচার চান্স নেই।আচ্ছা এটা আপনি জানলেন কি করে….?
.
হুমম!!কারণ ওই ছেলে আর কেউ নয় নীলাভ ছিলো!!ওইদিন তোমার কল্যাণেই আজও জীবিত ও।যদি ওকে ওই সময় হসপিটাল না নিয়ে যেতে তাহলে হয়তো…..
.
আচ্ছা উনি এখন কোথায়…?মানে বেঁচে আছেন তাই তো!! তাহলে বাসায় নেই কেন…?
.
হুমম বেঁচে আছে!!কিন্তু এখন একটু অসুস্থ হসপিটালে আছে।কয়েকদিনের ভিতরেই বাড়ী ফিরে আসবে।
.
ওহ্হ মাই গড!!যাক বেঁচে আছেন।আচ্ছা উনার এই অবস্থা হলো কি করে…?
.
বলবো!!সময় হলে সব বলবো।আচ্ছা মেহরীমা!একটু অন্যমনষ্ক হয়ে তুমি যদি জানতে পারো আমি না জেনে তোমার উপর অন্যায় করেছি তখন কি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে তুমি….!!
.
উনার কথায় সেই লেভের শকড আমি।কি বলছেন উনি।মানে!!
.
না কিছু না!!বাদ দাও। তোমাকে কিছু কথা বলবো জানিনা কথাগুলো কিভাবে নেবে তুমি।তবুও আজ বলতে হবে আমায়।
.
কিসের কথা বলছেন আপনি…?
.
বলবো কিন্তু তার আগে এক কাপ কফি দিতে পারবে আমায়…?
.
এই প্রথম এমন শীতল কন্ঠে আমার কাছে কিছু চাইলেন উনি।লোকটা দিন দিন কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে।আগের মতো রাগ দেখান না উনি।বেশির ভাগ সময়ই চুপচাপ থাকেন।উনার এই বদলের কারণটা অজানা আমার।কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি গন্তব্য রান্নাঘর।সেখানে গিয়ে কফি বানাচ্ছি তখনই তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।উনাকে বেড়িয়ে যেতে দেখে দরজা আটকে সোফায় বসে টিভি দেখতে লাগলাম আমি।নাদিরা বাসায় নেই।আন্টিও কোথাও একটা বেড়িছেন।টিভি দেখতে দেখতে কখন যে চোখটা লেগে গিয়েছিলো টেরই পাইনি আমি।হঠাৎ কলিংবেলের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো আমার…..এই সময়ে কে আসলো অসহ্যকর!!নিশ্চয় উনি ফিরেছেন।কলিংবেল বেজে চলেছে অনবরত।দরজা খুলতে মাএ কয়েক সেকেন্ড দেরি হয়েছে আমার তার মধ্যেই এত ডাকাডাকি দরজা খুলেই…..
.
আরে আপনি এতবার বেল বাজাচ্ছেন কেন…?মাএ ৩০ সেকেন্ডে ৩০ বার আল্লাহ গো!!কথাগুলো বলেই দরজার সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকালাম।দরজার সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে হাই ভোল্টেজের শক খেলাম আমি।ধুর কাকে কি বকছি।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন মেয়ে।মোটামুটি আমার বয়সেরই হবেন উনি।গায়ের রং আমার মতোই বা একটু ফর্সা হবেন।হাইট একদম আমার মতো।একি ইনি কে…?জিব্বায় কামড় কেটে কাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে দিলাম আমি!!ইয়ে মানে…!!আমতা আমতা করে সরি আমি ভেবেছিলাম আমার হাসবেন্ড এসেছেন…!!
.
ওহহ!!মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে ইট’স ওকে!!নো প্রবলেম।
.
পেছন থেকে বললেন রামীম ভাইয়া….হ্যাঁ তোমার হাসবেন্ডও আছে তবে কিছুটা পেছনে।যদিও ঝাড়িটা আরাভের প্রাপ্য ছিলো কিন্তু বেড লাক এখন ও নিয়ে নিলো বলে হাসতে লাগলেন উনি।একটুপর পেছন থেকে সামনে এলেন উনি।দরজা ছেড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ালাম আমি।উনারা তিনজনে ঢুকে পড়লেন রুমে।একটাই প্রশ্ন আমার মেয়েটা কে…?উনাকে আনতেই কি হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন উনি।মেয়েটাকে সোফায় বসিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন উনি…..
.
শোন ওকে তোমার একটা থ্রি-পিছ দাও।ফ্রেশ হয়ে আসুক।তারপর খেতে দিও।আজ থেকে ও আমাদের সাথেই থাকবে।আমাদের পাশের রুমটায় ওর থাকার ব্যবস্থা করে দাও।উনার কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম আমি।তারপর মেয়েটাকে বললেন উনি….ডোন্ট ওরি এখন তুমি সেইফ!ভয় পেও না।আর কেউ চাইলেও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর একসাথে লাঞ্চ করবো।
.
মেয়েটা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো থ্যাংকস ভাইয়া!!আপনি না থাকলে হয়তো আজ আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।এই উপকার কোনোদিনও ভুলবো না আমি।
.
উপকার আর কেথায় করলাম বলো!!যা আমার অনেকদিন আগে করার কথা ছিলো তা আজ করেছি।অনেক দেরি হয়ে গেলো।আমার জন্য অনেক সাফার করেছো তুমি।ইউ নো তোমাকে উদ্ধার করে এখন একটু শান্তি লাগছে আমার।তবে অপরাধবোধেও ভুগছি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভুল করেছি,অনেক বড় ভুল করেছি জানিনা এর থেকে কিভাবে পরিত্রান পাবো আমি!আমার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন উনি।
.
না ভাইয়া এতে আপনার কোনো দোষ নেই!!মানুষ মাএই ভুল!!যা ভুল করেছেন সেটা এবার সুধরে নিন।
.
হুম আচ্ছা যাও!!আর কান্না নয় এবার থেকে হাসি খুশী থাকবে বুঝেছো।
.
উনার কথায় মুখে হাসি ফুটলো মেয়েটির।।হ্যাঁ ভাইয়া এবার থেকে আমাকে ভালো থাকতেই হবে।আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বললো এবার “ভালো থাকবো আমি”!!
.
এই তো গুড গার্ল!!আচ্ছা যাও।আমি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে উনাদের কথাবার্তা শুনে চলেছি।কথা শুনে যা বুঝেছি মেয়েটা কোনো বিপদে ছিলো আর সেখান থেকে ওকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন উনি।কিন্তু মেয়েটা উনাকে ভাইয়া বলছে তাহলে মেয়েটা উনাদের চেনা কেউ…?ভাবনার রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছি আমি তখন কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলান আমি।আমার কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি…..
.
মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলে মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের পাশের রুমে চলে গেলাম আমি।উনাকে ওখানে রেখে রুম থেকে কয়েকটা থ্রি-পিছ এনে ধরিয়ে দিলাম উনার হাতে।আমার সাথে কোনো কথা না বলে টুপ করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন উনি।উনাকে রেখে ড্রয়িংরুমে গেলাম আমি।আবারও দুই বন্ধু মিলে কি যেন ফুসুরফুসুর করছেন এবারও আমাকে দেখে থেমে গেলেন উনারা।আজকে ব্যাপারটায় খুব খারাপ লাগছে আমার তাই বেশ ঝাঁজালো কন্ঠে বললাম…..
.
আপনারা কি এত কথা বলেন বলুন তো!আমাকে দেখলেই চুপ।আমার কথা তাই তো!
.
আমার কথা শুনে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে রামীম ভাইয়া বলে উঠলেন…. তোমার কথা হতে যাবে কেন…?আসলে আমাদের কিছু পারসোনাল কথা ছিলো ওইগুলোই বলছিলাম আর কিছু না।
.
হুহ (মুখ ভেংচি কেটে)আচ্ছা মেয়েটা কে…?
.
সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন উনি…..আন্টি আর নাদিরা আসুক সবাইকে একসাথে বলবো।চল রামীম আমার রুমে চল।আর তুমি খাবার রেডি করো আর দেখ ওর যেন কোনো অসুবিধা না হয় বলেই হন হন করে চলে গেলেন উনি।উনার পেছন পেছন তাড়াতাড়ি করে রামীম ভাইয়াও গেলেন।যেন আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই এত তাড়াতাড়ি উনাদের।কি তালগোল পাকাচ্ছেন কে জানে…!!
.
সন্ধ্যার পর সবাই মিলে বাসার ছাদে বসে আছি।আন্টি আর নাদিরাও ফিরে এসেছেন।দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে ওই মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে এখনও জাগে নি।আমি ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু বারণ করে দিয়েছেন উনি।ও অনেক টায়ার্ড তাই রেস্ট প্রয়োজন।রামীম ভাইয়াও আছেন এই আড্ডায় একমাত্র উনিই নেই।মেয়েটা সম্পর্কে এখনও কেউই কিছু জানে না।আন্টিও উনাকে জিজ্ঞেস করেছেন কিন্তু ওর সম্পর্কে এখনও কিছু বলেন নি উনি।এদিকে মেয়েটাকে নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই আমার।নিজের কৌতুহল মেটানোর জন্যই রামীম ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম আমি…..
.
আচ্ছা ভাইয়া ওই মেয়েটাকে কোথায় পেলেন…?মুখ দেখে মনে হয়েছিলো খুব বিপদে পড়েছিলো।আচ্ছা ওর সাথে কি হয়েছিলো…?আমার প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই চেয়ারে বসতে বসতে বলে উঠলেন উনি…..
.
ওয়েট আমি বলছি!!
.
আন্টিঃহুম তাই বলো!!আমারও এটা জানা প্রয়োজন।কে এই মেয়েটা…?তুমি ওকে কোথায় পেলে….?আর ও আমাদের সাথে থাকবেই বা কেন…?
.
হুম আন্টি সব বলছি আমি!মেহরীমা আজকে সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।তুমিও তোমার অজানা সব প্রশ্নের উওর পেয়ে যাবে।হয়তো সবকিছু জানার পর আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না তুমি।কিন্তু কি করবো বলো ভুল করেছি সবটা শুনে যদি পারো ক্ষমা করে দিও।
.
উনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।ওই মেয়েটার সাথে আমার অজানা প্রশ্নের সম্পর্ক কি…?আচ্ছা মূল কথায় যাওয়া যাক!!নাদিরা নীলাভ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডের নাম মনে আছে তোর….?
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে গেলো নাদিরার।মাথায় টোকা দিয়ে বলে উঠলো….হুম মনে পড়েছে মেহরু!!যদিও পুরো নামটা ভাইয়ার মুখ থেকে কখনও বার করতে পারিনি আমি তাই এইটুকুই জানি।
.
আরাভ “মেহরু” সেই মেয়েটা না যার জন্য আমার ছেলেটা মৃত্যু শয্যায় ছিলো।যে তার উডবি হাসবেন্ড কে নিয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো…?
.
হুম আন্টি!!আর আজকে আমাদের বাসায় যে এসেছে সে হলো নীলাভের সেই মেহরু!!
.
উনার কথা শুনে খুব রেগে গেলেন আন্টি….এক্ষুনি ওই রাক্ষুসীকে আমার বাসা থেকে বের করে দাও আরাভ।ওর জন্য আমার ছেলেটা মরতে মরতে বেঁচে উঠছে।আজ এতগুলো দিন আমার ছেলে হসপিটালের বিছানায় শুয়ে আছে।আর তুমি কিনা সেই মেয়েকে আমাদের আাসায় এনে রেখেছো।
.
আন্টি শান্ত হও!!এতে ওর কোনো দোষ নেই।ও সত্যি নীলাভকে ভালোবাসে।আমরা না জেনে ওকে ভুল বুঝেছি।তুমি জানো এই কটা দিন ও কতটা কষ্টে ছিলো,জানো না।ওর বাবা যখন নীলাভ আর ওর সম্পর্কের কথা জানতে পারে তখন নীলাভকে ওকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন।কিন্তু নীলাভ শোনেনি।বারবার ওর বিয়ে ঠিক করেছেন সেই সবকয়টা বিয়ে নীলাভ ভেঙ্গে দিয়েছে যার কিছুই জানতাম না আমরা।যখন কোনোভাবেই মেহরুর কাছ থেকে ওকে সরাতে পারছিলেন না তখন নীলাভকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেন উনি।সেই প্ল্যানের কিছুই জানতো না মেহরু।কিন্তু নীলাভকে মারার সময় ওরা এটা বলে যে মেহরুর সাথে অসভ্যতা করার কারণে আই মিন ওই প্রেগন্যান্টের ব্যাপারটার কারণে ও বলেছে নীলাভকে মেরে দিতে।এরপর নীলাভকে মেরে হাইওয়ে তে ফেলে দেয় ওরা।সেখান থেকে ওকে উদ্ধার করে হসপিটাল নিয়ে যায় মেহরীমা….!!
.
.
#চলবে…….

তোমায় ঘিরে পর্ব-০৭

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_7
.
.
🥀
খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে বসে আছি আমি।এখনও রুমে আসেন নি উনি।লোকটার সাথে এক বিছানায় কিছুতেই থাকবো না আমি।হয় আমি সোফায় থাকবো নয়তো অন্য কোনো রুমে।এতে যদি আন্টি কিছু মনে করেন তো করবেন কিচ্ছু করার নেই আমার।বসে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছি আর ভাবছি কি করা যায়…..এমন সময় রাক্ষুসের কথা কানে এলো আমার…!!
.
ছিহ!তুমি এখনও নখ খাও।ইট’স এ বেড হেবিট ম্যান!এটা স্বাথ্যের জন্যও ক্ষতিকর।এখানে বসে নখ না খেয়ে শুয়ে পড়ো।
.
উনার কথায় চট করে মুখ থেকে আঙ্গুল সরিয়ে নিলাম আমি!!কোনোকিছু না ভেবে “আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না”।
.
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন উনি….যেন কি একটা কথা বলে ফেলেছি আমি যা উচিৎ হয়নি আমার।আমি কখন তোমাকে আমার সাথে ঘুমাতে বললাম….?তুমি কি কোনোভাবে আমার সাথে ঘুমাতে চাইছো নাকি…?কিন্তু সরি আমি তোমার সাথে থাকতে পারবোনা।তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো আমি সোফায় শুচ্ছি।
.
ছিঃ ছিঃ!!লোকটা কিসব বললো।আমিও কথা শোনার আগে কথা বলে ফেলি।যদি কথাটা ভালো করে শুনে নিতাম তাহলে এই লজ্জায় পড়তে হতো না আমায়।
.
কি ভাবছো!হয়তো এটাই ভাবছো যে…জোর করে বিয়ে করলো অথচ নিজের পাশে জায়গা দিতে নারাজ কেন…?
.
জ্বী না আমি এসব কিছুই ভাবছি না বলপই উঠে বিছানায় বসলাম আমি।
.
আমি জানি তুমি তাই ভাবছো।হুম বিয়ে করেছি জোর করে বা ব্ল্যাকমেইল করেও বলতে পারো।কিন্তু আমি কখনও তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না।তেমাকেও স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবো না।তুমিও এসব কখনও আমার কাছ থেকে এসব এসপেক্ট করো না।তুমি এখন আমার কাগজে কলমের বউ ব্যস এইটুকুই।কে বলতে পারে হয়তো সময়ের ব্যবধানে সেটাও থাকবে না।
.
উনার শেষের কথাটায় চমকে উঠলাম আমি।এসব কি বলছেন উনি।তাহলে এই বিয়ের মানে কি!এত কাঠখড় পুড়িয়ে আমাকে বিয়ে করলেন কেন উনি।
.
এই যে এত ভাবাভাবির কিছু নেই যাও শুয়ে পড়ো!জানি কথাগুলো তোমার কাছে ভালো লাগছে না।তবুও ভাবলাম জানিয়ে রাখা ভালো।আমি কোনোকিছু চেপে রাখতে চাই না।তাই যা হবে তাই বলে দিলাম।তবে ভেবো না তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম আমি।এই বিশ্বাস রেখ….
যে হাতে ভাঙ্গবো,সেই হাতেই আবার সাজিয়েও তুলবো আমি!ওকে গুড নাইট বলেই লাইট নিভিয়ে সোফায় টুপ করে শুয়ে পড়লেন উনি।এই কথাগুলোর কি মানে বুঝতে ব্যর্থ আমি।কি ভাঙ্গবেন আর কি সাজাবেন উনি।ভাঙ্গারই যদি ছিলো তাহলে সাজালেন কেন উনি….আর যদি সাজাতেই চান তাহলে ভাঙ্গার প্রয়োজন কি!অদ্ভুত সব প্রশ্ন ঘুরছে আমার মাথায়।যার কোনো সঠিক উওর পাচ্ছি না আমি।একমাত্র সেই উওর জানে যে কথাগুলো বলেছে।কিন্তু তিনি তো এই সম্পর্কে এর থেকে বেশি কিছুই বলবেন না।যা বুঝার উনার কথার ইঙ্গিত থেকেই বুঝতে হবে আমায়।নয়তো ভাবনা থামিয়ে ঘুম ধরাতে হবে।সো মেহরীমা তের ছোট্ট মাথায় এত চাপ না নিয়ে ঘুমিয়ে পড়।যা হবে দেখা যাবে।
.
সকালে উঠেই তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেছেন উনি।খাওয়ার সময়ও হয়নি উনার।খান নি সেটা অবশ্য ভালোই হয়েছে আমার জন্য।সারাদিন খেয়ে বসে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ছাদে নাদিরার সাথে গল্পের আসর বসিয়েছি আমি।মেয়েটা খুবই মিশুক আর প্রাণবন্ত যা নজর কেড়েছে আমার।অতি সহজে সবাইকে আপন করে নেওয়ার এবিলিটি আছে ওর মাঝে।আমার সাথে মাএ একদিনের আলাপ ওর কিন্তু ওর ব্যবহারে মনে হয় কত চেনা আমি।সবসময় হাসি খুশী থাকে।মন খারাপ জিনিসটা যেন কিছুতেই স্পর্শ করতে পারে না ওকে।ওরা আসার আগ পর্যন্ত এটা একটা ভুতুরে বাড়ী ছিলো আমার কাছে।কিন্তু এখন বেশ ভালোই লাগছে।নাদিরার কল্যাণেই জানতে পেরেছি আরাভের বাবা মা নেই।ওর জন্মের সময় মা মারা গেছেন আর সেই থেকে এই আন্টিই উনাকে মানুষ করেছেন।আর উনার বাবা কয়েকবছর আগে গত হয়েছেন।শুনেছি ছেলেকে খুব ভালোবাসতেন তাই ছেলের কষ্ট হবে ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা কখনও চিন্তাও করেন নি উনি।নাদিরার বাবা নেই।ওরা এক ভাই এক বোন।ওর সাথে কথা বলার মাঝেই আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন উনি।মেহরীমা রুমে চলো কিছু কথা আছে তোমার সাথে…?
.
উনার কথায় চমকে উঠলাম আমি….কিহ!আমার সাথে কথা তাও আবার উনার।নাদিরা আমার দিকে একবার তো উনার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।
.
ওই হাসবি না!সত্যি প্রয়োজন আছে ইট’স আর্জেন্ট।হারি আপ!বলেই ওখান থেকে প্রস্থান করলেন উনি।কি এমন কথা যে এত আর্জেন্ট কে জানে।
.
যাও বউমণি যাও!তোমার সাথে ভাইয়ার কথা আছে তাও আর্জেন্ট তাড়াতাড়ি যাও দেরি হলে রেগে বোম হয়ে যাবে আর সেটা তোমার মাথায় ফাটবে বলে হেসে উঠলো ও।সত্যি কি শুনেই আসি।
.
রুমে ঢুকে অবাক আমি কেউ নেই।দেখসো আমাকে তাড়া দিয়ে এখন উনিই নাই হাওয়া।কোমড়ে দুহাত দিয়ে এংরি লুকে দাঁড়িয়ে আছি।তখন দরজা আটকানোর শব্দ কানে এলো আমার।পেছনে তাকিয়ে দেখি উনিই দরজা আটকেছেন।কিন্তু কেন…?আমাকে কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার দু বাহু চেপে ধরে বলে উঠলেন উনি…..
.
বাচ্চাটা কোথায় গেলো…?কি করেছো ওর সাথে…?
.
উনার কথায় রেগে ফায়ার হয়ে গেলাম আমি!!আবার সেই বাচ্চা নিয়ে পড়েছেন উনি।এক ঝটকায় উনার হাত সরিয়ে বলে উঠলাম আমি…এই আপনার কানে কথা যায় না তাই না।কতবার বলবো আমি কখনও প্রেগন্যান্ট ছিলাম না।শুনতে পান না আপনি।
.
উনাকে দেখেই বুঝতে পারছি বেশ রেগে আছেন উনি।চোখগুলো ভয়ংকর আকৃতি ধারণ করলো মুহুর্তেই।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছেন উনি।কপালে রগ ফুলে উঠছে বার বার।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন…..
.
মিথ্যা বলছো কেন…?কি করেছো ওকে মেরে দিয়েছো।কবে করেছো…?রাফির সাথে বিয়ের আগে তাই তো!
.
ধুর ভাল্লাগেনা!আপনি পাগল হয়ে গেছেন।কেন এমন পাগলামি করছেন যেখানে বাচ্চাই ছিলো না সেখানে মারার কথা আসছে কোথা থেকে।
.
আমার কথা শুনে হিংস্র হয়ে উঠলেন উনি।টপে থাকা ফুলদানি টা হাতে নিয়ে ছু্ড়ে মারলেন ড্রেসিং টেবিলে।সাথে সাথে ঝংকার করে শব্দ করে উঠলো….উনার এহেন আচরণে কেঁপে উঠলাম আমি। কাঁচগুলো টুকরে টুকরো হয়ে লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে।সেই টুকরো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছি আমি।
.
ছিহ!কি করে এটা করতে পারলে তুমি।একটা মেয়ে হয়ে নিজের প্রথম বেবিটাকে মেরে দিলে।এখন কি হবে ওই বাচ্চাটা নেই!নেই বাচ্চাটা!বলে বিছানায় বসে নিজের চুল টানছেন উনি।একটা বাচ্চার জন্য এতটা ডেস্পারেট কেন উনি।জানো তোমাকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে এখন বলেই আমার গলা চেপে ধরলেনউনি। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি আমি কিন্তু পারছি না।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।চোখ থেকে বড় বড় ফোঁটায় বেড়িয়ে আসলো লোনাজল গুলো।কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।কাশতে কাশতে শুকনো বার কয়েক ডুক গিললাম আমি।নিজেকে সামলে আপনি মানুষ নন,অমানুষ একটা।আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েও শান্তি হয়নি।আর কি চান বলুন আমাকে মেরে ফেলতে নিন মেরে ফেলুন!আমিও আর বাঁচতে চাই না।আপনার মতো অমানুষের সাথে তো একেবারে না।
.
এই কি বললে….আমি অমানুষ!!আরে অমানুষ তো তুমি যে কিনা নিজের সন্তানকে খুন করে ফেলেছো।পৃথিবীতে আসার আগেই, একটা সুন্দর পৃথিবীর দেখার আগেই খুন করে দিয়েছো ওকে বলে আমাকে মারতে উদ্ধৃত হলেন উনি।উনার হাত ধরে মোচড় দিয়ে বলে উঠলাম আমি…..
.
একদম বাড়াবাড়ি করবেন না!!আমি আট দশটা মেয়ের মতো স্বামীর নির্যাতন সহ্য করবো না।নিজের হাত নিজের কন্ট্রোলে রাখুন।মেয়েদের সম্মান দিতে নাই বা পারেন কিন্তু অসম্মান করবেন না প্লিজ!আমার কথায় কিছুটা শান্ত হলেন উনি।আমার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া হাতে দেয়ালে ঘুষি মারলেন।মুহূর্তেই হাত থেকে গড়গড় করে রক্ত ঝরতে লাগলো সেদিকে কোনো হুশই নেই উনার।আমি কাঁপা কাঁপা সুরে বলে উঠলাম…..ররক্ত!!নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসি উপহার দিলেন উনি!তুমি কেবল আমার হাতের রক্তটাই দেখছো এখন।কিন্তু তুমি কি জানো আমার বুকের ভিতরে কতটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।কতটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার।জানো না!!জানতেও চাইছো না হয়তো চাইলেও পারবেনা।
.
দেখুন আপনি শান্ত হন!!শান্ত হয়ে আমার কথাগুলো শুনুন।কি লাভ মিছেমিছি আমায় দোষারোপ করে।নিজের মাথায় যেটুকু বুদ্ধি আছে সেগুলো ঠান্ডা মাথায় খরচ করে দেখুন তো আপনি যা বলছেন তা কি হওয়ার নাকি হওয়ার নয়।কাউকে কোনোকিছু নিয়ে দোষারোপ করার আগে তার সম্পর্কে দশবার জানুন,তাকে বুঝুন তারপর যদি মনে হয় তাকে দোষারোপ করার যোগ্য তখন না হয় করবেন।আমার সম্পর্কে আপনি আমাদের এলাকায় খোঁজ নিন।দেখুন তারা কি বলে!!তারা যদি বলে আমি ওই টাইপ মেয়ে বা আমি প্রেগন্যান্ট তখন আপনি যা শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেবো আমি।
.
তোমাকে দেখলে যতটা সহজ সরল মনে হয় তুমি ততটাই জটিল প্রকৃতির মানুষ।সবসময় নিজেকে একটা খোলসের ভিতরে রাখতে পছন্দ করো।তোমাকে চেনা হয়ে গেছে আমার।কিন্তু তুমি আজ যেই ক্ষতিটা করলে সেটার জন্য একদিন তোমাকেই পস্তাতে হবে।
.
আচ্ছা ঠিক আছে!!আপনি হাত টা ব্যান্ডেজ করে নিন।রক্ত ঝরছে।
.
ঝরতে দাও!!জানো আমি ব্যর্থ।আজ সারাজীবনের মতো ব্যর্থতার খাতায় নাম উঠে গেলো আমার।যেখান থেকে কখনও আমার নামটা মুছতে পারবো না আমি।তুমি এটা না করলেও পারতে মেহরীমা।খুব কি ক্ষতি হয়ে যেতো ও থাকলে….হ্যাঁ আমি জানি লোকে দশটা কথা বলতো।তোমাকে অপমান করতো।কিন্তু তোমার ভালোবাসার উপর ভরসা ছিলো না।তোমার একবারও মনে হয় নি কেউ তোমাকে কিছু বলার আগেই সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।দেখ তোমাকে বিয়ে করে আমি সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছি যাতে কেউ তোমার দিকে আঙ্গুল তুলতে না পারে।হ্যাঁ তোমাকে খুঁজে পেতে একটু সময় লেগেছে আমার কিন্তু বিশ্বাস হারাই নি আমি বিশ্বাস করতাম তুমি ওর কিচ্ছু হতে দেবে না।কারণ তখনও আমিও জানতাম নিজের থেকে ওকে বেশি ভালোবাসো তুমি।কিন্তু তুমি আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিলে।আবারও প্রমাণ হয়ে গেলো পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই সবই সময়ের প্রয়োজন মাএ।
.
আচ্ছা আপনি যে এতগুলো বলছেন কিসের উপর ভিওি করে বলছেন।আমি আপনাকে চিনি না অথচ আমি আপনার বাচ্চার মা।আপনি কি কোনো জিন যে আমার স্বপ্নে আসতেন,আমাকে ভালোবাসতেন।তা নন তো!!তাহলে কেন এই ভিওিহীন কথাগুলো বলছেন।আপনি জানেন আমি সব থেকে বেশি কাকে ভালোবাসি…..
.
জানি মেহরীমা জানি!!তবুও আজ তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই আমি।বুঝতে পারছি হয়তো ফ্যামিলির চাপে তুমি এটা করতে বাধ্য হয়েছো কিন্তু তবুও তেমাকে ক্ষমা করবো না।আমার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন উনি।জানেন না তাই তো!!আমার বাবা-মা’কে।আপনি এটা জানেন কি বাবা-মা যেমন সন্তানের ক্ষতি চায় না তেমনি সন্তানও চায় না তাদের কোনো ক্ষতি হোক।আমি আপনাকে আমার সেই বাবা-মা’র দিব্যি খেয়ে বলছি আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম না।এবার অন্তত বিশ্বাস করুন।আমার কথাগুলো ঠান্ডা মাথায় একবার ভাবুন!!আপনার কথায় কোনো যৌক্তিকতা নেই কিন্তু আমার কথায় আছে।
.
আমার কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না উনার মধ্যে।কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই।যেমন ছিলেন তেমনই বসে আছেন উনি।বুঝতে পারছি উনাকে কথা বলে কোনো লাভ হবে না।আচ্ছা উনি কি সত্যি পাগল।হবে হয়তো নইলে এমন আচরণ করেন কেন উনি।আচ্ছা এই নিয়ে কি নাদিরাকে প্রশ্ন করতে পারি….!!
.
.
#চলবে……

তোমায় ঘিরে পর্ব-০৬

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_6
.
.
🥀
কেন জানিনা খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।কোথাও যেন খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এরকম তো হওয়ার কথা না।উনাকে তো সহ্য করতে পারিনা আমি। তার যথেষ্ট কারণও বিদ্যমান।কিন্তু তবুও উনার না থাকা এতটা কষ্ট দিচ্ছে কেন আমায়…?কেন মানতে পারছিনা উনি নেই।যেখানে উনি না থাকলে সব থেকে বেশি খুশী বোধহয় আমিই হবো।আমি অনায়াসে আব্বু আম্মুর কাছে চলে যেতে পারবো।সবটা খুলে বলতে পারবো।নিশ্চিত মনে বাঁচতে পারবো।তাহলে কেন এতটা ফাঁকা লাগছে আমার যেন খুব প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলেছি আমি।কারণটা কি….উনি আমার স্বামী!হ্যাঁ স্বামী।উনার সাথে আমার সম্পর্কের পবিএতা রয়েছে।শরীয়ত মোতাবেক উনি আমার স্বামী।একজন স্এীর কাছে স্বামী মহামূল্যবান সম্পদ।তাই আজ আমার স্বামীর এমন খবর শুনে ঠিক থাকতে পারছিনা আমি।উনার প্রতি আমার যতই রাগ ঘৃণা থাকুক না কেন তবুও আমিই উনার অর্ধাঙ্গিনী।এসব ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আমার।তখনই মেয়েটা শব্দ করে হেসে উঠলো….মেয়েটির এহেন আচরণে চরম অবাক আমি।মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি!এই কাঁদছে তো এই হাসছে।লোকে বলে মানুষ অধিক শোকে কাতর হলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।নিজের মধ্যে থাকে না।মেয়েটারও কি সেই দশা হলো নাকি…!!
.
সিরিয়াসলি বউমণি!তুমি আমার কথা বিশ্বাস করেছো..?বলেই আবারও হাসতে লাগলো নাদিরা। এবার ওর সবকটা দাঁত ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছা করছে আমার।ভালোভাবে কিছু বলবেও না আমার হো হো করে হাসবে।
.
তুই চুপ করবি নাদিরা!দেখছিস তোর কথা শুনে মেয়েটা ভয় পেয়ে গেছে তাও মজা করে যাচ্ছিস।তুমি কিচ্ছু চিন্তা করো না মা আরাভ ঠিক আছে।কিচ্ছু হয়নি ওর।এই শয়তান মেয়ে তোমার সাথে মজা করছে।তুমি রেস্ট নাও আমি একটু আসছি।
.
উনার কথা শুনে দেহে প্রাণ ফিরে এলো আমার।যাক লোকটা ঠিক আছে।লোকটা আমার সাথে যাই করুক না কেন তবুও উনার মৃত্যু কামনা করতে পারি না আমি।
.
কি বউমণি ভয় পেয়ে গিয়েছিলে তাই তো৷তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য সরি গো।আসলে আমি সবসময় মজা করতে ভীষণ ভালোবাসি।তুমি আবার কিছু মনে করো নি তো।
.
না ঠিক আছে।আসলে তখন তো উনার হাতে রক্ত দেখে আমি সেন্সলেস হয়েছিলাম তাই আর কি!
.
হুম!জানো ভাইয়ার হাতটা অনেক খানি কেটে গেছে।ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।কিন্তু এই ঘা শুকাতে অনেকদিন লাগবে।আমি তো দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
.
আচ্ছা আমি এখানে কি করে…?আমাকে কে নিয়ে আসলো…?
.
আরে বুঝতে পারছো না কে নিয়ে এসেছে।ভাইয়া মানে তোমার বর আরাভ।তুমি তো জ্ঞান হারিয়েই ফুস!কিন্তু ভাইয়া কি করবে।ওই যখম হওয়া রক্তাক্ত হাত দিয়ে ড্রাইভ করে তোমাকে কোলে করে রুমে দিয়ে গেছে।তারপর ডক্টর কে কল দিয়ে আগে তোমার ট্রিটমেন্ট করেছে তারপর নিজের তাও আমার জোরাজুরি আর আম্মুর বকা খেয়ে।কপাল করে এমন স্বামী পেয়েছো।কখনও হারাতে দিও না বুঝছো।
.
আচ্ছা ওই লোকটার কি হলো কিছু জানো…?
.
না বউমণি!ওই ব্যাপারে কিছু জানিনা।
.
ওহ্হ!আচ্ছা উনি এখন কোথায়…?
.
ভ্রু নাচিয়ে কেন খুব ইচ্ছে করছে বুঝি তাকে এক নজর দেখতে।কেমন আছে আমি ঠিক বলছি তো। অবশ্য নিজ চোখেনা দেখলে কেমন কেমন লাগে সবই বুঝি আমি।কিন্তু ভাইয়া এখন বাসায় নাই একটা ফোন আসতেই তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেলো।কখন ফিরবে কেউ জানে না।
.
ওহ্হ আচ্ছা!
.
ও ঠিক ফিরে আসবে তুমি টেনশন করো না কথাটা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলেন কাকীমা।হাতে দুধের গ্লাস।এখন এই অখাদ্য টাকে খেতে হবে আমায় ডিজগাস্টিং!এটা খেয়ে নাও ভালো লাগবে।সারাদিন পেটে দানা পানি পড়ে নি তাই তো এভাবে সেন্স হারিয়ে ফেললে।।নিজের স্বামী হলো সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।এত ভয় পেলে হয় যখন আরাভ তোমার সাথে ছিলো তখন কিসের ভয় বলতো।
.
না মানে আসলে…..
.
ঠিক আছে এবার এসব বাদ দাও।তুমি খেয়ে নাও।দুদিন বাড়ী ছিলাম না এরইমধ্যে ভাইয়া বউ জুটিয়ে নিয়েছে যদিও তার কারণগুলো বলেছে তবুও আমার কাছে কেমন জানি লাগছে।এই বাড়ীর ছেলে বিয়ে হলো অথচ কোনো উৎসব হলো না কেমন খাপছাড়া লাগছে।
.
হইছে তোর বক বক থামা!মেয়েটাকে রেস্ট নিতে দে।চল আমরা বাইরে যাই।
.
না ঠিক আছে!থাকুন না আপনারা।
.
আমরা থাকলে তোমার রেস্ট নেওয়া হবে না।আমার এই মেয়ে সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকে।তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো আর টেনশন করো না আরাভ কি একটা জরুরি কাজে গেছে চলে আসবে।আমাকে শুইয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন উনারা।রাফির কি হলো সেটা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি আমি।কিন্তু কি করে জানবো। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর ঘুম ধরা দিলো আমার চোখে।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।কিন্তু রুমে কেউ নেই।হঠাৎ মনে পড়লো এই রুমে তো আমি থাকি না।এটা তো উনার রুম!তাই উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হতে যাবো তখনই কারো কথা কানে এলো আমার।
.
কোথায় যাচ্ছ…?এখানেই শুয়ে থাকো!আর এখন বেটার ফিল করছো তো নাকি…?
.
উনার কথায় পেছন ফিরে তাকালাম আমি।এক হাতে টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছছেন উনি।আর এক হাতে ব্যান্ডেজ পেছানো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য শাওয়ার নিয়েছেন উনি।কথা বলতে বলতে একটা হোয়াইট টি শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলেন উনি।
.
কি হলো চুপ কেন…?তুমি তো জানোই আমার কাকিমা আর নাদিরা বাসায় ফিরে এসেছেন তাই এখন আর আলাদা রুমে থাকা যাবে না আজ থেকে আমরা এক রুমেই থাকবো।
.
এক রুমে মানে…?আমি আপনার সাথে থাকবো না।
.
আমি বুঝতে পারছি কিন্তু কিছু করার নেই।থাকতেই হবে নয়তো কাকিমা সন্দেহ করবে।আচ্ছা চলো কিছু খাওনি নিশ্চয় খেয়ে নেবে চল।
.
রাফির কি হলো….?
.
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন উনি।মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে উঠলেন….মরে নি বেঁচে আছে।এখন হসপিটালে আছে পরে হাজতে যাবে।স্পট থেকে পুলিশ ওকে ধরে নিয়ে গেছে নইলে ওখানেই মেরে দিতাম ওকে।
.
যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো।লোকটা মরে নি বেঁচে আছে।এরই মধ্যে নাদিরার ডাক কানে এলো বউমণি ভাইয়া খেতে আসো আমরা ওয়েট করছি।
.
চল নাদিরা ডাকছে!
.
আপনি যান আমি খাবো না।ভালো লাগছে না আমার।
.
ভালো না লাগলে হবে খেতে হবে তো!নিজের জন্য না হোক ওর জন্য তোমাকে ঠিক থাকতে হবে।ওহ্হ সীট!এতসবের মধ্যে রিপোর্ট আমার কথা ভুলেই গেছি আমি।ওকে কোনো ব্যাপার না কাল নিয়ে আসবো।
.
আপনাকে যত দেখি ততই অবাক হই আমি!কোনো কথার আগামাথা বুঝি না।সবটা কেমন ধোয়াশা মনে হয় আমার কাছে।যেখানে আমি নিজে শিওর সেরকম কিচ্ছু হয়নি আমার সাথে সেখানে আপনি জোর করে বাচ্চার মা বানিয়ে দিচ্ছেন আমায়।এই শুনুন অনেক নাটক+পাগলামি সহ্য করেছি আমি কিন্তু আর করবো না।আপনি কি পাগল নাকি সুস্থ সেটা নিয়ে এখন বেশ চিন্তিত আমি।
.
আমাকে এত রাগ দেখাইও না!হ্যাঁ তোমাকে ধোয়াশায় রেখে সবটা করেছি কিন্তু বেশি না আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও আমি সব ক্লিয়ার করে দেবো।তারপর আমাকে পাগল না বলে তুমি নিজেই আমার উপর কৃতজ্ঞ থাকবে।
.
কৃতজ্ঞ তাও আপনার উপর…ইম্পসিবল!আপনাকে ঘৃণা করা যায় কিন্তু আপনার উপর কৃতজ্ঞ হওয়া যায় না।
.
লাইক সিরিয়াসলি!বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন উনি।উনাকে আসতে দেখে পেছনে পিছাচ্ছি আমি।আমি যত পেছনে যাচ্ছি উনি ততটাই এগোচ্ছেন সামনের দিকে।একসময় আমার হাত চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন উনি…..তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছি তার মানে এই না যে তুমি আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলবে।শুধু এই বাড়ীর বংশধর তোমার কাছে বেড়ে উঠছে বলে কিছু বলছিনা নইলে…..
.
এই ভাইয়া!সরি!সরি! রিয়েলি সরি!! আমি জানতাম না এখানে রোমাঞ্চ চলছে।
.
নাদিরাকে দেখে আমাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ালেন উনি।কেমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হলো আমাকে।মেয়েটা কি থেকে কি ভাবছে ছিহ!
.
ধুর নাদিরা!তুইও না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।আমি এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।নাদিরা পাশে এসে দাঁড়িয়ে কি গো!এখানে কি চলছিলো হুম…বলেই হো হো হেসে উঠলো!!আচ্ছা চলো খাবে।
.
না আমি খাবো না!মেয়েটা নাছোড়বান্দা এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে চলে গেলো।টেবিলে বসে আছি আমি আন্টি, নাদিরা, আর উনি ফোনে কি যেন করছেন।সবাই খেতে ব্যস্ত আমিও খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছি কিন্তু খেতে ভালো লাগছে না আমার।তখনই আন্টি বলে উঠলেন….আরাভ খাচ্ছ না কেন…?
.
উফফ আম্মু!তুমিও না ভাইয়া এই হাতে কি করে খাবে।বউমণি তুমি ভাইয়াকে খাইয়ে দাও তো!
.
মেয়েটার কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো আমার।ও বলছে আমি খাইয়ে দেবো উনাকে ইম্পসিবল!কথাটা শোনেও না শোনার ভান ধরে বসে আছি আমি।নাদিরা আবারও বলে উঠলো কি গো কথা শুনছো!
.
নাদিরা থাক!আমি পারবো।
.
কি করে পারবে তুমি।কিচ্ছু পারবে না।বউমা যদি কিছু মনে না করো তাহলে ওকে খাইয়ে দাও না প্লিজ।আমিই দিতাম কিন্তু দেখছো তো আমি খাচ্ছি।
.
উনার কথা ফেলতে পারলাম না আমি।বয়স্ক মানুষ এভাবে বলছেন ফেলি কি করে তাই বাধ্য হয়ে উনাকে খাওয়াচ্ছি আমি।উফ এটাও হওয়ার ছিলো।কেন যে তখন রাফিকে মারতে আটকে ছিলাম এখন সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছি আমি ডিজগাস্টিং..!!উনাকে খাওয়াচ্ছি আর উনি তৃপ্তি করে খেয়ে চলেছেন।খাওয়া যেন আজ শেষই হচ্ছে না।হঠাৎ কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন….
.
তখন আমার হাত কাটার জন্য অনেকটা তুমিই দায়ী।তার জন্য মনে মনে নিশ্চয় অনুতপ্ত তুমি।অবশ্য এই অনুতাপ দূর করার জন্য ভালো একটা সুযোগও পাচ্ছ। আমাকে তিনবেলা খাইয়ে সেই অনুতাপ দূর করবে তুমি।জানি কাজটা অসহ্যকর কিন্তু তবুও তোমাকে এটা করতে হবে।আফটার অল তুমি আমার দশটা না পাঁচটা না একমাএ “বউ”(চোখ টিপে)
.
রাক্ষুসটার কথা শুনে চোখ কপালে উঠলো আমার।একটা ভুলের জন্য তিনবেলা খাওয়াতে হবে।তাও এই রাক্ষুস কে যার কিনা আধ ঘন্টায়ও খাওয়া শেষ হয় না।হায় কপাল!এ কোন মসিবতে পড়লাম আমি।
.
.
#চলবে……

তোমায় ঘিরে পর্ব-০৫

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_5
.
.
🥀
পানি নিয়ে ফিরে আরাভ মেহরীমাকে গাড়ীতে পায় না।গাড়ীর দরজা খোলা ভিতরে কেউ নেই।তড়িঘড়ি করে যাওয়ায় গাড়ীটা লক করতে ভুলে যায় আর তাই এই বিপদ ঘটলো।আশেপাশে কেথাও খুঁজে পায় না তাকে।কেউ ওকে দেখেছে বলেও বলতে পারছে না।এখন মেহরীমাকে কোথায় পাবে কিছুই বুঝতে পারছেনা আরাভ।দিন দুপুরে জল জ্যান্ত একটা মেয়ে উধাও তো হয়ে যেতে পারে না।কোথায় যেতে পারে ভাব আরাভ ভাব! ওর বাবার বাসায়।না সেখানে যাবে না।যাওয়ার হলে আরো আগেই চলে যেতো এত সময় নিতো না।তবুও সেখানে লোক লাগিয়ে দিয়েছে সে কিন্তু মেহরীমা যায় নি।তাহলে কোথায় গেলো।নাকি কেউ ওকে তুলে নিয়ে গেলো কিচ্ছু ভাবতে পারছেনা। ঘোটা দিন কেটে সন্ধ্যা হয়ে আসছে কিন্তু মেহরীমার কোনো খবর নেই।আরাভের লোকেরাও ব্যর্থ।কেউ কোনো আশার খবর দিতে পারেনি।
.
উদাস মনে গাড়ীতে বসে ভাবছে আরাভ।আজ যদি ওকে খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে কি জবাব দেব আমি।যখন জানবে মেহরীমা পালিয়ে গেছে তখন কি বাঁচানো যাবে।ওর জন্যই তো এতকিছু যদি ওই না থাকে তাহলে কেন এসব করলাম আমি।কিসের জন্য…?আর বাচ্চা যদি কোনো ক্ষতি করে দেয় তখন….না আর ভাবতে পারছিনা আমি।মেহরীমা তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন তোমাকে আমি খুঁজে বার করবোই করবো….!!
.
.
হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারের উপর অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে মেহরীমা।বর্তমানে কোনো হুশই নেই তার।তার মুখোমুখি অন্য একটি চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে একটা লোক।মেহরীমার জ্ঞান ফিরেনি।তাই ওর মুখের উপর এক গ্লাস পানি ছুড়ে মারলো সে।কিছুক্ষণেই জ্ঞান ফিরে আসলো তার।ধীরে ধীরে চোখ খুলে নিজেকে অন্ধকার একটা রুমে আবিষ্কার করলো।আরাভও তাকে এরকম একটা ঘরে আটকে রেখেছিলো।মূহুর্তে ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে গেলো তার।হাত নাড়ানোর চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো তার হা পা বাধা।সামনে আবছা আলোয় কারোর ছায়া স্পষ্ট কিন্তু মুখ দেখতে পারছে না।ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো….কককে আআপনি…?আআমাকে বেধে রেখেছেন কেন…?
.
সামনে থাকা লোকটা হুংকার করে হেসে উঠলো হা হা হা!আমাকে চিনতে পারছো না ডার্লিং।
.
গলাটা খুবই পরিচিত কোথায় যেন শুনেছি কিন্তু কোথায় এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না আমার।কিন্তু কন্ঠ টা চেনা বড্ড চেনা।
.
কি এখনও চিনতে পারো নি বুঝি…?
.
ররাফি……!!
.
হুম এই তো চিনে গেছে থ্যাংস গড!আমাকে যে চিনতে পেরেছো এটাই অনেক।আমি তো ভেবেছিলাম এখন ওই আরাভকে ছাড়া আর কাউকেই চিনতে পারবে না তুমি।কিন্তু না তুমি আমার এই ধারণা কে একেবারে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছো।
.
তুমি আমাকে এখানে এভাবে নিয়ে এসেছো কেন…?ছেড়ে দাও আমায় আমি বাড়ি যাবো।
.
ছাড়ার জন্য তো ধরে আনিনি।তবে ছাড়বো এটাও ঠিক।কিন্তু এখন নয় সেদিনের সব অপমানের শোধ নিয়ে তবেই ছাড়বো।
.
কিসের অপমান…?দেখ রাফি ওই দিন যা হয়েছে তার কিছুই আমি ইচ্ছে করে করিনি।কিভাবে যেন হয়ে গেছে।আমি মানছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি।মানুষ মাএই ভুল।আমিও ভুল করেছি।প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।
.
ক্ষমা!হুম ক্ষমা করবো তো।কিন্তু মামুনি ভুল করলে তো ভুলের মাশুল দিতে হয় সেটা কি তুমি জানো।সেদিন সবার সামনে আমাকে তুমি হাসির পাএ বানিয়ে দিয়েছিলে কাউকে মুখ দেখাতে পারিনি।তাই আজ তোমারও এমন অবস্থা করবো যাতে তুমিও সমাজে আর মুখ দেখাতে না পারো হা হা হা।
.
আমার ক্ষতি করে তুমি বাঁচতে পারবে না রাফি।আমার ভাইয়া তোমাকে শেষ করে দেবে।
.
আর তোমার স্বামী….ওর কথা বললে না যে।শোন আমি তোমাকে এখানে তুলে এনেছি এটা তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানে না।যখন সবাই জানবে আমি তোমার সাথে খাটাপ কিছু করেছি সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না।কারণ তুমি বিবাহিত আর আমি সেরকম ছেলেও নই।সবাই ভাববে তুমি মিথ্যা বলছো।
.
দেখ তুমি আমার সাথে এমন করো না।প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও
.
কিছুতেই না বলে আমার হাত পায়ের বাধন খুলে দিলো রাফি।দু হাত পেছন থেকে আটকে দিয়ে হাসতে শুরু করলো।এবার তোমায় কে বাঁচাবে সুন্দরী বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়ে গিয়েছে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে।আর চোখ দিয়ে অনবরত ঝরছে ঝর্ণার পানি।হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসলো দিলাম রাফির পেটের নিচে এক লাথি রাফি আহহ!বলে আমার হাত ছেড়ে নিজের পেটে হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়লো তখনই দৌড়ে ছুটতে লাগলাম আমি।হাত পা যেন চলছে না মাথা ভনভন করছে কিন্তু দুর্বল হলে চলবে না নিজেকে বাঁচাতেই হবে আমায়।আমি দৌড়াচ্ছি পেছন পেছন রাফিও দৌড়াচ্ছে আমার!দৌড়াতে দৌড়াতে একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেলাম আমি।লোকটার হাত ধরে বলে উঠলাম আমাকে বাঁচান প্লিজ ওই লোকটা আমাকে….প্লিজ প্লিজ আমাকে বাঁচান।
.
লোকটা শক্ত করে আমার হাত ধরে বলে উঠলো কোন লোকটা…?
.
কন্ঠটা খুব চেনা আমার।মুখ না দেখেই বলে উঠলাম আরাভ!
.
হ্যাঁ তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে জানো সারাদিন আমি তোমায় কোথায় না খুঁজেছি।আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি আর খুঁজে পাবো না।থ্যাংক গড পেয়ে গেছি।তুমি ঠিক আছো তো। কে তোমাকে কি করবে কই সে…?
.
এই তো এখানেই ছিলো বলে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।না কেউ নেই।তাহলে উনাকে দেখে রাফি কি পালিয়ে গেছে নাকি।রাফি!
.
রাফি…?কে রাফি…?
.
ওই যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সেই রাফি।সেদিন বিয়ের আসর থেকে ও ফেরত যাওয়ায় আমার উপর শোধ তুলতে এখানে নিয়ে আসে আমায়।জানেন ও আমাকে গাড়ী থেকে অজ্ঞান করে নিয়ে সামনের একটা ঘরে আটকে রাখে।তারপর বলেই কেঁদে উঠলাম আমি।
.
তারপর কি বলো….কি করেছে ও তোমার সাথে।
.
আমার সাথে হওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম উনাকে….তখনই ওকে লাথি দিয়ে ছুটতে ছুটতে এখানে চলে আসি আমি।কিন্তু এখন ও কোথায় গেলো।আপনাকে দেখে পালিয়েছে মেবি।
.
নো মিসেস আরাভ!রাফি পালাতে শিখেনি।তুমি আমার শিকার। সেটা আজ আমি শিকার করেই ছাড়বো।আর এই আরাভকে তো আজই দেখে নিবো আমি।কথাগুলো শুনে পেছনে তাকালাম আমি।রাফি কিছু গুন্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এখন আমি শেষ।
.
তাই নাকি!মেহরীমা তোর শিকার। ওর উপর একটা আছড় কেটে দেখা দেখি। আরাভের ওয়াইফের উপর হাত দেওয়ার সাহস কি করে হয় তোর।সারাদিন ওকে আটকে যতটা কষ্ট দিয়েছিস ততটাই ফেরৎ পাবি।আমি জানতাম তুই কোনো ভালো ছেলে নস।মেয়েদের লাইফ নষ্ট করাই তোর একমাএ উদ্দেশ্য।কত মেয়ের জীবন যে নষ্ট করেছি ইয়াওা নেই।এজন্যই তোর সাথে ওর বিয়েটা হতে দেই নি আমি।আমি জানতাম ওর জীবনটাও নরক করে ছাড়বি।আমার অবর্তমানে ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস এখন আমার উপস্থিতিতে ওকে ছুয়ে দেখা।দেখি কত বড় বুকের পাটা তোর।
.
এই তোরা এই আরাভটাকে সাইজ কর।আমি মেয়েটাকে দেখছি।
.
আপনি একা ওদের সাথে পারবেন না।চলুন পালাই।আপনাকে মেরে আমাকে ওরা নিয়ে চলে যাবে।প্লিজ আপনি ওদের হাতে আমায় ছেড়ে দিবেন না সময় থাকতে পালাই চলুন।একা একা এতজনের সাথে পারা ইম্পসিবল!
.
ভয় পেও না!চুপচাপ দাড়াঁও।কথা দিচ্ছি আমার প্রাণ থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না।একটু ভরসা করো প্লিজ!
.
মুহুর্তের মধ্যেই সবকয়টাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিলেন উনি।এবার রাফির পালা।রাফিকে ইচ্ছে মতো রাম ধোলাই দিচ্ছেন উনি।ব্যাথায় চিৎকার করে উঠছে রাফি।কিন্তু উনি ছাড়ছেন না।দূর থেকে উনাকে থামতে বলছি আমি কিন্তু কিছুতেই শুনছেন না উনি,মেরেই চলেছেন।উনার সামনে গিয়ে আর কত মারবেন লোকটা মরে যাবে তো…এবার ছাড়ুন!আমার কথায় থামলেন উনি।একটু সুযোগ পেতেই ছুরি দিতে উনাকে আঘাত করলো রাফি।ছুরিটা একদম পেট বরাবর ঢুকাতে যাবে তখনই হাত দিয়ে আটকে দিলেন উনি।গড়গড় করে রক্ত ঝরছে উনার হাত থেকে।রক্ত দেখলেই মাথা চক্কর দিতে উঠে আমার।ভয়ে নিঃশ্বাস আটকে যায়।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।একসময় শরীরের সমস্ত ভর ছেরে দিয়ে সেখানেই মাথা ঘোরে পড়ে গেলাম আমি…!!
.
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আরাভের রুমে আবিষ্কার করলাম আমি।আমার সাথে কি হয়েছে সেটা জানার জন্য ব্রেনে চাপ দিতেই মনে পড়লো আমার।আরে আমি তো রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম এখানে আসলাম কি করে। আরাভের কি হলো আর রাফিরই বা কি হয়েছিলো।আরাভ কোথায় সেটা জানার জন্য পুরে ঘরে চোখ বুলাচ্ছি তণই চোখে পড়লো ডানে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা এবং বামে ইয়াং একজন মেয়ে বসে আছে আমার।কিন্তু রুমের কেথাও আরাভ নেই।গতকাল থেকে এ বাড়ীতে এসেছি কিন্তু আগে কখনও উনাদের দেখিনি আমি।আজই প্রথম দেখছি।আমাকে উঠতে দেখে মহিকাটি বলে উঠলেন….এখন উঠো না মা।শুয়ে থাকো তোমার রেস্টের প্রয়োজন বলে মিষ্টি একটা হাসি দিলেন উনি।
.
উনার কথায় বিছানায় শুয়ে পড়লাম আমি।মাথায় একটাই প্রশৃন আরাভের কি হলো…?রাফি উনার সাথে খারাপ কিছু করে নি তো!তখনই ইয়াং মেয়েটি বলে উঠলো বউমণি তুমি নিশ্চয় ভাইয়ার কথা ভাবছো…?ভাইয়ার সাথে কি হলো তাই তো।ও হ্যাঁ আমাকে তো তুমি চিনোই না।আমি হলাম নাদিরা।ভাইয়ার ছোট বোন আর উনি হলেন আমার মা।মানে তোমার কাকি শাশুড়ী।
.
মেয়েটার কথা শুনে যা বুঝলাম এরা আরাভের চাচী আর চাচাতো বোন।আচ্ছা আরাভ…?
.
ওয়েট বলছি কিন্তু তুমি কি এটা সহ্য করতে পারবে বউমণি বলেই কেঁদে উঠলো মেয়েটি।মেয়েটির কান্না দেখে অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি।তাহলে কি আরাভ নেই….নাকি রাফি উনার সাথে বাড়াবাড়ি কিছু করেছে….?
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-০৪

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_4
.
.
🥀
উনি যেই কাগজটা আমার হাতে দিয়েছিলেন সেটা আর কিছু নয় প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট।সেখানে পেশেন্টের নামের জায়গায় বড় বড় করে আমার নাম লিখা রয়েছে মেহরীমা।এইজ ২১।হোয়াট!আই’এম প্রেগন্যান্ট।রিপোর্ট হাতে নিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম আমি।মাথা চক্কর দিচ্ছে।কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।একটা অপরিচিত লোক তার প্রেমিকা বলে আমাকে জোর করে বিয়ে করলো এখন আমার বলছে আমি তার বাচ্চার মা।যেখানে রিপোর্টের সব ডিটেইলস আমার দেওয়া।কিন্তু আমি তো তাকে চিনিনা আর কারো সাথে কোনো রিলেশনেও ছিলাম না।তাহলে বাচ্চা আসলো কোথা থেকে….?
.
কি হলো সব কথা হাওয়া হয়ে গেলো!এবার বলো এটা তোমার রিপোর্ট না।বা এটাও বলতে পারো নামটাও তোমার না।
.
এখনও কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছি আমি।সত্যি কি এটা আমার রিপোর্ট!কিন্তু তা কি হরে হয়।তবে কি উনি এটা কোনো বানোয়াট রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন।ডেইট টাও তো প্রায় মাস খানেক আগের দেওয়া।আপনি মিথ্যা বলছেন…?সত্যি এটা আমার রিপোর্ট না।আপনি ইচ্ছা করে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এটা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন।
.
হোয়াট!হেই আর ইউ ক্রেইজি!আচ্ছা তোমার মিথ্যা প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট বানিয়ে আমার কি লাভ…?
.
আপনার তো সব দিকেই লাভ!আমাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসে আমার বাবাকে আটকে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে।এখন আমি যাতে পালিয়ে না যাই সেই জন্য আমার ফ্যামিলিকে শেষ করার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন।আর আজ আবার বাচ্চা নিয়ে পড়েছেন যাতে বাচ্চার দিকে তাকিয়ে আমি সব ভুলে যাই।কিন্তু এসব কিচ্ছু হবে না।আমি এই রিপোর্ট মানি না।কারণ আমি ভালোভাবেই জানি আমি প্রেগন্যান্ট নই।আর রিপোর্টও আমার নয়।এটা আপনার চক্রান্ত!
.
এটা দেখার পরও কি করে বলছো তুমি…?ওয়েট ওয়েট! এই মেয়ে বলে আমার দুই বাহু চেপে ধরলেন উনি…বাই এনি চান্স তুমি বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দাও নি তো…?
.
উনাকে এক ধাক্কা দিয়ে উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম আমি।আপনি পাগল,উন্মাদ হয়ে গেছেন।হিতাহিত জ্ঞান শূন্য একজন মানুষ।যার বিয়ের দিন তাকে তুলে আনলেন সে মেয়ে বাচ্চা পাবে কোথায়…?আরে বাচ্চাই যদি থাকতো তাহলে কি সে বিয়ে পিঁড়িতে বসতো!বসতো না।এই সহজ বাংলাটা কেন বুঝছেন না।
.
কারণ কথাটাগুলো যতটা সহজ তুমি ততটাই জটিল একজন মানুষ!আর কেউ হলে মানতাম কিন্তু তুমি বলেই মানছি না।ভালোয় ভালোয় বলো বাচ্চাটার সাথে কি করেছো…?
.
ডিজগাস্টিং!আবার সেই এক কথা বাচ্চা হুহ!বলে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।তখনই হাতে হেচকা টান অনুভব করলাম আমি।আচমকা টান সামলাতে না পেরে উনার বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম আমি।কোথায় যাচ্ছ…?
.
কোনোকথা না বলে দাঁড়িয়ে আছি।আসলে এই ব্যাপারে কথা বলতে আর ইচ্ছে করছে না আমার।মস্তিষ্কে হাজারো প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে।যেই প্রশ্নগুলোর উওর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল আমি কিন্তু পাচ্ছি না।ছাড়ুন আমাকে!
.
কি হলো কথা বলছো না কেন…?বলো কি করেছো…?
.
লোকটার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছেন উনি…গলার স্বর নরম করে বলে উঠলাম….আপনি বিশ্বাস করুন আমাকে আমি প্রেগন্যান্ট নই!আর কখনও ছিলামও না।যখন ছিলাম না তখন নষ্ট করার কথা কোথা থেকে আসছে আপনিই বলুন।
.
আমাকে ছেড়ে দিয়ে তুমি সিওর তুমি প্রেগন্যান্ট নও…?
.
১০০% সিওর!
.
ঠিক আছে আমার সাথে চলো আর শোন আজ যদি জানতে পারি বাচ্চাটা নেই তাহলে তুমি ভাবতেও পারছো না তোমার সাথে কি হতে চলেছে।জানো তোমার আর আমার সম্পর্কের ভিওি কি…? একমাত্র ওই বাচ্চাটা।যার জন্য আমি তোমাকে ওইভাবে বিয়ে করেছি।এখন যদি জানতে পারি….বলে আমাকে টানতে টানতে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলেন উনি।রামীম ভাই সোফায় বসে ফোন ঘাঁটছেন।আমাদের দেখে বলে উঠলেন উনি…..
.
শালা বউ পাগল! এখন আসতে মন চাইলো তোমার!সেই কখন বউয়ের কাছে গেছো এখনও আসার নাম নেই তাও যা এলে বউকে হাত ধরে নিয়ে একেবারে তবেই এলে। বউ ছাড়া এক মুহুর্তও চলে না তাই না।
.
রামীম চুপ করবি!এটা মজা করার সময় নয়।আর তুই তো জানিসই বউ প্রেমিকা এসব বোকা বোকা জিনিসের উপর আমার ইমোশন কাজ করে না।প্রত্যোকটা মেয়েই লোভী,বেইমান আর প্রতারক।
.
আপনি কিন্তু মেয়েদের অপমান করছেন।হ্যাঁ প্রত্যেকটা মেয়েই লোভী হয়।কিসের জন্য জানেন একটু ভালোবাসার লোভী।একটু কেয়ারিং ব্যস আর কিচ্ছু চাই না তাদের।কিন্তু আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েরা সেইটুকুও পায় না।পায় শুধু অপমান তাচ্ছিল্য।
.
চুপ কর!তোমার লেকচার কেউ শুনতে চায় নি।আগে নিজে ঠিক হও তারপর অন্যকে জাজ করো।চল আমার সাথে আমরা এক্ষুনি হসপিটাল যাবো।
.
রামীমঃহসপিটাল…?(ভ্রু কুঁচকে)কেন কার কি হয়েছে…?
.
আপনার বন্ধুর মাথার ব্যামো হয়েছে এখন তিনি সাইকোলজিস্ট দেখাতে যাচ্ছেন।এই শুনুন আমি কোথাও যাবো না।আপনার যেখানে মনে হয় আপনি সেখানে যান।আমাকে নিয়ে যদি কোথাও যেতে হয় তাহলে আমার বাসায় গিয়ে সবাইকে সত্যি টা বলে আমাকে পৌছে দিয়ে আসেন।
.
বাসায়..?এই জীবনে তোমার আর ওখানে যাওয়া হবে না।এই পার্ট সারাজীবনের মতো ইন্ড হয়ে গেছে।বেশি বাড়াবাড়ি না করে চলো।
.
কিন্তু কেন যাবি বললি না তো…?
.
ওর চেকাপ করাতে যাবো।তুই তো জানিস এই বাড়ীর বংশধর আসতে চলেছে তাই ও কেমন আছে সেটা জানার জন্যই যাচ্ছি।
.
ওহহ! হুম তাহলে চল আমিও আসছি তোদের সাথে।মুখে এত রাগ দেখাস কিন্তু ঠিকই ওদের নিয়ে ওরিড বলে হেসে উঠলেন উনি।চোখ বড় বড় করে তার মানে উনিও জানেন আমি প্রেগন্যান্ট!হায় খোদা!
.
আরে ধুর ভাল্লাগেনা!এই আপনার কানে কথা যায় না।আপনি কি বয়রা কানে শুনেন না।আমি বলছি তো আমি প্রেগন্যান্ট না তাহলে কেন জোরাজোরি করছেন বলুন তো!একদম ফালতু ঝামেলা করবেন না।
.
এই চুপপ!বলে আমাকে হির হির করে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন উনি।রামীম ভাইয়া কাজের বোয়া কারোর কোনো কথাই শুনলেন না উনি।
.
.
.
রাস্তায় জ্যামে আটকে আছি আধঘন্টা হলো এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না আমার।রিপোর্ট সন্ধ্যার পর পাওয়া যাবে।এই একটা রিপোর্ট নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই উনার।যদিও আমি জানি রিপোর্টে কি আসবে।কিন্তু আমার কথাকে পাওা না দিয়ে উনি তো আশাবাদী।হঠাৎ আমাকে রেখে গাড়ী থেকে নেমে পড়লেন উনি…..এই সুযোগ পালানোর যখনই গাড়ী থেকে নামতে যাবো তখনই দেখি গাড়ীটা লক।যা আমার প্ল্যানে জল ঢেলে দিলো ব্যাটা রাক্ষুস!এখন আর পালানো যাবে না।এখান থেকে পালিয়ে অনেকদূর চলে যেতাম।যেখানে আরাভ নামের ছায়াটা থাকতো না।আব্বু আম্মু ভাইয়া কারো সাথে যোগাযোগ রাখতাম না।তাহলে আরাভ কারো ক্ষতিও করতো না।কিন্তু কোথায় যাবো আমি।একা একটা মেয়ে কোথায় যেতে পারি।এই শহর থেকে দূরে কিন্তু সেখানে গিয়ে থাকবো কি করে।কথাগুলো এক মনে ভেবে চলেছি আমি হঠাৎ কারো তুড়ির আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।হুম আরাভ এসেছে এক হাতে আইসক্রিম!সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে সে।আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছি।
.
আইসক্রিম টা নাও।তোমার তো বাইরে বের হলে আইসক্রিম ছাড়া চলেই না তাহলে এখন এত ভাব দেখাচ্ছ কেন..?নাও আইসক্রিম খাও ভালো লাগবে।
.
ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাহ!খাবো না আপনি খান।আগে অনেককিছুই করতাম কিন্তু এখন করি না।জানেন আগে আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারতাম না।কিন্তু এখন পারি।নিজের হাতে খেতে পারতাম না এখন সেটাও পারি সমস্যা হয় না বলেই বড় বড় দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো আমার।নিজেকে যেন সামলে উঠতে পারছিনা আমি।একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।হয়তো কিছুটা দয়া হচ্ছে উনার তাই নরম সুরে বলে উঠলেন উনি…..
.
ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড মেহরীমা!এভাবে কেঁদো না।রাস্তার লোকেরা কি ভাববে।একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে নাও মুখ মুছো।
.
টিস্যু হাতে নিয়ে বলে উঠলাম আমি….এক বোতল ওয়াটার হবে…?
.
ওহ্হ সীট !!গাড়ীতে পানি নেই।তুমি একটু ওয়েট করো আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।পানি নিয়ে ফিরে এসে শকড আমি।এমন কিছু হতে পারে কখনও মাথায়ও আসেনি আমার।তবে কি ভুল করে ফেললাম আমি।ভুল….হুম মারাত্মক “ভুল” করে ফেলেছি।আর তার মাশুল কড়ায় গণ্ডায় আমাকেই দিতে হবে…!!
.
.
#চলবে……