#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_3
.
.
🥀
ড্রয়িংরুম থেকে সিঁড়ি ধরে উপরের রুমের দিকে এগুচ্ছি আমি!কোথাও মানুষের চিটে ফুটোও নেই।পুরো বাড়ী একেবারে নিস্তব্ধপুরী।জনমানবহীন প্রায় শূন্য।রামীম নামের ছেলেটা কাজী সাহেবকে নিয়ে সেই যে গেছে আর ফিরেনি,হয়তো ফিরবেও না।লোকটা উনার বন্ধু সম্ভবত এখানে থাকে না।হাঁটতে হাঁটতে একটা রুমের সামনে দাঁড়ালাম আমি।ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলাম ওই দানবটা ভিতরে।হয়তো সদ্য শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছেন উনি।বুকের বা পাশে লোমের ফাঁকে ফাঁকে পানির ফোটা এখনও আটকে আছে।উনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সামনের রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আমি।কিছুক্ষণেই ঘুম ধরা দিলো আমার চোখে।
.
সকালে পানির ঝাপ্টা পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠলাম আমি।সামনে লৌহমানবকে দেখে অবাক আমি।উনার চোখ দুটো দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছেন উনি।কিন্তু রাগের কারণ টা বোধগম্য নয় আমার কাছে। আমি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি উনার পানে।
.
এই মেয়ে এতবেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমায় নাকি…?আমার ব্রেকফাস্ট রেডি করবে কে..?১০ মিনিটে আমার খাবার রেডি করা চাই।
.
উনার কথা শুনে রাগে গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে আমার। ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠলাম…. আমি কি আপনার কাজের লোক নাকি যে আমি আপনার খাবার রেডি করবো।আমি রান্না জানিনা।নিজের খাবার নিজে রেডি করুন আমি পারবো না।
.
হোয়াট!বলে আমার হাত ধরে বিছানা থেকে উঠালেন আমায়।এত তর্ক না করে যা বলছি সেটা করো।আচ্ছা ওয়েট বলে চোখ বুজে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলেন উনি।কিছুক্ষণ পর আলমারি খুলে একটা ড্রেস বের করে হাতে ধরিয়ে দিলেন আমার।যাও এইটা পাল্টে এটা পড়ে এসো।আর ওখানে তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু রাখা আছে।শাড়ী থেকে শুরু করে এভরিথিং।কোনোকিছুর ঘাটতি নেই।আচ্ছা এত ভারী বেনারসি পরে কাল ঘুমালে কি করে আশ্চর্য বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।
.
উনার ব্যবহারে শকড আমি।প্রথমে এত রুড বিহেভ তারপর এত ভালো ব্যাটায় করে কি!ওয় নিজে কি জানে!হালা সাইকো!ইচ্ছে করছিলো পেছন থেকে গলা আটকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলি।কিন্তু পারলাম না!!
.
অনেক্ক্ষণ হলো ব্রেকফাস্ট রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছি আমি।আম্মুকে কাজে হেল্প করতাম সেই সুবাদে রান্না কিছুটা আয়ও করতে পেরেছি।কিন্তু উনার আসার নাম গন্ধও নেই।এদিকে আমার পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।কাল থেকে কিছু খাইনি আমি।নিজের ক্ষিধে সহ্য হচ্ছে না বলে রান্না করেছি নইলে কে তোর অর্ডার শুনতো।হঠাৎ কলিংবেল চেঁচিয়ে উঠলো “টিন টিন”!আমি যেভাবে ছিলাম সেভাবেই বসে আছি।নো নড়িং নো ছড়িং।কন্টিনিউয়াসলি বেজেই চলেছে ধ্যাৎ ভাল্লাগেনা।একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দিলাম আমি।দরজা খুলতেই সেই শ্যামলা মেয়েটা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো।নিজের ৩২ দাঁত বের করে হে হে করে হেসে বলে উঠলো….ভাবি কেমন আছেন..?
.
লোকটার কথা শুনে সবকয়টা দাঁত ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছে করছে আমার।সাথে ” ভাবি” শব্দটা বড্ড বেমানান।আমি কোনোকথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো…..
.
কিরে রামীম তুই এত সকালে…?এনি প্রবলেম..?
.
না দোস্ত সব ঠিক আছে!ভাবিকে দেখতে আসলাম আসলে কাল সেভাবে দেখা হয়নি তো তাই ভাবলাম আজ দেখে আসি।কিন্তু এখানে এসে কে জানতো আমাকে কেউ পাওাই দিবে না।
.
মানে!
.
আরে ভাবি তে কোনো কথাই বলছে না।
.
আরে আপনি সেই কখন থেকে কি “ভাবি ভাবি” বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছেন।আমি কারোর ভাবি টাবি কিচ্ছু না।যেই বিয়েই মানিনা সেই সম্পর্কের কি কোনো ভিওি আছে।নেই তো তাহলে এত ভাবি ভাবি করার কি কোনো প্রয়োজন আছে…?
.
আরে ভাবি রাগছেন কেন…? আপনি মানেন আর নাই বা মানেন আপনিই আমাদের ভাবি।
.
আমাকে উনি ব্ল্যাকমেইল করেছেন বিধায় এখানে আছি নাহলে কবেই পালিয়ে যেতাম।
.
আচ্ছা রামীম তুই এর সাথে এত কথা কেন বলছিস।ভাবি ডাকতে মানা করেছে খালাম্মা ডাকিস খুশী হয়ে যাবে।উনার কথা শুনে দাঁত চেপে হাসছে রামীম ভাইয়া।সেটা দেখে রাগে ফুসছি আমি।
.
আপনি…..আমাকে থামিয়ে রামীম এসেছিস যখন তখন খেয়ে যা।চল খুব ক্ষিধে পেয়েছে বলেই টেবিলে খেতে বসলেন উনি।কিছুক্ষণ পর রামীম নামের ছেলেটা বলে উঠলো….
.
ভাবি আপনি খেয়েছেন…?না খেলে আমাদের সাথে বসে পড়ুন।
.
আমি কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন উনি….এখন কি খাওয়ার সময় নাকি।আগে আমরা খাব তারপর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে ও খাবে।আমার খাওয়া কমপ্লিট!এই যে ব্রেকফাস্ট ভালোই হয়েছে।আমার বাসার আয়াকে ছাড়িয়ে এবার ভাবছি কাজটা তোমাকেই দিয়ে দেব।আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই রামীমকে নিয়ে চলে গেলেন উনি।মানুষ এতটা পাষাণ কি করে হয়।গতকাল থেকে আজ অবধি কিছু খাইনি সেটা জানার পরও এইগুলো বললো ছিহ!
.
দুপুরের রান্না করতে যাবো তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠলো।ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে মধ্য বয়সী একজন মহিলা প্রবেশ করলো।তিনি ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন।
.
আমি রহিমা এই বাড়ীর কাজের লোক।স্যারে কাল না করছিলো আইতে তাই আসি নাই।আইজ কল দিয়া কইলো তোমার ভাবিসাব একা বাসায় আর রান্না করা লাগবো তুমি যাও।তাই মুই চইল্লা আইছি।উনাকে ভিতরে ঢুকিয়ে কিচেনে হেল্প করতে হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে উনি মানা করে দিলেন তাই নিজের রুমে চলে গেলাম আমি।আম্মু আব্বুর খবর নেবো সেই জোঁ নেই।কারণ আমার কাছে কোনো ফোনই নেই।আর এই বাড়ীতেও ল্যান লাইনের ব্যবস্থা নেই কেন নেই সেটাও জানিনা।তাই শুয়ে পড়লাম আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে ড্রয়িংরুমের উদ্দেশ্যে গেলাম আমি অন্যমনস্ক হওয়ায় পা স্লিপ করে সিঁড়ি থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম তখনই কেউ কোমড় জড়িয়ে ধরলো আমায়।আমিও নিজেকে বাঁচাতে তার শার্ট খামছে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।সামনে থাকা লোকটি কে হতে পারে সেটা ভাবার হুশই নেই আমার।হঠাৎ আমাকে সোজা করে দাঁড় করালো কেউ।সামনে থাকা লোকটার শার্ট ছেড়ে নিজেকে ঠিক করে লোকটার দিকে তাকালাম আমি।ওমা এটা কে…?ডাইনি বুড়ীর গল্পের সেই রাক্ষুস আরাভ।
.
এই তুমি দেখে হাঁটতে পারো না।দাঁত কটমট করে এখন যদি পড়ে যেতে তাহলে কি হতো বুঝতে পারছো তুমি।এই অবস্থায় কেউ এত বেখালি হয়ে হাঁটে৷ !!
.
আরে পড়ে গেলে কি হতো মানে!একটু হাত পা ছিলতো মাথা ফাটতো এর থেকে তো বেশি কিছু নয়।আর যা হতো আমার হতো কষ্ট হলে আমার হতো তাতে আপনার কি…?
.
তোমার কষ্ট হলে আমার কিচ্ছু নয়।আরে তুমি বাঁচলে নাকি মরলে তাতে কিচ্ছু যায় আসে না আমার।
.
তাহলে এতগুলো কথা শোনাচ্ছেন কেন…?আমিও তো সেটাই বলি আমাকে আটকালেন কেন..?পড়লে পড়তাম মরলে মরতাম।চোখের পানি ফেলে মরলে মরে যেতাম,আমার কাছে।এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই উওম।
.
তুমি মরে গেলে তো কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু তোমার সাথে জড়িয়ে আছে এই বাড়ীর বংশধর।ওর কিছু হলে আমি টলারেট করবো না।
.
উনার কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে গেলো।শেষের কথাটা বারবার কানে বাজছে আমার”ওর কিছু হলে আমি টলারেট করবো না।বংশধর!হাউ ফানি।
.
কিহ!একটা অনাগত বাচ্চাকে নিয়ে তুমি মজা করছো।এই বাচ্চাটার প্রতি বিন্দুমাএ ভালোবাসা নেই তোমার।এই তুমি না মা!মা হয়ে সন্তানের ক্ষতি কি করে চাইছো।
.
আরে কি বলছেন আপনি!বাচ্চা,সন্তান মা আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি।কার বাচ্চা!কিসের বাচ্চা!
.
মজা করছো আমার সাথে!তুমি অস্বীকার করতে পারো তুমি প্রেগন্যান্ট নও…?আর কদিন পরেই তোমার কোলে বাচ্চা আসতে চলেছে।
.
উনার কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো আমার।আপনাআপনি হাত চলে গেলো পেটে।পেটে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি আমি।আমার হাত অনুসরণ করে পেট বরাবর তাকিয়ে আছেন উনিও।উনার তাকানো দেখে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠলাম আমি…..
.
কি যা তা বলছেন…!!একবার বলছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি।আরেকবার বলছেন আমি বাচ্চার মা হতে চলেছি।এই আপনি এত মিথ্যা বলে হাঁপিয়ে উঠেন না।মনে হয় না এত মিথ্যা আল্লাহ সইবে না।
.
আমি মিথ্যা বলছি!হায়রে ড্রামা কুইন।এত ড্রামা কি করে করো তুমি।দুই+এক মাস বর্তমানে তুমি প্রায় তিন মাসের প্রেগন্যান্ট আর এখন তুমি না করছো।কেন করছো বলতো আর কদিন পর সত্যি টা লুকাতে পারবে,পারবে না তো!কারণ তখন তোমার শরীরেই প্রেগন্যান্সির সেই চিন্হগুলো ফুটে উঠবে।
.
এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন…!!জোর করে বিয়ে করলেন এখন কি জোর করে প্রেগন্যান্টও বানিয়ে দেবেন আজব!আরে যান তো ফালতু বকবেন না ভাল্লাগেনা!
.
আমি ফালতু বকছি!ঠিক আছে আমার সাথে চলো বলে উনার রুমের বিছানায় ছুড়ে মারলেন আমায়।আলমারি খুলে তন্নতন্ন করে কি যেন খুঁজে চলেছেন উনি….হঠাৎ একটা পেপার আমার হাতে ধরিয়ে ডেবিল স্মাইল দিলেন উনি।এবার বলো কে মিথ্যাবাদী,তুমি না আমি।পেপারটা হাতে নিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।এটা কি করে হলো…!!আমি প্রেগন্যান্ট আর আমি নিজেই জানিনা।হাউ ইজ পসিবল!
.
.
#চলবে…..
তোমায় ঘিরে পর্ব-০৩
তোমায় ঘিরে পর্ব-০২
#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_2
.
.
🥀
আরে আপনারা…?কি সৌভাগ্য আমার পেছনের লোকেদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন উনি….!!উনার চোখ অনুসরণ করে পেছনে তাকিয়ে অবাকের সপ্তম আকাশে পৌছালাম আমি!
.
ভাইয়া,আম্মু,রাফি,আঙ্কেল তোমরা এখানে বলে দৌড়ে আম্মুকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।আম্মু কোনো কথা না বলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।পাশ থেকে ভাইয়া বলে উঠলেন…..ছিঃ মিহু ছিঃ!তুই এভাবে আমাদের মান সম্মান ডোবাতে পারলি…?একটাবার ভাবলি না আমাদের কি হবে…?বাবার মাথা কতটা নিচু হয়ে যাবে।তুই জানিস তুই পালিয়ে আসার পর থেকে বাবাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বুঝতে পারছিস কতটা অপমানের ভয়ে বাবা মুখ লুকিয়ে আছে।এই মিহু তোর বিয়েতে মত নেই সেটা আর কাউকে না বলিস আমাকে তো বলতে পারতিস…?কি রে পারতিস না!বল না মিহু কেন এমনটা করলি…?
.
আম্মুকে ছেড়ে আ’এম সরি ভাইয়া!আমি বুঝতে পারিনি।
.
এখন তো বুঝতে পারছিস…?তাহলে চল আমাদের সাথে এক্ষুণি রাফির সাথে তোর বিয়ে দেবো আমি।এখনও তোকে বিয়ে করতে ওর কোনো আপওি নেই।রাফি এখনও তোকে বিয়ে করতে রাজি।
.
না ভাইয়া এটা হয় না!
.
কেন হয় না মিহু…?
.
কারণ একটা মেয়ের এক রাতে কয়টা ছেলের সাথে বিয়ে হবে ভাইয়া…?
.
কয়টা ছেলের সাথে মানে…?আর তুমি কে…?তার মানে তুমিই ওকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছো…?তোমাকে তো আমি ছাড়বো না বলেই আরাভের কলার চেপে ধরলো ভাইয়া।
.
আম্মু রাফি ও আঙ্কেলের সহায়তায় উনাকে ছাড়লেন ভাইয়া।নিজের কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন উনি….আরে ভাইয়া আপনার মাথা বড্ড গরম…এরকম কেউ করে!আগে আমার কথাটা শুনুন তারপর রিয়াক্ট করবেন ওকে।
.
এই কি বলবে তুমি…?থার্ড ক্লাস ছেলে একটা…!!রাগে ফুসতে ফুসতে তোমাকে তো আমি….
.
আরে ভাইয়া থার্ড ক্লাস কে সেটা পরে বুঝবেন আগে ঘটনাটা শুনুন।একরাতে একটা মেয়ের কটা বিয়ে হয়…?কি সবার আনসার কি “একটাই” তো!তো সেই একটা বিয়ে আপনারা আসার একটু আগেই মেহরীমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
.
কিহ!মিহু তুই এই ছেলেটাকে বিয়ে করেছিস…?তাও আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে।
.
নীরব শ্রোতার মতো কথাগুলি শুনছি আমি!এখন শোনা আর দেখা ছাড়া কোনো উপায় নেই আমার কাছে।
.
আমাকে ঝাকিয়ে আবারও বলে উঠলেন ভাইয়া মিহু আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে…?
.
হ্যাঁ ভাইয়া আমি উনাকে বিয়ে করেছি।আর আজ থেকে উনি আমার স্বামী কথাটা তোমাদের কাছে অপ্রিয় হলেও এটাই ধ্রুব সত্যি!
.
ঠাসস!!তোর এতটা অধপতন হয়েছে।আমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আমাদের সবাইকে না জানিয়ে ওকে বিয়ে করেছিস।এই কথাটা তোর বাবা জানার পর কি অবস্থা হবে উনার ভাবতে পারছিস তুই।
.
আম্মু আমার কথাটা তো শুনো প্লিজ!
.
তোর কথা শুনবো আর কি শোনানোর বাকি আছে মিহু।আদৌও কি কিছু বলার আছে তোর।
.
হ্যাঁ ভাইয়া তুমি আমাকে….কথাটা বলেই আরাভ নামের দানবের দিকে তাকালাম আমি।স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ভয়ংকর কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছেন উনি।তাই ওখানেই থেমে গেলাম আমি।কারণ আবার আব্বু এখনও উনার হাতে বন্দী।তাই চাইলেও কাউকে সত্যি টা বলতে পারলাম না আমি।
.
কিরে কিছু তো বল…!
.
ভাইয়া তোমরা এখানে পৌছালে কি করে…?আমি যে এখানে তোমাদের কে বললো…?
.
জানিনা! হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে আমাকে টেক্সট করে এই ঠিকানাটা পাঠালো সাথে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ।মেহরীমা এই ঠিকানায় আছে।তাই আমরা ছোটে এখানে চলে আসি!আর এখানে এসে যা দেখলাম তা তো….!!
.
আরে ভাইয়া আপনারা ওকে ভুল বুঝবেন না।ও আমাকে ভালোবাসে সেটা আপনারা বুঝেন নি।তাই আজকে এভাবে ওকে আমার কাছে পালিয়ে আসতে হয়েছে।আর একবার যখন আমার জন্য ঘর ছেড়েই দিয়েছে তখন ওকে বিয়ে করা ছাড়া আমার হাতে কোনো ওয়ে ছিলো না।আর ওই ম্যাসেজটা আমিই দিয়েছিলাম কারণ আপনাদের মেয়ে কোথায় আছে সেটা জানা আপনাদের জরুরি বলে মনে হয়েছিলো আমার।যাইহোক আমি তো মিহুর স্বামী আর আপনাদের জামাই।সেটা আপনারা মানুন আর নাই বা মানুন।আমি শুধু জামাই হিসেবে নিজের দায়িত্ব টা পালন করেছি ব্যস!আপনাদের না জানিয়ে বিয়ে করে আমি ভুল করেছি এবার আপনারা আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো মা।
.
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।ছিঃলোকটা কি জঘন্য!এতক্ষণ যতটা ঘৃণা হচ্ছিলো এখন তার থেকে সওর গুণ বেশি ঘৃণা হচ্ছে আমার।কিভাবে আমার ফ্যামিলির কাছে আমাকে মিথ্যুক প্রমাণ করে দিলো ছিহ!
.
রাফিঃছিঃ মিহু তোমাকে এতবার জিজ্ঞেস করেছি তাও তুমি বলেছো কাউকে লাভ করো না তুমি আর আজ কিনা।তোমার কখনও ভালো হবে না মিহু।আমার সাথে প্রতারণার ফল ভালো হবে না।
.
আঙ্কেল রাফি ভাইয়া একে একে সবাই আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।সবার কথা যেমনই হোক শেষে মায়ের বলা কথাটা কলিজায় বিধলো আমার।”মিহু তোকে অনেক যত্ন আর ভালোবাসায় বড় করেছিলাম আর আজ সেই তুই আমাদের মুখে চুনকালি দিলি”।আজ থেকে জানলাম “আমার কোনো মেয়ে নেই”। একটাই ছেলের মা আমি!আর কোনোদিন আমাদের বাসা আর আমার সামনে আসবি না তুই বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলো সবাই।লোকে মা বাবার কি অবস্থা করবে বুঝে গেছি আমি।কিন্তু মা তোমরাবকি জানো নিরুপায় আমি।সবাই যাওয়ার পর স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে কাঁদছি আমি আর আমাকে আড়চোখে দেখছেন উনি।কিছুক্ষণ পর চোখের পানি মুছে নিজেকে শান্ত করে উনার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে মারলাম আমি….!!
.
আপনি এটা কেন করলেন…?কেন সবাইকে বুঝতে বাধ্য করলেন আমি আপনাকে ভালোবাসি আর তাই আপনাকে বিয়ে করেছি।কেন কেন কেন…?
.
সেটার উপযুক্ত কারণ ছিলো তাই।যদি কারণ না থাকতো আমি এসব করতাম না।সো ভাবো এটারও কারণ আছে।
.
আমার বাবা কোথায়…?উনাকে ছাড়ছেন না কেন…?
.
এত টেনশন করো কেন তুমি…!!তোমার বাবাকে অলরেডি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আর এতক্ষণে বাসায়ও পৌঁছে গেছেন উনি।এবার চলো ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়বে চলো।
.
কোথাও শুবো না আমি।আমি বাসায় যাবো।এখানে থাকবো না আমি।
.
বাসা!হা হা বলে অট্রহাসিতে ফেটে পড়লেন উনি।
.
আরে হাসছেন কেন আপনি…?আমি হাসার মতো কিছু কি বলেছি…?
.
অভিয়াসলি!যারা এখন তোমাকে ফেলে চলে গেলো এরাই আবার তোমাকে বাসায় জায়গা দেবে মনে হয় তোমার…?
.
উনার কথায় চুপ হয়ে গেলাম আমি।সত্যিই তো কেউ আমার মুখ ও দেখতে চায় না।তাহলে আমাকে থাকতে দেবে কেন..?কোথায় যাবো আমি…?কে বিশ্বাস জরবে আমায়…?
.
কি চুপ হয়ে গেলে যে…!
.
আপনি আমার সাথে কেন এটা করলেন..?আপনিও খুব ভালো করে জানেন ভালোবাসা তো দূর আমি আপনাকে চিনিই না।তাহলে সবাইকে এটা কেন বিশ্বাস করালেন আমি আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি…?
.
সব কথার উওর হয় না!সব কথার উওর দেওয়ার সঠিক সময়ও এখন নয়।সঠিক সময়ে সঠিক উওর পেয়ে যাবে।সময় হলে আমাকে প্রশ্ন না করেও উওর ঠিক পেয়ে যাবে তুমি।আর আমাকে ভালোবাসো না ঠিকই কোথাও না কোথাও মনের গহীনে কাউকে না কাউকে তো ঠিকই ভালোবাসো…!!
.
কি বললেন….!!
.
না তেমন কিছু না!যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
.
আমি যাবো না।আমি বাসায় যাবো!!
.
এই স্টপ!!ভালোভাবে বললে শুনতে পাও না।তুমি কোথাও যাচ্ছ না।আজ থেকে এটাই তোমার বাসা তুমি এখানেই থাকবে।চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।আর যদি খেতে ইচ্ছে না করে তাহলেও ঘুমিয়ে পড়ো।
.
আমার উপর জোর…..
.
হুশশ!!নো কথা বার্তা ওকে।যা বলছি তা চুপচাপ করো।আমাকে হিংস্র হতে বাধ্য করো না।তাহলে কেঁদেও কুল-কিনারা পাবে না।
.
চিৎকার করে বলে উঠলাম আমি… আর কতটা হিংস্র হবেন আপনি…?আপনার মনে হয় আপনি হিংস্র নন।কি ভাবছেন আপনি আমার বাবাকে আটকে আমাকে বিয়ে করলেই স্বামীর অধিকার সম্মান পেয়ে যাবেন।কিছুতেই পাবেন না।
.
তোমার মতো মেয়ের কাছ থেকে আমি না তো স্বামীর অধিকার চাই আর না তো ভালোবাসা।কিচ্ছু চাই না আমার।কারণ আমাকে দেওয়ার কোনো এভিলিটিই তোমার নেই।তোমার মতো মেয়ের কাছ থেকে কোনো এক্সপেকটেশনও নেই আমার।সো এসব স্বামী অধিকার তুমি আমায় কি দেবে আমিই তোমাকে স্ত্রী হিসাবে মানিনা।
.
কিহ! তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেন..?কেন আমার জীবনটাকে নষ্ট করেছেন…?যাকে স্ত্রী হিসাবে মানতে পারবেন না তাকে বিয়ে করলেন কেন…? তাও বিপরীত দিকের মানুষটার অমতে।
.
এতসব তোমার মোটা মাথায় ডুকবে না।তাই তোমার মোটা মাথায় এত প্রেশার না দিয়ে চুপ করো।বকবক করে আমার মাথা খেও না।সময় হলে সবই জানতে পারবে।আর শোন এখান থেকে পালানোর বৃথা চেষ্টা করো না।কারণ পালাতে পারবে না উল্টে আমাকে চটাবে।আর আমাকে চটালে তোমার ফ্যামিলির যে কারো লাইফ রিস্কে থাকবে।হতে পারে সে তোমার বাবা-মা কিংবা ভাই।
.
আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো বলেই উনার গলা চেপে ধরলাম আমি।আর সহ্য হচ্ছে না আমার।আমার লাইফ নষ্ট করেও সাধ মিটেনি এখন আমার ফ্যামিলির পেছনে পড়েছেন লজ্জা করে না আপনার।
.
এক ঝটকায় হাত সরিয়ে আমাকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নিলেন উনি।কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন….এই মেয়ে খুব চটাং চটাং কথা বলতে জানো।”লজ্জা” এটা আমার কেন করবে তোমার লজ্জা করে না।আগে নিজেকে দেখ তারপর আমাকে বলো।এই তুমি আর তোমার বাবা যা করেছো তার তুলনায় কিছুই করিনি আমি।এখন তোমাকে সম্মান দিচ্ছি পাঁচ জনে পাঁচটা কথা বলার আগে নিজের ওয়াইফের মর্যাদা দিয়েছি যেখানে তোমার মতো মেয়ে কোনোভাবে যোগ্যই নয় আমার আর আমার বাড়ির।তবুও মেনে নিয়েছি আরে অকৃতজ্ঞ আমার কাছে এরজন্য তোমার কৃতজ্ঞ থাকার কথা আর তুমি কিনা উল্টো সুরে গান ধরেছো…?হায়রে মানবজাতি!
.
যোগ্য নয় তো অযোগ্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছেন কেন…?আমাকে বিয়ে করার জন্য কে আপনাকে মাথার দিব্যি দিয়েছে..?আর কি বললেন….বাবা কি করেছে আর আমি কি করেছি…?
.
এই কথাগুলো শুনেও না শোনার ভান করে “শুরু হইছে পাগলের প্রলাপ” বলে শিষ দিতে দিতে উপরে চলে গেলেন উনি।ড্রয়িংরুমের মেঝেতে বসে কেঁদে চলেছি আমি।আজ না নিজের আম্মু আমাকে বিশ্বাস করছেন আর না করবেন আব্বু।এই একটা লোক আমার পুরো জীবনটা তছনছ করে দিলো।একে একে আমার থেকে কেড়ে নিলো সব আপনজনদের আমার।উনাকে কিছুতেই ছাড়বো না আমি।পালাতে না পারি জ্বালাতে তো ঠিকই পারি।
.
.
#চলবে…..🥀
তোমায় ঘিরে পর্ব-০১
#তোমায়_ঘিরে🥀
#সূচনা_পর্ব
#Labiba_Islam_Roja
তোকে আমি খুন করে ফেলবো তবুও অন্য কারো বউ হতে দেব না।জানিস তোর লাশও আমার সহ্য হবে কিন্তু তুই অন্য কারোর বউ এটা আমি সহ্য করতে পারবো না।বিয়ে করার খুব শখ তোর তাই না।আজ তোর বিয়ের শখ মিটাচ্ছি আমি। আমার থেকে বড়লোক ছেলে পেয়ে দেই দেই করে নাচতে নাচতে বিয়ের পিড়িতে বসে পড়লি হুহ।অন্ধকারে নিমজ্জিত ঘরের এক কোণে মেহরীমার গলায় ছুরি তাক করে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ।চোখ দুটো বড় বড় রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে তার।ওকে দেখলে এখন যে কেউ পাগলের তকমা অনায়াসেই লেপ্টে দেবে ওর গায়ে।কিন্তু ওর কি যায় আসে তাতে।
.
কিসব যা তা বলছেন…?(চিৎকার করে)ছাড়ুন আমাকে।কে আপনি….?আর আমাকে এখানে এভাবে তুলে নিয়ে এসেছেন কেন….?
.
ওহহ!!ডার্লিং আর কত নাটক করবে তুমি।এখন আমাকে তুমি চিনতেই পারছো না।আমি আরাভ!!তোমার ভালোবাসা!!শয়তানি হাসি দিয়ে আমি তোমার জান আবির আরাভ!!
.
ফালতু না বকে আমাকে ছেড়ে দিন।আমি কোনো আরাভ টারাভকে চিনিনা।আর ভালোবাসা সে তো অনেক দূর।দেখে তো পাগল ছাড়া কিচ্ছু মনেও হচ্ছে না।পাগলামি করতে হলে রাস্তায় গিয়ে করুন।এখানে না কারণ এটা পাগলামি করার জায়গা নয়।আমাকে যেতে দিন।বাসায় সবাই আমার জন্য ওয়েট করছে।
.
এই চপপপ!!একটাও কথা বলবি না।আর কোন কথা বললে এক্ষুনি গলা কেটে রেখে দেব।আর নিঃশ্বাস ও নিতে পারবি না।আমার কাছে বেইমানীর একমাএ শাস্তি হলো “মৃত্যু”।কিন্তু আফসোস তোর মতো বেইমানকে মৃত্যু উপহার দিতে পারছিনা কারণ…..
.
বেইমানী!!মানে আমি কখন আপনার সাথে বেইমানী করলাম।আরে বাবা আমি বলছি তো আমি আপনাকে চিনিনা।আজকের আগে কখনো আমি আপনাকে দেখিওনি তাহলে বেইমানী কথাটা আসলো কোথা থেকে।দেখুন হাত জোর করে বলছি(চোখের পানি ফেলে) আমাকে যেতে দিন।আজকে আমার বিয়ে দেখুন(নিজেকে দেখিয়ে) কত সুন্দর করে সেজেছি আমি।আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।এখন যদি আমি বাসায় না পৌঁছাই তাহলে সবাই ভাববে আমি পালিয়ে গেছি।আর সেজন্য আমার বাবা মাকে ছোট বড় অনেক কথা শুনতে হবে।আমার বাবার উঁচু মাথা নিচু হয়ে যাবে।আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি তাহলে কেন এমন করছেন।কাঁদতে কাঁদতে হাত জোর করে প্লিজ যেতে দিন আমায়।
.
আমার কোনো ক্ষতি করো নি….সিরিয়াসলি!!এই মেয়ে শোন তুমি আমার যতটা ক্ষতি করছো ততটা ক্ষতি এই দুনিয়ার কেউ কোনোদিন করেনি আর করার সাহসও দেখায়নি।চুপচাপ বসে থাকো (ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে)একটু পর তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে।সেই প্রস্তুতি নাও।আর হ্যাঁ আমি কোনো ভিখারি নই তোমাকে খাওয়ানোর মতো সামর্থ্য আমার আছে।আর যাকে বিয়ে করতে বসেছিলে তার থেকে ভালো আর্থিক অবস্থানেও আছি।খাওয়া পড়ার কোনো অভাব হবে না। সো নো টেনশন ওকে বেবি।(চোখ টিপে)
.
আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।আমার বাবার ঠিক করা ছেলে রাফির সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।বিয়ে করলে ওকেই করবে নইলে কাউকে নয়।আর ধনদৌলত দিয়ে আমি কাউকে জাজ করিনা।হতে পারে রাফি আপনার থেকে গরীব কিন্তু মানুষ হিসেবে খাঁটি হীরে।
.
কি বললি আবার বল…!কাকে বিয়ে করবি….?(চোখ গরম করে)
.
ররাফ…..হুসসস!!একদম চুপ আর কোনোদিন এই নাম মুখেও আনবি না।শোন আজ থেকে আমি হলাম তোর জীবনের সব থেকে বড় সত্যি।হীরে আর কাঁচ খুব সহজে কেউ চিনতে পারে না।যেমন তুমিও পারো না।কোনটা কাঁচ আর কোনটা হীরে সেটা বুঝার মতো বোধ-বুদ্ধি এখনও হয়নি তোমার।যাগগে ১০ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসো কারণ একটু পরে আমাদের বিয়ে হবে।(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)
.
আমার কথা কি আপনার কানে যাচ্ছে না।আমি আপনাকে বিয়ে করবো নাআআআআ!!কেন আপনাকে বিয়ে করবো আমি।চিনিনা জানিনা কোনোদিন দেখিনি।আমাকে তুলে আনলেন আর আমি আপনাকে বিয়ে করে নিলাম এটা কি হয় নাকি…?আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।আমি এখান থেকে পালাবো হুম এক্ষুণি পালাবো।
.
অহহ রিয়েলি!!ওকে তাহলে পালাও।আমিও দেখি আরাভের কাছ থেকে পালিয়ে তুমি কোথায় আর কতদূর যেতে পারো।
.
চ্যালেঞ্জ করছেন আমাকে…?
.
তোমার যা ইচ্ছে তাই ভাবো…!!তোমার সাথে বকবক করে মাথা ধরে গেলো এখন বিয়েটা মিটলেই ঘুমিয়ে পড়বো।আজ অনেক দখল গেছে আমার উপর দিয়ে।তুমি ফ্রেশ হও আমি আসছি আর হুম পারলে পালিয়ে দেখিও ওকে বাই।সী ইউ এগেইন নিউ বউ।আরে বাহ!!কি সুন্দর নাম দিলাম তোমায় “নিউ বউ”/আই মিন “নতুন বউ”🤣
.
রুম লক করে বাইরে বেড়িয়ে গেলো লোকটা।এই সুযোগ পালানোর।এদিক ওদিক পালানোর রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত আমি।কিন্তু কিছুতেই কোনো রাস্তা পাচ্ছি না।রুমের মধ্যে একটাই জানালা তাও ভাঙ্গা যাবে না।তাহলে পালাবো কি করে….?আচ্ছা লোকটা কে..? কেন আমার সাথে এমন করছে…?কি করেছি আমি…?যাগগে এখন এত ভেবে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।আগে পালাই তারপর ভাববো…!!ওহহ আপনাদের বলাই হয়নি আমি মেহরীমা নূর।আমার বাবার দুই নয়নের মণি।আমার বড় একটা ভাইয়া আছে।যে ২৪ ঘন্টাই আমার পেছনে লাগে আর ঝগড়া করে বেড়ায়।পারিবারিকভাবেই আজ রাফির সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।আমিও মনের আনন্দে সেজেগুজে নিজ রুমে বসে ছিলাম তখনই এই আরাভ না টারাভ গিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে এখানে নিয়ে আসে।তারপরের ঘটনা তো আপনাদের জানাই আছে।
.
.
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই দরজার এক কোণে লুকিয়ে পড়লাম আমি।লোকটা দুজন লোককে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দৌড়ে রুম থেকে বের হতে যাবো তখনই খপ করে আমার হাত ধরে নিলো বজ্জাত টা।
.
উফফ ডার্লিং!!এত ছটফট করো কেন তুমি।এত ছটফট করো না।তোমার লেগে যাবে তো।
.
লাগলে লাগুক তাতে আপনার কি…?প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।কেন আমার এমন সর্বনাশ করছেন…?কি করেছি আমি…?
.
সর্বনাশ ধুর বোকা মেয়ে!!আমি তো তোমায় সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচাচ্ছি।কোথায় আমায় ধন্যবাদ দেবে তা না উল্টে আমায় দোষারোপ করছো।আচ্ছা বাদ দাও কাজী এসে গেছে চলো আমরা বিয়ে করবো।
.
নাআআআ!!আমি বিয়ে করবো না।
.
এই চুপ!!একদম চিৎকার করবি না।বিয়ে তো তোকে করতেই হবে।এই দেখ বলে ফোনে একটা ভিডিও প্লে করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন উনি।ভিডিও টা দেখে আতকে উঠলাম আমি।বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো বলে উঠলাম….না এ হতে পারে না।আমার বাবার এই অবস্থা কেন…?
.
তোমার বাবাকে আমার লোকেরা আটকে রেখেছে।যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি আমায় বিয়ে করছো ততক্ষণ তোমার বাবা ওখানে হাত পা বাধা অজ্ঞান অবস্থায় এভাবেই আটকে থাকবে আর যদি বিয়ে কমপ্লিট হয়ে যায় তাহলে ছাড়া পাবে আর যদি না হয় তাহলে হুশশশ করে উপরে চলে যাবে।
.
না না না এটা হতে পারে না।আপনি আমার বাবাকে ছেড়ে দিন।কিচ্ছু করবেন না উনার।
.
তার মানে তুমি রাজি…?
.
না আমি বিয়ে করবো না।
.
তাহলে ওখানে তোমার বাবার লাশ পড়বে।
.
না আপনি কিচ্ছু করবেন না।আমার বাবার কিচ্ছু হবে না।
.
তুমি বিয়েও করবে না।তোমার বাবাও মরবে না তা কি হয় খুকি।যে-কোনো একটা বেচে নাও।হয় সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার লাশ নয় লাল বেনারসি।এবার বল কোনটা মানবে তুমি…!!
.
কিছুক্ষণ ভেবে কোনো উপায় নেই আমার কাছে।চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরছে আমার।আমার যাইহোক না কেন বাবাকে বাঁচাতে হবে আমায়। বাবার জন্য না হয় আজ নিজের জীবনকে বিসর্জন দিলাম আমি।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দু-চোখ মুছে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠলাম…. আমি রাজি…!!
.
এই তো গুড গার্ল…!!কাজী সাহেব বিয়ে শুরু করেন।রামীম এদিকে আয় তো।সাথে শ্যামলা একটা ইয়াং ছেলে রুমে প্রবেশ করলো।তুই আমাদের বিয়ের সাক্ষী।
.
কিছুক্ষণেই সস্পন্ন হয়ে গেলো আমার বিয়ে।হ্যাঁ বিয়ে….যে বিয়ে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি।কিন্তু তার কিছুই পূরণ হলো না আজ।যাকে বিয়ে করেছি তাকেই চিনিনা আমি।কি আজব না আমার পরিণতি।
.
অন্ধকার রুম থেকে আমাকে নিয়ে বের হলেন উনি।বাড়িটা বেশ বড়।আশেপাশে নানা ধরণের ইয়া বড় বড় ওয়াল মেট ঝুলছে দেয়ালে দেয়ালে।সাদা আর লাল কম্বিনেশনে রং বেশ লাগছে।আমি যেখানে ছিলাম তার পাশেই ড্রয়িংরুম।আমাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দাঁড়ালেন উনি।বাড়িতে আর কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না আমার।হঠাৎ কিছু একটার শব্দে চমকে উঠলাম…..পেছনে তাকিয়েই অবাকের সপ্তম আকাশে পৌছালাম আমি…..!!
.
চলবে
ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব
#ভালোবাসি_ভালোবাসা♥️
#Written_by_Liza_moni
#অন্তিম_পর্ব
_____
পরের দিন সন্ধ্যায় সাদাফ তার মা বাবাকে নিয়ে হিয়াদের বাড়িতে আসে।একে বারেই আকাদ করে ফেলতে চান তারা। মা বাবাকে রাজি করাতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল সাদাফের।দিত্বীয় বার অপমান হতে চান না তারা।সাদাফের কাছ থেকে সব শুনে শেষে রাজি হোন এই বিয়েতে।
আনহা হিয়া কে একটা লাল শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়।সাদাফের সামনে বসে আছে হিয়া।হিয়া একবার সাদাফের দিকে তাকায়। সাথে সাথে সাদাফ চোখ মেরে দিল। হিয়া লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেলল। আংটি পরানো পর্ব শেষ হলে হিয়া কে রুমে নিয়ে যায় আনহা।
.
যে গরম পড়ছে।এই শাড়ি পরে আর কিছুক্ষণ থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবো।
.
আপু তুই শাড়িটা বদলে চুরিদার পড়ে নে। আমি আসছি।
.
হিয়া ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। মনটা আজ তার অনেক ভালো। শেষ মেষ ভালোবাসার মানুষটিকে তো পেলো।
.
ডিনার করে সাদাফ রা বাড়িতে চলে গেল। সামনের মাসের ৩ তারিখে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
.
বাড়িতে গিয়ে সাদাফ হিয়া কে ফোন করে। দুই বার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে হিয়া।
.
কি করো হিয়ু পাখি?
.
বারান্দা দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছি।
.
আজ চাঁদটা কিন্তু অনেক সুন্দর তাই না হিয়ু পাখি?
.
হুম।কি করেন?
.
আমার বউএর সাথে প্রেম করছি।
.
তাই নাকি?
.
হুম।
.
.
সময় তার নিজের গতিতে এগিয়ে যায়।কারো জন্য থেমে থাকে না। দিব্বি নিজের মতো করে বয়ে যায়।
দেখতে দেখতে সাদাফ আর হিয়ার বিয়ের দিন চলে এলো।এই কয়েক দিন চুটিয়ে প্রেম করেছে সাদাফ আর হিয়া।
.
আজ হিয়ার গায়ে হলুদ। সারা বাড়িতে আত্নীয় স্বজন গিজ গিজ করছে।হিয়ার খুব ভয় হচ্ছে। আমানের মতো যেন সাদাফের সাথে ওমন না হয়। খুব করে আল্লাহ কে ডাকছে হিয়া।
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলে রুমে চলে আসে হিয়া। রুমের দরজা খুলে দেখে ভেতরে অন্ধকার।লাইট অন করতে গেলেই কে যেন হিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে তার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে।হিয়া তো ভয়ে শেষ।কে বলে চিৎকার করতে যাবে তখন ঐ ব্যাক্তি হিয়ার মুখে হাত দিয়ে কানে কানে বলল
.
আরে ভয় পাচ্ছো কেন? আমি তো।
.
সাদাফের কন্ঠস্বর শুনে হিয়া চুপ হয়ে গেল।এত রাতে আপনি এখানে কী করেন?কেউ দেখলে কী ভাববে বলেন তো?
.
সাদাফ আলো জ্বেলে দরজা বন্ধ করে দেয়।হিয়ার দিকে এক পা এক পা এগিয়ে যেতে যেতে বলল কে কি বলবে আমার বউ এর কাছে আমি যখন ইচ্ছা আসবো।
.
হিয়া পিছিয়ে যেতে যেতে বলল এখন ও আপনার বউ হয়নি।হলে তারপর বলিয়েন।সাদাফ হিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে একটানে কাছে নিয়ে আসলো। হিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাদাফ পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো হলুদ বের করে তা হিয়ার মুখে লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল।
.
হিয়া চোখ মেলে কোথাও সাদাফ কে দেখতে পেল না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসলো হিয়া।
.
সাদাফ আর হিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
.
ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে আছে হিয়া।রাত তখন প্রায় ১২টা বাজছে। খুব ক্লান্ত লাগছে হিয়ার।
বন্ধুদের ঘুষ দিয়ে ১২টা ৪৩ এর দিকে রুমে আসে সাদাফ।সাদাফ কে আসতে দেখে কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো হিয়ার।হার্ট বিট বাড়তে লাগলো।
.
সাদাফ দরজা বন্ধ করে হিয়ার দিকে এগিয়ে এসে বলে যাও আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।
হিয়া এক মুহূর্তও দেরি করলো না। সুইট কেস থেকে একটা হালকা আকাশি রঙের শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।
.
হিয়া ফ্রেশ হয়ে আসলে সাদাফ যায় ফ্রেশ হতে।সাদাফ ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে দেখে হিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে।সাদাফ হিয়া কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল
.
কী মেডাম আজ বাসর হবে তো নাকি ঐ দিনের মত বলবা
.
সাদাফ ভাই এই বাসর হবে না। আমি এই বাসর করতে পারবো না। আপনি অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করেন।
সাদাফের কথায় ভীষণ লজ্জা পেল হিয়া।সাদাফের বুকে মুখ গুজে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। ওরে আমার লজ্জা বতী।
.
.
🍁সমাপ্ত 🍁
ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০৬
#ভালোবাসি_ভালোবাসা♥️
#written_by_Liza_moni
#part_6
রেস্টুরেন্টে সাদাফের সামনে বসে আছে হিয়া। অনেক কষ্টে সাদাফ হিয়া কে রাজি করিয়েছে দেখা করার জন্য। হিয়া মাথা নিচু করে হাতের নখ খুঁটছে।
.
এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কারণ কি হিয়া?
.
হিয়া একবার সাদাফের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।
.
কিছু বলছো না কেন?
.
কী বলবো?
.
শুনেন মিস রাওজামিনি হিয়া, আমি গতকাল রাতে আপনার ডায়রিটা দেখেছি।
.
কথাটা শুনে হিয়া পারছে না দৌড়ে চলে যেতে।কী আপনি জানেন না মানুষের পার্সোনাল ডায়রি দেখতে নেই?
.
হুম জানি তো। আমি তো শুধু একটা পেজের দুটো বাক্য দেখেছি।
.
হিয়া বুঝতে পারছে সাদাফ কোন লেখাটা দেখতে পেয়েছে।
.
তুমি ও তো আমায় ভালোবাসো হিয়া তাহলে কেন এই বিয়ে করছো না তুমি?হিয়ার ডান হাতটা আলতো করে ধরে বলে সাদাফ।
.
আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না সাদাফ ভাই। শান্ত কন্ঠে বলল হিয়া।
.
কে বললো হুম যে আমি তোমায় ভালোবাসি না?
.
তার মানে আপনি ও আমায় ভালোবাসেন? খুশিতে হিয়ার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো।
.
জী ম্যাডাম। ভালোবাসি আমার ভালোবাসাকে।
.
হিয়ার খুশি যেন আকাশ সমান। এত্ত ভালো লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।এত দিন চাতক পাখির মতো এই একটা কথা শুনার জন্য বসে ছিল।আজ তা পূরণ হলো। ভাবতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে হিয়া।
.
তোমাকে কেউ থ্রেট দিচ্ছে সে কথা কাউকে বলোনি কেন তুমি?
.
মানে
.
সাদাফ পকেট থেকে সেই কাগজটা বের করে হিয়ার সামনে ধরল। কাগজটা সাদাফের হাতে দেখে কলিজা শুকিয়ে গেছে হিয়ার।
তোতলাতে তোতলাতে বললো,,
.
আপনি এই কাগজটা কোথায় পাইলেন?
.
তোমার ডায়রি থেকে পড়ে গিয়েছিল। তখনই পেয়েছি।
এখন বলো এই সব কে দিয়েছে তোমাকে?
.
ঐ দিন সকালে আমি ফজরের নামাজ পড়ে একটু হাঁটতে বের হয়েছিলাম। তখন কোথা থেকে যেন এই কাগজটা এসে আমার গায়ে পড়েছিল।আসে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাইনি।
.
আমাদের বলোনি কেন?
.
আসলে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
.
আমার সাথে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কারণ?
.
যে দিন আপনারা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন আংটি পরাতে যাবেন আর তখন আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে।
.
কীসের মেসেজ?
.
হিয়া ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে মেসেজটা সাদাফ কে দেখায়।
.
মেসেজটা পড়ে বলে ও এই কারন। ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তুমি ভিডিওটা দেখছো?
.
কিসের ভিডিও?
.
একটা লোক একটা মেয়ের ওড়না কেড়ে নিয়ে মেয়েটার জামা ছিঁড়ে দিয়ে ছিল এমন টাইপের একটা ভিডিও।
.
হ্যাঁ সকালে রিয়ান ভাইয়ার ফোনে দেখেছিলাম।
.
এই ভিডিওটি আমি করেছিলাম। কিন্তু আমি এটা পোস্ট করিনি।
.
তাহলে? হয়তো অন্য কেউ ভিডিও করেছিল আর ভাইরাল ও করেছে।
.
হুম হতে পারে। তোমায় যে এই কাগজ আর মেসেজ গুলো করেছে সে দেখেছিলো আমাকে ভিডিও করতে।সে হলো ঐ ভিডিওটির সেই অশ্লীল বেয়াদব লোকটা।যার জন্য তাকে পুলিশে গ্রেফতার করেছিল।
সে হয় ভাবছে আমিই ওকে জেলে দিয়েছি।
.
ওহ আল্লাহ। এই লোকটা আপনার পরিচিত?
.
হ্যাঁ। শুধু আমার না রিয়ান ও চিনে ওকে।সায়মান নাম তার। খুব খারাপ একটা লোক।মেয়ে খোর।আমানদের এক্সিডেন্টটা ও করছে।
.
ছি এত বাজে মানুষ ও আছে পৃথিবীতে।আমান ওর কি ক্ষতি করছে যে ও তিন টা নির্দোষ মানুষকে খুন করে ফেললো।
.
আমি ও তাই ভাবছি। আচ্ছা চলো তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। অনেক বেলা হয়ে গেছে।
.
আচ্ছা।
.
সাদাফ হিয়া কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
হিয়া রুমে এসে গোসল করার জন্য ওয়াস রুমে চলে গেল।
.
.
বাড়িতে এসে সাদাফ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ঠিক তখনই সাদাফের ফোন বেজে ওঠে।পেন্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে আরিফ কল দিয়েছে।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরিফ বলে উঠে,,
.
আজ অফিসে আসেন নি কেন সাদাফ ভাই?
.
আজ একটা কাজ ছিল তাই বসের থেকে ছুটি নিয়েছি।
.
ওহ আচ্ছা।যেটার জন্য কল দিছি,,সায়মান আছে না ওকে নাকি পুলিশ ওর আস্তানা থেকে আবার গ্রেফতার করেছে।
.
কী বলেন? আমি এখনই আসছি।
সাদাফ কল কেটে দিয়ে রিয়ানকে কল দেয়।
রিয়ান ফোন ধরতেই সাদাফ বলে তৈরি হয়ে নে।আজ একটা টুর্নামেন্ট খেলা হবে। আমি আসছি। রিয়ানকে কিছু বলতে না দিয়েই সাদাফ কল কেটে দেয়।বাইক নিয়ে আবার রিয়ানদের বাসার দিকে রওনা হয়।
রাস্তার পাশেই রিয়ানকে দেখতে পেল সাদাফ।
.
বাইকে বস।
.
রিয়ান বাইকে বসে সাদাফ কে জিগ্যেস করে কী হয়েছে?
.
সাদাফ রিয়ানকে সব বললে রাগে রিয়ানের কপালের রগ ফুলে উঠে। এখন যদি সায়মান কে রিয়ান সামনে পেত তাহলে কেটে কুচি কুচি করে ফেলতো।
সাদাফ পুলিশ স্টেশনের সামনে বাইক থামায়।বাইক থেকে নেমে তারা এসিপির সাথে দেখা করতে ভেতরে যায়।
.
আরে সাদাফ মে,কি অবস্থা আপনার?
.
এই তো ভাই আছি। শুনলাম সায়মান কে নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে?
.
হ্যাঁ। কিছু দিন আগে বর যাত্রীর গাড়িতে ধাক্কা মারে যার ফলে ঐ গাড়িতে থাকা যাত্রীরা মারা যায়।
.
হুম সে বর যাত্রী আমার বোনের ছিল।
.
ওহ মাই গড।কি বলেন?
.
আচ্ছা আমরা কি সায়মানের সাথে দেখা করতে পারি?
.
হ্যাঁ অবশ্যই। আসুন আমর সাথে। এসিপির পেছন পেছন সাদাফ আর রিয়ান ও যায়।
.
কি অবস্থা আমার প্রান প্রিয় বন্ধু?সাদাফের ঠাট্টার ছলে বলা কথায় পিছন ফিরে তাকায় সায়মান। চোখ থেকে তার আগুন ঝড়ছে।লাল টুকটুকে হয়ে আছে তার চোখ।
.
তুই কত্ত বড় বোকারে সায়মান।আমায় কষ্ট দিতে গিয়ে তুই আমাকে সুখের রাজ্যে নিয়ে গেলি?
.
চোখ কটমট করে তাকায় সায়মান।
.
আমার সাথে লাগতে এসিছিলি সাদাফ এর ফল খুব খারাপ হবে।
.
আরে রাখ তোর ফল খারাপ হওয়ার কথা। শালা মন চাচ্ছে তোকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে।রাগছ গজগজ করতে করতে বলল রিয়ান।
.
শুন সায়মান আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে তুই শুধুই আমানদের মারলি।আমানরে যদি না মারতি তাহলে হিয়া কে না পাওয়ার যন্ত্রনায় আমি এমনি মরে যেতাম। কিন্তু দেখ আমানকে মেরে তুই সারা জীবনের মতো হিয়াকে আমার করে দিলি।শুন এর পর লাগতে আসলে একটু ভেবে চিন্তে লাগতে আসিস।জেলের মধ্যে ভালো থাক।শুভ কামনা রইলো।আসি।
আল্লাহ হাফেজ।
বলে সাদাফ আর রিয়ান পুলিশ স্টেশন থেকে বাড়িতে চলে আসে।
.
.
বাড়িতে এসে রিয়ান সবাইকে সব বলে সায়মানের কথা।
.
বেয়াদব লোক একটা।আর যেন জেল থেকে বের না হতে পারে। বলে হিয়া নিজের রুমে চলে গেল।
.
.
.
রাত তখন প্রায় দশটা বাজে।সাদাফ হিয়া কে ফোন দেয়।
হিয়া ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সাদাফ বলে উঠে,,
কী মেম এখন তো কোনো বাধা নেই, এখন কী আমাকে বিয়েটা করা যাবে?আর সিঙ্গেল থাকতে ইচ্ছে করে না তো।
.
সাদাফের কথায় হিয়া লজ্জা পেয়ে বলল ঘুম পাচ্ছে রাখি।
.
আরে লজ্জা পেয়ে কল কেটে দেওয়ার কি আছে? বিয়েটা তাহলে হচ্ছে? আব্বু আম্মু কে নিয়ে কাল আসছি আপনার বাসায় মেম।
.
হিয়া কিছু বললো না।
সাদাফ বুঝে নিলো নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।
,
,
চলবে,,,,,,,
ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০৫
#ভালোবাসি_ভালোবাসা♥️
#written_by_Liza_Moni
#part_5
কফি হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার ব্যস্ত ঢাকা শহর দেখছে সাদাফ। চোখ তার সেদিকে তাকিয়ে থাকলেও মন আর মাথায় চলছে অন্য চিন্তা। গতকাল হিয়ার ওমন ব্যবহার করার কারন তার জানা নেই।
.
হিয়া আমানকে ভালোবাসে সে জন্যই কি ও কাল ওমন বিহেব করেছে? কিন্তু হিয়া যে বলে ছিল আম্মু আব্বু কে রাজি করাতে পারলে সে বিয়েতে কোনো অমত করবে না। তাহলে কালকে ওমন বিহেব করলো কেন? নাকি অন্য কিছু?ওর বিয়ে না করার পিছনে কি অন্য কোনো কারন আছে?
এই সবই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সাদাফের।
.
আগামী কাল হিয়ার সাথে দেখা করতে হবে। জানতে হবে আসলে হিয়ার কি হয়েছে?
.
.
বিছানায় শুয়ে ছিল হিয়া।ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে জীবনটা এত বে রঙিন কেন?
হিয়ার রুমে এসে মিসেস সাবিনা হিয়ার মাথার পাশে বসেন। আলতো হাতে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করলেন,,,
আমাকে বল না মা কি হয়েছে তোর? কেন তুই এই বিয়েটা ভেঙে দিলি?
.
মায়ের দিকে তাকিয়ে হিয়া উঠে বসে। মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হিয়া।
.
মিসেস সাবিনা উত্তরের অপেক্ষায় হিয়ার মুখের পানে চেয়ে রইলো।
.
হিয়া কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি রিয়ান হিয়ার রুমে প্রবেশ করে। উৎকন্ঠা গলায় বলে
.
মা আমানের বাবা ইকবাল আংকেল ফোন করেছিলেন। একটু আগেই আমান এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।
.
রিয়ানের কথা শুনে হিয়ার বুকের ভেতরটা মোচড়ে উঠে। চোখ থেকে আপনা আপনিই পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মিসেস সাবিনা হিয়া কে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন। আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে রিয়ানের উদ্দেশ্য বললেন
.
সাদাফ কে বলেছিস?
.
হুম বললো ও আসছে।
.
ওকে নিয়ে আমানের শেষ কাজটুকু করে আয়।
রিয়ান আর কিছু বললো না।একটু পরেই সাদাফ আসে রিয়ানদের বাসায়।চাতক পাখির মতো চোখ দুটো শুধু হিয়াকেই খুঁজছে। কিন্তু কোথাও হিয়া কে দেখলো না।
.
হিয়া ওর রুমে আছে।দেখা করবে?
মিসেস সাবিনার কথায় সাদাফ মাথা নাড়িয়ে না বললো।
.
আমানের দাফন সম্পন্ন হলে রিয়ানের সাথে আমাদের বাড়িতে আসি ও।
.
ঠিক আছে আন্টি।
রিয়ান আর আমান চলে গেল আমানদের বাড়িতে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে হিয়া। আমি তো কারো ক্ষতি করিনি আল্লাহ। তাহলে কেন এই নির্দোষ মানুষ গুলো এই ভাবে কষ্ট পাচ্ছে ? আমার সাথে কার কী শত্রুতা আছে? আমি কার কী ক্ষতি করেছি আল্লাহ?শতশত অভিযোগ করে যাচ্ছে হিয়া।
.
মিসেস সাবিনা হিয়ার রুমে এসে কোথাও হিয়া কে দেখতে না পেয়ে বেলকনিতে গেলেন। মেঝেতে বসে হিয়া কে কাঁদতে দেখে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে দিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,
.
আমাদের সবাইকেই এক দিন চলে যেতে হবে। বাস্তবতা মতই কঠিন হোক না কেন আমাদের তা মেনে নিতে হবে। তোর আব্বু যখন আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলেন আমরা কি পেরেছি তাকে ফিরিয়ে আনতে? এটা কখনো স্বম্ভব ও না। নিজেকে শক্ত করে মা।জিবন অনেক কঠিন। এই সবের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা কর।
.
আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আম্মু। আমার জন্য শুধু আমার জন্য আমান,জায়ান ভাইয়া ড্রাইবার আংকেল মারা গেছেন। আমি দায়ী। কেন আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম কেন আম্মু কেন?আজ আমার জন্য তাদের মায়ের কোল খালি হয়ে গেল। আমি কিভাবে নিজেকে শক্ত করবো বলো না আম্মু? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু। আমি এই জন্যই সাদাফ ভাইকে বিয়ে করতে চাই না আম্মু।আমানদের মতো যদি সাদাফ ভাইয়ের সাথে ও এমন হয়? তাহলে আমি মরে যাবো আম্মু।
.
মিসেস সাবিনা শক্ত করে বুকের মাঝে হিয়া কে জড়িয়ে ধরলেন।কি বলে মেয়েকে শান্তনা দিবেন সেই ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
.
.
রাত তখন প্রায় দশটা বাজে। আমানের দাফনের কাজ শেষ করে রিয়ানের সাথে রিয়ানদের বাসায় আসে সাদাফ।
.
হিয়া কোথায় আম্মু?
.
কাঁদতে কাঁদতে এই মাত্র ঘুমিয়েছে। শরবতের সাথে ঘুমের ওষুধ গুলে খাইছি বলে একটু ঘুমাচ্ছে।
.
রিয়ান আর কিছু বললো না। নিজের রুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল। মিসেস সাবিনা ও রান্না ঘরে খাবার গরম করতে চলে গেলেন।সাদাফ আস্তে আস্তে হিয়ার রুমে চলে যায়।লাইট অন করে হিয়ার মুখের দিকে তাকাতেই বুকের বাঁ পাশে চিনচিন করে উঠলো।এই দুই দিনে শরীরের কী অবস্থা হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। কতো দিন যেন ঘুমায় না।সাদাফ হিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে আসার সময় হিয়ার পাশে একটা নীল রঙের ডায়রি দেখতে পেল সাদাফ।ডায়রি টা নিতে গিয়ে হাত সরিয়ে নিলো। ইতস্তত করে আবার কি মনে করে যেন ডায়রিটা হাতে নিলো। মানুষের পার্সোনাল ডায়রি দেখতে নেই।ডাইরিটা রাখতে গেলে ডায়রিটা হাত থেকে পড়ে যায় সাদাফের।নিচু হয়ে ডায়রিটা তুলতে গেলে চোখে পড়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা
ভালোবাসি ভালোবাসা ♥️
তার নিচে ছোট্ট করে লেখা আমার সাদাফ আহমেদ। লেখাটা পড়ে সাদাফ বিষ্ময়ে কিং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে যায়।
বিড় বিড় করে বলতে থাকে হিয়া আমাকে ভালোবাসে। কথাটা ভাবতেই খুশিতে সাদাফের নাগিন ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে।ডায়রিটা তুলে রাখতে গেলে সেখান থেকে সেই কাগজের ভাঁজটা পড়ে যায় ফ্লোরে।সাদাফ নিচ থেকে কাগজটা তুলে নিয়ে কাগজের ভাঁজ খুলে সেই লেখাটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।
কাগজটা পকেটে ঢুকিয়ে ডায়রিটা জায়গায় রেখে লাইপ অফ করে সাদাফ হিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মিসেস সাবিনা খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলে সাদাফ এখন কিছু খাবে না বলে বাইক নিয়ে বাড়িতে চলে গেল।সাদাফের চলে যাওয়ার কারন আগা গোড়া কিছুই বুঝলেন না মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন।
.
.
বাড়িতে এসে সাদাফ কাগজটা পকেটে থেকে বের করে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে কাভার্ড থেকে টি শার্ট আর আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াস রুমে গোসল করতে চলে যায়।
.
ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে দেখে তার আম্মু বিছানায় বসে আছেন।
.
কিছু বলবা আম্মু?
.
হুম। হিয়া যখন বিয়েটা করছে না তখন অনিমা রং সাথেই তোর বিয়েটা হবে।
.
এসব কী বলছো তুমি?
.
মা বলছি একদম ঠিক বলছি। তোর আব্বু আজ অনিমার আব্বুর সাথে কথা বলেছে এ ব্যাপারে।
.
বাহ্ তোমরা তো দেখছি আমাকে না জানিয়ে অনেক দূরে এগিয়ে গেছো।শুনো আম্মু আমি হিয়া কে ভালোবাসি।যদি বিয়ে করতেই হয় তবে আমি হিয়াকেই করবো।
.
ঐ মেয়েটা কীভাবে গতকাল অপমান করছে দেখিস নি তুই?সবার মুখের উপরে বলেছে এই বিয়ে হবে না। তারপরও তুই এসব বলছিস?
.
আমি হিয়া কে চিনি আম্মু। হিয়া এমনি এমনি ঐ কাজ করেনি। কিছু একটা আছে ওর এই কাজ করার পেছনে।
.
ওহ মায়ের থেকে ঐ মেয়ের দাম বেশি হয়ে গেছে তাহলে। ভালো।
খেতে আয় বলে
মিসেস ফাহমিদা সাদাফের রুম থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর সাদাফ খাবার খেতে যায়।
.
আব্বু কৈ আম্মু?
.
খেয়ে ঘুমাতে গেছেন।
.
সাদাফ আর কিছু বললো না। চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল। বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল নিয়ে কিছুক্ষণ ফেসবুকের নিউজ ফিডে স্ক্রল করলো। হঠাৎ তার চোখে একটা ভিডিও ভেসে উঠলো।
ভিডিওটা মন দিয়ে দেখে সাদাফ তার অফিসের কলিগ আরিফকে কল দিল।
আরিফ কল ধরতেই সাদাফ জিগ্যেস করলো,,
.
কেমন আছেন আরিফ ভাই?
.
এই তো ভালো। আপনি?
.
হুম আছি এক রকম।
সায়মানের সেই ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে।
.
হুম আমি ও দেখছি। এই ভিডিওটার জন্য সায়মান কে পুলিশে গ্রেফতার করে ছিল।
.
হুম করারি কথা।এত বেয়াদব কোনো পুরুষ হয়?ভরা রাস্তায় একটা মেয়ের গায়ের ওড়না টেনে নিয়ে আবার তার জামা ও ছিঁড়ে দেয়।
মনে পড়লে ইচ্ছা করে মাটিতে পুঁতে ফেলি ঐ মেয়ে খোর টাকে।
.
শুধু মেয়ে খোরি না ঐ সায়মান মানুষ ও খুন করতে একবার ও ভাবে না। কিছু দিন একটা খবর শুনলাম সাদাফ ভাই।
.
কী খবর?
.
ঐ সায়মান নাকি কিছু দিন আগে গাড়ি দিয়ে কোন বর যাত্রীর গাড়িতে মারাত্মক ভাবে ধাক্কা দিয়েছে।তার ফলে বরং যাত্রীর গাড়িটা উল্টে গিয়েছিল।ড্রায়বার তো ঘটনা স্থলেই মারা যায়।
.
সাদাফের কাছে এখন সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
কি করে জানলেন আপনি?
.
ঐ শিহাব আছে না আমাদের অফিসের পিয়ন।ও নাকি দেখেছে যে গাড়িটা ধাক্কা দিয়েছে সেখানে সায়মান কে দেখেছে।
.
ওহ। আচ্ছা আরিফ ভাই রাখি। ঘুম পাচ্ছে। সকালে অফিসে কথা হবে।সাদাফ কল কেটে দিল।
.
সায়মান আমানকে মারতে গেলো কেন? আমানের সাথে ওর কিসের শত্রুতা? একটা মানুষ কতোটা নিচ হলে মানুষ খুন করে ছি,,,,,
.
চলবে,,,,,,,,
ভালোবাসি ভালোভাসা পর্ব-০৪
#ভালোবাসি_ভালোভাসা ♥️
#written_by_Liza_Moni
#part_4
সেদিন সন্ধ্যায় সাদাফ তার মা বাবাকে নিয়ে হিয়াদের বাড়িতে যায়। হিয়া ছাদে বসে ছিল।আনহা এসে বলে
.
হিয়াপু সাদাফ ভাই তার আব্বু আম্মু কে নিয়ে আসছে।ফুফু মনি বললো তোমার বিছানার উপরে শাড়ি রেখে আসছে পড়ে নিতে।
.
ওনারা এখন কোথায়?
.
ড্রইং রুমে ফুফু মনি আর রিয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বলছে।
.
আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
আনহা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল।
.
সাদাফ ভাই তাহলে সত্যি বিয়েটা করছেন। কিন্তু তিনি তো আমায় ভালোই বাসেন না। তবে কী দয়া দেখাচ্ছে আমাকে?
.
হিয়া নিজের রুমে গিয়ে বিছানার উপরে কালো রঙের একটা শাড়ি রাখা দেখলো।ওয়াস রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সে শাড়িটা পরে তৈরি হয়ে নিলো।
হিয়া মেয়েটা দেখতে ফকফকা ফর্সা না। তবে ফর্সাদের তালিকায় পড়ে।কালো রঙের শাড়িতে হিয়াকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি।কালো পাথরের ঝুমকা। কোমর অবধি চুল গুলো ছাড়া।
.
.
হিয়া কে আমার আগে থেকেই পছন্দ ছিল। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য সাদাফ কে বললে ও জানায় হিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আগে থেকেই। বললেন সাদাফের আম্মুর কথায় মুচকি হাসলেন মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন।
.
আল্লাহর ইচ্ছায় সেই সাদাফের সাথেই বিয়েটা হবে। ওরা দুজন দুজনের জন্যই এসেছে দুনিয়ায়।তাই তো এত কিছুর পরেও ওদের মিল হচ্ছে ।বললেন সাদাফের আব্বু।
.
কীরে শালা,উপস সরি এখন থেকে তো তুই আমার বোনের জামাই হবি। তোরে আর শালা ডাকা যাবেই না।রিয়ানের কথা শুনে সাদাফ মুচকি হাসলো।
.
থেংক্স দোস্ত। এই অসময়ে আমার বোনের পাশে থাকার জন্য। আমার বোনের সম্মান বাঁচানোর জন্য।এ ভাবেই সব বিপদে আপদে আমার বোনের পাশে থাকবি, কথা দে আমায়?রিয়ান তার ডান হাতটা এগিয়ে দেয় সাদাফের সামনে।সাদাফ রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর হাতে হাত রেখে কথা দেয়
.
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হিয়ার ভালো সময় খারাপ সময় ওর সকল বিপদে আপদে আমি ওর পাশে ওর ছায়া হয়ে থাকবো। কথা দিলাম।
.
আবেগে আপ্লুত হয়ে রিয়ান সাদাফকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আমি আমার বোনের জন্য একটা ভালো মানুষ পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ।
.
.
মিসেস সাবিনা হিয়া কে আনতে হিয়ার রুমে যায়। হিয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।
রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায়।
কীরে মা মন খারাপ?
.
মলিন হাসলো হিয়া। না আম্মু।
আজ তার এতো বছরের একতরফা ভালোবেসে যাওয়া মানুষটার সাথে তার আকাদ হবে,, তবুও কেন জানি হিয়া খুশি হতে পারছে না। বুকের মাঝে ভয় হচ্ছে কোনো এক অজানা কারণে।
.
ড্রইং রুমে সাদাফের আব্বু আম্মু বসে আছেন।চল আমার সাথে।
হিয়া মাথা নাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে মায়ের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে।
.
ড্রইং রুমে এসে সবাই কে সালাম দিলো হিয়া। হিয়া কে দেখে সাদাফ আবারো হিয়া প্রেমে পড়ে গেলো।
.
আসো মা এদিকে এসে আমার পাশে বসো।
.
হিয়া সাদাফের মায়ের পাশে গিয়ে বসলো।
.
মাশাআল্লাহ। আমরা চাচ্ছি আজকেই আংটি পরিয়ে দিতে। আমাদের একমাত্র ছেলে, ধুমধাম করে বিয়ে না দিলে আত্মিয় স্বজনের কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। এখনকার যুগের মানুষ কে তো চিনেন কথায় কথায় খোঁচা দেওয়ার ধান্দা খুঁজে।
বললেন সাদাফের আব্বু সোহেল আহমেদ।
.
আপনাদের যেভাবে সুবিধা হয় আপনারা সে ভাবেই এগোতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই।
.
বড়দের কথার মাঝেই হিয়ার ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসে। হিয়া মোবাইল অন করে দেখে মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে আছে,,,
.
“”হিয়া তুমি যদি চাও সাদাফের অবস্থা আমানের মতো না হোক তাহলে এই বিয়েটা ভেঙে দাও।আর যদি এই বিয়েটা না ভাঙো তাহলে আমানের থেকে ও তোমার ভালোবাসা সাদাফের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। মনে রেখো।””
মেসেজ টা পড়ে হিয়া স্তব্দ হয়ে গেছে।মে নাম্বার থেকে মেসেজ টা আসছে সে নাম্বারে ডায়েল করেন হিয়া। কিন্তু নাম্বার বন্ধ। হিয়া এখন কী করবে বুঝতে পারছে না। হিয়ার হাত পা রিতিমত কাঁপছে।এই অবস্থায় কী করা উচিত কিছুই মাথায় আসছে না হিয়ার।
.
সাদাফের আম্মু ব্যাগ থেকে একটা আংটির বক্স বের করে সাদাফের উদ্দেশ্য বললেন,,
.
সাদাফ যা হিয়া মা কে আংটি টা পরিয়ে দে।
.
সাদাফ তার মায়ের হাত থেকে আংটি টা নিয়ে হিয়ার কাছে যায়। হিয়া আবেগ শূন্য ভাবে তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে।সাদাফ হিয়ার বা হাত টা ধরেতেই হিয়া ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নেয়।বসা থেকে উঠে বলে,,,
.
এই বিয়ে হবে না। আমি এই বিয়েতে রাজি না।
.
হিয়ার কথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সবার মাথার উপর।
.
কী যাতা বলছিস হিয়া? মাথা ঠিক আছে তোর?চিল্লিয়ে বলে রিয়ান।
.
আমার কারো করুনার দরকার নেই। আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েন সাদাফ ভাই। আন্টি আংকেল আমাকে মাফ করে দিয়েন। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
.
কিন্তু কেন হিয়া? আমি তোমায় দয়া দেখাচ্ছি না হিয়া।
.
মা এমন করিস না।কি হয়েছে তোর আমাকে বল?
.
আমি ঠিক আছি আম্মু।আপনারা আস্তে পারেন বলে হিয়া তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে।
.
কেন হয় আমার সাথে এমন? কী দোষ করছি আমি?
.
এই জন্যই মানুষের ভালো করতে নেই। আপনাদের মেয়ে যদি বিয়েটা নাই করতে চায় তাহলে সাদাফ কে শর্ত দিল কেন আমরা রাজি হলে সে সাদাফ কে বিয়ে করবে? দেখতে তো শান্ত ভদ্র মেয়ে মনে হয়। পেটে পেটে এত শয়তানি।যে যেমন তার সাথে তেমনি ঘটে।চল সাদাফ আর এক মূহুর্ত ও এই বাড়িতে থাকার দরকার নেই বলে সাদাফের আম্মু সাদাফের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
.
হিয়া হঠাৎ এমন করলো কেন সাদাফের মাথায় আসছে না।হিয়া মে শুধু শুধু এমন করছে না এটা আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক সাদাফ ঠিক বুঝতে পারছে।
মে করেই হোক হিয়ার সাথে আমার কথা বলতে হবে। জানতে হবে কেন হিয়া এমন করলো?
.
.
.
বলেছি না তোমায়, আমার সাথে লাগতে আসলে তার ফল ভালো হবে না। কিন্তু তুমি তো আমার কথায় পাত্তাই দিলে না।
আমাকে জেলে দেওয়ার শাস্তি তোমাকে সারা জীবন ভোগ করতে হবে মি.সাদাফ আহমেদ।
শুধু শুধু তোমার জন্য হিয়া বেচারি কষ্ট পাচ্ছে।ওমন একটা মেয়েকে কষ্ট দিতে আমার ও তো বুকে লাগে।
হাহা হা হা হা,,,,,,,
.
.
চলবে,,,,,
ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০৩
#ভালোবাসি_ভালোবাসা ♥️
#written_by_Liza_Moni
#part_3
সকাল ৯টায় ঘুম ভাঙলো সাদাফের। আড়মোরা ভেঙ্গে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াস রুমে।ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে এসে দেখে তার আম্মু মিসেস ফাহমিদা আহমেদ তার আব্বু সোহেল আহমেদের সঙ্গে কোনো এক বিষয়ে আলোচনা করছেন।সাদাফ তাদের দিকে এগিয়ে যায়।
মিসেস ফাহমিদা সাদাফের দিকে তাকিয়ে বললেন,
.
সাদাফ এসেছিস, এদিকে আয়। আমার পাশে বোস।
.
কেন আম্মু কিছু বলবে?
.
শুনলাম তোর বন্ধু আছে না ঐ কি জানি নাম
.
রিয়ান?
.
হ্যাঁ ওর বোনের নাকি বিয়ে ভেঙে গেছে।বর যাত্রী নাকি এক্সিডেন্ট করেছে?
.
হুম ঠিক শুনছো।
.
মেয়েটার কপালটাই খারাপ।কী মায়াবী একটা মেয়ে তার সাথে এমন হওয়ার কথা ছিল বুঝি। আফসোসের স্বরে বললেন সোহেল আহমেদ।
.
তোমরা কার কাছে শুনলে?
.
আরে পাশের বাসার শায়লা বেগম আছেন না,উনি নাকি ছেলের কেমন আন্টি হোন, তিনি বললেন।
.
ওহ।
যা বুঝছি আম্মু আব্বুর মাইন্ড এখন ফ্রেশ আছে।ঝোপ বুঝে কোপ মারতে হবে এখনই। মনে মনে ভাবলো সাদাফ।
.
হিয়া মেয়েটা ভীষণ ভালো।দেখা হলে কত নম্র ভদ্র ভাবে কথা বলে। ভালো মানুষের কপালটাই খারাপ হয়। বললেন সাদাফের আম্মু।
আব্বু আম্মু একটা কথা বলবো শান্ত কন্ঠে বলে সাদাফ।
.আমার ছেলে এতো ভদ্র হলো কবে? কিছু বলবে তার জন্য আবার অনুমতি চাচ্ছে। মায়ের কথা শুনে সাদাফ মুচকি হাসলো।
বলে ফেল। আমরাও শুনে ফেলি।
আসলে,,
আসলে আব্বু আম্মু আমি,,,,
আরে বাবা কী বলবি বল ? বিরক্ত হয়ে বললেন সাদাফের আব্বু।
আমি হিয়া কে বিয়ে করতে চাই।
সাদাফের কথায় তারা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
.
কীসব আবোল তাবোল বলছিস তুই? তোর মাথা ঠিক আছে তো? কয়দিন পর অনিমার সাথে বিয়ে তোর।সে কথা মাথায় আছে তো?চিল্লিয়ে বললেন সাদাফের আম্মু।
.
আম্মু দেখো অনিমার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।যেটা চাইলে ভেঙে দেওয়া যায়।
.
বিয়ে কী ছেলে খেলা নাকি। চাইলেই ভেঙে দিবি আবার চাইলেই আরেকটা করবি?
বললেন সাদাফের আব্বু।
.
আমার কথাটা একটু বুঝার চেষ্টা করো। হিয়া কে নিয়ে এই সমাজের মানুষ যা বলে বেড়াচ্ছে তাতে যদি হিয়া সুইসাইড করার চেষ্টা করে।এইসব যদি ও সহ্য করতে না পারে? তাহলে রিয়ান আর আন্টির কি হবে? মেয়েটার বাকি জীবনটা পড়ে আছে। বিয়ের জন্য অন্যকেউ আসলে সমাজ তো সে বিয়েটা ভেঙে দিবে।
.
তাহলে অনিমার কী হবে? বললেন সাদাফের আম্মু।
.
অনিমার সাথে বিয়ে ঠিক করা আছে বিয়ে তো আর হয়নি।আর আমাদের বিয়ের কথা শুধু আমাদের দুই ফ্যামিলি জানে।
.
তুই অনিমার সাথে কথা বলে যদি বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিস তো তাহলে আমার আর তোর মায়ের হিয়া কে তোর বউ হিসাবে মেনে নিতে আপত্তি নেই।
আমি না হয় অনিমার বাবার সাথে কথা বলে নিবো।
.
সাদাফ খুশিতে তার বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে তোমরা আমার বেস্ট আব্বু আম্মু।লাভ ইউউউউউ।
.
পাগল ছেলে।
সাদাফ তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে তার রুমে চলে যায়।আজকেই সে অনিমার সাথে দেখা করবে।
সাদাফের আব্বু সাদাফের মাকে বলে বুঝলাম কিছু সাদাফের মা?ডালমে কুছ হোতা হ্যায়।
হাসতে লাগলেন তাঁরা।
রুমে গিয়ে সাদাফ ফোন নিয়ে অনিমার নাম্বারে কল দেয়। দুই বার রিং হওয়ার পর অনিমা ফোন ধরে।
.
হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম।
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন?
.
আলহামদুলিল্লাহ, আপনি
.
হুম ভালো। আজকে আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?
.
হঠাৎ দেখা করার কথা বলছেন যে?
.
দরকার ছিল। আপনি পারবেন দেখা করতে?
.
হুম। কখন দেখা করতে হবে?
.
বিকাল সাড়ে চারটায় আপনি আপনার বাড়ির সামনে থাকিয়েন আমি যাবো।
.
আচ্ছা ঠিক আছে।
.
রাখছি আল্লাহ হাফেজ।
সাদাফ কল কেটে দিল।
.
.
রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে হিয়া। কিছুতেই তার মনে একটু ও শান্তি লাগছে না। গতকালের ঘটনার পর তো নিজেকে একটু শক্ত করেছে। সকালের সেই লিখা কাগজটা তার সব শান্তি কেড়ে নিয়েছে। কাউকে কিছু বলেও নি কাগজটার ব্যাপারে।
আম্মু আর ভাইয়ার মন এমনিতেও ভালো নেই। এই কাগজটা দেখিয়ে তাদের মন আরো ভেঙে দেওয়ার দরকার নেই।
আমাকে নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে এই অজানা আগুন্তক কে। আমার সাথে শত্রুতা করে চারটা নির্দোষ মানুষের কীভাবে এমন অবস্থা করতে পারে? আল্লাহ তুমি তার বিচার করো।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ল হিয়ার।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে মিসেস সাবিনা হিয়া কে ডেকেই যাচ্ছে।
হিয়া,ও হিয়া মারে দরজা খুল।
বিছানা থেকে নেমে হিয়া দরজা খুলে দিল।
মিসেস সাবিনা খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন।
.
উঠব আম্মু তোমাকে বলছি ও আমি খাবো না তবুও কেন খাবার আনছো?
.
ঠাসসস করে এক চড় দিবো। কালকে সারাদিনে কিছু খাস নাই রাতে ও খেলি না। এখন যদি আর একটা কথা বলিস তো তোর খবর আছে মেয়ে।
ভাত মাখিয়ে হিয়া কে খাইয়ে দিতে লাগলেন তিনি।
হিয়া ও চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে।যত কষ্টই থাকুক না কেন মায়ের হাতে ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা।
হিয়া কে ভাত খাইয়ে চলে গেলেন মিসেস সাবিনা।
.
.
ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটা বাজে।সাদাফ রেডি হয়ে বাইক নিয়ে অনিমা দের বাড়ির দিকে রওনা হয়।মোড় ঘুরানোর সময় কোথা থেকে একটা ফুল স্পিডে চালানো গাড়ি সাদাফের বাইকের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে লাগেনি।সাদাফ বাইক পিছিয়ে নিয়ে ছিল।
.
আরে এই ভাই ফুল স্পিডে কেউ গাড়ি চালায়। মানুষ মারার প্লেন করেন নাকি। শালা মদ গাঁজা খাইয়া কে যে এডিরে গাড়ি চালাতে কয়।
.
সাদাফ অনিমা দের বাড়ির সামনে এসে বাইক দাঁড় করিয়ে অনিমাকে কল দিতে ফোন হাতে নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে অনিমা আসছে।
.
আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসালাম। এই তো ভালো। আপনি?
.
আমি ও। বাড়ির সবাই কেমন আছেন?
.
ভালো। আপনার?
.
জী ভালো। বাইকে উঠুন।
অনিমা বাইকে উঠে বসে।সাদাফ একটা রেস্টুরেন্টের সামনে বাইক থামায়। ভিতরে চলুন।
ভিতরে এসে বসে দুইজন।
.
কী খাবেন?
.
মে গরম পড়ছে ঠান্ডা কিছু হলে মন্দ না।
.
ওয়েটার কে ডেকে সাদাফ দুটো কোল্ড ড্রিং অডার করে।
.
কী দিয়ে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না সাদাফ।ওয়েটার কোল্ড ড্রিং দিয়ে যায়।
সাদাফ একটা কোল্ড ড্রিং অনিমার দিকে এগিয়ে দেয়।
.
সাদাফ বলতে শুরু করে,,
আজকে আপনার সাথে দেখা করার জন্য একটা কারন আছে। আসলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
সবে মাত্র কোল্ড ড্রিং টা মুখে নিয়েছে অনিমা।সাদাফের কথায় কাশি উঠে যায় তার। চোখের মধ্যে পানি জমতে শুরু করে। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। এতো দিন যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতো সে,আজ সেই বলছে এই বিয়েটা সে করবে না।নিজেকে ধাতস্থ করে অনিমা সাদাফ কে জিগ্যেস করে
আমার কী কোনো ভুল হয়েছে? আমি কী কোনো দোষ করেছি?যার জন্য আপনি বিয়েটা ভেঙে দিতে চান?
.
না অনিমা। আপনার কোনো ভুল কিংবা দোষ কিছুই নেই। আপনি ভালো একটা মেয়ে।
.
তাহলে আপনি কেন বিয়েটা ভেঙে দিতে চাচ্ছেন?
.
আসলে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল।সে যাকে ভালোবাসে তার সাথে।
তার উপর জিদ করে আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে বলি আমার আব্বু আম্মুকে।
.
তার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাহলে?আর সেকি জানে আপনি তাকে ভালোবাসেন?
.
না। আমি তাকে ভালোবাসি সে এই কথা জানে না।সে আমান নামের কাউকে ভালোবাসে। এমনকি তার সাথে বিয়ে ও হয়ে যাচ্ছিল গতকাল। কিন্তু ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। তার হবু বরের গাড়ি মারাত্মক ভাবে এক্সিডেন্ট করে।তার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল সে মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে। কোমায় চলে গেছে। এবং তার এক বন্ধু মারা যায়।
.
সাদাফের মুখে পুরো কাহানি শুনে অনিমা কী বলবে বুঝতে পারছে না। তার এখন ঠিক কী করা উচিত তার মাথায় আসছে না।যেদিন তার আর সাদাফের বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল সেদিন থেকেই সে সাদাফ কে একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করে। তার ও তো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
.
কী হলো কিছু বলছেন না যে?
.
আমি কখনো চাইবো না আপনি আমায় বিয়ে করেন। আমি তাকেই বিয়ে করুন যাকে আপনি ভালোবাসেন। আমি হয়তো বলতে পারি আপনি একজনের উপর জিদ করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে বলছেন বিয়ে করবেন না। আপনি একবার ও আমার কথা ভাবছেন? তবে আমি বলবো আপনি ঐ মেয়েকেই বিয়ে করুন। এই অসময়ে তার পাশে থেকে তাকে আপনার ভালবাসায় রাঙিয়ে তুলুন।আসি দোয়া রইলো আপনাদের জন্য।
অনিমা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না।সি এন জি করে বাড়িতে চলে গেল।
রেস্টুরেন্টের বিল পে করে সাদাফ ও বাইক নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল।
বাড়িতে এসে মা বাবা কে সব বললো।অনিমা রং জন্য খারাপ লাগছে সবারি। কিন্তু হিয়ার থেকে বেশি না।
.
আজকে সন্ধ্যায় তাহলে হিয়াদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসবো।কী বলো সাদাফের আম্মু?
.
তোমার যা ভালো মনে হয়।
.
বলছি কী আপু আর আমার পুচঁকি টাকে আস্তে বললে হতো না?
.
না হতো না। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলে না হয় বলবো সাদিয়া কে।
বললেন সাদাফের আম্মু।
.
তোমাদের ইচ্ছে।
বলে সাদাফ তার রুমে চলে যায়।ড্রয়ার থেকে হিয়ার একটা ছবি বের করে তাকে বুকের বাঁ পাশে রেখে বলে তুমি আমার হবে হিয়া পরী।
হিয়ার ছবিটা দেখতে দেখতে সাদাফ ভাবনার মধ্যে ডুব দিল,,,,,
.
.
৫ বছর আগের কথা,,,
সময়টা তখন শরতের। আকাশে মেঘের ভেলা ভাসছে। ভার্সিটির বন্ধুদের জোড়া জুড়িতে কাশবন গিয়ে ছিলো সাদাফ। সেখানে গিয়ে বিরক্ত হচ্ছিল সে।এ দিক সেদিক তাকিয়ে দেখার সময় চোখ পড়লো ৭-৮ টা মেয়ের দিকে। তাদের মধ্যে হালকা আকাশি রঙের শাড়ি পরা একটা মেয়েকে দেখে বুকের বাঁ পাশে ধক করে উঠে তার। কাশফুলের রাজ্যের রাজকন্যা মনে হচ্ছিল মেয়েটাকে। বান্ধবীদের সাথে খুনসুটিতে মেতে ছিল মেয়েটি।সাদাফ সেদিন মোবাইল দিয়ে মেয়েটার কিছু ছবি তুলে নেয়।
তখন কোথা থেকে একটা ছেলে এসে মেয়েটাকে তার সাথে করে নিয়ে যায়।
এক বছরের চেষ্টায় অনেক কষ্টে মেয়েটার ভাইয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
মেয়েটা কখনোই তার সাথে তেমন কথা বলতো না।তার জন্য তার ভালোবাসার কথা আজও বলতে পারেনি।
হুম মেয়েটা হিয়া।
হঠাৎ চার মাস আগে সাদাফ শুনে হিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।হিয়ার উপর তার খুব রাগ হতো।যখন হিয়া আমানের সাথে দেখা করতে যেতো।কত সময় তো রিয়ানের জন্য হিয়া কে সাদাফ ড্রাইভ করে নিয়ে যেতো আমানের সাথে দেখা করতে। তখন যেন সাদাফের কলিজা টা ছিঁড়ে যেতো।সে হিয়া কে নিজের করে পেতে চাইতো। তবে আমানের জীবনের বিনিময়ে নয়। হিয়া হয়তো তাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করবে।কারন সাদাফ যে জানে হিয়া আমানকে ভালোবাসে,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,
ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০২
#ভালোবাসি_ভালোবাসা ❤️
#Written_by_Liza_Moni
#part_2
____________
আমি হিয়া কে বিয়ে করতে চাই।
.
সাদাফের কথাটা শুনে রিয়ান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ভ্রু কুঁচকে জিগ্গেস করে
তোর না অনিমার সাথে বিয়ে ঠিক করা আছে?
.
বিয়ে ঠিক করা আছে, বিয়ে তো আর হয়নি তাই না?
.
তোদের না রিলেশন চলছে?আর সব থেকে বড় কথা তোর পরিবার মানবে তো?
.
দুই মাসের রিলেশন,এতে কী হবে? যেখানে আমি নিজে বিয়ে করতে চাচ্ছি সেখানে আমার পরিবার না মেনে যাবে কোথায়?
.
তাহলে অনিমার কী হবে?
.
দেখ রিয়ান, তুই যে ভাবে বলছিস অনিমার কী হবে?অনিমার সাথে তো আর হিয়ার মতো হয় নি। আমাদের বিয়ের কথা বলা হয়েছে শুধু। বিয়ে হয়ে যায় নি।আর আমাদের বিয়ের কথা শুধু আমার আর অনিমার পরিবার আর তুই জানিস।আর হিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা পুরো সমাজ জানে।
.
রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আয় আমার সাথে।
রিয়ান সাদাফ কে নিয়ে ড্রইং রুমে যায়।মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন সোফায় বসে এখনো কেঁদে যাচ্ছে।
.
মা সাদাফ হিয়া কে বিয়ে করতে চায়।
.
রিয়ানের কথা শুনে সবাই ওদের দিকে তাকায়।
মিসেস সাবিনা কী বলবেন বুঝতে পারছেন না।এই চার বছরে সাদাফ কে তিনি কোনো খারাপ কাজ করতে দেখেননি। সাদাফ তার কাছে ভালো ভদ্র একটা ছেলে।
সাদাফ বর্তমানে একটা কোম্পানিতে মেনেজার হিসেবে আছে।
তিনি সাদাফের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন আমার মেয়েটা অনেক ভালো।অন্য সব মেয়েরা যেমন একটার সাথে ব্রেকআপ হলে আরেকটার সাথে প্রেম করে আমার মেয়েটা ওমন মেয়ে না। কখনো ওর নামে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দিতে পারেনি।ওর মাথায় সব সময় একটা কথা চিন্তা করেই ও পদক্ষেপ নিত। ওর তো বাবা নেই যে বিপদে তার ঢাল হয়ে দাঁড়াবে।
যদি কোনো বদনাম বের হয়ে যায় এই ভয়টা ওর সব সময় ছিল, আছে,থাকবে। আমি মা হয়ে বলছি আমার মেয়ে অপায়া অলক্ষী কোনোটাই না।
তুমি যখন নিজে বিয়ে করতে চাইছো আমি তোমায় বাঁধ সাধবো না। শুধু একটাই চাওয়া থাকবে তোমার কাছে আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিও না। তুমি হিয়ার সাথে কথা বলে এসো। ওর কথা ও শুনা দরকার যাও।
.
সাদাফ কিছু বললো না।হিয়ার রুমে চলে গেলো।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হিয়া।সাদাফ রুমে গিয়ে দেখে হিয়া নেই।ব্যালকনির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গলা খাঁকারি দিল।
হিয়া আকাশের দিকে তাকিয়েই বললো কিছু কী বলবেন সাদাফ ভাই?
.
তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
.
হুম বলুন।
.
হিয়া আমি জানি তুমি আমানকে অনেক বেশি ভালোবাসো।
হিয়া সাদাফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, মনে মনে বললো না সাদাফ ভাই আপনি জানেন না।
.
এই ঘটনার পর হয়তো তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। অবশ্য কষ্ট হওয়ারি কথা। আমার নিজেরও অনেক খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের থেকে সর্বত্তম পরিকল্পনা কারি।
.
শান্তনা দিতে আসছেন। বিপদের সময় শান্তনা জিনিসটাকে অনেক বিরক্ত লাগে জানেন তো?
.
আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই হিয়া।
.
সাদাফের কথায় স্তব্দ হয়ে যায় হিয়া।
কী বললো সাদাফ ভাই?আমায় বিয়ে করতে চান,কথাটা শুনার জন্য আমি অনেক আগে থেকেই আকুল হয়ে ছিলাম। কিন্তু এই ভাবে না। এমন একটা সময়ে এই কথাটা ঠিক হজম হলো না হিয়ার।
.
Will you marry me hiya?
.
শান্ত দৃষ্টিতে হিয়া সাদাফের দিকে তাকায়।
শান্ত কন্ঠে বলে,
দয়া দেখাতে আসছেন সাদাফ ভাই?
.
হিয়ার কথায় অসস্তি হচ্ছে সাদাফের। সেতো দয়া দেখানোর জন্য এই প্রস্তাব দেয়নি।এই অসময়ে এই পরিবার,হিয়ার পাশে থাকতে চেয়েছে। এই পরিবারটাকে সে নিজের পরিবারি ভাবতো।সে কখনো চায়না এই পরিবারের অসম্মান হোক। বিশেষ করে হিয়ার অসম্মান হোক সে চায় নি।
.
কী হলো সাদাফ ভাই কিছু বলছেন না যে?
.
হিয়ার কথায় সাদাফের ভাবনায় ছেদ পড়ল।
.
আমি দয়া দেখানোর মানসিকতা নিয়ে তোমায় এই প্রস্তাব দিইনি হিয়া।আর যদিও বা এটা দয়াই হয় তাহলে ভাবো তোমার কপাল ভালো যে এতো কিছুর পরেও কোনো একজন তোমায় বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।
.
এই অপায়া অলক্ষী মেয়েকে আপনার পরিবারের লোকজন মানবে তো সাদাফ ভাই?
.
পরিবারকে মানানো আমার কাজ।
.
আর যদি না মানে?
.
তাহলে আমরা আলাদা করে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবো টুনা টুনির মতো।
.
বাহ্ কী সহজেই উত্তর দিয়ে দিলেন। আপনি আপনার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। আপনার বড় বোনের অনেক আদরের একটা মাত্র ছোট ভাই আপনি।কী সুন্দর করে বলে দিলেন আপনার ফ্যামেলি না মানলে আপনি আমাকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে থাকবেন। পারবেন আপনি আপনার ফ্যামেলিকে ছাড়া থাকতে? মনে পরবে না তাদের কথা যারা আপনাকে ছোট থেকে বড় করেছেন।
.
আসলে আমি এভাবে,,,
সাদাফ কে থামিয়ে দিয়ে হিয়া বললো,
.
শুনেন সাদাফ আপনি আপনার ফ্যামেলিকে রাজি করাতে পারলে এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
.
সাদাফ আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।ড্রইং রুমে এসে বলে,,
.
আন্টি,রিয়ান আমি বাড়িতে যাচ্ছি।
.
সেকি বাবা এতো রাতে বাড়িতে কেন যাচ্ছো হিয়া কী কিছু বলেছে?
.
না আন্টি কী বলবে?যত দিন মা বাবা কে এই বিয়েতে রাজি করাতে পারছি ততো দিন এই বাড়িতে আর আসবো না।আসছি আন্টি দোয়া করিয়েন।
সাদাফ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না।বাইক নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
.
হিয়া ব্যালকানিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাদাফের চলে যাওয়া দেখছে।মেনর ভেতরে চিৎকার করে বলছে
আমি আপনাকে এমন করে চাইনি সাদাফ ভাই। আমি তো আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম খুব সুন্দর কোনো এক দিনে আপনি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিবেন। যেখানে অপায়া অলক্ষী মেয়ে নামের সাথে তমকা লাগানো থাকবে না। সময়টা খুব ভালো হবে।এমন একটি দিনের কথা তো ভুলেও চিন্তা করিনি সাদাফ ভাই।
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় হিয়া।
.
তোর মনের উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে আমি তা বুঝছি মা।এই ভাবে মন পুড়ে ফেলিস না মা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর ভরসা রাখ তিনি সব ঠিক করে দিবেন। অনেক রাত হয়েছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
.
সিফাত ভাইয়ের কী খবর জানো আম্মু?
.
একটু আগে রিয়ান বললো সিফাতের জ্ঞান ফিরেছে, আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।
.
জায়ান ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে খুব।
.
একদিন সবাইকেই যেতে হবে রে মা।এই সব তো একটা উছিলা মাত্র।আর মন খারাপ করিস না। নিজেকে শক্ত করতে হবে তো। জীবন তো এখন ও বাকি আছে।
.
আজ আমার পাশে ঘুমাবে আম্মু।
.
হুম।আগে ভাত খেয়ে নে।
.
আমার গলা দিয়ে কিচ্ছু নামবে না আম্মু। জোর করি ও না।
বলে হিয়া বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। মিসেস সাবিনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হিয়া কে জড়িয়ে ধরলেন বুকের মাঝে।
একটা আশ্রয় পেয়ে হিয়ার চোখের পানি যেন বাঁধ মানছে না। হিয়া কাঁদছে বুঝতে পারলেন মিসেস সাবিনা। বাঁধ সাধলেন না। থাক কাদুক। কেঁদে মনটা হালকা করুক।
.
.
রাত তখন ১টা ৫৫ মিনিট।সাদাফ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপ দেয়।প্রায় অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর সাদাফের আব্বু সোহেল আহমেদ দরজা খুলে দেন। বাহিরে সাদাফ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিগ্গেস করেন
.
এত রাতে ফিরে এলি যে,আজ তো তোর রিয়ানদের বাসায় থাকার কথা।
.
আমি এখন অনেক ক্লান্ত আব্বু। সব কথা সকালে বলি?
.
আচ্ছা যা।
.
সাদাফ আর কথা বাড়ালো না। নিজের রুমে চলে গেল। কাভার্ড থেকে ট্রাউজার আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াস রুমে চলে যায়।
গোসল করে বের হয়ে বিছানায় শুয়ে বলে আগে একটা ঘুম দি কালকে সকালেই মিশন শুরু করে দিবো।
.
.
ফজরের আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় হিয়ার। উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে মাকে ডাক দেয়। মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে চলে যান নাস্তা বানাতে।
চারদিকে সবে আলো ছড়াচ্ছে। হিয়া খালি পায়ে হাঁটতে বের হলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছে সে।
ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হলে মনে এক আলাদা শান্তি লাগে।
হঠাৎ করে হিয়ার গায়ে একটা কাগজের দলা পড়ে।
আশে পাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। কাগজটা নিচ থেকে তুলে ভাঁজ খুললো হিয়া।
সেখানে লিখা,,
.
কী ভাবছো আমানদের গাড়ি এক্সিডেন্টলি ভাবে এক্সিডেন্ট করছে? বোকা মেয়ে। তোমার লাইফ হেল করে দিবো আমি।
.
লেখাটা পড়ে হিয়ার শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। আমার সাথে কার কী শত্রুতা?
কে এই মানুষ?
.
.
চলবে,,,,,,,,,
ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০১
ভালোবাসি ভালোবাসা ❤️
#Written_by_Liza_moni
#part_1
জানেন সাদাফ ভাই আজ চারটি বছর আমি আপনাকে আড়ালে বসে একতরফা ভালোবেসে যাচ্ছি।কী করবো বলেন আমি তো এত সাহসী নারী না যে প্রেমিক পুরুষের সামনে গিয়ে নির্দ্বিধায় বলে দিব আমি আপনাকে ভালবাসি সাদাফ ভাই ভীষণ মারাত্মক ভাবে পুড়ে যাচ্ছি আপনার প্রেমে। কী করলে এই প্রেমের আগুন নিভে যাবে আপনি কী জানেন? আপনার সামনে পড়লেই তো আমার হার্ট বিট করা বন্ধ হয়ে যায়। আপনার সাথে কথা বলতে গেলে শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠে। একটা কথা খুব করে জানতে ইচ্ছে করে আপনি কী অন্য কাউকে ভালোবাসেন সাদাফ ভাই? কাল আমার বিয়ে হয়ে যাবে সাদাফ ভাই।অন্য কেউ আসবে আমার জীবনে। আমি পারিনি সাদাফ ভাই।শত চেষ্টা করেও আমি আম্মু আর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমি বিয়েটা আটকাতে পারিনি। দেখলাম নিজের হাতেই আমার বিয়ের সব সামলাচ্ছেন। অনেক আনন্দ করলেন গায়ে হলুদে।আজ রাতটা যেন শেষ না হয় আল্লাহ। একতরফা ভালোবাসা কেন এতো অসহায় আল্লাহ? কাল আমি অন্য কারো হয়ে যাবো। আচ্ছা সাদাফ ভাই কেন আমি আপনাকে এতো ভালোবাসি বলেন তো?সাদাফ ভাই আমি আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। আমার আর লিখার মতো শক্তি নেই গো সাদাফ ভাই। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে যে।ডাইরিটা ড্রয়ারে রেখে ভাবনায় ডুব দিলো হিয়া,,,
প্রথম যেদিন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল সেই দিনটি অনেক সুন্দর ছিল। কলেজে যাবো তাই রাস্তার পাশে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎই বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে পুরো কাক ভেজা হয়ে গেছি। কোথা থেকে আপনি এসে মাথার উপর ছাতা ধরেছিলেন।আর বলেছিলেন,
.
আপনার কি আক্কেলের গোড়ায় পানি নাই নাকি? সাদা রঙের ড্রেস পরে এখানে বৃষ্টি তে ভিজছেন।
.
আমি তখন কিছুই বলতে পারি নাই। ইসসস এই যুগে এত্ত ভালো কোনো ছেলে হয়?অন্য কোনো ছেলে হলে কী সাদাফ ভাইয়ের মতোই ভাবতো নাকি সবাই মিলে চোখের তৃষ্ণা মেটাতো?
.
তার প্রতি আমার এক আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বাড়িতে চলে আসি। সেদিন আর আমার কলেজে যাওয়া হয় নি।
সেদিন বিকেলে ছাদে বসে ছিলাম। তাকে নিয়ে ভাবা হচ্ছিল একা বসে। আম্মু ডাক দিল,,
.
হিয়া, হিয়া
রিয়ানের বন্ধুরা এসেছে রিয়ান কে ডেকে দে।
আম্মুর কথা শুনে ভাইয়া কে ডাকতে গেলাম রুমে। ভাইয়া তো ষাঁড়ের মত ঘুমাচ্ছে।এরে ঘুম থেকে উঠানোই যায় না।কী যে ঘুম বাপরে। আমাদের বাড়ির কুম্ভকর্ন আমার ভাইয়া।
ভাইয়াকে ডেকে আমি আমার রুমে যাওয়ার সময় ড্রইং রুমে চোখ পড়তেই ভড়কে গেলাম। সকালের সেই ছেলেটা।ভয় হতে লাগলো কেন জানি।
এ ভাইয়ার বন্ধু কৈ আগে তো কখনো দেখিনি।
রিয়ান ভাইয়া জানালো তার নাম সাদাফ আহমেদ।ভাইয়ার সাথে ফেসবুকে পরিচয়।সেখান থেকেই খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। পেশায় তখন তিনি টটো কোম্পানির মেনেজার ছিলেন মানে বেকার। অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন আমার ভাইয়ের সাথে।
আমাকে দেখে সেদিন সে অবাকই হয়েছিল।সাদাস নামটা একা একাই বিড় বিড় করতে থাকি আমি।ইসস সে যদি আমার হতো খুব কী ক্ষতি হতো?
এসব ভাবতে ভাবতে টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে হিয়া।
.
.
হিয়া, হিয়া, হিয়য়য়য়া
হিয়ার মামাতো বোন আনহা হাত ধরে টান দিতেই চোখ মেলে তাকায় হিয়া। বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করে,উফ আনহা একটু কী ঘুমাতে ও দিবি না নাকি?
.
ঘুমা তোকে মানা করছে কে?তাই বলে কি এতো বড় বিছানা রেখে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাবি?কাল রাতে তো আর ঘুমাতে পারবি না 😉।যা এখন বিছানায় গিয়ে ঘুমা।
.
কাল রাতে ঘুমাতে পারবোনা কেন?
.
হাডুডু খেলবি তো তাই।
.
ধেত যা তো।
.
.
পরের দিন সব নিয়ম কানুন মেনে হিয়া কে বউ সাজানো হয়েছে। একটু পরেই আমান আসবে ( হিয়ার হবু বর)। ছেলেটা হিয়া কে বড্ড বেশি ভালোবাসে।
আর হিয়া কিনা অন্য একজনকে ভালোবাসে।
.
সবাই খুব খুশি শুধু হিয়ার মুখেই হাসি নেই। জানালার পাশে বসে আছে হিয়া। মনে মনে কিছু পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষছে সে।একটু পরেই অন্যের হয়ে যাবে সে। চিরতরে হারিয়ে ফেলবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে।
.
নিজেকে কষ্ট দিয়ে বিয়েটা তুই সত্যিই করছিস হিয়া?
.
হিয়ার ভাবনায় ছেদ পড়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ড মীরার কথায়।
.কী করবো বল?
আমি তো একাই ভালোবাসি তাকে। সেতো আমায় ভালোবাসে না।সে যদি আমায় ভালোবাসতো তাহলে হয়তো বিয়েটা ভাঙ্গা যেতো।
.
এখন ও সময় আছে হিয়া, তুই সাদাফ ভাইকে বলে দে তোর মনের কথা।নাহলে যে তুই মরে যাবি হিয়া।
.
আসলে কি জানিস আল্লাহ নিজেই চান না আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।মা হচ্ছে হতে দে,,,,
.
বিয়ে বাড়ি হই হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে।সবাই খুব বেশি খুশি। বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে খুশি হবার কথাই তো।
.
হঠাৎ হৈচৈ এ ভরা বিয়ে বাড়িটা নীরবতায় ছেয়ে গেছে।সবার মাঝে হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে।
অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ে বাড়ীতে কান্নার রোল পড়ে যায়,,,
.
কান্নার শব্দ শুনে হিয়া রুম থেকে বের হয়ে আসে। অস্থির হয়ে জিগ্গেস করে কী হয়েছে? তোমরা সবাই কান্না করছো কেন?
.
এই আনহা কি হয়েছে?বড় মামি, ছোট মামি,চাচি আম্মু,কী হয়েছে কাঁদছো কেন?
এই আম্মু কাঁদছো কেন?
,
এই ভাইয়া কী হয়েছে?
.
সাদাফ ভাই আপনি অন্তত বলেন কী হয়েছে?
.
আরে কী হয়েছে বলছো না কেন আমাকে তোমরা
চিল্লিয়ে উঠে হিয়া।
হিয়ার আম্মু মিসস সাবিনা ইয়াসমিন হিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলে আমানদের গাড়ি মারাত্মক ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে।ড্রায়বার ঘটনা স্থলেই মারা গেছেন।
.
হিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কী শুনলো ও?স্তব্দ হয়ে গেছে হিয়া।
.
পাড়া প্রতিবেশীর কিছু নিচু মন মানসিকতার মানুষ মুখ বাঁকিয়ে বলেই যাচ্ছে,কি অপায়া অলক্ষী মেয়ে। বিয়ের দিনি জামাইরে খেয়ে বসলো।হায় হায় বেচারা ছেলেটার জীবন শেষ।আহারে। এমন অপায়া মেয়ে যেন আর কারো ঘরে জন্ম না নেয়।
.
মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন হিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো আমার মেয়েটার সাথে এমন কেন হলো? আমার মেয়েটার জীবনে দাগ লেগে গেল।
.
সাদাফ রিয়ানকে তাড়া দিয়ে বলে রিয়ান তাড়াতাড়ি হসপিটালে চল,,,আর দেরি করিস না,,
সবাই হসপিটালে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।
হিয়ার যখন চার বছর বয়স আর রিয়ানের দশ বছর তখন বাইক দুর্ঘটনায় হিয়া আব্বু মাহবুব হোসেন মারা যান। মিসেস সাবিনা চাকরি করে নিজের সন্তানদের বড় করেছেন।
,
,
হসপিটালে পৌঁছে দেখে সেখানে আমানের বাড়ির সবাই কাঁদছে। হিয়া কে দেখে আমানের মা তেড়ে আসেন। অপায়া অলক্ষী মেয়ে আমার ছেলেটাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য কেন আসছো হ্যাঁ।এই অপায়া মেয়ে দায়ী আমার ছেলের এই অবস্থার জন্য। কোনো দিন ও বিয়ে হবে না এই মেয়ের।
.
আমার মেয়েকে এতো বড় অভিশাপ দিবেন না। আমার মেয়ের কি দোষ? আমার মেয়েটার জীবনটাও তো শেষ হয়ে গেল।
.
কথা গুলো হিয়া সহ্য করলেও সাদাফের কেন জানি কথা গুলো হজম হলো না।
সাদাফ বলে
.
আপনি যে ভাবে কথা গুলো বলছেন যেন হিয়া নিজে ওদের এক্সিডেন্ট করিয়েছে। হিয়া যেন জানতো ওদের এক্সিডেন্ট হবে। আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনার ছেলের এক্সিডেন্ট হয়ে বিয়ার জীবনটা কোথায় গিয়ে থমকে গেছে?আজ হিয়ার জায়গায় অাপনার মেয়ে হলে কী এমন অভিশাপ দিতেন?
.
আহ সাদাফ বাবা বাদ দাও।মা তো ছেলের এই পরিনতি মেনে নিতে পারছেন না। বললেন আমানের বাবা ইকবাল হোসেন।
.
আমানদের গাড়িতে ড্রাইবার আমান আর আমানের দুই বন্ধু সিফাত আর জায়ান ছিল। ড্রাইবার ঘটনা স্থলেই মারা যায়। ওদের তিন জনের অবস্থা ও খুব খারাপ।
.
নার্স এসে বলে পেষেন্ট আমান চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে। হিয়া ছুটে যায় আমানের কেবিনে। ডিয়ার ছুটে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সাদাফ।ইসস ভালোবাসা গুলো এতো অসহায় কেন? হিয়া আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় আমানের দিকে। আমানের ডান হাত টা ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
বিশ্বাস করুন আমি সত্যি চাইনি এমনটা হোক। হয়তো আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে পেতাম না তবুও ও কখনো এমন কিছু চিন্তা করিনি। আপনি তো আমাকে ভালোবাসতেন তাই না? ভালোবাসা তো অপরাধের কিছু না। তবু ও কেন সত্যিকারের ভালবাসা এই ভাবে হেরে যায়?
আমান কিছু বলতে পারলো না।ডাক্তার এসে তাকে চেক করে বললেন আমান কোমায় চলে গেছে। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে এই অব্দি এসেছে সে।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই থমকে গেল।ছায়ানটের কেন থেকে অন্য এক ডাক্তার এসে জানালো জায়ান আর এই পৃথিবীতে নেই।জায়ানের পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সিফাতের এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
.
মিসেস সাবিনা পাগলের মতো করছেন।আজ যদি আমার মেয়েটার বিয়ে না হয় আমার মেয়েকে যে এই সমাজ বাঁচতে দিবে না।
আমার মেয়ের জীবনটা যে এই সমাজের মানুষ নষ্ট করে দিবে,,,,
রাত ১১ টার দিকে সাদাফ রিয়ান, মিসেস সাবিনা এবং হিয়া কে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
হিয়া রুমে গিয়ে গোসল করতে চলে যায়।
মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন সোফায় বসে পড়েন। এখন ও কাঁদছেন তিনি।হিয়ার মামিরা সবাই মিলে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
বড় মামি বলেন,
আপা দেখিয়েন আমাদের হিয়ার কপালে এর থেকে ভালো কিছু আছে। আমাদের হিয়ার জন্য হয় তো আমান ঠিক ছিল না। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখেন। তিনি সব ঠিক করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
সাদাফ রিয়ানের সাথে রিয়ালের রুমে যায়।
.
রিয়ান চিন্তা করিস না দোস্ত। আল্লাহ তা করেন ভালোর জন্যই করেন।
.
আমার বোনের জীবনটা এমন হলো কেন বলবি? আমার সেই ছোট্ট আদরের বোনের জীবনটা আজ এমন অসহায় হয়ে গেছে কেন বল না। এই সমাজ আমার বোনকে অপায়া অলক্ষী মেয়ে হিসেবে গালাগালি করছে। আমার বোন যদি এসব মেনে নিতে না পেরে অন্য পথ বেছে নেয়,,
রিয়ানের কথাটা শুনে বুকের বাঁ পাশে ধক করে উঠলো সাদাফের। নিজেকে শক্ত করে বললো,
.
এই সমাজের মানুষ গুলো কি ভাত না খেয়ে থাকলে এক বেলা ভাত খাওয়াবে? বিপদে কী পাশে এসে দাঁড়াবে? এদের কাজই হলো মানুষের নামে সমালোচনা করা,, এদের কথায় পাত্তা না দিলেই হবে,,,
.
আমি না হয় তোর কথা বুঝলাম কিন্তু হিয়া, হিয়া যদি এই সব কথা মেনে নিতে না পারে?ও যদি মানুষের কটুক্তি গুলো সহ্য করতে না পারে তখন কী হবে?
আমি আমার বোনকে হারাতে চাই না রে সাদাফ।
.
হিয়া ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসে। চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে প্লোরে। উদাসীন ভাবে বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
আকাশের দিকে চেয়ে বলে,
আব্বু জানো আমার জীবনটা না অদ্ভুত ভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে।
আমার নামের সাথে না অপায়া অলক্ষী মেয়ে হিসেবে যোগ হয়েছে।
আমার সাথে এমন কেন হলো?তাকে ভালোবাসি তাকে ও পাবো না যে আমাকে ভালোবাসে তাকে ও পেলাম না।এ কেমন নিয়ম?
.
.
সাদাফ রিয়ানকে বলে,,
যদি কিছু মনে না করিস একটা কথা বলবো?
.
হুম বল
.
আমি হিয়া কে বিয়ে করতে চাই,,,,,,,,
,
চলবে,,,,,