Wednesday, July 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1482



তৃণশয্যা পর্ব-০২

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#২য়_পর্ব

চারু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটা চারুর পিঠে একটা মাইর দেয়।তারপর গালটা টেনে দিয়ে বলে,
—‘ তারমানে তুই আমার সেই পিচ্চি খালাতো বোন ‘
চারু বুঝতে পারছে না ছেলেটা কি বলছে?অচেনা একটা ছেলে তাকে খালাতো বোন বলে দাবি তুলছে।ছেলেটা এবার চারুর হাত ধরে বলে,
—‘ চল আমার সাথে। ‘
এই বলে সে চারুকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।চারু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারেনা।অনেক শক্ত করে ধরে রেখেছে তাকে।এক পর্যায়ে চারু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করা বাদ দিয়ে দেয়।জানে চেষ্টা করেও ফল হবে না।প্রায় ৬মিনিটের মতো হাটার পর তারা এসে পৌঁছায় একটা বাসার সামনে।ছেলেটা এবার চারুর হাত ছেড়ে দিয়ে দরজায় মারতে শুরু করে।সাথে সাথে দরজা খুলে যায়।ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে চারুর খালাতো বোন রিমি।রিমি চারুকে দেখেই জড়িয়ে ধরে।ভিতর থেকে রিমির মা রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ কেরে রিমি? ‘

রিমি খানিকটা চিল্লিয়ে উত্তর দেয়,’ চারু ‘
রিমি চারুর পাজামার দিকে তাকিয়ে ভরকে যায়।সে তারাতারি চারুকে ভিতরে নিয়ে যায়।চারুকে নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।তারপর সে নিজেই চারুর ব্যাগ থেকে একটা পাজামা বের করে চারুকে দিতে দিতে বলে,

—‘ আগে পাজামা চেঞ্জ করে আয় ‘

চারুও আর কোনো কথা না বলে ব্যাগ থেকে আরেকটা জামা বের করে পাজা‌মা সমেত জামা নিয়ে ওপাসরুমে প্রবেশ করে।লক্ষ্য শাওয়ার নিয়ে পরিষ্কার হয়ে বের হওয়া।
প্রায় ২০মিনিটের মতো শাওয়ার নেওয়ার পর বের হয় চারু।সে বের হয়ে দেখে রিমি বিছানায় বসে আছে।চারু গিয়ে রিমির পাশে বসে পড়ে।রিমি কিছু বলে ওঠার আগেই চারু তাকে বলে,

—‘ আমি জানি তুই কি ভাবছিস?যে জিনিসটা তোর শুরু হয়েছে ১৩বছর বয়সে সেটা আমার শুরু হয়েছে ১৬বছর বয়সে।তাইনা? ‘

রিমি চারু কথায় মাথা নাড়িয়ে বলে,
—‘ হুম,সাধারণত ১০-১৪বছরের মধ্যে শুরু হয় কিন্তু তোর ১৬কেন? ‘

চারু এবার তার মাথাটা নিচে করে বলে,
—‘ প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম।তারপর ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার বলে,আমি অতিরিক্ত চিকন হওয়ার কারনে আমার এই অবস্তা।আর আমার প্রথম হয়েছে ৩মাস আগে।এটা ছিল ৩য়।বুঝছিস। ‘

রিমি এবার হাসি মুখে বলে,

—‘ আচ্ছা এখন এসব বাদ দে।শোন কলেজ তো ১মাসের ছুটি।এবার ছুটিটা আমরা জমিয়ে কাটাবো।ভাইয়াও আজকে ফিরে আসলো।এবারের ছুটিটা অনেক মজায় মজায় কাটবে মনে হয়।কি বলিস তুই? ‘

চারু উত্তর দেওয়ার আগেই দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়।রিমি তারাতারি উঠে দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে চারুর খালামনি আর তার গুনধর ছেলে।তাদের দেখে চারু উঠে দাঁড়ায়।চারুর খালা এসে চারুকে বসিয়ে দিয়ে নিজে পাশে বসেন।তারপর শুরু করে দেন হাউ ডু ইউ ডু।একপর্যায়ের হাউ ডু ইউ ডুর পালা শেষ হলে তিনি ডিনারের জন্য আসতে বলে সেই স্থান ত্যাগ করেন।এতক্ষন থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল ছেলেটা আর রিমি।রিমি এবার তার ভাইকে বলে,

—‘ আদনান ভাইয়া,কালকে আমরা বেড়াতে যাব। ‘

চারু বুঝতে পারে তার গুনধর খালাতো ভাইয়ের নাম আদনান।আদনান একবার চারুর দিকে আরেকবার রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই তোদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েদের সাথে ঘুরতে বের হওয়ার। ‘
এই বলে মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি কেটে সেই স্থান ত্যাগ করে আদনান।রিমি আর চারু তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।

৪.

চারুকে নিয়ে ডিনার টেবিলে হাজির হয় রিমি।চারু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় তাদের আগে থেকেই সেখানে বসে আসে আদনান ও তার মা।চারু গিয়ে আদনানের পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ে।রিমি বসে পরে চারুর পাশের চেয়ারটায়।রিমির মা সবাই ভাত দিতে শুরু করে।চারু তার খালামনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ খালামনি,খালু বাসায় নাই? ‘

তার খালা মনি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

—‘ তোর খালু কয়েকদিনের জন্য ঢাকা গেছে। ‘

তারপর কেউ আর কোনো কথা না বলে খেতে শুরু করে।খাওয়ার শেষপর্যায়ে চারু অনুভব করে কেউ তার পায়ের মধ্যে সজোড়ে লাথি মেরেছে।সে বহু কষ্টে মুখ দিয়ে শব্দ করা হতে বিরত রাখে নিজেকে।তারপর তার কড়া চোখ দিয়ে টেবিলের প্রত্যেকটা ব্যাক্তির দিকে তাকায় চারু।সবার মনোযোগই নিজ নিজ প্লেটের দিকে।চারু বুঝতে পারেনা কে এই অকাজটা করলো?
সেদিনের মতো ডিনার শেষ করে চারু।পানি খেয়ে রিমির ঘরকে উদ্দেশ্য করে হাটতে শুরু করে।তার আগেই রিমি নিজের ঘরে চলে গেছে।

চারু রিমির ঘরে যাওয়ার সময় মাঝে একটা সুন্দর ঘর লক্ষ্য করে।কৌতুহল বশত ভিতরে প্রবেশ করে চারু।ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের চারদিকটা দেখতে শুরু করে চারু।তার চোখ আটকে যায় বিছানার উপরে থাকার মোবাইলটার দিকে।চারু ভয় নিয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়।তারপর কোণের বাটনটাতে চাপ দিয়ে মোবাইলটা অন করে।

মোবাইলটা অন করে ওয়ালপেপারটা দেখে চিল্লিয়ে ওঠে চারু।সাথে সাথে রুমের ভিতরে আগমন ঘটে আদনানের।বিছানার উপর চারুকে মোবাইল হাতে দেখে তারাতারি এসে চারুর হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নেয় সে।তারপর খানিকটা কড়া গলায় বলে,

—‘ তুই আমার রুমে কেন?এসেছিস এসেছিস আবার মোবাইলেও হাত দিয়েছিস।তোর সাহস তো কম নয়! ‘

চারু ঘৃণিত চোখে তাকায় আদনানের দিকে।তারপর আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ আপনি এত বেহায়া আমি জানতাম না।ছি. ছি.।আপনি কিভাবে এত বেয়াদপ হইলেন।আপনার বাবা-মা দুইজনেই ভালো কিন্তু ছেলেটা নাম্বার ওয়ান বেয়াদপ।ছি. পাশে দুইটা মেয়ে নিয়ে কিভাবে ছবি তুলছে… ‘

চারু আর কিছু বলার আগেই আদনান চারুর মুখটা টিপে ধরে।তারপর খানিকটা রেগে বলে,

—‘ খুব কথা বলস তুই।আমি বেয়াদপ।আরো দেখবি এরকম ছবি।এই দেখ.. ‘

এইবলে মোবাইলের লক খুলে গর্বের সহিত আরো ছবি দেখাতে শুরু করে আদনান।এসব ছবি দেখে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয় চারু।আদনান এবার চারুকে দার করায়।তারপর এক রহস্যময়ী গলায় বলে,

—‘ আমি তোর মতো সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকি না।পড়তে পড়তে নিজের শরিরটাকে তো ডান্ডানাচুনি বানিয়ে ফেলেছিস।আমার কাছে লাইফ মানে চিল।তোর মতো বই‌ নিয়ে পড়ে থাকা নয়।আরো দেখবি নাকি পিক গুলা। ‘

চারু আর কোনো কথা না বলে তৎক্ষণাৎ আদনানের রুম ত্যাগ করে।চারু খুব রেগে গেছে।এই ছেলের সাহস কম নয় তাকে কিনা বলে ডান্ডানাচুনি।এর প্রতিশোধ সে নিবেই।এরকম আরো নানা কথা বিরবির করতে করতে রিমির রুমে প্রবেশ করে চারু।দেখে রিমি ঘুমিয়ে পড়েছে।চারুও গিয়ে শুয়ে পড়ে রিমির পাশে।ঘুমিয়ে পড়ে সেদিনের মতো।

৫.

রাত ২ কি ৩টার সময় এক আজব চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে চারু আর রিমি দুজনেরই।দুজনে তারাহুরো করে দরজা খুলে বের হয়।বের হয়েই বুঝতে পারে কতবড় ভুল করে ফেলেছে।এই গভীর রাতে তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছে একদল ডাকাত।দুজন ডাকাত এসে রিমি আর চারুর গলায় ছুরি ধরে…

চলবে…

তৃণশয্যা পর্ব-০১

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১ম_পর্ব

চলন্ত বাসে হঠাৎ পিরিয়ড শুরু হয় চারুর।সে তার পাশের ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,-“আপনি একটু আমাকে জানালার দিকের সিটটা দিবেন।আমার একটু দরকার আছে।না হলে কিন্তু আপনার গায়েই বমি করে দিব।”চারু ছেলেটিকে মিথ্যা বলে পিরিয়ডের কথা চেপে যায়। ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ এটা আমার সিট আর আমি এখানেই থাকবো,একটু নড়বো না।তাতে আপনি কি করবেন করুন?বেশি দরকার হলে আমার সামনেই পড়ুন না!’

ছেলেটাকে অনেক অনুরোধ করলেও ছেলেটা তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।এদিকে চারু কষ্ট বাড়তে শুরু করে।সে তার চোখ বন্ধ করে,এক ঠোট দিয়ে আরেক ঠোট কামড়ে ধরে সিটে হেলাম দিয়ে শুয়ে থাকে।তা দেখেও ছেলেটার মায়া হয় না।সেও সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।

দীর্ঘ ১দিনের জার্নির কেবল ১২ঘন্টা অতিবাহিত হলো।এখনো ১২ঘন্টা রয়েছে।চারুর কষ্টের পরিমাণ ধিরে ধিরে বাড়তে থাকে।চারু যদি জানতো এইরকম একটা লোক তার পাশে বসবে তাহলে খালার বাসা যাওয়ার প্লানটাই ক্যান্ছেল করে দিত।এদিকে ছেলেটার টের চোখে চারুর দিকে তাকাচ্ছে আর চোখ বন্ধ করে নিচ্ছে।
একপর্যায়ে চারুর পাজামা রক্তে ভিজতে শুরু করে সাথে ব্যাথায় বাড়তে শুরু করে।এটা তার জীবনের তৃতীয় পিরিয়ড।আগেও দুইবার এরকম ব্যাথা সহ্য করেছে তবে এবারের টা আগের বাড়ের তুলনায় ঢের বেশি।রক্ত আস্তে আস্তে দখল নিতে শুরু করেছে সমস্ত পাজামা।চারু এক ঠোট দিয়ে আরেক ঠোটকে কামড়ে ধরে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।ছেলেটা চারুর রক্তাক্ত পাজামার দিকে তাকিয়ে আছে।

চারু এবার সিদ্ধান্ত নেয় শত কষ্ট করে হলেও ড্রাইভারকে বলে বাসটা থামাতে হবে।এজন্য সে উঠে দাড়ায়।সে উঠে দাঁড়াতেই ছেলেটা তার পাজামার দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ আমি আপনাদের মতো কমনসেন্স হীন মানুষ কখনো দেখিনি।এইরকম ইমপর্ট্যান্ট একটা মুহর্তে কিভাবে পারেন এভাবে জার্নি করতে।নিন আমি অন্যদিকে ঘুরছি? ‘

এই বলে ছেলেটা অন্যদিকে তাকায়।পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখদুটো বেধে নেয়।চারুর ভাগ্য ভালো যে সে বাসের সর্বশেষের কোণের সিটে বসেছে।নাহলে আজ তাকে বিশাল এক বিরম্মনায় পড়তে হতো।ছেলেটা অন্যদিকে তাকিয়ে চোখবাধা অবস্থায় চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ নিন,তারাতারি শেষ করুন ‘

ছেলেটার আদেশ পেয়ে চারু খানিকটা কষ্ট করে হলেও তার ব্যাগটা নামায় উপর থেকে।তারপর ব্যাগের চেইন খুলে খুঁজতে শুরু করে এই মুহুর্তে তার কাঙ্খিত জিনিসটা।সে সমস্ত ব্যাগের কাপড় ওলট-পালট করেও খুঁজে পায় জিনিসটা।চারু বেশ চমকে ওঠে।এদিকে ছেলেটা বারবার তাকে তাগদা দিয়েই চলেছে।চারু শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে একটা মোটা কাপড়ের পাজামা বের করে নিজের ব্যাগ থেকে।তারপর ঝটপট এমনভাবে কমড়ে বেধে নেয় যাতে রক্তাক্ত পাজামাটা দেখা না যায়।চারু পাজামাটা ভালো করে বেধে নিয়ে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ এবার চোখটা খুলুন ‘

চারুর নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে চোখ খোলে ছেলেটা।প্রথমই অবাক হয়ে তাকায় চারুর পাজামার দিকে।তারপর উপর দিকে তাকিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ কাজ হয়েছে তো? ‘

চারু শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে না।তার উত্তর পেয়ে ছেলেটা আবার ‌নিজের কানে হেডফোন গুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে পড়ে।এদিকে চারু বুঝতে পারছে না কিছুই?সে নিজে স্যানিটারি প্যাডটা ব্যাগের ভিতরে রেখেছিল তাহলে এখন নাই কেন?এদিকে ব্যাথা খানিকক্ষ‌‌নের জন্য হালকা একটু কমলেও পরবর্তির কথা চিন্তা করে বেশ চিন্তিত হয় চারু।

২.
‘ রাউজান আইসা পড়ছি,কেডা কেডা নামবেন? ‘

হেলপারের এই কথাটায় চারু আর তার পাশের ছেলেটা দুজনেই জেগে যায়।দুজ‌নে ব্যাগ গুছিয়ে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।প্রথমে ছেলেটা নেমে পড়ে বাস থেকে তারপর চারু।তারা বাস থেকে নামতেই বাসটা চলতে শুরু করে।

চারু আস্তে করে গিয়ে বসে পড়ে একটা দেয়ালে।দেয়ালটা অনেকটা নিচু হওয়ায় বসতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হয় ‌না তার।ছেলেটা চারুকে এক হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে বলে,

—‘ বাই,বাই।ভাগ্যে থাকলেও দেখা হবে আবার। ‘

এই বলে ছেলেটা হাটতে শুরু করে।চারু ধুমমম মেরে সেখানেই বসে থাকে।কিছুক্ষন পরই পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যা নামবে।চারদিকে নামতে শুরু করবে ঘন কালো অন্ধকার।কিন্তু এখনো কোনো খবর নেই তার খালা কিংবা খালুর।এদিকে সে তার খালার বাসার ঠিকানাও জানেনা।বাসায় যে ফোন দিয়ে ঠিকানাটা জেনে নিবে তারও উপায় নেই।ফোনে নাম্বার ডায়াল করে কল দিতেই ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ সুন্দর করে বলছে,

‘ আপনার ফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যালে‍‌ন্স নেই,অনুগ্রহ করে রিসার্জ করুন অথবা ডায়াল করুন এত এত নাম্বারে।আরো ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলছিল ‘

এদিকে পাজামার রক্ত শুকিয়ে গিয়ে এক বিরক্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছে।চারু বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত?সে মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে খানিকটা চমকে ওঠে।এত তারাতারি কিভাবে আটটা বেজে গেল বুঝতে পারছে না।চারু সিদ্ধান্ত নেয় আর এখানে বসে থাকবে না।সামনে আগাবে খানিকটা।তারপর কোনো এক মোবাইল রিসার্জের দোকানে দিয়ে মোবাইল রিসার্জ করে বাসায় ফোন দিয়ে ঠিকানাটা জে‌নে নেবে।

চারু তার ব্যাগটা নিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে শুরু করে।বেশ কিছুটা কষ্ট হলেও থেমে থাকে না।চারু খানিকটা সামনে একটা দোকান দেখতে পায়।ঠোটে ঠোট চেপে সেই দোকানকে লক্ষ্য করে হাটতে শুরু করে।একপর্যায়ে সে এসে দাঁড়ায় দোকানের সামনে।দোকানি একজন মহিলা।চারু মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ এখানে কি ফেক্সিলোড করা হয়? ‘

মহিলা একবার চারুর দিকে তাকিয়ে কিছুটা শুস্ক গলায় বলে,

—‘ হ্যাঁ।করবেন নাকি?নাম্বার দিন ‘

চারু আর কোনো কথা না বলে মহিলাকে নাম্বারটা দিয়ে দেয়।মহিলা চারুর কথা অনুযায়ী তার ফোনে ৫০টাকা রিচার্জ করে দেয়।চারু টাকা পরিশোধ করে মোবাইল বের করে প্রথমে বাসায় ফোন দেয়।প্রায় ৫-৬ বারের মতো রিং হওয়ার পর তার ছোট বোন মারিয়া ফোন ধরে।চারু মারিয়াকে বলে ফোনটা তার বাবাকে দিতে।ছোট্ট মারিয়া বড় বোনের কথা অনুযায়ী ফোনটা তার বাবাকে দেয়।চারু এবার তার বাবার কাছ থেকে ঠিকানাটা শুনে একরকম মুখস্থ করে ফেলে।তারপর ফোন কেটে দিয়ে খুঁজতে শুরু করে ঠিকানাটা।

৩.
‘ এই ধর মেয়েটাকে,রক্তভেজা গোলাপ।আজকের রাতটা মনে হয় খুব মজায় কাটবেরে। ‘

বিচিত্র এরকম কথা শুনে চমকে পিছনে তাকায় চারু।কয়েকটা ছেলে তার দিকে এগোচ্ছে।ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় তার।এদিকে ব্যাথা আগের ন্যায় একটু বেড়েছে।চারু বুঝতে পারছে সে দৌড়াতে পারবেনা।তবুও দৌড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে সে।একহাতে ব্যাগ অন্যহাতে মোবাইল নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে সে।দৌড়ানোর মাঝে লক্ষ করে কমড়ের পাজামাটা খুলে পড়ে গেছে।বেড়িয়ে এসেছে রক্তাক্ত পাজামাটা।চারু সেদিকে ভ্রু-কুটি না করে দৌড়াতেই থাকে।ছেলেগুলো তার খুব কাছে চলে এসেছে।চারু মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ছে।হঠাৎ সে ধাক্কা খায় একজন লোকের সাথে।লোকটা তাকে না দেখে বলে ওঠে,

—‘ আজকাল রাস্তায় এইসব পাগল যে কোথা থেকে বেড়োয়,ধুর। ‘

এই বলে লোকটা চারুর দিকে তাকায়।চারুও তাকায় লোকটার দিকে।দুজনে চমকে ওঠে দুজনকে দেখে।চারু আর লোকটা একসাথে বলে ওঠে,

—‘ আপনি এখানে? ‘

দুজন একসাথে বললেও ছেলেটার কথাই শোনা যায়।চারু ঝটপট গিয়ে ছেলেটার পিছনে দাঁড়ায়।পিছনের ছেলেগুলো ততক্ষনে এসে পৌছেছে তাদের সামনে।ছেলেটাকে দেখামাত্র অন্য ছেলেগুলো ভয়ে দৌড়াতে শুরু করে।চারু অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকায়।চারু কিছু বলার আগেই ছেলেটা চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ আপনি এখানে কেন?এখনো যান নি। ‘

চারু এবার সব বলে ছেলেটাকে।ছেলেটা চারুর দেওয়া ঠিকানা শুনে বেশ অবাক হয়।সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ ওই বাড়ির লোকটা আপনার কি হয়? ‘
চারু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়,’খালু’

চারুর উত্তর শোনার সাথে সাথে ছেলেটা চারুর পিঠে খুব জোরে একটা মাইর দেয়।চারু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটা চারুকে…

চলবে..

তোমায় ঘিরে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Last_Part
.
.
🥀রিদির বাসায় পৌঁছে গেছিবঅনেকক্ষণ আগেই।রাস্তায় উনার আর কারীমার ঝগড়া খুনসুটি দেখতে দেখতে ওর বাসায় পৌঁছেছি আমরা।বড্ড বিরক্ত লাগছিলো ব্যাপারটায়।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো আমার।ইচ্ছ করছে মেরে দুটোকে গুম করে দেই।কি হাসাহাসি!রং-তামাশা উফফ! বিরক্তিকর।এই আরাভকে ঠাস!ঠাস! করে কয়েকটা চড় দিতে ইচ্ছে করছিলো আমার কিন্তু পারলাম না।যতই হোক স্বামী হন আমার।এগুলো মনে আনাও পাপ।গাড়ী থেকে নামতেই রিদির বর রিয়ান ভাইয়া এগিয়ে আসলেন আমাদের স্বাগত জানানোর জন্য।আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন উনি।বাড়ির ভিতর ঢুকেই রিদির কাছে যেতে চাইলাম আমি। আমাকে রিদির রুম দেখিয়ে দিলেন ভাইয়া।ওর রুমে প্রবেশ করতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো রিদি।যেন কতদিন পর পেয়েছে আমায়।গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গায় রিদিকে মানিয়েছে ভারী।
.
পুরো বাড়ীটা ঘুরে দেখার জন্য বাহিরে হাঁটছি আমি আর নাদিরা।কারীমা কে সেটা নাদিরাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু আশানুরূপ কোনো জবাব পাইনি আমি।কেমন একটা রহস্য আছে এই মেয়েটার মধ্যে।নাদিরাও ওর বিষয়ে ক্লিয়ার করে কিছু বললো না আমায়।হঠাৎ চোখে পড়লো সামনে আরাভ আর মেয়েটা গল্প করছে।মেয়েটা একদম গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে উনার।পারছে না উনার ভিতর ডুকে যেতে।যদি পাতে তাহলে একদম উনার ভিতরেই ডুকে পড়তো।কি গাঁয়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে বাবা।এমন মেয়ে আমি জন্মেও দেখিনি।একটা বিষয় ভেবেই অবাক হই….যেই আমি উনার স্ত্রী হওয়া সত্বেও আমার কাছ থেকে ডিস্টেন্স মেইনটেইন করে চলতেন উনি।সেই উনিই কিনা আজ ওই মেয়েটার সাথে এত ক্লোজ হয়ে কথা বলছেন।এটা কীভাবে সম্ভব খারাপ লাগছে না।না লাগবেই বা কেন ওই মেয়েটা তো আর সবার মতো না।ওটা তো গার্লফ্রেন্ড হয় উনার।নাহ!এদের আর চোখে দেখা যায় না।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের কাছ থেকে দূরে চলে যেতে হবে আমায়।নইলে নিজেকে কিছুতেই আটকাতে পারবো না আমি।রাগের বশে কি করতে না কি করে ফেলি।হয়তো কখনও এমন কিছু করে ফেলবো যেখানে নিজের অনুভূতি গুলো বাইরে বেড়িয়ে আসবে উনার সামনে।যা কখনও চাই না আমি।আজকে সন্ধ্যায়ই বাসায় ফিরে যাবো আমি।আর কখনও উনার সামনে আসবো না।
.
রিদির বাসা থেকে এসেছি মিনিট দশেক হবে বাসায় যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ ধরে বলে চলেছি আন্টিকে।কিন্তু আমাকে কিছুতেই যেতে দেবেন না উনি।কত করে বুঝিয়েও কাজ হলো না।ফলাফল শূন্যের কোঠায়!মুখ গোমড়া করে বসে আছি।তার একটা কারণও আছে।আসার সময় সেই কারীমা সংকটে পড়তে হয়েছে আমায়।ওই কারীমার জন্যই রাগ দেখিয়ে অনিচ্ছা থাকা স্বও্বেও আহানের সাথে ফিরেছি আমি।কিছুক্ষণ গাল ফুলিয়ে বসে বাইরে বের হলাম আমি।উদ্দেশ্য আরাভ আর কারীমা কি করছে সেটা দেখা।কেন জানিনা খুব ইচ্ছে করছে জানতে কিন্তু কেন সেটাও জানিনা আমি।মন বলছে দেখে আয় আর পা বলছে যাস না।এই দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছি আমি।শেষমেশ নিজের সাথে যুদ্ধ করে বাইরের যাওয়ার জন্য পায়ের সিদ্ধান্তকেই মেনে নিলাম আমি।বাইরে বের হয়ে বাগানের পাশে যেতেই আমার চোখ ছানাবড়া।এরকম দৃশ্য কখনও দেখবো ভাবতেও পারিনি আমি।বিশ্বাস জিনিসটা ঠুনকো সেটা আজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে জানান দিয়ে গেলো আমায়।আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।হাত পা অসার হয়ে যাচ্ছে আমার।চোখ থেকে ঝরে পড়ছে এক সমুদ্র পানি।সামনে থাকা পরিস্থিতি যেন বুঝতেই পারছি না।বড্ড এলোমেলো লাগছে।রাগটাকে কিছুতেই কনট্রোল করতে পারছি না আমি।অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ।।সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আরাভ আর কারীমা।স্পষ্ট দুজনে কিস করতে ব্যস্ত তাই আমাকে দেখতেই পাচ্ছে না।এংরি ফেস নিয়ে গুন্ডিদের মতে উড়াল চণ্ডীর রূপ নিয়ে কারীমাকে এক ধাক্কায় উনার থেকে সরিয়ে দিয়ে উনার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম আমি।ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে কিছুটা দূরে ছিটকে পড়লো কারীমা। আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছেন উনি।যেন কিছু বুঝে উঠতেই পারছেন না। হিটহির করে টানতে টানতে বাগানের একপাশে উনাকে নিয়ে গেলাম আমি।উনি বাধ্য ছেলেট মতো আমার সাথে ছুটে চলেছেন।উনাকে দাঁড় করিয়ে উনার শার্টের কলার চেপে বলে উঠলাম….
.
ওই মেয়েটার সাথে কি করছিলেন আপনি…?কি হয় ও আপনার…?কেন ওর সাথে এত কথা বলেন…?সারাদিন ওর সথে সাথে থাকেন কেন…?কিসের জন্য এন্সার মি!!
.
শান্ত গলায়….”মিহু শান্ত হও”!আমার কথাটা শোনো!!
.
কি শুনবো আমি!নিজের বউ থাকা স্বও্বেও অন্য একটা মেয়ের সাথে ছিঃ ছিহ!আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে আপনি আমার স্বামী।
.
লজ্জা লাগার কি আছে!!এমনিতেও তুমি তো আমাকে স্বামী হিসেবে মানোই না তাহলে আমি কার সাথে মিশলাম,কার সাথে কথা বললাম তাতে তোমার কি….?তোমার তো কিছু যায় আসার কথা না তাহলে…….
.
আমার যায় আসে!!কারণ আমি না মানলেও পুরো পৃথিবী জানে আপনি আমার স্বামী।সেই আপনি কিনা কারীমার সাথে এসব করছিলেন…
.
পুরো পৃথিবী দিয়ে কি হবে যেখানে তুমিই মানো না।যাগগে ছাড়ো আমাকে আমার কাজ আছে।
.
উনার কথা শুনে আরো রেগে গেলাম আমি।আমাকে ইগনোর করা।কলারটা আরেকটু চেপে ধরে কি কাজ…ওই কারীমার সাথে আমার জন্য পুরোটা করতে পারেন নি সেটা আই মিন ওই কাজটা করতে যাবেন বুঝি….কিছুতেই যেতে দেবো না আমি।
.
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে করলে করতেও পারি!!আচ্ছা আমি যদি কারীমাকে কিছু করেও থাকি বা করতে চাই তাতে তোমার অসুবিধা টা কোথায়…?যদি আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে কাছে টেনে নিতে তাহলে এর কিছুই হতো না।
.
আমি এসব শুনতে চাই না।আপনি ওই মেয়ে কেন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূরে থাক চোখ তুলে তাকাবেনও না বুঝেছেন।
.
না বুঝিনি!!আমি মেয়েদের দিকে একবার নয় একশোবার তাকাবো।তাতে তোমার কি…?কে হও তুমি আমার…?
.
কিছুতেই তাকাতে পারবেন না আপনি।কারণ আপনার উপর একমাত্র আমার অধিকার আর কারোর নয়।আপনি শুধু আমার আর কারোর নন।আমি আপনাকে ভালোবাসি।শুধু আমার মুখের কথাটাই শুনলেন মনটা বুঝলেন না খুব!খুব!খুব! খারাপ আপনি।উনাকে জড়িয়ে কেঁদে চলেছি আমি।কাঁদতে কাঁদতে উনার বুকে মাথা গুজে দিলাম আমি আহ!কি শান্তি।আমাকে পরম যত্নে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে ধরলেন উনি।উনাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছি আমি।আর আমাকে সামলাতে ব্যস্ত উনি।কিন্তু কোনো কথা বলছেন না।অনেকক্ষণ পর হুশে ফিরলাম আমি।এটা আমি কি করেছি।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে আমার।নাক টেনে উনাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে চাইছি কিন্তু ছাড়ছেন না উনি।
.
উহুম নড়ো না!আমাকে তুমি ভালোবাসো সেটা সেদিন বললে না কেন হুম..?জানো আজকে আমার থেকে খুশী আর কেউ নেই আমার লাল টুকটুকে বউটা আমায় ভালোবাসে।এর চাইতে খুশীর খবর আর কি হতে পারে হুম।
.
ছাড়ুন বলছি!!আমি কিছুই বলিনি ওটা আপনার মনের ভুল তাছাড়া কিছু নয়।
.
তাই বুঝি বউ মণি কিন্তু আমরা তো সব শুনে নিয়েছি বলে পেছনে থেকে বেড়িয়ে এলো নাদিরা রামীম ভাইয়া আর কারীমা।ওদের আসতে দেখে আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।লজ্জায় মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
.
আহা!ফাইনালি বউমণি ভাইয়াকে মনের কথাটা বললো।থ্যাংকস কারীমা আপু ভাইয়াকে হেল্প করার জন্য।
.
নাদিরার কথায় বিস্মিত হলাম আমি।কারীমা হেল্প করেছে মানে!প্রশ্নবিদ্ধ চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
.
রামীমঃবুঝলে না তো!আমি বলছি।তুমি আরাভকে ভালোবাসো কিনা সেটা জানার জন্য কারীমা কে আমরা নিয়ে এসেছিলাম তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য।কারীমা যা করেছে আমাদের কথায় করেছে।এখন আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল!ওকে আর তোমাদের মধ্যে থাকছি না আমরা।এবার নিজেরা নিজেদের বুঝে নাও।আসছি বাই বলে চলে গেলেন উনারা।
.
দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ হলো।কারো মুখে কোনোকথা নেই।আচমকা আমকে জড়িয়ে ধরলেন উনি….উনার ব্যবহারে শকড আমি কি হচ্ছে টা কি…?ছাড়ুন আমায়..!!
.
আমার বউকে আমি জড়িয়ে হার্টবিট শুনছি শুনতে দাও তো!ডিস্টার্ব করো না। এই পাগলি মেয়ে ভালোবাসো তাহলে এত দূরে সরিয়ে রেখেছো কেন আমায়।
.
আমি কখন আপনাকে দূরে সরালাম আপনিই তো আমাকে দূরে সরিয়ে দিলেন।আমার ইচ্ছে অনিচ্ছা,মতামত নেওয়ার প্রয়োজনই মনে করলেন না আপনি তাহলে এখন এসব আমায় বলছেন কেন..?
.
আমাকে ছেড়ে দিয়ে আচ্ছা বাবা সরি!এই কান ধরছি আর কোনোদিন এমন হবে না।আমি ভেবেছিলাম বিয়ের অজুহাতে তোমায় আটকালে তোমার প্রতি অন্যায় হবে ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতবড় ভুল করেছি আমি।ক্ষমা করবে না আমায়..?
.
দেখুন!ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই।যা হওয়ার হয়ে গেছে বাদ দিন।
.
যা হয়েছে ঠিক আছে।কিন্তু এবার কি আমরা পারি না নতুন করে শুরু করতে।যেখানে আমরা দুজন দুজনকে চাই সেখানে কি কোনো সমস্যা আছে।প্লিজ মিহু আমায় ফিরিয়ে দিও না।ভুল করেছি তার শাস্তি তুমি এভাবে আমায় দিও না।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি।প্লিজ ক্ষমা করে দাও এই দেখ আমি কান ধরছি প্লিজ!
.
বাচ্চাদের মতো কান ধরতে দেখে হেসে উঠলাম আমি।অপলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।আমি ক্ষমা করেছি না বললে কান ছাড়বেন না তিনি।শেষমেশ উনাকে ক্ষমা করে দিলাম আমি…!!
.
.
পরেরদিন সকাল বেলা আন্টিকে আমাদের ব্যাপারে সত্যি টা বলে দিলেন উনি।উনাকে আগে থেকে না জানানোও কিছুটা মন খারাপ থাকলেও এই বিষয় টায় ব্যাপক খুশী।উনার বাসা থেকে বিদায় নিয়ে আমাকে নিয়ে আমাদের বাসায় ছুটলেন উনি।আগে থেকেই এই ব্যাপারে অবহিত আছেন ভাইয়া।আজ আব্বুর কাছ থেকে আমাকে চেয়ে নিবেন উনি।খুব ভয় হচ্ছে যদিও জানিনা আব্বু কি বলবেন।আব্বু আম্মুকে মানিয়ে নিয়েছেন উনি।আমাকে নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন নিজ গন্তব্যে।উনার কথায় পড়েছি উনার দেওয়া নীল শাড়ি।বিকেলে আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন উনি বাসায় পৌঁছাতেই খবর পেলাম মেহরুকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে।ওর একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।দেখতে একদম মেহরুর মতোন।কি কিউট!প্রথমদিনই হাসছিলো।নীলাভ ভাইয়া মেয়েকে পেয়ে ভীষণ হ্যাপী।কোল থেকে নামাতেই ছাইছেন না উনি। এটা দেখে মেহরুও খুব খুশী।আমাকে দেখে খুশীতে চোখ চিকচিক করছে আন্টির।বুঝাই যাচ্ছে আমার ফিরে আসাটায় কতটা আনন্দিত উনি।মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন…..এই ফ্যামিলি এখন পরিপূর্ণ।আমার দুই বৌমা আর দুই ছেলেকে নিয়ে এবার আমি খুব সুখে দিন কাটাবো।আর কোনো দুঃখ দুর্দশা যেন না আসে।
.
.
এক বছর পর…..
আজ আমাদের প্রথম এ্যানিভারসারি!!ব্যাপারটায় কোনে বিশেষ প্ল্যান নেই আমাদের।নেই সেলিব্রেশনের জাঁকজমকতাও।নাদিরা নীলাভ ভাইয়া চেয়েছিলেন ধুমধুাম করে সেলিব্রেইট হোক কিন্তু আমরা সেটা চাই নি।তাই সব প্ল্যান ক্যানসেল।আমাকে নিয়ে বিকেলে বের হবেন উনি।আমরা নিজেদের মতো সেলিব্রেইট করবো দিনটি।
.
নদীর পাড়ে পা ডুবিয়ে দুজনে বসে আছি পাশাপাশি।নির্জন কোলাহল হীন স্থান।শহর থেকে খানিকটা দূরে।এই ইট পাথরের শগরের মাঝে এমন প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখবো ভাবতেও পারিনি।উনার কাঁধে মাথা দিয়ে নদীর ঢেউ দেখতে ব্যস্থ আমি।আমার হাত দুটো উনার মুঠোয় ভরে হঠাৎ বলে উঠলেন উনি…..সেদিন প্রপোজ করেছিলাম গোলাপটা ফেলে দিয়েছিলে আজ আমার অপূর্ণ আবদার পূরণ করে দাও বলে আমাকে কোলে করে নদী থেকে একটু দূরে দাঁড় করালেন। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন আমার সামনে।আমার হাত ধরে এক গুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন…..
.
ভালোবাসি মিহু!খুব ভালোবাসি।এভাবে তোমার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রেখ আমায়।কিচ্ছু চাই না আমি শুধু তোমাকেই চাই।তোমায় ঘিরে তোমায় নিয়ে বাঁচতে চাই।তোমার হাত ধরে তোমার পাশাপাশি হাঁটতে চাই…!!কি এইটুকু কি পেতে পারি আমি…?
.
উনার কথা শুনে চোখ টলমল করছে আমার।এই কান্না দুঃখের,নয় সুখের!! মানুষ অতি সুখেও কাঁদে আমিও তাই কাঁদছি।উনার হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে ধরা গলায় বলে উঠলাম….অবশ্যই পাবেন আপনি!!আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি আরাভ।আপনার সুখে দুঃখে পাশে থাকতে চাই।ভালোবাসতে চাই!আপনাকে ঘিরেই বাঁচতে চাই…!!
.
বসা হতে উঠে দাঁড়ালেন উনি।আমাকে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে চোখ মুছে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন উনি।কেঁদো না মিহু।তুমি জানোনা তোমার কান্না সহ্য হয় না আমার।এবার থেকে কোনো কান্না আমরা শুধু হাসবো।
.
হুম!! আর কাঁদবো না।
.
এভাবে সবসময় হাসিখুশি থাকবো মোরা।ঝগড়া করবো আবার ভাব করে ভালোবাসবো।একে অন্যকে ঘিরে বাঁচবো।আমায় ঘিরে তুমি আর #তোমায়_ঘিরে♥️ আমি…..!!

______সমাপ্ত______

তোমায় ঘিরে পর্ব-১৬

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_16
.
.
🥀উনার দেওয়া গিফট হাতে নেড়ে ছেড়ে দেখে চলেছি আমি খুলবো নাকি খুলবো না এই দোটানায় আছি।তখনই হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো নাদিরা।আমি নাদিরার দিকে একবার তাকিয়ে প্যাকেট টা লুকানোর বৃথা চেষ্টা করলাম!কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।প্যাকেটটা দেখলে এখন নিরানব্বই টা প্রশ্নোওর ওকে দিতে হবে আমায়।যা এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম।কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি যাই ভাবি তার বিপরীত টাই ঘটে।এবারও তার ব্যাতিক্রম হলো না।
.
আরে বউমণি আমাকে দেখে ওটা কি লুকালে তুমি…?দেখি দেখি ওটা কি…?
.
জিনিসটা দেখের জন্য খুব এক্সাইটেড নাদিরা।এটা এখন ওকে দেখতেই হবে।উপায় না পেয়ে ওকে দেখাতে বাধ্য হলাম আমি।প্যাকেট টা হাতে নিয়ে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে নাদিরা।কিন্তু খোলার মত পোষণ করছে না।প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে…..
.
নাও তোমার গিফট তুমিই খোলো….!!
.
আরে নাহ্!!তুমিই খোলো।নিজের হাসবেন্ডের দেওয়া প্রথম গিফট সেটা আমি কেন খুলবো বাপু!তুমিই খেলো।
.
নাদিরার কথায় কিছুটা বিস্মিত হলাম আমি।নাদিরা কি করে জানলো এটা উনিই দিয়েছেন।নাদিরার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি।তুমি কি করে জানলে…?
.
আরে বাবা!আমার সামনেই তো একই কালারের দুইটা পার্সেল এলো এখন একটা দেখছি তোমার কাছে তাহলে অপরটি কোথায়…?আচ্ছা যাগগে সেটা পরে পাওয়া যাবে।ওগো বউমণি খোলো না আমার তো তর সইছে না।
.
প্যাকেট খুলে অবাক আমি লাল শাড়ি।হঠাৎ উনি আমায় শাড়ী দিলেন কেন তাও টকটকে লাল।শাড়ীর সাথে ম্যাচিং সব আছে।গিফট বক্স খোলার পরই শাড়ী আর জুয়েলারির উপর হামলে পড়লো নাদিরা।আমার ভাইয়ার পছন্দ আছে।কি সুন্দর হয়েছে হেনতেন!প্যাকেটের এক সাইডে একটা চিরকুট।চিরকুট হাতে পড়তে শুরু করলাম আমি।
.
এটাই তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া।আর কোনোদিন হয়তো দেখাও হবে না আমাদের।এটাই শেষ!তাই জীবনের শেষ বাবের মতো তোমাকে নিজের মতো করে একটা দিন দেখতে চাই আমি।খুব ইচ্ছে ছিলো নিজের বউকে লাল শাড়ী পড়িয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে সারাদিন নিয়ে ঘুরবো কিন্তু তা তো হওয়ার নয় তাই আজকে রিদির বাসায় যাওয়ার সময় যদি এটা পড়ো তাহলে আমি খুব খুশী হবো।যদিও আমার খুশী আনন্দে তোমার কিচ্ছু যায় আসে না।তবও প্লিজ আমার শেষ ইচ্ছা ভেবে পড়ে নিও।আর যদি না পারো তাহলে ফেলে আসা গোলাপ মানে আমার ভালোবাসাকে যেভাবে ফেলে এসেছো সেভাবে ফেলে দিও…!!

চিরকুট টা পড়ে চোখ থেকে অনবরত জল পড়ছে আমার।এটাই আমাদের শেষ দেখা কিন্তু কেন উনি কোথাও চলে যাচ্ছেন নাকি!!বুকের ভিতরে হাজারো কষ্ট জমাট বেঁধে আছে।কাল ফিরিয়ে দিয়েছি বলে সারাজীবন একরকম থাকবো এটা কি করে ভাবলেন উনি।
.
রিদির রিসেশনে যাওয়ার জন্য তৈরী সবাই।নাদিরা আমি সেজেগুজে বসে আছি।নাদিরা গাউন পড়েছে শাড়ীর বোঝা আর বইতে পারছে না।যাওয়ার জন্য বাইরে বেড়িয়েছি তখন পেছন থেকে উনার গলা পেয়ে থমকে গেলাম আমি।স্পষ্ট আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ উনি।মাথানিচু করে মুচকি হাসছি আমি।
.
বরাবরই তুমি খুব সুন্দর!!যাই পড়ো না কেন তোমাকে মিষ্টি দেখায়।আজকেও তার ব্যাতিক্রম নয়।তোমাকে দেখে এখন এটাই মনে হচ্ছে আমার এই লাল রংটা একমাত্র তোমার জন্যই বানানো হয়েছে।এই মেয়েটাকে যত দেখি ততই মুগ্ধ হই আমি।প্রতিদিন যেন ওর প্রতি এক্সট্রা ভালোভাগা কাজ করে আমার।দুধে আলতা গয়ের রং পড়নে লাল শাড়ী,ম্যাচিং চুড়ি,জুয়েলারি,চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।লম্বা চুল গুলো কোমড় পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে এই সাজেই পরীর মতো লাগছে আমার বউটাকে।ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে একটু আদর করি।কিন্তু তা তো হওয়ার নয়।বউ যে এখনও আমাকে ধোয়াশায় রেখেছে।তোমার মনে কি আছে এখনও জানিনা আমি।কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই জেনে নেবো সুন্দরী।থ্যাংকস আমার কথাটা রাখার জন্য।
.
উনার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।আমার ঠিক পেছনে একটা মেয়ে লাল শাড়ী পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন উনি।মেয়েটার মাথার উপর দিয়ে উনাকে কিছুটা দেখা যাচ্ছে।আমাদের মাঝখানে ওই মেয়েটাকে দেখে রাগে ফু্সছি আমি।আমি একটু এগুতেই মেয়েটি বলে উঠলো….
.
আরাভ!!তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না।এমন কি কখনও হয়েছে তুমি কিছু বলেছো আর আমি শুনিনি!হয়নি তো তাহলে।
.
তার মানে উনি কথাগুলো আমাকে নয় মেয়েটাকে বলেছেন।মূহুর্তেই চোখ দুটো ভরে গেলো আমার।এখন নিজেকে নিজের গুলি করে মারতে ইচ্ছে করছে।তোর জামাই তোর সামনে দাঁড়িয়ে অন্য একটা মেয়ের প্রসংশা করছে গিফট দিচ্ছে আর তুই এখানে হ্যাংলার মতো দাড়িয়ে আছিস ছিঃ মিহু ছিঃ! মেয়েটাকে একবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলাম আমি।মাই গড!!মেয়েটা সেইম আমার মতো সেজেছে।সেইম কালারের শাড়ী,জুয়েলারি থেকে শুরু করে লিপস্টিক পর্যন্ত এটা কি এ তো আমারই কার্বন কপি।তার মানে নাদিরা দুইটা পার্সেলের কথা বলেছিলো সেই একটা উনি ওকে দিয়ছেন কিন্তু মেয়েটা কে…?আগে তো কখনও দেখিনি।আমি এতক্ষণ উনার পাশে দাঁড়িয়ে আছি সেদিকে নজরই নেই।কত আশা নিয়ে উনার শাড়ী পড়ে উনার সামনে এসেছিলাম কিন্তু এভাবে আশাহত হবো ভাবিনি।নিজের চোখের জলগুলোকে আড়াল করে সামনে পা বাড়ালাম তখনই….
.
আরে মেহরীমাও দেখছি এসে পড়েছে।তোমাকেও ভালো লাগছে।থ্যাংকস আমার কথাটা রাখার জন্য।তোমার সাথে তো আলাপই করানো হয় নি ও হলো কারিমা!কারিমা ও হলো মেহরীমা!
.
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও একটা হাসি দিলাম আমি।মেয়েটা হাই জানালো।আমি উওরে কিছু না বলে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
.
আরে বাহ!আমি তো একটা জিনিস খেয়ালই করিনি।কারিমা মেহরীমা দুজনের নামেই “রীমা” আছে।এই “রীমা” নামটা আমার পিছুই ছাড়ছে না।কীভাবে যেন এই নামগুলোকেই আমার সাথে কানেক্টেড হতেই হয়।
.
উনার কথায় সত্যি খেয়াল করলাম আমিও।কারীমা সত্যিই তো।মেয়েটার নামের শেষেও “রীমা” আছে।তাহলে কি এই রীমাই উনার।না না এটা হতে পারে না উনি নিজে আমায় বলেছেন আমিই উনার ভালোবাসা রীমা।আচ্ছা মেয়েটা কি হয় উনার…?কেন মেয়েটাকে আমারই মতো শাড়ী চুড়ি গিফট করলেন উনি…?কারিমা উনার গার্লফ্রেন্ড নয় তো!হতেও পারে নইলে কেউ বউকে যা দেয় তাকি আর কাউকে দেবে!দেবে না।আচ্ছা উনি কি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চাইছেন নাকি।আকাশ পাতাল চিন্তা করতে ব্যস্ত আমি।আমার ভাবনার মাঝেই কারোর তুড়ির আওয়াজ পেয়ে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।
.
কারীমাঃকি হলো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি…?এতক্ষণ ধরে কিছু জিজ্ঞেস করছি তো!
.
হুমম! বলুন।
.
না থাক!আচ্ছা আরাভ চলো আমরা ওদিকে যাই।
.
হুম!তুমি একটু এগোও আমি আসছি।মেয়েটা দু কদম এগুতেই আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন উনি….. মেহরীমা।
আবারও তোমাকে ধন্যবাদ!আমার স্বপ্নটা কে বাস্তব হতে সাহায্য করার জন্য। থ্যাংকস এ্যা লট!
.
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে উনাকে বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছি আমি।কিন্তু উনার সেই চোখের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ আমি।মনের মধ্যে উনাকে আর কারীমাকে নিয়ে হাজারও প্রশ্ন দানা বেঁধে আছে।যার উওর অজানা আমার।কিন্তু নিজেকে দমিয়েও রাখতে পারছিনা আমি।মেয়েটা কে..? আপনার গার্লফ্রেন্ড…?(ভ্রু কুঁচকে)
.
আমার কথায় মুচকি হাসলেন উনি।আপাদত বলছি না।সময় হলে সব জানতে পারবে।সানগ্লাস ঠিক করতে করতে চলে গেলেন উনি।আজকে একটু বেশিই স্মার্ট লাগছে উনাকে।কিন্তু কারণ কি!তাহলে একমাএ কারণ ওই মেয়েটি।যার কাছে পরিপাটি করে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান উনি।আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে অন্য মেয়ের সাথে টাংকি মারা তাই না।অবশ্য ভালোই হয়েছে উনার জীবনটাকে না হয় এবার গুছিয়েই নেবেন উনি।
.
রিদির বাসায় যাওয়ার জন্য সবাই রওয়ানা হয়ে যাচ্ছে।আজকেও আরাভের গাড়ী দিয়ে যেতে হবে আমায়।কিন্তু না আজ আমি যাবো না।কেন যাবো আমি!কিছুতেই যাবো না।উনি উনার কারীমাকে নিয়েই যাক হুহ।গাড়ীতে উঠে ধুম করে বসে পড়লো নাদিরা।রামীম নাদিরা দুজনে দখল করে নিলো পেছনের সিট।আর দুইটা সিট বাকি। যেতে হলে হয় পেছনে বসতে হবে নয়তো সামনে উনার পাশে।কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছি না আমি।নাদিরা বার বার সামনে বসার জন্য বলছে আমায় কিন্তু আমি নড়ছি না।যেই উনার পাশে বসতে যাবো তখনই কারীমা এসে বসে পড়লো উনার পাশে।ব্যাপারটায় বেশ আশ্চর্য আমি!কিন্তু এতে কোনো হেলদোলই হলো না উনার।অন্যদিন হলে আমাকে চোখ রাঙ্গাতেন,রাগ দেখাতেন কিন্তু আজ তার কিছুই হলো না।বরং কারীমার সাথে গল্প শুরু করলেন উনি।নাদিরা বার বার ওর পাশে বসার জন্য বলছে আমায় কিন্তু না আমি যাবো না।আর রিদির বাসায়ই যাবো না।হঠাৎ বলে উঠলেন উনি….
.
এই তোমাকে কি এখন জনে জনে দাওয়াত করতে হবে নাকি….?সেই কখন থেকে নাদিরা উঠতে বলছে কিন্তু নড়ছই না।ঠ্যাটার মতো দাঁড়িয়ে আছো। নাকি যাওয়ার ইচ্ছে নেই কোনটা…?
.
কথাগুলো শুনে চোখের কোণে জল চলে এলো আমার।সবার সামনে আমাকে এতগুলো কথা শোনাতে কীভাবে পারলেন উনি।এই আমার প্রতি উনার ভালোবাসা।ভালোবাসা না ছাঁই!কালকে আমার কাছে রিজেক্ট হয়ে আজকে আরেজনকে জুটিয়ে নিয়েছে ক্যারেক্টারলেস ছেলে একটা।রাগে দুঃখে অভিমানে চিৎকার করে বললাম….আমি যাবো না!আপনারা বেড়িয়ে যান।
.
আমার কথাটা যেন হজম হলো না উনার।রামীম ভাইয়া,কারীমা,নাদিরা সবাই যাওয়ার জন্য বলছে আমায়।কিন্তু আমি যাবো না।গাড়ী থেকে নেমে আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন উনি।কেন যাবে না তুমি..?সেজেগুজে রেডি হয়ে এসেও যাবে না বলছো কেন…?
.
এমনি!আগে যাওয়ার মুড ছিলো এখন নেই।আপনারা চলে যান আমি যাচ্ছি না।আমি বাড়ি যাবো আমার ভালো লাগছে না।
.
কোথাও যাবে না তুমি!এখন আমার সাথে রিদির বাসায় যাবে।আগামীকাল তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেও কেউ বাধা দেবে না।কিন্তু আজকে তোমাকে ওখানে যেতেই হবে।চলো আমার সাথে।
.
বললাম তো যাবো না!
.
আমাকে রাগিও না!রাগালে গতকাল একা পেয়ে যেটা করতে চেয়েছিলাম সেটা আজ এক্ষুনি সবার সামনে করবো।বুঝতেই পারছো কি মিন করছি।
.
উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।কি নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে।এখন কি না কি বলছে।এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই কথা শুনলে এটা করতে দু সেকেন্ড সময়ও নেবেন না উনি।এখন এর সাথেই যেতে হবে আমাকে।উপায়ান্তু না পেয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম আমি।সামনে বসে সানগ্লাস ঠিক করে ডেভিল স্মাইল দিয়ে গাড়ীতে স্টার্ট দিলেন উনি।
.
পাগলী মেয়ে!বড্ড অভিমান জমেছে তোমার তাই না।বরকে ভালোবাসো কিন্তু স্বীকার করতে নারাজ।এবার দেখি কতক্ষণ মনের কথা চেপে রাখতে পারো তুমি।তোমাকে ইচ্ছে করে পেছনে বসিয়েছি আমি।যাতে তোমাকে পুরে রাস্তা মন ভরে দেখতে পারি আমি।কিন্তু তুমি তো ইডিয়ট হয়তো কতকিছু ভেবে নিয়েছো কারীমাকে নিয়ে।ভাবতে থাকো।আমিও দেখবো কতক্ষণ আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারো তুমি…!!
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-১৫

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_15
.
.
🥀উনার কথাগুলো শোনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি আমি।কি বলবো বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি যে।উনি আমাকে ভালোবাসেন।নিজের কান কেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি।আমিই উনার ভালোবাসা রীমা!নিজের নাম ছোট করলে যে এরকম একটা নাম হতে পারে কখনও মাথাতেই আসেনি আমার।এখন নিজের মাথা নিজেকেই ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার।কি বোকামি টাই না করেছি।কিন্তু আমার প্রতি যদি ভালোবাসাই থাকে তাহলে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন উনি….?
.
…..আমি জানি মিহু তোমার আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না এটাই ভাবছো তো তাহলে তোমাকে ছেড়ে দিলাম কেন….?
.
লোকটার কথায় চরম আশ্চর্য আমি!!লোকটা আমার মনের কথা জানলো কি করে।উনি মনোবিজ্ঞানী নাকি…!!
.
অতীতে আমি অনেক ভুল করেছি। আমার ভুলের কোনো শেষ নেই।কিন্তু তুমি কি জানো বিয়ের পরেরদিন থেকেই তোমাকে চাইতাম আমি।তোমার দিকে তাকালেই পেছনের সব ভুলে যেতাম।তুমি নীলাভের সাথে কি করেছো যদিও পরে জানতে পেরেছি তুমি নির্দোষ তবুও তখন পেছনের সব! সব ভুলে যেতাম আমি।ইচ্ছে করে তোমার থেকে দূরে থাকতাম যাতে তোমার উপর দুর্বল হয়ে না পড়ি।কিন্তু কিছুতেই আটকে থাকতে পারিনি।যখন বুঝলাম তুমি সেই মেহরু নও তখন রোজ তোমার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকতাম আমি।তুমি যখন আমার সাথে তর্কে জড়াতে তখন অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতাম।কত রাত যে তোমার দিকে তাকিয়ে পার করেছি নিজেও জানি না আমি।শুধু তোমার ওই মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগতো আমার।কেন এমন পাগলামি করতাম তার কারণও অজানা ছিলো আমার।শুধু জানতাম তোমাকে দেখলে অশান্ত মন শান্ত হয়ে যেত আমার।পৃথিবী থমকে যেতো।মনের মধ্যে যতই অশান্তি থাকুক না কেন….তোমার ওই মুখ দেখলে অদ্ভুদ এক প্রশান্তি অনুভব করতাম মনে।তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না আমার কিন্তু আমার বিবেক আমাকে বাধ্য করেছে ফেরত দিতে তোমায়।বার বার মনে হতো অন্যায় করেছি আমি।যদি বিয়ে হয়ে গেছে বলে আটকে রাখি তাহলে তোমার উপর আরো বেশি অন্যায় করা হবে আমার।তাই সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।জানো তুমি চলে যাওয়ার পর কিছু ভালো লাগতো না আমার।শুধু পাগল পাগল লাগতো।কি যেন নেই মনে হতো।আর বার বার চোখের সামনে তোমার ছবি ভেসে বেড়াতো।কিন্তু কেন তা জানতাম না আমি।এভাবে মনের মধ্যে অশান্তি নিয়েই কেটে গেলো কয়েকটা মাস তোমার সাথে যোগাযোগ নেই আমার।মাঝেমধ্যেই ইচ্ছে করতো তোমার কাছে ছুটে চলে যাই পরক্ষনেই ভাবতাম যদি আমাকে অপমান করো তুমি তাই যাওয়া হয়নি।
.
কিছুটা থেমে আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বলতে শুরু করলেন….একদিন সকালে নাদিরার ফোন ভাইয়া বউমণি রিদির বিয়েতে এসেছে।ব্যাস এই একটা খবর অফিসের সব কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বিয়েতে চলে আসি আমি।যেখানে এই বিয়েতে আসারও কোনো ইচ্ছা ছিলো না আমার।তবুও তুমি এসেছো শুনে নিজেকে আটকাতে পারিনি।এখানে কেন এসেছি জানো….. শুধু তোমাকে দেখবো বলে।তোমার কাছাকাছি থাকবো বলে।যদিও এই ফিলিংসটার নাম অজানা আমার।তবুও ছুটে চলে আসি।এখানে আসার পর যখন তুমি আমায় ইগনোর করতে তখন জাস্ট সহ্য করতে পারতাম না।আহানের সাথে দেখলে রাগ হতো আমার,কষ্ট হতো তোমাকে চটকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করতো।শুধু মনে হতো তোমার সাথে কথা বলার অধিকার যদি কারোর থেকে থাকে তাহলে সেটা হলো একমাএ আমার।সেদিন বিকালে নাদিরা আর রামীম হঠাৎ বলে আমি নাকি প্রেমে পড়েছি।কথাটা নিয়ে অনেক ভেবেছি ভেবে উপলব্ধি করেছি হুম সত্যি প্রেমে পড়েছি…. তাও আর কেউ নয় আমার বউয়ের প্রেমে পড়েছি আমি।মানুষ সত্যি বলে বিয়ের পরেও ভালোবাসা হয়।যেটা আমার তোমার সাথে হয়েছে।
.
আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে আমার হাত ধরে ফিল্মি স্টাইলে বলে উঠলেন উনি……

#তোমায়_ঘিরে_স্বপ্ন_আমার
#তোমায়_ঘিরে_ঘর
#ভালোবাসবে_কি_আমায়
#সারাজীবন_ভর….!!

❤️আমি তোমাকে ভালোবাসি মিহু❤️
ডু ইউ লাভ মি মিহু….
.
সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে আমার।এটা সত্যি!উনি আমাকে ভালোবাসেন।চোখ দুটো পানিতে চিকচিক করছে আমার।কিন্তু এই কান্না কোনো দুঃখের নয় এটা যে আমার আনন্দের কান্না।উনার কথার জবাবে খুব বলতে ইচ্ছে করছে হুম আমিও ভালোবাসি কিন্তু না আমি তা বলবো না।এতদিন আমার থেকে দূরে থেকে এখন ভালোবাসি বলা হচ্ছে হুহ।আপনার মনে হলো আপনি আমাকে ভালোবাসেন আর আমিও রাজি হয়ে গেলাম না কিছুতেই এটা হতে পারে না।
.
মিহু কিছু বলো…!!আমি তোমার মুখ থেকে হ্যাঁ শুনতে চাই।বলোনা তুমিও ভালোবাসো আমায়।
.
উনি আমার থেকে হ্যাঁ শুনতে চাইছেন কিন্তু আমি তো তা বলবো না।আমাকে কি মনে হয় উনার ফেলনা আমি।চোখে মুখে কঠিনভাব ফুটিয়ে তুলে “না আমি আপনাকে ভালোবাসি না”।
.
এই কথাটা শুনে থমকে গেলো আমার পুরো পৃথিবী।মিহু আমায় ভালোবাসে না।সাথে সাথে হাত থেকে ফুলটা পড়ে গেলো নিচে।গোলাপটার দিকে তাকিয়ে আছে মিহু।পাথরের ন্যায় যেভাবে বসা ছিলাম সেইভাবেই আছি আমি।মিহু আমি জানি তুমি মজা করছো প্লিজ মজা করো না।আমি সিরিয়াসলি জানতে চাইছি।তোমার মনে যা আছে বলে দাও প্লিজ।
.
আমকে কি মনে হয় আপনার পুতুল আমি।যখন ইচ্ছে হলো খেললেন আবার যখন ইচ্ছে হলো ফেলে দিলেন।সেদিন ইচ্ছে হয়েছিলো তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন আবার ইচ্ছে হয়েছিলো বলে ফিরিয়ে দিলেন এখন আবার ইচ্ছে করছে ভালোবাসার।কে বলতে পারে ক’দিন পর ইচ্ছে করবে না ডিভোর্স দেওয়ার…..সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরলেন উনি।
.
একদম এসব কথা মুখেও আনবে না তুমি।দেখ মিহু!!কোমড় জড়িয়ে ওকে নিজের একদম কাছে নিয়ে গেলাম।আমি তার জন্য তোমাকে সরি বলেছি বুঝার চেষ্টা করো।তখন আমি বুঝতে পারিনি ভেবেছি তোমাকে আটকে রাখলে অন্যায় করা হবে তোমার সাথে তাই দিয়ে এসেছিলাম।নিজের ফিলিংটাও তখন বুঝিনি।কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছি!এখন তুমিই আমার পৃথিবী।আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো আমাকে চাও না তুমি।
.
উনার চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই আমার।ওই চোখের মায়ায় পড়ে যাবো।মিথ্যা বলতে পারবো না।কারণ আমিও যে আপনাকে ভালোবাসি,খুব বেশিই ভালোবাসি।নিচের দিকে তাকিয়ে ছাড়ুন আমাকে!ছাড়ুন বলছি!
.
আগে বলো ভালোবাসো!!তারপর ছাড়ছি।
.
আপনি আমাকে জোর করবেন নাকি!!আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে।আপনি নিজেকে কি মনে করেন বলুন তো।সেদিন বলেছিলাম আমাকে ফিরিয়ে দিতে!বলিনি তো।সকাল পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম কিন্তু সকালে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন তাহলে আজ কেন পুরনো হিসেব নিয়ে বসেছেন।সব কিছুর একটা সময় থাকে আপনারও সেই সময় চলে গেছে।আর ফিরে পাবেন না।যেভাবেই হোক বিয়ে হয়েছিলো আমাদের।আর বিয়ে হাতের মোয়া নয় ইচ্ছে হলে কিনলাম নয়তো ফেলে দিলাম।যেখানে আমি আপনার বৈধ ওয়াইফ সেখানে অন্যায় অবিচার এই কথাগুলো তখন বড্ড বেমানান।আমার কথা শুনে আস্তে আস্তে হাতের বাধঁন আলগা হয়ে গেলো উনার।জানি এখন কষ্ট হচ্ছে আপনার।কথাগুলো বলতে যে খুব কষ্ট হচ্ছে আমারও কিন্তু তবুও বলতে হচ্ছে আমায়।কারণ আমি তো কম কষ্ট পাইনি।ছয়টা মাস আপনার জন্য তিল তিল করে কষ্ট পেয়েছি।এবার আপনার পালা……আমাকে ছেড়ে দিয়ে….
.
এটাই তোমার সিদ্ধান্ত…..
.
হুম বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলাম আমি।আজ খুব দিয়েছি রাক্ষুস কে।দেখ কেমন লাগে।খালি আমাকে কষ্ট দেওয়া তাই না।এবার দেখেন কষ্ট পেলে কেমন লাগে।
.
মিহুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি আমি।লাল গোলাপটা নিচে পড়ে রয়েছে।তুলতে গিয়েও কি মনে করে আটকে গেছি থাক।মিহু আমায় ক্ষমা করতে পারলো না।তাহলে আমায় ভালোবাসে না।এটা কেন মেনে নিতে পারছি না আমি।হঠাৎ কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠি আমি।
.
উফফ!কি জটিল কেস।এটা হ্যান্ডেল করতে আমার বেশ সময় লাগবে।কিন্তু সলভ আমি করবোই করবো কথাগুলো বলতে বলতে সামনে এসে দাঁড়ালো নাদিরা।
.
তুই এখানে…?
.
শুধু ও না!!আমিও আছি।আমরা সব শুনেছি আর সব দেখেছিও।এখন কি করা যায় সেটাই ভাবছি।
.
এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই।ও আমাকে ভালোবাসে না।সেটা মুখের উপর স্পষ্ট বলে দিয়েছে।ওর সিদ্ধান্ত কে রেসপেক্ট করি আমি।
.
ধুর ভাইয়া!!রাখো তোমার রেসপেক্ট।আমি জানি বউমণি যতই বলুক তোমাকে ভালোবাসে না কিন্তু মনে মনে ঠিকই তোমাকেই ভালোবাসে।এখন তুমি আটার মতো লেগে থাকো দেখবে হয়ে যাবে।
.
তুই সিওর!!
.
রামীমঃশুধু ও না আমিও ১০০% সিওর!!ওর হাব ভাব দেখেই আমি বুঝেছি।ও তোকে ভালোবাসে এখন শুধু স্বীকার করানোর পালা।মানে হয়েছে কথাটা ওর পেটে আসছে কিন্তু মুখে আনছে না এমন…!!
.
আরাভঃওকে তাহলে কালকেই প্রমাণ হয়ে যাবে।কারণ কালকের পর আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি।আর যা হবে কালকের মধ্যেই হবে।আমাকে ভালোবাসে কিনা কালকেই ওর শেষ পরীক্ষা।পেটের কথা কীভাবে মুখে আনতে হয় সেটা খুব ভালো মতোই জানি আমি….!!
.
আজ সন্ধ্যায় রিদির রিসেপশন!তাই বিকেলে সবাই কে বেড়িয়ে পড়তে হবে।আজও আমাকে সেই বিরক্তিকর শাড়ী পড়েই যেতে হবে।এই জিনিসটা ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর তম হয়ে উঠেছে আমার কাছে।তার অন্যতম কারণ হলো আরাভ।কালকের কথাগুলো মনে হতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।যদি আজও এমন করেন উনি তাহলে….একদিকে বেস্টুর অনুরোধ অন্যদিকে আরাভ কোন দিকে যাবো আমি।এসব ভাবনার মধ্যেই দরজায় টোকা পড়লো আমার…..একটা প্যাকেট হাতে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলেন আরাভ।উনাকে দেখে চমকে উঠেছি আমি।এখানে এখন উনি কিন্তু কেন…?আর হাতে!হাতে ওটা কি…?চুপিচুপি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন উনি।উনাকে দেখে জমে গেছি আমি।আজ আবার কি করতে এসেছেন উনি….!!আমাকে অবাক করে হাতে থাকা প্যাকেট টি এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।
.
এটা রাখো এখানে তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
.
অবাক হয়ে গিফট!!
.
হুম!!

আমাকে আপনি হঠাৎ গিফট দিচ্ছেন কেন..?
.
গিফট মানুষ মানুষকে হঠাৎই দেয়।হঠাৎ তোমাকে কিছু দিতে ইচ্ছে হলো তাই দিলাম।এবার এটা বলো না আমার দেওয়া গিফট তুমি নিতে পারবে না।কেউ কিছু দিলে ফেরত দিতে নেই যত্ন সহকারে নিজের কাছে রাখতে হয়।আর একটা রিকুয়েষ্ট রিদির বাসায় যাওয়ার আগে এটা খুলে দেখ প্লিজ!বলে হনহন করে বেড়িয়ে গেলেন উনি।আমাকে গিফট!তাও রিদির বাসায় যাওয়ার আগে যেন খুলি!আচ্ছা কি আছে এই প্যাকেটে….!!
.

.
.
#চলবে…….

তোমায় ঘিরে পর্ব-১৪

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_14
.
.
🥀অনেক্ষণ বসে থাকার পর সেজে গুঁজে রিদিকে নিয়ে বের হলাম আমরা।রিদি টকটকে লাল বেনারসি পড়েছে।সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি।হাত ভর্তি চুড়ি,চোখে গাঢ় কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক।দারুন লাগছে মেয়েটাকে।নাদিরা আর আমি দুজনে পড়েছি সেইম কালারের শাড়ি।পার্লার থেকে বেড়িয়ে দেখলাম গাড়ীতে হেলান দিয়ে দারোয়ান দাঁড়িয়ে ফোন টিপছেন।ব্লু শার্ট,বুক পর্যন্ত বোতামগুলো খোলা,হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি,চুলগুলো স্পাইক করা লোকটা যেই গেট আপ নিক না কেন ভালো তাকে লাগবেই লাগবে।গাড়ীর কাছে যেতেই আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন উনি।
.
সামনে তাকিয়ে চোখ আটকে গেলো আমার। গোলাপী শাড়ি,সাথে হালকা জুয়েলারি,হাতে চুড়ি,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক।মায়াবতী লাগছে মেয়েটাকে।ওর দিক থেকে চোখই ফিরাতে পারছি না আমি।যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।সাজলে কাউকে এতটা সুন্দর দেখায় জানা ছিলো না আামর।অপলক দৃষ্টিতে দেখে চলেছি আমার মায়াবতী কে।দেখতে দেখতে কখন যে ওরা আমার সামনে চলে এসেছে টেরই পাইনি আমি।হঠাৎ নাদিরার তুড়ির আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।
.
নাদিরাঃকি ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেলে…?
.
রিদিঃভাইয়া একজনকে দেখলেই হবে।(গাল ফুলিয়ে)আমাদেরও একটু দেখ!কত সুন্দর করে সেজে এসেছি একটু প্রসংশাও করো।
.
নাদিরা আর রিতির কথা হুশ ফিরলো আমার।লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মেহরীমা।এখন আরো মায়াবী লাগছে ওকে।গাল দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে।ইচ্ছে করছে টুপ করে গিলে ফেলি।মাথা চুলকাতে চুলকাতে ক্যাবলাকান্ত হাসি দিয়ে…..
.
হুম তোদেরকেই দেখছিলাম।একেকটা কেমন ময়দা মেখে ভূত হয়ে বেড়িয়েছিস কাউকে চেনার জোঁ নেই।তাই চেনার চেষ্টা করছিলাম তোরা আমার বোনগুলো নাকি কোনো পেত্নী।
.
আচ্ছা আচ্ছা!!তাই বলো।আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো রিদি….ভাইয়া আমি সব জানি!নাদিরা বলেছে আমায় মিহুই তোমার সেই বউ।তাই আমার কাছ থেকে লুকিয়ে লাভ নাই।নিজের বউকে দেখছিলে এতে কোনো পাপ নেই।বরং খুব ভালো!তা এত হেজিটেট না করে ওকে মনের কথাটা বলেই দাও না।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
হুম এবার তাই করবো!!আচ্ছা চল বাসায় যাওয়া যাক।
.
হুম চলো!!
.
গাড়ীতে উঠতেই শুরু হয়ে গেছে নাদিরার প্যানপ্যানানি।মেয়েটা এত কথা বলে কিন্তু কখনো বিরক্ত হয় না এই আশ্চর্য এক ট্যালেন্ট নিয়ে জন্মেছে।আমার ভাবনার মাঝখানেই বলে উঠলো…..আচ্ছা ভাইয়া একটা প্রশ্ন করবো…?
.
আজাইরা প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নাই।সো চুপ করে বসে থাক।
.
আরে না!! খুব দরকারি।
.
ঠিক আছে বল!!
.
না মানে!ওই রীমা মেয়েটার সাথে কীভাবে দেখা হলো তোমার…?আর কতদিনের রিলেশন তোমাদের…?
.
নাদিরার প্রশ্নে খুব খুশী আমি!!এই প্রশ্নটা ঘোরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।মেয়েটা বকবক করে একটা ভালোই প্রশ্ন করেছে।উনার উওর শোনার জন্য কান খাঁড়া করে বসে আছি আমি।
.
এটা তোর খুব দরকারি কথা তাই না।ধমকের সুরে চুপ কর।
.
প্লিজ ভাইয়া বলো না।দুজনে নাছোড়বান্দা আমাকে দিয়ে কথা বলিয়েই ছাড়বে।
.
ওকে চুপপ বলছি!!মাস-ছয়েক আগে ওর সাথে এক্সিডেন্টলি দেখা আমার।তারপর আস্তে আস্তে ভালোলাগা এই ভালোলাগাটুকু কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হলো বুঝতেই পারিনি।
.
মেয়েটা জানে তুমি ওকে ভালোবাসো…?
.
নাহ্!!
.
আচ্ছা ও কি তোমায় ভালোবাসে…?
.
জানিনা!!আমার এই মন একবার বলে সে আমাকে ভালোবাসে,আমাকে চায় একবার বলে চায় না।ভালো না বাসলেও ওর মন ঠিক জয় করে নেব।যদিও আমার বিশ্বাস ও আমায় ভালোবাসে যদিও আমার ধারণা ও আমার উপর অভিমান করে আছে।
.
উনার কথাগুলো শোনে চোখ দুটো জলে ভরে গেছে আমার।নিজের বউ অভিমান করে বসে আছে সেই খবরটুকুও জানেন না আপনি।অথচ সেই আপনিই আরেকজনের অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যস্ত।বাহ্ কি দারুন অনুভূতি আপনার।
.
হুম এটা ঠিক বলেছো!!আচ্ছা তুমি ওকে সরাসরি বলে দাও তুমি ওকে ভালোবাসো।তাহলেই ল্যাটা চুকে যাবে।
.
হুম খুব তাড়াতাড়ি আমার মনের কথা বলবো তাকে।জানিনা পরে কি হবে।তবে আমি তার উপর জোর করবো না যদি নিজ ইচ্ছায় আমার কাছে আসে তাহলে ঠিক আছে আর যদি না আসে তাহলে তাকে তার মতো ছেড়ে দিবো।আর কোনোদিনও সামনে যাবো না।
.
ভাইয়া!!
.
হুম!!
.
কি দারুন সিদ্ধান্ত উনার!!আমার দিকে বার বার আড়চোখেে তাকাচ্ছেন উনি।চোখের জলগুলো বেড়িয়ে আসতে চাইছে।ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছি আমি।উপায় না পেয়ে জানালার দিকে মুখ করে বসে আছি আমি।একজনের জন্য কত সুন্দর অনুভূতি কাজ করে উনার আর আমার বেলায় শূন্য।এখানে এসে উনার ব্যবহারে মাঝেমধ্যেই মনে হতো খুব ভালোবাসেন আমায়।কিন্তু না সব মিথ্যে।বুঝতে ভুল করেছি আমি।
.
.
বরযাএী এসে পৌঁছেছে একটু আগেই।রিদি আর জিজুকে বসানো হয়েছে পাশাপাশি।জিজু রিদির পছন্দের শেরওয়ানি পড়েছেন।লাল শেরওয়ানি মাথায় লাল বড় টুপি।দুজনকে মানিয়েছে ভারী।জিজু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন রিদির দিকে।রিদি ব্যাপারটায় বেশ লজ্জা পাচ্ছে।আঁড়চোখে একবার বরকে দেখছে তো চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।বর বউ একে অপরকে মুগ্ধ অথচ আমার বরকে দেখতেই পাচ্ছি না আমি।অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে খুঁজে পেলাম না আমি।হয়তো রীমা কে নিয়ে ভাবতে বিজি।কথাটা মনে হতেই মুখ কালো হয়ে গেলো আমার।কিছুক্ষণেই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো রিদির।।এবার খাওয়ার পালা।আমাদের ছাড়া কিছুতেই খাবে না রিদি।রিতি আমি নাদিরা জিজু বসে আছি খাওয়ার টেবিলে।কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে আমার পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লেন উনি।উনাকে দেখে সকলে খানিকটা অবাক তবুও স্বাভাবিকভাবেই খেতে লাগলো সবাই।খাওয়া দাওয়া শেষে এবার বিদায়ের পালা।কেঁদে বুক ভাসিয়ে বিদায় নিয়েছে রিদি।ওকে জড়িয়ে নিজেকে আটকাতে পারিনি আমি।আন্টি অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছেন।উনাকে সামলে নিজের রুমের দিকে এগুচ্ছি আমি।তখনই হাতে হালকা টান অনুভব করলাম আমি।আচমকা এমন ঘটায় তাল সামলাতে না পারায় কারো বুকে আছড়ে পড়লাম আমি।চুলগুলো একদম মুখের উপরে পড়ছে আমার।সামনে কিছু দেখতে পাচ্ছি না।আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে কেউ।তার ভাব খানা এমন যেন চুলগুলো ব্যাথা পাবে তাই এত সাবধানতা।চোখ খুলে সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকালাম আমি।ওই কে রে আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছিস কেন….?সাথে সাথে আমার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরলো হুঁশশ!!কোনো কথা নয় বলে ঠোঁট ছেড়ে দিলেন আমার।
.
আপনি!!উনাকে দেখে দুপুরের কথাগুলো মনে হতেই মাথায় আগুন ধরে গেলো আমার।এটা কোন ধরনের অসভ্যতামো…?আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসার কি মানে!
.
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে এত হাইপার হইও না তো!!গালে চিমটি কেটে তুমি এমনিই কিউট তার উপর জানো রাগলে তোমায় কেমন দেখায় একদম স্ট্রবেরির মতো ইচ্ছে করে টুপ করে খেয়ে ফেলি।আচ্ছা তুমি কি চাও বলতো আমি পাগল হয়ে যাই…?
.
আশ্চর্য!!এসব কি বলছেন আপনি..?আপনি পাগল হতে যাবেন কেন…?আর আমিই বা চাইবো কেন…?
.
তুমি জানো তোমাকে শাড়ী পড়লে কতটা মায়াবী দেখায়।নরমালি তোমাকে আমি সবসময় ড্রেসেই দেখেছি একমাত্র বিয়ের দিন ছাড়া।ওইদিন ওতটা খেয়াল করিনি কিন্তু পরেরদিন দেখেছিলাম অনেকটা অগোছালো হলেও বেশ লাগছিলো।কাল থেকে তোমাকে দেখছি আর পাগল হচ্ছি।কাল কোনোমতে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম কিন্তু আজকে আর পারছিনা তাই এখানে নিয়ে আসতে বাধ্য হলাম।জানো তোমাকে এভাবে দেখলে পাগল হয়ে যাই আমি।একদম আমার বউয়ের মতো দেখায়।আর বউ কাছে না থাকলে(ঠোঁট উল্টে) দূরে গেলে কি ভালো লাগে কারোও হুম।
.
উনি কি বলছেন মাথায় ঢুকছে না আমার।পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি।দেখুন এসব আমাকে বলে লাভ নাই আমি আসছি।
.
হাত ধরে আমাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন উনি।এসব তোমাকে বলে লাভ নাই তাহলে কাকে বলবো।কানের কাছে ফিসফিস করে বউ কে বললে যদি এড়িয়ে যায় তাহলে আর কোথায় যাবো আমি হুমম!!
.
উনার প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে উঠছি আমি।কি করতে চাইছেন উনি!আমতা আমতা করে বলে উঠলাম….ককি করছেন ছাড়ুন আমাকে!
.
উহুম!ছাড়বো বলে তে ধরিনি।ছাড়বো না আমি!কিছুতেই ছাড়বো না বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন উনি…!!
.
নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমি কিন্তু রাক্ষুসের শক্তির সাথে কি আর মানুষ পারে!পারে না।তাই আমিও ব্যর্থ।আমার এই ব্যর্থতা দেখে হাসছেন উনি।সারাদিন রীমা নাম জপ করে এখন আমার সাথে আদিক্ষেতা দেখানো হচ্ছে।মূহুর্তেই রেগে গেলাম আমি…নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম উনাকে আমি।আচমকা এমন হওয়ায় কিছুটা দূরে ছিটকে গেলেন উনি।চিৎকার করে বলে উঠলাম….
.
ছিহ!আপনাকে অন্তত ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি সেই একই।আমাকে একা পেয়ে এখন ছিঃ।আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।আপনি এতটা নীচ জঘন্য একজন মানুষ।
.
মেহরীমা আমার কথাটা শোন প্লিজ!
.
কি শুনবো!!অতীতে মেহরীমা নামের একজনকে বিয়ে করেছেন।পরে ভুল বুঝতে পেরে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন এখন রীমা নামের মেয়ের সাথে প্রেম করছেন।আর সেই প্রাক্তন ওয়াইফের সাথে আজ রোমান্স করা ইচ্ছা জেগেছে এটাই বলবেন তো।
.
তুমি ভুল বুঝছো!!আরে বোকা তুমি যা বলছো সবই ঠিক।কিন্তু রীমা আর মেহরীমা সে কি আলাদা।আচ্ছা বোকা মেয়ে তুমি।।মেহরীমা একটু শর্ট করো…মেহরীমা থেকে মেহ বাদ দাও কি থাকলো রীমা।সেই রীমাই আমার বর্তমান ভালোবাসা আর ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।আমি তোমায় ভালোবাসি রীমা। তুমি আমার ভালোবাসা, তুমিই আমার স্ত্রী।আর এটাই ধ্রুব সত্যি….!!
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-১৩

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_13
.
.
🥀এই চুপ!!একদম চুপ!!
.
কথাগুলো কানেই যাচ্ছে না আমার।ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।এখন কি কারো কথা কানে যাওয়ার সময় নাকি!
.
এ তো থামবেই না!উফফ!!এখন পুরো বাসার লোক জেগে যাবে।তাই ধমকের সুরে বলে উঠলাম আমি….চুপ করো!!এবারও কোনো কাজ হলো না ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়েই যাচ্ছে।উফ!এই মেয়ে এত ভীতু কেন…?কোনো উপায় না পেয়ে একহাতে ওর মুখ চেপে ধরলাম আমি।
.
হঠাৎ কেউ মুখ চেপে ধরায় চোখ খুলে তাকালাম আমি।এ কি আআ….আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে….এই তুমি এত ভীতু কেন…?এইটুকু তেই এভাবে চেঁচালে।মাই গড!কানে আঙ্গুল ঢুকাতে ঢুকাতে আমার কানের পোকা মরে গেছে।
.
চেঁচাবো না!!আপনি এমন বেয়াক্কল মার্কা কাজ করবেন আর আমি ভয় পেলেই ভীতু!কে বলেছিলো এই শেষ রাতে নিজেকে সাদা কাপড়ে আবৃত করে সামনে আসতে আমার।আমি তো তাও একটু ভয় পেয়েছি।আমার জায়গায় আপনি থাকলে এর থেকে বেশি ভয় পেতেন।
.
ভয় আর আমি হাহা!!আমি তোমার মতো ভীতু নই।এরকম দশ-বারোটা ভূত আসলেও সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস আছে আমার।
.
হুহ আপনি যে কতটা সাহসী সেটা আমি জানি!!
.
হুম!জানা থাকলেই ভালো!আচ্ছা এত রাতে এখানে কি করছো…?স্পেশাল কারোর কথা ভাবছিলে বুঝি নাকি দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিলো কোনটা…?
..
উনার এই ফালতু কথাগুলো শুনতে একদম ইচ্ছুক নই আমি।তাই চুপচাপ ছাদ থেকে নামার উদ্দেশ্যে ঘুরে দাঁড়ালাম।
.
কি হলো চলে যাচ্ছ যে…?বললে না!
.
তেমন কিছু নয়!ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো তাই!আচ্ছা আপনি এত রাতে এখানে…?
.
আমি!আমি তো এখনও ঘুমাই নি।নিচে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ তোমার ছায়া আমার সামনে পড়লো চেয়ে দেখলাম তুমি দাঁড়িয়ে আছো তাই ভাবলাম একটু ভয় দেখাই।আচ্ছা তুমি কাঁদছিলে কেন…?
.
আমার কান্নাও দেখেছেন উনি।তার মানে আমি ভুল ছিলাম না তখন উনিই ছিলেন।আমতা আমতা করে ককই ননা তো!
.
আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি কাঁদছিলে!!সো মিথ্যা বলো না।কেন কাঁদছিলে বলো না…?আর না ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।সো যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
.
আপনাকে বুঝানোর সাধ্য কোনোকালেই ছিলো না আমার।সেদিনও ছিলো না আর আজও নেই।”বিয়ে”!আমার সাথে বিয়ে হয়েছিলো আপনার।সেটা যেভাবেই হোক হয়েছিলো তো।কিন্তু মেনে নিতে পারেন নি আপনি।নিজেকে খুব মহৎ ভাবেন তাই আমাকে ফিরিয়ে দিলেন।।যখন ভাবার কথা ছিলো তখন ভাবেন নি তাহলে এখন কেন আমার ব্যাপারে ভাবছেন।ভাবতে হবে না!তাছাড়া এখন নতুন করে জীবনও শুরু করেছেন তাহলে!এত দরদ দেখানোর কোনো মানে হয় না!চোখ মুখ কঠিন করে বলে উঠলাম…..আমার কাঁদতে ইচ্ছে করেছিলো তাই কেঁদেছি।জেগে থাকতে ইচ্ছে করছে তাই রাত জাগছি তাতে আপনার কি!আমার শরীর ভালো থাকলেও আমার না থাকলেও আমার।এটা নিয়ে আপনাকে ভাবার প্রয়োজন নেই।শুনুন আমার ব্যাপারে এত নাগ গলাবেন না।ওয়েল ইউর ওউন মেশিন।
.
বাবা রে বাবা!!মেয়েটা ক্ষেপে গেলো কেন..?কি এমন বললাম যে এত রাগ দেখাচ্ছে।তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন…?আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বললাম।
.
আমার ভালো আমাকেই বুঝতে দিন।অনেক তো ভালো করেছেন,ভালো চেয়েছেন আর নাই বা করলেন ভালো।
.
আমার কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন উনি।প্যান্টের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন….তুমি এখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারো নি তাই না মেহরীমা।
.
জানি কথাটা খুব গায়ে লেগেছে উনার।সেই এর থেকে বেশি বুঝার ক্ষমতা নেই আপনার।ক্ষমা করতে পারোনি হুহ!লোকটাকে এখন ছাদ থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে আমার।যদি সম্ভব হতো তাহলে এটা ঠিক করতাম আমি।কিন্তু না কিছু করার নেই।
.
মেহরীমা!বললে না তো!!
.
দম আটকে যাচ্ছে আমার।ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।কিন্তু নিজপর এই অসহায়ত্ব কিছুতেই আপনার সামনে প্রকাশ করবো না আমি।এখন কথা বাড়াতেও ইচ্ছে নেই।ক্ষমা সেটা তো সেই কবেই করে দিয়েছি।আপনার সাথে থাকতে থাকতে আপনাকে মেনে নিয়েছিলাম আমি।আপনাকে ভালোওবেসে ফেলেছিলাম।কিন্তু আপনি!আপনি তা পারেন নি।আপনি বুঝতে পারছেন না আপনার উপর অভিমান জমেছে,রাগ করেছি এর থেকে বেশি কিছু নয়।ওয়াইফ হিসেবে আমি জি এইটুকুও করতে পারিনা।।আচ্ছা আপনি কি কখনও বুঝবেন না আমায়।সেদিনও বুঝেন নি,আজও বুঝছেন না আর হয়তো ভবিষ্যতেও পারবেন না।উনার চোখে অসহায়ত্ব ফুটে আছে।ওই চোখে বেশিক্ষণ তাকানোর সাহস নেই আমার।আচ্ছা আসছি আমি।
.
এড়িয়ে যাচ্ছ…?
.
নাহ্!!অনেক আগেই তো বলেছি আপনাকে মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছি আমি।তাও বারবার এই কথাটা টানেন কেন…?এখন আমি আসি এই রাতের বেলায় যদি কেউ দেখে তাহলে উল্টা পাল্টা ভাববে।
.
কথাটা টানতাম না!!কিন্তু তোমার ব্যবহার বাধ্য করে।
.
আমার ব্যবহার!!আমি আবার কি করলাম।
.
নাহ্ কিছু না!!যাও ঘুমিয়ে পড়ো ভোর হয়ে যাচ্ছে।ছাদ থেকে নেমে গেলো মেহরীমা আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।জীবনটা বড়ই অদ্ভুদ!
.
.
.
সকাল বারোটায় ঘুম ভাঙ্গলো আমার।তাও আবার রিদির গুতাগুতি আর বকবকানির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও বিছানা ছাড়তে হলো আমায়।আমি ঘুমে এটা যেন সহ্য হচ্ছিলো না মেয়েটার।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হলাম আমি।আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে নাদিরা আর আরাভ।আমাকে দেখেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসতে শুরু করলো দুজনে,হাসছে তো হাসছেই থামার নামই নেই।আচমকা এমন হওয়ায় বোকা বনে গেলাম আমি।বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে।একেবারে সামনে গিয়ে নাদিরাকে উদ্দেশ্য করে…..
.
কি হয়েছে এভাবে হাসছো কেন তুমি…?
.
হাসবো না!বলে আবারও হাসতে লাগলো মেয়েটি।মুখ চেপে আরাভও হাসছে। কিন্তু এদের হাসির কারণ বোধগম্য নয় আমার কাছে।আচ্ছা আপনাদের হাসির কারণ কি আমি…?
.
অভিয়াসলি বউমণি তুমি!!
.
অবাক হয়ে আমি!!আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলেন উনি…..

নাদিরা আজকাল প্লাজু অরণা হিসাবে ব্যবহার হয় কই জানতাম না তো!আচ্ছা এটা তোদের নিউ স্টাইল নাকি!
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।কিসব ফালতু কথা বলছেন।প্লাজু অরণা হিসাবে ব্যবহার হয় পাগল নাকি!!
.
বউমণি একটু নিজের দিকে তাকাও বলে আবারও খিলখিল করে হাসতে লাগলো!
.
কেন কি হ…..নিজের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি।ছিঃ ছিঃ এ আমি কি করেছি।অরনার জায়গায় প্লাজু পড়ে এসেছি।এখন নিজেকে ড্রেনের পানিতে চুবিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে আমার।উনার বলা কথাটা কানে বাজছে। “এত কেয়ারলেস কেন তুমি”…?সত্যি এত কেয়ারলেস কেন আমি….!!চারিদিক তাকিয়ে চোরের মতো দিলাম এক দৌড় আমাকে আর কে পায়।কি সাংঘাতিক কান্ড!প্লাজু ছিঃ!
.
সব মেয়েকেই পার্লারে সাজতে হবে আজ।কোনো মতে পালানো চলবে না।রিদি আজকে আমায় ছাড়বে না।বিকেলে পার্লারে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছি।আমাদের জন্য আরাভের গাড়িটাই বরাদ্দ।ওটা দিয়েই যেতে হবে।কিন্তু ওই রাক্ষস টার সাথে যাবো না আমি।কিন্তু আজকে আমায় যেতেই হবে না গেলে চলবে না।রিদি নাদিরা গাড়ীতে উঠে বসে পড়েছে।পেছনের সিট ফুল সেই সামনে রাক্ষসের সামনে বসতে হবে আমায়।আমি পেঁচার মতো মুখে করে দাঁড়িয়ে আছি। তখনই আহান আসলো।
.
আরে তোমরা সবাই সাজতে যাচ্ছ বুঝি…?আমাকে উদ্দেশ্য করে তুমিও যাচ্ছ নাকি…?
.
প্রশ্নের উওরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম আমি।
.
ওহ!!তা গাড়ীতে দেখছি জায়গা নেই।চলো তোমাকে আমি বাইক দিয়ে পৌঁছে দিই।
.
আমি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে বলে উঠলেন উনি…..কাউকে কিচ্ছু করতে হবে না।ওর জন্য যথেষ্ট জায়গা খালি আছে।মেহরীমা গাড়ীতে উঠে বস হারি আপ!!
.
আসলে সামনে বসলে আমার গা গুলোয়।আমি অসুস্থ ফিল করি।তাই বলছিলাম রিদি তোরা চলে যা আমি উনার সাথেই বাইকে আসছি।
.
কি বলছিস আমরা তোকে ছাড়া যাবো। না না! এটা হবে না!!
.
বউমণি আমি সামনে বসছি তুমি পেছনে এসো।
.
আমার কথা শুনে সাপের মতো ফুঁস করে উঠলেন উনি….দাঁতে দাঁত চেপে বললেন…. কাউকে কোথাও যেতে হবে না।অসুস্থ হলে ডক্টর দেখাবো চলো।তাড়াতাড়ি গাড়ী তে উঠো সিট বেল্ট পড়ে নাও।আহান আঙ্গেল একা মানুষ উনাকে হেল্প করো।মেহরীমার জন্য আমি আছি।আমি থাকতে ওর কারোর হেল্পের প্রয়োজন পড়বে না।
.
বাধ্য মেয়ের মতো সত্যি সত্যি গাড়ীতে উঠে বসলাম আমি।উনার মুখই বলে দিচ্ছে কতটা রেগে আছেন উনি।আহানের সাথে কিছুতেই যেতাম না শুধুমাত্র উনাকে রাগানোই ছিলো মেইন উদ্দেশ্য আমার আর সেটাতে সাকসেস আমি।আপনি রীমা মাথায় নিয়ে সারাদিন ঘুরলে সমস্যা নাই আর আমি ছেলেদের সাথে কথা বললেই দোষ হুহ!পুরো গাড়ীতে টু শব্দটিও করিনি আমি।উনিও রেগে ফায়ার হয়ে আছেন বিধায় কথা বলেন নি।জানালার গ্লাস নামিয়ে মুখ গুড়িয়ে বসে আছি আমি।বাইরে মনোরম দৃশ্য সামনে হালকা বাতাস আহা!কি মনোমুগ্ধকর পবিবেশ।রিদি আর নাদিরা পুরোটা সময় বকবক করেই পার করে দিয়েছে।কিছুক্ষণেই পৌঁছে গেলাম পার্লারে।রিদি আর নাদিরা চলে গেলো ভিতরে।আমিও নেমে ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম…..
.
আহানের সাথে ঘোরাঘুরির খুব শখ তোমার তাই না…?হাতের উপরে হাত ভাঁজ করে সামনে দাঁড়ালেন আমার।
.
উনার কথার প্রতিওোরে কোনো জবাব দিলাম না আমি।এমন ভাব করলাম যেন কথাটা কানেই আসেনি আমার।
.
কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়…?
.
এসব ফালতু কথার উওর দেওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট আমার নাই।
.
চোখে মুখে কঠিন ভাব ফুটিয়ে চোয়াল শক্ত করে তোমার এই সিরিয়াস কথাকে ফালতু মনে হচ্ছে…!!তুমি বুঝ কোনটা ফালতু আর কোনটা ইম্পর্ট্যান্ট!
.
নাহ!!বুঝি না।এসব বুঝা আমার কম্যও নয়।ওগুলো আপনার মতো জ্ঞানী-গুণীরা বুঝবে।
.
তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন…?ভালোভাবে কথা বলতে পারে না।সবার সাথে খুব তো হেঁসে হেঁসে কথা বলো।আর আমার বেলায়ই যত রাগ,ইগনোর তোমার।কেন বলতে পারো…?
.
কই না তো!!আপনার উপর কোনো রাগ নেই আমার।সকলের সাথে যেভাবে কথা বলি আপনার সাথেও সেভাবে বলি।সে যাইহোক আর এই কাক ফাঁটা রোদের মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না আমার আসছি বলে ভেতরে চলে গেলো মেহরীমা…..মেয়েটা বার বার অবাক করে আমায়।আচ্ছা কাল রাত থেকে একটু বেশিই রাগ দেখাচ্ছে না।যখন থেকে “রীমা” নামটা লিখেছি।তার মানে কি আমাকে ভালোবাসে ও।এরজন্য জেলাস ফিল করছে।এই প্রথম কারোর মন বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছি।আচ্ছা যদি ভালোই বাসে তাহলে এত রাগ দেখায় কেন…?উল্টা পাল্টা ছাড়া সোজাসাপ্টা কথা বলে না।সত্যিই কি ভালোবাসে আমায় নাকি সবটাই আমার বুঝার ভুল…..!!
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-১২

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_12
.
.
🥀দুই হাতে মেহেদী দিয়ে পুতুলের মতো হাত দুটো টান টান করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে রিদি।আন্টির কড়া হুকুম মেহেদী না শুকানোর আগে যেন হাত না ধুয়।এই আদেশের একটা ব্যাখাও দিয়েছেন উনি।কারণ হাতের রং যত গাঢ় হবে তার বর তাকে তত ভালোবাসবে।এই কথাটা ভালোভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছে রিদি।এখন যদি পাঁচ মিনিটেই হাত ধুয়ে নেয় তাহলে রং বসবে কি করে।তাই কষ্ট করে বরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হলেও এই অসহ্য সময়টা পার করতে হবে ওকে।আমি ওর পাশে বসে কান্ড দেখে চলেছি।মেয়েটা কথাগুলো সত্যি মনে করে বসে আছে।নাদিরা মেহেদী দিতে ব্যস্ত।ওর দেওয়া শেষ হলেই আমার হাতে মেহেদী পড়ানো হবে।যদিও না করেছিলাম কিন্তু বেস্টুর কথা আমাকেও পড়তে হবে।এক হাত পুড়েছে তো কি হয়েছে অন্য হাতে পড়বো।নাদিরাকে পড়িয়ে আমার হাতে মেহেদী পড়াতে শুরু করলো পার্লারের মেয়েটি।কিছুটা পড়াতেই এক প্রকার দৌড়ে এসে আমার হাতের সাথে টেস দিয়ে হাত রাখলেন আরাভ।পেছনে রামীম ভাইয়াও আসছেন।উনার এমন ব্যবহারে শকড আমি।ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি।কারণ ছেলেদের মেহেদীর প্রতি ইন্টারেস্ট আছে এই প্রথমবার দেখলাম আমি।রিদি আর নাদিরাও বেশ অবাক।দুজনে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে উনার দিকে।সেদিকে নজর না দিয়ে মেয়েটি কে বলে উঠলেন উনি…..
.
একটা নেইম আর্ট করো তো ফার্স্ট!!
.
নেইম!!উনার কথায় ৩৬০ ভোল্টেজের শক খেলাম আমি।উনি হাতে কারো নেইম আর্ট করবেন!এটা ঠিক শুনছি তো আমি।আমার সাথে সাথে অবাক রিতি আর নাদিরাও।কিন্তু কার নাম হাতে আর্ট করবেন উনি।কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছেন নাকি।
.
উনার কথায় হাসলো মেয়েটি!!স্যার কি নাম হবে বলুন।
.
রিতিঃভাইয়া কার নাম আর্ট করবে তুমি…?ভ্রু নাচিয়ে গার্লফ্রেন্ডের বুঝি…?
.
ধুরর না!গার্লফ্রেন্ড না।নিশ্চয়ই বউমণি হবে।
.
তোরা থামবি!!ওদের কথায় কান না দিয়ে আপনি আপনার কাজ করুন তো!!
.
কি নেইম বললেন না তো!!
.
কিছুটা ভেবে “রীমা”!!খুব সুন্দর করে আর্ট করবেন কিন্তু।যাতে আমার মন মতো হয়।
.
নামটা শুনে আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না আমি।শুধু যে আমি আশ্চর্য হয়েছি তা কিন্তু নয় সাথে রিদি আর নাদিরাও।আমরা কেউ ভাবতে পারিনি উনি এরকম একটা নাম আর্ট করতে পারেন।”রীমা” নামটা বেশ ভালো কিন্তু কে সে…?কবে উনার মনে জায়গা দখল করলো।আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই কি উনার প্রেম চলছিলো।নাহ!নাদিরা তে বলেছিলো কোনো রিলেশন নেই উনার।উনার আচার ব্যবহারে আমারও তাই মনে হয়েছে।তাহলে কি এই ছয় মাসে কেউ এন্ট্রি নিয়েছে উনার লাইফে।সে যাইহোক এটা নিয়ে এত ভাবছি কেন আমি।কেন কষ্ট হচ্ছে আমার।উনি যা ইচ্ছা তাই করবেন তাতে আামর কি!আমার তো কষ্ট হওয়ার কথা না।তাহলে কেন কোথাও খারাপ লাগা কাজ করছে।জানি না!কিচ্ছু জানিনা আমি।
.
ভাইয়া তুমি বউমণি কে রেখে শেষ পর্যন্ত অন্য একটা মেয়ের নাম হাতে লিখছো…?দিস ইজ নট ফেয়ার।
.
রিদিঃএই বউমণিটা ওই যাকে তুলে এনে বিয়ে করেছিলো সে না…!!
.
হুমম!!
.
আহারে!!বেচারির কপাল টা পুড়লো।আচ্ছা ভাইয়া “রীমা” মেয়েটা কে..?
.
মাই লাইফ লাইন!!আমার দিকে তাকিয়ে বউ বা গার্লফ্রেন্ড সেটা ফ্যাক্টর নয় মোটকথা আমার ভালোবাসার মানুষ। আর কিছু জানতে চাস না তোরা।ছোট ছোটদের মতো থাকবি।বড়দের মতো পাকামি করবি না ওকে…!!
.
উনার কথা শুনে দুজনেই চুপ।আমি নিজের হাত গুটিয়ে ওখানে থেকে উঠে দাঁড়ালাম।এখানে থাকার একফোঁটা ইচ্ছেও নেই আমার।হয়তো থাকলে নিজের মনের কোণে চাপা পড়া কষ্ট গুলো বেড়িয়ে আসবে সবার সামনে।কি দরকার নিজের কষ্ট অন্যকে দেখানোর।চাই না আমি!!নিজের কষ্ট গুলোকে নিয়ে না হয় নিজেই বাঁচি।আমি উঠতেই রিদি নাদিরা আমাকে বসার জন্য বলছে কিন্তু কারো কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার।নিজের মনেই চলে যাচ্ছি।
.
নাদিরাঃযাহ!চলে গেলো!!ভাইয়া তুমি কি কাজটা ঠিক করলে…?
.
রামীমঃতোমার কাছে ঠিক না হলেও ওর কাছে ঠিক।এটা নিয়ে কথা বাড়িও না।একটু মাথা খাটাও ব্যাপারটা বুঝতে পারবে।অবশ্য মাথামোটা রা আর কিই বা মাথা খাটাবে।
.
কিহ!তুমি আমায় মাথামোটা বললে…?
.
তোকে এটাই বলা উচিৎ।এরইমধ্যে কমপ্লিট আমার মেহেদী দেওয়া।খুব সুন্দর হয়েছে ম্যাডাম।থ্যাংকস!!রিদি তোর ফ্রেন্ড কোথায় রে চলে গেছে নাকি…?
.
হুম!তুমি যেভাবে তোমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিজি তাই হয়তো রাগ করে চলে গেছে।
.
ওহ্!ঠিক আছে।মেহেদী না পড়লে খুব একটা ক্ষতি হবে না।
.
আচ্ছা ভাইয়া তুমি ওর পিছনে লাগছো কেন…?কি সামথিং সামথিং!!
.
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে সেটা তুই বুঝবি না!!বোঝার বয়স বা বুদ্ধি কোনাটাই হয়নি কিনা। আরেকটু বড় হ তারপর বুঝবি।
.
অবাক হয়ে ভাইয়া কাল আমার বিয়ে!!আর তুমি বলছো আমার বোঝার বয়স হয়নি…?
.
বিয়ে তো ১০ বছরের খুকীকেও দেওয়া যায় তাই বলে কি সে বড় হয়ে গেলো।যাকগে তোরা থাক আমার কাজ কমপ্লিট আমি আসছি।
.
.
রুমে বসে গুম হয়ে আছি আমি।হাত ধুয়ে ফেলেছি সেই কবে।কিন্তু তবুও গাঢ় রং বসেছে হাতে।সেই হাত দিয়ে গবেষণায় বসেছে দুজনে।তাদের কথা অনুযায়ী আমার বর খুব ভালোবাসবে আমায়।রিদিও খুব খুশী কারণ ওর হাতে গাঢ় রং বসেছে যে।কিন্তু নিজের দিকে বিশেষ খেয়াল নেই ওর।শুধু উল্টে পাল্টে আমার হাত দেখছে।এখন ওর মনে আমার বর দেখারও ইচ্ছে জেগেছে খুব।কিন্তু আমার বরকে কোথায় পাবে…?
.
আচ্ছা তোর ওই রাক্ষস বরটার কোনো ছবি আছে তোর কাছে…?
.
ওর কথায় চরম আশ্চর্য আমি!!ও আমার রাক্ষস বরের ছবি দিয়ে কি করবে…?
.
নাহ্!!কেন…?
.
না!!আজ ওই রাক্ষস বরটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আমার।দেখ তুই কত লাকি এখনও রাক্ষস তোকে ভালোবাসে।আসলে দূরে থেকেও ভালোবাসা হয়।
.
নাদিরাঃহুম দূরে গেলে আপনজনের শূন্যতা অনুভব করা যায়।আর সামনে থাকলে তাদের অবহেলা করি আমরা এটাই বাস্তব।।হয়তো এখন উনি খুব ভালোবাসেন তোমাকে।
.
এই মেয়ে দুটোর কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে যাচ্ছে আমার।কিন্তু থামার নেমই নেই।এতক্ষণ ধরে একই টপিকে কি করে আছে ওরা।যেখানে এক টপিকে পাঁচ মিনিটের উপরে কথা বলতে নারাজ আমি।রীমা যেই হোক এত কথা বলার কি আছে বুঝি না বাপু।উফফ!!থামবে তোমরা,…কি টপিক নিয়ে এখনও পড়ে আছো!অসহ্য লাগছে আমার।
.
আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো দুজনে।এমন ভাব করছে যেন কথাটা বলা উচিৎ হয়নি আমার।দুজনের এমন চাহনী দেখে বোকা বনে গেলাম আমি।কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেন তোমরা…?
.
তাকাবো না!!তুই জানিস এই ভাইয়া আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি আর সেই কিনা একটা মেয়ের নাম লিখলো…..!!
.
তো কি হইছে!একসময় তাকায় নি কিন্তু এখন তাকাচ্ছে।মানুষের সারাজীবন কি এক রকম যায় নাকি।মানুষের মন মিনিটের মধ্যে পাল্টে যায়।
.
এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস!!তবুও একটা খটকা থেকেই যায়।
.
ধুরর ভাল্লাগেনা!প্লিজ তোমরা এইবার চুপ করো।
.
নাদিরাঃআহা!!বউমণি তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি।কিন্তু তোমাকে জ্বালানোর জন্য আরো বেশি করেই বলছি আমি।
.
রাত তিনটা হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।এপাশ ওপাশ ফিরে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু ঘুমের উপর কি জোর চলে,চলে না তো!!তাই নিজেকে ঘুম পাড়াতে ব্যর্থ হলাম আমি।নিজেকে ব্যর্থ হতে দেখে প্রচন্ড রাগ লাগছে আামার।কেন ঘুম আসবে না।কিসের জন্য আসবে না।আজ রাতের ঘুম যদি নাই হয় তাহলে কাল এত দখল নেব কি করে।যেখানে ঘুমিয়েই ছিলাম আধঘন্টা মতোন আগে যদিও এখনও অনায়াসে চার-পাঁচ ঘন্টা ঘুমাতে পারি।কিন্তু ঘুম সেটা এভাবে উবে যাবে ভাবতেই পারিনি।কিছুক্ষণ বিছানায় ছটফট করে উঠে বসলাম আমি।দম বন্ধ লাগছে আমার।এতক্ষণে বুঝে গেছি আজ দু-চোখ এক করতে পারবো না আমি।ঘুম নেই সে হাওয়া হয়ে গেছে।কিন্তু এখানে একা একা বসে থাকা তো যায় না।নাহ ছাদে যাই।কিন্তু এই রাতের বেলায় একা একা যাবো কি…..
.
ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছি।আকাশে আজ তারার মেলা বসেছে।অনেকগুলো তারার মাঝখানে এক টুকরো চাঁদ।চাঁদের আলোয় চারিদিক চিক চিক করছে।চাঁদটাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ।ওই চাঁদের মুগ্ধতায় মুগ্ধ আমি।কাল রিতির জীবনে সবথেকে সুন্দরতম দিন।স্বামী,শশুর,শ্বাশুড়ি নিয়ে ভরা সংসার ওর।আমিও তে সব পেয়েছিলাম কিন্তু….চেয়েছিলাম মানিয়ে নিতে,উনাকে মেনে নিতে কিন্তু উনি!উনি কোনো সুযোগই দেন নি আাময়।হয়তো উনার লাইফে আগে থেকেই “রীমা” নামের অস্তিত্ব ছিলো তাই।বেশ ভালোই হয়েছে উনার পছন্দের মানুষের সাথে জীবন সাজাতে পারবেন উনি।আর পিছুটান রেখে লাভ নেই এবার উনার আমার সেপারেশন খুব জরুরি।কথাগুলো ভাবতেই চোখ দুটো ভরে আসছে আমার।চোখ বুঝে চোখের পানিগুলো ফেলছি তখনই সামনে কারে উপস্থিতি টের পেলাম আমি।এই গভীর রাতে কে হতে পারে আমার সামনে।তাহলে কি ভূত!না ভূত বলে তো কিছু নেই।ভয়ের চোটে চোখ খোলার সাহস পাচ্ছি না আমি।ভেতরে দম নিয়ে দোয়া দুরুদ পড়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম আমি।কিন্তু সামনে কেউ নেই।হয়তো আমার মনের ভুল ছিলো।এখানে থাকাটা উচিৎ নয় তাই আবারও রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম আমি।কিন্তু সামনে এমন কিছু দেখবো ভাবতেও পারিনি আমি।দু’হাতে চোখ কছলে বড় বড় চোখ করে আবারও তাকালাম কিন্তু না ভুল নয়!ঠিকই দেখছি।আআআ বলে চিৎকার করে উঠলাম আমি…….!!
.
.
#চলবে…..

তোমায় ঘিরে পর্ব-১১

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_11
.
.
🥀সকলের রাতের ডিনার শেষে রাতের বেলা ছাদে বসে গল্প করছি আমি,নাদিরা,রিদিতা সাথে ওর কাজিনগুলো।রিদি ওর বিয়েটা নিয়ে খুব এক্সাইটেড।এক্সাইটেড হবেই বা না কেন বিয়ে ঠিক হওয়ার চারমাস পর ছুটিয়ে প্রেম করে তবেই বিয়ে করছে ওরা।রিদির বর পেশায় ইন্জিনিয়ার,তবে বেশ রোমান্টিক।রিদি বিয়ের পর কি করবে কোথায় যাবে এই সব কথা বেশি প্রাধান্য পায় ওর মুখে।ওর কথাগুলো শুনে আমরা হাসছি।তখনই ছাঁদের কোণে দাঁড়ালেন উনি সাথে রামীম ভাইয়াও আছেন।উনাকে দেখেও না দেখার ভান করে গল্পে মনোনিবেশ করলাম আমি।তখনই বলে উঠলেন উনি….
.
আচ্ছা রিদি সবাইকেই তো মোটামুটি চিনি কিন্তু এই মেয়ে টা কে…?ওকে তো চিনলাম না।
.
উনার কথায় অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছালাম আমি।আমাকে চিনেন না উনি ঢং।উনার কথা শুনে মিটিমিটি হাসছে নাদিরা আর রামীম ভাইয়া।
.
রিদিঃওহ্!!ভাইয়া তোমার সাথে পরিচয় করানোই হয় নি।ও আমার বেস্টু মেহরীমা।মিহু উনি আমার কাজিন নাদিরার ভাই..!!
.
ওহ্!হ্যালো মিহু আমি আরাভ(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)।
.
উনার এমন ব্যবহারে রাগে ফুঁসছি আমি।”হ্যালো মিহু আমি আরাভ” নিকুচি করেছে তোর পরিচয়ের।যত্তসব ফালতু লোক একটা।একটু আগে চিনলো কিন্তু এখন সবার সামনে চিনলো না কেমন খাডাশ হুহ!!
.
ছাঁদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে এক পা দেয়ালে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি।ব্যাপারটায় অস্বস্তি ফিল হচ্ছে আমার।আমি কেন যে কারোরই হওয়ার কথা।এমন করে যদি কেউ চোখ দিয়ে গিলে খায় তাহলে তো অস্বস্তি হবেই।বার বার নিজের ওরণা ড্রেস ধরে টানছি।আমার এমন কান্ড দেখে মৃদু হাসছেন উনি কিন্তু যেই ছিলেন সেই একই ভগ্নিতে এখনও আছেন তিঁনি।উনার এই বেহায়াপনা মোটেও নিতে পারছি না আমি।তাই নিজ আসন ত্যাগ করে উঠে দাঁড়িয়ে আমি।গল্পের আসর ছেড়ে আচমকা উঠায় অবাক সবাই।কিরে উঠছিস যে….কোথায় যাবি…?
.
ভালো লাগছে না!!মাথা ব্যাথা করছে একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
রিদিঃখুব কি খারাপ লাগছে আমি আসবো তোর সাথে…?
.
উহুম আমি পারবো!!তুই থাক।উনার দিকে তাকিয়ে এখনও সেই অবস্থায় অটল উনি একটা মুখ ভেংচি কেটে নিচে নেমে এলাম আমি।নিচে নামতে মাথায় কারো সাথে টোকা খেলাম আমি।সামনের ছেলেটাকে দেখে রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমার।আহান রিদির কাজিন ওদের বাসায় থেকে লেখাপড়া করছে। ছেলেটার চরিএে সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি।দেখলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে তাকে আমার দিকে। যেন কোন জন্মে তাঁর বউ ছিলাম আমি।ছেলেটা বএিশ দাঁত বের করে যেই কথা বলতে যাবে তখনই তাড়াহুড়ো করে ওকে এড়িয়ে গেলাম আমি।যাক বাবা বাঁচা গেলো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি…!!
.
.
.
আজকে রিদিতার গায়ে হলুদ+মেহেন্দি।সকাল থেকে সবাই যে যার মতো বিজি।আমিও কম বিজি নই।আন্টি নাদিরার হাতে হাতে কিছুটা কাজ এগিয়ে দিচ্ছি।সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ তাই নাদিরা আর রিদি ওদের পার্লারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।রিদিতা আমাকে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু আমি যাই।শেষমেশ মেয়েটা মুখ কালো করেই চলে গেলো।আমি না যাওয়ার একটাই কারণ “আরাভ”!! এই লোকটার জন্য এই বাড়ীতে কোথাও একফোঁটা ও শান্তি পাই না আমি।যেখানেই যাই সেখানেই উনি।বিরক্তি লাগে সেটা কেন বুঝেন না উনি।রিদি কে নিয়ে পার্লারে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছি তখনই জানতে পারি আরাভের সাথে উনার গাড়ী করেই আমাদের পৌঁছে দেবেন উনি।পেছনে রিদি আর নাদিরা সাথে ওদের কাজিন আমার জায়গা নাই।তাই আমাকে সামনে উনার পাশে বসতে বললেন উনি কিন্তু কিছুতেই উনার পাশে বসে যাবো না আমি।যেখানে উনার মুখ দেখতেও নারাজ আমি সেখানে উনার পাশে বসার প্রশ্নই উঠে না।তাই রিদিকে বুঝিয়ে অসুস্থতার ভান করে আটকে যাই আমি।আমার না যাওয়ায় বেশ ক্ষেপেছেন উনি।সেটা উনার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি আমি।যা হয়েছে বেশ হয়েছে…!!
.
একটু আগেই পার্লার থেকে ফিরেছে রিদি!!মেয়েটাকে আজ যেন আরো মায়াবী লাগছে আমার কাছে।হলুদ কালারের শাড়ি,কানে গলায় ফুলের অর্নামেন্টস ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, হাত ভর্তি চুড়ি…!!নাদিরাকেও দারণ লাগছে আজ।কিন্তু আমার এখনও রেডি হওয়া হয় নাই।সেই দেখে রিদির কি রাগ।ওর আর আন্টির বকা শুনে তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে একটা শাড়ী জড়িয়ে নিলাম গায়ে।শাড়ী এই জিনিসটা আমার বিরক্তির তালিকায় প্রথম।কিন্তু রিদির ইচ্ছে তার বিয়েতে আমি যেন শাড়ী পড়েই থাকি।ওর এই আবদার টা ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারি নি।তাই শাড়ী পড়ে হালকা মেক-আপ,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে হাঁটা ধরালাম স্টেজের দিকে আমি।চারিদিক সেজে উঠেছে খুব সুন্দর করে।লাল নীল আলোর কি ছড়াছড়ি।আমকে দেখেই মিষ্টি হেঁসে উপহার দিলেন আন্টি…..খুব সুন্দর লাগছে তোকে…!!
.
উনার হাসির বিপরীতে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলাম আমি।তখনই দাঁত বের করে আমার সামনে দাঁড়ালো আহান খচ্চর!উফফ!!একে দেখলেই মেজাজ বিগড়ে যায় আমার।মিহু তোমাকে না সত্যি খুব সুন্দর লাগছে একদম পরীর মতো লাগছে।তোমার দিক থেকে কেউ চোখই ফিরাতে পারবে না।
.
উনাকে থ্যাংকস জানালাম আমি।বার বার তো মানুষকে ইগনোর করা যায় না।তাছাড়া আমি যে উনার সাথে কথা বলছি সেটা নজর রাখছে আর রাগে ফুসছে কেউ।তাঁকে আরেকটু রাগানোর জন্য না চাইতেও উনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম আমি।একসময় ক্লান্ত হয়ে উনাকে কাটিয়ে সামনে হাঁটা ধরালাম আমি।স্টেজে গিয়ে রিদির সামনে দাঁড়ালাম।রিদিও প্রসংশা করলো সাথে নাদিরাও।বেশ ভালোভাবেই হলুদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেলো।অনুষ্ঠান শেষে ড্রয়িংরুমে ঢুকছি তখনই আমার হাত টেনে ধরলো কেউ।কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথায় যেন পৌঁছে গেলাম।ব্যাপারটা এতটা তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে কিছুই টের পাইনি আমি।আমার সামনে রাগী লুকে তাকিয়ে আছেন আরাভ।এই রাগের কারণগুলো অজানা নয় আমার কাছে।উনার সাথে পার্লার যাই নি এটাই সবথেকে বড় রাগের কারণ উনার।কারণ ইগনোর জিনিসটা একেবারে পছন্দ করেন না উনি।সেটা উনাদের বাসায় থাকাকালীন জানতে পেরেছি।উনি যেটা বলেন সেটাই শুনতে হবে সবাইকে।উনার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে রুক্ষ কন্ঠে বললাম…..
.
এটা কি ধরণের অসভ্যতা আমাকে এখানে এভাবে নিয়ে আসলেন কেন….?
.
মুখে কথার খই ফুটেছে তাই না!!(দাঁত কটমট করে)ওই ছেলের সাথে এত কথা কিসের তোমার…?কিসের এত হাসাহাসি…?(চোখ রাঙিয়ে)
.
আজব!কোন ছেলেটার কথা বলছেন আপনি…?আর যার সাথেই হাসি না কেন তাতে আপনার কি…?আমার যখন যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে কথা বলবো,হাসবো।তাঁর কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নই।
.
বাধ্য তুমি!(চিৎকার করে)।তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ আইনত এখনও তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী।হ্যাঁ আমরা আলাদা থাকি এটা ঠিক কিন্তু আমাদের ডিভোর্স এখনও হয় নি।
.
বিবাহিতা স্ত্রী!!হাসালেন।যেই বিয়ে আপনিই মানেন না,আমিও মানি না।নিছক জোর করে,ভুল করে হওয়া একটা সম্পর্ক সেখানে আমাকে স্ত্রী দাবি করাটা কি বোকামি নয় মিঃ আরাভ।আপনার কাগজে কলমের স্ত্রী আমি কিন্তু মন থেকে নই।যাগগে এসব ফালতু কথা শোনার টাইম বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নাই।
.
নাহ বোকামি নয়!!আমার বউকে আমি বউ বলবো তাতে কার কি!আমি মানি কিনা সেটা আমি জানি!আজকের পর থেকে আর ওই আহানের সাথে কথা বলবে না।কথাটা মাথায় রেখ ইডিয়ট বলে চলে গেলেন উনি।আসছে বউ কইতে হারামজাদা!!আমি না তুই ইডিয়ট,তোর চৌদ্দ গুষ্টি ইডিয়ট হুহ!!কিসের এত জ্বালাপোড়া তোর।আমি কথা বলবো আরও বেশি করে কথা বলবো তুই আটকাইস আমারে…!!কথাগুলো কানে যাওয়ার আগেই ওখান থেকে চলে গেলেন উনি।থাকলে হয়তো কথাগুলো গলা দিয়ে বেরই হতো না আমার।ওই ফালতু লোকটার ফালতু কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ড্রয়িংরুমে ঢুকছি তখনই নাদিরার সাথে ধাক্কা খাই আমি।বেখালি হয়ে হাঁটার ধরুন ওর হাতে থাকা কফির মগ আঁচড়ে পড়ে আমার হাতে।সাথে সাথে আহ্ বলে চিৎকার দিয়ে উঠি আমি।হাতটা খুব জ্বালা করছে আমার।রান্নাঘর থেকে সদ্য নিয়ে আসা হয়েছে যার ধরুন তাপটা এখনও টাটকা আছে।আমি আহ্ বলার সাথে সাথে একজন সামনে এসে দাঁড়ালো আমার।ধমকের সুরে বলে উঠলো…..
.
এত কেয়ারলেস কেন তুমি…!!একটু দেখে শোনে চলতে পারো না এই চোখ কোথায় থাকে তোমার পায়ের নিচে…?
.
একে তো হাত জ্বলছে তার উপর এর গাঁ জ্বালানো কথা দুইয়ের সংমিশ্রণে দুকছি আমি।নাদিরা মন করে সরি!সরি!আমি দেখতে পাই নি।
.
এখানে দাঁড়িয়ে সরি না বলে আইস ব্যাগ নিয়ে আয়….দৌড়ে গিয়ে বরফ নিয়ে এলো নাদিরা।উনি বরফ নিয়ে আমার হাতে দিতে যাবেন তখনই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলাম আমি।
.
কি হলো হাত দাও…!!
.
আমার কাছে দিন আমিই দিয়ে দিতে পারবো।আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
.
ফটাফট হাত বার করো নইলে…..
.
বললাম তো…!!
.
রাবিশ!!বলে জোর করে এক টানে আমার হাতে উনার কাছে নিয়ে গেলেন উনি।বরফ দিয়ে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলেন আমার হাতে।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ।এত রাক্ষুসী শক্তির সাথে আমার মতো মেয়ে পারবে কি করে।অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন উনি….ফিসফিস করে কানের কাছে বলে উঠলেন…..
.
আর কখনও যদি দেখেছি বেখেয়ালে হেঁটে কিছু ঘটিয়েছো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।মাইন্ড ইট!!আর আমার কাজে কখনও বাধা সৃষ্টি করো না।কারণ আমার যা করার তা থেকে তুমি আমায় আটকাতে পারবে না উল্টে আমার কঠিন রূপ দেখবে তুমি যেটা আমি কখনও তোমার উপর এপ্লাই করতে চাই না।বুঝেছো “বউ” বলে চলে গেলেন উনি।”বউ” এই বউ শব্দটা বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমার কানে।এসব কি বলছেন উনি আর কেনই বা বলছেন।যেই সম্পর্ক ছয় মাস আগে মাটি চাপা দিয়েছেন নিজেই সেই সম্পর্ক কেন আবার নতুন করে টানছেন উনি।কেন এই বর বউয়ের খেলায় মেতেছেন।আমাকে কি পুতুল মনে হয় উনার নাকি।যখন যা হচ্ছে তাই করছেন।কখনও ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন তো কখনও দরদ দেখাচ্ছেন।কি চাইছেন কি উনি…..!!
.
.
#চলবে……

তোমায় ঘিরে পর্ব-১০

0

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_10
.
.
🥀নাদিরা!!
.
বউমণি বলেই আমাকে জাপটে ধরলো মেয়েটি।হালকা হেসে জড়িয়ে ধরলাম আমিও।আমাকে দেখে ওর খুশী যেন ধরছেই না যেটা ওর চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।চোখ গুলো খুশীতে চিকচিক করছে ওর।কিছুক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিলো।তারপর খুলে বসলো ওর কথার ঝুড়ি….!!
.
জানো বউমণি আমি তো ভাবতেই পারিনি তোমার সাথে আমার এভাবে দেখা হয়ে যাবে।তুমি চলে আসার পর তোমাকে খুব মিস করতাম এখনও করি।কেন চলে আসলে গো।আচ্ছা তুমি এখানে কি করছো…?
.
আমি আমার বান্ধবীর বিয়েতে এসেছি।আসার ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু ওই বান্দরনীর কড়া হুকুম ওর বিয়ের এক সপ্তাহ আগে যেন ওর বাসায় আসি।কিন্তু তা কি সম্ভব!!সম্ভব নয়।তাই আজকে এসেছি।
.
ওহ্হ তাই বলো…!!তার মানে তুমি রিদিতা আপুর বান্ধবী +আমার বউমণি।রিদিতা আপু হলো আমার কাজিন।তাই আমি এসেছি।আম্মু আসতে পারেনি তুমি তো জানোই ভাবির কথা।এই মাসেই ডেইট দিয়েছি তাই আম্মু ওকে একা ফেলে আসেনি।
.
তাই নাকি এটা তো খুব ভালো খবর!শেষমেশ একটা বাচ্চা আসছে তাহলে তোমাদের বাসায়।আচ্ছা নীলাভ ভাইয়া এখন কেমন আছেন…?
.
আরেহ তুমি তো জানোই না!!অবশ্য জানবেই বা কি করে তুমি চলে আসার পর তো কোনো যোগাযোগ ছিলো না আমাদের।তুমি আসার একমাস পরই ভাইয়া বাসায় এসেছে।এখন পুরো সুস্থ।ভাবির সাথে ছুটিয়ে সংসার করছে….!!জানো ওরা খুব হ্যাপীলি দিন কাটাচ্ছে। বাচ্চাটার আগমন নিয়ে খুব এক্সাইটেড ওরা।কবে আসবে সেই চিন্তায় বিভোর।ভাইয়ার যেন তরই সইছে না।
.
ওহ্হ ভালো তো!!বাচ্চা জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে।ওদের ওই ছোট ছোট আঙ্গুল ধরে থাকতে খুব ভালো লাগে আমার।আচ্ছা আন্টির খবর কি…?
.
হুমম!!আম্মু তো ভালোই আছে।জানো আম্মু আর ভাবি সবসময় তোমার কথা বলে।ভাবি সবসময় এটা বলে ওর জন্য সাফার করলে তুমি।আচ্ছা ভাবি সবার কথা জিজ্ঞেস করলে কই যার জন্য আমাদের সাথে তোমার পরিচয় সেই আরাভ ভাইয়ার কথা একটিবারও জিজ্ঞেস করলে না তো…!!
.
“আরাভ” এই একটা নাম আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে৷ভালো আছে নিশ্চয়,ভালো থাকবেই তো!থাকারই কথা!অতীতের কথা ভাবতেই ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ভেরিয়ে এলো আমার।উনার কথা আলাদা করে জিজ্ঞেস করার কি আছে,ভালোই আছেন নিশ্চয়ই।
.
তুমি জানো না বউমণি ভাইয়া ভালো নেই।তবে এটা আমি তোমাকে বলছি না।সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।
.
কি হলো চলো রিদির কাছে যাই।আর একটা কথা আমার যে তোমাদের সাথে একটা সম্পর্ক ছিলো সেটা প্লিজ ওকে বলো না।বুঝতেই তো পারছো কথাগুলো শুনলে এ্যা টু জেড বলতে হবে।আমি চাই না এগুলো নিয়ে কোনো কথা হোক।আসলে পুরনো কথা আমি আর মনে করতে চাই না।
.
ভাইয়ার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছ…?
.
আমতা আমতা করে ককই না তো!!চলো আমার আবার দেরি হলে রিদি গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।
.
ওকে চলো!!মনে মনে মুচকি হেসে বউমণি এইবার তোমার খবর আছে!!
.
রিতির কাছে যেতেই গাল ফুলিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলো আমায়।মেয়েটা সত্যি পাগলী!কেন আসতে দেরী হলো সেটা নিয়ে পড়েছেন উনি।এদিকে দুদিন পর সবাইকে ছেড়ে একা একা ডেং ডেং করে যে শ্বশুর বাড়ী চলে যাবেন সেটা কিছু না হুহ মুখ ভেংচি দিয়ে…!!
.
ওই একদম গাল ফুলাবি না তো…!!গাল ফুলালে এক্ষুনি চলে যাবো।তোর বিয়েতেই থাকবো না বান্দরনী!!
.
……
.
রিদির সামনে গিয়ে কোমড়ে দুহাত চেপে রাগী লুকে চুপ থাকবি তো!কথা বলবি না।ঠিক আছে বলে চুলের গুছি ধরে এক টান মেরে আসছি বলে যেতে লাগলাম আমি।তখনই মুখে কথা ফুটলো উনার।আমার হাত ধরে মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো…..
.
তুই সত্যি চলে যাবি নাকি…?
.
হুম!!ছাড় আমায়।
.
করুণ কন্ঠে যাস না প্লিজ…!!
.
কেন যাবো না!!তুই হাড়ির মতো মুখ করে আমার সাথে কথা বলবি আর আমি তোর বিয়েতে থাকবো নো ওয়ে বস আমি আসছি।
.
সরি! সরি!!আর হবে না।এই দেখ কান ধরছি বলেই কান ধরলো রিদি।ওর এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে খুটি খুটি আমি।আজ বাদে কাল যার বিয়ে সে কিনা কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে হাউ ফানি!
.
ওকে ঠিক আছে আর কান ধরতে হবে না শাঁখচুন্নি!!আমাদের কথার মাঝেই বেজে উঠলো রিদির ফোন।ফোন হাতে লজ্জা রাঙ্গা হাসি উপহার দিলো সে….ওর মিষ্টি হাসি দেখে বুঝতে বাকী নেই ফোনটা কার।একগাল লজ্জা নিয়ে আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ব্যস্ত সে।আমি অবাক হয়ে দেখে চলেছি ওকে….
.
কতটা খুশী নিয়ে মনের আনন্দে কথা বলছে রিদি।আজ বাদে কাল যে হবে ওর পৃথিবীর সব থেকে আপন মানুষ।আমার জীবনটাও তো এরকম হতে পারতো!!গল্পটা পারতো সুন্দর কোনো রূপ নিতে।কিন্তু না তা হলো না।
.
আরাভ আমাকে আমার বাড়ী ফিরিয়ে দিয়ে নিজের করা অন্যায়ের প্রাশ্চিত্য করে গেছেন।সেদিন আমার সামনে দুইটা অপশন রেখেছিলেন তিনি….এক.হয় উনার সাথে থাকবো নয় উনাকে ছেড়ে দিবো তার মধ্যে দুই নাম্বার টাকেই মেনে নিয়েছি আমি।অবশ্য মানি নি,মানানো হয়েছে আমায়।এক প্রকার বাধ্য হয়েই মেনে নিয়েছি।পরেরদিন সকালে আমাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন উনি।তারপর বাবা মা’কে সবটা খুলে বলেন।আব্বু আম্মু নিজেদের ব্যবহারে অনুতপ্ত।বিনা দোষে নিজের মেয়েকে ভুল বুঝেছেন উনারা।কিন্তু সবটা শোনার পর আরাভের উপর রেগে দুই-একটা চড় থাপ্পড় ও বসিয়েছেন আব্বু কিন্তু তাতে কোনো রিয়াক্ট করেন নি উনি বরং মাথা নিচু করে মেনে নিয়েছেন তিনি।উনার সাথে থাকার ব্যাপারে আমার উপরে সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছিলেন আব্বু কারণ জীবনটা আমার।তাই আমার ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন উনারা।সেই থেকে বদলে গেলো আমার জীবন।আরাভের সাথে বা ওর ফ্যামিলির সাথে আর দেখা বা কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার।তাই হঠাৎ এখানে নাদিরাকে দেখে অবাক হই আমি।উদাস মনে নিজের জীবন নিয়ে ধ্যান মগ্ন আমি তখনই কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।আচমকা এমন হওয়ায় চমকে উঠলাম আমি…..
.
রিদিঃকি রে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলিস….?এতক্ষণ ধরে ডাকছি হুশই নেই।
.
উহুম কিছু না!!একটু অন্য মনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম।
.
তা কি ভাবছিলিস!!ভ্রু নাচিয়ে জিজুর কথা বুঝি।
.
ওর কথায় হালকা হাসলাম আমি!!নাহ তোর জামাইয়ের কথা।এখন তুই থাক আমি আন্টির সাথে দেখা করে আসছি।
.
সন্ধ্যা সাতটা কি আটটা….চারিদিকে আত্মীয় স্বজনে গিজগিজ করছে।এই হট্রগোলে মাথা ধরে গেছে আমার।শরীরটাও ভালো লাগছে না।এই সময়ে নিরিবিলি একটু স্পেস চাই আমার যেখানে এই শোরগোল থেকে একটু শান্তিতে থাকতে পারি আমি।বাগানের পাশটা নীরব থাকায় ওইদিকে হাঁটছি আমি হঠাৎ কিছু একটার সাথে পা আটকে পড়ে যাচ্ছি তখনই কোমড় জড়িয়ে ধরলো কেউ।চোখ খিঁচে বন্ধ করে সামনে থাকা লোকটাকে আঁকড়ে ধরে আছি আমি।তখনই কানে কিছু কথা এলো আমার।
.
হেই লেডি এত কেয়ারলেস কেন তুমি…?দেখে মনে হয় এখনও হাঁটতে শিখ নি…!!বার বার পড়ে যাওয়ার অভ্যাসটা এবার ত্যাগ করো ইয়ার!
.
লোকটার কন্ঠটা খুব চেনা আমার।এমন শীতল মিষ্টি গলা আগেও শুনেছি আমি।চোখ খুলে সামনে থাকা লোকটাকে দেখে আমার চেখ ছানাবড়া!…..হোয়াইট শার্ট,চোখে কালো সানগ্লাস,সিল্কি চুলগুলো বেশ কিছুটা স্থান দখল করে নিয়েছে কপালের,মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে আমাকে ধরে আছে আরাভ।উনাকে দেখে আনমনেই বলে উঠলাম আপনি…..!!
.
হুম আমি!!গম্ভীর ভাব নিয়ে কেন তুমি অন্য কাউকে এসপেক্ট করেছিলে নাকি…?
.
ধুরর ছাড়ুন আমায়!!মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।
.
আমি তোমায় ধরে রেখেছি নাকি!!সেই কবে ছেড়ে দিয়েছি।তুমিই তো আমাকে ধরে আছো…!!উনার কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।নিজেকে একনজর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম সত্যি বলছেন উনি।তাড়াতাড়ি করে উনাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম আমি।
.
মেহরীমা নূর!!অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা।এখানে তোমাকে পাবো ভাবতে পারিনি।বাই দ্যা ওয়ে কেমন আছো তুমি…?
.
দেখতেই তো পাচ্ছেন ভালোই আছি!!অসুস্থ হলে কি আর এই বিয়ে বাড়ীতে আসতে পারতাম নাকি।
.
সানগ্লাস হাতে নিতে নিতে হুম তাও ঠিক!!তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি ভালোই আছে।বেশ মোটাও হয়ে গেছো ইদানীং।
.
কিহ!!আমি মোটা হয়েছি।যেখানে সবাই বলে দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হচ্ছি আর উনি কিনা বলছেন আমি মোটা…!!আর ইউ ওকে মিঃ আরাভ…?
.
জ্বী!!আচ্ছা তুমি এখানে কেন…?বিনা দাওয়াতে নাকি দাওয়াতে এসেছে…?
.
আপনি কি আমায় অপমান করছেন…?
.
নাহ না!!তোমাকে অপমান করার সাধ্য আমার আছে নাকি!জাস্ট মজা করে বলেছি ডোন্ট মাইন্ড!
.
ওহ্হ!!রিদিতা আমার বান্ধবী।
.
ওহ্হ আচ্ছা!!আমাকে জিজ্ঞেস করলে না তো আমি এখানে কেন…?
.
জানার প্রয়োজন নাই তাই।ওকে বাই বলে এক সেকেন্ডও সেখানে না দাঁড়িয়ে উল্টো পথে হাঁটছি আমি।লোকটাকে কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না আমার।গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে।কেন উনার উপর এতটা রাগ হচ্ছে তার কারণটা নিজেরই অজানা আমার।এই বিয়েতে আসাই ভুল হয়েছে আমার,মারাত্মক ভুল!এখানে যদি আসতাম তাহলে না এই রাক্ষস আর না নাদিরার দেখা পেতাম।এতদিন যেভাবে ওদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম তেমনই ভালো ছিলাম।শালা কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।আমি নাকি হাঁটতে শিখিনি।না আমি হাঁটা শিখি নি রোজ তুই আমায় হাত ধরে ধরে হাঁটতে বের হস খচ্চর কোনহানের…!!
.
.
#চলবে…..