Wednesday, July 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1481



তৃণশয্যা পর্ব-১২

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১২তম_পর্ব

আদনানকে এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে চারু।ছেড়ে দিলেই নির্ঘাত মৃত্যু।আদনান থ মেরে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে।কিন্তু এই মুহুর্তেও চারু কোনো প্রকার উত্তেজিত না হয়ে ভ্রু-কুচকে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ এতদিন থেকে কি করছেন করছেন?সেটা বড় কথা নয়,বড় কথা এখন আপনি আমার বর।আমার সামনে অন্য মেয়ের ছবি দেখবেন,কান্না করবেন এসব মানবো না।এবারের জন্য বাঁচিয়ে দিচ্ছি।পরেরবার সোজা উপরে।হুহ..’

এই বলে একটানে আদনানকে একটানে কোণা থেকে নিয়ে আসে মাঝে।আদনান নিজেকে সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়ে চারুর উপরে।দুজনে ধপাস করে পড়ে যায় ছাদের মেঝেতে।চারু নিচে তার উপরে আদনান।এতজোরে পরার কারনে আদনানের খানিকটা লাগে।সে অবাক হয়ে চারুর দিকে তাকায়।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আদনান তারাতারি উঠে দাঁড়ায়।আদনান উঠে দাঁড়ালে চারুও উঠে দাঁড়ায়।

আদনান কোনো কথা না বলে চারুর দিকে একবার তাকিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামতে শুরু করে।আদনান নিচে নামতেই চারু নিজেই নিজের বুকে এক ফু দেয়।মনে মনে তারিফ করে নিজের।এতসাহস সে কিভাবে পেল ভাবতেই অবাক হয় সে।চারু মনে মনে বলে,এখন থেকে এইরকম অত্যাচার তোমাকে সহ্য করতে হবে মি.আদনান।আমি পারবোনা এটা দেখতে যে আমার স্বামী আমার সামনে অন্যএকটা মেয়ের ছবি দেখে কান্না করছে।

১৯.

ব্রেকফাষ্টের টেবিলে বসে আছে সবাই।ব্রেকফাষ্ট করে চারু বাবা-মা রওনা দেবে।তাদের এগিয়ে দিয়ে আসার দায়িত্ব পড়েছে আদনান আর চারুর উপর।প্রথমে আদনান যেতে না চাইলেও পড়ে যেতে রাজি হয়।
ব্রেকফাষ্ট করে গাড়ি বের করে আদনান।এক এক করে সবাই উঠে বসে গাড়িতে।গাড়ির সামনের সিটে আদনানের সাথে বসে পড়ে চারু,পিছনে তার বাবা-মা।

একপর্যায়ে তারা এসে থামে বাসষ্টান্ডে।তারপর গাড়িতে উঠে পড়ে চারুর বাবা-মা।বিদায়ের মুহুর্তে চারু ততটা কান্না করেনি তবে চোখের পানি বাধ মানেনি।চারু মন খারাপ করে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।কিছুক্ষন পর আদনান এসে বসে পড়ে গাড়িতে।সে চারুকে থ মেরে বসে থাকতে দেখে কোনো কথা না বলে গাড়িতে বসে পড়ে।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ সিটবেল্ট পড়ে নে! ‘

আদনানের আদেশ পেয়ে সিটবেল্ট পড়ার চেষ্টা করে চারু।কিন্তু আগে থেকে অভ্যাস না থাকায় প্রতিবারে ফলাফল হয় ব্যার্থ।বারবার ব্যার্থ হয়ে একপর্যায়ে খুব রেগে যায় চারু।চিৎকার করে বলে,

—‘ ধুর,পড়বোই না। ‘

এই বলে সে সিটবেল্ট না পড়ে বসে থাকে।আদনান টের চোখে তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে।চারু একটা বিষয় লক্ষ্য করে আদনান তাদের বাসার রাস্তায় না গিয়ে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে তারপর চুপ করে বসে থাকে।আদনান এক মনে এক ধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে।

একপর্যায়ে গাড়ি এসে থামে একটা কাশবনে।জায়গাটা খুব নির্জন।আদনান গাড়ি থেকে ‌নেমে পড়ে।সে চারুর সাথে কোনো কথা না বলে চুপ করে হাটতে শুরু করে।চারু অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে টপ করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।তারপর সে দৌড়ে আদনানের কাছে যায়।আদনান টের চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবার হাটায় মন দেয়।

কাশবনে কাশ ফুলে ভরে গেছে।সাথে হালকা বাতাস ফুল গুলো দুলিয়ে দিচ্ছে।এর ফলে কাশবনের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে কয়েকগুন।হালকা বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায় আদনান চারু দুজনেরই।আদনান তার কপালে পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে উপরে তুলে দেয়।চারু তার চুল ঠিক করে ব্যান দিয়ে ভালোভাবে আটকে দেয়।

আদনান গিয়ে বসে পড়ে একটা বেঞ্চে।চারু গিয়ে চুপটি করে বসে পড়ে আদনানের পাশে।তাদের মতো অনেক জুটি বসে আছে চারদিকে।কারো দিকে কেউ তাকাচ্ছেনা।সবাই‌ নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে।

আদনান চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।চারু কৌতুহল নিয়ে উপরে তাকায় কি আছে দেখার জন্য?কিন্তু সে উপরে আকাশ ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না।অধৈর্য্য হয়ে মাথা নিচে নামিয়ে বিরবির করতে থাকে সে?

তাকে এরকম বিরবির করতে দেখে আদনান তাকে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ বিরবির না করে কি বলতেছিস জোরেই বল।আমরাতো গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি,আমাদেরও তো ‌শোনার অধিকার আছে! ‘
চারু দীর্ঘ সময় ধরে আদনানের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দেয়,তারপর‌ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলে,

—‘ এইযে,আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন?কি দেখতেছেন কে জানে?পাগল হইছেন নাকি এটাই ভাবছি..’

চারুর কথা শুনে আদনান হো হো করে হেসে ওঠে।হাসতে হাসতে বলে,
—‘ পাগল হইনাই,প্রকৃতি দেখছি।পাগল হইলে তো এতক্ষনে ওইযে আইসক্রিম ওয়ালার সব আইসক্রিম নিয়া পালিয়ে যাইতাম। ‘

আইসক্রিমের কথা শুনে মনটা আনন্দে নেচে ওঠে চারুর।সেই কতদিন ধরে আইসক্রিম খায়না সে।বাসায় থাকতে প্রতিদিন ৩টা করে আইসক্রিম খাইতো আর এখানে একটাও খাইতে পারে না।চারু তারাতারি উঠে দাঁড়ায় অথ:পর আদনানের হাতটা ধরে টানতে শুরু করে।

আদনানকে টানতে টানতে আইসক্রিম ওয়ালার সামনে নিয়ে আসে সে।আইসক্রিম ওয়ালার সামনে আসলে আদনান চারুর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভালোভাবে দাঁড়ায়।ততক্ষনে চারু আইসক্রিম ওয়ালাকে অডার্র দিয়ে দিয়েছে।
চারুর কথামতো আইসক্রিম ওয়ালা তাকে অনেক গুলা আইসক্রিম দেয়।চারু সেগুলো নিয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসে।বিল নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

আদনান বিল মিটিয়ে দিয়ে মুখটা গোমড়া করে এসে চারুর পাশে বসে।এদিকে চারু মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে।চকিতে সে একবার তাকায় আদনানের দিকে।আদনানের মুখ গোমড়া দেখে একটু হেসে ওঠে চারু।তারপর নিজের একটা আইসক্রিম এগিয়ে দেয় আদনানের দিকে।

আদনান মনে হয় এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল।সে এক মিনিটও দেরি না করে চারুর হাত থেকে আইসক্রিমটা নিজের দখলে করে নেয়।তারপর দুইজনেই মনের সুখে আইসক্রিম খেতে থাকে।

২০.

‘ ইস,ছেলেটা পুরাই লাড্ডু।একটা যদি ইয়ে করতে পারতাম, ‘

মেয়েটার এরকম উগ্র মনোভাব কানে আসে চারু ও আদনান দুইজনেরই।আদনান চারুকে রাগানোর জন্য সামনে থাকা মেয়েটার উদ্দেশ্য হাত নারে।প্রতিউত্তরে মেয়েটাও হাত নারে।চারু খুব রেগে যায়।সে সাটাম উঠে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা আইসক্রিমটা ছুড়ে মারে খুব জোড়ে।তারপর দ্রুতপায়ে এগোতে শুরু করে মেয়েটার দিকে।একেবারে এসে থামে মেয়েটার সামনে।

মেয়েটার বয়স চারুর সমানই হবে।চারু মেয়েটাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঠাস করে একটা মেরে দেয়।তারপর মেয়েটার চুল ধরে চিল্লিয়ে বলে,

—‘ কি করবি?বল,কি করবি? ‘

মেয়েটা কান্না করতে শুরু করে দেয়।মেয়েটার কান্নার আওয়াজ শুনে তার গার্ডিয়ান ছুটে আসে।মেয়েটার গার্ডিয়ানকে দেখে চারু ভিষন ভরকে যায়।সে মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যায় আদনানের কাছে।তারপর আদনানের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।চারুর চোখে এরকম ভয় আদনান খুব কমই দেখেছে।কিন্তু কেন এত ভয় পাচ্ছে সে?লোকটা কে?নাকি লোকটা চারুর…

চলবে,,ইনশাআল্লাহ

{খুব তারাতারি লিখছি।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।}

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

তৃণশয্যা পর্ব-১১

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১১তম_পর্ব

পকেট থেকে পকেট নাইফ বের করে আদনান।চারু এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ায়।কিছুক্ষন আগে রেগে যাওয়া আদনান এবার হো হো করে হেসে ওঠে।চারু আদনানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এতদিন জানতে হাসলে শুধু মেয়েদের গালে টোল পড়ে কিন্তু এখানে তো ছেলের গালেও টোল পড়েছে।

আদনান হাসতে হাসতে বলে,
—‘ নাইফ দেখে ভয় পেয়ে গেছিস চারু।মনে করেছিস নাইফ দিয়ে তোকে মারবো।আরে না,নাইফ দিয়ে এইযে পিনটা তুলব। ‘

এই বলে ইজি চেয়ারের মধ্যে একটা আলপিন দেখায় আদনান।চারু আলপিনটা দেখে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে।সে মনে করেছিল আদনান মনে হয় নাইফ দিয়ে তার হাত কেটে দিবে।কিন্তু এরকম হবে ভাবেনি।
আদনান মন দিয়ে পিনটা তুলছে।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।পিন তোলা শেষ হলে নাইফটা আবার পকেটে রেখে দেয় আদনান।মাথা তুলে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ শোন,তোকে একটা কাজ করতে হবে আমার হয়ে।পারবি? ‘

চারু টুলটা টেনে গালে হাত দিয়ে বসে বাচ্চাদের মতো করে বলে,

—‘ কি কাজ বলো,চেষ্টা করবো! ‘

আদনান এবার নীল ডায়েরীটা চারুর হাতে দেয়।তারপর ইজি চেয়ার থেকে উঠে বসে।রওনা দেয় রুমের দিকে।কিছুক্ষন পর বের হয়ে আসে আদনান।হাতে একটা খাম।খামটাও চারুর হাতে দেয় সে।তারপর চেয়ারে বসতে বসতে বলে,

—‘ এই জি‌নিসগুলো তোর কাছে রাখবি।কখনো হাড়িয়ে ফেলবি না।আমি কালকে ঢাকা চলে যাব।কবে আসবো জানি না।তুই এই জিনিসগুলো ভালো করে রাখবি।অবশ্য আমি রাখতে পারতাম তবে এগুলো দেখলে আমি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ি।তুই এইগুলো তোর কাছে রাখবি।কি পারবি না? ‘

চারু শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলে কিন্তু মুখে কোনো‌কথা বলে না।আদনান আবার বলতে শুরু করে,
—‘ আমি বুঝতে পেরেছি এই চট্টগ্রামে আমার থাকা যাবেনা।এখানে থাকলে অতসহজে ভুলতে পারবো না নিতিকে।ঢাকা গিয়ে বাবার অফিসের ব্যাঞ্চটা দেখা-শোনা করবো।কাজের মধ্যে থাকবো।যদি ভুলতে পারি নিতিকে। ‘

চারু ডায়েরীটা আর খামটা একহাতে ‌নিয়ে অন্যহাতটা আদনানের চেয়ারের হাতলে রাখে।চোখটা স্থির রাখে আদনানের দিকে,যাতে আদনান তার দিকে তাকালেই চোখা-চোখি হয়।চারু এবার বলে,

—‘ আমিও যাব আপনার সঙ্গে তাইনা ‘

চারুর ৫বাক্যের এই কথাটা শুনে মাথা তুলে তার দিকে তাকায় আদনান।চোখা-চোখি হয়ে যায় দুজনের মধ্যে।আদনান চারুর চোখের দিকে তাকানো‌ অবস্থায় বলে,

—‘ নাহ,আমি একাই যাব।দেখ আমাদের বিয়ে হয়েছে ঠিকই বাট আমার অনিচ্ছাসত্ত্বে।তুই যদিও আমাকে স্বামী মনে করিস কিন্তু আমি তোকে স্ত্রী মনে করিনা।আমি শুধু মাত্র নি…’

এইটুকু বলে থেমে যায় আদনান।মোবাইল বেজে ওঠে পকেট থেকে।এতোরাতে কে ফোন দিল ভেবে অবাক হয় সে?কৌতুহল নিয়ে ফোনটা উপরে তোলে।ফোনের স্কিনে ভেসে ওঠে রনিক নামটা।রনিক আদনানের বন্ধু।আদনান তাকে ঢাকা যাওয়ার টিকেট জোগার করতে বলেছিল।তাই মনে হয় ফোন দিয়েছে।আদনান ফোনটা রিসিভ করে।রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে বলে ওঠে,

—‘ দোস্ত টিকেট পাই নাই।কালকে পর্যন্ত কোনো বাস ঢাকা যাবেনা। ‘
এই বলে ফোন কেটে দেয় ওপাশের লোকটা।আদনান অবাক হয়ে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে।রনিকের উপর তার রাগ বাড়তেছে।তাকে কথাটুকুও বলার সুযোগ দিল না।ফোনে লাউড স্পিকার দেয়া থাকার কারনে সব শুনতে পায় চারু।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ আমি অতকিছু বুঝিনা,আমি আপনার সাথে ঢাকা যাব।যদি আমাকে না নেওয়ার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আমার থেকে ভয়ংকর কেউ হবে না। ‘

এই বলে ডায়েরী আর খামটা নিয়ে হনহন করে রুমে চলে আসে চারু।ডায়েরী আর খামটা বেডের উপর ফেলে দিয়ে নিজে সোফায় বসে পড়ে।অনেক হয়েছে আর না।কি পেয়েছে তাকে সবাই?পুতুলের মতো ব্যবহার করছে সবাই।যার সাথে বিয়ে হলো সে নাকি স্ত্রী হিসেবে মানে না।ঢাকাও নিয়ে যাবেনা।এটা কোন ধরনের ফাজলামি।চারু মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আজ থেকে সে অন্যরকম হয়ে যাবে।আদনান ভালোবাসবে ঠিকই কিন্তু সেটা অন্যভাবে।

চারু বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে কি করা যায়?এইসময় আদনান এসে চারুর পাশে শুয়ে পড়ে।চারু টপ‌ করে আদনানের বুকের উপর শুয়ে পড়ে।আদনান চারুকে সড়ানোর চেষ্টা করলে চারু আদনানের ঠোট দুটো নিজের দখলে করে নেয়।আদনানে চোখ বড় বড় করে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু চারু আদনানের ঠোটের স্বাদ নিতেই ব্যাস্ত।

প্রায় ১মিনিট পর আদনান চারুকে এক ঝটকায় বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর চোখ লাল করে তাকায় চারুর দিকে।আগে চারু ভয় পেলেও এখন আর ভয় পায় না।সে উল্টো চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,

—‘ কি শয়তানি শুরু করেছেন?বিয়ে করবেন আমাকে,ভালোবাসবেন অন্য একজনকে।ফাজলামি পাইছেন।আজ থেকে আর তা হবে না।আপনি শুধু আমার,এই চারুর।এখন থেকে কেউ আপনার দিকে তাকালে চোখ তুলে নেব। ‘

এই বলে চারু আদনানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।চারুর এহেন ব্যবহার আদনানকে আকাশ থেকে ফেলে দিয়েছে।কালকে যে মেয়েটা কথা বলতে ভয় পেত,আজকে সে এত বড় বড় কথা বলছে কি করে?আদনান চারুকে অনেক সড়ানোর চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয় না তার পক্ষে।শেষ পর্যন্ত দুইজনে ওই অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে।

১৮.

সকাল বেলা উঠে চারু দেখতে পায় সে শুধু বিছানায় পড়ে আছে।পাশে তাকিয়ে দেখে আদনান নেই।চারু তারাতারি করে উঠে বসে।চোখ পিটপিট করে তাকাতে থাকে সম্পুর্নটাতে।বোঝার চেষ্টা করে আদনান তাকে রেখে পালিয়ে গেছে কিনা?তারাতারি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় চারু।ওরনা ঠিক করে দৌড় দেয় বেলকনির দিকে।বেলকনিতে গিয়ে দেখে আদনান নেই।অথ:পর চারু রুম থেকে বের হয়ে দৌড় দেয় ছাদে।ছাদের গিয়েই চোখে পড়ে আদনানকে।এত সকালে ছাদে কি করছে আদনান তা দেখার জন্য চুপি চুপি তার দিকে এগোতে থাকে চারু।সে আদনানের কাছাকাছি যেতেই ঝট করে তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় আদনান।তারপর ভ্রু-নাচিয়ে বলে,

—‘ কি চুপ করে আমার পিছনে আসতেছিস কেন? ‘

হঠাৎ আদনান এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কারনে থতমত খেয়ে যায় চারু।তোতলাতে তোতলাতে বলে,
—‘ এমনি,এত সকালে কি করছেন দেখছিলাম আরকি? ‘
চারুর কথা মোটেও বিশ্বাস হয় না আদনানের।সে ভ্রু-নাচিয়ে আবার বলে,
—‘ সত্য কথা বল! ‘
চারু মাথা নাড়িয়ে বলে এটাই সত্য।এবার আদনানের একটু হলেও বিশ্বাস হয়।সে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে।তারপর একটা ফোল্ডারে প্রবেশ করে যেখানে শুধু তার আর নিত্তিয়ার ছবি।আদনান একের পর একটা ছবি দেখতে শুরু করে।এদিকে চারুর মাথা খিব গরম হয়ে যায়।তার স্বামী তার সামনে অন্য একটা মেয়ের ছবি দেখছে এটা মানতে পারেনা সে।সে চিলের মতো আদনানের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে ছুড়ে মারে মাটিতে।

নিজের মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলতে দেখে মাথার তার ছিড়ে যায় আদনানের।জলন্ত চোখে তাকায় চারুর দিকে।চারুও জলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।দুইজনেরই মাথার তার ছিড়ে গেছে।হঠাৎ চারু এমন কাজ করে বসে যা আদনান কল্পনাও করতে পারেনি।আদনানের অবস্থা বর্তমান এমন যে মৃত্যু যেকোন সময়েই হতে পারে..

চলবে..
{ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

তৃণশয্যা পর্ব-১০

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১০ম_পর্ব

আগুন লেগে যায় চারুর শাড়ির আচলে।আদনান এখনো চারুর উপরে বসে আছে।আগুন আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে।আদনান থ মেরে শুধু দেখছে।চারু বুঝতে পারছে এভাবে থাকলে তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হবে।এদিকে শাড়ির আচল থেকে বেডশীটও পুড়তে শুরু করেছে।আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে আগুনের আচ।একপর্যায়ে চারুর পেটে লাগে আগুনের ছ্যাঁকা।চারু এক ঝটকায় আদনানকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।দৌড় দেয় বাথরুমের উদ্দেশ্যে।দৌড়ানোর কারনে বাতাস পেয়ে আগুন আরো উঠতে শুরু করে।তবে বাথরুমে প্রবেশ করে বাথট্যাবে শাড়ির আচলটা রাখতে একেবারে নিভে যায় আগুন।চারু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয় তারপর একটা মগে পানি নিয়ে দৌড়ে ঘরের মধ্যে আসে।এসেই পানি গুলো ঢেলে দেয় বিছানার উপর।আগুনটা নিভে যায় বেডশীট থেকে।তবে অর্ধেকের চেয়ে বেশি পোড়া গেছে বেডশীট ও তোশক।আরেকটু হলে বেডটাতেও আগুন লাগতো।

আদনান এখনো নিচেই পড়ে আছে।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।চুপিচুপি সে প্রবেশ করে রিমির রুমে।রিমি নেই দেখে তারাতারি দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারপর ব্যাগ থেকে একটা জামা বের করে বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়।চেঞ্জ করে এসে সে আবার আদনানের রুমে যায়।আদনান সোফার উপর বসে আছে আর বেডশীটটা দেখছে।

চারু প্রবেশ করতে তার নজরটা পড়ে চারুর দিকে।চারু আদনানের সামনে দিয়ে বেডটার কাছে যায়।তারাতারি করে বেডশীটটা তুলে ফেলে।তোশক পোড়া যাওয়ার কারনে আরেকটা বড় বেডশীট বিছিয়ে দেয় সে।এবার সে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান তার দিকে তাকিয়ে আছে।হাতে দেশলাইটটা এখনো‌ আছে।

১৭.

সমস্ত দিনটা পার করে ডিনার টেবিলে বসে আছে সবাই।লক্ষ্য ডিনার করা।রাহিনা বেগম সবাইকে খাবার তুলে দিচ্ছেন।আদনান প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।কমবেশি সবার নজরই তার দিকে শুধুমাত্র চারু বাদে।তার পেটে প্রচন্ড ক্ষিধা থাকার কারনে নজরটা খাবারের দিকে।রাহিনা বেগম চারুর প্লেটে খাবার দিতেই চারু খেতে শুরু করে।খাওয়ার মাঝখানে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,

—‘ তাহলে আমরা কালকে চলে‌ যাচ্ছি। ‘

এই কথাটা শুনে হালিম সাহেব কড়া চোখে তাকান আমজাদ সাহেবের দিকে।
—‘ কালকে যাবেন মানে,আরো কয়েকদিন থাকুন ‘ হালিম সাহেব বলে।তার কথার প্রতিউত্তরে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,
—‘ নাহ আর থাকা যাবেনা।অনেকদিন হইছে,অফিসের একটা গুরুত্বপুর্ণ কাজ আছে তাই যেতে হবে। ‘

শেষ পর্যন্ত সবাই অনেক জোর করলেও আমজাদ সাহেব নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন।বাবা-মা চলে যাবে শুনে মনটা প্রচুর খারাপ হয়ে যায় চারুর।চোখের কোনে পানি চলে আসে।রিমি চারুর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,

—‘ খালা-খালু কালকে যাবে তার দুইদিন পর আবার আমরা খালা-খালুর বাসায় যাব। ‘

রিমির এই কথাটা শুনে মুখ তুলে তার দিকে তাকায় চারু।রিমির হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।রিমির কথার উত্তরে আমজাদ সাহেব বলে,
—‘ অবশ্যই যাবে ‘

সেদিনের মতো শেষ হয়ে খাওয়া-দাওয়া।সবার আগে টেবিল থেকে উঠে পড়ে আদনান।কারো সাথে কোনো কথা না বলে পানি খেয়ে চলে যায় নিজের রুমে।চারু সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ আমি কি আজ রিমির সাথে থাকবো! ‘

চারুর এরকম বোকা বোকা প্রশ্নে বিব্রত হয় তার বাবা-মা।কিন্তু রিমি মুচকি হেসে বলে,

—‘ বিয়ের পর কেউ বরের সাথে না থেকে ননদের সাথে থাকে নাকি ‘

চারু বুঝতে পারে তাকে আজ আদনানের সাথে থাকতে হবে।সকালের ঘটনার পর আদনানের সাথে একবারও কথা বলেনি চারু।আদনান কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও এড়িয়ে গেছে চারু।চারু খাবার শেষ করে পানি খেয়ে রওনা দেয় আদনানের ঘরের উদ্দেশ্য।আস্তে করে দরজা খুলে দেখে আদনান কি করতেছে?কিন্তু সে আদনানকে ঘরে দেখতে পায় না।কৌতুহল নিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে চারু।

ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয় সে।তারপর ছোক-ছোক করে খুঁজতে শুরু করে আদনান নামক বস্তুটাকে।চারু খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে দেখতে পায় আদনান ব্যালকনির ইজি চেয়ারটা বসে আছে।বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আছে নীল ডায়েরীটা।চারু আস্তে আস্তে করে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একোর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে আদনানের ঠিক পিছনে।আদনান নীল ডায়েরীটা বুকে জড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।চারু মনে মনে ভাবে,এই ছেলেটা এত ছ্যাচকাঁদুনি কেন?একটা মেয়ের জন্য কেউ এরকম থেকে থেকে কাঁদে।

চারু গিয়ে দাঁড়ায় একেবারে আদনানের সামনে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে ভালো করে বসে।চারু সরাসরি আদনানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ ঘুমাবেন না! ‘

আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ তুই ঘুমিয়ে পড় ‘

চারু এবার দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে।তারপর একটা টুল নিয়ে গিয়ে ঠিক আদনানের সামনে বসে পড়ে।আদনান অবাক হয়ে চারুকে দেখছে।এবার চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ আমি আপনার মতো ছিঁচকাদুনে ছেলে জীবনেও দেখি নাই।একটা মেয়ের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে বলেন? ‘

চারুর বলার ভঙ্গি এমন ছিল যা দেখে আদনান না হেসে পারে না।আদনানকে হাসাতে পেরে চারু নিজে নিজে খুশি হয়।আদনান ঠোটের কোণে হাসিটা রেখে বলে,

—‘ আমি কই কান্না করতেছি।আমিতো এমনি বসে আছি।ভাবছি তখনকার জন্য তুই আমাকে মাফ করেছিস কিনা? ‘

চারু ভাবে এই সুযোগ।সে আদনানকে বলবে আপনি যদি আমার এই কথাটা রাখতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে মাফ করবো।
তার ভাবনার শেষে আদনান বলে ওঠে,

—‘ তুই কি আমাকে মাফ করেছিস? ‘

চারু গলাটা পরিষ্কার করে বলে,

—‘ নাহ করিনি তবে করতে পারি যদি আপনি আমার একটা কথা রাখতে পারেন। ‘

আদনান ভ্রু-কুঁচকে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ কি কথা? ‘

চারু হাসতে হাসতে বলে,

—‘ আপনি আর কখনো কাঁদবেন না।কখনো না!কথা দিন? ‘
এই বলে চারু তার হাতটা আদনানের দিকে এগিয়ে দেয়।আদনান কি যেন ভেবে হাসতে হাসতে চারুর হাতের উপর হাত রেখে বলে,
—‘ আচ্ছা যা কথা দিলাম। ‘

চারু এবার বলে,–‘ চলুন ঘুমিয়ে পড়ি ‘
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,–‘ তুই ঘুমা আমি একটু পর ঘুমাবো ‘

চারু ধপ করে আদনানের কোলে বসে পড়ে।চারুর এরকম কাজে আদনান অবাকের শেষ সীমানা পার হয়ে যায়।মুহুর্তের মধ্যে তার মাথার তার আবার ছিড়ে যায়।পকেট থেকে বের করে পকেট নাইফ।যেটা তার কাছে সবসময় থাকে।শুধু তার কাছে নয় পকেট নাইফ কমবেশি অনেক মানুষের কাছেই থাকে।এই নাইফটা দিয়ে কোনো কোনো সময় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

আদনান নাইফটা বের করে।চারু চমকে ওঠে।সে কোল থেকে ওঠার আগেই….

চলবে..

তৃণশয্যা পর্ব-০৯

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৯ম_পর্ব{খানিকটা ধামাকা}

ছেলেটা চারুর গালে চুমু খেলো।চারুও ছেলেটার গালে চুমু খায়।এতক্ষন সবার মুখটা মরমরা থাকলেও এখন কিছুটা হাসি ফুটে ওঠে সবার মুখে।পিছন থেকে ছেলের মা এসে ধপ করে বসে পড়ে সোফায়।চারু ছেলেটাকে নিজের কোলে তুলে নেয়।আসলে ছেলেটা চারুর চাচাতো ভাই।৫বছর বয়সে পা দিয়েছে কয়েকদিন আগে😋অনেকদিন থেকে চারুর সাথে তার দেখা নাই।তাই এখানে চারুকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে ছেলেটা।

চারুর চাচিমার সাথে কথা বলছে সবাই।রিমি আর চারু ছেলেটা মানে রাব্বির সাথে মজা করছে।কিছুটা মুহুর্তের জন্য সবাই ভুলে গেছে আদনানের কথা।একপর্যায়ে চারুর চাচিমা চারুকে নিজের কাছে ডাকে।চারু রাব্বিকে রিমির কোলে দিয়ে আস্তে করে বসে পড়ে তার চাচিমার পাশে।বসতেই তার চাচিমা তাকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ কেমন আছিস মা?সেই ২বছর আগে গেছিলাম তারপর আর তোর সাথে দেখাই না।দুরে থাকি বলে কি একটু আসবিও না? ‘

চারু হাসি মুখে বলে,
—‘ এখনতো দেখা হলো।তুমি যদি আমাদের সাথে রংপুরে থাকতে তাহলেতো ‌প্রতিদিন দেখা করতাম।তুমিতো এখানে তাই দেখা হয়না। ‘

চারুর চাচিমা আর কোনো কথা না বলে রিমির মায়ের কাছ থেকে ওয়াসরুমের ঠিকানা নিয়ে সেদিকে রওনা হয়।তিনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে হালিম সাহেব আবার বলে ওঠে,

—‘ চারু মা,তুই কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলি না এখনো। ‘

চারু পুনরায় তার বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
—‘ আমি রাজি ‘
কথাটা শুনে হালিম সাহেব সহ সকলের মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।চারু লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে উঠে রিমির রুমের দিকে রওনা দেয়।যাওয়ার পথে হঠাৎ-ই মনে হয় আদনানের কথা।দৌড় দেয় সেদিকে।চারু দরজায় হাত দিতেই দরজাটা খুলে যায়।ভিতরে বিছানার উপর শুয়ে আছে আদনান।চারু আস্তে করে ভিতরে প্রবেশ করে আদনানের হাতে থাকা জিনিসটা দেখে খুব জোরে চিল্লিয়ে ওঠে।

তার চিৎকার শুনে সবাই তারাতারি‌ করে সেখানে উপস্তিত হয়।উপস্থিত হয়ে সবাই থমকে দাঁড়ায়।আদনানের মুখ দিয়ে গোল্লা বের হতে শুরু করেছে।হাতে ঘুমের ওষুধের পাতা।হালিম সাহেব আর আদনানের মা মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই বসে পড়ে।চারু হাত-পা সব কিছু অবশ হয়ে গেছে।রিমি থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।এই মুহুর্তে যে একটা আম্বুলেঞ্চ দরকার সেটা কারো মনে ঢুকছে না।

সবার এই অবস্থা দেখে নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে আম্বুলেঞ্চকে ফোন করে চারুর চাচি।কিছুক্ষনে মধ্যে পৌছে যায় আম্বুলেঞ্চ।কয়েকজন লোক আদনানকে ধরে আম্বুলেঞ্চে তোলে।আদনানের সাথে আম্বুলেঞ্চে ওঠে তার বাবা-মা ও চারু।বাকিরা বাড়িতেই থেকে যায়।

১৫.

আদনানের অপারেশন চলছে।ডাক্তার বলেছে একসাথে ৪টা ঘুমের ওষুধ খাওয়ার জন্য কিছুটা রিক্স আছে তবে বেশি না।ডাক্তারের কথায় কিছুটা হলেও আস্থা পেয়েছে হালিম সাহেব ও তার স্ত্রী,সাথে চারুও।তবে সবারই মনের মধ্যে একটা চিন্তা ঘুরঘুর করছে।

১ঘন্টা পর,

অপারেশন চেম্বার থেকে বের হয়ে আসে ডাক্তার।দৌড়ে তার কাছে যায় হালিম সাহেব।তার পিছন পিছন চারু ও রিমির মা রাহিনা বেগমও যায়।হালিম সাহেব ডাক্তারকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ডাক্তার বলে,

—‘ আপনাদের ভাগ্য ভালো যে ঠিক সময়ই নিয়ে এসেছেন।আর একটু হলেই হয়তো বড় ধরনের সমস্যা হতো।তবে এখন ঠিক আছে।জ্ঞান ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে ‘

এই বলে ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।ডাক্তারের কথায় অনেকটা আস্থা পায় সবাই।সবাই গিয়ে বসে পড়ে চেয়ারে।বসার সাথে সাথেই হালিম সাহেব চারু আর রাহিনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ আমি জানি আদনান কেন ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।সে তখন নিজে থেকেই ভালো হওয়ার অভিনয় করেছিল।নিত্তিয়াকে ভুলে থাকার অভিনয় করেছিল।সে আমাদের কষ্ট দিতে চায় না।তাই আমাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।তারপর…’

এই কথাগুলো শোনার পর রাহিনা বেগম হালিম সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ তুমি এত কিছু জানলে কিভাবে? ‘

হালিম সাহেব কো‌নো কথা না বলে তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে রাহিনা বেগমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—‘ এইখান থেকে ‘
রাহিনা বেগম স্বামীর কাছ থেকে এক ঝটকায় কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করে।চারুও মাথাটা এগিয়ে দিয়ে পড়তে শুরু করে।কিছুক্ষন আগে হালিম সাহেব যে কথাগুলো বললেন তাই সাজিয়ে লেখা আছে এতে।পড়া শেষ হলে মাথা তুলে হালিম সাহেবের দিকে তাকায় স্ত্রী রাহিনা বেগম।তার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।তিনি খানিকটা কান্না মৃশ্রিত গলায় বলেন,

—‘ আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সে কেন বুঝতেছে না যে আত্মহত্যা মহাপাপ।তাকে এখন চোখে চোখে রাখা প্রয়োজন।পাশ থেকে সাপোর্ট করা প্রয়োজন।এই সবকিছুই চারু করতে পারবে।আমি বাসায় গিয়েই কাজি সাহেবকে ফোন দিব।আজকেই বিয়ে হবে। ‘

চারু কোনো কথা না বলে একদৃষ্টিতে আদনানের ক্যাবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।মনের মধ্যে হাজারো উল্টাপাল্টা ভাবনা আসতেছে।সে বুঝতে পারছে আদনান তাকে খুব সহজে মেনে নেবে না।ভালোবাসবে না তাকে।কারন তার জীবনে একজন ছিল যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতো।কিন্তু চারু আদনানকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে।অতীতে চারুর জীবনে কেউ ছিল না।আদনানই প্রথম পুরুষ চারুর জীবনের।

হঠাৎ আদনানের ক্যাবিন থেকে একটা নার্স বের হয়ে আসে।তারপর হাসিমুখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ ওনার জ্ঞান ফিরেছে।আপনারা দেখে আসুন। ‘
এই কথা শোনা মাত্র আর এক সেকেন্ডও সেখানে বসে থাকেনা কেউ।সবাই গিয়ে প্রবেশ করে আদনানের ক্যাবিনে।আদনান উপরের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের পানি ফেলতেছে।

১৬.

পরেরদিন সকালে তার রিলিজ হয়।বাসায় নিয়ে আসা হয় তাকে।বাসায় ঢুকেই চমকে ওঠে সবাই।বাসাটাকে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে।কাজি সাহেব এসে বসে আছে।কে করলো এসব বুঝতে পারছে না কেউ?রিমি হাসিমুখে সবাইকে দেখছে।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার খালাতো ভাই ইশান।বয়সে রিমির ছোট সে।সবাই বুঝতে পারে কে করেছে এসব।

রিমি দরজা থেকেই চারুকে আলাদা করে নিজের রুমে নিয়ে যায়।ইশান আর আমজাদ সাহেব আদনানকে তার রুমে নিয়ে যায়।ভুলিয়ে ভালিয়ে একটা পাঞ্জাবী পড়ায় আদনানকে।

অবশেষে দুজনে এসে বসে কাজির সামনে।সবার অনুমতি নিয়ে বিয়ে পড়াতে শুরু করেন কাজি সাহেব।প্রথমে চারুকে তিনবার কবুল বলতে বলতে চারু কিছুটা চোখের পানি ফেলে কবুল বলে দেয়।কিন্তু আদনা‌নকে বলতেই আদনান চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায়।তার চোখ দিয়ে আগুনের ফোয়ারা ছুটছে মনে হয়।

তার সাথে উঠে দাঁড়ায় তার বাবা ও মা।তার মা তার সামনে গিয়ে আদনানের হাতটা ধরে তার নিজেরই মাথার উপর রেখে বলে,
—‘ আজকে তোর ভালোবাসার প্রমাণ হবে।তুই যদি নিত্তিয়াকে সত্ত্যিই ভালোবেসে থাকিস তাহলে এখনি কবুল বলবি পর যদি না ভালোবাসতিস তার সাথে ছলনা করেছিস তাহলে বলবি না।এখন কি করবি বল? ‘

আদনান খানিকটা রেগে বলে,
—‘ মা আমি নিত্তিয়ার সাথে ছলনা করিনি।তাকে মন থেকেই ভালোবেসেছি।তাকে ছাড়া আমি অন্যকাউকে বিয়ে করার কথা ভাবিনি আর ভাবতেও চাইনা। ‘
সাথে সাথে আদনানের বাবা বলে,
—‘ তাহলে কবুল বল।বাবা দেখ নিত্তিয়া মারা গেছে।সে ওপাশ থেকে চেয়ে আছে কখন তুই কবুল বলবি।তুই কবুল বললেই সে চলে যাবে।খুব খুশি হবে। ‘

তবুও আদনান রাজি হয় না।শেষ পর্যন্ত আর কোনো উপায় না পেয়ে রাহিনা বেগম ফলকাটা ছুরিটা নিজের গলায় ধরেন।আদনান এই দেখে চমকে ওঠে।রাহিনা বেগম আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ তুই কবুল না বললে এটাই আমার শেষ কথা হবে। ‘

আদনান মায়ের দিকে তাকিয়ে ধপ‌করে বসে পড়ে।এই মুহুর্তের নিত্তিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে।নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো যাকে তাকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে আদনান।আদনান কিভাবে এটা করতে পারতেছে।সে তো নিত্তিয়া বলেছিল কখনো তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না।আদনান এসব ভাবতে ভাবতে চোখের পানি ফেলতে শুরু করে।তারপর নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে পরপর তিনবার কবুল বলে দেয় আদনান।

কবুল বলার পর এক মিনিটও সেখানে থাকেনা সে।রওনা দেয় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে মনে করে তার পিছন পিছন যায় চারু।আদনান নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়ার আগেই ভিতরে প্রবেশ করে চারু।আদনান চারুকে দেখে খুব রেগে যায়।সে চারুকে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার উপর চেপে বসে।পকেট থেকে বের করে ডেসলাইট।

চারু ভিষন চমকে যায়।আদনান ডেসলাইটটাতে আগুন জালাতে জালাতে বলে,
—‘ তুই নিত্তিয়া আর আমার মাঝে এসেছিস।তোকে মারলে আমার আর নিত্তিয়ার মাঝে আর কেউ থাকবে না। ‘

এই বলে আদদান চারুর শাড়ির আচলের কাছে আগুন নিয়ে যায়।হুট করে শাড়ির আচলে লেগে যায় আগুন..

চলবে..

তৃণশয্যা পর্ব-০৮

0

#তৃণশয্যা
#‌নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব

আদনান লোহাটা নিজের মাথায় মারার আগেই চারু দৌড়ে এসে হাতটা এগিয়ে দেয়।ফলস্বরুপ মাইরটা লাগে চারুর হাতে।চারু ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে।আদনান হাতে থাকা লোহাটা ফেলে দিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তারপর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলে,

—‘ কেন আমাকে মরতে দিচ্ছিস না চারু।আটকাচ্ছিস কেন?ওপারে যে আমার নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে?আমাকে কেন তার কাছে যেতে দিচ্ছিস না তুই?কেন কেন কেন..? ‘

এই বলে আবার কান্না করতে করতে কবরটা খুড়তে থাকে আদনান।পাগলের মতো মাটি সড়াচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।সাথে মুখ দিয়ে বলছে,

—‘ আমি আসছি নিতি।তুমি শুধু আমার সাথেই থাকবে।তোমার আর আমার কবর হবে একটা। ‘
এই বলে আরো জোরে খুড়তে থাকে আদনান।আদনানের পাগলামি দেখে চারু দৌড়ে আসে আদনানের সাম‌নে।আদনানের মুখটা নিজের দিকে করে নেয়।তারপর দুইহাত দিয়ে আদনানের মুখটা শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করে,

—‘ ভাইয়া কি করছো তুমি?এটা বিশ্বাস করো যে নিত্তিয়া আপু আর আমাদের মাঝে নেই।সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।আর কখনো আসবে না।এটা বিশ্বাস করো..’

আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আবার মাটি সড়াতে শুরু করে।

—‘ না নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি তার কাছে যাবোই।কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। ‘ আদনান মাটি খুড়তে খুড়তে বলতে থাকে।

এই মুহুর্তে সেখানে উপস্তিত হয় রিমি আর রিমির বাবা।ছেলের এই অবস্থা শুনে শত কাজ ছেড়ে চলে এসেছেন তিনি।তিনি দৌড়ে নিজের ছেলের কাছে যান।এক ঝটকায় ছেলেকে নিজের দিকে করে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন।আদনানও নিজের বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে,

—‘ বাবা!আমার সব চলে গেল।জীবনের মুল্যবান জিনিসটাকে হাড়িয়ে ফেললাম।জীবন থেকে চলে গেল সব সুখ শান্তি।বাবা আমার এখন তার কাছে যাওয়া উচিত তাইনা।সে নিশ্চয় আমার জন্য বসে আছে।বাবা আমি যাই বেশিক্ষন অপেক্ষা করানো যাবে না নিতিকে।খুব রেগে যাবে কিন্তু,শেষে আবার তার রাগ ভাঙ্গতে অনেক কষ্ট করতে হবে আমাকে।আমি যাই হ্যাঁ বাবা.. ‘

ছেলের পাগলামি দেখে কান্নার আওয়াজ আরো বেরে যায় হালিম সাহেবের।ছেলেকে বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

—‘ না বাবা!সে অনেক স্বার্থপর,তোমাকে রেখে চলে গেছে।কয়েকদিন পর আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে তার কাছে যাবো।তুমি আর কারো কথা না ভাবো কিন্তু তোমার এই ছেলেটার কথা ভাবো।তুমি তো ‌বলতে আমি তোমার ছেলে তুমি আবার বাবা।আজকে কেন এই ছেলেটাকে এতিম করে চলে যেতে চাচ্ছো।কোনো বাবা কি নিজের ছেলেকে এতিম করতে পারে বলো? ‘

এই বলে তিনি আদনানকে আরো জোরে ধরিয়ে ধরেন।মুখটা চুমুতে ভড়িয়ে দেন আদনানের।বাবা-ছেলের এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না চারু আর রিমি দুজনেই।আদনান কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।তাকে ধরাধরি‌ করে গাড়িতে তোলে সবাই।আদনানের বাবা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন।ভাইয়ের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছে রিমি।সাথে বিসর্জন দিচ্ছে চোখের পানি।চারু মাথা নিচু করে বসে আছে।

১৪.

সন্ধ্যা নামছে পশ্চিম আকাশে।এখনো জ্ঞান ফেরেনি আদনানের।আজকে যে বিয়ের কথা ছিল সেটা বেমালুম ভুলে গেছে বাসার সবাই।সবাই‌ আদনানকে ঘিরে বসে আছে।চারু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আজ তার দোষের কারনেই আদনানের এই অবস্তা।তখন যদি দেখে শুনে রাস্তাটা পার হতো তাহলে‌ এটা হতো না।চারুর নিজেই আবার নিজের মনকে বলে,তারতো কোনো দোষ নেই।সেতো দেখতেছিল নিত্তিয়াইতো দৌড় দিল।

হঠাৎ চোখ খুলে যায় আদনানের।চোখ পিটপিট করে তাকাতে থাকে চারদিকে।বাসার সবাইকে নিজের সামনে‌ দেখে খানিকটা অবাকই হয় সে।তারপর আস্তে করে উঠে বসে বিছানায়।সে উঠে বসতেই তার বাবা-মা দুজনেই একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ এখন কেমন লাগছে বাবা? ‘

আদনান তার বাবা-মা দুজনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,’ ভালো।কিন্তু খুব ক্ষুধা লাগছে। ‘
ছেলের ক্ষুধার কথা শুনে সাথে সাথে খাবার আনতে যান মা।এদিকে আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।একপর্যায়ে সে চারুকে বলে,

—‘ কিরে,তুই মাথা নিচু করে কি ভাবছিস?নিশ্চয় বিয়ের কথ… ‘

কথাটা সম্পুর্ন করে না আদনান।তার আগেই খাবার নিয়ে এসে তার সামনে ধরে তার মা।আদনান একবার তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।তারপর খেতে শুরু করে।সবাই বুঝতে পারছে সদ্য অজ্ঞান থেকে উঠে নিত্তিয়ার কথা ভুলে গেছে আদনান।কেউ মনে করিয়েও দিচ্ছে না তাকে।

খাওয়া শেষ করে আদনান উঠে দাঁড়ায়।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তোমরা সবাই একটু বাহিরে যাওতো।আমি গুরুত্বপুর্ন একটা কাজ করবো। ‘

এই মুহুর্তে ছেলেকে একা ছাড়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই হালিম সাহেবের।তবুও অনিচ্ছাসত্ত্বে সবাইকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে আসেন তিনি।ধপ করে সোফায় বসে পড়েন হালিম সাহেব।চোখের কোনে জলজল করছে পানি কণা।হালিম সাহেবের এই অবস্তা দেখে চারুর বাবা আমজাদ সাহেব বলেন,

—‘ এই মুহুর্তে আমাদের এখানে থাকা ঠিক নয়।আমরা বরং আজকেই চলে যাই! ‘

আমজাদ সাহেবের এই কথাটা শুনে মাথা তুলে তার দিকে তাকান হালিম সাহেব।চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,

—‘ নাহ।আপনাদের এখন এখানেই থাকতে হবে।আমার ছেলে যতদিন সুস্থ হয়নি ততদিন এখানেই থাকবেন আপনারা।আর আজকেতো চারু আর আদনানের বিয়ের ডেট ছিল।আজকেতো হলো না তবে কালকে বিয়ে হবে।আমি জানি এই মুহুর্তে আদনানকে একমাত্র চারুই ঠিক রাখতে পারবে।সেদিন আমি দেখেছি সব চারু কিভাবে আদনানকে বোঝাতে পারে। ‘

এই বলে তিনি উঠে দাঁড়ান।আস্তে আস্তে চারুর দিকে এগোতে থাকেন।একেবারে চারুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চারুর হাতটা ধরে নিজের হাতের উপর রেখে বলেন,

—‘ চারু মা,তুমি আমার মেয়ের বয়সি।তোমার কাছে আজকে একটা অনুরোধ করবো।এটাই তোমার কাছে আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়া।তুমি আমার ছেলেটার পাশে থেকে তাকে আবার আগের মতো‌ করো প্লিজ।আমি অনুরোধ করছি…’

চারু কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।হ্যা বলবে নাকি না বলবে বুঝতে পারছে না।সে এক এক করে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায়।সবাই চোখের ইশারায় হ্যা বলতে বলে।অবশেষে সে তাকায় রিমির দিকে।রিমি চোখের ইশারায় চারুকে অনুরোধ করে হ্যা বলতে।চারু তার চোখ বন্ধ করে হ্যা বলতে যাবে এই মুহুর্তে তার হাত থেকে নিজের হাতটা সড়িয়ে নেন হালিম সাহেব।

চারু অবাক হয়ে চোখ খুলে তাকায় সামনের দিকে।একটা ছেলে এসে জড়িয়ে ধরে চারুকে।ছেলেটার পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তার মা।চারুও জড়িয়ে ধরে ছেলেটাকে।তারপর সে ছেলেটার কপালে চুমু খায়।ছেলেটা তার গালে চুমু খায়।সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

চলবে..
{মাথায় এখনো ব্যাথা থাকার কারনে গল্পটা ভালো‌ করে সাজিয়ে লিখতে পারিনি।আজকে ধামাকার কথা ছিল।অনেকে বলেছে ধামাকাটা কি?আমি এই পর্বে ধামাকা দিলাম না ধামাকা হবে পরের পর্বে।আর ধামাকাটা দেখতে পাশেই থাকুন।}

•••গুরুত্বপুর্ন কথা-কমেন্ট বক্সে অনেকে আমাকে আপু বলে ডাকে।তারা হয়তো জানেনা আমি মায়ের পেট থেকে জলজ্যান্ত ছেলে হয়ে জন্ম নিছি মেয়ে না।এই জলজ্যান্ত ছেলেটাকে মেয়ে বলে ডাকলে বুকের ভিতর মোচর মারে।কেউ আপু বলবেন না প্লিজ।

কেমন হয়েছে জানাবেন।
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

তৃণশয্যা পর্ব-০৭

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৭ম_পর্ব

আদনান আগে চারুর নার্ভ চেক করে।চারুর থেকে ১০হাত দুরে পরে আছে নিত্তিয়া।নিত্তিয়ার মাথা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে কিন্তু চারুর মাথা দিয়ে নয় হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।আদনান চারুর নার্ভ চেক করে বুঝতে পারে চারুর নিশ্বাস বইছে এখনো।তারপর দৌড়ে আদনান চলে যায় নিত্তিয়ার কাছে।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নিত্তিয়ার হাতটা ধরে।হাতটা ধরেই চমকে ওঠে আদনান।সবকিছু ঠান্ডা হয়ে গেছে।আদনান নার্ভ চেক করে নিত্তিয়ার।নার্ভ চেক করেই আদনান নিত্তিয়ার হাতটা নিজের বুকের মধ্যে ধরে কান্না করতে শুরু করে।এদিকে চারুর হাত দিয়ে রক্ত বইছে এখনো।

এই মুহুর্তে আদনানের কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা সে?নিত্তিয়াতো এই পৃথিবীকে,আদনানকে বিদায় জানিয়ে ওপারে চলে গেছে কিন্তু চারুতো এখনো আছে।তাকে বাঁচাতে হবে।আদনান মুহুর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়ায়।ভাবতে শুরু করে নিত্তিয়ার লাশ টাকে কোথায় রাখবে?আদনান কোলে তুলে নেয় নিত্তিয়াকে।নিত্তিয়ার রক্তে ভিজে যায় আদনানের সাদা পাঞ্জাবী।আদনান নিত্তিয়ার লাশটাকে নিয়ে গিয়ে রাখে তাদের বাসার সামনে।

তারপর দৌড়ে এসে চারুকে নিজের বাইকে তোলে।চারুকে এই অবস্তায় নিয়ে যাওয়া যাবে না তাহলে ঢলে পড়ে যাবে।আদনান চারুকে বাইকের সামনে বসায়।চারুর নিথর দেহটা পড়ে যেতে ধরে।আদনান অনেক কষ্টে চারুকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাইক চালাতে শুরু করে।কাছাকাছি মেডিকেল থাকায় বেশি কষ্ট করতে হয় না আদনানকে।সে মেডিকেলের সামনে এসে চারুকে নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর ডাক্তার ডাক্তার বলে চিল্লাতে চিল্লাতে ভিতরে প্রবেশ করে আদনান।তার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।আদনানকে এই অবস্তায় দেখে এগিয়ে আসে একজন ডাক্তার।তিনি কয়েকজন নার্সকে আদেশ দেন চারুকে ভিতরে নিয়ে যেতে।তিনি আদনানকে অপেক্ষা করতে বলে নিজে ভিতরে প্রবেশ করেন।

আদনান ধপ করে বসে পড়ে মেঝেতে।সাথে সাথে আবার উঠে দাঁড়ায় আদনান।কান্না করতে করতে বাইক নিয়ে আবার রওনা দেয় নিত্তিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে।কিছুক্ষন পরই সেখানে পৌছায় আদনান।নিত্তিয়ার মৃত দেহটা এখনো পড়ে আছে দরজার সামনে।আদনান নিত্তিয়াকে কোলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।একপর্যায়ে রাস্তায় হোচট খেয়ে পড়ে যায় আদনান।নিত্তিয়া তার কোল থেকে ঢলে পড়ে।আদনান নিত্তিয়া জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে জোরে জোরে।

১১.

কিছুক্ষন পরই জ্ঞান ফেরে চারুর।তাকিয়ে দেখে হাতে ব্যান্ডেজ করা।পাশে দাঁড়িয়ে আশে একজন সুদর্শন ডাক্তার।চারু খানিকটা উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ আমি কি এখন নিরাপদ?আর কতক্ষন অজ্ঞান হয়ে ছিলাম? ‘

চারুর মুখের কথা শুনে ডাক্তারটা খানিকটা হেসে বলে,

—‘ ১ঘন্টা যাবৎ আপনি অজ্ঞান ছিলেন।আপনি এখন নিরাপদ।শুধু মাত্র এই হাতটাতে চোট পেয়েছে আপনার।আপনাকে একটা ছেলে কোলে নিয়ে এসেছিল।কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ‘

চারু বুঝতে পারছে ডাক্তার কার কথা বলছে।নিজের জন্যে যতটা না চিন্তা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে নিত্তিয়ার জন্য।নিত্তিয়া ঠিক আছে কিনা নেই।চারু আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।ডাক্তার তাকে নিষেধ করলেও সে শুনে না।তাকে এখন কষ্ট করে হলেও নিত্তিয়াদের বাসায় যেতে হবে।চারু বের হয়ে হাটতে শুরু করে।রাস্তা দিয়ে হাটতেছে আর চারদিকে তাকাচ্ছে।

প্রায় ১০মিনিট হাটার পর চারু এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে দেখতে পায়।ভালো করে দেখার জন্য আরেকটু সামনে যায়।সামনে এগিয়েই‌ চমকে ওঠে চারু।মাটিতে পড়ে আছে নিত্তিয়ার দেহ।তার বুকের উপর মাথা রেখে নিরবে কান্না করছে আদনান।রাতের চাদের আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে আদনানের মুখটা।

চারু আদনানকে দেখলেও আদনান এখনো চারুকে দেখতে পায়নি।আদনান এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর নিত্তিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর রক্তাক্ত কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।চোখদুটোতেও ছুয়ে দেয় ভালোবাসার পরশ।তারপর চুলগুলো নাড়তে নাড়তে আদনান বলতে শুরু করে,

—‘ নিতি তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে এভাবে।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।মনটা বারবার বলছে,নিতি যায়নি এইতো নিতি শুয়ে আছে। ‘

এইটুকু কথা বলে চোখের পানি মুছে আদনান আবার বলতে শুরু করে,

—‘ যাই হোক।আমি জানি তুমি আর ফিরে আসবে না।কিন্তু তোমার এই দেহটা সারাজীবন আমার কাছে থাকবে।তুমি শুধু আমার থাকবে।যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন এক সঙ্গে একই‌কবরে দুজ‌নই থাকবো।আমি থাকতে তোমাকে কারো হতে দেব না।এই মাটিও যেন তোমাকে ছুতে না পারে। ‘

এই বলে নিজের মাথাটা নিত্তিয়ার বুকের উপর রাখে আদনান।চারু সব কিছু দেখছিল ‌এতক্ষন ধরে।চারুর চোখের পানি বাধ মানছে না।চারু আস্তে আস্তে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।আদনানের কাছে গিয়ে ধপ করে বসে থাকে।একহাতে ব্যান্ডেজ থাকার কারনে অন্যহাতটা দিয়ে আদনানের মাথায় হাত দেয়।আদনান চমকে ওঠে।তারাতারি করে উঠে বসে।সামনে চারুকে দেখে সাথে সাথে চারুকে জড়িয়ে ধরে আদনান।চারুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে আদনান।চারুও এক হাত দিয়ে আদনানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

১২.

‘ বাবা আদনান,ছেড়ে দেও ‌না ওকে।ওতো মরে গেছে।ওকে রেখে কি হবে।তুমি ওকে ছেড়ে দেও।ওর জানাজা হবেতো। ‘

কথাটা আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে আদনানের মা।তার সাথে নিত্তিয়ার মা-বাবা,চারুর বাবা-মা সবাই রয়েছে।সবাই খবর পেয়ে এসে ভিড় জমিয়েছে রাস্তাটায়।চারুই আদনানের মোবাইলটা দিয়ে চারুর বাবা-মাকে কল দিয়েছে।আশেপাশের কয়েকজন প্রতিবেশিও আছে সেখানে।আদনান এখনো নিত্তিয়াকে ধরে আছে।

একপর্যায়ে নিত্তিয়ার বাবার কথামতো আদনানকে নিত্তিয়ার কাছ থেকে আলাদা করে নেয় কয়েকজন প্রতিবেশি।সাথে সাথে নিত্তিয়াকে সেখান থেকে নিয়ে যায় কয়েকজন মহিলা।আদনান পাগলের মতো‌ গালাগাল করছে।সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিত্তিয়ার কাছে যাওয়ার।একপর্যায়ে নিত্তিয়াকে ভিতরে ‌নিয়ে যেতে দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আদনান।

১৩.

নিত্তিয়ার কবরের উপর শুয়ে আছে আদনান।তার পাশে বসে আছে চারু।দুজনের চোখ দিয়েই পানি পড়ছে।দিনের আলো ফুটেছে অনেক আগেই।গোরস্থানে মানুষ আসছে আত্মীয়দের করব যিয়ারত করার জন্য।চারু আদনানকে তোলার চেষ্টা করলে আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আদনান কবরটার উপর শুয়ে বলতে শুরু করে,

—‘ নিতি,তোমার সাথে শেষ দেখাটাও ‌হলো না।মাফ ‌করে দিও আমাকে।তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে চেয়েছিলাম সারাজীবন।কিন্তু ভাগ্য আমার পক্ষে ছিল না।জানো ‌এখ‌ন আমার খুব মনে পড়ছে তোমার কথাগুলো।ইচ্ছা করছে তোমার কাছে চলে যেতে।আমি তোমার কাছে যাব..’

এইবলে আদনান পাশে থাকা একটা লোহা হাতে তুলে নেয়।নিজেই নিজের মাথায় মারার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।চারু দৌর দেয় আসনানের দিকে…

চলবে..

তৃণশয্যা পর্ব-০৬

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৬ষ্ঠ_পর্ব

চারু অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।আদনানের ঠোটের কোনে হাসি।কিন্তু আদনানতো অন্য একজনকে ভালোবাসে তাহলে হাসতেছে কেন?নাকি আদনানের মনে অন্যকিছু চলছে?আমজাদ সাহেব আবার বলতে শুরু করেন,
—‘ বিয়েটাতে অনুষ্ঠান করবো না ঘরোয়া ভাবেই হবে। ‘

আদনান কিছু না বলে চুপ হয়ে আছে।কিন্তু চারু মুখ ফুটে বলে,

—‘ বাবা,এটা কেমন সিদ্ধান্ত?আমি রাজি নই।তুমি অন্য যে কোনো ছেলের সাথে বিয়ে দাও তবুও করবো ‌কিন্তু এই বিয়ে করবো ‌না। ‘

চারুর বাবা আমজাদ সাহেব রেগে চারুর দিকে তাকান।চারু খানিকটা ভয় পেয়ে যায়।সাথে সাথে নিচু করে নেয় নিজের মাথাটা।কিন্তু চারু অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে আদনান কিছু বলছে না কেন?সে না সেই মেয়েটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে,তাহলে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে কেন?আমজাদ তার শেষ কথা বলে চলে যান।তার শেষ কথা ছিল,কেউ রাজি থাকুক আর না থাকুক এই বিয়ে হবেই।আমজাদ সাহেবের পর আদনানের মা ও চারুর মা সেখান থেকে চলে যায়।আদনান ধপ করে বসে পড়ে বিছানায়।চারু লজ্জায় আদনানের দিকে তাকাতে পারছে না।

আদনান মাথা নিচু করে গম্ভীর হয়ে কিছু ভাবছে।সে ইশারায় চারুকে সামনের সোফায় বসতে বলে।চারু তার কথা মতো চুপ করে সোফাটাতে বসে পড়ে।আদনান উঠে গিয়ে লাগিয়ে দেয় দরজাটা।তারপর আবার গিয়ে বসে পড়ে আগের জায়গায়।মুখ তুলে তাকায় চারুর দিকে।একসঙ্গে চারুও তাকায় আদনানের দিকে।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।চারুকে অবাক করে দিয়ে আদনান হা হা করে হেসে ওঠে।চারু আদনানকে দেখছে আর ভাবছে,পাগল হয়ে গেল নাকি লোকটা।চারু কিছুটা ভয় নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় আদনানকে বলে,

—‘ ভাইয়া,আপনি এভাবে হাসতেছেন কেন? ‘

কথাটা শুনে হাসিটা থেমে যায় আদনানের।চোখ লাল করে তাকায় চারুর দিকে।রক্তিম চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায় চারু।আদনান উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে,

—‘ তোর কপালটা সত্ত্যি পোড়া।একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হলো তাকে ভাগিয়ে দিলি।আমার মতে তাকেই তোর বিয়ে করা ভালো ছিল।আর আমি তো তোর মতো নিচু ক্লাসের কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো‌ না।তাই তোর জন্য কষ্টে হাসি পাচ্ছে।তোর বাবাকে বলে দিস,আমি বিয়ে করতে পারবো না। ‘

চারু ভালো করেই বুঝতে পারছে আদনান তাকে অপমান করলো।তবুও মুখ বুঝে সহ্য করে চারু কোনো ‌কথা বলে না।তার মতে একটা পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণতা পাক এটাই বেশি।সে নিচু ক্লাসের মেয়ে নিচু ক্লাসেরই কোনো ছেলেকে বিয়ে করে নেবে।এসব ভাবতে ভাবতে চারু সেখান থেকে বের হয়ে আসে।তারপর রওনা দেয় ছাদের উদ্দেশ্য।ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায় যেখানে দাঁড়ালে অত সহজে বোঝা যায় না যে ওখানে কেউ আছে।চারু এক দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে।

এই মুহুর্তে কারো উপস্থিতি টের পায় চারু।মাথা ঘুরিয়ে তাকায় পিছনের দিকে।আদনান একটা ফোন হাতে পায়চারি করছে।মনে হয় মেয়েটাকে ফোন দিতে চাচ্ছে।একপর্যায়ে আদনান ফোনটা কানের কাছে ধরে বলে,

—‘ নিত্তিয়া তুমি কেমন আছো এখন।আমি আজকে রাতেই যাবো। ‘

ওপাশ থেকে কি বলে সেটা শোনার কৌতুহল ধরে রাখতে পারেনা চারু।তখনকার মতো নিঃশব্দে আগাতে থাকে আদনানের দিকে।দাঁড়িয়ে পড়ে একবারে আদনানের পিছে।ওপাশ থেকে বলছে,

—‘ নাহ,প্লিজ তুমি এসো না।বাবা শটগান নিয়ে পাহারা দিচ্ছে।আমার বিয়েটা দিতে না পারলে তার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।তুমি এসো না।তোমার কিছু হলে আমি সত্ত্যিই বাঁচতে পারবো ‌না। ‘

এই বলে ওপাশ থেকে ভেসে আসে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ।সাথে সাথে কেটে যায় ফোনটা।চারু সেখান থেকে সড়ে পড়ার আগেই আদনান পিছনে ঘোরে।চারু বরফের মতো জমে যায়।আদনান চারুকে দেখে চমকে ওঠে।চারু দৌড়ে পালাতে ধরলে আদনান তার হাতটা ধরে দোলানায় বসিয়ে দেয়।আদনান রেগে তাকায় চারুর দিকে।চারু মাথা নিচু করে ফেলে।

আদনান এবার চারুর মাথাটা ধরে বলে,

—‘ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে কি শুনছিলি?বল তারাতারি? ‘

কথাটা আদনান খানিকটা চিল্লিয়েই বলে।চারু চমকে ওঠে আদনানের গলার আওয়াজে।ভয়ে কাপতে কাপতে বলে,

—‘ মেয়েটার ক-থা ‘
আদনান এবার খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ সব শুনেছিস? ‘
চারু মাথা নাড়িয়ে হা-বোধক উত্তর দেয়।আদনান আস্তে করে বসে পড়ে চারুর পাশে।তারপর চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ হুম আমি ওই মেয়েটাকে ভালোবাসি।নিজের থেকেও বেশি।সেও আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু হঠাৎ তার বাবা বিয়ে ঠিক করে।সে পালাতে ধরলে তার বাবা ধরে ফেলে।তারপর‌ একটা ঘরে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে।না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে? ‘

এই বলে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলে আদনান।চারু কিছুটা ভয় নিয়ে তার হাতটা আদনানের কাধের উপরে রাখে।তারপর আদনানকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বলে,

—‘ আজকে তো তাকে আনতে যাবে।আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। ‘

সাথে সাথে আদনান চারুর দিকে তাকায়।তার শুকিয়ে যাওয়া গলাটা দিয়ে বলে,
—‘ কি বুদ্ধি? ‘
চারু এবার আদনানের দিকে ঘুরে বসে।তারপর চারদিকে তাকিয়ে নেয় একবার।তারপর আস্তে করে বলে,
—‘ তুমি যদি তাকে বের করতে যাও তাহলেতো ‌তোমাকে ধরে ফেলবে।তারচেয়ে আমি তার বান্ধবি সেজে যাব।তারপর তাকে বাসা থেকে বের করে আনবো।তুমি বাহিরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবে।আমি তোমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে চলে আসবো। ‘

চারুর এই প্লানটা মনে ধরে আদনানের।তাইতো চারুর পিঠে খুব জোরে একটা মেরে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—‘ ভালো বুদ্ধি বের করেছিস।যা তোদের থেকে আর ৩০০টাকা নিব না। ‘
এদিকে মাইরটা খুব জোরে হওয়ায় পিঠটাতে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে চারুর।আদনান দোলনা থেকে উঠে চলে যায়।চারু বসে ব্যাথায় হাত দিয়ে মালিশ করতে থাকে।

১০.

অবশেষে চলে আসে কাঙ্খিত সেই সময়।আদনান আর চারু দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটার বাড়ির সামনে।চারু আদনানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।দারোয়ান জিজ্ঞাসা করে জেনে ‌নেয় নিত্তিয়াদের ফ্লাট কোনটা।দারোয়ানের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী চারু দরজার সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজায়।দরজা খুলে দেয় এক মহিলা।চারুকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ কি চাই? ‘

চারু সাথে সাথে উত্তর দেয়,-‘ নিত্তিয়ার সাথে দেখা করবো।আমার একটা নোট তার কাছে আছে। ‘
মহিলা বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে চারুকে ভিতরে ‌‌নিয়ে যায়।তারপর একটা দরজার সামনে গিয়ে দরজায় মারতে মারতে বলে,
—‘ নিতি তোর বান্ধবি‌ এসেছে। ‘

সাথে সাথে খুলে‌ যায় দরজা।নীল রংয়ের জামা পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারুর সামনে।চারু তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তারপর দরজাটা লাগিয়ে দেয়।নিত্তিয়ার মা বোকা মহিলা সেখান থেকে চলে যায়।চারু দেখতে পায় ঘরের বিছানার মধ্যে শিকল।নিত্তিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ এই মেয়ে তুমি কে? ‘

চারু সাথে সাথে বলে,–‘ আদনান ভাইয়া পাঠাইছে তোমাকে নিয়ে যেতে। ‘
মেয়েটা সাথে সাথে বলে,’ চলো। ‘
এই বলে সে চারুকে নিয়ে একটা জানলার সামনে আসে।জানালা দিয়ে লাফ দেয় প্রথমে নিতি।তারপর চারু।রোডের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।চারু আর নিত্তিয়াকে আসতে দেখে বাইকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।নিত্তিয়া আর চারু দৌড় দেয় আদনানকে লক্ষ্য করে।এই মুহুর্তে একটা ট্রাক চলে আসে তাদের সামনে।আদনান থ মেরে যায়।খুব জোরে একটা চিল্লান শোনা যায়।আদনান দৌড়ে সেখানে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।দেখার চেষ্টা করে কার ক্ষতি হলো।চারু দেহটা পড়ে আছে।তারপাশে নিত্তিয়া।আদনান পরিক্ষা করতে শুরু করে দুজনকে।নিত্তিয়ার আগে চারুকে পরিক্ষা করে।চারুর নার্ভ ধরে সে।তারপর আস্তে করে ছেড়ে দেয়।চারু…

চলবে..ইনশাআল্লাহ

তৃণশয্যা পর্ব-০৫

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৫ম_পর্ব

বাসার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে কাঁপতেছে ছেলের বাবা,তাদেরকে বাসায় এনে এভাবে অপমান করা হলো সেটা মানতে পারছে না।এদিকে আদনান সদর দরজাও বন্ধ করে দিয়েছে।ওই অবস্থা নিয়ে তিনজনই হাটতে শুরু করে।কো‌নো রিকসাওয়ালাই তাদের তুলছে না।মোটকথা কোনো ড্রাইভারই তাদের নিজের গাড়িতে তুলছে না।রাগে মাথার তার ছিড়ে যাচ্ছে ছেলের বাবার।

এদিকে নিজের রুমে বসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে হাসতেছে রিমি আর চারু।তারা বুঝতে পারছে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে যদি তাদের অপমানবোধ থেকে থাকে।অপেক্ষায় আছে কখন ফোন দিয়ে জানিয়ে দিবে যে,বিয়ে ক্যান্সেল।এই মুহুর্তে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে আদনান।ধপ করে বসে পড়ে সিঙ্গেল সোফাটাতে।তারপর এক এক করে রিমি আর চারুর দিকে তাকিয়ে খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলে,

—‘ পঁচা কুমড়ো ফেলাটা ঠিক করিসনি।লোকগুলো কষ্ট করে হেটে যাচ্ছে।কোনো ড্রাইভারই তাদের গাড়িতে তুলছে না গন্ধের কারনে। ‘

আদনানের মুখে এই কথাটা শুনে ভিষন চমকে ওঠে রিমি আর চারু দুজনেই।রিমি তোতলাতে তোতলাতে বলে,

—‘ তু-তু-মি জা-জা-জান-লে কেমন ক-রে? ‘

আদনান এবার একটা ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে,
—‘ আমাকে চিনলি না তোরা।তোদের এসব কান্ডকারবার আমার মোবাইলে ভিডিও করা আছে।দেখ…’
এই বলে আদনান তাদের সামনে তার মোবাইলটা ধরে।একটা ভিডিও দেখা যাচ্ছে।ভিডিওটাতে রিমি আর চারু পচা কুমড়ো তুলে নিচে ফেলে দেয়।
চারু অবাক হয়ে বলে,

—‘ কিন্তু তুমিতো তখন নিচে ছিলে? ‘

আদনান আবার সেই রমস্যময়ী হাসিটা দিয়ে বলে,
—‘ কিন্তু মোবাইলতো উপরে ছিল।দোলনার এক কোণায়।আচ্ছা বাদদে ভিডিওটা সবাইকে দেখানো দরকার কি বলিস? ‘

এই কথা বলার সাথে সাথে রিমি আর চারু দুজনই আদনানের দুই হাত চেপে ধরে অনুরোধ করতে শুরু করে।আদনান একপর্যায়ে রাজি হয় তবে একটা শর্ত দিয়ে।শর্তটা হলো চারু আর‌ রিমি প্রত্যেকদিন আদনানকে ৩০০করে টাকা দিবে।যেদিন দিতে পারবে না সেদিন ভিডিওটা দেখাবে সে।এই বলে হন হন করে রুম ত্যাগ করে আদনান।চারু আর রিমি তাকিয়ে আছে তার যাবার পথে।

৯.

দুপুর ১২টার দিকে বিছানায় অলস ভাবে শুয়ে আছে রিমি আর চারু।এই মুহুর্তে ভিতরে প্রবেশ করে চারুর বাবা-মা আর রিমির মা।দুইজনেই শোয়া থেকে উঠে বসে।চারু বাবা বসে সিঙ্গেল সোফাটাতে আর চারু মা আর রিমির মা বিছানায়।চারুর বাবা এবার মাথা নিচু করে বলতে শুরু করে,

—‘ আমি কিছুই বুঝলাম না,ওরা এখানে সব কিছু ঠিকঠাক করে বাড়িতে যেতে যেতেই মত পাল্টালো কেন?জিজ্ঞেস করলে বলে কিনা আমরা মানুষকে বাসায় ডেকে এনে অপমান করেছি। ‘

চারু বুঝতে পারে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।তাই কাদোকাদো গলায় তার বাবাকে বলে,
—‘ বাবা,আমার বিয়েটা আবার ভেঙ্গে গেল।আমি শেষ পর্যন্ত তোমাদের কুলক্ষী হলাম। ‘
এই বলে সে বিছানা থেকে উঠে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।রিমি তার একটিং দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।এদিকে ছাদে প্রবেশ করেই নাচতে শুরু করেছে চারু।কি মজা আকাশে বাতাসে,বিয়ে ভেঙ্গে গেছে!নাচতে শুরু করে দিয়েছে চারু।নাচতে নাচতে সে খেয়াল করে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।

চারু চুপিচুপি আদনানের দিকে এগোতে থাকে।সম্পুর্ন নিঃশব্দে সে পৌছে যায় আদনা‌নের ঠিক পিছনে।কানটা এগিয়ে দিয়ে শুনতে চেষ্টা করে আদনান কি বলছে?আদনান ফোনে কথা বলতেছে।চারু অবাক হয় আদনানের চোখের পানি নিচে পড়তে দেখে।চোখের পানি দেখে তার আগ্রহ দ্বিগুন হয়ে যায়।আদনান চোখের পানি ফেলতেছে আর বলছে,

—‘ আমি ভাবতে পারিনি তোমার বাবা এতটা নিষ্ঠুর।তুমি চিন্তা করিওনা আমি কালকেই তোমাকে নিয়ে পালাবো।আমার এতদিনের ভালোবাসা কখনো বি-ফলে যাবে না। ‘
ফোনের ওপাশ থেকে কথা শোনা গেলেও ততটা ভালোভাবে শুনতে পারতেছেনা চারু।তবুও আধো আধো শোনা যাচ্ছে যে,তুমি এসোনা প্লিজ।এনি আমার নিজের বাবা নয় সৎ বাবা।জানো আমাকে না শিকল দিয়ে বেধে রাখছে।একমুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে তোমার বুকটাতে যেন আমার শেষ নিশ্বাস যায়।আমার যাই মনে হোক না কেন তুমি আসিও না?আমাকে যেমন শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে তোমাকে দেখলে গুলি করে ফেলবে।তারচেয়ে সেই মদখোর ছেলেটাকে বিয়ে করি।

আদনান ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
—‘ আমাকে এত তারাতারি ভুলে গেলে।মনে নেই‌ আমরা কি শপথ করেছিলাম।আমি তোমাকে নিয়ে আসবোই ওখান থেকে।প্লিজ তুমি আর একটু কষ্ট করো। ‘

ওপাশ থেকে আবার বলতে শুরু করে,
নাহ তুমি আসবে না।এই বলে কান্না করছে।তারপর শোনা যায় খুব জোরে কান্নার আওয়াজ।আদনান বার বার বলছে কি হয়েছে কিন্তু কোনো জবার আসে না।শুধু সোনা যাচ্ছে কান্না আর মাইরের আওয়াজ।

আদনান পিছনে ঘোরার আগেই চারু সেখান থেকে চলে আসে।তারপর রওনা দেয় নিচের উদ্দেশ্যে।ছাদের মধ্যে দোলনাতে বসে কাঁদছে আদনান।চারু নিচে নামতে নামতে চোখে হাত দিয়ে চমকে ওঠে।তার চোখেও পানি।সত্যি তার জানা ছিল না এমন ভালোবাসাও হয়।চারু কোনো কথা না বলে রিমির রুমে প্রবেশ করে।রিমি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছে।ঘরে আর কেউ নেই।চারুও গিয়ে নিঃশব্দে রিমির পাশে শুয়ে পড়ে।এখনও তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কেউ কতটা পরিমানে ভালোবাসলে শিকলে বাধা থেকেও মনের মানুষটাকে ফোন দেয়।সত্ত্যি চারু অবাক হয়েছে এই কথাগুলো শুনে।চারুর ইচ্ছা করছে আদনানের পাশে দাঁড়াতে কিন্তু কিভাবে?

চারু ঘুমানোর চেষ্টা করলেও তার চোখে ঘুম আসছে না।একপর্যায়ে সে উঠে বসে।তারপর কি ভেবে রওনা দেয় আদনানের ঘর লক্ষ্য করে।আদনানের ঘরে প্রবেশ করেই সে একটা অদ্ভুত গন্ধ পায়।প্রথম যেদিন ঢুকেছিল এই গন্ধটা তার নাকে আসেনি।গন্ধটা যেন চারুকে নিজের দিকে টানছে।চারু গিয়ে বিছানার উপর বসে পড়ে।পাশে টেবিলটাতে তার চোখ আটকে যায়।একটা নীল ডায়েরী।চারু ভাবতে থাকে ডায়েরীটা পড়বে নাকি পড়বে না।না না করতে করতে সে প্রথম পাতাটা উল্টায়।চোখে পড়ে অবাক করা একটা ফটো।একটা ছেলের বুকে শুয়ে আছে মেয়েটা।মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর ছেলেটা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।চারু ছেলেটাকে চিনতে পারে আদনান।তাহলে এইটাই সেই মেয়ে।চারু‌ মনে ম‌নে মেয়েটার কপাল ভেবে খুশি হয়।মেয়েটা সত্ত্যি একটা রাজপুত্র পেয়েছে।

এই মুহুর্তে বাহির থেকে কারো পায়ের শব্দ ভিতরে আসছে।আগন্তুক যে এদিকেই আসছে সেটা চারু বুঝতে পারে।সে তারাতারি ডায়েরীটা রেখে উঠে দাঁড়ায়।ভিতরে প্রবেশ করে আদনান তার মা আর চারুর বাবা-মা।আদনানের চোখটা লাল টকে-টকে রং ধারন করেছে।চারু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

এবার চারুর বাবা বলে ওঠে,
—‘ দুজনেই শোন আমরা আদনান আর চারুর বিয়ে ঠিক করেছি‌ এ‌বং সেটা কালকেই। ‘

এই কথাটা শুনে আদনান পর চারু দুজনেই তাকায় আমজাদ সাহেবের দিকে।তারপর চারু আর আদনানের চোখা-চোখি হয়ে যায়।চারু ভাবছে সে কিছুতেই এই বিয়ে করবে না।একজনের পবিত্র ভালোবাসা কিছুতেই নষ্ট করবে না কিন্তু আদনান ভাবছে অন্যকিছু।তার মুখে ফুটে উঠেছে হাসি কিন্তু সেটা কেন?

চলবে…ইনশাআল্লাহ

তৃণশয্যা পর্ব-০৪

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৪র্থ_পর্ব{পচা কুমড়ো অপারেশন}

সাপের ভয়ে গাছ দিয়ে পালাতে ধরে গাছে ঝুলে আছে চারুকে দেখতে আসা নিষ্পাপ ছেলেটা।না পারছে নামতে,না পারছে উঠতে।এদিকে বেলকনি থেকে সাপটা তাকিয়ে আছে তার দিকে।মোবাইল বের করে ভিডিও করছে আর হাসাহাসি করছে চারু আর রিমি।একপর্যায়ে ধপাস করে পড়ে যায় ছেলেটা।দৌড়ে বেলকনিতে যায় রিমি আর চারু।ছেলেটা পড়ে গিয়ে যে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ করছে না।সে পা খোঁড়াতে খোঁড়াতে দৌড়াচ্ছে।রিমি আস্তে করে সাপটা তুলে নিয়ে গিয়ে বাক্সতে ভরে রাখে।এবার চারু গিয়ে বসে পড়ে বিছানার উপর।রিমি খানিকটা দৌড়াতে দৌড়াতে যায় নিচে বসার ঘরে।গিয়ে হাপানোর অভিনয় শুরু করে সে।তাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে তার মা জিজ্ঞাসা করে,

—‘ কিরে,এভাবে হাপাচ্ছিস কেন? ‘

রিমি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

—‘ মা,দুলাভাইয়া বেলকনি দিয়ে পালিয়ে গেছে।আমরা তাকে এত আটকানোর চেষ্টা করেও পারলাম না।খালি দৌড়াচ্ছে আর সাপ সাপ বলে চেচাচ্ছে।অথচ ঘরে সাপ কেন,সাপের বংশও নেই। ‘

রিমি এই কথা শুনে ছেলেটার বাবা-মা নিজেদের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে।তারপর ছেলেটার বাবা মাথা নিচু করে বলে,
—‘ আমরা সত্ত্যিই লজ্জিত।ছেলেটা যে এরকম কিছু করবে ভাবিনি।আজ আমরা উঠছি। ‘
এই বলে তারা কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে চলে যায়।রিমি মা আর চারুর বাবা-মা পরস্পরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে।একপর্যায়ে চারুর মা বলে ওঠে,

—‘ চলোতো একটু উপরে যাই দেখি কি হয়েছে? ‘

তার এই কথায় সবাই উঠে দাঁড়ায় উপরে যাওয়ার জন্য।রিমি আগাচ্ছে আর ভাবছে এই মুহুর্তে যদি চারু খুশিতে নাচানাচি করে আর খালা-খালু যদি তা দেখে তাহলে শেষ।রিমি এসব ভাবছে আর এগোচ্ছে।

হঠাৎ চারু সিড়িতে শব্দ শুনতে পায়।তারাতারি দরজায় গিয়ে দেখে দলবেধে উপরে উঠছে সবাই।চারু কি করবে ভেবে পায় না?হুট করে তার মাথায় একটা বুদ্ধির আগমন ঘটে।চারু নিজের জামাটা খানিকটা এলোমেলো করে ফেলে।তারপর মুখ থেকে থুতু বের করে চোখের নিচে লাগিয়ে দেয়।তারপর শুরু করে দেয় কান্না করার একটিং..

সবাই রুমে প্রবেশ করে।সবার শেষে চোখ বন্ধ করে রুমে প্রবেশ করে রিমি।কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকার পর চোখ খুলে রিমি।চোখ খুলে এক অবাস্তব দৃশ্য দেখতে পায় যা সে আশা করেনি।চারু কাঁদছে,আর তার পাশে বসে তাকে সান্তনা দিচ্ছে তার মা।রিমি অবাক হয়ে চারুর দিকে তাকালে চারু রিমিকে উদ্দেশ্য করে চোখ মারে।চকিতে রিমি বুঝে নেয় এটা কি?

৮.
ছেলের বাসা থেকে ফোন দিয়েছে।ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকার দেয় চারুর বাবা।রিমি আর চারু দুজনেই ভরকে যায়।ছেলেটা যদি সব বলে দেয় তাহলে দুজনেই শেষ।কিন্তু সে রকম কিছুই ঘটলো না।উল্টো তারা বলে,
—‘ আবার নাকি কালকে আসবে।এসে সব কিছু পাকা করে যাবে। ‘

এই কথাটা শুনে চারুর বাবা-মায়ের মনে সস্তি আসলেও অসস্তি দেখা দেয় চারুর মনে।তার মনের সঙ্গে রিমির মনেও দেখা দেয় একই রোগ।তৎক্ষণাত সেখান থেকে চলে যায় দুজনেই।রিমি তার রুমে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।চারু ভিতরে প্রবেশ করে খানিকটা জোরেই লাগিয়ে দেয় দরজাটা।তারপর গিয়ে বসে পড়ে রিমির পাশে।দুজনের এর মধ্যে চোখা-চোখি হলে দুজনেই হেসে ফেলে।তারপর পুনরায় গম্ভীর হয়ে চারু বলে,

—‘ একবার ভাগাইলাম আবার নাকি আসবে।এবার কি করবো বুঝতে পারছি না?তোর মাথায় কি কোনো বুদ্ধি আসছে? ‘
রিমি নিরবে মাথা নাড়িয়ে বলে,’নাহ’
এই মুহুর্তে দরজায় ঠক ঠক শব্দ হয়।চারু উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।
আদনান চারুকে সড়িয়ে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তারপর ধপ করে শুয়ে পড়ে বিছানাটাতে।রিমি অবাক হয়ে আদনানকে দেখছে।আদনান এবার রিমি আর চারু দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ ছেলেটা নাকি পালিয়ে গেছে? ‘

আদনানের এই কথায় রিমি আর দুজনেই মাথা নাড়ায়।আদনান এবার শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—‘ আমার মনে হচ্ছে তোরা কিছু করেছিস।নাহলে একটা ছেলে এমনি পালাবে? ‘
চারু মুখটা খানিকটা মলিন করে বলে,
—‘ আমরা কি করবো বলো?আমার ভাগ্যই এরকম। ‘

আদনান এবার উঠে চারুর সামনে দাঁড়ায়।তারপর খানিকটা শুষ্ক গলায় বলে,
—‘ মন খারাপ করিস না,কালকে তো আবার আসবে কালকে আমিও থাকবো ছেলেটার সাথে।দেখি কি করে পালায়? ‘

এই বলে আদনান ডেবিল মার্কা একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।রিমি আর চারু দুজন দুজনের দিকে তাকায়।তারা কি ইচ্ছা করেই এই বিপদটাকে ডাকিয়ে আনলো নাকি?আদনান যদি ছেলেটার সাথে থাকে তাহলেতো তাদের প্লান খাটবে না।আবার নতুন উদ্যমে ভাবতে থাকে চারু আর রিমি।সেদিনের মতো রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়ে বাসার সবাই।চারু আর রিমি দুজনেই শুয়ে পড়ে।রিমির চোখে ঘুম আসলেও চারুর চোখে আসেনা ঘুম।অনেকক্ষন শুয়ে থাকার পরেও যখন ঘুম আসতেছেনা তখন চারু সিদ্ধান্ত নেয় ছাদে যাবে।আস্তে করে উঠে ছাদের পথে রওনা হয় চারু।

ছাদে লাইট থাকার সুবাদে এই অন্ধকার রাতে আলোকিত ছাদটা।তবে একদিকে কিছুটা অন্ধকার রয়েছে।চারু ছাদের চারদিকে পায়চারি করতে থাকে।পায়চারী করার সময় চারু দেখতে পায় দোলনাতে ঘুমিয়ে আছে আদনান।বুকের উপরে মোবাইলটা পড়ে আছে।চারু আস্তে আস্তে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একপর্যায়ে চারু আদনানের সামনে গিয়ে তার মোবাইলটা নেওয়ার চেষ্টা করে।হালকা একটু নড়ে ওঠে আদনান।চারু মনে করে আদনান জেগে গেছে তাই ছাদ থেকে ভো দৌড় দিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে।তারপর ঝটপট বিছানায় শুয়ে পড়ে।সাথে সাথে তার চোখে দেখা দেয় ঘুমরাজ।

৯.

সকালবেলা থেকেই বাড়ির সবাই ব্যাস্ত।এখনি ছেলেপক্ষ দেখতে এলো বলে।এদিকে চারুকে সাজানোর ভার পড়েছে রিমির উপরে।তাই চারুকে নিয়েই মেতে আছে রিমি।একপর্যায়ে ছেলেপক্ষ এসে পড়ে বাড়িতে।তাদেরকে ভিতরে নিয়ে আসে আদনান।চারুর বাবা আমজাদ সাহেব তাদের বসতে বলে।তারা বসতে বসতে বলে,আজকে বেশি দেরি করবে না।সব কিছু ঠিকঠাক করেই এখনি চলে যাবে।আদনান গিয়ে বসে পড়ে ছেলেটার পাশে।

কথাবলার একপর্যায়ে ছেলের বাবা বলে,
—‘ তো কালকে তো আপনার মেয়েকে ভালো করে দেখতেই পেলাম না।আজকেও কি দেখতে দিবেন না? ‘

আমজাদ সাহেব মুচকি হেসে বলে,
—‘ অবস্যই দেখবেন।আদনান যাওতো চারুকে নিয়ে আসতে বলো! ‘

এই আদেশ পেয়ে মুহুর্ত দেরি না করে সেখান থেকে উঠে পড়ে আদনান।রওনা দেয় রিমির রুম লক্ষ করে।সে রুমে প্রবেশ করে রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ চারুকে নিয়ে যেতে বলছে। ‘
রিমি আদনানের সাথে কোনো‌ কথা না বলে চারুকে নিয়ে নিচে আসে।নিচে এসে চারুকে বসিয়ে দেয় ছেলেটার পাশে।তারপাশে বসে রিমি।ছেলেটা যে লজ্জা পাচ্ছে তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা কারো।

সব কাজ শেষ হলে তারা সবাই উঠে দাঁড়ায়।এক এক করে বিদায় নিতে শুরু করে।চারু আর রিমি দৌড়ে ছাদে যায়।প্লান অনুযায়ী ছাদে সবকিছু রেডিই আছে।যখন বের হবে শুধু মাত্র কাজটা করা বাকি।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয় ছেলের বাবা-মা আর ছেলে।তারা বের হতেই তাদের মাথা লক্ষ্য করে পচা কুমড়ো ছুড়ে মারে রিমি আর চারু।তারপর টপ করে বসে পড়ে দুজনে।আস্তে আস্তে করে রওনা দেয় নিজেদের রুমে।

এদিকে পচা কুমড়ো মাথায় পড়ায় রেগে বোম হয়ে গেছে ছেলের বাবা-মা।তাদের বাসায় ডেকে এনে এভাবে অপমান করা হচ্ছে।গা দিয়ে দুর্গন্ধ ছুটছে সবার।এমনকি একটা কাকও এসে বসেছে ছেলের বাবার মাথায়….

চলবে..ইনশাআল্লাহ

তৃণশয্যা পর্ব-০৩

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৩য়_পর্ব

মধ্যে রাতে আদনানদের বাড়িতে হানা দিয়ে একদল ডাকাত।দলনেতার কথা অনুযায়ী তিনজন ডাকাত যথাক্রমে রিমির মা,রিমি ও চারুর গলায় চুরি ধরে আছে।এখানে অবাক করার বিষয় হচ্ছে বাড়িতে এত কিছু ঘটে যাচ্ছে অথচ আদনা‌নের রুমের দরজা এখনো বন্ধ।দলনেতার নির্দেশে একজন গিয়ে আদনানের দরজায় থাবা মারতে শুরু করে।প্রায় ২মিনিটের মতো থাবা মারার পর হঠাৎ খুলে যায় দরজা।দরজার ওপাশে ভেসে ওঠে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা আদনানের মুখখানা।সে চোখ ডলতে ডলতে বলে,

—‘ কে রে?এত রাতে কেউ এভাবে ডাকা-ডাকি করে নাকি? ‘

তার এই কথার জবাবে একজন ডাকাত বলে ওঠে,

—‘ আমরা ডাকাত।আজ তোমাদের বাড়ি ডাকাতি করবো! ‘

আদনান তাদের চমকে দিয়ে উত্তর দেয়,

—‘ ডাকাতি করবে তা করো,আমার দরজায় থাবা মারছো কেন?তোমরা যা করার করো কিন্তু আমার ঘুমের ডিষ্টার্ব দিও না। ‘
এই বলে সে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।তার এরকম কথাবাত্রায় ডাকাত দল সহ উপস্থিত সবাই বোকা হয়ে যায়।এবার ডাকাত দলনেতার কথা অনুযায়ী অন্যান্য লোকেরা এক এক করে চলে যায় সব কিছু আনতে।এদিকে সবারই গলায় ছুড়ি ধরা।এই অবস্থায় কেটে যায় ১০মিনিট।হঠাৎ তাদের ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে কয়েকজন ছেলে।তারা সংখ্যায় ২০।ডাকাত দলনেতা তাদের দেখে চমকে যায়।তাদের হাতে পিস্তল রয়েছে।সাথে সাথে খুলে যায় আদনানের ঘরের দরজা।ধরে ফেলা হয় ডাকাতদের।

৬.

বাসায় উপস্থিত সব আত্মীয়-স্বজনরা আদনানকে নিয়ে মেতে আছে যা মোটেও সহ্য হচ্ছে না চারুর।কালকে সংবন্ধ একটা ডাকাত দলকে ধরিয়ে দেওয়ার পর আদনানের কথা মতোই সবাইকে বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।সবাই আদনানের প্রসংশা করছে শুধুমাত্র চারু আর রিমি বাদে।এবার আদনান সবার মাঝ থেকে উঠে এসে রিমি আর চারুর সামনে দাঁড়ায়।রিমি তাকে দেখে মুখটা সড়িয়ে নেয়।
আদনান এবার নিজের কনুইটা ডলতে ডলতে বলে,

—‘ বুঝলি!তোরা দুইটা হইলে গবেট। ‘

গবেট কথাটা শুনে রিমি আর চারু দুজনেই প্রচন্ড রেগে যায়।তাদের রাগ দেখে আদনান আবার বলতে শুরু করে,

—‘ সারাজীবন গবেট থাকলে হবে না,আমার মতো বুদ্ধিমান হতে শেখো।দেখ আমি কিভাবে কালকে ডাকাতদলকে ধরিয়ে দিলাম?ওহ শিট,তোরা দেখবি কি করে?তোরা তো আস্ত কানা। ‘

আদনান যে তাদের অপমান করছে সেটা ঢের বুঝতে পারছে দুজনেই কি‍ন্তু কিছু বলতে পারছে না শুধু ভিতরে ভিতরে রেগে যাচ্ছে।এমন সময় আদনানের পাশে এসে দাঁড়ায় তার ফুফাতো বোন।শুরু করে দেয় ন্যাকামি।এই মেয়েটাকে উষালঘ্ন থেকে দেখতে পারেনা রিমি।শুধু ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করে।মেয়েটা আদনানের কাধে হাত রাখে।আদনানও তার কাধে হাত রাখে।এবার মেয়েটা রিমি আর চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ এদের দাঁড় করে রেখেছো কেন আদু? ‘
মেয়েটার এমন ন্যাকামি দেখে চারুর ইচ্ছা করতেছে কষে দুইটা থাপ্পর মারতে কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সেই ইচ্ছাটাকে দমন করে চারু।আদনান এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ কাদের কথা বলছো,এই গবেট গুলোর?আরে এই গুলাতো আস্ত একটা অবুদ্ধিমানের ঢিপি।তাই তাদের কিছু টিপস দিচ্ছি বুদ্ধিমান হওয়ার।আর তুমিতো জানো আমি কতো বুদ্ধিমান ‘

নিজ সম্পর্কের আদনানের এত অহংকার সহ্য করতে পারেনা চারু আর রিমি দুজনেই।তারা দুজনে আর এক মুহুর্ত দেরি না করে সেখান থেকে চলে যায়।দুজনেই রিমির রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।রেগে গিয়ে বসে পড়ে বিছানায়।দুজন দুদিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে।দুজনের মনেই আদনানের প্রতি সীমাহিন রাগ বিরাজ করছে।দুজনে দুদিকে মুখ করে প্রায় ৪মিনিট বসে থাকার পর রিমি প্রথমে চারুর দিকে তাকায়।চারুও তাকায় রিমির দিকে।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।

—‘ চারু তোকে একটা গোপন কথা বলতে চাই ‘-রিমি বললো।চারু খানিকটা আগ্রহ নিয়ে বলে,’ কি গোপন কথা? ‘

রিমি তার মাথাটা নিচু করে ফেলে।তারপর গলার আওয়াজ টা কিছুটা নিচু করে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করে,

—‘ তোকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে একটা ছেলেকে দেখানোর জন্য।ছেলেটা বাবার বন্ধুর ছেলে।আমেরিকাতে থাকে।তোর সাথে তার বিয়ের কথা চলছে।এতে তোর বাবা মাও রাজি আছে।আজকে তারা আসতেছে।আজকে তোকে ছেলেটা দেখতে আসবে।খুব তারাতারি তোর বিয়ে দিবে তোর বাবা মা।আমাকে বলতে নিশেধ করলেও আমি তোকে বলে দিলাম। ‘কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ফেলে রিমি।

চারু অবাক হয়ে রিমির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রিমি মজা করছে নাকি সত্ত্যি বলছে বোঝার চেষ্টা করছে।চারু আর ভাবতে পারছে না।এত তারাতারি তাকে বিয়ে দেয়ার চিন্তা করেছে তার বাবা এটা মানতে পারছে না।চারু দুই হাত দিয়ে নিজের মাথাটা চিপে ধরে।এই মুহুর্তে তার মাথা গরম করলে চলবে না।শান্ত মাথায় ভাবতে হবে কি করে বিয়েটা ভাঙ্গা যায়।এই নিয়ে সে রিমির সাথে কথা বলতে শুরু করে।তারপর দুজনে মিলে ঝাক্কাস একটা প্লান করে ফেলে।প্লানটা সফল হলে বিয়ে ভাঙ্গবে নিশ্চিত।দুইজনের মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।

৭.

‘ রিমি চারুকে একটু সাজিয়ে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে আয়তো! ‘

দরজার ওপাশ থেকে কথাটা বলে রিমির মা।রিমি এই কথার জবাবে বলে,’ যাচ্ছি মা! ‘
তারপর রিমিকে চারুকে বেশি ভালো করে না সাজিয়ে বাহিরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।চারু অবাক হয়ে দেখছে চারুর বাবা-মা ও সেখানে উপস্থিত রয়েছে।বাসার সবাই সেখানে উপস্থিত শুধুমাত্র আদনান ছাড়া।কথা শুরু আগেই রিমি বলে ওঠে,

—‘ আপনারা এখানে কথা বলুন,তারা আলাদা ভাবে কথা বলুক। ‘

রিমির এই কথাটা শুনে চারু অবাক হয়ে রিমির দিকে তাকায়।এমন একটা ভাব নেয় যেন সে কিছুই জানেনা।রিমির কথায় সায় দেয় উপস্থিত সবাই।তারপর রিমি ছেলেটাকে আর চারুকে নিয়ে নিজের রুমে যায়।ছেলেটাকে বসিয়ে রাখে বিছানায়।তার পাশে বসে চারু।আর রিমি যায় দরজার আড়ালে।

ছেলেটা যে খানিকটা ভ্যাবলাকান্ত সেটা বুঝতে পেরেছে রিমি পর চারু উভয়ই।একপর্যায়ে ছেলেটা চারুর কাছে এক গ্লাস পানি চায়।চারু উঠে যায় বেলকনির দিকে।এই মুহুর্তে একটা বাক্স হাতে ভিতরে প্রবেশ করে রিমি।ছেলেটা তাকে দেখে মাথা নিচু করে নেয়।রিমি বাক্সটা নিয়ে গিয়ে রাখে ছেলেটার সামনে।ছেলেটা আস্তে করে রিমিকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ বাক্সটাতে কি? ‘

রিমি বাক্সটা খুলে দিয়ে বলে,

—‘ আপুর পোষা সাপ ‘
এই বলে রিমি সেখান থেকে চলে যায়।যাওয়ার সময় দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যায়।এদিকে সাপটা আস্তে আস্তে মাথা তুলে তাকাতে থাকে।কালো রংয়ের এই সাপটা দেখে ভিষন ভয় পেয়ে যায় ছেলেটা।বার বার পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছতে থাকে।সাপটা আস্তে আস্তে ছেলেটার দিকে এগোতে থাকে।ছেলেটা দরজার দিকে তাকায়।দরজা বন্ধ করা।পালিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ ব্যালকনিটা।দৌড়ে সেদিকে যায় ছেলেটা।লাফ দিয়ে ব্যালকনির পাশের গাছটাতে উঠে পড়ে।এদিকে সাপটাও যেন তার পিছু ছাড়ছে না।ছেলেটা গাছ দিয়ে নামতে শুরু করে।নামতে নামতে একপর্যায়ে…

চলবে,ইনশাআল্লাহ।