Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1480



তবুও তুমি পর্ব-০৩

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৩
#লেখিকাঃলামিয়া রহমান মেঘলা
রোদ ছোঁয়ার গলাটা খুব শক্ত করে চেপে ধরেছিল যার ফলে ছোঁয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
সেটা বুঝতে পেরে রোদ ছোঁয়া কে ছেড়ে দেয়।
ও আমার গলা ছাড়াতে আমি কাশি শুরু করি।
অনেকটা সময় পর যেন আমি দম ফিরে পেলাম।
ভিশন কষ্ট হচ্ছে আমার তাও।
একটু পানি প্রয়োজন আমার।
কিন্তু আমি দিশাহারা হয়ে গেছি আশে পাশের কিছুই আমার উপর প্রভাব ফেলতে পারছে না,
কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছে সব।
তখনি আমার সামনে কেউ পানির গ্লাস ধরে আমি সেটা এক চুমুকে শেষ করি।
কিছুটা স্থির হয়ে সামনে দেখি রোদ দাঁড়িয়ে।
আমাকে তাকাতে দেখে এক সেকেন্ড ও লেট না করে ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়৷
আমি বিছনায় বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকি।
মনে পড়ে পুরোনো দিনের কথা,
সে দিন মুষলধারে বৃষ্টি ছিল,
কলেজে পড়ি ,
যখন রোদ আমার থেকে বিদায় নিতে এলো শেষ বারের মতো,
অতিত,
–ছোঁয়া রানি ছোঁয়া রানি কই তুমি?
–এই তো আপনি এতো জোরে কেন চিৎকার করছেন।
–তোমাকে না দেখতে পেলে আমার ভয় হয় তো কি করব।
–আমি এখানেই ছিলাম বৃষ্টি হচ্ছে জালানা দিচ্ছিলাম।
–আমার আর ১ ঘন্টা পর ফ্লাইট এখন যেতে হবে এয়ারপোর্টে চলো তুমিও যাবে।
–আমিও এই বৃষ্টিতে,
–ছোঁয়া গত ১ বছরের জন্য তোমার দেখা পাবো না এই সময় টুকু অন্তত আমাকে তোমার সাথে কাটাতে দেও।
আমি জানি কোন কথা বলে লাভ নাই তাই গিয়ে একটা জামা পরে বেরিয়ে এলাম চুল গুলো ঠিক করে,
–চলুন।
–হুম।
ওনার সাথে গাড়িতে বসে আছি উনি আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাবো।
মনে হচ্ছে এক বছর না দশ বছরের জন্য কোথাও চলে যাচ্ছে।
কিছু সময় রাস্তায় থাকার পর আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম।
গাড়ি থেকে নেমে ছাতা তুলে এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়ালাম।
সে আমার কপালে চুমু একে দিলো,
–তোমায় খুব মিস করবো ছোঁয়া শুধু মাত্র দাদা জানের ইচ্ছে ছিল তাই বাইরে যাচ্ছি খুব জলদি ফিরে আসবো খেয়াল রেখো নিজের৷
আমার ছোঁয়া এখন তোমার দায়িত্বে ওর যত্ন তুমি নিবা। কলেজে গিয়ে কোন ফাজলামো না সোজা ক্লাস করবা বাসায় আসবা।
ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে সব থেকে বড়ো কথা নিজের যত্ন নিবে।
খুব মিস করবো ছোঁয়া তোমায় ছাড়া একটা দিনও আমার ভালো কাটবে না।
কথা গুলে বলার সময় তার চোখে পানি এসেছিল।
আমি নিরব দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
কিছু সময় পর সে আমার হাতটা ছেড়ে ভেতরে চলে গেল।
যতোটা দুর পর্যন্ত আমাকে দেখতে পাওয়া যায় ততোটা দুর পর্যন্ত আমাকে দেখেছে সে।
সে এক দম ভেরতে চলে গেলে আমি চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম।
হটাৎ দমকা হাওয়া এলো আমার ছাতাটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল।
পুরো বৃষ্টির মাঝে পড়লাম আমি।
হায় আল্লাহ এবার কি হবে।
আমি দৌড়ে গাড়ির কাছে আসতে গেলে উল্টো দিক থেকে একটা গাড়ি আমার সামনে চলে এলো।
প্রচন্ড ভয়ে হাত দিয়ে চোখ আঁটকে নিলাম।
তখনি মনে হলো কেউ ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে টান মারলো।
আমি তার সাথে লেপ্টে গেলাম বৃষ্টির মধ্যে।
মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি এক জন ২২-২৩ বছর বয়সের ছেলে লম্বা ফর্সা মতো করে।
ছেলেটার মুখে বোধহয় মায়া আকা ছিল।
না হলে আমার দৃষ্টি তার দিক থেকে সরছিল না কেন খোদাই জানে
হটাৎ ছেলেটা শুকনো কাশি দিলে,
–এই যে ম্যাম এখানে এভাবে রাস্তা দিয়ে চললে তো যে কোন গাড়ি নিমিষেই আপনাকে বেটে দিবে।
আমি তার থেকে সরে এলাম।
আর কোন কথা বললাম না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটা আবার বললো,
–কি হলো ম্যাম আপনার জীবন বাঁচালাম আর আপনি দেখি আমাকে উল্টে ভাব দেখাচ্ছেন।
–কি বলেন ভাব কেন দেখাবো ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।
আমি এখন আসি।
–আরে আরে অপেক্ষা করুন বৃষ্টিতে ভিজে আপনার অবস্থা খারাপ এই অবস্থায় আপনি লোকের মধ্যে যাবেন না।
এই কোর্ট টা পরে নিন।
আমি পাশে থাকা একটা গ্লাসে দেখতে পেলাম সত্যি ও আমার অবস্থা ভিশন খারাপ।
তাই তার দেওয়া কোর্ট টা পরে নিলাম।
–ধন্যবাদ আবারো।
–বাই দ্যা ওয়ে এই বর্ষার দিনে আপনার বর্ষনের সাথেই দেখা হলো।
আমি বর্ষন আপনি?
–আমি ছোঁয়া।
–ছোঁয়া বাহ খুব মিষ্টি নাম আপনার।
–ধন্যবাদ।
–আপনি তো দেখি ধন্যবাদ এর দোকান খুলে রেখেছেন যা বলছি তাতেই ধন্যবাদ।
তা ধন্যবাদ বুঝি ফ্রি তে বিক্রি হয়।
ছেলেটার প্রতিটি কথা আমি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছি বেশ হাস্য রসিক মানুষ সে।
–ও ম্যাম কই গুম হয়ে গেলেন।
–জি আমার মনে হয় এখন বাসায় যাওয়া উচিত।
–হ্যাঁ চলুন আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।
–জি না তার দরকার নেই আমার গাড়ি আছে।
–আচ্ছা তো মিস ছোয়া এয়ারপোর্টে আপনার কি কাজ? তাও এই মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে
ওনার এই প্রশ্ন টা শুনে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিলাম,
–কিছু না সামান্য কাজ আরকি আমি এখন আসি আল্লাহ হাফেজ।
কথাটা বলে আমি গাড়িতে উঠলাম।
–মামা চলো।
–জি ম্যাম।
গাড়ির কাচের ওপাশে ছেলেটাকে বেশ সুন্দর করেই দেখা যাচ্ছে।
পকেটে হাত দিয়ে আমার গাড়ির দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি আর বেশি সময় তাকে না দেখে সোজা হয়ে বসলাম।
বর্তমান,
ছোঁয়া সব কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে চলে গেছে,
এদিকে রোদ তার সমস্ত রাগ একটা বালিশের উপর খাটাচ্ছ বালিস টাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে ।
তাও যেন রাগ কমছে না।
–কি করে পারলে ছোঁয়া আমার জায়গা টা অন্য কাউকে দিতে কি করে পারলে এটা তুমি কেন করলে ছোঁয়া আমার কথাটাকি একটা বারের জন্য ও মনে হয় নি ।
রোদ খুবই ক্লান্ত আজ।
জীবনের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করছে সে।
দাদা জানের পরে যাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসলো সেই ধোঁকা দিলো।
এ ক্লান্তি কোন পানিতে মিটবে না এ ক্লান্তি কোন কিছুতেই মিটবে না এটা চিরস্থায়ী ক্লান্তি।
দু চোখ বুঝে শুধু ছোঁয়া কেই ফিল করে রোদ।
ওর জীবনের মূল্যবান মানুষ গুলো কেন এমন করে ধোঁকা দেয় তা রোদের জানা নেই।
কিন্তু হৃদয়ের যে কষ্ট তা তো ভুলবার মতো নয়।
,
,
,
,
বিকাল গড়িয়ে রাত হলো।
দুই রুমে দু’জন আলাদা হয়ে আগের মতোই শুয়ে আছে,
কিন্তু তফাত একটা ছোঁয়া কাঁদে বর্ষন এর জন্য আর রোদ কাঁদে ছোঁয়ার জন্য।
কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না।
,
,
রোদ উঠে ছোঁয়ার রুমে আসে ছোঁয়াকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে,
কি মিষ্টি একটা বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে আছে সে।
এতো মায়াবী মুখটা দেখে কেউ কি আন্দাজ করতে পারবে এই মেয়েটা এতোটা কষ্ট দিয়েছে রোদ কে।
রোদ ছোঁয়ার পাশে গিয়ে বসে।
চুপচাপ তার ছোঁয়া কে দেখতে থাকে মন ভরে।
কিছু সময় পর ছোঁয়া নড়াচড়া করে ওঠে।
সেটা দেখে রোদ ছোঁয়ার থেকে সরে আসে।
★★★
চোখ খুলতে সামনে রোদকে দেখে ভয় পেয়ে যাই।
কারন সকালের কথা মনে পড়ে,
গলায় এখনো প্রচন্ড ব্যাথা এখনো।
–ছোঁয়া খেতে এসো।
–জি।
কথা না শুনলে না জানি কি করে ওনার সব কথা শুনে চলতে হবে তাই মনে হচ্ছে।
কিছুই করার নেই,
বর্ষনকে বাঁচাতে হলে আমাকে ওনার সব কথা শুনতে হবে,
চলবে,

তবুও তুমি পর্ব-০২

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০২
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
আমার সামনে হাত মুখ এবং পা বাঁধা অবস্থায় পরে আছে বর্ষন।
ওকে ওভাবে দেখে আমার হৃৎস্পন্দন থেমে যাচ্ছে।
আমি রোদের হাত থেকে ছুটার চেষ্টা করি কিন্তু রোদ আমার পেছনের ঘাড় ধরে বসে,
–জান এমন লাফালাফি করছো কেন বর্ষনের কাছে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি।
খুব ভালোবাসো না বর্ষন কে।
কেন ছোঁয়া আমাকে একটু ভালোবাসা যায় নি।
কেন বাসা যায় নি আমাকে একটু ভালো ওকে এতোটা ভালোবাসার অধিকার তোমায় কে দিয়েছে ছোঁয়া।
উনি আমার ঘাড় টাকে পেছন থেকে খুব বিশ্রী ভাবে চেপে ধরেছে । ব্যাথা করছে অনেক।
বুকে কিছুটা সাহস নিয়ে বললাম,
–ওকে ছেড়ে দিন প্লিজ আমি ওর জীবন আপনার কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি।
আমার কথা শুনে উনি আমাকে পেছন থেকে আরও জোরে আমার ঘাড় টা চেপে ধরলো,
–এতো ভালোবাসা কবে থেকে জন্ম মিলো ছোঁয়া।
ওনার কন্ঠ কাঁপছিল।
বুঝতে পারছি তিনি হয় তো কাঁদছেন কিন্তু আমার সে সব দিকে খেয়াল দিলে চলবে না উনি হয় তো বর্ষন কে মেরেই ফেলবে।
বর্ষন মরলে আমার বেঁচে থাকার কোন কারনি থাকবে না।
–রোদ প্লিজ আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি আপনি যা বলবেন আমি তাই করতে রাজি রোদ শুধু ওনাকে ছেড়ে দিন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বললাম।
ভয়ে বুকের মধ্যে উতলা পাতাল শুরু হয়েছে।
উনি আমাকে জোরে ধাক্কা দিলেন ফলে আমি গিয়ে সোজা সামনে মাঠে গিয়ে পরলাম।
উনি সোজা হাঁটতে লাগলেন বর্ষনের দিকে।
আমি উঠতে যাবো কিন্তু এই ভারি শাড়ির জন্য বেঁধে গেলাম।
কাল থেকে এই একি শাড়ি পরে আছি।
আমি তাও কষ্ট করে উঠতে উঠতে দেখি রোদ বর্ষনের কাছে চলে গেছে।
আমার হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেছে
আল্লাহ উনি কি করবে।
হুট করে উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বর্ষনের হাত পা মুখ খুলে দিলো।
বর্ষন অজ্ঞান অবস্থায় আছে।
তাই ওর কোন সোর শব্দ পাচ্ছিলাম না।
–রাফিত.
–জি স্যার।
–ওকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসো।
–জি স্যার।
ওনার লোক গুলো এসে বর্ষন কে নিয়ে গেল।
আমি সেখানে ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
সত্যি উনি বর্ষন কে ছেড়ে দিলো।
আল্লাহ ভাবতেই অবাক লাগছে।
বর্ষন কে ছেড়ে দিয়ে উনি আমার দিকে এগোতে লাগলো।
এবার আমার আরও ভয় হচ্ছে।
কি জানি কি করবে।
উনি এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে ঘরের ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো।
আমি ওনার সাথে ভেতরে গেলাম।
ঘরে এনে সোজা আমাকে বিছনার উপর ছুড়ে মারলো।
–তোমার বর্ষন কে ছেড়ে দিছি।
এখন আর কোন চিন্তা নেই আসা করি।। চিন্তা থাকলেও কিছু করার নেই।।
তবে ভুলে যেও না ওকে মাত্র আমি ছেড়ে দিয়েছি ওকে আবার তুলে আনতে আমার এক সেকেন্ড সময় ও লাগবে না।
সো আমার কথার অবাদ্ধ হবার চেষ্টা করবে না ছোঁয়া তাহলে সেটা বর্ষনের জন্য ভালো হবে না।
কথা গুলো বলে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো।
–শাড়ি পরে গোসল করে নেও।
আমি তোমায় ১০ মিনিটরে মধ্যে নিচে সবার সাথে দেখতে চাই।
কথাটা চলে তিনি হনহন করে চলে গেলেন।
আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হাতে শাড়িটা নিয়ে কিছু সময় বসে রইলাম।
তার পর মনে পরলো সে আমাকে ১০ মিনিটের কথা বলেছে।
তাই ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিলাম।
আমার মতো রোদের ও কেউ নেই।
ওর বাবা মা বলতে শুধু ওর দাদা আছেন।
আমি এ বাড়িতে আগেও এসেছি তখন দাদা আমাকে খুব আদোর দিতেন।
ওনার দাদা মানুষ টা খুবই ভালো।
ছোট থেকে রোদ কে মা বাবার অপূর্ণতা বুঝতে দেয় নি।
এতো বড়ো হয়ে এতো কিছু অর্জন এর পেছনে রোদের দাদার সব থেকে বড়ো অবদান।
নাতির কোন চাওয়া কখনো অপূর্ণ রাখে নি আজিজ চৌধুরী।
তারি ফল সরুপ আমার সাথে হওয়া অবিচার কেও তিনি কোন নাম দেয় নি।
আমাকে সব সময় বলে,
রোদ তোকে খুব ভালোবাসেরে মা।
ও সত্যি তোকে ভিশন ভালোবাসে ওর কাজে কষ্ট পাস না।। ও এতোটাই ভালোবাসে তোকে যে বার বার হারানোর ভয় পায়।
তাই না বুঝে কষ্ট দিয়ে ফেলে।
সব কিছু ভাবছিলাম আর চুল আঁচাচ্ছিলাম।
চুল থেকে চিরুনি টা সরিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে নিলম এক বার।
তার পর নিচে চলে এলাম।
নিচে রোদ আর দাদাভাই বসে আছেন ডাইনিং টেবিলে।
আমাকে দেখে রোদ হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
–সুইটহার্ট এতো লেট কেন করলে এসো বসো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আমার হাত ধরে বলল।
কিন্তু উনি এতো ভালো ব্যাবহার করছেন কেন বুঝলাম না।
–দাদা জান যেন আমাদের ভেতরের কোন কথার সাথে সংযুক্ত না হয়।
উনি সংযুক্ত হলে তোমার বর্ষন সহ তোমায় পৃথিবীর সাথে সংযোগ বিচ্ছিন করে দিবো।
আমার কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা গুলো বলে হেসে দিলেন,
–কি হলো জান এসো।
আমি মলিন হেঁসে তার সাথে তার পাশের চেয়ারে বসলা,
–ছোঁয়া কেমন আছো?
–আলহামদুলিল্লাহ দাদা তুমি কেমন আছো?
–তোদের এভাবে খুশি দেখে আমি ভিশন খুশি।
শেষ বয়সে আমি না থাকা কালিন আমার নাতি টার খেয়াল রাখতে যে একটা বউ এলো এটাই অনেক।
–উফ দাদাজান তুমি আবার শুরু করলে।
এসব বললে কিন্তু আমি তোমার সাথে কথাই বলব না।।
অভিমানী শুরে কথাটা বললেন রোদ।
আমি তার দিকে চেয়ে আছি।।
–ছোঁয়া খাবার খাও।
দাদার কথায় ধ্যান আসলো।
সবাই মিলে খাবার শেষ করলাম।
আমি কিছুই খেতে পারছিলাম না৷। মনে হচ্ছিল গলায় বেধে যাচ্ছে।
বার বার বর্ষনের কথা মনে পড়ে বুকের মধ্যে কেমন কেঁপে উছিল।
ওকে কি সত্যি রেহায় দিয়েছে নাকি আমাকে শুধু শুধুয়ই বলল।
কিছুই বুঝতে পারছি না।
কি সত্যি কি মিথ্যা।
খাবার শেষ করে রুমে চলে এলাম।
বিছনায় বসে বসে ভাবছি সত্যি কি বর্ষন কে রেহায় দিয়েছে উনি৷।
হটাৎ কারোর পায়ের শব্দে ধ্যান ফিলো।
সামনে তাকিয়ে দেখি রোদ দাঁড়িয়ে।
আমি মাথা নিচু করে নিলাম,
উনি আমার সামনে বসলেন।
আমার মুখটা উচু করে ধরলেন,
–মায়াবী এই মেয়েটা শুধু আমার ছিল তাই না।
আমার সব স্বপ্ন আমার সব গোছালো সভাব সব তার জন্য ছিল।
সব গোছালো সভাব কে অগোছালো করে সব স্বপ্ন গুলোকে ভেঙে দিয়ে মায়াবতী আমার হৃদয় টাকে দু’টো টুকরে বিভক্ত করে দিলে।
কি করে পারলে তুমি এমনটা করলে ছোঁয়া।
খুবই ধির কন্ঠে সে কথা গুলে বললো।
তার বলা প্রতিটি কথা আমার ভেতরে উতলা দিয়ে দিচ্ছে।
আমাকে কিছু না বলতে দেখে হটাৎ আমার গলা চেপে ধরল খুব শক্ত করে।
হুট করে এমন হওয়াতে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম৷
–কপন খেললি আমাকে নিয়ে ছোঁয়া কেন আমার জায়গা অন্য কাউকে দিলি।। তুই এই সাহস পেলি কোথায় ছোঁয়া।
আমাকে খুব শক্ত করে ধরেছে রোদ।
আমার দম বন্ধ হবার উপক্রম।
কিন্তু তার সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই সে তার মতো করে আমাকে আরও শক্ত করে চেপে ধরতেছে।
চলবে,

তবুও তুমি পর্ব-০১

0

#তবুও_তুমি💖
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০১

আমার বাসর ঘরে বধূ বেশে দাঁড়িয়ে আছি সামনে আমার আর বর্ষনের কিছু ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার সদ্য বিবাহ করা স্বামীর(রোদ) মুখ লাল হয়ে গেছে রেগে এটা দেখে।
আমার হাত পা সমানে কাঁপছে।
বাসর ঘরে এ কেমন উপহার পেলাম আমি।
রোদ আর সহ্য না করতে পেরে সামনে থাকা টিভি আমার দিকে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।
হাতের কাছে থাকা ছবির ফ্রেম টা তার উপর।
আমি কানে হাত দিয়ে পিছিয়ে এলাম।
তখনি আমার গালে তীব্র ভাবে আঘাত পড়লো।
আমি ছিটকে পড়লাম,
–যেখানে কোন ছেলের সাথে মেলা মেশা বন্ধ ছিল সেখানে অন্য একটা ছেলের সাথে এতো ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের সাহস কি করে হলো।
(চিৎকার করে)
সাথে আমার গলা চেপে ধরলো।
তার চিৎকার এ আমার হৃদয় কেঁপে উঠলো।
আমাকে দেখে রোদ আমার হাত ধরে তুলে তার সামনে দাঁড় করালো,
–কি হলো বল উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
বল তোর মুখ বন্ধ কেন?
কিসর জন্য এখন তোর মুখ বন্ধ?
(চিৎকার করে)
আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে মুখে কোন কথা নেই। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
এই মনে হয় গেলাম আমি।
তার প্রতিটা কথায় আমি বার বার কেঁপে উঠছি।
–কাঁদছিস কেন? এই কাঁদছিস কেন?
তুই তো কাঁদার জন্য এমন করিস নি।
তবে তুই কাঁদছিস কেন তোর তো সুখের সময় গেছে না ওর সাথে।
আমাকে ছেড়ে দিলো।
আবারও চিৎকার করে কথাটা বলে পাশে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা ভেঙে দিলো । আবারও বিকট শব্দে আমি আমার কান চেপে ধরলাম
এবার রোদের হাত অনেকটা কেটে গেল।
ওর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
–আমার অনুপস্থিতিতে তোর পাখনা গজিয়েছিল না রে।
তাই এসব করলি। সমস্যা নেই তোর পাখনা কাটার ব্যাবস্থা আমি করছি, তুই চিন্তা করিস না আমাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তির জায়গা আমি হতে দিবো না।
কথাটা বলে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও উল্টো দিক ফিরে বাইরে চলে গেল।
ওকে থামানোর মত অবস্থা আমার নেই।
আমি ভাঙা কাচের টুকরোর মধ্যে বসে কাঁদতে লাগলাম।
এগুলো কি হলো আমার সাথে।
কিছই বুঝতে পারছি না এই ভিডিও টা কে দিলো।
রোদ নিশ্চিত সব শেষ করে দিবে।
ও সব তছনছ্ করে দিবে।
ওর ভয়ানক রুপের কথা ভাবলেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে।
আমি ছোঁয়া, পুরো নাম ‘ছোঁয়াক্ত ছিন্তি’।
অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি।
আমার মা বাবা নেই এতিম আমি।
একটা আন্টির বাসায় বড়ো হয়েছি।
সময়ের সাথে সাথে আমার দায়িত্ব ভদ্রমহিলা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে সেও না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
তার বাড়িতেই থাকতাম আমি।
আমার সামনে যে ছিল আমার স্বামী “রোদ চৌধুরী “। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ।
উনি আমার জীবনে এসেছে আরও ৫ বছর আগে যখন আমি ক্লাস ১০ এ পড়ি।
তখন থেকে আমার জীবনে আমার বাবা আর সে বাদে কোন ছেলের অস্তিত্ব আসে নেই বললে চলে।
গত ১ বছর সে একটা কাজে বাইরে ছিলেন।
তার দেশে আসার ১ দিন পরই হুট করে আমাকে ১ দিনের মধ্যে বিয়ে করে তার ঘরে তুলে এ বিষয়ে আমার কোন মত জানার প্রয়োজন কেউ মনে করে নি।
ধরে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিলো।
আমার আর বর্ষনের সম্পর্ক টা কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
উনি ১ বছরের জন্য বাইরে চলে গেলে কি করে কি হয়ে গেল সত্যি করে আমি এক বারও ভাবি নি যে উনি জানলে কি হবে।
একে তো ছিল পাগলের মতো এখন আরও হলো।
উফ আর কিছু ভাবতে পারছি না সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
,
,
,
,
নির্জন রাস্তায় বিয়ের সাজের সেরোয়ানি টা পরে বহু দুর ড্রাইভ করেছে ফুল স্প্রিডে রোদ।
একটা সময় গাড়িটা থামিয়ে বাইরে নেমে আসে।
মিষ্টি শীতল বাতাস বইছে।
এক দম নির্জন একটা পরিবেশ।
ঝিঝি করে ডাকছে ঝিঝি পোকা গুলো।
রোদ বিকট এক চিৎকার দেয় ভেতরের আগুন কোনোমতে বের হতে চাচ্ছে না,
–কেন করলে ছোঁয়া এমন? কেন করলে ছোঁয়া? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি ভালোবেসেছিলাম ছোঁয়া।
বলেছিলাম কোন তৃতীয় ব্যাক্তির আমাদের মধ্যে জায়গা হবে না।
তুমি তাও আমাদের মধ্যে অন্য কাউকে নিয়ে এলে।
কেন করলে ছোঁয়া ভীষণ ভালোবাসি তো তোমায়।
তুমি কেন বুঝো না।
রোদ মাটিতে হাঁটু মুড়ে কান্না করছে আর কথাগুলো বলছে।
সত্যি সব কিছু ধোঁয়াশা লাগছে তার কাছে।
কেমন সব কিছু অন্ধকার।
ভালোবাসা থেকে এমন প্রতারণা সে নিতে পারছে না।
,
,
,
সকালে,
ভাঙা কাঁচ আর এলোমেলো ঘরের মধ্যে নিজেকে এলোমেলো ভাবে আবিষ্কার করে ছোঁয়া।
গলাটা ভিশন ব্যাথা হয়ে আছে।
ধিরে ধিরে খাট ধরে উঠার চেষ্টা করে।
খুব কষ্টে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় দেখতে পায় গালে তার ৫ টা আঙুলের দাগ স্পষ্ট।
এগুলা দেখে ছোঁয়ার ভিশন কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু বলার কোন অবস্থা নাই।
ছোঁয়ার কথা শুনবার মতো কেউ নেই।
পৃথিবীতে ছোঁয়ার যে আপন বলতে কেউ নেই।
আচ্ছা যদি কাল রোদের জায়গায় বর্ষন থাকতো তবে কি বর্ষন এটা করত ৷
না বর্ষন আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে।
ও কখনো এমন করত না।
ছোঁয়া আবার কথা গুলো ভেবে কান্না শুরু করে।
হটাৎ তার রুমে ঠক ঠক শব্দ শোনা যায়,
ছোঁয়া নিজেকে সামলে দরজা খোলে,
সামনে এক জন সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে
–ম্যাম, স্যার এই শাড়ি পরে রেডি হতে বলেছে।
ছোয়া মহিলাটার হাতে একটা শাড়ি দেখতে পায়।
একটা নীল রঙা শাড়ি।
ছোঁয়া সেটা সার্ভেন্ট এর হাত থেকে নিতে সার্ভেন্ট চলে যায়।
ছোঁয়া বেশ ভালোই জানে এখন ছোঁয়া জিদ করে শাড়িটা না পরলে হয়তো আরও খারাপ কিছু হবে।
তাই চুপচাপ শাড়িটা পড়ে গোসল করে নেয়।
ঘরের ভেতরের অবস্থা দেখলে ছোঁয়ার হৃদয় বার বার কেঁপে উঠছে।
কাল রাতের ভয়ানক ঘটনার কথা ছোঁয়ার মনে পড়ছে বার বার ।
ছোয়া শাড়িটা পরে আয়নার সামনে রাখা কিছু গয়না পরে নেই।
আর তখন সেই সময় হাজির হয় রোদ।
রোদকে দেখে অন্তর আত্মা ভয়ে কেঁপে ওঠে।
ও ঠিক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদ।
আমি তাকে দেখে ফ্রিজ হয়ে গেছি।
কিছুক্ষণ পর ও তাকানো বাদ দিয়ে এগোতে শুরু করলো,
এবার ওর এগোনো দেখে আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম।
আমার হাত পা কাঁপতে আছে।
হটাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে ও আমার চোখে একটা কালো কাপড় বেঁধে দিলেন।
কি করতে চাচ্ছে ও আমি তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
কাল রাতে ছিল কই।
যাক কাল রাতে কোথায় ছিল সেটা তো জানা যাবে না কিন্তু এখন ও কি করবে।
আমার ভাবনায় অবসান ঘটিয়ে সে আমায় কোলে তুলে নিলো।
এবার মনে হয় জান যায় যায় অবস্থা।
কোথায় নিচ্ছে আমাকে আর কেন।
কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে।
আমি বুঝতে পারছি সে আমাকে কোলে করেই হাঁটতে আছে আমি চুপচাপ তার শার্ট খামচে ধরে রেখেছি।
কেন জানি না ভয় করছে অনেক।
অনেকটা সময় পর মনে হলো সে থেমেছে,
আমাকে নামিয়ে ও দিলেন।
তার পর আমার পেছনে এসে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
–রেডি তো সারপ্রাইজ এর জন্য।
ওনার এমন কথা শুনে সত্যি মনে হচ্ছে এবার বোধহয় আমি আর থাকছি না।
আমাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে সে আমার চোখ থেকে কালো পট্টি টা খুলে দিলো।
সামনে তাকিয়ে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল,

চলবে,

তৃণশয্যা পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৯তম_পর্ব{শেষ পর্ব}

থরথর করে কেঁপে উঠে ভু-খন্ড।উপর থেকে পড়তে শুরু করে মানুষের বৃষ্টি।সেই তালিকায় নাম থাকে আদনান ও চারু দুইজনেরই।উপর থেকে নিচে পড়ে‌ যায় দুজনেই।নিচে পড়ার সাথে সাথে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে তারা।

৩২.

দীর্ঘ ১০দিন পর আদনান চোখ খুললেও চারু চোখ চোখ খোলেনি।আদনান চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে চারদিকটা।তার পাশে রিমি আর তার মা-বাবা বসে আছে।চারু পাশের বেডে শুয়ে আছে নিথর হয়ে।

ছেলেকে চোখ খুলতে দেখে হালিম সাহেব ও রাহিনা বেগমের মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।রাহিনা বেগম কান্না করতে করতে আদনানকে জড়িয়ে ধরেন।রিমি গিয়ে বসে পড়ে চারুর পাশে।আদনান উঠে বসার চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়।শরিরের মধ্যে প্রচুর ব্যাথা।আদনানকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেও আদনান কো‌নো কথার উত্তর না দিয়ে চুপ‌ করে শুয়ে থাকে।সে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।চারুর যেন কিছু না হয়।এর মাঝে ডাক্তার এসে আদনানকে ঔষধ দিয়ে গেছে এবং চারুকে দেখে গেছে।ডাক্তারটাকে দেখে আদনান বুঝতে পারে তারা এখনো আমেরিকাতেই আছে।

আদনান এবার চোখ খুলে তার মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ তোমাদের কে খবর দিল? ‘

হালিম সাহেব মুখের গম্ভীর ভাব ধরে রেখে বলে,

—‘ ইয়ট ম্যানেজমেন্ট।যারা যারা পাহাড়ে উঠেছে তাদের সবারই ক্ষতি হয়েছে।৮জন নাকি মারাও গেছে। ‘

আদনান চোখ দুটো বন্ধ করে বলে,

—‘ হঠাৎ ভুমিকম্প হওয়ার কারনে এতকিছু হয়েছে,না হলে কিছুই হত না। ‘

এই মুহুর্তে গোঙ্গানির আওয়াজ পায় আদনান।মুহুর্তের মধ্যে সে তার চোখ জোড়া খুলে ফেলে।মাথা ঘুড়িয়ে তাকায় চারুর দিকে।চারু চোখ খুলে‌ আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের মধ্যে চোখা-চোখি হয়ে যায়।দুজনের চোখের কোণেই পানি দেখা যায়।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে থাকে।তাকে থামানোর চেষ্টা করে রিমি ও তার মা।সাথে যোগ দেয় হালিম সাহেবও।হালিম সাহেব ঘোষণা করেন,এরা দুজনই সুস্থ হলে আরো কয়েকটা দিন ছুটি কাটিয়ে চলে যাব আমরা।

৩৩.

দেখতে দেখতে কেটে যায় ৫দিন।মোটা-মুটি সুস্থ হয়ে ওঠে আদনান ও চারু।ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে দুজনেই।হালিম সাহেব ও রাহিনা বেগমের মাথা থেকে অনেক বড় একটা চিন্তা নেমে যায়।রিমিতো এই ভেবে খুশি যে তারা আরো কয়েকটা দিন আমেরিকাতে থাকছে।চারু আর আদনানও ‌খুব খুশি।তারা দুজন দুজনকে পু‌নরায় ফিরে পেয়েছে।

পরেরদিন সকালেই হালিম সাহেব জানিয়ে দেন সমস্ত দিনের ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা।শুরুতেই তারা রেষ্টুয়েন্টে ব্রেকফাষ্ট করবে,তারপর ঘোরাঘুরি শুরু করবে।হোটেলে আরো দুটো রুম ভাড়া নেয়া হয়েছে।একটা রিমি আর তার মা।একটাতে হালিম সাহেব।আর আগের রুমেই রয়েছে আদনান ও চারু।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই বেড়িয়ে পরে রেষ্টুয়েন্টের উদ্দেশ্যে।রেষ্টুয়েন্টে গিয়ে খাবার অর্ডার করে হালিম সাহেব।পেটের মধ্যে ক্ষিধা থাকার কারনে সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া শেষ করে।খাওয়া শেষ করে তারা সবাই বের হয় রেষ্টুয়েন্ট থেকে।

হালিম সাহেব এর আগে আরো কয়েকবার এসেছিলেন এইখানে।অবশ্যই অফিস থেকে।তাই এখানকার অনেক জায়গাই হালিম সাহেবের চেনা।তাই তিনি সবাইকে নিয়ে রওনা দেন ম্যাজিক মাউনটাইনে।সেখানে অনেক বেড়ানোর জায়গা আছে।

একপর্যায়ে গাড়ি এসে তাদের নামিয়ে দেয় ম্যাজিক মাউনটাইনে।টিকিট কেটে এক এক করে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই।ভিন্ন ভিন্ন রাইড দেখে সেখানে উঠার ইচ্ছাপ্রকাশ করে চারু ও রিমি দুজনে।এক এক করে প্রায় সব রাইডেই উঠে হালিম সাহেবের পরিবার।

একপর্যায়ে সূর্য কিরন দিতে শুরু করে মাথার ঠিক উপর থেকে।সবার পেটে ক্ষুধার ঘন্টা বেজে ওঠে টং টং করে।হালিম সাহেব সবাইকে নিয়ে সেখানকার একটা ভালো‌ রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশ করেন।কয়েকবার এখানে আসার খাতিরে এখানকার একটা বাঙ্গালি ম্যাচিয়ারের সাথে ভাব জমে ওঠে হালিম সাহেবের।সেই লোকটা সবাইকে খাবার এনে দেয়।সবাই খাওয়া শেষ করে বের হয়ে আসে।

বাহিরে বের হয়ে হঠাৎ করে আদনান বলে ওঠে,

—‘ বাবা,আমি আর চারু ওদিকে যাই। ‘

হালিম সাহেব ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলেন,
—‘ যাও ‘

রিমি চারুর দিকে তাকিয়ে তার কানে কানে বলে,
—‘ কি ব্যাপার? ‘
রিমির কথায় চারু একটু একটু লজ্জা পায়।আদনান চারুর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে অন্যদিকে।চারু আদনানের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

—‘ এদিকে কেন আসতে চাইলেন? ‘

আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,

—‘ এমনি।আমার আর হাটতে ইচ্ছা করতেছে না।আসার সময় এদিকে একটা পার্ক দেখেছি।সেখানে গিয়ে বসবো‌ একটু। ‘

এই বলে চারুর হাত ধরে আবার হাটতে শুরু করে আদনান।চারুও আদনানের সাথে পা মিলিয়ে চলতে শুরু করে।একপর্যায়ে তারা এসে পৌছায় পার্কটাতে।চারু অবাক হয়ে পার্কটার দিকে তাকায়।এত সুন্দর জায়গা সে বাবা জন্মে,মায়ের জন্মে,কারো জন্মেই দেখেনি।কি সুন্দর সবুজ ঘাস?একেকটা করে ঘাসের উচ্চতা প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি।

আদনান চারুকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তাদের মতো‌ আরো অনেকেই বসে রয়েছে সেখানে।আদনান চারুকে নিয়ে বসে একটা গাছের নিচে।

চারু অবাক হয়ে চারদিকে তাকাতে থাকে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ সেদিন যদি ছেলেটাকে সাপের ভয় না দেখাতি তাহলে কিন্তু পালাতো ‌না ছেলেটা।আর আমিও তোকে পেতাম না। ‘

হঠাৎ আদনানের মুখে সাপের কথা শুনে খানিকটা চমকে যায় চারু।আদনান কিভাবে জানলো?আদনান যদি তার বাবা-মাকে বলে দেয় শেষ।চারু মনের কথা যেন বুঝতে পারে আদনান।তাই চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ ভয় নেই,ভয় নেই।বলবো‌ না। ‘

চারু এবার দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয়।আদনান চারুর কোলে‌ মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।চারু আদনানের মাথাটা নিজের কোলের উপর নিয়ে আদনানের চুলগুলোতে বিলি কাটতে থাকে।একপর্যায়ে চারু আসতে আসতে আদনানের দিকে ঝুকে পড়ে।আদনান এক টানে চারুকে নিজের পাশে শুইয়ে দেয়।

দুজনে তাকায় উপরে থাকা আকাশটার দিকে।সম্পুর্ন তৃণভূমিকে ঘিরে রয়েছে নীল আকাশটা।আদনান চারুর দিকে তাকায়।চারুও তাকায় আদনানের দিকে।চারু আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া,সারাজীবন যেন এরকম একসাথে শুয়ে থাকতে পারি। ‘

আদনান চারুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে,
—‘ এরকম ঘাসের উপর শুয়ে থাকার ইচ্ছা আমার নেই।আমি বিছানায় থাকতে চাই। ‘
চারু হেসে বলে,–‘ কিন্তু আমি এই তৃণের উপরে শয্যা অবস্থায় থাকতে চাই।আই মিন তৃণশয্যা।ঘাসের উপরে থাকতে চাই আমি। ‘

আদনান জোর প্রতিবাদ করতে যায় এই কথার।কিন্তু ততক্ষনে চারু নিজের ঠোট দিয়ে আটকে ধরে আদনানের ঠোট।কোনো‌ কথা বলার সুযোগ দেয় না আদনানকে…

সমাপ্ত.

তৃণশয্যা পর্ব-১৮

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৮তম_পর্ব

চারু লোকটার হাত থেকে একটা কাগজ তুলে নেয় নিজের দখলে।তারপর কাগজটা খুলে দেখে ইংরেজিতে কিছু লেখা।চারু আস্তে আস্তে ইংরেজিটা পড়তে শুরু করে।উপস্থিত সবাই তার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আদনানও মাথা এগিয়ে দিয়ে চারুর হাতের কাগজটা পড়তে শুরু করে।কাগজে যা লেখা তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়,

‘ সাবধান!সামনে অনেক বড় বিপদ আসতেছে।প্রাণহানি হতে পারে। ‘

চারু মাথা তুলে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান চারুর দিকে তাকায়,চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের মধ্যে।চারুর মনের ভিতরে ভয়ের বন্যা বইছে।আদনান বিষয়টাকে উড়িয়ে দেয়ার ভান করে চারুকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।চারু বার বার আদনানের দিকে দেখছে।অজানা এক ভয় কাজ করছে তার ভিতরে।লোকটার কথাগুলো যদি সত্ত্যি হয় তখন।চারু ভয় ভয় গলায় আদনানকে বলে,

—‘ আজকে আর না ঘুরি।চলেন হোটেলে যাই! ‘

আদনান চারুর কথা শুনে মাথা ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকায়।চারুর চোখে-মুখে ভয় দেখে আদনান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

—‘ এত ভয়ের কিছু নেই।এসব লোক টাকা কামানোর জন্য এরকম করে।তুই অযাথা ভয় পাচ্ছিস।ওকে আজ ঘোরাঘুরি করবো না।তবে কালকে অবশ্যই করবো। ‘

এই বলে আদনান চারুকে নিয়ে হোটেলের পথে রওনা হয়।চারু মনে আল্লাহকে ডাকছে যাতে লোকটার লেখা কাগজটার কথা গুলো সত্ত্যি না হয়।একপর্যায়ে দুজনে হোটেলের ভিতরে নিজের রুমে প্রবেশ করে।আদনান চারুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।চারু বিছানায় বসে ভাবতে থাকে অনেককিছু।তাদের আর এখানে থাকা ঠিক হবে না।কিন্তু আদনান যে এসব কথা শুনবে না সেটা ঢের আন্দাজ করতে পারছে চারু।

আদনান বাহিরে বের হয় চারুকে ফ্রেস হতে বলে।চারু ওয়াসরুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হতে।চারু ফ্রেস হয়ে বের হয়।সে বের হয়ে দেখে আদনান কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে বসে আছে।চারু বুঝতে পারে সে ফ্রেস হওয়ার সময় আদনান এসব আনিয়েছে।চারু গিয়ে আদনানের সঙ্গে বসে পড়ে।পেটের মধ্যে বেশ কিছুটা ক্ষিধে থাকার কারনে দুজনে বেশ তৃপ্তি সহকারে খাবারগুলো খায়।তারপর দুজনে শুয়ে পড়ে কিছুটা জিড়িয়ে নেয়ার জন্য।চারু আদনানের বুকের মধ্যে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সেই কথাটা।

তারা যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন সুর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে যায় যায় ভাব।আদনান উঠে দেখে চারু বিছানার উপর বসে গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে?আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।সে ফ্রেস হয়ে বাহিরে এসে দেখে চারু তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে পাসওয়ার্ড খোলার ব্যার্থ চেষ্টা করছে।চারু আদনানকে দেখে ফোনটা বিছানার উপর রেখে দেয়।

৩০.

পরেরদিন সকালবেলা থেকেই চারুর মনের ভয়টা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।আদনান চারুকে নিয়ে বের হয় হোটেল থেকে।তারপর দুজনে মিলে একটা রেষ্টুয়েন্টে বসে জমিয়ে ব্রেকফাষ্ট করে নেয়।ব্রেকফাষ্ট করার সময় দুজনে বাসায় কথা বলেছে।ব্রেকফাষ্ট করে তারা রেষ্টুয়েন্ট থেকে বের হয়।আদনান চারদিকে তাকাতে থাকে।এক জায়গায় গিয়ে তার চোখ আটকে যায়।কিছু লোক একটা টেবিলকে ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে।আদনান টেবিলের সামনে খুটিতে গেথে দেয়া সাইনবোর্ডটা পড়ে জানতে পারে,এখানে ইয়টে করে ভ্রমনের টিকিট বিক্রি হয়।

আদনান চারুকে বললে চারু প্রথমে না করে।পরবর্তিতে আদনানের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে রাজি হয়ে যায় চারু।চারু রাজি হয়েছে দেখে টপাটপ দুটা টিকিট কেটে ফেলে আদনান।দুজনে কিছু পপকর্নের প্যাকেট নিয়ে ইয়টে উঠে পড়ে।

তাদের মতো আরো অনেক মানুষে ভরে গেছে ফ্লাইং এঞ্জেল ইয়টটা।ইয়টের চারদিকে বিচরণ করছে অনেক লোক।তবে বেশিরভাগই কাপল।একপর্যায়ে বেজে ওঠে ইয়টের ভিতরে থাকা সাউন্ড সিষ্টেম।সমস্ত যাত্রীদের উদ্দেশ্য কথা বলে ওঠে একটা পুরুষ কণ্ঠ।পুরুষ মানুষটার কথা চারু না বুঝলেও আদনান বুঝতে পারে।লোকটা ইংরেজিতে যা বলছে তার বাংলা অ‌নুবাদ করলে দাঁড়ায়,

—‘ সম্মানিত সুধি,সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।আমাদের ফ্লাইং এঞ্জেল ইয়টটা নিয়ে আমরা আজকে একটা দ্বীপে যাব।দ্বীপটাতে কম বেশি সবই রয়েছে।রয়েছে বড় একটা পাহাড়।সেখানে আমরা ৫ঘন্টা সময় থাকবো।তারপর নিজ নিজ দায়িত্বে সবাই এসে ইয়টে উঠে পড়বেন। ‘

এই ঘোষণাটা দেয়ার পর ইয়টটা চলতে শুরু করে।দক্ষ হাতে ইয়টটা চালাচ্ছে অভিজ্ঞ ৩-৪জন নাবিক।তারা জানায় দ্বীপটাতে যেতে মাত্র ৩০মিনিট সময় লাগে।

অথ:এব ৩০মিনিট পর ইয়ট ভেড়ানো হয় দ্বীপের কাছে।এক এক করে নামতে থাকে ইয়টের লোকগুলো।আদনান চারুকে নিয়ে নেমে আসে ইয়ট থেকে।চারুর মন থেকে কিছুক্ষনের জন্য ভয়টা চলে গেছে।আদনান চারুকে নিয়ে প্রথমে চারদিকটা ঘুড়ে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।তারপর সব শেষে তারা পাহাড়ে উঠবে।

প্লান অনুযায়ী হতে থাকে সব কাজ।আদনান আর চারু দুজনে হাতে হাত ধরে ঘুরতে থাকে দ্বীপের চারদিকটা।তাদের মতো আরো অনেক দ্বীপের চারদিকটা ঘুড়ে দেখছে।

দেখতে দেখতে তাদের ৫ঘন্টা সময়ের ৩ঘন্টা চলে যায়।আদনান চারু দুজনে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।আদনান দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষনা করে ১০মিনিট বিশ্রান নিয়ে পাহারে ওঠা শুরু করবে।আদনানের ঘোষনার সাথে সহমত হয় চারু।দুজনে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসে পড়ে একটা গাছের নিচে।

১০মিনিট পর,
আদনান উঠে দাঁড়ায়।চারুও আদনানের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে হাটতে শুরু করে পাহারের দিকে।তাদের মতো আরো‌ অনেকে পাহাড়ে উঠছে।আদনান আর‌ চারু দুজনে উঠতে শুরু করে।চারু আদনানের বামহাত ধরে আছে নিজের ডান হাত দিয়ে।আদনান আগে আগে উঠছে আর চারু তার পিছন পিছন উঠছে।অনেকে আবার পাহাড়ের মধ্যে বসে আছে।আদনান আর‌ চারু দুজনে এক জায়গায় বসে খানিকটা জিড়িয়ে নিতে।

দুজনে ৫মিনিট জিড়িয়ে আবার উঠতে শুরু করে।জীবনে এই প্রথম এত বড় পাহাড়ে উঠছে চারু।এর আগেও বাংলাদেশে অবস্থিত পাহাড়পুরে ঘুরতে গিয়ে সেখানে উঠেছিল চারু,তবে সেই পাহাড় আর এই পাহাড়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে।

একপর্যায়ে তারা দুজনে উঠে পড়ে পাহাড়ের চুড়ায়।সেখানে আরো কয়েকজোড়া দম্পত্তি দাঁড়িয়ে আছে।আদনান তার মোবাইল বের করে চারদিকের ছবি তুলছে থাকে।চারু অবাক হয়ে চারদিকটা দেখছে।এত সুন্দর দৃশ্য সে জীবনেও দেখেনি।আদনান চারুকে জড়িয়ে ধরে পিক তুলে।

পাহাড়ের উপরে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর উপরে অবস্থান কারীরা সবাই নিচে নামতে‌ শুরু করে।চারু আর আদনানও সবার সাথে নামতে শুরু করে।

৩১.

হঠাৎ থরথর করে কেঁপে ওঠে পাহাড়টা,মনে হয় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।উপরে অবস্থান কারীরা সবাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আস্তে আস্তে সব ঘোলাটে দেখছে চারু আর আদনান দুজনে।পাহাড় থেকে ধপ ধপ করে পড়ছে মানুষগুলো।একপর্যায়ে আদনান চারু দুজনে ধপ করে নিচে পড়ে যায়।

চলবে.

তৃণশয্যা পর্ব-১৭

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৭তম_পর্ব

আদনান চারুর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।চারু কয়েকবার আদনানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও‌ প্রতিবারই ব্যার্থ হয় সে।আদনান নিশ্চুপ‌ হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকে।চারু এবার কান্না করতে করতে সোফায় বসে পড়ে।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে।কত বড় ভুল‌ করেছে সে।সত্ত্যি একটা ইডিয়েট আমি।এভাবে নিজে নিজেকে গালি দিতে থাকে চারু।

একপর্যায়ে চারু তার সামনে থাকা কাচের গ্লাসটা মেঝেতে ফেলে দেয়।হঠাৎ এরকম শব্দে মাথা তুলে পিছনে তাকায় আদনান।চারু একটা কাচের টুকরো তুলে নিজের হাত কাটছে।আদনান সেদিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।চারু ছলছল ‌চোখে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান আস্তে করে চারুর হাত থেকে কাচের টুকরোটা নেয়।চারু কিছু বলতে ধরলে আদনান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

—‘ কিছু বলা লাগবে না।নিজের ক্ষতি করে কি‌ লাভ? ‘

চারু ছলছল‌ চোখে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ দেখেন আমার কোনো দোষ নাই।আমি তাকে…’

চারুর কথাটার ইতি টানতে দেয় না আদনান।সে চারুর কোনো ‌কথা না শুনে বিছানায় গিয়ে ধপ‌ করে শুয়ে পড়ে।চারু নিজের রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।রক্ত দিয়ে হাতের মধ্যে লেখে আদনান।তারপর কান্না করতে করতে সোফায় সুয়ে পড়ে চারু।ঘুমিয়ে যায় সেখানেই।

এদিকে আদনান বিছানায় শুয়ে আছে কিন্তু ঘুম আসছে না চোখে।আজকে এই দিনটা সে আলাদা ভাবে উদযাপন করতে চায়।আজকের দিনটাতে সে একজনকে আপন করে নিবে।একেবারে নিজের করে নিবে।

আদনান বারবার মোবাইলের ঘড়ি দেখতে‌ থাকে।অস্থির হয়ে আছে সে,কখন ১২টা বাজবে।একপর্যায়ে তার অপেক্ষার সময় ফুরিয়ে যায়।ঘড়ি জানান দেয় ১২টা বেজে গেছে।আদনান লাফ‌ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।আস্তে করে সে চারুর চোখটা বেধে দেয়।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন চারু এসবের কিছুই‌ বুঝতে পারেনা।আদনান আস্তে করে চারুকে কোলে তুলে নেয়।চারু একবার চোখের পাতা খুলে সব অন্ধকার দেখে আবার চোখের পাতা বন্ধ করে নেয়।চারু ঘুমের ছায়াতলে থাকার কারনে বিষয়টা নিয়ে তত মাথা ঘামায় না।আদনান লিফ্টে করে সোজা উঠে যায় হোটেলের ছাদে।এবার সে চারুকে দাঁড় করিয়ে দেয়।

মুহুর্তের মধ্যে চারুর চোখের ঘুম ছুটে যায়।চারু একটান দিয়ে খুলে ফেলে নিজের চোখের বাধন।পটা-পট ফুটে ওঠে লাল-নীল-হলুদ রংয়ের ফটকা।জ্বলে নানা রংয়ের লাইট।চারু মাথা তুলে উপরে তাকায়।জোৎনা রাতের চাঁদের আলো এসে পড়ছে তার গায়ে।এমন সময় কেউ একজন বসে পড়ে তার সামনে।হাতে একটা ফুলের তোড়া।চারু হালকা আলোয় আদনানকে বেশ ভালোভাবেই চিনতে পারে।

আদনান নিজের হাতে থাকা ফুলের তোড়াটা চারুর দিকে‌ এগিয়ে দিয়ে বলে,

—‘ প্রিয়তমা,

স্রষ্টার সৃষ্টি এই ধরনীতে সবাই কিছুদিনের জন্য এসেছে।একদিন সবাই‌ চলে যাবে সবার মায়া ত্যাগ করে।কিছুক্ষনের এই সময়ে সবাই চায় আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে থাকতে।আমি ব্যাতিক্রম কেউ নই।আমি সারাটা জীবন আনন্দ-উল্লাস করে কাটাতে চাই,তবে একা নয়।আমি আমার সারাজীবনের সাথি হিসেবে তোমাকে চাই।নিচের এই সমুদ্র ঢেউ যেমন আজীবন থাকবে,তেমনি তুমি আজীবন আমার রিদয়ে থাকবে।পুর্ব আকাশে সুর্য ওঠে এটা যেমন সত্য,তেমনি আমার ভালোবাসাও সত্য।স্রষ্টার এই নিয়ম গুলোকে যেমন কেউ পাল্টাতে পারবে না।তেমনি আমার ভালোবাসাকেও কেউ‌ পাল্টাতে পারবে না একমাত্র আল্লাহ বাদে।আমি আমার এই‌ ছোট্ট খানিকক্ষনের জীবনে তোমাকে পাশে চাই।তুমি কি আমার পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবে??? ‘

এইসব কথা বলে চারুর দিকে তাকায় আদনান।চারু কান্না করতে করতে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।আদনানও ‌আজ কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়া জড়িয়ে ধরে চারুকে।চারু আদনানকে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে বলে,

—‘ আমি জানতাম আমার সত্ত্যিকারের ভালোবাসা কখনো‌ মিথ্যা হবে না।আমি তোমার এই খানিকক্ষনের জীবনের সঙ্গী হতে রাজি।তবে আল্লাহর কাছে আমার একটাই চাওয়া একসঙ্গে যেন আমাদের মৃত্যু হয়।আমি কখনো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো‌ না। ‘

আদনান চারুর নাকে সাথে নিজের নাক লাগিয়ে বলতে শুরু করে,
—‘ এই চাওয়াটা আমারও।একজনকে হারিয়ে বেঁচে আছি।আরেকজন হারিয়ে পারবো‌ না।আল্লাহর কাছে একটা চাওয়া মৃত্যু যে আমাদের এক সঙ্গে হয়। ‘

এই বলে আদনান চারুর ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিশিয়ে দেয়।এতদিনের তৃষ্ণার্ত চারু আর আদনান দুইজনেই‌ নিজের তৃষ্ণা দুর করার চেষ্টা শুরু করে।

২৯.

‘ চারু এবার ঘুমানো দরকার।কালকে সকালে উঠে ঘুরতে যাব ‘

চারু নিজের নিজের তর্জনী আঙ্গুল আদনানের ঠোটের উপর রেখে খানিকটা ফিসফিসিয়ে বলে,
—‘ কোলে নিয়ে যাও না প্লিজ! ‘
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি‌ দিয়ে কোলে তুলে‌ নেয় চারুকে।চারু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আদনানের গলাটা।আদনান চারুর সাথে দুষ্টমি করতে করতে রুমে পৌছে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।চারু আদনানের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।আদনানও ঘুমিয়ে যায় চারুর সাথে।

পরেরদিন সকাল বেলা দুজনেই একসাথে বাহিরে বের হয়।প্রথমে তারা একটা রেষ্টুয়েন্টে যায় ব্রেকফাষ্ট করতে।ব্রেকফাষ্ট করার সময় চারু হঠাৎ আদনানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

—‘ তুমি কিভাবে এত আয়োজন করলে কালকে ‘

আদনান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে কাহিনী গুলা।ছেলেটা এসেছিল আদনানের সাথে কথা বলতে।আদনান বের হয়ে দেখে চারু ছেলেটার সাথে কথা বলছে।চারু‌ এখনো‌ আদনানকে দেখেনি।কিন্তু আদনান প্রথম থেকে সব দেখেছে।সে চারুকে সন্দেহ করেনি,সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এরকম ব্যবহার করেছে।আর সেই ছেলেটাই সব সাজিয়েছে বুঝলে।

চারু আদনানের প্রত্যেকটা কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করে।তারপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
—‘ বাদ দাও।আমি যে সাঁতার পারিনা তাহলে সাগরে নামবো‌ কেমনে ‘

চারুর কথা শুনে আদনান চুপ করে থেকে কিছুক্ষন ভাবে।তারপর সে কো‌নো‌ কথা না বলে উঠে দাঁড়ায়।চারুও‌ নিজের খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ায়।আদনান বিল পরিশোধ করে চারুকে নিয়ে বের হয়।তারা দুজনে সিদ্ধান্ত নেয় আজকে সমুদ্রে নামবে না বরং চারদিকের সব ঘুড়ে ঘুড়ে দেখবে।প্লান অনুযায়ী তারা দুজনে ঘুরতে থাকে চারদিকে।

চারু এক জায়গায় গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।একজন বুড়া লোক কিছু কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই‌ তাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।চারু আদনানকে নিয়ে সেখানে যায়।বুড়াটা চারুর দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে ইংরেজিতে কি যেন বলে?চারু বুঝতে পারেনা।চারু একটা কাগজ তুলে নেয়।কাগজটা খুলতেই এক আজব কথা লেখা উঠে…

চলবে..

তৃণশয্যা পর্ব-১৬

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৬তম_পর্ব

২৬.
হানিমুন যাওয়ার দিন সকালে চারু সর্বপ্রথম ঘুম থেকে উঠে।সে তারাতারি করে আদনানকে ডেকে দেয়।আজ সকাল ১০টায় তাদের ফ্লাইট।আদনান উঠে ফ্রেস হয়ে আসে।চারু কফি বানিয়ে এনে আদনানকে দেয়।তারপর সে নিজে ফ্রেস হতে যায়।চারু ফ্রেস হয়ে এসে কফির কাপটা হাতে নেয়।কালকে সব ব্যাগ গুছিয়ে রাখার কারনে এখন গোছাতে হচ্ছেনা তাদের।আদনান নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা বাজে।সে তারাতারি চারুকে রেডি হতে বলে নিজে রেডি হতে যায়।চারুও আর সেখানে বসে না থেকে রেডি হতে যায়।

আজকে চারুর মনটা অজানা এক খুশিতে ভরে গেছে।সে তারাতারি রেডি হয়ে নেয়।চারু রেডি হয়ে এক রুম থেকে আরেক রুমে যাবার পথে দেখে কিছু কাটা পড়ে আছে।যেকোনো সময় কারো পায়ে লাগতে পারে ভেবে চারু কাটা গুলো তুলে নিয়ে গিয়ে জানালার ধারে রাখতে ধরে।কিন্তু জানালার ধারে রাখতে ধরলেই কাটা গুলো তার হাত থেকে পিচলে নিচে পড়ে যায়।চারু সেদিকে আর মনোযোগ না দিয়ে আদনানের কাছে যায়।আদনানও রেডি হয়ে পড়েছে।অথঃপর ব্যাগ নিয়ে দুজনে রওয়ানা দেয়।

আদনান বাহিরে বের হয়ে অনেকক্ষন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে।তাদের বাসাটা গলির ভিতরে হওয়ায় এত সকালে কিছুতেই গাড়ি পায় না তারা।এদিকে ৯টা বাজতে চলেছে।

হঠাৎ আদনানের মনে হয় এয়ারপোর্টের সাথে তো তার মামার বাসা।তাদের অনেক গাড়ি আছে।আমি গাড়িটা সেখানে রাখলে কোনো প্রবলেম হবে না।এই ভেবে আদনান গাড়িটা বের করতে যায়।গাড়ি বের করতে গিয়ে চারুর ফেলা সেই কাটাগুলোতে লেগে টায়ার পান্চার হয়ে যায়।টায়ারের অবস্থা দেখে মুচড়ে পড়ে আদনান।তাদের মনে হয় আর যাওয়া হবে না।সে দ্রুত দারোয়ানকে দিয়ে মেকারকে ডেকে আনে।মেকার নিজের কাজে লেগে পড়ে।
এই পান্চার হওয়ার কারনে চারু মনে মনে নিজেকে গালি দিতে দিতে শেষ করে ফেলছে।সে যদি তখন কাটা গুলো সেখানে রাখতে না যেত তাহলে এত বিপদ হতো না।

কাটায় কাটায় 9:30 বাজে।এমন সময় মেকার বলে ওঠে,কাজ শেষ।তারাতারি মেকারের টাকা পরিশোধ করে গাড়ি চালাতে শুরু করে আদনান।গাড়িটা খানিকটা জোড়েই চালাতে থাকে সে।কয়েকমিনিটের মধ্যে সে তার মামার বাসায় পৌছে যায়।সেখানে গাড়ি রেখে কারো সাথে কোনো কথা না বলে দৌড়ে বের হয় চারুকে নিয়ে।হাতে তাদের মাত্র ১৪মিনিট সময় রয়েছে।এয়ারপোর্টের সাথেই আদনানের মামার বাসা হওয়ায় এয়ারপোর্ট যেতে আর কোনো যানবাহনের প্রয়োজন হয় না তাদের।

দুজনে একসাথে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে।আদনান চারুকে এক জায়গায় রেখে সবকিছু ঠিকঠাক করতে যায়।৫মিনিটের মধ্যে সে সব কিছু ঠিকঠাক করে আসে।তারপর চারুকে নিয়ে সোজা প্লেনে উঠে পড়ে।একজন কেয়ারটেকার তাদের সিট দেখিয়ে দেয়।দুজনে আরাম করে সিটে বসে পড়ে।

২৭.

প্লেন উড়তে শুরু করে।চারু জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।জানালা খোলা নিষেধ থাকার কারনে জানালা খুলতে পারছে না সে।তবে জানালার কাচ পরিষ্কার হওয়ায় সবকিছু ভালোভাবেই দেখা যায়।প্লেন আকাশে উঠে যায়।চারু এবার মাথা ঘুরিয়ে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান নিজের মোবাইলের মধ্যে ডুবে রয়েছে।চারু মাথা এগিয়ে দিয়ে দেখার চেষ্টা করে আদনান কি করছে?চারু দেখে আদনান নিত্তিয়ার বাকি ছবিগুলোও ডিলেট করে দিচ্ছে,তখন যে গুলো ডিলেট করতে পারেনি।চারু মনে মনে খুব খুশি হয়।সে আমেরিকায় গিয়ে আদনানকে সম্পুর্ন নিজের করে নিবে ভেবে অনেকটাই খুশি হয় সে।

আদনান নিজের কাজ শেষ করে চারুর দিকে ফিরে তাকায়।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়।সাথে বলে ওঠে,

—‘ Past is Past..আমি আর অতীত নিয়ে ভাববো না,ভাববো বর্তমান নিয়ে।তবে তুই যদি মনে করে থাকিস আমি অলরেডি নিতিকে ভুলে বসে আছি,সেটাও তোর ভুল।স্ত্তৃতি বড়ো বেদনার চারু।এটা সহজে মোছা কিংবা ধোয়া যায় না।তবে সেটা নিয়ে ভাববো কম।বর্তমানকে ইনজয় করবো। ‘

আদনানের কথাগুলো প্রচন্ড রকমের ভালো লাগে চারুর।তার ইচ্ছা করে আদনানকে জড়িয়ে ধরে পাপ্পি দিতে।কিন্তু সিটবেল্টটার কারনে তা কিছুতেই পারেনা।তবে পাওনা রেখে দেয়,এটা পরবর্তি একটা সময় দিয়ে দেবে।আদনান এবার সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখে আদনানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।চারু বুঝতে পারেনা আদনান কাঁদছে কেন?সে আদনানকে ডাকে হাত দিয়ে।আদনান চোখ খুলে পানি মুছে চারুর দিকে তাকায়।চারু আদনানের দিকে বিরক্তি ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে,

—‘ এখনি না এত্তবড় লেকচার দিলেন।এখন আবার কান্না করতেছেন কেন?খুব তো বললেন,অতীত নিয়ে ভাববেন না,বর্তমানকে ইনজয় করবেন।তাহলে কান্না করতেছেন কেন? ‘

কথাগুলো বেশ বিরক্তি নিয়েই বলে চারু।আদনান তার দিকে তাকিয়ে স্লান একটা হাসি দিয়ে বলে,

—‘ আমি কি করবো বল?যখনি চোখ বন্ধ করি তখন নিত্তিয়া চলে আসে আমার সামনে।আমি যখনই চোখ বন্ধ করি তখনই সে এসে আমাকে বলে,কিভাবে পারলে আদনান?তাকে দেখলেই আমার কান্না পায়।আমি কি করবো বল তুই? ‘

চারু আদনানের কথা শুনে নিজের কঠোর ভাব ধরে রেখে বলে,

—‘ আমি নিতি ফিতি বুঝি না।আপনি আমার বর।আপনি শুধু আমার কথাই মনে করবেন,আর আমার জন্য কাদবেন।আপনি যদি অন্যকারো জন্য কাদেন তাহলে আমি গিয়ে সেই মেয়েটাকে মেরে আসবো।থাক সে এজগতে আর থাক সে ওই জগতে।মনে রাইখেন! ‘

চারু কথা শুনে হালকা হাসি পায় আদনানের।সে চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।চারুও এবার হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে প্লেন এসে থামে লস অ্যাঞ্জেলিস বিমান বন্দরে।চারু আর আদনান বিমান থেকে নেমে রওনা দেয় হোটেলের উদ্দেশ্য।আদনান একটা হোটেল বুক করে চারুকে নিয়ে রুমের মধ্যে যায়।চারু রুমে প্রবেশ করেই বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে।আদনান ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।

এইসময় কলিংবেল বেজে ওঠে।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন হোটেল বয়।সে চারুকে ইংরেজিতে কথা বলে।কিন্তু চারু তার কথার মাথামুন্ডু আলাদা করতে পারে না।সে ঢ্যাপঢ্যাপ করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।একপর্যায়ে ছেলেটা বিরক্ত হয়ে ইংরেজিতে বলে,ইডিয়েট পারসন।ইডিয়েট কথাটা বুঝতে পারে চারু।ছেলেটা যে তাকে অপমাম করলো সেটাও ধরে ফেলে বুদ্ধিমতি চারু।সে একটানে ছেলেটাকে ভিতরে নিয়ে আসে।বিছানার উপর ফেলে দেয় ছেলেটাকে।তারপর ছেলেটাকে মারার জন্য তার দিকে ঝুকতে শুরু করে।এই মুহুর্তে ওয়াসরুমের দরজা খুলে যায়।আদনান অবাক হয়ে তাকায় চারু আর ছেলেটার দিকে।চারু তারাতারি উঠে দাঁড়ায়।ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে চারুকে আরো একবার ইডিয়েট বলে চলে যায়।

আদনান চারুর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকায়।সে চারুর সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।আদনানের এমন ব্যবহারে বেশ কষ্ট পায় চারু।তবে কি আদনান তাকে ভুল বুঝলো?

চলবে..ইনশাআল্লাহ

তৃণশয্যা পর্ব-১৫

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৫তম_পর্ব

চারুর কথা শুনে আদনান না হেসে পারে না।আদনানের হাসি খুব তারাতারি সংক্রমিত হয় চারুর মধ্যে।চারুর আদনানের সাথে হাসতে শুরু করে।এই খানিকটা মুহুর্তের জন্যে হলেও চারুর মনে হয় ইস,সাড়া জীবন যদি এরকম হাসি-খুশিতে কাটিয়ে দিতে পারতাম।

এরকম হাসি-খুশিতে সাড়াজীবন কাটিয়ে দিতে না পারলেও খাওয়াটা হাসি-খুশিতেই শেষ হয় দুজনের।দুজনে হাত ধুয়ে এসে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে বিছানার মধ্যে।

২৫.

বিছানায় শুয়ে দুইজনেই।চারু বারবার আদনা‌নের বুকে মাথা রাখার চেষ্টা করলেও ফলাফল প্রতিবারে ব্যার্থই দাঁড়ায়।একপর্যায়ে সে রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।আদনান টের চোখ দিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তারপর এমন একটা ভাব নিয়ে শুয়ে থাকে ম‌নে হয় সে কিছুই জানেনা।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে খপ করে আদনানের হাত দুটো চিপে ধরে।তারপর এক লাফে আদনানের বুকে শুয়ে দুহাত দিয়ে আদনান আকড়ে ধরে নিজের মতো‌ করে।দুইবার চেষ্টার পর আদনান যখন ব্যার্থ হয় তখন চেষ্টা করাই ‌বাদ দিয়ে দেয়।

আদনান চেষ্টা করা বাদ দেয়াতে চারু মনে করে আদনান মনে হয় আর কিছু করবে না।কিন্তু এদিকে আদনানের মনে যে এরকম শয়তানি ছিল সেটা কে জানে?চারু এক ঢিল দিতেই আদনান চারুকে নিচে ফেলে‌ নিজের চারুর উপর শুয়ে পড়ে।আদনানের এত বড় শরিরের ওজন চারু সহ্য করতে পারে না।সে আদনানকে সড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে।

ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনের ঠোট একত্র হয় যায়।এরকম কিছু ঘটবে দুজনের কেউ আশা করেনি।চারুর লাল লিপষ্টিক আদনানের ঠোট ছুয়ে কিছুটা দাগ করে দেয়।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।দুজনের মধ্যেই ফুটে ওঠে লজ্জা নামক বস্তুটা।

আদনা‌ন আস্তে করে চারুর উপর থেকে নেমে গিয়ে অন্যপাশে মাথা করে শুয়ে পড়ে।চারুও একই‌ কাজ‌ করে।সেও অন্যপাশে মাথা করে শুয়ে পড়ে।হঠাৎ এরকম কিছু হবে দুজনের কেউই ভাবেনি।প্রস্তুতও ছিল না তারা এই রকম ঘটনার জন্য।তার জন্য খানিকটা লজ্জা পায় দুইজনেই।দুজন দুদিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সেদিনের মতো।

২৬.

সকালবেলা সবার আগে ঘুম ভেঙ্গে যায় চারু নামের মেয়েটির।তারাতারি বিছানা থেকে উঠে জানালার পর্দাটা সড়িয়ে দেয়।পর্দা সড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একফালি‌ রোদ এসে গ্রাস করে নেয় তাকে।চারু হাসিমুখে তাকায় পাশে শুয়ে থাকা আদনা‌নের দিকে।আদনানের ওষ্ঠের মধ্যে সে দেখতে পায় লাল লিপষ্টিকের দাগ।সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে।

এদিকে রোদের আলো এসে পড়ে আদনানের মুখে।ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।সে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়।সুর্য্যি মামার আলো এসে গ্রাস করে তার চোখকে।সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ভাবে,সত্ত্যি আজকে সকালটা অপুর্ব সুন্দর।

এই মুহুর্তে এক কাপ কফি নিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায় চারু।সে কফির কাপটা এগিয়ে দেয় আদনানের দিকে।আদনান চারুর দিকে হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে বিনিময়ে একটা হাসি উপহার দেয় চারুকে।চারু খানিকটা দৌড়ে রান্নাঘরে যায়।তারপর নিজের কফির কাপটা নিয়ে আসে শোবার রুমে।আদনান বিছানায় আর চারু সোফায় বসে পড়ে।

দুজনে ঘন ঘন চুমুক বসাতে থাকে কফির কাপে।কারো‌ মুখে কোনোরকম কথা ফুটছে না।সবাই‌ নিজ নিজ কফির কাপের দিকে মনোযোগ দিয়ে বসে আছে।একপর্যায়ে কফি শেষ করে আদনান কাপটা চারুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

—‘ সত্ত্যি,কফিটা অসাধারণ ছিল।থ্যাংকস ‘

চারু আদনা‌নের কথার প্রতিউত্তরে ওয়েকলাম বলে।আদনান বিছানা থেকে উঠে বসে রওনা হয় ওয়াসরুমের দিকে।ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসে সে।এরপর চারু যায় ফ্রেস হতে।সেও ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসে।

চারু গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।আদনান মোবাইল টিপছে।চারু সোফা থেকে উঠে মাথা চাড়া দিয়ে দেখার চেষ্টা করে আদনান কি দেখছে?আদনান যা করছে তা দেখে সে অবাক হয়ে যায়।আদনান নিত্তিয়ার সব ছবি নিজের ফোন থেকে ডিলেট করছে।চারু যেমন অবাক হয় তেমন খুশিও হয় এই ভেবে যে সে নিশ্চয় আদনানের মনে একটু হলেও নিজের জায়গা করে ‌নিতে পেরেছে।

এই মুহুর্তে কলিংবেল বেজে ওঠে।চারু দরজা খোলার জন্য যেতে ধরলে আদনান তাকে বসিয়ে দেয়।সে খানিকটা সন্দেহ নিয়ে এগোয় দরজার দিকে।কে আসলো এত তারাতারি?ওরাতো‌ ঢাকার কাউকে চেনে না।আদনান আস্তে করে দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন ডাক-পিয়ন।তার পোষাক দেখে আদনান চিনে ফেলে।ডাক-পিয়ন আদনানের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে এক জায়গায় সিগনেচার নিয়ে চলে‌ যায়।আদনান অবাক হয়ে চিঠিটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসে।চিঠি!কে পাঠালো!খামের উপরে লেখা আছে রাহিনা বেগম।তার মায়ের নাম।মা কে চিঠি পাঠাবে?এসব প্রশ্ন ঘুরঘুর করতে থাকে তার মাথায়।

সে চিঠিটা নিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়ে।চারু আদনানের হাতে চিঠিটা দেখে অবাক হয়ে আদনানকে প্রশ্ন করে,

—‘ চিঠি,কে দিল? ‘

আদনান খামটা খুলতে খুলতে বলে,

—‘ উপরেতো আম্মুর নাম লেখা।দেখা যাক ভিতরে কি থাকে? ‘

রাহিনা বেগমের নাম লেখা আছে শুনে চারুর আগ্রহ আরো‌বেড়ে যায়।সেও আদনানের দিকে ঝুকে পড়ে।আদনান খামটা খুলে প্রথমে দুটো প্লেনের টিকেট বের করে।তারপর সেই টিকেট দুটা চারুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আস্তে করে বের করে আনে একটা বড় কালার পেপার।পেপারটার ভাজ খুলতে শুরু করে আদনান।ভাজ খুলতেই‌ চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিভিন্ন কালার পেন্সিল দিয়ে রং করা একটা লেখা।লেখাটা হলো,

হ্যাপি হানিমুন😘

আদনান কাগজটা দেখে চারুর দিকে এগিয়ে দেয় কাগজটা।চারুও ভালোভাবে লক্ষ করে কাগজটা।কাগজটাতে সুন্দর করে লেখা আছে হ্যাপি হানিমুন।আর কোনো‌ কিছু লেখা নেই কাগজটাতে।আদনান এবার চারুর হাত থেকে টিকিট দুটো‌ নেয় দেখার জন্য যে কোথায় যাচ্ছে তারা।টিকিট দুটোতে লেখা আছে,ঢাকা টু লস অ্যাঞ্জেলস।জায়গাটা প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে,হলিউড থেকে মাত্র কয়েক মাইল দুরে।

চারু খানিকটা আনন্দ নিয়ে আদনানকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ কোথায় যাচ্ছি আমরা? ‘

আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ প্রশান্ত মহাসাগরে যাচ্ছি,আর মাত্র ২দিন পর।তুই একাই যাস আমি যাবো না। ‘

আদনানের এহেন কথা শুনে তার দিকে তাকায় চারু।চকিতে বুঝে ফেলে এটা মজা ছিল।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।তার দেখা-দেখে আদনানও হেসে ফেলে।সে হাসতে হাসতে বলে,

—‘ আম্মু কতটা চালাক।সে আমাদের আসার আগেই ডাক-অফিসে চিঠি দিয়ে এসেছে কিন্তু আমাদের সড়াসড়ি দেয়নি।ওফ‌ সিট।ভিসা গুলো কই ‘

এই বলে সে আবার খামের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়।বের করে আনে ঝকঝকে দুটো টুরিষ্ট ভিসা বই।দুজ‌নের মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির এক হাসি।

২৬.

আমেরিকা যাওয়ার দিন সকাল বেলা এক নতুন একটা অঘটন ঘটিয়ে বসে থাকে চারু।এদিকে ঘনিয়ে আসছে ফ্লাইটের সময়।তাদের যাওয়া হবে কি হবেনা সবকিছু এখন ডিপেন্ড করছে একটা মেকানিকের হাত।তবে আর কয়েকমিনিটের মধ্যে শেষ না হলে তাদের আর যাওয়া হবে না আমেরিকা।হবে না কোন প্রকার…

চলবে..

তৃণশয্যা পর্ব-১৪ + (বোনাস পর্ব)

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৪তম_পর্ব

মেয়েটা হুট করে রুমে প্রবেশ করে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।চারুর ইচ্ছা করতেছে মেয়েটাকে কষে থাপ্পর মারতে।কিন্তু বড় হওয়ার খাতিরে থাপ্পরটা মারতে পারলো না।মেয়েটা আর কেউ না আদনাননের ফুফাতো বোন তিনা।চারু দৌড়ে গিয়ে আদনানকে তিনার কাছ থেকে টেনে নেয়।তারপর তিনাকে হাসি মুখে বলে,
—‘ আপু তুমি কেমন আছো? ‘

এভাবে আদনানকে ছাড়িয়ে নেওয়া মোটেও পছন্দ হয়নি তিনার,সেটা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তবুএ চারুর কথার উত্তর দেয় সে।এদিকে তিনা কি মনে করেছে আর কি মনে করেনি সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নাই চারুর।সে তিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ আপু তুমি বাহিরে অপেক্ষা করো আমরা সব গুছিয়ে নিয়ে একেবারে যাই ‘

চারুর এই কথাটায় প্রচন্ড রেগে যায় তিনা।জলন্ত চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি কে হে?আমাকে ঘর থেকে বের হতে বলছো ‘
তিনার কথার উত্তর চারু হাসি মুখেই দেয়।সে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—‘ ওনার বউ।তুমি বাহিরে বসো আমরা আসতেছি।আর যদি বাহিরে যেতে না চাও,তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব ‘এই কথাটা খানিকটা চিল্লিয়েই বলে চারু।
চারুর কথায় খানিকটা হলেও ভরকে যায় তিনা।আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা রুম থেকে বের হতে ধরে।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিমি।সে এতক্ষন সব কিছু দেখছিল আর হাসতেছিল।সেও চলে যায় সেখান থেকে।

সবাই বের হয়ে গেলে চারু খুব জোরে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।আদনান চুপ করে বসে পড়ে সোফায়।চারু রাগি চোখে তাকায় আদনানের দিকে সাথে এক পা-দু পা করে এগোতে থাকে তার দিকে।আদনান এখনো চুপ হয়ে বসে আছে।

চারু গিয়ে আদনানের পাশে বসে পড়ে।তারপর আদনানের মাথার চুলগুলো টেনে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,
—‘ খুব শখ,নিজের বউকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করার। ‘
চারুর কথায় আদনান কোনো উত্তর না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকায়।সে বুঝতে পারছে না তার দোষটা কোথায়।তিনা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো বলেই তো সেও জড়িয়ে ধরলো।আদনানের এরকম তাকানো দেখে চারুর প্রচন্ড হাসি পায়।কিন্তু সেই হাসিটাকে গোপন করে মুখে রাগি ভাবটা ধরে রেখে বলে,

—‘ এটাই লাষ্ট,আরেকবার যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকানো বা ঢলাঢলি করছো তাহলে সোজা নিত্তিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেব ‘

নিত্তিয়ার কথা শুনে ঝট করে আদনান চারুর দিকে তাকায়।তারপর তারাতারি বসা থেকে উঠে পড়ে সে।এক ছো দিয়ে টেবিলের উপর থেকে নীল ডায়েরীটা তুলে নেয়।তারপর রওনা হয় ব্যালকনির দিকে।হঠাৎ আদনানের এমন ব্যবহারে খানিকটা ভরকে যায় চারু।সেও আদনানের পিছন পিছন ব্যালকনিতে যায়।আদনান ইজি চেয়ারটায় বসে আছে।চারু কোনো কথা না বলে আদনানের কোলে বসে।সে আদনানের চোখে পানি দেখে‌ খানিকটা চমকে ওঠে কিন্তু পরবর্তিতে আবার রেগেও যায়।

সে ছো মেরে আদনানের কাছ থেকে নীল ডায়েরীটা নিজের দখলে করে নেয়।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে পানি,মুখ দিয়ে কোনো কথা বলছে না।চারু আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে নিজের ঠোট দুটো মিশিয়ে দেয় আদনানের ঠোটের সাথে।আজকে আদনানও রেসপন্স করছে।চারু খুশিতে দুইহাত দিয়ে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।আদনান তার হাত দুটো এগিয়ে দিতে চেয়েও দেয় না।সে নিত্তিয়ার সবগুণই চারুর মাঝে খুঁজে পেয়েছে শুধু মাত্র একটা ছাড়া।কি সেটা..

২২.

‘ আদনান-চারু,তোমাদের দুজনের সাথে তিনাও ঢাকা যেতে চাচ্ছে।তোমাদের কি মত? ‘

হালিম সাহেবের এই কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় চারু।তবুও মুখে হাসি ভাব রেখে বলে,
—‘ খালু,তিনা আপুর কি কাজ ঢাকায় গিয়ে? ‘
হালিম সাহেবকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনা বলে ওঠে,
—‘ আমার খুব ইমপর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে ঢাকায়।কালকের মধ্যে যেতে না পারলে শেষ।প্লেনেরও টিকেট পাইনি। ‘

চারু এক এক করে রাহিনা বেগম,রিমি ও আদনানের দিকে তাকায়।আদনান বাদে সবার মুখেই অস্বস্তি।চারু তার মুখের হাসিটা মুখেই রেখে বলে,
—‘ কিন্তু আপু আমাদেরতো ঢাকা পৌছাতে সাতদিন লাগবে।ঢাকা যাওয়ার পথে আমরা অনেককিছু ঘুরে দেখবো।অনেক জায়গায় থাকবো।কি বলেন আপনি? ‘

এই বলে আদনানের দিকে তাকায় চারু।আদনান না বলার জন্য মুখ খুলতেই চারু পা দিয়ে আদনানের পায়ে খুব জোড়ে একটা পাড়া দেয়।আদনান না বলতে গিয়েও হা বলে দেয়।আদনানের হ্যা শুনে হালিম সাহেব তিনার দিকে তাকিয়ে বলেন,
—‘ ওদের সাথে তাহলে তোমার যাওয়া হবে না মা।আচ্ছা তুমি চিন্তা করিওনা আমি এখনি প্লেনের টিকেট ম্যানেজ করছি। ‘

তিনা আর কোনো কথা না বলে সাইট ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নেয়।তারপর রওনা দেয় গেটের উদ্দেশ্যে।যাওয়ার সময় পিছনে না তাকিয়ে বলে,
—‘ তোমরা সবাই অনেক স্বার্থপর ‘

তার কথায় মনে মনে হেসে ওঠে রিমি ও চারু।চারু এবার নিজের ল্যাগেজটা নিয়ে হালিম সাহেবকে সালাম করে তারপর রাহিনা বেগমকে সালাম করে।সবার শেষে সে রিমিকে জড়িয়ে ধরে।রিমিও চারুকে জড়িয়ে ধরে চারু গালে চুমু খায়।

বাসার সবাই তাদের এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত আসে।সবার অনুমতি নিয়ে গাড়িতে প্রবেশ করে আদনান আর চারু।আদনান গাড়ি চালাতে শুরু করে।চারু জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাহিরের দৃশ্য দেখতে শুরু করে।

২৩.

‘ সিটবেল্টটা বাধ না চারু,নাহলে সমস্যা হতে পারে। ‘

আদনানের কথা শুনে খানিকটা রেগে যায় চারু।চোখ রাঙ্গিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি জানো আমি সিটবেল্ট বাধতে পারিনা তারপরেও কেন বাধতে বলো।আমি পারবো না।দরকার হলে তুমি বেধে যায়! ‘

শেষ পর্যন্ত আদনান আর কোনো উপায় না পেয়ে চারু দিকে ঝুকে তার সিট বেল্টটা লাগাতে শুরু করে।চারু নিশ্চুপ হয়ে আদনানকে দেখছে।আদনান সামনের দিকে তাকিয়ে সিটবেল্টটা বাধতে থাকে।
সিটবেল্ট বাধা শেষ হওয়ার সাথে সাথে চারু আদনানকে নিজের দিকে করে নেয়।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।

আদনান চারুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।চারুও আদনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাহিরে প্রকৃতি দেখায় ব্যাস্ত হয়।গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে।আদনান মাঝে মাঝে চারুর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে ব্যাপারটা চারুর নজর এড়ায় না।আদনান যখনি তার দিকে তাকায় সে চোখ মেরে দেয়।

একপর্যায়ে চারু আদনানের কাধের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।আদনান চারুর মাথা সড়িয়ে না দিয়ে ওই অবস্থায় গাড়ি চালাতে থাকে।আদনান আড় চোখে চারুর দিকে তাকাচ্ছে ঘনঘন।কিছুক্ষনের জন্যে হলেও তার মনে হচ্ছে নিত্তিয়া যেন তার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে।চারু আর নিত্তিয়ার মধ্যে ৯৫℅ মিল খুজে পায় আদনান।কিন্তু বাকি ৫℅ খুজে পায়।কোনো একটা ঘাটতি আছে চারুর মাঝে যা নিত্তিয়ার ছিল না।আদনান গাড়িটা থামিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তার মনে হচ্ছে এটা নিত্তিয়াই।চারু নিত্তিয়ার মতো‌ নীল শাড়ি লাল লিপষ্টিক পড়েছে।

হঠাৎ চোখ খুলে ফেলে চারু।আদনানকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড খুশি হয় সে।মুহুর্তের মধ্যে খুশিটা মিলিয়ে যায়।পিছন থেকে একটা লোক লাঠি দিয়ে আদনানের গাড়িটাতে একটা বারি মারে.

চলবে‌..

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#বোনাস_পার্ট

এমন একটা হ্যাপি হ্যাপি মোমেন্টে কে গাড়িতে বাড়ি মারলো সেটা জানার জন্য আকুল হয়ে আছে চারু।এই সময় গাড়ির জানালায় দেখা দেয় বুড়ো একটা লোক।লোকটা রোদে লাল হয়ে গেছে।মুখে খানিকটা বিরক্তি নিয়ে লোকটা খানিকটা কড়া গলায় বলে,
—‘ এখানে মাঝরাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়েছেন কেন?একটু সামনে এগোন। ‘

লোকটার কথা শুনেই বোঝা যায় লোকটা ট্রাফিক পুলিশ।কিছুক্ষনের মধ্যে প্রমাণটাও পেয়ে যায় চারু।লোকটা তার ক্যাপটা মাথায় দিয়ে অন্য গাড়ি গুলোকে সড়িয়ে দিতে থাকে।আদনান গাড়ি চালানো শুরু করে আবার।চারু মুখ থম করে বসে থাকে।তার ইচ্ছা করতেছে লোকটাকে আচ্ছা করে বকে দিতে।আজকে প্রথম আদনান তার দিকে ওভাবে তাকালো,কি সুন্দর একটা হ্যাপি হ্যাপি মোমেন্ট তৈরি হয়েছিল।সেই সময় ঠাস করে বাড়ি মেরে সব তছনছ করে দেয় লোকটা।তারই বা কি দোষ?তার কাজই তো‌ এসব করা।
সব ভেবে চারু মাথা নিচু করে বসে থাকে।

আদনান চারুর দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে।তবে হাসিটা স্বজোড়ে না লুকিয়ে লুকিয়ে।চারু মত মুখ করে নিত্তিয়াও বসে থাকতো যখন মন খারাপ হতো।আদনান চারুকে দেখতেছে আর নিত্তিয়ার সাথে কাটানো সময় গুলো মনে করে খানিকটা আনন্দ পাচ্ছে।

চারু হঠাৎ মাথা তুলে আদনানের দিকে তাকায়।আদনানের লুকিয়ে লুকিয়ে হাসা তার রাগকে সুধ-আসল ছাড়াই দ্বিগুন করে দেয়।সে ঘুড়ে আদনানের দিকে বসতে যায় কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সিটবেল্টটা।চারু মাথাটা আদনানের দিকে করে খানিকটা জোড়ে বলে,

—‘ আপনি হাসতেছেন!কত্তবড় খারাপ লোক আপনি।কখনো তো আমাকে দেখেন না।আজকে একটু দেখছিলেন।সেই সময় ওই লোকটা সব তছনছ করে দিল।আর আপনি হাসতেছেন। ‘

আদনান চারুর দিকে একবার তাকিয়ে হাসির পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দেয়।আদনানের এই হাসির পরিমাণটা চারুর রাগকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।আদনান হাসতে হাসতে বলে,

—‘ হাসবো না তো কি করবো?তোর মুখটা তো দেখার মতো।হা হা ‘

আদনানের এমন বিটকেলে হাসি সহ্য করতে পারে না চারু।কিন্তু সিটবেল্টটার কারনে কিছু করতেও পারছে না।শেষ পর্যন্ত রাগে দুঃখে কাঁদতে শুরু করে চারু।চারুর কান্না দেখে অবাক হয়ে গাড়ি থামায় আদনান।নিজের সিটবেল্টটা খুলে চারুর দিকে ঘুরে বসে।চারু‌ এখনও কান্না করেই যাচ্ছে।আদনান মুচকি হাসি দিয়ে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ আরে আরে কান্না করতেছিস কেন?এখানে কান্না করার কি হলো? ‘

আদনানের কথা শুনে চারুর কান্নার পরিমাণ আরো বেরে যায়।সে ইশারায় আদনানকে সিটবেল্টটা খুলে দিতে বলে।চারু এরকম ইশারা পেয়ে আদনান হো হো করে হেসে ওঠে।আদনানের হাসি দেখে চারুর কান্না উড়ে যায়।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে হাসিটা কিসের জন্য।আদনান নিজের হাসিটা বজায় রেখে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—‘ তুই যে রকম তিড়িং-বিড়িং করে লাফাস,তোকে আটকে রাখার জন্য এই সিটবেল্টটাই পারফেক্ট।তুই ঢাকা পৌছা পর্যন্ত ওই অবস্থায় থাকবি। ‘

এই বলে আদনান পুনরায় গাড়ি চালায় মনযোগ দেয়।এর মধ্যে ওরা অনেক জায়গায় থামলেও আদনান এক বারের জন্যেও চারু বেল্ট খুলে দেয় নি।চারু অনেকবার খোলানোর চেষ্টা করলেও প্রতিবারে ব্যার্থ হয় সে।

২৪.

অবশেষে সব বাধা-বিপত্তি পেড়িয়ে ঢাকায় নিজের বাসায় পৌছায় তারা।আদনান গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে সব মাল নামায়।সব কিছু ঘরের ভিতরে রেখে এসে সব শেষে চারুকে নামায় আদনান।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে ভো একটা দৌড় মারে ঘরের দিকে।আদনান গাড়িটা পার্ক করে ভিতরে যায়।সে মনে করেছে চারু নিশ্চয় এখন কান্না করবো।করারই তো কথা এতসুন্দর একটা জার্নি সে উপভোগ করতে পারলো না।

আদনান ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে চারুকে দেখে চমকে ওঠে।চারু অলরেডি কাজে লেগে পড়েছে।সে আদনানকে দেখে কাজে লেগে পড়তে বলে।রাত নেমেছে।আদনানও চারুর সাথে কাজে লেগে পড়ে।কাজের মধ্যেখানে দুজনের মধ্যে কোনো প্রকার কথা আদান-প্রদান হয় না।দুইজনে নিশ্চুপ হয়ে কাজে লেগে থাকে।

একপর্যায়ে দুইজনের পেটই জানান দেয় যে তারা ক্ষুধার্ত।দুজন কাজ রেখে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।সবকিছু গোছানো‌ প্রায় শেষ।শুধুমাত্র বিছানাটা গুছিয়ে শুয়ে পড়া বাকি।
আদনান সোফায় বসে পড়লে চারু ব্যাগ থেকে খাবারের প্যাকেট গুলো বের করে।আসার পথে আদনান দুটো ডিনার প্যাকেট নিয়েছিল।চারু খাবারের প্যাকেট বের করে চমকে ওঠে।একটা প্যাকেটের সব খাবার প্যাকেট ছিড়ে ব্যাগে পড়ে আছে।চারু আস্তে করে ছেড়া প্যাকেট তুলে ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়।অবশিষ্ট থাকে একটা প্যাকেট কিন্তু তারা মানুষ দুইজন।

চারু সেই অবশিষ্ট প্যাকেটটা আদনানকে দেয়।আদনান প্যাকেটটা নিতে ঘপঘপ করে খেতে শুরু করে।চারু পেটের ক্ষুধা নিয়ে এক দৃষ্টিতে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে তার পেটের ক্ষুধা বাড়ছে তো‌ বাড়ছে।সে ক্ষুধা একদমই সহ্য করতে পারে না।আদনানও চারুর দিকে না তাকিয়ে একাই মনে সুখে খেয়েই যাচ্ছে।

রাগে,দুঃখে,ক্ষিধায় চারু কান্না করা শুরু করে দেয়।হঠাৎ করে কান্না করে ওঠায় খানিকটা অবাক হয়ে খাওয়া থামিয়ে তার দিকে তাকায় আদনান।চারু আদনানকে দেখে কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দেয়।আদনান প্যাকেটটা নিজের কোলের উপর রেখে ভ্রু-নাচিয়ে চারুকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ কান্না করতেছিস কেন?কি হইছে? ‘

চারু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিজের চোখের পানি‌ মুছতে মুছতে বলে,
—‘ আপনি কত্তবড় খারাপ,একাই সব খেয়ে যাচ্ছেন।এদিকে আমি ক্ষিধায় মরে যাচ্ছি সেটা একবারও দেখছেন না।কি প্যাকেট নিছেন ওটা সব ছিড়ে পড়ে গেছে?আর আপনি একাই খেয়ে যাচ্ছেন আমাকে একটু দিচ্ছেনও না 😭 ‘

এই বলে আবার কান্না করতে শুরু করে চারু।আদনান একবার চারুর দিকে আরেকবার নিজের পেটের দিকে তাকায়।শেষ পর্যন্ত কি মনে করে খাবারের প্যাকেটটা চারুকে দিয়ে দেয়।তারপর সে বেসিনের উদ্দেশ্য রওনা দেয় হাত ধোয়ার জন্য।

চারু কান্না থামিয়ে খেতে শুরু করে।খাওয়ার এক পর্যায়ে তার মনে হয় সে যেমন ক্ষুধা সহ্য করতে না পারে,আদনানও যদি সেরকম ক্ষুধা সহ্য করতে না পারে।তার চেয়ে এই প্যাকেটটা দুজ‌নে ভাগাভাগি করে খাই।তাতে কিছুটা হলে আমারও পেট ভরবে ওনারও পেট ভরবে।

এই ভেবে চারু খাবারের প্যাকেট নিয়ে গিয়ে সোফায় আদনানের পাশে বসে।কিছুটা খাবার হাতে তুলে নিয়ে আদনানের মুখের সামনে ধরে।আদনান নিজের মুখের সামনে খাবার দেখে মোবাইল থেকে চোখ তুলে তাকায় সেই আগন্তুকের দিকে,যে তার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরেছে।

আদনান চারুর দিকে তাকায়।চারু আদনানের দিকে খাবার তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আদনান তার দিকে তাকালে চোখাচোখি হয়ে যায় দুইজনের।চারু নিজের হাতের খাবার আদনানের মুখে তুলে দেয়।আদনান নিশ্চুপ হয়ে খাবার খাচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।

চারু আদনানের কান্না দেখে তাকে হাসানোর জন্য বলে,
—‘ খাইছে,আবার শুরু হইলো ফ্যাচফ্যাচ কান্না।বুঝিনা বাপু,একটা ছেলে কেমনে এতটা ছ্যাচকাদুনে হতে পারে। ‘

চলবে..

তৃণশয্যা পর্ব-১৩

0

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৩তম_পর্ব

লোকটাকে দেখে ভয়ে ভয়ে আদনানের পিছনে এসে লুকায় চারু।আদনান অবাক হয়ে একবার চারুকে দেখছে আরেকবার লোকটাকে দেখছে।৪০-৫০ হবে লোকটার বয়স।চোখে ভারি লেঞ্চের চশমা।মাথার অধিকাংশ চুল পটল তুলতে গেছে।লোকটাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চারু আর আদনানের দিকে।

একপর্যায়ে লোকটা এসে দাঁড়ায় চারুদের সামনে।চারু ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে ছোটবেলার মাইরের কথা।এখনো দাগ রয়েছে শরিরে।লোকটা আদনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
—‘ আমি কালাম ‘

আদনান কালাম সাহেবের হাতটা ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,
—‘ আমি আদনান ‘
কালাম সাহেব এবার চারুকে আদনানের পিছন থেকে সামনে নিয়ে আসেন।চারু এখনো ভয়ে চোখ বন্ধ করেই আছে।কালাম সাহেব তাকে চমকে দিয়ে বলে,

—‘ চারু মা,তোর সাথে এভাবে দেখা হবে আমি ভাবতেও পারিনি।সেই কতদিন ধরে দেখা নেই তোর সাথে। ‘

কালাম সাহেবের মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে মনের ভিতর হতে খানিকটা ভয় উধাও হয়ে যায়।চারু আস্তে করে চোখ খুলে নেয়।কালাম সাহেবকে তার বিশ্বাস নাই।এদিকে কালাম সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে চারুকে দেখছে মেয়েটা।চারু কালাম সাহেবের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে মেয়েটার কাছ থেকে মাফ নিয়ে কালাম সাহেবকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আদনানকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলে।আদনান বাধ্য করে গাড়ি চালাতে।

আদনান গাড়ি চালিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলে চারু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয়।এতক্ষন নিরব দর্শকের মতো চারুর সব কার্যকলাপ দেখছিল আদনান।এবার সে মুখ ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ এই লোকটা কেরে চারু,যাকে দেখে তুই এত ভয় পেলি।আমাকে টেনে নিয়ে এলি।কাহিনীটা কী? ‘

চারু আদনানের দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করে,
—‘ আর বলো না,ওই কামাল বেটা খুব পাজি।আমাদের স্কুলের গণিত টিচার ছিল।আমি একদিন একটা অঙ্ক পাইনি দেখে বেটা দুইটা ইয়া বড় বেত আমার পিঠে ভাঙ্গছে।এখনো দাগ আছে মাইরের।দেখবা! ‘
এই বলে চারু নিজের জামা উপরে তুলে আদনানকে পিঠি দেখাতে যায়।আদনান হাত নাড়িয়ে বলে,দরকার নাই।

কিছুক্ষন গাড়ি চালানোর পর আদনান চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তুই কি অঙ্ক করতে পারিস না? ‘
চারু নিজের মাথা নিচে করে বলে,
—‘ এই অঙ্ক জিনিসটা আমার মাথায় ঢুকে না।খুব কঠিন একটা বিষয়।আমি অঙ্ক করতে পারি তবে ততটা ভালো না। ‘

চারু এই কথাটা শোনামাত্র আদনানের মুখে ফুটে উঠে রহস্যময়ী এক হাসি।চারু অবাক হয়ে আদনানকে দেখছে আর বোঝার চেষ্টা করছে হাসির কারন কি?কিন্তু একপর্যায়ে তারা বাসায় পৌছে যায় কিন্তু চারু হাসির কারনটা খুঁজে পায় না।

২১‌.

‘ বাবা,আমি ঢাকা যাব কালকে।সব ঠিক-ঠাক হয়েছে।আমি কালকেই ঢাকা যাচ্ছি! ‘

এই কথা বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় আদনান।তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উপস্থিত আমজনতা।আদনান রওনা দেয় তার রুমের উদ্দেশ্য।রুমের কাছাকাছি যেতেই পিছন থেকে তাকে ডাকে তার বাবা।আদনান বাধ্য হয়ে পিছনে ফিরে এসে আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে।আট জোড়া চোখের লক্ষ এখন সে।হালিম সাহেব আদনানের দিকে ঝুকে তাকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ অফিসতো এখন বন্ধ।একমাস বন্ধ থাকবে।এত তারাতারি কেন যাবে তুমি? ‘

হালিম সাহেবের এত বড় একটা প্রশ্নের জবাব কয়েকটা বাক্যের মধ্যে দিয়ে দেয় আদনান।সে সোজা বলে দেয়,
—‘ কয়েকদিন ঘুরবো ‘
হালিম সাহেব সাথে সাথে বলে ওঠে,
—‘ তাহলে চারুও তোমার সাথে যাচ্ছে। ‘

আদনান এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,-‘ নাহ ‘
রাহিনা বেগম ছেলের অবস্থা বুঝতে পারছেন।এই মুহুর্তে ছেলেকে যে একা ছাড়া যাবেনা সেটাও ঢের বুঝতে পারছেন।তাই তিনি খানিকটা কঠোর হয়ে বলেন,
—‘ আদনান চুপ কর।চারু যাবে তোর সাথে।ওখানে অফিসের জন্য যে ফ্লাটটা আছে সেখানে উঠবি তোরা দুইজনেই।আর গাড়ি নিয়ে যাবি এখান থেকে। ‘
হালিম সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি পাগল হইছো,এতদুর গাড়িতে করে যাবে! ‘

রাহিনা বেগম নিজের কঠোর ভাব ধরে রেখেই বলে,
—‘ হুম যাবে।তাতে কতদিন লাগে লাগুক।ওরা গাড়িতেই যাবে। ‘
স্ত্রীর কথার উপর কথা বলার সাহস পান না হালিম সাহেব।তিনি চুপ হয়ে বসে থাকেন।বাবাকে এভাবে হারতে দেখে আদনান চুপসে যায়।সে জানে এখানে আর কোনো কথাই কাজ হবে না।চারুকে নিয়ে যেতেই হবে তার সাথে।

আদনান কোনো কথা না বলে চুপ করে উঠে দাঁড়ায়।আদনানের পর উঠে দাঁড়ায় হালিম সাহেব।খানিকক্ষন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি উপহার দিয়ে চলে যান তিনি।আদনান আর তার বাবা নিজ নিজ লক্ষ্যে পৌঁছার সাথে সাথে রাহিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চারু।রিমি তাকিয়ে দেখছে আর হাসছে।চারু রাহিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরা অবস্তায় বলে,

—‘ খালামনি,আমি ভাবতেও পারি নাই তুমি এত তারাতারি,এত সহজে ওনাকে রাজি করতে পারবে।কালকে উনি বলেছিল,মরে গেলেও আমাকে নিয়ে যাবে না। ‘

চারু কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় রাহিনা বেগম।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ সব গুছিয়ে নিস।সব গোছানো হলে একবার আমার রুমে আসিসতো। ‘

এই বলে রাহিনা বেগম সেই স্থান ত্যাগ করে।চারু মাথা ঘুরিয়ে তাকায় রিমির দিকে।দুজনের মধ্যে চোখা-চোখি হয়ে যায়।একপর্যায়ে হেসে ফেলে দুইজনেই।রিমি হাসতে হাসতে বলে,
—‘ তাইলে ভাবিজান,আপনার ঢাকা যাওয়া পাকা।ইস,তোর ভাগ্য কত ভালো দেখ।একই বয়স দুজনের অথচ আমি বন্ধি হয়ে থাকবো আর তুই মজায় মজায় ঘুরে বেড়াবি।আর ইউ লাকি চারু ‘

রিমির কথায় চারু না হেসে পারে না।সে রি‌মির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমকে লক্ষ করে রওনা দেয়।রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দেয় কেউ।চারু ঝট করে পিছনে তাকায়।আদনান দাঁড়িয়ে আছে পিছনে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারন করেছে।আদনান আস্তে আস্তে চারুর দিকে এগোচ্ছে।
অন্যকেউ হলে এতক্ষনে ভয়ে পিছিয়ে যেত কিন্তু চারু করছে তার উল্টোটা।সে আরো আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একপর্যায়ে দুজনেই খুব কাছাকাছি চলে আসে।তাদের দুজনের মধ্যে ফাকা রয়েছে কয়েক ইঞ্চি।

চারুর দৃষ্টি আদনানের মুখের দিকে।আদনান বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে।চারু আস্তে আস্তে আদনানের আরো কাছে আসতেছে।আদনানের পারফিউমের গন্ধে পাগল হয়ে যাচ্ছে চারু।সে আদনানের দিকে এগোতে এগোতে একবারে আদনানের শরিরের সাথে লেগে যায়।আদনান বিব্রত হয়ে খানিকটা পিছিয়ে যায়।চারু তার হাতটা দিয়ে আদনানের মুখটা ছুয়ে দেয়।আদনান জলন্ত চোখে তাকায় চারুর দিকে।

তার রাগান্তিত চোখকেও চারু ভয় পায়।এতে ঢের বিরক্ত হয় আদনান।চারু তার তর্জনী আঙ্গুলটা দিয়ে আদনানের ঠোটটা নাড়াচাড়া শুরু করে।আদনান পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে যায়।চারু নিজের মুখখানা আদনানের মুখের কাছাকাছি নিয়ে আসে।চারুর ঘন লাল লিপষ্টিক পাগল করছে আদনানকে।চারুর নিশ্বাশ পড়তে থাকে আদনানের মুখে।চারু নিজের ঠোটদুটো নিয়ে যায় আদনানের ঠোটের সামনে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

এই মুহুর্তে দরজায় বাড়ি মারে কেউ।সাথে সাথে চারুকে সড়িয়ে দিয়ে ভালো হয়ে দাঁড়ায় আদনান।চারু দরজা খুলতে যেতে যেতে বলে,
—‘ আজকে বাঁচলেও পরবর্তিতে সেই সুযোগ পাবেনা। ‘

চারু দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে থাকা আগন্তুক চারুকে সড়িয়ে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আদনানকে।চারু মেয়েটাকে দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।আদনানও চারুর দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে..

চলবে..ইনশাআল্লাহ

{কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।}

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।