Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1479



নিশ্চুপ ভালোবাসা পর্ব-০৩

0

গল্পের নামঃ-#নিশ্চুপ_ভালোবাসা💕
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ-০৩

দিহান বলে
—এই আদ্রিয়ান তুই কিছু বললি না কেন ঐ মেয়েটাকে? আদ্রিয়ান বলে
—চুপ নাপিত। তারপর সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় দিহানের সাথে মজা করতে, কিন্তু ঐদিকে আধারকে নিয়ে দুজনের মনে চলছে দুই ধরনের ধারণা, দুজনের মনে হচ্ছে তাদের মনে বাজাচ্ছে ঘন্টা কিন্তু সেটা কিসের বুঝতে টাইম লাগলো না পাশেই একটা মন্দির ছিলো সেখানকার ঘন্টার আওয়াজ এর মানে তাদের মনের ঘন্টা না।

[বিদ্রঃহিহিহি কেসা লাগা মেরা মাজাক]

আধার আর তার দুই বান্ধবীরা বসে বসে ক্লাস করছিল, তখনই স্যার কে বলে প্রবেশ করে দিহান আর আশিক। আশিকে দেখেই মিম ভেংচি কেটে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। কিন্তু আধার খুঁজছে আরেকজন কে কিন্তু তার দেখা সে পেলো না। দিহান আর আশিক এসে স্যারকে কিছু বলে তারপর চলে যায়, তার একটু বাদেই স্যার বলতে লাগে

—-ভার্সিটি থেকে টুরে যাওয়া হবে সাজেক। সবাইতো সেই খুশি কিন্তু আধারের তাতে কোন মথা ব্যথা নেই,সে দিব্যি বসে আছে নিজের মতো। একটু পরই তাদের ক্লাস ওভার হয়ে যায়। তাই তারা ঠিক করে লাইব্রেরিতে যাবে, আধার আর তার বান্ধবীরা কথা বলছে আর হাটছে ঠিক তখনই আধার কারো পায়ের সাথে বেজে পরে যেতে চাইলে কেউ তাকে ধরে ফেলে। আধার চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ছিল তারপর ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখে, আদ্রিয়ান তাকে ধরে ফেলেছে। আদ্রিয়ান আধারকে ঠিক ভাবে দাঁড় করিয়ে বলে

—-তুমি মেবি পুষ্টির অভাবে ভুগো তাই যেখানে সেখানে পরে যাও তাই না। আধার বলে

—-ওও আপনি তো অনেক বুদ্ধি মান তা এতো বুদ্ধি কোথায় রেখে ঘুমান বালিশের নিচে, আমি খেয়াল করিনি, কারো পায়ের সাথে বেজে পরে যাচ্ছিলাম, বায়দা ওয়ে ধন্যবাদ। আদ্রিয়ান আঁধারের চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে পরিষ্কার করতে করতে বলে

—-চশমা পড়া মেয়েরা কিউট হয় কিন্তু কানা তো আসলে কানাই। বলে আধারকে চশমাটা পরাতে গেলে আধার সেটা নিয়ে বলে

—-হ্যা আমি কানা আর আপনি আমার নানা হইছে খুশি মি.আদ্রিয়ান। বলেই চলে যেতে নিলে দিহান গান ধরে মারিয়াকে দেখে

—–খারুন লো.. তোর লম্বা মাথার কেশ

হিরো আলমের গান শুনাইয়া পাগল করলি দেশ
খাইরুন লো…খারুন লো… তোর লম্বা মাথার কেশ, মারিয়া বলে

—-নাপিত ভাইয়া তা আপনার সমস্যা কি একটু বলবেন,এমন কাকের মতো কাকা করে গান গাইছেন কেন? দিহান একভ্রু নাচিয়ে বলে

—-কিছু না আমার মাইন্ড আমার যা ইচ্ছা তাই গাইবো, কোনো সমস্যা তোমার? থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না। মারিয়া একটা হাসি দিয়ে বলে

—-হ্যা ছিল এখন নেই কারণ কিছু সময় আগ পর্যন্ত ভাবতাম যে আপনি সত্যি নাপিত কিনা কিন্তু এতো গুলো মানুষের সামনে আপনি স্বীকার করলেন আপনি নাপিত তাই আমি কনফার্ম হলাম, যাই হোক এটা বলেন চুলকাটার ব্যবসা কেমন চলছে?

দিহান বুঝতেই পারেনি মারিয়া তাকে এমন ভাবে কথার জালে ফেলবে। সবাইতো মুখ চেপে হাসছে। আধারও সেম আর সেই হাসিতে চোখ আঁটকে যায় অনেকের, আধার বলে

—ভাইয়া আজ আসি অন্য কোনো দিন আপনার সেলুনে গিয়ে আপনার সেলুনটাকেও দেখে আসবো সাথে গল্পও করে আসবো। আশিক বলো

—-তোমাকে তো চুপচাপ ভেবেছিলাম এখনতো দেখি তুমি কথার রানি। আধার মুচকি হেসে বললো

—-সবসময় সব কথার জবাব দিতে নেই। তখনই মৌ আসে, এসে বলে

—-কি হচ্ছে এখানে এত ভির কেনো? মিম তো মৌকে সহ্যই করতে পারনে তাই বলে

—-মধু সংগ্রহ হচ্ছে তা আপনি নিবেন,মধু তো মৌমাছির খুব পছন্দের তাই না? সবাই এবার জোরেই হেসে দেয়, মৌ তো রাগে শেষ বলে

—–ইউ ইস্টুপিট সাট আপ। মিম বলে

—-ডাবল সাট আপ, আমাকে আধার পেয়ছন নাকি দশটা শুনে একটা বলবো। মৌতো চুপ আশিক বলে

—-বাহ বাহ বাহ তালিয়া তালিয়া। মৌ আশিকের দিকে রাগী চোখে তাকায় কিন্তু আশিক ডোন্ট কেয়ার ভাব নেয়, যার মানে তার কিছু যায় আসে না।

আদ্রিয়ান পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য বলে

—-তোমরা তোমাদের কাজে যাও আর মৌ তুইও যা, বলেই আদ্রিয়ান তার ফ্রেন্ডদের নিয়ে হাটা দিলো। আধার, মারিয়া, মিম লাইব্রেরি থেকে বেড়িয়ে আসে মাত্র তখনই একটা ছেলে আসে আধারের সামনে
ছেলেটা বলে

—-হায় আমি তিয়াস। নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কিন্তু আধার বলেই

—-হ্যালো আমি আধার। বলেই হাটা দিলো তিয়াসও ওদের পিছন পিছন আসছে, আধারা নিচে নেমে ভার্সিটির মাঠে চলে যায় কিন্তু তিয়াস পথ ছাড়তে নারাজ। তিয়াস পিছন থেকে ডাক দেয় বলে

—–এই আধার দাঁড়াও। আধারকে ডাকায় সবার নজর এখন তাদের দিকে। আধার বলে

—-জ্বি ভাইয়া বলুন। তিয়াস বলে

—-ভাইয়া বলো কেন? মিম বলে

—-ওকে তিয়াস কাকু,এবার ঠিক আছে? তিয়াস বলে

—-এই আমি তোমাকে কোন এঙ্গেলস থেকে কাকুর মতো লাগী? মারিয়া বলে

—আরে আরে ভুল বলছিস কেন, উনি তো আমাদের দাদু, তা দাদু ভালো আছো,এই বয়সে আমাদের পিছনে পিছনে যেই হাড়ে দৌড় দিয়েছ, ভালোই তো পারো। তিয়াশ খেপে গিয়ে বলে

—-তোমারা ২টাই ইস্টুপিট, পাগল তোমাদের সাথে কথা কেনো বলছি আমি? যাই হোক আধার তোমার নাম্বর টা দেয়া যাবে। আধারের অনেক খারাপ লাগছে তার সামনে তার বান্ধবীদের অপমান করা, সে বলে

—-হুম আমার সেভেন নাম্বার টা অনেক ভালো লাগে। তিয়াশ বলে

—সেটা না, আমি তোমার ফোন নাম্বর টা চেয়েছি

—- হুমমম অবশ্য, আই ফোন এইট প্লাস। তিয়াশ বলে

—-আরে ঐটা না আমি তোমাকে কল করবো কি ভাবে? সেটা বলছি। আধার বলে

—–আমার নাম ধরে। তিয়াশ বলে

—-ওকে ফাইন তোমার ফোনটা দাও আমি আমার নাম্বার দিয়ে দেই। আধার বলে

—-সরি আমি আমার ফিঙ্গার প্রিন্ট ভুলে গেছি বলেই হাটা দেয় আর দাঁড়ায় না। আর তিয়াশ তো বেকুব এর মতো দাড়িয়ে আছে। আর এইসব দেখে রাগ ফুসফুস করছে একজন ( সেটা কে গো? কেউ আইডিয়া করো, কিন্তু যাকে আইডিয়া করবা সে নাও হতে পারে আবার হতেও পারে) আধার মিম আর মিরায় গল্প করতে করতে আসছে, মিম বলে

— কিভাবে কথা ঘুরালি, আর তোর ফিঙ্গার প্রিন্ট তুই ভুলে গিয়েছিস। মারিয়া হাহাহাহা করে হেসেই যাচ্ছে। আধার ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করে আদ্রিয়ান ওরা সবাই একসাথে বসে আছে আর গল্প করছে। কিন্তু আধার আর আদ্রিয়ানের চোখে চোখ পরলে, আধার সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলে। গেটের বাইরে যেতেই দেখে সেই বখাটে ছেলেরা। আধার কে দেখে তাদের পিছন পিছন হাটতে লাগলো আর গান ধরলো

—-চুমকি চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে? একটা ছেলেতো আধারের ব্যাগ ধরেই টান দেয় আধার এবার রেগে গিয়ে ঘুরে একটা লাগায় চড় ছেলেটা গাল হাত দিয়ে আধারের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর আধারকে একটা চড় বসিয়ে দেয় আধার তাল সমলাতে না পেরে নিচে পরে যায় ফলে হাতে ছিলে আর কপালের ভ্রুর দিকে অনেকটা কেটে যায়। মিম রেগে গিয়ে তেড়ে যায় নিজের জুতা হাতে নিয়ে

—-বাসায় মা বোন নাই তো, তাই না জুতার বারি খেলে রাস্তা ঘাটে আর মেয়েদের অসম্মান করবি না। মিমের চিৎকারে কেম্পাসের অনেক স্টুডেন্ট রা বাইরে চলে আসে, আর মারিয়া আধারকে ধরে বসে আছে। আদ্রিয়ান ওরা এসে বলে

—-কি হয়েছে, আধার কে দেখে বলে ওহহ তুমি আবার পরেগেছে? আধার রেগে গিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলে

—-আপনি না জেনে কথা বলেন কেন? মেয়েদের যে ভার্সিটি বাইরে হেনস্তা করা হয় সে খবর কি আপনি জানেন না? সকালেও করেছে ইভান এখন তো আমার ব্যাগ ধরে টান দিয়েছে তাই আমি চড় দিয়েছিলাম আর সে সেটা আমাকে রিটার্ন বেক করেছে। ভার্সিটির বড় ভাইনা আপনারা আপনাদের তো এইসব জানা উচিত। ছেলেগুলো তো ভয়ে কাপছে। তখনই তিয়াশ এসে একটা ছেলেকে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে

—-কে করেছে এমন? বল আমাকে। আধার বলে

—-ধন্যবাদ। শুনে ছিলাম বাঘের সাথে থাকলে শিয়ালের ও সাহস বেড়ে যায় তা আজ দেখেও নিলাম। বলেই আদ্রিয়ানকে একবার পা থেকে মাথা পর্যান্ত দেখে রাগে মুখ ফিরিয়ে হাটতে লাগলো। আর তিয়াশ বলে

—-এখানে যদি তোদের দেখেছি আবার ভাগ।

ছেলেগুলো দৌড়ে পালায়। আধার আর মিম ওরাও বাসে উঠে চলে যায় রুমাল দিয়ে রক্ত গুলো পরিষ্কার করছিল আধার আর চোখ টলমল করছিল রাগে। বাসায় গিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায় আর সারাদিনে রুম থেকে বের হয় নি। তার মা খেতে ডাকলে

—-সে বলে তার মাথা ব্যাথা। তাই আর জোর করেনি, মারিয়া আর মিমও কিছু বলেনা নয়তো আধারের মা কান্না কাটি করতে লাগবে, কারণ আধার তার কলিজা।

অপর দিকে গোডাউনে চেয়ারে এক হাত পা বাঁধা অবস্থা বসে আছে সেই ছেলেটি আর আরেক হাত টেবিলে রেখে ছুরি দিয়ে গেম খেলছে একজন। পরনে তার কালো হুডি মুখে মাস্ক সাথে তার আরো অনেকে। ছেলেটা ভয়ে একাকার, কালো মাস্ক পরা ব্যক্তি গেমের গতি বাড়িয়ে দিলো। আর ছেলেটা ভায়ে উমম উমমম করছে। এক পর্যায়ে ছেলেটার হাতে গেথে দিল ছুরিটা সে উমমমমম করে কান্না করছে। মাস্ক পরা ব্যক্তিটা উঠে দাড়িয়ে ইচ্ছে মতো কয়েকটা চড় বসায় আর বলে

—-তুই, আধারের দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছিস তোর চোখ আমি তুলে নিব,তুই ওকে এই হাত দিয়ে মেরে ছিলি না? বলেই হাতটা ধরে মুচড়ে ভেঙে দেয়। ছেলেটা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে আর চিৎকার করার চেষ্টা করছে আর এইসব দেখে তার সাথে থাকা অন্য সবাই ভয়ে শেষ, কারণ এর আগে তাকে কেউ এইভাবে রাগ তে দেখে নাই। এতেও যেনো সে শান্তি পেলো না, আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগে পরে দেখে একটা বাশ পেয়ে সেটা নিয়ে ইচ্ছে মতো মারে সে সেই ছেলেটাকে। তারপর বলে

—-এই এটাকে সরা আমার সামনে থেকে নয়তো জানে মেরে ফেলবো বলেই পা দিয়ে দেয় আরো কিছু লাথি মারে। একজন এসে তাকে শান্ত করে ছেলেটাকে নিয়ে যায়,আর সে বলে
—আজকের পর যে আধারের দিকে তাকাবে চোখ তুলে মার্বেল খেলবো। বলেই গোডাউন থেকে বেড়িয়ে গেলো।

চলবে

নিশ্চুপ ভালোবাসা পর্ব-০২

0

গল্পের নামঃ-#নিশ্চুপ_ভালোবাসা💕💕
writer:- ||আইদা ইসলাম কনিকা ||
পর্বঃ০২
সেদিন আধার, মিম আর মারিয়া বাসায় চলে আসে। এসে দেখে আধারের মা রান্না ঘরে রান্না করছে আর আয়রা তার বাবার সাথে কথা বলছে। আধার নিজের রুমে চলে যায় আর তার সাথে মিম,মারিয়াও নিজেদের রুমে গিয়ে তিনজনই ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।তারপর আধার তার বাবার সাথে কিছু সময় কথা বলে ফোনটা রেখে দেয়। আধারের মা রান্না শেষ করে ওদের খেতে ডাকে, ওরা সবাই একসাথে যায়, খাওয়ার সময় আধারের মা বলে

—-তোদের ভার্সিটির প্রথম দিন কেমন কাটলো? মিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আধার বলে

—-মাম্মা ভালোই কেটেছে, যাই হোক খাবারের সময় কোনো কথা না, সবাই নিজের খাবারের মনযোগ দাও।আর মাম্মা তুমিও বস।

তারপর সবাই একসাথে খেতে বসে। খাওয়া শেষে আধার নিজের রুমে চলে যায়, মিম আর মারিয়া অনেক ক্লান্ত তাই তারাও নিজেদের রুমে চলে যায়। আধারদের বাসাটা মুটামুটি বেশ বড়। আধার গিয়ে ঘুম দেয় বিকালের দিকে আধার ঘুম থেকে জেগে হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর একটা বই নিয়ে বসে। বইটির নাম দেয়াল। আধার বইটা পড়ছে। বইটির প্রথম আখ্যানে রয়েছে অবন্তি নামে এক তরুনির। যে ঢাকা শহরে নিজের পিতামহের সাথে থাকে। তার দাদা কিছুটা রক্ষনশীল মানসিকতার। তিনি সব সময় অবন্তিকে নজরদারিতে রাখেন, অবন্তির মায়ের চিঠি লুকিয়ে পড়েন , অবন্তির গৃহ শিক্ষকের উপরেও নজরদারি করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ঢাকা শহর থেকে পালিয়ে যায়, আশ্রয় নেয় এক পীরের বাসায়। পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থাকে অবন্তিকে রক্ষা করতে পীর নিজের ছেলের সাথে অবন্তির বিয়ে দেন…অবন্তির আকস্মিক ভাবে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো মেনে নিতে কিছুটা সমস্যা হয় শুরু হয় জটিলতা। তখনই মিম আর মারিয়া আসে হাতে কফি। রুমে ঢুকে তারা দরজা লাগিয়ে দেয়। আর আধারের দিকে কফির মগটা এগিয়ে দেয় আধার, বইটা রেখে চশমাটা খুলে, কফির মগটা হাতে নিয়ে বলে
—-কারো রুমে আসলে যে নক করতে হয় সেটা কি তোরা জানিসনা? মিম বলে

—-ঐ ছ্যামড়ি চুপ,এখন এইটা বল তখন আদ্রিয়ান ভাইয়াকে কি বললি? আধার ভ্রু-কুচকে বলে

—-তোরা কি করে জানিস উনার নাম আদ্রিয়ান? মারিয়া বলে

—ঐ মৌমাছি না নাম ধরে ডাকলো, আর সবাই আদ্রিয়ান ভাইয়া আসছে বলে সাইড হয়ে দাড়িয়ে ছিল। আধার বলে

—-ওহহহ। মিম বলে

—ওহহ না বলে এটা বল আদ্রিয়ান ভাইয়াকে কি বললি,আর তুই এমন চুপচাপ ছিলি কেনো? কোনো উত্তরই দিলি না ঐ মৌমাছির কথার। আধার বলে

—-সব কথার জবাব দিতে নেই, সময়ই বলে দেয় কে কেমন, আর আদ্রিয়ানকে ধন্যবাদ দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সে এটিটিউড নিয়ে বলে এটা তার কর্তব্য আমি তাও ধ্যনবাদ দিলে সে বলে এখন যাও মনে হচ্ছিল আমার সাথে কথা বলে আমার উপরে দয়া করছে। মিম মারিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলে

— তাই তুই এভাবে রেগে চলে আসছিলি? আধার বলে

—হুমম, আর তোরা মাম্মা কে কি বলতে যাচ্ছিলি আজকে ভার্সিটিতে কি হয়েছে, কিছু বললে কাচা মরিচ খায়িয়ে সাহারা মরুভূমিতে পাঠাবো। মিম বলে

—আচ্ছা বাবা না বললাম, ওকে তুই পড় আমরা যাই।

আধারা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে তার বারান্দার সামনে যায়। সেখান গিয়ে দেখে পরপর ১২ টা বাইক রাইডার বাইক নিয়ে বসে আছে মাথায় হেলমেট, বাইক গুলোর মাঝে ২টা বাইক আধারের চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে পড়ছে না। আধার খেয়াল করে দেখে একটা রাইডার তার বারান্দার দিকেই তাকিয়ে আছে, আধার সেটা দেখে নিজের রুমে চলে যায় আর বই নিয়ে বসে। কিছু সময় পরই সুসু করে বাইকগুলো চলে যাচ্ছে ঠিকই বুঝা যাচ্ছে।

তারপরের দিন সকালে। আধার শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেরহচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে। পরনে তার রেড কালারের একটা শার্ট হাটু নিচ অব্দি সাথে কালো পেন্ট, ভেজা চুলে আধারকে অনেক সুন্দর লাগছে কিন্তু তার মুখে এখনো বাচ্চা বাচ্চা ছাপটা রয়েগেছে। আধার তোয়ালেটা বারান্দায় শুকাতে দিতে যায়। তারপর নিজের রুমে এসে চুলগুলো শুকিয়ে ছেড়ে দেয় আর ঠোঁটে হলাকা লিপজেল লাগিয়ে, রেড কালারের সু জুতা আর তার কালো কালারের ঘরি পরে কলেজ ব্যাগ টা নিয়ে নিচে নামে। মিম বলে

—-আমি তো দূর থেকে ভাবছিলাম আয়রা আসছে, পরে দেখি না আয়রা তো আমার পাশেই বসে আছে। মারিয়া মিম সবাই হেসে দেয়। আধার কিছু বলে না চুপচাপ চেয়ার টেনে বসে পরে, তারপর তিন বান্ধবী বেরিয়ে যায় তাদের ভার্সিটির উদ্দেশ্য আর আধারের মা বাসায় একা থেকে যায় কারণ আয়রাও চলে যায় স্কুলে (সে এবার ক্লাস টেনের পরীক্ষার্থী)। ভার্সিটি দিয়ে ঢুকার সময়। কিছু বখাটে ছেলেদের মাঝে একটা ছেলে বলে

—-পুড়াই লালপরি,। বলেই সবাই হাসাহাসি করে। আধার কিছু বলে না কারণ সে চায় না কোনো ভেজাল হোক। আর ভার্সিটিতে ঢুকার পর একটু এগিয়ে যেতেই দেখে আদ্রিয়ান, আশিক,দিহান আর তাদের বন্ধুরা বসে আছে আর নতুন মানে ফার্স্ট ইয়ারের ইস্টুডেন্ট দের রেগিং করছে। এর মানে আধারের বুঝতে বাকি রইলো না যে তাদেরও রেগিং করা হবে। তারপরও তারা আদ্রিয়ানদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে দিহান মারিয়ার লম্বা বেনি ধরে টান দেয়। মারিয়া চুলধরে আহ বলে পিছাতে লাগে। দিহানকে চুল ধরতে দেখে বলে

—এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি একটু বলবেন। আধার আর মিম ও যায়। দিহান বলে

—-এখানে যে বড় ভাইয়ারা আছে তাদের সালাম না দিয়ে কোথায় যাও? লাইনে দাঁড়াও তোমাদের সাথে বুঝাপড়া আছে। মারিয়া কি কম ফাজিল সে বলে

—-দাঁড়াবো না লাইনে কি করবেন? দিহান বলে

—-তোমার লম্বা চুল গুলো কেঁচি দিয়ে গেছ করে কেটে দিব। মারিয়া বলে

—অহহহ, আপনি তাহলে নাপিত। আদ্রিয়ান পানি খাচ্ছিল আর তার সামনে আশিক দাঁড়িয়ে ছিল মারিয়ার এমন কথা শুনে আদ্রিয়ানের মুখের সব পানি গিয়ে পরে আশিকের গায়ে। আধার আর মিম এমন কাহিনি দেখে না হেসে আর পারলোনা আধারা আর মিম ফিক করে হেসে দিল, আদ্রিয়ান আর আশিক একমনে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, আদ্রয়িন রাগী চোখে আধারের দিকে তাকায় আধার একটু চুপ হলেও আবার হেসে দেয়। আদ্রিয়ান বলে।

—হেই ইউ মিস আধার তুমি আগে আসো তোমার রেগিং আগে করবো। তখনই মৌ মৌছারি মতো তাদের কাছে আসে, এসে বলে

—কি হচ্ছে?। আশিক বলে

—দেখলেই বুঝতে পারবি পক পক বন্ধ কর। দিহান বলে
—না আগে এই মেয়ের, এই তোমার নামকি? আদ্রিয়ান দিহানও আপত্তি করে না মারিয়া বলে

—-মারিয়া। দিহান বলে

—-ওকে তুমি গান গাইবে। মারিয়া বলে

—- ওকে। আর হিরো আলমের বাবু খাইছো গান গাইতে লাগলো

—-তুমি হলে বাবু আমি তোমার হিরো,
করলে তোমায় টেলিফোন বলবে তুমি বাবু খাইছো
ডেটিং এ যখন তুমি আমি যায় তুমি বলো না না না না,
আসতে নাকি দেরি তোমার ভালো লাগে না।
জীবনটা আমার রাখবো যে বাজি তুমি যদি একটি বার বলো,
কোন কথাটি রাখিনি আজীবন বলো
তুমি হলে বাবু আমি তোমার হিরো,
করলে তোমায় টেলিফোন বলবে তুমি বাবু খাইছো,
বাবু খাইছো, বাবু খাইছো, বাবু খাইছো। দিহান বলে

—এই চুপ চুপ, তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিব। আর মারিয়ার এমন গান শুনে মৌ চলে যায়। এখন আদ্রিয়ান এসে দাড়ায় আধারের সামনে আর বলে

—তো রেডি তো। আধার বলে

—হুমম। আদ্রিয়ান বলে

—-তোমার এখন। তখনই আধার বলে

—তারপর? আদ্রিয়ান বলে

— সবার সামনে এমন কিছু করতে হবে যার জন্য সবাই ভয়ও পাবে + অবাকও হবে। আধার বলে

—ওকে। কিছু সময় ভাবার পর সে আদ্রিয়ানের কাছ থেকে পানির বোতলটা হাতে নেয়। আর সেটা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে ছুড়ে মারে সবাই তো অবাক কিন্তু পানি আদ্রিয়ানের গায়ে লাগে না তা নিচে পরে যায়। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে মুখ ফিরে নেয়। আর মারিয়া মিম তো ভয়ে শেষ। আদ্রিয়ান চোখ খুলে বলে

—-What the hell। কি করতে যাচ্ছিলে তুমি? আধার পানির বোতল থেকে পানি খেতে খেতে বলে

—আপনি তো বললেন, তো আমি তাই করে দেখালাম,আপানর বন্ধুদের ফেশ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে আর আমার ২ বান্ধবী ভেঝা বিড়াল হয়ে গেছে। তো আমার টাস্ক তো শেষ মি. আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান ওর ফ্রেন্ডদের দিকে তাকিয়ে দেখে হুমম ঠিকই। আদ্রিয়ান বলে

—-গুড বাট। আধার আদ্রিয়ানকে থামিয়ে বলে

—-দেখুন আপনাদের গ্রুপের লিডার আপনিই,আর কালকে আপনার নাম ডাক শুনে এতোটা তো বুঝতে পেরেছি আপনার সাথে লাগার কারো ক্ষমতা বা ইচ্ছে নেই তাই আপনাকেই বেছে নিলাম,আর আপনার নামটা অনেক বড় আদ্রিয়ান। বাট নাইছ নেম। তা এখন আমরা যেতে পারি? সবাই তো অবাক আদ্রিয়ান কিছু না বললেও তার মুখে একটা রহস্যময়ী হাসি ঠিকই আছে।আশিক কিছু সময় পর বলে

—-এই না না, তোমার সাথের মেয়েটা বাকি আছে। মিম বলে

—-আমাকে কি করতে হবে বলবেন , আমি কিন্তু মারিয়ার চেয়ে ভালো গান গাইতে পারি গাইবো নাকি? আশিক বলে

— না সেটা করতে হবে না, তা তোমার নাম কি? মিম বলে

—-আমি মিম। ওকে আমার টাস্ক শেষ। বায় বলেই হাটা দিল। আর আশিক পিছন থেকে বলে

—-নাম তোমার মিম কিন্তু তোমাকে আমি খাওয়াবো কাঁচা ডিম। মিম পিছনে ফিরে একটা ভেংচি কেটে চেলে যায়। আদ্রিয়ানের একটা বন্ধু রাতুল বলে

—-তিনটাই ডেন্ঞ্জারাস মেয়ে। বিশেষ করে আধার যেমন কিউট তেমনি তার ব্যবহার আদ্রিয়ানকে যখন পানি ছুড়ে মারে আমি যতটা না ভয় পেয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি। দিহান বলে

—-আদ্রিয়ান ব্যাপার কি, ঐ মেয়েকে তুই কিছুই বললি না কেনো? আদ্রিয়ান বলে

—-চুপ নাপিত, আর সাবাই মজা করতে লাগে। আধারের জন্য দুইজনের মনে চলছে ২ ধরনের ধারনা

চলবে

নিশ্চুপ ভালোচবাসা পর্ব-০১

0

গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা 🖤❤️
writer:- ||আইদা ইসলাম কনিকা ||
পর্বঃ-০১

ভার্সিটির মাঠ ভর্তি ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে, মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আধার আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তার দুই বন্ধবী মিম আর মারিয়া , আর তার সামনেই বাইকে বসে আছে আর সেন্টার ফ্রেশ চিবুচ্ছে আদ্রিয়ান আর আদ্রিয়ানের কিছু ফ্রেন্ড। এইতো কিছু সময় আগের কথা, আধার তার নিজের নতুন ভার্সিটিতে আসে, আসলে আধার ঢাকার মেয়ে না তার বাবার বাড়ি চট্টগ্রাম, সে সেখান কারই মেয়ে। তার বাবা একজন বিদেশি প্রবাসী( বিজনেস ম্যান হেনতেন লিখতে লিখতে এক ঘেয়ামি লাগছিল তাই এটাই দিলাম)সে তার মা,আর তার ছোট বোন আয়রা থাকে বাংলাদেশে। তারা ঢাকা এসেছে আধারের জন্য। আধারের স্বপ্ন পূর্ণ করতে তার স্বপ্ন ছিল ঢাকা কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার আর ভাগ্য ভালো থাকায় সে সহ তার বান্ধবী মিম ও মারিয়া সেটা পেয়ে যায়। তো মারিয়া, মিম আর আধার একসাথেই থাকে । [বাকিটা পরে জানতে পারবা]।

ভার্সিতে এসে বেশ ভালোই লাগছিলো আধারের কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল সে তার নিজের ক্লাস খুঁজে পাচ্ছিল না, তারপর জানতে পারে তারা যেই বিল্ডিংএ ক্লাস খুঁজে পাগল হচ্ছে সেটা অন্য ডিপার্টমেন্টর। আর তাদের ডিপার্টমেন্ট হলো মাঠের অপর পাশের দিকে। তাই আধার আর মিম কিছু না ভেবেই তৈড়িৎ গতিতে ছুট লাগায় । আর তখনই সে কারো সাথে ধাক্কা লেগে ঠুস করে নিচে পরে যায় সাথে সেই মানুষটাও , (কি ভাবছ নায়কের সাথে ধাক্কা লাগছে, আমাকে এত দিনে এই চিনলা তোমরা 😪😪 Sent এক বালতি বড় সমবেদনা তাদের জন্য যারা হিরোর সাথে ধাক্কা লাগছে ভাবছে।) আধার তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ের সাথে তার ধাক্কা লেগেছে,মেয়েটা বেশ কিউট লম্বা চুল গুলো বিগ ক্রাল করা পরণে ডার্ক ব্লু কালারের শার্ট আর হুয়াট কালারের জিন্স আর মুখে মেকাপ । মেয়েটা বেশ রেগে আছে আধার উঠে দাড়ায় সাথে সেই মেয়েটাও আর সাথে সাথে একটা চড় লাগিয়ে দেয় আধারের গালে, আর বলতে লাগে

—-ইউ ব্লাডিফুল। চোখে দেখো না নাকি, ওহ হ্যা দেখবে কি করে এর জন্যই তো চোখে চশমা পরেছ। মেয়েটার এমন কথা শুনে আশেপাশের সবাই হুহু করে হেসে দেয় আর আধার মাথা নিচু করে আগের নেয় দাড়িয়ে আছে। মেয়েটার একটা বান্ধবী বলে

—-আরে বাদদে তো মৌ, যত্তসব থার্ড ক্লাস মেয়ে। আধারের কথাটা বেশ গায়ে লাগে কিন্তু সে এখনো কিছু বলে না চুপচাপ সব কথা হজম করছে। মৌ বলে

—-ঠিক বলেছিস, যত্তসব থার্ড ক্লাস মেয়ে। তখনই বাইক নিয়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করে গ্যাং AD, মানে আদ্রিয়ান আর তার বেস্ট ফ্রেন্ড আশিক, দিহানের এর গ্যাং। আদ্রিয়ান হলো ভার্সিটির হেড এর ছেলে আর ভিপি তো নাম ক্ষ্যাতি দুনটাই বেশ। আর পড়া-লেখায় ও ভালো তাই সব টিচারের পছন্দের সে। আর তাছাড়া আদ্রিয়ান ভার্সিটির অর্ধেক মেয়ের ক্রাশ আর বাকি অর্ধেক মেয়ে আশিকের আর দিহানের জন্য ফিদা তিন বন্ধুই কোনো ফিল্মের হিরোর চেয়ে কোনো অংশে কম না।কিন্তু দিহান কোনো এক কারণে আসতে লেট করে। আদ্রিয়ানের গ্যাং দেখে ভার্সিটির মাঠে ছোট খাটো একটা ভির জমে গেছে তাই তারা ঠিক করে তারা সেখানে গিয়ে দেখবে কি হয়েছে, কারণ এটা তার দায়িত্ব, আদ্রিয়ান সেখানে যায় সাথে আশিকও আদ্রিয়ানকে দেখে সবাই সাইড হয়ে যায়, আর মৌতো সেই খুশি কারণ সে আদ্রিয়ান বলতে অন্ধ যদিও আদ্রিয়ান মৌকে ফ্রেন্ডের বেশি কখনো ভাবে না। মৌ ভাবে সে আদ্রিয়ানকে দিয়ে আরো বকা শুনাবে আধারকে। আদ্রিয়ান আর আশিক বাইক থামিয়ে বলে
—কি হয়েছে এখানে? মৌ বলে

— এই থার্ড ক্লাস মেয়েটা আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। আধারকে ইশারা করে। আদ্রিয়ান বাইকে হেলান দিয়ে আধারকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চেক করতে থাকে। মেয়েটা অনেক সুন্দর। চুলগুলো সামনে দিয়ে ববকার্ট করা নিজ দিয়ে হালকা কুকড়ানো, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, পরনে একটা কালো কালারের টপস কালো জিন্স আর স্কার্প ঝুলানো গলায়, মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,কাধেঁ লেডিস ব্যাগ । আদ্রিয়ান সেন্টার ফ্রেশ চিবুতে চিবুতে মৌকে বলে

—-তোর কোন দিক দিয়ে ওকে থার্ড ক্লাস মনে হচ্ছে? মৌ আদ্রিয়ানের কথায় অবাক হয়ে যায় কারণ সে তাকে এভাবে বললো তাই। মৌ কিছু বলে না। আদ্রিয়ান আধারকে উদ্দেশ্য করে বলে

—-এই মেয়ে নামকি তোমার? আধার মাথাটা উঁচু করে তাকায় ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে চোখে লাল বর্ণ ধারণ করে পানিতে টলমল করছে। আধার ভাবে আবার হয়তো তাকে হেনস্তা করা হবে তাও সে বলে

—-আধার । আদ্রিয়ান বলে

—-কোন ইয়ার? আধার মাথা নিচু করেই বলে

—-ফার্স্ট ইয়ার। আদ্রিয়ান বলে

—-তুমি কি ওকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো? আধার তখন সেই আগের মতো আদ্রিয়ানের দিকে তাকায় যার মানে না। তখনই মিম বলে

—না ভাইয়া আমরা তো আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছিলাম। মাঝে এই মৌমাছি এসে ভেজাল লাগিয়ে দেয়। আশিকের অনেক হাসি পায় মিমের কথা শুনে কিন্তু সে হাসে না। তখনই দিহান আসে আদ্রিয়ানকে বলে

—-সরিরে দোস্ত আসতে লেট হলো একটু, তো এখানে কি হয়েছে। তারপর সব বলে আদ্রিয়ান দিহানকে দিহান আধারকে দেখে নেয় আর বলে

—এখানে তোর ওর কোন দোষ নেই। আদ্রিয়ান বলে

—হুমম, মৌ সরি বল ওকে। মৌ আদ্রিয়ানকে বলে

—আমি কেনো বলবো আমি কি দোষ করেছি ও আমাকে ইচ্ছে করে ফেলে দিয়েছে আর সরিও বলেনি। তখন মারিয়া বলে

—আপনি বলতে দিলেতো। মৌ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় কিন্তু তাতে মারিয়া আর মিমের কিছু যায় আসে না। মৌকে আদ্রিয়ান ধমকের সুরে বলে

—-মৌ আমি কিছু বলতে বলেছি।৷ মৌ রাগে গজগজ করতে করতে বললো

—সরি। আর সে দাঁড়ায়নি সেখানে, তার সেই বজ্জাত বান্ধবী গুলোকে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। আদ্রিয়ান আধারকে বলে

—-দেখো মৌএর তরফ থেকে আমি সরি আসলে ও এমনই। যাই হোক ক্লাসে যাও, উপরে দোতালায় বাম পাশের প্রথম ক্লাসটা তোমাদের। আধার মাথা নিচু করেই বলে

—-আচ্ছা।

আর মারিয়া আর মিমকে নিয়ে চলে যায় তাদের ডিপার্টমেন্ট। আদ্রিয়ান কিছু সময় তাকিয়ে থেকে আধারের চলে যাওয়ার পানে।তারা তাদের মতো চলে যায়। মৌ এর সরি বলার পরও আধারের খারাপ লাগছে, লাগাটা কি স্বাভাবিক না, আজ তার প্রথম ক্লাস আর আজই এইসব,আধার চুপচাপ বসে আছে। তার আর এখন কিছু ভালো লাগছে না, ইচ্ছে করছে যেয়ে মৌ এর মাথার সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। কি মনে করে নিজেকে। যাই হোক এখন আর সে এইসব ভাবতে চায় না। ক্লাসে কোনো রকম মনযোগ দিলো, কিন্তু আজ ক্লাসও তেমন একটা হলো না, মারিয়া বলে

—চল আমাদের ডিপার্টমেন্টটা ঘুরে দেখি। কিন্তু আধার বলে

—আজ না কালকে দেখবো, চল বাসায় ফিরা যাক।

মারিয়া আর মিমও কিছু বললো না। যাওয়ার সময় দেখে, গেটের কাছে একটা বড় গাছ আছে সেখানে আদ্রিয়ান আশিক দিহান সহ আরো অনেকেই বসে আছে। আধারের জন্য আদ্রিয়ান যা করেছে তার জন্য তো একটা ধন্যবাদ সে পায়ই। তাই আধার মারিয়া আর মিমকে বলে

—-তোরা একটু দাঁড়া আমি আসছি। মিম আর মারিয়া বলে

—-কোথায় যাস? আধার বলে

—দাঁড়া তো আসছি। বলেই আদ্রিয়ানের কাছে যায়। আদ্রিয়ান আধারকে দেখে এক ভ্রু উঁচু করে বলে

—কি হয়েছে? আধার বলে

—আসলে ভাইয়া সকালের জন্য ধন্যবাদ। আদ্রিয়ান বলে

—দেখে এটা আমার দায়িত্ব ছিল তো ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই। আধার মুচকি হাসি দিয়ে বলে

—তাও ধন্যবাদ। আদ্রিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে

—হুম এখন যেতে পারো। আদ্রিয়ানের কথাটা আধারের গায়ে লাগে, সে কি মনে করছে তার সাথে সে গল্প করতে এসেছে, হেল্প করছে তাই সে ধন্যবাদ দিতে এসেছে। আধার আদ্রিয়ানকে বলে

—হ্যা চলেই যাবো।এখানে বসে থাকবো না। আর ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার দিয়ে গেলাম। বলেই সামনের দিকে হাটা দিলো, আদ্রিয়ানের সব বন্ধুরা তো হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের সাথে রাগ দেখিয়ে গেলো, আর সে কিছুই বললো না। আশিক বলে

—আদ্রিয়ান এটা কি হলো? আদ্রিয়ান এখনো তাকিয়ে আছে আধারের যাওয়ার পানে। আশিক আবার বলে

—এই আদ্রিয়ান? আদ্রিয়ান বলে

—-কি কি হয়েছে? আশিক বলে

—এইটুকো একটা মেয়ে তোকে আদ্রিয়ান খানকে রাগ দেখিয়ে গেলো আর তুই কিছুই বললি না। আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলে

—ওর সব ইনফরমেশন আমার চাই, দেখাচ্ছি মজা তোমাকে, আধার।

চলবে….

তবুও তুমি পর্ব-১১ এবং শেষ

0

তবুও তুমি
পর্ব ১১ (শেষ)
লেখিকা -লামিয়া রহমান মেঘলা
রোদ আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
কেন আছে কে জানি।
আমি চুপচাপ তার বাহুডোর বাঁধা হয়ে আছি। হটাৎ ওর কি হলো আমি জানি না। এমন ব্যবহার কেন করছে ও।
–সরি ছোঁয়া।
–কি হয়েছে?
–ছোঁয়া।
আমি বুঝতে পারলাম ও কাঁদছে কিন্তু কেন কাঁদছে তা বুঝতে পারছি না।
আমি মুখ তুলে তার দিকে তাকায়।
–কি হয়েছে রোদ ।
–ছোয়া আমি জানতে পেরেছি কে অপরাধী।
আমি বুঝতে পেরেছি সব।
আমার দাদা জান তোমার মা বাবাকে মেরেছে।
ওরাই তোমার মা বাবাকে মেরেছে
আমি কথা দিচ্ছি আমি নিজে তোমার দাদা এর জীবন রক্ষার দায়িত্ব নিলাম।
এবং তোমার মা বাবা মৃত্যুর বিচার ও আমি দিবো।
–রোদ তুমি কেঁদো না।
–ভুল বুঝেছি ছোঁয়া তোমায় তোমায় মেরেছি আমি এই হাত দিয়ে। ক্ষমা করে দেও। আমাকে।
–এভাবে বলো না।
–কি বলব আমি দাদা জান আমাকে ছোট থেকে যা বুঝিয়েছে আমি সব সময় তাই বুঝেছি সব সময় তার কথা শুনেছি।
কিন্তু এখন আমার নিজেকে অসহায় লাগছে।
কোন আশা নেই।
সব কিছু ধোয়াসা হয়ে আসছে তোমায় কেন এতো কষ্ট দিয়েছি ছোঁয়া বলতে পারো।
–রোদ।
আমি রোদকে জড়িয়ে ধরলাম
–ভালোবাসি তোমায় তোমার দেওয়া কোন আঘাত আমাকে ব্যাথা দিতে পারবে না।
–আমি ভুল করেছি ছোঁয়া আমাকে ক্ষমা করো তুমি।। –
–রোদ তুমি যা করেছো না জেনে করেছো।
আমি তোমার সাথে আছি থাকবো সব সময়।
–আমি কেন তোমায় কষ্ট দিয়েছি ছোঁয়া।
–আবার সেই এক কথা কেন বলছো

–সরি ছোঁয়া।
রোদ আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
আমিও চুপচাপ ওর বুকের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।
,
,
,
,
দিম কেটে সন্ধ্যা হলো,
রোদ বসে আছে আমার পাশে।
হটাৎ কলিং বেল এর শব্দ।
আমি উঠে দরজা খুলতে অবাক।
ভাইয়া বর্ষা দাঁড়িয়ে।
আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরি।
–কেমন আছিস বোন।
–ভালো ভাই তুই কেমন আছিস?
–ভালো।
–ওদের ভেতরে আসতে দেও।
রোদের কথায় আমি ওদের নিয়ে ভেতরে এলাম।
–এবার পরিবার পূর্ণতা পাবে ছোঁয়া আমরা সবাই এক সাথে থাকবো।
–দাদা জান।।
–দাদা জান ক্ষমা চাইবে দেখো ছোঁয়া দাদা জান ছাড়দ পৃথিবীতে আমার কেউ নেই তুমি ওনাকে মাফ করে দেও।
রোদ আমার হাত ধরে কথা টা বলল।
আমি ভাইয়ার দিকপ তাকালাম
তখন দরজা দিয়ে দাদা জানের প্রবেশ।
–ছোঁয়া বর্ষন আমি আমার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত জদিও তোমার মা বাবাকে ফেরত দিতে পারব না।
দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দেও।
–হ্যাঁ দিবো সত্যি আর কেন চাওয়া পাওয়া নেই।
ভালে থাকুন সুস্থ থাকুন আপনি আমাদের সাথে থাকুন।
বর্ষন ভাইয়ার কথায় ওর দিকে তাকালম
সত্যি আমার ভাই টা উদার মনের।
রোদ বর্ষন ভাইকে জড়িয়ে ধরল।
,
,।
রতে,
–কাল ফিরে যাবো আমরা ছোঁয়া।
–বাসায়।
–হ্যা আর কাল থেকে আমরা এক সাথে থাকবো।
–তুমি জানো হাজার ঝড় ঝাপটা সব কিছুর ভেতর দিয়ে তবুও তোমায় ভালোবাসি 💖
–তবুও তুমি💖
সমাপ্ত

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

তবুও তুমি পর্ব-১০

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_১০
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
ছোঁয়া রোদের কাছে রোদের হুরপরী।
এই হুরপরী যে এতো সুন্দর এতো মায়া তার মুখে এতো মমতা তার বুকে। এটা আসলে শুধু রোদ উপলব্ধি করতে পারে।
রোদ তো ছোঁয়া কে দেখতে দেখতে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে রাজি।
রোদ যখন ছোঁয়াকে দেখে তখন পাশ থেকে কেউ ওর হুস না ফেরালে ওর হুস ফিরে না।
ঠিক এতোটা ভালোবাসে সে ছোঁয়া কে।
★★★
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে মনে পরলো এ বাসায় তো কেউ নেই খাবার রান্না তো আমাকে করতে হবে।
দেখো কি পাজি লোকের সাথে আমার বিয়ে হইছে শুধু শুধু এই ১২ টা পর্যন্ত টেনে বিছনায় রাখার কোন মানে আছে হ্যাঁ।
চিরুনি টা হাত থেকে রেখে বাইরের দিকে পা বাড়ালাম।
★★★
ছোঁয়া কে নড়তে দেখে রোদের হুস আসলো।
ছোঁয়া রুম থেলে বেরিয়ে গেল।
এদিকে রোদ রুমে এলো।
সেও ওয়াসরুমে চলে গেল,
★★★
সকালের খাবার রান্না করছি।
রান্নার কাজ করছি আর ভাবছি রোদ আমাকে সত্যি একটুও বিশ্বাস করলো না।
ওর কি মনে হলো আমি সবটা ওকে মিথ্যা বললাম।। কিন্তু কেন ওর এমন মনে হলো
ও কি তাহলে আমাকে ভলোই বাসে না।
ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষ কে বিশ্বাস করতে হয়।
কিন্তু নাহ আর ভাবতে পারছি না।
আমাকে এখন যে কোরে হোক ভাইয়ার সাথে কথা বলতো হবে ভাইয়ার সাথে কথা না বলতে পারলে কিছু হবে না।
আমি একটা রান্না চাপিয়ে দিয়ে।। দৌড়ে এ বাসায় থাকা টেলিফোনের কাছে গেলাম।
আমার ফোন টা সেই বিয়ের দিন রাগে রাগে রোদ টুকরো টুকরো করে ছেড়েছিল।। পরে আর পরিস্থিতির চাপে সময়ের পরিবর্তনে রোদকে বলা হয় নি।
বলব কি করে যা হচ্ছে বিগত কিছু দিন।
ভাইয়ার নাম্বার ডায়েল করলাম,
কিছু সময় রিং হবার পর ভাইয়া ফোন ধরলো,
–হ্যালো।
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
–কে ছোঁয়া।
–হ্যা রে ভাইয়া।
–কেমন আছিস তুই বোন কই আছিস সোনা আমার।
–ভাইয়ারে রোদ আমাকে বিশ্বাস করে নাই।
–মানে তুই ওকে সব বলেছিস।
–হ্যাঁ।
–কেন বলছিস ছোঁয়া আমি জানতাম ও বিশ্বাস করবে না।
–ভাইয়া তুই বর্ষাকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যা প্লিজ। (কেঁদে)
–আমি তোকে ফেলে কোথাও যাবো না ওরা তোকে মেরে দিবে। (ভয় পেয়ে)
–দিলেও কোন সমস্যা নাই তোরে আমার কসম লাগি তুই বর্ষা কে নিয়ে চলে যা। (কেঁদে)
–তুই এটা কি করলি ছোঁয়া কসম কেন দিলি।(হতভাগ হয়ে)
–হ্যাঁ ভাইয়া তুই চলে যা রোদের হাতের কাছে তুই পরলে তোকে মেরে দিবে।
আর ওর দাদা জানকে জানালে তো সব শেষ। আমার চিন্তা করিস না তুই সব সময় ভাব্বি আমি যেখনে আছি ভালো আছি।
তোকে আমি কসম দিছি তুই না গেলে আমার মরা মুখ দেখবি।
–ছোঁয়া………
–হতাস হস না ভাই আমি সব সময়, প্রান দিয়ে না পারি মন দিয়ে তোর সাথে থাকবো।
যদি কখনো দেখিস আমার কোন ফোন ১ মাসের মধ্যে আসতেছে না তখন বুঝিস তোর বোন আর নেই।
তুই এখনি রেডি হ বের হবি এখনি।
কথাটা বলে ফোনটা কেটে কান্না করতে লাগলাম।
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
ভিশন কষ্ট হচ্ছে।
কেন এতো কষ্ট হচ্ছে জানি না।। পৃথিবীতে মৃত্যুর থেকে বড়ো সত্যি হয়তো কিছু নেই।
আজ সেই সত্যির মুখোমুখি হতে তবে কেন এতো কষ্ট।
এ দুনিয়ার মায়াতে জড়িয়ে গেছি।
ভাইয়ার সাথে কাটানো শেষের একটা বছর সত্যি ভালো ছিল।
রোদ আমার জীবনে আসায় ওর সাথে প্রতিটি মুহূর্ত আমার জন্য শুখের ছিলো।। পৃথিবীর সব শুখ আমাকে দিয়েছে ও।
কিন্তু চজ বড্ড ভয় হচ্ছে । ।।
হয় তো আমি বুঝতে পারছি আর সময় নেই।
,
,
,
,
বর্ষনের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
হাতে ফোনটা নিয়েই সেভাবে বসে আছে।
বোনের বলা প্রতিটি কথা বুকের মধ্যে হাজার টা চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে বর্ষনের।
কি করবে কি না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
বোন কেন কসম দিলো।
কি দরকার ছিল।
বর্ষা বর্ষনের কাছে এসে ওর ঘাড়ে হাত দেয়।
এতো সময় সব কথাই বর্ষা শুনেছে।
ফোনটা লাউডে ছিল।।
বর্ষন বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে বর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আর শব্দ করে কেঁদে দেয়।
তা দেখে বর্ষাও কেঁদে দেয়।
কি বলে শান্তনা দিবে বর্ষা বর্ষন কে সে নিজেও জানে না।
,
,
,
,
রান্না শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে মুছে নিলাম।
রোদ এলো আমার পাশে দাঁড়ালো।
আমি ওর দিকে তাকাতে আমার কোমড় জড়িয়ে নিলো।
আমি ড্যাবড্যাব চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।। ওর মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছি।
–মনে পরে ছোঁয়া আমাদের প্রথম দেখার কথা।
ওর কথায় ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে পড়ে গেল।
আমাদের প্রথম দেখার কথা,
৫ বছর আগের কথা,
আমি ক্লাস ১০ এ পড়ি,
অতিত,
বৃষ্টির দিনে বান্ধবী বর্ষার সাথে ছোঁয়া
(বিঃদ্রঃ এই বান্ধবী বর্ষাই কিন্তু বর্ষনের স্ত্রী,)
হেঁটে বাসায় ফিরছে স্কুল থেকে।
ছোঁয়া এই বৃষ্টির রাস্তা দিয়ে লাফাতে লাফাতে হাঁটছে ।
তা দেখে বর্ষা বলল,
–কি রে কি সমস্যা তোর পেছনে ফিরে হাঁটছিস কেন পরে যাবি ত।
–না পড়বো না পড়লে আমার বর ধরবে।। কথাটা বলতে না বলতে ছোঁয়া পেছনে থাকা কিছু সাথে ধাক্কা খেয়ে যেই না নিচে পরবে,
বর্ষা এগিয়ে আসতে আসতে,
ছোঁয়াকে কেউ ধরে বসে।
ছোঁয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
কিন্তু কিছু সময় পর বুঝতে পারে ওকে কেউ ধরেছে।
যার জন্য ও নিচে পরে নি।
যাক বাবা এবারের মতো কোমড়টা বেঁচে গেছে।
এই রাস্তায় পরলে একে কোমড় দুই কাটা ছেড়া ফ্রি।
ধিরে ধিরে চোখ মেলে তাকায় ছোঁয়া।
একটা লম্বা উজ্জ্বল ফর্সা মতো করে একটি ছেলের বুকের মধ্যে লেপ্টে আছে ছোঁয়া।
ছোঁয়া নিজেকে সামলে সরে আসে,
ছেলেটি হাত দুটো বুকে বেঁধে ছোঁয়ার দিকে তাকায়,
–রাস্তা দিয়ে এভাবে নাচানাচি করবে আর বলবে পড়ে গেলে আমার বর ধরবে।
ভালোই বুদ্ধি।।
–দেখুন আমি সরি খেলায় করি নি আর আপনি এগুলা কি করে শুনলেম আপনি কি আমাদের ফলো করছেন?
–যাহ বাবা তোমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচালাম আর তুমি কই ধন্যবাদ দিবা তা না আচার বিচার শুরু করেছো।
–প্রথমত আমি আপনাকে চিনি না আপনি আমায় তুমি করে কেন বলছেন?
–এই দেখো তুমি তো বললে পড়ে গেলে আমার বর ধরবে।
তো পরে গেলে ধরলাম আমি হলাম তোমার বর নাকি।।
ছেলেটার কথা শুনে বর্ষা আর ছোঁয়া দুজনের চোখ রসগোল্লা হয়ে গেছে।
কি বলে কি এই ছেলে।
–এই ছেলে এই মুখ সামলে কথা বলুন।। কি আজব কথা বলছেন আপনি।
এই বর্ষা৷ চল তো।।
ছোঁয়া পাশ কাটিয়ে চলে আসতে গেলে ছেলেটি ছোঁয়ার হাত ধরে বসে,
আর নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,
–পালিয়ে লাভ নেই পারবা না আমার থেকে পালাতে।
তুমি আমারি হবে শুধুই আমার।
ছোঁয়া জোড়াজুড়ি শুরু করে নিজেকে ছাড়ানোর।।
কিছু সময় পর ছেলেটা ছোঁয়া কে ছেড়ে দেয়।
আর ছোয়া বর্ষাকে নিয়ে বাসার দিকে চলে আসে।
ছেলেটা ছোঁয়ার যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে,
বর্তমান।
ঠোঁটের উপর কিছু অনুভব হতে ভাবনা জগৎ থেকে বর্তমানে ফিরে দেখি।
মহাশয় আমার উপর হামলা চালিয়েছে।। এই ছেলে জীবনে শুধরাবে না।
চলবে,

তবুও তুমি পর্ব-০৯

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৯
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
–আর একটা কথাও বলবে না তুমি ছোঁয়া।
–রোদ আমাকে বিশ্বাস করো।
–না করি না বিশ্বাস আমার দাদা জানের সম্পর্কে তোমাকে এগুলা বলার সাহস কে দিয়েছে।
–রোদ আমাকে বিশ্বাস করো।
–বাসায় চলো
রোদ আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে বাসায় নিয়ে এলো।
বাসায় এনে ঠাস করে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো
আমি থুবড়ে গিয়ে মাটিতে পরলাম।
ব্যাথা পেলাম প্রচুর।
রোদ আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
–তুমি আমার দাদা জানের সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা বলবে না আমি বলে রাখলাম।
–কিন্তু রোদ বিশ্বাস করো,
–বর্ষন নামের ওই ছেলেকে আমি দেখে নেবো ও নিশ্চিত তোমায় খুব বাজে ভুল বুঝিয়েছে।
কথাটা বলে ও হনহনিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল।
–হে আল্লাহ আমি যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। এবর কি করব।
ভাইয়ার কোন ক্ষতি করে দিলে আমি মরে যাবো।
কি করব।
ভাবতে ভাবতে রোদ বের হলো।
আমি তখনো মেঝে তেই বসে ছিলাম।
রোদ আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পরলো।
আমি ধিরে ধিরে উঠে বারান্দায় চলে গেলাম।
আবার সেই মিষ্টি বাতাস।
গ্রামের মো মো করা পরিবেশ।
এতো ভালোবাসা এতো বিশ্বাস কিছুই আজ কাজে দিলো না।
রোদের বিশ্বাস হলো না আমকে।
ও ওর দাদা জানকে সব বলে দিলে সত্যি আমাকে তো মারবেই আমার ভাইয়া টাকেও ছাড়বে না।
ভাইয়ার কথা ভাবলে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠছে।
কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
ভাইয়াকে কি করে বাঁচাবো।
আমি নিরুপায়।
ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলতে হবে ওকে জানিয়ে যদি কিছু করা যায়।
কিন্তু কি করব হে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো।
চোখ বন্ধ করতে চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি বেয়ে পরলো।
হটাৎ মনে হলো কেউ আমাকে কোলে তুলেছে।
হুট করে পরে যাওয়ার ভয়ে হাতের কাছে যা পেলাম তাই আঁকড়ে ধরলাম।
তার পর তাকালাম।
রোদ আমাকে তুলেছে।
কিন্তু কেন।
অবাক হলাম।
ও আমাকে তুলে বিছনায় নিয়ে গেল।
–কি ভাবছিলা ওখানে দাঁড়িয়ে? কি করে পালানো যায়?
তা আর হচ্ছে না তোমায় আমি পালাতে দিবো না।
সারা জীবনের জন্য বেঁধে রাখবো।
আমি না রাখলেও আমাদের অনাগত সন্তান বেঁধে রাখবে।
তুমি আর যাই করো এই রোদকে ত্যাগ করতে পারবা না।
তুমি চাইলেও না। না চাইলে তো ভালোই।
তোমায় আজ থেকে সারা জীনের জন্য বাঁধা করে রাখার ব্যাবস্থা করব আজ।
আমি ওর দিকে রসগোল্লার চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছি,
ও কি পাগল।হয়েছে কি বলছে এগুলা।
আরে আজব আমি কি পালাতে চেয়েছি নাকি পালানোর কথা ভাবছি।
বাইরে ভারি বর্ষা।
বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে।
শীতল বাতাসের আনাগনা।
চারিদিকে থমথমে পরিবেশ।
মিষ্টি ঠান্ডায় সবাই ঘুম।
সব ঘরের লাইট বন্ধ।
প্রচন্ড গরমের পর যখন বৃষ্টি হয় তখন এতোটা আরাম লাগে যে সবাই ঘুমিয়ে যায়।
এই থমথমে সুন্দর পরিবেশে রোদ ছোঁয়ার ভালোবাসাকে আজ সত্যি করে পূর্ণতা দিলো রোদ।
,
,
,
,
সকালে বৃষ্টির পর চিকচিক কাঁচের মতো সচ্ছ আলো বের হয়েছে।
চারদিকে সুন্দর আলোতো আলোকিত।
ছোঁয়ার মুখে আলোট ঝলকানি পরতে ছোঁয়ার ঘুম ভেঙে যায়,
,
,
ঘুম ভাঙতে নিজেকে রোদের বাহুডোর আবদ্ধ দেখতে পাই।।
ওর হাতের বাধন আলগা করার চেষ্টা করি কিন্তু ফলাফল শূন্য সে আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
তার মানে কি ও জেগে।
আমি আরও একটু নড়তে ও হুট করে আমার ঘাড়ে কামড়ে দিলো,
আমি ব্যাথায় ‘আউ’ বলে উঠলাম
–আমার ঘুম হয় নি নড়ছো কেন?
–আমি উঠবো।
–না ঘুমাবা চুপচাপ ঘুমাও।
–আল্লাহ।
–ছোঁয়া রাগ তুলো না।
কথাটা বলে সে আবার ঘুমোলো।
বাহ মহাশয় ঘুমোবেন আর আমি তার বুকের মধ্যে শুয়ে থাকবো।
এমনি তো দরকার।। ঘুম তো নয় ঢং যতোসব।
অসহ্য কর।।
ধুর ভালো লাগে না।
চোখ বন্ধ করে নিলাম আবার না চাইতেও।
,
,
,
এদিকে,
বর্ষন ছোঁয়ার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়ার অবস্থা ঠিক কেমন তা বুঝতে পারছে না।
বর্ষা চেষ্টা করছে সব সময় বর্ষনের সাথে থাকার। কিন্তু জেনেশুনে বোনকে রাক্ষস গুহায় রাখার পর পৃথিবীর কোন ভাই এর চোখেই ঘুম থাকবে না।। বর্ষন জানে ছোঁয়া যদি কখনো ভুল করেও সত্যি রোদকে বলে রোদ তো বিশ্বাস করবেই না উল্টে তার বোনটার উপর টর্চার করবে।
ছোঁয়া বলেছিল ভাইয়া আমার বিশ্বাস রোদ আমার কথা বুঝবে।। কিন্তু রোদ যে তার দাদা জানকে ভিশন বিশ্বাস করে এটা ছোঁয়া বুঝতেছে ন।
বর্ষনের মাথায় শুধু মাত্র একটা কথা।
ছোঁয়া কখনো এ কথা রোদকে বললে রোদ ওকে তো মেন্টানি ফিজিকালি টর্চার করবেই সাথে বর্ষন কে হয় তো ছেড়ে দিবে ছোয়ার জন্য । কিন্তু এ কথা রোদ তার দাদা কে বললে বর্ষন কে তো মারবে বর্ষা কেও ছাড়বে না। ছোঁয়া তো দুরে থাক।
রোদকে না জানিয়েই ছোঁয়াকে মেরে দিবে।
এ কথা বর্ষন খুব ভালো করে জানে।
ওরা এতোটাই প্রভাবশালী যে ওদের কোন বিচার ই হবে না।
যদি হতো তবে তাদের মা বাবা খুনের বিচার টাই আগে হতো।
বর্ষনের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে বর্ষার আগমন।
–কি করছো?
–কিছু না।
–তোমায় মুখটা সব সময় উদাস কেন থাকে বর্ষন।
–তুমি তো সবি জানো বর্ষা।
–হ্যাঁ সব জানি আমি কিন্তু তুমি এভাবে কেন ভেঙে পরছো। আমি তো আছি তোমার পাশে আমার বিশ্বাস ছোঁয়া রানির কিছু হবে।
রোদ আর যাই করুক ছোঁয়া কে ভিশন ভালোবাসে।
–আমার চিন্তা সব জায়গায় বর্ষা তোমায়কে নিয়ে ছোঁয়া কে নিয়ে সবাইকে নিয়ে।
আমার খুব স্ট্রেস লাগছে বর্ষা।
–আল্লাহ এতো চিন্তা করো তার উপরে ঠিক মতো খাও না তোমায় প্রেশার সব সময় লো থাকে।। দেখি এখন মেপে দেখি।।
বর্ষা বর্ষনের প্রেশার টা মেপে অবাকি হয়।
সত্যি ভিশন কম।
বর্ষনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ও কতোটা চিন্তা করছে।
বর্ষা গিয়ে ডিম আর দুধ নিয়ে আসে।
যোর করে সেটা বর্ষন কে খাইয়ে দেয়।
ভালোবাসার মানুষ টার এমন অবস্থা কেউই দেখতে পারে না।।
,
,
,
,
সকাল না দুপুর ১২ টা বাজে।
মহাশয় এর ঘুম ভাঙতে সে আমাকে ছেড়ে দেয়।। এতোটা সময় শুধু শুধুই আঁটকে রেখেছিল।।
উঠে গোসল সেরে একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরলাম।
আমি শাড়ি পরে বেরিয়ে এলাম।
আয়নার সামনে চুল গুলো আঁচড়াচ্ছি,
★★★
বেলকনি থেকে ছোঁয়াকে দেখা যাচ্ছে। গোলাপি রঙের শাড়িটা ওর উপর বেশ ফুটেছে।
বউ বউ লাগছে।
ছোঁয়ার এই সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেখ রোদের চোখ। কারন রোদ ছোঁয়া কে ভলোবাসে।
ভালোবাসা চোখ দিয়ে তুমি যাকে দেখবে সেই পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে সুন্দর মানুষ টি।
চলবে,

তবুও তুমি পর্ব-০৮

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৮
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
রোদ আমার আবদার শুনে অবাক।
–এখন এই রাতে?
–চলুন না।
আমার মুখের হাসি দেখে রোদ সেটাকে ফেলতে পারলো না।
আমাকে নিয়ে বের হলো গ্রামের রাস্তায়৷
ফুরফুরে শীতল বাতাস।
আমি আর রোদ।
আমার মাথাটা রোদের কাঁধে।
চুপচাপ নিশ্বাস নিচ্ছি শুধু।
–রোদ৷
–হুম।
–আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।
–কি?
–এদিকে বসুন।
আমরা একটা গাছের তলায় বসলাম।
–কিছু সিরিয়াস।
–আমার আজ আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে।
–বলো,
–আমি কে জানেন?
আমার পরিচয় কি?
আমি যে এতিম আমার বাবা মা কে ছিলেন?
–এখন এসব প্রশ্নের কোন মানে নেই।
–আছে।
আমি আরিফ খান আর কোনিকা খানের দুই মাত্র সন্তান।
আমার বড়ো ভাই বর্ষন খান।
আমার কথা শুনে রোদের মুখের অবস্থা পুরোটাই পাল্টে গেল।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
–হ্যাঁ যে মেয়েটা আর ছেলেটাকে আপনি এতো দিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন মারবেন বলে।
আমরাই সেই দুই জন।
বর্ষন আমার আপন ভাই এ কথা আমিও জানতাম না।
আপনি চলে যাবার দিন ওর সাথে আমার দেখা৷
একটা কোর্ট দিয়েছিল আমাকে।
সেটা ফেরত দিতেই ওর সাথে আমার দ্বিতীয় বার দেখা,
অতিত,
–এই বর্ষন নামক ছেলেটার কোর্ট আমার কাছে কি করব এটার।
তাকে তো দিতে হবে। কিন্তু খোঁজ কি করে পাবো।
সব ভাবতে ভাবতে হুট করে ফোনটা বেজে উঠে।
অচেনা নাম্বার থেকে এই সময় কে ফোন করলো।
ছোয়া ভাবতে ভাবতে ফোন তুলে,
–আসসালামু আলাইলুম।
–আলাইকুম মসসলাম।
আমি বর্ষন বলছি।
–বর্ষন আচ্ছা আপনার কোর্ট টার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ওটা ফেরত দিবো কি করে।
–কাল দেখা করুন।
–কোথায়।
–ক্যাফেতে।
–আচ্ছা
ছোঁয়া ফোনটা রেখে দেয়।
পরের দিন সকালে,
ছোঁয়া সময় মতো ক্যাফেতে পৌঁছে যায়।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টি শেষে সবে রোদ বের হলো।
চারি দিকে পানির উপর আলোতে চিকচিক করছে পরিবেশ।
বর্ষন পেছন থেকে ছোঁয়াকে ডাক দেয়।
ছোঁয়া পেছনে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দেয়।
বর্ষন ছোঁয়ার সামনে আসতে ছোঁয়ার ব্যাগে।
থাকা কোর্ট টা বর্ষন কে দেয় আর বর্ষন সেটা গ্রহন করে।
এভবে তাদের সম্পকের শুরু হয়।
বর্ষন ছোঁয়াকে বরাবর ছোট বোনের মতো দেখতো ছোঁয়া বর্ষন কে ভাই এর মতো
রোদের অপূর্ণতা কে বর্ষন বুঝতে দেয় নি সব সময় ভায়ের মতো আগলে রেখেছে।
৫ মাস পর।
ছোঁয়া বসে আছে কলেজের বাইরে একটা ছাউনির তলায়।
দুর থেকে দেখা যায় বর্ষন দৌড়ে আসছে,
ছোঁয়া বর্ষন কে এভাবে দৌড়াতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।। কিছু হলো নাতো।
ছোঁয়া উঠে দাঁড়ায়।
বর্ষন ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে ছোঁয়াকে হুট করে জড়িয়ে ধরে।
ছোঁয়া হুট করে এ বিষয় টাকে সহ্য করতে পারে না বর্ষন কে জোরে ধাক্কা দেয়।
বর্ষন ছিটে আবার ছোঁয়ার দিকে তাকায়
–ছোঁয়া।
বর্ষনের চোখের কেনে পানি চিকচিক করে।
–কি সমস্যা?
–তুই জানিস তুই কে?
–মানে কি?
–তুই আমার বোন আমার এক মাত্র বোন।
–কি বলছেন ভাইয়া এগুলা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
–তুই আমার বোন
আমরা দু’জন ভাই বোন তুই এক দম এতিম নস তোর আমি আছি।
বাবা আরিফ খান আর মা কোনিকা খান।
ছোঁয়া বর্ষনের মুখে বাবা মায়ের নাম শুনে আকাশ থেকে পড়লো।
–কিহ।
–হ্যাঁ এই দেখ পিচ্চি কলের ছবি যখন তুই অনেক ছোট আমিও আছি।
আমি ছবিটা দেখে পুরোই পাথর হয়ে গেলাম।। এমন ছবি আমার কাছেও আছে ঠিক যেন এর কর্বন কপি।
–এই ছবিটা কে তো আমি আমার বাবা মা আর ভাই হিসাবে চিনতাম।
–হ্যাঁ এটাই আমার কাছপও আছে
আমাদের বাবা মায়ের মৃত্যুর আগে ওরা দুইটা ছবি আমাদের দু’জনের সাথে দিয়ে দেয়।
–ওদের মৃত্যু কি করে?
–ছোঁয়া রোদ তোর ভালোবাসা আমাদের সব থেকে বড়ো শত্রু।
–মানে?
–আমার মা বাবাকে রোদের দাদা হত্যা করেছে। সে দিন হয়ত আমিও মারা যেতাম কিন্তু মা বাবা খুব কষ্টে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
–কি বলছেন ভাইয়া?
–ঠিকি বলছি,
প্রায় ২০ বছর আগের কথা তুই তখন মায়ের কোলে আমার বয়স ৫-৬,
আমার বাবা মা ছিলেন সাংবাদিক,
তারা রিপোর্ট করতে করতে চৌধুরী বাড়ির এক মাত্র জ্বালের সম্পত্তির যে সমস্ত ডকুমেন্টস আছে সব কিছু জব্দ করে।
এদিকে রোদের দাদা সেটা জানতে পেরে মা বাবাকে প্রথম বলে সেটা দিয়ে দিতে কিন্তু সেটা দেয় না তারা।
হয়ত এটাই ভুল ছিল,
সেগুলা না দেওয়ায় মা বাবাকে নির্মম ভাবে মেরে ফেলে।
সেদিন বাসায় মা আমাদের নিয়ে পেছন দরজায় এসেছিল।
আমার পকেটে একটা ছবি আর তোর বুকে একটা ছবি দিয়ে তোকে আমার কোলে তুলে দিয়েছিল।
আমি তোকে বেশি সময় রাখতে পারি নি।
রাস্তায় একটা আন্টি ভেবেছিল হয়ত আমি শিশু চোর তাই তোকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েগেছিল তখন থেকে তুই একা আমি একা।
আমি যে পরিবারের সন্তান হিসাবে বড়ো হয়েছি আমাকে ওরা খুব ভালোবাসে আজ এই পর্যন্ত আমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছি তাদের ই জন্য।
কিন্তু আজ এই সব কথা আমি শুত্র ধরে ধরে জানতে পারলাম।
–ভাইয়ারে রোদ তাহলে আমাদের কেন ভুল বুঝবে।। দোষ তো ওর দাদার।
–না রে বোন রোদ তার দাদার কাছে পন করেছে আমাদের দু জনের এক জন কে পেলেও সে অবস্থায় সেই জায়গায় যাতে আমাদের মৃত্যু হয়।
–কেন?
–কারন বাবাকে মেরেছিল ওরা আগে। বাবার
মৃত্যুর সময় আমি মা তুই লুকিয়ে ছিলাম।
তখন বাবা বলেছিল,
*****
–আমাকে মেরে দিয়ে ভাবিস না সব কালো কাজ লুকিয়ে যাবে।
আমার দুই সন্তানের কাউকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবে।। এবং তাদের হাত ধরে তোর শাস্তি হবে।
–তোর সন্তান দের বাঁচতে দিলে তো।
****
-কিন্তু যখন রোদের দাদা আমাদের কে পায় না তখন বুঝতে পারে সত্যি কিছু হয়েছে। আমরা পালিয়েছি তখন সে তার ভালোবাসা রোদকে তৈরি করে শুধু মাত্র জেদের কারনে আমাদের দুজনের এক জন কে সামনে পেলে রোদ সেখানে মেরে দিতে বাধ্য কারন রোদ ওয়াদা বদ্ধ এবং ও ওর দাদার কসম কেটে সপথ নিয়েছে।
–এগুলা কি করে জানলে ভাই।
–দেখ রোদ গত ১৫ বছর জবত আমাদের খুজতেছে এগুলা তার প্রমান।
বর্ষন কিছু কল রেকর্ড আর ছবি দেখায়।
ছোঁয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না হচ্ছে টা কি।
–ভাই এবার কি করব।
–জানি না বোন খবরদার তুই রোদকে তোর পরিচয় দিবি না।।
বর্তমান,
–সেদিন ভাইকে জড়িয়ে বহুত কেঁদে ছিলামম।
সেই ছবি গুলো তোমার গার্ড তোমাকে দিয়েছে রোদ।
রোদ আমার ভাই আর আমি জানি তোমার সাথে আমাদের মোকাবেলা কখনো সম্ভব না।
তাই আমি তোমার সামনে বসেছি এতো দিনের ভালোবাসার এইটুকু দাম দিও আমার ভাইকে ছেড়ে দেও।
আমার কথা শেষ হতে হটাৎ রোদ আমাকে জোরে একটা চড় দিয়ে দিলো।। আমি ছিটক রাস্তায় পরলাম।। পিজের কারনে হাত ছুলে গেল।
আমি গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালম।
–মিথ্যা কেন বলছো ছোঁয়া আমার দাদা জান কখনো এমন করতে পারে না।
তোমার মা বাবা খুনি ছিল আমার মা বাবাকে মেরেছে।
যার জন্য আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি তোমাদের।
আমার মা বাবার খুনের শাস্তি দিবো বলে।
–না তুমি ভুল বিশ্বাস করো আমার মা বাবা সাংবাদিক ছিলেন।
তোমার দাদা জানের অনেক কালো কাজের ব্যাবসা আছে উনি শিশু ও পাচার করেন।
–ব্যাস
চলবে,

তবুও তুমি পর্ব-৬+৭

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৬
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
ওয়াসরুমে গিয়ে আয়নায় তাকাতে দেখতে পেলাম আমার কাল রাতে শাড়িটা নেই অন্য একটা শাড়ি।
কিন্তু আমার শাড়ি কে বদলে দিলো।
এ বাড়িতে কোন মেয়ে মানুষ নেই তাহলে অবশ্যই রোদ ই পাল্টেছে।
বেশি চিন্তা না করে গোসল সেরে নিলাম।
বাইরে এসে চুল গুলো আঁচড়ে নিচে চলে এলাম।
রোদ এদিকে সব গুছিয়ে ফেলেছে।
আমি নিচে নামতে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে চেয়ারে বসায় আর নিজে আমার পাশের চেয়ারে বসে পরে।
–নেও খেয়ে নেও।
–আপনিও খান।
–হুম।
রোদ খাবার খাচ্ছে আমি খাবার খাওয়ার মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকাচ্ছি।
সে খুবই তৃপ্তি করে খাচ্ছে।
–তোমার রান্না অনেক দিন পরে খাচ্ছি।
বাইরে গিয়ে খুব মিস করতাম।
মনে আছে আগে তুমি রোজ আমার জন্য রান্না করতে।
রোদর কথায় আমার মনে পড়ে গেল পুরোন সে দিন গুলোর কথা,
ছোঁয়া তখন ক্লাস ১১ তে সবে উঠেছে,
অতিত,
–বর্ষা (ছোঁয়ার বান্ধবি)
–কি রে?
–দেখ আমি তো ভুলেই গেছি রোদ আমার জন্য অপেক্ষা করছে কলেজের বাইরে আমি ওকে প্রায় ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে রেখেছি তাও ওই খাটাস পোলার গলে কথা কইতে গিয়ে।
কেন যে পথ আটকালো।
রোদ তো রেগে আছেই এখন যদি জানতে পারে এটা পেলার গলে কথা কইছি তাইলে আমারে মাইরে ফেলবে।
কি করতাম ক তো।
–তোর একটু বাড়াবাড়ি তোকে বললাম চল তুই মজে গেলি।
–আরে ধুর আমি কি জানতাম নাকি ওই বেদ্দপ আমরে প্রপোজ করবে।
–হ জানতে না আমি বলেছিলম এখন বুঝো ঠেলা।
–দেখ বর্ষ প্লিজ কিছু কর হেল্প কি।
–একটা আইডিয়া আছে কিন্তু যদি তুই পারিস তবে।
–কি আইডিয়া।
–রান্না পারিস তো তাই না।
–হুম।
–তো এই ১ বছর হলো কখনো রোদকে রান্না করে খাইয়েছিস?
–না।
–হুম তুই গিয়ে ওকে তোর রান্না করা খবার খাইয়ে বলবি সরি ফর লেট।
–তাতেই হবে সিওর তুই?
–হ্যাঁ তাতেই হবে সিওর আমি।
–আচ্ছা তাহলে এখন।
–এখন তো ভাইয়া কিছু বলবে না চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে বাসায় যাবে তাই না।
–হুম তা তো।
–বাসায় গেলে ওনার হাত ধরে ঘরে বসাবি তার পর রান্না করবি।
–আচ্ছা ধন্যবাদ বাবু।
–ধুর চল।
ছোঁয়া বর্ষার সাথে রোদের কাছে যায়।
রোদের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে রোদ বেশ রেগে।
ছোঁয়া চুপচাপ রোদের সাথে বাসায় চলে আসে।
গাড়ি থেকে নেমে,
–রোদ।
–হুম (গম্ভীর ভাবে)
–চলুন একটা জিনিস দেখাবো।
রোদ কোন কথা না বলে ছোঁয়ার সাথে হাঁটা শুরু করলো।
রোদ ছোঁয়ার বেডরুমে গিয়ে ছোঁয়ার পড়ার টেবিলের চোয়ার টেনে বসে।
রোদ আর যাই করুক কখনো ছোঁয়ার কথা ফেলে নি।
ছোঁয়া দৌড় দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
এক বাটি নুডলস বানিয়ে নিয়ে ঘরে আসে।
রোদ ছোঁয়ার বই গুলো দেখছিল।
ছোঁয়া বাটি নিয়ে রোদের দিকে এগিয়ে আসে,
–সরি ফর লেট আর এমন হবে না।
ছোঁয়ার নরম গলার কথা শুনে রোদ ছোঁয়ার দিকে তকায়।
হাতের বাটি দেখে রোদ কিছুটা অবাক হয়।
–কি এগুলা?
–নুডলস।
–(রোদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়)
–আরে আমি রান্না করেছি আপনার জন্য।
রোদ হেসে দেয়
–তুমি রান্না পারো?
–হ্যাঁ।
–আগে তো বলো নি।
–এখন তো বলছি রাগ কমছে?
রোদ হেসে বলল,
–ছোঁয়া রানি তুমি আমার মনের রানি তোমার উপর রাগ করে থাকা যায় না।
রোদ ছোঁয়ার রান্না খাবার খেয়ে প্রসংশায় পঞ্চমুখ।
ভালোবাসে যে মেয়েটাকে তার সব কিছুই ভালোবাসে রোদ।
বর্তামান,
–ছোঁয়া এই ছোঁয়া।
–হুম।
–খাচ্ছো ন কেন শরীর খারাপ করেছে।
–না তেমন কিছু না খাচ্ছি।
ছোঁয়া রোদ খাবার শেষ করে।
,পুরোটা দিন মেঘলা আকাশ ছিল।
বিকালেও ফুরফুরে বাতাস সাথে মেঘ মেঘ করা আকাশ।
–ছোঁয়া।
–জি।।
–চলো যাবে না?
–ওই জায়্গায় (হাসি মুখে)
–হুম৷।
–আচ্ছা চলুন।।
–তুমি একটা লাল শাড়ি পরো।
–লাল শাড়ি কেন?
–এমনি পরে এসো।
রোদের কথার জন্য একটা লাল শাড়ি পরলাম।
চুল গুলো বেঁধে একটু লাল লিপস্টিক দিয়ে রোদের সাথে বের হলাম।
রোদ কিছু সময় রাস্তা ধরে ড্রাইভ করার পর একটা বাড়ি নিয়ে গেল আমাকে।
সেখানের সবাই রোদকে আর আমাকে দেখে খুব খুশি তারা ব্যাস্ত হয়ে পরলো।
–আরে চাচু কিছু করা লাগবে না তোমাদের বউ মা ওই ঘের টা ঘুরে দেখতে চায় তাই নিয়ে এলাম (রোদ)
–এ তো বড়ো ভালো কথা। তুই বস বাবা আমি আবির কে বলছি
আবির রহিম চাচার ছেলে।
–আচ্ছা চাচা আবির এখন কি করে।
–ও এখন ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ালেখা করতেছে।
–আচ্ছা বড়ো হয়ে গেছে।
–হ ছেলে পোলা বড়ো তো হবেই এক দিন।
কথায় কথায় আবির চলে আসে।
আবির আশার পর আমরা রওনা দেয় বিলের মাঝের উদ্দেশ্যে,
চারি দিকে পানি আমি পনির দিকে তাকাচ্ছি না ভয় করছে।
রোদ এসে আমার হাতটা ধরে এসেই যেন ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারি।
আর চারিদিকের শান্ত পরিবেশ ফুরফুরে বাতাস উপভোগ করতে শুরু করি।
কিছু সময় পর আমরা সেই ঘেরে পৌঁছে যায়।
সেখানে নানা রকম ফলের গাছ আর ভেতরে মাছের চাষ।
খুব ভালোই কাটলো সময়।
রোদ কিছু ছবি তুললো।
ঘুরে দেখলাম সব টা।
ভয় করে নি আমার।
কারন রোদ আমার হাতটাই ছাড়ে নি।
আমার শুধু মনে হচ্ছিল ওর সাথে কেন আমার এতো দুরত্ব কেন ওকে আমি ভালোবেসেও বলতে পারি না।
কেন এমন হয় সব সময় আমার ভালোবাসার মানুষ গুলোকেই দুরে রাখতে হয়।
অনেক দুরে তাদের কে কষ্ট দিতে হয়।
আমিও কষ্ট পায় ওরাও কষ্ট পায়।
–ছোঁয়া।
–হুমম।
–এসো এদিকে এসো।
ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম।
উনি আমার কানে একটা ফুল গুঁজে দিলো।। এখানে আবার ফুল গাছও আছে।
আমি হেসে দিলাম,
চলবে,

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৭
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
–দেখো এখানে একটা নৌকা আছে তুমি চাইলে তোমায় নিয়ে এই পানিতে নামতে পারি।
–না আমার ভয় করে।
–আচ্ছা ঠিক আছে চলো তাহলে বাসার উদ্দেশ্যে যাওয়া যাক।
–আরো কিছু সময় থাকি একটু বৃষ্টি আসুক।
–নাহ কাল বৃষ্টিতো ভিজে জ্বর হয়েছে আর রিস্ক নিবো না আমি চলো বাসায় চলো।
–আচ্ছা।
মন খারাপ করে
রোদ আমার মন খারাপ দেখে হেঁসে দিলো,
–আবার নিয়ে আরবো আরও ৪ দিন আছি তো
ওর কথায় হেঁসে দিলাম আমি।
তার পর রওনা হলাম বাসার দিকে।
ওই আঙ্কেল রা আমাদের আসতে দিতে চাইছিল না কিন্তু রোদ থাকলো না।
বাসায় এসে দেখি কাপড়ে কাঁদা লেগেছে
তাই কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নিলাম
এখানের পথে ঘাটে বেশ বড়ো বড়ো ফুল গাছ।
সব অসম্ভব সুন্দর।
কৃষ্ণচূড়া বৌ সোজেছো।
আমার এই ফুলটা ভিশন পছন্দ।
এক বার রোদের কাছে বায়ন করেছিলাম,
রোদ আমাকে পুরো একটা গাছ এনে দিয়েছিল।
ভয় পাবেন না বড়ো না মিনি সাইজের গাছ।
ওটা এখনো আমার বেলকনিতে আছে।
আমার পছন্দ জন্য রোদের বাসা মানে এখন আমারও বাসা সেখানের বাগানে লাল কমলা রঙের বড়ো বড়ো কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে।
প্রতিবার ফুলের সময় আমি বাগানে মনে হয় সারাটা দিন কাটিয়ে দেয়।
,
ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এসে আমি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম।
রোদ হাতে একটা বড়ো ডাল কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে হাজির।
–নেও তোমার জন্য।
–কি করে আনলেন?
–আছে কিছু গ্রামের ছেলে মেয়ে ওরা পেড়ে দিলো
–ধন্যবাদ
–পছন্দ হয়েছে?
–অনেক পছন্দ হয়েছে।
রোদ ওয়াসরুমে চলে গেল।
আমি ফুল গুলোকে একটা যায়গায় রেখে বসলাম,
বিছনায় মাথা দিতেই মাথায় কেমন অসহ্য ব্যাথা শুরু করলো।
দু হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।
এমন তো আগে কখনো হয় নি হুট করে মাথা ব্যাথা কেন হচ্ছে এতো তিব্র আকারে
পাশে থাকা পানি খেয়ে নিলাম।
উফ সহ্য হচ্ছে না ভিশন যন্ত্রণা হচ্ছে।

তখনি রোদ বের হলো ওয়াসরুম থেকে ছোঁয়াকে মাথা চেপে ধরতে দেখে ছোঁয়ার কাছে এগিয়ে যায় রোদ।
–কি হয়েছো ছোঁয়া?কোন সমস্যা?
–আমার না ভিশন মাথা ব্যাথা হচ্ছে রোদ সহ্য হচ্ছে না।
ছোঁয়ার এমন কন্ঠ শুনে রোদ বিচলিত হয়ে পরলো,
–তুমি বালিশে মাথা দেও ।
রোদ ছোঁয়ার মাথাটা বালিশে উঠিয়ে দেয়।
আর আলতো হাতে ছোঁয়ার মাথা টিপে দিতে থাকে।
রোদের মাথা এভাবে টিপে দেওয়ার কারনে ছোঁয়ার বেশ আরাম লাগছে।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে রোদের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে ঘুমের দেশ পাড়ি দেয়।
ছোঁয়া যখন গভীর ঘুমে তখন রোদ ছোঁয়ার হাত ছাড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়ে।
,
,
রাত ৮ টা,
ঢাকা শহরে,
রুমের মধ্যে অগোছালো ভাবে বসে আছে বর্ষন।
একটা মেয়ে বর্ষন এর দিকে এগিয়ে এসে ওর অগোছালো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে লাগলো,
–বর্ষা প্লিজ এখন এগুলো ভালো লাগছে না (বর্ষন)
–কেন বর্ষন কি হয়েছে আমি কি কোন ভুল করেছি। (বর্ষা)
–তুমি কেন ভুল করবে আমার ভালো লাগছে না কি জানি ছোঁয়া কেমন আছে।
–ছোঁয়ার কথা ভেবে ভেবে অসুস্থ হয়ে পরছো।
কি অবস্থা করেছো শরীরের।
সারা দিন এভাবে অগোছালো জীবন জাপন করো এগুলা করলে কি ছোঁয়া ভালো হয়ে যাবে।
–ছোঁয়া আমার এক মাত্র বোন বর্ষা।
ওর হাতটা যখন ধরেছিলাম তখন আমি প্রথম মায়ের স্পর্শের কথা মনে করেছিলাম।
ও ঠিক আমাদের মায়ের মতো জানো বর্ষা।
ও যে আমার ছোট্ট একটা বোন তা বুঝি নি কখনো সব সময় বড়ো দের মতো শাসন করতো।
আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারছি না।
কি জানি রোদ সেদিন আমায় কেন তুলে নিয়ে গেছিল।
নিশ্চিত কেউ ওকে ছোঁয়া আমার হাত ধরা ছবি দিয়েছিল।। কিন্তু তুমি তো জানো বর্ষা ও আমার বোন।
এ কথা আমি না রোদ কে বলতে পারছি না ছোঁয়ার থেকে দুরত্ব সইতে পারছি।
আমার ছোঁয়া টা কেমন আছে তা খোদাই জানে।
বর্ষা বর্ষনের ঘাড়ে হাত দেয়,
,–প্লিজ বর্ষন এভাবে ভেঙে পড়ো না তোমাদের সিচুয়েশন আমি বুঝতে পারছি আমি বুঝতেছি সব কিছু।
কিন্তু কি করবা বলো সৃষ্টিকর্তা যা চায় তাই তো হয়।
আমার বিশ্বাস ছোঁয়া ঠিক আছে রোদ ওকে অনেক ভালো রাখছে।
–তুমি রোদ কে চিনো না বর্ষা ও আমাকে যে দিন তুলে নিয়ে গেছিল ওই দিন আমি বুঝে গেছিলাম ছোঁয়ার সাথে কেউ আমাকে বাজে ভাবে উপস্থাপন করেছে।
কিন্তু কেউ কে বুঝতে দেওয়া যাবে না ছোঁয়া আমার বোন।
আমি কেমন ভাই বর্ষা নিজের বোনের সাথে হওয়া অন্যায় ঠেকাতে পারছি না।
–বর্ষন একটা সময় আসবে যখন তুমি সব ঠেকাতে পারবে প্লিজ এখন মন খারাপ করো না।
–বুঝতে পারছি না বর্ষা।
আমার বোন টাকে আমি কি করে এই বিপদ থেকে রক্ষা করবো।
–আল্লাহর উপর ভরশা রাখো ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে।
বর্ষনা বর্ষার হাতে চুমু খায়।
–তোমার জন্য আমার জীবন একটু ইজি হয়ে গেছে।
–তুমি তো আমার সব বর্ষন আমার জীবনে তুমি ছাড়া কেউ নেই।
,
,
,
,
,
,
ছোঁয়া ঘুমোচ্ছে।
বন্ধ চোখে ছোঁয়াকে কি অসম্ভব মায়াবী লাগছে।
তা বুঝানোর ক্ষমতা রোদের নেই।
ছোঁয়া রোদের বুকের মধ্যে লেপ্টে আছে।
কি মায়াবী ছোঁয়া।
রোদের কাছে আজও সবটা কেমন অদ্ভুত ছোঁয়া কি করে অন্য কারোর সাথে রিলেশন এ জড়াতে পারে।। রোদের যেন বিশ্বাস হয় না এই মেয়েটা তাকে ধোঁকা দিতে পারে।
মেয়েটা যে ওকে খুব ভালোবাসে।
ছোঁয়া রোদের বুকে ঘুমালেই রোদের কলার্ট টা চেপে ধরে এক হাত দিয়ে।। বাচ্চা রা যখন কারোর কোলে উঠে তখন এমন যার কোলে ওঠে তার জামা কাপড় আঁকড়ে ধরে যেন ছেড়ে দিলে পরে যাবে।।
ছোঁয়া ঠিক তেমন করে রোদকে আঁকড়ে ধরে
ছোঁয়ার এই ছোট্ট ছোট্ট কাজ রোদের ভিশন ভালো লাগে।
ভালোবাসার মানুষের সব কাজি ভালোবাসার চোখে ভলো লাগে কিন্তু এই বাচ্চামি গুলো ছাড়া রোদের জীবন যে অপূর্ণ।
,
,
,
রাত ১১ টা,
রোদ ছোঁয়া কে আলতো করে ডাকছে,
–ছোঁয়া ছোঁয়া উঠো

–হুম। (ঘুমের ঘোরে)
–উঠো ছোঁয়া ভাত খেতে হবে।।
–উহু আপনিও ঘুমান (ঘুমের ঘোরে)
রোদ ছোঁয়ার কথা শুনে হেঁসে দেয়,
–আরে উঠো ছোঁয়া।
রোদ টেনে ছোঁয়াকে উঠায়।
–কি (ঘুম ঘুম চোখে)
ছোঁয়ার চুল গুলো সামনে এসে এলোমেলো হয়ে আছে।
রোদ সেগুলো গুছিয়ে কানে গুজে দিলো,
–ভাত খেতো হবে তার পর ঘুমাবে।
–এখন ইচ্ছে হচ্ছে না।।
–হবে উঠো উঠো।।
রোদ ছোঁয়া কে পাজকোলে করে টেবিলে নিয়ে আসে,
–যাও বেসিং থেকে ফ্রেশ হয়ে নেও।
ছোঁয়া ডুলতে ডুলতে বেসিং পর্যন্ত যায়।
১৬ মাসে বছর কাটিয়ে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসে।
ছোঁয়ার ঘুম পেলে ও এটাই করে ওর ঘুমের মাঝে কিছুই হুস থাকে না।
–খানার খেয়ে নেও।
–এখন এগুলা হাত দিয়ে খেতে হবে?
ছোঁয়ার প্রশ্নের মানে বুঝতে পেরে রোদ হেসে ছোঁয়ার মুখে খাবার ধরলো।
ছোঁয়া বাচ্চা দের মতো রোদের হাতে খেয়ে নিলো।
খাবার শেষে।
রোদ ছোঁয়াকে নিয়ে রুমে আসে।
–এবার ঘুমাও।
–কিন্তু এবার তো ঘুম আসবে না ভেঙে গেছে।

–তো কি করতে হবে।
–ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
কিছুটা ভয় ভয় পেয়ে.
–এই রাতে কই?
–গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে ভালোই লাগবে রাতের বেলায়,
আলবে,

চলবে

তবুও তুমি পর্ব-০৫

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৫
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
রোদ ছোঁয়াকে ভিজতে দখছিল এমন সময় আকাশে বিশাল আলোর ঝলকানি।
রোদ তৎক্ষনাৎ দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে যায় ছোয়া বিদ্যুৎ চমকানো টাকে ভিশন ভয় পায়।
আলোর ঝলকানির পরেই ভিশন শব্দে বজ্রপাত হয় ছোঁয়া ভয়ে পেছন ফিরে রোদ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
★★★
রোদের বুক পর্যন্ত আমার উচ্চতা।
আমার মাথাটা ঠিক ওর বুকে পরেছে।
ওর হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি।
ভেতর থেকে ইচ্ছে আসছে কেন না সময় টা এখানে থেমে যাক।
ওর বুকে এভাবে মাথা গুঁজে থাকতে আমার খুব ভালো লাগছে
★★★
অনেকটা সময় কাঁটার পর যখন ছোঁয়া রোদকে ছাড়ছে না তখন রোদের একটু সন্দেহ হয়।
রোদ ছোঁয়ার হাতটা ধরে,
বুঝতে পারে ছোঁয়ার জ্বর আসছে।
কিন্তু ছোঁয়ার জ্ঞান নেই।
রোদ তখনি ছোঁয়াকে কোলে করে রুমে আসে,
ছোঁয়া তো পুরোই ভিজে গেছে।
ওকে শুঁকনো কাপড় পরাতে হবে।
রোদ ছোঁয়ার জ্ঞান আনার চেষ্টা করে কিন্তু ছোঁয়ার ভিশন জ্বরের কারনে সে চোখ ই খুলতে পারছে না।
রোদ চিন্তিত হয়ে পরে।
তখনি রোদের মনে পড়ে এ বাড়িতে একটা কাজের মহিলা আছে যাকে দিয়ে সে ছোঁয়ার কাপড় পাল্টে দিতে পারে।
রোদ দৌড়ে নিচে আসে কিন্তু সেখানেও কাজ হয় না সেখানে দেখা যায় মহিলা তার স্বামী কে রেখে কিছু দিন গ্রামে গেছেন।
রোদ নিরুপায় হয়ে ছোয়ার কাপড় পাল্টে শুঁকনো কাপড় পরিয়ে দেয়।
মেয়েটাকে ভিজতে দেওয়া উচিত হয় নি ভিজে জ্বর টা আসছে।
রোদ ছোঁয়াকে কম্বল জড়িয়ে দেয়।
ছোঁয়া বাচ্চাদের মতো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
রোদ ছোঁয়ার কপলে হাত বুলাতে থাকে।
আজ কেন জানি ন কোন রাগ করতে পারছে না রোদ।
পারছে না অভিমান করে দুরে চলে যেতে।
পারছে না রোদ ছোঁয়াকে কিছু বলতে।
ছোঁয়ার আজকের ছোঁয়া টা একটা অন্য রকম অনুভূতি দিয়েছে রোদ কে।
এর আগে ছিল এমন কিন্তু বিদেশ থেকে আসার পর এই প্রথম ছোঁয়ার ছোঁয়াতে রোদ এমন অনুভূতি ফিল করছে।
রোদের কাছে সব কিছু কেমন রহস্য হয়ে আসছে সব কিছু ঘোলাটে হয়ে আসছে।
বাইরে ভিশন বৃষ্টি নেমেছে।
ঠান্ডা বাতাস আসছে জানালা দিয়ে।
একটু পর পর বিদ্যুৎ ও চমকে উঠছে।
ছোঁয়া প্রতিবার কেঁপে উঠছে।
রোদ ছোঁয়া কে ভয় পেতে দেখে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে।
রোদের বুকের মাঝেই গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে ছোঁয়া।
এতো মায়া এতো মমতা এতো ভালোবাসা।
,
সে রাতে কারোর খাওয়া হলো না।
রোদ ওভাবেই ছোঁয়াকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল সারা রাত।
কতো দিন পর রোদ শান্তিতে ঘুমোতে পারলো তা রোদ নিজেও জানে না।
ছোঁয়া হচ্ছে রোদের প্রশান্তি,,
রোদের শান্তনা, রোদের আকাঙ্খা, রোদের ভালোবাসা।
সব কিছু ছোঁয়াকে নিয়েই।
সকলের মিষ্টি রোদ ছোঁয়ার মুখে পরতে ছোঁয়া টিপ টিপ করে চোখ খোলে।
নিজেকে রোদের বুকের মাঝেই আবিষ্কার করে।
কিন্তু মাথাটা তার ভিশন ভার।
চাইলেও উঠতে পারছে না।
অসুস্থতা এখনো পুরো কাটে নি।
রোদ বুঝতে পারে ছোঁয়া উঠে গেছে তাই রোদ ছোঁয়া থেকে সরে উঠে পরে।
সোজা ওয়াসরুমে চলে যায়।
কিছু সময় পর বেরিয়ে এসে
–তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি চুপচাপ বসে থাকো নড়বা না।
রোদ নিচে চলে যায়।
★★★
আমি টুপ টুপ করে উঠে ওয়াসরুমে যাই।
কিছু সময় পর রোদ ফিরে এসে ছোয়াকে না দেখে ছোঁয়াকে ডাকতে শুরু করে,
–ছোঁয়া ছোঁয়া।
–জি আসছি।
ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসি।
উনি খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আসতে আমাকে খাইয়ে দেয়,
–আপনি খাবেন না।
–হুম খাবো।
তুমি ঔষধ খেয়ে নেও।
রোদ আমাকে ঔষধ দিয়ে জানলার পর্দ খুলে দেয়।
এটা একটা গ্রাম এই বাড়ির বেলকনি থেকে প্রায় সবটা দেখা যায়।
আমি বেলকনি তে গিয়ে দাঁড়ালাম।
সত্যি কি সুন্দর দেখাচ্ছে।
চারি দিকে সবুজ ধান খেত।
এক পাশে গ্রাম বাড়ি বাড়ি সব কিছু কতো গোছালো।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো প্রচুর পরিষ্কার।
আমার খুব ভালো লাগছে।
মেঘ এখনো আকাশে মিষ্টি বাতাস বইছে।
বৃষ্টির পরে মাটির একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আসে সেটা পাচ্ছি আমি।
★★★
রোদ ছোঁয়া কে দেখছে আকাশ থেকে একটা পরি নেমে তার বাসার বেলকনি তে দাঁড়িয়েছে।
মিষ্টি বাতাসে পরিটার চুল গুলো উড়ছে।
শাড়ির আঁচল টাও উড়ছে।
কি যে মিষ্টি দেখাচ্ছে তাকে তা বলার মতো ক্ষমতা রোদের নেই।
রোদ ছোঁয়ার দুরত্ব বুঝি এখন কমবে।
হয়তো এখন ওদের মধ্যে ভালোবাসর সম্পর্ক টা গভীর হবে।
–ছোঁয়া।
–জি।
–আজ বাইরে যাবো ঘুরতে।
আমার মনটা খুশি হয়ে যায় আপনা আপনি মুখে হাসি চলে আসে।
–আমি ওই খানটায় যেতে চাই।
আমি আঙুল দিয়ে দেখলাম।
রোদ আমার কাছে এগিয়ে আসে,
–কই।?
–ওই দেখুন ওই যে ঘের মনে হচ্ছে।
–ওহ ওটা আচ্ছা নিয়ে যাবো কিন্তু ওখানে যেতে গেলে নৌকাতে উঠতে হবে।
কালকের বৃষ্টি তে পুরো বিল পানি পানি হয়ে গেছে।
নৌকার কথা শুনে আমার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
পানিতে প্রচুর ভয় আমার।
রোদ মিষ্টি হেসে বলল।
–আমি তো থাকবো পড়তে দিবো না তোমায়।
–ওটা কাদের ঘের?
–তুমি ঘের চিনো।
–হ্যাঁ চিনি তো আন্টি তো গ্রামের ছিল ওনার থেকে ছোট থাকতে অনেক গল্প শুনেছি।
আর আমি সবি চিনি।
অন্তত এটা বলব না ধান গাছে কি ফার্নিচার হয়।
আমার কথা শুনে রোদ হেসে দিলো শব্দ করে।
আমি ওর দিকে তাকালম
ওর হাসিটা মন কাড়া।
–আচ্ছা ওটা একটা চাচার ঘের ওখানে প্রায় সব গাছ আছে কিন্তু ওর মাঝেও কিন্তু পানি মাছ চাষ হয় বুঝেছো।
–হুম।
আমি এখানে বসে থাকি?
–খুব ভালো লেগেছে জায়গা টা।
–হুম।
–আচ্ছা বসো বাজার করে আসি এখানে খাবার মতো কিছু নেই।
–আচ্ছা।
রোদ চলে গেল আমি বেলকনি তে বসে রইলাম।
–যদি তোমায় জানাতে পারতাম সব সত্যি রোদ তবে আমাদের মাঝে কোন দুরত্ব থাকতো না।
থাকতো না কোন সমস্যা একটা সুন্দর সংসার হতো তোমার আর আমার।
ছোঁয়ার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো পানি।
মিষ্টি এই সুন্দর পরিবেশ আর প্রিয় জনের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত ছোঁয়া উপভোগ করতে চায়।
একটা মুহুর্ত ওয়েস্ট করতে চায় না।
দুপুরে,
রোদ বাজার করে নিয়ে আসে।
ঔষধ এর জন্য ছোঁয়ার জ্বর পরে গেছে।
রান্না করার জন্য এখানে কোন লোক নেই রোদ পড়লো মহা চিন্তায় বাজার তো করেছে কিন্তু রান্না কে করবে ছোঁয়া অসুস্থ ওকে কি বলা ঠিক হবে।
★★*
রোদের চিন্তা মাখা মুখটা দেখে আমি বুঝতে পারছি সমস্যা টা কি হয়েছে।
তাই গিয়ে রোদকে বললাম,
–রান্না টা আমি করি।
–না তুমি অসুস্থ।
–জ্বর পরে গেছে আমি পারবো।
–না দরকার নেই।
–আরে আমাকে একটু হেল্প করবেন তাতেই হবে সরুন আপনি।।
ওনাকে সরিয়ে কিচেনে গেলাম।
কাজ শুরু করলাম।
এখানে সবি আছে কিন্তু থাকার মতো মানুষ নেই।
যাক সময় গুলো ভালোই কাটছে।
আমি একে একে সব রান্না শেষ করি।
রোদ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে সব হেল্প করে দেয়।
আমিও তার হেল্প পেয়ে সব রান্না ই শেষ করে ফেলেছি।
সব ধরে টেবিলে রাখবো তখনি রোদ আমার হাত ধরে বসে।
–তুমি গিয়ে গোসল করে নেও আমি এগুলে করছি।
–আচ্ছা।
আমি চলে এলাম।
চলবে,

তবুও তুমি পর্ব-০৪

0

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০৪
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
–দাদুভাই তোমাদের আজ সারা দিনে খোঁজ পাই নি কই ছিলা?
আজিজ চৌধুরী এর প্রশ্নে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল রোদ।
দাদা জান কে কখনো মিথ্যা বলে নি রোদ বুঝতে শিখছে যখন থেকে তখন থেকে
কিন্তু আজ সেই রোদ তার দাদা জানকে কি পরিমাণ মিথ্যা বলছে শুধু মাত্র ছোঁয়ার জন্য।
রোদ মলিন হেসে বলে,
–তোমার নাতি বউ আবদার করেছিল একটু লং ড্রাইভে যাবার।
তাই নিয়ে গেলাম আর কি।
রোদের কথায় দাদা জান হেসে দিলেন,
–তোর দাদিকে নিয়েও আমি প্রচুর ঘুরতাম জানিস।
তোদের তো ৫ বছরের সম্পর্ক। কিন্তু আমার আর তোর দাদির ছিল ৪ বছরের সম্পর্ক।
বিয়ে পর আমরা প্রচুর ঘুরেছি।
তোর বাবা হবার পর থেকে ঘুরাঘুরি কিছুটা কমে গেলেও তার আগে আমরা ভিশন ঘুরতাম।
তোদের দাদি মায়ের কাছে আমি কখনো পুরোন হই নি।
ও আমাকে খুব ভালোবাসতো এতোটাই ভালোবাসতো যে কখনো কোন ছেলের দিকে ও তাকাতো পর্যন্ত না।
কারন ও জানতো আমাদের জীবন এখন একটা সুতোয় গাঁথা।
দাদা জানের কথা শুনে রোদের বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে ওঠে।
রোদ ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
ছোঁয়াকে ও যে রোদ ঠিক এমন করেই চেয়েছিল।
কিন্তু ভাগ্য তা হতে দিলো না।
রোদ খাবার মাঝ পথে বন্ধ করে উঠে গেল।
ছোঁয়া আগের মতো বসে আছে,
–কি রে রোদ তুই খাবার ছেড়ে উঠছিস কেন?
–দাদা জান খাবার হয়ে গেছে।
রোদ উপরে চলে আসে,
আমি দাদা জনের পাশে বসে চুপচাপ চামচ নাড়াচ্ছি তখন দাদা জান বলে উঠলেন,
–ছোঁয়া তোমাদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে?
–না দাদা জান (মাথা নিচু করে)
–কিছু তো হয়েছে ছোঁয়া আমার নাতি এতো নিরব কখনো থাকে না।
ওকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে আমার তুমি খোঁজ লাগাও ।
দাদা জান কথাটা বলে উঠে গেল।
আমিও চামচ রেখে উঠে গেলাম।
রুমের বাইরে আসতে শুনতে পাই রোদের কন্ঠ ও কাউকে মারার কথা বলছে,
আমি থমকে দাঁড়ায়,
–ওকে পুতে দেও ওর লাশ টা যেন না দেখা যায়।
–হে আল্লাহ বর্ষনের কথা বলছে না তো।
আমি দৌড়ে রুমে যাই।
–আপনি কি বলছেন আমাকে মিথ্যা বলেছেন আপনি বর্ষন কে বাঁচিয়ে রাখেন নি মেরেছেন ওকে।
আমি উত্তেজিত হয়ে এক ভাবে কথা গুলো বললাম,
রোদের চোখ লাল হয়ে গেল।। প্রচন্ড রেগে গেছে ও।।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
ভয়ে ভয়ে পেছনে সরছি আর ও এগোচ্ছে।
একটা সময় দেয়ালে থেমে গেলাম।
ওর চোখ দিয়ে বোধহয় ও আমাকে খেয়ে নিবে এমন করে তাকিয়ে আছে।
ও আমার গলাটা আবার চেপে ধরে শক্ত করে,
–তোকে আমি বলেছি তোর আসিক কে আমি ছেড়ে দিয়েছি তবে তুই বার বার ওর নাম আমার সামনে কেন নিচ্ছিস।
কেন?(চিৎকার করে)
আমাকে খুব শক্ত করে ধরেছে এতোটাই শক্ত করে যে আমার শ্বাস সত্যি বন্ধ হয়ে গোছে।
হাত পা ছোটাছুটি ও।
ও মনো হলো আরও শক্ত করে চেপে ধরে কিছু বলছে,
কিন্তু আফসোস সে কথা শোনা সৌভাগ্য আমার হলো না।
তার আগেই চোখ দুটো বুজে এলো।
ছোঁয়াকে ওভাবে পড়তে দেখে রোদের খেয়াল আসে।
ও কি করছিল এতো সময়,
ছোঁয়া রোদের বুকে ডলে পড়ে,
–ছোঁয়া এই ছোঁয়া তুমি তাকাও কি হয়েছে তোমার।।
রোদ ছোঁয়ার মুখে আলতো হাতে চড় দিচ্ছিল। কিন্তু ছোঁয়া উঠে নি।
রোদ ছোঁয়া কে শুইয়ে ডক্টর কে ফোন দেয়।।
ওদের দাদা তখন ঘুম বাসার কোন খবর তার কাছে নেই।।
ডক্টর এসে বলে,
— মি.চৌধুরী ইনি আপনার কে হন।
–আমার স্ত্রী।
–কি বলেন আপনার স্ত্রী
–মানে কি!!
–ওনাকে কেউ খুব শক্ত করে গলা চেপে ধরেছে যার কারনে দম বন্ধ হয়ে সেন্স হারিয়েছে আর কিছু সময় হলে মারাই যেতেন।
ওনার প্যানিক এটাক হয়।
ওনার পানিতে ফোবিয়া আছে। + উনি চিৎকার করা কথা শুনতে পারেন না ওনার হার্ট দুর্বল।
ওনাকে দেখে শুনে রাখবেন নাহলে এ দুনিয়াতে বেশি দিন সময়ের জন্য থাকবে না।
আপনার স্ত্রী আপনাকে খেলাল রাখতে হবে।।
ঔষধ দিয়েছে ।
আমি এখন আসছি।
ডক্টরের কথায় রোদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
ছোঁয়ার সাথে সেই প্রথম দিন থেকেই চিৎকার চেচামেচি করে যাচ্ছে।
কিন্তু আগে তো এগুলা ছিলো না।
–ডক্টর।
–জি।
–আমি ছোঁয়াকে বিগত ৫ বছর ধরে চিনি ওর আগে এমন সমস্যা ছিল না।
–মি.চৌধুরী পানিতে ফোবিয়া অনেক দিন ধরেই ওনার জন্মের থেকে।
–হ্যা ওটা সম্পর্কে জানি কিন্তু এই, বাকি গুলো,
–এগুলা রিসেন্ট তৈরি হয়েছে।
ওনার মধ্যে সব সময় জড়তা এবং ভয় কাজ করে উনি ভিশন ভিতু প্রকৃতির এক জন মানুষ।
খেয়াল রাখবেন আসি।
ডক্টর চলে গেল।
রোদ ছোঁয়ার পাশে বসলো,
হাতে সেলাইন চলছে তার।
গত দু দিন ভালো করে কিছু খাই নি মেয়েটা।
ওর উপর এতোটাই রাগ ছিল যে ও যে কিছু খাচ্ছে না সে দিকে কোন খেয়াল নেই রোদের।
কিন্তু রোদ করবে তো করবে কি রোদ কে যে সব সময় ছোঁয়ার দেওয়া আঘাত গুলো তাড়া করে বেড়ায়।।
রোদ যেন পাথর হয়ে যাচ্ছে।
এক দিকে ছোঁয়ার এই অবস্থা অন্য দিকে ছোঁয়ার দেওয়া হাজার কষ্ট।
কি করবে রোদ কিছুই বুঝতে পারছে না।।
,
,
,
সকাল গড়িয়ে বিকাল হলো।
ছোয়ার জ্ঞান এসেছে,
সেলাইন ও শেষ।
রোদ খাবার নিয়ে আসে ছোঁয়ার জন্য।
–খাবার খেয়ে নিবা চুপচাপ কোন কথা শুনতে চাই না।
রোদের ধমকে ছোয়া সব গুলো খাবার খেয়ে নেয় রোদের হাতে
খাবা শেষ হতেই এক জন সার্ভেন্ট এসে বলে,
–স্যার দাদা ডাকছেন আপনাদের দু জন কে।
–হুম আসছি,
সার্ভেন্ট চলে যায়,
–তুমি নামতে পারবা?
–জি.
–ওকে চলো।
রোদ ছোঁয়াকে নিয়ে নিচে আসে,
নিচে এসে দেখে লাগেজ দুটো,
রোদ অস্থির হয়ে বলে,
–দাদা জান আপনি কোথাও যাচ্ছেন?
–না তোমরা যাচ্ছো।
–মানে।
–মানে কোন প্রশ্ন নয় এখনি রওনা হচ্ছো তোমারা আমার গ্রামের দিকে ধান হয়েছে বৃষ্টি হচ্ছে নদী আছে ফুরফুরে বাতাস সেখানে আমাদের বাংলো বাড়িতে তোমরা থাকবে ৫ দিনের জন্য।
৫ দিনের এক দিন ও কম হলে তোমাদের আমি ঘরে ঢুকতে দিবো না।
–কিন্তু দাদা এভাবে হুট করে।
–কেন কথা নয় এটা আমার ওডার এখনি বের হও।
আমি দুই দাদা নাতির কথা দাঁড়িয়ে শুনছি।
দাদা হুট করে এমন ডিসিশন নিলো কেন।
–ছোঁয়া যা ঘুরে আয়।
রোদ তার দাদার উপর কথা বলতে পারল না ফলে দু’জন রওনা হলো।
গাড়িতে ছোঁয়া নিশ্চুপ ছিল।
রোদ ছোঁয়ার এই অবস্থা দেখে ভিশন কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ওর হাত পাও বাঁধা আর এই বাঁধনের জন্য দায়ি এক মাত্র ছোঁয়া।।
অনেকটা পথ ড্রাইভ করার পর তারা গ্রামের বাসায় পৌঁছে যায়।
গাড়ি থেকে নেমে ছোঁয়া দেখে তাদের বাসার পাশেই ধান খেত সন্ধ্যা সন্ধ্যা সময় বেশ বাতাস হচ্ছে ছোঁয়া নিজের অজান্তে সে দিকে এগিয়ে যায়।
রোদ তা দেখেও কিছু বলে না।
ছোঁয়া গিয়ে বাতাসের মাঝে আলের উপর দাঁড়ায়।
অসম্ভব ভাবে বাতাস বইছে আর মিষ্টি ঘ্রাণ এখনি বৃষ্টি হবে।
চারিদিকে কালো হয়ে এসেছে মেঘে।
যা হবার তাই হলো কিছু সময়ের মধ্যে ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নেমে গেল।
ছোঁয়া মুখটা উঁচু করে বৃষ্টি গুলো উপোভগ করছিল।
আর দুর থেকে রোদ ছোঁয়াকে দেখছিল।
চলবে,