Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1478



হৃদয় হরণী পর্ব-০৫

0

@হৃদয় হরণী
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_নুসরাত_জাহান_নিপু

আলো পা দু’টো আড়াআড়ি করে ছাঁদে বসে আছে।তার মুখের হাসি নেই তবে গত কয়েকদিনের চেয়ে অবস্থা অনেকটাই ভালো।দু’দিনে যা জ্বর হয়েছিল!আলো এক পানে
কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে।পুরো গাছটা রঙিন হয়ে আছে।কৃষ্ণচূড়ায় এক অদৃশ্য শক্তি আছে।এই ফুল সবাই পছন্দ না করলেও খুব কম মানুষই অপছন্দ করে।কৃষ্ণচূড়াকে সবাই গাছে দেখতে পছন্দ করে।

আলো তাদের মধ্যেই একজন।সার্থক আগে কৃষ্ণচূড়া নিয়ে কত কবিতা,ছন্দ তৈরি করতো।যখনই আলোর মন খারাপ হতো টুস করে কবিতা বলা শুরু করতো।

কলেজ থেকে বিদায়ের সময় আলোর মন খারাপ ছিল।আলো চারটা বছর এই কলেজে ছিল ছেড়ে যেতে মায়া তো লাগেই!তখন কেউ একজন তাকে পেছন থেকে চোখ বন্ধ করে দেয়।আলো ঘাবড়াতে যেয়েও ঘাবড়ায় নিই।কারণ সে বুঝে নিয়েছিল সার্থকই তার চোখ বন্ধ করেছে।

প্রায় দশ মিনিটের মতো হাঁটিয়ে আলোর চোখ থেকে হাত সারায়।আলো পেছন ফিরতে কৃষ্ণচূড়ার বর্ষণ শুরু হয়।আবেশে সে চোখের পাতা বন্ধ করে নেয়।

সেকেন্ড কয়েক শেষ হতে সার্থকের দর্শন পায় সে।আলো দেখে সে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়া।দৃষ্টি কৃষ্ণচূড়া ফুলে আটকাতে বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাগলো।দৃশ্যটা এমন যে আকাশে উড়ন্ত সাদা-নীল মেঘগুলোর মতো কৃষ্ণচূড়াও তার একটি অংশ।এই এক টুকরো মেঘটির রঙ লাল!লাল রঙের মেঘটিই আলোর মনের সমস্ত হতশা মুছে দিতে বৃষ্টি হয়ে নামে।

সার্থক তার দৃষ্টি আলোতে স্থির রেখে মুগ্ধ চাহনিতে বললো,”এই নারী যদি,এই নারী যদী কৃষ্ণচূড়ার এক ফালি মেঘ হয়,তবে আমি বৃষ্টি হতে প্রস্তুত!”

আলো ভ্রু কুঁচকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না।সার্থক আবার বললো,”তোমার কৃষ্ণচূড়ার প্রতিটা রঙিন কাব্যে,প্রতিটা পাতায় আমার নাম লিখে রেখ হৃদয় হরণী!”

হৃদয় হরণী!এই একটা ডাক তার হৃদয় ছোঁয়ে যায়।কেঁপে উঠে সারা অঙ্গ।এই ডাকে সে আজীবন সাড়া দিতে প্রস্তুত।
কত নিমিষেই না আলোর হতাশা দূর করতো সার্থক।অবশ্য আলো সার্থক ছাড়া কিছু বুঝেও নিই।তাই সব ভুল মেনে নিতো।কিন্তু বর্তমানে….

.
-“এই পেত্নী কী ভাবিস?”

হৃদয়ের ধাক্কাতে আলোর ধ্যান ভাঙলো।মাথা নেড়ে সে কিছু না বললো।আলো প্রশ্ন করলো,”ব্যাবসায় লস খাচ্ছিস নাকি?দিন দিন এভাবে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিস কেন?”

হৃদয় আফসোসের ভঙ্গিতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো,”কী আর করবো বল!বউ আগের মতো যত্ন নেয় না।”

আলো হৃদয়ের কথায় রিয়েকশন দেখানোর আগে তাসনিন উড়ে এসে বলে উঠলো,”বউ যত্ন নেয় না?এই তোর কী যত্ন করবো বল,এক্ষুণি বল কোন ক্ষেতের মুলা এনে তোকে খাওয়াতে হবে।”

হৃদয় আমতা আমতা করে বলে,”আরে আমি মজা করছি।মজা বুঝো না?ফান,ফান।”
-“ফান আমার জুতায় মিশে যাক।আজকে তোমার এমন যত্ন করবো জীবনেও বলবে না আমার কারণে শুঁটকি হচ্ছো।”

তাসনিন এটুকুতে থেমে গেলে ঝগড়া থেমে যেত। কিন্তু সে বিড়বিড় করে বললো,”দেখলে মনে হয় কংকালের মামাতো ভাই।এর চেয়ে তো চিকনা ভূতই বেশি সুন্দর।”

হৃদয়ের কানে কথা গুলো পৌঁছাতে ক্ষেপে গিয়ে বললো,”কী বললে তুমি?আমাকে নিয়ে তোমার মনে এইসব ফন্দি করেছো?তোমার চেয়ে তো রুপচাঁদা সুন্দরিই বেশি সুন্দর।”
-“ছিঃ,ছিঃ।অবশ্য তোমার চয়েস রুপচাঁদা সুন্দরী পর্যন্তই থাকবে।শুঁটকি মাছ + রুপচাঁদা সুন্দরী।বেস্ট কাপল!”

আলো পড়ে গেলো দুজনের মাঝখানে।সে এতক্ষণ ধরে মিটিমিটি হাসছিলো।নিজের হাসি কোনো মতে আটকিয়ে প্রশ্ন করলো,”রুপচাঁদা সুন্দরী মানে গলির পাগলিটা?”

তাসনিন আলোকে নিজের দিকে মুখ করে বলে,”এই পাগলের সৌন্দর্যই তোমার বন্ধু দেখলো।ভূতের চোখে সুন্দর আর কতটুকুই বা হবে!”

আলোকে হৃদয় এক হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে করে বললো,”যে ভূত ভূত করছে না, তাকে বলে দেয় আয়নায় গিয়ে নিজের শাঁকচুন্নির মতো চেহেরাখানা দেখতে।প্রতিদিন নিজেকে আয়নায় দেখে দেখে মাথায় ভূত চেপেছে।”

একইভাবে তাসনিন তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”হা হা হা!জোক্স,জোক্স!একখানা তাজা ভূতের সাথে থাকলে মানুষের মাথা কী আর ঠিক থাকে?চোখ দুটো যেন চোখ নই হাঁসের সদ্য পাড়া ডিম।কপাল তো,মাশা-আল্লাহ!এত বড় যে এগারো জন ফুটবল খেলতে পারবে।”

পাশের বাড়ির ছাঁদ থেকে ছয়-সাত বছরের বাচ্চা ছেলে বলে উঠলো,”হাঁস সদ্য একটা ডিম পাড়ে।হৃদু আঙ্কেলের চোখ একটা বড় একটা ছোট?”

তাসনিন কোমরে দু’হাত দিয়ে বাচ্চাটিকে ধমকিয়ে বললো,”আব্বে তুই চুপ।প্রতিদিন আমাদের কথায় তোকে নাক ঢুকাতে কে বললে?বেতন দেয় কেউ?”

হৃদয় দাঁত খিলখিলিয়ে হেসে বলে,”হা হা হা!এই না হলে মানুষের বাচ্চা!কোথাকার মূর্খ মহিলা লজিক ছাড়া কথা বলে,ভুল তো ধরবেই।চুন্নিগিরি মাছ ভাজা চোর।”

বাচ্চাটি তখন বললো,”প্লিজ স্টপ আঙ্কেল-আন্টি।পপকর্ণ নিয়ে আসছি।”

আলো ভিতরে ভিতরে হাসলেও সেটা প্রকাশ করতে পারছে না।এরা দু’জনে টম এন্ড জেরির মতো লড়তে থাকে।এখন আলো হাসলে বোমাটা তার মাথার উপর ফাটবে।আলো চুপি চুপি পালাতে চাইলে হৃদয় আবার টেনে মাঝখানে দাঁড় করায়।তারপর বলে,”এই ময়লার প্রধানমন্ত্রী,নাক ফাটা বেলুনকে বল ভদ্রভাবে কথা বলতে।”

আলোকে তাসনিন নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”নিজের বর্ণনা কী আমার চেহেরায় দেখছে?ভদ্রতা কাকে বলে,কত প্রকার ও কী কী তার প্রশিক্ষণ আমার কাছ থেকে নেয় মানুষ।”

হৃদয় আলোকে নিজের দিকে ঘুরানের আগেই আলো তারদিকে ঘুরে গেল।হৃদয় বললো,”তাইতো বলি আজকাল অভদ্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে কেন।প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাহলে এখানে?”

তাসনিন রেগে বললো,”চুপ বান্দের চাচাতো ভাই।হিরো আলমের পিডিএফ।”
-“তুই ছকিনার পিডিএফ,ফটোকপি।”
-“তুই।”
-“তুই”

আলো মাথা নিচু করে তাদের দু’জনের মাঝখান থেকে পালিয়ে এসেছে।এখন দু’জনে একে অপরকে আঙ্গুল দেখিয়ে ঝগড়া করছে।যাকে বলে পায়ের উপর পা দিয়ে ঝগড়া করা।
আলো দূর থেকেই মজা পেয়ে হাসছে।হাসতে হাসতে আলো হৃদয়ের মায়ের সাথে দেখা করতে চলে আসে।

আড়চোখে আলোর চলে যাওয়া দেখে তাসনিন বললো,”হয়েছে,ঢং অফ করো।আলো চলে গেছে।”
-“হেঁসেছে?”
-“হাসবে না আবার?তাসনিন বলে কথা।”

হৃদয় ছাঁদ থেকে চলে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে তাসনিন বলে উঠলো,”বাই দ্যা ওয়ে,তোমার সাথে সত্যি সত্যি কংকালের একটা সম্পর্ক আছে।”
.
হৃদয়-তাসনিনের বিয়ে হয়েছে মাত্র ছ’মাস।তাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই ঠিক হয়েছে।পূর্ব পরিচয় বলতে বিয়ের আগে কয়েকদিন ফোনালাপ।অথচ,দু’জনের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা প্রগাঢ়।পরিবার টিকিয়ে রাখার জন্য বোধ হয় আন্ডারস্ট্যান্ডিংটাই বেশি জরুরি।ভালোবাসা,বিশ্বাস দু’টোই পরস্পর বোঝাপড়ার পরে জন্ম নেয়।

আলো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।এমনটা নয় যে তার সংসারে আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেই বরং এমনটা যে সার্থক বুঝে না।বা বলা যায় দুই লাইন বেশি বুঝে।ছ’বছরের সম্পর্কে আলোই বেশি স্যাক্রিফাইস করেছে।নাকি সংসারে নারীকেই বেশি ছাড় দিতে হয়?

বিয়ে পর এক সংসারী নারীই সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করে।জন্মের পর বেড়ে উঠা পরিবেশ থেকে হুট করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।এটুকুতে নারী নিজেকে সামলাতে পারতো কিন্তু দিন কাটিয়ে রাত হতে নতুন আরেক পরিবার!নতুন চেহেরা,নতুন সম্পর্ক।তার কাঁধে তুলে দেওয়া হয় পুরো সংসারটা।দেবর,ননদ,শ্বশুর-শাশুড়ি,স্বামী প্রত্যেকের মন জয় করে তাদের মনে স্থান তৈরি করা।যদি তাতে ব্যর্থ হও তাহলে নারী তুমি ভালো না।এরপর আসে সন্তান…জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে তাকে প্রকৃত মানুষ করা মুখের কথা নয়।সংসারী নারীর এক লাইনে পরিচয়-সবার প্রথমে ঘুম থেকে উঠা আর সবার শেষে ঘুমানো।।কারণ তারা এই যুদ্ধের নিয়মিত যোদ্ধা।

তবুও শেষে তারা হাঁসে।শ্বশুর-শাশুড়ির একটুখানি দোয়া গ্রহণেই তার সুখ।স্বামী এক টুকরো ভালোবাসা তারা মনে করে, “এইতো চাঁদখানা হাতে পেলাম”।সন্তানের হাসিতে তারা আজীবন হেঁসে যেতে পারে।কেউ মনে করে নারীর কোনো বাড়ি নেই, তারা প্রথমে বাবার বাড়ি তারপর স্বামীর বাড়ি।কিন্তু অন্যজনের মত,নারী বাড়ি দুইটা।এক বাবার বাড়ি দুই.স্বামীর বাড়ি।যার দৃষ্টি ভঙ্গি যেমন!

আলো কক্ষে প্রবেশ করে দেখলো হৃদয়ের মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন।এক মাস আগে থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে বেড রেস্টে আছে।আলো পাশে বসে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো।তখন তিনি চোখের পাতা মেলে আলোকে এক পলক দেখলেন।মৃদু হেসে আলো পাশের চেয়ারে বসে বললো,”খুদা লেগেছে?খাবে কিছু?”

তিনি মাথা না বোধক নাড়লেন।আলো উনার হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললেন,”স্যূপ করেছি আমি।একটু খাও..”

এবারে উনি মুখ খুলে বললেন,”একটু পরে খাবো।হৃদু এসেছে?”
-“এসেছে মানে?ফুল মুভি করে ফেলছে।”
-“মানে?”
-“দু’জনে আবার ঝগড়া করছে ছাঁদে।”

তারা দু’জনে এক সঙ্গে হো হো করে হেঁসে ফেললো।হৃদয়ের মা বললেন,”আমি অনেক ভাগ্যবতী রে,তাসনিনের মতো মেয়ে আমার ছেলের বউ হলো।আমার সংসার কত সুন্দর করে সামাল দিচ্ছে!আর আমি মেয়েটাকে তার বাবার বাড়িতেও পাঠাতে পারিনি কয় মাস!কিছু দিতে পারলাম না ওকে।”

আলো উনার হাত নিজের মুঠোয় শক্ত করে ধরে চুমু খেয়ে বললো,”এই যে তুমি বলছো,”আমি অনেক ভাগ্যবতী”।এই একটা বাক্যই তোমাদের ছেলের বউদেরকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।আমরা বউমারা এই বাক্য শুনলেই সবচেয়ে সুখি!”

তার কিছুক্ষণ পর আবার বললো,”আচ্ছা, ওদের দু’জনকে আজকেই তাসনিনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিই?কয়েকদিন থেকে আসুক আমি যখন বাড়িতে আছি।”
-“কতদিন থাকবি এভাবে?এক সপ্তাহ হয়ে গেল,সার্থক প্রতিদিন তোকে নিতে আসে কিন্তু তুই তার সামনে যাস না।তুই যে এভাবে চলে এলি তোর সংসারটা কে সামলাচ্ছে?”

আলো চুপ করে রইলো।এত জলদি সে সার্থকের কথায় সায় দিবে না।সে বললো,”আর কিছু দিন যাক।শুয়ে থাকো তুমি,আমি স্যূপ নিয়ে আসছি।”

আলোর মনটা কী তেঁতো হয়ে গেছে?আগে তো এমন ছিলো না।আগে ঝগড়া হওয়ার পর সার্থক একবার মাফ চাইলে সব ঠিক হয়ে যেতো।কিন্তু এখন সাতটা দিন সার্থক কি’না করছে!তবুও তার মন গলছে না।মনের দরজা বন্ধ হলে খোলা বোধহয় বেশি কঠিন।
.
সার্থক অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।তখন পেছন থেকে আসমা সিদ্দিকা বলে উঠলো,”কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

বিরক্ত হয়ে সার্থক বললো,”মা তুমি প্রতিদিন একই প্রশ্ন কেন করো?তুমি জানো যে আমি আলোকে আনতে যাচ্ছি।”

ক্রোধে তিনি বাজখাঁই গলায় বললে,”ঐ মেয়েকে প্রতিদিন আনতে যাস তুই।কিন্তু ফিরেছে কোনোদিন?ম্যাডামের তো রাগ উপচে পড়ছে।মেয়ে মানুষের এত তেজ ভালো না।”

সার্থক কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে এলো।মা মানুষটি কারণ বা অকারণে রেগে গেলে চুপটি করে সরে যাওয়ায় শ্রেয়।

(চলবে)

বি.দ্র-০২:বানান ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয় হরণী পর্ব-০৪

0

@হৃদয় হরণী
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_নুসরাত_জাহান_নিপু

ড্রয়িং রুমে আলোর সামনা-সামনি বসেছে সার্থক।আলোর পাশে হৃদয়।পাশেই তাসনিন চা বানাচ্ছে।

হৃদয় প্রশ্ন করলো,”তাহলে তুমি বলছো নুপূরের সাথে তোমার বিয়ে দুইদিন আগে হয়েছে আর বাচ্চাটা ওর প্রথম স্বামীর?”
সার্থক হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।বিরক্ত হয়ে হৃদয় বললো,”তাহলে তুমি কেন ফেঁসে গেলে এই ঝামেলায়?”

সার্থক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,”বান্দরবান থেকে রাঙামাটি যাওয়ার সময় আমি বাস মিস করে ফেলি।তখন রাত দশটা নেটওয়ার্কও উইক ছিল।তখন আমার সাথে নুপূরের দেখা হয়।ব্যাপারটা এমন যে নুপূর এক প্রকার পালিয়ে আসছিল।ও নিজেও বাসের জন্য এসেছিল কিন্তু বাস আগেই ছেড়ে দে আর আমরা সেই জায়গায় আটকা পড়ি।

দু’জনে অপরিচিত ছিলাম কিন্তু আমাদের থাকার জায়গার প্রয়োজন ছিল।তখন দুজনে একটা পুরাতন মাটির ঘর পাই যেখানে কেউ ছিল না।আমরা রাতটা সেখানেই পার করি।

তারপর সকাল হতেই চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়।আর তাকিয়ে দেখি নুপূর মেয়েটাকে কিছু লোক যা ইচ্ছে তাই বলছিলো।আমাকেও ইত্যাদি ইত্যাদি বলে।তখন গ্রামের লোকদের মধ্যে একজন বলে উঠে নুপূরকে প্রেগন্যান্ট লাগছে।এটা শুনে সবাই ক্ষেপে যায়।

তখন পরিস্থিতি বিগড়ে গিয়েছিল খুব,আমি গ্রামবাসীকে মিথ্যা বলি যে নুপূর আমার স্ত্রী।তখন তারা সবাই বিশ্বাস করেনি কারণ নুপূরের হাতে চুড়ি,নাকে নথ কিছুই ছিল না।তারপর সবাই মিলে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে।তাদের কথা ছিল নুপূর আমার স্ত্রী হলে দু’বার বিয়ে করতে তো সমস্যা নেই।

আমারা অনেক চেষ্টা করি বিয়েটা থামানোর কিন্তু সহজ ছিল না কিছুই।তোমাদের কাউকে জানানোর উপায়ও ছিল না কারণ নেটওয়ার্ক উইক।তারপর আমরা দু’জনে ঢাকার বাস ধরি।

বাসেই আমি আলোর কথা নুপূরকে বলি।আমি জানিয়ে দিই নুপূরকে কখনও স্ত্রী মানতে পারবো না।তখন নুপূরও বলে সে সংসারী হতে চায় না।সে এমন একটা জীবন চায় যেখানে কোনো বাঁধা থাকবে না।ওর শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে লড়তে চায়। আর ওর শ্বশুরবাড়ির কাহিনি বলার মতো না।

নুপূরের সামনে তখন ওর সন্তান ছিলো।তার সন্তান যদি শ্বশুরবাড়ির হাতে পড়ে তাহলে নুপূরের কোনো আাশায় পূর্ণ হবে না।বাচ্চাটাকে সে তার শ্বশুরবাড়ির পরিবেশে বড় করতে চায়নি বলে পালাচ্ছিলো।আর তাছাড়া নুপূর তাদের সামনে গেলে বাচ্চার দোহায় দিয়ে আবারো আটকে ফেলবে।

ঢাকাতে প্রথম আসায় ওর সাহায্যের দরকার ছিল,থাকার জায়গা ছিল না।সবকিছু নিয়ে আমি আলোর সাথে আলোচনা করতে চাইছিলাম।কিন্তু মায়ের সামনে নুপূরকে স্ত্রী হিসাবেই পরিচয় দিতে হতো কারণ বয়স্করা সহজেই ধরতে পারে প্রেগন্যান্ট কি’না।আর মা কেমন তা তো বলতে হবে না।তাই আমি বলি যে ছ’মাস আগে বিয়ে হয়েছে।সত্যি বলতে তখন আমি অতকিছু ভেবে দেখিনি।কিন্তু মা-বাবাকে বলতে গিয়ে আলো সব শুনে ফেলে আর পরিস্থিতি বিগড়ে যায়।তখন আমারও মাথা খারাপ হয় আলোর অবিশ্বাস করাই,একটাই কথা মাথায় ঘুরছিল আলো অবিশ্বাস কেন করবে?আর আমার ভাবনার জন্যই সব….সব শেষ।”

সার্থক নিজের দু’হাত দিয়ে মুখ আড়াল করলো।সবটা শুনে সবাই নিশ্চুপ।তারা জানে সার্থক মিথ্যা কথা কম বলে।একটু জল খেয়ে সার্থক বলে,”আমাদের বিয়ে কখন হয়েছে কাবিননামায় দেখ।”

তার হাতে থাকা কাগজের ফাইলটি হৃদয়ের দিকে এগিয়ে দিলো।হৃদয় সবটা পড়ে দেখে বললো,”হুম,দুইদিন আগেই বিয়ে হয়েছে।”

তখন তাসনিন বললো,”কিন্তু নুপূর যদি প্রেগন্যান্ট হয়,আই মিন ওর গর্ভে অন্যকারো সন্তান হয় তাহলে তোমাদের বিয়ে তো জায়েয না।”

তাসনিনের কথায় সবার মাঝে নতুন কৌতুহলের সৃষ্টি হলো।চায়ের কাপ রেখে হৃদয় বললো,”মানে কী?প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বিয়ে হয় না?”
-“দেখ,আমি বাবাজানের থেকে শুনেছি গর্ভবতী অবস্থায় তালাক বা বিয়ে হয়না।যদি না জেনে বিয়ে হয় তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হয় এবং তাদের বাচ্চা প্রসবের পরে আবার পুনরায় বিয়ে করতে হবে।এমনি বিয়ের আগে যদি কোনো মেয়ে প্রেগন্যান্ট হই আর সে সময় বিয়ে করলে তাও অশুদ্ধ।সহিহ বুখারীতে তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে।”

তাসনিনের কথায় সার্থক যেন আশার আলো দেখতে পেলো।যদি তাদের বিয়েটা জায়েয না হয় তাহলে তার একমাত্র স্ত্রী শুধুমাত্র আলো।শুধুই আলো!

আলো চোখে জল নেমে আসছে।তাহলে কী তার স্বামী একাই তার?কোনো ভাগিদার নেই!

হৃদয় প্রশ্ন করে,”তাহলে ঐ গ্রামের কাজী কী বিষয়টা জানতো না?তিনি কেন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বিয়ে দিলেন?”

সার্থক উত্তর দে,”তারা জানতে আমরা আগে থেকেই স্বামী-স্ত্রী।আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয় বার বিয়ে হওয়া না হওয়া কী?”

সবার উদ্দেশ্য তাসনিন আবার বললো,”তোমরা চাইলে বাবাজানের সাথে কথা বলতে পারো।”

হৃদয় কথা বললো,”না না,এত রাতে বাবাকে বিরক্ত করা ঠিক হবেনা।”

তাসনিন ধমক দিয়ে বলে,”তুমি বিরক্তের কথা ভাবছো?আরে ভাই,তিন তিনটা জীবন ধ্বংসের পথে।”

তাসনিনের পিতা পেশায় কাজী হওয়ায় কেউ বাধা দিলো না আর।তাসনিন তার বাবাজানের নাম্বারে ডায়াল করলো।প্রথমবার রিসিভ না হলেও দ্বিতীয়বার রিসিভ হলো।তাসনিন লাউডস্পিকারে দিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি একই উত্তর দেন এবং বিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করেন।
.
আলো দিদি,
দুঃখিত প্রথমে,অনুমতি ছাড়া দিদি এবং তুমি করে ডাকার জন্য।আমাদের বিবাহ দু’জনের অমতেই হয়েছে।জানি না আমার কথা বিশ্বাস করবে কি’না,তবুও ধৈর্য ধরে পুরো চিঠিটা শেষ করো।

সার্থক বাবু তোমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু তিনি যথেষ্ট একগুঁয়ে।নিজের জেদ এবং বিশ্বাসে অটুট।ভেবো না সম্পর্কে জড়িয়েছি বলে উনাকে চিনেছি বরং আমি লোকজনকে খুব সহজেই চিনে ফেলতে পারি।আর সার্থক বাবু তো নিজের জেদ সবাইকে দেখিয়ে বেড়ায়।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমার শ্বশুর বাড়ির গল্প শুনে নিয়েছো।আমি ততদিন পর্যন্ত তাদের থেকে পালিয়ে বেড়াবো যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রস্তুত,আমার সন্তানের জন্য সুন্দর পৃথিবী দিতে পারছি।আমি চাই না আমার সন্তান শ্বশুরবাড়ির পরিবেশে বেড়ে উঠুক,তাহলে আমার বাচ্চাটিও পাষাণই হবে।

আমার দূর্বলতা হলো আমার বাচ্চাটা।আর দূর্বলতাকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ করা মানে আগেই হাত গুটিয়ে পালানো।আমি সংসারী নারী না,সংসার বিচ্ছিন্ন নারী!সমাজ আমাকে সেই দৃষ্টিতে দেখবে না যেমনটা অন্য পাঁচ সংসারীকে দেখবে।ফলস্বরূপ বাচ্চাটাই কষ্টে বেড়ে উঠবে।

আমি উপযুক্ত হতে হতে হয়তো আমার শ্বশুরবাড়ির লোক আমাকে খোঁজে পাবেন তখন আমার বাচ্চাটির বিপদ আরো বেড়ে যাবে।তাই আমি চাই ও কে সুন্দর সংস্কার দিতে।সার্থক বাবু বলেছেন তোমরা বাচ্চা দত্তক নেওয়ার কথা ভাবছো।দিদি,আমার বাচ্চাটাকে কী তুমি মায়ের জায়গা দিতে পারবে?বাবা’র জায়গায় সার্থক বাবুর নামটা বসিয়ে দিবে?

আমি কখনই সার্থক বাবুর সামনে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে দাঁড়াবো না আর না বাচ্চাটিকে দত্তক দেওয়ার পর নিজের বলবো।দয়া করে আমার কথাখানা ভেবে দেখ।

ইতি,
নুপূর..

চিঠি পড়া শেষ করে হৃদয় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।সার্থকের উদ্দেশ্য প্রশ্ন করলো,”ওর শ্বশুর বাড়ির কী গন্ডগোল?”
-“বিস্তারিত জানিনা আমি।শুধু এটুকু জানি ওর শ্বশুরের গোপন বেআইনি কাজ কর্ম আছে আর ওর হাসবেন্ড সাইকো।তাছাড়া তারা নারীকে নিচু জাত মনে করেন।”
-“আর ওর বাবার বাড়ি?”
-“বাবা-মা বেঁচে নেই।চাচা-চাচির কাছেই বড় হয়েছে কিন্তু ওর বয়স যখন ১৭ তখন ওর স্বামীর কাছে ও কে বেঁচে দেয়।”
-“সংসার করেছে কয় বছর?”
-“ও আটক ছিলো প্রায়ই এক বছরের মত।তারপর বিয়ে হয়।এখন ২০-এ পা দিয়েছে হয়তো।”

তাসনিন প্রশ্ন করলো,”তুমি বললে নুপূর ঢাকায় প্রথম এলো তাহলে ও পালিয়ে গেল কোথায়?”
হৃদয় উত্তর দিলো,”চিঠিতে তো লিখবো ওর শুভাকাঙ্ক্ষী থাকার সু-ব্যবস্থা করেছে।হবে হয়তো কেউ একজন।”
-“এমনটাও তো হতে পারে নুপূর মিথ্যা বলেছে,ওর কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী নেই।আলো আর সার্থকের ভালোর জন্য চলে গেল।”

এতক্ষণ পর আলো মুখ খুললো।তাসনিনের উদ্দেশ্য বললো,”নাহ,এই মেয়ে এমনটা করবে না।ওর যদি এভাবে যাওয়ার থাকতো তাহলে সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করতো না,চিঠিতে এত কাহিনী লিখতো না।ও নিজের জন্য আশ্রয় খোঁজে পেয়েছে,ওর লক্ষ্যে পৌঁছাবার সিড়ি পেয়ে গেছে।নিজের ভালোটা ভালোই বুঝেছে।”

আলো একটু থেমে আবার বললো,”নুপূর কীভাবে জানলো আমরা বাচ্চা দত্তক নিতে চাইছি?”
-“কথায় কথায় নুপূর জিজ্ঞেস করে আমার বাচ্চা হয়েছে কি’না তখন আমি জানায় তোমার দু’বার মিসক্যারেজ হয়েছে তাই আমি এরপর দত্তক নিতে চাইছি।”
-“বাহ!তুমি আমাদের পরিবারের কথাও ও কে বলে দিয়েছ?”

তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে আলো প্রশ্ন করলো,”সত্যি সত্যি স্ত্রী মানতে শুরু করিছিলে নাকি?”

সার্থক মাথা নিচু করেই রাখে।সে বুঝতে পারে আলো বিষয়টা এখনো সহজ ভাবে নেয়নি।

তাসনিন বললো,”তাহলে এখন কী নুপূরকে খুঁজবে?”
হৃদয় উত্তর দে,”নাহ,নুপূর নিজে বলেছে ও সুরক্ষিত জায়গায় আছে।ও সার্থকের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য ছিল তো?সেটা যখন অন্য কোথাও পেয়ে গেলো তখন খোঁজার কী দরকার?”
-“কিন্তু নুপূরের থেকে ওর সন্তান ওরা কীভাবে দত্তক নিবে?যখন জানেই না নুপূর কোথায়।”
-“নুপূর যখন বলেছে দত্তক দিবে তারমানে যেকোনো উপায় নিশ্চয়ই রেখেছে।”

তারা আরো কিছুক্ষণ নুপূরকে নিয়ে আলোচনা করে।একসময় ফজরের আযান কানে ভেসে আসে।কথারমহল ছেড়ে সবাই নামাজ আদায় করে নেয়।
.
হৃদয়ের বাড়ি থেকে নাস্তা করার পর সার্থক আলোকে বলে,”ব্যাগ গুছিয়ে নাও।”
-“ব্যাগ কেন গুছাবো?”
-“মানে কী?বাড়ি যাবে না?”

আলো মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলে,”বাড়ি কেন যাবো আমি?তুমি নিজের ইগো নিয়ে,নিজে দোষ করেও আমাকে দোষারোপ করো।তারপর আমি চলে আসার সময়ও আটকালে না।তোমার নিজের এই অভ্যেসের সাথে আমি আর পারছি সার্থক।”

এতক্ষণ ধরে সার্থক ভেবেছিল হয়তো সব ঠিক হয়ে গেছে।কিন্তু আলোর কথা শুনে সে ঘাবড়ে যায়।আলোকে ছাড়া থাকা তার জন্য অসম্ভব।তাই তো এত বৃষ্টি মধ্যেও বেরিয়ে পড়েছে।সার্থক যতই রাগ,জেদ দেখাক না কেন সবটাই অল্পসময়ের।দিন পেরিয়ে রাত হতেই সে নিজের কাছে হার মানে।

সার্থক আমতা আমতা করে আলোর হাত ধরে বলে,”আ’ম স্যরি,আলো আর হবে না।প্লিজ চলো।”

এক ঝটকায় আলো হাত ছাড়িয়ে নেয়।ক্রোধ স্বরে বলে,”তোমাকে যেন আমার আশে-পাশেও না দেখি সার্থক।তোমাকে দেখলে আমার জাস্ট ঘেন্না হচ্ছে।”

বলতে বলতে নিজের রুমে চলে যায়।সার্থক পেছনে যেতে চাইলে হৃদয় আটকে ফেলে।সার্থক বললো,”মানে কী হৃদয়?আমি সবকিছু জেনে শুনে না করেছি।ভুল হয়েছে বললাম তো।”

হৃদয় বললো,”দেখ,আলো নিজেকে সামলে নিক আগে।তোমার বিহেভের জন্যই আলো এমন করেছে।তুমি প্রমাণ করো যে তোমার বিহেভ পাল্টে গেছে।”

সার্থক পাশে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো।আলোকে ছাড়া তার ক্ষণ কীভাবে কাটবে!
.
এক সপ্তাহের মত হয়েছে নুপূর দিনাজপুরে।দিনাজপুরের একটা বাংলোতেই থাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।আর নুপূর সেখানকার পাঁচবাড়ী ডিগ্রি কলেজে এডমিশন রেখেছে।প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ক্লাস করা তার জন্য পসিবল না।কিন্তু তাও পরিক্ষা দিতে হবে।নুপূর অনেক কৃতজ্ঞ তার শুভাকাঙ্ক্ষীর উপর।এখন তার সন্তানের সাথে সে নিজে সেইফ।অন্যদিকে সার্থক বাবু আর আলো দিদিও ঝামেলা মুক্ত থাকলো।

নুপূরের মনে পড়লো আসমা সিদ্দিকার কথা।খুব অদ্ভুত তিনি!আলো এতদিনেও তার পুত্রবধূ হতে পারেনি অথচ কত সহজে নুপূরকে মেনে নিলো?তা কী শুধু নুপুরের রুপ আর সন্তানের জন্য নাকি অন্য কোনো ঘাপলা আছে?

(চলবে)

বি.দ্র:ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,বানান ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন।

হৃদয় হরণী পর্ব-০৩

0

@হৃদয় হরণী
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_নুসরাত_জাহান_নিপু

নুপূর বাড়িতে ঢুকতে স্বর্ণা তার সেলফোন এগিয়ে দিলো।নুপূর বুঝলো না সে স্বর্ণার ফোন নিয়ে কী করবে?স্বর্ণাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে ফোন থেকে শব্দ হয়,”হ্যালো,নুপূর?”

নুপূর বুঝতে পারে তার সাথে কেউ কথা বলতে চাইছে।সে হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে কানে লাগালো।তখন ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,”নুপূর,আপনার সাথে আমি পার্সোনালি কিছু কথা বলবো।আশা করি আপনি শুনবেন।”

ছোট করে নুপূর ‘হু’ বললো।সে জানে ওপাশের ব্যাক্তি কে?তবুও সে জানতে চায় কী বলবে ব্যাক্তিটি?
.
এত গরমেও আলোর হঠাৎ ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো।জ্বর আসার লক্ষণ এটি।মাথা থেকে সে সার্থককে সম্পূর্ণ রুপে বের করতে চাইছে অথচ মাথা থেকে ভাবনা সরছেই না।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেজেতে।তার মনে পড়ছে সেই দিনের ঘটনা যেদিন সার্থক তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।

কলেজের ক্লাস শেষ করে আলো আর হৃদয় আসছিলো।তখন সার্থক এসে বলে,”হৃদয়,আলোকে বাসায় আমি ড্রপ করে দিবো।তুমি চলে যাও।”

সার্থকের এমন কথায় আলো-হৃদয় দুজনে বেশ অবাক হয়।কিন্তু সার্থকের সাথে ভালো বন্ধুত্ব থাকাই না করতে পারেনি।তার বাইকে করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলে সার্থক মাঝপথে বাইক থামিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়।হঠাৎ গাড়ি থামাতে আলো নেমে সার্থকের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ায়।তখন হুট করে সার্থক বলে বসে,”আই লাভ ইউ।”

সার্থকের এমন কথায় আলো ভ্যাবাচেকা খেল।সে প্রশ্ন করে,”মানে কী?”
-“অর্নাসে পড় তুমি অথচ আই লাভ ইউ’র মানে বুঝো না?”
-“বুঝবো না কেন?আমাকে কেন বলছো?”
-“যাকে ভালোবাসি তাকে আই লাভ ইউ বলবো না তো কাকে বলবো?”

আলো আগেই ধারণা করেছিল সার্থক তাকে ভালোবাসে।নারীর তৃতীয় চক্ষু খুবই কার্যকরী।তারা আগে থেকে আন্দাজ করতে পারে কোন ছেলের কী উদ্দেশ্য!

আলো উত্তরে কিছু বলেনি।ঠোঁট কামড়ে হাসি থামাতে ব্যস্ত সে।তা দেখে সার্থক রেগে বললো,”তোমার মজা মনে হচ্ছে?”

এ কথা শুনে আলো হাসি থামাতে পারলো না।খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাইকে হেলান দিয়ে বললো,”সরি সরি,তোমার প্রপোজাল দেখে না হেঁসে পারছি না।”

সার্থক গাল ফুলিয়ে বাইকের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।আলো একসময় হাসি থামিয়ে বলে,”চলো,যাওয়া যাক।”

সার্থক বলে উঠে,”মানে?তুমি আন্সার দিবে না?”
-“কিসের আন্সার?”
-“মজা করছি আমি?”
-“তোমার ‘আই লাভ ইউ’ বলতে ইচ্ছে হলো তাই তুমি বললে আমার বলতে হবে এমন কোনো বাধ্যকতা নেই।আর এমন শুকনো প্রপোজাল তো আমি জীবনে এক্সপেক্ট করবো না।”
-“শুকনো?বৃষ্টি কোথায় পাবো আমি?”

আলো মাথায় হাত দিয়ে বলে,”হায় আল্লাহ!এখন উনি বৃষ্টি খোঁজেন,বললাম কী বুঝলো কী!”
সার্থক বাইকে উঠে স্টার্ট দিয়ে বললো,”আমার অগোছালো, অভিমানী শহরে তোমার নিমন্ত্রণ হৃদয় হরণী!”

পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় হুট করে স্টার্টে আলো সার্থকের পিঠে ধাক্কা খায়।আলো তার মুন্ড সার্থকের পিঠ থেকে আর তুলেনি।

অতীতের ডায়েরি থেকে বেরিয়ে আলো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।সম্পর্ক তাদের প্রথমে ছিল বন্ধু,বন্ধু থেকে প্রেমের সম্পর্ক,তারপর বিয়ে!বিয়ে অতো সহজ ছিল না কারণ দু’জনে তখন সবে পড়াশোনা শেষ করেছে আর ব্যাচমেইট।অনেক কষ্ট করে তাদের বিয়ে হয় অথচ এখন?এখন দু’জনে আলাদা!

সার্থক এতদিন অভিনয় করেছে তার সাথে,এত নিখুঁত অভিনয় যে সে কিছু টের পায়নি।কষ্ট হচ্ছে আলোর নিজের ভাগ্যের উপর!আচ্ছা সার্থক কী নুপূরকে ভালোবাসে?ধুর,ভালোবাসে বলেই তো বিয়ে করলো আর মেয়েটি প্রেগন্যান্ট!

আলো খুব কাঁদছে কিন্তু সেই কাঁদায় কোনো জল নেই।বিরক্ত সে নিজের উপর কাঁদতে কাঁদতে।

তখনই হৃদয় চা নিয়ে তার রুমে আসলো।এক পলক তাকিয়ে আলো চায়ের কাপ নিলো।

হৃদয় স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,”কাঁদতে ইচ্ছে করলে কেঁদে নে।”

আলো ভ্রু কুঁচকে বন্ধুর দিকে তাকালো।কিছু না বলে নিঃশব্দে চায়ে চুমুক দিলো।হৃদয় আবারো বললো,”বিজ্ঞান কী বলে জানিস?কান্না পেলে অনেকটা আবেগি হয়ে কাঁদুন,কারণ এতে করে কাঁদার ফলে সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন এবং টক্সিন থাকে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।মূলত কান্না শরীরকে এক প্রকার বিষমুক্ত করে ফেলে।পাশাপাশি এন্ডরফিন হরমোন তৈরি হয় যা মনকে সতেজ করে তুলে আর ভালো অনুভব হয়।”

আলো কটমট করে হৃদয়ের দিকে তাকালো।এই সময় কী বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করার?

আলো তার উপর রাগ ঝাড়ার আগে কক্ষে হৃদয়ের স্ত্রী প্রবেশ করলো।তখন হৃদয়ের স্ত্রী তাসনিন বললো,”কী হয়েছে?”

হৃদয় মৃদু হেসে বললো,”কই কিছু না।আলোকে কাঁদার উপকারিতা শেখাচ্ছিলাম।”

আলো আঙ্গুল দেখিয়ে বললো,”চুপ।তুই একটা কথাও বলবি না।”তারপর তাসনিনের উদ্দেশ্য বললো,”কাকিমা ঘুম থেকে উঠেছেন?”
-“নাহ,আম্মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে।এখন জাগবে না।”
-“ঘুমের ওষুধ কেন দিলে আবার?”
-“হৃদয় তোমাকে আনতে যাওয়ার পর আম্মা চিৎকার চেঁচামেচি করে তাই নার্স ইনজেকশন দেয়।”
-“ওহ।”
-“তোমার কথা বলো,কী সিদ্ধান্ত নিলে?”

তাসনিনের প্রশ্ন আলো চুপসে গেল।কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি সে এখনো।কী সিদ্ধান্তই বা নিবে?

তখন তাসনিন বললো,”বাই চান্স,তুমি ডিভোর্সের কথা ভাবছো না তো?”
.
আসমা সিদ্দিকা নুপূরকে খোঁজছেন সন্ধ্যা থেকে।অথচ মেয়েটার দেখা নেই।বাগানেও দু-তিন দেখে এসেছেন।শেষে তিনি স্বর্ণাকে জিজ্ঞেস করলে স্বর্ণা উত্তরে জানায় সে জানে না।সন্ধ্যা পেরিয়ে নিশি নামতেই তার দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল।তিনি অতি দ্রুত কথাটি স্বামীর কানে তুললো।কিন্তু শারদ বিপরীত কোনো ইঙ্গিত দিলো না।বাধ্য হয়ে তিনি বললেন ছেলেকে।

এদিকে আলোর চলে যাওয়ায় সার্থকের মন মরা,মায়ের কথা সে কানেই তুললো না।কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই চেঁচামেচি শুরু হলো বাবা-মায়ের ঘর থেকে।সার্থক গিয়ে তাদের কথোপকথন শুনলো।

শারদ অত্যন্ত রেগে বললেন,”আশ্চর্য কথা বলছো তো তুমি আসমা।ঐ মেয়ে কোথায় উধাও হলো সেটা আমি জানবো?”

একই স্বরে আসমা সিদ্দিকা বললেন,”তোমরাই নুপূরের কিছু একটা করেছ।নাহলে ও কে খোঁজে দেখছ না কেন?”
-“আসমা,বাড়াবাড়ি করো না।আলো প্রতি তোমার সব অন্যায় মেনে নিয়েছি বলে ভেবো না ঐ মেয়ের প্রতি গোমার আদর মানবো।”
-“তোমার বউমার যেতে ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছে,বাপের বাড়ি তো নাই।পর পুরুষের বাড়ি গিয়ে উঠলো।”

এই পর্যায়ে সার্থক কথা বললো,”মা,বাজে কথা বলো না।”

আসমা সিদ্দিকা বিছানায় বসে আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদে কেঁদে বললেন,”আমি তো বাজেই বলি।গর্ভবতী বউটা যে কোথায় গেল,তার খবর নেই।”

মায়ের এমন কথায় সার্থকের টনক নাড়া দিলো।নুপূর কী সত্যি বাড়িতে নেই?

সে দৌঁড়ে বোনের রুমে গেল।সরাসরি স্বর্নাকে প্রশ্ন করলো,”নুপূর কোথায়?”
-“জানিনা।”
-“পুরো বাড়ি দেখেছিস?”
-“মা দেখেছে।”
-“কখন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?”

স্বর্ণা উত্তর দিলো না।সে ভাইয়ের দিকে দু’টো চিঠি এগিয়ে দিলো।সার্থক ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,”এসব কী?”

স্বর্ণা কথা বলা অর্থহীন মনে করলো।সে চিঠি দুটো ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলো।স্বর্ণার মতে বেশি কথা বলা কণ্ঠনালির জন্য ক্ষতিকর।
.
‘সার্থক বাবু,

আপনি আমাকে এই ঢাকা-শহরে এনেছেন তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।আমি যদি শুরুতে জানতাম আপনার স্ত্রী আছে তাহলে মরে গেলেও আপনাকে বিবাহ করতাম না।আমি আমার বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য আপনাকে বিবাহ করেছি কিন্তু আমার বাচ্চার জন্য আপনাদের সম্পর্ক নষ্ট হউক আমি চাইনা।আপনি আসার সময় যখন গাড়িতে বলেছেন আপনার স্ত্রী আছে তখন আমি জানতাম এমন প্রলয় অবশ্যই হবে।কোনো নারীই চায় না নিজের সতিন আসুক।আপনি বলেছেন আপনাদের সম্পর্কে বিশ্বাস দৃঢ়।কিন্তু আমাকে বিবাহ করে আপনি বিশ্বাস ভেঙ্গেছেন।তাহলে আলো দিদি কেন বিশ্বাস করবে?যেটা আপনি প্রথমেই ভেঙ্গে ফেলেছেন।দিদি যদি আরেকজন পুরুষকে বিয়ে করতো তাহলে আপনার চিন্তা-ভাবনা কেমন হতো ভেবে দেখুন।

আপনার দ্বারা আমি নিজের শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি।আমার থাকার জন্য সু-ব্যবস্থা করেছেন তিনি।ভাববেন না আপনি, আমি আমার স্বামীর কাছে ফিরে যাচ্ছি।আমি তার থেকে এই জন্মে পালিয়েই থাকবো।শুধু আপনার কাছে একটাই অনুরোধ আমার সন্তানের পিতার জায়গায় আপনার নাম লিখে দিবেন।ও কে আমি একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই যার জন্য এত যুদ্ধ!আশা করি আপনি আর আলো দিদি আমার কথাখানা রাখার চেষ্টা করবেন।

গত তিনদিনে আমার জীবনে তুফান নিয়ে এসেছিলাম আমি।গ্রামের লোকজন কখনো আমার খোঁজ করলে জানিয়ে দিবেন আমি ভালো আছি,ভালো থাকবো।অপর চিঠিটা আলো দিদিকে দিলে আমার খুব উপকার হবে।”

ইতি,
নুপূর
.
ঘড়ির কাঁটা রাত দু’টো ছুঁই ছুঁই।আলো ঘুমানো প্রস্তুতি নিচ্ছে।শরীরটা কেমন হালকা লাগছে।গা-টাও গরম।বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।সার্থককে ডিভোর্স দেওয়ার কথা সে কল্পনাতেও ভাবেনি।কিন্তু যদি সত্যি দেখা যায় সার্থক নুপূর মেয়েটার সাথে সংসার করছে তাহলে তালাকই দিবে।

চোখে হালকা ঘুম আসতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।এতরাতে কে আসলো ভেবে আলো আশ্চর্য হলো।পরক্ষণে সে ড্রয়িং রুম থেকে সার্থকের গলার আওয়াজ পেলো।আলোর বিস্ময় আকাশ ছুঁই ছুঁই!এতরাতে সার্থক এখানে কেন এলো?

হৃদয় আলোকে উঁচু স্বরে ডাকলো।আলো ভেবে পেলো না সে কী করবে?সার্থকের সাথে কথা বলবে না ঘুমের ভান ধরে এড়িয়ে যাবে?

(চলবে)

বি.দ্র:বানান ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন,ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🌼

হৃদয় হরণী পর্ব-০২

0

@হৃদয় হরণী
#পর্ব_০২
#লেখিকা_নুসরাত_জাহান_নিপু

আলো নিজের সেলফোন নিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো।এখন একমাত্র হৃদয়ই পারে তাকে সামলাতে।চক্ষে জল নিয়ে আলো কল লিস্টের প্রথম নাম্বারটিতে ডায়াল করলো।দু বার রিং হতে ওপাশে রিসিভ হলো।

আলোর উদ্দেশ্য সে বললো,”হ্যালো,বল আলো।”

বন্ধুর কন্ঠস্বর শুনে আলো উত্তরহীন কাঁদতে লাগলো।কান্নার শব্দ শুনে হৃদয় ঘাবড়ে গিয়ে বললো,”আলো,তুই কাঁদছিস কেন?কী হয়েছে?”
-“হৃদয়…ও”

কান্নার বেগ এতো বেড়ে গেল যে আলো কথা বলতে পারছে না।ওদিকে হৃদয় কী হয়েছে জানার জন্য চটপট করছে।ঠোঁট কামড়ে আলো এক নিঃশ্বাসে বললো, “স্বার্থক আবার বিয়ে করেছে।”
-“কিহ?মাথা ঠিক আছে তোর?”
-“ঠিক বলছি আমি।”

আলো কেঁদেই যাচ্ছে।বান্ধবীর এমন কথায় হৃদয় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।স্বার্থক-আলোর প্রেমকাহিনী এখনও কলেজে সবার মুখে মুখে।স্বার্থক কী করে এমনটা করতে পারে?

নিজের আশ্চর্য হওয়া থামিয়ে হৃদয় প্রশ্ন করলো,”স্বার্থক না অফিসের ট্যূরে বান্দরবান গেল?তাহলে বিয়ে?”
-“জানিনা আমি কিছু হৃদু।”

আলোর কান্না থামার নাম গন্ধ নেই।হৃদয় আবার প্রশ্ন করলো,”তোদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিলো কোনো কিছু নিয়ে?বা টের পেয়েছিস স্বার্থক অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে?”
-“সব ঠিক ছিল।এমনকি ও এক সপ্তাহ আগে ট্যূরে যাওয়ার সময়ও।কী হয়ে গেল হৃদু..”
-“স্বার্থক তোকে কিছু বলেনি?”
-“নাহ,উল্টো মেয়েটার জন্য আমার শাড়ি নিয়ে গেল।”

হৃদয় বলার মতো কোনো শব্দ খোঁজে পেল না।তার ভাবতে হবে,প্রচুর ভাবতে হবে।কী করে স্বার্থক এমনটা করলো?কৈফিয়ত তো স্বার্থককে দিতেই হবে।

ভাঙ্গা স্বরে হঠাৎ আলো বলে উঠলো,”আমি কী করবো হৃদু?আমার বাবার বাড়ির দরজা তো দু বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।আমি কোথায় যাবো?”

গালে লেগে থাকা অশ্রু মুছে পাগলের মতো আলো বললো, “শুন হৃদু…আমি না আমি সুইসাইড করবো।তখন..তখন,”
-“পাগলামো বন্ধ কর আলো।তুই ব্যাগ গুছিয়ে নেয়,আমি নিতে আসছি তোকে।দুপুরে খেয়েছিস?”

ক্রন্দন নিয়েই নিচু স্বরে আলো উত্তর দিলো,”নাহ।”
-“যাহ,কিছু খেয়ে নেয়।আর প্লিজ নিজের অভিমানকে এক পাশে রেখে স্বার্থক কিছু বলতে চাইলে শুনিস।হুট করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কোনো রিজন অবশ্যই থাকবে।”

আলো কিছু না বললো না।চারপাশের সবকিছু বিষাদ লাগছে তার।সবই অন্ধকার তার জন্য।আর যাই হউক,স্বার্থকের সাথে কথা বলতে পারবে না সে।
.
নুপূর তার শ্বাশুড়ির সাথে খেতে এলো।টেবিলে নিঃশব্দে খাবার খাচ্ছিলো স্বর্ণা।বাকি আর কাউকে নুপূর আশে-পাশে দেখতে পেলো না।স্বর্ণার পাশের চেয়ারটাই নুপূর বসে পড়লো।এখন আপাতত পেটকে শান্তি করতে হবে।কিন্তু অচেনা পরিবেশে এভাবে খেতে নিজেকে কেমন বেহায়া লাগছে।তবে আসমা সিদ্দিকা অতি আদরেই তার ভাতের প্লেটে মাংস তুলে দিচ্ছে।

এমন যত্নে তাকে কোনোদিন কেউ খাইয়ে দেয় নি।সে জানে আসমা সিদ্দিকা তার রুপ দেখেই এত আদর করছে কিন্তু যখন জানবে স্বার্থক বাবু তার সাহায্য করেছে মাত্র!তখনই হয়তো বাড়ি থেকে বের করে দিবেন।কত অদ্ভুত চরিত্র রয়েছে এই ধরণীতে!

খেতে খেতে নুপূরের এক পর্যায়ে আলোর কথা মনে পড়লো।ঐ মেয়েটা নাকি তার সতিন!অথচ আশ্চর্য নুপূর তাকে মোটেও সতিন ভাবতে পারছে না।তার কারণ কী?কারণটা হয়তো স্বার্থক বাবুকে সে নিজের স্বামীর আসন দিলেও মনের কোণে রাখেনি।স্বার্থকের জন্য তার মনে সম্মান ছাড়া অন্য কোনো অনুভূতি নেই।সন্তান জন্ম দিয়েই যে নুপূর হওয়ায় নিরুদ্দেশ হবে!কী করে জগৎ সংসারকে বুঝাবে সে এ কথা?

নুপূরের খাওয়া শেষ হলে তার শ্বশুর উপস্থিত হলো।নুপূর তাতক্ষণাত ঘামতে শুরু করলো।এই মানুষটাকে সে বড্ড ভয় পেয়েছে।স্বার্থকের মতো অত বড় ছেলে কীভাবে চড় মারলো!বাই চান্স তিনি নুপূরকেও মেরে তাড়িয়ে দিবেন নাতো!

এমন অদ্ভুত চিন্তা আসায় নুপূর নিজেকে কিছুক্ষণ বকা দিলো।তার শ্বশুর কারো সাথে কথা না বলে চুপচাপই বেরিয়ে গেলো।পেছন পেছন স্বার্থকও বেরিয়ে যেতে চাইলে তার মা থামিয়ে দিয়ে বললো,”কোথায় যাচ্ছিস আব্বা?এই গরমে কোথাও বের হতে হবে না।”
-“মা তুমি একই কথাটা বাবাকে বলে থামাতে পারলে না?”
-“আমি কেন থামাবো?যে যাওয়ার সে এমনিই যাবে।”

স্বার্থক তার মায়ের চেহেরার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না।রাগ হচ্ছে তার মায়ের উপর!কেন হচ্ছে নিজেও জানে না।তার মায়ের উপর কৃতজ্ঞ হওয়া উচিৎ।কারণ মাও যদি বিয়ের বিপক্ষে যেত তাহলে বাড়ি থেকে,আলোর কাছ থেকে বহু দূরে সরে যেতে হতো।যা সে কখনই পারতো না।

স্বার্থক তার ছোট বোনকে প্রশ্ন করলো,”আলো কোথায় দেখেছিস?”
-“ছাঁদে গিয়েছিল ভাবি।”

স্বার্থক ছাঁদে যাওয়ার জন্য ঘাড় ঘুরাতে আলোকে দেখতে পেলো।আলো তাকে দেখেও উপেক্ষা করে রুমে চলে গেলো।স্বার্থকের চেহেরাটা তার চক্ষে কাঁটার মতো ফুটছে।
.
-“আলো তুমি ব্যাগ গোছাচ্ছো কেন?”
-“হৃদয় আমাকে নিতে আসছে।”
-“পাগল হয়ে গেছ তুমি?”
-“আমি পাগল হয়েছি?আমি?আগে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজেকে প্রশ্নটা করো।”
-“আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে?”
-“লজ্জা করছে না তোমার স্বার্থক?প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আবার বিয়ে করলে আর এখনও আমার সাথে ইমোশনাল কথা বার্তা বলছো?ছিঃ।ঠিক আছে;তোমার প্রশ্নের উত্তর শুনো-তুমি যখন আরেকটি বিয়ে করে বাসায় তুলতে পারো তাহলে আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি।”
-“আলো আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি।বিয়েটা করতে চাইনি….”
-“স্বার্থক প্লিজ,আমাকে একা থাকতে দাও।তুমি চলে যাও রুম থেকে।জাস্ট লিভ মি এ্যলং!”

আলো এক প্রকার ঠেলেই স্বার্থককে রুম থেকে বের করে দিলো।এখন স্বার্থক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল শুরু করবে।ফলে আলো গলে যাবে আর কান্না করবে।সে কিছুতেই চাইছে না স্বার্থকের সামনে চোখের জল ফেলতে।তার থেকে কিছু শুনতে চায়না এখন।সবসময় স্বার্থক ভুল করে আর আলো তা মেনে নেয়।এজন্য পরে দেখা যায় বিষয়টি নিয়ে সে অনুতপ্ত নয়।কিন্তু এবার স্বার্থক কী করলো এটা?ও কী জানে না নারীর কাছে তার স্বামী অমূল্য সম্পদ।কোনো নারীই পারে না ভালোবাসের ভাগ কাউকে দিতে।স্বার্থক কী করে এমনটা করতে পারলো?আলো কিছুতেই পাত্তা দিবে না তাকে।অনুশোচনা হউক তার মধ্যে।

অনুশোচনা!এই অনুশোচনাই মানুষের খারাপ কর্মের বড় শাস্তি।যতই আইন,কঠোর শাস্তি হোক না কেন ব্যক্তির মধ্যে প্রথমে অনুশোচনা হতে হয়।তাহলে সে নিজে অনুতপ্ত হয়ে সারাজীবন কাঁদতে কাঁদতে কাটিয়ে দিবে।

.
আলো কাপড়-চোপড় ব্যাগে ভরে হৃদয়ের অপেক্ষা করতে থাকলো।খিদে তার একটুও পাইনি।বরং মনেই নেই কিছু খাওয়ার কথা।মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন ঘুরছে।”স্বার্থক কেন দ্বিতীয় বিবাহ করলো?” সে তো সবসময় বলতো তার হৃদয় হরণী একমাত্র আলো।তাহলে এখন নুপূরকে কেন বিয়ে করলো?

নাহ!সব পুরুষই এক।তার নিজের বাবাও দুটো বিয়ে করেছে।তার মা মারা যাওয়ার দু বছর পরই অন্য এক মহিলাকে ঘরে আনেন।পরিচয় করিয়ে দেন,”আলো,উনি তোমার মা।”

আলো টের পাই বাবা’র প্রতি ঘৃণাটা তার সেদিন থেকে শুরু হয়।কিন্তু সাত বছরের মেয়েটি আস্তে আস্তে বড় হয়।সে বুঝতে পারে বাবা যে মহিলাকে বাড়িতে এনেছিল তিনি তার মায়ের জায়গায় ভাগ বসিয়েছে।এমনটা নয় যে মহিলাটি খারাপ কিন্তু ভালোও নয়।আলোকে কষ্ট দেয়নি,অন্য সৎ মায়ের মতো অত্যাচার করেনি কিন্তু আদরও করেনি।আলো একা বড় হয়েছে।একা জগতে বাঁচতে জানে।কিন্তু মাঝপথে স্বার্থকই তার সঙ্গী হলো।কী দরকার ছিল?

এত কাঁদার পরও কান্না শেষ হয়না কেন?কোথায় জমা থাকে এত কান্না?ওমনি ইমোশনে একটু আঘাত হলেও হুর হুর করে বেরিয়ে পড়ে।অসহ্য!

আলোর কর্ণের ভেসে আসলো হৃদয়ের কন্ঠস্বর।সে নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো।আবারো মুখোমুখি হলো স্বার্থকের।আলো মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হৃদয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।হৃদয় হলো তার খুঁটি।

হৃদয় এতক্ষণ স্বার্থকের সাথে কথা বলছিলো।শেষে বললো,”স্বার্থক,আলো কিছুদিন আমার ওখান থেকে ঘুরে আসুক।ওর মাথা ঠিক নেই এখন।”

চেহেরা শুকনো করে রাখলো স্বার্থক।আলোকে থামানোর কোনো রাস্তা তার জানা নেই।এতক্ষণ রেগে ছিলো আলো উপর আর এখন প্রচুর রাগ হচ্ছে তার নিজের উপর,নুপূরের উপর।

স্বার্থক আমতা আমতা করে আবারো বললো,”হৃদয়,তোমরা সবাই আগে প্লিজ জানো আমি বিয়েটা কেন করলাম।আমি আলোকে কতটা ভালোবাসি তোমরা জানো না?”
-“জানি বলেই তুমি এখনো বাড়িতে আছো।প্রথম স্ত্রীর মত না থাকলে ২য় বিয়ে করাটা আইন এবং ইসলাম দু’দিকেই অপরাধ।”

স্বার্থক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।এখন বাড়ির কাউকে কিছু বুঝানো যাচ্ছে।পরিস্থিতি অতন্ত্য বিগড়ে গেছে।তাই বলে আলোও?আলোও তাকে ভুল বুঝবে?কত বিশ্বাস ছিল দু’জনের সম্পর্কে!স্বার্থক একগুঁয়ে।সে ঠিক করেছে বাড়ির সবাইকে বিয়ের ব্যাপারে খুলে বলবে রাতে কিন্তু আলোকে জানাবে না।আলো তাকে অবিশ্বাস কেন করলো?

হৃদয়ের সাথে আলো বেরিয়ে গেলে স্বার্থক তাদের দিকে চেয়ে রইল।এই আলো তো সেই না যে তার অভিমান!তার বেঁচে থাকার কারণ!সোনার সংসার ছিল তাকে।প্রতিটি মুহুর্ত ছিল আনন্দে ভরা।তার কানে বাজছে আলোর হাসির আওয়াজ।সেই সাথে দুপুরের কান্নার আওয়াজ!মেয়েটা কেঁদেছে,তার কারণে কেঁদেছে।অথচ স্বার্থক কথা দিয়েছিলো তার চোখে কখনো জল আসতে দিবে না।

স্বার্থকের সব রাগ গিয়ে পড়লে নুপূরের উপর।নুপূরের জন্য আজ সব কিছু হলো।না মেয়েটা তার সামনে আসতো আর না এত কিছু হতো…।নুপূরের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,”তোমার জন্য জাস্ট আমার লাইফ হ্যাল হয়ে গেল।ষ্টুপিড গার্ল!”
.
স্বার্থক এটুকু শুনিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।আর নুপূর..সে হাটু গেঁড়ে বাগানে বসে কাঁদতে লাগলো।কান্না তার আজীবনের সঙ্গী।আল্লাহ কেন তার জীবনটা নরকে পরিণত করলো?সে যার জীবনেই যায় যেখানে কালবৈশাখী চলে আসে।সে কাঁদছে স্বার্থকের রাগ দেখানোর জন্য নয় কাঁদছে আলোর জন্য,স্বার্থকের জন্য।এ জীবনে আর যাই হউক আলোকে সে স্বার্থকের কাছে ফিরিয়ে আনবে।

নুপূর বিয়ে নামক সম্পর্কে পরিচিত মাত্র আর আলো বিয়ে নামক সম্পর্কে বেঁচে থাকা,ভালোবাসা!

(চলবে)

বি.দ্র:ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, বানান ভুল ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন🌼

হৃদয় হরণী পর্ব-০১

0

@হৃদয় হরণী
#পর্ব_০১
#লেখিকা_নুসরাত_জাহান_নিপু

চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা নুপূর দাঁড়িয়ে আছে তার দ্বিতীয় স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সামনে।ভয়ে সে ঘেমে একাকার।নুপূর বুঝতে পারছে না এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলানো উচিত।সে কিছু বললে এখন উল্টো হতে পারে।তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলো।

স্বার্থক প্রথম স্ত্রীকে বললো,”আলো,তুমি ভুল বুঝো না..”

আলো কিছু না বলে অশ্রুসিক্ত চক্ষু নিয়ে দৌঁড়ে রুমে চলে গেল।নুপূরের মনে হলো সে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে বড্ড অন্যায় করেছে ফেলেছে।অবশ্য ছোট বেলা থেকেই সে অপরাধী।জন্মের আগে বাবা মারা গেল।জন্মের সময় মা মারা গেল।তাইতো চাচি সবসময় বলে সে অভিশাপ।আসলেই নুপূর অভিশাপ।

স্বার্থকের বাড়ির পরিবেশ বেশ থমথমে।তার বাবা উঠে এসে কথা ছাড়া স্বার্থকের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,”তুমি এতটা নিচ?ছিঃ,লজ্জা হচ্ছে আমার।”

নুপূর খেয়াল করলো বৈঠক ঘরের সবাই একে একে চলে যাচ্ছে।তাকে কেউ স্বাগতম জানাচ্ছে না।কিন্তু একজন মহিলার চেহেরার কোনো ক্রোধ, দুঃখ নেই বরং বেশ হাসি হাসি।নুপূরের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বুঝে নিলো এনি স্বার্থকের মা।তার পাশে দাঁড়ানো অন্য মেয়েটি হয়তো স্বার্থকের বোন হবে।

সবাই চলে গেলে তিনি তাদের দু’জনের সামনে এসে বললেন,”স্বার্থক বাবা,তুই ওদের কথায় কান দিস না।নুপূর মেয়েটাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।তোরা ঘরে যা।”

স্বার্থক দ্বিধায় পড়ে গেল।তার রুম একটাই যেখানে বর্তমানে আলো আছে।নুপূরকে নিয়ে একই ঘরে যাবে?

তখন স্বার্থকের ছোট বোন বললো,”উনাকে আমি আমার ঘরে নিয়ে গেলাম।আসো আপু..”
.
আলো মুখে পানি দিচ্ছে অনবরত।সে কিছুতে মানতে পারছে না স্বার্থকের দ্বিতীয় বিয়ে।চার বছর প্রেমের পর বিয়ে করেছে দু’বছর হলো।স্বার্থকের জন্য সে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েছে।আর আজ…আজ সেই স্বার্থক তাকে ধোঁকা দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করলো?নাহ বিয়েটা তো আজ করেনি,করেছে ছয়মাস আগে।চার মাসের প্রেগন্যান্ট মেয়েটি।

হু হু করে কেঁদে উঠলো আলো।কিসের কমতি ছিল তার সংসারে?সব পুরুষ এমন কেন হয়?

বাঙ্গালী নারীরা আর যাই হোক নিজের স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দেয় না।আলো দু ক্ষণ ভাবলো।কিন্তু তার ভাবার আগা-মাথা নেই।সব উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে।সমীকরণ কিছুতেই মিলছে না।বরং থেমে থেমে কান্না আসছে।

আলো মুখে পানি দেওয়া থামিয়ে দিলো।আজ সে কাঁদবে,অনেক কাঁদবে!
.
স্বার্থক গলা থেকে টাই খুলে ফেললো।তার মাঝে কোনো অপরাধবোধ নেই।সে জানে যা করেছে উচিৎ করেছে।এখানে দোষটা বরং আলোর।সে কেন ভুল বুঝবে তাকে?

স্বার্থক ঠিক করে রেখেছে।যতক্ষণ না আলো নিজ থেকে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে সে কিচ্ছুটি বলবে না।তার কর্ণে স্পষ্ট আসছে আলোর কাঁদার শব্দ।বাথরুমে ডুকরে কাঁদছে মেয়েটা।এতে স্বার্থক ভেবে পেলো না তার কী রিয়াকশন হওয়া উচিৎ।

কোনো শব্দ না করে স্বার্থক বাথরুমের দরজার ঠক ঠক আওয়াজ করলো।ওপাশে কান্নার গতি কমে আসলো।স্বার্থক অপেক্ষা করলো দরজা খুলার।
.
নুপূরের পরণে ছিল সুতির শাড়ি।এই গরমে তার গোসল দরকার।কিন্তু অপরিচিত এই বাসাতে গোসল সেরে কী পড়বে?

নুপূর দেখলো স্বার্থকের ছোট বোনটা খাটে বসে নিশ্চিন্তে ফোন টিপছে।অদ্ভুত মেয়ে তো!বাড়িতে এত অঘটন ঘটে গেল আর মেয়েটার মধ্যে কোনো রকম চিন্তা নেই!নুপূর ফিসফিস করে বললো,”এই;”

শব্দটা নুপূর নিজে শুনলো কি’না সন্দেহ।সে আবার ডাকলো।দ্বিতীয়বারে মেয়েটা উত্তর দিল।

-“কিছু বলবে?”
-“মা..মানে বলছিলাম যে..”
-“হ্যা বলো।”

চুপসে গেল নুপূর।কী বলবে মেয়েটাকে?’আমার কোনো কাপড় নেই,তুমি কাপড় দিবে?’খুব বাজে লাগলো নুপূরের কাছে বাক্যটা।তাছাড়া তার চেয়ে বয়সে বড় কী ছোট তাও জানেনা।হুট করে অচেনা কাউকে ‘তুমি’ বলা অভদ্রতা।

নুপূর মেয়েটাকে কিছু বলতে পারলো না।অসহায় ভঙ্গিতে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।আপাতত হাত-মুখ ধুয়ে ফেলা যায়।

স্বার্থকের ছোট বোন নুপূরের এমন কর্মে ভ্যাবাচেকা খেল।সে এতদিন মনে করতো পৃথিবীতে সে একজনই অদ্ভুত সত্তার অধিকারী।এখন দেখলো ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রীও তার দলের।ডাকলো অথচ কিছু বললো না?আজব!
.
স্বার্থক আলমারি থেকে আলোর একটা শাড়ি নিয়ে নুপূরকে দিতে চাইলো।মেয়েটা এক কাপড়ে চলে এসেছে।শপিং করাতে পারেনি।শাড়ি নেওয়ার সময় আড়চোখে আলোর দিকে তাকালো।আলোর চোখ দু’টো লালা হয়ে আছে।

স্বার্থক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে যাওয়ার পর পা বাড়ালে আলো বললো,”তোমরা বরং এ রুমে থাকো।আমি স্বর্ণার কাছে যায়।”

আলো এ কথা বললো ঠিকই কিন্তু বিছানা থেকে উঠলো না।স্বার্থক কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেল।আলোর গাল বেয়ে আবারো জল গড়িয়ে পড়লো।
.
নুপূর হাত-মুখ ধুয়ে অলস ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে নখ কামড়াচ্ছে।আয়নায় তার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।মুখ দেওয়া পর তার চেহেরায় নতুন ঝলক এসেছে।আগের থেকে সুন্দর লাগছে।কিন্তু কী হবে এমন রুপ দিয়ে?যদি সে রুপই ধ্বংসের কারণ হয়!

দরজায় ঠক ঠক আওয়াজে নুপূর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো স্বার্থক কক্ষে প্রবেশ করার অনুমতি চাইছে।নুপূর দেখলো ভাইয়ের আগমনে স্বর্ণা রুম ছেড়ে চলে যাচ্ছে।অদ্ভুত মেয়ে তো!

স্বার্থক কমলা রঙের শাড়িটি নুপূরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,”গোসল করে এটা পরে নিন।অনেক ধকল গেলো আপনার উপর।”

নুপূর নিরুত্তর।স্বার্থক কী শুধু শাড়ি এনেছে?ব্লাউজ আর পেটিকোট?

প্রশ্নটা করতে চেয়েও নুপূর থেমে গেল।তার স্বামী হলেও স্বার্থক এখনো আপন মানুষ নই।সে চুপচাপ শাড়িটি নিলো।

স্বার্থক বললো,”আপনি মোটেও গিল্টি ফিল করবেন না,এটা আপনারও বাড়ি।”
-“আপনার স্ত্রী..”
-“আলো এখন কষ্ট পেয়েছে কিন্তু সকাল হতেই দেখবেন সবকিছু মেনে নিবে।আমাদের সম্পর্কে বিশ্বাস অনেক দৃঢ়।”

নুপূর কিছু বললো না।স্বার্থক আবারো বললো,”স্বার্ণা;মানে আমার ছোট বোন,একটু অদ্ভুত টাইপের।ওর ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না।আপনি গোসল সেরে খেতে আসেন।বেলা হলো।”

নুপূর উত্তর স্বরুপ ‘হু’ বললো।স্বার্থক চলে গেলে সে শাড়িটা খুলে দেখলো।এর মধ্যে পেটিকোট আর ব্লাউজ দুটাই আছে।সবকিছু আলোর হয়তো।শাড়ি থেকে পুরনো একটা গন্ধ আসছে।অনেকদিন আগে ব্যবহার করা হয়েছে মনে হয়।ভাবা বাদ দিয়ে সে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।প্রচন্ড খুদা লেগেছে।ঝটপট গোসল সেরে নেওয়া দরকার।
.
স্বার্থকের মা আসমা সিদ্দিকা তার নিজের স্বামীর অতন্ত্য বিরক্ত।আলো মেয়েটাকে তিনি নিজের মেয়ের মতো দেখেন।কী দরকার ছেলের বউকে নিজের মেয়ে মনে করার?বিয়ের দু’বছর হয়ে গেল অথচ এখনো নাতির মুখ দেখতে পারলো না।

বিড়বিড় করেই আসমা সিদ্দিকা নিজের আলমারির সামনে গেল।এই আলমারির শেষ কোণে দুটো লাল রঙের শাড়ি,সোনার বালা আছে।এগুলো আলোর জন্য কেনা হয়েছিল।কিন্তু মেয়েটাকে কোনো কারণ ছাড়া তিনি পছন্দ করেন না।তাই আর দেওয়া হয়নি।তবে নুপূর মেয়েটাকে প্রথম দেখায় বেশ পছন্দ হয়েছে।এটাও কারণ ছাড়া!

স্বার্থক তার মায়ের কাছে কোনো কিছু গোপন রাখে না।অথচ বিয়ের ছয় মাস পর জানলেন তিনি!এর জন্যও আসমা সিদ্দিকা দোষারোপ করলেন আলোকে।মেয়েটা তার ছেলের মাথা খাচ্ছে।

শাড়ি আর বালা নিয়ে রুম থেকে বের হতে চাইলে তার স্বামী শারদ ক্রোধ হয়ে বললেন,”তুমি শাড়ি-গয়না ঐ মেয়েটাকে দিতে যাচ্ছ?”

মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়ে গেল আসমার।গলার স্বর উঁচু করে তিনি উত্তর দিলেন,”ও আমার ছেলের বউ,গর্ভবতী তার উপর।শাড়ি-গয়না তো নুপূরই পাবে।”
-“লজ্জা করে না তোমার আসমা?ছেলের এত বড় অন্যায় করেছে আর তাকে তুমি প্রশ্রয় দিচ্ছ?”
-“আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি বরং আলোকে বিয়ে করে যা অন্যায় করেছে তার… ”
-“চুপ করো আসমা।”

আসমা সিদ্দিকা আর কথা না বাড়িয়ে নুপূরের কাছে চলে এলো।নুপূরকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে তিনি বললেন,”শাড়ি?শাড়ি কোথায় পেয়েছ?”

নুপূর মাথা নিচু করে বললো,”উনি এনে দিয়েছেন।”

ছেলের এমন কান্ডে আসমা সিদ্দিকা অধিক খুশি হলেন।যাক!ছেলেটা তাহলে আলোর আঁচল থেকে নুপূরের আঁচলে বেঁধে থাকবে।

তিনি নুপূরকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখলেন।নুপূরকে বিয়ে করে স্বার্থক কেন যে এত দেরি করে আনলো…মেয়েটা পরীর মতো সুন্দর!নুপূরের হাতে বালা পরিয়ে দিয়ে বললেন,”আজ থেকে এই সংসার তোমার।তোমার নিজের কোনো কাজ করতে হবে না।শুধু আরাম করবে,গর্ভবতী হলে কাজ করতে হয় না।এই শাড়ি দু’টো পছন্দ হয় কি’না দেখ তো..”

নুপূর দেখলো শাড়ি দুটিই লাল রঙের।খুব অপছন্দ করে এই রঙটি।তবুও শাশুড়ীর মন রক্ষার্থে বললো,”পছন্দ হয়েছে।”

দুঃখী দুঃখী মন নিয়ে আসমা বেগম বললেন,”কী আর বলবো!ছেলেটাকে আলো একদম নিজের করে ফেলে ছিলো।আমার কথা তো শুনতোই না উল্টো দোষ ধরতো তোমার শ্বশুর।আলোর বিয়ের দু’বছর হয়ে গেল এখনও নাতির মুখ দেখলাম না….”

আসমা সিদ্দিকা নিজের মতো করে আলোর বদনাম করতে ব্যস্ত।নুপূর মনে মনে শুধু বললো,”আমাকে নিয়ে আশা কেন করছেন?আমি তো অলক্ষী!আমার গর্ভে যে ছোট প্রাণটি পৃথিবীর আলো দেখার অধীর অপেক্ষায় বেড়ে উঠছে সে তো স্বার্থক বাবুর সন্তান নই।অন্য কারো অংশ সে!যাকে স্বার্থক বাবু নিজের পরিচয় দিচ্ছেন।”

চলবে।

নিশ্চুপ ভালোবাসা পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0

গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা❤️🖤
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৮+শেষ

আদ্রিয়ান আর আধার ভিজে একাকার হয়েগেছে। মাঝ পথে এসে আধার বলে

—নামান আমাকে আপনার নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে? আদ্রিয়ান বলে

—আমার কষ্ট নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আধার বলে

—এমন করে কেন বলছেন, আপনি তো আমার মিষ্টি আলু ভাইয়া। আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আধারের দিকে আধার একটা শুকনো ঢুকে গিলো। আদ্রিয়ান বলে

—আমি তোমার ভাই তাই না? তা কেমন ভাই চাচাতো, মামতো,খালাতো, ফুপাতো কোন ভাই লাগি? আধার কি বলবে বুঝে পায় না…..। সে চুপ আদ্রিয়ান আধারের দিকে ঝুঁকে কথা বলছিল যার কারণে আদ্রিয়ানের মুখের সব পানি গিয়ে পরছিল আধারের মুখে। আধারকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান আধারকে কুল থেকে নামিয়ে বলে

—-দেখো আধার আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি আর পাঁচজনের মতো পারবো না কবিতা, রচনা লিখতে। কিন্তু এটা বলতে পারি তোমায় প্রথম আমি যেদিন প্রথম দেখি আমার ঘুম হারাম হয়ে যায়। শুধু তোমার চেহারাটা মুখের সামনে ভাসে শুধু তোমাকে নিয়েই ভাবি। ভার্সিটির আগে আমি তোমাকে প্রথম দেখি জেমে রিক্সায় বসে থাকতে, সাথে তোমার মারিয়া ছিল।তখনই একটা মেয়ে আসে ফুল বিক্রি করতে তুমি টাকা তো ঠিকই দিয়ে দাও কিন্তু ফুলটা নাও না। আর নির্দ্বধায় তুমি সেই মেয়েটাকে আদর করে দিয়েছিলে। আমি শুধু তোমার রূপে না তোমার জন্য, তোমার ব্যবহার কথার জন্য পাগল। আর আমি এটা বেশ ভালো করেই জানি তুমি জানো। কিন্তু কেনো আমাকে জ্বালাও? আধার চুপ। তা দেখে আদ্রিয়ান বলে

—-তুমি এখনও চুপ এর মানে কি ধরে নিব? আধার তাও চুপ। আদ্রিয়ান এবার রেগে গিয়ে বলে

—-তুমি কখনোই বুঝবি না আমার ভালোবাসার তীব্রতা, সেটা বুঝার ক্ষমতা তোমার নেই, আমি পাগল ওকে যাি আর বলবো না এতো দিন পিছন পিছন ঘুরেছি।তোমার ডিপার্টমেন্ট এর সামনে দাড়িয়ে থাকতাম, তোমাকে এক নজর দেখার জন্য তোমার বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকতাম কিন্তু এখন আর না। অনেক সময় পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজেছ নিচে চল সবাই অপেক্ষা করছে। আধার আদ্রিয়ানের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, এর মানে তার ধারণাই ঠিক তার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী আর কেউ না আদ্রিয়ান।আদ্রিয়ানের পেট থেকে কথা বের করার জন্যই আধার এমনটা কর কিন্তু আদ্রিয়ান যে এতটা রেগে যাবে তার ধারণা ছিল না। আদ্রিয়ান পিছনে তাকায় না আধার মুচকি হাসি দিয়ে আদ্রিয়ানের পিছন পিছন যেতে লাগে। রিসোর্টে গিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে নেয়।আদ্রিয়ান ও মন খারাপ কারণ সে জানে আধার সব জানে কিন্তু এমন কেন করে? যাই হোক এখন একটু দূরে দূরে থেকেই তাকে পরীক্ষা করতে হবে আধার তাকে সত্যি ভালোবাসে কি না!! আধার তো অনেক খুশি কারণ সেও যে আদ্রিয়ানের জন্য নিজের মনে একটু একটু করে স্বপ্ন বুনা শুরু করছে।। তারপর আরো দুইদিন তারাছিল সাজেক। কিন্তু এই দুইদিনে আদ্রিয়ান আধারকে যথেষ্ট ইগনোর করেছে। আর আধার কথা বলতে চাইলেও সে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। আর মৌ তো আদ্রিয়ানের পিছু ছাড়তে নারাজ আদ্রিয়ানও মৌ এর সাথে হেসে কথা বলেছে। আর এটাই যেথেষ্ট ছিল আগুনে ঘী ঢালার মতো। আধার তো রাগে ফুসছে। আর দিহান মারিয়া কে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। মারিয়া এখনও দিহানের প্রপোজাল একসেপ্ট করেনি। আজ তাদের যাওয়ার দিন ঢাকা বেক করবে তারা। এবার আধাররা তাদের ক্লাসের স্টুডেন্টদের সাথেই বসে। বাস ঢাকা আসতে আসতে রাত আটটা বাজে তারপর যে যার বাসায় চলে যায়।

তারপরের দিন ভার্সিটিতে যায় মিমও এখন অনেক চুপচাপ। আধার আর মারিয়া অনেক বুঝায় কিন্তু কোনো কাজ হয় না। একটু সময় পরই তিনজন বেড়িয়ে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। প্রতিবারের নেয় ভার্সিটিতে আসে তারা দেখে আদ্রিয়ান আর দিহান, আশিক সেখানে বসে বসে গলৃপ করছে। মিম তো আগে আগেই হেটে চলে যায়। কারণ মিম এখন যত পারে আশিক কে এড়িয়ে চলে। তখনই রাতুল এসে দাঁড়ায় মিম এর সামনে। আর বলে

—মিম একটা হেল্প করবে? মিম মুচকি হাসি দিয়ে বলে

—-জ্বি ভাইয়া বলুন? রাতুল বলে

—তোমার মনে যাওয়ার রাস্তাটা কোন দিক দিয়ে একটু বলবা? মিম তো রেগে কটমট করছে মানে কি এই সবের। মিম বলে

—-ভাইয়া আমিও জানি না জানলে পরে বলবো। আধার তো ভেবেছিল রাতুলের খবর আছে। কিন্তু না সে চুপ। তখনই আশিক দিহান আর আদ্রিয়ান আসে সেখানে আশিক এসে বলে

—- তোর মাথা খারাপ এমন সাইকো, তাড়ছিড়া মেয়েকে তুই পছন্দ করেছিস??সত্যি দেখ বাশের মতো শুকনা নাক বুচা। আর কিছু পারুক না পারুক কথা বলতে পারে অনেক তাও আবার ফালতু কথা। মিম আর এবার চুপ করে থাকতে পারলে না সে বলতে লাগে

—-আপনি এখানে কি করেন, আর এখানে আমার আর রাতুল ভাইয়ার মাঝে কথা হচ্ছে আপনার সাথে না, আরি হ্যা কি যেন বললেন? আমি বুচা শুকনা,তো ভাইয়া হ্যা মানি আমি দেখতে তেমন ভালো না। আল্লাহ সবাইকে সব কিছু দেয় না। আল্লাহ কাউকে পার্ফেক্ট ভাবে তৈরি করে না। আর আপনি আমার ব্যাপারে নাক না গলালেই খুশি হব। আপনি আপনার মতো আমি আমার। আপনার সাথে আমার কথাই বা হয়েছে কয়দিন?ওকে মানলাম আমি ফালতু কথা বলি আপনি কি করেন? কুটনামি করে বেরান যত্তসব। বলেই মিম হাটতে লাগলো আধার বলে

—-ভাইয়া আপনি এমনটা না করলেও পারতেন। মারিয়া বলে

—-এখন চল মিম কোথায় গেলো দেখতে হবে। আধার আর মারিয়া এক প্রকার দৌড় লাগায়। কোনো মতে মিমকে শান্ত করে। অপর দিকে আদ্রিয়ান ও আর পারবে না আধারের সাথে কথা না বলে অনেক ইগনোর করেছে। সেদিন ভার্সিটি শেষে আধার ঠিক করে সে নিজে আদ্রিয়ানকে প্রপোজ করবে নিজের মনের কথা জানাবে। তাই ক্লাস রুম থেকে দৌড়ে বের হয়।আর প্রপোজ করতে ফুল লাগবে আধারদের ভার্সিটির কাছেই মন্দির তাই ফুল নিয়ে আধারের টেনশন নেই। রাস্তার ওপারে ফুলের সমারোহ অভাব নেই। আধারদের ক্লাস শেষ হওয়ার আধার মারিয়া আর মিমকে সব বলে, তারা বলে

—- ভালোই তো মনে মনে কতো কি আধার মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিল

—-জানিনা কখন কি হলো আধার দৌড়ে যায় আদ্রিয়ানের কাছে আদ্রিয়ান তাকে দেখে না দেখার ভাঙ করে জেতে চাইলে আধার পথ আটকে দাঁড়ায়। আদ্রিয়ান বলে

—-কি হয়েছে? কি চাই তোমার!? আধার বলে

—আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল। আদ্রিয়ান বলে

—আমার সময় নেই। আধার নিরাশ হয়ে বলে

—ঠিক আছে। মিম আর মারিয়া এসেও হাজির কিন্তু আধারের মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করলেও সে কিছু বলে না চুপচাপ নিজের মতো করে যেতে থাকে। যেতে যেতে একবার রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। আর তখনই আদ্রিয়ান ছুটে এসে আধারকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে সাইডে নিয়ে আস আর ঠিক তখনই একটা কার ফুল গতিতে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আদ্রিয়ান ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় আধারের গালে। আদ্রিয়ান রাগী চোখে আধারের দিকে তাকিয়ে বলে

—–এখন যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে?আধারও জেদি কম না সে বলে

—-কি হতো মরে যেতাম আর কি। আদ্রিয়ান বলে

—-আরেকটা দিব।আধার বলে

—-আপনার কি আমি মরাগেলে, আপনি তো ভালোই আছেন তাই না? আদ্রিয়ান বলে

—বেশি কথা বলবা ঐ বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব। তখন কি বলতে চাচ্ছিলা? আধার ভেংচি কেটে বলে

—বলবো না, তখন শুনেন নাই এখন আসছেন কেন? তখনই মিম বকবক বরে হচ্ছে আর পিছন পিছন আশিক। মিম কে বলছে

—-মিম ও কাঁচা ডিম আই এম সরি মিম। কিন্তু মিম রাগে দ্রুত গতিতে হাটছে। আর বকছে

—-বাশির বাচ্চা তুই বাশি না ফাটা বাশি, গলায় তো মুধু নাই সরি বলার ধরন দেখ লাগতো না তোর সরি, সরি আচার করে খেয়ে ফেল বেয়াদব ছেলে। শয়তানের নানার নানা কাকার দাদা। আশিক দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ায় মিমের, আর বলে

—-সরি গো, আর বলবো না । মিম কিছু বলেনা। মিরিয়াকে দিহান উদ্দেশ্য করে বলে

—-দেখেছ দেখেছ আদ্রিয়ান আর আধারের মাঝে কত ভালোবাসা আর তুমি ফুলঝাড়ু আমার মতো নিষ্পাপ ছেলেকে ঝাড়ি মারো এগুলা মানা যায়। মারিয়া রাগী চোখে তাকায় দিহানের দিকে, দিহান বলে

—-এই কেরে কে বললি এমন কথা সামনে আয়, বলেই কেটে পরে মারিয়া দিহানের এমন কাহিনী দেখে মুচকি হাসি দেয়। আর আদ্রিয়ান বলে

—তুমি বলবে নাতো? আধার বলে

—-উমমমহুম। আদ্রিয়ান বলে

—-হ্যা না যখন মরে যাবো তখন বলো। যাও আধার এইদিকে ঐদিক কিছু একটা খুঁজে তখনই দেখে একজন লোক হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে। আধার বলে ওয়েট । আর দৌড়ে যায় সেই লোকটার কাছে তিনটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে এসে, আদ্রিয়ানের সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে

—-দেখুন কিছু পাইনি তাই হাওয়াই মিঠাই দিয়ে প্রপোজ করলাম, আর আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে হাওয়াই মিঠাই গুলো দিয়ে দিব তাহলে সেটা আপনার ভুল ধারণা। এগুলো আমিই খাবো। কিন্তু হ্যা আপনার মতো আমার মনেও আপনার জন্য রয়েছে অবিরাম #নিশ্চুপ_ভালোবাসা। আদ্রিয়ান ভাবতে পারছে না সে হাসবে নাকি কাদঁবে কেউ আদেও এভাবে কাউকে প্রপোজ করেছে কিনা তার কোনো ধারণা আদ্রিয়ানের নেই। আধারের কথায় তার হুঁশ আসে, আধার বলে

—-এই যে মি.মিষ্টি আলু আপনিকি আমার প্রস্তাবে রাজি নাকি আমি তিয়াস কে প্রপোজ করব? আদ্রিয়ান বলে

—–তোমাকে ভুনা খিচুড়ির মত রান্না করব বুঝতে পারছো। বলেই আধারের হাত থেকে হাওয়াই মিঠাই গুলো নিয়ে নেয়। আর ওদের কান্ড দেখে সবাই অবাক। আশিক বলে

—-আহারে আহারে আমি আমার বউটা কেব পাবো কে জানে। আদ্রিয়ানরে অনেক হইছে ইস্টপ যা নয়তো আমরা সিঙ্গেলরা সিঙ্গাপুর চলে যামু। মিম বলে

—-ভালো হবে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমবে। আশিক বলে

—-আপনিও সিঙ্গেল। মিম বলে

—-মটেও না আমি আমার ফোন আর চার্জার একটা সুন্দর রিলেশনে আছি। কিপ ইউর মুখ বন্ধ। আশিক বলে

—-গুন্ডি একটা। দিহান এসে বলে

—-ভাইরে ট্রিট দে, এই ফুলঝাড়ুর বকা খেতে খেতে আমি অন্য খাবারের স্বাদ ভুলে গেছি। মরিয়া বলে

—-নাপিত জীবনে ভালো হবে না।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো ২ বছর এই দুই বছরে আদ্রিয়ান নিজের কেরিয়ারে অনেক এগিয়ে গেছে। সাথে দিহান যোগ দিয়েছে তার বাবার বিজনেসএ। আর আশিকও সেম। মারিয়া একসেপ্ট করে নিয়েছে দিহানকে। আর আশিককে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে মিম। কারণ এটা তার প্রতিশোধ। কিন্তু আজ হাঠাৎ করেই আধারের ফোনে আদ্রিয়ান মেসেজ দেয়। সেটা দেখে আধার কেঁদে অস্হির। মেজেসটা এমন ছিল

—-সরি আধার আমার পক্ষে এই রিলেশন রাখা সম্ভব না, আমার ফ্যামেলি আমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছে আর তাকেই আমি বিয়ে করব। তখনই আধারের মা এসে বলে

—-মিম আর মারিয়া তোকে সাজাতে আসবে একটু পর আজ তোকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। আধারের মাথায় আকায় ভেঙে পরে কি হচ্ছে এইসব তার সাথে। তখনই মিম আর মারিয়া এসে আধারকে রেডি করাতে চাইলে আধার বাধা দেয় কিন্তু অনেক কষ্ট আধারকে তারা রেডি করিয়ে নিচে নিয়ে আসে। একটু সময় পর তাকে আর ছেলেকে একা কথা বলতে দিলে। আধার বলে

—-দেখুন আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না সরি। তখনই ছেলেটা হেসে দেয়। হাসির আওয়াজটা আধারের খুব চেনা মুখ তুমে তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান। মানে আর তার বুঝতে বাকি রইলো না। আদ্রিয়ানকে ধরে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো আর বলতে লাগলো

—–হারামি , শয়তান, ফাজিল এমন কেন করলি জানিস না আমার কষ্ট হয়। আদ্রিয়ান বলে

—-সরি আমার সোনা বউ আর হবে না। আধার বলে

—-কে তোর বউ করবো না তোকে বিয়ে। আদ্রিয়ান মনে মনে বলে( এইরে এখন আমার কি হবে) আদ্রিয়ান

—–সরি তো জানপাখি। আধার বলে

—-কাজ হবে না। আদ্রিয়ান বলে

—-আর হবে না তো। আধার বলে

—-মানতে পারি এক শর্তে এখন আপনাকে কান ধরে ওঠবস করতে হবে। আদ্রিয়ান বলে

—-এ্যা? আধার

—-এ্যা না হ্যা। আদ্রিয়ান অসহায়ের মতো কান ধরে যেই না ওঠবস করতে যাবে। আধার বলে

—থাক থাক লাগবেনা, এটাই অনেক বলে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে

—-আর কখনো এমন করবেন না। আই লাভ ইউ মাই মিষ্টি আলু। আদ্রিয়ান বলে

—-লাভ ইউ টু।

————সমাপ্ত———–

নিশ্চুপ ভালোবাসা পর্ব-০৭

0

গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা ❤️🖤
লেখিকাঃ-আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৭
পরিবেশ টা অনেক সুন্দর চারপাশে মেঘের মেলা এইদিক ঐদিক উড়ে বেড়াচ্ছে আর সবাই নিজের মতো। আদ্রিয়ান ব্যাস্ত আধারকে দেখতে একসময় আধার এদম পাহাড়ের কিনারায় চলে যায় আর ওমনি খেয়াল না করারা কারণে পা পিছলে পড়ে যায়। আর আদ্রিয়ান আধার বলে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। ( এক বালতি সমবেদনা যারা ভাবছিল আধার সত্যি পাহাড় থেকে পরে গেছে আমি এতটাও খারাপ না ওকে) ঘেমে একাকার হয়েগেছে। আশিকেরও আদ্রিয়ানের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। সে আদ্রিয়ানকে হাঁপাতে দেখে বলে

—-দোস্ত তোর কি হয়েছে এভাবে ঘামছিস কেন?আদ্রিয়ান কিছু সময় চোখ বন্ধ করে মাথার দুইপাশে চেপে ধরে চুপ থেকে বলে

—-কিছু না বাজে স্বপ্ন ছিল একটা। আশিক আদ্রিয়ানের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে

—কিছু হবে না, চিন্তা করিস না। তারপর৷ এক গ্লাস পানি ঢেলে আদ্রিয়ানের দিকে দিল। আদ্রিয়ান সম্পূর্ণ পানিটা ঢকঢক করে একবারে খেয়ে নিল। তার আর আজ ঘুম হবে না, তাই সে তাদের বেলকনিতে চলে আসে।রাতের অধারের আদ্রিয়ান খুজে চলছে তার আধারকে। আধারকে প্রথম দেখাতেই আদ্রিয়ানের মনে সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্য #নিশ্চুপ_ভালোবাসা আর আধারের সাথে আজ তার কাটানো মূহুর্ত গুলো বার বার মনে করতে লাগলো। আধার কি আদেও তাকে বুঝবে কিনা সেটা তার অজানা।

★পরের দিন সকালে

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফুট উঁচু সাজেক ভ্যালিতে তারা সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে সাজেকের সবচেয়ে উঁচু কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশে বের হয়। পাহাড়ে উঠে প্রচণ্ডভাবে ক্লান্ত হলেও প্রকৃতি সেটা বেশিক্ষণ থাকতে দেয়নি। আশপাশের সুন্দরের মোহে আকর্ষিত হয়ে সব ভুলে প্রকৃতি উপভোগ করতে থাকে সবাই। কেউ এক মনে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে, কেউবা নিজে মোবাইল–ক্যামেরায় প্রকৃতির সৌন্দর্যবন্দীতে ব্যস্ত। চারপাশে তাকিয়ে উঁচুনিচু পাহাড়গুলোকে মনে হচ্ছিল সবুজ ঘাসের চাদরে ঢাকা সব। আকাশটা যেন অনেকটা মাথার কাছে চলে এসেছে। আর এই সব কিছু বাদ দিয়ে আদ্রিয়ানে তাকিয়ে আছে আধারের দিকে। কাত-তালীয় ভাবে আজ আধার আর আদ্রিয়ান এই রকম ড্রেসআপ করেছে। আধার পরেছে একটা হুয়াট কালারের টপস্ ব্লাক কালারের জিন্স গোলায় পিংক কালের স্কার্প আর হুয়াইট কালারের জুত, আদ্রিয়ান ও সেম সাদা শার্ট, কালো পেন্ট হাতে ব্রেন্ডর ঘড়ি সু জাস্ট ওসাম লাগছে দুজনকে। দিহান এসে আদ্রিয়ান কে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে

—-কিরে তুই যবর খারাপ, আমাদের বলিস হরতাল আর তোলে তোলে তুমি, বাস টেম্পু,রিক্সা সব চালাও? আদ্রিয়ান বলে

—-ঐ নাপিত কি আবুল তাবুল বকছিস, মাথার তাড়টা ছিড়ে গেছে তোর? এক জন্যই এমন করেছিস তাই না? আশিক বলে

—-কি হয়েছে তোদের? দিহান বলে

—দেখ আজ আমাদের মিষ্টি আলু আর আধার ভাবি সেম সেম পরছে। কিন্তু ফুলঝাড়ু কোথায় ওকে তো দেখছিনা? আশিক বলে

—-তুমি দোস্ত ফুলঝাড়ুর প্রেমে তো স্লিপ কর নাই? দিহান বলে

—-আরে,,,না,,,,। আশিক বলে

—-জানি জানি, আর বলতে হবে না। দিহান বলে

—-বাঁশি তাহলে আবার জিজ্ঞেস করিস কেন। আমার লজ্জা লাগে না বুঝি, দাড়া একটু আমার ফুলঝাড়ু কে জ্বালিয়ে আসি।
বলেই চলে যায় আর আদ্রিয়ান নিজের ক্যামেরা দিয়ে পিক তুলতে লাগলো আধারের। আধার তো অনেক খুশি চারিদিকে সবুজের সমাহার কিন্তু আকাশ অনেক মেঘলা। হয়তো বৃষ্টি হবে এই পাহাড়ি অন্ঞ্চলে কখন বৃষ্টি হবে তা বলা বড় দায়। মিম আর মারিয়া আনলিমিটেড বকবক করছে। মরিয়া তার লম্বা চুলগুলো খুলে দিয়েছে তাকেও সবুজ রঙ টায় বেশ মানিয়েছে। মিম আধারের কাছে যায় কারণ সে একা একাই ঘুরছে। তখনই দিহান এসে বলে

—হ্যালো। মারিয়া বলে

—হাই। দিহান বলে

—একটা হেল্প করবা প্লিজ?মারিয়া ভাবে এত সুন্দর করে বলছে হয়তো সত্যি কোনো কাজ আছে সে বলে

—আগে বলেন তারাপর। দিহান বলে

—মারু, ফারু, ফুলঝাড়ু। আমার রুমটা না অনেক নোংরা হেয়ে গেছে, তো আমার তোমাকে লাগবে, ঝাড়ু দিতে। মরিয়া রেগে গিয়ে বলে

— ফাজিল,শেয়ালের নানার নানা, নারিকেল গাছের পত্নী এর জামাই। দিহান বলে

—-তাহলে সেই পেত্নী টা তুমি। মারিয়া কথাটা প্রথম দফা বুঝতে না পারলেও সেটা বুঝতে তার টাই লাগলো না যে দিহান কি বললো। মারিয়া আর চোখে তাকিয়ে বলে

—আপনি পাগল হয়ে গেছেন মিয়া,পাবনা পাঠানো দরকার আপনাকে। দিহান বলে

—এই তোমরা মেয়েরা এমন কেন বলতো, দেখ আমার সোজাসাপটা কথা। মারিয়া বলে

—এখান থেকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব জান বলছি। দিহান বলে

—-ওয়াও প্রথম বারই জান, হাউ কিউট। আচ্ছা এই দিকে তাকাও। বলেই নিজের ফোনটা বের করে ঘেচঘেচ করে কয়েকটা সেলফি তুলে নিল তার আর মারিয়ার। মারিয়া আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। দিহান বলে

—টাটা ফুলঝাড়ু। মারিয়া কিছুই বলেনা তা দেখে দিহান বলে না পিক গুলা দেখতে দেখতে কেটে পরে। মিম আধারকে আধার বলে ডাক দিলে, সে যখন নিজের ঘাড় ঘুরায় ঠিক সেই মূহুর্তেই একটা পিক তুলে নেয় আদ্রিয়ান মুখে বড় হাসির রেখা জাস্ট ওয়াও হয়েছে পিকটা। মিম দৌড়ে যাওয়ার সময় আশিকের সাথে ধাক্কা লাগে, কারণ আদ্রিয়ান আর আিশক প্রায় আধারের কাছেই ছিল। আশিক রেগে গিয়ে বলে
—-একটু কমন সেন্স নেই তোমার? এখন যদি পরে যেতাম খাদে? ওরা অনেকটা পাহাড়ের শেষ প্রান্তের দিকে ছিল। মিম বলে

—সরি আসলে আমি,,, আশিক জোরে আরেকটা ধমক দিয়ে বলে

—-সরি মানে? এত বাচ্চামো দুষ্টাম করা ভালো না, বড় হয়েছে ক্লাস নাইন টেনে পড় না। আধার আশিকে এতো রুড হতে দেখে তার সামনে এসে বলে

—ভাইয়া এত রাগার কি আছে আর আমার মনে হয়না ধাক্কা লাগলেও আপনি খাদে পরতেন বলে বেশ আগিয়ে গিয়ে নিচে তাকাতে যায় আর এমনি আদ্রিয়ানের রাতের স্বপ্নের কথা মনে পরে। সে আধারের হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে বলে

—-আপনাকে কে পাকনামি করে দেখতে হবে না। আধার বলে

—কেনো ভয় পান যদি পরে যাই? আদ্রিয়ান কিছু সময় পর ভেবে বলে

—-হুম পাই কারণ, তোমাকে বলতে বাধ্য নই ।আধার বলে

—অহহ,আচ্ছা। মিম চল যাওয়া যাক ।মিমের মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায় কারণ মিম আর যাই করুক এমন দুষ্টামি সে করবে না যাতে অন্যের খারাপ হোক। সে আশিকের দিকে তাকিয়ে বলে

—-আমও সরি ভাইয়া আসলে আমার আপনার সাথে এভাবে কথা বলা ঠিক হইনি মানি। কিন্তু আমি আপনাকে ইচ্ছে করে দেয়নি।আর কিছু না বলেই আধারের সাথে চলে যায়। আদ্রিয়ান বলে

—-এখানে মিমের কি দোষ ছিল এভাবে বকা দিল কেন? আশিক বলে

—-বাদদে একটু পরেই আবার ঠিক হয়ে যাবে। আদ্রিয়ান কিছু বলে না।একটু পরেই শুরু হয় বৃষ্টি আর তখনই টিচার সাহ সবাই নিচে নামতে লাগে। কিন্তু আধার দাড়িয়ে আছে দু হাত মেলে বৃষ্টি বিলাস করছে। আদ্রিয়ান খেয়াল করে দেখে মারিয়া মিম নামলেও আধার নেই।মিম আর মারিয়া ভাবে হয়তো আধার তাদের সাথেই কাণ তাদের পাশ দিয়ে আরেকটা সাদা জামা পড়া মেয়ে নাম ছিল। মনে একটা ভয় আকরে ধরে। সে আবার দৌড়ে পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে লাগে। আশিক দিহান ডাকলে পরে বলে

—- তোরা যা আমি আসছি। আদ্রিয়ান যেয়ে দেখে আধার বৃষ্টি ভিজে একাকার। আদ্রিয়ানের রাগে গা রিরি করছে। গিয়ে আধাীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে

—-এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি হ্যা? তোমার ধারণা আছে কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি? আমাকে মানুষ মনে হয়না তোমার? আধার বলে

—-কি হয়েছে? আদ্রিয়ান বলে

—-কি হয়েছে মানে? মানে জানতে চাও? তুমি সেটা জানো আধার তুমি এতো টাও অবুজ না। সব বুজও কেনো অবুজের মতো সেজে থাকো? আধার বলে

—কিছু জিনিস না জানাই ভালো। আদ্রিয়ান বলে

—পারতো শুধু বড় বড় কথা বলতে, না বুজাই ভালে কিভাবে তুমি বুঝনা সেটা আমি তোমাকে পরে বুজাচ্ছি। বলই কোলে তুলে নিল আধার কিছু বলতে যাবে তখনই আদ্রিয়ান বলে

—-একটা কথা বলবা, মাথায় তুলে আছাড় মারবো ফাজিল মেয়ে একটা। আধারও মুখে হাত দিয়ে বুজালো সে চুপ, কোনো কথা বলবে না। আদ্রিয়ান আধারকে কোলে তুলেই নামতে লাগলো। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার…..কিছু পথ যেতেই

চলবে….

নিশ্চুপ ভালোবাসা পর্ব-০৬

0

গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা ❤️🖤
লেখিকাঃ-আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ০৬

সেদিন আধারদের পৌছুতে পৌছুতে রাত হয়ে যায়। কারণ মাঝে বৃষ্টি হওয়াতে বাস অনেক ধীর গতিতে চলছিল। অপর দিকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ব্রজপাত সাথে ফ্রি বাসের মেয়েরা তো চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছিল, শুধু তিনজন ছাড়া,আধার মিম আর মারিয়ম। মারিয়া তো নিজের ফোন বের করে তার ব্রজপাতের সাউন্ড রেকর্ড করতে ব্যাস্ত তার ফোনের নতুন রিংটান দিবে। কিন্তু চিল্লাপাল্লার জন্য সে বারবার ব্যার্থ। দিহান বলে

—-কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা তুমি!!!আমি তো ভাবছিলাম নাইকাদের মতো ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরবা আর তুমি কি করছ!!! মারিয়া বলে

—-শুনেন নাপিত ভাইয়া। এইটা রিয়েল লাইফ বাংলা সিনেমা না বুঝছেন। দিহান বলে

—-তোমাকে আপনার কোনদিক দিয়ে নাপিত লাগে, একটু বলবেন রানি এলিজাবেথ। মারিয়া বলে

—-কুইনরা প্রজাদের কাছে রাজ্যের ব্যাপার ছাড়া পর্সোনাল কিছু বলে না, আর আপনি নাপিত ছিলেন নাপিত আছেন আর নাপিতই থাকবেন। দিহান বলে

—-অওওও হ্যালো মিস মারু, ফারু ফুলঝাড়ু আরেকটা কথা বললে। তখনই চোখ পাকিয়ে বলে

—-কি হুমমম?কি করবেন? আরকেট কথা যদি আপনি বলছেন সাজেক গিয়ে পাহাড় থেকে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব তারপর চল্লিশায় বিরিয়ানি খাবো। দিহান বলে

—-আগ্গে না আন্নে বিরিয়ানি না জেলের ডাল ভাত খাবেন। মারিয়া বলে

—-ঐ মিয়া চুপ করেন। আবার ব্রজপাত হয় আর মেয়েরা আবার চিৎকার দিয়ে উঠে, মৌতো পারে রাতুলকে আম ভরতা করে দেয় Without নুন, ঝাল। মিম এবার বিরক্ত হচ্ছে কারণ তার স্বাদের ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছে সবাই চেচিয়ে চেচিয়ে। তাই সে এবার রেগে দাড়িয়ে বলে

—–সম্মানিত বড় আপুরা দয়া করে চুপ করুন, আপনাদের চিল্লা চিল্লাতে বাস বেচারা না নিজে খাদে ঝাপ দেয়, সাথে আপনারাও মরবেন আর আমার ভবিষ্যৎ হাসবেন্ডকে বিধবা বানাবেন সাথে আপনাদের হাসবেন্ড দেরও। যত্তসব কথাটা আস্তে বলেই নিজের সিটে বসে পরে। আর সবাইতো মিমের কথায় হাসছে। বেচারা আশিক আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে

—-দোস্ত এইডা মাইয়া নাকি অন্য কিছু কি কথা বলে, আর আধার তো দিব্যি প্রকৃতি নিয়ে ব্যাস্ত আছে। আদ্রিয়ান বলে

—-হুমমম, সে নিজের জগৎ নিয়ে ব্যাস্ত,আর এইদিকে যে আমি তাকে আমার পৃথিবী, মঙ্গল থেকে শুরু করে বূধ, শুক্র,শনি বৃহস্পতি,নেপচুন সব বানাই বসে আছে সেটা তার অজানা। আশিক বলে

—-আমি ভাবি নাই তোর মতো ছেলে প্রথম দেখাতেই আধারের মতো মেয়ে উপর ফিদা হয়ে যাবে। আদ্রিয়ান বলে

—-ওকে যেদিন প্রথম দেখি বিশ্বাস কর আমার মনে হচ্ছিল একটা বাচ্চা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে, ওর টলমল চোখের চাহনি ঐদিন আমার জন্য মাদকতার নেশার মতো লেগেছে। আর ঐ ছেলেটাকে কি করেছিস। আশিক বলে

—-তুই যে মার মারছিস, আমি তো বাবা ভাবছিলাম মেরেই ফেলবি এখন সে এই শহর ছেড়ে পালিয়েছে। ভার্সিটির সব ছেলেরাই এখন আধারেরর থেকে দূরেই থাকবে। আদ্রিয়ান বলে

—-হ্যা। এভাবেই চলতে থাকে তাদের কথা, আর একসময় তার সাজেক পৌছে যায় তারা একটা রিসোর্টে উঠে। আধার মিম আর মারিয়া এক রুম নেয়। আশিক, আদ্রিয়ান নেয় তাদের পাশের রুমটা। তারপরের দুই রুমে রাতুল আর দিহান। সবাই যার যার মতো চলে যায় রুমে আজ তারা বেস টাইয়ার্ড। কিছু সময় পরই তারা রেস্ট নিয়ে রাতে বসে একসাথে গল্প করবে বলে কম বেশি সবাই আছে, আর যারা খুব ক্লান্ত ছিলি তার নিজেদের রুমে গিয়ে রেস্ট নিচ্ছে। চারদিকে গুল করে বসে আছে সবাই আর মাজখানে আগুন। আর রাতুল ব্যার্থ টংটং সুর তুলার চেষ্টা করছে গিটা কিন্তু তা আরকি হয়? আশিক গিটার টা নিয়ে আদ্রিয়ানের হাতে দিয়ে বলে

—-নে শুরু কর অনেকদিন তোর গান শুনিনা। আধার বলে

—-ওমাই কপাল আলু ভাইয়া আপনি গিটার বাজাতে +গাইতেও পারেন। আদ্রিয়ানকে আলু বলাতে সবাই হেসে দেয় আদ্রিয়ান আলু বলাতে না জতটা রাগ হয়েছে তার চেয়ে বেশি রাগ হয়েছে ভাইয়া বলাতে। আদ্রিয়ান বলে

—-হ্যা পারি তুমি তো তাও পারোনা মিস.চিংগুপিংগু। আধার বলে

—-চিংগুপিংগু নোট বেড। তখনই মারিয়া বলে

—-কে যে বলেন ভাইয়া গিটার বাজানো আর গানে আধার বরাবরই ভালো। আশিক বলে

—-বললেই হলো আদ্রিয়ান বেস্ট,আর মেয়েরা পারবে না । তখনই একটা মেয়ে বলে

—-আধার আমাদের মান সম্মান এখন তোমার হাতে প্লিজ। আদ্রিয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের হাতের গিটারটা এগিয়ে দেয় আধারের দিকে আধারও সেটা নিয়ে নেয়। গিটারটা অনেক সুন্দর ডার্ক ব্লাক কালারের। আধার বললো

—- আমি গিটার বাজাবো আপনি গাইবেন রাজি? আদ্রিয়ান বলে

—-ওকে। আধার বলে

—-গান? আদ্রিয়ান আধারের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে বলে

—-কি করে বোঝাবো তোকে কত আমি চাই। আধার কিছু সময় ভেবে মুচকি হেসে বললো

—ওকে, বলেই গিটারে টুন তুলতে লাগলো আর আদ্রিয়ান গান ধরলো।

★★বোঝাবো কি করে তোকে কতো আমি চাই?
তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই
বোঝাবো কি করে তোকে কতো আমি চাই?

তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই
তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই আমি

তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই
আজ চুরি চুরি মন উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন

আজ চুরি চুরি মন উড়ি উড়ি মনঘুড়ি ঘুড়ি মন

তিলে তিলে হলো কি যে?গেল ভিজে মন।
আগে তো এ শ্রাবণের ছিল না কারণ
তোর সাথে দেখা হলে কোনও নিরালায় নিজেকে উজার করে রেখে দেওয়া যায়। আজ চুরি চুরি মন

উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন।জেগে আছে দিন আর সেজে আছে ঘর। শুনাতে আমায় তোর আসার খবর

উঠে যাবে চাঁদ আর ফুটে যাবে ফুল।মেলে দিলে চোখ তুই খুলে দিলে চুল।আজ চুরি চুরি মন উড়ি উড়ি মন।

ঘুড়ি ঘুড়ি মন বোঝাবো কি করে তোকে কতো আমি চাই?তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই।

তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই। আমি তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই।আজ চুরি চুরি মন।উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন,আজ চুরি চুরি মন।উড়ি উড়ি মন ঘুড়ি ঘুড়ি মন। আদ্রিয়ান সম্পূর্ণ গানটা আধারকে দেখে গায়। গান শেষে সবার হাত তালিতে আদ্রিয়ানের ঘোর কাটে।কিন্তু মিম বলে

—-গানটা সেই ছিল কিন্তু, আধার এর চেয়ে বেশি ভালো গায়। আশিক বলে

—–মিম পঁচা ডিম, চুপ করে বস, আর কাথার রানি মিস আধার একটা গান হয়ে যাক? আধার বলে

—-না অন্য কোনোদিন, আর আলু ভাইয়া আপনার গলটা অনেক মিষ্টি। আদ্রিয়ান এবার রেগে যায় আর বলে

—-হ্যা, চিনির মতো মিষ্টি। আধার বলে

—-তাহলে আজ থেকে আপনার নেক নেম মিষ্টি আলু।আদ্রিয়ান বলে

—-এ্যা!!! আধার

—এ্যা না হ্যা। দিহান বলে

—-তো মিষ্টি আলু ঘুমাবি না? আর আবার সবাই হেসে দেয়, আদ্রিয়ান মনে মনে বলে

—-এতো কথা কিভাবে জানে,এই মেয়েটা আশিক ঠিকই বলে কথার রানি।। তখনই আশিক বলে

—-কি ভাবছিস মিষ্টি আলু? মিম বলে

—-আশাকি নামক বাশি ভাইয়া আপনি কিছু পারেন, পারেন তো শুধু বাচ্চাদের চিপস খেতে? রাতুল বলে

—আশিক নামক বাশি ওয়াও নাইছ নেম। হাহাহা। দিহান বলে

—-আলহামদুলিল্লাহ্ এখন যদি আমাকে নাপিত বলিস তাহলে আমি তোদের সুন্দর সুন্দর নাম গুলো দিয়ে ডাকবো। মারিয়া বলে

—-নাপিতকে নাপিত বলবে না তো কি বলবে। দিহান বলে

—-এই ফুলঝাড়ু। মারিয়া বলে

—-নাপিত। এভাবেঅনেকটা সময় কাটানোর পর তারা যে যার মতো ঘুমাতে চলে যায়। কারণ কালকে তারা যাবে সাজেক ঘুড়তে।

পরিবেশ টা অনেক সুন্দর চারপাশে মেঘপর মেলা এইদিক ঐদিক উড়ে বেড়াচ্ছে আর সবাই নিজের মতো। আদ্রিয়ান ব্যাস্ত আধারকে দেখতে একসময় আধার এদম পাহাড়ের কিনারায় চলে যায় আর ওমনি খেয়াল না করারা কারণে পা পিছলে পড়ে যায়। আর আদ্রিয়ান আধার বলে চিৎকার দিয়ে।।।

চলবে

নিশ্চুপ ভালোবাসা পর্ব-০৫

0

গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ-০৫

আধার লাইব্রেরিতে যাওয়ার পর, আধারদের ক্লাস টিচার বলে।

—আধার,কালকে ভার্সিটির ছুটির পর কি হয়েছে? তারপর আধার স্যারকে সব খুলে বলে। তখন স্যার বলে

—-তুমি যাও, আমি ভার্সিটির হেডের সাথে কথা বলে দেখবো। তারপর আধার নিজের ক্লাসে ফিরে আসার পথে তার আদ্রিয়ানের সাথে দেখা। আদ্রিয়ান আধারকে দেখে বলে

—-তুমি এখন এখানে কি করো? আধার বলে

—-গরু চরাচ্ছি। আদ্রিয়ান বলে

—-কি গরু কোথায় থেকে আসলো এখানে,,,তুমি তো লাইব্রেরি দিক থেকে আসছো? আধার বলে

—-দেখছেনই তো, তাহলে জিজ্ঞেস করেন কেন? বলেই হাটা দিলো আদ্রিয়ান পিছন থেকে বলে

—-পাজি মেয়ে একটা, কথার ধরন কি, তোমাকে টাইট দিতে হবে আধু।বলেই সেও নিজ কাজে চলে গেলো।

দেখতে দেখতে টুরে যাওয়ার দিন চলে এলো, সবাই বাসে উঠেছে। কিন্তু বিপত্তি হলো তখন যখন আধার দেখে সে তাদের ক্লাসমেটদের সাথে, যেই বাসে যাওয়ার কথা সেখানে একটা সিটও খালি নেই। তিনজনেরই মাথায় হাত এখন!!! তারপর স্যারকে জিজ্ঞেস করলে তারা সব বাস চেক করে দেখে আদ্রিয়ানদের বাসে তিনটা সিট খালি,তাই বাধ্য হয়ে তারা সেই বাসেই যায়। মিম বসে আশিকের সাথে আর মারিয়ার সিট খালি পায় দিহানের পাশে। কিন্তু আধারের পাশের সিট টা খালি। এখন সে আসেনি? তাতে আধারের কি সে ফোন নিয়ে নিউজফিডে ঘুরছে। হাঠাৎ করেই তার মনে হলো গুগোলে তারা যে সাজেক যাচ্ছে জায়গটা কেমন তা সার্চ করা যাক। তখনই কেউ তার পাশে বসে পরে। কিন্তু আধারের বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই সেটা কে? দেখার জন্য। তাই সে তার ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। একটু পরেই বাস চলতে থাকে আপন গতিতে। মিম চিপস খাচ্ছে আর ডোরিমোন দেখছে। আশিক বলে

—-এই তুমি কি বাচ্চা যে কার্টুন দেখছ? মিম ফোনটা ওফ করে বলে

—-আমার যা ইচ্ছে দেখব, আপনার সমস্যা হোলে চোখগুলো খুলে আপনার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন, যত্তসব। বলেই নিজের চিপস খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। আশিক মিম এর হাত থেকে চিপসের প্যাকেট টা নিয়ে নেয়, আর একটা পিস চিপস মুখে পুরে খেতে খেতে বলে

—-মিম তোমায় ডিম বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিব। মিম বলে

—-আশিক তোমায় আমি বাশি বানিয়ে সাজেক গিয়ে বাজাবো, বলেই আশিকের কাছ থেকে চিপসের প্যাকেট টা কেড়ে নিল। আশিক আবার চিপসের প্যাকেট নিতে গেলে মিম বলে

—–লজ্জা করে না একটা মাসুম অবলা বাচ্চা মেয়ের চিপস খেতে। আরকে বার ধরলো খবর আছে হুহ। বলেই কার্টুন দেখাতে ব্যাস্ত আশিক মিমের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময় তারপর সেও ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যায়।

অপর দিকে দিহান মারিয়ার লম্বা বেনি করা চুলগুলো ধরে বেচারিকে জ্বালাচ্ছে। দিহান বলে

—-এই তুমি কি চুলে সার দাও নাকি? এতো মোটা আর ঘন কেনো তোমার চুল? মারিয়া বলে

—-একদম ঠিক ধরেছেন, আমি চুলে জৈব সার, ইউরিয়া, জিংক সালফেট, এ্যামোনিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম সব দেই। দিহান বলে

—- তাইতো বলি,আচ্ছা তোমার চুলগুলো যদি এখন কেটে দেই কেমন হয়? মারিয়া বলে

—-নাপিতদের এতো হাত খুটখুট করে আপনাকে না দেখলে জানতাম না। কথায় আছে যার বিয়ে তার হুশ নেই পাড়া-পর্শির ঘুম নেই, আপনার হয়েছে সেম,আমি একবারও বলেছি আমি চুল কাটবো কিনা। ছাড়ুন আমার চুল।

বলেই দিহানের হাত থেকে নিজের চুলগুলো ছাড়িয়ে নিল। দিহান বলে

—-আমি আবার কি করলাম, হুহ দেখে নিব তোমাকে আমি। মারিয়া তার দিকে ঘুরে বলে

—ওকে নিন এখনই দেখে নিন। বলে চোখে গুলো বারবার পলক ঝাপটাতে লাগল। দিহান বলে

—অহহহহহহ হাউ কিউট, পুরাই তেতুল গাছের সাত নাম্বার পেত্নীর মতো লাগছে তোমায়। মারিয়া বলে

—–আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম। দিহান বলে

—-আমি শিহরিত!!!! মারিয়া কিছু না বলেই অন্য দিকে তাকায়।

অন্য দিকে আধার এতটা সময় ফোন নিয়েই ব্যাস্ত ছিল হঠাৎ করে সে তার পাশের বসা মানুষটার দিকে তাকায় দেখে, আদ্রিয়ান সে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই দেখে সে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আধার তার দিকে এক ভ্রু উচু করে বলে

—-কি মিস্টার আদ্রিয়ান কি দেখেন? আদ্রিয়ান বলে

—-তুমি নিশ্চিত এই ফোন দেখে দেখে নিজের চোখ গুলোকে খেয়েছ? আধার বলে

—-আপনার মত আহাম্মক আমি আর দেখেনি, আমি যদি আমার চোখ খেতাম তাহলে আর আমার চোখগুলো দেখা যেত না। আদ্রিয়ান বলে

—-তুমি সোজা কথা বলতে পারো না তাই না? আধার বলে

—-সোজা কথার সোজা উত্তর দেই বাকা কথার ঠিক আঁকাবাঁকা উত্তর দেই বুঝতে পারছেন।

বলেই বাইরে তাকাতেই আধারের মুখ থেকে আপনাআপনি ওয়াও শব্দটা বেড়িয়ে আসে, আদ্রিয়ানও জানলার দিকে উুকি দিয়ে দেখে। পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে তাদের বাসটা শোঁ শোঁ করে দীঘিনালার দিকে এগিয়ে চলছে, তখন থেকেই প্রকৃতির অভ্যর্থনা বুঝতে পেরেছে তারা। সাপের মতন আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো সাপের মতনই ভয়ংকর। একটু অসাবধানতা কিংবা দুর্ঘটনা মুহূর্তেই খাদে ফেলে চিরতরে ঘুম পারিয়ে দেবে। যেটা নিয়ে অনেকটা ভয় কাজ করছিল সবার মনে। তবু চাপা উত্তেজনা। পরিবেশটা অনেক সুন্দর আর সাথে আছে তার প্রয়সী আর কি চাই? তাই আদ্রিয়ানের নিজের ফোন বের করে কয়েকটা পিক তুলে নিল যদিও আধারকে বুঝা যাচ্ছে না কারণ সে বাইরের দিকে মুখ করে আছে। আর আধারদের আদ্রিয়ানই এই বাসে আনিয়েছে যদিও এর জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আধার তো ব্যাস্ত প্রকৃতি দেখতে। হাঠাৎই কারো অনেক জোরে চিৎকার শুনা যায়, সেটা আর কেউ না মিম দিয়েছে। একসময় সে কার্টুন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল হাঠাৎ আশিক তাকে ডাক দেওয়াতে সে জেগে যায় সে আশিকের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আশিক ইশারা করে বাইরের দিকে তাকাতে। আর তখনই

—-ও মাই আল্লাহ আমরা সাজেক চলে আসছি ইয়াহু,,,, আশিক তো বেচারা ভয়ে লাফিয়ে উঠে। সবার নজর এখন মিমের দিকে। মিম তো নিজের মতো ছবি তুলতে ব্যাস্ত সে তার দুনিয়ায় চলে গেছে। সবাই কিছু সময় মিমের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান আধারকে বলে

—-মিম অনেক দুষ্ট তাই না? আধার বলে

—-হুমম অনেক কিন্তু মনে দিক দিয়ে ভালো। আধার আর আদ্রিয়ানকে দেখে একজন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সে আর কেউ না মৌ। মৌ এর পাশে বসেছে রাতুল আর সে নাক ডেকে মৌ এর কানের + মেজাজের ২ টারই ১৪টা বাজাচ্ছে। আদ্রিয়ান বলে

—-তোমার প্রকৃতি মেবি খুব পছন্দের, তা তুমি আগে কখনো সাজেক এসেছ? আধার বাইরের দিকে তাকিয়েই বলে

—-প্রকৃতির সৌন্দর্যের মোহে মানুষ বরাবরই নেশাগ্রস্ত। ব্যস্ততা, পড়াশোনা, হতাশা, চাপ, দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে মনের প্রশান্তি, সজীবতার জন্য ভ্রমণের বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। পায়ের নিচে মেঘ আর সবুজের চাদর বিছানো গল্প শুনেছি, ছবিতে দেখেছি অনেক। কিন্তু সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই এবার আর সেই সুযোগ হারাতে চাইনি। একবার ঢুঁ মেরে এসেই দেখি সেই ধবধবে সাদা মেঘেদের রাজ্য থেকে। আদ্রিয়ান বলে

—-বাহ বেশ ভালোই তো কথা বলতে পারো। আধার আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরে বলে

—-সব মানুষরাই কথা বলতে পারে, ইভেন পাখিরাও কথা বলে। আদ্রিয়ান বলে

—-বেশি বুঝ কেন? আধার বলে

—-তো আমার সাথে কথা বলেন কেন? আদ্রিয়ান বলে

—-একা একা বসে বোর হচ্ছিলাম, তাই। আধার কি কম চলাক সে বলে

—- ও তাহলে আপনি আশিক ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসেন আর মিমকে এখানে বসতে বলেন। আদ্রিয়ানের তো ইচ্ছে করছে আধারকে ধরে আছাড় মারতে তাও সে নিজেকে কোনন্ট্রল করে উঠে দাড়ায়। আর মিম কে ডাকতে গেলে আধার বলে

—-না থাক যেতে হবে না। আদ্রিয়ান মনে খুশি হয়ে যায় কিন্তু সে সেটা প্রকাশ না করে বলে

—-না থাক লাগবে না আমি মিম কে ডেকে দিচ্ছি। আদ্রিয়ান ভেবেছিল হয়তো আধার আবার বলবে না থাক কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সে বলে

—-ওকে। আদ্রিয়ানের এখন নিজে উপর রাগ লাগছে তারপর সে গিয়ে মিমকে এখানে আসতে বলে সেও চলে আসে। আশিক বলে

—-কিরে এখানে কেন তুই? আদ্রিয়ান বলে

—-সবই কপাল। আশিক হুহু করে হেসে দেয়। আদ্রিয়ান বলে।

—মজা লোও, লোও সমস্যা নাই আমিও নিব, আমারও দিন আসবে এইদিন দিন না।

চলবে

নিশ্চুপ ভালোবাসা পর্ব-০৪

0

গল্পের নামঃ-#নিশ্চুপ_ভালোবাসা❤️
লেখিকাঃ-আইদা_ইসলাম_কনিকা
পর্বঃ০৪

রাত তিনটা বাজে কিন্তু আধারের চোখে ঘুম নেই বার বার মনে পরছে তার সেই ছেলেটার কথা যে কিনা তাকে, ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে সে তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে আছে, অন্য দিকে তার বেলকনির দিকে তাকিয়ে একমনে চেয়ে আছে কেউ তার দিকে । হালকা লেম্প পোস্টের আলোতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে তাকে, আর সে যে বার বার তার চোখের পানি মুছে তা দেখে মানুষটার ভালো লাগছেনা, তাই সে বাধ্য হয়ে চলে যায়। কিন্তু চলে গেলে কি হবে তার সেই নিষ্পাপ টলমল চোখের চাহনি তার ভিতরে ঝড় তুলে দিয়েছে,তার পরের দিন সকালে আধার শাওয়ার নিয়ে বেরহয় রুম থেকে। নিচে নামে মিম আর মারিয়া আধারকে দেখে বুঝতে পারে সে সারা রাত কান্না করছে। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়েগেছে। কপালে কাটা জায়গাটা লাল হয়ে আছে। আধারের মা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বলে

—-এই আধার তোর কি হয়েছে আর মাথায় কাটলো কি করে। আধার সবে মাত্র খাবার মুখে তুলেছে সে তার মার দিকে তাকিয়ে বলে

—-বললামই তো কালকে মাথা ব্যাথা ছিল, আর শাওয়ার নেওয়ার সময় পরে গিয়ে কেটে গেছে, অথৈ কোথায়? ওকে তো দেখছি না!! কথা ঘুরানোর জন্য। আধারের মা বলে

—-এই মেয়েকে নিয়ে আর পারিন ৩০মিনিট আগে বলেছি নিচে আসতে,তোরা খা আমি আসছি,আর আধার ঔষধ খেয়ে তারপর ভার্সিটি যাবি, না থাক আজ তোর যেতে হবে না। আধার বলে

—-আম্মু তুমি যাও তো টেনশন করো না। আধারের মা তো আধারকে ঔষধ না খায়িয়ে ছাড়বে না তখন মিম আর মারিয়া বেপারটা সামলে নেয়। তারপর তিনজনই বেরিয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। কিন্তু আধার চুপ মিম আর মারিয়া তো সেই চেষ্টা করছে আধারকে হাসানোর জন্য কিন্তু না তার মুখে কোনো হাসি নেই। একসময় আধার বিরক্ত হয়ে বলে

—-তোরা চুপ করবি নয়তো, বাসের জানলা দিয়ে দুইটা কেই ফেলে দিব।

বলেই চুপ হয়ে যায়, মিম আর মারিয়াও চুপ হয়ে যায় কারণ তারা জানে আধার রাগলে খবর আছে। তারপর তিনজনই ভার্সিটি পৌঁছে গেলো, কিন্তু আজ গেটের কাছে কোনো বখাটে ছেলে নেই, গেট দিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই দেখে আদ্রিয়ান, আশিক, দিহনা রাতুল সহ আগের মতো তাদের জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আধারকে দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেলে একজন আজ হলুদ কুর্তিতে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে কিন্তু তার মনটা পুরে যাচ্ছে প্রতিদিনের মত সেই হাসি মুখ খানা আজ গুমরা করে রাখা, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে কোনো ছেলেই আধারের কাছে ভুলেও আসছে না প্রায় এক প্রকার দৌড়ে পালাচ্ছে ইভেন তিয়াস ও।
আধার একটু অন্য মনস্ক হয়ে উপরে ওঠেছিল সিঁড়ি দিয়ে তখনই একটা ছেলে আধারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তাড়াতাড়ি করে আধারকে দেখে সে দূরে সরে যায়। মিম বলে

—-এই আজ কি হয়েছে রে সবাই এমন কেনো করছে? মারিয়া বলে

—-তোর দুইটা বাচ্চা হয়েছে, আমি কি তোর আগে আসছি? তোর সাথেই তো ছিলাম তো আমি জানবো কি করে? আমি কি মনো বিজ্ঞানী নাকি? মিম ভেংচি কেটে বলে

—-হ্যা আকাশ থেকে টপকাইছে তো বাচ্চা দুইটা আমার বাচ্চা আমিই জানিনা?! আধার বলে

—-চুপ করবি তোরা? মিম আর মারিয়া নিজেদের ঠোঁটে হাত রেখে চুপ করে যায়। আর আধার ওদের ফেলেই আগে হাটতে লাগলো। মিম আর মারিয়া দৌড়ে আসে তার পিছন পিছন। কিছু সময়ের মধ্যেই ক্লাস শুরু হয়, এমন ভাবে পরপর ২টা ক্লাস শেষ হয়ে যায়, কিন্তু স্যার আসার খবর নেই। তাই সবাই নিজের মতো গান করছে গল্প করছে। আধারের এইসব বিরক্ত লাগছে তাই সে মিম আর মারিয়াকে বলে বাইরে চলে আসে তখন আধারের ক্লাসের একটা মেয়ে এসে আধারকে বলে

—-আধার তোমাকে স্যার ডেকে পাঠিয়েছে, জলদি যাও।

মেয়েটার কথা শুনে আধার ভ্রু-কুচকে ফেলে তার কথা হলো তাকে কেনো ডাকবে? সে আবার কি করলো। আধার কিছু বলে না চুপচাপ লাইব্রেরির দিকে যেতে লাগে, ভাবছে মিম আর মারিয়াকে বলে আসলে ভালো হতো। আর এইসময় এই দিকটায় কেউ নেই ভয়ও করছে সবাই যার যার মতো ক্লাসে মাঠে, কেন্টিনে। আধার যখন ল্যাবের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটা হাত এসে হেচকা টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়, আধার ভয়পেয়ে যায়। সে বলে

—-কে? কে এখানে? কিন্তু কোনো শব্দ নেই আধার এবার ভয় পেয়ে যায়, তাই সে ধীরে ধীরে সামনে আগাচ্ছে তখনই অনেক গুলো জুনাকি উড়তে লাগে, আধার সেটা দেখে আরেক দফা অবাক হয়ে যায় কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। সে একটা জোনাকিকে হাতের মুঠোয় আটকে ফেলে, আর তখনই সে পিছনে কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে। সে পিছনে ফিরে যেই না কিছু বলতে যাবে। তখনই সেই ব্যক্তিটা তাকে বলে

—-একদম চুপচাপ থাকবে নড়বেনা নড়লে খাবর আছে।

—-আপনি কে? আপনি এখানে কি করেন? ব্যক্তিটাকে বলে

—-ফুটবল খেলতে আসছি খেলবা? আধার একটু ভেবে বলে

—-আপনি কি অন্ধ দেখেন না আমি মেসি, নেইমার আর রোনালদোর সাথে ফুটবল খেলছি। আদ্রিয়ান ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে

—-তুমি আমার সাথে যে ভাবে কথা বলো, বড়দের সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে? আধার বলে

—–এমন ত্যাড়া কথা বললে ত্যাড়া উত্তরই পাবেন, এখন, বলেন কে আপনি আর এখানে কি করেন? কি চাই।। ব্যক্তিটা বলে

—-এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? আধার বলে

—-আমার ক্লাস শুরু হয়গেছে যেতেদিন,নয়তো চিৎকার করবো। সে বলে

—-আগে আমার কাজ করে নেই তারপর। বলেই আধারকে নিজের কাছে নিয়ে আসে, আর বলে এখন এখানে চুপচাপ বসবা একটা কথা বললে মাথায় তুলে আছাড় মারবো। আধার তো অবাক এইসবের মানে কি সে কিছু বলতে গেলে সেই ব্যক্তিটা তাকে দেয় এর রাম ধমক তাই আধার চুপ হয়ে যায়। সে বাইরে গিয়ে বলে

—-D পেকেট টা দিয়ে যা।

তখনই কেউ আসে আর কিছু একটা দিয়ে চলে যায়। তারপর সেই ব্যক্তিটা এসে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে সেটা দিয়ে আধারের চোখ বেধে দয়। আর নিজের ফোন বের করে ফ্লাসলাইট টা ওন করে আধার কিছু বলতে গেলে সে তার ঠোঁটে হাত রেখে বলে সসসসসসসসু। আধার তো জমে ফ্রিজ। সে তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে পেকেট টা খুলে আর কিছু বের কর। আধার তার মাথায় কাটা জায়গাটায় তরল কিছুর অনুভব করে , আধার ব্যাথায় আহহহহ আম্মু বলে ওঠে। আর সে বলে
—আস্তে আস্তে একটু ওয়েট কর,সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর সে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বলে

—- হয়েগেছে,আর হ্যা আরেক বার যদি দেখছি মন খারাপ করে আছ তাহলে। আধার বলে

—-কে আপনি? সে বলে

—-তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। বলেই গান ধরে

—–Tumhe apna banene ka jonon sarpe hain.. kabse hain….

গান গাইতে গাইতে চেলে যায় কোনো রকম কথা আধার আর শুনে না তখন আধার নিজের চোখের রুমাল খুলে নিয়ে দেখে সম্পূর্ণ ক্লাস খালি কেউ নেই। সে দৌড়ে বাইরে আসে। কিন্তু কাউকে দেখে না কিন্তু একটু আগাতেই সে দেখে লাইব্রেরি দিক থেকে আশিক আর দিহান আসছে। সে ভালো করে তাকিয়ে দেখে আশিক তার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে

—-কি খবর কথার রানি কেমন আছ?আর সরি আমরা কালকের জন্য। আধার বলে

—- ঠিক আছে সমস্যা নেই, তখন দিহান বলে

—-ভাবি। তখনই আশিক চোখ পাকিয়ে তাকায় দিহানের দিকে দিহান, হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে

—- ভাবছি আপনার মানে তোমার ঝগরাটে বান্ধবী মারিয়াম কই? আধার বলে

—-ক্লাসে, কেনো কিছু বলবেন। আশাকি বলে

—না, তা তুমি এখন এখানে? আধার বলে

—-এইতো একটু লাইব্রেরিতে। আশিক বলে

—-আচ্ছা যাও সাবধানে যাও আল্লাহ হাফেজ। আধারও আল্লাহ হাফেজ বলে চলে যায়।

চলবে