তোমায় ঘিরে পর্ব-১১

0
1083

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_11
.
.
🥀সকলের রাতের ডিনার শেষে রাতের বেলা ছাদে বসে গল্প করছি আমি,নাদিরা,রিদিতা সাথে ওর কাজিনগুলো।রিদি ওর বিয়েটা নিয়ে খুব এক্সাইটেড।এক্সাইটেড হবেই বা না কেন বিয়ে ঠিক হওয়ার চারমাস পর ছুটিয়ে প্রেম করে তবেই বিয়ে করছে ওরা।রিদির বর পেশায় ইন্জিনিয়ার,তবে বেশ রোমান্টিক।রিদি বিয়ের পর কি করবে কোথায় যাবে এই সব কথা বেশি প্রাধান্য পায় ওর মুখে।ওর কথাগুলো শুনে আমরা হাসছি।তখনই ছাঁদের কোণে দাঁড়ালেন উনি সাথে রামীম ভাইয়াও আছেন।উনাকে দেখেও না দেখার ভান করে গল্পে মনোনিবেশ করলাম আমি।তখনই বলে উঠলেন উনি….
.
আচ্ছা রিদি সবাইকেই তো মোটামুটি চিনি কিন্তু এই মেয়ে টা কে…?ওকে তো চিনলাম না।
.
উনার কথায় অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছালাম আমি।আমাকে চিনেন না উনি ঢং।উনার কথা শুনে মিটিমিটি হাসছে নাদিরা আর রামীম ভাইয়া।
.
রিদিঃওহ্!!ভাইয়া তোমার সাথে পরিচয় করানোই হয় নি।ও আমার বেস্টু মেহরীমা।মিহু উনি আমার কাজিন নাদিরার ভাই..!!
.
ওহ্!হ্যালো মিহু আমি আরাভ(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)।
.
উনার এমন ব্যবহারে রাগে ফুঁসছি আমি।”হ্যালো মিহু আমি আরাভ” নিকুচি করেছে তোর পরিচয়ের।যত্তসব ফালতু লোক একটা।একটু আগে চিনলো কিন্তু এখন সবার সামনে চিনলো না কেমন খাডাশ হুহ!!
.
ছাঁদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে এক পা দেয়ালে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি।ব্যাপারটায় অস্বস্তি ফিল হচ্ছে আমার।আমি কেন যে কারোরই হওয়ার কথা।এমন করে যদি কেউ চোখ দিয়ে গিলে খায় তাহলে তো অস্বস্তি হবেই।বার বার নিজের ওরণা ড্রেস ধরে টানছি।আমার এমন কান্ড দেখে মৃদু হাসছেন উনি কিন্তু যেই ছিলেন সেই একই ভগ্নিতে এখনও আছেন তিঁনি।উনার এই বেহায়াপনা মোটেও নিতে পারছি না আমি।তাই নিজ আসন ত্যাগ করে উঠে দাঁড়িয়ে আমি।গল্পের আসর ছেড়ে আচমকা উঠায় অবাক সবাই।কিরে উঠছিস যে….কোথায় যাবি…?
.
ভালো লাগছে না!!মাথা ব্যাথা করছে একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
রিদিঃখুব কি খারাপ লাগছে আমি আসবো তোর সাথে…?
.
উহুম আমি পারবো!!তুই থাক।উনার দিকে তাকিয়ে এখনও সেই অবস্থায় অটল উনি একটা মুখ ভেংচি কেটে নিচে নেমে এলাম আমি।নিচে নামতে মাথায় কারো সাথে টোকা খেলাম আমি।সামনের ছেলেটাকে দেখে রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমার।আহান রিদির কাজিন ওদের বাসায় থেকে লেখাপড়া করছে। ছেলেটার চরিএে সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি।দেখলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে তাকে আমার দিকে। যেন কোন জন্মে তাঁর বউ ছিলাম আমি।ছেলেটা বএিশ দাঁত বের করে যেই কথা বলতে যাবে তখনই তাড়াহুড়ো করে ওকে এড়িয়ে গেলাম আমি।যাক বাবা বাঁচা গেলো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি…!!
.
.
.
আজকে রিদিতার গায়ে হলুদ+মেহেন্দি।সকাল থেকে সবাই যে যার মতো বিজি।আমিও কম বিজি নই।আন্টি নাদিরার হাতে হাতে কিছুটা কাজ এগিয়ে দিচ্ছি।সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ তাই নাদিরা আর রিদি ওদের পার্লারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।রিদিতা আমাকে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু আমি যাই।শেষমেশ মেয়েটা মুখ কালো করেই চলে গেলো।আমি না যাওয়ার একটাই কারণ “আরাভ”!! এই লোকটার জন্য এই বাড়ীতে কোথাও একফোঁটা ও শান্তি পাই না আমি।যেখানেই যাই সেখানেই উনি।বিরক্তি লাগে সেটা কেন বুঝেন না উনি।রিদি কে নিয়ে পার্লারে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছি তখনই জানতে পারি আরাভের সাথে উনার গাড়ী করেই আমাদের পৌঁছে দেবেন উনি।পেছনে রিদি আর নাদিরা সাথে ওদের কাজিন আমার জায়গা নাই।তাই আমাকে সামনে উনার পাশে বসতে বললেন উনি কিন্তু কিছুতেই উনার পাশে বসে যাবো না আমি।যেখানে উনার মুখ দেখতেও নারাজ আমি সেখানে উনার পাশে বসার প্রশ্নই উঠে না।তাই রিদিকে বুঝিয়ে অসুস্থতার ভান করে আটকে যাই আমি।আমার না যাওয়ায় বেশ ক্ষেপেছেন উনি।সেটা উনার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি আমি।যা হয়েছে বেশ হয়েছে…!!
.
একটু আগেই পার্লার থেকে ফিরেছে রিদি!!মেয়েটাকে আজ যেন আরো মায়াবী লাগছে আমার কাছে।হলুদ কালারের শাড়ি,কানে গলায় ফুলের অর্নামেন্টস ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, হাত ভর্তি চুড়ি…!!নাদিরাকেও দারণ লাগছে আজ।কিন্তু আমার এখনও রেডি হওয়া হয় নাই।সেই দেখে রিদির কি রাগ।ওর আর আন্টির বকা শুনে তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে একটা শাড়ী জড়িয়ে নিলাম গায়ে।শাড়ী এই জিনিসটা আমার বিরক্তির তালিকায় প্রথম।কিন্তু রিদির ইচ্ছে তার বিয়েতে আমি যেন শাড়ী পড়েই থাকি।ওর এই আবদার টা ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারি নি।তাই শাড়ী পড়ে হালকা মেক-আপ,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে হাঁটা ধরালাম স্টেজের দিকে আমি।চারিদিক সেজে উঠেছে খুব সুন্দর করে।লাল নীল আলোর কি ছড়াছড়ি।আমকে দেখেই মিষ্টি হেঁসে উপহার দিলেন আন্টি…..খুব সুন্দর লাগছে তোকে…!!
.
উনার হাসির বিপরীতে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলাম আমি।তখনই দাঁত বের করে আমার সামনে দাঁড়ালো আহান খচ্চর!উফফ!!একে দেখলেই মেজাজ বিগড়ে যায় আমার।মিহু তোমাকে না সত্যি খুব সুন্দর লাগছে একদম পরীর মতো লাগছে।তোমার দিক থেকে কেউ চোখই ফিরাতে পারবে না।
.
উনাকে থ্যাংকস জানালাম আমি।বার বার তো মানুষকে ইগনোর করা যায় না।তাছাড়া আমি যে উনার সাথে কথা বলছি সেটা নজর রাখছে আর রাগে ফুসছে কেউ।তাঁকে আরেকটু রাগানোর জন্য না চাইতেও উনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম আমি।একসময় ক্লান্ত হয়ে উনাকে কাটিয়ে সামনে হাঁটা ধরালাম আমি।স্টেজে গিয়ে রিদির সামনে দাঁড়ালাম।রিদিও প্রসংশা করলো সাথে নাদিরাও।বেশ ভালোভাবেই হলুদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেলো।অনুষ্ঠান শেষে ড্রয়িংরুমে ঢুকছি তখনই আমার হাত টেনে ধরলো কেউ।কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথায় যেন পৌঁছে গেলাম।ব্যাপারটা এতটা তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে কিছুই টের পাইনি আমি।আমার সামনে রাগী লুকে তাকিয়ে আছেন আরাভ।এই রাগের কারণগুলো অজানা নয় আমার কাছে।উনার সাথে পার্লার যাই নি এটাই সবথেকে বড় রাগের কারণ উনার।কারণ ইগনোর জিনিসটা একেবারে পছন্দ করেন না উনি।সেটা উনাদের বাসায় থাকাকালীন জানতে পেরেছি।উনি যেটা বলেন সেটাই শুনতে হবে সবাইকে।উনার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে রুক্ষ কন্ঠে বললাম…..
.
এটা কি ধরণের অসভ্যতা আমাকে এখানে এভাবে নিয়ে আসলেন কেন….?
.
মুখে কথার খই ফুটেছে তাই না!!(দাঁত কটমট করে)ওই ছেলের সাথে এত কথা কিসের তোমার…?কিসের এত হাসাহাসি…?(চোখ রাঙিয়ে)
.
আজব!কোন ছেলেটার কথা বলছেন আপনি…?আর যার সাথেই হাসি না কেন তাতে আপনার কি…?আমার যখন যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে কথা বলবো,হাসবো।তাঁর কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নই।
.
বাধ্য তুমি!(চিৎকার করে)।তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ আইনত এখনও তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী।হ্যাঁ আমরা আলাদা থাকি এটা ঠিক কিন্তু আমাদের ডিভোর্স এখনও হয় নি।
.
বিবাহিতা স্ত্রী!!হাসালেন।যেই বিয়ে আপনিই মানেন না,আমিও মানি না।নিছক জোর করে,ভুল করে হওয়া একটা সম্পর্ক সেখানে আমাকে স্ত্রী দাবি করাটা কি বোকামি নয় মিঃ আরাভ।আপনার কাগজে কলমের স্ত্রী আমি কিন্তু মন থেকে নই।যাগগে এসব ফালতু কথা শোনার টাইম বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নাই।
.
নাহ বোকামি নয়!!আমার বউকে আমি বউ বলবো তাতে কার কি!আমি মানি কিনা সেটা আমি জানি!আজকের পর থেকে আর ওই আহানের সাথে কথা বলবে না।কথাটা মাথায় রেখ ইডিয়ট বলে চলে গেলেন উনি।আসছে বউ কইতে হারামজাদা!!আমি না তুই ইডিয়ট,তোর চৌদ্দ গুষ্টি ইডিয়ট হুহ!!কিসের এত জ্বালাপোড়া তোর।আমি কথা বলবো আরও বেশি করে কথা বলবো তুই আটকাইস আমারে…!!কথাগুলো কানে যাওয়ার আগেই ওখান থেকে চলে গেলেন উনি।থাকলে হয়তো কথাগুলো গলা দিয়ে বেরই হতো না আমার।ওই ফালতু লোকটার ফালতু কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ড্রয়িংরুমে ঢুকছি তখনই নাদিরার সাথে ধাক্কা খাই আমি।বেখালি হয়ে হাঁটার ধরুন ওর হাতে থাকা কফির মগ আঁচড়ে পড়ে আমার হাতে।সাথে সাথে আহ্ বলে চিৎকার দিয়ে উঠি আমি।হাতটা খুব জ্বালা করছে আমার।রান্নাঘর থেকে সদ্য নিয়ে আসা হয়েছে যার ধরুন তাপটা এখনও টাটকা আছে।আমি আহ্ বলার সাথে সাথে একজন সামনে এসে দাঁড়ালো আমার।ধমকের সুরে বলে উঠলো…..
.
এত কেয়ারলেস কেন তুমি…!!একটু দেখে শোনে চলতে পারো না এই চোখ কোথায় থাকে তোমার পায়ের নিচে…?
.
একে তো হাত জ্বলছে তার উপর এর গাঁ জ্বালানো কথা দুইয়ের সংমিশ্রণে দুকছি আমি।নাদিরা মন করে সরি!সরি!আমি দেখতে পাই নি।
.
এখানে দাঁড়িয়ে সরি না বলে আইস ব্যাগ নিয়ে আয়….দৌড়ে গিয়ে বরফ নিয়ে এলো নাদিরা।উনি বরফ নিয়ে আমার হাতে দিতে যাবেন তখনই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলাম আমি।
.
কি হলো হাত দাও…!!
.
আমার কাছে দিন আমিই দিয়ে দিতে পারবো।আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
.
ফটাফট হাত বার করো নইলে…..
.
বললাম তো…!!
.
রাবিশ!!বলে জোর করে এক টানে আমার হাতে উনার কাছে নিয়ে গেলেন উনি।বরফ দিয়ে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলেন আমার হাতে।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ।এত রাক্ষুসী শক্তির সাথে আমার মতো মেয়ে পারবে কি করে।অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন উনি….ফিসফিস করে কানের কাছে বলে উঠলেন…..
.
আর কখনও যদি দেখেছি বেখেয়ালে হেঁটে কিছু ঘটিয়েছো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।মাইন্ড ইট!!আর আমার কাজে কখনও বাধা সৃষ্টি করো না।কারণ আমার যা করার তা থেকে তুমি আমায় আটকাতে পারবে না উল্টে আমার কঠিন রূপ দেখবে তুমি যেটা আমি কখনও তোমার উপর এপ্লাই করতে চাই না।বুঝেছো “বউ” বলে চলে গেলেন উনি।”বউ” এই বউ শব্দটা বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমার কানে।এসব কি বলছেন উনি আর কেনই বা বলছেন।যেই সম্পর্ক ছয় মাস আগে মাটি চাপা দিয়েছেন নিজেই সেই সম্পর্ক কেন আবার নতুন করে টানছেন উনি।কেন এই বর বউয়ের খেলায় মেতেছেন।আমাকে কি পুতুল মনে হয় উনার নাকি।যখন যা হচ্ছে তাই করছেন।কখনও ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন তো কখনও দরদ দেখাচ্ছেন।কি চাইছেন কি উনি…..!!
.
.
#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে