তোমায় ঘিরে পর্ব-১২

0
1118

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_12
.
.
🥀দুই হাতে মেহেদী দিয়ে পুতুলের মতো হাত দুটো টান টান করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে রিদি।আন্টির কড়া হুকুম মেহেদী না শুকানোর আগে যেন হাত না ধুয়।এই আদেশের একটা ব্যাখাও দিয়েছেন উনি।কারণ হাতের রং যত গাঢ় হবে তার বর তাকে তত ভালোবাসবে।এই কথাটা ভালোভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছে রিদি।এখন যদি পাঁচ মিনিটেই হাত ধুয়ে নেয় তাহলে রং বসবে কি করে।তাই কষ্ট করে বরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হলেও এই অসহ্য সময়টা পার করতে হবে ওকে।আমি ওর পাশে বসে কান্ড দেখে চলেছি।মেয়েটা কথাগুলো সত্যি মনে করে বসে আছে।নাদিরা মেহেদী দিতে ব্যস্ত।ওর দেওয়া শেষ হলেই আমার হাতে মেহেদী পড়ানো হবে।যদিও না করেছিলাম কিন্তু বেস্টুর কথা আমাকেও পড়তে হবে।এক হাত পুড়েছে তো কি হয়েছে অন্য হাতে পড়বো।নাদিরাকে পড়িয়ে আমার হাতে মেহেদী পড়াতে শুরু করলো পার্লারের মেয়েটি।কিছুটা পড়াতেই এক প্রকার দৌড়ে এসে আমার হাতের সাথে টেস দিয়ে হাত রাখলেন আরাভ।পেছনে রামীম ভাইয়াও আসছেন।উনার এমন ব্যবহারে শকড আমি।ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি।কারণ ছেলেদের মেহেদীর প্রতি ইন্টারেস্ট আছে এই প্রথমবার দেখলাম আমি।রিদি আর নাদিরাও বেশ অবাক।দুজনে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে উনার দিকে।সেদিকে নজর না দিয়ে মেয়েটি কে বলে উঠলেন উনি…..
.
একটা নেইম আর্ট করো তো ফার্স্ট!!
.
নেইম!!উনার কথায় ৩৬০ ভোল্টেজের শক খেলাম আমি।উনি হাতে কারো নেইম আর্ট করবেন!এটা ঠিক শুনছি তো আমি।আমার সাথে সাথে অবাক রিতি আর নাদিরাও।কিন্তু কার নাম হাতে আর্ট করবেন উনি।কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছেন নাকি।
.
উনার কথায় হাসলো মেয়েটি!!স্যার কি নাম হবে বলুন।
.
রিতিঃভাইয়া কার নাম আর্ট করবে তুমি…?ভ্রু নাচিয়ে গার্লফ্রেন্ডের বুঝি…?
.
ধুরর না!গার্লফ্রেন্ড না।নিশ্চয়ই বউমণি হবে।
.
তোরা থামবি!!ওদের কথায় কান না দিয়ে আপনি আপনার কাজ করুন তো!!
.
কি নেইম বললেন না তো!!
.
কিছুটা ভেবে “রীমা”!!খুব সুন্দর করে আর্ট করবেন কিন্তু।যাতে আমার মন মতো হয়।
.
নামটা শুনে আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না আমি।শুধু যে আমি আশ্চর্য হয়েছি তা কিন্তু নয় সাথে রিদি আর নাদিরাও।আমরা কেউ ভাবতে পারিনি উনি এরকম একটা নাম আর্ট করতে পারেন।”রীমা” নামটা বেশ ভালো কিন্তু কে সে…?কবে উনার মনে জায়গা দখল করলো।আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই কি উনার প্রেম চলছিলো।নাহ!নাদিরা তে বলেছিলো কোনো রিলেশন নেই উনার।উনার আচার ব্যবহারে আমারও তাই মনে হয়েছে।তাহলে কি এই ছয় মাসে কেউ এন্ট্রি নিয়েছে উনার লাইফে।সে যাইহোক এটা নিয়ে এত ভাবছি কেন আমি।কেন কষ্ট হচ্ছে আমার।উনি যা ইচ্ছা তাই করবেন তাতে আামর কি!আমার তো কষ্ট হওয়ার কথা না।তাহলে কেন কোথাও খারাপ লাগা কাজ করছে।জানি না!কিচ্ছু জানিনা আমি।
.
ভাইয়া তুমি বউমণি কে রেখে শেষ পর্যন্ত অন্য একটা মেয়ের নাম হাতে লিখছো…?দিস ইজ নট ফেয়ার।
.
রিদিঃএই বউমণিটা ওই যাকে তুলে এনে বিয়ে করেছিলো সে না…!!
.
হুমম!!
.
আহারে!!বেচারির কপাল টা পুড়লো।আচ্ছা ভাইয়া “রীমা” মেয়েটা কে..?
.
মাই লাইফ লাইন!!আমার দিকে তাকিয়ে বউ বা গার্লফ্রেন্ড সেটা ফ্যাক্টর নয় মোটকথা আমার ভালোবাসার মানুষ। আর কিছু জানতে চাস না তোরা।ছোট ছোটদের মতো থাকবি।বড়দের মতো পাকামি করবি না ওকে…!!
.
উনার কথা শুনে দুজনেই চুপ।আমি নিজের হাত গুটিয়ে ওখানে থেকে উঠে দাঁড়ালাম।এখানে থাকার একফোঁটা ইচ্ছেও নেই আমার।হয়তো থাকলে নিজের মনের কোণে চাপা পড়া কষ্ট গুলো বেড়িয়ে আসবে সবার সামনে।কি দরকার নিজের কষ্ট অন্যকে দেখানোর।চাই না আমি!!নিজের কষ্ট গুলোকে নিয়ে না হয় নিজেই বাঁচি।আমি উঠতেই রিদি নাদিরা আমাকে বসার জন্য বলছে কিন্তু কারো কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার।নিজের মনেই চলে যাচ্ছি।
.
নাদিরাঃযাহ!চলে গেলো!!ভাইয়া তুমি কি কাজটা ঠিক করলে…?
.
রামীমঃতোমার কাছে ঠিক না হলেও ওর কাছে ঠিক।এটা নিয়ে কথা বাড়িও না।একটু মাথা খাটাও ব্যাপারটা বুঝতে পারবে।অবশ্য মাথামোটা রা আর কিই বা মাথা খাটাবে।
.
কিহ!তুমি আমায় মাথামোটা বললে…?
.
তোকে এটাই বলা উচিৎ।এরইমধ্যে কমপ্লিট আমার মেহেদী দেওয়া।খুব সুন্দর হয়েছে ম্যাডাম।থ্যাংকস!!রিদি তোর ফ্রেন্ড কোথায় রে চলে গেছে নাকি…?
.
হুম!তুমি যেভাবে তোমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিজি তাই হয়তো রাগ করে চলে গেছে।
.
ওহ্!ঠিক আছে।মেহেদী না পড়লে খুব একটা ক্ষতি হবে না।
.
আচ্ছা ভাইয়া তুমি ওর পিছনে লাগছো কেন…?কি সামথিং সামথিং!!
.
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে সেটা তুই বুঝবি না!!বোঝার বয়স বা বুদ্ধি কোনাটাই হয়নি কিনা। আরেকটু বড় হ তারপর বুঝবি।
.
অবাক হয়ে ভাইয়া কাল আমার বিয়ে!!আর তুমি বলছো আমার বোঝার বয়স হয়নি…?
.
বিয়ে তো ১০ বছরের খুকীকেও দেওয়া যায় তাই বলে কি সে বড় হয়ে গেলো।যাকগে তোরা থাক আমার কাজ কমপ্লিট আমি আসছি।
.
.
রুমে বসে গুম হয়ে আছি আমি।হাত ধুয়ে ফেলেছি সেই কবে।কিন্তু তবুও গাঢ় রং বসেছে হাতে।সেই হাত দিয়ে গবেষণায় বসেছে দুজনে।তাদের কথা অনুযায়ী আমার বর খুব ভালোবাসবে আমায়।রিদিও খুব খুশী কারণ ওর হাতে গাঢ় রং বসেছে যে।কিন্তু নিজের দিকে বিশেষ খেয়াল নেই ওর।শুধু উল্টে পাল্টে আমার হাত দেখছে।এখন ওর মনে আমার বর দেখারও ইচ্ছে জেগেছে খুব।কিন্তু আমার বরকে কোথায় পাবে…?
.
আচ্ছা তোর ওই রাক্ষস বরটার কোনো ছবি আছে তোর কাছে…?
.
ওর কথায় চরম আশ্চর্য আমি!!ও আমার রাক্ষস বরের ছবি দিয়ে কি করবে…?
.
নাহ্!!কেন…?
.
না!!আজ ওই রাক্ষস বরটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আমার।দেখ তুই কত লাকি এখনও রাক্ষস তোকে ভালোবাসে।আসলে দূরে থেকেও ভালোবাসা হয়।
.
নাদিরাঃহুম দূরে গেলে আপনজনের শূন্যতা অনুভব করা যায়।আর সামনে থাকলে তাদের অবহেলা করি আমরা এটাই বাস্তব।।হয়তো এখন উনি খুব ভালোবাসেন তোমাকে।
.
এই মেয়ে দুটোর কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে যাচ্ছে আমার।কিন্তু থামার নেমই নেই।এতক্ষণ ধরে একই টপিকে কি করে আছে ওরা।যেখানে এক টপিকে পাঁচ মিনিটের উপরে কথা বলতে নারাজ আমি।রীমা যেই হোক এত কথা বলার কি আছে বুঝি না বাপু।উফফ!!থামবে তোমরা,…কি টপিক নিয়ে এখনও পড়ে আছো!অসহ্য লাগছে আমার।
.
আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো দুজনে।এমন ভাব করছে যেন কথাটা বলা উচিৎ হয়নি আমার।দুজনের এমন চাহনী দেখে বোকা বনে গেলাম আমি।কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেন তোমরা…?
.
তাকাবো না!!তুই জানিস এই ভাইয়া আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি আর সেই কিনা একটা মেয়ের নাম লিখলো…..!!
.
তো কি হইছে!একসময় তাকায় নি কিন্তু এখন তাকাচ্ছে।মানুষের সারাজীবন কি এক রকম যায় নাকি।মানুষের মন মিনিটের মধ্যে পাল্টে যায়।
.
এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস!!তবুও একটা খটকা থেকেই যায়।
.
ধুরর ভাল্লাগেনা!প্লিজ তোমরা এইবার চুপ করো।
.
নাদিরাঃআহা!!বউমণি তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি।কিন্তু তোমাকে জ্বালানোর জন্য আরো বেশি করেই বলছি আমি।
.
রাত তিনটা হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।এপাশ ওপাশ ফিরে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু ঘুমের উপর কি জোর চলে,চলে না তো!!তাই নিজেকে ঘুম পাড়াতে ব্যর্থ হলাম আমি।নিজেকে ব্যর্থ হতে দেখে প্রচন্ড রাগ লাগছে আামার।কেন ঘুম আসবে না।কিসের জন্য আসবে না।আজ রাতের ঘুম যদি নাই হয় তাহলে কাল এত দখল নেব কি করে।যেখানে ঘুমিয়েই ছিলাম আধঘন্টা মতোন আগে যদিও এখনও অনায়াসে চার-পাঁচ ঘন্টা ঘুমাতে পারি।কিন্তু ঘুম সেটা এভাবে উবে যাবে ভাবতেই পারিনি।কিছুক্ষণ বিছানায় ছটফট করে উঠে বসলাম আমি।দম বন্ধ লাগছে আমার।এতক্ষণে বুঝে গেছি আজ দু-চোখ এক করতে পারবো না আমি।ঘুম নেই সে হাওয়া হয়ে গেছে।কিন্তু এখানে একা একা বসে থাকা তো যায় না।নাহ ছাদে যাই।কিন্তু এই রাতের বেলায় একা একা যাবো কি…..
.
ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছি।আকাশে আজ তারার মেলা বসেছে।অনেকগুলো তারার মাঝখানে এক টুকরো চাঁদ।চাঁদের আলোয় চারিদিক চিক চিক করছে।চাঁদটাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ।ওই চাঁদের মুগ্ধতায় মুগ্ধ আমি।কাল রিতির জীবনে সবথেকে সুন্দরতম দিন।স্বামী,শশুর,শ্বাশুড়ি নিয়ে ভরা সংসার ওর।আমিও তে সব পেয়েছিলাম কিন্তু….চেয়েছিলাম মানিয়ে নিতে,উনাকে মেনে নিতে কিন্তু উনি!উনি কোনো সুযোগই দেন নি আাময়।হয়তো উনার লাইফে আগে থেকেই “রীমা” নামের অস্তিত্ব ছিলো তাই।বেশ ভালোই হয়েছে উনার পছন্দের মানুষের সাথে জীবন সাজাতে পারবেন উনি।আর পিছুটান রেখে লাভ নেই এবার উনার আমার সেপারেশন খুব জরুরি।কথাগুলো ভাবতেই চোখ দুটো ভরে আসছে আমার।চোখ বুঝে চোখের পানিগুলো ফেলছি তখনই সামনে কারে উপস্থিতি টের পেলাম আমি।এই গভীর রাতে কে হতে পারে আমার সামনে।তাহলে কি ভূত!না ভূত বলে তো কিছু নেই।ভয়ের চোটে চোখ খোলার সাহস পাচ্ছি না আমি।ভেতরে দম নিয়ে দোয়া দুরুদ পড়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম আমি।কিন্তু সামনে কেউ নেই।হয়তো আমার মনের ভুল ছিলো।এখানে থাকাটা উচিৎ নয় তাই আবারও রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম আমি।কিন্তু সামনে এমন কিছু দেখবো ভাবতেও পারিনি আমি।দু’হাতে চোখ কছলে বড় বড় চোখ করে আবারও তাকালাম কিন্তু না ভুল নয়!ঠিকই দেখছি।আআআ বলে চিৎকার করে উঠলাম আমি…….!!
.
.
#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে