তোমায় ঘিরে পর্ব-১৬

0
1180

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_16
.
.
🥀উনার দেওয়া গিফট হাতে নেড়ে ছেড়ে দেখে চলেছি আমি খুলবো নাকি খুলবো না এই দোটানায় আছি।তখনই হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো নাদিরা।আমি নাদিরার দিকে একবার তাকিয়ে প্যাকেট টা লুকানোর বৃথা চেষ্টা করলাম!কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।প্যাকেটটা দেখলে এখন নিরানব্বই টা প্রশ্নোওর ওকে দিতে হবে আমায়।যা এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম।কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি যাই ভাবি তার বিপরীত টাই ঘটে।এবারও তার ব্যাতিক্রম হলো না।
.
আরে বউমণি আমাকে দেখে ওটা কি লুকালে তুমি…?দেখি দেখি ওটা কি…?
.
জিনিসটা দেখের জন্য খুব এক্সাইটেড নাদিরা।এটা এখন ওকে দেখতেই হবে।উপায় না পেয়ে ওকে দেখাতে বাধ্য হলাম আমি।প্যাকেট টা হাতে নিয়ে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে নাদিরা।কিন্তু খোলার মত পোষণ করছে না।প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে…..
.
নাও তোমার গিফট তুমিই খোলো….!!
.
আরে নাহ্!!তুমিই খোলো।নিজের হাসবেন্ডের দেওয়া প্রথম গিফট সেটা আমি কেন খুলবো বাপু!তুমিই খেলো।
.
নাদিরার কথায় কিছুটা বিস্মিত হলাম আমি।নাদিরা কি করে জানলো এটা উনিই দিয়েছেন।নাদিরার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি।তুমি কি করে জানলে…?
.
আরে বাবা!আমার সামনেই তো একই কালারের দুইটা পার্সেল এলো এখন একটা দেখছি তোমার কাছে তাহলে অপরটি কোথায়…?আচ্ছা যাগগে সেটা পরে পাওয়া যাবে।ওগো বউমণি খোলো না আমার তো তর সইছে না।
.
প্যাকেট খুলে অবাক আমি লাল শাড়ি।হঠাৎ উনি আমায় শাড়ী দিলেন কেন তাও টকটকে লাল।শাড়ীর সাথে ম্যাচিং সব আছে।গিফট বক্স খোলার পরই শাড়ী আর জুয়েলারির উপর হামলে পড়লো নাদিরা।আমার ভাইয়ার পছন্দ আছে।কি সুন্দর হয়েছে হেনতেন!প্যাকেটের এক সাইডে একটা চিরকুট।চিরকুট হাতে পড়তে শুরু করলাম আমি।
.
এটাই তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া।আর কোনোদিন হয়তো দেখাও হবে না আমাদের।এটাই শেষ!তাই জীবনের শেষ বাবের মতো তোমাকে নিজের মতো করে একটা দিন দেখতে চাই আমি।খুব ইচ্ছে ছিলো নিজের বউকে লাল শাড়ী পড়িয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে সারাদিন নিয়ে ঘুরবো কিন্তু তা তো হওয়ার নয় তাই আজকে রিদির বাসায় যাওয়ার সময় যদি এটা পড়ো তাহলে আমি খুব খুশী হবো।যদিও আমার খুশী আনন্দে তোমার কিচ্ছু যায় আসে না।তবও প্লিজ আমার শেষ ইচ্ছা ভেবে পড়ে নিও।আর যদি না পারো তাহলে ফেলে আসা গোলাপ মানে আমার ভালোবাসাকে যেভাবে ফেলে এসেছো সেভাবে ফেলে দিও…!!

চিরকুট টা পড়ে চোখ থেকে অনবরত জল পড়ছে আমার।এটাই আমাদের শেষ দেখা কিন্তু কেন উনি কোথাও চলে যাচ্ছেন নাকি!!বুকের ভিতরে হাজারো কষ্ট জমাট বেঁধে আছে।কাল ফিরিয়ে দিয়েছি বলে সারাজীবন একরকম থাকবো এটা কি করে ভাবলেন উনি।
.
রিদির রিসেশনে যাওয়ার জন্য তৈরী সবাই।নাদিরা আমি সেজেগুজে বসে আছি।নাদিরা গাউন পড়েছে শাড়ীর বোঝা আর বইতে পারছে না।যাওয়ার জন্য বাইরে বেড়িয়েছি তখন পেছন থেকে উনার গলা পেয়ে থমকে গেলাম আমি।স্পষ্ট আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ উনি।মাথানিচু করে মুচকি হাসছি আমি।
.
বরাবরই তুমি খুব সুন্দর!!যাই পড়ো না কেন তোমাকে মিষ্টি দেখায়।আজকেও তার ব্যাতিক্রম নয়।তোমাকে দেখে এখন এটাই মনে হচ্ছে আমার এই লাল রংটা একমাত্র তোমার জন্যই বানানো হয়েছে।এই মেয়েটাকে যত দেখি ততই মুগ্ধ হই আমি।প্রতিদিন যেন ওর প্রতি এক্সট্রা ভালোভাগা কাজ করে আমার।দুধে আলতা গয়ের রং পড়নে লাল শাড়ী,ম্যাচিং চুড়ি,জুয়েলারি,চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।লম্বা চুল গুলো কোমড় পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে এই সাজেই পরীর মতো লাগছে আমার বউটাকে।ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে একটু আদর করি।কিন্তু তা তো হওয়ার নয়।বউ যে এখনও আমাকে ধোয়াশায় রেখেছে।তোমার মনে কি আছে এখনও জানিনা আমি।কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই জেনে নেবো সুন্দরী।থ্যাংকস আমার কথাটা রাখার জন্য।
.
উনার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।আমার ঠিক পেছনে একটা মেয়ে লাল শাড়ী পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন উনি।মেয়েটার মাথার উপর দিয়ে উনাকে কিছুটা দেখা যাচ্ছে।আমাদের মাঝখানে ওই মেয়েটাকে দেখে রাগে ফু্সছি আমি।আমি একটু এগুতেই মেয়েটি বলে উঠলো….
.
আরাভ!!তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না।এমন কি কখনও হয়েছে তুমি কিছু বলেছো আর আমি শুনিনি!হয়নি তো তাহলে।
.
তার মানে উনি কথাগুলো আমাকে নয় মেয়েটাকে বলেছেন।মূহুর্তেই চোখ দুটো ভরে গেলো আমার।এখন নিজেকে নিজের গুলি করে মারতে ইচ্ছে করছে।তোর জামাই তোর সামনে দাঁড়িয়ে অন্য একটা মেয়ের প্রসংশা করছে গিফট দিচ্ছে আর তুই এখানে হ্যাংলার মতো দাড়িয়ে আছিস ছিঃ মিহু ছিঃ! মেয়েটাকে একবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলাম আমি।মাই গড!!মেয়েটা সেইম আমার মতো সেজেছে।সেইম কালারের শাড়ী,জুয়েলারি থেকে শুরু করে লিপস্টিক পর্যন্ত এটা কি এ তো আমারই কার্বন কপি।তার মানে নাদিরা দুইটা পার্সেলের কথা বলেছিলো সেই একটা উনি ওকে দিয়ছেন কিন্তু মেয়েটা কে…?আগে তো কখনও দেখিনি।আমি এতক্ষণ উনার পাশে দাঁড়িয়ে আছি সেদিকে নজরই নেই।কত আশা নিয়ে উনার শাড়ী পড়ে উনার সামনে এসেছিলাম কিন্তু এভাবে আশাহত হবো ভাবিনি।নিজের চোখের জলগুলোকে আড়াল করে সামনে পা বাড়ালাম তখনই….
.
আরে মেহরীমাও দেখছি এসে পড়েছে।তোমাকেও ভালো লাগছে।থ্যাংকস আমার কথাটা রাখার জন্য।তোমার সাথে তো আলাপই করানো হয় নি ও হলো কারিমা!কারিমা ও হলো মেহরীমা!
.
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও একটা হাসি দিলাম আমি।মেয়েটা হাই জানালো।আমি উওরে কিছু না বলে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
.
আরে বাহ!আমি তো একটা জিনিস খেয়ালই করিনি।কারিমা মেহরীমা দুজনের নামেই “রীমা” আছে।এই “রীমা” নামটা আমার পিছুই ছাড়ছে না।কীভাবে যেন এই নামগুলোকেই আমার সাথে কানেক্টেড হতেই হয়।
.
উনার কথায় সত্যি খেয়াল করলাম আমিও।কারীমা সত্যিই তো।মেয়েটার নামের শেষেও “রীমা” আছে।তাহলে কি এই রীমাই উনার।না না এটা হতে পারে না উনি নিজে আমায় বলেছেন আমিই উনার ভালোবাসা রীমা।আচ্ছা মেয়েটা কি হয় উনার…?কেন মেয়েটাকে আমারই মতো শাড়ী চুড়ি গিফট করলেন উনি…?কারিমা উনার গার্লফ্রেন্ড নয় তো!হতেও পারে নইলে কেউ বউকে যা দেয় তাকি আর কাউকে দেবে!দেবে না।আচ্ছা উনি কি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চাইছেন নাকি।আকাশ পাতাল চিন্তা করতে ব্যস্ত আমি।আমার ভাবনার মাঝেই কারোর তুড়ির আওয়াজ পেয়ে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।
.
কারীমাঃকি হলো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি…?এতক্ষণ ধরে কিছু জিজ্ঞেস করছি তো!
.
হুমম! বলুন।
.
না থাক!আচ্ছা আরাভ চলো আমরা ওদিকে যাই।
.
হুম!তুমি একটু এগোও আমি আসছি।মেয়েটা দু কদম এগুতেই আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন উনি….. মেহরীমা।
আবারও তোমাকে ধন্যবাদ!আমার স্বপ্নটা কে বাস্তব হতে সাহায্য করার জন্য। থ্যাংকস এ্যা লট!
.
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে উনাকে বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছি আমি।কিন্তু উনার সেই চোখের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ আমি।মনের মধ্যে উনাকে আর কারীমাকে নিয়ে হাজারও প্রশ্ন দানা বেঁধে আছে।যার উওর অজানা আমার।কিন্তু নিজেকে দমিয়েও রাখতে পারছিনা আমি।মেয়েটা কে..? আপনার গার্লফ্রেন্ড…?(ভ্রু কুঁচকে)
.
আমার কথায় মুচকি হাসলেন উনি।আপাদত বলছি না।সময় হলে সব জানতে পারবে।সানগ্লাস ঠিক করতে করতে চলে গেলেন উনি।আজকে একটু বেশিই স্মার্ট লাগছে উনাকে।কিন্তু কারণ কি!তাহলে একমাএ কারণ ওই মেয়েটি।যার কাছে পরিপাটি করে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান উনি।আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে অন্য মেয়ের সাথে টাংকি মারা তাই না।অবশ্য ভালোই হয়েছে উনার জীবনটাকে না হয় এবার গুছিয়েই নেবেন উনি।
.
রিদির বাসায় যাওয়ার জন্য সবাই রওয়ানা হয়ে যাচ্ছে।আজকেও আরাভের গাড়ী দিয়ে যেতে হবে আমায়।কিন্তু না আজ আমি যাবো না।কেন যাবো আমি!কিছুতেই যাবো না।উনি উনার কারীমাকে নিয়েই যাক হুহ।গাড়ীতে উঠে ধুম করে বসে পড়লো নাদিরা।রামীম নাদিরা দুজনে দখল করে নিলো পেছনের সিট।আর দুইটা সিট বাকি। যেতে হলে হয় পেছনে বসতে হবে নয়তো সামনে উনার পাশে।কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছি না আমি।নাদিরা বার বার সামনে বসার জন্য বলছে আমায় কিন্তু আমি নড়ছি না।যেই উনার পাশে বসতে যাবো তখনই কারীমা এসে বসে পড়লো উনার পাশে।ব্যাপারটায় বেশ আশ্চর্য আমি!কিন্তু এতে কোনো হেলদোলই হলো না উনার।অন্যদিন হলে আমাকে চোখ রাঙ্গাতেন,রাগ দেখাতেন কিন্তু আজ তার কিছুই হলো না।বরং কারীমার সাথে গল্প শুরু করলেন উনি।নাদিরা বার বার ওর পাশে বসার জন্য বলছে আমায় কিন্তু না আমি যাবো না।আর রিদির বাসায়ই যাবো না।হঠাৎ বলে উঠলেন উনি….
.
এই তোমাকে কি এখন জনে জনে দাওয়াত করতে হবে নাকি….?সেই কখন থেকে নাদিরা উঠতে বলছে কিন্তু নড়ছই না।ঠ্যাটার মতো দাঁড়িয়ে আছো। নাকি যাওয়ার ইচ্ছে নেই কোনটা…?
.
কথাগুলো শুনে চোখের কোণে জল চলে এলো আমার।সবার সামনে আমাকে এতগুলো কথা শোনাতে কীভাবে পারলেন উনি।এই আমার প্রতি উনার ভালোবাসা।ভালোবাসা না ছাঁই!কালকে আমার কাছে রিজেক্ট হয়ে আজকে আরেজনকে জুটিয়ে নিয়েছে ক্যারেক্টারলেস ছেলে একটা।রাগে দুঃখে অভিমানে চিৎকার করে বললাম….আমি যাবো না!আপনারা বেড়িয়ে যান।
.
আমার কথাটা যেন হজম হলো না উনার।রামীম ভাইয়া,কারীমা,নাদিরা সবাই যাওয়ার জন্য বলছে আমায়।কিন্তু আমি যাবো না।গাড়ী থেকে নেমে আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন উনি।কেন যাবে না তুমি..?সেজেগুজে রেডি হয়ে এসেও যাবে না বলছো কেন…?
.
এমনি!আগে যাওয়ার মুড ছিলো এখন নেই।আপনারা চলে যান আমি যাচ্ছি না।আমি বাড়ি যাবো আমার ভালো লাগছে না।
.
কোথাও যাবে না তুমি!এখন আমার সাথে রিদির বাসায় যাবে।আগামীকাল তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেও কেউ বাধা দেবে না।কিন্তু আজকে তোমাকে ওখানে যেতেই হবে।চলো আমার সাথে।
.
বললাম তো যাবো না!
.
আমাকে রাগিও না!রাগালে গতকাল একা পেয়ে যেটা করতে চেয়েছিলাম সেটা আজ এক্ষুনি সবার সামনে করবো।বুঝতেই পারছো কি মিন করছি।
.
উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।কি নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে।এখন কি না কি বলছে।এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই কথা শুনলে এটা করতে দু সেকেন্ড সময়ও নেবেন না উনি।এখন এর সাথেই যেতে হবে আমাকে।উপায়ান্তু না পেয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম আমি।সামনে বসে সানগ্লাস ঠিক করে ডেভিল স্মাইল দিয়ে গাড়ীতে স্টার্ট দিলেন উনি।
.
পাগলী মেয়ে!বড্ড অভিমান জমেছে তোমার তাই না।বরকে ভালোবাসো কিন্তু স্বীকার করতে নারাজ।এবার দেখি কতক্ষণ মনের কথা চেপে রাখতে পারো তুমি।তোমাকে ইচ্ছে করে পেছনে বসিয়েছি আমি।যাতে তোমাকে পুরে রাস্তা মন ভরে দেখতে পারি আমি।কিন্তু তুমি তো ইডিয়ট হয়তো কতকিছু ভেবে নিয়েছো কারীমাকে নিয়ে।ভাবতে থাকো।আমিও দেখবো কতক্ষণ আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারো তুমি…!!
.
.
#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে