Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1439



প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা সোজা গিয়ে শান্তি রহমানের পাশে এসে বসেছে,উনি নরমালি একবার তাকালো আহানার দিকে তারপর আহানার গায়ের শাড়ীটা দেখে মনে মনে হাসলেন
শাড়ীটা যে তার আলমারিতে ছিল এবং সেটা যে শান্ত নিয়ে আহানাকে দিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই উনার
শান্ত কিছুক্ষণ বাদেই সোফার রুমে এসে হাজির হলো,মায়ের সামনে এসে শক্ত গলায় বললো”মা শুনো,আমি আপাতত বিয়ে করতে চাই না,আহানাকেও না, কণাকেও না,আমাকে আমার মতো থাকতে দাও প্লিস”
এক দমে কথা শেষ করলো শান্ত,আহানা লাইনটা মুখস্থ করে নিয়েছে ততক্ষণে
তারপর সেও তার মায়ের দিকে চেয়ে বললো”মা শুনো,আমি আপাতত বিয়ে করতে চাই না,শান্তকেও না, রামিমকেও না,আমাকে আমার মতো থাকতে দাও প্লিস”
.
আহানার মা আর শান্তর মা চুপ করে চেয়ে আছেন ওদের দিকে
তারপর দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকালেন,এরপর নিরবতা!!
.
১০মিনিট হয়েছে শান্ত দাঁড়িয়ে আছ উনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অথচ উনারা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছেন,আর আহানাও ঠিক একই ভঙ্গিতে উনাদের মুখ দেখায় ব্যস্ত
.
শেষে শান্ত বললো”কি ব্যাপার?”
.
শুনো বাবা,আমি কিছু কথা বলি,আমাদের সবারই কিছু না কিছু ইচ্ছা থাকে আমাদের সন্তানদের নিয়ে
আর আমরা চাই তোমরা আমাদের সিদ্ধান্তটা মেনে নাও
যেহেতু তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও না সেহেতু যাদের সাথে আমরা ঠিক করেছি তাদেরই করে নাও,সমস্যা কোথায়?
.
মায়ের কথা শুনে আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”মা শুনো,আমার আর উনার বিয়ে…!
.
শান্ত আহানার হাত টেনে ওকে চুপ করিয়ে দিলো তারপর বললো”আমাদের সময় দাও,হুটহাট করে বিয়ের কথা বললেই তো আর বিয়ের পিরিতে বসে যাওয়া যায় না?”
.
ঠিক আছে,সময় নাও তোমরা,আজকালকার ছেলে মেয়েরা মায়েদের কথায় গুরুত্বই দেয় না,যা বুঝলাম

আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে,বিবাহিত হওয়ার সত্ত্বেও বিয়ের কথা চলছে তার আর তার স্বামীর তাও আরেকজনের সাথে
আর আমার স্বামী সব অস্বীকার করতেছে তাও আন্টির ভয়ে
আরে আন্টি তো জানলে আরও খুশি হবেন
একটু নারাজ হলেও পরে খুশি খুশি মেনে নিবেন তিনি,এটা তার কাছে একটা সারপ্রাইজ হবে আর তাকে দেখো,ভীতুর ডিম একটা!বুঝতেই চায় না

রিয়াজের বৌভাত শেষ হয়েছে সবেমাত্র,যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে
আহানা শান্ত আর তাদের মা,সাথে নিতু এক কারে উঠে বাড়ি ফিরছে,আহানার মা তো রামিম ছেলেটার গুনগান গাইতে গাইতে শেষ
কাঁচপুর ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় শান্তর মন চাচ্ছিলো কারটা ব্রিজ টিপকিয়ে পানিতে ফেলতে
তার নিজের দুবার বিয়ে করা বউ কিনা কোথাকার কোন রামিমকে বিয়ে করবে?
ঐ রামিমের নিজের বাড়ি আছে তো আমারও ৩টে বাড়ি আছে
এসব শুনানোর কি আছে?
.
মা তো নিজের ফোন থেকে কণার ছবি বের করে আহানার আম্মুকে দেখাচ্ছেন বারবার
আহানা জ্বলতে জ্বলতে শেষ,রাগী রাগী লুক নিয়ে বারবার শান্তর দিকে তাকাচ্ছে সে
.
রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরে যে যার রুমে চলে গেছে
শান্ত বাসায় ফিরার পর থেকে একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর সেটা হলো কাল আহানার মায়ের জন্মদিন আর সে আহানার মাকে সব চাইতে বেস্ট একটা গিফট দিবে বার্থডে গিফট হিসেবে,সেটারই কাজ করতেছে সে
ঐদিকে আহানা শান্তকে ফোনে কল করছে ছাদে গিয়ে,মায়ের জন্য সামনা সামনা কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে আহানা
কোনোরকম একটা বাহানা দিয়ে সে আপাতত ছাদে এসে মশার কামড় খাচ্ছে,আর তার সো কলড দুবার বিয়ে করা জামাইর কিনা খবর নাই!
শান্তি আন্টি সোফার রুমে না থাকলে এতক্ষণে হারামিটার রুমে গিয়ে মারামারি শুরু করে দিতাম,কি এমন কাজ করছে যে ৩৩বার কল করছি একবার ও ধরছে না
আগে ঠেলেও আমাদের দুজনকে এক করতে পারতো না তারা আর এখন এক হতে যেতেই ভয় পাচ্ছি তাও তাদের ভয় হচ্ছে!কি ভাগ্য!
এই জন্যই বুঝি বলে”দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না”
.
যাই হোক অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে যা দেখছি, এভাবে সারারাত মশার কামড় খেয়েও ঐ শান্তর মুখ দেখবো না,আরে এত সিরিয়াস মোমেন্টে কেউ ফোন সাইলেন্ট রাখে?
নেক্সট কি হবে তা নিয়ে ডিসকাস করার জন্য ফোন করছি,কোনো প্রেম করার জন্য না,আমার টেস্ট এত খারাপ না!

শান্ত খাটের মাঝখানে বসে অনলাইনে বার্থডে ওয়ার্ড বেলুন অর্ডার করছে আর কেক অর্ডার করছে,হঠাৎই তার বারান্দায় শব্দ হলো
ধপাসসসসস!
.
তারপর হালকা করে “ও মাগো,আমার কোমড় গেলো গো” বলার আওয়াজ আসলো
শান্ত ফোনটা সাইডে রেখে বিছানা থেকে নামতেই ওপার থেকে রণচন্ডি রুপ ধারণ করে আহানা এগিয়ে আসলো
ওড়না কোমড়ে বাঁধা আর চোখে মুখে আগুন নিয়ে
হাতে পায়ে কাদাও লেগে আছে
.
শান্ত আহানাকে দেখা শেষ করে বললো”কি হয়েছে?আমার রুমের কি দরজা নাই?এরকম লুটোপুটি খেয়ে এসেছো কেন?!
.
চুপ!আন্টি শুনে ফেলবে,সোফার রুমে উনি,আর দরজা দিয়ে আসবো মানে?আপনি জানেন মা আমাকে আপনার থেকে দূরে থাকতে বলেছে
.
তো থাকো
.
মানে কি এসবের,ভুলে গেছেন কয়বার বিয়ে করেছেন আমাকে?
.
না ভুলি নাই,কিসের জন্য এত সাত সাগর পাড়ি দিসো সেটা বলো এখন,আমার অনেক কাজ আছে
.
ভাব দেখান?কাকে দেখান?জানেন আমি আপনাকে সাড়ে ৩৩বার কল করেছি
.
সাড়ে ৩৩মানে?কল আবার সাড়ে হয় কি করে?
.
লাস্টের বার কল করে রিং ১বার হওয়ার পর কেটে দিয়েছিলাম তাই ওটা সাড়ে ধরেছি
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো”তুমি একটা উন্মাদ,যা বলার বলবা আগে বাথরুমে গিয়ে হাত পায়ের কাদা পরিষ্কার করে আসো”
.
আহানা তাই বাথরুমের দিকে গিয়ে হাত পা ধুয়ে আবার ফেরত আসলো
.
হুম বলো এবার
.
আরে কি বলবো?আপনি জানেন না?নাকি সব ভুলে গেছেন,আপনার আজকের প্ল্যান তো ফ্লপ হলো,নেক্সট কি হবে?
.
আমার আজকের প্ল্যান কার্যকর না হলেও পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে বৈকি
.
তারপর কি করবেন সেটা বলেন
.
তারপর তারা বাড়াবাড়ি করলে বিয়ের কথা বলে দিব,আবার বিয়ে করা তো একদমই সম্ভব না
.
হুম সেটাই,তাহলে যাই আমি
.
দাঁড়াও
.
কি?
.
কাল তোমার জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আহানা,অবশ্য গিফটা আন্টির জন্য তবে আই থিংক তুমি সব চাইতে বেশি খুশি হবে
.
তাই নাকি?আমাকে খুশি করতে পারবেন সেদিন যেদিন আপনি নিজের মুখে বিয়ের কথাটা বলতে পারবেন সবাইকে,তার আগে আহানা খিলখিল করে হাসবে না
.
কথাটা বলে আহানা চললো বারান্দার দিকে,টপকে নিচে নামবে
শান্ত এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো তারপর বললো”তাহলে বিয়েটাকে তুমি মানছো?তুমি চাও আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে?আমাকে পছন্দ করো নাকি?”
.
আমাকে ভূতে ধরে নাই,জাস্ট নিজের অধিকারটার জন্য এত কষ্ট করছি আমি আর কিছু না
.
শান্ত পকেটে হাত দিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো”তাহলে তো অন্য অধিকার ও প্রাপ্য তোমার”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে কথার উত্তর না দিয়ে গ্রিল টপকে নিচে নেমে চলে গেলো
.
পরেরদিন সকাল থেকে আহানার মায়ের রুম থেকে বের হওয়া বারণ,শান্ত আর আহানা মিলে ডেকোরেশন করতেছে সোফার রুমটায়,আহানা নিজের হাতে একটা কেক বানিয়েছে আর শান্ত একটা অর্ডার করেছে
এদিকে মা তো জানে তার জন্মদিন বলে ওরা এমন করছে
মায়ের তখন খুশি লাগতো যখন আহানার বাবা ছিলো
এখন আর এসবে খুশি আসে না তার
যাই হোক সকাল ১১টা অবদি আহানা আর শান্ত সবটা রেডি করে ফেললো,সাথে নিতু আর রিপা ও হেল্প করেছে
আহানা মায়ের চোখ বেঁধে সোফার রুমে এনে চোখের বাঁধন খুলে দিলো,সাথে সাথে সবাই বললো”হ্যাপি বার্থডে!!!”
মা খুশি হলেন,শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”বাহ রে,৫১% ডেকোরেশন আমি করেছি,আগে আমার মাথা মুছে দেওয়া উচিত ছিল তোমার,হুহ!”
.
তুই তো আমার মেয়ে,তোকে আবার আলাদা করে মাথা মুছে দিতে হয়?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”নাও কেক কাটো!”
.
মা কেক কেটে সবার আগে শান্তর মাকে খাওয়ালো,তারপর নিতুকে,তারপর শান্তকে,সবার শেষে আহানাকে
অবশ্য এতে আহানা রাগ করেনি,কারণ পুরো ডেকোরেশনটা তাদের খরচেই হয়েছে
আহানা এসব ভাবতে ভাবতে এরই মাঝো শান্ত বলে উঠলো উনার জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ সে রেডি করেছে
আহানার মা জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললেন”কি সেটা?”
.
তার জন্য চোখ আবারও বাঁধতে হবে
.
শান্ত দুটো ফিতা নিয়ে আসলো রুম থেকে
.
আহানা বললো “দুটো কেন?”
.
উত্তরে শান্ত বললো একটা তার
.
কেন??
.
সারপ্রাইজ দুজনেরই
চুপ থাকো না,সব আগে বলে দিলে সেটা সারপ্রাইজ থাকে?
.
আচ্ছা আচ্ছা
.
আহানাকে আর ওর মায়ের চোখে শান্ত ফিতা বেঁধে দিলো
তারপর ওদের নিয়ে কারে বসালো সে
মাকে বলে আসলো সে ঠিক কি কারণে যাচ্ছে,মায়ের চোখে মুখে খুশি ফুটে উঠলো শান্তর কথা শুনে
ওদিকে আহানা গেস করার চেষ্টা করছে ঠিক কি সারপ্রাইজ হতে পারে
তো প্রায়ই ৩০মিনিটের পথযাত্রার পর কার থামলো
শান্ত কারের দরজা খুলে আহানা আর ওর মাকে বের করলো
তারপর একটা বাড়ির সামনে নিয়ে এক এক করে ওদের চোখের বাঁধন খুলে দিলো সে
এটা সেই বাড়ি যে বাড়ি থেকে ৭বছর আগে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছিলো,যে বাড়িটার সাথে সাথে তাদের আর্থিক স্থান বদলে গিয়েছিলো
আজ সেই বাড়িটার সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে
নীল রঙের দোতলা একটা বাড়ি,সামনে শতে শতে নাম না জানা বিদেশি ফুলের বাগান,অবশ্য আগে গন্ধরাজের বাগান ছিলো সেই বাগানটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়
শান্ত নিজের মনের মতন করে বাগানটা সাজিয়ে নিয়েছে
.
বাড়ির সামনে লাল রঙের একটা গাড়ী,এটা সেই গাড়ী যেটা চালিয়ে আহানার বাবা ওকে স্কুলে দিয়ে আসতো
আহানা কারের কাছে দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো,চোখের সামনে আজও ভাসতেছে বাবা তার হাত ধরে কারে বসাতো তাকে,মা হাসতো,টাটা দিতো
সব একটা কার এক্সিডেন্টে ছারখার হয়ে গেছে
আহানার মা বাড়িতে ঢুকার আগেই পিছন ফিরে শান্তকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন,শান্ত তাকে আজ এত বড় উপহার দিবে তা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো
আহানা ততক্ষনে বাড়ির ভিতরে চলে গেছে
সোফার রুমটা একটু দূরে শুরুতেই পড়ে একটা ফুলদানি,সব যেন সেই আগের মতই,শান্ত ঠিক মনে রেখেছে বাড়িটা আগে কিরকম ছিলো
সোফায় হাত বুলিয়ে আহানা চলে যেতে নিতেই থেমে গেলো
সোফায় তাদের ছোটবেলায় আঁকিবুকির দাগ এখনও লেগে আছে,আহানা মনের অজান্তেই হাসলো
তারপর সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় গেলো নিজের রুমে,নিজের রুম দেখে আহানা কেঁদে ফেললো সাথে সাথে
তার সেই গোলাপি রঙের বিছানা,গোলাপি বিছানার চাদর,মিকি মাউসের লম্বাটে একটা পুতুল পাশে,আহানা পুতুলটা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো
মজনু চাচা তাকে পুতুলটা নিতে দেয়নি,অথচ তার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু ছিল এই পুুতলটা,পুতুলটা দামি হওয়ায় চাচা রেখে দিয়েছিলেন
আহানা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো এবার
সম্পূর্ণ বাগানের ঠিক মাঝখানে আহানার রুমের বারান্দাটা বানানো,যাতে সেখানে দাঁড়ালেই ফুলের সব সুবাস উপভোগ করা যায়
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা মুচকি হেসে বারান্দার নিচে তাকাতেই চোখ পড়লো শান্তর উপর
শান্ত যেন এতক্ষণ ওর দিকেই চেয়ে ছিলো
আন্টি বাসার ভিতরে চলে যাওয়ায় শান্তও যেতে নিচ্ছিলো ঠিক তখনই সে আহানাকে দেখতে পেয়েছে বারান্দাতে
তাই সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে আহানার চোখে মুখের হাসি দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো
আহানা শান্তর মিষ্টি হাসি দেখে মনের অজান্তেই হেসে ফেললো সে নিজেও
তারপর কি যেন মনে করে মুখ বাঁকিয়ে আবারও নিজের রুমে ফেরত গেলো
শান্ত ঠিক বুঝলো না,মুখ বাঁকানোর কারণটা কি ছিলো
তারপর সেও বাসার ভেতর দিকে চললো
আহানার মা হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বাসার প্রতিটা আসবাবপত্র দেখতেছেন আর গায়ের হালকা গোলাপি রঙের শাড়ীটার আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতেছেন
সব কিছুতে আহানার বাবার স্মৃতি আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে
সোফার রুমের সামনে যে বিরাট দেয়ালটা আছে সেটাতে মিনিমাম ৩০টার মতন ছবি ঝুলানো
সবগুলোতে আহানা,তার বাবা আর তার মা,সাথে আছে শান্ত ও তার বাবা মা
আহানার মা একটা ছবি হাতে নিলেন,ছবিটা আহানার বাবার,সেটা ধরে তিনি শক্ত চোখে চেয়ে রইলেন
শান্ত আর ওখানে দাঁড়ালো না, সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে গেলো সে
এই বাড়িতে সে কদিন আগেও এসেছিলো,সেট আপ দেখার জন্য,বাড়িটা সে মিঃ মজনুর থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ঠিক তেমন করে যেমন করে মজনু আহানার মায়ের থেকে কেড়ে নিয়েছিলো
জাস্ট মাস্টারমাইন্ড প্ল্যান করতে হয়েছে এই আর কি,এই মজনুকে পথে বসাবো আমি,আমাকে চেনে না
শান্ত মুচকি হেসে শেষ সিঁড়িটা পেরিয়ে দোতলায় পা রাখতেই আহানার সাথে এক ধাক্কা খেয়ে গেলো
আহানা মাথা মুছতে মুছতে বললো”দেখে চলতে পারেন না?”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”আমি না হয় কিছু একটা ভাবতে ভাবতে উপরে উঠতেছিলাম তাই খেয়াল ছিল না
কিন্তু তুমি কোনদিকে চেয়ে এদিকে আসতেছিলে?”
.
আহানা আবারও মুখ বাঁকিয়ে পাশ কেটে নেমে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাতের কব্জি ধরে ফেললো
.
আহানা পিছন ফিরে বললো”কি?আবার কি?”
.
কেমন লাগলো?
.
বেশ ভালো,ধন্যবাদ দিতেই পারি
.
ওয়েলকাম! বাট!
.
বাট কি?
.
এখন থেকে আলাদা হয়ে গেলাম,দুবার বিয়ে করা বউ এখন থেকে আলাদা থাকবে,আমার কেমন জানি খালি খালি লাগতেছে
.
এহহহহ,এত দরদ?আমার তো মনে হয় আপনি মনে মনে খুশি আমাকে বের করে দিয়ে
.
সেটা ঠিক বলছো,আজ থেকে আমাকে কেউ জ্বালাবে না
.
হুহ😎আর আমিও শান্তিতে থাকবো আপনার সাথে ঝগড়া করে মাথার গরম করার ঝামেলা নেই,আহা কি আনন্দ বিল্ডিংয়ে বিল্ডিংয়ে!!
.
আহানা হেলেদুলে নিচে নেমে গেলো
শান্ত উপরের রুমগুলো দেখে আবার নিচে চলে এসেছে
আহানা রান্নাঘরে গিয়ে উৎপাত করছে আর ওর মা আপাতত তার রুম দেখতে গেছেন
শান্ত রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে যা বুঝলো আহানা চা আর পাকোড়া বানাচ্ছে,নুডুলস পাকোড়া
শান্ত এগিয়ে গিয়ে চুলার পাশের তাকে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো
আহানা ওর দিকে একবার চেয়ে চায়ের পানি বসাতে বসাতে বললো”তা মাসকাবারি বাজার করলো কে?বাসা তো আজ ওপেন হলো তাই না?”
.
জি তাই,তবে এই বাসা মরুভূমির মতন ছিলো,আমি সব ঠিক করেছি ঠিক আগে যেমন ছিলো তেমন করে,বাগান দেখলে তো মূর্ছা যেতা,আমি লোক লাগিয়ে সব ঠিক করেছি,বাজার করে রেখেছি,সব সেট করে তারপর তালা মেরে আন্টিকে আনলাম
আর আমি তো চেয়েছিলাম প্রতি মাসে আন্টির নামের সেই ব্যাংক আকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে সংসার চালানোর টাকা আর কি বাট তুমি তো এমনি এমনি টাকা নিবা না তাই কি আর করার কাল থেকে অফিসে এসো,লাল কারে করে
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”কার চালিয়ে যাব ২০হাজার টাকার চাকরি করতে😂”
.
কি আর করার,আমার বউ তো এমনি এমনি টাকা নিতে চায় না
.
আর একটা কথা আমি কার চালাতে পারি না
.
আরে সমস্যা নাই,তোমাদের পুরান ড্রাইভারের সাথে আমার কথা হইছে,উনি কাল থেকে জয়েন হয়ে যাবেন
.
সত্যি?কিন্তু উনার বেতন?আমি তো পাবো ২০হাজার
.
হাসবেন্ড হিসেবে ড্রাইভারের সেলারিটা আমি বহন করতে পারি,তাই নয় কি?
.
আহানা ভাবলো অনেক তারপর আর কিছু বললো না,বাটিতে পাকোড়া নিয়ে চায়ের পাতিলে চা পাতা দিয়ে সোফার রুমের দিকে চললো
শান্ত এসে সোফায় বসে গরম গরম পাকোড়া মুখে দিয়ে টিভিটা অন করেছে
আহানার মাও এসে গেছে ততক্ষণে
মায়ের আজ খুশি ধরে না
মা বললেন শান্ত যেন ওর মাকে নিয়ে আসে,শান্ত হেসে বললো”আমি রিপাকে বলে দিয়েছি সে নিতু আর মাকে নিয়ে ক্যাবে করে আসতেছে”
.
তাই??তাহলে আজ তোমরা এখানেই থেকে যেও,খুব মজা হবে
.
মন্দ হয় না,তবে আমার অফিসের আজ অনেক কাজ,আজ রাতেই সব কাজ সারতে হবে,তাই আজ পসিবল না
.
ওহহ
.
আহানা পাকোড়া নিয়ে নিয়ে গোটা গোটা গিলছে,চিবানোর প্রয়োজনও মনে করছে না কারণ শান্তর খাওয়ার স্পিড দেখে তার কলিজা কাঁপতেছে
যে স্পিডে শান্ত পাকোড়া খাচ্ছে মনে হয় আহানার কপালে আর একটাও জুটবে না তাই সে সব সাবাড় করতেছে অনবরত
.
শান্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কপাল কুঁচকে বললো”ছোটবেলায়ও এমন করতে তুমি,তোমার জন্য আমি ঠিকমত চিপস খেতে পারতাম না,আর এখনও শুরু করে দিলে?”
.
তো কি করবো,যেভাবে রাক্ষসের মতন খাওয়া শুরু করছেন বাপরে বাপ
.
আমি না হয় একসাথে দুটো মুখে দিয়েছিলাম একবার তুমি কি করছিলে এতক্ষণ?? একসাথে ৪টা মুখে পুরে বসে ছিলে,আমি খেয়াল করিনি?
.
থাম তোরা!খাওয়া নিয়েও ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস শেষমেষ!

আহানা কোমড়ে ওড়না বেঁধে রান্নাঘরে ঢুকেছে,আজ সে বিরিয়ানি রাঁধবে,এক প্রকার পার্টি ধরে নেওয়া যায়
একে তো মায়ের জন্মদিন আরেক তো তাদের বাড়ি গাড়ি সব ফেরত এসেছে
তাই আজ আলাদা একা আমেজ আমেজ ভাব পুরো বাড়ি জুড়ে
শান্ত টিভি দেখতেছে সোফায় হেলান দিয়ে বসে
আর আহানার মা বাগানে ফুল দেখতে গেছেন
৫/১০মিনিট পর শান্তি রহমান আর রিপা,নিতুও এসে পড়েছে
আহানার মা তাদের নিয়ে বাগানের যে অংশে ছায়া সেখানে গিয়ে বসেছেন চেয়ার নিয়ে
আহানা চা নাস্তা পাঠিয়েছে,রিপা হেল্প করেছে কিছু
শান্ত আহানাকে দেখছে আবার টিভি দেখছে
মনে হচ্ছে সে বিবাহিত ব্যাচেলর
আহা!মন চাচ্ছে জোর গলায় বলতে!”ওগো বউ লেবুর শরবত এক গ্লাস পাওয়া যাবে কি?”
কিন্তু ভয় করে যদি খুন্তি ছুঁড়ে মারে?এমনিতেও একা হাতে সব সামলাচ্ছে
ভাবতে ভাবতেই আহানাকে দেখে তার ভাবনায় ইয়া বড় ছেদ পড়লো আর সেটা হলো আহানা মুচকি হেসে হাতের ট্রে তে করে এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে এদিকেই আসতেছে
সকাল সকাল জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি?না এটা স্বপ্ন না
.
আহানা এক গাল হাসি নিয়ে গ্লাসটা শান্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসে পড়লো দপ করে
শান্ত ঢোক গিলে শরবতের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো আবার আহানার দিকে তাকাচ্ছে
কিছু মিশিয়ে দেয়নি তো?
আহানা শান্তর হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে আবারও ফেরত দিলো সেটা
তারপর বললো”কিছু মিশাই নি,খেতে পারেন”
.
শান্ত তাও ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে,তাহলে আহানার এমন হাসির আর এমন পতি সেবার কারন কি হতে পারে?
.
আহানা আঙ্গুল দিয়ে শান্তর হাতে গোল গোল করে বানাতে বানাতে বললো”শুনো না””
.
শান্তর কাশি উঠে গেছে “শুনো না” শুনে,তারপর গলা একটু হাত দিয়ে ঘষে বললো”কি শুনতাম?”
.
শুধু বিরিয়ানি খেতে কেমন কেমন লাগে,একটু বাজার থেকে গিয়ে কোকাকোলা আর শশা,টমেটো নিয়ে আসেন না!!
এবার আহানার গলার আওয়াজ চওড়া হয়ে গেলো
উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী রাগী লুকে বললো”এসবও আবার বলতে হয়?মিনিমাম কমন সেন্স নাই আপনার?মাসকাবারি বাজার করে দিছেন উনি!
আমার মাথা করেছেন
এটা পেলে ওটা নাই
এখন গিয়ে এসব নিয়ে আসেন যান,সেই সকাল থেকে টিভিই দেখতেছে খালি,আজাইরা একটা!
.
শান্ত জ্যাকেটটা একটু টেনে ঠিক হয়ে বসে বললো”শান্তি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের” মালিক কিনা বাজারে যাবে শশা,টমেটো আর কোকাকোলা আনতে?”
.
তো?না পারলে লোক ধরিয়ে তাকে দিয়ে আনান,আপনার তো টাকা আর টাকা,টাকা আর টাকা
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে তাহসিনকে কল করে বললো আনতে
তারপর আবার টিভি দেখায় মন দিলো
আহানা বিরিয়ানি নাড়তে নাড়তে বলতেছে”ছেলেরা অফিসের কাজ ছাড়া আর কোনো কাজে আসে না,আরে মাঝে মাঝে ওয়াইফকে কাজে হেল্প করতে হয়,এইটুকু জ্ঞানবোধ নেই নাকি?”
.
আহানা শান্তকে বকতে বকতে পিছন ফিরতেই ভয় পেয়ে গেলো শান্তকে দেখে,শান্ত একটা ছোট বাটি আর চামচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
মুখটা গুলিয়ে বললো”একটু বিরিয়ানি দাও না,টেস্ট করে বলবো কেমন হয়েছে”
.
শুনুন!এমনিতেও লোক বেশি,তার উপর আপনি তাহসিন ভাইয়াকেও ডেকেছেন এখন আবার একটু চাচ্ছেন?দুপুরবেলায় আপনার পাতে কম দিব তাহলে”
.
আরে তাহসিন খাবে না তো,সে এক দাওয়াতে সেখান থেকে আসতেছে এখন,জিনিস দিয়ে আবারও দাওয়াতে যাবে সে
.
লোকটা এত কষ্ট করে এসব আনবে তাকে আমি এসব না দিয়ে যেতে দিব?
.
ওর মাস করা বেতন আছে আমার বাসার ছোটখাটো সব কাজ করার জন্য,বুঝেছো?
.
তার পরেও এটা ভদ্রতা!
.
ফাইন!দিও না বিরিয়ানি
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিতেই আহানা আটকিয়ে বললো”আচ্ছা দিচ্ছি,রাগ করিয়েন না”
.
শান্ত এক চামচ মুখে দিয়ে আহা আহা বলতে বলতে সোফার রুমের দিকে চলে গেছে
আহানা হাসতেছে শান্তর এমন বাচ্চামি দেখে
.
সবাই একসাথে খেতে বসেছে,শান্ত চেটেপুটে সবটা বিরিয়ানি খেলো তার প্লেটের,মনটা আরেকটু আরেকটু চাচ্ছে
আহানা বাটিতে করে এক্সট্রা বিরিয়ানি দিয়ে বললো”নিন খান”
.
শান্ত যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে,আহানার থেকে বাটিটা কেড়ে নিয়ে সেটাও খেয়ে নিলো সে
তারপর সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার বাসায় ফিরে গেছে
আহানা নিজের রুমে বসে কাঁচা কলার চিপস খাচ্ছে আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতেছে
এত মজার বিরিয়ানি সে কিনা একটুও খেতে পারলো না!!সবাই বললো অনেক মজা হইছে আর সে একটু টেস্ট ও করতে পারলো না?
নিজের ভাগের বিরিয়ানি পুরোটা শান্তকে খাইয়েছে সে
একটা রাক্ষস,একবার জিজ্ঞেস ও করেনি আহানা তুমি খেয়েছো?তুমি না বললা বিরিয়ানি কম,তাহলে এখন কি করে এক্সট্রা দিচ্ছো?
সেসব তো জিজ্ঞেসই করেনি উল্টো হাত থেকে কেড়ে নিয়ে খেয়েছে,আর আমি দুপুরবেলায় বসে এখন চিপস খাচ্ছি,পোড়া কপাল আমার!
দুবার বিয়ের পরেও বউয়ের অধিকার পেলাম না আর আজ বিরিয়ানি ও পেলাম না
এরই মাঝে ফোন বেজে উঠলো,শান্তর ফোন
৩/৪ ঘন্টার মতন হয়েছে চলে গেছে এখন আবার ফোন করছে কেন,ঢং করতে?
হ্যালো!কি সমস্যা? ফোন করেছেন কেন আবার?
.
বাপরে!এত রাগ?তা কষ্ট করে গেটের বাইরে আসতে পারবেন?
.
কি জন্যে?বিরিয়ানি আর নাই,পাতিল মেজে ধুয়ে উল্টো করে রেখে দিয়েছি ভেসিনে পানি ঝরে যাওয়ার জন্য
.
আমি কি বলছি যে বিরিয়ানি খাবো?
.
তাহলে?
.
আরে আসোই না একটু
.
ওকে
.
আহানা চিপস হাতে নিয়েই চললো,পরে ভাবলো শান্ত যে খাদক এটাও খেয়ে নিবে
তাই সে বাটিটা সোফার উপর রেখেই গেটের দিকে গেলো
শান্ত কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
বাম হাত পকেটের ভিতরে আর ডান হাতে একটা টিফিন বক্স
.
আহানা কাছে এসে বললো”কি?”
.
নাও ধরো
.
কি এটা?
.
বিরিয়ানি
.
আমি বাজারের বিরিয়ানি খাই না,শরীর খারাপ করে
.
এটা বাজারের না, এটা আমি বানিয়েছি
.
কিহহহহহহ!
.
আস্তে!এত জোরে চেঁচাও কেন?মানুষ কি ভাববে?
.
মানে সিরিয়াসলি? আপনি বানিয়েছেন?আমার বিশ্বাস হয় না
.
বিরিয়ানিতে কিশমিশ ১৩টা দিয়েছি,গুনে নিও তাহলেই বুঝবা
.
হঠাৎ বানালেন কেন?কে শেখালো?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ইউটিউব,আর কে শেখাবে?
.
আচ্ছা,টেস্ট করে দেখি,আসুন না বাসার ভিতর
.
আহানা টিফিন বক্সটা নিয়ে বাসার দিকে ছুটলো এক দৌড়ে
শান্ত এসে সোফায় বসেছে,আহানা একটা চামচ দিয়ে বিরিয়ানি মুখে দিতেই নাকে দিয়ে কানে দিয়ে মনে হয় ধোঁয়া বের হবে এমন অবস্থা,এত পরিমাণ ঝাল দিয়েছে আরেক চামচ খেলে পুকুরে ডুব দিয়ে বসে থাকতে হবে
আহানা পুরো বাড়ি মাথায় করে পানি খেতে খেতে ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়েছে
তারপর শান্তকে এক গাদা গালিও ছুঁড়ে মেরেছে
শান্ত অসহায়ের মতন ওর মুখের দিকে চেয়ে বসে আছে
আহানা নিজের আগের বানানো কলার চিপসটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে ইচ্ছামত আবারও বকলো শান্তকে তারপর আহানার খেয়াল হলো শান্ত আসার পর থেকে বাম হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে,বিষয়টা সবেমাত্রই খেয়াল করলো সে
তাই কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো হাতটা ওমন করে লুকিয়ে রেখেছে কেন সে
শান্ত থতমত খেয়ে বললো”এমনি,স্টাইল”
.
কথাটা আহানার হজম হলো না,ফ্লোর থেকে উঠে তেড়ে আসলো চেক করার জন্য তার আগেই শান্ত সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো তার দেরি হচ্ছে সে এখন বাসায় ফিরবে
.
এক মিনিট দাঁড়ান,আমার থেকে কিছু লুকানোর ক্ষমতা আপনার নেই,দেখি আপনার হাত
.
শান্ত হাতটা ভালো করে পকেটে ঢুকিয়ে বললো”আমার লেট হচ্ছে বললাম না,পরে কথা হবে বাই”
.
আহানা শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ওর হাত টানাটানি শুরু করে দিলো দেখার জন্য
অনেক জোরজবরদস্তি করে শেষে সে দেখতে পারলো ওর হাতটা
পোড়া গেছে তাই লুকিয়ে রেখেছিলো
আহানা চোখ বড় করে চেয়ে থেকে আর জিজ্ঞেস করলো না যে এটা কিভাবে হলো,চুপচাপ সে দৌড়ে গিয়ে একটা ওয়ারড্রবের ড্রয়ার থেকে মলম খুঁজে আবার ফেরত আসলো
.
লাগবে না,নিতু লাগিয়ে দিয়েছে
.
ওটা তো শুকিয়ে গেছে,তাই আবার লাগাচ্ছি,আপনাকে কে বলেছিলো ফাজলামি করতে?রেঁধে একেবারে উদ্ধার করছে আমাকে
.
আর কত বকবা?
.
আহানা আর কিছু বললো না,মলমটা লাগিয়ে দিয়ে বিরিয়ানি এনে এক চামচ শান্তকেও খাইয়ে দিলো জোর করে
তারপর বললো “এটা একটা প্রতিশোধ নিছেন তাই না,সবাই ভাববে আমার বর কত ভালো,আমার কত কেয়ার করে,বাট বিরিয়ানির টেস্ট কেমন সেটা তো শুধু আমি জানি”
.
প্রতিশোধ না,সেটা হলে হাত পুড়াতাম না,যাই হোক তুমি বুঝবে না
বাই
.
শান্ত চলে যাচ্ছে আর আহানা থ হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর যাওয়া দেখছে,বিকাল ঘনিয়ে এসেছে
আহানা সোফার উপরে রাখা তার কাঁচা কলার চিপসটা হাতে নিয়ে আবারও নিজের রুমে ফেরত গেলো
.
শান্ত নিজের কারে বসতে বসতে হেসে দিলো হাতের দিকে তাকিয়ে
ঝাড়ি ও দেয় আবার কেয়ার ও করে,এই মেয়েটাকে আসলেই বুঝতে পারি না আমি

শান্ত নিজের বাসায় এসে তো ওর চোখ কপালে
কণা আর তার মা বাবা এসে হাজির
শান্ত হাল্কা কেশে উনাদের সালাম দিয়ে দাঁড়ালো একপাশে
মা ও বসে আছেন হাসিমুখে,বুঝাই যাচ্ছে বিয়ের কথা পাকা করতে এসেছেন তারা,উফ!!মা আমাকে না জানিয়ে এদের কেন ডাকলো আবার
কণা লজ্জায় মনে হয় মরে যাবে এই দেখে শান্তর গা জ্বলে যাচ্ছে,এর চেয়ে তো আহানার রাগী রাগী লুকটা মাচ বেটার
.
উনাদের হাতে দেখছি আংটির বক্স,শান্ত আজ তুই শেষ!
.
মা শান্তকে হাত দিয়ে কাছে ডাকলেন
শান্ত ভালো ছেলের মতন গিয়ে বসলো উনার পাশে
কণার মা বাবা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছেন শান্তর দিকে,তাদের পাগল মেয়ের যে এত ভালো চয়েস তা তাদের জানার বাইরে ছিল
অবশ্য এই নিয়ে কতবার যে কত ছেলেকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো কণা,এটা নতুন কি,তবে এবারের টা খাসা
.
শান্তি রহমান আংটির বক্সটা কণার মায়ের হাত থেকে নিতেই শান্ত দাঁড়িয়ে পড়লো,আজ যদি সবটা না বলে তো ভালো ফাঁসা ফাঁসবো,আহানা আমাকে কাঁচা গিলেই খাবে
.
শান্ত হালকা কাশ দিয়ে আবারও এদিক ওদিক তাকিয়ে পরিবেশ কেমন বুঝে নিলো,সবাই ওর মুখের দিকেই চেয়ে আছে
.
শুনো মা!!এদের ডাকার আগে আমাকে একবার জানানো উচিত ছিলো তোমার
আর আমি তো তোমাকে বলেছিলাম এসব নিয়ে না ভাবতে
আর একটা কথা এসব আজীবনের জন্য বাদ দাও,কারন আমি অলরেডি মেরিড
.
কথাটা শুনে সবাই চোখ তুলে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে ততক্ষণে
মা তো রীতিমত শকড!!!!আহানা আর শান্তকে মিলানোর জন্য উনি আর আহানার মা মিলে ওদের দুজনকে আরেকজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিলো আর শেষে এই শুনবে তা একদম ভাবেননি তিনি,ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না,শান্ত এসব কি বলতেছে,তাহলে কি সেদিন শান্তর বাবার কাজী বন্ধু মইনুদ্দিন ভাই ঠিক বলেছিলেন?শান্তর বিয়ে হয়ে গেছে
উনার ফোন পেয়ে আমি এটা বিশ্বাস করিনি,এখন তো শান্ত নিজের মুখেই বলে দিলো,উনি আমাকে জাস্ট কথাটা বলেই লাইন কেটে দিয়েছিলেন আমি তো বোবা হওয়ায় উত্তরটাও দিতে পারলাম না সেদিন,নাহলে জিজ্ঞেস করতাম ও ঠিক কাকে বিয়ে করেছে
.
শান্ত নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফেললো,তারপর আহানাকে ফোন করলো জানাতে যে সে বিয়ের কথা বলেছে মাকে
ফোনের উপর ফোন বেজে যাচ্ছে আর আহানা?সে তো তার নিজের বাথরুমের বাথটাবে মরার মত ঘুমাচ্ছে,এতদিন পর নিজের সব ফিরে পাওয়া কি মুখের কথা?আজ তো সে বাথটাবেই ঘুমাবে
মা সোফার রুমে মনে হয়,আর আহানার ফোন তার বিছানার উপর
৫/৬বার কল দেওয়ার পরও না ধরায় শান্ত ভাবলো কাল আহানা অফিসে আসলে জানাবে তখন
ওদিকে কণা শান্তর রুমের দরজা মনে হয় ভেঙ্গেই ফেলবে,তার একটাই কথা শান্ত বিয়ে করেনি,এটা সে মিথ্যা বলেছে,তার মা বাবা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে ওদের বাসা থেকে
শান্ত কানে ইয়ারফোন গুজে বারান্দায় বসে আছে চুপ করে,হাতে একটা ইংলিশ ম্যাগাজিন

পরেরদিন সকাল সকাল শান্ত অফিসে গেলো,করিডোরের দিকে যেতে যেতে একবার আহানার কেবিনের দিকে তাকালো সে,কেবিন খালি,অবশ্য ৯টা বাজেনি এখনও,কর্মচারীরা ৯টায় আসবে,তবুও অনেকেই আসতেছে এখন
.
শান্ত নিজের অফিস রুমে গিয়ে কোটটা খুলে চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে গ্লাস থেকে পর্দা সরালো
ঊষা এসে গুড মর্নিং জানাতেই শান্ত বললো”আহানা আসলে যেন এখানে আসে সাথে সাথে”
ঊষা ঠিক আছে বলে চলে গেছে
আহানা ৯টার সময় অফিসে এসে হাজির,তাদের কারে করে এসেছে সে
কি যে ভালো লাগতেছে,এতবছর কত কষ্টই না সে করেছিলো তবে সকাল সকাল মা যা বললো তাতে মেজাজটা বিগড়ে আছে,ঐ শান্তর উপর ঝাড়তে হবে তারপর শান্তি হবে
আহানা অফিসরুমে ঢুকতেই ঊষা এসে বললো শান্ত ওকে ডেকেছে
আহানা তাই সোজা ওদিকেই গেলো
.
আসবো শান্ত ভাইয়া????
.
হঠাৎ আহানার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে শান্তর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, কপাল কুঁচকে সে ফাইল গুলো থেকে চোখ উঠিয়ে ওর দিকে তাকালো,তারপর ২মিনিটের জন্য ভ্রমে চলে গেলো আহানাকে দেখে
ঘাড়ো হলুদ রঙের একটা শাড়ী, চুল ছাড়া,একদম রেডি,শান্ত ঠিক বুঝলো না,তারপর বললো”কি ব্যাপার?এত সাজগোছ কেন?”
.
আসলে ভাইয়া
.
আর একবার ভাইয়া বললে তোমার ঐ সুন্দর শাড়ীর বেহাল অবস্থা করে দিব,চিনো তো আমাকে??
.
আহানা গলায় হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বললো”কি আর করবো বলেন!!!আমার তো আজ এঙ্গেজমেন্ট,আজকের পর থেকে তো আপনি আমার ভাইয়াই তাই না?”
.
মানে?কিসের এঙ্গেজমেন্ট??কার সাথে?
.
আহানা এবার নিজের আসল রুপে আসলো, লাফ দিয়ে শান্তর সামনে থাকা কাঁচের টেবিলটার উপর গিয়ে গোল হয়ে বসে একটা পেন নিয়ে শান্তর গলায় চেপে ধরে বললো”তোর সাহস তো কম না,আবার জিগাস!কার সাথে আবার??আমার সাঙ্গাইয়ার সাথে,সাঙ্গাইয়া কাকে বলে জানিস তো!!দ্বিতীয় স্বামীকে বলে,তোরে এত করে বলছি তোর মারে বল আমরা বিবাহিত, তুই তো কবি না
তো ঠিক আছে,আমি আজ ঐ বলদা রামিমের সাথে এঙ্গেজমেন্ট করে নিমু,আর তুই আজ থেকে আমার ভাইয়া,কথা ক্লিয়ার?”
.
শান্ত তো অবাক হয়ে আহানার দিকে চেয়ে আছে,যেভাবে গুন্ডি ভাব নিছে,একেবারে আমার টেবিলের উপর বসে কলম গলায় গেঁথে কথা বলছে
.
আহানা কলমটা সরিয়ে পাশ থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেলো ঢকঢক করে তারপর টেবিল থেকে নেমে শাড়ীর কুচি ঠিক করে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত সামনে এসে দাঁড়ালো
.
আবার কি?
.
আপনি থেকে একেবারে তুই?
আগে শুনো আমার কথা
.
কি কথা শুনবো তোর??তুই তো তোর মারে বাঘের মতন ভয় পাস,তোরে আর কি কমু আমি?বিয়ের ৫/৬দিন হয়ে গেছে,তারপর আবারও বিয়ে হইছে মোট মিলিয়ে দুবার আর তুই খালি মুড মুড কস
.
এবার শুনো আমার কথা,কাল মা কণার মা বাবা আর ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছিলো একেবারে এঙ্গেজমেন্ট করানের জন্য দ্যান আমি বলছি আমি মেরিড
.
সত্যি?
.
৩সত্যি
.
ইয়াহু!!
.
আস্তে,পুরো কথা শুনো,এবার তোমার বিয়ে আটকাবে কি করে,এবার তো তোমার মায়ের জন্য আমার চিন্তা হচ্ছে
.
আপনার কি মনে হয় শান্তি আন্টি এতক্ষণে মাকে এসব জানায় নি?
.
কি বলো!মা তো কথা বলতে পারে না
.
ওহ হ্যাঁ,তাহলে এখন?
.
বিয়ে ভাঙ্গার অভিজ্ঞতা আছে?
.
ওহ ওটা সমস্যা নাই,ছেলে হাবাগোবা হলে ২মিনিটের কাজ,আর আপনার মত হলে একটু টাইম লাগবে
.
আমার মত হলে মানে?
.
মানে নাছোড়বান্দা,রাগী,বদমেজাজি
.
বাই দ্যা ওয়ে,এরকম সুন্দর করে সেজেছো কি জন্যে?তুমি চাও ঐ রামিম ছেলে তোমাকে দেখে পাগল হয়ে যাক?
.
আমাকে সুন্দর লাগছে বুঝি?
.
লাগছে বাট এমন করে যাবা না,এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেলবে,একটু ভূত ভূত টাইপের মেকাপ আছে না ওগুলা ট্রাই করো
.
এক কাজ করবো,মুখ ধুয়ে যাবো,নো মেক আপ লুক নিয়ে
.
আরে না না,তোমাকে নো মেক আপেও সুন্দর লাগে,বললাম তো ভূত সেজে যাবা
.
আপনার আইডিয়া আপনার কাছে রাখেন,ভূত সেজে গেলে মা আমাকে কেলাবে,বলবে ইচ্ছা করে বিয়ে ভাঙ্গতে চাচ্ছি
.
কি করবা তাহলে?
.
কাঁচামরিচের জুস খাওয়াই দিব,শুনলাম ছেলে নাকি কাঁচামরিচ খেলে অজ্ঞান হয়ে যায় ঝালে
.
কমাই দিও,পরে মরে যাবে
.
খাওয়াবো না তো,গায়ে ঢেলে বলবো”ওপস সরি!”
গায়ের জ্বালায় এমনিতেই অজ্ঞান হবে,জুস খাওয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না
.
এত বুদ্ধি নিয়ে থাকো কেমনে!তা কখন দেখতে আসবে?
.
সন্ধ্যাবেলায়
.
ওকে ফাইন,যাও এখন নিজের কাজে,আর চুল ছেড়ে রাখছো কেন?খোঁপা করো,দুবার বিয়ে করছো,সাধ মেটে নি?আবারও করবা?তাহলে চলো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে খোঁপা করে নিলো তারপর বললো”খোঁপা আটকানোর কাঠি তো আনি নাই”
.
শান্ত টেবিলের উপর থেকে পেন টা এনে আহানার খোঁপায় ঢুকিয়ে দিলো,তারপর বললো”যাও”
.
আহানাও চলে আসলে নিজের কেবিনে
ওদিকে শান্ত ভাবনায় আছে আহানা কি করে সামলাবে সব,তার মনে হচ্ছে দুই পরিবার একসাথে হয়ে তারপর নিজেদের মধ্যে সব আলাপ করে নিলে ভালো হতো
ওদিকে দেখতে দেখতে সন্ধাও হয়ে গেছে,আহানা বাসায়ও চলে এসেছে
মা বললো শরবত জুস যেটা ইচ্ছা সেটা তৈরি করতে,ছেলে পক্ষ এসে পড়বে
আহানা কাঁচামরিচের জুস বানালো,মা এসে জিজ্ঞেস করলো সবুজ রঙের এটা আবার কিসের জুস
.
আহানা হেসে বললো লেবু আর পুদিনা,অনেক টেস্ট আর হেলদি ও
.
আচ্ছা
.
ছেলে,,,তার মা আর ফুফু এসে পড়েছে
আহানা উঁকি দিয়ে একবার দেখলো,চেহারায় বোঝা যাচ্ছে এক নাম্বারের বলদ,ইয়া বড় চশমাও পড়েছে,এরে তো কণার সাথে মানাবে
যাই হোক এর গায়ে পুরোটা জুস ঢালবো না,হাফ ঢালবো,বেচারার চেহারা দেখে মায়া হচ্ছে
.
আহানা মাথায় ঘোমটা টেনে সেদিকে গেলো
মা বললো রামিমের সাথে বাগানের দিকে যেতে ট্রেতে জুস নিয়ে,ওখানে চেয়ার আছে সেখানে বসে খেতে আর গল্প করতে
আহানা তাই গেলো সেদিকে,রামিম আহানার থেকে চোখ সরাচ্ছে না
আহানা চেয়ারে বসে দেখলো রামিম এখনও দাঁড়িয়ে ওর দিকে হা করে চেয়ে আছে,আহানা বিরক্তি নিয়ে বললো”বসুন না এখানে,,জুস খাবেন না??”
.
হ্যাঁ খাবো তো
.
রামিম সামনের চেয়ারে বসে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো আবারও
আহানা জুসটা নিলো রামিমের গায়ে ঢালার জন্য তার আগেই রামিম ওর থেকে জুসের গ্লাসটা কেড়ে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা গিলে সাবাড় করে দিলো
আহানা মুখে হাত দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে
রামিম এবার বুঝলো সে আসলে কি খেয়েছে
ঝালের চোটে রামিম “আম্মাগো” বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলো”
দুমমমমম!
আহানা মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে
মরে গেছে নাকি?আমি জেলে যাবো না তো?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা মন খারাপ করে সেই কখন বাসার ভেতর চলে গেছে শান্তর সেদিকে খবর নেই
সে গেট সামলাতে ব্যস্ত,অনেক ঝগড়া করে শেষমেষ ৫হাজার টাকা দিয়ে সবাইকে থামালো শান্ত,নওশাদ আর সূর্য মিলে
ভিতরে গিয়ে সবাই চেয়ার টেনে বসতেছে এক এক
করে
শান্ত রিয়াজের সাথে স্টেজে এসে বসেছে,মেয়েরা বারবার নওমিকে জিজ্ঞেস করতেছে শান্ত সিঙ্গেল কিনা
কণা ভ্রু কুঁচকে কাছে এসে বললো”শান্ত শুধু আমার,ওকে??কেউ নজর দিবা না ওর দিকে”
.
নওমির ছোট বোন আরবি বললো”কিন্তু শুনেছিলাম আহানা আপুর সাথে নাকি উনার এঙ্গেজমেন্ট ও হয়ে গেছে?”
.
হয়েছে তো কিছে?বিয়ে তো আর হয়নি,সেটা না হলেই হলো,আর সেটা হবেও না,আমি হতে দিব না
.
একটা মেয়ে বললো”এই আহানাটা কে?আজ এসেছে?”
.
আরবি বললো সে আহানাকে গেট দিয়ে ঢুকতে একবার দেখেছিলো এরপর আর দেখেনি
কণা ততক্ষণে আহানাকে খুঁজতে বেরিয়ে গেছে,আহানাকে বুঝাতেই হবে যে শান্ত শুধু আমার,ওর না,ও যেন বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়
.
শান্তর এবার আহানার কথা মনে পড়লো,দেরি না করে স্টেজ থেকে নেমে সে আহানাকে খুঁজতে লেগেছে
.
ইস একদম ভুলে গিয়েছিলাম আহানার কথা
কোথায় মেয়েটা!উফ!!!
.
আহানা একটা রুমের কোণায় চুপ করে বসে আছে
তার আশেপাশে মানুষে ভর্তি,সম্ভবত এরা নওমি আপুর আত্নীয় স্বজন,মন খারাপ থাকায় আহানা এখানে চুপ করে বসে আছে
কণা অবশেষে আহানাকে খুঁজে পেলো,ওর সামনে এসে ওকে ধরে টেনে নিয়ে গেলো বাড়ির সেকেন্ড ফ্লোরে
.
আহানা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো” কি হইছে কণা আপু?আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসছো কেন?”
.
তুমি একটা কথা কেন বুঝতেছো না আহানা?শান্তকে আমি ভালোবাসি,ও আমার,তুমি মাঝখানে আসতে চাইছো কি জন্যে?আর শান্ত তো তোমাকে পছন্দ করে না তাহলে কেন তুমি পড়ে আছো?
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আমাদের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে,তার পরেও তুমি এসব কেন বলতেছো?”
.
বিয়ে তো আর হয় নাই,সময় আছে,ভেঙ্গে ফেলো এখনই
.
আহানা বলতে গিয়েও পারলো না,সে দাবি করতে পারবে না যে সে শান্তর লিগালি ওয়াইফ কারণ শান্ত নিজের মুখেই বলেছে এটা একটা চুক্তি ছিলো
আহানা মাথা নিচু করে চুপ হয়ে আছে
কণা আহানাকে ঝাঁকিয়ে বললো”আমি কিছু শুনতে চাই না,তুমি এই সম্পর্ক শেষ করে দাও,নাহলে কাউকে শান্তিতে থাকতে দিব না আমি”
.
কণা চলে গেলো কথাগুলো বলে
.
শান্ত পাগলের মতন আহানাকে খুঁজতেছে,শেষে আরবি জানালো সে আহানাকে আর কণাকে সেকেন্ড ফ্লোরের দিকে যেতে দেখেছে
শান্ত সেদিকে ছুটলো,তারপর সেখানে এসে দেখলো আহানা করিডোরের শেষে যে জানালাটা আছে সেটার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে আনমনে
.
আহানা?তুমি এখানে?আমি তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম,আমাকে না বলে কোথাও যাবা না একদম
.
আহানা চোখ মুছে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো তারপর স্বাভাবিক গলায় বললো”আমাকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হচ্ছিলেন কেন?”
.
এটা কেমন প্রশ্ন!তুমি আমার সাথে এসেছো যখন তখন আমার সাথেই তো থাকবা
আমি যখন তোমাকে দেখলাম না কোথাও তখন আমার তো ভয় লেগেছিলো,না জানি সাইমন,রতন এসে পড়লো এই ভেবে
.
আহানা মুচকি হাসলো,তারপর বললো””ওহহ,এটারই ভয় বুঝি”
.
হুমম,চলো এখন
.
শান্ত আহানার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে,আর আহানা এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে চেয়ে আছে,কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার
আরেক হাত দিয়ে চোখ মুছে থেমে গেলো সে
.
আবার কি হলো?
.
কতদিন পর্যন্ত সেফটি দিবেন আমায়?
.
যতদিন রতন আর সাইমন চিরতরে না যাচ্ছে,আই মিন তোমার পিছু না ছাড়ছে ততদিন
.
তার পর?
.
তার পর তুমি তোমার পথে আর আমি আমার পথে,সিম্পল!
.
আহানা থ হয়ে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে রইলো
শান্ত হেসে বললো”আসলেই আহানা আমি ভেবেছি,আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করার আগে আমার বুঝা উচিত ছিলো তোমারও তো স্বপ্ন থাকতে পারে,তোমার ও তো পছন্দ থাকতে পারে,তাই আমি এই সিধান্ত নিয়েছি,এরপর তুমি তোমার মতো থাকবে”
.
ওহ
.
শান্ত আবার গিয়ে রিয়াজের পাশে বসেছে,আহানা মন খারাপ করে সামনে সব চেয়ার রাখা ছিলো ওগুলোর মধ্যে একটাতে গিয়ে বসে আছে
শান্ত যা বলেছে এসব শুনে আমার তো খুশিতে নাচার কথা তাহলে আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি?আমি তো উনাকে ভালোবাসি না,আর উনি তো আমাকে ভালো রাখার জন্যই কথাগুলো বললেন,আমার ভালো ভেবেই
শরীর খারাপ লাগতেছে,এখান থেকে তো শান্তদের বাসা কাছেই,আমি বরং বাড়ি ফিরে যাই,এখানে ভালো লাগছে না
.
আহানা উঠে শান্তকে বলতে যাবে “যে সে চলে যাচ্ছে” তখনই শান্তর ফোন আসলো,সে কথা বলতে বলতে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে
আহানা ৫মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু শান্তর কথাই শেষ হচ্ছে না,বিরক্তি চরম পর্যায়
উপায় না পেয়ে আহানা এগিয়ে রিয়াজের কাছ এসে বললো”ভাইয়া আমার শরীর ভালো লাগতেছে না,আমি বাসায় ফিরে যাচ্ছি,আপনি প্লিস উনাকে বলে দিবেন এই কথা,উনি ফোনে কথা বলতেছেন সেই কখন থেকে”
.
কিন্তু আহানা বিয়ের খাবার তো খেয়ে যাও
.
না ভাইয়া,আমার একটু রেস্ট দরকার
.
ঠিক আছে,সাবধানে যেও
.
আহানা চলে গেলো সাথে সাথে
শান্ত কথা শেষ করে পিছন ফিরে চেয়ারটার দিকে তাকালো যেটাতে এতক্ষণ আহানা বসে ছিলো
ওকে আবারও দেখতে না পেয়ে শান্তর ভীষণ ভয় হলো
ছুটে এসে এদিক ওদিক তাকালো সে
.
রিয়াজ নওশাদ আর সূর্যর সাথে গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ফটো গুলো দেখতেছে
.
মেয়েটা গেলো কই,,আমি বলেছিলাম আমাকে না বলে কোথাও না যেতে,এখন আবার কই খুঁজবো ওরে
.
আহানা একটা সিএনজিতে উঠে বাসায় ফিরতেছে,কান্না পাচ্ছে খুব,একটা সময়ে কেঁদে ফেললো,আর কান্না থামাতে পারলো না সে
সিএনজির ড্রাইভার বারবার জিজ্ঞেস করতেছে আহানা কেন কাঁদছে,আহানা কিছু বলছে না
বাসায় ফিরে দেখলো রিপা বুয়ার সাথে গল্প করছে সোফার রুমে,আহানাকে দেখে সে একটু অবাক হলো
.
আহানা?তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?
.
এমনি,শরীর ভালো লাগতেছিলো না তাই চলে এলাম
.
আহানা আর কিছু বললো না,সোজা রুমে চলে গেলো,দরজাটা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো সে
যে লোকটাকে আমি পছন্দ করি না,আমার হাজার মানার পরেও যে আমাকে বিয়ে করেছে
যে বিয়েতে আমি খুশি ছিলাম না আজ সেই বিয়ের পরিণতি কি হতে পারে সেটা জেনে আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে,আমি তো উনাকে ভালোবাসি না,স্বামী হিসেবে মানি না তাহলে কেন আজ আমার এমন লাগতেছে
.
আহানার ফোন বাজতেছে,শান্তর কল,আহানা ধরলো না,জানালার দিকে চেয়ে বসে রইলো সে
.
শান্ত পুরো বাড়ি খুঁজেও কোথাও আহানাকে পেলো না,চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে,রতন সাইমন আসেনি তো?
আমি কি করবো এখন,কোথায় পাবো ওকে,মূহুর্তেই চলে গেলো চোখের সামনে থেকে,কি করছে,কেমন আছে,কোনো ক্ষতি হয়নি তো?
এতক্ষণে আহানার মা আর শান্তর মাও এসে গেছেন সবার সাথে,আহানার আম্মু তো শান্তকে দেখেই ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আহানা কোথায়
শান্ত চুপ করে থাকলো,উত্তর দিতে পারলো না,কাজের বাহানা দিয়ে সরে আসলো সে

রিপা কাজ সেরে চলে গেছে
বুয়া রাতের রান্না করে সেও চলে গেছে,বাসা পুরো খালি এখন
আহানা ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা শান্তর রুমে আসলো
রুমটা খালি,আলো নিভানো
আহানা আলো জ্বালিয়ে এক কদম এক কদম করে ভিতরে এসে ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলটার উপরে রাখা তার আর শান্তর ছোটবেলার ছবিটা হাতে নিয়ে বিছানার এক কোণে গিয়ে বসলো
ছবিটা দেখে কিঞ্চিত হাসলো সে,ছবিটায় হাত বুলিয়ে আবারও আগের জায়গায় রেখে দিলো
তারপর গিয়ে শান্তর আলমারিটা খুললো,সুন্দর করে সব সাজিয়ে রাখা সেখানে
আহানা একটা পেস্ট কালারের জ্যাকেট হাতে নিলো
শান্তর গায়ের গন্ধ আসতেই তার সারা শরীরে নেশা ধরে গেছে হঠাৎ করে
জ্যাকেটটা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসলো সে,একদম শান্তর মতোই লাগতেছে তাকে
.
শান্ত রিয়াজের কাছে এসে বললো যে সে আহানাকে খুঁজতে যাচ্ছে তাকে কোথাও পাচ্ছে না
রিয়াজ অবাক হয়ে বললো”আরে আহানা তো আমাকে বলেই গিয়েছিলো,তার নাকি শরীর ভালো লাগতেছে না তাই সে বাড়ি ফিরে গেছে,তুই ফোনে কথা বলতেছিলি বলে তোকে ডিস্টার্ব করেনি”
.
না বলে একাই বাড়ি চলে গেলো?
.
হুম,আমি মানা করলাম,শুনলো না,এবার তুইও যাবি না খবরদার বলে দিচ্ছি
.
শান্ত গাল ফুলিয়ে রিয়াজের পাশে বসে থাকলো,বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই এবার বউকে নিয়প যাওয়ার পালা,শান্ত দূরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,ওর মা আর আহানার মা রিয়াজদের সাথেই যাবেন কিছু রীতিনীতি আছে সেসবে রিয়াজের আম্মু অনেক রিকুয়েস্ট করলেন যাতে তারা থাকে
শান্ত পথ কেটে সোজা তার বাসার দিকে যাচ্ছে,তার জানামতে আহানা বাসায় একা,এই রিস্ক সে নিতে পারে না,রিয়াজের শত মানার সত্ত্বেও সে চলে যাচ্ছে বাসার দিকে
আহানা শান্তর একটা ছবি দেখতে দেখতেই ওর বিছানার এক কোণে শুয়ে পড়েছে
শান্ত বাসায় এসে দরজায় নক করতেই দরজা খোলা পেলো
বুয়া ভাবলো আহানা আছে যেহেতু তাই সে দরজা কোনোমতে লাগিয়ে চলে গিয়েছিলো
শান্তর তো বুক কেঁপে উঠেছে,এই ভর সন্ধ্যাবেলায় দরজা খোলা কেন??
আহানার কিছু হয়নি তো??
এক ছুটে সে আহানার রুমের দিকে গেলো
সেখানে আহানাকে না পেয়ে ভয় আরও বেড়ে গেলো তার,এদিক ওদিকে ওকে খুঁজতে খুঁজতে মনে পড়লো তার নিজের রুমেই দেখা হয়নি
এক দৌড়ে নিজের রুমে আসলো সে
এসেই আহানাকে দেখতে পেয়ে কলিজা ঠাণ্ডা হলো তার
আহানা ওর জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে বিছানায় গুটিশুটি দিয়ে ঘুমাচ্ছে
শান্তর রাগ প্রচণ্ড রকম ভাবে বেড়েছে
হনহনিয়ে এসে সে আহানার দুহাত ধরে ওকে ঘুম থেকে টেনে তুলে ফেললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বলতে গেলো”যে কি হয়েছে”
তার আগেই গালে এক চড় খেয়ে তার সমস্ত ঘুম ঘুম ভাব পালিয়ে গেলো
গালে হাত দিয়ে সে অসহায়ের মতন শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে
শান্ত এগিয়ে এসে ওর দুহাত ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো”কি সমস্যা তোমার??আমাকে না বলে চলে এসেছো কোন সাহসে?কতবার ফোন করেছি আমি?আমার কি কোনো অধিকার নেই তোমার প্রতি?আমার চিন্তা হয় না তোমাকে নিয়ে?যে চিন্তার জেরে তোমাকে বিয়ে পর্যন্ত করে নিয়েছি সেখানে তুমি এরকম সাহস দেখাও,আনসার মি!”
.
আহানা চুপ করে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না
শান্তর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে,এই মূহুর্তে আহানার এক লাইন হলেও কিছু বলা উচিত কিন্তু তা না করে সে চুপ করে আছে এটাতে আরও রাগ উঠতেছে শান্তর
.
কি হলো বলো!কিছু বলছো না কেন,কেন এসেছিলে তুমি?আমাকে বললে কি হতো তোমার?
.
হাত ছাড়ুন
.
কেন ছাড়বো?আমার কথার উত্তর দিয়েছো তুমি?
.
এরকম আর কতো করবেন?আপনি তো বলেই দিয়েছেন,রতন, সাইমন চলে গেলে আপনিও সব সম্পর্ক শেষ করে দিবেন তাহলে এসবের মানে কি?
.
এসবের মানে কি আবার বলতেছো,তুমি আমার স্ত্রী
.
কয়েকদিনের জন্য
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
তুমি কি চাও আহানা?কি বুঝাতে চাও তুমি?তুমি যদি চাও আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে তো আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে রাজি আছি,তুমি ঠিক কি চাও সেটা বলো আমাকে
.
আহানা মুখ আরেকদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললো”আমাকে একা থাকতে দিন”
.
না দিব না!তোমাকে আজ সব ক্লিয়ারলি বলতেই হবে,কেন তুমি আজ আমাকে না বলে একা একা এই বাসায় চলে আসলে,কেন তোমার মুখের ভাবগতি বদলে গেলো হুট করেই,আমি আজ শুনতে চাই!তুমি এই বাসায় কোন সাহসে একা একা এলে,হাসবেন্ড হিসেবে তা জানার পুরো অধিকার আছে আমার
.
না নেই,চুক্তির বিয়েতে আপনার কোনো অধিকার নেই আমার থেকে এসব জিজ্ঞেস করার
আমি আমার মতন আছি,আমাকে আমার মত থাকতেও দিয়েছেন আপনি
আজ তা পরিষ্কার করে বলেও দিয়েছিলেন তাহলে এখন কেন স্বামীর অধিকারের প্রসঙ্গ উঠতেছে?
.
আহানা আমি নিজ থেকে এই বিয়েটাকে ছোট করে দেখতে চাইনি,তুমি সেদিন বিয়েতে বিন্দুমাত্র রাজি ছিলে না বলেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন তুমি এটাতেও নারাজ,তাহলে তুমি ঠিক কিসে খুশি?
.
আপনি প্লিস আমার হাত ছেড়ে দিন,আমার কিছু ভাল্লাগতেছে না,আমি একটু একা থাকতে চাই
.
ফাইন!!চলো আমার সাথে
.
কথাটা বলে শান্ত আহানার শাড়ীর উপরে থাকা ওর জ্যাকেটটা টেনে খুলে ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো
.
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে,হাত ছাড়ুন!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকসা নিলো
আহানা বার বার জিজ্ঞেস করতেছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে কিন্তু শান্ত একটু টু শব্দ ও করছে না,শুধু আহানার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে সে
বাসার থেকে ১০মিনিট দূরে একটি মসজিদ,সেখানে আসতেই রিকসা থামাতে বললো শান্ত
তারপর ভাড়া দিয়ে আহানাকে টেনে নামিয়ে ওখানে দাঁড় করিয়ে মসজিদের ভিতরে চলে গেলো সে
আহানা কিছুই বুঝতেছে না, শান্ত ওকে কেন এখানে নিয়ে এসেছে
শান্ত ৫মিনিট পর বেরিয়ে এসেছে,এসেই ওকে ধরে মসজিদের পাশে হুজুরের বাড়ির দিকে নিয়ে গেলো
.
আপনি একটু বলবেন আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
.
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে বললো”একটা কাজ বাকি রইলো সেটা পূরণ করতে”
.
হুজুরের বাসায় ঢুকে শান্ত আহানাকে সোফায় বসিয়ে দিলো তারপর ওর মাথায় গোমটা টেনে দিয়ে ওর পাশে নিজেও বসে পড়লো
হুজুর চেয়ার টেনে বসেছেন ততক্ষণে
.
আহানা শান্তর দিকে তাকাচ্ছে আবার হুজুরের দিকে তাকাচ্ছে,হুজুর দোয়া পড়া শুরু করলেন ইতিমধ্যে
এবার আহানা বুঝলো এখানে ঠিক কি হচ্ছে,এখানে তাদের বিয়ে হচ্ছে
আহানা শান্তর দিকে অবাক চোখে তাকালো
শান্ত শুধু কিছু কথা বললো আহানার চাহনি দেখে আর সেটা হলো”যেটা নিয়ে তোমার ভয়,যেটার জন্য তুমি না বলে একা বাড়ি ফিরলে,যেটার জন্য তোমার মন খারাপ ছিলে ঠিক সেই ভয়টা আমি এখন দূর করবো,ধর্ম মতে তোমাকে বিয়ে করবো”
.
শান্ত কাগজে আহানার বাবার আর মায়ের নাম লিখে দিলো,সাথে নিজেরটাও লিখলো তারপর হুজুরের হাতে কাগজটা দিলো সে
হুজুর শেষে বললেন শান্তকে কবুল বলতে,শান্ত বললো,এবার আহানাকে বলতে বললেন তিনি
আহানা শান্তর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,খুশি হবে নাকি কাঁদবে
সে কি চেয়েছিলো সে নিজেও জানে না
হুজুর আবারও বললেন কবুল বলতে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে “তিন বার কবুল বলেই দিলো”
.
আলহামদুলিল্লাহ,,

শান্ত হুজুরের সাথে দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে
আর আহানা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে রোবটের মতন চেয়ে আছে শান্তর দিকে
মূহুর্তেই কি থেকে কি হয়ে গেলো,তার সামান্য মন খারাপ যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে দিবে তার কল্পনার বাইরে ছিল এটা
শান্ত হুজুরের সাথে কথা শেষ করে আবারও আহানার হাত ধরে টেনে উনার বাসা থেকে বেরিয়ে চলে আসলো,এবার আরেকটা রিকসা নিলো তাদের বাড়ি ফেরার জন্য
আহানা শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এখনও
শান্ত সামনে জ্যামের দিকে চেয়ে থেকে বললো”বিয়ে তো সব রীতিতেই হয়ে গেছে,তোমার আর কোনো ভয় থাকার কথা না নিশ্চয়??দেনমোহরে এমন একটা আমাউন্ট লিখেছি,তুমি চাইলেও আমি তোমাকে ছাড়বো না মিস আহানা,সরি সরি,মিসেস আহানা
.
আহানা মুখটা সরিয়ে আরেকদিকে ফিরে তাকালো
১০/১২মিনিটেই তারা বাসায় চলে এসেছে
আহানা রোবটের মত করে হেঁটে তার রুমের দিকে যাওয়া ধরতেই শান্ত ওর হাতের কব্জি ধরে ওকে আটকে ফেললো
আহানা ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে আছে,মুখ দিয়ে তার কোনো কথা বের হচ্ছে না
শান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো”আজ থেকে তুমি আমার সাথে আমার বিছানায় ঘুমাবে,আমার রুমে থাকবে”
.
আহানা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো”আমি এটা চাইনি”
.
শান্তর মেজাজ গেলো বিগড়ে
রেগে দরজায় একটা ঘুষি মেরে আহানাকে ঝাপটে ধরে কাছে নিয়ে আসলো সে
চিৎকার করে বললো”কি চাও তুমি?”
.
আহানার চোখের পানি টপটপ করে পড়তেছে,তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আর
.
শান্ত আহানার কোনো উত্তর না পেয়ে ওকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসলো
তারপর বিছানায় ছুড়ে ফেলে বললো”আমি যেটা বলবো সেটাই হবে,এখন থেকে তুমি সেই সব কিছু করবে যা একজন স্ত্রীর দায়িত্ব”
কথাটা বলে শান্ত নিজের আলমারি খুলে একটা টিশার্ট নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো
আহানা চোখের পানি মুছে চুপ করে আছে,তারপর পা তুলে বিছানার মাঝখানে গিয়ে গোল হয়ে বসলো সে
মনে হচ্ছে শান্তকে ভয় লাগছে,তার কথা না শুনলে আরেকটা চড় খেতে হবে এখন
তাহলে সমান সমান হবে,সেও শান্তকে ২টি চড় দিয়েছিলো
আর শান্ত ও?না না সমান সমান হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই
রাত ৮টা বেজে গেছে,পুরো বাড়ি খালি,অন্ধকার নেমে এসেছে
এই প্রথম সে আর শান্ত এত একা একা একসাথে এক বাসায় যেখানে কেউ নেই
আহানার ভয় করে না,কারণ সে শান্তকে চিনে,শান্ত ওর সাথে এসব নিয়ে জোরজবরদস্তি করবে না
তার পরেও একসাথে এক রুমে এক বিছানায় থাকতে কেমন যেন লাগতেছে
কাল এক সাথে এক রুমে ছিলো তারা কিন্তু সেটা সোফায় আর বিছানায় ছিলো
এখন তো এক বিছানায়,আহানার গা গুলিয়ে আসতেছে শুধু
ভাবতে ভাবতে শান্তকে দেখতে পেলো সে
শান্ত গায়ের পাঞ্জাবিটা বদল করে টিশার্টটা পরে এসেছে
চোখে মুখে রাগের ছাপ,রাগ এখনও কমেনি তার,আহানার দিকে না তাকিয়েই তার ল্যাপটপটা খুঁজে সেটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো সে
তারপর বিন ব্যাগে বসে কাজ শুরু করে দিলো
আহানা ওর দিকে চেয়ে আছে,এরকম ১০মিনিট চেয়ে থেকে আহানার মাথাটাই ব্যাথা হয়ে গেছে
বিছানা থেকে নেমে সে রুম থেকে চলে গেলো সোজা নিজের রুমে
নিজের একটা থ্রি পিস বের করে সেটা পরে আসলো তারপর গেলো রান্নাঘরে,বুয়া সব রেঁধে তারপর চলে গেছে
ইলিশ মাছের আইটেম বেশি,আহানা ব্রু কুঁচকে খুঁজতে খুঁজতে চিকেন ও পেলো,তাই সেটা দিয়ে পেট পুরে ভাত খেলো সে
সকালে যে ঐ বাড়িতে নাস্তা করেছিলো আর কিছু মুখে দেয়নি সে
তাই এখন পেটুকের মত খেলো,তারপর মুখ মুছে চা বসালো
চা খেলে মাথা ধরাটা যাবে,সারাদিনের ক্লান্তি ও যাবে
.
শান্ত বাসায় ঢুকে দরজা লক করে চাবি পকেটে রেখেছে,এই আহানাকে একটুও বিশ্বাস নেই,একটা পাগল মেয়ে,যদি আবার বেরিয়ে যায়?
.
আহানা চায়ের কাপ দুটো হাতে নিয়ে শান্তর রুমের দিকে চললো
শান্ত মাথা টিপতে টিপতে কাজ করতেছে
আহানা কাছে এসে বারান্দায় থাকা টি টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে আবার বিছানায় ফেরত আসলো
নিজের চা খেতে খেতে টিভি অন করলো সে,কার্টুনের চ্যানেল এনে একটা বালিশ কোলে রেখে কার্টুন দেখায় মনোযোগ দিলো এবার
তার দুবার বিয়ে হয়েছে,এই লোকটার সাথে
যে ল্যাপটপ দেখতে দেখতে তার বানানো চা খাচ্ছে এখন
অথচ আমার কি কপাল,এই দুই বিয়েতে একবারও বাসর রাত হয়নি
অবশ্য আমার মত নেই,আর উনার তো একদমই নাহহ
বাসর রাত নিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছিলাম আমি,আসলে যারা বেশি স্বপ্ন দেখে তাদের সাথেই এমনটাই হয়
আমি তার প্রমাণ,বাসর না করি,একটু গল্প গুজব তো করতে পারি?না সেটাও না,বরং এখন দু লাইন বললে ঝাড়ি খেতে হবে উল্টো
যা হয়েছে তার সবটা দোষ ঐ কণার
আমার শান্ত,আমার শান্ত করে মাথা খাচ্ছিলো আমার
বেশ হয়েছে!উনি আমাকে আবারও বিয়ে করেছে,এবার ঐ কণা মেয়েটা আর কিছু করতে পারবে না হুহ
আর একদিন আমাকে যদি ধরে তো বলবো দুইবার বিয়ে করেছি,এখন থেকো এটা আমার শান্ত,আমার আমার আমার!
আহানা হেসে দিলো,পরে শান্তর মুখের দিকে তাকাতেই তার হাসি উধাও
আমার শান্ত না!এমনি
সে আমার শুধু স্বামী,আর কিছু না
তাও আমি আজ অনেক খুশি
আমাকে আর ছাড়তে পারবেন না উনি,ঐ কণা আমাকে উনার থেকে আলাদা করতে পারবে না কোনোদিন
ঐ বার বিয়েতে এত কেঁদেছিলাম কষ্টে আর এবারের বিয়েতে খুশিতে মন চাঙ্গা হয়ে গেছে
আমার সামান্য মন খারাপ আর রাগ করে বাড়ি ফেরাতে এত বড় সারপ্রাইজ পাবো জানলে ডেইলি এমন করতাম
.
এই তুমি আমার বিছানায় বসে কি ভাবতে ভাবতে হাত পা এমন নাচাচ্ছো?
একটু যদি চা ফালাইসো আমার বিছানায় তো খবর আছে তোমার!
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”কেন?কি করবেন?আবার বিয়ে করবেন বুঝি?”
.
শান্ত কাজ থেকে মন উঠিয়ে অবাক হয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ
কি বললো মেয়েটা??সে কি খুশি হয়েছে আজকে করা আমার এই কাজে?নাহলে এটা বললো কেন?
.
আহানা চায়ের কাপ রেখে শান্তর বিছানার চাদর টেনে শুয়ে পড়েছে,সাথে সাথে চোখে রাজ্যের ঘুম এসে গেলো তার
এদিকে শান্তর ফোনে বারবার আহানার মায়ের কল আসতেছে
শান্ত রিসিভ করে বললো আহানা রুপাদের বাসায় গেছে,রুপা অসুস্থ
কোনোরকম এটা বুঝিয়ে দিলো সে
আহানার মা তাই আর কিছু বললেন না
শান্ত ফোন রেখে আবারও কাজে মন দিলো,একেবারে রাতের ১টায় কাজ শেষ করে তারপর উঠেছে সে
কোমড় ঘষতে ঘষতে ল্যাপটপটা নিয়ে ওয়ারড্রবের উপরে রেখে একটা মলম নিয়ে আহানার দিকে তাকালো
আহানা সুন্দর করে চাদর মুড়িয়ে বিছানার এক কোণে ঘুমিয়ে পড়েছে
শান্ত ২মিনিট ধরে ওর ঘুম দেখলো তারপর ব্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে আহানার হাত ধরে টেনে ওকে তুলে ফেললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বললো”আমি ঘুমালে আপনাকে কেউ খোঁচায়?সুন্দর করে নাম ধরেও তো ডাকতে পারেন,এভাবে হাত ধরে টেনে তুলেন কেন আপনি?”
.
আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে,একটু মলম লাগিয়ে দাও
.
এটার জন্য তুলেছেন আমায়?
.
বউ হও না তুমি আমার?স্বামীর সেবা করো ঠিক করে
.
শান্ত টিশার্টটা একটু উঠিয়ে সামনের দিকে মুখ করে আহানার পাশে এসে বসলো
আহানা চোখ ডলা শেষ করে মলমটা নিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছে শান্তর কোমড়ে
লাগানো শেষে শান্ত এবার আহানার হাত ধরে টেনে ওকে বিছানা থেকে নামালো
.
আবার কি?
.
ডিনার করিনি আমি সে খেয়াল আছে তোমার?যাও খাবার নিয়ে আসো আমার জন্য
.
আহানা মাথার চুল টানতে টানতে রান্নাঘরের দিকে গেলো,তারপর খাবার নিতে নিতে বললো”ইলিশ মাছ খান?”
.
শান্ত তখন সোফার রুমে এসে বসেছে,আহানার কথা শুনে সামান্য হেসে বললো”ইলিশ থাকলে জাস্ট ইলিশই দাও,”
.
আহানা ইলিশ প্লেটে নিতে নিতে বললো “কি ছেলেরে বাবা,ইলিশ মাছ কেমনে খায়,আমি তো একটুও খেতে পারি না
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্তর সামনে খাবারের প্লেট রেখে আহানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে সোফার উপর
শান্ত খেতে খেতে গভীর মনযোগ দিয়ে টিভি দেখতেছে
আহানা হাই তুলতে তুলতে শেষমেষ ঘুমিয়েই গেলো সোফার উপর
পরেরদিন যখন চোখ খুললো তখন আবারও নিজেকে শান্তর রুমে শান্তর পাশে,শান্তর বিছানায় আবিষ্কার করলো
লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে,শান্ত পাশেই ঘুমাচ্ছে,ঘড়িতে ভোর ৫টা বাজে তখন
আহানা শান্তর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো
এ সময়ে ঝগড়া করার মনমানসিকতা নেই তার,পরে সকালে ৮/৯টার দিকে উঠে ঝগড়া করা যাবে এই নিয়ে,এখন আপাতত এই সুন্দর সময়ে ঘুমাই একটু,পরেরটা পরে দেখা যাবে
সকাল হতেই যখন সে চোখ খুললো সেই শান্তকেই দেখলো
হাতে তার একটা নীল রঙের শাড়ী আরও গয়না গাটিও আছে
সে দাঁত কেলিয়ে বললো”ম্যাডাম বউ আপনার কি খবর আছে আজ বৌভাত??”
আহানা আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বললো”কার আমার??”
.
শান্ত হেসে ফেললো তারপর বললো”জি না,রিয়াজ আর নওমির,এখন উঠে জলদি করে তৈরি হয়ে নাও,লেট হয়ে যাবে,তোমার আম্মু বারবার ফোন করে তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেছে,আমি একবার বলছি তুমি বাথরুমে আবার বলছি রুপার মাথায় পোটি দিচ্ছো,আর কি বলবো?”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে উঠে বসলো তারপর শান্তর হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে বললো”এই শাড়ীটা পেলেন কই”
.
আম্মুর,আলমারি থেকে আনছি,এ সময়ে শাড়ী পাবো কই?
.
আন্টি তো আমার গায়ে শাড়ীটা দেখলো চিনে ফেলবে,তখন কি হবে?
.
আরে আমি একটা কিছু বলে বুঝিয়ে দিব,সমস্যা নাই
.
আহানা ১৫মিনিট বাদে তৈরি হয়ে এসে দেখলো শান্ত ও রেডি হয়ে গেছে ততক্ষণে
.
চলুন যাই
.
নাস্তা তো করবা,যাত্রামুড়া যেতে এখনও অনেক দেরি আছে
.
কই নাস্তা?কে বানালো?
.
বুয়া বানিয়ে দিয়ে গেছে,আসো খেতে আসো,আর শুনো আজ আমি মাকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা
.
কি জন্যে?আপনি না বললেন মুডের উপর ডিপেন্ড করে বলবেন!
.
আরে আজ মায়ের মুড ভালো থাকবে আমি জানি,আর আজই সবটা জানাবো তাকে

বুবু আমার মনে হয় এদের এক করার জন্য আমাদের কিছু একটা করতে হবে যাতে করে দুজনেই হিট খায় তারপর মিল হবে দেখিও
.
শান্তি রহমান হাত নাড়িয়ে বুঝালেন তিনি কথাটা শুনতে চান
.
তাহলে শুনো আমার পরিকল্পনা…(……)

আহানা আর শান্ত চুপচাপ হয়ে আছে,কারে একসাথে বসেছে প্রায়ই ১ঘন্টা হতে চললো আর ওরা একটাও কথা বলেনি দুজনে
যেন প্রয়োজন হলেই কথা বলবে তারা, এমনি এমনি বলবে না
শেষে শান্তই মুখ খুললো
“শুনো মাকে বলবা না যে বিয়ে দুবার হয়েছে,বলবা হয়েছে,লিগালি এন্ড ধর্ম মতেও,দুবার আলাদা করে করসি এটা বলতে যেও না,যা বলার আমি বলবো,মোট কথা তুমি চুপ থাকবা,ওকে?”
.
হুম
.
যাত্রামুড়া এসে গেছে,শান্ত আর আহানা রিয়াজের বাসার দিকে হেঁটে চলছে মাটির পথটা ধরে
মাটির পথটার পাশে থাকা গাছগুলো ঝিলিক বাতি দিয়ে সাজানো পুরোটা,লাল নীল সবুজ বাতি
সুন্দরই লাগতেছে দেখতে তবে শান্ত আর আহানার মধ্যে দুজনের একজনও এই সৌন্দর্য দেখতেছে না,তাদের মাথায় শুধু ঘুরতেছে ২টো মাকে সত্যিটা বলার পর কি ঘটবে
নেগেটিভ নাকি পজেটিভ?
অবশেষে বাসার মেইন দরজার সামনে এসে দুজনে দাঁড়ালো
মানুষ যতজন আছে তারা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত
শান্ত তার মাকে খুঁজে বের করলো,উনি নিতুর চুল ঠিক করে দিচ্ছেন,আর আহানার মা চা খাচ্ছেন
শান্ত সেদিকে গেলো সোজা
তারপর শক্ত গলায় বললো”মা!!!”
.
শান্তি রহমান নিতুর চুল থেকে হাত সরিয়ে শান্তর দিকে তাকালেন
আহানার মাও তাকালেন ওর দিকে
.
মা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই
.
আহানার মা মুচকি হেসে স্বাভাবিক গলায় বললেন”তার আগে আমার আর বুবুর ডিসিশন কি হয়েছে সেটা শুনো”
.
কি?
.
কি?
.
আমরা দুজন মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,যেটা শুনলে আশা করি তোমরা দুজনেই অনেক খুশি হবে,আসলে তোমরা যেটা চাও সেটাই করবো আমরা এখন
.
কি করবা মা?
.
শান্ত আর আহানা বুঝতেছে না উনারা কিসের ডিসিশন নিয়েছেন
.
আহানার মা চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে হাতের আঙ্গুল গুলো নাড়াতে নাড়াতে বললেন”শান্ত তোমার জন্য আমরা মেয়ে একটা ঠিক করেছি,তার নাম কণা,সে নাকি তোমাকে অনেক ভালোবাসে,আর আহানা তোর জন্য ও আমরা ছেলে একটা ঠিক করেছি,সে এখানকারই ছেলে,নাম রামিম,এবার বলো তোমরা খুশি তো?
.
কথাটা শুনে শান্ত আর আহানা হা করে চেয়ে রইলো,মুখ দিয়ে যে কথা বের হওয়ার কথা সেটা ভেগে গেছে,এখন তারা ভাবতেছে তারা আসলেই কি শুনলো এটা
এবার যদি আবারও বিয়ে করে তাহলে এই নিয়ে ৩বার??
.
দুজনে দপ করে পিছনে থাকা সোফায় বসে গেলো,একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতেছে
তাদের এখন কি বলা উচিত?
মায়ের মুখের হাবভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে তাদের নিজেদের বিয়ের কথা এখন বললে তুলকালাম লাগবে
আহানাকে শান্ত বলে দিয়েছিলো মুখ না খুলতে তাই সে আপাতত চুপ করে বসে আছে
শান্ত কি বলবে সেটাই ভাবতেছে
ওদিকে আহানার মা আর শান্তর মা তাদের দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়
শান্ত হালকা কাশ দিয়ে পানি এক গ্লাস নিয়ে খেলো
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে
.
কি হলো?তোমরা দুজন মুখ বাংলার পাঁচ করে রেখেছো কেন? আমাদের ডিসিশন তোমাদের ভালো লাগে নি নাকি?
.
আসলে আন্টি!!
.
শান্তি রহমান আঙ্গুল তুললেন শান্তর দিকে,চোখ রাঙিয়ে চেয়ে রইলেন,চোখের আগুন দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল!

বৌভাতে সব মেহমানরা আসতেছে এক এক করে,বেলা ১২টা বাজে তখন
দূরের একটা মাঝারি সাইজের নারকেল গাছের সাথে আহানা আর শান্ত হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,বিরহ লুক নিয়ে
কিসের বিরহ!দুবার বিয়ে করে আবার বিয়ে করার বিরহ!
আহানা দুম করে শান্তর গায়ে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো”খুব তো ডেং ডেং করে আমাকে জোর করে ২বার বিয়ে করেছিলেন তো এখন এত চুপ কেন আপনি?”
.
আমি কি বলবো?মায়ের মুখ দেখোনি?কেমন আঙ্গুল তুলেছিলো,এর ভিতরে যদি শুনে পালিয়ে বিয়ে করেছি তো রেগে আজীবনের জন্য আমার মুখ ও দেখবে না উনি
.
তাহলে এখন কি করবো?বিয়ে করবো আবার?
.
চুপ থাকো একটু প্লিস,আমাকে ভাবতে দাও,পারলে মায়ের মুডটা ঠিক করো একটু
.
আজব,আমি কি ঠিক করবো এখন?আন্টি ভাববে এতদিব তার ছেলেকে বিয়ে করতে চাইনি এখন তার ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজে পাওয়ায় সংসার ভাঙ্গতে চাচ্ছি
.
তুমি এক কাজ করো আমার মাথায় একটা বাড়ি দাও
.
আমি কিছু জানি না,আপনি ঐ কণাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবেন না ব্যস!মনে রাখবেন আমাকে দুবার বিয়ে করেছেন
.
উফ!এর ভিতরে আরেক টপিক আনো কেন?কে বিয়ে করবে?এক বউকে সামলাতে ২বার বিয়ে করতে হয় তাকে
আবার বুঝি আরেক ঝামেলা ঘাড়ে আনবো আমি?
.
তো কি করবেন তাহলে?
.
ভাবতে দাও,যাও এক গ্লাস শরবত নিয়ে আসো আমার জন্য
.
হুহ
.
আহানা বাসার দিকে যেতেই পড়লো কণার সামনে
কণা হাতে লাগানো নতুন নেইলপলিশ ফু দিতে দিতে বললো”আহানা শুনেছো নিশ্চয়?শান্তি আন্টি আই মিন আমার হবু শাশুমা, উনি নাকি আমার আর শান্তর বিয়ে ঠিক করেছেন?”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকালো একবার
নাহহহ আশেপাশে শুনে লাগানোর মতন কোনো আন্টি-টুন্টি নাই
আহানা এবার তার দু হাত ভাঁজ করে একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো তারপর মুখ বাঁকিয়ে বললো”তোমার খুব শখ না আমার শান্তর সাথে সম্পর্ক করার??
তো ফাইন!আমার ছেলের ফুফু বানাবো তোমাকে”
.
কথাটা বলে আহানা চলে গেলো
কণা ভাবনায় পড়ে গেলো,আহানার ছেলের ফুফু সে হওয়া মানে আহানার হাসবেন্ডের বোন সে,তার মানে শান্তর বোন??
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার! আমার শান্তকে আমার উড বি ভাই বানিয়ে দিয়েছে!!
স্টুপিড!!
.
আহানা শরবত এক গ্লাস নিয়ে আবারও শান্তর দিকে যেতে নিতেই মা ওর হাত ধরে আটকে ফেললো
.
আহানা?সত্যি করে বল!শান্তর কণা মেয়েটার সাথে বিয়ে ঠিক শুনে তোর কি একটুও খারাপ লাগছে না??তুই কি কিছুই বলতে চাস না?তুই ঐ রামিম ছেলেটাকেই বিয়ে করে নিবি?
.
আহানা চুপ করে আছে,কিছু বলছে না
.
মা ওর হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে নিলো তারপর বললো”এটা নিশ্চয় শান্তর জন্য?
নিবি না,যাকে বিয়ে করার কথা শুনে বাড়ি মাথায় তুলেছিস তার প্রতি তোর এত কিসের দরদ?যাকে দেখতে পারিস না
সারাদিন ঝগড়া করিস তার জন্য তোর এত কেয়ার আসে কোথা থেকে?
.
আহানা স্বাভাবিক গলায় বললো”আমি তো দূরে থাকতে চেয়েছিলাম মা!!
তুমিই তো সবসময় আমাকে উনার কাছে কাছে রাখতে,তাহলে এখন এই প্রশ্ন কেন?একটা মানুষের সাথে থাকতে থাকতে একটা সময় ভালো লাগা কাজ করে,আমার ঠিক সেটাই হয়েছে
.
কথাগুলো বলে আহানা ওর মায়ের থেকে গ্লাসটা নিয়ে চলে গেলো

কি হয়েছে?এত দেরি?
.
একবার কণা ধরেছে আবার মা ধরেছে
.
আচ্ছা শুনো!আমি ভেবে নিয়েছি মাকে কি বলবো!
.
কি বলবেন?
.
তাহলে শুনো!তোমাকে এখন যা যা বলবো সব তুমিও আমার মা আর তোমার মায়ের সামনে রিপিট করবা,জাস্ট নাম চেঞ্জ,ওকে?
.
মানে?
.
মানে আমি আহানা বলবো,তুমি শান্ত বলবে,আমি যে ক্যাপশন দিব সেটা কপি পেস্ট করবা আর নামের জায়গা চেঞ্জ হবে,ওকে?
.
ওকে!
.
চলো এখন
.
শান্ত শরবত খেয়ে আহানার হাত ধরে হেঁটে চললো মায়ের কাছে
এর ভিতর রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্য মিলে ওকে ঝাপটে ধরে ফেলেছে,আহানাকে বলেছে ১০মিনিট পর ছাড়বে ওকে
আহানা তাই চলে গেলো বাসার ভেতর

তোরে কাল কত করে মানা করছি যে যাইস না??
.
সরি রিয়াজ,আহানা একা ছিলো তো তাই
.
তাই মানে কি?জানিস নওশাদ সূর্য কত মজা করেছে?সব মিস করেছিস তুই
.
দায়িত্ব আগে পরে মজা মাস্তি
.
নওশাদ শান্তর কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বললো সে রিয়াজের বাসর ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল
.
সূর্য শান্তর আরেক কানে ফিসফিস করে বললো”ক্যামেরা লাগানোর পরই আবার ধরাও খেয়েছে😂”
.
রিয়াজ নিজের ক্রিম কালারের পাঞ্জাবিটা টেনে বললো”তোরা যে এত এত শয়তানি করিস আমার সাথে
মনে রাখিস আমি কিন্তু তোদেরই বেস্টফ্রেন্ড,তোদের কীর্তিকলাপ হারে হারে জানা আছে আমার”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
গান শেষ হতেই সবাই স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছে
আহানা শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,আর শান্ত সে তো দাঁত কেলিয়ে শুধু হাসতেছে আজ
কি হয়েছে এই ছেলেটার!!
.
গায়ে হলুদের বিরিয়ানি খাওয়া শেষে রিয়াজ দাঁড়িয়ে তার মাকে বলতেছে একটা রুম খালি করতে
শান্ত পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বললো”রিয়াজ আজ যাই,কথা দিচ্ছি কাল ভোরেই এসে পড়বো”
.
তা হচ্ছে না,আমি তোর আর আহানার জন্য আলাদা একটা রুম খালি করে ফেলেছি,তোরা আজ আমার বাসাতেই থাকবি
কথা ছিলো আমার বিয়ের ৭দিন আগে আসবি সেটা রাখোসনি তো এটা রাখতেই হবে
.
কিহ?এক রুমে আমি আর আহানা?ইম্পসিবল,আহানা এটা শুনলে আমাকে কাঁচা গিলে খাবে আর আমার পক্ষেও পসিবল না আহানার সাথে এক রুমে রাত কাটানোর
.
শুন,শান্তি আন্টি আর আহানার আম্মু,নিতু ওরা কাল আসবে,তোরা আজ থেকে যা,তোদের পরার সব ওরা আসার সময় নিয়ে আসবে,আমি আর কিছু শুনতে চাই না ব্যস
.
আহানা এগিয়ে এসো বললো”কি হয়েছে রিয়াজ ভাইয়া?”
.
আহানা তোমার কি শান্তর সাথে এক রুমে থাকতে কোনো প্রবলেম হবে?তোমরা তো হাসবেন্ড ওয়াইফ,প্রবলেম হওয়ার তো কথা না
.
কি বললেন?আমি তাও উনার সাথে এক রুমে?ইম্পসিবল এটা,হতেই পারে না
.
দেখলি,আমি বলেছিলাম না?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আরেকদিকে চলে গেলো
.
শান্ত তোকে আমি আমার রুমে শুতে বলতে পারতাম বাট কথা হলো আহানা কার সাথে ঘুমাবে?আমার কোনো বড় বোন নেই
যে পিচ্চি একটা আছে সে মা বাবার সাথে ঘুমায়,অন্য কারোর সাথে মরে গেলেও ঘুমাবে না সে,তো আহানা একা রুমে ঘুমাক??এতে তোর কোনো সমস্যা না হলে বল
.
একা?না ওকে একা রুমে দেওয়া যাবে না,ওর সেফটির জন্য আমি ওকে বিয়ে করেছি সেই আমি কিনা ওকে একা অজানা জায়গায় আলাদা রুমে ঘুমাতে দিব?
.
তাহলে একসাথেই এক রুমে থাক,একজন সোফায় আরেকজন বিছানায়,থিংক সামথিং ফিল্মি
.
এহহহহ!আহানা আমাকে সোফায় শুতে বলবে,যে মেয়ে তুই চিনস না ওরে
.
তো তুই তো সোফাতেউ ঘুমাবি,ফিল্মে তো ছেলেরাই সোফায় ঘুমায়
.
আহানা আবার এসে বললো”সোফায় শোয়ার কথা আসে কোথা থেকে?আমি তো উনার সাথে এক রুমেই ঘুমাবো না
.
রিয়াজ প্লিস মেনে যা,আমি সত্যি ভোরে রওনা দিব কাল
.
না আমি মানবো না এমনিতেও আজ তুই দেরি করে এসেছিস,আমি কিছুতেই মানবো না,নওশাদ,সূ্র্য থেকে যাচ্ছে তাহলে তোর কি সমস্যা?
.
শান্ত আহানার দিকে তাকালো,আহানা অনেক ভেবেচিন্তে তারপর রাজি হয়ে গেলো শেষমেষ
করিডোরের শেষপ্রান্তে যে রুমটা আছে সেটাতে আহানা আর শান্তকে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে রিয়াজ
তারপর শান্তর কাঁধে দুম করে হাত রেখে ওর পিঠ ঘষতে ঘষতে বললো”জাস্ট চিল!!ফ্রেশ হয়ে নে আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি”
রিয়াজ হেসে চলে গেলো
আহানা শান্তর দিকে রাগী রাগী মুখ করে রুমটার ভিতরে ঢুকে ওর মাথায় মনে হয় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে
গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বিছানাটায় লাভ শেফ করে আঁকা ভিতরে লিখা(S+A)
আহানা চোখ রাঙিয়ে শান্তকে ডাক দিলো,শান্ত এখনও করিডোরে,ফোন দেখতে দেখতে ভিতরে ঢুকে বললো “আবার কি সমস্যা”
.
কি সমস্যা? দেখুন কি সমস্যা!!
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বিছানার দিকে চেয়ে এমন অবস্থা দেখে হাসলো তারপর সোফায় বসতে বসতে বললো”আমার ফ্রেন্ড তো একটু মজা করেছে,ফুলগুলো সরিয়ে বসো,এত অবাক হওয়ার কি আছে?
.
আহানা অবাক হলো এই ভেবে যে শান্ত একদম নরমালি কথা বলতেছে,সে ভাবলো শান্ত হয়ত অন্য কিছু বলতো এরকম সাজানো দেখে
.
আহানা তাই চুপচাপ পাপড়িগুলো সরিয়ে পা তুলে বিছানায় বসে পড়লো,শাড়ীটা ভারী হওয়ায় আহানার অস্বস্তিকর লাগতেছে অনেক
চুপচাপ খোলাচুল গুলো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে খোঁপা করে সে বাইরের দিকে তাকালো,একটা জানালা,এই রুমে কোনো বারান্দা নেই,তবে জানালাটা ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত,এরকম অদ্ভুত জানালা আহানা আগে দেখেনি তবে এমন ডিজাইন অনেক ইউনিক আর সামনে দাঁড়ালে বেশ লাগবে,যে ডিজাইনটা করেছে তার নিশ্চয় মন অনেক সুন্দর,কারন মন সুন্দর থাকা মানুষগুলোরই চিন্তাভাবনা এত সুন্দর হয়
এরকম জানালা থাকলে আর বারান্দার প্রয়োজন নেই
আহানা মুচকি হেসে এবার বিছানার উপরে থাকা গোলাপের পাপড়িগুলোর দিকে তাকালো তারপর সোজা শান্তর দিকে
শান্ত আজকে যে নেচেছিলো সে ভিডিওগুলো দেখতেছে আর মিটমিট করে হাসতেছে তার এদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই
.
আহানা ফুলগুলো হাতে নিয়ে আবার নিচে ফেলছে আবার সেগুলো তুলে আবারও ছিঁটাচ্ছে
ঐ যে কথায় আছে না”নেই কাজ তো খই ভাজ”
অনেকটা সেরকমই
.
একজন মহিলা এসে হাজির হলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই,গায়ের পোশাক আশাকে বোঝা যায় উনি এই বাসার হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করেন
উনি হাতে একটা ট্রে নিয়ে এসেছেন,সম্ভবত চা আর বিসকিট
সাথে একটা প্যাকেট তার হাতে
ট্রেটা বিছানার উপর রেখে তিনি বললেন “রিয়াজের আম্মু এই পাঞ্জাবি আর এই শাড়ী এমনিতেও উপহার হিসেবে দিতেন ওদের,আর আজ ওরা এখানে যেহেতু থেকে যাচ্ছে বারতি পরার কিছু নেই তাই উপহারটা এখনই পাঠালেন,তারা যেন চেঞ্জ করে নেয়”
আহানা তো মহাখুশি,সে তার গায়ের এই ভারী শাড়ী খুলবে,তাই জলদি করে প্যাকেটটা থেকে শাড়ীটা বের করে নিয়ে সে বাথরুমে দৌড় দিলো
শান্ত কানে ফোন ধরে সূর্যর সাথে কথা বলতে বলতে চা খাচ্ছে
আহানা শাড়ীটা পরতে ওরতে ওর মনে পড়লো চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে
তাই আঁচলটা গায়ে পেঁচিয়ে দৌড় দিয়ে বেরিয়ে সে ট্রেটা থেকে চায়ের কাপ হাতে নিতেই ওর মনে হলো কেউ ওর দিকে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে
আহানা আঁচলটা পেঁচিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো”এমন করে কি দেখেন আপনি?বিয়ে করেই খালাশ??আমার প্রতি আপনার আর কোনো দায়িত্ব নেই তাই না?নিজে বসে চা খাচ্ছেন,আমি খেলাম কিনা সেদিকে কোনো খবর নেই আপনার
.
তুমি তো শাড়ী পেয়ে দুনিয়া ভুলে বাথরুমের দিকে দৌড় দিসো,আমি আর কি বলতাম?
.
নাচেন,কিছু বলতে হবে না
.
এটা কি শাড়ী পড়ছো?এটা কে শাড়ী পরা বলে?মনে হচ্ছে বাঁশের উপর কেউ নেকড়া টাঙিয়ে দিয়েছে
.
আহানা চোখ বড় করে বললো”আমাকে দেখে আপনার বাঁশ মনে হয়?
.
নেকড়াও হতে পারে
.
আহানা রেগে শান্তর দিকে পা বাড়াতেই উল্টা পাল্টা করে শাড়ী পরায় শাড়ী ফ্লোরে নেমে এসেছিলো অনেকটা তো সেটায় পা দিয়ে পিছলিয়ে শান্তর গায়ের উপর গিয়ে পড়লো সে একেবারে
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বললো”রোমান্স করতে মন চায় বুঝি?তাহলে বিছানার পাপড়ি গুলা এলোমেলো করলে কেন?
.
আহানা দূরে সরে গিয়ে এক চুমুকেই কাপের সব চা শেষ করে শাড়ী ধরে বাথরুমের দিকে চলে গেলো
.
শান্ত হাসতে হাসতে বিছানায় বসে একটা বিসকিট মুখে দিয়ে আবারও ভিডিও দেখায় মনোযোগ দিলো
.
আহানা ঠিকমত শাড়ীটা পরে বেরিয়ে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে
জানালাটার সামনে সব সুপারি গাছ,মনে হয় সুপারি বাগান হতে পারে,পরিষ্কার বাগান,এখানে হেঁটে আসতে মন্দ লাগবে না
আহানা খুশি হয়ে পিছনে তাকালো,ওমা শান্ত নেই
আহানা দরজা খোলা দেখে সেও বের হলো,করিডোর ফাঁকা,দূরে মানুষের কোলাহল শোনা যাচ্ছে
আহানা সেদিকেই গেলো,সোফায় রিয়াজের বাবা আর নানা দাদা সবাই একসাথে বসে চা খাচ্ছেন আর কাল বিয়ের বাবুর্চির রান্না নিয়ে কথা বলতেছেন
আহানা মাথায় গোমটা দিয়ে সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো,শান্তকে দেখতে পেয়ে মনটা জুড়ালো তার
শান্ত দূরে একটা সুপারি কাছের সাথে আটকানো সিটে বসে রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে,পাশেই নওশাদ সুপারি গাছটাতে উঠার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে
সূ্র্য লুকিয়ে নওশাদের ভিডিও করতেছে তার ফোনে
আহানা তাই আর সেদিকে গেলো না
নওমিরা সবাই চলে গেছে,কাল একেবারে ওর বাড়ি থেকে বিয়ে করে ওকে নিয়ে আসবে রিয়াজ ভাইয়া
আহানা সুপারি বাগানটার দিকে গেলো,জায়গাটা এত সুন্দর তার উপর বিকালবেলা, হাঁটতে জোস একটা ফিলিং আসতেছে আহানার
আহানা হেলেদুলে পুরো সুপারি বাগানটা ঘুরে দেখতে লাগলো
সুপারি বাগানটা যেখানে শেষ সেখানে বিরাট ঘাট দেওয়া একটা পুকুর
ঘাটটা দেখে আহানা রীতিমত অবাক
দৌড়ে ঘাটটার কাছে এসে দাঁড়ালো সে
দুপ করে বসে পুকুরটার দিকে চেয়ে রইলো আহানা,পুকুরটার চারপাশে বন আর বন, ওপারে কি আছে তা বোঝা দায়
আহানা এই ভেবে নিজের মাথা নিজে চাপড়ালো যে
কয়েক মাস আগে হলো সে এই পুকুরে ডুব দিয়ে মরে যাওয়ার চিন্তা করতো
আর এখন জীবনটা তার পুরো বদলে গেছে,মরার প্রশ্নই আসে না এখন
আহানা দেখলো পুকুরটার পশ্চিম পাশের কোণায় একটা গোলাপি রঙের পদ্ম ফুটে আছে একলা একলা
আহানা নিজের গায়ের দিকে একবার তাকালো,তার গায়ের শাড়ীটাও সুতির গোলাপি রঙের,এখন যদি সে ফুলটা পায় তাহলে সেই মানাবে
ভাবতে ভাবতে সে ঘাট থেকে নেমে সেদিকে ছুটলো, কথা হলো গিয়ে বন পেরিয়ে যেতে হবে
আসার সময় শান্তকে নিয়ে আসলে ফুলটা এতক্ষণে আমার মাথায় থাকতো,কি আর করার,এখন আবার বাগান পেরিয়ে তাকে ডাকতে যেতে পারবো না,সাথে করে ফোনটাও আনিনি
সাপ টাপ না থাকলেই হয়,আহানা শাড়ীটা একটু উঠিয়ে পা টিপে টিপে বন মাড়িয়ে পুকুরটার কোনায় এসে দাঁড়ালো,তারপর একটা শুকনো লাঠি খুঁজে সেটা নিয়ে ফুলটাকে কাছে এনে পানি থেকে তুলে নিয়ে ডাঁটাটা ফেলে দিলো
তারপর ফুলটা খোঁপায় বেঁধে নিলো,ইস কি যে ভাল্লাগতেছে,এবার নিজেকে আয়নায় দেখে মনটা জুড়াবো
এটা বলেই আহানা পিছন ফিরে নিচের দিকে তাকাতেই
তার সামনে দিয়ে কি একটা যেন গেলো,সে পুরোটা না দেখলেও লেজ দেখেছে
আর লেক দেখেই বোঝা গেছে এটা মাটিয়া সাপ
আহানা মনে হয় জীবনে এত জোরে চিৎকার দেয় নাই এখন মাত্র যে চিৎকারটা দিলো
পুরো পুকুর কেঁপে উঠেছে,এমনকি আহানার চিৎকার শান্তর কানেও গেছে
শান্ত সিট থেকে নেমে সুপারি বাগানটার দিকে চেয়ে রইলো তারপর বললো”এটা আহানার আওয়াজ না?
.
আহানা তো রুমে,ওদিকে আসবে কেন?
.
শান্তর কেন যেন ভয় লাগলো,দেরি না করে সে সেদিকে ছুটলো
সুপারি বাগানটার চারিদিকে একবার চোখ বুলাতে বুলাতে থেমে গেলো সে,দূরের পুকুরটার কোণায় গোলাপি রঙের শাড়ী পরা কাউকে দেখলো সে,রঙটা ঘাড়ো হওয়ায় সহজেই চোখে পড়েছে
শান্ত আরেকটু এগিয়ে এসে বুঝলো এটা আহানা
.
আহানা?তুমি এখানে কি করতেসো?এত জঙ্গলের ভিতরে গেসো কেন?
.
আমাকে বকা বাদ দিয়ে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান,এখানে একটা মাটিয়া সাপ দেখসি,আমি মরে যাব,আমাকে বাঁচান
.
ভালো হয়েছে,তেমাকে কে বলেছিলো এত বনের ভেতর যেতে,ওয়েট আমি আসতেছি
শান্ত বন পেরিয়ে আহানার কাছে এসে ওর হাত ধরে নিয়ে আসলো
.
কেমন হাসবেন্ড আপনি?
.
যাক বাবা,আবার কি করলাম?
.
আহানা কপাল কুঁচকে কিছু না বলেই বাসার দিকে চললো
.
এই মেয়ের মাথায় মাঝে মাঝে কি চলে আমি বুঝি না,হাত ধরে নিয়ে আসলাম আর সে বলে কেমন হাসবেন্ড আমি??
ওহহহহ,আচ্ছা তুমি চাইসো তোমাকে কোলে করে আনা দরকার ছিলো??
.
আহানা জিভে কামড় দিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে ছুটেছে
.
শান্ত মুচকি হেসে দিয়ে সেও আসতেছে
আহানা এবার দৌড়ই দিয়ে দিলো,খোঁপাটা খুলে মাথার ফুলটা পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ফুলটা ধরে সাথে আহানার হাত ও ধরে ফেললো
.
না সত্যি আমি কোলে নেওয়ার কথা মিন করে বলিনি
.
আমি কি বললাম তুমি কোলে নিতে বলেছিলা,আমি তো তোমার মাথার ফুলটা ধরলাম পড়ে যাচ্ছিলো,নাও ধরো এটা পরে নাও
বাচ্চাদের মত কান্ডকলাপ করে,ফুল নিতে উনি আফ্রিকার জঙ্গলে গিয়ে জামাই জামাই করে আসতে না পেরে
জঙ্গলে যাওয়া তাদেরকেই মানায় যারা এদের খাওয়ার সাহসিকতা রাখে,ঐ যে ম্যান বাসসেস ওয়াইল্ড শো টা দেখিও
ঐ লোকটা খায় না জঙ্গলের এমন কিছু বাদ নাই
.
এটা আফ্রিকান জঙ্গল ছিলো না,পুকুরের পাশে এরকম বন টন থাকেই
.
তো তাহলে চিল্লাচ্ছিলে কেন?
.
সাপ দেখছিলাম তাই,হইসে হইসে,এত সাপাই কেন দিচ্ছি আপনাকে?কে আপনি??আমার থেকে এত কৈফিয়ত কেনোই বা নিচ্ছেন?
.
শান্ত রেগে আহানার চুলের মুঠি টেনে ধরতেই রিয়াজের আম্মু সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন
.
শান্ত জিভে কামড় দিয়ে বললো”আহানা,চুলের একটুও যত্ন নাও না,কেমন উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে,মাঝে মাঝে তেল ও তো লাগাতে পারো
.
রিয়াজের আম্মু মুচকি হেসে বললেন”শান্ত আহানা আসো তোমরা সোফার রুমে এসে বসো,আমি পাঁচ পিঠা বানিয়েছি,খেতে আসো
.
আহানা নিজের চুল ছাড়িয়ে ব্রু কুঁচকে চলে গেলো সেদিকে
.
শান্ত এগিয়ে যাওয়া ধরতেই নওশাদ সূর্য কোমড়ে হাত দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো
.
কি ব্যাপার কি চাই?
.
সত্যি করে বল তুই আহানার চুল টেনে ধরছিলি কেয়ার দেখাতে নাকি রেগে?
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে যেতে যেতে বললো”দুটোই”
.
সূর্য নওশাদের কাঁধে হাত দিয়ে চশমা ঠিক করে বললো”আহানা যেমন গরম তেলের মতন,তেমনই শান্ত শুকনো মরিচের মতন,দুটোই একসাথ হলে ফোড়নের সৃষ্টি হয়
কোনোটাই কোনোটা থেকে কম যায় না বুঝলি
.
হুম ঠিক বলেছিস
.
আহানা সোফায় এসে বসতেই ২মিনিট বাদে একজন বয়স্ক মহিলা এসে বসলেন ওর পাশে
আহানা উনাকে সালাম দিলো,সম্ভবত রিয়াজের দাদি হোন উনি
উনি আহানাকে ভালো করে দেখে বললেন”তোমার আর আমার নাতি শান্তর নাকি নতুন বিয়া হইছে?”
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো
.
উনি চমকে বললেন”তাহলে তোমার গলায় কানে স্বর্ণ কই?নতুন বউরা এমন বেশে থাকে না তো
.
আহানা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,শান্ত কোথা থেকে এসে ওর পাশে বসে নিজের গলার স্বর্নের চেইনটা খুলে ওকে পরিয়ে দিতে দিতে বললো”আরে দাদি!!ওকে একটু বুঝান,ওর নাকি এসব পরলে ঘুম হয় না,তাই সব খুলে রাখছে,নেন আমি আমার গলারটাই পরিয়ে দিলাম”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
দাদি শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন”এভাবেই সবসময় বউয়ের পাশে ছায়া হয়ে থাকবা কেমন?”
.
শান্ত মাথা নাড়তে নাড়তে একটা পিঠা নিয়ে মুখে দিলো

সন্ধ্যার পর আহানা সেই আবার বিছানায় এসে বসেছে,শান্ত সোফায় গোল হয়ে বসে তার ফোনে কি যেন কাজ করছে,মনে হয় অফিসের কোনো কাজ
আহানা গম্ভীর লুক নিয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে,আর শান্ত ভুলেও তাকাচ্ছে না আহানার দিকে
এবার আহানার ফোন বেজে উঠেছে,মায়ের কল
আহানা হ্যালো বলতেই মা এক গাদা বকা শুরু করে দিয়েছেন
বকার মূল টপিক হলো একা কোথায় ঘুমাবে,কার সাথে ঘুমাবে আজ রাতে
মা তো আর জানে না উনার গুনধর মেয়ে বিয়ে করে বসে আছে,আর সে এখন তার বিয়ে করা বরের সাথে এক রুমে আছে
আহানা ফোনটা এক সাইডে রেখে বালিশ চাপা দিয়ে ফিসফিস করে শান্তকে ডাকলো
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বললো”কি?”
.
আমাদের যে বিয়ে হয়েছে সেটা আমার মাকে বলবো?
.
খবরদার না!!মা জানলে আমাকে ফ্রেন্স ফ্রাই করবে
.
আহানা ঢোক গিলে বালিশের তলা থেকে ফোন নিয়ে বললো”মা শুনো,আমি রিয়াজ ভাইয়ার ছোট বোনের সাথে ঘুমাবো আজ”
.
মা এবার একটু থামলেন তারপর বললেন “শান্ত কোথায়? ওকে দে”
.
আহানা বিছানা থেকে নেমে শান্তর দিকে তার ফোনটা বাড়িয়ে ধরলো
শান্ত হাতে নিয়ে হ্যালো বলে সব কিছুর উত্তরে জি জি বলে যাচ্ছে শুধু
.
কথা শেষ হতেই আহানা ওকে জিজ্ঞেস করলো” কি বললো মা?”
.
বললো আহানাকে দেখে রেখো,বেশি বাঁদরামো করে,শয়তানি করে এসব,তোমাকে প্রয়োজনে মেরে ঠিক করারও অধিকার দিয়ে দিসে আমাকে
মাই গড!! আমার হাতটা কেমন পিনপিন করছে,কাউকে পেটালে খুব ভালো লাগতো
.
আহানা ভ্রু কুঁচকে আবার বিছানায় এসে বসলো,কি বোরিং লাগতেছে,এভাবে কতক্ষণ ধরে এই ছেলের মুখই দেখে যাবো আমি?
দেখতে দেখতে সব মুখস্থ হয়ে গেছে আমার
তার বামপাশের ব্রুর সাথে এটাচড একটা মাঝারি সাইজের তিল আছে
নাক এত চিকন বাপরে বাপ,ছোটবেলায় আমি নাকি বিছানা থেকে উলটে এর নাকের উপর গিয়ে পড়েছিলাম তাহলে নাক এত চিকন কেমনে,ভোঁতা হয়ে যাওয়ার কথা তো!
মা তাহলে ভুল বলেছে,বরং সেই আমার নাকের উপর এসে পড়েছে
এদিকে বাইরে বের হয়ে যে ঘুরঘুর করবো তার ও উপায় নেই,এখানের কারোর সাথেই কম্পোর্ট ফিল করি না,সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত
আর আমার বরকে দেখো সেও তার অফিসকে ফোনের মাধ্যমে এই রুমে ঢুকিয়ে ফেলেছে
আমি কি করতাম??আমি বরং ঘুমাই,কিন্ত এই সন্ধ্যাবেলায় ঘুমানো কি ঠিক হবে?
মা তো বলে সন্ধ্যায় ঘুমালে নাকি ফকির হয়ে যায়
উফ!!
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে চেয়ে বললো”মনে মনে আমাকে গিলে খাচ্ছো কেন?”
.
শান্তর এমন সত্যি কথা শুনে আহানার কাশিই উঠে গেলো,কাশতে কাশতে বললো”কিসের গিলে খাওয়া,আমি কাঁচা জিনিস খাইনা
.
তাহলে আরেকদিকেে ফিরে বসে থাকো,আমি খেয়াল করছি সেই কখন থেকে তুমি ড্যাবড্যাব করে আমাকেই দেখতেছো
.
তো কি করবো,রুমে আর কোনো জন্তু থুক্কু মানুষ নাই,কার দিকে তাকাবো?
আমার বেরিং লাগতেছে
.
বোরিং লাগতেছে?
.
হ্যাঁ
.
কাজ পাচ্ছো না?
.
হ্যাঁ
.
২মিনিট,তোমাকে একটা কাজ দিব ওয়েট
.
শান্ত সোফার থেকে উঠে রুম থেকে চলে গেলো
তারপর ফেরত আসলো দুটো বাটি নিয়ে
একটা খালি আরেকটাতে পোলাও চাল আর মসুর ডাল মিক্স করা
শান্ত আহানার হাতে বাটি দুটো ধরিয়ে দিয়ে বললো”নাও বেছে বেছে এই খালি বাটিতে মসুর ডাল রাখো,তোমার তো কাজ নাই,আঞ্চলিক ভাষায় একটা প্রবাদ আছে”কাম না থাকলে ডালে চালে মিলাইয়া বাছো”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বাটি গুলো নিয়ে ভিক্ষুকের মত বসে রইলো
শান্ত আবার সোফায় গিয়ে নিজের কাজে মন দিয়েছে
আহানা ডাল চাল আলাদা করতে করতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে ততক্ষণে,বাটি এক জায়গায়,ডাল আরেক জায়গায়,চাল আরেক জায়গায়
আহানা হাত পা ছড়িয়ে মরার মতো ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছে
.
শান্তর কাজ শেষ,হাতের ঘড়িতে চেয়ে দেখলো রাত সাড়ে ৮টা বাজে,তারপর সামনে তাকাতে তার চোখ কপালে
আহানা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুম দিছে একদম
বাটি একটা পায়ের কাছে আরেকটা মাথায় টুপির মতন হয়ে আছে,সারা বিছানায় গোলাপের পাপড়ির জায়গায় এখন চাল আর চাল,ডাল আর ডাল
শান্ত নিজের মাথায় এক বাড়ি দিয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো
.
এই মেয়েটা একটা ২বছরের বাচ্চাকেও হার মানাবে,এত বড় একটা মেয়ে হয়েছে আর তার কাজ দেখো!
.
শান্ত আর আহানাকে জাগালো না,রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রিয়াজের রুমের দিকে
সেখানে নওশাদ, সূর্য ও আছে
রুমে ঢুকে দেখলো রিয়াজ সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে শুয়ে ভিডিও কলে নওমির সাথে কথা বলতেছে
নওশাদ টিভি দেখতে দেখতে পপকর্ণ চিবোচ্ছে
আর সূর্য পাবজি খেলায় ব্যস্ত
শান্ত চুপচাপ বিছানায় এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
নওশাদ টিভি দেখতে দেখতে বললো”কিরে?আহানা তোরে বিছানায় জায়গা দেয়নি?”
.
রিয়াজ ভিডিও কলটা রেখে বললো”আমি তো তোকে সোফায় শুতে বলেছিলাম,সেটাও দখল করলো নাকি?”
.
সোফায় শোয়ার অভ্যাস নাই আমার,আর রইলো কথা বিছানার
আহানার টাইম যাচ্ছে না বলে ওরে ডাল চাল মিক্স করে আলাদা করতে দিয়েছিলাম,সে এখন খিচুড়ি বানিয়ে ফেলেচে বিছানায়
.
সূর্য নওশাদ আর রিয়াজ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
.
শান্ত মুখ বাঁকা করে পপকর্ণ মুখে দিয়ে টিভি দেখায় মন দিলো
আহানা ৯টা বাজার কয়েক মিনিট আগেই জেগে গেছে,বিছানার এমন অবস্থা দেখে নিজেই লজ্জা পেলো তারপর জলদি করে চাল ডাল সব বাটিতে নিয়ে বিছানা ঠিক করে মুখটা ধুয়ে এসে রুম থেকে বের হলো সে
রিয়াজ ভাইয়ার রুম থেকে চিল্লাপাল্লা শোনা যাচ্ছে,আহানা সেদিকে না গিয়ে রিয়াজের আম্মু যেখানে সেদিকেই গেলো
উনি রিয়াজের দাদি আর নানিকে নিয়ে নওমিকে কি কি গহনা দিবেন সেসব হিসাব করতেছেন
আহানা সেখানে এসে বসলো,রিয়াজের নানি বললেন”তা আহানা তোমাকে শান্তর মা কেমন গহনা দিয়েছিলো?”
.
আহানা ভাবলো এত মিথ্যা না বলে সত্যিটাই বলে দিই
.
আসলে উনারা জানেন না আমরা যে বিয়ে করেছি
.
ওমা কি কও!জানে না কেন?
.
একটা কারণে,পরে জানবে,আপনারা প্লিস আমার মা আর শান্তি আন্টিকে কিছু জানাবেন না
.
উনাাদের ঘাড়ে এত কাজ যে তারা আহানার কথায় মাথা নাড়িয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
আহানা এবার উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিলো ডাইনিং টেবিল থেকে তারপর অন্ধকার করিডোর দিয়ে রোবটের মতো হেঁটে হেঁটে রুমটার দিকে যাচ্ছে সে
শান্ত রিয়াজ, সূর্যর সাথে চুটিয়ে মদ খেয়েছে এতক্ষণ
এবার ওদের বাই বলে রুম থেকে বের হতেই আহানার সাথে এক ধাক্কা খেলো সে
আহানা প্রথমে ভয় পেলেও পরে গায়ের ঘ্রানে বুঝলো এটা শান্ত
.
কোথায় ছিলেন আপনি?
.
তোমার কি?
.
শান্ত তাদের রুমের দিকে চললো
আহানা নাকে হাত দিয়ে আসতেছে পিছু পিছু,মদের তীব্র গন্ধ ভাসতেছে চারিদিকে
শান্ত হেলেদুলে দুম করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছে
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো”আপনি মদ খেয়েছেন?”
.
হু
.
কেন?কে ছ্যাকা দিছে আপনাকে?
.
মদ খাইতে ছ্যাকা লাগে না,এমনিও খাওয়া যায়,মাথা খারাপ করিও না যাও
.
কোথায় যাব,আমার এই বাসায় ভাল্লাগতেছে না,মনে হয় আমার পৃথিবীতে আমি ছাড়া কেউ নাই,কোথায় ভাবলাম আপনার সাথে ঝগড়া করবো সেটাও হলো না,আপনি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গেছেন
.
শান্ত শোয়া থেকে উঠে বসে পাঞ্জাবির ২টা বোতাম খুলে বড় করে শ্বাস নিলো তারপর বললো”আমি মদ খেলে আমাকে নেশায় ধরে না,হেভিট আছে”
.
ওহ
.
জি,তো ঝগড়া করতে মন চায় বুঝি আপনার?
.
না থাক
.
আহানা সোফায় গিয়ে বসে পানিটুকু খেয়ে চুপ করে রইলো
শান্ত আবারও শুয়ে পড়েছে
আহানার নজর গেছে এবার শান্তর ফোনের দিকে
পা টিপে টিপে সে শান্তর কাছে এসে ফোনটা নিয়ে আবারও এক দৌড়ে সোফায় চলে আসলো
ওমা ফোন দেখি ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক
কি করা যায়,ভাবতে ভাবতে আহানা শান্তর কাছে এসে ওর ডান হাত নিলো
এক এক করে ডান হাতের পাঁচটা আঙ্গুল মেলালো কিন্তু লক খুললো না
এবার বাম হাতের আঙ্গুল গুলো দিতে যেতেই শান্ত চোখ খুলে অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে থাকলো
আহানা মনে হয় হার্ট এটাক হয়ে মরেই যাবে
হাত থেকে ফোনটা ছেড়ে পালাতে নিতেই শান্ত টান দিয়ে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
ঠিক ধরেছিলাম আপনাকে নেশায় ধরেছে
.
জি না,কাছে এনেছি কি কিস করতে নাকি?কাছে এনেছি দেখাতে যে আমার ফোনের লক কি করে খুলে,তুমি হুদাই চোরের মতো বিহেভ করো
.
শান্ত নিজের বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলটা দিয়ে খুললো লক
.
আহানা ভালো করে দেখে নিয়ে বললো”ভালো তো!! আমাকে দেখান কেন,আমার কি এতে?”
.
তুমি না মূহুর্তের মধ্যে রুপ,মতলব দুটোই পাল্টাতে পারো
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আবারও সোফায় এসে দপ করে বসে পড়লো
শান্ত শুয়ে শুয়ে ফোন টিপে টিপপে বললো”মাকে বিয়ের ব্যাপারটা মায়ের মুড দেখে বলবো একদিন,এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছি হুটাহাট করে তা তো আর বলা যায় না
আমার মা আবার রাগ করার কত কারণ বাঁধায় করে রাখেন সবসময়
যত রাগ সব আমার উপর দিয়েই ঝাড়ে,কারণ আমি তাকে ভয় পাই তাই
আমি বলা ছাড়া তুমি বলবা না,তুমি তোমার মতো থাকো,বিয়েটা করেছি জাস্ট একটা রিজনে
আমাদের মধ্যে না কখনও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে হবে
না কোনোদিন আমরা একজন আরেকজনকে মেনে নিব
.
আপনার রিপিট করতে হবে না,আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলেও আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে নারাজ,আপনাকে আমার জাস্ট ভাল্লাগে না
.
কি কারণে?
.
প্রথমত ছেলে হয়ে আমার সাথে পাল্লা দিয়ে ঝগড়া করেন সবসময়
দ্বিতীয়ত আমার মধ্যে কোনো গুন দেখেন না দেখতেও চান না, সারাদিন দোষটাই দেখেন
তৃতীয়ত মারামারি বেশি করেন আমার সাথে
.
এবার শুনো আমার কাছে তোমাকে কেন ভাল্লাগে না
.
আগে শুনুন,আমাকে যদি বিচ্ছিরি আর কোনোদিন বলেছেন তো নেক্সট টাইম আমি শাড়ী পরে চুল ছেড়ে দিলে যদি হা করে চেয়ে থাকতে দেখি আপনাকে তো থাপ্পড় আরও একটা দিব
.
বলতে তো দিবা
প্রথমত তুমি তোমার চেয়ে বয়সে বড় একটা ছেলের সাথে সারাদিন ২৪ঘন্টা ঝগড়া করো
দ্বিতীয়ত আমার কাজে উল্টা পাল্টা কান্ড ঘটাতে তুমি ওস্তাদ
তৃতীয়ত আমাকে প্রচুর জ্বালাও
.
তো?এরপরেও তো জোর করে ধরে বিয়ে করে নিয়েছেন,সেটার কি হবে? আমি কি বলছি শান্ত ভাইয়া! শান্ত ভাইয়া! প্লিস ম্যারি মি
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে বললো”পাগলেও নিজের ভালো বোঝে বাট আফসোস তুমি পাগল না,পাগলের চেয়েও পাগল
তোমাকে সাইমন উঠায় নিয়ে গেলে তখন তোমার ভাল্লাগতো তাই না?
ভালোই ভালোই উনার লাইফ সেভ করছি আমি
কোথায় থ্যাংকস দিয়ে সকাল বিকাল চায়ের কাপ হাতে আমার সমানে দাঁড়িয়ে থাকবে সেটা না করে উঠে পড়ে লেগে আছে আমি কেন তাকে বিয়ে করেছি তা জানার জন্য
.
আহানা সোফার থেকে একটা কুশন নিয়ে শান্তর গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো”সকাল বিকাল চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো না??আমাকে কি কণা পাইছেন??আমি আপনাকে দিয়ে রুটি বানিয়ে সেটা খাওয়ার ক্ষমতা রাখি,আমি হলাম মিসেস শাহরিয়ার আহানা 😎
.
এহহহ!এক দিক দিয়ে আমার পরিচয় লাগায় নিজের নামের সাথে আবার বলে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়াবে না উনি
কি বললা আমাকে রুটি বানিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা রাখো?
তাহলে আমি যখন বিয়ের জন্য চেপে ধরছিলাম তখন কোথায় ছিল তোমার সো কলড ক্ষমতা?
.
আহানা হালকা কেশে এদিক ওদিক তাকালো তারপর নরমালি বললো”আমি আমার ক্ষমতা ছোটখাটো বিষয়ে ইউজ করি না”
.
বের হও রুম থেকে,কথার কি ছিরি রে বাবা!!
আমার মা নাকি এই মেয়ের গুনে মুগ্ধ!
.
আহানা মুখটা বাঁকাতে বাঁকাতে চলে গেলো রুম থেকে
.
সবাই এক এক করে ডাইনিংয়ে খেতে বসতেছে
আহানা রিয়াজের মাকে হেল্প করলো কিছু তারপর বললো “সে বেশি খাবে না,তার খিধা নাই”
আন্টি তো ওকে শাসন করে বললো “এ বয়সের মেয়ে বেশি বেশি খাবা তাহলেই তো বউ বউ লাগবে,মোটাতাজা”
.
শান্ত ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে আছে, মাথা ফেটে যাচ্ছে তার,একটু কফি হলে ভালো হতো এটা বলেই সামনে তাকিয়ে দেখলো টেবিলের উপর ধোয়া ওঠা কফির মগ
খুশি হয়ে মগটা হাতে নিতেই দরজার দিকে তাকালো সে
আহানা চলে গেছে মগটা রেখে, শান্ত যখন দরজার দিকে তাকালো তখন আহানার শাড়ীর গোলাপি আঁচলটাই শুধু দেখেছে সে
তারপর হেসে কফিটা খেতে খেতে সোফায় হেলান দিলো শান্ত
.
আহানা উঁকি দিয়ে দেখলো আবার,শান্ত কফিটা খাচ্ছে কিনা
হুহ!আমি নাকি বউয়ের দায়িত্ব পালন করি না,এখন কার হাতের বানানো কফি খেয়ে মন জুড়াচ্ছে?
এই লোকটা আমার কোনো গুনই দেখে না
নওমি আপু আবার বললো উনি নাকি বলেছেন আমি শুধু তার
কেউ গলা কেটে বললেও আমি এই কথাটা বিশ্বাস করবো না
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
রিয়াজের মায়ের কড়া শাসনে আহানা অবশেষে ডিনার করতে রাজি হলো,শান্ত কফি খেয়ে একটু চাঙ্গা ফিল নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে সবেমাত্র
আহানা ভেবেছে শান্ত বুঝি আজ খাবার খেতে চাইবে না তাই সে নিজেই এক প্লেট খাবার হাতে করে শান্তর জন্য নিয়ে আসতেছে এদিকে
শান্ত সোজা রিয়াজের রুমে চলে গেছে,সেখানে রিয়াজ,সূর্য আর নওশাদ একজন এক জায়গায় মরার মত পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর আবোলতাবোল বলে যাচ্ছে,মদ বেশি খেয়েছে তারা,,তাই এই হাল
শান্ত ওদের সবার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে আবার বেরিয়ে এলো,বের হতেই দেখলো আহানা খাবার হাতে রুমে ঢুকতেছে
শান্ত ও সেদিকে গেলো কৌতুহলবশত
আহানা এদিক ওদিকে তাকিয়ে শান্তকে দেখতে না পেয়ে আবারও পিছন ফিরলো,শান্ত কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
কি ব্যাপার?
.
খাবেন না?আপনার জন্য খাবার নিয়ে এলাম
.
হুম খাবো,একটু দেরিতে,রাত ১০টা বাজে,ঘুমিয়ে পড়ো তুমি
.
কোথায়?বিছানায় নাকি সোফায়?
.
ওকে টস করি,,
.
শান্ত পকেট থেকে একটা ৫টাকার পয়সা নিয়ে বললো সেতু পড়লে আমি,শাপলা পড়লে তুমি সোফায় শোবে
.
ওকে
.
শান্ত পয়সাটা উপরের দিকে মারলো ঘুরিয়ে
শাপলা পড়েছে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বিছানায় শুতে গেলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বালিশ একটা নিয়ে সোফায় এসে বসেছে
শান্ত কিছুক্ষণ আপন মনে তার ফোনে গান শুনেছে তারপর টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে খাবার খেয়েও নিয়েছে
আহানা একটা ম্যাগাজিন পড়েছে এতক্ষণ ধরে,সম্ভবত হাস্যরসিক একটা ম্যাগাজিন,সব কৌতুক নিয়ে
আহানা হেসে হেসে অনেকটা সময় পার করলো তারপর চোখে ঘুম নেমে আসতেই সোফায় শুয়ে পড়লো সে
শান্ত গান শুনতে শুনতে এবার তার বিরক্তি এসে গেছে তাই ফোনটা এক পাশে রেখে বিছানা থেকে নামলো রুমের লাইট অফ করতে,চোখ গেলো আহানার দিকে
আহানা হাত পা গুটিয়ে সোফায় কোনোরকম করে ঘুমাচ্ছে
শান্ত লাইটটা অফ করে দিয়ে বিছানায় ফেরত চলে আসলো
পরেরদিন সকালে আহানা চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করেছে,পাশে শান্ত নেই,সোফাতেও নেই
কিন্তু আমি তো সোফায় ঘুমিয়েছিলাম,এখানে এলাম কি করে,আর উনি কোথায়??
আহানা তড়িগড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর রুম থেকে বের হতে হতে একবার ঘড়ির দিকে তাকালো সে
৮টা বাজে তখন
বিয়ে বাড়ি বলে কথা,হইচই লেগে আছে চারিদিকে
আহানা করিডোর পেরিয়ে রিয়াজের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থেমে সেদিকে তাকালো একবার
শান্ত আর নওশাদ মিলে রিয়াজের বিয়ের শেরওয়ানি দেখতেছে আর দাম নিয়ে কথা বলতেছে
আহানা একটু এগিয়ে এসে বললো”এই যে শুনুন”
.
শান্ত পিছনে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকালো
এই মেয়েটাকে হাজারবার মানা করার পরেও এই যে শুনুন বলবে আমাকে,আরে আমি কি ওর জামাই লাগি!??
ও হ্যাঁ সত্যি তো এখন জামাই লাগি
ভাবতে ভাবতে শান্ত দরজার কাছে এসে বললো”কি চাই?”
.
আপনি আমাকে সোফার থেকে তুলে বিছানায় এনেছেন তাই না?
.
আমার ঠেকা পড়েছে তাই না?তুমি নিজেই আসছো বিছানায়
.
মিথ্যা বলবেন না একদম,আমি নিজে কেন আসবো?
.
ঘুমের ঘোরে,আর কেন?
.
আপনাকে বলেছিলাম না আমাকে ছুঁবেন না
.
আরেহ তুমি নিজে এসে শুইছো আমার কি দোষ এতে?
.
ঘুমের ঘোরে মানুষ বিছানা থেকে পড়ে যায় শুনেছিলাম আর সোফা থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে বিছানায় এসে শোয় এ প্রথম শুনলাম
.
তাই?
.
তাই?
আপনি!!আপনি খুব খারাপ!
.
আহানা বকতে বকতে চলো গেলো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
কাল রাতে সে আহানাকে তুলে বিছানায় নিয়ে এসেছিলো আর নিজে গিয়ে সোফায় শুয়েছিলো
কারণ আহানা ঘুমের মধ্যে কোমড় ধরে বিরক্তি নিয়ে একবার একদিকে ফিরছিলো বারবার
বোঝাই যাচ্ছিলো যে তার সোফায় শুতে কষ্ট হচ্ছে
এদিকে শান্তর ও অভ্যাস নেই সোফায় শোয়ার কিন্তু কি করবে,আহানার কষ্ট ও সহ্য করা যাচ্ছিলো না সেই মূহুর্তে
.
রিয়াজের আম্মু এসে বললেন শান্তর আম্মু আর আহানার আম্মু এসে গেছে
শান্ত সেদিকে গেলো জলদি করে,আহানার মা আহানাকে দেখে তো অবাক
গোলাপি শাড়ী,গলায় সোনার চেইন,মাথায় গোমটা দিয়ে এদিক ওদিক হাঁটতেছে, যেন বিবাহিত সে
মা এগিয়ে এসে আহানার হাতের কুনুই ধরে টেনে এক কোণায় নিয়ে গেলো
.
আরে মা তুমি,কখন এলে?
.
আগে বল এমন বউ বউ সেজে হাঁটতেছিস কেন?মানুষ তো বলবে তুই বিবাহিত
আর তোর গলার চেইন এটা পেলি কই,দেখে তো সোনার মনে হচ্ছে,আরেহহ এটা তো শান্তর
.
আহানা ঢোক গিলে বললো”ঐ আসলে আমি এটা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম,হ্যাঁ এটা শান্ত ভাইয়ারই
উনাকে সকাল থেকে দেখিনি তো তাই গলায় পড়ে নিয়েছি,সুন্দর লাগছে না আমাকে?”
.
হুম
কিন্তু!তোর আর শান্তর হাবভাব আমার কেন জানি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে,কি লুকাচ্ছিস তোরা বল তো?
আর সত্যি করে বল কার সাথে কাল রাতে ঘুমিয়েছিলি?
.
আহানা মুখটা শক্ত করে বুকের ভেতর এক বালতি ভয় নিয়ে বললো”রিয়াজ ভাইয়ার বোন মুনমুনের সাথে”
.
কই সে?
.
আহানা কাল থেকে দু তিনবার একটা বাবু টাইপের মেয়েকে দেখেছিলো মনে হয় সে মুনমুন
তাই বললো”দাঁড়াও,ঐ তো সোফায় বসে চিপস খাচ্ছে সে”
.
আচ্ছা
.
শান্ত রুটি মুখে দিয়ে সোফার রুমে আসতেই ওর মায়ের মুখোমুখি পড়লো
আর নিতু ও সোফায় বসে আছে একপাশে,রিয়াজের আম্মু তাদের চা নাশতা দিয়ে চলে গেছেন,আর আহানার মা ওকে চেপে ধরে ফিসফিস করে কি যেন বলতেছে
.
শান্ত পালাতে গিয়েও পারলো না,নিতু ডাক দিয়ে বসলো
শেষে মায়ের পাশে এসে সোফায় বসলো সে
.
এই তো শান্ত এসে গেছে,নে তোর গলার চেইনটা খুলে ওকে দিয়ে দে
.
আহানা কপাল কুঁচকে চেইনটা খুলে শান্তকে দিতে দিতে বললো”ধরেন ভাইয়া,আপনার চেইন,পড়ে গেছিলো এটা আর আমি কুড়িয়ে পেয়েছি,আপনার জিনিস আপনি ফেরত নেন”
.
শান্ত আগামাথা কিছুই বুঝতেছে না,তাও আহানার চোখ রাঙানো দেখে চেইনটা সে ফেরত নিলো
.
আরে আরে আমার মেইন মেহমানরা যে এসে গেছে!!
কথাটা বলে রিয়াজের দাদি এসে আহানার মায়ের পাশে বসলেন
শান্ত আহানাকে চোখ টিপে এদিকে আসতে বললো
আহানা তাই সুযোগ বুঝে উঠে শান্তর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো
.
এই শুনো,দাদি সত্যিটা যদি বলে দেয়?
.
আমি কি জানি?এমনিতেও মা আসার পর থেকে ১০০টা প্রশ্ন করতেছে আমাকে
আপনি সত্যিটা বলে দেন না প্লিস
.
পাগল নাকি!আমার মায়ের মুখ দেখছো আজ??কেমন করে রাখছে
.
উনি মুখ ভার করে রেখেছেন শুধুমাত্র এক কারণে আর সেটা হলো আপনি বিয়েতে রাজি নন
.
এই তোমরা দুজন কি ফিসফিস করতেছো?আমরাও একটু শুনি
.
শান্ত বললো”ঐ আসলে আন্টি! রিয়াজের বিয়ে নিয়ে একটু প্ল্যান করছিলাম আর কিছু না”
.
শান্ত আহানার হাত ধরে সোফার রুমে থেকে বেরিয়ে আসলো,যতক্ষন ওখানে থাকবে ততক্ষনই সবার নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে
শান্ত রিয়াজকে রেডি করতে ওর রুমে গেছে
আর আহানা সেই আগের রুমে বসে আছে চুপচাপ,মায়ের কাছে গিয়ে বসা যাবে না,শান্তর কড়া নিষেধ
মা আহানাকে খুঁজতে খুঁজতে সেই রুমটায় চলে আসলো,রুমে এসে তো মায়ের চোখ কপালে,সারা রুমের ফ্লোরে গোলাপের পাপড়ির ছড়াছড়ি
.
কিরে তুই এই রুমে কি করিস.আর এটা তো দেখি বাসর ঘরের মতন
.
আহানা লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে তোতলাতে তোতলাতে বললো”ইয়ে না মানে কোথাও বসার খালি জায়গা পাচ্ছিলাম না তো তাই এখানে আসলাম”
.
আমার কাছে থাকতি,চল এখান থেকে
.
মা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন আবার সেই সোফার রুমে
রিয়াজকে রেডি করিয়ে নওশাদ,সূ্র্য আর শান্ত ও রেডি হয়ে নিয়েছে,এবার কারে উঠে বসবে
শান্ত আহানাকে সবখানে খুঁজে না পেয়ে শেষে সোফার রুমে পেলো
আহানার মা ওকে চেপে ধরে বসে আছে
.
শান্ত চোখ রাঙিয়ে বুঝালো যে ওকে মানা করেছে এদের সাথে যেন না বসে সে আহানাই কিনা আবারও এখানে এসে বসলো
আহানা ইশারা ইঙ্গিতে বুঝালো তার দোষ নাই,মা জোর করে এনেছে
.
শান্ত মায়ের দিকে চেয়ে বললো”মা আমি রিয়াজের সাথে বিয়ের গাড়ী করে ওর শশুর বাড়ি রওনা হচ্ছি, তোমরা রিয়াজের আম্মু,দাদির সাথে এসো,আমি আহানাকে নিয়ে যাই কেমন?
.
শান্তর মা আর আহানার মা ভূত দেখার মতন শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছেন
শান্ত হালকা কেশে বললো”কেন? কোনো সমস্যা আছে কি?”
.
আহানার মা বললেন”না সমস্যা নেই,যাও তোমরা”
.
আহানা শান্তর সাথে যেতে যেতে বললো”কি ব্যাপার এত ভালোবাসা প্রদান করছেন?শরীর ঠিক আছে তো আপনার?”
.
আরেহহ আমি তোমাকে আন্টির থেকে সরিয়ে আনার জন্য বললাম,দেখো না কেমন প্রশ্ন শুরু করছে তোমাকে
.
ওহ আচ্ছা,ভালো করেছেন
.
এক মিনিট,তৈরি হওনি কেন?১০মিনিট আছ হাতে,জলদি করে রেডি হয়ে আসো
.
আচ্ছা আচ্ছা
.
আহানা গিয়ে মাকে বললো শাড়ীর প্যাকেটটা দিতে
মা একটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে বললেন এটা নাকি শান্তর মা কাল উনাকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়ে এটা আহানার জন্য কিনেছিলো
আহানা প্যাকেটটা নিয়ে সেই রুমে এসে শাড়ীটা পরেই দৌড় দিলো আবার
বিয়ের গাড়ীর সামনে এসে দেখলো শান্ত হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর অপেক্ষা করছে
আর রিয়াজ সূর্য আর নওশাদ একটু দূরে ফটোশুট করতেছে
.
এই যে শুনুন!! ধুরুন তো এটা
.
আহানা নিজের কানের দুল শান্তর হাতে দিয়ে চুলগুলো বাঁধতে লাগলো
বাঁধতে বাঁধতে বললো”ভেবেছি লেট হয়ে গেছে তাই জাস্ট শাড়ীটা পরেই বেরিয়ে পড়েছি”
.
আহানার মা আর শান্তি রহমান জানালা দিয়ে ওদের দিকেই চেয়ে আছেন
আহানার মা শান্তর মায়ের হাতে হাত রেখে বললেন”দেখলা বুবু,কি সুন্দর লাগছে ওদের,মনে হয় যেন সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে এমন লাগতেছে”
.
শান্তি রহমান মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললেন কথাটা শুনে
.
বুবু তুমি চিন্তা করিও না,আমি বলেছি না ওরা একদিন না একদিন একজন আরেকজনকে ঠিকই বুঝবে,দেখোই না কদিন আগে দুটোই একটা আরেকটার মুখ দেখতে চাইতো আর এখন একসাথে থাকে সবসময়,এবার শুধু ওরা মুখ ফুটে বলার পালা
.
রিয়াজ গিয়ে প্রথমে বসলো তারপর শান্ত আর আহানা ওর সাথে বসেছে,সামনের সিটে নওশাদ আর সূর্য কিলাকিলি করে কোনোরকম বসে পড়লো
উদ্দেশ্য ঢাকা ধানমন্ডি,নওমিদের বাসা ওখানেই
আহানা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,শান্ত রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে আজ কি কি করবে ওরা সেটা নিয়ে
নওশাদ বলে উঠলো”শান্ত তুই কিন্তু একবার ধুমধাম করে বিয়ে করবি,ওদিনের বিয়েতে না ছিলো কোনো মজা,না ছিলো কোনো গানবাজনা ”
.
শান্ত হেসে বললো”ওটা বিয়েই ছিলো না,জাস্ট একটা চুক্তি ছিলো যেটা দায়িত্বের খাতিরে করেছিলাম,তোরা তো জানিসই আমি আর আহানা একে অপরকে পছন্দ করি না”
.
কথাটা আহানার বুকে গিয়ে বাঁধলো তারপরে মনে হলো ঠিকই তো বলেছেন উনি
.
বাই দ্যা ওয়ে তোরা কাল বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজিয়েছিলি কেন?
.
শয়তানি করছিলাম,আমরা তো ভেবেছিলাম তোরা দুজন দুজনকে মেনে নিয়েছিস
.
এটা ভুল,আমরা জীবনেও এক হবো না
.
আহানার মনটা খারাপ হয়ে গেলো,কেন হলো সে জানে না
তবে এতদিন ভাবতো শান্ত ওকে কিছুটা হলেও লাইক করে বাট এখন এ সবকিছু শুনে মনে হচ্ছে সব তার ভুল ধারনা ছিলো
শান্ত ওকে ভালোইবাসে না,লাইক ও করে না
বিয়েটা সে আমার সেফটির জন্যই করেছে
আর আমি কিনা কত কি ভেবে বসেছিলাম
.
ধানমন্ডিতে নওমিদের বাসার গেটের সামনে আসতেই ওরা দেখলো মেয়েদের ভিড় বরাবর গেটের কাছে
রিয়াজ পকেট থেকে ৫হাজার টাকা গুনে গুনে নিয়ে নওশাদের হাতে দিলো লুকিয়ে রাখার জন্য
বাসা থেকে আসার সময় মা ১০হাজার টাকা দিয়ে বলেছেন গেটে টাকাগুলো দিতে,এত টাকা কেন দিব?৫হাজার দিব বাকিগুলো নওশাদ তোর কাছে রাখ আপাতত
এগুলো দিয়ে আমি হানিমুনে যাবো
.
রিয়াজ তোর মতো কিপটা আর দেখিনি আমি,যাই হোক তোর বিয়ের গিফট হিসেবে তোর আর নওমির জন্য আমি বালির টিকেট কেটেছি,হানিমুন প্যাকেজে,সো টাকা নিয়ে ভাববি না
.
রিয়েলি?
.
ইয়াহ!
.
তুই আমার কলিজা রে দোস্ত!
.
নওশাদ ব্রু কুঁচকে বললো”শান্ত এটা ঠিক না,আমিও ওর জন্য হানিমুনের প্যাকেজ হিসেবে সাজেকের মাচাং হোটেলটায় বুকিং দিয়েছি”
.
আরে সাজেক?আমি একসাথে দুটায় যাব কি করে?
.
সমস্যা নেই,বালি ট্যুরে তোর যেদিন ইচ্ছা সেদিন যেতে পারবি, আমি ডেট আনফিক্সড করে রেখেছি
.
নাইস
.
সূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো”আমি কিন্তু হানিমুন প্যাকেজ কাটিনি,আমি তোর সংসারের কিছু এ্যাসেসরিস কিনেছি,ওসব গিফট দিব”
.
গাড়ী থেকে নামার পর থেকে শান্ত খেয়াল করলো আহানা কেমন মনমরা হয়ে গেছে,মুখে হাসি উধাও হয়ে গেছে তার
কণা আর নওমির বোনেরা মিলে গেট আটকিয়ে রেখেছে
শান্ত এসে সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির হাতাটা একটু উঠিয়ে বললো”কে আমার বেস্টফ্রেন্ড থেকে টাকা নিতে চায়,দেখি একটু তাকে”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩০+৩১+৩২

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সাইমন ভিড়ের মাঝে আহানাকে আর শান্তকে খুঁজতেছে,রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে
শান্ত একটা খালি মদের বোতল হাতে নিয়ে হনহনিয়ে এসে সাইমনের সামনে দাঁড়ালো
মাথায় ফাটালে মরে যাবে পরে জেলের ভেজাল বইতে হবে
তাই শান্ত সাইমনের হাতেই ফাটালো এই হাত দিয়ে সে আহানাকে কষ্ট দিয়েছিলো
সাইমন চিৎকার করে নিচে বসে গেছে সাথেসাথে
একটা আহাজারি লেগে যাওয়ায় গান অফ হয়ে গেছে ততক্ষণে
লালা নীল বাতি বন্ধ হয়ে সাদা বাতি জ্বলে উঠেছে,সবাই অবাক হয়ে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,ওর চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে সাইমনের রক্তাক্ত হাতটা পা দিয়ে মাড়িয়ে ধরে বললো”আহানা আমার!শুধু আমার!তাকে ছোঁয়ার অধিকার আমি ছাড়া আর কারোর নেই,হাত কেটে রেখে দিব কেউ ওকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলে,গট ইট??”
.
নওশাদ এগিয়ে এসে বললো”কি হয়েছে শান্ত?এনিথিং রং?
.
শান্ত কিছু বলছে না,সাইমনের হাতে আরেকটা চাপ দিয়ে তারপর চলে যেতে নিতেই সাইমন বলে উঠলো “দাঁড়ান মিঃশান্ত”
.
শান্ত থেমে গিয়ে সাইমনের দিকে তাকালো,সাইমন তার পকেট থেকে রুমাল নিয়ে হাতে বাঁধতে বাঁধতে বললো”আপনি তো সেই শান্ত না?? যে “শান্তি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের” মালিক?”
একজন বলে উঠলো “হুম”
সাইমন দাঁত কেলিয়ে বললো”তা আপনার জন্য কি মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি?আপনার ভক্ত/ফলোয়ার তো কম না,ডেইলি শতে শতে মেয়েরা আপনাকে নিয়ে ক্রাশ পোস্ট করে,আপনার গানে কত মেয়ে মুগ্ধ আর সেই আপনি কিনা বেছে বেছে বস্তির একটা মেয়ের জন্য এত নিচে নামছেন??আহানার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু জানেন?তার বাড়িতে গেছেন কখনও?ওর তো বাপই নেই”
.
শান্ত টেবিল থেকে কাঁচের গ্লাস নিয়ে সাইমনের মাথায় ছুড়লো এবার,চিৎকার করে বললো”তোর মাথায় ফাটানো উচিত ছিলো সবার আগে তা করতে দেরি করায় এখন তোর মুখ দিয়ে এত চিপ কত বের হলো!
আহানা আমার রিলেটিভ হয়,আর আমার রিলেটিভদের স্টেটাস আমাকে বুঝাতে হবে না! তারা এমনিতেই হাই লেভেলের,তোর থেকেও!
আহানার বাবা আর আমার বাবা একসাথে কার এক্সিডেন্টে মারা গেছেন,আমাকে বুঝাতে হবে না আহানার বাবা আছে কি নাই
আহানাকে এই টুকুন থেকে আমি চিনি,ওর চরিত্র নিয়ে আমাকে কারোর সার্টিফিকেট দিতে হবে না
ও হাসলেও সেই হাসির কারণ আমার জানা থাকে,ওর এ টু জেট সবটা আমি জানি,ওর ব্যাপারে কেউ একটা কথাও বলবে না,মাথা কেটে হাতে ধরিয়ে দিব তাহলে
.
সাইমন মাথায় হাত বুলিয়ে জোরে জোরে হেসে দিলো তারপর বললো”তোমাদের তো বিয়ে হইনি তাই না??আহানা কি করে তোমার হয় সেটাও আমি দেখবো!!কালকেই সে আমার হয়ে যাবে,ইউ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!আহানাকে বিয়ে না করলেও ওকে সবার আগে আমিই টাচ করবো,আমার কথা নোট করে রাখো মিঃ শান্ত!তখন তোমার কিছু করার থাকবে না,তখন ওকে বিয়ে করতেও তোমার ঘৃনা হবে!”
.
শান্ত কণার দিকে তাকালো এবার তারপর গলার স্বরটা হালকা করে নওশাদ আর রিয়াজ সূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো”রুপাকে নিয়ে মইনুদ্দিন আঙ্কেলের বাসায় আসো তোমরা ১ঘন্টার ভিতরে
সাথে করে ফুলের মালা আর মিষ্টি ও নিয়ে আসবে,রুপাকে বলবে সাথে করে আহানার আইডিকার্ড নতুবা জন্মনিবন্ধন অথবা এসএসসির সার্টিফিকেটটা নিয়ে আসতে,পাসপোর্ট সাইজের ছবিও ম্যানেজ করতে বলবা এই এক ঘন্টার ভিতরে,ওকে?
কথাটা বলে শান্ত বেরিয়ে পড়লো
আহানা কারের ফ্রন্ট সিটে পা তুলে গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে শান্তর জ্যাকেটটা মুঠো করে ধরে
চোখ তার সামনের দিকে,অন্য কোথাও তাকাচ্ছে না সে
শান্ত এসে কারের দরজা খুলে বসে কার স্টার্ট করলো
আহানা পা নিচে নামাতে যেতেই শান্ত বললো”যেভাবে কমপোর্ট ফিল করো সেভাবে বসো”
.
আহানা পা আর নিচে নামালো না,চুপ করে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে সে
শান্ত স্পিড বাড়িয়ে কার চালাচ্ছে,রাত ৮টা বাজে তখন
চারিদিকে বাতি আর বাতি, নিরিবিলি রোড দিয়ে তারা যাচ্ছে,ঢাকার বাইরে,জ্যাম তেমন একটা নেই,২/৩মিনিট অস্থায়ী জ্যাম লাগে মাঝে মাঝে
আহানার মুখ দিয়ে কথা আসতেছে না,কি দিয়ে শুরু করবে ভাবতে পারছে না সে
শেষে মুখ ফুটে বললো”আমি এখানে আসতে চাইনি,নওমি আপু অনেক করে বললো,তারপর এখানে এসে আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পেলাম না,তারপর এই লোকটা এসে গেলো ততক্ষণে
আমি বুঝি না সবাই কেন মেয়েদের সাথে জোরজবরদস্তি করতে চায়
শান্ত আহানার এই কথাটায় আহানার দিকে তাকালো তারপর আবারও রোডের দিকে চোখ রেখে বললো”তবে আজ আমি তোমার সাথে জোরজবরদস্তি করবো”
.
আহানার মুখটা এমনিতেও ছোট হয়ে ছিলো শান্তর এমন কথায় সে নড়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে এখন
.
শান্ত একটা বাড়ির সামনে এসে কার থামিয়ে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বললো”রফিক!আমি শান্ত”
.
রফিক হচ্ছে এই বাড়ির দারোয়ান,সে শান্তকে দেখে গেট খুলে দিলো
আহানার মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে যেটা হওয়া উচিত না,কিন্তু সে বুঝতেছে না ঠিক কি হতে যাচ্ছে
শান্ত কারটা বাড়ির সামনে থামিয়ে কার থেকে নেমে ঘুরে এসে দরজা খুলে আহানার হাত ধরে ওকেও বের করে আনলো
.
আআআআপনি কি করবেন এএএএখন?
.
শান্ত কিছু না বলে আহানাকে নিয়ে বাড়িটার ভিতরে চলে আসলো,একজন বয়স্ক লোক সোফায় বসে কাগজপত্র নিয়ে লেখালেখি করতেছেন
শান্তকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে বললেন”আরে শান্ত যে,এ সময়ে কি মনে করে?”
.
শান্ত আহানাকে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো জোর করে তারপর বললো”আঙ্কেল আমি এরে এখন এই মূহুর্তে কাগজে কলমে বিয়ে করতে চাই,আপনি সব বন্দবস্ত করুন”
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে তাকালো তারপর সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আপনি এসব কি বলতেছেন?”
.
আঙ্কেল আমার হাতে সময় নেই জলদি করুন
.
কিন্তু শান্ত কিছুই তো বুঝতেছি না,এসব কি বলছো?এ সময়ে বিয়ে??আর কাগজে কলমে বিয়ে করতে হলে তো তোমার আর ওর আইডিকার্ড/জন্মনিবন্ধন কপি এসব লাগবে,বললেই তো আমি জলদি করতে পারবো না
.
আমার সব কিছু পকেটে আছে আর আহানার কাগজপত্র রুপা নিয়ে আসতেছে ওর মায়ের কাছ থেকে
.
আপনি আমার দিকে তাকান,এসব কি বলতেছেন আপনি?বিয়ে মানে?
হঠাৎ করে এসব কি শুরু করছেন আপনি?আমি আপনাকে বিয়ে করবো না কিছুতেই,আপনি আমার সাথে এ বিষয় নিয়ে কিছুতেই জোর করতে পারেন না,আমি এখনই মাকে ফোন করতেছি
আহানা তার সাইড ব্যাগ থেকে ফোন নিতে যেতেই শান্ত ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো ওর থেকে
স্বাভাবিক ভাবেই বললো “উনি আমার সম্পর্কে আঙ্কেল হয়,উনার সামনে সিনক্রিয়েট করবা না,চুপচাপ সোফায় বসে থাকো
.
কিন্তু শান্ত,তোমার মা?উনি কি জানেন এসব?
.
জানে না,তবে জানবে,আজ এখন এ মূহুর্তে আমার এসব করা জরুরি,আপনি কাইন্ডলি সব তৈরি করুন,নিন আমার কাগজপত্র, আর আহানার গুলা কয়েক মিনিটেই এসে যাবে
.
আমরা হাজির!!!
.
শান্ত পিছনে তাকিয়ে দেখলো নওশাদ,রিয়াজ, সূর্য আর রুপা দাঁড়িয়ে আছে, রুপার হাতে একটা কাগজের ফাইল আর নওশাদের হাতে মিষ্টির প্যাকেট,সূর্যের হাতে ফুলের মালা দুটি
আহানা রুপার দিকে চেয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো”রুপা তুইও!!”
রুপা আহানার কথার উত্তর না দিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”ভাইয়া আমি ওর আম্মুকে বলছি ওর অফিসের কাজে কাগজপত্র গুলা লাগবে,উনি আর সন্দেহ করেননি”
.
গুড জব!
.
শান্ত এগিয়ে এসে সূর্যর হাত থেকে ফুলের মালা গুলো নিয়ে আহানার গলায় একটা পরিয়ে দিলো
আহানা মালা টা খুলে শান্তর মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো তারপর হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো সে
.
শান্ত হাত দিয়ে তার মাথার চুলগুলো টানতে টানতে মালাগুলো সোফার উপর রেখে বললো”আমি ওরে নিয়ে আসতেছি,আঙ্কেল আপনি কাগজপত্র রেডি করেন যেন আসার পর জাস্ট সইতেই বিয়ে হয়ে যায়
কথা শেষ করে শান্ত বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে
আহানা একা একা অন্ধকার একটা পথের কিনারা দিয়ে হেঁটে চলেছে,কোনদিকে যাচ্ছে সে জানে না তবে এখানে আর থাকা যাবে না এটাই ঘুরতেছে তার মাথায়,দৌড়ের চোটে জুতাটা ফেলে এসেছে সে,খালি পায়ে হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে কিন্তু না এভাবে দূর্বল হলে চলবে না
শান্তকে বিশ্বাস নেই যদি সত্যি সত্যি বিয়েটা সেরে ফেলে?
একে বিয়ে করলে আমার জীবনটা পুরো নদীর পানিতে ডুববে
আহানা পিছনে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকাতেই এক ধাক্কা খেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শান্তর সাথে
আহানা কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে বললো”আমি বললাম না এই বিয়ে করবো না আমি,আপনি কেন জোর করতেছেন আমাকে,আর আপনি তো বলেছিলেন আমাকে কখনও বিয়ে করবেন না,তাহলে আজ এসব কেন?”
.
শান্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আহানার দিকে চেয়ে,হাত দুটো তার পকেটের ভিতর
আহানা কপাল কুঁচকে যখন দেখলো শান্তর কোনো উত্তর নেই তখন সে পাশ কেটে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফেললো শক্ত করে,ওর গলার কাছে মুখ নিয়ে বললো”প্লিস আহানা!”
.
আহানার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপতেছে,এভাবে শান্ত ওকে ধরবে সে ভাবতেই পারেনি,কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”ছেড়ে দিন,আমি বিয়ে করবো না আপনাকে”
.
শান্ত ছেড়ে দিলো আহানাকে,আহানা কাঁদতে কাঁদতে রোডের উপর বসে পড়েছে,মাথায় হাত দিয়ে বললো”বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে আপনি বললেন আর হয়ে গেলো,আমার কত স্বপ্ন এই বিয়ে নিয়ে,আমি চাই না এই বিয়ে,আমাকে জোর করবেন না”
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ওকে টেনে রোড থেকে তুলে দাঁড় করালো
তারপর কাছে টেনে বললো”আমি চাই না এরপর কোনো পুরুষ তোমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করুক,আমি চাই না তুমি আর অন্য কারোর দ্বারা কষ্ট পাও!আমি শুধু চাই তুমি আমার স্ত্রীরর অধিকারে আমার চোখের সামনে থাকো,আহানা আমি তোমাকে ভালোবাসি না
কি আছে তোমার মধ্যে যে আমি তোমাকে লাভ করবো?
তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই জাস্ট তোমার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য,আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো মা আমাকে জীবনেও ক্ষমা করতেন না,কারণ সেই পার্টিতে আমিও উপস্থিত ছিলাম
রতনের বেলায় মা আমার সাথে রাগ করে ছিলেন
এরপরে যদি তোমার কিছু হয় তাহলে মা আর আমার দিকে ফিরেও তাকাবেন না,আমার জীবনে মা আর নিতু ছাড়া কেউ নেই,ওরাই আমার সব,আর ওরা যখন তোমাকে আমার সাথে দেখতে প্রিপার করে তো ফাইন!বিয়েই শেষ পরিণতি হওয়া উচিত
.
এক মিনিট!আপনার আর আপনার পরিবারের খুশির জন্য আমি কেন এই বিয়েতে রাজি হবো?আমার কি কোনো ইচ্ছা নাই??বিয়েটাতে মত দেওয়ার রাইট আমারও আছে
.
না নেই!আমার মা বলেছে তুমি আমার ওয়াইফ হবে তো হবে
আর তোমার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে বিয়ে করতে হবে আমায় আর আমি সেটাই করবো,এখন থেকে সবসময় তুমি আমার চোখের সামনে থাকবে,কেউ তোমাকে একটা টোকাও দিতে পারবে না
.
আমি এই বিয়ে করবো না,আমি আপনাকে পছন্দ করি না
বিয়ে তো দূরের কথা,আমি আন্টিকে বুঝিয়ে বলে দিব তাই বলে আজ আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না,হাত ছাড়ুন আমার
আমি বাসায় ফিরে যাবো
.
শান্তর কাছে আর কোনো উপায় নেই,নিজেকে শক্ত করে সে আহানাকে একটা কঠিন কথা বলার জন্য মুখ খুললো
.
আহানা তুমি কি চাও আমি এখন তোমার সাথে ঠিক সেই কাজ করি যেটা রতন আর সাইমন করতে চেয়েছিলো?
সেটা ভালো হবে নাকি বিয়ের পরেরটা ভালো হবে?লিগালি?
.
আহানা বিস্মিত হয়ে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,পিছোতে পিছোতে কিছুদূর চলে গেছে সে
তারপর ডানে বামে সব পাশে তাকালো,দুপাশে ঝোপঝাড়,মাঝ দিয়ে ফাঁকা একটা রোড
কত শত পোকার গায়ে কাঁটা লাগানো শব্দ হচ্ছে
.
আহানা কাঁদতে কাঁদতে বললো”আপনার আর ওদের মধ্যে কেনো তফাৎ নেই শান্ত!,আপনি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন
.
শান্ত কথাটা না শুনার ভান ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরেকদিকে ফিরে
.
আহানা দুহাত দিয়ে মুখটা মুছে আর ১মূহুর্তও দেরি না করে ছুটলো সামনের দিকে
.
উফ!এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি পারি না!
.
আহানা দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছেই,থামাথামি নেই
.
আহানা দাঁড়াও!অন্ধকারে বিপদ হতে পারে এভাবে দৌড়াইও না প্লিস!
.
আহানা শান্তর কথায় কোনো পাত্তায় দিচ্ছে না,সে যতদূর পারছে দৌড়ে যাচ্ছে,অনেকদূর চলে গেছে সে,আজ শান্তকেও খুব খারাপ মনে হচ্ছে,মোট কথা ওর থেকে বাঁচার জন্যই দৌড়াচ্ছে সে
একটু থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখলো দূরে শান্তকে দেখা যায়,সেও আসতেছে তেড়ে
আহানার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,পা চলছে না আর,তাও দৌড়ানোর জন্য পা বাড়াতেই নিচে থাকা কয়েকটা কঙ্করের সাথে হোচট খেয়ে নিচে পড়ে গেলো সে
.
শান্ত এবার থেমে গেছে আহানাকে পড়তে দেখে,তারপর কপাল কুঁচকে বললো”এটাই দরকার ছিল,এতে যদি একটু সুবুদ্ধি হয় আর কি”
.
আহানা পা ধরে চোখ মুখ খিঁচে বসে আছে,শান্ত ততক্ষণে কাছেও চলে এসেছে
.
একদম কাছে আসবেন না আপনি!আমি আপনাকে বিয়ে করবো না কিছুতেই
.
শান্ত নিচু হয়ে আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো বিপরীত দিকে
আহানা হাত দিয়ে শান্তর মুখ গলা বুক সবকিছুতে কিল ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে
শান্তর চুল টানতে টানতে শুধু একটা কথায় বলতেছে সে আর সেটা হলো”বিয়ে করবো না”
শান্ত রোডের দিকে তাকিয়ে নরমালি হেঁটে চলেছে
আহানা একসময় ক্লান্ত হয়ে হাত পা নাড়ানো বন্ধ করে দিলো
তার আর বুঝতে বাকি নেই যে শান্ত ওকে আজ বিয়ে করেই ছাড়বে
শান্ত আহানাকে নিয়ে মইনুদ্দিন আঙ্কেলের বাসায় এসে ওকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে রুপাকে বললো ফার্স্ট এইড বক্স আনতে
তারপর আহানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তুলো দিয়ে আহানার পায়ের রক্ত মুছতে মুছতে বললো”আমি আজ তোমাকে বিয়ে না করলে সাইমন তোমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না কিছুতেই,সে মানুষভর্তি পার্টিতে দাঁড়িয়ে আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে সে তোমাকে হাসিল করবে যেকোনো কিছুর বদলেই হোক,আর আমি তোমাকে নিয়ে চান্স নিব না
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে শান্তর গালে চড় মেরে দিলো একটা
তারপর চিৎকার করে বললো”আমার পা ছাড়ুন বলতেছি”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্ত গালে হাত দিয়ে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
নওশাদ হা করে চেয়ে থেকে বললো”এই নিয়ে কত হলো”
.
সূর্য মুখে হাত দিয়ে বললো”২বার”
.
রুপা চোখ বড় করে নওশাদকে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতেছে আরেকবার চড় দিয়েছিলো কেন?
.
রিয়াজ ধমক দিয়ে আহানার কাছে এসে বললো”কি সমস্যা তোমার???তোমার সাহস হয় কি করে শান্তর গায়ে হাত তুলার?তোমার থেকে বয়সে কত বড় শান্ত আর তুমি হুটহাট করে ওকে চড় মারো সবসময়,তোমার মা কি তোমাকে এসব শিখিয়েছে?”
.
শান্ত মইনুদ্দিন আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললো”আর কত সময় লাগবে?”
.
এই তো বাবা আর ১০মিনিট
.
ফাইন!
শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে আহানার হাত মুঠো করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো,মইনুদ্দিন আঙ্কেল বাসায় একাই থাকেন তাই সবগুলো রুম খালি থাকবে এটা শান্তর জানা আছে
শান্ত তাই আহানাকে নিয়ে দূরের এক রুমে চলে গেছে
রুমে ঢুকে দরজাও লাগিয়ে ফেললো ভেতর থেকে
নওশাদ রুপা,সূর্য আর রিয়াজ এক দৃষ্টিতে রুমটার দিকে চেয়ে আছে
.
নওশাদ ওদিকে তাকাতে তাকাতে সোফায় এসে বসলো,রুপা পা টিপে টিপে নওশাদের পাশে বসে বললো”এখন কি করবে শান্ত ভাইয়া?আহানাকে মারবে নাকি?”
.
রিয়াজ মুখটা গম্ভীর করে একটা টুল টেনে বসতে বসতে বললো”শান্তর যদি মারারই ইচ্ছা থাকতো তো এতক্ষণে ৪০টা থাপ্পড় খেতো আহানা”
.
তাহলে কি করতে নিয়ে গেছে?
.
সেটা তো শান্তই ভালো জানে
.
সূর্য রুমটার দিকে যেতে নিতেই নওশাদ বললো”ওদের একা থাকতে দেওয়া উচিত আমাদের”
.
সূর্য “হুম”বলে রিয়াজের পাশে এসে বসলো
পাক্কা ১০মিনিট পর রুমটার দরজা খুললো শান্ত
ভেতর থেকে আগে শান্ত বের হলো তার পাশে আহানা জ্যান্ত লাশের মত দাঁড়িয়ে আছে,শান্ত ওকে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আঙ্কেল থেকে কাগজটা নিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলো
আহানা রোবটের মতন ওর হাত থেকে কাগজটা নিলো,তারপর চুপচাপ সই করে দিলো,দেওয়ার সাথে সাথেই কেঁদে ফেললো সে
.
নওশাদ শান্তকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো”কিরে?কি এমন করলি যে রাজি হয়ে গেলো”
.
রিয়াজ ফিসফিস করে বললো”মেরেছিস?”
.
সূ্র্য দাঁত কেলিয়ে বললো”আরেহহহ নাহহহ,মনে হয় কিস করেছে😜”
শান্ত চুপচাপ কাগজটা নিয়ে এবার সেও সই করে দিলো
রুপা আহানার মুখের দিকে চেয়ে আছে,আহানার মুখের ভাবগতি একদম অসহায়ত্ব প্রকাশ করতেছে,কিছু একটা তো করেছে শান্ত তা নাহলে আহানা এতক্ষণ বিয়েটা করতে নারাজ ছিলো আর সে কিনা ১০মিনিটেই রাজি হয়ে গেলো সই ও করে দিয়েছে চুপচাপ কিছু না বলেই
রুপা আহানার পাশে বসে ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”কিরে!কিছু বলছিস না যে?কি হয়েছে তোর?এরকম হয়ে আছিস কেন?কি করেছে শান্ত ভাইয়া?”
.
আহানা তার সামনে থাকা কাঁচের সেন্টার টেবিলটার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে,চোখ দিয়ে অশ্রুর জলধারা বইতেছে
শান্ত সই করে দিতেই মইনুদ্দিন আঙ্কেল বললেন”আলহামদুলিল্লাহ, এখন থেকে তোমরা লিগালি হাসবেন্ড ওয়াইফ”
.
শান্তর মুখেও হাসি নেই,আহানার তো হাসি গায়েবই হয়ে গেছে,শান্ত সোফার উপর থেকে ফুলের মালাগুলো নিয়ে একটা নিজে পরলো আরেকটা আহানার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সূর্যর হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা নিয়ে এক এক করে সবার মুখে একটা করে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলো
মুখে তার বিন্দু মাত্র হাসি নেই
রিয়াজ শান্তর হাত ধরে বললো”শান্ত তোর আর আহানার কি হয়েছে?মুখ এমন করে আছিস কেন?এই বিয়েতে যখন তোরা খুশিই ছিলি না তখন বিয়ে করতে গেলি কেন?”
.
শান্ত টিসু দিয়ে হাত মুছে বললো”আঙ্কেল থ্যাংকস ফর হেল্প!আজ আসি আমরা”
এটা বলে শান্ত সোফায় বসে থাকা আহানার হাত মুঠো করে ধরে বেরিয়ে গেলো ওকে নিয়ে
আহানা রোবটের মতন শান্তর সাথে সাথে আসতেছে
বাকিরা ওদের দুজনের অবস্থা দেখে ঠিক বুঝতেছেই না যে কি এমন হলো যে ওদের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো চিরতরে
.
আহানা কারে বসে গলার থেকে ফুলের মালাটা ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো তারপর কাঁদতে কাঁদতে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ধরেছে
হাত দিয়ে জানালার কাঁচে কয়েকটা ঘুষি দিলো সে,চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে এখন
.
শান্ত চুপচাপ কার চালাচ্ছে,আহানা কাঁদতে কাঁদতে এবার থামলো,চোখ মুছে নিজেকে ঠিক করলো সে
বাসায় আসতে আসতে দেড় ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে,রাত তখন ১১টা বাজে,আহানা কার থেকে নেমেই চলে গেলো বাসার দিকে
শান্ত গলার মালাটা ফেলে দিয়ে সেও গেলো সেদিকে
মা আর আন্টি সোফায় বসে টিভি দেখতেছেন,ওদের দুজনকে দেখে টিভি থেকে চোখ সরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছেন এখন
আহানার চোখ মুখ ফুলে আছে, সে কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো
শান্ত ও চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
আহানার মা বললেন”ওদের দুজনের চোখ মুখের এ অবস্থা কেন?”
.
শান্তর মা ও বুঝলেন না কিছু
আহানা বাথরুমে ঢুকে নিচে ফ্লোরে বসে পড়লো,হাত দিয়ে চুল টানলো জোরে জোরে অনেকগুলে চুল ছিঁড়েও ফেললো সে
তারপর টেনে কানের দুল খুলে ফেললো,চিৎকার করলো হাত উঠিয়ে ঝর্ণা অন করে দিলো যাতে ওর কান্নার আওয়াজ বেশিদূর না যায়
হাতে, পায়ে আর গলায় পানি পড়তেই গা শিউরিউয়ে উঠলো তার
শান্ত ওকে আজ অনেক কষ্ট দিয়েছে,তার দোষ ছিলো সে শান্তকে চড় মেরেছিলো
শান্ত আজ তার সাথে যা করলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তত ছিলো না
এর ভিতরে মা এসে বাথরুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললেন “কিরে ভাত খাবি না?এসেছিস দেরি করে খাবি কখন?নাকি খেয়ে এসেছিস?”
.
আহানা নিচু স্বরে বললো”খাব না,খিধে নেই,তুমি যাও”
.
শান্ত বারান্দায় বসে আছে এক কোণায়,আহানাকে এভাবে জোর করতে চায়নি সে,বিয়েতে রাজি করানোর জন্য সে আহানাকে আজ বাধ্য করেছে
চাইলেই আজ চড়টার পর ওর সবটা কেড়ে দিতে পারতাম আমি কিন্ত আমি সেটা করিনি,রাজি করানোর আরও অনেক ওয়ে আমার হাতে ছিল আমি সেটাই প্রয়োগ করেছি
একটু ভয় দেখিয়েছি জোরজবরদস্তি করার তাতেই ভয় পেয়েছে সে
.
স্যার?
.
শান্ত দরজার দিকে তাকিয়ে বললো”রিপা চলে যাও,আমি আজ ডিনার করবো না,আমার খিধে নেই”
.
রিপা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো

কিরে আহানা?শরীর খারাপ তোর?এমন চুপচাপ শুয়ে আছিস কেন?
.
কিছু না,ঘুমাও তুমি
.
আগে বল আমাকে কিছু কি হয়েছে?তোরা আজ এত দেরি করে আসলি যে?
.
আহানার বিরক্ত লাগছে এর ভিতর মা ১০০টা প্রশ্ন করে যাচ্ছে একের পর এক
রেগে আহানা রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসলো,সোফার রুমে আসতেই শান্তকে দেখলো সে
শান্ত পানি খেতে এসেছিলো তখন
ভেজা চুল আহানার,চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ে যাচ্ছে অনবরত,পরনে হালকা হলুদ রঙের থ্রি পিস,কিছু সময়ের জন্য শান্ত ভ্রমে চলে গিয়েছিলো,হাতে গ্লাসটা ধরে রেখে চেয়ে আছে সে,আজকের পর থেকে আহানা তার বৈধ স্ত্রী, আর আজ অধিকার একটু বেশিই চাওয়া যায় কিন্তু কোনো এক বাধা মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শান্তর হুস আসতেই সে মুখ ফিরিয়ে নিলো
আহানা ওকে দেখে আর দ্বিতীয় বার তাকায় নিই,সোজা বাসার বাইরের গন্ধরাজ বাগানটার কাছে এসে দাঁড়ালো সে,মৃদু শীত অনুভূত হচ্ছে চারিদিকে
আহানা নিজের ওড়নাটা গায়ে পেঁচিয়ে ঘাসের উপর এসে বসলো,তারপর সোজা আকাশের দিকে চেয়ে রইলো
শান্ত মাকে দেখতে এসে মায়ের রুমের বারান্দাটা দিয়ে আহানাকে দেখতেছে স্পষ্ট, কারণ গন্ধরাজ ফুলের বাগানটা ওর মায়ের রুমের সামনে বরাবর একদম
আহানার শুস্ক চোখ দিয়ে দুফোটা পানি বেরিয়ে আসলো,হাত দিয়ে মুছে সে পাশে তাকাতেই দেখলো শান্ত চেয়ে আছে ওর দিকে,তারপর যখন সে দেখলো আহানা ওকে দেখে ফেলেছে তখন সে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
আহানা আবারও আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বিয়ের ১০মিনিট আগ মূহুর্তটা মনে করলো
শান্ত ওর হাত চেপে ধরে রুমটায় নিয়ে গিয়ে কিছু না বলেই ওর হাত আরও জোরে চেপে ধরে কাছে নিয়ে এসেছিলো
রুমটা ছিল অন্ধকার!!বাসার পাশের বাউন্ডারিতে থাকা এক লাইটের আলোয় তারা একে অপরকে দেখতেছিলো
তারপর আহানার চোখের দিকে না তাকিয়েই শান্ত ওর গলার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো
আহানা হাত নাড়াতে নাড়াতে বললো”কি অসভ্যতামি শুরু করছেন কি আপনি?চড়ে হয় নাই?আরেকটা দিব?”
.
শান্ত বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে আহানার গলায় মুখ লাগাতেই আহানা কেঁপে দূরে সরতে গিয়েও পারলো না,তার তখন এত খারাপ অনূভূতি হচ্ছিলো যে সে বুঝে গেছিলো বিয়েতে হ্যাঁ না বললে শান্ত সেই সব কিছু করবে যেটা করলে সম্পর্কটা হারামে পরিণত হবে
আহানার নিশ্চুপ হয়ে চোখ দিয়ে পানি দুফোটা ফেলে মুখ ফুটে একটাই কথা বললো আর সেটা হলো”আমি বিয়েতে রাজি”
.
সাথে সাথে শান্ত ওকে ছেড়ে দিলো,তারপর স্বাভাবিক ভাবেই ওর হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গেলো সবার সামনে
আহানার আর কোনো উপায় ছিলো না তখন,শান্ত ওকে এমন ভাবে দূর্বল জায়গায় আঘাত করে বুঝিয়ে দিয়েছিলো ওর আর কিছু করার ছিলো না সেই মূহুর্তে
শান্ত কেন আজ এমন করলো সেটাই ভেবে পাচ্ছে না আহানা
শুধু কি আমার সেফটির জন্যই উনি এমন করলেন?
আমাকে বিয়ে করার জন্য উনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেন,আমাকে রাজি করাতে এতটা নিচে নামলেন!
আমারই দোষ,শুরুতেই রাজি হয়ে গেলে এত কিছু করতো না
কিন্তু শুরুতে কি করে রাজি হই আমি??আমার কি বিয়ে নিয়ে কোনো ইচ্ছা নেই?সেই মূহুর্তে এত বাজে ব্যবহার করলেন আমার সাথে ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে আমার!বিয়েতে হ্যাঁ না বললে এতক্ষণে তো!!!
আমার অসহ্য লাগছে এই ভেবে যে এই লোকটা আজ থেকে আমার স্বামী!
আমার সেফটি না ছাই,মন চাচ্ছে গলা টিপে মেরে ফেলি
.
খুব জোরে আহানার হাতের ফোনটা বেজে উঠেছে,আহানা বুকে থুথু দিয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলো আননউন নাম্বার
রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শান্ত এক ধমক দিলো
এত জোরে ধমক দিলো যে আহানার হাত থেকে ফোনটাই ঘাসের উপর উল্টে পাল্টে পড়ে গেলো
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে ফোনটা নিয়ে আবারও কানে ধরলো
.
কি ব্যাপার উত্তর দিচ্ছোনা কেন?
.
কে আপনি?
.
তোমার সবেমাত্র বিয়ে করা বর বলছি
.
ওহহ,কি চাই?আমার নাম্বার পেলেন কই
.
আমার রুমে আসো
.
কি করতে?নাকি এবারও নেক কিস করে বাসররাত কম্পলিট করার থ্রেট দিবেন?
.
তোমার মধ্যে কি আছে যে তোমার সাথে বাসররাত করার ইচ্ছা জাগবে আমার??তোমাকে যে তখন নেক কিস করসিলাম আমার বমি পাচ্ছে এখন
.
তো বিয়ে করছেন কেন তাহলে?
.
সেটা দায়িত্বের খাতিরে,তোমার সেফটির খাতিরে
.
বাহানা দেওয়া অফ দেন,আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস আছে কারও?
.
আসলে হইছে কি তুমি যেমন ছাইয়া টাইপের তোমার সাইকো লাভার রাও তেমন ছাইয়া টাইপের,কি জানি কখন কি করে বসে তাই আমি চান্স নিই নাই
.
আপনার এত দরদ কেন? আমাকে কেউ উঠায় নিয়ে গেলে আপনার কি সমস্যা?
.
কি সমস্যা?দেখাচ্ছি,আসো আমার রুমে
.
যাব না,বাই
.
তুমি কি চাও আমি এখন তোমাকে গন্ধরাজ বাগানটার সামনে এসে তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে আসি?
.
আসতেছি,আজ একটা বিহিত করে তারপর আমি যাব
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে সেদিকে ছুটলো
শান্ত নিজের বিছানায় বসে রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে
আহানা দরজার কাছে এসে ফোনের ক্যামেরা অন করে শান্তর ড্রেসিং টেবিলে ফোনটা হেলান দিয়ে রাখলো তারপর শান্তর পাশে এসে দুপ করে বসে পড়লো
.
ওকে রিয়াজ কাল দেখা হচ্ছে,বাই
.
শান্ত ফোন রেখে আহানার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালো তারপর ড্রেসিং টেবিলের দিকে চেয়ে বললো”কি ব্যাপার?ফোন ওখানে রাখসো কেন,আর ওখানে তো দেখছি ভিডিও রেকোর্ড হচ্ছে আমার আর তোমার
.
হুম ঠিক দেখছেন,আপনি এখন এই ভিডিওতে আমার কিছু শর্ত মানতেছেন সেসব বলবেন,সেটা প্রমান হিসেবে থাকবে আমার কাছে
.
কিসের শর্ত?
.
এই যে এই বিয়েটা নামেই বিয়ে আর আমাকে আপনি কখনও ঐভাবে ছুঁবেন না
.
“ঐভাবে ছোঁয়া মানে?কোন ভাবে?”
কথাটা বলে শান্ত আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো একবার
আহানা চোখ বড় করে নিজের ওড়না ঠিক করে একটু নড়েচড়ে বসে বললো”ঐভাবে মানে হচ্ছে আপনি কখনও আমাকে ওয়াইফকে যেভাবে ছোঁয় ওভাবে ছুঁবেন না”
.
তাহলে কি ভাবে ছুঁবো?
.
উফ!আমার কথার মানে হচ্ছে কোনো ভাবেই ছুঁবেন না
.
আচ্ছা,তো এবার আমার কথা শুনে রাখো,আমি তোমাকে ছুঁবো না কারণ কেন জানো?কারণ তোমাকে ছোঁয়ার মতন তেমন ইন্টারেস্টিং কিছুই নাই
না ঠোঁট সুন্দর,না গাল সুন্দর, না হাত পা,আর না বডি,কিছুই সুন্দর না তোমার,তাহলে কেন ছুঁবো তোমাকে?
.
এসব বলে বলে তো বিয়েটাও সেরে ফেলেছেন
.
শুনো,তোমাকে ছোঁয়ার হলে এখন এত নরমালি কথা বলতাম না,বিয়েটা যে কারণে করসি তা তো তুমি জানোই তাহলে বারবার জিজ্ঞেস করো কেন?
.
ঠিক আছে!
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে ভিডিওটা সেভ করে মুখ ফুলিয়ে বললো”এই ভিডিওটা আমার কাছে প্রমাণস্বরুপ থাকবে,এখন কি জন্য ডেকেছিলেন বলুন আমি যাই
.
কাল রিয়াজের গায়ে হলুদ,সকাল সকাল তৈরি থাকবা তোমাকে নিয়ে যাত্রামুড়া রওনা হবো
.
যাবো না,আমি
.
কি বললে?
শান্ত বিছানা থেকে নামতে নিতেই আহানা দৌড়ে যেতে যেতে বললো”রেডি থাকবো”
.
এই দাঁড়াও
.
আহানা থেমে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে বললো”কি?”
.
নাও
.
কি এটা?
.
গায়ে হলুদে পরার একটা শাড়ী,আমি কিনেছিলাম তোমার জন্য,তোমার ভালো কোনো জামা/শাড়ী নেই তো তাই
.
ভালো
তারপর আহানা আর কিছু না বলেই চলে গেলো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা রুমে এসে প্যাকেটটা চেয়ারের উপর রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে
পরেরদিন সকালে সে ঘুম থেকে জাগলো শান্তর মুখ দেখে
শান্ত হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি পরে কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে,মুখে কঠিন রাগের ছাপ
আহানা হাত পা ছড়িয়ে আরামসে ঘুমাচ্ছে,দূরের জানালা দিয়ো শীতল বাতাস আসতেছে জোরে জোরে,সম্ভবত বৃষ্টি হচ্ছে তাই এত বাতাস,ঘুমটাও সেই রকম আসতেছে,এই ওয়েদারটা ঘুমকে আরও মনোমুগ্ধকর করে দেয়
আহানা শান্তকে দেখে চোখ ডলে আরেকদিকে ফিরে সেই ঘুমিয়ে গেলো আবার
শান্ত এবার রেগে আহানার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে ফেললো এক টান দিয়ে
.
উফ!ঘুমাতে তো দিবেন,এমন করেন কেন
.
কয়টা বাজে খবর আছে তোমার?সাড়ে ৯টা বাজে,কখন যাব আমরা,তোমাকে বললাম সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকবা আর তোমার কিনা কোনো পাত্তাই নেই
.
কিহ!এত সকাল হলো কি করে,আমি তো!
.
জলদি করে রেডি হয়ে নাও তুমি,পথে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে ব্রেকফাস্ট করে নেওয়া যাবে
.
আহানা বিছানা থেকে নেমে তড়িগড়ি করে প্যাকেটটা হাতে নিতেই দেখলো শান্ত এখনও দাঁড়িয়ে আছে
.
কি?এবার কি আপনার সামনে চেঞ্জ করবো আমি?বের হোন রুম থেকে
.
শান্ত এমন ভাবে তাকালো যেন কেউ ওকে নিজের রুম থেকে বের হতে বলতেছে,হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে চলে গেলো সে
আহানা শাড়ীটা পরে চুল ছেড়ে দিয়ে,হাতে চুড়ি পরতে পরতে বের হয়ে গেলো
মা আবারও হাত ধরে টেনে রুমে ঢুকিয়ে বললেন”এরকম যাবি??একটু সাজিস ও নাই,এদিকে আয়
বিয়েবাড়িতে এরকম নিরামিষ কেউ সাজে?
.
সাজবো??আমার সাজার কিছু আছে নাকি যে সাজবো?
.
ধর এই লিপস্টিকটা লাগিয়ে নে,রিপার থেকে নিয়েছি
.
আহানা লিপস্টিকটা লাগিয়ে এবার বের হলো
শান্ত কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে নওশাদের সাথে কথা বলতেছে
.
আহানা মুখ কালো করে হেঁটে আসতেছে দূর থেকে
শান্ত কথা বলতে বলতে যেই না ওদিকে তাকলো ওমনি ওর মুখ দিয়ে কথা বের হওয়াই বন্ধ হয়ে গেলো
হলুদ রঙের শাড়ীটায় আর খোলা চুলে আহানাকে বেশ মানিয়েছে,আহানা কাছে এসে বললো”চলুন”
.
শান্ত এখনও চেয়ে আছে আহানার দিকে,ওদিকে নওশাদ চিল্লাচ্ছে শান্ত কেন ওর কথার জবাব দিচ্ছে না সে জন্যে
শান্ত যে তার নতুন বিয়ে করা বউকে দেখে হতবাক হয়ে গেছে সেটা কেউ জানে না
আহানা দরজা খুলো ভিতরে গিয়ে বসেছে ততক্ষণে
শান্ত এবার নওশাদকে বাই বলে সেও ভেতরে এসে বসলো
কার চালাতে চালাতে ১০০বার তাকাচ্ছে সে আহানার দিকে
আহানার সেদিকে খেয়াল নেই,সে বৃষ্টভেজা শহরটা দেখতে ব্যস্ত
কি সুন্দরটাই লাগতেছে,সবকিছু ভিজে তাদের আসল রুপ ধারণ করে আছে,সবুজ সবুজ গাছ,পরিষ্কার রাস্তাঘাট
আহানার মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,সাথে সাথে সে শান্তর দিকে তাকাতেই শান্ত আরেকদিকে মুখ করে ফেললো
.
আমি না সুন্দর না?আমার মধ্যে তো কিছু নাই তাহলে এমন ড্যাবড্যাব করে দেখতেছেন কেন?আমার চাইতে তো কণা আপু সুন্দর,তাহলে?
.
সাজলে সবাইকেই সুন্দর লাগে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে হাতের চুড়িগুলো ঠিক করে আবারও জানালার দিকে চেয়ে থাকলো
শান্ত ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নেমে নাস্তা করতে বসেছে
আহানা পরোটা এক টুকরা মুখে দিয়ে শান্তর দিকে তাকাতেই দেখলো সে এক দৃষ্টিতে ওর দিকেই চেয়ে আছে
.
কি ব্যাপার বলুন তো?এমন দেখতেছেন কেন আমাকে?একবার বলে আমার মতো বিচ্ছিরি আর নাই আবার নিজেই ক্যাবলার মতন চেয়ে থাকে সারাক্ষণ,টেনে দিব আরেক চড়,অসভ্যের মতো এরকম তাকিয়ে থাকলে
কথাটা বলে আহানা আশেপাশে চেয়ে দেখলো সবাই ওর কথা শুনে ওর দিকে চেয়ে আছে
আহানা নড়েচড়ে বসে বললো”কি?উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”
.
বিয়ে করা বউয়ের দিকে তাকাতেই পারি,তাই বলে তোমার কোনো অধিকার নেই আমার থেকে এই বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়ার
.
আহানা বিরক্ত হয়ে চায়ে চুমুক দিলো,রিয়াজ ফোন করতে করতে শেষ যে শান্ত কখন আসবে
শান্ত বলতেছে রোডে জ্যাম কিন্তু আসল কথা হলো আহানার কারণে দেরি হয়েছে
আহানা ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেলেছিলো আজ
.
তোমার কারণে আজ এত দেরি হয়ে গেছে
.
যাক বাবা,বৃষ্টিতে এত ভালো ঘুম এসে গিয়েছিলো তো আমি কি করতাম শুনি?
.
নাচতা!কাল বলেছিলাম সকাল সকাল রেডি হবা,ঢাকা থেকে যাত্রামুড়া কি কাছে?যেতেও তো সময় লাগে
.
আপনি নাস্তা করে নিতে পারেননি?আমি পানি খেয়েই পেট ভরিয়ে নিতাম
.
চুপ থাকো
.
আহানা জানালা খুলে চুপ করে থাকলো,জড়ো হাওয়া এসে গায়ে লাগতেই মনে হয় ভেতরের সব দুঃখ নিঃশেষ হয়ে যায় সাথেসাথে
অবশেষে যাতামুড়া এসেই গেলো
আহানা আর শান্ত রিয়াজদের বাসায় ঢুকতেই সবাই বলে উঠলো “অভিনন্দন”
সবাই বলতে নওশাদ,সূর্য আর শান্তর আরও কয়েকটা ফ্রেন্ড
শান্ত থ্যাংক ইউ বলে রিয়াজকে খুঁজে বের করতে গেলো
আহানা সোজা গিয়ে নওমির কাছে এসে বসলো
নওমি ওর আন্টির সাথে কথা বাদ দিয়ে আহানার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো কাল রাতে কি হয়েছিলো
আহানা নিচু স্বরে বললো”কিছুই হয়নি”
.
নওমি আশ্চর্য হয়ে বললো”কি বলো এসব!তাহলে শান্ত ভাইয়া ওভাবে ঐ ছেলেটাকে মেরেছিলো কেন?”
.
আহানা চমকে বললো”মেরেছিলো?”
.
হুম!কাঁচের বোতল নিয়ে ছেলেটার হাতে ভেঙ্গে ছিলো তারপর কাঁচের গ্লাস দিয়ে ওর মাথাও পাঠিয়ে দিয়েছিলো
চিৎকার করে বলতেছিলো “আহানা শুধু আমার,ওকে ছোঁয়ার অধিকারও আমার,কেন,তোমাকে বলেনি?”
.
আহানা ইয়া বড় হা করে পরে ভাবলো নওমি মিথ্যা বলতেছে,শান্ত কেন এসব বলবে
আহানা দূরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত নওশাদ সূর্যর সাথে হাসাহাসি করতেছে
আহানা নওমিকে বলে উঠে গিয়ে সেদিকে ছুটলো,কিছুদূর যেতেই কণা এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে
.
আহানা কি খবর!!শুনলাম কাল নাকি সাইমন নামের একটা ছেলে তোমার সাথে কি না কি করেছে?
.
আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত এসে বললো”সাইমন কি করেছে সেটা না ঘেঁটে এটা শুনো যে আমরা কি করেছি”
.
কণা ব্রু কুঁচকে বললো”কি করেছো?”
.
নেক কিস,আহা!
.
আহানা চোখ বড় করে চলে গেলো আরেকদিকে শান্ত ওর হাত ধরে আটকিয়ে বললো”প্রমাণ দেখবা?”
.
শান্ত প্লিস,হাত ছাড়ুন,এসব কি বলতেছেন আপনি?
.
কণা দাঁতে দাঁত চেপে বললো”কই দেখি প্রমাণ ”
.
শান্ত আহানাকে কাছে টেনে এনে ওর গলার থপকে চুল সরিয়ে বললো”দেখো”
.
কণা চোখ বড় করে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো”তুমি আমার সাথে চিট করতে পারলে?”
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তর হাত ছাড়িয়ে চলে গেছে ততক্ষণে
লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে,আর শান্ত কিনা খোলামেলা সব বলে যাচ্ছে,এই কণা না জানি কি না কি করে বসে
মনে হয় বিয়ের কথা জানে না
.
কই চিট করলাম,আহানার থেকে এসব তো আমার প্রাপ্য
.
নওশাদ আর সূর্য দাঁত কেলিয়ে মজা নিচ্ছে,কণা শান্তর মুখ দুহাত দিয়ে ধরে বললো”ছেড়ে দাও না ওকে,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো”
.
শান্ত কণার হাত সরিয়ে বললো”একসাথে অনেকজনকে লাভ করাকে রিয়েল লাভ বলে না কণা”
.
আহানা একজন আন্টির পাশে এসে বসলো হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে,আন্টিটার হাতেও জুস,উনি আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলেন,তারপর দেখলেন আহানা শান্তর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
আন্টি মুচকি হেসে বললেন”তোমার বর বুঝি?বেশ দেখতে তো,তোমাদের দুটোকে অনেক মানিয়েছে,তা বিয়ের কতদিন হলো?”
.
আহানা জুস খেতে খেতে বললো”১৩ঘন্টা ৩মিনিট ১০সেকেন্ড ‘
.
ওমা সেকি!কাল বিয়ে হয়েছে নাকি?
.
হুম
.
বাহ বাহ!দোয়া করি সুখী হও,বেশ লাগে তোমাদের, তোমার স্বামী যেরকম সুন্দর তুমিও ঠিক সেরকমই নজরকাড়া সুন্দরি
.
আহানা তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো”আমার স্বামীর কাছে মনে হয় আমি সুন্দর না,আমার মধ্যে এমন কিছুই আহামরি নেই”
.
এসব সে নিজের মুখে বলেছে?
.
হুম
.
তাহলে তো মিথ্যা বলেছে
.
আহানা চমকে উনার দিকে চেয়ে বললো”আপনি বুঝলেন কি করে যে মিথ্যা বলেছে?”
.
আরে যে স্বামী নিজের মুখে বলে যে তার স্ত্রী সুন্দর না এটা তো ডাহা মিথ্যা কথা,কোনো স্বামীই বলে না তার স্ত্রী অসুন্দর,আর তোমার স্বামী বলেছে এর পিছনে কারণ আছে হয়ত,তুমি খুঁজে নিও,আর তুমি নিজেও জানো তুমি কম সুন্দরি নও,তাহলে ভাবো তোমার স্বামী তোমাকে এটা কেনোই বা বললো
.
আহানা পড়ে গেলো মহা চিন্তায়,নওমি আপুর কথা আর এই আন্টিটার কথা মিলালে মনে হবে শান্ত আমাকে ভালোবাসে আর যেটা একদম মিথ্যে,আমি তো জানি উনি আমাকে ভালোবাসেন না
.
রিয়াজ আর নওমি স্টেজে এসে বসেছে,নওমি হলুদ রঙের একটা সুতির শাড়ী বাঙালি স্টাইলে পরেছে সাথে ফুলের গয়না,আর রিয়াজ হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছে
আহানা সেই কখন থেকে চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে,শান্তকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না সে
ওদিকে কণাকেও দেখতেছে না
না জানি দুজন মিলে কি করতেছে,যাগ গে,আমার গায়ে লাগে কেন,ঐ লোকটাকে তো আমি ভালোবাসি না আর সেও বাসে না
নওমির ছোট বোন আরবি এসে বললো শান্ত আর তার কিছু বন্ধুরা ভিতরের রুমে নাচের প্র্যাকটিস করতেছে
আহানা মাথা নাড়িয়ে গাপটি মেরে বসে থাকলো
আরবি যেতে যেতে বললো”কণা আপুও সেখানে”
.
আহানার মনে হলো ওর গায়ে কেউ এক বালতি গরম পানি ঢেলে দিয়েছে,সাথে সাথে সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা সেই রুমটার দিকে ছুটলো
রুমে এসে দেখলো এক কোণায় শান্ত নওশাদ আর সূর্য একসাথে নাচের প্র্যাকটিস করছে,আর কণা আর কিছু মেয়েরা ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে তারাও একপাশে নাচতেছে
আহানা মন খারাপ করে চলে যেতে নিতেই নওশাদ আহানাকে ডাক দিলো
আহানা পিছনে তাকিয়ে বললো”কি ভাইয়া?”
.
আহানা তুমিও জয়েন হও না আমাদের সাথে”
.
আমি নাচ পারি না
.
শান্ত তাচ্ছিল্য করে বললো”বাদ দে,ঠিকমত নাচতে পারবে না পরে আমার নাচের ১২টা বাজাবে,আমি বরং ঐ কণার সাথেই নাচবো”
.
আহানা মনে মনে ভাবলো কণার সাথে নাচার এত শখ তো নাচুক না আমার কি,আমিও নাচবো না আমার গায়ে কেন লাগতেছে বুঝি না আমি
আহানা আবার আগের জায়গায় ফেরত এসে বসলো
“এই যে বিয়ানসাব” গানটা অন হয়েছে,সূর্য তার পাঞ্জাবির উপর দিয়ে একটা হালকা নীল শাড়ী পেঁচিয়ে কেকা ফেরদৌসি সেজে হেলেদুলে স্টেজে এসে দাঁড়িয়েছে,ওর এমন বেশ দেখে পুরো বিয়েবাড়িতে হাসির হট্টগোল লেগে গেছে
আহানাও ফিক করে হেসে দিয়েছে এটা দেখে
নওশাদ এসে বললো”তা কেকা আপা আজ আমাদের কি রান্না করে খাওয়াবেন?”
.
আমি আজ নুডুলস রান্না করে খাওয়াবো
.
না না,এই নুডুলসে তো অনেক ফ্যাট
.
সূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো”তোমাকে আজ আমার হাতের বানানো নুুডুলস খেতেই হবে,না না খেতেই হবে”
.
আহানা হাসতে হাসতে শেষ,বাকিরাও হাসতেছে
এবার শান্ত হেঁটে আসলো কালো চশমা চোখে দিতে দিতে
সূর্য শাড়ী খুলে সেও আসলো,সাথে আসলো নওশাদ,আরও ৩/৪জন এসে দাঁড়িয়ে নাচ শুরু করলো
এক কাতারে কণা,ইশা,মিষ্টি,ঐশি সবাই আসতেছে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে
আহানা ব্রু কুঁচকিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
আন্টি আহানাকে এক খোঁচা দিয়ে বললেন”কি গো মেয়ে তোমার বর দেখি এদিকেই আসতেছে”
.
কথাটা শুনে আহানা সামনে চেয়ে দেখলো শান্ত এদিকেই আসতেছে স্টেজ থেকে নেমে
বাকিরা গানের তালে নাচতেছে আর কণা মুখটা বেলুন বানিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত কাছে এসেই আহানার হাত ধরে সেদিকে নিয়ে যাচ্ছে এবার
.
আরে আমি নাচ পারি না তো আমাকে স্টেজের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
.
এই গানের সাথে নাচ নাই জাস্ট তুমি অলওয়েজ যেটা করো সেটাই করবা
.
অলওয়েজ যেটা করি মানে?
.
মানেটা সহজ,মুখ বাঁকা করবা,গাল ফুলাবা,ভাব দেখাবা আর মাঝে মাঝে কোমড় দুলাবা
.
আমি সবসময় ভাব দেখাই?
.
হু
.
কণা আপুর সাথে না নাচবেন??আমি তো ভালো না তাহলে আমাকে নিচ্ছেন কেন?
.
শত হোক বউ তো,বউকে রেখে অন্য একটা মেয়ের কোমড়ে হাত দিই কি করে বলো?
.
ঢং!!! বলার সময় তো আমাকে নিচু করেন সবসময় তাহলে এখন এত দরদ হচ্ছে কেন?
.
শান্ত আহানাকে স্টেজে উঠিয়ে নওশাদ আর সূর্যর সারিতে দাঁড়িয়ে নাচা স্টার্ট করে দিয়েছে
আহানা বাকি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা কোমড় দুলাচ্ছে আর ভাব দেখাচ্ছে এমন অভিনয় করতেছে
আহানাও তাই করলো
কণা রেগে স্টেজ থেকে নেমে চলে গেছে আরও আগে
শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে গানের লাইন বলতে বলতে ওকে ঘুরালো,আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আপনার ভিতর আর বাইরের অভিনয় টা দেখে কেউ বলবে না যে আপনি আপনার বউকে তাওয়ায় টালেন ডেইলি”
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানাকে ঘুরিয়ে এনে বললো”সেটা যেই যাই বলুক,আমার বউয়ের কোমড় দোলানো বাকিদের থেকে একটু বেশিই ভাল্লাগতেছে
.
আজ মনে হয় সূ্র্য মামা এলোমেলো হয়ে অস্ত যাবে,আপনার হাবভাব দেখে সুবিধা লাগছে না
.
শান্ত হেসে আহানাকে ছেড়ে আরেকটা স্টেপ নাচতে নাচতে বললো”সত্যিটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি?”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-২৭+২৮+২৯

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কিরে?তোরে যে জিজ্ঞেস করতেছি এত করে উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?
.
হ্যাঁ!কিছু বললি?
.
নওশাদ!শান্ত মনে হয় আমাদের আলোচনা থেকে বেরিয়ে গেমস খেলতেছে তাই তোর কথা মনে হয় শুনে নাই
.
শান্ত এটা ঠিক করস নাই,তোর শাস্তি হলো আহানাকে নিয়ে নাচবি স্টেজে
.
কাজ নাই আর আমার,তোদের কাজ নাই?সকাল থেকে আমার অফিসে কি করিস তোরা?
.
হেহহ!!আমরা এত কাজের বাহানা দেখাই না,অফিসের স্টাফদের উপর দায়িত্বভার দিয়ে আমরা চলে আসছি,তুই তো একা হাতে সব সামলাস

আচ্ছা সুহানা একটা কথা বলবো?
.
হুম ঊষা আপু বলো
.
স্যার তোমাকে সবসময় আহানা বলে কেন?আর এতকিছুর পরেও স্যার তোমাকে ব্যাক আনিয়েছে তোমরা কি পরিচিত?
.
আসলে আমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম,আমি বিবাহিত নই,আর আমার নাম আহানা
.
ওহ আচ্ছা,বাট মিথ্যা বললে কেন?
.
সত্যি বললে তো উনি চিনে ফেলতো আমাকে
.
স্যার তো এমনিতেও তোমাকে দেখতো পরে
.
আসলে আমি সেটা জানতাম না তাই নাম পাল্টিয়েছিলাম,আমি উনার বাবার বন্ধুর মেয়ে
.
ও মাই গড,!!সত্যি?
.
হুম
.
তাই তো বলি পূর্বপরিচিত বলেই স্যার তোমাকে সব কাজে ছাড় দেয়,তা নাহলে স্যার সামান্য একটা ভুলের কারণেও অননেকের চাকরি খান
.
আমাকে ভয় পায় তো তাই😎
.
কে কাকে ভয় পায়?
.
আহানা ঢোক গিলে সামনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটুদূরে দাঁড়িয়ে আছে,কপাল কুঁচকানো তার
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”কিছু না তো!ঊষা আপু যাও না”
.
হুম যাচ্ছি
ঊষা হালকা হেসে চলে গেলো,নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য ওরাও চলে গেছে এতক্ষণে
বাকি রইলো শান্ত আর আহানা,আহানা এখনও পুতুলের মত দাঁড়িয়ে আছে,শান্তিতে বসতেও পারতেছে না কারণ একটু সামনেই শান্ত দাঁড়িয়ে থেকে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে যাচ্ছে
.
কি সমস্যা? এরকম তাকিয়ে আছেন কেন?
.
আমার অফিসের স্টাফদের আউটফিট এরকম কেন বুঝি না!তুমি অফিস থেকে টাকা এডভান্স নিয়ে নতুন জামা কিনে তারপর ওগুলা পরে আসবা,এসব পরে আর আসবা না
.
আহানা বিড়বিড় করে বললো”মামার বাড়ির আবদার পাইছে,ঐ টাকা দিয়ে আমি আমাদের বড় একটা বাড়ি বানাবো টাকা জমিয়ে জমিয়ে,এখন টাকা খরচ করা যাবে না কোনোমতেই”
.
শান্ত আহানার দিকে তাকাতে তাকাতে আবার চলে গেছে
শান্তর চলে যাওয়া দেখে আহানা হাঁপ ছেড়ে বেঁচে চেয়ারে দুম করে বসে গেলো,আহা শান্তি!এবার আজকের কাজগুলো শেষ করতে হবে
শান্তদের যে বিদেশি শাড়ীর আমদানি হবে সেটা কত গুলো হবে,কার দ্বারা হবে সেটার হিসাব রাখার দায়িত্ব আহানার
তো সে এখন সেটাই করছে আবার মাঝে মাঝে ফোনে ক্লাইন্টদের সাথে ইংরেজিতে কথাও বলতে হচ্ছে
আহানার আজ কাজের চাপ অনেক বেশি,তবে তার একটুও খারাপ লাগছে না কারণ বেরিং কাজ তার ভাল্লাগে না,এরকম পরিশ্রমের কাজই ভালো মনে হয় তার কাছে
ওদিকে শান্ত টেবিলে মাথা রেখে চুল টানতেছে আর কিছুক্ষন বাদে বাদে ল্যাপটপে তাকিয়ে কিসব টাইপ করছে
তার কাজ হলো অফিসের ২০৫জন কর্মচারীর সবাই ঠিকমত কাজ করছে কিনা সেটার লিস্ট দেখে চেক করা
কারণ সবাই তাদের কাজ যখন যেটা সম্পন্ন হয় তখন সেটার কপি নাম সহ অফিসের মেইন তথ্য ভাণ্ডারে পাঠিয়ে দেয় যেটা সোজা শান্ত দেখে
শান্ত এই নিয়ে ৬কাপ কফি খেয়েছে,ঊষা একের পর এক কফি নিয়ে যাচ্ছে,আহানা কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিষয়টা খেয়াল করতেছে
তো ৭ম বার ঊষা কফি নিয়ে যাওয়ার সময় আহানা থামিয়ে বললো সে দিয়ে আসবে,ঊষা তাই ওর হাত কফি দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো
আহানা কফি হাতে নিয়ে শান্তর রুমে এসে দরজায় নক করলো তারপর ভিতরে ঢুকে দেখলো শান্ত চেয়ারে আধশোয়া অবস্থায় চোখ বন্ধ করে নিজের মাথা টিপতেছে দুই হাত দিয়ে
.
এই যে শুনুন!
.
শান্ত তার মাথা থেকে হাত নামিয়ে দরজার দিকে তাকালো
আহানা কফি নিয়ে ওর সামনে এনে রেখে বললো”আমি টিপে দিবো?”
.
বাপ রে বাপ!সূর্য তো মনে হয় আজ উঠেই নাই
.
ঢং করতে হবে না,দিতাম কিনা সেটা বলেন
.
লাগবে না,কফি খেলে ঠিক হবে
.
কফি একবার খেলেই মাথা ধরা যায় যদি টেকনিক জেনে কফি খাওয়া যায় তবে
তাহলে আর ৭বার কফি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না বুঝলেন?
.
আচ্ছা তা কিসের টেকনিক?
.
মুখে দিয়ে মাথা উঁচু করে গিলতে হয়
.
ইন্টারেস্টিং বাট আমি ঠিক বুঝলাম না
.
আমি দেখাচ্ছি!
আহানা কফির মগ নিয়ে এক ঢোক গিলে দেখালো তারপর থুথু করতে করতে বাইরে চলে গিয়ে ২মিনিট বাদে এসে বললো এটা কিসের কফি খান আপনি?ছিহ ছিহ বাপের জন্মে এরকম ফালতু খাবার খাইনি,একে তো তিতা তার উপর চিনির ছিঁটেফোটাও নাই,তাই তো আপনার মাথা ব্যাথা যাচ্ছিলো না
.
চিনি খাইলে আমার শরীর খারাপ করে
.
কি বললেন?চিনি খাইলে শরীর খারাপ করবে কেন?আপনার তো ডায়াবেটিস না,জোয়ান একটা ছেলে তার কিনা চিনিতে সমস্যা!তাই তো বলি আপনাকে সবসময় এলিয়েন মনে হয় কেন!
আপনার মুখ থেকে তেতো কথা বের হয় কেন,পাজল এখন মিললো
.
শান্ত চেয়ার থেকে উঠে আহানার চুল টেনে ধরে বললো”তুমি এলিয়েন তোমার ১৪গুষ্টি এলিয়েন,যাও আমার রুম থেকে!মাথা ব্যাথা আরও বাড়াতে এসেছে!”
.
আহানা রুমের বাইরে এসে বোকার মতন তাকিয়ে আছে আর শান্ত ওর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে ভিতরে চলে গেছে
.
আহানা অফিসের কিচেনে গিয়ে নিজের হাতে এলাচ,দারুচিনি দিয়ে দুধ চা বানালো ঘাড়ো করে তারপর সেটা নিয়ে আবারও দরজা ধাক্কালো
শান্ত টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো,মাথা উঠিয়ে রাগি রাগি লুক নিয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই দেখলো আশেপাশে কেউ নেই,নিচে এক কাপ চা তার মধ্যে একটা চিরকুটে লিখা “মাথা ব্যাথা কমাতে চাইলে চা টা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন”
.
শান্ত পুরো করিডোরটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো
আহানার এক অংশও দেখা যাচ্ছে না কোথাও,এত জলদি উধাও হলে কি করে
শান্ত চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আবার ভিতরে চলে গেলো
আহানা আবারও পা টিপে টিপে করিডোর পেরিয়ে শান্তর রুমের দরজার ফুটো দিয়ে দেখতে লাগলো শান্ত চা টা খাচ্ছে কিনা
হুম খাচ্ছে,আহানা তাই মুচকি হেসে চলে আসলো তার কেবিনে
.
শান্ত চা খেতে খেতে একটা কাজ শেষ করলো,পরে কাজটা শেষ করে তার মনে হলো তার মাথা ব্যাথা একটুও নেই,নিজের অজান্তেই হেসে দিলো সে
আহানা কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে টেবিলে মাথা রেখে,বিকাল সাড়ে ৫টা বাজে তখন
অফিসের বাকি স্টাফরা উঁকি দিয়ে ওর ঘুম দেখছে,ঊষা বাদে আর কেউ জানে না যে আহানা শান্তর রিলেটিভ হয়
তো সবাই তো একজন আরেকজনের সাথে বলাবলি করছে যে আজ আহানা শান্ত থেকে বিরাট বড় ঝাড়ি খাবে,সবাই মজা দেখার জন্য ওয়েট করছে
ঊষা গেছে থার্ড ফ্লোরে,সেও নাই
শান্ত তার রুম থেকে বেরিয়ে স্টাফদের কেবিনদের সামনে এসে পা রাখতেই যে যার কাজে মন দিয়ে দিলো সাথে সাথে
আহানা এখনও ঘুমাচ্ছে,শান্ত সবাইকে দেখার পর এবার আহানার কেবিনের দিকে তাকালো,কিন্তু কিছুই বললো না,এগিয়ে এসে আহানার ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে অনেকক্ষণ ধরে তারপর বাকি স্টাফদের তাকানো দেখে টেবিলে দুম করে একটা বাড়ি দিলো সে
আহানা হকচকিয়ে উঠে গিয়ে বললো”কি হয়েছে,কে মরেছে?কে বেঁচেছে??”
.
শান্ত আর কিছু না বলেই চলে গেলো আবার
.
আহানার এবার হুস আসলো যে সে এতক্ষণ কাজ রেখে ঘুমাচ্ছিলো
এদিকে সবাই কনফিউশানে পড়ে গেছে এই ভেবে যে শান্ত আহানাকে ধমক তো দূরে থাক একটা ঝাড়িও দিলো না কেন!

৬টা বাজে এবার শান্তর চলে যাওয়ার পালা,সে ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যেতে নিতেই দেখলো আহানা ঊষার সাথে কথা বলতেছে এখনও
.
কি হলো?চলো?
.
কে আমি?
.
না তোমার ভূতে
.
আমি রিকসা নিয়ে যেতে পারবো,আপনি যান
.
শান্ত হাত মুঠো করে শার্টের হাতা খানিকটা উঠাতে নিতেই আহানা তার সাইড ব্যাগ হাতে নিতে নিতে বললো’আসতেছি”

আচ্ছা একটা কথা বলেন তো
.
কি?
.
আমি আপনার সাথেই কেন বাসায় ফিরতাম?
.
শুনো!তোমার এসব আজগুবি কথা অফ দাও
.
সামান্য এক লাইন বললাম শুরুতেই মুখে তালা মেরে দিলেন,আজ সারাদিন আমি একা একা কথা বলছি,আপনার সাথে একটুও ঝগড়া করি নাই,আমার কেমন খিধা খিধা পাচ্ছে
.
হোয়াট!ঝগড়ার আবার খিধা!তাহলে তুমি স্বীকার করছো যে তুমি ঝগড়া করো বেশি
.
না মানে কে বললো!এক হাতে তো আর তালি বাজে না,আপনিও তো ঝগড়া করেন
.
যাই হোক,দুপুরে কিছু খেয়েছিলা?
.
ঊষা আপুর সাথে চকবার খেয়েছিলাম
.
ভালো
.
ভালো মানে?লাঞ্চে কেউ আইসক্রিম খায়?
আপনি কিনা আবার বলতেছেন ভালো?
.
আমি লাঞ্চে কিছু খায়নি,তুমিও খাও নি,তাহলে এটা তো ভালোই হলো তাই না?
.
আমি ভাত খাবো😭আপনি কেমন বস,স্টাফরা খেলো কি খেলো না খোঁজ নেন না
.
আমার অফিসের স্টাফরা টিফিন নিয়ে আসে,তুমি আনলা না কেন?আর তুমি যদি এটা ভেবে থাকো আমি তোমার প্রতি ওভারপ্রোটেক্টেড তাহলে এটা ভুল ভাবছো
তোমাকে আমি বিয়ে করবো না,বুঝছো?
.
আপনি মানুষ না এলিয়েন
.
বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবা
.
না আমি এখন খাবো,গাড়ী থামান
.
এখন কি খাবা!আমার মাথা ধরে আছে নাহলে রেস্টুরেন্টে যেতাম,মুড নাই,সো সোজা বাসায় যাচ্ছি
.
আমি নেমে যাই আপনি চলে যান, গাড়ী থামান
.
তুমি এই সন্ধ্যাবেলায় কি খাবে?টাকা আছে তোমার কাছে?
.
১০টাকার ঝালমুড়িতে পেট ভরে যাবে,গাড়ী থামান আপনি,আমি নাহলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো আর একটু সময় খালি পেটে থাকলে
.
উফ!
.
শান্ত গাড়ী থামিয়ে চুপ করে আছে
আহানা মনে মনে ওকে গালি দিতে দিতে কার থেকে নামলো,ভাবলো শান্ত কার থেকে নেমে ওর জন্য ঝালমুড়ি এনে দিবে কিন্তু তা হলো কই,উল্টা সে এখন ঝালমুড়ি নিতে এসেছে,ঝালমুড়ি কিনে গাল ফুলিয়ে গাড়ীতে এসে বসলো আহানা
শান্ত আবারও কার স্টার্ট দিয়ে নিশ্চুপ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে
আহানা সাউন্ড করে করে ঝালমুড়িটা খাচ্ছে
গাপুসগুপুস,গাপুসগুপুস!!
.
শান্তর মন চাচ্ছে আহানাকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে নিতে কিন্তু পারছে না সে
.
আহানা একটু খেয়ে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো”নিন”
.
শান্ত সামনে থাকা ইয়া বড় জ্যামের দিকে চেয়ে থেকে বললো”খাবো না”
.
খেতে তো দিই নাই,মরিচ বেছে ফেলে দেন,আমি ঝাল খেতে পারি না,আমার এপাশে অন্ধকার বলে মরিচ খুঁজে পাচ্ছি না,আপনার পাশে একটা বাসের থেকে আলো আসতেছে,সেই আলোয় দেখে দেখে মরিচ বেছে দেন
.
শান্ত শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে ঢিলা করে রাগটা সামলিয়ে আহানার দিকে চেয়ে বললো”আমি তোমার কি লাগি?”
.
ভাইয়া!
.
শান্তর রাগ এবার ১০তলা বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে গেছে,বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো”আর?”
.
শত্রু
.
আচ্ছা!
শান্ত আহানার হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে মরিচ বাছতে লাগলো
কারের ভিতরে লাইট দেওয়ার সিস্টেম আছে আর তা আহানাও জানে শান্ত ও জানে
শান্ত আগে থেকে রেগে আছে আরও রাগানোর জন্য আহানা ওকে কাজ দিলো
শান্ত কারের লাইট অন না করে চুপচাপ বাসের আলোয় মরিচ বাছতেছে দেখে আহানা ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো কিন্তু তার ধারনার বাইরে শান্তর মেজাজ ঠিক কতটুকু বিগড়ে আছে
আহানা জানালা দিয়ে বাইরের একটা বিল্ডিংয়ের লাল নীল বাতি দেখতেছে
শান্ত গুনে গুনে ৬টুকরো মরিচ বাছলো ঝালমুড়ি থেকে তারপর মরিচের টুকরো গুলো ঝালমুড়ির উপরে সুন্দরমতন লেপে রাখলো যাতে প্রথমবার নিলেই সব মরিচ উঠে আসে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ ,আহানা দূরের বাতিগুলো দেখতে দেখতে বললো”হলো?এত সময় লাগান কেন?”
.
হলো!
.
আহানা শান্তর দিকে ফিরে ওর হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে চিমটি কেটে ঝালমুড়ি নিয়ে মুখে দিয়ে ১বার চিবালো তারপরই সে টের পেলো এটায় সব মরিচ পড়েছে,চোখ বড় করে ঝালমুড়ির দিকে না তাকিয়ে আহানা সোজা শান্তর দিকে তাকালো
শান্ত স্বাভাবিক ভাবেই জ্যমের দিকে তাকাচ্ছে আবার মাঝে মাঝে হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে
আহানা ওড়না দিয়ে নাক চোখ মুছতে মুছতে ঝালমুড়িটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো রাগ করে
বাচ্চাদের মত কেঁদেই যাচ্ছে সে
শান্ত হাসি থামিয়ে কারের ডেস্ক থেকে এক বোতল পানি নিয়ে এগিয়ে ধরলো আহানার দিকে
আহানা কাঁদতে কাঁদতে পানির বোতল নিয়ে পুরো হাফ লিটার পানি খেয়ে শেষ করে দিলো তারপর আবার নাক মুছতে লাগলো বসে বসে
এত মরিচ সে আগে কখনও খায়নি
.
আমার মন মেজাজ ভালো না থাকলে আমাকে ডিস্টার্ব করলে তোমার সাথে সবসময় এমনটাই হবে মিস আহানা ম্যাডাম
.
আহানা গাল ফুলিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসে আছে,চিৎকার করে চিল্লাইতে মন চাচ্ছে কিন্তু সেটা করা যাবে না,এখন কারের দুপাশেই যানবাহন,মানুষ ভাববে পাবনা থেকে পাগল রিলিজ করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
এরে তো আমি বাসায় গিয়ে টাইট দিব,আমাকে মরিচ খাওয়ানো?তোকে আমি বোম্বাই মরিচ খাওয়াবো মনে রাখিস
.
জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে,শান্ত কার স্টার্ট দিতে দিতে বললো”আমার কিন্তু মরিচ ভাল্লাগে”
.
আহানা জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে মনে মনে ভাবলো”মনেও এখন আর প্ল্যানের ব্যাপারে ডিসকাস করা যাবে না যা বুঝলাম”
.
হুম ঠিক বুঝছো!অন্য কিছু ট্রাই করতে পারো,যেমন আমি অনেক কিছুই খাই না
রিপার থেকে জেনে নিয়ে কাজে লেগে যেতে পারো
.
আহানা আবারও নাক মুছে বললো”আপনাকে আমি মাটিও খাওয়াবো মাটির তলের পানিও খাওয়াবো,মনে রাইখেন!
.
জি আপু মনে রাখবো
.
আহানা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সামনে তাকালো,”আপু তোর কণা!আমি তো তোর ক্রাইম পার্টনার লাগি”
.
ইয়া রাইট!আমার একমাত্র ক্রাইম পার্টনার,যে আমার বিরুদ্ধে কাজ করে সবসময়”
.
বিশ্বাস করেন আপনার মতো বস থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন হবে না
.
প্রয়োজন নেই তো!আমি তো সিরিয়াসলি তোমার শত্রু,আমি তো পারি না তোমাকে রতনের সাথে বিয়ে দিয়ে দিই
.
আর আমার তো ইচ্ছা করে আপনাকে কণার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে
বাট কণা আপু আপনাকে আমার মতন জ্বালাতে পারবে না বলে বিষয়টা আই মিন মনোভাবটা শীতলক্ষ্যা নদীতে ফালায় আসছি আমি
নাহলে কবেই শত্রুতার খাতিরে আপনার গলায় কণা আপুকে ঝুলায় দিতাম আমি
.
exactly!!আমিও তোমাকে রতনের বউ বানাতাম বাট কি জানো রতন তোমার থেকে শারীরিক চাহিদা নেওয়া ছাড়া আর কিছুই চায় না বাট আমি তো তোমাকে সকাল থেকে শুরু করে রাত শেষ হওয়া পর্যন্ত জ্বালাবো যেটা বস্তির সেই রতন পারবে না
.
এক মিনিট!আপনাকে কে বিয়ে করবে?
.
২মিনিট!তোমাকে কে বিয়ে করবে?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
বাসায় আসতেই আহানা ডাইনিংয়ে বসে গেলো খাওয়ার জন্য আর অন্যদিকে তার নজর নেই
শান্ত নিজের রুমে চলে গেছে,আহানা ভাত আর ডাল দিয়েই খাবার শেষ করে ফেললো
রিপা মাংসের বাটি আনতে আনতে সে খাওয়া শেষ করে উঠে চলেও গেছে
এত খিধা লেগেছিলো যা বলার বাইরে
শান্ত ফ্রেশ হয়ে একটা ছোট বিয়ারের বোতল নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে
এতদিনের ব্যস্ততায় ভালোমতন খাওয়াই হয় নাই
ঢক ঢক করে ২চুমুক দিয়ে এদিকে ওদিকে একবার চেয়ে নিলো,আহানা বা নিতু দেখে ফেললে বিপদ
ওদের কাউকে না দেখে শান্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বিন ব্যাগে বসলো পা টা বারান্দার গ্রিলে উঠিয়ে
লাউডলি গান চালিয়ে চোখটা বন্ধ করে একটু চিল হতে চাইছে শান্ত
আহানা চাদর টেনে পাশের রুমে শুয়েছে একটু,কিন্তু তীব্র গানের আওয়াজে লাফ দিয়ে উঠে বসে এদিক ওদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো গানের আওয়াজটা শান্তর রুম থেকে আসতেছে
বালিশ মাথায় দিয়ে আবারও শুয়ে পড়লো সে
কিন্তু নাহহ আওয়াজ মনে হয় কমতেছেই না বরং বাড়তেছে
এদিকে শান্তর মা বই পড়ছেন কোনো মানাও করছেন না তিনি
আর আমার নিজের মা তো রিপার সাথে রান্নাঘরে কি যেন কাজ করছে
শয়তানটা আমাকেই জ্বালায় খায় সবসময়
আহানা বিছানা থেকে নেমে ওড়না গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো,সোজা শান্তর রুমে এসে দেখলো শান্ত বিনব্যাগে আধশোয়া অবস্থায় কি যেন খাচ্ছে
আহানা নক না করেই হনহনিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো,বারান্দার কাছে এসেই থেমে গেলো সে
শান্ত এটা কি খাচ্ছে ভালো করে দেখে আর গন্ধ শুঁকেই বুঝতে পারলো এটা মদ
আহানা আরেকটু এগিয়ে আসতেই শান্তর নজরে পড়লো সে
শান্ত কিছুটা ভয় পেয়ে বোতলটা লুকিয়ে ফেললো তারপর হাত দিয়ে থুতনি আর মুখ মুছে উঠিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আপনি কি খাচ্ছিলেন ওটা?
.
কারোর রুমে ঢুকতে হলে নক করে ঢুকতে হয় এই টুকু কমনসেন্স নেই তোমার?
.
আগে এটা বলুন! কি খাচ্ছিলেন
.
পাইনএপেল জুস,শুনছো?এবার বের হও আমার রুম থেকে,এখন তো মনে হচ্ছে রুম লক করে রাখতে হবে সবসময়
.
আপনি এত জোরে গান বাজাচ্ছিলেন কেন?আমি একটু ঘুমোতে চাইলাম তা আর পারলাম না আপনার কারণে
আর আপনি কিনা এখানে বসে মদ খাচ্ছিলেন?আমি আনারসের জুস চিনি না তাই না?এখনই আন্টিকে বলে দিচ্ছি আমি
.
আহানা সোজা বাইরের দিকে ছুটতেই শান্ত ওর হাত খিঁচে টান দিয়ে আবারও আগের জায়গায় নিয়ে আসলো
.
আপনাকে না বললাম আমাকে ছুঁবেন না
.
সবসময় এরকম করো কেন যখনই আমি তোমাকে ধরি
আমি কি তোমাকে বিয়ে করবো নাকি?
হাত ধরা নরমাল ব্যাপার তুমি সবসময় নেগেটিভলি নাও কেন?
বাই দ্যা ওয়ে! কি বলবা মাকে?
.
বলবো আপনি লুকিয়ে মদ গাঁজা এসব খান
.
এটা জুস,ওকে?
.
তাহলে দিন আমি খেয়ে দেখবো
.
নাহহহহ!
.
কেন না?জুসই যদি হয় তাহলে আমি খেয়ে দেখলে কি সমস্যা?
.
সমস্যা আছে,ইয়ে আসলে আমি মুখ লাগাই খাইছি,আমার থুথু ভিতরে চলে গেছে,তুমি সেটা খাবা?
.
ইয়াকককক!জীবনেও খাবো না,আপনার মতো খাচ্ছর আর দুটো দেখিনি আমি,হাত ছাড়ুন আমার
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানার কোমড়ে হাত চেপে ওকে আরও কাছে নিয়ে আসলো
.
কি ব্যাপার?আমি বুঝতে পারতেছি আপনি মদ খেয়েছেন,কেমন নেশাখোরের মতন বিহেভ করতেছেন,ছাড়ুন আমাকে তা না হলে আমি চিৎকার!!
(না সেটা কেমনে করবো এত জোরে গান বাজতেছে)
হাত ছাড়ুন আমার
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বললো”আমার মুখ লাগানো বোতলটা থেকে জুস খাবা?”
.
ইচচচচ!ছাড়ুন জীবনেও খাবো না আমি
খবিশ!ছাড়ুন
.
আহানা অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগালো,হাঁপাতে হাঁপাতে টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে খেয়ে বিছানায় পা তুলে বসে পড়লো সে
শান্তর মতন ডেঞ্জারাস ছেলে আর দুটো দেখেনি সে,একসময় এক রুপ ধারণ করে লোকটা
কখনও গুন্ডা,তো কখনও দাদাগিরি,কখনও বলদা
.
শান্ত মদের বোতলটা শেষ করে লুকিয়ে ফেলে মাউথ ওয়াস নিয়ে কুলি করতে চলে গেছে ওয়াসরুমে
.
আহানা লুকিয়ে এতক্ষণ শান্তর গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখছিলো,ওর নামে বিরাট বড় একটা বিচার সে শান্তি আন্টিকে দিবে তাই তার জন্য প্রমাণ লাগবে
এরকম লুকিয়ে খাচ্ছিলো তার মানে নিশ্চয় আন্টি জানলে কেলাবে
হিহি,বাবু তোমাকে আমি কেলানি খাওয়াবো,তোমার একটা মাত্র শত্রু আমি
আহানা পা টিপে টিপে শান্তর রুমে ঢুকলো,শান্ত এখন ওয়াসরুমে
আহানা পুরো রুমে তন্নতন্ন করে খুঁজেও একটা বোতল পেলো না,কোন সিন্ধুকে লুকিয়েছে কচু পাচ্ছিইই না ধুর ধুর!
আচ্ছা গন্ধ শুঁকে তো খোঁজা যায়?
আহানা ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে গন্ধটা ধরে ধরে বোতল পর্যন্ত পৌঁছে গেলো,একেবারে আলমারির উপরে রেখেছে,এত বড় আলমারি আমি তো নাগাল পাবো না
কি করবো এখন!এদিকে শয়তানটার বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে
আমি বরং গভীর রাতে আসবো এখন যাই
আহানা পালালো সেখান থেকে
.
রাত ১টা বাজে ৮মিনিট
আহানা কোমড়ে ওড়না বেঁধে তার রুম থেকে বেরিয়েছে,মা গভীর নিদ্রায়,নিতুও ঘুমাচ্ছে,শান্তি আন্টিও ঘুমাচ্ছেন তার রুমে
রাস্তা ফাঁকা মানে করিডোর ফাঁকা
আহানা এবার শান্তর রুমের কাছে এসে আল্লাহর নাম নিয়ে দরজায় টোকা দিলো কারণ শান্ত বেশির ভাগ সময় দরজা আটকে রাখে
তো ভাগ্যবশত দরজাটা খোলাই আছে
আহানা তো আল্লাহকে থ্যাংক ইউ দিয়ে ভিতরে ঢুকলো
মাটির তলের গুহাকেও হার মানাবে এই রুমের অন্ধকারের পরিমাণ
গায়ে কিছুক্ষণ বাদে বাদেই ঠাণ্ডা হাওয়া এসে লাগতেছে
এসির হাওয়া,এই হাওয়া গায়ে এমন কাঁটা দেয় মনে হয় এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম,শীতের পরিমান বেড়ে গেছে
ওমাগো!
আহানা অন্ধকারে কিছুই দেখছে না, আসলেই সে ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে এখন
একটু বাতির আলো ও নেই,এমন জানলে টর্চ নিয়ে আসতো সাথে করে
নিচে বসে ফ্লোর ধরে ধরে সে আলমারির দিকে না গিয়ে সোজা বেডের দিকে গেলো অন্ধকারে,বেড ধরে বুঝলো এটা বেড
তাই ওদিকে ঘুরে যেতে নিতেই দামমমম করে একটা হাত এসে আহানার ঘাড়ের উপর পড়লো
শান্ত ঘুমের ঘোরে হাত নাড়াতেই সেটা আহানার গায়ে গিয়ে পড়েছে
আহানা তো ভয়ে মনে হয় মরেই যাবে,ভাবছে শান্ত বুঝি জেগে গেছে কিন্তু না জাগে নি
শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলে সে কিছুদূর এগোতে নিতেও পারলো না,কারণ শান্ত আহানার ঘাড়ের উপরের জামার হাতাটা মুঠো করে ধরে রেখেছে
আহানা এবার কি করবে,ঘুমের ঘোরে শান্ত এত শক্ত করে আহানার জামা ধরেছে মনে হয় চোর ধরেছে
আহানা কাঁপা কাঁপা হাতটা উপরে উঠিয়ে শান্তর হাতটা ধরলো তারপর আস্তে আস্তে সেটা ঘাড় থেকে সরালো
তারপর কপালের ঘাম মুছে আবারও একটু এগোতেই কেউ একজন ওর গলার সামনে দিয়ে হাত নিয়ে চেপে ধরে পিছন দিকে এক টান দিয়ে নিয়ে গেলো
আহানা চিৎকার করা ধরতেই শান্ত তার আরেক হাত দিয়ে আহানার মুখও চেপে ধরলো,আহানা চুপ হতেই ল্যাম্পশ্যাডটা অন করলো সে
আহানা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সামনে আয়নার দিকে তাকালো,আয়নায় স্পষ্ট শান্তকে দেখতে পাচ্ছে সে
শান্ত জেগে গিয়ে আহানাকে ভালো করে ধরেছে
যাকে বলে হাতেনাতে ধরা
আহানা কাঁপতে কাঁপতে বললো” ইয়ে আসলে ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে এদিকে চলে আসলাম, এই আর কি!
অন্য কিছু না সত্যি”
.
শান্ত আহানাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
আহানা এত এত ভয় পেয়েছে মনে হয় এখনই কেঁদে দিবে
শান্ত সবেমাত্র ঘুমিয়েছিলো আর আহানা কিনা এই কান্ড করলো
.
তুমি ঘুমের ঘোরে হাঁটতেছিলো?
.
হুম হুম সত্যি
.
তাহলে ওড়না এমন করে বেঁধেছো কেন মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধে যাচ্ছো!
.
ইয়ে আমি স্বপ্নে দেখছিলাম যে আমি বাহুবলির যুদ্ধে আছি তাই বাঁধলাম মনে হয়
.
আচ্ছা,তো হামাগুড়ি দিয়ে আমার বিছনার পাশ দিয়ে কই যাচ্ছিলে?আর আমার হাতই বা ধরলে কেন?
.
আরে আপনি আমার ঘাড়ের উপর জামা টেনে ধরছিলেন ওদিকে যেতে আমার সমস্যা হচ্ছিলো তাই
(ইস কি বলে ফেললাম)
.
আচ্ছা তাই??ওদিকে যেতে প্রব হচ্ছিলো বুঝি?তা কি করে বুঝলে?তুমি তো ঘুমের ঘোরে ছিলে তাই না?
.
না মানে,হাত ছাড়ুন আমি যাই ঘুমাতে
.
না না,তা হচ্ছে না,চোরের মতো আমার রুমে তুমি এত রাতে কি করতে এসেছিলা তার সম্পূর্ণ তথ্য তো আমাকে বের করতে হবে
.
বললাম তো ঘুমের ঘোরে আসছিলাম
.
তোমাকে আমি হারে হারে চিনি,কি কুবুদ্ধি নিয়ে আসছো বলো নাহলে আজ রাত তোমাকে আমার রুমেই কাটাতে হবে
.
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে নিজের রুমের দরজা লক করে আসলো
তারপর দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো”বলো”
.
আহানা টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে খেয়ে ধপ করে বিছানায় বসে গেলো,ওড়না দিয়ে গলার আর কপালের ঘাম মুছে বললো”আমি সত্যি ঘুমের ঘোরে এসেছিলাম”
.
শান্ত এক ধমক দিয়ে বললো”চুপ!!!অনেক মিথ্যা হইছে,তোমার যে ঘুমের ঘোরে হাঁটার রোগ নাই তা জানা আছে আমার,খালি খালি মিছা বলে লাভ নাই বুঝছো??
.
আহানা অনেক ভাবলো,এখন সত্যি বললে শান্ত ওকে কাঁচা গিলে খাবে,তাই ভালো মেয়ের মতন বিছানায় শুয়ে চাদর টেনে মুখ ঢাকলো সে
.
আরে আরে এসব কি?তোমাকে আমার বিছানায় শুতে বলছি আমি?উঠো
.
উহু!ঘুম পাচ্ছে,ঘুমাতে দেন
.
শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছো তুমি,তা হবে না,উঠো!!
শান্ত আহানাকে জোর করে ধরে বসিয়ে দিলো
.
আহানা এবার কি করবে সেটাই ভাবতেছে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে
.
ঠিক আছে যাও নিজের রুমে,তাও আমার রুমে ঘুমাবা না,যাও
.
আহানা সাথে সাথে বিছানা থেকে নেমে এক দৌড় দিলো,এক বাঁচা বাঁচলাম আমি,আর এ ভুল হবে না
.
শান্ত তার রুমের দরজা ভালো করে লাগিয়ে এসে শুয়ে পড়েছে আবার
.
এত বড় চান্সটা গেলো আমার,কোথায় ভাবলাম আন্টিকে দিয়ে কেলানি দিব তা আর হলো কই,উল্টো আমি ফেঁসে যাচ্ছিলাম একটুর জন্য
আহানা নিজেকে বকতে বকতে রুমে এসে শুয়ে পড়লো
কাল থেকে আর কোনো টিউশনি করাবো না,যে বেতন আসবে অফিস থেকে সেটা দিয়েই হয়ে যাবে,এত ঝামেলা বহন করতে পারবো না,এমনিতেও শয়তানটার অফিসে এত এত কাজ বাপরে বাপ

পরেরদিন ভোরবেলায় চোখ খুলে আহানা আবারও শান্তর রুমের সামনে এসে হাজির,ভেবেছিলো শান্ত এখন ঘুমে থাকবে এখনই কাজটা সেরে ফেলবে কিন্তু শান্ত তো ঠিকই ঘুমাচ্ছে কথা হলো গিয়ে শান্তর রুমের দরজা বন্ধ,শান্তর সাথেই অফিস যেতে হবে আবার ফিরার সময় তার সাথেই ফিরতে হবে তাহলে কাজটা করবো তো করবো কখন!??
আহানা মন খারাপ করে গন্ধরাজফুলের বাগানটার সামনে হাঁটা হাঁটি করছে,একটা ফুল কানে দিয়ে বাসার ছাদের দিকে একবার তাকালো সে
তারপর আবারও ঘাসের দিকে চোখ রাখতেই মাথায় ঘুরপাক খেলো এক্সিলেন্ট একটা আইডিয়া
আর সেটা হলো শান্তর রুমের বারান্দা!!
আহানা এক দৌড়ে সূর্যমুখীর বাগানটায় এসে হাজির
শান্তর রুমের বারান্দাটা একটু অদ্ভুত!নিচে দিয়ে ওয়াল,তার উপরে ২বিঘে গ্রিল,তারপর উপরে খোলা ছাদ পর্যন্ত
তো আহানা ওখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি করে সে এই গ্রিল টপকে ভিতরে যাবে,যা করার এখনই করতে হবে,এখন বাজে ভোর সাড়ে ৫টা,শান্ত ৮টা ছাড়া জাগবে না যতদূর জানি
এ সময়ের মাঝে আমাকে কাজটা সেরে ফেলতে হবে
আহানা বারান্দার কাছা কাছি এসে গ্রিল ধরে ঝুলে রুমটার ভিতরে তাকালো
শান্ত উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে,নির্ঘাত ঘুমাচ্ছে,জেগে থাকার চান্সই নাই এখন
আহানা এবার গ্রিল ধরে বাঁদরের মত ঝুলতে ঝুলতে ৪বার চেষ্টা করলো তাও ভিতরে ঢুকতে পারলো না,তারপর বাসায় এসে একটা মোড়া নিয়ে আবারও সেই জায়গায় উপস্থিত হলো সে
মোড়ায় পা রেখে সুন্দরমত গ্রিল টপকে ভিতরে চলে গেলো আহানা
এখন হয়ে গেলো এক সমস্যা
গ্রিলেগুলো যে প্রান্তে শেষ হয়েছে ঠিক সেই প্রান্তে একটা এ্যারো আকৃতির মশাল বানানো লোহার
আহানার ওড়না সেটাতে গেঁথে গেছে ভালোমতন
আহানা বারান্দায় নেমে সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওড়না টান খেয়ে দুম করে নিচে পড়ে গেলো সে
তারপর পিছনে তাকিয়ে দেখলো ওড়না আটকে গেছে
ওড়না অনেক টেনেও খুলতে না পেরে ওড়না ছাড়ায় হাঁটা ধরলো সে
এবার হলো ২য় বিপদ
আর সেটা হলো শান্ত বিছানায় নেই
আল্লাহ গো!!
আমার এখন কি হবে
ওয়াসরুমের আলো জ্বলতেছে তার মানে শান্ত সেখানে
আহানা কি করবে কোথায় যাবে ভেবে না পেয়ে বারান্দার দিকে দৌড় দিলো ফের
.
দাঁড়াও!
.
ইহ রে কেলো করেছে
.
আহানা ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে পড়লো আর পিছনে তাকালো না
আল্লাহর নাম নিয়ে এক দৌড় মেরে দিলো
গ্রিলে পা রেখে নিচে লাফ দিতে নিতেই শান্ত দৌড়ে এসে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে আসলো
.
পালাও কই??আমি তোমাকে এমনি এমনি যাইতে দিব?
.
শান্ত আহানাকে ফ্লোরে বসিয়ে দিলো
আহানা চোরের মতো মুখ করে হাত নিয়ে গ্রিলে আটকে থাকা তার ওড়নাটা ছুটাচ্ছে
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে আহানাকে দেখে যাচ্ছে
.
এবার বলো এখনও কি ঘুমের ঘোরে আমার বারান্দার গ্রিল টপকে এসেছো নাকি সজ্ঞানে এসেছো?
.
না মানে আমি আসলে
.
চুপ!!তোমার মতো মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি,এত সাহস তোমার কই থেকে আসে?আমার রুম থেকে কি চাই তোমার?সোজা সাপ্টা বলে দিলেই পারো আমিও দিয়ে দিব
এরকম চোরের মতন আসার কি দরকার?
.
আপনি যে মদ খান সেটার সেম্পল একটা দিলেই হবে
.
ওওওওওওও আই সি!!তাহলে এটা হলো কথা!তোমার মদের একটা বোতল লাগবে যেটা নিয়ে মাকে দেখাবে তাই তো?
.
না মানে হ্যাঁ,না না,এমনি দেখবো একটু
.
একটা শর্তে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কি শর্ত?
.
রিয়াজের বিয়ের সব অনুষ্ঠানে আমার সাথে এটেন্ড করতে হবে তোমাকে এজ মাই ওয়াইফ
.
এহহহহ,শখ কত,পারবো না আমি
.
শান্ত নিচু হয়ে আহানার নাক বরাবর মুখটা লাগিয়ে বললো”তাহলে তোমার কপালে শনির দশা আছে মিস আহানা”
.
আহানা একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো”আচ্ছা যাব তবে আমারও একটা শর্ত আছে”
.
কি?
.
আমাকে ছুঁবেন না একদম
.
সেটাতে ওকে বলতে হলে এখন এই মূহুর্তে তোমাকে আমি মদের বোতলের সেম্পলটা দিব না,ভেবে উত্তর দাও
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে ৩মিনিট ধরে ভাবলো তারপর বললো”ঠিক আছে”
.
ওকে তাহলে আর তোমাকে ছুঁবো না
.
হুমম এখন সরুন আমি আমার ওড়না নিব
.
শান্ত গাল ভেটকিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো
আহানা ওড়না ছুটিয়ে আবারও গ্রিল টপকে নামতেছে
.
এই তোমার কি মিনিমাম কমনসেন্স ও নাই??আমার সাথে তোমার কথা দুই এ দুই এক হয়ে গেছে তাহলে এরপরেও তুমি চোরের মতন গ্রিল টপকে যাচ্ছো কেন?
.
ও হ্যাঁ তাই তো
.
আহানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে সোজা দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে
শান্ত বিছানায় হেলান দিয়ে বসে টিভি অন করলো,দারুন একটা শো দেখাচ্ছে,শো টার নাম হলো”আজকের সকাল”ঢাকার বিভিন্ন জায়গা লাইভ দেখাচ্ছে,শান্ত হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে খেতে খেতে শো টা দেখছে
আহানা টেবিল থেকে আপেল একটা নিয়ে সোফায় বসে টিভি অন করে বসে কার্টুন দেখতেছে আরামসে
আর ২/৩দিন বাদেই রিয়াজের বিয়ের সব কাজ শুরু,প্রথমে গায়ে হলুদটাকেই ইম্পরট্যান্স দিচ্ছে শান্ত,নওশাদ আর সূর্য
কাল ব্যাচেলর পার্টি,শান্ত এই সকালবেলায় সময় পেয়েছে বলে আলমারি খুলে কাল কি পরে যাবে সেটা দেখতেছে
আহানা সোফায় ঘুমিয়ে গেছে টিভি দেখতে দেখতে,সকাল ৬টা বাজে তখন
হঠাৎ ল্যান্ডলাইনের ফোনটা বেজে উঠলো,আহানা ভয় পেয়ে জেগে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,কেউ নেই তার মানে ফোনটা তাকেই ধরতে হবে
হ্যালো,কে?
.
আমি নওমি বলছি,শান্ত ভাইয়া আছে তাকে একটু দেওয়া যাবে?
.
নওমি আপু? মানে রিয়াজ ভাইয়ার বউ?
.
আহানা?
.
হুম
.
আরেহহহ দাঁড়াও দাঁড়াও,শান্ত ভাইয়াকে দিতে হবে না,আমি তো তোমাকেই খুঁজছিলাম,শান্ত ভাইয়াকে দিতে বলেছিলাম কারণ উনার থেকে তোমার নাম্বারটা নেওয়ার দরকার ছিল আমার,এখন তোমাকে পেয়ে গেলাম নাম্বার লাগবে না
.
কি হইছে?কোনো দরকার?
.
হ্যাঁ আসলে আমি জানতে পারলাম রিয়াজ,শান্ত ভাইয়া আর নওশাদ সূূর্য ভাইয়া তারা আরও কিছু ফ্রেন্ডরা মিলে গায়ে হলুদের আগের ব্যাচেলর পার্ট করবে
.
ওহ আচ্ছা তাই?
.
তো আমি আর আমার কাজিন,ফ্রেন্ডরা ভাবলাম তারা ছেলেরা বিয়ের আগে আবিয়াইত্তা পার্টি পালন করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না,সো আমরাও মেয়েদের একটা পার্টি করবো,কিটি পার্টি
তুমি ও আসবা,তোমাকে ডাকার জন্যই ফোন করলাম
.
আমি??কিন্তু!
.
আরে কোনো কিন্তু নয়,তুমি আমার ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছো তার উপর শান্ত ভাইয়ার হবু ওয়াইফ তুমি,তোমাকে তো আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হয়,সুইমিং প্লাজায় চলে এসো কাল সন্ধ্যা ৬টায়
.
আহানা আর কিছু বলার সুযোগই পেলো না কারণ নওমি লাইন কেটে দিয়েছে,আহানা বোকার মতে বসে আছে
পার্টিতে যেতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু কথা হলো যদি কণাও আসে?সে তো নির্ঘাত আসবে,আর আমাকে একা পেলে মাথা চিবিয়ে খাবে,উফ কি করে বাঁচবো এখন
আহানা ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে গেলো চা বানাতে,মাথাটা ধরেছে,চা খেলে ঠিক হবে,এখন সকাল ৬টা ১৭বাজে
আহানা কি পরে যাবে ভাবতে ভাবতে চা বানাচ্ছে
.
শান্ত ঠিক করলো সে কাল ব্রাউন কালারের জ্যাকেট,ভিতরে কালো টিশার্ট পরে যাবে সাথে ডিপ ব্ল্যাক জিন্স,পারফেক্ট!
সেগুলো একসাইড করে রেখে শান্ত রান্নাঘরের দিকে চললো কফি বানাতে
আহানা চা বানিয়ে পিছন ফিরতেই শান্তর সাথে এক ধাক্কা খেলো
.
চোখ কোথায় রেখে হাঁটেন আপনি?
.
তুমি দেখে হাঁটতে পারো না?সবসময় আমার দোষ দেয় এই মেয়ে
.
সরুন তো
.
আমার জন্য কফি বানিয়ে দাও
.
ইহ মঘেরমুলুক পাইছে উনি
.
শান্ত আহানার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলো ছোঁ মেরে
.
এটা কি ধরনের অসভ্যতামি?দিন আমার চায়ের কাপ
.
আগে কফি বানিয়ে দাও
.
আহানা শান্তকে গালি দিতে দিতে পানি গরম করতে চুলায় বসিয়ে শান্তর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে গেলো
.
সকালের নাস্তা সেরে সেই দুজন মিলে একসাথে অফিসে ফিরেছে
আহানা ঠিক করলো সে শাড়ী পরে যাবে,যেহেতু তার ভালো কোনো জামা নাই তো শাড়ী একটা আছে তার কাছে যেটা শান্তর মা ওকে দিয়েছিলো কিছুদিন আগে,খয়েরী রঙের সেই শাড়ীটা
আজ কাজের এত চাপ যে অফিসে শান্ত আহানার তেমন একটা দেখা হয়নি,একেবারে সন্ধ্যাবেলায় বাসায় ফিরার সময় দেখা হয়েছে
.
পরেরদিন সকাল সকাল শান্ত আর আহানা দুজন মিলে রেডি হয়ে নিলো একেবারে অফিস থেকে পার্টিতে যাবে এই ভেবে
রুম থেকে বেরিয়ে দুজন দুজনকে দেখে তো রীতিমত অবাক
শান্ত অফিস কোট না পরে, পরে আছে জ্যাকেট -জিন্স
আর আহানা থ্রি পিস না পরে,পরে আছে শাড়ী
.
তুমি এরকম সেজেছো কেন?
.
আপনি এরকম সাজছেন কেন?
.
সেটা তোমার জানার বিষয় না,আগে বলো তুমি শাড়ী পরছো কেন?
.
আপনাকে কেন বলবো আমি?
.
শান্ত আর কিছু না বলে কারের দিকে হাঁটা ধরেছে,আহানার সাথে ঝগড়া করার মুড তার নাই
সন্ধ্যায় একটু চিল করবে সবাই মিলে আর এখন এই মেয়েটার সাথে ঝগড়া করে সন্ধার পার্টিটায় মুড খারাপ করতে চাই না আমি
আহানার মনে পড়লো নওমি আপু বলেছিলো যে আজ শান্ত আর রিয়াজ ভাইয়ারা মিলে ব্যাচেলর পার্টি করবে হয়ত তাই শান্ত এমন তৈরি হয়ে নিয়েছে আগে থেকে
অফিসে এসে আহানা নওমিকে ফোন করলো একবার
সেদিন নওমির থেকে মনে করে নাম্বারটা নিয়ে নিয়েছিলো সে
নওমি জানালো আজ ৬টায় আসতে
আহানা ফোনটা রেখে নিজের কাজে মন দিয়েছে
শান্ত নিজের রুমে এসে নওশাদকে ফোন করলো তারা বললো তারা আজ শান্তর অফিস ছুটি হলে ওকে নিয়ে একসাথে পার্টিতে যাবে
শান্ত তাই অফিস রুম থেকে বেরিয়ে আহানার কাছে এসে বললো আহানা যেন আজ অফিসের কারে করে বাসায় ফেরে কারণ সে আজ এখান থেকে একটা কাজে যাবে,কি কাজে যাবে সেটা আর বললো না
আহানা মাথা নাড়ালো,তারপর মনে মনে অনেক খুশি হলো এই ভেবে যে শান্তকে কৈফিয়ত দিতে হবে না সে সন্ধ্যাবেলায় কই যাবে,এখন আর শান্ত জানবেও না
আহা কি মজা
সন্ধ্যা হয়ে গেছে আহানা চোরের মতন তাকিয়ে আছে শান্তর অফিস রুমের দিকে
উফ কখন যাবে!!ধুর ধুর,আমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে
শান্ত জ্যাকেটের চেইন খুলে আহানার কেবিনের সামনে নিয়ে চলে গেলো
আহানা সাথে সাথে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে
শান্ত চলে গেছে একদিকে আর আহানা আরেকদিকে
ইয়া বড় এক শপিং মল,এই শপিংমলটার ছাদে কিটি পার্ট হবে
আহানা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে মুখটা হাত দিয়ে মুছে ভিতরে গেলো শপিং মলটার
তারপর লিফটে ঢুকে মুখে হাসি ফুটালো সে,সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে বেরিয়ে এখন একটু রিল্যাক্স করা যাবে
ছাদে এসে আহানা তো রীতিমত অবাক,বিরাট আয়োজন এখানে
যাকে বলে এলাহি কান্ড
সবাই এখানে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে এসেছে
আহানা এটা দেখে মন খারাপ করলো,তার একটা ভালো জামা থাকলে সেটা পরে আসতে পারতো সে,জামা না থাকায় এরকম একটা পার্টিতে শাড়ী পরে আসতে হইছে
.
আরে আহানা যে আসো আসো
.
আহানা মুচকি হেসে নওমির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,নওমি হলুদ রঙের একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে আছে,সাথে কণা এসে দাঁড়াতেই আহানার মনে হয় কলিজায় কেউ খোঁচা দিছে
ভয়ে আহানার গলা শুকিয়ে গেছে
নওমি সবাইকে নিয়ে গোল হয়ে চেয়ার নিয়ে বসলো
তারপর বললো!”শুনো সবাই,আমাদের সবার উড বি/বিএফরা ব্যাচেলর পার্টিতে সো আমি আর কণা মিলে ঠিক করেছি আমরা তাদের ব্যাচেলর পার্টিতে গিয়ে তাদের ইয়া বড় সারপ্রাইজ দিব, ইয়ে!!”
.
আহানা চোখ বড় করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
কি ব্যাপার আহানা?খুশি হও নাই?সেখানে তো শান্ত ও আছে কিন্তু হুমমমম☺
.
না আমি বাসায় যাব,বাই
.
নওমি দৌড়ে এসে আহানাকে আটকালো
আহানা কোথায় যাও,এটা কিন্তু ঠিক না,তুমি বলেছিলে আমাদের সাথে পার্টিতে জয়েন হবে তাহলে এই পার্টি আর ঐ পার্টিতে কি সমস্যা,বরং আরও মজা হবে সেখানে
.
কণা হেসে হেসে বললো”নাকি তোমার হাসবেন্ডের কাছে যেতে লজ্জা করে?”
.
আহানা চুপ করে আছে,তারপর কণার কথার চাপে হ্যাঁ বলে দিলো সে
সবার সাথে শান্ত দের পার্টিতে এসে হাজির হলো অবশেষে
শান্ত মদ এই নিয়ে ৫গ্লাস খেয়েছে,কাজু বাদাম মুখে নিয়ে নওশাদের সাথে হাসাহাসি করতেছে সে
হঠাৎ অনেকজন মিলে বলে উঠলো “সারপ্রাইজ!!!”
শান্ত আর বাকিরা পিছনে তাকিয়ে তো চমকে গেলো সবাইকে দেখে
পুরো মেয়েদের গ্যাং হাজির এখানে
শান্ত আহানাকে এখনও দেখেনি কারণ সে সবার শেষে দাঁড়িয়েছে,সে দেখেছে শুধু কণাকে
শান্ত ঢোক গিলে জ্যাকেটের চেইন টেনে উপরে তুলে ফেললো
কণার একমাত্র দূর্বলতা হলো শান্তর বডি,আর তাই শান্ত সেটা ওকে দেখলেই লুকায়
.
কিগো পুরো ব্যাটেলিয়ন এখানে কি করে?তাও আমাদের ব্যাচেলর পার্টিতে
কথাটা বলে রিয়াজ মদের গ্লাসটা রেখে নেমে গিয়ে নওমির কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো ওরা সবাই এখানে কেন
নওমি বললো “সারপ্রাইজ”
যাই হোক রিয়াজ আর কি করবে ওদের নিয়েই পার্টিটা শুরু করলো
শান্ত নওশাদকে সামনে বসিয়ে নিজে কোণায় গিয়ে বসেছে,কণা নির্ঘাত জ্বালিয়ে খাবে এখন
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খুঁজতেছে
সবাই তাদের পার্টনারকে নিয়ে ব্যস্ত
আহানার ভয় করছে,এখানে কাউকে তেমন চিনে না সে
নওমি আপুকে চিনতো সে এখন রিয়াজের সাথে কোণায় গিয়ে বসেছে
বাকি রইলো নওশাদ আর সূর্য,ওদের খুঁজে পেলে নিশ্চয় শান্তকেও পাওয়া যাবে
এখানে তো শান্তই ভরসা,ওর কাছে থাকলে সেফটি ফিল হয়
আহানা এগোনোর জন্য পা বাড়াতেই একটা ছেলে ওর হাত ধরে ঘুরিয়ে ওকে আরেকদিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো
আহানা কপাল কুঁচকে বললো”আপনি!আপনাকে না বলছিলাম আমালে ছুঁবেন না!এরকম করে ধরলেন কেন,আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম”
ছেলেটার মুখে পার্টি মাস্ক থাকায় আর ঠোঁটটা একদম শান্তর মত হওয়ায় আহানা ভাবলো ছেলেটা শান্ত
কিন্তু শান্ত তো কণার ভয়ে নওশাদের পাশে লুকিয়ে অরেঞ্জ জুস খাচ্ছে,আবার হাতিয়ে টেবিলের উপর থেকে চিপস নিয়ে খাচ্ছে মাঝে মাঝে
কণা পাগলের মতো শান্তকে খুঁজতেছে
অবশেষে সে শান্তকে পেয়েও গেলো
শান্ত!!!
.
উফ কার মুখ দেখে আজ উঠেছিলাম
.
কণা শান্তর পাশে এসে বসে পড়েছে,তারপর শান্তর ঠোঁট আর গলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো”দিন দিন এত কিউট কেন হচ্ছো শান্ত!আমি যে পাগল হয়ে যাবো”
.
রিয়াজ নওশাদের কানে ফিসফিসিয়ে বললো”এখন মনে হয় পাগল নয়,এখন তো পুরো পাগল,তাহলে আর কত পাগল হবে?”
সূর্য আর নওশাদ ফিক করে হেসে দিলো রিয়াজের কথায়
নওমি ওদের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো”মজা অফ দাও আমার বেস্টিকে নিয়ে,কত মানায় ওদের,আমি তো ভেবেছিলাম ওদের বিয়েতে অনেক অনেক মজা করবো কিন্তু শান্ত ভাইয়া কিনা আহানার সাথে এঙ্গেজমেন্ট করে নিলো!সব স্বপ্ন মাটি!
আরে আমি তো ভুলেই গেসিলাম,আহানাও তো এসেছে আমাদের সাথে,সে কোথায়?

.
কি হলো হাত ছাড়ুন!
.
ছেলেটা নিজের মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেললো
ছেলেটার মুখ দেখে আহানার মনে হয় পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে,রতনের চেয়েও নিকৃষ্ট কোনো ছেলে যদি আহানা দেখে থাকে তা হলো এই ছেলেটা,এর চরিত্র কত খারাপ আহানা তা খুব ভালো করে জানে
ছেলেটা একটু পাগল প্রকৃতির
আহানা ১বছর আগে একটা মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো,তার নাম টিয়া,টিয়ার ভাই হলো এই ছেলেটা
নাম সাইমন
এই ছেলেটা আহানাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতো সবসময়,খারাপ নজরে তাকাতো আর তাই আহানা সেই প্রাইভেট ছেড়ে দেয়
এরপর আর ছেলেটা আহানাকে কোথাও খুঁজে পায়নি
তবে আজ ঠিকই পেয়ে গেলো
আহানা ভয়ে কিছুদূর পিছিয়ে গেছে
ছেলেটা হেসে বললো”এট লাস্ট তোমাকে খুঁজে পোলাম আমি,এরকম একটা জায়গায় পাবো সিরিয়াসলি ভাবিনি”
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খুঁজলো
সাদা লাইট অফ করে লাল নীল বাতি জ্বালানো হয়েছে
আহানা এতক্ষণ যা নওমি,কণাকে দেখেছিলো এখন সেটাও দেখতেছে না এই আলোতে
ছেলেটা এগিয়ে এসে আহানার দুহাত ধরলো আবারও
.
আহানা!!চলো আমরা ইঞ্জয় করি
.
হাত ছাড়ুন আমার,বেয়াদবির স্বভাব আপনার এখনও যায়নি,অতিরিক্ত করতেছেন,হাত ছাড়ুন আমার নাহলে চিৎকার করে মানুষ ডাকবো
.
একটা ইংরেজী গান খুব জোরে বাজানো হচ্ছে
আহানা শান্তকে ২/৩বার ডাক দিলো,সাইমন আহানার হাত আরও শক্ত করে ধরে বললো”কে শান্ত?ওকে ডাকছো কেন?আমি তো তোমার সামনে,আমার দিকে তাকাও,আসো না প্লিস,এই সুন্দর মূহুর্ত আমরা ইঞ্জয় করবো,আসো না”
.
আহানা হাত মুছড়াতে মুছড়াতে ভাবলো আজ তার হাতে একটা চুড়িও নেই,কিছুই নেই,ব্যাগটাতে ফোন ছাড়া কিছু ছিলো না,ব্যাগটা ধরার সুযোগ ও পাচ্ছে না সে
এত এত মানুষের ভীড়ে একটা ছেলে ওর সাথে খারাপ বিহেভ করছে কিন্তু কেউ খেয়ালই করছে না
সাইমন আহানাকে টেনে নিয়ে গেলো সিঁড়ির দিকে
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে গুনে গুনে ৫/৬টা কেবিন
আহানা শান্তকে ডাকতে ডাকতে তার গলা ফেটে যাওয়ার মতন অবস্থা কিন্তু গানের তীব্র আওয়াজের কাছে তার এই চিৎকার কিছু না,সাইমনের সাথে পেরে উঠছে না সে
.
আজ আমি তোমার সাথে কিছু করলে তোমার মায়ের কিছু করার থাকবে না,তোমার তো কিছুই করার থাকবে না
তখন বাধ্য হয়ে আমাকেই বিয়ে করতে হবে তোমায়
.
আহানা কেঁদে দিয়েছে শান্তর কোনো সাড়া না পেয়ে,আজ বুঝি সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না
.
সাইমন আহানাকে কেবিন একটার দিকে নিয়ে যাচ্ছে টেনে হিঁচড়ে
আহানা হাতে প্রচণ্ড রকম ভাবে ব্যাথা পাচ্ছে,শান্তকে ডাকা অফ করে এখন সে শুধু বলতেছে তার হাত ছেড়ে দিতে
সাইমন আহানার হাত ছেড়ে ওর পিঠে হাত দিয়ে ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”ভাবতেও পারিনি আজ এখানে এসে এত বড় বোনাস পাবো,তোমাকে পাওয়া ছিলো আমার একটা জেদ,আর এতদিন পর সেই জেদ পূরণ হবে”
.
সাইমন আহানার চুলে হাত বুলিয়ে ওর কোমড় ছুঁতে নিতেই পিছন থেকে একটা হাত এসে ওর নাকে আঘাত করলো খুব জোরে
এত জোরে যে সে আহানাকে ছেড়ে দূরে থাকা রুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পড়লো
আহানা সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছে,শান্তকে দেখে আহানা কিছু না বলেই ওর বুকে গিয়ে মাথা লুকিয়ে ফেললো,ওকে শক্ত করে ধরে বললো”আমি আপনাকে ডেকেছিলাম শান্ত!অনেকবার ডেকেছিলাম”
.
শান্ত সাইমনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,সাইমন পিঠে হাত বুলিয়ে ঠিক হয়ে দাঁড়ালো
আহানার কাঁপা কাঁপা হাতটা গিয়ে শান্তর জ্যাকেটটা শক্ত করে ধরেছে
শান্ত আঙ্গুল তুললো সাইমনের দিকে তারপর আহানাকে বুক থেকে সরিয়ে ওর হাত ধরে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো
সোজা তার কারের কাছে এসে আহানাকে কারের ভিতর বসিয়ে গায়ের জ্যাকেটটা খুলে আহানার হাতে দিয়ে সে আবারও পার্টি সেন্টারটাতে ফেরত গেলো
চলবে

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-২৪+২৫+২৬

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আজব এসব কি!!!সরুন!আমাকে দেখলেই শুরু করেন নাটক!
.
আহানার কথায় শান্তর হুস আসলো,জলদি করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”তোমাকে দেখলেই মানে কি?তুমি দেখে হাঁটতে পারো না সেটা বলো”
.
আমি দেখো হাঁটবো?আপনি যে নিতুর দিকে তাকিয়ে আসতেছিলেন সেটা?
.
যখন দেখলে আমি ওদিকে চেয়ে আসতেছি সরে পড়তে পারোনি?আসলে হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে ইচ্ছে করে সামনে তো দাঁড়াবেই
.
এক্সকিউজ মি!আমি যখন দেখলাম আপনি তেড়ে এদিকে আসতেছেন তখনই আমি ডান পাশে সরে গেছিলাম,কিন্তু আপনি বাম পাশ থেকে ঘুরে ডানপাশেই এসে পড়লেন,আমি কি করতে পারি?
.
আহানা আপু,শান্ত ভাইয়া তোমরা থামো প্লিস,আমার কাজই তো হলো না
.
আহানা শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো
আহা!বাঙালি ক্ষেতে চাষাবাদ করা কৃষকের মতন লাগতেছে
এই ভেবে আহানা ফিক করে হেসে দিলো
শান্ত আহানার হাসি দেখে লুঙ্গিটা ধরে সোজা চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
.
হুহ!নিতু যাও পড়তে বসো,আজ তোমার কত পড়া বাকি আছে খবর আছে তোমার?
.
আপু পড়া বাদ দাও,কাল আমার স্কুলে সিন্ড্রেলা কম্পিটিশন,আমাকে জিততেই হবে যে করেই হোক
.
তাহলে তোমার ভাইয়াকে বলো যে শিখায় দিতে,আমি পারবো না কিন্তু
.
আপু প্লিস প্লিস,এ্যা😭
.
আহানা পড়লো মহা ঝামেলায়
সে এখন কি করবে,এদিকে নিতু ড্রেস পাল্টিয়ে এসে আহানার হাতে দিয়ে বললো এটা পরে অভিনয় করে দেখাতে
আহানা বাধ্য হয়ে হ্যাঁ তো বলে দিলো কিন্তু এখন সে নিতুর রুমে সিন্ড্রেলার ড্রেসটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,নিতু তো ওর বোনের মতনই,তার উপর পুচকে একটা মেয়ে, ওর কথা না রাখে কি করে
জামাটা একটু টাইট হবে তবে বেশ ফিট হয়ে যাবে গায়ে,সিন্ড্রেলা ড্রেস তো তাই একটু বড়োসড়ো জামাটা
আহানা এসব ভাবতে ভাবতে জামাটা পরে নিলো,আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই হা হয়ে চেয়ে আছে সে
কি সুন্দর,একদম সিন্ড্রেলার মতন লাগতেছে আমায়
আহানা জামাটা ধরে রুম থেকে বাইরে পা রাখতেই শান্তর সাথে এক ধাক্কা খেয়ে গেলো
শান্ত হাতে জুস নিয়ে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখন
আহানাকে রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহানাকে এমন বেশে দেখে হা করে চেয়ে আছে সে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”দেখে হাঁটতে পারেন না আপনি?কি হলো?কথা বলছেন না কেন,?স্টুপিড!
আহানা চলে গেলো তার সব প্রশ্নের উত্তরে শান্তর নিরবতা দেখে
শান্ত এখনও হা করে আহানাকেই দেখছে,গায়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জামাটা লেগে আছে আহানার
চুলগুলো ও ছেড়ে দেওয়া,এত সুন্দর লাগতেছে যে শান্তর আর দুনিয়ার খবর নেই
পরে নিতু শান্তর হাত ধরে টান দিতেই শান্তর হুস আসলো নিতুর দিকে না তাকিয়েই মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো সে
তাকালেই হাজারটা প্রশ্ন করে বসবে নিতু
.
আহানা নিতুকে বেশ ভালোমতন অভিনয় কি করে করতে হবে শিখিয়ে দিয়েছে তাই আজ একটু দেরি হয়ে গেলো
একেবারে ৮টা বেজে গেছে,আহানা ঘড়ির দিকে চেয়ে হা করে বললো”এ মা এত দেরি কি করে হলো,আমাকে তো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে”
আহানা জামাটা চেঞ্জ করে বাসা থেকে বেরিয়ে এক দৌড় দিলো
তার আগেই কেউ ওর হাত ধরে আটকে ফেলেছে ওকে
আহানা হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর যে ধরেছে তার মুখের দিকে তাকালো
শান্ত মুখটা গম্ভীর করে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
আমার আজ এমনিতেও দেরি হয়ে গেছে আর আপনি কিনা আমার হাত ধরে আটকিয়ে আমার সময় আরও নষ্ট করছেন?
.
তুমি আবারও একা একা রাত করে বের হয়ে বিপদ মাথায় তুলতে চাও?
.
তো?তাতে আপনার কি?
.
শান্ত আহানার হাত হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে স্বাভাবিক ভাবেই বললো”আমার কিছু না তবে আমার দায়িত্ব বটে”
.
দায়িত্ব?কিসের দায়িত্ব? আমি তো আপনার কিছু লাগি না তাহলে কিসের দায়িত্ব আপনার?
.
আমার!আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়ে তুমি,তো আমার তো অনেক কিছু লাগো
.
চাপা মারবেন না,হাত ছাড়ুন
.
ছাড়বো না,চলো আমার সাথে
শান্ত আহানার হাত ধরে হেঁটে চললো কারের দিকে
.
আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার সাথে কারে করে আমি বাসায় ফিরবো তাহলে ভুল ভাবছেন
.
আমি তো সেটা ভাবিনি
.
মানেহহহ?
.
মানেটা সহজ,কারে উঠো
.
নো ওয়ে,আমি বাসায় যাচ্ছি রিকসা নিয়ে,আপনি প্লিস দখল দিতে আসবেন না,আমি নিজের রক্ষা নিজে করতে পারি
ঐদিন ও নিজেই করছিলাম সো দূরে থাকেন,নিজের চরকায় তেল দেন,বাই
.
এই!কিসের এত জেদ তোমার?
আমার সামনেই সেন্সলেস হয়েছিলে সেদিন,রতনের সামনে হলে তখন কি হাল হতো তোমার জানো?আমি তোমাকে নিয়ে আন্টির কাছে এনেছিলাম রতন হলে সিধা কি করতো ধারণা আছে?
.
হেল্প করে আবার খোঁটা দিচ্ছেন?
.
খোঁটা বলে না এটাকে,মনে করিয়ে দিচ্ছি আমি জাস্ট!
.
আমি একা বাসায় যাবো!
.
শান্ত চুপচাপ আহানাকে কোলে তুলে সিটে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো হুট করেই
আহানা ভাবতেও পারেনি শান্ত এমনটা করবে
.
আপনি একটা খারাপ লোক,আমাকে টাচ করতে মানা করিনি আমি?
.
শান্ত ঘুরে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে চুইংগাম চিবোতে চিবোতে গাড়ী স্টার্ট দিলো
.
আপনি আমার কোনো কথাই সিরিয়াসলি নেন না কেন বলুন তো?
.
কারণ তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে,বাচ্চাদের কথায় এত কান দিতে নাই বড়দের
.
আমার প্রতি এত কেয়ার দেখিয়ে মায়ের সামনে ভালো হতে চান তাই না?তাহলে একটা কথা শুনে রাখুন আমি আপনাকে বিয়ে করবো না
.
তোমাকেও বিয়ে করতে আমার বয়ে গেছে
.
কোন পথ দিয়ে নিচ্ছেন আবার?শুনুন আমি আপনার সাথে আলাদা কোথায় দাঁড়িয়ে বা বসেও কথা বলতে চাই না
.
আমি এখনই কথা শেষ করতে চাই বলে শর্টকাট দিয়ে যাচ্ছি,জলদি বাসায় ফিরতেও পারবা আর আমার কথাও বলা শেষ হবে ততক্ষণে
.
কিসের কথা?
.
রিয়াজের পরেরমাসের শুরুতেই বিয়ে,আমার সাথে যাওয়ার জন্য তৈরি হও
.
আমাকে পাগলে ধরছে তাই না?জীবনেও না, আপনি গিয়ে খান বিয়ে
ঐবার চুমু দিতে চেয়েছেন এবার কি করবেন কে জানে!
.
শুনো,ওটা ভুলবশত ছিলো আর কিছু না,বাদ দাও ওসব,কাল বিকালে আমার অফিসে এসো,একসাথে রিয়াজের বিয়ের গিফট কিনতে যাবো
.
আপনি হুকুম করছেন এমন ভাবে যেন আমি আপনার সব কথা মানি তাই না?এটাও মানবো না,কি করবেন?
.
শান্ত কার থামিয়ে ফেললো
.
কার থামালেন কেন?আমার বাসা তো আশেপাশেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না,কোথায় নিয়ে এলেন আমাকে?
.
নামো
.
আমি এখন একা বাসায় ফিরবো?এমন জায়গায় নামতে বলতেছেন যেটার কিছুই চিনি না আমি আজব তো!
.
ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলবো বলে নামতে বলেছি তোমাকে,নামো!!!!!
.
আহানা শান্তর ধমকে ভয় পেলো আবার মাথার মধ্যে রাগের পাহাড় গড়তে গড়তে কার থেকে নামলো সে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার সামনে দাঁড়িয়ে বললো”শুনো আহানা!সবার আগে একটা কথা বলি আর সেটা হলো তুমি আমার অফিসে কাজ করবা না ভালো,চাকরি পাইসো একটা ছোটখাটো সেটা দিয়ে তুমি অনেক কষ্টে ডাল ভাত জোগানোর কথা ভাবছো সেটাও ভালো বাট এটা ভেবেছো কি যে আন্টি ভালো আছে কিনা?সবসময় নিজে যা ভালো মনে করবে সেটাই করবে এটা কিন্তু রং!
.
আমি কি করবো না করবো সেটাও কি আপনি ঠিক করবেন?
.
হ্যাঁ আমি ঠিক করবো,আর শুনো!তোমার এই সাদাসিধা চেহারা নিয়ে আমাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টাও করবা না,এই যে মাঝে মাঝে বলো আমাকে বিয়ে করবা না এটা সেটা
এগুলো বলে কি বুঝাতে চাও?তুমি অচিনপুরের রাজকুমারী?
বাট তুমি আসলে একটা গাঁইয়া ভূত!তোমার চেয়ে তো কণা ভালোই স্মার্ট
.
তো আরও ভালো,রিয়াজ ভাইয়ার বিয়েতে গিয়ে ওর সাথে বিয়েটা পাকা করে আসেন,আমাকে মাফ করেন,সবসময় আমাকে নিয়ে টানাটানি না করে ওকে নিয়ে টানাটানি করেন বরং
.
বিয়ে কাকে করবো সেটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার,আমি জাস্ট ৩টা কথা বলার জন্য তোমাকে এখানে এনেছি
.
কি?
.
তুমি কাল সকালে আন্টিকে নিয়ে আমাদের বাসায় ফেরত আসবা
তারপর আমার অফিসে জয়েন হবা আর সবার শেষে আমার সাথে শপিং মলে যাবা,রিয়াজের বিয়েতে কিছু গিফট দিব সেসব কিনবো,আর রিয়াজের বিয়েতেও তুমি আমার সাথেই যাবা
.
বাপের বাড়ির আবদার পেয়েছেন তাই না?
.
তুমি হয়ত জানো না আমি মজনু আঙ্কেলের বিপক্ষে একটা কেস লড়তেছি তাও তোমাদের বাড়ি গাড়ী ফেরত আনার উদ্দেশ্যে!সো তুমি ভেবে দেখো তুমি কি চাও
আমি আজ অফিস থেকে ফেরার সময় তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম
বাসার অবস্থা তো অনেক খারাপ,ওরকম একটা পরিবেশে তুমি আন্টিকে রাখতেছো জাস্ট তোমার জেদের বশে?হাউ চিপ ইউ আর!
আমার মা যদি বলে তোমার মত একটা মেয়েকে বিয়ে করলে উনি হাসবেন তো আমিও সেটাতেও রাজি হয়ে যাবো,জঘন্য কাজটা করতে আমি রেডি হয়ে যাবো কারণ আমি আমার মায়ের মুখের হাসির দায়িত্ব নিয়েছি সেদিন থেকে যেদিন তার হাসির মেইন কারণ আমার বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছিলেন
আর তুমি??তুমি তোমার জেদ পূরন করতে গিয়ে তোমার মাকে এত কষ্ট দিচ্ছো,আমার সাথে শত্রুতা নাহয় বুঝলাম বাট আন্টির সাথে কি শত্রুতা তোমার?
.
আহানার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়তেছে অনবরত তারপর চোখ মুছে শক্ত হয়ে সে বললো”আমার কারোর সাথেই শত্রুতা নেই
আমি এমন একটা মেয়ে যে বিনা পরিশ্রমে কোনো টাকা,সাহায্য নিতে চাই না কারোর থেকে,আমি চাই আমার মা ভালো থাকুক ভালো কাজের টাকা দিয়ে
.
এক মিনিট!আমি আন্টিকে আমাদের বাসায় রাখবো এটাতে খারাপের কি দেখছো তুমি?
.
আমার মা অন্যের বাড়িতে কেন থাকবে?
.
এই চিন্তাভাবনা তোমার অনেক খারাপ!এই লজিক উঠাতে গিয়ে তুমি এটাই ভুলে গেছো যে আন্টি সেখানে ভালো আছেন নাকি নাই,বাট তুমি তো তুমিই,তোমার জেদ এত বেশি যে তুমি নিজেও না খেয়ে থাকতে পারবা আর আন্টিকেও না খাইয়ে রাখবা,এত জেদ তোমার
.
ব্যস একটা কথাও না,অনেক বলেছেন,আমাকে আমার মতো থাকতে দিন না,আমার মায়ের ভালো খারাপ আমাকে বুঝতে দিন
.
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার দুকাঁধ চেপে ধরে কাছে এনে বললো”কিসের ভালো খারাপ??আমি তো সবটাই খারাপ দেখি!তুমি ইচ্ছে করে আন্টিকে কষ্ট দিচ্ছো,আমার মাকে যিনি বুবু ডাকে তাকে তুমি কষ্ট দিচ্ছো,যে ছোটবেলায় আমার জন্য সুয়েটার বানাতে গিয়ে হাতে বড় সুই ঢুকিয়ে ফেলেছিল সেই আন্টিমণিকে কষ্ট দিচ্ছো তুমি!”
.
আহানা ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো”সেই মহিলাটি আমার মা,আমার অধিকার সব চাইতে বেশি”
.
তোমার মা বলে তুমি যা নয় তাই করবা আমি তা হতে দিতে পারি না,আন্টি নিজে আজ মাকে ফোন করে কেঁদেছে
আমার সামনে বসে কেঁদেছে,আমি এটা আর হতে দিতে পারি না ব্যস!!তুমি আমার কথা সোজা সাপটায় বুঝো নয়ত আমি কাল গিয়ে আন্টিকে নিয়ে আসবো
.
আহানা হাতের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললো”আপনার কথায় হবে,হাত ছাড়ুন,আমি নাহয় আসলাম না,কিন্তু মা আসবে”
.
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো,তারপর কিছুদূর গিয়ে থেমে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে নিচু স্বরে বললো”আন্টি তোমায় ছাড়া থাকবে না,তুমি সহ আসবা”
.
আহানা চিৎকার করে বললো”আপনি কি চান বলুনতো”
.
আহানার কথার জবাব না দিয়ে শান্ত সামনের দিকে তাকিয়ে আছে,লম্বা লম্বা সবুজ ঘাস,বাতাসে নড়তেছে,শীতল হাওয়া এসে গায়ে লাগে বারবার
দূর দূরান্তেও মানুষ দেখা যায় না,নির্জন একটা এলাকা
আহানা যখন বলে কি চান তখন নিজের মনের ভিতর কি চলে তা যদি সে দেখতো তাহলে সে কখনও এটা জিজ্ঞেস করতো না,আমি ওর সাথে একবার ভুলবশত জোর করতে গিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি,সেদিন চড়ের জন্য না চরিত্রহীনের এওয়ার্ডটা খারাপ লেগেছে অনেক
তবে আহানাকে আমার ভাল্লাগেনা আবার তাকে ছাড়া একটা দিনও ভালো লাগে না,আজব অনুভূতি,কবিরা বলবে এটা ভালোবাসা
তবে আমি মানি না,ওকে ভালোবাসতে যাবো কেনোই বা??
কি আছে ওর মধ্যে?
সাজগোজের মধ্যে কপালে একটা টিপ,আর কিছুই না
না ক্রিম,না পাউডার, না কোনো ভালো ড্রেস আপ
সবসময় হালকা রঙের থ্রি পিস পরে থাকে
গলায় ওড়না ঝুলিয়ে চুলগুলো সামনে দিয়ে রাখে,হাতে জামার সাথে মিলিয়ে ১ডজন চুড়ি সবসময় থাকে
তারপরেও ওকে দেখলে মনে হয় সে আমার মায়ের পরে সবচাইতে আপন মানুষ!যার সামনে আমি অপেন বুক
সে আমাকে পড়ে দেখতে পারবে,সে যদি নিজ থেকে এসেও জড়িয়ে ধরে আমাকে হয়তবা আমি তাকে বাধা দেওয়ার শক্তি পাবো না
হ্যাঁ এটা অবশ্যই ভালোবাসা নয়

এই লোকটা আমাকে কখনও সম্মান দেয়নি,দিবেও না জানি
লোকটা খুব খারাপ,এরকম খারাপ চরিত্রের লোক আমি আর দেখিনি,অথচ কেয়ার করার সময় ঠিকই করে আবার মুহুর্তেই ধাক্কা দিতেও পিছুপা হবে না
আমি বুঝি না আসলেই সে চায় টা কি?
আমাকে তো ভালোটালো বাসে না সাফ সাফ বলে দেয় তাহলে এসবের কারণ কি?আমি একা বের হলে তার কি যায় আসে?
এত বছর পর তার সাথে আমার বান্দরবনে দেখা হয়েছিলো
সেদিন থেকেই আমাকে এক দিক দিয়ে বাঁচাচ্ছে তো আরেক দিক দিয়ে অপমান করছে
এত অপমান যে তাকে শুধু ঘৃনা করতে ইচ্ছে করে আমার
আর আমিও কেমন যেন হয়ে গেছি,সেদিন কি দরকার ছিল উনার ক্ষতে মলম লাগানোর!
আমি উনাকে ভালোবাসি না,পছন্দ ও না,কিছু করি না
ঘৃনাও না!
ছোটবেলায় কি হইছে না হইছে সেটা আগের কথা,এখন এসব ভেবে লাভ আছে?দয়া করবে বলে কি মাথা কিনে খাবে আমার?
না এটা কোনোমতেই ভালোবাসা নয়,অন্য কিছু হতে পারে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কি হলো?কারে এসে বসো,ইনবাইট করতে হবে নাকি?
.
দরকার নেই
.
আহানা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে প্লাজোর সাথে পা লেগে দুম করে কারের ভিতরে এসে শান্তর উপর গিয়ে পড়লো সে
একদম শান্তর গায়ের উপরই পড়লো
শান্ত চুপ করে আছে,একটাও কথা বের হচ্ছে না ওর মুখ দিয়ে,কারণ ওর ঠোঁট জোড়া আহানার মাথার চুলে ডুবে আছে
আহানা কোনোরকম ঠিকঠাক হয়ে বসে বললো”সরি”
.
ইটস ওকে!
.
শান্ত আহানাকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আবার চলে আসলো বাসায়
আহানা জানালার গ্রিল ধরে চুপ করে আছে,মাকে বললেই মা রাজি হয়ে যাবে শান্তদের বাসায় থাকার জন্য,কিন্তু ওর মন যে মানছে না,এভাবে অন্যের ঘরে থাকা একদম পছন্দ না ওর
মায়ের দিকে চেয়ে দেখলো মা বসে বসে ঝিমোচ্ছেন,মন খারাপ তার,কি জন্য মন খারাপ তা জানে আহানা
জানালা থেকে সরে এসে মায়ের হাত দুটি মুঠো করে ধরে বসলো সে
তারপর নরম গলায় বললো”মা কাল সকালে আমরা শান্তদের বাসায় যাবো,এখন থেকে সেখানেই থাকবো,আন্টি নাকি তোমার আর আমার জন্য সারাদিন মন খারাপ করে থাকেন”
.
মায়ের মুখের ভাবগতি মূহুর্তেই বদলে গেলো,এক গাল হাসি দিয়ে বললেন”সত্যি?”
.
হ্যাঁ
.
তাহলে তোর এই দোকানের চাকরিটা ছেড়ে দে,এখন থেকে তোর তো আর আমাদের বাসা ভাড়ার দরকার পড়বে না”
.
দেখি কি করতে পারি
.
আহানা আর কিছু বললো না,কাঁথাটা টেনে একপাশে শুয়ে পড়েছে সে
পরেরদিন অনেক সকাল হয়ে গেলো এখনও আরামসে ঘুমাচ্ছে আহানা,তার ইচ্ছা ছিল ঐ বোরিং চাকরি আর করবে না তাই সে মন দিয়ে ঘুমাচ্ছে,সকালে উঠে চাকরিতে যাওয়ার ও আর কোনো চিন্তা নাই
খালি ঘুম আর ঘুম!
হুট করে গালের মধ্যে কে যেন চিমটি কাটলো,নাহ কে চিমটি কাটবে আবার!হয়ত পিপড়া হবে
আহানা হাত পা ছড়িয়ে আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো
কিন্তু নাহ!কিছুক্ষণ বাদে আবারও সেই চিমটি কাটলো,কিন্তু এবার গালে না একেবারে হাতে
আহানা লাফ দিয়ে উঠে বসতেই দেখলো একজন সুদর্শন পুরুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শক্ত চোখে তাকিয়ে
পরনে কালো শার্ট,কালো জিন্স,হাতে কালো ঘড়ি
আহানা ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ড্যাবড্যাব করে দেখে যাচ্ছে,সে যে স্বপ্ন ছেড়ে বাস্তবে তা সে জানে না
হাঁট উঁচু করে ভাঁজ করে তার উপর হাত রেখে হাতের উপর থুতনি বসিয়ে মুগ্ধ হয়ে সে শান্তকে দেখে যাচ্ছে
শান্তর বুঝতে বাকি নেই যে আহানা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে তা নাহলে শান্তকে দেখলেই তার গায়ে জ্বালা দেয় আর সে কিনা মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে পাক্কা ৩মিনিট ধরে
শান্ত হাত বাড়িয়ে আহানাকে ধরে এক ঝাঁকুনতি দিলো
আহানা ঝাঁকুনি খেয়ে চোখ ডলে বুঝলো এটা সত্যি তারপর ওড়নাটা হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললো”আপনি?এখানে?এসময়ে?”
.
তোহহহ?কাল রাতে কি কথা হয়েছিলো?সকাল সকাল আমার বাসায় আন্টিকে নিয়ে ফেরত আসবা,তো কয়টা বাজে?
.
তো?যাবো বলসি তো,যখন ইচ্ছা তখন যাবো,আপনি অফিসে যান না,আমার পিছে লেগে আছেন কেন?
.
ওকে ফাইন যখন খুশি তখন যেও,আপাতত আমি আন্টিকে নিয়ে চলে যাচ্ছি,আর তোমাদের বাসার যে সব জিনিসপাতি আছে সেগুলো আমি OLX.com এ বেচে দিব,যে টাকা আসবে ওটা দিয়ে লজেন্স খেও কেমন খুকি?
.
খুকি মানে?কে খুকি?আর বেচবেন কেন?আপনাকে পারমিশন দিসি আমরা?
.
আন্টি দিছে,বাই
.
আরে আরে!
.
শান্ত চলে গেলো আহানার মাকে নিয়ে
আহানা একা বাসায় গাপটি মেরে বসে আছে,সকাল সাড়ে ১০টা বাজে তখন,আহানা অনেকক্ষণ ভেবে কতকিছু ভাবলো তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে ওড়না আর ব্যাগ নিয়ে শান্তদের বাসায় ফিরে আসলো
মা শান্তর মায়ের সাথে বাগানে বসে আছেন
শান্তি রহমান আহানাকে দেখেই হাত বাড়িয়ে ধরলেন
আহানাও ভালো মেয়ের মতন উনার কাছে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে সালাম দিলো,উনার চোখে মুখে আজ যেন হাসির বৃষ্টি ঝরছে
আহানার মাও অনেক খুশি,আহানার মুখেও হাসি ফুটলো তাদের হাসি দেখে
আহানা বাসার ভিতর যেতেই রিপা এসে বললো শান্ত নাকি বলে গেছে আহানা যেন ওর অফিসে আসে
আহানা উত্তরে বললো সে যাবে না
ব্যস তাদের জন্য রাখা রুমে এসে আহানা বালিশ একটা কোলে নিয়ে ধপ করে বসে গেলো

কি হলো রিপা??তুমি কি আহানাকে বলোনি অফিসে আসতে?
.
স্যার বলেছিলাম,কিন্তু আহানা মুখের উপর না করে চলে গেছে
.
ঠিক আছে,আমি আসতেছি,কাঁটা দিয়ে কি করে কাঁটা তুলতে হয় জানা আছে আমার
শান্ত ফোন রেখে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে
আহানা বসে বসে বিসকিট খাচ্ছে আর বারান্দা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে একবার একটা দেখতেছে,মা আর আন্টি এখনও বাগানে,আর নিতু স্কুলে,রিপা বুয়ার সাথে রান্নাঘরে
দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আহানা পিছন ফিরে তাকালো
শান্ত রাগী রাগী লুক নিয়ে আহানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
.
কি ব্যাপার?বলছি না আমি আপনার অফিসে যাব না,আমাকে যে কি পরিমাণ অপমান করে বের করছেন সেটা মনে আছে?
আমার তো মনে হয় না কিছু মনে আছে আপনার তা না হলে বার বার রিকুয়েস্ট করতেন না
.
শান্ত এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল দরজার কাছে,আহানার কথা শেষ হতেই এখন সে এগিয়ে আসতেছে এদিকে
আহানার অজান্তেই হাত থেকে তার বিসকিটা পড়ে গেলো,ভয়ে কারণ শান্ত উল্টা পাল্টা কিছু করে না বসে এই ভাবনাই সারাদিন আহানার মাথায় ঘুরপাক খায়,এখনও খাচ্ছে
আহানা ফ্লোরের দিকে চেয়ে বিসকিটটা দেখে নিলো,ভেঙ্গে ২টুকরো হয়ে গেছে চকলেট বিসকিটটা
আহানা এবার মুখ তুলে সামনে তাকাতেই খেয়াল করলো শান্ত ওর খুব কাছে এসে গেছে
.
(এখন নায়কদের মতো আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে অফিসে সব জানা আছে আমার)
.
ভুল ভাবছো
.
আমি কি ভাবছি তা জানেন কি করে?
.
তুমি মনে মনে কথা বললে সেটা ভাষণ আকারে আমার কানের কাছে বাজে,বুঝলা
.
আচ্ছা তাহলে কি করবেন শুনি একটু
.
তোমার সব টিউশনি বন্ধ করার দায়িত্ব শুধু আমার
.
মানে কি
আপনি কি করবেন?
.
করবেন না,বলো কি করেছি
.
👿কি করেছেন?
.
আমি চিত্রা/সিয়া আর রিপার বোন রুনা সবার বাসার এড্রেস তোমার মায়ের কাছে থেকে নিয়ে নিয়েছি
.
তারপর?
.
তারপর নাথিং!
তুমি কি চাও সেটা বলো,আমার সাথে আমার অফিসে যাবা নাকি আমি তোমার টিউশনি খাবো
.
মঘেরমুলুক আর কি,বললেই হয়ে গেলো নাকি,কককককককি করবেন কি আপনি?
.
শান্ত হেসে দিয়ে বিছানায় বসলো পায়ের উপর পা তুলে,তারপর আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”বেশি কিছু না
শুধু বলবো আহানা আমার উড বি ওয়াইফ,অন্যের বাসায় গিয়ে গিয়ে টিউশনি করায়,কেমন দেখায়,আপনি প্লিস নিজ থেকে আহানাকে মানা করে দেন,ও কিছুতেই মানছে না,আমার তো এনাফ টাকা পয়সা আছে,তাহলে আমার ওয়াইফ কেন এত কষ্ট করবে বলুন
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আপনার এত মাস্টার মাইন্ডের প্ল্যানটা ফ্লপ হবে দেখিয়েন”
.
তোমার আর আমার ছবি আন্টিকে দেখানোর প্ল্যান কিন্তু সাকসেস হয়েছিলো
.
আহানার এবার কলিজা কাঁপতেছে,ঢোক গিলে বললো”আপনাকে আমি ভয় পাই নাকি?”
.
জানতাম এমনটাই বলবে,দেখো তোমার মনে হয় ফোন বাজতেছে,গিয়ে ধরো
.
আহানা পা টিপে টিপে টেবিল পর্যন্ত গিয়ে ফোন ধরলো,সিয়ার আম্মুর কল
.
হ্যালো আন্টি,আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
তুমি এটা ঠিক করোনি আহানা!
.
কককককি মানে?বুঝলাম না
.
বিয়ে করলা আর একটিবার দাওয়াত ও দিলে না
.
না তো আমি বিয়ে করিনি
.
হইছে হইছে আর বলতে হবে না,যাক যেটার জন্য ফোন করেছিলাম শুনো,তুমি নাকি লজ্জার কারণে বলতে পারো না যে আর পড়াবানা, তাই আমি বলছি আর পড়াতে হবে না
অনেক কষ্ট করেছো এতদিন এবার একটু সুখ করো,স্বামীর টাকায় কেমন?
সিয়ার জন্য নতুন টিচার অলরেডি খুঁজেও নিয়েছি আমরা
.
ব্যস সিয়ার আম্মু কল কেটে দিয়ে পৃথিবীর শেষ সীমানায়!!!
আহানা গাল ফুলিয়ে শান্তর সামনে এসে বললো”আপনাকে এত বড় মিথ্যা কথা বলতে বললো কে?আপনার এত সাহস!!আমার টিউশনি একটা বাদ দিয়ে দিলেন!
.
শান্ত হেসে বললো”সবে তো একটা,এখনও আরও আছে”
.
আপনি আমাকে এত এত অপমান করলেন তার পরেও আমি কি করে আপনার অফিসে যাই?আমাকে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছিলেন মনে আছে?
আহানা কেঁদে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো”এটাও বলেছিলেন আমি নাকি আর চাকরি পাবো না কোথাও
কিন্তু!আমি তো পেয়েছি, আপনার কথা ভুল প্রমাণ করেছি
.
কথাগুলো বলতে বলতে আহানা কেঁদেই যাচ্ছে
শান্ত টিসু হাতে নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে টিসুটা রেখে দিয়ে এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো,নিজের বুকে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে চুপ করে রইলো সে
আহানা কেঁদে কেঁদে শান্তর শার্ট টেনে চোখ মুছতেছে
শান্তর ঠিক মনে আছে ছোটবেলায় আহানা ওকে ধরে ওর জামায় চোখ মুছতো কান্না করার সময় আর তাই সে এখন টিসু নিয়েও রেখে দিয়েছে,আহানা সেই ছোটবেলার আচরণটাই করলো
আহানা কাঁদা শেষ করে মুখ তুলে বললো”জড়িয়ে ধরে কি বুঝাতে চান?”
.
এই যে আমি তোমাকে ইচ্ছে করে অপমান করিনি,তুমি দায়ী
.
আমি দায়ী?
.
হুম!সোজা কথায় হ্যাঁ বলো না কখনও,বললেই তো আর কথা শুনতে হতো না
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে পাশে তাকাতেই চোখ পড়লো তার আয়নায়
সে শান্তকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,এটা দেখেই চোখ বড় করে দূরে সরে দাঁড়ালো সে
.
শান্ত হালকা একটা কাশ দিয়ে বললো”ওকে আই এম সরি!এবার তো চলো!”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আমাকে আর ছুঁবেন না”
.
হুহ!হোয়াটএভার,চলো এখন
.
আহানা খুশি খুশি শান্তর পিছন পিছন আসতেছে,শান্ত ওকে সরি বলেছে এটার চেয়ে খুশি আর কিছু হতে পারে নাকি
তার এখন মন চাচ্ছে আকাশে উড়তে
মা আর শান্তি রহমান তো রীতিমত অবাক,শান্ত আর আহানা কিনা বিনা ঝগড়ায় একসাথে কারে করে কোথায় যেন চলে গেলো!
শান্তি রহমান তো আহানার মায়ের হাতে হাত রেখে এক গালি হাসি দিয়ে গেটের দিকে চেয়ে আছেন

তুমিই বলো কি গিফট করা যায়?
.
বাজেট কত?
.
ব্যাপার না,যেটা পছন্দ হবে সেটা নিব,টাকা ব্যাপার না,আমার বেস্টফ্রেন্ড রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্য,১/২/৩লাখ বাজেট
.
কিহহহ!
.
শান্ত কার থামিয়ে ফেললো,তারপর বললো”কি?চিৎকার করো কেন?”
.
এত টাকা দিয়ে কি কিনবেন?
.
সেটাই তো ভাবতেছি,কি কিনবো,তুমি বলো তাহলে সেই অনুযায়ী শপিংমলে যাবো
.
নওমি আপুকে গলার নেকলেস টাইপ কিছু দিয়েন
.
না আমি এংগেজমেন্টের দিন দিয়েছিলাম তাই এখন ভিন্ন কিছু দিতে চাচ্ছি
.
তাহলে এক কাজ করেন,টিভি/ওয়াসিং মেশিন/মাইক্রোওয়েভ এসব কিনে দিতে পারেন
.
কাম অন!এসব তো ওর রিলেটিভরা ওকে দিবে,ইউনিক কিছু বলো
.
আইডিয়া!
.
কি?
.
উনাদের জন্য হানিমুন প্যাকেজ আপনি কিনে গিফট দিয়ে দেন,ব্যস হয়ে গেলো
.
ওয়াও জোস আইডিয়া দিলা!এটা বেস্ট হবে,বালি প্যাকেজ কিনে দিয়ে দিব
.
বালি মানে,কক্সবাজার?
.
আরেহ না,ইন্দোনেশিয়ার বালির কথা বলতেছি
.
ওমা তাহলে তো অনেক খরচ
.
আমি নেটে দেখছিলাম,প্যাকেজ ৩/৪লাখ হবে,৭দিনের
.
এত দাম!
.
তাহলে এটাই ফাইনাল,আমি এখনই বুক করছি
.
বাপরে এত টাকা খরচ করে মানুষ নিজের বেস্টফ্রেন্ডের বিয়েতে,আমি আরও ঠিক করসিলাম রুপার বিয়েতে শাড়ী একটা কিনে দিব!৭০০/৮০০ কিংবা বড়জোর ১হাজারের!
টাকা থাকলেই সব হয় আজ তা বুঝলাম
.
তুমি তাহলে এখন আমার সাথে অফিসে চলো,আগের মত কাজ শুরু করে দিবা,আর আমার কথার ভিতর নিজের কথা ঢুকাবা না,ওকে?
.
আপনি ভুলভাল বলে যাবেন আর আমি চুপ থাকবো তা হচ্ছে না হুহ!
.
আমি যা বলি সব ঠিক বলি,তোমার মতন না,তোমার তো আজ পর্যন্ত একটা কথাও ঠিকঠাক লাগেনি আমার
.
মানুষ ঠিকঠাক হলে তার পরে তো সব ঠিকঠাক লাগবে
.
শান্ত শার্টটা একটু টেনে কার পার্ক করতে করতে বললো”আমি তোমার চেয়ে ভালোই”
.
আহানা কার থেকে নেমে তারপর বললো”তা তো হবেই,আপনি তো আমার মতন মেয়ে না,ছেলে”
.
বকবক না করে লিফটের বাটন চাপো
.
হুম😒
.
লিফটে ঢুকে দুজনে দুজনের দিকে কেমন করে যেন চেয়ে আছে
৫১% গালি আসতেছে তো ৪৯%ভালোলাগা
গালিতে ১% বেশি হওয়ার কারণে দুজন মিলে ব্রু কুঁচকালো তারপর একসাথে বললো”জীবনে আর দেখো নি?”
.
না
.
না
.
এক মিনিট!আপনাকে দেখার কি আছে?
.
সেম উত্তর,তোমাকে দেখার কি আছে?আমাকে কপি করো কেন?
.
আপনি আমাকে কপি করছেন
.
তোমার সাথে ভালো মানুষে কথা বলে না
.
আরেহহহ আহানা!
.
আহানা সামনে চেয়ে দেখলো ঊষা হা করে ওর দিকে চেয়ে আছে,চোখেমুখে তার হাসি
.
শান্ত লিফট থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো”ওরে ওর কেবিন বুঝিয়ে দিয়ে আমার অফিস রুমে আসতে বলো”
.
ওকে স্যার!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সুহানা!!তুমি যে লেটার পাঠিয়েছিলা আমি তো ধরেই নিছিলাম যে স্যার নির্ঘাত তোমাকে জেলে নিয়ে ছাড়বে
বাট এখন দেখি তুমি আবার ব্যাক করেছো,আই এম সো হ্যাপি!বাই দ্যা ওয়ে তোমার বাচ্চাগুলো কেমন আছে?
.
ইয়ে মানে!ভালো আছে সবাই
.
ওকে!! তাহলে স্যারের কাছে যাও,আমি আমার কাজে যাই
আহানা হাসি মুখে শান্তর রুমের দিকে যেতে নিতেই দেখলো তার পাশ দিয়ে নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্য স্টাইল করে হেঁটে যাচ্ছে সেদিকে
আহানা তাই আর গেলো না,নিজের কেবিনেই ফেরত আসলো সে
.
স্যার আসবো নাকি?😜
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে দেখলো তার পুরো গ্যাং দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপারে,শান্ত মুচকি হেসে ফোনটা টেবিলে রেখে দিয়ে বললো”জি স্যাররা আসেন আসেন”
.
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে ঢুকেই টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আর সূর্য রিয়াজ চেয়ার টেনে বসেছে ততক্ষণে
.
তা কি ভেবে আমাকে স্মরণ করতে মন চাইলো আপনাদের?
.
শুনলাম তুই নাকি ইদানিং আহানার সাথে বেশি সময় কাটাস,তা এত কিছু হলো আর আমরাই জানলাম না?
.
সময় কাটানো মানে কি আবার,তোরা তো জানিস ও আমার রিলেটিভ তো সে অনুযায়ী তো আমার সাথে ওকে দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক
.
জি অবশ্যই,তবে অতিরিক্ত দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক, তাই না রিয়াজ?
.
হ্যাঁ তা তো বটেই
.
এটা বলতে এসেছিস তোরা?তাহলে শুনে রাখ আমার আর আহানার মধ্যে ঝগড়া ছাড়া জীবনে কিছু হয়নি আর হবেও না
.
সে যাই হোক এখন শুন মেইন কথা
.
জি বলেন দুলা সাহেব
.
হুম,বিয়ের আগে একটা ব্যাচেলর পার্টি করবো,অনলি বয়েজ,তুই রাতে আসবি,এই মাসের ৩০তারিখ রাত ১০টা টু যতক্ষন ইচ্ছা ততক্ষণ
.
সেটা আসবো,তবে মা আর নিতুর কানে যেন কথাটা না যায়
মা মদ গাঁজা এসব খাওয়া দুচোখে দেখতে পারে না আর ব্যাচেলর পার্টিতে এসবই মেইন শুনলে আমার যাওয়া বন্ধ
.
সেটা জানি,এমনকি আমাদের ফ্যামিলির লোক ও জানে না যে আমরা একটা ব্যাচেলর পার্টি থ্রো করেছি
.
দ্যাটস গ্রেট!বস তোরা,আমি কফি অর্ডার করছি
.
তা কর,আরও কথা আছে তোর সাথে
.
হ্যালো ঊষা!৪টা কফি আর “নাচোস”পাঠাও আমার রুমে
.
ওকে স্যার
.
নওশাদ শান্তর রুমের পর্দা সরিয়ে বললো”তোর রুমের এই ভিউটা জাস্ট অসাধারণ!!আমার অফিসের সামনে ইয়া বড় একটা বিল্ডিং, ভাবছি রুম চেঞ্জ করবো
.
নওশাদ!!রুম কেমনে চেঞ্জ করবি তোর অফিসের চারপাশেই তো সব বিল্ডিং
.
সেটাই,এই জন্য তোর অফিস বানানোর আগে আমি তোকে বারবার করে বলেছিলাম রোড সাইড দেখে বানা,অন্তত মন মেজাজ খারাপ থাকলে নিজের রুমের জানালার পর্দা সরিয়ে মুডটা সুইং হয়ে যাবে নিমিষেই,আমার কথা তো শুনলি না
.
শান্ত তোর কথা শুনতাম আমি বাট বাবা এমন জায়গায় জমি কিনে বসেছিলো আমার হাতে কিছু ছিলো না তখন
.
রিয়াজ বলপয়েন্ট ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”ভাই আমি বেঁচে গেছি,উত্তরায় খোলামেলা জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানিয়ে আরামসে সারাদিন কিউট পরিবেশ উপভোগ করার শান্তি!
.
তোর তো টাকা আর টাকা!
.
সূর্য!টাকা আর টাকা মানে কি,আমার সব একসাথ করলেও শান্তর সমান হবে না,শান্ত ২হাতে খরচ করে আবার আল্লাহ ওরে সেই পরিমাণ দিয়ে দেয়,ওর ব্যবসায় জীবনে আমি লোকসানের নাম শুনি নাই
.
দেখে শুনে ক্লাইন্ট সিলেক্ট করতে হয়,আমি আমার একটা ক্লাইন্টকেও ফালাছড়া করি না,আমি নিজে গিয়ে মিট করি,এই হলো টিপস বুঝেছো চান্দুরা
.
আমাদের এত ধৈর্য্য নাই ভাই রে ভাই,তা সূর্য তোর কি খবর সেটা বললি না
.
আমার আর কি,আমিও শান্তর মতন বাবার বিজন্যাস নিয়ে আছি
.
এবার বিয়ে করে নে
.
তা হচ্ছে না নওশাদ,রিয়াজ করুক তারপর তুই তার পর শান্ত,সবার শেষে আমি
.
হেহে,আমি রুপাকে কদিন ঘুরাবো,তারপর বিয়ে করবো,আমার দেরি আছে
.
শান্ত রিয়াজের হাত থেকে বলপয়েন্ট নিয়ে হাতে নাড়াচাড়া করতে করতে বললো”আহানার বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা,দেখিস আবার তোকে না ঘুরায়”
.
আহানার মত ঝগড়া পারে না তাই একটু বাঁচলাম,তবে তোর তো অবস্থা বেহাল
.
নওশাদ কি বলিস এসব,শান্ত কম যায় নাকি?গ্রামীণ মহিলাদের মতন পায়ে পা রেখে ঝগড়ায় লাগে আহানার সাথে,বাপরে বাপ একদিন আমি নিজের চোখে ওদের ঝগড়া দেখছিলাম,তারপর দেড় মাস পাগল ছিলাম
.
সূর্য নওশাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিচে চলন্ত বাস একটার দিকে চেয়ে বললো”শান্ত বাসর ঘরেও এমন ঝগড়া শুরু করে দিবে আহানার সাথে”
.
সেটা আর বলতে!
.
থাম তোরা!আহানার সাথে বিয়েই হবে না আবার বাসরের কথা ভাবোস তোরা
.
দেখা যাবে!
.
স্যার আসবো?
.
হ্যাঁ আসো!
.
ঊষা ভিতরে এসে একটা লোককে দিয়ে কফি আর নাচোস আনাচ্ছে,এনে এনে টেবিলে রাখতেছে লোকটা
.
আহানা গালে হাত দিয়ে পুরো অফিসটা ড্যাবড্যাব করে দেখতেছে,পুরো অফিসে একটাই নাম লেখা আর সেটা হলো “শান্তি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ”
.
স্যার!মিঃ মজনু এসেছে আপনার সাথে মিট করতে
.
হোয়াট!!তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন?আহানা কোথায়?
.
সুহানা?সে তো তার কেবিনে
.
মাই গড!মজনু আঙ্কেল যদি আহানাকে দেখে ফেলে তাহলে তুলকালাম বাঁধবে
শান্ত কফির মগ হাত থেকে টেবিলে রেখে দৌড় অফিস রুম থেকে চলে গেলো
অফিসে ঢুকতেই গেস্টদের বসার একটা সোফা থাকে,সেখানে মিঃ মজনু বসে তার ফোন দেখতেছেন তার কিছুদূরেই আহানা কেবিনে গালে হাত দিয়ে পুরো অফিস দেখতেছে,দুজন দুজনকে দেখেনি এখনও
শান্ত করিডোর পেরিয়ে কর্মচারীদের কেবিনগুলোর সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেখলো আহানা উপরের ছাদের দিকে চেয়ে আছে আর দূরেই সোফায় মজনু আঙ্কেল ফোন টিপতেছেন
শান্ত হাঁপ ছেড়ে বেঁচে এগোতে যেতেই আহানা ওকে দেখে ডাক দিলো
.
এই যে!আমাকে যে অফিস রুমে ডেকেছিলেন?কি জন্যে?আপনি এখনও ফ্রি হোন নাই?
.
আহানার কথা শুনে মজনু আঙ্কেল মাথা তুলে সেদিকে তাকালেন
শান্ত কি করবে ভেবে না পেয়ে আহানার কেবিনে ঢুকে ওর মুখ চেপে ধরে ফেললো
ওদিকে মজনু আঙ্কেল সোফা থেকে উঠে এদিকে আসতেছেন কারণ উনি শান্তকে দেখেছেন মাত্র,উনি আজ এখানে এসেছেন শান্তর সাথে মিট করতে
.
আহানা চোখ বড় করে ইশারা ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করতেছে শান্ত ওকে এমন করে ধরে আছে কেন
.
শান্ত ফিসফিস করে বললো”শুনো,আমি যতক্ষন না বলবো এখান থেকে বের হবা না,ঠিক আছে?”
কথাটা বলে শান্ত আহানার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো
.
কিন্তু কেন?
.
মজনু আঙ্কেল বাহিরে
.
কিহহহহ!
.
উনি তোমাকে দেখে ফেললে আমার এতদিনের প্ল্যান ফ্লপ হয়ে যাবে সো প্লিস এখানে লুকিয়ে থাকো
.
ঠিক আছে

শান্ত?তুমি কোথায়?
.
শান্ত আহানাকে বুঝিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে বললো”আরে মিঃ মজনু যে,চলুন চলুন,কতদিন পর আসলেন”
.
আহানা লুকিয়ে মজনু চাচাকে দেখতেছে,এ লোকটাকে ছোট থেকেই সে দেখতে পারে না কারন উনি সবসময় ওর বাবার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতো, বাবার সব কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতো
.
শান্ত মজনু চাচাকে নিয়ে সোফায় এসে বসলো পায়ের উপর পা তুলে
.
শান্ত আই নিড ইউর হেল্প
.
হুম বলুন,কি করে হেল্প করতে পারি?
.
কোথাকার একটা লোক আমাকে নিয়ে কেস করেছে যে আমি ৭বছর আগে কার না কার সম্পত্তি আত্নসাৎ করেছি যার কারণে সে ঐ সম্পত্তি ব্যাক নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে
আমার যতদূর মনে আছে ঐ সম্পত্তি আমার মৃত ভাই আয়াতের,সে আমার নামে করে দিয়েছিলো,তাহলে এখন কার এত সাহস আমার বিরুদ্ধে কেস করে
.
যিনি মারা গেছেন তার কোনো ছেলে ছিলো নাকি?
.
আরে না,ছিল একটা মেয়ে,সেই মেয়ে এখন কোন চুলোয় গেছে আমার কি!!তার এত সাহস হবে না আর আমি খোঁজ নিয়েছিলাম তারা সায়দাবাদে থাকে
তাহলে আমার বিরোধিতা কে করছে!!
.
ডোন্ট ওয়ারি!আপনি এক কাজ করুন আপাততর জন্য সেই সব সম্পত্তি অন্য কারোর নামে দিয়ে রাখেন নাহলে বুঝেনই তো আপনার একটা নাম আছে সমাজে,স্টেটাস আছে
.
হুম সেটাই!কিন্তু কাকে দিব তাই ভোবে পাচ্ছি না,আমার আপন মানুষ বলতে আমার স্ত্রী আর দুটো ছেলে,ঐ ছেলেগুলো আমার শত্রুকেও হার মানাবে,স্ত্রীকে দিলে ঘুরেফিরে ছেলেদের কাছেই যাবে
তাই ঠিক ভেবে পাচ্ছি না,তার উপর যে কেস করেছে সে উঠে পড়ে লেগেছে,কোর্টে একের পর এক প্রমাণ আনতেছে
.
নাম জানেন.চেনেন?
.
আরেহ না,সেই পড়েছি আরেক বিপদে,আমি নাকি তারে দেখলে খুন করে ফেলবো তাই সে আমার সামনে আসবে না আর পুলিশ ও এতে সাঁই দিয়েছে,তবে নাম শুনলাম শামসুর আলী,চিনি না জানি না,কে এই শামসুর আলী?
.
হুমমম!ভাববার বিষয়,তবে যতদূর জানি শামসুর নামের লোকেরা অনেক ডেঞ্জারাস হয়
.
সেসব বাদ,আমি তোমার কাছে হেল্পোর জন্য এলাম,অন্য বিজনেস পার্টনারদেন তেমন বিশ্বাস করতে পারি না
তোমাকে পারি কারণ তুমি এক মাসেই আমার এত উপকারে এসেছো,এত আপন হয়ে গেছো
আমার আর আমার স্ত্রীর বিবাহবার্ষিকীতে তুমি কিনা ব্র্যান্ড নিউ কার গিফট করেছিলে তুমি আমার আপন মানুষ হয়ে গেছো শান্ত!!
তোমাকে অবিশ্বাসের কথাই আসে না
.
তাহলে আপনি একটু ভেবে দেখুন কি করবেন,আমি তো আমার পরামর্শ দিলাম
.
হুম,আসি আজ তবে,ভেবে তোমাকে জানাবো
.
ওকে
.
আহানা লুকিয়ে চেয়ে আছে এখনও,শান্ত মজনু চাচাকে বিদায় দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেছে,সেখানে নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য মিলে শয়তানি করতেছে,তারপর শান্তকে দেখে বললো”কিরে কই চলে গিয়েছিলি?”
.
ক্লাইন্ট একটা আসছিলো
.
কে এসেছিলো রে?তুই যেভাবে দৌড় মেরেছিলি আমরা তো ভাবলাম আহানার কিছু হলো নাকি
.
আহানার কথা মাথায় আসতেই শান্ত আবারও ছুটলো সেদিকে
আহানা পা টিপে টিপে দরজা পর্যন্ত এসে তার চাচাকে দেখতেছে
অমি আর অর্নব জানি কেমন আছে কে জানে!ওদের একবার দেখার অনেক ইচ্ছা আহানার
চাচাকে সে দেখে নিলো ভালো করে,চাচা আগের চেয়েও একটু স্মার্ট হয়েছেন তবে মাথার কটা চুল পেকে গেছে একদম,হাতে দামি ঘড়ি,পরনে কোট, মনে হয় কোনো বিশাল বিজনেসম্যান,আর এসব তার বাবার টাকায় হয়েছে
আহানা তারপর নিজের দিকে তাকালো,হালকা গোলাপি রঙের একটা জামা তার গায়ে,মাত্র ৫০০টাকার জামাটা
আজ তারা বাবা বেঁচে থাকলে হয়ত তার ও এরকম দামী জামা থাকতো,এরকম ৫০০টাকার জামা পরে থাকতে হতো না
আহানা মন খারাপ করে ওর চাচার দিকে চেয়ে আছে,চাচা লিফটে ঢুকে গেলেন ব্যস আর দেখা গেলো না তাকে
আহানা পিছন ফিরতেই শান্তকে আচমকা দেখে ভয় পেয়ে দুম করে ফ্লেরে পড়ে গেলো
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”তোমাকে মানা করলাম না কেবিন থেকে বের হবা না”
.
আপনি বলেছিলেন চাচা গেলে বের হতে,তাই তো বের হলাম
.
কই গেছে?আমি তো দেখছিলাম তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে উনাকে দেখছিলে
.
সরি!কিন্তু উনি আমাকে দেখেননি
.
যাই হোক,আর এরকম করবা না,আমি কোনো বাহানা চাই না,উঠো এখন,অফিসের লোকেরা কি বলবে?এরকম ফ্লোরে গোল হয়ে বসে আছো কেন?আর আমি বাঘ না ভাল্লুক যে দেখেই পড়ে গেলা
.
এরকম চোরের মতন পিছনে এসে দাঁড়ালে যে কেউই ভয়ে হার্ট এটাক করবে আমি তো জাস্ট পড়ে গেলাম
.
শান্ত আর কিছু না বলেই আহানাকে তুলার জন্য হাত বাড়ালো
আহানা ওর হাত ধরে উঠে আসতেই টাইলসে পিছলিয়ে আবারও পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ওকে টেনে ধরে ফেললো
আহানা শান্তর কাঁধে হাত রেখে চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত ও চুপ,নওশাদ আর রিয়াজ সূর্য মিলে ওদের দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললো”চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও,পাবে না কেউ তোমাকে! তুমি কারো নও!!!!”
.
ওদের গান কানে আসতেই শান্ত আহানাকে ছেড়ে দিলো
আহানাও নিচের দিকে তাকিয়ে সোজা তার কেবিনের দিকে দৌড় দিয়েছে
আর শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার রুমের দিকে চললো
.
আরে আরে যাস কই??এত সুন্দর একটা রোমান্টিক সিন দেখালি সাথে ট্রিট ও দিয়ে যা
.
শান্ত চেয়ার টেনে বসে নাচোস মুখে দিয়ে বললো”কিসের ট্রিট?”
.
ওমা!তোর প্রেম প্রেম ভাব শুরু হলো সেটার,আর কিসের
.
কিসের প্রেম,আহানা পড়ে যাচ্ছিলো বলে ধরছিলাম আর কিছু না
.
আহানা তার কেবিনের কাঁচের দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপ করে আছে,আজ ২সেকেন্ডের জন্য কিসের একটা ভ্রমে চলে গিয়েছিলো সে,হাত কাঁপতেছে এখনও
শান্তকে জোর গলায় বলে দিতে হবে আমাকে যেন না ছোঁয় আর
এমন ভাবে ছুঁলে আমার গায়ে কাঁটা দেয়
স্টুপিড একটা,শুধু আমাকে ছোঁয়ার বাহানা লাগে তার
.
শান্ত তার রুমের পর্দার পাশে গিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য হাসির হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে,টপিক হলো রিয়াজের বিয়ের আলোচনা
আর শান্ত আনমনে আহানাকে নিয়ে ভাবছে,আহানাকে টাচ করলেই কিরকম যেন ফিল হয় মন চায় হাত ধরেই রাখি,ভালো লাগে এক অন্য রকম
.
কিরে শান্ত?
.
হুম বল
.
শান্ত পিছন ফিরে সবার দিকে তাকালো,সবাই এবার কথা বলবে গায়ে হলুদে কিরকম মজা করবে তারা,কি গানে নাচবে সেসব নিয়ে
.
শান্ত চুপিচাপি ল্যাপটপটা অন করে গেমসে ঢুকেছে,কারণ বিয়ে নিয়ে এরকম বোরিং আলোচনা তার ভাল্লাগে না
গেমসই ভালো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-২১+২২+২৩

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা কিছুটা হলেও ভয় পেলো কিন্তু শান্ত ওকে যে পরিমাণ অপমান করে সেসব মনে করে আহানা বললো সে যাবে না মানে যাবেই না
.
শান্ত নরমালি আহানার মায়ের দিকে চেয়ে বললো”আন্টি আপনি প্লিস আহানার কথা চিন্তা করে অন্তত জামাকাপড় সব গুছিয়ে চলো আসুন”
.
আহানার মা ১সেকেন্ড ও দেরি না করে ব্যাগ নিয়ে জামাকাপড় সব গুছাতে চলে গেলেন
.
মা তোমার কি কিছুই মনে নেই?এই লোকটা আমাকে কত অপমান করে আর তার পরেও তুমি তারই বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছো?
.
তুই তো চুপ থাক একদম!!! কোনো কথা বলবি না
.
মা ১০মিনিটেই সব জামাকাপড় রেডি করে বের হতে হতে বললেন”বাবা তুমি আহানাকে নিয়ে আসো,আমার মনে হয় না ও রাজি হবে”
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে বললো”যান আন্টি,আমি এরে নিয়ে আসতেছি”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে শান্তর দিকে চেয়ে চাদর টেনে সেটা শক্ত করে ধরে বসে আছে
শান্ত এগিয়ে আসতেছে,বাড়ির সামনের ৪টা সিঁড়ি পেরিয়ে সে ভিতরে ঢুকলো
আহানা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যে শান্ত ওকে কথার যত লজিকই দেখাক না কেন সে কিছুতেই মানবে না,গলবেও না
.
শান্ত কাছে এসে এক ওয়ার্ড কথাও বললো না,শুধু আহানার গায়ের থেকে চাদরটা টেনে সরিয়ে ফেললো
তারপর হাতে থাকা জ্যাকেটটা আহানার গায়ে পরিয়ে দিয়ে ওকে বিছানা থেকে কোলে তুলে নিলো
.
এই এই এসব কি!!!ছাড়ুন আমাকে
.
সোজা কথায় যাবা না যখন কোলে তুলেই তো নিতে হবে
.
শান্ত আর কথা না বাড়িয়ে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে,আহানা ওকে কিল ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে একের পর এক,তবে বেশি জোরে দেওয়ার শক্তি নেই তার
মনে হয় আবারো জ্ঞান হারাবে,,খিধায় অসহ্যকর হয়ে উঠছে সব কিছু,তারপরেও যত পেরেছে শান্তকে মেরেছে সে
কিন্তু শান্ত তো ছাড়ার পাত্র না,নিয়ে চলেছে তো চলেছেই
বাড়ি থেকে বের হয়ে তারপর আহানাকে বললো দরজায় তালা লাগাতে
.
আহানা রাগি রাগি লুক নিয়ে চেয়ে বললো”আপনার কোলে থেকে আমি দরজায় তালা দিব?”
.
তুমি আমার কোলে তো আমি তালা কি করে দিব?
.
নামান আমাকে
.
তোমাকে নামালে তুমি এই জন্মেও আমার সাথে যাবে না,তোমাকে হারে হারে চিনি আমি
.
তো দিয়েন না তালা
.
হুম দিলাম না,চুরি হলে তো তোমাদের বাসায় চুরি হবে,আমার কি?
.
আহানা অনেক ভেবে বললো “ঠিক আছে নামান আমাকে,আমি হেঁটেই যাব আপনার সাথে”
.
শান্ত আহানাকে নামিয়ে ওর হাত ধরে রাখলো,কে জানি যদি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়
.
আহানা দরজা লাগিয়ে পিছন ফিরে বললো”অন্তত আমার হাত তো ছাড়ুন,আজব!”
.
না তা হচ্ছে না
.
নিরুপায় হয়ে আহানা বোকার মত শান্তর সাথে মেইন রোডের দিকে যাচ্ছে,কিছুক্ষন আগে কত বড় বিপদে না পড়ছিলাম আমি,কেমনে বাঁচলাম মাগো মা!ভাবতেই ভয় লেগে উঠে!
.
আহানা চারপাশে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ ওর মনে হলো সে রতনকে দেখেছে
শান্ত এতক্ষণ ওর হাত ধরে ছিল এবার আহানাই ওর হাত চেপে ধরলো শক্ত করে,আবার কিছুটা কাছেও এসে দাঁড়ালো
শান্ত বিষয়টা ভালো মতনই খেয়াল করেছে কারণ কিছুক্ষণ আগে রতনকে সেও দেখেছে,অন্ধকারে পাশে কেউ এসে দাঁড়ালে তা টের পাওয়া যায় সহজেই আর তা যদি হয় শুকনো পাতার উপর তাহলে তো কথাই নেই
শান্ত আহানাকে আর ওর মাকে নিয়ে তাদের বাসায় ফিরে আসলো
সবাই একজোট হয়ে শান্তর মাকে সবটা জানালো,মা তো সব শুনার পর মুখটা এত রাগী রাগী করে ফেললো যেন উনি বুঝাতে চাইছেন বিয়েতে রাজি হলে আজ এমনটা হতো না
আহানা তাদের জন্য দেওয়া রুমের মাঝখানে চেয়ার টেনে বসে আছে,বিছানায় বসতেও ভয় করে,১/২ঘন্টা আগে তাকে রতন এমন বিছানায় হাত পা বেঁধে রেখেছিলো
মা তো মনে হয় আন্টির সাথে কথা বলতেছেন,আর শান্ত বাসায় নেই,কোথায় গেছে কে জানে,তাতে আমার কি?
.
শান্ত ঠিক ২ঘন্টা পর বাসায় ফিরে আসলো,তখন রাত ১০টা বাজে,শান্তর মা নিজের হাতে আহানাকে খাইয়ে দিচ্ছেন,শান্ত ঠোঁটের কোণে জমে থাকা রক্ত ভালো করে মুছে তারপর বাসায় ঢুকলো,কোনোমতে মায়ের চোখ এড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসলো সে
রুমের দরজা লাগাতে গিয়েও পারলো না কারণ আহানা এসে হাজির,সে শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পরোক করে নিলো
জ্যাকেট হাতে ঝুলানো,বাকি সব ঠিকঠাক শুধু ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখা যাচ্ছে,কপালে মাটি লেগে আছে,গায়েও কিঞ্চিত মাটি আছে
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”সেই হিরোর মতন মারপিট করেই আসলেন তাই তো?”
.
তুমি তো বললে এটা মুভি নয় বাস্তব,পুলিশ রতনকে কেমন ভাবে ট্রিট করবে তা জানি আমি,, তাই আমি একটু দেখে আসলাম আর কি
.
কি দরকার ছিল?আমাকে না দুচোখে দেখতে পারেন না তাহলে এসব কি?
.
তোমাকে কে বললো আমি এসব তোমার জন্য করেছি??,আমি তো আমার আন্টির মেয়ের জন্য করেছি
আর টেনসন করো না,ওদের ভালো করে আদর যত্ন করে ব্ল্যাক পেপার স্প্রে করে দ্যান এসেছি
.
ব্ল্যাক পেপার মানে কালো গোলমরিচের গুড়া?
.
হুম!
.
ইয়া আল্লাহ!আপনি তো দেখি অনেক চালু,অনেক নায়কদের দেখতাম মেরে আবার হসপিটালে ভর্তি করে দিয়ে আসে আর আপনি কিনা কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটি দিয়ে এলেন?
.
শুনো!মেরে আবার হসপিটালে ভর্তি করে পাগলে,মেয়েদের গায়ে হাত তুলবে আবার তাদের হসপিটালে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই,বরং ওদের জখমে আরও কষ্ট দেওয়া উচিত আর আমি সেটাই করেছি!
.
কোথায় পেলেন গোলমরিচ?
.
রান্নাঘর থেকে নিয়ে গেসিলাম
.
ভালো😒বসুন আমি আসতেছি
.
শান্ত নিজের বিছানায় গিয়ে বসে জ্যাকেটটা পাশে রাখলো,,কাঁধের নিচ বরাবর একটু চোট আছে,টিশার্টের কারণে দেখাই যায় না,রতনের সাথে ১২/১৩জন ছিল,সবার সাতে পেরে উঠতে কষ্ট হয়েছিল ভাগ্যিস নওশাদ আর রিয়াজকেও সাথে নিয়েছিলাম,রতনকে তো আমি মেরেছি,নওশাদ আর রিয়াজকে ওকে ছুঁতেও দেইনি,ওকে তো আমি নিজের হাতে মেরেছি
ওকে মারায় আমার রাগ কিছুটা হলেও কমেছে,কারেন্টের শক দিলে আরও ভালো লাগতো!!
.
আহানা হাজির,হাতে করে নিয়ে এসেছে ডেটল এন্টিসেপ্টিক আর তুলা,মলম
শান্ত গায়ের থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে আহানাকে দেখে চোখ ছানাবড়া করে ফেললো তারপর ইয়া বড় হা করে বললো”সূর্য তো মনে হয় আজ অজ্ঞান হয়ে অস্তে গেছে”
.
আমার এত শখ নাই আপনার কেয়ার করার,আপনাকে হেট করি,, অলওয়েজ হেটই করবো,ধরেন,নিজের মলম নিজে লাগান
আহানা শান্তর হাতে ফার্স্ট এইড বক্স ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিতেও পারলো না,পিছন ফিরে আবারও তাকালো শান্তর দিকে
খুব দরদ হচ্ছে, কিন্তু ঐ যে কথায় কথায় আমাকে অপমান করে সেটার জন্য কেয়ার ও আসে না ভিতর থেকে
এর ভিতর দিয়ে আবার দরদ ও হচ্ছে,দোটানায় পড়ে গেলাম!!
.
শান্ত টিশার্ট খুলে মলম লাগাতে গিয়ে দেখলো আহানা এখনও যায়নি,জলদি করে হাত ঢেকে বললো”কি?যাওনি কেন?অবশ্য কারোর যদি আমার জন্য মায়া হয়ে থাকে তো বসে বসে দেখতে পারে”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওর মাথা মনে হয় কেউ ঘুরিয়ে টেনে হিঁছড়ে শান্তর সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিলো ফের!
.
শান্ত এবার বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে বললো”তুমি আসলে কি চাও বলতো?
.
আহানা শক্ত হয়ে মাথা উঁচু করে বললো”আপনার আম্মু বলেছে আপনার মাথায় মলম লাগিয়ে দিতে”
.
সিরিয়াসলি?
.
হুম!
.
আচ্ছা তাহলে লাগাই দেন
.
আহানা তুলোয় ডেটল নিয়ে রক্ত মুছতেছে মন দিয়ে,আর মাঝে মাঝেমাঝে ফু দিচ্ছে
শান্তর হঠাৎ মনে পড়লো ওর মা তো কথা বলতে পারে না!
.
মা তো কথা বলতে পারে না তাহলে তোমাকে কি করে বললো আমাকে মলম লাগিয়ে দিতে?আর মা জানলো কি করে যে আমি মারামারি করে এসেছি?
.
আহানার কাশি উঠে গেছে,কাশি থামিয়ে বললো”ঐ যে আমি বলেছিলাম আপনার মারামারির কথা,আর উনি হাত দিয়ে বুঝালেন মলম লাগিয়ে দিতে!
.
বাহ! তুমি আমার মায়ের ইশারা ইঙ্গিত এত স্মুথলি বুঝতে পারো?
.
এত কথা বলবেন না তো,চুপ করে বসে থাকুন,ঠোঁটের তো ১২টা বাজিয়ে এসেছেন,রক্ত জমে আছে
এদিক দিয়ে আমাকে প্রতি সেকেন্ডে কথা শুনায় আর ঐ দিক দিয়ে আবার আমাকে কে মারলো তারে গিয়ে মেরে আসে আবার মার খেয়েও আসে
.
ঠোঁটের কোণায় মলম লাগানো শেষ,এখন কপালে মলম লাগাচ্ছো তাহলে বারবার ঠোঁটের দিকে তাকাচ্ছো কেন?
.
আহানা শান্তর মাথায় চেপে ধরে বললো”ফালতু কথা অফ দেন,আমার এত শখ নাই এরকম বিশ্রী ঠোঁটের দিকে তাকানোর
নেহাত রক্তজমে আছে বলে মলম লাগানোর পরেও রক্ত বের হয় কিনা সেটা দেখছিলাম অন্য কিছু না
.
বিশ্রী ঠোঁট??তুমি আসলে সুন্দরই চিনো না সেটা বলো
.
নিজের গুনগান গাইতে হবে না
.
ফাইন!
শান্ত খুব সুন্দর করে হেসে দিলো,এত সুন্দর করে হয়ত আহানার চোখে আর কাউকে সে হাসতে দেখেনি
সে নিজের অজান্তেই হেসে ফেললো
শান্ত এবার আহানার হাসি দেখে নিজের হাসি থামিয়ে নিলো তারপর বললো “যাও এখন”
.
মানে কি?এখনও মলম লাগানোই তো হয়নি
.
তো?কপালে আর ঠোঁটে লাগানো শেষ,যাও এখন
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে উঠে চলে যেতে নিয়ে থেমে গিয়ে আবারও এসে বললো”আপনার হাত এরকম ঢেকে রেখেছেন কেন?”
.
শুনো,একটা মেয়ের সামনে এভাবে উদম গায়ে বসা আমার ভালো লাগে না
.
আহানার ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না,পা টিপে টিপে কাছে এসে ছোঁ মেরে শান্তর গায়ের থেকে টিশার্টটা নিয়ে নিলো সে
একি!!এতটুকু ছড়ে গেছে কি করে?আর আপনি আমার থেকে লুকাচ্ছিলেন এতক্ষণ??
আহানা হুট করেই শান্তর পাশে বসে মলম নিয়ে লাগাতে লাগাতে বললো”সব ক্ষত দেখালেন এটা দেখালে কি টাকা দিতে হতো?”
.
আমি যাকে তাকে আমার ব্যাথা দেখাই না
.
আহানা রেগে শান্তর হাতের ক্ষততে এক চাপ দিয়ে বললো”যাকে তাকে দেখানোর চেয়ে তো ব্যাথা সহ্য করতে পারবেন তাই না মিঃঝগড়াইট্টা!!
.
এক মিনিট!ঝগড়াইট্টা মানে টা কি?আমার নাম শান্ত ওকে?
.
♠আপনি যেখানে ঝগড়ার বিজ বপন হয় সেখানে♠
তাই আপনার নাম দিলাম মিঃঝগড়াইট্টা,নাইস না?
.
নামটা একটুও সুন্দর নাহ,বিরক্তিকর একটা নাম,চেঞ্জ ইট!
.
আহানা পিছোতে পিছোতে বললো”আহারে আমার মিঃঝগড়াইট্টা রে!!”
এটা বলেই আহানা এক দৌড় দিলো
তখনই শান্ত পিছন থেকে এসে আহানার কাঁধ চেপে ধরে ফেললো
.
আহানা কাঁধের চোটে ব্যাথা পেয়ে কুকড়িয়ে উঠতেছে বারবার!!
বারান্দা থেকে শীতের হালকা বাতাস এসে গায়ে লাগতেছে তার সাথে সূর্যমুখী ফুলের একটা চিরচেনা ঘ্রান
আকাশে চাঁদ তার সাথে সূর্যমুখী ফুল বাতাসে নড়তেছে মনে হয় যেনো শান্ত আহানার অজান্তেই তাদের এ সময়ের কাছে আসাকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে যে দেখো সবচাইতে সুন্দর ঠিক তখন লাগে যখন তোমরা মিষ্টি প্রেমে একসাথ হও
চাঁদের আলো আর তার সাথে সূর্যমুখীর সৌন্দর্য তার সাথে বাতাসের সাথে লেগে তাদের দোলখেলা
শান্ত আর আহানাকে কি দেখছে না?
দেখলে হয়তবা কিছুক্ষনের জন্য হলেও হারিয়ে যেতো,ভুলে যেতো ঝগড়া,উজ্জীবিত হতো এক ভিন্নপ্রেমের যে প্রেমের আশেপাশেও থাকবে না একে অপরের প্রতি কোনো ঘৃনা
দুজনের সামনেই ফ্লোর থেকে ছাদ চুম্বি এক বিশাল আয়না
অথচ দুজনের একজনেরও সেদিকে নজর নেই
আচ্ছা!!এদের কবে মিলন হবে?
যেদিন সূর্যমুখী আর চাঁদ এসে বলবে ভাই তাকা আমাদের দিকে!তোদের মিল করার জন্য সয়ং তোদের সামনে চলে এসেছি
হয়ত তখনও এরা ঝগড়াই করে যাবে
সূর্যমুখী তখন সেন্সলেস হয়ে পড়বে চাঁদের গায়ে এটা দেখে যদি আহানা শান্তর প্রেম প্রেম ফিল হয় আর কি!!😂

কি ম্যাডাম!!ব্যাথা লাগলো?আমাকে যে তখন চেপে ধরে ব্যাথা দিলেন,কেমন ফিল হয় বুঝেন!!
.
লাগতেছে ছাড়ুন নাহলে আরও জঘন্য নাম দিব
.
আচ্ছা??আরও ঝঘন্য?দেখি শুনাও তো সাহস থাকলে
.
আগে হাত ছাড়ুন তারপর নাম দিব
.
আমি বোকা তাই না??আমি তোমাকে ছেড়ে দিলে তুমি আমাকে নামটা শুনিয়ে উধাও হয়ে যাবা
.
আচ্ছা দৌড় দিব না
.
শান্ত আহানার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”হুম এবার বলো”
.
আহানা পা পিছাতে পিছাতে বললো”মিঃআউলাঝাউলা”
ব্যস আহানাকে আর পায় কে!! সে এক দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেছে
.
এই মেয়েটা এত দুষ্টুমি করতে পারে,আউলাঝাউলা মানেটা কি আবার কে জানে,মিঃঝগড়াইট্টাই মাচ বেটার ছিল!
হোয়াটএভার এই রতনকে তো পুলিশের হাতে তুলে দিছি যেন সহজে ছাড়া না পায় তার বন্দোবস্ত কাল করে আসবো
আপাতত আজ একটু রেস্ট নিই
উফ!!বস্তির এই ছেলেগুলো ফাইটিং ভালোই জানে!তারপরেও তো আমার আর নওশাদ, রিয়াজের সাথে পেরে উঠলো না,সবগুলোকে মেরে হাঁড়গোড় ভেঙ্গে তারপর বাসায় ফিরছি!
কত বড় সাহস আমার ছোটবেলার খেলার সাথীকে টাচ করার চেষ্টা করে!!
ছোটবেলায় তিসানের আঙ্গুল ব্যাঁকা করে দিয়েছিলাম কারণ সে আহানার হাত মুড়িয়ে ধরেছিলো
আর এই রতনের বাচ্চা রতন আমার আহানার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো!
.
কথাগুলো বলা শেষে শান্ত হঠাৎ আয়নায় চোখ রাখলো
আমার আহানা মানে?এটা কি বললাম!ধুর!ও হচ্ছে জাস্ট ছোটবেলার ফ্রেন্ড আর কিছু না
সে আমার না!

কিরে আহানা এরকম হাঁপাচ্ছিস কেন?
.
না এমনি কিছু না,নিতু কোথায়?ওর সাথে গল্প করবো
.
আচ্ছা যা,ও মনে হয় নিজের রুমে
.
আহানা নিতুর রুমের দিকে চলে গেলো
শান্তি রহমান মুখটা ছোট করে নিচের দিকে চেয়ে আছেন
তার মনটা ভীষণ খারাপ,তার ছেলে তার কথা শুনছে না এমনকি আহানাও না
.
আহানার মা উনার হাতটা ধরে বললেন”চিন্তা করিও না বুবু,ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে,একদিন না একদিন ঠিকই বুঝবে,আমাদের ওদেরকে সময় দেওয়া উচিত
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আচ্ছা আহানা আপু!ভাইয়ার দেখি তোমার ছোটবেলার সব মনে আছে,তো তোমার কিছু মনে নেই?
.
না রে,তখন আমি এইটুকুন ছিলাম,আমার তো কিছুই মনে নাই
.
তো শান্ত ভাইয়া কতটুকুন ছিলো?যে উনার সব মনে আছে?
.
ওটা তো বুইড়া খাটাস!মনে হয় উনার ৮বছর ছিলো তখন
.
মানে আমার বয়সি ছিলো?
.
তোমার তো ৭বছর,তুমি আরও ছোট,আরও কিউটি
.
সবাই বলে আমি নাকি ভাইয়ার মতো হয়েছি,ভাইয়া তো আরও কিউট
.
তুমি সুন্দর চিনোনা!তোমার শান্ত ভাইয়াকে তো একটা ঝুলন্ত বাঁদরের মতন লাগে😂
.
শিসসস!আস্তে বলো,ভাইয়া শুনলে রাগ করবে অনেক
.
তোমার ভাইয়াকে ভয় পাই না আমি,আচ্ছা একটা কাজ করো তো,তোমার ভাইয়াকে ধরে বিয়ে দিয়ে দাও,আমিও একটু বাঁচি
.
হুম তাহলে তুমি রেডি হও
.
আরে আমি কেন?আমার কথা বাদ দাও,আমি জীবনেও তোমার ভাইয়াকে বিয়ে করবো না
অন্য মেয়ে খুঁজো
.
না আপু তোমাকেই ভাবী বানাবো
.
কথাটা শুনে আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”জিন্দেগি বারবাদ হো গেয়া”
.
নিতু খিলখিল করে হেসে দিলো আহানার গান শুনে

এই আহানা ঘুমাতে আয়,কটা বাজে খবর আছে তোর?
.
আসতেছি মা
.
আহানা নিতুর রুম থেকে বের হতেই এক ধাক্কা খেলো শান্তর সাথে
শান্তর হাতে ছিলো স্যুপের বাটি,সে কোনো মতে বাটিটা ধরে সবদিক সামলিয়ে আহানাকে এক ধমক দিয়ে দিলো
.
কি সমস্যা? চোখ কোথায় তুলে হাঁটো?
.
আপনি?আপনার চোখ কই থাকে?সরুন!ঘুম পাচ্ছে আমার
আহানা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আর একটিবার ফিরেও তাকালো না
অথচ কিছুক্ষণ আগে সে এত এত কেয়ার করছিলো
.
এই মেয়েটা নিজের দোষ কখনও চোখেই দেখে না!
.
রাত শেষ,সকাল সকাল শান্ত রেডি হয়ে অফিসে চলেও গেছে
জ্যাম বেশি হওয়ায় শান্তর আজ অফিসে পৌঁছাতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো
আহানা আজ পরিপাটি হয়ে কাজে বের হয়েছে
তার আজ একটাই উদ্দেশ্য আর সেটা হলো একটা চাকরি,চাকরি পেলেই মাকে নিয়ে সে নতুন বাসায় উঠবে
রতনের ভয়ে সায়দাবাদে আর পা রাখা যাবে না,তার মানে সে বাসাটা বাতিল
কড়া রোদের ভিতর আহানা ঢাকার অলিগলি সব খানে চাকরি খুঁজে যাচ্ছে,সারাদিন ধরে তন্নতন্ন করে অবশেষে আহানা চাকরির দেখা পেলো
কথা হলো গিয়ে বেতন নিয়ে,মাত্র ৫হাজার টাকা, সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানে বসে থাকতে হবে,মেয়েদের কসমেটিকসের দোকান,একটা ছোটখাটো দোকান, আরও অনেক সহকারী আছে আহানার সাথে,
আহানা সেটাতেই রাজি হয়ে গেলো
এখান থেকে ৫হাজার পাবে সেটা দিয়ে নতুন একটা বাসা নিয়ে ভাড়ায় থাকা যাবে,আর বাকি যে ৩টা টিউশনি আছে ওগুলা থেকে ৬হাজার আসবে প্রতিমাসে তাহলে এমনিতেই সংসার ভালোই যাবে
আহানা আজ খুশি খুশি বাসায় ফিরে গেলো
মা শান্তর মায়ের সাথে গন্ধরাজটার বাগানে চা খাচ্ছেন বসে বসে
আহানা দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বললো”মা আমি চাকরি পেয়ে গেছি”
.
মা তো মহাখুশি,তারপর যখন শুনলেন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করে পাবে মাত্র ৫হাজার টাকা তখনই মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললেন তিনি তার উপর আহানা বললো সে কিছুতেই শান্তর সাথে এক বাসায় থাকতে চায় না
.
মা মন খারাপ করে বললেন”ওসব নাহয় বুঝলাম,কিন্তু তোর পড়াশুনার কি হবে যদি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজই করিস”
.
মা ওসব বাদ দাও,সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি আবার পড়াশুনা?এতকিছুর খেয়াল রাখতে হলে আর চাকরি করা হবে না,একটা চাকরি পেয়েছি এটাই বা মন্দ কি!
.
আহানার কথায় আজ মা নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললেন!সংসার চালানোর দায় ভার মেয়ের উপর দিয়ে মেয়ের থেকে তিনি তার সব ইচ্ছা,স্বপ্ন তুলে নিলেন
স্বামী,বাবা ছাড়া সব পরিবারের বুঝি এই হাল হয়
কবে এই দিন গুজবে আমাদের!
তার উপর এমন একটা মেয়ে জন্ম দিলাম যে কারোর থেকে একটা টাকাও এমনি এমনি নেয় না
তার জন্য শান্তর মতো একটা ছেলে,সাজানো গোছানো একটা পরিবার রেডি থাকার পরেও সে এসব কিছু নাকোচ করে তার এই সংসার চালানোয় মনপ্রাণ সবটা দিয়ে রেখেছে
সে বুঝে না এসবেই সব হয়না,মাঝে মাঝে নিজেরও ভাবতে হয়
আত্নসম্মানকে উঁচু করে দেখতে গিয়ে সে আজ তার পড়ালেখাই বিসর্জন দিয়ে দিলো
আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে এমনটা কখনওই হতো না,কেন আমার ভাগ্য একটা কার এক্সিডেন্টের দরুন এভাবে ছারখার হয়ে গেলো
.
আহানা রুমে এসে নিজের জামাকাপড় সব গুছিয়ে ব্যাগে ভরে বিছানার উপর ব্যাগটা রেখে আবারও বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো, সে এবার যাবে বাসা খুঁজতে
.
মা মন খারাপ করে শান্তি রহমানের পাশে বসে আছেন,তিনি মেয়েকে মানা ও করতে পারেন না কারণ আহানা অনেক জেদি একটা মেয়ে,তার কাছে তার সম্মানটাই সব
.
শান্তর সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে এতকিছুই হতো না,ভাগ্য এসে দরজায় কড়া নাড়ছে আর এই মেয়ে কিনা দরজা বন্ধ করে বসে আছে
.
আহানা এই গলি সেই গলি খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা বাড়ি পেলো যেটাতে প্রতি ফ্ল্যাটের ইউনিটকে ১৪ভাগ করে ভাড়া দেওয়া হয়,মানে মানুষে গিজগিজ করতেছে চারিদিকে
৩রুমের একটা ইউনিট ভাড়ার জন্য পেলো আহানা
তাও ৫তলাতে,ছাদের সাথে এটাচড ৩রুম,দুটো বেডরুম,আর একটা রান্নাঘর
৫হাজার টাকা শুনে আহানা সেটাতেই হ্যাঁ বলে দিলো,আর দেরি না করে আবার শান্তদের বাসায় ফেরত আসলো সে
মা একবার না করছেন তো একবার হ্যাঁ করছেন,যাওয়ার প্রতি কোনো মতই নেই তার
এদিকে শান্তি রহমান আহানার দিকে তাকাচ্ছেন ও না,তিনি আহানার উপর প্রচণ্ডভাবে রেগে আছেন
কারণ আহানা একে তো বিয়েতে না করেছে তার উপর এই বাসায় থাকতেও চাচ্ছে না সে
আহানা উনাকে সালাম দিলো কিন্তু উনি আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন সাথে সাথে
আহানা আর কি করবে,,মন খারাপ করে মায়ের হাত ধরে চলে গেলো বাসা থেকে

সন্ধ্যা ৭টা বাজে,শান্ত সবে বাসায় ফিরতেছে,আজ একটু দেরি হয়ে গেছে,কাজের চাপ বেশি ছিলো সকালে লেট করে যাওয়ার কারণে
শান্ত বাসায় ফিরতেই দেখলো বাসার পরিবেশ একদম ঠাণ্ডা,কোথাও কোনো টু শব্দটাও নেই
শান্ত বিষয়টায় নজর না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেছে
আহানা কি নাই বাসায়??থাকলে তো আমার সূর্যমুখীর বাগানে ঢুকে লণ্ডভণ্ড করে ফেলতো সব, তাহলে কোথায়?নিশ্চয় আম্মুর গন্ধরাজ বাগানটাই গিয়ে ফুল ছিঁড়তেছে
আজ এক ঝাড়ি দিব ওরে
শান্ত টি শার্টটা পরে নিয়ে রুম থেকে বের হলো,রিপাকে নাস্তা দিতে বলে সব রুমে একবার করে চক্কর দিয়ে আসলো কিন্তু কোথাও আহানাও নেই, ওর মাও নেই
শান্ত একটা বিসকিট মুখে দিয়ে রিপার দিকে তাকিয়ে বললো”আহানা কোথায়?”
.
উনারা তো চলে গেছেন কিছুক্ষণ আগে
.
মানে!চলে গেছে মানে?কোথায় গেছে?আমাকে বলেনি কেন?
.
আহানারা নতুন বাসা নিয়ে সেখানে উঠেছে,আহানা নাকি একটা দোকানে চাকরি পেয়েছে
.
হোয়াট!আর আমাকে একবার জানালো ও না?মা ওদের বাধা দেয়নি?
.
আহানা তো শুনে না কারোর কথা
.
শান্ত রেগে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো

আহানা রে এটা কোথায় বাসা নিলি,এরকম চিপা কেন,থাকবো কেমনে?এত মানুষের হইচই কেন? আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে
.
তো কি করবো আর!অন্যের বাসায় থাকার চেয়ে এটা হাজারগুন ভালো,তুমি সবসময় অন্যের দয়ায় থাকতে চাও কেন বলোতো?
.
যাতে তোকে ভালো জীবন দিতে পারি,তা তো বুঝবি না তুই
.
আমার ভালো জীবন লাগবে না মা,আমার আত্নমর্যাদাসম্পন্ন একটা জীবন চাই,যেখানে আমি আমার পরিশ্রমের কামায় দিয়ে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে পারবো,কারোর কোনো দয়া থাকবে না
.
যা কি রাঁধবি রাঁধ!রাতে কি না খেয়ে থাকবো তোর আত্নসম্মানের জন্য?
.
আহানা মুখটা ছোট করে রান্নাঘরে গেলো,চোখে পানি এসে গেছে তার,চোখ মুছে রান্নাঘরটা একবার পরোক করে নিলো সে,পুরো তাকগুলো খালি,সবই খালি
হাতে টাকা আছে ১৫০০,এগুলো দিয়ে মাসের বাকি দিন মানে ২০দিন কাটাতে হবে,পরের মাসে বেতন পাবো
এখন বরং তরকারি কিনে আনি
আহানা বাসা থেকে বের হতেই শুনতে পেলো নিচে কতগুলো ছেলের হট্টগোল,সবগুলো চিকনার দল
১৭/১৮বছর বয়সি হবে মনে হয়,আহানা মাথার ঘোমটা টেনে চুপচাপ নামতেছে সিঁড়ি দিয়ে,ছেলেগুলো কথা বলা বন্ধ করে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই মিলে
মনে হয় আর এর আগে মেয়ে দেখেনি
এবার সবাই ফিসফিস শুরু করে দিলো একে অপরের সাথে
একজন বললো “মনে হয় নতুন এসেছে মেয়েটা”
আরেকজন বললো “মনে হয় বড় আপু”
আরেকজন বললো “তাহলে আসসালামু আলাইকুম”
আরেকজন বললো”সিনিয়র আপু যখন বউ”
এটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে
আহানা পিছন ফিরে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আরেকটা আছে!”সিনিয়র আপু যখন শাশুড়ি”
এটা বলেই আহানা চলে গেলো
এবার সবাই মিলে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে,এটা কি বললো মেয়েটা!
.
আহানা নিচে নেমে এদিক ওদিক তাকালো,এসময়ে তরকারি পাবো কই,এই এলাকা তো ভালো করে চিনি না আমি
সামনে দোকানপাট আছে,আর এপাশে সব বাড়ি,২তলা,৫তলা,৭তলা এরকম
তো আহানা সামনে রাস্তার ওপাশে গেলো দোকানদারকে জিজ্ঞেস করার জন্য
.
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
.
আঙ্কেল এখানে আশেপাশে কোথাও তরকারি বাজার আছে বলতে পারবেন??
.
তুমি তো মনে হয় এখানে নতুন,,তরকারি বাজার তো এখান থেকে দূরে তবে এ সময়ে ভ্যানগাড়ী যায় এই রোড দিয়ে,ওটাতে তরকারি পাবা
.
এখন?আচ্ছা তাহলে আমি অপেক্ষা করতেছি
.
আহানা দালানগুলোর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতেছে,টিনের ঘর পেলো না,পেলে হয়তবা ভাড়া আরও কম লাগতো,যেহেতু বেতনে সব হয়ে যাবে তাই দালানেই উঠলো
চিকন গলির রোড,মানুষ এত বেশি এই এলাকায়,আহানা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে কয়েকজন বয়স্ক লোক টুলে বসে আজকের খবরের ব্যাপারে আলোচনা করতেছেন হাতে গরম চায়ের কাপ নিয়ে
এরকম জনবহুল এলাকা আমি আর দুটো দেখিনি,মনে হচ্ছে কোনো যৌথ পরিবারে থাকতে এসেছি,এত মানুষ চারপাশে!দু একদিনেই সবার সাথে ভাব হয়ে যাবে,মা তো মনে হয় এতক্ষণে প্রতি ইউনিটের আন্টিদের সাথে ভাব ও করে ফেলেছে
এই সরু পথটা দিয়ে কিছুক্ষন বাদেই সাইকেলে করে কেউ না কেউ যাচ্ছে,বাপরে বাপ এত ব্যস্ত এরিয়া!!
ভ্যানগাড়ী আসতে প্রায়ই ১০/১৫মিনিট লেগে গেছে,দূর থেকে ভ্যানগাড়ী দেখতে পেয়ে আহানা জলদি করে উনার সামনে এসে দাঁড়ালো
পটল/বেগুন/পুঁইশাক/কলমিশাক/লাল শাক/বরবটি/লেবু এসব আছে
আহানা অনেক ভেবে কলমিশাক আর বরবটি নিবে ঠিক করলো
তো ভাইয়া কলমিশাক ২মুঠা কত করে?
.
১৫টাকা
.
এটা আবার কোন হিসাব?এক মুঠা ৫টাকা হলে,২মুঠা ১০টাকা,১৫টাকা হয় কেমনে?
.
আপনি ৩মুঠা নেন ১৫টাকা দিয়ে
.
না,বাসায় ফ্রিজ নাই,রাঁধলে আজকেই রাঁধতে হবে,কাল পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাবে,আমি ২মুঠাই নিব ব্যস
.
আচ্ছা,আর কি নিবেন?
.
বরবটি কেজি কত করে?
.
৮০টাকা
.
ঐদিন না দেখলাম ৫০টাকা
.
কোথায়?
.
আমাদের সায়দাবাদে ৫০টাকা করে পাওয়া যায়,আপনি এত দাম চাচ্ছেন কেন?
.
আমি সায়দাবাদ থেকেই আনছি,তো এতদূর থেকে আনছি একটু বেশি চাইবো না?
.
নিব না আমি বরবটি,কাল সায়দাবাদ যাবো একটা কাজে তখন আসার সময় ৫০টাকা দিয়ে বরবটি নিয়ে আসবো দেখিয়েন আপনি
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
এতক্ষণ পর কলমিশাক দুই মুঠো, চাল এক কেজি আর এসব কি মসলাপাতি,তেল নিয়ে ফিরলি তুই?আজ এগুলা খাবি?
.
কলমিশাক ভাজি করে নাও,ভাত আমি রাঁধবো,কাল সায়দাবাদের বাসায় গিয়ে আমাদের বাকিসব জিনিসপাতি নিয়ে ফিরবো তাহলেই তো হয়ে যায়
.
তোকে আমি একা ওখানে যেতে দিবো না
.
তুমি সহ যেও তাহলে আর নয়ত আমি রুপাকে সাথে করে নিব
ওহ আমি তো ভুলেই গেছি আমি আর ভার্সিটিতে যাব না কোনোদিন,তার উপর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ আছে,তাহলে তোমাকে নিয়ে বিকালে আরে না ধুর!বিকালেও তো টিউশনি আছে,কি করা যায় বলোতো?
.
নিতুকে পড়িয়ে শান্তকে নিয়ে যাইস তাহলেই তো হয়
.
অসম্ভব! আমি ঐ লোকটার সামনেও যাব না আর
.
তাহলে রাতে আমি নাহয় যাবো তোর সাথে
.
হুম সেটাই,চলো আমি তোমায় শাক কাটায় হেল্প করবো
.
৩টে রুমের মধ্যে সবগুলো বন্ধ শুধু রান্নাঘরেরটা বাদে
আহানা আর তার মা নিচে ফ্লোরে বসে শাক কাটতেছে
পাশের বাসার আন্টির থেকে আপাততর জন্য ২টো পাতিল নিয়ে এসেছে আহানা,কাল পাতিল-টাতিল সব নিয়ে আসতে হবে একেবারে
আহানা শাক বেছে দিয়ে চাল ধুচ্ছে বেসিনে গিয়ে
মা শাক হাত দিয়ে কুচি করতেছেন,দা বটি সব বাসায় রেখে এসেছেন তারা
আহানা ভাত বসিয়ে রুমের দিকে গিয়ে ধুমধাম করে নিমিষেই রুম দুটো পরিষ্কার করে ফেললো সে
তারপর ফ্লোরে গোল হয়ে বসে গালে হাত দিয়ে সামনের জানালাটা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো
অনেকদিন বাদে তার মনে হচ্ছে তাকে আর কেউ জ্বালাবে না
রতন প্রতিদিন জ্বালাতো আর এখন আর জ্বালাবে না,বেশ ভালো
আহানা মুচকি হেসে ফ্লোরে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
আউ!মাগো!
আহানা উঠে বসে পিঠ ঘষতে ঘষতে ফ্লোরের দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন
এত শক্ত এটা!ঘুমাবো কি করে আমি!
ধুর,কোনো কিছু না এনেই ড্যাং ড্যাং করে নতুন বাসায় এসে পড়লাম
আহানা উঠে গিয়ে জানালার গ্রিল ধরে আনমনে আকাশের দিকে চেয়ে বললো”মিঃঝগড়াইট্টা!!আমাকে আর পাচ্ছেন না আপনি,কিরাম লাগে এখন?
.
আমি বুঝি না এই মেয়েটা এত এত জেদ দেখায় কি করে,আসলে সে কি মানুষ নাকি অন্য কিছু?
মেয়েরা একটু ভাব দেখায় সেটা জানি বাট এরকম ভাব দেখায় জীবনে এ প্রথম দেখলাম আমি,আজব একটা মেয়ে সে
আরে ভাই জেদ দেখানো দরকার তো রতনকে দেখাতা ইটস ফাইন!
তো আমাকে কি জন্যে দেখায় সেটা বুঝি না,আমি ওর কি লাগি সে কি জানে না?
.
কি লাগে ভাইয়া?
.
শান্ত এতক্ষণ বারান্দার বিনব্যাগে আধশোয়া অবস্থায় সূর্যমুখীর বাগানটার দিকে চেয়ে কথা বলতেছিলো নিজেই নিজের সাথে হঠাৎ নিতুর কথায় হকচকিয়ে ঠিক হয়ে বসে দরজার দিকে তাকালো সে
.
না তো!!কিছু লাগে না
.
আসবো?
.
আসেন!আসেন
ভিতরে ঢুকে আবার জিজ্ঞেস করতেছিস কেন?
.
হিহি,তো তোমার কি লাগে বলো,আমিও শুনি
.
শত্রু লাগে,এত পাকনামি করতে হবে না তোকে,কি জন্যে এসেছিস সেটা বল আগে
.
সত্যি সত্যি বলবো নাকি মিথ্যে মিথ্যে?
.
এত ঢং তোকে কে শিখিয়েছে?আহানা?
.
আহানা আপুর নাম নিলাম না তুমি আহানা বলতেছো কেন,আমি তো এমনি এমনি এরকম ডায়ালগ দিই
.
আচ্ছা সত্যিটাই বল!
.
পরশু আমাদের স্কুলে সিন্ড্রেলার অভিনয়ের কম্পিটিশন আছে,মানে সবাই সিন্ড্রেলা সেজে আসবে,যার অভিনয় বেশি ভালো হবে সে উইননার
.
তো?আমাকে বলিস কেন?আমি কি তোকে নাচানাচি শিখাবো?যেমন করে সিন্ড্রেলা জামা ধরে দৌড়াইয়া পালাচ্ছিলো ১২টা বাজার সাথে সাথে?
.
নাইস!তুমি দেখি সবটা জানো,তুমি আমাকে শিখাইয়া দাও কিভাবে সিন্ড্রেলা জামা ধরে দৌড়ে যাচ্ছিলো,আমি অবশ্য কার্টুনে দেখছিলাম তবে অভিনয়টা আসতেছে না ঠিক
.
আমার আর কাজ নাই তাই না?আমার অফিসের কত কাজ,যা এখান থেকে
.
তোমার সত্যিই কাজ নাই,আমি দেখছিলাম তো বারান্দায় বসে বসে “আহানা তোমার কি লাগে”এসব বলতেছিলা
.
এত পাকনা হয়ে গেছিস তুই!যাবি নাকি ধরে দিব এক চড়
.
আমি মায়ের কাছে গিয়ে বলবো তুমি এতক্ষণ আহানা আপুকে নিয়ে কি বলতেছিলা
.
এই এই!দাঁড়া ঠিক আছে আমি তোকে শিখায় দিব,এখন রাত হয়ে গেছে তুই যা,আমি কাল শিখায় দিব
.
ঠিক আছে!
নিতু নাচতে নাচতে চলে গেলো রুম থেকে
.
শান্ত বারান্দা থেকে এসে তার রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়েছে,মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে ফোনটা নিয়ে শুয়ে পড়লো সে
ডাটা অন করে মেসেজ রিকুয়েস্ট চেক করতেই দেখলো ৩২টা মেসেজ দেওয়া কণা তাসনিম আইডি থেকে
এই নিয়ে ওর ১০টা আইডি শান্ত ব্লক দিয়েছে,শান্ত বিরক্ত হয়ে আবারও ব্লক করলো ওকে,জানু বেবি,এসব লিখে রেখেছে
শান্ত সবসময় ফেসবুকে দ্যা পিপল ইউ মে নো চেক করে
নোটিফিকেশন চেক করে না আর ইনবক্সে একটা গ্রুপ আছে,ওর, রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্যর
তো আগ্রহ বশত সে গ্রুপের মেসেজ চেক করতে গেলো
নওশাদ আর রিয়াজ মিলে শান্তর আর আহানার ঝগড়ার টাইমের কতগুলো ছবি তুলে গ্রুপে দিয়ে রেখেছে
শান্ত রেগে মেগে গ্রুপ থেকে লিভ নিয়ে নিছে,তারপর গেলো দ্যা পিপল ইউ মে নো তে
সব চেক করতে করতে চোখে পড়লো একটা আইডি
আইডির নাম”আহানার ইচ্ছেঘুড়ি ”
আহানা নামটা অানকমন বলে শান্তর বারবার এটাই মনে হলো যে আইডিটা আহানার হতে পারে
তাই সে ভিতরে গেলো,আহানার নিজের কোনো ছবি দেওয়া না থাকলেও সব ছবি পুতুলের
আর কভারে একটা পিক দেওয়া সেটা হাতে নীল চুড়ির,হাতটা দেখে শান্তর আর ২মিনিট ও দেরি লাগেনি চিনতে
শান্ত এবার সিউর হলো এটা আহানা,সব ছবিতে ১০/১২লাইক
সবগুলো মেয়ের লাইক,শান্ত মুখ বাঁকিয়ে চলে আসলো ওর আইডি থেকে
ও ভাব দেখাতে পারে আমি পারি না?আমিও রিকুয়েস্ট পাঠাবো না হুহ!!

এই যে আত্নসম্মানের রাণী,আসেন খেতে আসেন,কিছুই তো আনেন নাই,পাতিলে রেখেই খান,খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে মায়ের হাতে খাবার খেয়ে নিলো,তারপর কোনোরকম ফ্লোরে মায়ের শাড়ী বিছিয়ে শুয়ে পড়লো ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে
পরেরদিন সকাল হতেই আহানা ঠিক করলো যেহেতু ৯টা থেকে দোকানে বসতে হবে তো এখন গিয়ে সায়দাবাদ থেকে সব জিনিসপাতি নিয়ে আসার মোক্ষম সময়,রাতে যেতে ভয় করে
তাই মাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দুজন মিলে সায়দাবাদ এসে পৌঁছালো
তখন সকাল ৭টা বাজে,এদিক ওদিক বারবার তাকাতে তাকাতে আহানা আর তার মা হেঁটে চলেছে,সম্পূর্ণ ভয় রতনকে নিয়ে
মা দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকলেন,তারপর আর দেরি না করে এক এক করে সব জিনিসপাতি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিকসায় এনে তুললেন,এখন বাকি রইলো খাটটা সেটা আর রিকসায় আঁটলো না
আহানা বললো রিকসা আরেকটা নিয়ে নিবে খাটের জন্য
খাট খুলে খন্ড গুলো রিকসায় তুলার পর মোট ২রিকসা মালামাল হলো
আহানা আর মা তাই রিকসা আরেকটা নিয়ে ফিরলেন
আহানা রিকসাআলাদের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে মাকে বললো আস্তে আস্তে সব গুছাতে আর নয়ত রেখে দিতে সে এসে সব ঠিক করবে,এখন সে তার কাজে যাবে
মা ঠিক আছে বলে ওকে এক বোতল পানি এগিয়ে দিলো
আহানা এক বোতল পানি ব্যাগে পুরে বের হলো বাসা থেকে
আজ থেকে তার দায়িত্বের ভার বাড়লো, কাজ বেশি টাকা কম,পড়ালেখাও বন্ধ
কত কিছু যে বিসর্জন দিলাম একদিন নিজেকেই বিসর্জন দিয়ে দিব আমি
তাও হাল ছাড়বো না
আহানা আজ হেঁটেই সেই দোকানটায় আসলো,এমনিতেও মালামাল আনতে গিয়ে অনেক টাকা খরচা গেছে তাই বাধ্য হয়ে সে হেঁটেই আসলো
ওদিকে দোকান খুলে দিয়েছে দোকানের মালিক মালিনী রহিম আপু
বাকি সহকারীরাও এসে গেছে দেখছি!
আহানা সালাম দিয়ে ভিতরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো,মালিনী সবাইকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলো তার কাজে
আহানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে,এত বোরিং লাগতেছে ওর,প্রায়ই ২ঘন্টা হয়ে গেছে এখনও একটা কাস্টমার আসলো না

কি ব্যাপার ঊষা!এসব কি?আমি না তোমাকে বললাম মিঃরুপমের ফাইলটা আনতে,তুমি সিরাজের ফাইল এনেছো কেন?
.
কিন্তু স্যার আপনি তে বললেন রুপমের ফাইল না আনতে,ওখানে যে ফাইল আছে সেটা আনতে তাই তো আমি সিরাজের ফাইল এনেছি
.
ওহ,আমি ভুলে গেসিলাম!যাও এখন তুমি
.
স্যার কফি পাঠাবো?
.
না তার দরকার নেই,এসময়ে আবার রিয়াজের ফোন!এবার যদি বলে বিয়ে ঠিক তো বলবো আমি আসবো না,এ কণার বেয়াদবি আর ভাল্লাগে না আমার
হ্যালো!
.
কিরে হারামি!তোরে ফোন দিই এত দেখোস না নাকি? আহানার সাথে অলসেট??গ্রুপেও মেসেজ সিন করে লেফট নিয়েছিস,কি ব্যাপার?
.
ওর কথা তুলবি না,বাদ দে,কিসের জন্য ফোন করেছিস সেটা বল আগে
.
আগামী মাসের ৪তারিখে আমার গায়ে হলুদ,পরেরদিন বিয়ে,আপনি কিন্তু ১০দিন আগেই যাত্রামুড়াতে এসে হাজির হবেন,আমি কিছু শুনতে চাই না,নো এক্সকিউজ
.
বাপের বাড়ির আবদার তাই না?আমার আর কাজ নাই ১০দিন আগে গিয়ে বসে থাকবো তোর বাসায়,আমি তো বিয়ের দিন ও যাব না
.
কণার ব্যাপারটা ভুলে যা,এবার বলে দিবি তোর আর আহানার বিয়ে ডান,তারপর আর কিছু বলবে না দেখিস
.
তার মানে আহানাকে আবারও আমার সাথে তোর বিয়েতে আর গায়ে হলুদে নিয়ে যেতে হবে?
.
তো তাহলে তুই বল কণা থেকে কি করে বাঁচবি
.
আমি তোর বিয়েতে যাবোই না ব্যস
.
তাহলে তোর বিয়েতে আমি নওশাদ আর সূর্যও যাবো না দেখিস তুই
.
আসিস না,বাই
শান্ত কল কেটে দিয়ে ফোন টেবিলে রেখে দিলো,তারপর উঠে গিয়ে ওর অফিসের রুমটার জানালার পর্দা সরিয়ে ফেললো এক টান দিয়ে
নিচের গাড়ী আর মানুষগুলোকে পিঁপড়ার সমান লাগতেছে আর উপরে বিশাল আকাশ,টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে চলে যাচ্ছে
শান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ টেবিলের উপরে থাকা ফোনের দিকে একবার তাকালো তারপর এসে ফোন হাতে নিয়ে আহানার মাকে ফোন করতে গিয়ে থেমে গেলো
না আমি ফোন করবো না,করলে আন্টি ভাববে আমি আহানাকে পছন্দ করি,হুম থাক ফোন করবো না
ও যেমন তেমনই থাক,আমার কি,বরং ভালোই আছি সে জ্বালাচ্ছে না,ঝগড়া করছে না
.
আহানা আজ সারাদিনে শুধু ২টো কাস্টমারের মুখ দেখেছে,কতবার যে চোখে ঘুম এসে গিয়েছিলো তার খবর নেই কিন্তু চাকরি তো চাকরিই,করতে তো হবেই
বিকাল হতেই সে দোকান থেকে বের হয়ে চিত্রাকে পড়াতে গেলো সোজা তারপর চিত্রাকে পড়ানো শেষ করে রুনা আর সিয়াকেও পড়ালো,এবার শেষে নিতুকে পড়াবে,হাত পা চলছে না,আস্তে করে হেঁটে আসতেছে সে

ভাইয়ায়ায়ায়ায়া!
.
হোয়াট!শান্তিতে কফিও খেতে দিবি না,এমন করে চিল্লাস কেন?
শান্ত টিভি থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো,সেখানে নিতু গোলাপি রঙের একটা সিন্ড্রেলা ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছে,হাতে একটা লুঙ্গি
.
জামা পরেছিস ভালো কথা হাতে লুঙ্গি নিতে গেলি কেন?আমার যতদূর মনে আছে সিন্ড্রেলার হাতে তো লুঙ্গি ছিলো না
.
আরে ভাইয়া তুমি কাল আমাকে বলেছিলা সিন্ড্রেলা কেমনে অভিনয় করে সেটা শিখিয়ে দিবা আর আজ সারাদিন গিয়ে এখন আহানা আপুর আসার সময় ও হয়ে গেলো আর তুমি এখনও ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছো না
.
ওহ সরি সরি,আমি কাজের চাপে একদমই ভুলে গেসিলাম
.
শান্ত টিভি অফ করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিতুর কাছে এসে বললো “চল স্টার্ট করি!!এক মিনিট তোর হাতে লুঙ্গি কেন সেটাই তো বললি না”
.
ওমা,সিন্ড্রেলা ড্রেস পরে অভিনয় করতে হবে না?আর ড্রেসটা যেহেতু আমি পরে আছি সেহেতু তুমি ড্রেস মনে করে এই লুঙ্গিটা পরে নাও
.
আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?
আমি?আমি শাহরিয়ার শান্ত কিনা লুঙ্গি পরে সিন্ড্রেলা সাজবো?তুই আসলেই কি আমার মায়ের পেটের বোন মনে তো হচ্ছে তোকে ডাস্টবিন থেকে তুলে এনেছিলো
.
আ্যাহ!!!
.
তোকে “আ্যাহ” কে শেখালো?
.
নওশাদ ভাইয়া
.
ওরে আমি পরে বুঝাবো,এটা রাখ তুই এখন
.
ভাইয়া প্লিস আপাততর জন্য এটা পরেই শিখাও না প্লিস, কেউ তো আর দেখছে না,রিপা আপু আম্মুর রুমে,বুয়াও নাই
.
ফাইন
শান্ত ওর থ্রি কোয়াটার প্যান্টের উপর দিয়ে লুঙ্গিটা পরে নিলো,তারপর লুঙ্গিটা হাতে নিয়ে উঁচু করে বললো”দেখ,ডিং ডং,ডিং ডং,ও মাগো ১২টা বেজে গেছে,আমাকে এখনই চলে যেতে হবে,এটা বলে এমন করে দৌড় দিবি”
.
শান্ত লুঙ্গি ধরে নিতুর দিকে চেয়ে সামনে দৌড়াতে গিয়ে আহানার গায়ের সাথে এক ধাক্কা লেগে ওর গায়ে গিয়ে পড়লো
আর আহানা ভার নিতে না পেরে সে সমেত নিচে পড়লো
দুম!!!
.
ওমা সিন্ড্রেলা দেখি উলটে পড়ে গেলো,বাট সে তো পড়েনি আসলে,আমি তো দেখছিলাম দৌড়ে গাড়ী করে চলে গিয়েছিলো, যাওয়ার সময় জুতা একটা রেখে গিয়েছিলো ভুলে
বাট ভাইয়া তোমার জুতা দেখি ২টাই আমার সামনে পড়ে আছে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-১৮+১৯+২০

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ওকে বাদ দে সব কিছু,এখন চল স্টেজের দিকে,আমি এখন নওমিকে রিং পরাবো
.
হুম
.
আহানা গাল ফুলিয়ে দূরে বসে আছে,শান্ত স্টেজে গিয়ে রিয়াজের পাশে সোফায় বসতেই কণা এসে হেলান দিয়ে বসে পড়লো ওর পাশে
.
শান্তর রাগ বাড়তেছে অনেক!রাগ আরও যাতে না বাড়ে তাই সে উঠে দাঁড়িয়ে নেমে চলে গেলো
যেতে যেতে বললো”সূর্য!!আমার সাথে যদি কারোর বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকে তো আসতে বল,আমি চলে যাচ্ছি”
.
সূর্য আহানার দিকে তাকালো,আহানা চুপচাপ উঠে দাঁড়িয়ে শান্তর পিছে পিছে যাচ্ছে
এখন মাটির পথটায় দুজনে,আশেপাশের বাড়ির আলোয় পথটা উজ্জ্বল হয়ে আছে তাই তেমন অন্ধকার ও নেই,সহজেই হাঁটা যায়
আহানা শাড়ীর আঁচল ঘুরিয়ে কাঁধ ঢেকে আসতেছে
শান্ত কারে ঢুকে চুপ করে বসে আছে সেই কখন থেকে, কিছুক্ষন বাদে আহানা এসে দরজা খুলে ভিতরে এসে বসলো,সিট বেল্ট লাগানোর আগেই শান্ত খুব জোরে গাড়ী চালানো শুরু করে দিলো
আহানা গিয়ে দুম করে মাথায় একটা বাড়ি খেলো সামনে
মাথা ডলতে ডলতে শান্তর দিকে তাকালো সে
.
শান্ত সামনের ব্যস্ত নগরীর দিকে চেয়ে কার চালাতে চালাতে বললো”আমাকে দেওয়া একটা চড় তোমার উপর খুব ভারী পড়বে মিস আহানা!”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে সিট বেল্ট লাগিয়ে নিলো
একটা বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছে তারা,বাজারটায় সব রিকাশা,অটোরিকশা, বাইক এসবে মিলে রুলস ব্রেক করে জ্যাম সৃষ্টি করেছে,যাত্রামুড়া থেকে একদম কাঁচপুর ব্রিজের কাছাকাছি পর্যন্ত জ্যাম
শান্ত একটু এগোচ্ছে কার নিয়ে তো আরও একটু থেমে থাকছে
পথটাতে চলায় মুশকিল হয়ে গেছে একেতো চিকন রোড তার উপর এত ভিড়!রাত ৮টা বাজে হয়ত
আহানা বাইরের দোকানগুলির দিকে চেয়ে আছে আনমনে
একটা সেলুন তার পাশে মুদি দোকান,তার পাশে ফার্মেসি
সামনেই অনেক লোকেরা মাছের বাজার নিয়ে বসেছে,তরিতরকারি ও আছে
.
বাজারটা পেরিয়ে তারা এবার কাঁচপুর ব্রিজে উঠলো,আহানা একটু নড়েচড়ে বসে মুগ্ধ চোখে শীতলক্ষ্যা নদী দেখছে,কি সুন্দর টাই লাগতেছে,লঞ্চ স্টিমারের আলোয় মনে হয় নদীটা আরও মনমুগ্ধকর হয়ে গেছে
.
এদিকে শান্ত রাগে গজগজ করতে করতে কার চালাচ্ছে,ভাঙ্গচুর করলে রাগ কমতো
মন তো চাচ্ছে আহানাকে ব্রিজ থেকে ফেলে দিতে,সম্ভব হলে শান্ত সেটাই করতো এতক্ষণে
শান্ত ব্রিজ থেকে নামতেই আবারও জ্যাম দেখে কার থামিয়ে নিলো
আহানা একবার কানের থেকে চুল সরাচ্ছে আবার শাড়ী ঠিক করছে,হাতের চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজে শান্তর রাগ আরও শেখরে উঠতেছে
.
শান্ত কারের জানালায় হাত রেখে সেটায় মাথা রাখলো,তাও ঝুনঝুন আওয়াজ হয়েই যাচ্ছে ক্রমাগত
হাতের উপর থেকে মাথা তুলে শান্ত চোখ রাঙিয়ে আহানার দিকে তাকালো
আহানার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ও নেই,সে নিজের মনমত চুল নিয়ে খোঁপা করে যাচ্ছে
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে টেনে ধরলো নিজের দিকে
.
আহানার এবার হুস আসলো,শান্ত তার হাত ধরেছে কেন,আবার কি করবে সে!
.
আহানা হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললো”আর কি করবেন আপনি?”
.
যাই করি না কেন,আবার চড় দেওয়ার সাহস রাখো?
.
যতবার বেয়াদবি করবেন ঠিক ততবার চড় দেওয়ার সাহস রাখি আমি
.
তোমার হাত ধরেছি তোমার হাতের এই মিউজিক ব্যান্ড অফ করতে
.
মিউজিক ব্যান্ড মানে?
.
চুড়ি,এটার আওয়াজে আমার মাথা ব্যাথা বেড়ে গেছে,এখনই খুলো এটা
কথাটা বলে শান্ত আহানার হাত থেকে টেনে চুড়ি সব খুলে ওর হাতে ধরিয়ে দিলো
.
তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে বসে পড়লো সে
আহানা মনে মনে ভাবলো সামান্য চড়ের জন্য এরকম করতেছে!এত মিসবিহেভ করছে আমার সাথে!
.
জ্যাম আছে এখনও,আহানা রেগে গিয়ে একদম দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলো
.
শান্ত চুপ করে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
কাঁচপুর থেকে সায়দাবাদ বেশি দূর না হলেও আবার কাছেও না,আহানা একটা মেয়ে হয়ে একা এতদূর কি করে যাবে ওর কাছে তো টাকাও নেই,শান্ত নিজের মাথার চুল টেনে এখনও চুপ করে আছে
আহানা হেঁটেই চলেছে,থামাথামি নেই কোনো
.
শান্ত কারটা নিয়ে দূরের একটা ফাঁকা জায়গায় কোনোরকম পার্ক করে রেখে আহানার পিছন ছুটলো
.
আহানা ফুটপাত ধরে হেঁটে চলেছে পাশেই বিরাট বড় জ্যাম লেগে আছে
বাস,বাসের সামনে আরেকটা বাস তার সামনে কার তার পাশে বাইক,সব পেরিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়েই আহানা হেঁটে চলেছে
শান্ত ওর হাঁটার গতি বাড়িয়ে আহানাকে শেষ পর্যন্ত ধরেই ফেললো,ওর হাত মুঠো করে ধরে নিজের দিকে ফেরালো সে
.
তোমার সমস্যা কি?
.
আমার হাত ছাড়ুন,আমি আপনার সাথে আর কোথাও যাব না,আমি একাই বাড়ি ফিরতে পারবো,হাত ছাড়ুন,অনেক হয়েছে
.
শান্ত চুপ করে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে তারপর আহানাকে টানতে টানতে নিয়ে আসতে লাগলো
আহানা ওর শক্তির সাথে পারছেই না,নিজের আরেক হাত দিয়ে শান্তর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে সে
শান্ত আহানাকে কারের কাছে নিয়ে এসে দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে কারের ভিতরের সিটে ফেললো ওকে
আহানা সিটের উপর দুম করে পড়ে হাতের কুনুই ধরে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
.
শান্ত একটা কথাও বললো না
নিচু হয়ে আহানার শাড়ীর আঁচল ভিতরে সরিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে নিজেও ভিতরে এসে বসলো,তারপর আহানার দিকে ফিরে ওর কাছে এসে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো চুপচাপ
.
এত কেয়ার দেখাতে হবে না,আপনাকে চেনা হয়ে গেছে আমার
.
তোমাকে কেয়ার দেখাচ্ছি না আমি,তোমার যদি আজ রেপ হয় বা অন্য কিছু হয় আমি আমার মায়ের সামনে আর তোমার মায়ের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো?
.
তারা যখন জানবে আপনি নিজেই আমাকে জোর করে কিস…করতে চেয়েছিলেন তখন কি ভাববে?
.
আমার কিস আর তোমার সাথে অন্যসব হওয়া সম্পূর্ন ভিন্ন ব্যাপার!
তুমি একা ৪/৫টা ছেলের সাথে পারবা না,এসব না ভেবেই ডেং ডেং করে একা অন্ধকার জায়গায় হাঁটা ধরেছেন উনি
তোমাকে তো দিনে রাতে ২৪টা থাপ্পড় মারা উচিত
.
আহানা রাগে আরেকদিকে ফিরে বসলো
শান্ত সায়দাবাদ এসে কার থেকে নেমে হাঁটা ধরলো সোজা আহানাদের বাসার দিকে অথচ যার বাসা সে এখনও কারের ভিতর,তার খবর ও নেই শান্তর
আহানা কার থেকে নেমে শান্তকে গালি দিতে দিতে পিছন পিছন আসতেছে
শান্ত বাড়ির সামনে এসে দরজায় নক করলো কয়েকবার
তারপর মা এসে দরজা খুলে শান্তকে দেখে খুশি হলেন তারপর বললেন ভিতরে আসতে,শান্ত ভিতরে আসলো না শুধু বললো ছবির ছেলেটা সে ছিলো
.
মা হেসে বললেন “জানতাম আমি,আমি তো শুধু দেখতে চেয়েছিলাম কি হয়,আহানাকে ভালো করে চিনি আমি ও এখন পর্যন্ত এসবে জড়ায়নি”
.
জড়াবেও না,ওর মত মেয়ে কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না
কথাটা বলে শান্ত চলে গেলো
আহানা এসে দেখলো শান্ত চলে যাচ্ছে,মা মুখটা ফ্যাকাসে করে তাকিয়ে আছেন সেদিকে
.
উনি কি বলেছে তোমায়?
.
বললো!,,,,,,,,,,, না থাক,আয় ভিতর আয়
.
আহানা শাড়ী পাল্টিয়ে জামা পরলো তারপর ভাবলো যেহেতু সে চাকরি পাচ্ছে না তাহলে আগে যা করতো সেটাই করা উচিত,রতন জ্বালায় তো কিছু করার নেই,চাকরি ও তো পাচ্ছি না,আগের মতন সকালে বাচ্চাদের পরাবো আর বিকাল থেকে টিউশনি
আর যাই হোক এই লোকটার অফিসে আমি চাকরি করবো না
.
শান্ত বাসায় ফিরে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো
আলমারি থেকে বিয়ারের একটা বোতল নিয়ে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো সে
গায়ের কোটিটা খুলে নিচে ফেলে দিলো
পাঞ্জাবির কয়েকটা বোতাম খুলে চোখ বন্ধ করে আছে সে
আজ আর ঘুমাতে বিছানায় আসেনি শান্ত,চেয়ারেই ঘুমিয়ে গেছে,হাতে বিয়ারের খালি বোতল ঝুলতেছে,সূর্যের আলো চোখে পড়তেই শান্ত জেগে গেলো,হাত থেকে বোতলটা ছেড়ে দিয়ে চোখ ডলে ঠিক হয়ে বসলো,তারপর ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে মাথার চুলগুলো টেনেটুনে উঠে দাঁড়ালো সে,আলমারি থেকে তোয়ালে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো,ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়ে ডাইনিংয়ে আসলো এবার
মা টিভি দেখতেছিলেন, শান্তকে দেখে হেসো দিলেন তিনি
শান্ত ও হাসলো,তারপর রিপাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো “নিতু কোথায়”
রিপা বললো “রেডি হচ্ছে”
শান্ত জলদি করে খাওয়া শেষ করে নিতুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো
পথে নিতুকে তার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে শান্ত অফিসে আসলো
ঊষা একটা লেটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে,শান্তকে দেখে গুড মর্নিং তো বললো কিন্তু এই লেটারের রহস্যটা বলার সাহস পায়নি সে
শান্ত এই লেটারটা পড়লে অফিসের উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যাবে এখন
ঊষা পা টিপে টিপে শান্তর অফিস রুমের সামনে এসে নক করলো,তারপর ভিতরে ঢুকে দেখলো শান্ত তার কোট খুলে চেয়ারে রেখে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে,ঊষা ঢোক গিলে বললো”স্যার আপনার নামে একটা লেটার এসেছে”
.
কে পাঠিয়েছে?
.
সসসসুহানা
.
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে বললো”রেখে যাও”
.
ঊষা মনে হয় কত বড় ধমক থেকে বেঁচে গেলো,লেটারটা টেবিলের উপর রেখে বলপয়েন্ট দিয়ে চেপে রেখে সে আর এক মূহুর্ত ও থাকলো না সেখানে
.
শান্ত এবার লেটারটা হাতে নিলো,খুলে যা দেখলো তার মেজাজ বিগড়ে ১০তলায় উঠে গেছে
হাতে থাকা পানির গ্লাস ছুঁড়ে মারলো সে
.
লেটারটা হলো Resignation এর
আহানা অফিস কেন ছাড়তেছে সেটার রিজন ও স্পষ্ট করে লিখা আছে,আহানা লিখেছে “Shanti Group of industry ” একটা ভালো নাম করা কোম্পানি বটে তবে এটার কর্মচারী এবং মেইন মালিক একজন ফালতু লোক,ব্যবহার অতি খারাপ!নারীর সাথে কেমন বিহেভ করবে তা তার জানা নেই,মিঃ শাহরিয়ার শান্তর ইমিডিয়েটলি ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন তা না হলে অবস্থার শুধু অবনতিই হবে!
.
এত বড় সাহস মেয়েটার!! আমার অফিসের এরকম বাজে একটা রিভিউ দিলো!!সাহস দেখানো ভালো তবে অতিরিক্ত সাহস অনেক খারাপ!
.
ঊষা কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ পেয়ে ভয়ে পালিয়েছে ততক্ষণে,শান্তকে সে অনেক ভয় পায়,না জানি সুহানার কি অবস্থা হবে
.
আহানা ভার্সিটিতে গালে হাত দিয়ে বসে আছে,তবে চোখে মুখে চিন্তা নেই তার,শুধু হাসি আর হাসি
.
কিরে আহানা এত হাসতেছিস কেন?
.
সত্যি কথা বললে হাসি তো হাসবেই,হাহা!
.
কি সত্যি বলেছিস?আর কাকে?
.
কিছু না বাদ দে,তোর আর নওশাদ ভাইয়ার কতদূর এগোলো সেটা বল আগে
.
সে তো আমাকে লাইক করে একটু একটু
.
একটু থেকেই অনেক খানি হয়ে যাবে দেখিস
.
তুই তো কাল নাকি নওশাদ ভাইয়ার ফ্রেন্ড রিয়াজ ভাইয়ার আংটিবদলে গেছিলি,কেমন লাগলো?
.
সব চেয়ে বাজে দিন ছিল কাল
.
কেন কি হয়েছিলো?
.
কিছু না বাদ দে,চল আমরা ক্যামপাসে একটু ঘুরি
.
আহানা রুপার হাত ধরে ক্যামপাসে নামতেই সবার আগে যার দিকে চোখ পড়া উচিত তার দিকেই চোখ পড়লো আর সেটা হলে শান্ত
কালো কোট আর তার ভিতরে সবুজ শার্ট পরে আছে,পকেটে হাত ঢুকিয়ে কারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে,তাও গেটের সামনে
আহানা না দেখার ভান করে আরেকদিকে চলে গেলো

সে একটু দূরে গিয়ে আবারও তাকালো,শান্ত এখনও একি জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
গাল এমন ভাবে ফুলিয়ে রেখেছে যেন সামনে যারে পাবে তারেই হত্যা করবে
.
কয়েকটা মেয়ে শান্তর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থেমে গিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো তারপর ফোন টিপে শান্তর ছবি বের করে মিলিয়ে নিলো
আরে এটা তো সত্যি সত্যি শাহরিয়ার শান্ত!!
ও মাই গড!
মেয়েগুলে লাফিয়ে শান্তর সামনে এসে ও মাই গড বলেই যাচ্ছে এখনও
তারপর শান্তর সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সবাই
শান্ত রোবটের মত দাঁড়িয়ে থেকে আহানা কি করছে কোথায় যাচ্ছে সেটাই দেখে যাচ্ছে
.
আহানা!
.
জি করিম স্যার বলুন!
.
তোমার ফ্যামিলি থেকে একজন এসেছে তোমাকে নেওয়ার জন্য, যাও,তোমার ছুটি দিলাম
.
কিরে কে এসেছে তোর?
.
আহানা শান্তর দিকে একবার তাকিয়ে কথাটা ইগনর করতে চাইলো পরে ভাবলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু যদি হয়?
তাই ব্যাগ হাতে নিয়ে সে এগিয়ে আসতেছে এদিকে
শান্ত আহানাকে আসতে দেখে মেয়েগুলোর সাথে হেসে পিক তুলতে লাগলো,মেয়েগুলো তো মনে হয় খুশিতে মরেই যাবে
আহানা কপাল কুঁচকিয়ে কাছে এসে বললো”কি চাই?”
.
শান্ত কিছু না বলেই পকেট থেকে ফোন বের করে আহানার মাকে ফোন করলো,উনি রিসিভ করতেই ফোনটা সে আহানার কানে লাগিয়ে ধরলো
মা বলতেছে আহানা যেন শান্তর সাথে তাদের বাসায় আসে,শান্তর মা আর আহানার মা মিলে কি কথা বলবে ওদের সাথে তাই শান্তকে বলেছে আসার সময় যেন আহানাকে তার ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসে
.
আহানা ঠিক আছে বলতেই শান্ত তার ফোন পকেটে ঢুকিয়ে কারে গিয়ে বসলো
.
মুখটা কেমন বেলুন বানিয়ে রেখেছে 😂কি যে লাগতেছে,এটাই তো চেয়েছিলাম
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ভিতরে এসে বসার জন্য কি ইনভাইট করতে হবে?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে সাথে সাথে এসে বসলো,শান্ত ওর দিকে তাকাচ্ছে বারবার,তাও ভালো ভাবে না এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন খেয়েই ফেলবে,আহানার একটুও ভয় লাগছে না কারণ তার ধারণা সে যেটা করেছে ঠিক করেছে,রিভিউটা সত্যি ছিল
কিছুদূর যাওয়ার পর আহানা বুঝতে পারলো এটা শান্তদের বাসায় যাওয়ার রোড না,তাহলে এটা কোথায় যাচ্ছেন উনি?
আহানার এবার ভয় করতেছে কারণ শান্ত ওর দিকে চেয়ে দাঁত কেলিয়েছে দুবার
আহানা গায়ের সুতির ওড়না দিয়ে কপালটা মুছে নিলো,সে সবসময় আত্নরক্ষার জন্য ব্যাগে একটা নেইলকাটার রাখে,যেটা দিয়ে নিজেকে সাময়িক ভাবে বাঁচাতে পারবে,তো সেটা হাতে নিয়ে বের করে রেখেছে,শান্ত আবারও কালকের মত কিছু করতে গেলে অবস্থা খারাপ করে দিবে তার
.
শান্ত কার এমন একটা জায়গায় থামালো যেখানের রোডটা সম্পূর্ণ ফাঁকা,পিপড়াও নজরে আসতেছে না,দুপাশে ঝাউ গাছ,রেডের পাশে সব ক্ষেত,দূরদূরান্তেও ক্ষেত,১০মিনিট পর পর একটা প্রাইভেট কার দেখা যায়
আহানা ঢোক গিলে গাপটি মেরে বসে আছে,নামতেছে না কার থেকে
শান্ত নেমে গিয়ে ঘুরে এসে দরজা খুলে আহানাকে টেনে বের করলো
.
এই!আপনি কি করতে চাচ্ছেন টা কি??আমাকে এখানে আনছেন কেন!
.
তোমারে দিয়ে হিউম্যান জুস বানাবো আজ
.
হিউম্যান জুস মানে!
.
শান্ত আহানাকে কারের সাথে চেপে ধরলো ভালো করে
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের নেইল কাটার টা ভালো করে ধরলো,আর কিছু করলে একদম কেটেকুটে দিবে সে
.
শান্ত কপাল কুঁচকে বললো”আমার দিকে তাকাও!তোমার সাহস হয় কি করে আমার সাথে এরকম বেয়াদবি করার??চিঠি দিতে কে বলেছিল?সাহস থাকলে মুখোমুখি এসে বলতা,রিভিউ দিতে কে বলসে তোমাকে?অফিসের সবাই কি ভাবছে??তোমার এত সাহস আসে কই থেকে?
.
আহানা বুঝলো শান্ত উল্টা পাল্টা কিছু করবে না তাই নেইল কাটার যে হাতে আছে সেই হাতটা লুকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো”যেটা সত্যি সেটাই বললাম,আর অফিসে যখন আর আসবোই না,, লেটার তো দিতেই হতো
.
তুমি যা করতেছো সব অতিরিক্ত করতেছো!একবার চড়,একবার এটা,একবার সেটা
.
আমি কি এমনি এমনি করতেছি?আপনি কিছু করেন না?আপনার সাহস হলো কি করে কাল আমাকে একা টেনে নিয়ে গিয়ে কিস করার চেষ্টা করার?
.
আমি তেমনটা করতাম না,রিয়াজ বললো কণা…..
.
কণা কি?মিথ্যা বাহানা দিবেন না একদম,একটা কথা কি জানেন,কণা আপুর সাথেই আপনাকে ভালো মানাবে
.
হ্যাঁ আর তোমার সাথে বাংলাদেশ কেন কোনো রাষ্ট্রের ছেলেকেই মানাবে না
.
সেটা আপনার দেখতে হবে না,কার সাথে মিলিয়েছি আমি সেটা ভেবে দেখুন না,একটা ফুল মেন্টাল মেয়ের সাথে আপনাকে মিলিয়েছি
কথাটা বলে আহানা মুখ বাঁকিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো
অনেক জোরে বাতাস বয়ে যাচ্ছে,আহানা ওড়না টেনে মাথায় দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে নিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো শান্ত কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আহানার চাহনি দেখে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আহানা আবারও সামনে তাকালো
এই লোকটা এত খারাপ!
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে তাকালো এবার আহানার দিকে,আহানা হাতে একটা গাছের ঢাল নিয়ে সেটা নাড়তেছে বারবার
পরনে সুতির একটা থ্রি পিস,হলুদ রঙের
শান্ত গাল ফুলিয়ে এখনও তাকিয়ে আছে ওর দিকে
আহানা আবারও ফিরে তাকালো,তাকিয়েই দেখলো শান্ত এতক্ষণ চেয়ে ছিল ওর দিকে
শান্ত আহানার তাকানো দেখে আরেকদিকে ফিরে গেলো আবার
তারপর চুপচাপ কারে উঠে বসলো সে
আহানা ঢালটা ফেলে সেও এসে বসলো,দুজনে এবার কোনো ঝগড়াঝাটি না করে ভালো ছেলেমেয়ের মতন বাসায় ফিরে আসলো
আহানা কার থেকে নেমেই বাসার ভেতর দৌড় দিলো
এসে দেখলো শান্তর মা আর ওর মা সোফায় বসে হাসতেছেন দুজনে
আহানা উনাকে সালাম দিয়ে পাশে এসে বসলো,শান্ত আহানার মাকে সালাম দিয়ে চলে যেতে নিতেই উনি বললেন আহানার পাশে এসে বসতে
আহানা চোখ বড় করলো সাথে শান্ত ও
শান্ত শেষমেষ চেয়ার টেনে বসলো,আহানার সাথে বসার মন মানসিকতা তার নাই
শান্তর মা চোখ বড় করলেন শান্তর দিকে তাকিয়ে
আর কি করবে!! শান্ত বাধ্য ছেলের মতন চেয়ার থেকে এসে আহানার পাশে বসলো
.
শান্তর মা এবার আহানার মায়ের হাত ছুঁয়ে বুঝালেন কথা শুরু করতে
.
তো শুনো তোমরা,আমরা দুই বোন মিলে ঠিক করেছি তোমাদের ছোটবেলার এই মিষ্টি সম্পর্কটাকে একটা বৈধ সম্পর্কে রুপ দিব
আর সেটা হলো তোমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাই,আমাদের এবার আত্নার সম্পর্কটাও গভীরতর হয়ে যাবে
.
কথাটা শুনে শান্ত আর আহানা একসাথে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সোফার উপর থেকে
দুজনেই চিল্লিয়ে বললো”অসম্ভব!!! ”
.
শান্তর মা আর আহানার মা হা করে তাকিয়ে আছেন
.
আমি?আমি বিয়ে করবো এই খারাপ অসভ্য লোকটাকে?জীবনেও না
.
আমি?আমি বিয়ে করবো এই বেয়াদব মেয়েটাকে??কখনও না
.
আহানার মা আর শান্তর মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন
.
আমি বেয়াদব?আপনার সাহস তো কম না,মায়ের সামনে আমাকে বেয়াদব বলেন
.
তুমি আমাকে অসভ্য বলসো সেটার কি হবে?খারাপ ও তো বলছো!তোমাকে তো আমার এখন ধরে বাসা থেকে বের করে দেওয়া উচিত,আমার বাসায় এসে আমাকেই অসম্মান করে কথা বলো তুমি!
.
এই তোমরা দুজনে থামো!আমাদের কথা বলতে দাও
.
শান্ত আহানাকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে গিয়ে বসলো
আহানা সেফায় দুম করে পড়ে মা আর শান্তর মায়ের দিকে তাকালো,তারা বিষয়টা খেয়ালই করে নাই
আহানার মা ফিসফিস করে শান্তর মায়ের সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করতেছেন
আহানা এবার উঠে এসে শান্তকে এক ধাক্কা মারতে যেতেই শান্ত ওর হাত ধরে ফেললো
.
হাত ছাড়ুন!আপনি আমাকে ধাক্কা দিসেন কোন সাহসে?
.
বাসা থেকে ধাক্কা মেরে বের করা উচিত ছিল আমার
.
আহানা হাত ছাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে জুসের গ্লাস নিয়ে শান্তর মুখে মেরে দিলো
.
শান্ত মুখ মুছে আহানার চুলের মুঠি ধরে টান দিলো এবার,দুজনের মধ্যে মারামারি লেগে গেছে পুরো,অবস্থা ডেঞ্জারাস!
.
আহানার মা আর শান্তর মা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো
আহানা শান্তর কোট প্রায়ই ছিঁড়েই ফেলেছে,আর শান্ত আহানার চুলের ১২/১৩টা বানিয়ে ফেলেছে
ওদের কাণ্ডকারখানা দেখে দুজনে রোবটের মত তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ ,তারপর ফিক করে হেসে দিলেন
উনাদের হাসি দেখে আহানা আর শান্ত দুজন দুজনকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
শান্তর মা তার আঁচলের ভিতর থেকে একটা কার্ড বের করলেন,লাল রঙের একটা কার্ড,দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের কার্ড
মা কার্ডটা বাড়িয়ে ধরলেন শান্ত আর আহানার দিকে
.
আহানা আর শান্ত দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে কার্ডটা একসাথে ধরলো,তারপর দুজনে টানাটানা করে শেষে দুজনের হাতে রেখেই কার্ড খুললো,ভিতরে লিখা আছে
শুভ বিবাহ♥
বরের নাম-শাহরিয়ার শান্ত
বধুর নাম-আহানা ইয়াসমিন
এ দুলাইন দেখে শান্ত আর আহানা চোখ বড় করে তাকালো তারপর ভ্রু কুঁচকে যে যার মায়ের দিকে তাকালো
.
আহানার মা হেসে বললেন “কার্ডটা তোমরা যখন ছোট ছিলে তখন তোমাদের বিয়ের কথা আমরা দুই পরিবার মিলে পাকা করে প্রমাণ স্বরুপ বানিয়ে রেখেছিলাম কার্ডটা,এতদিন বুবুর কাছে ছিলো এটা
তারিখ কিন্তু তোমাদের বিয়ে যেদিন হওয়ার কথা ঠিক সেদিনকার তারিখই লিখা আছে এখানে,আজ থেকে ঠিক ২মাস পরে
.
তো?
.
তো?
.
তো মানে কি?দুজনে একসাথে “তো” বলতেছিস কেন,তোদের বিয়ে ২মাস পরেই হবে ব্যস
.
আন্টি আপনারা অনেক ডিসিশন নিয়ে ফেলছেন আমাকে না জানিয়েই,এখন আমার কথা শুনুন, বিয়েটা হচ্ছে না,আমি এই মেয়েটাকে পছন্দ করি না,সে আমার ওয়াইফ হওয়ার যোগ্যই না
.
এক মিনিট!যোগ্য তো আপনি নিজে না,আমি আপনাকে জীবনেও বিয়ে করবো না
.
আর কিছু না বলে কোনোদিকে না তাকিয়েই আহানা হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
শান্ত নিজের রুমের দিকে চলে গেছে ততক্ষণে
শান্তর মা আর আহানার মা মুখটা ফ্যাকাসে করে বসে আছেন
এরা দেখি দুজন দুজনকে সয্যই করতে পারে না,আর আমরা এদের নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতেছিলাম
শান্তর মা চোখ মুছলেন পরে হেসে দুহাত জোড় করে দেখালেন আহানার মাকে
মানে ওরা একসাথ হবে বা একসাথ করতে হবে এরকম কিছু বুঝিয়েছেন তিনি

আহানা বাসায় ফিরছিলো সামনে এসে পড়লো রতন!
ওকে উপেক্ষা করে আহানা পাশ কাটিয়ে যেতে নিতেও পারলো না কারণ রতন ওর পথ আবারও আটকে ফেলেছে
.
দেখ রতন,মেজাজ খারাপ করবি না আমার,পথ ছাড়
.
ছাড়বো না,কি করবি?
.
আহানা পা দিয়ে রতনের পা মাড়িয়ে ধরে বললো”দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারাবি তুই”
.
রতন ব্যাথা পেয়ে সরে গেলো,আহানা আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না,চলে গেলো সে বাসার দিকে
রতন পা ধরে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকলো ওখানে দাঁড়িয়ে
আহানার অনেক অপমান আমি সহ্য করেছি আর না,এবার এরে উঠিয়ে নিয়ে নিজের সব ইচ্ছা আমি পূরন করবো,বহুত ছাড় দিসি
বড়লোক ছেলের গাড়ীতে করে এদিক ওদিক চলা ফেরা করে,সময় থাকতে এরে এখনই আমার আয়ত্তে নিয়ে আসতে হবে
.
শান্ত নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে পড়েছে,ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলটার উপরে তার আর আহানার ছোটবেলার ছবিটা রাখা
শান্ত সেটার দিকে তাকিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
আমি?আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করবো?মা এটা ভাবলো কি করে!জীবনেও আমি ওরে বিয়ে করবো না,আমার লাইফ আমি কিছুতেই এভাবে নষ্ট হতে দিব না
.
আহানার মা শান্তর মা কে বিদায় দিয়ে উনিও বাড়ি ফিরে আসলেন,আহানা কাঁথা টেনে ঘুমাচ্ছে মরার মতো,যেনো কিছুই হয়নি
মা রাগ করে ঘরের সব জিনিসপাতি ধুমধাম করে এখান থেকে ওখানে রাখতেছেন
আহানা ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলো মা পুরো বাড়িতে উথাল পাতাল করতেছে
.
কি ব্যাপার এমন করো কেন?
.
কথায় আছে না মানুষরে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়,তোর হইছে সেটা!তুই আমাদের সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে ভাঙ্গতেছিস
.
আমার জীবন,আমার জীবনের ডিসিশন ও আমারই
.
তোর কপালে রতন জুটবে দেখিস,আইতে যাইতে গায়ে খালি হাত তুলবে,তখন তোর খুব ভালো লাগবে তাই না?
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে ওড়না গায়ে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলো
বিকাল হয়ে গেছে,আহানা তাই প্রতিদিনকার মতন আগে চিত্রাকে পড়াতে গেলো
তারপর যাবে রিপার বোন রুনাকে পড়াতে,আজকে এসবে একটুও মন নেই তার কিন্তু তারপরেও টাকার জন্য করতে হচ্ছে,শরীর ও দূর্বল লাগতেছে,সকালে দুমুঠো ভাত খেয়ে যে বেরিয়েছিল আর কিছুই খাওয়া হয়নি তার
রুনাকে পড়ানো শেষ দিয়ে এবার সে গেলো সিয়াদের বাসায়,উফ এত ঝামেলা,টিউশনি সব চাইতে বিরক্তিকর!
সবার শেষে নিতুকেও পড়াতে হবে
না আমি নিতুকে আর পড়াবো না,ঐ বাড়িতে গেলেই ঐ লোকটার সাথে ঝগড়ায় পড়তে হয়
আমাকে যা তা বলে কথা শুনায় সবসময়!আর জীবনেও উনার মুখোমুখি হবো না আমি
সব টিউশনি শেষ,এখন বরাবর সন্ধ্যা ৬টা বাজে,নিতুকে যেহেতু আজ পড়াবো না তাহলে বাসায় ফিরি
নাহ!!ফিরবো না,মা সব কিছুতে বাড়াবাড়ি করে, আমি ফিরবো না আজ
ফিরবো কিন্তু দেরি করে,বুঝুক একটু আমাকে বকলে কি হয় হুহ!
.
আহানা আজ আর রিকসা নিলো না, টাকা আছে,বরাবর ৩০টাকা,ওটা দিয়ে বাড়ি ফেরা যাবে কিন্তু ঐ যে দেরি করে ফিরবে সে জন্যে আহানা হেঁটেই বাড়ি ফিরতেছে
১০/১২মিনিটেই ধুসর অন্ধকার নেমে গেছে চারিদিকে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলেছে মনের ভিতর কড়া সাহস নিয়ে

ঊষা কাল সকালে মিটিং নেই তাই আমি দেরি করে অফিসে আসবো
.
ওকে স্যার
.
শান্ত ফোন রেখে কার ড্রাইভ করায় মন দিলো,জলদি করে বাসায় ফিরতে হবে,আহানাকে আজ সোজা কথা বলে দিব নিতুকে যেন আর পড়াতে না আসে
.
শান্ত মোড়ে কার ঢুকাতেই ওর মনে হলো আহানাকে দেখলো সে
কিন্তু এখন তো সে নিতুকে পড়াতে যাওয়ার কথা,তাহলে কই যাচ্ছে?
ভাবতে ভাবতে শান্ত কার থামিয়ে কার থেকে নেমে আহানাকে ডাক দিলো
আহানা থেমে গিয়ে পিছন ফিরে দেখলো শান্ত গাল ফুলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আবার কি?আর কি কোনো কথা শুনানো বাকি আছে আপনার?
.
তোমার সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলার সময় আর ইচ্ছে দুটোই নেই আমার,জাস্ট বলতে এলাম তুমি এর পর থেকে নিতুকে আর পড়াতে আসবা না
.
আপনি বলার জন্য বসে নেই আমি,আমি এমনিতেও পড়াবো না ওকে,ঐ বাড়িতে গেলে আপনার এই চাঁদমুখ দেখতে হবে কিনা এই ভয়ে আমি যাবো না
.
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে আর দাঁড়িয়ে না থেকে গাড়ীতে উঠে চলে গেলো,হুদাই কথা বললে কথা বাড়ে
আহানা ও মুখ বাঁকিয়ে আবার হাঁটা ধরেছে
সে যে পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেটার দুপাশে বাড়ি,মাঝখান দিয়ে ফাঁকা রোড,তবে অতোটাও ফাঁকা নয়,বাইক/কার/রিকসা এসবের চলাচলতি আছে খানিকটা
আহানা শান্তকে মনে মনে গালি দিতে দিতে হাঁটতেছে
হঠাৎই ওর সামনে কেউ এসে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা রোড থেকে চোখ উঠিয়ে উপরে চেয়ে দেখলো রতন দাঁড়িয়ে আছে,ওর সাথপ আরও ৩টা ছেলে,সবার মুখে হাসি,আর এই হাসিতে আহানা নিজের ক্ষতিটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে,চেঁচিয়েও যে মানুষ পাবে না তা আহানা জানে কারণ সে নির্জন এলাকায় আছে এই মূহুর্তে,এতক্ষণ আসার সময় রাস্তার দুপাশে বাড়িঘর ছিল আর এখন শুধু গাছ আছে দুপাশে
আহানার ভয় লেগে উঠলো,কারণ এমন একটা সময়ে রতনকে তার সাথীদের সাথে দেখলে ভয় লাগারই কথা
আহানা তারপরেও শক্ত হয়ে বললো”কি সমস্যা? আমার পথ আটকিয়েছিস কেন?”
.
তোকে নিয়ে যাবো তাই
এটা বলেই রতন আহানার হাত মুঠো করে ধরে ফেললো
.
আহানা হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় বিফল হয়ে চিৎকার দিলো,কিন্তু ততক্ষণে রতন ওর মুখ চেপে ধরে ফেলেছে

আহানা এ অসময়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো কেন?এই মেয়েটা!!একটা জেদি,নাছোড়বান্দা মেয়ে
বুঝে না কেন দেশের অবস্থা ভালো না মানে ভালো না!সে নিজে যে মেয়ে এটা তার জেদের নিছে সবসময় চাপা রাখে
সাত পাঁচ কিছু হয়ে গেলে তখন?
আমি বুঝতেছি আমার কেন এত ভাবনা ওকে নিয়ে! মরুক!
.
রতন আহানাকে উঠিয়ে নিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে এসেছে,হাত পা মুখ বেঁধে খাটের এক কোণায় বসিয়ে রেখেছে ওকে
আর সে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলেগুলোর সাথে ওর আর আহানার বিয়ে নিয়ে কথা বলতেছে,বিয়েটা আজ রাতের মধ্যেই সেরে ফেলবে সে তাই ছেলেগুলোকে জোড় দিয়ে আদেশ দিচ্ছে
আহানা হাত পায়ের বাঁধন কিছুতেই খুলতে পারতেছে না,১০মিনিট ধরে হাত পা বহুত নেড়েছে তাও বাঁধ খুললো না,মজবুত করেই বেঁধেছে রতন,এখন আহানা দূর্বল হয়ে গিয়ে চুপচাপ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,একটা কিছু পেলেই সেটা দিয়ে নিজেকে কি করে রক্ষা করবে সেই ভাবনাই ঘুরতেছে আহানার মাথার ভেতর
এদিকে চিৎকার যে দিবে তার ও উপায় নাই,মুখ ও বেঁধে রেখেছে রতন
মায়ের সাথে রাগ করতে গিয়ে আজ এ ঝামেলায় পড়বো কে জানতো!নির্ঘাত বিয়ের বন্দোবস্ত করতেছে বেয়াদবটা!কি করে বাঁচবো আমি
বিশ পেলে সেটা খেয়ে বসে থাকতাম,জান দিব তাও ইজ্জত দিব না
.
শান্ত কার ঘুরিয়ে আবারও ফিরে আসলো সেই মোড়ে,কিন্তু আহানা কোথাও নেই
ওকে সেখানে না পেয়ে শান্ত বাসায় চলতে আসতে নিয়েও পারলো না
কেন জানি খুব চিন্তা হচ্ছে,তাই সে ফোন নিয়ে আহানার মাকে ফোন করলো,উনি নামাজ পড়তেছেন বলে ধরতে পারলেন না তখন
শান্ত কি আর করবে বাসায় ফিরে আসলো উপায় না পেয়ে
শান্তর মা মুখ ভার করে সোফায় বসে নিতুর বই খাতা দেখতেছেন,নিতু পাশে বসে বিসকিট খাচ্ছে
শান্ত একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো
ফ্রেশ হয়ে এসে রিপাকে বললো কফি পাঠাতে,তারপর গিয়ে বারান্দায় বসলো সে
ফোন বিছানার উপর রাখা
এই মেয়েটা আমার জন্মের শত্রু অথচ এখন ওর জন্য এত চিন্তা হচ্ছে

আহানাকে এখানে বেশি রাখা যাবে না,ওর ফিরতে দেরি দেখলে ওর মা সিধা আমার বাড়িতে দেখতে আসবে
.
তাহলে ভাই কি করবা?
.
অন্য কোথাও নেওয়ার জায়গাও তো নেই,তোরা তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা কর, বিয়ে হয়ে গেলে ওর মা কেন!!ওর মরা বাপের ও সাধ্য নাই আর কিছু করার
.
ওকে ভাই
সুমন আর সাজু মিলে হুজুর একজনকে আনতে চলে গেলো
রতন এসে দরজা খুলে দেখলো আহানা খাটের এক কোণায় বসে হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছে
.
নে নে করে নে,যত চেষ্টা আছে করে নে,তাও আজ আমার থেকে রক্ষা পাবি না তুই,তোকে আজ আমার হতেই হবে
.
মরে যাবো তাও আমি তোর হবো না,তোর এত ভয় কিসের?আমাকে ভয় পাস?হাত পা বেঁধেছিস কেন?সাহস থাকলে এগুলা খুলে দে,দেখি আমার সাথে তুই একা কত পারোস
.
রতন রেগে গিয়ে আহানার হাত আর পায়ের বাঁধন খুলে দিলো
আহানা এবার নিজেই নিজের মুখ থেকে বাঁধন খুলে দূরে সরে গেলো
রতন নিজের থুতনি ঘষতেছে আর হাসতেছে
আহানা রেগে রতনকে এক ধাক্কা দিলো কিন্তু রতন মাটিতে পড়লো না,সে শুধু জোরে জোরে হেসে যাচ্ছে
আর বলতেছে”মাইয়া মানুষ নাকি পুরুষ মানুষের সাথে পারবে”
.
আহানা পুরো রুমে একটা ছুরি তো দূরে থাক একটা লাঠিও পায়নি,পুরো রুমটা খালি,শুধু একটা বিছানা
কোনো উপায় না পেয়ে আহানা পিছিয়ে গিয়ে টিনের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে হাত শক্ত করতেছে
একদম নাক বরাবর মেরে দিবো বেয়াদবটার
.
রতন আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত লালসার চোখে দেখতেছে,লাল বাতির আলোয় তার নেশা বেড়ে আসতেছে ক্রমশ
.
কিরে তোর তো হাত পা খুলে দিয়েছি তাহলে পালিয়ে দেখা,দেখি কেমন পারিস আমার সাথে
.
আহানা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,বাড়াবাড়ি করতে গেলেই গায়ে হাত দিবে,তার চেয়ে বরং দেখি কি করে তারপর নাহয় আঘাত হানবো
.
রতন অনেকক্ষণ চুপ করে চেয়ে থেকে এগিয়ে আসতে লাগলো এবার
আহানা হাত আগে থেকেই মজবুত করে রেখেছে,একটা সুযোগের অপেক্ষাই আছে
রতন আহানার হাতের দিকে তাকিয়েছে,সে বুঝেছে আহানা ওকে হাত দিয়ে মারতে চাইবে তাই সে সবার আগে আহানার হাত দুটো খপ করে ধরে ফেললো
আহানা ভাবতেও পারেনি রতন তার হাত ধরে ফেলবে
রতন তার ঠোঁট এগিয়ে আনতেই আহানা পা দিয়ে রতনকে জোরে একটা লাথি মেরে দূরে সরিয়ে ফেললো
.
হাত ধরেছিস পা কে ধরবে রতন??
.
রতনের মেজাজ গরম হয়ে এবার শেষ সীমানায়,সে মাটি থেকে উঠে আসতে যেতেই আহানা এক দৌড় দিলো
কিন্তু আফসোস,দরজা আটকানো, দরজা খুলতে খুলতেই রতন এগিয়ে এসে আহানার কাঁধ খাঁমছে ধরে টান দিয়ে দিলো,জামা কেটে চামড়াও কাটা গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে আহানার কাঁধ থেকে
আহানা ব্যাথা পেলো কিন্তু তার এখন আপাতত একটাই উদ্দেশ্য আর সেটা হলো এই দরজাটা যে করেই হোক খোলা
রতন যখন দেখলো আহানার হাত কাটা যাওয়ার পর ও সে দূর্বল হলো না,ভয় পেলো না
তখন সে এবার আহানার দুহাতের কুনুই ধরে নিজের দিকে ফিরালো
আহানা অনেক সহ্য করেছে,হাত খোলা পেয়ে চড় মেরে দিলো রতনের গালে
তারপর আবারও ছিটখিনি খোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে
দরজাটা খুললো শেষমেষ,,খোলার সাথে সাথে আহানা বের তো হলো কিন্তু রতন ওকে আবারও ধরে ফেললো

তোর এত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস!!
.
রতন আহানার চুলের মুঠি ধরে আবারও টেনে ঘরে ঢুকাচ্ছে,আহানা তার চুল না ছাড়িয়ে হাত দিয়ে নিজের হাতের কাঁচের চুড়ি ভাঙ্গলো সবার আগে
তারপর ভাঙ্গা টুকরা নিয়ে রতনের হাতে ঢুকিয়ে দিলো সে
(NB-কেউ চুল ধরে টান দিলে তার হাত থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা না করে নিজের যে দুহাত খালি আছে সেটা দিয়ে যা করার করবেন আক্রমণকারীকে)
রতন চিৎকার দিয়ে আহানার চুল ছেড়ে দিলো,নিজের হাত থেকে চুড়ির ভাঙ্গা অংশ বের করে দেখলো আহানা উধাও
আহানা প্রান নিয়ে দৌড়াচ্ছে,অনেকদূর এসে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কেউ নাই,তারপর হাঁপ ছেড়ে সামনে চেয়ে দেখলো সাজু আর সুমন আসতেছে সাথে একজন হুজুরকে মিয়ে
আহানা পাশের একটা টিনের বাড়ির সামনে থাকা রসুইঘরে ঢুকে গুটিশুটি দিয়ে নিচে বসে পড়লো
কাঁধ প্রচণ্ড ব্যাথা করতেছে তার কিন্তু কিছু করার নেই,মুখ চেপে ধরে বসে আছে আহানা
রতন দৌড়ে এসে সাজু আর সুমনকে জানালো আহানা পালিয়েছে
তাদের কে দল গঠন করে তারপর আহানাকে খুঁজতে বললো,এক গলিতে সাজু গেলো,আরেক গলিতে সুমন,আর মাঝখানের গলি দিয়ে রতন ছুটলো
আহানা মুখে হাত দিয়ে রসুই ঘরটাতে বসে আছে

আসসালামু আলাইকুম,,আন্টি কেমন আছেন?
.
ভালো আছি বাবা,তুমি কেমন আছো?
.
ভালো,আসলে এখন ফোন করলাম আহানা বাসায় ফিরেছে কিনা জানার জন্য
.
আহানা?ও তো এখন নিতুকে পড়াচ্ছে তাই না,এখন বাসায় আসবে কেন?
.
মানে!আহানা তো আজ নিতুকে পড়াতে আসেনি,আর আমি অনেকক্ষণ আগে অফিস থেকে আসার সময় দেখলাম ও বাড়ি ফিরতেছে
.
কি বলো?তাহলে এখনও আসলো না কেন?
.
শান্তর এবার খুব টেনসন হচ্ছে,আহানার নাম্বার ও নেই তার কাছে
ওর মাকে ফোন করতে বলে জ্যাকেট পরতে পরতে সে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে
এই মেয়েটাকে এখন আবার কই খুঁজবো!আমি মানা করছিলাম এভাবে বাইরে একা একা না থাকতে,আমার একটা কথা যদি শুনতো!
.
আহানা রসুইঘরটা থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,এখান থেকে তাদের বাড়ি বেশি দূরে না তবে কয়েকটা মোড় পার হতে হবে এই আর কি,এখন কথা হচ্ছে যদি কোনো মোড়ে গিয়ে ঘুরেফিরে ওদের সামনেই পড়ি??
.
আন্টি আমি পথে আহানাকে কোথাও পেলাম না,কি করবো এখন?ও কোথায় যেতে পারে জানেন?
.
না আহানার তো একটাই বান্ধুবী আর সে হলো রুপা,রুপাকে আমি ফোন করেছি সে বললো আহানা আসেনি,আর আহানা ফোনটা সুইচ অফ বলতেছে,আমি কি করবো বুঝতেছি,একা একটা মেয়ে!! কিছু হয়ে গেলে কি করবো তখন!!
.
আন্টি টেনসন নিয়েন না,আমি পুলিশে খবর দিচ্ছি
.
এটা নির্ঘাত ঐ রতনের কাজ
.
শান্ত ফোন করতে গিয়ে থেমে গেলো তারপর বললো”রতন কে?”
.
আর বলিও না বাবা,ছেলেটা কয়েকবছর ধরে আহানাকে অনেক জ্বালাচ্ছে,আমার মনে হয় ওর কাজ এটা!!
কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে দিলেন উনি
.
শান্ত চুপ করে থেকে তারপর বললো”ওর বাসা কোথায় জানেন?”
.
এখানেই,সোজা গিয়ে মাঝখানের গলিটা দিয়ে ঢুকলে তারপর ডান পাশে ঘুরে একদম শেষ প্রান্তের টিনের বাড়িটা ওর
.
ফাইন!
.
শান্ত বেরিয়ে গেলো,আন্টির কথামত সেদিকে ছুটছে সে,পুলিশকে খবর দেওয়া হয়ে গেছে ততক্ষণে
শান্ত ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে হাঁটতেছে,চারিদিক শুধু অন্ধকার,কিছু দেখা যাচ্ছে না,শুধু বুঝা যাচ্ছে পথটা ইটের তৈরি
আহানা পা টিপে টিপে হাঁটতেছে,বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারলেই হলো
মাথা চক্কর দিতেছে বারবার,যেকোনো সময় অজ্ঞান হয়ে যাবো মনে হয়,সকালে যে ভাত খাইছিলাম আর কিছু খাইনি তারপর থেকে
আল্লাহ শক্তি দাও,আমি যেন ঠিকঠাক ভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারি
.
এদিক ওদিক ভালো করে দেখতে গিয়ে অন্ধকারে একটা লোকের সাথে ধাক্কা লেগে আহানা নিচে পড়ে গেলো
পিছোতে পিছোতে বললো”খবরদার আমাকে ছুঁবে না!একদম জানে মেরে ফেলবো আমি”
.
শান্ত ফ্ল্যাশ ভালো করে সামনো ধরে দেখলো আহানা কথা বলতেছে,ভয়ে মুখটুখের অবস্থা ওর বেহাল,জামা ছিঁড়ে গেছে অনেকটা,কাঁধ দেখা যাচ্ছে
আহানা মাথা ধরে এখনও বলতেছে”মেরে ফেলবো”
বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো সে
.
শান্ত হাঁটু গেড়ে বসে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
মুখ দিয়ে ওর কোনো কথাই বের হচ্ছে না,আর দেরি না করে আহানাকে মাটি থেকে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো সে
রতন লুকিয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে,ও আহানাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসা ধরেছিলো কিন্তু তার আগেই শান্ত এসে পড়লো তাই থেমে গেলো সে
শান্তকে দেখে আর তার দলের কোনো লোককেই সে এগোতে দেয়নি,কারণ শান্তকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে সহজে ছাড়বে না কাউকে,কার নিয়ে এসেছে,নিশ্চয় যেনোতেনো মানুষ নয় বৈকি
বরাবরের মতই রতন বড়লোক মানুষদের ভয় পায় খুব
এখন যদি তাদের মধ্যে কেউ আসে আহানাকে ধরতে তাহলে যদি জেলে টেলে যেতে হয়??
তাই তারা গাপটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলো ঐ জায়গায়
শান্ত আহানাকে ওদের বাসায় নিয়ে আনলো,মা তো এক চিৎকার করে আহানার হাত ধরে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন”কিছু হয়নি তো?”
.
“জানি না আমি কিছুই”
শান্তর চোখে মুখে যেমন আহানার প্রতি কষ্ট দেখা যাচ্ছে তেমনই রাগে ফেটে যাচ্ছে সে
মা পানি এনে আহানার মুখে ছিঁটা দিলেন
শান্ত দূরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আহানার দিকে
আহানা চোখ খুলতেই মায়ের মুখ দেখতে পেয়ে সিউর হলো সে নিরাপদ তারপর হকচকিয়ে উঠে বসে পড়লো সে
সামনে শান্তকে দেখে বিছানার উপরে থাকা চাদরটা টেনে গায়ে দিয়ে নিলো সে
একে তো জামা ছিঁড়া আরেকতো ওড়নাও নাই
তারপর মাথা নিচু করে বসে থাকলো
.
শান্ত শুধু জিজ্ঞেস করলো “তোমাকে ছুঁয়েছে?খারাপ ভাবে?”
.
আহানা মাথা তুলে বললো”আপনার কি?”
.
শান্ত এগিয়ে এসে ওর মাকে বললো “আন্টি আপনি একটু বাইরে যাবেন?আমার আহানার সাথে কিছু কথা আছে”
.
আন্টি মাথা নাড়িয়ে হাতে থাকা পানির মগটা নিয়ে চলে গেলেন,তারপর বাড়ি থেকে বের হতেই দেখলেন দূর থেকে কয়েকটা ছেলে চলে যাচ্ছে,এতক্ষণ এখানেই ছিল মনে হয়
.
সোজা প্রশ্নের উত্তর দাও
.
দিব না, বাধ্য নই আমি
.
তার মানে ধরে নিতাম উল্টা পাল্টা কিছু করেছে তোমার সাথে?
.
কারোর সাধ্য নেই আহানার ইজ্জত কেড়ে নেওয়ার,আমি নিজেই নিজের রক্ষা করতে জানি
.
শান্ত আহানার গায়ের থেকে চাদর টান দিয়ে বললো”তাহলে কাঁধের এ অবস্থা কেন?”
.
ঐ রতন বেয়াদব জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করেছিলো
.
ঠিক আছে!
.
কি?নায়কের মত গিয়ে মাইরপিট করে আসবেন নাকি?এটা মুভি না,বাস্তব,আর আপনাকে কিছু করতে হবে না
যা করার আমিই করবো
পুলিশকে খবর দিয়ে লাভ নাই
আমি এই রতনের দলবলের সাথে পেরে তো উঠবো না,মাকে নিয়ে এই জায়গা ছাড়তে হবে যতদূর বুঝলাম
.
আমি কি করবো না করবো সেটা তোমার বলতে হবে না
ঠিক বলেছো!!এটা মুভি নয় বাস্তব!
কথাগুলো বলে শান্ত চলে গেলো,সাথে সাথে মা ভিতরে এসে বললেন”কি বললে রে?”
.
কিছু না বাদ দাও,আমাকে ভাত দাও,ভাত খাবো,সকালে যে খাইসি আর কিছু খাওয়া হয়নি,তাই তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলাম
.
আন্টি চলুন
.
আহানার মা চমকে পিছন ফিরে চেয়ে দেখলো শান্ত হাতে জ্যাকেট নিয়ে তাকিয়ে আছে
.
কোথায় যাবো বাবা?
.
আমাদের বাসায়,সব প্যাক করে নিন
.
আহানা মাথা বাঁকিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বললো”এত কেয়ার দেখাতে হবে না,আমি যাবো না আপনাদের বাসায়,কথায় কথায় বলেন বাসা থেকে বের করে দিব”
.
হ্যাঁ যেও না,থেকে যাও,রেপ হলে তারপর আমার সাথে পুলিশ স্টেশন যেও কেমন?নাকি একা একা যেতে পারবা?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-১৫+১৬+১৭

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ওয়ালাইকুম আসসালাম!
.
আহানা এবার চলে যাচ্ছে,আবারও শান্ত ডাক দিলো ওরে
ধীরে ধীরে আহানার রাগ আরও বাড়তেছে
ধমক একটা দিয়ে বললো “আবার কি?”
.
মিস সুহানা!আপনার নাকি ৩টা বাচ্চা আছে?তাদের জন্য চকলেট চিপস কিনেছি কিছু নিয়ে যান
.
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো”তুই রাখ তোর কাছে”
.
শান্ত মুচকি হাসতেছে বসে বসে
আহানা বাসায় ফিরে গোসল করে নিলো তারপর জলদি করে আবার বেরিয়ে পড়লো নিতুকে পড়ানোর জন্য
শান্তদের বাসার গেট দিয়ে ঢুকতে যেতেই সবার আগে শান্তকে দেখলো সে
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিয়ার খাচ্ছিলো,আহানাকে দেখে সাথেসাথে লুকিয়ে ফেলে আরেকদিকে ফিরে গেছে সে
আহানা ব্যাপারটায় খেয়াল না দিয়ে নিতুর রুমের দিকে চলে গেছে সোজা
শান্ত বিয়ারের বোতলটা লুকিয়ে আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে নিতুর রুমে যেতে গিয়েই থেমে গেলো
ওখানে না গিয়ে মায়ের রুমে গেলো সোজা,মা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছেন,হাতে একটা বই
বই পড়ার অনেক নেশা উনার,সারাদিনে ফ্রি টাইম পেলেই হাতে বই নিয়ে বসেন তিনি
শান্ত মাকে বললো প্যাকেটটা আহানাকে দিতে,ও দিলে আহানা নিবে না কিন্তু মা দিলে নিতে পারে
কাল রিয়াজের আংটিবদলে সে আহানাকে নিয়ে যাবে সাথে করে
আহানার ভালো জামা শাড়ী নেই বলে শান্ত আসার সময় একটা শাড়ী আর কিছু অরনামেন্টস কিনে এনেছে আহানার জন্য
যাতে ও কাল এগুলো পরে আসতে পারে
মা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালেন
প্যাকেটটা মায়ের পাশে রেখে শান্ত নিজের রুমে চলে আসলো
.
আহানা নিতুকে পড়িয়ে চলে যেতে নিতেই রিপা এসে বললো মা নাকি ওকে নিজের রুমে ডাকছে
আহানা তাই সেদিকে গেলো
শান্তর মা একটা ফটো এলবাম নিয়ে বসে আছেন,আহানা গিয়ে উনার পাশে বসলো
উনার হাতে যে এলবামটা আছে তাতে একটা ছবি যেটাতে আহানা শান্তর পিঠে উঠে বসে চিজ পোজ দিয়ে আছে আর শান্ত মরার মত ঘুমাচ্ছে,আহানা হেসে দিলো ছবিটা দেখে
মা ও হাসলেন,তারপর পাশ থেকে প্যাকেটটা নিয়ে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন
আহানা চমকে তাকিয়ে থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বললো”এটা কি?”
.
মা কিছু বলতে পারলেন না,রিপা পাশে থেকে বললো”ম্যাডাম তোমাকে উপহার দিয়েছেন”
.
আহানা খুশি হয়ে শান্তর মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো
শান্ত দিলে সে নিতো না,শান্ত ভালো করেই জানে তাই মাকে দিয়ে দেওয়াইছে
আহানা শান্তর মায়ের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো,একটু থেমে পিছন ফিরতেই শান্তকে দেখলো সে
এতক্ষণ ধরে শান্ত ওর দিকেই চেয়ে ছিলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে
আহানাকে দেখে আরেকদিকে মুখ করে নিয়েছে সে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বাজে,আহানা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে,বেশি অন্ধকার হলেই বিপদ,মাসের শেষে এসে গেলে হাতে কানাকড়ি ও থাকে না
জলদি করে বাসায় ফিরেই বিছানায় গোল হয়ে বসে সে প্যাকেটটা খুললো,ভিতরে একটা ক্রিম কালারের জর্জেট শাড়ী,মুক্তোর কাজ করা,সাথে গলার কানের সেট,মা তো রীতিমত অবাক,ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতেছেন সব আর বলতেছেন “শান্তর মায়ের চয়েস অনেক ভালো”
আহানা হেসে বললো”ভালো তো,অন্তত ঐ হারামির চয়েসের থেকেও ভালো”
.
পরেরদিন সকালে বাচ্চাদের পড়ালো না সে রতনের ভয়ে সময় হতেই রেডি হয়ে ভার্সিটির দিকে গেলো,কাল যে একটা চাকরিতে সে জয়েন করেছে সেটাই ভুলে গেছে,মন মত সে ক্লাস করে যাচ্ছে
ফোন বাজতেছে কিন্তু ক্লাস টাইম বলে সে ধরলো না,ভাইব্রেশন দেওয়া
ব্রেক টাইমে রুপার সাথে কথা বলতে বলতে আহানা ক্যামপাসে বের হতেই ওর নজর গেলো ভার্সিটির গেটের দিকে, শান্ত হনহনিয়ে এদিকেই আসতেছে
আহানা চোখ ডলে আবারও তাকালো
না এটা তো সত্যি সত্যি শান্ত,এত রেগে কেন!
ইয়া আল্লাহ!আমার তো অফিসের কথা মনেই নেই,ধুর!
.
এই মেয়ে!বেয়াদব!
কাল যে চাকরির জন্য ফর্ম ফিল আপ করে আসছো সেটা কি মনে নেই তোমার?অফিস কে করবে?
.
এরকম ধমকান কেন??আমার মনে ছিল না,যাচ্ছি এখন
.
কারে গিয়ে বসো যাও
.
আমার বয়ে গেছে আপনার সাথে অফিসে যেতে
আমি রিকসা একটা নিয়ে তারপর যাবো
.
তোমার চাকরি হলো ক্লাইন্টদের সাথে মিটিংয়ে আমাকে হেল্প করা,আর এখন আমি রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি যেখানে আমার ক্লাইন্ট ওয়েট করতেছে,এবং তাই তুমি আমার সাথে যাবে
.
ওহ!
.
আরে এটা যে শাহরিয়ার শান্ত!!!
ও মাই গড!!আপনি আমাদের ভার্সিটিতে,আমি কই যাবো!!!কি করবো
.
সীমান্ত সম্ভারে যাও,নওশাদ সেখানে😉
.
🙈আপনি জানলেন কি করে যে আমি উনাকে লাইক ইউ করি
.
নওশাদ বলেছে তুমি আমাকে দেখে হাসো আর ওকে দেখে পিলারের সাথে লেগে যাও,তোমাকে নাকি” ক্রাশ যখন বর”এর তনুর মত লাগে ওর কাছে
.
হ্যাঁ আমি তো তনুর মত,বিয়া না করলে গলা টিপে ধরে বিয়া করে নিব জোর করে
.
তো যাও ধরে বিয়ে করে নিয়ে আসো,আমি চাই আমার আগে ওদের সবার বিয়েটা হয়ে যাক
.
সত্যি!আপনি মজা করছেন না তো?
.
একদমই না,তুমি যাও, আমি নওশাদকে ফোন করে বলে দিচ্ছি ও তোমার সাথে মিট করবে
শান্ত কথাটা বলা শেষ করে আর রুপাকে কোথাও দেখলো না, সে তো উধাও,দুনিয়াতেও নেই
.
আহানা অবাক হয়ে বললো”এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না,সত্যি সত্যি সীমান্ত সম্ভারে চলে গেছে মনে হয়
.
হ্যাঁ এখন আমরাও সেখানে যাচ্ছি
.
কেন?
.
বললাম না ক্লাইন্ট আসতেছে
.
“ওহ”
আহানা নিজের গায়ের দিকে তাকালো একবার
ফ্যাকাসে একটা হলুদ রঙের জামা পরে আছে সে,মনে হয় সখিনা জরিনা লাগতেছে
শান্ত কারের ভেতর থেকে একটা কোট নিয়ে আহানার গায়ে ছুঁড়ে মেরে ভিতরে গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে
.
আহানা কোটটার দিকে চেয়ে বললো”কি করবো এটা দিয়ে?
.
খাও বসে বসে
কোট মানুষ কি করে?পরে জানো না??আর এটা লেডিস কোট,স্পেশালি তোমার জন্য কেনা,মিটিং এটেন্ড করার সময় সবসময় এটা পরে থাকবা
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে এরপর দাঁত কেলিয়ে পরে নিলো কোটটা
তারপর দরজা খুলে ভিতরে এসে বসে পড়লো
শান্ত গাড়ী স্টার্ট করতেই আহানা বললো”আমরা যেহেতু সীমান্ত সম্ভারে যাচ্ছি,রুপাও তো যেতে পারতো আমাদের সাথে?”
.
না পারতো না,রুপা আমাদের সাথে গেলে সে জেনে যেতো তুমি আমার অফিসের কর্মচারী,সে এই কথাটা নওশাদকে বলতো,তারপর নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য মিলে আমার মাথা খাইতো এই বলে যে তোমার আর আমার অনেক কিছু চলে
.
ওহহ!তো যখন আমি আজ আপনার সাথে আপনার বন্ধুর আংটিবদলে যাবো তখন কিছু ভাববে না?
.
আইডিয়া ওরাই দিয়েছিলো,কারণ ওখানে একটা মেয়ে আছে নাম কণা, সে আমাকে ডিস্টার্ব করে তাই ওরা বলেছিল এমনটা করতে
.
আচ্ছা
.
নামেন এখন,এসে গেসি আমরা
.
আহানা গাড়ীর দরজা খুলে নেমেই শান্তর পিছন পিছন আসতেছে,শান্ত এত জলদি জলদি হাঁটে
লিফটে ঢুকে আহানা বড় করে শ্বাস একটা নিলো মনে হয় যেন তার পরীক্ষা হবে এখন
তারপর একটা কথা মাথায় আসতেই সে শান্তকে জিজ্ঞেস করলো “তার ভার্সিটির কি হবে?”
.
শান্ত লিফট থেকে বের হতে হতে বললো”দুটোর একটা বেছে নাও”
.
আরে কি বলতেসেন,আমার পড়ালেখা তো চালিয়ে যেতে হবে
.
তুমি ভার্সিটির ক্লাস করো,চাকরির দরকার নেই,সংসার খরচ আমি দিব
.
না😒ফ্রিতে টাকা নিব না আমি
.
তাহলে পড়ালেখার কথা ভুলে যাও,যেকোনো একটা করো
.
আহানা মন খারাপ করে একটা চেয়ার টেনে বসলো
কিছুক্ষণ বাদেই ২জন লোক আসলেন,শার্ট প্যান্ট পরা,দেখতে শান্তর মতোই,ওর বিজনেস পার্টনার,উনারা বসে আহানার দিকে চেয়ে “হ্যালো” বললো
.
শান্ত আজ কিছুই বললো না শুধু চেয়ে চেয়ে আহানার প্রতিটা কাজে মুগ্ধ হয়েছে
অনেক সুন্দর করে আহানা কাজটা সম্পর্কে দুজন লোককে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে,শান্ত আসার সময় কারে ওর হাতে টপিকটার একটা শিট দিয়েছিলো,আহানা শিটটা পড়ে সে অনুয়ায়ী বিশ্লেষণ করলো সবটা
লোকগুলো খুশি হয়ে ডিলে সাইন করে চলে গেলো
মিটিং শেষ হতেই শান্ত দুপুরের খাবার অর্ডার করেছে,আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে আশেপাশের মানুষের চলাচলতি দেখতেছে,সবাই সবার খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত
শান্ত ফোনে রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে
আহানা চুপ করে চারিদিক দেখে যাচ্ছে শুধু
আবার মাঝে মাঝে শান্তর দিকেও তাকাচ্ছে
এ্যাশ কালারের কোট, তার ভিতরের নীল শার্টে ওকে বেশ লাগতেছে,আহানা ঠিক ভাবে ওকে তেমন করে কোনোদিনই দেখে না
আজ বোরিং লাগতেছিলো বলে একটু তাকালো সে
শান্ত তার ফোন টেবিলের উপর রেখে টেবিলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো”এই মেয়ে শুনো,এভাবে তাকাইও না,আমি তোমাকে বিয়ে করবো না”
.
আহানা চোখ নামিয়ে আরেকদিকে ফিরে গেলো,তারপর গম্ভীর গলায় বললো”এই যে শুনুন!আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলেও আমি বিয়ের পিড়ি থেকে পালাবো”
.
এই মেয়ে শুনো!আমাকে “এই যে শুনুন” বলবা না
.
কেন?
.
এমনি!
.
শান্ত আর কিছু বললো না,ফোনে একটা গান প্লে করে টেবিলে আবারও রেখে দিলো ফোনটা,খাবার আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন!!
গানটা হলো “♥দিল সামাল যা জারা,ফের মোহাব্বত কারনে চালা হে তু♥”
.
আহানার হুট করে খারাপ লাগা শুরু হলো,গায়ের থেকে কোটটা খুলে কোলে রাখলো সে
.
শান্ত আরেকদিকে ফিরে বসে আছে
দুজনেই দুজনের মুখের উপর বলে দিয়েছে তাদের মনের কথা আর এখন নিজেদেরই মন খারাপ হয়ে গেছে
কেন মন খারাপ হয়েছে তার কারণ তারা জানে না,জানতেও চায় না
আহানার বরাবর একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে হাসছে আর খাচ্ছে,আহানা ওদের দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে
আর শান্তর বরাবর বসেছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সাথে তাদের ছোট্ট একটা মেয়ে,তারা দুজন মিলে না খেয়ে বাবুটাকেই খাওয়াচ্ছে শুধু
শান্তর মনে হলো ওর মনটা জুড়ে গেছে,হঠাৎ করে ভালো লাগা কাজ করতেছে
এপাশে আহানা আর ওপাশে শান্ত একসাথে দুজনেই হাসলো,তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখটা আবারও কালো করে খাওয়ায় মন দিলো
শান্ত খেতে খেতে বললো”সন্ধ্যায় রেডি থেকো,আমি তোমাকে তোমাদের বাসা থেকে পিক আপ করে নিব”
.
নিতুকে পড়াতে আসবো না?
.
আজ পড়াতে হবে না,নাহলে যেতে যেতে লেট হয়ে যাবে
.
ঠিক আছে
.
প্রতিবার চিকেনের হাঁড় খাওয়ার সময় ছাড়িয়ে খেলেই হয়,বসে বসে একটা একটা করে হাঁড় সরাচ্ছো,তোমার এই অভ্যাস এখনও গেলো না
.
আপনি জানেন কি করে?
.
বাহ রে,ছোটবেলায় আন্টি তোমাকে ইয়া বড় প্লেটে খাবার ধরিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসিয়ে দিতো,আর আমি তোমার খাওয়া দেখতাম
বসে বসে চিকেনের হাঁড় আগে সরিয়ে ফেলে তারপর একসাথে সব মুখে দিয়ে খেতে তুমি,এত বড় হয়ে গেছো এখনও এই অভ্যাস গেলো না তোমার
.
আমার নিজেরই মনে নেই,আর আপনার সব মন আছে?
.
কারণ আমি তখনও তোমার চেয়ে বড় ছিলাম,আর এখন ও
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আপনি নিজের চরকায় তেল দেন না,আমার খাওয়ার দিকে তাকানোর কি আছে?”
.
শান্ত তাচ্ছিল্য করে একটু হাসলো তারপর চামচ দিয়ে রাইস নাড়াতে নাড়াতে বললো”আমার খুনসুটি তো তোমার সাথেই,অন্য কারোর সাথে আসে না,আসবেও না হয়ত!
দেখো না,,,,আমেরিকা থেকে সেই ৭বছর আগে ঢাকায় ফিরেছি,আজ পর্যন্ত কারোর সাথে এরকম ঝগড়া হয়নি,হতেও যায়নি,আর সেই হলো তো তোমার সাথেই হলো যার সাথে ছোটবেলা থেকেই হয়ে আসতেছিলো”
.
আহানা শান্তর মুখ থেকে চোখ সরিয়ে খাবার দূরে ঠেলে দিয়ে পানি নিলো খাওয়ার জন্য
.
আন্টির জন্য ও অর্ডার করেছি, প্যাকেট আসলে ব্যাগে নিয়ে নিও,আর খাবারটা শেষ করো,অনেক কাজ বাকি,আমি কিন্তু কর্মচারীদের বেশি খাওয়াই না প্রয়োজন ছাড়া
.
কথাটা শুনে আহানা মুখ বাঁকিয়ে খাবারের প্লেট টেনে বাকিটাও খাওয়া শুরু করে দিয়েছে
শান্ত উঠে চলে গেছে বিল দিতে,আহানা পানি খেতে খেতে ভাবলো আজ কি সূর্য উঠেছে?ঝগড়ুটে লোকটা কিনা এত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেছিলো?
আহানা পানি খেতে খেতে সামনে তাকাতেই দেখলো একটু দূরে রুপা দাঁত কেলিয়ে নওশাদের সাথে হাসতে হাসতে কফি খাচ্ছে
এটা দেখে আহানার কাশি উঠে গেলো,ওড়না মুখে রেখে কাশি থামিয়ে শান্তকে খুঁজতে লাগলো সে
শান্ত বিল পে করে এগিয়ে এসে বললো”চলো যাই,লেট হচ্ছে,প্যাক করা খাবার নিয়েছো তো?”
.
আহানা ইশারা করে বললো “নওশাদ ভাইয়া আর রুপা ঐ দিকে”
.
শান্ত চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সত্যি তো তাই
তাই সে আহানার হাতে চাবি দিয়ে বললো “নিচে গিয়ে কারে বসতে,সে আসতেছে নওশাদকে হালকা টাইট দিয়ে”
আহানা মাথা নাড়িয়ে চাবি নিয়ে চলে গেলো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে নওশাদের দিকে আসতেছে,এসেই নওশাদের ঘাড়ে হাত রেখে বললো”কি ও ভাই??প্রেম হচ্ছে নাকি?”
.
নওশাদ তো একপ্রকার ঝটকা খেয়ে গেলো তারপর হেসে হেসে বললো”আরে না,রুপা তো আসলে এমনি”
.
বুঝি বুঝি,এতদিন আমার পিছনে লাগতেন এবার আমি আপনার পিছনে লাগবো
ভিতরে ভিতরে টেম্পু চালান তাই না?
.
কথাটা বলে শান্ত হেসে চেয়ার টেনে বসলো
রুপা তার কানের পিছনে এলোমেলো চুলগুলো গুজে দিচ্ছে বারবার আর লজ্জা পাচ্ছে শুধু
.
শান্ত নওশাদকে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো”নট ব্যাড!! রুপার সাথে ভালোই মানাবে তোকে,চটপটা স্বভাবের মেয়েটা
আমারই পছন্দ হয়েছে তোর জন্য তাই তো পাঠিয়ে দিলাম”
.
ধুরু মিয়া!!কই থেকে কই নিয়ে যাচ্ছিস কথা রে
.
রুপা ভ্রু কুঁচকে বললো”কি বললেন?তার মানে এতক্ষণ ধরে যে আমরা কথা বললাম সেটা কিছুই না?”
.
নওশাদ হালকা কেশে বললো”না মানে,ইয়ে আসলে”
.
শান্ত হাসি থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে,তারপর হাসিটা এক সাইড করে বললো”ভাই আর লুকাতে হবে না,আমি সব বুঝছি আর ছবিও তুলছি😎
এবার দেখি তুমি আমারে নেক্সট টাইম কেমনে ব্ল্যাকমেইল করো”
.
এটা কেমনে?কখন করলি?
.
তোর বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা!!একটু একটু ফটোগ্রাফি তো জানতেই হবে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা কারের সামনে এসে চাবি নিয়ে চেয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে
তারপর অনেকক্ষণ ভেবে কারের কাছে এসে ফুটো খুঁজতে লাগলো যেটাতে চাবি ঢুকিয়ে সে কারের দরজাটা খুলবে
অনেকক্ষণ দেখাদেখির পর বুঝতে পারলো কোনো ফুটো নেই,তারপর ভাবলো এটা আবার কেমন গাড়ী,আমি এখন কেমনে খুলবো এটা?
.
এই আহানা!
.
আহানা পিছন ফিরে দেখলো তিয়া এগিয়ে আসতেছে এসেই বললো “এখানে কি করিস তুই?”
তিয়া হলো আহানার ক্লাসমেট
.
ওর প্রশ্নের উত্তরে আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে বললো”গাড়ীটা পছন্দ হয়েছে বুঝি?হুম বেশ দেখতে,কালো গাড়ী এমনিতেই জোস আর গরজিয়াস হয়,এভাবে গুরগুর করে দেখিস না মানুষ তো তোকে চোর ভাববে
.
আহানা মুখটা ছোট করে বললো”আমি তো এটা ”
.
বুঝছি তো তোর পছন্দ হয়েছে,তাই বলে পাবলিক প্লেসে এমন করে দেখবি?মানুষ কি বলবে?আমি তো দেখে চোরনি ভাবসিলাম
.
এক্সকিউজ মি!
.
তিয়া পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত আসতেছে,”এক্সকিউজ মি” ঠিক কাকে বললো তা বুঝলো না তিয়া
শান্ত আসতে আসতে তার হাতে থাকা ছোট্ট একটা রিমোটের বাটনে ক্লিক করে কার অানলক করে দরজা খুলে বললো”ঢুকে বসো,আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে ভুল চাবি দিয়েছি নাহলে তুমি যে দুষ্টু পরে আমার কার চালিয়ে রোডে নেমে যেতা”
শান্ত তিয়ার দিকে তাকাচ্ছেও না, পাত্তাও দিচ্ছে না,তিয়া থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আহানা বোকার মত শান্তর কথা শুনতেছে
শান্ত ওর হাত ধরে টেনে কারের ভিতরে বসিয়ে দিয়ে নিজেও গিয়ে বসলো তারপর জানালা দিয়ে মাথা বের করে বললো”আপু সরুন এখান থেকে,পার্কিং প্লেসে এমন করে দাঁড়িয়ে থাকবেন না,আমি তো পাগল ভেবেছিলাম”
.
তিয়া চোখ বড় করে সরে দাঁড়ালো সেখান থেকে
শান্ত গাড়ী স্টার্ট দিয়ে চুপ করে কার চালাচ্ছে,আহানা তিয়ার কথাগুলো মনে করে কাঁদতেছে
চুপিচুপি চোখ মুছতেছে সে,জানালার দিকে ফিরে বসেছে শান্ত যাতে ওকে কাঁদতে দেখে না ফেলে
শান্ত নিশ্চুপ হয়ে ফাঁকা রোড দিয়ে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছে
আহানার হাতের চুড়ির ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে যতবার সে চোখ মুছে ঠিক ততবারই
শান্ত গাড়ী থামিয়ে ফেললো,২মিনিট চুপ করে থাকলো তারপর আহানার মাথায় হাত দিয়ে টান দিয়ে বুকে নিয়ে আসলো ওকে
কেন এনেছে সে জানে না তবে তার দায়িত্ব
কিসের দায়িত্ব সে জানে না তবে এটা তার করতেই হতো
কেন হতো সে জানে না,কিন্তু আহানার চোখের পানি তার তার গায়ে কাঁটার মত লাগছিল
আহানা খুব জোরে কেঁদে দিলো,শান্তর বুকে সে তার সেদিকে খেয়াল নেই,কাঁদার জন্য একটু জায়গা পেয়েই কেঁদে দিয়েছে সে
.
আমি শুনেছি মেয়েটা কি বলেছে তোমাকে,কিছু মানুষ থাকে মনে আঘাত করে কথা বলার,জাস্ট ইগনর দেম,নাহলে কখনও উপরে উঠতে পারবা না
.
আহানা অনেকক্ষণ কাঁদার পর তার মনে হলো সে কোথায়,এক ঝটকায় সরে গেলো সে
শান্ত ঠিক হয়ে বসে আবারও গাড়ী স্টার্ট করলো
.
আহানা জানালার দিকে ফিরে ওড়না দিয়ে মুখ মুছে নিলো ভালো করে
খারাপ লাগতেছে এই ভেবে যে সে এতক্ষণ শান্তর বুকে ছিলো,কি লজ্জাকর!
.
শান্ত গলার টাই হালকা টেনে ঢিল করে চুপচাপ কার চালাচ্ছে,টু শব্দ ও নেই দুজনের মুখে
আহানা এতক্ষন ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো তারপর হুট করেই মাথা তুলে শান্তর দিকে তাকালো সে
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”আমাকে আর কখনও ছুঁবেন না আপনি”
.
শান্ত ঠাণ্ডা স্বরে বললো”তাহলে আর কখনও আমার সামনে কাঁদবা না”
.
কান্না পেলে কাঁদতে হয়
.
না হয় না,নিজেকে শক্ত করতে শেখো
.
বাইরের মানুষের কথা বাদ দেন,আপনি নিজেই তো কাঁদান আমাকে
.
আমি সব পারবো,আমি বাদে অন্য কেউ পারবে না তোমাকে কাঁদাতে
বরং আমি কাঁদাবো,সারাদিন সারাক্ষণ, সারাজীবন ধরে!!স্টুপিড !!!!
.
আহানা শান্তর চিৎকারে কেঁপে উঠলো,চোখ নামিয়ে আরেকদিকে মুখ নিয়ে গেলো সে,কি বলতে নিয়েছিলো সেটাই ভুলে গেছে সে
হাত কাঁপতেছে তার,কখনও এমন করে কেউ কথা বলেনি ওর সাথে তাই হয়ত এমন লাগছে
শান্ত অফিসের সামনে এসে কার থেকে নেমে হনহনিয়ে চলে গেলো
আহানা কার থেকে নেমে আস্তে আস্তে অফিসে আসতেছে
শান্ত ততক্ষণে নিজের অফিস রুমে চলেও গেছে
ঊষা আহানাকে ওর কেবিন দেখিয়ে দিলো,একদম শান্তর অফিস রুমের পাশেই,হালকা ঝাপসা কাঁচের দেয়াল মাঝখানে
ওপারে কি চলে তা দেখা যায় না তবে মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে নাকি বসে আছে তা বুঝা যায়,আহানা একটিবারের জন্য ও তাকালো না সেদিকে
চুপ করে তার সামনে থাকা টেবিলের দিকে চেয়ে আছে সে

স্যার এই ফাইলগুলো তো সুহানাকে দিব তাই না?
.
হুম,ও কি করছে এখন?
.
কেবিন দেখিয়ে দিয়েছি,গিয়ে বসেছে সে
.
ওকে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,ওর পাশে আরও ১৩/১৪টা কেবিন,সবাই সবার কাজে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে
মাঝে মাঝে একটা লোক ট্রেতে করে কফি এনে দিয়ে যায়
তারা সেটা হাতে নিয়ে খায় আর কাজ করে,এত কাজ?বেতন কত এদের!
.
ঊষা হেসে বললো”তোমার বেতনই তো ৩০হাজারের উপরে হবে
.
কিহহহ!
.
হুম,তবে তোমার পোস্টের বেতন ২০হাজার কিন্তু স্যার চেকে ৩০হাজার সাইন করেছে
.
কেন?আমি তো বারতি টাকা নিব না
.
সুহানা,এসব কেমন কথা?স্যার তোমাকে নিজ থেকেই টাকা দিতে চায় আর তুমি নিতে চাচ্ছো নাহ?
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে শান্তর রুমের দিকে ছুটলো
ঊষা দৌড়ে এসে ওকে থামালো সাথে সাথে
.
আরে আরে এমন করিও না স্যার রেগে যাবে,তোমার না ৩টা বাচ্চা আছে?টাকা পেলে তো তাদেরই ভালো হবে তাই না?
.
আমি যেটা পাওয়ার কথা সেটাই নিব এর বেশি আমি নিব না!
আহানা শান্তর রুমের দরজার সামনে এসে নক করলো কয়েকবার
ঊষা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,শান্ত এসে দরজা খুলতেই দেখলো আহানা ঊষাকে বলতেছে ওর শান্তর সাথে কথা আছে
.
ঊষা!ওকে আসতে দাও
.
শান্তর কথা শুনে ঊষা আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো”ঠিক আছে”
.
শান্ত আবার ভিতরে চলে গেলো,আহানাও আসলো কিছুক্ষণ পর
.
কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো আমার কাজ আছে
.
আমার বেতন ২০হাজার থাকার কথা আপনি ৩০হাজার ঠিক করলেন কেন??
আমি এমনি এমনি টাকা নিব না
.
শান্তর কিছুক্ষণ আগে একটা পার্টনারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে
মন মেজাজ এমনিতেও বিঘড়ে আছে এর ভিতরে আহানা নিউ টপিক নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে
.
শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে আহানার হাত ধরে এক ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলো
আহানা গিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেছে ওর ধাক্কায়
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো”আমি আন্টির ঔষধ আর ভালো থাকা খাওয়ার জন্য ১০হাজার বাড়িয়ে লিখেছি আর হয়ত তোমার মতো মেয়ের এইটুকুও যোগ্যতা নাই যে ৩০হাজার তো দূরে থাক ২০হাজারেরও চাকরি পাবে!
আমার রিলেটিভ বলেই তুমি চাকরিটা পেলে!নাহলে আইএ পাস তাও এ গ্রেটের কেউ এরকম পোস্টের জব পায় না বুঝেছো??
আবার বড় বড় কথা বলতেছো!টাকা কত দিব কারে দিব দ্যাটস নন অফ ইউর বিজন্যাস!জাস্ট গেট আউট ফ্রম হিয়ার,নাও!!
.
আহানা মুখটা ছোট করে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
তারপর ফ্লোর থেকে উঠে করিডোর দিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে দিলো তারপর আহানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে
আহানা চোখ মুছতে মুছতে বললো”আমি এই চাকরি করবো না!পথ ছাড়ুন,আমি চলে যাবো এখন”
.
আই এম সরি!মেজাজটা গরম ছিল আর তুমি সবসময় এক কথায় অটল থাকো যে এমনি এমনি তুমি টাকা নিবে না
.
আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না,অনেক বলেছেন
.
আহানা পাশ কেটে চলে যাচ্ছে শান্ত ওর হাত মুঠো করে ধরে আটকালো ওকে
.
হাত ছাড়ুন নাহলে চেঁচাবো!
.
শান্ত এখনও ধরে রেখেছে আহানার হাত
আরেক হাত দিয়ে নিজের মাথাটা একটু টিপে নিজেকে ঠিক করলো সে,তারপর আহানাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসলো
.
আপনি অতিরিক্ত করতেছেন!! একবার বের করে দিয়ে এখন আবার এখানে আনলেন,কি চান কি আপনি?
.
বসো এখানে
.
আমার এতো সময় নেই,আমি গিয়ে আরেকটা চাকরি খুঁজবো তাও আপনার কাছে চাকরি করবো না আমি
.
ও তাই নাকি?তুমি অন্য কোথায় চাকরি পাবে?ঠিক আছে যাও তাহলে,কাল সকালেই তুমি ফিরে আসবে,আমি চ্যালেঞ্জ করতেছি তোমায়!
.
আহানা চোখ মুছে মাথা উঁচু করে চলে গেলো আর কিছু বললো না
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,বেশি রুঢ হয়ে গেছে সে
আহানা তো সবসময় এরকমই ঝগড়া করে আজ বেশি বকলাম নাকি!
যাই হোক কাল আবার ফেরত আসবে আমি সিউর!কোথাও চাকরি না পেয়ে ঠিকই ফেরত আসবে
.
আহানা গাল ফুলিয়ে চলে গেলো তখন দুপুর ২টো বাজে
সে হেঁটে হেঁটে যতদূর পারছে যত কোম্পানি পেয়েছে খোঁজ নিয়েছে তাও কোনো চাকরি পেলো না সে
বিকাল ৫টার দিকে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরলো আহানা
মা জিজ্ঞেস করলো প্রথমদিনের অফিস কেমন লাগলো
আহানা কিছু বললো না উত্তরে
শান্তর দেওয়া শাড়ীটা হাতে নিয়ে চুপচাপ সেটা পরায় মন দিলো সে
শাড়ীটা ক্রিম কালারের আর লাল পাড়ের, মুক্তোর কাজ করা,আহানা পরার পর মা হা করে বললেন”রাণী রাণী লাগতেছে তোকে”
.
আহানার সেদিকে খবর নেই,চাকরির কথা ভেবে যাচ্ছে সে
গলায় নেকলেসটা পরে কানে দুল পরতে পরতে বেরিয়ে গেলো সে
শূন্য রোডে দাঁড়িয়ে আছে আহানা,মাথার উপরে ফ্লাইওভার, শো শো করে তার উপর দিয়ে গাড়ী যাচ্ছে,আহানা চোখ বন্ধ করে রইলো কিছুক্ষণ
তারপর একটু পিছিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ফ্লাইওভার থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো সে
এ শহরে চাকরি পাওয়া মুখের কথা নয়!আর যদি হই মেয়ে তো চাকরি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!
.
আহানা!
.
নামটা শুনে আহানার ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠেছে,পাশে তাকাতেই দেখলো রতন দাঁড়িয়ে আছে,পরনে সেই ফ্রিন্টের থার্ড ক্লাস লুঙ্গি আর হাফ হাতার শার্ট,সে আহানাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন ভাবে দেখছ যেন গিলে খাবে এখনই
আহানা সরে দাঁড়ালো
.
এতো সেজেগুজে কই যাও তুমি?তাও এসময়ে??কিছুক্ষন পর সাঁঝ হবে এখন কই যাও??শুনলাম তুমি নাকি চাকরি পাইছো?সেখানে যাচ্ছো নাকি?বড়লোক দেখে নতুন পটাইছো মনে হয়?
.
আহানা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রতনের তিক্ত করা শুনতেছে
.
কিরে?কথা বলস না কেন?এতদিন তোরে তুমি কইয়া সম্বোধন করতাম এখন মনে হয় তুই সেটার যোগ্য না!!তোরেও বড় লোক ছেলেদের হাওয়া ধরছে নাহলে এত সেজেগুজে এ সময়ে কই যাস তুই?তোর মা তো বাড়িতে!!
ইজ্জত রাখমু না তোর মনে রাখিস!আমাকে যদি ধোকা দেস সব শেষ করি দিমু তোর!
.
আহানা হাত মুঠো করে চড় দেওয়ার আগেই কারের আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলো,পিছন ফিরে দেখলো শান্তর কার
আহানা দেরি না করে সেদিকে ছুটলো,শান্ত বের হওয়ার আগেই ও দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বসে পড়লো
রতন দাঁড়িয়ে সব দেখতেছে
আহানা শান্তকে শুধু বললো “চলুন!দেরি হয়ে যাচ্ছে”
.
শান্ত রতনকে দেখেছে,সেদিকে তাকাতে তাকাতেই সে গাড়ী স্টার্ট করলো
কিছুদূর গিয়েই সে বললো”ছেলেটা কে”?
.
আপনার বিষয় না এটা
.
ডিস্টার্ব করে?
.
আমার দায়িত্ব আমার নিজেরই, কারোর এতো ভাবতে হবে না
.
শান্ত আহানাকে আর কিছু না বলে গাড়ীর ডেস্ক ওপেন করলো এক হাত দিয়ে
আরেক হাত দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে
ডেস্কের ভেতরে ছিলো এক মুঠো লাল চুড়ি আর একটা ঘড়ি
শান্ত চুড়ি গুলো নিয়ে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো”চুড়ি দিতে ভুলে গিয়েছিলাম,নাও ধরো পরে নাও”
.
আহানা চুড়ি হাতে নিয়ে পরতে পরতে থেমে গেলো হঠাৎ,শান্তর দিকে ফিরে বললো”দিতে ভুলে গেসিলাম মানে?এগুলো তো আমাকে আন্টি দিয়েছিল,তার মানে আপনি!!!”
.
শান্ত তার ঘড়িটা পরতে পরতে বললো”মা তোমার জন্য চুড়ি কিনতে ভুলে গেসিলো বলে আমাকে কিনতে হলো,আমার আর কাজ নেই তোমার জন্য শপিং করবো”
.
আহানা চুড়িগুলো পরে জানালার দিকে মুখ করে বসলো
.
শান্ত তার ঘড়িটা ভালোমতন পরে এরপর নওশাদকে ফোন দিলো
নওশাদ জানালো সে আর সূর্য রিয়াজদের বাসায় পৌঁছে গেছে অলরেডি
কণা ও এসে গেছে,সে নাকি পাগলের মত শান্তকে খুঁজতেছে
শান্ত লাইন কেটে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে সবটা পানি খেলো
এই কণা মেয়েটার থেকে কি করে বাঁচবো!
.
আহানার সেদিকে খবর নেই,সে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে
একটা সেতু পেরিয়ে যাচ্ছে তারা
সম্ভবত কাঁচপুর ব্রিজ এটা,দূর পর্যন্ত নদী দেখা যায় শেষ সূ্র্যের আলোয় চিকচিক করছে পানি,আহানা মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে,পানি এমন ভাবে চিকচিক করতেছে মনে হয় নদীর পানি সোনার
ব্রিজ থেকে নামতেই তারা পড়লো জ্যামে,ইয়া বড় জ্যাম
আহানা গালে হাত দিয়ে বাইরের একটা যাত্রীবাহী বাসের দিকে তাকিয়ে আছে
.
আপা আমড়া খাবেন??শশা খাবেন?
.
আহানা মুচকি হেসে আবারও মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো”না খাবো না”
.
শান্ত ছেলেটাকে ইশারা করে বললো ২টো দিতে,পকেট থেকে টাকা বের করে ছেলেটাকে টাকা দিয়ে সে শশা একটা আর আমড়া একটা হাতে নিলো ছেলেটার থেকে
তারপর একটু আহানার কাছের দিকে এসে বসে আরামসে সাউন্ড করে সে শশা খাচ্ছে
আহানা পাশে তাকাতেই দেখলো শান্ত লবণ মরিচ ডলে ডলে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে আর বলতেছে”কেউ চাইলে নিতে পারে,আমি আবার একা একা খাই না”
.
আহানা শান্তর দিকে খেয়াল করলো এবার,,শান্ত আজ ক্রিম কালারের সিল্কি কাপড়ের একটা পাঞ্জাবি পরেছে তারউপর দিয়ে লাল কোটি পরেছে
মনে হয় যেন আহানার সাথে মিলিয়েই পরেছে সে
আহানা শান্তর হাত থেকে থাবা দিয়ে আমড়া নিয়ে নিলো
বেয়াদবের মত এমন ভাবে দেখিয়ে খাইতে পারে যেন মানুষকে পাগল করে দিয়ে ছাড়বে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আর কতদূর??আর এই জায়গার নাম কি?যাত্রাবাড়ী??
.
নাহ যাত্রাবাড়ী না,,যাত্রামুড়া মনে হয়,আমি আরও কয়েকবার আসছি এখানে
আর অল্প একটু পথ আছে,এসে গেছি প্রায়ই
এই গলিতে ঢুকলেই মাটির একটা রোড পড়বে সেটা দিয়ে যেতে হবে,হেঁটেই যেতে হবে,কার ঢুকবে না সেদিকে
.
শান্ত কার থামিয়ে নামলো সেখান থেকে,আহানাও নেমে গেছে,শান্ত কার লক করে হাঁটা ধরেছে ওকে নিয়ে
আহানা শাড়ী ঠিক করতে করতে হাঁটতেছে,তারপর চুলের খোঁপাটা খুলে চুল ছেড়ে দিয়েছে সে
বাসা থেকে জলদি করে বের হতে গিয়ে চুলের দিকটা সে খেয়ালই করে নাই
একটা এক তলা বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে দুজনে
হালকা গোলাপি রঙ করা বাড়িটটা,বিরাট বড়,আশেপাশে এবং ভিতরে মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে হালকা পাতলা
শান্ত দূর থেকে কাকে যেন দেখে পিছনে তাকিয়ে আহানার হাত টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো ওকে
আহানা তখন চুলে ক্লিপ লাগাচ্ছিলো
ভয় পেয়ে বললো”কি হয়েছে?”
.
কিছু না,চলো!
.
কণা দৌড়ে এসে শান্তর সামনে দাঁড়ালো
পরনে হালকা নীল রঙের নেটের একটা লেহেঙ্গা,চুল বাঁধা,দেখতে অনেক স্মার্ট
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে সবাইকে দেখতেছে
.
শান্ত!!!তুমি জানো কত ওয়েট করছিলাম তোমার!
.
আহানা এবার কথা শুনে কণার দিকে তাকালো,কণা শান্তর হাতের দিকে চেয়ে মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললো,কারণ শান্ত আহানার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে
.
মেয়েটা কে শান্ত?
.
শান্ত মুচকি হেসে বললো”মিট মাই উড বি ওয়াইফ,আহানা ইয়াসমিন”
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
এসব কি বলতেছে শান্ত!
.
শান্তর কথা শুনে কণা তো রীতিমত শকড্!!
.
এসব কি বলছো তুমি?তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?এটা মিথ্যা,আমি বিশ্বাস করি না!
.
এটাই সত্যি কণা!আচ্ছা ফরগেট ইট!
রিয়াজ কোথায় যার জন্য এই বাড়িতে আসলাম এতদূর থেকে
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বাসার ভিতর দিকে
কণা ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,তারপর নরম গলায় বললো”আমি আহানার সাথে কিছু কথা বলতে পারি?”
.
শান্ত বললো”না! আমি আহানার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিব এখন,পরে কথা বলিও”
.
শান্ত আর থামলো না সেখানে,আহানাকে নিয়ে চলে গেলো সে
কণা রাগে ফুলতেছে,প্রচণ্ড রাগে হাতের কাছে থাকা একটা ফুলের টব ভেঙ্গে ফেললো সে
.
বাসার বাইরে ওপাশে বিরাট খোলা মাঠ একটা আছে সেখানে,সেখানে ছোটখাটো করে একটা স্টেজ খুব সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে
শান্ত সেদিকে আসলো আহানাকে নিয়ে,রিয়াজ স্টেজে থাকতেই শান্তকে দেখতে পেয়ে হেসে হেসে নেমে আসতেছে
.
থ্যাংকস এ লট শান্ত!!তুই আমার কথা রেখে এসেছিস এর জন্যে
.
আসতে তো হতোই,নিন আপনার আর আপনার বউয়ের গিফট,ধরুন
.
থ্যাংক ইউ!!আরে আহানা যে,কি খবর?
.
ভালো
.
নওশাদ আর সূর্য আসতেছে,এসেই শান্তকে চেপে বললো “কিরে!!শান্তর মনে এখন কি চলে?”
.
ফগ চলে
.
হাহা,দোস্ত!!!কণার চেহারার এক্সপ্রেশন একটু যদি দেখতাম
.
আহানার সাথে একা কথা বলতে চাইছে কিন্তু আমি দিই নাই
এটা বলেই শান্ত পাশে চেয়ে দেখলো আহানা উধাও!
একি!মেয়েটা গেলো কই?
.
ছাড়ুন আমার হাত!!কণা আপু,এমন করতেসেন কেন?
.
কণা আহানার হাত ধরে টেনে ওকে দূরে নিয়ে আসলো,তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে আহানাকে দেখালো
তার পুরো হাত কাটা দাগে রক্তাক্ত হয়ে আছে
.
আহানা চোখ বড় করে সেদিকে চেয়ে আছে
.
দেখো আমি শান্তকে কতটা ভালোবাসি আর তুমি কি আমার ব্যাপারে জানতা না?প্লিস তুমি শান্তকে বিয়ে করো না প্লিস
আমি মরে যাবো,আই লাভ হিম সো মাচ,প্লিস ট্রাই টু অ্যান্ডারস্ট্যান্ড!
.
আহানা টেবিলের উপর থেকে টিসু বক্স নিয়ে টিসু বের করে কণার হাত মুছে দিতে দিতে বললো”এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবেন না,আমি উনার সাথে কথা বলবো,আপনি প্লিস আর নিজের ক্ষতি করবেন না”
.
শান্ত নওশাদ মিলে আহানাকে খুঁজতেছে সব খানে
.
প্লিস আমার কথাটা রেখো আহানা!
.
আচ্ছা,ডোন্ট ওয়ারি!
.
আহানা ফিরে আসতে আসতে ভাবলো”যাক বাবা,এই পাগলের সাথে ঐ পাগলের বিয়ে দিয়ে দিলে আমি বেঁচে যাবো
নাহয় তো মা এতদিন ঐ বেয়াদবটার সাথে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো,পাইছি একটা সুযোগ,হাতছাড়া করা যাবে না
.
আহানা খুশিতে আটখানা হয়ে পিছন ফিরে কণার দিকের চেয়ে হাঁটতে হাঁটতে শান্তর বুকের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ওকে ধরে ফেললো
.
এই তুমি আমাকে না বলে কই গেছিলে?
.
আহানা ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে বললো”আপনার সাথে আমার কথা আছে”
.
ওসব পরে,চলো আমার সাথে,নওমির সাথে মিট করিয়ে দিব তোমায়
.
আগে বলুন আপনি সবাইকে বলতেছেন কেন যে আমি আপনার উড বি?
.
পরে সব পরে,আগে চলো
.
শান্ত আহানাকে টেনে স্টেজে নিয়ে আসলো
আহানা ইতস্তত হয়ে নওমির পাশে গিয়ে বসেছে,নওমি ওকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতেছে শুধু
অথচ ওর জিজ্ঞেস করার কথা
.
দূরে সোফায় নওশাদ,রিয়াজ,সূর্য আর শান্ত বাম পা ডান পায়ের উপর রেখে গালে হাত দিয়ে বসে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
.
রিয়াজ নওমির দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললো”আহানাকে কিছুক্ষন আগে কণা উধাও করেছিল আই এম Damn শিওর”
.
নওশাদ মাথা নাড়িয়ে তার দুহাতের আঙ্গুল নাড়াতে নাড়াতে বললো”আর এতক্ষণে সে আহানার কানে হাবিজাবি কথা ঢুকিয়ে কস্টিভ ও মেরে দিছে”
.
সূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো”আবার হাত কাটে দেখায়নি তো?আহানা তো তাহলে তোর সাথে কণাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে”
.
মাই গড!!এটা কি শুনাইলি!আমি জানি না
আহানা যে শয়তান একটা মেয়ে,ও আমার জীবন নষ্ট করে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হলেও কণার সাথ বিয়ে দিয়ে ছাড়বে
.
নওশাদ ফোন বের করে কয়েকটা সেলফি তুলতে তুলতে বললো”তো তাহলে কি করা যায়?”
.
রিয়াজ দাঁত কেলিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত তার পাঞ্জাবির উপর পরা কোটির বোতাম কয়েকটা খুলে ঢিল করে রিয়াজের দিকে আড় চোখে তাকালো তারপর স্টেজের দিকে মুখ করে বললো”এরকম হারামির মত চেয়ে আছিস কেন?”
.
তোরে একটা আইডিয়া দিব?
.
হোয়াট?
.
আহানাকে ধরে কিস করে দে
.
নওশাদ তখন জুস খাচ্ছিলো,রিয়াজের কথা শুনে পুরুত করে সব ফেলে দিলো,সূর্য পাকোড়া খাচ্ছিলো কথাটা শুনে গালে কামড়ই পড়েছে তার,গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে সে বললো”তুই তোর নওমিরে কিস করছিস বলে কি শান্ত ও আহানাকে করবে?মেয়াদ ছাড়াই গাঞ্জা খেয়েছিস মনে হয়
.
নওশাদ ব্রু কুঁচকে বললো” মনে হয় ৫বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া গাঞ্জা খেয়েছিস তুই ”
.
রিয়াজের মাথা গেছে!!
এখনও ওর আংটিবদল হয়নি এখনই পাগল হয়ে গেছে বিয়ের পর নির্ঘাত ওকে নিয়ে আমাদের পাগলা গারতে ঘুরতে হবে
.
শান্ত বি সিরিয়াস!আই এম নট জোকিং
.
সিরিয়াস মানে?আহানাকে আমি কিস কেন করবো?
.
যাতে আহানার ভিতরে একটা ফিল আসে,সে তোকে কণার হতে দিবে না তাহলে
মেয়েদের কিস করে কাবু করা যায় বুঝলি
.
নওশাদ মুখ বাঁকিয়ে বললো”তো আমার এক্সকে আমি কতবার কিস করেছি সে আমারে ছাড়লো কেন?”
.
শুন রিয়াজ! আমার আর কাজ নাই তোর কি মনে হয়?
আমার কণাকেও চাই না,আহানাকেও না,ওকে?
.
এখন কথা হলে কণা থেকে কি করে বাঁচবি আহানা তো পরের কথা,আহানা তোকে পছন্দ করে না
.
তো?তুই তো বললি কিস করলে পাগল হয়ে আমাকে কণার হতে দিবে না
.
আরে সেটা না!কিস করলে কণার সাথে তোর জন্য লড়াই করবে পরে তুই কণার থেকে রেহায় পেয়ে গেলে বলে দিবি তুই আহানাকে লাভ তো দূরে থাক লাইক ও করিস না,ব্যস হয়ে গেলো
.
নওশাদ মাথা নাড়িয়ে বললো”ব্রো!!রিয়াজের আইডিয়ায় কারেন্ট আছে”
.
দেখতে হবে না কার বিয়ে হচ্ছে😎
.
না না,আমার দ্বারা হবে না,ঐ ধানিলঙ্কারে আমি কিস করতে পারবো না,দরকার নেই এসবের
.
তাহলে যা কণার কোলে বসার জন্য রেডি হ
আমাদের কি,ভালোই ভালোই একটা জোস আইডিয়া দিলাম
.
দেখ আহানার থেকে ছাড়া পাওয়া সহজ কিন্তু কণা তোকে ছাড়বে না সহজে
তোর আগে ১০/১২টা ছেলেকে সে ধুয়ে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে তারপর ছেড়েছিলো তোকে তো একদম কাঁচা গিলে তারপর ছাড়বে
.
ভাবতে দে আমাকে!
.
সূর্য একটা মেয়েকে দেখে উঠে সেদিকে যেতে যেতে বললো”পাগলের প্রলাপ পাগলে শুনে”
.
রিয়াজ হাতে থাকা গোলাপ ফুল একটা সূর্যের মাথায় মারলো
“হারামি তুই পাগল!”
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,কণা এসে সূর্যের জায়গায় বসে পড়েছে শান্তর পাশে
শান্ত চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে একটু সরে বসলো
.
কেমন আছো??নিতু কেমন আছে?
.
শুনো কণা! একটা কথা ক্লিয়ারলি বুঝে নাও,আমি তোমাকে না লাইক করি না লাভ করি,কোনোটাই না,যারেই তোমার লাইক হবে তারেই পাবা এমন তো না!আমার থেকে দূরে থাকো,তুমি মেয়ে বলে আমি বেশি রুঢ হচ্ছি না বাট বুঝার চেষ্টা করো
.
দেখো আমি হাত কেটেছি
.
তোহ??
তুমি তো আরও কতজনের জন্যই কাটসো!আর আমি কি তোমাকে বলেছিলাম যে হাত কাটো!আর আমার সাথে কথা বলবা না,আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,স্টে এওয়ে ফ্রম মি
.
শান্ত উঠে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো,আহানা নওমির সাথে কথা শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে শান্তর সামনে এসে দাঁড়ালো
.
কি?
.
কি মানে,আপনার জন্য কণা আপু জাস্ট পাগল!
.
জাস্ট পাগল তো আমি কি করবো?এটাকে পাগলামি বলে না এটাকে ছেঁসড়ামি বলে
ও এরকম আরও অনেক ছেলের জন্যই করে,সো এটা ছেঁসড়ামি,আমাকে বুঝাতে হবে না আর
.
আপুটা সত্যি আপনাকে ভালোবাসে
.
আমার এরকম মেয়ে পছন্দ না,আমাকে হুদাই বুঝিয়ে লাভ নেই বুঝছো
.
বুঝিয়েন না,আমার কি!আমি কণা আপুকে বলতেছি আপনি কিছু বুঝতে চান না
.
যাও বলো গিয়ে!
.
আহানা বিরক্ত হয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে আছে গাল ফুলিয়ে
.
শান্ত এটাই মোক্ষম সুযোগ!! আহানাকে করিডোরের দিকে নিয়ে গিয়ে কিস করে দে,আজীবনের জন্য তোকে কণা থেকে বাঁচিয়ে দিবে
.
না,আমি এই ফকিন্নিরে কিস করবো না,কোনোদিন ও না
.
করিস না,কণা তোকে নিজের জামাই বানিয়েই ছাড়বে দেখিস,, ঐ তো আসতেছে আবার
.
শান্ত চোখ বড় করে দৌড়ে আহানার কাছে এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো
.
আরে আরে হাত ছাড়ুন আমার!কই নিয়ে যাচ্ছেন,কি হলো টা কি??এমন করতেছেন কেন?
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে বাড়ি পেরিয়ে মাটির রাস্তায় নেমে গেছে
একটু দূরে গেলেই কাশফুলের বিরাট বিস্তার,পাশেই শীতলক্ষা নদী,শান্ত আহানাকে নিয়ে সেদিকে ছুটছে
.
আরে আমি বুঝতেছি না আপনি এত অন্ধকারের ভিতরে আমাকে নিয়ে কই যাচ্ছেন,হঠাৎ কি হলো যে এত ছোটার প্রয়োজন হলো?
আর আপনার কার তো মাটির পথটা ধরে গিয়ে সামনে পার্ক করা আছে তাহলে আপনি আমাকে এদিকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছেন আর কেন??আশ্চর্য কিছু বলছেন না কেন
.
শান্ত আহানাকে কাশফুলের বাগানে নিয়ে এসেছে,পাশেই থাকা নদীতে চলা লঞ্চ,স্টিমারের,আর ফ্যাক্টরি থেকে আগত আলোয় দুজন দুজনের মুখ স্পষ্ট দেখতেছে এত অন্ধকারের মাঝেও
.
কি?এবার তো বলুন,এখানে কেন এনেছেন?
.
শান্ত ঢোক গিলে আহানার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ
.
আহানা ব্রু কুঁচকে আবারও জিজ্ঞেস করলো এখানে কেন এসেছে তারা!
.
নদীর বায়ুপ্রবাহ অতি দ্রুত বয়তেছে,আহানার চুল সব ওর সারামুখে এলোমেলো হয়ে আসতেছে বাতাসে
সে চুল ঠিক করতে করতে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে,দুপাশে ঘন বন,,চারিদিকে কাশফুল আর কাশফুল,পাশেই নদীতে সব লঞ্চ,স্টিমার,দূরে ব্রিজ দিয়ে গাড়ী যাচ্ছে সেটাও চোখে পড়তেছে
শান্ত এক কদম পেরিয়ে আহানার আরও কাছে আসলো তারপর ফিসফিস করে নিজেই নিজেকে বললো”আই হোপ!তুমি আমাকে কণা থেকে বাঁচাবা”
.
শান্ত আহানার গলার পাশ দিয়ে হাত নিয়ে ওর গলা ধরে ওকে টেনে কাছে নিয়ে আসলো
আহানার আর বুঝতে বাকি নেই শান্ত কি করতে যাচ্ছে
সে চোখ বড় করে দাঁতে দাঁত চেপে একদম দিয়ে দিলো একটা চড়!!!!
.
শান্ত আহানাকে ছেড়ে গালে হাত দিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
আপনার এত বড় সাহস!আমাকে ছুঁতে চান আপনি!!এসবের জন্য আমাকে এতদূর নিয়ে আসলেন,আপনার মন মানসিকতা এত খারাপ!ছিঃ!আপনাকে আমি বদমেজাজি আর ঝগড়ুটে মনে করতাম আর এখন দেখি আপনি চরিত্রহীন ও বটে
একা একটা মেয়েকে পেয়ে এটা করতে যাচ্ছিলেন আপনি!আপনি একটা খারাপ লোক!
কথা শেষ করে আহানা কেঁদে দিয়ে পিছিয়ে চলে গেলো
.
শান্ত থ হয়ে দাড়িয়ে আছে,সে আসলেই এটা কি করতে যাচ্ছিলো??
আহানা তাকে বাধা দিলে সে জোর করতো না,কিন্তু আহানা বাধা না দিয়েই গালে চড় বসিয়ে দিলো,কিস তো দূরে থাক!
.
আহানা রিয়াজদের বাসায় ফিরে দূরে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে
শান্ত গালে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে আসতেছে বাড়ির দিকে
সূর্য,রিয়াজ আর নওশাদ আহানাকে কাঁদতে দেখে জলদি করে শান্তকে খুঁজতে লাগলো পরে দেখলো শান্ত রোবটের মতন হেঁটে হেঁটে আসতেছে
.
কিরে?তোর কি হয়েছে?এরকম মুখ করে আছিস কেন?তুই আহানাকে কিস করলি নাকি আহানা তোকে করলো?
.
কেউ কাউকে করে নাই,তোদের জন্য আজ চড় খেলাম
.
কিহহহ!তোকে চড় মেরেছে?
.
হুম!
.
হায় রে,এই শান্তর গায়ে পড়ার জন্য মেয়েরা পাগল হয়ে যায় আর আহানা কিনা কিস কে দূরে রেখে চড় মেরে দিলো,আমরা কি ভাবলাম আর কি ঘটে গেলো
.
কণার চক্করে আহানার সামনে আমার চরিত্রটা কালার হলো
.
আমরা আর কি করবো,ভালোই আইডিয়া দিসিলাম,অবশ্য আমরা ভেবেছিলাম আহানা বাকি মেয়েদের মতন
বাট ও যে এরকম করবে তা তো ভাবনার বাইরে ছিল পুরা
.
আহানা আর ৫টা মেয়ের মতন না,আমার এটা বুঝা উচিত ছিল
.
তোর দোষ নাই,তুই তো খালি কিসই করতে চেয়েছিলি তাতে চড় মারার কি আছে?
.
নওশাদ কি বলিস?মেয়েদের হাত ধরে টানলে চড় খাইতে হয় আর শান্ত তো কিস করতে চেয়েছিলো
.
চড় কয়টা দিয়েছে?
.
শান্ত গাল ঘষে চেয়ার একটাতে বসে এক গ্লাস পানি হাতে নিলো টেবিলের উপর থেকে তারপর বললো”চড় তো একটাই দিয়েছে বাট সেটাতে আমার কষ্ট হয়নি,হয়েছে সে আমাকে যখন চরিত্রহীন বলেছে তখন
আমি তো সত্যি সত্যি কিস করতাম না
ইভেন সে আমাকে সরিয়ে দিলে আমি করতামই না
বাট না সরিয়েই থাপ্পড় মেরে দিলো
.
ইস রে,এই মেয়ের সাহস দেখেছিস!শান্তকে আন্টি জীবনে ফুলের টোকা দেয় নাই আর সে কিনা সিধা চড় মেরে দিলো
.
চড় চড় করিস না আমার গা জ্বলতেছে এই ভেবে যে সে আমাকে চরিত্রহীন বলেছে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-১২+১৩+১৪

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আর কখনও আপনার ব্যাপার নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করবো না,আপনার কসম!!
সরি আর করবো না এমন,বাসায় যাবো,আন্টি আর আম্মু তো অপেক্ষা করছে তাই না??
.
হুম,যাবো তো!
.
শান্ত ক্যামেরাটা দারোয়ানের হাতে দিয়ে বললো ছবি তুলতে
.
কককককি কিসের পিক!
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানার কোমড়ে হাত রেখে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো
তারপর গায়ের থেকে জ্যাকেটটা খুলে দূরে সরিয়ে রেখে দারোয়ানকে বললো এমন ভাবে ছবি তুলতে যেন শান্তর মুখ না উঠে
.
আহানা চোখ বড় করে দূরে সরতে নিতে গিয়েও পারলো না কারণ শান্ত ওকে ভালো করে ধরে রেখেছে
দারোয়ান কয়েকটা ছবি তুলে দিলো তৎক্ষনাৎ
শান্ত ক্যামেরা হাতে নিয়ে হেসে বললো”পারফেক্ট!! এবার এগুলা আমি আহানার বিরুদ্ধে ইউজ করবো”
.
আহানা ছবিগুলো দেখে বললো”এটা তো আপনি!”
.
তো?কথাটা তুমি জানো আর আমি জানি,জ্যাকেট খুলসি কেন?যাতে কেউ আমাকে না চেনে
শান্ত তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে টেবিলের উপর থেকে জ্যাকেট নিয়ে বিল দিতে চলে গেলো
আহানা বোকার মতন চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে
সে এসেছিল একজনকে ফাঁসাতে আর এখন সে নিজেই ফেঁসে গেছে
এসব ভেবে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বেরিয়ে গেলো সে
ধুর!আর জীবনে এর পিছনে গোয়েন্দাগিরি করতে আসবো না আমি
এখন যদি মাকে দেখায় এই ছবিটা?না না মা তো চিনবে উনাকে,মুখ না দেখলেও বডি তো চেনা যায়,হুম!সেটাই
.
এই মেয়ে!
.
আহানা হাঁটা থামিয়ে শান্তর দিকে তাকালো
.
কই যাচ্ছো তুমি?
.
আপনার কি?
.
কথা সুন্দর মার্জিত ভাবে বলবা নাহলে ছবিটা আন্টিকে দেখায় দিব
.
মা আপনাকে দেখলেই চিনে ফেলবে মুখ না দেখলেও
.
চিনবে না দেখিও
.
শান্ত গিয়ে কারে বসলো,আহানা মুখ বাঁকিয়ে হাঁটা ধরেছে সোজা
শান্ত ওকে একবার ডাকলো ও না
আহানার সেদিকে নজর ও নাই তার মাথায় খালি ঘুরতেছে মা কি চিনবে যে এটা শান্ত,যদি না চেনে?
ক্যামেরাটা হাইজ্যাক করতে হবে নাহলে আহানা তুই মস্তবড় বিপদে পড়তে চলেছিস
.
শান্ত কার ঘুরিয়ে কিছুদূর গিয়ে থামালো আবার
আহানা দেখলো না সে এখনও ভাবতে ভাবতে হাঁটতেছে
.
শান্ত গ্লাস নামিয়ে চেঁচিয়ে বললো”এত ভাব না দেখিয়ে কারে উঠো নাহলে তোমার চুল ছিঁড়ে তারপর তোমাকে উঠাবো আমি”
.
আহানা চমকে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে কারে বসে
.
আহানা কাছে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আপনার সাথে যাব না আমি,আপনি যান ”
.
ফাইন!যেও না
কথাটা বলে শান্ত চলে গেলো
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আবারও হেঁটে চলেছে

শান্ত বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটা চিপস হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে খাচ্ছে আর কোলে ল্যাপটপ রেখে অফিসের খুচরো কাজ করে যাচ্ছে
চিপসটা ফ্যাট ফ্রি,এখন কার যুগে এসব চিপস খাইলেও লাভ
সন্ধ্যা ৭টা বাজতে চললো,আহানার মা চিন্তিত হয়ে এসে শান্তর রুমের দরজায় নক করলো কয়েকবার
.
শান্ত বারান্দা থেকে এসে দরজা খুলতেই উনি সবার আগে জিজ্ঞেস করলেন শান্ত জানে কিনা আহানা কোথায়
আহানার ফোন অফ
.
ও,,,, তো!
শান্ত আর কিছু বললো না সোজা ঘড়ির দিকে তাকালো
৭টা ২বাজে
শান্ত দেরি না করে এক দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে কারে উঠতে যেতেই দেখলো দূর থেকে আহানাকে দেখা যাচ্ছে,কোমড়ে হাত দিয়ে টেরাবেকা হয়ে আসতেছে সে
.
এই মেয়েটা নিজে তো পেরেশানিতে পড়বে সাথে আমাদেরও ফালাবে
.
আহানা কচ্ছপের স্পীডে হেঁটে হেঁটে আসতেছে
শান্তদের বাসার গেটের কাছে এসে হাঁপিয়ে ভিতরে ঢুকতে যেতেই দেখলো শান্ত চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
.
কি?
.
তখন আমার সাথে আসলে কি হতো তোমার?তুমি জানো আন্টি কত টেনসন করতেছে?
.
আহানা কথার উত্তর না দিয়ে হেঁটে চলতেই শান্ত ওর হাত ধরে আটকিয়ে বললো”এতটা ইরেসপনসিবল কেন হও তুমি?তুমি যা চাও সেটাই হবে সবসময়?তুমি ভুলে যাও কেন যেকোনো সময় তোমার সাথে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে!এই টুকু জ্ঞান নেই তোমার?”
.
আহানা তার হাতের দিকে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো,শান্ত ওর হাতের দিকে চেয়ে দেখলো লম্বাটে লাল দাগ হয়ে আছে ওর হাতে
.
সত্যি করে বলো কি হয়েছিলো??
.
আপনি যেটা ভাবতেছেন সেটা হয়নি,কারোর সাহস নেই আহানার সাথে বেয়াদবি করবে,আমি আসার সময় পড়ে গেসিলাম তাই হাতে ব্যাথা পেয়েছি আর কিছু না
কথা শেষ করে আহানা চলে গেলো
.
শান্ত ও পিছন পিছন আসলো ওর
.
কিরে আহানা কই ছিলি তুই?
.
ঐ আসলে টিউশনিতে ছিলাম,আজ তাই একটু দেরি হয়ে গেলো
কোনোরকম বাহানাটা দিয়ে সে চলে গেলো রুমের দিকে,শান্ত সেখানে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সে নিজেও রুমে ফেরত গেলো
পরেরদিন ভোর হতেই শান্ত ঘুম থেকে উঠে সবার আগে তার সূর্যমুখী বাগানটার দিকে গিয়ে একবার ভালো করে দেখে নিলো,আহানা নেই,এবার শান্তি
বাগানটা ভালোমতন দেখে এসে শান্ত আবার গিয়ে শুয়ে পড়েছে
আবার সকাল ৯টা বাজতেই শান্ত ঘুম থেকে উঠে পড়লো,রেডি হয়ে অফিসে যাবে
উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে সামনে তাকিয়ে দেখলো তার রুমের সোফায় নওশাদ হাত পা ছড়িয়ে বসে বসে ফোনে গেমস খেলছে আর পাশেই বিন ব্যাগে রিয়াজ বসে কার সাথে কথা বলছে আবার মাঝে মাঝে ফোনে চুমু খাচ্ছে
.
একি রে,তোরা?এ সময়ে?কখন এলি?
.
নওশাদ ফোন থেকে মুখ তুলে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো শান্তর দিকে
তারপর সোফার একটা কুশন নিয়ে শান্তর মুখে মেরে দিলো
শান্ত কুশনটা মুখ থেকে সরিয়ে বললো”গাইস এখন এটা বলবা না যে আহানার সাথে আমার কিছু চলে”
.
হ্যাঁ অবশ্যই চলে,আমরা তো ভাবতাম আহানার সাথে তোর জাস্ট ঝগড়ার কারণে বান্দরবনে মিট হয়েছে বাট এখন তো দেখছি মেয়ে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে
মাই গড!!!
তলে তলে এতো?আর তুই আমাদের ছিঁটে ফোটাও জানালি না,শেম অন ইউ
.
যেটা ঘটেনি সেটা জানিয়ে কি হবে?
.
রিয়াজ ফোনে কথা বলা শেষ দিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বললো”ঘটছে তো অনেক কিছুই আর আমরা আজ জানলাম,রিয়েলি নওশাদ আমরা শান্তর কিছু হই না”
.
উফ!বললাম তো আহানার সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই,ও জাস্ট আমার আব্বুর বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়ে,ব্যস!
.
হইছে হইছে আমাদের বুঝাতে হবে না
.
নওশাদ আর রিয়াজ গাল ফুলিয়ে শান্তদের ডাইনিং রুমের দিকে চলো গেলো
শান্ত কুশনটা নিয়ে এখনও বসে আছে বোকার মতো,এই বন্ধুগুলা সবসময় উল্টা পাল্টা বুঝে,আজব ব্যাপার

আন্টি আজ আসি আমরা,আপনি কিন্তু সময় করে আমাদের বাসায় আসবেন
.
শান্তর মা আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হাসলেন,উনাকে বিদায় দিয়ে আহানা আর তার মা তাদের বাসায় ফেরত আসলো
বাসায় এসেই আহানা জলদি করে তৈরি হয়ে ভার্সিটির দিকে চলে গেছে
.
শান্ত ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে এসেই দেখলো নওশাদ আর রিয়াজ আপেল খাচ্ছে আর আড় চোখে ওকে দেখছে বারবার
শান্ত ওদের পাশে বসে বললো”কি?তো তোরা কি চাস এখন?এরকম করে তাকাস কেন?”
.
আমরা কিছু চাই না,আমরা জাস্ট বুঝতেছি না তুই আমাদের সাথে আগে সব শেয়ার করতি আর এখন ইয়া বড় বড় টপিক গোপন করে যাচ্ছিস,দিস ইজ আনট্রাস্টেবল
.
সূর্য বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললো”রিয়েলি হতাশাজনক”
.
আসেন আসেন,আপনারই বাকি ছিল,আপনিও শুরু করেন
.
তো কি করবো আমরা?যাই হোক এরকম খোঁটা দিতে আসিনি আমরা
রিয়াজের পরশুদিন আংটি বদল,তোরে তো ফোন দিলে তুই ব্যস্ত থাকোস
আজ এখানে এসে বুঝলাম কেন এত ব্যস্ততা,আচ্ছা আসিস কিন্তু
.
বিয়ের সব ঠিকঠাক তোর রিয়াজ??কার সাথে?নওমি?
.
হুম
.
হে হে শান্ত!!আহানাকে নিয়ে আসিস নাহলে কণা তোরে একা পেয়ে চিবায় চিবায় খাবে
.
ভাই তাহলে আমি আসবো না,এই কণা মেয়েটা অনেক ডেঞ্জারাস,আই মিন গায়ে পড়া স্বভাব, আমার ভালো লাগে না,রিয়াজের চক্করে মাইনকার চিপায় পড়তে হয়েছে আমাকে
আংটিবদলে সেও আসবে নাকি?
.
আরে কি কস,আমার নওমির একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড হলো কণা,কণা তো সবার আগে আসবে
.
তাহলেই হলো,আমি আমেরিকার ট্রিপে চলে যাবো তাও তোর আংটিবদলে আসবো না,ভিডিও কল দিস লাইভ দেখে নিব
.
তা হচ্ছে না,সরাসরি আসতে হবে তোকে নাহলে তোরে বাসা থেকে লোক ধরিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমি
.
তুই জানিস তো কণা আমাকে কি পরিমাণ ডিস্টার্ব করে
.
তুই ছেলে হয়ে ওকে ধমক দিতে পারিস না?তোর গায়ে লাগে ওকে ধমক দিলে?
.
ধমক?কত বার ধমক দিসি তাতেও যদি ঠিক না হয় তো কি করবো আমি?
.
আহারে শান্ত মিয়া নিজে সুন্দর রুপ পাইয়াও বিপদে পড়সে
.
“যা বের হ তোরা,আমি দেখছি কি করা যায়”
শান্ত রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে কার ড্রাইভ করতে করতে ভাবতেছে কি করে রিয়াজকে বুঝাবে যে তার দ্বারা ওর engagement এ আসা পসিবল না কারণ কণা মেয়েটা ওর জন্য জাস্ট পাগল
এত পাগল যে শান্তকে একবার দেখলে আর ওর পিছু ছাড়ে না!কেমনে কি করবো,!
.
আহানা রুপার সাথে আইসক্রিম খাচ্ছে আর হাসতে হাসতে হাঁটতেছে রোডের কিনারা দিয়ে
শান্ত ভাবনার মধ্যে থেকে কার মোড়ে ঢুকালো
ঠিক তখনই কারের সাথে ধাক্কা লেগে আহানা আর একটুর জন্য এক্সিডেন্ট করতো তাও ভয়ে আর বাতাসেই দুম করে পড়ে গেছে সে
শান্তর হুস আসতেই কার থামিয়ে ফেললো সে,তারপর নেমে এদিক ওদিক তাকালো,কারোর কোনো ক্ষতি হলো না তো
আহানা নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”চোখ কি আল্লাহ দেয় নাই??”
.
শান্ত আহানার কথা শুনে পিছনে তাকালো
আহানা এবার শান্তকে দেখতে পেয়ে চোখ বড় করে বললো”ও!আমার তো ভাবা উচিত ছিল এই বাঁদরামি আর কে করতে পারে,আপনি ছাড়া আর কে হতে পারে!”
.
আহানা!মেজাজ গরম করবা না আমার
.
আরে এটা শান্ত না!???ও মাই গড,!!
.
রুপা থাম আমাকে কথা বলতে দে
আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন তাই না??
.
এমনিতেও মেজাজ গরম আমার, মেজাজ আরও বিগড়াবা না
.
কেন কি করবেন?
.
শান্ত আর কিছু বললো না, কারে উঠে বসতেই রুপা চিল্লাইতে চিল্লাইতে বললো”শান্ত ভাইয়া প্লিস ওর কথায় কিছু মনে করবেন না,ওর মাথায় তো শুকনো গোবর ঠাসা আছে
আমার সাথে কথা বলুন না প্লিস
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”তোমাকে একটা এডভাইস দিই,তোমার বান্ধুবীকে একটু মানুষের মত মানুষ করো,এরকম ঝগড়ায় লেগে থাকলে কবে না জানি মাথা ফেটে মরে যায়
.
কথাটা শুনতে পেয়ে আহানা কাছে এসে বললো”কি বললেন আপনি?আমার মাথা ফেটে আমি মরে যাবো?
তুই মরবি দেখিস”
.
নাউজুবিল্লা! আহানা এসব কি বলিস তুই,কথার কি ছিরি তোর,কার সাথে কি বলতেছিস
.
শান্ত চলে গেছে ততক্ষণে
রুপা আহানাকে ঝাঁকিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করতেছে আহানা এরকম করে কথা বলে কেন শান্তর সাথে
আহানা কিছু না বলেই হাঁটা ধরলো উল্টো দিকে
.
শান্ত অফিস রুমে এসে বসতেই কল আসলো সূর্যের
.
হ্যাঁ বল সূর্য!
.
আমরা এখন রিয়াজের বিয়ের শপিং করতে এসেছি,আই মিন আংটি বদলের,তুই আসবি?
.
ধুর কিছু ভাল্লাগে না আমার,তোরা কর শপিং
.
তুই এখনও কণাকে নিয়ে ভাবছিস,আচ্ছা শুন এক কাজ কর কণাকে বলিস তোর engagement হয়ে গেছে তাহলেই তো হলো
.
আর ও বিশ্বাস করবে?
.
আহানাকে নিয়ে আসিস,বলিস আহানা তোর হবু বউ,তাহলেই হয়
.
আমাকে ভূতে ধরে নাই,আর আহানা রাজিও হবে না,এত বড় মিথ্যার দরকার ও নাই
.
ফাইন আসিস না পরশু, রিয়াজ তোকে কাঁচা গিলে খাবে সেদিন
কথাটা বলে সূর্য লাইন কেটে দিলো
.
শান্ত অনলাইনে একটা গিফট চুজ করে অর্ডার দিয়েছে রিয়াজের আংটিবদলের দিন দিবে ওকে
কথা হলো কণার থেকে রক্ষা পাবে কি করে,সূর্য যে বুদ্ধিটা দিলো তাতে কাজ হবে কিন্তু আমি রাজি না
আর ঐ আহানাকে এখন অফারটা দিলে ভাব দেখাবে প্রচুর,ঝগড়া শুরু করে দিবে তার উপর আমার হবু ওয়াইফের অভিনয় ও কেনোই বা করতে যাবে?
সারাদিন ধরে অফিসে থেকে শান্ত ভাবলো কি করে কি করবে
সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় ফিরতেই দেখলো নিতুর রুমে আহানা নিতুকে পড়াচ্ছে
শান্ত রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে বসে খাবার খেতে খেতে ভাবলো কণার জ্বালানো থেকে আহানার সাথে ঝগড়া করবো সেটাই বরং ভালো হবে
শান্ত খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে আহানাকে ডাক দিলো
আহানা শুনেও না শুনার ভান করে নিতুকে পড়াচ্ছে
.
আপু!ভাইয়া তোমাকে ৩বার ডাকছে এই নিয়ে
.
হুম শুনলাম,, তুমি পড়ো,আমি এখন ব্যস্ত তাই যাবো না
.
শান্ত তো নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করার সব চেষ্টা করছে এরকম ভাবওয়ালি মেয়ে সে আর দুটো দেখেনি
এক দেখেছে ছেঁসড়া কণাকে আর এক দেখতেছে এই আহানাকে,যে ভাবের ফ্যাক্টরি খুলে বসে আছে
মেয়েরা শান্তর জন্য পাগল হয়ে যায় আর এই মেয়েকে দেখো ঘুরেও তাকায় না
.
এই মেয়ে!!!
.
আহানা নিতুকে বাংলা প্রতিশব্দের কয়েকটা উদাহরণ লিখতে দিয়ে উঠে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”কি সমস্যা?গরুর মত ডাকতেছেন কেন?”
.
আমি গরু??
.
হুম
.
তাইলে তুমি গাভী!
.
আমি গাভী?কি বললেন আপনি?আমাকে এত বড় কথা বলে অপমান করতে পারলেন??
.
আমাকে যে গরু বললা?সেটা অপমান হলো না
.
গরু তো ঠিক আছে,গাভী কিরকম শুনায়
আপনি নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখেন একবার,ছিঃ ছিঃ আমার ইজ্জত একটুও রাখলো না
.
শান্ত গালে হাতে দিয়ে ভাবতে লাগলো”যে গাভীই তো বললো জাস্ট তাই বলে এমন সিনক্রিয়েট করার কি আছে,এটা বুঝি অপমান হলো!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানার রাগ বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে
হাতের কাছে যা পাবে তাই ছুঁড়ে মারবে আর এক লেভেল পার হয়ে গেলেই
কথা হলো শান্তকে মেরে নিজের মার খাওয়ার শখ নেই বলেই আহানা ঠাণ্ডা হয়ে বললো “কিসের জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন”
.
আসো না আমার পাশে বসো
.
আহানা তো মনে হয় আকাশ থেকে দুম করে মাটিতে এসে পড়েছে
কান কি ঠিক আছে ওর??ভুল শুনলো?নাকি স্বপ্ন দেখছে সে
সয়ং শান্ত কিনা ওকে পাশে বসতে বলছে
আঙ্গুল দিয়ে কান গুতিয়ে তারপর চোখ ডলে আবারও তাকালো সে
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে আহানার কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছে,শেষে হালকা করে নিশ্বাস ফেলে বললো”সত্যি সত্যি বসতে বললাম,এত ঢং করার কিছু নাই”
.
আহানার কেন জানি সন্দেহ সন্দেহ হচ্ছে,যার কারণে সে শান্ত থেকে সব চেয়ে দূরে যে সোফার সিট আছে,সেখানে গিয়ে বসে পড়েছে
.
শান্ত ওর দিকে ফিরে বললো”কাল বাদে পরশুদিন আমার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু রিয়াজের আংটিবদল
তো আমি সেখানে যেতে চাই
.
তো যান,আমি কি ধরে রাখছি নাকি
.
পুরো কথা তো শুনবা!
সেখানে রিয়াজের যার সাথে বিয়ে হবে আই মিন নওমি সেই নওমির একটা বেস্টফ্রেন্ড আছে নাম হলো কণা,কণা আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করে
.
আচ্ছা তাহলে সে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলে
.
শান্তর মাথা চরগ গাছ,উঠে এসে দুহাত দিয়ে আহানার গলা টিপে ধরে ওকে সোফার সাথে লাগিয়ে ধরতে মন চাচ্ছে কিন্তু না,নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো
শান্ত দুহাতের আঙ্গুল ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”তোমার থেকে আমার একটা হেল্প লাগবে”
.
কি?
.
তুমি আমার সাথে পরশুদিন যাবে অনুষ্ঠানে
.
কি জন্যে?আমার আর কাজ নেই?পরশুদিন আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে,পারবো না আমি হুহ!তার উপর বিকাল থেকে টিউশনি
.
হইছে?আর কিছু আছে?
.
আবার ৬-৭টা নিতুকে পড়ানোর পর আর কোনো কাজ নেই
.
বেরি গুড,আংটিবদল সন্ধাতেই হবে,তুমি তাহলে যাচ্ছো আমার সাথে
.
না যাবো না আমি,কেন যাবো?
আপনার মতো ঝগড়ুটে একটা লোকের সাথে আমি কেন যাবো?
.
কেন যাবে?আচ্ছা ভাবতে দাও,হুম ভাবলাম,তোমার আর আমার তোলা ছবিটা মনে হয় এবার প্রয়োগ করার সময় এসে গেছে
.
আহানা ঢোক গিলে উঠে দাঁড়িয়ে চুপচাপ শান্তর মায়ের রুমের দিকে ছুটলো,রুমের মাঝখানে এসে বকবকবক করে শান্তর নামে এক গাদা নালিশ করলো সে
তারপরেও শান্তর মায়ের কোনো সাড়া না পেয়ে এগিয়ে এসে দেখলো শান্তর মা হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছেন
আহানা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে
.
দেখুন আপনাকে আমি ভয় পাই না,এই ছবি দেখে মা চিনে যাবে এটা আপনি
.
ওকে তাহলে চলো,সামনা সামনি আন্টিকে দেখাই ছবিটা তারপর দেখি উনি কি বলেন
.
আহানা নিতুর রুম থেকে ব্যাগটা নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো”আমার বয়ে গেছে আপনার হেল্প করার!”
.
বাসা থেকে বেরিয়ে আহানা রিকসা নিলো না
হেঁটেই চললো,ভাড়া যেটা আছে সেটা দিয়ে কাল ভার্সিটিতে যাবে,কোনোমতে বাসায় পৌঁছে গেলো সে তখন ৭টা ২৩বাজে,হাঁপাতে হাঁপাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে হাতের ব্যাগটা বিছানায় রেখে বসলো সে
মা মুড়ি আর বিসকিট আনতে আনতে বললেন”তোর কি কোনো ছেলেকে পছন্দ?”
.
আহানা ভূত দেখার মত মুখ করে মায়ের দিকে চেয়ে আছে,তারপর থতমত খেয়ে বললো”কই না তো”
.
তাহলে শান্ত যে বললো তোকে নাকি কোন ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখেছে,ছবি নিয়েও কি সব বলছিলো
.
(শান্ত হারামি,তোরে আমি কেটে টুকরো টুকরো করে পাটায় বেটে কিমা বানাবো)ওহ,উনি তো আন্দাজেও কথা বলেন
.
শুন আহানা এসব নিয়ে তোকে বলি একটা কথা এতদিন আমি ভাবতাম হয়ত শান্ত আর তা মাকে কখনও খুঁজে পাবো না
তাই আশা করতাম তোর জন্য যেন একটা ভালো ছেলে পাই কিন্তু যখন শান্তকে পেয়েই গেছি তো আমি নিশ্চিন্ত
বিয়ে হলে তোর শান্তর সাথেই হবে তাই অন্য কারোর সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হইস না কেমন?
.
এসব কি বলো তুমি?আমি?তাও বিয়ে করবো ঐ ঝগড়ুটে টারে?
দরকার হলে বিয়ের দিন পালাবো তাও ওরে বিয়ে করে জীবন নষ্ট করবো না,সারাদিন খালি ঝগড়াই করে
.
আহানা মুড়ির বাটি নিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
মা কাছে এসে আহানার সামনে বসে বললেন”শান্ত কিসের ছবির কথা বলতেছিলো রে?তুই কি সত্যি সত্যি প্রেম টেম করতেছিস?
এটা কিন্তু ঠিক না আহানা,আমরা দুই পরিবার মিলে ঠিক করেছিলাম তোদের বিয়ে দিব আর তুই কিনা বাড়া ভাতে ছাই দিতে চাচ্ছিস!
.
মা শুনো আমি ঐ শান্তকে বিয়ে করবো না ব্যস,শুনে রাখো কথাটা,এখন ভাত দাও ভাত খাবো,মুড়িতে পেট ভরে নাই আমার
.
মা রান্নাঘর থেকে আলুর ভর্তা আর খালি ভাত এনে দিলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”আর কিছু নাই?”
.
আর কি পোলাও থাকবে?মাসের কয় তারিখ খবর আছে তোর??এই আলু টাও আমি পাশের বাড়ি থেকে ধার করে এনেছি
বলেছিলিস না চাকরি খুঁজবি,টিউশনির টাকাতে তো চলে না আর
.
ক্যান তোমার শান্ত না বললো তোমার সব ফেরত দিয়ে দিব
.
সেটা যেদিন ফেরত দিবে সেদিন,বললেই তো আনা যায় না
কত বড় ব্যাপার,তুই বরং চাকরি খোঁজা শুরু কর
.
শুনো মা,আইএ পাসের সার্টিফিকেট দিয়া এই জামানায় কোনো চাকরি পাওয়া যায় না,তাও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি
.
হুম,সামান্য বেতনের হলেও হবে
.
আহানা আলুর ভর্তা দিয়ে কোনো রকম ভাত খেয়ে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন ভোর হতেই আম পাতা হাতে করে সে হাঁটা ধরেছে
মা পাতিল সব নিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে যাচ্ছেন,এগুলো মেজে তারপর ভাত বসাবে,এতদিন শান্তদের বাসায় থাকায় এগুলো মাজা হয়নি
আহানা ভাত খেয়ে তারপর ভার্সিটিতে যাবে
আহানা এখন হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে হঠাৎ ওর মনে হলো সে শান্তকে দেখেছে
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে গলির ভিতরের দিকে যাচ্ছে,নিশ্চয় আমাদের বাসায় যাচ্ছে?কিন্তু কেন?
আহানা তড়িগড়ি করে হাতের আমপাতা ফেলে দৌড় দিয়ে শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
শান্ত পকেট থেকে হাত উঠিয়ে সেটা গুটিয়ে নিয়ে বললো”লাস্ট টাইম বলতেসি আমার সাথে কাল রিয়াজের আংটিবদলে যেতে রাজি হও নাহলে এখন পিকটা আমি আন্টিকে দেখাতে যাচ্ছি
.
হুম দেখান,আমার মা আপনাকে ঠিকই চিনে ফেলবে
.
শান্ত আহানার কথাটা তাচ্ছিল্য করে হেঁটে চললো
আহানা ঢোক গিলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সেও আসতেছে
আহানার মা পাতিল সব মেজে হাতে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেছিলেন তখনই শান্তকে দেখে থেমে গেলেন তিনি
তারপর মুচকি হেসে বললেন”কখন এলে বাবা”?
.
শান্ত গম্ভীর গলায় বললো”আন্টি আপনাকে আমি বলেছিলাম না আহানাকে দেখে শুনে রাখবেন,এখন দেখেন আহানা একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে গেছে ছবিও তুলেছে
.
মা চোখ বড় করে এগিয়ে এসে ছবিটা দেখতে চাইলেন
শান্ত ক্যামেরা থেকে ছবি তার ফোনে নিয়ে এসেছিল,ছবিটা বের করে দেখালো সে আহানার মাকে
.
মা বিশ্বাস করো এটা উনি,আমাকে ফাঁসাচ্ছে
.
কি বলিস এসব,এটা তো দেখি অন্য ছেলে
.
আহানা মনে হয় শক খেয়েছে এরকম অবস্থা
এগিয়ে এসে বললো”না মা এটা উনি,ভালো করে দেখো”
.
শান্ত না এটা,দেখ গায়ে অন্য জামা,এরকম তো শান্তকে কখনও বের হতে দেখিনি,ও তো সবসময় জ্যাকেট পরে বের হয়
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে আহানার দিকে
মা আহানার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে শান্তকে বললেন”ভিতরে আসো বাবা,আর তুই ও আয়,বেয়াদব!
.
আহানা মাকে বুঝাতে এক কদম ফেলতেই শান্ত ওকে আটকে ফেললো
.
আর কি চান আপনি?
.
তুমি রাজি হয়ে যাও তাহলে বলবো ছবির ছেলেটা আমি
.
আহানা কিছুক্ষন চুপ হয়ে থেকে ভেবেচিন্তে বললো”ঠিক আছে”
.
তাহলে কাল অনুষ্ঠান শেষ হলেই আমি আন্টিকে বলবো ছেলেটা আমি
.
আপনাকে বিশ্বাস করি না আমি,এখন বলতে হবে,নাহলে অনুষ্ঠান শেষ হলে বলবেন ছেলেটা অন্য কেউ
.
আমি যদি এখন বলি ছেলেটা আমি তাহলে তুমি যে কাল আমার সাথে আংটিবদলে যাবা তার গ্যারান্টি কি?
.
😒আমি জানি না আমার মাথা ঘুরাচ্ছে
আপনি ভাবুন,আমিও আপনাকে বিশ্বাস করতে পারছি না আর আপনিও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না
.
আন্টি!
.
হ্যাঁ বাবা বলো
.
আন্টি আমি এই ছেলেটার খোঁজ বের করছি আপনি আহানাকে কিছু বলবেন না কেমন?
.
আহানা মনে মনে শান্তকে গালি দিয়েই যাচ্ছে,মা ওকে এক ধমক দিয়ে বললেন চা বসাতে
শান্ত মানা করে বললো তার কাজ আছে সে এখন চলে যাবে
এটা বলে সে চলে গেলো
আহানা ভয়ে মায়ের দিকেও তাকাচ্ছে না,মুখটা কোনোমতে ধুয়ে বাচ্চাদের পড়াতে চলে গেলো সে
২৪টা বাচ্চার একটা ছোট্ট স্কুল চালায় আহানা,সবাই ১০০করে দেয় মাসে,তারাও গরীব,এর চেয়ে বেশি দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের
তো এখন আহানা তাদের পড়াচ্ছে মনোযোগ দিয়ে
এর মধ্যে ঘটে গেলো বিপত্তি
রতন তার কিছু দলবল নিয়ে এসে বাচ্চাদের সাথে বসে পড়েছে
আহানা চোখ রাঙিয়ে ওদের বললো এখান থেকে চলে যেতে
রতন হেসে হেসে বললো”জায়গা কি তোমার বাপের নাকি? আমার মন চাইছে বসছি,কি করবা?”
.
আহানা বাচ্চাদের ছুটি দিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে হেঁটে চলতেই রতন ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে দেখতে বললো”কতদিন ছুটি দিয়ে দিবা,আমি তো প্রতিদিন আসবো জানেমান”
.
আহানা আর কিছু বললো না,বললেই তিল থেকে তাল হয়ে যাবে তাই সে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো,বাসায় এসে ব্যাগ ছুঁড়ে মারলো বিছানায়
মা ভাত বাড়তে বাড়তে বললেন”আবারও রতন জ্বালিয়েছে?”
মা ভালো করেই জানেন রতনই সবসময় এমন এমন কাজ করে যাতে আহানার মেজাজ বিগড়ে তারপর সে বাসায় ফিরে
.
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো”আর কতো??আর কতো সহ্য করবো আমি?”

তাই তো বলছি চাকরি একটা খোঁজ তাহলে আর তোকে দিনে বেশি দেখবে না, জ্বালাবেও কম
.
হুম তাই তো মনে হয় করতে হবে
.
আহানা আজ আর ভার্সিটিতে গেলো না,সারাদিন টইটই করে চাকরি খুঁজে গেলো,কিন্তু তার যোগ্যতা দিয়ে কোনো চাকরি পাচ্ছে না সে
যদি ইন্টারমিডিয়েটে এ+ পেতো তাও হতো আর তার তো গ্রেট ছিল এ গ্রেট যার কারণে চাকরির ধারের কাছেও নেই সে
মন খারাপ করে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল সে হঠাৎ মনে হলো শান্তর অফিসে যাবে,যদি চাকরি পায়?কিন্তু শান্ত তো ওকে দেখলেই শুরু করবে খোঁচানো,কি করা যায়!
আর সেদিন শান্তকে ফোনে কথা বলতে শুনেছিল তাদের নাকি একটা সহকারী এসিস্টেন্ট লাগবে যে ক্লাইন্টদের সাথে সব মিটিং এটেন্ড করবে সহকারী হিসেবে
আমি যদি ছদ্দবেশেও যাই তাও তো আওয়াজ শুনে চিনে ফেলবে,ধুর,এই আশাও গেলো
.
আচ্ছা এক কাজ করলে হয় না?অফিসে কে চাকরি তে ঢুকলো তার ইন্টার্ভিউ তো আর শান্ত নিবে না,তাহলেই তো হয় কেউ চিনবে না আমাকে,জলদি করে বোরকা একটার ব্যবস্থা করে নিতে হবে
আহানা দৌড়ে বাসায় ফিরে গেলো,খুঁজে খুঁজে একটা কালো বোরকা পেলো সে,ইন্টারে পড়ার সময় রতন অতিরিক্ত জ্বালাতো বলে আহানা এই বোরকা পরে বের হতো সবসময়
তো যেমন ভাবা তেমন কাজ! বোরকা পরে সে “Shanti’s Group of industry ” এর সামনে এসে হাজির
গুনে গুনে ১২তলার একটা দালান
আহানা দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো মেইন ফ্লোর কোনটা উনি বললেন শান্ত যে ফ্লোরে থাকে সেটা হলো ৯তলায়
আহানা তাই হিজাব ঠিক করে লিফটে গিয়ে দাঁড়াতেই ৪৪০ভোল্টের একটা শক খেলো
ওর পাশেই শান্ত আর তার পিএ ঊষা দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে
আহানার মন চাচ্ছে লিফট থেকে লাফ দিয়ে মরে যেতে
শান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে ঊষাকে বলছে”আজ সে ৬টার আগেই বাড়ি ফিরে যাবে
কথাটা বলে সে আহানার দিকে তাকালো,পরনে কুচকুচে কালো বোরকা,ইয়া বড় হিজাব,মুখ তো দূরে থাক চোখ ও দেখা যাচ্ছে না
শান্ত চোখ নামিয়ে ফোন কানে ধরে বেরিয়ে গেলো লিফট থেকে
আহানাও বের হয়ে গেলো ওদের সাথে,ঊষা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে আহানা ওদের পিছু পিছু আসতেছে
ঊষা থেমে গিয়ে আহানাকে বললো”কিছু লাগবে আপনার?”
.
আহানা হালকা কেশে গলা মোটা করার চেষ্টা করে বললো”আমি আসলে ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং এটেন্ড করতে যে এসিস্টেন্ট খুঁজতেছিলেন আপনারা আমি সেটার ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছি
.
ওহ তাহলে সোজা গিয়ে ডান পাশের কেবিনে সিরিয়ালে বসুন,আমি আসতেছি
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে ছুটলো সেদিকে,শান্ত চলে গেছে তার অফিস রুমের দিকে
ঊষা শান্তকে কফি দিয়ে এসে ইন্টার্ভিউ নিতে এসেছে
একটা চেয়ার টেনে বসে বললো”মিনিমাম বিএ পাস হতে হবে এবং ইংরেজীতে দক্ষ হতে হবে আর কথা মার্জিত হতে হবে,যারা যারা এসব কিছুর যোগ্য তারা যেন এক এক করে আসে
আহানা থ হয়ে বসে আছে,একে তো সে বিএ পাস না আরেকেতো ইংরেজী বলায় মোটামুটি বলতে পারবে সমস্যা না,ছোট থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে সে,বাবা যখন মারা যায় তখন সে ক্লাস নাইনে পড়তো তার পর থেকে সে বাংলা মিডিয়ামে পড়েছে কারণ মায়ের কাছে এত টাকা ছিল না যে ইংলিশ মিডিয়ামের ফিস জোগাড় করবে
তাই বলতে গেলে ইংরেজীতে ভালোই পারদর্শী আহানা
কথা হলো বিএ পাস নিয়ে
আহানা মুখের পর্দা উঠিয়ে ঊষার কাছে এসে ভ্যাত করে কেঁদে দিলো
বললো”আমার সব ঠিক তবে বিএ পাস ঠিক নেই,আমি আইএ পাস আর অনার্সের ছাত্রী,প্লিস আমাকে চাকরিটা দেন😭
.
আরে আরে মঘেরমুলুক নাকি,এমন করে চাকরি পাওয়া যায় না,আপনি প্লিস যান
.
না প্লিস আমাকে চাকরিটা দেন,আমার ৩টা বাচ্চা না খাইয়া আছে😂😭
.
কিহ!এ বয়সে ৩টা বাচ্চা?আপনি প্লিস অন্য কোথাও দেখুন
.
অন্য কোথাও যাবো কি করে আমি??
এই কোম্পানির অনেক নাম ডাক শুনেছি,আপনারা নাকি যোগ্যতা দেখে চাকরি দেন
তো আমার তো খালি আই আর বিএ এর মধ্যে তফাৎ
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহা আপনি বুঝতেছেন না,এভাবে চাকরি পাওয়া যায় না
এখন আপনাকে চাকরি দিলে অন্যদের সাথে বেইমানি করা হবে
আপনি প্লিস অন্য কোথাও ট্রাই করুন,আমাদের সময় নষ্ট করবেন না
.
প্লিস!!!রিকুয়েস্টটা রাখুন আমার
.
এক মিনিট স্যার ফোন দিয়েছে
হ্যালো স্যার!!
.
কি সমস্যা?এত চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে কেন?কি হয়েছে?
.
স্যার একটা মেয়ে এসে চাকরির জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে
মানতেই চাচ্ছে না
তার নাকি ৩টা বাচ্চা না খেয়ে আছে
.
উনার যোগ্যতা কতদূর?
.
স্যার সব ঠিকঠাক তবে আইএ পাস
বিএ পাস না
.
ইংলিশে কথা বলতে বলো,দেখো কত স্পীডে বলতে পারে তারপর নাও
.
ওকে স্যার
.
আহানা চোরের মতন ঊষার মুখের দিকে চেয়ে আছে,শয়তানটা কি বলছে কে জানে
ঊষা ফোন রেখে আহানাকে বললো ইংরেজীতে নিজের পরিচয় দিতে
আহানা বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে ফটরফটর করে ইংরেজীতে নিজের পরিচয় দিতে থাকলো
My name is Suhana Yasmin, I am married, I have two children, my husband has left me
.
এক মিনিট,তোমার সার্টিফিকেটে লেখা আহানা,তাহলে নাম সুহানা হলো কেমনে?
.
ইয়ে আসলে সার্টিফিকেটে সুহানার জায়গায় আহানা লিখে ফেলেছে কম্পিউটারের লোকটা,পরে ঠিক করতে ৫০০টাকা চাইছিলো বলে ঠিক করাইনি,আপনারা আমাকে সুহানা ডাকিয়েন
.
ওকে ডান,তোমার কথা আমার ভালো লাগছে,তোমার চাকরি কনফার্ম
.
থ্যাংক ইউ সো মাচ!!
.
এক মিনিট ম্যাম,তাহলে আমরা কি দোষ করলাম?আমাদের ও তো ফ্যামিলি আছে,আমরাও ইংরেজীতে পারদর্শী
.
আহানা ব্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে চেয়ে বললো”তো?তোমার কি আমার মত ৩টা বাচ্চা আছে?তোমারেও কি তোমার বউ ছাইড়া দিসে?আজব সাজব কথা কয়
.
ছেলেটা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
.
ওকে সুহানা,তুমি এখন চলো স্যারের সাথে কথা বলবে
.
আহানার কাশি উঠে গেলো ঊষার কথা শুনে
কাশতে কাশতে বললো”আমার না ভয় করে,আমি আসলে…
.
আরে কিছু হবে না,আর চাকরি এটাতে তো তোমাকে সারাক্ষণ স্যারের সাথে এদিক ওদিক যেতে হবে,স্যারের তো ক্লাইন্ট পার্টনার তুমি এখন থেকে
.
আহানা কথাটা শুনে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে
কি বলতেছে এই মেয়েটা!আমি তো ভেবেছিলাম একা আমি গিয়ে ক্লাইন্ট সামলাবো,এখন দেখি আমার সাথে উনিও যাবেন
একেই বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়
.
কি হলো চলো!
.
ঊষা আহানার হাত মুঠো করে ধরে হেঁটে চলেছে
আহানা কি করবে!! কি করে পরিস্থিতি সামলাবে সেটার মারপ্যাঁচ বের করছে
ঊষা করিডোর পেরিয়ে সবার শেষের একটা বিরাট অফিস রুম আছে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো,দরজায় নক ৪বার করে বললো “স্যার আসবো?”
.
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে বললো আসতে
.
ঊষা ভিতরে ঢুকে বললো “স্যার ঐ ক্লাইন্ট মিটিং এটেন্ড করার জন্য আপনার নিউ পার্টনার কে এনেছি,ওকে কি ডাকবো?”
.
হ্যাঁ ডাকো
.
সুহানা!
.
শান্ত চমকে দরজার দিকে তাকালো
সুহানা??নামটা ওকে মনে হয় গলা ধরে বলতেছে সুহানা না এটা হবে আহানা
শান্ত থ হয়ে দরজার দিকে চেয়েই আছে
আহানা পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকলো,সে একটা কথা ভালো করে ঠিক করে নিয়েছে আর সেটা হলো মুখ খুলবে না,মুখ খুললেই শান্ত ওকে চিনে ফেলবে,কোনো কথা বলবে না
.
শান্ত ব্রু নাচিয়ে বললো”বোরকা??
.
ঊষা আহানাকে খোঁচা দিয়ে বললো মুখ থেকে পর্দা সরাতে
আহানা মাথা নাড়িয়ে “না” জানালো
.
শান্ত আবার ল্যাপটপে মনে দিয়ে বললো”ঊষা ২কাপ কফি নিয়ে আসো,একটাতে চিনি বেশি আরেকটা উইথ আউট সুগার
.
ওকে স্যার
.
আহানা ঢোক গিলে রোবটের মত রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে,দোয়াদরুদ সব পড়া শেষ তার
.
ঊষা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই শান্ত চোখ তুলে তাকালো আহানার দিকে
শান্তর এই চাহনি দেখে আহানা মনে হয় এখনই মরে যাবে
শান্ত তার চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে আসতেছে এদিকে
আহানা ভয়ে এদিক ওদিক তাকালো তারপর ভাবলো নাহ এমনি হয়ত কথা বলার জন্য আসতেছে এদিকে
.
শান্ত সোজা গিয়ে দরজাটা লক করে ফেললো
এটা দেখে আহানার ভয় এবার চরম শিখরে
.
শান্ত আহানার একদম কাছে এসে দাঁড়ালো এবার
আহানা কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার একটা টেনে বসে পড়েছে ততক্ষণে
শান্ত মুচকি হেসে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
তারপর টাই টানতে টানতে বললো”কি ব্যাপার আহানা সরি সরি সুহানা ম্যাডাম!!আমাকে এত ভয় পেলে চলে?আমার সাথেই তো আপনার এখন থেকে সব মিটিং এটেন্ড করতে যেতে হবে”
.
আহানা মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে,শেষমেষ ধরা খেয়েই গেলো,কথা হলো গিয়ে চিনলো কি করে
.
শান্ত আহানার মাথার থেকে হিজাবটা টান দিয়ে উঠিয়ে বললো”তোমাকে চিনতে আমার কোনো সার্টিফিকেট লাগবে না বুঝছো?তোমাকে আমি হারে হারে চিনি!!
এ কদিনে তোমার গায়ের ঘ্রান তোমার হাঁটা চলা,এবং মোস্ট ইমপরট্যান্ট থিংক তা হলো তোমার পায়ের বড় তিলটা ওটা দেখেই আমি সিউর হলাম এটা সুহানা নয় আহানা
.
আহানা এখনও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
.
আগে বলো এরকম বেশে আসছো কেন?কি হইছে?এত নাটকের মানে টা কি?
.
আহানা ব্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”চাকরির দরকার কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না বলে এখানে এসেছি,আপনি তো আমাকে দেখলেই খোঁচাতেন তাই এমন বেশে আসছি আর দেখেন সেই খোঁচাচ্ছেনই
.
চাকরি দরকার মানে?কি করবা টাকা দিয়ে?
.
সংসার কি আপনি চালান?আমি একা চালাই,টাকা দিয়ে কি করবো?
নুন আনতে পান্তা পুরোয় আর আপনি বলতেছেন কি করবো?
এতদিন পর আপনার পরিবারের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে,আমাদের অবস্থা সম্পর্কে সবটা জেনেও আপনি কোন মুখে জিজ্ঞেস করেন যে টাকা দিয়ে কি করবো?
নাচবো,খুশি?
.
আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করেছি,তাই বলে এত হাইপার হচ্ছো কেন?
তোমার চাকরি করতে হবে না,তোমাদের সংসার আমি চালাবো
.
ঢং করার দরকার নাই,আপনার হেল্পের কোনো দরকার নাই আমাদের,আমি এই চাকরিটাও করবো না

কি ব্যাপার ভিতর থেকে দরজা লক কেন?
স্যার!!!কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
.
আহানা ঊষার কথা শুনতে পেয়ে টেবিলের উপর থেকে হিজাবটা নিয়ে পরতে পরতে দরজা খুলে বেরিয়ে চলো গেলো
ঊষা চিন্তিত হয়ে ভিতরে ঢুকে বললো”কি হয়েছে স্যার?”
.
কিছু না,জাস্ট ফর গেট ইট!
.
আহানা যেতে যেতে পথেই কেঁদে দিলো
এই লোকটার কাছে আমরা ভালো আছি নাকি খারাপ আছি সে ব্যাপারে কোনো কিছু যায় আসে না,টাকা দিয়ে কি করবো মানে?কি করে এটা বললো আমাকে!আমাদের অবস্থা কি দেখে না?
না খেয়ে মরবো তাও এই অফিসে আমি চাকরি করবো না বেয়াদব একটা!!
শুধু শুধু সময় নষ্ট করছে আমার
.
আহানা বাসায় ফিরতেই দেখলো মা দরজা খুলে ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই
আহানা কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেলো
.
কিরে?চাকরি পেলি?
.
চাকরি তো আর হাতের মোয়া না যে পেয়ে যাবো আর তোমার ঐ শান্ত!!বললো আমার আবার টাকার কিসের দরকার,টাকা দিয়ে কি করবো এসব বললো আমাকে
.
শান্ত?ওকে পেলি কই?আর ও এসব বললো মানে?
.
বাদ দাও,কেমন পরিবারের ছেলে উনি?আমাদের অবস্থা তো নিজের চোখে দেখেছে তাও বলে আমার টাকা কেন দরকার,কেন চাকরি খুঁজতেছি এসব বললো আমায়
.
আরে হ্যাঁ আমার তো মাথায় আসেনি,তুই তো শান্তর অফিসেই কাজ করতে পারিস
.
তোমার মাথা ঠিক আছে?এত অপমানিত হয়ে এলাম আর তুমি বলতেছো ঐ হারামির অফিসে আমি চাকরি করবো?মরে গেলেও না
না খেয়ে থাকবো এখন থেকে
.
শুন,মজা করিস না,হাতের কাছে সুযোগ আর তুই জেদ ধরে বসে আসিস,জীবনে নিজের জেদ নিয়ে বসে থাকলে উপরে উঠা যায় না আহানা
তুই আবার যা শান্তর অফিসে,ও তোকে ভালো চাকরি দিয়ে দিবে,তাতে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে কিছুটা হলেও
.
না আমি যাব না
.
তুই রতনের ভয়ে সকালে বাচ্চাদের পড়াতে পারবি না বিকালে টিউশনি করাতে পারবি না তারমানে তুই চাস আমি না খেয়ে মরি?এতদিন নিজে খেটে আমি তোকে খাইয়েছি আর বুড়ো বয়সে এসে তুই আমাকে এই দিন দেখাবি এটা জানলে আমি কত আগেই তোর বাবার সাথেই মরে যেতাম
.
মা প্লিস!থামো
আচ্ছা ঠিক আছে,আমি যাচ্ছি,তুমি যা চাও তাই হবে,ঐ শান্তর পা ধরে বসে থাকবো তাতে যদি তুমি খুশি থাকো তো ভালো
কথা শেষ করে আহানা বোরকা খুলে ওড়না হাতে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
সন্ধ্যা ৬টা বেজে এসেছে,, শান্ত অফিস রুম থেকে বের হতেই দেখলো আহানা আসতেছে তেড়ে
.
শান্ত হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”আবার কি?তোমার সাথে তো এখন আর কথাই বলতে ইচ্ছে করে না আমার, যাই বলি তা নিয়েই শুরু করে দাও”
.
শুনুন,আমার যথেষ্ট আত্নসম্মান আছে কিন্তু মায়ের ভরণপোষনের জন্য বাধ্য হয়ে আমাকে সেই আপনার অফিসেই আসতে হলো
তাই বলে এই নয় যে আপনি আমাকে যা তা বলে কথা শুনাবেন,ভুলে যাবেন না আমি আপনার কে হই সম্পর্কে
.
তুমি আমার কিছু হও না,তোমার বাবা আমার বাবার বেস্টফ্রেন্ড এই সূত্র ছাড়া আর কিছু না
.
চাকরি দিবেন নাকি চলে গিয়ে মাকে বলতাম তার সো কলড শান্ত আমাকে চাকরি দেয়নি
.
এক শর্তে দিব
.
কি?
.
আমার সব কথা শুনতে হবে
.
আমি এখনই মা কে ফোন করে বলতেছি যে আপনি চাকরি দেওয়ার নাম করে আমাকে কিসব শর্ত দিচ্ছেন
.
তুমি কেন?আমি ফোন করছি
শান্ত ফোন বের করে আহানার মাকে কল করলো
মা ফোন ধরতেই শান্ত বললো”সে আহানাকে জাস্ট বলেছে অফিসের কাজে আহানা যেন তার কথা শুনে কিন্তু না আহানা আবারও রাগ দেখাচ্ছে, চাকরি করবে না বলতেছে
.
আহানা চোখ বড় করে বললো”এসব কি উল্টা পাল্টা বলে আমার মায়ের মাথা খাচ্ছেন আপনি??”
.
মা শান্তকে বললো ফোন আহানাকে দিতে
আহানা ফোনটা নিয়ে কানে ধরতেই মা কেঁদে কেঁদে বললেন”তোর জায়গায় আমার একটা ছেলে থাকলে আজ চাকরি করে আমাকে খাওয়াইতো আর তুই এইটুকু পারতেছিস না আমার জন্য
.
এসব কি বলতেসো তুমি?২বছর ধরে আমি সংসার চালাচ্ছি আর তুমি আমাকে এখন খোঁটা দিচ্ছো?
.
মা লাইন কেটে দিলেন আর কিছু বললেন না
আহানা রেগে শান্তর ফোন ওর গায়ে ছুঁড়ে মারলো
.
আউচ!
বসকে কেউ এমন করে মারে?একদম চাকরি খাবো তোমার
.
বিশ্বাস করেন আপনার মতো ফালতু লোক আমি আর দুটো দেখিনি
.
তো দেখো এখন,সূবর্ণ সুযোগ
.
আহানা রেগে মেগে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়লো
শান্ত ঊষাকে ডেকে বললো আহানাকে অফিসের ফর্মটা দিয়ে যেতে আহানা সেটা ফিল আপ করবে
.
আহানা মাথার চুল টানতেছে আবার গলা ঘষতেছে,
সারাদিনে কিছুই খয়নি সে,পাগলের মত চাকরি খুঁজে গেছে এখন শরীর খারাপ করছে,গলা জ্বলতেছে
.
আহানা ফর্ম হাতে নিয়ে টেবিলে মাথা রেখে পূরন করতেছে
শান্ত দূরে চেয়ার টেনে বসে পায়ের উপর পা তুলে একটা কর্মচারীকে ডেকে বললো একটা বার্গার আর চা আনতে
.
আহানার সামনে এনে কর্মচারী বার্গার আর চা রাখলো
শান্ত দূর থেকে বললো”ভেবো না তোমার প্রতি আমার মায়া আছে,নতুন কর্মচারীদের আমরা এমন করে ওয়েলকাম করি,কিছু খাইয়ে,খালি মুখে যেতে দেই না
.
আহানা ফর্ম একপাশে রেখে গাপুসগুপুস করে পুরো খাবার সাবাড় করে দিয়ে পানি খেয়ে এবার চা খেতে খেতে ফর্ম পূরন করছে
শান্ত মুচকি হেসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হাসি থামানোর জন্য
আহানা ফর্মটা পূরন করে শান্তর হাতে দিয়ে ব্রু কুঁচকে চলে যাচ্ছে
.
এই মেয়ে!!
.
কি?
.
বস কে আসতে যাইতে সালাম দিবা বুঝছো?
.
সবাই গুড মর্নিং,গুড ইভেনিং,গুড নাইট এসব বলে,আমিও নাহয় ওসব বলবো
.
না তুমি সালাম দিবা আমাকে
.
আপনার……👿
.
ডিল ইজ ডিল,চাকরি দেওয়ার আগে বলেছিলাম আমার সব কথা তোমাকে শুনতে হবে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে শান্তর সামনে এসে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে অনেক কষ্টে দাঁত কেলালো,তারপর হেসে দিয়ে বললো”স্যারররর,আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
চলবে♥