Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1438



প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৬৮ এবং শেষ পর্ব

3

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৮(শেষ পর্ব)
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সেদিন ছিল সোমবার,খুশির দিন ও বলা যেতে পারে আবার কষ্টের দিন ও বলা যায়
কারণ যেদিন একসাথে সুখবর এবং খারাপ খবর দুটোই এসেছিলো আমার জীবনে
আমি আসলেই ভাবতে পারিনি আমি সে সময়টায় গর্ভবতী ছিলাম,শুরু থেকেই ডাক্তার বলে এসেছিলো আমার বাচ্চা এবনরমাল হবে,প্রতিবন্ধী টাইপ হবে কিংবা অটিস্টিক ও হতে পারে
কারণ আমি ঝিনাইদহে শান্তর সাথে মজা করতে গিয়ে পা পিছলিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম,পড়ে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে আমি জ্ঞান হারিয়েও ফেললাম তারপর যখন চোখ খুললাম আশেপাশে শান্ত আর নানু, মামিকে দেখতে পেলাম,নানু আমার দিকে চেয়ে ইচ্ছে করে হাসার চেষ্টা করলেন,কারণ ততক্ষণে ডাক্তার বলে দিয়েছে তাদের যে আমি প্রেগন্যান্ট আর শান্ত খুশি হওয়ার পরিবর্তে মুখটা কালো করে রেখেছে কারণ ডাক্তার সাথে এটাও বলেছেন আঘাতটা পেটে পড়ায় বাচ্চা হয় মরবে নাহয় এবনরমাল হয়ে জন্মাবে
এবরশান করানো যাওয়া যেতো কিন্ত এবরশান করালে পরে বাচ্চা হতে নানান সমস্যা হয়
এই ভেবে ভুলটা আর করলাম না
আমি সেদিন থেকে ধরেই নিয়েছিলাম আমার সন্তান আর ৫টা মানুষের মতো হবে না,আমি নিজেকে শুরু থেকেই তৈরি করতে থাকলাম
কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না??”যেটা ভাবি সেটা হয় না,যেটা ভাবিনা সেটা হয়”
অবশ্য আরেকটা কথাও আছে,নেগেটিভ ভাবলে পজিটিভ হয়
আমার ক্ষেত্রেও তাই,আমাকে আল্লাহ উপহার স্বরুপ একজন প্রতিভাবান সন্তানের জননী বানালেন,যে কিনা ক্লাস ৫এ পড়াকালীন ক্লাস ৭এর পড়া বুঝে,আমি আসলেই ভাগ্যবতী

মিসেস আহানা তা আপনি প্রেগনেন্সিতে কি কি খেয়েছিলেন যদি একটু বলতেন?
.
হাহা,সেটা কোনে ফ্যাক্ট না,আপনার ভাগ্যের উপর নির্ভর করে,অবশ্য আমার যদি প্রতিভাবান সন্তান না হয়ে প্রতিবন্ধী ও হতো আমার কিছু যায় আসতো না,কারণ আর যাই হোক সে তো আমারই সন্তান তাই না?
.
Attention everyone! এবার মঞ্চে নাচ করতে আসবে হুমাইরা হক,হাত তালি!!
.
যে নাচ করতে আসবে সে বুঝি আপনার মেয়ে?
.
না!আমার মেয়ে তো যে উপস্থাপনা করছে সে
নাম তার”শান্ত্বনা শাহরিয়ার”
.
কিহ?এই বয়সে এত ভালো ইংরেজি বলতে পারে?আমি তো শুরু থেকে এর কথা বলার দিকে খেয়াল রাখছিলাম,মাই গড এটা আপনার বেবি?তা আপনার বাবুর বাবা কই?তাকে তো দেখছি না!
.
সে অফিসের কাজে ব্যস্ত বলে আসতে পারেনি আজ
.
শান্ত্বনা কিছুতে পার্টিসিপেট করেনি?
.
করেছে তো,সে গান গাইবে,তার বাবার মতো তার গলার আওয়াজ ভালো
.
আচ্ছা
.
হুমাইরার নাচ দেখলেন, আপনাদের এবার পারফরমেন্স দেখাবো আমি নিজে
আমার বাবার পছন্দের গানটা আমি আমার মত বানিয়েছি😎আজ সেটা গাইবো,হাত তালি!!!
.
আহানা হেসে দিয়ে হাত তালি দিলো,তবে তার মেয়ে যে কি গান গাইবে তা তার অজানা,বাসায় তো বলেছিলো সে একটা চেনাপরিচিত গান গাইবে তার মতো করে

চাইনা ছেলে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে তুমি কারও নও
চাইনা ছেলে তুমি অন্য কারও হও,পাবে না কেউ তেমাকে তুমি কারও নও
আমারও নও
ওও!হোহোহোহো
.
আহানা চোখ ইয়া বড় করে শান্ত্বনার গান শুনছে,তারপর জিভে কামড় দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না আমি,পুরো বাপের কার্বন কপি হয়েছে একটা
.
আহানা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে স্টেজে এসে শান্ত্বনার
কান ধরে নামিয়ে নিয়ে গেলো স্কুলের গেটের দিকে
.
তোকে এসব শিখিয়েছিলাম?এই তোর প্রতিভা?মিসেস রানুর সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা করে দিলি
আজ থেকে ৫দিন তোর চাউমিন খাওয়া বন্ধ
.
না মা এত বড় শাস্তি দিও না
.
তোর বাবাকে কল করে জানাচ্ছি আমি,প্রতিভা না ছাই,এত এত প্রশংসা করতেছিলাম মেয়েটার আর সে এটা কি করলো!স্কুলে কেউ এসব গান গায়?
.
হুমাইরা যে পাগলু ডান্স –ডান্স—ডান্স গানে নাচলো তখন ওর আম্মু তো ওরে কিছু বললো না,আবার শশী যে পরান যায় জলিয়া রে গানের সাথে অভিনয় করলো তাও তো ওর মা ওকে বকলো না,তাহলে আমি কি দোষ করলাম?
.
তাই বলে এমন গান?চাই না ছেলে তুমি অন্য কারো হও?আজ তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে
.
শান্ত্বনা দৌড় দিয়েছে আহানার ভয়ে
তারপর এক দৌড় স্কুলের বাইরে চলে আসলো সে,একটা খয়েরী রঙের কার এসে থেমেছে তার সামনে,শান্ত্বনা দেরি না করে পটাপট উঠে গেলো সেটাতে
.
বাবা হারি আপ,মা আজ আমাকে মেরে ভূত বানিয়ে দেবে তা না হলে
.
কি হয়েছে বলো,নাহলে এখন না বলে তোমাকে নিয়ে পালালে আমাকেও তোমার সাথে মেরে ভূত বানিয়ে দেবে
.
ঐ যে আমি গান লিখেছিলাম,চাই না ছেলে তুমি অন্য কারও হও সেটা গেয়েছিলাম স্টেজে আজ
.
ইস!তোমাকে কে বলেছিলে গানটা ওখানে গাইতে,আমি তো তোমাকে শিখিয়েছিলাম বন্ধুদের মাঝে গাওয়ার জন্য
.
আহানা শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজে এগিয়ে এসে কারের কাছে দাঁড়িয়ে বললো”বের হ কার থেকে,আবার পালানো হচ্ছে?”
.
মিসেস আহানা!!!ওয়েট আ মিনিট
.
আহানা কারোর ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকালো,শান্ত্বনাদের স্কুলের হেড টিচার হাতে একটা ট্রপি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে আসতেছেন এদিকে
.
কি হয়েছে ম্যাম?
.
আপনার মেয়ে এই ট্রপিটা জিতেছে,সেটা না নিয়েই চলে যাচ্ছিলেন আপনারা
.
কিসের জন্য জিতেছে এটা?ও তো কিছুতে,আই মিন ঐ গানটার জন্য পেয়েছে?
.
ইয়েস!ওর গানের লিরিক্স কেমন ছিল সেটা আমরা কাউন্ট করি নাই,আমরা জাস্ট দেখেছি ওর গানের গলা কেমন,জাস্ট ওসাম গেয়েছে আর তাই বরাবরের মতো সে বিজয়ী
.
ইয়াহু!!দেখলে বাবা আমি জিতলাম
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে ট্রপি হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”তোমরা এখানে থাকো,আমি আমার সব বান্ধুবীদের দেখিয়ে আসি,আমার মেয়ে ফালতু একটা গান আই মিন ইউনিক গান গেয়ে এওয়ার্ড পেয়েছে
.
হ্যাঁ যাও যাও
.
শান্ত্বনা ঠিক হয়ে বসে বললো”বাবা!এখন এফবিতে গিয়ে দেখো,মা এতক্ষণে ২০/৩০টা পোস্ট দিয়ে ফেলেছে আমার ট্রপিটা নিয়ে
.
তোমার মা দুনিয়ায় এক পিসই আছে,কিভাবে এতবছর সামলাতে পেরেছি তা আমি জানি,আর এ কদিনে তুমিও জানো
.
রাইট,পিটি অন ইউ
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”তোরে এত পাকনামি কে শেখায়?”
.
রক্তিম,আর কে শেখাবে!
.
তা সে জিতে নাই কিছুতে?
.
আসলে তো জিতবে
.
আসেনি কেন?
.
স্কুলের এই অনুষ্ঠানটা নাকি বোরিং,আর তাই রক্তিম গেছে ফুটবল ম্যাচ এটেন্ড করতে
.
আর তাই তুমি ওর উপর রেগে আছো?
.
হু
.
ভেরি গুড

এই শুনুন
.
ইস রে বুকে লাগলো!
.
বিয়ের এত বছর পরেও আপনার বুকে লাগে?
.
পাগলি তু নেহি সামজেগা
.
সরেন! বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছে,মায়ের কি খবর,অনেকক্ষণ দেখি না,টেনসন হচ্ছে,চলুন যাই
.
হুম
.
৩জনে মিলে বাসায় ফিরে আসলো,এসে দেখলো মা খালা মিলে শান্তি রহমানের রুমে বসে আছেন কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছেন তারা
.
কি গো,,আমাকে না নিয়েই গল্প শুরু করে দিলে?আমিও শুনি একটু এত হাসির কি কারণ
.
শান্ত্বনা দৌড়ে গেলো নিতুর রুমের দিকে
.
আরে বলিস না,রক্তিম আর শান্ত্বনার কান্ডকলাপ নিয়ে হাসতেছি আমরা
.
কেন মা?কি করলো আবার?আমাকে এটা বলো না যে শান্ত্বনা আবার রক্তিমকে চড় মেরেছে?
.
হুম সেটা নিয়েই হাসতেছি এবার নাকি রক্তিম পাল্টা চড় মেরেছে
.
আচ্ছায়ায়ায়ায়া,তাই তো বলি আমার মেয়ের সকাল থেকে মন খারাপ কেন😂
.
শান্ত আহানাকে এক ধাক্কা মেরে বললো”তোমার মেয়ে একদম তোমার মতো হয়েছে”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে খানিকটা হাসলো তারপর হঠাৎই মাথায় হাত দিয়ে সে নিচে পড়ে গেলো সবার সামনে
শান্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল বলে আহানা পড়ে যাওয়ার সময় ধরতে পারেনি ওকে,নিমিষেই সব হাসি গায়েব সবার মুখ থেকে
শান্ত আহানাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন করলো আসার জন্য
ডাক্তার এসে আহানাকে চেক করে বললেন”বমি করে বেশি?সিক?”
.
হ্যাঁ,কয়েকদিন ধরে শুধু বমি করছে
.
ডাক্তার মুচকি হাসলেন
.
ডাক্তারের মুখে হাসি দেখে শান্ত মাথায় হাত দিয়ে আহানার পাশে বসে পড়লো তারপর ছলছল চোখে চেয়ে বললো”শান্ত্বনার বয়স যখন ৩বছর ঠিক সেসময়টা থেকে আমরা আরেকটা বেবির জন্য ট্রাই করছিলাম বাট সেই সুখবরটা আসছিলো না, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি,এতবছর পর সুখবরটা আসবে এটা একদম ভাবনার বাহিরে ছিল,ভেবেছিলাম আর আসবে না
.
বি কেয়ারফুল,শান্ত্বনার সময় কি হয়েছিলো মনে আছে তো?এবার একটু সাবধানে থাকবেন আপনারা দুজনেই,বেশি বেশি খেয়াল রাখবেন,দেরিতে কনসিভ করা বাচ্চার কেয়ার আলাদা করে নিতে হয়
.
অবশ্যই আমি খেয়াল রাখবো
.
তবে এভাবে হাবভাব দেখে তো বুঝা যায় না আসলেই গর্ভবতী কিনা,আপনারা বরং হসপিটালে এসে একবার টেস্ট করিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ সিউর হয়ে নিন
.
আচ্ছা সেটা করে নিব
.
আহানার হুস ফিরে এসেছিলো একটু আগেই,আহানা কথাগুলো শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লো সাথেসাথে,তারপর পেটে হাত দিয়ে বললো”আল্লাহ এবার যেন একটা আহান্ত আসে আমার কোল জুড়ে”
.
আরেকটা শান্ত্বনা হলেও সমস্যা নাই
.
আরে এই শান্ত্বনাকে সামলাতে গিয়ে আমি শেষ,পুরো আমার মত হয়েছে,ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখতাম “আমার মেয়ে আমার এটিটিউড পেলে আমি শেষ”আর সেই পোস্ট টা যে এত সত্যি হবে আগে জানতাম না
.
এবার ভাবো তোমাকে আমি সামলাচ্ছি কি করে
.
ইহ!সরুন,আমি এখন ফরেস্ট কেক খাব
.
শুনলাম প্রেগনেন্সিতে আচার খায়,বাট তুমি দেখি মিষ্টি খাচ্ছো
.
মিষ্টিও খায়,বুঝছেন?
.
শান্ত মুচকি হেসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চললো
.
এই এই!আমি হেঁটে যেতে পারব তো
.
ডাক্তার বলেছে কোলে কোলে রাখতে
.
তাই না?
.
হুম,
.
আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো
.
কি?
.
শান্ত্বনা রক্তিমকে থাপড়ায় তো রক্তিম পাল্টা ওকে থাপড়ায় কি করা যায় বলুন তো?
.
রিয়াজের ছেলে আমার মেয়েকে চড় মেরেছে তো?ওর একদিন কি আমার যতদিন লাগে আজ
.
আপনার মেয়ে যে এতদিন মেরে এসেছে?নওমি তো একটিবারও বিচার দিতে আসেনি
.
সেটাও তো কথা,আচ্ছা আমি শান্ত্বনাকে বুঝিয়ে বলবো বাট এরপরেও যদি রক্তিম শান্ত্বনাকে মারে তো আমি রিয়াজের কাছে যাব সোজা
.
তখন দেখা যাবে এখন নামান তো,
.
শান্ত আহানাকে নামিয়ে দিয়ে নিতুর রুমের দিকে গেলো নিতু আর শান্ত্বনার সাথে গল্প করতে

আজ এতটা বছর পর আহানা সেই আবারও মন খুলে হাসলো শান্তর সূর্যমুখী বাগানটার দিকে চেয়ে
আর মা হচ্ছিলো না বলে নিজেকে এতদিন সে দোষারোপ করে করে আসছিলো,কারণ তার যে একটা আহান্ত চাই
যাকে সে সারাদিন ধরে দেখবে,দুচোখ ভরে!
যেখানে সে এখনও লজ্জার কারণ সামনা সামনি অনেকক্ষণ ধরে শান্তর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না,লজ্জায় মাথাটা নিচু হয়ে যায় তার
জীবন কোনসময় কিভাবে বদলে যেতে পারে তা আমরা কেউ বলতে পারি না
সেদিন আমি মরতে চেয়েছিলাম,সেদিন যে লোকটা আমাকে বাঁচিয়েছিল আজ সে আমার স্বামী এবং আমার দুটো বাচ্চার বাবা
.
হয়ত তার হাতে ফিরে পাওয়া জীবনটা তার জন্যই লিখা ছিলো
♥♥♥♥♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥♥♥♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৬৬+৬৭

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
বিকালবেলা,নামটা শুনলেই মনে হুট করেই একটা আলাদা আনন্দ কাজ করে,চায়ের সাথে একটা বিসকিট এটা ভাবলে তো দিল আমার খুশিতে আটখানা
সারাদিন ধরে কি ঝড় ঝাপটা গেছে তা না ভেবে এখন আমি ভাবছি চায়ে চিনি বেশি দেবো
চিনি হলেই চায়ের আসল স্বাদ বোঝা যায়,তবে বেশিও না আবার কম ও না
এক চামচ চিনি বেশি দরকার হলে আরেক চামচের ১৫%
ভাবতে ভাবতে শান্তর বারান্দার বিন ব্যাগটা থেকে উঠে দাঁড়ালাম চা বানাতে যাব বলে তবে পিছন ফিরতেই দেখলাম আমার রুগী জামাই চায়ের কাপটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকালো হয়ত ডাকার জন্যই,
রিপা এসে দিয়ে গেছে মনে হয়
আমি এক দৌড়ে এসে হাজির তার কাছে,তার যে অসুস্থতা সেটা আমার মাথায় নেই,এখন আমার মাথায় ঘুরঘুর করছে কখন চায়ে বিসকিট ডুবিয়ে খাব
সাথে দেখছি চিনিছাড়া টোস্ট,মন ভালো করার মেডিসিন হলো চা
ভাবতে ভাবতে আহানা শান্তর পাশে বসে চা আর বিসকিট নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে,শান্ত গরম গরম চা খেতে খেতে আহানার চায়ের প্রতি এমন উন্মাদ হওয়া দেখছে
.
আহানা পুরোটা চা শেষ করে তারপর হাত দিয়ে মুখ মুছে শান্তর দিকে ফিরে তাকিয়ে বসলো,এবার সে গল্প করবে
.
শান্ত ও ফিরলো ওর দিকে
.
তো বলুন আপনি রতনের কি করবেন?
.
আমি তারে জেলে ঢুকাবো,ওসব বাদ দাও,আগে বলো মায়ের মুড কিরকম দেখলে?
.
শান্তি আন্টি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা স্বভাবের একজন মানুষ,তাকে যা বোঝানো হয় তাই বুঝেন,এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আপনি হসপিটাল থেকে এসে তাকে যা বুঝিয়েছিলেন তা তিনি বুঝেছেন
.
হ্যাঁ সেটা ঠিক,তবে মা ওভার টেনসন করে একদম তোমার মতো,তুমি তো পাগলামি শুরু করে দাও
কিন্তু মা নিরবে নিজেকে পোড়ান
.
এটা সবচেয়ে কষ্টের, যাই হোক আপনি বডিগার্ড রাখেন,এত টাকা নিয়ে তো কবরে যেতে পারবেন না,তাই টাকা কাজে লাগান,২/৩টা রাখলেই চলবে,অন্তত আপনার সেফটি জরুরি
ঐ যে শাহরুখ খান যে বডিগার্ড রাখে সেটা রাখেন,একদম সেফ
.
হাসালে আহানা
.
হাসালাম তো হাসেন,তারপর যা বললাম করেন,আমি কিছু শুনতে চাই না,আমার কথা যদি না শোনেন তাহলে কচু গাছে ফাঁসি দেবো
আমি আবার সুইসাইড এটেন্ড করতে অত্যন্ত পটু
আমার হাসবেন্ড বলেছিলো আমার সবকিছু “অত্যন্ত ”
.
শান্ত হাসতে হাসতে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়েছে
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”ঝগড়া করবো না আর কোনোদিন, এভাবেই হাসবেন”।
.
নাহ
.
কি নাহ?
.
তোমাকে ঝগড়ায় মানায়,যে সম্পর্কে ঝগড়া হয় না সে সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না
ঝগড়া হয়ে আবার মিটমাট হওয়া সম্পর্কগুলো হয় আজীবনকার জন্য,আমি চাই তুমি তোমার মতন থাকো
তোমার কোনো কিছু বদলাতে হবে না
একবার ভেবে দেখো না শুরু থেকেই কিন্তু আমরা ঝগড়া করে এসেছি কিন্তু তারপরেও আজ আমরা স্বামী স্ত্রী
.
সেটা ঠিক তবে আপনাকে হারানের ভয়টা মাথায় আসলে মন চায় আপনাকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিই
.
শান্তর কাশি উঠে গেছে কথাটা শুনে,তারপর কোনোরকম কাশি থামিয়ে সে বললো”থাক থাক,এত এত সেবা লাগবে
না,আগের আহানাই বেস্ট
একটা কথা কি জানো?বেশি কেয়ার করলে সে হয় খালাতো বোন আর ঝগড়া করে মাথা খেলে সেটা হয় বউ
বুঝলে?”
.
আপনার খালাতো বোন আছে?
.
নাহ,থাকলে এতদিনে কাড়াকাড়ি লেগে থাকত
.
তা ঠিক,তবে আমার ইচ্ছা আপনার নানু বাড়ি যাব,কোনোদিন দেখা হয়নি
.
আমার নানু তোমাকে ছোট বেলায় পছন্দ করত না
.
কেন.?কি করেছি
.
উনি যখন বেড়াতে আমাদের বাসায় আসতেন তখন তুমি আমার সাথে খেলতে আমাদের বাসায় আসলে উনার পানের বাটুয়া থেকে চুন চুরি করে নিয়ে সারা মাথায় মেখে সাদা ওড়না গায়ে পেঁচিয়ে পুরো বাড়ি হাঁটতে হাঁটতে বলতে”আমি নানু সেজেছি,আমি নানু সেজেছি”
.
এ্যা মা!!!তারপর?
.
নানু অনেক রেগে যেতেন কারণ তিনি পান খেতেন ঘন্টা পরপর,আর সেখানে তুমি চুন নিয়ে ঝামেলা করতা বলে তার মেজাজ খারাপ থাকতো তার উপর আন্টি তোমাকে পানিতে চুবিয়ে তোমার চুলে হাজার সাবান- শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতেন
.
তো এখন যদি আমরা আপনার নানু বাড়ি যাই আমাকে কি উনি ভালোবাসবেন না?
.
বাসবে অবশ্যই,আচ্ছা আমি মাকে বলে দেখি তোমাকে নিয়ে একবার নানুবাড়ি থেকে ঘুরে আসবো,আগে আমি সুস্থ হয়ে নিই,এই ব্যান্ডেজ নিয়ে নানুবাড়ি গেলে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আমাকে,আর অনেকে তোমাকে অলক্ষী এওয়ার্ড ও দিয়ে দিতে পারে
.
এ্যা!আমি কি দোষ করছি
.
সেটা তুমি জানো,জামাইরে ভালোবাসো না মনে হয় ঠিকমতন,তাছাড়া জামাই জোর করে ভালোবাসলে দুদিন গাল ফুলিয়ে রাখো তোমাকে অলক্ষী বলবে না তো কি আমাকে বলবে?
.
হ্যাঁ আপনাকেই বলবে কারণ আপনি বিয়ের এক মাস পর আমাকে আই লাভ ইউ বলেছেন তাও আমাকে কত ঘাটের পানি ও খাইতে হয়েছে
.
তুমি তো বলছো ২০দিন পর
.
তো?আপনার আগে বলছি তাই আমি জিতলাম এই যাত্রায়
.
সে যাই হোক কিস করতে গিয়ে তো ১০০বার চড় খেলাম সেটার কি হবে?
তোমাকে তো বক্স অফিস থেকে এওয়ার্ড দেওয়া উচিত চড় দেওয়ার জন্য
.
ভালো ছেলের মতন বিহেভ করলে চড় খায়না মানুষ
.
কিস কি শুধু খারাপ ছেলেরাই করে?
.
সবাই করে,কথা হলো আপনি সিরিয়াস মোমেন্টে কিস করতে আসছিলেন বলে আমি চড় মেরেছিলাম
.
কিস করার সময়টাই তো সিরিয়াস,কি বলো তুমি!
.
না সেটা না,আমি বলছি প্রথমবার আপনি রিয়াজ ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আমাকে টেনে কাশফুলের কাছে নিয়ে এসেছিলেন সেখানে আশেপাশে নদীর উপর লঞ্চ স্টিমারে ভর্তি ছিল সেটা সিরিয়াস মোমেন্ট না?তার উপর দ্বিতীয় বার আপনার বুকে ছুরির ক্ষত দাগ ছিলো আমি সেটার দিকে চেয়ে কাঁদছিলাম আর ঐ সময়ে আপনি কিস করতে চেয়েছেন,সেটা সিরিয়াস মোমেন্ট নয়?
.
শান্ত কপাল কুঁচকে বললো”তোমার জন্মের পর আন্টি তোমার মুখে ঝিঙের খোসা দিয়েছিলেন?”
.
আহানা রেগে কুশন দিয়ে শান্তর গায়ে এক বাড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো রুম থেকে
.
শান্ত হাসতে হাসতে বললো”এই আহানাটাকেই চাই,ঝগড়াটে বউ”
.
আহানা একেবারে রাতেই রুমে আসলো তাও শান্তকে ডিনারের জন্য ডাকতে
.
শান্তকে আজ শান্তি রহমান নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন,সাথে খাওয়ালেন নিতুকেও
আহানা ব্রু কুঁচকে সব দেখছিলো,ব্যাপারটা শান্তি রহমান বুঝতে পেরে আহানাকেও খাইয়ে দিচ্ছেন এবার
.
চিকেনের পাখনার মাংসটা আহানার ও পছন্দের আর শান্তর ও
মা সেই মাংস দিয়ে লোকমা বানাচ্ছেন,বিষয়টা দেখতে পেয়ে আহানা মুখ এগিয়ে নিলো লোকমাটা ওকে দেওয়ার জন্য,কিন্তু তার আগেই শান্ত আহানার কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের মুখটা মায়ের দিকে এগিয়ে ধরলো
.
আহানা হেরে গিয়ে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে,শান্ত দাঁত কেলিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি হেসে যাচ্ছে অনবরত

রতনকে পুলিশ ২দিনের ভেতরেই ধরে ফেলেছে,খাগড়াচড়িতে গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে ছিলো সে
শান্ত তার বিশ্বস্ত একজন পুলিশ ফ্রেন্ডকে কাজটা দিয়েছিলো
রতন আপাতত জেলে,১৭তারিখে কোর্টে আনা হবে তাকে,বাস যার থেকে ভাড়া নিয়েছিলো সে পুলিশ কাস্টাডিতে আছে,সব প্রুফ জোগাড় হয়েছে এবার শুধু শাস্তি শোনানোর পালা
তাছাড়া মজনু চাচার ও জেল হয়েছে কারণ কয়েকদিন আগে শান্তর উপর করা হামলার আসল রহস্য বেরিয়ে এসেছে এবং এর মূল হোতা মজনু এরেস্ট হয়েছে
সবকিছু শুনে আহানা এবার পুরোপুরি নিশ্চিত

আহানা????আহানা!!!আমি জামাটা পরতে পারছি না,পরিয়ে দাও না প্লিস
.
আমি গোসলে ঢুকছি মাত্র,আরও আগে বলতে পারেননি?সব আমাকে জ্বালানোর ধান্দা
.
আহানা শান্তকে এক ঝুড়ি বকাবকি করে ভেজা জামা পরা অবস্থাতেই বের হলো বাথরুম থেকে তারপর গাল ফুলিয়ে কাছে এসে শান্তকে ওর টিশার্টটা পরিয়ে দিতে থাকলো
.
স্বামীর সেবা করো তো ঠিকই তার আগে এত কথা শুনাও ক্যান বলোতো?
.
আপনি টাইমলি কাজের ফরমাইশ দেন না
.
কি করবো?ভেবেছিলাম নিজে নিজে পরতে পারবো কিন্তু হাতের জন্য পারছিলাম না বলেই তো ডাকলাম
.
আহানা কপাল কুঁচকে টিশার্টটা সম্পূর্ন পরিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাতটা ধরে ফেললো
.
কি?সময় নষ্ট করছেন কেন,আমার এখন ভেজা জামার কারণে জ্বর এসে যাবে
.
শান্ত আহানাকে জড়িয়ে ধরে বললো”আসবে না,প্যারাসিটামল খেয়ে নিবা
.
আপনার কি আমার জন্য মায়া হয় না
.
হয় বলেই তো বুকে ধরে রেখেছি
.
আহানা মাথা উঁচু করে বললো”শান্ত”
.
হুম বলো বউ
.
ঠাস করে ধাক্কা খাবা জামাই?
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”ক্যান”
.
এরকম রোমান্স সময় অনুযায়ী করিয়েন কেমন?আমার গোসলের সময় কেউ ডিস্টার্ব করলে তার মাথা ফাটাতে ইচ্ছা করে
.
মাফ করো আর ধরব না,যাও
.
শান্ত আরেকদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো এবার
তা দেখে আহানার দয়া হলো কিছুটা
তাই এগিয়ে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সে শান্তকে
শান্তর কিঞ্চিত রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে,মুচকি হেসে সে পাশে তাকিয়ে বললো”কি ম্যাডাম?গোসলে দেরি হচ্ছে না এখন?”
.
আমার বর রাগ করেছে তাকে চড় মেরে ঠিক করবো বলেই ঝাপটে ধরলাম
.
শান্ত চোখ বড় করে বললো”আহানা মাঝে মাঝে ভাবি তুমি তো আমার বাচ্চাদের দিনে ২০০বার চড় মারবা মনে হয়”
.
ধুর!
.
আহানা গেলো গোসল করতে,শান্তর সাথে দু লাইন কথা বললেই শুরু হয় ঝগড়া,ঝগড়া ছাড়া যেন আর কোনো কথাই নেই

১৫/১৬দিন পর শান্ত সুস্থ হয়েছে প্রায়ই,এখন আর হাতে ব্যান্ডেজ নেই,মাথায় ও নেই,তার অবস্থার উন্নতি দেখে আহানা তো প্রতিদিন শান্ত আর শান্তি রহমানকে দেখিয়ে দেখিয়ে ট্রলি ব্যাগ বাসার সামনের পাকা রাস্তাটায় রোদে দেয়
.
শান্ত ও হাসে,মা ও হাসে,তো সেদিন বিকেলবেলা আহানা মুখ ফ্যাকাসে করে ট্রলি ব্যাগটা টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বাসায় ঢুকার সময় শান্ত এসে দাঁড়ালো ওর সামনে
হাত ভাজ করে সে আহানার ট্রলি ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে আছে
.
কি এত দেখছেন?পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিলো বলে রোদে দিয়েছিলাম,আর কিছু না
.
আমি তো কিছু বলিনি
.
হুহ
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে রুমের দিকে চললো
শান্ত ওর পিছু পিছু এসে আলমারি থেকে নিজের জামা বের করতে করতে বললো”তা কেউ চাইলে আমার সাথে আমার নানুবাড়ি যেতে পারে”
.
আহানা তো নিজের কানে শুনেও কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না,এক দৌড় আলমারির কাছে এসে শান্তকে সরিয়ে দিয়ে সে এখন নিজের শাড়ীগুলো নেওয়ায় ব্যস্ত
.
শান্তর নানুবাড়ি হচ্ছে ঝিনাইদহের বেপারি পাড়ায়,তো ঢাকা থেকে গাবতলি গিয়ে সেখান থেকে লঞ্চে যেতে প্রায়ই ৫ঘন্টা পেরিয়ে আরও আধঘন্টা সময় লাগতে পারে
শীত পড়া শুরু বলে আহানা সবার আগে শীতের জামাকাপড় নিচ্ছে,নিজের এবং শান্তর জন্য।
.
সব শাড়ী নিয়েছে আহানা,,কোনো থ্রি পিস নেয়নি,কে জানে নানু যদি রাগ করে,এমনিতেও আগে ভাগে ছোটবেলায় কুকীর্তি করে তার মেজাজ বিগড়ে রেখেছিলাম
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সবাইকে বিদায় জানিয়ে আহানা শান্ত মিলে গাবতলি পৌঁছালো
এবার লঞ্চ আসার অপেক্ষা,আহানা ছোটবেলায় একবার কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে লঞ্চে করে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলো,অনেক বছর হয়ে যাওয়ায় লঞ্চে উঠার অনুভূতিটা নতুনই মনে হচ্ছে, শান্ত ব্যাগ হাতে নিয়ে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে শতে শতের মানুষের ভিড়ে,পাশেই আহানা চিমটি দিয়ে শান্তর জ্যাকেট ধরে আছে,কে জানি যদি হারিয়ে যাই,এত মানুষ জনমে দেখি নাই!
শান্তর পরনে ছিলো মেরুন কালারের একটা জ্যাকেট,চোখে ছিলো কমলা রঙের সানগ্লাস, আর আহানা কমলা রঙের একটা কোটা শাড়ী পরে আছে,চুলে খোঁপা করে সাদা রঙের গাজরা লাগিয়ে রেখেছে তাতে
তো এত এত মানুষের ভিড়ে তাদের দেখে মনে হচ্ছিলো একজোড়া উজ্জ্বল তারা
শত শত তারার ভিড়ে তারা শুকতারা আর সন্ধ্যাতারা হয়ে প্রোজ্জ্বলিত হয়ে আছে যেন
আহানা তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লঞ্চ গুলোর ফাঁক দিয়ে চেয়ে দূরের পানিতে চলমান লঞ্চ গুলো দেখছে
কিরকম একটা শব্দ এই বাহনগুলোর,আহানার কেমন ভয় ভয় করে এমন শব্দ শুনলেই
লঞ্চ এসে পড়েছে ১৫মিনিটের মধ্যেই,শান্ত এক হাতে ব্যাগ নিয়ে আরেক হাতে আহানার হাত ধরে ওকে নিয়ে লঞ্চে ঢুকতেছে
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে বললো”খোলামেলা জায়গা দেখে সিট নিয়েছেন তো?আমি কিন্তু ভিতরে বসবো না”
.
শান্ত পিছন ফিরে একবার তাকালো তারপর আবার হাঁটতে হাঁটতে বললো”ঠিক ধরেছো,আমি ভিতরের সিটই নিয়েছি”
.
কিন্তু কেন?
.
এত বাতাসে ঠাণ্ডা লেগে যাবে তার উপর পড়ে যাওয়ার চান্স থাকে
.
না প্লিস আমি বাইরে বসবো
.
সিটে ব্যাগ রেখে না হয় বারান্দা থেকে ঘুরিয়ে আনবো তোমাকে
.
আহানা মুখ গোমড়া করে বাধ্য হয়ে লঞ্চের ভেতরের সিটগুলোয় বসে আছে,শান্ত ওর পাশে বসে ফোনো গেমস খেলছে
সম্ভবত গেমসটার নাম”টিনি হোপ”
সেখানে একটা কিউট লিটল পটকার মতো বস্তু হচ্ছে নায়ক,সে উড়ে উড়ে,ঠেলে ঠেলে লাস্টে একটা গর্তে গিয়ে পড়ে খুশিতে ছলছল চোখে তাকায় থাকে,আহানা মনযোগ দিয়ে দেখলো,ভালোই লাগলো তবে বোরিং ও লাগলো
সব সেম,খালি ঠেলে ঠেলে সে গর্ত পর্যন্ত পোঁছায় আর কোনো কাজ নাই,গেমস হওয়া উচিত ইন্টারেস্টিং,রহস্যজনক,যেমন “ইসকেপ ডোর”ওগুলায় মাথা খাটিয়ে দরজা খুলতে হয়,আমার তো সেই গেমস ভাল্লাগে,আর এই মহাশয়কে দেখো,৫বছরের বাচ্চাদের গেমস খেলছে বসে বসে
.
আহানা এবার তার ডান পাশে তাকালো,একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা বসে আছেন,চোখে চশমা পরা তবে পরনে সেলোয়ার কামিজ,মাথায় ওড়না পেঁচানো,বেশ ভদ্রমহিলা তিনি,চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন,মাঝে মাঝে বলছেন কিরে তোরা আসবি কখন?আমাকে তো নেস নাই আমি নাকি কেঁপে পানিতে পড়ে যাব,ঠিক করিসনি আমাকে না নিয়ে
.
আহানা বুঝতে পারলো মহিলাটির পরিবার বারান্দা দিয়ে পানি দেখতে গেছে সাথে করে তাকে নেয়নি হয়ত তিনি পড়ে যাবেন এই ভয়ে
ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক কারণ এমন দূর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে,
যাই হোক ৫/৬মিনিট ধরে মহিলাটির চেঁচামেচির পর তার পরিবার আসলো
একটি মেয়ে সাথে তার জমজ দুটি ছেলে,বয়স ৫/৬বছর হবে
আহানা তাদের দিকে চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে,কি সুন্দর বাচ্চাগুলা,তবে বাচ্চাগুলোর সাথে মেয়েটির চেহারার সাথে মানালো না একটুও,কি হয় সে বাচ্চাদের?
.
মেয়েটা বয়স্ক মহিলাটির পাশে বসতেই আহানা বললো”এক্সকিউজ মি বাচ্চাগুলা কি আপনার? তাহলে কিছু প্রশ্ন করতাম,জমজ বেবি নিয়ে”
.
মেয়েটি কিছুটা চমকালো এমন প্রশ্ন শুনে তারপর বললো “হুম,,এরা আমার বাচ্চা”
.
ওহহ
.
আহানা আর কিছু বললো না
.
আহানা আর কোনো কথা বলছে না দেখে মেয়েটি ফের বললো”পিয়াশ তিয়াশ বাবারা যাও তোমাদের পাপার কাছে”
.
মায়ের কথা মতন বাচ্চাগুলা সিট থেকে নেমে বারান্দার দিকে ছুটলো,মেয়েটি শুকনো মুখ করে আহানার দিকে চেয়ে বললো”আপনার ঐ প্রশ্নের কারন আমি বুঝতে পেরেছি,আসলে ওরা আমার বাচ্চা না,আমি ওদের একটা অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নিয়েছিলাম,আমি কোনোদিন মা হতে পারবো না বলে
তবে মনে যত খুঁত ছিলো এদের পেয়ে সব ভুলে গেছি,আমি এখন সুখী,আরও সুখী আমার এমন একজন স্বামীকে পেয়ে যে কিনা আমার অক্ষমতা জেনেও আমার পাশে আছেন আজও
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”আলহামদুলিল্লাহ”
.
শান্ত গেমস খেলা রেখে আহানার হাত ধরে এক টান দিয়ে বললো”কি হয়েছে?”
.
একটা প্রশ্ন করি?
.
জি করেন
.
আমি যদি কোনোদিন মা না হতে পারি?
.
এক গবেষনায় দেখা গেছে অধিক ঝাঁঝ আলা মেয়েদের একটা নয় ২টা করে বাচ্চা হয়,সো আমার কোনো সন্দেহ নেই যে তোমার বেবি হবে
.
উফফফ,মজা করবেন না!সিরিয়াসলি উত্তর দেন না
.
বাচ্চাই জীবনের সব কিছু না আহানা!সো ডোন্ট ওয়ারি
.
শান্তর কথা শুনে আহানা খুশি হবে নাকি মন খারাপ করে থাকবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না
.
শান্ত সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কারণ বিকালে রওনা হয়েছে তারা আর এখন বাজে সন্ধ্যা ৭টা
.
আহানা যখন দেখলো শান্ত ঘুমাচ্ছে সে আস্তে করে উঠলো বারান্দাটা ঘুরে আসবে বলে কিন্তু আফসোস কিসের যেন টান খেয়ে সে এক কদমের বেশি ফেলতে পারেনি সামনে
তাই পিছন ফিরে চেয়ে দেখলো তার হলুদ রঙের শাড়ীটার আঁচল শান্তর হাতে গিট্টু দেওয়া
আজব তো!
গিট্টু দিলো কখন?আর কেনোই বা দিলো?
.
আহানা আবারও ফেরত এসে গিট্টু খোলায় মনযোগ দিয়েছে,শান্ত ততক্ষণে জেগে ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললো”কোথায় পালাচ্ছিলা?”
.
আপনি আগে বলেন আমার আঁচল বেঁধে রেখেছিলেন কেন?
.
কারণ তোমার স্বভাবের সাথে আমি খুব ভালোমতন পরিচিত,তুমি যখন দেখবা আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তখনি তোমার মাথায় ভূত চাপবে বারান্দায় গিয়ে নদী উপভোগ করার
.
তো?আমার বর তো আমাকে ঘুরাতে নেয় নাই,গেমস খেলে ঘুমাচ্ছিলো সে তাই বলেই তো চোরের মত যেতে হচ্ছিলো আমাকে
.
ওকে চলেন,আপনাকে নদী দেখিয়ে আনি সাথে একটু চুবিয়েও আনি
.
চুবাবেন আমাকে?
.
হু
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে করিডোর পেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,দূর দূরান্তে নৌকা,স্টিমার,লঞ্চ নজরে আসে শুধু
.
পানির ঢেউয়ে সেসব দুলে যাচ্ছে,পানি এসে বাড়ি খাচ্ছে বারবার
আহানার মন চাইলো একটু ছুঁয়ে দেখার কিন্তু পারলো না তার উপর পাশে শান্ত দাঁড়িয়ে এক হাত তার পকেটে রেখেছে আরেক হাত দিয়ে আহানার কুনুই ধরে রেখেছে যাতে ভুলেও না পড়ে যায় সে
.
দূরে একদম শেষ প্রান্তে লাল লাল হয়ে আছে,যেন অগ্নিশিখা তবে সেটা অগ্নিশিখা নয়,আশেপাশের লাইটের আলো একসাথে হয়ে এমন দেখাচ্ছে,আহানা প্রানভরে পরিবেশটা উপভোগ করছে,আশেপাশে দুএকজন মানুষ ও আছে তবে তারা একটু দূরে,কেউ ফোনে কথা বলছে,কেউ ছবি তুলছে,কেউ বাইরের দিকে চেয়ে আছে
আহানা মুচকি হেসে দূরের একটা লঞ্চের দিকে তাকানোর সময় গালে খোঁচা দাড়ির স্পর্শ পেয়ে চমকে পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো তার বর চোরের মতন বিহেভ করে একবার এদিক তাকাচ্ছে তো আরেকবার ওদিক তাকাচ্ছে
আহানার বুঝতে বাকি নেই সবেমাত্র তার বর তার গালে চুমু দিয়ে দিয়েছে এরকম পাবলিক প্লেসে
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে আশেপাশের মানুষদের অবস্থা চেক করলো, সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত
আহানা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দুম করে শান্তর ঘাড়ে একটা কিল বসিয়ে বললো”আর সময় পান না তাই না?”
.
না পাই না,তাই তো এখন দিয়ে দিলাম
.
চলুন ভেতরে যাই,খিধা লাগছে,কি খাব?
.
মা রিপাকে দিয়ে খাবার প্যাক করে দিয়েছে,চলো সেটা খাবো

ঝিনাইদহের বেপারিপাড়ায় এসে দুজনে এবার একটা রিকসা নিয়েছে,শান্তর মামা রিকসাটা পাঠিয়েছেন শান্তদের জন্য
রিকসায় বসে আহানা শান্তর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে,সারারাত সিটে বসে ঠিকমত ঘুম হয়নি তার
শান্ত মন দিয়ে তার নানুরবাড়ি যাওয়ার পথটা দেখতে ব্যস্ত
কতটা বদলে গেছে সব
২বছর আগে লাস্ট এসেছিলো শান্ত এখানে,দুবছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে এখানকার
নানুবাড়ির কাছাকাছি এসে পড়ায় শান্ত আহানাকে ডেকে তুলে বললো”ঠিক হয়ে বসতে,বাড়ির কাছে এসে গেছে তারা”
.
আহানা চোখ ডলে মাথায় ঘোমটা টেনে নিলো,একটা সাইডওয়ালের বিরাট বাড়ি নজরে আসছে,উপরে টিন,সামনে লম্বাতে চিকন মাটির রাস্তা,তার দুপাশে তালগাছ,তালগাছগুলোর গোড়ায় সাদা রঙ করে রাখায় দেখতে বেশ লাগছে
.
আহানা তো অবাক এত সুন্দর বাড়ি আর পথ দেখে,বাড়িটার সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে
আহানা রিকসা থেকে নেমে শান্তর জন্য অপেক্ষা করলো,শান্ত ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো”চলো”
.
আহানা ওর সাথে সাথে চললো,বাড়ির সামনে শান্তর নানু,নানা,মামা মামি আর তাদের ছেলেমেয়েরা একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন
.
আহানা গিয়ে সবার আগে নানু আর নানাকে সালাম করলো তারপর মামা মামিকে,উনাদের সকলের মুখে হাসি,অনেক খুশি হয়েছেন তারা শান্ত আর আহানাকে পেয়ে
.
নানু আহানার থুতনি ধরে টেনে বললেন”কিরে শান্ত,এটা সেই মেয়েটা না যে আমার চুনের কৌটা খালি করতো সবসময়?”
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বললো”ঠিক ধরেছো,এই সেই ধানিলংকা”
.
বেশ করেছিস এরে বউ করে
.
কেন?তোমার যে চুন নষ্ট করতো তোমার কি ওর প্রতি রাগ নেই?
.
নাহ রে কিসের রাগ,ওরে আমি সেসময়ে বকাবকি করতাম ঠিকই তবে ওরে আমি আদরও করতাম,কারণ ও আদর করার মতই ছিলো,ছোটবেলায় গালদুটো টমেটোর মতন ছিল ওর
.
আহানা লজ্জায় নিচের দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত হেসে বললো”এখন মনে হয় টমেটো শুকিয়ে চেরি হয়ে গেছে কি বলো?”
.
সবাই একসাথে হেসে দিলো,আহানা রাগে ফুলে শান্তর দিকে তাকালো একবার
একবার একা পাই এই কথা বলার শাস্তি দেবো!!
.
নানু আহানার হাত ধরে বাসার ভেতর নিয়ে চললেন
বাসার ভেতরে ঢুকলেই যে রুমটা পড়ে সেটাতে সোফা আর একটা খাট,নানু সোজা আহানাকে নিয়ে ভেতরের রুমে একটাতে নিয়ে আসলেন
সেখানে একটা খাট আর একটা টেবিল,রুমটা শান্তর মামাতো ভাই রিফাতের,এখন মেহমানের জন্য খালি করা হয়েছে
শান্ত গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়,সে অনেক টায়ার্ড
আহানা ওকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মামি এসে বললেন”আহানা মা একটু এদিকে আসো”
.
আহানা মুখ ঘুরিয়ে ঘোমটা টানতে টানতে সেদিকে চললো,মামি ওর হাতে একটা ট্রে ধরিয়ে দিয়ে বললেন”তোমার বরকে নিয়ে খেয়ে নাও এগুলা তারপর একটু রেস্ট নাও,কেমন?”
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে আবার রুমের দিকে চললো
.
শান্ত কোলবালিশ জড়িয়ে আরেকদিকে ফিরে শুয়ে আছে
আহানা ওর পিঠে একটা কিল বসিয়ে বললো”নিন,নাস্তা খেয়ে উদ্ধার করেন আমায়”
.
এরকম জোরে কিল মারো কেন?কি করছি?
.
আমার গাল শুকিয়ে টমেটো থেকে চেরি হয়ে গেছে?দাঁত ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেবো আপনার,স্টুপিড!
.
ওহ সেটা মনে রাখছো এখনও?একটা কথা কি জানো?টমেটোর চেয়ে চেরির দাম বেশি এবং টমেটো থাকে তরকারিতে আর চেরি থাকে কেকের মাঝখানে
.
হইছে হইছে,নিন চা নাস্তা করেন
.
আহানা শান্তর পাশে বসে গপাগপ খাবার শেষ করে আবার ছুটলো বাহিরের দিকে
.
এই আহানা দাঁড়াও
.
কিছে?
.
নতুন বউ এরকম ডাকা ছাড়া বের হয় না মনে হয়
.
আপনাকে এই কথা কে বলেছে?নতুন বউকে ডাকলে সে আসবে এমনি আসবে না এটা আবার কেমন কথা!আমি তো না ডাকলেও যাব
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৬৩+৬৪+৬৫

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কথায় কথায় আমাকে ছোট বলবেন না,আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর,আপনার বুঝতে ভুল হয় এই আর কি,এর জন্য আপনাকে আমি হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ খাওয়াবো,কাজ করবে সিউর
.
কোনো ঔষুধ লাগবে না,যেটা সত্যি সেটাই বুঝি,বরং তুমি খাও,তোমার তো শয়তানি বাঁদরামির শেষ নেই,তাতে ওসব যদি একটু কমে আর কি
.
আহানা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দুজনেই দেখতে পেলো মায়ের জ্ঞান ফিরেছে,দুজনেই একসাথে উনার কাছে এসে দাঁড়ালো
উনি চোখ খুলতেই ওদের একসাথে দেখতে পেয়ে অনেক খুশি হলেন,কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারলেন না
.
দুপুর হতে না হতেই শান্ত তার মাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়েছে,বাসায় ফিরে মাকে নিজের রুমে রেখে সে মায়ের হাত ধরে পাশে বসে থাকলো,মাকে ছাড়া কোথাও যাবে না সে
.
আহানা শান্তর রুমে এসে রুমটা পরিষ্কার করলো তারপর গেলো গোসল করতে,শান্ত মায়ের ঘুম আসা পর্যন্ত মায়ের হাত ধরে ছিলো তারপর নিতুকে ডেকে দিয়ে সে আসলো ফ্রেশ হতে
আহানা গোসল করতে গেলে ১ঘন্টার কাছাকাছি সময় নষ্ট করে
দেরি হওয়ার কারণ হলো সে সাবান গায়ে একটু ঘষে টাইলসের দিকে গভীর মনযোগ দিয়ে দেখে,তারপর সাবান আবার আরেকটু ঘষে ফ্লোরের দিকে চেয়ে দেখে
কি কারণে এত দেখে দেখে সময় নষ্ট করে তা সে নিজেও জানে না
তবে গোসলের সময়টায় এরকম উদ্ভট কাজ করতে তার বেশ লাগে
এদিকে শান্ত তোয়ালে হাতে নিয়ে ৫মিনিট হয়েছে কোমড়ে হাত দিয়ে বাথরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,আর আহানার কোনো খোঁজই নেই,ঝর্নার পানির আওয়াজ আসতেছে তা না হলে শান্ত ধরেই নিতো যে আহানা মরে গেছে
তো এতক্ষণ সময় লাগাচ্ছে দেখে শান্ত এক ধমক দিয়ে বললো”তুমি নিজ থেকে বের হবা নাকি আমি টেনে হিঁচড়ে তোমাকে বের করবো?”
.
আহানা হকচকিয়ে সাবানটা হাত থেকে ফেলেই দিলো তারপর দরজার কাছে এসে বললো”২টার সময় ঢুকছি,এরকম করেন কেন?”
.
শান্ত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখন বাজে পনে ৩টা
শান্তর চোখ কপালে উঠে গেছে,তারপর আরেক ধমক দিয়ে সে বললো”এত ঘন্টা ধরে কি করো তুমি?তুমি কি এমন করেই গোসল করো?আমার তো ৩মিনিটে গোসল হয়ে যায়”
.
আপনি হয়ত সাবান দেন না গায়ে
.
দিই,তোমার মতন কচ্ছপের স্পীডে দিই না,আমি সময় নষ্ট করি না
অবশ্য আজাইরা মানুষেরা এরকম করেই সময় নষ্ট করে,তোমাকে দেখে মানতে বাধ্য হলাম
.
আহানা ঠুসঠাস করে বাথরুম থেকে বের হলো কোমড়ে হাত দিয়ে
পরনে আগের থ্রি পিসটা অথচ সারা গায়ে সাবানের বাবলসে ভর্তি
.
শান্ত আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো”কি ব্যাপার এখনও গায়ে পানি ঢালো নাই?”
.
আপনার এত কিসের সমস্যা আমার গোসল নিয়ে?নিজের চরকায় তেল দিন না,যত্তসব!
ঠিক করে গোসল ও করতে দেয় না আমাকে
এটা আমার শশুর বাড়ি ওকে?আমাকে কোনো কিছুতে মানা করার কোনো অধিকার নেই আপনার
.
ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন!!! এই বাসাটা আমি আমার টাকায় তৈরি করেছি
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”তো??রীতিমতন এটা আমার শশুড় বাড়ি হয়,শশুড় আপনার বাবা হয় ওকে?সে সূত্রে এটা তার বাড়ি,আপনি তো গাছের একটা পাতা স্বরুপ
.
এরকম ফালতু লজিক দেওয়ার জন্য তোমাকে বাথটাবে চুবিয়ে আধ ঘন্টা বাদে বের করবো
.
সে যাই হোক,সত্যি কথা এমন তেতোই হয়,এখন আরও মিনিট দশেক ওয়েট করবেন নাকি আমি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতাম আপনি গিয়ে গোসল করে আসবেন
.
শান্ত তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে যেতে যেতে বললো”আমার অনেক কাজ আছে,আরও ১০মিনিট অপেক্ষা করার সময় নাই”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”যেন আজই ৫তলা বিল্ডিং নিজের হাতে তৈরি করবেন”
.
শান্ত ৫মিনিটেই গোসল সেরে বের হলো,আহানা ফ্লোরে বসে আছে গালে হাত দিয়ে
.
শান্ত তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বললো”তোমার বসার জায়গার অভাব পড়েছে?”
.
জি না,আপনার বিছানায় এরকম সাবান আলা শরীর নিয়ে বসলে আপনি পরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলবেন”আমার এত সুন্দর ইম্পোর্টেড বেড কভার নষ্ট করে দিলো রে”
.
তোমার সাথে ভালো মানুষ কথা বলে না
.
আহানা বাথরুমে যেতে যেতে বললো”তাহলে তো আপনি খারাপ মানুষ ওরপে হোল স্কয়ার
.
কি বললে?আমি করলাম?
.
আহানা দরজা লাগিয়ে ফেলে বললো”আপনি তো সোজা আমাকে বিয়েই করে নিয়েছেন তাও দুবার করে”
.
এই মেয়েটার সাথে জীবনে লজিক দিয়ে পারি না,মনে হয় যেন লজিক নিয়ে ডিগ্রী করে রেখেছে
.
শান্ত এবার সোজা গিয়ে শুয়ে পড়লো,রাতে ভালোমতন ঘুম হয়নি তার এবার শান্তিতে একটু ঘুমাবে সে
.
আহানা গোসল করে বেরিয়ে দেখলো তার মিষ্টি বর বুকে বালিশ রেখে সোজা হয়ে খাটের মাঝখানে গিয়ে ঘুমাচ্ছেন
আহানা কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবলো”ছোটবেলায় শান্ত আহনার এমন অবস্থায় বলািশের উপর বসতে চেয়েছিলো,মন তো চাচ্ছে আমি এখন বসে আমার প্রতিশোধটা নিয়ে নিই,কিন্তু নাহ,মাফ করলাম যাও
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো মাকে দেখতে,সোফার রুম দিয়ে মায়ের রুমে য়াওয়ার সময় দেখলো ওর মা আর খালা আসতেছে,মাকে দেখতে এসেছে মনে হয়
আহানা তাই তাদের নিয়ে শান্তি রহমানের রুমে ঢুকলো
নিতু তার মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে
কিন্তু মা জেগে আছেন,আহানার মা তার পাশে এসে বসলেন হাতটা ধরে
আহানা তাই গেলো নাস্তা বানাতে সবার জন্য এসময়ে ভাত তো খাবে না মা আর খালা,ভাত খেয়ে এসেছে নিশ্চয়
তার চেয়ে বরং আমি চা আর কিছু হালকা নাস্তা বানিয়ে নিই
.
আহানা মন দিল লাগিয়ে নাস্তা বানাচ্ছে,রিপা আজ আসেনি ওর নাকি কি কাজ পড়ে গেছে
বুয়া রান্না সেরে চলে গেছে,তাই মায়ের রুমে সবাই,আহানা একা রান্নাঘরে আর শান্ত তার রুমে ঘুমায়
হঠাৎ আহানা নিজের কোমড়ের কাছে কারোর গরম নিশ্বাস টের পেয়ে চামচ নিয়ে পিছন ফিরে দুম করে এক বাড়ি বসিয়ে দিলো
.
আউচচচচচ!
.
ওপস,সরি!আপনি এখানে কি করেন? তাও হাঁটু গেড়ে বসে লুকিয়ে,আমার কোমড়ের কাছে এসে আপনার নিশ্বাস পড়তেছিলো,এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি,আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম
.
আরে বোন সাধে করি নাই,সিলিন্ডার চেক করছিলাম,দোকান থেকে কল এসেছিলো ওরা বললো চেক করার লোক আজ এসে ফিরে গিয়েছিলো দারোয়ান নাকি গেটে ছিল না,তাই আমাকে চেক করতে বললো
.
ওহ আমি তো ভাবলাম কি না কি
.
ওসবই ভাবো,একবার চড় আর এখন চামচ দিয়ে বাড়ি,আর কি কি করবা তুমি?স্বামীকে কেউ এমব ভাবে প্রতিনিয়ত মারে সেটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না
.
যাই হোক,আমাকে বোন বললেন কেন?
.
তুমি যে সারাদিন শান্ত ভাইয়া ভাইয়া বলো আমি তোমাকে চামচ দিয়ে বাইড়াইছি?
.
আপনি আমাকে মারবেন?
.
না না সেটা কেন করতে যাব,আমি তো খালি তোমার হাতে মাইর খেতে খেতে ২/৩বাচ্চার বাপ হয়ে যাবো একদিন
.
বকরবকর না করে যান তো
.
বিসকিট দাও
.
লাঞ্চ করবেন না?
.
দুপুর ৩টায় লাঞ্চ করি না আমি,বিসকিট দাও আর চা বানাও,মাথা ধরেছে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি
.
আহানা বিসকিট একটা শান্তর হাতে দিয়ে চায়ের দিকে মন দিলো
শান্ত চুলার পাশের তাকের উপর বসলো পা দুলিয়ে
বিসকিটে এক কামড় দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে আহানার দিকে তাকাচ্ছে সে
আহানা পিছন ফিরে তাকাতেই শান্ত আরেকদিকে মুখ করে নিলো
.
কি ব্যাপার?প্রেম প্রেম পাচ্ছে?
.
যার সাথে ছোট থেকে একসাথে থাকলাম তার প্রতিটা দিনই প্রেম প্রেম পেয়েছিলো
.
আহা!! কবি কবি ভাব রে,এতদিন মেরেও মুখ দিয়ে ভালোবাসি কথাটা বের করতে পারিনি আর আজ উনি হাবুডুবু খাচ্ছেন
.
কে বললো?কবিতাটি তোমার জন্য ছিল না
.
আহানা চামচটা ঘুরাতে ঘুরাতে শান্তর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললো”তা কার জন্য ছিল?”
.
আমার অত্যন্ত কিউট প্রেমিকার জন্য
.
নিন চা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন
.
আহানা চায়ের কাপটা শান্তর হাতে দিয়ে মায়ের রুমের দিকে গেলো,নিতু উঠে বসে চোখ ডলতেছে
আহানা সবাইকে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে নিতুকে বললো মুখ ধুয়ে আসতে,তার জন্য গরম দুধ রেখেছে,সে যেন সেটা খেয়ে নেয়
.♣
মা আর খালা মিলে শান্তি রহমানের সাথে গল্প করছেন উনার মন ভালো করার জন্য
আহানা বোর হয়ে শান্তর রুমে ফেরত আসলো,শান্ত তার বউকে চলে যেতে দেখেও সেও পিছু পিছু এসে পড়েছে
আহানা বিছানায় বসে টিভিটা অন করে পা তুলে গোল হয়ে বসলো
.
শান্ত চুপচাপ এসে পাশে বসে ফোন হাতে নিয়ে কিছুক্ষন দেখলেও মন বসছে না দেখে রেখে দিলো সে
এদিকে আহানা মনযোগ দিয়ে একটা হিন্দি সিরিয়াল দেখছে
.
দেখতেছো না আমি কতক্ষণ ধরে তোমার দিকে চেয়ে আছি?
.
দেখলাম তো ফোন টিপতেছেন,এররই মাঝে ফোন রেখে দিছেন?
.
ভালো লাগছে না,চলো ঝগড়া করি
.
মুড নেই
.
কেন?তুমি যখন বলো তখন আমি ঝগড়া করি না?তাহলে আমি বলাই ঝগড়া করতেসো না কেন?
.
কেমন মানুষ আপনি?ঝগড়ার জন্য ঝগড়া করতেছেন?
আমি ভাবতাম আমিই হয়ত পাগল যে চেয়ে চেয়ে ঝগড়া করি
এখন দেখি আপনাকে সেই রোগ ধরেছে
.
মাস্ক পরে থাকবা,কিসব উল্টা পাল্টা রোগ তোমার থেকে আমাকে ধরছে
.
আহানা রেগে শান্তর চুল টেনে দিলো,রিমোট দিয়ে একটা বাড়ি বসিয়ে দিলো ধুমদাম
.
আমাকে মারা ছাড়া আর কিছু পারো না?
.
আহানা মুচকি হেসে এগিয়ে এসে শান্তর কপালে চুমু দিয়ে বললো”পারি তো অনেক কিছু,”
.
আহানা চুমুটা দিয়ে সরে যেতে নিতেই শান্ত ওর পিঠে হাত রেখে ধরে ফেললো ওকে
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”মজা করছি,ধরলেন কেন আমাকে?এসময়ে?
এখন?বাসায় মেহমানে ভর্তি,মায়ের অসুখ!”
.
হইছে হইছে,রোমান্স করার জন্য ধরি নাই,এমনিতেই ধরলাম,যাও ছেড়ে দিয়েছি,কি মেয়েরে বাবা!
.
আহানা চলে গেলো রুম থেকে,শান্ত হেসে দিয়ে ফোনটা আবার হাতে নিতেই ওর চোখ কপালে,কণার কল
.
এই মেয়েটা আমার নাম্বার পেলো কই?সহসা নাম্বার চেঞ্জ করতে হবে দেখছি তা নাহলে মাথা চিবিয়ে খাবে আমার
.
তারপর শান্ত কি ভেবে আহানার ফোনটা হাতে নিয়ে সিম চেঞ্জ করে তার সিম আহানার ফোনে ঢুকালো আর আহানার সিম তার ফোনে ঢুকালো
হেহে এবার যা করবে সব আহানাই করবে
.
শান্ত বিছানা থেকে নেমে ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেছে
আহানা কিছু সময় বাদে আবারও রুমে ফেরত আসলো,এসেই দেখলো ওর ফোন জ্বলতেছে,কার যেন কল এসেছে,সাইলেন্ট করে রাখায় সাউন্ড হচ্ছিলো না
.
আহানা কল রিসিভ করে হ্যালো বলতে যেতেই ওপাশ থেকে কণা বললো”জান জান প্লিস টক উউথ মি”
.
কে রে?কে তুই?কোথাকার জান?আমি মেয়ে!!!
মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে জান বলতে লজ্জা করে না?বেশরম!
.
আহানা লাইন কেটে দিয়ে বারান্দার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো শান্ত হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
.
কি ব্যাপার?এরকম হাসতেছেন কেন?
.
কিছু না তো,এমনি
.
আহানা আবার চলে যেতে নিতেই কলটা আবার আসলো
এবার সে বিছানায় বসে রিসিভ করলো,কণা বললো”হু আর ইউ??এটা শান্তর নাম্বার নাহ?
.
শান্ত??আপনি কে বলুন তো
.
আমি ওর জিএফ,ওকে দাও,তুমি কে?
.
আমি ওর ওয়াইফ!
.
কণা হালকা কেশে দম নিয়ে বললো”তুমি তো বউ হয়েও বউ না,শান্ত তোমাকে মেনে নেয়নি জানা আছে আমার,ওকে দাও,ওর সাথে কিছু কথা আছে আমার”
.
আহানা শান্তর দিকে তাকালো তারপর বললো”সে তো আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমায়
.
বিশ্বাস করি না
.
করো না?
.
না?
.
সত্যি করো না?
.
না!
.
তাহলে মুড়ি খাও
.
আহানা লাইনটা কেটে দিয়ে ফোন নিয়ে হনহনিয়ে শান্তর সামনে এসে রেগে রেগে বললো”আপনার পাগলা প্রেমিকা আপনাকে জ্বালানোর জায়গায় আমাকে জ্বালাচ্ছে কেন?”
.
কারণ আমার সিম আমি তোমার ফোনে দিয়েছি আর তোমার সিম আমি ইউজ করছি
আশা করি তুমি ওকে সামলাতে পারবে
.
আমি কেন সামলাবো?
আপনি আপনার রুপ দিয়ে কণাকে পাগল বানিয়েছিলেন এখন ওরে আমি কেন সামলাবো,আপনি সামলান
.
কেমন বউ তুমি?তোমার জেলাস ফিল হচ্ছে না?
.
তখন হতো যখন আপনি আর ওর মাঝে টাংকি চলতো বিয়ের পরেও,এ ছাড়া জেলাস ফিলের কিছু দেখছি না
সিম বদলে নিজের সিম নিজে নেন আর যতবার সে কল করবে ঝাড়ি দিয়ে কেটে দিবেন
.
আমার অনেক কাজ,তুমি সামলাও না প্লিস!আর ওকে ব্লক দিলে আরেক নাম্বার থেকে কল করে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আপনার যা খুশি করেন,আমি পারবো না এত ভেজাল মাথায় নিতে,ওকে বাই”

মা আর খালা শান্তি রহমানের সাথে গল্প করা শেষ করে একেবারে বিকেলে বাসায় ফিরলেন,শান্ত কাজ করতে করতে শেষ,আজ অফিসে যেতে পারেনি বলে সব কাজ এখন বাসায় বসে করছে সে
.
আহানা ফ্রি টাইমে নিজের জামাকাপড় গুছাতে গিয়ে একটা ছবি দেখে থমকে গেলো,তারপর দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডার টার কাছে এসে সে তারিখ চেক করলো,চোখ দিয়ে হঠাৎ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে
আহানা ছবিটা বুকে ধরে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে,দৌড়াতে দৌড়াতে দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলো গেলো সে
.
শান্ত এ বিষয়ে জানে না,তার কাজ শেষ হয়েছে সন্ধ্যা ৭টা ৩৫এ
কাজ শেষ করে সে টিভিটা অন করে বললো”আহানা এক কাপ কফি হবে?”
.
আহানার কোনো খবর নেই দেখে সে রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর পেরিয়ে রান্নাঘরে চেয়ে দেখলো পুরো রান্নাঘর ফাঁকা,নিতু তার রুমে পড়ছে,মা ঘুমাচ্ছেন,তাহলে মেয়েটা গেলো কই?
.
শান্ত ফোন হাতে নিয়ে বাসার বাইরে বের হয়ে বাগানগুলো চেক করে না পেয়ে আহানাকে কল করলো,আহানার ফোন বেজে যাচ্ছে কিন্তু সে ধরছে না কারন সে ফোন বাসাই রেখে গেছে
আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে তাদের বাসার কাছে আসলো,এতটা পথ সে ছুটে এসেছে,রিকসা নিবে নাকি শান্তদের বাসার কারে করে আসবে এতসব মাথায় ছিল না তখন
তার শুধু মাথায় আছে তাকে এখন এই মূহুর্তে নিজের বাড়ি ফিরতে হবে
বাড়িতে না ঢুকে সে বাড়ির পেছন দিকটায় আসলো
.
একটা কবর সেখানে,আশেপাশে টাইলস করা,দুটো সাদা আর লাল গোলাপের গাছ মাঝখানে, তাতে ফুল ধরে আছে অনেক
আহানা একটু এগিয়ে এসে নিচে বসে পড়লো হাঁটু গেড়ে
কবরটি তার বাবার
আর কাল তার জন্মদিন,প্রতিবার খুব ধুমদাম করে জন্মদিনটা পালন করতো আহানারা
উনি যাওয়ার পর থেকে না আহানার জন্মদিন পালন হয় না উনার
কিন্তু আহানা টাকা জমিয়ে প্রতিবার গরীব কিছু লোকদের খাওয়ায় বাবার জন্য
এবারও খাওয়াবে সে,বাবার কবরটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সে চোখের পানি মুছতে লাগলো নিঃশব্দে
.
হঠাৎ পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে আহানা চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো,চোখ ভর্তি পানি তার
শান্ত বুঝতে পারলো আহানা কেন কাঁদছে তারপর সে স্বাভাবিক গলায় বললো”কাঁদলে উনি কষ্ট পাবেন,বরং হাসি মুখে থাকো,কাল তো আঙ্কেলের জন্মদিন,কত কাজ আমাদের,এভাবে কাঁদলে চলবে?উঠো!”
.
আহানা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো”আপনি যান,আমাকে একা থাকতে দিন,এতসবের মাঝে আমি দিনটা ভুলেই গিয়েছিলাম,কাপড় গুছাতে গিয়ে ছবিটা না পেলে হয়ত মনেই আসতো না”
.
এখন এসেছে তো?এটা নিয়েই পড়ে থাকবা নাকি কি করে দিনটা পালন করনা সেটাই ভাববা,আমি কিন্তু পথশিশু দের খাওয়াবো
.
আহানা হালকা হেসে বললো”আমি তাদের মা বাবাদের খাওয়াবো”
.
হুম,চলো এখন,রাত করে এখানে বসে থাকতে হবে না,তোমার এমন হাল দেখে আমারও খারাপ লাগে,তোমাকে তো ধানিলঙ্কা ফ্লেভারে মানায় শুধু
.
আহানা উঠে গিয়ে চুপচাপ হাঁটা ধরলো,মন খারাপ তার,বাবাকে এসময়টায় খুব মিস করে সে
অবশ্য যখন যখন সে পরিশ্রম করে টাকা কামাতো তখন তখন বাবার কথা মাথায় আসতো,তার বয়সের মেয়েরা বাবার টাকায় আরাম আয়েশ করত আর সে কাজ করে করে সংসার চালাতো
শান্ত ওর জীবনে আসার পর থেকে তো বাবাকে প্রায়ই ভুলেই গিয়েছে সে
আর এখন আবার সেই বাবাকে মনে পড়লো,মন চাচ্ছে বাবাকে সামনে পেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখতো সে
প্রিয় মানুষ ছেড়ে চলে গেলে তাকে ফিরে পাওয়ার কষ্টটা অনেক, তখন তাকে চেয়েও না পেয়ে আরও খারাপ লাগে
.
শান্ত কার চালাতে চালাতে আর আহানার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো না,কারণ আহানার মন খারাপ,যেটা হওয়া স্বাভাবিক
এখন ওকে মন খারাপ থেকে বেরিয়ে আসতে বলাও সাজে না
কারণ শান্ত নিজেও তার বাবাকে হারিয়েছে,কষ্টটা সে খুব ভালো মতন ফিল করতে পারে
.
বাসায় ফিরে আহানা ছবিটা ধরে রেখে খাটের এক কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে,বলে দিয়েছে সে ডিনার করবে না
বুয়া এসেছে সে সবাইকে ডিনার সার্ভ করে দেবে
.
শান্ত আহানা ডিনার করবে না শুনে তার ও খাওয়ার প্রতি ইচ্ছা উঠে গেছে তাও মায়ের সামনে খেতে হবে বলে কিছুটা খেলো তারপর আহানার জন্য কিছু খাবার নিয়ে সে রুমে ফেরত আসলো,আহানাকে ডাক দিয়ে বললো খাবারটা খেয়ে নিতে কিন্তু আহানা সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে
শান্ত এবার এক ধমক দিতেই আহানা উঠে বসে পড়েছে
চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে তার
শান্তর মনে হলো সে ধমক দিয়ে ভুল করেছে তাও খাওয়ানোর খাতিরে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে সে বললো”খাবার খেতে বলছি খাবা,এত না না করো কেন?না খেলে এক চড় বসিয়ে দেবো”
.
আপনি কেন বুঝছেন না আমার খিধে নেই,আমার কষ্ট লাগছে
.
তো?খাওয়া কি দোষ করছে??
.
খাব না আমি,প্লিস যান
.
তোমাকে খেতেই হবে
.
আহানা বাধ্য হয়ে দু টুকরো রুটি মুখে দিয়ে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো
শান্ত আর জোরাজুরি করতে পারলো না,ওর যেভাবে ইচ্ছা থাকুক,জাস্ট নিজের খেয়ালটা রাখুক সে

পরেরদিন ভোর হতে না হতেই আহানা উঠে পড়লো,তার আজ অনেক কাজ,খাবার প্রস্তুত করার জন্য বাবুর্চির সাথে কন্ট্যাক্ট করতে হবে
তা ছাড়া জামাকাপড় কিনে দেবে সে,শান্ত আহানার আঁচল বুকে ধরে ঘুমাচ্ছে,আহানা সব টেনসন গুছিয়ে নিয়ে আঁচল নিয়ে সমস্যা পড়লো এবার
তারপর হালকা টান দিয়ে বললো”আমার আঁচলের সাথে আপনার এত কি সম্পর্ক??ছাড়ুন,সরুন!”
.
হুমমম আহানা, ঘুমাতে দাও
.
ঘুমান না,কে মানা করেছে?আমার আজ কত কাজ,সরুন তো!উফ!
.
আহানা আঁচল টান দিয়ে শান্তর খালি পিঠে এক বাড়ি দিয়ে চলে গেলো,তারপর ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছাতে গুছাতে সে বিছানার দিকে এক নজর তাকালো,কিন্তু অবাক হলো এই দেখে যে শান্ত সেখানে নেই
.
গেলো কই?
.
আহানা এবার ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত মাথা মুছতে মুছতে বের হচ্ছে আর কাঁপতে কাঁপতে আলমারির কাছে গিয়ে জ্যাকেট বের করছে
.
কি ব্যাপার?ভোর ৪টা বাজে,এখন উঠলেন কেন?গোসলই বা করলেন কেন?
.
ওমা কি বলে!!তোমাকে আমি এ সময়ে একা বের হতে দেবো?মা তো তাহলে আমাকে কুচি কুচি করে কেটে নদীর জলে ভাসিয়ে দেবে
.
মা এমন কিছুই করবে না,আমার জন্য আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না,যান শুয়ে পড়েন,আমি একা একা যেতে পারবো
.
তা হচ্ছে না,আর ছোটবেলার বন্ধু হিসেবে এই টুকু সেফটি দিতেই পারি, তাছাড়া ভুলে যেও না তোমার সেফটির জন্যই কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করেছি
.
আহা আহা,এতদিনে না রতনের হামলার শিকার হলাম না সাইমনের,তাহলে এত কিসের ভয় আপনার?
.
যাই হোক, আমি যাব মানে যাবোই,চুপচাপ নিজের কাজ করো আমার যাওয়া নিয়ে এত না ভেবে
.
ঠিক আছে ফাইন!
.
আহানা চুল গুলো আঁছড়িয়ে নিতে নিতে শান্ত একটা টি-শার্ট পরলো এ্যাশ কালারের তারপর তার উপর দিয়ে একটা সবুজ রঙের জ্যাকেট পরে নিলো
,হাতে ঘড়ি পরে এবার সে জুতার ফিতা লাগাচ্ছে
আহানা চুলে খোঁপা করে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”এমন সেজেগুজে যাচ্ছেন কেন?কণার মতো একটা মেয়েকে পাগল করে শান্তি হয়নি আপনার?এখন আবার আরও শতে শতে পাগল করতে চান?”
.
আমার বউ পাগল হলেই চলবে,যাই হোক,পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি কোথা থেকে,কি পুড়ছে??
.
আহানা রেগে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,শান্ত আহানার ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওর পিছু পিছু গেলো,দুজনেই সবার আগে আসলো বাবুর্চির কাছে,তাকে সব মেনু বুঝিয়ে দিয়ো রাঁধতে বলে দিলো আর পথশিশুদের খোঁজায় মন দিলো দুজনে
.
আহানা বললো এভাবে কাজ হবে না,আপনি ওদিকে খোঁজেন আর আমি এদিকে,তাহলে বেশি বেশি পাবো
.
ঠিক আছে
.
সবাইকে সকালের খাবার খাওয়ানো হবে সাথে দুপুরের জন্য ও দিয়ে দেওয়া হবে,সাথে থাকবে জামা কাপড়
.
আজকে শিশুদের মা বাবার খরচ আহানা দেবে বলেছে,আর পথশিশুদের খাওয়ার খরচ শান্ত দেবে ঠিক করেছে
.
আহানা অনেকজনকে পেলো
সে সবার সাথে মজার মজার কথা বলছে,হঠাৎ একজনকে দেখে তার মুখের হাসি হাওয়া হয়ে গেলো
হলুদ রঙের ফ্রিন্টের একটা লুঙ্গি পরা আর জাম কালারের ফতুয়া পরা একজন দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে,আহানা থেকে প্রায়ই ১৩হাত দূরে
লোকটাকে দেখে আহানা ভয়ে গা কেঁপে উঠলো,লোকটা আর কেউ নয়,এ হলো রতন,দাঁত কেলিয়ে সে হাসতেছে এবার
.
আহানা পিছোতে পিছোতে অনেকটা পথ চলে আসলো তারপর এদিক ওদিকে শান্তকে খুঁজতেছে সে এখন
মিনিট দুয়েক পর শান্তর দেখা পেলো সে,শান্ত সেখানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছিলো
আহানা ভয়ে ভয়ে শান্তর সামনে দাঁড়িয়ে বললো”শান্ত আমি রতনকে দেখেছি”
.
শান্ত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো”কে?রতন?সেটা কি করে হয়,ও তো জেলে”
.
না আমি ওরেই দেখলাম মাত্র
.
শান্ত আহানার কথা শুনে সেই জায়গায় আসলো কিন্তু রতনকে দেখলো না সে
আহানা বললো সে সত্যি এখানে দেখেছে
.
আচ্ছা আমি কল করে জেনে নেবো রতন জেল থেকে বেরিয়েছে কিনা,তুমি এত টেনসন নিও না,আমি আছি না?
আমি থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,যে ওয়াদা আমি তোমাকে বিয়ে করার সময় করেছিলাম সেটা আমি পালন করবো
.
আহানা ঠিক আছে বলে কাজে মন দিয়েছে,সে ভুলেই গেছে সকালে সে রতনকে দেখেছিলো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
পুরোটা দিন দুজনেই ব্যস্ত ছিলো গরীব মানুষদের খাবার আয়োজনের এরেঞ্জমেন্টে
তো সন্ধ্যায় সব কাজ শেষ করে দুজনেই টায়ার্ড হয়ে কারে চুপ করে বসে আছে এখন
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বললো”এক কাপ চা হলে ভালো হতো,আমার আর শক্তি নাই, প্রচুর কাজ হয়েছে এবার!
প্রতিজনকে নিজের হাতে খাবার দেওয়া কি ছোটখাটো কাজ?”
.
হুম সেটাই,চলো রেস্টুরেন্টে গিয়ে চা আর হালকা নাস্তা করে আসি
.
ওকে চলুন,তার আগে বলেন মায়ের অবস্থা কেমন ফোন করেছিলেন রিপাকে?
.
হুম,মা ঠিক আছে,কোনো চিন্তা নাই

রেস্টুরেন্টের কাছে আসতেই শান্ত কারটা থামালো,আহানা আগে ভাগে নেমে দৌড় দিয়েছে রেস্টুরেন্টর দিকে
.
শান্ত মুচকি হেসে সিট বেল্ট খুললো সবেমাত্র,তারপর কার থেকে নামতে যেতেই বিকট একটা শব্দ হলো সাথে সাথে
মূহুর্তেই সব ওলটপালট!
.
আহানা মাত্র রেস্টুরেন্টের দরজায় হাত দিয়েছিলো দরজা খোলার জন্য
এত জোরে হওয়া শব্দ তার কানে আসতেই তার বুক কেঁপে উঠেছে সাথেসাথে,কারণ শব্দ যেদিক থেকে এসেছে সেখানেই শান্ত কার পার্ক করতেছিলো
কাঁপতে কাঁপতে আহানা পিছন ফিরে তাকালো
আশেপাশের মানুষে ভর্তি হয়ে গেছে জায়গাটায়
শান্তর কার ড্যামেজ ৫৬%,পিছনে একটা বাস দাঁড়িয়ে আছে,যাত্রীবাহী একটি বাস,ড্রাইভার পালিয়ে গেছে ততক্ষণে
আহানা কোনোদিক না তাকিয়ে দৌড় দিলো কারের কাছে
শান্ত কারের ভেতর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে,তার হাত আর মাথার বাম সাইড থেকে রক্ত বের হচ্ছে
আহানার পুরো দুনিয়াটা যেন থেমে গেলো
তার বাবার সাথে যা ঘটেছে তা আজ আবারও??
আহানা মানুষকে সরিয়ে শান্তর কাছে এসে ওর হাত ধরে ওকে উঠানোর চেষ্টা করছে এখন
.
শান্ত?কথা বলছেন না কেন??আমার দিকে তাকান,কি হয়েছে আপনার?
.
ম্যাডাম আপনি প্লিস সাইড হন,উনাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে জলদি
.
একজন পথচারীর কথা শুনে আহানা তার দিকে তাকিয়ে বললো”হ্যাঁ,আমার শান্তর কিছু হবে না,ওকে আমি বাঁচাবো”
.
আহানা কথাগুলো বলতে বলতেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে
এতবড় ট্রমা সে নিতে পারেনি,হাত পা হঠাৎ এত জোরেশোরে কাঁপতে লাগলো!!! না পারলো সে কিছু বলতে না পারলো চিৎকার করতে
মূহুর্তেই মানুষের জীবন কিভাবে বদলে যেতে পারে
আহানা যখন চোখ খুলেছে তখন দেখলো সে একটা সাদা চাদর বিছানো বেডে শুয়ে আছে,তারপর তার সব মনে পড়তেই সে বিছানা থেকে নেমেই দৌড় দিলো শান্তর কাছে
দুজন নার্স এসে ওকে আটকে ফেলে বললো”থামুন,আপনি যেতে পারবেন না ভেতরে”
.
আমি আমার শান্তর কাছে যেতে চাই,আমাকে বাধা দেওয়ার আপনারা কারা???,ছাড়ুন আমার হাত
.
আহানা চিৎকার করছে বারবার
নার্সরা না পেরে ওকে অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশান দিয়ে দিয়েছে কারব আহানা ভেতরে ডাক্তারদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলো রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে
.
আহানা আবারও জ্ঞান হারিয়ে বেডে শুয়ে আছে
.
শান্তর পকেট থেকে ওর মানিব্যাগ নিয়ে সেখানে থাকা ওর অফিসের কার্ড থেকে অফিসে ফোন করলো নার্স তারপর ওদের খবর জানিয়ে বললো যাতে শান্তর পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়
.
২০মিনিটের মধ্যেই রিপা আর নিতু এসে গেছে সাথে এসেছে আহানার মা আর খালা
শান্তি রহমান ঘুমাচ্ছেন,তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি কিছুই,বুয়াকে বলা হয়েছে উনার খেয়াল রাখতে
.
আহানার মা আহানার কাছে এসে বললেন”ওর কি হয়েছে?”
.
নার্স জানালো আহানা শান্তর এমন হাল দেখে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো তারপর সেন্স আসার পর সে আরও চিৎকার চেঁচামেচি করায় ওকে অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশান দেওয়া হয়েছে আপাততর জন্য
.
আর শান্ত হাতে চোট পেয়েছে এবং মাথায় ও,থেমে থেমে রক্ত বমি করছে সে,চোখে সব ঝাপসা দেখছে সে
ডাক্তার নার্স ছাড়া আর কাউকেই দেখছে না চোখের সামনে
শুধু মুখ ফুটে একবার বললো”আহানা কোথায়”
.
তারপর আর কিছুই তার মনে নেই,ডাক্তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন”আহানা কে?তাকে যেন রুমে আসতে বলা হয় আর শান্তর মাথায় চোট পেয়েছে তাকে যেন কোনো টেনসন জাতীয় কথাবার্তা না শুনানো হয়”
.
আহানার এখনও জ্ঞান ফেরেনি,শান্তর ও ফেরেনি,দুজনে দুটি রুমে শুয়ে আছে অচেতন হয়ে
মাঝখানে একটি দেয়াল
আজকের এই ঘটনার পেছনে কার হাত থাকতে পারে?
মজনু নাকি রতন??
.
মজনুর নয়,কারণ সে বলেছিলো প্রতিশোধ নেবে কিন্তু সে নেয়নি, জাস্ট হুমকি দিয়েছিলো,তিনি শুধু একবার শান্তর উপর হামলা করেছিলেন যেটা কয়েকদিনের আগের ঘটনা
আজকের বাস দিয়ে চাপা দেওয়ার আইডিয়াটা রতনের ছিল
বাস ড্রাইভার ও সেই ছিলো,চাপা দিয়ে সে বাস রেখে পালিয়েছে
.
চেয়েছিল আহানাকে আর শান্তকে একসাথে মারতে কিন্তু এই যাত্রায় আহানা বেঁচে গেছে

পুরো রাত শেষ হয়ে গেলো
রিপা শান্তি রহমানের কাছে চলে গেছে যাতে উনি কোনো সন্দেহ না করেন,উনাকে শান্তর এক্সিডেন্টের কথা জানানো যাবে না কোনো মতেই
.
আহানা ভোর হতেই চোখ খুলে আবারও ছুটলো শান্তর রুমের দিকে
যতক্ষণ না সে শান্তকে সুস্থ দেখছে,শান্তকে জড়িয়ে ধরছে ততক্ষণ তার শান্তি নেই
.
শান্তর রুমে ঢুকার সময় কেউ ওকে বাধা দেইনি
করিডোরে থাকা চেয়ারের সারিতে মা,খালা আর নিতু বসে ঝিমাচ্ছেন,পুরো রাত তারা ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি,এই মাসটা কিরকম বিচ্ছিরি ভাবে শেষ হবে তারা ভাবতেই পারেনি
একবার শান্তি রহমানের হার্ট এটাক আবার এখন এত কিছু
.
আহানা শান্তর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে,ওর বাম হাতে ব্যান্ডেজ করে রাখা,মাথায় ও ব্যান্ডেজ
আহানা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শান্তর বুকে মাথা রাখলো
.
শান্ত এসব কি হয়ে গেলো,আপনি ঠিক আছেন তো?আমার সাথে কথা বলবেন না??একটু আমার দিকে তাকান না শান্ত!
আর আপনাকে ভাইয়া ডাকবো না কখনও,কখনও ঝগড়াও করবো না,প্লিস তাকান আমার দিকে
.
আহানা শান্তর কোনো উত্তর না পেয়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর চলে যেতে নিতেই শান্ত হাত বাড়িয়ে ওর আঁচল ধরে ফেললো
.
আহানা চমকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসিমাখা মুখে বললো”আপনি ঠিক আছেন তো?”
.
শান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো”হুম,তোমাকে খুঁজেছিলাম অনেক,কই ছিলো?”
.
আমাকে অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশান দিয়েছিলো
.
কিন্তু কেন?
.
বেশি চিৎকার চোঁচামেচি করছিলাম তো,ওসব বাদ দিন,আপনার হাতে কি হয়েছে?বেশি ব্যাথা করে?
.
ব্যাথা বলতে ডাক্তার বলেছে ২০দিন বেড রেস্ট, হাতে চাপ দিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না,আমাকে তাহলে এক হাতেই ল্যাপটপ চালাতে হবে
.
আপনাকে আমি কাজ করতে দেবো না,আমি অফিস সামলাবো
আহানা কিসব ভেবে আবারও করিডোরের দিকে যেতে নিতেই শান্ত আবারও ওর আঁচল ধরে ফেললো
আহানার চোখে মুখে, বুকের ভেতরটা আগুন জ্বলছে,প্রতিশোধের আগুন!
রতনকে সে একটা শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তার শান্তি হবে না
শান্তর দিকেও তাকাচ্ছে না সে,চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা তাকাচ্ছে না দেখে শান্ত আঁচল হালকা টেনে বললো”যা করার আমি করবো!তুমি কিছু করবা না
বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার প্ল্যান যেই করে থাক না কেন তার শাস্তি সে পাবে,তুমি শুধু আমার পাশে থাকো,একা কিছু করতে যেও না আহানা
.
আহানা চুপ করে থেকে আবারও চেয়ার টেনে বসলো শান্তর কাছে,শান্তর অসুখে ভরা চেহারাটা দেখে আহানা সব ভুলে গিয়ে হাত এগিয়ে এনে শান্তর মাথায় হাত রাখলো
.
শান্ত!আমি একবার আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েছিলাম,সে কষ্টের ঘা এখনও শুকায়নি
তার মধ্যে আমি আমার আরেকজন প্রিয় মানুষকে হারানোর ঘা কি করে সহ্য করতে পারতাম?
এই ভয় ততদিন থাকবে যতদিন না শত্রুদের পতন হচ্ছে,আমার মা জানত না তার সামনে থাকা গোপনশত্রুদের কথা
কিন্তু আমি তো জানি,রতন,মজনু চাচা কিংবা সাইমন
আর তো কেউ নয়,তাহলে এদের কি করে ছাড় দেবো আমরা??
দেখলেন তো কত বড় একটা বিপদ হয়ে গেলো
মা কাল সারা রাত আপনাকে দেখেনি,রিপা কোনোরকম বুঝিয়েছে কিন্তু আজ কি হবে??আজ আপনার হাতে আর মাথায় ব্যান্ডেজ দেখলে মায়ের অবস্থা কেমন হতে পারে ভাবতে পারেন??
কি বলবেন তাকে?
আর আমার এটা ভেবে নিজেকে অসহ্য লাগছে কারণ
আজ আপনার এই এক্সিডেন্টটা যেই করিয়েছিল তার শত্রুতামি আমার সাথে কিন্তু বদলা নিয়েছে আপনার থেকে
ভবিষ্যতে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে,আমি তখন কি করবো??
.
আহানা তুমি এত কেন ভাবতেছো??পুলিশ আছে না?উনারা উনাদের কাজ করবে
.
আহানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”এই ভরসা দিয়ে দিয়ে সেই আপনার ক্ষতি তো হয়েই গেলো,এরপরেও আপনি আমাকে এমন ভরসা দেন কি করে??
ভালো হতো আমি মরে যেতাম,প্রিয় জনের কষ্ট,মৃত্যু নিজের সচোক্ষে দেখার চেয়ে মরে যাওয়া মাচ বেটার
.
আহানা তুমি থামবা?নাকি ডান হাতের চড় খাবা
.
আহানা ব্রু কুঁচকে আঁচল ছাড়িয়ে বললো”চুপচাপ শুয়ে থাকেন,আমি যাই নাস্তার ব্যবস্থা করি,মা আর খালা,নিতু না খেয়ে আছে

আহানা সবাইকে নাস্তা এনে দিয়ে নিজে আর খেলো না,শান্তর কাছে এসে চুপ করে বসে থাকলো
শান্ত এতক্ষণ ঘুমিয়েই ছিলো,আহানার উপস্থিতি টের পেয়ে সে চোখ খুললো
আহানা ক্লান্ত হয়ে গেছে,,তাই সে শান্তর হাতটা ধরে পাশে মাথা রেখে বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে গেছে
শান্ত ওর ডান হাতটা আহানার হাত থেকে সরিয়ে সেটা দিয়ে আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,বাম হাতে ব্যান্ডেজ করা তার,নাড়ানোও যাচ্ছে না
.
শান্ত ভেবেছিল রতন মনে হয় আহানার ক্ষতি করে ফেলেছে যার কারনে সে বারবার আহানার নাম ধরে ডেকেছিলো
.
মা আর খালা মিলে শান্তকে দেখতে এসে দেখলো আহানা দিব্যি ওর পাশে মাথা রেখে শুয়ে আছে,আর শান্ত আহানার মাথায় হাত বুলাচ্ছে
.
এই আহানা?তোর এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি শান্তর??এরকম শুয়ে আছিস কেন?উঠ!শান্তর তো নড়তে চড়তেও কষ্ট হচ্ছে নির্ঘাত!
উঠ বলছি!
.
আহানা চোখটা খুলতেই ওর সব হুস আসলো
তখনই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
আহানা মুখে হাত দিয়ে বললো”সরি!আসলে ক্লান্ত লাগছিলো,মাথা এলাতেই চোখটা লেগে এসেছে,আপনার বেশি কষ্ট লেগেছে?”
.
নাহ,এরকম বাচ্চা টাইপ মেয়ে সামলাতে আমার সমস্যা হয় না তেমন একটা
.
আহানা হেসে চলে গেলো,কিছুই বললো না
অন্য সময় হলে সে ঝগড়া করতো,তাই বিষয়টা শান্তর ভালো লাগলো না
আহানা ভেবে রেখেছে সে আর শান্তর সাথে ঝগড়া করবে না কখনও
.
বিকালের দিকে তারা সবাই বাসার দরজার সামনে এসে হাজির,শান্ত সেই হসপিটাল থেকে বাসায় আসা পর্যন্ত ভেবে যাচ্ছে মাকে কি করে সামলাবে
রিপা দরজা খুলতেই শান্ত সবার আগে দেখলো দূরে মা হুইল চেয়ারে বসে আছেন
মা শান্তকে দেখে প্রথমে মুচকি হাসলেও পরেই যখন তিনি দেখলেন শান্তর মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ করা
উনি চাকা ঘুরিয়ে শান্তর কাছে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে শান্তর শরীর ছুঁয়ে দেখলেন তারপর আহানার দিকে তাকালেন
আহানা মাথা নিচু করে আছে
.
শান্তি রহমান নিরবে কাঁদতে থাকলেন এছাড়া আর কিছু বলার শক্তি তার নেই,শান্ত মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো”বাবা ফিরে আসেনি,কিন্তু আমি ফিরে এসেছি মা,তোমার ছেলে তোমাকে রেখে কোথাও যাবে না
বাবা চলে যাওয়ার পর এই পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিয়েছি আর আজীবন দায়িত্বটা আমার কাঁধেই থাকবে,তোমার আর বাকিদের দোয়ায় আমি বেঁচে ফিরে এসেছি,এটা ছোটখাটো ব্যাপার!তুমি চিন্তা করে তোমার নিজের ক্ষতি করবা না,আমার অসুখ আমি সামলে নিতে পারি কিন্তু তোমার অসুস্থতায় আমি ঠিক থাকতে পারি না মা
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৬০+৬১+৬২

3

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা এখনও একই জায়গায় বসে আছে,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৮টা বাজে এখন
ঠিক ৮টা বাজতেই শান্ত ছাদ থেকে ফিরে তার রুমে আসলো
আহানাকে নিচে বসে থাকতে দেখে সে কিছু বললো না,চুপচাপ ল্যাপটপটা নিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো সে
বিন ব্যাগে বসে আবারও আহানার দিকে তাকিয়ে সে আহানাকে দেখতে পেলো না
লজ্জা পেয়ে চলে গেছে মনে হয়,শান্ত মুচকি হেসে তার কাজে মন দিলো
আহানা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,এত কিছুর পরেও আহানার আজ ভীষণ খারাপ লাগছে
কেন লাগছে তা সে জানে না,তবে মনে হচ্ছে সবকিছুই সে শান্তকে জোর করিয়ে করাচ্ছে
এটা কিআসলেই ঠিক?
নাহ ঠিক নয়,আমি ঠিক করিনি,উনার সামনেই যাব না আর

রাত ১১টা বাজতে চললো অথচ আহানা এখনও ওর রুমে আসছে না
শান্ত কাজ সেরে উঠে ডিনারের জন্য আসলো,সাথে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আসতেছে,আহানা মনে হয় নিতুর রুমে,কারণ মায়ের রুমেও সে আহানাকে দেখেনি
মেয়েটা দূরে দূরে থাকছে কেন এত!
.
আহানা নিতুর রুমে বসে নিতুর সাথে গল্প করছে,শান্ত নিতুর রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো ওদের গল্পে সামিল হওয়ার জন্য
আহানা শান্তকে দেখে নড়েচড়ে বসলো
শান্ত কথার ছলে ছলে বারবার ওর দিকে তাকায় শুধু
আহানা তাই উঠে গিয়ে বললো”নিতু আমি ডিনার রেডি করতে যাচ্ছি,তোমরা কথা বলো কেমন?”
আহানা আর দেরি না করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো
শান্ত ও সাথে সাথে বেরিয়ে ওর হাতটা ধরে ওকে আটকালো তারপর বললো”এরকম পালাচ্ছো কেন বলোতো?”
.
আহানা চোখ বন্ধ করে রেখেছে,তারপর একটা শ্বাস নিয়ে বললো’কাজ আছে আমার,হাতটা ছাড়ুন”
.
শান্ত হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের দিকে চলে যেতে যেতে বললো”আমি ডিনার করবো না”
.
আহানা শান্তর চলে যাওয়া দেখছে,তারপর টেবিলে খাবার সার্ভ করে,মাকে আর নিতুকে খাবার দিয়ে শান্তর রুমের দিকে তাকিয়ে রইলো সে
তারপর শান্তকে আসতে না দেখে সেদিকে গেলো সে
ওকে ডাকার জন্য
মা আবার কি না কি মনে করে বসবেন পরে!
আহানা রুমে এসে দেখলো শান্ত চাদর টেনে শুয়ে পড়েছে,রুমের লাইটটা অফ করে,এখন ল্যাম্পশ্যাড জ্বলছে শুধু
আহানা কাছে এসে বললো”আসুন না,মা ভাববে আমরা আবারও ঝগড়া করেছি,শুধু শুধু রাগ করছেন কেন?”
.
শান্ত ঘুরে আরেকদিকে ফিরে গেলো
আহানা সেদিকে এসে শান্তর গায়ে হাত রেখে বললো”আসুন না প্লিস! ”
.
খাবো না বললাম না???
.
আহানা আর কিছু বললো না,আবারও ফেরত গেলো ডাইনিং রুমের দিকে
মা আহানার দিকে তাকিয়ে আছেন,তার আর বুঝতে বাকি নেই দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে,উনি তাই খাওয়া শেষ করে চুপচাপ চলে গেলেন,কারণ এরা যতই ঝগড়া করুক না কেন পরে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়
.
আহানা খাবার খেলো না,রুমে ফেরত আসলো না খেয়েই,তারপর শান্তর এক পাশে শুয়ে পড়লো সে
.
কি থেকে কি হয়ে গেলো,আমি কি উনাকে রাগ দেখিয়েছিলাম?তাহলে উনি এতো রাগ কেন দেখাচ্ছেন আমাকে?খাবারটাও খেলো না,সকালে নাস্তা করবে কিনা কে জানে!

খিধাতে দুজনের একজনেরও ঘুম হচ্ছে না
রাত ২টোর দিকে দুজনেই এপাশ ওপাশ করতে করতে উঠে পড়লো একসাথে
আহানা ঘুম ঘুম চোখে শান্তর দিকে চেয়ে কিছু না বলে উঠে গিয়ে পানি এক গ্লাস ছিলো সেটা নিলো খাওয়ার জন্য
শান্ত তার আগেই এসে ছোঁ মেরে গ্লাসটা নিয়ে নিলো তারপর বললো”আমি কিছু খাইনি,সো এটার প্রতি অধিকারটাও আমার”
.
আহানা গাল ফুলিয়ে বললো”আমিও খাইনি”
.
খাওনি কেন?আমি কি তোমাকে বলেছিলান যে খেও না?
.
আপনি এরকম রাগ দেখান কেন আমাকে?কি করেছি আমি?
.
কি করো নাই সেটা বলো,কিস করার পর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতেছো,অন্য কোনো হাসবেন্ড হলে সিধা গালে চড় মেরে দিতো বুঝলা?
.
আহানা মাথা নিচু করে বললো”আমি ভাবলাম আমি জোর করাতে এমন করেছেন”
.
তুমি?তুমি কিসের জন্য আমাকে জোর করেছো?কবে?বরং কিস করতে গিয়ে দুবার চড় খেয়েছি আমি
.
না সেটা না,ভলোবাসার ব্যাপারটার কথা বলছি
.
শান্ত পানির গ্লাসটা টেবিলে রেখে আহানার দুকাঁধ ধরে বললো”দেখো আহানা!আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ,এরকম রিলেশন হওয়া স্বাভাবিক ”
.
তার মানে আপনি আমার স্বামী হওয়ার কারণেই এমনটা করলেন?আর কিছু না?
.
না?আর কি?
.
আহানা মুখ কালো করে বিছানায় এসে বসলো,তারপর কেঁদে দিলো আবার
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে ওর পাশে বসে পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরে বললো”উফ,তোমাকে কি করে বুঝাই যে!!! থাক,বুঝতে হবে না,তুমি কি চাও খোলসা করে বলো,আমাকে এতো প্যাচে ফেলবা না একদম
.
আহানা শান্তর দিকে ফিরে বসে হাত দিয়ে চোখগুলো মুছে বললো”আপনি আমাকে ভালোবাসেন?”
.
শান্ত আহানার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,তারপর কিছু না বলেই উঠে বারান্দায় চলে গেলো
আহানা বুঝতে পারলো শান্ত ওকে ভালোবাসে না,সে কাঁথাটা টেনে আবারও শুয়ে পড়লো,শান্তর থেকে এই উত্তরটা সে আর কোনোদিন চাইবে না,যে ওকে ভালোবাসে না তাকে জোর করে কি লাভ!
.
পরেরদিন সকাল সকাল আহানা শান্তর সামনে ওর মাকে বললো সে কয়েকদিনের জন্য তার মায়ের বাড়িতে থাকতে চায়
শান্ত চুপচাপ নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো,কথাগুলো ভালোমতন শুনেছে সে,কিন্তু তাও কোনো পাত্তাই দিলো না
আহানাও নিরুপায় হয়ে সব গুছিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসলো
সারাদিনে দুজন দুজনের কোনো খোঁজ নিলো না
.
আহানা বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা ছবি দেখছে,ছবিটা শান্তর,যখন তার ১৮বছর বয়স ছিলো এটা তখনকার ছবি
আহানা শান্তি রহমানের রুমে পেয়েছিলো ছবিটা,বেশ ভালো লেগেছিলো বলে ছবিটা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলো আহানা
শান্তর গায়ে ছিলো সবুজ রঙের একটা টিশার্ট
বাসার সামনে দাঁড়িয়ে এক গাল হাসি নিয়ে সে ফটোগ্রাফারের দিকে চেয়ে ছিলো
আহানা ছবিটা দেখতে দেখতে ফোনের দিকে তাকালো একবার,ফোন জ্বলছে না,শান্তর একটা ফোনের আশায় সে আজ সারাটা দিন লাগিয়ে দিয়েছে,কিন্তু কেন?
যে আমাকে ভালোবাসে না তার প্রতি আমার কেন এত টান??একটা স্বার্থপরকে ভালোবাসি বলেছিলাম,এই তার নমুনা
.
শান্ত বাসায় ফিরেছে,আজ জলদি করেই ফিরেছে,সে জানে বাসায় আহানা নেই,এউ কথা ভেবে অফিসের কোনো কাজেই তার মন বসছিলো না তাই চলেই আসলো
.
পুরো রুমটা তার খালি পড়ে আছে,সেই বৃষ্টি শুরু আবারও,মন খারাপের সময় কেন যে বৃষ্টি হয় কে জানে!
শীত এমনিতেই পড়তে শুরু করেছিলো এবার তো জোরেশোরে পড়বে মনে হয়
শান্ত চেঞ্জ করে এসে বিছানায় বসলো,আহানার গায়ের গন্ধ পুরো রুম জুড়ে,অথচ সে নেই,একটা কথার উত্তর দেইনি বলে চলে গেলো
আমি বলেছি সব কিছুর একটা সময় আছে
জীবনে প্রেম করি নাই,হুট করে আই লাভ ইউ বলতে পারি না আমি
তোমার প্রশ্নের সোজা উত্তরটাও দিতে পারলাম না বলে তুমি চলেই গেলে?আমার মন বুঝতে এত কিসের কষ্ট তোমার?সব কিছুতে দেমাগ দেখানো কি সাজে?
সন্ধ্যা হয়ে আসতেছে একটা কল পর্যন্ত করে নাই,নিশ্চয় আমার কলের অপেক্ষাই আছে,এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারবো না আমি
.
শান্ত একটা কালো জ্যাকেট নিয়ে তার টিশার্টের উপর দিয়ে সেটা পরতে পরতে বেরিয়ে গেলো
আহানাদের বাসার সামনে কার থামাতেই সবার আগে নজরে পড়লো আহানাকে
আহানা তার বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি উপভোগ করছে
পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে তার
শান্ত কার থেকে নেমে আহানার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো,আহানা চোখ খুলছে না,সে বৃষ্টির মধ্যে ডুবে আছে
.
আমার প্রতি যত রাগ সব নিজেকে ভিজিয়ে মেটাচ্ছে,জ্বর হলে কার ক্ষতি হবে আমার নাকি তার??এটা বুঝে না
.
শান্ত বাসায় ঢুকে সোজা আহানার রুমে আসলো
গায়ের জ্যাকেটটা খুলে হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে ছুটলো সে
কাছে এসে আহানার গায়ে জ্যাকেটটা পরিয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করালো সে
আহানা চমকে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
.
শান্ত কিছুটা রাগি চোখে আহানার দিকে তাকালো তারপর নিচু হয়ে আহানাকে কোলে তুলে নিলো সে
আহানার পুরো শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে
আহানা নরম গলায় বললো”যে আমাকে ভালোবাসে না তার কোনো অধিকার নেই আমাকে ছোঁয়ার,তার থেকে প্রাপ্য যে অধিকার আছে সেসব ও আমার লাগবে না”
.
শান্ত আহানাকে বিছানায় নামিয়ে আলমারি থেকে তোয়ালে নিয়ে ওর গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো”কবির মতন বড় বড় ডায়ালগ না মেরে মাথা মুছে ফেলো”
কথাটা বলে শান্ত আলমারি খুঁজে একটা থ্রি পিস বের করে সেটাও আহানার গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো”চেঞ্জ করো শাড়ীটা,নাহলে আমি করাই দেবো”
.
আহানা তোয়ালে আর জামা কাপড় সব বিছানায় ফেলে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত সামনে দিয়ে এসে দরজাটা লাগিয়ে ফেললো
আহানা বিরক্ত হয়ে বললো”আর কি চান আপনি!এখানে এসেছেন কি জন্যে?যাকে ভালোবাসেন না তার প্রতি এত কিসের দরদ আপনার?”
.
দরদ না কর্তব্য
.
চুলোয় যাক সেসব,এখন পথ ছাড়ুন আমার,অনেক বিরক্ত করছেন!আপনাকে কে বলেছিলো এখানে আসতে?আমাকে ছাড়া চলে না?
.
শান্ত কিছু না বলে আহানাকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তোয়ালে বাড়িয়ে ধরলো ওর দিকে
.
আহানা আবারও চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর শাড়ীর আঁচল মুঠো করে ধরলো তারপর বললো”চুপচাপ মাথা মুছো নাহলে……
.
আহানা বাধ্য হয়ে চুল মুছে নিচ্ছে,শান্ত এবার থ্রি পিসটা আহানার হাত ধরিয়ে দিয়ে বললো”নাও চেঞ্জ করে আসো”
.
পারবো না,আঁচল ছাড়ুন আমার
.
শান্ত আঁচলটা আরেকটু টেনে ধরে বললো”মেজাজটা খারাপ করিও না আহানা,যেটা বললাম সেটা করো, তুমি জানো বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার অসুখ হয় তাও জেনে শুনে এমন করার কারণ কি সেটা বুঝতেছি না আমি
সিমপাথি পেতে চাও আমার থেকে?
.
আহানার চোখে পানি এসে গেছে শান্তর মুখে সিমপাথি কথাটা শুনে তারপর নিজেকে শক্ত করে সে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো”সিমপাথি??আপনার থেকে সিমপাথি পাওয়ার আশায় আমি এসব কেন করবো??আমি ওমন মেয়ে?আপনার তা মনে হয়?
আমি কণা নই মিঃশাহরিয়ার শান্ত!আমি আহানা,আমার কাছে নাটক জিনিসটা নেই,আমি যা করি মন থেকে করি
আর আপনি আমাকে এখন বলছেন আমি সিমপাথি পাওয়ার জন্য বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম??আমার জ্বর হলে আপনি কেয়ার দেখাবেন তাই??
কেয়ার ছাড়া আর কি দেখিয়েছেন যে সেটা পাবার আশায় আমি এমন করবো?
আমার শরীর আমার ইচ্ছা,আমি যা খুশি তাই করবো,আপনার কোনো অধিকার নেই কেনো কিছুতেই
আপনি আমাকে ভালোবাসেন না
নামেই স্বামী আপনি তাহলে এতকিছুতে মাথা ঘামান কেন আপনি?
বেরিয়ে যান আমার বাসা থেকে,আমি আপনার মুখ ও দেখতে চাই না!যার মনে আমাকে নিয়ে এরকম নিচু মনমানসিকতা আছে তার সাথে আমার কোনো কথা নেই
.
শান্ত রেগে আহানার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো
.
আহানা গালে হাত দিয়ে কিছু না বলে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত ধরে কাছে টেনে এনে বললো”এমন ভাবে কথা বলতেছো যেন আমার আর তোমার এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছে?”
.
আহানা নিশ্চুপ হয়ে কেঁদে যাচ্ছে
.
শান্ত ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”মুখে বললেই বুঝবা আমি তোমাকে ভালোবাসি?এটা কোন ধরনের লজিক আহানা?তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না আমি,বারবার আমাকে বাধ্য কেন করো??গায়ে হাত তুলতেও বাধ্য করলে তুমি
ভালোবাসি বলিনি মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি না??তোমার প্রশ্নের উত্তর দিই নাই বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি না?
তুমিও ম্যাচিউর এবং আমিও,বাট তোমার লজিক সেকেলে রয়ে গেছে,বাচ্চামি ছাড়া আর কিছুই দেখি না আমি তোমার মাঝে
কাল বিকালের সেই সময়টুকু যথেষ্ট নয় তোমার এটা বুঝার যে আমি তোমাতে আসক্ত???ভালোবাসি বললেই তুমি হ্যাপি?আর কিছু লাগবে না তোমার??তো ফাইন,আমি তোমাকে ভালোবাসি,এবার খুশি তো তুমি??নিজের সমস্ত জেদ ছেড়ে এবার শাড়ীটা চেঞ্জ করে ফেলো,আর কথা বাড়িও না তুমি
.
আহানা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো”জোর করে চাইনি আমি,আর তাই চলে এসেছিলাম এখানে,আপনার দয়া আমার লাগবে না,চলে যান এখান থেকে!”
.
আই নিউ ইট!তুমি ভালোবাসি কথাটা শোনার পরে ঠিক এই রিয়েকশানটা দেখাবে,আসলেই কি চাও তুমি নিজেও সেটা জানো না আহানা
.
আহানা শান্তকে দূরে ঠেলে দিলো ধাক্কা দিয়ে
তারপর বললো”আমি শুধু এটা চাই আপনি এখান থেকে চলে যান প্লিস!”
.
শান্তর মাথা চড়ক গাছ,রেগে আহানাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেললো সে
তারপর হাত দিয়ে নিজের মাথার চুলগুলো টানলো মিনিট দুয়েক ধরে
আহানা এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত চুল গুলো ঠিক করে গায়ের টিশার্টে হাত দিলো,চট করে খুলে ফেললো টিশার্টটা
আহানা এখনও চুপ করে তাকিয়ে আছে
শান্ত টিশার্টটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মেরে এগিয়ে আসতে আসতে বললো”আজ সব প্রমাণ করে দেবো”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
প্রমাণ লাগবে না আমার,ভালো যে বাসেন না তা খুব ভালো করে জানি,তো কিসের প্রমাণ দেবেন আপনি??
বলার আর কিছু আছে??
.
শান্ত পাশ থেকে থ্রি পিসটার ওড়না হাতে নিয়ে আরও এগিয়ে আসতেছে
আহানা ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে খানিক ভয় পেয়ে গেলো,তারপর একটু পিছিয়ে বললো”বললাম না,কোনো প্রমাণ লাগবে না আমার,এসব কি করতে চান কি আপনি? ”
.
দেখবা তো!
.
আহানা কিছু বলার আগেই শান্ত ওড়না দিয়ে আহানার মুখটা ভালো করে বেঁধে ফেললো,আহানা ভেবেছিলো হয়তবা ওর হাত দুটো বাঁধবে কিন্তু এ দেখি তার উল্টাটা করলো শান্ত
আহানা চোখ বড় বড় করে শান্তর দিকে তাকিয়ে হাত উঠালো মুখের বাঁধন খুলার জন্য, শান্ত এবার তার দুহাত ও ধরে ফেললো শক্ত করে
.
আহানা কিছু বলতেও পারছে না,হাত ও নাড়াতে পারছে না,কিরকম একটা বিরক্তির মাঝে সে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত মুচকি হেসে বললো”কেমন লাগছে??
বেশি বকবক করো বলেই একদম সবার আগে মুখ বেঁধেছি তোমার,এবার কাউ কাউ করো যত পারো”
.
আহানা চোখ দিয়ে রাগ ঝাড়ছে তাও কোনো লাভ হচ্ছে না,শান্ত এমন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেন সে আহানার রাগে ভয় পায়নি বরং আরও রাগানোর ফন্দি আঁটছে
.
কি??কিছু বলবা না আহানা??বলো না একটু শুনি!ভালোবাসি বলি না সবসময় এটা বলো যে এখন ভালোবাসা দেখাতে আসায় এত ছটফট করছো কেন হুমমম?
.
আহানা হাত পা নাড়াতে নাড়াতে শান্তর গায়ের দিকে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে,শান্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”এত কিছুর মাঝে তুমি আমার বডি চেক করছো?ভাল্লাগছে??”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে মুখ আরেকদিকে ঘুরিয়ে নিলো,সোজা বারান্দার দিকে তাকালো সে,বৃষ্টি থেমে গেছে,সব অন্ধকার,ঘড়িতে সাড়ে ৭টা বাজে এখন
আহানা শান্তর দিকে তাকাচ্ছে না,হাত ও নাড়াচ্ছে না,চুপ করে নির্বাক হয়ে সে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,অথচ বাইরে কিছুই নেই দেখার মতো,সব অন্ধকারে ছেয়ে গেছে,শান্তদের বাসার মতন এখানে ল্যাম্পপোস্ট নেই
আহানা তার গলায় শান্তর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো সাথেসাথে
তাও তাকালো না সে শান্তর দিকে,একটা গভীর রাগ এখন তার মধ্যে বাস করছে
বারবার করে সে বলেছিলো যে তাকে ভালোবাসি না বলে যেন শান্ত তাকে না ছোঁয়
আর শান্ত তার এই কথাটা শুনলো না,বললো ঠিক আছে তবে সেটা জেদ ধরে,মন থেকে তো বলেনি
তাই এখন এত ভালো লাগার স্পর্শের মধ্যেও ভালো লাগছে না,বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে তার
শান্তর ঠোঁটজোড়া আহানার গলা থেকে সরিয়ে আহানার কানের কাছে নিয়ে আস্তে করে বললো”তোমাকে খুব ভালোবাসি,কখনও কাউকে এই কথাটা বলা হয়ে উঠেনি বলে তোমাকে হুট করেই বলতে এত দেরি হয়ে গেলো!ভেবেছিলাম তুমি হয়ত বুঝবে!
কিন্তু তুমি তো মুখের কথায় বিশ্বাসী! শুনে রাখো! আই নিড ইউ!!”
.
আহানা কথাগুলো শুনে শান্তর দিকে তাকালো,শান্তর মুখটা আহানার পাশে বালিশের উপর রাখা,তারপরেও দুহাত দিয়ে সে এখনও আহানাকে ধরে রেখেছে


ভোর ৫টা ১৪বাজে,আহানা খাটের এক কোণায় গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে শান্তর দিকে তাকিয়ে
শান্ত তার সাদা পিঠটা উপরে রেখে ঘুমাচ্ছে মাথা বালিশের নিচে গুজে দিয়ে
আহানা এবার নড়েচড়ে বিছানা থেকে নামলো,শাড়ীর আঁচলের অর্ধেক অংশ শান্তর বুকের নিচ দিয়ে গিয়ে বিছানার ওপাশে পড়েছে,আহানা আঁচলটা ধরে বেকুবের মতন চেয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর এক ঝটকা দিতেই শান্ত মুখের উপর থেকে বালিশটা একটু সরিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললো”আরও ভালোবাসা চাও নাকি?ঘুমাতে পারিনি,এবার একটু ঘুমাতে দাও আমাকে”
.
ঢং করবেন না একদম! জোর করে ভালোবাসা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছে,আঁচলের উপর থেকে নিজের এই খাম্বা বডি সরান!
.
শান্ত আঁচলটা সরিয়ে আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো
আহানা আঁচল হাতে নিয়ে ব্রু কুঁচকে বারান্দায় চলে আসলো,শাড়ীটা কাঠ শুকা শুকিয়েছে,গায়ে থেকেই শুকিয়ে গেছে,আজব ব্যাপার হলো শান্ত যখন এসেছিলো তখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে আর এখন সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে
অথচ মা আর খালা একবারও ডাকলো না!!
আহানা ভাবতে ভাবতে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো একবার!
কাল রাতে যা হয়েছে সব প্রথমে আহানার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই হচ্ছিলো,পরে যখন আহানা শান্তর থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনলো তারপর থেকে সে শুধু শান্তর মুখের দিকেই চেয়ে ছিলো
.
আহানা ফ্রেশ হয়ে সেই থ্রি পিসটা পরে রুম থেকে বের হয়েছে,মা নিজের রুমে ঘুমাচ্ছেন,খালাও
আহানা সোফায় এসে পা তুলে বসে একটু হেলান দিলো,চোখে ঘুম নেমো আসলো তার সাথে সাথেই,ভেজা চুলে ঘুম ভালো করে আসে,এখনও তাই হলো,তার উপর শীত শীত আবহাওয়া
.
শান্ত এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়েছে,আহানা রুমে নেই
সকাল সকাল যে ঝাড়িটা দিলো বাপরে বাপ!!
যেন তাকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছি,কেন করেছি!এখন এসব বলে লাভ আছে??
সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতো কখন তাকে বলবো আমি ভালোবাসি,এবার সোজা সাফটা যখন প্রুভ করে দিলাম তখন উনি রাগ দেখাচ্ছেন,আমার কি,আমার বউকে আমি ভালোবেসেছি,আমার কাছে তো ভালোই লাগছে
তাহলে ও এরকম রাগ দেখায় কি জন্যে সেটা বুঝলাম না আমি
শান্ত নিজের টিশার্টটা খু্ঁজে সেটা পরে নিলো তারপর গেলো ফ্রেশ হতে
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আহানাকে এখনও না দেখে এবার সে রুম থেকে বের হলো
আহানাকে নিচে দেখলো সোফায় পা তুলে গুটিশুটি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন উনি,কপাল কুঁচকানো রেখে
এই মেয়েটা আমাকে বাধ্য করেছিলো কাল রাতে জোর করতে আর এখন এমন ভাব করে ঘুমাচ্ছে যেন সব দোষ আমারই ছিলো!
ভালোবাসলেও দোষ না বাসলেও দোষ
.
শান্ত কাছে এসে আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো
আহানা সাথেসাথে চোখ খুলে ফেলে উঠে পিছিয়ে গিয়ে বললো”আবার কি চাই?”
.
যদি বলি আবারও তোমাকে চাই?
.
একদম হাত ভেঙ্গে দিব,অনেক হইছে!
.
হাত ভাঙ্গবা কেন?আমি তোমার বর,এখন আমরা পুরোপুরি হাসবেন্ড ওয়াইফ,আমাদের মাঝে সে সম্পর্কটা হয়েছে
শান্ত কথাটা বলে আহানার দিকে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো
আহানা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো”আর হবে না কোনোদিন,কারণ আমি আর আপনাকে আমার মুখ আর হাত বাঁধতে দেবো না”
.
তো না বেঁধেই ভালোবাসবো নাহয়
.
আপনি একটা!!!
যান এখান থেকে!স্টুপিড!
.
শান্ত হাসতে হাসতে ডাইনিংয়ে এসে পানি নিয়ে খেয়ে বললো”বউ যাও আমার জন্য নাস্তা বানিয়ে আনো,কাল তোমার চক্করে সন্ধ্যা থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি আমার”
.
আহানা আরোকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো সোফায়
.
শান্ত ফ্রিজ খুলে আইসকিউব বের করে পা টিপে টিপে আহানার কাছে এসে আহানার গলার উপর ২/৩টা আইস কিউব নিয়ে ছেড়ে দিলো
আহানা এক চিৎকার দিয়ে উঠে বসে জামা ঝাড়তে ঝাড়তে সোফা থেকে নেমে গেলো সাথেসাথে
.
শান্ত সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো”যাও বাবু,যেটা বলছি সেটা করো”
.
আহানা রাগে কটমট করতে করতে রান্নাঘরের দিকে চললো
.
শান্ত টিভিটা অন করে একটা কুশন কোলে রেখে টিভি দেখায় মনযোগ দিয়েছে
আহানা পিঠ মুছতে মুছতে রুটি বানাচ্ছে
কি জ্বালাচ্ছে লোকটা!!এমন করে কেন বুঝি না!
.
আহানা এবার নাস্তা বানিয়ে এনে টেবিলে রেখে গাল ফুলিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”নেন,এসে খেয়ে নেন,আর আমাকে উদ্ধার করেন,আপনি তো সব করে আমাকে ইদানিং উদ্ধার করছেন
.
শান্ত চেয়ার টেনে বসে বললো”খাওয়াই দিবা না?”
.
আপনার সমস্যা কি বলুন তো?এমন ভাব করছেন যেন কি দয়া করছেন আমাকে যে আমি সেটা চুকাবো এখন?
.
দয়া?? কিসের দয়া?ভালোবাসি কিনা জানার জন্য মাথা চিবিয়ে খাচ্ছিলা আমার,এখন এমন রাগ দেখাও কেন?ভালোবাসা কম হয়েছে নাকি?
.
চুপ করে থাকুন তো!আপনি ভালোবাসেন কিনা তা জানার জন্য জিজ্ঞেস করছিলাম এটা ঠিক তবে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বলিনি আমি আপনাকে!
আপনি কাল যা করেছেন সব আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিলো
.
বিয়ের ২০/২৪দিন পর তুমি এটা বলছো?আমার মনে হয় না তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছিলো,আমি তোমার চোখের ভাষা পড়তে পারি আহানা
.
আহানা কিছু না বলে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
.
শান্ত নাস্তা করে মেইন দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে তার বাসায়
আহানার সামনে আসেনি আর,বাসায় ফিরে রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো সে
আহানা উঁকি দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো শান্তকে ড্রয়িং রুমে দেখা যাচ্ছে না তার মানে চলে গেছে,আহানা তাই আবার নিজের রুমে ফেরত চলে আসলো
.
শান্ত অফিসে মাথায় হাত দিয়ে নিজের রুমে বসে আছে,ঊষা এক কাপ কফি ওর সামনে রেখে বললো”স্যার আজ এত তাড়াতাড়ি এলেন যে?কোনো মিটিং আছে?”
.
নাহ,এমনি ভালো লাগছিলো না,যে ক্লায়েন্টের সাথে আমাদের কাল মিটিং করার ছিলো তাকে আজ ডাকো,অন্য কোনো ক্লায়েন্ট থাকলেও তাদের আজ ডাকো
আমি আজ সারাদিন ব্যস্ত থাকতে চাই
.
ঠিক আছে স্যার
.
আহানা ফোন নিলো শান্তকে কল করার জন্য তার আগেই কল আসলো শান্তর বাসা থেকে,রিপার কল
আহানা রিসিভ করতেই রিপা বললো”আহানা জলদি করে হসপিটালে চলে আসো,শান্তি ম্যাডামের শরীর খারাপ হয়ে গেছে”
.
আহানা বিচলিত হয়ে বললো”কিহহ!কি হয়েছে?মা এখন কোথায়?কেমন আছে?”
.
শরীর খারাপ হয়ে গেছে,বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছেন শুধু,আমি দেরি না করে হসপিটালে নিয়ে এসেছি,শান্ত স্যার ফোন ধরছেন না,তুমি জলদি চলে আসো,আমার একা ভয় করছে,নিতু ও স্কুলে
.
আহানা দেরি না করে বেরিয়ে পরলো বাসা থেকে,হসপিটালে এসে সে শান্তকে অনেকবার ফোন করলো কিন্তু শান্ত ক্লায়েন্টের সাথে মিটিংয়ে ব্যস্ত
এদিকে ডাক্তার অপারেশনের জন্য এডভান্স ৫লাখ টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলেছে সেটা দিলেই অপারেশন শুরু করবে
১০মিনিট ও অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে যার কারণে আহানা শান্তর অফিসে যাওয়ার সাহস করলো না,পেপারে সাইন করে হসপিটালের নিচে গেলো এটিএম থেকে টাকা তুলতে,একদিন শান্ত ওকে তার এটিএমের কার্ড দিয়েছিলো
টাকা তুলে সে টাকা জমা দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে করিডোরের একটা চেয়ারে এসে বসলো,সব টেনসন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,এসময়টায় শান্তকে অনেক দরকার,এভাবে মাকে একা রেখেও যেতে পারছে না সে
.
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চললো,শান্ত সবে একটা মিটিং শেষ করেছে
ঊষা দৌড়ে এসে বললো”স্যার একটা কথা!”
.
কি?
.
স্যার আপনার একাউন্ট থেকে সকাল ১১টা ১৯মিনিটে ৫লাখ টাকা উইথড্র করা হয়েছে,মেসেজ এসেছে একাউন্ট থেকে
.
শান্ত চেয়ার থোকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”কি?কে উঠালো?কি দিয়ে উঠিয়েছে?”
.
স্যার আমি অফিসে ফোন করেছিলাম উনারা জানালো আপনার পার্সোনাল এটিএম কার্ড থেকে
.
আমার পার্সোনাল কার্ড তো আমি আহানাকে দিয়েছিলাম,তাহলে কি আহানা?এত টাকা তুললো কেন,কি হয়েছে!!
.
শান্ত ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আহানার ৫৬টা কল
শান্ত বুঝলো কিছু তো একটা হয়েছে,সোজা আহানাকে ফোন করলো সে,আহানা কাঁদতেছে শান্তি রহমানের জন্য
ফোন বাজতে দেখে চোখ মুছে রিসিভ করে শুধু বললো”শান্ত প্লিস হসপিটালে আসুন,শান্তি আন্টি অনেক অসুস্থ!অপারেশনের জন্য নিয়ে গেছে”
.
শান্তর মনে হলো পুরো পৃথিবীটা তার থমকে গেছে,হাত থোকে ফোন ফেলে সে ছুটলো,যত দ্রুত সে যেতে পারে
১৫মিনিটের পথ সে হাই স্পীডে গাড়ী চালিয়ে ১০মিনিটেই চলে আসলো,৪র্থ তলায় এসে আহানার দিকে তাকিয়ে সে সামনের রুমটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর মাকে দেখতে না পেয়ে আহানার কাছে এসে বললো”মায়ের কি হয়েছে আহানা?আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমার কল রিসিভ করতে পারিনি”
.
মায়ের হঠাৎ করে শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেছিলো,অপারেশনের জন্য নিয়ে গেছে,আমার হাতে টাকা নেই বলে আপনার এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলে কাগজে সই করে দিয়েছি
আমাকে রিপা জানালো,তখন ছুটে এসে দেখি মাকে অপারেশন করার রুমে নিয়ে গেছে
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো,৭বছরের আগের ঘটনাটা তার চোখের সামনে এখন মনে হচ্ছে আবারও রেপ্লে হচ্ছে
বাবাকে হারানোটার কষ্ট আবারও বুকে বিধছে খুব করে
মাকে হারালে সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না কিছুতেই
কি থেকে কি হয়ে গেলো,সকালে অফিসে আসার সময় নিয়ম করে শান্ত তার মায়ের রুমে গিয়েছিলো,,মা তখন চুপ করে বারান্দার বাইরের ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাহলে হঠাৎ করে শরীর এমন খারাপ হলো কেন তার
.
ডাক্তার বেরিয়ে এসে শান্তকে দেখে বললেন”আরে শান্ত!!আপনার মা উনি??”
.
শান্ত চোখ মুছে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”মায়ের কি হয়েছে ডাক্তার?শ্বাস কষ্ট হলে অপারেশন কেন?”
.
শ্বাসকষ্ট হয়ে উনার হার্ট এটাক হয়েছে,হার্ট এটাকের আগে যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় সেটাই হয়েছিলো,এবং তার পরপরই হার্ট এটাক হয়েছে উনার!আর তাই অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া উনাকে
ডাঃআয়ুশ এসেছেন বলে আমি বেরিয়ে এসেছি,উনি আজই চলে যেতেন এই কেসটা এসে পড়ায় থেকে গেলেন,টেনসন করবেন না উনি সব সামলে নেবেন ”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
মায়ের কি অবস্থা এখন?আমি একটু দেখতে যেতে পারি?
.
নাহ এখন না,অপারেশন শেষ হোক তার আগে দেখা করা যাবে না
.
মন খারাপ করে শান্ত এসে আহানার পাশে বসলো,রিপা গেছে নিতুকে স্কুল থেকে আনতে,আহানা শান্তর হাতটা ধরে বললো”সব ঠিক হয়ে যাবে”
.
সেটাই যেন হয়,মাকে ছাড়া আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার,,নিতু কখনও বাবার আদর পায়নি,আর এবার সে এত কম বয়সে মাকে ছাড়া হলে ওকে সামলাবো কি করে আমি?
এসব ভেবেই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আহানা!
.
এতসব ভাববেন না,মায়ের জন্য দোয়া করুন,আমি আমার মাকে ফোন দিয়েছি,মা আর খালা এসে পড়বে কিছুক্ষনের মধ্যেই
.
শান্তর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,চোখ মুছতে মুছতে প্রায়ই অচেতন হওয়ার মতো হাল হয়ে গেছে তার,আহানা ওর এমন অবস্থা দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না,কি করে শান্তকে সে এখন সামলাবে
আহানা বাধ্য হয়ে উঠে গিয়ে দুটো কফি আনলো হসপিটালের ক্যানটিন থেকে
শান্তর কাছে এসে কফির গ্লাসটা শান্তর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো”এটা খেয়ে নিন,মায়ের সাথে কথা বলার শক্তি টুকু জোগাবে অন্তত”
.
শান্ত কফি হাতে নিয়ে চুপচাপ খেয়ে আবারও অপারেশন থিয়েটারের কাছে এসে দাঁড়ালো,তার মিনিট পাঁচেক বাদেই মিঃ আয়ুশ বের হলো,শান্ত উনাকে দেখেই সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলো” মা কেমন আছে”
.
উনি মাস্ক খুলতে খুলতে বললেন”এখন সেফ আছে”
.
আমি একবার দেখা করতে পারি?কোনো কথা বলবো না
.
আচ্ছা,তবে শুধু আপনি যাবেন
.
কথাটা বলে আয়ুশ চলে গেলেন,শান্ত দেরি না করে তার মাকে দেখতে চলে গেলো
হসপিটালের ড্রেস পরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাকে,মায়ের এখনও সেন্স ফেরেনি,চোখটা বন্ধ তার
শান্ত কাছে এসে উনার মাথায় হাত রাখলেন তারপর নিঃশব্দে কেঁদে ফেললো সে
একটা টু শব্দ ও সে করেনি,মায়ের মাথায় হাত রেখে আরেক হাত দিয়ে মায়ের হাতটা ধরে চুমু খেলো সে,কাঁদতে কাঁদতে শুধু মাকেই দেখে যাচ্ছে শান্ত
নার্স ছিলো ৩জন,তারা শান্তর কান্না দেখে তাদের ও অনেক খারাপ লাগলো
মায়ের সব ছেলেই হয়ত এমনভাবে কাঁদে যখন তাদের মমতাময়ী মায়ের অসুখ হয়
শান্ত ও তাই কাঁদছে,তার কষ্টটা একটু বেশিই
কারণ সে তার বাবাকে তাদের ছেড়ে চলে যেতে দেখেছে,এখন আবার মায়ের এই অবস্থা,তার বুক ফেটে কান্না আসছে শুধু
মায়ের সুস্থতা দেখে অবশেষে তার কান্না থামলো,চুপচাপ মায়ের হাত ছেড়ে বেরিয়ে আসলো সে
বের হতেই আহানার মুখোমুখি হলো শান্ত,আহানা একবার শান্তর দিকে তাকাচ্ছে আবার রুমটার দিকে তাকাচ্ছে
শান্ত আহানাকে এমন বিচলিত দেখে চোখ মুছতে মুছতে চেয়ার টেনে বসে বললো”মা ঠিক আছে,আমি গিয়ে দেখে আসছি”
.
আলহামদুলিল্লাহ,জ্ঞান ফিরেছে?আমি একটু যাই?
.
না,ডাক্তার মানা করেছে
.
ওহ!বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে কখন?
.
কাল,বা পরশু জানি না ঠিক,তুমি এক কাজ করো আন্টির সাথে বাসায় চলে যাও,আমি এখানে মায়ের সাথে আছি
.
নাহ,বাসায় গিয়ে কি করবো,এখানে আমার প্রয়োজন হতে পারে আমি বরং এখানেই থেকে যাই
.
শান্ত আর কিছু বললো না,চুপ করে বসে থাকলো,আহানার মা আর খালা অনেকক্ষণ ছিলেন হসপিটালে
তারপর তারা বাসায় ফিরে গেলো,সাথে করে নিতুকেও নিয়ে গেলো
বাচ্চা মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে শেষ,তার উপর তার কিছু খাওয়াও হয়নি
আহানা আর শান্ত ও কিছু খায়নি,দুজনেরই মনের ভেতর ভয় মাকে নিয়ে
.
আহানা গালে হাত দিয়ে বসতে বসতে মাথা এলিয়ে কখন যে শান্তর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো,রাত ৯টা বাজতেই শান্ত আহানাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো কিছু খেতে যাবে তাই
আহানা সকালে যে নাস্তা করেছিলো আর কিছু খায়নি সারাদিনে
তাই সে শান্তর কথামতন রেস্টুরেন্টে চললো ডিনার করার জন্য
আহানা খিধার জোরে গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে,কিন্তু শান্ত কিছুই মুখে তুলছে না দেখে আহানা এক লোকমা তুললো ওর মুখের সামনে
.
শান্ত বললো তার খিধা নেই,আহানা তাও জোর করায় আহানার হাতেই সে ২/৩লোকমা ভাত খেয়ে নিলো,ডিনার শেষে শান্ত আহানাকে জোর করে বাসায় রেখে গেছে,আহানা বাসায় আসতে চায়নি,কিন্তু শান্তর ধমকে আর কিছু বলার সাহস পেলো না সে
শান্ত বললো সে একাই তার মায়ের খেয়াল রাখতে পারে
আহানা এদিকে একা একা টেনসন করছে শান্ত ওখানে কি করছে,সব সামলাতে পারছে তো??
রাত ১২টা বেজে গেছে অথচ আহানার চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই,থাকার কথাও না,কারন মায়ের মতন একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে হসপিটালের বেডে পড়ে আছে,নিজের স্বামীও সেখানে তাহলে নিজের কি করে ঘুম আসে??
তার উপর জোর করে বাসায় ফেলে গেছে আমাকে,আমি একা একা এত টেনসন কি করে নিতে পারি
♣♣
আহানা পরেরদিন ভোর হতে না হতেই বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো সোজা হসপিটালে,এসে দেখলো হসপিটালে মায়ের রুমে এপাশে একটা সিঙ্গেল বেডে শান্ত মাথায় হাত রেখে ঘুমাচ্ছে,আহানা শান্তকে আর মাকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,আসার সময় নাস্তা বানিয়ে এনেছে সে শান্তর জন্য,কাল রাতে শুধু ৩লোকমা খেয়েছিলো শান্ত সেটা আহানার মনে আছে,আস্তে করে সে শান্তর কাছে গেলো জাগানোর জন্য পরে ভাবলো হয়ত সারারাত ঘুমাতে পারেনি তাই সে শান্তকে জাগালো না,ব্যাগটা এক পাশে রেখে সে করিডোরের দিকে আসলো,হসপিটালে এখন ক্লিনাররা ছাড়া আর কেউ নেই,তাও সবাই ঘুমাচ্ছে ফ্লোরে কাঁথা বালিশ বিছিয়ে
ভোর ৫টা বা ৬টা থেকে হয়ত তাদের কাজ শুরু হবে
আহানা হেঁটে হেঁটে চারিদিকটা দেখে নিয়ে পিছন ফিরতেই শান্তকে হঠাৎ দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো,তারপর বুকে থুথু দিয়ে বললো”এমন করে ভয় দেখালেন কেন,আমার কলিজা কাঁপতেছে,সারা হসপিটাল খালি,হুট করে এমন একজনকে দেখলে ভয় পাবারই কথা আমার”
.
তুমি এই ভোরে এখানে কেন?রিকসা পেলে কই?
.
হুহ,হেঁটে এসেছি
.
এত দরকার ছিলো?বাসায় ঘুমিয়ে থাকতে পারলে না?
.
ঘুম আসে না তো আপনাদের টেনসনে,আপনি কাল রাতে আমাকে বাসায় রেখে এসে ঠিক করেননি একদম
.
তোমাকে এখানে রাখলে আলাদা বেড নিতে হতো তার উপর তোমাকে একা রুমপ দিতে দেওয়ায় টেনসন ছিলো,আমি থাকতাম মায়ের পাশে তাই বলে এত ঝামেলা মাথায় নিই নাই,তোমাকে সোজা বাসায় রেখে এসেছি একেবারে
.
আপনি কি করে জানলেন যে আমি এসেছি?
.
তুমি আমার বালিশের কাছে নাস্তার টিফিন বক্স রেখে এসেছো,তোমার হাতের রান্নার ঘ্রান নাকে আসতেই জেগে গেছি
.
আচ্ছা,তো এখন নাস্তা করবেন?সার্ভ করে দিব?
.
নাহ এখন না
.
মায়ের অবস্থা কেমন?রাতে জ্ঞান ফিরেছিলো?
.
হুম,রাত ২টোর দিকে চোখ খুলেছিলো,আমি তখন তার পাশে চেয়ারে বসা ছিলাম,আমাকে দেখতে পেয়ে খুশি হয়েছে অনেকে
.
আমাকে দেখলে আরও খুশি হতো হুহ!
.
ত্যাড়ামি না করে চলো রুমে গিয়ে বসে থাকবে,এভাবে একা একা করিডোরে হাঁটার সাহস দিছে কে তোমাকে ?
.
এখানে তো আর মজনু বা সাইমন এসে পড়বে না
.
তবে তাদের মতো আরও লোক আছে পৃথিবীতে,মেয়ে হয়েছো যখন!!! তখন বুঝেশুনে চলা শেখো
.
ভয় দেখতে হবে না আমাকে,চলুন তো,আমি মায়ের কাছে বসে থাকবো এখন
.
আহানা সোজা গিয়ে মায়ের কাছে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো,শান্ত পাশের বেডটায় বসে চোখ ডলতেছে,চোখে ঘুম নেই তার
হসপিটালে আসলে এই এক ঝামেলা,ঠিকমত ঘুম আসে না
মোটকথা নিজের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও সহজে ঘুম আসে না কারোরই
শান্তর হয়েছে তাই
.
সকাল ৭টা বাজে এখন,আহানা মায়ের বেডটায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে,শান্ত উঠে এসে আহানাকে উঠিয়ে দিতে গিয়েও পারলো না,বেচারি আমার মতন মনে হয় ঘুমাতে পারেনি ঠিকমত,এরকম একটা জীবনসঙ্গীনি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,যে আপনার মাকে নিজের মা মনে করে
শান্ত আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেলো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে,ডাক্তার বললেন সব তো ঠিকঠাক আছে তবে একটু খেয়াল রাখতে হবে উনার,সবসময় উনার পাশে কাউকে না কাউকে থাকতে হবে মাস্ট
উনার সাথে হাসি-মজা করতে হবে যাতে সবসময় তার মন ভালো থাকে
শান্ত হসপিটালের কর্তৃক সব পেপারে সাইন করে নিলো,আজই মাকে বাসায় নিয়ে যাবে সে
আহানা এখনও ঘুমায় কি ঘুম তার,চোখের সামনে দেখছে শান্ত তাকে কিস করতে আসতেছে
এক কাঁপুনি দিয়ে আহানা জেগে গেলো,চোখ মুখ ডলে বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন ছিলো,মাথার ঘাম মুছে সে চেয়ার থেকে উঠে পাশের বেডটায় এসে বসলো দপ করে
এত কিছুর পরেও কিসের কথা আসতেই ভয় পায় কেন আমার!
কিন্তু শান্ত গেলো কই আবার,নাস্তা করবে না!
.
আহানা বেড থেকে নেমে দরজা দিয়ে উঁকি দিলো করিডোরে,কিন্তু বের হলো না,মাকে একা রেখে যাওয়া যাবে না তাই
শান্ত প্রায়ই ৩০/৩৫মিনিট পর ফেরত আসলো,মুখে হাসি নিয়ে
.
আহানা বললো”কি?এরকম হাসির কারন কি?”
.
মাকে আজই নিয়ে যাওয়া যাবে
.
এটা তো খুশির খবর,কখন নেওয়া যাবে?
.
দুপুরের দিকে,দাও নাস্তা,খেয়ে নেবো,আজ আর অফিসে যাবো না,মায়ের কাছে থাকাটা মোর ইম্পরট্যান্ট
.
হুম
.
শান্ত নাস্তা করে নিলো সাথে আহানাও,মাকে আপাতত খাবার খাওয়ানো যাবে না,হসপিটাল থেকে ওরা আলাদা করে সুপ আর কি কি যেন দেবে সেটা খেতে বলা হয়েছে
আহানা আর শান্ত এখন দুজনে সেই পাশের বেডটায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এক খোঁচা মারলো
শান্ত তখন নিজের ফোন দেখতেছিলো,আহানার খোঁচায় সে আহানার দিকে চেয়ে নরমালি বললো”সব ভুলে গেছো?মনে লাড্ডু ফুটতেছে তোমার?”
.
আহানা চমকে বললো”কি ভুলছি?”
.
পরশু রাতটা!
.
আহানা চোখ বড় করে একটু সরে বসলো তারপর বললো”ও হ্যাঁ,ভুলে গিয়েছিলাম তো,না সেটা তো আজীবন মনে থাকবে,খোঁচা তো দিয়েছি অন্য কারনে
.
কি কারণ?
.
আগে বলুন আপনি আমাকে ঐ রাতের কথা মনে করিয়ে দিলেন কেন?আমি কি বলছি” শান্ত কিস মি”
.
চোরের মনে পুলিশ পুলিশ
.
চোর কে আর পুলিশ কে?
.
চোর ছিলে তুমি,এখন পুলিশ পুলিশ ভাব নিতেসো
.
আহানা শান্তর কথাটা গভীর মনযোগ দিয়ে ভাবতে লাগলো,তাও এর মানে বুঝলো না
তারপর বললো”আরে শুনুন না”

হুম বলুন না,কান তো খাড়া,সব শুনতেছি,বলুন,অনেকদিন আপনার ক্যাঁচক্যাঁচ শুনি না আমি,এখন কান আমায় বলছে”কিছু একটা মিসিং”
.
একদম মজা নেবেন না,একটা সিরিয়াস কথা বলার ছিলো,ভুলে গেছি,ধুর!
.
আচ্ছা আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি,খোঁচা মেরেছিলা কি জন্যে?
.
ও মনে পড়েছে,অনেকদিন আপনার সাথে ঝগড়া করা হয় না তো তাই ভাবলাম একটু ঝগড়া করবো
.
মা সামনে ঘুমাচ্ছে,আর তুমি ঝগড়া করতে চাও সেধে সেধে?
.
এটা চেঁচিয়ে ঝগড়া হবে না,এটা হবে ফিসফিস ঝগড়া
.
ওকে তাহলে করতে পারো,শুরু করো
.
আপনি একটা উজবুক
.
উজবুক নাম শুনেছি,তবে এর মানে জানি না সরি,তাই পাল্টা জবাব দিতে পারলাম না,তবে সময় পেলে গুগল করে বের করতে পারলে তোমার চুল ছিঁড়বো মনে রেখো
.
তাহলে আপনি খাটাশ
.
খাটাশের কি দেখলে?
.
কিছুই না! এমনি এমনিও পদবি দেওয়া যেতে পারে পার্সোনাল লোকদের
.
আমি তোমার পার্সোনাল লোক?কবে হলাম?
.
বিয়ের দিন থেকেই
.
তবে তুমি কিন্তু আমার সেই ছোটবেলা থেকেই পার্সোনাল লোক
.
ঠিক কখন থেকে?
.
তুমি আমার ৪বছরের ছোট ছিলে,তো যখন তুমি জন্মেছিলে তখন মনে হয় আমি ৪বছরের ছিলাম,তেমন হিতাহিত জ্ঞান না থাকলেও আমি নাকি তোমার সেরেলাক নিজে আগে টেস্ট করে তারপর তোমার মুখে দিয়ে দিতাম যখন তোমার উঠতি বয়স ঠিক তখন
.
আগে আপনি টেস্ট করতেন কি জন্যে?
.
সেরেলাক অনেক মজার একটা খাবার,শুধু শুধু খেতে তো জোস লাগে তার উপর তোমার প্রতি আমার কেয়ার কাজ করতো তখন,তোমাকে আন্টি কি খাওয়াই না খাওয়াই আমার তো জানতে হবে তাই না?
.
এইটুকু বয়সে এসব ভাবতেন?
.
জি না ভাবতাম না,ভাবা শিখেছিলাম তাও মায়ের থেকে
তোমাকে তো আমি দুচোখে দেখতে পারতাম না
তোমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দেওয়ার ও চেষ্টা করতাম,তোমার বুকে বালিশ রেখে আন্টি তোমার ঘুম পাড়াতো আর আমি সেটার উপর উঠে একদিন বসতে গিয়েছিলাম,পরে আম্মু হাতেনাতে আমাকে ধরে নাকি অনেক পিটিয়ে ছিলো আর প্রমিজ করিয়েছিলো যেন আমি সবসময় তোমার পাশে ছায়া হয়ে থাকি,তোমার কেয়ার করি,তোমাকে বেশি ভালোবাসি
.
আপনি এত গুন্ডা ছিলেন?
আল্লাহ তুমি আমাকে জন্মের পরপরই কোন রাক্ষসের কাছে বড় হতে দিয়েছিলা
.
এই রাক্ষসটাই এখন তোমার বর
.
যাই হোক!আমার তো ছিঁটেফোটাও মনে নেই
.
থাকবে কি করে??আমি যখন আমেরিকা চলে আসি তখন তুমি অনেক ছোট ছিলে,এত কিছু মনে থাকার কথা না
আমার ৭বছরের পরের তোমার সাথে কাটানো সময় গুলো মনে আছে,বাকিগুলা মা বলেছিলো আমায়,সেগুলো মনে ছিলো না,কারণ তোমাকে আমি পিচ্চিকাল থেকেই চিনি
.
এত এত মেয়ের মাঝে আহানাকেই মনে ধরেছিলো কেন?
.
কে বলেছে??তোমার মাঝে আহামরি বলতে জাস্ট দুইটাই জিনিস আছে সেটা হলো মায়া ভর্তি একটা চেহারা আর দুষ্টুমিষ্টি স্বভাব এগুলাতে আমার মা ইম্প্রেসড আর আমি তো ছোট থেকে একসাথে থাকতে থাকতে ফিদা
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”তাহলে এতদিন চেপে রেখেছিলেন কেন?”
.
আমার কথা হলো ভালোবাসি বললেই সেটা ভালোবাসা হয় না
কাজে দেখানোতে বিশ্বাস করি আমি,তুমি তো নিব্বি,তুমি এসব বুঝবা না খুকি
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো”থ্যাংক ইউ”
.
শান্ত হয়ত শুনলো না,সে এখন নানা চিন্তায় বিভোর,চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো সে
পরেরদিন সকালে আহানা যখন ঘুম থেকে উঠলো তখনই ওর হুস আসলো যে আসলেই কাল রাতে কি কি হয়েছিলো,সে কি কি করেছিলো
সব মনে পড়তেই জিভে কামড় দিয়ে আহানা পাশে তাকালো,শান্ত উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে এক কোণায়
আহানা আর ওখানে না থেকে বিছানা থেকে নেমে ওয়াসরুমের দিকে দৌড় দিলো
আয়নার কাছে এসে নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে টমেটো সস হয়ে গেলো একদম
তারপর চোখ বুজে কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে আসলো
শান্তর সামনে আর যাওয়া যাবে না,লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে সব ভেবে
চুপচাপ নাস্তা বানিয়ে নিলো আহানা,কাজ করার সময় সে খেয়াল করলো রিপা ওর দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে
এর কারন কি আহানা বুঝলো না তারপর কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করেই বসলো “যে কি সমস্যা?এরকম হাসার কারণ কি”
.
রিপা হাসি থামিয়ে বললো”না তো কিছু না,এমনি ”
.
আহানা আর জেরা করলো না,খাবারগুলো নিয়ে টেবিলে রাখতে গিয়েই দেখলো শান্ত গোসল করে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে এদিকেই আসতেছে
পরনে হালকা নীল রঙের টিশার্ট আর গলায় ঝুলানো সাদা তোয়ালে,চুলগিলো এলোমেলো হয়ে আছে,ভিজে একাকার
আহানা কিছুক্ষনের জন্য সব কিছু ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে শান্তকে দেখলো তারপর সব আবার মাথায় আসতেই পালিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো সে
শান্ত সোফায় বসে টিভি অন করলো তারপর চেঁচিয়ে বললো”মা!!!খাবার খেতে আসো,নিতু তুমিও আসো,আমি সবার সাথে নাস্তা করে তারপর অফিসে যাবো”
.
নিতু চুলে জুটি করে এসে চেয়ারে বসেছে শান্তর কথামতন আর মা ও তার হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদিকে আসলেন,রিপাও গেছে সার্ভ করতে এদিকে আহানা নড়ছে না রান্নাঘর থেকে,তার খুব লজ্জা লাগছে শান্তর সামনে যেতে
যে কিসের জন্য সে শান্তকে চড় মেরেছিলো সেই কিস কিনা সে নিজ থেকেই করে দিলো
হায়হায় কি লজ্জাকর একটা ব্যাপার!
.
শান্ত খেতে বসে এদিক ওদিক চেয়ে বললো”আহানা কোথায়?”
.
রিপা শান্তি রহমানের প্লেটে রুটি রাখতে রাখতে বললো”সে তো এতক্ষণ রান্নাবান্না সব করেছে,তাও রান্নাঘরে এখনও,মনে হয় চা বানাচ্ছে”
.
আহানা খেতে আসো,চা পরে হবে
.
আহানা ঢোক গিলো রান্নাঘরের দরজার কাছে এসে আড়ালে থেকে বললো”আমার শরীর খারাপ তো,পরে খাবো,খিধে নেই এখন”
.
শান্তর মনে পড়লো আহানার জ্বরের কথা,সে এবার এক ধমক দিয়ে বললো”তোমার জ্বর তার মধ্যে এতসব নাস্তা বানিয়েছো এখন আবার নাস্তা করতে লেট করছো,জলদি করে নাস্তা করে ঔষুধ খাও,আসো এদিকে!”
.
আহানা এবার কি করবে?কি বলবে?
কোনো উপস্থিত উপায় না পেয়ে মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে চেয়ে সে পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমে আসলো
.
শান্ত খেয়াল করেছে আহানা ভুলেও ওর দিকে তাকাচ্ছে না,কোনোমতে মায়ের দিকে চেয়ে উনার পাশে গিয়ে বসেছে সে
শান্ত আর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলো না,নাস্তা করে উঠে রুমে গেলো রেডি হতে
আহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রিপাকে খুঁজছে,শান্তকে দিয়ে আসার জন্য, সে কিছুতেই যাবে না
কিন্তু সমস্যা হলো রিপা নিতুকে রেডি করে দিচ্ছে ওর স্কুল বাস যেকোনো সময় চলে আসবে তাই
আহানা তাই বাধ্য হয়ে চায়ের কাপ নিয়ে করিডোর দিয়ে এসে চোরের মতন শান্তর রুমে ঢুকলো
শান্ত তখন বিছানায় বসে হাতে ঘড়ি পরছিলো
আহানা ওর দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে ধরে বললো”নিন”
.
শান্ত কাপটা নিলো তারপর আহানাকে কিছু বলার আগেই ও চলে যেতে নিলো,শান্ত তার আরেক হাত দিয়ে আহানার হাত ধরে ওকে আটকে ফেললো
আহানা চুপ করে আরেকদিকে ফিরে আছে
.
কি ব্যাপার বলোতো?আমার চোখে চোখ রাখতে এত কিসের সমস্যা??
এমনটা নয়ত যে কাল যে পাকনামি করছো তার মানে এখন বুঝে ভেতরে ভেতরে লজ্জায় মরে যাচ্ছো?
.
আহানা জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বললো”নাহহহ তো!আসলে”
.
শান্ত আহানাকে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে ফেললো তারপর চুপ করে ওর দিকে চেয়ে বললো”যাই হোক,যেটা করেছো ভালোই করেছো,নেক্সট টাইম তাহলে আর চড় খেতে হবে না আমাকে,কি বলো?”
.
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,কোনো কথা নেই মুখে
শান্ত ওকে দুলাতে দুলাতে বললো”কেমন লাগছে বরের কোলে বসে??দুলতে কেমন লাগছে?”
.
আহানা মনে হয় এবার মরেই যাবে লজ্জায়,উঠতে গিয়েও পারছে না
শান্ত ওর এক হাত দিয়ে আহানার পিঠ ধরে রেখেছে আরেক হাত থেকে চায়ের কাপ রেখে সেই হাত দিয়ে আহানার হাত ধরে রেখেছে
.
আহানা নিজেকে শক্ত করে বললো”মা কি করছে গিয়ে দেখে আসতে হবে,আমি যাই?”
.
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো”যান!সাবধানে থাকিয়েন”
.
আহানা কথাটা শুনে থেমে গিয়ে শান্তর দিকে তাকালো,তারপর এগিয়ে এসে শান্তর কোটটার দিকে চেয়ে বললো”আপনার বুকের ক্ষতটা সেরেছে?দেখি একটু”
.
সেরেছে,হালকা একটু বাকি,সেটাও ঠিক হয়ে যাবে
.
আজ অফিসে না গেলে হয় না?
.
কাজ কে করবে?এমনিতেও প্রচুর মিস দিয়েছি আর দেওয়া সম্ভব না,ডোন্ট ওয়ারি
.
শান্ত ল্যাপটপের ব্যাগটা হাতে নিয়ে চলে গেলো
আহানা দরজার কাছে এসে ওর চলে যাওয়া দেখছে,ও চলে যেতেই আহানা এবার শান্তি রহমানের রুমে এসে হাজির হলো,উনি বারান্দার কাছে বসে গন্ধরাজ ফুলগুলোর সারি দেখছেন হাতে তফসি নিয়ে
.
মা একটা কথা বলবো??
.
মা বারান্দা থেকে চোখ সরিয়ে আহানার দিকে তাকালেন এবার
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”তোমার শান্ত কি কাউকে ভালোবাসতো?
.
মা হাসলেন তারপর হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে চললেন শান্তর রুমের দিকে
আহানাও এক রাশি প্রশ্ন নিয়ে উনার পিছু নিলো
উনি শান্তর রুমে ঢুকে ওর আলমারির কাছে আসলেন তারপর আলমারিটা খুলে নিচের ডেস্ক গুলো খুঁজে খুঁজে একটা ছবি বের করলেন যেটা কদিন আগে আহানাও দেখেছিলো
মা ছবিটা আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন
আহানা ছবিটা হাতে নিয়ে আবারও তাকালো মায়ের দিকে,কারণ কিছুই বুঝলো না সে
মা এবার নিজের আঁচলে জুলন্ত একটি চাবির গুচ্ছ একটা ছোট চাবি বের করে সেটা দিয়ে ৩য় তম ডেস্কটা খুললো,ভেতরে ১০/১৫টা ছবি,এখানে সব ছবি শুধু আহানার ছোটবেলার ছবি
এই ডেস্কটা সেদিন আহানা দেখেছিলো তবে লক ছিলো বলে সে খুলতে পারেনি,এর চাবি শান্ত আর তার মায়ের কাছে আছে তাহলে?
মা ছবি সব আহানার হাতে দিলেন
আহানার আর বুঝতে বাকি নেই শান্তর সেই অত্যন্ত কিউট আর দুষ্টু প্রেমিকাটি সে নিজেই”
.
আহানা মুখে হাত দিয়ে পিছিয়ে গেলো,মা হেসে রুম থেকে চলে গেলেন চেয়ার ঘুরিয়ে
আহানা ছবিগুলো হাতে নিয়ে চুপ করে আছে,শান্ত ওকে ছোট থেকেই ভালোবাসতো?
তাহলে মুখে কেন বলে না সে?
কেন স্বীকার করে না?
.
আহানার ফোন বাজতেছে,সেই কখন থেকে
টোনের আওয়াজ কানে আসতেই আহানা ছবিগুলো এক পাশে রেখে ফোন হাতে নিলো,রুপার কল
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো
যেন মরাকান্না,আহানা কিছুটা ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো আঙ্কেল আন্টি ঠিক আছে কিনা
রুপা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো “ঠিক আছে”
.
তাহলে এমন মরাকান্না জুড়ে দিয়েছিস কি জন্যে?কে মরছে তোর?
নওশাদ ভাইয়া ঠিক আছে তো?
.
আরে সব ঠিক আছে,জিজ্ঞেস কর আমি কেমন আছি
.
ওহ,তোর কি হলো?
.
আমি এখন তোদের বাসায় তোর রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছি আর তোর আম্মু এক গ্লাস ট্যাংয়ের শরবত হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেছে নাস্তা বানাতে
.
ওমা সেকি,তুই আমাদের বাসায় গেছিস কেন?আমি তো শান্ত ভাইয়াদের বাসায়,আর মরাকান্না শুরু করলি ক্যান সেটা তো বললি না?
.
শান্ত ভাইয়া?আর ইউ সিরিয়াস আহানা?বিয়ের এতদিন হলো তুই এখনও ভাইয়া বলিস?তোর থেকে তো এডভাইস নিলে মনে হয় আমার দুদিনে ডিভোর্স হবে
.
ওসব বাদ দিয়ে আগে বল কাঁদতেছিলি কেন?
.
বাবা জোর করে কোথাকার কোন বুইড়া সরকারি চাকরি করা ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া ধরছিলো তাই ভেগে এসেছি তোদের বাসায়
.
বাহ!নওশাদ ভাইয়া জানে?
.
সেটাই তো মেইন সমস্যা! নওশাদ বিদেশে গেছে একটা কাজে,আজই ফিরবে,এখন কথা হল কি করে কি হবে আমি কিছুই বুঝতেছি না,তুই প্লিস আয়
.
আহানা বিচলিত হয়ে বললো”আচ্ছা কাঁদিস না,আমি আসতেছি,দেখি কি করা যায়”
.
আহানা সাইড ব্যাগ নিয়ে মাকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো সোজা তার বাসায়,শান্তকে ফোন করে কিছু বলার আগেই শান্ত বললো সে সবটা জানে,নওশাদ ওকে বলেছে সব
আর সে নওশাদকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে ওকে নিয়ে আহানাদের বাসায় আসবে বিকালের দিকে
আহানা তাই নিশ্চিন্তে রুপার কাছে আসলো,রুপা আহানাকে দেখে কান্না থামিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করতেছে কি হবে নেক্সট
.
আহানা ওর হাত থেকে শরবতটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে বললো”আমি এমনিতেও ভেজালে আছি,শান্ত ভাইয়া,না মানে শুধু শান্ত সে আমাকে ভালোবাসে তবে মুখে স্বীকার করতে চায় না,এখন তার মুখ দিয়ে কি করে বের করাবো সেটা ভাবতে ভাবতেই মাথায় এসে জুটলো তোর এই চিন্তা,তোরা এক কাজ কর আমি আর
শান্ত যেমন করে বিয়ে করেছি তোরাও সেমন করে কর
.
আরে কোনোরকম হুজুর ডেকে বিয়ে করে ফেলবো,দলিল লাগবে না,রেজিস্টার পরেও করা যবে যখন পরিবার মানবে তখন এখন আপাতত ধর্মীয় মতে বিয়েটা করতে চাই
.
ওকে,নওশাদ ভাইয়া আসুক,উনি তোর থেকেও এনাফ ম্যাচিউর,উনি যেটা বলবেন সেটাই হবে,তুই আপাতত কান্না থামা
.
আহানা সবকিছু বাদ দিয়ে ভাবতেছে শান্ত ওকে ভালোবাসে আর সে নিজেই জানে না সেটা,একটাবার একটু হিনট ও পায়নি সে,কি আজব ব্যাপার,অথচ আমি ভেবেছিলাম অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে,তার প্রতিচ্ছবি নিজের চোখের সামনে এনে কত কি ভেবেছিলাম আর সেখানে সেই মেয়েটাই কিনা আমি?
আজ উনার একদিন কি আমার যতদিন লাগে,স্টুপিড একটা!

শান্ত এয়ারপোর্ট থেকে নওশাদকে নিয়ে আহানাদের বাসায় ফিরলো,রুপা দৌড়ে এসে নওশাদকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে
.
আহানা রুপাকে কিছু বলার আগেই শান্ত ওর হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে আসলো
.
কি ব্যাপার?এখানে নিয়ে আসলেন কেন কি হয়েছে?
.
নওশাদের মা নাকি রুপাকে পছন্দ করে না
.
সেকি!দুই পরিবারই একে অপরকে পছন্দ করে না তাহলে কি করে হবে
.
সেটাই তো,নওশাদ তার মায়ের মতের বিরুদ্ধেও যেতে পারবে না এদিকে রুপাকেও ছাড়তে পারবে না,এখন সে কি করবে আমার থেকে জানতে চাচ্ছে,আমাদের দুজনেরই পরিবারের মনের মিল ছিল আমাদের চেয়েও অনেক বেশি তাই আমরা এক হয়েছি সো আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই,কি করা যায় তুমি ভেবে বলো
.
রুপার বাবাকে রাজি করানো একদমই সম্ভব নাহ,উনি হিটলারের বড় ভাই,উনার কথাবার্তা শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে তাই আমার মনে হয় টার্গেট করা উচিত নওশাদ ভাইয়ার ফ্যামিলিকে
.
তো কি করবা?
.
আগে বলুন নওশাদ ভাইয়ার মা রুপাকে পছন্দ করে না কেন?
.
রুপার ফ্যামিলি স্টেটাস লো আর রুপা নওশাদের বরাবর না মানে স্মার্ট না
.
রুপা তো যথেষ্ট স্মার্ট
.
আরে আমার কথা হচ্ছে উনার এমন মেয়ে পছন্দ যে বললেই শাড়ী পরতে পারবে আবার বললেই জিন্স,ওয়েস্টার্ন পরতে পারবে
.
ওসব পড়লেই স্মার্ট হয়ে যায়?বুঝলাম আন্টির মাথায় গোবর ঠেসা,সেটা সাফ করলেই রুপাকে মেনে নেবে
.
তা সেটা হবে কি করে?
.
চলুন আমরা যাই নওশাদ ভাইয়ার বাসায়,আমরা বুঝাবো তাদেরকে
.
আরে আমরা জোয়ান কাপল,আমাদের কথায় কোনো পাত্তাই দেবে না
.
সেটা আমি জানি,আগে বলেন নওশাদ ভাইয়ার পরিবার আপনাকে চেনে কিনা?
.
চেনে তো,আমি অনেকবার ওদের বাসায় গেছি
.
ধুর!তাহলে যা বুঝলাম আমাকেই সব করতে হবে
.
কি করবা তুমি?
.
পাশের বাসার আন্টি সেজে যাব
.
পাশের বাসার আন্টি মানে,ইউ মিন রেক্সিনা আন্টি?
.
এক্সাকলি
.
হোয়াট!তুমি রেক্সিনা আন্টি সেজে যাবে নওশাদের বাসায়??গিয়ে কি করবে?
.
সেটা কাজ হওয়ার পর বুঝবেন এখন আপাতত আমাকে রেক্সিনা আন্টি যে পোশাক পরেন ওগুলা বাজার থেকে এনে দেন জলদি
.
জীবনেও না,রেক্সিনা আন্টি অলওয়েজ হাতা কাটা একটা ফতুয়ার উপর দিয়ে শাড়ী ঝুলিয়ে কোনোরকম পরে যেন এখনই পড়ে যাবে ওরকম বিশ্রি সাজ তোমায় সাজতে হবে না
.
আরে নওশাদ ভাইয়ার মা তো বেশি স্মার্ট পছন্দ করেন তো আমি যখন তাকে জ্ঞান দিতে যাব আমাকে তো হাইলি ওভারস্মার্ট হতে হবে তাই না?
.
ফতুয়া আর শাড়ী তো এনে দিবো বাট একটা শর্তে
.
কি শর্ত আবার?
.
কোমড় ঢাকবা ভালো করে
এক মিনিট তোমার কাছে কি আর কোনো অপশন ছিলো না?আমাদের তো অনেক পাশের বাসার আন্টি আছে,তাহলে বেছে বেছে রেক্সিনা আন্টিকে চুজ করলা কি জন্যে?
.
কারণ উনাকে দেখলে বলদ লাগলেও উনার কথার জোর আছে আর সাজ তো জাস্ট কি বলবো,নওশাদ ভাইয়ার আম্মু ইম্প্রেস হলেই হলো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ঠিক আছে আমি সেই উদ্ভট সাজের অর্নামেন্টস রেডি করছি,তুমি তারপর ভাবো কি এমন করবা যে নওশাদের আম্মু এত সহজে রুপাকে পছন্দ করে ফেলবেন,বিয়েতে মত দিয়ে দেবেন
.
ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না,আমি যা করার করবো,হিসেব আছে আমার
.
শান্ত তাহসিনকে ফোন করে বললো মার্কেট থেকে একটা মেয়েদের ফতুয়া আর জর্জেটের শাড়ী কিনে আনতে সাথে সিলভার অর্নামেন্টস,এসব কালেক্ট করে জলদি আহানাদের বাসায় নিয়ে আসতে,যদি কিনতে সমস্যা হয় তাহলে যেন সে রিপাকে সাথে নিয়ে যায়
.
ওদিকে রুপা যখন শুনেছে নওশাদের মা ওকে পছন্দ করে না তখন সে আবারও মরাকান্না জুড়ে দিয়েছে
শান্ত নওশাদকে নিয়ে সোফায় বসে বুঝাচ্ছে ও যেন ওর মাকে বুঝায়
.
আর আহানা তার রুমে রুপাকে বুঝাচ্ছে সাথে আশা ভরসা দিচ্ছে যে সে সব ঠিক করে দেবে
১ঘন্টার মধ্যে তাহসিন সেইসব নিয়ে হাজির যেগুলো শান্ত ওকে কিনে আনতে বলেছিলো
শান্ত ওর থেকে প্যাকেটগুলো নিয়ে আহানার হাতে দিতে দিতে বললো”শর্তের কথা মনে থাকে যেন ম্যাডাম”
.
জি মনে থাকবে

নওশাদ টিভিতে একটা ফুটবল ম্যাচ দেখছে,কারোর আসার শব্দ পেয়ে সে সিঁড়ির দিকে তাকালো
আহানা সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসছে,পরনে পেস্ট কালারের একটি ফতুয়ার উপর কমলা আর কালো রঙের মিশ্রন রঙের একটা জর্জেটোর শাড়ী,চুলগুলো খোঁপা করে রাখা,আর ইয়া বড় ফ্রেমের একটা মোটা চশমা,কেউ দেখে বলবে না যে এটা আহানা
নওশাদ হা করে চেয়ে বললো”শান্ত রে,রেক্সিনা আন্টি আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স এসে গেছে,চাহিয়া দেখ”
.
শান্ত এক গ্লাস পানি নিয়ে খাচ্ছিলো নওশাদের কথা মতন সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আহানাকে এমন বেশে দেখে পুরুত করে সব পানি ফেলে দিলো সে মুখ থেকে
আহানা একটা ভাব নিয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো”শান্ত!!দ্যা হ্যান্ডসাম বয়!!!কাজ কতদূর তোমার??তোমার স্কিন সুন্দর বলে কি আর যত্ন নিবা না??প্রতিদিন আনপাকা টারমারিক দিয়ে মিল্ক খাবা,ভেতর থেকে ফর্সা হইয়া যাবে,তুমি এমনিতেও ফর্সা আরও ফর্সা হয়ে যাবা,লোকে বলবে “শ্বেত রোগী”হাহা!!আই এম জোকিং,নেভার মাইন্ড!
.
নওশাদ আহানার ডায়ালগ শুনে শান্তর কানে ফিসফিস করে বললো”সব তো বুঝলাম,আনপাকা কি জিনিস আবার সেটা বুঝলাম না”
.
কাঁচা হলুদরে রেক্সিনা আন্টি আনপাকা টারমারিক বলে
.
ওহ!হোয়াট!!কি বিচ্ছিরি ভাষা
.
আমি জানি না আহানা তোর আম্মুর মাথায় কি কি ঢুকায়,শুধু জানি এই সাজ দিয়ে কিছু একটা তুলকালাম লাগাবে সিউর
.
আহানা কোমড় দুলিয়ে হেঁটে গিয়ে কারে বসলো তারপর জানালা দিয়ে মাথা বের করে বললো”অন্তত ওদের বাসায় তো পৌঁছে দিবেন নাকি?
নাকি এখান থেকে রেক্সিনা আন্টির মত স্কুটি চালিয়ে যেতে হবে আমাকে”
.
শান্ত টাই ঠিক করে আসতে আসতে বললো”আরে না না,আমার বউকে এত কষ্ট করতে হবে না
.
আহানা বললো”তার কাজ সারতে ১/২ঘন্টা লাগতে পারে,আর পথে যেন কোনো মার্কেটের সামনে শান্ত কার থামায়
.
কেন?মার্কেটে কি করবা আবার?
.
বাহ রে,রেক্সিনা আন্টি হাতে কিছু না কিছু নিয়ে আসে সবসময়,তো আমাকেও তো কিছু নিয়ে যেতে হবে
.
আরে নওশাদের আম্মু রেক্সিনা আন্টিকে চেনে না
.
তো?না চিনলে আমার কি,বাট কারো বাসায় গেলে খালি হাতে যদি যাই তাহলে সবাই সব রেখে এই খুঁতটাই ধরবে,আর এটা একটা ব্যাড ম্যানার,বুঝছেন?
.
ফাইন!তা কি কিনবে?ফ্রুটস?
.
ডায়মন্ড নেকলেস
.
কিহহ!
আগে জানতাম মানুষ কারও বাসায় গেলে ফল বা ফুল নিয়ে যায়,ডায়মন্ড নেকলেস নিয়ে যায় সেটা তো জানতাম না
.
আরে টেনসন নিয়েন না,নেকলেসটা আবার ফেরত এসে আমাদের বাসাই ঢুকবে,জাস্ট কাজটা সারলে চেয়ে নেবো,ইম্প্রেস আগে জরুরি
.
ওকে,নওশাদের আম্মু ওটা রেখে দিলেও সমস্যা নেই,গিফট তো গিফটই
.
ঠিক আছে
.
একটা হালকা পাতলা ডায়মন্ডের নেকলেস কিনলো শান্ত আর আহানা মিলে,তারপর সোজা নওশাদদের বাসায় গেলো
উত্তরার একটা ১৫তলা বিল্ডিংয়ের ৭ম তম তলায় নওশাদের ফ্ল্যাট
.
কলিংবেল বাজতেছে,নওশাদের আম্মু টিভিতে “সাথ নিভানা সাথিয়া দেখছেন”কলিংবেল বাজতেই বাসার গৃহকর্মী এসে দরজা খুললো
.
গৃহকর্মী তো আহানাকে দেখে অবাক,এরকম স্টাইলের মানুষকে দেখলে অবাক হওয়ারই কথা
.
আহানা একটু ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক চেয়ে বললো”মিসেস রাহেলা কোথায়?আই হ্যাভ সাম টকস উইথ হার”
.
ইংরেজী শুনে রাহেলা হক মাথা উঁচু করে দরজার দিকে তাকালেন,আহানার সাজগোজ দেখে উনার চোখ কপালে
হুরমুর করে ঠিকঠাক হয়ে বসে বললেন”আমি এখানে,আপনি কে,,চিনলাম না!”
.
আহানা হেলেদুলে এগিয়ে এসে উনার পাশে বসে পড়লো তারপর সমস্যা হলো কি বলবে সেটাই ভুলে গেছে সে রাহেলা হকের চোখ দেখে
কি বড়বড় চোখ তার উপর কাজল এমন ঘাড়ো করে দিয়েছে পুরো সিরিয়ালের মহিলাদের মতন লাগে
.
উনি দাঁত কেলিয়ে বললেন”আপনি কে?যদি পরিচয়টা দিতেন!”
.
ওহ!আমি আসলে পাশের ফ্ল্যাটে নতুন এসেছি,আমি রেক্সিনা উমেদ,আমার হাসবেন্ড ম্যারাইনে জব করে,আর আমার একটা ছেলে আছে সদ্য বিয়ে করেছে,সেও ম্যারাইনে জব করেরে
.
ওয়াও!বাহ!
.
কথাটা বলে রাহেলা হক আহানার হাতের গয়নার বক্সটার দিকে তাকালেন
আহানা বুঝতে পেরে এগিয়ে ধরে বললো”এটা আপনার জন্য আনলাম,আমি আবার কাউকে ছোটখাটো গিফট দিই না”
.
রাহেলা হক বক্সটা খুলে হা করে চেয়ে বললেন”এটা কি ডায়মন্ডের?”
.
আমি ডায়মন্ড ছাড়া আর কোনো ব্র্যান্ড চিনি না,গলার সেট আবার অন্য কিছুর ও হয় নাকি?
.
না মানে,এমিটেশন নাকি অন কিছু সেটা জিজ্ঞেস করছিলাম
.
এমিটেশন কি আবার,আমি তো জন্ম থেকে ডায়মন্ড শুনে এসেছি, সব ডায়মন্ড পেয়ে এসেছি!! দিয়ে এসেছি,এমিটেশন কি আবার?নতুন শুনলাম,তার দাম কি ডায়মন্ডের চেয়েও বেশি?
.
রাহেলা হক দাঁত কেলিয়ে বললেন”না না,বাদ দেন ওসব
মর্জিনা যাও নাস্তা নিয়ে আসো
তা সাথে করে নতুন বউকেও নিয়ে আসতেন
.
আরে কি বলবো,আমার পুত্রবধূ সারাদিন কিটি পার্টি আর ফ্রেন্ডদের নিয়ে থাকে,এসবের সময় কই
জিন্স ছাড়া চলেই না,বিয়ের আগে বলেছিলো শাড়ী জিন্স দুটোই পরতে পারবে,এখন দেখি রাতে ঘুমাতে যেয়েও জিন্স পরে,মেহমানদের সামনে আমার মাথা কাটা যায়
কথায় আছে না,বিয়ের জন্য বেশি বাছা বাছি করলে কপালে ছাই জোটে
আমার ও হয়েছে তাই,আমি সবসময় স্মার্ট মেয়ে চাইতাম আমার ছেলের জন্য,আর জুটেছেও ওভারস্মার্ট
এখন তো ভাবি কেন এটা চাইলাম,এর চেয়ে তো গ্রামের ক্ষ্যাত মেয়ে অনেক ভালো,অন্তত আমার কথা তো শুনবে!
.
রাহেলা হক চুপ করে কিসব ভাবলেন,তারপর বললেন”আপনার কোনো কোথাই শোনে না?”
.
শোনে তো,যখন ডাইনিংয়ে নাস্তা রেডি করে বলি বউমা খেতে আসো তখন সাথে সাথে এসে হাজির হয়
.
হায় হায় বলেন কি,আপনার বাসার কি কোনো কাজই সে করে না?চা ও বানায় না?
.
কাজ করে না কে বলে??সারাদিন কত কাজ করে
নখে নেইলপলিশ লাগায়,ফেসিয়াল করে,আবার আমাকেও নেইলপলিশ লাগিয়ে দেয়,এই ভালো দিক আর কি
.
আমি তো আরও এমন বউ চাইছিলাম এতদিন,না বাবা আর চাইবো না,ঘাঁট হইছে আমার,আমার ছেলে যে মেয়েটাকে পছন্দ করে ওরেই বিয়ে করে আনাবো,তা একটা কথা আপনার এমন সুন্দর বডি মেইনটেইন করার টিপসটা বলুন আমি লিখে নিই
.
কিরকম টিপস?
.
আপনাকে দেখে একদমই মনে হয় না আপনার একটা ছেলে আছে আবার তারে বিয়েও করিয়েছেন
মনে হয় আপনি নিজেই নতুন বিয়ে করেছেন
.
কথাটা শুনে আহানার কাশি উঠে গেলো,কাশতে কাশতে বললো”আজ আসি কেমন??”
.
আরে আরেকটু থাকুন না
.
না না,পরে আসব,কাজ হয়ে গেছে আর থেকে কি হবে
.
কাজ হয়ে গেছে মানে?
.
না মানে,আপনাকে ডায়মন্ড দেওয়া হয়ে গেছে,সেটা বললাম আর কি,হেহে,বাই বাই,নাইস টু মিট উইথ ইউর ১৪গুষ্টি,আবারও কাম কেমন?
.
আবারও কাম?,ওহ আচ্ছা আবারও আসবেন,হুম আসিয়েন
.
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে বিল্ডিংয়ের নিচে চলে আসলো,শান্ত কার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষন,আহানাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো”কাজ হয়েছে কিনা?”
.
হয়েছে মানে!!!উনি তো এখন রুপাকেই পছন্দ করবেন শুধু,এমন ট্রিকস করছি না
.
আহানা জলদি করে কারে বসে চোখের চশমাটা খুলে বড় করে একটা শ্বাস নিলো সে,তারপর মুচকি হেসে বললো”কাজটা বেশি কঠিন ছিলো না আবার সহজও ছিলো না”
.
কি কি করলা একটু শুনি
.
ওভারস্মার্ট মেয়ের সুবিধা আর অসুবিধা বুঝালাম উনাকে,এই আর কি
.
যাক এবার তাহলে নওশাদের বিয়ে খাবো,একের পর এক আমার সব ফ্রেন্ড সার্কেল মিঙ্গেল হয়ে যাচ্ছে
.
হুম,আর আপনি হয়েও না হওয়ার মতন
.
বুঝলাম না কি বললে
.
মানেটা সহজ,আপনি বিয়ে করলেন তবে আমাকে কি বউ হিসেবে মানেন নাকি মানেন না সেরকম অবস্থাতে আছি দুজন
.
তোমাকে তো বললাম আমার প্রেমিকার….
.
থাক আর বলতে হবে না,আপনার প্রেমিকা কে তা জানা হয়ে গেছে আমার,শান্তি আম্মু আমাকে সব বলেছে
.
শান্ত কার ড্রাইভ করতে করতে হাসলো কিছুটা তারপর জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আবারও সামনে তাকালো,হালকা পাতলা জ্যাম লেগে আছে
.
আহানা শান্তর দিকে ঘুরে বসে বললো”তা স্বীকার করবেন না আপনি আপনার অত্যন্ত কিউট প্রেমিকা ওরপে বউকে কত ভালোবাসেন?”
.
শান্ত জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বললো”সেটার সময় আসলে সে জানতে পারবে,সব কথা মুখে বললেই কি বলা হয়ে যায়?
.
যায় তো!
.
আচ্ছা তাহলে বলবো তাকে,বাসি নাকি পুরান
.
আহানা হেসে দিলো,মিনিট দশেক বাদেই দুজনে আহানাদের বাসায় পৌঁছালো,আহানা কিছু বলার আগেই নওশাদের ফোনে কল আসলো তার মায়ের
তার মা জানালো রুপাকে নিয়ে যেন সে তাদের বাসায় আসে
রুপা তো এ কথা শুনে আহানার হাত ধরে নাচতে নাচতে অবস্থা বেহাল করে ফেলেছে
নওশাদ আহানাকে থ্যাংকস বলে রুপাকে নিয়ে চলে গেলো তাদের বাসার দিকে
আহানা এবার শান্তর দিকে চেয়ে বললো “চলুন সাহেব,আমরা আমাদের বাসায় ফিরে যাই,এটা তো আমার বাপের বাড়ি”
.
চলুন যাই
.
দুজন মিলে বাড়ি ফিরলো তখন মনে হয় বিকাল হয়ে এসেছে
আহানা শান্তর রুমে এসে নিজের একটা শাড়ী হাতে নিলো রেক্সিনা আন্টির সাজটা বদলাবে বলে,শান্তি আন্টি দেখলে কি না কি ভাববে তার আগেই সব পাল্টে ফেলতে হবে যত জলদি পারি
.
শান্ত রুমে এসে দেখলো আহানা গলার আর কানের গয়না খুলছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
শান্তর হাতে এক গুচ্ছ বিদেশি অর্কিড ফুল
তাহসিনকে দিয়ে আনিয়ে রেখেছিলে শান্ত,আহানা মনে হয় রুমে ঢুকার সময় দেখতে পায়নি
শান্ত আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে ফুলগুলো নিয়ে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলো
আহানা কানের দুলটা হাত থেকে রেখে ফুলগুলোর দিকে চেয়ে থেকে তারপর ব্রু কুঁচকে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো”সকালে আসার সসময় পথে একটা দোকানে দেখছিলাম তাই কিনে ফেললাম,কারেই ছিলো,দিতে ভুলে গিয়েছিলাম,নাও রাখো,সুন্দর ফুলগুলো
.
আহানা ফুলগুলো হাতে নিয়ে বললো”আর কিছু না?
.
আর কি?
.
কিছু বলার নেই?
.
আছে তো
.
তো বলেন
.
আগে তুমি ফ্রেশ হবা নাকি আমি?
.
আহানা রাগে কটমট করতে করতে শান্তর গায়ে ফুলগুলো মেরে হনহনিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো
.
যাক বাবা,আমি কি করলাম আবার!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা ওয়াসরুম থেকে বের হতেই দেখলো শান্ত অর্কিডগুলো নিয়ে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
.
কি ব্যাপার?এবার এগুলো চিবিয়ে দেখাতাম?এরকম চেয়ে আছেন কেন?
.
না মানে এত দামি ফুল তো,পছন্দ হয়নি তোমার?
.
দামি ফুল আমার পছন্দ না,আমার ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার বেশি ভাল্লাগে,এর জায়গায় একটা গন্ধরাজ দিলে আরও খুশি হতাম,যাই হোক ধন্যবাদ!
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো রুম থেকে,শান্ত মন খারাপ করে ফুলগুলো টবে সাজিয়ে রেখে সেও চলে গেলো ফ্রেশ হতে

ঢং দেখায় আমাকে!প্রোপোজ করতে শরম করে তার,অসভ্য একটা,এর থেকে কিছু আশা করাও মস্ত বড় ভুল আমার,এই জন্য মানুষ বলে আগে মেয়েরা প্রোপোজ করতে নেই,করলে বহুত ঘানি টানতে হয়
আমারও হয়েছে তাই
শান্ত যে আমাকে কোনোদিন ভালোবাসি বলবে না তা আজ হারে হারে বোঝা হয়ে গেছে আমার
.
রিপা পানি গরম করতে এসে আহানার দিকে চেয়ে বললো “কি গো? কি এতো বিড়বিড় করে বলছো?”
.
আহানা চমকে রিপার দিকে তাকিয়ে বললো”না কিছু না”
কথাটা বলে সে চায়ের ট্রেটা হাতে করে মায়ের রুমের দিকে গেলো সোজা,মা যেন ওরই অপেক্ষা করছিলেন,আহানা মুচকি হেসে উনার হাতে চায়ের কাপ দিলো সাথে বিসকিট তো আছেই তারপর সে চললো শান্তর রুমের দিকে
রুমে এসে টেবিলের উপর অর্কিড ফুলগুলো দেখে আহানার খুব রাগ হলো,রাগে গজগজ করতে করতে সে চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রাখলো,শান্ত সবে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়েছে
আহানা ওর দিকে একবার তাকিয়ে বিছানায় এসে বসলো চায়ের কাপ নিয়ে,তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো”কি ব্যাপার বলুন তো?,এমন ড্যাবড্যাব করে দেখতেছেন কেন আমাকে?সেই তখন থেকে”
.
কেন?তোমার কোনো সমস্যা?
.
আহানার আরও রাগ উঠলো,সামান্য কথায় হ্যাঁ/না বলে উত্তর দেওয়াই যেতে পারে তাই বলে ধমক দেবে কেন?
.
আহানা আর কিছু বললো না,টম এন্ড জেরি দেখায় মন দিয়েছে সে এখন
শান্ত চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সেও আহানার গা ঘেঁষে বিছানায় এসে বসলো,আহানার কেমন একটা অস্বস্তিকর লাগছে ব্যাপারটা,একটু নড়েচড়ে বসে সে বললো”পুরো খাট খালি রেখে আমার গায়ের সাথেই আপনাকে লেগে বসতে হবে সবসময়?”
.
ছোটবেলায় তুমি আমার কোল ছাড়া কোথাও বসতে না,ওটার শোধ তুলতেছি
.
শোধ তুললে পুরোটাই তোলা উচিত,গা ঘেঁষে না বসে একেবারে কোলে এসেই বসুন না,দেখি আপনার কত ক্ষমতা?
.
শান্ত মুচকি হেসে সত্যি সত্যি আহানার কোলে বসে পড়লো
.
আহানা এক চিৎকার দিতেই শান্ত ওর মুখটা চেপে ধরে বললো”তুমি তো বললা বসতে!”
.
আহানা কিছু বলতে পারলো না হুট করেই কেঁদে ফেললো
হঠাৎ ওকে কাঁদতে দেখে শান্ত সরে গিয়ে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো ব্যাথা পেলো কিনা
.
আহানা চোখের পানি মুছে বললো”হাতের চুড়ির সাথে পেয়েছি একটু”
.
শান্ত আহানার হাত দুটো ধরে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, তারপর অসহায় একটা লুক নিয়ে বললো”সরি!আমি এতসব খেয়াল করিনি আসলে,মজা করতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে ফেললাম তোমাকে”
.
হুহ!কাঁচের চুড়ি গুলো কত সাধ করে কিনেছিলাম,একদিন একটা ভাঙ্গেন আপনি
.
আরও ভাঙ্গছিলাম?কবে সেটা?
.
কথায় কথায় আমার হাত চেপে ধরে যে টান দেন,তো সেটাতে আমার চুড়িগুলো ভেঙ্গে যে চুরমার হয়ে যায় সেদিকে খবর আছে আপনার?
অবশ্য খবর থাকবে কি করে,পারেন তে শুধু ঝগড়া করতে আর কিছুই পারেন না,ভালোবাসা টাসা মনে হয় না আপনার দ্বারা জীবনে হবে
.
এর মধ্যে ভালোবাসা আসে কোথা থেকে,আসলো যখন তখন একটা কথা বলি শুনো!!তুমি যে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো ব্যস হয়ে গেলো এটাই ভালোবাসা?
তোমাকে এটা কে বললো?
ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করলেই সব হয়ে যায় না,কাজে দেখাতে হয়
.
তো আমি কিস করি নাই আপনাকে?
.
আজব তো!কিস আসছে কোথা থেকে,ভালোবাসার মধ্যে ছোঁয়াছুঁয়ি থাকে না বুঝলে?
.
আহানা গালে দুটো আঙ্গুল রেখে ভাবতে থাকলো
তারপর আবার শান্তর দিকে চেয়ে বললো”তাহলে ভালোবাসাই কি থাকে?”
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানার কোমড়ে হাত দিয়ে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে বললো”অনুভূতি”
.
আহানার হার্টবিট বেড়ে গেছে,ঢোক গিলে বললো”এটা?”
.
জি!বুঝতে পারছেন তাহলে!
.
আমি তো বুঝলাম,তবে আপনি কবে বুঝবেন শুনি?
.
আমিও বুঝে গেছি
.
আহানা রুমের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে বললো”কই ভালোবাসার অনুভূতিটা টের পেলাম না,চোখে দেখলাম না!
.
চোখে দেখতে চাও?চলো তোমাকে আজ আমি সেই অনূভূতিটা দেখাবো,চা শেষ করো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চা হাতে নিয়ে সবটা শেষ করে ফেললো দু সেকেন্ডেই,তারপর আবারও শান্তর দিকে চেয়ে বললো”কই দেখান”
.
শান্ত নিজের চা শেষ করে বিছানা থেকে নেমে বললো”ফলো মি”
.
আহানাও গাধার মতো ওর পিছু পিছু ছুটেছে,শান্ত রান্নাঘরে ঢুকে মুঠো করে কি যেন নিলো তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাচ্ছে সে এখন,আহানাও এবার সিঁড়ি বেয়ে ওর পিছু পিছু ছাদে যাচ্ছে,শান্ত হাতে কি নিলো সে দেখলো না
.
ছাদে এসে আহানা হাঁপিয়ে গেলো তারপর বললো”কই??”
.
শান্ত মুচকি হেসে ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে
আহানা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”মিথ্যে আশা দিয়ে এখানে আনছেন তাই তো?আপনি তো জানেনই না ভালোবাসা কি হয়,কি করে সেটা ফিল হয়,শুধু শুধু আপনাকে বিশ্বাস করে এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে আমার”
.
শান্ত তার হাতের মুঠোয় থাকা জিনিসগুলো ছাদের উপর রাখলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত ধরে ফেললো
আহানা পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো”আবার কি?”
.
শান্ত পিছনে ছাদের রেলিংয়ে হাত দিয়ে জিনিসগুলো একটু খানি নিয়ে আহানার গায়ে ছুঁড়ে মারলো
আহানা চোখ বন্ধ করে ফেললো সাথে সাথে
ওর সারা গায়ে লাল রঙের আবিরের ছড়াছড়ি
আহানা চোখ খুলে নিজের গায়ের দিকে তাকিয়ে আবারও শান্তর দিকে তাকালো,কিছু বলার আগেই শান্ত আবারও আরেক মুঠো আবির ওর গায়ে ছুঁড়ে মারলো
এটা ছিলো নীল রঙের
তারপর আহানার হাত ছেড়ে দিলো সে
আহানা হাত দিয়ে শাড়ী থেকে আবির ঝাড়তে ঝাড়তে বললো”পাগল গয়ে গেলেন??
.
আহানা বিরক্তি নিয়ে গায়ের থেকে আবির ঝেড়ে যাচ্ছে,শান্ত আহানার হাত দুটো ধরে ফেললো আবারও
আহানা এবার অবাক হলো,বিরক্তি ভাব কমে গেছে তার মুখ থেকে
শান্ত হ্যাচকা টান দিয়ে ওকে একদম কাছে নিয়ে আসলো
তারপর রেলিংয়ে থাকা অবশিষ্ট আবিরের গুড়ো আহানার ডান হাতের তালুতে রাখলো সে,তারপর সেই হাতটা দিয়ে নিজের মুখে আর গলায় লাগালো আহানার হাত দিয়ে
.
আহানা অবাক হয়ে শুধু দেখছে শান্ত কি করছে এসব

বিকালের শেষ অংশ এখন
সূর্য ডুবুডুবু,,নভেম্বরের এই সময়টা মুখে প্রকাশ করার মতন না,এই সময়টা সারাদিনের মধ্যে বেস্ট বলা যেতে পারে চোখ বন্ধ করেই
.
আহানা হাত মুছড়াচ্ছে ছাড়ানোর জন্য,তারপর যখন দেখলো শান্ত দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
তখন উপায় না পেয়ে সে বললো”কি করতে চান বলুন তো??
এমন হাত আটকে ধরেছেন কেন?তার উপর আবির দিয়ে ভূত বানিয়ে রেখেছেন আমাকে আর নিজেকেও
সন্ধ্যাবেলার ভূতে ধরেছে নাকি আপনাকে? কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন?আর আমার হাতই বা ছাড়ছেন না কেন?ছাড়ুন,হাতে চুড়ি আর ২/৩টা আছে এগুলাও ভাঙ্গার শপথ করে রাখছেন নাকি আপনি?
যেভাবে ধরে রেখেছেন যেন আমি আবার আপনাকে চড় মারতে পারি সে ভয়ে……
.
আহানা কথাটা শেষ করে চুপ হয়ে গেলো,বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো তার,শান্ত কি তাহলে!
আহানা সব কথা থামিয়ে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এবার,ভয় কাজ করছে,এ এক অন্যরকম ভয়,কারোর থেকে ভালোবাসার স্পর্শ পাওয়ার আগ মূহুর্তে যে ভয়টা হয় ঠিক সেটা
আহানার আরও ভয় করছে শান্তর চোখ দুটো দেখে
শান্তর চোখ যেন স্পষ্ট করে বলছে”আহানা আজ তুমি শেষ”
.
শান্ত আহানার ঠোঁটজোড়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসছে সেই কখন থেকে
আর এদিকে আহানার ভয়ে গলা শুকিয়ে হাত পা কাঁপার মতন অবস্থা,হাত নাড়তে নাড়তে তার হাত ব্যাথা হয়ে গেছে যার কারণে এখন সে হাতদুটো নিচে নামিয়ে নিয়েছে শান্ত কিন্তু এখনও আহানার হাত ছাড়েনি
.
বিকাল সম্পূর্ণ শেষ,সন্ধ্যা হয়ে গেছে,অন্ধকার নামছে ধীরে ধীরে
শান্ত এখনও সেই একই মিষ্টি হাসি দিয়ে আহানার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে
আর আহানা চুপ করে শান্তর চোখের দিকে চেয়ে আছে
.
রোডের ল্যাম্পপোস্ট গুলো এক এক করে জ্বলে উঠছে,বাসার গেট থেকে দারোয়ান উঠে গিয়ে এদিক ওদিক হাঁটছেন
তারপর তিনি বাগানের লাইটগুলো জ্বালিয়ে আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসলেন
.
আহানা বড় করে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো”সারা জীবন এমন ফ্যালফ্যাল করে চেয়েই থাকবেন?হাত ছাড়ুন,অনেক হয়েছে!!আমার হাত পা ধরে গেছে এরকম এক টানা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
আজব তো!!সেই তখন থেকে বকবক করে যাচ্ছি আমি আর আপনি খালি আমাকেই দেখে যাচ্ছেন,কিছু তো বলবেন!নাকি বোবা হয়ে গেলেন!
.
আহানা আবারও হাত মুছড়ানো শুরু করলো
ওর হাতের ২জোড়া কাঁচের চুড়ি ঝুনঝুন আওয়াজ করছে একটার সাথে একটা লেগে
আহানা আবারও থেমে গেলো,হাত ব্যাথা হয়ে গেছে তাই
মলিন চোখে সে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”ছেড়ে দিন নাহলে কিছু তো বলুন,আমার ভালো লাগছে না এমন দাঁড়িয়ে থাকতে”
.
কিছু ফিল হয়?
.
কি?
.
এই যে এতক্ষণ ধরে ভালোবাসার মানুষের কাছাকাছি আছো কিছুই ফিল হয়নি তোমার?কথা ছিলো ভালোবাসা ফিল করানো তাইতো এত কিছু করার,আবির মেখেছিলাম কেন জানো?কারণ তোমার গায়ে আবির মেরে আমি তোমার চোখে নেশা দেখেছিলাম,তারপর তোমার হাতে আবির আমার গায়ে লাগিয়ে আমি আমার চোখের নেশা তোমাকে দেখালাম
.
হইছে,ভালোবাসা দেখা হয়ে গেছে আমার,এবার তো হাত ছাড়ুন!শান্তি আন্টি এতক্ষণ আমাদের না দেখলে চিন্তা করবে,তার উপর রিপা বা নিতু যদি হুট করে ছাদে চলে আসে?
.
রিপা তার বাড়ি ফিরে গেছে,নিতু ডান্স ক্লাসে গেছে,মা উপন্যাস পড়ছেন
আর কারোর ডিটেইলস লাগবে আহানা ম্যাম?
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো”তাহলে বলুন আর কি চান যে এমন হাত ধরে রেখেছেন আমার”
.
শান্ত আহানাকে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে বললো”তোমাকে ”
.
আহানা শক্ত গলায় বললো”মনের কথা না জানিয়ে আমাকে ছুঁবেন না”
.
শান্ত হাসলো তারপর হাসি থামিয়ে বললো”কেন?মনের কথা ছুঁয়ে বুঝিয়ে দেওয়া যায় না বুঝি?”
.
আমি কাজে-বোঝাতে মানি না,আমি মুখে স্বীকার করাকে মান্য করি,আশা করি বুঝতে পেরেছেন!
.
সেটা তো এত সহজে প্রকাশ করবো না,তোমাকে কাঁদতে হবে শাহরিয়ার শান্তর জন্য,বুঝলা মেয়ে?
.
আরও কাঁদাবেন?এতদিনের কান্নায় হয়নি আপনার?
.
হয়নি তো,আরও কাঁদো,দেখি একটু
.
আহানা জোরে জোরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,মেজাজ সম্পূর্ণ বিগড়ে গেছে,এরই মাঝে শান্ত আলতো করে ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো
আহানা মূহুর্তেই থেমে গেলো,চুপ করে থাকলো সে
শান্ত ফিসফিস করে বললো”ফিল হয়?”
.
আহানা চোখ দুটো বন্ধ করে চুপ করে থাকলো,কিছু বললো না আর
শান্ত আহানার ঠোঁটজোড়া স্পর্শ করে ফেলেছে
গুনে গুনে ৪সেকেন্ডের জন্য! তারপর আহানাকে ছেড়ে দিলো সে
আহানা এখনও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,তারপর কি যেন ভেবে সে দৌড়ে চলে গেলো ছাদ থেকে
শান্ত মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে আকাশের দিকে তাকালো,সন্ধ্যাতারা উজ্জ্বল হয়ে আছে,আর কোনো তারা নেই আকাশে
অথচ শান্তর মনে হচ্ছে তার আশেপাশে আলোয় আলোয় ভর্তি
আহানা শান্তর রুমে এসে বিছানার ওপাশে ফ্লোরে বসে পড়লো হাত পা গুটিয়ে,পুরো শরীরের শিরায় শিরায় কম্পিত হচ্ছে ৪সেকেন্ডের সেই অনুভূতিটা,এত সময় ধরে এর রেশ রয়ে গেলো,থেকে যাবে অাজীবন,মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ ছোঁয়া আমার মনে থাকবে
আমি এটা নিয়েই হেসে খেলে জীবন কাটাতে পারবো,আমার আর কিছু চাই না শান্ত,আমাকে সব দিয়ে দিলে আজ
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
মা খবর দেখা শেষে উঠে নিজের রুমে চলে গেছেন,আহানাও সাথে সাথে টিভিটা অফ করে রুমের দিকে চলে গেলো
রুমে এসে চুপ করে বিছানার মাঝখানে বসে পড়েছে সে
পা টা নিচে ঝুলিয়ে
শান্ত ও চুইংগামের মতন ওর পিছু পিছু এসে হাজির
আহানা চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে,শান্ত যখনই দরজাটা লাগালো
সাথেসাথে আহানা হনহনিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো তারপর কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আপনি আমাকে তখন এত ডিস্টার্ব করতেছিলেন কেন বলুন তো?”
.
শান্ত মুখটা নিচু করে আহানার বরাবর নিয়ে বললো’কেন?আমার বউকে ডিস্টার্ব করেছি তোমার গায়ে লাগছে কেন?”
.
কারণ বউটা তো আমি তাই
.
তো তুমি যে সারাদিন আমাকে ডিস্টার্ব করো সেটার কি হবে?
.
আমি অন্তত এমন করে ডিস্টার্ব করি না
.
যাই হোক,বিয়ের ১৪দিনের বাসরে দুষ্টামি করলাম একটু এখন ঘুমাও যাও
.
আহানা বিছানায় এসে কাঁথাটা টেনে শুয়ে পড়েছে
শান্ত ওয়াসরুম থেকে মুখটা ধুয়ে এসে দেখলো তার বউ তার কথামতন খাটের এক কোণায় শুয়েছে এবং ঘুমিয়েও গেছে
শান্ত পা টিপে টিপে বিছানায় উঠে বসলো তারপর মনযোগ দিয়ে আহানার মুখের দিকে চেয়ে থাকলো
.
মেয়েটা আমার অত্যন্ত কিউট একটা বউ,এরে হাত ছাড়া করা যাবে না,এরে আগলে রাখতে হবে সবসময়
কথাটা বলে শান্ত আহনার পাশে শুয়ে পড়লো সাথে আহানাকে কাছে টেনে নিলো
পরেরদিন সকাল সকাল আহানা যখন চোখ খুললো সে দেখতে পেলো টিশার্টের ৩টে বোতাম,তার নাকের সাথে বিধে আছে,আর ভেতর থেকে হার্টবিট শোনা যাচ্ছে,কিন্তু আসলে সে কোথায় সে এখনও বুঝছে না
নড়েচড়ে একটু পিছোতেই বুঝতে পারলো সে শান্তর বুকে,এতক্ষন এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলাম নাকি?
ইস রে!কি লজ্জাকর!
আহানা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিছানা থেকে উঠতে নিতেই টান খেলো তার শাড়ীর আঁচলে
পিছন ফিরে শান্তর দিকে চেয়ে দেখতে পেলো শান্তর বাম হাতে ওর আঁচলটা গিট্টু দেওয়া
আহানা কিছুটা অবাক হলো সাথে কনফিউশনে পড়ে গেলো এই গিট্টু দেওয়ার কারণ কি সেটা ভাবতে গিয়ে
তারপর একটু এগিয়ে এসে গিট্টুটা খুলতে যেতেই শান্ত তার চোখজোড়া খুলে ড্যাবড্যাব করে তাকালো
আহানাও ব্রু কুঁচকালো তারপর বললো”কি ব্যাপার?সকাল সকাল ওমন আমার আঁচল নিয়ে আপনার হাতের সাথে বাঁধলেন কেন?”
.
ওহ আচ্ছা সেটা?আমি তো সকালে বাঁধি নাই,কাল রাতেই বেঁধেছিলাম
.
কিন্তু কেন?
.
কারণ একটা কথা জানাতে,যাতে ভুলে না যাই তাই সিস্টেম করা
.
কি জানতাম?
.
রাতে শোয়ার সময় আমিই তোমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম সেটা
তুমি তো বলো আমি নাকি কেয়ার করি না,কিছু করি না
.
জড়িয়ে ধরা কেয়ার?
.
সেটার মধ্যে পড়ে আরকি,সমাস,ব্যাকরণ,সংজ্ঞা,এরকম
.
আপনি থাকেন আপনার লজিক নিয়ে
কথা ভুলে যাবে করে উনি আমার আঁচল বেঁধে রেখেছেন যেন আমি সকাল সকাল কই চলে যাব,আর ফিরবো না
আহানা শান্তকে বকতে বকতে ফ্রেশ হতে চলে গেলো

হ্যালো তাহসিন?আমার অফিসে যাওয়ার কারটা চেক করেছো?আমি এখননই নাস্তা করে বের হবো
.
স্যার কারটা সম্পূর্ণ চেক করেছি বাট একটা প্রব্লেম পেলাম,আর সেটা হলো একটা টায়ার পাঞ্চার করা,আশেপাশে এমন কিছু পেলাম না যেটা দিয়ে এটা পাঞ্চার হতে পারে
.
পাঞ্চার??আমি তো কাল যখন কার থামিয়েছিলাম তার আগ পর্যন্ত ও কার ঠিক ছিলো তাহলে পাঞ্চার হলো কি করে
.
জানি না স্যার,আমি নিউ একটা টায়ার লাগিয়ে দিয়েছি
.
ওকে ডান
.
আহানা শান্তর জন্য নাস্তা রেডি করে টেবিলে রেখে মুখ ফসকে বললো”আপনার তো গাড়ী নষ্ট,ক্যাব ডাকবেন না?”
.
শান্ত পাউরুটি মুখে দিয়ে সন্দেহের চোখে আহানার দিকে তাকালো
তারপর বললো”তুমি জানো কি করে আমার গাড়ী নষ্ট?”
.
আহানা ঢোক গিলে বললো”ইয়ে আসলে তাহসিন ভাইয়াকে দেখছিলাম আপনার কার চেক করতেছে তাই গেস করলাম”
.
ওহ!নষ্ট না জাস্ট টায়ার পাঞ্চার হয়েছে এই আর কি,তাহসিন চেঞ্জ করে দিয়েছে,আমি এখন কারে করে যেতে পারবো আলাদা ক্যাব ডাকার প্রয়োজন পড়বে না
.
কথাগুলো শুনে আহানার মনে হলো পায়ের তলার মাটি সরে গেছে,সে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো হাতে ভাজির বাটি নিয়ে তারপর বাটিটা শান্তর সামনে রেখে নিচু স্বরে বললো”প্লিস!ক্যাবে করে যান,কারে করে যাইয়েন না”
.
শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে টাইটা টানতে টানতে বললো”তাহসিন কারটা সম্পূর্ণ চেক করেছে,আই এম আউট অফ ডেঞ্জার”
.
আহানা অনেক মানা করার পরেও শান্ত অফিস চলে গেলো
তাও সেই কারে করে
আহানা তো অনেক টেনশনে আছে, কাল এত কষ্ট করে টায়ারটা পাঞ্চার করলো কিন্তু তাও কোন লাভ হল না আহানা বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে শান্তর জন্য চিন্তা করতে লাগলো
বুকের ভেতরে একটা ভয় কাজ করতেছে যে শান্তর যদি কিছু হয়ে যায়?
শান্ত যে তার সব কথার অবাধ্য এটা সে জানে তাই তো সেই টায়ার পাঞ্চার করে রেখেছিল কিন্তু তাতেও লাভ হলো না
এত টেনসান নিতে না পেরে আহানা শান্তি রহমানের রুমে এসে হাজির হয়েছে
শান্তি রহমান একটি সাদা কাপড় নিয়ে বসে বসে সেটাতে সুই সুতা দিয়ে ফুলকারি কাজ করছেন, এটা দিয়ে একটা জামা তৈরি করবেন নিতুর জন্য
.
আহানা এসব ব্যাপারে উনাকে জানাতে চায়নি কিন্তু তারপরও এখন এত টেনশন এ থাকতে না পেরে উনাকে জানাতেই হবে এই ভেবে আহানা শান্তর মায়ের রুমে এলো
চুপচাপ মায়ের পাশে বসে উনার হাতটা শক্ত করে ধরে সে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো উনার দিকে

মা আমি তোমাকে কিছু একটা বলতে চাই এ কথাটা বলার কারণ হচ্ছে শান্ত তোমার কথা শুনে সবসময়
কখনো অবাধ্য হয় না, আশা করি তুমি ব্যাপারটা বুঝে যদি উনাকে একটু বোঝাও তাহলে উনি তোমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করবে
.
শান্তি রহমান হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে??
.
আসলে বাবার আর রিয়াদ আংকেলের এক্সিডেন্ট এর পেছনে আমার আর শান্ত মনে হচ্ছে আমার চাচা মজনুর হাত আছে
উনি কালকে আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন যে উনি শান্তর কোন ক্ষতি করতে পারেন সেটা কারের দ্বারায় বা অন্য কিছু ও হতে পারে
তারপর থেকে আমি শান্তকে অনেক মানা করেছি কিন্তু সে আমার কোন মানা শুনেনি
শেষে সেই কারটাতে করেই অফিসে চলে গেছে
তুমি আজকে উনি অফিস থেকে আসলে ভালো করে বুঝিয়ে দিবে যাতে আর কারে করে অফিসে না যায় দরকার হলে অন্য কোন যানবাহনে করে যাবে কিন্তু তাও এই কারে করে যেন আর না যায়,তুমি একটু বুঝিয়ে দিও উনাকে
.
আহানার মুখে সব কথা শুনে শান্তি রহমান চোখ বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আহানার দিকে
সাত বছর আগের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো তার
তিনি ভেবে উঠতে পারছেন না তিনি ঠিক এই সময়ে কি বলবে নাকি কি করবে
এদিকে আহানা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে
কোন দিশা না পেয়ে উনি আহানার হাতটা ধরে চুপ করে থাকলেন তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলেন
এমন একটা সময়ে তার কথা বলার অনেক জরুরী কিন্তু তার কথা যে বের হবে না এটাই হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য
শুধু চোখের পানি দিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিলেন ব্যাপারটা বড়ই কষ্ট দায়ক এবং তিনি মুখ দিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না
শান্তি রহমানের কোন উত্তর না পেয়ে আহানা চুপচাপ উঠে গিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো
খুব জোরে মেঘ ডাকা শুরু হয়ে গেছে
শান্তকে নিয়ে সেই ভাবনায় পড়ে গিয়ে শান্তর রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো আহানা
আকাশ কালো হয়ে এসেছে
থেমে থেমে মেঘ ডাকছে,এবার যে বৃষ্টিটা হবে এটাকে মনে হয় নভেম্বর রেইন বলা যেতে পারে, এ বছরের শেষ বৃষ্টি মনে হয়
এই বৃষ্টি টা কিন্তু খুব ধুমধাম করে হয় অনেক জোরে আসে সবকিছু ভাসিয়ে তারপর চলে যায়,২/৩দিন টানা থাকে
আর এখন আহানার মনে হচ্ছে আহানার জীবনটা ভাসিয়ে দিয়ে না চলে যায় এই বৃষ্টিটা
সে একটু কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো বারান্দাটার
খুব জোরে মেঘ ডেকে উঠতেই আহানা আর একমুহূর্ত ও বারান্দায় দাঁড়ালো না
তাড়াতাড়ি রুমে চলে এসে ফোনটা খুঁজে বের করলো সে তারপর শান্ত কে ফোন করলো, শান্ত সবেমাত্র অফিস রুমে এসে বসেছে,ঊষার সাথে কথা বলার আগেই দেখলো তার ফোনে আহানার কল আসছে
তাই অফিসের কাজ শুরু করার আগে কল রিসিভ করলো শান্ত
.
আপনি কি ঠিকঠাকভাবে পৌঁছে গেছেন??
.
শান্ত কিছুটা হেসে বললো “কেনো?? সবে মাত্র বাসা থেকে বের হলাম আর এখন আমি অফিসে ঢুকেছি মাত্র তুমি এটা কেনো জিজ্ঞেস করছো??
আর তোমাকে তো বলেছিলাম যে আমি কারটা ভালো করে চেক করে তারপর রওনা হয়েছি,তাও তুমি কেন এখনো একই কথা ধরে বসে আছো?
এত টেনশন না করে চুপচাপ বসে থাকো, যদি বসে থাকতে ভালো না লাগে তাহলে আম্মুর কাছে গিয়ে বসে থাকো,গল্প করো
রিপার সাথে কথা বলো, কত কাজ আছে বাসায় ওসব করো তাহলে আর এই চিন্তা মাথায় আসবে না
আর আমাকে প্লিজ কাজটা করতে দাও, আমি এতদিনে অনেক কাজ ঠিকমত করতে পারিনি এখন আমি চাই না কোন কিছু উল্টাপাল্টা চিন্তা ধারা মাথায় এনে আমি আমার অফিসের কাজটা বন্ধ রাখতে
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে “ওকে বাই “বলে ফোনটা রেখে দিলো
মেঘ ডেকেছিলো এতক্ষণ কিন্তু হঠাৎ করে আবার সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে তাই হাসিমুখে ফোনটা রেখে দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো আহানা
.
শান্তর জন্য রান্না করবো!!! বিরিয়ানি তৈরি করবো
শান্ত আমার হাতের বিরিয়ানি অনেক পছন্দ করে
.
বিরিয়ানি রান্না করতে করতে দুপুর 2 টার বেশি বেজে গেছে
আহানা এবার সব কাজ শেষ করে হাত ধুয়ে -মুছে নিজের রুমে আসলো তারপর ফোনটা খুঁজে হাতে নিয়ে আবারও ফোন করলো শান্তকে,ঠিক গুনে গুনে পাঁচবার কিন্তু শান্ত রিসিভ করল না
আহানার একটু চিন্তা হলো পরে ভাবলো হয়ত অনেক কাজের চাপে ব্যস্ত আছে, কিছুক্ষণ পর শান্ত যখন দেখবে আহানা ফোন করেছে তখন সে ফোনটা কলব্যাক করবে নিশ্চয়
কালকে রিপার সাজানো বাসর ঘরটার ফুলগুলো সব শুকিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে আছে
আহানা তাই রুম পরিষ্কার করায় ব্যস্ত এখন
পরিষ্কার করতে করতে প্রায় তিনটা বেজে গেছে
আহানা যখন দেখলো শান্ত কল ব্যাক করছে না এখনও তখন সে ফোনটা নিয়ে শান্ত কে আবার ফোন করলো কিন্তু এবারও শান্ত রিসিভ করলো না
এবার আহানার প্রচুর ভয় করছে, আকাশে মেঘ আবারও কালো হয়ে গেছে এমনকি টপটপ করে বৃষ্টি পড়তেও শুরু হয়ে গেছে
আহানা এবার বাধ্য হয়ে শান্তর অফিসের মেইন নাম্বারে ফোন করলো
কিছুক্ষণ পর ঊষা রিসিভ করলো,আহানা ওকে জিজ্ঞেস করলো যে শান্ত কোথায় ফোন ধরছে না কেন??
ঊষা জানালো” শান্ত এতক্ষণ মিটিংয়ে ছিল, প্রায় 5 মিনিট হয়েছে সে অফিস থেকে বেরিয়েও গেছে”
.
আহানা খুশি হয়ে ফোনটা রেখে দিয়ে নিশ্চিন্তভাবে রান্নাঘরে গিয়ে বিরিয়ানি প্লেটে নিচ্ছে শান্তর জন্য
কিছুক্ষণ বাদেই শান্ত এসে পড়বে তাই সে জলদি তার কাজ শেষ করছে
3:30 বাজে অথচ শান্তর এখনো বাসায় ফেরার নাম নেই আজ সকাল থেকেই কেন জানিনা তার প্রতি কদমে কদমে ভয় হচ্ছে
বারবার মনে হয় শান্তর কিছু বিপদ হয়নি তো?
অপেক্ষা করতে করতে আর শান্তকে অনবরত ফোন করতে করতে এখন বাজে বিকেল 4:30 অথচ শান্তর কোন খবর নেই, না অফিসে কোন খবর আছে না তার ফোনের কোন খবর আছে
এমন কি এখন ফোনটাও অফ দেখাচ্ছে
আহানা কাঁদতে কাঁদতে বাসার গেটের কাছে এসে একবার বামে তাকাচ্ছে আবার ডানে তাকাচ্ছে
অথচ শান্তর কোনো হদিস মিলছে না
এদিকে বৃষ্টি এখন টুপটাপ করে পড়া শেষ হয়ে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে
আহানা ভিজতে ভিজতে এখনো সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে
সে বাসায় ফিরবে না,যতক্ষণ না শান্তকে সে নিজের চোখে দেখবে ততক্ষণ সে বাসায় যাবে না
শান্তি রহমান জানেন না আহানা সেই এক ঘন্টা ধরে বাসার গেটে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতেছে, তিনি নিজের রুমে আছেন এমনকি এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন
তিনি এই খবর সম্পর্কে অবগত নন
নিতু দুপুর বেলায় স্কুল থেকে ফিরে লাঞ্চ করে তার রুমে শুয়ে ও পড়েছে
রিপা তার কাজ সেরে তার বাসায় ফিরে গেছে
আহানা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তার মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা হওয়া শুরু হয়ে গেলো
অথচ তার সেদিকে খেয়াল নেই সে মাথা ধরে বাউন্ডারির দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শান্তর জন্য অপেক্ষা করছে মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে
আযান দেওয়া শেষ হয়ে গেছে অথচ শান্ত এখনও অফিসের থেকে ফিরছে না
এর আগে এমন সময় শান্ত সবসময় বাড়ি থাকে
আর আজ কিনা সে এখনো ফিরছে না, ফোনও ধরছে না চিন্তার বিষয় বটে
আহানা শান্তি রহমানের রুমের দিকে দৌড় দিবে তখনই সে শান্তর কারের আওয়াজ পেলো
একগাল হাসি নিয়ে পিছন ফিরে তাকালো আহানা
শান্তর কার বাসার ভিতরে ঢুকছে দেখতে পেয়ে আহানার মনে হলো সে তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে
এমন বৃষ্টিতে আহানাকে খালি ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শান্ত কিছুটা অবাক হল তারপর তাড়াতাড়ি করে কার থেকে বেরিয়ে এসে মাথার উপর হাত দিয়ে দৌড়ে আহানার কাছে এসে বললো”” কি ব্যাপার তুমি এমন বৃষ্টিতে ভিজতেছো কেন? এরকম বৃষ্টি হচ্ছে তুমি বাইরে কি করে দাঁড়িয়ে আছো??
তোমার জ্বর হতে পারে তুমি জানো না? এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন, আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছো না কেন?
.
আহানা রোবটের মতন দাঁড়িয়ে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে
বৃষ্টির মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে বললো” আমি আপনাকে কতবার ফোন করেছি আপনি একবারও আমার ফোন ধরেননি,অফিস থেকে বেরিয়েছেন সেই ৩টার টার সময় আর আপনার কোন খোঁজ পাইনি আমি আমার চিন্তা হয় না? আপনি কেন বুঝেন না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি? বুঝলাম আপনার কাছে আমার ভালবাসার দাম নেই তাই বলে কি আপনি আমার ভালোবাসাকে এভাবে হেনস্থা করবেন?? এমনভাবে আমাকে কষ্ট দেবেন?আমার কষ্ট পাওয়া আমার ভালোলাগা আমার খারাপ লাগাতে কি আপনার কিছু যায় আসে না? আপনার কি একবারও উচিত ছিল না আমাকে ফোন করে জানানো? আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম সেই ধারণা কি আছে আপনার?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
অফিস থেকে বেরিয়েছিলাম ৩টার সময় সেটা ঠিক তবে আসতে লেট হয়েছিলো কারণ একটা ঝামেলায় পড়েছিলাম সাথে ফোনে নেটওয়ার্ক ও ছিলো না
.
কি ঝামেলা?
.
বাসায় ঢুকে বলতেছি,এখানে বসে আলাপ করার মন মানসিকতা নেই আমার,আর আমি অনেক টায়ার্ড,সো ভেতরে চলো
.
আহানা তাও যেতে চাইলো না,শক্ত হয়ে একি জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনেও যখন দেখলো সে বিন্দুমাত্র নড়ছে না তখন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো”তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাওয়ার শক্তিটাও আমার নেই,বুঝার চেষ্টা করো আহানা,ভেতরে চলো”
.
আহানা শান্তর হাত দুটো ধরে বললো”শক্তি নেই মানে?কি হয়েছে?আমাকে বলুন এখনই”
.
বৃষ্টির কমাকমি নাই,জোরে সোরে হচ্ছে
এদিকে আহানাও নাছোড়বান্দা সে এই জায়গা থেকে কিছুতেই নড়বে না যতক্ষন না শান্ত তাকে সবটা খুলে বলছে
শান্ত কিছু না বলেই বাসার ভেতর চলে গেলো
শান্ত চলে যাওয়ায় আহানা নিচে বসে পড়লো,বাসার সামনে বাগান বাদ রেখে যতটা খালি জায়গা আছে সবটা সিমেন্ট দিয়ে ঢালায় করা
আহানা সেখানেই বসে পড়েছে,চিৎকার করে আহানা বললো”আপনি আমাকে ভালোবাসেন না শান্ত,ঠিক এই কারণে আমি আপনাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে চাইনি,অপমান হবো বলো
সেই অপমানটা করেই গেলেন আপনি,আপনি ঠিক করেননি,আমি শুধু ভালোবেসেছি,পাইনি কখনও”
.
শান্ত রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ের থেকে কোটটা খুলে ফেললো,তারপর ভেতরের হালকা নীল রঙের শার্ট আর টাইটাও খুলে ফ্লোরে ফেললো
বুকের এক পাশে কাটা দাগ,সেই ক্ষতটা থেকে রক্ত পড়তেছে এখনও
শান্ত নিচু হয়ে ড্রয়ার থেকে তুলার একটা বক্স নিয়ে সেখান থেকে তুলা নিয়ে বুকে চেপে ধরে ল্যান্ড লাইন থেকে ফোন করার জন্য সোফার রুম পর্যন্ত আসলো তারপর সেখান থেকে তাহসিনকে ফোন করে বললো”ডাক্তার নিয়ে আসতে”
কথা শেষ করে শান্ত বাসার বাইরে তাকালো একবার,আহানা কোথাও নেই,শান্ত ভেবেছিলো আহানা ওর পিছু পিছু আসবে কিন্তু না!
সে কোথায় তাহলে?
শান্ত নিজের রুমে ফিরে এসে ফ্লোর থেকে নীল শার্টটা নিয়ে পরে আবারও বেরিয়ে পড়লো,আহানাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না,কোথায় গেলো মেয়েটা!
এরকম পরিস্থিতিতে উধাও হয়ে আমাকে আরও টেনসনে ফেলে সবসময়
শান্ত আবার কারে উঠে বসে আহানাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে
আহানা যে সোজা তার মায়ের কাছে যাবে এ ব্যাপারে শান্ত ২০০%সিউর
পথে এদিক ওদিক তাকিয়েও আহানাকে দেখলো না সে
এত জলদি চলে গেলো?
অবশ্য বাসাও বেশি দূর না!
উফ বুকের ব্যাথা এত বেশি যেন ভেতর থেকে মনে হচ্ছে সুই ফোঁড়ছে,ওদিকে তাহসিন ডাক্তার নিয়ে আসতেছে এদিকে আমার বউ আবারও রাগ করেছে এঅসময়ে,কি একটা জ্বালা!
.
আহানা নিজের বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে আছে
মা আর খালা মিলে বাইরে থেকে ওকে বারবার জিজ্ঞেস করছে যে হয়েছে টা কি কিন্তু সে উত্তর দিচ্ছে না কিছুতেই
শেষে মা আন্দাজ করে বললো হয়ত শান্তর সাথে ঝগড়া হয়েছে
এসব ভাবতে ভাবতেই পিছন ফিরে তারা শান্তকে দেখলো,শান্ত জোরে জোরে সিঁড়ি বেয়ে তড়িঘড়ি করে উপরে আসতে আসতে বললো”আহানা কি এখানে?”
.
মা মাথা নাড়ালেন
.
শান্ত দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই মা আর খালা চলে গেলেন সাথেসাথে
.
আহানা প্লিস দরজা খোলো,তুমি আমাকে এত ভেজালে কেন ফেলো বলতে পারো?কি ঝামেলা হয়েছে সেটা বাসায় ঢুকে বললে কি তোমার মানসম্মান যেতো নাকি অন্য কিছু হতো?
এত জেদ কেন ধরো??আর আবার রাগ করে বাসা থেকে এই বৃষ্টির মধ্যে একা একা চলেও এসেছো
.
আহানা শান্তর কথা শুনে দরজা খুললো,শান্ত ডান হাত কোমড়ে রেখে দাঁড়িয়ে আছে,আহানা কিছু বলার আগেই শান্তর ফোন বেজে উঠলো,শান্ত রিসিভ করে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো”তাহসিন ডাক্তার নিয়ে আহানাদের বাসায় আসো,আমি সেখানে আছি”
.
ওকে স্যার
.
আহানা এগিয়ে এসে বললো”ডাক্তার কেন?কার কি হয়েছে?”
.
সেটা বলার সুযোগ দিয়েছো?একের পর এক জেদ দেখিয়েই যাচ্ছিলা তুমি,তোমাকে চড় মারি নাই এটা তোমার ভাগ্য বুঝলা?
.
আহানা বিচলিত হয়ে শান্তর পাশে বসে বললো”কি হয়েছে বলুন তো”
.
শান্ত কিছু বলার আগেই আহানার মুখের অবস্থা দেখে তার মুখের সব কথা হাওয়া হয়ে গেলো
আহানার চোখ অশ্রুতে ভরা,চোখের কাজলগুলো লেপটে গেছে,নিশ্চয় এতক্ষণ কাঁদতেছিলো
শান্ত তাই কিছু না বলেই আহানার চোখগুলো মুছে দিলো তারপর বললো”আমার হাই প্রেসার তাই ডাক্তার ডেকেছি,আর কিছু না”
.
আহানা মুখটা কালো করে বললো”আগে বলবেন না,আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে”
.
আহানা উঠে গিয়ে ফ্যানটা চালু করে শান্তকে জোর করে ধরে তার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চাদরটা টেনে দিয়ে বললো”ডাক্তার আসা পর্যন্ত শুয়ে থাকুন,এরকম অফিসের কাজ নিয়ে টেনসন করলে তো হাই প্রেসার হবেই,আর এমন টেনসন করবেন না, আমি আপনার লাঞ্চের ব্যবস্থা করতেছি
.
কথাগুলো বলে আহানা চলে গেলো,তারপর রান্নাঘরে ঢুকার সময় দেখলো তাহসিন একজন ডাক্তার নিয়ে আসতেছে এদিকে
আহানা ওদের বললো শান্ত উপরের রুমে তারপর নিজের কাজে চলে গেলো

আপনার শরীরের ক্ষতটা ঠিক কতটা গভীর এটা জানতে আপনাকে হসপিটালে এডমিট হতে হবে মিঃশান্ত
.
শান্ত খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে হাতের ঘড়ির দিকে চেয়ে বললো”ওতো সময় নেই,আপনি তাড়াতাড়ি ব্যান্ডোজ করে দিন,আর তাহসিন এসব তুলা,রক্ত পরিষ্কার করে তুমি একটা ব্যাগে ভরে নিয়ে যাও,আহানা একটা ছোট খুঁত পেলেও সন্দেহ করবে,আমি চাই না ও জানুক
.
ওকে স্যার,বাট আপনি এটা তো হসপিটালে গিয়েও করতে পারতেন,এত দেরি হয়ে গেলো ট্রিটমেন্ট করতে
.
হুম পারতাম কিন্তু কথা হলো বিষয়টা মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাবে,আর আমি সেটা চাইনি,মা জানলে মা অনেক টেনসন করবে,সাথে আহানা তো আছেই,২ঘন্টা ধরে ফোন ধরিনি বলে কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছে,এসব দেখলে ওরে সামলানো কঠিন হয়ে যাবে
.
ওকে স্যার
.
এদিকে আহানা এসে হাজির,দরজায় নক করতে করতে বললো”কি ব্যাপার দরজা লাগালেন কেন আপনারা?”
.
শান্ত জলদি করে শার্টটা পরে নিলো
তাহসিন গিয়ে দরজা খুলতেই আহানা ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো”সব ঠিক আছে তো?”
.
জি ঠিক আছে,একটু খেয়াল রাখবেন উনার,আজ আমি আসি
.
ডাক্তার আর তাহসিন মূহুর্তেই উধাও,আহানা কিছু বুঝে উঠার আগেই ওদের ছিঁটেফোটা পর্যন্ত নিঃশেষ হয়ে গেলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে হাতে থাকা খাবারের ট্রেটা শান্তর সামনে রেখে মুচকি হেসে বললো”আজ আমি নিজের হাতে আপনাকে খাইয়ে দেবো”
.
আহানা প্লেট হাতে নিতেই শান্ত এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ করে
আহানা তো অবাক,এত অবাক যে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না
শান্ত ওকে শক্ত করে ধরে বললো”আমাকে ভালোবাসো তাহলে শেষমেষ বলেই ফেললা!”
.
আহানা মনে হয় লজ্জায় মরে যবে,লজ্জা এক সাইড করে তারপর বললো”খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে”
.
শান্ত আহানাকে ছেড়ে দিয়ে হা করলো আর আহানা নিজের হাতে ওকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো
শান্তদের বাড়িতে বিরিয়ানি বানিয়েছিলো সে কিন্তু এখন এ বাড়িতে যা পেয়েছে তাই নিয়ে এসেছে আহানা

খাওয়ানো শেষ করে আহানা হাত ধুয়ে রুমে এসে দেখলো শান্ত চাদর টেনে ঘুমিয়ে গেছে ততক্ষণে
আহানা তাই রুমের লাইটটা অফ করে বারান্দার সামনের পর্দাটা টেনে দিলো তারপর পা টিপে টিপে শান্তর একপাশে বসে চেয়ে থাকলো অনেকক্ষণ
আহানার ফোনটা ভাইব্রেশন করে রাখা,৫/১০মিনিট বাদে ওর ফোনে একটা কল এসেছে
আহানা ফোন কাছে রেখেছিলো বলেই টের পেয়েছে তার ফোন এসেছে
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো”আজকের ডোজটা আশা করি যথেষ্ট, এরপর বেশি উড়ার স্বপ্ন দেখো না”তারপর লাইনটা কাটা গেলো
.
আহানা ভাবনায় পড়ে গেছে যে আজকের ডোজ মানে কি বুঝালো,শান্তর তো জাস্ট প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছিলো,আর কিছু তো!
তারপর আহানার মনে কেমন যেন ঘটকা লাগলো,সে শান্তর দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো”এমন নয় তো যে উনি আমার থেকে কিছু লুকালেন?”
আহানা এগিয়ে এসে শান্তর হাত পা সব চেক করলো কিন্তু কিছুইও সন্দেহ করার মতন পেলো না তারপর ওর নজর গেলো শান্তর নীল শার্টটার দিকে
বুকের অংশে লাল দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে,অথচ এতক্ষণ এই দাগটা ছিলো না
আহানার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে
সে জলদি করে শান্তর গায়ের থেকে চাদর সরিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো
ততক্ষণে শান্ত ও জেগে গেছে,সে ঘুম থেকে হঠাৎ উঠে আহানা ঠিক কি করতে চাইছে তা সে বুঝতে পারলো না
এদিকে আহানা শার্টের বোতাম সব গুলো খুলে যা দেখলো তাতে তার মাথা ঘুরে উঠেছে
ব্যান্ডেজ করা তারপরেও ব্যান্ডেজ ছেদ করে রক্ত বেরিয়ে তা জ্বলজ্বল করছে
আহানা মুখ হাতে দিয়ে এক চিৎকার করে পিছিয়ে গেলো
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে ভাবতেছে সে এখন আহানাকে কি করে সামলাবে
আহানা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মুখে হাত দিয়ে রেখেছে
শান্ত বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে আসতে আসতে বললো”কিছু হয়নি আহানা,আই এম ফাইন”
.
এএএএসসসব!আপনি আমাকে জানালেন না কেন,কি করে হলো এসব?”
.
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চোখ মুছে দিয়ে বললো”কিছু হয়নি,দেখো না আমি এখন তোমার সামনে সেফলি দাঁড়িয়ে আছি”
.
রক্তের একটা ফোটা বুক থেকে বেয়ে শান্তর সারা শরীর বেয়ে নিচে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো
আহানা সেটা দেখে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে গেছে তারপর কোনোরকম কান্না থামিয়ে সে উঠে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে শান্তর ডাক্তারকে ফোন করে বললো জলদি আসতে
আহানার কান্না থামছেই না,সে কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না ঠিক
শান্ত বিছানার এক কোণে দুপাশে দুহাত রেখে পা ঝুলিয়ে ফ্লোরের দিকে চেয়ে আছে
আহানা তুলা খুঁজতে ব্যস্ত,সাথে কান্না তো আছেই
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সে বলছে”যা হয়েছে সব তার দোষে হয়েছে,তার আর তার মায়ের সম্পত্তি শান্ত মজনুর থেকে নিয়ে নেওয়ায় আজ তাকে এত বড় বিপদে পড়তে হলো”
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”এটা মজনুর কাজ নাও হতে পারে,যারা এটাক করেছিলো তাদের আমি চিনি না,আর কার দ্বারা তো কোনো বিপদ হয়নি,হঠাৎ কারের সামনে এসে ওরা পথ আটকিয়েছিলো
বেশি ক্ষতি তো করতে পারেনি,
.
আহানা আবারও চোখের পানি মুছে তুলা এনে হাঁটু গেড়ে শান্তর সামনে বসে তুলাগুলো শান্তর বুকে চেপে ধরে নাক টানতে টানতে বললো”আপনার কিছু হলে আমি এমনি এমনি মরে যাবো”
.
কিছু হয়নি,আমি একদম ফিট আছি,তুমি এত টেনসন করো না আহানা
.
আহানা হাত পা ছড়িয়ে আবারও কেঁদে ফেললো,কোথায় হাই প্রেসার আর কোথায় বুকে ছুরির আঘাত
আকাশ পাতাল তফাৎ সব
আর আমি কিনা এখন জানলাম,সব আমার কারণে হয়েছে
আহানা ফ্লোর থেকে উঠে শান্তর পাশে বসে ওর বুকে হাত রেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে,লাল রক্ত, লম্বা একটা দাগ,না জানি শান্তর কত কষ্ট হচ্ছে,এই ক্ষতটা দীর্ঘমেয়াদি না তো?
উনি সুস্থ হয়ে যাবে তো??
.
শান্ত গম্ভীর একটা লুক নিয়ে আহানার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,আহানা মনে হয় আধমরা আর পুরা পাগল হয়ে গেছে
বুকে শান্তর শার্ট জড়িয়ে কাঁদতেছে সে যেখানে সয়ং শান্ত ওর সামনে বসা
তার উপর কান্না কিছু থামলে শান্তর বুকের ক্ষতটার দিকে চেয়ে আরও ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দেয় সে
শান্ত বিরক্ত হয়ে আহানার হাত থেকে ছোঁ মেরে শার্টটা নিয়ে পরতে লাগতেই আহানা বললো”পরবেন না,ক্ষতটা শার্টের সাথে লাগলে আরও ব্যাথা পাবেন”
.
তো?বসে বসে তোমার কান্না দেখার চেয়ে এটা মাচ বেটার
.
আচ্ছা কাঁদব না,তাও শার্ট পরিয়েন না
.
কথাটা বলে আহানা শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিলো
শান্ত হালকা হেসে আহানাকে কাছে টেনে বসিয়ে ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো”আহানার কান্নার জোরে আমি ফাইন”
.
আহানা তার ভেতরের কষ্টটা চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না,খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু শান্ত যে রেগে যাবে এই ভেবে সে বারবার ঢোক গিলে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে
শান্ত ভাবলো আহানা বুঝি এসময়ে তাকে কাছে পেতে চাইছে
শান্ত আহানার খোলা চুলগুলো মুঠো করে ধরলো
আহানার সেদিকে খবর নেই,সে ড্যাবড্যাব করে শান্তর বুকের ক্ষতটার অবস্থান চেক করে যাচ্ছে
শান্ত আহানার ঠোঁটজোড়ার দিকে এতক্ষণ চেয়েছিলো এখন যখন আহানা নিজ থেকে সাঁই দিচ্ছে,আজ কিস করলে নিশ্চয় চড় খাবো না?
বাইরে হালকাপাতলা বৃষ্টি,মেঘ কালো বলে অন্ধকার নেমে এসেছে চারিদিক জুড়ে
শান্ত তার মাথাটা এগিয়ে আহানার ঠোঁটজোড়ার খুব কাছে নিয়ে আসলো
আহানা এবার ক্ষত জায়গাটার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই শান্তর নাকের সাথে ওর নাকে এক ঘষা খেলো
ঠিক এসময়ে এসব আহানা কল্পনাও করতে পারেনি
এমনকি শান্ত ঠিক কি কারণে তার মুখটা এত কাছে এনেছে তা আহানার ভাবনার বাইরে
এ অবস্থায় সে কিস নিয়ে ভাবতেই পারে না কিন্তু শান্ত যে ভেবে নিয়েছে তা আহানা জানে না
শান্ত চোখ বন্ধ করে আহানকে ছুঁতে যেতেই দুম করে এক চড় খেয়ে এই জনমে কিস করার সাধ মিটে গেলো তার
গালে হাত দিয়ে পিছিয়ে খাটের সাথে লেগে গেলো সে
আহানা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো”এ অসময়ে আপনার কিস পায়???থাবড়িয়ে দাঁত সব ফালায় দিব!ভালোবাসি বলছি মানে এই নয় যে আজকেই কোলে বাচ্চা এনে দেবেন
বেয়াদব একটা!!আমি কাঁদতে কাঁদতে মরে যাচ্ছি উনি আসছেন কিস করতে!আমার ইমোশনকে রোমান্স বানাতে চান উনি!আপনি সিক বলে জাস্ট চড় মারলাম,নাহলে হাড্ডি সব! থাক আর বললাম না,চুপ করে বসে থাকুন এখানে,ডাক্তার না আসা অবদি আমি আপনার সামনেও আসবো না,কতটা খারাপ মাইন্ডেড হলে মানুষ এরকম একটা সময়ে কিস করতে চাবে”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা সোজা রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের কাছে চলে গেছে
শান্ত গালে হাত দেওয়া অবস্থায় আয়নার দিকে তাকালো
তাকে সদ্য জেল থেকে বের হওয়া কয়েদির মতন লাগছে
এরকম অবস্থা দেখে সে সাথে সাথে গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো তারপর চুপ করে বসে থাকলো,মনে মনে এটা ঠিক করলো আহানাকে আর জিন্দেগিতেও ছুঁবে না সে,তাকাবেও না
ওদিকে আহানা সোফায় পা তুলে বসে রাগ করবে নাকি শান্তর বুকের ক্ষতটার কথা ভেবে কাঁদবে তা সে ভেবে পাচ্ছে না,বিরাট একটা ভাবনায় পড়ে গেলো সে
২/৩মিনিটেই ডাক্তার এসে হাজির,আহানা বিচলিত হয়ে বললো”শান্তর বুক থেকে রক্ত যাওয়া অফ হচ্ছে না কিছুতেই, কি করা যায়?”
.
ডাক্তার আহানাকে চিন্তা করতে মানা করে রুমে এসে শান্তর ক্ষতটা চেক করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন
এদিকে রিপা আহানাকে বারবার ফোন করছে এটা জানার জন্য যে আহানা আর শান্ত দুজনের একজনও কেন বাসায় নেই,মা অনেক দুংশ্চিন্তা করছেন
.
আহানা শেষে কল রিসিভ করে বললো একটা কাজে এসেছে সে তার মায়ের বাসায়,সাথে শান্ত ও এসেছে,মাকে বলে দাও যেন চিন্তা না করে
.
ডাক্তার শান্তকে একটা ইনজেকশান দিয়ে আবারও ড্রেসিং করে দিয়ে চলে গেছেন
আহানা দূর থেকে শান্তকে দেখছে
শান্ত ডাক্তার চলে যাওয়ায় শুয়ে পড়েছে আবার,আহানা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাসলো,কেন যে আজ চড় মারলাম!
মাঝে মাঝে কি হয় বুঝি না আমি,বেচারা মনে হচ্ছে উনাকে এখন,ইস!
আহানা আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে শান্তর পাশে বসতেই শান্ত বুঝতে পেরে আরেক দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো
আহানার বুঝতে বাকি নেই যে শান্ত রাগ করেছে,রাগ করারই কথা,কিস করতে গিয়ে এই নিয়ে দুবার চড় খেলো আবার বিয়ের দিন ও চড় খেয়েছিলো
খালি চড় আর চড়
.
আহানা নিজেকে নিজেই বকতে বকতে বিছানা থেকে উঠে বেরিয়ে চলে আসলো
সন্ধ্যায় কয়েকবার গিয়ে শান্তকে সে দেখে এসেছে,ইঞ্জেকশানের প্রভাবে শান্ত বেঘোর ঘুমাচ্ছে
শেষে ডিনারের সময় হওয়ায় আহানা শান্তর কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো”শান্ত?”
শান্ত মুখ তুলে এমনভাবে তাকালো আহানার দিকে যেন এখনই কাঁচা খেয়ে ফেলবে
আহানা ভয়ে ভয়ে বললো”ভাইয়া!ডিনার টাইম হয়ে গেছে,উঠে বসুন,আমি খাবার আনছি”
.
শান্ত ঠিক হয়ে বসে গম্ভীর গলায় বললো”আমি এখন আমার বাড়ি ফিরে যাবো,এখানে থাকতে আমার ভালো লাগছে না,তোমার পার্সোনাল রুমে টিভি নাই তার উপর বারান্দায় বিন ব্যাগ ও নাই,আমি কম্পোর্টেবল ফিল করছি না
কথাটা বলে শান্ত শার্ট পরতে লাগলো
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো”আমি যাব না?”
.
শান্ত বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো”তোমাকে তো যেতে মানা করি নাই আমি”
তারপর শান্ত আরেকটা লাইন বললো গালের ভেতর রেখে,তার পুরোটাই আহানা বুঝলো,
আসলে আহানা যেন কথাটা শুনে সেরকম করেই বলেছে শান্ত
আর সেই কথাটা ছিলো”বউ হইছে প্রেম পিরিতের টাইমে চড় মারার জন্য”
.
আহানা কাঁদো কাঁদো মুখ করে শান্তর পিছু পিছু গিয়ে কারে উঠে বসেছে,শান্ত গালটা এখনও ফুলিয়ে রেখেছে
.
বাসায় আসতে আসতে প্রায়ই ১৫/২০মিনিট লেগেছে
শান্ত বাসায় ফিরে সবার আগে মায়ের রুমে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর তার সাথে কিছু কথা বলে মুড ঠিক করে রুমে ফিরে আসলো
আহানা ডাইনিংয়ে খাবার আনতেছে এক এক করে
শান্ত তার গায়ের শার্টটা চেঞ্জ করে একটা টিশার্ট পরে নিয়েছে
তারপর বিছানায় বসে টিভিটা অন করলো
আহানা করিডোর দিয়ে পা টিপে টিপে এসে দরজার কোণায় পুতুলের মতন কোনো শব্দ না করে, কোনে নড়াচড়া না করে ঠাঁই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে
শান্ত বুঝতে পেরেছে আহানা সেখানে তাও সে সেদিকে তাকাচ্ছে না ইচ্ছে করেই
আহানা প্রায়ই অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে যখন দেখলো শান্তর কোনো সাড়াশব্দ নেই তখন সে এগিয়ে এসে বললো”ডিনার করবেন না?”
.
শান্ত টিভির দিকে চোখ রেখেই বললো”খিধা পেলে গিয়ে খেয়ে আসবো,তোমায় এত টেনসন নিতে হবে না”
.
আহানার খুব কান্না পাচ্ছে,জাস্ট চড়ই তো মেরেছি তাই বলে এত রাগ দেখাবে?উনিও তো আমাকে চড় মেরেছিলেন সেটার কি হবে?আমি কি সেটা মনে ধরে বসে ছিলাম?সেই কবেই সব ভুলে গিয়েছি
.
আহানা নাক টানতে টানতে বারান্দায় থাকা বিন ব্যাগটায় গিয়ে বসলো,বিন ব্যাগের সামনের টি টেবিলটার উপর একটা গ্লাস আর একটা পার্পল কালারের বোতল
গোলগাল বোতল,দেখে জুসের বোতলই মনে হচ্ছে, তার উপর বড় বড় করে লিখা আছে “রোজ এ্যাপল ফ্রেভার”
আহানার জাম অনেক পছন্দ,কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গেছিলো বলে সে আর দেরি না করে সেই জামের জুসটা গ্লাসে ঢেলে ঢকঢক করে খাওয়া শুরু করে দিলো
.
শান্ত ভাব ধরে থাকলেও তার নজর ছিলো সম্পূর্ণ আহানার উপরেই,তাই যখন সে আড় চোখে দেখতে পেলো আহানা কি যেন খাচ্ছে সাথে সাথে তার মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগে সে একটা বিয়ারের বোতল টি টেবিলটার উপরে রেখে এসেছিলো,আহানার থেকে পাওয়া চড়টার স্মৃতি ভুলার জন্য মদটা খাবে সে ভেবে রেখেছিলো আর সেটা কিনা এখন আহানা খাচ্ছে???
শান্ত লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে সেদিকে দৌড় দিলো
সে আসতে আসতে আহানা পুরো বোতলের মদ সাবাড় করে দিয়েছে
এখন আবার বোতলটা উল্টো করে ঝাঁকাচ্ছে আরেকটু জুস পাবার আশাতে
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আহানার মুখের দিকে তাকালো
চোখ ঘোলাটে হয়ে গেছে তার
তার উপর দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে সে শান্তর দিকে
শান্তর আর বুঝা বাকি নাই যে আহানাকে পুরোপুরি নেশায় ধরেছে
আল্লাহ জানে!! এই মেয়েটা নেশার মধ্যে আমাকে আর কত চড় মারবে!! এখন এই মেয়েটাকে কি করে সামলাই!
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে রুমে ফিরে আসলো,বিছানার মাঝখানে বসে ভাবতে লাগলো আহানা এবার চড় দিতে আসলে ওরেও চড় দিয়ে বসিয়ে রাখবো আমি
.
মিনিট পাঁচেক পর আহানা বারান্দা থেকে হেলেদুলে আসলো এদিকে, হাতে মদের খালি বোতলটা
.
আহানা হেঁটে হেঁটে শান্তর পাশে এসে দুম করে বসে গেলো
তারপর বোতলটা একপাশে রেখে বললো”এই শান্ত ভাইয়া,আমাকে আরেকটা জুসের বোতল এনে দাও”
.
রিপা!!!রিপা!!লেবুর শরবত এক গ্লাস দিয়ে যাও,চিনি দিবা না তাতে,এক চিমটি লবণ দিবা
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আমি বললাম এরকম জুস,রোজ এ্যাপেল ফ্লেভারের,লেমন জুস তো চাইনি
.
সে যাই হোক,চুপ করে বসে থাকো,বেশি কথা বলবা না
.
আহানা তার ঠোঁটজোড়ার মাঝ বরাবর নিজের হাতের আঙ্গুল একটা দিয়ে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে থাকলো
শান্ত নিশ্চিন্ত হলো এই ভেবে যে আহানা সজ্ঞানে না থাকার সত্ত্বেও তাকে চড়টড় মারে নাই এখনও,কথা ক্লিয়ার আর মারবেও না
সে তো ভেবেছিলো এতদিনের চাপা সব রাগ আজ ঝাড়বে
.
আহানা এবার ঠোঁট থেকে আঙ্গুল সরিয়ে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসলো,একেবারে শান্তর গা ঘেঁষে
তারপর শান্তর গালটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে অসহায় একটা লুক নিয়ে বললো”ব্যাথা পেয়েছো ভাইয়া??খুব লেগেছে?”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে মনে মনে ভাবলো”আহানা এরকম ভাইয়া ভাইয়া বলছে কেন?মনে মনে আমাকে ভাইয়া মনে করে নাকি?”
.
আহানা হুট করে মুখটা এগিয়ে এনে শান্তর ঠোঁটটা ছুঁয়ে ফেললো
শান্তর চোখ ছিলো টিভিতে,আহানার এমন কান্ডকলাপে তার হাত থেকে রিমোট পড়ে গেলো সাথে সাথে
রিপা লেবুর জুস এনে দরজার কাছে এসে এই কান্ড দেখে পালিয়েছে,আর দাঁড়াইনি
শান্ত চোখটা এবার আহানার দিকে ফিরালো
আহানা সাথে সাথে একটু পিছিয়ে গিয়ে ঠোঁটটা হাতের উপরের পিঠ দিয়ে মুছতে মুছতে বললো”যাও,কিস কিস করে চড় খাইলা বারবার তাই দিয়েই দিলাম যাও,এবার খুশি তো তুমি শান্ত ভাইয়া?”
.
শান্ত ভূত দেখার মতন মুখ করে বসে আছে,দম বন্ধ হয়ে গেছে তার,আহানা বিছানা থেকে নেমে হেলেদুলে ওয়াসরুমে চলেও গেছে অথচ শান্ত এখনও একই জায়গায় বসে আছে
আমি কিস করতে চেয়েছিলাম বলে দুবার চড় খেলাম,আর সে মদ খেয়ে নিজ থেকেই করে দিলো!
না জানি হুস আসলে আমার কপালে কত চড় লেখা থাকবে,আমি তো ওকে বলিনি যে কিস করো,নিজ থেকেই তো করলো,কি জানি এই মেয়েটার হাবভাব একেক টাইমে একেক রকম হয়
.
আহানা মুখটা ধুয়ে মাথায় হাত দিয়ে এসে বিছানার এক কোণায় শুয়ে পড়লো,শান্ত ওর এমন হাল দেখে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে এসে দেখলো লেবুর শরবত বানিয়ে সেটা এক পাশে রেখেছে রিপা
এখন সে তার কাজ করছে
.
কি ব্যাপার রিপা?লেবুর শরবত বানানো হয়েছে,দিয়ে আসলা না কেন?
.
ইয়ে স্যার আসলে ঐ সময়ে আপনাদের দরজা খোলা ছিলো আর আমি…
.
শান্তর গাল লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেছে, লেবুর শরবতের গ্লাসটা নিয়ে সে রুমে ফিরে আসলো আর কিছু না বলে,
আহানা আজ ইজ্জতের ফালুদা করে দিয়েছে আমার
শান্ত রুমে এসে দেখলো আহানা মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে শুয়ে ওর মাকে ডাকছে
শান্ত কাছে এসে বললো”নাও এই শরবতটা খেয়ে নাও,”
.
আহানা শুধু বললো সে খাবে না,তার শরীর খারাপ লাগছে
.
শান্ত আহানার হাত দুটো ওর মাথা থেকে সরিয়ে মাথায় হাত রেখে দেখলো ধুম জ্বর,হঠাৎ করে এসময়ে জ্বর আসলো কি জন্যে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে,তাড়াহুড়ো করে পাশ থেকে চাদরটা নিয়ে আহানার গায়ে জড়িয়ে দিলো শান্ত তারপর আহানার কথাবার্তায় বুঝলো মদের নেশা কেটে গেছে,সুতরাং শরবত না খেলেও চলবে
.
কি ঝামেলা!একদিনে সব ওলট পালট করে ফেললো মেয়েটা!
আজ দুপুর বেলায় বৃষ্টিতে ভিজেছিলো খুব তাই হয়ত এত জ্বর এসেছে
আমার বুকের ব্যাথার ভেতর এখন তার সেবা করতে হবে আমায়
শান্ত আবার রান্নাঘরের দিকে ছুটলো,এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে এসে আহানাকে ডেকে তুললো সে,তারপর নিজের হাতে ওকে খাইয়ে দিলো,দুপুরবেলায় আহানা ওকে খাইয়ে দিয়েছিলো আর এখন সে আহানাকে খাবার খাওয়াচ্ছে
কত মিল,কত কো-ইন্সিডেন্স
.
আহানা খাবার খেয়ে এবার ঔষুধ খেয়ে নিলো তারপর শান্তকে বললো”আপনি খেয়ে নিয়েন”
কথা শেষ করে আহানা শুয়ে পড়েছে আবার,আর কোনো কথা বলার ইচ্ছা তার নেই,শরীর খারাপ লাগছে প্রচণ্ডরকম ভাবে
শান্ত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিশে ফিসফিস করে বললো”যদি চড় না মারো,জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়াতে পারি?”
.
আহানা মুচকি হেসে শান্তর দিকে ফিরলো,শান্ত ওকে বুকে আগলে ধরে নিজেও শুয়ে পড়লো পাশে
আহানা একটু দূরত্ব রাখলো শান্তর থেকে,কারণ না হলে শান্তর বুকের ক্ষতটায় চাপ লেগে ও ব্যাথা পেতে পারে
.
আহানা যখন ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক তখনই শান্ত ওকে রেখে বিছানা থেকে নেমে গেছিলো
তারপর গিয়ে মায়ের আর নিতুর সাথে বসে ডিনারটা করে নিলো,মাকে বললো আহানার জ্বরের কথা,তাই মা এসে আহানাকে একবার দেখে গেছেন
রাত পনে ১২টা বাজে,সবাই ঘুমে
আহানাও ঘুমে,কিন্তু শান্ত জেগে আছে,নিজের ঠোঁটটা ডান হাতের উপর এলিয়ে রেখে বিন ব্যাগে বসে এক দৃষ্টিতে সে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে,বাউন্ডারির পাশে থাকা ল্যাম্পপোস্টটার আলো এসে বরাবর গিয়ে আহানার মুখে পড়ছে
শান্তর কেমন একটা ভালোলাগা ফিল হচ্ছে এখন,আহানার থেকে পাওয়া প্রথম স্পর্শটাকে সে ভুলতেই পারছে না
আচ্ছা আহানার কি মনে আছে?
নিশ্চয় মনে নেই?কিন্তু আমার তো সেই সময়টা হুবুহু মনে আছে
ভাবতেও পারিনি মেয়েটা আজই আমার ইচ্ছাটা পূরন করে দিবে
শান্ত এবার আহানার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আরেকটা ভাবনায় এসে পড়লো আর সেটা হলো যেহেতু সব সম্পত্তি এখন আহানার নামে মজনু চাচা আহানার কোনো ক্ষতি করে বসবে না তো??
আহানা তো বাসায় একা থাকে,রিপা সারাদিন মাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে,নিতু স্কুলে থাকে,আহানার যদি কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে কেউ?
না যে করেই হোক কোনো না কোনে একটা স্টেপ আমাকে নিতেই হবে,শুধু যে আহানার লাইফ রিস্ক আছে তা কিন্তু নয়,তার সাথে ওর আম্মু,ওর খালা এমনকি আমার পরিবারের ও লাইফ রিস্ক আছে
মোটকথা আমার পুরো পরিবার রিস্কে
ভাবতে ভাবতে শান্ত বারান্দা থেকে চলে এসে পর্দা টেনে দিলো তারপর আহানার জ্বরের পরিমাপ চেক করে ওর পাশে শুয়ে পড়লো সে
আহানা হাত নাড়াচাড়া করছে বারবার,যার কারণে চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ ভেসে আসছে
শান্ত ওর পাশ দিয়ে হাত নিয়ে ল্যাম্পশ্যাডটা অন করে দেখলো আহানার হাতের চুড়ির সাথে ওর চুল আটকে গেছে আর সে ঘুমের ঘোরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে
শান্ত আরেকটু এগিয়ে এসে আহানার চুলটা ছাড়িয়ে দিলো ওর হাতের চুড়িটা থেকে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৫১+৫২+৫৩

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আপনার সমস্যা কি বলুন তো??এভাবে সবসময় আমাকে ঘুম থেকে হুটহাট তুলে ফেলে আপনি কি শান্তি খুঁজে পান?
.
অনেক শান্তি পাই,খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করে তোমার এই রাগী লুক দেখলে
.
অসভ্য লোক একটা,কিসের জন্য উঠিয়েছেন সেটা বলুন
.
আমার ঘুম আসছে না
.
তো?আমার তো আসছে
.
কিন্তু আমার তো আসছে না, তাই তুমি আমার সাথে জেগে থাকবা,আমরা গল্পগুজব করবো,নিউলি হ্যাপি ম্যারিড কাপলের মতন
.
তাই বুঝি,তা কি কি টপিক থাকবে তাতে?একটু শুনি
.
এই যে তোমার কোনো রোগ আছে কিনা রোমান্টিক মুডে তোমার থাপড়াইতে মন চায় অলওয়েজ তাই এটা তো একটা রোগ
.
হোয়াট!
.
তাই নয়ত কি!প্রথমবার কিস করতে যাওয়ায় যে চড়টা খেয়েছিলাম জীবনেও তো ভুলবো না আমি
.
ভুলতে বলছি নাকি,ওমন ভাবে স্মরনীয় করে দিসি যাতে জীবনেও না ভুলেন
.
আচ্ছা আচ্ছা,আর আমি যে চড় মেরেছিলাম ভুলে গেছো?
.
হুহ!
সরুন তো,হাত ছাড়ুন,আমি ঘুমাবো
.
তা হচ্ছে না,গল্প করো নয়ত ঝগড়া,আমার ঘুম আসতেছে না
.
আচ্ছা তো আপনি শুরু করেন,আমার মাথায় কিছুই আসতেছে না
.
ওকে তাহলে ছোটবেলায় কি কি করছিলাম ওসব নিয়ে কথা বলি
.
ঠিক আছে
.
আমি যে জামা পরতাম তুমি সেই জামা পরতে চাইতা আর সে কারণে আমাদের সব ফ্যামিলি ফটোতে কেউ তোমাকে আমার পাশে দেখলে বলতো আমার টুইন ভাই
.
আচ্ছা তাই??কিন্তু আম্মু তো আমাকে অন্য কথা বললো
.
কি বললো?
.
বললো আপনি নাকি ইচ্ছে করে আমাকে আপনার জামা পরিয়ে দিতেন,আপনি চাইতেন আমাদের দুজনকে সেম সেম লাগুক
.
কে বলেছে,আন্টি সত্যিটা তাহলে জানে না,সত্যিটা তো আমি জানি
.
ওসব বাদ,এবার বলেন আপনার ঐ ক্রাশের কথা,যে আপনার বিয়ের দিন বিয়ে করেছিলো
.
সে তো ছিলো অত্যন্ত কিউট,অত্যন্ত শয়তান,অত্যন্ত দুষ্টু,অত্যন্ত কিপটা
.
সব অত্যন্ত?
.
শান্ত আহানার থুঁতনি ধরে টেনে বললো”আর সে ছিলো অত্যন্ত মিষ্টি,জাস্ট!!!!!. ”
.
জাস্ট কি?
.
কিছু না,তুমি বুঝবা না
.
কেন বুঝবো না আমি?
.
বুঝার হলে এতদিনে তোমার কোলে আমার বাচ্চা থাকতো
.
আজিব তো,বিয়ে হয়েছে ১২/১৪দিন হয়েছে,এ কদিনে আমি আপনার বাচ্চার মা কেমনে হতাম আবার কোলে নিয়েও বসে থাকতাম?
.
বললাম তো তুমি বুঝবে না তাই তো এসব আর বলতে চাইছি না
.
ওকে তাহলে ওদিকে তাকান
.
শান্ত পিছন ফিরে বারান্দার দিকে তাকালো,কিন্তু কিছুই দেখলো না,তারপর আবার সামনে চেয়ে দেখলো আহানা ভালো মানুষের মতন কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়েছে
.
এই তুমি আমাকে বোকা বানিয়ে আবার শুয়ে পড়লে,উঠো
.
আহানা আদো আদো ভয়েসে বললো”রাত ২টা বাজে,ঘুমান আর আমাকেও ঘুমাতে দিন,”
.
শান্ত আর কি করবে,লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে সে
আহানার দিকে তাকাতে তাকাতে তারও ঘুম এসে গেছে
সকালে যখন সে উঠলো তখন মনে হলো তার যে সে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে
একটা লাল পরী তার সামনে ঘুরঘুর করছে
চোখটা একটু ডলে সে শোয়া থেকে উঠে বসে আড়মোড়া ভেঙ্গে আবারও তাকালো সেদিকে
লাল পরীটা পাশে থাকা আলাদা বেডটায় উঠে দাঁড়িয়ে সেটার সামনের পর্দা সরিয়ে কোমড়ে হাত রেখে নিচের দিকে তাকালো,তারপর লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে সে ব্যাগটা খুললো,কোমড়ে হাত এখনও
চুলগুলো তার নড়াচড়ার সাথে সাথে হেলেদুলে যাচ্ছে
তার থেকে ফোটায় ফোটায় পানি পড়তেছে,একবার ফ্লোরে তো একবার বিছানায় তো একবার শান্তর গায়ে
শান্ত হা করে লাল পরীটাকে দেখে যাচ্ছে,আশেপাশের দিকে তার কোনো মন নেই
লাল পরীটা হলো আহানা,ঘুম থেকে উঠে ভালো লাগছিলো না বলে গোসল করে নিয়েছিলো সে,তারপর লাল নীল আর সবুজের মাঝ থেকে লাল শাড়ীটা বেছে পরে নিয়েছে সে
শান্ত এখনও ওকে দেখছে,কি সুন্দর,এতদিন এই সৌন্দর্য্য কোথায় লুকিয়ে ছিলো নাকি আমিই দেখিনি
.
আহানা একবার এক কাজ করছে,একবার ব্যাগে ইউজ করা শাড়ী ভরছে তো একবার নতুন কি পরবে সেটা বের করছে
তার চুল থেকে পানি পড়তে পড়তে ফ্লোর পিচ্ছিল হয়ে গেছে অলরেডি
আহানা আবারও আরেকটা কাজে বারান্দার দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দুম করে পড়ে গেলো পিচ্ছিল জায়গাটায় পা রেখে
শান্ত এবার তার ক্রাশ খাওয়া থেকে বেরিয়ে এসেছে,এভাবে রোমান্টিক মুডে পড়ে গিয়ে আহানা প্রমাণ করলো সে আসলে কোনো লাল পরী নয় সে হলো মিসেস আহানা
আহানা ব্যাথা পেয়ে কোমড়ে হাত বুলাচ্ছে,হঠাৎ কারোর খিলখিল হাসির আওয়াজে মুখ তুলে সে বিছানার দিকে তাকালো,শান্ত বালিশে হেলান দিয়ে বসতে বসতে হাসতেছে অনবরত
.
আহানা ব্রুটা কুঁচকিয়ে বললো”এটা কেমন কথা??আপনার বিয়ে করা বউ পড়ে গিয়ে কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছে আর আপনি কিনা আমাকে না তুলে হেসেই যাচ্ছেন?এটাতে হাসির কি হলো বুঝলাম না আমি”
.
শান্ত ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকেছে তারপর আহানার কথাটা শুনে বললো”ঢং করে ভেজা চুলের পানি দিয়ে ফ্লোর ভালোই পরিষ্কার করেছো আবার সেটাতে পড়েছো এখন আমি হাসবো না তো কি করবো?”
.
নাচেন!
.
আহানা ফ্লোর থেকে উঠে হনহনিয়ে বাথরুমে গিয়ে হাতটা ধুয়ে আবারও এসে বললো”আজ ঢাকায় ফিরবেন নাকি আজও আমাকে জ্বালানোর জন্য সাজেকেই থেকে যাবেন?”
.
আজই ফিরবো,আমার অফিসে অনেক কাজ
.
তাহলে আমি সব ব্যাগে পুরে নিচ্ছি,নাস্তা কপালে জুটবে নাকি শুধু বাঁশ চা?
.
আরে না না,আমার অত্যন্ত কিউট একটামাত্র বউ,বিরিয়ানি খাওয়াবো,চলো
.
অত্যন্ত বলবেন না,ওটা আপনার প্রেমিকার জন্য রাখা নাম,আমার জন্য না
.
ওহ,জেলাস হচ্ছো নাকি?
.
না তো কিসের জেলাস,সে এখন বিয়ে করে তার স্বামীর সাথে হানিমুনে ইনজয় করছে তাহলে আমার জেলাস হওয়ার প্রশ্নই আসছে না
.
ইনজয়??আর সে??মা গো মা
.
কেন?ইনজয় করবে না তো কি আমার মতন আপনার সাথে ঝগড়া করবে খালি,আমি সিউর উনি এখন তার জামাইকে নিয়ে সুইট মোমেন্ট ইনজয় করছেন
.
হুম হুম বহুত সুইট,লাইভ দেখছি কিনা,সুইট এন্ড সাওয়ার
.
লাইভ মানে?
.
না মানে কই লাইভ,কি উল্টা পাল্টা শুনো,যাও সব প্যাক করে নাও,নাস্তা করে রওনা হবো ঢাকার জন্য
.
আচ্ছা
.
আহানা সব রেডি করে নিয়ে ব্যাগ হাতে নিলো ততক্ষণে শান্ত ও ফ্রেশ হয়ে এসেছে
.
আহানা শান্তর হাতে ব্যাগ বুঝিয়ে দিয়ে চুল গুলো টেনে খোঁপা করতে করতে চুলের কাঠিটা খুঁজতে লাগলো এদিক ওদিক
শান্ত পিছন ফিরে সামান্য মুচকি হেসে বললো”ঐ চুল বেঁধো না,স্বাধীন রেখে দাও”
.
অত্যন্ত সুন্দর না তো!!!
.
আমি কি বলছি সুন্দর?একদম পেত্নির মতন লাগে তোমাকে
.
আহানা রেগে গিয়ে চুলগুলো ভালো করে বেঁধে বেরিয়ে গেলো সোজা
শান্ত ও আসলো পিছু পিছু,দুজনে কোনোরকম নাস্তাটা সেরে কারে এসে বসেছে
আহানা জানালাটা খুলে সাজেকের রিসোর্ট গুলোর দিকে একবার চেয়ে রইলো তারপর বললো”আবারও আনিয়েন আমাকে,জায়গাটা অনেক ভালো”
.
আনবো,সময় করে,এখন আপাতত সময় একদমই নেই বললে চলে
.
আহানা জানালায় হাত রেখে তার উপর মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,সবুজ সব গাছগাছালি দৌড়াচ্ছে নাকি আমাদের গাড়ী??
চিকন পথটা একবার উপরে উঠছে তো একবার নিচে নামছে,এটা ঠিক তখনই বোঝা যায় যখন দূরের পথটার দিকে তাকাই তা না হলে আমরা কত উঁচুতে উঠতেছি আর কত নিচুতে নামছি তা বুঝাই যায় না একেবারে
দুপাশে সবুজ আর সবুজ,এখানে সারাজীবনের জন্য থেকে যেতে পারলে ব্যাপারটা বেশ হতো
.
শান্ত কার ড্রাইভ করতে করতে বাম হাত দিয়ে আহানার হাতের কুনুই ধরে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে বললো”আরও বের হয়ে থাকতা জানালা দিয়ে যেন পাশ দিয়ে কোনো গাড়ী ক্রস করে যাওয়ার সময় বাড়ি দিয়ে মাথাটা সাথে করে নিয়ে যেতে পারে
.
নিবে না,ভালোই লাগছিলো ,দিলেন তো ভালো লাগায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে?
.
বকবক না করে চুপ করে থাকো,এই যে এখান দিয়ে দেখো যত সিনারি দেখার,ওতো রিস্ক নিয়ে দেখতে হবে না
.
আহানা মুখ গোমড়া করে হাত ভাঁজ করে সামনের দিকে চেয়ে থাকলো,পুরোটা সময় শান্ত ওকে নড়তেও দেয়নি,জানালা থেকে মনে হয় এক কিলোমিটার দূরে রেখেছে ওকে,জোর করেই
বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেছে
আহানা আজ প্রথম তার শশুড় বাড়িতে শান্তর বউ হিসেবে থাকবে,তার আলাদা একটা ফিলিংস কাজ করতেছে মনের ভেতর
আহানা কার থেকে নামতেই নিতু দৌড়ে আসলো,আহানা ওকে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেছে
শান্ত ও আসতেছে ফোনে কথা বলতে বলতে
আহানা গিয়ে শান্তি রহমানকে সালাম করলো তারপর জড়িয়ে ধরে উনার পাশে গিয়ে বসলো সে
উনার চোখে মুখে হাসি,খুশি আর ধরে না
নিতু সাজেকে তোলা পিক দেখতে চাচ্ছে,শান্ত বললো সে ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে দিলে তারপর দেখতে পারবে
এদিকে রিপা দৌড়ে এসে বললো শান্ত যেন রুমে না ঢুকে
শান্ত থেমে গিয়ে কপাল কুঁচকে তাকালো রিপার দিকে
রিপা দাঁত কেলিয়ে বললো রুমটায় একটা সারপ্রাইজ আছে আর সেটা যেন শান্ত আহানা দুজনে মিলেই দেখে
আহানা তো সারপ্রাইজের কথা শুনে এক পায়ে খাড়া
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো তার রুমের দিকে
আহানাও চললো সেদিকে
শান্ত দরজা খুলতে যেতেই আহানা তার আগে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো”সারপ্রাইজ আগে আমি দেখবো,লেডিস ফার্স্ট,ওকে?”
.
ওকে ম্যাডাম,দেখেন আবার কি না কি রাখছে,সাবধান বোম টোম থাকতে পারে
.
আহানা দরজা খুলতেই হা করলো,কিছু নাই,পুরো রুম অন্ধকার
শান্ত হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকে লাইটটা অন করতেই যা দেখলো তাতে দুজনেই অবাক
পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো
বেলি আর গোলাপ!
আহানা তো ঘুরে ঘুরে দেখতেছে,রিপা শান্ত আর আমার জন্য বাসর সাজিয়েছে??
.
শান্ত মুখটা বাঁকিয়ে বললো”বিয়ের ১৪দিন পর বাসর?হাউ ফানি!”
.
আহানা মুচকি হেসে বিছানায় বসে বললো”আফসোস এবারও আমরা খালি ঝগড়াই করবো,হুদাই বাসর সাজিয়েছে”
.
রাইট!
.
শান্ত আলমারি খুলে একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেছে
আহানা একটু শুতেই ওর মনে হলো শান্ত বলেছিলো তার আলমারিতে তার প্রেমিকার একটা ছবি আছে
দেরি না করে আহানা আলমারির সামনে গিয়ে হাজির হলো,ওয়াসরুমের দিকে একবার তাকিয়ে পরোক করে নিয়ে আলমারিটা খুললো সে
তন্নতন্ন করে সব তাকেই দেখলো কিন্তু জামা ছাড়া আর একটা ফটো ফ্রেম ছাড়া কিছুই পেলো না
ফটো ফ্রেমটায় তার আর শান্তর ছোটবেলার ছবি,আর এটা সে আরও আগে দেখেছে,তাহলে উনার প্রেমিকার ছবি কই,কোথায় লুকিয়ে রাখছে,পাচ্ছি না কেন?
.
শান্ত ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো আহানা ওর আলমারির ভিতরে ঢুকে কি যেন খুঁজতেছে মন দিল লাগিয়ে
শান্তর আর বুঝতে বাকি নেই যে আহানা তার আর তার প্রেমিকার ছবি খুঁজতেছে
শান্ত হালকা হেসে বুকটা ফুলিয়ে রাগী রাগী একটা ভাব নিয়ে আহানাকে এক ধমক দিলো
আহানা ভয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে তারপর বললো”আসলে আমি আমার শাড়ীগুলো কোথায় রাখবো জায়গা করছিলাম,আর কিছু না”
.
বুঝলাম,কিন্তু আমি তো অলরেডি জায়গা করে রেখেছিলাম
.
তাই বুঝি?দেখলাম না তো,আগেই বলতেন এত করে খুঁজতে হতো না আমাকে
.
কি খুঁজতে হতো না?
.
ইয়ে ঐ যে শাড়ী রাখার জায়গা
.
আচ্ছা,যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর কফি নিয়ে আনো আমার জন্য
.
(চাচার বাড়ির আবদার)
.
কিছু বললে?
.
না তো
.
মামার বাড়ির আবদার শুনেছিলাম,চাচার বাড়ির আবদার এই প্রথম শুনলাম
.
আমার বাবা আপনার বাবার বন্ধু ছিলো,ভাই ভাই
তাহলে আপনার চাচাই তো হলো তাই না?
.
বাপরে বাপ!এত হিসাব?
.
বিছানাটা সম্পূর্ণ বেলি ফুলের মালা দিয়ে সাজানো,আহানা একটা মালা ছিঁড়ে সেটা নিয়ে চলে গেছে ওয়াসরুমে
আর শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দার দিকে গেছে
আহানা জাস্ট মুখটা ধুয়ে চুলগুলো আঁছড়িয়ে খোঁপা বেঁধে তাতে বেলি ফুলের মালাটা লাগিয়ে চললো রান্নাঘরের দিকে
মা উপন্যাস পড়ছেন তার রুমে আর নিতু পড়তে বসেছে,রিপা ডিনার প্রস্তুতিতে বুয়াকে হেল্প করছে
আহানা গিয়ে কফি বানাতে লাগতেই রিপা বললো সে বানিয়ে দিবে
আহানা না করে দিলো,কারণ রিপার হাতে অনেক কাজ,মায়ের জন্য আলাদা করে খাবার তৈরি করতে হয়
তেল কম দিয়ে,ঝাল কম দিয়ে,ভর্তা করে আইটেম বানাতে হয় উনার জন্য
আহানা তাই রিপাকে না করে দিয়ে নিজেই কফি বানিয়ে নিলো,তারপর মায়ের জন্য চা বসিয়ে দিয়ে কফিটা নিয়ে গেলো শান্তকে দিয়ে আসতে
শান্ত ল্যাপটপে ভিডিও কলে একটা ক্লাইন্টের সাথে মিটিং করতেছে
আহানা এসে চুপচাপ কফিটা টেবিলের উপর রেখে যেতেই তার আঁচলে টান খেলো
পিছন ফিরে তাকিয়ে সে দেখতে পেলো শান্ত ধরে রেখেছে ওর আঁচলটা অথচ তার চোখ ল্যাপটপের দিকে
আহানা জোরে কথা বললো না কারণ ক্লাইন্ট শুনে ফেলতে পারে তাই ফিসফিস করে বললো”মায়ের জন্য চা বসিয়েছি,আমাকে জ্বালানো অফ করে নিজের চরকায় তেল দেন,স্টুপিড!”
.
শান্ত শুধু বললো”তুমিও খেয়ে নাও,আর বেলি ফুলটা সুন্দর কিন্তু!
.
অত্যন্ত?
.
হুম অত্যন্ত সুন্দর,তবে শুধু ফুলটা😜
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আমার কোনো গুনই আপনার নজরে পড়ে না তাই না?
.
পড়ে বলেই তো বিয়েটা করে নিয়েছি তাও দুবার করে
.
ঢং করতে হবে না,বাই
.
আহানা চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে,মুখে সামান্য হাসি
রিপা একটা খোঁচা দিয়ে বললো”কি ব্যাপার এত হাসি কিসের?আর একটা কথা এত সুন্দর করে বাসর সাজিয়ে দিলাম তুমি এখানে কি করতেছো?”
.
আহানা কানের পিছনে চুলগুলো সরিয়ে বললো”কিসের বাসর,বিয়ের ১৪দিন চলে,এখন এসব বলে লজ্জা দিচ্ছো কেন?”
.
তাই বুঝি?তার মানে বাসর আগেই গেছে?
.
আহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দৌড়ে মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো
মা একটা উপন্যাস পড়তেছিলেন এতক্ষণ,দরজায় নক হওয়ার আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে পাশে তাকালেন
আহানা মুচকি হেসে উনার কাছে এসে বসলো তারপর হাত থেকে বইটা নিয়ে আরেক হাতে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো”নাও খেয়ে বলো দেখি তোমার পুত্রবধূর হাতের চা কেমন?”
.
মা এক চুমুক দিয়ে ব্রুটা নাচিয়ে হেসে দিলেন তারপর আহানার হাতজোড়া ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরালেন
.
চা খাও,ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তো
.
মা মাথা নাড়িয়ে নিজের হাতের থেকে দুজোড়া বালা খুলে আহানার হাতে পরিয়ে দিলেন
.
আহানা নিতে চাইলো না কিন্তু মা তাও জোর করে ওর হাতে পরিয়ে দিলেন
আহানা বালাগুলোর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো,ওজনে অনেক হালকা তবে দেখতে ভারী মনে হয়,পুরোনো ডিজাইনের তবে যে কেউ দেখলে পাগল হয়ে যাবে এরকম সুন্দর বালাটা
মা চা পুরোটা শেষ করে আবারও বইটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে দিলেন
আহানার কাজ শেষ তাই সে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে গেলো,কাপ রেখে এরপর গেলো শান্তকে তার হাতের বালা দেখাতে
শান্ত সবেমাত্র তার মিটিং শেষ করে বিছানায় এসে বসেছে বিছানার উপরের গোলাপের পাপড়ি সরিয়ে টিভি অন করলো সে
আহানা এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো”দেখুন আমার হাতের বালাগুলো,মা দিয়েছে”
.
সুন্দর
.
সুন্দর মানে?আর কিছু না?
.
আর কি?
.
আহানা গিয়ে শান্তর পাশে দপ করে বসে কিছু বলার আগেই ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো
শান্ত ভাবলো আহানা মজা করতেছে,কিছুক্ষন ওর সাড়া শব্দ না পেয়ে পাশে চেয়ে দেখলো আহানা হাত ধরে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আবার বিছানায় ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা গোলাপের পাপড়ি গুলোর দিকে তাকাচ্ছে,শান্ত কিছুই বুঝতে না পেরে ঘুরে ওর দিকে ফিরে বসলো তারপর বললো”কি হয়েছে?”
.
আপনার জানার দরকার নাই,ব্যাথা পাওয়ার ১৪ঘন্টা পর আসে জিজ্ঞেস করতে যে কি হয়েছে
.
ব্যাথা পেয়েছো?কি করে?আমি ভাবলাম মজা করতেছো
.
ব্যাথা নিয়ে মানুষ কেন মজা করবে,বিছানায় গোলাপ একটা ছিলো কাঁটা সমেত
কথাটা বলে আহানা বিছানা থেকে নেমে চলে গেলো
শান্তর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব
তারপর বিছানায় হাত বুলিয়ে একটা গোলাপ পেলো যেটা গোটা তাও কাঁটা যুক্ত
ওহহহ তার মানে এটা দিয়ে ব্যাথা পেয়েছে?সোজাসুজি বললেই হয়,আমি তো টিভি দেখছিলাম আমার এত দিকে খবর আছে?আবার রাগ ও দেখায়,এই মেয়েটা!!
.
আহানা গেস্ট রুমে এসে গাল ফুলিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে আছে
শান্ত পুরো বাড়ি খুঁজেও ওকে না পেয়ে শেষে গেস্ট রুমে এসে দেখলো আহানা রাগ করে বসে আছে
.
এত রাগ আসে কই থেকে?হুম?
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ওলটপালট করলো কিন্তু কিছুই পেলো না তারপর বললো”কই কাটা গেছে?”
.
রক্ত মুছে ফেলেছি,আমি মানুষকে দেখানোর জন্য রাখি না
দরকার নেই কারোর কেয়ার
.
তুমি হুটহাট এত রাগ করো কেন একটু বলোতো?আমার কি দোষ?এভাবে রাগ করে এই রুমে চলে এসেছো!মা জানতে পারলে কি ভাববে?
.
সেটা আপনার ব্যাপার আমার না,আমার সাথে ভালোমতন বিহেভ করলে তো আমি এই রুমে চলে আসতাম না,তাই না?
.
বুঝলাম,এই মেয়ে আমার কোলে উঠার জন্য আর কি কি করবে কে জানে
শান্ত নিজের হাতের কুনুই ধরে নেড়ে চেড়ে আহানার কাছে এসে ওকে বিছানা থেকে তুলে নিলো
.
আহানা গাল ফুলানো বাদ দিয়ে এবার দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো শান্তর মুখের দিকে
শান্ত ভ্রু কুঁচকে বললো”তুমি এত দুষ্টুমি কি করে করতে পারো?আজীবন জ্বালিয়েছো এবার বাকি রয়েছে বিয়ের পরেরটা??
মাই গড!!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছে,মা ওদের দেখে মুচকি হেসে চেয়ে রইলেন,রিপা পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো”আহানা রাগ করেছিলো আর শান্ত স্যার রাগ ভাঙ্গিয়ে এখন মনে হয় নিয়ে যাচ্ছে”
.
মা হাত দিয়ে রিপাকে চুপ থাকতে বলে ওদের দিকে তাকালেন,দুজনেই ওদের একসাথে দেখে অনেক খুশি হলো তারপর যে যার কাজে চলে গেলো
.
আপনাকে কে বলে আমাকে কোলে তুলতে?তারপর আবার খোঁটাও দেন
শান্ত আহানাকে বিছানায় নামিয়ে ওর ঠোঁটজোড়ার মাঝখানে আঙ্গুল দিয়ে বললো”চুপ!এখন চুপচাপ ঘুমাও,অনেক বেশি দুষ্টুমি হইছে তোমার,, আর না,আমার মাথা ভারী করে ফেলেছো তুমি”
.
এখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে,এসময়ে ঘুমাবো?
.
তাহলে বসে বসে কার্টুন দেখো তাও এরকম বাঁদরামো অফ করো
.
বিছানায় বসে গোলাপের কাঁটা দিয়ে চোট পেলাম সেটা কি ইচ্ছে করে করছি আমি?
.
না,সেটা হলে আমি মলম লাগিয়ে দিতাম,বাট তুমি কি করলা তুমি সোজা রাগ করে গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলা
.
আমার সাথে ভালো বিহেভ না করলে এমনটাই করবো আমি তাও শান্তি আম্মুর সামনে,বলে দিলাম
.
আম্মু ও হয়ে গেলো তোমার?সবার আগে উনি আমার মা
.
তো এখন থেকে উনি আমার মা
.
তুমি অতিরিক্ত করো ইদানিং,আমি তোমার আম্মুর কাছে বিচার দিব,তখন দেখিও কি হয়
.
কচু হবে
.
একটু চুপ থাকো প্লিস
.
আহানা মুচকি হেসে শান্তর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে রিমোটটা নিয়ে গোল হয়ে বসলো,তারপর মটু পাতলু দেখায় গভীর মনোযোগ দিলো
শান্ত আহানার ঐ হাসি দেখে ঝগড়া বিবাদ এক পাশে রেখে সেও চেয়ে রইলো কিছুক্ষন
মাঝে মাঝে আহানার হাসির কারন শান্ত বুঝে উঠতে পারে না
ভালোই লাগে তার এই রহস্যমাখা হাসিগুলো
তবে এই হাসির দেখা সে মাঝে মাঝেই পায়,সবসময় না কিন্তু!
.
আহানা কার্টুন দেখতেছে আর শান্ত গালে হাত দিয়ে সাজানো বাসর ঘরটা দেখছে,পৃথিবীতে হয়ত সেই একমাত্র বর যার বউ কিনা বাসর ঘরে বসে কার্টুন দেখতেছে
এটা কে সৌভাগ্য বলবো নাকি দূর্ভাগ্য বলবো?
.
আহানা খিলখিল করে হাসতেছে কার্টুন দেখতে দেখতে
শান্ত হাত ভাঁজ করে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”নাহ এটা আমার সৌভাগ্যই বটে”
.
শান্ত এবার এগিয়ে এসে বিছানায় বসলো অথচ আহানা টের ও পায়নি,তার চোখ টিভির দিকে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার দুপাশে দুহাত রাখতেই আহানা কিছুটা চমকে ওর মুখের দিকে তাকালো
শান্ত কিছুই বললো না,শুধু আহানার কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠে চলে গেলো
আহানা অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,ছেলেটার হলোটা কি?
একবার বকে তো একবার কেয়ার করে,একবার ঝগড়া করে তো একবার আদর করে
আসলেই সে কি করতে চায় আমি বুঝি না
.
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে তার সূর্যমুখী ফুলের বাগানটায় এসেছে,ফুলগুলোর ঠিকমত যত্ন নেয় কিনা মালি সে বিষয়ে তদারকি করতে হয় মাঝে মাঝে
শান্ত ফুলগুলো দেখতে দেখতে একবার উকি দিয়ে তার রুমের ভেতর দিকে তাকালো,বিছানায় আহানা নেই,টিভিও অফ দেখছি,তাহলে গেলো টা কই?
.
আমি এখানে😎
.
শান্ত পিছন ফিরে দেখলো তার একমাত্র বউ গন্ধরাজ ফুল ২টি নিয়ে মাথায় লাগাতে লাগাতে এদিকে আসতেছে
.
কি ব্যাপার?আবার আমার পিছু পিছু চলে এলে,আজ সারাদিনে কি ঝগড়া কম হয়ে গেছিলো?
.
না তো!আমিও একটু বাগানবিলাস করতে এলাম,বলি আপনার মাথায় কি বুদ্ধি নেই,বেছে বেছে সূর্যমুখীর বাগান করতে গেলেন কি জন্যে?আর ফুল নেই দুনিয়ায়?
.
এটা আমার প্রিয় ফুল
.
আর গন্ধরাজ?
.
না সেটা প্রিয় না,মায়ের প্রিয় বলেই বাগানটা করা হয়েছে,তোমার সাথে মায়ের পছন্দ অপছন্দ অনেকাংশই মিলে যায়
.
তাইতো আমি তার পুত্রবধূ হয়েছি
.
এখন যাও রুমে,কি শীত পড়েছে খবর আছে তোমার?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিতেই হাতের ফোনটা বেজে উঠলো,একটা অাননোউন নাম্বার
আহানা কৌতুহলবশত রিসিভ করলো
ওপাশ থেকে একটা বয়স্ক লোকের আওয়াজ ভেসে এসেছে
উনি বললেন”আমার আহানা কেমন আছে?”
.
আহানা চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো,এটা তো মজনু চাচার ভয়েস,আহানা কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এদিক ওদিক তাকালো তারপর বললো”ভালো আছি,আপনি? ”
.
আমি কেমন আছি বা আমাকে তোমার হাসবেন্ড শাহরিয়ার শান্ত কেমন রেখেছে তা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো
.
আহানা চুপ করে থাকলো
.
তা সবই তো পেয়ে গেলে,আমাকে ভুলে গেলে কেন?আমি বুঝি সম্পর্কে তোমার কিছু লাগি না?
.
চাচা আমি কি সেটা বলেছি একবারও?
.
সে যাই হোক একটা কথা শুনে রাখো এত শত সুখ তোমার আর তোমার মায়ের কপালে ঠিক কতদিন টিকে সেটা আমিও দেখবো বুঝলে?
তোমাদের সেফ করার জন্য যিনি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সে ঠিক কতদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে আমিও দেখবো
কার চালিয়ে অনেকেই মারা যায়,দেখো আবার!
তোমার বাবা,তোমার বাবার একমাত্র বন্ধু মারা গেলো,তোমার মা তোমার শান্তি আন্টি বিধবা হলেন
কে জানে বংশের ধারা তুমি পেয়ে বসো নাকি,তুমিও বিধবা হও নাকি,কি আছে তোমার কপালে কে জানে
.
কলটা কেটে গেলো
.
আহানা হাত থেকে ফোনটা ছেড়ে দিয়ে পিছন ফিরে তাকালো,শান্ত সূর্যমুখী ফুল গাছের গোড়ায় মাটি দিতেছে বালতি করে এনে
আহানা দৌড়ে সেদিকে গেলো,শান্ত বালতিটা নিচে রেখে রেগে রেগে বললো”তুমি এখনও রুমে যাও নাই,আবার আসছো কি জন্যে?যাও ভিতরে”
.
আহানা কেঁদে দিলো হঠাৎ তারপর শান্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে
শান্ত বুঝছে না আহানা কেন এত করে কাঁদতেছে
আহানা শান্তর গায়ের টিশার্টটা টেনে ধরে ওকে আরও ঝাপটে ধরলো
শান্ত আহানার মাথায় হাত দিয়ে বললো”আহানা?কি হয়েছে তোমার??এভাবে কাঁদতেসো কেন?কেউ কিছু বলেছে?আমাকে বলো,আহানা?”
.
আপনি প্লিস আর কার চালাবেন না কোনোদিন,কারে উঠতেও হবে না
.
কেন?কি হবে?
.
না আমি চাই না আপনাকে হারাতে,একবার প্রিয় মানুষের হারিয়ে যাওয়াতে অনেক কষ্টের মুখে পড়তে হয়েছিলো আমাকে
আমি আর চাই না,আর সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই শান্ত
আপনি প্লিস আর কোনোদিন কার চালাবেন না আমাকে কথা দিন”
.
এটা কেমন কথা,কি হলো সেটা তো বলো,আর এভাবে কাঁদতেসোই বা কেন?
.
আহানা কান্নার জন্য কিছু বলে উঠতে পারছে না,বারবার চোখের সামনে ভাসতেছে বাবার লাশের সেই মর্মান্তিক ছবিটা
যতবার ছবিটা আরও সামনে আসতেছে ততবারই আহানা শান্তকে আরও শক্ত করে ধরতেছে
.
শান্ত এবার আহানার দুকাঁধ ধরে ওকে বুক থেকে সরিয়ে সামনে এনে দাঁড় করালো
তারপর ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”কি হয়েছে ক্লিয়ার করে বলো,আর কান্না করা বন্ধ দাও”
.
আপনি প্লিস আমার এই কথাটা রাখুন,কখনও কিছু চাইবো না আপনার থেকে
.
তার আগে আমাকে কারণটা জানতে হবে,তুমি খোলসা করে বলো আমাকে,আগে কান্না থামাও
.
শান্ত হাত দিয়ে আহনার চোখ মুছে দিয়ে ওকে নিয়ে বাগানের একপাশে থাকা চেয়ারে এনে বসালো
.
তারপর সে আহনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো “হুম এবার বলো কি হয়েছে”
.
আসলে মজনু চাচার ফোন এসেছিলো আর উনি আমাকে হুমকি দিয়েছেন,আপনার কোনো ক্ষতি করবে এই নিয়ে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আর তুমি সেটা বিশ্বাস করে বাচ্চাদের মতন এতক্ষণ ধরে কাঁদতেছিলা??
তুমি আসলেই একটা বোকা মেয়ে,আরে মজনুরে আমি কবেই ডোজ খাওয়াইসি এখন নাহয় আরেকটা ডোজ খাইয়ে দিব
এখন কান্না থামিয়ে সব ভুলে যাও রুমে,আমি কিছুক্ষণ পর আসতেছি
.
আহানাও চুপচাপ চেয়ার থেকে উঠে বাসার ভেতর চলে আসলো,মা সোফায় বসে টিভি দেখতেছিলেন,আহানাকে দেখে মুচকি হাসলেন তবে ওর ফ্যাকাসে মুখটা দেখে উনার মুখটাও ছোট হয়ে গেলো,আহানাকে হাত দিয়ে নিজের দিকে ডাকলেন তিনি
আহানা এসে উনার পাশে বসলো,তারপর হঠাৎ করে উনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সোফায়,আজ তার মা থাকলে হয়ত এটাই করতো সে
শান্তি রহমানকে তো সে তার মায়ের মতই ভাবে
শান্তি রহমান ভাবলেন হয়ত শান্তর সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই মুখটা ওমন ফ্যাকাসে করে রেখেছে আহানা
শান্ত আরেক বালতি মাটি এনে গাছের গোড়ায় দিলো,মজনু চাচা কি বললো না বললো তা সে একদমই মাথায় নেয়নি,এরকম হুমকি বিজন্যাস লাইফে সবাইকেই পেতে হয়
আর শান্ত এমন হুমকি এর আগেও পেয়েছে তাই ব্যাপারটা তার কাছে স্বাভাবিক,আহানা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছে,ঐ মজনু আমার কিছু করতে পারবে না বরং ওর ঠ্যাং ভেঙ্গে আমি ওর হাতে ধরিয়ে দিব
গাছগুলোকে পারফেক্টলি সেট করে দিয়েছি আর কোনো কাজ নেই এবার আমি যাই
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো,৮টা বেজে গেছে,এখন আপাতত অফিসের কিছু কাজ করবো ডিনার টাইম অবদি
শান্ত বাসায় ঢুকতেই দেখলো আহানা সোফায় মায়ের কোলে মাথা রেখে চুপ করে টিভির দিকে চেয়ে আছে
.
ওমা একি!
.
আহানা উঠে বসে শান্তর দিকে এমন করে তাকালো যেন শান্ত কোনো বিপদ থেকে বেঁচে এসেছে
.
শান্ত আর কিছু না বলে তার রুমের দিকে চলে গেলো
আহানা উঠে গিয়ে শান্তি রহমানকে বললো তার কিছু কাজ আছে
তারপর রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে সেটা নিয়ে শান্তর রুমের দিকে গেলো সে
শান্ত বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে মনযোগ দিয়ে
আহানা ওর দিকে কফিটা বাড়িয়ে ধরে বললো”কাল অফিসে যাবেন?”
.
একটা ডিলের কাগজপত্র চেক করতে করতে শান্ত বললো”হুম যাব তো”
.
ওহ
.
শান্ত আহানার হাত থেকে কফির মগটা নিতে নিতে একবার ওর মুখের অবস্থা বুঝে নিলো তারপর বললো”কেন?তোমার কিছু লাগবে?”
.
না,কিছু লাগবে না
.
কথাটা বলে আহানা বিছানার আরেক পাশে এসে বসে রইলো থ হয়ে
কিসব নিয়ে খুব ভাবতেছে সে
তারপর একবার শান্তর মুখের দিকে অহসায়ের মতন চেয়ে রইলো
এই লোকটার প্রতি আজ খুব কেয়ার আসতেছে,আজকে এই সংবাদ শুনে মনে হলো আমার কলিজায় কেউ আঘাত দেওয়ার কথা জানালো
আসলেই কি সে আমার এত আপন?
যাকে ছুঁয়ে দেখলাম না সে এক মূহুর্তেই আমার জীবনের সবটা হয়ে গেলো?
আহানা কথাগুলো ভাবছে আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরে যাচ্ছে অনবরত
শান্ত কফি খেতে খেতে একবার আহানার দিকে তাকালো,তাকাতেই আহানা আরেকদিকে মুখটা ঘুরিয়ে চোখগুলো মুছে ফেললো
.
শান্ত আহানার হাত টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”তুমি আবারও ওসব ভাবছো?আরে আমার কিছু হবে না,আর বাবা আর আয়াত আঙ্কেলের এক্সিডেন্টটা একটা ইন্সিডেন্ট ছিলো,আমার সাথে সেমটা ঘটবে কি করে?
কেউ তো আর জেনে শুনে…..
এক মিনিট!
পুলিশ আমাদের বলেছিলো বাবার কারটার ড্রাইভিং সিটে কিছু গণ্ডগোল পেয়েছিলো তারা আর সেটা শত্রুতাও হতে পারে আবার ন্যাচারালি ও হতে পারে
আমরা তখন সেটা ন্যাচারালি ভেবেছিলাম ঘটনাটাকে কারণ তখন বাবার কোনো শত্রু ছিলো না
.
আহানা সোজা হয়ে বসে বললো”কিন্তু আমার বাবার ছিলো”
.
মানে.?কে?
.
মজনু চাচা হতে পারে,উনি বাবার কাছে বারবার বলেছিলেন আমার নামে সম্পত্তি না দিয়ে তার নামে করে দিতে আর বাবা সেটা করেনি বলে এই নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে তাদের মাঝে
.
তার মানে বিষয়টা এবার পরিষ্কার!শত্রুতার জেরে আর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্যই তোমার মজনু চাচা এত বড় খেল খেললো আর সেটা প্রকাশিত হলো এই ৭টা বছর বাদে
আমাদের তখনি বিষয়টা ভালো করে ধরা উচিত ছিলো,কেন ধরলাম না আমি!
তখন এক হাতে নিতুকে সামলিয়েছি আরেক হাতে মাকে
মায়ের জবান বন্ধ হয়ে যাওয়া, মা স্থায়ী প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া,তোমাদের লাপাত্তা হওয়া এসবের ভিতরে আমার মাথায় একদমই ছিলো না যে বাবার আর আয়াত আঙ্কেলের কার এক্সিডেন্টে মরে যাওয়ার পিছনে তোমার মজনু চাচার হাত থাকতে পারে বা অন্য কোনো শত্রু!!
.
শান্ত মাথার চুলগুলো টানতে টানতে বললো”কেন আমি তখন সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারলাম না,কেন!!”
.
আহানা চুপ করে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে শান্তি রহমানের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো
উনি বিছানায় শুয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে
আহানা রুমটার ভিতরে প্রবেশ করলো
পুরো রুম জুড়ে শান্ত আর তার বাবার ছবি,আহানার মনে হলো তার বাবার শত্রুর জন্য তার বাবা আর রিয়াদ আঙ্কেল মারা গেছে
শুধুমাত্র তার বাবার শত্রুর জন্য শান্তদের পরিবারটা ভেঙ্গে গেলো
নিতু তার বাবাকে হারালো,শান্তি আন্টি তার এত সুখের সংসারকে এভাবে কাঁচের মতন ভেঙ্গে যেতে দেখে অবশ হয়ে গেলেন
এই সব কিছুর দায় আহানার পরিবারের
আহানার পরিবারের সাথে শান্তদের পরিবারের যোগাযোগই যদি না থাকতো আজ শান্তর বাবা অন্তত বেঁচে থাকতেন,উনার তো কোনো দোষ ছিলো না
আমার বাবার ও দোষ ছিলো না কিন্তু বাবার শত্রু তার সাথে সাথে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটাকেও মেরে ফেললো
.
আহানার বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে,শান্তর বাবার হাসি মাখা মুখ আর তার বাবার হাসিমাখা মুখের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখে তার আরও কষ্ট হচ্ছে
কেন তারা শাস্তি পেলো, যেখানে তাদের কোনো দোষ ছিলো না
শান্তর ও তো দোষ নেই,ও তো আমার বাবার অবর্তমানে আমার আর মায়ের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে
মজনু চাচা যদি আমার শান্তর কোনো ক্ষতি করে ফেলে?
আমি তো বেঁচে থাকতে পারবো না,আমি কি করে বাঁচবো
একবার বাবাকে হারিয়েছি,এখন আবার….
না এটা হতে পারে না,আমি উনাকে কিছুতেই মরণবাহনে চড়তে দেবো না,ঐ কারে তাকে আমি উঠতে দিব না
আমার মা জানতো না তার আশেপাশে এমন শত্রু আছে যে তার সব সুখ কেড়ে নেবে
কিন্তু আমি তো জানলাম আজ,তাহলে আমি জেনেশুনে এই ভুল করতে পারি না
আহানা পিছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে শান্তর রুমের দিকে যেতে নিতেই থেমে গেলো বাইরে থাকা শান্তর কারটা দেখে
তারপর কারের কাছে এসে দাঁড়ালো সে
বাগান থেকে একটা পেরেক খুঁজে নিয়ে টায়ার পাঞ্চার করে তারপর বাসায় ফিরলো আহানা
শান্তকে কোনোমতেই কারে চড়ে অফিসে যেতে দেবে না সে
তারপর হঠাৎ মনে হলো যদি অন্য উপায়ে মজনু চাচা উনার ক্ষতি করার চেষ্টা করে?তখন আমি কি করবো?
.
শান্ত মিঃলোকমানের সাথে কথা বলতেছে যিনি ৭বছর আগে শান্তর বাবার কার এক্সিডেন্টের সময় তদারকি করতে এসেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন এটা ৬০% মানুষকৃত মার্ডার হওয়ার সম্ভাবনা ময় একটি কেস
.
মিঃলোকমান শান্তর কথা শুনে বললেন”আমি তো আগেই বলেছিলাম এটা একটা ইন্সিডেন্ট ছিলো না,এটা একটা মার্ডার কেস ছিলো”
.
এখন কি কোনোভাবে কেসটা আবার খাড়া করা যেতে পারে?
.
কিভাবে? সেই কারটা তো এখন নেই,আপনার বাবার লাশটাও তো কবর দেওয়া হয়েছে বিগত ৭বছর হয়ে গেছে,ময়নাতদন্ত একদমই পসিবল না
আপনারা তখনই কঠোরভাবে কেসটা হ্যান্ডেল করলে হয়তবা কেসটার আসল রহস্য বেরিয়ে আসতো
.
আমি এখন কি করবো,আমার মনে হলো এই বিষয়টা তাই ফোন করলাম
.
আচ্ছা আমি দেখি কি করা যায়
.
শান্ত ফোন রেখে পিছন ফিরতেই দেখলো আহানা হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারপর সে এগিয়ে এসে বললো”পুলিশ কি জানালো?”
.
ঠিক করে বলতে পারছে না আদৌ কেসটা রিওপেন করা যাবে কি যাবে না,তা হঠাৎ এত খাতিরদারি করছো?শরীর খারাপ নাকি তোমার?
.
আহানা গ্লাসটা শান্তর হাতে দিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো”নাহ শরীর খারাপ নয়,তবে মন খারাপ”
.
কারণটা জানি তাই কিছু বলছি না,কারণ তুমি শুধু শুধু এত চিন্তা করতেছো,ঐ মজনু আমার কিছু করতে পারবে না বুঝলে?
.
আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি কিছু?চুপচাপ বসে থাকেন এখানে,এশার নামাজ পড়েছেন? গিয়ে পড়ে আসেন
.
শান্ত গেলো নামাজ পড়তে
আহানা শান্তর শোয়ার জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেললো,কেন জানি মনে সংশয় হয় উনাকে হারানোর,আর কখনও ঝগড়া করবো না উনার সাথে,ভালোমতন চলবো এখন থেকে
.
আহানা বিছানায় থাকা ফুলগুলোর দিকে চেয়ে আবারও কেঁদে ফেললো
উনার সাথে এখনও ভালোবাসার মূহুর্ত গুলোই কাটালাম না তার আগেই এই দিন দেখতে হচ্ছে আমাকে
.
শান্ত নামাজ পড়ে এসে দেখলো আহানা বিছানা থেকে ফুল নিয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতেছে
.
একি কি করতেসো??এমন করো কেন?কি হলো আবার
.
কিছু হয়নি তো,ঘুমাবেন তাই বিছানা ক্লিন করছি আর কিছু না
.
শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে ওকে আটকালো
.
আহানা ছলছল চোখে চেয়ে থেকে আবারও শান্তর বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো
শান্ত ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো”আরে বোকা মেয়েরে!এতদিন আঁচল কোমড়ে গুজে লড়াই করতা আর আজ কিনা কার না কার হুমকিতে তোমার চোখের পানি থামছেই না?আমাকে এত ভালোবাসো?”
.
আহানা মাথাটা উঠিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো”ককককককে?কে ভালোবাসে আপনাকে? আমি তো বাসি না,এমনিতেই আমার বর আপনি,আপনার কিছু হলে আমি বিধবা হবো তাই কাঁদতেছি,ভালোবাসি কে বললো?
আপনাকে ভালোবাসা যায়??আজ পর্যন্ত আপনাতে প্রেমে পড়ার মতন আহামরি কিছু করেছেন আপনি?বলতে এসেছে আমি নাকি উনাকে ভালোবাসি
কচু বাসি
.
আচ্ছা বাসো তো,ভালো না হোক কচু বাসো ওটাতেই চলবে
এখন আসো ডিনার করবো
.
আহানা চোখের পানি মুছতে মুছতে শান্তর পিছু পিছু আসলো
মা আর নিতু এসে ডাইনিংয়ে বসেছে
আহানা শান্তর পাশে বসলো আজ,নিজ হাতে সব সার্ভ ও করে দিচ্ছে,মা তো এসব দেখে মহাখুশি আর শান্ত সে তো গালে হাত দিয়ে আহানার বদলে যাওয়া দেখছে
যাক মজনু চাচা আমার একটা হেল্প তো করলো জীবনে
আর সেটা হলো আমার ধানিলঙ্কা বউকে সে এখন গোলাপজাম বানিয়ে দিয়েছে,খালি মিষ্টি আর মিষ্টি
ঝাল লাগেই না
তবে ধানিলঙ্কা ফ্লেভারকে মিস করতেছি অনেক,এখন একটু তেজি হলে ডিনারটা জমতো,কেন জানি সব শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে আমার
.
শান্ত টেবিলের নিচ দিয়ে আহানার শাড়ীর আঁচল নিয়ে টানতে লাগলো
আহানা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও না বুঝার ভান করে খাচ্ছে আর নিতুর সাথে কথা বলতেছে
শান্ত যখন দেখলো তার আঁচল টানাতে আহানার বিন্দু মাত্র নড়চড় হলো না তখন সে আহানার কোমড়টা ঝাপটে ধরে এক চামচ সুপ মুখে দিলো
আহানা চোখ বড় করে এবার শান্তর দিকে তাকালো
এমনিতেও মন মেজাজ ভালো না তার উপর এমন একটা সিচুয়েশনে এই লোকটা আমার মেজাজ আরও বিগড়ানোর পিছনে উঠে পড়ে লেগে আছে,হাতের চড় একটা খাওয়ার জন্য এমন করতেছে যা বুঝলাম
মন চাচ্ছে এক চড় মেরে সাদা গালটা লাল করে দিতে কিন্তু নাহ,সামনে আমার শাশুড়ি আর ননদ বসে আছে এদের সামনে এদের কলিজার টুকরাকে টোকা দিলে পরে আমাকে এই বাড়ি ছাড়তে হবে
এরে তো আমি রুমে গিয়ে বুঝাবো যে আহানা একটু কেয়ার করে মানে এই না যে তোমার বাঁদরামিতে চুপ করে থাকবে
এমন মার মারবো না আজ সারারাত খুব ভালো ঘুম হবে কারন কান্নার পরের ঘুমটা ভালো হয়
এমন মারবো যে কাঁদতে কাঁদতে তুমি ঘুমাই যাবা মিঃআউলাঝাউলা!!
.
শান্ত আড় চোখে আহানার দিকে তাকিয়ে যা বুঝলো আহানা মনে মনে তাকে গিলে খাচ্ছে
কি যা তা বলছে সে জানে,বাট আমার মনে হচ্ছে বিশ্রী ভাষায় গালি দিচ্ছে আমাকে,কারণ হাতের কাঁটাচামচটাকে উপর করে ধরে চিকেন লেগপিসে বারবার ছিদ্র করছে মনে হয় লেগ পিসটাকে আমি মনে করে এমন সাঁটাচ্ছে
রুমে গেলে কি হাল করবে কে জানে
কি এমন করছি?জাস্ট কোমড়ই তো ধরেছি
ওর কোমড় ধরলে এরকম তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে কেন সেটা বুঝে উঠতে পারি না আমি
খাওয়া শেষে মা এবার সোফায় এসে বসে খবর চালু করলেন
আহানা তার পাশে এসে বসলো,সাথে সাথে শান্ত ও ওর পাশে এসে বসে পড়লো
অথচ এসময়ে জীবনেও শান্ত টিভি দেখে না
সবসময় সে ডিনার করে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করে রাত ১পর্যন্ত
আহানাও অবাক সাথে মা ও অবাক
মা টিভি মনযোগ দিয়ে দেখছেন,আহানাও মনযোগ দিয়েছিলো তবে শান্তর উৎপাতে এখন সে টিভিতে ভালোমতন মনযোগটা দিতে পারছে না
শান্ত ওর পিঠের উপর দিয়ে হাত নিয়ে সোফায় রেখেছে
হাতের এবং হাতে থাকা মোটা ঘড়িটার খোঁচায় আহানার অস্বস্তিকর লাগছে
উঠতে গিয়েও পারছে না
শান্ত ওর শাড়ীর আঁচলের উপর বসেছে একেবারে,আজ শান্তর কপালে কি ঝাড়ি আছে তার একটু একটু ইঙ্গিত শান্ত পাচ্ছে আহানার চোখের আগুন দেখে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৪৮+৪৯+৫০

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আমার কি মানে?যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও সোজাসুজি,কথা ঘুরাতে হবে না এতো
.
রতন একদিন জোরাজুরি করতে চেয়েছিলো তো আমি দৌড়াতে গিয়ে পড়ে হাতের এমন অবস্থা হয়েছে
.
কত বছর ধরে জ্বালিয়েছে তোমাকে?
.
অনেক বছর ধরেই
.
এই জন্যই তোমাকে বিয়ে করে বাঁচিয়ে দিয়েছি আমি তুমি তো সেটা বুঝতেই চাও না
.
হুহ!চলুন এখন একটু ওদিকটাই যাই
.
ঘুরবা?এই শরীর নিয়ে?
.
কেন?আমি তো বেশ আছি,জ্বর টর নেই,আই এম ফাইন
.
ফাইন হলেই ফাইন,চলুন তাহলে
.
শান্ত আহানার হাত ধরে হাঁটতেছে
আহানাও চুপচাপ শান্তর দিকে গম্ভীর একটা লুক নিয়ে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটতেছে,দুজনেই নিরব,কারও মুখে কোনো কথা নেই
আহানা এবার মুখ খুললো তাও পনেরো-ষোলো মিনিট পর
সে বললো”আমার হাত ধরা হাঁটা কি জরুরি?”
.
শান্ত হাতটা না ছেড়েই হাঁটতে হাঁটতে বললো”ধরাটা জরুরি নয় তবে অসুস্থ তো তাই ধরতে হয়,না জানি আবার গড়াইয়া গড়াইয়া পাহাড়ের নিচে না পড়ে যায় এই ভেবে”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”আর কোনো কারণ নেই আমার হাত ধরার?”
.
শান্ত থেমে গেলো এবার তারপর মুখটা শক্ত করে বললো”তুমি আসলে কি শুনতে চাও?এটাই তো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি?কথাটা ভুল আহানা!
আমি তোমাকে ভালোবাসি না,পছন্দও করি না
তবে!
তুমি আমার স্ত্রী,লিগালি ওয়াইফ যাকে বলে
তোমার প্রতি করা এসব কেয়ার আমার থেকে প্রাপ্য তোমার অধিকার,এর বাইরে কিছু নয়
আর ভালোবাসাটা এমন জিনিস না যে বিয়ে হলে একসাথে থাকতে থাকতে উতলায়ে পড়লো
ভালোবাসাটা এমন একটা জিনিস আমাদের মধ্যে যেখানে আমি বলতেও পারবো না আদৌ আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা,আর তুমিও বলতে পারবা না বাসো কিনা
মুখে বললেই সেটা ভালোবাসা হয় না
.
আমার আপনার ভালোবাসা চাই ও না,থাকুন আপনি!
.
আহানা হনহনিয়ে উল্টো পথ ধরে ফুফুদের বাসার দিকে চলে গেলো
শান্ত রোবটের মতন ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে আহানার চলে যাওয়া দেখে যাচ্ছে
এই মেয়েরা একটা ক্লিয়ার কথা কেন বুঝতে চায় না?
কেন এত প্যাঁচ বের করে কে জানে!
কোনোকিছু সোজাসুজি নেওয়া যায় না নাকি?নিলে কি ওকে টাকা দিতে হবে আমাকে?
.
আহানার কান্না আসতেছে তাও কোনোরকম নিজেকে সামলিয়ে সে রুমে এসে খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে পড়লো
শান্ত ভাইয়া কি বুঝে না?আমি চাই সে আমাকে ভালোবাসুক
তবে আমি বাসি না,কেন বাসি না জানি না,তবে তার ভালোবাসা আমার দরকার,সে আমার স্বামী আমি তার স্ত্রী
স্ত্রী হিসেবে এটাও তো আমার অধিকার তাই না?
তাহলে সে কেন আমাকে ভালোবাসে না?কি দোষ করেছি?
কোমড়ে হাত দিছে বলে জাস্ট ঝাড়িই তো দিসিলাম, চড় তো আর মারি নাই
তাই বলে জোর করতে পারে না?সব শিখিয় পড়িয়ে নিতে হয়?
এক মিনিট!আমি এসব কি ভাবছি ধুর,আহানা তোর মাথা গেছে,যে ছেলেটা তোর জন্মের শত্রু তুই কিনা তার থেকে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছিস?হোয়াই?
এখন থেকে ভাব নিয়ে থাকবি!ঐ শয়তানটার ভালোবাসা তোর দরকার নেই ওকে?
হুম!লাগবে না লাভটাভ!আমি এরকমই ঠিক আছি

শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে একটা জামরুল গাছে উঠে বসে অফিসের কাজ করতেছে
ওর ফুফাতো বোন সেজোটা মানে রেশমি সে পিক তুলতেছে আহানাকে আর বাকিদের দেখাবে বলে
অফিসের কাজের জন্য মানুষ কি না করে তা শান্তকে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না
শান্ত গাছে উঠেছে কারণ সেখানে একটু নেট আসে
আহানা মুখ গোমড়া করে জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে,রেশমি আর রিমু হাসতে হাসতে এসে আহানাকে ছবিটা দেখালো
আহানা প্রথমে চিনতেই পারলো না এটা যে শান্ত
যখন মুখটা ভালো করে দেখলো তখন তার বিশ্বাস হলো
.
রেশমি আর রিমুর সাথে সেও হেসে ফেললো
রেশমি বললো এটা লাইভ দেখতে হলে আহানা যেন বাড়ির পিছনের জামরুল গাছটার কাছে গিয়ে দেখে আসে
আহানাও এই সুযোগ হাতছাড়া করলো না
সেদিকে ছুটলো,কিছুদূর যেতেই হুডি পরা ছেলেটা মানে শান্তকে দেখলো সে
শান্ত আরামসে গাছে বসে পা গুটিয়ে তার উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করতেছে,সে আহানাকে এখনও দেখেনি
আহানা হাসি থামিয়ে আরেকটু সামনে গিয়ে দেখতে লাগলো ওকে
ওদিকে বিচ্ছুবাহিনী আসতেছে এদিকেই,বিচ্ছুবাহিনী মানে হলো ওরা ফুফুর ছোট জা এর ছেলে ৪টা,একটার বয়স ৪,একটার বয়স ৬ একটার বয়স ৮ আরেকটার বয়স ১০
মেয়ের আশায় ৪টা ছেলে হয়ে গেলো তাদের,এদের জ্বালাপোড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ছোট জা প্রতিজ্ঞা করেছে আর বেবি নিবে না জীবনে
তো ওরা গাছটার নিচে এসে শান্তকে দেখতেছে আহানার সাথে
তারপর আহানাকেও দেখে নিলো একবার
এরপর ৪জনে মিলে গাছটাকে নাড়াতে শুরু করলো,গাছটাতে উঠতেও চাইলো
.
হঠাৎ ভূমিকম্প আসলো কই থেকে?অবশ্য পাহাড়ী অঞ্চলে এমন ভূমিকম্প হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার
বাট গাছের নড়াচড়া তো আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে,এরকম বেশি নড়তেছে কেন
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নিচে তাকালো
আহানা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে আর ওর সামনে ৪টা বাবু,এদেরকে সে চেনে এবং চেনে বলেই তার কিছুটা ভয় লাগলো কারন এদেরকে একসাথ করে সবাই নাম দিয়েছে “বিচ্ছুবাহিনী”
যেখানে যাবে তুলকালাম বাঁধাবে
শান্ত ভাবলো জীবন ঠিক থাকতে গাছ থেকে নেমে যাবে,কিন্তু সেই কষ্ট করতে দিলো না ছেলেগুলো,গাছ এত এত নাড়লো যে শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে নিচে পড়লো একদম আহানার গায়ে গিয়ে
এদিকে শান্ত যে আহানার গায়ে গিয়ে পড়েছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ও না করে বিচ্ছু পোলাপান গুলা ল্যাপটপটা হাতিয়ে নিয়ে দৌড় মেরেছে
আহানা চোখ বন্ধ করে হাত দুটো শক্ত করে রেখেছে
শান্ত চুপ করে আহানার বন্ধ চোখগুলোর দিকে চেয়ে আছে
দূর থেকে ফুফুর ছোট দেবর দৌড়ে আসতে আসতে বললেন”মাফ করবা শান্ত,আমার বিচ্ছুবাহিনী বুঝি তোমাদের খুব জ্বালাচ্ছে”
উনার কথা শুনে শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা ও বসে গায়ের থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে বললো”পড়ার সময় লোক দেখেন না নাকি?”
.
শান্ত চুল থেকে জামরুলের পাতা একটা নিয়ে ফেলতে ফেলতে বললো”অন্য কোনো মেয়ের গায়ে পড়লে বুঝি খুশি হতা?”
.
কথাটা শুনে আহানা ব্রু কুঁচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো,আর কিছু বলবে না সে,একদম দূর্বল জায়গায় কথাটা লেগেছে,আরও কিছু বললে আরও দূর্বল কিছু বলে বসবে এই লোকটা
.
সে চলে যেতো নিতেই ওপাশ থেকে শান্ত আরেকটা লাইন বলে ফেললো
আর সেটা হলো”এই যে মাত্র তোমার গায়ে পড়লাম আমার ঠোঁটটা তোমার নাক ছুঁলো,অন্য কোনো মেয়ের নাক ছুঁলে ভালো হতো বুঝি?”
.
আহানা রাগি রাগি চোখে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর চলে গেলো
.
শান্তর তার ল্যাপটপের কথা মাথায় আসতেই এক দৌড় দিলো
দৌড়ে গিয়ে সে বিচ্ছুবাহিনীকে দেখতে পেলো,ওরা ল্যাপটপটা খোলার সব চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু শান্ত ছাড়া তার ল্যাপটপ খোলার সাধ্য কারও নেই
শান্ত এক ধমক দিয়ে ওদের হাত থেকে ল্যাপটপটা ছিনিয়ে নিয়ে চলে আসলো
রুমে এসে আহানাকে পেলো না সে,চিন্তায় আবারও বের হলো রুম থেকে
কোথায় গেলো মেয়েটা??
হেঁটে অনেকটা পথ এসে শান্ত আহানার দেখা পেলো
মহারানী রোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সাজেকের রিসোর্ট গুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে আহানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো”কি?কাউকে না বলে এতটা পথ এসেছো কেন?এখানে যদি রতন বা সাইমন এসে পড়ে তখন কি করবা?”
.
হাসালেন!ওরা এখানে কেন আসবে?রিসোর্ট গুলো দেখলো মন জুড়িয়ে যায় তাই একটু দেখছিলাম এই আর কি!
রুমে আর কতক্ষণ থাকা যায়?
.
ফুফুরা মাছ মাংস কাটে ওসব দেখো তাহলেই হয়
.
আঁশটে গন্ধে বমি আসে বলেই বাইরে হাঁটাহাঁটি করছি
.
এটাতেও সমস্যা ওটাতেও সমস্যা!
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টানতে টানতে ফুফুদের বাসায় নিয়ে আসলো আবার
আহানা কোনো উপায় না পেয়ে ফুফুদের কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসেছে
রান্না শেষ হতে প্রায় ঘণ্টাখানেক লেগেছে,ততক্ষণ আহানা সবার সাথে চুপচাপ বসে ছিলো,ওদের গল্পগুজব শুনছিলো আনমনে
তারপর রুমে আসতেই আহানার চোখ কপালে,তার ব্যাগ নেই,এমনকি শান্তর ব্যাগ ও নেই,চোর টোর এলো নাকি
এই ভয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ফুফুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো “তার ব্যাগ কোথায়”
ফুফু খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন”শান্ত নিয়েছে”
.
নিয়েছে মানে?কোথায় নিয়েছে?
.
শান্তর অফিসের অনেক কাজে বিফল ঘটতেছে বলে ও চাইছে তাড়াতাড়ি চলে যেতে আর তাই আজই সাজেকের একটা রিসোর্টে উঠবে তোমাকে নিয়ে,তোমাকে মেঘ দেখাবে, ঘুরবে তারপর সেখান থেকে চলে যাবে,মনে হয় এখন সে বুকিং দিতেই গেছে
.
আহানা মনে মনে অনেক খুশি হলো তারপর আবার ফেরত গেলো তাদের রুমের দিকে
যেতে যেতে দেখলো শান্ত আসতেছে,আহানা ওর কাছে গিয়ে বললো”বুকিং দিতে পেরেছেন?শুনেছি এখানে নাকি আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হয় তা না হলে ভালো ভিউ পাওয়া রিসোর্ট গুলোয় রুম পাওয়া যায় না
.
ঠিক!আর ওরা আমাকে চিনে ফেলেছে,আর আমি যে তাদের বিরাট বড় একটা স্পন্সার তা তারা বুঝতে পেরে আমাকে আমার পছন্দমত রুম খালি করে দিয়েছে
.
স্পন্সার মানে?আপনি আবার কি প্রোমোট করেছেন?
.
আরে করি নাই বাট করবো,একটা সাজেক ব্লগ বানাবো তাও তাদের রিসোর্ট নিয়ে ব্যাস হয়ে গেলো তাদের প্রোমোট
এই হলো ইউটিউবারদের সুবিধা
.
এহহহহ!
.
জি,তা না হলে তুমি গিয়ে দেখো,এই সিজনে মানুষ ২/৩দিন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে আর সেখানে আমি গিয়ে ১০/২০মিনিটেই পেয়ে গেলাম,সেলিব্রেটি বলে কথা
এখন তাড়াতাড়ি করে লাঞ্চ করে নাও,আমরা গিয়ে হোটেলে উঠবো,ওখানে ব্যাগ রেখে এসেছি আমি
.
আচ্ছা,যাই হোক এটা ভালো করেছেন
.
যা করেছি আমার অফিসের কাজের জন্য করেছি তা ছাড়া আর কিছু না বুঝেছো?
.
আহানা চলে গেলো যেন সে কথাটা শুনেই নাই
.
লাঞ্চ শেষে দুজনে সবাইকে বিদায় জানিয়ে এবার ছুটলো রিসোর্টটার দিকে
তারা যে রিসোর্টে উঠেছে তার নাম ” মেঘ মাচাং”
সাজেকের বাকি রিসোর্ট গুলোর মধ্যে এই রিসোর্টটা নাম করা কারণ এটাতে ভিউ ভালো আসে
আর আহানা মেঘ দেখবে তাই শান্ত ভেবে এই রিসোর্টটাই বুক করেছে
রিসিপশানে এসে শান্ত কিছু ফরমালিটি পূরণ করে আহানাকে নিয়ে রুমে আসলো
আহানা তো অনেজ এক্সাইটেড,দরজা খুলতেই ওর মুখটা নিমিষেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,দুপাশে দুটো সিঙ্গেল বেড
আহানার মুখের ওমন হাল দেখে শান্ত জানালা থেকে পর্দা সরাতে সরাতে বললো”তোমার তো খুশি হওয়ার কথা!রাতে আমার সাথে টাচ লাগলে তোমার ঘুম হয় না,তাই তো আলাদা বেডের রুম নিলাম”তুমি যে বেডে ইচ্ছা সেই বেডে শোও,এবার শান্তি???
.
আহানা মুখটা ছোট করে একটা বেডে এসে বসলো
শান্ত তার ব্যাগ থেকে একটা জ্যাকেট,টিশার্ট আর প্যান্ট নিয়ে বাইরে রাখলো তারপর আহানার দিকে চেয়ে বললো”তৈরি হয়ে নাও,আমরা এখন ঘুরতে যাবো”
.
কোথায়?
.
মেঘপুঞ্জি রিসোর্টটা দেখতে যাব,আর কিছু পাহাড় আছে এখানে ওগুলাও দেখে আসা যাবা,কংলাক পাহাড়টাও
.
ওকে
.
আহানা চুলটা আঁচড়িয়ে নিয়ে বললো”চলুন”
.
শান্ত আর কিছু বললো না,কারণ আহানাকে এমনিতেই ভালো লাগছে নতুন করে সাজার প্রয়োজন নেই তার
.
দুজনেই রিসোর্ট থেকে বের হতেই কোথা থেকে বাইকে করে একটা কাপল এসে থামলো ওদের সামনে
আহানা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে,ওদের মাথায় হেলমেট থাকায় ঠিক চিনতে পারলো না আহানা আর শান্ত
.
মাথা থেকে হেলমেট সরাতেই শান্ত ওকে দেখে হেসে ফেললো তারপর বললো”রিয়াজ??? তুই এখানে?”
.
দেখলি!!ঠিকই তোর দেখা পেয়ে গেলাম,নওমি বললো দেখা পাবো না
.
একদম ভালো হয়েছে,তা বাইক পেলি কই?
.
ভাড়ায় নিয়েছি,কংলাক পাহাড়ে যাব তাই,তোরাও নিয়ে নে
.
ওকে ডান
.
আহানা নওমির দিকে চেয়ে আছে,নওমি একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে,সাথে জিন্স আর আহানা একটা সুতির শাড়ী পরে দাঁড়িয়ে আছে
রিয়াজ আহানাকে জিজ্ঞেস করলো “সে কেমন আছে”
আহানা উত্তরে “ভালো “বললো,ততক্ষণে শান্ত ও বাইক নিয়ে হাজির
আহানার বাইকে চড়ার অভ্যাস নেই তাও শান্তকে কোনোরকম ঝাপটে ধরে বসলো সে
শান্ত হেলমেটটা পরতে পরতে বললো”ভুলেও আমাকে ছাড়বে না,পথ আঁকাবাঁকা,কখন কি হয়ে যায়,শক্ত করে ধরে রাখবা ঠিক আছে?”
.
আচ্ছা
.
সামনে দিয়ে রিয়াজ নওমিকে নিয়ে যাচ্ছে আর পিছন দিয়ে শান্ত আর আহানা
আহানা ভয় পাচ্ছে বলে শান্ত বাইক আস্তে আস্তে চালাচ্ছে,ওদিকে রিয়াজ হাসতেছে শান্তর বাইক চালানোর
স্পীড নিয়ে
শান্ত রেগে আহানাকে বললো মজবুত হয়ে বসতে,এবার রিয়াজকে ছাড়িয়ে যাবে সে
আহানা বাইকের আয়নায় তাকিয়ে শান্তর দিকে মিষ্টি করে চেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে
এভাবে আজ শান্তকে খুব ভালো লাগছে
আহানা যে এতটা মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে সেদিকে তার খবর নেই,সে এখন রিয়াজকে হারাতে ব্যস্ত
আহানা শান্তর পিঠে মাথাটা রেখে পাশে চেয়ে রইলো,চলমান গাছগাছালি সাথে আপন মানুষকে আঁকড়ে ধরে রাখা
আর কি চাই??পাহাড়গুলোও মনে হচ্ছে চলমান
রিয়াজকে হারানো শেষে শান্ত এবার খেয়াল করলো আহানাকে ওকে আবেশে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেন তাদের মাঝে কোনো দেয়াল নেই,ছিলো ও না
শান্ত রীতিমত অবাক,আহানার হয়েছে টা কি??এমন করছে কেন ও??
শান্ত বাইকটা থামিয়ে ফেললো,অথচ আহানা এখনও ওর পিঠে মাথা রেখে দূরের একটি পাহাড়ের দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসতেছে
শান্ত হেলমেটটা খুলে পিঠ ঝাঁকুনি দিতেই আহানার হুস আসলো,থতমত খেয়ে বললো”সরি”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
তোমার কি হয়েছে একটু বলবা??
.
না কিছুই তো হয়নি,ভুলবশত মাথা রেখেছি তার জন্য সরি
.
তোমার মনের খবর তুমি আর আল্লাহ জানো,আমার জানার সাধ্য নাই
.
রিয়াজ আর নওমি মিলে ছবি তুলতেছে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে
আর আহানা সেখানে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শান্ত তার ইউটিউবের ব্লগ নিয়ে ব্যস্ত
এসব দেখে আহানার এত এত বিরক্তি লাগছে,রিয়াজ আর নওমি কতই না মজা করছে আর আমার স্বামীকে দেখো!বেয়াদব একটা
আমার সাথে একটা ছবিও তো তুলতে পারে!এত সুন্দর ভিউ আসতেছে চারিদিক থেকে,এটাই তো ছবি তুলার মোক্ষম সময়
অথচ উনাকে দেখো!লাগবে না তোর কেয়ার!তোর প্রেম,তোর ভালোবাসা,বাই!
আহানা রাগে গজগজ করতে করতে পাহাড় থেকে নেমে চলে যাচ্ছে
রিয়াজ আর নওমি ওকে চলে যেতে দেখে শান্তকে ডেকে বললো আহানা হুট করে চলে যাচ্ছে কেন
শান্ত ও ব্যাপারটা বুঝলো না,সেও সেদিকে ছুটলো
.
আহানা দাঁড়াও,কোথায় যাচ্ছো?
.
আহানা পিছন ফিরে তাকাচ্ছেও না,কথার উত্তর ও দিচ্ছে না,শুধু হেঁটে চলেছে সে
শান্ত তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে শেষে আহানাকে ধরতে পারলো,হাত ধরে টান দিয়ে আটকিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
আহানার দুচোখ ভর্তি পানি
তার আরেকটা হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে বললো”আমি হোটেলে ফিরে যেতে চাই”
.
শান্ত নির্বাক হয়ে আহানার অশ্রুসিক্ত চোখজোড়ার দিকে চেয়ে আছে,তারপর বললো”কি হয়েছে তোমার?”
.
প্লিস!
.
শান্ত আর কিছু বললো না,আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে বাইকে উঠে বসলো
আহানাও চুপচাপ এসে বসেছে,শান্ত হেলমেট পরতে পরতে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়াজ আর নওমিকে হাত দিয়ে বাই বলে বাইক স্টার্ট করলো
.
হোটেলে এসেই আহানা নিজের বিছানায় দপ করে বসে পড়লো,মুখের হাবভাব নিশ্চুপ এখনও
শান্ত দরজা লাগিয়ে এসে এক দৃষ্টিতে প্রায়ই দেড় মিনিটের মতন চেয়ে রইলো ওর দিকে তারপর কি ভেবে আহানার হাতের কব্জি ধরে ওকে টান দিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলো
.
আহানা চুপ করে আছে এখনও,শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”কি সমস্যা তোমার??জাস্ট ক্লিয়ার করো বলো”
.
আহানা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো”কিছু হয়নি”
.
শান্ত ওর হাতে চাপ দিয়ে বললো”আমি সত্যিটা শুনতে চাই আহানা”
.
আহানা শান্তকে হুট করেই জড়িয়ে ধরলো,কাঁদতে লাগলো আর কিছু বলতে পারছে না সে
আহানা শান্তকে এভাবে ধরতেই শান্তর বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো
আহানা কষ্ট পেয়েছে??তাই কি সে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে আমাকে?কিন্তু কিসের কষ্ট?
.
আহানা শান্তর জ্যাকেটটা খাঁমছে ধরে শান্তর বুক থেকে মুখটা উঠিয়ে শান্তর দিকে তাকালো তারপর বললো”আমি জানি না আমি কি চাই তবে আমার ভালো লাগে না অন্য কাপলদের দেখলে,কারণ ওদের মতন আমরা নই,কেন নই?”
.
শান্ত আহানার কাঁধ ধরে ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”তার মানে তুমি চাও আমি তোমাকে স্ত্রীর অধিকারটাও দিতাম?”
.
অধিকারটাও???
.
হ্যাঁ টাও!!আমি তোমাকে সেফ করার জন্য বিয়ে করেছি,তোমার মান রাখতে ২য় বার বিয়ে করেছি তোমাকে
তোমাকে সে সকল অধিকার দিয়েছি যেটা তোমার প্রাপ্য,আর রইলো কথা স্বামী স্ত্রীর মাঝের সম্পর্কটার!
.
চাই না!ছেড়ে দিন আমার হাত,আমি কি বলেছি আমি সেটা চাই?মন খারাপ কেন হয়েছিলো সেটা বললাম,আপনি আমাকে আপন করতে চাইলেও আমি দিব না,আপনাকে চেনা হয়ে গেছে আমার
এখন হাত ছাড়ুন
.
শান্ত ওকে আরেকটু কাছে টেনে বললো”চুপচাপ বসে থাকো এখানে”
.
আহানা চোখ মুছে বসে পড়লো বিছানায়
শান্ত দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেছে
আবার ১৫/১০মিনিট পর ফেরত আসলো সে হাতে ২টা ছোট বাঁশ নিয়ে,ভেতরে চা
এসে দেখলো আহানা খাটের এক কোণায় গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে
.
নাও ধরো,এটা খেয়ে শরীর চাঙ্গা করো
.
আহানা হাতে বাঁশটা নিয়ে শান্তর কথা শুনে চোখটা বড় করে চেয়ে রইলো
তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বললো”কেন?চাঙ্গা করে কি হবে?”
.
কিছু হবে না,জাস্ট কান্নাকাটি করছো যে একটু রিফ্রেশমেন্ট ফিল হবে
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চা খাওয়ায় মন দিলো আবার,শান্ত বারান্দায় দাড়িয়ে চুপচাপ চা খাচ্ছে,আহানা চায়ে এক চুমুক দিচ্ছে তো একবার শান্তর দিকে তাকাচ্ছে
শান্ত তার চা শেষ করে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো আহানা ওর দিকেই চেয়ে আছে
শান্ত একটু করে হাসলো,তাও এমন ভাবে যেন আহানা বুঝতেই না পারে
আহানা চোখটা তখনি সরিয়ে আরেকদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার হাত ধরলো আবারও,তারপর ওকে টেনে বারান্দায় নিয়ে আসলো
.
আরে এমন করছেন কেন,কি হয়েছে?
.
শান্ত আহানাকে টেনে এনে বারান্দার একপাশে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে চুপচাপ বাইরের দিকে তাকানোই মনোনিবেশ করলো
আহানা থ মেরে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,এসব কি হচ্ছে সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
শান্তর কোনো উত্তর না পেয়ে আহানা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে বললো”আপনি এমন করলেন কেন??আমাকে হঠাৎ বিছানা থেকে তুলে এনে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখার মানে টা কি সেটাই বুঝতেছি না!
.
শান্ত পাহাড় থেকে চোখ ঘুরিয়ে আহানার দিকে চেয়ে বললো”কেন?তোমার না স্ত্রীর অধিকার দরকার,তো এখন এই মূহুর্তে অন্য কাপলরা যেটা করতো আমি ঠিক সেটাই করতেছি,সিম্পল!”
.
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”তো অন্য কাপলরা এখন বারান্দায় এই রোমান্টিক ওয়েদারে,রোমান্টিক প্লেসে চুমু দিলে আপনিও কি সেটা……!!
.
আহানার কথা আর শেষ হলো না তার আগেই শান্ত আহানার গলা টিপে ধরে ওকে কাছে নিয়ে এসে গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে আবারও ওকে ছেড়ে দিলো
তারপর আবারও সে দূরের পাহাড়টার দিকে চেয়ে রইলো
আহানা গালে হাত দিয়ে ভূত দেখার মতন ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তারপর সোজা হেঁটে রুমে চলে গেলো সে
দপ করে বিছানায় বসে পড়লো,গালে হাত এখনও
শান্ত মনে হয় পাগল হয়ে গেছে,এমন করলো কেন?আমি তো ভাবতেই পারিনি এমনটা করবে
.
শান্ত বারান্দা থেকে ফেরত এসে নিজের বেডে বসতে বসতে বললো”আচ্ছা নিউ কাপলরা এই সময়ে কি করে?আই মিন এখন তো সন্ধ্যা ৬টা বাজে”
.
আহানা কথাটা শুনে গালে হাত দিয়ে ভয়ে বিছানার চাদর টেনে শুয়ে পড়লো
.
শান্ত ফিক করে হেসে দিলো তারপর একটা বালিশ নিয়ে হেলান দিয়ে বসে ফোনে গেমস খেলা শুরু করলো সে
.
আহানা চাদরটা হালকা সরিয়ে উঁকি দিয়ে শান্তকে একবার দেখে নিলো তারপর আবারও মুখটা ঢেকে ফেললো
.
শান্ত ফোন রেখে দিয়ে আহানার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
মেয়েটা মুখ ফুটে বললে আমি তাকে সে সব দিব যা সে চায়!
কিন্তু না,সে বলবে না,কেন বলবে না?সে নিজেও জানে না সে আসলেই কি চায়!
মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ধরে পিটাই,এমন পিটাই যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতন অবস্থা হয় তার
.
আহানা বিপরীত পাশে ফিরে শুয়ে আছে,পরনে কালো রঙের সুতির শাড়ীটা,কিছুক্ষণ আগেই চেঞ্জ করেছে সে
ফর্সা হাত-পিঠটা যেন তুলে ধরে রেখেছে শাড়ীটা
আসলেই পৃথিবীতে কালো না থাকলে ফর্সা কেমন হয় তা বোঝা যেতো না,দুটোরই মূল্য সমান সমান
ব্লাউজটার পিছন সাইতে দুটো ফিতা লাগানো,,তাতে ফুল করে আটকানো আবার,মানে রেডিমেট,এই সুতা টানলেও কি না টানলেও কি,ব্লাউজটা জামার মতন পরতে হয় সুতাটা জাস্ট ডিজাইন করে লাগানো
.
শান্ত গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে,তারপর নিজে নিজে এগিয়ে গেলো আহানার দিকে,চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো
আহানা চাদর সরিয়ে বেডের দিকে তাকালো আবার শান্তকে দেখার জন্য কিন্তু বেড তো খালি,চাদরটা সরিয়ে সে উঠে বসতেই দেখলো শান্ত ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে
কিছুটা ভয় পেয়ে আহানা পিছিয়ে গিয়ে বললো”কি হয়েছে?”
.
কিছু না,অন্য কাপলরা তো একজন আরেকজনকে দেখাদেখি করে তাই আমিও দেখলাম একটু
.
আপনি প্লিস এই অন্য কাপল কি করে না করে সেই ট্যাগ লাইন নিয়ে কথা বলা অফ করেন
.
কেন??তুমি তো বললে অন্য কাপলরা রোমান্স করে আর তুমি আমি করি না বলে তোমার সেটা ভাল্লাগে না যার কারণে কংলাক পাহাড় থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে এসেছো
.
আমার কিছু লাগবে না,যান গিয়ে নিজের বেডে গিয়ে বসেন আমাকে খোঁচা মারা অফ দেন প্লিস
.
ওকে ফাইন,যা তুমি বলবা,বিয়ের পর থেকে তো তোমার কথায় উঠতে বসতেছি
.
আহানা মন খারাপ করে উঠে গিয়ে বারান্দায় নিচে বিছানো তোষকটায় বসে পড়লো,দূরে কিছু দেখা যায় না তবে আকাশে একটা চকচকে চাঁদ দেখতেছি
খুব সুন্দর ভিউ,ঠিক যা যা চেয়েছিলাম সব কিছু পাচ্ছি তবে কিসের যেন শূন্যতা রয়ে যাচ্ছে,কথাটা আহানা শেষ না করতেই পাশেই শান্তর উপস্থিতি টের পেলো
শান্ত তোষকের উপর পা মেলে বসে পড়লো
তারপর একটা গান চালালো ফোনে এরপর ফোনটাও পাশে রেখে দিয়ে আনমনে চাঁদটার দিকে তাকালো
আহানা শান্তর কার্যকলাপ দেখা শেষ করে সেও চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো এবার
শান্ত আহানার গায়ের সাথে লেগে বসতেছে বারবার আহানা সরতে সরতে বারান্দার শেষ প্রান্তে চলে এসেছে
তাই বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বললো”আপনি কি চান আমি পাহাড়ের নিচে পড়ে যাই?”
.
না চাই না,বাট তুমি কেন পড়তে চাচ্ছো সেটাই বুঝলাম না
.
কে বললো আমি পড়তে চাচ্ছি?আপনি তে বারবার গায়ে লাগছেন তাই তো সরতেছি
.
বাহ রে!!তোমার স্বামী আমি
আমি তোমার গায়ে লাগবো না তো কে লাগবে??আর তুমি কেমন স্ত্রী??
গায়ে লাগলাম বলে সরতেসো কেন?চুপ করে বসে থাকলেই পারো
.
আহানা আর কিছু বললো না,দুহাত দিয়ে গা টা ঢেকে বাইরের দিকে চেয়ে রইলো
শান্ত রুমে জ্যাকেট খুলে রেখে এসেছে নাহলে এখন জ্যাকেটটা আহানাকে দিতো গায়ে দেওয়ার জন্য
তারপর কি মনে করে গিয়ে নিজের বিছানার উপর থেকে চাদর এনে সেটা গায়ে মুড়িয়ে আহামার পাশে বসলো
অথচ তার শীত করে না,শীত করতেছে আহানার
আহানা ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে ওর দিকে
শান্ত গানের তালে তালে ঢুলতে ঢুলতে বললো”কেউ চাইলে চাদরটা শেয়ার করতে পারে আমার সাথে ”
.
নো থ্যাংকস
.
তোমার না জ্বর?
.
এত কেয়ার থাকলে পুরো চাদরটাই আমাকে দিয়ে দেন,ঢং না করে,আমি খুব ভালো করে জানি আপনার শীত করছে না
.
আরে আহানা বুঝতেছো না কেন??অন্য কাপলরা চাদর মুড়ি দিয়ে একসাথে বসে থাকে এসময়ে,তাহলে আমরা কেন বাদ যাব??
.
আহানার খুব রাগ হলো এবার,রাগের বশে সে বললো”অন্য কাপলরা হানিমুন সেরে বাড়ি গিয়ে সুখবর শোনায় তাদের ফ্যামিলিকে,তাহলে আমরা কেন বাদ যেতাম?
.
শান্ত মুচকি হাসলো তারপর তার গায়ের থেকে চাদরটা ফেলে ধাওয়া করলো আহানাকে
আহানা পিছোচ্ছে আর সে এগোচ্ছে
আহানা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”আমি আসলে মজা করছিলাম,আপনি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছেন?”
.
শান্ত আহানার একদম কাছে এসে বললো”কাল বাড়ি ফিরে যাব,তাহলে কাল মাকে সুখবর কি করে দিব আমরা? হাউ?”
.
আহানা আরেকটা চড় মেরে দিলো,তবে আস্তে করে,ওরকম ঠাস ঠুস না,জাস্ট গালে হাত লাগিয়ে মুখটা আরেকদিকে ফিরিয়ে দিলো
.
শান্ত মুচকি হেসে মুখটা আবারও আহানার দিকে ফেরালো,মুখ এগিয়ে এনে আহানার গলায় ঘষতেছে সে এখন
খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শে আহানার কাতুকুতু লাগতেছে প্রচণ্ডরকম ভাবে
শান্তকে সরাতে ধাক্কা দিলো সে
তারপর নড়তে নড়তে বললো”প্লিস অন্তত এরকম দুষ্টুমি করবেন না,কাতুকুতু লাগতেছে”
.
শান্ত মুচকি হেসে উঠে চলে গেলো
আহানা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো,গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বড় করে শ্বাস নিচ্ছে সে,শান্তর কি হয়েছে আজকে
কথা মাটিতে পড়ার আগেই একশান নিচ্ছে,সব কিছুতে ভয় করছে আমার
সন্ধাবেলায় গালে চুমু এখন আবার এটা,হইছে টা কি উনার??মন খারাপ করে থাকাও বারণ আমার,সবসময় দাঁত কেলিয়ে থাকা যায় এত??
তার উপর স্পষ্ট করে কারণ না বললেও ঠিক বুঝে নেয়
কি একটা ঝামেলা!
.
শান্ত আহানার বালিশটা নিজের বেডে নিয়ে আসলো,আহানা ৫/৬মিনিট পর বারান্দা থেকে এসে তার বালিশ শান্তর বিছানায় দেখে বললো”এটা কি আবার?”
.
ওমা!নতুন কাপলরা একসাথে ঘুমায়,জানো না?
.
আমার ঘাঁট হয়েছে আপনাকে ওসব বলায়,,প্লিস নতুন কাপল কাপল বলা এসব অফ দেন
.
না অফ দিব না,তোমার একবার একটাতে মন খারাপ হয় আমি শুধু জানতে চাই তুমি ঠিক কিসে হ্যাপি?
কোমড় ধরলে চেঁচাও আবার না ধরলেও চেঁচাও
কেয়ার করলে আড় চোখে তাকাও না করলে কাঁদিয়ে ভাসিয়ে ফেলো
স্ত্রীর অধিকার দিতে চাইলেও দোষ,না দিলে বাপরে বাপ ইজ্জতের ফালুদা করে ফেলো
আমার তো এখন মনে হচ্ছে ইন ফিউচার তুমি বাচ্চার হওয়ার সময়ে বলবা “এটা ঠিক না,আই এম কনফিউজড, আই নিড সাম টাইম”
মানে আমাকে সব দোষ দিতে চাও তুমি আর এটাতেই তুমি হ্যাপি হও,কি চিজ তুমি!আসলেই বুঝি না আমি
এখন মনে হচ্ছে রতন আর সাইমন কেন তোমাকে এখন পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি
ভাই আমি বিয়ে করা বর হওয়ার সত্ত্বেও কিস করতে গিয়া আর হুদাইও মোট মিলাইয়া কতগুলো চড় যে খাইছি
.
ব্যস! এত অভিযোগ যখন জোর করে বিয়ে করেছেন কেন??
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আমি একটা কাগজে লিখে দিব যে আমি ঠিক কি কারণে তোমাকে বিয়ে করেছি তারপর সেটা দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবো
কারণ তোমাকে বিয়ে করার পর থেকে তুমি এই প্রশ্নটা মিনিমাম দেড় শতবার জিজ্ঞেস করেছো এন্ড আই নো তুমি এই প্রশ্ন আরও আরও করবে
.
কথা সেটা না, কথা হলো….
.
চুপ!আর একটা কথাও না,এখানে এসে বসে থাকো,আমি গিয়ে দেখি খাবার কি পাওয়া যায় এখানে তারপর এসে তোমাকে নিয়ে যাব

এই লোকটা আমার কোনো কথা কখনও বুঝার চেষ্টা করে না,নিজের কথাই কথা হয়ে গেলো
.
শান্ত প্রায়ই ১০/১৫মিনিট পর আবার ফেরত এসে বললো”বাম্বো চিকেন খাবে ডিনারে,আহানা যেন তৈরি হয়ে নেয়,রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবে তারা”
.
আহানাও এক পায়ে খাড়া!! লাফ দিয়ে উঠে বললো “চলুন”
.
শুনো!রেডি হয়ে নেওয়া মানে এই না যে যেই জায়গায় বসা থাকে ঐ জায়গা থেকে উঠে বললা “চলুন”,রেডি হওয়া মানে চুল ঠিক করে,পোশাক আশাক ঠিক করে নেওয়া,বুঝছো??
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো একবার,বনমোরগের মতন লাগতেছে তোমাকে
.
আহানা কপাল কুচঁকে চুলগুলো টেনেটুনে খোঁপা করে নিয়ে শাড়ীটাও টেনে ঠিক করে নিলো তারপর বললো”এবার তো চলুন”
.
কি ব্যাপার বলো তো?তোমার এত তাড়া কিসের?
.
তাড়া কিসের সেটা কোন মুখে জিজ্ঞেস করছেন আপনি?আমাকে যে বিকালে নাস্তায় শুধু চা খাওয়াইছেন সেদিকে খেয়াল আছে আপনার?কিপটা জামাই একটা!
এত টাকা কি করবেন যদি আপনজনই খিধায় মরে যায় যায় অবস্থা হয়
.
তুমি যে খাদক একদিনে”শান্তি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির “সব টাকায় খাবার কিনে সেটা খেয়ে সাবাড় করে দিতে পারবা
.
খোঁটা দিচ্ছেন??আমি যাবো না,ডিনার ও করবো না
.
কথাটা বলে আহানা গায়ে কাঁথা টান দিয়ে লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো
.
আরে আরে!এরকম রাগ দেখাও কেন?আমার খিধা লেগেছে,চলো এখন,রাগ-টাগ বাদ দাও,ওসব পরে হবে,উঠো বলছি
.
যাব না আমি,আপনার টাকায় আপনি খাবার কিনে খান
.
দেখো মেজাজ খারাপ করবা না,তা নাহলে কোলে তুলে নিব কিন্তু!
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে চুপ করে আছে কাঁথা মুড়ি দিয়ে
শান্ত যখন দেখলো তার হুমকিতেও আহানা তার কথার নড়চড় হয়নি তখন সে নিচু হয়ে আহানাকে বিছানা থেকে তুলে নিলো
তারপর হেসে বলতে যাবে যে”দেখলা তো কথা শুনো নাই এখন কোলে নিয়েছি”
কিন্তু সেটা সে বলতে পারলো না কারন আহানা তো মহাখুশি তার কোলে উঠে
এমন কি সে মুচকি হেসে শান্তর গলা জড়িয়ে ধরে কোলে উঠাটা সেট ও করে নিলো যেন কত পথ এমতাবস্থায় পাড়ি দিতে হবে
.
শান্ত ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো”তুমি আমার কোলে উঠে হ্যাপি?”
.
ভালোই লাগতেছে,এখন চলুন যাই রেস্টুরেন্টে
.
তুমি আসলে!!!এসব তাহলে নাটক ছিলো!
.
শান্ত উপায় না পেয়ে চুপচাপ আহানাকে নিয়ে হোটেল থেকে নামলো,ম্যানেজার এবং আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে
শান্ত একটা রুমাল দিয়ে মুখটা ঢেকে নিয়েছে নামার সময়
আহানা মুচকি মুচকি হাসতেছে,প্রায় ২মিনিট হয়ে গেছে শান্ত আহানাকে নিয়ে হেঁটেই চলছে
আহানা চুপ করে এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত ওর দিকে একবার তাকায় তো আবার সামনের রোডটার দিকে তাকায়,রোডটা মোটামুটি অন্ধকার তবে আশেপাশের রিসোর্ট গুলো থেকে আলো আসতেছে কিছু
আহানা মুগ্ধ হয়ে শান্তকে অপলক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে,শান্ত হাঁপাচ্ছে এবার,অনেকটা পথই হেঁটেছে সে
আহানা কোনোদিকেই তাকাচ্ছে না,শুধু শান্তকে দেখায় ব্যস্ত সে
.
শান্ত সামনের পথের দিকে চেয়ে বললো”আরেকদিকে তাকাও,এরকম চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেন?আগে কখনও দেখো নাই আমাকে?”
.
দেখি নাই,তবে এ প্রথম এত সময় ধরে কোলে নিয়ে হাঁটতেছেন তো! আই এম ইমপ্রেসড
.
তোমার ইম্প্রেসডের গুষ্টি উদ্ধার করবো আমি,১৪দিনের জিম হয়ে গেছে আমার একদিনেই
এত ওজন বাপরে বাপ!দেখে বোঝা যায় না আসলেই
মনে হয় ৬০/৭০কেজির আলুর বস্তা আরও নরমাল ওজনের হবে
তোমার ওজনের কাছে সেসব ফেল
.
কখনও তুলছেন যেভাবে সিউরিটি নিয়ে বলতেছেন??
.
এক্সকিউজ মি!!
.
না আলুর বস্তা কেন তুলবেন,সেটাই!
.
হুম!গেস করলাম আর কি,বাই দ্যা ওয়ে তোমার ওজন কত?
.
অনলি ৫৩কেজি
.
এই জন্যই আমার ডান হাতের রগটা পিনপিন করতেছে যেকোনো সময় চটাস করে ছিঁড়ে যাবে
.
কেমন স্বামী আপনি?বউকে তুলতে পারেন না
.
তুলতে পারি না?দীর্ঘ ৩মিনিট ধরে হাঁটতেছি কোলে নিয়ে
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও এক কথা ছিলো
বিনা রেস্টে হাঁটতেছি
আমি তোমাকে নামানের পর আমাকে একটা এ্যাওয়ার্ড দিবা,প্রাপ্য আমার
.
রেস্টুরেন্টের সামনে এসে অবশেষে শান্ত আহানাকে নামালো
তারপর বললো”দাও আমাকে কি দিবা,এত কষ্ট করলাম”
কথাটা শান্ত হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললো
.
আহানা পা উঁচু করে শান্তর গালে চুমু দিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে চলো গেলো এক দৌড়ে
শান্ত রীতিমত অবাক,হা করে সে আহানার চলে যাওয়া দেখছে
আহানা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো রেস্টুরেন্টের
শান্ত তার কিছুক্ষণ পর এসে সেও বসেছে,দুজনে দুজনের দিকে তাকাচ্ছে না,এরকম একটা সিচুয়েশনে খাবার ও জলদি এসে গেলো,দুজনে আরেকদিকে ফিরে খাবারটাও শেষ করে ফেললো,তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এবার দুজনে কিছুটা হলেও নরমাল হয়েছে
আহানা রোডের পাশে দাঁড়িয়ে দূরের পানে চেয়ে আছে,দূরে একটা পাহাড়ে আলো জ্বলছে,নিশ্চয় কারোর বাড়ি-ঘর হবে সেখানে
শান্ত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে তার ফুফুর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত,ফুফু জিজ্ঞেস করলেন ডিনার করেছে কিনা,মন চাইলে আবার ফেরত আসতে পারে তারা
শান্ত বললো ডিনার করেছে উনি যেন চিন্তা না করে
.
কথা বলা শেষে শান্ত এসে বললো”হুম চলো যাই”
আহানাও পিছু পিছু আসতে লাগলো কোনো কথা না বলেই,আজকে যা যা হয়েছে জীবনেও তা সে আর শান্ত দুজনের এক জনেও কল্পনাও করতে পারে নাই
দুজনেরই মুখে কোনো কথা নেই
অন্ধকার একটা পথ ধরে দুজনে হাঁটতেছে,মাঝখানে হালকা দূরত্ব বিদ্যমান
শান্তর হাতে বারবার আহানার শাড়ীর ছোঁয়া লাগছে,যতবার লাগছে ততবারই সে আড় চোখে আহানার দিকে তাকায়
আর আহানা সোজা নিচের দিকে চেয়ে হেঁটে চলেছে
কিছুদূর যেতে না যেতেই শান্ত হঠাৎ আহানার হাতটা চেপে ধরলো
আহানা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলে উঠলো”কেউ যদি তোমাকে টেনে নিয়ে যায়,সাবধানতার তো কূল নেই তাই না?”
.
আমার হাত ধরতে মন চাইছে সেটা বললেই হয় এত বাহানার কি আছে?
আর আমাকে কে নিয়ে যেতে চাইবে?শুধু এক কথা আমাকে কে নিয়ে যাবে,কচু নেবে!নিজের বর আমাকে সামলাতে পারে না অন্যরা কি করবে,আর আপনাকে চেনা আছে আমার
কেউ নিয়ে গিয়ে আপনাকে কল করলে বলবেন”ভাই ছেড়ে দে নাহলে তোরে আহানা নিজেই কাঁচা গিলে খেয়ে নেবে”
.
শান্ত আহানাকে টান দিয়ে ওর সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বললো”তোমার মনে হয় আমি এটা বলবো?যেটার ভয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি আর সে আমি কিনা এসব বলবো??জানে মেরে দিব যে তোমাকে আমার থেকে আই মিন কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে চাইবে তাকে
.
আপনার থেকে?বাব্বাহ এত প্রেম!
.
ও তুমি বুঝবে না,তুমি ঝগড়া ছাড়া জীবনে আর কোনো উন্নতি করতে পারবা না জানা আছে আমার
.
হুহ!

দুজনেই রিসোর্টে যখন ফিরে আসলো তখন ঠিক রাত সাড়ে ১০টা বাজে
আহানা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদটাকে দেখছে
কি সুন্দর পরিবেশটা,নিশ্চুপ,শহরের কোনো বালাই নেই এখানে
চাঁদের আলো সোজা মুখের উপর এসে পড়ছে,ইস যদি চাঁদটাকে ছুঁতে পারতাম!
.
পাশে শান্ত এসে বললো”এই চাঁদকে ছুঁতে পারো”
.
আহানা একটা ভেঁংচি দিয়ে বললো”আপনি বুঝি চাঁদ?”
.
চাঁদ কিনা জানি না তবে আজ ঠিক যেমন করে আমাকে দেখছিলে এখনও আকাশের ঐ চাঁদকে তেমন করেই দেখছিলে তাই বললাম আর কি
.
♥যে জিনিস আমরা পাই না,কিন্তু যেটা পাই সেটাতে সে জিনিস মনে করে আপন করে নিই♥
আচ্ছা একটা কথা জানার ছিল
.
বলুন!! আসুন আগে বসুন
শান্ত আহানার হাত ধরে নিচে বিছানো তোষকে বসিয়ে দিলো তারপর গালে হাত দিয়ে আহানার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো সে কি বলতে চায়
.
আহানা হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো একটা কথা
আর সেটা হলো”আপনি কখনও প্রেম করেছেন?”
.
নাহ,অফিসের কাজের চাপে,মায়ের কেয়ার,নিতুর কেয়ারের চাপে আমি এসবের ঘানি টানি নাই,দেখোই না তোমাকে বিয়ে করে বিয়ের দায়িত্ব উঠাতে গিয়েও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি
.
আচ্ছা!তো প্রেমে পড়েছেন কারোর?
.
শান্ত আহানার দুচোখের দিকে তাকিয়ে বললো”হ্যাঁ,পড়েছি”
.
কে সে??দেখতে কেমন?তার কি বিয়ে হয়ে গেছে আপনার মতো?
.
হ্যাঁ তার বিয়ে হয়ে গেছে,তাকে কত বছর ধরে মনে রেখেছিলাম,তার ছবিটা আজও আমার আলমারিতে যত্ন করে রাখা
.
তো তাকে বলেননি কেন?বললে তো আজ সে আপনার হতো
.
মেয়েটা অনেক বাজে বুঝলে,মানে কি বলবো,ওর মতন স্বভাবের মেয়ে আমি আর দেখিনি,প্রচুর দুষ্টুমি করে,সে সবসময় আমাকে হারাতে চাইতো,আমার যা সব তার হওয়া চাই
.
ছোট থেকে জানতেন বুঝি?
আসলে আমার মনে নেই ছোটবেলার কথা তা নাহলে মনে থাকতো শান্ত ভাইয়া ঠিক কোন মেয়েটার জন্য পাগল ছিলো, আমি তাকে চিনি কিনা
.
আরে তুমি চিনো ওকে!
.
তো আমাকে বিয়ে করলেন কেন তাহলে??মনে যদি একটুও মায়া থাকতো তার জন্য অন্য কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছাই আসার কথা না আপনার
.
আরে কি করবো বলো,আমি যেদিন তোমাকে বিয়ে করেছিলাম সেও সেদিন বিয়ে করে নিয়েছে,তাই তো আমিও করে নিয়েছি
.
ওহহ!
.
এবার আমি প্রশ্ন করবো
.
হুম বলেন
.
তোমার সাথে আমার যেদিন দেখা হয়েছিলো সেদিন তুমি সুইসাইড করতে চেয়েছিলা,আমি জানতে চাই কেন??
.
ওটা ফিনান্সিয়াল প্রবলেমের কারণে,আসলে আমি একা সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতাম তাই এসব থেকে মুক্তি পেতে সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম,মায়ের জন্য তো খালা আছে সেই সুবাদে
.
আহা কত প্ল্যান,আমি তো ভাবলাম কোন ছেলে ছ্যাকা দিলো আবার,অবশ্য এখন মনে হচ্ছে কোনো ছেলেই তোমাকে সামলাতে পারবে না,যদিও আমি একটু একটু পারি বাট অন্য কেউ পারে নাই পারবেও না,ইম্পসিবল একটা ব্যাপার
.
সেটা ঠিক,তবে আমি কি এত খারাপ বলুন?
.
প্রশ্নটা করে আহানা অসহায় একটা লুক নিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত আহানার গাল ধরে টেনে বললো”ওলেলেলে”
.
উফ,গাল টানেন কি জন্য?
.
এরকম ফুলা ফুলা গাল দেখলে টানতেই মন চায়,তোমার সাথে ঝগড়া করতে করতে আমি কতদিন কাটালাম,গাল টানলাম আজ,কি ভুল করলাম,বিয়ের দিন থেকে টানা উচিত ছিলো
.
আমিও আপনার চুল টেনে দিব
.
দাও,মাথা ব্যাথা করতেছে
.
আহানাও ভালো মেয়ের মতন চুলগুলো টেনে দিলো শান্তর
.
বাট এক দিক দিয়ে আমি খুশি,অন্তত ঐ কণার হাসবেন্ড হই নাই
.
হলে ভালো হতো,আপনার ওয়াইফ ও হলে আপনার এসব ঢং বের হই যেতো,আমাকে ঝগড়ায় যা তা বলেন,কণাকে বললে একদম মুখটা সেলাই করে দিতো আপনার,তখন ঠিক হতো
.
তোমার ও রতনের সাথে বিয়ে হলে বেশ হতো,আসতে এক চড় যেতে এক চড় খেতে,আর বাকি টর্চার তো আছেই
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চুল টানা বন্ধ করে দিয়ে উঠে চলে গেলো
শান্তর বিছানা থেকে ওর বালিশটা নিয়ে সে পাশের বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো
শান্ত উঠে এসে দেখলো তার ওয়াইফ আগের জায়গায় এসে শুয়ে পড়েছে
.
আহানা এখনও ঘুমায়নি,সামনে থাকা দেয়ালটার দিকে চেয়ে আছে সে,অথচ শান্তর কোনো সাড়াশব্দ নেই
আহানার রাগ আরও বেড়ে গেছে,গাল ফুলিয়ে সে চোখ বড় বড় করে এবার দেয়ালটা দেখে যাচ্ছে
প্রায়ই ১২/১৪মিনিট পর আহানা খেয়াল করলো একটা হাত ওর কোমড় ছুঁয়ে ফেলেছে,পাশ ফিরে তাকাতে যেতেই এবার শান্ত ওর মুখটা আহানার গলায় এনে রাখলো তারপর চোখটা বন্ধ করে বললো”অলরেডি ১২টা বেজে গেছে,ঘুমাও,আর নিশ্চয় এখন কোমড় ধরা নিয়ে চেঁচাবা না?”
.
আহানাও আর কিছু বললো না,চুপচাপ আবারও দেয়ালটার দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো সে

রাত এখন ১টা ৩২বাজে,আহানা ঘুমিয়ে গেছে, শান্ত ঘুমায়নি,কেন যেন ঘুম আসতেছে না
আহানাকে অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে সে জাস্ট আহানার রাগটা ভাঙ্গার জন্য ওকে ধরেছিলো
ঘুম আসতেছে না দেখে উঠে বসলো সে
আহানা হাত দুটো মাথার নিচে রেখে গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছে খাটের এক কোণায়
শান্ত কাঁথাটা ওর গায়ে ভালো করে টেনে দিয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো
একে আমি কখনও ছাড়তে পারবো না,আমার লাইফের একটা অংশ হয়ে গেছে মেয়েটা
শুধু একবার বলো”আমাকে চাও”
যে জোর আমি তোমাকে বিয়ে করতে করেছি সেটা অন্য কিছুতে করতে চাই না আহানা
মাঝে কিসের যেন দেয়াল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বারবার
আমি জানি না কেন,কিসের জন্য ওকে কাছে নিয়েও নিতে পারি না
.
আহানা ঘুরে শান্তর হাতটা জড়িয়ে ধরলো ঘুমের ঘোরে
.
শান্ত বসেই ছিলো,আহানা এভাবে হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে নেওয়ায় তার সব ভাবনায় ছেদ পড়েছে
আরেকটা হাত বাড়িয়ে আহানার চুল গুলো এলিয়ে দিলো সে
তারপর কি মনে করে চুলের ভিতরে হাত দিয়ে ওর মাথাটা ধরে টান দিয়ে ঘুম থেকে তুলে ফেললো ওকে
.
আহানাকে ঘুম থেকে এমন হুট করে উঠিয়ে দেওয়ায় আহানা প্রথমে বেশ ভয় পেলো তারপর বুকে থুথু দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর ব্যাপারটা বুঝতে পারলো যে শান্ত আবারও ওর এত সুন্দর ঘুম টেনে তুলে নষ্ট করেছে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
রাত ১২বাজে ২মিনিট,,,দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে শান্ত,তার কাঁধে মাথা রেখে আহানা ঘুমাচ্ছে,সেও শান্তর মতন ফ্লোরে বসে আছে,শান্ত সোফাটার দিকে চেয়ে ভাবতেছে সে এখন সোফায় গেলে আহানা তাকে ছাড়বে না,ভাগ বসাবে, যার কারণে দুজনেই ফ্লোরে বসে আছে আপাতত
আহানা শান্তর নড়াচড়ায় জেগে চোখ ডলে বললো”এভাবে ঘুম হচ্ছে না তো”
.
তো?তুমি তো তাও দুমিনিট ঘুমালে আমি তো সেটাও পারছি না,মাথা সরাও তোমার,ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেলো,মাথা তো নয় যেন ৫০কেজির রড
.
আহানা মাথা ধরে সোজা হয়ে বসলো তারপর হাই তুলতে তুলতে শান্তর কোলে মাথা রেখে ফেললো ঘুমের ঘোরে
শান্ত কিছু বলে উঠার আগেই সে শুয়ে পড়েছে
শান্ত কি করবে এখন,কোথায় বউয়ের কোলে মাথা রেখে তার ঘুমানোর কথা সেখানে তার বউ তার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে
সব উল্টা হচ্ছে তার সাথে,এদিকে আহানা এত সুন্দর করে গুটিশুটি দিয়ে শুয়েছে যে ওকে ধমক দিয়েও উঠানোর শক্তি ভেতর থেকে আসছে না,কি করা যায়!
.
আহানা ঘুমের ঘোরে বললো”আপনিও আমার মতো শুয়ে পড়েন দুমিনিটের জন্য”

পরেরদিন সকালে শান্ত চোখ খুলে দেখলো আহানা তার কোলে মাথা রেখেছিলো আর সে এখন আহানার মাথার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলো
হুস আসতেই মাথাটা উঠিয়ে নিলো সে
আহানা শান্তর শেরওয়ানি খাঁমছে আরও উষ্ণতা নিয়ে ঘুমাচ্ছে
শান্ত মুচকি হেসে ওর চুলগুলো গুছিয়ে ওর কানে গুজে দিলো
মনে হয় যেন একটা বাচ্চাকে সে আগলে রেখেছে তার কোলে
শান্ত এবার ঘড়ির দিকে তাকালো,সকাল ৬টা বাজে,পিঠ ব্যাথা হয়ে গেছে এভাবে বসে বসে ঘুমাতে গিয়ে
এদিকে আহানাকে সরাতে পারছে না,জোঁকের মতন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে সে শান্তকে
শান্ত আহানাকে নিচ থেকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো,বিছানার চাদরটা নিচে পড়ে আছে,কাল যে ঝগড়া করেছিলো দুজনে মিলে
আসলেই তো চাদর না থাকলে তো বিছানায় শুতে সমস্যা হওয়ার কথা না আর আমরা কিনা সারারাত এত কষ্ট করলাম
শান্ত আহানার পাশে নিজেও শুয়ে পড়লো
আহানা একটিবারের জন্যও জাগলো না,রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারায় এখন মনে হয় সে ঘুমের শেষ রাজ্যে আছে
সকাল ৮টা পর্যন্ত দুজন মিলে প্রচুর ঘুমালো
শেষে আহানা ৮টা বাজে উঠে বসে পড়লো
নিজেকে বিছানায় দেখে এক প্রকার শক খেলো সে,তারপর ফিল করলে হাত পা চুলকাচ্ছে না
শক থেকে বেরিয়ে সে বিছানা থেকে নেমে গেলো
সারা গায়ে শাড়ীর পুতির দাগ বসে গেছে,এসব শাড়ী পরে ঘুমানো যায় নাকি!
মা এত কষ্ট দিলো মেহমানদের মুখ রাখার জন্য
তাড়াতাড়ি এই শাড়ী পালটাতে হবে,সারা শরীরে চিনচিন ব্যাথা করতেছে
আহানা গিয়ে দরজা ধাক্কালো কেউ আসলো না খুলার জন্য
এদিকে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে শান্ত জেগে গিয়ে আহানাকে গালি দিতে দিতে আবারও ঘুমিয়ে গেছে
.
৩০/৩৩মিনিট বাদে শান্ত জেগে গেলো আবারও,চোখের সামনে কাকে যেন দেখলো সে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে একটা মেয়ে,যেন চুল তার জীবনের মহাশত্রু
শান্ত ভালো করে চোখ দুইটা খুলে দেখলো আহানা,পরনে ওর শার্টটা যেটা সে আজ পরবে বলে এনেছিলো,আর নিচে শাড়ী দিয়ে ঘাগড়া বানিয়ে পরেছে
শান্ত উঠে বসে বললো”এসব কি”
.
আহানা চুল থেকে হাত সরিয়ে বললো”আপনার গুনধর বন্ধুরা দরজা এখনও খুলছে না এদিকে ঐ শাড়ীটা পরে আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না বলেই তো হাতের কাছে আপনার শার্টটা পেয়ে পরে নিলাম
প্যান্ট পরলাম না সেটা আরও বিরক্তিকর
আপাততর জন্য আমার শাড়ীটা পেঁচিয়ে স্কার্ট বানিয়ে নিলাম,সুন্দর না?
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে তোয়ালেটা হাতে করে বাথরুমে চলে গেলো
আহানার মনে পড়লো সে তোয়ালের মধ্যে লোশন ঢেলে রেখেছিলো
সাথে সাথে সেও বাথরুমের ভেতর ঢুকে পড়লো
.
এটা কি আবার!তুমি ঢুকসো কেন?
.
ইয়ে মানে,তোয়ালেটা দিন আমাকে
.
কেন?
.
লাগবে আমার
.
যাও বের হও,আমি এখন ফ্রেশ হবো
.
আগে তোয়ালেটা দিন আমাকে
.
কেন সেটা তো বলো
.
ঐ আসলে আমি কাল দুষ্টুমি করে লোশন ঢেলে দিয়েছিলাম তোয়ালেতে যাতে পুরোটা আপনার মুখে ভূতের মতন মাখিয়ে যায়
.
ইউ!!
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে দৌড় দিলো বাইরের দিকে
শান্ত মুখটা ধুয়ে শেরওয়ানী দিয়ে মুখ মুছে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো আহানার দিকে
আহানা গাপটি মেরে বিছানার কোণায় বসে আছে
শান্ত নওশাদকে ফোন দিলো এবার,নওশাদ ঘুম ঘুম চোখে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই এপাশ থেকে শান্ত এক ধমক দিয়ে বললো দরজা খুলতে
নওশাদ “সরি” বলে আসলো দরজা খুলতে,সে আর সূর্য গেস্ট রুমে ঘুমাচ্ছিলো
দরজা খুলতেই শান্ত আহানার দিকে চেয়ে বললো”যাও তোমার জামা নিয়ে এসো,আর আমাকে আমার শার্টটা ফেরত দাও”
.
আহানা বিছানা থেকে নেমে মুখ বাঁকা করতে করতে চলে গেলো
১০/১৫মিনিট পর সে একটা থ্রি পিস পরে আসলো হাতে শান্তর শার্টটা নিয়ে তারপর ওকে সেটা দিয়ে আবার চলে গেলো মাকে নাস্তা বানাতে হেল্প করতে
মা আর খালা শুধু হাসতেছেন,কেন হাসতেছেন তার কারণ অজানা,আহানা ঠিক বুঝতেছে না এর কারণ কি
শান্ত এসে ডাইনিংয়ে বসতেই একটা খাম পেলো টেবিলে
হলুদ রঙের খাম
আগ্রহ বশত সে খামটা খুললো,ভিতরে একটা চিঠি
চিঠিটা যিনি লিখেছেন তার হাতের লেখা দেখেই শান্ত চিনেছে এটা কার হাতের লেখা,এটা তার ফুফুর হাতের লেখা
তিনি লিখেছেন শান্ত যেন আজকেই সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাও আহানাকে নিয়ে
কদিন তার বাসায় থাকতে হবে এবং সাজেকটাও ঘুরে নেওয়া যাবে
শান্ত বুঝলো ফুফু কেন তাকে কথাটা সামনা সামনি বলেনি কারণ সামনা সামনি বললে হয়ত শান্ত রাজি হতো না বরং ডাইরেক্ট মানা করে দিতো
শান্ত ভাবনায় পড়ে গেলো তারপর আহানাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো
আহানা জানতে চাইলো কি ব্যাপার!
শান্ত ওর হাতে খামটা ধরিয়ে দিয়ো বললো”তোমার কি মত?”
.
আহানা চিঠিটা পড়ে চুপ করে থেকে হঠাৎ করে এক লাফ দিয়ে উঠলো তারপর শান্তর হাত টেনে ধরে লাফাতে লাফাতে বললো”এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে,চলুন না যাই,খুব মজা হবে,আমার তো নাচতে মন চাচ্ছে,সাজেক হচ্ছে স্বপ্নের রাজ্য
চলুন এখনই যাই”
.
আর ইউ ম্যাড?এমনিতেও বিয়ে বিয়ে করে আমার অফিসের অনেক কাজে কারচুপি হয়ে গেছে আর তুমি পড়ে আছো সাজেক নিয়ে
.
তো?আপনার ফুফু জোর দিয়ে বললো তাই আগ্রহ দেখালাম,,,,না গেলে নাই,আমার কি
.
আচ্ছা আমি মাকে বলে দেখবো,তুমি প্যাকিং শুরু করো,মা শুনলে নির্ঘাত হ্যাঁ বলবে জানা আছে আমার
আহানা রান্নাঘর থেকে নাস্তা এনে শান্তর সামনে রেখে এক দৌড়ে গেলো প্যাকিং করতে,সাজেকে এক মাস থাকবে সে মনে মনে ভেবে নিয়েছে,বিন্দু বিন্দু করে সব জায়গা সে দেখবে,এত দিনের স্বপ্ন এভাবে পূর্ণ হবে একদমই ভাবেনি সে
.
শান্ত নাস্তা করে তার বাসায় চলে এসেছে,মাকে কথাটা বলায় যা ভেবেছিলো তাই হলো,মা তো রাজি,মুচকি হেসে তাই বুঝালেন
শান্তর অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা নেই,চিন্তা হলো আহানাকে নিয়ে
যে পরিমাণ দুষ্টু সে,পুরো সাজেক মাথায় করে নাচবে,আসার সময় সব ওলট পালট করে তারপর আসবে
না জানি ফুফুকে কেমন জ্বালায়
.
ওদিকে আহানা ফোন করে জানালো সে রেডি,শান্ত তখন সবেমাত্র একটা জামা নিয়েছে ব্যাগে,এক ধমক দিয়ে সে বললো”বেশি সাজেক সাজেক করলে ওখানে রেখে চলে আসবো ”
.
ওমা!এমন করেন কেন,আপনার ফুফুকে বলে দিব যে আপনি সাজেক যেতে রাজি না একদম,ধরে বেঁধে এনেছি
.
যেটা সত্যি
.
যাই হোক,কখন বের হবেন?
.
আমার প্যাকিং হয়নি,আমি রেডি হয়ে যাওয়ার সময় তোমাকে পিক আপ করে নিব
.
আপনি সাজেকের পথ চিনেন?
.
আমার ফুফুর বাড়ি ওখানে,বহুবার গেছি,গুগল ম্যাপেরও প্রয়োজন পড়বে না
.
আচ্ছা আচ্ছা,তাই তো বলি আপনার মনে এত প্যাঁচ কেন,একদম সাজেকের রোডের মতন
.
কি বললে?
.
কিছু না তো,ওকে বাই,হ্যাপি প্যাকিং

শান্ত একটা হলুদ রঙের জ্যাকেট পরতে পরতে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর নিতুর গাল টিপে দিয়ে যাওয়ার সময় রিপাকে বললো মাকে দেখে রাখতে,কিছু লাগলে তাহসিনকে কল করতে
আহানা তাদের বাসার গেট ধরে ঝুলতেছে,রোডে তার ট্রলি ব্যাগ দাঁড় করানো
কখন আসবে এই লোকটা,আমার খিধে লেগে গেছে
সাইড ব্যাগের থেকে একটা সেদ্ধ ডিম নিয়ে আহানা খেতে খেতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,জার্নিতে সে আর কিছু না নিক,সেদ্ধ ডিম অবশ্যই নেবে,এট লিস্ট পেট তো ভরে,চিপস চকলেটে তো আর পেট ভরে না
আহানা একটা কালো রঙের সুতির শাড়ী পরেছে আজ,মা বলেছে ফুফু শাশুড়ি আমাকে জামায় দেখলে কত কথা বলবে,তাই মা আমাকে শাড়ী পরতে বলেছে হয়ত
আহানা ডিমটা খেয়ে এবার পানি খেলো, শান্তর খবর নেই,এবার সে পায়চারি করতেছে সময় কাটানোর জন্য
১/২মিনিট বাদেই শান্তর কার দেখতে পেয়ে আহানার মনে হলো সাজেক বুঝি এখনই যাওয়া যাবে,মানে দু কদম পের হলেই মেঘ আর মেঘের দেখা মিলবে
আহানা ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা ধরলো কারের দিকে
শান্ত কার থামিয়ে বললো ব্যাগটা পিছনের সিটে রেখে ফ্রন্ট সিটে এসে বসতে
আহানা তাই করলো
.
আমি তো এখানে এসে কল করতাম,আগে থেকেই গেটে এসে ছিলে কেন?
.
আপনার কি?আপনি বুঝবেন না,এই প্রথম যাচ্ছি,আমার কেমন ফিল হচ্ছে আপনাকে সেটা বলে বুঝানো যাবে না
যাই হোক আগে এটা বলুন আগে কি আপনার ফুফুর বাড়ি যাবো নাকি সাজেকের রিসোর্ট গুলাতে যাবো?
.
আমার মনে হয় না ফুফু রিসোর্টে থাকতে দেবে
.
ওমা কি বলেন!রিসোর্ট থেকেই তো মেঘ দেখা যায়,ধুর!
.
আমি ম্যানেজ করবো সমস্যা নাই,তার আগে কদিন হয়ত তার বাসায় থাকতে হবে,বি কেয়াফুল
.
কেন?
.
আমার ফুফু জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকে,এত এত মানুষ তুমি পাগল হয়ে যাবে,এই জন্য আমি যেতে চাচ্ছিলাম না,আমার নিজেরই বিরক্তি লাগে তার বাসায় গেলে
.
কত আর হবে?চাচা জেঠা,তাদের পোলাপান এই তো?
.
জি এই তো তবে,আমার ফুফারা ভাই ৬জন,তাদের আবার ছেলেমেয়ে ৭/৮টা করে করে
তো এবার তুমি হিসেব করো বাড়িতে বাচ্চা বুড়ো কতটা হয়
.
আপনি মজা করছেন না তো??এত মানুষ একসাথে কিভাবে থাকে?বাসা তো তাহলে স্কুল ঘরের মতন হওয়ার কথা?
.
রাইট!স্কুলের ঘরের মতনই,প্রতি রুমে মিনিমাম ৬জন ঘুমায় রাতে
.
আমি বাসায় ফেরত যাব
.
হাহা!শান্ত কোনো কিছু নিয়ে মানা করলে এমনি এমনি মানা করে না বুঝলে আহানা বাবু??
অবশ্য আমাদের আলাদা রুম দিবে,টেনসন নিও না
.
তো আলাদা রুম দিলে ওরা কোথায় ঘুমাবে?
.
পাশের বাসায়,কথা হলো গিয়ে রাতটায় আলাদা হলেও সারাদিন ওদের মাঝখানেই বসে থাকতে হবে
.
আমার এখনই মাথা ধরেছে
.
একটু ঘুমিয়ে নাও,না জানি সেখানে তোমার ঘুম হবে কিনা
.
আহানা ব্যাগ থেকে চুড়ি নিয়ে হাতে পরলো তারপর ঘোমটা দিয়ে বসে থাকলো,শুনেছি অনেক মানুষ থাকলে নানান কথা বলে
তাই পারফেক্ট হয়ে যেতে হবে আমাকে,কেউ যাতে কোনো দোষ না ধরতে পারে
.
কিছু খাবে?হোটেল নজরে পড়তেছে আশেপাশে,থামাবো?
.
না,খিধে নেই,এত লোকের সংমিশ্রনের পরিবারের কথা শুনে আমার খিধা ভেগেছে
.
ভয় পেও না,আমি আছি না?
.
আহানা বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো”ঐ আপনাকে নিয়েই ভয়টা বেশি,সবার সামনে আমাকে নিয়ে মজা করার এই সুযোগ আপনি ছাড়বেন না
.
সেটা ঠিক
.
আবার বলেন ঠিক?আমিও কিন্তু কম না,আমাকে বাঁকা কথা বললে আমিও বাঁকা কথা বলবো আপনাকে বলে দিলাম
.
বলিও,আমার আবার ফুফাতো বোন মাত্র ৬টা,ওদের পাকা পাকা কথায় পারবা তো উত্তর দিতে?
.
আহানা সেখানে অতিব ভদ্র হয়ে বসে থাকবে,যেন ধোয়া তুলসি পাতা,আমার রণচন্ডি রুপ কেবল আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
.
বুঝলাম!
.
আচ্ছা এই যে আঁকাবাঁকা সরু পথটা দিয়ে আমরা যাচ্ছি এটার নাম কি?
.
দীঘিনালা রোড
বলতে গেলে ফুফুর বাসায় এসে গেছি
একটা টিপস দিই শুনো,সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বড় করে সালাম দিবা,ওকে?
.
ওকে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সাজেকের রিসোর্ট গুলাতে পৌঁছাতে হয়তবা ১০/১৫মিনিট বাকি ঠিক সে সময়ে শান্ত কার থামালো,এবার ডান পাশ দিয়ে আরও চিকন একটা রোড গেছে সেটা দিয়ে চলতে হবে
কার সেদিকে যাবে না,মানে ঢুকবেও না
শান্ত কারটা একটা জায়গায় পার্ক করে আহানার আর ওর ব্যাগ হাতে করে নিয়ে চললো
আর আহানা তার ঘোমটা টানায় ব্যস্ত
শান্ত হালকা হেসে বললো”আরে জাস্ট বললাম জয়েন্ট ফ্যামিলি তার মানে এই নয় যে তোমাকে সবাই মিলে ঘোমটার জন্য ধরবে,ওরা সবাই অনেক স্মার্ট”
.
আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে
.
কিছুদূর হাঁটতেই আহানা স্কুলের মতন লম্বাতে একটা বাড়ির মতন কিছু একটা দেখলো সে বিশ্বাসই করতে পারলো না এটাই শান্তর ফুফুর বাড়ি,শান্ত যখন নিজের মুখে বললো তখন তার এটা মানতে হলো শেষে
বাড়ির সামনে বয়স্ক একজন মহিলা আর পাশে ফুফু আর তার ৬টা মেয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আছে,সবার মুখে মিষ্টি হাসি
আহানা সবাইকে সালাম দিলো,উনারা আহানার পিঠে হাত দিয়ে ওকে ধরে বাসার ভিতর দিকে চললেন
.
শান্ত আমি অনেক খুশি হয়েছি তোমরা এসেছো
.
ফুফু তোমার কথা তো রাখতেই হতো,কি আর করার তোমাকে তো মানা করতে পারি না
.
আহানা বাসার ভিতর ঢুকে পুরো ১৪গুষ্টিকে একসাথে না দেখলেও এক এক করে দেখা শুরু হয়ে গেছে
সবার আগে সে এখন কথা বলছে শান্তর ফুফুর শাশুড়ির সাথে
উনি সেই কখন যে আহানার হাত ধরেছেন ছাড়ার নামই নিচ্ছেন না
শান্তকে তার ফুফাতো বোন ছোটটা যার নাম রিমু সে আহানা আর তার থাকার রুমটা দেখিয়ে দিলো
দাদি আহানাকে সোফায় বসিয়ে ওর পাশে বসে এবার ওর পরিবারে কে কে আছে,কতদূর পড়াশুনা করেছে সব জিজ্ঞেস করতেছেন
আর বাকিরা মিলে একের পর এক নাস্তা এনে টেবিলে রাখতেছে,খাবারের আইটেমের লিস্ট দেখে আহানার চোখ কপালে,এই সব তার জন্য নাকি,পুরা এক বছরের খাবার মনে হচ্ছে
শান্ত মুখটা ধুয়ে আবারও এদিকে আসতেছে,এসে দেখলো আহানার দুহাতে দুইটা পিঠা আর সে দাঁত কেলিয়ে সবার কথা শুনে যাচ্ছে
ফুফু শান্তকে দেখতে পেয়ে ওকে ধরে এনে আহানার পাশে বসিয়ে দিলেন
তারপর ওর হাতেও পিঠা ধরিয়ে দিলেন তিনি
শান্ত পিঠাটা মজা করেই খাচ্ছে,আহানা শান্তর খাওয়া দেখে এবার নিজেও খাওয়া শুরু করে দিলো,তেমন একটা মজা লাগেনি তবে আপাতত খেতে হবে তা নাহলে আবার কে কি ভাববে,আহানা আসার পর থেকে এক প্রকার ভয়ে আছে,কেউ ওকে খোঁচা দিলে ওর বড্ড খারাপ লাগে,আর খোঁচাটা যেন না শুনতে হয় তাই সে নিয়ম মেনে চলছে যতটা পারছে
তারা সবাই এখন যে রুমটাতে আছে সেটাতে সোফা আর একটা খাট আছে,ওপাশে জানালা দরজাও আছে,মানে একটা রুমে দরজা দুটো
ওপাশের দরজাটা দিয়ে মনে হয় একটা ছোট উঠানে নামা যায়
আহানা মাথা উঁচু করে সেদিকে একবার তাকালো
.
ফুফু চায়ের ট্রে আনতে আনতে বললেন”তা রিসোর্টে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি তোমাদের?”
.
শান্ত চায়ের কাপটা নিয়ে বললো”ফুফু আহানার মেঘ দেখার শখ,চলে যাওয়ার আগের দুদিন ওকে নিয়ে একটা রিসোর্টে উঠবো ভাবছি”
.
হুম সেটা করতে পারো,তবে আমি চেয়েছিলাম যতদিন সাজেক থাকো ততদিন আমার কাছেই থাকো,আমার বাড়িতে থাকো,অবশ্য এখান থেকে মেঘ দেখা গেলেও একদম দূর থেকে দেখা যায় তাই কাছ থেকে দেখার হলে তোমরা বরং রিসোর্ট একটাতেই যেও
.
কথাটা শুনে আহানা তো খুশিতে গদগদ হয়ে পিঠা আরেকটা মুখে দিয়ে বললো”ফুফু পিঠা অনেক মজা হইছে”
.
দাদি গালে হাত দিয়ে বললেন”এতক্ষণে মাইয়ার মুখে বুলি ফুটছে”
.
শান্ত টিটকারি মেরে বললো”ওরে ওর হ্যাপিনেসের সব দিয়া দাও তোমাকে মাথায় তুলে নাচবে”
.
আহানা মনে মনে শান্তকে একটা গালি দিলো তারপর বাইরে দিয়ে হেসে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে দিলো সে
.
খাওয়াদাওয়া শেষে তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে,শান্তর ফুফাতো বোন মেজোটা আহানাকে নিয়ে চললো ওদের জন্য রাখা রুমটার দিকে,আর শান্ত তার ফুফার সাথে বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে আলাপ করছে বিজন্যাস নিয়ে
আহানা রুমে ঢুকে তো রীতিমত অবাক,একদম রিসোর্ট গুলার রুমের মতন না হলেও কাছাকাছি,বাঁশের তৈরি পুরো রুমটা
তন্নি আহানাকে রুমে রেখে চলে গেছে
আহানা একটু বিছানায় গিয়ে বসে বড় করে শ্বাস নিলো,সবে ২০জনের মতন মানুষের দেখা মিলেছে না জানি আর কত!
সন্ধ্যা যত বাড়তে লাগলো শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে লাগলো ধীরে ধীরে
আহানার গায়ে শীত লাগতেই সে তার ব্যাগটা খুললো,শাড়ী আর থ্রি পিস ছাড়া আর কিছুই নেই,এ তো মহা ঝামেলা,এত শীতে আমি কি গায়ে দিব?
রুমটাতে দরজা সেই দুটোই,আবার বাথরুমও আছে দেখছি,তবে সেটা এই পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়,এটাচড না
আহানা জানালার কাছে গিয়ে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখলো না,তাই পর্দাটা টেনে সে হাত ভাঁজ করে বিছানার মাঝখানে গিয়ে বসলো,শীতে গা কাঁপতেছে এবার
একটা পাতলা কাঁথা রাখা,এটা তো আমারই হয়ে যাবে,ঐ শান্ত কি গায়ে দেবে,আজকে রাতে আবারও ঝগড়া হবে যা বুঝলাম
আহানা আপাতত শীতকে কাবু করতে কাঁথাটা পেঁচিয়ে বসে পড়েছে
শান্ত ৩০/৪০মিনিটের মতন ফুফার সাথে কথা বলে এবার রুমের দিকে ফিরে আসলো
এসে দেখলো আহানা বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে দুহাত ঘষতেছে
.
কি?শীত করে?সোয়েটার আনো নাই?
.
আরে আমি কি জানতাম নাকি যে এখানে এমন শীত পড়ে
.
আমারও শীত করছে তবে জ্যাকেটে আই এম ফাইন,তুমি এক কাজ করো আমার একটা জ্যাকেট পরে নাও
.
কথাটা বলে শান্ত ওর ব্যাগ থেকে একটা জ্যাকেট নিয়ে আহানার হাতে দিলো
আহানা বললো”বাকিরা দেখলে কি বলবে?”
.
তো আমি আর কি করবো?দাঁড়াও চাদর আছে কিনা দেখে আসি
শান্ত গেলো চাদর আনতে
আহানা জ্যাকেটটা পরে আবারও কাঁপতে লাগলো,এত বিরক্তি লাগতেছে তার,পুরো অসহ্যকর লাগতেছে,বাড়ি ফিরে যেতে মন চাচ্ছে এখন এই মূহুর্তে
শান্ত একটা কাঁথা হাতে করে এনে বললো”এক্সট্রা চাদর তো পেলাম না,ফুফু এই একটা কাঁথা দিলো
.
ভালো,ওটা গায়ে দিয়ে আপনি ঘুমাইয়েন,আমি এটা গায়ে দিয়ে ঘুমাবো
.
ওকে,,
.
শান্ত এবার আহানার পাশে বসে ফোন হাতে নিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
আহানার ফোন আছে তবে তার এখন আলাদা রকম বিরক্তি লাগতেছে,শীত হলে সোয়েটার /চাদর গায়ে না থাকলে যে বিরক্তি লাগে ঠিক সেটাই
রাগে শান্তকে গালিও দিতে পারছে না সে,কারণ তার তড়িগড়ির কারণেই সে ভুলে গিয়েছিলো যে এখানে শীত পড়বে অনেক
কিছুক্ষণ বাদে ভুলে আহানার হাত শান্তর হাতের সাথে লাগতেই আহানা বুঝলো শান্তর গা গরম,এখন যদি ওদের মাঝে সব ঠিকঠাক হতো সে নিশ্চয় শান্তকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতো??শীতটাও কমতো,কিন্তু পোড়া কপাল
শান্ত এবার গেমস খেলতেছে মনযোগ দিয়ে
আহানা চুপচাপ ওর পাশে শুয়ে পড়লো,একটু একটু করে শান্তর কাছে এসে কাঁথার নিচে মুখ লুকিয়ে নিলো সে
শান্ত বুঝতে পারলো,খেয়াল ও করলো কিন্তু কিছু বললো না
আহানা যে প্রচণ্ড শীতে ঝগড়াবিবাদ বাদ দিয়ে ওর কাছে ঘেষেছে এটা সে বুঝেছে তাই আর কথা বাড়ালো না
শান্তর গায়ের উষ্ণতা পেয়ে আহানা কখন যে ঘুমিয়ে গেলো
রাত ৯টার দিকে শান্তর ফুফাতো বোন রিমু এসে দরজায় নক করে বললো”ভাইয়া খেতে আসো,খাবার রেডি,নাহলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে”
শান্ত উঠে যেতে নিয়েও পারলো না,আহানা ওর বাম হাতটা শক্ত করে ধরে মাথা লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে,শান্ত হাত নাড়িয়ে ওকে ডাক দিলো কয়েকবার
আহানার ঘুমটা ভাঙ্গতেই নিজেকে একদম শান্তর কাছে দেখে সে বাতাসের গতিতে উঠে সরে গেলো
.
হুহ,এতক্ষণ তো লেগে ছিলেন হঠাৎ এরকম ভয় পেলেন কেন আহানা ম্যাডাম?
.
আহানা এতক্ষণ উষ্ণতায় থেকে এখন দূরে সরে যাওয়ায় শীত ওকে আবারও ধরেছে,সে কাঁপতে কাঁপতে বললো”তো কি করবো,শীতে মরবো নাকি?”
.
আসো ডিনার করবে,আজ রাতে যে কি পরিমান জ্বালাবে তার পূর্বাবাস পাচ্ছি,আমার যে সারারাত তোমাকে বয়ে নিয়ে ঘুমাতে হবে,আদৌ ঘুম আসবে কিনা কে জানে
.
এমন স্বার্থপরের মতন কথা বলছেন কেন?আমি কি হই আপনার?দুবার বিয়ে করা বউ হই,এইটুকু পারবেন না?
আপনার তো উচিত ছিলো মুখ ফুটে বলার যে আহানা আসো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাও তাহলে তোমার শীত কমবে,সেটা তো করেন নাই,আমি নিজে বেহায়ার মতন আপনাকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম আর এখন উল্টো আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছেন কেন আমি আপনাকে ধরলাম
.
আস্তে আস্তে,এরকম ঝগড়া করতে হবে না,তোমার যেমন ইচ্ছা তেমন করে ঘুমাইও,ওকে?এখন চলো ডিনার করতে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বিছানা থেকে নামলো,তারপর শান্তর পিছু পিছু ডাইনিং রুমের দিকে গেলো সে,এবার যাদেরকে সে দেখেনি তাদেরকে দেখলো,মানে শান্তর ফুফুর দেবর,ভাসুর এবং তাদের ওয়াইফদের,বাচ্চা তো আছেই
আহানা বড় করে সালাম দিলো,এক এক করে সবাইকে
ওদের একসাথে বসতে দিয়ে ফুফু আর তার ৬মেয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লো খাবার সার্ভ করাতে
.
ফুফু আমি হেল্প করতেছি,আপনি বসুন,আর দাদি কোথায়?
.
না মা তুমি বসো,তুমি মেহমান আমাদের,তার উপর নতুন বউ
তোমাকে দিয়ে একটা কাজ করানো ও সাজে না,আর আম্মা তো ঘুমিয়ে গেছেন,উনি তাড়াতাড়ি খান রাতের খাবার তারপর তাড়াতাড়ি শুয়ে ও পড়েন
.
আচ্ছা
.
তোমার ঐ কাঁথাতে হবে তো?আসলে আমাদের কাছে বারতি চাদর নেই এই এক ঝামেলা,আমরা ভাবলাম তোমরা সাথে করে চাদর সোয়েটার নিয়ে আসবে
.
ফুফু আমি সত্যি জানতাম না এখানে এরকম শীত পড়ে,জানলে আমি নিয়ে আসতাম আর উনিও তো আমাকে বলেন নিই কিছু
.
শান্ত পোলাও এক চামচ মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো”আমিও জানতাম না তো,দেখো না আমিও সোয়েটার আনি নাই”
.
ফুফুর ভাসুর পাশেই একটা চেয়ারে বসে কাগজে কিসব লিখতে লিখতে বললেন”এসময়ে পাহাড়ী অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি থাকে,এটা কমন সেন্স বুঝলে মেয়ে?”
.
আহানা বোকার মতন চেয়ে আছে উনার দিকে তারপর শান্ত গলায় বললো”আপনার সোয়েটার টা কিন্তু জোস”
.
আহানার মুখে ওমন কথা শুনে সবাই ইয়া বড় হা করে ওর দিকে তাকালো,ফুফুর ভাসুর কাগজ থেকে মুখ তুলে আহানার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন
“কি বললো এই মেয়েটা???”
ফুফুর ভাসুর বয়সে সব ভাই থেকে বড়,এবং অনেক মুডি,তার কথার উপরে কেউ কথা বলার সাহস পায় না আর আহানা কিনা মাঝখান দিয়ে এমন একটা কথা বললো যেন সে উনারই মেয়ে
.
উনি ঠিক কিরকম রিয়েক্ট করবেন তা তিনি নিজেও বুঝতেছেন না,শেষ বললেন”আসমা???আমার জন্য রাখা ভাতটা ঠাণ্ডা হলে বলো,আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাবো,আর এই মেয়েটাকে আমার জন্য যে সুয়েটারটা বুনেছিলা সেটা দাও,পরের বাড়ির মেয়ে,এখানে এসে জ্বর হলে আমাদেরই বদনাম হবে
আর শান্ত?তোমার লাগবে না তো?
.
না আমার লাগবে না,আমাদের এত শীত লাগে না
.
আহানা ব্রু কুঁচকে শান্তর দিকে তাকালো
ফুফু মুচকি হেসে আহানার পাতে মাংস দিলেন,আহানার এক লাইন কথাতে তার ভাসুর যে এতটা বদলে যাবেন তা তিনি একদমই ভাবেননি,রান্নাঘরে যেতেই আসমা উনার হাত ধরে টেনে বললেন”ভাবী,এই মেয়েটার কথায় তো দম আছে দেখছি,আমার স্বামী যিনি কিনা কারোর সাথে জীবনে নরম হয়ে কথা বলেননি তিনি কিনা আজ ওর কথায় কাবু হয়ে গেলো?”
.
ফুফু ফিক করে হেসে বললেন”আমার শান্তর বউ বলে কথা,কথার এবং গুনের দুটোরই তেজ আছে বৈকি,শান্তর সাথে পারফেক্ট ম্যাচ বলেই তো শান্তি ওকে বউ করতে এতদিন উঠে পড়ে লেগেছিলো,আর তুমি তো জানোই শান্তির পছন্দ লেভেল হাই হয়
ওর পছন্দেই আমরা আগে শাড়ী গয়না কিনতাম,আর এখানে ওর একটামাত্র ছেলের বউ বলে কথা,লাখে না কোটিতে একটা তো হবেই
.
শুনলাম শান্ত নাকি ওকে লুকিয়ে সবার অগোচরে বিয়ে করেছিলো?
.
হুম,শান্ত তো ওকে সেই ছোট্টবেলা থেকে পছন্দ করে,দুটোই মিলে পুরো বাসা মাথায় করে রাখতো,এই জন্যই তো রিয়াদ ভাইয়া ওদের বিয়ে ঠিক করেছিলো তখনই,এমনকি কার্ড ও ছাপিয়ে রেখেছিলো ব্যাপারটা পাকাপোক্ত করার জন্য
.
বুঝলাম
.
ওদিকে আহানা নাচতে নাচতে ফুফুর ভাসুরের দেওয়া সোয়েটারটা পরে রুমে এসে বসলো
শান্ত দরজা লাগিয়ে জ্যাকেটটা খুলে একটা টিশার্ট পরতে পরতে বললো”তোমাকে এত পাকা পাকা কথা কে শিখিয়েছে?”
.
কে আবার,আপনি!
.
হেহ!আমি কেন শেখাবো?তুমি আজকে যারে বলছো সোয়েটারটা জোস তার কথায় মানুষের খাওয়া দাওয়া অফ হয়ে যায় সেটা জানো??
.
দেখুন,শক্ত মানুষদের মন অনেক নরম হয়,আর আমি তাদের দূর্বল জায়গা ধরে কথা বলছি
আপনারা উনাকে ভয় পান বলে নরমাল কথা বলেন,কখনও তার সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলে দেখিয়েন আসলেই তিনি কেমন মানুষ সেটা বুঝতে পারবেন
.
শান্ত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো বাঁকাতে বাঁকাতে বললো”আফসোস,আমার মন বুঝলে না,বুঝলে খালি কেমনে আমার সাথে ঝগড়া করা যায় সেটা
.
আমি আপনার কেয়ার করি না বুঝি?কাজের চাপে মাথা ধরে যখন বসে থাকেন তখন চা/কফি কে বানিয়ে খাওয়ায় আপনাকে?
.
আমার বউ,এটা তোমার দায়িত্ব বুঝলে?
.
তো?স্বীকার করলেই পারেন,আমার দোষ না খুঁজে একটু গুন খুঁজেন,মনে হবে যেন শ্রেষ্ঠ সময় যাপন করছেন
.
আহা!
.
আহা কি?আহানা হবে
.
তোমার নামে আহা থাকলেও তোমার কাজে আহা পাচ্ছি না
বকবক বন্ধ করে আমাকে ঘুমাতে দাও,এখন তো তোমার কাছে সুয়েটার আর কাঁথা দুটোই আছে,আমাকে জড়িয়ে ধরার প্রয়োজন নেই তাহলে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে শুতে শুতে বললো”হুম,আপনাকে ধরবো ও না,আপনার গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আমার কিউট নরম ফেস স্কিনটা চুরমার হয়ে গেছে,মনে হইছে যেন আমার গালকে শলামুঠায় আছাড়তেছি
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আজকে একটু ছুঁয়ে দেখো আমাকে!!!তোমার হাড্ডি একটাও আস্ত রাখবো না
ভালোই ভালোই উনাকে সেই সন্ধ্যা থেকে ডিনারের সময় পর্যন্ত আগলে রেখেছিলাম আর উনি এখন এসে বলে আমার দাঁড়িতে সমস্যা
.
কথাগুলো উপেক্ষা করে আহানা শুয়ে পড়েছে আরেকদিকে ফিরে
শান্ত ওকে শুতে দেখে এবার নিজেও এসে পাশে শুয়ে পড়লো
রাত তখন মনে হয় ১টা কি ২টা বাজে
আহানা নিজের কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো,পাশে শান্ত ছাড়া আর কেউ নাই,তার মানে এটা ওরই কাজ
এই স্টুপিড, উঠুন বলছি,বেয়াদবি করার জায়গা পান না,আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে ছোঁয়ার
.
শান্ত চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে বললো”কি সমস্যা? ভূতে টূতে ধরসে নাকি?এমন চেঁচাও কেন?”
.
আপনি আমার কোমড়ে হাত দিলেন কেন,লজ্জা শরমের মাথা খাইছেন?
.
ওহ আচ্ছা আমি?কি জানি,ঘুমের ঘোরে ভুলে হাত চলে গেছে হয়ত!!সরি
সরি বলে শান্ত আবারও শুয়ে পড়লো
এদিকে আহানার সারা শরীরে কাঁটার মতন সব কিছু বিধতেছে,একেবারে কোমড়েই হাত দিলো,কি বেয়াদবি একটা ব্যাপার স্যাপার,এখন তো একসাথে শুইতেও ভয় করছে আমার,কি করবো এখন
আহানা আঁচল দিয়ে পেটটা ভালো করে ঢেকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আরেকটু দূরে গিয়ে শুয়ে পড়েলো এবার
রাত এবার ২টার শেষ প্রান্তে,আহানা তার কানের কাছে কারোর গরম শ্বাস নিশ্বাস টের পাচ্ছে
সে মুখটা ঘুরিয়ে দেখলো শান্ত চোখ বন্ধ করে মুখটা ওর ঘাড়ের সাথে লাগিয়ে ধরে নিশ্চিতভাবে গভীর ঘুমে আছে
.
আহানা নড়তে যেতেই শান্ত আবারও হাতটা ওর কোমড়ে রেখে ঘুমের ঘোরে বললো”আহানা বাচ্চাদের মতো ছোটাছুটি করিও না,তুমি না আবার দুবার বিয়ে করা বউ?”
.
আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছে,মাঝরাতে এভাবে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে!!তা হতে দিব না আমি
ছাড়ুন!!!
.
আহানা উঠে আবারও বসে গেলো
শান্ত হাতটা দুম করে আহানার শোয়ার সাইডে ফেললো,তার ঘুম ভাঙ্গেনি এখনও
আহানার মন চাচ্ছে শান্তকে ধরে এক ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলতে,ঘুমের ঘোরে না জানি আর কি কি করে ফেলতো,আমার আজকের রাতের ঘুমের একদম ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে এই লোকটা,একবার কোমড়ে হাত তো একবার ঘাড়ে মুখ এনে রাখে,এত এত ঝগড়া করতো এতকাল ধরে আমি তো এর চরিত্রের কথা ভুলেই গেছিলাম,সেই শুরুতেই কিস করতে চেয়েছিলো
এই!এই!!
.
শান্ত প্রচণ্ডরকম বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো,,নাক আর চোখদুটো লাল হয়ে আছে,দাঁতে দাঁত চেপে সে বললো”কি হইছে?”
.
আহানা গাল ফুলিয়ে বললো”আপনি একবার আমার কোমড়ে হাত দেন তো ঘাড়ের কাছে মুখ রাখেন,এসব কোন ধরনের বেয়াদবি?”
.
শান্ত একটু এগিয়ে গেলো আহানার দিকে,আহানার মনে হইছে তাকে কেউ খুন করতে আসতেছে,সাথে সাথে সে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো
শান্ত দেয়ালে ওর একটা হাত রাখলো আহানার পাশ দিয়ে নিয়ে তারপর বললো”আর কিছু তো করিনি তাই না?
ঘুমের ঘোরে মানুষ আরও অনেক কিছু করে ফেলে,যেমন ধরো না তুমি একদিন ঘুমের ঘোরে আমার রুম পর্যন্ত চলে এসেছিলা ঠিক তেমন,আর আমি তো জাস্ট!! ”
কথাটা শান্ত আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো
.
আহানা গায়ে কাঁথা টেনে তোতলাতে তোতলাতে বললো”সরুন এখান থেকে,ডিস্টেন্স রেখে ঘুমান,এমন করে টাচ করবেন না আমাকে,আমার ঘুম হয় না
.
কাঁথাকে লম্বা করে বালিশ বানিয়ে মাঝখানে রাখো,তাহলেই হয়
.
এই শীতে আমি কাঁথা ছাড়া থাকবো?
.
তো আমি কি করবো তুমি বলে দাও,এত চিকন একটা বেডে আমরা দুজন শুবো,একজন আরেকজনের সাথে লাগতেই পারে ঘুমের ঘোরে সেটাতে তোমার যখন সমস্যা তো তুমি বর্ডার তৈরি করে ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও
.
আহানা কি আর করবে কাঁথা দিয়ে বালিশের মতন করে বানিয়ে মাঝখানে রেখে শুয়ে পড়লো ওপাশে,গায়ে সোয়েটার আছে তাও সারা শরীর শীতে কাঁপতেছে,শেষরাতে আর থাকতে না পেরে আহানা কাঁথাটা মাঝখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন সকাল সকাল শান্ত উঠে পড়েছে,সাজেকের সকাল দেখবে বলে,আহানাকে জাগাতে চায়নি কারণ কাল সারারাত যে ওর ঠিকমত ঘুম হয়নি তা জানা আছে তাই ওকে আর জাগালো না শান্ত,নিজে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কটা হুডি পরে বেরিয়ে গেলো মর্নিং ওয়াকে
আহানা তার চলে যাওয়ার ১ঘন্টা বাদেই জেগে গিয়েছে তাও রিমুর ডাকাডাকিতে,তখন মনে হয় সকাল ৭টা বাজে
আহানা গলা ব্যাথা আর মাথা ধরার জন্য কথা বলতে পারছে না,গায়ে হাত দিয়ে বুঝলো তার জ্বর এসেছে,এই শান্তর জন্য এমনটা হলো,বেয়াদব,আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে!!
আহানা উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো,সবার আগে দাদির সামনে পড়তেই সে মিষ্টি হাসি দিলো
কিন্তু দাদি হাসলেন না!!!ফ্যাকাসে মুখে বললেন”নতুন বউরা সকাল সকাল তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়,তুমি দেখি কালকের শাড়ীটা এখনও পরে আছো,গোসল করো নাই নাকি?রিমুকে দিয়ে আমি তোমাদের বাথরুমে গরম পানি পাঠিয়েছি,যাও গোসল করে নতুন পোশাক পরে বের হও
.
আহানাও মাথা নাড়িয়ে আবারও রুমে ফেরত যাচ্ছে,এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও শান্তকে দেখলো না সে,গোসল করতে গিয়ে দেখলো পানিও ঠাণ্ডা হয়ে গেছে,তাও গোসলটা সেরে নিয়ে একটা বেগুনি রঙের সুতির শাড়ী পরে সে রেডি হয়ে নিলো,ভেজা চুল গায়ে লাগতেই শীত মনে হয় ঘাড় চেপে ধরেছে
কাঁপতে কাঁপতে আহানা হাঁটতেছে রুম থেকে বেরিয়ে
সোফার রুমের দিকে যাচ্ছিলো সে,হঠাৎ শাড়ীর সাথে লেগে পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ধরে ফেললো ওকে
আহানা ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো আবার
.
এই মেয়েটা এত ভোরে গোসল করলো কেন,এমন ভাব করছে যেন সিরিয়াসলি সে আমার সাথে একটা সম্পর্কে আছে
গোসল করলো কেন সেটা বুঝলাম না,জ্বর বাঁধিয়ে ছাড়বে,তারপর আম্মু আমার মাথা খাবে
.
আহানা গিয়ে সোফায় বসে আছে,ওর পাশে রিমু বসে ফোনে গেমস খেলছে
ফুফু মুড়ি আর মুড়কি এনে বললেন”তা ঘুম হলো তো নতুন জায়গায়?”
.
আহানা বললো”হুম”
.
শান্ত ও এসে গেছে ততক্ষণে
.
ফুফু ব্রু কুঁচকে বললেন”তোমার শরীর খারাপ নাকি?কথা ওমন শোনাচ্ছে কেন?এত ভোরে আবার গোসলই বা করলে কেন?”
.
ফুফু একটু কথা শুনাও তো,ওকে কে বলেছে এত ভোরে গোসল করতে?জ্বর হলে তখন কি হবে?
.
জ্বর হলে কি??হয়ে গেছে অলরেডি,কপাল ছুঁয়ে দেখ
.
শান্ত চোখ রাঙিয়ে বললো”এবার খুশি তো তুমি?”
.
দাদি এসে কঠিন গলায় বললেন”নতুন বউ বাসি কাপড়ে থাকা শোভা পায় না বলেই তো আমি ওকে জোর করে গোসল করতে বললাম, এই টুকু জানো না নিলু?
.
ফুফু মাথা নিচু করে বললেন”আসলে শহুরে মেয়ে তো,জায়গা বদলালে সেখানকার পানির সাথে মিশতে সময় লাগে,এই সিজনে জ্বর হলে তো সমস্যা তাই বললাম
.
ওসব সেরে যাবে,এরকম একটু আধটু জ্বর হলে কিছু হয় না,তোমরা নাস্তা করো তো
.
মুড়ি মুড়কি খাওয়া শেষে ফুফু বললো ৮টায় নাস্তা দেবে,ততক্ষণ গিয়ে রুমে বসতে
আহানা উঠে সেদিকে ছুটতেই শান্ত ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
কি?
.
যখন তোমার জ্বর তখন গোসল করলে কেন?
.
জ্বরের ভয় বেশি নাকি দাদির ভয় বেশি?আর একটু জ্বরে কিছু হয় না,চলুন না একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি
.
ধরো
.
এটা কি?
.
হুহ,আমি তো নাকি তোমার কেয়ার করি না,ভোর ৬টায় উঠে মর্নিং ওয়াকে গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ গিয়ে একটা লোককে দেখলাম তার বাসা থেকে বের হচ্ছে হাতে নিয়ে ১২/১৩টা চাদর,ব্যস কিনে নিলাম একটা তোমার জন্য
.
বাহ!
.
আহানা খুশি হয়ে চাদরটা গায়ে মুড়িয়ে নিলো
শান্ত ভ্রু কুঁচকে হাত দিয়ে ওর কপালটা চেক করে মুখটা কালো করে হাঁটা ধরলো,আহানা ওর পিছু পিছু আসতেছে
মাটির একটা পথ,দুপাশে বন,তারা একটা পাহাড়ের ওপর দিয়ে হাঁটতেছে,মূলত ফুফুদের বাসাটাই ওখানে
কুয়াশা আর কুয়াশা,ঠাণ্ডা পরিবেশ
আহানা এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হেঁটে চলেছে,অনেকটা পথ হাঁটতে হাঁটতে তারা তাদের কারের দেখা পেলো যেটা পার্ক করে রাখা
শান্ত তার কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন বের করে ছবি তুলছে এখন
আহানাও এসে পাশে দাঁড়ালো,চাদরটা আনাতে আহানা শান্তর প্রতি কিছুটা হলেও খুশি হয়েছে,মনে মনে ভালো লাগা কাজ করছে
শান্ত ছবি তুলতে তুলতে বললো”এভাবে কি দেখো?প্রেমে টেমে পড়লা নাকি?”
.
আহানা সাথে সাথে মুখটা আরেকদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো”কিসের প্রেম?আমার প্রেম নেওয়ার মতন ক্ষমতা আছে আপনার?”
.
বুঝলাম না
.
আমি প্রেমে পড়লে সেই মানুষটাকেও প্রেমে ফেলবো,তারপর সে পারবে তো নেশা থেকে বেরোতে?
.
শান্তকে চ্যালেঞ্জ করছো?
.
কিসের চ্যালেঞ্জ! আমি তো আপনার প্রেমেই পড়লাম না,আপনি প্রেম থেকে তো দূরেই
.
শান্ত হঠাৎ ফোনটা পকেটে পুরে আহানার কোমড়ে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিয়ে আসলো
আহানা এতক্ষণ ডায়ালগ মারতে মারতে হুট করে এমন একটা সিচুয়েশনে চলে আসবে ঠিক ভাবেনি সে
শান্তর দিকে না তাকিয়ে ডানে বামে তাকালো সে,দূর দূরান্তেও কেউ নেই,শুধু সে আর শান্ত আর তাদের সাদা কারটা
সাথে কিছু কুয়াশা ভাসমান অবস্থায় দোদুল্যমান!
.
তুমি না হয় আমাকে প্রেমের নেশায় ফেলবে কিন্তু আমার প্রেমে পড়লে তো তুমি মরেই যাবে
অবশ্য অলরেডি প্রেমে পড়েই গেছো তা নাহলে বিয়ের চুক্তিটা শেষ হওয়ার কথা শুনে কাউকে কিছু না বলে রিয়াজের বিয়ের থেকে একা বাড়ি চলে আসাকে আমি কি ধরে নিতাম?
.
আহানা হালকা কেশে শান্তকে হাত দিয়ে আলতো করে সরাতে সরাতে বললো”ওটা কিছু না,এমনি মন খারাপ ছিলো বলেই”
.
বলেই??চলে এলে?আবার বললে কেন আমি বললাম চুক্তিটা শেষ হলে তুমি মুক্ত,এটা বলে খোঁচাও তো মেরেছিলা,২য় বার বিয়ে কি এমনি এমনি করেছিলাম আমি?
.
শান্তর মুখে সব সত্য শুনে এই ঠাণ্ডার মাঝেও আহানার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে
শান্ত মুচকি হেসে আহানার কোমড় থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো আবার
আহানা লজ্জা পেয়ে আরেকদিকে ফিরে হাঁটা ধরলো,কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলো সে,তারপর মাথা তুলে দূরের একটা পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো,সত্যি কি সে সেদিন শান্তর প্রেমে পড়েই ওকে ২য় বার বিয়ে করেছিলো?
.
এই মেয়ে শুনো!
.
আহানা পিছন ফিরে তাকালো
.
এত শীতের মধ্যে আর বাইরে থাকতে হবে না,চলো এখন
.
আহানাও বাধ্য মেয়ের মতন শান্তর সাথে বাড়িতে ফিরে গেলো,টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে ফুফু আর ফুফুর জা রা মিলে
আহানা এক কোণায় গিয়ে বসলো,কারণ সবার সাথে কাজে হাত লাগাতে চেয়েছিলো কিন্তু ফুফু দেয়নি
ফুফু শান্তকে বললো আহানার শরীর ভালো হলে ওকে নিয়ে ঘুরে আসতে,বাসায় থাকতে হয়ত বোরিং লাগবে
শান্ত রুটি মুখে দিয়ে বললো”না আজ আর ও বের হবে না,জ্বর বাধিয়ে নিয়েছে এখন আর বের হতে হবে না,পরে অসুখ আরও বাড়বে”
.
সেটা ঠিক বলেছিস
.
আহানা নাস্তা করে এসে আবারও শুয়ে পড়েছে,শরীর খারাপ লাগতেছে,সবার মাঝে বসে থাকলে ১০০টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে,ওদিকে শান্ত ফুফুর কাছ থেকে ঔষুধ নিতে গেছে আহানার জন্য
আহানা মায়ের সাথে কথা বলে নিলো,মনটা এখন একটু হালকা লাগছে এখন,শরীর খারাপের কথা আহানা জানালো না মাকে
আবার শুতে নিতেই দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছে,হাতে এক কাপ চা,ধোঁয়া ওঠা গরম
শান্ত চায়ের কাপটা ওকে এগিয়ে দিলো তারপর ওর পাশে বসে ওর কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করে নিলো
আহানা তো রীতিমত শক,চোখ ইয়া বড় করে সে শান্তর কাজে অবাক হচ্ছে বারবার
.
ওমন করে কি দেখো তুমি?
.
এত কেয়ার করতেছেন তো তাই
.
তোমার শরীর খারাপ আর আমি খেয়াল না রাখলে ফুফু আম্মুকে জানিয়ে দিবে তারপর আম্মু আমার সাথে রাগ করে থাকবে
.
আন্টি ভয়ে এত কেয়ার করছেন?
.
হুম তাই নয়ত কি!
.
ওহ
.
শান্ত উঠে চলে গেলো আবার
আহানা চা শেষ করে বিছানা থেকে নেমে রুমটার পিছনের দরজাটা খুলে বাইরে বের হলো,সূর্য এখন মাথার উপরে,তাও শীত শীত আমেজ আছে,দূরে ফুফুকে দেখা যায়,উনি বড় একটা মাছ কাটতেসেন
আহানা সেদিকে না গিয়ে উল্টো দিকে গেলো,একা একা হাঁটতে মোটামুটি লাগছে,মাটিগুলো হলুদ হলুদ
আহানা কিছুদূর গিয়ে একটা দোলনা দেখতে পেলো
মেহগনি গাছ দুটোর মাঝ বরাবর লাগানো,সম্ভবত কোনো বাচ্চার জন্য বানানো,তবে কম ওজনের বড় রাও বসতে পারবে
আহানা এই সুযোগ হাত ছাড়া করলো না,গিয়ে দোলনাটায় বসে পড়লো,নিজে নিজে ঢুলতে লাগলো সে,ভালোই লাগছে,কিছু সময়ের জন্য শরীরটা ফুরফুরে লাগতেছে
.
শান্ত ঊষার সাথে কথা বলা শেষ করে ফোন পকেটে রাখতে রাখতে দক্ষিণ দিকে তাকাতেই আহানাকে দেখলো
আহানা বাচ্চাদের মতন একটা দোলনায় দোল খাচ্ছে
শান্তর মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার কথা,তাদের বাসার বাগানটায় একটা দোলনা বানিয়ে ছিলো শান্ত আর আহানা মিলে
তারপর সারাদিন সেটাতে দুজন মিলে দুলতো
কতবার পড়ে হাত পা কেটেছে দুজনে,,একদিন তো উড়ে গিয়ে বন পরিষ্কার করার মেশিনের উপর পড়ছিলো আহানা,হাত পুরো জখম হয়ে গেসিলো তার
আহানার হাতে হয়ত দাগটা এখনও আছে,শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে ওকে দোলনা থেকে নামিয়ে নিলো
.
কি সমস্যা!
.
দেখি তোমার হাত
.
শান্ত আহানার হাত উল্টো করতেই দেখলো ছোটবেলার সেই দাগটা আছে এখনও,তবে তার পাশে আরেকটা দাগ
শান্ত কপাল কুঁচকে বললো”এটা আবার কিসের দাগ,কবে হলো?”
.
আহানা হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো”আপনার কি?”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে এক পা এক পা করে
কিছুদূর পিছিয়ে যেতেই কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো,আহানা মনে হয় ভয়ে এবার মরেই যাবে,না জানি রামিমের মা নাকি ফুফু এসে পড়েছেন!
চোখ বড় করে পিছন ফিরতেই আহানা দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছে
কালো রঙের জ্যাকেট পরা একজন সুদর্শন পুরুষ,এবং তার চোখ মাটিতে মরার মতন পড়ে থাকা রামিমের উপর
.
আপনি??এখানে?আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম
.
আরে আসলাম দেখতে তুমি ঠিকমত বিয়ে ভাঙ্গতে পারো কিনা সেটা দেখার জন্য
তুমি না বলেছিলে জাস্ট গায়ে ঢালবা জুস??তাহলে?
দেখে তো মনে হচ্ছে জুসটা তার পেটে গেছে
.
আরে ঐ গাধাটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পুরোটা গিলে ফেলেছে, আমি কি করবো?ওর মা আর ফুফু বাসার ভেতর,এখন এরে কি করা যায়
.
ওয়েট দেখতেছি মরে গেছে নাকি সেন্সলেস
.
শান্ত হাঁটু গেড়ে নিচে বসে রামিমের হাত নিয়ে নাড়ি চেক করলো,সব ঠিকঠাক তার মানে সেন্সলেস হয়েছে
আহানা শাড়ীর আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বারবার
আর শুধু বাগানে হাঁটা হাঁটি করছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না
এদিকে শান্ত রামিমের চশমা নিয়ে ফান করতেছে
আহানা বিরক্ত হয়ে বললো”সমস্যার সমাধান না করে আপনি মজা করতেছেন?এর জ্ঞান ফিরাবো কি করে?আজব!”
.
আরে মরে নাই তো,এমনিতেই জ্ঞান ফিরবে,ওয়েট করো একটু
.
আহানা ওয়েট করার ধৈর্য পাচ্ছে না,শেষে চেয়ার টেনে বসে গালে হাত দিয়ে রামিমের দিকে চেয়ে রইলো তারপর বললো”আহারে বলদটা!!!ওর তো কোনো দোষ নেই”
.
শান্ত অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো”দোষ নেই মানে?তোমার কি দরদ হচ্ছে নাকি ওর প্রতি?”
.
আহানা মুখটা বাঁকিয়ে বললো”এই কেয়ামতের সময় আপনার জেলাসি ফিল হচ্ছে?আর সময় পেলেন না?যাই হোক এটা বলেন শান্তি আন্টি কিছু রিয়েকশান দেখালো?”
.
সেই আরেক বিপদ,মা ভেবে নিয়েছে আমি বিয়ে তো করেছি বাট অন্য একটা মেয়েকে,তোমাকে না,তাই তো আমার দিকে তাকাচ্ছেও না,মুখে কিছু তুলছেও না,আমি তাই আসলাম তোমাকে আর আন্টিকে নিয়ে যেতে
.
আপনি বলেন নাই আমার সাথে বিয়ে হয়েছে আপনার?
.
আরে ধুর!মা তো দরজা বন্ধ করে ফেলেছে,আর মিউজিক প্লেয়ারে ভজন চালু করছে,আমি একশোবার “আহানাকে বিয়ে করেছি” কথাটা রিপিট করেছি,না মা শুনেছে!!!না নিতু শুনেছে,না রিপা শুনেছে
.
রাগ হলে মানুষ ভজন শোনে?
.
আমার মা আগে নানারকম গান শুনতো,এ কয় বছর ভজন শোনে
.
আচ্ছা,তো আমরা গেলে তখনও যদি ভজনই শুনতে থাকেন তখন কি হবে?
.
আরে ততক্ষণে ভজন অফ হবে সমস্যা নাই,দেখো দেখো রামিম নড়তেছে
.
আহানা নড়েচড়ে বসলো
.
রামিম চোখ ডলে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”কে আপনি?আহানা উনি কে??জুসটা খাওয়ার পর কি হয়েছিলো?
.
শান্ত জ্যাকেটটা টেনে আহানার দিকে তাকালো তারপর রামিমের দিকে চেয়ে বললো”শুনো রামিম ভাই!আমরা বিবাহিত, বুঝছো??তুমি ওকে বিয়ে করবা না ব্যস”
.
হ্যাঁ,উনাকে আমি এমনিতেও বিয়ে করবো না,জাস্ট দেখতে এসেছিলাম আর আজকেই আমাকে কাঁচামরিচের জুস খাওয়ালো,আমি তো মায়ের কাছে বিচার দিব এই মেয়ের নামে,ইরিটিয়েট
.
আহানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো”কি বললি?আমি ইরিটিয়েট??তুই যে বলদ সেটা জানিস তুই?তোরে কে বিয়ে করবে?তুই আহানার হাতের তৈরি কিছু খেয়েছিস এটাও তোর ভাগ্য,চশমা আলা বলদা কোথাকার,যা বের হ আমার বাসা থেকে,বান্দর হয়ে মুক্তার মালা গলায় দেবে,সাধ কত!”
.
রামিম চশমা পরতে পরতে বললো”তুমি কি জানো?তুমি একটা শাঁকচুন্নি! তোমার এই স্বামী তোমাকে কালই ডিভোর্স দিবে”
.
আহানা রেগে গ্লাসে যেটুকু জুস তলায় অবশিষ্ট ছিলো সেটা নিয়ে রামিমের মুখে মেরে দিয়ে বললো”বের হবি নাকি মরিচ ডলে তোকে বের করবো?
ভবিষ্যতে আমার আর শান্তর বাচ্চা যতগুলা হবে তোরে ফোন দিয়ে দিয়ে জানাবো আমি মনে রাখিস,এখন বের হ আমার বাসা থেকে,নাহলে চেয়ারপেটা করে বের করবো
.
শান্ত আহানার গালিগালাজ শুনতে শুনতে হাসতেছে এক পাশে দাঁড়িয়ে
রামিম শান্তর সামনে গিয়ে বললো”ভাই,আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইউর ফিলিংস,এরকম একটা মেয়েকে বিয়ে করে তোমার জীবন যে তেজপাতা,সরি পাঁচফোড়ন হয়ে গেছে আমি তা বুঝতেছি,তোমার সাথেও তো এমন করে তাই না?আহারে,পিটি অন ইউ!!পারলে এরে ছাইড়া দিওও,বেঁচে যাবা
.
আহানা চেয়ার হাতে নিলো ছুঁড়ে মারার জন্য
শান্ত হেসে বললো”ভাই!আহানা ট্যারাব্যাকা হোক,তবুও আমার”
.
আহানা চেয়ারটা রেখে দিয়ে গালে হাত দিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে বললো”এত প্রেম!”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”খুশিতে এত ফুলতে হবে না,একটা কথা তো বলতে ভুলেই গেসি রামিমকে,তুমি আসলেই আমাকে জ্বালাও”
.
হুহ!আমি বুঝি আপনার জ্বালানো সহ্য করি না??অন্য কেউ হলে কবেই ছেড়ে চলে যেতো
.
আমার মা বিয়ের ৮বছর পরে এই কথা বাবাকে বলেছিলো আমার মনে আছে,আর তুমি কিনা বিয়ের ১সপ্তাহ না হতেই বলে দিলা আমাকে?
.
যাক গে,চলুন মায়ের কাছে যাই
.
আহানা আর শান্ত বাসার ভিতর আসতে আসতে দেখলো রামিম আর তার মা,ফুফু চলে যাচ্ছেন
মা হন্তদন্ত করে এসে বললেন”রামিম কিছু না বলেই সবাইকে নিয়ে কেন চলে যাচ্ছে
একি শান্ত?? কখন এলে?”
.
আন্টি আমার সাথে চলুন,একটা সমস্যা হয়েছে,মা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে
.
ওমা সেকি,কি হয়েছে আবার?
.
চলুন প্লিস
.
আহানা আর ওর মাকে নিয়ে শান্ত তাদের বাসায় ফিরে আসলো
মা দরজা খুলেছেন,রিপা তাকে কিছু খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতেছে বারবার,তিনি শুনতেছেন না,চুপচাপ টিভি দেখতেছেন
আহানার মা উনার পাশে এসে বসে বললেন”কি হয়েছে বুবু?তুমি নাকি খাওয়া দাওয়া করছো না,কি হয়েছে আমাকে বলো,সব ঠিক আছে তো?”
.
শান্তি রহমান রাগী রাগী চোখে শান্তর দিকে তাকালেন
শান্ত আহানার হাত ধরে ওদের দুজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর বুকটা ফুলিয়ে বললো”মা শুনো,আমি যাকে বিয়ে করেছি সে আর কেউ না,সে আহানা”
.
কথাটা শুনে শান্তি রহমান আর আহানার মা চোখ বড় করে তাকালেন
আহানা তো ভয়ে কাঁপতেছে, কি হবে কে জানে,ধুমধাম কিছু তো হবে, না জানি বাড়ি থেকে বের করে দেয় আমাদের
.
আহানার মা সোফা থেকে উঠে আহানার সামনে এসে বললো”কিরে?শান্ত এসব কি বলছে?তোরা বিয়ে করেছিস?কবে?কখন?কোথায়?
.
আহানা বোকার মতন চেয়ে থেকে বললো”৫/৬দিন আগে”
.
আমাদের না জানিয়ে কেন করেছিস?আমাদের বললে কি আমরা বাধা দিতাম?
.
আসলে আন্টি একটা সিচুয়েশনে পড়ে তৎক্ষনাৎ বিয়ে করতে হয়েছিলো,জানানোর সুযোগ ছিল না তখন
.
সেটা তো বুঝলাম,তা এতদিন কেন লুকিয়ে রেখেছো তোমরা?বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন এত লুকোচুরির কি আছে?
.
ভাবলাম তোমরা রাগ করবা!
.
আহানার মা আবার গিয়ে বুবুর পাশে বসে পড়লেন,দুজনে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে
নিতু কোথা থেকে দৌড়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরে ঘুরতে ঘুরতে বললো”ও আপু এখন থেকে তুমি আমার ভাবী,ইয়ে”
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করতেছে এবার কি হবে
.
শান্ত ও চুপচাপ দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
শান্তি রহমান নিজের হুইল চেয়ার নিজে চালাতে চালাতে আহানার মাকে সাথে করে রুমে চলে গেলেন,দরজাও লাগালেন
আহানা আর শান্ত সোফায় বসে অপেক্ষা করছে নেক্সট বিস্ফোরকের
কি হতে যাচ্ছে,টানটান উত্তেজনা,কোন দল জিতবে!
.
আহানা কপাল কুঁচকে শান্তর গায়ে দুম করে কিল বসিয়ে বললো”আপনার কারণে হয়েছে সব”
.
মানে?আমি কি করসি?
.
আপনাকে কে বলছিলো আমাকে জোর করে বিয়ে করতে?কই রতন আর সাইমন তো ধাওয়া করতে আসলো না
.
যেদিন আসবে সেদিন বুঝবা,চুপ থাকো এখন,কি হতে পারে এখন সেটা ভাবো আপাতত,বিয়ে তো হয়েই গেছে এখন এসব বলে লাভ আছে?
.
লাভ আছে মানে?এমন ভাবে বলতেছেন যেন আমি বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করেন,নিজে জোর করে বিয়ে করে এখন দোষ দিচ্ছে আমাকে
.
শান্ত আহানার আঁচল ধরে টান দিয়ে বললো”একটু চুপ থাকতে পারো না,অলটাইম তোমাকে ঝগড়া করতে হবে?এমনি থাকা যায় না?
.
না যায় না,আপনি নিজের দোষ স্বীকার কেন করছেন না
.
করবো কেন যেখানে আমার কোনো দোষই নাই
.
ও তাহলে দোষ আমার??আমি বলেছিলাম প্লিস শান্ত মেরি মি,প্লিস!

তুমি থামবা নাকি মুখে কসটিভ লাগাবো তোমার?
.
আমার সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়া না করে ভাবুন আন্টিকে সামলাবেন কি করে
.
সেটাই তো ভাবতেছি,তুমি তো ভাবতেও দিচ্ছো না,কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতেছো সেই কখন থেকে
.
রিপা এসে চা দু কাপ দিয়ে চলে গেলো
শান্ত চা পেয়ে সাথে সাথে কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো
.
একটা কথা বলুন তো!আপনি কি ঐদিন ক্লাবে বলেছিলেন”আহানা শুধু আমার?”
.
কথাটা শুনে শান্তর কাশি উঠে গেছে,কাশতে কাশতে বললো”নিজেকে কি মনে করো?আমি এটা বলবো?জীবনেও না,আমি তো তোমাকে লাইক ও করি না তাহলে তুমি এটা ভাবলা কি করে,আবার জিজ্ঞেস ও করতেছো”
.
হুম,আমিও তো তাই ভাবতেছি,নওমি আপুর এই কথায় আমি বিশ্বাস করিনি
.
হুম,বিশ্বাস করার হলে তো করবা

আহানা মা আর শান্তর মা অনবরত হাসতেছেন
হাই ফাইভ দিতেছেন একজন আরেকজনকে,কি খুশি তারা আজ
লুকিয়ে হলেও বিয়েটা অন্তত শান্ত আহানা করে নিয়েছে এই ভেবে তারা তো মহা খুশি
তারা তো জাস্ট ওদের মিলানোর জন্য আরেক জায়গায় বিয়ের কথা উঠিয়েছিলো এর ভিতর ওরা যে বিয়ে করে নেবে তা কল্পনার বাইরে ছিলো
যাই হোক যা করেছে একদম ঠিক করেছে,অবশেষে আমাদের প্ল্যান সফল হলো,তা বুবু এবার কি করবো?
.
শান্তি রহমান হেসে দুহাত এক করে দেখালেন
.
বুবু আমি বলি কি,ওদের তো বিয়ে হয়েছে তাহলে না হয় বৌভাতের অনুষ্ঠানটা আমরা ধুমধাম করে দিয়ে দিই?
.
শান্তি রহমান মাথা নাড়ালেন
.
দরজা খুললো রুমের,দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে শান্ত আর আহানা দাঁড়িয়ে পড়লো সোফা থেকে উঠে
আহানার মা এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বললেন”শুনো তোমরা দুজন!যেহেতু বিয়েটা করেই ফেলছো আমি আর বুবু মিলে ঠিক করেছি তোমাদের বৌভাতটা ধুমধাম করে হবে,কি বলো?”
.
শান্ত আর আহানা তো রীতিমত শকড,তারা সব নেগেটিভ ভেবেছিলো এতক্ষণ আর এখন তো দেখি পজিটিভ রেসাল্ট
আহানা হেসে দিলো কিন্তু শান্ত হাসলো না,সোজা খাবারের প্লেটটা নিয়ে মায়ের রুমের দিকে গেলো
তার মা আজ সারাদিন কিছু মুখে তুলেননি,আগে সেসব
.
আহানার মা আহানার কান টেনে বললেন”ভিতরে ভিতরে এতদূর??? আর কি করেছিস??”
.
না কিছু করিনি আর
.
তোকে চিনতে আমার এত ভুল হলো!তুই আমার থেকে এত বড় সত্যি লুকালি?কিভাবে পেটে রাখলি কথাটা?
.
আহানা কানে হাত দিয়ে বললো”সরি,আর হবে না”
.
আর হবে না মানে?আবার বিয়ে করবি নাকি,যেভাবে বলতেছিস
.
না সেটা না,বললাম আর কিছু লুকাবো না
.
নিতু তো নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে তার ভাইয়ার বৌভাত,খুশি আর ধরে না তার
শান্ত নিজের হাতে মাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে এরই মাঝে মা হঠাৎ শান্তকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন
শান্ত কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তারপর বললো”মা,তুমি খুশি তো?সবটা তোমার খুশির জন্যই করা”
.
মা মাথা নাড়লেন,শান্তর মনে হলো সে তার মাকে অবশেষে খুশি করতে পেরেছে,এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে
.
ওদিকে মা আহানাকে টেনে বাসার দিকে নিয়ে গেছে,বৌভাতের অনেক কাজ বাকি,খালাকে ফোন করে দিলো আসার জন্য,একা সব করা সম্ভব না
.
শান্ত মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে আহানাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে রিপাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো আহানা আর তার মা চলে গেছে তাদের বাসায়
শান্ত তাই নিজের রুমে ফেরত আসলো,আলমারি খুলে তোয়ালে নিলো ফ্রেশ হতে যাবে তাই তারপর হঠাৎ মনে হলো বৌভাত হয়ে গেলে আহানা এখন থেকে তার রুমেই থাকবে,এই আলমারিতেও তার জামাকাপড় থাকবে
শান্ত তাই জায়গা করে নিলো আলমারিতে, তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলো
আহানা বসে বসে টিভি দেখতেছে,তার যে সামনের বুধবারে বৌভাত মানে আর কদিন পর সেদিকে তার খবর নেই,ওদিকে মা আর খালা পাগল প্রায়ই
শান্ত ফোন করে জানিয়েছে ব্যাংকে সে টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছে,মায়ের ইচ্ছা বৌভাতটা হোক আর আহানার মায়ের কাছে সেরকম টাকা নেই যে অনুষ্ঠানটা ধুমধাম করবে তাই শান্ত টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে
টাকা পেয়ে মা আর খালা তো অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সব ঠিকঠাক করতে
আহানা মনমত টিভি দেখেই যাচ্ছে,খালা তো এসে কালো টিকা লাগিয়ে দিয়েছে আহানাকে,নজর যেন না লাগে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা টিভি অফ করে নিজের রুমে ফেরত এসেছে
তারপর বিছানায় দুম করে শুয়ে পড়তেই মাথায় আসলো এখন থেকে তাকে শান্তর সাথে এক ঘরে একই রুমে থাকতে হবে, এই ভেবে আহানা মুখ বাঁকিয়ে আবারও বসে পড়লো
বিয়ে বিয়ে করে সে এটাই ভুলে গেছে যে শান্ত তার শত্রু
এই শত্রুর সাথে কিনা এখন থেকে আমাকে এক সাথে থাকতে হবে?
অবশ্য আমাকে যে টাচ করবে না এটা সিউর,তার পরেও ওর মুখ দেখলেই ঝগড়া এসে আমাকে বলে”আমি কি বাইরে বের হবো?”
প্রতিটা দিন ডিস্টার্ব করবে আমাকে,উফ!কোথায় নিজের রুমে নিজের বাসায় সুখ করবো তা আর হলো না,সারাদিন জ্বালাবে আমাকে! এটা একদমই ভাবিনি,ভেবে কি লাভ হবে,সেদিন তো জোর করে বিয়েটা সেরে নিয়েছিলো,রতন আর সাইমন নাকি আমাকে কিডন্যাপ করবে,কচু করবে
.
আহানা পাশে তাকাতেই দেখলো ফোন জ্বলতেছে,শান্তর ফোন
বিরক্তি নিয়ে আহানা কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শান্ত বলে উঠলো”ওকে গাইস আজকে আমি যে গানটা গাইবো সেটা আমার সামওয়ান স্পেশালের জন্য!ইয়েস আই এম মেরিড,এবং এই গানটা আমার ওয়াইফের জন্য”
.
আহানা বুঝলো না শান্তর কথাগুলো, কাকে বলছে,তাও কানে ধরে রাখলো ফোনটা
শান্ত ল্যাপটপটা সেট করে টেবিলে রেখে গিটার নিয়ে বিনব্যাগে বসলো বারান্দাতে

কথা হবে দেখা হবে প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবেনা,,,
চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালো বাসা বাসি আর হবেনা,,,,

শত রাত জাগা হবে থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না,,,
হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙ্গে যাবে জানো না,,,

আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,

ভুলভাল ভালোবাসি কান্নায় কাছে আসি
ঘৃনা হয়ে চলে যাই থাকিনা,,,
কথা বলি একা একা সেধে এসে খেয়ে ছেঁকা
কেনো গাল দাও আবার বুঝিনা,,,,

খুব কালো কোন কোনে গান শোনাবো গোপনে
দেখো যেনো আর কেও শোনেনা,,,,
গান গেয়ে চলে যাবো বদনাম হয়ে যাবো
সুনাম তোমার হবে হোকনা,,,,

আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,

যদি তুমি ভালোবাসো ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনো খানে রবে না,,,,
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ গলে না,,,,,

আমি গলা বেঁচে খাবো কানের আসে পাশে রব
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কথা হবে না,,,
কারো একদিন হবো কারো একরাত হবো
এর বেশি কারো রুচি হবে না,,,,

আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না,,,,
.
আহানা মুগ্ধ হয়ে শান্তর গাওয়া গানটা শুনলো,এত ভালো লাগলো বলে বুঝানো যাবে না,যেন গানটা তার জন্যই
.
শান্ত লাইভ শো অফ করে পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরে বললো”কি ম্যাডাম??শুনেছেন?কেমন লাগলো,ফিডব্যাক দিলেন না”
.
ভালো হয়েছে
.
শুধু ভালো?
.
আয় এই খুশিতে তোরে আবার বিয়ে করি
.
শান্ত হেসে ফেললো,গিটারটা রাখতে রাখতে বললো”চলো আবার বিয়ে করি,ভালোই লাগে এতবার বিয়ে করতে”
.
শুধু কি বিয়ে করতে করতেই বুড়ো হবো?জীবনে আর কিছু নাই?
.
আছে তো,ঐ যে বছরে বছরে বাচ্চা হলে রামিমকে কল করে জানাবা,সেটা আছে
.
আহানা ফিক করে হেসে দিলো,শান্ত এত হাসায় ওকে বলার বাইরে,চাইলেও মন খারাপ করে থাকতে পারে না সে
.
শুনো
.
কি?
.
বৌভাতে গোলাপি শাড়ী পরিও,গোলাপিতে তোমাকে বউ বউ লাগে
.
আমি তো বউই,আবার বউ বউ লাগার কি আছে?
.
আরে এত কথা না বলে যেটা বলছি সেটা করবা,আমি সবাইকে দাওয়াত দেওয়ায় বিজি থাকবো তাই এখন একটু ফ্রি বলে তোমাকে কল করলাম আর একটা লাইভ শো ও করে নিলাম
.
ভালো
.
তোমার কি হয়েছে বলোতো?
.
কি আর হবে?যার সাথে বিয়ে দুবার করে সেই বিয়ে বাঁচানোর জন্য এতদিন এত কষ্ট করলাম এখন মাথায় আসলো সেই লোকটা আমার জন্মের শত্রু
.
সেটা আমারও মনে আছে,তোমার মতন ধানিলঙ্কাকে বিয়ে করেছি প্রতি দিন এর শোধ আমাকে দিতে হবে
.
কাকে দেবেন?
.
আমাকে,আর কাকে?,আমি আমাকে শোধ দিব,আহারে শান্ত তোর জীবন যৌবন সব শেষ করে দিলি এই মেয়ের জন্য,আহারে আহারে
.
আহানা রেগে লাইনই কেটে দিলো,অসভ্য একটা,কখনও মুখ ফুটে আমার ভালো বলবে না খালি দোষ খুঁজতে দাও সেটা পারবে,আমাকে এখন থেকে এর জ্বালানো ভোগ করার অভ্যাস তৈরি করে ফেলতে হবে
.
আহানা আলমারির কাছে গিয়ে একটা গোলাপি শাড়ী নিলো,রিয়াজের আম্মু দিয়েছিলো এটা সেই শাড়ী
আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো সে
সত্যি তো!আমাকে তো জোস লাগতেছে
এই ছেলেটার টেস্ট তো অনেক ভালো,অবশ্য আমার টেস্ট ও খারাপ না,উনি তো কম সুন্দর না বরং আমার চেয়েও সুন্দর,একদিন জিগাবো মুখে কি মাখে,আমার মুখে ২/১ব্রন উঠলেও উনার মুখে একটা গোটাও দেখলাম না,কিছু মাখলে তো সাইড এফেক্ট হিসেবে ব্রন উঠার কথা,তাহলে ব্যাপারটা কি?
নিশ্চয় বয়েজ পার্লারে যায়,সময় করে সব জেনে নিব একদিন
.
আহানা বিছানাটা ভালো করে গুছিয়ে নিচে গেলো ডিনার করার জন্য,মা কিসব প্যাকেট রেডি করতে করতে বললেন”আহানা আজ ডিনার তৈরি করিনি,আলু দুটো ভেজে খেয়ে নে,আমাদের অনেক কাজ,আমরা কাজ শেষ হলে রুটি বানিয়ে ডিম ভেজে খাবো”
.
আহানা তাই সোজা গেলো আলু নিতে রান্নাঘরে,রান্নাঘরের জানালায় শব্দ করে একটা কঙ্কর এসে পড়লো
আহানা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো তারপর জানালার কাছে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,অন্ধকারে দেখা যায় না কিছু,তারপর জানালা আটকাতে যেতেই তার চোখ পড়লো বাউন্ডারির ওপাশে শান্ত দাঁড়িয়ে হাত নাড়াচ্ছে
আহানা প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না,পরে চোখ ডলে আবারও তাকিয়ে শান্তকেই দেখলো,তড়িগড়ি করে সে রান্নাঘরের থেকে বেরিয়ে বাসার বাইরে চলে গেলো,গেট খুলতেই শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো”তোমাকে কতবার কল করেছি?ফোন নিজের কাছে রাখতে পারো না সবসময়?”
.
কি জন্য কল করেছেন?আর গেটে এসে কলিংবেল চাপ দিলেই হতো!
.
আরে দিসি আমি,মেবি নষ্ট
.
ওহ,কি কারণে এসেছেন বলেন সেটা
.
আমি আসলে একটা গিফট কিনবো তোমার আম্মু আর তোমার খালার জন্যে,আর গিফট চয়েস করতে একটু ঢিলা আমি
তুমি চয়েস করে দিও,মাকে তো আর যেখানে সেখানে নেওয়া যায় না,জানোই তো হুইলচেয়ারে বসে থাকে সারাদিন
.
পারবো না,আমি এমনিতেও খিধায় মরে যাচ্ছি,হেঁটে হেঁটে শপিং করার শক্তি নাই আমার
.
আচ্ছা তাহলে তোমাকে খাওয়াবো,তাহলে চলবা তো?
.
হুমম,ভাবতে দিন
.
কষিয়ে একটা চড় মেরে ভাব ছুটিয়ে দিব,কাকে ভাব দেখাও,তুমি জানো তোমার চুল আর কান টেনে তোমাকে আমি নিয়ে যেতে পারি?সময় নষ্ট করবা না একদম,চলো আমার সাথে
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,আহানা বললো “মাকেও তো বলে যেতে হবে তা না হলে টেনসন করবেন উনি”
.
আরে সেটা কল করে জানিয়ে দিব,এত কিছুর সময় নেই,চলো এখন
.
গাড়ীতে বসে আহানা পেটে হাত দিয়ে বললো”আমি ঝালমুড়ি খাবো,তারপর চটপটি,তারপর ফুচকা,সবার শেষে আইস্ক্রিম,ব্যস বেশি কিছু খাবো না,রাতে বেশি খেতে পারি না আমি”
.
এটা কম নাকি?
.
খাওয়ার খোঁটা দিলেন?ঠিক আছে খাবো না আমি
.
খোঁটা কই দিলাম,তোমাকে ফুচকার দোকান কিনে দিতে পারি আমি,খোঁটা কেন দিব,এসব কোথায় পাওয়া যাবে?
.
এহহহ,ঢং দেখলে বাঁচি না,জানেন না এগুলা কোথায় থাকে?আমার মাথায় থাকে
সব খানেই পাবেন, দেখলেই গাড়ী থামাবেন
.
শুনো আহানা,কাল বাদে পরশু আমাদের বৌভাত,উল্টাপাল্টা কিছু খেয়ে অনুষ্ঠানটা মাটি করো না
.
এগুলা খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার,আমাকে খাওয়াতে চান না সেটা বলেন
.
আমি তোমাকে নিয়ে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি,সেখানে যা ইচ্ছা খাবা,ওকে?
.
না ওকে না,আমি এসবই খাবো
.
ঠিক আছে,চুপ থাকো,এত চেঁচাতে হবে না
.
রোডের পাশে ফুচকাআলা দেখতে পেয়ে শান্ত কার থামিয়েছে
আহানা ফুচকা নিয়ে গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে
শান্ত পাশেই একটা টুলে বসে আহানার মাকে কল করে জানিয়েছে সে আহানাকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে
আহানা একটা ফুচকা সাধলো শান্তকে,শান্ত ফুচকার সাথে দেওয়া সালাদ মুখে দিয়ে চিবাচ্ছে,আহানা তাই মুখ বাঁকিয়ে খালি ফুচকাটা খেয়ে নিলো
শান্ত পুরো তার উল্টো
যাই হোক সব খাবার এক এক করে আহানা খেয়ে পেট পুরিয়ে এখন শান্তর বাম হাত ধরে ঝুলে ঝুলে হেলেদুলে শপিংমলে হাঁটতেছে,তার হাত পা চলতেছে না
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সাথে সাথে আহানার ঘুম চলে আসে চোখে,তখন তার পক্ষে হাঁটা হাঁটি একদম সম্ভব হয় না
আশেপাশের মানুষ আহানাকে এমন করে হাঁটতে দেখে চেয়ে রয়েছে এক দৃষ্টিতে
শান্ত বললো”আসলে আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট তো তাই এমন করে হাঁটতেছে”
.
কথাটা শুনো আহানার চোখের ঘুম বাপের বাড়ি চলে গেলো
খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে সে চোখ বড়বড় করে তাকালো শান্তর দিকে,তারপর সোজা হাঁটা শুরু করলো,শান্ত ইচ্ছা করে এটা বলেছে যাতে আমি উনার গায়ে ভর দিয়ে না হাঁটি,স্টুপিড!
মায়ের জন্য একটা শাড়ী আর খালার জন্য একটা শাড়ী কেনা হলো তো বটে তবে আপাতত আহানা এখন পা গুটিয়ে কারের ফ্রন্ট সিটে ঘুমিয়ে গেছে, জানালায় হেলান দিয়ে
শান্ত ওদের বাসার কাছে এসে দেখলো আহানা এখনও ঘুমে
ফিল্মের নায়কদের মতন কোলে নিয়ে হাঁটার মতন ছেলে শান্ত না,এ তো আমার মহা শত্রু,এরে তো শত্রুতামি করেই উঠাবো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার কাছে মুখ নিয়ে ওর কানে কানে বললো”কিরে আহানা যাবি নাকি আমার লগে?”
.
আহানা হকচকিয়ে চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকালো,মনে হচ্ছে রতনের কন্ঠর মতন লাগলো,ঘেমেও গেছে আহানা,ওড়না দিয়ে সারামুখ মুছে শান্তর দিকে চেয়ে বললো”রররররততততন,এসেছিলো?”
.
না তো!তবে মনে হয় শান্ত এসেছিলো
.
আহানা এবার পুরো ব্যাপারটা বুঝলো,দাঁতে দাঁত চেপে শান্তকে বকতে বকতে কার থেকে নেমে প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো সে
.
আমার ঘুমের ১২টা বাজাতে মনে হয় ডিগ্রি পাস করে রেখেছেন উনি,কখনও হাত ধরে টেনে তুলে তো কখনও আমার পাগল প্রেমিকদের কণ্ঠ শুনিয়ে ভয় দেখিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গায়,না জানি উনাদের বাসায় থাকতে গেলে আর কি কি করবে
খোদা!!!!
.
কিরে আহানা এলি??কি কিনলি দেখি
.
আমি কিনি নাই,শান্ত ভাইয়া কিনেছে,তোমার আর খালার জন্য শাড়ী
.
শান্ত ভাইয়া কি আবার?তোর স্বামী হয়
.
ওহ তাই তো!
.
আহানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে উপরের রুমে চলে গেলো সিঁড়ি বেয়ে
খালা এসে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললেন”এই মেয়ে এসব কি বলে?জামাই বাবাজি ভাইয়া ডাক শুনলে কিন্তু রাগ করবে অনেক”
.
আরে তুমি জানো না,এই মেয়ে শান্তকে প্রচুর জ্বালায়,আমার তো বিশ্বাস হয় না শান্ত ওকে কেন বিয়ে করেছে,এরে আমি এতবছর ধরে সামলিয়েছি এবার শান্ত সামলাবে
.
ছেলেটা আহানাকে পছন্দ করে তা নাহলে এরকম স্বভাব জেনেও বিয়ে করে নিতো না
.
সেটা আর বলতে,ওরা দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতেই পারে না শুধু বাহির থেকে দেখে বোঝা যায় না এই আর কি
ছোটবেলায় ও এরকম ঝগড়া করত,আমি তো ভেবেছিলাম বড় হয়ে সব ভুলে গেছে,তবে এখন দেখি সব মনে আছে,বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে
.
হুমমম,ঝগড়া এরকম থাকাই ভালো,ভালোবাসা বাড়ে
আবার পানসে পানসে সম্পর্ক ভালো লাগে না আমার,এরকম ঝগড়ার ভিতরে ভলোবাসা লুকানো থাকে বুঝলে
.
হুম

আহানা বারান্দার পর্দা টেনে বিছানা ঘুমাতে গিয়ে টের পেলো তার প্রচণ্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে
পেটে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতেছে সে
শান্ত বার বার মানা করেছিলো একসাথে সবকিছু না খেতে,আমি শুনলাম না,এখন মনে হচ্ছে উনি ঠিক ছিলেন
মাঝখান দিয়ে আমি বেশি খেয়ে ফেললাম,এখন এই খবর কিছুতেই মাকে জানানো যাবে না,মা সোজা উনাকে জানাবেন তারপর উনি হাসবেন আমাকে নিয়ে হুহ!
.
শান্ত ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে সূর্যমুখীর বাগানটার দিকে তাকিয়ে আছে,আহানাকে মনে পড়তেছে বারবার,অথচ ঘণ্টা খানেক আগেই আমি ওর সাথে ছিলাম
এত মিস করতেছি কেন?কান জ্বালাফালা করে রাখে সারাদিন তার পরেও ওকে ভাল্লাগে,ওকে কেন ভাল্লাগে তার কারণ আমার কাছে নেই,তবে ভাল্লাগে
মোটকথা এই ধানিলঙ্কাকে নিয়ে আমি সারাজীবন কাটাতে পারবো,আমাকে যে ছেড়ে যাবে না সেটা ১০১% নিশ্চিত
ঝগড়া করেই যাবে তাও ছাড়বে না
কিছু কিছু মানুষকে ভালো লাগতে আসলেই কারণ প্রয়োজন হয় না,তার এত এত গুনের মাঝে আমার কাছে তার ঝগড়াটাই ভালো লাগে,এই ঝগড়াটা না করলে আসলেই চিনতাম না এটা সেই আহানা যে ছোটবেলায় হাতের কাছে যা পেতো তা আমার মুখে মাখিয়ে দিতো,আফসোস আমাদের গায়ে হলুদ হলো না,গায়ে হলুদটা হলে ওর গালে ইচ্ছামত হলুদ মাখাতাম আমি,সব শোধ তুলতাম
ছোটবেলায় অনেক জ্বালিয়েছে,এবার আমার পালা মিসেস শাহরিয়ার আহানা!!
কি করবা তুমি??তোমাকে ২৪ঘন্টা জ্বালাবো
তোমার কল্পনার বাহিরে থাকবে সব,তুমি কি ভাবো তুমি পারো ঝগড়া করতে আর জ্বালাতে?
এবার শান্ত তোমাকে দেখাবে ঝগড়া আর জ্বালানো বিস্তারিত
বৌভাতের রাতে আমার সাথেই তো ঘুমাবা তাই না??
তোমার শোয়ার জায়গাটায় আমি চুলকানির পাউডার ফেলবো,ঘুমানো দেখিও দিব সেদিন

আহানা ঘুমানোর আগে ভাবলো সে বৌভাতের দিন রাতে কি করবে
“আমি সেদিন উনার বালিশের তলায় চিনি ফেলবো ভালো করে,এত পিপড়া আসবে শান্তিতে ঘুমাতেই পারবেন না উনি
হাহাহা,আমার সাথে ঘুমানো দেখিয়ে দিব”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
পরেরদিন সকাল সকাল ব্যস্ততা আরও বেড়ে গেছে,আহানাদের আত্নীয় বলতে কেউই নেই যার কারণে যারা আসবে- যাবে বৌভাতের রাতে তারা সব শান্তদের ফ্যামিলি থেকেই আসবে আর সেটার জন্যই এত আয়োজন
আহানা আজ শান্তিতে এখনও ঘুমিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ মা এসে বললো একটা মেয়ে এসেছে মেহেদি লাগিয়ে দিতে,শান্তি আন্টি নাকি পাঠিয়েছে ওকে
আহানা ভাবলো আজ সারাদিন ঘুমাবে তা আর হলো কই,এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে গেলো
তারপর হাতে বিসকিট নিয়ে মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলো সোফায়
মেয়েটা সুন্দর করে মেহেদি লাগিয়ে শান্ত নামটাও লিখে দিলো ওর হাতে
আহানা দুহাত ভর্তি মেহেদি নিয়ে বারান্দায় একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে সেই আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে
যখন সে চোখ খুলেছে তখন সম্ভবত বেলা ১২টা বাজে
আহানা চেয়ার থেকে নেমে হাতের দিকে তাকালো,মেহেদি শুকিয়ে কাঠ,তাড়াতাড়ি ধুতে হবে
এই ভেবে সে আয়নার সামনে দিয়ে ওয়াসরুমে যেতে নিয়ে থেমো গেলো,আবার আয়নার সামনে ফেরত আসলো সে
সারা গায়ে তার হলুদ মাখানো,নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে এক চিৎকার করলো আহানা,মা আর খালা দৌড়ে আসলেন ওর চিৎকার শুনে
আহানা গালে হাত দিয়ে বললো”শান্ত ভাইয়া এসেছিলো?”
.
না তো,ও কেন আসবে?
.
তাহলে আমার এই অবস্থা করছে কে?কখন করছে?বাসায় আর কে এসেছিলো?
.
কেউ তো আসেনি,গেট ও তো বন্ধ
.
আহানা ১০০%সিউর এটা শান্তরই কাজ,রেগে সে ফোন হাতে নিয়ে শান্তকে কল করলো,শান্ত সেই সময়ে নওশাদকে কল করেছে
.
হ্যালো নওশাদ!ভাই কাল বৌভাত হবে,হালকা ধুমধাম তুই রুপাকে নিয়ে চলে আসিস কেমন?
.
মাই গড!এত জলদি?আন্টিকে ম্যানেজ করে ফেললি?
.
মা তো শুরু থেকেই আহানাকে পছন্দ করে,এটা আর নতুন কি,অবশ্য আমি ভয় পেয়েছিলাম বিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে যে কি রিয়েক্ট করে মা,পরে সব পজিটিভ হলো,কেউ বকলো না
.
ওকে ডান,আমি রুপাকে নিয়ে চলে আসবো
.
শান্ত এবার এক এক করে রিয়াজ আর সূর্যকেও জানিয়ে দিলো
আজ সকাল সকাল সে আহানাদের বাসায় গিয়েছিলো আহানাকে হলুদ দিয়ে ভূত বানাতে,এতদিনের শখ সে আজ পূরণ করলো,অবশ্য এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছিলো বৈকি!
বাউন্ডারি পেরিয়ে,বারান্দায় পিলার বেয়ে উঠতে হয়েছিলো তাকে,কাজটা এমনভাবে সম্পন্ন করেছে সে আহানা যেন কোনো সূত্র না পায়
ওদিকে আহানা বারান্দার সব খানে তন্নতন্ন করেও কিছু পেলো না,তার ভয় হতে লাগলো রতন কিংবা সাইমনের কাজ নয়ত এটা এই ভেবে
পরে ভাবলো না তারা কেন হতে যাবে,তারা হলে এই কাজ করত না
.
যাই হোক আহানা আপাতত ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে বসেছে,শান্তর সাথে ওকে কথা বলতেই হবে,এটা নির্ঘাত শান্তরই কাজ আমি সিউর!
কিন্তু কথা হলো শান্ত ফোনই তো ধরছে না আজব!
শান্ত ইচ্ছে করেই ফোন ধরছে না
আজকের দিনটা কোনোরকমে কেটে গেছে,সকাল সকাল আহানাকে তৈরি হয়ে শান্তদের বাসায় যেতে হবে কারণ বৌভাতটা ওদের বাসাতেই হবে আর তারপর শান্ত আর আহানা এই বাড়িতে আবার ফেরত আসবে
তো আজ সারাদিন শান্ত আহানার ফোন ধরেনি একবারও,আহানা ভেবেছিলো জাস্ট বালিশের তলায় চিনি ঢালবে এখন তো রাগে ক্ষোভে সে ঠিক করেছে আরও অনেক কিছু করবে শান্তকে টাইট করতে,কত বড় সাহস,আজ সারাদিন আমার সাথে কথা বললো না,তোরে ছাড়মু না আমি মনে রাখিস তুই
.
পরেরদিনের সকালটাও এসে গেলো যথাযথ সময়ে
আহানাকে তার খালা আর ২টি পার্লারের মেয়ে মিলে তৈরি করছে,শান্তদের বাসা থেকে শাড়ী গয়না এসে গেছে,মনে হয় আজ বৌভাত নয় আজ বিয়ে
.
নওশাদ আর রিয়াজ মিলে শান্তকে তৈরি করছে,সূর্য ভিডিও করতেছে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করবে তাই
শাহরিয়ার শান্তর বিয়ের কথা শুনলে ভিউ এমনিতেই আসবে,খুশি আর ধরে কই তার
.
আহানাকে সাজানো হয়ে গেছে,ঘাড়ো রঙের একটি গোলাপি শাড়ী পরেছে সে,শাড়ীটা জর্জেটের
আহানা শাড়ীটা পরার পর থেকে গাল ফুলিয়ে রেখেছে,এই শাড়ীটা পরে নাকি তাকে আজ সারাদিন কাটাতে হবে
গলা ঢাকা যায় এমন একটা সেট পরেছে সে
চুলগুলোকে খোঁপা করে দিয়েছে মেয়েগুলো
আহানা এখন রোবটের মতন হেঁটে হেঁটে গিয়ে কারে বসেছে,খালা আর মা ও তৈরি হয়েছে,তবে সাথে যাবে শুধু খালা
মা বাড়িতেই থাকবে কারণ শান্ত আর আহানা দুপুরে আবার ফেরত আসবে
বাড়িতে অনেক কাজ থাকায় মা রয়ে গেলেন,আহানার সাথে খালাই গেলেন আপাতত
শান্তদের পুরো বাড়িটা নীল রঙের ঝিলিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে
এটা দেখে আহানার মনটা একটু হলেও ভালো হয়ে গেলো
সে কার থেকে নামতেই নিতু আর রিপা এসে হাজির হয়েছে
তারা তো শুরুতেই বললো”ঝাক্কাস”
.
আহানা মুচকি হেসে খালার সাথে বাসার ভিতরের দিকে গেলো
শান্ত তৈরি হয়ে সোফায় বসে আছে সেই কখন থেকে
মেহমানরা খালি একটাই প্রশ্ন করতেছে আর সেটা হলো”বিয়েটা কবে হলো,আর লুকিয়ে কেন হলো?”
.
শান্ত বললো”একটা সমস্যা ছিলো”আর কিছু বললো না সে
.
আহানা বাসার ভিতর ঢুকতেই শান্তকে দেখলো সবার আগে
মন চাচ্ছে এখনই কাঁচা গিলে ফেলি কিন্তু নাহ সময় হোক,তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে আজ
শান্ত আজকে গোলাপি রঙের একটা শেরওয়ানি পরেছে
একটা ভাব নিয়ে সে সোফায় বসে আছে যেন আহানাকে সে দেখতেই পায়নি
আহানা এগিয়ে যেতেই সামনে এসে পড়লেন শান্তি আন্টি,হুইলচেয়ারে করে,রিপা নিয়ে এসেছেন উনাকে
আহানা তাকে দেখে হেসে সালাম করলো,তারপর কথা আরেকদিকে ঘুরে গেলো
কিছুক্ষণ পর সবাই বাসার সামনের বাগানের পাশে খোলা জায়গায় তৈরি করা স্টেজ টাতে আসলো,সেখানে শান্ত আর আহানাকে বসানো হবে
আহানাকে রুপা নিয়ে সেখানে বসিয়ে দিয়েছে
আর নওশাদ,রিয়াজ,সূর্য মিলে শান্তকে নিয়ে এদিকেই আসতেছে
শান্ত সিটে বসে এখনও আহানার সাথে কথা বলতেছে না,আহানা মনে হয় ফেটে যাবে ঠুস করে,এত এত রাগ সে কি করে সামলাবে
হাত মুঠো করে বারবার সে শান্তর দিকে তাকাচ্ছে
শান্ত সামনের দিকে চেয়ে নরমালি বললো”সুন্দরই লাগছে মোটামুটি ”
.
জিগাই নাই তোরে,আজ তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে,তুই আমার ফোন ধরিস কেন?
.
আস্তে আস্তে,মানুষ কি বলবে,একটু সম্মান দিয়ে কথা বলো
.
কিসের সম্মান,তুই আয় আমার সাথে এক রুমে,তোর হাড্ডি ভাঙ্গবো আজ আমি
.
আর আমি তোমায় ছেড়ে দিব?
.
কেন?আমি কি করছি যে তুইও আমার পিছে লাগবি,বরং তুই করছিস,আমার ফোন ধরিসনি
.
আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম,তোমার বুঝা উচিত ছিলো এটা,আর ফোন আমার কাছে ছিলো না,এত মানুষকে আমি একা ইনবাইট করেছি,তোমাকে দিলে তো ১মাস লাগাইতা
.
যাই হোক বাহানা দিতে হবে না,আর একটা কথা আপনি আমার গায়ে এত হলুদ মেখেছিলেন কেন?
.
কে?আমি?না তো
.
একদম মিথ্যা বলবেন না
.
কিরে শান্ত এত কথা কিসের?তর সয় না?
.
চুপ থাক নওশাদ,আগে বল তোরা বিয়ে করবি কবে?
.
আমি তো আরেকটু দেরিতে করবো,সূর্যকে জিজ্ঞেস কর আমাকে না করে
.
আমি এখনও ছোট,আমি এখন বিয়ে করবো না সরি
.
তুই ছোট??আমার বাচ্চা হলে তোকে নানাভাই ডাকবে
.
শান্ত আর রিয়াজ ফিক করে হেসে দিলো নওশাদের কথা শুনে
সূর্য জিভে কামড় দিয়ে ছবি তোলায় মনোযোগ দিলো আর হঠাৎ করেই ধাক্কা খেলো রিপার সাথে
.
রিপা হা করে সূ্র্যর দিকে চেয়ে রইলো,সূর্য সরি বলে আরেক পাশে চলো গেছে সাথেসাথে
.
দুপুরে মেহমানদের খাওয়া দাওয়া শেষে এবার শান্ত আর আহানার বাড়ি ফেরার পালা,আহানাদের বাসায় যাবে শান্ত এখন
মাকে বিদায় জানিয়ে কারে উঠে বসলো দুজনে
আহানা পা তুলে বসে এক এক করে মাথার টিকলি,হাতের চুড়ি খুলতেছে
শান্ত কার ড্রাইভ করতে করতে বললো”রাত হয়নি এখনও”
.
আমার জাস্ট বিরক্তি লাগতেছে এই সাজে,বাড়ি ফিরে শাড়ীটাও পালটে নিব,তারপর আপনাকে টাইট দিব
.
আমি কি করলাম আবার?
.
কি করেন নাই সেটা বলেন,আমাকে কাল সারাদিন টেনসনে রাখছেন আপনি,এলবার কল ধরলে কি মরে যেতেন?মনে রাখবেন আমাকে ২বার বিয়ে করেছেন আপনি,হুহ!
.
আর মনে করাতে হবে না,জানি আমি

বাসায় ফিরে আহানা নিজের রুমে গেলো চেঞ্জ করতে,মা সাথে সাথে কোথা থেকে এসে বললেন”খবরদার চেঞ্জ করবি না,তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দিব,শান্তর সাথে ওর কিছু রিলেটিভ আসতেছে তারা কি বলবে?”
.
আহানা তাই গাপটি মেরে আবার বিছানায় বসে পড়েছে
সত্যি সত্যি শান্তর ১৪গুষ্টি আসলো আহানাদের বাসায়,সবাইকে মা আর খালা মিলে নাস্তা খাওয়াইছে
সন্ধ্যা ৭টা বাজতেই যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে
এখন আপাতত বাসায় আছে মা,খালা,শান্ত আর আহানা,আরও কজন আছে মনে হয়
শান্ত আহানার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাহসিনের সাথে কথা বলতেছে অফিসের কাজ নিয়ে
আর আহানা দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখতেছে সবাই গেলো কিনা,তারপর পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো,শান্ত ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত
আহানা শাড়ী চেঞ্জ না করে আগে কাজে লেগে পড়লো শান্তকে হেনস্তা করতে,শান্তর বালিশে ইচ্ছেমত চিনি ছিটিয়ে দিলো সে
কোমড়ে কাগজ মুড়িয়ে চিনি রেখেছিলো সেটা
তারপর শান্ত যে তোয়ালে ইউজ করবে সেটাতে লোশন ঢেলে দিয়ে চুপচাপ বিছানায় একপাশে গিয়ে বসলো সে
শান্ত কথা বলা শেষ করে বিছানায় এসে বসলো
আহানার হঠাৎ করে হাত পা চুলকাচ্ছে,চুলকাতে চুলকাতে সে বিছানা থেকে নেমে পড়লো,তারপর দৌড়ে বাথরুমের দিকে গেলো
শান্ত খিলখিল করে হাসতেছে,তার প্ল্যান সাকসেসফুল
এবার সে ফোন নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফেসবুকে ঢুকেছে
১০মিনিট পর আহানা বের হলো শাড়ী ওলটপালট করে,মনে হয় ওর উপর দিয়ে টর্নেডো গেছে
শান্ত মুখ টিপে হাসতেছে
আহানা এখনও বুঝেনি চুলকানির পাউডার ছিল তার জায়গায় আর এটা শান্তরই কাজ ছিল
আহানা আলমারি খুললো নিজের একটা থ্রি পিস বের করতে
তখন ঠাস ঠুস আওয়াজ আসলো পাশ থেকে
আহানা উঁকি দিয়ে দেখলো শান্ত ওর হাতে পায়ে থাবড় মারতে মারতে বিছানা থেকে নেমে বললো”মাই গড!এত পিপড়া কোথা থেকে আসলো”
.
আহানা মুখ টিপে হাসতেছে এবার
শান্ত হাত পা ঝাড়তে ঝাড়তে বাথরুমের দিকে চলে গেছে
আহানা এবার আলমারির দিকে চেয়ে দেখলো তার সব জামা উধাও,শান্তর একটা শার্ট আর প্যান্ট ঝুলতেছে শুধু,যেগুলো শান্ত সাথে করে এনেছিলো ব্যাগে করে
আহানা সোজা গেলো মায়ের কাছে, মা জানালো আহানা যাতে শাড়ী না চেঞ্জ করে তাই ওর সব জামা তিনি লুকিয়ে ফেলেছেন
.
সবাই তো চলে গেছে এবার তো দাও
.
না কে বলেছে গেছে?শান্তর কিছু ফ্রেন্ড আর ওর ফুফু আছেন দেখোস না?
.
তো কতক্ষণ এটা পরে থাকবো?
.
যতক্ষন এরা না যাচ্ছে,ধর এই চায়ের কাপ,তুই আর শান্ত খেয়ে নে
.
আহানা ট্রেটা হাতে করে আবার রুমে ফেরত আসলো,এসে দেখলো শান্ত সোফায় পা উঠিয়ে বসে বিছানার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
আহানা বিছানায় বসতে গিয়ে ওর মনে পড়লো চুলকানির কথা,শেষে সেও গিয়ে শান্তর পাশে বসে পড়লো
২মিনিট নিরবতা পালন করে তারা চা শেষ করেছে
তারপর দুজন দুজনের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে চেঁচিয়ে বললো”এটা তোমার কাজ”
.
আমি কি করছি?জাস্ট চিনি ছিঁটিয়ে দিয়েছিলাম
.
আমিও তো জাস্ট চুলকানোর পাউডার ঢেলে দিয়েছিলাম
.
কেন করলেন এমন?
.
তুমি কেন করলে?
.
আমি তো করেছি আপনি আমার ফোন ধরেননি কাল সারাদিন সেই ক্ষোভে,আর আপনি কেন করলেন সেটাই বুঝলাম না
.
তুমি আমাকে সবসময় জ্বালাও বলে আমি এই দিনে শোধ নিতে চেয়েছিলাম
.
হইছে তো?এবার বিছানায় ঘুমাবেন কি করে,আপনার জন্য আমার ঘুমটাও গেলো
.
তোমার জন্য ও আমার ঘুমটা গেলো
.
আমি আগে থেকে বলে রাখছি আমি সোফায় ঘুমাবো
.
আর আমি ফ্লোরে??এত সুখ কেন দিব তোমাকে?
আমি সোফায় ঘুমাবো ব্যস!
.
আমি সোফায় ঘুমাবো ব্যস
.
ওপাশ থেকে নওশাদ,সূর্য মিলে বলে উঠলো”যেখানেই ঘুমাস না কেন,এই রুমেই থাক তোরা,ওকে বাই”
এটা বলে ওরা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে পালালো
শান্ত আর আহানা ছুটে এসে দরজা অনেক ধাক্কালো কিন্তু লাভ হলো না
.
শান্ত আহানার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো”সব তোমার দোষে হয়েছে”
.
আমি কি করলাম,বরং আপনার দোষে হয়েছে,আমার অন্তত এরকম বিচ্ছু বন্ধুবান্ধব নেই,একেবারে দরজাটাই লক করে পালালো,কোথায় ভাবলাম অন্য একটা রুমে ঘুমানো যাবে,এখন কি করবো?
.
আমি সোফায় ঘুমাবো
.
শান্তর কথা শুনে আহানা দৌড়ে গিয়ে সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে শান্ত যাওয়ার আগেই
শান্ত হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
আহানা নাক ডাকার একটিং করতেছে,যেন সে গভীর ঘুমে আছে
শান্ত শয়তানি করে বিছানার চাদরটা নিয়ে আহানার গায়ে লেপটে দিতেই আহানা চিৎকার করে বললো”এটা কোন ধরনের শত্রুতামি!অসভ্য লোক কোথাকার”
আহানা গা চুলকাতে চুলকাতে চাদরটা নিয়ে এবার শান্তর গায়ে মুড়িয়ে দিলো
দুজন মিলে এবার গা চুলকাচ্ছে
একজন আরেকজনের চুল টানাটানি ও শুরু করে দিয়েছে
এমন করে ১০মিনিট কেটে গেলো
এখন আপাতত দুজনে ফ্লোরে বসে আছে
দুজনকে আফ্রিকার জঙ্গলের জন্তুর মতন লাগছে
আহানা ফিক করে হেসে বললো”আপনাকে সত্যি মিঃআউলাঝাউলার মতন লাগছে এখন”
.
তোমাকেও!হাহা
.
দুজনে হাসলো,তারপর হাসা থামিয়ে গাল ফুলিয়ে আবারও একজন আরেকজনেকে দোষারোপ করা শুরু করে দিলো
চলবে♥