Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1437



বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০২

0

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০২
#লেখনিতেঃনুসরাত

“হু!”

“কিন্তু এত বছর পর হঠাৎ তোর সামনে কিভাবে?”

তারপর মায়া অহনাকে সবকিছু খুলে বলে।সবকিছু শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহনা।আর বলতে থাকে,

“তুই যথেষ্ট স্ট্রং হয়েছিস মায়ু।আর এখন তোর পিছুটান রাখার প্রয়োজন নেই।ভুলে যা আজ তুই তোর প্রাক্তনকে….” বলতে না দিয়ে মায়া ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“প্লিজ অহু প্রাক্তন বলিস না।খুব কষ্ট হয়।আমি যে ওকে এখনো ভালোবাসি।হ্যা আমি ওকে #বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️” মাথাটা নিচু করে বলে।

“কিন্তু এটা বাস্তবতা মায়ু যে ও এখন তোর প্রাক..” অহনাকে থামিয়ে দেয় মায়া।

“প্লিজ অহু প্লিজ এটা বলিস না।আমার বুক ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়।আমি কখনো ওকে আমার প্রাক্তন মানিনি।সবসময় আমার বর্তমান ভেবে এসেছি।হয়তো ও আমাকে এখন আর ভালোবাসেনা।হয়তো আমাকে ভুলেও গেছে কিন্তু আমি ওকে ভুলতে পারিনি।ভীষণ ভালোবাসি আমি আমার আরফুকে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।এখন ওর কথা বাদ দে চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি ভালো লাগবে তোর”

“বাসায় থাকনা আমার সাথে প্লিজ”

“বার বার প্লিজ বলছিস কেনো হারামি!আমার সাথে ফর্মালিটি করিস?আমিতো আছি ই তোর পাশে”

“হুম।জানিস ও এটা জানতো যে ঐ রেস্টুরেন্টে ই আমাদের পরিচয় হয়।আমাদের প্রথম দেখা।আমাদের প্রথম ভালোবাসি বলা আমাদের প্রতিটা স্পেশাল মুহুর্ত ঐ রেস্টুরেন্টেই কাটিয়েছি আমরা আর ও তাই আমাকে বলেছেও বিচ্ছেদ টাও তাই এই রেস্টুরেন্টেই এনে করেছে!” চোখে পানি টলমল করছে।

“একদম কাদবিনা।এই কথা আমাকে বহুবার শুনিয়েছিস।ভুলে যা না ইয়ার প্লিজ”

“চাইলেই কি ভুলা যায়?”

“হ্যা যায়।আর না গেলেও চেষ্টা তো করা যায়।কিন্তু তুই সেই চেষ্টা টুকুও করিস না” ধমকের সুরে বলে অহনা।

“হুম।আমার জন্য কেনো তুই তোর লাইফটাকে এভাবে রেখেছিস বল তো?কেনো তুই রিশান ভাইয়াকে…” ধমক দিয়ে মায়াকে থামিয়ে অহনা বলে,

“চুপ।একদম ওর নাম নিবিনা।ভুলে গেছিস?আরাফও তোর জন্য প্রথম প্রথম খুব পাগলামি করেছে।তোকে প্রথম দেখার পর পাগলপ্রায় হয়ে তোকে খুজেছে।খুব পাগলামি করেছে তোর জন্য।কিন্তু শেষে কি হলো?সেইতো ছেড়েই চলে গেলো তাইনা?সব ছেলেরাই এক।আমি আমার আরও বান্ধুবীদের দেখেছি। ওদের এভাবেই একা করে দিয়ে চলে গিয়েছে।আমি পারিনা কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে।আর আমার বেস্টু তুই তোকে ঐ আরাফ জাস্ট ভেঙে দিয়েছে মায়ু!”

“সব ছেলে এক হয়না অহু।এই যেমন আমাদের বাবা ভাইয়াকে দেখ”

“এসব উলটা পালটা উদাহরণ দিস না মায়ু।বাবা ভাইয়া বাদে সবাই ই কষ্ট দেয়।কোনো গ্যারান্টি আছে বাবা কখনো কারো সাথে এমন করেনি?আছে কোনো গ্যারান্টি তোর কাছে ভাইয়া কখনো করবেনা? বল মায়ু বল!” চিল্লিয়ে বলে অহনা।

“তুই চিল্লাচ্ছিস কেনো।সবাই এসে পড়বে।তুই পাগল হয়ে গেছিস।তুই বিশ্বাস জিনিস টা নিজের মধ্যে থেকে উঠিয়ে ফেলেছিস।”

“দেখ এসব আমি আর শুনতে পারবোনা।বিশ্বাস করিনা মানে করিনা ব্যাস!”

“আচ্ছা ঠিক আছে”

“আর ঐ আরাফ…” আবার ও থামিয়ে দেয় মায়া ওকে।

“কি বারবার আরাফ আরাফ লাগিয়েছিস?ভাইয়া বলা যায়না?”

“ও আচ্ছা তোর জ্বলেরে?কই তখন তো তুই নিজেই ওকে ভাইয়া বলে এসেছিস।আমি না বললেই কি?”

“ঐটাতো ওকে শুনানোর জন্য বলেছিলাম”

“পাগলি”

ওর মুড ভালো করে দিয়ে অহনা ওর বাসায় চলে যায়।

পরেরদিন সকালে নাস্তা করতে ডাইনীং টেবিলে সবাই বসে নাস্তা করছে।মায়ার নাস্তা প্রায় শেষ।কলেজে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে মায়া।

“সাবধানে যাস বোনু” মায়ার ভাই মায়ান বলে।

“ঠিক আছে ভাইয়ু” স্মিত হেসে বলে মায়া।

মায়া চলে যায়। ডাইনীং টেবিলে পিনপতন নীরবতা। এর ই মাঝে মায়ান ওর বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,

“দেখোনা বাবা আমাদের মায়াটার মায়াবী মুখ কেমন মলিন হয়ে গেছে।হারিয়ে গেছে আমার মায়ুর চঞ্চলতা।৬ টা বছর ধরে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে।প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা।হাসিটাতো দেখাই যায়না অহনা ওর আশেপাশে না থাকলে।আর সেই ১ টা বছর!আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো আমার বোনকে ওভাবে দেখলে!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে মায়ান।

“হ্যা রে অহনা মেয়েটা না আসলে ওর জীবনে হয়তো অন্ধকারেই আমার মেয়েটা থেকে যেতো” নীরবে চোখের জল ফেলে বলেন মায়ার মা।

“আজও আমাদের বললোনা কি হয়েছিলো ওর সাথে” মায়ার বাবা বলেন।

মায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“কিন্তু আমরা জোর ও তো করতে পারিনা।আগে সবসময় আমার সাথে খুনশুটি লেগেই থাকতো।আই মিস মাই পিচ্চি মায়ু!”

“তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি খেয়ে বেরিয়ে পড়ো।আমিও বেরোচ্ছি” মায়ার বাবা টপিক পালটাতে কথাটা বলেন কেনোনা তার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে মেয়ের জন্য আর ঐদিকে উনার স্ত্রী কান্না করছেন যেটা তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

বিকালে মায়া অহনাকে সাথে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসেছে।এই সেম পার্কেই রিশান ও এসেছে অহনার পিছুপিছু।আরেকবার ট্রাই করতে চায় অহনার মন গলানোর।এসে হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে অহনার সামনে হাটুগেরে বসে ভালোবাসার কথাবার্তা বলতে থাকে।মায়া ওদের মাঝে কাবাবের হাড্ডি হতে চায়না বিধায় অন্য সাইডে চলে আসে।আর অহনা বিরক্তির চরম সীমানায় পৌছে গেছে।লোকটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা।

রাগ নিয়েই অহনা ক্ষীপ্ত গলায় বলে,

“দেখুন মি.রিশান আমি কোনো ছেলেকেই বিশ্বাস করিনা।সব ছেলেরাই এক।প্রথমে হাত ধরবে তারপর মাঝ পথে এসে হাত ছেড়ে দিবে এটাই তাদের কাজ!”

“সবাই ছেড়ে যায়না আপু।তবে কিছু কিছু মানুষের হয়তো বাধ্য হয়ে হাতটা ছেড়ে যায় কিন্তু ভুলতে পারেনা তার ভালোবাসার মানুষটিকে” একটি ছেলে বলে উঠে ওদের মাঝখানে।

“হ্যা অহনা। ভাইটি ঠিক বলছে”

“কি এমন বাধ্যতা যে ভালোবেসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঝ পথে ফেলে চলে যেতে হয়?”

“থাকে কিছু বাধ্যতা।যা সবাইকে চাইলেই বুঝানো যায়না।তাই আমি বলবো যে আছে তার কদর করতে শিখুন নয়তো হারিয়ে গেলে কেদেও ফিরে পাবেন না।”

“আমার বেস্টুও ঠিক এইভাবেই বিশ্বাস করে ঠকেছিলো।তাই আমি ঠকতে চাচ্ছিনা ভাইয়া।আর মি.রিশান আপনি আমার পিছু ছেড়ে দিন এটাই আপনার জন্য ভালো হবে।” বলেই চলে যায় মায়ার কাছে।

একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে অফিসে চলে যায় রিশান।মেয়েটা কিছুতেই ওকে বিশ্বাস করেনা।ভালোবাসা তো দূরে থাক!হতাশ রিশান ওকে বুঝাতে বুঝাতে তবুও হাল ছাড়বেনা।শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবে।

আরাফ বসে আছে পার্কের এক কোনায় ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আলাকের সাথে।আকাশের পানে চেয়ে আছে আরাফ।আলাক ওর কাধে হাত রাখতেই ধ্যান ভাঙে আরাফের।

এতক্ষণ ভাবছিলো ওদের প্রথম দেখার কথা।সেই রেস্টুরেন্টে মায়া এসেছিলো ওর ভাইয়ের সাথে আর ওর কিছু কাজিনের সাথে। পরনে ছিলো নীল শাড়ি আর খোলা চুল।কোনো সাজ নেই।সাজহীন ই আরাফের নজর কেরে নেয় মেয়েটি।
আরাফ এসেছিলো ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ওদের ট্রিট দিতে আর মায়া এসেছিলো ওর ভাই মায়ানের থেকে ট্রিট নিতে।মায়াদের টেবিলের পাশের টেবিলেই আরাফরা বসেছিলো।মায়া বার্গারে সস মাখাতে মাখাতে খাচ্ছিলো আর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসায় সবার দিকে সসের বোতলে চাপ দিয়ে ওদের কাপড়ে ভরাচ্ছিলো।ভুলবশত নাচতে নাচতে চাপটা পাশের টেবিলে দিয়ে ফেলে আর আরাফের শার্ট পুরো নষ্ট হয়ে যায়।রেগে গিয়ে সামনে তাকিয়ে আরাফ বলতে থাকে,

“হোয়াট দ্য…. ” ব্যাস আর বলতে পারলোনা।মেয়েটার চোখ খিচে বন্ধ করা অবস্থায় বারবার বলা “সরি সরি। সরি সরি” ওর কানে বাজছিলো আর ওর চেহেরার দিকে এক ধ্যানে চেয়েছিলো।
এই সেই সময় যখন আরাফ মারাত্মকভাবে প্রেমে পড়ে। মায়ার মায়াতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।তারপর মায়ান এসে সরি টরি বলে ওদের নিয়ে যায়।অনেক খোজ করে পাগলপ্রায় হয়ে মায়াকে খুজে ওর জন্য পাগলামি করে ওকে নিজেকে ভালোবাসাতে পাগল করে দেয়।আর ঠিক ই মায়া ওর ভালোবাসায় পাগল হয়ে যায়।আর ওর চাইতেও ডাবল পাগলামি করতে শুরু করে দেয়।আরাফ ছাড়া আর কিচ্ছু বুঝেনা।পড়াশুনা,খাওয়া দাওয়া সব বাদ দিয়ে ওর সাথে সময় কাটানো শুরু করে।ফ্রেন্ডদের ও ভুলে যায়।ফ্যামিলির সবাইকেও ভুলতে শুরু করে।আর আরাফ এসব কিছুর জন্যই ওকে ছাড়তে বাধ্য হয়।ওর আগের লাইফ ওকে দিতে নিজের ভালোবাসাকে দমিয়ে রেখে কঠোর হতে হয় ওর প্রিয়তমার জন্য।এই কথাটি কেবল আলাক ই জানে।আর কেউ জানেনা।

“কি ভাবছিস ভাই?” আলাক বলে।

“ভাবছি জীবন টা পালটে গেলো।যেই মায়ার মায়াতে আমি জড়িয়ে গিয়েছিলাম তাকে তার লাইফ ব্যাক দিতে গিয়ে নিজেই ওকে ভেঙে দিয়েছি হাজারো টুকরায়।মেয়েটা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ঠিকি করেছে।কিন্তু আগের লাইফে ব্যাক আসতে পারেনি।ওর চাঞ্চল্য ভাব ওর সেই মায়াবী মুখ মলিন হয়ে গেছে একদম বদলে গেছে আমার মায়াপরী”

“তাহলে কি তুই আর ওকে ভালোবাসিস না?”

“পাগল হয়েছিস?”

“তাহলে?”

“আমি আমার মায়াপরীকে #বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️ আর আজীবন বেসে যাবো।” চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে বলে।

To be continued…

বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০১

0

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০১
#লেখনিতেঃনুসরাত

রেস্টুরেন্টে অধীর অপেক্ষায় বসে আছে মায়া কেননা তার প্রিয় মানুষটির সাথে আজ প্রায় ৫ মাস পর দেখা হচ্ছে।কখনো ১ মাসের বেশি সময় যায়নি যে ওরা একে অপরের সাথে দেখা করেনি।কিন্তু এই ৫ মাস হওয়ার পিছনেও একটি বড় কারণ আছে।গত ৬ মাস যাবৎ মায়া তার ভালোবাসার মানুষটির বদলে যাওয়া ব্যবহারগুলো কিছুতেই নিতে পারছিলোনা। খুব কষ্ট দিচ্ছিলো তাকে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছিলোনা “কেনো আমার সাথে এমন করছো?কি করেছি আমি?”। এক সপ্তাহ আগেই সে মায়াকে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে এক সপ্তাহ পর ওর সাথে এই রেস্টুরেন্টে দেখা করবে।মায়া তো আজ ভীষণ খুশি কারন তার প্রিয় মানুষটির সাথে এত মাস পর দেখা হচ্ছে আবার তার অনেক প্রশ্নের জবাব ও চাই।আজ মায়া নিজেকে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটির জন্য তার প্রিয় সাজে সাজাচ্ছে।পরনে আছে নীল শাড়ি হাতে নীল কাচের চুড়ি চুল গুলা খোলা চোখে গাঢ় টানা টানা কাজল আর ঠোটে গোলাপ লিপস্টিক।হাতে পার্সটার মধ্যে মুঠোফোনটা ভরে বেরিয়ে পড়ে তার গন্তব্যে।রিক্সায় চড়ে বসে।বেশ কিছুক্ষণ পর ই রেস্টুরেন্টে পৌছে যায়।গিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট হয়ে আসলো এখনো সে আসছেনা তাই ভাবলো তাকে কল দিবে।ফোন টা বের করেছে এমন সময় এসে পড়লো তার প্রিয় মানুষটি যাকে সে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।পরনে কালো পাঞ্জাবি কালো জিন্স প্যান্ট হাতে কালো ওয়াচ চুলগুলো হাত চিরুনী দিয়ে নরমালি আচড়ানো চোখে তার সেই বিখ্যাত চশমাটি যার নাম মায়া দিয়েছে ‘আরচশমু’। আসলে সে চোখে একটু কম দেখে তাই এই চশমা নেওয়া।চেয়ারে বসে পড়ে।বসার পর চশমাটা ঠিক করে চোখে এটে নেয়।দূর থেকে যখন আসছিলো তার প্রিয়তমাকে একজনর চোখ বুলিয়েই এসেছিলো বিধায় এখন তার দিকে তাকাচ্ছেনা।এত সুন্দর করে শুধু মাত্র তার পছন্দের সাজে এসেছে মায়া আর লোকটি তাকাচ্ছেইনা বলে মায়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়।তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে।সে ওয়েটারকে ডেকে মেনু দেখে দুটো কোল্ড কফি অর্ডার করে।মায়া চুপটি করে বসে আছে।প্রায় ১৫-২০ মিনিট হয়ে আসছে লোকটি মোবাইল ই টিপছে।আর মায়া হাত কচলাচ্ছে যেনো কিছু বলতে চায় তবুও পারছেনা কোনো জড়তা কাজ করছে।লোকটি ফোনটি রেখে দেয়।তারপর কিছুক্ষণ মেঝেতে তাকিয়ে থাকে।তিনিও প্রায় ৫-১০ মিনিট যাবৎ ঘামছে আর রুমাল দিয়ে তা মুছছে।এর ই মাঝে ওয়েটার কফি এনে রাখে।লোকটির জড়তা কাজ করছে কিন্তু কফির একটি গ্লাস তার প্রেয়সীর দিকে এগিয়ে দেয়।যা দেখে মুচকি হাসে মায়া।মুখে সবেমাত্র স্ট্রটি মুখে দিয়েছে আর তখন ই সে বলে,

“আমি তোমার সাথে আর থাকতে পারছিনা মায়া।তোমার সাথে আমার যায়না।”

মায়ার কাশি উঠে যায়।তা দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে লোকটি আর পানি এগিয়ে দেয়।পানি খেয়ে মায়া তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।সে আবার ও মাথা নিচু করে বলে,

“জানি তোমার মানতে কষ্ট হবে তবুও আমি তোমার এসব পাগলামি আর মেনে নিতে পারছিনা।তোমাকে আমার অসহ্য লাগে।আই নিড আ ব্রেকাপ”

ছোট্ট ছেলেটির ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে মায়ার।সে বর্তমানে ফিরে আসে।সামনে তাকিয়ে দেখে তার প্রিয় মানুষটি তার দিকেই চেয়ে আছে চাহুনীতে ছিলোনা আগের মতো ভালোবাসা ছিলো শুধু বিরক্তি।যা দেখে মনটা বিষিয়ে যায় মায়ার।আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগের কথাই ভাবছিলো মায়া।মায়া কলেজ থেকে সবেমাত্র তার ডিউটি শেষ করে বেরিয়েছিলো রাস্তায় রিক্সা নিতে।সেই মুহুর্তে দেখে একটি ছেলে রাস্তার এপাশে আসছে আর তার দিকে ধেয়ে আসছে একটি প্রাইভেট কার।আর তখন ই মায়া দৌড়িয়ে আসে ছেলেটির কাছে আর ছেলেটিকে সরিয়ে তার কাছে আনে।আর ওপাশ থেকে তার সেই ভালোবাসার মানুষটাও দৌড়িয়ে এসে দাড়ায় পিচ্চিটার সামনে।আর যখন ই এই লোকটির দিকে মায়ার চোখ যায় তখন ই মনে পড়ে যায় সেই কালো দিনটির কথা।যেদিন তার সবকিছু হারিয়ে গিয়েছিলো।হারিয়ে গিয়েছিলো তার ভাইয়ুর ছোট্ট চঞ্চল মায়া।তার জীবন উলোটপালোট হয়ে গিয়েছিলো।হেরে গিয়েছিলো তার ভালোবাসা।

“আন্টি আন্টি তুমি কথা বলছোনা কেনো?”

ধ্যান ভাঙে মায়ার।

“হ্যা বাবা বলো”

লোকটি মাঝখানে কথা বলে,
“তুমি আমাকে নিয়ে আসতে পারতে আহান”

“চাচ্চু সরিতো।রাগ করোনা।এই আন্টিটা আমাকে বাচিয়ে দিয়েছে।থ্যাংক ইউ আন্টি”

“থ্যাংক ইউ মিস আমার ভাতিজাকে বাচানোর জন্য”

“না তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি একজন নাগরিক হিসেবে আর মানুষ হিসেবে আমার কর্তব্য পালন করেছি।বাবু তুমি অনেক কিউট কি নাম তোমার?” মায়া আহানের গাল হাত রেখে বলে।

“আহান মিষ্টি আন্টি।তোমার নাম?”

“মায়া।কিউটিপাই” হেসে জবাব দেয়।

“আন্টি তোমার হাসিটা খুব মিষ্টি”

“ওহ তাই?”

“হ্যা” মাথা ঝাকিয়ে জবাব দেয়।

এতক্ষণ তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো তার প্রাক্তনকে সে।মেয়েটা আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে আছে।চুলগুলো ঘন মোটার থেকে হালকা আর পাতলা হয়ে গেছে।যদিও খোপা করা তবুও বুঝা যাচ্ছে।আগে সবসময় চুল খোলাই রাখতো।কেনোনা তার খোলা চুল ভালো লাগতো আর সে ই মায়াকে বলেছিলো সবসময় চুল খোলা রাখতে।কিন্তু আজ মায়ার চুল খোপা করা দেখে হাসলো সে।গলার হাড় দেখা যাচ্ছে মায়ার।মেয়েটা যে এতটা পালটে যাবে ভাবেনি কখনো।আগের মতো সেই মায়াটা এখন আর মায়ার প্রতি জন্মায় না।

“চাচ্চু চাচ্চু আন্টিটার কোলে উঠি?”

“না!” এক প্রকার চিল্লিয়েই বলে সে।

“কিন্তু কেনো?”

“অপরিচিত কারো কোলে উঠতে নেই বাবা।আর তাছাড়া উনি কি মনে করবেন”

“আসো বাবা কোলে আসো তোমায় আমি চকলেট কিনে দেই খাবা?” স্মিত হেসে।

“কিন্তু চাচ্চু?” মাথাটা নিচু করে বলে আহান।

“দেখুন ভাইয়া আমি আপনার ভাতিজাকে খেয়ে ফেলবোনা।তাই নিশ্চিন্তে থাকুন।প্রয়োজন পড়লে আসুন আমাদের সাথে।আসো বাবু” বলেই আহানকে কোলে তুলে নেয় মায়া।

এদিকে মায়ার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌছে যায় সে।মেয়েটা তাকে ভাইয়া ডাকলো কেনো?বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাই?নাকি বিয়ে করে ফেলেছে তাই?কিন্তু নাকে তো কোনো নাকফুল ছিলোনা।ছিলোনা হাতে চুড়ি।তবে কি সে আজও তার অপেক্ষা করে?বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসে?এসব ভাবতে ভাবতেই দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আহানদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে মায়া বাসায়।এতবছর পর কেনো দেখা পেলো আবার?ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে কান্নায় ভেঙে পড়ে মায়া।কেনো আবার ও তাকে কাদাতে তার সামনে এলো?নিজেকে তো শক্ত করেই নিয়েছিলো।আজ সে বড় একজন প্রফেসর।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।১ বছর ডিপ্রশনে ছিলো।১ বছর পর ওর জীবনে নতুন করে আলো ফুটায় ওর প্রিয় বান্ধুবী অহনা।ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।ধীরে ধীরে ওকে ডিপ্রেশন থেকে বের করিয়ে আনে।আর হয়ে উঠে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর জান।এভাবেই চলছিলো ওদের জীবন।তারপর পড়াশুনা শেষ করে জবের জন্য দুজন এপ্লাই করে। আর এক ই কলেজে প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ নেয়।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অহনা ছোট্ট করে একটা মেসেজ দেয় “প্লিজ বাসায় আয়। আই নিড ইউ রাইট নাও”।

মেসেজ দেয়ার পর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলে পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে করে।

অহনা মেসেজ পেয়ে জলদি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে মায়ার বাসার উদ্দেশ্যে।মিনিট বিশেকের পর হাজির হয়ে যায় ওর রুমে।এসে দেখে কপালে হাত গুজে আছে।যেটা দেখে ওর বুকটা ধুক করে উঠে।যখন মায়া ভীষণ কষ্টে থাকে ঠিক এইভাবেই কপালে হাত দিয়ে কাদে।এসব ভেবেই ওর কাছে এসে হাত সরিয়ে দেখে চোখে পানি।অহনাকে দেখে উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে ফেলে।

বিচলিত হয়ে পড়ে অহনা।আর বলে,

” মায়ু মায়ু!রিল্যাক্স।বল আমায় কি হয়েছে?”

মায়া কিছু না বলে কেদেই যাচ্ছে।

“আমায় না বললে আমি বুঝবো কি করে পাগলি?”

মায়া তাও কিছু বলছে।

“মায়া!বলবি তুই?” জোরে ধমক দিয়ে।

“সে এত বছর পর আমার সামনে ছিলো।কথা বলেছে।আমি আমি তাকে দেখেছি।সে কেনো আবার এলো আমার জীবন উলোট পালোট করতে?”

“আরাফ!”

To be continued…

সংসার পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

4

#সংসার(০৮)
#শেষ_পর্ব
#তাহরীমা

“আম্মু তুমি অই বুড়ি কে এসব দিবে না।

–আমার জিনিস আমি যাকে ইচ্ছে দিবো তুই বলার কে?

–দিবে না মানে দিবে না।(রাগ দেখিয়ে)

“তনুর শাশুড়ি কিছু পেঁপে খুঁজতে এসেছিল তনুর ননদকে রেঁধে দিবে তাই।তনু যখন পেঁপে দিতে যাবে তাওহীদ রাগ দেখিয়ে এসব বলতে শুরু করে,সে মোটেও চায়না তার দাদুকে কিছু দিক।অতীতের কথাগুলো তার মনে পরে।এখনো ও তনুর শাশুড়ি তাওহীদ এর দোষ খুঁজে বেড়ায়,ছেলের কাছে নালিশ দেয়,তাই মাঝেমাঝে তাওহীদ ও দাদুকে দেখলে এমন রিয়েক্ট করে।

তনু ছেলেকে বুঝাতে চেষ্টা করে-

–আমরা যে যেমন তার সাথে যদি তেমন ব্যবহার করি তফাৎ কি থাকলো?

–যে যেমন তার তেমন ব্যবহার পাওয়া উচিৎ তবে ই বুঝবে।

–নাহ কখনো বুঝবে না,কারণ যে মনে মনে নিজ থেকে দায়িত্ব না বুঝবে তার কখনো বিবেক হবেনা।

–তুমি তারপর ও অই বুড়িকে দিবে তাহলে?

–তুই ও যদি তোর দাদুর মতো হোস তাহলে মনে রাখিস তোর ও পরিণতি এমন হবে,একটা সময় আপন কাউকে নিজের কাছে পাবিনা।সবাই কে তো আল্লাহ বুঝার জ্ঞান দেননা।সবাই তো পরকালকে ভয় পায়না?

–হুহ এত কিছু জানিনা।

–একটা কথা মনে রাখবি,বন্ধু হোক শত্রু হোক সবার সাথে ভাল ব্যবহার করবি,কারো মন ভেঙ্গে কেউ বড় হতে পারেনা।আর উনি তোর দাদু,উনার শাস্তি তো আল্লাহ দিচ্ছেন ই।

“তাওহীদ আর কিছুই বলেনা।একটা সময় পুকুরের মাছের সবটা বড় মাছ টা তনুর শাশুড়ি নিজের জন্য নিয়ে যেতো।আরো বলতো -“আমি বেশিদিন বাঁচবো না তাই নিয়ে নিচ্ছি।

কখনো ই নাতি অথবা ছেলেবউ কে খেতে দেয় নি।তনু যদি এখন মাছ রেঁধে খাওয়ায়,সে বলে-আমি আমার ছেলের অধিকারে খাচ্ছি।

“অথচ অতীতের সব কিছু ভুলে গেছে।অই যে তনু বলে-যে বুঝবে না মনে মনে,তাকে কেউ বুঝাতেই পারেনা।

“তানির ও প্রচুর রাগ উঠে,দাদুকে কিছু দিতে গেলে,মা কে গিয়ে রাগ দেখাতে গেলে ই তনু বলে-“কাউকে কিছু দেয়াতে ই আনন্দ, নেয়াতে নয়।যে দিতে জানবে না সে বুঝবে না আনন্দ কতটুকু।আর গাছের ফল সব আল্লাহর দেয়া।সবার উপর ই অধিকার থাকে খাওয়ার।

“তানি ধম বন্ধ করে চলে যায়।কিছুক্ষণ ভাইবোন মিলে চিল্লাপাল্লা করবে তারপর আবার শান্ত হয়ে যাবে।বুঝেনা তারা মায়ের এত ধর্য্য আসে কোথেকে?এখনো পর্যন্ত দাদু নানুর বাড়ির কারো আসা খাওয়া পছন্দ করে না।শোধরালো না এ বয়সে ও,আফসোস….!!!

“তানি কখনো নিজের বাবার ছাড়া কারো থেকে কখনো কিছু পায়নি,না চাচা,না দাদা,না দাদু।তারপর ও মা বাবার থেকে পাওয়া সবকিছুতেই সে সন্তুষ্ট।প্রতিবার জন্মদিনে মা তাকে কাপড় গিফট করে সাথে মজার বিরিয়ানি রান্না করে,এতে খুশির শেষ নেই তার।

তনু বলে-যে অল্প তে সন্তুষ্ট হয় সে ই প্রকৃত সন্তুষ্ট হতে পারে।তনুর মা ই নাকি শিখিয়েছিল-সবসময় ছোট হয়ে থাকতে,ছোট হয়ে থাকলেই আল্লাহ বড় করে।নিজেকে বড় ভেবে কেউ কখনো বড় হয়না।

“তনু মা,বাবা,বড়বোন সবার উপদেশ মেনে চলে সবার সব দায়িত্ব পালন করে গেছে।ধর্য্য ধরে গেছে সারাজিবন।
———–
“তনুর দেবরেরা এখন দিনে এনে দিনে খায় কোনোমতে,টেনেটুনে সংসার চালায়।আর কাজ না করলে সাথে বউয়ের আজেবাজে কথা তো রয়েছে।কারোর সম্মানের দিকে কেউ ভাবেনা।বর বউ দুজনে একজন আরেকজন কে যা ইচ্ছে বলে ঝগড়ায়।এদিকে তনু আর তার বর কে কখনো রেগে কথা বলেনি,তনু রাগলে বর চুপ থাকে বর রাগলে তনু চুপ থাকে,শেষমেশ ঝগড়া ও হয়না।

“তানি এখন সে ই ছোট্ট তানি নেই।তানি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।এখন আর চাচার দিকে অসহায় হয়ে ফিরে তাকায় না,ভয় ও করে না।তাওহীদ ইঞ্জিনিয়ার এ পড়ে।আর তানির ছোটবোন ৬ষ্ট শ্রেণী তে পড়ে।তিনভাই বোন মিলে হাসি ঝগড়ায় মাতিয়ে রাখে পরিবার।

তানি মাঝেমাঝে মা কে হাসির জোক্স বলে বলে হাসায়।তানি ভীষণ কথা বলতে পছন্দ করে,অবসরে অথবা কাজের ফাঁকেফাঁকে অতীতের স্মৃতিগুলা তনু মেয়ের কাছে তুলে ধরে।বিভিন্ন মুহুর্তে বিভিন্ন স্মৃতি মনে পরে,সেসব অন্ধকার দিনের কথা ভাবলে এখনো ভয় লাগে।তাই মেয়ের সাথে কথাগুলো শেয়ার করে হালকা হয়।অনেক ঘটনা তানি মায়ের কাছ থেকে ই শুনে আসছে।মাঝেমাঝে সে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়াকে ও ভয় করে।তার যদি এমন অন্ধকার জগতে পরে কখনো কি মায়ের মতো ধর্য্য ধরতে পারবে?

“তনু অনেক সুন্দর করে নকশি কারুকাজ করতো।সেসব দেখলে তানি নিজেই অবাক হয়,তার মায়ের কত গুণ। অথচ সে গুনের গ টাও নেই তার কাছে।খালি বসে বসে খেতে জানে।এসব ভেবে আনমনে হাসে।

“তনুর ননদ বেড়াতে আসলে তনুর হাজারটা ভুল ধরতে চাই,অথচ সে ও ভুলে গেছে কি না করেছে তনু তার জন্য?তারপর ও মায়ের সাথে তানি সারাক্ষণ এটা ওটা কাজে হেল্প করে।মাঝেমাঝে ফুফুদের সাথে কথা ও বলেনা।তাই ফুফুরা তাকে খারাপ বলে।কিছু স্বার্থপর মানুষ আছে পৃথিবীতে,যাদের জন্য আপনি যতক্ষণ করতে পারবেন ততক্ষণ মনে রাখবে আপনাকে,তারপর ভুলে ই যাবে।আর সেসব মানুষ দের কখনো দূর্বলতা দেখাতে নেই।তাই তানি ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাটে।নিজের রক্ত রা যদি তার দোষ খুঁজে বেড়ায়,তার তো আর করার কিছুই থাকেনা।আর ফুফুরা সবসময় একটা কথায় বুঝাতে চাই তানি তার মায়ের মতো ই হয়েছে,মানে খারাপ।

তারপর ও সংসারে সবাইকে নিয়ে মানিয়ে চলতে হয়।মানিয়ে নিতে পারলে ই সে ভাল,আর মানিয়ে নিতে না পারলে সমাজ তাকে কতকিছুই না বানিয়ে দেয়।অথচ কষ্টের সময় সে সমাজ কখনো ই পাশে থাকেনা।

“ইদানীং তনুর ননদের বর তনুকে খুব সম্মান করে,তাই তনুর ননদ ও বাধ্য ভাবিকে সম্মান করতে।তনুর ছেলেমেয়ে রা বড় হয়েছে তাই তাকে সবাই সম্মান দিয়ে কথা বলে,বরং বাড়ির কিছু মানুষ যারা হিংসা করতো তারা ই বলে-এই একটা মেয়ে একা ই লড়াই করে গেছে,একা ই ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছে।

“তানি আর তাওহীদ কে ক্লাস এইট পর্যন্ত কখনো তনু টিচার দেয়নি,কারণ টিচারের খরচ দেয়ার মতো টাকা তার কাছে ছিল না বরং সে নিজেই পড়িয়েছে।অনেকে এটা বিশ্বাস না করলে ও সত্যি এটাই…!!
বলে রাখা ভালো তনু সাইন্স নিয়ে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছে।তখনকার এপর্যন্ত পড়া অনেক কষ্টের আর সুনামের ছিলো।অনেক মেধা ছিল তনুর,বাবার কাজ করে রাতে হালকা সময় পেত পড়ার,একবার পড়েই সব মনে রাখতে পারতো।তনু ইংরেজি তে অনেক দক্ষ ছিল কিন্তু ভাগ্যে পড়ালেখা ছিল না,তাই করা হয়ে উঠে নি।

“আজ তনুর কিছুর অভাব নেই,যাকে বলে পরিপূর্ণ সংসার।যে যেমন কাজ করবে আল্লাহ তাকে তেমন ই শাস্তি দিবে সেটা ইহকাল অথবা পরকাল,সেটা বিশ্বাস করাটা খুবই জরুরী।আর যে পরকাল কে ভয় পেয়ে আল্লাহর পথে চলে তার সাথে আল্লাহ সবসময় থাকেন।

“তনু মেয়েকে পর্দা করা শিখিয়েছে,ছেলেমেয়েদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছে নিজেই।তনুর বাবা ই তনুকে শিখিয়েছিল-যে নিজে কোরআন পড়ে,এবং অন্যকে শিক্ষা দেয় সে ই উত্তম ব্যক্তি।তনু ও তার সন্তানদের এসব শেখায়।ভাল পথের কথা ও বলে খারাপ পথের কথাও বলে।

“মাঝেমাঝে তনুর অসুস্থ লাগলে মৃত্যুর কথা ভাবে,তানির মন অনায়াসে খারাপ হয়ে যায়।মা ই তার একমাত্র আপন আর বন্ধু যে,যাকে বিশ্বাস করে কখনো ঠকে না।সে মা কখনো কারোর চলে না যাক সে দোয়া ই করে।

“সবচেয়ে মজার বিষয় তানির কাছে,মায়ের রান্না।এত মজা লাগে।যে দাদু তনুর রান্না মজা লাগতো না বলে ঘৃণা করতো আজ তনুর রান্না খাওয়ার জন্য বসে থাকে।সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে দিন খারাপ হোক ভাল হোক চলে ই যায়।কিছুক্ষেত্রে সুদিন ফিরে আসে,আসতে হয় যে।

“তনু ভবিষ্যৎ এ কি হবে জানেনা,তবে বর্তমানের সবকিছুর জন্য আল্লাহ কে শুকরিয়া জানায়।আল্লাহ ই তো একমাত্র পাশে ছিল আছে থাকবে।

আর তানি ও এমন মা পেয়ে গর্ববোধ করে।তার মা তার আদর্শ।সে আগের মতো মা ছাড়া কাউকে ভাল লাগেনা।এখনো ইচ্ছে করে কোলে বসে জ্বালাতে আর মজার মজার কবিতা শুনে ভাত খেতে…….

(সমাপ্ত)

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ, জিবনের গল্প কখনো শেষ হয়না😊,তানি চরিত্র টা হচ্ছে মূলত আমার চরিত্র।আশা করি বুঝতে পেরেছেন তনু কে?ধর্য্য ধরে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।আর যাদের ভাল লাগেনি ইগনোর করুন,সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ)

সংসার পর্ব-০৭

0

#সংসার(০৭)
#তাহরীমা

“কয়েকদিনের মধ্যে তানি পড়ালেখায় অনেক ভালো করে,সাথে বান্ধবী ও করে নিয়েছে,তানির বান্ধবি তিন্নি অনেক ভালো,আসার সময় একসাথে আসে,আর যাওয়ার সময় একসাথে যায়।যদিও পাশাপাশি বাড়ি না তাও দাঁড়ায় তানির জন্য।তানি ছোট বেলা থেকে গুলুমুলু চেহারার মেয়ে,মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় কেউ না কেউ আম্মু ডেকে ডেকে আদর করতো,এতে তানির ভয় ও লাগতো।অচেনা মানুষ আম্মু কেন ডাকবে?

একদিন তানি মাদ্রাসা যাওয়ার সময় একটা বড় ছেলে তানিকে দেখে বলল-

“হেয় কিউট পিচ্চি,বড় হলে তোমাকেই বিয়ে করবো”

বিয়ে শব্দটা তানি বুঝলো না তাই সে চুপচাপ মাদ্রাসায় যেত।যতদিন ছেলেটা তানির সামনে যেত-“এই বউ”বউ বউ করতো।বউ কি তানি বুঝলো না।তাই মাদ্রাসা থেকে ফিরে মা কে জিজ্ঞেস করলো বউ কি?বিয়ে কি?

“তনু অবাক হয়ে গেলো এত ছোট মেয়ে বিয়ে,বউ কেন বলছে?তানির থেকে সবটা জেনে মেয়েকে বলল-অচেনা কারো সাথে কথা বলবে না,তাদের দিকে তাকাবেনা,তাদের কিছু দিলে নিবে ও না।কারণ তোমার আপনজন ব্যতীত অন্য কারো জিনিসে তোমার হক নেই,বড় হলে হক অথবা অধিকার সম্পর্কে বুঝবে,কিন্তু এখন আম্মুর কথা মনে রাখবে ঠিক আছে?

“তানি মাথা নাড়ালো,তানির আব্বু ছেলেটির খুজ নিয়ে তাকে কি বলেছিল তানির জানা নেই তবে সেদিনের পর থেকে ছেলেটাকে আর দেখেনি কোথাও।
————-

“মেজো বউয়ের বিয়ের সাথে সাথে দুইটা মেয়ে বাচ্চা হয়ে যায়,শাশুড়ি এদের কে খুব ভালবাসে,এদের গায়ে একটা ঠুকা ও লাগতে দেয় না।

তাওহীদ চায় সবসময় দাদুদের ঘরে থাকতে,তার মতে ওদের যেমন দাদু তার ও দাদু তাকে ওতো ওদের মতো আদর দেয়া উচিৎ,তাকে কেন তাড়িয়ে দেয় এটা মাথায় আসেনা।সে মায়ের বকা খেয়েও দাদুর ঘরে যায়।

কাজিনদের তাওহীদ খুব আদর করে,তানি ও আদর করে,কাজিন রা নানুবাড়ি গেলে অপেক্ষা করতো কবে ফিরবে।কিন্তু দাদু একদম পছন্দ করেনা তানি তাওহিদ ঘরে আসুক সেটা।

মাঝেমাঝে তাওহীদ কাজিনদের আদর করতে করতে করতে বিরক্ত বানিয়ে ফেলে,তখন তারা তাওহিদকে মারে,আর তারা কাদে ও।দাদু মনে করতো তাওহিদ মেরেছে সেজন্য কাঁদছে,তারপর তনুকে বিচার দিতো-“তোর ছেলে মেজবউ কে আগে মারতো,এখন তার বাচ্চাগুলা কে মারছে।”

সেদিন তনু ছেলেকে খুব মারে।তারপর ও দাদু বলে-“এগুলা কোনো মাইর হলো,জোরে জোরে মার”

ছেলেকে মেরে নিজেও কাদে।একবার কাজিন(মেয়ে) একটা খেলার ছলে তাওহিদ কে পেটে লাতি মারে,সে পেটব্যথা নিয়ে একমাস খাবার খেতে পারেনি।তাও তনু বিচার পায়নি,আরো শুনতে হয়েছে দুষ্টু ছেলের এমন হওয়া উচিৎ।

“তাওহীদ একবার দুষ্টুমি করে মেজাম্মু কে মেরেছে,ছোট হাত দিয়ে মেরেছে কত ই বা ব্যথা পাবে?কিন্তু মেজাম্মু তাকে ইটের কঙ্কর নিয়ে মেরে কপাল ফাটিয়ে দেয়।তবে তনুর দেবর খুব প্রতিবাদ করে সেদিন,বউ কে আচ্ছামত বকা দেয়,কারণ দেবর রা তাওহিদ কে ভালবাসত।
———–

আস্তে আস্তে তনুর ননদ বড় হয়ে যায়,কিন্তু শাশুড়ি তার বিয়ের কথা ভাবেনা,তনুর বর বিয়ের কথা তুললেই।আরো বলে-

–কত মেয়ে বুড়ি বুড়ি হয়ে যাচ্ছে দেখিস না?আমার কচিমেয়ের দিকে নজর পরলো?

তনুর বর বুঝায়-মেয়ে বড় হলে বিয়ে দেয়ায় ভালো,তাছাড়া সে পড়ালেখা করেনা।বেকার বসে থাকলে পরে পাত্র ই খুঁজে পাবেনা।তখন তনুর ননদের বয়স ছিল ১৯/২০ বছর।

শাশুড়ি,ননাসের জামাই,দেবর সবাই তখন তনুর বরকে বলে-তোর বোন তুই বিয়ে দে গা,তোর হাতে ই তো তুলে দিয়েছে বাবা,আমাদেরকে এসবে টানিস না।

“তনু বর বিদেশ থেকে তো আর পাত্র দেখাশুনা করতে পারেনা।তাই তনু ই তার দুলাভাইকে নিয়ে বিভিন্ন পাত্র দেখতে শুরু করে,তাদের দেখা অথবা যত খরচ সব তনুর বর ই করত,শাশুড়ি অথবা অন্যরা এসবে মাথা ও দিত না।

তনুর মেজো দেবর শাশুড়ি কে বলতো-মা তোমার অনেক সম্পত্তি কিছু বিক্রি করে দাও না?অনেক টাকা পাবে হাতে।শাশুড়ি ও লোভ সামলাতে না পেরে একে একে তিনবার জমি বিক্রি করে।বিক্রির টাকা কিছু দেবরে নেয়,কিছু ননাসের জামাই নেয়,কিছু নিজে খরচ করে।অথচ মেয়ের বিয়ের টাকা এখন তার কাছে নেই।যে যার মতো স্বার্থপরের মতো চলে।তনুর ননদ তনুর কাছে এসে কাদে-“ভাবি তুমি যেমনে পারো এ নরক থেকে আমায় বিদায় দাও।

“তনু সকালে পাত্র দেখতে যেত,দুপুরে এসে ভাত রেধে বাচ্চাদের খাওয়াত,এভাবে অনেকদিন পর একটা ভাল পাত্রের খুজ পায়,অবশেষে তনুর বর দেশে আসলে বিয়ে ঠিক হয়।পাত্র তনুর ব্যবহার খুব পছন্দ করে।সব দায়িত্ব এখন তনুর বরের কাধে এসে পরেছে,বিয়ের বাজার থেকে শুরু করে মানুষ কে দাওয়াত দেয়া,এদিক সেদিক টুকটাক কাজ এমনকি বিয়ের সব আয়োজন বর ই করে,আর বাড়ির কাজ তনু একাই করে,পাশাপাশি বাড়ির অনেক মহিলা ই সাহায্য করেছে।তনুর কে পছন্দ না করলে তনুর ননদকে তো পছন্দ করে তাই কাজ করে দিছিলো।

বিয়ের এক সপ্তাহ ধরে এত ব্যস্ততায় তনু আর তার বর ঘুমাতে ই পারেনি ঠিক।তার মাঝে তানির কর্ণছেদন ও করে।তানি ও বউয়ের মতো সাজবে ফুফুর সাথে।

।তনুর বাপের বাড়ির লোকেরা অবাক হয় তনু আর তার বরকে দেখে,এত ধর্য্য এদের?তনুর বড়বোন সবসময় তনুকে সাপোর্ট দেয়।এত কষ্ট পেয়েও যে শাশুড়ি কে সম্মান করে,শশুরের কথা মনে রাখে।

“গায়ে হলুদের দিন তানি খুব সুন্দর করে বউয়ের মতো সাজে,তানির জন্য ও কেক আনে তার আব্বু।সেদিন অনেক খুশির দিন ছিল তার কাছে।

“অবশেষে বাবার দেয়া দায়িত্ব তনু আর তার বর পালন করলো,ছোট ননদ কে ছোট থেকে বড় করে নিজ হাতে বিয়ে দিলো।বোন কে বিয়ে দিয়ে তনুর বর অনেক কাদলো।যেন মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে,কারণ এতই ভালবাসত বোনকে যে, কাজে যাওয়ার আগে বোনের কপালে চুমু দিয়েই যেত।মোটকথা মা বাবা ভাইবোন সবাইকে ভালবাসত।কেউ তার ভালবাসার দাম দেয় নি।তারপর ও তনু আর তার বর তাদের জন্য সারাজিবন করে গেছে।

“আস্তে আস্তে তাওহীদ আর তানি বড় হয়,দাদু যে তাদের পছন্দ করেনা সেটা ও বুঝতে শিখেছে।গাছের কোনো ফল ও যে তাদের না সেটাও বুঝতে শিখেছে তাই তনুর কথামত তাদের ভাগের সব বড় হওয়ার দিন গুনে।

“তনুর দেবরের আবার টাকার প্রয়োজন হলে তনুর শাশুড়ি জমি বিক্রি করবে ভাবে,জমি নেবে বাড়ির ই এক পরিবার।কিন্তু এভাবে বাড়ির মানুষের কাছে জমি বিক্রি করতে চায়না তনুর শাশুড়ি।

তনুর দেবর এসে তনুকে বলে-“তোমার ভাইগুলা তো এখন যতেষ্ট বড়লোক,তাদের বলো জায়গাগুলা কিনে নিয়ে আমাদের টাকা দিতে”?

“তনু সেটা ভাইদের শেয়ার করে,ভাইরা সেটা শুনে বলে-“তোর শশুড় বাড়ির জমি দিয়ে আমরা কি করবো,বরং আমরা তোকে ধার দিচ্ছি জমিটা তোর জামাইয়ের নামে করে ফেল।

“তনু সেটা শাশুড়ি কে জানালে সে রাজি হয়,কিন্তু যেদিন রেজিট্রি হয় সেদিন তনু কিংবা তার বর কেউ ই উপস্থিত ছিল না,ছিল তনুর শাশুড়ি আর দেবর,তারা ই সাইন করে জায়গাটা তনুর বরের নামে লিখে দেয়।

কিন্তু আল্লাহর চাওয়া অন্যকিছু ছিল,শুধু দেয়ার কথা ছিল জমি,কিন্তু কাগজে পুকুর,বিল,যতকিছু আছে সব উল্লেখ হয়ে গেছে তনুর বরের নামে।এমনকি যে রেজিট্রি করেছে সে ই বলছে-“সাইন করার আগে তিনবার তনুর দেবর আর শাশুড়ি কে পড়ে শুনিয়েছে।”

“কি থেকে কি হয়েগেলো তনু বুঝলো ই না।তবে এটা বুঝেছে তারা টাকা পেয়েছে হয়েছে,এত জমির প্রতি খেয়াল ছিল না হয়ত,ভাগ্যিস জায়গা তারা কিনেছে,বাড়ির মানুষ এ কিনলে তো টাকার লোভে বাড়ি টাও দিয়ে দিতো।

“তারপর সংসারে কম খরচ করে টাকা জমিয়ে,আর ভাইয়েদের সাহায্য তনু পাকা বাড়ি বানায়।বাড়ির সামনে বিভিন্ন ফলের গাছ রোপন করে।

আম,লেবু,জাম্বুরা,পেয়ারা,আমড়া,পেপে সব গাছ ই রোপন করে।তনুর শাশুড়ি পেপে গাছ রোপন করলে ও তেমন ধরতো না।কিন্তু প্রথম তনুর পেপে গাছে এত বড় ফল আসে যে মানুষ দেখে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতো।আর অনেক মিষ্টি ও ছিলো ফলগুলো তে।প্রথম গাছের পেপে ফল টা অনেক বড় ছিল,তাই সেটা মাদ্রাসায় দান করে।পাশাপাশি তানি ও তাওহীদ ও খায়,এত এত পেঁপে ফল খেতে খেতে আর খেতে ই ইচ্ছে করেনা ফল।আম,আর পেয়ারা গাছ ও বড় হচ্ছে,পেয়ারা গাছে অনেক ফুল এসেছে।

অথচ এমন এক সময় ছিল তাওহিদ দাদুর পিছে পিছে কান্না করতো একটা আম এর জন্য।

———–

তনুর শাশুড়ি দেবরের কথামত জমি বিক্রি করতে করতে জমি তার কাছে নেই বললেই চলে,তাই এখন স্বার্থ নেই দেবর তাকে একদমি সহ্য করেনা।আর মেজো বউ তো ঝগড়া করে কথায় কথায় তাই এখন শাশুড়ি নিজেই চুপ থাকে,বুড়ি বয়সে ঝগড়া কি ভাল লাগে?তাই চুপ থেকে থেকে কোনোমতে মানিয়ে নেয়।
———-

ছোট ছেলে বিদেশ যায়,আবার এসে বিয়ে করে,কিন্তু বউ ভাড়াবাসায় থাকে,সে ও তেমন পাত্তা দেয়না।তনু মাঝেমাঝে খাওয়ায় শাশুড়ি কে,কিন্তু শাশুড়ি কষ্ট পেলেও তার কাছে আনবে না।কারণ একসাথে না থাকার কথা শাশুড়ি ই একদিন নিজেই তুলেছিলেন,আজ কিভাবে খারাপ বউওয়ের সাথে থাকবে?

মেজবউ কে নিয়ে তার নামে নিন্দা করতো, আর আজ মেজবউ ই ঝগড়া লাগলে শাশুড়ির কুকীর্তি পাস করতে দুইবার ভাবেনা।আর ছোট বউ বলে-” বড় বউরা করেনি কাজ আমি কেন শাশুড়ি ননদ কে দেখবো?

প্রতিবন্ধী ননদকে নিয়ে শাশুড়ি অহংকার করে তনুকে চিল্লিয়ে বলতো -“এটা আমার বুড়া বয়সের সঙ্গি”হ্যা আজ সঙ্গি হয়েছে।মেয়েটা একটা কাজ ও করেনা,বুড়ি বয়সে কাজ করে খাওয়াতে হয়।

কিন্তু তনু বরকে বলেছে-“উনি মা,মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত,তোমার দায়িত্ব অধিকার তুমি পালন করে যাও।শাস্তি দেয়ার মালিক আল্লাহ……তাই তনুর বর মাসের টাকা মাসে দিয়ে দেয়,সংসারে যতই টানাপোড়ন থাকুক মা কে কখনো অবহেলা করেনি,ঔষধ আর খাওয়ার খরচ দিয়ে দেয়……আর তনুর শাশুড়ি মেজবউয়ের মুখে কোনোমতে নাম করে করে ভাল থাকে,আর মেজবউয়ের সাথে ই থাকে……….
——-

“তানিদের এখন নিজেদের পুকুরেই বড় মাছ পায়,তাই দাদুর সুযোগ থাকেনা সব নিয়ে নেয়ার।তনুর ননাসের ছেলেরা তনুর বরের টাকায় পড়ালেখা করে বড় হয়ে গেছে,তাই ননাস আর তেমন কিছু বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে যায় না।

তানি আশেপাশে বাচ্চা দেখে মা কে বলে তাদের জন্য একটা বাবু আনতে হবে।তনু বলে-“বাবুর সব কিন্তু করতে হবে,পায়খানা ও পরিষ্কার করতে হবে কিন্তু?তানি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

তাওহিদ আর তানির চিল্লাচিল্লি তে তনু আরো একটা বাচ্চা নেয়।আরো একটা মেয়ে হয়।মেয়েটা হওয়ার পর তনুর বরের ও প্রমোশন হয়,বিদেশে ভাল জব করে।

তনুর এখন রাতে আর ভয় করেনা।সেই ছোট্ট তনু যে সংসার মানে কি ই বুঝতো না বিয়ের আগে,সে আজ কত বড় হয়ে গেছে,একসময় তার কিছুই ছিল না।আজ সব আছে….তনু ই বলে ধর্য্যের ফল অনেক মিষ্টি…

কিন্তু আজ সব থেকে ও সেই যৌবন বয়সে যে ইচ্ছে গুলা ছিল তা সব মরে গেছে,ইচ্ছে ছিল সোনালি ঘড়ি পরার,আজ টাকা আছে কিনার কিন্তু ইচ্ছে নেই,ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করার আজ সে বয়স নেই,সুন্দর কবিতা লিখতে ইচ্ছে হতো,আজ ছন্দ মনে পরে না।ইচ্ছে ছিল বরকে নিয়ে নতুন শাড়ি পরে বেড়াতে যাওয়ার,তনুর বর তনুর জন্য শাড়ি কিনে আনলে হয় শাশুড়ি নয় ননাস ঝগড়া করে নিয়ে পরে ফেলতো।

আজ শাড়ি কিনার সামর্থ্য থাকলে ও শাড়ি সামলানোর শক্তি নেই।সব থেকে ও আজ মন মরে গেছে😊,মাঝেমাঝে সংসারের ঝামেলা গুলোই খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়,সব ছেড়ে দিতে মন চায়,বয়স বাড়ছে,মনের রোগ বাড়ছে,সাথে দেহের রোগ..!!

চলবে…..

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

সংসার পর্ব-০৬

0

#সংসার(০৬)
#তাহরীমা

“কিছুদিন পর ই তনুর শশুড়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়,তনুর মতো তিনি ও ধুলাবালি,ধোয়া একদমি সহ্য করতে পারতেন না,যেহেতু তনু সে রোগ সম্পর্ক এ বুঝে তাই সে শশুড়ের সব দেখাশুনা করতো আর সেবা করতো।শশুড়ের সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতো।আস্তে আস্তে শশুড় তনুকে পছন্দ করতে শুরু করে,আর বলে-“আমি দুহাত তোলে দোয়া করছি তুই বড় হ”

“তনুর বর দেশে ফেরার সাথে সাথে বাবার অসুখের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।কিন্তু তনুর শাশুড়ি তনুর শশুড়ের ঔষধ খাওয়াটা একদমি পছন্দ করতেন না।

সারাক্ষণ বলতেন-“টাকা খরচ হচ্ছে এই হচ্ছে সেই হচ্ছে।ঝগড়া লাগিয়ে দিতো।তনুর বর তাই চুপিচুপি বাবাকে ঔষধ কিনে দিতে,এতে বাবার খুশিতে চোখে পানি চলে আসতো।আর দুহাত তোলে দোআ করতো।

অন্যদুই ছেলেকে যদি বাবা কখনো ডাকেন তারা ফিরে ও তাকাতো না। এতে তিনি তনুকে বলতেন-“দেখেছ বউ আমার ছেলে আর সাথে কেমন ঘাড়বাকা করে হাটছে?

তনু এতে কিছুই বলতো না,কি বা বলবে?তার তো কিছু বলার অধিকার নেই শুধু কাজ করার অধিকার ই আছে।অনেক সময় প্রতিবাদ শব্দটা সব জায়গায় মানায় না।কিছু ক্ষেত্রে চুপ থেকে ও নিরব প্রতিবাদ করা যায়,

কথায় আছে-“চুপ থাকে যে মুক্তি পায় সে”।চুপ থেকে যদি ঝগড়া আর নিন্দা থেকে বাচা যায় তাও ভালো।আল্লাহ ধর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন যে।

“তনুর বর তনুর জন্য স্বর্নের চুড়ি নিয়ে আসে বিদেশ থেকে।শাশুড়ির তো ছিলই অনেক তারপর ও বউয়ের পরা টা পছন্দ নয়,কিভাবে এ চুড়ি বউ থেকে নিবে সে চিন্তায় খালি মাথায় ঘুরে।তনুর ছোটদেবর বিদেশ যাওয়ার জন্য মনস্থির করলে শাশুড়ি বলে চুড়ি গুলা দিতে যাতে সেগুলো বিক্রি করতে পারে।তানি চুড়ি গুলা দেয় সাথে তনুর বর ও ৬০০০০ টাকা দেয়,বলে রাখা ভালো তখনকার ১টাকা আজকের ১০ টাকার সমান।
তানিকে ও তার আব্বু একটা চেইন দিয়েছিল।ছোট তাই গলাতে পরতে পারেনি।

তনুর শাশুড়ি একটা বিয়েতে তানির চেইন পরে যায়,সেখানে গিয়ে চেইন টা হারিয়ে ফেলে,হয়ত হারায় নি মিথ্যা বলেছে কারণ তানি দিয়ে ফেলবে,হারায় ফেলেছে বললে তনু যে বোকা এসব খুঁজবে ই না।কিন্তু তনুর জা খুব চালাক সে কৌশলে শাশুড়ি থেকে তনুর চুড়ি গুলো নিয়ে দেবরের দিয়ে বিক্রি করিয়ে ফেলে এতে শাশুড়ি সে ছেলের উপর কথা বলেন না।ছেলেকে খুব ভয় পায় তো,মেজাজি ছেলে বলে কথা।সেবার ছোটদেবর তো বিদেশ যায় ও নাই, টাকা গুলা ও উধাও হয়ে গেছে,তনুর বর হিসাব চাইলে বলে-” তোর বউ খরচ করেছে আমরা কিছুই জানিনা”।

তনুর বর ভাল ই জানে তনু এমন মেয়ে ই নয় তাই সে তনুকে কিছুই বলেনা।

“সেবার তনুর খুব অসুখ হয়।এতই অসুখ যে কাজ ই করতে পারছিল না(কি অসুখ বলতে চাচ্ছিনা),শুয়া থেকে উঠতে ই পারেনা।কিন্তু শাশুড়ি ডাক্তার ও দেখাচ্ছে না।এদিকে তনুর বর তনুর বড় আপাকে বললে বড় আপা তাড়াতাড়ি এসে বোনকে নিয়ে যায় ডাক্তারের কাছে,ডাক্তার বলেছিল একমাস লাগবে সুস্থ হতে,তনুর বড়বোন একমাস সেবা করে তনুকে ভাল করে এবং নিজের কাছে রাখে।

এদিকে শাশুড়ি রেগে বোম,সংসার ছেড়ে এতদিন বোনের বাড়িতে কেন থাকবে?নিশ্চয় এসবি নাটক,নিশ্চয় আলাদা হওয়ার ফন্দী আঁটছে। এসব ভেবে শাশুড়ি মনস্থির করে যে,বউ বাড়ি আসলে এর বিহিত করতে ই হবে।

“তনু যখন শশুড় বাড়ি আসে,বোনের ছেলেকে দেখে শাশুড়ি আজেবাজে কথা বলতে লাগলো।শাশুড়ি বলে-

–হয়ত ভাগ্নে নয়তো দুলাভাই এর সাথে লাইন আছে নইলে এতদিন সংসার ছেড়ে কেমনে থাকে?

“তনুর চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝরে পরে,তনুর শশুড় হাজার বলেও শাশুড়ির বাজে কথা থামাতে পারেনা।পরে তনু ও দু চারটা কথা বলে-

–এতদিন আমি অসুস্থ ছিলাম,একটা দিন তো দেখতে ই যান নি,দায়িত্ব সব বউয়ের আপনাদের নেই।আমি এতদিন সুখে ই ছিলাম।

–ও যা ভেবেছি,আলাদা হতে চায় বউ।

বাড়ির মহিলা রা ও এতে তাল মেলায়।

–ছিঃ শেষমেশ হাড়ি আলাদা করতে চায় এই বউ?আগেই বলেছিলাম মেয়েটা বিয়াদব সংসার ভাঙ্গতে চায়।

“তনু এসব সহ্য করতে না পেরে তার বর কে বলে-“হয় আমি আলাদা থাকবো এদের থেকে,নয় যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো”।

তনুর বর এতদিনে বুঝতে পারে মায়ের ব্যাপার টা,কারণ সেদিন সবার ভাত খাওয়া শেষে যখন তনুর বর হাড়ি দেখতে গেছিলো দেখলো ভাত একমুঠ কি দুমুঠ আছে,সে চুপিসারে সরে গিয়ে দেখলো তনু উপোস থাকে।অতচ তনুকে জিজ্ঞেস করলে বলে-খেয়েছি তো।

আর তনুর জা যে কাজ করে না সেটা ও লক্ষ্য করেছে,সবমিলিয়ে তনুকে নিয়ে বের হয়ে যায়।আলাদা বাসা নেয়,কয়েকদিন ভাড়া বাসায় থেকে বাড়ির উঠানে ছোট ঘর বেধে তনুকে নিয়ে আসে।

তখন বাড়ির লোকে রা সবাই তনুকে যা ইচ্ছা তাই বলতো,শুরু হলো অন্য এক যুদ্ধ।দুইটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে কিভাবে কি করবে।এদিকে তনুর বর সংসার খরচ দেয় খুব অল্প,বেশিরভাগ টাকা মা কে ই দিতে হয়।

তনুকে শাশুড়ি আলাদা করিয়ে মনে মনে খুশি ই হয়,কারণ তনুর গুছিয়ে গড়ে তুলা রুমটা জা কে দেয়।আর তনুকে পাশে উঠানে একটা ছোট্ট ঘরে জায়গা দেয়।সংসারে যত টাকা লাগবে তার চেয়ে অল্প টাকায় সব কিনতে হিমশিম খেতে হয় তনুর,গাছের পাতা কুড়িয়ে ভাত রান্না করতো,অল্প তেল দিয়ে তরকারি রাঁধত,মাঝেমাঝে ছোট বাচ্চাগুলা কে মরিচ দিয়ে ভাত মেখে খাওয়াত।আর চোখ দিয়ে পানি পরতো।

গাছের আম পেঁপে যদি দাদু কে পাড়তে দেখত দৌড়ে মা কে এসে বলতো-“আম খাব পেঁপে খাব”

দাদু থেকে খুঁজতে গেলে দাদু দিত ই না।তখন তনু বাচ্চাদের সান্তনা দিত-“তোমাদের গুলা বড় হোক।

পুকুরে এত এত মাছ পেলেও শাশুড়ি একমুঠ মাছ দিত না।সব মাছ বিক্রি করতো নয়তো খেত।আহা কত যে দূঃখের ছিল দিনগুলো।যে এমন অবস্থায় থাকে সে বুঝে কত কষ্ট লুকিয়ে ছিল।তনু মুরগি পালা শুরু করলে অল্প কয়েকদিনে অনেক মুরগি হয়,কিন্তু শাশুড়ি শশুড়কে না দিয়ে একটা গোশত ও সে খায়নি।তরকারি একটু মজা হলে শশুড়কে দিয়ে আসত,এতে শাশুড়ি খুশি না হলেও শশুড় তৃপ্তি করেই সব খেত।শাশুড়ির তো মজা ই লাগত না তনুর রান্না।সব ভাল জা এটা।

“কিছুদিন পর তনুর শশুড় মারা যায়।এদিকে তেমন টাকা ও নাই তনুর হাতে,তনুর বর যখন মেজবান দেয়ার জন্য সে তনুর চুড়িগুলার খুজ করে,সবাই তখন একসাথে ঝগড়া শুরু করে,শাশুড়ি ই আমতাআমতা করে বানিয়ে কয়েকটা মিথ্যা বলে,শেষে আসল কথা বলে ফেলে যে- মেজবউ এটা বিক্রি করে ফেলেছে,কারণ তার বাপকে দিতে হয়েছে টাকা।

হায়রে বিচার কার স্বর্ন আর কে বিক্রি করে?সেইবার তনুর বর কোনোমতে ধার করে অনেক বড় মেজবান দেয়।তনুর শশুড় মারা যাওয়ার আগে তনুকে বলেছিল-আমার ছোট মেয়েটাকে দেখিস তোরা।তনুর বিয়ে যখন হয়েছিল ছোট ননদ তখন খুব ছোট ই ছিল।বড়ভাইয়ের হাতে সে বড় হয়েছিল।

“তনু যখন আলাদা হয় শাশুড়ি একটা হাড়ি পর্যন্ত দেয়নি।এমনকি তনুর বাপের বাড়ির এবং নিজে বানানো অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস সব শাশুড়ি রেখে দিয়েছিল।অতি ভাল জিনিস তো ননাসের প্রাপ্য।তনুর সংসারের প্রায় জিনিস বড়বোন থেকে নেয়।সেক্ষেত্রে বড়বোন অনেক সাহায্য করে তনুকে।

আর ঘরের বেড়া,ছাল সব বাবা পাঠায়।তনুর বড় আর ছোট ভাই তখন বিদেশে থাকতো,তারা ভাল আয় ও করতো।তাই বেশিরভাগ সাহায্য তারা ই করে।তনুকে শাশুড়ি কিছু না দিলেও তনুর থেকে কিছু নিতে দ্বিধাবোধ করতো না।

“রাত হলে দুইটা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে থাকতে তনুর ভীষণ ভয় করতো,তখন ডাকাত ও ছিল অনেক,বাড়ির মানুষ রা চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতো -আজ তানির মা কে খাবে ডাকাত রা।

এই বলে অট্টহাসি দিত।তনু সারারাত আল্লাহ কে ডেকে পার করতো।শাশুড়ি থেকে আলাদা হওয়া মানে তখন বিরাট লজ্জার বিষয় ছিল।তনু লজ্জায় বাইরে যেতো না।এত অভাবের মাঝেও বাড়ির মানুষেরা তনুর থেকে আলাদা চাঁদা নিতে ভুলতো না।রাস্তার চাঁদা,মসজিদের চাঁদা।শাশুড়ি আরো বলতো-” ছেলেকে যখন কেড়ে নিছে আমার থেকে,সব রাজত্ব তো এখন ওর ই।

“তনুর খালাশাশুড়ি একবার বেড়াতে আসলে তনুর কাছে ই থাকতো কারণ তনু মেহমান বেশি পছন্দ করতো,তাদের যত্নের ত্রুটি রাখতো না,সে যেমন ই হোক ঘরে যা আছে তা যত্ন সহকারে দিতো।

খালাশাশুড়ি তনুকে কে একদিন বলল-“তোর অনেক শত্রুরে,ছেলেমেয়েদের সবসময় দেখেশুনে রাখিস।আর রাতে ঘর চেক করে দরজা বন্ধ করিস।বলা তো যায় না আজকাল পরিস্থিতি খুব খারাপ।মানুষ স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।

তারপর থেকে তনু ঘর চেক করে ই ঘুমাতে যেত।কিন্তু একা ভয়ে আর ঘুম হতো না।মাথায় একটা চিন্তা থাকত কিভাবে বাচ্চাগুলাকে মানুষ করবে।পড়াবে।তানিকে স্কুল থেকে মাদ্রাসায় দেয়ার চিন্তা করে তনু।বাচ্চারা সুন্দর সুন্দর গজল করে এসব তার খুব ভাল লাগে,তানি মাদরাসা পড়ে সুন্দর গজল শিখে তাকে শুনাবে,কি আনন্দ..!!

তনুর মেয়েটা ছোট বয়সে দূরের মাদরাসায় ভর্তি হয়,কারণ তনুর যখন বাচ্চা হচ্ছিল না তখন মানত করেছিল-আমার সন্তানকে মাদরাসা পড়াবো।

তো যেহেতু মানত করেছিল তাই মাদরাসা ই ভর্তি করিয়ে দিলো,ছোট তানি একা ই অনেক দূর হেটে মাদরাসায় যেত।ঘরে চাচা,দাদু,ফুফু থাকতে কেউ সাহায্য করত না।

তানির মেজচাচা তার পাশ দিয়ে রিক্সা নিয়ে চলে যেত তানিকে তুলতো না।তানি চাচাকে দেখে খুশি হলেও চাচা চিনতো ই না তানিকে,একা একা তানি একটা কুকুর দেখলে দাঁড়িয়ে পরতো ভয়ে,তারপর বড় কাউকে দেখলে তার পিছন পিছন হেটে চলে যেত,আর কাছে কোনো মাদ্রাসা ও ছিল না,সংসারের কাজ ছেড়ে তনু ও মেয়ের সাথে যেতে পারত না।

যতদিন মেয়ে বড় হয়নি ততদিন তানিকে বিদায় দেয়ার পর তনুর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরতে থাকতো….

চলবে……

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

সংসার পর্ব-০৫

0

#সংসার(০৫)
#তাহরীমা

“চারদিকে কোরআন শরীফ পড়ার আওয়াজ ভেসে উঠছে,১১ ভাইবোন যেভাবে পারছে কোরআন খতম করার চেষ্টা করছে।তনুর চোখ অনবরত ভেসে যাচ্ছে।তার এরকম কঠিন সত্য মানতে ইচ্ছে করছে না।

মা যাওয়ার আগে তনুকে বলে গেছে-“তোর কখনো মন খারাপ হলে বোনেদের কাছে যাস,আমার দুইটা ছেলে মাত্র তাদের কাছে আসিস না।”

“তনু এ কথার মানে বুঝলো না।হয়ত তনু এভাবে যখন তখন টাকার জন্য আসতো যে মায়ের খারাপ লাগতো,তাই তনু যাতে অবহেলিত না হয় ভাইদের কাছে তাই আসতে নিষেধ করেছে হয়ত।

মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে শাশুড়ি আসলো।সেখানে ও তাকে আপ্যায়ন করতে হলো তনুর বোনদের,তনু চুপ করে এক জায়গায় বসে রইল।
মাকে দাফন করা হয়ে গেলে তনু শশুড় বাড়ি চলে আসলো।

“কিছুদিন পর তনু অনূভব করলো তার মাঝে আরো একটা প্রাণ বড় হচ্ছে।তনুর বর বিদেশে চলে গেলো।

সংসারের সব কাজ সামলানো,বাচ্চা সামলানো সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছিল।তনুর শাশুড়ি প্রায় সময় বাইরে থাকে,বাইরের মহিলাদের সাথে রাত দিন আড্ডা দেয়,সাথে তনুর নামে নিন্দা তো রয়েছে,সবাই তাই মনে করে তনু কোনো কাজ করেনা,আর শশুড় শাশুড়ি কে পছন্দ ও করেনা।কিন্তু আসল কাহিনী কেউ জানে ই না আদৌ,কত কষ্ট সহ্য করতে হয় একটা মেয়েকে,তনুর ছোট ননদের মায়া হয়।সে ভাবি কে একটু সাহায্য করতে গেলেই শাশুড়ি ডাক দেয়-“এই তুই কেন এত কাজ করছিস?বউ কি বসে বসে খাবে নাকি?

তাই তনুর কাজে কেউ সাহায্য করেনা।শাশুড়ি ভাত খাওয়ার সময় যদি ঘরে আসে সেখানে ও নিন্দার শেষ থাকে না।শুনিয়ে শুনিয়ে বলে-
–ঘর টা ঝাড়ু দেয়া হয়নি,এটা এরকম ঠিক হয়নি,ওটা ওরকম ঠিক হয়নি।

তনুর বর ছাড়া আর বাকি দেবর, শশুড় পানির গ্লাস টাও নিজে নিয়ে পানি খেত না বাকি কাজ না হয় বাদ ই দেয়া হলো।তারপর ও সবার অভিযোগ এর শেষ নেই।তনু বিরক্ত হয়ে দুচারটা কথা বলতো কিন্তু যেদিন বলতো সেদিন সারাদিন আর রক্ষা নেই।শাশুড়ি সারাদিন মানুষ ডেকে বদনাম করতো।এক্ষেত্রে নিরবে সহ্য করা ছাড়া উপায় ছিল না।

তনু বাপের বাড়িতে গেলে সব কাজ শাশুড়ি তনুর জন্য রেখে দিতো।তনু আবার ফিরে এসে মাজাঘষা সব সামলাতো।মা মারা যাবার পর তনুর বর বিদেশে চলে যায়,তখন তনু আবার যায় বাপের বাড়িতে সবাইকে দেখতে।

তানির বয়সী একটা মামাতো ভাই আছে,তনুর বড় ভাইয়ের দ্বিতীয় ছেলে,নাম রায়হান।মোটামুটি তানির সাথে সে বেশ জমে,তানি যখন একটু আধটু কথা বলা শিখেছে তখন বলতো-
–নায়ান এ নায়ান।

“তানির ডাকে রায়হান ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো,নানুবাড়িতে দুজনে একসাথে খেলত।রায়হান আবার গান পছন্দ করতো,তখন রেডিও তে যদি গান বাজতো সে একটু একটু লাফাতো,বিশেষ করে “ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়?”এ গানটা।তানি ও চেয়ে থাকতো।

তনু একদিন থেকে আবার শশুড় বাড়ি চলে আসতো।

কয়েকদিন পর রায়হান রা ও তার নানুবাড়িতে চলে যাবে।তনুর বড় ভাবি ও তনুদের সবাইকে খুব ভালবাসতো।ছোট ভাইয়ের বউ ও ভালো।তারপর ও মা নেই যে কিছুই তার ভাল লাগছে না,তাই চলে আসে তাড়াতাড়ি।

“রাতে তনু একটা স্বপ্ন দেখে,একটা সুন্দর বাগানে তনু বসে বসে কচি ফল গুলা ছিঁড়ে নিচ্ছে।এ স্বপ্নের অর্থ সে বুঝলো না।তার কিছুদিন পর রায়হান মারা গেলো,ওর নাকি জ্বর আসছিলো।প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এটা শুনে তনু হেটে বাপের বাড়ি চলে যায়।তখন মানুষ হেটে এখানে সেখানে যেত। অতি বড়লোকেরা রিক্সায় চড়তো।যেখানে শাশুড়ি খাবার খাওয়া পছন্দ করেন না সেখানে রিক্সা চড়ার টাকা দিবেন না।তাই হেটে ই যায়।সেইবার আরেকবার মনে হয়েছিল তনুর কলিজা কেউ ছিঁড়ে নিয়েছে,কারণ রায়হান কে খুব ভালবাসত তনু,আর বাচ্চা মারা যাওয়ার কষ্ট যেকোন মায়ের আঘাত লাগা বাধ্য।তনু কান্নায় ভেঙ্গে পরে।সবাই তনুকে বকে বিশেষ করে বড়বোন রা।এ অবস্থায় রেস্ট না নিয়ে হেটে এখানে কেন এসেছে তাই।

“পর পর দুইটা শোকে তনু নিরব হয়ে যায়।শাশুড়ি যা বলে চুপচাপ কাজ করে।কিছুদিন পর তনুর ছেলে হয় একটা।ছেলে হওয়াতে শশুড় দেবর সবাই খুশি হয়,শুধু শাশুড়ি ব্যতীত।তার আস্তে আস্তে কর্তৃত্ব কমে যাবে বলে।তনুর ছেলে ও একদম চাদের মতো সুন্দর হয়।কেউ তনুর বর কে দেখে বলবে না এরা ওর সন্তান।এতটায় সুন্দর হয়েছিল।

“সংসারে সব ঝামেলা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে তনুর মেজো দেবর জেদ করে বসে সে বিয়ে করবে।অথচ তনুর ই ভাল একটা রুম দিতে পারেনি শাশুড়ি,আর দেবর ও তেমন কাজ করে না।তনুর বরকে ই দেবরের বউকে খাওয়াতে হবে ল।এদিকে দেবর বলছে রিক্সা চালিয়ে হলেও সে তার বউকে খাওয়াবে অথচ এতদিন একটা কাজ ও করত না হিংসায়।বড়ভাই বিয়ে করে বাচ্চা হয়ে গেছে অথচ সে কেন একা থাকবে।অতিরিক্ত রাগি হওয়ায় শাশুড়ি ও এ ছেলেকে ভয় পায়,শুধু তনুর বরের ক্ষেত্রে যত আবদার আর শাসন বাকি দুই ছেলে তাকে পাত্তা ও দেয় না।তবুও এদের বেশি ভালবাসে।মেয়ে দেখা হলো,তানি সহ গেলো মেয়ে দেখতে,তানিকে জিজ্ঞেস করলো দাদু-” বউ পছন্দ হয়েছে কিনা?

তানি দেখলো মেয়েটা সুন্দরী,তার পছন্দ হয়েছে।বিয়ে ফাইনাল।তানির তখন ৪ বছর বয়স।

“অবশেষে রান্নাঘরের একপাশে রুম করা হয় দেবরের জন্য,রান্নাঘর টা বড় ছিল।

তারপর বিয়ে হয়ে যায়।তানি ৪ বছর বয়সে ই ক্লাস ওয়ান পড়া শুরু করে।হ্যা অতি ছোট ই পড়ালেখা করছে,বাড়ির সামনে স্কুল হওয়ায় দাদু গিয়ে দিয়ে আসতো,কিন্তু তার কান্নাকাটির শেষ নেই অবশেষে কয়েকদিন দাদু আর ফুফু ওর সাথে ক্লাস করেছিল।আস্তে আস্তে সে যখন স্কুলের বন্ধু পায় আর ভয় করে না কান্না ও করতো না।নিজে নিজে স্কুলে যেতো।
————-
“নতুন মেজো আম্মু তানিকে খুব ভালবাসতো।তানির ভাই ও আস্তে আস্তে বড় হয়,কিন্তু তানি যেমন দুষ্টুমি করতো না তার ভাই ডাবল দুষ্টুমি করতো,এতে দাদুর পছন্দ না নাতি কে।তানির ভাই তানির সব খেলনা নিয়ে ভেঙ্গে ফেলতো তানি কিছুই বলত না।তখন তাওহিদ(তানির ভাই) একটু একটু হাটতে পারে।

তানি যদি মাকে প্রশ্ন করতো সেখানে ও সবার আপত্তি ছিল,তানিদের বাড়ির সামনে এতবড় উঠান ছিল সেখানে তানির দাদু বিভিন্ন শাকসবজি রোপন করতো,তানি মায়ের থেকে এসব জানতে চাইতো-

–আম্মু এটা কি?এটা কি চিচিঙ্গা?

–হ্যা।

“চিচিঙ্গা শব্দটা বইয়ের ভাষায় হলেও গ্রামের মানুষ এটাকে অন্যনামে চিনে।তাই পাশের ঘরের মহিলা ব্যঙ্গ করে বলতো-

–এহহ চিচিঙ্গা,ইংরেজি শেখাচ্ছে মেয়েকে,আমরা জানিনা তো?

মহিলাটির ভুল ধারণা ভাঙ্গার জন্য তনু কথা বলে,নয়তো এদের থেকে সবসময় এড়িয়ে চলতো,তনু বলে-

–চাচিমা এটা ইংরেজি ভাষা না।

“তখনি মহিলাটি বলে-জানি জানি মুখে মুখে তর্ক করাটায় তোমার স্বভাব,প্রতিদিন শাশুড়ির সাথে কেমন বিহেভ কর শুনিনা?বেয়াদব মেয়ে।

তনুর কান্না চলে আসে এদের কথায়।মেয়েকে নিয়ে ঘরের ভিতরে চলে যায়।এখন তো নতুন জা আছে,নতুন জা কে তনু নিজের ছোটবোনের মতো ভালবাসে,কিন্তু জা তনুকে পাত্তা দেয় না।কারণ তনুর নামে যত নিন্দা সব শাশুড়ি আর ননাসের জামাই থেকে শুনেছে।এমনকি শাশুড়ি বলেছে তনু তেমন কাজ ই করে না সংসারে।তানির নতুন জা ভেবে নিয়েছে সে বড়বউ হয়ে কাজ না করে থাকতে পারলে আমি নতুনবউ হয়ে কেন কাজ করবো?তাই সে রুমে সারাক্ষণ বসে থাকে তনুকে এড়িয়ে চলে।তনু সারাদিন কাজ করে,আর নতুন জা খালি খাবার খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হয়,তবে হ্যা শাশুড়ির মাথা আছড়াতে ভুলে না।শাশুড়ি তো খুব খুশি। তনুকে শুনিয়ে বলে-

–মনের মতো বউ পেয়েছি একটা,আমার কত সেবা করে।বড়টার মতো বেয়াদব না।

এতে নতুন জা ও খুশি হয়।তাকে দেখে মনে হয় সে ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেনা।কিন্তু ননাসের জামাইকে নিয়ে নিন্দা করতে দুবার ভাবেনা।নতুন বউ হওয়া সত্ত্বেও সবার প্রিয় বউ হয়ে গেলো কারণ সে মিষ্টি কথা বলে শাশুড়ির মাথা আছড়ায়,দুলাভাই কে ও ভাই ভাই করে।

ছোটকাল থেকে তনু মনে যা মুখে ও তা,অতিরিক্ত আধিখ্যেতা পছন্দ নই কিন্তু কাজের ত্রুটি নাই,আর এটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো।সবাই তনুকে অপছন্দ করতে শুরু করলো,এখন কারোর তনুকে ভাল ই লাগেনা।আর তনুর বাচ্চাদের তো আরো ভাল লাগেনা।কতটুকু অবহেলিত হলে এরকম নিষ্পাপ বাচ্চাদের মানুষ ঘৃণা করে,তাদের যে অপরাধ নেই।

বিয়ের পর আসার পর থেকে শাশুড়ি তনুকে পছন্দ না করার একটায় কারণ তনু শাশুড়ির বিপরীত,তনু নামাজি কালামি,পরিষ্কার মেয়ে,অযতা আড্ডা দেয়া,ঘরের বাইরে থাকা একদমি পছন্দ না।কিন্তু শাশুড়ি এসব ই করে,কেন তনু তার মতো নয় সেজন্য তিনি তনুকে এত অবহেলা করেন,কিন্তু নতুন বউ একদম তার মতো যেমন গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারে তেমনি আড্ডা তে পারদর্শী,আর কাজের ফাঁকি তো আছেই।

“তনু আনমনে ভাবে আর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়তে থাকে,এর শেষ কোথায়?তনুর চাচা মারা গিয়েছে,নইলে চাচা কে বলতো,জমিজমা আর টাকা দেখে যে তুমি মেয়ে বিয়ে দিলে,ভাল শাড়ি আর খাবার তো দূর ভাল ব্যবহার টা ও তো পাওয়া যায় না।এত কিছু করেও মানুষ গুলোকে সন্তুষ্ট করা যায় না?

তনুর বাবার কথা মনে পরে।বাবা বলতো-দশজন মূর্খ মানুষের সাথে বেহেশতে থাকার চেয়ে,দশজন শিক্ষিত মানুষের সাথে দোজগে থাকা উত্তম।

তনুর শাশুড়ির জমি টাকার অভাব নেই,কিন্তু মানসিকতা আর বিবেকের বড় অভাব,কারণ এটা ভাবে না যে আমার ও তো মেয়ে আছে,আমি যে তাদের কষ্ট করে বড় করেছি,বউ আনছি যে ওটাও অন্যের মেয়ে তাদের ও কষ্ট হয়েছে।বউ রা কি মানুষ না?

কথায় আছে,”তরবারির আঘাতের প্রতিষেধক আছে কিন্তু মুখের আঘাতের কোনো প্রতিষেধক নেই”।

“তনুর ছেলে যত বড় হচ্ছে তত দুষ্টুমি বাড়ছে,তেমন কিছু না,সে নতুন বউয়ের কাছে গিয়ে কোলে উঠতে চায়,ধাক্কাধাক্কি করে,নতুন বউ কিছু না বল্লেও দাদুর এসব পছন্দ না,সে চিৎকার করে বলে-

–দেখো তানির মা তাওহিদ নতুন বউ কে কেমন জ্বালাচ্ছে,অসভ্য ছেলে।

“তনু সব রাগ ছেলের উপর ঝাড়ে,ছেলে কে ধরে এসে ইচ্ছেমত মারে,ছোট বাচ্চা বুঝেনা, কি দোষ করে মা তাকে মারছে মাথায় আসেনা।সে মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে,তনুর চোখ দিয়ে বৃষ্টি ঝরে পরে,শশুড় এ নাতিকে খুব ভালবাসে,তিনি মারাটা একদম পছন্দ করেন না,তাই তনুর উপর রাগ করলেও, শাশুড়ি খুব খুশি ই হয়……..

চলবে…….

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ,বানান ভুল হলে কষ্ট করে পড়ে নিবেন,রিচেইক করার সময় ছিল না।ধন্যবাদ)

সংসার পর্ব-০৪

0

#সংসার(০৪)
#তাহরীমা

“তনুর বর দুইবার দেশে এসে চলে গেছে,বাচ্চা না হওয়ার কারণে শাশুড়ির কথার কোনো শেষ নেই।

“কিন্তু তনুর বর তনুকে কখনো খারাপ কথা বলে নি,এমনকি যতেষ্ট সম্মান দিয়ে কথা বলতো, তনুকে ধর্য্য ধরতে বলতো,পাশাপাশি তনুর মা বাবাকে ও সম্মান করতো,সাহায্য করতে চাইতো তাদের বিপদে,কিন্তু মায়ের কারণে একটু আধটু যা দেখতেন সবটা মেনে নিতেন,মা যাতে কষ্ট না পায়।মা কে সে খুব ভালবাসতো তাই প্রতিবাদ করতো না কোনো বিষয়ে।কারণ তনুর দিকে কথা বললে কান্নাকাটি করে পাড়ার লোক জড়ো করতে ও ভাববেনা।

তনুর বর প্রবাসী দেশে আসলে দুই কি তিনমাস থাকেন,মায়ের এতসব কিছু তার অগোচরে ই হতো,আর তনু ও কিছুই বলতো না।কারণ তনু বললে ও তার বিশ্বাস হবেনা,সে যে সামনাসামনি কখনো এতসব দেখেনি।তার মা ভাল সে শুধু সেটায় জানে।তাই শুধু শুধু ঝগড়া বাধিয়ে লাভ কি?পরে তনুকে ই দোষারোপ করবে সবাই। তনুর মা ও বরাবর ই মেয়ে কে বলতেন ধর্য্য ধরতে আল্লাহ চাইলেই সব সম্ভব।বাচ্চা একদিন হবে ই আল্লাহ চাইলে।

“তনুর বিয়ের কিছুদিন পর তার বড় ভাই বিয়ে করেন,এবং ছোট ভাইয়ের জন্য ও বউ দেখে যাতে বিয়ে করিয়ে দিতে পারে,কারণ তনুর মায়ের ইচ্ছে মরার আগে বউদের দেখে যেতে চান,মানুষের মৃত্যুর যে ঠিক নেই।

বড়ভাইয়ের এখন দুইটা বাচ্চা ও হয়ে গেছে।তনুর এতে অনেক খুশি ও লাগে।বরাবর ই বাচ্চা ভালবাসত তনু।শুধু শাশুড়ির ব্যবহারে মন ভেঙ্গে যেতো।

তনু প্রতি নামাজ এ কান্নাকাটি করতেন যেন সুস্থ আর জ্ঞান সম্পন্ন তাকে যেন বাচ্চা দেন।বিয়ের পাচ বছর পর শেষের বার তনুর বর যাওয়ার কিছুদিন পর তনুর মাথা ঘুরায় বমি আসে,কিছুই খেতে পারেনা সব গন্ধ লাগে।বিয়ের প্রায় পাচ বছর পর এ অনুভূতি হচ্ছে।তাই সে ডাক্তারের কাছে গেলো মা কে নিয়ে।তারপর জানতে পারে সে মা হতে চলেছে।দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ত সেদিন ই হয়েছিল।দিন যত যায় পেট ভারি হয়ে আসে,কিন্তু কাজের কোনো কমতি নেই।নেই কারো সাহায্য নেই কোনো সেবা,নেই পুষ্টিকর খাবার।তার উপর নলকূপ চেপে পানি ব্যবহার করা কত যে কষ্টের ছিল।নলকূপ এ তেমন পানি ও পরতো না,অল্প অল্প পানি দিয়ে বাসনকোসন ধোয়া,কাপড় ধোয়া,গোসল করা সব করতে হতো।

অতি কষ্টের জন্য একদিন তনু শশুড় বাড়ির সামনের পুকুরে কাপড় ধোতে যায়,পুকুর দশজনের হলেও ঘাট টা একজনের।তনু কে নামতে দেখে যাদের ঘাট সে মহিলা চিৎকার করে বলে উঠলো –

–এই মেয়ে তোমার শাশুড়ি কে বলিও বউ যেমন এনেছে তেমন পুকুরে ঘাট দিতে একটা,যাতে অন্যের কিছু ব্যবহার করতে না হয়।

এমন নিচু মনের মানুষ দেখে তনু অবাক হয়,এরপর আর কখনো পুকুরে যায়নি,কষ্ট হলেও নলকূপ এ সব কিছু ধোয়েছে।তনুদের বাড়িতে দুইটা পুকুর একটা সবাই ব্যবহার করে আরেকটা তনুরা।কই তার বাবা মা তো এমন ব্যবহার করেনা তাদের সাথে?

“এভাবে দশমাস কেটে যায়।বাড়িতে ধাত্রী আনা হয়।সন্ধ্যার দিকে তনুর একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয়।তনুর আরেক ছোটবোনের ও একই দিনে সকালে কন্যাসন্তান হয়েছিল,তনুর মা সেখানে গিয়ে জানতে পারে তনুর ও বাচ্চা হয়েছে তাই তিনি ছুটে আসেন মেয়েকে দেখতে।

তনুকে বাচ্চা কোলে দেয়া হয় এ যেন অন্যরকম সুখ।তনুর মেয়েটা যেমন সুন্দরী তেমন আদুরে চেহারার হয়েছে,সবাই মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ বলে উঠলো।তবে মেয়ে হওয়াতে পরিবারের অনেক কেই তেমন খুশি হন নি যেমন তনুর শশুর,দেবর,বিশেষ করে জামাই ও একটু মন খারাপ করেছিলো প্রথমে।

“তবে তনুর দেবর যেটা মেজাজি ছিল বাচ্চা হওয়ার পর আর তনুর সাথে মেজাজ দেখাতো না।বাচ্চা হওয়ার পর কাজ আরো বেড়ে গেলো কাথা ধোয়া, বাচ্চাকে খাওয়ানো।

প্রথমে তনুর বাচ্চা কে কোলে দিলো তনুর মা কে।কিন্তু অপরিষ্কার কাথাগুলা কেউ ধুয়ে দিচ্ছে না।শাশুড়ি তনু কে বলল-

–তোমার মা কে ধোতে বলো?

“তনুর এতে খুব অপমান লাগলো। কেন আমার মা ধোবে?তাই সে কষ্ট করে গিয়ে কাথা ধোতে বসে পরলো।এদিকে এরকম বাচ্চা হওয়ার সাথে সাথে রেস্ট নিতে হয় তনুকে এমন অবস্থায় দেখে তনুর এক ফুফুশ্বশুরি ননদ বলে উঠলো-

–একি ভাইয়ের বউ তুমি মরতে চাও,ছিঃ ছিঃ আমরা থাকতে তুমি এখন এ অবস্থায় এসব করছো?আমি ধোয়ে দিচ্ছি।

“তারপর সে জোর করে তনুকে তুলে দিলো।তারপর তনুকে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে বাচ্চাকে দুধ পান করতে দিলো।

তনুর শাশুড়ি বলতে লাগলো-“বাচ্চা হলেও অনেক কিছু নানাবাড়ি থেকে দিতে হয়।কম জিনিস দিলে চলবে না”

তনুর বাবা যথাসাধ্য দিয়েছেন।তাও শাশুড়ি সন্তুষ্ট হননি।

“তনুর মেয়ে টা যত বড় হচ্ছে জান্টুসে পরিণত হচ্ছে,নাম রাখে তানি(ছন্দ্মনাম)।তানি মা ছাড়া কিছুই বুঝেনা।বাবা কে তো কখনো দেখে নি।সারাক্ষণ কোলে থাকতে চায়,কারোর কোলে যায় ও না।

তানি খাবার খাওয়ার সময় কেউ টু শব্দ ও করতে পারেনা।তার উপর আওয়াজ শুনলে বাইরে চলে যেতে যায়।যত বড় হয় তত মোটাসোটা আর আদুরে বাচ্চা হয়ে উঠে,কখনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে কোনো মানুষ নেই যে তাকে আদর করে নাই।কিন্তু সে মা ছাড়া কারো কাছে যাই ই না।চাচারা তাকে আদর দিলে সেগুলো ছোট্ট হাত দিয়ে মুছে ফেলতো।কাজের সময় ও মেয়েকে কোলে নিয়ে সব কাজ শেষ করতে হতো।

পরিবারের সবার ঘুম আর খাবার ঠিক রাখতে হতো একটু উল্টাপাল্টা হলেই শাশুড়ির বকা শুরু হয়ে যেত।

“তানি আস্তে আস্তে বড় হয়ে ভাত খাওয়া শিখে।কিন্তু ভাত খাওয়ার সময় বিভিন্ন কবিতা,পশু পাখি দেখিয়ে ভাত খাওয়াতে হতো।এদিকে রাতে ও জ্বালাতো আবার দিনের বেলাও সেইম।কিন্তু কখনো তনু মেয়েকে মারতো না।কত সাধনা কষ্টের পর মেয়েকে পেয়েছে সে।তানিকে দাদা তেমন পছন্দ করতো না।তানি জানতো ই না বাবা নামক একটা শব্দ আছে সেটা।তানি কারোর ব্যবহৃত জিনিস অন্যকাউকে ধরতে দিতো না।একজনের জুতা অন্যজনে পরলে টেনে নিয়ে ফেলতো।একটু ও ময়লা ধরতো না।যখনি তানি হাটতে শিখেছে বাইরে যাওয়ার আগে আম্মু কে বলে যেত-

–আম্মু আমি আসি?

আবার কিছুক্ষণ পর পর মা কে দেখতে আসতো।প্রতিদিন একটা কথা ই বলতো-

–আম্মু আমি আসছি।

“তনু মেয়ের কান্ডে হেসে বলতো-ভালো করেছো।

“তানি যখন একবছর পার হয়ে যায় তখনি তার বাবা দেশে আসে।ইয়ারফোর্টে তানিও দাদুর সাথে যায়।তানির বাবা বের হয়ে প্রথমে মেয়েকে কোলে নিতে চায়,কিন্তু যখনি তানি দেখে অন্য একটা মানুষ তাকে কোলে নিতে চাচ্ছে সে কান্না করে মারতে থাকে হাত দিয়ে,শেষে আর কোলে নেয়না।সারা রাস্তা সে অন্যদিকে ফিরে ছিলো,অথচ মেয়েরা নাকি বাবার আদুরী বেশি হয়,তানি ই একমাত্র যে এমন টা করলো।

বাড়ি এসে সে মায়ের কোলে উঠে পরলো।তানির বাবা যখন রুমে ডুকলো তার কি কান্না,কেন তাদের মা মেয়ের মাঝে আবার অন্যকেউ ডুকবে?ছোট মাথায় এটা বুঝা আসছেনা।তখন তো ফটো ছিল না অথবা মোবাইল ছিল না যে বাবা কে দেখবে হঠাৎ দেখাতে যেকোনো বাচ্চা এমন বিহেভ করবে স্বাভাবিক।রাতে তানি এক হাতে কোল বালিশ এক হাতে কাথা নিয়ে দাদুর পাশে শুয়ে পরলো-

–আমি তোমার সাথে থাকবো দাদু।

“তনু মেয়ের কান্ডে হেসে দিলো।তনুর বাবা ও হাসলো,তানির জন্য অনেক পোশাক চকলেট নিয়ে আসলো।তানি ছোট থেকে ই কোনো জিনিসে আগ্রহ দেখাতো না,শুধু মা কে পেলেই হলো,জ্বালাবে,হাসাবে,কাঁদাবে,সব মা কে ঘিরে।

“কিছুদিন পর তনুর মায়ের ক্যান্সার ধরা পরে।তাই ছুটে যায় মায়ের কাছে,তনুর বারবার মনে হচ্ছে,না তার মা তাকে ছেড়েই যেতে পারেনা।দুনিয়াতে একমাত্র মা ই সন্তানকে সাপোর্ট করে,তানিকে নানা নানু পছন্দ আদর করতো।অনেক আদর লাগতো নাকি তাকে।

তনু যখন মাকে সেবা করতো তানির বাবা তানিকে এটা ওটা দিয়ে কোলে রাখতো।তনুর শাশুড়ি কিছু বলবে বলে দিনে এসে দেখে আবার শশুড় বাড়িতে চলে যেতো।

“এভাবে অনেকদিন অসুখের সাথে লড়াই করে তনুর মা,তখন তনুর ভাইদের ও তেমন আয় ছিল না যে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবে।কিন্তু সেবার কোনো ত্রুটি রাখেনি ভাই বোন মিলে।এ মানুষ টা ও সংসারের জন্য কম কষ্ট করেনি,১১ টা ছেলেমেয়ে মানুষ করা তো চারটেখানি কথা না?তারপর ও তনুর মন মানে না।এত তাড়াতাড়ি মা তাকে ছেড়ে যাবে ই না।

“যেদিন তনুর মা মারা যাবে সেদিন তানি খালি কান্না করতেছে সকাল থেকে,তনু বিরক্ত হয়ে প্রথম মেয়েকে থাপ্পড় বসায় গালে।তানির বাবা বাইরে উঠানে বসে ছিল,সে দৌড়ে এসে তাড়াতাড়ি মেয়েকে কোলে নিয়ে দোকানে হাটা দেয় চকলেট কিনে দেয়ার জন্য।তানি ও বাবার কোলে চলে যায়,হয়ত ছোট্ট তানি বুঝেছে মায়ের মন ভাল নেই।

“মেয়েকে তার বাবার কাছে দিয়ে আসতেই তনু গুনগুন করে কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়,কারণ তনুর মা ই বলেছিল মেয়েদের চিৎকার করে কাঁদলে গুনাহ হয়।তাই বোনেরা মুখ চেপে কাঁদছে।

তনু বুঝে গেল তার ধারণা মিথ্যা,সে ও তাদের দলে নাম লিখালো আজ থেকে,সে ও মা হারা মেয়ে হয়ে গেলো।আজ থেকে তার মন বুঝার মত কেউ রইলো না।চোখ দিয়ে অনবরত বৃষ্টি পরতে লাগলো আর শেষবারের মতো মায়ের চাদের মতো মুখটা দেখতে ছুটে গেলো ঘরে…….

চলবে……….

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

সংসার পর্ব-০৩

0

#সংসার(০৩)
#তাহরীমা

“সবার ভাত খাওয়া শেষে তনুর জন্য অবশিষ্ট যা ছিল তাই খেয়ে চুপ করে থাকলো।সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে গেলে তনু সব গুছিয়ে তারপর নামাজ পড়তে গেলো।নামাজ শেষ করতে করতে আবার কিছুক্ষণ পর বিকেলের চায়ের সময় হয়ে গেলো।

—–

“কিছুদিন পর তনুর বর বিদেশে চলে গেলো।তনু একেবারে একা হয়ে গেলো।সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে।আর শাশুড়ির বকা তো আছেই।

তনুর দুই দেবর একটা কাজ ও করেনা।এতদিন তনুর বর ই বাজার যা যা করা লাগে করতো।কিন্তু দেবরদের বাজারে পাঠালে আগে পকেট ভর্তি টাকা লাগতো তারপর বাজার কোনোমতে নিয়ে আসতো।

ধান চাষের দিনে তাদের পাঠানো যেত না যদিও লোক রাখতো চাষের জন্য তারপর ও যদি যায় তবে তনুর থেকে শরবত এনে ওদের কে পাকা দিয়ে বিছিয়ে খাওয়াতে হতো। তারপর অন্য কাজে যেতে পারতো।

তনুর শশুড় যতেষ্ট ইয়ং ছিলেন,তাও একটা লুঙ্গি ও তিনি ধুতেন না সব তনুর জন্য রেখে দিতেন।সংসারের সব কাজ করে আবার সবার কাপড় চোপড় ধুতে হতো।অতিরিক্ত গরমে তনু একটু ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে চাইতো।তনুর দেবর অথবা শাশুড়ি এসে ফ্যান টা বন্ধ করে দিতো।এতে জিজ্ঞেস করলে বলত-

–ফ্যান এর হাওয়া লাগলে মোটা হয়ে যাবে,তাই।নয়ত অনেক বিল আসবে তো।

“তনুর জবাব দেয়ার সাহস ছিল না যে,আমার বরের টাকাই তো সব হচ্ছে।অথচ ওরা সারাদিন ফ্যান চালিয়ে বসে থাকতো।

“কোনো ভিক্ষুক আসলে তনুর শাশুড়ি কাউকে কিছু দিতে চাইতো না।মোটকথা কারো খাবার খাওয়া তিনি পছন্দ করেন না।তবে তার বড়মেয়ের বেলায় উলটা সব।তনুর ননাস বাড়ি আসলে যত্নের কমতি রাখেন না।বড় বড় মাছ কিনে এনে খাওয়াতো।তার উপর ঘরের ভাল ভাল সব জিনিস তাকে দিয়ে দিত।তনুর কপালে কিছুই জুটতো না।

তখনকার সময়ে মোবাইল ফোন ছিল না।চিঠির মাধ্যমে ই যোগাযোগ হতো,যদি কখনো তনুর বর চিঠি পাঠাতো শাশুড়ি আগে পড়তো হ্যা শাশুড়ি বাংলা পড়তে পারেন।পড়ে তারপর চিঠি টা তনুকে দিতো।বোকা তনু এসব জানতো ই না।

“তনুর বর বিদেশ থেকে ব্যাগভর্তি জিনিস পাঠাতো কিন্তু তনুকে কিছুই দিতো না বরং প্রায় সব ননাস তার শশুড় বাড়িতে নিয়ে যেত।কারণ ননাসের জামাই বেকার ছিল তনুর বরের টাকায় তাদের সংসার চলতো,প্রায় সময় তারা বাড়িতেই থাকতো।একটু অসুখ হলে তনুকে ই সেবা করতে হতো এত কাজ করেও তাদের চোখে পরতো না।বরং কোনো মানুষ আসলে শাশুড়ি শুনিয়ে শুনিয়ে বলতো-
“এ আর কি কাজ সামান্য রান্নাবান্না ই তো করে বউ,কই আমার কি মাথা আছড়ায় দেয় নাকি?

“এসব কথায় তনুর চোখ দিয়ে অনবরত বৃষ্টি ঝরে পরতো।এরই কয়েকদিন পর তনুর আরো ছোট দুইবোনের বিয়ে হয়ে যায়।বিয়েতে তনুর শাশুড়ি তেমন কোনো গিফট না দিলেও সবাই গিয়ে ইচ্ছেমত খেয়ে আসলো সাথে বদনাম তো রয়েছেই।তনুর ননাসের জামাই খালি শাশুড়ি আর তনুর বর কে নিন্দা করতো তনুর নামে,এতে সবার একটা ভুল ধারণা থেকে যায় যে- তনু খারাপ।

“দুই দেবর অত্যন্ত রাগিমেজাজের ছিল।তারা যা চাই তাই করতো, একজনে আয় করে সবার তখন দেমাগ বেড়ে গেছিলো।অথচ তনুকে তো দেখেশুনে ই বউ করে এনেছে তার তো অপরাধ থাকার কথা না?

“একটা সাবান অনেকদিন ব্যবহার করতে হতো সাবানের ও জবাবদিহি দিতে হতো অথচ প্রতিবন্ধী ননদ টা দুইতিন বার করে গোসলে ব্যবহার করতো কিন্তু তাদের যে স্বাধীনতা ছিল তনুর তা ছিল না।কারণ সে মেয়ে নয় বরং বউ।কিন্তু সে কারোরর তো মেয়ে এমনকি শাশুড়ি নিজেও মেয়ে সেটা মস্তিষ্কে আসতো না।তনুর বর তনুকে কিছু টাকা দিতে চাইলে শাশুড়ি আপত্তি করতো-বউয়ের কেন টাকা প্রয়োজন হবে?আমরা কি খাওয়াচ্ছি পরাচ্ছি না?

“তনু বাপের বাড়ি গেলে মায়ের থেকে কিছু টাকা খুঁজে আনতো।সেগুলো জমা করে রেখে দিতো যদি কখনো প্রয়োজনে লাগে ব্যবহার করার জন্য,বোনদের নতুন বিয়ে হয়েছে তাদের তো দাওয়াত দিতে হবে,কিন্তু শাশুড়ি দিবে ই না তাই সে মায়ের টাকা গুলা দিয়ে নিজে দাওয়াত দিলো আর নাম করলো শাশুড়ির।কিন্তু এতেও তনুর ই দোষ এত দাওয়াত দেয়ার কি আছে?

“তনুর বর এত এত টাকা পাঠানো সত্ত্বেও ধারের অন্ত ছিল না শাশুড়ির।প্রায় দোকানে ধার করে রেখে আসতো আর তনুর বর দেশে আসলে সব শোধ করতো। মাস শেষ হওয়ার আগে ঘরের চাল শেষ হয়ে যেত আর তনুকে বলতো তার বাবার থেকে যেন টাকা নিয়ে আসে পরে শোধ করে দিবে।শাশুড়ির মান বাঁচাতে তনু মায়ের কাছে যেত টাকা আনতে বাবাকে শুনাতো না।কারণ বাবা যদি শোনে খুব রাগ করবে বরের উপর, বিদেশি জামাইকে মেয়ে দিয়েছে বাবার টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য তো নয়।তবে এসব কিছু তনুর বর জানতো না সব করতো শাশুড়ি নিজেই।কাজ করার জন্য তনুর সংসার হলেও কর্তৃত্ব করতো শাশুড়ি।

“কোনো এক বৃষ্টির দিনে তনুর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো।তাকিয়ে দেখলো ঘরের টিন ফুটা হয়ে গেছে আর সেদিক দিয়ে সারা বিছানায় বৃষ্টি পরে ভিজে যাচ্ছে শাশুড়ি কে ডাকতে গেলে তারা সবাই রাতে আরামে ঘুমাচ্ছিল,তনু কোনোমতে হাড়ি,বাসন দিয়ে রাখলো বিছানায়।আর ঘুম হলো না।সকালে শাশুড়ি কে এটা বললে তিনি পাত্তা ই দিলেন না।এভাবে যতদিন বৃষ্টি পরতো তনু ঘুমাতো না তার চোখ দিয়ে ও অঝোরে বৃষ্টি গড়িয়ে পরতো।

“কিছুদিন পর তনু দেবরের সাহায্য নিয়ে উপরের টিন গুলা ঠিক করলো,নিজে নিজে ইট কিনে এনে একটা দেয়াল তৈরি করলো।শাশুড়ি খুব খুশি বউকে এরকম কাজ করতে দেখে।

দুইটা গরু ছিল,তনুর শাশুড়ি ই এদের দেখাশুনা করতো।পাশের ঘরের চাচি শাশুড়ি রা এসে বলতো-

–তোমার বয়স হয়েছে বউকে এত বসে বসে খাওয়াচ্ছ কেন?চাইলেই তো গরুর সব বউয়ে দেখাশোনা করতে পারে।

“তনু এবার চরম রেগে মহিলাকে বলল-

–ভাল কিছু বলতে না পারলে এসব খারাপ উপদেশ দিতে আসিয়েন না।বসে বসে খায় কিনা আল্লাহ জানেন।

“বউ কিভাবে এভাবে মুখের উপর কথা বলে?এ নিয়ে কথার শেষ নেই।যেন মনে হয় বউদের কথা বলার জন্য মুখ ই থাকতে নেই।সেদিন অনেক ঝগড়া হলো।তনু নিরবে চোখের পানি ফেলে কাজ করতে লাগলো।

ধুলাবালি ধোয়া কম সহ্য করতে পারতো বলে তনু সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চলতো।এ নিয়ে শশুড় বলতো-

–যতসব অসুখ শুধু তোমার কই আমাদের তো এমন হয় না।

“তনু একদম কিছুই বলতো না।বললে ই আবার ঝগড়া।ঝগড়া থেকে এড়িয়ে চলার জন্য কত প্রচেষ্টা তার।ননদ আর আর দেবর কে পড়াতে বসালে ওরা বলতো –

–আমাদের নিয়ে ভাবতে হবেনা,সব জানি আমরা।

“কোরআন শরিফের আদবকায়দা সম্পর্ক এ শিক্ষা দিতে গেলে শশুড় ডাক দিয়ে বলতো-

–কোরআন শরীফ উল্টালে ও সওয়াব।

“এরপর থেকে তনু এদের কারোর বিষয়ে কোনো কথা বলতো না।তাও একটা না একটা বিষয়ে শাশুড়ি বকা দিত প্রতিটাদিন।

“শীতের দিন আসলে তনুকে একটা শীতের জামা ও কিনে দিতো না।কারণ তাদের ধারণা বউদের শীত লাগতে নেই।একবার এক পুরনো শাল তনু পরেছিল বলে বাড়ির এক শাশুড়ি তনু কে বলল-ইসশ বউ হয়ে শাল পরে?জোয়ান বয়সে এত শীত কিসের?

তনু তখন বলে-

–আপনি কি জোয়ান বয়সে কাপড় না পরে থাকতেন নাকি?

“এটা শুনে মহিলাটি আবার শাশুড়ি কে এসব বলিয়ে বকা শুনায়।তনুকে পুরা বাড়ির মানুষ অপছন্দ করতে শুরু করে।

“ইদের সময় আসলে ঘরে কেউ আসতো না বসতো না।তনুর শাশুড়ি অপরিষ্কার ভাবে চলে যে সবাই জানে,এদিকে তনুকে ও পছন্দ না করায় বাড়ির কেউ আসতো না,আসলেও খাবার খেত না।সারাবছরে দুইটা শাড়ি পরতে পরতে একদম ছিঁড়ে গেছে তাও একটা শাড়ি কিনে দিত না ইদের জন্য।অথচ তনুর বাবা গরিব হলেও ইদে সব ভাইবোন কে নতুন জামা কিনে দিতো,সবাই ইদের দিন সেসব পরে আনন্দ করতো।আজ তার কপালে একটা ভাল শাড়ি ও জুটে না।তনুকে ইদের দিন শাড়ি কিনে না দেয়ার কারণ যাতে বাড়ির মানুষ পচাতে পারেন।বাড়ির অন্য বউরা তনুকে দেখিয়ে দেখিয়ে শাড়ি আর গহনার বাহার দেখাতো,তনু ছলছল চোখে এসব চেয়ে থাকতো।ইদের দু তিনদিন পর তাও সস্তা শাড়ি তনুর কপালে জুটতো।নতুন বছরে তনুর মা বাবা যে কাপড় পাঠিয়েছিল তনুর পছন্দ হলেও তনুর শাশুড়ি কত ব্যঙ্গ করেছিল কিন্তু নিজে তার চেয়ে খারাপ শাড়ি পরতে দিলো।

তনুর শাশুড়ির কতৃত্ব বেশি হওয়ার এক্টায় কারণ তিনি অনেক সম্পত্তির মালিক।তার বাবা তার নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে গেছেন,তাই তিনি তনু গরিব হওয়ায় মানুষ মনে করতেন না।আরো বলতেন-

–আমাকে অবহেলা করলে আমার অনেক সম্পত্তি এগুলা বিক্রি করেও সারাজীবন পা তুলে খেয়ে যেতে পারবো।

“সারাক্ষণ সম্পত্তি গুলো নিয়ে অহংকার করতো।আর বাড়ির মানুষ তাল মেলাতো।

“তনুর শাশুড়ি আবার পিঠা বানাতো ভালই।কিন্তু বানানোর সাথে সাথে খেয়ে ফেলতো,রাতদিন পিঠা ই খেত।তনু অবাক হয়ে চেয়ে থাকতো।মাঝেমাঝে তনুর থেকে ও পিঠা বানাতে হতো।তনু এই পিঠা বানাতো এই তারা খেয়ে শেষ করে ফেলত একটা ও তনুর জন্য রাখতো না।তনু এসব ব্যবহারে খুব কষ্ট পেতো।তাই একদিন বুদ্ধি করে তনু পিঠা বানাতে বানাতে কয়েকটা খেয়ে ফেলে,তনু জানে যে তার কপালে পিঠা জুটবে না।

“নতুন চালের ভাত রাঁধতে গিয়ে তনু পুড়িয়ে ফেলতো শাশুড়ির বকার ভয়ে ভাল সব তাদের খাইয়ে পুড়া সব তনু ই খেত।
——————

“এভাবে সংসার চলে তনুর।কিছুদিন পর তনুর বর আবার দেশে আসে।ততদিনে তনুর ছোটবোন দের বাচ্চা হয়ে গেছে।কিন্তু তনুর এখনো বাচ্চা হচ্ছে না।তনুর বাবা অনেক চিকিৎসা করালো,না কিন্তু তাও বাচ্চা হচ্ছে না।কিন্তু বাচ্চা না হওয়াতে শাশুড়ি খুশিই।তিনি একা রাজত্ব করতে পারছেন।তার মেয়ে জামাই নাত্নিরা সব নিতে পারছে,বাচ্চা হলে আরেকটা ভাগ বেড়ে যাবে এ ধারণা তার।কিন্তু বাচ্চা না হওয়াতে ও কথার শেষ নেই।তনু কে শুনিয়ে ই বলে-

–নিশ্চয় সে পাপী তাই তার বাচ্চা হচ্ছে না।

“তনু এসব শুনে জায়নামাজ এ কান্নায় ভেঙ্গে পরে।কোরআন শরীফ পড়তে বসলে ই আঘাতের কথা গুলা মনে পরে দম ফেটে কান্না আসে…….

চলবে…….

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর ভাল না লাগলে ইগনোর করুন,ধন্যবাদ)

সংসার পর্ব-০২

0

#সংসার(০২)
#তাহরীমা

“তনু চা বানিয়ে সবাই কে পান করতে দিলো।বিয়ে বাড়ি অথচ কোনো নাস্তা ও বিদ্যমান ছিল না,সবাই বিস্কুট দিয়ে চা পান করলো।কিন্তু তনুকে একবার ও চা পান করতে ডাকলো না।তনু শুকনা কিছু মুড়ি খেয়ে নিলো কারণ ক্ষুধায় তার পেট তখন জ্বলে যাচ্ছিল।মা বাবার কথা খুব মনে পরাতে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো।কিন্তু ধর্য্য ধরা ছাড়া উপায় নাই যে।

“তনু সবার খাওয়া শেষে আবার জিনিস গুলা ধুতে নিয়ে গেলো।কাজ করতে করতে শাড়িতে ময়লা লেগে গেলো।এদিকে গ্রামে এরকম নতুন বউ নিয়ে আসলে,মানুষ খালি দেখতে আসতো তাই তনুকে ও দেখতে আসলো।তনুর শাশুড়ি তনুকে ডাক দিলো,তনু আসতেই এক মহিলা নাক সিটকে বলে উঠলো-

–এ কেমন বউ কাজে বেডির মতো,ছিঃ এ কি বউ নাকি?

“তনুর তখন কান্না পেয়ে গেলো।তারপর ও শাশুড়ি কিছুই বলল না।

“দুপুরের সব রান্নাবান্না ও তনুকে করতে হবে,তাই তনু তরকারি কুটে রেখে ভাত রান্না করলো,তারপর একটা বড় হাড়িতে তরকারি রাঁধল।রান্নাবান্না শেষে গোসল করতে গেলে শাড়ি খুঁজতে গেলো শাশুড়ি থেকে।কারণ বাপের বাড়ির সব জিনিস যে শাশুড়ির হাতে।শাড়ি যা নতুন সব ননাসে নিয়ে গেছে,আর যা সব শাশুড়ি নিয়ে নিয়েছে।

“শাশুড়ি তনুকে দুইটা শাড়ি ই দিলো তাও নরমাল,তনুর এসব নতুন শাড়ি মনে ই হচ্ছে না।তাও নতুন বউ মুখে মুখে তো প্রশ্ন করা যায় না।তনু আবার শাশুড়িকে খুব ভয় পায় কখন আবার তার মা বাবা কে নিয়ে নিন্দা করে ঠিক নেই,তাই সে শাড়িগুলা নিয়ে চলে গেলো।তারপর গোসল সেরে নামাজ পড়তে বসলো।এদিকে দুপুর হওয়াতে আবার শাশুড়ির চিৎকার-

–ও বউ তোমার শশুড় ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না,নামাজ পরে,আগে খেতে দাও সবাইকে।

“তনু কোনোমতে নামাজ পড়ে ননদ দেবর,বর,শশুড় শাশুড়ি সবাই কে খেতে দিলো।সবার কি লাগবে না লাগবে সেজন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো সে,এদিকে একজন ও কেউ বলল না যে,” তুমি ও বসে যাও সকাল থেকে তো কিছুই খেলে না?

“সবার খাওয়াদাওয়া শেষে তনু বাসনকোসন নিয়ে গেলো পরিষ্কার করার জন্য।তারপর হাড়িতে চোখ দিলো দু এক মুঠ ভাত ছাড়া আর অবশিষ্ট নেই।তনু সেগুলো নিয়ে খেয়ে সব পরিষ্কার করে রেখে দিলো ততক্ষণ এ সবাই ঘুম।

“তনু রুমে গিয়ে দেখলো বর জেগে আছে,তনুকে জিজ্ঞেস করলো-

–খেয়েছ?

“তনু হাসিমুখে উত্তর দিলো-খেয়েছি।তখন দুজনে কিছুক্ষণ গল্প করলো।গল্প করতে করতে আসরের আজান দিয়ে দিলো।তনুর তখন মনে পরে গেলো শাশুড়ি যে বলল তখন,আগে খেতে দেয়ার কথা,আবার ও হয়ত বকা দিবে,তাই সে নামাজ না পড়ে চা বানাতে চলে গেলো।

“সবাইকে চা দিয়ে তারপর গেলো নামাজ পড়তে।নামাজ শেষ করে নিজে কিছু খেতে গেলে তার জন্য চা রাখলো না,আবার কিছু মুড়ি খেয়ে পানি খেয়ে নিলো।ঘরে বিস্কুট নেই তাই সে বরকে বললো কত দিক থেকে মেহমান আসতে পারে বিস্কুট নিয়ে আসো বাজার থেকে”

“বর বাজারে গিয়ে বিস্কুট মুড়ি প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই এনে মায়ের হাতে দিলো।সন্ধ্যার দিকে তাদের ক্ষুধা লাগলে বিস্কুট খুলে আধপ্রায় খেয়ে ফেললো।তনুর এসব অভিজ্ঞতা খুবই নতুন,সে এসব অবাক হয়ে চেয়ে থাকলো।কারণ তার বাপের বাড়িতে এত অভাব ছিল না।এত অভাবের সংসারে এসে সব সামলাতে পারবে তো এ নিয়ে বড্ড চিন্তা হয় তার,সারাদিন খুব ভয় করে শাশুড়িকে।

“এভাবে দিন কাটে প্রতিদিন।ঘরের একটা কাজ ও কেউ করেনা।ঘর ঝাড়ু থেকে শুরু করে মুছা,মাজা ঘষা,ধুয়া রান্নাবান্না,খাওয়ানো,গুছানো সব তনু একাই করতো।আর রাত হলে অল্পতে ই ঘুম চলে আসতো।

“কিছুদিন পর তনুকে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ছোট দুইবোন নাস্তা নিয়ে আসলো।তনুর মা আবার ভাল পিঠা নাস্তা বানায়।এরকম মেয়ের শশুড় বাড়িতে নাস্তা বানিয়ে দেয়াও একটা রীতি।ছোট দুইবোন কে দেখে গ্রামের কিছু ছেলে মশকরা করে সুন্দরি ডাকতে লাগলে তারা এতে অপমান বোধ করে,এতে তারা আর কখনো বোনের বাড়িতে আসবে না বলেই দেয়।আর সমাজের মহিলারা তো আছেই নানান কথা বলার জন্য,

কেউ নাস্তাগুলা নিয়ে বলতে শুরু করলো-” এসব এত ছোট কেন?মেয়ে বেশি তাই যা পারছে দিছে এত অল্প কেউ এভাবে পাঠায়।

“তনুর শাশুড়ি মহিলা গুলা কে ইচ্ছে করে ডেকে আনে যাতে পচাতে পারে।তনু কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনা মায়ের কথা ভেবে।অনেক কিছু বলে তারা তনুকে বোনদের সাথে পাঠায়,সাথে করে আবার দুই ননদদের সহ,যেটা প্রতিবন্ধী ছিল সেটা সহ,যাতে তনুকে সেখানে ও জ্বালাতে পারে।তনুর বর মাকে খুব সম্মান করে তাই মায়ের উপর কথা বলতে পারেনা,মা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটায় মেনে চলার চেষ্টা করে,তাই তনুর বর ও তনুর সাথে শশুড় বাড়ি যায়।

“শশুড় বাড়িতে নতুন জামাইয়ের কোনো কমতি নাই আদরের।সামর্থ্য অনুযায়ী সব করেছে।তনুকে দেখে সবাই খুব খুশি হয়।তনু বড় বোনদের জড়িয়ে ধরে কাদে,পড়ার কথা ভেবে কাদে,তখন তনুর সেজো বোন বলে-“নিজের বাচ্চাদের পড়িয়ে মানুষ করিস,আর কাঁদিস না।

“ঠিক হলো তনু কয়েকদিন এখানে থাকবে সাথে ননদ রা ও।তনুর খারাপ লাগলে ও কিছুই বলতে পারেনা।তনুর বর চলে যায়।

“তনুর প্রতিবন্ধী ননদের অচেনা জায়গায় এসে পাগলামি আরো বেড়ে গেলো।তনুদের বাড়ির পাশে খুব সুন্দর বিল আছে,সেখানে প্রচুর বাতাস থাকে।তনুর ননদ বাড়ি থেকে বের হয়ে এরকম বিল দেখে খিলখিল করে হেসে দৌড়াতে লাগলো।চুলগুলা আছড়ানো নেই,দেখে মনে হচ্ছে একটা পাগলি বিড়বিড় করছে,কেউ চিনে কেউ চিনে না তাই সবাই কানাঘুষা করতে লাগলো,তনুকে এ কেমন পরিবারে বিয়ে দিলো?

“দুইদিন তনু বাপের বাড়িতে থাকলে ও শান্তি পায়নি ননদ দের জন্য।তনুর মা বুঝলো মেয়ের কষ্ট কিন্তু বিয়ে দেয়ার পর মেয়েদের এভাবে মানিয়ে নিতে হয়,বিয়ের পর মেয়েরা সংসার ভাঙ্গলে লোকে নানান কথা বলে,বিশেষ করে গ্রামের মানুষ রা সমাজের মানুষের কথার খুব দাম দেয় তাই।শশুড় বাড়িতে তনুর বাবা ই দিয়ে আসে,যাওয়ার সময় তনু অনেক কান্না করেছে আরো কয়েকদিন থাকার জন্য,কিন্তু শাশুড়ি বলেছে দুইদিন থাকতে।

“শশুড় বাড়িতে তনুকে দিয়ে গিয়ে তার বাবা এক গ্লাস পানি ও পান না করে বেড়িয়ে যায়।তনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

“শশুড় বাড়ি আসার পর শাশুড়ি মেয়েদের আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে-“তনু কি কি করেছিলো আর তনুর বর শাশুড়ি কে মা বলে ডেকেছিল কিনা?

তখন তারা বলল ডেকেছিলো,তনুর শাশুড়ি তখন বলে উঠলো-

–হায় হায় বিয়ের পর ছেলে আমার পর হয়ে গেলো,অন্যর মাকে মা বলে ডাকছে?

“তনুর দুলাভাই রা অনেক ভাল,তনুকে ছোটবোনের মত ভালবাসে,তনু ও তাই বড় ভাইয়ের মতো দেখে তনু যখন যাবে বলছিল দুলাভাই রা ও এসেছিল তনুকে দেখতে,তনু যে কথা বলছে সেসব ননদ রা দেখেছিল সেটা ও মা কে বলে।এসব শুনে তনুর শাশুড়ি অনেক বকা দিলো।তনুর যেন কলিজা টা কেউ ছিঁড়ে নিচ্ছে মনে হলো,এদের মানসিকতা এত নিচ ছিঃ।

“তনু রুমে এসে দেখলো রুম পুরা তছনছ হয়ে আছে,হয়ত কিছু খুঁজেছে কেউ,তনু এটা বুঝলো না তাও সব গোজ করে নিলো।বরকে ও জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না।সে তো মায়ের কথা ই মেনে চলে।তনু হঠাৎ শুনলো একজন মহিলা
চিৎকার করে উঠে বলে-

–কই তোমার বউ কই?

“শাশুড়ি তখন মহিলাটিকে বলে আস্তে কথা বল,বউ শুনবে।

–শুনলে কি?আমার গহনা ফেরত দাও?শুধু বিয়ের জন্য নিয়েছিলে এগুলো,এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

তনু এসব শুনতে পায়।তার মানে শাশুড়ি মিথ্যা বলিয়ে এসব দিয়েছে,তনুর বাবা কে বলেছিল যে-এসব তার গহনা,আর এখন কি শুনছে।তার মানে শাশুড়ি মিথ্যাবাদী।

“যে মিথ্যা তনু সহ্য করতেই পারে না আজ সে মিথ্যাবাদীর সঙ্গে থাকতে হচ্ছে,যে নামাজ কালামবিহীন মানুষকে তনু পছন্দ করতো আজ তেমন পরিবারে তনুকে থাকতে হচ্ছে,কি ভাগ্য তার..!!

“শাশুড়ি এসে তনু কে অন্যকিছু বুঝিয়ে গহনা সব খুলে নিলো।অথচ তনু সব শুনেছিল কিন্তু কিছুই বলেনি।ঝগড়া যে তনুর পছন্দ না।তনু ও চায়না অন্যর কিছু পরতে।তাই সে সব নিরবে দিয়ে দিলো।

তনুকে দেখেই বাড়ির বউ নয় বরং কাজের মেয়ে ই মনে হচ্ছে।তনু কাজে মনোযোগ দিলো।বাপের বাড়ি থেকে ফিরে দেখলো আবার চারদিকে ময়লা আর ময়লা।তনু সব পরিষ্কার করে নিলো।ভাতের হাড়িতে যখন চাল নিচ্ছিল রান্নার জন্য,তখন শাশুড়ি তনুকে শুনিয়ে শুনিয়ে পাশের ঘরের চাচি শাশুড়ি কে বলল-

–শুনো ভাবি আমার বউ ঘরে আসলে ভাত বেশি লাগে দেখছি।তাড়াতাড়ি চাল শেষ হয়ে যায়।কি রাধে কে জানে?সেদিন দেখলাম আমার ছেলে বিস্কুট আনলো তাও শেষ।

“একথা তনু শুনে ভাবতে লাগলো- বিস্কুট তো সে খায়নি,তাহলে?ওরা যেভাবে খায় একটা মেহমান আসলে কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করা যাবে তার ও সুযোগ নেই তাই তনু কিছু বিস্কুট মেহমানদের জন্য লুকিয়ে রেখেছিল যাতে শশুড় বাড়ির মান সম্মান বাচে আর আজ শাশুড়ি তাকে এ অপবাদ দিলো।

“তনু ঠিক করলো সকালে একদম উপোস থাকবে মুড়ি ও খাবে না।তনু বাপের বাড়িতে যা ইচ্ছে খেয়েছে,এমনকি সবচেয়ে বেশি মজার আর ভাল খাবার টা তনুর মা তনুকে দিতো,এ নিয়ে ভাই বোনেরা কখনো ঝগড়া করতো না।টক খেতে পারেনা বলে গাছের সবচেয়ে মিষ্টি ফলটা তনু ই খেত।আহা সেসব দিন ভেবে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো…..

“সারাদিন উপোস থেকে ভাত টায় তো খায়,তাও এভাবে বলবে?একজন মানুষ বেড়েছে যেহেতু সেহেতু ভাতের চাল ও বাড়িয়ে ই দিতে হবে।তনু এসব ভেবে তনুর ভাগের টা একটু কম করে চাল দিয়ে ভাত রান্না করলো।যদি এক মুঠ থাকে সবাই খেয়েদেয়ে তাই না হয় খাবে…..

চলবে……..

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

সংসার পর্ব-০১

0

#সংসার
#পর্ব_০১
#তাহরীমা

“তোর তো বিয়ে ভেঙ্গে গেছে রে,ওদের নাকি আরো ভালো পরিবার লাগবে।

–এটা আগে কেন বলে নি?

–জানিনা,ওরা নাকি অনেক বড়লোক,বাবার তো অত টাকা নেই।ভেবেছে হয়তো কিছুই দিবেনা বিয়েতে,তাই ভেঙ্গে দিয়েছে।

“তনু কান্নারত চোখে কিছুক্ষণ আকাশের পানে থাকালো।মন খারাপের সময় নাকি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে ভাল ই লাগে।

“তনু মা বাবার ছয় নাম্বার সন্তান।তনুর বাবা পেশায় কৃষিকাজ করেন।মা গৃহিনী।তনুরা নয়বোন দুইভাই।বাবা কৃষক হওয়ায় ঘরের খাবারের অভাব নেই।পরিশ্রম ও করেন সুখে ও থাকেন,তনুর বাবা কারো কাছে হাত ও পাতেন না।কিন্তু মেয়ে বড় হলে বাবা মায়ের যে চিন্তার শেষ থাকেনা।তাও আবার এতগুলো মেয়ে হলে তো কথায় নেই,তনুর ইচ্ছা ছিল অনেক পড়বে একজন নার্স হবে।কিন্তু বোনেদের দিকে তাকিয়ে তার বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো।তনুর ছোট আরো বোন আছে তারা ও যে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে,ঘরে এত মেয়ে থাকলে লোকের কথার শেষ থাকে না যে।

“তনু দেখতে যেমন সুন্দরি,তেমন গুণি।তনুর বাবা লাল মিয়া তনু কে বেশি পছন্দ করেন।কারণ তিনি যেমন কাজ পছন্দ করেন তনু ও তাই করেন।তনু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে।

লাল মিয়া মেয়েদেরকে স্কুলে ও পড়াচ্ছেন।লোকে অনেক কিছু বলে মেয়ে পড়ে কি হবে?কিন্তু তাঁর একটায় কথা মেয়েদের ও শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন।একজন শিক্ষিত মা একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেয়।তনু ভোরে উঠে মাকে কাজে সাহায্য করে,পাশাপাশি ক্ষেতে যায় বাবার সাথে,গরু আছে দুইটা সেগুলো কে খাবার দিয়ে স্কুলে যায়।এভাবে দেখতে দেখতে তনু বড় হয় এসএসসি পাশ করে।আরো পড়ার ইচ্ছে থাকলে ও টাকার অভাবে তা আর হয়ে উঠে না।তাই বিয়ে করতে রাজি হয়।তনু সুন্দরী হওয়ায় তারা তনুকে দেখেই পছন্দ করে ফেলে।পরে কি ভেবে তারা বিয়ে ভেঙ্গে দিলো বুঝা আসলো না।

“বিয়েটা না হওয়ার কারণে তনুর মা বাবা একদমি ভেঙ্গে পরেন।লোকের কথার যে শেষ থাকবে না।তনুর এক ভাই বড় আরেকভাই ছোট।বড় ভাই মাস্টার্স করছে তখন।সে ও টিউশনি করিয়ে কোনোমতে পড়ালেখা টা চালিয়ে নিচ্ছে।

“বিয়ে হবে ভেবে তনুর কান্নার শেষ ছিলো না।কত ভাল ছিল মা বাবার সাথে।তনু রা ভাইবোন বেশি হলেও ঝগড়া শব্দ টা একদমি নেই।সবাই একসাথে হাসিখুশি তে থাকে।যে যার যার মতো কাজ ভাগ করে সেটা করে ফেলে।যেহেতু তনুর বাবা ধান,টমেটো,মরিচ,শসা আরো অনেক কিছুই চাষ করতো,এসব আনে আবার তনুর বাবা হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে।আম গাছে আম,জাম গাছে জাম,পেয়ারা,খেজুর,তেতুল প্রায় সব গাছ তনুদের আছে।খাবারের অভাব সে কখনো দেখেনি বাবা কৃষক হওয়া সত্ত্বেও।কিন্তু বিয়ের পর অন্য পরিবেশে যাবে এটা মানতে ই পারছিলো না।

————-

কিছুদিন পর তনুর আবার বিয়ে ঠিক হয়।তনুর বোনেরা সবাই সুন্দরী হওয়ায় সবার এক দেখায় বিয়ে হয়ে যায়।শুধু তনুর বেলায় এমন হলো।তাও নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে।তনু ভীষণ রাগি হলেও মন টা একদমি নরম।তনুর চাচা ই এ বিয়ে ঠিক করে।বিয়ের আগে তনুকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসে।কিন্তু শাশুড়ি কে তনুর পছন্দ হয়নি।অতিরিক্ত কথা বলে।বেশি কথা বলা মানুষ ও তনুর পছন্দ না।এভাবে বিয়ের ডেট চলে আসে,বিয়ের আগে জামাই কে তনু দেখে নি।তখন এরকম দেখা করা,কথা বলার তেমন নিয়ম ছিল না।জামাইকে শুধু তনুর চাচা দেখেছিল।ছেলে প্রবাসী,জমি আছে অনেক। মেয়ে সুখে ই থাকবে,ভাল শাড়ী গহনা পরবে আর কি চাই??

“এভাবে বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ের পর জামাইকে তনুর বড় বোনেরা উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে।সাথে সাথে ততনু মেঝ বোন কান্নায় ভেঙ্গে পরে।তনুর কাছে গিয়ে তনুকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে থাকে,আর বলতে থাকে-

–বিয়ের আগে জামাই দেখলে আমি কখনো বিয়ে হতে দিতাম না তনু,তোর পুরা ই বিপরীত।তুই আদৌ সংসার করতে পারবি??ছেলে যেমন কালো তেমন দাঁত বের হওয়া,তেমনি চিকন।

“একে একে সবাই বোন কে জড়িয়ে ধরে।তনুর বাবা ও বিয়ের দিন জামাই কে দেখে।তনুর বাবার পছন্দ না হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে দেন কারণ মেয়ে বেশি,বিয়ে যে দিয়ে দিতে ই হবে।তিনি তনুর চাচা মানে নিজের ভাইয়ের উপর কথা বলেন না যে,তিনি ও কাঁদতে থাকেন,সবাই কাদেঁ।

“তনু নিজের ভাগ্যেকে মেনে নিয়ে,চলে যেতে হচ্ছে অন্য পরিবেশে,সংসার নামক পরিবেশে। গ্রামের মেয়েদের মা বাবা যায় বলতো তাই যে মেনে নিতে হতো।তনুর জন্য সিএনজি নিয়ে আসলো তারা।তনুকে একটা বোরকা পরিয়ে দিলো।তনুর বড় বোনেরা,আর চাচা এসে গাড়িতে তুলে দিলো।মনে মনে ভয় হতে লাগলো মা বাবাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে কি করবে।সব সামলাতে পারবে তো।

“শশুড় বাড়িতে গিয়ে সবার এক কথা,সুন্দর বউ নিয়ে এসেছে,সুন্দর বউ।সবাই ঝাকেঝাকে দেখতে আসলো তনুকে,দেখে সবাই হা হয়ে গেলো।যেই দেখছে সে ই বলছে এত কালো ছেলের বউ এত সুন্দর হয় কিভাবে।তনুর বয়স আঠারো আর জামাইর বয়স একুশ।তনুর শাশুড়ি বলল-আমার ছেলেকে অল্প বয়সে বিয়ে করিয়েছি,কারণ আমার কাজ করার আর বয়স নেই।তনু ও মেনে নিলো সংসার মানে খালি কাজ করা।

তনুর দুই ননদ এক ননাস।এক ননদ কালো আর পাগলাটে,সাথে প্রতিবন্ধী ও,উলটাপালটা কথা বলে,আরেকজন ছোট ৫/৬ বছরের হবে।দুই দেবর,আর শশুড় আছে।পুরা ঘরে এত্ত এত্ত ময়লা,তনু এদের ব্যবহার আর কথার ধরণ দেখে সত্যি ই মনে মনে বলতে লাগলো এরা যে তার বিপরীত,কিভাবে সংসার করবে?

“তনুর সাথে তনুর ভাই ও আসে যে,বোনকে শশুড় বাড়ি দিয়ে যাওয়ার জন্য।তনুর ভাই কে দেখে পাড়া-প্রতিবেশী কয়েকজন বলতে শুরু করলো-

–ভাইয়ের তো অনেক বয়স হয়েছে,ভাই বলে ছোট না জানি বউয়ের কত বয়স হবে?

তনুর শাশুড়ি কে দেখিয়ে বলল-“দেখো গা বউ তোমাদের ছেলের বড় হবে,বুড়ি বউ আনছো।এ কথা শুনে তনুর শাশুড়ি তাল মিলায়।এতে তনু প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে যায় নতুন বউ কে কি ভাববে।এটা বাপের বাড়ি হলে কখনো এসব কথা সহ্য করতো না।

একবার এক মহিলা তনুর বাবা কে নিয়ে খারাপ কথা বলছিল বলে প্রতিবাদ করেছিলো,মহিলা টি বলেছিল শুধু-” তোর বাপ কৃষক।নামিদামি তো কেউ আর না।

তখন তনু বলেছিলো-

–হ্যা আমার বাবা কৃষক হলেও কারো থেকে হাত পাতে নি,একাই এতগুলা ছেলে মেয়ে মানুষ করছে সৎভাবে,আমি গর্বিত এমন বাবা পেয়ে।

তখন মহিলাটি চুপ হয়ে গেছিলো।কিন্তু আজ শশুড় বাড়িতে তাকে বুড়ি বলল,তাও সে প্রতিবাদ করতে পারলো না।তবে কি এভাবে চুপ থাকতে হবে?তার খুব কষ্ট হতে লাগলো।শশুড় বাড়ি এত কষ্টের কেন?

“তনুর ভাই তনুকে শশুড় বাড়ি দিয়ে চলে গেলো।তনুকে তারা কিছু নতুন বউয়ের নিয়মকানুন শেষ করে আরেকটা শাড়ি পরিয়ে একটা রুমে নিয়ে গেলো।এতক্ষণ এ একবারো তনু তার জামাইকে ভালো ভাবে খেয়াল করেনি।রুমে আসার পর যখন জামাই ও আসলো তারপর খেয়াল করলো।মুহুর্তেই মন খারাপ হয়ে আসলো।সে কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পরলো।

“ভোরে তনু নামাজ পড়তে উঠলো।খুঁজে খুঁজে বাথরুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।শশুড় বাড়ির সবাই তখন ঘুম।তনু এদের কে দেখে আরেক দফা অবাক হলো।আদৌ কি এরা মুসলিম?তনুর বাবা মা বোন সবাই একসাথে নামাজ পড়তে উঠতো।অথচ শশুড় বাড়ির কেউ ভাল করে নামাজ টা ও পড়ে না?এ আবার কেমন পরিবার…??

“তনু রুমে বিছানায় বসে থাকলো,ক্ষুধায় পেট ছো ছো করছে,নতুন বউয়ের কথা কারো খেয়াল নেই,এমন কি জামাই এর ও না।অনেক বেলা করে শাশুড়ি ঘুম থেকে উঠলো।তারপর চা বানালো।

তারপর তনুকে ডেকে বলল-

–আজ থেকে এ সংসার তোমার,সব কাজ ও তাই তোমার,আশা করি সব করে ফেলবে,কাল থেকে চা বানানো থেকে শুরু করে সব কাজ তুমি ই করবে।ঘরে বউ এনেছি একটু সুখ করার জন্য।বুঝলে?

তনু অবাক হয় নতুন বউয়ের সাথে এমন ব্যবহারে।সে মেনে নিতো এমন ব্যবহার যদি সে প্রেম করে আসতো।প্রেম করলে সমাজের মানুষ নানান কথা বলে সেসব শুনতে ও হয়।কিন্তু এরা তো দেখেশুনে বিয়ে করিয়েছে,তার কি একটু ও সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা নেই?

“বিয়ের পরের দিন তনুর বাবা মা বোনেরা দেখতে আসলো।সবাইকে দেখে তনুর শশুড় বাড়ির লোকেরা ইচ্ছেমত বলতে লাগলো-“এত মেয়ে?এরা খাবার পেয়েছে?না জানি মুড়ি দিয়ে বসিয়ে রেখেছে বাপ”

আরো কত কথা।তারা নতুন আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও কোনো আয়োজন করলো না।তনুর বাবা নিজের সাধ্যমত মেয়েকে সব দিয়েছে,যা যা দাবি ছিল পাত্রের।গরীব হলেও তিনি সব মেয়েকে ভাল ভাল জিনিস পাঠিয়েছেন যাতে শশুড় বাড়িতে সুখে থাকে।

তাও ওদের কথা থেকে রেহায় পায়নি তারা।একেক জিনিসের দিকে চেয়ে একেক মন্তব্য করতেছিলো।তনু নিরবে সব সহ্য করলো।কারণ মায়ের উপদেশ-

“ধর্য্য ধর,সব ঠিক হয়ে যাবে,উল্টাপাল্টা কিছুই বলিস না।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে”

——–

“তনুর বাবা মা সবাই চলে গেলো।তনুর ভীষণ মন খারাপ।আজ তাদের বাসর রাত,শুনেছে বাসর রাতে নাকি বিছানায় অনেক ফুল থাকে,অনেক ফুল দিয়ে রুম কে সাজানো হয় না জানি আজ কেমন হবে?এসব ভাবতে ভাবতে তার আরো ভয় হতে লাগলো।যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে তাই সব মানিয়ে নেয়ায় ভাল।

“তনুর বর তনুর ননাসের জামাইকে অনেক টাকা দিলো ফুল কিনে আনার জন্য,যাতে রুম সাজাতে পারে,ননাসের জামাইয়ের এটা পছন্দ হলো না,তাই সে হিংসার বশে ফুল তো কিনে আনলো ই না উলটা বুঝিয়ে দিলো অল্প বয়সে বিয়ে করে এসব বাসর করা ঠিক না।লোকে হাসবে।তনুর বর ও লজ্জায় কিছুই বলতে পারলো না।

“রাত যখন হলো তনু দেখলো রুম এ কিছু নেই।তার খুব অভিমান হলো।বর আসতে ই তনু অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে গেলো।

“ভোরে ঘুম থেকে উঠে তনু নামাজ পড়লো।তারপর রাতের খাওয়া সব বাসনকোসন পরিষ্কার করতে বসে গেলো..এগুলো পরিষ্কার করতে করতে সকাল ৭ টা বেজে গেলো,আর শাশুড়ি ঘুম থেকে উঠে বলে উঠলো-

“কই চা টা কি বানাবে না?”

চলবে….??