Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1436



Love Marriage Part-05

0

Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৫
দিশা বাহিরে এসে দেখে তাদের কলেজের ফ্রেন্ডরা এসেছে।
আর তার শাশুড়ী তাদের সাথে বসে গল্প করছে।

দিশা তাদের কে দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
তারা কি কি যে গল্প করলো কে জানে?

কারন তার ফ্রেন্ডরা জানে ইশানের ফ্যামিলি নিজের ইচ্ছায় দিশার সাথে ইশানের বিয়ে দিয়েছে।
এদিকে ইশানের মা জানে না যে ইশান আর দিশা একই কলেজে পড়াশোনা করেছে।
তারা দুইজন প্রেমিক প্রেমিকা।

দিশা কোন কথা না বলে চুপ করে আছে।

তার ফ্রেন্ড রা বললো কি রে আমাদের কে কি চিনতে পারছিস?
না বিয়ে করে ভুলে গেলি?

দিশা তার শাশুড়ীর দিকে তাকালো।
তার শাশুড়ী ও দিশার দিকে তাকালো।

তার এক ফ্রেন্ড হঠাৎ বলে উঠলো আমাদের কে না জানিয়ে বিয়ে করা হয়েছে?
আজ ডাবল ট্রীট চাই আমাদের।

দিশার শাশুড়ী বললো তুমি ইশানের বন্ধুদের আগে থেকে চেনো?

দিশা তো পড়ে গেলো বিপদে।
তবুও সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলো।

——— না মা চিনি না।

——— তাহলে এরা এভাবে বললো কেনো?

——— সেটা তো আমিও ভাবছি।

দিশার বন্ধুরা অবাক!
কি বলে দিশা এসব?

দিশার এক বন্ধু দিশার কাছে এগিয়ে এলো।
তুই এসব কি আবোল তাবোল বকছিস?
তুই ঠিক আছিস তো?

দিশা বললো আপনারা বসেন।।
আমি আপনাদের বন্ধু কে ডেকে দিচ্ছি।
এই বলে সে তাড়াতাড়ি করে রুমে যেতে ধরলো।

দিশার আরেক ফ্রেন্ড দিশার মাথায় আস্তে করে টোকা দিলো।
ব্যাপার কি?
পালিয়ে যাচ্ছিস কই?

দিশা এবার ও চুপ হয়ে আছে।
কি বলবে এখন সে ভেবেই পাচ্ছে না সেটা।

ইশানের মা কিছুই বুঝতে পারলো না।
তিনি বললেন তোমরা এসব কি বলছো?
আর দিশা তুমি এভাবে চুপ করে আছো কেনো?
আর ওরা এসব কি বলছে?

দিশা তার শাশুড়ীর প্রশ্ন এড়িয়ে গেলো।

দিশা আর দেরী না করে তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেলো।
কিন্তু রুমে আবার ইশান ছিলো না।

দিশা ইশান কে ডাকতে লাগলো।
ইশান বাথরুমে গেছে।

দিশা বললো তাড়াতাড়ি বের হও।
এদিকে তো অঘটন ঘটে গেছে।
আমাদের ফ্রেন্ডরা এসেছে।

ইশান বাথরুমের ভিতর থেকেই উত্তর দিলো যে তুমি যাও আমি পরে যাচ্ছি।

দিশা বললো তুমি গিয়ে কি বলবে সেটা তো আগে শোনো।

ইশান বললো আমাকে সেটা বলতে হবে না।
আমি জানি কি বলতে হবে।

দিশা আবার চিৎকার করে বললো তুমি বলবে তারা শুধুমাত্র তোমার ফ্রেন্ড হয়।
আমার না কিন্তু।

ইশান বললো ঠিক আছে, ঠিক আছে তুমি যাও।

দিশা আবার বাহিরে গেলো।
কিন্তু তার শাশুড়ী এখনো সেখানেই আছে।
তিনি দিশা আর তার ফ্রেন্ডদের এমন ব্যবহার দেখে আর কোথাও যাচ্ছে না।
তার সন্দেহ হতে লাগলো।

ইশান আসলো।
সে এসে বললো আপনারা ভালো আছেন?
আর আমাদের বাসা চিনলেন কি করে?

ইশানের এক বন্ধু এগিয়ে আসলো।
দোস্ত কি বলছিস এসব?
তুই ও আমাদের চিনতে পারছিস না?

দিশা ইশান কে একটু সাইডে নিয়ে গেলো।
আর বললো কি বলছো তুমি এসব?
এরা তো তোমার বন্ধু।
তুমি আমার বন্ধু ভাবছো কেনো?

ইশান বললো তুমি না বললে যাতে ওদের কে না চেনার ভান করি।

দিশা রাগ হয়ে বললো আরে পাগল সেটা আমার কথা বলেছি।
তুমি ওদের চিনবে।
আমি চিনতে পারবো না।

ইশানের মা এবার রেগে গেলো।
হচ্ছে টা কি এখানে?
দিশাও চেনে না তুই ও চিনিস না,এরা আবার বলছে দুইজনই তোদের ফ্রেন্ড।

ইশান পড়ে গেলো বিপদে।
সে এখন কি বলবে?
সে দিশা কে টোকা দিলো কিছু একটা বলো।

দিশা হঠাৎ করে বলে উঠলো আপনারা ভুল বাড়িতে এসেছেন।
আমরা আপনাদের চিনতে পারছি না।
প্লিজ চলে যান।

ইশানের এক ফ্রেন্ড বললো আমরা তোদের কে না বলে এসেছি সারপ্রাইজ দিবো বলে।
কিন্তু আমরা তো নিজেরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।

আরেকজন বললো এরা ট্রিট দেওয়ার ভয়ে অভিনয় করছে।
লাগবে না আমাদের ট্রীট।
অন্তত তোর মায়ের সামনে আর অপমান করিস না।

ইশানের মা বললো আমি বুঝতেছি না একটা ব্যাপার।
যেখানে দিশাও চেনে না আবার আমার ছেলেও তোমাদের চেনে না সেখানে তোমরা বার বার একই কথা কেনো বলছো?
দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।

ইশান এর মা বললো ইশান এদের কে যেতে দিস না।।।
দরজা বন্ধ করে দে।
এরা হয় তো বাড়ি ডাকাতি করতে এসেছে।
এই বলে তিনি চলে গেলেন।

ইশান একজনের কানে কানে বললো দোস্ত প্লিজ চলে যা।
আমি পরে বুঝিয়ে বলতেছি।
এখানে একটু গোলমাল আছে।
মা জানে না আমাদের সম্পর্কের কথা।

ইশানের মা বাসার দারোয়ান কে বললো গেট বন্ধ করে দাও।
বাসায় চোর ঢুকেছে।

ইশানের মা পুলিশ কে ফোন করলো যে বাসায় চোর এসেছে।
এদিকে ইশান তার বন্ধুদের কে পালানোর জন্য সাহায্য করলো।
কিন্তু সবদিক দিয়ে বন্ধ ছিলো।

ইশান তাদের ঘরের প্রাচীরের উপর একটা মই রেখে এক এক করে সবাই কে উপরে ওঠালো।
আর বললো ঝাপ দে সবাই।

কিন্তু তারা জানালো এতোদূর থেকে ঝাপ দেওয়া যাবে না।
ইশান বললো তোরা তাহলে কিছুক্ষন প্রাচীরের উপর ই দাঁড়িয়ে থাক।
আমি মই টা ওই পাশে নিয়ে যাচ্ছি।

ইশান তাই মই নিয়ে অন্যসাইডে যেতে ধরলো।

এদিকে সবাই প্রাচীরের উপর ই দাঁড়িয়ে থাকলো।
কেউ আর ঝাঁপ দিতে পারলো না।
প্রাচীর টা অনেক উঁচু ছিলো।

ঠিক সেই মুহুর্তে পুলিশের গাড়িও আসলো।
সবাই পুলিশের গাড়ি দেখে তাড়াহুড়ো করে ঝাঁপ দিলো।
কিন্তু আর দাঁড়াতে পারলো না কেউ।
সবাই ওখানেই বসে পড়লো।
আর পা ধরে কাঁদতে লাগলো।
কারন ঝাপ দেওয়ার কারনে তারা সবাই পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।

এখন কি হবে?
একজন ইশান কে ফোন দিলো দোস্ত আমরা তো হাটতে পারছি না।
পায়ে অনেক ব্যাথা পাইছি।
কিছু একটা ব্যবস্থা কর।

ইশান তাদের কে বাঁচানোর জন্য বাহিরে এলো।
কিন্তু এসে দেখে পুলিশ গাড়ি থেকে নামছে।
ইশান তাই পুলিশ কে বাড়ির ভিতর নিয়ে যেতে ধরলো।

হঠাৎ পুলিশেরা ইশানের বন্ধুদের দেখে ফেললো।
তারা সেখানে গেলো।
ইশান বললো স্যার আগে বাড়ির ভিতর চলুন।
চোরগুলো তা না হলে পালিয়ে যাবে।
পুলিশ কোন কথা শুনলো না।

পুলিশঃতোমরা এখানে এভাবে বসে আছো কেনো?

ইশানের বন্ধুরা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না।

ইশান হঠাৎ বুদ্ধি করে বললো স্যার এরা আমার বন্ধু হয়।

ইশান তার বন্ধুদের বললো তা তোরা এখানে কেনো?
ইশানের বন্ধুরা চুপ হয়ে থাকলো।

তখন ইশান বললো স্যার চোরগুলো আমার ফ্রেন্ড পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকেছিলো।
তাই হয় তো এদের কে বেধে রেখেছিলো।
যাতে এরা ভিতরে না যেতে পারে।

পুলিশ বললো কই এদের কে বেঁধেছে?
হাত তো খোলা এদের।

——— তখন এক ফ্রেন্ড বললো স্যার আমাদের পায়ে আঘাত করেছে।
তাই আমরা আর হাঁটতে পারছি না।
সেই কথা শুনে পুলিশ বললো এদের কে বাড়ির ভিতর নিয়ে চলো।
এদের ট্রিটমেন্টের দরকার আছে।

ইশান বললো স্যার বাড়ির ভিতর নিয়ে গিয়ে কি হবে?.
তারচেয়ে আমি এদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
আপনারা বাড়ির ভিতর গিয়ে চোর খুঁজুন।

পুলিশরা ইশানের কথা শুনে বাড়ির ভিতর গেলো।
এদিকে ইশান এদের কে একটা গাড়ি ঠিক করে পাঠিয়ে দিলো।
আর বললো দোস্ত পরে দেখা করছি।
আর আমাকে মাফ করে দিস।

তার এক বন্ধু মুখ ভেংচিয়ে বললো মাফ করলে কি আমাদের কষ্ট কমবে?
কি হয়রানি টাই না হলাম আজ।
সারাজীবন মনে থাকবে।
সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।

তার এক বন্ধু প্যান্টের পকেট থেকে একটা চেন বের করলো আর বললো এটা তোদের কে গিফট দেবো বলে এনে ছিলাম।
কিন্তু তা তো আর দেওয়া হলো না।
ধর এটা দিশা কে দিস।

ইশান হা করে তাকিয়ে থাকলো।
সে এখন এটা কি করে নেয়?
আবার ভাবলো না নিলেও তো এরা মন খারাপ করবে।

ইশানঃতোরা রাগ করিস না প্লিজ।
প্লিজ রাগ করিস না।
পরিস্থিতি টা বোঝার চেষ্টা কর।

ইশানের বন্ধুরা কিছু না বলে চলে গেলো।

এদিকে পুলিশ কোন চোর খুঁজে না পেয়ে তারাও চলে গেলো।

ইশানের মা ইশানের উপর রাগ হলো।
চারদিকে বন্ধ ছিলো।
তবুও চোর কি করে পালালো?

ইশান তার মায়ের সাথে আর অযথা তর্ক করলো না।

দিশা আর ইশান এ বারের মতো বেঁচে গেলো।
কিন্তু তার বন্ধুরা যে অপমানিত হলো সেই জন্য খুব খারাপ লাগলো।
দিশা আর ইশান ঠিক করলো তাদের সাথে দেখা করে সরি বলে নেবে।
কিন্তু বাড়ি থেকে কি করে বের হবে?
তাই ঠিক করলো তারা দিশার বাবার বাড়ি যাবে।

কারন দিশা বিয়ের পর একদিনও বাবার বাড়ি যায় নি।

দিশা তার শাশুড়ী কে বলতে গেলো যে মা আমি একটু বাড়ি যাচ্ছি।
ইশানের মা হাসতে হাসতে বললো তা একাই বাবার বাড়ি যাবে?
আমরা যাবো না?
তোমার বাবা আমাদের কে যেতে বলে নি?

দিশা বললো হ্যাঁ বলেছে।
যাবেন আপনি?

তার শাশুড়ী জানালো যাবোই তো।
কিন্তু তোমার শ্বশুড় তো যেতে পারবে না।
সে খাবার খাবে কোথায়?

ইশানের বোন ইরা হঠাৎ রুমে আসলো।
সে বললো আমিও যাবো।

তখন ইশানের মা বললো সবাই চলে গেলে বাড়ি থাকবে কে?

ইশানের বোন জানালো ইশান আর তার বাবা থাকবে।
তাছাড়া ইশান তো এখন রান্নাবান্না সব একাই করতে পারে।

দিশা আর না করতে পারলো না।
সে মন খারাপ করে ঘরে গেলো।

ইশান দিশা কে বললো আমার ব্যাগ গোছানো শেষ।
তুমি রেডি হও তাড়াতাড়ি।
দিশা ইশান কে বললো তোমার যাওয়া হবে না।
কারন তুমি বাবা আর দুলাভাই এর জন্য রান্না করবে বাসায় থেকে।

ইশান বললো মানে কি?
কি বলছো এসব?
আমি রান্না করবো মানে?

দিশা জানালো তার মা আর বোন তার সাথে যাবে।
আর তোমাকে বাড়ি থাকতে বলেছে।

ইশান সে কথা শুনে খুব রেগে গেলো।
মা কি পাগল হয়েছে নাকি?
আমি তোমাকে রান্নার কাজে হেল্প করি দেখে এখন সবার জন্য রান্না করতে হবে?
পারবো না আমি?
আর তুমি বাবার বাড়ি চলে গেলে আমি এখানে একা একা কি করবো?

——— আমি কি জানি?
তোমার মা কে গিয়ে বলো?

——— তুমি বলো নি আমার কথা?
যে আমিও যাবো তোমার সাথে।
তাছাড়া তুমি তো জানো আমরা ওখানে আমাদের ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করবো।

——— আমি তো বুঝতে পারছি।
কিন্তু মা নিজের থেকেই বলছে যে তিনিও আমাদের বাড়িতে যাবেন।
আর তোমরা ছেলেরা বাড়ি পাহারা দেবে।
আর তোমার বোন জানালো সেও যাবে?
এখন আমি কি করে বলি যে আপনারা যান না।
আমি আর আপনার ছেলে একাই যাবো।

ইশান রাগ করে তার মায়ের রুমে যেতে ধরলো।
কিন্তু এদিকে তার মা এই দিকেই আসছিলো।
তার মা ইশান কে দেখে বলে উঠলো বাবা একটু কষ্ট করে ম্যানেজ করে নিস।
কতই আর বাড়ির ভিতর থাকি?
একটু ঘুরে আসি আমি?
তোরা ছেলেরা তো চাইলেই বাহিরে গিয়ে ঘুরে আসতে পারিস।
আর আমরা মেয়েরা কোথাও যেতে পারি না।
তাছাড়া তোর বাবার অফিস আছে।
সে তো যেতে পারবেই না।
তুই একটু রান্না করে দিস।
শুধু কয়েকটা দিন একটু কষ্ট করিস।

ইশান রাগে আর একটা কথাও বললো না।
এখন কি তাকে সারাজীবন মেয়েদের মতো রান্না করতে হবে?
সে দিশা কে বকতে লাগলো।
তার জন্য আজ এ দিন টা দেখতে হলো।
কেনো যে দিশা কে রান্নার কাজে সাহায্য করতে গেলাম?

ইশান খাওয়াদাওয়া বাদ দিয়ে এই ভরদুপুরেও কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

দিশার প্রচন্ড মন খারাপ।
তার একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না ইশান কে ছেড়ে চলে যেতে।
কিন্তু সে যদি এখন বলে সে যাবে না তখন আবার তার শাশুড়ী ভাববে তিনি যেতে চেয়েছেন দেখে দিশা এমন করছে।

ইশানের মা আর বোন রেডি হয়ে দিশার রুমে আসলো।
এসে দেখে দিশা রেডি হই নি এখনও।
তাই দিশার শাশুড়ী বললো আমরা গাড়ি তে গিয়ে বসলাম।
তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।
দিশা মাথা নাড়ালো।

দিশা রেডি হয়ে ইশান কে ডাকতে লাগলো।
ইশান কোন কথা বললো না।
দিশা ইশানের কাঁথা টা টেনে তুললো।
আর বললো আমি যে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না?

ইশান কোন কথা না বলে কাঁথা টা আবার টেনে তার গায়ে জড়িয়ে নিলো।

দিশাঃআমার উপর রাগ দেখাচ্ছো কেনো?
তোমার মাকে বললেই তো হয় যে তুমিও যাবে?

ইশান কোন কথা বললো না।

দিশা ইশানের কপালে একটা কিস করলো।
আর বললো আমরা এখন বের হবো।
একটু তাকাও এদিকে।

ইশান তবুও তাকালো না।

দিশা ইশান কে জড়িয়ে ধরলো আর বললো তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
আর যদি বেশি খারাপ লাগে তুমি চলে যেও বাড়িতে।
তুমি যেভাবে রাগ দেখাচ্ছো মনে হচ্ছে বাড়ি চেনো না?

ইশান বললো আমি কি যেতে চাচ্ছি?
আর রাগ করবো কেনো?
আমার ঘুম ধরেছে তাই শুয়ে আছি।
তোমরা সাবধানে যেও।
আর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।

দিশা ইশান কে বললো তুমি ভাবছো আমি খুব খুশি হয়েছি?
মোটেও না।
আমারও কিন্তু খারাপ লাগছে।

ইশান বললো বেশি দেরী করলে মা কিন্তু রাগ হবে।
তাড়াতাড়ি যাও।

দিশাঃতাহলে আমার দিকে একবার তাকাও।
একটু আদর করো।

ইশানঃকি শুরু করলে বলো তো?

ইশান উঠে দিশার কপালে একটা কিস করলো।
এখন ঠিক আছে?

——— না।

——— আবার কি হলো?

——— তুমি আমার দিকে তো একবার ও তাকাচ্ছো না?
আমার চোখের দিকে একবার তাকাও?

ইশান দিশার দিকে তাকাতেই হেসে উঠলো।
এখন খুশি?

দিশা ইশান কে জড়িয়ে ধরে বললো শুক্রবার তো বাবার অফিস বন্ধ আছে।
তাহলে সেইদিন বাবা কে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যেও।

ইশান মাথা নাড়ালো।

দিশা তার শাশুড়ী আর ননদের সাথে বাবার বাড়ি চলে গেলো।

চলবে?????????
ভালো লাগলে অবশ্যয় লাইক এবং কমেন্ট করবে।

Love Marriage Part-04

0

Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৪
দিশা কিচেন রুমে যেতেই দেখে অনেকগুলো মহিলা গেস্ট রুমে বসে আছে।

দিশাকে দেখামাত্র তার শাশুড়ী বলে উঠলো দিশা মা এসেছো?
আমি আরো ভাবছি মেয়েটা কই গেলো?
এই বলে দিশার কানে ফিসফিস করে বললো খবরদার একটা কথাও বলবে না।
চুপচাপ শুধু শুনবে।
যা বলার সব আমি বলবো।
আর মাথায় ঘোমটা টা দাও।

দিশা মাথায় ঘোমটা দিলো।
আর চুপ হয়ে থাকলো।

দিশার শাশুড়ী দিশাকে পরিচয় করে দিলো সবার সাথে।
দিশা সবাই কে সালাম দিলো।
আর বললো এরা সবাই আমার ফ্রেন্ড হয়।

দিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।।।
এই বয়সেও তার শাশুড়ীর এতো ফ্রেন্ড!!!!

দিশার শাশুড়ী বললো আমার বউ মা খুবই লক্ষী একটা মেয়ে।
একদম আমার মনের মতো হয়েছে।
আমাকে কোন কাজ করতেই দেয় না।
সব কাজ পারে।
সারাক্ষণ আমার খোঁজখবর নেয়।
কখন কি খাবো তার খেয়াল রাখে।

—-ওমা!
কি কপাল রে তোর?
আর আমাদের কপাল দেখ!!!

——— তোদের কপাল তো খারাপ হবেই।
ছেলের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করলে এমন তো হবেই।

আর আমি সারা এলাকা খুঁজে খুঁজে এমন একটা শান্তশিষ্ট মিষ্টি বউ পেয়েছি।
যে আমাদের অনেক সম্মান করে।
এমন একটা বউ ই এতোদিন ধরে চাইছিলাম আল্লাহর কাছে।
আমার ইশান ও খুব খুশি হয়েছে।

——— সেটাই তো দেখছি।।।
আসলে তোর ছেলেটা অনেক ভালো।
কি সুন্দর তোর কথামতো তোর পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করলো।

——— ইশানের কথা আর বলতে হবে না।
ওর মতো ছেলেই হয় না।
এই বলে ইশানের মা দিশা কে বললো মা তুমি এখন ঘরে যাও।
সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছো।
এখন একটু রেস্ট নাও।।।

দিশা ঘরে চলে গেলো।
সে একেবারে অবাক!
তার শাশুড়ী এতো সুন্দর ব্যবহার করলো তার সাথে।
আর তার নামে এতো সুনাম করলো?
অথচ এদিকে সে একবারের জন্যও তার শাশুড়ীর কোন খোঁজ নেয় নি।।।
তার শাশুড়ী কি রান্না করছে দেখতেও যায় নি।
দিশা তার শাশুড়ীর এমন ব্যবহারে সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলো।

ইশান দিশার গা ধরে ঝাকাতে লাগলো।
হঠাৎ করে কি হলো?
কোথায় হারিয়ে গেলে?
আর খাবার কোথায়?

——— আজ না খেয়েই থাকতে হবে।

——— কেনো?

——— কারন বাহিরে মেহমান এসেছে।

——— কে আবার এলো?

——— আমার শাশুড়ী আম্মার বান্ধুবী।

——— উল্টাপাল্টা কিছু বলো নি তো?

——— একটা কথাও বলি নি।

——— তুমি চুপ করে ছিলে আমার বিশ্বাস হয় না।

——— আমি চুপ করে শুধু তোমার মায়ের কথা শুনছিলাম।
এতো সুন্দর করে আমার প্রশংসা করলো।
আমি সত্যি অবাক!!!!

ইশান দিশাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
আর বললো তুমি চাইলেই কিন্তু মায়ের ভুল ধারনা টা পালটে দিতে পারো।
কারন আজ না হয় কাল মা তো জানবেই তুমি আমার প্রেমিকা ছিলে।
তুমি অযথা কেনো তর্ক করো বলো তো?
আমার সাথে যা মন চায় করো কিন্তু বাকি লোকজনের সাথে এমন আচরণ করো না যাতে তারা কষ্ট পায়।

——— আমি কি এমনি এমনি তর্ক করি?
না কেউ যদি ভুলভাল কথা বলে তার প্রতিবাদ করি।

———মাঝেমধ্যে অনেক জিনিস বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকতে হয়।
এভাবে মুখে মুখে তর্ক করলে সবাই বেয়াদব বলবে।
কারন এটা তোমার শশুড় বাড়ি।

দিশা ঠিক করলো নিজেকে সে পাল্টাবে।
তার শাশুড়ী তার নামে যেসব মিথ্যা কথা বললো সেভাবেই সে চলবে এখন।

দিশা অনেক সকালে উঠলো।
আর ইশান কেও তুললো।

——— এতো সকালে আমাকে ডাকছো কেনো?

——— সকালের নাস্তা রেডি করতে হবে।
তাড়াতাড়ি ওঠো।

———আমি কেনো উঠবো?
তুমি যাও।
আর আমাকে রান্নাঘরে দেখলে সবাই হাসবে।

——— তুমি উঠবে কি না বল?

——— কি যন্ত্রণা শুরু করলে বলো তো?
তোমার নাস্তা বানাতে হবে না।
শুয়ে পড়ো তো।

এই বলে ইশান দিশাকে আবার শোয়ালো।

দিশা কোন কথা না বলে ইশান কে টেনে তুললো।
উঠবে না কেনো?
কি কথা দিয়েছিলে?
সবসময় আমার পাশে থাকবে।
তাহলে এখন রান্না করার সময় থাকবে না কেনো?
আমি রান্না করার সময় ও তোমাকেই চাই।

——— তুমি কি পাগল হয়েছো?
আমি ছেলে মানুষ।।
আমি যাবো না রান্না ঘরে।

দিশা ইশান কে জোর করেই উঠে নিয়ে গেলো

ইশান পড়ে গেলো মহা বিপদে।।।
কেনো যে বলেছিলাম সবসময় পাশে থাকবো।
এই কোন মেয়ে রে বাবা!!!!
এখন আমাকে রান্নাও করতে হবে।

দিশা ইউটিউব এর ভিডিও দেখে দেখে রান্না করবে।
মোবাইল দিলো ইশানের হাতে।
ইশান ভিডিও দেখছে আর বলছে।
দিশা সেভাবেই রান্না করছে।

হঠাৎ তার শাশুড়ী আসলো।
ইশান কে দেখে বললো তুই এতো সকালে রান্নাঘরে কেনো?
ইশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
সে বললো মা পানি খেতে এসেছিলাম।

——— ঘরে পানি রাখিস নি?
ভুলে গেছি রাখতে।

দিশা রান্না ঘর থেকে বের হতেই তার শাশুড়ী কে দেখতে পেলো।
তারপর মাথায় ঘোমটা দিলো।
আর বললো আসসালামু আলাইকুম মা।
কেমন আছেন?

দিশার শাশুড়ী অবাক!!!
তিনি মনে মনে সালামের উত্তর নিলেন।

দিশা তার শাশুড়ী কে বললো মা আপনি ঘরে যান।
এখানে এসেছেন কেনো?
আজ থেকে আপনি রান্নাঘরের আশেপাশেও আসবেন না।
শুধু খাওয়ার সময় আসবেন।
আমি আর আপনার ছেলে আজ থেকে সব কাজ করবো।

সেই কথা শুনে ইশান বললো আমি কেনো কাজ করবো?
তুমি একাই করবে?
তুমি বাড়ির বউ তাই তোমাকে কাজ করতেই হবে।
খবরদার আমাকে এর ভিতর জড়াবে না।

দিশাঃকোন বই এ লেখা আছে শুধু বাড়ির বউ রা কাজ করবে?
তোমরা ভাত খাও না?
কাজ করতে কি সমস্যা তোমার?
তাছাড়া তুমি তো এখন বসেই আছো।

——— ইশান চোখ দিয়ে দিশা কে অনেক ইশারা করলো আর কিছু বলো না।
তা না হলে মা বুঝে যাবে সব।

দিশা বলতেই আছে বলতেই আছে।

ইশানের মা হাসতে লাগলো।

——— তুমি হাসছো মা?
কিছু তো বলো?

——— কি বলবো?
তোর বউ কে তুই বল?
বউ এর এতো বড় সাহস হয় কি করে?
স্বামীকে রান্নাঘরে কাজ করার জন্য এনেছে।

ইশান অনেক সাহস নিয়ে বললো দিশা তুমি এসব ঠিক করছো না।
আমি তোমার স্বামী হই।
আমাকে একটু সম্মান দিতে শেখো।

——— আসসালামু আলাইকুম স্বামী?
আপনি কেমন আছেন?
প্লিজ আমাকে একটু হেল্প করুন।
আমি একা একা কাজ করতে পারছি না।।

ইশান তার মায়ের দিকে তাকালো আর তার মা ইশানের দিকে।
দুইজনই হেসে উঠলো।
ইশানের মা দিশার এসব কান্ড দেখে ঘরে চলে গেলো।

——— তুমি মার সামনে এভাবে কথা বললে কেনো?
মা এখন কি ভাববে?

——— যা ভাবার ভাবুক।
আমি একা কাজ করতে পারবো না।
তুমি আমার সাথে করবে।
বুঝেছো?

——— যদি না করি কি করবে?

——— তাহলে আমিও কোনো কাজ করবো না।
ঘরে শুয়ে বসে থাকবো।

——— তুমি আমার সাথে এমন করছো কেনো?
আমার ঘুম ধরছে।
আমি ঘরে গেলাম।

দিশা ইশান কে জোর করেই আটকালো।
যাও না প্লিজ।
আমি একা একা কাজ করতে পারবো না।

ইশান আর না করলো না।
দিশার সাথে কাজ করতে লাগলো।
আর বললো কেনো যে ভালোবেসে বিয়ে করলাম?
বউ তো কোন কথাই আমার শুনছে না।
আমাকে একটুও ভয় পায় না।
উলটা আমার উপর রাগ দেখায়।
আমাকে শাসায়।

ইশানের মা তার স্বামীকে বললো রান্নাঘরে গিয়ে দেখে আসো।
ইশান রান্না করছে।

——— মানে কি?

——— মানে আবার কি?
তোমার প্রিয় বউমা তার স্বামীকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে।
বেচারার চোখেমুখে ঘুম ঘুম ভাব এখনো যায় নি?

———মেয়েটার সাহস আছে।
তা না হলে আমরা থাকা সত্ত্বেও ইশান কে দিয়ে কাজ করাচ্ছে।

——— তুমি দিশার সাহস নিয়ে কথা বলছো?
ও যে একটা বেয়াদব মেয়ে সেটা বললে না?

——— এখানে বেয়াদবির কি আছে?
তাছাড়া আমি মনে করি স্বামীদের উচিত বউ দের প্রতিটা কাজে এভাবে সাহায্য করা।

——— ওরে বাবা!!
তুমি বললে এটা?
তুমি কবে আমাকে এভাবে সাহায্য করেছো?

ইশানের বাবা হাসতে লাগলো আর বললো তুমি কি আমায় কখনো ডেকেছিলে?
আজ দুইজনে একসাথে কাজ করবো।

ইশানের মা মনে মনে ভাবলো ঠিকই তো।
এখন থেকে আর একা একা কোন কাজ করবো না।
দুইজন মিলেই করবো।

ইশান আর দিশা সবার জন্য নাস্তা রেডি করলো।
দিশা ইশান কে বললো যাও ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা খেয়ে নাও।
আমি সবাই কে ডেকে নাস্তা দিচ্ছি।

ইশান রুমে চলে গেলো।

দিশা সবাই কে আজ নিজের হাতে নাস্তা দিলো।
সবাই খুব খুশি হলো।
কিন্তু ইশান আর তার এখনো খাওয়া হয় নি।
তাই সে ইশান কে ডাকতে গেলো।

দিশা রুমে গিয়ে দেখে ইশান ঘুমাচ্ছে।

——— এই ইশান?
তুমি ঘুমাচ্ছো কেনো?
খাবে কখন?

ইশানের কোনো সাড়াশব্দই নাই।

দিশা আবার ডাকতে লাগলো।
কি হলো?
ওঠো।

ইশান রাগ করে দিশা কে সরিয়ে দিলো।
আমার চোখের সামনে থেকে যাও তো এখন।
আমার ঘুম ধরেছে।

——— এভাবে বললে হবে নাকি?
নাস্তা খেয়ে আবার দুপুরের খাবার রেডি করতে হবে না?

——— আমি আর পারবো না।
তুমি করো গিয়ে।

——— কেনো পারবে না?
তোমাকে পারতেই হবে।
আমি একা একা করতে পারবো না।

ইশান এবার খুব রেগে গেলো।
সবসময় এরকম ছেলেমানুষী ভালো লাগে না দিশা।
এবার একটু বুঝতে শেখো।
আমি ছেলে মানুষ।
আমাকে রান্নাঘরে মানায় না।
আমাকে ডিস্টার্ব করো না প্লিজ।
খুব ঘুম ধরেছে।

সেই কথা শুনে দিশার খুব মন খারাপ হলো।
শুধু তোমারই ঘুমের দরকার আছে?
আমার নেই?
আমারও তো ঘুম হয় নি।
আমাকেও তো ঘুমাতে ইচ্ছা করছে।

——— আবার বকবক করছো?
বললাম তো যাবো না আমি।
আমাকে কি হাসির পাত্র বানাতে চাচ্ছো?

দিশা চলে গেলো।
সে নাস্তা না করেই দুপুরের খাবার রেডি করতে গেলো।
ইশান কে আর একবার ও ডাক দিলো না।

ইশান ঠিক দুপুর বেলা উঠলো।
সে উঠে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
তারপর রান্নাঘরের দিকে গেলো।

দিশা ইউটিউব এর ভিডিও দেখছে আর রান্না করছে।

হঠাৎ ইশান বললো মোবাইল টা আমার হাতে দাও।
আমি সাহায্য করছি।

দিশা কোন কথা বললো না।

——— কি হলো?
কথা বলছো না কেনো?

দিশা বললো তোমাকে কি খাবার দিবো?

ইশান উলটা জিজ্ঞেস করলো তুমি খাইছো?

দিশা মিথ্যা কথা বললো যে সে খেয়েছে।

ইশাঃমা,বাবা খাইছে?

দিশাঃসকালের নাস্তা করেছে।
দুপুরের খাবার খায় নি এখনো।

ইশান দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।
রাগ করেছো?
তখন সত্যি খুব ঘুম ধরেছিলো।

দিশা ইশান কে সরিয়ে দিলো।
আর বললো কাজ আছে আমার।
তাড়াতাড়ি বলো খাবার কি দেবো?

——— হ্যাঁ খাবো।
দাও।

দিশা ইশান কে খাবার দিলো।
ইশান দিশার হাত ধরে তার সামনে বসালো।
আর দিশার মুখে খাবার তুলে দিলো।

——— বললাম তো খেয়েছি আমি।

——— আমার সাথে একটু খাও।

——— আমি একবার খেলে আর খাই না।

ইশান দিশাকে কোলে তুলে নিলো।
দিশা বললো কি করছো?

ইশানঃ লাগবে না তোমার রান্না করা।
আজ থেকে কিছুই করতে হবে না।
একদিন কাজ করেই বেচারারার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
না জানি সারাবছর কাজ করলে আরো কি হবে?

——— ছাড়ো আমাকে।
তাছাড়া কাজ করতে আমাকে ভালোই লাগছে।

——— তাহলে আমার উপর রাগ দেখাচ্ছো কেনো?
আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে তেমন উত্তর ও দিচ্ছো না।

——— কই রাগ দেখাচ্ছি?

ইশান দিশা কে ঘরে নিয়ে গেলো।
এখন শুয়ে থেকে রেস্ট নাও।
বাকি কাজ আমি করছি।

——— কি করবে তুমি?
সব কাজ করা শেষ হয়েছে।

——— তাহলে তো ভালো কথা।
তবুও রান্না ঘরে পড়ে আছো কেনো?
ঘরে একবার ও আসলে না?

——— ইচ্ছা হচ্ছিলো না তাই।

——— কাল থেকে তোমার সাথে সব কাজ আমিও করবো।
ঠিক আছে?

——— দরকার নেই কারোর।
আমি একাই করতে পারবো।

——— আমি জানি তুমি পারবে।
তবুও করবো।
সত্যি বলছি।
এখন একটু রাগ টা কমাও।

দিশা উঠে যেতে ধরলো।

——— কই যাচ্ছো আবার?

——— এখন গোসল করবো
তারপর আবার সবাই কে দুপুরের খাবার খেতে দিতে হবে।

——— দুইদিনেই দেখি সবাই কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলে?
আমার দিকে একটু নজর দাও।

দিশা চুপ করে থাকলো।
ইশান বুঝতে পারলো আর কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি নামবে।
যেভাবে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে।
তবুও অনেক সাহস নিয়ে বললো দিশা একটু কাছে যাই?

দিশা চোখ বড় বড় করে তাকালো।

——— আচ্ছা ঠিক আছে।।।
শুধু হাত টা ধরবো।

ইশান দিশার হাত দুটি ধরলো।
দেখলো এখনো সব ঠিক আছে।

যেই ইশান কিস করতে গেছে এখনো দেয় নি দিশা ইশান কে মারতে লাগলো।
এখন কি এখানে?
কি দরকার?
আমার কাছে আসবে না খবরদার।
আমি একা একা সব কাজ করলাম আর উনি আরাম করে ঘুমালেন।
শুধু কি আমার একার দায়িত্ব?
তোমার কি কোনো দায়িত্ব নেই?
আমি মেয়ে হয়েছি দেখে আমাকেই সব করতে হবে?
শুধু মুখে বলি অনেক ভালোবাসি।
এই তোমার ভালোবাসার নমুনা?

ইশান জোর করেই দিশার কাছে গেলো।
আগে তার হাত দুটি শক্ত করে ধরলো।
কারন দিশা তাকে মারতে একটু ও দ্বিধাবোধ করে না।
মাঝে মাঝে খামচিও দেয়।

——— এসব কি করছো তুমি?
ছাড়ো বলছি?

——— এতো রাগ কাকে দেখাও?
কোনো লাভ হবে না।।
আমি তোমার রাগ কে ভয় পাই না।
এই বলে দিশাকে কিস করতে লাগলো।

——— তুমি যদি জোর করে কিছু করছো খুব খারাপ হবে কিন্তু।

——— দেখি কি হয়?
এই বলে ইশান আদর করতে লাগলো।

একসময় দিশার রাগ ইশানের ভালোবাসার কাছে হেরে গেলো।

কিছুক্ষণ পর দিশার মনে হলো এখনো কেউ দুপুরের খাবার খায় নি।
সে তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
তারপর বাহিরে গেলো।

কিন্তু বাহিরে গিয়ে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

চলবে,,,,,,,,,,,,

Love Marriage Part-03

0

Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৩
দিশা বিড়বিড় করতে করতে রুমে ঢুকলো।
ইশান তা দেখে বললো কি হয়েছে নতুন বউ এর?
চোখেমুখে এতো রাগ কেনো?
মনে মনে কাকে বকতেছো?

দিশা বললো আপনাকে।

ইশানঃ কেনো?
আমি আবার কি করলাম?

দিশাঃতোমার পাড়াপ্রতিবেশি রা জিজ্ঞেস করছে বাবা কি দিয়েছে?
বাবার বাড়ি থেকে কি কি আনছো?

তুমিই বলো বাবাকে আর কি দিতে হবে?

আমিও উলটা জবাব দিয়েছি কি দেবে আবার?
তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ টাই তো দিয়ে দিছে।

ইশানঃতারা কিন্তু ভুল কিছু বলে নি।
এমন হ্যান্ডসাম একটা জামাই পেয়েছো ভাগ্য করে।
কিছু তো দিতেই হবে।
দাম আছে না আমার একটা?

দিশা ইশানের কাছে এলো।
তার শার্টের কলার ধরে বললো কি বললে তুমি?
তোমাকে যদি দাম দিয়ে কিনতে হয়,
তাহলে তো আমাকেও দাম দিয়ে কিনতে হবে।
আমি আবার তোমার থেকে কম কিসের?

ইশান দিশার হাত দুটি শক্ত করে ধরলো।
আর বললো আমি তো দাম দিয়েই কিনেছি।
দেনমোহর তো আর কম না।

দিশাঃএই শোনো?
এটা তোমরা ইচ্ছা করে দাও নি?
এটা নিয়ম।
তাছাড়া মেয়েরা একটু বেশি মূল্যবান।
তাই তো তাদের দাম দিয়েই কিনতে হয়।

ইশানঃআচ্ছা ওসব বাদ দাও এখন।
আগে বলো আমাকে না বলে এতো সকালে উঠেছো কেনো?

দিশাঃতুমি ঘুমায়তেছিলে তখন।
তাছাড়া আমি নিজের ইচ্ছায় উঠি নি।
তোমার বোন অনবরত দরজা ধাক্কাতেই আছে।
তাই খুলে দিয়েছি।

ইশান দিশার হাত ছেড়ে দিলো।
এবার তাকে একেবারে কাছে নিয়ে আসলো।
আর বললো এইসব আজেবাজে বকবকানি শোনার জন্য বিয়ে করেছি?

দিশাঃকি করলাম আমি?

ইশানঃএখনো কিছুই বুঝতে পারছো না?
কাল রাতে ঘুমিয়ে পরেছিলে কেনো?
কাল কি ঘুমানোর রাত ছিলো?

দিশাঃঘুম ধরলে আমি কি করবো?
তোমার নিজের খেয়াল ছিলো না যে বউ টা একা একা ঘরে বসে আছে।
একটু তাড়াতাড়ি রুমে যাই।

ইশানঃতোমাকে বললাম না মার সাথে একটু দেখা করে আসি।
আর এই কয় মিনিটেই ঘুম ধরেছিলো?

দিশা কোন উত্তর দিলো না।

ইশানঃআচ্ছা,ঠিক আছে কালকের কথা বাদ দিলাম।
ঘুম ধরেছে তাই ঘুমিয়েছো।
কিন্তু আজ সকালে কখন উঠেছো যে আমি টেরই পেলাম না।

দিশাঃএটাও আমার দোষ?
বললাম তো তোমার বোন,,,,,,

দিশার কথা শেষ না হতেই ইশান দিশার মুখ টিপে ধরলো।
কোনো অজুহাত দেবে না।
আর যেনো এ ভুল না হয়।
মনে থাকবে?

দিশা বললো আমি কি ভুল করেছি সেটাই তো বুঝলাম না।

ইশান হাসবে না কাদবে তা বুঝে উঠতে পারলো না।

সে দিশা কে বললো আগে প্রেমিক প্রেমিকা ছিলাম।
এখন কিন্তু আমরা স্বামী স্ত্রী।
এখনকার জীবন আর আগেকার জীবনের মধ্যে অনেক তফাৎ।
এখন দায়িত্ব কর্তব্য অনেক বেশি।
সবসময় এই কথা টা মনে রাখবে।
বুঝেছো?

দিশা আবার মাথা নাড়লো।

ইশানঃবোঝনি?

দিশাঃনা।

ইশান তখন হাসতে হাসতে বললো যাও এক কাপ চা নিয়ে এসো।

দিশাঃতুমি সেই থেকে এটা বুঝাচ্ছিলে?

ইশানঃহ্যাঁ।।
বুদ্ধি আর তো হলো না।
শুধু ওই বকবকানি টাই পারো।
আর পারো গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে।

দিশাঃকি বললে?

ইশানঃচা আনতে বললাম।

দিশা চা আনার জন্য কিচেন রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে তার শাশুড়ী রান্না করছে।

দিশাঃমা,কি রান্না করছেন?

দিশার শাশুড়ী কোন উত্তর দিলো না।

দিশা এবার বললো মা,আমার জন্য এক কাপ গ্রীন টি আর আপনার ছেলের জন্য এক কাপ দুধ চা বানিয়ে দেন তো?
আমি ঘরে গেলাম।
রেডি হলে আমাকে ডাক দিয়েন।

সেই কথা শুনে দিশার শশুড় কাশতে লাগলো।
তার কাশি আর থামছে না।

দিশাঃকি হয়েছে বাবা?
পানি খাবেন?

দিশার শশুর কথা বলতেই পারছে না।
তিনি দিশার কথা শুনে অবাক হলেন।
দিশা নিজে চা না বানিয়ে তার শাশুড়ী কে অর্ডার করছে।

ইশানের বাবার এ অবস্থা দেখে ইশানের মা এগিয়ে আসলো।
তুমি কাশতেছো কেনো?
এই দিন টা দেখার জন্যই তো তুমি ওই মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে টা দিলে।
তুমি খুশি হয়েছো তো?
তোমার শখ মিটেছে?

যে মেয়ে বিয়ে না হতেই বলে বিয়ের পর শাশুড়ী মা রান্না করে খাওয়াবে।
তবুও সেই মেয়েকেই ঘরে আনলে?

ইশানের বাবা বললো তুমি আবার আমাকেই দোষারোপ করছো?
আমার কিন্তু কোন দোষ নাই।
বার বার এসবের মধ্যে কেনো আমাকে টানছো?
তাছাড়া এই বিয়ে টা তো আমরা নিজের ইচ্ছায় করায় নি?
পরিস্থিতির কারনে করতে বাধ্য হয়েছি।

আর তোমার জামাই কে জিজ্ঞেস করো।
সেই দিয়েছে এই মেয়ের খোঁজ।

কথাটা শোনামাত্রই ইশানের দুলাভাই এর মুখ থেকে বিস্কুট পড়ে গেলো।
কারন ইনি মনের সুখে চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে ডুবিয়ে খাচ্ছিলেন।

বাবা,,,,,,,,
মানে,,,,,,,
আমি,,,,,
আমি কিছু জানি না মা।।।
আমার কাজ আছে।
আজকে আমাকে একটু দেশের বাড়ি যেতে হবে।
ইরা,,,,,,,,,,? কই তুমি?
আমি গেলাম।
এই বলে তাড়াহুড়ো করে ইশানের দুলাভাই চলে গেলো।

ইশানের মা বললো তোমরা এই বলদটার কথা শুনে মেয়ে দেখতে গেছো?
আমার ভাবতেই অবাক লাগছে তোমরা একটিবার আমাকে বলো নি?
যে মানুষ নিজে ইনকাম করে খেতে পারে না,
ঘর জামাই থাকে সে ভালো মেয়ের খোঁজ কি করে দেবে?

মা,,,,,,,?
চুপ করো।
যা মুখে আসে তাই বলো?
ওই মেয়ের খোঁজ তোমার ছেলেই দিয়েছে।
ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।

অযথা আমার স্বামীকে গালি দিবে না।
আর আমি সারাজীবন এর জন্য এখানে থাকবো না।
শুধু সময়ের অপেক্ষা।
একটা চাকরি হলেই চলে যাবো।
আর জীবনেও আসবো না।
তুমি তখন একা একা তোমার এই প্রাসাদ নিয়ে থাকিও।

লাভ ম্যারেজ পছন্দ করি না,
লাভ ম্যারেজ করতে দেবো না ছেলেকে।
শেষমেষ ছেলে লাভ ম্যারেজ ই করেছে।
আর আমি লাভ ম্যারেজ করেছি দেখে কত কথা শুনতে হয়।
এদিকে নিজেরাও লাভ ম্যারেজ করেছে।
ওনার আদরের ছেলে ও করেছে।
ইরা মুখ বাঁকা করে এসব কথা জোরে জোরে বলতে বলতে তার রুমে গেলো।

ইশানের মা ইশানের বাবার কাছে আসলো।
কি বললো ও?
ইশান লাভ ম্যারেজ করেছে?
দিশা কে ও চয়েচ করেছে?

ইশানের বাবা বললো তুমি একটু বেশি বোঝো।
ও আমাদের কথা বললো।
আর বললো ইশান ও তো প্রেম করেছিলো।
সে ও তো ওই মেয়েকেই বিয়ে করতে চাইছিলো।

ইশানের মা বললো তুমি চুপ করো।
আমি ভুল শোনার মানুষ নই।
এই বলে ইশানের মা ইরার কাছে গেলো।

কি বললি তুই?
ইশান লাভ ম্যারেজ করেছে?

ইশানের বাবা মেয়েকে ইশারা করলো বলিস না মা।

ইরাঃকখন বললাম?

ইশানের মা বললো আমি তাহলে কি ভুল শুনলাম?

ইরাঃহ্যাঁ ভুলই শুনেছো।

আর যদি এটাই ঠিক হতো তখন কি হতো?
ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে?
বউ কে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে?
আমি একটা জিনিষ বুঝি না তুমি লাভ ম্যারেজ এ এতো বিরক্ত কেনো?
কেনো পছন্দ করো না?
যার যাকে ভালো লাগবে তাকেই তো বিয়ে করা উচিত।

সেই কথা শুনে ইশানের মা চলে গেলো।

ইরা তার বাবা কে বললো বাবা?
মা কেনো এমন করে?
আমি লাভ ম্যারেজ করেছি দেখে আমাকে আর তোমার জামাইকে একটুও সহ্য করতে পারে না।
ভাইকেও করতে দিতে চায় নি।
কিন্তু তোমরা তো লাভ ম্যারেজ করেই বিয়ে করেছো?

ইশানের বাবা বললো তোর মাকে গিয়ে বল?
সেই ভালো জানে কেনো এমন করে?
আর তুই কি করে সব বলে দিলি?
মেয়ে মানুষের পেটে আসলেই কথা থাকে না।
একটু কিছু হলেই সব সত্যি বলে দেয়।
আর যেনো এ ভুল না হয়।

দিশা খালি হাতে রুমে গেলো।

ইশানঃচা কই?

দিশাঃশাশুড়ি মাকে করতে বলেছি।

ইশানঃকি বলছো এসব পাগলের মতো?
মা এমনিতেই রেগে আছে তার উপর আবার তাকে রাগিয়ে দিয়ে এলে?

দিশাঃআমি সত্যি আর কিছু বলি নি।

ইশানঃআর কি বলতে হবে?
যা বলেছো তাতেই কাজ হয়ে গেছে।
আরে পাগল এসব বাড়ির বউ দের কাজ।
বাড়ির বউ সব কাজ করবে।
শাশুড়ী রা বসে থেকে খাবে।
আর তুমি শাশুড়ী কে হুকুম করেছো চা আনতে?

দিশাঃআনতে বলি নি তো।
শুধু বানাতে বলেছি।
আমি পরে গিয়ে নিয়ে আসবো।

ইশানঃচুপ করো।
খুব ভালো কাজ করো।
না জানি মা রাগে কি করছে?

দিশাঃএখানে রাগ করার কি হলো?
আর দুই কাপ চা বানাতে কতটুকু সময় লাগে?

ইশানঃআমিও তো সেটাই বলছিলাম।
এই কাজ টা নিজে করলে না কেনো?
শাশুড়ী কে করতে বলেছো।
হায় রে বউ তুমি?

দিশাঃকেনো এই নিয়ম?
শাশুড়ী রা রান্না করলে কি হবে?

ইশানঃকিছুই হবে না।
এটা দেখতে খারাপ দেখা যায় যে বউ বসে আছে আর শাশুড়ী রান্না করছে।
বড়দের সম্মান করতে হয় জানো না সেটা?

দিশাঃআমার কিন্তু একটুও ভালো লাগছে না।
তুমি সারাক্ষণ আমাকে উপদেশ দিতেই আছো দিতেই আছো।
আগেই তো ভালো ছিলাম।
সারাদিন ফোনে কত সুন্দর সুন্দর কথা বলতে।
কত ভালোবেসেছো!
আর এখন ভালো তো বাসছোই না শুধু বকা দিচ্ছো সারাদিন।
আমি কিন্তু বাড়ি চলে যাবো।
আর আসবো না।
থাকো তুমি তোমার বাড়ি তে।

ইশান দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।

তখন তো সেই জন্যই বললাম প্রেমিক প্রেমিকা আর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক তফাৎ।
আগে তোমার কোনো দায়িত্ব ছিলো না।
মায়ে রান্না করে দিয়েছে তুমি বসে থেকে খেয়েছো।
আর সারাদিন আমার সাথে কথা বলেছো।
কিন্তু এখন তোমাকে আমার বাবা মার খেয়াল রাখতে হবে।
রান্না করতে হবে।
সংসারের সব কাজ সামলাতে হবে।
আবার স্বামীকেও ভালোবাসতে হবে।
তার সেবাও করতে হবে।

দিশা ইশান এর হাত দুটি সরালো।
আমার চাই না এ জীবন।
আমি পারবো না এসব করতে।
আগের জীবনই ভালো ছিলো আমার।

ইশান হাসতে লাগলো।
তাই???
শুধু সারাদিন ফোনে কথা বলতে এটাই ঠিক ছিলো?

দিশাঃহুম।

ইশানঃস্বামীর আদর ভালোবাসার প্রয়োজন নাই?

দিশাঃনা।

ইশানঃতাই?

দিশাঃবললাম তো হ্যাঁ।

ইশান দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর তার ঠোঁটে একটা কিস করলো।
দিশাঃকি হচ্ছে এসব?

ইশানঃআমিও জানি না।

দিশাঃমানে?

ইশান দিশার ঠোঁটে হাত দিলো।
চুপ করো।
আর কোনো কথা না।
এই বলে দিশা কে আদর করতে লাগলো।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো।
ইশান আর দিশার খাবার খাওয়ার কোনো খেয়াল ই নাই।
হঠাৎ দিশা বললো আচ্ছা তোমার ক্ষুধা লাগে নি?

ইশানঃহ্যাঁ লাগছে তো।

দিশাঃতাহলে আমরা খাচ্ছি না কেনো?

ইশানঃকি খাবে?
তুমি কি রান্না করেছো?

দিশাঃএ বাড়িতে কি শুধু আমি আছি?
আর কেউ নাই?

ইশানঃআবার অন্যজনের সাথে নিজের তুলনা করো?
এ বাড়িতে অনেক লোক থাকলেও বউ কিন্তু একটাই।
তাই কারো সাথে কাজের ভাগ না করে নিজেই করবে।
বুঝেছো?

দিশাঃএকটা কাজের লোক রাখলেই তো হয়?

ইশানঃমা,এসব বাহিরের লোকের হাতের রান্না খায় না।

দিশাঃআমিও তো বাহিরের লোক।

ইশান হাসতে লাগলো।
তা বাহিরের লোক আমার ঘরে কি করো?
তাও আবার আমার খাটে,আমার সাথে।

দিশাঃএটা আমার স্বামীর,,,,,,,,,,
ও,,,,,
আমি তো বাহিরের কেউ না।
এটা তো আমার নিজের শশুড় বাড়ি।
নিজের স্বামীর বাড়ি।

ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো।
আর বললো বুদ্ধিমানদের বেশি বোঝাতে হয় না।
আমার বউ টা অনেক বুদ্ধিমতী।

দিশাঃতুমি না বলো আমার বুদ্ধি নাই।

ইশানঃসেটা তো এমনি রাগানোর জন্য বলি।

দিশাঃআমাকে রাগিয়ে কি লাভ তোমার?

ইশানঃগাল ফুলিয়ে বসে থাকো,
কথা বলতে চাও না,
হাত ধরতে দাও না,
এগুলো খুব ভালো লাগে আমার।

দিশাঃআজ থেকে তাহলে সবসময় এগুলোই করবো।
তার জন্য আমার মন খারাপ করে রাগানোর কি দরকার?

ইশানঃসবসময় কি আর এক জিনিষ ভালো লাগে?
কখনো রাগলে ভালো লাগে।
আবার কখনো হাসলে।
কখনো বকলে ভালো লাগে।
আবার কখনো আদর করলে।
কখনো ভালোবাসলে।।
আবার কখনো কখনো কাঁদলেও ভালো লাগে।

দিশাঃতাহলে কি আমাকেও একসময় ভালো লাগবে না তোমার?

ইশানঃতাই মনে হয়?

দিশাঃতুমিই তো বললে সবসময় এক জিনিষ ভালো লাগে না।

ইশান দিশাকে বুকে জড়িয়ে নিলো তুমি আসলেই একটা পাগল মেয়ে।।।
আমি তোমার মুডের কথা বলছি।
তোমার কথা না।।
তুমি কখনো হাসবে।
কখনো আবার কাঁদবে।
কখনো রাগ করবে।
আবার কখনো আমাকে অনেক অনেক ভালোবাসবে।

দিশা ইশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
যদি কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো তখন কিন্তু একেবারে খুন করে ফেলবো।

ইশানঃকই যাবো আর?
সব পথ তো বন্ধ।।।
আমি শুধু তোমাতেই অন্ধ।
শুধু তোমাকেই ভালোবাসতে চাই হাজার উপায়ে প্রিয়।

দিশাঃতুমি তো দেখি কবি হয়ে গেছো?

ইশানঃএবার একটু বাহিরে যান।
খাবার দাবার যদি কিছু পান।
তাহলে সেটা কষ্ট করে একটু নিয়ে আসেন।

দিশা ইশানের এমন ছন্দ শুনে হাসতে লাগলো।
আর রান্নাঘরে গেলো খাবার আনতে।

চলবে,,,,,,,,,,,,

Love Marriage Part-02

0

Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০২
ইশান আর দিশার বিয়ে হয়ে গেলো।
সবাই দিশা কে ইশানের রুমে বসে রাখলো।

কিছুক্ষন পর ইশান রুমে ঢুকলো।

দিশা বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
ইশান দিশার সাথে কোন কথা না বলে ঘোমটা টা খুলে ফেললো।

দিশা আবার ঘোমটা দিলো।
ইশান বিরক্ত হয়ে আবার খুলে ফেললো।

দিশা এবার রেগে গিয়ে বললো আপনি বার বার ঘোমটা ফেলে দিচ্ছেন কেনো?
সমস্যা কি আপনার?

ইশান বললো এটা আমার রুম।
আর রুমে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই।

দিশাঃতো কি হইছে?
তাই বলে আপনি এইভাবে ঘোমটা সরাবেন?

ইশান দিশার একেবারে কাছে গেলো।

ইশানঃএবার নাটক করা বাদ দাও।
অনেক হয়েছে।

দিশাঃকিসের নাটক?
আর আপনি জানেন না নতুন বউ এর ঘোমটা ধীরে ধীরে সরাতে হয়।

ইশান হাসতে লাগলো।
তুমি নতুন বউ???

দিশাঃমানে কি?
আপনার কি মনে হয় আমার আগেও বিয়ে হয়েছে?

ইশানঃপ্লিজ এখন একটু চুপ করো।
আমি ঝগড়া করার মুডে নাই কিন্তু।

দিশাঃআমি কখন ঝগড়া করলাম?

ইশানঃতার আগে বলো তোমাকে আমি এগুলো শিখিয়েছি?
আর কে বলেছে তোমাকে এসব বলতে?

দিশাঃআপনি এসব কি বলছেন?
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

ইশানঃআবার আপনি আপনি করছো?

দিশাঃস্বামীকে তো আপনি করেই বলতে হয়।

ইশান এবার জোরে করে বললো দিশা এবার একটু চুপ করো।

দিশাঃচুপ করবো কেনো?

ইশান দিশার মুখ টিপে ধরলো।
আর বললো তোমাকে বলেছিলাম তোমার বাড়ির কেউ যেনো এগুলো বলে।
আর তুমি নিজে এসে বলতে গেলে কেনো?
এমন ভাবে বললে যা আমি নিজে শুনেই অবাক হয়েছি।

দিশাঃবাড়ির কেউ এসব কথা বলার সাহস পাচ্ছিলো না।
তাই নিজেকেই বলতে হলো।
তাছাড়া তোমরা কতগুলো গিয়েছো হিসেব করেছো একবার?
এতো টাকা খরচ করে আমার বাবা খাওয়ালো আর তোমার মা বলে কিনা পাত্রী পছন্দ হয় নি।
তাই চুপ করে থাকতে পারি নি।
নিজেই নিজের বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।

ইশানঃতোমার মাথায় আসলেই বুদ্ধি নেই।
মাথামোটা কোথাকার।
এখন যে মা ভাবলো তুমি বেয়াদব একটা মেয়ে।
আদবকায়দা জানো না।
এখন মার মন জয় করবে কি করে?

দিশাঃসেটা না হয় আমার উপরই ছেড়ে দাও।

ইশানঃএতো সহজ না বুঝলে?

দিশাঃতোমার মতো বদমেজাজি ছেলে কে যদি কন্ট্রোল এ আনতে পারি তাহলে তোমার মা কে পারবো না?

ইশানঃআমি বদমেজাজি?
আর আমি তোমার কন্ট্রোলে কবে আসলাম?
কি বুঝাতে চাচ্ছো?

দিশাঃকিছু না।
তুমি কি ঝগড়া করেই রাত টা শেষ করবে?

ইশানঃতুমি যে ব্যবহার দেখিয়েছো তাতে তো আমার মাথায় ঘুরছে।
না জানি আমার পরিবারের বাকি সব সদস্যদের কি হচ্ছে?
এই বলে ইশান চলে যেতে ধরলো।

দিশাঃআবার কই যাচ্ছো?

ইশানঃমার সাথে আরেকবার দেখা করে আসি।

দিশাঃএখন তোমার মা হয় তো ঘুমাইছে।
ডিস্টার্ব করার কি দরকার?

ইশানঃতুমি বুঝবে না এসব।
ইশান চলে গেলো।

ইশানের মা কাঁদতেই আছে।
মাঝে মাঝে ইশান তার মা কে শান্ত্বনা দিচ্ছে।
মা কেঁদে আর কি হবে?
বিয়ে তো হয়েই গেছে।
তবে কথা দিচ্ছি এই মেয়েটাকে আমি অনেক ভদ্র একটা মেয়ে বানাবো।
বড়দের যাতে সম্মান করে কথা বলে সেগুলো শিখিয়ে দেবো।

ইশানের বাবা বললো আমার বিশ্বাস ইশান পারবে।

ইশানের মা ইশানের বাবার কথা সহ্য করতেই পারছে না।
তুমি চুপ করো।
একটা কথাও বলো না।
সব দোষ তোমার।
তুমি কেনো খোঁজখবর না নিয়েই মেয়ে দেখতে গেলে?
এমন বেয়াদব মেয়ের সাথে আমার ছেলেটা কি করে থাকবে?

ইশানের খালা এগিয়ে আসলো।
আপা এটা কি হলো?
আমার মেয়েটার এখন কি হবে?
তুই তো বলেছিলি এমনি শুধু মেয়ে দেখতে যাবো।
কিন্তু এরা তো বিয়ে টাই দিয়ে দিলো।
আমার মেয়ে কে কার সাথে এখন বিয়ে দেবো?

ইশানের মা বললো আমি কি করে জানি যে এরা জোর করে বিয়ে টাই দিয়ে দেবে?
ইশানের খালু বললো আমরা এতো গুলো মানুষ এসে কিছুই করতে পারলাম না।
সবই কপাল।।।
ইশানের মা আবার কেঁদে উঠলো।

ইশান তার মা কে জড়িয়ে ধরে আছে।
ইশানের বাবা বললো তোর মায়ের কাছে আমি আছি।
তুই দিশার কাছে যা।

ইশানের মা চিৎকার দিয়ে উঠলো আমাকে একবার শুধু ধরে দেখো?
খবরদার ধরবে না।
ইশানের বাবা বললো তুমি আমার উপর রাগ দেখাচ্ছো কেনো?
আমি কি করেছি?
ইশান তার বাবা কে বললো তুমি যাও তো এখন।
দেখছো না মায়ের মন খারাপ।

ইশানের বাবা ইশান কে বললো মনে হচ্ছে বিয়ে টা আমি করেছি।
তোরা আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেনো?
ইশান তার বাবা কে বললো বাবা প্লিজ এখন কথা বলো না।

ইশানের বাবা বুঝতে পারলো না কিছু।
তার দোষ কোথায়।
সবাই তাকে দোষারোপ করছে কেনো?
ইশানের বাবা তার জামাই এর কাছে গেলো।
তোমার জন্য আমি ইশানের মায়ের বকা শুনছি।
তুমি কেনো বলছো না এই মেয়ের খবর তুমি আমাকে দিয়েছো।।।

ইশানের দুলাভাই বললো বাবা আপনার হাতে পায়ে ধরি।
আমার নাম বলে দিয়েন না।
শাশুড়ী আম্মা এমনিতেই আমাকে গাধা বলে।
আর যদি শোনে এই মেয়ের খোঁজ আমি দিয়েছি তাহলে এবার আর বাড়িতেই উঠতেই দেবে না।

ইশান তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
তবুও তার মায়ের ঘুম আসছে না।

ইশানের বাবা ভয়ে আর কোন কথাই বললো না।

হঠাৎ ইশানের বাবা বলে উঠলো মেয়েটা ঘরে একা একা আর কতক্ষণ বসে থাকবে?
ইশান তুই দিশার কাছে যা।

ইশান বললো বাবা তোমার কবে বুদ্ধি হবে?
আর তুমি মাকে কবে বুঝবে?
মা কে এই অবস্থায় রেখে আমি কি করে ঘরে যাই?

ইশানের মা কাঁদতে কাঁদতে বললো তোর বাবা এমনি।
এতোবছর যে কি করে পার করলাম তা আমিই জানি।
অন্য কোনো মেয়ে হলে জীবনেও থাকতো না।

ইশানের বাবা বললো কথাটা ঠিকই বলেছো।
কিন্তু সেটা তোমার জায়গায় আমার নাম হবে।

ইশানের মা বললো কি বললে তুমি?

ইশানের বাবাঃকিছু না।
এবার ছেলেকে রুমে যেতে দাও।
ঘরে নতুন বউ একা একা বসে আছে।

ইশানঃবাবা তুমি এমন করছো কেনো?
বউ বসে আছে তো কি হইছে?
আগে মায়ের সেবা করি।
তারপর বউ।

ইশানের মা বললো বাবা তুই এখন রুমে যা।
আর খবরদার ওই মেয়ের সাথে বেশি একটা কথা বলবি না।
বেয়াদব মেয়ে একটা।

ইশানঃঠিক আছে মা।
তুমি ঘুমাও।
আমার চিন্তা করো না।

এই বলে ইশান রুমে চলে গেলো।
কিন্তু গিয়ে দেখে দিশা ঘুমাইছে।

ইশান দিশাকে ডাকতে লাগলো।
এই দিশা,,,,,,,
ওঠো,,,,
ঘুমায়ছো নাকি?
দিশার কোন সাড়াশব্দ নাই।

ইশান আবার দিশাকে ডাক দিলো।
দিশা একটু নড়েচড়ে শুইলো।।।
আর ঘুমন্ত কন্ঠে বললো কি হয়েছে?

ইশানঃকাপড় চেঞ্জ নাই করতেই ঘুমায়ছো কেনো?

দিশাঃসকালে করবো।
এখন আর ডিস্টার্ব করো না তো।
খুব ঘুম পাচ্ছে।
এই বলে দিশা ইশানের কোলের মধ্যে শুয়ে পড়লো।আর ইশানের হাত টা তার মাথায় দিলো।
আর বললো চুলগুলো বুলিয়ে দাও।
ইশান তাই আর ডিস্টার্ব করলো না।
দিশার চুল গুলো বুলিয়ে দিলো।
দিশা ঘুমিয়ে গেলো।

ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো।
পাগলি একটা মেয়ে।
এতো কথা যে কিভাবে বলে?
হায় আল্লাহ আমার পাগলী টাকে একটু বুদ্ধি দাও।
আর সে যেনো আমার মায়ের মন জয় করতে পারে।
আজ থেকে সারাজীবনের জন্য তাকে কাছে পেলাম।
পাঁচ বছরের রিলেশন আজ পূর্নতা পেলো।
সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
এই বলে আবার একটা কিস করলো কপালে।

ইশান যে কখন ঘুমাইছে নিজেও জানে না।

সকালবেলা ইশানের বোনের ডাকে দিশার ঘুম ভেংগে গেলো।
তিনি শুধু বারবার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন।
দিশা দরজা খুলে দিলো।
ইশানের বোন দিশা কে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
পাশের বাসার আন্টিরা দেখতে এসেছে।

দিশা বললো কি দেখবে?

ইশানের বোন বললো তোমাকে দেখবে?

দিশাঃআমাকে দেখার কি আছে?

ইশানের বোন এবার একটু রাগ হলো।
এতো কথা বলো কেনো তুমি?
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।
দিশা রেডি হয়ে আসলো।

ইশানের বোন বললো খবরদার কারো সাথে তর্ক করবে না।
যা প্রশ্ন করবে শুধু তারই উত্তর দেবে।
দিশা মাথা নাড়লো।

পাড়াপ্রতিবেশি মহিলারা বউ দেখার জন্য এসেছে।
দিশা অনেক অবাক হলো।
সবাই এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো?
মনে হচ্ছে কোরবানির পশু দেখতে এসেছে?
দিশা চুপ করেই থাকলো।

হঠাৎ করে এক মহিলা দিশার মাথার কাপড় সরিয়ে চুল দেখতে লাগলো।
দেখি কত বড় চুল?
ওমা,,,,,
চুল দেখি শুকনা।
গোসল করে নি নতুন বউ?

দিশার খুব রাগ হলো।
কি ধরনের অভদ্রতা এসব?
সে শান্তভাবে বললো আমি দেরীতে উঠেছি।
ফ্রেশ না হতেই আপনারা দেখার জন্য এসেছেন।
তাই গোসল না করেই শুধুমাত্র কাপড় টা পরে চলে এসেছি।

ছিঃ ছিঃ কি বলে রে বাবা!
ইশানের মা কোথায় তুমি?
তোমার ঘর থেকে তো রহমত বরকত উঠে গেলো।

ইশানের বোন বললো মা কে ডাকছেন কেনো?
মার শরীর ভালো না।
আর দিশা এমনি বললো যে গোসল করে নি।
আপনারা এখনো মান্দাতার আমলেই পড়ে আছেন।
ও গোসল করেছে।
আর চুল গুলো হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে শুকায়ছে।
তাই শুকনা।
তাই না দিশা?
দিশা কোন উত্তর না দিয়ে তার ননদের দিকে তাকালো।

দিশার ননদ বললো আপনাদের সবার দেখা হয়ে গেছে?
দিশা এখন চলে যাবে।

হঠাৎ এক মহিলা বললো তোমার বাবা রা কি কি দিলো?

দিশাঃবুঝলাম না।

——— টাকা পয়সা কিছু দিলো না?
ঘরের আসবাবপত্র?

দিশাঃটাকা পয়সা দেবে কেনো?
আমার শশুড় কি ফকির নাকি?
তাছাড়া আমি তো কোন অকেজো পন্য নই।
তাই টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিবে।

—বা রে বা, নতুন বউ এর এতো কথা।

দিশাঃকি বললাম আমি?

দিশার ননদ বললো দিশা তুমি ঘরে চলে যাও।

দিশা বললো আপু দাঁড়ান একটু।
আমার আরো কথা আছে।
আমি হলাম আমার বাবার অনেক আদুরে মেয়ে।
আমার বাবার অনেক বড় এক মূল্যবান সম্পদ।
সেই মূল্যবান জিনিষ টাই তো বাবা দিয়ে দিছে।
আর কি দেবে?

পাড়াপ্রতিবেশি আন্টিরা বিড়বিড় করতে লাগলো।
ইশানের মা এ কোন বউ নিয়ে এলো।
এমন বেয়াদব বউ তো আমাদের এলাকায় একটাও নাই।

দিশার ননদের ভয় হতে লাগলো।
কখন যে এই কথাটা তার মায়ের কানে যায়।
এতো করে বললাম চুপচাপ থাকবে।
তা না করে শুধু কথার পিঠে কথা বলে।

মা এইজন্য মনে হয় Love Marriage করতে দেয় নি ইশান কে।
কারন এই বউ গুলো অনেক পাকা হয়।
স্বামী আগে থেকেই চেনা থাকে তাই কথা বলতে ভয় পায় না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় তার ছেলে Love Marriage ই করেছে।
মা যেদিন শুনতে পাবে সেদিন যে কি হবে সৃষ্টিকর্তায় তা ভালো জানে।

চলবে,,,,,,,,,,

Love Marriage Part-01

0

Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০১

——— পাত্রী পছন্দ হয় নি ভালো কথা।
যাওয়ার আগে খরচের টাকা টাকা টা দিয়ে যান।

——— কিসের খরচের টাকা?

গোষ্ঠীসহ এসে যে খেয়ে গেলেন সেই টাকা কে দেবে?
বাবা বাজার করেছে পনেরো হাজার টাকার।
আর আমার মা,চাচীরা যে পরিশ্রম করে রান্না করেছে তার দাম পাঁচ হাজার টাকা।
আর হ্যাঁ অবশ্যয় আমার টাকাটাও দিয়ে যাবেন।
পার্লারে যাওয়া আসা সহ সব মিলে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।
সর্বমোট পঁচিশ হাজার টাকা।

পাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে সবাই অবাক।
বিশেষ করে পাত্রের মা।
পাত্রীর নাম ছিলো দিশা।

পাত্রের মা তার স্বামীকে শুধু চিমটি কাটছে।
আর ফিসফিস করে বলছে ওঠো না কেনো?
আর এক মুহুর্ত ও থাকা যাবে না।

পাত্রের বাবা উঠতে ধরলো।
সেই কথা শুনে দিশা বললো আংকেল আগেই ওঠা যাবে না।
আগে আমার দাবী মানতে হবে।

পাত্রের বাবা বললো আমরা তো এতো টাকা সাথে করে আনি নি।

দিশা তখন বললো তাহলে আজকেই আপনার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে হবে।
এখন ভেবে দেখুন কি করবেন?

পাত্রের মা হঠাৎ করে বলে উঠলো এখানে ভাবার কি আছে?
তোমার সাথে তো আমার ছেলের জীবনেও বিয়ে দেবো না আমি।

দিশা বললো তাহলে গুনেগুনে তিরিশ হাজার টাকা দিন।
একটা টাকা কম দিলে হবে না।

পাত্রের বাবা বললো মা তখন না পঁচিশ হাজার টাকার কথা বললে?

দিশা বললো আংকেল আমি যে সেজেগুজে এতোক্ষন ধরে বসে আছি আপনাদের সামনে তার কি কোনো মূল্য নেই?
পছন্দ হোক বা না হোক খুশি মনে কিছু তো দিবেন।
তাই এর জন্য পাঁচহাজার ধরেছি।

পাত্রের মা রেগে গেলো।
আমরা একটা টাকাও দেবো না।
দেখি তুমি কি করো?
এই বলে তিনি তার স্বামীকে আবার একটা চিমটি দিলেন।
উঠতেছো না কেনো?
সামান্য একটা মেয়েকে দেখে কেনো ভয় পাচ্ছো?

পাত্রের বাবা বললো আমি এখন কি করবো?
মেয়েটা খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে।
হয় টাকা দিতে হবে তা না হলে তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে।

পাত্রের মা তার স্বামীর দিকে এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো?
কি বললে তুমি?

পাত্রের বাবা বললো আমি কিছু জানি না।
তুমি যেভাবে পারো ম্যানেজ করো।
আমি এর ভিতর নাই।

পাত্র চুপ করে বসে আছে।
পাত্রের নাম ছিলো ইশান।
ইশান দিশার এমন সাহস দেখে খুব অবাক হলো।
ছেলে হয়েও তো তার এতো সাহস নেই।
দিশার কথাবলার স্টাইল দেখে সে পুরাই পাগল হয়ে গেলো।
আর এতো সুন্দর করে সেজেছে মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে তার।।।
দেখতে যেমন সুন্দর,তেমনি তার অনেক গুন।
মা যে কেনো মেয়েটাকে পছন্দ করছে না ইশান বুঝতে পারছে না।

ইশানের মা এবার ইশান কে বললো তুই কিছু বল?
চুপ করে আছিস কেনো?

ইশান লজ্জাবতী মেয়েদের মতো নিচ মুখ হয়ে বললো আমি কি বলবো?

ইশানের মা সেই কথা শুনে আরো রেগে গেলো।
কি বলবি মানে?
মেয়েটা যে আমাদের কে ফাঁদে ফেলছে,
জোর করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তুই তবুও কিছু বলবি না?

ইশান তখন বললো উনি তো বিয়ের প্রস্তাব ও দিয়েছেন?
আমরা না হয় সেই শর্তটায় মেনে চলি।

ইশানের মা সেই কথা শুনে ইশানের কান টেনে ধরলো।
তুই এতো কিছুর পরও এই মেয়েটাকেই বিয়ে করতে চাচ্ছিস?
ইশান বললো লাগছে আমাকে।
ছাড়ো।

ইশানের মা ছেড়ে দিলো কান টা।

ইশান তখন বললো আমার কি দোষ?
আমি কি পাত্রী দেখতে আসতে চেয়েছি?
কত করে বললাম আমি পাত্রী দেখতে যাবো না।
তোমরা যাকে পছন্দ করে আনবে তাকেই বিয়ে করবো।
তবুও জোর করেই আমাকে আনলে।
এখন তো আমাকে এই মেয়েকেই ভালো লেগেছে।
আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথেও বিয়ে দিচ্ছো না।
এখন এ মেয়ে টাকে ভালো লাগলো তাকেও তোমাদের পছন্দ হচ্ছে না।

ইশানের মা বললো এই মেয়ে তোর কিভাবে পছন্দ হলো?
যে বড়দের সম্মান করতে জানে না।
ছিঃ তোর চয়েচ এতো খারাপ?
না জানি তোর গার্লফ্রেন্ড টা আরো কত বেয়াদপ?

এই কথা শুনে ইশানের বাবা ইশানের মা কে বললো ছেলে কে তো যেকোন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতেই হবে।
ছেলের ও যখন চয়েচ হয়েছে,
আবার মেয়েটাও বিয়ে করতে চাচ্ছে তাহলে বিয়ে তে রাজি হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ইশানের মা মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে লাগলো।
তোমরা নিজের মানুষ ই আমার বিপক্ষে চলে যাচ্ছো।
এখন তো শত্রুপক্ষ আরো শক্তিশালী হলো।
তুমি তোমার ছেলেকে এখানেই বিয়ে করাও আমি চললাম।
এই বলে ইশানের মা চলে যেতে ধরলো।

দিশা তাকে আটকালো।
না,না,আন্টি যাওয়া যাবে না।
আগে আমার দাবী মানতে হবে।

ইশানের মা আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।
তিনি ইশানের বাবা কে বললেন তোমার কাছে কত টাকা আছে?

ইশানের বাবা বললো একটা টাকাও নাই।

ইশানের মা রেগে গেলো।
টাকা নেই মানে?
এতোদিন পকেটে এতো টাকা থাকে আর আজ ফকিরের মতো টাকা না নিয়েই মেয়ে দেখতে এসেছো?

ইশানের বাবা বললো মিষ্টি যে নিলাম দশ কেজি সেখানেই সব শেষ হয়েছে।

ইশানের মা বললো এতো করে বললাম এতো গুলো মিষ্টি নাও না।
তবুও শুনলে না।।।
এখন টাকা দিতে না পারলে এই বদমায়েশ মেয়েটার সাথেই আমার ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে।
ও বাবা রে কি হবে এখন?
আমার ছেলের জীবন টা শেষ।
কার কুনজর লেগেছে বাবা।
ইশানের মা ইশানের গায়ে থু থু ছিটিয়ে দিলো।
বাবা তোর জন্য ভালো বউ আনতে পারলাম না।
আমাকে মাফ করে দিস।
তোর বাবা কে কত বললাম আমার বোনের মেয়ে তানিয়া কে দিয়ে বিয়ে করাও।
উনি তো শুনলেনই না।
এখনকার মেয়েরা কত বিপদজনক দেখেছো?
আর তার সাথে মেয়ের মা বাবারাও।
মেয়েকে ব্যবসায় নামিয়ে দিয়েছে।
এখন কি করি?

ইশান বললো মা আমার কাছে পাঁচ হাজার আছে।
ইশানের মা দৌঁড়ে ইশানের কাছে গেলো দে দে টাকা টা।
এই বলে তিনি টাকা টা নিয়ে দিশার হাতে দিলো।
আর বললো বাকি টাকা পরে দিয়ে যাবে।

দিশা বললো আমি বাকির ব্যবসা করি না।

ইশানের মা বললো এই ব্যবসা কত দিন ধরে করছো?

দিশাঃআজকেই ফাস্ট।
আপনার ছেলের সাথে বিয়ে টা না হলে ভাবছি এই ব্যবসা টাই continue করবো।
বউ সাজার শখও মিটবে।।
টাকাও কামাই হবে।

ইশানের মা কাঁদতে লাগলো।
এই কোন চক্ররে পড়লাম রে?
তিনি ইশানের বাবা কে বললেন এই মেয়ের খোঁজ কোন ঘটকে দিয়েছে?
এরে কাছে পেলে চিবিয়ে চিবিয়ে খাইতাম।

ইশানের বাবা তার জামাই এর দিকে তাকালো।

তার জামাই হাত জোড় করে বললো তার নাম যেনো না বলে।
কারন ইশানের দুলাভাই এই মেয়ের কথা বাসার সবাই কে বলেছে।
সেই কথা শুনে সবাই দিশা কে দেখতে এসেছে।
ইশান রা আসার সাথেই আগে খাওয়াদাওয়া করানো হয়েছে।
তারপর মেয়েকে সবাই মিলে অনেক প্রশ্ন করেছে।
দিশার উত্তর শুনে ইশানের মা সবার সামনেই বলে দিয়েছে এ মেয়ে তার পছন্দ হয় নি।
কিছুতেই তার ছেলের বউ সে হতে পারবে না।

ইশানের দাদী প্রশ্ন করেছে একটু হেঁটে দেখাও তো?
দিশা বললো আমি তো পায়ে হেঁটেই এখানে এসেছি?
তখন দেখেন নি?
তাহলে এখন হাঁটতে বলছেন কেনো?

ইশানের বাবা বললো মা তুমিও না সেই আগের যুগে পরে আছো।
এগুলো আগে দেখতো।
এখন এগুলো কে মানে?

ইশানের মা ইশানের বাবার দিকে তাকালো।
ইশানের বাবা ভয় পেয়ে বললো আর কোন কথাই বলবো না।
তোমরাই প্রশ্ন করো।
আর তোমরাই বিচার করো।

ইশানের খালা প্রশ্ন করেছে মা তুমি কি রান্না করতে পারো?
দিশা উত্তর দিয়েছে আমি কি কাজের মেয়ে তাই রান্না করতে পারবো?

ইশানের খালা বললো শুধু কি কাজের মেয়ে হলেই রান্না শিখতে হয়?
মেয়ে হলে তাকে রান্না শিখতেই হবে।

দিশাঃকেনো শিখবো রান্না?
কি দরকার?
তাছাড়া মা তো আছেই।

ইশানের খালাঃযখন বিয়ে হবে তখন তো আর মা থাকবে না।
নিজেকেই তো সব কিছু করতে হবে।

দিশাঃমা না থাকলো শাশুড়ী মা তো থাকবে।
তখন তিনি রান্না করে খাওয়াবেন।
আমার মা যদি সারাবছর রান্না করে খাওয়াতে পারে শাশুড়ী মা কেনো খাওয়াবে না?

ইশানের মা রেগে গেলো সেই কথা শুনে।
তিনি অনেক কষ্টে তার রাগ কন্ট্রোল করলেন।
তারপর বললেন ঠিক আছে সবই বুঝলাম।
কিন্তু তোমার বাবা মা কি তোমাকে কোন ভদ্রতা শেখায় নি?
এভাবে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করছো?

দিশা বললো আন্টি উচিত কথা বললেই কি সে অভদ্র হয়ে যায়?
যেটা বাস্তব আমি সেটাই বলেছি।

ইশানের মা তখন বললো তোমরা ওঠো সবাই।
মেয়ে আমার পছন্দ হয় নি।

ইশানের বাবা বললো আমি কয়েকটা প্রশ্ন করি?

দিশাঃজি অবশ্যয়?

ইশানের বাবাঃতুমি চা বানাতে পারো মা?

দিশাঃযে চা টা এখন খাচ্ছেন সেটা আমিই বানিয়েছি।
এখন আপনিই বলুন পারি কিনা?

ইশানের বাবা বললো ফাস্ট ক্লাস চা।
খুব সুন্দর হয়েছে।
এই মেয়েকে ঘরের বউ করায় যায়।

ইশানের মা তার স্বামীকে বললো বাসায় যেতে দাও শুধু তোমাকে চায়ের বালতি টে ডুবে রাখবো।
চা ভালো হলেই হবে নাকি?
মেয়ের অন্য দিক ভালো না?

ইশানের মা তার জামাই কে বললো তুমিও টাকা আনো নি?

তার জামাই বললো মা আমি মানিব্যাগ টা ভুলে রেখে আসছি।

ইশানের মা বললো তুমি আসলেই একটা গাধা।
এইভাবে টাকা না নিয়ে তোমরা কি করে মেয়ে দেখতে এসেছো?

হঠাৎ ইশানের খালু বললো আপা আমার কাছে দশ হাজারের মতো হবে।

দিশা বললো হবে না হবে না।
পুরো তিরিশ হাজার চাই আমার।

ইশানের মা বললো আমি মামলা করবো তোমাদের নামে।

দিশাঃসেটা পরে দেখা যাবে।
তাড়াতাড়ি আপনাদের সিদ্ধান্ত জানান।

ইশানের বাবা বললো আমাকে শুধুমাত্র দশ মিনিটের জন্য বাহিরে যেতে দাও।
আমি আমার ফোনটা বিক্রি করে তোমাকে পুরো টাকা দিয়ে দেবো।

দিশাঃসেটাও হবে না।।
এখনি দিতে হবে।
তা না হলে তো অন্য আরেকটা অপশন তো আছেই।

ইশানের দুলাভাই অনেক সাহস নিয়ে তার শাশুড়ী আম্মাকে বললো আম্মা এখন কি করার আছে?
ভাগ্য কে মেনে নিতেই হবে।
ভাগ্যের উপর আমাদের তো কোনো হাত নেই।

ইশানের বোন ও এগিয়ে এলো মা এটাই মনে হয় আল্লাহর ইচ্ছা।
দেখতেই তো পারছো কিভাবে বিপদে পড়লাম?
এখন এই বিয়ে টা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপাই নাই।

ইশানের মা ইশান কে বললো তোর কি মতামত?
তুই তোর গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করবি?
না এই মেয়েটাকে?

ইশান বললো মা তুমি যখন একাবার না করেছো তখন আমি সেই কাজ কিভাবে করি?
তুমি যেহেতু প্রেম করে বিয়ে করা পছন্দ করো না তাই আমি আমার ভালোবাসার মানুষ কে সেই কবে বিসর্জন দিয়েছি।
এখন তোমরা সবাই মিলে যাকে দিয়ে করাবে তাকেই বিয়ে করবো আমি।

ইশানের মা রেগে গেলো।
সোজা কথা বল।
হ্যাঁ বা না।

ইশান একটু ঢোক গিললো আর বললো যে পক্ষে লোকজন বেশি সেই পক্ষকেই তো সমর্থন করা উচিত।

ইশানের মা বললো ও তুই ও এদের পক্ষেই।
তাহলে ঠিক আছে।
সবার যখন এই মেয়েটাকেই পছন্দ তাহলে এর সাথেই বিয়ে দাও।

ইশানের খালা আর খালু বললো আপা কি বলছো এসব?
এই মেয়ের সাথে ইশানের বিয়ে দাও না খবরদার।
তোমার জীবন একেবারে শেষ করে দিবে।

ইশানের মা বললো তাছাড়া আর উপাই নাই রে বোন।
ইশান আবার এই সুযোগে তার প্রেমিকা কে বিয়ে করতে চাইবে।
প্রেমের বিয়ে আমি জীবনেও মেনে নেবো না।

ইশানের বাবা বললো ঠিক বলেছো তুমি।
এই মেয়েকে বিয়ে করা ছাড়া তো আর উপাই দেখছি না।

ইশানের মা রেগে গিয়ে বললো তুমি চুপ করো।
তোমার জন্যই এমন হলো।
শেষমেষ অভদ্র একটা মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে হচ্ছে।
বাসায় গিয়ে এর বিচার করবো আমি।
তুমি কার কথা শুনে এই অভদ্র ফ্যামিলি তে মেয়ে দেখতে এসেছো?
এখন কি হবে আমার?
পাশের বাসার ভাবী টাকেই কি বলবো এখন?
কত বড় মুখ করে বলেছি অনেক বড় ফ্যামিলিতে ছেলের বিয়ে দেবো।
আর মেয়ে তো হবে সেই রকমের ভদ্র।
ইশানের মা আবার কাঁদা শুরু করলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
ভালো লাগলে অবশ্যয় লাইক এবং কমেন্ট করবে সবাই।

বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
অন্তিম পর্ব
#লেখনিতেঃনুসরাত

মেন্টাল এসাইলামে আছে ২ বছর হয়ে আসলো আরাফের।ওদের সবার সুন্দর জীবনটা বিষিয়ে গেছে।না মায়ার পরিবারের কেউ ভালো আছে আর না আরাফের।আহানতো চাচ্চুর জন্য পাগলপ্রায়।ওর চাচ্চু কোথায়?ওকে দেখতে আসেনা কেনো?ওর সাথে দুষ্টামি করেনা কেনো?এরকম হাজারো প্রশ্ন করে থাকে আর সবাই উত্তর দেয় “এসে পড়বে খুব শীঘ্রই” কিন্তু তারাও জানে না আদৌ আরাফ কখনো ভালো হবে কিনা?

৩ বছর আগে মায়ার এক্সিডেন্টের পর মায়াকে আরাফ কোলে উঠিয়ে নিয়ে হাসপাতালে আসে।বাকিরাও আসে ওর সাথে তাদের মনে হাজারো প্রশ্ন।মায়া আর আরাফের মাঝের সম্পর্কটা ঠিক কি রকম?অহনা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনা।তাই শুরু থেকে এই পর্যন্ত সবকিছু বলে দেয় সবাইকে।আর সবাই ই আরাফকে দোষী মেনে যাচ্ছে।আরাফ যে কেনো এটা করেছে কেউ ই তা জানতে চাচ্ছেনা।এমনকি আরাফের নিজের পরিবার ও ওর বিপক্ষে।মায়ার মা ভেঙে পড়েছেন মেয়ের এমন অবস্থা দেখে।মায়ার মা কে সামলাচ্ছেন আরাফের মা।আর বাকিরা দাঁড়িয়ে আছেন নয়তো বসে আছেন চিন্তিত মুখে।আরাফ হাসপাতালের ভিতরে আইসিইউ কেবিনের বাইরে একটা চেয়ারে মাথাটা নিচু করে দুই হাটুতে দুই হাত ভর দিয়ে বসে আছে।চেহেরা বিধ্বস্ত আর কষ্টের ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।ওর নিজের প্রতি ই রাগ হচ্ছে কেনো মায়াকে আগেই সবটা বলে দিলোনা।তাহলে না এই বিয়ে ঠিক হতো না ওর মায়াপরীর আজ এই অবস্থা হতো।

অহনা আর মিরা রাগে ফেটে যাচ্ছে।ওরা আরাফকেই সবকিছুর জন্য দোষী ভাবছে।দুজনের ই আরাফ এখন দুই চোখের বিষ।মায়ান রেগে আছে আরাফের প্রতি পারেনা ওকে এখন ই খুন করে ফেলবে আজ বুঝতে পারছে ওর জন্যই ওর বোনু এতগুলা বছর ডিপ্রেশনে ছিলো আর বদলে গেছে আর আজও মায়ার এই অবস্থার জন্য আরাফ ই দায়ী।কিন্তু মায়ার জন্য চিন্তিত হয়ে আছে তাই আরাফকে কিছু বলছেনা।

ডাক্তার বেরিয়ে আসেন।সবাই ডাক্তারকে বেরোতে দেখে জিজ্ঞেস করে মায়ার কি অবস্থা তিনি বলেন,

“রোগীর অবস্থা খুব ই ক্রিটিকাল।তার শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝড়ে গেছে।আমরা রক্তের ব্যবস্থা করছি।রক্ত দেয়ার পর ই যা বলার বলতে পারবো।আপনারা যেকোনো নিউজ শুনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।” বলেই চলে যেতে নেন আর আরাফ তার কলার ধরে রেগে আগুন হয়ে বলে,

“যেকোনো নিউজ মানে?তুই ডাক্তার হয়েছিস কি জন্য?আমার মায়াকে তোকে বাঁচাতেই হবে।নাহলে আমি তোকে খুন করে ফেলবো”

আরাফকে সারাফ আর মায়ান এসে ছাড়িয়ে নেয়।ডাক্তার কেবিনে ঢুকার আগে অহনা আর মিরা তাকে পার্সোনালী ডেকে নিয়ে যায় অন্য এক রুমে আর অনেকক্ষণ কথা বলে তারপর আসে।
ডাক্তার রক্ত নিয়ে ভিতরে যান।আর প্রায় ২ ঘন্টা পর বেরিয়ে এসে মুখটা গম্ভীর করে বলেন,

“সরি।শি ইজ নো মোর।”

আরাফ এটা শুনে ডাক্তারকে মারতে যায় আর ওর ভাই ওকে আটকিয়ে নেয়।আরাফ তারপর সেখানেই বসে পড়ে আর চুপ হয়ে যায়।ছেলেরাতো আর চাইলেই কাদতে পারেনা।প্রকৃতিতে যে এই নিয়ম টা নেই।মায়ান নিজেকে সামলাতে না পেরে এলোপাথাড়ি আরাফকে মারতে থাকে।আরাফের কোনো হুশ নেই ও চুপটি করে আছে।সারাফ আর রিশান মিলেও মায়ানকে আটকাতে পারছেনা।আরাফের মা হুহু করে কেদে দেন ছেলেকে এভাবে মারতে দেখে।আর বারবার বলেন, “আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও” কিন্তু মায়ানের মনে একটুও দয়া হয়না।বোন হারানোর বেদনায় মায়ান পাথর হয়ে গেছে।আর অন্যদিকে মায়ার মা গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বার বার কেদে যাচ্ছেন সশব্দে। মায়ার বাবা চুপ হয়ে আছেন।

আরাফকে মারার পর আরাফ যখন সেন্সলেস হয়ে যায় তখন মায়ান আরাফকে ছাড়ে আর ডাক্তাররা ওকে নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন।তারপর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় আর শুইয়ে রাখা হয়।

অন্যদিকে মায়াকে জানাজা দিয়ে এসে পড়ে মায়ান, ওর বাবা, সারাফ,সারাফের বাবা আর রিশান।কান্নার এক রোল পড়ে যায় মায়াদের বাসায়।

পরেরদিন সকালে উঠেই আরাফ মায়াকে খুজে কিন্তু পায়না।এরপর থেকে আরাফের পাগলামিগুলা বেড়ে যায়।সবকিছু ভাঙচুর করতে থাকে।পরিবারের কাউকেও চিনেনা।বাচ্চাদের মতো আচরণ করে আর প্রায় প্রায় মায়াপরী বলে চিল্লিয়ে উঠে।সহজ ভাষায় ভারসাম্যহীন একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হয় যাকে সচরাচর কথ্য ভাষায় “পাগল” উপাধি দেয়া হয়।

ইশা এমন একটা পাগলের সাথে কখনোই জীবন কাটাতে পারবেনা বলে দেয়।আর বিয়েটা হয়না।

১ বছর যাবৎ আরাফকে বাসায় বন্দী করে রাখা হয় কিন্তু এরপর ই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় আরাফকে মানসিক হাসপাতালে রেখে আসবে।আর তাই করা হয়।বিগত দুই বছর ধরে আরাফ পাবনাতেই আছে।

অহনা অনেকটা ভেঙে পড়ে মায়াকে ছাড়া।ওর পাশে এসে দাঁড়ায় রিশান।মায়ার মৃত্যুর এক বছর পর ই অহনা আর রিশানের বিয়ে হয়।তার এক বছর পরেই অহনা আর রিশানের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়।অহনা মায়ার সাথে মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখে মিহা।

আজ প্রায় ২ বছর পর দেবরকে দেখতে যাচ্ছে মিরা সাথে করে আহানকেও নিয়ে আসে।আহানের এখন ৭ বছর বয়স।তখন ছিলো ৪ বছর। ওর সাথে অহনা, আর ওর ১ বছর বয়সী মেয়ে মিহাও আসে।মিহাকে কোলে নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে অহনা।আর আহানকে নিয়ে আরাফকে যেই রুমে রাখা হয়েছে তার জানালায় দাঁড়িয়ে আছে মিরা।

আরাফের পরনে আকাশি রঙের ঢিলেঢালা ফতুয়া আর পায়জামা।চুলগুলো উষ্কোশুষ্কো।চোখে চশমা।চেহেরা মলিন হয়ে গেছে।শুকিয়ে গেছে আরাফ।চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে।আর বাচ্চাদের মতো দাত বের করে হাসছে তো আবার একটু পরেই মুখটা মলিন করে কাদছে।এসব দেখে আহান মিরাকে জিজ্ঞেস করে,

“আম্মু কি হয়েছে চাচ্চুর?এরকম করছে কেনো?আর রোগীদের পোশাকে কেনো?”

“তোমার চাচ্চু এখন পাগল হয়ে গেছে।পাগল বুঝোতো?”

“হ্যা আম্মু বুঝি কিন্তু আমার চাচ্চুতো ভালো ছিলো।এরকম কেনো হলো?আমি চাচ্চুর কাছে যাবো” কান্না করতে করতে বলে।

“না বাবা যাওয়া যাবেনা।চাচ্চু তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবে।আর তোমার মিষ্টি আন্টি মারা গেছে জানোনা?”

“হুম” মুখটা মলিন করে বলে।

“তোমার চাচ্চু আর তোমার মিষ্টি আন্টি একে অপরকে ভালোবাসতো।কিন্তু তারা এক হতে পারেনা।তোমার মিষ্টি আন্টির মৃত্যুর খবর শুনে তোমার চাচ্চু ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।আর তারপর পাগলের মতো আচরণ করে।তারপর আমরা চাচ্চুকে এখানে রাখি। মানসিক হাসপাতালে।যাতে করে তোমার চাচ্চু ভালো হয়ে যায়।”

“আমার চাচ্চু!” কান্না করে দেয় আহান।

মিরা যদিও আরাফকে এখন দেখতে পারেনা।কিন্তু নিজের ছেলের সামনে আরাফকে খারাপ বানাতে চায়না।চায়না ওর ছেলেটাও আরাফের মতো হোক।তাই যতটুকু জানানো প্রয়োজন ঠিক ততোটুকুই জানায়।

আহানের কান্না দেখে অহনা মিহাকে কোলে নিয়ে জানালার সামনে আসে।অহনা আর মিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার আরাফের দিকে তাকায় আর ওর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে আর হেসে অহনা বলে,

“ইউ ডিজার্ভ দিস মি.আরাফ চৌধুরী!”

মিরাও হেসে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ইয়েস। দিস ইজ কল্ড কার্মা!”

ছোট্ট আহান কিছুই বুঝতে পারেনা।এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি বুঝবে কিভাবে?ওর চাচ্চুর এই অবস্থা আর উনারা হাসছে?আহান কিছুই বুঝতে পারেনা কেনো হাসছে দুজন।

সমাপ্ত…

বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০৬

0

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০৬
#লেখনিতেঃনুসরাত

মায়ার জীবন টাই কেনো এমন হলো?কেনো এতটা ভালোবাসার পরেও আরাফ কে পেলোনা?ওর ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো?এসব ভাবতে ভাবতেই মায়া বাসায় ওর রুমে এসে ধপ করে বসে পড়ে।ওর সাথে অহনাও আসে।মায়াকে এই সময় একা রাখা ঠিক হবেনা।মায়া অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।অহনা কিছুই বলছেনা অনেক্ক্ষণ যাবৎ কিন্তু আর সহ্য করতে পারছেনা তাই ওকে ঝাকিয়ে বলতে শুরু করে,

“কার জন্য কাদছিস মায়ু?ঐ প্রতারকটার জন্য?যে তোকে ভালোই বাসেনি?ভালোবাসলে কি তোকে এভাবে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে এখন বিয়ে করছে?করছেতো করছে আবার দাওয়াত ও দিয়েছে কতটা নিচু মস্তিষ্কের হলে এমনটা করতে পারে তুই বুঝতে পারছিস?”

“প্লিজ আর কিছু বলিস না আমি সহ্য করতে পারছিনা।আমার আরফু অন্য কারো হয়ে যাবে আমি এটা মেনে নিতে পারছিনা আমি আর যাবোনা ঐ বিয়েতে” হেচকি তুলতে তুলতে বলে।

“হ্যা যেতে হবেনা।কিন্তু ভাইয়াকে কি বলবি?”

“জানিনা কিন্তু আমি এসব সহ্য করতে পারবোনা একদম ই না”

“ঠিক আছে তাহলে কয়দিনের জন্য আমার বাসায় চলে আয়”

“আমি আজ আর এখন ই যাবো।”

“চল”

মায়া মায়ানকে বলে কিন্তু মায়ান আপত্তি করে কেনোনা মায়ান ভাবে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে ওর বোনটা ভালো থাকবে কিন্তু ভাই কি আর জানে?ওর বোনের সর্বনাশ এই বিয়েতেই হচ্ছে?ওর বোনের মনটা যে আরেক দফা ভেঙে যাচ্ছে?কিছুতেই মায়ান কে রাজি করানো গেলোনা তাই ওদের যেতেই হবে হলুদেও আর বিয়েতেও।কিন্তু মায়া কি পারবে আরাফকে ইশার হতে দেখতে?যাকে নিয়ে শতশত স্বপ্ন বুনেছে পারবে সেই স্বপ্নগুলা ভেঙে দিতে?ভুলে যেতে আরাফকে?যাকে বিচ্ছেদের পরেও ভুলতে পারেনি তাকে এখন পারবে ভুলতে?

২ দিন পর আজ হলুদে আসে ওরা কিন্তু মায়া অসুস্থতার বাহানা দিয়ে বাসায় ই থেকে যায় কেনোনা এসব অনুষ্ঠান আর সবকিছুই ওরা কল্পনা করতো নিজেদেরকে নিয়ে।মায়ার এটা মানতেই কষ্ট হচ্ছে যে মায়ার জায়গাটা আরাফ অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছে।খুব অভিমান করেছে ওর আরফুর প্রতি।

ভালোভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।আরাফ তো অন্য কিছুই ভেবে রেখেছে।কিছুতেই বিয়েটা ও করবেনা।দরকার পড়লে এই দেশ ছেড়ে দিবে নয়তো শহর ছেড়ে দিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে যেখানে কেউ ওকে খুজে পাবেনা।মায়ের জন্য নিজেকে এমন একটা সম্পর্কে বাধতে পারবেনা যেখানে কোনো ভালোবাসা নেই।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আরাফ পারবেনা মায়ার জায়গা অন্য কাউকে দিতে হোক সেটা আপোষে বা সমঝোতাতে।বিয়ের দিন ই আরাফ চলে যাবে।
আলাকের সাথে সব প্ল্যানিং করে ফেলেছে।

আরাফের বিয়ের একদিন আগের কথা,

রিশান বসে আছে সারাফের সাথে ওর অফিসে।সারাফ আর রিশান এক ই অফিসে কাজ করে আর সেই সুবাদেই ওদের বন্ধুত্ব। সারাফ জানে রিশান অহনাকে ভালোবাসে কিন্তু মেয়েটা ওকে ভালোবাসেনা।তাই আজ ওকে পরামর্শ দিতেই এসেছে যদিও আগেও দিয়েছে কিন্তু রিশান শুনেনি।

চেয়ার টেনে রিশানের কাছে এসে বসে বলতে শুরু করে সারাফ,

“দেখ ভাই যে তোকে ভালোই বাসেনা তার পিছনে কেনো পড়ে আছিস?”

“ও আমাকে ভালোবাসতে চায় কিন্তু ওর বান্ধুবীর এক্স ওর বান্ধুবীকে ধোকা দিয়েছে তাই ছেলেদের বিশ্বাস করতে পারছেনা”

“তুই কিভাবে জানিস ও তোকে ভালোবাসে?”

“ওর চোখ দেখলেই বুঝি ভালোবাসেনা কিন্তু বাসতে চায় কিন্তু চাইলেও পারেনা।আমি বুঝতে পারছিনা কিভাবে বিশ্বাস করাবো।আমি ঐ শালাকে একবার পাই তারপর মজা বুঝাবো মেয়েদের মন ভাঙার!” রেগে গিয়ে বলে রিশান।

“এক কাজ করতে পারিস।ডাইরেক্ট ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দে।তুইতো ভালো ফ্যামিলি বিলোং করিস ওর ফ্যামিলি না করবেনা।আর মেয়ের ও তো স্টাডি শেষ জব করছে অবশ্যই বিয়ের কথা বলছে কিন্তু ও করছেনা কারণ টা নিশ্চয়ই তুই?”

“কি জানি।দেখি ট্রাই করে।আরাফের বিয়েটা যাক তারপর আমার বিয়েও খেতে পারবি” হাসতে হাসতে বলে।

“আচ্ছা তাহলে কাল এসে পড়িস সবার আগেই।সবকিছুর দেখাশোনা আমাদের ই করতে হবে”

“আচ্ছা”

বিছানায় শুয়ে আছে মায়া।ভাবছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু।কত সুন্দর ছিলো ওদের সম্পর্কটা।ওদের সম্পর্কের ২ বছরের মাথায় এসে আরাফের থেকে বিচ্ছেদ হতে হয়েছে মায়াকে।সবকিছুই ওর দোষে হয়েছে।যদি এতটা বাচ্চামো না করতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না।মনে করছে ওদের সম্পর্কের ১ বছরের দিনটার কথা।কতোইনা সেলিব্রেশন করেছে আরাফ ওকে নিয়ে আর সারপ্রাইজ ও দিয়েছে।যেই ছেলেটা ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতো কেনো ওকে ছেড়ে দিলো?যেই ছেলে কখনো ওর উপর একবারের জন্য ও চিল্লায়নি এমনকি উচু আওয়াজ এ কথাও বলেনি সে তাকে কিভাবে এতগুলা অপমান করলো?এতবছর এসব ভাবেনি কিন্তু এখন মায়া ভাবছে।ওর জানতেই হবে কি কারণ ছিলো যার জন্য আরাফের ওকে ছাড়তে হলো।আর কেউ জানুক না জানুক মায়া জানতো ওর আরফু ওর মায়াপরীকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।তাই ঠিক করে নেয় আগামীকাল বিয়ের আগেই সবকিছু আবার ও জিজ্ঞেস করবে আর এইবার আরাফের ওকে জবাব দিতেই হবে তার জন্য মায়ার যা করার করবে।ওর আরফুকে ও অন্য কারোর হতে দিবেনা আর হতে চাইলে ও অনেক দূরে চলে যাবে।তারপর উঠে বারান্দায় যায় গিয়ে দোলনায় বসে চাঁদ দেখতে থাকে।এই চাঁদের আলোয় কতই না স্বপ্ন বুনেছে দুইজন।
তারপর ভাবতে থাকে ওদের সম্পর্কের ১ বছরের মাথায় আরাফ সারপ্রাইজ দেয়ার দিন মায়াকে কত বুঝালো কিন্তু মায়া ওর একটা কথাও শুনলোনা।সেদিন আরাফ কেক কাটার পর বাকিদের বাইরে যেতে বলে শুধু দুজন রেস্টুরেন্টের ছাদে ক্যান্ডেলাইট ডিনার করতে যায়।ছাদে গিয়ে চেয়ারে বসার পর আরাফ মায়ার হাত ধরে বলে,

“মায়ু তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই যা আমি বিগত ৩/৪ মাস ধরে ভাবছি বলবো কিন্তু বলা হচ্ছেনা” আস্তে সুরে।

“হ্যা আরফু বলো”

“আচ্ছা মায়ু তুমি ই দেখো তুমি যে একদিন দেখা না করলে এভাবে ধমকি দাও এমনকি দুই তিনবার হাত পা ও কেটেছো এগুলা কি ঠিক হচ্ছে?তুমি কি জানোনা আমি তোমার একটু কষ্ট সহ্য করতে পারিনা?সেই জায়গায় তুমি নিজের শরীরকে আঘাত দিচ্ছো তাতে আমার ও কষ্ট হয় তুমি কি তা বুঝোনা?” মায়াভরা চাহনী দিয়ে বলে।

“বুঝিতো কিন্তু তুমিতো জানো আমি তোমাকে একটা দিন না দেখলে থাকতে পারিনা।ছটফট করি” মাথাটা নিচু করে বলে।

“কিন্তু আমি তো ব্যস্ত ও থাকতে পারি তাইনা?হয়তো অফিসে আমার অনেক কাজ পড়ে যেতে পারে নয়তো বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটাই।”

“না তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সময় দিতে পারোনা!” রেগে গিয়ে বলে।

“রাগছো কেনো মায়াপরী।ওরাও তো আমার লাইফের একটা অংশ তাইনা?ওদের সাথে আমি মাসে ১ বার দেখা করি কিন্তু এখন তাও পারছিনা অফিসে এত কাজ।কিন্তু তোমার সাথেতো প্রতিদিন ই করি।একটা দিন না করলে কি খুব খারাপ হয়ে যায়?”

“তোমার ফ্রেন্ডরা একবার আড্ডায় বসলে আর তোমাকে ছাড়তে চায়না।একদম রাতে আসো আর আমার সাথে কথাও বলোনা ঐদিন।আর তুমিতো জানো আমি কতটা রাগী!তাই রাগ হয় আর অমন করে ফেলি।তোমার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারিনা।”

“আমাকে তুমি না বুঝলে কে বুঝবে বলো?আর আমাদের বিয়ের পর তো সারাদিন ই আমি তোমার কাছে থাকবো তখন মন ভরে দেখতে পারবেনা?”

“হুম পারবো”

“আচ্ছা তুমি যে বলো বোনদের সাথে কথা বলতেনা।ওরা যদি সেধে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে কেমন আছি এতটুকুও কি আমি বলতে পারিনা ‘হুম ভালো আছি’?”

“না পারোনা!”

“আচ্ছা ঠিক আছে এটা বাদ দাও।এটা বলো যে তুমি যে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে আগের মতো কথা বলোনা ওরা কি এটা ভাবেনা যে তুমি বয়ফ্রেন্ড পেয়ে ফ্রেন্ডদের ভুলে যাচ্ছো?ওদের ও তো তোমার টাইম দেয়া উচিত তাইনা?”

“মাঝেমধ্যে বলিতো কথা।”

“আমি যেই মায়াকে চিনি সে ছিলো আড্ডা প্রিয়।তুমি কেনো বদলে যাচ্ছো?তোমার জীবনেতো শুধু আমি ই নেই তোমার বান্ধুবীরাও আছে মায়ু তারপর তোমার ফ্যামিলি।তোমার ভাইয়ু কেনো উনাদের সাথে বাজে বিহেভ করো? আমার সাথে রাগ করে কেনো উনাদের কষ্ট দাও?এটাই কি উনারা ডিজার্ভ করে?আমার সাথে কিছু হলে ভাত খাওনা।উনারা বললে উলটো রেগে যাও।কেনো জান?উনারাতো তোমার ভালোই চায় তাইনা?”

“চায়তো!কিন্তু আমার রাগ হলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনাতো”, মাথাটা নিচু করে বলে।

“দেখো মায়া আমি তোমাকে সবসময় বলে এসেছি আমাদের জীবনে শুধু বয়ফ্রেন্ড বা স্বামী ই সবকিছু না।আর বিশেষ করে মেয়েদের দায়িত্ব অনেক।এই যেমন ধরো একটা মেয়ে একজন মা,বোন,স্ত্রী,মেয়ে,বান্ধুবী এবং আরো অনেক কিছু। তার মধ্যে সবচাইতে মধুর সম্পর্ক চারটা আর তা হলো মা,বোন,স্ত্রী আর মেয়ে হওয়া।আমি ই শুধু তোমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য না মায়াপরী!তোমার ক্যারিয়ারের কথাও কি ভাবছোনা?তোমার না স্বপ্ন তুমি শিক্ষিকা হয়ে সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াবে?এভাবে আমাকে নিয়ে পড়ে থাকলে তা কি করে হবে বলো?”

“আমার আর কিছু চাইনা শুধু তোমাকে চাই”

“কি বুঝালাম তোমাকে এতক্ষণ আমি?দেখো এভাবে জীবন চলেনা।আমার কথাগুলা ভেবে দেখো”

“আচ্ছা দেখবো” খামখেয়ালিভাবে বলে।

আরাফের এত বুঝানোর পরেও মায়া ঐরকম ই করতে থাকে এমনকি আগের চেয়ে আরো বেশি পাগলামি।আরাফকে একদম না ই করে দিয়েছে বন্ধুদের সাথে যেতে।বোনেরা জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে চলতে।সবসময় ওকেই সময় দিতে।ডেইলি ৩/৪ ঘন্টা করে কথা বলতে।ডেইলি দেখা করতে।আর ফ্যামিলির প্রতি বাজে ব্যবহার বেড়েই চলছিলো মায়ার।আর কিছু হলেই নিজের শরীরের ক্ষতি করতো।তারপর থেকে আরো ৬ মাস পর্যন্ত আরাফ প্রতিদিন মায়াকে বুঝাতো ওর এসব করা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু মায়া বুঝতোইনা উলটো আরাফের সাথে রাগ করতো, ওর সাথে বাজে ব্যবহার করতো, চিল্লাতো।আরাফ সবকিছুই সহ্য করে নিতো কিচ্ছু বলতোনা।কিন্তু পরে হঠাৎ করে আরাফ বদলে গেলো।ওর সাথে খুব কম কথা বলতো।৩/৪ ঘন্টার বদলে ৩/৪ মিনিট বলতো।দেখা করা বাদ ই দিয়ে দিয়েছিলো।মায়া হাত পা কাটতো তাতেও কোনো প্রভাব পড়তোনা।একপ্রকার এড়িয়ে চলতো মায়াকে।তারপর দুইবছরের মাথায় একদিন দেখা করে ওকে অপমান করে ছেড়ে দেয়।তারপর সব জায়গা থেকে ব্লক দিয়ে দেয়।শহর ছেড়ে দেয়।বন্ধুদের বলে মায়াকে ব্লক দিতে।আর তারপর আর যোগাযোগ করেনা।

মায়া নিজের ভুল আজ বুঝতে পারছে।কি কি করেছে।কতবড় বড় ভুল করেই যাচ্ছিলো।এত বুঝানোর পরও বুঝতে পারলোনা।কথায় আছে “থাকতে মূল্য দিতে জানিনা যখন না থাকে তখন বুঝি” মায়ার সাথেও তেমন টাই হয়েছে।আরাফের থাকাকালীন বুঝেনি এখন আরাফ অন্য কারো হচ্ছে এখন বুঝতে পারছে ওর ভুল হয়েছে।কিন্তু যাকে এতো ভালোবাসতো এমনকি মায়া ওর সাথে বাজে ব্যবহার করলেও এক ফোটা টু শব্দ করতোনা সেই মায়াকে ওর মায়াপরীকে কিভাবে এত অপমান করলো?আর কেনোই বা ছেড়ে দিলো?এখন যে মায়ার জানতেই হবে!ভাবতে ভাবতেই দোলনায় ই ঘুমিয়ে পড়ে মায়া।

আজ মায়া সাজবে।হ্যা ওর আরফুর জন্য সাজবে।ঠিক সেইভাবে যেইভাবে আরফুর পছন্দ ছিলো।মায়া আজ পরেছে সেই নীল শাড়িটা যেটা আরাফ ওকে গিফট করেছিলো।আরাফের দেওয়া কাচের নীল চুড়ি পরেছে।চুল গুলো খোলা রেখেছে।ঠোটে গোলাপ কালার লিপস্টিক।চোখে গাঢ় টানা টানা কাজল।অহনা ওকে দেখে হা হয়ে গেছে।এ ও কাকে দেখছে।মেয়েটাকে আজও হালকা একটু সাজলে পরীদের মতো লাগে?অহনা কখনো মায়াকে সাজতে দেখেনি।আরো অবাক হচ্ছে আরাফের প্রিয় সাজে নিজেকে সাজিয়েছে বলে।তাই জিজ্ঞেস করেই ফেলে,

“তুই এই সাজে?”

“হ্যা রে।অনেক ভেবেছি।আমার আরাফকে আমি অন্য কারো হতে দিতে পারবোনা।আমার জানতেই হবে এতো ভালোবাসতো আমায় কিন্তু কেনো ছাড়লো?নিশ্চয়ই বড় কোনো কারণ আছে!”

“তুই আবার ও পাগলামি করছিস মায়া।ও তোকে ভালোবাসেনা।”

“বাসে”

“তাহলে বিয়ে কেনো করছে?”

“জানিনা।সব প্রশ্নের উত্তর নিতেই যাচ্ছি।”

“যা ভালো মনে করিস”

মায়াকে এইভাবে সাজতে দেখে মায়ান আর ওর বাবা-মা খুব অবাক হন সাথে খুশিও।মায়ান জানতো ওর আগের বোনটাকে ফিরে পাবে এই অনুষ্ঠানে গেলে আর তাই হলো।

ওরা সেন্টারে এসে উপস্থিত হয়।সবার নজর ই এখন মায়ার উপর।সেই মহিলাটাও মায়াকে দেখে অবাক হন আর সেদিনের কটুক্তির জন্য অপরাধবোধ করেন।সব ছেলেরা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।একজন তো এসে জিজ্ঞেস করেই ফেলেছে সিংগেল কিনা।আরাফ স্টেজে বরবেশে বসে ছিলো।মায়াকে এভাবে দেখে কয়েকদফা ক্রাশ খায়।কতগুলো বছর পর ওর মায়াপরীকে ওর প্রিয় সাজে দেখলো।কিন্তু রাগ ও হচ্ছে ওর উপর।এত সুন্দর হওয়ার প্রয়োজন টাই বা কি ছিলো ছেলেরা চোখ দিয়েই পারেনা গিলে খাচ্ছে।রাগে স্টেজ থেকে উঠে গজগজ করতে করতে ওর রুমে গিয়ে বসে।আলাক ওকে এভাবে রাগতে দেখে ওর পিছু যায়।দেখে আরাফ কপালে হাত দিয়ে আঙুল দিয়ে কপাল ঘষছে রাগ কমাতে।কিন্তু কিছুতেই কমছেনা।

“কি হয়েছে এভাবে আসলি কেনো?আর কিভাবে পালাবি কিছু ভেবেছিস?” রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে আলাক।

“সেসব বাদ দে।মেয়েটাকে দেখেছিস?আবার ও ঐ সাজে এসেছে যেভাবে দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই।পরীরাও এত সুন্দর হয়না যতটা ও সুন্দর।কিভাবে ছেলেগুলা ওর দিকে তাকিয়েছিলো!” দাতে দাত চেপে বলে।

“মায়া ভাবি?”

“হ্যা”

মায়া আরাফকে এভাবে আসতে দেখে ওর পিছু আসে আর ওর মনে জেগে উঠা প্রশ্নগুলা করার জন্যই মূলত পিছনে আসা।দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ে আর শুনতে থাকে আলাক বলছে,

“মায়া ভাবি?”

“হ্যা”

“দেখ ভাই এমনিতেই তুই ভাবিকে অযথা কারনে ছেড়েছিস এখন তোর জ্বলছে কেনো? ” ভ্রু কুচকে।

“আমি ওকে ভালোবাসি তাই জ্বলছে।আর অযথা কারণ বলছিস?তুই তো সব জানিস!”

“হ্যা আমি জানি।মায়া ভাবীর পাগলামি বেড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু তুই বুঝাতে পারতিনা?”

“ওকে কম বুঝিয়েছিলাম আমি?”

“তা ঠিক আছে কিন্তু ”

“আমি ওর জীবনে থাকলে ও পাগলামিগুলা করতেই থাকতো এতে করে ওর দুনিয়াটা সংকুচিত হয়ে যেতো।নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারতোনা।ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস দের গুরুত্ব বুঝতোনা।আমার সাথে যা করেছে তাতে আমার কোনো আফসোস ছিলোনা।ওর প্রতি কোনো রাগ ছিলোনা আমার সাথে বাজে বিহেভ করেছে বলে।কিন্তু নিজের শরীরের ক্ষতি এসব আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।আর আমি থাকলে ও এমন ই করতো আর নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারতোনা।ওকে সুন্দর একটা লাইফ দেয়ার জন্যই আমি ওর জীবন থেকে সরে এসেছি।নাহলে ও কখনো লাইফে আগে বাড়তে পারতোনা।কিন্তু নিজের এ অবস্থা করবে ভাবিনি।”

মায়া এসব শুনে অনেক খুশি হয়।ওর আরফু ওকে ভালোবাসে আর মায়ার ভালোর জন্য ই ওকে ছেড়ে দিয়েছিলো।তাই আজ এ বিয়ে ভেঙে দিতে বলবে।তাই রুমে যেতে নেয় আর শুনে,

“কিন্তু আন্টির কি হবে তুই ভেবেছিস?”

“কি আর হবে?”

“যদি আবার ও বিষ খায়?”

“খেলে আমি কি করতে পারি?”

“আন্টির কিছু হয়ে গেলে?”

“আমি চাইনা মায়ের কিছু হোক।আর মায়া হয়তো আমাকে ঘৃণা করে।তাই বিয়েটা করতেই হবে। এমনটা…” আরো কিছু বলার আগেই দরজায় ধাক্কার আওয়াজ আসে আর দেখে মায়া দৌড়িয়ে চলে যাচ্ছে।আরাফ আরো বলতে নেয় “এমনটা করার নাটক করে পালাতে হবে” কিন্তু তার আগেই মায়া দৌড়িয়ে চলে যায়।

“ওহ শিট না জানি কি শুনেছে!”

আরাফ এটা বলেই মায়ার পিছনে দৌড় দেয়।আর বারবার বলছে “মায়ু দাড়াও।আমার কথাটা শুনো!” কিন্তু মায়া শুনছেই না।ও ভাবছে আরাফ আর ওর হবেনা।তাই এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। ওর বিয়েটা ও দেখতে পারবেনা।পারবেনা আরাফকে অন্য কারোর হতে দিতে।দৌড়িয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে।মায়ার পিছনে আরাফ দৌড়াচ্ছে আর আরাফের পিছনে আলাক এটা দেখে বাকি সবাই অবাক। তারাও ওদের পিছু আসে।

মায়া রাস্তায় দৌড়িয়ে যেতে নেয় আর একটা প্রাইভেট কার ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মায়ার নিথর দেহটা পড়ে থাকে রাস্তার মাঝে।রক্তাক্ত শরীরে শাড়িটা ভিজে যাচ্ছে।রাস্তায় রক্তের ছড়াছড়ি!এমন একটা দৃশ্য দেখে আরাফের পৃথিবীটাই থমকে যায়।লোক জড়োসড়ো হচ্ছে মায়ার চারদিকে।আর বাকিরাও এমন একটা দৃশ্য দেখে থমকে যান।

To be continued…

বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০৫

0

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০৫
#লেখনিতেঃনুসরাত

বিকট আওয়াজ পেয়ে আরাফের মা আর ভাবি ওর রুমে এসে দেখেন আরাফের হাত থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ছে আর ভাঙা আয়নার টুকরোগুলো ফ্লোরে পড়ে আছে।ছেলের এমন অবস্থা দেখে সাহানা চৌধুরী সামনে এগিয়ে এসে আরাফের হাত ধরতে চান।কিন্তু আরাফ বাধা দিয়ে বলে,

“না মা।একদম আসবেনা।”

“আরাফ!”, অবাক হয়ে।

” চিল্লাছো কেনো মা?তুমি এটা আমার সাথে কেনো করলে?তুমিতো আমার মা আর মা রা তো সন্তানের ভালো চায় কিন্তু তুমি আমার সাথে এরকম টা কিভাবে করতে পারলে?”

“তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো আমি তোমার খারাপ চাই?”

“তা নয়তো কি?” চেচিয়ে বলে উঠে।

আরাফের চেচানো আর এমন উগ্র ব্যবহারে মিরা নিরাশ হয়।এমনটা আরাফের থেকে আশা করেনি।ওর শাশুড়ীকে বড্ড ভালোবাসে মিরা।তাই আরাফকে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“আরাফ এটা কোন ধরনের ব্যবহার উনি তোমার মা!”

” হ্যা ভাবি উনি আমার মা কিন্তু আমার ও একটা সিদ্ধান্ত আর মতামত আছে।আমি বলার পরেও আমাকে একবার না জানিয়ে বিয়ে পাকাপাকি করে ফেলা এটা কেমন ধরনের সিদ্ধান্ত? ”

“হ্যা মানছি এটা ঠিক হয়নি তাই বলে তুমি মায়ের উপর চিল্লাতে পারোনা”

আরাফের একটু খারাপ লাগে।আসলেই এমন চিল্লানোটা উচিত না যতই হোক মা তো!মাথাটা নিচু করে বলে,

“সরি ভাবি”

” আমাকে না বলে মা কে বলো”

“সরি মা।কিন্তু তুমি আমাকে না জানিয়ে এমন টা কেনো করলে?”, আস্তে সুরে।

“আমি কি তোর ভালো চাইনা বাবা বল?সব বাবা-মা ই চায় তার সন্তান ভালোভাবে বাচুক।বিগত ৬ টা বছর তুই হাসিখুশি থাকিস না।কেনো থাকিস না জানিনা হয়তো বলতে চাস না তাই কখনো জোর করিনি।কিন্তু আমি তো মা?৯ টা মাস তোকে গর্ভে ধারণ করেছি।প্রসব যন্তণায় কাতর হয়ে তোকে এই দুনিয়ায় এনেছি।তোর অল্প আঘাতে আমার বুকের ভিতর ক্ষত বিক্ষত হয়ে যেতো।আমার আরাফ তো এমন চুপচাপ আর মনমরা ছিলোনা?প্রায় প্রায় ই খেতিনা।কিছু বললে রাগ করে চলে যেতি এমন ও সময় গেছে তুই বাসায় ফিরিস নি তারপর ও কিছু জিজ্ঞেস করিনি।বড় হয়েছিস পার্সোনাল লাইফ তোর। হস্তক্ষেপ করা পছন্দ করি না করিনি ও।কিন্তু আমি চাই আমার ছেলেটা হাসিখুশি থাকুক একটু ভালো থাকুক আর তাই ইশার সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই ব্যাস এই টুকুই।আর আমি জানি তুই রাজি হতিস না আর সেইজন্যই তোকে না জানিয়ে সব পাকাপোক্ত করেছি”

“কিন্তু মা তোমার কি মনে হয় আমি ইশার সাথে ভালো থাকবো?”

কান্নাভরা কন্ঠে বলে উঠেন সাহানা চৌধুরী,

“আমি জানি তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস।তাহলে তাকে বিয়ে করছিস না কেনো?যতবার ওর কথা বলেছি বলেছিস বিয়ে করবিনা।তাই ভেবেছি হয়তো এখন আর সম্পর্ক নেই তাই বলছিস।আচ্ছা তুইতো পাগল হয়ে গেছিলি ওকে বিয়ে করতে।আমার সাথে কত ই না পাগলামি করেছিস তোমার বউ আসলে এই করবো সেই করবো।তোমার বউ আসলে বউয়ের সাথে টাইম স্পেন্ড করবা মেয়ের মতো ট্রিট করবা।মেয়ের আশা পূরণ করবা।আমার সেই আরাফ টা কোথায় হারিয়ে গেছে বাবা বল?”

“মা তোমাকে বলিনি কিন্তু ভাবিকে বলেছিলাম আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে আর জানো?বিচ্ছেদ হওয়ার সিদ্ধান্ত টা আমি ই নিয়েছিলাম আর আমি ই করেছিলাম।আর ওকে আমি নিজ হাতে হারিয়েছি।ওকে আর কখনো ফিরে পাবোনা।আমাকে হয়তো এখন ঘৃণা করে।সেদিন ওকে অনেক অপমান করেছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করো মা আমি চাইনি ওকে এভাবে ভাঙতে ওকে সুন্দর লাইফ দেয়ার বদলে লাইফটা অন্ধকারে নিয়ে গেছি।যার জন্য আল্লাহ আমাকে কখনো মাফ করবেনা।কিন্তু মা আমি ওর জায়গা আর কাউকে দিতে পারবোনা।আমি ওকে #বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️।আমি এই বিয়েটা করতে পারবোনা মা আমাকে মাফ করে দিয়ো।”

“বুঝতে পেরেছি কিন্তু এভাবে জীবন চলেনা আরাফ।আমাদের কারো না কারো প্রয়োজন হয় ই।তাই বিয়েটা হচ্ছে আর এইটাই ফাইনাল”, গম্ভীরভাবে বলেন।

” আ’ম সরি বাট আই কান্ট।আমি চলে যাবো এখান থেকে অনেক দূরে আমাকে আর দেখা লাগবেনা”

বলেই সেখান থেকে বের হয়ে যেতে নেয় আর ওর মা ওকে আটকিয়ে দিয়ে বলেন,

“আমি জানতাম তুই রাজি হবিনা।তাই সাথে করে বিষ টা নিয়েই এসেছি।তুই যদি আমার মরা মুখ দেখতে না চাস তো বিয়েটা কর নাহলে তোর মা আজ ই তাকে শেষ করে দিবে”, বিষের বোতলের মুখ টা খুলতে খুলতে বলেন।

“মা!”,হতবাক হয়ে।

” মা এ তুমি কি করছো!ফেলে দাও এটা।জোর করে বিয়ে দিলেও ভালোবাসা হয়না।আর আরাফ পারবেনা অন্য কাউকে ভালোবাসতে”, হতবিহ্বল হয়ে বলে মিরা।

“বিয়ে হয়ে গেলে সব হয়।ভালোবাসা না হলেও মায়া ঠিক ই জন্মে যায়।আর আল্লাহ চাইলে ভালোবাসাটাও একসময় হয়ে যাবে।”

“মা তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছো?”

“হ্যা করছি”

“আমি বিয়ে করবোনা মানে করবো না ই।”

“ঠিক আছে।আমাকে মারতে চাচ্ছিস ওকে ফাইন”, বলেই বোতলের মুখ টা খুলে মুখে দিয়ে গিলে ফেলেন।আর মাটিতে শুয়ে পড়েন।

” মা মা মা!এটা তুমি কি করলে!তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারোনা মা।ভাইয়া ভাবির বাবার কি হবে?আমার কি হবে?তুমি যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করবো প্লিজ মা ফিরে আসো।ভাবি ভাইয়া বাবাকে কল দাও।আমি মাকে নিয়ে হসপিটাল এ যাচ্ছি”,অস্থির হয়ে বলে।

“হ্যা তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো আমি এখন ই কল দিচ্ছি”, চিন্তিত সুরে বলে মিরা।

আরাফ উনাকে কোলে নিতে যায় আর উনি বলে উঠেন,

” রিল্যাক্স আমার কিছু হয়নি ওটাতে পানি ছিলো।”

“মা!”, রেগে গিয়ে বলে আরাফ।

” চিল্লিয়োনা।এটা পানি ছিলো কিন্তু তুমি রাজি না হলে আমি সত্যি ই বিষ খাবো এই বলে দিলাম”

“ওকে ফাইন যা ইচ্ছে হয় করো” , রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় বাইরে।

“হাত টা ব্যান্ডেজ করে…যাহ চলেই গেলো”, আফসোসের সুরে বলেন সাহানা চৌধুরী।

” মা এটা তুমি ঠিক করোনি”, শান্ত সুরে বলে মিরা।

“মা তো হয়েছো।ছেলে বড় হলে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বুঝবে।”, হালকা হেসে বলেই চলে যান উনার রুমে।

এক সপ্তাহ পর,

আজ শুক্রবার।মায়া আর অহনা মিলে রেডি হচ্ছে।মায়া পড়েছে গোলাপি শাড়ি আর চুল খোপা করে চুলে গাজড়া দিয়েছে।যদিও দিতে চায়নি অহনার জোড়াজুড়িতে দিয়েছে।ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক।কানে ছোট একজোড়া দুল।অহনা অনেক বলেছে পার্লার থেকে সাজতে কিন্তু মায়া না করে দিয়েছে।পরে আবার অহনা বলেছে কাজল দিতে চুল খোলা রাখতে ঠোটে গোলাপ কালার লিপস্টিক দিতে।
হাতে কাচের চুড়ি পরতে।কিন্তু মায়া সাথে সাথে অস্বীকার করে দিয়েছে পরার থেকে।বলেছে,” যার জন্য এই রূপে সাজতাম সেইতো নেই।সাজ দিয়ে কি হবে?কাকে দেখাবো?” এর প্রতিউত্তরে অহনা কিছুই বলতে পারেনি।

অহনা পরেছে সবুজ শাড়ী।চুল খোলা।ভারী মেকাপ করা।আর জুয়েলারিও পরেছে।ওর সাজতে ভালো লাগে তাই সাজা থেকে নিজেকে আটকাতে পারেনি।

সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে উঠে বসে।মায়া,অহনা আর মায়ান এক গাড়িতে আর মায়ার মা-বাবা এক গাড়িতে।অহনার কথা মিরাকে বলাতে মিরা রাজি হয়ে যায় আর সব ফাংশনে আসতে বলে।তাই অহনাকেও নিয়ে যাচ্ছে মায়ার জন্য।বোনটা একটু খুশি হলেই মায়ানের তৃপ্তি মিলে।

অন্যদিকে প্রচন্ড বিরক্তির সাথে রেডি হচ্ছে আরাফ।কালো পাঞ্জাবী পায়জামা পরেছে।চুলগুলো সবসময়ের মতো নরমাল ই রেখেছে।ওর চুল নিয়ে মাতামাতি একদম ও পছন্দ না।চোখে চশমা।হাতে হাত ঘড়ি কালো রং এর।

ইশাকেও কালো শাড়ি পরানো হয়েছে।আর পার্লার থেকেই সেজে এসেছে।দুজনকেই স্টেজে বসানো হয়েছে।প্রচুর বিরক্ত হচ্ছে আরাফ তা তার মুখেই ফুটে উঠছে।আর ইশাতো পারেনা চোখ দিয়েই গিলে খাবে। ওর সাথে সাথে যতগুলা মেয়ে এসেছে সবাই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে ওর দিকে।

সবেমাত্র ওরা নামলো সেন্টারের সামনে।ভিতরে এসে অহনা আর মায়াকে দুটো চেয়ারে বসিয়ে পাশে ওর বাবা-মাকে বসিয়ে মিরাকে আর সারাফকে ডাকতে গেলো।কিছুক্ষণ পর মিরা আসলো সাথে সারাফ আর ওদের ছেলে আহান।
মিরাকে দেখেই মায়া জড়িয়ে ধরে মিরাকে আর বলে,

“আপুই আপুই আই মিসড ইউ সো মাচ!তুমিতো দেখছি আরো সুন্দরী হয়ে গেছো?ভাইয়া বুঝি অনেক ভালোবাসে?”, চোখের ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলে।

” যা ফাযিল মেয়ে”,লজ্জামিশ্রিত মুখে।

“মিষ্টি আন্টি তুমি এইখানে?”,মায়াকে দেখে আহান বলে।

” তুমি এইখানে কেনো বাবা?”

“আমি থাকবোনাতো কে থাকবে আন্টি?”

“আমি কিছু বুঝতে পারছিনা”

“আরে মায়ু তুই আমার ছেলেকে চিনিস না?ও চিনবি কিভাবে কখনো দেখিস নি তো।আমার আর সারাফের ছেলে আহান।আর আহান এটা তোমার মায়ান মামার বোন মায়া।তোমার মায়া আন্টি”

“হ্যা আম্মু আমি জানি ওদিন শুনেছিলাম মিষ্টি আন্টির নাম।”, হাসিমুখে বলে।

” কিভাবে?” জিজ্ঞেস করে সারাফ।

তারপর আহান সবকিছু বলে ঐদিন কি কি হয়েছিলো।সবকিছু শুনে মায়ার বুকটা ধুক করে উঠে।তবে কি ওর আরফুই মিরা আপুর দেবর?ওর ই বিয়ে হচ্ছে?মায়াতো আগেই জানতো আরাফ অন্য কারো হয়ে যাবে তবে এখন কেনো কষ্ট পাচ্ছে?ও খুব করে চাইছে মিরা আপুর দেবর যেনো আরাফ না হয়।অন্য কেউ হয়।আর তাই জিজ্ঞেস করে,

“আপু তোমার দেবরের নাম কি?”

“জানিস না?”

“আরাফ।আরাফ চৌধুরী আমার ভাইয়ের নাম”, সারাফ বলে।

” হোয়াট!”, অবাক হয়ে অহনা বলে।

তারপর মায়া স্টেজের দিকে গিয়ে দাঁড়ায়।সাথে অহনাও যায়।

“এ তো সেই ছেলেটা পার্কে যে লেকচার দিয়েছিলো আমায়”, আস্তে আস্তে বলে অহনা।

মায়ার আরাফকে ইশার সাথে বসা দেখে বুকটা চূর্ন-বিচূর্ন হয়ে যায়।চোখ গুলো ঘোলা হয়ে যায়।ঝাপসা দেখছে মায়া।টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো মায়ার গাল বেয়ে।অহনা মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া কাদছে।যার মানে এই আরাফ ই ওর আরফু।অহনার রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।এই ছেলেকে ওর কিছুতেই সহ্য হয়না।সেদিন তো অনেক বলছিলো বাধ্য হয়ে ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু ভালোবাসে ঠিকি।এই ওর ভালোবাসা?এভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করে নেওয়া?এসব ভেবেই প্রচুর রাগ সহ বিরক্ত হচ্ছে অহনা।কেনো যে আসতে গেলো এই ফাংশনে।তারপর মায়াকে নিয়ে একটা চেয়ারে বসায় আর এক গ্লাস পানি দেয়।খুব কষ্ট করে মায়া পানিটুকু খেলো।তারপর কাপা কাপা কন্ঠে বললো,

” আমা আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল প্লিজ”

“আমিও থাকতে চাচ্ছিনা চল”

মায়া চোখের পানি মুছে যেতে নেয় আর এক মহিলার সাথে ধাক্কা লাগে।মহিলাটা পড়ে যায়।

মায়া দুঃখিত মনে বলে,

“সরি আন্টি আসলে আমি দেখিনি”

“কেমন মেয়ে তুমি হ্যা?চোখ কোথায় রেখে হাটো?ও অবশ্য হাটবেও বা কিভাবে? চোখ ই তো নেই।সব ভিতরে ঢুকে আছে।আর এত কালো কেনো চোখের নিচে?নেশা টেশা করো নাকি?”

মায়া হতবাক হয়ে যায় মহিলার কথা শুনে অহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবারো বলে ঐ মহিলাটি,

“যেই না শরীর এই শরীর দিয়ে আবার ধাক্কাও দাও?এত শুকনা কেনো?নিশ্চিত নেশা টেশাই করো বেয়াদব মেয়ে”

এসব শুনে অহনার রাগ উঠে যায় আর বলতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে কথা গুলো ভেসে আসে,

“যাকে আপনি নেশা টেশা করার অপবাদ দিচ্ছেন সে একসময় ছিলো কোনো এক অপূর্ব পরী।যাকে দেখলে বাস্তবের পরীও লজ্জা পেয়ে যাবে।অবশ্য এখন ও পরী ই আছে।কিন্তু আপনার মতো মন মানসিকতার মানুষরা সেটা বুঝবেনা।কিছু সমস্যার জন্য এমন শুকিয়ে গেছে তাই বলে নেশা করবে কেনো?নিশ্চয়ই আপনার মেয়ে বা ছেলে নেশা করে?তাইতো অন্যকে বলতে আপনার মুখে বাধলোনা।আপনাকে সরি বলার পরেও এতগুলা কথা শুনানোর প্রয়োজন তো ছিলোনা আন্টি।অন্যকে সম্মান দিন আপনিও সম্মান পাবেন।হোয়াটেভার আপনারা কি দেখছেন?যার যার কাজ করুন।আর আন্টি আপনি ও অনুষ্ঠান এঞ্জয় করুন নয়তো চলে যেতে ইচ্ছে হলে চলে যান।আর মিস আপনি উপরের দিকে বা নিচের দিকে না তাকিয়ে সামনে তাকিয়ে হাটবেন আগের অভ্যাস গেলোনা হায়রে!”

“এক্সকিউজ মি”, বলেই অন্য সাইডে চলে আসে মায়া আর অহনা।

কিছুক্ষণ আগে,
আরাফ হঠাৎ করে সামনে তাকিয়ে দেখে মায়া আর ওর সাথে ঐদিনের সেই মেয়েটা যে ছেলেটাকে অপমান করছিলো।ওর আর বুঝতে বাকি নেই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড টা কে।হ্যা মায়াই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আর আরাফের করা কাহিনীর জন্য রিশানকে অহনা সহ্য করতে পারেনা।তারপর দেখে মায়া উঠে যেতে নেয় আর মহিলাটির সাথে ধাক্কা খায়।ওর প্রেয়সীকে নিয়ে এমন কটু কথা সহ্য করতে পারেনা আরাফ তাইতো সাথে সাথে স্টেজ থেকে উঠে আসে সেখানে।এরকম টা দেখে ইশাও ওর পিছুপিছু আসে।চিল্লাচিল্লি শুনে মিরা মায়ান আর সারাফ ও আসে।

” তুমি ওকে চিনো আরাফ?”,ইশা বলে।

“হ্যা যেভাবে বললে মনে হয়তো চিনো তাও অনেক আগে থেকে?”, সারাফ বলে।

” হ্যা আমার বোনকে কিভাবে চিনো আরাফ?”,মায়ান বলে।

“আসলে একসময় আমরা বন্ধু ছিলাম।তারপর যোগাযোগ ছিলোনা অনেক বছর।সেই সুবাদেই চিনি আরকি”, মিথ্যা হাসার চেষ্টা করে।

মিরা ভাবছে অন্যকিছু।মায়াকে ও পরী কেনো বললো?আর এরকম প্রশংসা তো আরাফ শুধু একজনের ই করে।ওর মায়াপরীর তার মানে কি এই মায়াই ওর মায়াপরী?হ্যা মিরা এখন বুঝতে পারলো এই মায়াই আরাফের মায়া।মায়ার জীবন টা এইভাবে নষ্ট করার জন্য মিরার এখন রাগ হচ্ছে আরাফের প্রতি।মিরাতো জানে কি ট্রমাতে ছিলো মায়া আর কেমন হয়ে গেছে। এসবের জন্য শুধু আরাফ দায়ী।ওর ছোট্ট বোনটা বদলে গেছে ওর ই দেবরের জন্য।এরপর আর কিছু না বলে ওরা অন্য সাইডে চলে যায় আর আরাফ ইশা স্টেজে গিয়ে বসে।এনাউন্সমেন্ট হয় আর রিং সেরিমনী শুরু হয়।আরাফ আংটি পরায় ইশাকে আর ইশা আরাফকে।দূর থেকে দাঁড়িয়ে মায়া সবটাই দেখছিলো।কেউ যেনো ওর বুকে ছুরি চালাচ্ছে এমন বেদনাদায়ক যন্ত্রণা হচ্ছে মায়ার।আরাফ আড়চোখে মায়াকে দেখে।ও বুঝতে পারছেনা মায়াকি এখনো ওকে ভালোবাসে?নাকি ঘৃণা করে?

অহনা মায়ার জন্য পানি আনতে যায় আর তখন ই কারো সাথে ধাক্কা খায়।সামনে তাকিয়ে সরি বলবে কিন্তু তার আগেই রিশানকে দেখে ওর মাথা গরম হয়ে যায় আর বলে,

” এখানেও আমার পিছু পিছু এসে পড়েছেন?উফফ অসহ্য!”, কিছুটা চেচিয়ে।

“আস্তে অহনা!এটা তোমার বাড়ি না যে সিনক্রিয়েট করবে।সবসময় তোমার পিছুই কেন নিবো?আমার ফ্রেন্ডের ভাইয়ের এঙ্গেজমেন্ট তাই এসেছি দ্যাটস ইট।”

বলেই সেখান থেকে চলে যায়।অহনা কিছুটা অপরাধবোধে ভুগে।আর পানি নিয়ে যায় মায়ার জন্য।

To be continued…

বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০৪

0

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০৪
#লেখনিতেঃনুসরাত

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এরকম একটা জিনিসের সম্মুখীন হতে হবে জানা ছিলোনা আরাফের!কিন্তু ওর মা ওর সাথে এমন টা কেনো করলেন?সবকিছুর উত্তর আরাফের চাই ই চাই।

কিছুক্ষণ আগে আরাফের ভাবি এসে আরাফকে ডেকে দিয়ে বলে গেছে আরাফকে দেখতে ওর মায়ের বান্ধুবী আর তার পরিবারের সাথে মেয়েও এসেছে আরাফ যেনো রেডি হয়ে নিচে আসে।এসব শুনেই আরাফের মেজাজ চড়ে গেছে।রাগে কপালের রগ ফুলে আছে। কোনোরকমে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রাতের পরা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরেই নিচে চলে এসেছে।

আরাফকে এইভাবে দেখে ওর মায়ের ভীষণ রাগ হয় কিন্তু বান্ধুবীর সামনে কিছু বলতেও পারছেন না।আর আরাফের ভাবিতো হেসে কুটিকুটি।আরাফের ভাবি জানে মায়ার কথা।তার দেবর মায়াকে কতটা ভালোবাসে। আরাফ সবকিছুই ওর ভাবির সাথে শেয়ার করে একদম বন্ধুর মতো সেই ধারাতেই আরাফের ভাবি মিরা তার দেবরের পাগলামি আর ওদের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জানে কিন্তু কেনো বিচ্ছেদ হয়েছিলো তা জানেনা।আর এয়ো জানে যে আরাফ আর বিয়ে করতে চায়না তাইতো বিগত ৬ বছর যাবৎ বিয়ের ব্যাপারে ওর মা বললে এড়িয়ে চলে আর না করে দেয় কিন্তু এইবার তো ডাইরেক্ট মেয়ের পরিবার নিয়ে বাড়িতে হাজির করিয়েছে।না জানি তার দেবর কোন জোয়ালামুখি ফাটায়!এসব ভেবেই চিন্তা হচ্ছে মিরার।

আরাফ চুপচাপ এসে সোফাতে বসে পড়ে মিরার পাশে কেনোনা ও চায়না বাইরের মানু্ষের সামনে কোনো সিন ক্রিয়েট করতে।দেবরের এতো শান্ত ব্যবহার হজম হচ্ছেনা মিরার।তাই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরাফকে কানে কানে জিজ্ঞেস করে,

“কি দেবর সাহেব?তোমার ঐ মস্তিষ্কে কোন অদ্ভুত পরিকল্পনা চলছে?”

“শুধু মেহমানদের যেতে দাও ভাবি তারপর দেখো আমি কি করি।মাকে আমি ডাইরেক্ট বলে দিয়েছি আমি বিয়ে করবোনা তারপরও এরকম টা মায়ের কেনো করতে হলো।আই নিড আন্সার!” আস্তে আস্তে দাতে দাত চেপে বলে।

“আচ্ছা আচ্ছা দেবর সাহেব ঠিক আছে এখন শান্ত হও”

আর এদিকেতো আরাফকে দেখতে আসা আরাফের মায়ের বান্ধুবীর মেয়ে ইশা আরাফের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

লম্বা ও হলুদ ফর্সা দেহের গড়ন।চুলগুলা সিল্কি কপালের এক পাশে পড়ে আছে।চোখে গোল কালো স্টিলের ফ্রেমের চশমা। চোয়ালের উপরের দিকে গজদাঁত। হাসলে!সে কি সুন্দর দেখায়!যেকোনো মেয়ে এই হাসি দেখলে পাগল হয়ে যাবে।কিন্তু আরাফ সচরাচর হাসে না আর ৬ বছর যাবৎ তো হাসেইনা।

শরীরে সাদা শর্ট হাতার টি শার্ট, কালো ট্রাউজার আর পায়ে স্লিপার্স পরে দৌড়াতে দৌড়াতে নামছিলো সাথে ওর সিল্কি চুলগুলো উড়ছিলো। ইশা তৎক্ষনাৎ ক্রাশ খেলো।তাও যেমন তেমন না বড়সড় ক্রাশ!ওর তো ওকে বিয়ে করতেই হবে।অনেক শুনেছে ওর বড় বোনের মুখে সাহানা আন্টির দুই ছেলেই দেখতে অসম্ভব সুন্দর।ওর বোন নিশা আরাফের ভাই সারাফকে পছন্দ করতো কিন্তু সারাফ প্রেম করে মিরাকে বিয়ে করে ফেলে যার জন্য নিশার মা নিশার কথা সাহানা চৌধুরীকে বলতে পারেননি কিন্তু ছোট মেয়ের জন্য উনার ছোট ছেলের কথাতো চালাতেই পারেন যেহেতু ছোট ছেলের কেউ পছন্দের নেই।কিন্তু তারা কি আর জানে আরাফ মারাত্মকভাবে পাগল মায়ার জন্য?আর নিশা এয়ো বলেছে সারাফের থেকে আরাফ বেশি ড্যাশিং আর হ্যান্ডসাম আর চশমাতে অসম্ভব কিউট লাগে।ওর বিয়ে না হলে আরাফকেই বিয়ে করতো!এসব শুনেই ইশার আরাফকে দেখতে ইচ্ছা করতো আজ দেখে যেনো পাগল ই হয়ে গেছে।বেক্কলের মতো হা করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

ইশাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে মিরা।আর আরাফকে পেটে গুতা মেরে বলছে,

“দেখুন দেখুন দ্যা হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাশিং আরাফ চৌধুরীর দিকে বেক্কলের মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে নয়না আন্টির ছোট মেয়ে ইশা!অবশ্য চাইবে নাইবা কেন?সবসময়ের মতো মেয়েদের নাম্বার ওয়ান ক্রাশ কে যে দেখলো।কিন্তু আমার দেবরজিতো কাউকে পাত্তাই দেয়না!” আস্তে আস্তে হাসতে হাসতে বলে।

“ভাবি!” আস্তে বিরক্তির সুরে।

আরাফের মা সবার উদ্দেশ্যে বলা শুরু করেন,
“আমি আর নয়না স্কুল লাইফ থেকে ফ্রেন্ডস বলতে গেলে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ডস।ছোট থেকেই আমরা বলে আসতাম তোর ছেলে হলে বা মেয়ে হলে আমার মেয়ে বা ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।আর দেখো সেটাই হয়েছে।আমার দুটো ছেলে আর ওর দুটো মেয়ে।যদিও আমার দুই ছেলেই ওর মেয়েদের থেকে বড়।কিন্তু আমার বড় ছেলে সারাফের আগে থেকে মিরাকে পছন্দ ছিলো বিধায় আমরা এগোইনি।আবার নিশার ও বিয়ে হয়ে গেছে নাহলে আরাফের সাথেই ওর বিয়ে দিতাম কিন্তু পরে একদিন ইশার কথা ভাবলাম।যেই ভাবা সেই কাজ।আর আমি আজ ইশাকে আংটি পরাতে ওদের সবাইকে ডেকেছি।আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছিনা আরাফ।যা বলার পরে বলবে।”

এসব শুনে আরাফের মাথায় রক্ত উঠে যায়।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।আর এদিকে আরাফের মা ইশাকে আংটি পরিয়ে পাকা কথা দিয়ে দেয়।আগামী শুক্রবার ই এঙ্গেজমেন্ট আর তার ২ দিন পর হলুদ আর ৩ দিন পর কাবিন করে রাখবে আর ইশার গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট হলে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিয়ে আসবে।আরাফ তখন ই উঠে হনহনিয়ে চলে যায় আর এসেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে ঘুষি মারে আর চুড়চুড় করে আয়না ভেঙে যায়।হাত দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।এমন বিকট আওয়াজে মিরা আর ওর শাশুড়ি উপরে আরাফের রুমে আসেন।

অন্যদিকে মায়ারা ডাইনীং টেবিলে বসে খাচ্ছিলো।এই এক সময় যখন সবাই একত্রিত হয়।তাই মায়ান বলা শুরু করে,

“বাবা- মা তোমাদের মনে আছে?আমার কলেজ লাইফ ফ্রেন্ড আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মিরার কথা?প্রায় প্রায় যে বাসায় আসতো আর আমাদের মায়ুর সাথে সবসময় থাকতো?”

“হ্যা ভাইয়ু মিরাপুর কি হয়েছে?আবার ও বেবি হবে নাকি?” উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলে।

এতবছর পর বোনকে এতটা উচ্ছ্বাসিত দেখে খুশি হয়। আর ভাবে হয়তো এই অনুষ্ঠান গুলায় গেলে ওর মন ভালো হবে তাই সবাইকে যাওয়ার জন্য রাজি করাবেই।

“আরে না।ওর দেবরের বিয়ে ঠিক হয়েছে।আগামী শুক্রবার ই এঙ্গেজমেন্ট তার ২ দিন পর হলুদ আর তার ৩ দিন পর ই বিয়ে।বিয়ে বলতে কাবিন করে রাখবে আরকি।তো মিরা আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে স্পেশালি মায়ুকে।আরও বলেছে মায়ু না গেলে ও নিজে এসে জোর করে তুলে নিয়ে যাবে।” হাসতে হাসতে বলে মায়ান।

“তার দরকার পড়বেনা ভাইয়ু আমি অবশ্যই যাবো।কতবছর হলো আপুকে দেখিনা।আর আপুর বেবিটাও হয়তো বড় হয়েছে।ওকেও দেখিনি কখনো দেখা হয়ে যাবে গেলে।প্লিজ প্লিজ না করোনা।আর অহনাকেও নিয়ে যাবো প্লিজ আপুকে বলো”

“আচ্ছা বলে দিবো”, খুশি হয়ে।

মেয়েকে এত খুশি দেখে মায়ার মা-বাবাও রাজি হয়ে যান যাওয়ার জন্য।

এদিকে মায়াও জানেনা ওর মিরা আপুই ওর আরফুর বেস্ট ভাবি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড যার কথা সবসময় আরাফ মায়াকে বলতো।আর না মিরা জানে ওর বেস্টু মায়ানের বোন মায়ুই ওর দেবরের মায়াপরী।কে জানতো এরকম ঝড় ওদের জীবনে আসবে?কি হবে মায়ার আর আরাফের বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসার পরিণতি?
চলবে

বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০৩

0

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০৩
#লেখনিতেঃনুসরাত

এভাবেই চলছিলো ওদের জীবন একে অপরকে ছাড়া।কেউ ই এই জীবনে সুখী ছিলোনা।আরাফের সেই ক্ষমতা ছিলোনা আবার মায়ার জীবনে ফিরে আসার।আসতে চাইলেও কি মায়া দিবে আসতে?কি নির্মমভাবে সেদিন শতশত অপমান করে মায়াকে নিজের থেকে দূরে সরিয়েছিলো।চাইলেই কি মায়া পারবে ভুলতে সেই অপমান গুলো?এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরাফ।ওর মায়াপরীকে ও হারিয়ে ফেলেছে।আর কখনো ফিরে পাবেনা।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় আরাফ।

অন্যদিকে মায়ার আজ মনটা খারাপ।জীবন টা সত্যি বদলে গেছে।মাঝেমাঝে ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগে। মায়া জানে ওর ভাই ওর মা-বাবা ওর জন্য কষ্ট পায়।কিন্তু জেনেও কোনো লাভ নেই।মায়া পারেনা ওর আগের জীবনে ফিরে আসতে।যখন ই চেষ্টা করে তখন ই দুটো দিনের কথা মনে পড়ে যায় প্রথমত আরাফের সাথে প্রথম দেখা আর দ্বিতীয়ত ওদের বিচ্ছেদের দিন।ওর চাঞ্চল্যতার জন্যইতো আরাফ ওর প্রেমে পড়েছিলো।আর এই চাঞ্চল্যতা আর পাগলামির জন্যইতো ওকে ছেড়ে দিয়েছিলো!তাই সেই চাঞ্চল্যভাব ই ওর জীবনে কাল হয়ে দাড়িয়েছে।না ও চঞ্চল থাকতো না ওর জীবনে আরাফ নামের কোনো মানুষ আসতো আর না ওকে ভেঙে দিয়ে চলে যেতো।এসব ভেবেই আর আগের জীবনে ফিরে আসতে পারেনা মায়া।আজও মায়ার মনে পড়ে সেই বিচ্ছেদের দিনের কথা।চাইলেও ভুলতে পারেনা মায়া সেই দিনটি।

“আই নিড আ ব্রেকাপ!”

এই একটি কথা মায়ার জীবনে তোলপাড় আনার জন্য যথেষ্ট ছিলো।নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলোনা মায়া।ওর আরফু হ্যা ওর আরফু ওকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে?কিন্তু কেনো কি দোষ ওর?৬ টা মাস সহ্য করে গেছে না আর পারবেনা।ওর সব প্রশ্নের জবাব চাই ই চাই!তাই মুখ ফুটিয়ে মায়া বলে,

“তোমার মাথা ঠিক আছে তো?কিসব আবোলতাবোল বলছো?”

“আমার মাথা ঠিক ই আছে।তোমার মাথা ঠিক নেই।নিজেকে ঠিক করো অনেক ছেলে পেয়ে যাবে”

“কিন্তু আমিতো শুধু তোমাকে চাই আরফু”

“ওহ প্লিজ স্টপ ইওর ননসেন্স।আমি আর তোমাকে চাইনা”

“কিন্তু কেনো?কি দোষ আমার?আমার সাথে কেনো এমন করছো?৬ টা মাস ধরে তোমার অবহেলা সহ্য করে যাচ্ছি।আর কত এমন করবে?”

“কারণ আমি তোমার সাথে আর থাকতে চাচ্ছিনা।তোমার দোষ?তোমার কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার না আমি সেদিন এই রেস্টুরেন্টে আসতাম না তোমাকে দেখতাম আর না তোমার এই সুন্দর চেহেরার প্রেমে পড়তাম।আমি এখন বুঝে গেছি সবটা মোহ ছিলো তোমার এই সুন্দর চেহেরার মায়ায় পড়েছিলাম আর কিছুনা।সময়ের সাথে সবটা কেটে গেছে।আমি তো জানতাম না এই চঞ্চলতার মাত্রা আর পাগলামির মাত্রা তার সীমা ছাড়িয়ে যাবে।আমাকে পাগল বানিয়ে দিবে।আরফু এইটা করোনা।আরফু ঐটা করোনা।এই মেয়ে তোমার দিকে কেনো তাকাবে?ঐ মেয়ে কেনো তাকাবে?মেয়েদের সাথে কথা বলবানা।বোনদের সাথে কথা বলবানা।বন্ধুদের সাথে এত আড্ডা দিবানা।আমার সাথে সবসময় কথা বলবা প্রতিদিন দেখা করবা।আমাকে এইখানে ঘুরতে নিয়ে যাও ঐখানে ঘুরতে নিয়ে যাও।জাস্ট রিডিকুলাস!মানে কি চাওটা কি?সারাদিন ২৪ ঘন্টা তোমাকেই দিয়ে দেই?আমার জীবনে আর কোনো মানুষ নেই?নাকি তোমার মতো চাও?নিজের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস ভুলে যাই?একদিন দেখা না করলে হাত কাটাকাটি ধমকি দেয়া আমি জাস্ট আর পারছিনা!তোমার পাগলামিগুলা আগে ভালো লাগতো কিন্তু পরিমিত পাগলামি এরকম মানুষ খুন করার পাগলামি না মায়া!তুমি আমায় কখনো ভালোই বাসোনি বাসলে এত পাগলামি করতে না তুমি জাস্ট একটা পাগল সাইকো আর কিছুনা।নিজের ট্রিটমেন্ট করাও মিস মায়া রহমান! ৬ টা মাস ধরে চেষ্টা করে আসছি তুমি যেনো আমার লাইফ থেকে নিজ ইচ্ছায় চলে যাও কিন্তু না তুমিতো যাচ্ছোইনা এত অবহেলার পরও বেহায়ার মতো পড়ে আছো।তাই আমার ই আজ এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।আমি আর পারবোনা আমি তোমাকে আর আমার লাইফে চাইনা!” একদমে সব বলে নিশ্বাস নিয়ে থামলো আরাফ।

আরাফের এসব কথাবার্তা শুনে মায়া ঐখানেই ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে।চোখের সামনে ঘোলাটে দেখছে।টপটপ করে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝোর বৃষ্টি! এই বৃষ্টি আকাশের নয় এই বৃষ্টি চোখের!চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে থামছেনা।বহু কষ্টে মায়া আরাফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

” পি পি প্লিজ আরাফ এভাবে বলোনা।দেখো এটা কি মজা করার বি বিষয়?আমিতো তোমায় ভালোবাসি তাইনা?তুমিওতো বা বাসো আর আমাকে বিয়েওতো করবে বলেছো।বিয়ে করে তুমি আমাকে পড়াবে।তাহলে?” হেচকি উঠে গেছে কাদতে কাদতে।

“আমি মোটেও মজা করছিনা।আ’ম সিরিয়াস।আর ভালোবাসতাম কিনা জানিনা।কিন্তু এখন আমি শিওর আমি তোমাকে ভালোবাসিনা আর কখনো একটা সাইকোকে আমি ভালোবাসতে পারিনা পারবো ও না”

“আমি জানি তুমি আমাকে রাগাতে চাও তাইনা?এভাবে বলোনা প্লিজ।আমার কষ্ট হচ্ছে”

“তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।তুমি যথেষ্ট সুন্দরী আমি গেলে হাজারটে ছেলে পেয়ে যাবে”

“আমার লাগবেনা হাজারটে ছেলে।শুধু তোমাকে চাই”

“এই জনমে আমাকে আর পাবেনা।নাকি আমার বাবার টাকার জন্য আমাকে ছাড়তে চাচ্ছোনা?”

“আরাফ!” হতবাক হয়ে চিল্লিয়ে।

“ও আসল কথা বলায় এখন চিল্লানি বের হচ্ছে?তা আমার চেয়েও অনেক বড়লোক ছেলে পেয়ে যাবে সমস্যা নেই।আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।আমি মায়া নামের কোনো কালো ছায়াকে আমার জীবনে আর চাইনা।এখন আমি আসি বাই ফরএভার!” বলেই চলে যেতে নেয় আর মায়া ওর পা দুটো ধরে ফেলে ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

“প্লিজ আরফু আমাকে ছেড়ে যেয়োনা।আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবোনা।আমাকে একটা সুযোগ দাও আমি নিজেকে সুধরে নিবো।আর কখনো অমন করবোনা যেটা তুমি চাওনা।”

“সরি আই কান্ট!আমার পা ছাড়ো” আস্তে সুরে বলে।

“না আরফু প্লিজ!হাউ মাচ আই লাভ ইউ,ইউ নো না?” কান্নাজড়িত কন্ঠে।

“ইয়েস ইয়েস আই নো দিস ইজ জাস্ট আ সাইকোনেস হোয়াট ইউ হ্যাভ কল্ড লাভ নাও!লিভ মাই লেগস মায়া!”

“আমি তোমার পা দুটো ধরছি প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিয়োনা”

“তুমি কি বেহায়া বেশরমের থেকে এখন সেল্ফরেস্পেক্টলেস ও হয়ে গেছো?ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধ নেই তোমার মাঝে?আমাকে ছাড়ো নয়তো আমি!”

আরাফকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“নয়তো কি?”

“নয়তো আমি সুইসাইড করবো তারপর দেখি কিভাবে তুমি আমাকে পাও”

এই কথা শুনে মায়া ওর পা ছেড়ে দেয়।আর আরাফ হনহনিয়ে চলে যায়।যাওয়ার আগে বলে যায়,

“আই হেইট ইউ মায়া।আই জাস্ট হেইট ইউ!এখন থেকে আমি তোমাকে চিনিনা আর না তুমি আমাকে বাই ফরএভার!”

আর পিছনে ফিরে তাকায়নি আরাফ।মায়া ওর যাওয়ার পানেই তাকিয়ে ছিলো।রেস্টুরেন্টের প্রতিটা কাপল ওদের দেখছিলো।মায়াকে এই অবস্থায় দেখে উনারাই উঠিয়ে নিয়ে ওর হুশে আনায় তারপর মায়া সেখান থেকে আস্তে আস্তে হাটতে থাকে রাস্তায়।কিছুক্ষণ হাটার পর বৃষ্টি নামতে শুরু করে।ধীরে ধীরে পথঘাট জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে।দু একটা রিক্সা পথে ঘাটে দেখা মিলছিলো।মায়া হাটু গেরে বসে পড়ে রাস্তায় দুহাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেদে উঠে।ভিজে যাচ্ছে মায়া সাথে ভিজছে ওর চোখ।আকাশের জল আর চোখের জল এক হয়ে যাচ্ছে।মায়ার আর্তনাদে যেনো ধরনীও চিৎকার দিয়ে বলছে “আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা!তুমি ভেঙে গেছো!তুমি টুকরো টুকরো হয়ে গেছো!তুমি জোড়া লাগলেও তোমার গায়ে দাগগুলো আজীবন লেগে থাকবে চাইলেও পারবেনা ভুলতে!”

তারপর মায়া অজ্ঞান হয়ে যায়।বৃষ্টি কমলে কিছু লোক ওকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়।হাসপাতালে গিয়ে জ্ঞান ফিরলে ওর পরিবারের সবাইকে আসতে বলা হয়।ওকে বাসায় নিয়ে যান তারা।কিন্তু ওর তীব্র জ্বর আসে।সেই জ্বর স্থায়ী ছিলো পুরো একটি মাস! জ্বর থেকে উঠে মায়া ওর ফোন হাতে নিয়ে দেখে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিয়েছে।সিমটাও পালটে ফেলেছে।এমনকি শহর ও ছেড়ে দিয়েছে।ওর বন্ধুরাও ব্লক করে দিয়েছে মায়াকে।এরপর মায়া আরো ভেঙে পড়ে।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো।চুপটি করে থাকতো একটা টু শব্দও করতোনা।সারাক্ষণ ফ্লোরের দিকে নয়তো আকাশের দিকে চেয়ে থাকতো।ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।ভিটামিনের অভাবে চুল গুলো পড়তে থাকে।চোখের নিচে কালি পড়ে যায়।বেশিরভাগ ই ওর চোখ দুটো ভিজা আর লাল ও ফুলে থাকতো।নাক লাল হয়ে থাকতো।মাঝেমাঝে এত ফুলে যেতো লাল হতো যে মনে হয় এখনি চোখ বেরিয়ে পড়বে।

মায়া শুয়ে ছিলো বিছানায় চোখ বন্ধ করে আর এসব ভেবে চোখের কার্নিশ বেয়ে পড়া পানি মুছছিলো।তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।ঐখানে একটা দোলনা ছিলো।ওর ভাই মায়ান ওর জন্য বানিয়েছে।মায়া দোলনায় দুলতে দুলতেই ঘুমিয়ে পড়ে।

To be continued…