“জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে যদি খালি পায়ে হেঁটে যেতে পারো তবে তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিব।”
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে নিজের স্বামী হামিমের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠে আদিয়া।উপস্থিত সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে হামিমের দিকে।
“হামিম এসব কী বলছিস তুই?”
“আপু এটা আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার,তুই এতে নাক না গলালেই ভালো হয়।”
হামিমের বোন নিলা কিছু বলতে গেলে হামিম হাত উঠিয়ে বাঁধা দেয় আর আদিয়ার উদ্দেশ্য বলে উঠে।
“তোমাকে কী এখন কথাটা আবার রিপিট করতে হবে,নাকি কাজটা করবে?”
আদিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,আপাতত আদিয়ার কিছু বলার নেই।এখন হামিম তাকে যা করতে বলবে তাকে সেটাই করতে হবে।আদিয়ার হাত পা বাঁধা কিছু করার নেই তার,তাই সে আর বেশি কিছু না ভেবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।হামিমের ঠোঁটের কোনে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে উঠে।
“হামিম তুই এসব পাগলামি বাদ দিবি নাকি আমি চলে যাব এখান থেকে!”
হামিম তার বোনের কথার কোন উওর না দিয়ে তার গার্ডকে বলে উঠে,,,
“আপুকে তার শ্বশুর বাড়িতে সাবধানে পৌঁছে দিয়ে আসো।”
“আমি গেলে আমার সাথে আদিয়াও যাবে।”
“আমার বউ আমার সাথেই থাকবে,আর আমার যা খুশি তাই করব।কারন আমার সে অধিকার আছে আদিয়ার উপর,ত তুই বেশি কথা না বলে আয় এবার।”
“বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তকে নিজের সন্তানের মত কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি,আর তুই!তকে ত আমি এমন শিক্ষা দেই নি যে একটা মেয়ের উপর এতটা নিষ্ঠুর হবি।”
হামিম এবার খুব রেগে যায় আর তার গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলল।
“তোমাকে বলেছি না আপুকে পৌঁছে দিয়ে আসতে,তবে এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
গার্ড হামিমের চিৎকারে খুব ভয় পেয়ে যায় আর নীলার কাছে গিয়ে একপ্রকার জোর করেই নীলাকে নিয়ে চলে যায়।ততক্ষণে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে ফ্লোর সাজানো হয়ে গেছে।আদিয়া এক কোনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে,বেচারি খুব ভয় পেয়ে আছে।নিজের হাত কাটলেও যে মেয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলত আজ সেই মেয়ে নাকি জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হবে।কথাটা ভেবেই আদিয়ার বুকটা ভার হয়ে আসে,চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
“কই তাড়াতাড়ি এসো,এমন ডং করলে কয়লা ত ছাইয়ে পরিনত হবে।”
হামিমের কথায় আদিয়া কেঁপে উঠে,তারপরও কাঁপা কাঁপা পায়ে জ্বলন্ত কয়লার দিকে এগিয়ে যায়।একটা সময় আদিয়া কয়লাগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়।একপলক হামিমের দিকে তাকায় এটা ভেবে যে হামিম তাকে আটকাবে।কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমান করে হামিম চোখের ইশারায় আদিয়াকে বলে এগিয়ে যেতে।আদিয়ার চোখ দিয়ে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।আদিয়া চোখের পানিটা মুছে নেয়,আর কিছু না ভেবে নিজেই মনে মনে বলে উঠে।
“আদিয়া এটা তুই করতে পারবি,এটা করলে হয়ত তুই সাময়িক কষ্ট পাবি।আর না করলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
কথাগুলো নিজ মনে আওড়ে আদিয়া দুই হাত দিয়ে শাড়িটা ধরে উঁচু করে।এক পা তুলে কয়লার উপর পা ফেলার জন্য কিন্তু আদিয়ার সাহস হচ্ছে না তাই আবারও পা নামিয়ে ফেলে।আদিয়া আবারও হামিমের দিকে তাকায়,তখন হামিম বাঁকা হেসে আদিয়াকে কিছু একটা দেখায়।যেটা দেখে আদিয়ার গলা শুকিয়ে যায় আর কিছু না ভেবে কয়লাগুলোর উপর এক পা ফেলে আর সাথে সাথে জ্ঞান হারায়।অতিরিক্ত ভয় আর মানসিক চাপ থেকে এমনটা হয়েছে।আদিয়া ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ার আগেই হামিম এসে আদিয়াকে ধরে ফেলে আর কোলে তুলে নেয়।
_____________________________________
ড্রয়িংরুমে বসে একের পর এক শাড়ি দেখেই চলেছে হামিম।কিন্তু কোনটাই তার মনমত হচ্ছে না,অনেকগুলো দোকানদার তাঁদের দোকানের বেস্ট শাড়ি নিয়ে এসেছে কিন্তু হামিমের সেসব কিছুই পছন্দ হচ্ছে না।এভাবে অনেকক্ষণ দেখার পরও যখন হামিম শাড়ি পছন্দ করতে পারল না তখন হামিম হার মেনে নিলো।এসব তার দ্বারা সম্ভব নয়,আর সম্ভব হবেই বা কী করে!মেয়েদের জামা কাপড় নিয়ে তার কোন আইডিয়া থাকলে ত।কখনও কোন মেয়ের জন্য শাড়ি কিনেছে নাকি সে!
হামিম এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর কিচেন থেকে মলিকে(কাজের মেয়ে) নিয়ে আসে।
“দেখ ত এখানে কোন শাড়িটা ভালো,কোনটা আদিয়ার জন্য বেস্ট হবে।”
মলি হামিমের কথাশুনে যেন রাতের আকাশে সূর্য দেখতে পেলো এতটাই অবাক হয়েছে মলি।বিয়ের প্রথম দিন যিনি তার বউকে জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটায় সে নাকি তার বউয়ের জন্য শাড়ি কিনছে।মলি অবাক চোখে ড্যাবড্যাব করে হামিমের দিকে তাকিয়ে আছে।হামিম এবার খুব বিরক্ত হয়।
“আমার দিকে তাকাতে বলি নি শাড়ির দেখতে বলেছি তকে।”
হামিমের কথাশুনে মলি নিজেকে সামলে আমতা আমতা করে বলে উঠে।
“ছোট সাহেব আমি ত শাড়ি পড়ি না থ্রি পিছ পড়ি, কোনদিন শাড়ি কিনিও নাই।আমার সব কাপড়চোপড় ত নিলা মেডামই আইন্না দেয়।আমি কেমনে বউমনির লাইগ্গা শাড়ি পছন্দ করমু!”
হামিম মলিকে রেগে কিছু বলতে যায় কিন্তু কিছু একটা ভেবে চুপ করে তার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।হামিম তার রুমে এসে দেখে আদিয়া খাটে বসে তার পা দেখছে।হামিম পকেটে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আদিয়ার দিকে।আর আদিয়া ঘরে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে দরজার দিকে তাকায়।আর দেখে হামিম থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর কালো গেন্জি পড়ে পকেটে হাত দিয়ে তার দিকেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আদিয়া সেটা দেখে খাট থেকে নেমে হামিমের সামনো দাঁড়ায়।
“আমার পায়ে কোন পোড়া দাগ নেই কেন?”
আদিয়ার কথাশুনে হামিম হেয়ালি করে বলে,,,
“সেটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে নিজের পা কে জিজ্ঞেস করো।”
“দেখুন আমি মজা করার মত মুডে একদমই নেই।”
“আমার ত খেয়েদেয়ে কাজ নেই তোমার সাথে মজা করব,এখন চলো আমার সাথে।”
“আমি কোথাও যাব না আপনার সাথে,আগে বলুন পায়ে কোন পোড়া দাগ নেই কেন?আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি জ্বলন্ত কয়লার উপরে এক পা ফেলে ছিলাম তারপর কী হয়েছে জানা নেই।ত সেই হিসাবে ত আমার এক পায়ে পোড়া দাগ থাকবে তাই না!”
“আমার সাথে কেউ এভাবে কথা বলুক সেটা আমি একদমই পছন্দ করি না।প্রথম বার তাই কিছু বললাম না কিন্তু নেক্সট টাইম এমন হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।এখন চুপচাপ আমার সাথে চলো।”
হামিম কথাগুলো বেশ গম্ভীর হয়েই বলে,তাতে আদিয়া অনেকটা ভয় পায়।তাই আর কোন কথা না বলে হামিমের পিছন পিছন যায়।
“এখান থেকে যে শাড়ি গুলো পছন্দ হবে রেখে দাও।”
“কিন্তু আমি ত শাড়ি পড়ি না।”
“তোমার থেকে জানতে চাই নি আমি কী পড়ো আর কী পড়ো না!আমি তোমাকে যেটা করতে বলব সেটাই করবে তুমি।তাই আজ থেকে তুমি শাড়িই পড়বে,শাড়ি ব্যাতীত কোন কিছু যাতে পড়তে না দেখি।ত চুপচাপ শাড়ি সিলেক্ট করো বেশি কথা বলবে না।”
কথাগুলো বলে হামিম তার ফোনটা নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।আর আদিয়া মন খারাপ করে শাড়ি দেখছে।আদিয়া না ত শাড়ি পড়তে পারে আর না পারে সামলাতে।বিয়েতে শাড়িটা পড়তে যে কত কষ্ট করতে হয়েছে সেটা আদিয়া ছাড়া আর কেউ জানে না।কিন্তু হামিম যখন বলেছে তখন তার যত কষ্টই হোক সেটা আদিয়াকে করতেই হবে,নয়ত হীতে বিপরীত হবে।তাই আদিয়া চুপচাপ শাড়ি দেখছে।
_______________________________________
রাত ১২ টা বেজে ২০ মিনিট হামিম তার ঘরে আসে,আর এসে দেখে আদিয়া ঘরে নেই।হামিমের খুব রাগ হয়,হামিম রেগে ঘরে থেকে বের হয়ে যায় আর সারা বাড়ি আদিয়াকে খুঁজে।প্রায় পনেরো মিনিটের মত খোঁজার পরও যখন আদিয়াকে পায় না তখন হামিম তার ঘরে আসে।আর ফোনটা হাতে নেয় কাউকে কল দেয়ার জন্য কিন্তু তখন সে কিছু একটার আওয়াজ শুনতে পায়।হামিম আওয়াজটা কোন দিক থেকে আসছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে আর সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আওয়াজটা তারই ঘরে হয়েছে তাই হামিম চারপাশটা ভালো করে দেখে ওয়াশরুমে যায়।আর গিয়ে যা দেখে তা দেখার পর হামিম খুব জোড়ো একটা চিৎকার দেয়।
Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
শেষ পর্ব
ইশানের দুলাভাই বেশিদূর পালাতে পারে নি।
তাকে পুলিশ ধরে ফেললো।
কিন্তু তাকে দুই একটা চড় দিতেই আসল সত্য বের হয়ে আসলো।
ইরার স্বামী বললো,আমি এ সবের কিছুই জানি না।
ইরা আমাকে একটা কাগজ দিয়ে বললো ঔষধের দোকান থেকে এটা কিনে আনো।
আমি কাগজটা খুলেও দেখি নি।
কিন্তু দোকানদার বললো নাই এটা।
আমি চলে আসতে ধরলাম।
হঠাৎ দোকানদার বললো এটা হবে না তবে অন্য প্রডাক্ট হবে।।।
আমি বললাম হলেই হলো।
সেটা নিয়ে আমি ইরা কে দেই।
আমি আর কিছু জানি না।
বা ইরা কে জিজ্ঞেস ও করি নি সে এই টা দিয়ে কি করবে?
এবার একটা মহিলা পুলিশ ইরার কানে দুই টা চড় দিলো।
ইরা চুপ হয়ে থাকলো।
আবার গালে দুই টা চড় মারলো।
ইরা কাঁদতে কাঁদতে বললো আমার বাবার বাড়ি আর আমাকেই দিনে রাতে ছোট হয়ে থাকতে হয়।
আর কোথা থেকে উড়ে এসে অচেনা অজানা মেয়ে পুরো সংসারের মালিক হয়ে বসে আছে।
আমি তো মার কোন ক্ষতি করতে চাই নি।
আমি শুধু দিশাকে কষ্ট দিতে চাইছিলাম।
আর আমার এক বোকা স্বামী ওকে আনতে বলেছিলাম হাত চুলকানোর ঔষধ।
যা ধরার সাথে সাথে চুলকানি শুরু হবে।।।
ও কিছু না বুঝে সায়ানাইড ক্যামিকেল এনেছে।
কিন্তু কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে?
ক্ষতি করতে চাইলাম দিশার ক্ষতি হলো আমার মায়ের।
এই বলে ইরা জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
ইশান নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
সে এসব কি শুনছে?
ইরা এসব কি বলছে?
সবাই অবাক হলো ইরার কথা শুনে।
দিশাকে একটু শাস্তি দেওয়ার জন্য আজ তার নিজের মা সারাজীবন এর জন্য অচল হয়ে পড়ে থাকলো।
পুলিশ ইরা আর তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেলো।
পুরো বাড়ি টা কিছুক্ষণের মধ্যে একদম ফাঁকা হয়ে গেলো।
এখন বাড়িতে শুধু ইশান আর তার বাবা থাকলো।
ইশান ঠিক করলো তার বাবার অফিসে জয়েন করবে।।।
এভাবে একা একা আর কতই বসে থাকে সে?
ইশান চাকরিতে জয়েন করলো।
এদিকে দিশাও বসে থাকলো না।
সে তার বান্ধুবী সীমার অফিসে জয়েন করলো।
এইভাবেই চলছিলো,,,,,,,
ইশান আর দিশাকে ফিরিয়ে আনতে যায় না।
আর দিশাও নিজের থেকে যায় না।
কিন্তু ইশানের বাবা সেটা কিছুতেই মানতে পারলেন না।
এভাবে ছেলেমেয়ে দুই টা চোখের সামনে কষ্ট পাচ্ছে তা কি করে সহ্য করা যায়?
একদিন ইশানের বাবা নিজেই গেলো দিশাকে আনতে।
দিশা কোন উত্তর দিলো না।
সে হ্যাঁ বা না কিছুই বললো না।
ইশানের বাবা বললো দিশা মা ভুল সবাই করেছে।
আমিও ভুল করেছি,ইশানও করেছে।
আমাদের ফ্যামিলির সবাই তোমার সাথে অন্যায় করেছে।
সেজন্য সবার হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
কিন্তু ইশান যে তোমাকে ভালোবাসে
তোমাকে ছাড়া তার জীবন যে অপূর্ণ সেটা কি বিশ্বাস করো?
যদি ইশানের ভালোবাসা নিয়ে তোমার সন্দেহ হয়ে থাকে, যদি ওর সাথে আর থাকার ইচ্ছা না থাকে তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
এভাবে বিবাহিত দুইজন ছেলেমেয়ে আলাদা থাকা জায়েজ না।
এটা সমাজের চোখেও খারাপ দেখায়।
এখন সিদ্ধান্ত তোমার হাতে।
যদি ইশানের বউ হয়ে সারাজীবন কাটাতে চাও তাহলে ফিরে এসো।
আর ইশান কে কষ্ট দিও না।।।
ছেলেটার মুখের দিকে আমি তাকাতে পাচ্ছি না।
এই বলে ইশানের বাবা কেঁদে ফেললো।
দিশা চুপ করেই থাকলো।
তার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।
সে তো নিজেই ইশানের জন্য পাগল।
সে তো নিজেই তাকে ছাড়া ভাবতে পারে না কিছু।
কিন্তু আজ এমন এক অবস্থায় এসে দুইজন দাঁড়িয়েছে, যে দুইজন দুইজনকে ছাড়া দিব্যি চলাফেরা করছে।
হয় তো কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু কেউ প্রকাশ করছে না।
ইশানের বাবা চলে গেলো।
দিশা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।
এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।
তাদের এতো বছরের সম্পর্ক?
এতো ভালোবাসার বন্ধন?
এতো এতো বিশ্বাস,এতো এতো স্মৃতি সব আজ চাপা পড়ে আছে কিছু মান অভিমানের কাছে।
পরের দিন দিশা অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
হঠাৎ ইশান আসলো।
সে কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে পড়লো।
দিশা তো ইশান কে দেখে অবাক!
ইশান এসেছে!
কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।
মনে হচ্ছে কত অচেনা দুইজন!
সীমা বললো দিশা কখন যাবি?
হলো তোর?
কিন্তু বাহিরে এসে দেখে ইশান।
তুই?
–মানে?
–কিসের মানে?
–দিশা নাকি আজ বাড়ি যেতে চেয়েছে?
সেইজন্য নিতে এলাম।
সীমা তো অবাক!
আমি তো জানি না।
–বাবা তো বললো দিশা কে নিয়ে আয়।
আজ ও আসবে।
–কি বলিস?
কখন বলেছে?
দিশা তো নিজেই অবাক।
সে একবারের জন্যও যেতে চায় নি।
ইশানঃকি হলো?
চুপচাপ আছো যে?
যাবে না?
দিশা মাথা নাড়লো।
দিশা অনেক চিন্তা করে দেখলো যদি আজকেও সে না যায় তাহলে তার শশুড় অনেক মন খারাপ করবে।
তার শশুড় তার উপর কত টা বিশ্বাস করে ইশান কে পাঠিয়েছে।
যে দিশা আজ বাড়ি আসবে।
দিশা ইশান কে বললো তুমি চলে যাও এখন।
কারন আমি অফিস যাবো।
অফিস ছুটি হলে নিজেই চলে যাবো।
ইশানঃআমিও তো অফিসে যাবো।
ঠিক আছে।
এই বলে ইশান চলে গেলো।
সীমা বললো তুই কখন যেতে চেয়েছিস যে আমি একবারও শুনলাম না।
দিশাঃযেতে চাই নি।
সীমাঃইশান না বললো তুই তোর শশুড় কে বলেছিস আজকেই যাবি।
দিশাঃবাবা,মিথ্যা বলেছে ইশান কে।
যাতে ইশান আবার আমাকে নিতে আসে।
সীমাঃতুই যেতে রাজি হলি যে?
দিশাঃইশান অনেক কষ্টে আছে।
ও আমার দিকে একবার ও তাকায় নি?
কারন আমার দিকে তাকালেই আমি ওর ছলছল করা চোখ দুইটা দেখে ফেলবো।
সীমাঃআমি কিন্তু তোকে অনেকবার বলেছি যে ইশান কে আর কষ্ট দিস না।
ও ভুল করেছে।
সেটা তোকে বার বার বলেছে।
তবুও শুনিস নি?
দিশা কিছুতেই কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না।
এদিকে অফিসটাও ছুটি হচ্ছে না।
অন্যদিকে ইশান তার বাবা কে বলতেও পারছে না যে তাকে আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে।
কিন্তু তার বাবা নিজেই ইশান কে বললো আজ বাড়ি যা।
কাল ঠিক সময়ে অফিস আসিস।
ইশান তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো সে বাড়ি এখনো আসে নি।
অফিসেই আছে।।।
ইশানের বাবা বললো তাতে কি হয়েছে?
যাবে তো?
ইশান আর কোন কথা না বলে বাড়ি চলে গেলো।
সে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখে রুম টা আজ গোছানো।
কে গুছিয়ে রাখলো?
সে দৌঁড়ে তার মায়ের রুমে গেলো।
যা ভেবেছে সেটাই।
দিশা তার আগেই এসেছে।
দিশা তার শাশুড়ীর রুমে ঢুকে নার্স এর সাথে কথা বলছে।
ইশান রুমে ঢুকলো।
কি হয়েছে মার?
ইশান আর কোন কথা না বলে রুমে চলে গেলো।
দিশাও কিছুক্ষণ গল্প করে রুমে চলে গেলো।
কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।
মনে হচ্ছে কেউ কাউকে চেনে না।
ইশান বুঝতে পারছে না কি ভাবে কথা বলা শুরু করবে?
দিশাও বুঝতে পারছে না কি বলবে?
দিশা ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে গেলো।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।
ইশান গিয়ে খুলে দিলো।
ইশান গিয়ে দেখে তাদের ফ্রেন্ড রা এসেছে।
তোরা?
–বিরক্ত করলাম?
–না,না।
–মনে মনে তো বিরক্তই হয়েছিস?
–মনের খবর যখন এতই পড়তে পারস তাহলে এসেছিস কেনো?
–না এসে থাকতে পারলাম না।
ভাবলাম বন্ধুর থেকে আজ একটা ট্রীট না নিলেই নয়।
চল না আজ বাহিরে গিয়ে ঘুরে আসি?
–না,আজ যাবো না।
–দিশাও খুশি হবে।
চল সবাই মিলে যাই।
ইশান অনেকগুলো টাকা বের করে তার ফ্রেন্ড দের দিলো।
আর বললো তোরা নিজেরাই আনন্দ কর গিয়ে।
যা এখন।
–দোস্ত পরে যাই।
দিশার সাথে একটু দেখা করি?
–দিশা ফ্রেশ হচ্ছে।
ও এখন কথা বলবে না।।।
তোরা যা তো?
এই বলে ইশান দরজা বন্ধ করে দিলো।
কিছুক্ষণ পর আবার কলিংবেল বাজলো।
ইশান খুলে দিলো।
ইশানঃআবার কি?
–দোস্ত, দুই টা নোট শর্ট পড়েছে।
আর দুই টা নোট দে।
তাহলে মনের মতো একটা পার্টি দিতে পারবো।
ইশান রাগ না করে দিয়ে দিলো।
ইশান রুমে চলে গেলো।
দিশা গোসল করে বের হয়েছে।
দিশা চুল ঝাড়তেছে।
ইশান দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে লাগলো।
দিশার কেমন জানি লজ্জা লাগতে লাগলো।
আর বলতে ইচ্ছে করলো জীবনেও কি চুল ঝাড়া দেখো নি?
ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
কিন্তু দিশার সংকোচ হতে লাগলো।।
সে কিছুই বললো না।
ইশান আর চুপ করে না থেকে বললো তোমার না অফিস পাঁচটায় ছুটি হয়?
আজ এতো তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে?
দিশা ইশানের দিকে তাকালো আর বললো তোমার অফিস কি প্রতিদিন এই দুপুরেই ছুটি হয়?
ইশানঃআমি আজ একটু তাড়াতাড়ি আসলাম।
দিশাঃআমিও তাড়াতাড়ি আসলাম।
ইশানঃকেনো?
দিশাঃতুমি কেনো তাড়াতাড়ি এসেছো?
ইশান কোন উত্তর দিলো না।
হঠাৎ আবার কলিং বেল বেজে উঠলো।
ইশানঃকে আবার এলো?
দিশাঃআমি খুলে দিচ্ছি।
ইশানঃথাক,লাগবেনা।
আমি দিচ্ছি।
ইশান গিয়ে দেখে তার বাবা এসেছে।
বাবা তুমি এতো তাড়াতাড়ি?
–দিশা এসেছে?
–হ্যাঁ।
–কই?
এই বলে ইশানের বাবা দিশার কাছে গেলো।
খুব ভালো লাগছে তোমাকে দেখে।।।
বাড়ি টা মনে হচ্ছে ভরে গেছে।
দিশাঃবাবা কিছু খাবার করে দেবো?
বাবাঃএসেই রান্না করবে?
আজ বাহিরের খাবার খাবো।
ইশান বাহির থেকে কিছু কিনে আন তো?
ইশানঃআমি আবার কখন যাবো?
অন্য কাউকে বলো।
বাবাঃবাহিরের লোকের হাতে খাবার আনতে দেবো না আমি।
তুই যাবি আনতে।
তাড়াতাড়ি আন।
দিশাঃতার আর কি দরকার?
তারচেয়ে আমরা সবাই মিলে খেয়ে আসি?
বাবাঃবুদ্ধি টা কিন্তু খারাপ না।
যাও তোমরা দুইজন রেডি হয়ে নাও।
দিশাঃআপনি যাবেন না?
বাবাঃনা,আমি আবার কেনো যাবো?
তোমরাই যাও।
দিশাঃতাহলে আমিও যাবো না।
বাবাঃতোমার শাশুড়ী কে রেখে একা যাওয়া ঠিক হবে না।
তুমি আর ইশান গেলেই হবে।
দিশা রেডি হলো।
কিন্তু ইশান হঠাৎ করে দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।
দিশা কোন কথা বললো না।
ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো।
দিশাঃকি হলো?
ইশানঃতুমি আমায় ছাড়া এতোদিন কি করে ছিলে?
দিশা কোন উত্তর দিলো না।
ইশানঃআমি এটা ভাবতেও পারি নি এতোদিন এভাবে আলাদা থাকবো?
আর যদি কখনো এভাবে ছেড়ে চলে যাচ্ছো তাহলে আমি নিজেকেই শেষ করে দেবো।
দিশাঃকি বলছো এসব?
আর যাবো না কোথাও।
শুধু কি তোমার কষ্ট হয়েছে?
আমার হয় নি?
আমিও যে কি করে দিন গুলো কাটায়ছি তা শুধুমাত্র ওপরওয়ালাই জানে।
ইশানঃআজ থেকে আমাদের সংসার নতুনভাবে শুরু করবো।
যেখানে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না।
কোনো রাগ অভিমান ও থাকবে না।
আর কোনো ঝগড়াও না।
Only ভালোবাসা থাকবে।
দিশাঃঝগড়া তো থাকবেই।
ঝগড়া না করলে ভালোবাসা হবে কি করে?
ইশানঃতাই?
তাহলে চলো আরেকটু ঝগড়া করি।
তারপর না হয় ভালোবাসবো।
দিশাঃনা,এখন ঝগড়া করার কোন মুড নাই।
বাহিরে থেকে এসে তারপর।
Love Marriage
পর্ব ১৩
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
ইশান পরের দিন আবার গেলো দিশার কাছে।
কিন্তু দিশা জানালো তার সময় হলে সে এমনি যাবে।
আপনাকে বার বার আসতে হবে না।
এই বলে সে রুমে চলে গেলো।
ইশান দিশার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো।।
তবুও দিশা ইশান কে একটিবারের জন্য ভিতরে আসতে বললো না।
ইশান কিছুক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলো।
হঠাৎ সীমা এলো বাসায়।
তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
ভেতরে যা?
ইশান রুমের ভিতর গেলো।
সীমাঃআমি একটু বাহিরে গেছিলাম।
ইশানঃআজকে না দিশার যাওয়ার কথা ছিলো?
যাবে না?
সীমাঃতুই চিন্তা করিস না।
আমরা ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো।
ইশানঃআমরা মানে?
দিশা আর কাকে নিয়ে যাবে?
সীমাঃতুই নাকি অপরাধী খোঁজার জন্য দিশাকে নিতে এসেছিস?
তাই দিশা আমাদের সবাই কে একটা প্লান বলেছে।
ইশানঃতারমানে দিশা শুধুমাত্র অপরাধী খুঁজতেই যাবে?
ও আর আমার সাথে থাকবে না?
সীমাঃতা আমি কি করে জানবো?
দিশার থেকে শুনিস।
ইশানঃসে তো আমার সাথে ঠিক করে কথাই বলে না।
কি জিজ্ঞেস করবো?
সীমাঃআচ্ছা ওসব পরে দেখা যাবে।
আগে ক্রিমিনাল টাকে খুঁজে বের করি।
এখন তুই বাসায় যা।
আমরা দিশা কে নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে রওনা দিবো।
আর তুই আমাদের কে না চেনার ভান করবি।
শুধু বলবি কে আপনারা?
তখন আমরা আমাদের পরিচয় দেবো।
ইশান আস্তে করে মাথা নাড়লো।
আর বার বার রুমের দিকে তাকাতে লাগলো।
কিন্তু দিশা আর একবারের জন্যও বাহিরে এলো না।
সীমা বুঝতে পারলো ইশান দিশার সাথে কথা বলার জন্য উঁকি মারছে।
তবুও সে ইশান কে বললো দেরী করছিস কেনো?
বাসায় যা।
ইশান চলে গেলো।
ইশানের মুখচোখ দেখে সীমার খুব খারাপ লাগলো।।।
বেচারা বউ এর টেনশনে কখন যে পাগল হয়ে যায়?
সীমা দিশা কে বললো যা করবি ভেবেচিন্তে করবি।
আর আমার মনে হয় ইশান ওর শাস্তি পেয়ে গেছে।
ওর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
তাছাড়া ওর তখন মন মানসিকতা ঠিক ছিলো না।
তাই না বুঝেই তোর সাথে অন্যায় করেছে।
আর তুই কিন্তু বুঝেশুনে অন্যায় করছিস?
দিশাঃপ্লিজ সীমা।।
এ ব্যাপারে আর আমি কথা বলতে চাই না।
আমি ইশান কে চিনি না।
ওর সাহায্যের দরকার সাহায্য করতে যাচ্ছি।
Just এটাই।
সীমাঃযা ভালো মনে করো তোমরা।
তোদের দেখে সবাই এতোদিন শিক্ষা নিবে ভাবতাম।
এখন তো দেখছি সব love marriage এ same কাহিনী।
আগে ইচ্ছেমতো ভালোবাসে।
দুইজন দুইজনকে না দেখতে পেরে পাগল হয়ে যায়।
অবশেষে বিয়ে করে।
ভাবে বিয়ে করে অনেক সুখী হবে।
কিন্তু সেই Others Couple দের মতো তারাও আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।।।
দিশা কোন উত্তর না দিয়ে রুমে চলে গেলো।
ইশান বাসাতেই থাকলো।।।
আর বার বার বাহিরের জানালা দিয়ে তাকাতে লাগলো।
হঠাৎ দেখতে পেলো একটা গাড়ি তাদের বাসার দিকেই আসছে।
ইশান বুঝতে পারলো না গাড়ি নিয়ে আবার কে এলো?
সে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দিলো।
গাড়ি থেকে নেমে এলো তার কয়েকজন ফ্রেন্ড সীমা আর দিশা।
কিন্তু আরো কয়েকজন অচেনা ছেলে।
তারা বাড়ির ভিতর ঢুকলো।
ইশান হা করে তাকিয়ে থাকলো।
তাকে সীমা যে কি শিখিয়ে দিয়েছে তা আর মনে নেই।
এক এক করে ইশানের বাবা,বোন,তানিয়া আর ইশানের দুলাভাই,বাড়ির দারোয়ান সবাই কে দাঁড় করানো হলো।
অচেনা এক ছেলে বললো আমার নাম তারেক।
আমি অপরাধ তদন্ত বিভাগ থেকে এসেছি।
আপনাদের বাসার গার্ডিয়ান এর উপর খুব অন্যায় করা হয়েছে।
কে করলো?
কেনো করলো?
আপনারা সেটা না খুঁজে দিশাকে অনেক অপমান করেছেন।।।
এইজন্য দিশা আমাদের অফিসে গিয়ে সব বলে দেয়।
তাই আমরা তদন্ত করার জন্য এসেছি।
একজন সদস্যও বাড়ির বাহিরে যেতে পারবেন না।
ইশানের বাবা বললো আমার অফিস আছে।
–দুই এক দিন ছুটি নিয়ে নিন।
আপনি কি চান না আপনার বউ এর উপর যারা এই অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি হোক।
–অপরাধী তো দিশাই।
তাছাড়া আর কে করবে এমন জঘন্য কাজ?
–আবার একটা Crime করলেন আপনি।
একজন নির্দোষ মানুষকে দোষ দেওয়া অনেক বড় Crime.
ইশানের বাবা চুপ হয়ে গেলো।
ইশান দিশাকে টেনে অন্যখানে নিয়ে গেলেন।
কে ইনি?
দিশাঃআমাকে ধরছেন কেনো?
যা বলার সরাসরি বলেন।
ইনি একজন অপরাধ তদন্ত বিভাগের অফিসার।
এনার কাজই হলো অপরাধীকে খুঁজে পুলিশের হাতে দেওয়া।
তারেক বললো আমার একটা আলাদা রুম চাই।
আমি এক এক করে জিজ্ঞেস করবো সবাই কে।
ইশান তারেক কে একটা রুমে নিয়ে গেলো।
আর তারেক প্রথমেই ইশানের বাবা কে প্রশ্ন করতে লাগলো।
তারেক এক এক করে সবাই কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
কারন যে অপরাধী তার গলার স্বর শুনেই বোঝা যায় যে সে অপরাধ করেছে।
কারন অপরাধী ভয় পেলে তাদের গলার স্বর পরিবর্তন হয়।
তারেকের সন্দেহ হলো ইরার উপর।
কিন্তু তানিয়া কে দেখে মনে হলো সে খুব ভয় পাচ্ছে।
তাহলে ইরা না তানিয়া এই কাজ টি করেছে?
দিশা তারেকের কানে কানে বললো তানিয়া কে দুই চার টা ভয়ের কথা বলেন তাহলেই সব বলে দেবে।
তারেক তানিয়া কে আবার রুমে ডাকলো।
তারেকঃতুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?
তানিয়াঃনা তো?
তারেকঃএই ম্যাশিন টা আগে কখনো দেখেছো?
তানিয়াঃনা।
তারেকঃএটা হলো সত্য কথা বলার মেশিন।
যতই মিথ্যা বলো না কেনো আমি সত্য টা শুনতে পাবো।
তানিয়াঃবললাম তো আমি খালার সাথে কোনো অন্যায় করি নি।
আপনি যতই ভয় দেখান আমি এই কথাই বলবো।
তারেকঃখালার সাথে কিছু করো নি মানলাম।
কিন্তু দিশার সাথে তো করেছো।
আমি মেশিনে স্পর্শ দেখতে পাচ্ছি।
তানিয়া সেই কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলো।
তারেকঃতুমি যদি সত্যি বলো তাহলে তোমার কোনো শাস্তি হবে না।
তানিয়া কাঁদতে লাগলো।
স্যার,আমি খালার তেলে কোন ক্যামিকেল মেশায় নি।
বিশ্বাস করেন।
তারেকঃকরলাম বিশ্বাস।
কিন্তু তুমি এখনো কিছু লুকাচ্ছো।
বলো আমাকে আমি সাহায্য করবো তোমাকে।
তানিয়াঃস্যার যখন দেখলাম বাড়ির সবাই দিশা কে দোষারোপ করছে তখন আমার মাথায় বুদ্ধি এলো যে এই সুযোগে দিশাকে সবার সামনে অপরাধী করলে ব্যাপার টা আরো ক্লিয়ার হবে।
তাই আমি সায়ানাইড দিশার Nail Polish remover এর বোতলে রাখি।
তানিয়াঃআমি ময়লা ফেলতে গিয়েছিলাম সেখানে গিয়ে দেখি ইরা আপার স্বামী একটা বোতল গর্ত করে পুতে রাখছে।
আমি বললাম ওটা কি দুলাভাই?
তখন উনি বললেন কে জানি এই ক্যামিকেল টা এখানে ফেলে রেখেছে।
অন্য কেউ ধরলে তো বিপদ হয়ে যাবে।
তাই পুঁতে ফেলছি।
দুলাভাই চলে যাওয়ার পর আমি বোতল টা সাবধানে তুলে ঘরে নিয়ে যায় তারপর এই কাজ টা করি।
কিন্তু আমি খালার তেলে মেশায় নি সায়ানাইড।
তারেক তানিয়া কে বললো বাহিরে যাও আর আমাকে যা যা বললে তা আর কাউকে বলবে না।
–ঠিক আছে।
তারেক এবার ইশানের দুলাভাই কে ডাক দিলো।
তারেকঃআপনি ভালো আছেন?
দুলাভাইঃহ্যাঁ আছি।
তারেকঃআপনি তো জানেন আপনার শাশুড়ীর সাথে অনেক বড় অন্যায় হয়েছে।
দুলাভাইঃহ্যাঁ জানি।
তারেকঃআপনি সেদিন কই ছিলেন?
দুলাভাইঃবাহিরে।
তারেকঃতাহলে তো আপনাকে দোষ দেওয়ার কোনো উপাই নাই।
দুলাভাইঃহ্যাঁ।
তারেকঃসায়ানাইড আপনি দেখেছেন কখনো?
দুলাভাইঃনা,
আমি কিভাবে দেখবো?
তারেকঃঠিক আছে যান আপনি।
আর হ্যাঁ শুনুন।
যদি কোথাও পড়ে থাকতে দেখেন অবশ্যয় আমাদের জানাবেন।
ইশানের দুলাভাই হা করে তারেকের দিকে তাকিয়ে রইলো।
তারেক বললো যান আপনি।
আপনার বউ কে ডাকুন।
ইরাঃআপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?
তারেকঃনা।
আপনি কি করে আপনার মাকে মারতে পারেন?
ইরাঃহ্যাঁ,সেটাই।
তারেকঃকিন্তু আপনার মা অসুস্থ হওয়াতে তো আপনি খুব খুশি হয়েছেন।
পুরো সংসার টা নিজের আন্ডারে নিয়েছেন।
আর স্বামীর বাড়ি যেতে হবে না।
এখন এখানেই থাকবেন।
ইরাঃতাছাড়া আর কে আছে?
মার অনুপস্থিতিতে তো আমাকেই দেখতে হবে এখন।
তারেকঃকেনো দিশা আছে না?
আপনার চেয়ে তার অধিকার কিন্তু বেশি।
ইরাঃসে আমার মায়ের সাথে অন্যায় করেছে।
তারপরেও বলছেন সে সংসারের দায়িত্ব নেবে?
তারেকঃআমি যদি বলি আপনি করেছেন?
আপনি এই সংসারে থাকার জন্য এমন জঘন্য কাজ করেছেন।
ইরাঃকি বলছেন এসব?
আমি করি নি।
তারেকঃআপনার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি অপরাধী।
যেহেতু আমরা এর আগেও অনেক অপরাধী ধরেছি।
ইরাঃআপনি বললেই হলো নাকি?
তারেকঃতাহলে আপনি দিশার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার কেনো করেছেন?
বার বার ওর দোষ কেনো দিচ্ছিলেন?
ইরাঃও অপরাধী।
তাই ওর দোষ দিচ্ছিলাম।
তারেকঃএই যন্ত্র টা দেখছেন?
সত্য কথা বলার মেশিন।
একবার মাথায় সেট করলে এ যাবতে যত অন্যায় করেছেন সব বেরিয়ে আসবে।
এখন ভেবে দেখুন।
সব অপরাধের শাস্তি ভোগ করবেন।
না এখন সত্য বলবেন?
ইরাঃবিশ্বাস,করুন আমি কিছু করি নি।
আমি শুধু দিশাকে অপমান করেছি।
কারন যখন দেখলাম মা অসুস্থ।
এদিকে আবার দিশা অপরাধী।
তাই এই সংসারের দায়িত্ব তো এখন আমার ই পাওয়ার কথা।।
তাই দিশাকে অপমান করেছি আর কিছু না।
তারেকঃকিন্তু আমি তো দেখতে পাচ্ছি আপনি অনেক আগে থেকেই দিশার উপর শত্রুতা করেছেন।
দিশা রান্না শেষ করে ঘরে গেলে আপনি তরকারি তে লবন ঝাল দিয়ে যেতেন।
তাই না?
আবার আপনার মা যে পিছলে পরে গেছিলো সে তেল টাও আপনি ফালায়ছেন।
তাই না?
ইরা চুপ করে আছে।
তারেকঃচুপ করে আছেন কেনো?
সত্য বলুন।
ইরাঃহ্যাঁ।
তারেকঃআপনি যদি এতো অন্যায় করতে পারেন আর এই কাজ টা করতে কতক্ষণ?
ইরাঃআপনি ভুল ভাবছেন।
আমার উদ্দেশ্য ছিলো দিশাকে অপমান করা।
কারন সবাই ওকে হঠাৎ করে খুব ভালোবাসতে শুরু করলো।
তাই এমন করেছি।
কিন্তু মার সাথে আমি একাজ করি নি।
তারেকঃআপনার হাজব্যান্ড কি সেদিন বাসায় ছিলো যেদিন এই ঘটনা ঘটেছিলো?
ইরাঃনা ছিলো না।
তারেকঃভালো করে ভেবে বলুন।
ইরাঃসকালে উঠেই ও বাহিরে গিয়েছিলো।
পরের দিন এসেছে।
তারেকঃযান আপনি।
তারেক আর তার সহকর্মী রা মিলে ভাবতে লাগলো।
এদিকে ইশান দিশাকে ঘরে আটকিয়ে রেখেছে।
দিশা শুধু বলছে ইশান বাহিরে যেতে দাও আমাকে।
ইশানঃনা।
আগে বলো এমন করছো কেনো তুমি?
আমি তো সরি বলেছি।
ভুল হয়ে গেছে সেটাও বলেছি।
দিশাঃসরি বললেই কি ক্ষমা করে দেবো নাকি?
তুমি আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছো।
আমাকে বিশ্বাস না করে আমাদের ভালোবাসার অপমান করেছো।
আমাকে অনেক মেরেছো যেমন করে অন্যান্য পুরুষ মানুষ বউ দের উপর নির্যাতন করে।
আর আমি বউ হয়ে থাকা অবস্থাতেও তুমি অন্য মেয়ে কে বিয়ে করবে বলে জানিয়ে দিয়েছো।
আমি কি ভুলে গেছি সব?
কিছুই ভুলি নি।
আমি কখনোই তোমাকে ক্ষমা করবো না।
ইশান দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।
প্লিজ দিশা।
প্লিজ।
আমার মনমানসিকতা ভালো ছিলো না।
প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।
আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।
দিশাঃছাড়ো বলছি।
চিৎকার করবো কিন্তু।
ইশানঃকোনো লাভ নাই।
সবাই জানে আমরা স্বামী স্ত্রী।
দিশাঃবাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে।
আমাকে যেতে দাও।
ইশানঃনা,
আমি তোমাকে আর যেতে দেবো না।
দেখি তুমি কি করে যাও?
এই বলে ইশান দিশার ঠোঁটে কিস করতে গেলো।
আর দিশা ইশান কে দিলো জোরে এক কামড়।
ইশানঃউহঃ
কি হলো এটা?
দিশাঃশত্রুর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার নিনজা টেকনিক।
এই বলে দিশা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইশান ও পিছু পিছু গেলো।
দিশা দাঁড়াও।
দিশা,,,,,,,
দিশা তারেকের কাছে গেলো।
কি হলো পেলেন কোন তথ্য?
–হ্যাঁ অনেক তথ্যই তো পেলাম।
আসল ক্রিমিনাল কে এখনো বুঝতেছি না।
তারেক দিশা কে সব কাহিনী বললো।
দিশা শোনার সাথে সাথে বললো তাহলে তো পেয়েই গেছেন আসামী।
তারেকঃকিভাবে?
দিশাঃআমাদের দুলাভাই জীবনেও তো ময়লা ফেলার জায়গায় যায় না।
আর উনি নাকি আবার নিজেই পুঁতে রাখছেন ক্যামিকেল।
ব্যাপার টা সন্দেহজনক।
তা উনি সেদিন কেনো গেছিলেন জিজ্ঞেস করেছিলেন?
তারেকঃওনাকে তো আমিও সন্দেহের লিস্টেই রেখেছি।
এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নি।
দিশাঃওনাকে ডাকেন।
জিজ্ঞেস করেন।
তারেক ইশানের দুলাভাই কে ডাকতে পাঠালো।
কিন্তু তাকে কেউ খুঁজে পেলো না।
সবাই খুঁজতে লাগলো।
এদিকে ইরা শুধু তার স্বামীকে বকতে লাগলো।
মা সেই জন্য একে বোকা বলে।
তা না হলে কেউ আসামীর মতো পালিয়ে বেড়ায়?
এখন তো সবাই তাকেই সন্দেহ করবে???
ইশানের দুলাভাই পালায়ছে।
কিন্তু কিভাবে পালায়লো?
চারিদিকে সবাই খুঁজতে লাগলো।
এদিকে তারেক ইশান কেও সমস্ত কাহিনী বলে দিলো।
ইশান তানিয়া কে বললো তুই ও আছিস এর ভিতর?
তানিয়া মাথা নিচু করে উত্তর দিলো তোরা তো সবাই দিশার দোষ দিচ্ছিলি তাই আমি এই কাজ করেছি।
ইশান তানিয়া কে একটা চড় মারলো।
তানিয়া কাঁদতে লাগলো।
আর বললো এই দিশার কারনে বার বার আমার বিয়ে ভেংগে যাচ্ছে।
এই দিশাই আমার জীবনের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।
ইশানঃবের হ।
বাড়ি থেকে বের হ।
ইরাঃতানিয়া তুই এতো শয়তান কেমনে হলি?
ছিঃ
বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তানিয়াঃআপনি মনে হয় খুব সাধু।
দিনেরাতে অপমান করতেন দিশাকে।
আপনার কথা শুনেই তো দিশা বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলো।
ইরাঃছোট মুখে এতো বড় কথা?
ইশানঃচুপ কর তুই।
আর তোর স্বামী কই?
তাড়াতাড়ি ডেকে আন।
তা না হলে তুই ও কিন্তু আর রেহাই পাবি না।
দুইজনকেই পুলিশে দেবো।
ইশানের বাবা ইতোমধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।
কি বলছে এরা এসব?
ইরার স্বামী কেনো এ কাজ করলো,?
বিয়ে হওয়ার পর থেকে এই বাড়িতেই থাকতেছে,খাচ্ছে।
আর এই বাড়ির সাথেই এতো বড় বেঈমানি?
ইশানের বাবা দিশার কাছে অনেক ক্ষমা চাইলো।
দিশা বললো ঠিক আছে বাবা।
আমি কিছু মনে করে নি।
মানুষের ভুল হতেই পারে।
ইশানঃআমারও তো ভুল হয়েছে।
আমাকেও ক্ষমা করে দাও।
দিশাঃনা।
তোমার ক্ষমা নাই।
তুমি আমাকে সবার থেকে বেশি চিনতে।
অনেকদিন ধরে চিনতে।
সবাই যে ভুল করেছে তুমিও কেনো সে ভুল করলে?
এই জবাব আগে দাও।
ইশান কি করবে এখন?
কারন দিশা ঠিকই বলেছে।
সবাই যে ভুল করতে পারে সে সেই ভুল করতে পারে না।
কারন সে দিশাকে অনেক বছর থেকে চেনে।
তবুও কেনো যে এই ভুল টা করলো নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো।
সবাই চলে গেলো।
এদিকে ইশানের দুলাভাই কে খোঁজার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
দিশা সীমার সাথে আবার চলে গেলো।
ইশান এবার আর তাকে বাঁধা দিলো না।
কারন কারো মনের বিরুদ্ধে জোর করা ঠিক হবে না।
–আমার স্বামী যদি আমার চোখের সামনে অন্য একটা মেয়ে কে এভাবে বিয়ে করতো তখন হয় আমি নিজেকে শেষ করে দিতাম।
তা না হলে অনেক দূরে পালিয়ে যেতাম।
কিন্তু দিশার তো দেখি অনেক ধৈর্য্য।
স্বামীর বিয়ে করার কথা শুনেও এখনো এই বাড়িতেই পড়ে আছে।
কি নির্লজ্জ মেয়ে রে তুমি???
দিশা কাঁদতে লাগলো।
আমি বুঝতেছিনা আপনি কেনো আমার সাথে এমন করছেন?
আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?
–কি করলাম আমি?
শুধু মনে করে দিলাম যে ইশান আর তানিয়ার কিন্তু কাল বিয়ে।
চেহারা দেখে মনে তো হচ্ছে না তোমার মনে আছে।
তাই মনে করে দিলাম।
কাল তো খুব বড় গলায় বললে এই সংসার তোমার?
এই বাড়ি তোমার?
কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কিভাবে সবকিছু পালটে গেলো?
ইরা দিশার কানে কানে বলতে লাগলো
এ থেকে বোঝা গেলো তোমার থেকে এ বাড়িতে আমার পাওয়ার বেশি।
এখন সব আমার কথাতেই চলবে।
আর এই পুরো সংসার ও এখন থেকে আমার।
তানিয়া তো পাগল।
ওকে যেমন ভাবে নাচাবো তেমনভাবেই নাচবে।
–তুমি এই বাড়িতে থাকার জন্য আর সংসারে রাজত্ব করার জন্য নিজের মায়ের সাথে এতো বড় অন্যায় করতে পারলে?
–না,না।
এই দোষ টা আমাকে দিও না দিশা।
আমি মার কোন ক্ষতি করি নি।
মার ক্ষতি তো তুমি করেছো।।
তুমি ভেবেছিলে মায়ের সাথে অন্যায় করে পুরো সংসার তোমার দখলে আনবে?
তা আমি বেঁচে থাকতে কি করে হতে দেই বলো তো???
জমি চাষ করলে তুমি,বীজও বপন করলে তুমি।
কিন্তু ফসল পেলাম আমি।
কালকের জন্য রেডি হও দিশা।
কাল থেকে তুমি শুধু চাকরানি হয়ে থাকবে।
আর তোমার স্বামী,,,,,
বুঝতেই তো পারছো ব্যাপার টা।
না আরো বিস্তারিত ভাবে বিশ্লেষণ করে দিতে হবে?
ইরা চলে গেলো।
দিশা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।
সে কাঁদতে লাগলো।
আজ তার পাশে কেউ নাই।
একিদিকে ইশানের বাড়ির লোকেরা অপমান করছে অন্যদিকে ইশান তো কথায় বলে না।
তাই সে এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিলো।
ইশান রুমে এসে দেখে দিশা নাই।
দিশা তাহলে কই গেলো?
সে পুরো বাড়ি খুঁজে দেখলো।
কিন্তু দিশাকে পেলো না।
ইশান বুঝতে পারলো না দিশা বাড়ির বাহিরে গেলো কিভাবে?
কারন সে যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারে সেটা সবাই কে বলা হয়েছে।
ইশান সবার উপর রাগ দেখাতে লাগলো।
ইশান বুঝতে পারছে না কি করবে এখন সে?
ইশান দিশাকে খুঁজে না পেয়ে প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেলো।
সে জানতো দিশা রাগের মাথায় কিছু একটা করে ফেলবে।
তাই সে সবসময় তাকে নজরে নজরে রাখতো।
কিন্তু দিশা বাড়ির বাহিরে গেলো কিভাবে?
ইশানের মনে হলো সে বোধহয় দিশা কে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললো।
প্রায় এক সপ্তাহ পর ইশান জানতে পারলো দিশার বান্ধুবী সীমার বাড়িতে আছে।
ইশান পাগলের মতো ছুটে গেলো সেখানে।
ইশান কে দেখে সীমা অনেক বেশি অবাক হলো।
তুই এখানে?
–দিশা কই?
–তা আমি কি করে জানবো?
–তোর এখানে আসে নি?
–না।
–আচ্ছা ঠিক আছে।।।
আমি চললাম।।।
এই বলে ইশান চলে যেতে ধরলো।
সীমা তাকে ডাক দিলো।
এসেই যাচ্ছিস যে?
বসলি না?
–এখন বসার সময় নেই।।।
পরে আরেকদিন আসবো।
–দিশাকে খুঁজতিছিস কেনো?
কই গেছে ও?
–জানি না।
–জানিস না মানে???
কি বলছিস এসব???
ইশান কাঁদতে লাগলো।
–কি হয়েছে?
কাঁদছিস কেনো তুই?
–দিশা মনে হয় আর বেঁচে নেই।
–কি বলছিস এসব?
–তাছাড়া ও গেলো কোথায়?
–কেনো তুই ওকে বকেছিলি?
ইশান কোনো উত্তর দিলো না।
–কি হলো?
উত্তর দে?
ইশান চুপ হয়ে আছে।
–তুই আর কি উত্তর দিবি?
আমি তো শুনলাম তুই নাকি ওকে অনেক মারধর করেছিস।
আবার শুনলাম আরেকটা বিয়েও করবি।
বাঃ ইশান বাঃ
পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রেম টাকে টিকিয়ে রাখতে পারলি আর মাত্র কয়েকমাস হলো বিয়ে হয়েছে তাতেই এতো অরুচি এসে গেলো দিশার প্রতি।
–তুই কিছু জানিস না।
তাই এভাবে বলছিস।
–আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না তুই দিশাকে মেরেছিস।
কেমনে পারলি এটা?
যে মেয়েটাকে এতো ভালোবাসতিছ সেই মেয়েটার উপর আজ কেনো এতো অবিচার করলি?
–তুই কি আমার মায়ের কথা শুনেছিস?
–হ্যাঁ শুনেছি।
আন্টির জন্য খুব খারাপ লাগছে।
হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো এসব?
–হঠাৎ করে হয় নি।
মার সাথে ইচ্ছা করেই এসব করা হয়েছে।
–তার মানে তোর সন্দেহ দিশা করেছে।
–দিশা এর আগেও এমন এমন সব কান্ড করেছে সেই জন্য সবাই ওকে সন্দেহ করছে।
সীমা সেই কথা শুনে রেগে গেলো।
সবার কথা বাদ দে।
তোর কথা বল।
কারন তোর মতো আর তো কেউ ওকে চেনে না।
–আমার মাথাটা ঠিক ছিলো না রে।
মার এমন একটা অবস্থা দেখে আমি পুরাই ডিপ্রেশনে চলে গেছিলাম।
তাছাড়া আমার আলমারিতে আমি সেই ক্যামিকেল টা পেয়েছি যেটার কারনে মার আজকে এই অবস্থা।
তাই আমিও দিশাকেই সন্দেহ করেছিলাম।
–তোর ঘরের আলমারি তে তো অন্য কেউ ও এটা রাখতে পারে।
আর দিশা কি পাগল যে নিজে অন্যায় করে আবার নিজেই ধরা দেবে।
–জানি না আমি।
আমার মাথায় তখন আর কিছু ঢুকে নি।
আমি মনে হয় এখন পাগল হয়ে যাবো।
এতো টেনশন আর নিতে পারছি না আমি।
–তুই নাকি বিয়ে করবি?
করেছিস?
–বললাম তো আমার মাথা টা একদম ঠিক ছিলো না।
রাগের মাথায় বলেছি।
এখন ওকে কই খুঁজবো বলতো?
–ওর প্রতি যখন অন্যায় করেছিস তখন শাস্তি তো ভোগ করতেই হবে।
–ও কি আর ফিরবে না?
ও যদি আজ কালকের মধ্যে না ফেরে তাহলে আমি যে কি করবো নিজেই জানি না।
ও তো জানে আমি ওকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারি না তবুও কেনো বাড়ি থেকে বের হলো?
কেনো বের হলো?
–তুই ওকে মারবি।
তোর বাড়ির সদস্যরা দিনরাত অপমান করবে।
ওকে তোরা মিথ্যা দোষ দিবি।
আবার শুনলাম ওর চোখের সামনে বিয়েও করবি।
তাহলে ও কেনো তোর বাড়িতে থাকবে?
কি জন্য থাকবে?
তুই বল?
আমার তো মনে হয় না ও আর তোর সাথে কথা বলবে বা দেখা করবে।।
কারন তুই ওর সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছিস।
–দেখা না করুক।
কথাও না বলুক।।।
কোনো আপত্তি নাই আমার।
কিন্তু ও ভালো আছে কিনা?
সুস্থ আছে কিনা?
সেটা না জানা পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না।
কারন ও যে রাগী আর অভিমানী,রাগের মাথায় কি যে করলো আল্লাহই ভালো জানে।
–দিশা কে এতো ভালোবাসিস?
ওকে নিয়ে এতো ভাবিস?
কিন্তু বিশ্বাস করলি না কেনো?
ও তো তোকে বার বার বলেছিলো যে সে এ কাজ করে নি।
কেনো বিশ্বাস করলি না?
ইশান সীমা কে জিজ্ঞেস করলো দিশা তোর এখানেই আছে তাই না?
তা না হলে তুই এতো কথা জানলি কিভাবে?
–নাই এখানে।
ইশান সীমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করলো না।
কারন দিশা এখানে না আসলে সীমা এতো কথা জানলো কি করে?
সে দিশা কে খুঁজতে লাগলো।
— আমি তো শুনলাম ও এখানেই আছে।
–তুই বাসায় চলে যা ইশান।
দিশা আর যাবে না তোর বাড়িতে।
–ও ভালো আছে তো?
–হ্যাঁ ভালো আছে।
–একবার অন্তত দেখি ওকে।
–ও যদি জানে আমি তোকে বলেছি তাহলে আমার উপর খুব রেগে যাবে।
তুই টেনশন করতিছিলি তাই বলে দিলাম।
–ও আছে কোথায়?
প্লিজ বল না?
আমার কষ্ট টা বোঝার চেষ্টা কর।।।
–আমি বুঝে কি করবো?
দিশা যদি না বোঝে।
ইশান কিছুতেই আর সীমার বাসা থেকে গেলো না।
সীমাঃতুই যা ইশান।
কাল আসিস।
আজ ও একটু বাহিরে গেছে।
ইশানঃবাহিরে গেছে মানে?
একা একা যেতে দিলি কেন?
–আজাইরা দরদ বাদ দে।
আগে বল আসল অপরাধী কে খুঁজে পেয়েছিস?
ইশানঃনা।
সীমাঃদিশার মুখে শুনলাম তোর মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নাকি তোর বোন ইরা ওকে নানাভাবে অপমান করতে থাকে।
তারপর বলে এখন থেকে নাকি এই সংসার তার।
এই ঘর তার।
তাহলে বোঝ তোর বোন কত স্বার্থপর
দিশা তোর বোনের জন্যই বাড়ি থেকে চলে এসেছে।
ওর আর সহ্য হচ্ছিলো না কিছুতেই।
ইশানঃতার মানে এই কাজ টা ইরা করেছে?
সীমাঃতা তো আমি জানি না।
দিশা আমাকে যা যা বলেছিলো সেটাই বললাম তোকে।
শুধু তাই না।
এদিকে নাকি তানিয়াও দিশা কে অপমান করেছে।
যে তানিয়া কে তোরা মাথামোটা বলিস।
সেও তোর বউ কে অপমান করার সাহস পেয়েছে।
তাহলে তুই বুঝতে পারছিস দিশা কে তুই কত টা নিচে নামায়ছিস?
আর মেয়েটার মনের অবস্থা এখন কত টা খারাপ?
ইশান তার ভুল বুঝতে পারলো।
সে বললো আমি আসলে জ্ঞানহারা হয়ে গেছিলাম।
দিশার কথা শোনার প্রয়োজন ই মনে করি নি।
ও কি আমাকে ক্ষমা করবে?
–দিশার সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে তানিয়াকে বিয়ে করার কথা শুনে।
সে বার বার কাঁদছে আর বলছে ইশান আমাকে কখনোই ভালোবাসে নি।
ভালোবাসলে অবশ্যয় আমাকে বিশ্বাস করতো।
আর তানিয়াকে জীবনেও বিয়ের কথা বলতো না।
ইশানঃআমার যদি সত্যিই তানিয়া কে বিয়ে করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে এখনো করি নি কেনো?
তুই বল?
আমি রাগ করে বলেছিলাম।
কারন সেদিন আমি হাতেনাতে প্রমান পেয়েছিলাম।
সীমাঃতা এখন কি করে বুঝলি দিশা কোনো অপরাধ করে নি?
এখন কেনো ওকে খুঁজতে বের হয়েছিস?
ইশানঃতুই এই কথা টা বলতে পারলি?
তুই জানিস না আমি দিশা কে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না।
দিশা যদি আমার জীবনে না থাকে তাহলে আমি নিজের জীবনটাই শেষ করে দেবো।
সত্যি বলছি।
দিশা ইশান কে ফেলে দিলো।
আমি আপনাকে চিনি না।।তবুও কোন শাসনে আমাকে ধরেছেন?
ইশানঃ সরি,সরি।
আর ধরবো না।
তুমি যদি আমাকে মাফ করে না দাও তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই।
কথা যদি না বলো তবুও আপত্তি নাই।
তুমি যদি আমাদের বাড়িতে আর না যাও সেটাতেও জোর করবো না ।
কিন্তু আসল অপরাধীর উচিত সাজা হোক সেটা তো নিশ্চয় চাও।
প্লিজ না করো না।
প্লিজ।
দিশাঃআমি কিভাবে সাহায্য করবো?
ইশানঃতুমি আগে বাসায় চলো তারপর শিখিয়ে দেবো।
দিশাঃনা,আমি যাবো না।
আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে কে?
ইশানঃমানে?
কিসের নিরাপত্তা?
দিশাঃএকটা অচেনা ছেলের বাড়িতে যাবো।
সেখানে থাকবো।
আমার যদি কোন ক্ষতি হয়?
ইশানঃতুমি কোন ক্ষতির কথা বলছো?
কে করবে ক্ষতি?
আমি তো সবসময় তোমার সাথেই থাকবো।
দিশাঃআমি অন্য মানুষের কথা বলছি না।
আপনার কথায় বলছি।
আপনার মনে যদি শয়তানি জাগে তখন আমাকে কে বাঁচাবে?
ইশান হেসে উঠলো আমি কেনো তোমার সাথে শয়তানি করবো?
আচ্ছা ঠিক আছে যখন আমাকেই ভয় পাচ্ছো তখন আমি নিজেই থাকলাম না বাড়িতে।
দিশাঃআপনি তাহলে আমাকে কেনো নিয়ে যাচ্ছেন?
যেখানে আপনি নিজেই থাকবেন না।
আপনি না বললেন আমার সাহায্য লাগবে আপনার।
ইশানঃওকে আমিও থাকবো।
আর কথা দিলাম।
কোনো ক্ষতি হবে না তোমার।
আমার বাড়িতে তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
দিশাঃপরে কিন্তু আমাকে জোর করতে পারবেন না আপনি।
আমি কিন্তু ও বাড়িতে আর কিছুতেই থাকবো না।
ইশানঃতোমার যা মন চায় তাই করবে।।।
কিন্তু এখন তো চলো।
দিশাঃআপনি বললেই আমি যাবো নাকি?
আমাকে তো আগে ভাবতে হবে।
ইশান আর কোনো তর্ক করলো না।
কারন যে করেই হোক দিশা কে বাড়ি নিয়ে যেতে হবেই।
ইশান চলে গেলো।
সীমা দিশা কে বললো খুব তো বড় গলায় বললি আর যাবি না ওই বাড়িতে।
এখন যেতে রাজি হলি কেনো?
দিশাঃইশানের বোন আমাকে যে অপমান করেছিলো তোর মনে নেই?
ওনাকে শাস্তি দেওয়ার একটা উপযুক্ত সুযোগ পেয়ে গেলাম।
কারন আমার বিশ্বাস উনি এই কাজ করেছে।
অপরাধী ধরা পড়লেই আমি আর ও বাড়িতে থাকবো না।
তাছাড়া আমি একা যাবো না।
তুই ও যাবি আমার সাথে।
কারন ইশানের উপর বিশ্বাস নাই আমার।
–আমি গেলে ইশান রাগ করবে না?
–আমি কি ওর বউ হিসেবে যাচ্ছি নাকি?
আমি তো জাস্ট অপরাধী ধরতে যাচ্ছি।
সীমা হাসতে লাগলো।
ইশান আর তোকে আমি তোদের থেকেও ভালো করে চিনি।
বুঝলি?
আমাকে এসব শিখাস না?
–তুই দেখে নিস।
আমি এবার আর কিছুতেই দূর্বল হবো না।
ইশান আমাকে মেরেছে না?
অবিশ্বাস করেছে না?.
এর শাস্তি তো ও পাবেই।
Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ১১
ইশানের মায়ের রিপোর্ট দেখে ডাক্তার নিজেই কেঁদে ফেললেন।
তিনি কথা বলতে পারতেছিলেন না।
ইশান বললো ডাক্তার আমার মায়ের কি হয়েছে?
ডাক্তার বললো আগে বলেন আপনার মায়ের কোনো বড় শত্রু আছে কিনা?
–শত্রু?
কিসের শত্রু?
ডাক্তার বললেন শত্রু না থাকলে এই জঘন্য কাজ টা করলো কে?
ইশানের মেজাজ খারাপ হতে লাগলো।
ডাক্তার সাহেব আসল কথা বলুন।
কি হয়েছে আমার মায়ের?
ডাক্তারঃআপনার মা জীবিত থেকেও মৃত।
কারণ তিনি আর কথা বলতে পারবেন না।
আবার চলাফেরাও করতে পারবেন না।
তার পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়েছে।
মানে কি?
কি বলছেন এসব
–হ্যাঁ ঠিকই বলছি।
সায়ানাইড খুবই মারাত্মক একটি রাসায়নিক যৌগ।
যার এক ফোঁটা কেউ খেলে সাথে সাথে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
যেহেতু রোগী সায়ানাইড খায় নি তাই তার মৃত্যু হয় নি।
কিন্তু এই মারাত্মক ক্যামিকেল শরীরে লাগানোর ফলে তা রক্তের মাধ্যমে পুরো শরীরে চলে গিয়েছে।
এই জন্য রোগীর পুরো শরীর অবশ হয়েছে।
সেই কথা শুনে সবাই চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
সবাই শুধু বলছে কে করলো এই কাজ?
ইশানের মায়ের এতোবড় শত্রু কে???
ইশান একেবারে নীরব হয়ে গেলো।
সে কোন কথাই বলতে পারছে না।
ডাক্তার জানালো এখন রোগীর অনেক সেবা করতে হবে।
তাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে সবাই তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।
সবসময় তার সাথে একটা লোক থাকতেই হবে।
ডাক্তার আরো বললো যে এই কাজটা করেছে তার উদ্দেশ্য রোগীকে ধীরে ধীরে কষ্ট দেওয়া।
যদি সে রোগীকে মারতে চাইতো তাহলে এটা খাওয়াতে পারতো।
বা অন্য কোনো ক্যামিকেল খাইয়ে মারতে পারতো।
কিন্তু সে কেনো এটা তেলের সাথে মিশালো সেটাই বুঝতে পারছি না।
ইরা কাঁদতে কাঁদতে বললো আর এসব বলেন না ডাক্তার সাহেব।
আমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না।
ইশান তার মায়ের কাছে গেলো।
তার মা কে এভাবে পড়ে থাকা দেখে সে চিৎকার করে উঠলো।
মা ওঠো।
ওঠো মা।
তুমি যদি আমার সাথে কথা না বলো তাহলে আমি কার সাথে কথা বলবো?
আমি কার কোলে ঘুমাবো?
কে আমার চুল টেনে দেবে?
ইশান পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।
দিশা নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগলো।
কারন তেলটা রোজ সেই মালিশ করে দেয়।
সে কি করে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করবে?
তার কথা কে বিশ্বাস করবে?
এটা ভাবতেই দিশা কেঁদে উঠলো।
সে ইশান কে কোনো শান্ত্বনা দিতেও পারছে না।
দিশার খুব খারাপ লাগতে লাগলো।
ডাক্তার জানালো রোগীকে এখানে না রেখে বাসায় নিয়ে গিয়ে ট্রীটমেন্ট করেন।
ওনার ভালো করে সেবা করেন।
যদিও সুস্থ হবেন না আর তবে যত দিন হায়াত আছে ততদিন বেঁচে থাকবেন।
সেই কথা শুনে সবাই পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।
কি হয়ে গেলো এটা?
ইশানের মাকে বাসায় আনা হলো।
তার সেবার জন্য একটা নার্স রাখা হলো বাসায়।
দিশা যেই তার শাশুড়ীর রুমে গেলো ইশানের বাবা রেগে গেলো।
তোমাকে এ রুমে আসতে হবে কেনো?
তোমার কোন প্রয়োজন নাই এখানে।
–কি বলছেন বাবা?
মার এখন অনেক সেবার দরকার।
আমাকে থাকতেই হবে সবসময়।
ইরা রেগে গেলো দিশার উপর।
লজ্জা শরম বলতে যদি কিছু থাকতো তাহলে আর এ রুমে আসতে না
দিশা কাঁদতে লাগলো।
তোমরা সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছো কেনো?
আমি কেনো এই কাজ করতে যাবো?
তোমরা বিশ্বাস করো আমি এ কাজ করি নি।
ইরা বললো তাছাড়া এ বাড়িতে বাহিরের কে আছে?
তুমিই তো একমাত্র বাহিরের লোক।
–আমি বাহিরের লোক?
কি বলছো তোমরা?
আমি এ বাড়ির বউ।
তোমাদের মতো আমিও এ বাড়ির একজন সদস্য।
দিশা ইশানের কাছে গেলো।
সবাই কি বলছে তুমি শুনতে পাচ্ছো না?
আমাকে কেনো দোষারোপ করছে এরা?
অন্তত তুমি কিছু বলো।
ইশান কোন উত্তর দিলো না।
ইরা বললো মা তোমাকে সবসময় বকতো।
ইশান তোমার থেকে মা কে বেশি ভালোবাসতো।
তাছাড়া মা যদি জানতো তোমার love marriage এর কথা তাহলে কি হতো?
সেই জন্য হিংসা করে এসব করেছো তুমি।
ইশান কোন কথা না বলে বাহিরে চলে গেলো।
দিশা কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো।
ইশান সারারাত বাহিরেই থাকলো।
দিশা অনেকবার ফোন দিলো।
কিন্তু ফোন না ধরে অফ করে রাখলো।
সকালবেলা দিশা রান্নাঘরে রান্না করতে গেলো।
কিন্তু গিয়ে দেখে তানিয়া রান্না করছে।
দিশাঃতুমি রান্নাঘরে কি করো?
তানিয়াঃইরা আপা আজ থেকে আমাকে রান্না করতে বলেছে।
দিশাঃকেনো?
তানিয়াঃতা তো আমি জানি না।
ইরা আপা বললো আপনি যেনো রান্নাঘরের আশেপাশে না আসেন।
দিশা ইরার কাছে গেলো।
দিশা কে দেখে ইরা বললো তুমি কি জন্য এসেছো তা আমি ভালো করেই জানি।
শুধু আমি না।
বাবা আর ইশান ও চায় তুমি যেনো সংসারের কোন কাজকর্ম না করো।
খাবারে যদি অন্য কোন ক্যামিকেল মিশিয়ে আমাদের সবাই কে মেরে ফেলো।
দিশা এবার রেগে গেলো।
আপনি কিন্তু এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।
এই বিষাক্ত ক্যামিকেল টা আবার আপনি মেশান নাই তো?
ইরাঃকথাবার্তা সাবধানে বল।
আমি আমার মাকে কেনো এতো কষ্ট দিবো?
দিশাঃকারন আপনার মা তো সারাক্ষণ আপনাকেও বকতেন।
আপনার স্বামীকে অপমান করতেন।
ইরাঃএটা অন্যরকমের বাড়াবাড়ি হচ্ছে দিশা?
দিশাঃকথাগুলো শুনতে কেমন লাগলো?
আমাকে যখন বলো তখন আমারও এইভাবেই লাগে।
দিশা চলে যেতে ধরলো।
কি মনে করে যেনো আবার ফিরিয়ে এলো।
আর ইরা কে বললো তোমার তো আর এক মাস পরেই বাড়ি ছাড়ার কথা ছিলো?
এখন কি ছাড়বে?
না মার সেবা করার অজুহাতে এই বাড়িতে এখন সারাজীবন এর জন্য থেকে যাবে?
আর আরেকটা কথা শোনো,এটা আমার সংসার।
আমার ঘর।
আর আপনার এটা বাবার বাড়ি।
আমার স্বামীর বাড়ি।
তাই অধিকার টা আমার বেশি।
বুঝেছেন?
কোন কিছু বলার আগে ভেবেচিন্তে বলবেন।
ইরা রেগে গেলো।
সে কাঁদতে লাগলো।
আর বললো বাবা আগে বাড়ি আসুক।
সব বলে দেবো।
মা অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথে উনি সংসারের মালিক হয়ে বসে আছেন।
তোমার সংসার করা শিখিয়ে দেবো আজ।
দিশা ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো।
সবাই কেনো তাকে এভাবে দোষ দিচ্ছে?
ইশান সারারাত সারাদিন বাহিরেই থাকলো।
রাতের বেলা হঠাৎ ইশান রুমে ঢুকলো।
দিশা বিছানায় শুয়ে আছে।
কিন্তু ইশান বেশিক্ষণ রুমে থাকলো না।
সে চলে যেতে ধরলো।
দিশা তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠলো।
আর ইশান কে জড়িয়ে ধরলো।
সে কাঁদতে কাঁদতে বললো সারারাত সারাদিন কই ছিলে?
আমি যে তোমাকে নিয়ে টেনশন করতে করতে একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছি।
তুমিও কি আমাকেই সন্দেহ করছো?
তোমার বাড়ির লোক আমার সাথে যা নয় তাই ব্যবহার করছে।
আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
রান্না করতেও দিচ্ছে না।
আমি তাই রাগ করে সারাদিন কিছুই খাই নি।
তুমি সবাইকে একটু বলে দাও যে আমার সাথে কেউ যেনো আর খারাপ ব্যবহার না করে।
ইশান দিশাকে সরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
দিশাঃকি হলো?
কিছু না বলে আবার কই যাচ্ছো?
আমি কিন্তু আর এসব সহ্য করতে পারছি না।
ইশান তার মায়ের রুমে গেলো।
তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
তার মা চোখ খুললো।
–তুমি ঘুমাও নি মা?
এখনো জেগে আছো?
ইশান লক্ষ্য করলো তার মা কাঁদছে।
তাই সে তার মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।
তারপর কপালে একটা চুমু দিলো।
তার মাকে জিজ্ঞেস করলো মা তোমার কাকে সন্দেহ হচ্ছে?
তুমি যার কথা বলবে আমি তাকে তোমার চোখের সামনেই খুন করে ফেলবো।
এই বলে ইশান কাঁদতে লাগলো।
ইশান তার মায়ের পাশেই ঘুমিয়ে পড়লো।
দিশা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো।
কিন্তু ইশান এখনো আসছে না কেনো?
তাই সে তার শাশুড়ীর রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে ইশান ঘুমিয়ে পড়েছে।
তাই তাকে আর ডাক দিলো না।
সে ঘরে চলে গেলো।
পরের দিন সকালে তুমুল ঝগড়া লেগে গেলো।
দিশাকে আজকেও রান্না ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
তানিয়ার এরকম বাড়াবাড়ি দেখে দিশা রেগে গেলো।
সে রাগ করে বললো তুমি আমাকে বারণ করার কে?
তোমরা সবাই একজোট হয়ে এই কাজ টি করো নি তো?
সেই কথা তানিয়া ইরা কে বলে দিলো।
ইরা রাগ করে এসে দিশাকে একটা চড় মারলো।
মুখ সামলিয়ে কথা বলবে।
তুই আমার মাকে মারতে চেয়েছিস।
দিশা কি বসে থাকার মেয়ে নাকি সেও কষে একটা চড় দিলো।
আমি মারার কোনো চেষ্টাও করি নি।
আর আমি কি পাগল যে নিজে প্রতিদিন তেল মালিশ করে দেই আবার নিজেই সেই তেলে ক্যামিকেল মেশাবো?
ইরা তার বাবা, ইশান কে ডাকতে লাগলো।
দেখে যাও তোমরা।
এই মেয়ের উদ্দেশ্য হলো পুরো বাড়ি দখল করা।
সবাই কে এক এক করে মেরে ফেলা।
ইশান সবকিছু শুনে এতো রেগে গেলো যে সব দোষ মনে হয় দিষার।
সে চিৎকার করে বলতে লাগলো কি হচ্ছে এসব?
আমি কি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো?
এতো অশান্তি কেনো এ বাড়িতে?
হয় এ বাড়িতে সবাই থাকো তা না হলে চলে যাও।
আমি একটু শান্তি চাই।
দিশা রাগ করে ঘরে চলে গেলো।
দিশা উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
হঠাৎ সে তার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে লাগলো।
সে সামনে ঘুরতেই ইশান তাকে জড়িয়ে ধরলো।
তার গলা,ঘাড়ে কিস করতে লাগলো।
দিশা ভাবলো তখন ওভাবে ইশান বকা দিলো দেখে মনে হয় রাগ ভাংগাতে এসেছে।
তাই দিশাও ইশানের আদরে অন্য এক জগতে হারিয়ে গেলো।
হঠাৎ ইশান থামলো।
দিশা কাঁদতে লাগলো আর বললো বাড়ির সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছে।
তবুও চুপ করেই আছি।
এখন তুমিও এসব বলছো?
তোমরা সবাই চাচ্ছো টা কি?
আমি এখন কি করবো?
ইশান দিশাকে বিছানা থেকে টেনে তুললো আর বললো আমার মাকে ফিরিয়ে দাও।
তুমি ছাড়া এ কাজ আর কেউ করে নি।
কারন তুমি সবকিছু নিয়েই ফাজলামি করো।
তুমি ইচ্ছা করেই সব করেছো।
দিশা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকলো।
আর বললো ঠিক আছে মেনে নিলাম এটা আমিই করেছি।
এখন আমার কি শাস্তি হওয়া উচিত?
ইশান দিশাকে মারতে লাগলো।
আমি জানি তুমি এটা করেছো।।।
এটা তোমারই কাজ।
আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো।
না,না।
মেরে ফেলবো না।
তোর পুরো শরীরে আমি সায়ানাইড ঢেলে দিবো।
যেরকম কষ্ট আমার মা পেয়েছে সেইরকম কষ্ট আমি তোমাকেই দিবো।
দিশা বললো আনো।
তাড়াতাড়ি আনো।
আমার গায়ে কেনো ঢালবে?
আমাকে খাইয়ে দাও।
একবারে মরেই যাই।
আমি এখন সব বুঝতে পারতিছি।
এটা তোমাদের সবার চক্র।
তোমরা আমার সাথে চক্রান্ত করতেছো।
তা না হলে সবাই একজোট কেনো হয়েছো?
ইশান দিশাকে আবার একটা মারলো।
মাথাভর্তি তোর শুধু শয়তানি বুদ্ধি।
তুই অকাম ও করবি আবার তোর বড় বড় কথা।
এটা কি?(এই বলে ছোট্ট একটা বোতল দেখালো)
দিশা বললো Nail Polish Remover.
–এটা কি তোমার?
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা ঠিক আছে এটা Nail Polish Remover.
তাহলে এখন একটু Nail এ লাগাও দেখি।
–আমার নখে তো এখন Nail Polish নাই।
এখন কেনো লাগাবো?
ইশান দিশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
তুই লাগাবি না কারন এটা Nail Polish Remover না।
এটাই সেই বিষাক্ত সায়ানাইড।
যা আমি আমাদের আলমারিতে পেয়েছি।
কথায় আছে না চোর চুরি করার সময় কিছু না কিছু প্রমাণ রেখে যায়।
তুমি ভুল করে এটা আমার পকেটে রেখেছো।
তুমি নিজে মুখে তো জীবনেও স্বীকার করতে না।
এই বলে ইশান দিশাকে মারতে লাগলো।
দিশার মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
সে ইশানের হাত টেনে ধরলো।
খবরদার!!!!
আমার গায়ে আর হাত দিবি না।
তুই কে রে আমার গায়ে হাত দেওয়ার?
এতো নাটক বা কাহিনী করার কি আছে?
বললেই তো হয় আমাকে আর ভালো লাগে না।
এইভাবে আমাকে না ফাঁসালেও হতো।
আরে বোকা আমি যদি এ কাজটি ঠিকই করতাম তাহলে সেটা আর তেলের ভিতর মিক্স করতাম না।
আর এই জিনিস ঘরেও রাখতাম না।
আচ্ছা তোমরা যখন আমাকে হাতেনাতে ধরেই ফেলেছো তাহলে আমার কি শাস্তি হওয়া উচিত?
দাও আমাকে শাস্তি।
–তোকে মেরে ফেললেও আমার রাগ করবে না।
এখন তোকে আমি এমন একটা শাস্তি দেবো যা তুই জীবনেও কল্পনা করতে পারবি না।
তুই তিলে তিলে মারা যাবি কিন্তু মরবি না।
এই বলে ইশান চলে গেলো।
দিশা ইরার রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে তানিয়া আর ইরা গল্প করছে।
দিশা বললো খেলা টা তাহলে ভালোই শুরু করেছো।
আমার সাথে এত বড় অন্যায় করে তোমরা কেউ ভালো থাকবে না।
তোমাদের এমন শাস্তি হবে যা কল্পনার বাহিরে।
আমার আর ইশানের ভালোবাসা তোমাদের সহ্য হয় নি তাই তোমরা এ কাজ করেছো।
ইরা বললো অকাম করার সময় মনে ছিলো না?
এখন ধরা পরে আমাদের দোষ দিচ্ছো?
দিশা খাওয়াদাওয়া সব বন্ধ করে দিলো।
তার একমাত্র ভরসার মানুষ হলো ইশান।
যে তাকে সবসময় আগলিয়ে রাখে।
আজ যখন সেই মানুষটিই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেখানে এ জীবনের মানেই হয় না।
দিশা তবুও ধৈর্য ধরে থাকলো।
যদি ইশান বুঝতে পারে।
কিন্তু ইশান এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলো যে দিশা সেটা জীবনেও কল্পনা করে নি।
সে যদি দিশা কে বাড়ি থেকে বের করে দিতো তবুও একটা কথা ছিলো।
সে দিশা কে যদি মেরে ফেলতো সেটাও দিশা হাসিমুখে মেনে নিতো।
কিন্তু ইশান দিশাকে বাড়ির বাহিরে যেতে দিলো না।
আর সবাই কে ঘোষণা দিলো সে দিশার চোখের সামনে তানিয়া কে বিয়ে করবে।
দিশা এই বাড়িতেই থাকবে।
সংসারের সব কাজ করবে।
ইশান মনে করে দিশার জন্য এর চেয়ে বড় শাস্তি আর হতে পারে না।
দিশা এই কথা টা শুনে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।
আর বললো হ্যাঁ তুমি আমার জন্য পারফেক্ট শাস্তির ব্যবস্থা করেছো।
তবে তোমার এই স্বপ্ন জীবনেও পূরন হবে না।
কারণ আমি কোনো দোষ করি নি।
তাই আমার জন্য এই শাস্তি প্রাপ্য না।
আজ তোমাদের সবার আনন্দের দিন।
এই দিন টা না আসলে আমি বুঝতাম ই না কে কেমন?
কার মনে কি চলছে?
তবে দিন আমার ও একদিন আসবে ইশান।
সেদিন আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবো।
আর তুমি আমার কাছে নত হবে।
তুমি এতো কাঁদবে এতো কাঁদবে যে আমার কিছুই মনে হবে না।
আজ যেমন আমি কাঁদছি তোমরা সবাই হাসতেছো।
সেদিন আমি হাঁসবো তোমরা কাঁদবে।
এই বলে দিশা বাড়ি থেকে বের হতে ধরলো।
ইশান দিশার হাত টেনে ধরলো।
আর বললো কই যাচ্ছো তুমি?
এই বাড়িতে থেকেই তোমাকে তোমার শাস্তি ভোগ করতে হবে।
–আমি থাকবো না এ বাড়িতে।
আমাকে ছেড়ে দাও ইশান।
–না।
তোমাকে আমি মারবোও না,
আর বাড়ি থেকে বের করেও দিবো না।
তুমি এই বাড়িতেই থাকবে।
এই বলে দিশাকে ঘরে বন্দি করে রাখলো।
ইশান তার মায়ের কাছে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।
অপরাধ যাই করুক শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।
তাই না মা?
আর মা তোমার কি মনে হয় শাস্তি টা কি ঠিক আছে?
কারণ একসাথে আমার দুটো কাজ হলো।
দিশা তার অপরাধের শাস্তিও পেলো।
আর আমি ওকে যে কথা দিয়েছিলাম কোনদিন ওকে চোখের আড়াল করবো না।
ওকে সারাজীবন আগলে রাখবো।
ও যতই অপরাধ করুক মা আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
ওকে না দেখে আমি কিছুতেই থাকতে পারব না।
ওকে আমি কোনদিন কষ্ট দিবো না সে প্রমিজ ও করেছিলাম।
কিন্তু সেটা আর রাখতে পারলাম না।
ওকে আজ অনেক মেরেছি।
ও নিশ্চয় অনেক কাঁদছে।
দিশা কেনো তোমার সাথে এমন করলো মা?
কেনো?
ও নিজের বিপদ কেনো ডেকে আনলো?
ও কেনো একটিবার আমার কথা ভাবলো না।
ওর অনেক ফাজলামি মেনে নিয়েছি।
কিন্তু এবার তো সে কোন ফাজলামি করে নি।
মারাত্নক অপরাধ করেছে।
আমার মায়ের সাথে অন্যায় করেছে।
আমার মায়ের জীবনের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।
ইশান কাঁদতে লাগলো।
তার পাশে আজ কেউ নাই।
সে আর কাকে বিশ্বাস করবে?
যে একমাত্র বিশ্বাসের যোগ্য ছিলো সেই যখন বিশ্বাসঘাতকতা করলো তখন আর কে বুঝবে তার কষ্ট?
Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ১০
দিশা রুমে এসে শুয়ে পড়লো।
কিন্তু তার কিছুতেই ঘুম ধরছে না।
তবুও ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
কিন্তু সে এমন একটা খারাপ স্বপ্ন দেখলো যার কারণে আর তার ঘুম আসলো না।
সে উঠে বারান্দার দিকে গেলো।
চারিদিকে অন্ধকার আর নীরবতা!!!
কোন এক অজানা ভয়ে তার মন প্রাণ সংকুচিত হয়ে আছে।
এদিকে তার শুধু বার বার ইশানের কথাটা মনে হচ্ছে।
কারন ইশান যেভাবে আজ বললো যে আর কোন ভুল ত্রুটি হলে তাকে সে নিজেই বাড়ি থেকে বের করে দেবে।
দিশা ভাবতে লাগলো যদি হয়?
সে ইচ্ছাকৃতভাবে না করলো কিন্তু তার অজান্তেই যদি হয়ে যায়?
কি হবে তার?
ইশান কি সত্যি তার সাথে এমন করবে????
দিশা আনমনে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ ইশান তাকে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো এখানে এভাবে একা একা কি করছো?
দিশা কোন উত্তর দিলো না।
–কি হলো?
তবুও সে চুপ হয়ে আছে।
ইশান এবার দিশাকে ঘুরিয়ে তার মুখ করলো।
অন্ধকারে দিশা বা ইশানের মুখ স্পষ্ট দেখা না গেলেও ইশান বুঝতে পারলো দিশা কাঁদছে।
–কি হয়েছে?
দিশা ইশানের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলো।
তারপর বিছানায় গিয়ে শুইলো।
–কথা বলছো না কেনো?
ইশান বুঝতে পারলো দিশার মন খারাপ।
তাই সে আর তাকে বিরক্ত করলো না।
দিশাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ দিশা ইশানের গলা ধরে কেঁদে উঠলো।
প্লিজ আমাকে তোমার জীবন থেকে আলাদা করিও না।
আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিও না।
ইশান খুবই অবাক হলো।
সে কিছুই বুঝতে পারলো না।
হঠাৎ দিশা এসব কেনো বলছে???
দিশা ইশানের গলা আরো শক্ত করে ধরলো।
ইশানঃকি হয়েছে?
কাঁদছো কেনো?
দিশাঃমৃত্যু ব্যতীত তুমি আর আমি জীবনেও আলাদা হবো না।
তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে সবসময় বলি যেনো মৃত্যু টাও একসাথেই হয়।
ইশানঃহ্যাঁ সেটা তো আমিও চাই।
কিন্তু হঠাৎ করে এসব কথা কেনো বলছো?
দিশার মনে হয় এতোক্ষণে হুঁশ হলো।
সে এতোক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো।
সে ইশান কে দেখে অবাক হলো।
তুমি এখানে?
কখন এলে?
ঘুমাও নি?
ইশান কিছুই বুঝতে পারলো না।
দিশা এসব কি বলছে।
কি হইছে দিশা?
তুমি এতোক্ষণে আমাকে দেখলে?
আমি তো অনেকক্ষণ এসেছি।
–ও,,,
বুঝতে পারি নি।
তুমি না মার ঘরে ঘুমায়ছিলে?
–ঘুম আসতেছিলো না।
তাই উঠে এলাম।
–আসলে কেনো?
মা আবার কি ভাববে?
–মা ঘুমাইছে।
কিন্তু তুমি এসব কি বলতেছিলে?
–কই কি?
–কি লুকাচ্ছো দিশা?
–কিছু না।
–আবার মিথ্যা কথা বলছো?
–আমি আজ একটা স্বপ্ন দেখেছি।
–স্বপ্ন?
কিসের স্বপ্ন?
–হ্যাঁ স্বপ্ন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কি জানো?
আমি এই একই স্বপ্ন এক সপ্তাহ ধরে দেখছি।
–দূর মেয়ে।
স্বপ্ন তো স্বপ্নই।
তা কি দেখলে স্বপ্নে?
–আমি স্বপ্নে দেখি তুমি তানিয়া কে বিয়ে করছো।
আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো।
ইশান সেই কথা শুনে জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
অন্য কোনো মেয়েকে যদি দেখতে তাহলে আসলেই সেটা ভাবার বিষয় ছিলো?
কিন্তু তানিয়া?
Impossible!!!
ওই পাগল টারে আমি বিয়ে করবো?
–তারমানে অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছে আছে???
–না,না।
সেভাবে বলি নি।
আর অন্য কোন মেয়েকে কেনো বিয়ে করবো?
–যদি করো?
–সেটা পরে দেখা যাবে।
–তারমানে বিয়ে করবে?
ইশান দিশাকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো করতেই পারি।
নিজের বিয়ে করা বউ যখন ঠিকভাবে স্বামীর যত্ন করে না তখন তো সেটাই করতে হবে।
দিশা ইশান কে এক ঝটকায় ফেলে দিলো।
যা কর গিয়ে।
এখনই কর।
–এখন কিভাবে করবো?
আর মেয়েই বা পাবো কোথায়?
দিশা বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো।
–এই,,,,,?
কই যাচ্ছো???
–সব ছেলেরা এক।
কেউ ভালো না।
ইশান ও পিছু পিছু গেলো।
–আমাকে ধরবি না তুই।
–ঠিক আছে।
ধরবো না।
কিন্তু একটু তো ধরতেই পারি?
দিশা এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো না,না।
ধরবি না তুই।
তুই ও বাকি সব ছেলেদের মতো।
তোরা সবাই এক।
আগে জানলে আমি প্রেমই করতাম না।
আর বিয়ে তো করতামই না।
বিয়ে করেও যদি স্বামীকে হারানোর ভয় থাকে তাহলে সে বিয়ে করে কি হলো?
আমি আর এতো টেনশন নিতে পারছি না।
কেনো আমাকে এতো টেনশন করতে হবে?
আর কেনোই বা আমাকে বার বার একই স্বপ্ন দেখতে হচ্ছে?
তুমি কেনো এরকম স্বপ্ন দেখছো না?
তুমি যদি দেখতে তাহলে বুঝতে টেনশন কাকে বলে।
তাহলে তুমিও বুঝতে কিছু হারানোর আগেই হারানোর টেনশন টা কত কষ্টের।
দিশা হাত নাড়ছে আর বকবক করছে।
ইশান একবার দিশার হাতের দিকে আরেকবার দিশার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
কেমনে এতো কথা বলে সে?
আর এই কথাগুলো আসে কই থেকে?
মেয়ে টা ইচ্ছে করলে খুব ভালো একজন ধারাভাষ্যকার হতে পারতো।
যে ভাবে এক নিঃশাসে ভাষন দেয়।
ইশান দিশাকে কোলে তুলে নিলো।
আর তার ঠোঁটে কিস করতে লাগলো।
–কি হচ্ছে এসব?
ছাড়ো।
আমাকে আজ বলতে দাও।
এসব তোমার শোনা দরকার।
ইশান কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলো দিশাকে।
আর বললো এবার বলতে থাকো।
আর নিজেই বসে থেকে শোনো।
আমি ঘুমাতে গেলাম।
ইশান চলে গেলো রুমে।
–কই যাচ্ছো তুমি?
আর এটা কি করলে?
আরো কিছু বলার ছিলো।
শুনে যাও।
–কাল কে শুনবো।
এখন ঘুমাবো।
দিশাও চলে গেলো রুমে।
গিয়ে দেখে ইশান কোলবালিশ টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়ছে।
–এ কে?
–প্রাকটিস করছি।
যদি সত্যিই আরেকটা বিয়ে করি তখন তোমার রিয়েকশন টা কেমন হবে?
দিশা ইশানের চুল ধরে টানতে লাগলো।
আর কোলবালিশ টাকে ছিড়ে মাটিতে ফেলে দিলো।
তারপর নিজেই ইশানের কোলের ভিতর শুয়ে পড়লো।
–গুড।
এইভাবেই শত্রুকে পরাজিত করতে হবে।
কিন্তু আমার উপর এভাবে Attack করা যাবে না।
আমি খুব ব্যাথা পাইছি।
মাথা ঘুরতাছে।
সকালবেলা,
আজ দিশা তাড়াতাড়ি উঠলো।
কিন্তু আজ আর সে ইশান কে ডাক দিলো না।
সে একা একা সবার জন্য নাস্তা রেডি করতে লাগলো।
সে একজন আদর্শ বউ হওয়ার চেষ্টা করছে।
নাস্তা রেডি করে সে সবাই কে খাওয়ার জন্য ডাক দিলো।
দিশাকে আজ রান্নাঘরে একা দেখে সবাই অবাক!!!
শেষ পর্যন্ত ইশান বেচারা এই রান্না করার চাকরি থেকে রেহাই পেলো।
দিশা যখন ইশান কে নাস্তা করার জন্য ডাক দিলো তখন ইশান বললো ব্যাপার কি?
আজ একা একাই দেখি রান্না করেছো?
আমাকে আর লাগবে না?
–না।
আপনাকে আর রান্না করতে হবে না।
শুধু রান্না কেনো?
আর কিছুই করতে হবে না।
–সত্যি বলছো?
এই বলে দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো আমার বউ টা কত ভালো!!!
–খুশি হয়ে লাভ নেই।
কারন আজ থেকে তুমি আর এভাবে ঘরে বসে থাকতে পারবে না।
কাল থেকে তুমি তোমার বাবার অফিসে জয়েন করবে বুঝেছো?
–কি বলছো এসব?
আমার এসব কাজকর্ম করতে ভালো লাগে না।
–সেটা বললে হবে নাকি?
তোমার বউ বাচ্চাকে কি সারাবছর তোমার বাবা খাওয়াবে?
–বাচ্চা!!!
আমার বাচ্চা!!!
কোথায় সে বাচ্চা!!!
দিশা লজ্জা পেয়ে গেলো।
আর বললো যেভাবে বলছো মনে হয় হবে না।
আজ না হয় কাল হবে তো।
–কবে হবে?
–যেদিন আল্লাহ দেবে।
ইশান দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।
ইনশাআল্লাহ।
খুব শীঘ্রই হবে।
দিশা সবদিক দিয়েই নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
এখন দিশাকে সবাই অনেক ভালোবাসে।
ইশান ও অনেক খুশি।
এভাবেই চলছিলো।
কিন্তু ইদানিং দিশার প্রতিটা কাজে শুধু ভুল হতে লাগলো।
চায়ে লবণ দিচ্ছে।
তরকারি তে চিনি দিচ্ছে।
কোনদিন ঝাল বেশি হচ্ছে।
আবার কোনদিন লবন হচ্ছে বেশি।
প্রথম প্রথম সবাই এটাকে মেনে নিলো।
কারন এটা হতেই পারে।
কিন্তু যখন এইরকম প্রতিদিন হতে লাগলো তখন কেউ আর সেটা মানতে পারলো না।
তার শাশুড়ী সেই জন্য ইদানীং দিশাকে বকা শুরু করলো।
ইশান ও বুঝতে পারছে না কিছু দিশা কেনো এইরকম করছে?
সে শুধু বার বার দিশা কে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে তোমার?
তুমি কি ঠিক আছো?
দিশা বললো হ্যাঁ ঠিক আছি।
একদিন দিশা রান্না করতেছিলো।
হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো মেঝেতে তেল পড়ে আছে।
সে নিজেও বুঝতে পারলো না কিভাবে তেলগুলো পড়ে গেলো?
সে তেলগুলো পরিষ্কার করার জন্য ন্যাকড়া খুঁজতে ঘরে যায়।
এদিকে ইশানের মা রান্নাঘরে আসতেই ধপাস করে পড়ে যায়।
এই জন্য তিনি পায়ে কিছুটা আঘাত পান।
ইশান দিশার উপর খুবই রেগে যায়।
কাজ করার সময় মন কোথায় থাকে?
এতো অমনোযোগী কেনো তুমি?
দিশাঃআমি নিজেও জানি না তেল পড়লো কিভাবে?
ইশানঃনিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলছো?
দিশাঃতুমি এটা বলতে পারলে?
ইশানের মা বললো ঠিক আছে।
ওকে বকছিস কেনো?
ও কি ইচ্ছে করে ফেলছে নাকি?
দিশা ইশানের কথায় খুব মন খারাপ করে।
তার সাথে কথা পর্যন্ত বলে না।
ডাক্তার ইশানের মায়ের পায়ে মালিশ করার জন্য একটা তেল দেয়।
দিশা তিনবেলা সেই তেল মালিশ করে দেয়।
প্রতিদিনের মতো আজকেও দিশা সেই তেল মালিশ করে দিলো।
তারপর ঘরে চলে গেলো।
ইশান রুমেই আছে।
দিশা ইশান কে দেখে এড়িয়ে যেতে ধরলো।
ইশান তা দেখে বললো আর কতদিন এভাবে এড়িয়ে চলবে?
এবার তো অন্তত রাগ টা কমাও।
যা হবার তা তো হয়েছে।
দিশা কোন কথা বললো না।
ইশান দিশাকে বললো ভাবতেছি কোথাও একটু ঘুরতে যাবো।
এ বাড়িতে কেনো জানি আর ভালো লাগছে না।
তাছাড়া এ বাড়িতে থেকে কি লাভ?
বউ একটুও আদর করে না।
মনে হচ্ছে ভালোবাসা সব শেষ হয়ে গেছে।
দিশা এবারও কোনো কথা বললো না।
সে বাহিরে চলে গেলো।
হঠাৎ তার শাশুড়ী চিৎকার করে উঠলো।
বাবা রে মরে গেলাম।
বাঁচাও আমাকে।
দিশা দৌঁড়ে তার শাশুড়ীর রুমে আসলো।
এদিকে তার শাশুড়ী চিৎকার করতেই আছে।
তার শাশুড়ী বললো তাড়াতাড়ি ইশান কে ডাক দাও।
আমি মরে গেলাম।
আমার পা জ্বলছে।
আমার পা পুরে যাচ্ছে।
দিশা ইশান কে ডাক দিলো।
দেখো তো মার কি হয়েছে?
চিৎকার করছে কেনো এতো?
ইশান আসার সাথে সাথে তার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।।।
ইশান তাড়াতাড়ি করে তার মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
ডাক্তার ইশানের মায়ের পরীক্ষা নীরিক্ষা করছে।
হঠাৎ ইশান ও চিৎকার দিয়ে উঠলো।
কারন তার ও হাত জ্বলছে।
ডাক্তার ইশানের ও ট্রীটমেন্ট শুরু করে দিলো।
ইশানের বাবা শোনামাত্র পাগলের মতো ছুটে এলো।
ডাক্তার কিছুক্ষন পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানালো যে তার মায়ের পায়ে যে তেলটা মাখানো হতো সেটার ভিতর বিষাক্ত ক্যামিকেল পটাসিয়াম সায়ানাইড পাওয়া গেছে।
ইশানের বাবা বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিলো যে বোতল টা যেনো কেউ না ধরে।
হঠাৎ ইশানের মনে হলো দিশার কথা।
কারন সেই তো এই তেল তার মায়ের পায়ে মালিশ করে দিচ্ছিলো।
তাহলে দিশা ঠিক আছে তো?
ইশান বেড থেকে উঠতে ধরলো।
আর বললো আমার বউ কে একবার চেকাপ করতে হবে।
কারন ও এই তেল মালিশ করে দিচ্ছিলো।
ডাক্তার বললো ও মাই গড।
তাড়াতাড়ি ওনাকে কেউ ডেকে আনুন।
ইশানের বাবা ইশান কে বললো তুই এখানেই থাক।
আমি ডেকে আনছি দিশাকে।
ইশানের বাবা দিশাকেও হসপিটালে আনলো।
ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলো দিশা ঠিক আছে।
ডাক্তার তো নিজেই কিছু টা অবাক হলো।
এটা কি করে সম্ভব?
দিশার কিছু হলো না কেনো?
দিশা তখন বললো আমি আজ হ্যান্ড গ্লাভস পরে তেল মালিশ করেছি সেই জন্য হয় তো আমার কিছু হয় নি।
হঠাৎ ইরা বলে উঠলো তুমি তো খালি হাতেই তেল মালিশ করে দাও।
তা আজ হঠাৎ হ্যান্ড গ্লাভস পরে তেল মালিশ করলে কেনো?
ইরা বললো তুই চুপ কর।
তুই কোনো কথা বলবি না।
মা অসুস্থ কেনো হলো?
সেটা ভেবে দেখেছিলি কখনো?
আর এ পটাশিয়াম সায়ানাইড তেলের ভিতর কিভাবে এলো?
আমি আরো বেশি অবাক হচ্ছি তোর বউ কি আগে থেকে জানতো যে আজ তেলে পটাশিয়াম সায়ানাইড আছে।
তাই সে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে তেল মালিশ করলো।
দিশা এবার কথা বলে উঠলো।
তুমি এসব কি বলছো?
আমি আজ এমনিতেই হ্যান্ড গ্লাভস পড়েছিলাম।
কারন তেলটা খুব ভারী আর আঠালো।
তাই বার বার হাত ধুলেও হাত পরিষ্কার হতো না।
তাই আমার মনে হলো হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে তেল মালিশ করলে আর হাতে লাগবে না।
তাহলে আর বার বার ধুতেও হবে না।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এলেন।
ডাক্তারের চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে মারাত্নক কিছু ঘটে গেছে।
সবার ভয় হতে লাগলো।
Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৯
দিশা তার শশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
আজ তার মুখে কি সুন্দর হাসি!!!
ইশান তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর ভাবছে সবসময় যদি এইরকম হাসিখুশি থাকতো!!!
তাহলে কত ভালো হতো!!!
কিন্তু উনি তো তা করবেন না।
সামান্য কিছু নিয়েই ঝগড়া শুরু করে দিবেন।
আর একটুতেই কেঁদে ফেলবেন।
আর আমাকে শুধু শুধু টেনশনে ফেলে দেবেন।
দিশাঃওভাবে কি দেখছো?
ইশানঃকিছু না।
দিশাঃতাহলে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
ইশানঃনিজের বউ এর দিকে তাকাবো না তো কার দিকে তাকাবো?
দিশা ইশানের কাজে এগিয়ে গেলো।
তারপর তাকে বিছানা থেকে টেনে নিচে নামালো।
ইশানঃকি করছো?
পড়ে যাবো তো?
দিশাঃকয় টা বাজে দেখেছো?
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
এই বলে সে বাহিরে চলে গেলো।
ইশান দেখতে পেলো মেঝেতে তার ফোন পড়ে আছে। এতোক্ষনে তার মনে হলো বাড়ির কথা।
একটা ফোন ও করা হলো না বাড়িতে।
ইশান ফোন টা তুলে দেখতে লাগলো।
আর বললো এই মেয়েটার একটুও মায়ামমতা নাই।
কিভাবে এতো দামী একটা ফোন ভেংগে ফেললো?
দিশা ঠিক তখনি আবার রুমে এলো।
কি হলো?
রেডি হবে কখন?
–এই তো হচ্ছি।
কিন্তু তার আগে বলো তুমি যে রাগ করে ফোন টা ভেংগে ফেললে এখন আবার নতুন একটা ফোন কিনতে টাকা লাগবে না?
দিশা কোন উত্তর দিলো না।
সে নিচ মুখ হয়ে থাকলো।
ইশান দিশাকে তার পাশে এনে বসালো।
আর বললো আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করো না দিশা?
একবার যদি আমার মনে রাগ ঢুকে যায়,
আমি যদি কঠোর হই,
তাহলে কিন্তু তোমার আর রেহাই নাই।
তখন আমার পিছে পিছে ঘুরলেও আর কোন ভালোবাসা খুঁজে পাবে না।
তাই আমি যেমন আছি তেমনই থাকতে দাও।
কিন্তু তোমাকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে।
তুমি আমার শুধু ভালোবাসাই দেখেছো।
আমার রাগ,অভিমান এগুলো এখনো দেখো নি?
এবার ও ছাড় দিলাম।
কিন্তু পরবর্তীতে আর মাফ করবো না।
দিশা সেই কথা শুনে কেঁদে ফেললো।
ইশানঃকি হলো এটা?
আমি কি কাঁদার কথা বললাম?
চোখে কি পানি লেগেই থাকে?
ইশান দিশার চোখের পানি মুছে দিলো।
আর বললো আজকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে।
দিশা রাগান্বিত চোখে ইশানের দিকে তাকালো।
ইশানঃসত্যি বলছি।
আর সকালবেলার ওই মুখের হাসি টা একদম পাগল করে দিচ্ছিলো আমাকে।
সবসময় সেইরকম ভাবেই হাসবে।
দিশা চুপচাপ ইশানের কথা শুনছে।
ইশান দিশাকে তার কোলের ভিতর নিলো আর বললো
মাঝে মাঝে তোমার কি হয়?
এতো খারাপ ব্যবহার করো যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
কেনো এমন করো?
এখন থেকে রাগ টা একটু কন্ট্রোলে আনতে হবে।
দিশাঃআমি সত্যি বুঝতে পারি না কিছু?
কেনো যে এমন করি?
ইশানঃবাসায় তো যাচ্ছো কিন্তু মা যদি বকাবাকি করে খবরদার তর্ক করবে না।
মনে থাকবে?
দিশা ইশান কে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো মনে থাকবে।
কিন্তু আমার খুব ভয় করছে মা বাবা যে কি কি বলে?
ওনারা তো আজ আমার কান ঝালাপালা করে দেবে।
ইশানঃবেয়াদবি যখন করেছো তখন তো শাস্তি পেতেই হবে।
দিশাঃএখন একটা উচিত কথা বলি?
ইশানঃকি?
দিশাঃআমি কি মাকে বলেছিলাম তানিয়ার পিছনে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে?
আর উনি কি কানা নাকি?
কার পিছনে দৌঁড়াচ্ছেন?
কাকে মারছেন তা একবারের জন্য ও দেখেন নি?
আগে যাচাই করে নিবেন না?
ইশানঃএই কথা আমাকে বলছো ঠিক আছে।
মাকে যেনো আবার বলো না।
দয়া করে নতুন কোন অশান্তি শুরু করবে না।
দিশা কোন উত্তর না দিয়ে উঠে গেলো।
ইশান রেডি হয়ে নিলো।
দিশা তার মাকে বললো যাচ্ছি আমি।
তার মা সেই কথা শুনে কেঁদে ফেললো।
আর বললো কালকে চড় মেরেছিলাম দেখে নিশ্চয় আমার উপর এখনো রেগে আছিস?
দিশা চুপচাপ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
মাঃকি হলো?
কথা বলছিস না কেনো?
দিশাঃরাগ করে আছি কিনা জানি না তবে আর আমি এ বাড়িতে আসবো না।
মাঃও,,,,,,,
তাহলে রেগে আছিস এখনো?
রাগ করে থাক আর অভিমান করেই থাক একটা কথা মনোযোগ দিয়ে শোন।
ইশানের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করবি না আর।
ওরকম ছেলে জীবনেও আমি দেখি নি।
তোর এতো অত্যাচার সহ্য করেও কিভাবে হাসিখুশি থাকে বুঝি না।
আর তোর শশুড় শাশুড়ীর সাথে কোন বেয়াদবি করবি না।
মনে থাকবে?
দিশা কোন উত্তর না দিয়ে রাগ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
তার আজ খুব খারাপ লাগছে।
কেনো তাকে এতো বোঝাতে হবে?
একদিকে ইশান বোঝাচ্ছে আবার অন্যদিকে তার মা।
সে কি এতই খারাপ?
তাকে কেউ ভালো বলছে না।
সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো যে নিজেকে এবার পাল্টিয়ে ফেলবে।
ইশানের মুখের উপর আর কোন কথা বলবে না।
তার অনেক সেবা করবে।
ইশান কে অনেক বেশি ভালোবাসবে।
যেমন করে ইশান তাকে ভালোবাসে।
দিশা আর ইশান বাড়ি চলে গেলো।
দিশার মা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো যতদূর চোখ যায়।
দিশা আর ইশান বাড়ি পৌঁছে দেখে তার বাবা সোফায়,তার মা চেয়ারে আর তার বোন দাঁড়িয়ে আছে।
তাদের কে দেখে কেউ কোন কথা বললো না।
তারা সবাই রুমে চলে গেলো।
ইশান হা করে তাকিয়ে রইলো।
কিছুই বুঝতে পারলো না।
ইশান তার মা কে বললো মা যাচ্ছো কেনো?
তার মা কোন উত্তর দিলো না।
ইশান তানিয়ার মাথায় একটা টোকা দিলো।
কি হয়েছে রে?
সবাই চলে গেলো কেনো?
–সবাই রাগ হয়ে আছে।
তুই যে ভাবীকে আনতে যাবি তা সবাই কে বলে যাবি না?
এদিকে আবার ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিস?
খালা আর খালু কাল সারারাত ঘুমায় নি।
পুলিশে রিপোর্ট পর্যন্ত করেছে।
–আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।
হঠাৎ তানিয়ার চোখ দিশার দিকে গেলো।
সে এই প্রথমবার দিশা কে সরাসরি দেখতেছে।
কিন্তু তানিয়ার মনে হলো দিশা কে সে আগে কোথাও দেখেছে।
সে ইশান কে বললো তোর বউ কে চেনা চেনা লাগছে কেনো?
কই যেনো দেখেছি।
ইশান বললো মাথা মোটা কোথাকার।
সেদিন যে ভিডিও কলে কথা বললি তাই হয় তো চেনা চেনা লাগছে।
–না,না।
ভাবীকে আমি কোথায় যেনো দেখেছি।
–মানে কি?
দেখতেই পারিস।
হয় তো কোন মার্কেট বা রাস্তাঘাটে দেখেছিস।
–কি জানি?
মনে করতে পারছি না।
আচ্ছা তোর এক্স গার্লফ্রেন্ড টা কি বিয়ে করেছে?
ইশানঃতা আমি কি করে জানবো?
আমি কি ওর খোঁজ রাখি নাকি?
দিশা বললো গার্লফ্রেন্ড?
তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো?
কে সে?
আমি তো জানি না।
ইশানের এবার খুব রাগ হলো।
সামান্য ব্যাপার টা দিশা বুঝতে পারছে না।
দিশাই তো তার গার্লফ্রেন্ড।
সে তো তার কথায় বলছে।
তানিয়ার সামনে তাকে বুঝায়তেও পারছে না।
ইশান দিশা কে বললো তুমি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
–আগে বলো তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো?
তানিয়া বললো ভাবি তুমি জানো না
ইশান ভাই এর গার্লফ্রেন্ড এর কথা?
দিশাঃনা তো।
তানিয়া বললো টানা পাঁচবছর ধরে রিলেশন করেছে।
এক নাম্বারের চিটার তোমার স্বামী।
তাকে বাদ দিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে।
ইশান তানিয়া কে বললো এমন মার দিবো না তোকে।
আমাকে চিটার বললি কেনো?
–চিটার কে চিটার বলবো না?
–তুই তো জানিস আমি আমার মায়ের কথা সবার আগে শুনি।
মা যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই আমি মেনে নিয়েছি।
–তোর মা তো প্রেম করতেও বারন করেছিলো।
তবুও করেছিলি কেনো?
তখন মনে ছিলো না মায়ের কথা?
বেচারি মেয়েটা যে এখন কি করছে কে জানে?
আর তুই দিব্যি বউ নিয়ে আনন্দে আছিস?
–তুই কি চাস আমি দিশার সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করি?
–না, না সেটা বলি নি।
পাঁচবছরের সম্পর্ক কে তুই কি করে ভুলে গেলি সেটাই ভাবছি।
দিশা এতোক্ষণে বুঝতে পারলো।
তাই সে বললো অতীত তো অতীত ই।
তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নাই।
এখন সে আমাকে বিয়ে করেছে তাই আমি ওর গার্লফ্রেন্ড আমি ওর বউ।
বুঝেছো?
আর কখনো এ ব্যাপার নিয়ে কথা বলবে না।
ইশান দিশার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেলো।
দিশা তানিয়া কে বললো আমিও যাই।
পরে কথা হবে।
দিশাও রুমে গেলো।
তানিয়া মনে মনে বলতে লাগলো ভাবলাম পাঁচবছরের রিলেশনের কথা শুনে রেগে যাবে কিন্তু কিছুই তো হলো না।
এতো স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপার টা মেনে নিলো কিভাবে?
আচ্ছা ওসব না হয় বাদই দিলাম।
কিন্তু দিশাকে আমি এর আগেও দেখেছি এটা সত্যি।
কিন্তু কোথায় দেখেছি?
দূর শালা ব্রেন!!!
এতো ধীরে ধীরে যে কেনো কাজ করে?
তাড়াতাড়ি কাজ কর আমার প্রিয় ব্রেন।
আমার ভালোবাসার ব্রেন।
এই বলে সে চোখ বন্ধ করে মাথায় টোকা দিচ্ছে আর ভাবতেছে।
ইরা এসে দেখে তানিয়া কেমন জানি করছে?
সে জিজ্ঞেস করলো কি করছিস তুই?
তানিয়া ঐ অবস্থায় বললো আমার ব্রেন ওয়াশ করছি।
–মানে কি?
পাগল টাগল হলি নাকি?
–হতেই পারি।
সেদিন যেহারে তোমার মা আমার পিছনে দৌঁড়ায়ছে এখনো মনে হলে ভয় করে আমার।
রাতে এখন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি খালাকে।
–কি কি দেখিস স্বপ্নে?
–খালা একটা লাঠি নিয়ে আমার পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে।
আর আমি তার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কখনো নদীতে ঝাপ দিচ্ছি।
কখনো আবার আকাশে উড়ে যাচ্ছি।
কাল তো কুয়ার মধ্যে ঝাপ দিয়েছিলাম।
ইরা হাসতে লাগলো।
–আপা হেসো না।
সত্যি বলছি।
মনে হয় বুদ্ধি টা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
খালা যে কেনো এতো বড় একটা ভুল করলো?
ইরা তানিয়ার মাথায় জোরে করে টোকা দিলো আর বললো এসব পাগলামি কথা বাদ দিয়ে খাবার দে।
ক্ষুধা লাগছে।
আর এসব কেনো দেখিস জানিস?
–কেনো??
–সারাক্ষন মোবাইলে গেম খেলিস।
আবার ভুতের মুভি দেখিস সেই জন্য।
হঠাৎ তানিয়া চিৎকার দিয়ে উঠলো আর ইরার গালে চুমু খেতে লাগলো।
আপা তুমি একটা জিনিয়াস।
–মানে কি?
কি বলছিস তুই?
আসলেই তুই একটা পাগলি।
ভাগ্যিস ইশানের সাথে তোর বিয়ে টা হয় নি।
–তানিয়া আবার চিৎকার দিয়ে উঠলো বুদ্ধি আমার আরো বেড়ে গেলো।
এই বলে সে ইরা কে আবার একটা চুমু দিলো।
–কি করছিস তুই?
–তুমি আমাকে পাগল ভেবো না আপা।
আমি আসলেই অনেক বুদ্ধিমান।
তবে ব্রেন টা আমার খুব দুষ্টু।
সহজে কাজ করে না।
ধীরে ধীরে কাজ করে।
–বলবি তো কি হয়েছে?
তুই এমন করছিস কেনো?
–তাহলে শোনো।
আমি অনেকক্ষন ধরে আমার ব্রেনের সাথে পরামর্শ করছিলাম যে দিশা কে আমি এর আগে কই দেখেছি।
কিন্তু আমার ব্রেন আর আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
তুমি যেই একটা টোকা দিলে আর মোবাইলের কথা বললে তখন মনে হলো যে আমি ফোনে দেখেছি দিশার ছবি।
তারপর আবার ভুলে গেলাম যে কার ফোনে দেখেছি।
যেই তুমি ইশানের কথা বললে তখন মনে হলো আমি দিশা কে এর আগে ইশানের ফোনে দেখেছি।
–তো কি হইছে?
ওর বউ এর ছবি ফোনে থাকতেই পারে।
–হ্যাঁ পারে।
কিন্তু ছবি টা আমি অনেক আগে দেখেছি।
কিন্তু এখন আমি এটা মিলাতে পারছি না যে তখন তো ইশানের সাথে দিশার বিয়েই হয় নি।
তাছাড়া দিশা আমাদের ফ্যামিলির চেনা পরিচিত কেউ না।
আর ইশান ও বিয়ের আগে ওকে দেখে নি।
তাহলে দিশার ছবি বিয়ের আগেই ইশানের ফোনে কিভাবে এলো?
ইরা বুঝতে পারলো ব্যাপার টা।
যে দিশার ছবি তানিয়া ইশানের ফোনে দেখেছে।
সে তানিয়া কে বললো এসব নিয়ে তুই এতো মাথা ঘামাচ্ছিস কেনো?
আজাইরা বুদ্ধিগুলো শুধু এমনি এমনি কমে ফেলছিস।
এসব নিয়ে আর না ভেবে নিজের কাজে মন দে।
–আচ্ছা ইরা আপা দিশা আবার ইশানের গার্লফ্রেন্ড না তো?
–তুই কি বলছিস এসব?
এসব আবোলতাবোল কথাবার্তা বলে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাস?
–রাগ করছো কেনো?
আমার মনে হলো তাই বললাম।
–আর বলবি না এসব কথা।
মা শুনলে তো ভাববে সত্যিই দিশা ইশানের গার্লফ্রেন্ড।
ইরা আর এ ব্যাপারে কথা না বলে অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করলো।
দিশা রুমে যেতেই ইশান তাকে বললো এই মাথামোটা?
তোমার বুদ্ধি তো দেখছি তানিয়ার থেকেও কম।
আমার গার্লফ্রেন্ড কে ছিলো তুমি জানো না?
কি করে এটা তুমি বিশ্বাস করলে যে তুমি ছাড়াও অন্য কেউ ছিলো?
–তানিয়া এমন ভাবে বলছিলো যে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
–আচ্ছা ধরো তুমি আর আমি দুইজনই অজানা।
আমি আমার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে না করে তোমাকেই করলাম।
আর তুমি বিয়ের পর জানতে পারলে তোমার স্বামীর রিলেশনের কথা।
তখন কি করতে?
দিশা ইশানের গলা টিপে ধরলো।
আর বললো খুন করতাম।
আমার জিনিস অন্য কারো কেনো হবে?
–সত্যি সত্যি দেখি খুন করছো?
আচ্ছা ছাড়ো এখন।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো তানিয়া কিন্তু তোমাকে চিনতে পেরেছে।
যদিও সিওর হতে পারছে না।
তবুও বলছি ওর সামনে একটু কম কম যাবে।
–হ্যাঁ ঠিক আছে।
ইশানঃতাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।
মা বাবার রুমে যেতে হবে।
আল্লাহই জানে কি আছে কপালে?
আমি কি করে যে এই ভুল টা করলাম?
দিশাঃSorry
আমার জন্য এসব হচ্ছে।
ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো আর বললো ঠিক আছে।
এবার ভুল হয়েছে।
পরবর্তীতে আর না হলেই হলো।
যা বলতে হবে মনে আছে তো?
–হ্যাঁ আছে।
মা যতই বকুক কোন উত্তর দিবো না।
চুপ করে শুনবো।
আর ক্ষমা চাইবো মার কাছে।
–Good.
লক্ষী বউ আমার।
ইশান দিশা কে নিয়ে তার মায়ের রুমে গেলো।
ইশানঃমা আসলে এতো তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছি যে কাউকে বলার সময় পাই নি।
ভুল হয়ে গেছে মা।
আমি জানি তোমরা অনেক টেনশন করেছো?
দয়া করে রাগ করে থেকো না।
তার মা চুপ করে আছে।
ইশান তার বাবার কাছে গেলো,
বাবা তুমি অন্তত বোঝার চেষ্টা কর।
ইশানের বাবা বললো কি এমন দরকার যে তাড়াহুড়ো করে বের হতে হলো?
ইশানঃদিশা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো।
তাই আমি কাউকে না বলেই তাড়াতাড়ি করে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম।
ইশানের মা এখনো চুপ করেই থাকলো।
–কথা বলছো না কেনো মা?
ইশান দিশাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো মায়ের কাছে ক্ষমা চাও।
দিশা তাই তার শাশুড়ী কে বললো মা আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।
আমি সত্যি সেদিন বুঝতে পারি নি।
আর করবো না এমন ফাজলামি?
Sorry maa.
Please Forgive me.
ইশানের মা কোন কথাই বলছে না।
ইশান কতবার মা মা করে ডাকলো কিন্তু কোন উত্তর দিলেন না।
ইশানের বাবা বললো তোর বিবেক আসলেই নষ্ট হয়ে গেছে।
তোর বাবা মা যে বেঁচে আছে তুই মনে হয় এটা ভুলে গেছিস।
আমরা যে তোকে নিয়ে টেনশন করবো এটা ভেবেছিলি কখনো?
যাওয়ার সময় বলে যাস নি।
আবার ওখানে গিয়ে তো একটা ফোন করতে পারতি?
ইশানঃআমার ফোন ভেংগে গেছে তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।
সেই কথা শুনে ইশানের বাবা বললো তোর বউ ভেংগেছে নাকি?
তোর বউ এর তো আবার অনেক রাগ।
দিশা সেই কথা শুনে ইশানের দিকে তাকালো।
ইশানঃনা,না।
ও ভাংবে কেনো?
আমার পকেট থেকে পরে গেছিলো।
ইশানের বাবা বললো তোর শশুড়বাড়িতে কি আর কারো ফোন ছিলো না?
ইশান আর কোন উত্তর দিতে পারলো না।
সে শুধু বার বার ভাবছে সে কি করে এই ভুল টা করলো।
ইশান তার মা কে জড়িয়ে ধরলো।
বললাম তো ভুল হয়েছে।
দরকার হলে কয়েকটা চড় দাও।
তা না হলে কান টা মলে দাও।
যা মন চায় করো।
আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে যে শাস্তি দেবে সেটাই মেনে নেবো।
সত্যি বলছি।
তবুও কথা না বলে থেকো না।
তুমি কথা না বললে আমি কার সাথে কথা বলবো?
প্লিজ মা।
রাগ করে থেকো না।
ইশানের মা কথা বললো এতোক্ষনে।
তোকে আমি কি বলেছিলাম?
দিশাকে আর আমি এ বাড়িতে দেখতে চাই না।
ওর মুখ আমি আর দেখবো না।
আর তুই কি করলি?
কাউকে না বলে ঠিক বউ এর কাছে চলে গেলি।
ওকে বাড়িতেও নিয়ে এলি।
তোর বাবার থেকেও পারমিশন নিলি না।
আর আমাকেও একবারের জন্যও বললি না।
আমি সব বুঝি রে বাবা।
বিয়ে করলে বউ ই সব থেকে আপন হয়।
আর মা বাবা হয় বোঝা।
তুই ভালো থাক এটাই আমি চাই।
কিন্তু আমি দিশাকে আর এ বাড়িতে থাকতে দেবো না।
ওকে চলে যেতে বল।
দরকার হলে তুই ও চলে যা তোর বউ এর সাথে।
আমার কোনো আপত্তি নাই।
ইশানঃমা কি বলছো এসব?
কই যাবো আমি?
মাঃযেখানে মন চায়।
যেখানে শুধু তুই আর তোর বউ থাকবে।
আর কেউ থাকবে না।
কেউ তোদের কে কথা শুনাবে না।
তোর বউ তার ইচ্ছামতো বেয়াদবি করতে পারবে।
কেউ বকবেও না।
ইশানঃমা,এইবারই লাস্ট।
আর দিশা কোন ভুল করবে না।
যদি সে এইরকম বেয়াদবি আবার করে আমি নিজে ওকে ঘর থেকে বের করে দেবো।
এই তোমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করলাম।
সে সত্যি অনেক অনুতপ্ত।
ও আমার কাছে অনেক কেঁদেছে।
তোমার সাথে ফাজলামি করে সে অনেক বড় ভুল করেছে।
সে বুঝতে পারে নি।
এবারের মতো ওকে ক্ষমা করে দাও।
প্লিজ মা।
দিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
তার খুব খারাপ লাগছে।
কেনো বার বার সে এমন করছে?
দিশা তার শাশুড়ীর পায়ে পড়লো।
কিন্তু কোন কথা বলতে পারলো না।
চোখের এক ফোঁটা পানি তার শাশুড়ীর পায়ে পড়লো।
তার শাশুড়ী দিশা কে ওঠালো।
এই দিশা তুমি কাঁদছো কেনো?
চোখ মোছো।
ইশানঃও এমন ই।
কিছু একটা বলতেই কেঁদে দেয়।
কোন শাসন ই করতে পারছি না আমি।
দিশা ইশানের দিকে তাকালো।
–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
আমি কি ভুল কিছু বললাম?
ইশানের মা বললো এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম।
পরবর্তীতে যেনো এরকম না হয়।
দিশার শাশুড়ী দিশা কে বললো আমি তোমার গুরুজন হই।
আমাদের সাথে তোমার ঠাট্টা করার সম্পর্ক নয়।
আমাদের কে সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে।
মনে থাকবে?
দিশা মাথা নাড়লো।
ইশানের মা ইশানের কান ধরে এমন জোরে মলা দিলো যে কানটা মনে হয় ছিঁড়েই গেলো।
কিভাবে তুই এটা করতে পারলি?
আমার তুই ছাড়া আর কে আছে?
তুই কোথায় যাবি কেনো যাবি আমাকে বলবি না?
বউ কে আনতে যাবি সেটা আমাকে বললে কি হতো?
–মা লাগছে তো।
ছেড়ে দাও।
–লাগার জন্যই তো ধরেছি।
আর তুই না বললি যা শাস্তি দেবে দাও।
–ঠিক আছে ঠিক আছে তাহলে কান টা ছিড়েই ফেলো।
তখন সবাই বলবে অমুকের ছেলের কান নেই।
তখন নিশ্চয় তোমার শুনতে ভালো লাগবে না।
ইশানের মা ইশানের কান ছেড়ে দিলো।
আর বললো তুই দিশা কে আনতে যাবি সেটা আমাকে বললে কি ক্ষতি হতো?
অন্তত তোর বাবা কে বলতে পারতি বা ইরা কে বললেও হতো।
–তুমি যদি না যেতে দাও তাই বলি নি।
–আমি যদি এমন টাই চাইতাম তাহলে তো তোকে বিয়ে করাতাম না?
আমার আঁচলে বেধে রাখতাম।
তোর বাবা কালকেই এ নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে যে দিশা কে তার বাড়ি থেকে আনতে হবে।
আমি আরো বললাম সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।
ইশান নিজে গিয়ে নিয়ে আসবে।
তখন তোর বাবা বললো তোমার থেকে পারমিশন না নিয়ে সে জীবনেও দিশা কে আনতে যাবে না।
কিন্তু কি হলো?
তুই কাউকে না বলে একাই গিয়ে নিয়ে আসলি।
ইশান তার মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুইলো।
আর বললো সত্যি আমি অনেক বড় ভুল করেছি মা।
জীবনেও এই ভুল আর হবে না।
দেখে নিও।
আর যদি আবার এইরকম কোন ভুল করি তাহলে আমাকে শাস্তি দিও কিন্তু কথা বলা বন্ধ করবে না।
তাহলে কিন্তু আমি দম ফেটে মরে যাবো।
–কি বলছিস এসব?
এসব কথা মুখে আনবি না খবরদার।
ইশানের বাবা বললো তোরা কি আজ ঘুমাবি না?
দিশা মা রুমে যাও।
ইশান তুইও যা।
ইশান বললো বাবা আজ আমি মায়ের কোলেই ঘুমাবো।
তোমরা চলে যাও সবাই।
ইশানের মা বললো তোর বউ আবার রাগ করবে।
যা ঘরে যা।
দিশা বললো রাগ করবো কেনো?
সেই কথা বলে দিশা রুমে চলে গেলো।
ইশানের মা বললো তোর বউ কিন্তু রাগ করে চলে গেলো।
যা ঘরে যা।।
–রাগ করে করুক।
আজ আমি এখানেই থাকবো।
তোমার কোলেই ঘুমাবো।
আমার চুল গুলো বুলিয়ে দাও।
ইশানের বাবা তাই রুমের ভিতর যে সোফা আছে ওখানেই শুয়ে পড়লো।
আর ইশান তার মায়ের কোলে।
তার মা আজ অনেক খুশি হলো।
তার ছেলে কে নিয়ে সেই জন্যই তো তার গর্বের শেষ নেই।
এরকম ছেলে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।
Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৮
দিশা ছিলো খুব চঞ্চল,রাগী এবং অভিমানী মেয়ে।
তবে ইশান কে অনেক ভালোবাসতো।
আর অন্যদিকে ইশান হলো দিশার রাগ ভাঙ্গানোর কারিগর।
কারন দিশা জানে ইশান তার মন ভালো করার জন্য যা ইচ্ছে তাই করতে পারে।
এইজন্য একটুতেই অভিমান করতো।
আবার ইশানের সামান্য বকাতেই কেঁদে ফেলতো সে।
একবার দিশা ইশানের সাথেও ফাজলামি করেছিলো।
সে কলেজের একটা মেয়েকে বলেছিলো যে ইশান তাকে ভালোবাসে।
আর সে যেনো ইশানের আগেই তাকে প্রপোজ করে।
এ ব্যাপারে সে নিজে সাহায্য করবে।
মেয়েটি সেই কথা শুনে সবার সামনে ইশান কে প্রপোজ করেছিলো।
মেয়েটা আবার কলেজের প্রফেসরের মেয়ে ছিলো।
ইশান যখন তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো মেয়েটা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ইশান কে মার খেয়ে নেয়।
তখন ইশান দিশা কে ইচ্ছামতো বকেছিলো।
দিশা সেইজন্য তার ফোন ভেঙে ফেলে।
আর ইশানের সাথে যোগাযোগ অফ করে দিয়েছিলো।
সেবার অনেক কাহিনি করে দিশার রাগ ভাঙ্গিয়েছে সে।
আবার একবার দিশা ইশানের সাথে রাগ করে এক ছেলের সাথে মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করেছিলো।
যাতে ইশান জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
কিন্তু শেষে ছেলেটি সত্যি সত্যি তাকে ভালোবেসে ফেলে।
দিশা কে পাওয়ার জন্য সে পাগল হয়ে যায়।
শেষে গুন্ডা লাগিয়ে দেয় দিশাকে উঠে আনার জন্য।
তখন সবাই ভয়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো।
শেষে দিশার সাথে দুইজন পুলিশ ছদ্মবেশে পাহারায় রাখা হয়েছিলো।
এইভাবে যেই তারা দিশাকে তুলে নিয়ে যেতে ধরে তখন পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।
তখন ইশান দিশা কে কয়েক টা চড় মেরেছিলো।
আর যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।
কিন্তু দিশা ইশান কে পাগলের মতো ভালোবাসতো।
এদিকে ইশান ও তার কোন খোঁজখবর নিচ্ছিলো না।
সেই দুঃখে সে আত্নহত্যা করতে ধরে।
কারন দিশা খুবই ইমোশনাল একটা মেয়ে।
সে যখন ভালো তখন খুব ভালো।
কিন্তু রেগে গেলে আর রেহাই নেই।
এইরকম আরো অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে দিশা।
যার জ্বলন্ত প্রমান ইশান নিজেই।
ইশান আর রাগ করে থাকতে পারলো না।
সে দিশাকে ফোন দিলো।
কিন্তু দিশার ফোন অফ ছিলো।
ইশান এবার তার শশুড় কে ফোন দিলো।
তিনি জানালেন বাহিরে আছেন।
ইশান এবার তার শাশুড়ী কে ফোন দিলেন।
তার শাশুড়ী জানালো দিশা কাল থেকে কিছু খাচ্ছে না।
ওর নাকি শরীর খারাপ।
আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলাম তখন বললো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মতো অসুখ নয়।
কিন্তু আজ সকাল থেকে একবার ও বাহিরে বের হয় নি।
ইশানঃকি বলছেন মা?
ওকে ডাকেন নি?
–ডেকেছি অনেকবার।
কিন্তু খুলছে না।
ইশান আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।
সে সকাল বেলায় দিশার বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
টেনশনে তার কিছু ভালোও লাগছে না।
এদিকে তাদের বাড়িও বের হচ্ছে না।
ইশানের মনে হচ্ছে গাড়ি টা খুব ধীরে ধীরে যাচ্ছে।
সেজন্য সে ড্রাইভার কে বললো ভাই একটু দ্রুত চালান না?
ড্রাইভার বললো দ্রুতই তো চলছে।
ইশানের অস্থিরতা বেড়ে গেলো।
এই মেয়েটা সারাজীবন তাকে এইরকম টেনশনের মধ্যেই রাখে।
তাকে একটু ও শাসন করা যায় না।
যদি শাসন করা হয় তাহলে তো তার রাগ ভাঙ্গাতে জীবন টাই শেষ।
অনেক অপেক্ষার পর ইশান দিশার বাড়ি পৌঁছলো।
ইশান কে দেখে দিশার মা এগিয়ে এলো।
বাবা তুমি?
তখন তো বললে না আসবে?
ইশান তার শাশুড়ীর প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো দিশা কই?
তার শাশুড়ী বললো এতোক্ষনে দরজা খুললো।
মনে হয় ফ্রেশ হচ্ছে।।
তুমি ঘরে গিয়ে বসো।
ইশান দিশার রুমে গিয়ে বসলো।
কিন্তু দিশা এখনো আসতেছে না কেনো?
তাকে একটিবার দেখার জন্য সে পাগল হয়ে আছে।
ইশান রুমের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলো।
হঠাৎ দিশা বাথরুম থেকে বের হলো।
কিন্তু দিশা ইশান কে দেখেই দিলো এক দৌঁড়।
দিশা তার মায়ের কাছে গেলো।
তার মা বললো তুই এখানে কেনো?
জামাই এসেছে দেখিস নি?
দিশা বললো এসেছে তো কি হইছে?
দিশার মা দিশার উপর খুব রাগ হলো।
আর বললো জামাই এর কাছে যা।
দিশা রাগ করে অন্য রুমে চলে গেলো।
ইশান তার শাশুড়ী কে জিজ্ঞেস করলো দিশা কই গেলো মা?
তার শাশুড়ী বললো এখানেই তো ছিলো।
ইশানের খুব রাগ হতে লাগলো।
সে শুধু ভাবতেছে একবার শুধু দেখা পাই।
ফাজলামি শিখে দেবো।
ইশানের শাশুড়ী জামাই কে খেতে দিলো।
ইশান বললো মা এখন আমি কিছুই খাবো না।
আর দিশা কে একটু ডাকুন।
বেশি দেরী করবো না আমি।
ওকে নিতে এসেছি।
দিশার মা খুবই রেগে গেলো।
দিশা এরকম ব্যবহার কেনো করছে?
তিনি দিশাকে ডাকতে লাগলেন।
আর বললেন তাড়াতাড়ি বের হ।
ইশান নিতে এসেছে তোকে।
দিশা ঘরের ভিতর থেকে উত্তর দিলো সে যাবে না।
দিশার মা বললো তুই যদি এখন দরজা না খুলছিস তাহলে কিন্তু দরজা একেবারে ভেঙ্গে ফেলবো।
আর তোর বেয়াদবি শিখে দেবো।
খোল বলছি।
দিশা বললো আগে ওকে চলে যেতে বলো।
ও চলে না গেলে আমি কিছুতেই বের হবো না।
কারন আমি ওর সাথে কোন কথা বলতে চাই না।
ওর মুখ ও দেখতে চাই না।
আমি আর যাবো না ও বাড়িতে।
দিশার মা ইশান কে বললো বাবা দেখো তো দরজা টা ভাঙ্গা যায় কিনা?
আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন।
বেশি আদর করে করে মাথায় উঠে গেছে।
ইশান বললো মা ওকে আর কিছু বলেন না।
আমি চলে যাচ্ছি।
ও না যেতে চাইলে আর কি করার আছে?
আমার খুব ভয় হচ্ছিলো।
তাই ছুটে এলাম।
দিশার মা এবার ভালো করে বললো দিশা বের হয়ে আয় বলছি।
কিছুই বলবো না।
এরকম করতিছিস কেনো?
দিশা বললো আমি কিন্তু ওর সাথে যাবো না।
দিশার মা বললো ঠিক আছে।
দিশা দরজা খুলে দিলো।
কিন্তু দরজা খোলার সাথে সাথেই দিশার মা দিশার দুই গালে ইচ্ছামতো চড় মারতে লাগলো।
ফাজলামি করিস?
এতো বেয়াদব তুই কেমনে হইলি?
ইশান তার শাশুড়ী কে আটকালো।
মা কি করছেন?
ব্যাথা পাচ্ছে তো।
দিশার মা ইশান কে বললো বাবা তুমি আজ একটা কথাও বলো না।
তোমার জন্য সে আজ এমন হয়েছে।
প্রথম থেকে যদি ওকে শাসনে রাখতে সে কিছুতেই এমন করতে পারতো না।
এই বলে আবার চড় দিলো।
ইশান তার শাশুড়ী কে থামালো।
কিন্তু আজ দিশার মায়ের অনেক বেশি রাগ হচ্ছিলো।
মেয়ে মানুষের এতো জিদ হবে কেনো?
এই বলে দিশার চুলের মুটি ধরলো।
ইশান দিশাকে এক ঝটকায় তার মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
আর শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
মা আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন?
খবরদার ওর গায়ে আর হাত দিবেন না।
অন্তত আমার চোখের সামনে না।
আমার চোখের আড়ালে আপনার মেয়ের সাথে যা ইচ্ছা করতে পারেন।
আমার চোখের সামনে কেউ ওকে মারবে এটা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না।
তারপর ইশান তার চুল গুলো ঠিক করে দিলো।
তার গাল বোলাতে লাগলো।
তার শাশুড়ী না থাকলে হয় তো গাল দুটোই একটু আদর করে দিতো।
দিশা ইশান কে ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিলো।
তুমি ধরছো কেনো আমাকে?
আজাইরা দরদ দেখাতে আসছে।
আমাকে মারুক,কাটুক তোমার কি তাতে?
তুমি কি জন্য এসেছো এখানে?
চলে যাও।
আজ তোমার জন্য মা আমাকে মারলো।
এই বলে আবার জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
তারপর তার রুমে চলে গেলো।
ইশান দিশার পিছু পিছু গেলো।
দিশা বিছানায় শুয়ে কাঁদতেই আছে কাঁদতেই আছে।
ইশান গিয়ে দিশা কে জড়িয়ে ধরলো।
দিশা কাঁদতে কাঁদতে বললো কেনো এমন করতেছো তুমি?
আমাকে কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছো?
আমি বললাম তো আমাকে ভালো লাগছে না তবুও বার বার কেনো যেতে বলছো?
ইশান বললো আমি কষ্ট দিচ্ছি?
না তুমি আমার উপর মানসিক আঘাত করছো?
তুমি তো জানো আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত ও থাকতে পারি না।
তবুও বার বার কেনো দূরে ঠেলে দিচ্ছো?
দিশা কোন উত্তর দিলো না।
ইশান দিশাকে তার পাশ করলো।
কিন্তু দিশা আবার অন্যপাশ হলো।
তাই আর তাকে বিরক্ত করলো না।
দিশাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলো।
ইশান দিশা কে বললো যাবে না আমার সাথে?
দিশাঃনা।
ইশানঃকেনো?
দিশাঃএমনি।
ইশানঃতাহলে কবে যাবে সেটা বলো।
আমি সেই দিন তাহলে নিতে আসবো।
দিশাঃআমি কোন দিনই আর যাবো না।
আমি আজ থেকে তোমার সাথে ব্রেকাপ করলাম।
এই বলে সে ইশান কে সরিয়ে দিলো।
ইশান হাসতে লাগলো।
আমরা কি এখনো বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড আছি?
তাই ব্রেকাপ করে দিচ্ছো?
দিশা বললো তাহলে যেটা করলে তোমার মুখ আর দেখতে হবে না।
তোমার বাড়ি আর যেতে হবে না।
আর তুমি জোর করে আমাকে ধরতে পারবে না সেটা করবো।
ইশান দিশার মুখে হাত দিলো কি বলছো এসব?
এসব কথা বলা ঠিক না?
ঠিক আছে তুমি যদি আমাকে ছাড়া ভালো থাকো তাহলে আর আসবো না তোমার কাছে।
তবে এসব আজেবাজে কথা কখনোই বলবে না।
কারন আমাদের মাঝে ঝগড়া হবে,
রাগ থাকবে,
অভিমান থাকবে,
দূরত্বও থাকবে,
কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা জীবনেও ভাববো না।
আমাকে যখন একটুও সহ্য হচ্ছে না তাহলে আমি আর আসবো না।
তোমার যেদিন ইচ্ছা করবে সেইদিন যেও।
–কোনদিনও আর ইচ্ছে করবে না।
ইশান আর কোন কথা বললো না।
সে দিশাকে জোর করেই জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো এতো রাগ কই থেকে আসে?
রাগ টা একটু কম করা যায় না?
–ছাড়ো আমাকে।
আর আমার রাগ কখনোই কমবে না।
–তাই?
চ্যালেঞ্জ করছো?
–কিসের আবার চ্যালেঞ্জ?
ইশান দিশাকে বললো আমার চোখের দিকে তাকাও।
আর বলো আমি চলে গেলে তুমি খুব খুশি হবে।
তাহলে সত্যি বলছি আর আসবো না কখনো?
–বলবো না?
–আজ বলতেই হবে তোমাকে।
দিশা উঠে যেতে ধরলো।
ইশান তাকে আবার টেনে আনলো কাছে।
–আবার ধরছো কেনো?
তুমি আর আমাকে ধরতে পারবে না।
আমি তোমাকে আর ধরতে দেবো না।
ইশান ছেড়ে দিলো দিশাকে।
ঠিক আছে।
No ধরাধরি।
No ছাড়াছাড়ি।
Only going বাড়ি।
এখন একটু রেডি হও দেখি।
তাড়াতাড়ি চড়তে হবে গাড়ি।
বউ যাবে তার শশুড় বাড়ি।
So no কান্দাকান্দি।
Only ভালোবাসাবাসি।
আর,,,,,,,
বাকি টা গিয়ে বলবো বাড়ি।
এখন রেডি হও তাড়াতাড়ি।
করো না আর আড়ি।
আমি যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি।
তোমার মা যে তোমাকে মারলো তার জন্য very very sorry.
Love you আমার জান পাখি।
এখন কি তোমাকে একটু ধরতে পারি?
দিশা সেই কথা শুনে হাসতে লাগলো।
এসব কি বলছো তুমি?
পাগল হয়েছো নাকি?
–আরো বলবো?
–না।
দরকার নাই।
আমি এখন রেডি হতে যাচ্ছি।
–এতো তাড়াতাড়ি রাগ কমে গেলো?
–একটুও কমে নি।
আর আমি রাগ করেই তোমাদের বাড়ি যাচ্ছি।
কারন মা আমাকে কেনো এতো গুলো কেনো মারলো?
কি কারনে মারলো?
তাই আমি ঠিক করেছি আর এ বাড়িতে আসবো না।
ইশান দিশাকে আবার জড়িয়ে ধরলো আর বললো মা কে যেনো এসব কথা বলো না।
অনেক কষ্ট পাবে।
তাছাড়া তুমি যা শুরু করেছিলে আমার ই তো চড় দিতে ইচ্ছে করছিলো।
–মারো।
এখন মারো।
এই বলে ইশানের হাত দুটি ধরে তার গালে চড় দিতে লাগলো।
–কি করছো?
আমার বউ কি পিটন খাওয়ার জন্য নাকি?
শুধু আদর আর ভালোবাসার জন্য।
আর কিছু না।
এরপর থেকে যে পিটন দিবে আমি তার উপর অনেক রেগে যাবো।
ঠিক আছে?
দিশার রাগ কিছুটা কমেছে।
ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো।
আর বললো তুমি বড়দের মুখে মুখে যে তর্ক করো তার কি হবে?
বড়রা কোন কথা বললে চুপ করে শুনবে।
যদি চুপ করে থাকতে না পারো ঘরে এসে সেগুলো আমাকে বলবে।
যা মন চায়।
কিন্তু আর যেনো আমার বাবা মা বোন এবং তোমার ফ্যামিলির ও কারো সাথে তর্ক করতে না দেখি।
দিশা চুপ করে থাকলো।
–কি হলো?
কিছু তো বলো?
–আমি কিছু বললেই সেটা অপরাধ হয়ে যায়।
তাই আজ থেকে কোন কথা বলবো না।
কারো সাথেই না।
–এটাও একটা বেয়াদবি।
কথা বলবে না কেনো?
কথা না বললে তখন সবাই বলবে মেয়েটা খুব অহংকারী।
ভাব নিয়ে চলে।
–তুমি কি আমাকে এসব উপদেশ দেওয়ার জন্য এসেছো?
–না তো।
বউ টাকে একটু দেখার জন্য এসেছি।
এই বলে দিশাকে আদর করতে লাগলো।
–আবার?
বারন করলাম যে?
ইশান হাসতে লাগলো আর বললো মন থেকে বলছো?
–তো?
–মুখ ফুটে বললেই তো হয় জোর করেই আদর করো।
–মানে?
–এখন একটু চুপ করবে তুমি?
সবসময় ডিস্টার্ব করো।
দিশা এবার নিজেই ইশান কে কিস করলো।
আর বললো আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছো তুমি?
–না।
তবে মায়ের সাথে যা করেছো তার জন্য এখনো রাগ হচ্ছে।
–,বাড়ি গিয়ে মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো।
তাহলে কি রাগ কমবে তোমার?
–একটু কমবে।
তবে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবে না।
–ঠিক আছে।
আজ আর ইশান দিশা কে নিয়ে বাড়ি গেলো না।
এদিকে সে বাড়িতে ফোন করে একবার ও জানায় নি যে সে দিশা কে নিতে এসেছে।
সে দিশা কে কাছে পেয়ে সব ভুলে গেলো।
এদিকে তার বাবা মা তার জন্য চিন্তা করতে লাগলো।
ফোনটাও বন্ধ ছিলো।
কারন দিশা ফোন টা রাগ করে ফেলে দিয়েছিলো।
ফোন টা সেখানেই বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৭
দিশা টেনশনে কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না।
একদিকে ইশান আর তানিয়া একই বাড়িতে একসাথে আছে।
অন্যদিকে আবার ইশানের সাথে সে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে।
সে এখন কি করবে?
অনেক ভেবেচিন্তে সে একটা বুদ্ধি বের করলো।
দিশা তার শাশুড়ীকে বললো মা আপনাকে আজ বাড়ি যেতেই হবে।
দিশার শাশুড়ী এবার রেগে গেলো।
বার বার কেনো দিশা তাকে বাড়ি যাওয়ার কথা বলছে।
তিনি রাগ হয়ে বললেন তোমার বাবা কি দুইদিনেই হাঁপিয়ে গেলো?
যেভাবে বার বার বাড়ি যেতে বলছো মনে হচ্ছে আমরা অনেক বেশি খাচ্ছি।
যে আর সামলানো যাচ্ছে না।
দিশা বললো ছিঃ মা এসব কি বলছেন?
আপনি যদি সারাবছর এখানে থাকেন কোন সমস্যা নেই আমাদের।
কিন্তু আপনি এখানে আর একদিন থাকলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে।
–বিপদ?
কিসের বিপদ?
–আমি শুনলাম বাবা বাসায় কোন এক মেয়ে কে নিয়ে এসেছে।
–কে সে?
–আমি তো সেটা বলতে পারবো না।
তবে আমি শুনলাম বাবা তাকে নিজেই কই থেকে যেনো এনেছে।
–তুমি কার থেকে শুনলে?
–শুনলাম একজনের কাছ থেকে।
–তোমার শশুড় কে আগে ফোন দেই।
দেখি কে সে?
–না,না।
এই ভুল করবেন না।
তাকে যদি ফোন দিয়ে জানান তাহলে তো মেয়ে টাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।
তখন আপনি তো হাতেনাতে তাকে ধরতে পারবেন না।
দিশার শাশুড়ী কেঁদে উঠলো।
এই বয়সে ওনার ভীমরতি ধরেছে রে!
সেই জন্য আসার সময় একবার ও বারন করলো না।
একবারও বললো না যে,
ইশানের মা তুমি যেনো বেশিদিন থেকো না।
তাড়াতাড়ি চলে এসো।
ইরা বললো কি হয়েছে মা?
–বেশি দেরী করিস না মা।
তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নে।
বাড়ি যেতে হবে।
–কেনো?
–এই উত্তর আমি তোকে দিতে পারবো না।
অনেক লেট হয়ে যাবে।
ইরা তার মায়ের উপর রাগ হলো।
কান্না করা বাদ দিয়ে বলো কি হয়েছে?
–তোর বাবা নাকি বাসায় কোন এক মেয়ে এনেছে?
সেই কথা শুনে ইরা বললো কি বলছো এসব?
বাবা এমন কাজ করতেই পারে না।
হঠাৎ ইরার মনে হলো আজ তো বাসায় তার স্বামী আসার কথা।
সে আবার কাউকে আনলো নাকি?
তাছাড়া বাবা তো জীবনেও এ কাজ করবেন না।
আর ইশান তো নয় ই।
তার মানে?
তার স্বামী,,,,,
ইরা এবার চিৎকার দিয়ে উঠলো।
ইরা বললো মা এটা হয় তো তোমার জামাই এর কাজ।
আজ তো ওর আসার কথা ছিলো।
আর এক মুহুর্ত ও দেরী করা যাবে না।
তাড়াতাড়ি চলো।
ইরাও কাঁদতে লাগলো।
তার সন্দেহ হলো তার স্বামী কাউকে এনেছে।
দিশা বললো আজকাল ছেলেমানুষের কোন গ্যারান্টি নাই?
বাড়িতে বউ না থাকলেই অন্য খানে সুযোগ খোঁজে।
কে জানে কার কপাল পুড়লো?
দিশার শাশুড়ী আর ননদ সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো।
তারা এতোটাই টেনশনে ছিলো যে দিশা কে একবারের জন্যও বললো না তুমি যাবে কিনা?
দিশা ও সুযোগ পেয়ে গেলো।
সে আর গেলো না।
দিশার কিছুটা হলেও টেনশন কমে গেলো।
কারন তার শাশুড়ী আর ননদ বাসায় চলে গেলে তানিয়া বেশি একটা ঘুরঘুর করতে পারবে না।
কারন তানিয়া বাসায় আসলে তার শাশুড়ী এক মুহুর্তের জন্যও তাকে হাতছাড়া করে না।
কারন তার শাশুড়ীর মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া,
চুল বেঁধে দেওয়া,
আরো অনেক কাজ তানিয়ার থেকে করে নেয়।
তানিয়া এই জন্য এ বাড়িতে বেশি থাকতে চায় না।
ইশানের মা আর বোন বাসায় পৌঁছলো।
ইশান তার মায়ের গলা শুনে হাসতে লাগলো।
সে ভাবলো দিশাও এসেছে।
আর মনে মনে বললো আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে!
বেচারা!!!
রাত টা পার হতেই এসে হাজির।
ইশান ভাব নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলো।
সে ভাবলো আমি নিজের থেকে কথা পর্যন্ত বলবো না।
এদিকে ইশানের মা চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো।
কিন্তু বাসায় তো কেউ নাই।
ইশানের বাবা অফিস গেছে।
ইরা তার স্বামীকে ফোন দিলো।
তার স্বামী জানালো সে এখনো বাসায় আসে নি।
ইরা বললো বাঁচলাম বাবা।
তার স্বামী বললো কি বলছো এসব?
ইরা বললো তুমি ওসব বুঝবে না।
ইশানের মা রান্নাঘরে ঢুকে দেখে কেউ নাই।
এবার তিনি তার বেডরুমে গেলেন।
কিন্তু গিয়ে যা দেখলেন তা দেখে তার মাথা ঘুরতে লাগলো।
একটা মেয়ে গায়ে মাথায় কাপড় দিয়ে শুয়ে আছে।
ইশানের মা কাঁদতে লাগলো আর বললো ইরা তুই কই?
তোর বুড়া বাপ টা তো বিয়ে করেছে।
আর তার বেডরুমেই থেকেছে।
এই বয়সে আমার কপাল পুড়লো রে!!!
আমি এখন কই যাবো?
ভালোবেসে তার হাত ধরে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছি।
এইজন্য আমার বাপ টা হার্ট অ্যাটাক এ মারা গেছে।
সেই জন্য এখনো আমি অনুশোচনা করি।
আমার মা তার মৃত্যুর সময়ও আমার মুখ দেখে নি।
আমি কত টা কষ্ট চাপা দিয়ে শুধু তোদের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করছি।
কিন্তু তোর বাপ এই বয়সে এটা কি করলো?
আমার সাথে এতোবড় প্রতারণা করতে পারলো?
ইরা দৌঁড়ে এলো তার মায়ের রুমে।
সেও অবাক হলো!!
তার বাবা মার বিছানায় কে শুয়ে আছে?
ইশানের মা কোন কিছু না ভেবেই ঝাটা হাতে নিয়ে দিলো উড়াধুরা মার।
তানিয়া তো সেই জোরে চিৎকার করে উঠলো।
বাবা রে বাঁচাও।
মরে গেলাম।
ইরা বললো মা এটা তানিয়া।
তার মা ইরা কে বললো তুই ও তাহলে চিনিস একে?
তোরা সবাই এক জোট হয়েছিস?
এই বলে আবার মারতে লাগলো।
তানিয়া বললো খালা আমি?
আমি তানিয়া?
ইশানের মা এতোটাই রেগে আছে যে কারো কথায় তার কানে ঢুকছে না।
ইরা তানিয়া কে বললো মুখ থেকে কাপড় টা সরা।
তাহলেই তো মা চিনতে পারে।
তানিয়া বললো ইরা আপা বাঁচাও আমায়।
খালা তো সে সুযোগ ই দিচ্ছে না।
ইরা তার মাকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করলো।
কিন্তু তার মা ইরা কেও ফেলে দিলো।
এদিকে তানিয়া ইশানের মায়ের সাথে গোল্লাছুট খেলতে লাগলো।
একবার খাটের উপর ওঠে আর একবার নিচে নামে।
এইভাবেই কিছুক্ষন চলছিলো।
ঘরের মধ্যে এতো বেশি চিৎকার হচ্ছিলো যে ইশান ও চলে এলো।
ইশান বললো মা কি হয়েছে?
তানিয়ার পিছু ধাওয়া করছো কেনো?
ইশান তার মায়ের হাত থেকে ঝাটা টা কেড়ে নিলো।
তারপর তার মায়ের হাত দুটা ধরলো।
ইশানের মায়ের শরীর একদম হাঁপিয়ে গেছে।
তিনি কোন কথাই বলতে পারছেন না।
তিনি শুধু পানির নাম নিতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
কারন টেনশনে আর জোরে জোরে চিল্লানোর ফলে তার প্রেশার হাই হয়েছে।
ইরা তার মায়ের জন্য পানি আনলো।
এবং ইশান তাকে বিছানায় শুয়ে দিলো।
ইশান তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
আর ইরা কে বললো ডাক্তারের কাছে ফোন দে।
ইরা তাই করলো।
এদিকে তানিয়া জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
সে ব্যাগ গোছাতে লাগলো।
আর এক মুহুর্ত ও নয়।
এ বাড়িতে সে আর আসবেই না।
ইশান তাকে আটকালো।
আর বললো কি হয়েছে তানিয়া?
তানিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো আমি খালার বিছানায় একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
ভাবলাম খালা থাকতে তো বিছানায় বসাও যায় না।
তাই যেহেতু খালা নাই এই সুযোগে একটু বিছানায় ঘুম পাড়ি।
তাই খালা আমাকে এমনভাবে মারলো।
আমি কি এমন দোষ করেছি?
শুধু তো একটু শুয়েছিলাম।
তাছাড়া আজকেই এসব ধুয়ে দিতাম।
ইরা বললো না না সেজন্য না।
তুই ভুল ভাবছিস তানিয়া।
ইরা ইশান কে সব কথা বলে দিলো।
যে দিশা তাদের বোকা বানিয়েছে।
সে কথা শুনে ইশান খুব রেগে গেলো।
সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এতো কিছু হয়ে গেলো?
তার মা হলো হাই প্রেশারের রোগী।
আর কিছুক্ষন এরকম করতে থাকলে না জানি কি হতো?
ইশান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো।
ইশান দিশা কে ফোন দিলো।
ফোন পেয়ে দিশা তো সেই খুশি!!!
মনে মনে ভাবলো কেমন বোকা বানালাম?
সে আনন্দে ফোন ই ধরলো না।
ইশান আবার ফোন দিলো।
দিশা একটু ভাব দেখালো।
এবার ফোন টা ধরলো।
দিশাঃকি ব্যাপার ইশান সাহেব?
কেমন বোকা বানালাম?
ভাবছো আমিও ওদের সাথে গিয়েছি?
আর আপনি কখন আসতেছেন?
না রওনাও দিয়েছেন?
আমাকে নিতে আসলেও কিন্তু যাবো না।
দেখি আমাকে ছাড়া কতদিন থাকতে পারেন?
ইশানঃচুপ করো বেয়াদব মেয়ে।
সবাই বলে তুমি একটা ফাজিল মেয়ে।
এক নাম্বারের বেয়াদব।
আজ আমি নিজেও বলছি শুধু তুমি বেয়াদব না এক নাম্বারের দুষ্টু মেয়ে।
সব বিষয় নিয়ে ফাজলামি করতে করতে তোমার সাহস অনেক বেড়ে গেছে।
তুমি একদম মাথায় উঠে নাচতেছো?
আমি তোমাকে অনেক বেশি ছাড় দিয়ে ফেলছি।
আজ যদি আমার মায়ের কিছু হতো তোমাকে একদম খুন করে ফেলতাম।
দিশাঃকি বলছো তুমি?
কাকে বলছো এসব?
ইশানঃআমি যাকে ফোন দিয়েছি তাকেই বলছি।
আর তোমাকে এ বাড়িতে আসতে হবে না।
কেউ আর যাবে না তোমাকে আনতে।
তুমি ওখানেই থাকো।
খুব শখ বাবার বাড়িতে থাকার তাই না?
সারাজীবনের জন্য থাকো।
তুমিও নিজের থেকে আর আসবে না।
দিশাঃকি করেছি আমি?
ইশানঃএখনো বলছো কি করেছো?
মাকে কি বলেছো?
মা সেই উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে।
আর কিছুক্ষণ এরকম করলে না জানি আজ কি হতো?
তোমার সাথে কথা বলতেই আমার কেমন জানি লাগছে।
ফোন রাখো।
জীবনেও আর ফোন দিবে না তুমি।
আমাকে নিয়ে সন্দেহ করো তাই না?
তানিয়ার প্রতি কোন ফিলিংস থাকলে তোমাকে তো এতো কাহিনী করে বিয়ে করতাম না?
ওকেই করতাম।
দিশাঃআমার ভুল হয়েছে।
আমি সত্যি বুঝতে পারি নি এতো কিছু হয়ে যাবে।
সরি বলছি।
ইশানঃচুপ করো।
কিসের সরি?
যদি মার কিছু হতো?
মাকে তোমার এই সরি কি ফিরিয়ে দিতে পারতো?
দিশাঃবললাম তো ভুল হয়েছে।
মা এখন কেমন আছে?
আমি এখনি আসছি।
ইশানঃখবরদার এ বাড়িতে আর আসবে না।
তোমার আসার কোনো দরকার নেই।
যদি আসতেছো তাহলে কিন্তু মা অপমান করে বের করে দিবে।
তুমি আমার সাথে ফাজলামি করো ঠিক আছে।
আমি মানিয়ে নিলাম।
তুমি আমার বাবা মার সাথেও ফাজলামি করা শুরু করেছো?
দিশা কাঁদতে লাগলো।
বললাম তো ভুল হয়েছে।
আর হবে না এমন।
তুমি প্লিজ নিতে এসো আমাকে।
আমি বাড়ি যাবো।
প্লিজ ইশান।।।
ইশান কল কেটে দিলো।
আজ আর দিশার চোখের পানি তার মন গলাতে পারলো না।
ইশানের চোখে পানি এসে গেলো।
কারন সে তার মা কে অনেক বেশিই ভালোবাসে।
তার মা কষ্ট পাবে দেখে এখন পর্যন্ত সে বলে নি যে সে তার প্রেমিকাকেই বিয়ে করেছে।
কারন তার মা প্রেমের বিয়েকে আর সাপোর্ট করে না।
তারাও প্রেম করে বিয়ে করেছিলো।
কিন্তু তার বিনিময়ে তিনি তার বাবা কে হারিয়েছিলেন।
তার মাকে এতো কম সময়ে বিধবা করেছিলেন।
এই জন্য তার মা তার মুখ দেখবে না দেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলো।
এইজন্য ইশানের মা Love Marriage এর কথা শুনলে অনেক বেশি রেগে যায়।
কিন্তু তার মেয়ে ইরাও Love Marriage করেই বিয়ে করেছে।
তবে তার স্বামী ঘর জামাই থাকে।
কারন তার মা বাবা কেউ নাই।
এতিমখানায় বড় হয়েছে ছেলেটা।
তাই ইশানের মা কে সবাই অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে।
কিন্তু তার ছেলে ইশান কে তিনি কোন ভাবেই এই ভুল করতে দিবে না।
সে যাতে প্রেম না করতে তার জন্য তার মা তার সাথে সাথে কলেজে যেতো।
কিন্তু এভাবে আর কত দিন ইশান কে তিনি পাহারা দিবেন?
তাই ইশানের কাছে প্রমিজ করে নেন যে সে যেনো কোন প্রেম না করে।
কোন মেয়ের দিকে না তাকায়।
তার মা নিজে পছন্দ করে সবচেয়ে সুন্দর ও ভালো মেয়ের সাথে তার বিয়ে দেবে।
ইশান সেদিন তার মার কাছে প্রমিজ করলেও দিশা কে দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি।
তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে।
দিশার ও ভালো লেগে যায় তাই সে আর ইশানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নি।
ইশানের মা পরে যখন তানিয়ার সাথে তার বিয়ে ঠিক করে তখন ইশান বলে যে সে একজন কে পছন্দ করে।
তাকেই বিয়ে করতে চায়।
ইশানের মা কোনভাবেই রাজি হয় নি সেদিন।
তাই তো ইশানের চাকরি না হতেই বেকার ছেলের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করে দেন।
ইশান মাঝে মাঝে ভাবে মা কে বলা দরকার সত্য টা।
কারন মা যেদিন নিজেই শুনবে সেদিন খুব কষ্ট পাবে।
ইশানের প্রতি তার ভালোবাসা,বিশ্বাস আর কিছুই থাকবে না।
ইশান ঠিক করলো এবার তার মাকে সত্যি টা বলে দেবে।
তাছাড়া সে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না।
দিশা এবার নিজেই ফোন দিলো।
কিন্তু ইশান কল কেটে দিলো।
দিশা আবার কল দিলো।
ইশান এবার রাগ করে দিশার নাম্বার টাই ব্লক করে দিলো।
এদিকে ইশানের মায়ের এখনো জ্ঞান ফেরে নি।
ডাক্তার এখনো আসতেছে না।
ইশান তাই তার মাকে কোলে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো।
ইশানের বাবা বাসায় এসে সব শুনলেন।
এবার তিনিও রেগে গেলেন।
এ কোন ধরনের ফাজলামি?
বেয়াদবির একটা লিমিট থাকা দরকার।
শেষমেশ আমার নামে মিথ্যা বদনাম করেছে।
এবার কেউ আর দিশা কে সাপোর্ট করলো না।
সবাই রেগে গেলো।
দিশা কখনোই ভাবে নি এই সামান্য একটা মিথ্যা কথার জন্য এতো কিছু হয়ে যাবে।
সে কাঁদতে লাগলো।
তার খুব খারাপ লাগছে।
ইশানের মা সুস্থ হলো।
সবাই খুব টেনশনে ছিলো।
ইশানের বাবা এবার ইশানের মায়ের উপর রাগ দেখালো।
দিশা না হয় ফাজলামি করে বলেছে আর তুমি সেটাই বিশ্বাস করলে?
এতোবছর সংসার করে তাহলে কি লাভ হলো?
আমাকে এখনো চিনলে না?
এই আমাকে তুমি বিশ্বাস করো?
এই তোমার বিশ্বাসের নমুনা?
ইশানের মা বললো আমি বুঝতে পারি নি।
দিশা যে তোমাকে নিয়েও ফাজলামি করবে তা আমি ভাবি নি কখনো।
ইশানের মা ইশান কে বললো খবরদার দিশা যেনো এ বাড়িতে আর না আসতে পারে।
ওর অনেক ফাজলামি সহ্য করেছি।
অনেক ছাড় দিয়েছি আমি।
এবার আর ওকে ক্ষমা করবো না।
তুই ওকে কোনো ফোন ও দিবি না।
আর আনতেও যাবি না।
ও যদি নিজে আসে তাহলে কেউ ওকে বাড়ি উঠতে দেবে না।
দরকার নেই এমন বউ এর।
ওর মুখ যেনো আমাকে আর দেখতে না হয়।
আমরা একটু ওদের বাড়িতে থাকতে চেয়েছি দেখে ও এই মিথ্যা কথা বলে আমাদের পাঠিয়ে দিলো।
আমি জীবনেও আর ও বাড়িতে যাবো না।
ইশান বললো মা তুমি শান্ত হও।
আর কোন কথা বলো না।
আর তুমি যেটা ভাবছো সেটা নয়।
আসলে দিশা তানিয়ার কথা শুনে এরকম করেছে।
আমি আর তানিয়া একাই বাসায় থাকি তাই ও তোমাদের কে চালাকি করে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ইশানের মা এবার রেগে গেলো।
তুই এখনো তোর বউ কে সাপোর্ট করছিস?
তাহলে ও আসলো না কেনো?
তোকে নিয়ে যদি সত্যিই ভাবতো সে তাহলে শুধু আমাদের একা পাঠাতো না।
সেও আসতো।
ইশান চুপ হয়ে গেলো।
কারন সে সবাই কে এটা কি করে বলে যে দিশা আর সে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে যে কে কার কাছে আগে আসে?
তার মা বললো এই মেয়ে টা আমার আগে থেকেই পছন্দ না।
আমার আর ইচ্ছা হচ্ছে না ওর মুখ দেখার।
ইশান কোন কথা না বলে ঘর থেকে বের হলো।
কারন সে জানে দিশা একটু চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে।
সে এসব কাজ করে মজা পায়।
তার খুব আনন্দ লাগে।
ইশান ছাড়া আর কেউ তাকে ভালো করে চেনে না।
আর চিনবেও না।
দিশা বেয়াদবি করেছে ঠিক আছে কিন্তু তাকে ছাড়া ইশান থাকবে কি করে?
এদিকে মা তো দিশার মুখ দেখবে না বলে প্রমিজ করে বসে আছে।
ইশান খুবই ভেংগে পড়লো।
কারন সে বুঝতে পারছে দিশা নিশ্চয় অনেক কান্নাকাটি করছে।।।
তাকে সে ছাড়া আর কেউ সামলাতে পারবে না।
নিশ্চয় খাওয়া দাওয়া করাও ছেড়ে দিয়েছে।
কারন দিশা সবার বকা সহ্য করতে পারলেও
ইশানের বকা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।
ইশান একটু চোখ বড় করে কথা বললেই সে এমন পাগলামি শুরু করে যে কেউ তাকে থামাতে পারে না।
ইশান আফসোস করতে লাগলো।
রাগের মাথায় পাগলি টাকে তখন কি কি বললাম?
কি জানি কি করছে এখন?
ইশানের এতো কষ্ট হচ্ছে যে কাউকেই বোঝাতে পারছে না সে।
সে মনে মনে ভাবলো দিশা তুমিও কি আমাকে বুঝতে পারছো না?
রাগের মাথায় না হয় অনেক কথাই বলেছি।
বাড়িতে আসতে বারণ করেছি।
তাই বলে তুমিও নিজের থেকে আসবে না?
তুমিও যদি রাগ করে থাকো আমিও রাগ করে থাকি তাহলে কে আমাদের মিল করে দেবে?
তুমি প্লিজ এসো।
আমি তোমাকে ছাড়া আর এক মুহুর্ত ও থাকতে পারছি না।
ইশানের চোখে পানি এসে গেলো।
দিশা এর আগেও কলেজে অনেক ফাজলামি করেছে ইশানের সাথে।
যার জন্য ইশান কে অনেক অপমানিতও হতে হয়েছে।
আর ইশান রাগ করে দিশা কে অনেক বকেছিলো।
একবার তো দিশা কে চড় ও মেরেছিলো।
দিশা তখন যে যে কান্ড করেছিলো তা সীমার বাহিরে।
ইশানের আজ সেসব ঘটনা মনে পড়ে গেলো।
আর দিশার জন্য দুশ্চিন্তা হতে লাগলো।
রাগের মাথায় যদি খারাপ কিছু করে বসে?
Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৬
দিশা বাবার বাড়ি পৌঁছার কিছুক্ষণ পরেই ইশান ফোন দিলো।
——— তোমরা কবে আসবা?
——— মাত্র আসলাম।
আর তুমি এখনি যাওয়ার কথা বলছো?
——— আমাকে কিন্তু একা একা ভালো লাগছে না।
দিশা হাসতে লাগলো।
দুই তিন ঘন্টায় এই অবস্থা?
তাহলে সাত দিন পরে কি হবে?
——— কি বলছো এসব?
তোমরা সাতদিন থাকবে?
——— তোমার মা তো সেটাই বললো।
তিনি নাকি এক সপ্তাহ থাকবেন।
——— মা আর আপা কে রেখে তুমি চলে এসো।
——— পাগল হইছো তুমি?
আমার বাবার বাড়ি,আর আমিই থাকবো না?
সেটা কি করে হয়?
——— তাহলে কিন্তু আমি এখনি রওনা দিলাম।
——— না,না,আজকে এসো না।
তোমার বাবা কে রান্না করে খাওয়াবে কে?
——— আমি কি বাড়ির কাজের লোক নাকি?
যে রান্না করে খাওয়াতেই হবে?
——— মা কিন্তু রাগ হবে।
তুমি আজকেই এসো না প্লিজ।
মানসম্মানের তো একটা ব্যাপার আছে।
——— রাখো তোমার মানসম্মান।
আমি একা একা থাকতে পারবো না।
আমি আজকেই যাবো।
——— তুমি যদি আজকেই আসো খুব খারাপ হবে কিন্তু।
শুক্রবারে এসো।
এককথা বার বার বলতে হচ্ছে কেনো?
সেই কথা শুনে ইশান ফোন কেটে দিলো।
সে রাগ করে ফোন বন্ধ করে রাখলো।
দিশার খুব খারাপ লাগলো।
সে জানে ইশান তাকে ছাড়া এক মুহুর্ত ও থাকতে পারবে না।
তবুও তাকে সেটা বুঝতে দিলো না।
দিশা বাবার বাড়ি এসেও শান্তি পাচ্ছিলো না।
সবাই খুব খুশি
অনেক আনন্দ করছে।
কিন্তু দিশার মন প্রচন্ড খারাপ।
সেই রাত টা খুব টেনশনে কাটালো দিশা।
কারন ইশানের ফোন তখনও বন্ধ ছিলো।
সকালবেলা ইশানের বাবা অফিস যাওয়ার জন্য বের হলো।
কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে দেখে ইশান ও নাই আর কোনো খাবারের ঘ্রাণ ও পাওয়া যাচ্ছে না।
ইশানের বাবা ইশানের রুমে গেলো।
আর ডাকতে লাগলো।
বাবা,,,,,,,?
বাবা ইশান,,,,,,?
আমার খাবার টা কি রেডি করছিস?
ইশানের কোন সাড়াশব্দই নাই।
ইশানের বাবা আবার ডাক দিলো।
কিন্তু ইশান এবার ও উঠলো না।
ইশানের বাবা এবার ইশানের গা ধরে ঝাকাতে লাগলো।
আমার খাবার কই রাখছিস?
ইশান মাত্র শুয়েছে।
সারারাত সে ঘুমাতে পারি নি।
তাই কাচা ঘুম থেকে উঠে আবোল তাবোল বলতে লাগলো।
ইশান তার বাবা কে বললো বাবা চা গুলো ভালো না মনে হয়।
তুমি আসার সময় নতুন চা পাতি আনিও।
ইশানের বাবা বললো কি বলিস এসব?
কালকেই নতুন প্যাকেট এনেছি।
ইশানের বাবা ইশানের কাছে এলো।
এসে দেখে চায়ের কোনো রঙ হয় নি?
——— ১০ মিনিট হয়ে গেলো আর এখন পর্যন্ত চায়ের কালার আসে নি?
——— আমি কি করবো?
তোমার চা যদি ভালো না হয়।
ইশানের বাবা চামুচ দিয়ে তুলে দেখলো।
তিনি হাসতে হাসতে শেষ।
——— তুমি হাসছো কেনো বাবা?
——— বাবা তুই আরেকটু ঘুমিয়ে নে।
তোর ঘুম এখনো ভাংগে নি।
আমি গেলাম।
——— বাবা না খেয়েই যাবে?
——— কি আর করার আছে?
——— কেনো?
চা হচ্ছে তো?
বাবা আগে চা পাতি আর কালোজিরা চিনতে শেখ।
তারপর আমাকে চা বানিয়ে খাওয়াস।
ইশানের বাবা চলে গেলো।
ইশান হাত দিয়ে দেখে হ্যাঁ ঠিকই তো।
এগুলো না কালোজিরা?
সেইজন্য ১০ মিনিট থেকে রান্না করছে তবুও চা এর রঙ আসতেছে না।
ইশান রাগ করে সবকিছু ফেলে দিয়ে ঘরে গিয়ে আবার ঘুমাইলো।
এদিকে দিশার মা কত ধরনের পদ রান্না করছে।
দিশার শাশুড়ী তো সেই খুশি!
কত আদর যত্ন করছে তাদের।
দিশার শুধু আফসোস হচ্ছে।।
ইশান থাকলে অনেক ভালো হতো।
দিশা ইশান কে আবার ফোন দিলো।
কিন্তু ইশান ধরলো না।
সে আবার ফোন অফ করে রাখলো।
দুপুরবেলা ইশানের ঘুম ভাংলো।
তার মনে হলো বাবা তো কিছুক্ষণ পরে দুপুরের খাবার খেতে আসবে।
তাই তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরে গেলো।
এদিকে তার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর সে বিস্কুটের প্যাকেট পেলো।
সেখান থেকে তিন চার টা বিস্কুট খেলো।
কিছুক্ষণ পর তার বাবা আসলো।
কিন্তু তার বাবার সাথে তার খালাতো বোন তানিয়া কে দেখতে পেলো?
——— তুই কই থেকে আসলি?
——— খালু নিয়ে আসলো।
তোদের বাসায় নাকি কেউ নাই।
——— খুব ভালো করেছিস।
এই রান্না নিয়ে যে ঝামেলার মধ্যে আছি বলে বোঝাতে পারবো না।
——— সবাই চলে গেছে।
আর তোকে রান্না করার জন্য রেখে গেছে?
——— কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি?
একটু দিশার রান্নার কাজ এ সাহায্য করি দেখে এরা ভেবেছে আমি তো সেরা রাধুনি হয়ে গেছি।
তানিয়া হাসতে লাগলো।
তুই তোর বউ কে রান্নার কাজে সাহায্য করিস?
তুই কবে রান্না শিখলি?
——— দূর আমি কি রান্না করতে পারি নাকি?
ইউটিউব এর ভিডিও দেখে দেখে বলি আর দিশা রান্না করে।
——— আমাকে বিয়ে করলে তোর এই কষ্ট টা হতো না।
আমি কত সুন্দর রান্না করতে পারি তা তো জানিস?
——— তোর আর কাজ টা কি?
এই রান্না টায় ভালো পারিস।
পড়াশোনায় তো গোল্লা।
শুধুমাত্র রান্না পারিস দেখে তাই বিয়ে করতে হবে?
——— তুই আমাকে খোটা দিলি?
ইশানের বাবা বললো তানিয়া ঝটপট কিছু করে দে।
আমি আবার অফিসে যাবো।
ইশান তানিয়ার মাথায় একটা টোকা দিলো আর বললো কথা না বলে রান্না কর?
আর বাবার জন্য হালকা পাতলা রান্না করলেও আমার জন্য একটু ভালোমন্দ রান্ধিস।
——— আমি কি তোর বউ নাকি?
তাই হুকুম করছিস?
——— তাহলে কেনো এসেছিস এখানে?
যা চলে যা।
তানিয়া তার খালুকে ডাকতে লাগলো খালু ইশান কিন্তু অপমান করছে।
ইশানের বাবা বললো কি হচ্ছে ইশান?
ঘরে যা।
আর ওকে কাজ করতে দে।
ইশান ঘরে চলে গেলো।
দিশার শাশুড়ী এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দিশার ননদ ও খুব খুশি।
তারা ঠিক করলো বেশ কয়েকদিন থাকবে।
তাছাড়া এখানে থাকতে তাদের ভালোই লাগছে।
কিন্তু দিশার শুধু অস্থির অস্থির লাগছে।
কিছুই ভালো লাগছে না তার।
সে তার শশুড় কে ফোন দিলো।
——— বাবা খাইছো তোমরা?
——— এখনো খাই নি।
তবে রান্না হচ্ছে।
দিশা হাসতে লাগলো।
শেষে ইশান কি বাড়ির রাধুনি হলো নাকি?
দিশার শশুড় বললো সে কথা আর বলিস না।
তোরা এমন রাধুনি রেখে গেছিস যে ১০ টায় ঘুম থেকে ওঠে।
হাজারবার ডাকলেও ঘুম থেকে ওঠে না।
তুই ওকে কি করে সকালে ওঠাস?
দিশা হাসতে লাগলো।
ওকে সকালে ওঠাতে অনেক কষ্ট হয়।
উঠতেই চায় না।
তো দুপুরে কি রান্না করছে?
——— এখনো দেখি নি?
——— ইশান কে একটু ফোন টা দাও না?
ও আমার উপর রেগে আছে।
আমি ওকে এখানে আসতে বারণ করেছি দেখে।
——— চিন্তা করিস না মা?
ওকে আজ পাঠিয়ে দেবো।
——— তুমি খাবে কিভাবে?
——— ইশান আমাকে এখন পর্যন্ত কিছুই রান্না করে খাওয়াতে পারে নি?
সে ঘুমাচ্ছে এখন।
ইশানের বাবা সকালের ঘটনা দিশা কে বললো।
দিশা হাসতে হাসতে শেষ।
হঠাৎ দিশার মনে হলো তাহলে রান্না করছে কে?
দিশার শশুড় তানিয়ার কথা বললো।
তানিয়ার নাম শোনামাত্র দিশার পুরো শরীর জ্বলতে লাগলো।
কারন দিশা এই তানিয়ার কথা অনেক আগেই শুনেছে।
এই তানিয়ার সাথেই ইশানের বিয়ে দেওয়ার জন্য ইশানের মা পাগল হয়ে গেছিলো।
কিন্তু ইশান করে নি।
তখন ইশান বলেছিলো তার গার্লফ্রেন্ড আছে।
তাকে সে বিয়ে করবে।
কিন্তু ইশানের মা রাজি হয় নি।
তাই ইশানের বাবা বলেছিলো ঠিক আছে আমি তাহলে একটা উপাই বের করে দেই।
ইশানের সাথে তানিয়ার বিয়েও হবে না আবার ইশানের গার্লফ্রেন্ড এর সাথেও হবে না।
আমরা সবাই মিলে পছন্দ করে যাকে নিয়ে আসবো তার সাথেই ইশানের বিয়ে হবে।
ইশানের বাবা আর তার বোন দুলাভাই এর সাথে জড়িত ছিলো।
তাই তো ইশান দিশাকে বিয়ে করতে পেরেছে।
ইশানের মা সে কি কান্না!
তার খুব ইচ্ছা ছিলো তানিয়া কে ঘরের বউ করার।
কারন এতো সুন্দর সুন্দর রান্না করে মেয়েটা।
যে একদম মন ভরে যায়।
সব কাজ করতে পারে।
তবে স্টুডেন্ট তেমন একটা ভালো না।
দিশার এবার ইশানের উপর খুব রাগ হলো।
সে ফোন কেনো খুলছে না?
দিশা তার শশুড় কে বললো বাবা ইশান কে একটু ডেকে দেন না?
তার শশুড় ইশান কে ফোন টা দিলো।
ইশানঃহ্যালো?
দিশাঃফোন অফ করে রাখছো কেনো?
ইশানঃকে আছে আমার?
কার জন্য খুলে রাখবো?
দিশা রাগ না দেখিয়ে খুব ভালোভাবে বললো আজ কে তুমি আসতে পারো।
কখন আসবে?
——— যাবো না।
কি দরকার যাওয়ার?
——— এখনো রেগে আছো?
আমি কি করেছি?
——— আমি কখন বললাম রেগে আছি আমি?
আমি যাবো না বলেছি তো যাবো না।
——— কেনো?
——— এমনি।
দিশা এবার তার রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারলো না।
সে ইশানের কান ঝালাপালা করে দিলো।
———আমি জানি তো কেনো তুমি আসবে না?
আজ এতো করে আসতে বলছি কিন্তু তুমি আসতে চাচ্ছো না।
অথচ কাল আসার জন্য কত কাহিনী করলে?
আমি কিন্তু বুঝি সব।
কি চলছে তোমার মনে।
——— বুঝলাম না কিছু।
কি বলছো তুমি?
———আমি যাই বলি না কেনো সেটা বাদ দাও।
তুমি আর এক মুহুর্ত ও থাকবে না ওই বাড়িতে।
এখনি চলে এসো এখানে।
———বলছি তো যাবো না।
——— ভালো হবে না কিন্তু।
আমার কথা না শুনলে খুব খারাপ হবে।
——— আজকে এতো তাড়া কেনো?
ব্যাপার কি?
——— কোন ব্যাপার না।
তুমি কখন আসবে সেটা আগে বলো?
——— খুব বেশি মিস করতেছো?
না তানিয়া আসার কথা শুনে জ্বলতেছো?
——— তানিয়া কে?
সে আবার কখন এলো?
——— তুমি তাহলে জানো না ওর কথা।
আমি ভেবেছিলাম তানিয়া আসার কথা শুনে আমাকে আর এ বাড়িতে থাকতে দিচ্ছো না।
দিশার রাগ এবার আরো বেড়ে গেলো।
সে বললো তানিয়া এসেছে তাই কি হয়েছে?
তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই ডাকতেছি।
তুমি কখন আসবা?
তাড়াতাড়ি বলো।
——— আমি যাবো না আজ।
দেখি কাল যেতে পারি কিনা?
———আজ রাতে কি ওই মেয়েটা তোমার সাথে থাকবে?
——— কি বলছো পাগলের মতো?
——— বললাম আজ রাতে কি সে তোমাদের বাড়ি থাকবে?
——— হ্যাঁ।
শুধু আজ রাত কেনো?
তোমরা যতদিন আসো নি ততোদিন সে এখানেই থাকবে।
আমি আরো ভাবছিলাম তোমাকে ফোন করে বলবো যে আর কয়েকটা দিন থাকো তোমরা।
আনন্দ করো।।
বাসায় তো রান্না করা নিয়ে আর কোন টেনশন নাই।
আর ওর হাতের রান্নার যে কি স্বাদ?
বলে বোঝাতে পারবো না।
দিশা রাগ করে বললো শয়তান ছেলে।
বেয়াদব ছেলে।
তোর মনে এই ছিলো?
সেই জন্য আসতে চাচ্ছিস না?
দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি।
আর তোকে খাওয়া শিখাচ্ছি।
আমি আজকেই বাসায় যাচ্ছি।
এই বলে দিশা ফোন কেটে দিলো।
ইশান তো সেই লেভেলের খুশি হলো।
লাইনে বলে আসো না?
ইশান তার বাবা কে ধন্যবাদ দিলো।
কি দারুন একটা কাজ করেছে বাবা!
এই বুদ্ধি টা তো তার মাথায় একবার ও আসে নি?
এখন শুধু দিশা কেনো?
দিশার পুরো ফ্যামিলি আসবে?
দিশার এতো রাগ হচ্ছে যে সে ইশান কে আজ হাতের কাছে পেলে কি করতো নিজেও জানে না।
সে কিছুতেই খেতে পারছে না।
শুয়ে থাকতেও তার ইচ্ছা করছে না।
কিছুই ভালো লাগছে না।
এদিকে প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো।
দিশা তার শাশুড়ী কে বললো মা আজকেই আমি বাড়ি যেতে চাচ্ছিলাম?
দিশার শাশুড়ী বললো কিছুক্ষণ পরে সন্ধ্যা হবে।
আজ কিভাবে যাবে?
দিশার সেই কথা শুনে বুক টা ধড়ফড় করতে লাগলো।
ইশান ওই মেয়েটার সাথে একা একা আজ থাকবে?
না এটা হতে পারে না।
সে ইশান কে আবার ফোন দিলো।
——— হ্যালো?
——— কখন আসতিছো?
——— আজ আর কখন যাবো?
কিছুক্ষণ পরেই তো রাত হবে।
——— আমি এতো করে বলার পর ও কেনো আসলে না?
——— আসার জন্য তো একটু সময় লাগবে?
তাই না?
আর যখন তখন ডাকলেই যাওয়া যায় নাকি?
——— আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে ইশান।
তুমি আসবে কি না বলো?
হঠাৎ তানিয়া ইশানের রুমে ঢুকলো আর বললো তোর কি কিছু লাগবে?
ইশান দিশা কে রাগানোর জন্য বললো হ্যাঁ লাগবে।
কেমন জানি ঠান্ডা লাগছে।
তাই শরীর টা একটু গরম করতে হবে?
তানিয়া বললো বুঝেছি।
তোর এই অভ্যাস আর গেলো না?
——— যখন বুঝেছিস তাহলে দেরী করছিস কেনো?
তানিয়া চলে গেলো।
দিশাঃতুমি কিসের কথা বললে?
ইশানঃতুমি বুঝবে না এসব।
ঘুমালাম গুড নাইট।
——— দাঁড়াও দাঁড়াও।
কই রাখছো ফোন।
যদি আজ ফোন একবার রাখছো তাহলে খবর আছে।
আজ সারারাত ভিডিও অন করে রাখবে।
——— তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?
——— না।
আমার স্বামীর খেয়াল রাখছি।
কারন আশেপাশে তো মশামাছির অভাব নাই।
কখন যে গায়ে বসবে তার ঠিক নাই।
——— তুমি এতোদূর থেকে মশা তাড়াবে?
——— হ্যাঁ।
ইশান হাসতে লাগলো।
তার খুব মজা লাগছে।
এদিকে দিশা তো শুধু জ্বলছে।
ইশান দিশার কথা শুনে ভিডিও অন করে টেবিলে রাখলো।
তানিয়া চা নিয়ে আসলো।
দিশা কে দেখে তানিয়া বললো ভাবি কেমন আছেন?
দিশাঃএই তো ভালো আছি।
তুমি এখনো ঘুমাও নি?
তানিয়াঃনা।
এই তো ঘুমাবো এখন।
দিশাঃঠিক আছে তুমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়।
আর ইশান তুমিও দেরী করো না।
তাড়াতাড়ি দরজা টা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
ইশানঃআমি পরে ঘুমাবো।
তুমি আগে ঘুমাও।
দিশাঃএতো বেশি বোঝ কেনো?
যা বলছি সেটাই কর।
তানিয়া হাসতে লাগলো।
এবং আর দেরী না করে চলে গেলো।
ইশান এখনো দরজা লাগায় নি।
দিশাঃকি হলো?
দরজা খোলা কেনো?
ইশানঃএই মেয়েটা আসলেই পাগল।
এই বলে ইশান দরজা লাগিয়ে দিলো।
দিশাঃএবার মোবাইলের ক্যামেরা দরজার মুখ করে রাখো।
আর তুমি ঘুমিয়ে পড়।
ইশান এবার রেগে গেলো।
কি হচ্ছে এসব দিশা?
এমন পাগলামি করছো কেনো?
——— কত করে বললাম আসো আসো।
শুনলে না কেনো?
এখন এসব পাগলামি সহ্য করো।
——–আমি যখন যেতে চাইলাম তখন কি আমায় যেতে দিয়েছো?
এখন এতো অস্থির হচ্ছো কেনো?
এবার পাগলামি করা তুমি থামিয়ে দাও।
আমি বলেছি তো যাবো না।
তো যাবো না।
পারলে তুমি নিজে এসো।
——— তাহলে তুমি আসবে না?
ঠিক আছে আমিও যাবো না।
দেখি কে আসে আগে?
ইশান হাসতে লাগলো।
নিজের অবস্থা দেখেছো?
তারপর ও বলছো কে আগে আসে?
আমি তো যাবোই না।
তোমাকেই আসতে হবে।