Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1434



ভোরের শিশির পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

1

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১১(অন্তিম পর্ব)

হামিম অনেক খুঁজেও যখন আদিয়াকে পায় না,তখন হামিম তার ঘরে চলে আসে।এসে আলমারি চেক করে দেখে আদিয়ার জামা কাপড় সব আছে কী না!হামিম খুলে দেখে সবই ঠিক আছে তবে আদিয়া কোথায় গেলো?হামিম এবার হসপিটাল আর আদিয়ার বাবার বাড়িতে ফোন করে।কিন্তু আদিয়া সেখানেও নেই,হামিম এবার পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে।হামিম খাটে বসে পড়ে মাথা নিচু করে।

“আজ থেকে নতুন জীবন শুরু করব ভেবেছিলাম, কিন্তু এভাবে যে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবি নি।
ভোরের শিশিরের মতই কী হারিয়ে গেলে?কোথায় চলে গেলে আমাকে ছেড়ে,বড্ড একা একা লাগছে।”

হামিমের চোখগুলো টলমল করছে পানিতে,যেকোন সময় ঝরে পড়বে গাল বেয়ে।

“আরে আপনি উঠে গেছেন দেখছি,বসুন আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছি।”

হামিম আদিয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে তাকায়।আদিয়া রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই হামিম ঝড়ের গতিতে আদিয়ার কাছে চলে যায়।আর আদিয়াকে পিছন থেকে শক্ত করে ঝাপ্টে ধরে।আদিয়া এমন কিছুর জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না।

“কককী করছেন ছছাড়ুন আমায়।”

আমার কথা মনে হয় উনার কানে যায় নি,তাই আবারও একই কথা বললাম।তাতেও উনার কোন সারা নেই,এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর উনি হঠাৎ করে উনার দিকে ঘুরিয়ে গালে শক্ত করে হাত রাখে।এত শক্ত করেই গাল চেপে ধরেছে যে মনে হচ্ছে দাঁত খুলেই পড়ে যাবে।আমি এবার উনার চোখের দিকে তাকাই,উনার চোখ দেখেই মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।

“কোথায় চলে গেছিলে?” (গম্ভীর গলায়)

উনার চাহনিতেই ত আমার ভয় করছে,আর এখন যদি বলি কোথায় গেছি তবে ত সারপ্রাইজই দেয়া হবে না।আর যদি না বলি তবে ত কাঁচা চিবিয়ে খাবে যা মনে হচ্ছে।আল্লাহ,আমার গাল গুলো শেষ।

“বলো কোথায় গিয়েছিলে?” (রেগে চিৎকার করে)

“লললাগছে আমার,প্লিজ ছাড়ুন বববলছি আমি।”

উনি আমার গাল ছেড়ে দেয়,আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

“এবার বলো কোথায় আর কেন গেছিলে?”

কী বলব এখন!সকাল সকাল কী মিথ্যা কথা বলব!

“একটা কাজ ছিল তাই একটু বাহিরে গেছিলাম।”

আমার কথাশুনে উনার ভ্রু কুঁচকে আসে।

“এত সকাল সকাল কী কাজ ছিল তোমার যে আমাকে না বলে বাইরে গিয়েছিলে।”(ধমকে)

উনার ধমকে আমি কেঁপে উঠি,বেটা ডাইনোসর খালি ধমকাইব।জীবনটা আমার এই ডাইনোসরের ধমকানিতেই যাইব।

“এখন বলব না,কাল বলব।”

“তোমাকে এখনই বলতে হবে কোথায় আর কেন গেছো?”

“আমি এখন বলব না,কাল বলব ত কালকের জন্য একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ।”(ইনোসেন্ট ফেস করে)

“ওকে।”

কথাটা বলেই উনি ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আর আমি খুশিমনে ওয়াশরুমে চলে যাই একটা শাড়ি নিয়ে।আমি মলির সাথে একটু বাজারে গিয়েছিলাম, বাজারে গিয়ে কিছু জিনিস নিয়ে এসেছি।যেসব কাল সকালে লাগবে উনাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।অতঃপর দুজন দুজনের কাজে চলে যাই।দিন শেষে রাতে দুজন বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ি।শোয়ার সময় উনি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমাকে।এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে কাজটা করব কীভাবে?কথাটা ভেবেই উনাকে বলে উঠি,,,

“এই যে শুনুন।”

“কী হয়েছে!” (বিরক্ত হয়ে)

“এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে আমি রাতে নড়তে পারি না,তাই প্লিজ একটু হাতটা সরান।”

“এত নড়াচড়া করতে হবে না,আজ আর তোমাকে ছাড়ছি না।আজ সকালে যে খেলা দেখাইছো তারপর ত আরো আগে ছাড়ব না।চুপচাপ ঘুমাও নয়ত মাইর খাবে।”

তারপর আর কী ওভাবে ধরেই উনি ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু আমার ঘুমালে চলবে না।তাই উনার ঘুমানোর পর খুব সহজে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে যাই।ভাগ্য ভালো ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ছিলাম নয়ত এখন উঠতেই পারতাম না।এবার তাড়াতাড়ি গিয়ে কাজটা সারতে হবে।কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি।

______________________________________

ভোর পাঁচটা বাজে আদিয়া হামিমকে সেই কখন থেকে ডেকে চলেছে কিন্তু হামিমের কোন সারা শব্দই নেই।থাকবে কীভাবে বেচারা গতরাতে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়াইছে ত এত সকালে কী উঠতে পারবে নাকি?এবার আদিয়া এক গ্লাস পানি হামিমের মুখে ঢেলে দেয় আর হামিম ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে।

“কী হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে তোমার?”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না বুঝাই।

“তবে কী হয়েছে এভাবে পানি ঢাললে কেন ভোরবেলা?”

আমি উনার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললাম।

“ফ্রেশ হয়ে এগুলো পড়ে বাগানে আসুন।”

“কেন?”

“যেটা বলেছি আপাতত সেটাই করুন,গেলে সবটা জানতে পারবেন।উঠুন তাড়াতাড়ি আর তৈরি হন জলদি।”

উনি আমার কথামত ওয়াশরুমে চলে যায় আর আমি অন্য একটা রুমে গিয়ে শাড়ি পড়ে বাগানে চলে যাই।

বেশ অনেকক্ষন পরে হামিম সাদা রঙের একটা পান্জাবি আর পায়জামা পরে বাগানে চলে আসে।বাগানে পা রাখার সাথে সাথে হামিম আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।বাগানটা খুব সুন্দর করে সাজানো।বাগানের ঠিক মাঝামাঝি একটা উঁচু জায়গায় আদিয়া সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।হামিম মুচকি হেঁসে সামনে এগোয়,আর আদিয়া হামিমকে দেখে ছোটখাটো একটা ক্রাশ খায়।আদিয়ার সামনে হামিম দাঁড়ালে আদিয়া হাত বাড়িয়ে হামিমকে উপরে তুলে নেয়।হামিমকে উপরে উঠানোর পরপরই আদিয়া হামিমের হাতটা ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।হামিম অবাক চোখে আদিয়ার দিকে তাকায়।

“আপনার বাবুর আম্মু হতে চাই,
দিবেন কী আমাকে সেই অধিকার?”

আদিয়ার কথাশুনে হামিম যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।হামিম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আদিয়ার দিকে।আদিয়া আবারও বলে উঠে,,,

“ভালবাসি আপনাকে।”

হামিম এবার কোন কিছু না বলে আদিয়ার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আদিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আদিয়া তার উওর পেয়ে গেছে,আদিয়াও হামিমকে জড়িয়ে ধরে।আদিয়া জড়িয়ে ধরলে হামিম আদিয়ার গালে হাত দিয়ে সারা মুখে ভালবাসার পরশ একে দেয়।আদিয়া চোখ বন্ধ করে হামিমের প্রতিটা স্পর্শ উপভোগ করছে।

“আমিও খুব খুব খুব খুব বেশি ভালবাসি তোমাকে।প্লিজ আমাকে কখনও একা করে দিও না।তাহলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব,তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।”

“হুম জানি আমি,পরসু রাতে আপনি বাগানে এসে যা বলেছেন সবটাই শুনেছি আমি।”

হামিম আদিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকালে আদিয়া বলে উঠে।

“হ্যাঁ আমি সবটা শুনেছি,আর তাই আজ আপনাকে আমার মনের কথা বলার সাহস পেয়েছি।আমিও আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি।আমাদের বিয়ে হওয়ার পরই ভালবেসে ফেলি আপনাকে।কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নি কখনও,আর কাল আপনার কথাশুনে আমি সাহস পেয়েই আজ মনের কথা বলে ফেললাম।”

উনি আবারও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর হামিম আমাকে ছেড়ে কোলে তুলে নেয়।আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরি,উনি আমাকে দোলনায় বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।

“চুলে একটু হাত বুলিয়ে দাও না।”(বাচ্চাদের মত কিউট ফেস করে)

আমি মুচকি হেঁসে উনার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“আজকের এই ভোর আমার জীবনের বেস্ট একটা মুহুর্ত।কখনও ভুলব না আজকের কথা আমি।ইস্ সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত কতই না ভালো হত।”

আমি উনার কথায় শুধু মুচকি হাসছি,উনি এবার বেশ আবেগ মিশ্রিত গলায় বলে উঠে,,,

“সারাজীবন ভালবেসে আমার হয়ে থেকো,
আমিও ভালবেসে তোমায় আমার করে রাখব।”

আমি উনার কথায় মুচকি হেঁসে উনার কপালে একটা ভালবাসার পরশ একে দেই।হামিম তার উওর পেয়ে গেছে।এভাবেই ভালো থাকুক প্রতিটা ভালবাসার মানুষ।

★সমাপ্ত★

ভোরের শিশির পর্ব-১০

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১০

হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে সোজা হামিমের রুমে চলে যাই।গিয়ে দেখি উনি ল্যাপটপে কাজ করছেন,আমি রেগে উনার সামনে দাঁড়াই।

“আহমেদ কোম্পানিটা তবে নীলা আপুদের।আর এসব কিছুর পিছনে তবে নীলা আপু আর তার হাসবেন্ড জড়িত তাই না!”

উনার কোন ভাবান্তর হলো না,এমন ভাব করছেন যেন এটা হওয়ারই ছিল।

“চুপ করে না থেকে উওর দিন।”

“তোমার স্যারত জানালই ত এখন আমাকে এসব প্রশ্ন কেন করছো?”

“আপনাকে এসব প্রশ্ন করছি কারন আমি সবটা আপনার থেকে জানতে চাইছি।”

“তবে শুনো যা জানো তুমি সবটাই সত্যি,এসবের পিছনে আপু আর তার হাসবেন্ড জড়িত।আহমেদ কোম্পানিটা আপুদেরই,আর কোম্পানিতে ঐ বিষাক্ত গ্যাস অরাই দিয়েছিল যাতে করে শ্রমিকদের ঐ অবস্থা হয়েছে।”

“কেন এসব করল অরা?কেন এতগুলো মানুষের ক্ষতি করল?”

“শ্রমিকদের সাথে বেতন নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল তাই অরা এমন করেছে।আর অরা ত ওদের শাস্তিও পেয়েছে,পুলিশ ওদের গ্রেফতারও করেছে।”

“জানি আমি কিন্তু আপনি এসব লুকিয়েছিলেন কেন?”

উনি মুচকি হেঁসে বসা থেকে উঠে আমার সামনে দাঁড়ায়।আমি ভ্রু কুঁচকে উনার থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে যাই।

“আমি ত লুকাতে চাই নি,তুমি বাধ্য করেছো।”

“আমি বাধ্য করেছি মানেহ?”

“তুমিই ত সেদিন আমার ফোনে বলা কয়েকটা কথা শুনে ভুল বুঝে প্রতিবাদী হয়ে উঠলে।তাই আমাকে তোমার থেকে অনেক কিছু লুকাতে হয়েছে।”

“এমন হেয়ালি না করে সোজাসুজি উওর দিন।”

“সেদিন ফোনে আমি অন্য একটা কেস নিয়ে আলোচনা করছিলাম।আমার জুনিয়র অফিসার কিশোর ঐদিন একটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিল। তখন দেখতে পায় একটা মেয়েকে দুইটা ছেলে জোড়াজুড়ি করে গাড়িতে তুলছে।কিশোরের বুঝতে বেশি সময় লাগে নি যে ছেলেগুলো ভালো কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়েটাকে নিচ্ছে না।সে গিয়ে আটকায় কিন্তু তারা উল্টো কিশোরকে মারতে আসে।আর কিশোর বাধ্য হয়ে গুলি চালায় যেখানে একজন মারা যায় আরেকজন পালিয়ে যায়।সেটা কিশোর আমার সাথে শেয়ার করলে আমি ওকে জানাই এক্সিডেন্ট কেস বলে চালাতে।আর যা প্রমান আছে সব নষ্ট করে দিতে।”

“তবে ঐদিন যে বললেন শ্রমিকদের দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে।”

উনি হাসলেন,

“ওটা ত আমি এমনি বলেছি।”

“ওহ আচ্ছা বুঝতে পারছি।”

“হুম আর কোন প্রশ্ন আছে কী তোমার?”

“আপু আর ভাইয়াকে যে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো তাতে আপনার খারাপ লাগছে না?”

“না খারাপ লাগছে না,তারা তাদের কর্ম ফল পেয়েছে।এসব বাদ দিয়ে আর কিছু জানার থাকলে বলে।”(রেগে)

“না আর কোন প্রশ্ন নেই,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

“আচ্ছা।”

আমি একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি উনি খাবার নিয়ে বসে আছেন।

“আপনি খাবার আনতে গেলেন কেন?আমি ত নিচে গিয়েই খেতে পারতাম।”

“এমনি নিয়ে আসলাম,বসো খাবে।”

বুঝি না উনি এমন কেন?এই ভালো ত এই খারাপ।আমি সোফায় গিয়ে বসলে উনি আমার সামনে খাবার ধরে।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাই।উনি চোখ দিয়ে ইশারা করে খেতে,কিন্তু আমি এক দৃষ্টিতে উনার দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।

“এভাবে তাকিয়ে থাকলে পেট ভরবে না।”

উনার কথায় থতমত খেয়ে যাই আমি,আর চোখ নামিয়ে খাবারটা খেয়ে নেই।উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।উনার চোখ কিছু একটা প্রকাশ করতে চাইছে কিন্তু সেটা আমি বুঝতে পারছি না।উনি আমাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নেয়।উনি প্লেট নিয়ে উঠতে গেলে আমি আস্তে করে বলে উঠি।

“Sorry!”

উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

“আপনাকে ভুল বুঝে অপমান করার জন্য আমি খুব দুঃখিত,ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ।”

উনি আমার কথার উওরে শুধু মুচকি হেঁসে আমার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে চলে গেলেন।আর হামিম প্লেটগুলো রান্নাঘরে রেখে বাগানে চলে আসে।আর একমনে নিজের সাথে কথা বলে চলেছে।

“তোমাকে ত আমি সেই কবেই ক্ষমা করে দিয়েছি।খুব ভালবাসি তোমাকে আমি,সেই প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছিলাম।কিন্তু এতদিন আপুর জন্য তোমাকে কাছে টেনে নিতে পারি নি।তুমি যখন আমার ঐদিনের ফোনে কথা বলা শুনে ভুল বুঝো।সেই ভুলটা আমি সেদিনই ভাঙ্গিয়ে দিতে পারতাম।কিন্তু আমার কাছে উপযুক্ত প্রমান ছিল না তাই তোমার ভুলটাও ভাঙ্গাতে পারি নি।আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তোমার,আপু যখন জানতে পারে তুমি ওদের বিরুদ্ধে প্রমান কালেক্ট করতে চাও।তখন থেকে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে চলেছে।তাই তোমাকে প্রমান দেয়ার নাম করে আমার কাছে নিয়ে আসি।এখানে আপু তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।তারপরও আপু আর দুলাভাই এখানে এসেছিল।কিন্তু আমি তোমাকে ওদের থেকে দূরে রেখেছি।হয়ত খুব খারাপ আচরন করেছি কিন্তু তার পিছনেও কারন আছে।আমি যদি তোমার সাথে ভালো আচরন করতাম ওদের সামনে তবে আপু তোমাকে আমার দুর্বলতা বানিয়ে আমাকে থামিয়ে দিত আমার দায়িত্ব থেকে।এমনটা আপু করতে চেয়েছিল যাতে আমি কেসটা এক্সিডেন্ট কেস বলে চালাই।কিন্তু আপু পারে নি সেটা করতে,আমার রাগের কাছে হার মেনেছিল তখন।আর তুমি আসার পর তোমাকে আমার দুর্বলতা দেখালে আপু সেটা ব্যাবহার করত যা আমি চাই নি তাই এসব করা।কিন্তু শেষ হাসিটা আমিই হাসলাম আমি তোমাকে সেফ রাখতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক বেশি।আপু আর দুলাভাইয়ের থেকে এখন তোমার কোন বিপদ নেই।তাই ওদের থেকে দূরে রাখার জন্যও তোমার সাথে আর খারাপ আচরন করতে হবে না আমাকে।এখন থেকে শুধু ভালবাসব,বলব তোমাকে ভালবাসি।কাল থেকে এক নতুন জীবন শুরু করব আমরা।”

হামিম কথাগুলো বলার সময় চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।হামিম চোখটা মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে রুমে চলে আসে।রুমে এসে দেখে আদিয়া রুমে নেই,হামিম এবার ব্যালকনিতে যায়।আর গিয়ে দেখে আদিয়া কারো সাথে কথা বলছে ফোনে।কিন্তু হামিম ত ওকে ফোন কিনে দেয় নি,তবে কী নিজেই কিনেছে!হামিম আদিয়ার থেকে ফোনটা কেঁড়ে নেয়।

“আরে ফোনটা নিলেন কেন?দেখছিলেন ত কথা বলছি,দিন ফোনটা।”

“এই ফোন কোথায় পেলে?”

“কুড়িয়ে পাইছি।”

“মজা করো না সত্যি বলো।”

“আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন আমার কাছে ফোন কেনার টাকা নাই।এবার ফোন দিন আমার।”

“দিব না এটা আমার কাছেই থাকবে।”

কথাটা বলেই উনি ফোন নিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমি দৌড়ে উনার সামনে যাই।উনি দাঁড়িয়ে যায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় আমার দিকে।আমি মুচকি হেঁসে উনার কাঁধে দুই হাত রাখি।উনি খুব অবাক হয়ে যায়,আমি আস্তে করে মাথাটা উনার দিকে এগিয়ে দেই।উনিও কাছে আসার জন্য এগিয়ে আসলে আমি টুপ করে ফোনটা নিয়ে নেই।আর উনি বোকা বনে যায়,আমি খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠি।এবার উনি এক ঝটকায় আমার কোমড়ে ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।আর ঝাপ্টে ধরে গলায় মুখ গুজে নেয়।

“প্লিজ ছাড়ুন আমার অস্বস্তি লাগছে।”

“লাগুক আজ এভাবেই ঘুমাবে,একদম নড়বে না।”

বেশ কিছুক্ষন ছোটার পরও যখন ছুটতে পারলাম না তখন হাল ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

_____________________________________

ঘুমের মাঝে কেমন যেন শূন্যতা অনুভব হল হামিমের,হামিম ধরফরিয়ে চোখ খুলে বিছানার দিকে তাকায়।আর দেখে আদিয়া বিছানায় নেই,জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গেছে।হামিম ভাবল আদিয়া হয়ত বাগানে গাছে পানি দিচ্ছে তাই হামিম ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।ফ্রেশ হয়ে বাগানে চলে আসে কিন্তু সেখানে আদিয়া নেই।এবার হামিমের ভয় হচ্ছে,হামিম দৌড়ে বাড়িতে আসে।সারাবাড়ি খুঁজে বেড়ায় কিন্তু কোথাও আদিয়াকে পায় না।তারমানে কী আদিয়া চলে গেছে তাকে ছেড়ে!কথাটা মাথায় আসতেই হামিমের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০৯

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৯

সকালে কারো চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে আমার।আমি চোখ খুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই।কারন গতকাল উনি আমাকে যে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল এটা সে বাড়ি নয়।এটা আগের সেই বাড়িটা,বুঝলাম না কিছু। রাতে ঐ বাড়ি আর সকালে এই বাড়ি,উনি এমন কেন করছেন!এসব ভাবনার মাঝেই আবার নিচ থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে।আমি হুরমুরিয়ে দৌড়ে নিচে ড্রয়িং রুমে চলে আসি।আর এসে দেখি নীলা আপু এসেছে,আর হামিম নীলা আপুর সাথে রেগে কথা বলছে।বুঝি না বাবা উনি আপুর সাথে এমন আচরন কেন করে?
নীলা আপু আমাকে দেখে আমার সামনে এসে গালে হাত দিয়ে বলে,,,

“কেমন আছো দিয়া?”

আমি কিছু বলব তার আগেই হামিম আমাকে চিৎকার করে বলে উঠে।

“এই তুমি এখন এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কী তোমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি আমি?”

“না মানেহ,আপু,,,

“চুপ কোন কথা না,তাড়াতাড়ি এখন ফ্রেশ হয়ে বাগানে যাও।আর প্রতিটা গাছে পানি দিয়ে আসবে,নয়ত সকালের খাওয়া বন্ধ।”

আপুর সামনে উনার এমন কথায় আমি একটু অপমানিত বোধ করলাম।আপুর সামনে এভাবে না বললেও পারতেন উনি।আর গাছে পানি দেয়ার পরও খাব না আমি,একবেলা না খাওয়ার জন্য আর মরে যাব না।প্রমান গুলো শুধু হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছি,তারপর আর উনার এমন বাজে আচরন শয্য করতে হবে না।এসব ভেবে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বাগানে চলে আসি।
বাগানটা খুব বেশি বড় নয়,আবার খুব ছোটও নয়।কিন্তু বাগানটা বেশ গুছানো,আর নানা ধরনের গাছগাছালিও আছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর দেখি নীলা আপু রাগে হনহনিয়ে গেট দিয়ে বের হচ্ছে।হামিম লোকটা বড্ড রহস্যময়,কেন যে নিজের আপুর সাথে এমন করছে বুঝতে পারছি না!
এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলাম তখন পিছন থেকে কে যেন কোমড়ে চিমটি কাটে।আমি কোমড়ে হাত দিয়ে রেগে পিছনে তাকিয়ে দেখি হামিম।তারমানে উনিই চিমটি কেটেছে,রাগটা আবার মাথায় চড়ে বসল।

“ঐ মিয়া আপনি চিমটি কাটলেন কেন?যখন তখন এমন খোঁচা মারেন কেন?”

উনি আমার রাগকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো রেগে বলে উঠে।

“কোমড় দেখাতে বেশ ভালোই লাগে তাই না!কোমড় থেকে যদি আরেকদিন কাপড় সরছে ত দেখো কী করি!আজ ত চিমটি কাটলাম,পরের বার ব্লেড চালাব কোমড়ে।”

আমি উনার কথাশুনে তাড়াতাড়ি কোমড়ের দিকে তাকাই আর দেখি সত্যি সত্যি কোমড় থেকে কাপড় সরে গেছে।আমি তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে শাড়ি আকড়ে ধরলাম যাতে কোমড় না দেখা যায়।ইস্ লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে উনার সামনে কোমড়ের কাপড় সরে গেছিল।

“হয়েছে এখন এত লজ্জা পেতে হবে,গাছে পানি দেও।”

কথাটা বলেই উনি আমার পিছনে দোলনায় বসে পড়লেন।আমি কোনমতন শাড়িটা ঠিক করে গাছে পানি দেয়ায় মনযোগ দিলাম।কিন্তু কেমন আনইজি ফিল হচ্ছে,উনি কীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কী কাজ করা যায় নাকি!

“এই আপনি এখান থেকে যান ত,তখন থেকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন।”

উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে,যেন উনি বুঝতেই পারে নি আমি কী বলেছি।

“চোখ দিয়ে আবার গিলে খায় কীভাবে?মুখ দিয়ে খাওয়া যায় জানি কিন্তু চোখ দিয়ে কীভাবে খায়?”

“আল্লাহ দরি ফালাও এই ডাইনোসরটাকে উঠাইয়া দেই।শালা বজ্জাত,পঁচা কুমড়ো,ইচ্ছে করতাছে কিক মাইরা উগান্ডা পাঠাইতে।চোখ দিয়ে গিলে খায় কেমনে জানে না।ডং কত!এখনও ছোট বাবু রয়েছে তিনি হুহ।”

রাগের মাথায় কথাগুলো উনার সামনেই বলে ফেলি।কথাগুলো বলার পর উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার ঠিক পিছনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“আর কিছু বলার আছে?”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না বুঝিয়ে সাথে সাথে উল্টো ঘুরে দৌড় লাগাই।আর পিছনে তাকিয়ে দেখি উনিও আমার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে।এটা দেখে ভয়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।আমি দৌড়ের স্পিড আরো বাড়িয়ে দেই,আর একটা সময় আমার পায়ে কিছু লাগলে আমি মাটিতে হঠাৎ করে বসে পড়ি।তাকিয়ে দেখি পায়ে কাটা ফুটেছে কিন্তু রক্ত পড়ছে না।তারপরও পায়ে খুব ব্যাথা করছে,আমি কাটাটা টান দিয়ে উঠিয়ে ফেলি,সাথে সাথে রক্ত পড়া শুরু হয়।আর ব্যাথায় চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।আমি চোখের পানিটা মুছে দেখি হামিম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।উনি আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পায়ে হাত দিতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে থেমে যায়।আর কিছু না বলে আমাকে ওখানে রেখেই বাড়ির ভিতরে চলে আসে।
উনার এমন কাজে কেন যেন খুব খারাপ লাগছে,তারপরও আমি এটা নিয়ে বেশি না ভেবে উঠে দাঁড়াই।আর স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে চলেছি,পায়ে যে কাটা ফুটেছে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব আমার উপরে পড়ে নি এমন ভাব করে।রুমে এসে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি।এতটা সময়ে উনাকে কোথাও দেখতে পাই নি,এতে খারাপ লাগলেও পাত্তা দিলাম না।

_____________________________________

হসপিটালে পৌঁছানোর পরপরই একটা কল আসে,একটা পেসেন্ট দেখার জন্য তার বাড়িতে যেতে হবে।সে নাকি খুবই অসুস্থ,তাই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়ি রোগী দেখার জন্য।পেসেন্টের বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী একটা ফ্ল্যাটের সামনে আসি আর কলিং বেল বাজাই।কিছুক্ষনের মধ্যে একটা মহিলা দরজা খুলে দিয়ে আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়।কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি খুব বেশি অবাক হয়ে যাই।কারন হামিম রয়েছে এখানে,আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনিও ভ্রু কুঁচকায়।আমি পিছন ফিরে সেই মহিলাকে কিছু জিজ্ঞেস করব কিন্তু দেখি সে মহিলা নেই।আর ঘরের দরজাটাও বন্ধ,এসব কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না আমি।

“আপনি এখানে কেন?আর পেসেন্ট কোথায়?”

“আমারও একই প্রশ্ন তুমি এখানে কেন?আর কোন পেসেন্টের কথা বলছো?”

“আমাকে ত ফোন করা হয়েছিল কে নাকি খুব
অসুস্থ দেখে যেতে।আর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেয়।ভুল ঠিকানায় আসি নি ত?”

আমি এবার আমার ফোনে ম্যাসেজ চেক করে দেখি ঠিকানা ঠিকই আছে।

“ঠিকানা ত ঠিকই আছে,ভুল ঠিকানায় ত আমি আসি নি।কিন্তু আপনি এখানে কেন?”

“এমনি।”

“এমনি মানেহ?কেন এসেছেন?এটা কার বাসা?আর রোগী কোথায়?”

“বড্ড বেশি প্রশ্ন করছো তুমি,তুমি জানো না আমার যা করতে মন চায় তাই করি।আর তার কৈফিয়ত কাউকে দেই না।চুপ করে এখানে বসে থাকো,খালি বেশি কথা।”

“ওকে থাকুন আপনি এখানে,আমি গেলাম।”

কথাটা বলে বেরিয়ে আসতে নিলেই উনি হাত টেনে খাটে বসিয়ে দেয় আমাকে।আর আমার সামনে নিচে বসে আমার পা উনার হাঁটুর উপর রাখে।আমি পা সরিয়ে নিতে চাইলে উনি সরাতে দেয় না।উনি পকেট থেকে কিছু একটা বের করে হাত দিয়ে আমার দুই পায়ে একটা ঔষধ লাগিয়ে দেয়।

“পায়ে কী লাগালেন ওটা?”

“ঔষধ,তখন পায়ে কাটে ফুটেছিল তার জন্য।”

“এক পায়ে কাটা ফুটেছে দুই পায়ে না।”

“হুম জানি কিন্তু এটা খেয়াল নাই কোন পায়ে ফুটেছে তাই দুই পায়েই লাগিয়ে দিলাম।”

“এখন এমন কেয়ার করার কারন কী?তখন ত দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে আসলেন।তবে এখন এত কেয়ারিং হাসবেন্ডের রোল পালন করছেন কেন?”

“তার কৈফিয়ত তোমাকে দিব না।”

কথাটা বলেই দরজায় তিনটে টোকা মারেন আর কেউ দরজা খুলে দেয়।উনি বেরিয়ে যায় রুম থেকে,আর আমার মাথায় কিছু ডুকছে না।এত রহস্যময় মানুষ কীভাবে হয়,পুরোই রহস্যের গোডাউন।

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০৮

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৮

হামিম আমার চিৎকারে লাফিয়ে উঠে শোয়া থেকে।উনি উঠার সাথে সাথে আমিও খাট থেকে নেমে নিচে দাঁড়াই।উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে,,,

“এভাবে চিৎকার কেন করলে?”

আমি উনার কথার কোন উওর না দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা লাগানো।দরজা ত আমি তখন ভালো করেই লাগিয়েছি তারপরও উনি ভিতরে আসল কীভাবে?

“কী হল এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?বলবা ত কেন ওভাবে চিৎকার করলে?”

“আ আপনি এখানে কী কীভাবে এলেন?”(আমতা আমতা করে)

” উড়ে এসেছি।”(মজা করে)

“মজা করছেন না নাকি সত্যি?দে দেখুন মজা করলে একদম মজা ক করেবেন না বলে দিচ্ছি,সত্যি ক করে বলুন আ আপনি মানুষ না জ্বীন?”

আমার শেষের কথাটা শুনে উনি বড়বড় চোখ করে তাকায় আমার দিকে।উনি আমার কথায় এতটাই অবাক হয়েছে চোখ যেন বেরিয়ে আসবে।

“আ আমি আপনাকে ভয় পাই না একদমই,তা তাড়াতাড়ি বলুন আপনি কে?কীভাবে এই ঘরে এলেন?নয়ত ভা ভালো হবে না।”

“একটা থাপ্পড় দিয়ে না সব দাঁত ফেলে দিব,যে কয়টা দাঁত পোকা খাইছে সেসব দাঁতও পড়ে যাবে থাপ্পড় দিলে।”

উনার কথাশুনে আমার হাত আপনা আপনি বাম গালে চলে যায়।যাহ বাবা এটা উনি জানল কেমনে?কথা বলার সময়ও ত ঐ দাঁতগুলো দেখা যায় না।তবে উনি জানল কেমনে?আল্লা এটা নিশ্চয়ই কোন জ্বীন,ভূত হবে।

“আল্লাহ বাঁচাও,ভূত।”

কথাটা চিৎকার করে বলেই একটা দৌড় দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলি।আর আরেক দৌড়ে একদম নিচে চলে যাই।আর নিচে এসে দেখি আমার সামনে মলি,কিন্তু আমরা ত বাড়িতে না।এটা ত অন্য একটা বাড়ি এই বাড়িতে মলি এলো কীভাবে?কিন্তু সেসব প্রশ্ন গুরুত্ব না দিয়ে আমি মলিকে জাপ্টে ধরি।

“আপামনি কী হইছে আপনে এইভাবে চিল্লাইতাছেন কেন?”

আমি মলিকে ভয়ে ভয়ে বলে উঠি।

“মলি ভূ ভূত আছে আমার ঘরে।দ দরজা বন্ধ থাকার পরও ভি ভিতরে চলে গে গেছে।”

আমার কথাশুনে মলি ঠকঠক করে কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিছে।

“আআ আপামনি হাছা কইছেন আপনে ভূত আছে।মা মাস খানিক আগে আমারেও দেখা দিছিল সাদা একটা ভূ ভূত।”

মলির কথা শুনে আমার এবার বেশি ভয় করছে।আমাদের কথার মাঝেই হামিম রূপি সেই ভূত নিচে নেমে আসে।একদম আমার সামনে দাঁড়ায় বুকে হাত গুজে।আমার উনাকে আমার এত সামনে দেখে আমি উল্টো দৌড় দেই।কিন্তু বেশিদূর যেতে পারি নি,তার আগেই উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়।হঠাৎ এরকম হওয়াতে আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই।

“মলি বাঁচাও আ আমাকে ভূ ভূত।”

আমার কথাশুনে মলিও জোড়ে ভূত বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।আমি চোখ বড়বড় করে একবার মলির দিকে তাকাই ত একবার হামিম রূপি ভূতটার দিকে তাকাই।উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে কোল থেকে নামায়,আমি দৌড় দিতে গেলে আমার হাতটা ধরে রাখে।আমি হাত মোচড়া মুচড়ি করছি ছাড়াবার জন্য কিন্তু একটা ভূতের কাছে আমার শক্তি নগন্য।উনি পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে ফোন লাগায়।সেটা দেখে আমি আরো বেশি অবাক হয়ে যাই।ভূত কী ফোনও চালায়?ডিজিটাল বাংলাদেশে কী ডিজিটাল ভূতেরও উৎপত্তি হল নাকি?
আমি এসব ভাবছি আর উনি এর মাঝেই ফোনটা রেখে আমাকে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি কোল থেকে নামার জন্য ধস্তাধস্তি করে চলেছি কিন্তু নামতে পারছি না।উনি ঘরে এসে আমাকে খাটে বসিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

“দেখুন আ আমি কিন্তু কো কোন ভূতের কোন ক্ষতি করি নাই।আমাকে ছে ছেড়ে দেন প্লিজ,আর আমার জামাইটাকেও ফি ফিরিয়ে দেন প্লিজ।!

” জামাই?”

“আ আমার জামাইয়ের রূপ ধরে আসছেন,নি নিশ্চয়ই আমার একমাত্র ডাইনোসর জা জামাইটাকে কোথাও রেখে এসেছেন?নয়ত আ আমি এত চিৎকার করলাম উনি এলো না কে কেন?প্লিজ আমার জা জামাইকে ফিরাইয়া দেন।”

“চুপ একদম চুপ,স্টুপিট কোথাকার।ভূত বলতে কিছু নেই,তাই এমন বোকা বোকা কথা আরেকবার বললে এমন থাপ্পড় দিব যে ভূত বলতে কোন ওয়ার্ড আছে সেটাই ভুলে যাবে।আমাকে তোমার কোন এঙ্গেলে ভূত মনে হয় হুম?এন্সার মি চুপ করে থাকবা না।”

উনার ধমকে আমি এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলি।উনি হকচকিয়ে উঠে আমার কান্নার আওয়াজে।

“সারু কেঁদো না,আর ধমক দিব না।তুমি শান্ত হও কেঁদো না।”(শান্ত হয়ে)

সারু শব্দটা শুনে মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করল।আমি কান্না ভুলে উনার দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছি।আর উনি আমার চোখের পানি মুছে দেয়।

“তুমি এমন বোকাবোকা কথা বলছিলে তার জন্যই ত এভাবে ধমক দিতে হল আমার।আর তোমাকে কাঁদতে হল।আমি কোন জ্বীন কিংবা ভূত নই আমি হামিম তোমার একমাত্র স্বামি।আর রুমে আসার জন্য কী ভূত হতে হয় নাকি?বারান্দা আর এক্সট্রা চাবি আছে কী করতে হুম!”

“আল্লাহ বলুন।”

উনি মুচকি হেঁসে বলে উঠে।

“আল্লাহ।”

“হাতটা দিন আপনার।”

“হাত দিয়ে কী করবা?”

“দিন ত।”

তারপর উনি হাত দিলে আমি উনার নখে চাপ দিয়ে ধরি।উনি ব্যাথায় আউচ করে উঠে,আর আমি বিশ্বজয় করা হাসিতে মেতে উঠি।আমি এখন শিয়োর উনি কোন জ্বীন,ভূত নয় আমার একমাত্র স্বামী উনি।

“ব্যাথা দিলা কেন?”

“হি হি হি,ব্যাথা পেলেন বলেই ত শিয়োর হলাম আপনি কোন জ্বীন কিংবা ভূত নন।”

“মানেহ?”

“মানে হল ছোট থাকতে মামার বাসায় গেলে নানু বলত,ভূত/জ্বীন ধরলে নাকি হাতের নখে চাপ দিলে ব্যাথা পায় না।তাই সেই টেকনিকটাই এখন ব্যাবহার করলাম।”

উনি আমার মাথায় একটা ঠুয়া মেরে বলে উঠে,,,

“পাবনার পলাতক পাগল একটা।”

আমি উনার কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি।

“এই আপনি কাকে পাবনার পাগল বলছেন হ্যাঁ?ঘুসি দিয়ে না একদম নাক বোঁচা করে ফেলব।”

“তুমি পাবনার পাগল,আর দেও একটা ঘুসি দেখি তেমার কত শক্তি।”

উনার কথাশুনে দমে যাই,কারন যতই হোক কেউ তাকে মারতে বললে মারা যায় না।তাই আমি চুপ করে বসে আছি,কিন্তু হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় উনি ত আমার উপরে ছিল তখন।কিন্তু কেন তখন ওভাবে শুয়ে ছিল?

“এই মিয়া আপনি তখন আমার উপরে শুয়ে ছিলেন কেন?কোন কু মতলবে তখন এমন করছেন হুম?”

“দেখছিলাম তোমার কয়টা দাঁত পোকায় খেয়েছে।এই তুমি না একজন ডাক্তার!ডাক্তার হয়ে নিজের দাঁতের এ হাল কেন?”

“দেখুন একদম দাঁত নিয়ে কথা বলবেন না?আমার দাঁত যথেষ্ট সুন্দর ঠিক আছে!”

“সেটা ত দেখতেই পারছি।”

“দেৎ আপনার সাথে কথা বলে কোন ফায়দা নাই,যান এই ঘর থেকে ঘুমাব আমি।আপনার সাথে কথা বললেই কথা বাড়বে।আর রাত পার হয়ে সকাল হয়ে যাবে।”

“আমি এই ঘর থেকে কোথাও যাচ্ছি না,আমি আজ থেকে তোমার সাথে একই রুমে থাকব।”

“খেলব না থুক্কু থাকব না আমি আপনার সাথে,বের হন এই ঘর থেকে।”

উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দেয়।আর উনি আমার পাশে শুয়ে পিছন থেকে এক হাতে আমার গলা আরেক হাত পেটে রেখে শুয়ে পড়ে।উনার ছোঁয়ায় কেঁপে উঠি আমি,আর উনি মুচকি হেঁসে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।
আমি উনার আলতো ছোঁয়ায় একদম ফ্রিজড হয়ে যাই।কী হল এটা?কী করল এটা?

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০৭

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৭

“আপাতত তোমাকে চাইছি।”

“আমাকে চাইছেন মানেহ?”

“মানে হল আমি চাইছি তুমি বউ সাজে আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবে।এবং আজ থেকে সেটাই হবে তোমার নিজ বাড়ি।”

“আমি যাব না আপনার সাথে,আর খুব শীঘ্রই আপনি ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবেন।”

“তুমি যদি আমার সাথে যাও তবে এক মাসের মধ্যে তোমাকে আমি সমস্ত প্রমান হাতে দিব।কে,কেন,কীভাবে ঐ শ্রমিকদের সাথে ওমন করেছে সেসব তোমার হাতে পেয়ে যাবে।তবে তোমাকে কথা দিতে হবে তুমি আমার বাড়িতেই থাকবে নিজ ইচ্ছেতে।”

আমি কিছুক্ষণ একমনে ভেবে উওর দেই।

“ঠিক আছে যাব আমি,তবে আজ নয় কয়েকদিন পর।”

“ঠিক আছে সমস্যা নেই,তবে চালাকি করতে যেও না।”

তারপর উনি চলে আসে সেদিন,আর আমি নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হই।একমাসের ব্যাপার সেটা দেখতে দেখতেই চলে যাবে।প্রমানগুলো হাতে পেলেই আমি চলে আসব।আমার এই কাজে অনেকগুলো মানুষ ন্যায় পেয়ে যাবে।এমনটা ভেবে আমি রাজি হই উনার বাসায় যাব।কয়েকদিন পর উনি আমার জন্য বউ সাজার জন্য শাড়ি,গহনা পাঠায়।যেগুলো পড়ে উনার বাড়িতে যেতে বলেছে আমাকে।আর এখান থেকে কোন জামা,কাপড়,কসমেটিকস নিতেও বারন করেছে।

আমিও তার পাঠানো শাড়ি গহনা দিয়ে তৈরি হয়ে নেই।আমার পরিবার কিছুই জানত না যে আমার আর হামিমের মধ্যে সমস্যা ছিল।তাই যেতেও কোন সমস্যা হয় নি।বাড়ি থেকে নিচে এসে দেখি উনি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি বাবা,মা আর ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে উনার পাশে বসে পড়ি।উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলেন।
তারপর সেদিন উনার বাড়িতে ঢোকার পর একটা মেয়েকে দেখতে পাই।উনি তখন ঐ মেয়েটাকে দেখেই আমাকে জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাটার জন্য বলে উঠে।কথাটা শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম কারন আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই হয় নি যে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবেন না।উল্টো উনি জোড় করে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।পরে ওদের কথাতে বুঝতে পারি মেয়েটা উনার বড় বোন।আর সেদিন উনার বোন বলেছিল উনার বাবা,মা ছোট থাকতে মারা গেছিল তবে সে মহিলা কে যে কয়েকদিন আগে মারা গেলো?এমন নানা প্রশ্ন এখনও আমার মাথায় ঘুরে।
তারপরও আমি ঐ মানুষগুলোকে ন্যায় পাইয়ে দেয়ার জন্য কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে চেয়েছি।এক পা দিয়েছিলামও তারপর কী হয় মনে নেই।তবে জ্ঞান ফেরার পর পায়ে কোন পোড়া দাগ দেখি নি।সেটাও আমার কাছে একটা রহস্য।আর সেদিন রাতে আমি উনার ল্যাপটপটা শাড়ি পড়ার জন্য নেই নি।উনার ল্যাপটপে ঐ শ্রমিকদের দুর্ঘটনার প্রমান থাকতে পারে সেটা ভেবে নিয়েছিলাম যাতে প্রমানগুলো হাতে চলে আসে সেদিনই।কিন্তু কপাল খারাপ তাই ল্যাপটপ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।

★ফ্লাসব্যাক এন্ড★

অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি মনে নেই।কিন্তু হঠাৎ গালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠি।

“দিয়া উঠো,খাবার এনেছি খাবে চলো।”

হামিমের গলার স্বর পেয়ে আমি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি।উনি সেটা দেখে মুচকি হাসে।

“খাবার নিয়ে চলে যান খাব না আমি।”

“মাইর খেতে না চাইলে চুপচাপ খেয়ে নাও।”

“খাবার থেকে মাইর খাওয়াই ভালো।কারন এতএত প্রশ্ন মাথায় নিয়ে আমি খেতে পারব না।”

“কী প্রশ্ন জাগছে তোমার মনে?”

“বললেই ত আর উওর দিবেন না,ত বলেও লাভ নেই।”

“বলতেও ত পারি,তুমি বলেই দেখ না।”

“সত্যি বলবেন?”

“হুম বলব,তবে সেসব উওর দেয়ার মত হলে শুধু দুইটা প্রশ্নের উওর দিব।”

“উওর দেয়ার মতই,আর আপনার কাছেই সব উওর আছে।”

“বেশ ত বলো কী প্রশ্ন আছে!আর খাবারটা মুখে নিয়ে নাও।”

উনি আমার মুখের সামনে খাবার ধরে কথাটা বলে।আমিও কিছু না ভেবে উনার হাত থেকেই খেতে শুরু করি।আর খেতে খেতেই উনাকে প্রশ্ন করে উঠি।

“আপনার মা ত কয়েকদিন আগে মারা গেলো তবে সেদিন নীলা আপু কেন বলল বাবা মা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে উনি আপনাকে বড় করেছে?

উনি হঠাৎ আমাকে খাইয়ে দেয়া বন্ধ করে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।আমি ঐ দৃষ্টির মানে বুঝলাম না,তবে বেশ কিছুক্ষণ পর উনি বলে উঠল।

” কয়েকদিন আগে যিনি মারা গেছে উনি আমার মা নন।উনাকে আমি বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে এসে মায়ের আসনে বসিয়েছি দুই বছর আগে।ছোট থাকতে মা-বাবা মারা যান,প্রথম বাবা তারপর মা।আমার মাকে আমি বড্ড বেশি ভালবাসতাম।তাই মা মারা যাওয়ার পর মায়ের মৃত্যুটা আমাকে বড্ড বেশি আঘাত করে।তখন নিজেকে মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোন ভাবেই পারছিলাম না।আপু আমাকে খুব ভালবাসে,আপু আমাকে আগলে রাখত সবকিছু থেকে।কিন্তু তারপরও আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি নি।একদিন একটা কেসের তদন্ত করার জন্য বৃদ্ধাশ্রমে যাই আর সেখানে গিয়ে উনাকে দেখে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে খুব।মনে হচ্ছিল আমার মা বুঝি এখানেই রয়েছে,আমি প্রায় সময়ই ওখানে যেতাম গিয়ে দেখা করে আসতাম উনার সাথে।এভাবে উনার প্রতি আমার মায়া দিনদিন বাড়তে থাকে।তাই আমি উনাকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসে মায়ের আসনে বসাই।আর এসব কিছুতে আপুর আপত্তি ছিল,তাই উনি মারা যাওয়ার পরও উনাকে দেখতে আসেন নি।”

উনি কথাগুলো বলার সময় চোখে পানি টলমল করছিল।আমারও চোখের কোনে পানি জমেছে।উনি নিজেকে সামলে আমার মুখের সামনে খাবার ধরে।আমিও উনার দিকে তাকিয়ে খাবারটা খেয়ে নেই চুপচাপ।

“আরেকটা প্রশ্ন করতে পারবে,তাড়াতাড়ি করো নয়ত আর উওর পাবে না।”

আমি উনার কথা শুনে ভুলেই গিয়েছিলাম যে দুইটা প্রশ্ন করতে পারব।

“ঐদিন আমাকে জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে কেন বলেছিলেন?”

আমার এই কথাটা শোনার পর উনার চোখ মুখের রং আবারও পাল্টে যায়।চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠে,,,

“এই প্রশ্ন বাদ দিয়ে অন্য কোন প্রশ্ন করো।”

“আপনি না বললেন দুইটা প্রশ্নের উওর দিবেন ত দিন না উওর।এমন কেন করছেন বলুন ত!”

“দুইটা প্রশ্নের উওর যদি দেয়ার মত হয় তবে দিব বলেছি।আর এটা উওর দেয়ার মত প্রশ্ন নয় ত অন্য প্রশ্ন করো।”

বুঝতে পারলাম উনি এই প্রশ্নের উওর দিবে না।তাই অন্য প্রশ্ন করাই ভালো তাতে করে একটা রহস্যভেদ ত করতে পারব।আর নয়ত এভাবেই রহস্যর মায়াজালে ঝুলে থাকতে হবে আমাকে।

“কী ভাবছো?”

“না মানে ভাবছিলাম তখন কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছিলেন কেন?”

“ঐ বাড়িতে আপু আর দুলাভাই এসেছে তাই এখানে নিয়ে এসেছি।তোমাকে ভালো করে বললে তুমি আসতে না তাই এভাবে নিয়ে আসা।”

“কিন্তু আমি ওখানে থাকলে সমস্যা কী ছিল?”

“অনেক সমস্যা ছিল যেটা এখন তোমাকে বলা যাবে না।তাই চুপচাপ এবার শুয়ে পড়ো,আমি আসছি এখনি।”

“মানেহ?আপনি আসবেন কেন?”

“বাহ্ রে আমার ঘর আমার বউ ত আমি আসব না নাকি?”

“মানে আপনি আমার সাথে এক ঘরে থাকবেন নাকি?”

“হুম বউ থাকতে বউয়ের সাথে থাকব না ত কী একা একা থাকব?আর এতদিন বিয়ে করার পরও একা থেকেছিলাম কারন বউ শ্বশুর বাড়িতে ছিল।কিন্তু এখন ত তুমি আমার বাড়িতেই।আর গতরাতে একা শুতে দিয়েছি বলে যে আজও একা শুতে দিব এতটাও ভালো আমি নই।তাই আজ আমি তোমার সাথেই থাকব,আর তুমি থাকবে আমার বুকে।”(শয়তানি হেঁসে)

“ননননননননননা,আমি ঘুমাব না আপনার সাথে।”

“আস্তে চিল্লাও,কানের পর্দা ফেটে যাবার উপক্রম।”

“আমি শুব না আপনার সাথে,চলে যান এখান থেকে।”

“তোমার শুতে হবে না আমিই শুব তোমার সাথে।”

কথাটা বলে উনি ঘর থেকে চলে যায় আর আমি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দরজা লাগিয়ে দেই।আর হাফ ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ি।
হঠাৎ মাঝরাতে কারো গরম নিশ্বাসে ঘুম ভেঙে যায় আমার।আমি ধীরে ধীরে চোখ খুলে আমার উপর হামিমকে দেখে খুব জোড়ে একটা চিৎকার দেই।

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০৬

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৬

“বিয়ে মানেহ!কার বিয়ে?”

“আদিয়া তুই ভিতরে যা তোর সাথে এটা নিয়ে পরে কথা বলছি।”

“বাবা,,,

” ভিতরে যা।”

আমি আর কিছু না বলে আমার রুমে চলে আসি।আর গভীর ভাবনায় মগ্ম হই,হঠাৎ বিয়ের কথা কেন বলল বাবা?এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম তখন ঘরে কারো প্রবেশ ঘটে।আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি হামিম,উনাকে দেখে আমি খুব বেশি অবাক হই।

“আপনি আমার ঘরে কেন?আর দরজা কেন লাগাচ্ছেন?”

উনি আমার কথার কোন উওর না দিয়ে দরজা আটকে খাটে বসে।উনি বসার সাথে সাথে আমি দাড়িয়ে যাই।

“কী করতে চাইছেন আপনি?”

“তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি।”

“বাপরে আপনি থেকে ডিরেক্ট তুমি!”

“হুম আর যাই হোক নিজের হবু বউকে ত আর আপনি করে বলতে পারি না।”

“হবু বউ মানে!কে আপনার হবু বউ?”

“কেন তুমি।”

“মাথা ঠিক আছে আপনার!কী সব আজেবাজে কথা বলে চলেছেন?”

“নিচে ত শুনলেই বিয়ের কথা চলছে,আর সেটা তোমার আর আমার বিয়ের জন্য।”

“আমি আপনাকে বিয়ে করব না,আপনাকে কেন কাউকেই বিয়ে করব না আমি।আমি এখনি বাবার কাছে যাব।”

“আদিয়া এটা আমার মায়ের শেষ ইচ্ছে।”

“শেষ ইচ্ছে মানে?”

“মানে মায়ের ক্যান্সার,আর বেশি গেলে একমাস বাঁচবে।তারপর তাকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে পরকালে।”

উনার কথাশুনে আমি খুব অবাক হই,তার সাথে খুব খারাপও লাগে।

“প্লিজ আদিয়া আপনি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিবেন না।আমার মায়ের কথা চিন্তা করে আপনি প্লিজ এই বিয়েটা করুন।আমার মার এই শেষ ইচ্ছেটা প্লিজ পূরন করে দিন।”

আমি উনাকে কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি।উনি আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার উওর জানার জন্য।বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আমি উনাকে বলি।

“আমার একটু সময় দরকার,আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি।”

“ঠিক আছে সময় নিন আপনি,কিন্তু উওর যেন পজিটিভ আসে।”

তারপর উনি ঘর থেকে চলে যায়,আর আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি।কী করব বুঝতে পারছি না আমি।এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে যায়।আমি সকালে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি তখন ফোনটা বেজে উঠে।

“আসসালামু আলাইকুম,,,কে বলছেন?”

“ওয়ালাইকুম সালাম,,,হামিম বলছি।”

“জি বলুন।”

“আমি আপনার সাথে আজ একটু দেখা করতে চাইছি,আপনার কী সময় হবে!”

“হসপিটালে এখন খুব চাপ ত মনে হয় না পারব।জরুরি কোন কথা?জরুরি কথা থাকলে আপনি হসপিটালে চলু আসুন সেখানেই না হয় কথা হবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

তারপর ফোন রেখে নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসার পর মা খাবার বেড়ে দেয়।আমার খাওয়ার মাঝেই সেখানে বাবা উপস্থিত হয়।

“তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে দিয়া।”

“আমি জানি তুমি কী বলবে বাবা,আমার একটু সময় চাই।”

“হাতে একদমই সময় নেই,হামিমের মা অসুস্থ তাই তিনি চাইছেন দুদিনের মধ্যেই বিয়েটা সেরে ফেলতে।”

“বাবা প্লিজ এটা নিয়ে এখন চাপ দিও না।আমি সময় চেয়েছি ত আমাকে ভাবার একটু সময় দাও।আমি মত দেয়ার আগে তোমরা কোন সিদ্ধান্ত নিও না।”

কথাটা বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসি।

___________________________________

চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলাম তখন সেখানে উপস্থিত হয় হামিম।রোগী বিদায় করে উনাকে বসতে বলি।

“কী খাবেন চা না কফি?”

“না কিছু লাগবে না,আমি এসেছি তোমার সাথে কথা বলতে ত কথা বলেই চলে যাব।”

কী লোক রে বাবা এক সময় তুমি বলে আরেক সময় আপনি বলে।মাথার নাট বল্টু কী ডিলা নাকি।যা ইচ্ছে হোক এসব নিয়ে কথা বললেই কথা বাড়বে। তার থেকে ভালো শর্টকাটে কথা বলে বিদায় দেই উনাকে।

“হ্যাঁ বলুন কী বলতে চান আপনি।”

“আমার মায়ের হাতে ত বেশি সময় নেই তাই উনি চাইছে কাল পরসুর মধ্যে বিয়েটা যাতে হয়ে যায়।”

“হুম বাবা বলেছে আমাকে।”

“আমি জানি তুমি এসবের জন্য প্রসস্ত নও।কিন্তু তারপরও আমি স্বার্থপরের মত আমার মার শেষ ইচ্ছেটা পূরন করার জন্য তোমার কাছে অনুরোধ করছি,রাজি হয়ে যাও।আমার মা তোমাকে দেখে মনে করছে তুমিই সঠিক আমার জন্য।তুমিই পারবে সারাজীবন আমার হাত ধরে একসাথে চলতে।তাই মা শেষ ইচ্ছে হিসেবে তোমাকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে পেতে চাইছে।”

“হুম আমি বুঝতে পারছি সবটা,কিন্তু আমি এখনই বিয়ে করতে চাইছি না।তারপরও একজন মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের কথা ভেবে আমি বিয়েটা করব।”

“সত্যি তুমি বিয়েটা করবে?”

“হুম করব।”

“বুকের উপর থেকে একটা পাথর সরালে,আমি এখনই বাড়িতে গিয়ে মাকে জানাই।মা জানলে খুব খুশি হবে,আর বিয়ের আয়োজনও ত করতে হবে।”

“হুম।”

তারপর উনি চলে যায় আর আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে মন দেই।
আমাদের বিয়ে ঠিক করা হয় এক সপ্তাহ পরে।কারন আমার বাবা বলেছে একমাত্র মেয়ের বিয়ে তিনি ধুমধাম করে পালন করবে।তাই এই সময়টুকু নেয়া,এর মাঝে সবকিছু ঠিকই চলছিল।
কিন্তু একদিন হঠাৎ করে উনার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন।আর উনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার জানায় উনার হাতে আর বেশি সময় নেই।যেকোন সময় যা খুশি হতে পারে।আর তখন হামিমের মা আমার বাবাকে ডেকে পাঠায় উনার কেবিনে।

“ভাইসাহেব আমার সময় ত শেষ,কিন্তু শেষ সময়টুকুতে আমার ছেলেটার পাশে আপনার মেয়েকে দেখতে চাই পুত্রবধূ হিসেবে।আপনি প্লিজ আমার এই ইচ্ছেটা পূরন করুন নয়ত মরেও শান্তি পাব না।”

“আপা আপনি এভাবে বলবেন না,আমি এখনই ওদের বিয়ের ব্যাবস্থা করছি।”

অতঃপর আমাদের সেদিনই বিয়ে হয়ে যায় পারিবারিক ভাবে।তারপরের দিনই উনার মা মারা যায়,উনি খুব ভেঙ্গে পড়েন।আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন।কিন্তু সেখানে কোথাও তখন নীলা আপুর ছায়াও দেখিনি।উনার মৃত্যুর খবর শুনেও আসেন নি আপু এতে আমি খুব অবাক হই।কিন্তু পরে জানতে পারি আপু দেশের বাইরে ছিলেন,তাই আসতে পারেন নি।
এভাবে কেটে যায় আরো কয়েকদিন,আমাদের বিয়ের সতেরো দিন চলছে এখন।হামিম এখন আমাদের বাড়িতেই থাকে।তবে উনি এক রুমে আর আমি আরেক রুমে।বাবা হামিমকে একা কিছুতেই ঐ বাড়িতে থাকতে দিবেন না।তাই এখানে রেখে দেয়া।আমি মাঝেমধ্যে হসপিটাল থেকে উনার রুমে গেলে আমার সাথে কথা বলত খুব স্বাভাবিক ভাবেই।আবার উনিও আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার রুমে যেতেন।আর বাড়ির কারো সাথেই তেমন কথা বলতেন না।
একদিন হসপিটাল থেকে বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে উনার রুমে যাওয়ার সময় শুনতে পাই উনি কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন।

“কেসটা এক্সিডেন্ট কেস হিসেবে চালিয়ে দাও,আর আহমেদ কোম্পানির যেসকল শ্রমিক মারা গেছে,কোমায় আছে তাদের পরিবারের সাথে কথা বলো।যে তাদের প্রত্যেককে দুই লক্ষ টাকা করে দেয়া হবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে।”

“———-”

“আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে,আর যা প্রমান আছে সব নষ্ট করে দাও।”

কথাগুলো শুনে আমার দুনিয়া থমকে যায়,এতগুলো মানুষের মৃত্যু উনি টাকা দিয়ে সব ঠিক করতে চাইছে।

“কত টাকা ঘুস দিয়েছে আহমেদ কোম্পানির মালিক আপনাকে!”

ঘরে ডুকতে ডুকতে কথাটা বলি আমি,আর উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকায়।”

“কী বলছো এসব,ঘুস দিয়েছে মানে?”

“এই মাত্র ত বললেন সেদিনের আহমেদ কোম্পানিতে ঘটা সেই ঘটনাকে এক্সিডেন্ট কেস হিসেবে চালিয়ে দিতে।আর সব প্রমান নষ্ট করে দিতে।”

“আমার কথা,,,

” চুপ একদম চুপ আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে চাই না।আপনি খুব খারাপ একটা মানুষ।চলে যান এখান থেকে আমি আপনার মুখ ২য় বার দেখতে চাই না।আমি আপনার নামে পুলিশ কেস করব,আর সেই সব শ্রমিকদের ন্যায় পাইয়ে ছাড়ব।”

“আমি গেলে আমার সাথে তুমিও যাবে এ বাড়ি থেকে।কারন তুমি আমার স্ত্রী।”

“মানি না আমি এই বিয়ে আর না মানি স্বামী হিসেবে আপনাকে।আর আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না চলে যান এখান থেকে।”

“বেশি বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি,আমার রাগ উঠিও না।চুপচাপ আমার সাথে চলো।”

আমার হাত ধরতে গেলে আমি পিছনে সরে দাঁড়াই আর রেগে চিৎকার করে বলি।

“আপনার মত স্বার্থপর মানুষের সাথে আমি কোথাও যাব না।বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে নয়ত আমি পুলিশ ডাকব।”

“তুমি কিন্তু,,,

“চলে যান এখান থেকে।”

“বেশ চলে যাব,তবে মনে রেখো আমার দরজায় তোমার আসতেই হবে।

তারপর উনি আমাকে আর কিছু না বলে বেরিয়ে যান ঘর থেকে।আর আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।ভাবতেও অবাক লাগছে আমার স্বামী একজন অসৎ ব্যাক্তি।এতগুলো মানুষের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে কেসটা ধামাচাপা দিতে চাইছে।না আমি এটা হতে দিব না,আমি ওদের ন্যায় পাইয়ে ছাড়ব।এমনটা মনোস্থির করে আমি পুলিশের কাছে যাই।কিন্তু তারা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয় তারা এই কেসটা নিবে না।এসব নিয়ে কয়েকদিন খুব চেষ্টা করি কিন্তু কোন লাভ হয় না।
তনয় স্যারকেও আমি আগেই সবটা জানিয়েছিলাম উনি সবটা জানে।উনিও কম চেষ্টা করে নি কিন্তু ফল শূন্য।একদিন উনার সাথে কথা বলছিলাম কীভাবে সেই শ্রমিকদের ন্যায় পাইয়ে দিব অপরাধীদের শাস্তি দিব।তখন সেখানে উপস্থিত হয় হামিম,হামিমকে দেখে আমি খুব অবাক হই তখন।

“আপনি এখানে কেন এসেছেন?আপনাকে বলেছিনা আমি আপনার মুখ ২য় বার আমি দেখতে চাই না।তারপরও কেন এসেছেন এখানে আপনি?”

উনি আমার কথাশুনে মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“কী কোন কিছু করতে পারলে না ত!কোন পুলিশ কেসটা নিলো না ত!”

“আপনি কীভাবে জানলেন এসব?আপনিই কী তবে এসবের পিছনে রয়েছেন?”

“একদম ঠিক,আমিই এসবের পিছনে রয়েছি।আমি না চাইলে কোন পুলিশ কেসটা নিবে না আর না তুমি কোন প্রমান হাতে পাবে।”

“আপনি চাইছেন টা কী এভাবে এতগুলো মানুষের ক্ষতি কেন করছেন আপনি?কেন অপরাধীদের শাস্তি পাইয়ে দিচ্ছেন না।”

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০৫

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৫

সেদিন রাতে আমি বাবা আর ভাইয়া ঐ লোকটার বাড়িতেই ছিলাম।আমি উনার মার সাথে শুয়ে ছিলাম আর বাবা,ভাইয়া অরা ঐ ছেলেটার সাথে পাশের রুমে শুয়েছিল।মহিলাটিকে ঔষধ খাইয়ে দেয়ার পর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।আর আমি উনার মাথায় পানি দিয়ে,জলপট্টি দিয়েছি সারারাত।আমার সজাগ থাকার অভ্যাস আছে তাই জেগে থাকতে কোন সমস্যা হয় নি।সকালে উনি সজাগ হয় আর উনার মাথার কাছে আমাকে বসে থাকতে দেখে খুব অবাক হয়।

“তুমি এখনও যাও নি!”

“এইত এখনই চলে যাব,সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।তা আপনি এখন কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা,তোমাকে খুব কষ্ট দিলাম।আমার ছেলেটাও না একটা পাগল জানো!একটু জ্বর হল কী হল না তোমাকে এভাবে তুলে নিয়ে এলো।আমি বারবার না করেছি একটা মেয়েকে এতরাতে নিয়ে আসার দরকার নেই।কিন্তু কে শুনে কার কথা!”

“আরে আন্টি কোন সমস্যা নাই,উনি যা করেছে একদম ঠিক করেছে।উনার জায়গায় আমি থাকলে আমিও এটাই করতাম।কারন কোন সন্তানই তার বাবা মায়ের কষ্ট শয্য করতে পারে না।আর আমি ত একজন ডাক্তার আমার দায়িত্বই হল রোগীর সেবা করা।”

উনি এবার আমার গালে হাত দিয়ে বলে,,,

“তুমি খুব ভালো,খুব মিষ্টি,এমন একটা মেয়ে আমার হামিমের জন্য খুব দরকার।যখন আমি থাকব না তখন যাতে সে হামিমকে আগলে রাখতে পারে।”

উনার কথাশুনে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম,তাই কোনমতে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুচকি হেঁসে চলে এলাম ঘর থেকে।আর পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখি ভাইয়া নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে আর বাবা রুমে নেই।তাই বাইরে চলে আসি বাবাকে খুঁজতে আর এসে দেখি রাতের ছেলেটা রান্না ঘরে কী যেন করছে।আমি কৌতূহলি হয়ে উনার কাছে গিয়ে দাঁড়াই।উনি আমাকে দেখে মুচকি হাসেন,আর এক বাটি গরুর মাংস আমার দিকে এগিয়ে দেয়।

“খেয়ে দেখুন ত একটু সবকিছু ঠিক আছে কী না?আসলে মার জন্য পাক করেছি তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

আমি ত এখন অবধি ফ্রেশই হলাম না,আর উনি বলছে গরুর মাংস খেতে!এখন যদি বলি ফ্রেশ হই নি তবে ত ভাববে মেয়েটা খাচ্চর।এত বেলা হওয়ার পরও নাকি ফ্রেশ হয় নি।না বাবা থাক এটা বলে কাজ নেই।

“না মানে আমি গরুর মাংস খাই না,এলার্জি আছে।”

আল্লাহ মাফ করো সকাল সকাল একটা মিথ্যা কথা বলে ফেললাম।

“ওহহ ঠিক আছে,সমস্যা নাই।”

“আপনাদের বাড়িতে আর কেউ থাকে না!”

“হুম থাকে ত,আমি মা আর কিছু সার্ভেন্ট।”

“সার্ভেন্ট থাকতে আপনি রান্না করছেন?”

“আসলে মা ওদের হাতের রান্না পছন্দ করেন না।তাই আমাকেই করতে হয় মার জন্য রান্না।

“ওহহ!”

এরপর বেশ কিছুক্ষন দুজনেই নিরবতা পালন করি। তারপর হঠাৎ করে উনার মার সেই কথাটা কানে বাজে,”এমন একটা মেয়ে আমার হামিমের জন্য খুব দরকার।”মানে উনিই কী সে,যেদিন আমাকে ধাক্কা দিয়ে সবার সামনে ফেলে দিয়েছিল।তনয় স্যারও ত সেই লোকটার নাম হামিমই বলেছিল।কথাটা মাথায় আসতেই মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু আমি যতটা সম্ভব নিজেকে কন্টোল করার চেষ্টা চালিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলাম।

“আচ্ছা আপনার নাম কী?আর কী কাজ করেন আপনি?”

“ওপস সরি এতক্ষণ ধরে দুজন একসাথে আছি অথচ আমার নামটাই আপনাকে বলা হয় নি।আমি হামিম একজন ডিটেকটিভ।”

এইবার আমি শিয়োর এই বেটায়ই সেদিন আমাকে ফেলে দিয়েছিল।আর ভাব নিয়ে আমাকে না ধরে তার ফোন নিয়ে চলে এসেছিল।দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা তোকে।কথাটা বলেই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি একে শায়েস্তা করার মত কিছু পাই কী না।তারপর চোখ যায় ময়দার বয়ামে,আমি তৎক্ষনাৎ সেটা নিয়ে উনার উপরে ডেলে দেই।

“শোধ নিলাম,সেদিন হসপিটালে ফেলে দেয়ার জন্য।”

কথাটা বলে ভৌ দৌড় দেই।আর বাবা,ভাইয়ার কাছে চলে আসি।আর খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠি,,,

“ইস্ একটা পিক তুলে নিলে মন্দ হত না,পুরা সাদা ভূত হয়ে গেছে ময়দা দিয়ে।”

কথাটা বলে আবারও হাসিতে মেতে উঠি।

অন্যদিকে হামিম এটার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিল না।হামিম স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে ওভাবেই,সে বুঝার চেষ্টা করছে যে এই মুহুর্তে ঠিক কী হল তার সাথে।আর যখন বুঝতে পারল তখন রেগে গেলো খুব।

“ভূতততততততত।”

এত জোরে কারো গলা পেয়ে হামিম আশেপাশে তাকিয়ে দেখে মলি ফ্লোরে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।সেটা দেখে হামিম এক গ্লাস পানি নিয়ে মলির সামনে গিয়ে চোখে,মুখে পানি ছিটায়।একটু পর মলির জ্ঞান ফিরে আর চোখের সামনে হামিমকে এই অবস্থায় দেখে আবারও চিৎকার করে জ্ঞান হারায়।হামিম বেচারা পড়েছে ঝামেলায়,তাই হামিম তার ঘরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে,তারপর মলির কাছে যাবে।আর আদিয়াকে পড়ে দেখে নিবে সে এমনটা মনস্থির করে।

____________________________________

সেদিন আমরা হামিম আর উনার মার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।হামিম আমাকে কিছু বলে নি সেদিন সাথে বাবা আর ভাইয়া ছিল বলে।তবে আমি এখন মনে মনে খুব বেশি খুশি।কারন প্রতিশোধ নিতে পেরেছি আমি।এরপর কেটে যায় আরো দুই দিন,এই দুই দিনে আহমেদ কোম্পানির অনেক শ্রমিক মারা গেছে,কেউ কোমায় আছে আর কেউ সুস্থ হয়েছে।এসবে মনটা বড্ড বেশি ভার হয়ে আছে।
একদিন হসপিটালে একটা মিটিং ডাকা হয়,যেখানে হসপিটালের কয়েকজন ডাক্তার সহ আমিও সেখানে ছিলাম।মিটিং শেষ করে বের হয়ে আমার চেম্বারের দিকেই যাচ্ছিলাম।কিন্তু চেম্বারের সামনে হামিমকে দেখে ঘাবড়ে যাই।আর উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করি,এখন উনিও যদি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আসে!তবে ত পুরো হসপিটালের সামনে আবারও আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে।কথাটা ভেবে হাঁটার স্পিড বারিয়ে দেই,কিন্তু বেশিদূর যেতে পারি নি।তার আগেই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে,,,

“এত ভীতু হয়ে ডাক্তার হলেন কীভাবে?”

কথাটায় কেমন অপমান বোধ হল আমার,তাই রেগে পিছন ফিরে আঙুল তুলে কিছু বলার জন্য তাকাতেই থমকে যাই।কারন উনি আমার দিকে খুব রেগে তাকিয়ে আছে।উনি যেভাবে রেগে আছে তাতে উনার কাছে আমার রাগ কিছুই না।

“কী সব হাওয়া ফুস!”

“——-”

“কথা কেন বলছেন না মিস আদিয়া!আপনি যে ভীতু সেটা কী আবার প্রমান করার জন্য এভাবে ঘুটিয়ে রয়েছেন হুম!”

আমি এবার কয়েক পা পিছিয়ে যাই আর রেগে বলি।

“আপনার মত ডাইনোসর,বজ্জাত বেটাকে ভয় পেতে আমার বয়েই গেছে।”

কথাটা বলেই আবারও দৌড় লাগাই।আর উনি পিছন থেকে বোকার মত তাকিয়ে রইল।
এরপর কেটে যায় আরো পনেরো দিন,এই কদিনে হামিমের সাথে আমার বহুবার দেখা হয়েছে হসপিটালে।উনি আহমেদ কোম্পানির সেই কেসটার তদন্ত করার জন্য মাঝেমধ্যেই হসপিটালে আসতেন এটা ওটা জানার জন্য।আর দুজন সামনাসামনি পড়লে দুজন এমন ভাব ধরতাম যেন কেউ কাউকে চিনিই না।
ভালোই কাটছিল দিন কিন্তু হঠাৎ একদিন হসপিটাল থেকে বাড়িতে এসে দেখি সেই আন্টিটা মানেহ হামিমের মা আমার বাড়িতে।উনাকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি উনার সাথে হামিমকে দেখে।

“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন আপনি?”

“ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালো আছি মা,কিন্তু তোমার সাথে অভিমান করেছি।”

“কেন আন্টি?আমি কী কিছু করেছি?”

“তুমি ত সেদিনের পর আর আমার সাথে দেখা করতেই গেলে না।হামিমকে কতবার বলেছি তোমাকে নিয়ে যেতে কিন্তু তুমি নাকি খুব ব্যস্ত তাই আসতে পারবে না।তাই আমিই চলে এসেছি তোমার সাথে দেখা করতে।”

“খুব ভালো করেছেন আন্টি।আপনি একটু বসুন আমি চেন্জ করে আসছি।”

“কথাটা বলেই আমি হামিমের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে আসি।আর ফ্রেশ হয়ে জামা চেন্জ করে নিচে নেমে আসি।আর আসার পর যে কথাটা শুনি সেটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না একদমই।

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০৪

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৪

বেশ অনেকক্ষণ পর আমার চোখ,মুখে আর হাতের বাঁধন খুলে দেয়া হয়।আমি দুই হাত দিয়ে চোখ কচলে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি আমি কোথায়!আর কে আমাকে এখানে আনল!কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পারছি না।আমি কী অন্ধ হয়ে গেছি নাকি জায়গাটাই এমন অন্ধকার।আমার মনে এক অজানা ভয়ের জন্ম হয়।যাঁরা আমাকে এখানে এনেছে তারা কী আমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে তুলে এনেছে!
আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না,কিন্তু আমি মরে গেলে সেসব মানুষের কী হবে যারা আমার মুখ চেয়ে এখনও বেঁচে আছে ন্যায় পাওয়ার জন্য।নাহ আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে।তাই অন্ধকারেই হাতরিয়ে দরজা খুঁজে চলেছি।
এভাবে বেশ কিছুক্ষন খুজার পর আমার হাতের সংস্পর্শে কেউ আসে।আমি গাবড়ে যাই,কিন্তু নিজেকে যতটা সম্ভব ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।

“কককে আপনি?”

“——-”

“কথা কেন বলছেন না!উউওর দিন কে আপনি! আআর আআমাকে এভাবে ততুলে এনেছেন কেন?”

“——–”

“আমি ককিন্তু পুলিশ ডডাকব।”

“নিজে আগে ছাড়া পাও তারপর না হয় পুলিশের কাছে যেও।”

কন্ঠটা আমার বেশ পরিচিত,তাই বুঝতে সমস্যা হল না এটা কে?”

“হামিম আপনি!আপনি আমাকে এভাবে বেঁধে নিয়ে এসেছেন কেন?চাইছেন টা কী আপনি?”

“আমার যেটা করতে মনে চায় আমি তাই করি।তার কৈফিয়ত আমি কাউকে দিতে বাধ্য নই।”

কথাটা বলেই উনি ঘরটার লাইট জ্বালিয়ে চলে যায়,আর আমি ঘরটা দেখে অবাক হয়ে যাই।এটা ত সে বাড়ি না যেখানে আমরা সকালেও ছিলাম।এটা অন্য একটা বাড়ি,এই বাড়িতে উনি আমাকে এভাবে নিয়ে এলেন কেন?আমার মাথাতে কিছুই ডুকছে না এই লোকটা পুরোই রহস্যময়।
এই লোকের সাথে আমার বিয়েটা না হলেও পারত।আমি মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম।আর ভাবতে লাগলাম আজ থেকে দুইমাস আগের কথা।যখন আমার জীবনে এই হামিম নামের লোকটার প্রবেশ ঘটে।

★দুইমাস আগে★

মামাত বোনের বিয়ে খাওয়ার জন্য চার দিনের ছুটি নিয়েছিলাম হসপিটাল থেকে।কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই হসপিটাল থেকে কল আসে ইমার্জেন্সি যাওয়ার জন্য।আমিও তখন সাথে সাথে রওনা হই সোনারগাঁও থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে।আর হসপিটালে এসে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।
কারন হসপিটালের মধ্যে একের পর এক রুগি ভর্তি হয়েই চলেছে।সবাই এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছে।আমি সবটা জানার জন্য একজন নার্সকে ডাক দেই।

“কী হচ্ছে এখানে,এত রোগী হসপিটালে একসাথে কী হয়েছে?”

“ম্যাম এরা সবাই আহমেদ কোম্পানির শ্রমিক,হঠাৎ করে সেখানের ১০০% শ্রমিক থেকে ৭৩% শ্রমিকই এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”

নার্স কথাটা বলেই স্থান ত্যাগ করে,আমি আর কিছু না ভেবে ডাক্তার তনয়ের কেবিনে আসি।উনার কেবিনে ডুকার সময় আমি কারো সাথে ধাক্কা খাই।আর আমি যাতে পড়ে না যাই তাই কিছু একটা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করি।কারন এই ভরা হসপিটালে পড়ে গেলে মানসম্মান বলতে আর কিছু থাকবে না।সামনের ব্যাক্তিটি তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে আমাকে ধরার জন্য।কিন্তু যখন আমি তার হাত ধরতে যাব তখন সে আমার দিক থেকে হাত সরিয়ে তার ফোনটা হাওয়া থেকে হাতে নেয়।আর আমি নিচে পড়ে যাই,নিচে পড়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছি।আমি আশেপাশে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।তাই বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াই।আর সামনের ব্যাক্তিটিকে কড়া কথা শোনানোর জন্য তাকাতেই দেখি সে হাওয়া।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার,

“বেটা বজ্জাত একটা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে তাকে না ধরে ফোন ধরা।আবার সরিটাও না বলে ভাব নিয়ে চলে যাওয়া তাই না।আরেকবার দেখা পাই কেলিয়ে একদম হালুয়া বানিয়ে ফেলব।
কিন্তু বেটার খোমাটাই ত দেখলাম না পরের বার দেখা হলে চিনব কেমতে?”

“আদিয়া আর ইউ ওকে!”

সামনে তাকিয়ে দেখি তনয় স্যার,আমার এবার হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।এভাবে সিনিয়রের সামনে লাউয়ের মত পড়ে গেলাম।দূর ভাল্লাগে না।

“জি স্যার আমি ঠিক আছি।স্যার ঐ লোকটা কে?”

“আরে ওটা ত হামিম চৌধুরি।”

“হামিম চৌধুরী!”

“হুম কেন?”

“না এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম।আর স্যার কী হয়েছে ওদের?একেরপর এক রোগী হসপিটালে এসেই চলেছে,বুঝলাম না কিছু।”

“আসো আমার সাথে দেখাচ্ছি তোমাকে।”

আমি স্যারের সাথে তার পিছন পিছন আসি,স্যার আমাকে নিয়ে একটা কেবিনে ডুকে যেখানে অনেক রোগী রয়েছে আর যারা সবাই ঐ আহমেদ কোম্পানির শ্রমিক।

“স্যার ওদের ত অবস্থা খুবই খারাপ,কেউ বমি করছে,কারো বুকে ব্যাথা।এসব কী হচ্ছে স্যার?”

“ওদের প্রত্যেকের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস পাওয়া গেছে।”

“কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস!এই গ্যাসে ত মানুষ সহ সকল মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী হিমোগ্লোবিক প্রানীর জন্য বিষাক্ত।”

“হ্যা তুমি একদম ঠিক বলেছো।”

“কিন্তু স্যার এত গ্যাস আসল কোথা থেকে আহমেদ কোম্পানিতে!”

“সেটার জন্যই হামিম চৌধুরী ও তার টিম এখানে এসেছিল তার তদন্ত করার জন্য।”

“মানেহ!অরা কী পুলিশ?”(অবাক হয়ে)

” না গোয়েন্দা উনারা।এখন কাজ শুরু করে দাও আদিয়া,সবটা ত বুঝতেই পারছো!”

“জি স্যার অবশ্যই।”

তারপর আমি রোগীদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি,এভাবে চারদিন কেটে যায়।চারদিন পর রাত ৩ টায় আমার বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠে।সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন তখন,কিন্তু বারবার কলিং বেল বাজার কারনে বিরক্ত নিয়ে ঘুম থেকে উঠি।আর ড্রয়িং রুমে এসে দেখি বাবা আগেই চলে এসেছে দরজা খুলতে।দরজা খোলার পর কয়েকজন হুরমুরিয়ে আমার বাড়িতে প্রবেশ করে।

“আরে কারা আপনারা?এভাবে আমার বাড়িতে কেন ডুকছেন!বের হন,বের হন আমার বাড়ি থেকে।”

লোকগুলো ভেতরে ডোকাতে আমি সামনে এগিয়ে যাই,আর লোকগুলো বাবার কথার উওর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে উঠে।

“ডাক্তার আদিয়া সারজিন আছেন?”

“আমিই ডাক্তার আদিয়া সারজিন,কী সমস্যা আপনাদের এভাবে ভিতরে ঢোকার মানে কী?কারা আপনারা?”

“আমদের সাথে আপনাকে যেতে হবে,আপনার বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে আমাদের কাছে।”

“মাথা ঠিক আছে আপনাদের?কী বলছেন এসব আমার মেয়ের বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে মানে কী?কী করেছে আমার মেয়ে!”

“জানতে হলে আমাদের সাথেই আসুন।”

কথাটা বলেই লোকগুলো হাঁটা দেয় বাইরে,আর বাবা আমার কাছে আসে।

“লোকগুলো কে?আর কী বলছে এসব দিয়া!”

“বাবা আমি কিছু বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে এসব?আমি ত ওদের আজই প্রথম দেখলাম।”

বাবা আর কিছু না বলে আমার বড় ভাই আনাছকে নিয়ে ওদের পিছন পিছন যায়।সাথে আমিও আসি ওদের সাথে।লোকগুলো আমাদের নিয়ে একটা বাড়িতে আসে,আমরা সবাই অবাক হই খুব সাথে ভয়ও পাই।লোকগুলো আমাদের নিয়ে একটা ঘরে আসে,আর এসে দেখি একজন বৃদ্ধ মহিলা অসুস্থ।তার পাশেই একটা ছেলে মহিলার হাত ধরে কী যেন বলছে।

“স্যার ডাক্তার নিয়ে এসেছি।”

ছেলেটা এবার মুখ তুলে তাকায় আমার দিকে,শ্যামলা বর্নের ছেলেটা,মায়াবী মুখ,হাইট ছয় ফুটের মত হবে।ছেলেটা আমাকে দেখে আমার দুই হাত চেপে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।

“আমার মা খুব অসুস্থ,প্লিজ আমার মাকে সুস্থ করে দিন।”

ছেলেটার মা অসুস্থ শুনে আমি কোনকিছু না ভেবে উনার মার কাছে যাই।কারন আমি একজন ডাক্তার,আর ডাক্তারের কাজই হল মানুষের সেবা করা।

“উনার শরীরে অনেক বেশিই জ্বর,এই ঔষধগুলো এনে খাইয়ে দিবেন।ততক্ষনে উনার মাথায় একটু পানি দিয়েন তবে উনার মাথাটা ভালো লাগবে আর জ্বরটাও কমবে।”

ছেলেটা একজনের হাতে কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বলল ঔষধ আনতে।সে চলে যাচ্ছিল তখন আমি তাকে আটকে প্রশ্ন করে বসি।

“আমাকে ত এরেস্ট করা হয়েছে তবে এই বাড়িতে নিয়ে আসার কারন কী উনার মাকে দেখা!”

ছেলেটা ঐ লোকটাকে চলে যেতে বলল আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

“হুম মিস,আসলে কোন ডাক্তার পাচ্ছিলাম না এত রাতে।ডাক্তার তনয়কে ফোন করলে জানায় তিনি হসপিটালে ইমার্জেন্সি রোগী দেখছে।আর উনি আপনার নাম জানায় তাই আপনাকে নিয়ে আসতে ওদের পাঠাই।আর একটা মেয়েকে নিশ্চয়ই কোন বাবা মা এত রাতে পেশেন্ট দেখার জন্য আসতে দিবে না তাই এই পদ্ধতি।”

উনার কথাশুনে বাবা আর ভাইয়া হেঁসে ফেলল,কী টেকনিক রে ভাই।আমি বাবা আর ভাইয়ার থেকে চোখ সরিয়ে উনাকে বলি।

“তবে আমরা কী এখন আসতে পারি?”

“না প্লিজ যাবেন না আপনি,মা অসুস্থ আমি ছেলে মানুষ তেমন কিছু বুঝিও না।আর রাতে কোন দরকার পড়লে আবার ডাক্তার পাব কোথায়।ত দয়াকরে আপনি কয়েকটা ঘন্টা এখানে থেকে যান।সকাল হলেই আমার লোক আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবে।”

আমি ছেলেটার কথা শুনে বাবা আর ভাইয়ার দিকে তাকালে বাবা আশ্বস্ত করে থেকে যাওয়ার জন্য।তাই আমিও হ্যাঁ বলে দেই।

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০৩

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩

আমি আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা বোরকা আর হিজাব পড়ে তৈরি হয়ে নেই।কারন উনার কড়া নির্দেশ কোথাও বাহিরে গেলে হিজাব আর বোরকা পড়ে যেতে হবে।তৈরি হয়ে নিচে নামতেই দেখি হামিম নেই এখানে।সেটা দেখে আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

“যাক বাবা ডাইনোসরটা এখানে নেই,থাকলে আবার কী না কী করত আল্লায়ই জানে!”

কথাটা বলেই আমি ধাপ ধুপ পা ফেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি।আর বাইরে গাড়ির সামনে এসেই আমার চোখ কপালে।কারন আমি যে গাড়িতে করে যাব সেই গাড়িতে হামিমও বসে আছে।আমি থেমে যাই,সেটা দেখে হামিম মুচকি হাসে।

“থেমে গেলে কেন!তাড়াতাড়ি আসো লেট হয়ে যাচ্ছে।”

“মানেহ!আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

“কেন হসপিটালে।”

আমি যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হয়েছে,এই লোকটা অতি চালাক এর সাথে এমনি এমনি পারা যাবে না।তাই আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসি।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে আর আমি একটু পরপর বাইরের দিকে তাকাচ্ছি।আর হামিম নিজ ফোনে ফোন টিপছে।

“চাচা গাড়িটা ঐ শপিংমলের সামনে থামান ত।”

আদিয়ার কথা শুনে হামিম ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আদিয়ার দিকে তাকায়।

“কেন গাড়ি থামাতে বলছো?”

“আমার একটা ফোন দরকার ত সেটাই কেনার জন্য গাড়ি থামাতে বলছি।”

“গাড়ি থামানোর দরকার নেই চাচা আপনি হসপিটালেই যান।”

হামিম কথাটা বলেই আবার ফোন টিপায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।আর আমি রাগে ফুঁসছি,লোকটাকে কতগুলো কড়া কথা শুনিয়ে দেয়ার ইচ্ছে হচ্ছে।

“আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন এবার।”

আমার কোন কথা উনি পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ ফোন টিপছে।আজ বাড়িতেও ত মনে হয় নিয়ে যাবে না এই ডাইনোসর টা।বাড়িতে গেলেও কিছু একটা করা যেত।
বেশ কিছুক্ষণ পর দুজনেই হসপিটালে এসে পৌঁছাই।আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় আড়চোখে একবার উনার দিকে তাকাই।একি উনিও নামছে কেন?

“আপনি নামছেন কেন?আপনার ত,,,

” এক কথা কতবার বলব তোমাকে!তখন বলি নি হসপিটালে আসব।চুপচাপ ভিতরে আসো নয়ত কী হবে তুমি ভালো করেই জানো।”

কথাগুলো বলে হামিম ভিতরে চলে যায়,আর আমিও অসহায় মুখ করে উনার পিছন পিছন যাই।হসপিটালে ডুকার পরপরই উনি একটা ভয়ানক কাজ করে বসে।
আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই।আর উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আমার কাঁধে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে আর এক হাত পকেটে দিয়ে হেঁটে চলেছে।আমি হাত সরাতে চাইলে উনি আরো জোড়ে চেপে ধরে।আর আশেপাশের বাকি সবাই অবাক চোখে দেখছে আমাদের।আর যারা পরিচিত তারা সবাই আমাদের দুজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে আমাদের নতুন জীবনের জন্য।আমার চেম্বারে ডুকার পরপরই উনি আমার কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে আমার চেয়ারে বসে পড়ে।আর আমি বোকার মত উনার দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছি।

“এটা কী হল?আপনি হসপিটালে ডুকার পর আমার কাঁধে হাত কেন দিয়েছেন?আর এখন আমার চেয়ারেই বা কেন বসেছেন?উঠুন বলছি।”

“আমার যা মন চাইবে আমি সেটাই করব,আর তার কৈফিয়ত কাউকে দেই না আমি।”

ব্যাস উনার এই একটা কথায় আমার সব উওর পাওয়া হয়ে গেছে।কোন দুঃখে যে সেদিন উনার মত গাউড়ার সাথে আমার দেখা হল।পুরাই তাড়ছিড়া মার্কা জামাই পড়ছে আমার কপালে।
উনি বসে থেকে কাউকে কল দেন,আর একটু পর চেম্বারে ড্রাইভার চাচা এসে উনার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।

“এই যে মিসেস বউ এবার যান।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই উনার দিকে কই যাব আমি সেটা জানার জন্য।

“বাইরে যান।”

“বাইরে যাব মানে কী?আমার পেশেন্ট গুলো কী তবে আপনি দেখবেন?”

“অবশ্যই না,তোমার পেশেন্ট তুমিই দেখবে।কিন্তু আমার প্যান্টটা নিশ্চয়ই তুমি পড়বা না আমিই পড়ব।ত বাইরে যাও,আমি চেন্জ করব।”

উনার কথাশুনে আমি উনার পায়ের দিকে তাকাই,আর যখনই একটা চিৎকার করতে যাব উনি বসে থেকেই উনার ঠোঁটে এক আঙুল চেপে ধরে বুঝায় চুপ থাকতে।

“শসস একদম চিৎকার করবা না,এমন করছো যেন আমাকে থ্রি কোয়াটার প্যান্টে কখনও চোখেই দেখো নি।”

“মানে কী?আপনি এভাবেই তখন সবার সামনে দিয়ে এসেছেন?আল্লাহ আমার মান সম্মান সব চশমা হইয়া গেছে।এই লোকটার জন্য আমার এতদিনের অর্জন করা সব মান সম্মান গেলো গো।”

“একদম চুপ করো নয়ত থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।আর আমি এক থেকে তিন গুনব এর মধ্যে তুমি বাইরে যাবে তারপর আমি ডাকলে ভিতরে আসবে,নয়ত!”

উনি কথাটা বলার পরপরই আমি বাইরে চলে আসি।কারন আমি জানি উনি এরপর কী বলবে,বজ্জাত বেডা একটা।

আর হামিম ভিতরে নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছে।

“হামিম তোর লজ্জা সরম কী কিছুই নাই নাকি রে।এভাবে কেমনে পারলি থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে এতগুলো মানুষের সামনে দিয়ে আসতে।তোর কী দরকার ছিল না মনে করে প্যান্টটা চেন্জ করে আসার জন্য।তোর কপাল ভালো চাচা তোকে একটা নতুন প্যান্ট কিনে দিয়ে গেছে।নয়ত চাচা না আসলে তকে এভাবেই থাকতে হত।ইস্ ভাবতেই সরম করতাছে কেমনে এতগুলো মানুষের সামনে দিয়ে আসলাম আমি।”

_______________________________________

আমার চেম্বারে বসে আমি পেশেন্ট দেখছি আর উনি পাশেই একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে।বিরক্তিকর লোকটা,শান্তিতে পেশেন্টও দেখতে দিবে না আমাকে।এমন বন্দি জীবন কার ভালো লাগে,আমার একদমই ভালো লাগছে না এমন জীবন।শুধু কাজের জিনিসটা হাতে পাই তারপর চান্দু বুঝাব তোমাকে এখন এভাবেই সবটা মুখ বুঝে মেনে চলতে হবে।

অন্যদিকে হামিম আদিয়ার আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে বলে চলেছে।

“তোমাকে আমি এত সহজে ছাড়ছি না বউ,আর না সহজে তোমাকে তোমার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি দিব।রাতের আঁধার কেটে গিয়ে সকালের আলো ফুটবে ঠিকই কিন্তু তুমি আমার থেকে ছাড়া পাবে না।”

এসব ভাবনার মাঝেই হামিমের ফোনটা বেজে উঠে,আর হামিম ফোনটা রিসিভ করে।আদিয়া হামিমের দিকে তাকায় কিন্তু আদিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই হামিম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় খুব উত্তেজিত হয়ে।

“আমি আমার গার্ডকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি তার সাথে বাড়িতে চলে এসো।খবরদার চালাকি করার চেষ্টা করবা না,তুমি যাই করো না কেন সবটা আমার কানে আসবেই।ত যাই করো ভেবে চিন্তে করো,আমি আসছি আমার একটা কাজ আছে।”

কথাগুলো বলে আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই বেরিয়ে যায়।কিছুই বুঝতে পারলাম না কী হল,উনি এভাবে বেরিয়ে গেলেন কী কাজ থাকতে পারে!আমি এসব নিয়ে আর বেশি না ভেবে আমার চেম্বার থেকে বেরিয়ে রিসিপশনে আসি।আর সেখান থেকে একটা নাম্বারে ডায়াল করি,প্রথম বারেই কলটা রিসিভ হয়।

“আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

“——”

“স্যার আমি এখন অবধি কিছুই করতে পারি নি,আমাকে কিছু করার সুযোগই দেয় নি।সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকে,চোখে চোখে রাখে আমাকে।আমার এমন বন্দি জীবন একদমই ভালো লাগছে না।”

“——-”

“জি স্যার আমি জানি,সবটাই বুঝতে পারছি আমি।আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করব।”

“——-”

“ওকে স্যার রাখি এখন,আমি কিছু জানতে পারলে আপনাকে অবশ্যই জানাব।”

“——-”

“আল্লাহ হাফেজ।”

________________________________________

সারাদিন হসপিটালে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরি,গাড়ি থেকে নামার পরই আমার পিছন পিছন দুইজন গার্ডও আসে।ভাল্লাগে না এমন বিআইপি মার্কা জীবন,সাধারণ মানুষের মত জীবন কাটানোতেই আনন্দ।
ক্লান্ত পায়ে বাড়িতে ডুকি আর বাড়ির ভিতরে ডুকার আগেই কেউ আমার চোখ বেঁধে দিয়ে মুখও বেঁধে দেয়।আমি ছোটার চেষ্টা করলেও পারি না,লোকটা আমার হাত,মুখ,পা বেঁধেই আমাকে কোলে তুলে নেয়।

#চলবে,,,

ভোরের শিশির পর্ব-০২

0

#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২

হামিম ওয়াশরুমে গিয়ে যা দেখে তা দেখার পর হামিম খুব জোড়ো একটা চিৎকার দেয়।কারন তার সামনে আদিয়া আছে,আর আদিয়ার হাতে তার ল্যাপটপ।এতটুকু অবধি ঠিক ছিল কিন্তু তার ল্যাপটপের অবস্থা একদম নাজেহাল।ল্যাপটপ পানিতে চুপচুপে হয়ে আছে আর হয়ত ফ্লোরে পড়েছে তার জন্য কিছুটা ফেটেও গেছে।আর এসব দেখেই হামিম ওভাবে চিৎকার করে উঠে।হামিম ওয়াশরুমে প্রবেশ করার পরপরই আদিয়া পিছন ঘুরে যায়।আর হামিম খুব রেগে তেড়ে যায় আদিয়ার দিকে।হামিম এক ঝটকায় আদিয়ার হাত থেকে তার ল্যাপটপটা ছিনিয়ে নেয়।

“আমার ল্যাপটপের এ অবস্থা কীভাবে হল?কী করেছো তুমি এটার সাথে!”

খুব রেগে কথাগুলো বলে হামিম,আর আদিয়া ভয়ে গুটিয়ে রয়েছে।পিছনে হামিমের দিকে তাকাবার সাহস টুকু তার হচ্ছে না।আদিয়ার কোন সারা না পেয়ে হামিম আরো রেগে যায়।আর আদিয়ার হাত ধরে তার দিকে ঘুরায়,আদিয়ার দিকে তাকিয়ে হামিম অপ্রস্তুত হয়ে যায়।তাই হামিম আর কিছু না বলে গটগটিয়ে ওয়াশরুম থেকে একপ্রকার পালিয়ে যায়।সেটা দেখে আদিয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে,কিন্তু তার এখন খুব লজ্জাও করছে।কী হল এখন,কীভাবে যাবে সে হামিমের সামনে!

অন্যদিকে হামিম সে তার রুম ত্যাগ করে সিড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়।আর দুই হাত দিয়ে চুলগুলো টেনে ধরে,আর মনে মনে আদিয়ার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে চলেছে।

“ইডিয়েট একটা কোন সেন্স নেই নাকি,এভাবে একটা ছেলের ওয়াশরুমে!ইস্ ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে,দরজা ভালো করে না আটকে ওয়াশরুমে শাড়ি পড়ছে।”

_____________________________________

অনেকক্ষণ পর আদিয়া শাড়িটা কোনমতে গায়ে পেচাতে পেরেছে।এবার বাইরে যাওয়ার পালা কিন্তু আদিয়া বাইরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।তার খুব লজ্জা করছে তার সাথে ভয়ও করছে।

“এখন আমি বাইরে যাব কীভাবে!উনি হয়ত রুমেই আছেন!আর উনার ল্যাপটপের যেভাবে তেরোটা বাজিয়েছি তাতে করে উনি ত খুব রেগে আছে।সামনে পেলেই কাঁচা চিবিয়ে খাবে,পুরোই ডাইনোসর।”

এমন অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে আদিয়া ওয়াশরুমের দরজাটা হালকা খুলে উঁকি দিয়ে পুরো ঘরটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।নাহ,কোথাও হামিম নেই,আদিয়া এবার হাফ ছেড়ে বাঁচে।আর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমের দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে দেয়।আর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়,আজ সে খুব ক্লান্ত।খুব ধকল গেছে আজ আদিয়ার উপর,আদিয়া চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু একটা ভেসে উঠে।আর হুরমুরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।

“আল্লাহ তুমি সহায়,দেখো কোন বিপদ যাতে কারো না হয়।কোন নিস্পাপ মানুষের যাতে কোন ক্ষতি না হয়।”

কথাগুলো নিজ মনে আওড়ে আদিয়া গিয়ে ওজু করে আসে,আর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নেয়।

সকাল ৭টা বেজে ৫৬ মিনিট,আদিয়া এখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে,আদিয়া লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে।কারন হামিম তাকে আগেই বলেছিল কেউ ডাকার আগেই যাতে ঘুম থেকে উঠে বাগানে যায়।আর বাগানের গাছগুলোতে যাতে সে পানি দেয়।কিন্তু আদিয়া সেটা পারে নি।আদিয়া তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করে বিছানা থেকে নামে এবং একপ্রকার দৌড়েই যায় দরজা খুলতে।আর দরজা খুলে দেখে তার সামনে হামিম দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে।

“আসলে রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেছিল তাই সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারি নি।আপনি একটু বসুন আমি এক্ষুনি বাগানের গাছগুলোতে পানি দিয়ে আসছি।”

একদমে কথাটা বলেই আদিয়া ঘর থেকে বের হতে যায় আর হামিম ডেকে উঠে,,,

“আদিয়া।”

হামিমের এমন শান্ত স্বরে কথা বলাটা আদিয়াকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।আদিয়া হামিমের সামনে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে।

“আপনি আমাকে এর জন্য যে শাস্তি দিবেন আমি সেটাই মাথা পেতে নিব কিন্তু আপনি প্লিজ ওদের কোন ক্ষতি করবেন না।”

হামিম আদিয়ার কথার কোন পাত্তা না দিয়ে আদিয়ার হাত ধরে টেনে রুমে আনে।আর দরজাটা লাগিয়ে দেয়,আদিয়া ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে।হামিম আদিয়ার সামনে আসতে আসতে তার পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখটা বেঁধে নেয়।আদিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায় হামিমের দিকে আর বুঝার চেষ্টা করছে হামিম কী করতে চাইছে।
হামিম আদিয়ার সামনে এসে আদিয়ার শাড়িটা একটানে খুলে ফেলে।আদিয়া চোখ বড়বড় করে হামিমের দিকে তাকায়।চোখ যেন বেরিয়ে আসবে এক্ষুনি এতটাই অবাক হয়েছে আদিয়া।হামিম শাড়িটা পড়িয়ে দেয়ার জন্য আদিয়ার গায়ে হাত দিতে গেলেই আদিয়া ছিটকে দূরে সরে যায়।

“আ-আমি পড়তে পারব,প্লিজ আপনি যান এখান থেকে।”

“বেশি কথা না বলে সামনে আসো নয়ত চোখের বাঁধন খুলে শাড়ি পড়াব।তারপরও শাড়ি আজ তোমাকে পড়িয়েই ছাড়ব আমি।”

আদিয়া হতভম্ব,কিন্তু আদিয়া বেশি সময় না নিয়ে হামিমের সামনে এসে দাঁড়ায় আর হামিম খুব সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দেয়।শাড়ি পড়ানোর পর হামিম চোখের বাঁধন খুলে আদিয়াকে পা থেকে মাথা অবধি একবার দেখে নেয়।

“না সব ঠিকই আছে,ভালোই হয়েছে শাড়ি পড়ানো।”

আদিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে,হামিমের কথার প্রতিউওরে আদিয়া কিছুই বলল না।

“এবার বলো আমার ল্যাপটপের ঐ অবস্থা কীভাবে করলে!কী করছিলে ল্যাপটপ নিয়ে ওয়াশরুমে!”

“শশাড়ি পড়তে।”

“ওয়াও,শাড়ি পড়ার জন্য তুমি ল্যাপটপের ঐ অবস্থা করেছো!খুব ইন্টারেস্টিং ত ব্যাপারটা।”

হামিম কথাটা বেশ শান্ত হয়েই বলে কিন্তু পরক্ষণেই খুব রেগে যায়।

“সত্যি কথা বলো আদিয়া ল্যাপটপ নিয়ে ওয়াশরুমে কী করছিলে!সত্যিটা না বললে আমি কী করতে পারি সেটা তুমি এতদিনে ভালোই বুঝে গেছো।এবার তাড়াতাড়ি সত্যিটা বলো কোন নাটক না করে।”

“আমি শাড়ি পড়তে পারি না,ততাই ভিডিও দেখে শাড়ি পড়ার জন্য ল্যাপটপটা নিয়েছিলাম।কারন আমার ফোনটা বাসায় ফেলে এসেছি।আর ল্যাপটপটা ভালো করে রেখেই শাড়ি পড়ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে কীভাবে যেন হাত লেগে ল্যাপটপটা নিচে পড়ে যায়।আর ফ্লোরে পড়ে থাকা পানিতে ভিজে যায়।”

“পাসওয়ার্ড জানলে কীভাবে?”

আদিয়া এবার খুব অস্বস্তিতে পড়ে যায়,এখন কী বলবে আদিয়া।

“বলো পাসওয়ার্ড জানলে কীভাবে?” (খুব রেগে)

“ববাগান,পানি দদিতে হবে।”

আদিয়া কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে আসতে গেলেই হামিম বলে উঠে,,,

“নিজেকে এতটাও চালাক ভেবো না মিসেস আদিয়া, কথায় আছে অতি চালাকের গলায় দরি।কথাটা মাথায় রেখে চালাকি করো,আর ভুলে যেও না এখানে আমিও রয়েছি।”

কথাটা বলেই হামিম ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আর আদিয়া হামিমের কথার মানে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।তাই আদিয়া ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।আর গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে।

_____________________________________

হামিম খাবার টেবিলে বসে তার বোন নীলার সাথে কথা বলছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।সামনেই আদিয়া বসে আছে,আর হামিমের কথা শুনছে হামিম নীলা আপুর সাথে যেভাবে কথা বলছে সেটা একদমই হাসার মত নয়।লোকটা পাগল হবে হয়ত তাই ঐদিকে গম্ভীর হয়ে কথা বলছে আর এদিকে মিটমিটিয়ে হাসছে।বেশ কিছুক্ষন পর হামিম ফোন রেখে আদিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

“আপনি আপুর সাথে ওভাবে কথা কেন বললেন?আর আপু এই বাড়িতে আসবে না ত কই যাবে!এটা যেমন আপনার বাবার বাসা তেমন ত উনারও বাবার বাসা।”

“তোমার থেকে আমি কিছু জানতে চেয়েছি?”

আদিয়া হামিমের কথায় থতমত খেয়ে যায়,আর মাথা নেড়ে না বুঝায়।

“তবে এত কথা কেন বলছো?বেশি কথা না বলে চুপচাপ খাওয়া কমপ্লিট করো।”

আদিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় আর দুজনেই খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।খাওয়া শেষ হওয়ার পর আদিয়া হামিম কে বলে উঠে।

“একটা কথা বলার ছিল!”

“বলো।”(গম্ভীর হয়ে)

” আমি হসপিটালে যেতে চাচ্ছি।”

“ত যাও মানা কে করেছে!”

হামিমের কথাশুনে আদিয়া খুব খুশি হয় আর খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠে।

“সত্যি যাব!”

“হ্যাঁ যাবে,তবে বাড়ির গাড়িতে যাবে আবার বাড়ির গাড়িতে করে বাসায় ফিরবে।বাড়ি টু হসপিটাল আর কোথাও যাবে না আমার অনুমতি ছাড়া।”

“ঠিক আছে আমি রাজি,আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

“আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার কী হল,ডাক্তার তুমি আর ডাক্তারের কাজই হল মানুষের সেবা করা।এখন আমি ত তোমার কাজের আর মানুষের সেবা করার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারি না।”

“বাঁধা হয়ে না দাঁড়ানোর জন্যই ধন্যবাদ আপনাকে।”

কথাটা বলেই আদিয়া ছুটে তার রুমে চলে যায় রেডি হতে,হসপিটালে যাবে আজ।সেটা ভেবে খুব খুশি আদিয়া,আর হামিমের মুখে বাঁকা হাসি।

#চলবে,,,