Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1433



আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০১

0

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
সূচনা পর্ব

“আজ আমাদের বাসর রাত আর বাসর রাতে আপনি আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন কোন আক্কেলে?”
কথাটা বললো আঁচল।

আবির রাগী চোখে আঁচলের দিকে তাকিয়ে বললো
“আরেকটা কথা বলবা তো থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব মেয়ে।আর তোমার সাথে বিছানা শেয়ার করা ইমপসিবল।তোমাকে আমি বিছানায় ঘুমাতে দিবো না”
আঁচল এবার ভ্রু কুচকে বললো
“আজ বাসর রাতে আপনি আমাকে বিছানায় ঘুমাতে দিবেন না মানে কি?শুনেন আপনার এসব হিরোগিরি আর সাইকোগিরি বাহিরের মেয়েদের দেখাবেন আমাকে না। আর সরুন আমি ঘুমাবো প্রচুর ঘুম পাচ্ছে আমার”
আচঁল কোমরে হাত দিয়ে তার স্বামী আবিরকে এই কথাটা বললো। আবির চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো
“এই মেয়ে তোমার কি কথা কানে যায় না। শোনো আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করি নি তাই তুমি আমার বিছানায় ওহ সরি শুধু বিছানায় না তুমি আমার বেডরুমের মধ্যেও ঘুমাতে পারবে না”
আচঁল এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“আপনার ঘরের মধ্যে ঘুমাতে দিবেন না তো বিয়ে করেছিলেন কেনো?আমি তো আপনাকে জোর করে বিয়ে করি নি যে আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো ”
আবির এবার ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বললো
“বাবা মায়ের কথা রাখতে গিয়ে। আর আমি স্নেহাকে ভালোবাসি তাই তোমাকে আমার জীবনে জায়গা দেওয়া সম্ভব না। আর তোমাকে আজ বিয়ে করেছি কিছুদিন পরই স্নেহা লন্ডন থেকে ফিরলেই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওকে বিয়ে করে ফেলবো”
আচঁল ভ্রু কুচকে বলে
“অন্য কাউকে ভালোবাসেন তো আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?আর বিয়ে যখন করেছেন তো আমার সোজাসাপটা কথাও আপনি জেনে রাখেন মরার আগে আমি আপনাকে ছাড়ছি না।আর অন্য কাউকে ভালোবাসেন বাবা মা কে আগে সেটা বলতে পারেন নি কুলাঙ্গার কোথাকার”
আবির এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“এই মেয়ে কি বললা তুমি। তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে কুলাঙ্গার বলার”
আঁচল রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে
“আমার সাহসের দেখেছেন নি মিস্টার বরবাবু।আরো অনেক কিছুই যে আপনার এখনো দেখার বাকি আছে”
আবির এবার রেগে বললো
“হাউ ডেয়ার ইউ। আমাকে বরবাবু বলছো কোন সাহসে। তুমি যেমন ক্ষ্যাত তোমার কথাবার্তাও ক্ষ্যাত”
আচঁল বাঁকা হেসে আস্তে করে বললো
“এই ক্ষ্যাত আপনাকে জীবনেও ছাড়ছে না বরবাবু”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“মানে?”
আচঁল এবার আবিরের পা ধরে সালাম করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে “গুডনাইট”

এতোটুকু বলেই ধপ করে ভারী লেহেঙ্গাসহ বিছানায় শুয়ে পড়ে আবির মনে মনে ভাবে
“এই মেয়ে মানুষ নাকি এলিয়েন এতো ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে কেউ ঘুমায়? আর একে তো আমার বিছানায় আমি একদমই এলাও করছি না। ওয়েট বেবী দেখাচ্ছি মজা”
যেই ভাবা সেই কাজ আবির টেবিলে থাকা জগটা নিয়ে পুরো জগের পানি আঁচলের গায়ে ঢেলে দেয় যার ফলে বিছানাও ভিজে যায়। আচঁল উঠে দাড়ালে আবির বলে
“এমন হুতুমপেঁচার মতো দাঁড়িয়ে কি দেখছো। একটু আগে না বললে তোমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমাও”

আচঁল আবিরকে বকতে বকতে আলমারি থেকে একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আর আবির ভেজা বিছানা টা চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ে।

(আঁচল মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। পুরো নাম আদ্রিজা আঁচল।অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। গায়ের রঙ বেশ ফর্সা আর কোমরের নিচ পর্যন্ত লম্বাচুল।কালকের আগেও আঁচল জানতো না যে তার বিয়ে।তার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথেই তার বিয়ে হয়েছে তাই বাবা মায়ের কথা রাখতে গিয়ে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে। আঁচল যেমন তেজি তেমনি প্রতিবাদী। )
(আবির উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে। পুরো নাম আবির আহমেদ। পাঁচ দিন আগেই আবির লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরলো।আর আজই আবিরকে তার বাবা মায়ের মন রক্ষার জন্য বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো।আবির বেশ ফর্সা আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।আবির বাবা মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে বড় জন আর ওর ছোটো ওর একটা বোন আছে)

কিছুক্ষণ পর আঁচল ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আবির খুব আরামেই ঘুমাচ্ছে। আঁচল গিয়ে ধপ করে আবিরের বুকের ওপর শুয়ে পড়লো। আবির চেচিয়ে উঠলো
“আউচ।এই মেয়ে তুমি আমার বুকের ওপর শুয়েছো কেনো? একে তো আটার বস্তা তারওপর তোমার একশো কেজি মেকাপ”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“প্রথম কথা হচ্ছে আজ থেকে এভাবে ঘুমানোর অভ্যাস করে নিন।দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমার নাম আঁচল আমাকে মেয়ে টেয়ে বলবেন না। আর শেষ কথা হলো আমি একদমই আটার বস্তা নই আর মেকাপ সব ধুয়ে এসেছি আপনার শরীরে কোনো জোর নেই যে সেটা বলুন শুধু শুধু আমাকে আটার বস্তা বলবেন না”
আবির এবার হাসি দিয়ে বলে
“লাইক সিরিয়াসলি আমার বডি দেখেছো তুমি?৷ জিম করা৷ বডি তোমার৷ মতো এরকম দশজন মেয়েকে কোলে নেওয়া তো আমার বাম হাতের কাজ”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“ঠিকাছে আপাতত আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমান তাহলেই হবে। আর যদি একটা কথাও বলেছেন তো সোজা আপনার বাবার কাছে গিয়ে নালিশ করবো”
আবির ঢোক গিলে বললো
“তুমি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো?”
আঁচল আবিরের চোখে চোখ রেখে বলে
“জ্বি থ্রেট দিচ্ছি প্রথমবার বলে থ্রেট দিলাম কিন্তু এর পর আর কোনো থ্রেট দিবো না সোজা গিয়ে আপনার বাবাকে বলে দেবো”
আবির সন্দেহজনক৷ ভাবে তাকিয়ে বলে
“কি বলবে”?
আঁচল হালকা কেশে বললো
” বললো যে আপনার দশবারোটা রিলেশন আছে পাঁচ ছয়টা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ”
আবির রাগী দৃষ্টিতে বললো
“মিথ্যা বলবে??”
আঁচল হাসি দিয়ে বললো
“স্বামীকে নিজের আঁচলে বেধে রাখার জন্য দু একটা মিথ্যা বলা জায়েজ আছে। আর আমি জানি আপনি আপনার বাবাকে কতোটা ভয় পান। যাইহোক কাল সকালে কথা হবে শুভ রাত্রি”
বলেই আঁচল আবিরের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো আবির কোনো রিয়েক্ট করলো না। আপাতত আবির এই মেয়েকে উসকিয়ে নিজের বিপদ বাড়াতে চায় না তাই চুপচাপ আঁচলের কথা গুলো হজম করে ঘুমিয়ে পড়লো।

আঁচল নিজের রুটিনমতো ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নিলো। তারপর ওজু করে নামাজ পড়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে আবির এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আবিরকে ঘুমাতে দেখে আঁচল ধীরে পায়ে গিয়ে আবিরের পাশে বসে আবিরের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ডানহাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর আবিরকে ডাকে
“এই যে উঠুন নামাজ পড়বেন না”
আবির ঘুমঘুম চোখে বললো
“স্নেহা যাও তো এখন মজা করো না আমি ঘুমাবো”
স্নেহা নামটা শুনেই আঁচলের মেজাজ বিগড়ে যায়। আবির এর কলার চেপে ধরে বলে
“আরেকবার স্নেহা নাম শুনবো তো জানে মেরে ফেলবো মাইন্ড ইট”
আবির ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে আঁচল।আঁচলকে দেখে বেশ অপ্রস্তুত ভাবে বললো
“ওহ তুমি”
আঁচল দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“কেনো আমার জায়গায় কি অন্য কারোর আসার কথা ছিলো?”
আবির এক হাতে চোখ মুছে বললো
“ধুর শালা আজকে পুরো দিনটাই খারাপ যাবে”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“কেনো?”
আবির দাঁত কেলিয়ে বললো
“এই যে তোমার মতো একটা ডাইনির মুখোমুখি হয়েছি সকাল সকাল তাই”
আঁচল রাগি গলায় বললো
“বাজে কথা বন্ধ করুন যান নামাজ পড়তে যান”

আবির আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। আঁচল আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায় আর নিজে নিজে ভাবে
“হায়রে কপাল। ভার্সিটিতে সব ছেলের ক্রাশ ছিলাম আর আমার বরবাবু তো আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। জীবনে প্রেম করিনি বিয়ের পর জামাইর সাথে করবো বলে কিন্তু আমার বরবাবুকে ওতোটাও সুবিধার মনে হচ্ছে না”

অনেকক্ষণ আবির ওয়াশরুম থেকে একটা সাদা পাঞ্জাবি পরে বের হয়ে দেখলো আঁচল আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চুল আঁচড়াচ্ছে। আবির মনে মনে বললো
“বাহহ মেয়েটার চুল তো বেশ লম্বা”
আবিরকে দেখেই আঁচল তাড়াতাড়ি করে ঘোমটা দিয়ে বললো
“মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ুন”
আঁচলের কথায় আবির বললো
“ঠিকাছে”
আবির চলে গেলো।।

চলবে__

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৯ম ও শেষ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আমি আমার ছেলেকে নিয়ে আলাদা পৃথিবী গড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য আমাকে আজ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু একটা জিনিস আমার বোধগম্য হচ্ছেনা বাবা কেন আমার ছেলের কথা কাইফকে বলে দিলো!

অবশ্যই বলে দিয়েছে তা নাহলে এই বাড়ির নাম কিভাবে আমার ছেলের নামের সাথে মিলতে পারে। মামীর সাথে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। পরী আমার হাত ধরে আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গেলো। সমস্ত ঘরে পরীর ছবিতে ভর্তি। ছবিগুলো আমাকে দেখিয়ে বলল,
– দেখেছো আম্মু, পাপা আমাকে কত্তো ভালোবাসে! সারাঘরে আমার ছবি।

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি আর পরী ঘরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ কেও আমার ঘাড়ে হাত রাখলো। পিছন ঘুরে দেখলাম মামী দাঁড়িয়ে আছে।

চোখের পানি মুছে মামীকে বললাম,

– কাইফ ভাইয়া পরীকে খুব ভালোবাসে তাইনা?

– হুম নিজের থেকেও বেশি।

– পরীর ঘটনা কি আমাকে বলবে মামী?

এরপর মামীকে পরীকে অন্য ঘরে গিয়ে খেলতে বলে। পরী চলে গেলে মামী আমাকে বলে,

– নিশ্চয়ই বলবো, তোর জানা উচিৎ। তুই চলে যাওয়ার পর আমার কাইফ একদম হতাশ হয়ে যায়। কয়েকমাস তোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ একদিন বলে, মা আমি বিয়ে করবো। যে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তাকে আমি কেন মনে রাখবো, সে আমাকে ভুলে গেলে আমি কেন পারবোনা! সেদিন ওর গা থেকে মদের গন্ধ পেয়েছিলাম। বুঝেছিলাম তোর জন্য ও পাগল হয়ে যাবে তার থেকে বরং ওর জীবনে অন্যকাওকে ঢোকানো দরকার।
এরপর একদিন পরীর মায়ের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। মেয়েটা অনাথ ছিলো। বেশ মিষ্টি দেখতে, যেমনটা পরীকে দেখছিস।
মেয়েটাকে কাইফের অফিসে যোগ দেওয়ানোর সমস্ত কাজ করি আর সাথে তাকে বলেও দিই যেন আমার ছেলেটাকে সে নিজের ভালোবাসায় জড়াতে পারে।

– এরপর বুঝি তার আর কাইফ ভাইয়ার বিয়ে হয় আর তার গর্ভে পরীর জন্ম হয়?

– আমিও এটাই চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য অন্যকিছু বলছিলো। তোকে তো পরীর মায়ের নামটাই বলা হয়নি। সন্ধ্যা নাম ছিলো তার। যায়হোক, এরপর কয়েক বছরের মধ্যে সন্ধ্যা কাইফের সাথে অনেক গাঢ় বন্ধুত্ব করে। কিন্তু কাইফ ওকে বন্ধু ছাড়া কিছুই ভাবতো না। মেয়েটা একসময় নিজের থেকেও ওকে ভালোবেসে ফেলে। বারবার কাইফকে নিজের মনের কথা বলে কিন্তু কাইফ ওকে পাত্তা দেয়না। কারণ ওর হৃদয়ে তোর নামই লেখা ছিলো জন্মজন্মান্তরেও যে সে নাম পাল্টানোর নয় এটা তো আমি জানতাম না। সন্ধ্যা একদিন বৃষ্টির সময় কাইফকে বলে তাকে ভালো না বাসলে সে যেদিকে চোখ যাবে সেদিকে চলে যাবে। কাইফ সেটা শুধু একটা ব্লাকমেইল ভেবে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু সন্ধ্যাকে খুজে পাওয়া যায়নি তারপর থেকে। অনেক খোজ করার পর তাকে খুজে পাই আমরা প্রায় ১৫ দিন পর। কয়েকটা অমানুষ তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। সেদিনের পর থেকে সন্ধ্যাকে আমার কাছে নিয়ে আসি।
মেয়েটা একদম চুপ হয়ে যায়। ওর ক্ষতির জন্য আমি নিজেকেই দায়ী কর‍তে থাকি ওদিকে কাইফও নিজেকে দায়ী করতে থাকে। ওকে ওর প্রাপ্ত সম্মান দেওয়া যেন আমার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আমি ওকে কাইফের সাথে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই এবার, কাইফও এবার না করে না। কারণ মেয়ে নিজেকে শেষ করে দেবে যদি আমরা ওকে বাচার ইচ্ছা না জাগাই। সেদিন আমার ছেলের বুকফাটা কান্না দেখেছিলাম মা পাগলের মত কেদেছিলো। ভাবিস না সন্ধ্যার জন্য, শুধু তোর জন্য। তোর জায়গা অন্য কাওকে দেবে এটা যেন সে মেনেই নিতে পারছিলো না।
বাড়িতে কাজী ডাকা হয় কিন্তু সন্ধ্যা বলে সে এখন বিয়ে করবেনা। আমি ওকে জোর করিনা। ওর মত ওকে সময় দিই। কিন্তু হঠাৎ করেই জানতে পারি মেয়েটার গর্ভে বেড়ে উঠছে সেই অমানুষ গুলোর সন্তান। আমি ওর গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করে দিতে বলি কিন্তু ও রাজি হয়নি। এজন্য বিয়ের তড়িঘড়ি লাগিয়ে দিই কিন্তু আগের মতই সে রাজী হয়না। বলে, সন্তান হওয়ার পরই নাহয় বিয়েটা হোক, সবাই তো জানেই আমি ধর্ষিতা, এই কলঙ্ক ঢেকে ফেলা যাবেনা।
আমরাও আর কিছু বলিনা। ৯ মাস পর ফুটফুটে পরীর জন্ম হয়। দেখতে পরীর মত ছিলো তাই আমার কাইফ ওর নাম পরী রাখে।
ওদেরকে বাড়িতে আনি। এবারও বিয়ের জন্য সন্ধ্যাকে বলি, ও দুইদিনের সময় নেয়। কিন্তু পরদিন তাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। একটা চিঠি লিখে যায়,

মা,
তুমিই আমার মা। আমি চাইনা তোমার বাড়িতে মরতে। এতে তোমদের নামে কেস হতে পারে তাই আমি হয়তো কোনো ব্রিজের উপর থেকে লাফ দিয়ে হারিয়ে যাবো।
ভেবোনা তোমাদের উপর রাগ করেছি আমি একটুও রাগ করিনি। রাগ করিনি বলেই আমার মেয়েকে তোমাদের কাছে রেখে গেলাম।

আমি কাইফকে ভালোবাসি মা। কিন্তু ওর মনে যার নাম লেখা তার নাম আমি মুছে দিতে পারিনা। হয়তো ও নিজের দ্বায়িত্ববোধ থেকে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি ওর হৃদয়ের ঠিকানায় নিজের নাম পৌঁছে দিতে পারতাম না। ওটা অন্যকেও দখল করে আছে। তাই আমি চলে গেলাম। আমাকে খুজে লাভ হবেনা। যতক্ষণে চিঠি পড়ছো তখনে আমি আর দুনিয়াতে নেই।
ভালো থেকো।
ইতি
অভাগা সন্ধ্যা।

মামী সব কথা বলে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। আমারও চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। মেয়েটা চাইলেই তার জীবনকে সুন্দর করতে পারতো কিন্তু ভালোবাসার প্রতি তার কতই না সম্মান যে আমার জন্য সে কাইফকে বিয়েই করতে পারলোনা। আমি মামীর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলি,
– পরী এই বিষয়ে কিছুই জানেনা মামী?

– না ও কিছুই জানেনা। কাইফ ওকে শুধু চিনিয়েছে তুইই ওর মা। সন্ধ্যা নামক কেও ওর জীবনে নেই।

আমি আর একটা কথাও না বলে দৌড়ে পরী যে ঘরে খেলা করছে সেখানে চলে যায়। আমার চোখে পানি দেখে পরী আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে,

– আম্মু তোমার গালে পাপ্পি দেবো? তুমি কাদছো যে!

হাটু গেড়ে বসে ওর সারামুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিই। আজকে থেকে আমার এক মেয়ে একছেলে।
মেয়েটা কতদিন আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। আমি আর কখনো ওকে ছেড়ে যাবোনা৷ নিজের মনে মনেই শপথ করলাম।

আমার চোখে একজনকে খুজেই চলেছে। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে তাকে খুজেই পাচ্ছিনা যেন। আমাকে হঠাৎ এমন দেখে পরী বলল,
– পাপার কাছে যাবে?

আমি মাথা বাচ্চাদের মত উপর নিচ করি। পরী আমার ধরে চলতে থাকে। বাড়ির পিছন দিকে ছোট্ট একটা গার্ডেন রয়েছে, তার মধ্যে একটা দোলনা। আর অন্যদিকে ফিরে সেখানে কেও যেন অধীর আগ্রহে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। পাশে তাকাতেই দেখলাম পরী নেই। এখন মানুষটার কাছে একাই যাওয়া লাগবে।

ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম তার দিকে। সে অন্যদিকে ফিরেই আছে। আমি ঠিক তার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম। বললাম,
– কেমন আছো?

আমার দিকে একবারও তাকালো না সে। অন্যদিকে ফিরেই বলল,
– যেমনটা রেখে গেছিলে তেমনই আছি। শুধু অপেক্ষা করতে করতে বয়সটাই বেড়ে গেছে।

– আমার দিকে তাকাবেনা?

এবার সে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
– চোখের পাওয়ার কি কমে গেছে?

– হ্যা, বয়সটা আমারও বেড়েছে তো। এমনিতেই চোখের সমস্যা ছিলো আর এই সাত বছরে সেটা বেড়ে গেছে অনেকটা।

– তোমার বয়সটা কিন্তু কম। ৩২ কেবল এখনি খুব বয়স্ক মনে করো না।

আমি হাসি দিয়ে বললাম,
– ঘাড় ঘুরিয়ে কথা বলতে হবেনা। আমি তোমার পাশে বসছি।

এরপর আমি তার পাশে বসলাম। নিজের অজান্তেই তার কাধে মাথা রাখলাম। কি দরকার অভিমান করা, সব ভুলে নতুন শুরু করিনা। কি দরকার মাফ চাওয়া,ক্ষমা করা। সবতো ঠিকই আছে। আমার হৃদয়ে সে তার হৃদয়ে আমি।

– আমার ছেলের খবর তুমি কিভাবে জানো?

– ছেলেটা যে আমারও। কেন আমি জানবোনা। বাবা আমাকে বলেছে। সে চায়নি আমার থেকে আমার ছেলের খবর লুকিয়ে রাখতে। হয়তো অনেক পরে বলেছে, তবুও বলেছে।

– কবে বলেছে?

– মাত্র দুই বছর আগে। কালকে ওরা আসবে। আমার জীবন কি সাদা-কালোতেই থাকবে সাওদা নাকি রঙিন হবে।

– দিন বলে দেবে।

লজ্জা কেটে যাবে শীঘ্রই, মনের ঠিকানায় শুধু সেই বসে ছিলো সেই থাকবে। তার কাধে মাথা রেখে বড্ড ঘুমাতে ইচ্ছা করছে। শান্তির ঘুম, অনেক লম্বা একটা ঘুম।

পরদিন,
পরী, মামী, সরি মা তাকে আর মামী ডাকা গেলো না। তাই মা, পরী, কাইফ আর আমি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সাওয়াম আর বাবা পৌঁছে গেলো। আমি গাড়িতেই বসে থাকলাম। কাইফ মাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। বাবার কাছে পৌঁছে গিয়ে মাকে বাবার সামনে দাড় করিয়ে সাওয়ামকে কোলে নিয়ে গাড়িতে চলে এলো।
সাওয়াম আমাকে দেখে না দেখার ভান করেই থাকলো। বাবাকে পেয়ে যেন আমাকে ভুলেই গেছে। দেখাবো মজা ওকে বাড়িতে গিয়ে। খাইয়ে দেবে কে! আমি কাইফকে বললাম,
– বাবা মাকে রেখে আসলে কেন?

– তাদের যুগ যুগের অভিমান শেষ হোক তারপরই না হয় আসবে গাড়িতে।

– কিন্তু তাদের অভিমান কি নিয়ে ছিলো?

কাইফ মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
– আমাদের অভিমান যেমন আমাদের সন্তানরা জানতে পারবেনা কোনোদিন তাদেরটাও নাহয় আমাদের অজানাই থেকে যাক।

আমি একটা হাসি দিয়ে পরীকে আদর করতে লাগলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের অভিমানের পালা শেষ হলে আবার আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। পরী আমার কোলেই ঘুমাচ্ছে আর আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। অকারণে আমার জীবন থেকে সাত বছর হারিয়ে গেলো। তাকে ভালোবাসি তবুও তাকে কষ্ট দিলাম। আমি না গেলে হয়তো সন্ধ্যা নামক মেয়েটা কখনো কাইফের জীবনে আসতো না, তার জীবনও যেতো না। কাইফ বাম হাত আমার হাতের উপর রেখে বলল,
– যা হয়েছে তা হয়েছে। সামনের কথা চিন্তা করো। মিশন আরেকটা পরী।

যাহ! বাবা মায়ের সামনে এটা কি ধরনের কথা। ছিহ! লজ্জায় মরে যাই, মরে যাই।
আমার লজ্জা পাওয়া দেখে সবাই হাসতে লাগলো। আমি লজ্জায় আরও লাল হয়ে যেতে লাগলাম।
মনের ভিতর খুশিতে দোলা দিতে লাগলো। আমি সব পেয়েছি। হৃদয়ের ঠিকানায় যার নাম ছিলো সে কখনো মুছে যায়নি, আর যাবেও না। এই নিয়েই চলবে আমাদের সংসার, ভালোবাসার সংসার।

,
হৃদয়ের ঠিকানা
,
,
সমাপ্ত

বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৮

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৮ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সেদিনের পর থেকে আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়ে গেছিলো। মেয়েদের খুব মহৎ একটা গুন আছে। যেটা আমার মধ্যেও আছে, সব ভুলে যাওয়া। আমি তার অন্যায় ভুলে গেছিলাম। তাকে ভালোবেসে বাকি জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম।

আমাদের সম্পর্কটা খুব মধুর ভাবে চলছিলো৷ চুপিচুপি একে অপরকে সময় দেওয়া যেন আমাদের নেশা হয়ে গেছিলো। আরেকটা কথা, আমাদের বিয়ের খবর মামীকে দেইনি আমরা। যদিও মামী রাগ করবেনা জানি। কারণ সে তো তার বউমা হিসেবে আমাকেই চায়। তবে আমাদের বিয়ের কথা তাকে না জানানোর কারণ ছিলো, আমরা একে অপরের কাছাকাছি আসতাম একদম লুকিয়ে। এর মধ্যে একটু থ্রিল কাজ করতো।

বিয়ের দুইমাস পর থেকে কাইফ নিজের কাজে মন দেয়। আমিও আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকি। কিন্তু নিয়তি কখনো আমার আপনার ইচ্ছায় চলেনা। লিখন যেটা আছে সেটাই হয়।

প্রায় বছর খানিক পর, আমাদের চুপিচুপি কাছে আসার একটা বড় উপহার পেয়েছিলাম আমি। আমার পেটে তখন কাইফের সন্তান। কেবল একমাস হয়েছে। মামীকে জানানো দরকার ছিলো কারণ এখন সব কিছু পালটে গেছে। আমাদের বিয়ের কথা সবাইকে জানানো না হলে আমাদেরই বদনাম হবে যে বিয়ের আগেই সন্তান। সবার সম্মান চলে গেলেও আমি আমার মামা-মামীর সম্মানকে তুচ্ছ করতে পারিনা।

একদিন আম অধৈর্য হয়ে যায়।
টেবিলে বসে পড়ছিলাম আর কাইফ আমার খাটে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। আমি বললাম,
– আমি এখনই মামীকে বলতে যাবো আমাদের সন্তানের কথা। তুমি যেন বাধা দিওনা।

– তুমি এতো উত্তেজিত কেন হচ্ছো সাওদা? জীবনে অনেক দূর এগোতে হবে হবে। মাকে বলবো একদিন। তুমি চিন্তা করো না।
আগে তাকে বাড়ি ফিরতে দাও।

মামী সেদিন বাড়ি ফেরে তার এক বান্ধবীর বাসা থেকে তবুও আর বলা হয়না। এদিকে দিনে দিনে আমার পেটটা বড় হতে থাকে। এবার আমি নিজেই ঠিক করি মামীকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা। সবাই রাজি তাহলে প্রব্লেমটা কোথায় সেটাই আমি বুঝতে পারছিলাম না। এমন নয়তো কাইফ আমাকে ছেড়ে দিতে চায়! অন্য মেয়ের সাথে জড়ায়নি তো ও। মনে সন্দেহ বাড়তেই থাকে।

একদিন হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। কাপড় গোছানোর জন্য আমি দৌড়ে ছাদে চলে যায়। কিন্তু সেদিন আমার জীবনের সুখ শেষ হওয়ার দিন ছিলো আমি নিজেও জানতাম না। শুরুই দিকের বৃষ্টিতে পুরনো ছাদ একদমই পিচ্ছিল হয়ে গেছিলো। আমি ছাদে পা ফেলতেই একদম পড়ে যায়। পেটটা এমন ভাবে পড়ে যে আমার গর্বে থাকা তাকে আর বাচানো যায়নি।

হাসপাতালে মামী কাইফকে ঠাস করে একটা চড় মেরে বলে,
– এসব আমাকে কেন জানাসনি। আমি যদি কখনো বুঝতে পারতাম তাহলে অন্তত ওকে কোনো কাজ করতে দিতাম না। তোর জন্য আজ তোর সন্তান মরেছে।

কাইফ সেদিন মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলেছিলো কিন্তু আমি ফেলিনি। আমার চোখ থেকে পানি পড়েনি। মামী ঠিকই বলেছে মামী যদি জানতো আমার পেটে সন্তান আছে তাহলে সে আমাকে কখনোই ছাদে যেতে দিতো না। সব কিছুর মুলে ওই কাইফ। এই কথাটা মাথায় গেথে গেছিলো।

এরপর থেকে আমাদের একই ঘরে থাকার আদেশ ছিলো কিন্তু আমার মন কখনো এটা চাইতো না। আমি মেনে নিতে পারতাম না তাকে। কখনোই না। কোনোভাবেই না।। আমাকে ছুতেও দিতাম না। সব থেকেও যেন আমি শেষ হয়ে গেছিলাম।।

বছরও পার হয়ে যায়,

তার কাছে থেকেও দূরে থাকাটা হয়তো সে মেনে নিতে পারেনি তাই সে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আমি তবুও চুপ ছিলাম। কিন্তু একদন ফোনে শুনতে পাই কাইফ বলছে, স্ত্রী বেচে থাকতে বিয়ে করা যাবেনা। কিছুদিন অপেক্ষা করো সব ঠিক হয়ে যাবে।

সেদিনের দেওয়া চাবিটা এভাবে কাজে লেগে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। স্কলারশিপ লেটার টা বের করি আমি। কিন্তু আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে কে। আমি চাইনা কাইফের জীবনে বাধা হয়ে থাকতে।

আমি তার কথা একদম ভুলে গেলাম কি ভাবে! তাড়াতাড়ি ফোন বের করে তার নাম্বারে ফোন লাগিয়ে বললাম,

– মামা আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তুমি দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে কেন আমাকে কোনো অনাথাশ্রমে রেখে যাওনি! তাহলে এতো মায়া, এতো ভালোবাসা এতো অভিমান কিছুই আমার মধ্যে জন্মাতো না।

– তুই আমাকে সবটা বলবিতো মা!

– তোমার ছেলে আমাকে রেখে অন্য কাওকে বিয়ে করতে চাই। ও শুধু আমার মরার অপেক্ষায় আছে। তুমি যদি এখান থেকে আমাকে না নিয়ে যাও তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো। আর কখনো আমাকে খুজে পাবেনা কেও।

– তোকে আনবো মা। নিশ্চয় আনবো। তবে কিছুদিন সময় লাগবে। আমার এক বন্ধু আছে তার সাথে তোর যোগাযোগ করা লাগবে। সে তোর পাসপোর্ট ভিসা সব ম্যানেজ করে দেবে।৷

এরপর থেকে চুপি চুপি আমার সব কাজ চলতে থাকে৷ আর কাইফ আমার সামনে বেশি বেশি অন্যের সাথে কথা বলতে থাকে। আমি চাই সে কথা বলতে বলতে তাকে বউ করেই আনুক। কি দরকার! সবতো শেষ।

কয়েকমাস পর মামা হঠাৎ ফোন দিয়ে বলে,
– সমস্ত কিছু রেডি তুই গুছিয়ে চলে আয়। তোর ভিসা আগামী পরসু।

আমার কথা শুনে বুকটা ধক করে ওঠে। কাইফকে ছেড়ে আমি চলে যাবো। এটা ভাবতেই কেমন লাগছিলো।

আজকে হঠাৎ কাইফের মাঝে পরিবর্তন দেখলাম। সারাদিন ফোনে কথা বলেনি। রাতে শুয়ে ছিলাম ফ্যানের দিকে তাকিয়ে। যদিও অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছিলাম না।

কাইফ হঠাৎ বললো,
-সাওদা, আমার মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে যাবো কোথাও। তুমি আমাকে একবার আপন করে নেবে৷ মন ভরে তোমাকে ভালবাসতে চাই।

সেদিন ছিলো আমাদের শেষ কাছে আসা। একদিন পর খুব সকালে আমি বের হয়ে পড়ি এয়ার্পোরটের উদ্দেশ্য। কেও জানলো না আমি পাড়ি দিলাম ইংল্যান্ডে।
চোখের পানি দেখার কেও ছিলোনা সেদিন। খা খা বুক নিয়ে মেঘের উপর দিয়ে ভেসে চলেছিলাম।

,
এয়ার্পোরটের কাস্টমের কাজ থেকে থেকে বের হয়েই দেখলাম মামা দাড়িয়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– মামা তুমি কেমন আছো কত বছর পর তোমার সাথে দেখা।

মামা হাসতে হাসতে বলে,
– তুই আমার একমাত্র ছেলের বউ। আমাকে বাবা বলে ডাকিস। আর মামা ডাক শুনতে ইচ্ছা করেনা।

-তোমাকে এমনিই বাবা বলবো তবে তোমার ছেলের শর্ত দিওনা প্লিজ।

– আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। তুই এমনিই বাবা বলিস।

এরপর থেকেই গড়ে ওঠে আমার অন্য জীবন। আর আমার মধ্যে গড়ে উঠতে থাকে কাইফের একাংশ। এই নিয়েই আমার বিদেশের সাত বছর কেটেছে। যদিনা মিতু আপুর সাথে মাস দুয়েক আগে দেখা না হতো তাহলে জানতেই পারতাম না যে, কাইফ আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আমাকে জেলাস করানোর জন্য এমন অভিনয় করতো। সেদিন কাদবো নাকি হাসবো বুঝতে পারিনি। বারবার আমার দোষেই সব হয়েছে। আমার দোষে তার সাথে প্রায় দুই বছর একই বিছানায় শুয়েছি তবুও ভালোবাসা ছিলোনা। আমার ভুলের জন্য সাত বছর তার থেকে আলাদা ছিলাম।৷ উপরওয়ালার কি লীলা খেলা মিতু আপু তার হাজবেন্ড নিয়ে এখানে সেটেল হতে না আসলে কিছুই জানতাম না।

আমি মামাকে আমার করা ভুল বলতে গেলে মামা বলে,
– কাইফ আমাকে সব বলেছিলো রে মা। ও অভিনয় করতো আর ভাবতো তুই ওকে আবার ভালোবাসবি। কিন্তু না, তুই ওর থেকে দুরেই চলে এলি। তাই ও তোকে বাধা দেয়নি। ভাবিসনা ও কিছুই জানতো না। সব জানতো ও। তোর জন্যই ও তোকে আলাদা করে দিয়েছিলো। ও ভেবেছিলো তোর অভিমান দেখবে। কয়েকদিন পর ঠিক তুই ওর কাছে ফিরে যাবি। কিন্তু তুই গেলিনা। আজও আমার পাগল ছেলেটা তোর অপেক্ষায় দিন গোনে মা। এতো ভালোবাসা কোথায় পাবি।

সেদিনে কাদতে কাদতে মামাকে বলি, আমাকে যেন বাংলাদেশে আসাত ব্যাবস্থা করে দেয়। সব কাজ সম্পন হয় আমি আমার অভিমান ভেঙে এখানে ফিরে আসলাম আজকে। এই ছিলো আমার জীবনের অতীত।

গাড়ির হর্ন শুনে ভাবনা থেকে বের হলাম। মামী বলল,
– পৌঁছে গিয়েছি।

সামনের বাড়িটা আগের সেই বাড়ি নেই। দেখলেই মন ভরে যাচ্ছে। মেইন দরজায় লেখা আছে। সাওয়াম ভিলা।

আমার ছেলের নাম এরা জানলো কিভাবে!

,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৭

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৭ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
কাইফের সেদিনের ঘটনার পর প্রায় তার সাথে ১৪ দিন কথা বলিনি। আসলে ১৪ দিন এই জন্য কথা বলিনি যে তার উপর রাগ। এই ঘটনার পর তার প্রতি একটা ঘৃনা জন্মে গেছিলো৷
সে যদি বলতো তার জন্য আমার জীবন দিয়ে দিতে হবে তবুও আমি ২য় বার ভাবতাম না। আর সে সামান্য একটা বিয়ের জন্য আমার সাথে এতো বড় নাটক করলো।

১৪ দিন সেও আমার সামবে আসেনি ঠিক মত। আমি মামীর কাছেই শুয়েছি এই দিনগুলোই। কিন্তু মামী আজকে তার বাবার বাড়িতে গেছে তাই কাইফ আমার দিকে নজর দিয়ে আছে। সে আমার সাথে কিছু বলতে চাচ্ছে, তার হাবভাব দেখে এটাই মনে হলো আমার।

আমিও কম যাইনা, তাকে পাত্তা দেওয়ার মত সময় বা মন আমার নেই। রান্না করে ডাইনিংএ রেখে আমি চলে এসেছি মামীর ঘরে৷ একটু পর কাইফ এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকলো। আমি আড় চোখে দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলাম।

সে বলে উঠলো,
– সাওদা তুমি। এক বালিশ বারবার ঝাড়ু দিচ্ছো কেন?

আমি চাইলেই ওর কথার উত্তর দিকে পারি কিন্তু আমার মোটেও সে ইচ্ছা নেই।
ওর সাথে কথা বলবোনা এই জন্যই যে এক বালিশ বারংবার মুছে চলেছি এটা কি ও বুঝতে পারছেনা! নাকি বুঝতে পেরেও আমার মুখ থেকে কথা শোনার জন্য এটা বলল। যায়হোক, এতো ভেবে কাজ নেই, আমি বরং বরাবরের মত বালিশ ঝাড়ু দিই। কিন্তু এবার এসে দরজা থেকে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার হাত চেপে ধরলো। আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই সে হাত সরিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। আমার চোখে চোখ রাখার মত শক্তি সে হারিয়েছে। এর মানেই হলো সে অপরাধী।

অনেক্ষণ পুতুলের মত চুপচাপ থেকে এবার আমি উঠতে উদ্দ্যত হলান। কিন্তু সে আমার পথা আগলে বলল,

– একটা ছোট্ট মিথ্যার জন্য তুমি আমার সাথে এমন করবে সাওদা? আমি কি পারিনা আমার ভালোবাসাকে পরীক্ষা করতে!

আমি অবহেলার শুরু বললাম,

– সরে দাড়ান আমি আমার ঘরে যাবো।

মামীর সাথে মিতু আপু চলে গেছে তাই আজকে আমি মিতু আপুর ঘরেই যাবো। এ কয়দিন মিতুর সাথে আমার ঘরে থাকিনি কারণ এই লোকটা এসে ন্যাকামো জুড়তো প্রতিদিন প্রায়। মামীর সামনে অবশ্য এটা করতে পারতোনা।

এখন বুঝতে পারছি মামীকে যেতে দেওয়ায় আমার ভুল হয়েছে। নতুন করে এখন এসব ন্যাকামো দেখা লাগতো না।

কাইফ আবার বলল,
– সাওদা দেখো, আমি তোমার সাথে তুমি বলে কথা বলছি। তুই বলা বন্ধ করে দিয়েছি। শুনেছি স্বামী-স্ত্রী তুমি সম্মোধন করলে সম্পর্কে ভালোবাসা বেসি থাকে। আমি তোমার কাছে মাফ চেতে চাই সাওদা। প্লিজ এবারের মত মাফ করে দাও। এমনতো না যে আমি অনেক বার ভুল করেছি তাই বারবার মাফ চাচ্ছি। একবার ভুলের মাফ তুমি করবেনা?

-হ্যা মাফ করবো। একদিন না একদিন আমাকে এসব ভুলতেই হবে। কারণ আমি আপনার সাথে পবিত্র সম্পর্কে বন্দী হয়ে আছি। তবে কবে মাফ করবো সেটা জানিনা। হয়তো মরার আগে আপনাকে মাফ করে দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবো।

আমার কথা শুনে কাইফ বেশ আহত হলো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কিন্তু এবার সে যেটা করলো আমাকে সত্যিই চিন্তায় ফেলে দিলো। সে হুট করে আমার পা ধরার জন্য হাত বাড়ালো আমি তাড়াতাড়ি পিছিয়ে গেলাম। যাতে সে হাত না বাড়াতে পারে।

এবার যেন একটু রাগ বেড়েই গেলো। আমি বললাম,
– অন্যায় করে পা ধরবেন আর আমি মাফ করে দেবো? এতোটাও বোকা নই আমি। যারা পা ধরে নাফ চাইতে যায় তাদের উদ্দেশ্য কখনো ভালো হয়না।

সে বলল,
– সাওদা তুমি আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। আগে তুই বলতাম এখন তুমি বলতে শুরু করেছি, আগে তুমি আমার উপর রাগ করলে আমি কিছুই ভাবতাম না৷ কিন্তু দিন পাল্টেছে সম্পর্কও পাল্টেছে। তুমিতে যেমন ভালোবাসা বাড়ে তেমনি দুঃখিত, সরিতে সম্পর্কের মধ্যে ছোটো ছোটো দ্বিধা কেটে যায় এবং সম্পর্ক মজবুত হয়। শুধু একবার বিশ্বাস করো আমাকে।

আমি বললাম,
– আপনাকে আমি খুব বিশ্বাস করি। সেজন্য আপনার ক্যান্সার শুনেই সারারাত উপরওয়ালার কাছে চেয়েছি আপনি যেন সুস্থ হয়ে যান আর আমার যেন আপনার রোগ চলে আসে। কিন্তু আপনি কি করলেন। যেদিন আপনাকে আমি মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করলাম সেদিনই আপনি এমন মিথ্যা বলে আমাকে কষ্ট দিলেন? কি হয়তো যদি আপনি মরে যাবেন ভেবে আমি ওই রাতেই নিজেকে শেষ করে দিতাম? কার উপর রাগ করতেন তখন, আমি মারা গেছি এজন্য আমার উপর নাকি আপনার জন্য মারা গেছি এ কারণে আপনার নিজের উপরই রাগ করতেন!

অনেক্ষণ দুইজনই চুপ থাকার পর আমিই বললাম,
– যান আপনাকে মাফ করে দিলাম। প্লিজ আপনি জীবন মরণ নিয়ে এমন মজা করবেন না। আমি হাত জোড় করে বলছি। আমার একটা মন আছে। আমি নির্দয়া নই। আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনাকে হারানোর কষ্ট যে কিভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলো সেটা শুধু আমি জানি আর আল্লাহ জানে।

কাইফ মাথা নিচু করে বলল,
– আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে সাওদা? তুমি সত্যিই আমাকে মাফ করে দিয়েছো কিনা আমার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে।

আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরবো এখনই! এটা কি সম্ভব নাকি? তাই আমি ওনাকে বললাম,
– আমাকে কিছুদিন সময় দিন প্লিজ। স্বাভাবিক হতেও তো কিছুদিন সময় লাগবে। এরপর আপনার সব চাওয়া পাওয়া আমি আমার সাধ্য মত পুরোন করার চেষ্টা করবো।

– সব মেনে নেবো তবে তুমি দয়া করে আমাকে আপনি বলে সম্মোধন করো না।

– সেটাও চেষ্টা করবো।

এই বলে আমার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। হয়তো কষ্ট ভুলে যাবো একদিন। তাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসবো। মনের সংকোচ দূর হওয়াও অনেক জরুরী।

গোসল সেরে বের হতেই দেখলাম কাইফ আমার খাটের উপর বাবু হয়ে বসে আছে। যেন মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চা কেবল বসা শিখেছে। নিজের হাসিকে কোনোরকম লুকিয়ে বললাম,
– মাফ করেছি বলে আদিখ্যেতা দেখাবেন সেটা কিন্তু আমি মেনে নেবোনা একদম।

– তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে সাওদা। তার আগে আমাকে তুমি বলো। সারাজীবন তো বলতে এখন হঠাৎ কি হয়ে গেলো?

– বলেছিতো সময় লাগবে। আর আপনি এখনই চলে আসলেন এখানে? রাতেও কি এখানেই শোয়ার প্লান করছেন নাকি? যদি তাই করে থাকেন তাহলে সেই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে নিজের ঘরে যান।

– আরে না। আগে আমার কথা শেষ করতে দাও। তুমি গোসল শেষ করলে, এখন আমরা একসাথে খাবো। তার আগে তোমার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ আছে।

– আপনার সারপ্রাইজ আমাকে কাদায়। আমি চাইনা আপনার সারপ্রাইজ।

কাইফ আর কথা না বাড়িয়ে আমার হাতে একটা পেপার দিলো। ডিভোর্স পেপার নয়তো? আমি ঢোক গিলে পেপারটা হাতে নিতেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো। কিন্তু সে খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না। আমি এখান থেকে যাবোনা কোথাও। ইংল্যান্ড কেন, আমেরিকাতেও যাবোনা। তাকে ছাড়া কোথাও গিয়ে আমি থাকতে পারবোনা।

আমার বিষন্নতা দেখে কাইফ বলল,
– তুমি তো সব সময় চাইতে বাইরে পড়াশোনা করবে কিন্তু এখন স্কলারশিপ লেটার পেয়ে এতো চিন্তায় কেন পড়লে?

– আমি এই বাসা ছেড়ে কোথাও যাবোনা। কখনো না৷ মামীকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি। আপনাকে। তোমাকে ছাড়াও আমি থাকতে পারবোনা কাইফ। আমার সমস্ত স্বপ্ন আমি শেষ করে দিতে শুধু তোমার ভালোবাসার স্পর্শ পাওয়ার জন্য। আমার জীবনকে অর্থহীন করে দিতে চাই তোমাকে প্রাপ্ত দেওয়ার জন্য।

কাইফ একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
– অন্যদের মত তোমাকে আমি বলবোনা যে যাও তোমার স্বপ্ন পূরণ করো। আমিও চাই তুমি আমার ছায়া হয়ে থাকো আজীবন। শুধু তোমার কাছে খবর টুকু পৌঁছে দিলাম।

সে আমার হাতে একটা চাবি দিয়ে বলল,
– এই চাবিটা তোমার কাছেই রাখো। এটা আমার লকারের চাবি। যেদিন তোমার ইচ্ছা হবে আমাকে বলবে, আমি তোমার যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেবো। এই লেটারের এখনো তিন বছর মেয়াদ আছে। তোমার মন পাল্টাতেও তো পারে তাইনা!

– আমার মন কখনোই পাল্টাবে না। এটাই ফাইনাল। আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবোনা।

তবুও চাবিটা তুই রাখ। এমনিতেও কয়দিন পর তো আমার সব কিছুই তোর হবে।
,
,

বিঃদ্রকেও দয়া করে বলবেন না গল্পটা ছোটো হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় লিখলাম। আপনাদের অপেক্ষা করাতে ভালো লাগছেনা তাই কষ্ট করেও লিখলাম। এই গল্পের আর মাত্র দুই পর্ব বাকি আছে। আগামীকাল এক পর্ব দেবো আর মঙ্গলবার শেষ পর্ব দেবো ইনশাআল্লাহ, সব ঠিক থাকলে।

আর হ্যা পরীর কার মেয়ে সেই ব্যাখ্যাও দেওয়া হবে। আপাতত পরীকে ভুলে গল্পটা ইনজয় করুন। নাহলে গল্পের মজা হারাবেন। পরীর ব্যাখ্যা অবশ্যই দেবো।
কি মনে হয় সাওদা কেন কাইফ কে রেখে ইংল্যান্ডে চলে গেছিলো, আর কেই বা তাকে যেতে সাহায্য করছিলো!?। গেস করুন। পরীকে ভুলুন আপাতত। ধন্যবাদ।

চলবে..
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৬

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৬ষ্ঠ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
অল্পসময়ের মধ্যে ড্রাইভার ফিরে আসলো। গাড়িতে তেল ভরে আবার চালানো শুরু করলো। আমি পূর্বের ন্যায় বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, পূর্বের ন্যায় ভাবনায় হারিয়ে গেলাম,

‘ছাদের দোলনায় বসে দুল খেয়ে চলেছি, কাইফ ভাইয়ার কাধে মাথা রেখে। ফুরফুরে বাতাসে আমার চুল বারবার কাইফ ভাইয়ার মুখের সামনে চলে যাচ্ছে আর আমি সেগুলো ঠিক করে নিচ্ছি৷ একসময় কাইফ ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,

– চুলগুলো ইচ্ছামত উড়তে চাই তাহলে কেন বারবার ওদেরকে বাধা দিচ্ছিস! সবাইকে কি তোর মত গাধী ভেবেছিস নাকি যে চুপচাপ থাকবো আজীবন।

আমি কথা বলার মত অবস্থায় নেই। আজকে আমার জন্মদিনে যত সারপ্রাইজ পেয়েছি তা কি আমার জন্য অনেক নয়! কাইফ ভাইয়া বলল,
– অনেকে বলে ভালোবেসে চাঁদ হাতে এনে দিতে পারবো, অনেকে বলে ভালোবাসা পেতে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হতে পারবো কিন্তু আমি এগুলো চাইনা।

এই কথা শুনে কাইফ ভাইয়ার উপরে একটু রাগ হলো। লোকটা একটুও রোমান্টিক নয়, দূর। কিন্তু আমাকে হালকায় অবাক করে দিয়ে বলল,
– আমি জ্যোৎস্না রাতে চাদের আলোয় তোর সাথে স্নান করতে চাই, সমুদ্র-নদীতে তোর সাথে ভাসতে চাই। তোর দুঃখের সময় হাসির কথা বলে খিলখিল করে হাসিয়ে দিতে চাই।

আমি মুগ্ধ শ্রোতার মত শুনেই চলেছি। এতো মধুর কথা না শুনে উপায় আছে! আমাকে চুপ থাকা দেখে কাইফ ভাইয়া বলে,
– হঠাৎ তুই কি একটু বেশিই লজ্জা পাচ্ছিস? আমরা একে অপরকে ভালোবাসি এটা তো নতুন ঘটনা না। হ্যা, এটা ঠিক যে প্রকাশ করতে দেরি হয়েছে কিন্তু অনুভুতি তো অনেক পুরোনো।

আমি এবার একটু কিছু বলার প্রস্তুতি নিলাম। আমিও কাইফ ভাইয়ার মত মিষ্টি কথা বলার চেষ্টা করি একটু। কাইফ ভাইয়ার দুইহাত আমার হাতের মুঠোয় নিলাম। যদিও আমার পিচ্চিপিচ্চি হাতে কাইফ ভাইয়ার হাত ঠিক ভাবে ধরলো না। তবুও জোগেজাগে হাত ধরে বললাম,

– তুমি আমার জীবনের প্রথম পুরুষ যাকে দেখে হাজার বছর বাচতে ইচ্ছা করে কাইফ ভাইয়া, সবসময় তোমার সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসি। একদিন আমি তোমার বউ হবো হয়তো সেদিন আমার সব চাহিদা পুরোন হবে, তোমাকে আরও নতুনভাবে ভালোবাসতে শিখবো। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার কোনো শেষ হবেনা। ভালোবাসা শিখতে শিখতেই আমার জীবনের সমাপ্তি ঘটবে তবুও তোমাকে ভালোবাসার চাহিদা কমবেনা।

কাইফ ভাইয়া আমার কথা শুনে আমাকে জ্বালাতন করার জন্য বলল,
– তোর কথায় মজা নেই সাওদা। তুই বরং চুপ থাক আমি রোমান্টিক কথা বলি তুই আমার কাধে মাথা রেখে শুনতে থাক।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। আজকের এই শুভ দিনে আমি তার সাথে মিষ্টিমিষ্টি ঝগড়াও করতে চাইনা। আজকের এই দিনে আমি তাকে হাজার বার নতুনভাবে চিনতে চাই।

কাইফ ভাইয়া নিজের পা দিয়ে দোলনার গতি একটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

– আর হয়তো দুইতিন বছর পর তোর কোলে আমার ছেলে, আমার মেয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। আমরা তিনজন মিলে জ্যোৎস্নার আলো দেখবো। মাঝে মাঝে চাঁদ মামা মেঘের আড়ালে চলে যাবে, আমি পাগল প্রেমিকের মত তোকে বলবো, দেখো দেখো তোমার আর আমার সন্তানের সৌন্দর্যের কাছেও ওই আকাশেএ চাঁদ লজ্জা পাচ্ছে তাই নিজেলে লুকিয়ে নিচ্ছে। আমার এমন রকবাজি কথায় তুই বারবার লজ্জায় পড়বি, এখন যেমনটা পড়িস সারাক্ষণ।

আমি বললাম,
-মোটেও না। এসব মিছেকথায় আমার মন জয় করা যাবেনা বলে দিলাম।

কাইফ ভাইয়া একটু হাসি দিয়ে বলল,
-জয় করার বাকি আছে বুঝি?

আমি আবারও চুপ করে রইলাম। বারবার তার প্রশ্নে উত্তত আমার কাছ থেকে পালিয়ে যায়।
কাইফ ভাইয়া আমাকে বলল,
– সাওদা আমার সাথে বিয়ে করবি এখনি?

আমি অবাক হলাম না একটুও বরং বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলাম,
– কথা খুজে পাচ্ছোনা বুঝি কাইফ ভাই! কথা না খুজে পেলে বলো আমি একটা গান গেয়ে তোমার সময় পার করিয়ে দিচ্ছি।

এরপর কাইফ ভাইয়া যেটা বলল সেটা শুনে আমার বুকটা আৎকে উঠলো। সে স্বাভাবিক গলায় কিছু একটা বলল, যেটা শুনে যেন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি কোনোরকমে বললাম,
– আমার সাথে আজকের দিকে মজা করবেনা কাইফ ভাইয়া। আজকে তুমি আমাকে সে খুশি দিয়েছো সেটা ধূলিস্যাৎ করে দিওনা। আমি সহ্য করতে পারবোনা।

কাইফ ভাইয়া আবারও স্বাভাবিক গলায় বলল,

– তুই ঠিকই শুনেছিস সাওদা আমার ক্যান্সার। ডাক্তার বলেছে ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত আর বাচবো সর্বোচ্চ। আর এটাই সত্যি।

এরপর কাইফ ভাইয়া তার পকেট থেকে একটা কাগহ বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল,
– এই দেখ রিপোর্ট।

আমি রিপোর্টটা ফেলে দিলাম। উঠে দাঁড়িয়ে কাইফ ভাইয়ার গালে ঠাস করে একটা চড় দিয়ে বললাম,
– তুমি ১ বছর পর বা ১০ বছর পর সেটা কেন আমাকে বললে। উপরওয়ালা তো সবাইকেই নিজের কাছে নিয়ে নেবেন তাহলে তোমাকেও নেবেনা কেন! তুমি নিজের ডেট নিজেই বলে দিলে। কেন আমাকে সুখের থাকার সময়টুকু দিলেনা। তুমি যতদিন বেচে থাকবে ততদিন আমি মরবো, তুমি যেদিন মারা যাবে সেদিন আমিও শেষ হয়ে যাবো। বেচে থেকেও বেচে থাকবোনা, মরেও মরবোনা।

কাইফ ভাইয়া আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,
– আমি চেয়েছিলা তোক ভালো না বাসতে কিন্তু আমি পারিনি। নিজেকে হারানোর দিন যত এগোচ্ছে তোকে কাছে পাওয়ার নেশা ততটা ভর করছে।

আমি কাইফ ভাইয়ার হাত ধরে বলি,
– আমি তোমার সাথে কালকেই বিয়ে করতে চাই কাইফ ভাইয়া। কেও জানবেনা তোমার আমার বিয়ে। প্লিজ কাইফ ভাইয়া। তুমি যতদিন আছো ততদিন তোমাকে আমি নিজের করে পেতে চাই। তোমাকে মন ভরে ভালোবাসতে চাই, তোমার ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে চাই। দেবে কি আমার সেই ভালোবাসা!

নিজ স্বার্থ স্বার্থ সবার কাছেই প্রিয় হয়। কাইফ ভাইয়া নিজের সম্পর্কে সব জেনেও আমাকে দূরে ফেলে দিতে পারছেনা। এটাই ভালোবাসার জোর।

পরদিন সকালে নিজেকে হালকা সাজালাম। আজকের দিনটা আমি একটু সাজতে চাই। চোখের জল কমছেনা, তবুও আমি সাজবো। কাইফ ভাইয়াকে পেয়েও না পাওয়ার মত ঘটনা ঘটবে আমার সাথে।

কাইফ ভাইয়া আর আমি বের হয়ে পড়লাম কাজী অফিসের উদ্দেশ্যে। সাথে মিতু আপু এবং কাইফ ভাইয়ার কয়েকজন ফ্রেন্ডও গেলো।

কাজী অফিসে কলম যেন হাতেই থাকতেই চাইছিলো না। মন আর মস্তিষ্ক যেন আলাদা কথা বলছে। তবে আমার মনই শেষ পর্যন্ত জয়ী হলো। আমার ভালোবাসা জয়ী হলো। কি আছে কপালে জানিনা কিন্তু এখন সে আমার। মৃত্যু ছাড়া কেও আমাদের আলাদা করতে পারবেনা। হ্যা মৃত্যু, একটা দীর্ঘশ্বাস বের হবেই।

সবাই হাত তালি দিয়ে আনন্দ করতে লাগলো। কিন্তু আমার মনে সুখের ভিতর ও দুঃখ। হঠাৎ কাইফ ভাইয়া হোহো করে হাসতে লাগলো।
তার হাসি যেন আমার বুকের ভিতর কাটার মত গিথে চলেছে। কষ্টের পরিমান তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। কিন্তু এরপর যা বলল তাতে ওই লোকটার গালে চড় মারা ফরজ হয়ে গেছে।

সে নাকি কালকে রাতে আমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলো তার ক্যান্সার। আসলে সে নাকি দেখতে চেয়েছিলো সে মারা যাবে জানার পরও আমি তাকে বিয়ে করবো কিনা।

আমার ভাবনা আমাকে কাজটা করতে বাধ্য করলো। কাজী অফিসের ভিতরেই কাইফকে একটা চড় দিয়ে হাওমাও করে কাদতে লাগলাম। ওই জানোয়ার টা কি জানে গতরাত আমার জন্য কতটা কষ্টের ছিলো, ওই অমানুষটা কি জানে একটা সেকেন্ড আমার কাছে একটা বছরের মত লেগেছে।

আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না, অকথ্য ভাষায় গালি দিতে লাগলাম,
– জানোয়ার, কুত্তা দুই জানিস আমি কতটা কষ্টে ছিলাম। ভেবেছিলাম এই বুঝি আমার জানটা বের হয়ে যায়। আর তুই সারারাত মজা করে ঘুমিয়েছিস আমাকে কষ্ট দিয়ে। তোর এই অপরাধ কিভাবে মাফ করবো বল। তুই তো বললে আমি এমনিতেই তোকে বিয়ে করতাম, এতো নাটক করার কি দরকার ছিলো।

মিতু আপু বলল,
– তোমার মামী জানার আগে এই কথা ভেবেছিলে কখনো? ছেলেটা তোমার জন্য বছরের পর বছর কষ্ট পেয়েছে আর তুমি একরাত কষ্ট করবেনা।

আমি কাদতে মিতু আপুকে বলি,
– এই অমানুষ লোকটা তো নিজের মনের কথা প্রকাশ করতো কিন্তু আমি যে পারতাম না। তাহলে কষ্টটা তার বেশি।।মনে রাখবেন আপু। একদিন ওর এই মিথ্যার জন্য ওকে আর আমাকে সারাজীবন আলাদা হয়ে থাকতে হবে।

আমার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো। সবাই বুঝতে পেরেছে মজা করতে করতে তারা লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। কাইফের এমন কাজ কোনোদিন হয়তো আমাদেরকে আলাদা করে দেবে।’

সেদিনের ভাবনায় সত্যি হয়েছিলো। তার এই মজা একসময় লিমিট পার করে ফেলেছিলো। সে জন্য সে আজও নিজের ছেলে সম্পর্কে জানেনা। আমার সাওয়াম জীবনে প্রথম তার বাবাকে দেখবে। কেমন হবে তার অনুভূতি। আমার অভিমানের কারণে সে ২য় বিয়ে করেছিলো পরীর মাকে? এরপর পরীর জন্ম হয়েছিলো! আমার ভালোবাসা সে ভুলে গেছিলো! সে দোষ করলো, আবার সে নিজেই বিয়ে করলো আর আমি অভিমান করে তার থেকে দূরে থাকলাম গত ৭ বছর, তার ছেলে সম্পর্কে তাকে জানালামই না। তবুও তো তার মত বিয়ে করে ফেললাম না আবার। আমাদের ডিভোর্স তো হয়নি, তার বোঝা উচিৎ ছিলো একদিন আমি তার কাছে ফিরে আসবোই। কেন সে অপেক্ষা করলো না!
,
,
চলবে

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৫

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৫ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সে তো জানেই তাকে ভালোবাসি, তবুও ফর্মালিটিস মানার জন্য তো আমাকে বলিয়েই ছাড়বে। তার আগে এককাজ করি লোকটার নাকে দড়ি দিয়ে কিছুদিন ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াই।

এই ঘরে আর বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবেনা। আমার ভিজে পোশাকগুলো নিয়েই মামীর ঘরে গেলাম। মামী এখন গল্পের বই পড়ায় মন দিয়েছে। আমি মামীর পাশে বসে বললাম,

– খাওয়ার সময় তুমি এখানে বসে গল্পের বই পড়ছো? আমাদের খেতে কে দেবে?

মামী একটু আহত গলায় বলল,
– তোরা খেয়ে নে মা। আমার আজকে খুধা নেই।

আমি মামীকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে বললাম,
– তোমার মন খারাপের কারণ কি মামী? তোমার ছেলে কি তোমার ইচ্ছার বাইরে বিয়ে করছে?

মামী আমার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলল,
– আমার ইচ্ছা বাদে সে বিয়ে করবেনা। এই ভরসা আমার আছে রে মা। কিন্তু সে আজকে তোর সাথে যেমনভাবে কথা বলল, আমি যেন আমার ছেলেকে নতুনভাবে চিনলাম।

আমার তো এখন সব জানা তাই মামীকে বুঝিয়ে বললাম,
-যে বিষয়ে তুমি নিজেও জড়িতো সেই বিষয়ে তুমি দুঃখ কেন পাচ্ছো! আমাদের জীবন তো সুখের হতে চলেছে তাইনা?

আবেগ ধরে রাখতে না পেরে প্রায় মামীর সামনে বলেই দিয়েছিলাম যে আমাদের নিয়ে তার প্লান আমি জেনে গেছি। কিন্তু মামী আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,
– দুঃখ হয়রে মা। তোর বয়স হয়েছে। বিয়ের উপযুক্ত তুই। কিন্তু কাইফের আগে আমি তোকে বিয়ে দিতে পারছিনা।

মামীর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো যেন। তার কথার ভাব শুনে তো মনেই হচ্ছেনা সে আমাকে নিজের ঘরের বউমা করবে। সে বরং তার ছেলের বিয়ে দিতে চায় আমার আগে। অন্যকোথাও। আমার জীবনটা যেন কেমন একটা হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ সুখ আবার হঠাৎ দুঃখ। কাইফ ভাইয়ার ডায়েরির লেখাগুলো কি তাহলে মিথ্যা ছিলো! হতেও পারে। একজন্যই হয়তো লোকটা আমাকে তার ঘরের ওয়াসরুমে যেতে বলেছে আর বুদ্ধি করেই হয়তো নিজের ডায়েরিটা খুলে রেখে এসেছে।

আমি অনেক্ষণ ধরে চুপ রয়েছি এটা দেখে মামী আমার মাথাটা উচু করে আমাকে বলল,
– চল মা খেয়ে নিবি তুই। ওদেরকেও ডাক।

আমার খাওয়ার সমস্ত ইচ্ছা যেন উধাও হয়ে গেছে। মনের ভিতর সব অংক মিলিয়ে ফেলেছি। তাই আমার গলা দিয়ে ভাত নামবে না এখন। সুঃখগুলো সব বাষ্পীভূত হয়ে গেল যেন। মামীর কথায় আবারও চুপ করে থাকলাম। মামী আমাকে বলল,
– কিরে মা স্বপ্নে হারিয়ে গেলি নাকি স্বপ্নের রাজকুমারের সাথে? মনের ভিতর যদি কোনো রাজকুমার থেকে থাকে তাহলে আমাকে বলবি তার কথা কেমন?

আমার মনে এই মুহুর্তে কি চলছে সেটা যেন আমি ভুলেগেছি। আমি হেরে যেতে পছন্দ করিনা। কাইফ ভাইয়াকে আমি ভালোবাসি তাহলে কেন আমি নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার চেষ্টা করবোনা। আমি মামীকে বলবো তার ছেলেকে ভালোবাসি। সে আমার গালে কয়েকটা চড় দিলেও বলবো আমি তার ছেলেকে ভালোবাসি। এভাবে নিজেকে হার মানিয়ে বসে থাকার মানেই হয়না।

মামী আমার দুই হাত ধরে আমাকে নাড়া দিয়ে বলল,
– তুই কি চোখ মেলে ঘুমিয়ে আছিস নাকি সাওদা মা? নাকি কথা বলায় ভুলে গেলি।

আমি হাওমাও করে কাদতে কাদতে মামীকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– আমি একটা অন্যায় করেছি মামী। আমি জানিনা এই অন্যায়টা কীভাবে করলাম। তুমি আমার গালে আগে কয়েকটা চড় মারো নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে।

আমি দুই হাত দিয়ে আমাকে আকড়ে ধরে বলল,
– কি এমন ভুল করেছিস মা যে তোর গায়ে হাত তোলা লাগবে?

– আমি একটা জিনিস ভেঙে ফেলেছি মামী। নিজের অজান্তেই ভেঙে ফেলেছি।

মামী আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো আর বলল,
– এই বাড়ির সমস্ত জিনিস ভেঙে ফেললেও আমি তোকে কিছু বলবো এটা কিভাবে ভাবলি তুই? এই বাড়ির সবকিছুতে তোর অধিকার আছে। ইচ্ছা হলে সব ভেঙে ফেলবি। পরে নতুন জিনিস আনবো দরকার পড়লে।

– মামী আমি যা ভেঙেছি তা দেখা যায়না, তা অনুভব করে কষ্ট বা সুখ পাওয়া যায় শুধুমাত্র। তুমি আমাকে মাফ করে দিও৷ একটুখানি আগেও ভেবেছিলাম তুমি আমাকেও এই বিষয়ে সাপোর্ট করো কিন্তু আমি ভুল৷ আমি শুরু থেকেই ভুল করে আসছি। তোমাদের খেয়ে তোমাদের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমি দোষী, আমার কথা শেষ হলে আমাকে ইচ্ছামত শাস্তি দিও। ছোটো থেকেই আমি কাইফ ভাইয়ার পাশেপাশে থাকতে পছন্দ করতাম সে আমার চুল টেনে দিলেও তার পিছুপিছু চলতাম। জানো মামী কাইফ ভাইয়া যেদিন আমার চুল টেনে দিতো সেদিন ও নিজেই আমার মাথায় নারিকেল তেল দিয়ে দিতো, অগোছালো বিনুনি করে দিতো। সেটা আমি নাচতে নাচতে তোমাকে আর মামাকে দেখাতাম।
দিন গড়িয়েছে পিছুপিছু থাকার অনুভূতির পরিবর্তন হয়েছে, সারাক্ষণ তার পাশাপাশি থাকতে মন বলে। সারাক্ষণ নয়, সারাজীবন তার পাশে থাকতে চাই আমি। আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি মামী, তোমাদের অবাধ্য হয়েই যে তোমার ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছি। একটুখানি আগেও ভেবেছিলাম কাইফ ভাইয়ার অন্যকোথাও বিয়ে হয়ে যাবে, আমি চোখের পানি ফেলবো কিন্তু আমি নিজের কাছেই হেরে গেছি মামী। তোমার ছেলেকে ছাড়া আমার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা হবে মামী। আমি তোমার ছেলেকে ভালোবাসি। আজকে নির্লজ্জের মত তোমার কাছে সব বলতে হচ্ছে। কারণ তাকে হারানোর মত মনবল আমার নেই। তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা।

কাদতে কাদতে ভাঙা গলায় কোনোভাবে কথাগুলো শেষ করলাম। মামী আমাকে তার বুক থেকে তুলে আমার মুখটা তার মখের সোজাসুজি ধরলো। আমাকে তার দিকে তাকাতে বলল।

মামীর চোখের দিকে তাকিয়ে আবার আমার চোখ নামিয়ে নিলাম৷ সে রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অপরাধী হয়ে ওই চোখে চোখ মিলাতে পারিনা। কিন্তু মামী আমাকে বলল,
– আমার চোখের দিকে তাকা। (রাগান্বিত কন্ঠে)

মামীর হুমুক আমি মানতে বাধ্য। আমি আবার মামীর চোখের দিকে তাকালাম কিন্তু আমি মামীর মুখে একচিলতে হাসি দেখতে পেলাম। মামী সব সময়ের ন্যায় আবারও আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুই কি ভেবেছিলি মামী তোমে স্বার্থপর ভাববে? আমি তোকে স্বার্থপর ভাবতাম তখন যখন তুই নিজের মনের কথা আমাকে না বলতিস! আজকে তুই তোর মনের কথা বলে দিয়েছিস। আজকে থেকে আমার ছেলেটাকে তোর দায়িত্বে ছেড়ে দিলাম। আমার ঘরে এমন পরীলোকের লালপরী থাকতে অন্যকারো চিন্তা করি কিভাবে বলতো! তুই তো এই বাড়িরই বউমা হবি।

মামীর বুক থেকে মাথা তুলতে একদম ইচ্ছা করছেনা। ইচ্ছা করছে কয়েকদিন শান্তিতে তার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে প্রশান্তির ঘুম দিই। আমি আমার ভালোবাসার সার্টিফিকেট পেয়েগেছি। কে আটকাবে আমাকে। সুখে থাকলে ঘুম লাগে এটা মনে হয় আমি না সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
মামীর বুকে মাথা রেখেয় ঘুমিয়ে পড়লাম৷ দুপুরে খাওয়াও হলোনা৷

চোখে মেলে দেখলাম আমি এখন মামীর ঘরে শুয়ে আছে। এখানেই তো থাকার কথা, অন্য কোথায় থাকবো আবার! পাশেপাশে মামী নেই। ভিজে কাপড়গুলো কাঠের চেয়ারের উপর রেখেছিলাম, এখন সেগুলোকেও দেখছিনা। কেউকি আমার পোশাকগুলো ছাদে মেলে দিয়েছে। দেখে আসা দরকার তাই বিছানা থেকে উঠলাম। হঠাৎ মামীর ঘরের দেয়াল ঘড়িতে চোখ গেলো, ৭টা ২৬ বাজে। তার মানে আমি প্রায় ৪/৫ ঘন্টা ঘুমিয়েছি দিনের বেলায়।

ঘর থেকে বাইরে বের হলাম কিন্তু কোথাও কাওকে দেখছিনা। আমার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। বাড়িতে কেও এইজন্য একটু ভয় ভয় করছে আমার মধ্যে। অন্ধকারে আমার ঘরে প্রবেশ করতেই কেও আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি চিৎকার দিতে গিয়েও পারলাম না কারণ সে খুব জোরেসোরেই আমার মুখ চেপে ধরেছে। আমি আবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে যাবো তার আগেই লোকটা আমার কানে কানে বলল,
– আমি তোর কাইফ ভাইয়া। ভয় পাসনা, আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না।

আমি কাইফ ভাইয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে, এক মহাপ্রশান্তিতে বলতে লাগলাম,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি কাইফ ভাইয়া। এটা মিথ্যা নয়, বান্ধবীকে বলা নাটম নয়, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আজ আর আমার ভয় নেই, আমার মামী আমাকে তোমাকে ভালোবাসার সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছে। তাই আমি আবার বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া একমুহুর্তও আমি থাকতে পারবোনা আর।

কাইফ ভাইয়া আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– ভেবেছিলাম তোর মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে অনেক খড়কুটো পোড়াতে হবে কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই সব বলে দিলি।

হঠাৎ ঘরে লাইট জ্বলে উঠলো। আশেপাশে মামী, মিতু আপু সহ পরিচিত সব আত্মীয়সজনরা রয়েছে আর সবাই হাসি মুখে হাত তালি দিচ্ছে। ইশ, এতো মানুষের মধ্যে আমি তাকে ভালোবাসি বলেছি ভাবতেই যেন লজ্জায় মরে যাই যাই৷ ‘

গাড়ির ঝাকুনিতে বাস্তবে ফিরে এলাম। পরী আমার কোলে বসে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। মামীও ঘুমিয়ে আছে। ড্রাইভারকে বললাম,
-হঠাৎ কি হলো?
– তেল ফুরিয়ে গিয়েছে আপামনি। আমি তেলের মিটারের দিকে খেয়াল করিনি। খেয়াল করলে আগেই তেল ভরে রাখতাম। আসেপাশে তো তেল পাম্প নেই। আমরা গাড়িতেই বসুন। আমি কোনো ব্যাবস্থা করতে যাই। এখান থেকে ১০ মিনিটের দুরেই একটা পাম্প আছে। আমি যাবো আর চলে আসবো।

এরপর তেলের একটা ঢপ নিয়ে সে তেল আনতে চলেগেলো। আমি পরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর বাইরের পরিবেশ দেখছি। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কল আসলো, ফোন রিসিব করেই হাসি মুখে বললাম,
– বাবা কেমন আছো তুমি? সওয়াম কি করছে? তোমরা কখন রওনা দেবে?

ওপাশ থেকে বলল,
– কালকেই যেতে পারবো সব ঠিক থাকলে। তুই তোর ছেলের সাথে কথা বল।

এরপর ওপাশ থেকে বলল,
– মাম্মি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো, তুমি পঁচা।

আমি হাসি দিয়ে বলি,
– কালকে আবার আমার সোনার ছেলেটার সাথে দেখা হবে৷ রাগ করেনা।

– রাগ করবো না তো কি হবো। তুমি আমাকে ফেলে ওই দেশে চলে গেলে কেন? আমার দাদিমার সাথে দেখা হবে কখন?

-কালকেই হবে সোনাপাখি।
,
আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। অবশেষে সাওয়ামের রাগ ভাঙাতে পেরেছি। কালকে আবার আমাদের দেখা হবে এটা বুঝতে পেরেই সে খুশি।

সাওয়াম আমার একমাত্র ছেলে, বয়স ৬ বছর ২মাস।
,
,
চলবে…

বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৪

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৪র্থ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আমার মামী আমাকে এতো ভালোবাসে তবুও আমি কেন যে মুখ ফুটে বলতে পারিনা, মামী আমি তোমার ছেলেকে ভালোবাসি। কাইফ ভাইয়া তো আমার থেকে একলাইন উপরে। সে তো তার মাকে বলতে পারতো যে সে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু না,
সে কখনো বলেনি আমাকে ভালোবাসার কথা।

মিতু আপুকে পছন্দ করে তো বলেছেই তাহলে আমার এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আমি বরং আমার ঘরে যাই।

আমি আমার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কাইফ ভাইয়া বলে ওঠে,
– ওই ঘরে মিতু থাকবে যে কয়দিন এখানে আছে। তুই কোথায় থাকবি সেটা তো বলেই দিয়েছি। নিজের ঘরে যা এখন।

আমি এই বাড়ির আশ্রিতা, এরা যা বলবে আমাকে শুনতেই হবে, খুশি মনে কিনবা কষ্ট পেয়ে। আমি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলি,
– আমি এখনি স্টোর রুমে যাচ্ছি কাইফ ভাইয়া।

এই বলে আমি স্টোর রুমের দিকে যেতে লাগলাম। আমার যাওয়া দেখে কাইফ ভাইয়া বলল,
– আমি বললাম আর চলে যাচ্ছিস? তোর বালিস, কাথা, জামা-কাপড় কে নিয়ে যাবে ওই ঘরে? ওইগুলো সহ স্টোর রুমে যা।

আমি ঘুরে আমার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। মামী আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে দাড় করালো। রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
– তুই যদি ওই ঘর থেকে একটা জিনিস বের করিস আমার মরা মুখ দেখবি।

মামীর এই কথায় ভালোবাসা ছিলো নাকি অন্য কিছু ছিলো আমি ঠিক বুঝতে পারিনি তবে হঠাৎ করেই আমার মনে বড্ড অভিমান জমলো। একজন বলছে যাও একজন বলছে যেওনা, যেন আমাকে নিয়ে মা-ছেলে মজা করছে। আমি অসহায়ের মত চুপ করে দাড়িয়ে থাকলাম। মিতু আপু আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– সাওদা কেন অন্য কোথাও শুয়ে থাকবে! আমরা দুইবোন এক ঘরে থাকবো। ঠিক বলেছি না সাওদা?

আমি মিতু আপুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে বললাম,

– সবাই যেটা সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেখানেই থাকবো।

মিতু আপু একটু অভিমানী স্বরে বলল,

– আমিই মনে হয় নষ্টের গোড়া। আমিই চলে যাচ্ছি।

মিতু আপুর এমন কথা শুনে কাইফ ভাইয়া আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো, যেন আমি কোনো বড় অপরাধ করেছি। আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুই চলে যাবি মানে? যাওয়ার কথা বললে তোর কপালে শনি ডাকবে।

মিতু আপু কাইফ ভাইয়াকে বলল,
– তুই নতুন একটা বাড়ি কেন বানাচ্ছিস না?

– ভাই রে ভাই, আমি এখন পড়াশোনা শেষ করলাম এখনই কিভাবে সব করবো! একটা চাকরি তো করি আগে।

মিতু আপু বলে,
– যে একটা কোম্পানির পার্টনার সে চাকরি করবে। বাহ বাহ! চলো সাওদা আমরা নিজেদের ঘরে যায়।

– ওরে তুই এই অংক বুঝবিনা। একদিন সব বোঝাবো তোকে। এখন যা ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে।

এরপর মিতু আপু আমার হাত ধরে আমার ঘরে নিয়ে আসলো। আমাকে খাটে বসিয়ে আমার পাশে বসে বলল,
– তুমি কি কাইফের কথায় কষ্ট পেয়েছো? ওর হয়ে আমি তোমার কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি।

বাহ বাহ। এতো তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেলো। ওর হয়ে আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি! এতোদুর গড়িয়ে গেছে! তারমানে আমি কি তাহলে একটা ফান ম্যাটেরিয়াল ছিলাম। কাইফ ভাইয়া ভালোবাসি ভালোবাসি বলে কি তাহলে আমার সাথে মজা করতো!

আমার চুপ থাকা দেখ্ব মিতু আপু বলল,
– তুমি কি ভাবছো? এখনো ওকে মাফ করতে পারোনি?

বাব্বাহ মাফ চেয়েই শুনবে যে দেখছি। আমি মিতু আপুকে বললাম,
– মাফ চাওয়ার কিছু নেই আপু। এই বাড়িটা তার সে যা বলবে আমাকে তাই শুনতে হবে। একজন আশ্রিতাকে আর কত যত্ন করবে তারা। আমাকে যথেষ্ট কেয়ার করে এ বাড়ির সবাই। মামা দেশে থাকেনা তবুও মামীর কাছে কখনো ভালোবাসার ঘাটতি পাইনি আমি। নিজের সন্তানের মত আগলে রেখেছে।

মিতু আপু বলল,
-তুমি বসো আমি একটু আসছি৷

এরপর সে চলে গেলো। আমি চুপচাপ খাটের উপর বসে রইলাম। হটাৎ মেঘের গর্জন শুনতে পেলাম। হয়তো একটু পর বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টির শুরুর মুহুর্তটাকে আমি মিস করতে চাইনা তাই দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম। আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি আমার মন ভালো করে দেওয়ার ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

ছাদে পৌছে দেখলাম হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমি ঠিক মাঝখানটাই যেতেই ঝুম করে বৃষ্টির গতি বেড়ে গেলো। আমি দুই হাত মেলে বৃষ্টিকে স্বাগত জানাতে লাগলাম। আজকে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। যে কাইফ ভাইয়া আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবনায় থাকতো আজকে সে আমাকে স্টোর রুমে শোয়ার জন্য বলছে। আমাকে যেন সে জেনেশুনেই অবহেলা করতে চায়।

আমার কষ্ট আজকে বৃষ্টির যাথে ধুয়ে যাচ্ছেনা। বরং বেড়েই চলেছে। সিদ্ধান্ত পালটে আবার ঘরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আমি ঘরে ঢুকবো তার আগেই আমার ঘরের ভিতর থেকে মিতু আপু আর কাইফ ভাইয়ের গলা শুনতে পেলাম।

কাইফ ভাইয়া একটু রাগীস্বরে বলছে,
– তুই খুব বেশি বুঝিস? ওকে কেন এই ঘরে রাখার কথা বললি বলতো? ও থাকলে আমি কি এই ঘরে আসতে পারবো?

বড্ড হাসি পেলো এই কথা শুনে৷ তবে এই হাসি মজা পাওয়ার হাসি না। বরং তাচ্ছিল্যের হাসি। যে মানুষ আমার বিনা অনুমতিতে যখন তখন এই ঘরে প্রবেশ করতো আজকে নাকি আমি তার বাধা হয়ে দাড়িয়েছি৷ আমার এখন এই ঘরে থাকা উচিৎ না। আমার উচিৎ এখন মামীর ঘরে মামীর কাছে শোয়া৷

আমি এমন একটা ভাব নিলাম যেন আমি কিছুই শুনতে পাইনি। ঘরের ভিতরে ঢুকতেই মিতু আপু বলল,
– একি সাওদা তুমি হঠাৎ ভিজে গায়ে কেন? বৃষ্টিতে ভিজছিলে বুঝি?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানাই। মিতু আপু কিছু বলতে গেলে কাইফ ভাইয়া তাকে বাধা দিয়ে বলে,
– সাওদা তুই বরং তোর পোশাক নিয়ে আমার ঘরের ওয়াসরুমে যা। আমি আর মিতু একটু গল্প করছি।

আমি কথা না বাড়িয়ে কাভার্ড থেকে আমার পোশাক নিয়ে কাইফ ভাইয়ার ঘরে চলে আসি। ওয়াসরুমে ঢুকেই মনে হলো কেন এই লোকটার ঘরে এলাম। একদিনেই আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে ফেলেছে লোকটা। আমিতো মামীর ঘরের ওয়াসরুমে গেলেও পারতাম। যায়হোক সময় নষ্ট না করে আমি। পোশাক পালটে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলাম।

ঘর থেকে বের হবো ঠিক তখনই দেখলাম কাইফ ভাইয়ার টেবিলে একটা বই বা ডায়েরি জাতীয় কিছু খুলে রাখা রয়েছে৷ ওটা বন্ধ করে দিতে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম। ডায়েরিই ছিলো ওটা, বন্ধ করতে যাওয়ার আগে হঠাৎ মনে হলো চুপিচুপি কাইফ ভাইয়ার ডায়েরির কিছুটা পড়ি। শুরু থেকে পড়বো নাকি শেষ থেকে ভাবতে লাগলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আজকাল কি লিখেছে সেটা পড়তে হবে। তাই শেষের দিকের পৃষ্ঠা উলটে দেখলাম৷ প্রায় দেড় পেইজ মত লেখা আছে তবে এখবো সম্পুর্নটা লিখে শেষ করেনি। যতটুকু আছে ততটুকুই পড়তে লাগলাম,
‘সাওদা আমাকে মাফ করে দিস। তোকে কষ্ট দিতেই হবে। তুই সব বুঝেও না বোঝার ভান করিস আমি জানি৷ এর এটাও জানি তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস। তুই ভেবেছিস আমি কিছুই জানিনা তোর মনের কথা! কিন্তু তুই ভুল রে। তুই কোনোদিন কিছু না বললেও জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস। কিন্তু সব প্রেমিকের একটা ইচ্ছা থাকে সে তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনবে। আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। তুই হয়তো ভাবিস আমার মা এটা মেনে নেবে না৷ কিন্তু তোর মনে হয় এটা জানা নেই যে তোর জন্মের আগেই যখন সবাই জানতে পারে ফুফুর মেয়ে হবে মানে তুই হবি তখন মা ঠিক করে রাখে তোর আর আমার বিয়ে হবে। কিন্তু তুই তোর মনের ভিতর আগাম সবকিছু সাজিয়ে বসে আছিস। এজন্য মিতুকে এখানে আসতে বলেছি৷ আমি জানি তুই ওকে আমার সাথে বেশি বেশি দেখলে সহ্য করতে পারবিনা তাই মনের কথা বলে দিবি৷ আমি জানি তোর মনের কথা তবুও তোর মুখে শুনিবোই কারণ…..

এরপর আর কিছু লেখা নেই বা হয়তো আছে কিন্তু আমার আর পড়ার ইচ্ছা নেই। আমি সব সময় ভুল ছিলাম এখনও ছিলাম। ভাগ্যিস এইখানে এসেছিলাম নাহে হয়তো জানতেই পারতাম না আমাকে নিয়ে মামীর মনে কি চলে। ইশ! বড্ড লজ্জা লাগছে আমার।

কাইফ ভাইয়ার প্লান শুরুর আগেই ভেস্তে গেলো ভাবতেই হাসি লাগছে বড্ড। কি দরকার ছিলো ডায়েরি খুলে রাখার হাহাহা।

বৃষ্টিতে ভিজেও যে কষ্ট কমেনি এইমাত্র এই ডায়েরিটা পড়ে তার থেকে কয়েক গুন বেশি সুখে মনটা ভরে উঠেছে। ইচ্ছা করছে এখনি কাইফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলি, কাইফ ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।

হয়তো ভালোবাসি বলতে গিয়ে কাপাকাপা গলায় সব কথা ঠিকভাবে বের হবেনা। কাইফ ভাইয়া কি সব কিছু ঠিক ভাবে বুঝে নিতে পারবে!
,
,
চলবে
,
,
রিচেক দেওয়া হয়নি তাই দয়া করে বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৩

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৩য় পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আমি তোতলাতে তোতলাতে কাইফ ভাইয়াকে বললাম,
– তু তু তুমি এখানে কি কি কিভাবে আসলে? রিয়া কক কোথায়?

– এখানে রিয়ার থাকার কথা না। আমার থাকার কথা তাই আমি আছি ও নাই।

কাইফ ভাইয়া চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।

আমি মাথা নিচু করে নিলাম। আমি বলে ফেলেছি কাইফ ভাইয়াকে ভালোবাসি৷ এখন বড্ড ভয় হচ্ছে। আমাকে কোনোভাবে বিষয়টা কাটাতেই হবে। তাই মাথায় নিচু করেই মনগড়া গল্প শুরু করলাম আবার,
– কাইফ ভাইয়া তুমি আমার উপর রাগ করোনা। আমি আমার সব বান্ধবীকে বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু এটা সত্য নই। আমি তো তোমাকে বলেছিই আমি কাকে ভালোবাসি।

কাইফ ভাইয়ার রাগ একদম উধাও হয়ে গেলো মনে হলো। বাকা একটা হাসি দিয়ে বলল,
– তুই আমাকে বড্ড বোকা পেয়েছিস। এবার তোর ক্লাস আমি নেবো। দেখবো তোর কত ধৈর্য।

আমি অবাক হতে কাইফ ভাইয়াকে বললাম,
– তুমি আমার কি ক্লাস নেবে কাইফ ভাইয়া? আমরা দুইজন তো দুই সাব্জেক্টের স্টুডেন্ট।

কাইফ ভাইয়া আগের মতই বাকা হাসি দিয়ে বলল,

– কিসের ক্লাস নেবো সে পরে বুঝতে পারবি। আগে একটা কথার উত্তর দে তো! তুই বললি তুই অন্য কাওকে ভালোবাসিস। তাহলে তোর বান্ধবীদের সাথে আমার কথা কেন বলেছিস?

আমি ঢোক গিলে ভাবতে লাগলাম কি বলবো এটা। অবশেষে কিছু একটা মনে চলে আসলো, তাই গড়গড় করে বলে দিলাম,

– যাকে আমি ভালোবাসি সে আর আমি ছাড়া কেও জানেনা আমাদের রিলেশনের বিষয়ে। আমার এক বান্ধবীর ভাই আমাকে প্রপোজ করতে এসেছিলো, আমি নিজেকে বাচানোর জন্য বলে দিই, তুমি আর আমি একে অপরকে ভালোবাসি।

কথাগুলো বলে নিজের হাত দিয়ে নিজেরই ঘাড় চাপড়াতে মন বলল। এতো সুন্দর করে মিথ্যা বানালাম কিভাবে! কাইফ ভাইয়া আমি দিকে একভাবে তাকিয়েই রইলো। কেমন দৃষ্টি ওটা আমার জানা নেই। তবে একথা বলতে পারি, তার চোখের মায়া থেকে বের হতে চাইনা৷

কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর কাইফ ভাইয়া বলল,
– তোকে একটা কথা আমি আজীবন বলে এসেছি আর তা হলো সত্যকে গোপন রাখবিনা। দেখিস একদিন মিথ্যা বলার জন্য তুই অনেক বড় কিছু হারাবি।

এবার একটু বেশিই ভয় পেলাম। আমার সব কথা তাহলে ধরে ফেলল না তো! আমি আবার তোতলাতে তোতলাতে বললাম,

-তুমি ঠিক কিসের কথা বলছো কাইফ ভাইয়া। আমি হঠাৎ কি মিথ্যা বললাম।

যদিও মিথ্যা বলেছি তবুও এমন একটা ভাব নেওয়ার চেষ্টা করলাম যেন আমি সব সত্যি বলছি।

কাইফ ভাইয়া হোহো করে হাসতে লাগলো রেস্টুরেন্টের মধ্যেই। আশেপাশের সবাই কেমন ভাবে যেন কাইফ ভাইয়ার দিকে তাকাতে লাগলো কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

– শোন তোকে একটা গল্প শোনাই। রাস্তা দিয়ে দুইজন হেটে যাচ্ছিলো। একজন চোর আরেকজন সাধারণ পথিক। হঠাৎ দূর থেকে একজন পুলিশ বলতে বলতে দৌড়ে আসতে থাকে। এরপর কি হলো বলতো?

আমি অনার্গল বলে দিলাম,
– কি আর হবে! চোর সেখান থেকে পালিয়ে যাবে আর ভালো লোকটা সেখেনি দাঁড়িয়ে থাকবে।

কাইফ ভাইয়া দুই হাতের তালু একজায়গায় করে নিজের মুখ মুছে বলল,
– এইতো বুঝতে পেরেছিস। এটা কেন বললাম জানিস? আমি বলিনি যে তুই এখন মিথ্যা বলছিস কিন্তু তুই নিজেই ধরে নিচ্ছিস তুই মিথ্যা বলেছিস।

– কাইফ ভাইয়া তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছিনা। সব কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

– তোর কিছু বুঝতে হবেনা। যা বোঝার আমিই বুঝে নিয়েছি৷ এখন বাসায় চল।

– আমাকে আগে বলো, আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তুমি কোথায় গিয়েছিলে? জানো মামী কত চিন্তা করেছে তোমার জন্য?

– হ্যা আমার মা আমার জন্য চিন্তা করবেনা তো কি তুই করবি?
বায় দা রাস্তা, তোর চোখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেন আমার কাছে? সারারাত কাদিস নি তো?

আমি একটা ঢংগি হাসি দিয়ে বললাম,
– ক.ক কাদবো কেন কাইফ ভাইয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এখানে চলে এসেছি সে জন্যই হয়তো এমন লাগছে।

– ঠিক আছে বাসায় চল৷ আজকে একজন স্পেশাল গেস্ট আসবে বাসায়।

– তুমি আমার কথার উত্তর দাও। গেস্ট আসবে কি ফেস্ট আসবে আমি কি শুনতে চেয়েছি সেটা? তুমি আগে বলো কালকে কোথায় ছিলে? আমি সব খবর নিয়েছি তুমি তোমাদের ফেয়ারওয়েলে যাওনি।

কাইফ ভাইয়া একদম স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

– বন্ধুর বাসায় ছিলাম। চল এখন আর কথা বাড়াস না। মায়ের সাথে দেখা করতে হবে। একদিন মাকে দেখিনি।

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে পড়লাম কাইফ ভাইয়ার সাথে। আমি কি ভুল কিছু করছি! কাইফ ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসে। তাহলে আমি কেন ভালোবাসতে পারবোনা? আমিতো ভালোবাসিই কিন্তু তাকে জানাতে পারিনা। হয়তো কোনোদিন পারবোওনা।

আমাদের পরিণতি হবে অন্য রকম। কাইফ ভাইয়ার আগেই হয়তো মামা-মামী আমার বিয়ে দিয়ে দেবে। অনেক কাদবো কাইফ ভাইয়ার জন্য। তাকে হারানোর যন্ত্রণা হয়তো দিনকে দিন, মাসকে মাস, বছরকে বছর আমি সয়ে যাবো, তবুও তাকে পাওয়ার চেষ্টা করবোনা। নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য আমি এতো বড় স্বার্থপর হতে পারবোনা। পারবোনা আমি মামা-মামীর সাথে বেইমানি করতে। জীবন গেলেও না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পৌছে গেলাম। বাসায় ঢুকতেই শুটকি মাছের গন্ধ পেলাম। ওড়না দিয়ে নিজের নাক মুখ কোনোরকমে ঢেকে দৌড়ে নিজের ঘরের ওয়াসরুমে চলে গেলাম। শুটকির গন্ধ আমার একদম সহ্য হয়না তাই ওয়াসরুমেই বমি করা শুরু করে দিলাম।

কিছুক্ষন পর মামী আমার ঘরে আসলো। ততক্ষণে আমি ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছি। মামী আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
– মারে শুটকি রান্না করে ভুল করেছি বল? তুই যে একদম সহ্য কর‍তে পারছিস না।

আমি কিছু বলবো তার আগেই কেও বলল,

– ওর সহ্য হয়না তো কি হয়েছে যে আজকে বাসায় আসবে এটা তার প্রিয় খাবার।

হঠাৎ করেই কাইফ ভাইয়ার কথার ধরণ পাল্টে গেলো কেন আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে সে আবার বলতে লাগলো,

– মিতু আসবে তুমি তো জানোই মা। সাওদাকে কোন ঘরে শিফট হতে হবে তুমি বলে দাও। মিতু আবার এই ঘরে ছাড়া শুতে পারেনা।

মামী কাইফ ভাইয়াকে বলল,

– আমার ভাইজি কোথায় থাকবে সেটা আমিই ঠিক করবো। ও দরকার হলে আমার কাছে থাকবে। এই ঘরের মালিক একমাত্র সাওদা। ও ছাড়া এখানে কেও থাকবেনা। তুই যা এখান থেকে সারাক্ষণ মেয়েটার পিছনে লেগে থাকিস।

কাইফ ভাইয়া চলে গেলো কিন্তু কয়েক মণ আঘাত দিয়ে গেলো আমাকে। তার কথার ইঙ্গিত আমি বুঝতে পেরেছি। আমাকে স্টোর রুমে থাকার কথা বলছে।

আমার চুপ থাকা দেখে মামী আমাকে বলে,
– তুই ওই পাগলটার কথায় রাগ করিস না মা। ও তোকে রাগানোর জন্যই কিন্তু এসব বলেছে।

আমি মৃদু হাসি দিয়ে বলি,

– না মামী আমি স্টোর রুমে শুতে পারবো। ওখানে একটা খাটও আছে।

মামী আমাকে বাধা দিয়ে বলে,
– তোর কথার মধ্যে অনেক যন্ত্রণা মা। আমি চাইনা এই যন্ত্রণা আরও বাড়ুক। তুই এখানেই থাকবি।

আমি এবার একটু জোর গলায় বললাম,
– না আমি ওই ঘরের থাকবো। এখানে গেস্ট থাকবে। তুমি আমার জন্য সারাজীবন অনেক কিছুই করেছো। আর কিছু করিওনা মামী, কাইফ ভাইয়া যা বলছে সেটাই হবে৷ তুমি এই নিয়ে এতো চিন্তা করো না।

মামী আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলল,
– আমি যে মা। আমার মত তোরা কেও বুঝবিনা আর বুঝতে হবেও না। তুই তোর ঘরেই থাকবি এটাই ফাইনাল নাহলে আমি কিন্তু বাসার ভিতরে শুবোনা।

অবশেষে মামীর কথা মেনে নিলাম।
🍁
ঘন্টা খানেক পর মিতু নামক সেই আপু বাসায় আসলো। মামীর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে আমার সামনে এসে বলল,
– সাওদা?

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিই। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কানে ফিসফিস করে বলে,
– তুমি তো দেখতে একদম পরীর মত হয়ে গেছো। তুমি বাসায় থাকতে কাইফ আমাকে পছন্দ করে কেন বুঝলাম না।

আমি কথাটা যেন শুনেই না শোনার ভান করলাম। কিন্তু আমার মন তো আমাকে বারবার বলছে কাইফ আমাকে ভালোবাসে না। কেনই বা বাসবে। আমি কি তাকে ভালোবাসি বলেছি? একটা ছেলে কতদিন অপেক্ষা করবে। ঠিক করেছে কাইফ ভাইয়া মিতু আপুকে চয়েজ করে।

তবে একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকছেনা। যে মানুষটা কালকেও বলল আমাকে ভালোবাসে সে আজকেই কিভাবে মিতু আপুকে পছন্দ করে এই কথা বলে ফেলল!
,
,
চলবে

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০২

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
২য় পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আমি কোনোভাবে বলার চেষ্টা করলাম,
– কাইফ ভাইয়া তুমি আমার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়টুকু তো দাও। তাহলেই না বলবো আমার মনের কথা!

আমার কথা শুনে শয়তান লোকটা এবার নিজেকে একটু সরিয়ে নিলো। তবুও পুরোপুরি আমাকে ছাড়লোনা। ওনাকে জন্য বললাম,

– কলেজের একটা ছেলেকে আমি পছন্দ করি কাইফ ভাইয়া।

আমি ভেবেছিলাম এই কথা শুনে আমাকে আরো শক্তি দিয়ে জানালার সাথে চেপে ধরবে কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আমাকে সম্পুর্ন ছেড়ে দিয়ে নিজের সিটে বসে রইলো।

আমি এবার একটু ভয় পেলাম, এই ভেবে যে তুফানের আগে হয়তো সবকিছু শান্ত থাকে। কিন্তু না এবারের ধারণাও ভুল হলো। সে একমনে গাড়ি চালাতে লাগলো। আমি এবার আরো দুষ্টুমি করে বললাম,
– তার নামটা শুনবেনা কাইফ ভাইয়া?

– নাম শুনে আমি কি করবো? তোর ভালোবাসার মানুষ তুইই বরং তার নাম, ধাম মুখস্থ করে রাখ।

আমি লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে বলি,
– শুধু মুখস্থ কি বলছো কাইফ ভাইয়া। আমিতো তার নাম আমার বুখস্থ করে ফেলেছি। এই বুকের মধ্যে তার নাম, ধাম সব আছে।

এবার কাইফ ভাইয়া রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকালো কিন্তু তৎক্ষনাৎ একটা হাসি দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আবার গাড়ি চালানোয় মন দিলো। আমিও চুপচাপ বসে রইলাম। কাইফ ভাইয়া হঠাৎ সামনের মোড় থেকে ইউটার্ন নিয়ে বাসার দিকে গাড়ি চালাতে লাগলো। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
– বাসায় যাবে নাকি আবার!

– হ্যা যাবো।

– কিছু কি ফেলে এসেছো নাকি? মামীকে বললেই তো ড্রাইভারকে বলে অন্য গাড়ি দিয়ে তোমার কাছে জিনিসটা দিয়ে যেতো।

– আমি কি বলেছি কিছু ফেলে এসেছি? সব সময় এতো বেশি কথা কেন বলিস তুই? আমি তোকে বাসায় রেখে আসতে যাচ্ছি।

– তোমাদের ফেয়ারওয়েলে আমাকে নিয়ে যাবেনা তাহলে?

মন খারাপ করে বললাম।

কাইফ ভাইয়া একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

– তাদের সাথে বলেছিলাম আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু তুই আমার ভালোবাসা হলেও আমিতো তোর কেও না!

– আমি তোমার ফুফুর মেয়ে কাইফ ভাইয়া। বোন হিসেবেও তো আমাকে নিয়ে যেতে পারো!

– না পারিনা। কারণ ওরা সবাই জানে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। তাই আমি চাইনা তোর গায়ে কলঙ্ক লাগুক।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
– এর সাথে কলঙ্কের কি সম্পর্ক কাইফ ভাইয়া।

কাইফ ভাইয়া গাড়ি আবার সাইড করে রেখে বলল,

– আজকে তোকে প্রেমিকা হিসেবে ওখানে নিয়ে যাবো। কিন্তু কিছুদিন পর যখন ওরা জানবে তুই অন্যকাওকে ভালোবাসিস, তার সাথে বিয়ে করছিস তখন সবাই তোর চরিত্রের দিকে আঙুল তুলবে। আমি কাইফ বেচে থাকতে তোকে অপমান করা সহ্য করতে পারবোনা রে সাওদা।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে কাইফ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো। চোখগুলো রসগোল্লার মত টসটসে হয়ে আছে। একটু টোকা লাগলেই যেন রস সব গাল বেয়ে পড়বে। লোকটার চোখের পানির থেকেই তার মুখের কথাগুলো আমার মনে আঘাত হেনেছে। একটা মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসে কেন? আমার কাছে কি আছে যে তাকে দেবো! না আছে বাবা না আছে মা, তাদের বাসায়ই বড় হয়েছি আর এখন তার সাথেই বিয়ে করবো এই চিন্তা আমি করতে পারিনা। মামীর কাছে আমি ছোটো হয়ে যাবো। এই জন্য মিথ্যা আমাকে বলতে হবে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় নিজের গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে কাইফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে তার বুকের মধ্যে মাথা রেখে চিৎকার করে বলি, আমি তোমাকে ভালোবাসি কাইফ ভাইয়া, আমার মত কেও তোমাকে ভালোবাসতে পারবেনা।
কিন্তু আমি পারিনা। তারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের এতো বড় সুযোগ আমি নিতে পারিনা। আমার বিবেক আমাকে এটা করতে দেয়না। তাই মাঝে মাঝে আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি, কি করবো কি করবোনা।

এতো আজকেই বলতে ইচ্ছা করছিলো আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু পারলাম না।

কাইফ ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

– জানিস সাওদা, আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে। তোর বয়স যখন ১০/১১ বছর তখন থেকেই আমার মনে তোর জন্য অন্য এক অনুভুতির স্থান আছে। আজও একটুও অনুভূতি কমেনি, বরং যত দিন গেছে আরও চেয়েছি তোকে কাছে পাওয়ার। এখনতো তুই প্রাপ্ত বয়স্ক তাই তোকে মনে কথা বলেই দিলাম। তুই ভাবিস না আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমার বরং খুশিই লাগছে যে তুই নিজের জীবনসঙ্গী পছন্দ করেছিস।

আমি গলা টেনে বললাম,

– তোমার কথা আজকাল খুব উলটা-পালটা হচ্ছে কাইফ ভাইয়া। একটু আগেই বললে তোমার কষ্ট হয়, আবার এখন বলছো আমি জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছি তাই তুমি খুশি। নিজের কথায় ঠিক থাকো কাইফ ভাইয়া, নাহলে তোমার বউ পালিয়ে যাবে বাপের বাড়ি। হিহি।

জানি আমি যেটা বললাম এটা কাইফ ভাইয়ার কাছে মজার কিছু না। তবুও বললাম। আমার কাছে যেন সবকিছুই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। পেয়েও হারিতে ফেলতে চাওয়ার যন্ত্রণা যে কতটা কষ্টের আমি বোঝাতে পারবোনা।

কাইফ ভাইয়া গাড়ি না চালিয়ে চুপ করে বসে রইলো। আমি বললাম,

– বাসায় যেওনা কাইফ ভাইয়া। তুমি আমাকে তোমার অনুষ্ঠানে নিয়ে চলো। একদিন নাহয় তোমার প্রমিকা সেজে রইবো।

আমার কথা বলা শেষ হতে না হতেই কাইফ ভাইয়া গাড়ি চালানো শুরু করলো। আমার সাথে আর একটা কথাও বললো না সে৷ সোজা বাসার সামনে গাড়ির পার্কিং করে বলল,

– বিকালে তোকে ঘুরতে নিয়ে যাবো, তবুও ওখানে তোকে নিয়ে যেতে পারবোনা। আমার বিবেক আমাকে তোকে নিয়ে যেতে দেবেনা। তুই বাসার ভিতরে যা।

আমি মন খারাপ করে বাসার ভিতরে চলে এলাম। একটু কান্নাও পেলো, কিন্তু এই কান্নার কোনো মানে নেই। আমি নিজেই যে দোষী।

বাসায় ঢুকতেই মামী আমাকে দেখে বলল,

– কিরে মা তোরা চলে এলি যে! কাইফ কোথায়?

আমি মন খারাপ করে বললাম,
,
– কাইফ ভাইয়ার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে তাই আমাকে এখানে ফেলে চলে গেছে। বলেছে আমাকে নিয়ে যাবেনা। আমি নাকি সবার সামনে ঝগড়া করবো।

মামীর সাথে সত্য বলতে পারিনি। বলতে পারিনি তার ছেলে আমাকে ভালোবাসে। যদি বলি হয়তো ভেবে নেবে আমি কাইফ ভাইয়াকে ফাদে ফেলেছি। তাই একটু মিথ্যা বলতেই হলো।

আমি সোজা নিজের ঘরে চলে এলাম। দরজা আটকে দিয়ে, খাটে উপড় হয়ে শুয়ে নিজের কপালের জন্য কাদতে লাগলাম। ইশ! আজকে যদি আমার বাবা মা বেচে থাকতো তাহলে কতই সহজে কাইফ ভাইয়াকে নিজের মনের কথা বলে দিতে পারতাম।

কাদতে কাদতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা। মামীর ডাকে ঘুম ভাঙলো। দরজা খুলে দেখলাম মামী খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বলল,

– ওয়াসরুম থেকে মুখ ধুয়ে আয় ভালো করে। আমি তোকে খাইয়ে দেবো।

বাধ্য মেয়ের মত ওয়াসরুম থেকে আমার হাত মুখ ধুয়ে এসে খাটে বসলাম। মামী আমার পাশে বসে প্লেটে থেকে এক লোকমা খাবার তুলে আমার মুখের সামনে ধরলো। আমি খাবার গালে নিলাম।

মামী একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– মারে তুই কাদছিস কেন? আমার পাগল ছেলেটা কি তোকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলল? ও আজকে আসুক তারপর দেখাবো মজা।

আমি মামীকে বলি,
– না না মামী, তুমি কাইফ ভাইয়াকে কিছু বলিওনা। আমিতো বাবা-মায়ের জন্য কাদছি।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

– তাহলে বোধহয় আমি আর তোর মামা তোর বাবা মায়ের জায়গা নিতে পারিনি।

– তা না মামী। আমি সেই ভাবে কিছু বলতে চাইনি। তুমি তো আছোই। এখন আমাকে খাইয়ে দাওতো বড্ড খিধা পেয়েছে।

মামী আমাকে পরম যত্ন করে খাইয়ে দিতে লাগলো। এই মানুষটা আমাকে এতো ভালোবাসে তাহলে কেন আমাকে বউমা হিসেবে মানবেনা! আমার বাবা মা নেই সেজন্য। নাকি আমার মন থেকেই তাকে নিয়ে এমন উল্টোপালটা ভেবে বসে আছি।

যায়হোক মামীকে একটু ঝালিয়ে দেখি। মামীকে বললাম,

– মামী তোমার ছেলের জন্য কেমন বউ পছন্দ?

– সে আর শুনে কি করবি। আমিতো পছন্দ করেই রেখেছি। সে যেমনই হোক তাকেই আমার ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। আমার ঘর আলোকিত করার জন্য সেই লক্ষি মেয়েটাকেই লাগবে।

মনটা একটু খারাপ হলেও লোক দেখানো একটা হাসি দিলাম। মামী তাহলে তার ছেলের বউকে পছন্দ করে বসে আছে আর আমি জানিই না।
,
আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
,
🍁
সকালে ঘুম ভাঙতেই আমার বান্ধবী রিয়া ফোন দিয়ে বললে এখনি রেস্টুরেন্টে তার সাথে দেখা করতে,কারণ সে নাকি কাইফ ভাইয়ার সন্ধান পেয়েছে।

কালকে থেকে কাইফ ভাইয়ার কোনো খোজ নেই। সেই যে আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকি সে নাকি তাদের ফেরারওয়েলেও যায়নি। রিয়ার ফোন পেয়ে আমি ফ্রেস হয়েই একটা অটো ভাড়া নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। প্রায় ২০ মিনিট পর রিয়ার বলা রেস্টুরেন্টে পৌছালাম।

ওকে দেখলাম রেস্টুরেন্টের এককোনে বসে আছে। আমি দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে ওকে বললাম,
– শিগগিরি বল কাইফ ভাইয়াকে কোথায় দেখেছিস?

– আরে দোস্ত শান্ত হ। সে ঠিক আছে এবং সুস্থ আছে। তুই চিন্তা করিস না। আগে বল তুই কাকে ভালোবাসিস।

– এটা কেমন কথা? তুই জানিস না বুঝি!

– জানি তবুও একবার বল।

আমি মাথা নিচু করে বলি,
– কাইফ ভাইয়াকে ভালোবাসি দোস্ত। কিন্তু আমি বলতে পারিনা। মামী আমাকে ভুল ভাবতে পারে। যদি ভাবে তার খেয়ে তার সাথেই অন্যায় করছি তাহলে সে খুব কষ্ট পাবে। আমি চাইনা আমার মামীর কোনো কষ্ট হোক মনের ভিতর।তাই কাইফ ভাইয়া বা মামী কাওকেই বলিনি আমার মনের কথা। যাদের খাই তাদের সাথে এতো বড় বেইমানি করতে পারবোনা দোস্ত।

এক নিঃশ্বাসে সব বলে মাথা উঠিয়ে দেখি সামনে রিয়া নেই। তার জায়গায় বসে আছে কাইফ ভাইয়া। চোখ দুটো লাল টকটকে।। ওনাকে দেখেই তোতলাতে শুরু করে দিলাম। এবার আমার কি হবে!
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০১

0

#হৃদয়ের_ঠিকানা
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
১ম পর্ব

তার সাথে অভিমান করে ইংল্যান্ডের পথে পাড়ি দিয়েছিলাম সেই সাত বছর আগে। আজকে দেশের মাটিতে পা রাখলাম।
সে আবার তার বাড়িতেই আমার দিন কাটবে। হয়তো নতুন বাধনে হয়তো ভীষণ আবেগে।

এয়ার্পোরটের বাইরে বের হয়ে দেখলাম মামী দাঁড়িয়ে আছে। একটু মন খারাপ হলো, হয়তো ভেবেছিলাম সে আসবে কিন্তু আসেনি।
তাকে না দেখতে পেয়ে মামীকে বললাম,
– মামী কাইফ ভাইয়া আসেনি?

– নারে আসেনি। তবে তোর জন্য একজনকে পাঠিয়েছে।

আমি একটু উৎসাহের সাথে বললাম,
– কে, তাকে দেখাবেনা আমাকে?

মামী পরী বলে ডাক দিতেই গাড়ি থেকে ৩/৪ বছর বয়সী একটা মেয়ে বের হয়ে আসলো। মেয়েটা বের হয়ে এসে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলো।

আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার মামীর দিকে তাকালাম। মামীকে জিজ্ঞাসা করলাম,
– এই মেয়েটা কে মামী? নামটাও যেমন পরী দেখতেও তেমন পরীর মত।

মামী একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
– কাইফের মেয়ে ওটা।

সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আসলে আমি বড্ড পাগল। সাত বছরে যে মানুষটার সাথে একটুও কথা বলিনি ফোনে, সে কিভাবে আমার জন্য অপেক্ষা করবে! কাইফ ভাইয়া ঠিকই করেছে, বিয়ে করে।
এখন ওই বাড়িতে আমার যাওয়াটা কি ঠিক হবে!
তার স্ত্রী আমাকে দেখলে হয়তো তাদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হবে।

হঠাৎ সামনে থাকা মেয়েটা বলল,
– আম্মু তুমি কাদছো কেন?

আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অন্যকাওকে ডাকলো কিনা দেখার জন্য। মেয়েটা তখন আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো কোলে ওঠার জন্য। আমি যেন নিজের অজান্তেই তাকে কোলে তুলে নিলাম।

মেয়েটার আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
– পাপা বলেছিলো তুমি কাদলে যেন তোমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে তোমার গালে পাপ্পি দিই। তাই পাপ্পি দিলাম। হিহি।

এবার আমি অবাক হওয়ার চরম পর্যায়ে চলে গেলাম৷ কাইফ ভাইয়ার মেয়ে আমাকেই আম্মু ভেবে নিয়েছে! তাহলে তার নিজের মাকে কি ডাকে!

আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়েই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেন ভাবনার জগতে হারিয়ে গেলাম। মামী আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আমার কাধে হাত রেখে বলল,
-এতো ভাবনায় হারিয়ে যাসনা মা। জীবন যুদ্ধের অনেক কিছুই বাকি এখনো।

মামী ঠিকই বলেছে, এখনই ভাবনায় হারিয়ে গেলে চলবে নাকি আমার! এরপর কাইফ ভাইয়াকে আর তাদ বউকে একসাথে দেখবো, সেই ধাক্কাও তো সামলাতে হবে।

মামীর কাছে বড্ড জানতে ইচ্ছা করছে, কাইফ ভাইয়া তার বউকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় কি! আমাকে যে ভাবে দিতো আমি রাগ করলে।

পরী আমার কোলে থাকা অবস্থায় আমাকে বলল,
– আম্মু তুমি এমন চুপচাপ আছো কেন? পাপা তো বলেছিলো তুমি খুব চঞ্চল মানুষ, একদম আমার মত।

মামী আমার কোল থেকে পরীকে নিয়ে নিতে চাইলো, আমি মামীকে বারণ করে বললাম,
– আমার কোলে থাকনা ও। আমার খুব ভালো লাগছে।

মামী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– সেদিন সামান্য কারণে রাগ করে যদি তুই না চলে যেতিস তাহলে হয়তো এমনই একটা মেয়ে হেসে খেলে বেড়াতো তোদের জীবনে।

পরী রাগা মাখানো চোখে মামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– দিদি ভাই, তুমি কিন্তু আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছো! আমি কি আমার পাপা আর আম্মুর মেয়ে না! অন্য একটা মেয়ের কথা কেন বললে।

এতোক্ষণ পর হঠাৎ আমার অন্যকিছু মনে হতে শুরু করলো। এই মেয়েটার মা মারা যায়নি তো এর জন্মের সময়! এটা তো হতেই পারে। হয়তো কাইফ ভাইয়া আমার ছবি দেখিয়েই বলে গেছে যে আমিই তার মা যাতে সে মায়ের অভাব না অনুভব করে।

মামী পরীকে আমার কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে বলল,
– সারাজীবন তো পরীকে কোলে নিয়েই কাটাবি। এখন নাহয় একটু আমিই রাখি।

এরপর মামী ড্রাইভারকে বললো আমার লাগেজ গুলো গাড়িতে তুলতে। এদিকে আমরা গাড়িতে উঠলাম। আমি একদম ডান পাশে বসলাম, তারপর পরী বসলো আর বাম দিকে বসলো মামী। ড্রাইভার লাগেজগুলো গাড়ির পিছনে রেখে ড্রাইভিং সিটে এসে বসে গাড়ি চালানো শুরু করলো।

গাড়ি চলা শুরু করতেই পরী আমার কোলে এসে বসবে আবদার করলো। মামীকেও দেখলাম কেমন করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো তার দৃষ্টি বলছে যেন আমি পরীকে নিজের কোলে বসিয়ে নিই। কয়েক মিনিটের পরিচয়ে মেয়েটা কেমন যেন আমার অনেক আপন হয়ে উঠেছে।

মামীর দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে পরীকে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিলাম।
গাড়ি আপন গতিতে চলছে। বাসায় ফিরতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লাগবে, এরমাঝে একটুখানি ঘুম দেবো কিনা ভাবছি। না না, ঘুম আর হবেনা। কোলে পরী রয়েছে যে৷ ও তো আমার সাথে গল্প করে সময় পার করতে চাইবে। হোকনা একটু ঘুম নষ্ট মিষ্টি মেয়েটার সাথে কথা বলেই নাহয় এই সময়টা নষ্ট করি। নষ্ট বললে ভুল হবে, উপভোগ করি। তবে আপাতত ও যতক্ষণ চুপ থাকে আমি বাইরের পরিবেশ দেখতে থাকি।

বড় বড় অট্টালিকাগুলো সব পিছন দিকে চলে যাচ্ছে। চলন্তগাড়িতে বসে মুখ বের করে রাখার কারণে চুলগুলো উড়ে এসে মুখের উপর আঁটকে যাচ্ছে। আমি হাত দিয়ে চুলগুলো কানের পিছনে গুজতে যাবো কিন্তু হঠাৎ কেও যেন বলে উঠলো, থাকনা চুলগুলো এমনই৷ বেশ মানাচ্ছে তোকে।

আমি এটা শুনে যেন কেপে উঠলাম। মামী আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– কি হয়েছে মা? হঠাৎ এমন চমকে উঠলি যে!

মামীর কথা শুনে বুঝতে পারলাম আনি জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্ন বললে ভুল হবে, অতীত দেখেছি। বড্ড অতীতে ডুব দিতে ইচ্ছা করছে। বাইরে বিল্ডিংগুলো যেমন পিছনে চলে যাচ্ছে আমিও তেমনই স্মৃতির পাতায় প্রায় ১০ বছর পিছনে চলে গেলাম।

এমনই একদিনে কাইফ ভাইয়া গাড়ি চালাচ্ছিলো আর আমি তার পাশে বসে জানালায় হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বিল্ডিং গুলো পিছন চলে যাওয়া দেখছিলাম আর এলোমেলো চুলগুলো বারবার কানের পিছনে গুজে দিচ্ছিলাম কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার যা যবর যা, তা যবর তা হয়ে যাচ্ছিলো। কাইফ ভাইয়া এটা খেয়াল করে বলল,
– সাওদা তুই বারবার চুল গুলোকে ডিস্টার্ব কেন করছিস?

আমি চখ মোটামোটা করে কাইফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তুমি কি কানা হয়ে গেছো? দেখতে পারছোনা যে চুল আমার চোখে মুখে চলে আসছে!

কাইফ ভাইয়া কেমন একটা হাসি দিয়ে বলল,
– তাইলে চোখ মুখ বন্ধ করে রাখ। এভাবে বারবার চুল ঠিক করিস না৷ আমার গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

এবার যেন আমার চোখে কোঠরি থেকে বের হয়ে আসবে। আমি অবাক চোখে তাকে বললাম,
– আমি রয়েছি তোমার বাম পাশে, তোমার সামনে না যে তুমি গাড়ি চালাতে পারবেনা।

-তুই বুঝবিনা রে পাগলি। এমন চলতে থাকলে শুধু গাড়ি চালানোয় সমস্যা না। আমার মাথায়ও সমস্যা দেখে দেবে। আমি পাগল হয়ে যাবো তোর জন্য।

– আমি তোমার কথা বুঝতে পারছিনা কাইফ ভাইয়া।

উনি গাড়িয়ে সাইড করে রাখলো এরপর আমার দিকে চেপে আসলো। আমাকে একদম একপাশে চেপে রাখলো। আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আর কত অবুঝ হওয়ার চেষ্টা করবি তুই? আমার মনের কথা সবই জানিস তাহলে কেন বারবার মজা করিস।

আমি কষ্ট করে কোনোরকমে বললাম,
– আমার নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কাইফ ভাইয়া। তুমি একটু সরে যাও।

– সরবো সাওদা। আগে বল তুই আমাকে ভালোবাসিস! যতক্ষণ না তুই বলবি আমাকে ভালোবাসিস তখন এমন চেপেচুপে রাখবো। উত্তর না পেলে তোকে একদম আলু ভর্তা বানিয়ে ফেলবো। তাই সোজাসাপটা বলে দে তুই আমাকে ভালোবাসিস।

,
চলবে…