Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1432



বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন ২) পর্ব-০২

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ২)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__২

বাড়ির বৌ পালিয়েছে। আজ দুদিন ধরে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা তাকে। এই নিয়ে বাড়ি ঘর এক করে ফেলছে রাত্রি চৌধুরি। তার দৃঢ় বিশ্বাস বৃষ্টি পালানোর মতো মেয়ে না। হয়তো তাদের না জানিয়ে কারো বাড়িতে দিয়ে মজা করছে। আর নয় তো কেও কিডনাপ করে নিয়ে গেছে। এই জাতিয় ভাবনা গুলো মাথার মাঝে ইদুর দৌর করছে।
রাত তখন সকালের নাস্তা নিয়ে টেবিলে। রাত্রি চৌধুরি বক বক করেই চলছে তার মাঝে কঠিন একটা উত্তেজিত ভাব।
সেদিকে মন না দিয়ে খেয়ে চলছে রাত।
বিরক্তি নিয়ে রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– আজব আমি কথা বলছি তোর সাথে, আর তোর কোনো গুরুত্বই নেই আমার কথায়?
রাত খেতে খেতে বলে উঠে,
– বলো আমি শুনছি।
– তুই এক কাজ কর। পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দে। আর পুলিশ স্টেশানে যা।
– অযথা কেনো এতো ঝামেলা বলো তো?
– মানে কি? অযথা ঝামেলা মানে? আমি তোর সাথে মজা করছি না, সিরিয়াস হয়ে কথা বলছি।
– তো আমিও কি মজা করছি নাকি? যে চলে যাওয়ার, ভালো লাগছেনা সে চলে গেছে, এতে এতো লাফানোর কি আছে? তার এখানে ভালো লাগছেনা, সে এখানে হ্যাপি নেই তাই চলে গেছে হয়তো। আর তোমার জদি এতোই পুত্র বধুর প্রয়োজন হয় তাহলে দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছে নাকি?
– দেখ রাত মাথা খারাপ করবিনা আমার, ঠাস করে একটা চর খাবি আর সব দাত পরে থাকবে এখানে। আমার তো মনে হচ্ছে সব তুই ই করেছিস। ওই বেয়াদপ মেয়েটা ফিরে এসেছে শুনে বৃষ্টিকে সাইড করে দিয়েছিস তুই। একটা কথা পরিস্কার ভাবে শুন রাত। আরশি যেমন আমার মেয়ে বৃষ্টিকেও আমি এর চেয়ে কোনো অংশে কম ভাবিনা। প্রয়োজনে বৃষ্টিকে আমার কাছে এনে দিয়ে ওই বর্ষা মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা তুই। তবুও যেভাবেই হোক খুজে নিয়ে আয় আমার কাছে।
নাস্তা শেষ করে উঠে চলে যাচ্ছে রাত। রাত্রি চৌধুরি ঠাই দাড়িয়ে আছে ওখানে। রুদ্র চৌধুরি কপালের চামরা ভাজ করে সোফায় বসে আছে চিন্তিত ভাব নিয়ে।

বৃষ্টির পালিয়ে যাওয়ার কথা পৌছে গেলো তার বারার বাড়িতেও। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে বৃষ্টির মা। কেও কারণটা না জানলেও বৃষ্টির মা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে এটা। কারণ সে বৃষ্টিকে এসব নিয়ে ব্লেকমেইল করতে দেখেছে। সে পুরুপুরি সিউর বর্ষার কারনেই বাড়ি ছেরে চলে গেছে বৃষ্টি।
বর্ষার গালে ঠাস ঠাস করে দুটু চর দেয় তার মা।
রাগি চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– দেশে এতো মানুষ মরে তুই মরিস না কেনো? বেয়াদপ মেয়ে নিজেতো আমাদের মান সম্মান ডুবিয়ে ছেরেছেই এখন আবার এসেছে আমার ছোট মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে। কেনো ফিরে এসেছিস তুই? ধোকাই যখন খেয়েছিস তাহলে মরে যেতে পারলিনা তুই। আমার মেয়েটা, তোর কারনে এভাবে বিয়ে হয়ে গেলো তার। ওই বাড়ি থেকে বিশেষ করে রাতের থেকে হাজারো অবহেলা পেয়ে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েও সব সহ্য করে নিয়েছে চুপ চাপ। হাজারো কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে ধিরে ধিরে মানিয়ে নিয়েছে সব। এই দু, হাত তুলে কতো দোয়া করেছি মেয়েটার কপালে যাতে একটু সুখ জুটে। হয়তো আমার সে দোয়া কবুল ও হয়েছিলো। সব শেষ করে দিলি তুই। কিভাবে পারলি নিজের আপন ছোট বোনের সাথে এমনটা করতে? তোর কাছে তো মানসম্মান, আমাদের ইমোশন, এগুলো কিচ্ছু আসে যায় না। কিন্তু নিজের বোনের ঘুচানো সংসার ভাংতে একটুও বিবেকে বাধলোনা তোর? তোকে আমি পেটে ধরছি এটা আমার কোন পাপের শাস্তি ছিলো কে জানে।

বর্ষা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। হয়তো তার মনেও একটু অনুসুচনা জেগে উঠেছে। আবেগের বসে একটু বেশিই বলেছিলো বৃষ্টিকে।
ওদিকে আচলে মুখ চেপে কান্না করছে তার মা।
দিনটা কেটে গেলো কিন্তু বৃষ্টির কোনো খোজ পাওয়া গেলোনা।
,
,
পর দিন সকালে, সোফায় বসে আছে বৃষ্টি। আর পাশে বসে নিউজ পেপারটা খুলে সামনে ধরে পরছে ওই বাড়ির মহিলা মানে তার আন্টি নামক মহিলাটা। সে আঙুল দিয়ে চশমাটা ঠিক করতে করতে বলে উঠে,
– তোমার নামে নিখোজ সংবাদ এসেছে পত্রিকায়। পত্রিকার এক কোনে ছোট্ট করে তোমার একটি ছবিও দেওয়া আছে দেখছি। হয়তো তোমার শশুর বাড়ির লোকই দিয়েছে এই সংবাদ।
মহিলাটার হাত থেকে পত্রিকাটা নেয় বৃষ্টি। দেখে তার নাম ও ছবি পত্রিকার পাতায়। এই মুহুর্তে নিজেকে অনেক বড় সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে তার। পত্রিকাটা রেখে হুট করেই মহিলাটার হাত ধরে ফেলে বৃষ্টি।
– প্লিজ আপনারা কাওকে বলবেন না যে আমি এখানে আছি। আমি আর ফিরে যেতে চাইনা কারো কাছে। প্লিজ আমার এই অনুরুধ টুকু রাখেন। কাওকে বলবেন না প্লিজ।
মহিলাটা একটু ভরসা দেয় বৃষ্টিকে,
– আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থাটা। নিশ্চিত থাকো কেও জানবে না।
– আপনার ছেলে মানে ওই ভাইয়াটাকেও বলে দিন যেনো এই ব্যাপারে কারো সাথে শেয়ার না করে।
– আচ্ছা বলে দিবো। তুমি টেনশন করো না। কেও জানবেনা।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, তারপর পুলিশকে ইনফ্রম করেও কোনো খোজ পাওয়া গেলো না বৃষ্টির। এতে একেবারে হতাশ হয়ে পরেছে তার বাবা মা, শশুর শাশুরি এরা সবাই। শুধু দুঃশ্চিন্তার ছাপটুকুও দেখা গেলো না রাতের মুখে। যেনো এই কয়দিনে কিছুই ঘটেনি এই বাড়িতে।

বর্ষার সামনে দাড়িয়ে আছে রাত। নির্জন জায়গা একটা নদীর পাড়।
– তোমার মনে আছে রাত এক সময় আমরা এখনে প্রায়ই আসতাম। কতো মজা করতাম দুজন মিলে। সবুজ ঘাসের উপর পাশাপাশি সুয়ে থাকতাম দুজন। তোমার কাধে মাথা রেখে নদীর জলে ঢিল ছুরে ছুরে স্বপ্ন বুনতাম আমরা। মনে আছে রাত?
– মনে না থাকেলেও ভুলে যাই নি। আর বাদ দাও ঐসব। তোমার এসব আজাইরা কেচাল শুনতে তোমায় ডাকিনি আমি। আমি কিছু প্রশ্ব করবো সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক ভাবেই দিবে।
– আচ্ছা বলো।
– বৃষ্টির সাথে তোমার কি হয়েছিলো। আই মিন কি করেছো তুমি তার সাথে?
– ক কই কিছু করিনি আমি।
– আমি তোমার তোতলামু শুনতে আসিনি এখানে। ক্লিয়ার ভাবে সত্যিটা বলো। আর তুমি ভালো করেই জানো আমি একবারের কথা দুই বার বলতে পছন্দ করিনা। কি বলেছিলে বৃষ্টিকে?
– রাত আমি আসলে,,,,,,,
রাত একটা হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠে,
– আমি আসলে কি? ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে তাকে আমার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছো তাই তো? আমাকে ভালোবাসো সে আমাকে ছেরে না গেলে এটা করবে ওটা করবে আত্মহত্যা করবে। এখন তোমার এসব ভালোবাসা কোথা থেকে উতলে পরছে শুনি। এই ভালোবাসা তখন কোথায় ছিলো যখন আমাকে বিয়ের আসরে রেখে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে চলে গিয়েছিলে তুমি? এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো যখন নিজের বোনকে স্ত্রীর পরিচয়ে অন্য একটা ছেলের হাতে অত্যাচারের মাঝে রেখে অন্য একটা ছেলের সাথে ফুর্তি করছিলে? তখন কোথায় ছিলো তোমার এই ভালোবাসা? আর এখন ভালোবাসা দেখাতে আসছো নিজের বোনের ঘুচানো সংসার ভেঙে। তুমি কি ভেবেছো তোমার মতো এতো লোভি নষ্টা মেয়েকে রাত বৌ করে তুলবে আবার সব জেনে শুনেই। নো বর্ষা। বরং তোমাকে আমি আরো থ্যাংক্স দিতে চাই তোমার মতো লোভি ও বাজে মেয়ে আমার লাইফ থেকে সরে বৃষ্টির মতো কাউকে আমার কাছে তুলে দেওয়ার জন্য।
এবার একটু করুন হয়ে যায় রাতের গলা,
আই এম সরি বর্ষা আমি কখনোই তোমাকে এভাবে বাজে ভাবে কথা গুলো বলতে চাইনি। বাট তুমিই আমাকে বাধ্য করেছো বলতে। তুমি আমাকে যতটা চাও তার চেয়ে বেশি আমি চাই বৃষ্টিকে। তোমার শুন্যতা মানিয়ে নিয়েছি বৃষ্টির মতো কাওকে পেয়ে। তাই বলে বৃষ্টির শুন্যতা মানিয়ে নিতে পারবোনা আমি। আমি এখন বৃষ্টিকে খুব বেশিই ভালোবাসি। প্লিজ বর্ষা তোমার কাছে হাতজোর করে বলছি, তুমি আমাদের মাঝখান থেকে সরে যাও।
– কিন্তু রাত……
রাত আবারও হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠে,
– তুমি না সরলে আমি নিজেই আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিবো তোমাকে। আমাদের ভালোবাসার মাঝখানে তোমাকে দেখতে চাইনা, এখন না, কোনো দিনও না।

রাত কোমরে দু হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ওখানে। মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে যাচ্ছে বর্ষা।
,
,
বাইরে চাঁদের আলো। হালকা বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। এতে চাদের আলো কিছুটা রুমেও প্রবেশ করছে তার। বিছানায় শুয়ে আছে বৃষ্টি। মৃশ্রন ঠোট দুটু লেগে আছে একটা আরেকটার সাথে। চোখ দুটু বন্ধ তার। কিছু চুল এসে পরেছে মুখে। এখন ঘুমের রাজ্যে রাজত্ব করছে সে। আশে পাশে মন্ত্রি নামক অনেক গুলো পড়ির বসাবাস। এই রাজ্যে রাজত্ব শুধু তার।
বৃষ্টি ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের ঘরে অনুভব করছে কেও মুখের উপর থেকে চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে কপালে ঠোট ছুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুখ ভর্তি চুমু খেলো কেও একজন। ঠোটে অন্য ঠোটের শীতল ছোয়া অনুভব করতেই জ্বমে পাথর হয়ে যায় সে। এই ছোয়াটা যে খুব পরিচিত তার।
কিছুক্ষন পর অনুভব করে পাশে কেও নেই। পিটপিট করে চোখ খোলে চার পাশটায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। পর্দা গুলো হালকা বাতাসে নরছে। হারিয়ে গেলো তার সেই পরিচিত ছোয়াটা। বৃষ্টি একটু কেদে বলে উঠে,
“” স্বপ্নে এসেও হারিয়ে গেলে কেনো? আরেকটু থাকলে কি হয়? এটা কি স্বপ্ন? নাকি তুমি সত্যিই এসেছো প্রিয়।

To be continue…..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০১

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__১

বৃষ্টির মাঝেও এখন বেড়ে উঠছে একটি নতুন প্রান। তার আর রাতের ভালোবাসার একটা অংশ। এর মাঝে সে আজ চলে যাচ্ছে স্বামির সংসার ছেরে। রাতকে ছেরে দিলেই জদি সব সমস্যার সমাধান হয় তাহলে মন্দ কি? এতো ডিপ্রশন এতো ঝামেলা তার আপন বোনের ব্লেকমেইল। বৃষ্টি রাতকে ছেরে না দিলে সুইসাইড করবে তার আপন বড় বোন বর্ষা। যাকে সে খুব বেশি ভালোবাসতো।
আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে, এই কথাটার উপর ভরসা করেও অনেকটা দিন পার করেছে সে। কিন্তু না এসবের কিছুই পরিবর্তন হলোনা। অবশেষে নিজের অনাগত বাচ্চাকে পেটে নিয়েই চলে যাচ্ছে রাতের সংসার ছেরে।

চার দিকটায় ভোরের আভাস ভেষে উঠেছে। ট্রেন চলছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনা জল। তার সামনের সিটেই বসে আছে একটা যুবক। পেপার দিয়ে ঢেকে আছে তার মুখটা। পেপারটা সামনে এমন ভাবে ধরে আছে তাতে সে কি পেপারটা পড়ছে নাকি নিজেকে ঢেকে রেখেছে তাও বুঝতে পারেনা বৃষ্টি। তার থেকে চোখ সরিয়ে পুনরায় বাইরের দিকে তাকালো বৃষ্টি। বেশ কিছুক্ষন পর একটা স্টেশানে এসে ট্রেন থামলো।
বৃষ্টি লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– এই যে ভাইয়া, আপনি কি এখানে নেমে যাবেন?
লোকটার মুখে কোনো উত্তর না পেয়ে আবার চুপ হয়ে গেলো বৃষ্টি। তখনই লোকটা একটা কাগজ এগিয়ে দিলো তার দিকে। তাতে ছোট্ট করে লিখা,
– না।
বৃষ্টি হুট করে বলে উঠে,
– আপনি কি কথা বলতে পারেন না?
আবারও একটা কাগজ এগিয়ে দিলো বৃষ্টির দিকে।
– গলায় একটু প্রব্লেম হয়েছিলো তো তাই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। এভাবে বলতে সমস্যা হচ্ছেনা আমার আপনি বলুন। আমার হ্যান্ড রাইটিং আবার দ্রুত আছে।
আর কিছু বললোনা বৃষ্টি, চুপচাপ বসে আছে। ছেলেটা আরেকটা কাগজে বলে উঠে,
– আপনার সাথে আর কাওকে দেখছিনা। কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
– জানিনা…(গম্ভির ভাবে উত্তর দিলো বৃষ্টি)
বৃষ্টি মুখে কথা বলছে আর ছেলেটা কাগজে।
– মানে?
– কিছুনা।
– আমাকে বলতে পারেন সমস্যা নেই।
যেতে যেতে এভাবেই বাকিটা পথ দুজনের মাঝে কথা হলো।
ট্রেন থেমে গেলো। নেমে গেলো দুজন। ছেলেটার গায়ে একটা চাদর মোড়ানো। মুখটাও চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। আজব লোকটার কি গরম লাগছে না? বৃষ্টি নেমে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– এতোটা পথ সঙ্গ দেওয়ার জন্য থ্যাংক্স।
– কোথায় যাবেন এখন?
– হয়ে যাবে একটা ব্যাবস্থা।
– আপনার ব্যাপারে যা শুনলাম তাতে আপনাকে তো হ্যাল্প করতেই পারি তাই না? আমার সাথে চলুন। যতদিন না একটা ব্যাবস্থা হচ্ছে আমার বাড়িতেই থাকবেন।
লোকটার কথায় একটু ঘাবড়ে যায় বৃষ্টি।
– তার দরকার নেই ভাইয়া থ্যাংক্স।
– ভয় পাবেন না। বাড়িতে বাবা মা আছে। আর আমি ওরকম বাজে ছেলে নই। আমি মাসে ২৮ দিনই থাকি বাইরে। বাড়িতে থাকা হয়না বললেই চলে। আর ওই বাড়িতে কোনো প্রব্লেম হবেনা আপনার।
– না ভাইয়া, আমি ব্যাবস্থা করে নিতে পারবো। সমস্যা নাই।
– দেখেন এই দুনিয়ায় কোথাও শুন্য হাতে এসে, একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে এটা বলা যতটা সহজ ঠিক ততোটাই কঠিন হলো ব্যাবস্থাটা করার। তাছারা আপনি একটা মেয়ে মানুষ। সে ক্ষেত্রে রিস্ক বেশি আপনারই। আর এখন কোথায় বা যাবেন। হয়তো এখানে তেমন কিছু চিনেন ই না। আমি আপনার ভালোর কথা চিন্তা করেই বন্ধু ভেবে বলছি। বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
বৃষ্টি এবার একটু রেগে বলে উঠে,
– আপনাকে বলছি আমার ভালোর কথা চিন্তা করতে? আপনি আপনার রাস্তা মাপুন তো ভাই।
– ওকে গেলাম আমি। আর এই নিন আমার নাম্বার কোনো প্রব্লম হলে, চোর ছিনতাই কারির কবলে পরলে অথবা অন্য কিছু ছিনতাই কারির কবলে পরলো ফোন দিয়েন বন্ধু হিসেবে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। গেলাম আমি।
লোকটা কিছু দুর যেতেই বৃষ্টি বলে উঠে,
– দাড়ান আমি যাবো।

– আচ্ছা একটা কথা বলবো?
– হুম।
– আপনি এভাবে মেয়ে মানুষের মতো মুখ ঢেকে রেখেছেন কেনো? নাকি গলার মতো মুখেও কোনো প্রব্লেম হয়েছে? এমন চাদর ছারা হাটলে সমস্যা কি?
– এভাবে যখন হাটছি সমস্যা তো অবস্যই আছে তাই না?
– আচ্ছা আপনিই কি ছিনতাই কারি বা ডাকাত দলের কেও?
চাদরের আড়ালেও যে ছেলেটা হেসে উঠলো তা বুঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।

লোকটা কলিং বেল বাজাতেই একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু আজব ব্যাপার হলো বৃষ্টিকে পাশে দেখেও মহিলাটা কোনো প্রশ্ন করলোনা লোকটাকে। দুজনকেই ঘরে নিয়ে গেলো।
একটু নাস্তা পানি খেয়ে মহিলাটার সাথে কথা বলছে বৃষ্টি।
– আমার ছেলেটা তোমার সম্পর্কে আগেই বলেছে। এমন বিপদে পরেছো আর যাওয়ারও কোনো জায়গা নেই। তাই আমি বললাম এখানে নিয়ে আসতে। কোনো একটা ব্যাবস্থা হওয়া অব্দি এখানেই থাকবে সমস্যা হবেনা তোমার। আর আমার ছেলেটা এই সকালে আসছে বিকেলে আবার চলে যাবে। আর তোমার আঙ্কেলও থাকে বাইরে সন্ধার পর বাসায় আসে। সো আমিও এখানে আমার এক সঙ্গি পেয়ে গেলাম। তোমার কোনো প্রব্লেম নেই তো?

সবার অচরণে কেমন সন্দেহ হচ্ছে বৃষ্টির। অপরিচিত কাওকে কি এভাবে নিমেশেই কেও আপন করে নিতে পারে? তাদের আচরনে মনে হচ্ছে তারা আমায় আগে থেকেই চেনে। আশে পাশে চোখ বুলাতেই দেওয়ালের একটা ফটোর উপর চোখ আটকে যায় বৃষ্টির।। একটা মেয়ের ছবি দেওয়ালে। কেমন চেনা চেনা লাগছে মেয়েটাকে। কেমন যেনো মনে হচ্ছে মেয়েটাকে আগে কোথাও দেখেছে সে। পাশ থেকে মহিলাটা বলে উঠে,
– আমার মেয়ে, বছর খানেক আগে বিয়ে হয়েছে। মাঝে মাঝে আসে। এখন শশুর বাড়িতেই আছে।

সারা বাড়িটা হেটে হেটে দেখলো বৃষ্টি। কিন্তু লোকটাকে আর চোখে পড়েনি তার। কেমন আজব প্রকৃতির লোক। মুখে তো কথা বলেই না তার উপর মুখটা দেখাতেও লজ্জা করে। আর এখন কোথাও গায়েবই হয়ে গেছে। দুপুরে খাবার খেয়ে বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। তার পাশে মহিলাটি এসে বসে।
– তুমি কিন্তু আমাকে আন্টি ডাকতে পারো। আসার পর দেখছি কেমন চুপচাপ হয়ে আছো। আমার ছেলের বন্ধু তুমি, আন্টিই ডাকবে ঠিক আছে?
– জ্বি আন্টি।
– আচ্ছা বলতো, সন্তান যখন খুব বেশি চাপে থাকে। তখন কেও জদি বলে মায়ের কাছে যাবিনা। তখন কি সন্তান সেই কথায় কান দেয়? সবার আগে মায়ের সাথেই বিষয়টা শেয়ার করে তাই না?
– জ্বি আন্টি মা ই এক মাত্র মানুষ যার সাথে মন খুলে সব শেয়ার করা যায়।
– আরো একজন আছে যার সাথে আরো মন খুলে কথা বলা, সব শেয়ার করা যায়। আর সে হলো তোমার স্বামি। আমার মতে তুমি যতই ডিপ্রেশনে থাকোনা কেনো তোমার স্বামীর সাথে বিষয়টা শেয়ার করা উচিৎ ছিলো।
– আসলে আন্টি জীবনে এমন এমন ডিপ্রশন থাকে তখন অনেকে কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক এটাও বুঝতে পারেনা। আমার মনে হয় এতে আরো ঝামেলা বারবে। আর আমায় হয়তো দু,একদিন খোজাখুজি করবে। এর পর সব আবার ঠিক হয়ে যাবে। সবাই সবার দিক থেকে হ্যাপি থাকবে।
– জীবনে এতোটা সেক্রিফাইজ করাও কিন্তু উচিৎ না। নিজের কথাও ভাবতে হয়।
কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো বৃষ্টি।

সন্ধার দিকে রুমের পাশ দিয়ে যেতেই খেয়াল করে লোকটা কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। লোকটাকে দেখার জন্য রুমের দরজার কাছে আসতেই দেখে ততোক্ষনে চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়েছে লোকটা আজব মানুষ একটা। বৃষ্টি হেটে চলে গেলো সেখান থেকে।
কিছুক্ষন পর খেয়াল করলো লোকটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মহিলাটা মানে তার মাকে কি যেনো বলছে।
আজব তো, লোকটা আজ সকালে বললো তার গলায় সমস্যা দেখে কথা বলতে কষ্ট হয় কিন্তু এখন দেখি মায়ের সাথে নরমালিই কথা বলছে সে। আড়ালে দাড়িয়ে সব দেখছে বৃষ্টি।
বৃষ্টির মাথায় ঘুরছে একটা প্রশ্ন।
” লোকটা কেনো এমন করছে? কে এই লোকটা? কি চায় বা কি করতে চাইছে সে? আচ্ছা এটা তার কোনো ফাদ নয় তো যে এই ফাদে এনে ফেলেছে আমায়?
মনের মাঝে একটা ভয় গ্রাস করে নেয় বৃষ্টির।

গায়ে চাদর পেচানো অবস্থায় একটা ব্যাগ নিয়ে হেটে বাইরে চলে যেচ্ছে লোকটা। পেছন থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– এই যে শুনছেন।
লোকটা থমকে গেলো। কাগজ কলম বের করে কি যেনো লিখছে। বৃষ্টি কিছু বলতে চেয়েও থমকে গেছে। হয়তো বলতে চেয়েছিলো, চিরেকুটের শব্দে কথা বলতে হবেনা। আমি জানি আপনি কথা বলতে পারেন। কিন্তু বলতে চেয়েও কিছুই বললো না বৃষ্টি। চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। লোকটা কাগজটা দিয়ে একটা প্লেন তৈরি করলো। আর তা ওভাবে অপর দিকে তাকিয়েই বৃষ্টির দিকে আস্তে করে ছেরে দেয়। কাগজটা আস্তে করে প্লেনের মতো এসে তার পায়ের কাছে থামলো। আর লোকটা চলে গেলো। বৃষ্টি কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে,
“” ভয় পাবেন না। আপনি এখানে পুরুপুরিই সেইফ।

বৃষ্টি তাকিয়ে আছে লোকটার চলে যাওয়ার দিকে।
লোকটাকে গেট অব্দি এগিয়ে দিলো তার মা। লোকটা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠোটের কোনে ছোট্ট একটা হাসি ফুটিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– দেখো কোনো অসুবিধে যেনো না হয়। আমার একটাই মাত্র প্রিয়সি।

To be continue…………

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

1

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
অন্তীম পর্ব

সন্ধ্যা সাতটায় আবিরের বার্থডে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।পুরো বাড়ী বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।আবিরের সব বন্ধু বান্ধব স্নেহা ও স্নেহার বাবা মা সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে।

আলমারির সব কাপড়চোপড় পুরো ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।আবির বিছানার একপাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আঁচল পা টিপে টিপে এক হাতে শাড়ীর আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো। পুরো বিছানা এমন এলোমেলো দেখে ভ্রু কুচকে আবিরকে জিজ্ঞাসা করলো
“কি ব্যাপার একটুপর গেস্টরা সব চলে আসবে ঘরের এমন অবস্থা করে রেখেছেন কেনো?”
আবির আঁচলকে দেখে একটা লম্বাশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে উঠে আঁচলের এক হাত চেপে ধরে বলে
“উফফ এতোক্ষণে আসার সময় হলো তোমার।দেখো এক ঘন্টা যাবৎ ট্রায় করছি কিন্তু কোন শার্ট পরবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। একে তো পুরো আলমারি তোমার শাড়ীতে ভরে আছে”
আঁচল ভ্রু কুচকে বলে
“একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনার আলমারি আপনার জামা কাপড়ে ভর্তি শুধু শুধু আমার শাড়ীর দোষ দিচ্ছেন কেনো”
আবির মুখে ভেঙচি কেটে বলে
“তো আমি খুজে পাচ্ছি না কেনো তাহলে”

আঁচল এবার আলমারি থেকে একটা শপিংব্যাগ বের করে আবিরের হাতে দিয়ে বললো
“এখানে কিছু জিনিস আছে আশা করি আপনার পছন্দ হবে।”
এতোটুকু বলেই আঁচল ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আবির বিষ্ময় নিয়ে প্যাকেট টা খুললো। দেখলো তাতে একটা সাদা পাঞ্জাবি সাদা প্যান্ট,,নেভি ব্লু রঙের কোর্ট আর একটা ব্লু কালারের ঘড়ি আছে।আবির ওয়াশ রুমে চলে যায়।

পুরো বাড়ী ভর্তি মেহমান।ড্রয়িংরুমের চারদিকে ম্যাজিকলাইটিং করা হয়েছে।স্টেজের টেবিলে একটা বড় কেক রাখা আছে। টেবিলের চারপাশে অংসখ্য বেলুনের ছড়াছড়ি।আবির আর আঁচলকে সিড়ি দিয়ে একসাথে নামতে দেখে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
আবির সাদা পাঞ্জাবি সাদা প্যান্ট আর ব্লু কোট পরেছে। আর আঁচল একটা সাদা শাড়ি পরেছে যাতে ব্লু রঙের স্টোন বসানো। আঁচলের চুলগুলো সাইডে সিথি কাটা আর কানের পাশে একটা লাল গোলাপ গুজে দেওয়া।আঁচল ঠোঁটে লাল লিপ্সটিক আর চোখে গাঢ় কাজল দিয়েছে।

আবির নিচে নেমে স্টেজে গিয়ে দাড়াতেই স্নেহা এসে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বললো
“হ্যাপি বার্থডে বেইবি”
আবির স্নেহার দিকে তাকালো।স্নেহা একটা কালো গ্রাউন পরেছে। আর স্নিগ্ধ একটা কালো শার্ট কালো প্যান্ট পরেছে। আবির স্নেহাকে কিছু বললো না ঝাটকা মেরে ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। আবির গিয়ে টেবিলে কেকের সামনে দাড়ালো আর টেবিলের চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে মেহমান রা। আবিরের একপাশে স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে আর অন্য পাশে আবিরের মা দাঁড়িয়ে আছে। আবির কেক কেটে প্রথমে তার মা কে খাওয়ালো আবিরের মা ও আবিরকে কেক খাওয়ালো। আবির আরেকটা কেক কেটে স্নেহার দিকে এগিয়ে গেলো।স্নেহা মুচকি হেসে হা করতেই আবির স্নেহাকে টপকে আঁচলকে কেকটা খাইয়ে দিলো স্নেহা রেগে গেলো ভীষণ।কিন্তু নিজের রাগ দমিয়ে রাখলো। আঁচল স্নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।স্নেহার সহ্য হচ্ছে না আঁচলের এই হাসি।। স্নেহা ওখান থেকে সরে স্নিগ্ধর পাশে গিয়ে দাঁড়ায় স্নিগ্ধ হালকা কেশে আস্তে করে বলে উঠে
“কি ব্যাপার এমন রাগি লুকে আছো কেনো?”
স্নেহা নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বললো
“আবিরের হাবভাব একদম ভালো লাগছে না”
স্নিগ্ধ ভ্রু কুচকে বলে
“কেনো ও কি করেছে?”
স্নেহা স্নিগ্ধকে ফিসফিসিয়ে বলে
“আজকে ওর আঁচলকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা আর ও আমাকে ইগনোর করে আঁচলকে কেক খাওয়াচ্ছে। কোথাও তো কিছু গন্ডোগোল আছেই”
স্নিগ্ধ হালকা হেসে বলে
“মনে হয় আজই আঁচলের এই বাড়িতে শেষ দিন তো তাই ওর শেষ মূহুর্তটা আবির ওকে হাসি মুখে বিদায় দিতে চাচ্ছে। বায় দা ওয়ে তুমি যাও আবিরের পাশাপাশি থাকো ওকে চোখে চোখে রাখো। আর তোমাদের এনগেজমেন্ট এর কথাটা বলো”

জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হতেই স্নেহা আবিরের কাছে গিয়ে আবিরকে বললো
“আবির আজ আমাদের এনগেজমেন্ট হওয়ার কথা আর আমার মা বাবা ও এসে গেছে তুমি আঁচলকে ডিভোর্স দিবে আজই”
আবির রহস্যময় মুচকি হেসে বললো
“হ্যা অবশ্যই”
স্নেহা আবিরের একহাত শক্ত করে ধরলো। আবির গিয়ে ঘরের মাঝ বরাবর দাড়ালো চারদিকে অন্ধকার আবিরের মুখের উপর লাল নীল লাইটের আলো আসছে। আবিরের এক হাত চেপে ধরে দাড়িয়ে আছে স্নেহা আর দূরে দাড়িয়ে আছে আঁচল।আঁচল ওদের দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে ভাবছে
“ডিয়ার স্নেহু। যতো হাসি এখনই হেসে নাও একটুপর হয়তো তোমার এই হাসি থাকতে না ও পারে আর হয়তো একটুপর তোমার এই আনন্দের হাসি কান্নায় পরিণত হবে। আবিরের এমন শান্ত চেহারাই বলে দিচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাসে যেমন চারদিক নিরব থাকে আবিরও তেমন শান্ত আছে। আই নো মানুষটা তারজন্মদিনের দিন তার বন্ধু আর ভালোবাসার আসল চেহারা দেখতে পেয়েছে তার কষ্ট কতো খানি৷ আসলেই কিছু মানুষ বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা রাখে না আর কেউ ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যও নয়। বাট মিস্টার আবির এতোকিছুর পর আপনারও কিছু পাওনা থেকে যায় আর আপনার সব অপমানের জবাব আপনি পাবেন।”

আবির একটা মাইক হাতে নিয়ে স্টেজে দাড়ালো চারদিকে অন্ধকার শুধুমাত্র আবিরের মুখের উপর লাল নীল ম্যাজিক লাইট এসে পড়ছে। আবির মাইক মুখের সামনে নিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো

“হ্যালো এভরিওয়ান লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান। সবাইকে জানাই শুভ রাত্রি।আজ আমি আপনাদের সাথে আমার প্রেয়সি অর্থাৎ আমার ভবিষ্যত জীবনের জীবনসঙ্গীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো আর তার সাথে আমার জীবনের সেই মানুষটা যাকে আমি সবথেকে বেশী ঘৃণা করি ওই মানুষটাকে ও চিনিয়ে দিবো।।প্রথমেই আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো আমার তিন বছরের ভালোবাসার। যাকে আমি তিন বছর ধরে মনেপ্রাণে ভালোবেসেছিলাম এবং বিশ্বাস করেছিলাম।স্নেহা এখানে চলে এসো”
স্নেহা হাসতে হাসতে স্টেজে উঠে আবিরের পাশে দাড়ালো। সবাইকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাই বললো
আবির এবার মাইক টা মুখের কাছাকাছি নিয়ে বললো
“আঁচল তুমিও এখানে এসো”
আঁচল মুচকি হেসে স্টেজে উঠলো। সবার চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। কেমন ছেলে নিজের বউ আর গার্লফ্রেন্ডকে একসাথে ডাকছে।

আঁচল গিয়ে আবিরের পাশে দাড়ালো। আবির পকেট থেকে একটা ছোট্টো বক্স বের করলো। যেটাতে একটা ডায়মন্ডের আংটি দেখা যাচ্ছে। আবির আঁচলের সামনে হাটুগেড়ে বসে আঁচলকে উদ্দেশ্য করে বললো
“হবে কি আমার প্রেয়সি
হবে কি আমার সুখ দুঃখের সাথী। জানি আমি তোমার সাথে কারণে অকারণে অনেক বাজে ব্যাবহার করেছি। জেনে না জেনে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়। এখন সেই কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়ার নতুন সু্যোগ কি দিবে আমায়? তোমার জীবনটাকে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার সুযোগ কি আমায় দিবে?
ভালোবাসি
#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
ভীষণ ভালোবাসি।
ওই আকাশের যেমন কোনো সীমা নেই তেমন আমার ভালোবাসারও কোনো সীমা নেই সীমাহীন ভালোবাসি তোমাকে।”
আঁচল মুচকি হেসে হাতটা বাড়িয়ে দিলো আবির আঁচলের হাতে আংটি পরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আঁচলকে জড়িয়ে ধরলো।

স্নেহা আবিরের এমন কর্মকান্ড একদমই আশা করেনি।স্নেহা দৌড়ে আবিরের কাছে গিয়ে বলে
“বেইবি তুমি ঠিক আছো।আজ আমার আর তোমার এংগেজমেন্ট হওয়ার কথা ছিলো আর তুমি আঁচলকে আংটি পরালে?”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“হুম এংগেজমেন্ট হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু হয় নি তো। আমি তোমাকে যতোটা ভালোবাসতাম এখন তার থেকেও বেশী ঘৃণা করি”
স্নেহা আঁচলের সামনে গিয়ে বলে
“তুই নিশ্চই আবিরকে ভুল বুঝিয়েছিস আমার ব্যাপারে।তোর এতো বড় সাহস হয় কি করে হাউ ডেয়ার ইউ”
এতোটুকু বলেই স্নেহা আঁচলকে থাপ্পর মারতে হাত তুললো কিন্তু আবির স্নেহার হাত ধরে স্নেহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জোরে একটা থাপ্পর মারলো।

পুরোবাড়ী স্তব্ধ হয়ে আছে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।স্নেহার গালে আবিরের হাতের পাঁচটা আঙুলের চাপ বসে গেছে। স্নেহা নিজের গালে হাত রেখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আবিরকে বলে
“বেইবি তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছো তাও আবার ওই থার্ডক্লাস মেয়ের জন্য”
আবির স্নেহাকে ধমক দিয়ে বলে
“একদম আঁচলকে নিয়ে কোনো কথা বলবি না তুই। তুই নিজে থার্ডক্লাশ মেয়ে।”
স্নেহা আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“বেবি তুমি আমাকে তুই করে বলছো কেনো”
আবির স্নেহার গলা চেপে ধরে বলে
“তোর ভাগ্য ভালো যে তোকে তুই করে বলছি। যদি এর চেয়েও নিকৃষ্ট কোনো ভাষা থাকতো তবে তোকে সেটাই বলতাম। কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তোর যার কারণে তিনটা বছর তুই ভালোবাসার নাটক করেছিস”
স্নিগ্ধ দৌড়ে স্টেজে উঠে আবিরের থেকে স্নেহাকে ছাড়িয়ে নেয়। আবির স্নিগ্ধ কে বলে
“ওহ তোকে তো ভুলেই গেছিলাম।তোর মতো বন্ধু থাকতে শত্রুর কি প্রয়োজন। তোর মতো বিশ্বাসঘাতক মুখোশধারী বন্ধু থাকার চেয়ে হাজার টা প্রকাশ্য শত্রু থাকাও অনেক ভালো”
স্নিগ্ধ খানিকটা চমকে উঠে বলে
“কি যা তা বলছিস তুই আবির”
আবির নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে স্নিগ্ধকে নিজের শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কষে একটা থাপ্পর মারে। আর স্নিগ্ধকে কয়েকটা ফাইল দেখায়। যেখানে স্নিগ্ধ আর স্নেহার অনেকদিন হোটেলে রাত কাটানোর জন্য সিগনেচার করা।আবির স্নেহার হাতে একটা রিপোর্ট দেয়। স্নেহা সেটা দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে বলে
“এএটা ততুমি কোথায় পেয়েছো?”
স্নিগ্ধ স্নেহার হাত থেকে রিপোর্টটা নিয়ে অবাক হয়ে বলে
“স্নেহা ততুমি প্রেগন্যান্ট”
আবির স্নেহাকে থাপ্পর মেরে স্নিগ্ধকে বলে
“হ্যা স্নেহা প্রেগন্যান্ট। আর ওই অনাগত সন্তানের বাবা তুই”
স্নেহা ভয় পেয়ে বলে
“ততুমি এসব ককোথায় পেয়েছো”
আবির রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে”গতকাল রাতে আমার কাছে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। জানিনা কে ছিলো সে কিন্তু এতোটুকু জানি যে সে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলো তারজন্যই হয়তো আমি ঠিক আর ভুলের পার্থক্য টা বুঝতে পেরেছি আর মুখোশধারী বন্ধু আর ভালোবাসার আসল রুপ দেখতে পেয়েছি।গতকাল রাতে আননোন নাম্বারের মানুষটা আমাকে তোরা যে হোটেলে ছিলি ওই হোটেলের ডিটেইলস আর তোদের রুম নাম্বারটা বলে এটাই বলেছিলো যেনো আমি ওই ঠিকানায় খোজ নিই। এতো রাতে হোটেলের সিকিউরিটিদের টাকা দিয়ে ভেতরে যেতে পারলেও ওখানের ম্যানেজার আমাকে ডুকতে দিচ্ছিলো না পরে ভিজিটিং কার্ড দেখানোর পর সব তথ্য দিয়েছে তোদের। আর সাথে এই প্রমানগুলোও। আজ সকালে বেরিয়েছিলাম স্নেহার মুখ থেকে সব সত্য জানবো তাই কিন্তু ওর বাসার গেইটে যেতেই ওর দারোয়ান বললো ও একটু আগে বেরিয়েছে। আমি কিছু না বলেই স্নেহাকে ফলো করতে লাগিলাম।ওর গাড়ি হসপিটালের সামনে গিয়ে দাড়ালো আর ওর আর ডক্টরের মাঝে অনেকক্ষণ কথাবার্তা হয়।স্নেহা বেরিয়ে যাওয়ার পরই আমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি স্নেহা কেনো এসেছিলো ওনি প্রথমে না বলতে চাইলেও পরে বললেন স্নেহা প্রেগন্যান্ট ওর বাচ্চাটা ও নষ্ট করতে চায় তারজন্যই ওখানে গিয়েছিলো। আমি ডক্টরের থেকে অনেক অনুরোধ করে এই প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট নিয়েছি।স্নেহা তুমি বড্ড ভুল করলে লোভ সব সময় ধ্বংস করে।টাকার লোভ করে আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করলে তোমরা।”
স্নেহার মা এসে স্নেহার সামনে দাঁড়ায়। স্নেহা তার মাকে মাম্মি বলে জড়িয়ে ধরতে নিলেই স্নেহার মা স্নেহাকে থাপ্পর মেরে বললো
“তোর মতো মেয়ে থাকার চেয়ে সন্তানহীন থাকলে সেটাই ভালো হতো। যে মেয়ের কারণে নিজেদের মান সম্মান বজায় থাকে না এমন মেয়ে মরে যাওয়া ভালো।তোর বাবার কি টাকার অভাব যার কারণে কারো অনুভুতির সাথে খেলা করবি তুই”
স্নেহা স্নিগ্ধকে জড়িয়ে ধরতে নিলে স্নিগ্ধ এসে স্নেহাকে থাপ্পর মেরে বলে
“ভুল করেছি আমরা কিন্তু সেই ভুলের শাস্তি বাচ্চাটা কেনো পাবে। তুই আমাকে এসে বলতে পারতি তাহলেই তো হতো কিন্তু তুই বাচ্চা নষ্ট করতে চেয়েছিলি কোন সাহসে তাও আবার আমাকে না জানিয়ে”
স্নেহা হাটু গেড়ে বসে কান্না করতে লাগলো আঁচল এসে স্নেহার কাধে হাত রেখে বললো
“ছোট্ট ছোট্ট ভুল থেকেই পাপ মহাপাপ হয়।ভুল মানুষ করে তাই ভুল গুলো সুধরে নিয়ে নিজের জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজাও নিজের অনাগত সন্তানের খেয়াল রাখো দেখবে জীবন সুন্দর হবে।মানুষের জীবনে টাকা সব না টাকা থাকলেই কেবল মানুষ সুখী হয় না সুখী হওয়ার জন্য ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকাটাই যথেষ্ট ”

স্নেহা ডুকরে কেঁদে আঁচলকে জড়িয়ে ধরে বললো
“ভুল করেছি আমি।আমি আবিরকে ঠকিয়েছি। আমি ভেবেছিলাম আবিরের টাকায় আমেরিকা গিয়ে সেটেল্ড হয়ে যাবো তাই স্নিগ্ধ যা যা বলেছে সব করেছি। কিন্তু এখন আমার পাশে কেও নেই স্নিগ্ধ আবির কেউ নেই আমি বড্ড একা”
আঁচল মুচকি হেসে স্নেহার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো
“কে বলেছে তোমার পাশে কেউ নেই। স্নিগ্ধকে তুমি ভালোবাসো ওর থেকে ক্ষমা চেয়ে নাও দেখবে ও তোমাকে সারাজীবন আগলে রাখবে।ক্ষমা একটি মহৎ গুণ।অপরাধীর অপরাধ যদি হয় পাহাড় সমান তবে ক্ষমাশীলের ক্ষমা হতে হবে পর্বত সমান”
স্নেহা গিয়ে সিগ্ধ আবিরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো।আবিরও ওকে ক্ষমা করে দিলো স্নিগ্ধ ওকে বুকে টেনে নিলো।

আকাশের চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে। আর চারদিকে তারা গুলো মিটমিট করছে। আঁচল খোলা চুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কারো গরম নিশ্বাস এসে পড়ছে আঁচলের ঘাড়ে আঁচল কেপে কেপে উঠছে।মানুষটা আঁচলের পেটে আলতো করে হাত রাখলো আঁচলের সারা শরীর শীতল হয়ে আসছে।মানুষটা আঁচলকে বললো
“উমম ঘুম পাচ্ছে ভীষণ ঘুমাবো চলো”
আঁচল কপাল ভাজ করে বলে
“ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমান আমার কাছে এসেছেন কেনো কি চাই?”
আবির আঁচলকে আরো একটু চেপে ধরে বললো
“আদর চাই”
আঁচল আবিরের পেটে গুতো মেরে বলে
“অসভ্য”
আবির মুচকি হেসে বলে
“অসভ্য বাট সেটাও নিজের বউয়ের জন্য হুহ”
আঁচল মুচকি হেসে আবিরের দিকে ঘুরে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে
“ভালোবাসি”
আবির আঁচলকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
“#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি।
ভীষণ ভালোবাসি এই ভালোবাসাটা আজীবন থাকবে।”
আঁচল মুচকি হাসে
আবির আঁচলকে জিজ্ঞেস করে
“আচ্ছা স্নেহার এমন রুপ দেখেও তোমার কাছে কোনো রকম কোনো অদ্ভুত রিয়েক্ট দেখি নি কেনো ব্যাপারটা কি তুমি আগে থেকেই জানতে?”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“কিছু কথা অজানা থাকাই ভালো”
আবির আর কিছু না বলে আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।
শুরু হয় আরো একটা নতুন ভালোবাসার সূচনা””

সমাপ্ত

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০৮

0

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
অষ্টম পর্ব

রাত এগারোটা পঞ্চান্ন মিনিটে আঁচল পা টিপে টিপে ঘরে গেলো।দেখলো আবির গভীরে ঘুমে মগ্ন।আঁচল একটা মেরুন রঙের শাড়ী পরেছে যাতে গোল্ডেন স্টোন বসানো একটা গোল্ডেন রঙের থ্রী কোয়াটার হাতার ব্লাউজ পরেছে।গলায় একটা ছোট্টো স্বর্ণের লকেট পরা যেটাতে “A” লিখা।আঁচলের লম্বাচুলগুলো সাইডে সিথি কাটা খোলা চুলের একপাশে একটা তাজা গোলাপ লাগানো। ঠোঁটে মেরুন রঙের লিপস্টিক আর চোখে গাঢ় কাজল।আঁচল ধীরে পায়ে একহাতে একটা বেলুন আর অন্যহাতে একটা আলপিন নিয়ে এগিয়ে গেলো আবিরের দিকে।আবিরের কাছে গিয়ে আঁচল নিচু হয়ে বসলো আবিরের পাশে।আঁচলের চুলগুলো আবিরের মুখের ওপর গিয়ে পড়লো আঁচল তা আলতো হাতে সরিয়ে আবিরকে ফিসফিস করে ডাকলো
“আবির উঠুন। এই আবির”
আবির নড়ে চড়ে পাশ ফিরে শুড়ে পড়লো।আঁচল এবার আরেকটু জোরে ডাকলো
“এই আবির উঠুন”
আবির পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই আঁচল হাতে থাকা আলপিনটি দিয়ে বেলুন টা ফাটিয়ে দিয়ে বলে।
“শুভ জন্মদিন বরবাবু”
আবির খানিকটা চমকে উঠে। একহাতে চোখ মুছে উঠে বসে বলে “কি করছো তুমি”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“শুভ জন্মদিন বরবাবু। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা”
আবির ভ্রু কুচকে বলে
“এতো রাতে ঘুম ভাঙিয়ে বার্থডে উইশ”
আঁচল আবিরের হাতে একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবি দিয়ে বলে
“ওয়াশরুমে গিয়ে ৫ মিনিটের ভেতরে ফ্রেশ হয়ে আসুন যান”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“এই মাঝরাতে ফ্রেশ হবো কেনো”
আঁচল বিরক্তিমাখা কন্ঠে বললো
“আরে যান না”
বলেই আবিরকে টেনে টুনে ওয়াশরুমের ভেতরে নিয়ে গেলো।আবিরকে ভেতরে রেখে আঁচল বেরিয়ে গেলো।আর বিছানায় বসে আবিরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো

কিছুক্ষণ পর আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। আবিরের পরনে একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা রঙের পায়জামা। চুলগুলো এলোমেলো ভাবে কপালের অর্ধেক ঢেকে পড়ে আছে। আবির গিয়ে আঁচলের সামনে দাড়ালো আর বললো
“এতো রাতে কি শুরু করেছো তুমি?”
আঁচল মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে বললো
“পারফেক্ট এবার চলুন”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কোথায় যাবো?”
আঁচল আবিরের কপালে পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো আরেকটু এলোমেলো করে দিয়ে বলে
“উফফ এতো প্রশ্ন করেন কেনো আপনি?আমার সাথে আসুন”

আঁচল পা টিপে টিপে বাড়ী থেকে বের হয় আঁচলের পেছন পেছন আবিরও বের হয়।মেইন গেইট থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠেই দুজনে একটা লম্বা নিশ্বাস ছাড়ে।আঁচল আবিরের পাশে গিয়ে আবিরের এক হাত জড়িয়ে ধরে আবির ভ্রু কুচকায় কিন্তু কিছু বলে না।

উদ্দেশ্যহীন ভাবে দুজনে হাটতে থাকে।আঁচলের মুখে মুচকি হাসি। আকাশ ভরা তারা তার মাঝে একটা চাঁদ।চাঁদের আলো এসে পড়ছে আঁচলের মুখে।আঁচলের চুলগুলো মুখের উপর এসে পড়ছ।ভীষণ সুন্দর লাগছে।আবির এক হাত দিয়ে আঁচলের চুলগুলো সরিয়ে দিলো। রাস্তার মাঝে আঁচল একটা দোকান দেখে লাফিয়ে উঠে বলে
“বরবাবু ওই যে ওই দোকানটা খোলা”
আবির ভ্রু কুচকে বলে
“দোকান খোলা তো আমি কি করবো?”
আঁচল মুখে ভেঙচি কেটে বলে
“আইস্ক্রিম নিয়ে আসুন না”
আবির হালকা কেশে বলে
“এতো রাতে আইস্ক্রিম খেলে সকালে জ্বর উঠবে ঠান্ডা লেগে যাবে আইস্ক্রিম খাওয়া চলবে না”
আঁচল চোখ রাঙিয়ে বলে
“আইস্ক্রিম নিয়ে না আসলে আমি বাড়ী যাবো না এখানেই এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো”
আবির কপাল ভাজ করে বলে ওঠে
“এতো রাতে রাস্তার মধ্যে আইস্ক্রিম খাবে নাকি? আইস্ক্রিম কিনে বাড়ি যেতে যেতে তো আইস্ক্রিম গলে যাবে”
আঁচল মুখে এসে পড়া চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে বলে
“হুম রাস্তায় হাটতে হাটতে আইস্ক্রিম খাবো।যান না নিয়ে আসুন”
আবির ভ্রু কুচকে বলে
“তুমি কি জানো রাত বারোটার পর রাস্তাঘাটে অতীপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়?”
আঁচল আবিরের কথা কে পাত্তা না দিয়ে বলে
“তো আমি কি করবো”
আবির ফিসফিসিয়ে বললো
“দেখো আইস্ক্রিমের রঙ সাদা আর আত্নারাও কাপড় পরে সাদা,অত্রীপ্ত আত্মারা যদি আইস্ক্রিম দেখে নেয় তো কি হবে বুঝতে পারছো”
আঁচল লাফিয়ে ওঠে বলে
“সত্যি?”
আবির ভ্রু কুচকে বলে
“এতো খুশি হচ্ছেন কেনো আপনি?”
আঁচল আবিরের এক হাত ধরে বলে
“আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ভুত,প্রেতাত্মা এগুলোর সাথে মিট করার কিন্তু বাসা থেকে তো কোনোদিন রাতের বেলা বের হওয়ার সুযোগই পাই নি। তাই আজ আপনার জন্য দেখা হবে ওদের সাথে ওয়াও ব্যাপার টা ভীষণ ইন্ট্রেস্টিং”
আবির কপাল ভাজ করে বলে
“আমার জন্য কেনো দেখা হবে?”
আঁচল দাঁত কেলিয়ে বলে
“আপনি এখন আমাকে আইস্ক্রিম কিনে দিবেন আর যদি না কিনে দেন তাহলে ভুতদের সাথেও দেখা হবে না আর আমি বাড়িও যাবো না”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“আরে এটা হেলথ এর জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবার।চলো আইস্ক্রিম পার্লার থেকে আইস্ক্রিম খাবে”
আঁচল ঠোঁট উল্টে বললো
“না আমি এখান থেকেই খাবো।যান নিয়ে আসুন”
আবির আর কোনো উপায় না পেয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আইস্ক্রিম নিয়ে এলো। দুজনে আইস্ক্রিম খেতে খেতে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে গন্তব্যহীন কোনো অজানা জায়গায়।

আঁচল আর আবির একটা নদীর পাড়ে।চারদিক জনমানবহীন।
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“আমরা এখানে এসেছি কেনো?”
আঁচল মুচকি হেসে বললো
“সামনে চলুন”

নদীর তীরে দুটো নৌকা বাধাঁনো ছিলো।আঁচল গিয়ে নৌকায় উঠলো আঁচলের পেছনে আবিরও উঠলো।ওরা ওঠার সাথে সাথেই মাঝি নৌকা চালাতে শুরু করলো।আবির ভালোকরে লক্ষ করলো পুরো নৌকা ফুল আর বেলুন দিয়ে ডেকোরেশন করানো কিছু কিছু বেলুন ফেটেও গেছে দেখা যাচ্ছে নৌকার চারদিকে মোমবাতি জ্বালানো।মোমবাতির আলোয় আলোকিত নৌকা। গাদা ফুলের মাঝে গোলাপ দিয়ে শুভ জন্মদিন লিখা।আঁচল আবিরের হাত দুটো শক্ত করে ধরে বললো
“শুভ জন্মদিন” আবির বেশ খানিকটা অবাক হয়।।আঁচল আবার বলে
“জানেন আজকের দিনটা আমার কাছে ভীষণ স্পেশাল। আজকে আমার জীবনসঙ্গী আই মিন আপনার জন্মদিন। আমি লাইফে রিলেশন প্রেম ভালোবাসা এগুলো বিশ্বাস করতাম না কারণ আজ প্রেম করবে দুইদিন পর ছেড়ে চলে যাবে।শুধু শুধু কি দরকার নিজের সুন্দর গোছালো জীবনকে আগোছালো করার বলুন। আমার সব বান্ধবীরা প্রেম করতো বয়ফ্রেন্ডর সাথে মিট করতো আরো কতো কি বয়ফ্রেন্ডের বার্থডে তে ফাইভস্টার হোটেলে পার্টি করতো কিন্তু আমি চাইতাম বিয়ের পর হাজবেন্ডের সাথে প্রেম করবো তখন আর হারিয়ে ফেলার কোনো ভয় থাকতো না কেউ কাউকে ছেড়ে যেতো না।কিন্তু কপাল আমার কালকে চলে যাবো আপনার বাড়ী ও আপনার জীবন থেকে”

এতোটুকু বলেই আঁচল ছোটো একটা নিশ্বাস নিয়ে একটা ছোট্ট কেক নিয়ে আসে। আবিরের সামনে রেখে আবিরের হাতে একটা চুরি দিয়ে বলে
“কেক কাটুন”
আবির অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। খোলা আকাশের নিচে নদীর মাঝখানে নিজের বার্থডে সেলিব্রেট করা হয় নি এর আগে। স্নেহার সাথেও আবির এর আগে অনেকবার বার্থডে সেলিব্রেট করেছে বাট সেটা ফাইভস্টার হোটেলে। এভাবে কখনো সে এতো বড় সারপ্রাইজ পায়নি।আবিরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁচল মুচকি হেসে বললো
“কি হলো কেক টা কাটুন মোমবাতি গুলো শেষ হয়ে আসছে একটু পর নিভে যাবে”
আবির মুচকি হেসে কেক কাটলো।পুরো ব্যাপারটা আবিরের কাছে খুব ভালো লাগলো।মাঝরাতে রাস্তায় হাটতে হাটতে আইস্ক্রিম খাওয়া খোলা আকাশের নিচে আর মাঝনদীতে বার্থডে সেলিব্রেট করা সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটাই আবিরের কাছে সারপ্রাইজ ছিলো অনেক বড় সারপ্রাইজ।।

রাত প্রায় তিনটা বাজে
রাস্তার মাঝ দিয়ে হাটছিলো আঁচল ও আবির।আঁচল আবিরের এক হাত শক্ত করে ধরে আছে বাচ্চাদের মতো যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে সে। আঁচল আবিরের হাতে একটা গিফট বক্স দিলো।আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কি এটা?”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“নিজেই খুলে দেখে নিন”
আবির কিছু বললো না চুপ রইলো আঁচল আবিরের এক হাত ধরে বললো
“এখন খুলুন এটা দেখুন ভেতরে কি”

আঁচলের কথামতো আবির বক্সটা খোলে ভেতরে দেখে ছোট্ট একটা বক্স বক্সটা অনেক সুন্দর করে বাহিরে থেকে সাজানো।আবির ভ্রু কুচকে আঁচলের দিকে তাকিয়ে বলে
“কি এটা?”
আঁচল কপাল ভাজ করে বলে
“দেখতে পাচ্ছেন না এটা।চোখ কি বাসার আলমারি তে রেখে এসেছেন”
আবির চোখ রাঙিয়ে বলে
“দেখতেই পাচ্ছি বাট হোয়াই? এটা কেনো”
আঁচল মুচকি হেসে বললো
“আপনার জন্য বার্থডে গিফট।আমি তো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তাই এর চেয়ে ভালো গিফট দেওয়ার সামর্থ আমার নেই। বক্সটা খুলে দেখুন”
আবির বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বক্সটা খুলে বেশ অবাক হয়।কারণ বক্সের ভেতরে একটা ডায়মন্ডের আংটি যেটার উপর A লিখা। আবির আঁচলের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁচল আগের মতোই আনমনে হাটছে।আবির কিছু বললো না।

কিচ্ছুক্ষণ পরই আবিরের মোবাইলে কল আসে।আবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে।
আবির কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে
“আপনাকে চারদিক থেকে ঠকানো হচ্ছে। আপনার জীবনের অনেক বড় সত্য জানতে হলে এখনই হোটেল ব্রিটানিয়ার ৪১২ নাম্বার রুমের খোজ নিন।অনেক কিছু জানতে পারবেন”
আবির বিস্মিত হয়ে বলে
“হ্যালো কে বলছেন হ্যালো”
ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে
“আমি কে সেটা জানা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনার ভালোর জন্যই বলছি যদিও এর পেছনে আমার কোনো স্বার্থ নেই কথা দিচ্ছি আপনি আশাহত হবেন না আমার কথার উপর একটু বিশ্বাস রেখে ওই হোটেলে গিয়ে খোজ করুন।আপনার ভালো হবে কেউ আপনার ভালো চায় না”
ওপাশ থেকে লাইন কেটে যায়। আবির দুই থেকে তিনবার ওই নাম্বারে কল করার চেষ্টা করে কিন্তু মোবাইল সুইচ অপ করা।
আবির আঁচলের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁচলের কোনো রিয়েকশন নেই।।আবিরের মনের ভেতর সন্দেহ জাগে বিষয়টা কি কে এই লোক কেনো কল করেছে আরো নানা প্রশ্ন জাগে আবিরের মনে
আবির আঁচলকে বাসার গেইটের ভেতর পর্যন্ত পৌছে দিয়ে আঁচলকে বলে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে আবিরের কাজ আছে ও পরে আসবে।আঁচল ভেতরে চলে যায় আর আবির বাইক নিয়ে চলে যায় ওই হোটেলের উদ্দেশ্যে।

আঁচল ঘরে গিয়ে শাড়ী চেঞ্জ করে একটা থ্রী পিছ পরে নেয়। আঁচল বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসে।আঁচল কফির মগে চুমুক দিচ্ছে উন্মাদের মতো হাসছে আর বলছে
“আজকের এটাই আপনার জন্য আপনার জন্মদিনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ মিস্টার আবির।আজকে যা ঘটতে চলেছে আপনি তার জন্য একদমই প্রস্তুত নন। সব কিছুর হিসেব আপনাকে দিতে হবে তিলে তিলে। পাল্টা আঘাত দেওয়ার সময় এসে গেছে।এই থার্ডক্লাশ মেয়ের কাছে যে আপনাকে আসতেই হবে।”

আবির দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে হোটেলে গিয়ে পৌছায় কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় হোটেলের সিকিউরিটিরা। আবির কোনো ভাবে ওদের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ভেতরে যায়। রিসিপশনে একটা সুন্দরি মেয়ে বসে আছে।মেয়েটার চুল তেমন লম্বা না। গায়ে একটা কোট পরা আর গলায় টাই লাগানো। আবির ওখানে যাওয়ার সাথে সাথে মেয়েটা বলে
“আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি”
আবির হন্তদন্ত হয়ে বলে
“৪১২ নাম্বার রুমের”
আবিরকে কথার মাঝে থামিয়ে মেয়েটা বলে
“স্যার ৪১২ নাম্বার রুম তো বুক করা”
আবির ভ্রু কুচকে বলে
“কাইন্ডলি আমাকে কিছু ইমপমেশন দিতে পারবেন”
মেয়েটা আবিরের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
“সরি স্যার এটা আমাদের রুলস এর বাহিরে ”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“রুলস এর বাহিরে মানে?”
মেয়েটা আবিরকে বলে
“হোটেলের একজনের খোজ অন্য জনকে দেওয়াটা আমাদের রুলস এর বাহিরে।আপনি চলে যান এখান থেকে হোটেলের মালিককে ডাকার জন্য আমাকে বাধ্য করবেন না”
আবির হা হা করে হাসে আর পকেট থেকে আবিরের ভিজিটিং কার্ড বের করে মেয়েটাকে দেখায় মেয়েটা খানিকটা চমকে বলে
“স্যার আপনি।সসরি স্যার আমি আপনাকে চিনতে পারি নি ”
আবির মুচকি হেসে বলে
“দেখে তো মনে হচ্ছে কাজে নতুন জয়েন করেছেন”
মেয়েটা কাচুমাচু হয়ে বললো
“জ্বি স্যার”
আবির ভ্রু কুচকে বলে
“তো নতুন হলে আমাকে চিনেন কিভাবে?”
মেয়েটা মাথা নিচু করে বলে
“এর আগে যে কাজ করতো সে আমার বড় আপু ওর থেকেই শুনেছি এই হোটেলের মালিক সেজান চৌধুরীর বোনের একমাত্র ছেলে আপনি।সবাই আপনাকে অনেক ভয় পপায়”
আবির মুচকি হেসে বলে
“গুড এন্ড তোমার কাজ অনেক ভালো।আমাকে এখন ৪১২ নাম্বার রুমে কে আছে সেটার সব ইমপরমেশন দিন”

মেয়েটা কিছুক্ষণ অফিসের কিছু ফাইল ঘাটাঘাটি করে বললো
“ওখানে বিবাহিত দুজন স্বামী স্ত্রী থাকে”
আবির বললো
“ওহ”
আবির আবার কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞাস করলো
“যারা থাকে তাদের নামটা একটু বলো”
মেয়েটা বললো
“স্নেহা জাহান আর স্নিগ্ধ হোসেন”
আবিরের পায়ের মাটি সরে গেলো মেয়েটাকে বললো
“কি যা তা বলছো মাথা ঠিক আছে তোমার”
মেয়ে টা আবিরের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলল
“দেখুন ওনাদের দুজনেরই সিগনেচার দেওয়া আছে এখানে আর ওনারা গত নয় দিন ধরেই এই হোটেলে আছেন”
আবির সিগনেচার গুলো লক্ষ্য করলো একটা স্নেহার সিগনেচার “sneha Jahan” লিখা আর অন্যটা আবিরের বন্ধু স্নিগ্ধর সিগনেচার “snigdho hossen”

আবির মেয়েটাকে কিছু বল্লো না হোটেল থেকে বেরিয়ে বাইক নিয়ে বাড়ীতে চলে এলো।

আবির দেখলো আঁচল বিছানায় ঘুমাচ্ছে।আবির একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বারান্দায় রকিংচেয়ারে দুলছে আর নিজের মনে বলছে
“কেনো করলি তোরা এইরকম আমার বিশ্বাসের সাথে ছলনা করেছিস তোরা।স্নেহা তোমাকে তো আমি অনেক ভালোবাসতাম আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো না আর স্নিগ্ধ তোকে তো আমি নিজের বন্ধুর চেয়েও বেশী ভাবতাম তুই ও বেইমানি করলি।এর সাজা তোদের পেতেই হবে”

সত্য এটাই যে ঠকায় একদিন সেও ঠকে

চলবে__

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০৭

0

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
সপ্তম পর্ব

এখনো অন্ধকারের রেশ কাটে নি।চারদিকে ফজর আজানের শব্দে আঁচলের ঘুম ভাঙে।।ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে আর আঁচলের রাতের কথা মনে পড়ে।আঁচল তাকিয়ে দেখে আবিরে ওর পাশে নেই।আঁচল ছোট্টো একটা শ্বাস নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়। বারান্দায় এসে দেখে আবির ফ্লোরে বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। আঁচল আবিরকে ডাক দিতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে ডাক না দিয়ে আবার ঘরে চলে আসে। আঁচল আলমারি থেকে একটা থ্রী পিছ বের করে ওটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

আঁচল সাদার আর হলুদ একটা থ্রী পিছ পরেছে।মুখে কোনো সাজগোজ নেই মুখটা কেমন সাদামাটা লাগছে।চুলগুলো হাত খোপা করা।বিছানায় বসে ফোন ঘাটছে আঁচল।হঠাৎ আবিরের ফোন বেজে ওঠে।আঁচল আবিরের ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে “Jaan” দিয়ে সেইভ করা একটা নাম্বার থেকে কল আসে সেই সাথে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি ভেসে ওঠে মোবাইল স্ক্রিনে। আঁচল বুঝতে পারে মেয়েটা কে। আঁচল ফোন টা রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে স্নেহা বলে ওঠে
“কি ব্যাপার জান কল রিসিভ করতে এতো সময় লাগে?আর শোনো আঁচলকে তোমাদের বাড়ী থেকে বের করেছো? ওই মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে আর তো কয়েকটা দিনের ব্যাপার তুমি ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। তারপর আমি আর তুমি বিয়ে করে অনেক হ্যাপি থাকবো।”
স্নেহা এতোটুকু বলতেই আঁচল কল কেটে দেয় ওর আর সহ্য হচ্ছিলো না স্নেহার করা থা গুলো।আরো দুই তিনবার স্নেহা কল দেয় কিন্তু আঁচল ফোনটা আর ধরে নি।আঁচলের চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরে পড়ে।কিছুক্ষণ পর আবারো স্নেহার নাম্বার থেকে মেসেজ আসে
“বেইবি আমি আমার বাবা মা কে বলে দিয়েছি আমাদের বিয়ের কথা।ওনারা চান তোমার বার্থডের দিনই আমাদের এনগেজমেন্ট করে রাখতে আর তার কয়দিন পরেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে হবে।আর শোনো ঠিক সকাল ১০ টায় এশিয়ান রেস্টুরেন্টে চলে এসো আমি অপেক্ষা করবো”
আঁচল একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে চিন্তা করে আজকে আঁচলও ওই রেস্টুরেন্টে যাবে আর আজই ওদের মুখোমুখি হবে।

প্রতিদিনের নিয়ম মতো আবিরের ঘুম ভাঙে আবির নিজেকে বারান্দায় দেখে অবাক হয়।আবিরের রাতের কথা মনে পড়লে আবির নিজে নিজে বলে
“ইস আঁচলের সাথে রাগের মাথায় অনেক খারাপ ব্যাবহার করে ফেলেছি।জানিনা মেয়েটা কতোটা কষ্ট পেয়েছে।উফফ মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে।”

আবির ঘরে গিয়ে দেখে আঁচল বিছানায় বসে হেলান দিয়ে বই পড়ছে।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে চোখের কোণে পানি স্পষ্ট। আবির ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আঁচল এখনো আগের জায়গায় বসে বই পড়ছে।কোনো রিয়েকশন নেই ওর মধ্যে।অন্য সময় হলে তো এতোক্ষণে কথা বলে বলে পাগল করে মাথা খেয়ে পেলতো।

খাবার টেবিলে বসে আবির এবং আবিরের মা খাচ্ছে আর আঁচল খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। আবিরের মা আঁচলকে অনেকবার খেতে বললেও আঁচল বললো পরে খাবে ওর এখন খিদে নেই বলেই নিজের ঘরে চলে গেলো।ব্যাপারটা আবির বুঝতে পারলেও আবিরের মা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।আবির নিজের ঘরে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিতেই স্নেহার মেসেজ টা চোখে পড়ে আবিরের

সকাল নয়টা পয়তাল্লিশ মিনিট।আবিরে রেডি হচ্ছে স্নেহার সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য।এর মধ্যে আবির আঁচলের সাথে কথা বলতে চাইলেও আঁচল তার সাধ্যমতো আবিরকে এড়িয়ে চলে।আবির একটা সাদা টি-শার্ট আর একটা কালো প্যান্ট পরে নেয়।বাম হাতে কালো ওকটা ব্যাসলেট পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। আবির বেরিয়ে যেতে আঁচলও আবিরের পেছন পেছন একটা কালো বোরকা আর কালো নিকাব পরে নেয়।চোখে একটা চশমা আর হাতে হাত মোজা পরে।আঁচলকে একদমই চেনা যাচ্ছে না।

আঁচল আবিরকে ফলো করে আবিরের পেছন পেছন একটা রিক্সা নিয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে যায়। আবির রেস্টুরেন্টের ভেতর প্রবেশ করে।আঁচলও প্রবেশ করে চারদিক টা আঁচল ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেয়।কিছুক্ষণ পর আঁচল আবিরকে দেখতে পায় আবির আর স্নেহা একই টেবিলে বসেছে।ওই টেবিলের পেছনে একটা খালি টেবিল ছিলো আঁচল গিয়ে ওখানে বসে খাবার অর্ডার করে আর খুব মনোযোগে দিয়ে আবির স্নেহার কথা শুনতে থাকে।

স্নেহা আবিরের হাত ধরে বলে
“বেবি আমরা কবে বিয়ে করবো”
আবির হালকা কাশি দিয়ে বলে
“হুমম খুব তাড়াতাড়ি”
স্নেহা আবিরকে বলে
“আবির আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কি?”
স্নেহা বললো
“আগামীকাল তো তোমার বার্থডে তো সেই বার্থডে অনুষ্ঠানে তুমি আঁচলকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে আর আমাদের এনগেজমেন্ট টাও করে রাখবে।”
আবির বলে
“কিন্তু”
আবিরের কথার মাঝে থামিয়ে স্নেহা বলে
“কোনো কিন্তু না।তুমি তো জানোই আমার মামা একজন উকিল।মামার সাথে আমার কথা বলা হয়ে গেছে তোমাদের ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবে উনি।তুমি আঁচলকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে সিম্পল”

আবির আর স্নেহা টুকটাক কথা বলে হালকা খাবার খেয়ে আবির উঠে চলে যায়।আঁচল ভাবলো স্নেহার মুখোমুখি দাঁড়াবে।আঁচল উঠতেই খেয়াল করে আড়াল থেকে একজন এসে স্নেহার সামনে বসে।আঁচল খানিকটা অবাক হয়। আঁচল ওদের কথোপকথন শুনে তো মহা অবাক।
স্নেহা সিন্ধকে বলে
“প্লান মতো কাজ হচ্ছে। ওই থার্ডক্লাস আবিরকে আরো ইমোশনাল বানিয়ে দিতে হবে।তাহলেই আমরা আমাদের আসল উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবো”
স্নিগ্ধ স্নেহার হাত টা ধরে বাঁকা হেসে বলে
“ইয়াহ সুইটহার্ট।আবির বুঝতেও পারবে না যে আমরা ওর সাথে কতো বড় খেলা খেলছি।তুমি আবিরের সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নাও।তারপর আমরা আমেরিকা গিয়ে সেটেল্ড হয়ে যাবো আর ওই আবির কিচ্ছু টের পাবে না”
স্নেহা কপাল ভাজ করে বললো
“আবির তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।তিন বছরে ওকে যতোটুকু চিনেছি ও সত্যটা জানলে একদমই ছেড়ে দেবে না”
স্নিগ্ধ হেসে বলল
“হুমম প্রয়োজনে আবিরকে খুন করে ফেলবো।না থাকবে বাঁশ তো না বাজবে বাঁশি”

আঁচল রিক্সায় করে বাড়ি ফিরছে।বাড়িতে ঢোকার আগেই বোরকাটা খুলে একটা শপিংব্যাগের মধ্যে নিয়ে নিলো। বাড়ীর দরজা খোলা ছিলো তাই কারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় নি আঁচলকে।

আঁচল নিজের ঘরে প্রবেশ করলো।আবির বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।আঁচল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই আবির বলে উঠলো
“কোথায় গিয়েছিলে”
আঁচল কোনো জবাব দিলো না আবির আবার জিজ্ঞাস করে
“কোথায় গিয়েছিলে এই ভরদুপুর বেলা”
আঁচল আবিরের দিকে একবার বলে
“একটা ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম”
আবির জিজ্ঞাস করে
“কেনো গিয়েছিলে?”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে”
আবির রেগে বলে
“ভালোয় ভালোয় বলছি কোথায় গিয়েছিলে আর কেনো গিয়েছিলে বলো”
আঁচল রহস্যময় হাসি হেসে বললো
“জেনে কি করবেন বলুন”
আবির বিছানা থেকে উঠে এসে আঁচলের সামনে দাঁড়িয়ে আঁচলের চোখে চোখ রেখে রাগী ভাবে বলে
“তুমি আমাদের বাড়ীর বউ আর তুমি আমাদের বাড়ীর সম্মান তাই কোথায় গিয়েছিলে কেনো গিয়েছিলে বলো। তোমার কোনো ক্ষতি হলে সম্মানটাও আমাদের বাড়ীরই নষ্ট হবে”
আঁচল আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“আমার যেখানে ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছি তাতে আপনার কি? কে আপনি? আমি আপনাকে কেনো কৈফিয়ত দিবো?হু আর ইউ মিস্টার আবির আহমেদ?হু আর ইউ?”
আবির আঁচলের হাত দুটো চেপে ধরে বলে
“আমি তোমার হাজবেন্ড ওকে”
আঁচল তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলে
“হাজবেন্ড সেটা আর তো মাত্র একটা দিনের জন্য আর আপনার মতো মানুষ কোনো ভাবেই কারো হাজবেন্ড হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।”
এতোটুকু বলেই আঁচল ওয়াশরুমে চলে যায় আর আবির ধপ করে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর আঁচল একটা খয়েরী রঙের শাড়ী পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।আঁচল বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে আবির ঘরে নেই।আঁচল গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রোজকার মতোই হালকা কাজল আর লিপস্টিক পরে নেয়।ড্রয়িংরুম থেকে কারো খুব জোরে অট্টহাসির আওয়াজ ভেসে আসছে আঁচলের কানে।আঁচল মাথায় একটা ঘোমটা টেনে নিজের ঘর থেকে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ায়।আঁচল ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখে আবির ও তার এক ফ্রেন্ড সোফায় বসে হাসছে।আঁচলকে দেখে আবির বলে
“তিয়াশ এটা তোর ভাবি আঁচল। আর আঁচল এটা আমার বন্ধু তিয়াশ”
তিয়াশ আঁচলকে দেখে লম্বা একটা সালাম দিলো
“আসসালামু আকাইকুম ভাবি।”
আঁচল সালামের উত্তর নিলো
“ওয়ালাইকুম আসসালাম”
তিয়াশ আবিরকে বললো
“কি মামু আমাদের রেখে
একা একা বিয়ে করে নিলা।
বলি ভাবি আপনার ছোটো বোন আছে লাইন মারার মতো?”
তিয়াশের কথায় আবির আর আঁচল হাসে আবির তিয়াশকে বলে
“তোমার একটা গার্লফ্রেন্ড সামলাইতেই বারোটা বেজে যায় এখন আবার আমার সালি খুজো”
আবির আর তিয়াশের কথার মাঝে পেছন থেকে স্নিগ্ধ এলো।তিয়াশ স্নিগ্ধকে বললো
“কিরে শালা এতোক্ষনে তোর আসার সময় হলো”
স্নিগ্ধ বলে
“আরে মামু রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো”
স্নিগ্ধর কন্ঠটা আঁচলের কাছে বেশ পরিচিত মনে হয় আঁচল ঘুরে তাকায়।আঁচল স্নিগ্ধকে দেখে অনেক বড় একটা শক খায়। আঁচল চিনতে পারে স্নেহার সাথে ছেলেটাই তো এটা যে আবিরকে মারার প্লান করছিলো।স্নিগ্ধ গিয়ে আবিরের পাশে বসে আবির স্নিগ্ধকে বলে
“দোস্ত তোর ভাবি আঁচল।আর আঁচল এইটা আমার বেস্টফ্রেন্ড স্নিগ্ধ”
আবিরের কথায় স্নিগ্ধ বলে
“দোস্ত মাইয়া তো পুরাই জোস” বলেই স্নিগ্ধ আঁচলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করার জন্য
“হাই আঁচল আমি স্নিগ্ধ”
স্নিগ্ধর কথায় আঁচল হাত বাড়িয়ে না দিয়ে সালাম দেয়
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া”
আবির আঁচলকে বলে
“আঁচল যাও তুমি ওদের জন্য নাস্তা রেডি করো”
আঁচল ওখান থেকে চলে যায়।

রাত ১১ টা ত্রিশ মিনিট আঁচল বারান্দায় বসে আছে।আর নিজের মনে বলছে
“স্নিগ্ধ বন্ধুত্বের সাথে এতো বড় বেইমানি করছে। নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে খুন করার প্লানিং করছে।আর ওই স্নেহা নিজের ভালোবাসার সাথে এতোবড় বেইমানি করছে।ওদের মনুষ্যত্ব বলতে কি কিছুই নেই।ওদের মুখোশ আমি সবার সামনে টেনে খুলবো কাল কিন্তু কিন্তু মিস্টার আবির আহমেদ আপনাকেও যে শাস্তি পেতে হবে,ভয়ানয় শাস্তি। আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা আঘাতের শাস্তি আপনাকে পেতে হবে।কিন্তু তার আগে ওই স্নেহার আসল রুপ আপনার সামনে তুলে ধরি। আপনাকে আমি ভেঙে গুড়িয়ে আবার নিজের মতো করে তৈরি করবো। আপনার বলা প্রত্যেকটা কথার হিসেব আপনাকে অক্ষরে অক্ষরে ফিরিয়ে দেবো।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস্টার আবির আহমেদ।আপনি এতো বড় ভুল করেছেন তার শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে””

চলবে_
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০৬

0

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
ষষ্ঠ পর্ব

সূর্যটা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ছে। আকাশে সাত রঙের রংধনুর রশ্মি দেখা যাচ্ছে।চারদিক থেকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে।গাছগুলো এদিক ওদিক দোল খাচ্ছে।দূরের মসজিদ গুলো থেকে ভাসা ভাসা অস্পষ্ট মাগরিবের আজানের শব্দ কানে আসতেই আঁচল ওড়নাটা ঠিক করে মাথায় ঘোমটা দেয়।

ঘড়িতে সকাল দশটা কিংবা তার বেশী বাজে।মলিন হয়ে আছে কোনো এক সুন্দরী রমণীর মুখ। তার মন খারাপের কারণ হলো প্রায় নয়দিন বাবার বাড়ীতে হাসি ঠাট্টা ও বাবামায়ের আদরে থাকার পর আজ আবার তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ীতে।আঁচলের বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আঁচলের জন্য অপেক্ষা করছে।মেয়েকে শ্বশুর বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে উনি অফিসে যাবেন। আঁচলের মা তার মেয়ে আঁচলের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলেন
“মন খারাপ করিস না মা।এটা তো নিয়ম মেয়ে দের একদিন না একদিন তো বাবার বাড়ী ছেড়ে শ্বশুর বাড়ী যেতে হবে।এটা শুধু তোর ক্ষেত্রে না এটা সকল মেয়েদের ক্ষেত্রে”
আঁচল চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি ফেলে বললো
“আসছি”
আঁচলের মা করুণ স্বরে বললো
“কান্না জড়িত অবস্থায় বিদায় নিতে নেই এতে অমঙ্গল হয় রে মা”
আঁচল এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে হেসে বললো
“হুমম”

ঘাম মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছেন আঁচলের শাশুড়ী রাহেলা বেগম। আঁচলকে দেখে উনি মুচকি হাসলেন।আঁচলও মুচকি হেসে ধীরে পায়ে এসে শাশুড়ীকে সালাম করে হাল্কা গল্প করে ঘরে গেলো।

স্নেহা আবির বসে আছে পার্কে। স্নেহা আবির কে বললো
“তুমি কি আদোও আমাকে ভালোবাসো?”
স্নেহার এমন প্রশ্নে আবির খানিকটা চমকে বললো
“মানে?”
স্নেহা কড়া গলায় বললো
“যেটা জিজ্ঞাস করেছি সেটার উত্তর দাও”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না সেটা তো তুমি জানো”
স্নেহা হালকা হেসে বললো
“জানি। তুমি আমাকে ভালোবাসতে কিন্তু এখন বাসো না সিম্পল”
আবির অবাক চোখে বললো
“মানে?”
স্নেহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
“মানে টা খুবই সিম্পল।তুমি আমাকে নিজের স্বার্থ স্বিদ্ধির জন্য ব্যাবহার করেছো”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কি যা তা বলছো”
স্নেহা আবিরের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললো
“কেনো করলে বলো আমার সাথে এমন।বিয়ে যখন অন্যকাউকেই করবে তবে কেনো ভালোবাসলে। আর ভালোবাসা টা যখন মিথ্যা ছিলো তখন তিনবছর ধরে এমন নাটক না করলেও পারতে”

এইটুকু বলে স্নেহা থামলো। আবির কিছু বললো না স্নেহার দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো স্নেহা আবার বলতে শুরু করলো
“আবির তুমি আমার সাথে বেইমানি করেছো।প্রতারণা করেছো এর জন্য ক্ষমা তুমি কখনো পাবে না।তুমি একটা বেইমান।আর ভয় নেই মিস্টার আবির আমি আবার লন্ডনে ব্যাক করবো আর কখনো তোমার লাইফের চৌকাঠে পা ও রাখকবো না মরে গেলেও না”
আবির খানিকটা তোতলিয়ে বললো
“কককি যযা ততা ববললছো ততুমি”
স্নেহা হালকা হেসে বললো
“ডু ইউ নো মিস্টার আবির,আপনি দূর্বল হয়ে পড়েছেন ইয়েস আপনি আপনার ওয়াইফের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছেন,এতোটাই দূর্বল হয়েছেন যে তিনবছরের ভালোবাসাও আপনি ভুলে গেলেন”
স্নেহার কথাগুলো আবিরের মনে একএকটা যেনো কাটার মতো গেথে গেলো।আবির ওখান থেকে উঠে বাসায় চলে গেলো।আবির যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আড়াল থেকে স্নিগ্ধ বেরিয়ে এসে বললো
“উফফ সুইটহার্ট ফাটাফাটি acting করেছো।আমি নিজে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কথা বলে তোমাকে হিরোইন বানাবো”
স্নেহা মৃদু হেসে বললো
“উফফ বাদ দাও তো ফাজলামো। আমি কথাগুলো বলার সময় নিজের হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিলো ওই থার্ডক্লাস ছেলের ইমোশন দেখে।”
স্নিগ্ধ স্নেহাকে একহাতে জড়িয়ে বললো
“এই জন্যই তো তোমাকে এতো ভালোবাসি সুইটহার্ট। এবার আবিরের বুকের ভেতর উতাল পাতাল ঢেউ শুরু হবে”
স্নেহা স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো
“আমরা কবে বিয়ে করছি?”
স্নিগ্ধ স্নেহার দিকে তাকিয়ে বললো
“আগে তুমি ঠিকভাবে ওই আবিরের সব টাকাপয়সা আর সম্পত্তি হাতিয়ে নাও তারপর আমরা বিয়ে করবো”

আবির বারান্দায় ফ্লোরে বসে একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।চোখের কোনে পানি জমে আছে।আর নিজে নিজে বলছে
“আমি এতোটা নিচে কি করে নামতে পারলাম কি করে? আজ আমার নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে ছিহ। আমি কয়েকদিনের উড়ে এসে জুড়ে বসা একটা মেয়ের প্রতি এতো দূর্বল হয়ে পড়লাম কি করে৷ কিছুদিনের একটা মেয়ের জন্য আমি আমার তিনবছরের ভালোবাসাকে এতো অবহেলা করছি। আমার নিজের ভালোবাসার সাথেই বেইমানি করছি।এখনতো আমার নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে।ওই মেয়ের উপর আমি এতোটা দূর্বল হয়ে পড়লাম কিভাবে। না আমাকে এতো দূর্বল হলে চলবে না। আমি এতোটা দূর্বল নই।আমি আবির আহমেদ আমি এতোটা দূর্বল নই।দূর্বল হওয়া আমার সাজে না। আমাকে স্টং থাকতে হবে। আমি কালই স্নেহাকে বিয়ের কথা বলবো। আমি নিজের ভালোবাসার সাথে এতো বড় বেইমানি করতে পারবো না।”

আবিরের কথার মাঝে ধীরে পায়ে বারান্দায় প্রবেশ করলো আঁচল। পরনে একটা সাদা আর নীলে মিশ্রণ করা শাড়ী চুল গুলো সাইডে সিথি কাটা খোলা। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক লাগানো।।আঁচল ধীরে পায়ে গিয়ে আবিরের সামনে দাড়ালো।বেশ খানিকটা অবাক হলো আঁচল কারণ আবিরের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে চুলগুলো অগোছালো কপালে পড়ে আছে। ফ্লোরে ৫/৬ টা সিগারেটের শেষ অংশ পড়ে আছে আর আবিরের হাতে একটা জলন্ত সিগারেট আবিরের নাক মুখ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।ধোঁয়া আঁচলের নাকে মুখে ডুকে আঁচল কাশি দিতে লাগলো।আবিরের হুস ফিরলো আঁচলের কাশির শব্দে।

আঁচল আবিরকে উদ্দেশ্য করে কাশতে কাশতে বললো
“স্মোকিং ক্যান্সারের কারণ সেটা জানেন তো?এটা হাত থেকে ফেলুন”
আবির কিছু বললো না শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।আঁচল আবার বললো
“প্রাক্তনের কথা চিন্তা করা বাদ দিন তো নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন আর এটা হাত থেকে ফেলুন।আর সমস্যা কি অসময়ে স্মোক করছেন কেনো?প্রব্লেম কি?”
আবির আবারো কোনো রিয়েক্ট করলো না আঁচল আবিরের হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে নিচে ফেলে দেয় আবিরের এতোক্ষণ জমে থাকা কষ্টগুলো রাগে পরিণত হয়ে যায়।

আবির আঁচলকে একটানে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আবির চিৎকার করে বলে
“কেনো এসেছো আমার লাইফে বলো?টাকা পয়সা লুট করতে তো সব নিয়ে যাও তবুও আমাকে মুক্তি দাও এই মিথ্যে বিয়ের নাটক থেকে আমাকে মুক্তি দাও
আমি মুক্তি চাইছি।”
আঁচলের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আবিরের কথা শুনে ছলছল চোখে আঁচল বললো
“কিভাবে মুক্তি দেবো বলুন?”
আবির আঁচলের হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো
“ডিভোর্স চাই আমি। তোমার থেকে মুক্তি চাই।চলে যাও আমাদের বাড়ী থেকে”
আঁচল হালকা হেসে বললো
“ওকে চলে যাবো বাট আই হ্যাভ এ কন্ডিশন”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কি সর্ত তোমার?”
আঁচল হালকা হেসে বললো
“একুশে জুন আপনার বার্থডে আর আজকে উন্নিশে জুন তাই এই দুইদিন আমি থাকতে চাই। প্রমিস আপনার জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হলেই শুধু আপনার বাড়ী ছেড়ে নয় আপনার জীবন ছেড়েও চলে যাবো”
আবির কিছু বল্লো না আঁচলেকে ছেড়ে আঁচলের থেকে দূরে গিয়ে দাড়ালো। আঁচল দৌড়ে ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে উপুড় হয়ে কান্না করতে লাগলো।আবির সব দেখছে কিন্তু ও রিয়েক্ট করছে না।

চলবে_

আকাশেরর চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০৫

0

#আকাশেরর_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
পঞ্চম পর্ব

প্রিন্সেস ডায়নার একটা বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে
“আমি যাকে ভালোবাসি
সে ছাড়া পুরো বিশ্ব
আমাকে ভালোবেসেছিলো”
ভালোবাসাটাই এমন যে আমরা যাকে ভালোবাসি সে আমাদের দিকে ফিরেও তাকায় না।তাই যাকে তুমি ভালোবাসো তাকে নয় যে তোমাকে ভালোবাসে তাকেই জীবনসঙ্গী হিসাবে বেচে নাও

দক্ষিণের জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস এসে আঁচলের শরীরকে শীতল করে দিচ্ছে।পরনে একটা সাদা থ্রী পিছ আর এলোমেলো চুলে পড়ার টেবিলে বসে ড্রয়িং করছে আঁচল। কারো ছবি আকাঁর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছে বার বার।তার চোখে মুখে বিরক্তির চাপ।ড্রয়িংখাতার কাগজ ছিড়ে ছিড়ে পুরো ঘর নোংরা করে ফেলেছে।শুধু এই টুকুতেই আঁচল শান্ত নয়।চারদিকে খাতা কলম বই রঙ পেন্সিল রাবার সব কিছু এলোমেলো করে রেখেছে সে।। আঁচলের চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি।এর মাঝে কেউ একজন এসে আলতো করে আঁচলের কাধে হাত রাখলো। স্পর্শ টা আঁচলের খুব চেনা।আঁচল দ্রুত গতিতে চেয়ার থেকে উঠে জড়িয়ে ধরলো তার বাবাকে। আঁচলের বাবাও মেয়েকে পরম আবেশে বুকে রেখে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন
“কেমন আছিস মা?”
আঁচল অভিমানি কন্ঠে তার বাবাকে বললো
“এই কয়দিনে তুমি আমাকে একবারও দেখতে যাওনি কেন?আমার কতো কষ্ট হয়েছিলো সবাইকে ছাড়া তুমি জানো”

আঁচলের বাবা মেয়ের এমন বাচ্চামো দেখে মেয়েকে শান্তনা সূচক বাক্য শুনিয়ে বলে
“হাতে অনেক কাজ তাই ব্যাস্ত ছিলামরে মা। তাই আর যাওয়া হয়নি ”
আঁচল এবার প্রচন্ড অভিযোগ করে বললো
“আমার চেয়ে কি তোমার কাজ আর ব্যাস্ততা বেশী। আর তুমিই নাহয় ব্যাস্ত ছিলে মানলাম। তো আম্মুকে পাঠালেই তো পারতে”
আঁচলের বাবা মেয়েকে বললেন
“সব মেয়েরই একদিন বাবার বাড়ী ছেড়ে স্বামীর বাড়ী যায়। এটাই নিয়ম।তাই বলে তো আর সব বাবা মা গিয়ে মেয়ের বাড়ীতে বসে থাকতে পারে না। হ্যা তোকে তো আমরা দেখতে যাবো মাঝে মাঝে।ওবাড়ির সবাই কেমন আছে মা”
আঁচল মুচকি হেসে বললো
“হুম সবাই ভালো আছে”

আঁচল আর তার বাবার কথার মাঝে আঁচলের মা আঁচলকে ডেকে বললেন
“আঁচল ছাদ থেকে গিয়ে জামাকাপড় গুলো নিয়ে আয় তো। আকাশে ঘন মেঘ। বৃষ্টি আসবে বোধয়”
আঁচল বাবার বুক থেকে সরে জোরে বললো
“এইতো নিয়ে আসছি আম্মু”
আঁচল এক দৌড়ে ছাদে চলে যায়। আঁচলের এমন বাচ্চাদের মতো লাফালাফি দৌড়াদৌড়ি দেখে তার বাবা মুচকি হাসেন।

ছাদে গিয়ে আঁচল দেখতে পায় আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে আছে।পাখিরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।বাতাসের গতি ধীরে ধীরে ক্রমশ বাড়ছে।গাছেরা হওয়ায় দুলছে একটা আরেকটার সাথে বারি খাচ্ছে।
আঁচল দেখতে পেলো ছাদের এককোণে একটা ছোট্টো গুটিশুটি মেরে দুটো পাখি দাড়িয়ে আছে। একটাকে অন্যটা ডানা দিয়ে কেমন আগলে নিচ্ছে। আঁচল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।পাখিরাও ভালোবাসা বোঝে শুধু মানুষ বোঝে না।আঁচলের ভাবনার মাঝেই আচমকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো আঁচল তাড়াতাড়ি কাকভেজা হওয়ার আগেই কাপড় গুলো নিয়ে ছাদ থেকে নেমে যায়।

চারদিকে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির কিছুটা ফোটা জানালা দিয়ে এসে পড়ছে আবিরের গায়ে। আবিরের চোখে মুখে বিরক্তির চাপ।হাতে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। কোনো কাজেই মন বসছে না আবিরের। সব কিছুর মাঝেও এই প্রথম আবিরের নিজেকে শূন্য মনে হচ্ছে। যেনো তার কোনো প্রিয় জিনিস হারিয়ে গেছে।কিন্তু কি সেটা আবির বুঝতে পারছে না। অনেকক্ষণ ধরে ফোনে কেউ কল করছে। কিন্তু আবিরের সেই দিকে কোনো হুস নেই। কারো কথার শব্দে আবিরের ধ্যান ভাঙলো।
“কিরে এতোক্ষণ ডাকছি শুনতে পাস নি”
আবির অপ্রস্তুত গলায় জবাব দিলো
“হ্যা আম্মু কিছু বলবে কি?”
আবিরের মা একটু এগিয়ে এসে বলে
“কখন থেকে ফোন বাজছে তুলছিস না কেনো?দেখ হয়তো কোনো দরকারি ফোন”
আবির জোরপূর্বক হাসি দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে
“না তেমন জরুরি না তাই রিসিভ করি নি”
আবিরের মা ঘরের বাহিরে চলে গিয়ে আবার কিছু একটা মনে করে ভেতরে এসে আবিরকে বললেন
‘আঁচলের সাথে তোর কথা হয়েছে?”
আবির হাতে থাকা ল্যাপটপ টা বিছানার এক পাশে রেখে বললো
“নাহ”
আবিরের মা অবাক হয়ে বললেন
“হয় নি মানে? তুই ওকে ফোন করিস নি? আমাকে কালকে বিকেলে কল করেছিলো মেয়েটা কিন্তু আমি ধরতে পারি নি পরে আবার আমি যখন করেছি তখন ওরাও ধরে নি। আমি বলি কি বাবা তুই একটা কল করে দেখ। আর জিজ্ঞাস কর কবে আসবে”
আবির হালকা ঢোক গিলে বললো
“আমার কাছে তো নাম্বার নেই।কি করে কল করবো”
আবিরের মা কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে তার ফোনটা এগিয়ে দিলো আবিরের দিকে। তারপর বললো
“আমার এমন গুণধর ছেলে বিয়ের প্রায় পনেরো দিন হয়ে গেলো এখনো বউয়ের নাম্বার ই জানেনা।এই নে ফোন ধর কল দিয়ে আমাকে উদ্দার কর। আমার বাকী বান্ধবীদের ছেলে নাকি সারাক্ষণ তাদের বউয়ের পেছন পেছন থাকে আর তুই এখনো বউয়ের নাম্বার পর্যন্ত জানিস না”
এতোটুকু বলেই আবিরের মা ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

অনেকক্ষণ ফোন রিং হওয়ার পর আঁচল ফোনের কাছে দৌড়ে আসে।ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে দেখে তার শাশুড়ীর নাম্বার। আঁচল তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরে সালাম দেয়
“আসসালামু আলাইকুম”
এই প্রথম আবির ফোনে আঁচলের কন্ঠ শোনে। ভারী মিষ্টি কন্ঠ। ওপাশ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আঁচল আবার বলে
“হ্যালো”
আবির কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়।আঁচল বেশ চিন্তিত হয়ে আবার কল দেয়।কারো বিপদ হলো কি না। দুইবার রিং হতেই আবির কল ধরে।আঁচল বলে
“হ্যালো মা”
আবির খানিকটা কাশি দিয়ে বলে
“হ্যা”
এভাবে নিজের স্বামীর কন্ঠ শুনে আঁচল বেশ অবাক আবার তার পাশাপাশি খুশিও হয়। আঁচল যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।আঁচল আবার সালাম দেয়
“আসসালামু আলাইকুম”
আবির উত্তর দেয়
“ওয়ালাইকুম আসসালাম”
আঁচল আবিরকে জিজ্ঞাসা করে
“মায়ের শরীর ভালো আছে তো?”
আবীর ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলে
“হ্যা ভালো আছে”
আঁচল জিজ্ঞাসা করে
“আপনি কেমন আছেন”
আবির হালকা কেশে বলে
“হুম সবাই ভালো”
আবির এতোটুকু বলেই আঁচলকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো।আঁচলকে সে পছন্দ না করলেও আঁচলের সাথে কথা বলতে সে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ছে।

সন্ধ্যায় আবিরের মা আবিরকে খাবার খেতে ডাকতে আসলে আবির বলে সে খাবে না। হঠাৎ আবিরের ফোনে কল এলো। আবির তাকিয়ে দেখলো স্নেহা ফোন করেছে।
আবির ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।স্নেহাকে কেমন যেনো বিরক্তিকর মনে হয় আবিরের কাছে এখন।
আবির বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে স্নেহা বললো
“কি সমস্যা বেইবি এতোক্ষণ কল দিচ্ছি ধরছো না কেনো”
আবির ছোট্ট করে বললো
“ওয়াশ রুমে ছিলাম তাই”
স্নেহা এবার আবিরের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো
“এখন না হয় ওয়াশরুমে ছিলে মানলাম কিন্তু বিকেলে কোথায় ছিলে তোমাকে এতোগুলো কল দিয়েছি কল তো ধরলেই না আর পরেও কল ব্যাক করলে না।হোয়াই?”
আবির চোখমুখ শক্ত করে বললো
“তুমি আমাকে সন্দেহ করছ?”
স্নেহা হালকা হেসে বললো
“সন্দেহ করছি না বাট আই থিংক তুমি আমাকে ইগনোর করছো।বাই এনি চান্স তোমার সুন্দরী বউয়ের রুপের জাদুতে কি তোমাকে বেধে পেলেছে?”
আবির স্নেহার কথা গুলো সহ্য করতে পারছে না তাই বললো
“আচ্ছা আমি এখঅন একটু বিজি আছি। সকাল ৯ টায়৷ দেখা হচ্ছে এখন রাখছি বাই”

স্নেহা আর আবির বসে আছে কোনো এক রেস্টুরেন্টে।আবিরের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আবির কেমন যেনো হয়ে গেছে। স্নেহা ভ্রু কুচকে বললো
“বেইবি প্রব্লেম কি তোমার? আমি ফোন দিলে ঠিকমতো ফোন ধরছো না। বাসা থেকেও বের হচ্ছ না ঠিক মতো। কি হয়েছে?”
আবির মুখে জোরপূর্বক হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে বললো
“না কিছু না”
স্নেহা আবিরের হাতের উপর হাত রাখলো আবির সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাত টেবিল থেকে সরিয়ে ফেললো।স্নেহা ভ্রু কুচকে আবারো বললো
“আই থিংক তুমি আজ কাল কেমন যেনো হয়ে গেছো বেইবি। আগে যখন দেখা হতো সবার আগে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরতে আর এখন আমি নিজে থেকে জড়িয়ে ধরলেও তুমি দূরে সরে যাও।বাই এনি চান্স তুমি আবার ওই উদ্ভট কি যেনো নাম ওহ হ্যা আঁচল ওর প্রেমে টেমে পড়ে যাও নি তো?”
আবির কোনো রিয়েক্ট করলো না স্নেহা আবার বললো
“ওহ হ্যালো আমি তোমার সাথে কথা বলছি”
আবির বললো
“হ্যা”
স্নেহা আবিরের দু হাত ধরে বললো
“তুমি ওই মেয়েকে ডিভোর্স কবে দিবে?”
আবির বললো
“শীগ্রই”
স্নেহা বললো
“তাড়াতাড়ি তুমি ডিভোর্স দিয়ে দাও ওই মেয়েকে তারপর আমাকে বিয়ে করবে আর আমরা সুখে শান্তিতে থাকবো”
তিন বছরের ভালোবাসাকে আজ যেনো আবিরের সহ্য হচ্ছে না।স্নেহার সব কথাই কেমন যেনো লাগছে আবিরের কাছে।

আবিরের সাথে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে স্নেহা চলে গেলো স্নিগ্ধর বাসায়।স্নিগ্ধ মোবাইল টিপছে কলিংবেলের শব্দ শুনতেই দরজা খুলতে গেলো।দরজা খোলা মাত্রই স্নেহা স্নিগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো।স্নেহা বললো
“হাই বেইবি”
স্নিগ্ধ স্নেহাকে বললো
“হ্যালো মাই সুইটহার্ট। তোমার বয়ফ্রেন্ড আবিরের সাথে মিট করা শেষে আমার কথা মনে পড়লো তাহলে”
স্নেহা স্নিগ্ধর কথায় হেসে বললো
“আবির তাও আবার আমার বয়ফ্রেন্ড।ওর মতো থার্ডক্লাস ছেলে তো আমার যোগ্যও না”
স্নিগ্ধ এবার একটু ভাব নিয়ে বললো
“আই নো।বাট তুমি দেশে এসেই ওর সাথে যা শুরু করেছো”
স্নেহা খানিকটা হেসে জবাব দেয়
“এসব আমি কার কথায় করছি? তোমার কথায়”
স্নিগ্ধ স্নেহা কে বললো
“আরে বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলবে নাকি ভেতরে এসো দেওয়ালের ও কান থাকে”
স্নেহা ভেতরে প্রবেশ করলো। স্নিগ্ধ স্নেহাকে তার বেডরুমে নিয়ে গেলো।স্নিগ্ধ বললো
“তুমি তো কাজের কাজ কিছুই করতে পারছো না। তোমাকে তো বলেছি আবিরকে বিয়ে করে ওদের সম্পত্তি তোমার নামে করে নাও তারপর ওকে ডিভোর্স দিয়ে তুমি আর আমি সোজা আমেরিকা গিয়ে সেটেল্ড হয়ে যাবো”
স্নেহা ভ্রু কুচকে বললো
“তুমি কিছু করো। আই থিংক আবির তার বউয়ের প্রেমে পড়েছে”
স্নিগ্ধ খানিকটা অবাক হয়ে বললো
“মানে কি বলছো কি তুমি?”
স্নেহা স্নিগ্ধর গলায় হাত রেখে বললো
“হুম কয়েকদিন ধরে ওকে সুবিধার লাগছে না।অল টাইম শুধু ব্যাস্ততা দেখায়”

চলবে__

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০৪

0

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
চতুর্থ পর্ব

কফি হাউজের চারদিকে নানা মানুষের কোলাহল।সবাই নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। স্বামী,স্ত্রী প্রেমিক,প্রেমিকা বা বন্ধুবান্ধব সহ পুরো কফিহাউজ জুড়ে নানা ধরণের মানুষের আনাগোনা। চারদিকে নানা শ্রেণির মানুষের ব্যাস্ততা। তাদের মধ্যে কোনো এক টেবিলে স্নেহা আর আবির একে অপরের হাত ধরে বসে আছে।।আবির হুট করে বলে উঠলো
“স্নেহা”
স্নেহা বেশ অবাক হলো কারণ এর আগে আর কখনো আবির স্নেহা কে নাম ধরে ডাকে নি। সবসময় জান বলে সম্বোধন করতো। স্নেহা ভ্রু কুচকে বললো
“তুমি আগের চেয়ে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো”
আবির স্নেহার কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করে বললো
“মানে”
স্নেহা কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো
“এই যে দেশে এসে বিয়ে করার পর তুমি অনেকটাই চেঞ্জ হয়ে গেছো”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“যেমন”
স্নেহা হালকা হেসে বললো
“ফোন দিলে ঠিকঠাক মতো ফোন ধরো না। আমাকে ঠিক মতো সময় দাও না এসেই শুধু যাই যাই করো।”
আবির কোনো উত্তর দিলো না স্নেহা আবার বললো
“দেখো যেনো।পরে আবার তোমার বউ আঁচলের শাড়ীর আঁচলে নিজেকে জড়িওনা।”

আবির একটা ছোটো দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর স্নেহা আর আঁচলের মধ্যে পার্থক্য গুলো খোজার চেষ্টা করছে। আঁচল সম্পুর্ণ বাঙালি মেয়ে আর স্নেহা বাঙালি হলেও তার মধ্যে বাঙালি মেয়ের কোনো চিহ্নই নেই। আবির আঁচলের স্বামী হওয়ার সর্তেও আঁচল সবসময় আবিরের সামনেও নিজের শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। আর স্নেহা নিজের বাঙালি কালচার ভুলে ছোটো খাটো পোশাকেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।আঁচলের চুলগুলো কোমরের নিচ পর্যন্ত লম্বা আর স্নেহার চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত কাটা আর কালার করা। সবকিছু মিলিয়ে আঁচলের প্রতি আবিরের দুর্বলতা বেড়ে গেছে। আঁচল মধ্যবিত্ত ঘরের খুবই নরম স্বভাবের একটা মেয়ে আর স্নেহা অনেক অহংকারী মেয়ে। বলতে গেলে দুজনের মাঝে অনেক পার্থক্য।

স্নেহা আর আবিরের কথার মাঝেই আবিরের বেস্টফ্রেন্ড স্নিগ্ধ আর তিয়াশ এলো। ওরা আসা মাত্রই স্নেহা গিয়ে স্নিগ্ধ আর তিয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।। যেটা আবিরের একদমই পছন্দ হয় নি। বাঙালি মেয়েরা আর যাই হোক কখনো পরপুরুষকে গায়ে হাত দিতে দেয় না। আর স্নেহা বিদেশে থাকতে থাকতে বিদেশের সংস্কৃতি অনুসরণ করে। বাঙালি মেয়ের কোনো চিহ্নই তার মাঝে নেই।পরনে শার্ট আর জিন্স।দেহের সব ভাজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আবির স্নেহাকে বারণ করেছিলো যেনো ছেলেদের সাথে মেলামেশা না করে কিন্তু স্নেহা অল টাইম ছেলেদের সাথে চলাফেরা করে।।

ভরদুপুর বেলা আঁচল গোসল করে আয়নার সামনে বসে আছে।।মাথার উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরছে। আবির বিছানায় বসে ফোন টিপছে আর আড়চোখে আঁচলকে দেখছে। আঁচল নিজের কাজে ব্যাস্ত। লম্বা কোমরের নিচ পর্যন্ত পড়ে থাকা চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। ড্রয়ার থেকে কাজল বের করে চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে নিলো।আবির আড়চোখে আঁচলের মায়াবী মুখটা দেখছে।
আঁচল আবিরকে বললো
“খাবার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে খেতে চলুন”
আবির মাথা নাড়িয়ে বলে
“তুমি যাও আমি আসছি। আমার একটু কাজ আছে সেটা শেষ করে আসছি।”
আঁচল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“কাজ শেষ করুন একসাথে যাবো।আমি অপেক্ষা করছি। আমাদের সম্পর্ক টা কেমন সেটা আমরা জানি আর আমাদের ঘরের চারদেয়াল জানে কিন্তু মা বাবা তো জানেন না উনারা জানলে কষ্ট পাবে। তাই একসাথে চলুন”
আবির মোবাইলটা বিছানায় রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
“চলো”

হঠাৎ রিংটোনের শব্দে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই প্রিয় নাম “আম্মু” দিয়ে সেইভ করা নাম্বার ভেসে ওঠে। আঁচল প্রচুর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়

“আসসালামু আলাইকুম। আম্মু কেমন আছো”
ওপাশ থেকে মৃদু হেসে আঁচলের মা জবাব দেয়
“এইতো ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? ও বাড়ীর সব ঠিকঠাক আছে তো”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“জ্বি আম্মু সব ঠিকঠাক আছে”
আঁচলের মা জিজ্ঞাসা করে
“জামাই কেমন আছে? তোকে মেনে নিয়েছে তো। শোন মা ভীষণ চিন্তা হয় তোকে নিয়ে। ঠিকভাবে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিস তো সব”
আঁচল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
“তোমাদের জামাই ভালো আছে আম্মু আর সব ঠিকঠাক আছে।আচ্ছা আম্মু রাখছি রাতে ফোন দিবো এখন হাতে একটু কাজ আছে”
আঁচলের মা মৃদু হেসে বলেন
“আচ্ছা”
দূর থেকে দুটি চোখ অপলক দৃষ্টিতে আঁচলকে দেখছে। আর শুনছে আঁচলের কথাগুলো।ফোনের লাউড স্পিকার দেওয়া ছিলো তাই কথাগুলো আবিরের কান এড়ায়নি।আঁচল কাঁধ ঘুরিয়ে দেখে আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আঁচল কিছু না বলেই রুমের বাহিরে চলে যায়। আবির আবারো নিজের কাজে মন দেয়।

আঁচল পা টিপে টিপে রান্না ঘরে প্রবেশ করে।আঁচল ও তার শাশুড়ী দুজন দুজনের কাজে ব্যাস্ত।আঁচলের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে মায়ের সাথে কথা বলার পর থেকে। আঁচলের শাশুড়ী আঁচলকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে
“তোমার কি কোনো কারণে মন খারাপ”
আঁচল হালকা হেসে বলে
“কই না তো”
আঁচলের শাশুড়ী আঁচলের চোখে চোখ রেখে বলে
“আমি তো তোমার মায়ের মতো। আমাকে বলতে পারো যদি কোনো কারণে মন খারাপ থাকে”
আঁচল মুখভার করে বললো
“না মানে ওই আরকি একটু মায়ের কথা মনে পড়ছে”
আঁচলের শাশুড়ী মৃদু হেসে বলেন
“বিয়ের পর তো এখনো তোমাদের বাড়ী যাও নি। কয়দিন গিয়ে থেকে আসো তোমারও মনটা ভালো থাকবে”
আঁচলের শাশুড়ীর কথায় আঁচল খুশিতে গদগদ করতে বললো
“কবে যাবো মা”
আঁচলের শাশুড়ী বললেন
“কাল সকালে যেও আজকে তো অনেক বেলা হয়ে গেছে”

ঘড়ির কাটা আপন গতিতে চলছে।রাস্তাঘাট সবকিছুর চারদিক ঘোর অন্ধকার হয়ে গেছে।প্রকৃতির আলো নিভে লাইটের আলোয় আলোকিত হয়েছে সবার বাড়ীঘর।
আবির কম্পিউটারে কাজ করছে আর আঁচল বিছানায় বসে ব্যাগ গোচাচ্ছে।আঁচলের দিকে আড়চোখে দেখছে আবির কিন্তু আঁচলের কাজের আগাগোড়া কিছুই তার মাথায় ডুকছে না। কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও পাচ্ছে না।সন্ধ্যা থেকে আঁচল যথেষ্ট পরিমাণে আবিরকে এড়িয়ে চলছে।আবির ভ্রু কুচকে আঁচলকে বললো
“কি ব্যাপার ব্যাগ কেনো ঠিক করছো? আমাদের বাড়ী থেকে কি আজই বিদায় হচ্ছো নাকি”
আঁচল ছোট্টো একটা শ্বাস ফেলে বললো
“হয়তো”
আবির বেশ অবাক হয়ে বলে
“মানে?”
আঁচল নিজের কাজে মন দেয় আবির আবারো জিজ্ঞাস করে
“ব্যাগ কেনো গোচগাছ করছো?”
আঁচল জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“কালকে সকালে আমাদের বাড়ী যাবো।তাই”

হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে সূর্যের উত্তপ্ত তাপে ঘেমে একাকার হয়ে আঁচল বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো।আঁচলকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আবির চলে গেছে। আঁচলকে দেখে আঁচলের মা বেশ অবাক হলো। আঁচল গিয়ে মায়ের পা ধরে সালাম করলো।আঁচল তার মা কে জিজ্ঞাসা করলো
“কেমন আছো আম্মু। আব্বু কোথায়?”
আঁচলের মা অবাক চোখে বললো
“আমি ভালো আছি।তুই আসবি সেটা আগে জানালে তো পারতি”
আঁচল মুচকি হেসে বললো
“এখন তো জানলে নাকি। আম্মু প্রচন্ড খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দাও”
আঁচলের আম্মু আঁচলের গালে হালকা করে একটা বারি মেরে বলেন
“পাগলি মেয়ে।তুই খাবার টেবিলে গিয়ে বস আমি খাবার দিচ্ছি”

চলবে__
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০৩

0

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
তৃতীয় পর্ব

রাত একটায় কারো কথার আওয়াজে ঘুম ভাঙে আঁচলের। আঁচল তাকিয়ে দেখে আবির পাশে নেই। আঁচল বেশ অবাক হয় এতো রাতে মানুষটা কোথায় গেলো। আঁচল বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় যায়। বারান্দায় গিয়ে দেখে আবির কারো সাথে ফোনে কথা বলছে আর হাসছে।
“রাগ করে না জান আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো। একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।দেখো আমার হাতে এখন কোনো চাকরি নেই তাই তোমাকে বিয়ে করলে তো ঠিকভাবে খাওয়াতেও পারবো না। বাবা বলেছে কিছুদিন পর আমাকে ওনার ব্যাবসার সবকিছু বুঝিয়ে দেবে। ”
আঁচল শুধু মাত্র আবিরের কথাগুলোই শুনছে ফোনের ওপাশের কথা গুলো আঁচলের কানে আসছে না। আঁচল আবার শুনতে পেলো
“আরে ওই থার্ড ক্লাস মেয়ের কথা তোমাকে ভাবতে হবে না। আর তুমি আমার ওপর বিশ্বাস রাখো। ওকে আমি খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দেবো”
এতোটুকু শুনে আঁচলের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। ওদের প্রেমালাপের আর একটা শব্দ ও আঁচলের পক্ষে শোনা সম্ভব না। আঁচল ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে বালিশ চেপে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো।আবির ফোনে কথা বললেও আঁচলের কান্নার শব্দ আবিরের কান এড়ায়নি। আঁচল ঘুমিয়ে পড়ার পর আবিরও এসে চুপচাপ আঁচলের পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।

পরদিন সকাল নয়টায় আঁচল ঘুম থেকে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকাতেই আঁচল চমকে উঠলো। এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমানো আঁচল পছন্দ করে না কিন্তু আজ সে নিজেই ঘুম থেকে দেরিতে উঠলো। কে জানি বলেছিলো “ঘুম মৃত্যুর সমান”। ” ঘুম ভাঙলে সকাল আর না ভাঙলে পরকাল”
আঁচল তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। বাড়ীর বউয়ের এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমানো টা মানায় না।আঁচল ভাবছে
“ইসস বাবা মা সবাই আমাকে খারাপ ভাবছে। আমার এতো কেয়ারলেস হওয়াটা একদমই উচিত হয় নি।রাতে এলার্ম দিয়ে ঘুমানো উচিত ছিলো আমার”

আঁচল ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়। আঁচলকে দেখে আঁচলের শাশুড়ী রাহেলা বেগম বলে
“আরে বউ মা উঠেছো। টেবিলে ব্রেকফাস্ট রাখা আছে যাও গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নাও”
আঁচল খানিকটা কাচুমাচু হয়ে বললো
“আসলে মা আমি”
আঁচলের এতোটুকু কথার মাঝেই আঁচলের শাশুড়ী আঁচলকে থামিয়ে দিয়ে বললো
“কোনো ব্যাপার না মা। এইসময় একটু বেলা করে উঠলে সমস্যা নেই।যাও গিয়ে নাস্তা করে নাও”

বাইরে কড়া রোদ। উত্তপ্ত সূর্যের উত্তাপে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।আঁচল রান্নাঘরে চুলায় রান্না বসিয়েছে। আঁচলের পাশে আঁচলের শাশুড়ী রাহেলা বেগম একটা চামচ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। শাশুড়ী বউমা দুইজনই ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। আঁচল কিছুক্ষণ পর পর রান্নার দিকে তাকাচ্ছে আর আঁচলের শাশুড়ী আঁচলের পাশে দাঁড়িয়ে আঁচলকে রান্নার রেসিপি বলে দিচ্ছে।কার কি পছন্দ সেটাও বলে দিচ্ছে। আঁচল কপাল ভাজ করে তেলের মধ্যে মাছ দিতে গিয়ে তেল কিছুটা ছিটকে গিয়ে আঁচলের হাতের ওপর পড়ে৷ গরম তেল পড়ায় আঁচল চিৎকার করে ওঠে।আঁচলের শাশুড়ী তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ এনে আঁচলের হাতে লাগিয়ে দেয়। মেডিসিন দিতে বলে আঁচল বলে বেশী কিছু হয় নি সে ঠিক আছে।

রাতে আবির খাওয়ার টেবিলে আঁচলকে দেখতে না পেয়ে বেশ চমকে যায়। আবিরের মা রাহেলা বেগম আবিরকে বলেন।
“আসার সময় আঁচলকে ডেকে নিয়ে আসলে তো পারতি?”
আবির ভ্রু কুচকে বলে
“কেনো আঁচল খায়নি?”
আবিরের মা পানির জগ থেকে গ্লাসে পানি ডালতে ডালতে বলেন
“মেয়েটা সকাল থেকে কিচ্ছু খায় নি এএখন আসার সময় আমি অনেকবার ঢেকে এসেছি। কিন্তু ও বললো ওর খিদে নেই খাবে না। তুই বললে হয়তো তোর কথা শুনতো”
আবির কপাল ভাজ করে বললো
“খাবে না কেনো? এমনিতেই তো অন্য সময় দেখা যায় খাই খাই করে বাড়ী মাথায় তুলে ফেলে”
আবিরের মা পানির গ্লাস টা টেবিলে রেখে বলেন
“খাবে কি করে। মাছ ভাজা করতে গিয়ে হাত পুড়ে গেছে। আমি অনেকবার বলেছি হাতে মেডিসিন লাগিয়ে নিতে কিন্তু আমার কথা শোনে নি”
আবির এবার বিরক্তিকর ভাবে বলে ওঠে
“উফ মা। তোমারও কি আঁচলকে দিয়ে কাজ করানো টা বেশী দরকার ছিলো৷ পরে হয়তো ওই মেয়ে বাপের বাড়ি গিয়ে বলবে শাশুড়ীর নির্যাতনে তার হাতের এই অবস্থা”
আবিরের মা অবাক হয়ে বলে
“আরে আঁচল এমন না। আর আমি তো ওকে বার বার বারণ করেছিলাম রান্নাঘরে আসতে। ওর শেখার আগ্রহ দেখে আর কিছু বললাম না। আর স্বামীর সংসার করা মুখের কথা নয় সংসার করতে গেলে হাত কাটা হাত পোড়া অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়”

আবির উঠে একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঘরে গিয়ে দেখে আঁচল বিছানার এককোণে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। যা দেখে আবিরের মেজাজ বিগরে গেলো। আবির আঁচলের সামনে গিয়ে প্লেট টা রেখে বললো
“খেয়ে নাও”
আঁচল কোনো রিয়েক্ট করলো না
আবির আবারো বলে উঠলো
“সকাল থেকে কিচ্ছু খাওনি খেয়ে নাও।”
আঁচল আবারো কিছু বললো না। আবির এবার রেগে বললো
“এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার সাথে পার্ট নিচ্ছো। শোনো তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। যাস্ট তোমাকে খেতে বলেছি এই জন্য যেনো পরে বাপের বাড়ি গিয়ে আমাদের বাড়ীর নামে বদনাম না করতে পারো”
আবিরের কথায় আঁচলের চোখ থেকে টপটপ করে দুফোটা পানি পড়ে। আবিরের মেজাজ চরম পর্যায়ে খারাপ হয়ে যায়। আবির এবার ধমক দিয়ে বলে
“এই মেয়ে একদম ন্যাকা কান্না করবে না। তোমাদের মতো মেয়েদের খুব ভালো করে জানা আছে আমার। আর হ্যা তুমি রান্নাঘরের ত্রিশ সীমানায় ও যাবে না। আমার মায়ের সংসার আমার মা একাই সামলাতে পারবে। এতো আগ বাড়িয়ে কাজ করার কোনো দরকার নেই তোমার। চুপচাপ খেয়ে নাও”
কথার মাঝেই আবিরের ফোন বেজে উঠলো আবির ফোনের স্ক্রিনে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে তাকিয়ে দেখলো “Jaan ” দিয়ে সেইভ করা নাম্বার ভেসে উঠলো। আবির হাতে থাকা প্লেট টা টেবিলে রেখে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।।

কিছুক্ষণ পর আবির রুমে এসে দেখে আঁচল এক হাতে প্লেট ধরে অন্য হাত দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু হাত পুড়ে থাকার কারণে ঠিকভাবে খেতে পারছে না।।আবির ধীরে পায়ে এসে আঁচলের হাত থেকে প্লেট টা নেয়,,,,তারপর নিজের হাত দিয়ে খাবার আঁচলের মুখের সামনে ধরে বলে
“হা করো”
আঁচল আবিরের থেকে এমন কিছুই আশা করে নি। আবির আবার ধমক দিয়ে বলে
“হা করতে বলেছি তোমায়”
আঁচল আর কিছু না বলে চুপচাপ খাবার খেয়ে নেয়।

আঁচলকে খাইয়ে আবির হাত ধুয়ে প্লেট টা রান্নাঘরে গিয়ে রেখে আসে। এসে দেখে আঁচল ঘুমিয়ে পড়েছে। আবির ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আস্তে আস্তে আঁচলের হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দেয়।। তারপর নিজেও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।।

চারদিকে কিচিরমিচির নানা পাখির ডাকে আঁচলের ঘুম ভাঙে।আঁচল ধীরে পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।রাস্তাঘাট সবকিছুই জনমানবহীন। আর গাছে গাছে পাখিরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে খাবারের খোঁজে।দূরের মসজিদ গুলোর আস্পষ্ট আজান কানে আসছে আঁচলের। চারদিকে আবছা আলো ছড়িয়ে গেছে৷ খোলা চুলগুলো হাত খোপা করে নেই আঁচল।হঠাৎ হাতের পোড়া অংশের দিকে চোখ যায় আঁচলের। আঁচল ভালোভাবে লক্ষ করে তার হাতের পোড়াস্থান মলম লাগানো আছে। আর হাত থেকে মেডিসিনের উদ্ভট গন্ধও আঁচলের নাকে লাগছে_হাতের পোড়ার যন্ত্রণাটা আগের থেকে বেশ কমে গিয়েছে।আঁচলের আর বুঝতে বাকী রইলো না মেডিসিন কে লাগিয়ে দিয়েছে। আঁচল মুচকি হাসে।

খারাপ সময় সবার জীবনেই আসে। কিন্তু খারাপের পরে ভালো দিনও আসে মানুষের জীবনে। আঁচলও সেই উত্তম সময়ের অপেক্ষায় আছে। হয়তো আবির কখনো তার ভুলটা বুঝতে পারবে আঁচলকে কাছে টেনে নেবে। পরোকিয়া থেকে দূরে সরে আসবে। হয়তো আঁচলের জীবনের সব অন্ধকারের ছায়া কেটে আবার আলোর দেখা মিলবে।। খারাপ সময় প্রতিটা মানুষের জীবনেই আসে তাই বলে প্রিয় মানুষের হাত ছেড়ে দেওয়াটা নিতান্তই বোকামি।

চলবে
[রি-চেইক করা হয়নি]

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি পর্ব-০২

0

#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
দ্বিতীয় পর্ব

সকাল সাতটায় আঁচল পরিপাটি হয়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো তার শাশুড়ী রাহেলা বেগম চুলায় চা বসিয়েছেন।আঁচল ধীরে পায়ে তার শাশুড়ীর সামনে গিয়ে বললো
“দিন মা আমি করে দিচ্ছি”
আঁচলকে দেখে তার শাশুড়ী বললো
“আরে মা তুমি এতো সকাল সকাল উঠেছো কেনো”
আঁচল ঘোমটা টা টেনে মুচকি হেসে বললো
“অভ্যাস”
আচঁলের শাশুড়ী মুচকি হেসে বললো
“অভ্যাস বললে তো চলবে না মা। তুমি আমার মেয়ের মতো। শোনো তুমি এখন বাড়ীর নতুন বউ সবকিছু মানিয়ে নিতে তোমার একটু সময় লাগবে তাই বিয়ের প্রথম দুই বছর তুমি সকালে নামাজ পড়ে আবার ঘুমাবে আর ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে সকাল দশটায়। দুই তিন বছর কেটে গেলে তুমিও সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে শিখবে তখন তোমার সকাল ছয়টায় উঠে সবার জন্য নাস্তা বানাতে হবে।। আমরা প্রত্যেকটা মেয়ে আগে বউ হয়ে আসি তারপর শাশুড়ী হই।প্রত্যেকটা শাশুড়ীর উচিত তার ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মতো করে আদর করার।কারণ অন্য বাড়ী থেকে একটা মেয়ে তার শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে ঝগড়া/হিংসা করতে আসে না। চারদিকের ঝগড়া বিবাদ দেখেই সে ঝগড়া শিখে।”
আঁচল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তার শাশুড়ীর দিকে। আঁচল মনে মনে ভাবছে এমন শাশুড়ীও হয় দুনিয়ায়। প্রত্যেকটা শাশুড়ী যদি এমন হতো তাহলে আর কোনো মেয়ের সংসার ভাঙতো না আর কোনো শাশুড়ীকেই বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হতো না।

আঁচল সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নিজের ঘরের দিকে উঁকি দিলো। আঁচল দেখলো আবির কম্পিউটারে কাজ করছে। আঁচল ধীরে পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো।৷ আঁচলের উপস্থিতি টের পেয়ে আবির কম্পিউটার অফ করে বারান্দায় চলে যায়। আঁচলও আবিরের পেছন পেছন বারান্দায় যায় গিয়ে আবিরকে বলে
“মা আপনাকে ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে”
আবির বিরক্তিকর ভাব দেখিয়ে বললো
“আমি ব্রেকফাস্ট করবো না”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“কেনো?”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“সব কেনো এর উত্তর হয় না”
আঁচল অবাক হয়ে বললো
“ভালোয় ভালোয় বলছি নাস্তা করতে চলুন। নাস্তা না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে”
আবির এবার ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে নূন্যতম লজ্জা কি তোমার মাঝে নেই। বুঝতে পারছো না আমি তোমাকে ঘৃণা করি।তুমি আমার সামনে এসে একদম জ্ঞান দিতে আসবে না। আমার ভালো মন্দ ভাবার জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। দু পয়সার মেয়ে। বড়লোক ছেলে দেখেছো তাই গলায় ঝুলে পড়েছো এটাই তো তোমাদের মতো থার্ডক্লাস মেয়েদের স্বভাব”
কথাগুলো বলে আবির আর একমুহূর্ত ওখানে দাড়ালো না। গাড়ীর চাবি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো

আঁচল ছলছল চোখে আবিরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।আঁচল এক হাতে চোখের পানি মুছে নিজেকে সামলে নিলো। রাত দশটায় আবির বাসায় এলো তাও নেশাগ্রুস্থ অবস্থায়। আঁচল কলিংবেলের শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখে আবির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আবিরের কোনো হেলদোল নেই ঠিকভাবে দাড়াতেও পারছে না। আঁচল গিয়ে আবিরকে দেখে আঁচল তাড়াতাড়ি করে ধরে। আঁচল আবিরের এমন অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো যে আবির নেশা করেছে। তাই আবিরকে ধরে ধীরে পায়ে ঘরে নিয়ে গেলো। আঁচল আবিরকে বিছানায় শুইয়ে সামনের দিকে পা বাড়াতেই আবির আঁচলের শাড়ীর আঁচলটা খামছে ধরে। আঁচল আবিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রান্না ঘরে যায়। অনেক খোজাখুজির পর তেঁতুলের বৈয়ম পায় আঁচল। সেখান থেকে কিছু তেঁতুলের টক বানিয়ে ঘরে যায়। আবিরকে তুলে আঁচল নরম গলায় বললো
“এটা খেয়ে নিন”
আবির আঁচলের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
“তুমি খুব সুন্দর”
আঁচল নরম গলায় বলে
“হ্যা আমি জানি আমি সুন্দর কিন্তু আপনি এটা খেয়ে নিন”
আবির আবার বলে
“তোমার চুলগুলো বেশ লম্বা”
আঁচল ছোটো নিশ্বাস ফেলে বলে
“হ্যা এটা আগে খেয়ে নিন”
আবির বাচ্চাদের মতো জিজ্ঞাস করে
“এটা কি?”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“এটা জুস এটা খেলে গায়ে শক্তি বাড়ে”
আবির মুখ ভেংচি কেটে বলে
“এটা বাজে কেমন বাজে দুর্গন্ধ এটা খাবো না”

আঁচল অনেক জোরাজোরি করে আবিরকে টক টা খাওয়ায়। তারপর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে
“আপনার বমি পাচ্ছে?”
আবির মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। আঁচল আবিরকে ধরে ওয়াশ্রুমে নিয়ে যায়। আবির বমি করে। আঁচল আবিরকে বিছানায় শুইয়ে নিজে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।।বিছানায় এসে আবিরের পাশে গা এলিয়ে দিতেই আবির আঁচলকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আঁচল প্রথমে কোনো রিয়েক্ট করলো না কিন্তু পরক্ষণেই আবির আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আঁচল এক ঝাটকায় আবিরের থেকে সরে যায়। আবির আবারো আঁচলকে জড়িয়ে ধরে। আঁচল এবার আবিরকে নিজের গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে আঁচল উঠে বারান্দায় চলে যায়। আঁচল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আবির এখন হুসে নেই। ওর অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়াটা নিতান্তই অন্যায় হবে।চরম অন্যায়।। তাই এই মুহুর্তে আঁচলের আবিরের থেকে দূরে থাকাটাই শ্রেয়।।।

এভাবেই কাটতে লাগলো দিন। আবিরের বাজে কথাগুলো শোনা এখন আঁচলের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিবাদী মেয়েটাও এখন চুপচাপ কথা হজম করতে শিখে গেছে।

ভোর পাঁচটায় আঁচল ঘুম থেকে ওঠে। আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আঁচল আবিরের কপালে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। গোসল শেষে আঁচল একটা কালো রঙের শাড়ী পরেছে।শাড়ী টা সিল্কের। আঁচল নামাজ পড়ে আবিরকেও নামাজ পড়ার জন্য জাগিয়ে দেয়।

আবির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে আঁচল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ী ঠিক করছে। আবির গিয়ে আঁচলের পেছনে দাঁড়িয়ে বলে
“তো কবে বিদায় হচ্ছেন মেম”
আঁচল আবিরের কথাটা বোঝার চেষ্টা করে ভ্রু কুচকে বললো
“মানে?”
আবির নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললো
“স্নেহা আজ দেশে ফিরছে।। আর ও যদি জানে আমি এখনো তোমার সাথে রুম আর বেড শেয়ার করছি তাহলে মেয়েটা অনেকটাই কষ্ট পাবে। তাই তুমি কবে বিদায় হচ্ছো সেটা বলো”
আঁচলের চোখের কোণে পানি জমে গেলো আবিরের কথা শুনে। আঁচল নরম কন্ঠে বললো
“হুম”
আবির বাম হাতে ঘড়ি পরতে পরতে ভ্রু কুচকে বললো
“হুম মানে কি? কবে যাচ্ছো সেটা বলো। আর ইতিমধ্যে আমার উকিল সাহেবের সাথেও কথা হয়ে গেছে৷ উনি খুবতাড়াতাড়ি আমাদের ডিভোর্স পেপারটাও পাঠিয়ে দেবে”
প্রতিটা কথা যেনো আঁচলের হৃদয়ে গিয়ে আঁচড় কাটে। আঁচলের কোনো রেসপন্স না পেয়ে আবির দরজার দিকে পা বাড়ালো।
আবিরকে চলে যেতে দেখে আঁচল পেছন থেকে বললো
“জানি পেছন থেকে ডাক দেওয়া ঠিক না তবুও বলছি ব্রেকফাস্ট করে গেলে ভালো হতো।আর এতো সকাল বেলা কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
আবির বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো
“আমার জীবনে তুমি আসার পর থেকে কিছুই ঠিক নেই। আর আজকে স্নেহা দেশে ফিরবে তাই স্নেহাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যাচ্ছি।ব্রেকফাস্টটাও ওর সাথে করে নেবো এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি শুধু এটা ভাবো কিভাবে আমার জীবন থেকে দূরে থাকবে”
এতোটুকু বলেই আবির চলে যায় আর আঁচল অসহায়ের মতো আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।।

আবির এয়ারপোর্টে পৌছালো।স্নেহা পেছন থেকে এসে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বললো
“Hello baby….কতোক্ষণ তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম তুমি জানো? বেবী তোমাকে অনেক হট লাগছে”
স্নেহার কথা টা কেনো জানি আবিরের ভালো লাগলো না। তবুও আবির হাসি মুখে বললো
“কেমন আছো জান”
স্নেহা আবিরকে ছেড়ে কপাল ভাজ করে বললো
“একদমই ভালো না আমি বেবী। তুমি জানো কতোক্ষণ ওয়েট করছিলাম আমি তোমার জন্য”
আবির হাত দিয়ে নিজের দুই কানে হাত দিয়ে বললো
“সরি জান রাস্তায় ভীষণ জ্যাম ছিলো”
স্নেহা হাসি দিয়ে বললো
“হইছে আর ঢং করতে হবে না। Let’s go”

চলবে__
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)