Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1431



বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১২

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১২

– মাইন্ড ইউর লেঙ্গুএ্যাজ অফিসার। বর্ষার খুন? আর তাও আবার খুনি বৃষ্টি? এটা হতেই পারেনা। আরে যেই মেয়ে থাপ্পর খাওয়ার ভয়েও এক পাশে গুটিসুটি মেরে চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকে সে কাওকে খুন করেছে এটা আমার বিশ্বাস করতে হবে।
চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে দ্রুত গতিতে কামরুল হাসানের কাছে গিয়ে কথাটা বলে উঠে রাতের বাবা রুদ্র চৌধুরি।
– কে দোষি আর কে নির্গোষ তা আদালত প্রমান করবে আমরা নয়। আপাততো আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন। এই নিয়ে চলো একে।
একটা মহিলা পুলিশ এসে হাতকরা লাগায় বৃষ্টির হাতে।
ভয়ে কাপছে বৃষ্টি। কাঁদো কাঁদো গলায় আকুতি মিনতি করতে থাকে সে।
– বিশ্বাস করুন বাবা আমি আপুকে কিছু করিনি। ওরা মিথ্যা বলছে, আমি কিছু জানিই না এই বেপারে। রাত আপনি তো আমায় বিশ্বাস করছেন।
ঘরের ভেতর থেকে বৃষ্টির ছেলে শ্রাবন কে কোলে নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসে আরশি।
বৃষ্টি পুলিশের হাত থেকে হেচকা দিয়ে ছুটে শ্রাবনকে কোলে তুলে নিলো।
– আমার ছেলে, তুমিও কি আমার কথা বিশ্বাস করবেনা শ্রাবন? বিশ্বাস করো মা কিচ্ছু করিনি। নিজের ছেলে কে শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে বৃষ্টি।
পাশ থেকে মহিলা পুলিশটা তাকে টানতে টানতে বাড়ির গেট পার হয়ে যায়।
রাত ছুটে আশে পেছন পেছন। বৃষ্টিকে গাড়িতে উঠানোর আগে রাত গিয়ে বৃষ্টির গুই গালে হাত রেখে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে,
– চিন্তা করো না বৃষ্টি। আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে তুমি কিছুই করোনি। তুমি নির্দোষ। আমি যত তারাতারি সম্ভব তোমায় ছারানোর ব্যাবস্থা করছি।
বৃষ্টিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তারা। গাড়ির পেছন পেছন দৌড়ে অনেকটা পথ এসেছে রাত। কিন্তু এবার গাড়ির গতি বেড়ে যাওয়ায় ধিরে ধিরে চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে। রাতের দিকে চেয়ে চেয়ে নিজের পাঁচ মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে বৃষ্টি। তার একটাই কথা আমি কিচ্ছু করিনি।

খুব জঘন্ন ভাবে মারা হয়েছে মেয়েটাকে। পিঠের দুটু হার ভাঙা পাওয়া গেছে। হয়তো কেও পেছন থেকে সজোড়ে লাথি মেরেছিলো। খুব ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কাটা হয়েছে মেয়েটার। লাশটা যেই যায়গায় পাওয়া গেছে ওখানে খুন করা হয়নি। বাইরে থেকে খুন করে ওখানে এনে ফেলে দিয়ে গেছে। কারণ ওখানে জদি জবাই করা হতো তাহলে প্রচুর রক্ত পরে থাকতো ওই জায়গায়। খুনটা হুট করেই হয়নি আগে থেকেই প্লেন করা ছিলো।
রিদের কাছে বর্ষার গলা কাটা ছবি গুলো দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে কথা গুলো বলে উঠে ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান।
রিদ ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,
– খুন যে সে ই করেছে তা আপনারা শিউর হলেন কি করে?
– মিসেস বৃষ্টি ও বর্ষা এদের দুজনের মাঝে একটা ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে দন্ধ চলছিলো। আর বৃষ্টির বিরুদ্ধে অভিযোগটা তোলেন বর্ষার বয় ফ্রেন্ড। কয়েকদিন পরই তাদের বিয়ে করার কথা ছিলো।
রিদ ছবি গুলো টেবিলে রেখে অবাক চোখে ই. কামরুল হাসানের দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– তার বয় ফ্রেন্ড মানে?
– দেখুন রিদ সাহেব আপনি যেই কথা বলছিনের যে টাকা পয়সার ব্যপারে ওটা সম্ভব নয়। কারণ বৃষ্টির নামে অলরেডি মামলা হয়ে গেছে। তাও আবার যেই সেই মামলা নয়, মার্ডার। এখন যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আদালত নিবে। আপনারা মিসেস বৃষ্টিকে এখন নির্দোষ প্রমান করতে চান তাহলে ভালো দেখে একটা উকিল নিয়ে ট্রাই করতে পারেন।

পাশে চুপ চাপ বসে আছে রাত। কপালে জমে থাকা ঘাম গুলো মুছে একটা বড় দির্ঘশ্বাস ফেললো সে। শান্ত গলায় বলে উঠে,
– আমরাকি তার সাথে দেখা করতে পারি?
– চলুন আমার সাথে।

রাত ও রিদ গিয়ে খাচার সামনে দাড়াতেই বৃষ্টি শ্রাবনকে কোলে নিয়ে রাতের সামনে এসে দাড়ায়।
– প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন আমাকে। আমি কিচ্ছু করিনি। দেখেন শ্রাবন শুধু কান্না করছে এখানে। এখানে খাবার গুলোও কেমন। খুব ভয় করছে আমার এখানে প্লিজ নিয়ে চলুন আমাকে এখান থেকে।
রাত বৃষ্টির গালে হাত রেখে বলে উঠে,
– হুম নিয়ে যাবো। আর খুব শিগ্রই।
– জানেন, পুলিশ মহিলাটা আমার গায়ে হাত তুলেছে। বার বার জিগ্গেস করছে আমি খুন করেছি কিনা?
রাত এবার রেকে ই. কামরুল হাসানের দিকে এগিয়ে যেতেই রিদ থামায় তাকে। রিদ ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– পদোন্নতি করতে চাইছেন? তাও আমার মহিলার গায়ে হাত তুলে?
– দেখুন রিদ সাহেব আইনের চোখে সবাই সমান। সে না দেখে নারি না দেখে পুরুষ সে সুধু দেখে অপরাধি।
রিদ একটু ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
– আচ্ছা? তো ই. কামরুল হাসান আমার মনে হয় আপনার আইন সম্পর্কে জ্ঞান টা অসম্পূর্ণ। অপরাধি ও সন্দেহ বাচনের মাঝে পার্থক্য জানেন? দেখি একটা করে সংজ্ঞা বলুন তো এগুলোর। অপরাধি হলো যার দোষ সবার সামনে প্রমানিত হয়ে গিয়েছে। আর সন্দেহ বাচন হলো যাকে সন্দেহ করা হয়েছে এবং তার দোষ এখনো কারো কাছেই প্রমানিত হয়নি।
পাশ থেকে রাত বলে উঠে,
– দেখুন আমরা চুপ করে আছি তার মানে এই নয় আমরা কিছু করতে পারবো না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে আমরা এখনো চুপচাপ আপনাদের সব ক্যাচাল সহ্য করে যাচ্ছি।
রিদ পাশ থেকে রাতের কাধে হাত রেখে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
– মাথা ঠান্ডা কর। এখন রাগের বসে কিছু করে বসাটা বোকামি। এগুলো শুধু আমাদের আরো এক ধাপ পিছিয়ে নিবে।

রাত তখন দশটা কপালে চিন্তার ভাজ নিয়ে সোফায় বসে আছে রুদ্র চৌধুরি ও রাত্রি চৌধুরি। সারাদিন টেনশন ব্যাস্ততায় ক্লান্ত হয়ে পরেছে সে। রাত এখনো থানার সামনে বসে আছে। তার স্ত্রী এবং সন্তানকে ফেলে কিছুতেই বাড়ি যাবে না সে। রিদ অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছে তাকে। কিন্তু কিছুতেই মানছেনা রাত। পারছেনা শুধু সকল আইন অমান্য করে পুরু থানা গুড়িয়ে দিয়ে নিয়ে যেতে বৃষ্টি ও তার সন্তানকে।

বৃষ্টিকে ছারাতে শহরের সব চেয়ে বড় উকিলকে নিযুক্ত করলেন রুদ্র চৌধুরি। তার একটাই কথা বৃষ্টিকে মুক্ত দেখতে চায় সে। আর তা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে।

কয়েকদিন পর কোর্টে হাজির করা হলো বৃষ্টিকে। তার ডিফেন্স ল-ইয়ার ফারহান রেজবি। আজ পর্যন্ত একটাও হারার রেকর্ড নেই তার। তবে এই কেসটা একটু জটিল তার কাছে। কারণ খুনি যেই হোক, বৃষ্টির বিরুদ্ধে একের পর এক কারণ রেখে গেছে।
– তো মিসেস বৃষ্টি। এই যে আপনার বোন বর্ষার সাথে আপনার কিছু ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলছিলো তাই না?
– হ্যা আমি মানছি যে আমার আর আপুর মাঝে দন্ধ ছিলো। কিন্তু আমি ওকে মারিনি।
– তো কি নিয়ে দন্ধ ছিলো?
– আপু সব সময় আমায় জ্বালাতো আর ব্লেকমেইল করতো যে আমি যেনো আমার স্বামী ও সংসার ছেরে তাদের থেকে দুরে সরে যাই। সব সময় আমাকে চাপ দিতো। তার কারণে আমার সংসারে একের পর এক অশান্তি লেগেই থাকতো। তবুও কিছু বলতাম না ভাবতাম সব ঠিক হয়ে যাবে নিজেরই তো আপু।
– কি বললেন? সে আপনাকে ব্লেকমেইল করতো, তার কারনে আপনার সংসারে অশান্তি লেগে থাকতো। তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনার জীবন টা পুরাই উলট পালট হয়ে গিয়েছে তার জন্য। আর এই কারণে আপনি ওকে মেরে আেপনার জীবন থেকে সরিয়ে দেন যাতে আপনি তার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
– না, আমি আপুকে মারিনি।
– আপনিই মেরেছেন তাকে। কারণ সে আপনি অন্তঃসত্বা থাকতে সীড়ি দিয়ে ফেলে আপনার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো আর সেই ক্ষোপ থেকেও আপনি তার প্রান নিয়ে নিলেন।
– না আমি সত্যি বলছি আমি আপুকে মারিনি।
পাশ থেকে বৃষ্টির ডিফেন্স ল-ইয়ার ফারহান রেজবি বলে উঠে,
– আপনি কাওকে এভাবে প্রমান ছারা খুনি বলতে পারেন না মিস্টার আনোয়ার সাহেব।
জ্বজ ও বলে উঠে,
– হ্যা কি প্রমান আছে যে ওনিই খুনি।
– জ্বজ সাহেব, আমার কাছে একটা জোড়ালো প্রমান আছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে জানা যায়। পুলিশ পাওয়ার ১০ ঘন্টা আগে ওনার খু হয়েছে। আর পুলিশ লাশ পেচেছে সকা৭ টা নাগাদ। তার মানে খুন হয়েছে রাত নয়টায়। আর ঠিক রাত সারে নয়টায় মিসেস বৃষ্টিকে বাইরে থেকে আসতে দেখেছে তাদের বাড়ির দাড়োয়ান আলি।
– জ্বি স্যার, আমি ম্যাডামকে রাত নয়টা নাগাত গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেখেছি। আর উনি খুব রেগেছিলেন আমি জিগ্গেস করলাম কি হয়েছে তখন উনি কিছুই না বলে ভেতরে চলে গেছেন।
তখনই বৃষ্টির বি পক্ষের উকিল বলে উঠে,
– কারন উনি তখন কাওকে খুন করে এসেছে তাই আপনার সাথে কোনো কথা বলেনি। কারণ নয়টার সময় খুন হয়েছে আর উনি সারে নয়টায় বাড়ি ফিরলেন এর আগের সময়টা তিনি কোথায় ছিলে। আর এটাও জানা গেছে যে মিসেস বৃষ্টি রাতে কখনো বাইরে যান না, তাহলে ওই রাতে কেনো গিয়েছিলেন? নিশ্চই বর্ষাকে খুন করতেই গিয়েছিলেন।
– না আমি কাওকে খুন করিনি। আপনারা কেনো আমার কথা বিশ্বাস করছেন না? এটা বলেই কাদতে থাকে বৃষ্টি। ভয়ে শরিরটা কাপছে তার। কারন কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরেনি সে।
– মিসেস বৃষ্টি আপনার কান্নায় কিন্তু আমারও কান্না পাচ্ছে কিন্তু আফসোস আদানল আবেগ নয় প্রমান দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়। বলেই হেসে উঠলেন আনোয়ার সাহেব।

বৃষ্টির সাথে দেখা করতে গেলো রাত। প্রতিবারের মতো আজও খাচার বাইরে দাড়িয়ে আছে রাত। চেহারাটা কেমন উস্কো খুস্ক হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ঠিকঠাক মতো খেতে দেয়না এখানে। যাত্ন নিতে পারে নাসে। পারবেই বা কি করে এটা তো আর বাড়ি নয়। ভেতরে অঝরে কেদে চলছে বৃষ্টি।
– আমাকে কি আর কখনো আপনার কাছে যেতে দিবেনা তারা?
রাত বৃষ্টির দু গালে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠে,
– কে বলছে দিবেনা। আর কয়েকদিন অপেক্ষা করো। তোমাকে ঠিকই এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবো আমি।
– ওরা বলছে সব প্রমান আমার বিরোদ্ধে। কিন্তু আমি তো আপনার কাছে কখনো মিথ্যা বলিনি। আপনি কি আমায় বিশ্বাস করছেন না? আমি মারিনি আপুকে।
– বৃষ্টি ভেঙে পরো না। কখনো কখনো মিথ্যার আড়ালে লুকিয়ে থাকে সত্যটা। আর তা এক সময় ঠিকই সামনে আসে।
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে। আপনাদের ছারা এতোটা দিন পরে আছি এভানে। রাতে অন্ধকারে একা একা আমার খুব ভয় করে এখানে। মশার জন্য ঘুমাতেও পারিনা ঠিক মতো। বার বার আপনার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে। অনেক্ষন ধরে কাদলেও কেও সামনে এসে দেখে না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।

To be continue………

~~ আপনাদের কি মনে হয়, বৃষ্টিই কি খুনি?

~~ রি-চেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 💖💖💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১১

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১১

প্রচন্ড বর্ষনের মাঝে হসপিটালে নিয়ে গেলো বৃষ্টিকে। রাত তখন ১১ টা পার হয়ে গেছে। বাইরে সকলের কথা শুনা যাচ্ছে। রাত প্রায় পাগল পাড়া বৃষ্টির পাশে থাকার জন্য। অনেক জোরাজুরিতে বৃষ্টির সাথে থাকার অনুমতি দিলো রাতকে।
পাশে ডাক্তার। সাথে প্রয়োজনিয় যন্ত্রপাতি। বৃষ্টির হাত শক্ত করে ধরে আছে রাত।
সবাই এখন ব্যস্ত বাচ্চার জন্য। দাতে দাত চেপে নিচের ঠোঁট টা কামড়ে ধরে বৃষ্টি। মনে হচ্ছে আজ এই কষ্ট মৃত্যুর চাইতেও ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করেছে। বৃষ্টি সাহস দিতে চাইলেও মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছেনা রাতের। কারণ তার নিজের শরিরও থরথর করে কাপছে। আজ মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয় নেই বৃষ্টির। মৃত্যুর জন্ত্রনা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছে সে। তার একটাই চাওয়া, তার সন্তান টা যেনো সুস্থ থাকে।

ডাক্তারদের মুখে হাসির আভাস। রাতের শরির এখনো কাপছে তবে এখন আগের চাইতে কিছুটা কম। নিচু হয়ে বৃষ্টির কপালে একটা চুমু দিলো রাত। বৃষ্টির শত কষ্টও যেনো এই মুহুর্তে সার্থকতায় রুপ নিলো।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার রা হসি মুখে রাতের কোলে তুলে দিলো এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। রাতের হাস্যজ্জল চেহারায় দু,গাল বেয়ে ঘেমে পড়লো নোনা জল। আজ এই গড়িয়ে পড়া জল দুঃখের নয় সুখের জল এটা।

রুদ্র চৌধুরির কোলে তর বংশের প্রথম নাতি। আজ খুশিতে আত্মহারা সে। নাতির ডান কানে আজান বাম কানে একামত দিলো সে। আজ খুশিতে আত্মহারা সবাই।
,
,
,
বাড়িতে একটা দোলনা প্রোজনিয় সব বিষেশ করে শত রকমের খেলনার জিনিস দিয়ে একটি রুম পরিপূর্ণ করে ফেললেন রুদ্র চৌধুরি।
বড় করে অনুষ্ঠান করে নাতিন নাম রাখলো, আহমেদ শ্রাবন চৌধুরি।
সারাক্ষন নাতিকে নিয়েই কাটিয়ে দেয় তারা। রাত্রি চৌধুরি কোলে নিয়ে হাটছে শ্রাবনকে। রুদ্র চৌধুরি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে উঠে,
– এই বুড়ো বয়সে দুজন মিলে যুক্তি করে আমায় আবার ধোকা দিওনা শ্রাবন দাদু। ভুলেও যেনো আমার ওনির দিকে চোখ না জায়। রাত্রি চৌধুরির কোলে হাত পা নাড়িয়ে চার দিকে পিট পিট করে তাকাচ্ছে শ্রাবন।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো এক মাস। বৃষ্টির বাবা মাও এসেছে কয়েক বার। কিন্তু বর্ষা আসেনি। আসবেই বা কোন চোখে। সে তো সেদিনের কাহিনির জন্য রাত ও বৃষ্টির কাছে একটিবার ক্ষমা চাওয়ার জন্যও আসার সাহস পাচ্ছেনা।

রাত অফিস থেকে ফিরে দেখে শ্রাবনকে নিয়ে বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। মুখে তার হাঁসির ঝলক। রাত ফ্রেশ হয়ে টাওয়া দিয়ে চুল নাড়তে নাড়তে বের হয়। দেখে শ্রাবনকে কোলে নিয়ে হাটছে বৃষ্টি।
বৃষ্টির কাছে গিয়ে দুই হাতে বৃষ্টির ঘার ধরে কপালে একটা চুমু একে দিলো রাত। শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– বাবু খেয়েছে?
বৃষ্টি শ্রাবনকে আদর করতে করতে বলে উঠে,
– হুম।
শ্রাবনকে বৃষ্টির কাছ থেকে নিয়ে তার সাথে দুষ্টুমিতে কথা বলতে বলতে হাটতে থাকে রাত। পেছন থেকে বৃষ্টি হাসি মুখে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে তাদের বাপ ছেলের দিকে।
,
,
,
আরশি রিদকে কয়েকবার কল করলেও ফোন ধরলো না রিদ। এবার ফোন ধরেই রেগে গেলো রিদ।
– সমস্যা কি তোর? ফোন ধরছিনা তার মানে বুঝতেই তো পারছিস আমি বিজি আছি।
– আমার জন্য কি তোমার কখনোই সময় হবে না রিদ ভাই। এতো রাতেও আমি ফোন দিলে বলছো তুমি বিজি। তুমি কি ইচ্ছা করেই আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন করো নাকি তুমি চাও আগের সব ভুলে আমি তোমার লাইফ থেকে সরে যাই?
রিদ এবার ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– কি বলবি বল।
– এ ভাবে কেনো বলছো? কেমন আছো তুমি?
– ভালো। তুই কি এতো রাতে এটা বলার জন্য ফোন দিলি?
– তুমি মনে হয় বিরক্ত বোধ করছো। আচ্ছা বাই, ভালো থেকো। বেশি রাত জেগো না শরির খারাপ করবে। ঘুমিয়ে পড়ো।
– আচ্ছা বাই,,, বলেই ফোন কেটে দিলো রিদ।
আরশি শুয়ে শুয়ে তাকিয়ে আছে মাথার উপর থাকা ছাদটার দিকে।
এই মধ্য রাতেই প্রিয় মানুষটার কথা মনে পরে সবচেয়ে বেশি। ইচ্ছে করছে সব ফেলে ছুটে যেতে তার কাছে। আরশির মনে পড়ে সেই আগের দিন গুলো। যখন রিদ এই মধ্য রাতে এসে তাকে দেখে যেত। কখনো কখনো আদর করে চুমু একে দিতো কপালে। গায়ের কাঁথাটা টেনে দিয়ে চলে যেতো আবার।
কিন্তু সেই রিদ এখন রাতে এতো কেয়ার দুরে থাক দিনের বেলায়ও দেখতে আসেনা তাকে। তুমি বুঝনা রিদ ভাই আমি যে তোমার অপেক্ষায় থাকি?
লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পরে আরশি।

গালে আলতো করে কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় আরশির। দেখে চার পাশটা খোলা মেলা। আজও সেদিনের মতো ছাদে বসে আছে সে। দেখে সামনে মাস্ক পড়া সেই লোকটা বসে আছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে আরশির। কারণ আর অনেকদিন লোকটা কোনো বিরক্ত করেনি আরশিকে। আরশিও মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো হয়তো আর আসবেনা লোকটা। কিন্তু আজ আবার এসে হাজির হলো সে।
লোকটা গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– যে তোমায় নিয়ে ভাবতেও চায় না তার পেছনে পরে থাকতে লজ্জা করেনা তোমার?
– সেটা আমার আর তার ব্যাক্তিগত ব্যপার। এই নিয়ে আপনাকে না ভাবলেও চলবে। আর প্লিজ আমাকে আর এভাবে বিরক্ত করবেন না। আপনি কে তাও আমি আর জানতে চাই না। আগে অনেকবার জানতে ইচ্ছে হলেও তা এখন আর নেই। দয়া করে আমায় মুক্তি দিন। প্লিজ আর আসবেন না আমায় জ্বালাতে। হাত জোড় করে আপনার কাছে অনুরুধ করছি আমি প্লিজ।
লোকটা ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– ওকে তোমার ইচ্ছে আমি পুরণ করবো। এভাবে আর কখনো তোমার কাছে আসবো না। তবে তোমাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। তোমাকে ঠিক ঠাক মতো নিজের খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকে কখনো কষ্ট দিতে পারবে না। আর কোনো ছেলের জীবণের সাথে জড়িয়ে লাইফটা নষ্ট করবে না। ঠিক ঠাক মতো পড়া শুনা করবে। আর হ্যা, টাইম লি খাবার খাবে। যদি দেখি আমার শর্ত মতে তোমার সব ঠিক আছে তাহলে আমি আর আসবো না। আর জদি দেখি কোনো কিছুর পরিবর্তণ হয়েছে তাহলে আমি আবার আসবো।
আর কিছু মনে নেই আরশির। তার আগেই লোকটা আরশির মুখে রুমাল চেপে ধরে আবার বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে আবার চলে যায়। লোকটা চলে যাওয়ার সময় আরশি ঘুমু ঘুমু চোখে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– রিদ ভাইয়া,,,,,,,
লোকটা কিছু না বলে চলে যায়। হাতটা বিছানায় পরে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় আরশি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রিদের নাম্বারে ফোন দেয় আরশি।
রিদ রিসিভ করে ঘুমাতুর কন্ঠে বলে উঠে,
– হুম আরশি বল।
– কাল রাতে তুমি কোথায় ছিলে?
– কেনো বাসায়।
– মিথ্যা বলছো তুমি, আমার সাথে কথা হওয়ার পর তুমি কোথায় ছিলে?
– তার কিছুক্ষন পরই তো ঘুমিয়ে গেলাম। আর এখন তুই ফোন দিলি। কেনো রে কোনো প্রব্লেম হয়েছে?
– কিন্তু আমি তো তোমার কন্ঠ শুনেছি। লোকটা কি তুমি?
– কি সব বাজে বকছিস আরশি। কোন লোক?
– আগে বলো তুমি কি রাতে আমার সাথে কথা হওয়ার পর ঘুমিয়েই ছিলে?
– হ্যা রে বাবা। কি বলছিস আমি তো কিছুই বুঝছি না।
– ওহ্,,, আচ্ছা। না কিছুনা।
– তুই কি আর কিছু বলবি?
– না।
– তাহলে ঘুমাতে দে।
,
,
আরো কয়েকমাস কেটে গেলো। বৃষ্টি ও আরশি দুনেরই ফাইনাল পরিক্ষা শেষ। তবে এখনো রেজাল্ট দেয়নি।
শ্রাবন বৃষ্টির চাইতেও বেশির ভাগ সময় থাকে আরশির কাছে। আরশির আগে থেকেই বাচ্চা খুব পছন্দের।

বিকেলে ভিডিও কলে কথা হলো বাড়িতে। বৃষ্টির মা দেখতে চাইছে নাতিকে। বৃষ্টির বাবা মাঝে মাঝে আসে আসে দেখতে। বিকেলে খুব ভালো ভাবেই কথা হলো তাদের মাঝে।
পর দিন সকালে ফোন দিয়ে শুনতে পায় মায়ের কান্নার শব্দ। এক নাগারে কেদেই চলছে তার মা। একটু অবাক হয় বৃষ্টি।
– কি হলো মা কাদছো কেনো? কিছু হয়েছে?
– বর্ষা,,,,,,, আবার কেদে উটলো তার মা।
– কি হয়েছে আপুর।
আর কিছু বলার আগেই দেখে বৃষ্টির ফোন অফ হয়ে গেছে। দুঃশ্চিন্তার ভার তার মাথায়। উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেনি তো আপু? তখন দেখলো রাত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছে। বৃষ্টিকে আতঙ্কিত দেখে বলে উঠে,
– কি হলো তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো? এ্যানি প্রব্লেম?
বৃষ্টি কিছু বলার আগেই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো রাত গিয়ে রকজা খুলতেই দেখে বাইরে পুলিশ দাড়িয়ে আছে। রাতের পাশে এসে দাড়ায় বৃষ্টি।
সামনে থেকে পুলিশ ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান বলে উঠে,
– আপনাদের বাসায় বৃষ্টি কে?
রাত অবাক চোখে বৃষ্টির দিকে তাকায়। পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– জ্বি আমিই বৃষ্টি। বলুন কি বলবেন?
– ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট।
পাশ থেকে রাত মাথা গরম করে বলে উঠে।
– ইউ আর মেড?
– রাত সাহেব, উত্তেজিত হবেন না। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কিন্তু আমার অপরাধ?
– বর্ষা নামক এক যুবতিকে খুন।

To be continue……….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১০

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১০

কাঁদতে কাঁদতে রিদের বুকে মাথা রেখে সুয়ে আছে আরশি। রিদ এক হাত দিয়ে আগলে রেখেছে তাকে। রিদ তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
– কিছু খেয়েছিস?
কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে আরশি। হয়তো ক্লান্তিতে এতোক্ষনে ঘুমিয়ে পরেছে সে।

কিছুক্ষন পর আরশি উঠে রিদের পাশে বসে আছে। কারণ ডাক্তার এসেছে কেবিনে। রিদের সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে চলে গেলো সে।
ডাক্তার বের হতেই রাত আসলো খাবার নিয়ে। দেখে আরশি পাশে বসে আছে রিদের। আরশির হাতে খাবার দিয়ে রিদের পাশে বসে রাত।
– কিরে ভাই, এতোক্ষন লাগলো তোর আসতে?
– কি করবো বল? আমি আরো আগেই আসতে চেয়েছিলাম। বাবা বললো, মা ও বৃষ্টি এরা বাসায় একা আরো আছে দুঃশ্চিন্তার মাঝে। তাই তারা গেলে তার পর আসতাম। কি আর করার, জানিসই তো বাবা এক ঘেয়ি সভাবের। যা বলে তাই। আচ্ছা এখন খাবার এনেছি গরম গরম খেয়ে নে।

আরশি খেয়াল করে রিদের হাতে বেন্ডেজ করা। তাই প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে উঠে,
– তুমি তো আর খেতে পারবে না, সমস্যা নাই আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।
পাশ থেকে রাত হেলান দিয়ে বলে উঠে,
– আমারও ডান হাত টা খুব ব্যাথা করছেরে আরশি। মনে হয় আজ রাতে আর খাওয়া হবেনা।
আরশি একটু হেসে উঠে,
– বুঝছি আসো দুজনকেই আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তিন জন আজ এক সাথেই খাবো।

রাত ও রিদ দুজনকেই খাইয়ে দিচ্ছে আরশি। সেও খাচ্ছে। রাত খেতে খেতে বলে উঠে,
– জানিস আরশি, আমাদের দাদি মানে দাদা বৌ টাও ছিলো এমন। আমাকে আর রিদকে সেই ছোট বেলায় এভাবে পাশে বসিয়ে খাইয়ে দিতো। আমার এখনো মনে আছে। আজ আবার আমার দাদার বৌ টাকে আমাদের সামনে দেখতে পেলাম।
– হুম কথার ফাকে এখন তুমি আমাকে দাদার বৌ বানিয়ে ফেললে।

খেয়ে দেয়ে বসে আছে রাত ও আরশি। রিদ সুয়ে সুয়ে রাতের দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– তুই আজ এখানেই থাক আমার সাথে। জদি সমস্যা না হয়। গাড়ি এনেছিস তো তাই না?
– হুম,,
– তাহলে আরশিকে এক টানে বাড়ি পৌছে দিয়ে তুই আবার চলে আয়।
রিদের কথায় অবাক হলো আরশি। অনেক জোড়াজুড়ির পর সবাইকে রাজি করিয়েছে সে আজ রিদের পাশে থাবে। রিদও সম্মতি দিয়েছে থাকতে। আর এখন বলছে বাড়ি দিয়ে আসতে?
আরশি একটু রাগি ভাবেই জোর গলায় বলে উঠে,
– আমি যাবোনা, আমি এখানেই থাকবো আজ।
রিদ তার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– বারাবারি করিসনা আরশি। চুপচাপ রাতের সাথে বাড়ি চলে যা। প্রয়োজনে কাল আবার আসিস।
– আমি বলছিনা আমি যাবোনা। আমি এখানেই থাকবো যাবোনা মানে যাবোনা।
– রাত ওকে নিয়ে যাতো এখান থেকে।
– আচ্ছা আরশি থাকতে চাইছে প্রব্লেম কি?
– অনেক প্রব্লম আছে তুই বুঝবি না। যা আরশিকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আয়। আরশি ভালো ভাবে বলছি চুপচাপ রাতের সাথে চলে যা, কাল আবার আসিস।
– রিদ চাইছেনা তাও বেহায়ার মতো থাকতে চাইছিস কেনো। চল বাড়ি চল।
কথাটা একটু রাগি ভাবেই বলে উঠে রাত।

আরশি যেতে না চাইলেও আরশিকে নিয়ে চলে গেলো রাত। বাড়িতে পৌছে দিয়ে আবার রাতের কাছে চলে গেলো সে।
রাত ফিরে এসে রিদের পাশে বসতেই রিদের ফোনটা বেজে উঠে। ফোন তুলে দেখে বৃষ্টির ফোন।
– হ্যালো ভাবি, এতো রাতে ফোন দিয়েছো ঘুমাও নি?
– রাত পৌছেছে?
– এটা জানার জন্যই এতো রাতে ফোন দিলে? বাব্বাহ্ কি দরদ। হুম এসেছে মাত্র।
– আরশিকে এতো রাতে পাঠিয়ে দিলেন কেনো? আসার পর থেকেই শুধু রুমে বসে বসে কাদছে।
– কাঁদুক সমস্যা নাই, একটু পর ঘুমিয়ে যাবো।
– কিছু কি হয়েছে?
– না তেমন কিছু হয় নি। আসার পর থেকেই দেখলাম কাদছে। এভাবে কি কাওকে এখানে রাখা যায় বলুন। আর এখানে কিছুক্ষনপর পর নার্সরা আসছে। এতে আরো আরশির ঘুমের ডিস্টার্বই হতো। আর তার উপর এই শীতের রাত। এই ঠান্ডার মাঝে এভাবে ঘুমের ডিস্টার্ব হলে কি থাকা যায় এই হসপিটালে? তাই রাতের সাথে পাঠিয়ে দিলাম তাকে। এখানে থাকলে আরো কষ্টই হতো তার।
– বাব্বাহ, এই অসুস্থ শরির নিয়েও প্রেয়সির জন্য এতো চিন্তা?
– এই তো তোমার প্রিয়তম আমার দিকে চেয়ে আছে নাও কথা বলে নিশ্চিত হও যে ঠিকঠাক মতো পৌচালো কিনা।
,
,
পর দিন বিকেলে রিদকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ি। এখন মোটামুটি সুস্থ আছে সে।

আজ বৃষ্টি বাবার বাড়ি গেলো রাতের সাথে। নিয়ম অনুযায়ি দু,এক দিন থাকার কথা হলেও রুদ্র চৌধুরি বললো, এই অবস্থায় এতোদিন থাকার দরকার নেই। এক দিন থেকেই আবার রাতের সাথে সাথে চলে আসবে সে।
আজ মেয়ে ও মেয়ের জামাই আসায় খুশি আনন্দে নানান আয়োজনে কাটলো দুপুর টা।
বিকেলে বর্ষা ও বৃষ্টি বসে আছে ছাদের দোলনাটায়। বর্ষা একটু তাচ্ছল্যের হাঁসি দিয়ে বলে উঠে,
– হারিয়ে যাওয়ার নাটকটা করে তো রাতের মনটা খুব ভালোভাবেই জয় করেছিস দেখছি।
– তুমি এখনো সেই পুরুনো কথাগুলো টানছো আপু। আমরা সব ভুলে কি আগের মতো জীবন যাপন করতে পারিনা?
– হুম অবশ্যই, আর তুই তো এটাই চেয়েছিলি। তাই তো এতো কাহিনি করলি। তুই খুব ভালো অভিনয় পারিস রে বৃষ্টি।
বর্ষার ত্যরা বাকা কথায় এবার একটু রাগ হয় বৃষ্টির। বর্ষার দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– রাতের সাথে কে কতোটা অভিনয় করেছে সেটা তোমায় নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবেনা আপু। তুমি রাতের জায়গায় নিজেকে দার করিয়ে দেখো, কতোটা অন্যায় করেছিলে তার সাথে?
– ওটা যাস্ট আমার একটা ভুল ছিলো। আর ভুল তো মানুষেই করে তাই না? তাই বলে তাকে সেই ভুল সংসোধন করতেও সুজুগ দিতে হয়। বড় বোন হয়েও তোর কাছে হাত জোড় করে কেদেছিলাম। আর হারিয়ে যাওয়ার অভিনয় করে আমার সেই কান্নাগুলো অভিনয়ের চাদরেই ডেকে ফেললি তুই। তাই তো আমার ভাগ্যটা আজ এমন।
– তোমার ভাগ্য তুমি নিজেই পরিবর্তন করেছো আপু। আর আমার ভাগ্য হটাৎ পালটে যাওয়ার কারণ ও ছিলে তুমি। অজথা আমায় দোষারপ করোনা।

ধিরে পায়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো বৃষ্টি। বর্ষার চোখ দুটি রাগে লাল হয়ে আছে। এক মুহুর্তের জন্য হলেও বৃষ্টিকে এখন তার চরম শত্রু মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে এই ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে বৃষ্টি ও তার বেবিকে রাতের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে। রাতের সাথে বৃষ্টিকে দেখলেই সহ্য হয় না তার। ইচ্ছে করছে বৃষ্টিকে এখন কথা বলতে বলতে ছাদের কিনারা থেকে টুপ করে নিচে পেলে দিতে। তাতেই রাতের জীবন থেকে সরানো যাবে বৃষ্টিকে। এমন পাশান হৃদয়ের বোন ও দুনিয়ায় দ্বিতিয়টা খুজে পাওয়া যাবে কিনা মনে হয় না।

বৃষ্টি নিচে নামার জন্য ধিরে ধিরে সীড়ির কাছে আসতেই অনুভ করে পেছন থেকে কারো হাতের স্পর্স। আর তা একটু জোড়েই ছিলো। নিজের ওজন সামলাতে না পেরে মনে হচ্ছে এক্ষুনি সীড়ি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পরবে সে। যেমন টা একটা গোলাকার বস্তু সীড়ি দিয়ে ছেরে দিলে পরবে। বৃষ্টি চোখ বন্ধ করে আছে, পিট পিট করে তাকাতেই নিজেকে রাতের বুকে নতুন করে আবিস্কার করে সে। রাত তখন বৃষ্টিকে খুজতে ছাদে যাচ্ছিলো। বৃষ্টিকে এভাবে পড়ে যেতে দেখেই খপ করে ধরে পেলে সে। তবুও ব্যথায় চোক দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে বৃষ্টির। এবার পেটে হাত দিয়ে কেদেই দিলো সে। রাত রাগি চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে। বৃষ্টিকে এভাবে ঘরে রাখায় পারছেনা কষিয়ে কয়েকটা চর বসিয়ে দিতে বর্ষার গালে।

ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে দশ মিনিটের ভিতর এখানে আসতে বলে রাত। বৃষ্টিকে নিচে নিয়ে গিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলো সে। থাকার জন্য যে কাপর এনেছিলো তা সব ঘুচিয়ে নিলো ব্যাগে। এখনি বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি চলে যাবে সে।
বাড়ির সামনে এসেই হর্ণ বাজালো ড্রাইভার। বৃষ্টিকে নিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে সে। বৃষ্টির বাবা মা সামনে এসে জিগ্গেস করলেও কিছু বললো না রাত। শুধু রাগি গলায় বলে উঠে,
– যে বাড়িতে আমার স্ত্রীর এক মিনিটের নিরাপত্তা নেই সেই বাড়িতে আর এক সেকেন্ডও থাকবেনা সে।
– কি এমন হলো কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।
– আপনার বড় মেয়েকে জিগ্গেস করুন বিষয় টা তাহলে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারবেন। চলো বৃষ্টি।
রাত সচরাচর কারো সাথে এভাবে কথা বলেনা। কিন্তু আজ তার কথার ধরন বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কতোটা রেগে আছে।
,
,
,
কেটে গেলো আরো কয়েক দিন। আজ হটাৎ আরশি কলেজ ছুটির পর বের হতেই দেকে রিদ গেটের বাইরে অপেক্ষা করছে তার জন্য। এতো দিন আরশির সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি রিদ। আজ হটাৎ কলেজের সামনে আসায় একটু অবাক হলো আরশি।
পেছন থেকে আরশিকে কেও ডাক দিতেই পেছন ফিরে আরশি। দেখে নতুন স্যার টা(আসিফ)।
– চলে যাচ্ছো আরশি? আমি আরো ভাবলাম আজ তোমাকে নিয়ে এক সাথে লান্স করবো।
আরশি একটু ভ্রু জুগল কুচকে বলে উঠে,
– সরি?
– না মানে, তোমার জদি তারা থাকে তাহলে জোর করবো না।
– ভাইয়া গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে সামনে।
রিদ তখন হেটে এসে আরশির পাশে দাড়ায়। আসিফ হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– হাই ভাইয়া।
রিদ একটু হেসে বলে উঠে,
– আমি আপনার সমবয়সিই হবো।
– তবুও আপনি আরশির বড় ভাই তাই,,,,,,
– হাসবেন্ট, হবু হাসবেন্ট। আপনার জানায় ভুল আছে। আরশি আমার বোন নয় বরং আমার হবু বৌ।
রিদের কথায় এবার চোখ কপালে উঠে গেলো আরশির।
রিদ আসিফ কে বলে উঠে, একটু সাইডে আসুন কথা আছে।
– হুম এবার বলুন।
– মনে হয় সেদিনের হাতের মতো এবার গলায় আঘাত করাতে চান। গলায় কিন্তু বেন্ডেজ করেও আর কোনো লাভ হবে না। সো পড়াতে আসছেন সুন্দর ভাবে পড়াবেন, বেশি লুচ্চামু ভাব থাকলে চোখ দুটু আলাদা করে নিবো শরির থেকে। বিশেষ করে আরশির থেকে দুরে থাকবেন। নাহলে গলার অবস্থাও এই হাতের মতোই হবে। এটা আপনার ফাস্ট ও লাষ্ট ওয়ার্নিং।
রিদ সানগ্লাসটা লাগিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠে, বি-কেয়ার-ফুল। আরশির কাছে গিয়ে আরশির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় গাড়ির কাছে।
– গাড়িতে উঠ।
– কোথায় যোবো আমরা?
– স্যারের লান্সের ইনভাইট টো মিস করে ফেললি। এখন আমার সাথেই চল রেস্টুরেন্টে।
– তুমি কি আমায় ভুল বুঝছো?
– না একধম না। ওই ছেলে তোকে লান্সের ইনভাইট করার সাহস পায় কিভাবে। নিশ্চই তুই এসব বলার সুজুগ দিস তাই। চল তুই আজ কতো খেতে পারিস দেখি।
এটা বলেই আরশির হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে তুললো রিদ।,
,
,
কেটে গেলো আরো তিন মাস।
একটু আগে হসপিটালে নিয়ে আসা হলো বৃষ্টিকে। ওটির বাইরে এদিক ওদিক পায়চারি করছে বাকি সবাই। রাত খুব জোড়াজোরি করে বৃষ্টির সাথে ভিতরে গেলো। বৃষ্টির হাত টা শক্ত করে ধরে আছে সে। ভয় হচ্ছে আজ তার, প্রচুর ভয় হচ্ছে তার এই পিচ্চি বৃষ্টি ও সন্তানের জন্য।

To be continue…………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৯

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৯

গতকাল থেকে আর রিদের সামনে যায়নি আরশি। থাকুক সে তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে। আমি তার কে? কেও না। হয়তো এক সময় অনেক কিছুই মনে করতো আমায়। কিন্তু আমি তার সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারিনি।

আজ চলে জাবে রাত, বৃষ্টি, আরশি ও তার বাবা-মা। রিদ ও বৃষ্টি বসে আছে সোফায়। ব্রেকফাস্ট করে একেক জন একেক কাজে বেস্ত। কেওবা বাইরে হাটতে গেছে, আর কেও চলে গেছে অফিসে। আর কেও দরজা বন্ধ করে গোমড়া মুখে বসে আছে ঘরে। আর রিদ ও বৃষ্টি বসে আছে সোফায়।
– আরশি আজ কলেজে যাবেনা?
– কি জানি, সকাল থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে দেখছি। আচ্ছা রিদ ভাই, গত কাল যে মেয়েটা এসেছিলো সে আপনার তো ফ্রেন্ড তাই না?
– হুম, কলেজ ফ্রেন্ড। দেশে ফিরার পর দেখা হয়েছে তাই বাড়িতে নিয়ে এলাম। আর তাছারা তাকে এখানে নিয়ে আসার অন্য একটা কারণ ও আছে।
– হুম জানি, আরশি।
– ভাবি,
– হুম,,,,,
– আরশি আর আমার সম্পর্কে কেও জানুক আর নাই জানুক। তোমার মোটামুটি কিছুই অজানা নয়। আমার দুর্বলতা সম্পর্কে আরশিকে না জানালেই ভালো হবে।
– আরশি কিন্তু এখন পুরোপুরিই আপনাকে ভালো বাসে। আর আপনিও আরশিকে। তাহলে কেনো এমন ছন্নছারা হয়ে আছেন।
– শুনেন ভাবি, কখনো ছেরে যায় ভাবোবাসার মানুষ মাঝ পথে একা ফেলে, ছেরে যায় তারা না চাইতেও উজার করা ভালোবাসা পেলে। তাই আমি চাই আবেগ নয় ভালোবাসার মানেটা আরশি বুঝতে শিখুক। আমাদের মাঝে আগে এতো কিছু হওয়ার পরও যদি আমি আরশির কথায় দুর্বল হয়ে পরি তাহলে তার কাছে আমার আত্মসম্মান টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে বলুন। আমি চাই যতোটা কষ্ট আমি পেয়েছি ঠিক ততোটা কষ্ট এখন সে পাক। যেদিন আরশি ভালোবাসার মানে পুরোপুরি ভাবে বুঝতে শিখবে সেদিন আমি তাকে নিজের করে নিবো।
বৃষ্টি একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে সোফায় হেলান দিয়ে বলে উঠে,
– আজব ভালোবাসার বিস্তার আপনাদের মাঝে। আচ্ছা আরশি যদি ভালোবাসার মানে বুঝতে বুঝতে অন্য কারো ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলে তাহলে?
– আপনার কি মনে হয়?
– বলা তো যায়না, এই বয়সে মেয়েরা বিবেকের চাইতেও আবেগ কে প্রধান্য দেয় বেশি। হয়তো দেখা যাবে, আপনার কাছে থেকে অবহেলা পেতে পেতে তার কাছে মনে হবে, অন্য কেও তাকে আপনার চাইতে বেশি ভালোবাসে তখন যদি সে তার ডাকে সারা দিয়ে দেয়?
– আচ্ছা ভাবি একটা কথা বলুন, আরশি কি আমায় আগে ভালো বাসতো?
– আমার জানা মতে, না।
– তাহলে সে অন্য কোনো ছেলের সাথে রিলেশনে জড়ায় নি কেনো?
– সেটা আরশিই ভালো জানে।
– কারণ আমি ছোট বেলা থেকেই আরশির পাশে ছায়া হয়ে তাকতাম যাতে তার কাছে কেও ঘেসতে না পারে।
– আপনাদের দুজনই অদ্ভুত, কখন যে মতি গতি পল্টি খায় তার কোনো হিসেব নেই।
রিদ মাথা ঝাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো সেখান থেকে।

আরশিকে ডেকে কলেজে দিয়ে এলো রিদ। যদিও আরশি রিদের সামনে পরতে ইচ্ছে করছে না তবুও নিরুপায় হয়ে তার সাথেই যেতে হলো তাকে।
ক্লাসে আজ কোনো মনোযোগ নেই তার। মন মরা হয়ে বসে ছিলো ক্লাসে।
– কিরে এমন ভাব ধরে বসে আছিস, মনে হয় জামাই অন্য কাওকে নিয়ে ভেগে গেছে সুন্দরি।
হটাৎ কারো কথায় আরশি পেছনে ফিরে দেখে, তৃনা। মেয়েটা সত্যিই অনেক বিরক্তি কর। ছেলেদের মতো চলাফেরা। মাস্তন গিরি। আরো কয়েকটা মেয়ে আছে এমন। ওদের কাজই কাওকে বিরক্ত করা। তাই কিছু না বলে চুপ চাপ বসে আছে আরশি।
মেয়েটা একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে আরশির পাশে বসে।
– ওমা, সুন্দরির দেখি কতো দেমাগ।
গতকাল থেকেই মন মেজাজ চরম পর্যায়ে আরশির। মেয়েটার বিরক্তিগুলো কিছুক্ষন দাত চেপে সহ্য করে, উঠেই ঠাস করে একটা চর মেরে দেয় মেয়েটাকে। রাগে ফোস ফোস করছে আরশি। মেয়েটাও রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি খুন করে ফেলবে আরশিকে।
ওখানে তাদের মাঝে ঝামেলা হওয়ায় ক্লাস শেষে প্রন্সিপাল অপিস কক্ষে ডাকলো আরশি ও তৃণা কে। তাদের অভিবাবক কে ফোন দিলো স্যার। আরশির সব খানে বাবা মায়ের পর লোকার অভিবাবকের জায়গায় রিদের নাম ও নাম্বার দেওয়া। কারণ সব খানে রিদ নিজেই তার নামটা দিয়েছে, যাতে কোনো প্রব্লেম হলেই সে জানতে পারে।
রিদকে ফোন করে কলেজে নিয়ে এলো স্যার। লাইফে প্রথমবার এমন হলো আরশির সাথে তাই ভয়ে রিদের পেছন গিয়ে তার হাত ধরে লুকিয়ে আছে আরশি।

ড্রাইবিং করছে আর হাসিতে লুতুপুতু খাচ্ছে রিদ। পাশে বসে রাগে জ্বলছে আরশি।
– বাব্বাহ্, তুই দেখি আজকাল কলেজে মারামারিও করিস। তোর দেখি অনেক সাহস। চেষ্টা করতে হবে কলেজে ছেলে ভিপি বাদ দিয়ে তোকে ভিপি বানিয়ে দিতে।
– তুমি বক বক বন্ধ করবে রিদ ভাই? চুপ চাপ গাড়ি চালাও।
– আচ্ছা কি নিয়ে লাগলি রে?
– ওফ চুপ করো তো।
রিদ ড্রাইবিং করছে আরশি চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাগ্যিস অভিবাবকের জায়গায় রিদ ভাইয়ার নাম ছিলো। আব্বু অথবা ভাইয়া জানলে আজ বারোটা বাজিয়ে ছারতো আমার।
– মেয়েটা সব সময় এমন করে, আজ একটু বেশিই করেছিলো তাই নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারিনি। প্লিজ বাড়িতে কাওকে কিছু বলোনা প্লিজ।

বিকেলে চলে গেলো সবাই বাড়ি। রিদ ও তার বাবা মাকে যেতে বললেও গেলোনা তারা। অস্ট্রেলিয়াতে সব কিছু বিক্রি করে দেশে চলে আসলো তারা। এখানেই সব শুরু করবে তারা। তাই এখন একটু ঝামেলায় আছে। পরে সময় করে যাবে তারা। আর রিদ তো আগে মাসে ২৫ দিনই ওখানে পরে থাকতো।

সন্ধার পর পড়তে বসলো আরশি। বৃষ্টি হর্লিক্স বানিয়ে তার সামনে রেখে পাশে বসলো। হর্লিক্স দেখে একটু অবাক হলো আরশি। ভ্রু কুচকে বৃষ্টির দিকে তাকায় সে। বৃষ্টি একটু হেসে বলে উঠে,
– আরে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন তো তোমার শক্তি প্রয়োজন তাই না? তা না হলে কলেজে তৃনার সাথে ঝগড়া করবে কি করে?
আরশি চোখ বড় বড় করে তাকায় বৃষ্টির দিকে।
– তুমি জানলে কি করে? রিদ ভাইয়া বলেছে তাই না?
– হুম, বললো, এখন থেকে তোমাকে ভিটামিন যুক্ত খাবার খাইয়ে শক্তি শালি গড়ে তুলতে।
আরশি দাত দিয়ে নিচের ঠোট টা কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে মাথাটা এদিক ওদিক ঢুলিয়ে বৃষ্টিয়ে বলে উঠে,
– যাওতো ভাবি।
রিদের বাচ্চা রিদ। কতো বার হাতে পায়ে ঘরে বললাম কাওকে বলিস না বলিস না। তাও মুখে আটকে রাখতে পারলো না এটা। আজ বাচিয়ে মনে হয় এভারেষ্ট জয় করে ফেলেছে।
– এই ভাবি,,
– আবার কি?
– রিদ ভাই কি বাবা মা ভাইয়াকেও কথাটা বলে দিয়েছে?
– না শুধু আমায় বললো। ওরা কিছু জানেনা। আমিও বলিনি।
– ভালো করেছো এখন যাও। আরশি দাত মুখ খিচে টেবিলে একটা হাত দিয়ে আঘাত করলো।

কিছুক্ষন পর বাবা মায়ের চেচামেচিতে দৌড়ে নিচে চলে যায় আরশি। শুনতে পায়, বাবা মাকে বলছে,
– আমার এখনি হসপিটাল যেতে হবে।
– কেনো? এখন হসপিটালে কেনো?
– রিদ নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। এখন হসপিটালে আছে। আমাকে এখনি যেতে হবে।
– দাড়াও আমিও আসছি।
– না তোমার যাওয়ার দরকার নেই। বৃষ্টির এই অবস্থায় তাকে এভাবে ফেলে যাওয়ার দর কার নেই। তাছারা রাতও এখনো ফিরেনি। কতো সমস্যা টমস্যা আছে। আমি একাই যাচ্ছি।
আরশির বুকটা কেপে উঠে ধুক ধুক করে। মনে পরে গত কাল রাতে অচেনা লোকটার কথাটা। আমাকে থাপ্পর মারায় রিদ ভাইয়াকে ছারবেনা সে। তাহলে কি এক্সিডেন্ট টা সে ই করিয়েছে? ভাইয়া এখন কেমন আছে? কিছু হয় নিতো তার? উত্তেজনা মুলক ভাবে আরশিও বলে উঠে,
– বাবা, আমিও যাবো তোমার সাথে।
– না তোমার যাওয়ার দরকার নেই এই রাতের বেলায়। দিনে তোমার মায়ের সাথে যেও।
কে শুনে কার কথা, আরশি কেদে কেটে অস্থির। অবশেষে রুদ্র চৌধুরি তার সাথে নিয়ে গেলো আরশিকে।

রিদেম মাথায় চোট লেগেছে হাতটাও বেন্ডেজ করা। ঘুমিয়ে আছে সে। ভেতরে চুপচাপ বসে আছে আরশি। আরশির কান্না কাটিতে রিদের পাশে থাকতে দিয়েছে তাকে। বাকিরা বাইরে বসে আছে।
রিদ ঘুম থেকে উঠতেই দেখে আরশি পাশে বসে আছে। ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টা বেজে গেছে।
– এতো রাতে এখানে কেনো এলি তুই? তাও আবার এই শীতের রাতে।
আরশি কাদু কাদু ভাবে বলে উঠে,
– তোমার কিছু হয়নি তো রিদ ভাইয়া?
– না তেমন কিছুনা, এমনি মাথায় একটু চোট লেগেছে আর হাতটা একটু কেটে গেছে তাই ব্যান্ডেজ করা। তাছারা কিছু হয়নি।
– তোমার এমন হওয়ার জন্য আমিই দায়ি রিদ ভাইয়া। আমার জন্যই তোমার এমন হয়েছে।
– আরে ধুর পাগলি, এটা যাস্ট একটা ছোট খাটো এক্সিডেন্ট। এতে তোর কি দোষ?
– আরশি গত কাল রাতের কথা রিদকে বলতে চেয়েও থেমে গেলো।

এই শীতের রাত্রি তাই হসপিটালে থাকা অসম্ভব। আর রিদেরও তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। তাই বাড়ি চলে গেছে সবাই। যদিও একজন থাকতে হবে আর তা হলো আরশি। রিদের মায়ের অবস্থা কান্না কাটি করতে করতে কাহিল। তাই তাকে বাড়ি নিয়ে চলে গেছে। আর আরশিও জেদ ধরেছে সে এখানে থাকবে। এখান থেকে এক পা ও নরবে না সে। তাই রুদ্র চৌধুরিও বললো সমস্যা নেই আরশি যেহেতু থাকতে চাইছে থাকুক। তাছারা একটু পর রাত ও আসছে। সমস্যা হবে না।

রিদ আরশির দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– এই হসপিটালে থাকতে পারবি সারা রাত? তাও আবার এই শীতের রাতে।
আরশি কিছু না ভেবেই বলে উঠে,
– পারবো আমি।
রিদ একটু হেসে আরশিকে ডাক দেয়।
– এদিকে আয়।
আরশি গিয়ে আসলো রিদের পাশে। রিদ একটু সরে বলে উঠে,
– আয় আমার পাশে সুয়ে পর।
– না সমস্যা নেই থাকার জায়গা আছে তো। আর তাছারা তোমারই তো প্রব্লেম হবে।
– না হবেনা। তোকে যা বলেছি তাই কর আরশি। চর খেতে না চাইলে এখানে চুপ চাপ সুয়ে থাক আমার পাশে।
– আরশিও চুপ চাপ লক্ষি মেয়ের মতো সুয়ে পরে রিদের বুকে মুখ লুকিয়ে কেদে উঠলো।

To be continue…………..

~~ আমি রি-চেক করিনা, তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত (সিজন ২) পর্ব-০৮

1

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ২)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৮

শীতল পরিবেশ, চার দিকে নিস্তব্দতায় ঘেরা। ছাদের এক পাশে বসে ফোন টিপছে রিদ। একটু আগে আরশিকে বললো তাকে এক কাপ গরম কফি দিতে। মেয়েটার এখনো আসার খবর নাই। রিদ একরাশ বিরক্তি মুখে ভর করে ফোলের স্কিনে চোখ রাখলো। শীতে শীতল হয়ে থাকা আঙ্গুল গুলো স্কিনে নাচাচাচি করছে।
হাতে দু,কাপ কফি নিয়ে রিদের পাশে এসে বসলো আরশি। গায়ে একটা চাদর জড়ানো তার। রিদের দিকে মগটা বাড়িয়ে দিলে রিদ মগটা নিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকালো।
– এতোক্ষন লাগে আসতে?
আরশি উত্তর না দিয়ে কফির মগে চুমুক দিলো। গলা টেনে দেখার চেষ্টা করলো রিদ কি করছে। কফির মগে চুমুক দিয়ে আরশি বলে উঠে,
– কি হলো রিদ ভাই, এতো বিজি তুমি? আমি যে তোমার পাশে বসে আছি সেটাও তোমার নজরে পরছেনা? কার সাথে চেটিং করছো? ভালো টালো বাসো নাকি কাওকে?
কথাটা একটু মজার ছলেই বললো আরশি। রিদ একটু মুচকি হেসে বলে উঠে,
– কি করে বুঝলি যে আমি কাওকে ভালোবাসি? তোর মাথার প্রশংশা করতে হবে আরশি। বলার আগেই সব বুঝে জাস।
আরশি একটু ভ্রু জুগল কুচকে বলে উঠে,
– মানে?
– মানে আবার কি? জানিস মেয়েটা আমায় প্রচন্ড ভালোবাসে। আমাকে ছারা কিছু ভাবতেও পারেনা। আমিও খুব ভালোবাসি তাকে। বলতে পারিস আমরা দুজনি এই ব্যারে খুবই সিরিয়াস। আস্তে ধিরে সব কিছু গোচগাচ হয়ে উঠুক, তার পর ফ্যামিলিকে বলে একেবারের জন্য আমার করে ফেলবো তাকে।
আরশি একটু রেগে বলে উঠে,
– তুমি মজা করছো আমার সাথে?
– মজা করতে যাবো কেনো আমি? ও হ্যা তোর কাছে তো আবার সব মজাই মনে হয়। যে তোর জন্য যতই সিরিয়াস থাকুক না কেনো, সবই তো তোর কাছে যাস্ট ফান। উপভোগ করিস এসব। তাদের ইমোশন নিয়ে খেলে অনেক বিনোদন পাস তুই। তোর মতো মেয়ে কি আর সত্যি কারের ভালোবাসার মানে বুঝে? আর আমি তো তাকেই চাইবো যে তার সব কিছু দিয়ে আমায় ভালোবাসবে। যার কাছে আমার ভালোবাসা প্রকাশ গুলো বেহায়ার পরিচয় দিবে না। একটা সময় একটু বেশিই বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম রে। ওসব মনে উঠলে এখন সত্যিই হাঁসি পায়।
আরশি অন্য দিকে চেয়ে আছে। হাঁসি মুখটা মুহুর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে। কারন সে বুঝলো যে রিদ তাকে উদ্দেশ্য করেই কথা গুলো বলছে। সত্যিই তো এক সময় এমন একটা রাতে এভাবে ছাদে দাড়িয়ে কতো বাজে বাজে কথা বলেছিলো রিদকে। এতে তার মনে আক্ষেপ থেকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
আরশি কফির মগটা ছুরে ফেলে দেয় নিচে। ভেঙে টুকরু টুকরু হয়ে গিয়েছে কাপ টা। রিদ কিছু না বলে ফোন টিপতে টিপতে কফির মগে চুমুক দিলো।
আরশি কিছুক্ষন ওভাবে দাড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করে হাটা ধরলো। আবার থেকে বলে উঠে,
– অনেক রাত হয়েছে, ঘরে যাবেনা? কুয়াশায় ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
– তুই যা, আমি আসবো আরো পরে। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর।
আরশি আবার হেটে রিদের কাছে গিয়ে তার চাদরটা রিদের গায়ে পড়িয়ে দিলো।
– এটা কেনো পেচাচ্ছিস আবার। আমার দরকার নেই তুই নিয়ে যা।
– দরকার হবে, রাত যখন আরো গভির হবে তখন শীত আরো বাড়বে। আর তোমার দেখছি এখনো ঠান্ডা লাগছে। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারাতারি ঘরে চলে এসো। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

পরদিন আরশি কলেজে গেলো একেবারে ঠিক সময়েই। কেও কেও পড়ছে আবার কেও আড্ডা দিচ্ছে। ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। আজও গতকালে নতুন স্যারটা আসলো প্রথম ক্লাসে।
আরশি খেয়াল করলো স্যারের ডান হাতের কিছুটা অংশ বেন্ডেজ করা। কেও একজন হুট করে বলে উঠলো, স্যার হাতে কি হয়েছে?
স্যারের কথায় জানতে পারলো কাল রাতে রাস্তা পার হওয়ার সময় হুট করে কে জেনো বাইক নিয়ে এসে তার হাতের তুলু বরারব ধড়ালো ছুরি দিয়ে কেটে দিয়ে চলে গেছে। দুর্ভাগ্য বসতো লোকটাকে চিনতে পারলো না স্যার।

আজ দিনটাই যেনো খারাপ যাচ্ছে আরশির। কোনো কিছুতেই মন বসছেনা তার। কলেজ ছুটির পর রিদের জন্য না দাড়িয়ে রাস্তা পার হতেই একটা গাড়ি তার গাঁ ঘেসে চলে যায়। হয়তো একটু হলেই গায়ে লেগে যেতো আজ। বুকে হাত দিয়ে বড় একটা শ্বাস নিয়ে হাটা ধরলো আরশি। প্রায় বিকেল হয়ে গেলো তবুও বাড়ি গেলোনা আরশি। মিম আজ কলেজে আসেনি। মেয়েটা কলেজ মিস দেয় না। আরশির গত কাল রাতে কথা হয়েছিলো তার সাথে। আরশি কয়েক দিন কলেজে আসেনি তাই মিমের কাছ থেকে কিছু নোটস নিতে চেয়েছিলো। মিম বললো আজ কলেজে আসলে দিবো। কিন্তু আজ কলেজে আসেনি সে। আজ হটাৎ মিমের আবার কি হলো? তার বাসায় ফিরার পথেই মিমদের বাসা। তাই বাড়ি না ফিরে মিমদের বাসায় গেলো আরশি। রাত ফোন দিলে বলে, মিমদের বাসায় আসছি বিকেলে চলে আসবো।
ঘরে গিয়ে দেখে মিম বিছানায় কম্বল মুড়িয়ে সুয়ে আছে। গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বর এসেছে তার। ধুর আজ দিকটা পুরাই কুপা।
আন্টিকে জিগ্গেস করতেই জামতে পারে, আজ সকালে পাত্র পক্ষ এসেছিলো তাকে দেখতে। গতকাল রাতেই নাকি তাদের সাথে কথা হয়েছে। আজ সকালে আসলো দেখতে।
মিমকে পছন্দও করে গেছে তারা। মিমদের ফ্যামিলিটা মধ্যবিত্ব ফ্যামিলি। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেও নাকি বিদেশ থাকে। তিন মাসের ছুটিতে এসেছে বাড়ি। তাই বিয়েটাও তারাতারি ঠিক করার কথা চলছে। এই নিয়ে সকাল থেকে চিন্তায় চিন্তায় দুপুরে জ্বর উঠেছে মিমের। মিম নাকি এই বিয়ে করতেই রাজি না। কারণ সামনে তার ফাইনাল পরিক্ষা। পাত্রর বাড়িতে গিয়েও নাকি পড়া শুনা করতে পারবে সে। তাও এখন বিয়ে করতে চায় না মিম।

এখনো রিদ দের বাড়িতেই সবাই কথা আছে আগামি কাল চলে যাবে তারা। বিকেলে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখে সোফায় প্রায় সবাই বসে আছে। এতে একটু অবাক হলেও তার চেয়ে বেশি অবাক হলো রিদের সাথে একটি মেয়েকে দেখে। মুহুর্তেই যেনো একটা ছোট্ট ঝাকুনি দেয়ে উঠে আরশির শরির জুরে। এটাই কি তাহলে সেই মেয়ে? যার কথা গত কাল রিদ ভাইয়া বলেছিলো? আরশি ভেতরে গিয়ে বৃষ্টিকে জিগ্গেস করতেই জানতে পায় এটা নাকি রিদের ফ্রেন্ড। ছোট একটা সস্থির নিশ্বাস ছারে আরশি। মেয়েটার সাথে গিয়ে পরিচিত হয় আরশিও।
– হাই আপু, কেমন আছেন?
– ভালো তুমি?
– জ্বি আলহাম্দুলিল্লাহ্।
পাশ থেকে রিদ বলে উঠে,
– আমার ফুফির মেয়ে আরশি।
– ও এটা তাহলে সেই আরশি? বাব্বাহ্।
কথাটা একটু অন্য রকম ভাবে বলে উঠে মেয়েটি।
রিদ আর মেয়েটি কথা বলছে। আরশি গিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো।

বিকেলে আবার মেয়েটা চলে গেলো। রিদ এগিয়ে দিয়ে এলো তাকে।
সন্ধার পর রিদকে বলে উঠে আরশি,
– এটাই কি সেই মেয়েটা যার কথা হতকাল বলেছিলে?
– তোর কি মনে হয়?
– যা বলছি তার উত্তর দাও রিদ ভাই। এটাই কি সেই মেয়ে যাকে তুমি,,,,,,
– হুম, কেমন মানিয়েছে আমাদের?
আরশির এবার চোখের কোনে পানি জমে গেলো। একটু কান্না মাখা অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– তুমি না আমায় খুব ভালোবাসতে, তাহলে এটাই বুঝি তোমার ভালোবাসা? তুমি না সব সময় ফিউর লাভ এর কথা বলো? তাহলে এটাই তোমার ফিউর লাভ? কাওকে ভালোবাসলে আবার সেই মনে এতো তারাতারিই আরেকজনকে জায়গা দিয়ে দিতে পারলে তুমি?
– হুম তখন আবেগে একটু বেশিই, বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম। তুই নিজেই তখন আমার বেহায়া নির্লজ্জ বলে দুরে ঠেলে দিয়েছিলি। সেগুলো তোকে নতুন করে শুনাতে হবেনা আরশি।
রিদ একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে আবার বলে উঠে,
– অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। বোকার মতো কেদেছিলামও খুব। কিন্তু দিন শেষে যখন নিজেকে এটা বুঝিয়েছি যে, লাইফে নিজেকে নিজেই গড়ে তুলতে হয়, এমন কারো জন্য নিজের চোখের জল ফেলবোনা যে আমার ইমোশনের আমার ভালোবাসার একটু মর্যাদা দিতে শিখেনি। আমাকে এমন কাওকে বেছে নিতে হবে যে আমাকে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবে। ধিরে ধিরে নিজেকে বদলে নিয়েছি আমি। একটা সময় ওসব ভেবে কষ্ট নয় বরং হাসি আসতো।
হুট করেই রিদকে জড়িয়ে ধরে আরশি।
– আমায় ক্ষমা করে দাও রিদ ভাই, আমি মানছি তোমার সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি অনেক বদলেগেছি আমি এখন সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি। রিদ ভাই। বলোনা সব মিথ্যে ছিলো। আর তুমি আমায় সেই আগের মতোই ভালোবাসো?
রিদ আরশিকে নিজের কাছ থেকে ছারিয়ে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় আরশির গালে।
– তোকে বলছিনা, আমার গায়ে টার্চ পর্যন্ত করবিনা, আমার অনুমতি ছারা। নিজেকে কি ভাবিস তুই? এতো কিছুর পরও আমি তোরএই নেকা কান্নায় গলে যাবো? হুট করেই আমার উপর ঝাপিয়ে পরবি আরআমি সব ভুলে যাবো? নো আরশি,,,,,। শরিরের জদি এতোই চাহিদা থাকে তাহলে আমার কাছে না, সেজে গুজে রাস্তায় গিয়ে দাড়া কাস্টমারও পাবি অনেক। নেক্সট টাইম আমার চোখের সামনেও যাতে তোকে না দেখি।
রিদের কথায় ও থাপ্পরের আঘাতে গালে হাতদিয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে আরশি।

রাতে ঘুম আসছেনা আরশির, বালিশে মুখ গুজে কান্না করছি সে। এক সময় সে কাদিয়েছে আর আজ কাদছে। পার্থক্যটা শুধু সময়ের। এটাই বুঝি প্রকৃতির প্রতিশোধ? কাদতে কাদতে এক সময় ঘুমিয়ে পরে আরশি।
ঘুমের মাঝে আরশি অনুভব করে সে হাওয়ার ভাসছে। কেও একজন কোলে করে নিয়ে হাটছে। আরশি কিছু বলে উঠার আগেই লোকটা ধপ করে নামিয়ে দেয় তাকে। চার দিকে খুটখুটে অন্ধকার। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ছাদে তারা। সামনে বসে আছে সেই মাস্ক পরা ছেলেটা। আরশি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,
– কে আপনি? কেনো আমার সাথে এমন করছেন? কি চান আপনি?
ছেলেটা একটু ভারি গলায় বলে উঠে,
– তোমাকে,
– মানে?
– আজ নিশ্চই তোমার নতুন স্যারের হাতের অবস্থা চোখে পরেছে তোমার?
– তার মানে ওটা,,,,,
– হুম আমিই করেছি। অপরাধ ছিলো তোমার সাথে হাত মিলানো।
– কিন্তু কেনো এমন করছেন আপনি? আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?
– মনটা চুরি করে ফেলেছো তুমি। এটাই তোমার অপরাধ। আর তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তারই অবস্থা কারাপ হয়ে যাবে। এখন তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো আমার নেক্সট টার্গেট রিদ। আমার ভালোবাসার মানুষকে আঘাত করা। তার তালে চর দেওয়া। তোমার গায়ে হাত তোলা তো দুরে থাকে, যে আঙুল তুলে কথা বলবে তার সেই আঙুল কেটে কুকুরকে খাওয়াবো আমি।
– প্লিজ আপনি রিদ ভাইকে কিছু করবেন না। ওকে কিছু করবেন না আপনি। আপনার দুটু পায়ে ধরছি আমি। প্লিজ,,,,,,,,,
আর কিছু বলার আগেই ছেলেটা আরশির মুখে একটি রুমাল চেপে অজ্ঞান করে ফেলে আরশিকে।

To be continue…….

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৭

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৭

হাতের তালুতে একের পর এক আঘাত করায় হাতটা লাল বর্ণ ধারণ করে ফেলেছে আরশির। শীতের রাত্রি, এই ঠান্ডায় প্রতিটা আঘাত যেনো আঘাত স্কয়ারে পরিনত হয়ে আছড়ে পরছে হাতের তালুতে। ঘুমের মাঝে তুলে আচমকাই এমন হওয়ায় একেবারে জ্ঞান শুন্য হয়ে পরে আরশি। লোকটার মুখে মাস্ক। আবছা আলোয় ঠিক মতো দেখাও যাচ্ছেনা মুখটাকে।
লোকটা কে তা আরশির অজানা। কে এমন করে তার সাথে? লোকটার পরিচয় জানতে পারলোনা আরশি। হুট করেই একটা চিরেকুট রেখে চলে যায় লোকটা।
ব্যাথায় চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে আরশির। লাইট অন করে চিরেকুট টা হাতে নিলো আরশি,,,
“” লজ্জা করেনা ছেলেদের হাতে হাত রেখে কথা বলতে? তাদের চোখে চোখ রেখে হাসতে? ওই হাত ধরার অধিকার শুধু আমার, ওই চোখে চোখ রেখে হাসার অধিকারটাও শুধু আমার। নেক্সট টাইম এমন ভুল হলে পরিনাম টা এর চাইতেও ভয়ঙ্কর হবে।

ভয়ে আরশির শরির থর থর করে কাপছে। বাম হাতের তালু টা রক্ত জমাট বাধা লাল হয়ে আছে। কান্নাও করতে পারছেনা নিচের ঠোটটা প্রচন্ড গতিতে কাপছে তার। কারণ সে লাইফে কখনো এমন আঘাত প্রাপ্ত হয়নি। আর এমন কোনো ভয়ঙ্কর সিচুয়েশনেও পরেনি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে হাতের তালুটা লাল হয়ে ফুলে আছে। ব্যাথাও করছে খুব। হাতটা সবার চোখ থেকে আড়াল করে রাখছে আরশি। আরশি চায় না এই ব্যাপারে কেউ জানুক। জানলে হয়তো অনেক জবাবদিহি করতে হবে তাকে। বিষেশ করে রিদের কাছে।
সকালের খাবার শেষে রিদ আরশিকে বললো,
– আজ আমার সাথেই যাবি কলেজে। যা চটফট রেডি হয়ে নে।
পাশ থেকে রিদের মা হাটতে হাটতে তার সামনে দাড়িয়ে বলে উঠে,
– দু,দিন হলো মেয়েটা এখানে এসেছে। থাকুক না মজা করবে সব করবে। এই দু,এক দিন না হয় কলেজে না গেলো সে।
– আম্মু, কয়েকমাস পর ওর ফাইনাল এক্সাম। এখন কোনো ফাকি দেওয়া চলবে না।
আরশি করুন শুরে বলে উঠে,
– আজ না গেলে হয় না?
– আমি তোকে জিগ্গেস করেছি? চুপ চাপ রেডি হয়ে নে।
আরশি জোড় গলায় বলে উঠে,
– ভাইয়া ই তো আমাকে পতিদিন দিয়ে আসে। আমি ভাইয়ার সাথে যাবো।
রাত বলে উঠে,
– রিদ নিতে চাইছে সমস্যা কি? আমি নিয়ে যাওয়া আর রিদ নিয়ে যাওয়াতো একই কথা?
– না এক না।
– যাই হোক আমি আজ তের সাথে যেতে পারবো না, রিদের সাথেই যা তুই।
ঠোট ফুলিয়ে মনে মনে রিদকে একশ টা গালি দিতে দিতে রুমের দিকে হাটা ধরলো আরশি। রিদও গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। দুজন ই দুজনের রুম থেকে এক সাথে বের হলো। আরশিকে দেখেই রিতিমতো অবাক হলো রিদ। কারণ রিদের গায়ে একটা কালো শার্ট ও পড়া কালো পেন্ট, আর আরশির গায়েও একটা কালো জামা।
– আমার সাথে ম্যাচিং করে পড়ার কারণ? যাতে লোকজন ভাবে আমরা,,,,,,,,?
আরশি রাগি ভাব নিয়ে আবার নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।
– আবার কোথায় যাচ্ছিস?
– জামা চেন্জ করতে।
– বাপরে ত্যাড়ামি তো দেখি এখনো কমেনি। কানের নিচে দু,টু দিলে ঠিকই কথা শুনবি। চল……….

আরশি বাইরে গিয়ে দেখে একটি নতুন বাইক।
রিদ উঠে স্টার্ট দিয়ে বলে, উঠ,,,,,
– বাইক কেনো গাড়ি দিয়ে যাবো আমি।
– কথা বারাস না আরশি, এমনিই মাথা গরম করে ফেলছিস তুই। উঠতে বলছি উঠ,,,
– এই বাইক কার? আমি তো প্রথম দিন কোনো বাইক দেখিনি এই বাড়িতে।
– এটা চুরি করে এনেছি তোর কোনো প্রব্লেম?
– চুরি করা বাইকে আমি চড়তে যাবো কেনো?
– ওরে মাবুদ রে, দড়ি ফালাও আমি উঠে যাই, বইন এটা কাল কিনছি আজ সকালে দিয়ে গেছে। এবার চল।

আরশি রিদের পিছনে বসলো। রিদ বাইক নিয়ে নেমে গেলো রাস্তায়। আরশি রিদের থেকে হালকা দুরুত্ব বজায় রেখে বসে আছে। ইদানিং কেমন জানি রিদকে ভয় লাগে তার।
– আস্তে চালাও আমার ভয় করছে।
– এভাবে করোনা সতর্কতার মতো তিন চার ফিট দুরুত্ব বজায় রেখে বসলে তো ভয় লাববেই। ধরে বস।
– কি ধরবো?
– আমার মাথা।
– তোমার মাথায় তো হেলমেট। তাহলে কিভাবে ধরবো?
রিদ এবার বাইক থামিয়ে বলে উঠে,
– নাম।
– আরশি।
– তোকে নামতে বলছি নাম জিগ্গেস করিনি।
– এই মাঝ রাস্তায় কেনো নামবো?
– তুই যেভাবে বসলি, তাতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নব্বই (%) এর ও অধিক। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।
– তুমিই তো কাল সকালে বলেছো যাতে তোমার গায়ে হাত না দিই। আর এই মাঝ রাস্তা থেকে কিভাবে যাবো? আচ্ছা তুমি অনুমতি দিলে আমি ধরে বসছি, শক্ত করে ধরে বসবো।
– গুড বয় থুক্কু গার্ল।
রিদ আবারও চালাতে শুরু করলো। আরশি পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রাখলো রিদের। রিদ আবারও থামলো।
– আবার কি হলো?
– তোর কি লজ্জা শরম সব গেছে? এই খোলা রাস্তায় কেও এভাবে ধরে। তোকে আমি শুধু ধরে বসার অনুমতি দিয়েছি, জড়িয়ে ধরতে বলিনি।
আরশি মুখটা গোমড়া করে বলে উঠে,
– আমার ভয় করছিলো তাই। আচ্ছা রিদ ভাই আমি নেমে যাচ্ছি, তুমি চলে যাও। গাড়ি পেলে উঠে চলে যেতে পারবো আমি।
আরশির অভিমানি চোখ দেখে রিদ শান্ত গলায় বলে উঠে,
– উঠ, কাধে হাত রেখে ধরে বস। আস্তে আস্তে চালাবো আমি।

কলেজে পৌছে ব্রেক করতেই আরশির বাম হাত গিয়ে পরে রিদের ঘারে। হুট করে ব্যাথা লাগায় “আউ” করে উঠে আরশি।
আরশি নেমে কলেজের গেটের দিকে হাটা ধরতেই রিদ আবার ডেকে উঠে,
– আরশি।
– হুম,
– এদিকে আয়।
আরশি আবার হেটে রিদের কাছে গেলো। রিদ আরশির বাম হাতটা টেনে বলে উঠে,
– হাতে কি হয়েছে?
– আরশি আমতা আমতা করে বলে উঠে, একটু চোট লেগেছিলো হাতে।
রিদ হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
– তখন ব্যাথা পেয়েছিলি খুব তাই না?
– হুম।
– কেনো এমন করিস তুই? আচ্ছা যা ভেতরে যা। দেড়ি হয়ে গেছে এমনিতেই।
আরশি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। রিদ ততোক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো যতক্ষন আরশিকে দেখতে পাচ্ছিলো সে।

ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে ক্লাস অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। এখন ম্যাথ ক্লাস। মকবুল স্যারের। স্যারের রাগে থর থর করে কাপতে থাকে ক্লাসের মেয়েগুলো। ছেলেরাও অনেকে ভয় পায় স্যারকে। বাইরে দাড়িয়ে দোয়া দুরুত পরে বলেই দিলো,
– ম্যা আই কামিং স্যার?
ভেতর থেকে একটা ছেলে কন্ঠ বলে উঠলো।
– ইয়েস কামিং।
ভেতরে গিয়েই অবাক হয় আরশি। একটা ছেলে বয়সি লোক ক্লাস করাচ্ছে। আদ্রিতার পাশে গিয়ে বসে আরশি। তাকে জিগ্গেস করতেই জানতে পারে। মুকবুল স্যারের স্ত্রী নাকি প্র্যাগনেট ছিলো এই কয়দিন ধরে জটিল অবস্থা, তাই তিনি কয়েক দিনের ছুটিতে গেছেন। তাই মুকবুল স্যারের ক্লসটা এই ছেলেটাই করাবে।
আরশির কাছে গিয়ে কিছু জিগ্গাসাবাদ করলো ছেলেটা। মাথা নিচু করে উত্তর দিলো আরশি।
– নেক্সট টাইম ঠিক সময় আমার ক্লাসে আসবেন।
– ওকে স্যার।
ক্লাস চলা কালিন বাকি সময়টা আরশি খেয়াল করলো ক্লাস করানোর ফাকে মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাচ্ছিলো ছেলেটা। এতে একটু অস্থি লাগছিলো আরশির। তাই ক্লাসে আর তেমন মনোযোগি হতে পারেনি সে। তার চোখ শুধু টেবিলের খাতার দিকেই স্থির ছিলো।

ক্লাস শেষে গেটের বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো আরশি। রিদ অথবা ভাইয়া আসলেই চলে যাবে সে। আরশির পাশে এসে দাড়ালো তখন ক্লাস করানো ছেলেটা।
– হাই, আরশি, দাড়িয়ে আছো যে, যাবেনা? ওহ্ সরি তুমি করে বলে ফেললাম।
– ইটস ওকে স্যার।
– তুমি বয়সে আমার কয়েক বছরের ছোটই হবে। তাই তুমি করেই সম্মোধন করলাম। প্রব্লেম নেই তো?
– নো প্রব্লেম স্যার।
– চলো যাই,,,,,
– আসলে স্যার ভাইয়া আসবে আমায় নিয়ে যেতে।
– ওহ্ আচ্ছা।
তখনই রিদ এসে দাড়ালো তার সামনে।
– এটাই তোমার ভাই? আচ্ছা যাও তাহলে। গুড বাই।
এটা বলেই আরশির দিকে হাত বাড়ালো ছেলেটা। আরশিও যেনো এই সুজুগটা হাত ছারা করতে চায় না। রিদকে জেলাস করার ছোট খাটো সুজুগ গুলোর মাঝে এটাও একটা। আরশিও হাত মিলিয়ে বলে উঠে,
– সাবধানে যাবেন স্যার।
রিদ কিছু না বলে ছোট্ট করে বলে উঠে,
– উঠ।
আরশি উঠে বসলো। আর রিদ টান দিয়ে চলে গেলো। সারা পথ আরশির সাথে কোনো কথা বললোনা রিদ। চুপচাপ বাইক নিয়ে বাড়ি পৌছে গেলো সে।
,
,
বৃষ্টি ও আরশি বসে আছে এক সাথে। বৃষ্টির ফোলা পেট দিখে আরশি কৌতুহলি ভাবে বলে উঠে,
– আচ্ছা ভাবি, এই সময়টায় অনুভুতিটা কেমন হয়?
– অন্য রকম একটা অনুভুতি। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
– শুনলাম নাকি অনেক কষ্ট হয়?
– যখন সন্তান কোলে আসবে, তার কান্নার শব্দ কানে আসবে তখন সব কষ্ট তখন সার্থক হয়ে যাবে। তখন মনে হবে এসব কষ্ট কিছুই না।
– আমার ও না ছোট ছোট বাবু বেবি এদেরকে খুব ভালো লাগে। কারো কাছে দেখলে ইচ্ছে করে চুরি করে নিয়ে চলে আসি। খুব আদর করতে ইচ্ছে করে আমার। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কখনো একটা বেবি পেলাম না। তোমার বেবির জন্য তো আর তরই সইছে না আমার।
– তাই না? আচ্ছা বাবাকে বলবো তোমাকে যেনো তারাতারি কারো গলায় ঝুলিয়ে দেয়। এমনিতেই তো প্রতিবার পাত্র পক্ষকে ভাগিয়ে দাও। কারন কিরে?
আরশি একটু অভিমানি ভাবে বলে উঠে,
– ঘরে পাত্র রেখে বাড়িরের কালেকশনের কি দরকার?
– মানে?
আরশি বৃষ্টিকে ইশারা করে কানে কানে বললো। বৃষ্টি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে বলে উঠে,
– সে কিরে আরশি। এক সময় তো তুমি তাকে সহ্যই করতে পারতে না। আর এখন তার প্রমে হাবুডুবু খাচ্ছো?
– তুমি প্রমিস করো, আমি না বলা অব্দি তুমি এই কথা কাওকে বলবে না?
– আচ্ছা বলবো না। আগে বলো, কবে থেকে তুমি তার ফাদে পরে গেলে?
– জানিনা।

ওইদিন রাতে অচেনা লোকটা আবার এসেছিলো আরশির ঘরে। এবার আর আঘাত করেনি। কপালে একটা চুমু খেয়ে একটা কাগজ রেখে চলে গেলো। কাগজে ছিলো একটা ছোট্ট ম্যাসেজ।
“” তোমার বেবি খুব ভালো লাগে তাই না? আমি সেটাই করবো যা তোমার ভালো লাগবে। অপেক্ষা করো, বিয়ের পর প্রতি বছর তোমার জন্মদিনে উপহার থাকবে একটা করে বেবি।”””
,
,
হাতে আপেল নিয়ে তা ছুরি দিয়ে কেটে কেটে বৃষ্টির মুখে তুলে দিচ্ছে রাত। এসব ফল টল খেতে একধম ভালো লাগেনা তার। একটা খাইয়ে এখন আরেকটা কাটছে রাত।
– আপনি কি আমার পেট টাকে ফলের গোডাউন বানিয়ে ছারবেন?
– কেনো?
– আমার এসব ফল টল খেতে ভালো লাগেনা। তার চেয়ে দুটু আপেলের চেয়ে দুই প্লেট ফুচকা এনে দিলেও, রাগ করবো না।
– আচ্ছা আনবো। ওসব ভাজা পোড়া পরে, এখন ফল খেতে হবে বেশি বেশি। দেখলেনা, ডাক্তার কি বললো? তোমার এখন প্রচুর ভিটামিন ও শক্তির দরকার। আর তার জন্য ফল খেতে হবে বেশি বেশি।
বৃষ্টি মুখ বাকিয়ে বলে উঠে,
– হুম, ওগুলো সব অটো পাস করা ডাক্তারদের কথাবার্তা। অটো পাশ করে ঔষধের নাম হয়তো ঠিক ঠাক মতো জানেনা তাই ফল ফল করে মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। সব অটো পাশ করা ডাক্তার।
– আচ্ছা তারা যখন পরিক্ষা দিচ্ছিলো তখন তুমি মনে হয় দেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিলে তাই না?
বৃষ্টি রাগি লুক নিয়ে রাতের দিকে তাকালো।
– আপনি কি আমায় ইনডিরেক্টলি অপমান করছেন?

To be continue………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৬

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৬

আরশির মাথায় চিন্তার ভাজ। কে হতে পারে এই লোক? রিদ ভাইয়া নয় তো? না না সে তো সন্ধা বেলায় এসে এখন রেস্ট নিচ্ছে। চারদিকে তাকিয়ে তেমন কোনো চিহ্ন পেলোনা আরশি। আরশি রাগে কাগজটা হাত দিয়ে মুচড়িয়ে বল বানিয়ে বাইরে ফেলে দিলো।
সবাই খাওয়ার টেবিলে আজ কতো বছর পর সবাই এক টেবিলে। নিচে না গিয়ে রুমে বসে আছে আরশি। বৃষ্টি ও তার মা ডাকতে আসলে প্রতিউত্তর খাবেনা সে, ক্ষিদে নেই। কয়েকবার বলেও কোনো লাভ হলোনা।

প্রায় ১২ টা অব্দি আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে সবাই। গভির ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই, রিদ বেড়িয়ে রান্না ঘরে গেলো ওখানে খাবার রাখা আছে কিনা দেখতে। কিন্তু রান্না ঘরে তেমন কিছু পেলোনা সে। ফ্রিজ খুলে দেখে খাবার ওখানেই তুলে রাখা হয়েছে। কিছু খাবার বের করে রান্না ঘরে গিয়ে ওগুলো গরম করে নেয় রিদ। প্লেটে খাবার নিয়ে হাটা ধরে সে। আরশি যে রুমে ঘুমাচ্ছে ওই রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে সে।
পাশে খাবারগুলো রেখে ডেকে তোলে আরশিকে।
– কি হলো এতো রাতে এভাবে ডাকছো কেনো? আমার ঘুমও বুঝি সহ্য হচ্ছেনা তোমার? (কথাটা একটু রেগেই বলে উঠে আরশি)
– না আপাততো সহ্য হচ্ছেনা। খাবার গুলো খেয়ে নে তার পর তার পর আবার ঘুমাস।
আরশি হাই তুলতে তুলতে বলে উঠে,
– খাবোনা আমি তুমি যাওতো রিদ ভাই। আমি ঘুমাবো।
– হুম যাবো তো তার আগে লক্ষি মেয়ের মতো খাবার গুলো শেষ করো। নাহলে তো পরে আবার বাড়ি গিয়ে খোটা দিবি। রিদ ভাইদের বাড়ি গেলাম, রাত্রে না খাইয়ে উপাস রেখেছে। আমি কারো খোটার পাত্র হতে চাই না তাই লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নে।
আরশি আবারও হাই তুলতে তুলতে বললো,
– খাইয়ে দাও।
আরশির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বলে উঠে,
– আচ্ছা হা কর।
রিদ একে একে প্লেটের সব খাবার তুলে দিলো আরশির মুখে। ঘুমু ঘুমু চোখে খেয়ে নিলো আরশি।
– তুই তো দেখছি সেই লেভেলের পেটুক রে আরশি। একটিবারও বললিনা যে আর খাবোনা। এতোই যদি ক্ষুদা থাকে তাহলে তখন এমন ঢং করার কি দরকার ছিলো?
বলেই মুচকি হাসলো রিদ।
– ওপ, যাওতো এখন আমি ঘুমাবো।

সকাল আট টা সবাই উঠে গেছে প্রায়। শীত কালে সকাল আট টায়ও মনে হয় এখনো ভোর কাটেনি। গোলাফি কালারের হাতলা লোম ওয়ালা একটা সুয়েটার পড়া আরশির গায়ে। পেছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে, একটা টেডি পুতুল।
রিদের ঘরে উকি দিয়ে দেখে বাহ্ কম্বল মুড়িয়ে সুয়ে আছে সে। কয়েকবার ডাক দিলো রিদকে, কিন্তু রিদের কোনো সাড়া না পেয়ে টেনে উঠানোর চেষ্ট করে আরশি। এবার একটু বেশিই রেগে যায় রিদ।
– সমস্যা কি তোর হ্যা? আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হয় কি করে তোর? সকাল সকাল একটা অবিবাহিত ছেলের গায়ে এসে হমলা দিলি। বেশরম মেয়ে কোথাকার।
– এমন করছো কেনো রিদ ভাই। আমি আরশি তোমার পর কেও না।
– তো কোন দেশের প্রেসিডেন্ট আপনি? আমি তোর কে হই যে এভাবে টেনে তুলছিস আমায়। একজন মেয়ে হয়ে নুন্যতম লজ্জাটুকু তো থাকা দরকার তোর। যা বের হ রুম থেকে।
– তুমি আমার সাথে এমন করো কেনো রিদ ভাই। সেদিনের ভুলের জন্য শাস্থি দিচ্ছো আমায়? আমার উপর এখনো রাগ করে আছো তুমি?
– এই আম্মু,,,,,
রিদের ডাক শুনে রুমে আসলো তার মা।
– কিরে কি হয়েছে? এভাবে ষাড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেনো সকাল সকাল?
– নিজের বাড়িতেও কি একটু শান্তিতে ঘুমানোর অধিকার টুকু নেই আমার? এই সকাল সকাল কেনো এসব উস্কো ঝামেলা এনে হাজির করলে আমার সামনে। যত্তসব ফাউল কার্যকলাপ।
রিদের মা একটু শান্ত ভাবে বলে উঠলো,
– আরশি তুই যা তো আমি দেখছি।
আরশি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রিদের দিকে।

সারাদিন আর রিদের সাথে কোনো কথা বলেনি আরশি।
আজ সন্ধায় রিদের বাবার বন্ধুরা আসবে এ বাড়িতে। এতো বছর পর দেশে আসলো তারা।
সন্ধার সময় মেহমানরা আসতে শুরু করলো একে একে। রিদ ও রাত মিলে সামলাচ্ছে সব। দু,একজন স্মার্ট ছেলেও আসছে দেখছি। আরশি আর বৃষ্টি তখন শিড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো। রিদ হুট করে আরশির পাশ দিয়ে যেতেই কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে,
– পার্টির কোনো ছেলের দিকে নজর দিয়েছিস তো সারে ১৩টার চায়না নিউজে খবর আসবে আরশি নামক এক মহিলাকে হত্যার দায়ে রিদ নামক এক মোহা মানব গ্রেফতার।
বলেই সেখান থেকে সরে গেলো রিদ।
পার্টির চক্কারে রিদের কথা ডান কান দিয়ে ঢুকে বাম কান দিয়ে বেড়িয়ে গেলো আরশির।
একটা ছেকে এসে আরশির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– হাই,,,
আরশিও হাত মিলিয়ে বলে উঠে,
– হ্যালো,,,,
– আমি মাহিম খান। খান ইন্ডাস্ট্রির মালিকের এক মাত্র ছেলে।
– ওয়াও।
আরশি পাশে ফিরতেই দেখে রিদ তার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে।
এবার যেনো একটা উত্তম সুজুগ খুজে পেলো আরশি। রিদের রাগি লুক কে পাত্তা না দিয়ে এবার অন্য একটা ছেলের সামনে গিয়ে নিজেই হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
– হাই আমি আরশি।
– আমি জিসান। নাইস টু মিট ইউ।
রিদ এবার নিচের ঠোট টা দাত দিয়ে চেপে ধরে চার পাশটায় তাকায়। না সবাই ব্যাস্ত দেখছি। দ্রুত পায়ে আরশির কাছে গিয়ে হাত ধরে হেচকা টানে সেখান থেকে সরিয়ে আনে তাকে। টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে সোজা উপরে নিয়ে যায় তাকে। রুমে নিয়ে গিয়ে ছেরে দেয় রিদ।
– ত্যারামি তো এখনো দেখি সই আগের মতোই আছে। কিন্তু বদলে গেছি আমি। আগের মতো তোর সব মেনে নিবোনা আমি। পার্টি শেষ হওয়া অব্দি চুপ চাপ রুমে বসে থাকবি। যদি তোকে আরেকবার নিচে দেখেছি তো ওখানেই হাত পা ভেঙে ফেলে রাখবো।
– ভাইয়া প্লিজ এমন কোরো না। আমি যাষ্ট তোমায় একটু ক্ষেপাতে চেয়েছিলাম। আর কিছু না। প্লিজ এই কানে ধরছি আর কোনো ছেলের সাথে কথা অব্দি বলবো না।
আরশির কথার পাত্তা না দিয়ে প্রস্থান করলো রিদ। যাওয়ার আগে বাইরে থেকে দরজাও লক করে দিয়ে গেছে।

রিদের বাবার বন্ধু ফাহিম সাহেব রিদকে বলে উঠে,
– তো বাবা তোমার স্ত্রীকে তো দেখছিনা। তোমার বাবাকেও এই ব্যাপারে জিগ্গেস করলাম মনে হয় সে যেনো আকাশ থেকে পরলো। হা হা।
রিদ একটু অবাক হয়ে বলে উঠে,
– কার স্ত্রী আঙ্কেল?
– কি আজব, আরে ওই যে তোমার জম্মদিন পার্টিতে যার সাথে স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দিলে। কি যেনো নাম তার?
পাশ থেকে রাত রিদের কানে কানে বলে উঠে,
– বিয়ে করার আগে কার বৌকে নেয়ে হাজির হয়েছিলি তার সামনে?
– আরে ধুর আজব, অন্যেক বৌকে নিয়ে আমি কেনো টানাটানি করবো? আমি কি ওরকম ছেলে নাকি? আমার চরিত্র হলো ফুলের মতো পবিত্র।
রাত এবার আগ্রহ দৃষ্টিতে বলে উঠে,
– কাহিনি টা কি আঙ্কেল একটু খুলে বলুন তো।
– তোমরা আমার সাথে মজা করছো নাকি বুঝতে পারছি না। আরে রিদ ওই যে জম্মদিন পার্টিতে একটা মেয়ের সাথে আমাদের সামনে আসছিলে। বললে, হুট করেই বিয়েটা করে ফেলেছো তোমরা। তোমাদের জন্য দোয়া করতে। ওহ্ মনে পরেছে মেয়েটার নাম। আর…….
মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে রিদ বলে উঠে,
– ও আঙ্কেল মনে পরেছে, একটু সাইডে আসুন আমি সব বলছি।
– পেছন থেকে রাত বলে উঠে, কিরে রিদ তোর বৌ আসলো কোথা থেকে?

রাত তখন প্রায় ১ টা। কন কনে ঠান্ডায় কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়েছিলো আরশি। রুম টাও খুটখুটে অন্ধকার। নিঝুম পরিবেশ।

হাতের তালুতে একের পর আঘাতে হাতটা লাল বর্ণ ধরন করে ফেলেছে। ঠান্ডায় প্রতিটা আঘাত যেনো আঘাত স্কয়ারে পরিনত হচ্ছে। আচমকাই এমন হওয়ায়, জ্ঞান শুন্য হয়ে যায় আরশি। লোকটার মুখে মাস্ক। অন্ধকারে মুখটাও দেখা যাচ্ছেনা তার। যতটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে মাস্ক পড়া তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কে এই লোকটা চিনতে সক্ষম হলোনা আরশি। একটা কাগজ রেখে হুট করে চলে যায় সে।
“” লজ্জা করেনা পর পুরুষের হাতে হাত রেখে কথা বলতে? এক পর কোনো ছেলের সাথে এমন ঘেসাঘেসি করতে দেখলে পরিনামটা আরো ভয়ঙ্কর হবে।

To be continue……

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৫

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৫

আজ দেশে ফিরছে রিদ ও তার বাবা মা। সন্ধার পর দেশের মাটিতে পা রাখবে তারা। গত কয়েকদিন আরশি একটা ছোট্ট শব্দের সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। আর তা হলো অপেক্ষা। পূর্বের দিনগুলো থেকে তুলনা মুলক ভাবে এই কয়েকটা দিন মনে হয়েছিলো একটু বেশিই বড়। অবশেষে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটবে আজ। মামা মামিকেও সেই ছোট্ট বেলায় দেখেছে। যখন তার বয়স ছিলো ১২। তখন মামি তাকে দুষ্টুমি করে বলতো, আমার পিচ্চি বৌ মা। মামির কথায় একটু বিরক্তি ভাব ফুটে উঠতে চাইলেও, লজ্জার কাছে তা চাপা পরে যেতো। তখন লজ্জায় দুরে চলে যেতো আরশি। মাঝে মাঝে অভিমানি স্বরে বলেই ফেলতো।
” মামি তুমি সব সময় আমার সাথে এমন করো কেনো? আমার লজ্জা করেনা বুঝি?
” ওরে আমার পিচ্চি সোনামনিটা দেখি লজ্জাও বুঝে।
” কেনো বড় হয়েছিনা? আর তুমি সব সময় একই কথা বলো কেনো? রিদ ভাইয়া তো আমার ভাইয়া। তুমি এসব বললে তো আমার তার সামনে যেতেও লজ্জা করে।
তখন এক গাল হেসে দিয়ে আলতো করে আরশির গাল টেনে চলে গেলো মামি। তার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলো আরশির সম্পর্ক। যেদিন তারা চলে গিয়েছিলো সেদিন আরশির সে কি কান্না। সেদিন রাতে দোলনায় রিদের কোলে মাথা রেখে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে ছিলো আরশি। সেদিন সারা রাত ওভাবেই রিদের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো আরশি। রিদের আরাম করে বিছানায় সোয়া ছারা ঘুম আসতোনা তখন। ওইদিন সারা রাত জেগে তাকিয়ে ছিলো আরশির পিচ্চি মায়া ভরা মুখের দিকে। আরশির প্রতি সেই দির্ঘ দৃষ্টিই নজর কাড়ে তার। তার পর থেকে কেনো যানি আরশিকে কোনো ছেলের সাথেই সহ্য হতোনা রিদের। তার কাছে কোনো ছেলে ঘেসলেই কায়দা করে সরিয়ে দিতো তাকে। তার ছেলে বন্ধুগুলো হটাৎ করে এমন পল্টি খেতো কেনো তা আরশির কান অব্দি পৌছাত না। ধিরে ধিরে এক সাথে বড় হতে থাকে দুজন। রিদ আর রাত প্রায় সম বয়সি, আরশি তাদের থেকে ছয় বছরের ছোট। আজ আরশি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। সাথে বৃষ্টিও। আচ্ছা মামি কি আজও আমাস সেই পিচ্চিই ডাকবে? তখন তো পিচ্চি ডাকটা শুনে অভিমান ভর করতো তার মাঝে। সেই অভিমানেও নাকি আরশিকে একটু বেশিই কিউট লাগতো তাই বার বার ক্ষপাতো তাকে সবাই। আগের কথা মনে পরতেই গাল চেপে হেসে উঠে আরশি। তার হাসির শব্দ রুমের দরজা পার হয়ে হয়তো পাশের রুমেও প্রবেশ করে ফেলেছে।
তখনই রুমে প্রবেশ করতে করতে তার মা বলে উঠে,
– কিরে পাগলের মতো এমন হাসছিস কেনো একা একা? মনে হচ্ছে আনন্দের বাধ ভেঙে কিছু আনন্দ পাবনা হসপিটালের বারান্দায়ও প্রবেশ করে ফেলেছে।
– হুম রিদ ভাইয়া আসছেনা আজ। ওফ কবে যে সন্ধা হবে?
আরশির কথায় একটু ভ্রু কুচকে তাকায় তার মা। নিজের বোকামুতে জ্বিভে ছোট্ট একটা কামর দেয় আরশি।
– ইয়ে মানে, তোমার মনে আছে মা? মামা মামি রিদ ভাইয়া সবাই যখন ছিলো তখন আমাকে আমাকে নিয়ে কোতো ফাজলামি করতো? মামি একটু বেশিই ছিলো তাই না।
রাত্রি চৌধুরির কুচকানো ভ্র-জুগল এখনো ঠিক হয়নি। কুচকানো ভ্র-জুগল স্বাভাবিক করে বলে উঠে,
– তারাতারি রেডি হয়ে নে বিকেলের মধ্যেই ওই বাড়িতে যেতে হবে।
– তাদের রিসিভ করতে যাবোনা আমরা?
– না, রাত আর তোর বাবাই যাবে।
– ওহ্।

আরশি এক এক করে দেখছে কোন ড্রেসটা পড়লে ভালো হয়? তখনই দেখে আলমারিতে পরে থাকা একটা নীল শাড়ি। তখনই হারিয়ে যায় সেই আগের সৃতি তে।
কলেজের একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরশির কয়েকজন সহ পাঠি এক সাথে শাড়ি পড়ে নাচছিলো। রিদ আরশিকে আনতে গিয়ে তাদের দেখলো। ওখানে কিছু বললো না আরশিকে।
রাতে যখন সবাই ঘুমিয়েছিলো তখন হুট করে রিদ একটা নীল রংয়ের শাড়ি হাতে আরশির রুমে প্রবেশ করলো। আরশি তখন লেপটপে মুভি দেখছিলো। রিদকে দেখে একটুও অবাক হলো না সে। কারণ প্রায়ই রিদ মাঝ রাতে আসে। বারান্দার দরজা অফ করে লাইট অফ করে গায়ে একটা পাতলা কাঁথা টেনে কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার চলে যেতো। আবার কখনো কখনো বর্ষনের রাতে তার পাশে বসে থাকতো সারা রাত, যাতে একটুও যেনো ভয় না পায় আরশি।
কিন্তু আজ রিদের হাতে শাড়ি দেখে চমকে উঠে আরশি।
– একি রিদ ভাই, তুমি এতো রাতে? তাও আবার শাড়ি হাতে?
– তোর জন্য। একটা অনুরুধ রাখবি আরশি?
– কি অনুরুধ।
– তুই এই শাড়িটা পড়ে যাষ্ট পাঁচ মিনিট আমার সামনে দাড়াবি। আমি শাড়িতে তোকে কেমন লাগে এটা দেখেই আবার চলে যাবো।
– পারবোনা।
– প্লিজ।
অনেক জোড়াজুরি করেও লাভ হলোনা।
– আমি শাড়ি পরতে জানিনা। আর পড়লেও সুন্দর হবে না।
– জানতে হবেনা। তুই যা পারবি এটাই আমার জন্য অনেক। না পারলে এমনি পেচিয়ে পড়ে আয় তাও দেখি তোকে কেমন লাগে। প্লিজ আরশি😞
– তুমি যাওতো আমি ঘুমাবো এখন।
সেদিন অনেক জোড়াজুরি করেও আরশিকে তার কথা থেকে এতটুকু নড়াতে পারেনি রিদ।
আরশি কড়া মেজাজে বলে উঠে,
– এক কথা কতো বার বলা লাগে? তোমাকে বলছিনা এখান থেকে যেতে।
রিদ কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে ছিলো আরশির দিকে। তার পর সোফায় শাড়িটে রেখে বলে উঠে,
– কখনো ভালো লাগলে পড়িস, হ্যাপি হবো।
এর পর আর কখনো আরশিকে শাড়ি পড়তে বলেনি রিদ। অবশেষে তাদের এই রাগ অভিমান খুনশুটি এগুলোর সমাপ্তি হয় বিচ্ছেদেই। রিদ কেনো চলে গেলো তার বাবা মায়ের কাছে অস্ট্রেলিয়া? আরশির কথা নামক প্রতিটা তীরের আঘাত রিদের বুকের রাজ্য পাজরে কতোটা গড়ির ভাবে আঘাত এনেছে তা প্রথম সিজনেই সবাই দেখলেন।

শাড়ি পড়া নিয়ে রিদের অভিমান গুলো ভাবতে ভানতে আরশি আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়িটা মেলে ধরলো গায়ে। বাহ্, ভালোই মানিয়েছে তাকে। আচ্ছা আজ এই শাড়িটা পড়লে কি রিদ ভাইয়া খুশি হবে? ভাবতে ভাবতে আবারও তার মা রুমে এসে বলে উঠলো,
– কি রে তোর হলো?
– মা এই শাড়িটা পড়লে কেমন হয়?
– তুই আর শাড়ি? কখনোই তো পড়িস নি।
– তাতে কি? আজ পড়বো।
– পড়তে পারিস?
আরশি মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
– নাহ্।
– আয় আমি পড়িয়ে দিই।
মায়ের কথায় আজ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আরশি। কি ব্যাপার? মা আজ কোনো প্রশ্ন করলো না কেনো? শাড়ি পড়ার কারণ জানতে চাইলোনা কেনো? আরো কেমন আগ্রহ ভঙ্গিতে পড়াতে রাজি হয়ে গেলো।
শাড়ি পড়ানোর পর,
– বাহ্ আমার মেয়েটাকে তো দেখছি আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। মাশাল্লাহ্ যেনো নজর না লেগে যায়। লজ্জা ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে একটা ছোট্ট হাসি দেয় আরশি।
,
,
বিকেলের মাঝেই সবাই চলে গেলো ওই বাড়িতে মানে রিদ দের বাড়ি। বাড়িটা সুন্দর ভাবে পরিপাটি করেই গুছানো সব। রিদ ও তার বাবা মা সবাই বাইরে থাকেও এই বাড়িতে থাকে, এক দারোয়ান ও জমির মিয়া ও জরিনা আপা। জমির মিয়া ও জরিনা আপা সম্পর্কে দুজন স্বামী-স্ত্রী। দুজনই এই বাসায় আগে থেকেই থাকতো। সবাই যখন এখানে ছিলো, তখন তারা দুজনই বাড়ির সব কাজ কর্ম করতো।
বাড়ির চার পাশটায় চোখ বুলায় আরশি। খুব ঝাক ঝমক পুর্নই বাড়িটা। দেখে বুঝাই যাচ্ছেনা এই বাড়ির মালিক গত ৭-৮ বছর ধরে বাইরে ছিলো। আর রিদ চলে যাওয়ার পরও বাড়িটার একটুও অজত্ন হয়নি।

সন্ধা পার হতে চললো, আরশির বুকের বা-পাশের টিপ টিপ শব্দটা যেনো ক্রমশ বেড়েই চলছে। বুকে হাত দিয়ে একটা বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে বার বার স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে আরশি। কিন্তু না টিপ টিপ করা আওয়াজ টা ক্রমশ বারছেই। মনে হচ্ছে এক্ষুনি হার্ট এ্যাটাক করবে সে।
কিছুক্ষন পর গাড়ির আওয়াজ এলো কানে। রোবট হয়ে যায় আরশি। আজ কিসের এতো ভয় তাও বুঝতে পারছেনা সে। সবাই ছুটে গেলো মেইন দরজার দিকে। রিদ ও রাত একে অপরের কাধে হাত রেখে কথা বলতে বলতে ঘরের দিকে আসলো সাথে তার বাবা মা ও রুদ্র চৌধুরি। রিদ গিয়ে সালাম করলো রাত্রি চৌধুরিকে।
– তুমি গেলেনা কেনো ফুফি। আংকেল বললো, তুমি নাকি যেতে ইচ্ছুক নও তাই তাদের পাঠিয়েছো?
– কিহ্, ও তোকে এইসব উল্টোপাল্টা বুঝিয়েছে না? আরে সে ই তো আমাদের নেয়নি। আমাদের এখানে রেখে চলে গেছে বাপ ব্যাটা মিলে। আর এখন তোকে উল্টোপাল্টা বুঝাচ্ছে না?
– আচ্ছা ফুপি বাদ দাও চলো।

আরশি এক পাশে দাড়িয়ে থেকে উকি দিয়ে দেখছে তাদের। সাদা টি-শার্টের উপরের জামাটার রং কালো। চোখে সানগ্লাস। হাতে একটা কালো রংয়ের এ্যাপেল ওয়ার্চ। ফর্সা মুখে দাড়ি ও হেয়ার কাট টা যেনো স্পর্শ ফুটে উঠেছে।
আরশি বির বির করে বলে উঠে,
– ওয়াও, নিজেকে তো দারুন পরিবর্তন করেছে দেখছি। একেবারে হ্যান্ডসাম বয়। তাই বলে এই সন্ধা বেলায়ও সানগ্লাস? বাপরে কি ঢং।
আরশির বির বির রিদের কান অব্দি যেতে সময় লাগলো না। সবাই উত্তেজনায় অস্থির রিদ একটু আর চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। রিদ একটু এগিয়ে বলে উঠে,
– কেমন আছো জমির চাচা?
– জ্বি বাবা আলহাম্দুলিল্লাহ ভালো। তোমাদের সবাইকে পেয়ে আরো বেশি ভালো হয়ে গেলাম।
– আরে জরিনা আপা, কেমন আছেন?
– এই বাবা দাড়াও এক মিনিট, আমি তোমার চাচা হলে সে আপা হলো কি করে।
– ওফ চাচা পুরনো অভ্যাস তো তাই মুখে স্লিপ কাটছে। এখন তো উনি আমার চাচি।
রিদের কথায় লজ্জায় আচল দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো জরিনা।

আরশি খেয়াল করলো রিদ সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলছে। কিন্তু তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। এতে একটু রাগ হলো আরশির।
রিদ বলে উঠে,
– তোমরা কথা বলো আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।
পাশ থেকে রাত বলে উঠে,
– আচ্ছা তুই যা ফ্রেস হয়ে আয়, আমি গাড়ি থেকে জিনিস গুলো নিয়ে আসি।
– তুই যাবি মানে? লোকজন আছে তো।
– আরে তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবেনা। তুই যা তারাতারি চট করে ফ্রেশ হয়ে আয়।
বলেই বাইরে চলে গেলো রাত। রিদ উপরের দিকে হাটা ধরতেই আরশি গিয়ে পথ আটকায় তার। অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– আমায় দেখতে পারছোনা রিদ ভাই? নাকি দেখেও না দেখার ভান করছো?
– আমি কি অন্ধ নাকি যে এরোকম একটা জল জেন্ত মানুষকে দেখবো না?
– তাহলে কথা বলছো না যে?
– কি বলবো? আরশি কেমন আছিস? তুই বলবি ভালো আছি। এটাই তো নাকি?
রিদের কথায় একটু কষ্ট পেলো আরশি। তাও একটু হাসার চেষ্টা করে বলে উঠে,
– আমায় কেমন লাগছে আজ।
– আমায় নয়, আগামি কাল বাবার বন্ধুদের সাথে তাদের দু,একজন ছেলেও আসবে। তাদের দেখাস ও জিগ্গেস করিস তোকে কেমন লাগছে?
রিদ এখনো অন্য দিকে তাকিয়েই কথাটা বললো। আরশির দিকে তাকালোনা সে। আরশি আবারও বলে উঠে,
– পড়নের শাড়িটা তুমি চিনতে পারছো?
রিদ এবার হন হন করে উপরে চলে গেলো। আরশির প্রশ্নের উত্তর দিলো না সে।
আরশি হয়তো দেখাতে চেয়েছিলো, দেখো আমি তোমার দেওয়া শাড়িটা পড়ে আজ তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি। আজ তোমার যত খুশি দেখো আমায়। আর শুধু একটিবার বলবে আমার কেমন লাগছে?
রিদ যতক্ষন রুমে গেলোনা ততোক্ষন পর্যন্ত তাকিয়ে রইলো আরশি। বৃষ্টি এসে হাত ধরে কি কারণে যেনো হাসতে হাসে সেখান থেকে নিয়ে গেলো তাকে। কিন্তু আরশির মুখে আজ কোনো হাসি নেই।
আরশিকে দেখেই রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– এই তো আমার আরশি।
– বাহ্, সেই পিচ্চিটা বড় হয়ে গেছে দেখছি, মাশাল্লাহ্।
– হুম। কতো জায়গা থেকে দেখতে এসেছে তাকে। পছন্দও করে গেছে কিন্তু পরে শুনি মেয়ে তাদের পছন্দ হয়নি। বুঝতাম না কেনো এমন করতো সবাই? পরে জানতে পারি সব তারই কাজ। কৌশলে সব পাত্র পক্ষকে বিদায় করে দিতো, বিয়ে না করার ধান্দায়।
– বাব্বাহ্, দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো পিচ্চি পিচ্চি, কেমন একটা ইনোসেন্ট ভাব।
– ইনোসেন্ট না? আস্ত ফাজিলের হাড্ডি।
পাশ থেকে আরশির মামা বলে উঠে,
– নিজে মনে হয় একে বারে শান্ত স্বভাবের ছিলি? আমার মনে হয় না আরশি তোর অর্ধেক ফাজলামু করে। তুই যে বিয়ের আগে কেমন সয়তানের হাড্ডি ছিলি তা তো আমিই জানি বাপরে বাপ।
তাদের ববাই বোনের এমন তর্ক দেখে মুচকি মুচকি হাসছে রুদ্র চৌধুরি।

রুমে গিয়ে শাড়ি চেন্জ করে জামা পরে নেয় আরশি। রাগে শাড়িটা খুলে ফ্লোড়ে ছুরে মারে সে। পরে আবার তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে কাদতে থাকে সে। সারাদিনে করা প্লেন টা নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো। খুব বদলে গেছে রিদ।
ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে টেবিলে রাখা একটা কাগজ। সেটা তুলে নেয় আরশি। লেখা ছিলো,
“” রিদ ফিরেছে ভালো কথা,তার সামনে শাড়ি পড়ে দাড়ানো তো দুরের কথা, হেসে হেসে কথা বললেও এর পরিনাম খুব খারাপ হবে।””

~ইতি, নামটা না হয় অজানাই থাক।

To be continue……….

~~ রি-চেক করতে পারিনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৪

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৪

“না এ্যাবরশন কেনো করবো এটাতো আমারই সন্তান। আমি মা হয়ে এমনটা কি করে ভাবলাম?
গত দুদিন ধরে ভেবেছে বৃষ্টি। নিরবে বসে দু,হাত পেটে রেখে গুন গুন করে কথা বলেছে তার সন্তানের সাথে। অনুভব করছে তার রিপ্লে। সত্যিই খুবই মা মা ফিলিংস আসছে তার মাঝে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার আগেই যেনো মা হয়ে গেছে সে।

ইদানিং রাতে তেমন ঘুম হয়না বৃষ্টির। আজ দু,দিন জেগে ছিলো কিন্তু সে আসেনি। তাহলে কি এটা মাত্রই তার কল্পনা?
রাত তখন ১২ টা,
চার পাশ টা কুয়াশা ঘিরে ধরছে বাইরে। কম্বল দিয়ে সারা শরির ঢেকে শুয়ে আছে বৃষ্টি। তখনই চোখ পড়ে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা একটা লোকের উপর। এটাই কি তাহলে সেই লোক? কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে ধিরে ধিরে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। রুম থেকে বারান্তা অব্দি যেতে পাঁচ মিনিট হাটতে হলো তাকে। এতো সময় লাগারও একটি কারণ আছে। তার মনে জেগে উঠছে নানান ভয়। এটা ভুত নয়তো আবার? এক পা আগাচ্ছে তো আবার দুই পা পিছিয়ে আসছে। কাপা হাতে গ্লাসটা তুলে পানিতে চুমুক দেওয়ার আগেই হাত থেকে পড়ে টুকরু টুকরু হয়ে যায় গ্লাস টা। পানিটা ছরিয়ে পরে মেঝেতে। পানিটা এতোটাই জায়গা দখল করলো যে, মনে গহচ্ছে এখানে এক গ্লাস নয় বরং এক বালতি ঢেলে দেওয়া হয়েছে পানি। কাচ ভাঙার শব্দেও কোনো সারা দিলোনা ছেলেটি। আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। অনেক হাটার পর বারান্দায় পা রাখতে সক্ষম হলো বৃষ্টি। এবার ছেলেটি ঘুরে দাড়ায় বৃষ্টির দিকে। মুহুর্তেই যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো বৃষ্টি। সাদা টি সার্টের উপর একটা কালো জেকেট পরে আছে লোকটা। মাথায় বাচ্চাদের মতো একটা কান টুপি। হাতদুটি বুকে গুজে তার দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
বৃষ্টি কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো,
– আ আ আ আ আপনি?
– কেনো অবাক হলে বুঝি?
– আ আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন বা কি করে জানলেন আমি এখানে এসব জিঙ্গের করে সময় নষ্ট করবোনা আমি। কারন আমি জানি আপনার কাছে এসব ছোট খাটো বিষয় গুলো বের করা অসাধ্য কিছু নয়। আমি বলতে চাইবো, আপনি এখানে কেনো এসেছেন? আপুর সাথে তো সুখেই আছেন নিশ্চই।
– না এমনি দেখতে আসলাম আমার সালিটা কেমন আছে।
– আমি ভালোই আছি এখানে। এর চেয়ে ভালো থাকতে আমি চাইও না। চলে যান আপনি এখান থেকে।
ঠাস করে একটা চর পরে বৃষ্টির গালে। বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগে আরো একটা চর পরে অপর গালে। এবার ভয়ে বাকি যা বলার ছিলো তাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা বৃষ্টির। গালে হাত দিয়ে ছল ছল দৃষ্টিতে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে। দেখে মনে হচ্ছে এতোক্ষন অনেক কষ্টে কান্নাটা আটকে রেখেছিলো সে। এবং এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কতোক্ষন এই চেষ্টা সফল থাকবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
রাত রক্তিম চক্ষু জোড়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– প্রথম চর টা এই জন্য দিলাম যে। আমাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার সাহস হলো কি করে তোমার? আর দ্বিতীয় চর টা এই জন্য দিলাম যে আমার মুখের উপর ধমক দিয়ে কথা বলার সাহস পেলে কোথায় তুমি। এতো সাহস আসলো কোথা থেকে তোমার?
বৃষ্টির মুখে কোনো কথা না শুনে রাত এবার জোর গলায় বলে উঠে,
– আমি কোনো মুর্তির সাথে কথা বলছি না, যা বলার তোমাকেই বলছি।
– সরি।
– আমার মাথায়ই আসছেনা যে এতো বোকার মতো বলদা বুদ্ধি আসলো কি করে তোমার মাথায়? কি করে ভাবলে যে এই রাতের হাত থেকে পালিয়ে তুমি অন্য জায়গায় থাকতে পারবে? আর তুমি ভেবোনা তোমার রেখে আসা ডিবোর্স পেপারে সাইন করেছি আমি। ওটা অনেক আগেই ছিরে ফেলে দিয়েছি। কেনো এমনটা করলে তুমি? আর যাই হোক তোমার প্রব্লেম গুলো আমাকে জানাতে পারতে।
এবার হুট করেই রাতকে জড়িয়ে ধরলো বৃষ্টি। বৃষ্টির চোখের জন মিশে যাচ্ছে রাতের গায়ে। রাতের বুকে মাথা রেখে অঝরে কেদে চলছে বৃষ্টি।
রাত নিজেকে না চাইতেও শক্ত করে বলে উঠে,
– এতো ঢং আমার মোটেও পছন্দ নয়। আরএতো রাতে কোনো ভদ্র লোকের বাড়িতে আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছিনা যাও ঘুমাও এখন। যা বলার কাল বলা যাবে।
বলেই সোজা হেটে বেড়িয়ে যাচ্ছে রাত। পেছন থেকে নিচু স্বরে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কোথায় যাচ্ছেন? ঘুমাবেন না।
থামকে দাড়ায় রাত। মনে মনে বলে উঠে, তোমার কাছে থাকলেই তোমার ইমোশনাল কার্যকালাপে দুর্বল করে ফেলবে আমায়। আর তোমার কাছে থাকলে হাজারো রাগ করে থাকলেও বার বার তোমাকে আদর করতে চাইবে এই অবুজ মন।
রাত একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলে উঠে,
– অনেক হিসেব নিকাশ বাকি আছে তোমার সাথে। বলেই হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় রাত।
,
,
বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো রাত। কলিং ব্যাল বাজাতেই আরশি দরজা খুলে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে থাকে ওখানে। কিছুক্ষন পর উত্তেজনা মুলক একটা চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টিকে। আরশির চিৎকারে বেড়িয়ে আসে রাত্রি চৌধুরি। বৃষ্টিকে দেখে স্তব্দ হয়ে যায় সে ও। এই সকাল সকাল যেনো বড় একটা সারফ্রাইজ হয় সবাই। ঘরে গিয়ে সোফায় বসে সবাই। রুদ্র চৌধুরি ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি?
রাত বলে উঠে,
– খালাম্মাদের বাসায়।
– চট্টগ্রাম।
– হুম।
রাতের মা বলে উঠে,
– কিহ্? রাহি তো আমায় এই ব্যপারে কিছুই বলেনি।
– আসলে আমিই বারণ করছিলাম কাওকে বলতে।
– তার মানে সব তুই জানতি?
– মা পরে সব বলবো। কাল সারা রাত ঘুমাই নি। ওখানে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় ১২ টা বেজে গিয়েছিলো। আর ভোর চার টা বাজে আবার বেড়িয়ে গেলাম সকাল সকাল তোমাদের সারফ্রাইজ দিবো বলে। রাস্তা ফাকা ছিলো তাও দেখো ছয় ঘন্টার মতো লেগে গেলো। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তোমাদের পরে সব বলি?
সকাল দশটা পার হয়ে গেলো। কিন্তু কুয়াশা এখনো পুরুপুরি কাটেনি। শীত কাল, তার উপর সত্য প্রবাহ। সূর্যি মামার দেখা পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।

আজ দিনটা নানার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই কেটে গেলো তাদের।
রাত তখন নয়টা, শীতে কন কন অবস্থা।
বারান্দায় ইজি চেয়ারটায় বসে আছে রাত ও বৃষ্টি। একই চাদরে মোড়ানো দুজন। রাতের কোলের উপর বসে আছে বৃষ্টি।
– তুমি তোমার নিজ সুবিধা মতোই বসো। এই অবস্থায় কোনো প্রব্লেম যেনো না হয়।
– মানে? তার মানে আপনিও জানেন? কিন্তু কি করে? আমিতো আপনাকে বলিনি।
– তোমার মাঝে যে বড় হচ্ছে সে কে? তোমার আমার মানে আমাদেরই তো সন্তান তাই না? তো আমি জানবো না? আর প্র্যাগনেন্সি রিপোর্টগুলোও তো আমার কাছেই আছে। তুমি যে সেদিন ডাক্তাদের কাছে গিয়েছিলে। পরিক্ষা করে সুখবরের আভাস পেয়েই বেড়িয়ে গিয়েছিলে। তো তুমি কি জানো যে রিপোর্ট গুলো আনতে হয়?
– আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো জানেন না।
– তাই এ্যাবরশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে তাইতো?
রাতের কথায় চক্ষু জুগল বড় বড় হয়ে যায় বৃষ্টির।
– কে বললো আপনাকে? আমি এমন একটা জঘন্ন সিদ্ধান্ত কেনো নিতে যাবো? আমার নিজেরই তো সন্তান নাকি?
রাত মেসেন্জার অন করে বৃষ্টির সামনে ধরলো। এতে পুরাই হতোভাগ বৃষ্টি।

– আচ্ছা ভালো কথা আপনি জানলেন কি করে যে আমি পালিয়ে যাবো?
– সেদিন আমি আর বর্ষা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলে তুমি রাগে ফোসফোস করছিলে ওটা কি আমি দেখিনি? আর ওদিন আমি বর্ষাকে ডেকেছিলাম এই জন্য যে, ওর কিছু সৃতি আমার কাছে রয়ে গিয়েছিলো? তাই ওগুলো ফেরত দিতে।
আর জানলাম কি করে? তোমাকে আমি ফলো করতাম, কারন তোমার অঙ্গি ভঙ্গি কেমন সন্দেহ জনক ছিলো। ফলো করেতে করতেই সব জানলাম ও বুঝলাম। যখন রাতে আমায় ঘুমের মাঝে রেখে বেড়িয়ে গিয়েছিলে তখন কি আমি সত্যিই ঘুমিয়েছিলাম? নাকি করছিলাম ঘুমের অভিনয়। তুমি গাছের ঢালে হাটলে আমি হাটি পাতায় পাতায়।
– সবই যখন জানতেন তাহলে আটকালেন না কেনো?
– কারণ আমি তোমাকে বুঝেতে চাইছি শুন্যতা শব্দটার স্বাদ কেমন। মাহিতের অফিসে কাজ করিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে, অন্যের কাজ করে খাওয়ার স্বাধ কেমন। মাহিত তোমার সাথে ও অন্যান্ন রা তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার কারতো, কারণ আমি তোমায় বুঝাতে চেয়েছি যে, এই শহরে কাছের মানুষগুলো ছারা অন্যের কাছে তুমি কতোটা তুচ্ছ। আমি সব সময় তোমায় চার পাশ থেকেই তোমায় আগলে রেখেছি কিন্তু তোমায় বুঝতে দেইনি আমি। নাহলে ঠিকই বুঝতে বাস্তবতা কখনো কখনো কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাও আবার এক অচেনা শহরে।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
– হুম।
– এতো কিছুর পরও আপনি আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছেন কেনো? এমন সিচুয়েশনে কারোর ই স্বাভাবিক আচরণ করার কথা না। কিন্তু আপনি এমন ভাবে আচরন করছেন যেনো কিছুই হয়নি।
– হুম, ভালোবাসি তাই।
– আপনি এতো ভালো কেনো?
– কে বললো তোমায়? এখন তো তোমার সামনে আমার সব চেয়ে ভয়ঙ্কর রুপটা আনতে মন চাইছে।
– কেনো?
– কারণ তুমি কেনো আমাদের ভালোবাসার অংশ টুকু ছুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছিলে?
– সরি।
কন কনে শীতে চাদরটা ঠিক করে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় বৃষ্টিকে।
,
,
সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আরশিকে বলে উঠে বৃষ্টি,
– আরশি শুনলে একটি কথা?
– না বললে শুনবো কোথায়?
– মামারা দেশে ফিরছে।
– কোন মামা?
– রিদ ভাইয়া সহ তার বাবা মা। কথা ছিলো আরো কয়েকমাস পর আসবে দেশে। কিন্তু দু, একদিন পরই আসছে তারা।
আরশির চোখে মুখে উত্তেজনা মুলক খুশির আভাস। খুশিতে যেনো চোখ মুখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো তার। আরশি হকচকিয়ে বলে উঠে,
– রিদ ভাইয়াও আসছে?
– বাপরে, তোমার মনে দেখি আজ হুট করেই লাড্ডু ফুটেছে।

To be continue…………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৩

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৩

বৃষ্টি ঘুমিয়ে আছে। মুখের উপর কিছু চুল পরে আছে এলোমেলো হয়ে। ঘুমের ঘরে অনুভব করলো কেও মুখের উপর থেকে চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে কপালে তার ঠোট যুগল ছুইয়ে দিলো। বৃষ্টির সমস্ত শরির জুরে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।
লোকটা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুখ ভর্তি ভালোবাসার পরশ একে দিলো সে। এবার নিজের ঠোটে অন্য ঠোটের ছোয়া পেতেই জমে পাথের হয়ে যায় সে। চক্ষু জোড়া বন্ধ হয়ে আছে তার। কারণ এই ছোয়া তার খুবই পরিচিত।
একটু পর অনুভব করলো পাশে কেও নেই। পিট পিট করে চার পাশটায় তাকালো সে। হালকা বাতাসে পর্দা গুলো নরছে। হারিয়ে গেলো তার সেই পরিচিত ছোয়াটা।
লাইট অন করে চার পাশটায় ভালো করে দেখে বৃষ্টি। রুমের দরজা বন্ধ, বারান্দায় গিয়ে দেখলো তাও কেও নেই। তাহলে কি এটা স্বপ্ন ছিলো?
কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে রইলো বৃষ্টি। চোখের কোন দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে তার। একটু পরই হাটু গড়ে বসে কেদে উঠে সে।
“” আপনি এতোটা নিষ্ঠুর কেনো? স্বপ্নে এসেও আবার হারিয়ে গেলেন? আচ্ছা আপনি কি সত্যিই এসেছিলেন নাকি এটা আমার মনের ভুল স্বপ্ন?

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকটা দিন। একটা অফিসে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে আসলো বৃষ্টি। করো উপরে আর কয় দিন? এবার না হয় নিজের খরচ নিজেই বহন করবে সে। অবশ্য ইন্টার ভিউ দিতে অফিসের ঠিকানাটা তার বর্তমান আশ্রয় কেন্দ্রের মহিলাটাই দিয়েছে। এভাবে অন্যের অন্ন ধংস করতে আর ভালো লাগছেনা তার। তাই বৃষ্টির ডিসিশন ছোট খাটো হলেও একটা জব করবে সে। কোনো মতে নিজের খরচ চালিয়ে নিতে পারলেই হলো। ইন্টার ভিউ দিয়ে রিক্সা নিয়ে বাড়ি ফিরছে বৃষ্টি। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো ইন্টারভিউ না দিয়েই চাকরিটা হয়ে গেলো তার। শুধু তারা বৃষ্টির সাথে হালকা একটু কথা বলেই বললো,
– কনগ্রেচুলেশন আপনার চাকরি কনফার্ম। কবে থেকে জয়েন করছেন?
বৃষ্টি খুশিতে হকচকিয়ে বলে উঠে,
– থ্যাংক ইউ স্যার, আপনারা চাইলে কাল থেকেই জয়েন করবো।
– ওকে, নো প্রব্লেম। তাহলে কাল থেকেই শুরু। অল দ্যা বেস্ট।
– থ্যাংক ইউ স্যার।
– মোষ্ট ওয়েলকাম।

বৃষ্টির মাথায় একটা ভাবনা। এই অফিসের বস টাকে কেমন যেনো চেনা চেনা মনে হচ্ছে তার। কিন্তু মনে করতে পারছেনা ওনি আসলে কে।
ও মাই গট, রাতের সাথে একটা মিটিংএ দেখেছি তাকে। আচ্ছা লোকটা আমায় চিনে ফেলেনিতো আবার? না, তা আবার সম্ভব নাকি? সেই কবে দেখেছে তাকে। তাও ঠিক মতো কথাই হয়নি। চিনলে আজ নিশ্চই রাতের সম্পর্কে কিছু জিগ্গেস করতো অথবা তার মতো একজন বিজনেস ম্যান এর স্ত্রী হওয়ার সত্বেও এখানে সামান্ন কয়েক হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতে আসায় অবাক হতো। যাই হোক চিনেনি ভালোই হয়েছে।
রাতের কাছ থেকে দেখে দেখে মোটামুটি অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। তারপরও কোনো সমস্যা হলে এখানে তো লোক আছেই।

বাসায় ফিরে আগে ওই বাড়ির মহিলাটা মানে তার আন্টির মুখে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয় বৃষ্টি। আজ তার আনন্দ আকাশ ছোয়া
এভাবেই চলতে থাকে সব। নতুন অফিস প্রথম প্রথম একটু নার্ভাস লাগলেও এখন সব মানিয়ে নিয়েছে বৃষ্টি।
প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক থাকলেও ইদানিং অফিসের বস তার সাথে অ-স্বাভাবিক আচরণ করে। হালকা ভুল হতেই শুধু ঝাড়ির উপর রাখে। দোষ না দেখলেও খুটিয়ে একটা দোষ বের করে ঝাড়ির উপর ঝাড়ি। এতো কিছু ও চুপচাপ সহ্য করে নেয় বৃষ্টি। কারণ চাকরিটা হারালে তাকে আবার অন্যের করুনার পাত্র হয়ে থাকতে হবে। মাস শেষে বেতনের টাকা গুলো হাতে নিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে একটা দির্ঘশ্বাস নেয় বৃষ্টি। এ রকম কতো টাকা এক সময় তার হাতে ছিলো। হাত ভর্তি টাকা থাকলেও ওসবে ইন্টারেষ্ট ছিলোনা বৃষ্টির। কারণ তার প্রয়োজনিয় জিনিস গুলো রাতকে বললে সে ই এনে দিতো। এর থেকেও বড় একটা অফিসের মালকিন ছিলো সে। আর আজ, এই সামান্য কিছু টাকার জন্য এতো ঝাড়ি খেয়েও এই অফিসের কর্মচারি হয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। সবই এই কোপাল। সার্থপর এক বোনের জন্য নিজের হাসি খুশি সব বিসর্জন দিলো সে।

এভাবেই কেটে গেলো কয়েকটি মাস। শীত কাল চলে এসেছে। আজ দু,দিন হলো খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে রাত্রি চৌধুরি। কারণ গতকাল রাতের রুমে ঢুকলেই রাতের ড্রয়ারে পরে থাকা প্রগন্যান্সি রিপোর্টগুলো পায় সে। সেই চার মাস আগের রিপোর্ট। বৃষ্টি যেদিন নিখোজ হয়েছে তার দুই দিন আগের।
ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই মায়ের হাতে এই ফ্রেগন্যান্সি রিপোর্ট গুলো দেখে চমকে উঠে রাত। তাহলে মা আজ সব জেনে গেলো। রাত্রি চৌধুরি ধিরে পায়ে এগিয়ে যায় রাতের দিকে। রাগে ফোস ফোস করছে তার সারা শরির। নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে সজোরে একটা চর বসিয়ে দেয় রাতের গালে।
– ছি রাত, ছোট বেলা থেকে তোকে বড় করার এই পরিনাম? তুই আমাদের সন্তান না? ছোট বেলা থেকে কি তোকে একটু পরিমান অবহেলা অযত্ন করেছি আমরা? বরং, সব সময় চিন্তা করতাম আমার ছেলেটা আমার মেয়েটার কোনো অযত্ন হচ্ছে কিনা? তুই কি করে পারলি স্ত্রী সহ তোর এই অনাগত সন্তানের কোনো খোজ খবর না নিতে? আজ কতোটা মাস হলো তারা নিখোজ। কিন্তু তোর মাঝে কোনো উত্তেজনা বা শুন্যতার ছাপ দেখছিনা আমি। কতো স্বপ্ন ছিলো নাতি নাতনির হাত ধরে ধরে খেলা দেখাবো তাদের। এই শেষ বয়সটা তাদের নিয়েই কাটিয়ে দিবো। এই দু,হাত তুলে কতো দোয়া করেছি যেতে এই সংসারে একটা দাদু ভাই এর জন্য। আর তুই এই খবরটাও আমার কানে একটিবারের জন্য পৌছালিনা?
– আমি চেয়েছি সব মিলিয়ে একেবারে তোমাকে সারফ্রাইজড করে দিবো।
– চুপ, কিসের সারফ্রাইজড? নিজের স্ত্রীর কোনো খোজ খবর নেই সে আসছে সারফ্রাইজ দিতে বাহ্।
– রাত এবার আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠে, হুম সময় আসলে ঠিকই দেখবে।
– বৃষ্টি এই বাড়িতে পা রাখা পর্যন্ত একটু খাবারও এই গলা দিয়ে নামবে না বলে দিলাম। কোথায় থেকে খুজে বের করবি ওটা তোর ব্যাপার। আমি শুধু বৌমাকে আমার সামনে দেখতে চাই ব্যাস।

ইদানিং আরশির মাঝে মাঝে মনে হয় কেও তার পিছু নিচ্ছে। পেছন ফিরলেই কাওকে দেখতে পায় না সে। কিছু দুর যেতেই আবার মনে হয় কেও পিছু নিয়েছে। আবার পেছন ফিরলে দেখে কেও নেই।
শুধু তাই নয় রাতে ঘুমানোর সময়ও মনে হয় বারান্দায় কারো ছায়া হাটাহাটি করছে। এই শীতেও ভায়ে কম্বলের নিচে গুর গুর করতে থাকে সে। কম্বলের নিচে মাথাটা ঢুকিয়ে থাকলে কিছুক্ষন পর মনে হয় কেও একজন তার পাশে এসে বসেছে।
ইদানিং দিনের বেলায় অনেক হরোর মুভি দেখে সে। বলতে গেলে এক প্রকার নেশা হয়ে গেছে। দিনের বেলায় নিশ্চিন্তে দেখে, আর রাত হলে যতো ভয়। এই ভয়ে রাতে ছাদে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি সে। কিন্তু এতো কিছুর পরও আরশির মনে হয়, এটা তার মনের ভুল না সত্যি সত্যি কেও তাকে ফলো করছে। এই ব্যাপারে কারো সাথে শেয়ারও করতে পারছেনা আরশি। কেও এটা শুনলে নিশ্চিৎ হাসিতে গড়াগড়ি খাবে। উপকারতো হবেই না বরং আরো হাসির বস্তুতে পরিনত হবে সে। আজ রিদ ভাইয়া থাকলে হয়তো তার সাথে শেয়ার করা যেতো। আমার অনেক প্রব্লম কাওকে না জানিয়ে নিজেই সল্ভ করে নিতো সে। সেই এক মাত্র মানুষ যে বাবা মায়ের পর আমায় নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সাপোর্ট করে যেতো সব সময়। আমি সত্যিই খুব অন্যায় করে ফেলেছি তার সাথে। তার ভালোবাসাকে একটুও মুল্য দিলাম না আমি। সেই দিন কতো বাজে ব্যাবহার করেছি তার সাথে। আচ্ছা সে কি আমায় কখনো ক্ষমা করবে? ভালোবাসবে আগের মতো? আমি যে আপনার জন্য এখন পথ চেয়ে আছি রিদ ভাই কখন ফিরে আসবেন আপনি? যেই আমিকে দেখার জন্য রাতের বেলায়ও এটা ওটার বাহানা করে চলে আসতেন আমাদের বাসায়। সব চেয়ে বেশি সময় কাটাতেন এই বাড়িতেই। কিন্তু আজ এতোটা দিন পেরিয়ে গেলো। একটি বারও আমাকে দেখতে ইচ্ছে হলোনা আপনার? কেনো একটিবার ফোনে কথাও বললেন না আমার সাথে?

শীত কালিন শীতল হাওয়া এসে হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির গায়ে। গায়ের চাদরটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিলো সে। শীতের রাত খুটখুতে অন্ধরার চার পাশ। ছোট একটা লাইটে হালকা আলোয় বারান্দায় দাড়িয়ে আছে সে। তখনই কেও পেছন থেকে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় বৃষ্টিকে। মুহির্তেই কফির মগটা হাত থেকে পরে যায় বৃষ্টির। কাচের মগ টা টুকরু টুকরু হয়ে গরম কফি গুলো পায়ে এসে লাগলো তার। তবুও সেদিকে কোনো ভ্রু-ক্ষেপ নেই। জমে শন্ত হয়ে আছে সে। লোকটা পেছন থেকে চুল গুলো সরিয়ে ঘারে আলতো করে চুমু একে দিলো তার।
কিন্তু আগের মতো এবারও উধাও হয়ে গেলো সে। বৃষ্টি প্রতিবারই ভাবে আরেকবার আসুক, এবার বের করেই ছারবো এটা কি আমার মনের ভুল নাকি রাত সত্যিই আমার কাছে আসে। কিন্তু আগে যাই হোক আজ এটা স্বপ্ন হতে পারেনা। রাত জদি সত্যিই আমার ঠিকানা জেনে থাকে তাহলে এমন লুকুচুরি খেলছে কেনো? না কিছুই মাথায় আসছেনা আমার। বৃষ্টি নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে। মা হওয়ার আভাস মোটামুটি ভাবে তার মাঝে ফুটে উঠেছে। এই সন্তানকে কি পরিচয়ে বড় করবে সে?
,
,
ইদানিং বৃষ্টির একটা ছেলের সাথে ভালো বন্ধুত্ব হলো। তাও আবার ফেসবুকে। ছেলেটার আইডিতে কোনো ছবি পোষ্ট করেনি। আইডির নাম বৃষ্টি ভেজা রাত। সরল মনের বৃষ্টি মোটামুটি সব শেয়ার করে এই ছেলেটার সাথে। বলতে গেলে এখন ভালো বন্ধু তারা।

– সব বুঝলাম, কিন্তু হুট করে এই এ্যাবরশনের সিদ্ধান্তটা কেনো নিলেন। ওটা তো আপনারি সন্তান তাই না?
সাথে সাথেই ম্যাসেজ সিন হলো।
– পৃত্বি পরিচয় হিন আমার সন্তানকে কি করে বড় করবো আমি। আর এমন একটা সিচুয়েশনে মা হওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত নই আমি।
– দেখুন আপনি আগে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। তার পর সিদ্ধান্ত নিন। সে অনুজায়ি কাজ করুন যে আপনি কি চান।
– আমি অনেক ভেবেছি। এই সন্তান আমার ভবিশ্যতের প্রতিটা পদক্ষেপেই বাধা হয়ে দাড়াবে। আর মা হওয়ার জন্য তো এখনো অনেক সময় পরে আছে।
– একজন মেয়ের কাছে মা ডাকটা শুনা কতোটা আনন্দ দায়ক?
– অনেক। কিন্তু পরে সন্তান হলে তাদের কাছ থেকেও আমি মা ডাক শুনতে পারবো। আগে ও রকম একটা সিচুয়েশন তৈরি হোক।
– এটা আপনার প্রথম সন্তান। আর কেও কেও এই একটা সন্তানের জন্য কতো কিছুই করে। আর আপনি পেয়েও নষ্ট করে ফেলতে চাইছেন? হয়তো এমনই তো হতে পারে যে আপনি, আপনি এ্যাবরশন করলেন। পরে আপনি আর কখনো মা হতে পারবেন না। তখন?
মেসেজ সিন হলো কিন্তু বৃষ্টি কোনো রিপ্লাই দিচ্ছেনা। ছেলেটার কথাটা মনের ভেতরে গিয়ে আঘাত করেছে তার। সত্যিই জদি পরে শুনতে পায় যে সে আর কখনো ‘মা’ হতে পারবেনা তাহলে? বৃষ্টি ছোট্ট করে রিপ্লাই দিলো,
– জানিনা।
– দেখেন আপনি এখনো ওই সিদ্ধান্তটা নিতে পারেন নি। আপনার মন যা চায়।
– এখন আমি কি করবো? কিছুই বুঝতে পারছিনা।
– আমার কিছু টিপস্ ট্রাই করে দেখেন। হয়তো সিদ্ধান্তটা বদলাতেও পারে।
– কেমন টিপস্?
– আপনি যখন ফ্রি থাকবেন তখন, একটা নিরিবিলি জায়গায় বসবেন। তার পর আপনার সাথে যে আছে তার সাথে গুন গুন করে কথা বলতে থাকবেন। আর চোখ বন্ধ করে তার উত্তর গুলো অনুভব করবেন। নির্জন জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে পেটে হাত রাখবেন। চোখ বন্ধ অবস্থায় অনুভব করবেন যে, আপনি আপনার সন্তানকে কোলে নিয়ে হাটছেন। মাঝে মাঝে চুমু খাচ্ছেন। তাকে রেখে তার পাশে সুয়ে আছেন। সে হাত পা গুলো নারছে। আপনার খুব ভালো লাগছে তখন। তখনও মন ভরে আদর করছেন তাকে। সে বার বার আপনার কোলে উঠতে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আপনি আদর করে কোলে তুলে নিয়ে হাটছেন। সে আপনার গলা জড়িয়ে ধরে আপনার কোলেই ঘুমিয়ে পরলো।
তার পর আবার এটা ভাবুন। বাচ্চাটি হলো আপনি। আর আপনি হলেন আপনার মা। আপনার মা আপনাকে মেরে ফেলতে চাইছে। আপনি পেট থেকে বার বার চিৎকার দিয়ে বলছেন। প্লিজ আম্মু আমায় মেরো না। আমিও দেখতে চাই দুনিয়াটা কেমন। আমিও পেতে চাই বাবা মায়ের আদর। আমাকে এভাবে মেরে রাস্তার কুকুরদের খাবার বানিও না মা।
আপনি দুই ভাবেই চিন্তা করবেন। তার পর হয়তো আপনার সিদ্ধান্তটা বদলাতেও পারে। আর হ্যা, নিজের মাঝে একটা মা মা ফিলিংস আনুন। ভালোবেসে গুন গুন করে কথা বলতে থাকুন তার সাথে। তখন বুঝবেন আপনি আপনার সন্তানকে কতো ভালোবাসেন।
– আচ্ছা আপনি সত্যি করে বলুন তো, আপনি কে?
– আপনার খুব কাছের কেও। সময় হলে বুঝবেন।
– কাছের কেও মানে? সত্যি করে বলুন তো আপনার পরিচয়টা কি?
– এই যে আমরা বন্ধু।
হেসে দিলো বৃষ্টি। ছোট্ট করে বললো,
– আচ্ছা।

To be continue……….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖