Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1430



মায়াদেবের মায়া পর্ব-০৬

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৬
#তাহমীম

আমি কালকেই মায়াকে বলবো আমি ও মায়াকে ভালোবাসি। ভালোবাসে তার মায়াদেব তাকে। তার মায়াদেব ও চায় না তার মায়াবতী কষ্ট পাক। হাজারো বাহানায় তার মায়াদেব তাকে সাজাতে চায়। হাজারো বারনে তার মায়াদেব তাকেই ভালোবাসে। তার মায়াদেব ও তার জন্য এতোটাই পাগল যতটা সে। আমার মায়াকে আমি বলবো। আমার বলতেই হবে। আমার মায়াবতী শুধু আমারই। তার এলোমেলো চুলে, লেপ্টে যাওয়া কাজলে, তার গুন গুন করা আওয়াজে, তার লেখা কবিতায় শুধু আমার অধিকার, আমার বসবাস, আমার অস্তিত্ব। আর আমার অধিকার আমি কাউকে দিবো না। মায়াবতী শুধুই আমার। মায়া তার মায়াদেবের।

-” ঠিক বলছিস দাদু ভাই। এখন ঘুমিয়ে যা। লম্বা একটা ঘুম দিয়ে সকালে উঠে মায়ার কাছে যাবি। আমি যায় রুমে।
-” দাদু তুমি আজকে আমার সাথে ঘুমাও না! আমার আজকে ঘুম হবে না। সারা রাত না হয় তোমার সাথে গল্প করবো। মায়াবতীকে সকালে আমি সব বলার পর অন্য রুপে দেখবো ভাবতেই ভিতরে খুশির জোয়ার বইছে।

আমির চৌধুরী নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিঝুম চোখ বন্ধ করে কথা বলছে দাদুর সাথে। আমির চৌধুরী নিঝুমের দিকে তাকিয়ে
-” আমি সব সময় থাকবো না তোর পাশে। তুই কিন্তু কোন সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিস না৷ ভেবে চিন্তে যা ভালো হবে সবার তাই করবি। মনে রাখবি নিজে ভালো না থাকলে কখনো অন্যকে ভালো রাখতে পারবি না তাই আগে নিজে ভালো থাকতে হবে।

নিঝুম চোখ খুলে আমির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে হাত ধরে

-” হুম। কিন্ত আর এসব কথা বলো না তো তুমি থাকবে না মানে কোথায় যাবে? এসব কথা একদম বলবে না। নাতবৌকে কি কি দিয়ে ঘরে তুলবে সেটা ভাবো।

দাদা নাতি সারা রাত গল্প করে কাটিয়ে দেয়। আমির চৌধুরী নিঝুমের মাথায় সারা রাত হাত বুলিয়ে দেয়।
.
.
.

সকালে

নিঝুম গুন গুন করে গান গাইছে আয়নার সামনে। চুল গুলো আচড়িয়ে আবার এলোমেলো করে দেয় নিঝুম। মায়াবতীর নিঝুমের এলোমেলো চুল খুব ভালো লাগে। তাই চুল গুলো এলোমেলো করে রেখে শরীরে পারফিউম দিয়ে আবার আয়নায় ভালো করে দেখে বের হয়ে যায় নিঝুম। উপচে পড়া ঢেউ এর মতো নিঝুমের ভাবতেই ভালো লাগছে আজকে নিঝুম সব বলে দিবে মায়াকে। আপন করে পেতে আবেদন করবে নিঝুম মায়ার কাছে। মায়া আজীবনের জন্য নিঝুমের হয়ে যাবে। কেউ চাইলে ও পারবে না মায়াদেবের মায়াকে আলাদা করতে৷ মায়াবতীকে নিয়ে হারাবে নিঝুম। কেউ মানা করার থাকবে না কেউ বাধা দেওয়ার থাকবে না। একান্ত নিঝুমের অধিকার থাকবে শুধু তার মায়াবতীর উপর।

নিঝুমের গাড়ি এসে থামে মায়াদের বাড়ির সামনে। নিঝুম কি ভাবে কি শুরু করবে বুঝতে পারছে না। মায়াকে কই থেকে বলবে যে নিঝুম ও মায়াকে ভালোবাসতো হয়তো তার থেকে বেশি। মায়ার বর্ষণে নিঝুমের চোখে বর্ষণ নামতো। তাকে আগলে রাখার অভিপ্রায় থাকতো সব সময়।

ভাবতে ভাবতে নিঝুম বাড়ির ভিতরে ড্রয়িংরুমে চলে যায়। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে মায়া। নিঝুম অন্ধকার হাতড়িয়ে আলো পাওয়ার মতো তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলতে মায়াবতী ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু তা করা যাবে না অনেকেই আছে আশে পাশে। সবার সামনেই কি বলবে নিঝুম? নিঝুম ও ভালোবাসে মায়াকে। সবাই জেনে যাক ক্ষতি কি তাতে?

নিঝুম একপা দুপা করে এগোচ্ছে মায়ার দিকে। মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। আজকে নিঝুমকে অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে। এলোমেলো চুল কপাল ছুঁয়ে নাক ছুঁই ছঁই করছে। সেই চিরচেনা ঘ্রাণ। আর পরনে কালো শার্ট।

নিঝুম মায়ার একদম কাছে এসে।
-” মায়া
-” হুম।
-” কিছু বলতে চাই তোমায়। আ……..

আর কিছু বলার আগেই নিঝুমের বড় মামা নিঝুমের কাধে হাত রাখে

-” নিঝুম বাবা এসেছিস? ভালোই করেছিস এখন এসে। আমান আর মায়া বেরই হচ্ছিলো তাদের বিয়ের টুকটাক জিনিস কিনতে। ওহ ওদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি আগামী শুক্রবারেই। আর তিনদিন সময় আছে। এতো কম সময়েই সব করতে হবে। তুই ও ওদের সাথে যা।

নিঝুমের ভিতরে সব উলোট পালোট হয়ে যায় আশিক আহমেদের কথা শুনে। কি বলছে এই সব এই লোকটা? যায় বলুক নিঝুম বলে দে সে ও ভালোবাসে মায়াকে।

হঠাৎ সিড়ি দিয়ে আমান নামতে নামতে

-” নিঝুম ভালোই করেছিস এসে, তুই ও চল আমাদের সাথে। আমি এসব ব্যপারে একদম কাঁচা। মেয়ে মানুষ নিয়ে গেলে নাকি অনেক ঝামেলা হয়। আমি এই সব ঝামেলায় নেই ভাই তুই ও চল আমাদের সাথে। এক সাথে সবাই অনেক দিন হলো বের হয়না। বিয়ে করে তো আর এতো বের হওয়া যাবে না। মানে বউ দিবে না এতো বের হতে, তাই না মায়া?

মায়া নিচে তাকিয়ে আছে কি বলতে চেয়েছিলো মায়াদেব? মায়াদেব কি মায়াকে ভালোবাসে বলতো? কেনো মনে হচ্ছে মায়াদেব মায়াকে ভালোবাসে বলতো? কি ভাবছি আমি আবার এই সব মায়াদেব তো তিথিকে ভালোবাসে আমাকে কি ভাবে বলবে সে ভালোবাসে আমায় ? এই অবাধ্য মনটা কেন বার বার এই সব ভাবে? কেন ভাবে মায়াদেব ও তাকে ভালোবাসে?

-” কি হলো মায়ারাণী কি ভবছো?
আমানের কথায় মায়ার ভাবনার ছেদ ঘটে ।

মায়া কিছু না বলে মলিন হাসি দেয় একটা।

মায়ার আম্মু আমানের আম্মু সবাই এসে নিঝুমকে বসতে বলে । সবাই কতো খুশি সবার মুখে হাসি লেগে আছে। আমান যেনো খুশিতে আত্নহারা। নিঝুম এখন কি ভাবে বলবে মায়াকে ভালোবাসে? সবার এই মুখের হাসি নিঝুম কি ভাবে নিজের জন্য কেড়ে নিবে?

মায়া বার বার নিঝুমের কাছে যেতে চাইছে নিঝুম কি বলতে চেয়েছিলো শুনতে কিন্তু সবার জন্য পারছে না। বার বার কেউ না কেউ আটকিয়ে দিচ্ছে।

নিঝুম, মায়া আমান শপিং কর‍তে বেড়িয়ে পড়ে। নিঝুম নিজেকে সামলে তিথিকে কল দেই আসার জন্য। তিথি ও তাদের সাথে জয়েন হয়।
আমান তিথি আগে আগে হাটছে। ওরা গল্প করতে করতে আগে আগে যাচ্ছে। মায়া নিঝুমের সাথে চুপচাপ হেটে যাচ্ছে। নিঝুম মায়াকে কিছু বলছে না দেখে মায়া ই নিঝুমকে জিজ্ঞেস করলো

-” কিছু বলতে চেয়েছিলেন সকালে। বলেননি এখনো।
-” ওহ তেমন কিছু না। ওই তো তিথিকে গিফট দিবো কি গিফট দিলে খুশি হবে তাই জিজ্ঞেস করতাম। মেয়েদের তো আগে কখনো কিছু দেওয়া হয়নি তাই।

মায়া একটু চুপ থেকে
-” আমাকে তো দিয়েছেন।

নিঝুম চুপ হয়ে আছে। মায়ার কথার উত্তর এখন না দেওয়াই ভালো হবে। কিছু বলতে গেলেই হয়তো দিবো আমি যে তোমায় ভালোবাসি মায়াবতী।

নিঝুম মায়াকে তার পছন্দের একটা শাড়ী পছন্দ করে দেয়। যেমন বিয়ের শাড়ীর সাজে মায়াকে ভাবতো নিঝুম ঠিক তেমন শাড়ী মায়াকে বলে নিতে। মায়া ও তার মায়াদেবের কথা ফেলেনি। শাড়ী জামার উপর দিয়ে ধরতেই নিঝুম বলে উঠে
-” মাশাআল্লাহ।
.
.
.
নিঝুম, মায়া আমান আর তিথি সারাদিন শপিং করে ক্লান্ত হয়ে মায়াদের বাড়ি ফিরতেই দেখে মুনিয়া আহমেদ ড্রয়িংরুমে বসে আছে।
নিঝুম মাকে দেখতে পেয়ে
-” আম্মু তুমি কখন এলে?

মুনিয়া আহমেদ একটা শব্দ ও বের না করে নিঝুমকে হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়।

নিঝুম অবাক হয়ে

-” আম্মু কি হয়েছে এমন করছো কেন? আর দরজা বন্ধ করলে কেনো?……..

চলবে……….

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হলো জানাবেন। 😪😪😪

মায়াদেবের মায়াচ পর্ব-০৫

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৫
#তাহমীম

আমি আমানকে বিয়ে করতে রাজি আব্বু। যত তারাতাড়ি পারো তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো।
মায়ার কথা শোনে আমান খুশিতে লাফিয়ে উঠে। দৌড়ে মায়ার কাছে গিয়ে মায়াকে জড়িয়ে ধরে। মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে ঘোরাতে শুরু করে আমান সবার সামনেই । হতভম্ব হয়ে যায় সবাই আমানের এই সব দেখে আর মায়ার কথা শুনে। মুনিয়া আহমেদ একটু অবাক হয়ে

-” সত্যি বলছিস?
-” হুম ফুপিমা।

ওই দিকে নিঝুমের চোখে পানি চিক চিক করছে। নিঝুম মেনে নিতে পারছে না মায়া রাজি হয়ে গেছে। তবে কেন পারছে না? নিঝুম তো তাই চাইতো যাতে মায়া রাজি হয়ে যায় আমানকে বিয়ে করতে। আমানকে আপন করে নেয় নিঝুমকে ভুলে। তবে কেনো এতো খারাপ লাগছে নিঝুমের? তাহলে কি নিঝুম মায়াকে ছাড়া থাকতে পারবে না? ওর মায়াবতী ওকে ভালোবাসতো এখন কি তবে আমানকে ভালোবাসবে? নিঝুমের মায়াবতী কি এখন তবে আর ওর জন্য কবিতা লিখবে না? গান গাইবে না? গুন গুন করে আওয়াজ তুলবে না সে আছে আশে পাশেই? তবে কি এখন রোজ আমানের জন্য সব করবে?

নিঝুমের বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে হার্টের কার্যক্রম হয়তো এখনি বন্ধ হয়ে যাবে। নিঝুমের এখন পালাতে হবে এখান থেকে নয়তো সে মায়াকে ভালোবাসে তা বলে দিবে। আর তা হোক নিঝুম চায় না। আমান ওকে অনেক ভালো রাখবে, ভালোবাসবে আর ভালো থাকবে ও। শুধু শুধু কেন দুই পরিবারের শান্তি নষ্ট করবে নিঝুম মায়াকে ভালোবাসে বলে দিয়ে!! সব ভালোবাসা পেতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। কিছু ভালোবাসা থাকুক না অপূর্ণ। কিছু জিনিস অপূর্ণতেই ভালো লাগে। ভালোবাসতে শুধু কাছেই যেতে হবে তার তো কোন মানে নেই। দূরে থেকে ও ভালোবাসা যায় দিব্বি। মায়াবতীকে পাওয়ার দামী অনুভুতি ওকে ছুঁবার তীব্র ইচ্ছে এমনই থাক না! ক্ষতি কি? এমন অনুভুতি কখনো নষ্ট হবে না। উল্টো দিন দিন আরো দামী হয়ে উঠবে ।

নিঝুম আর কিছু না ভেবে মায়ার কাছে যায়। মায়ার কাছে গিয়ে ওকে

-“অভিনন্দন মায়া। সুখি হও

মায়া নিঝুমের চোখে অভিযোগ খুঁজছে। মায়ার জন্য নিঝুমের অভিযোগ খুঁজছে। এই হয়তো বলবে মায়া কেন তুমি এমন করলে কেন আমানকে বিয়ে করতে রাজি হলে? আমি যে তোমায় ভালোবাসি তুমি জানো না? কিন্তু হায় মায়া নিঝুমের চোখে কোন অভিযোগ দেখতে পাচ্ছে না। মায়াকে জড়িয়ে ধরে মায়া তুমি শুধু আমার বলার কোন আকুতি দেখতে পাচ্ছে না মায়া নিঝুমের চোখে । মায়ার ভালোবাসা কি এতোই কম ছিলো মায়াদেবের জন্য? যে ভালোবাসা মায়াদেবকে ছুঁতে পারলো না?

এতো ভালোবাসা কোন পাথরকে দিলে ও হয়তো সে জীবিত হয়ে বলতো আমি ও তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু মায়ার ভালোবাসায় কেনো মায়াদেবের মন গলাতে পারেনি? কেন অভিযোগ নেই আজকে তার মায়াদেবের? থাকবেই বা কি করে!! মায়াদেব যে অন্য কারো।আমার মায়াদেব তো ভালোবাসে অন্য কাউকে। আমি কি করে বাধা হয়ে দাড়াঁবো ওদের মাঝে? সরে এলাম আমি, আমার মায়াদেব ভালো থাকুক।

আমানের ডাকে ঘোর ফিরে দুজনের ই এতোক্ষন কি তবে দুজনের দিকে দুজন তাকিয়ে ছিলো? মায়া মাথা নিচু করে ফেলে মায়া।
আমান নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে। নিঝুম আমানকে এক হাতে ধরে বললো

-” কনগ্রেটস।

নিঝুম মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো এখন আমার যেতে হবে। আজকে অনেক কাজ ফেলে সারা দিন এসব করলাম। একটা ভিডিও কনফারেন্স আছে আমার যেতে হবে এখন। নিঝুম আমানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে

-” তোরা এনজয় কর ভাই। আমি আসি।
নিঝুমের চলে যাবার কথা শুনে তার বড় মামা আশিক আহমেদ

-” এই তো এলি এখনো চলে যাবি? তুই না থাকলে ভালো লাগে না বাবা। এখন যাস না।

শফিক আহমেদ ও নিঝুমের কাছে গিয়ে কাধে হাত দিয়ে।
-” পরে গেলে হয় না?
নিঝুম শফিক আহমেদ এর হাত ধরে
-” না মামা এখন যেতেই হবে আমার। আমার যে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে।( দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

কথাটা শুনেই মায়া নিঝুমের দিকে তাকায়

-“সবাই অপেক্ষা করছে কল দিবে এখনি জয়েন হতে। আমি যায় মামা

নিঝমের দাদা আমির চৌধুরী
-” নিঝুম চল আমি ও যাবো। আমার প্রেশারটা বেড়ে যাচ্ছে হয়তো।

মুনিয়া আহমেদ শশুরের কথা শুনে

-” সে কি বাবা আপনি আমায় আগে বলেননি কেন? খাবার খেয়ে যাবেন তো।

-” না আমার এখন দাদুভাই এর সাথে যেতে হবে। তুমি রাশেদকে আর অহনা আর অনিকে নিয়ে চলে এসো।
.
.
.
নিঝুম চলে যাওয়ায় মায়ার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেছে। সে কি ঠিক করলো তবে? ঠিকি তো করেছে আর কি বা করার আছে বা ছিলো মায়ার? সব তো এমনিতেই শেষ। মায়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এটাই এখন এক মাত্র মাধ্যম তার মায়াদেবকে দেখার। তার সাথে কথা বলার। মায়ার দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা টুপটুপ করে পড়ছে

কিছু ভালোবাসা নাহয় না পাওয়াই থাক পেয়ে গেলেই হয়তো মূল্য কিছু কমে যায়। না পেলে হয়তো তার দাম আরো কয়েক লক্ষ গুন বৃদ্ধি পায়। আমি না হয় মায়াদেবকে ভালোবেসে যাবো। ভাব্বো আমার একটা মায়াদেব ছিলো যার রঙে আমি রঙিন হতাম। যাকে ভালোবাসি ভাবলেই খুশিতে আত্নহারা হতাম। এই অনুভুতি যে কতো খুশির সেটাকে তো বাঁচিয়ে রাখতে পারবো।
.
.
লাইট অফ করে বসে আছে নিঝুম। পুরো ঘরে অন্ধকারে পিনপিন করছে। কোথাও একটু ও আলো নেই। অন্ধকার বেশ ভালো লাগছে নিঝুমের। তবে মজার ব্যপার ছিলো আগে নিঝুম অন্ধকার ভয় পেতো। মায়া বলতো এই মায়াদেব অন্ধকারে ভয় কিসের অন্ধকারে যে নিজেকে লুকানো যায়। এর থেকে তৃপ্তি আর কি আছে?

আজকে সেই তৃপ্তি খুঁজে নিতে চাচ্ছে নিঝুম কিন্তু পাচ্ছে না কোন ভাবেই পারছে না।
খাটের সাইডে ফ্লোরে হেলান দিয়ে বসে আছে নিঝুম। আমির চৌধুরী রুমে এসে লাইট অন করতেই নিঝুম চোখ খুলে তাকায়।

-” দাদু লাইট অফ করে দাও তো। অন্ধকার রুমই ভালো লাগছে আমার।

নিঝুমের দাদা আসতে আসতে নিঝুমের কাছে গিয়ে খাটে বসে নিঝুমের চুলে হাত দেই।
-” কাদঁছিস কেন?
-” কোথায় কাদঁছি দাদু? আমার মাথা ব্যাথা করছে তাই লাইট অফ করে বসে আছি।

-” আমাকে শিখাতে আসছিস? তুই জানিস না আমি তোর সময় পার করে এসেছি। আমির চৌধুরী বংশের কেউই প্রেমে ব্যার্থ হয়ে তোর মতো ঘরে লাইট অফ করে বসে থাকেনি।
-” দাদু ভালো লাগছে না আমার তুমি এখন যাও।

-” চুপ কর বেটা। তোর দাদিকে আমি প্রেম করে ভালোবেসেই বিয়ে করে এনেছি।শুনেছি আমার বাবা ও প্রেম করে বিয়ে করেছে। তোর মা মুনিয়াকে ও আমার রাশেদ কিন্তু ভালোবেসেই বিয়ে করে এনেছে। আর তুই কিনা ওই বাড়ির মেয়ের জন্য কান্না করছিস? আমি চৌধুরী সাহেব তোর বিয়ের কথা বললে হাজার মেয়ের বাপ এসে দাঁড়িয়ে থাকবে আমার নাতিকে বিয়ে করাতে। তার তুই আমার নাতি হয়ে লাইট অফ করে বসে আছিস? আমাদের বংশের পুরুষরা মহা প্রেমিক পুরুষ ছিলেন।

নিঝুম দাদার দিকে তাকিয়ে
-” কি বলছো দাদু আসলেই?

-” হ্যা আমি কি বুড়ো বয়সে তোকে মিথ্যা বলবো নাকি? শোন মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে। ওর অধিকার আছে তুই ওকে ভালোবাসিস কিনা এটা শোনার। আমি মেয়েটার চোখে তোর জন্য অগাধ ভালোবাসা দেখেছি। এই সব ঝামেলার জন্য এই নিষ্পাপ মেয়ের অগাধ ভালোবাসাকে না দেখার ভান করিস না দাদু ভাই৷ আল্লাহ সইবে না যে।

-” এখন আমি কি করবো দাদু? আমান ও যে মায়াকে ভালোবাসে। আমান যদি কিছু করে বসে মায়ার জন্য আর কিছু হয়ে যায় আমি নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবো না। এতো স্বার্থপর আমি কি ভাবে হবো? দুটো পরিবার যে নষ্ট হয়ে যাবে।

-” কিচ্ছু হবে না। আমি আমান দাদুভাইকে বুঝাবো। তুই কি আমানকে কখনো বলেছিস? যে তুই ও মায়াকে ভালোবাসিস আর মায়া তোকে?
-” না বলিনি। তবে আমান হয়তো জানে।
-” তাহলে এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? তুই মায়াকে আগে বল তুই ওকে ভালোবাসিস আর পরে আমানকে সবাই মিলে বুঝাবো বসে। না হয় এই ভাবে তিনটি জীবনই নষ্ট হয়ে যাবে দাদু ভাই তোরা কেউ ভালো থাকতে পারবি না। মায়া তোকে ভালোবাসে ও তোকে ছাড়া ভালো থাকবে না। ভালোবাসা এতো সহজ নয় যে যাকে ইচ্ছে তাকে ভালোবেসে ফেলবে।

-” দাদু ভাই
-” কি
-” আই লাভ ইউ। তুমি ঠিকি বলেছো দাদু ভাই। আমার মায়াবতী আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না। না মায়াবতীর মায়াদেব তাকে ছাড়া ভালো থাকবে। আমি কালকেই মায়াকে বলবো আমি ও মায়াকে ভালোবাসি। ভালোবাসে তার মায়াদেব তাকে…….

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

মায়াদেবের মায়া পর্ব-০৪

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৪
#তাহমীম

বেল্কুনির রেলিংয়ে এক হাত দিয়ে ধরে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে কাদঁছে মায়া ওই দিকে আরেক বেল্কুনিতে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে নিঝুম।নিঝুম দাঁড়িয়ে দেখছে মায়া কান্না করছে। ভীষণ কান্না করছে। কান্নার গতি কোন মতেই কমছে। কমছে না নিঝুমের হৃদয়ের ছুরিঘাত। মায়ার কান্না দেখে নিঝুমের চোখ দিয়ে অনুরুপ ভাবেই পানি ঝরছে। ইচ্ছে হচ্ছে দৌঁড়ে গিয়ে মায়াকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরতে। জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে এইতো আমি মায়াবতী, কান্না করছো কেন? তুমি তো শুধু আমারই মায়াবতী । তোমাকে যে আমি কারো হতে দিবো না, দিবো না হারাতে। মায়াবতী কেন কান্না করছো তুমি। আমার বুকে যে ব্যাথা হচ্ছে ভীষণ। মায়াবতী তোমার মায়াদেব যে শুধু তোমায় ই ভালোবাসে।

নিঝুম আর কিছু না ভেবে মায়ার কাছে যাবে বলে পা বাড়ায়। বেল্কুনির ওই পাশ থেকে এসে দেখে আমান নিঝুমের বাহু ধরে জিজ্ঞেস করছে
-” কি হয়েছে মায়া?
মায়া কিছু বলছে না। আমান আবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। হঠাৎ আমান মায়াকে জড়িয়ে ধরে। এই দৃশ্য দেখে নিঝুমের খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো আমানকে সরিয়ে দিতে কিন্তু ও যে অসহায় পারবে না কিছু করতে। নিঝুম চুপ করে চলে ওই খান থেকে।

মায়া আমানকে ছাড়িয়ে
-” কিছু হয়নি আমার। ওই তো মাথা ব্যাথা করছিলো তাই এই খানে এসে দাঁড়ালাম এখন চল যায় সবাই অপেক্ষা করছে।

বলেই মায়া ওই খান থেকে আগে চলে আসে। এতো কান্নায় কই নিঝুমকে তো সে পেলো না। আমান এসে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। মায়াদেব কি জানে না ওর কান্না থামে না মায়াদেবের জন্য। কই একটু সান্ত্বনা দিতে ও তো আসেনি। আমরা বরাবরই এমন মানুষকে কেনো ভালোবেসে ফেলি যাদের আমাদের একটু ও পরোয়া থাকে না। আমারদের থাকায় না থাকায় কিছুই যায় আসে না তাদের। আমরা বরাবর মরিচিকার পিছনে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। থমকে যায় সেই জায়গায়। সামনে তাকিয়ে দেখি শুধুই মরুভূমি পিছনে তাকিয়ে দেখি অতল সাগর। আটকা পড়ে যায়। না পারি সামনে যেতে না পারি পিছনে যেতে। কষ্টে বুক ফেটে যায় চিল্লিয়ে সবাইকে বলতে ইচ্ছে করে আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু পারি না আমরা পারি না এমন বেহায়া হতে। আর পারি ও না তাদের আপন কর‍তে।

মায়া গিয়ে দেখে তিথি মেয়েটার সাথে নিঝুম বসে বসে ফোন টিপছে। একজন আরেকজনের ফোন নিয়ে টানাটানি করছে। মায়ার চোখ দিয়ে এমনিতেই আবার এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। ভালোবাসার মানুষকে হয়তো পৃথিবীর কেউই অন্য কারো সাথে দেখতে পারেনা।

নিঝুম মায়াকে দেখে মায়ার কাছে এসে দাঁড়ায়। মায়া সরে যেতে নিলেই।
-” মায়া একটু উপরে চলো তোমার সাথে কথা আছে।

মায়া একটু অবাক হলো ওর সাথে কি কথা বলবে যার ভালোবাসার কোন মূল্য দেয় না সে।আবার মনে হলো মায়াদেব কি তাহলে না করবে আমানকে বিয়ে করতে।মায়াদেব কি মায়া কে বলবে মায়া আমি ও তোমায় ভালোবাসি৷ মায়ার মুখে খুশির ছাপ ফুটে উঠে। অবশেষে তাহলে মায়ার মায়াদেব বুঝতে পেরেছে তার মায়া তাকে কতোটা ভালোবাসে। মায়ার কাংখিত মুহুর্ত তবে কি বেশি দূরে নয়?

-” কি হলো মায়া?

মায়ার ভাবনার ঘোর কেটে গেলো মায়াদেবের ডাকে
-” হুম আমি যাচ্ছি উপরে আমার রুমে, আপনি আসুন।

মায়া দাঁড়িয়ে আছে তার মায়াদেবের জন্য মায়াদেব আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেনো। অবশ্য ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা কয়েক মুহুর্ত ও কয়েক জনম মনে হয়। মায়া
হঠাৎ ই দেখতে পেলো নিঝুম আসছে মায়ার রুমের দিকে, নিঝুম ঘরে ঢুকতেই মায়া নিঝুমের বুকে ঝাপ্টে পড়ে। নিঝুম কে জড়িয়ে ধরে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে। যেনো মায়ার মায়াদেবকে কেউ আলাদা না করতে পারে মায়ার কাছ থেকে। মায়ার এলোমেলো চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নিঝুমের মুখে নিঝুমের পুরো শরীরে। নিঝুমের ও খুব ইচ্ছে হচ্ছে খুব মায়াকে জড়িয়ে ধরতে। এলোমেলো ভাষায় বলতে ভালোবাসি মায়াবতী। কিন্তু নিঝুম নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে রয়। মায়াকে হাত দিয়ে আগলে ধরে না।

নিঝুমের সারা না পেয়ে মায়ার হুশ আসে। এটা কি করলো মায়া খুশিতে। নিঝুম কি বলতে চাই না শুনেই এটা কি করলো মায়া। মায়া লজ্জায় নিঝুমের বুক থেকে মাথা তুলতে ও ভয় পাচ্ছে।
আচমকা মায়া নিঝুমের বুক থেকে সরে যায়। দূরে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। লজ্জায় নিঝুমের মুখের দিকে চাইতে পারছে না মায়া ।

নিঝুম ও অস্বস্তিতে পড়ে যায়। নিরবতা কাটিয়ে নিঝুমই মায়াকে বলে।
-” নিচে যেই মেয়েটা এসেছে তিথি আমি ওকে ভালোবাসি। তোমার বিয়ে হয়ে গেলেই আমি ওকে বিয়ে করবো আমাদের প্রেম অনেক দিন ধরেই কাউকে বলতে পারছি না। তোমায়ই প্রথম বললাম আর আম্মু জানে। আম্মু বললো তোমাদের বিয়ের পরই আমাদের বিয়ে ঠিক করবে।

মায়ার মাথায় যেন আকাশে ভেঙে পরেছে কি বলছে এই সব তার মায়াদেব। মায়া বিস্মিত হয়ে দুচোখ তুলে তাকায় নিঝুমের দিকে। চোখ দিয়ে হয়তো এখনি বৃষ্টি নামবে। যেই ঘর এতো দিন মায়াদেবকে নিয়ে বানিয়েছে মায়া সেই ঘর মায়ার না অন্য কারো। মায়ার চোখ দিয়ে অনবরত পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। আকাশের বৃষ্টি হয়তো হার মানবে মায়ার দুচোখের বৃষ্টির কাছে।

মায়া নিঝুমের দিকে তাকিয়ে
-” আপনি সত্যিই ভালোবাসেন তাকে?
-” হ্যা জীবনের চাইতে ও বেশি। আমি ওর জন্য সব করতে পারবো।

মায়ার কান আর কিছু শুনতে পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ওর আত্না ওকে ত্যাগ করবে এখনি। মায়ার শ্বাস হয়তো এখনি বন্ধ হয়ে যাবে।

মায়া নিঝুমের মুখে ওই মেয়ের সম্পর্কে আর কিছু শোনার আগেই সেখান থেকে চলে যেতে নিলো। কিন্তু দরজার কাছে গিয়েই মায়া দরজায় দুহাত দিয়ে ধরে দাঁড়ালো মায়ার পা চলছে না মাথা ভন ভন করছে। মনে হচ্ছে সব কিছু কেমন ঘুরছে। সাথে মায়াদেব ও।
.
.
.

মায়ার আর কিছু মনে নেই চোখ খুলে দেখে আমান, মায়ার আম্মু, মায়ার আব্বু তার পাশে বসে আছে। নিঝুম কে খুঁজছে মায়া। তার মায়াদেব কোথায়? মায়াদেব কি মায়াকে এই ভাবে ফেলে চলে গেছে?

মায়ার আম্মু মায়ার জ্ঞান ফিরেছে দেখে মায়ার আরো কাছে এসে বসে।
আমান মায়ার হাত ধরে
-” মায়া তুই ঠিক আছিস?
-” হুম।
-” ফুপিমা কোথায়?
-” আব্বু ফুপিমা আম্মু নিঝুম মাত্র নিচে গেলো। সবাই নিচে ই। তোর কি হয়েছিলো?

মায়ার আম্মু আমানের কথা কেড়ে নিয়ে
-” জ্ঞান হারাবে না? সারাদিন কিছু খায় না। খালি বাদরামি।

মায়া উঠছে দেখে মায়ার আব্বু বললো
-“শুয়ে থাক তোর উঠতে হবে না।
-” না আব্বু উঠতে হবে সবাই নিচে চলো।
.
.
.
সবাই বসে আছে চুপ করে মায়া তাদের কিছু বলবে তাই। মায়ার ফুপিমা মায়া কে জিজ্ঞেস করে
-” কি বলবি মায়া?
-” বলছি ফুপিমা
-” হুম বল
-” আমি আমানকে বিয়ে করতে রাজি আব্বু। যত তারাতাড়ি পারো তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো……….

চলবে……

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

মায়াদেবের মায়া পর্ব-০৩

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৩
#তাহমীম

আমান কিছু না বলে মায়াকে খুজঁছে সব জায়গায় চোখ বুলিয়ে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তার মায়া। মায়া দু-হাত দিয়ে দরজার পর্দাকে বার বার দলা পাকাচ্ছে আবার খুলছে।
আমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। আমান মায়ার দিকে তাকিয়ে

– কিরে এখনো দূরে দাঁড়িয়ে থাকবি? আমার কাছে আসবি না মায়ারানী?

মায়া কিছু বলতে যাবে তখনি পিছন থেকে মুনিয়া আহমেদ রুমে প্রবেশ করে। আমানকে জড়িয়ে ধরে
– কেমন আছিস এখন আব্বাজান।
– ভালো আছি ফুপিমা।
– এইটা কেনো করলি যদি তোর কিছু হয়ে যেতো? আমাদের কথা একবারো ভাবলি না?

– আমার হাতে আর কোন উপায় ছিলো না ফুপিমা। তুমিই তো যাচ্ছিলে নিঝুমের সাথে আমার মায়ার বিয়ে দিতে। আমি মায়ার জন্য কানাডায় স্কলারশিপ পাওয়ার পরে ও যায়নি। আমি যে মায়াকে ভালোবাসি তোমরা কেউ খেয়ালই করছিলে না।
আমি ওকে ছাড়া কিছু কল্পনা করতে পারি না ফুপিমা। আমি ওকে অন্য কারো হতে কি ভাবে দেখবো? তাই তো এই ডিসিশন নিলাম। কিন্তু ওকে ছেড়ে যেতে পারলাম না। আমি ওকে ছাড়া একটা নিঃশ্বাস কল্পনা করতে পারি না। ওকে ছাড়া আমাকে আমি ভাবতে পারি না। তাহলে বলো আমি কি করতাম?

মুনিয়া আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে
– মায়া তোরই থাকবে চিন্তা করিস না।
– নিঝুম কোথায় ফুপিমা? ও আমাকে দেখতে আসেনি?
– ও অফিসে গিয়েছিলো আসবে বলেছে রাস্তায় হয়তো।
– ওহ আচ্ছা। ছোটমা মায়া ওখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো ভিতরে আসতে বলো।

আমান মায়ার দিকে তাকিয়ে
-আসবি না আমার কাছে মায়া?

মায়া এদিক সেদিক তাকিয়ে গুটি গুটি পায়ে আমানের দিকে এগিয়ে আসে। আমানের মাথার দিক দিয়ে বেডের সাইডে দাঁড়ায়।
সবাই আমানের সাথে কথা বলে বাহিরে যায় আমান আর মায়াকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। মায়া এখনো সাইডে দাঁড়িয়ে আছে।

-বসবি না মায়ারাণী?

মায়া আমানের সামনে চেয়ারে বসে পরে। আমানের চুলে হাত দিয়ে আমানের দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে
– আমাকে এতো ভালোবাসিস আগে বলিস নি কেনো?
– কেনো তুই কি বুঝতি না?
– উমহু
– তোর মনে আছে একবার ভার্সিটিতে একটা ছেলে তোর সাথে বেয়াদবি করেছিলো। তারপর এসব জেনে আমি একাই ওই ছেলেকে মারতে গিয়েছিলাম আর ওই ছেলের আর ছেলের বন্ধুরা মিলে আমায় পিঠিয়ে আমার হাত ভেঙে দিয়েছিলো? ( একটু হেসে) তুই আমায় হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছিলি আর কান্না করছিলি।
সেদিন তোকে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছি কিন্তু তুই খেয়াল করিসনি। তুই কান্নায় ব্যস্ত ছিলি। তোকে কিন্তু আমি প্ল্যান করেই আমার ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছিলাম। হি হি হি যাতে তোকে সব সময় চোখের সামনে রাখতে পারি।

শব্দ করে হেসে একটু থেমে মায়ার দিকে মায়াময় চোখে তাকিয়ে
– তোর মনে আছে মায়া?
– কি?
– একবার তোকে আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম আর তোর হাত কেটে গিয়েছিলো।
– হুম
– কেনো ফেলেছিলাম জানিস? তুই নিঝুমের সাথে খেলছিলি আমি তোকে অনেক বার ডাকার পরে ও শুনছিলিনা তখন ভীষণ রাগ উঠেছিলো আর যখন এসেছিলি রাগে ধাক্কা মেরেছিলাম। কিন্তু জানিস পরে আমি ই কান্না করেছিলাম অনেক তোর জন্য। আমার জন্য তোর হাত কেটে গিয়েছিলো। ভীষণ ভালোবাসি তোকে। আমার ঝগড়া ছিলো ভালোবাসার।

মায়া চুপ হয়ে আছে। আমান মায়ার হাত ধরে রেখেছে।
– কিরে কিছু বলছিস না যে।
– একটু রেস্ট নে ডাক্তার এতো কথা বলতে মানা করেছে।
– ডাক্তার কচু জানে আমি এখন সুস্থ হয়ে গেছি। তুই আছিস তো আমার কাছে।
একটু চুপ থেকে
– মায়া। তুই জানিস তো আমি তোকে মায়ারাণী ডাকি।
– হুম
– আমায় ছেড়ে যাবিনা তো কখনো?

একটু নিরব থেকে
– যাবো না। ( এক হাত দিয়ে ধরে)

হঠাৎ আমানের চোখ যায় দরজায় নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে দরজায়।
– নিঝুম দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আয়!

মায়ার ভিতরে ধক করে উঠে নিঝুমের নাম শুনে। মায়া পিছনে ফিরে দেখে সত্যিই নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে।

নিঝুম কিঞ্চিৎ হেসে
– না তোরা কথা আমি বাহিরে আছি পরে আসবো।
বলেই নিঝুম চলে যায় বাহিরে।

মায়া নিচে তাকিয়ে আছে। আমান মায়ার নিরবতা দেখে।
– মায়া একটু পানি দে তো গলা শুকিয়ে গেছে।

মুনিয়া আহমেদ তখন রুমে এসে।
– পানি খেতে হবে না সুপ এনেছি তোর জন্য আগে সুপ খাবি। মায়া নিঝুম এসেছে দেখেছি ওকে একটু বলতো আসতে।
– হুম ফুপিমা।

মায়া খুঁজছে তার মায়াদেবকে কোথাও নেই মায়াদেব। তবে কি চলে গেছে সে? আমানের সব কথা কি শুনেছে মায়াদেব? মায়ার ভিতরে সব তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। মায়াদেব কে একটু ভালো করে দেখতে ও পারেনি সে। খুঁজতে খুঁজতে নিঝুমকে পাই করিডোরের এক কোনায়। জানালার কাচে একহাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়ার মায়াদেব।

মায়া চুপ চাপ গিয়ে দাঁড়ালো নিঝুমের পাশে। নিঝুম বাহিরে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে।
নিঝুম মায়ার দিকে না তাকিয়েই

– তাহলে বিয়ে করছো আমানকে।
মায়া আমানের দিকে নিরব চোখে তাকিয়ে

— ফুপিমা যেতে বলেছে। সবাই অপেক্ষা করছে।
– হুম । ভালোই হয়েছে তোমাকে আর আমার বুঝাতে হবে না আমানকে বিয়ে করার জন্য।
– আমাকে তো অনেক আগেই পণ্য করে দিয়েছেন আপনারা। যাকে ইচ্ছে তাকে দিয়ে দিচ্ছেন।
– আমান ভীষণ ভালোবাসে তোমায় তাই না?
– হ্যা আর আ…..

ওদের কথার মধ্যেই মায়ার আম্মু এসে।

– কিরে তোরা এই খানে সবাই খুঁজছে তোদের আয়। আমানকে সন্ধ্যায় রিলিজ করে দিবে।
আমরা ভাবছিলাম আজকে রাতে একটা গেট টুগেদার করলে কেমন হয়? অনেক ঝামেলা গেলো কয়েকদিন।

নিঝুম মামির কথা কেড়ে নিয়ে।
– অনেক ভালো হবে মামুনি সব আত্নীয়স্বজন মিলে একটু রিলেক্স করা যাবে।
– হ্যা এখন চল সবাইকে তো ইনভাইট করতে হবে।

🍂🍂রাতে🍂🍂🍂

খাবার দাবারের অনেক আয়োজন করেছে আশিক আহমেদ আর শফিক আহমেদ। আজকে যেন বাড়ির প্রান ফিরে পেয়েছে। আশিক আহমেদ আর শফিক আহমেদ আলোচনা করছে আজকে আমান আর মায়ার বিয়ের তারিখ ও ফাইনাল করে ফেলবে। মায়া রেডি হয়ে নিচে নামছিলো তখনি ওদের কথোপকথন শুনতে পাই ।

মায়ার বুঝতে বাকি রইলো এই আয়োজন কেনো করা হয়েছে। মায়া আবার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। ওরনাটা দূরে ছুঁড়ে মারে কি করবে সে এখন? আর তো কোনো পথ খোলা নেই। আমানকে কিছু বলবে? কি করে বলবে কিছু বললে যদি আমান আবার সুইসাইড করতে যায় তখন? বার বার তো আর বেঁচে যাবে না। একটা মানুষ আমার জন্য মারা গেলে আমি কি ভালো থাকবো? সবাই তখন আমাকে ভুল বুঝবে। কেউ আমায় ক্ষমা করবে না। কিন্তু মায়াদেবকে না পেলে কি আমি ভালো থাকবো। মায়াদেবকে ছাড়া তো আমি ভালো থাকবো না। বেঁচে থেকে ও মরে যাবো। আমার কি অধিকার নেই একটু ভালো ভাবে বাঁচার? কি করবো এখন আমি। মায়ার কান্না দলা পাকাচ্ছে গলায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মায়া শব্দ করে কান্না করে দেয়। মায়াদেব কি তার এই অবস্থা দেখতে পাই না? বুঝতে পারে না তার মায়া ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছে।

দরজায় ধাক্কাচ্ছে মায়ার আম্মু। মায়া নিজেকে সামলে দরজা খোলে দেয়।
– কিরে এখনো রুমে বসে আছিস কেনো? সবাই চলে এসেছে নিচে। নিঝুম, মুনিয়া আপা, রাশেদ ভাই ( নিঝুমের বাবা) নিঝুমের দাদা, অহনা আর অনি ও ( নিঝুমের দুই বোন) সাথে একটা মেয়ে ও কি যেন নাম বললো ওহ মনে পড়েছে। তিথি।
– তিথি কে?
– নিচে আয় তাহলেই দেখতে পারবি।
– আমি যাবো না নিচে।
– পাগলামি করিস না মায়া। সব সময় পাগলামি মানায় না।
– কি মানায় আম্মু? আমাকে তো তোমরা পাগলই করে দিয়েছো আমাকে চেয়ার টেবিলের মতো বস্তু পেয়েছো যাকে ইচ্ছে তাকে দিয়ে দিচ্ছো। কেন আমি পাগল হবো না?

অহনা আর অনি কথার মাঝে এসে মায়া আপু তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি সবাই খুঁজছে তোমাকে।
মায়া চোখ মুছে অহনা আর অনির সাথে নিচে চলে আসে।
মায়ার আম্মু ঐশি শিকদারের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে তার মেয়ের এমন অবস্থা দেখে। না পারছে মায়া কাউকে কিছু বলতে না পারছে সইতে কিন্তু মা তো মা ই হয়। মা এর চোখে যে তার সন্তানের সব ধরা পড়ে যায়।

.
.
.
মায়া নিচে যেতেই দেখে নিঝুম একটা মেয়ের সাথে হাসাহাসি করছে। মায়াকে দেখে নিঝুম তিথিকে নিয়ে সামনে এগিয়ে আসে।

– মায়া এতো দেরি করে আসলে যে? যায় হোক তিথি ও মায়া। আর মায়া ও হচ্ছে তিথি আমার ফ্রেন্ড। আমরা এক সাথেই পড়াশোনা করেছি।

মায়া মলিন হেসে
– ওহ
তিথি মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে
– নিঝুম তোমার কথা অনেক বলে।

আমান পিছন থেকে এসে অহনা, অনিকে
-কেমন আছো?
– ভালো আছি ভাইয়া ( এক সাথে)

মায়া শুধু নিঝুমকে দেখছিলো মেয়েটার সাথে কতো ক্লোজলি বসছে দাঁড়াচ্ছে মনে হচ্ছে বিয়ে করা বউ। মায়ার এসব দেখে ইচ্ছে হচ্ছে উপরে চলে যেতে কিন্তু পারছে না।

কিছুক্ষন পর

আমান সবার এটেনশন নিয়ে মায়ার দুবাহুতে ধরে আজকে কিন্তু আমাদের মায়া গান গাইবে।

আমানের কথা শুনে
– আমান আমি গান পারি না।
– সবাইকে কি বলবো তুই ভার্সিটির সব ফাংশনে গান গাইতি আর অকেশনে ও। মায়া কিন্তু অনেক ভালো গান জানে কবিতা ও লিখে। ওর সুরে সবাই মুগ্ধ হয়। বিশেষ করে আমি হিহিহিহি।

অনি আর অহনা ও বলছে
– আপু প্লিজ একটা গান গাও।
মায়ার আব্বু ও বলছে
– কতো দিন তোর গান শুনি না মা একটা গান গেয়ে শোনা সবাইকে।

সবার অনুরোধে মায়া গান গাইতে রাজি হয়। চোখ জোড়া বন্ধ করে

ক্ষমা করো আমি ভালো নেই
এলোমেলো হয়ে গেছি,
যেন সব হারিয়েছি,
হে বসন্ত বিদায় ..

পথে পড়ে থাকা মন খারাপ
চুপি চুপি খুঁজে নেয় নির্বাসন,
স্মৃতি টুকু ধুয়ে গেছে পায়ের ছাপ
মনে পড়ে যায় আজ তার শাসন ..
ক্ষমা করো আমি ভালো নেই।

ওই দূরে নক্ষত্র মালায়
তুমিও তারা হয়ে জ্বলো,
আমার কান্না শুনতে কি পাও?
দেখতে কি পাও কিছু বলো? .. ( নিঝুমের দিকে তাকিয়ে)

পথে পড়ে থাকা মন খারাপ
চুপি চুপি বেছে নেয় নির্বাসন,
স্মৃতি টুকু ধুয়ে গেছে পায়ের ছাপ
মনে পড়ে যায় আজ তার শাসন ..
ক্ষমা করো আমি ভালো নেই ..

কে দেবে মুছিয়ে অভিমান
কে নেবে কোলে তুলে মাথা,
এতটা পথ পেরিয়ে এসে
উঠোনে শুধু ঝরাপাতা। ( চোখ মুছে)

ক্ষমা করো আমি ভালো নেই
এলোমেলো হয়ে গেছি,
যেন সব হারিয়েছি,
হে বসন্ত বিদায় …

পথে পড়ে থাকা মন খারাপ
চুপি চুপি বেছে নেয় নির্বাসন,
স্মৃতি টুকু ধুয়ে গেছে পায়ের ছাপ
মনে পড়ে যায় আজ তার শাসন ..
ক্ষমা করো আমি ভালো নেই,
ক্ষমা করো আমি ভালো নেই,

গান শেষেই মায়া সাথে সাথে চলে যায় ড্রয়িংরুমের বেল্কুনিতে। বেল্কুনির রেলিংয়ে এক হাত দিয়ে ধরে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে কাদঁছে মায়া ওই দিকে আরেক বেল্কুনিতে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে………..

চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

মায়াদেবের মায়া পর্ব-০২

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_২
#তাহমীম

– এখনো ভালোবাসিস নিঝুমকে?
– হুম ফুপিমা। আমি মায়াদেবকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। তোমরা প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা করো। বুঝতে শিখার আগে ও পরে থেকে আমি শুধু তোমার ছেলেকেই ভালোবেসেছি। এখন আমি অন্য কাউকে কি ভাবে বিয়ে করবো।

মুনিয়া আহমেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিরবতা কাটিয়ে
– ভুলে যা নিঝুমকে।

মায়ার চোখ দুটোতে হঠাৎ করে বিন্দু বিন্দু জল জায়গা করে নিলো। শত আলোর দিশা মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই নিভে গেছে
– কি বলছো ফুপিমা ( করুন চোখে মুনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে)
– ঠিকি বলছি মায়া, নিঝুমকে ভুলে যা। আমান হসপিটালের সিটে শুয়ে আছে তোর জন্য সুইসাইড করতে গিয়ে। আমি তোর সাথে নিঝুমের বিয়ে ঠিক করতে না গেলে হয়তো ও এখন ভালো থাকতো সুস্থ থাকতো। আমার বড় ভাইয়ের একটা মাত্র ছেলে ওকে আমি নিঝুমের থেকে ও বেশি আদর যত্ন করে বড় করেছি। ওর কিছু হলে আমরা কেউ মেনে নিতে পারবো না। ও তোকে অনেক ভালোবাসে।
– কিন্তু ফুপিমা আমি তো শুধু তোমার ছেলেকেই ভালোবাসি।

মুনিয়া আহমেদ চোয়াল শক্ত করে উঠে দাঁড়িয়ে
– নিঝুম কি তোকে বলেছে সে তোকে ভালোবাসে?
মায়া মাথা নিচু করে ফেলে। কি বলবে মায়া ? নিঝুম তো কখনোই মায়াকে বলেনি সে মায়াকে ভালোবাসে। নিঝুম ভালোবাসলে হয়তো মায়া সারা দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে পারতো। কিন্তু এখন সে কার জন্য লড়াই করবে? মায়া ভেবে নিতো হয়তো সে ও ভালোবাসে। তাহলে তার ভাবনা কি ভুল?

– কি হলো মায়া চুপ করে আছিস কেন? নিঝুম কি তোকে বলেছে?
– উমহু। ( চোখ মুছে)
– তাহলে কেন এই ভালোবাসা নিয়ে পড়ে আছিস? নিঝুমকে ভুলে যা ও তোকে ভালোবাসে না। আর ভালোবাসলে ও নিঝুম আমানের মতো পাগলামি করবে না ও নিজেকে বুঝিয়ে নিবে। আমার মনে হয় ও তোকে ভালোই বাসে না দেখিসনি কি বললো ও সেদিন তোকে? আমানকে বিয়ে করে নিতে। সবার ভালোর জন্য বলছি তুই নিঝুমকে ভুলে যা।

– সবার ভালোর জন্য আমাকে বলি দিচ্ছো? বাহ, আমার কথার আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তোমাদের কাছে? আমানকে আমি শুধু ভাই হিসেবে জেনে এসেছি এখনো তাই মানি।

মুনিয়া আহমেদ মুখ শক্ত করে

– আমার এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই। পানি মাথার উপর দিয়ে গড়াবার আগে সামলে নে।
– আমি শুধু মায়াদেবকেই ভালোবাসি ফুপিমা। তোমারা যদি আমায় জোরাজুরি করো আমানকে না আমায় হারাবে।

কথা গুলো বলে মায়া চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়েই দেখে সামনে নিঝুম অফিসের জন্য রেডি হয়ে এসেছে। ডার্ক ব্রাউন কালারের সুট পরেছে, কালো চুলগুলো সব সময়ের মতো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কপালে। এই মানুষটাকে সব সময় এতো ভালো লাগে কেনো জানা নেই মায়ার।

মায়া নিঝুমকে না দেখার মতো ভান করে চলে যেতে নিলেই
নিঝুম পিছন থেকে বলে উঠে
– কোথায় যাচ্ছো?

মায়া একটু দাঁড়িয়ে পিছনে না ফিরেই
– বাড়ি
– বিকেলে যাবার কথা তোমার
– মানুষ সব সময় সব কথা রাখে না।
– আচ্ছা চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি, আমি অফিসেই যাচ্ছি রাস্তায় আমানকে ও হসপিটালে দেখে যাবো।
– লাগবে না আমি একা যেতে পারবো।

কথা গুলো বলে পিছনে ফিরে এক মুহুর্তের জন্য তাকিয়ে তারাতাড়ি করে চলে যায় মায়া। নিঝুম মায়ার চোখের পানি দেখতে পেয়েছে। মন ভাঙার মতো কষ্ট পৃথিবীতে হয়তো আর কিছুতে নেই। বার বার ভেঙে যাচ্ছে মন। এই মন ভাঙার বিচার কেন হয়না মানুষের? আমরা যাদের ভালোবাসি আপন ভাবি তারায় বার বার খুব যত্ন করে কাছে ডেকে মন ভেঙে দেয়। ভেঙেচুরে চুরমার করে দেয়। গুড়িয়ে দেয় অজস্র আশা ইচ্ছে, বাসনা, সপ্ন।

নিঝুম তার মায়ের কাছে যায়। মুনিয়া আহমেদ খাটের মাথায় হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে।

– মায়াকে কি বলেছো আম্মু?
– যা বলার সেই গুলোই বললাম ওর বাচ্চামির জন্য দু পরিবারের সুখ নষ্ট করতে পারি না। এমন নয় যে আমি ওকে ভালোবাসি না আমি ওকে ভালোবাসি তবে এই খানে কিছু করার নেই।
– তুমি ভুলে কেন যাচ্ছো আম্মু আমি মায়াকে ভালোবাসি। ওর চোখে পানি আমি দেখতে পারি না। ওকে আমি ছোট থেকেই ভালোবাসে আগলে রেখেছি, তোমার কথায় আমি হয়তো ওকে ভুলে যাবার চেষ্টা করবো। আমান আমার ও ছোট ভাই ওর জন্য হয়তো আমি এতোটুকু করতে পারি, ওকে বুঝানোর চেষ্টা করবো আমানকে বিয়ে করতে তবে মায়ার কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না। সারা দুনিয়ায় আমি আগুন লাগিয়ে দিবো। আমার মায়া সুখে থাকবে এইটুকু দেখতে চাই আমি।

নিঝুমের চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে ভিতরে মনে হচ্ছে কোন ঝড় উঠেছে হঠাৎ। নিঝুম নিজেকে সামলে
– অফিসে যাচ্ছি আমি।
– কিছু খেয়ে যা।
– না মায়াদের ওখান থেকে নাস্তা করে এসেছি।

মায়া রুমে এসে দরজা লক করে দেয়। কার কাছে যাবে ও? সব আপন মানুষ গুলো ওর বিপক্ষে, হতবিহ্বল হয়ে বেল্কুনিতে তার খাচায় বন্দি পাখির কাছে যায়। এই পাখি দুইটা মায়াদেবের দেওয়া। মায়ার যখন ভীষন মন খারাপ হয় তখন পাখি গুলোর সাথে কথা বলে। মায়াদেবের দেওয়া সব কিছুই যে মায়ার কাছে দামী সেটা কষ্ট হোক বা পাখি দুটো।

মায়া আসতে আসতে পাখিগুলোর কাছে গিয়ে।

– আচ্ছা তোরা ই বল মায়াদেব কি আমায় ভালোবাসে না? আমার ভালোবাসা কি শুধুই একতরফা? আমি কি করলে মায়াদেবকে পাবো বলবি?
মায়া কান্নায় ভেঙে পরে
– কথা বলছিস না কেন? তোরা ও কথা বলবি না আমার সাথে? দেখনা মায়াদেব তার মায়াকে বুঝে না। আমার যে দম বন্ধ হয়ে যায় রে আমি কি করবো? আমানকে ভালোবাসার চেষ্টা করবো? চেষ্টা করে কি ভালোবাসা হয়? আমার কি মায়াদেবের সাথে সরাসরি কথা বলা উচিত? এমন বেহায়া কি ভাবে হবো ও তো বলেই দিয়েছে যাতে আমি আমানকে বিয়ে করে নেই।

চোখ মুছতে মুছতে

– কিরে তোরা কথা বলছিস না যে, মন খারাপ করেছিস? তোদের মালিকের নামে এসব শুনে? আচ্ছা মন খারাপ করতে হবে না চল তোদের একটা কবিতা শোনায়।

মেঘাচ্ছন্ন আমার একটুকরো রোদ
অবহেলায় আমার ভালোবাসা আর
কুয়াশায় ডাকা আমার অস্তিত্ববোধ।

বেঘোরে সবাই যখন নিশিত নিদ্রায়
নিদ্রাবিহীন আমার অনুভূতি তখন
দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মৃতির মেলা জমায়।

একান্ত নিজের থাকা লুকানো অনুভুতি
অবেলায় কেন ছেড়ে যায় না নিয়েই অনুমতি?
চূর্ণন করেছে সে কবেই বেপরোয়া আবেগ
একটু ও কাজ করেনি তার অকেজো বিবেক।

এমন দহন তার নাই-বা হোক
যত ক্লেশ আছে সব আমার হয়েই রওক।
রুক্ষ অহংকারী কটু কথা নাই বা হলো শোনা
অন্বেষা যেনো না করতে হয় আমায়
ঈশ্বরের কাছে আমার এই আরাধনা।

দিনশেষে তবু ও বলবো তার নেই গলদ
শুধু একটাই আরজি আমি ভালোবাসি
বললে সে যেনো না করে বিমত।

দরজায় কেউ শব্দ করছে শুনে মায়া চোখের পানি মুছে দরজার দিকে যায়৷ দরজা খুলে দেখে মায়ার আম্মু (ঐশি শিকদার) দাঁড়িয়ে আছে।

– আর কতো কান্না করবি? মুনিয়া আপা না করে দিয়েছে নিঝুমকে বিয়ে করাবে না এখানে।
– জানি।
– সবাই হসপিটালে যাচ্ছি মুনিয়া আপা নিঝুম ও আসবে তোকে বলেছে নিয়ে যেতে সাথে।
– আমি যাবো না।
– কেনো যাবি না? দেখ আমান তো আমাদেরই ছেলে অনেক ভালো ছেলে তোকে ভালোবাসে অনেক।
– মা এখানে ভালো খারাপ কেনো আসবে? আমি ভালোবাসি মায়াদেব কে এখন অন্য কে ভালো কে খারাপ আমি দেখে কি করবো?
– এই গুলো ভালোবাসা না এই গুলো ছেলে বেলার আবেগ।
– তাহলে আমানের ভালোবাসা ও আবেগ।

ঐশি শিকদার একটু চুপ থেকে
– তর্ক করিস না। জলদি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। তোর আব্বু, বড় আব্বু, বড় মা, মাহাদ ( মায়ার ভাই) আশা ( আমানের বোন) সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।

মায়া কিছুক্ষণ বসে থেকে কি ভেবে যেনো উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। তারপর রেডি হয়ে নিচে যায়।

মায়াকে দেখে মায়ার বড় আব্বু ( আশিক আহমেদ)
– এই তো মায়া মা চলে এসেছে।

মায়ার আব্বু ( শফিক আহমেদ)
– কিরে এতো দেরি করলি যে। ওইদিকে আমান হয়তো অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে গেছে।

মায়ার আম্মু সবার এতো প্রশ্ন দেখে
– আচ্ছা এখন তারাতাড়ি চল সবাই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
দুই গাড়িতে সবাই উঠে পড়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার জন্য।
.
.
.
আমান শুয়ে আছে বেডে সবাই রুমের ভিতরে বসে আছে।
মায়া ভিতরে ডুকেনি দরজার পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে দূরে আমানের দিকে তাকিয়ে ।
আমানের আম্মু কান্না করছে আমানকে ধরে।
– কেনো এমন করলি তুই। তুই আমাদের আগে বলতে পারতি। আমরা একটা ব্যবস্থা করতাম।

আমান কিছু না বলে মায়াকে খুজঁছে সব জায়গায় চোখ বুলিয়ে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তার মায়া………

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

মায়াদেবের মায়া পর্ব-০১

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_১
#তাহমীম

মেয়েটা বড্ড দোটানায় পড়েছে চাচাতো ভাইকে বিয়ে করবে নাকি ফুফাতো ভাইকে বুঝতে পারছে না। সদর দরজা পেরিয়ে ড্রয়িংরুমে ডুকতেই কথা গুলো শুনতে পেলো মায়া। প্রতিবেশি কয়েকজন আন্টি এসব বলে হাসাহাসি করছে। মায়া তাদের কথার তোয়াক্কা না করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যাবে তখনি একটা আন্টি ডাক দিতেই মায়া পিছনে ফিরে তাকায়

—” কিরে মায়া কাকে বিয়ে করবি ঠিক করলি নাকি কিছু ?

মায়া কিছু না বলে জোর করে একটা হাসির রেখা টেনে চলে গেলো । ভীষণ দম বন্ধ লাগছে মায়ার। কেনো এমন হচ্ছে ওর সাথে, এমন না হলে ও পারতো।

এতো সুন্দর মায়াদেবের মায়াবী মায়ার এমন হাল যেন কেউ দেখলে মেনে নিতে পারবে না।
নিভু নিভু আলোয় ধীর পায়ে আয়নার সামনে যাচ্ছে মায়া। অনেক দিন ধরে আয়না দেখা হয় না। এতো সুন্দর মুখে অনেক গুলো ব্রন বের হয়েছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। চুল গুলো পাটের ন্যায় উসকোখুসকো হয়ে পরে আছে কোমড়ে। মায়া আয়নার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো নিজেকে দেখে। হাসি দিলো কারন মায়া ভাবছে এটাই কি সে মায়া যে ছিলো ভিষণ পরিপাটি। নিজেকে সব সময় একটা অপ্সরার মতোই রাখতো।

কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত জীবনকে দূর্বিষহ করে ফেলেছে মায়ার। বেচেঁ আছে তবে বাচাঁর ইচ্ছে টুকু আজ নেই। শুনশান-নিস্তব্ধ রাতের শেষ প্রহরে এমন করাটা ঠিক কোন পর্যায়ে পরে জানা নেই মায়ার। কিন্তু ভাবতে তো কোনো ঠিক সময়ের প্রয়োজন হয়না। গভীর রাতে ভাবতে বেশ ভালো লাগে। কোনো কোলাহল থাকে না। চিৎকার চেচামেচি, গাড়ির হর্ন এমন কি পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ থাকে না।গভীর রাতটা শুধু মাত্র একান্ত নিজের। যেখানে কারো হস্তক্ষেপ থাকে না। কেউ ভাবনার বেঘাত ঘটাতে পারে না। বেঘোরে ঘুমায় সবাই আর ভালো না থাকা মানুষ গুলো জাগে।

মায়ার এই অবস্থার জন্য তার মায়াদেবই দায়ী। কতো সুন্দর করে বলে দিলো মায়াদেব
—” মায়া আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবো না।
তুমি আমানকে বিয়ে করে নাও। ও তোমায় অনেক ভালোবাসে, অথচ মায়াদেব একবার ও দেখলো না মায়া তাকে কতটা ভালোবাসে।

মায়াদেব নামটা মায়া ই দেই তার মায়াদেবকে। মায়াদেবের আরেকটা নাম আছে সেটা হচ্ছে নিঝুম চৌধুরী। মায়ার বাবারা দু-ভাই আর আর একবোন। নিঝুম মায়ার ফুপাতো ভাই আর আমান আহমেদ চাচাতো ভাই। নিঝুম মায়ার চার বছরের বড় আর আমান তিন বছরের বড়।

ছোট বেলার প্রায় অর্ধেক সময়ই কেটেছে তিনজনের এক সাথে। মায়া আর আমানের সব সময়ই ঝগড়া লেগে থাকতো আর নিঝুম তাদের আটকাতো। মায়া যখন কিছুই বুঝে না তখন মায়ার বড় মা মজা করে জিজ্ঞেস করতো সে বড় হলে কাকে বিয়ে করবে মায়া অবুঝের মতো না বুঝেই বলতো নিঝুমকে আর খিলখিল করে হাসতো। সাথে সবাই হাসতো মায়ার কথা শুনে।

একবার আমান মায়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর মায়ার হাত কেটে যায় নিঝুম দৌড়েঁ এসে নিঝুমের শার্ট খুলে মায়ার হাত পেচিয়ে ফেলে যাতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ব্যান্ডেজ করে দেয়৷ মায়া অপলক চোখে দেখছিল নিঝুমকে মেয়েদের মতো বড় বড় চোখের পাপড়ি, লাল ঠোট কি মায়াবী হাসি। সেই থেকেই মায়া নাম দিয়েছিলো নিঝুমকে মায়াদেব। আমান যখন কিছু খেত আর মায়াকে দিতো না তখন নিঝুম এনে দিতো। কত যত্ন নিতো মায়ার।

হঠাৎ নিঝুম পড়াশুনার জন্য আমেরিকায় চলে যাবে শুনে মায়া অনেক কেদেঁছিলো। মনে হয়েছিলো সারাজীবনের জন্য নিঝুমকে হারিয়ে ফেলছে সে। কিছু মানুষ দূরে গেলে আর কখনো ফিরে আসে না। আর তাই সত্যি হলো নিঝুম ফিরে এসেছে ঠিকি কিন্তু মায়ার কাছে ফিরে আসেনি।

মায়ার আজ সব কথা কেন যেন মনে পরছে। আমানকে তো সে ভাই হিসেবেই জেনে এসেছে এতদিন আমান মায়াকে ভালোবাসে সে জানতো না। কেন করলো আমান এমনটা মায়ার সাথে। আমান এমনটা না করলে হয়তো মায়াদেবের সাথে বিয়েটা হয়ে যেতো। সব এলোমেলো করে দিয়েছে আমান, সাথে মায়ার জীবনটা ও।
একটু একটু করে যখন মায়া বড় হচ্ছিলো নিঝুম বেড়াতে আসতো আর মায়া সারাক্ষন নিঝুমের সাথেই লেগে থাকতো।কবে নিঝুম তাদের বাড়ি আসবে সেই অপেক্ষায় বসে থাকতো। এসব করে কবে কখন নিঝুমকে মায়া ভালোবেসে ফেলে বুঝতেই পারেনি।
.
.
.
দরজায় ঠক ঠক শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মায়ার।সারা রাত ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারেনি, ঘুম জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো

—‘ কে?
—‘ নিঝুম

নিঝুম নাম শুনেই মায়া তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে। দরজা খুলে দিতেই নিঝুম ভিতরে এসে খাটের মাথায় বসে।

নিঝুম মায়াকে দেখছে কেমন একটা হয়ে গেছে নিজের যত্ন নেয়না একদমই বুঝা যাচ্ছে। মায়ার মায়া মলিন হয়ে গেছে। মুখ ফ্যাকাসে লাগছে, চুল ও চিরুনি করে ঘুমায়নি। পরিপাটি মায়াকে কেমন এলোমেলো লাগছে।

নিঝুমকে নিরব চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়া প্রশ্ন করলো

—‘ কেনো এসেছেন?
—‘ তোমাকে নিয়ে যেতে।
—‘ আমাকে নিয়ে যেতে মানে?
—‘ আম্মু বললো নিয়ে যেতে। বিকেলে চলে আসবে।
—‘ ওহ তাই নিতে এসেছেন? ( নিঝুমের চোখের দিকে তাকিয়ে)
—‘ হ্যা।

মায়ার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো ফুপি মা পাঠিয়েছে তাই মায়াদেব নিতে এসেছে। না হয় আসতো না। আচ্ছা নিঝুম কি এক মুহুর্তের জন্য ও আমায় ভালোবাসেনি? আমি কি শুধু একাই বেসেছি? আর অবুঝের মতো ভেবেছি সে ও আমায় ভালোবাসে!? আমায় ভালোবাসলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো তার? আমি তার খুব বেশিই অযোগ্য? নিঝুকে অনেক গুলো অভিযোগ করতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্ত বলার সাহস পাচ্ছে না মায়া।

মায়া ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দেখে নিঝুম মায়ার সামনে হাত নাড়িয়ে

—‘ কি হলো ফ্রেশ হতে যাও। আমি তোমাকে দিয়ে অফিসে যাবো অনেক কাজ আছ।
—‘ কেন যেতে বলেছে ফুপি মা?
—‘ জানি না কিছু বলবে তোমায় বললো ইমারজেন্সি।

মায়ার চোখে মুখে আশার আলো ফুটে উঠলো মনে হচ্ছে। মায়া নিঝুম কে ভালোবাসে এটা তার ফুপিমা জানে। হয়তো ফুপিমা মায়াকে বুঝবে। মায়া দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুমের দরজা একটু ফাঁক করে মায়ার তোয়ালেটা দিতে বললো নিঝুমকে।

নিঝুম মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সারা মুখে ফেসওয়াশ লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। নিঝুম মুচকি হেসে তোয়ালে এগিয়ে দিলো মায়াকে।

মায়া ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে নিঝুম এখানো আছে ফোন টিপছে বসে বসে।
মায়া কিছু না বলে আয়নার সামনে গিয়ে চুল আচরাতে লাগলো।
নিঝুম আড় চোখে তাকিয়ে বললো

—‘ মাথায় কি চিরুনি লাগাও না নাকি চুল তো কাকের বাসা করে ফেলেছো ।

—‘ তাতে আপনার কি? আমার চুল কাকের বাসা বানাবো নাকি কোকিলার বাসা বানাবো ওটা আমার ব্যপার।

—‘ যত্ন নিতে না পারলে এতো লম্বা চুল রাখার কি প্রয়োজন।

—‘ আমরা কিছু মানুষকে পাবো না জেনে ও যেমন ভালোবাসি তেমন প্রয়োজন। ( নিরব হয়ে)

পুরো ঘর থম থম করছে নিরবতায়। নিঝুম বুঝতে পারছে এখন কি কথা উঠবে তাই দাঁড়িয়ে

মায়া চুপ হয়ে গেছে কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললো ভাবছে।

—‘ আমি নিচে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো।

নিঝুমের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মায়া। মায়া বুঝতে পারছে নিঝুম পালিয়েছে। চোখের কোনে অবাধ্য কিছু পানি চলে আসতেই মায়া হাত দিয়ে তা মুছে দেয়।

মায়া নিঝুম নাস্তা করে নিঝুমদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। মায়া চুপ করে বসে আছে। নিঝুম বার বার মায়ার দিকে তাকাচ্ছে ওকে চুপ দেখে।অতিরিক্ত কথা বলা মেয়েটা কেমন চুপ হয়ে গেছে। মায়ার কান্না আসছে কিন্তু কান্না করতে পারছে না। এখন একমাত্র ভরষা তার ফুপিমা। কি বলতেই বা ফুপিমা যেতে বলেছে মায়াকে! এখন সবাই মায়ার বিরুদ্ধে এমনকি মায়াদেব ও। হয়তো মায়াদেব কখনো মায়ার পক্ষেই ছিলো না।

বাড়িতে ডুকতি মুনিয়া আহমেদ ( মায়ার ফুপি) মায়াকে তার রুমে নিয়ে যায়। মায়া চুপ করে তার সামনে বসে আছে।

মুনিয়া আহমেদ মায়ার দিকে তাকিয়ে

—‘ এখনো ভালোবাসিস নিঝুমকে?………

চলবে……..

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

2

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৭_(শেষ)

চোখ বাধা অবস্থায় আরশিকে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে ছেলেগুলো। আরশি একটু কথা বলারও সাহস পাচ্ছেনা। কারন তার মাথায় একটা গান ঠেকানো। চুপচাপ তাদের সাথে হাটছে আরশি। হটাৎ আরশিকে কোথাও যেনো এনে দার করালো তারা। ভয়ে রিতিমত কাপছে সে। তার একটাই ভাবনা রিদ ভাইয়া কেনো এভাবে ছেলেগুলোর হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলো এতো রাতে?
হটাৎ একটা ছেলে এসে আরশির গলায় একটা ধারালো ছুরি ধরলো। এবার আরশি নিশ্চিৎ আগামি কাল সকালের সূর্যটা হয়তো তার আর দেখা হবে না। হিচকে হিচকে কাদছে আরশি। হটাৎ পাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠে,
– বস মারার আগে অন্তত চোখের বাধনটা খুলে দিন চারপাশটা একটু দেখুক।
আরশি তখনও কাঁদছে। একটা ছেলে এসে চোখ খুলে দিলো আরশি। ধিরে ধিরে চোখ খুললো আরশি। চারপাশ টা অন্ধকার। হুট করে লাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে চার দিকে। সামনে তাকাতেই দেখে রিদ হাটু গড়ে একটা ডায়মন্ড রিং নিয়ে তার সামনে। চারপাশটা নানা রকম বেলুন নানা রমন আলোয় ঝলমল করছে।
ঢুম ঢুম করে ফাটা আওয়াজে কেপে উঠে আরশি। ছোট ছোট রঙ বেরঙিন কাগজের টুকরু গুলো মাথায় এসে পরছে তার। আরশির চোখ বরাবর চোখ রেখে বলে উঠে,
– Well you marry me?💖💖
ছল ছল দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। ভয় যেনো এখনো কেটে উঠেনি তার। রিদ আরশির অনামিকা আঙুলে রিংটা পড়িয়ে উঠে দাড়ায়। আরশির দুই গালে হাত রেখে বলে উঠে,
– আজ চুপ করে আছিস যে?
আরশি বড় বড় শ্বাস নিয়ে বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কেদে দেয়। হাসিতে নড়ে উঠে রিদের সারা শরির। রিদ হাসতে হাসতে বলে উঠে,
– কি রে বাচ্চাদের মতো কাদছিস কেনো? আচ্ছা আরো জোড়ে জোড়ে কাদতো। তোকেতো এখন পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। একেবারে ফ্রেম বন্ধ করে রাখার মতো। এই সামি, জনি দারুন লাগছেনা তোদের ভাবিকে? ভিডিও করতো।
সামি খেলনার গানটা আঙুলে ঘুড়াতে ঘুড়াতে বলে উঠে,
– যা হয়েছে তোমার ফ্লেনেই হয়েছে মামা। ভয়ে বেচারির কলিজা শুকিয়ে গেছে তোমার জন্য। এখন তোমরা জিনিস তুমিই শামলাও। আমরা বরং বাইরে ওয়েট করি। এই সবাই চল। রুমের বাইরে চলে গেলো সবাই। আরশি এবার কান্নার গতি স্লো করে এলোপাথারি কিল দিতে থাকে রিদের বুকে। হাসতে হাসতে আরশিকে নিজের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে নেয় রিদ। এবার আর কিল দেওয়ার জায়গা টুকু অবশিষ্ট রইলোনা। মিশে আসে রিদের সাথে। বেশ কিছুক্ষন পর রিদ খেয়াল করলো আরশি শান্ত হয়ে মিশে আছে তার সাথে। রিদ ওভাবেই বলে উঠে,
– ভয় পেয়েছিলি?
– হুম খুব😔 এমন ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজ আমি কখনো পাইনি।
– আগে কখনো দেখিসনি বলেই তো সারপ্রাইজ টা এমন ছিলো। আরো একটা সারপ্রাইজ দেখবি?
আরশি এবার রিদের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলে উঠে,
– না না, এমন ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজ আর পেতে চাই না আমি। আমার প্রাপ্তির পরল্লা আজ পরিপূর্ণ।
– আচ্ছা, চোখ বন্ধ কর।
– কেনো?
– ওফ্ কর না।
রিদের কথায় চোখ বন্ধ করে রইলো আরশি। হুট করেই আরশিকে কোলে তুলে হাটা শুরু করে রিদ।
– কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?
– একধম চোখ খুলবি না।
রিদ আরশিকে নামিয়ে বলে উঠে এবার চোখ খোল। আরশি চোখ খুলে দেখে বাবা মা ভাইয়া ভাবি মামা মামি রিদের বন্ধুরা সবাই উপস্থিত। সামনে একটা বড় কেক রাখা। রিদ আরশির হাহে ছুরিটা দিয়ে নিজে সহ মিলে কেকটা কেটে একে একে সবার মুখে তুলে দিলো।
আরশির বুঝতে বাকি রইলো না এই প্লেনে সবাই জড়িত ছিলো।

রাত তিনটা বাজে সবাই গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। শুধু ঘুম নেই আরশির চোখে। এই মাঝ রাতে তার জন্য যে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো তা ছিলো তার ধারনার বাইরে। বার বার তাকাচ্ছে হাতে রিদে পড়িয়ে দেওয়া রিংটার দিকে। সত্যিই কি আজ রিদ ভাইয়া আমাকে নিজের করে নিলো? নাকি এটা আমার স্বপ্ন?

রিদের পাশে বসে আছে আরশি। রিদ ঘুমাচ্ছা আর আরশি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে। রিদের ঠিক মাথার পাশে আরশি। রিদ কাত গয়ে আরশির কোমর ধরে জড়িয়ে নিলো। এবার জ্বিব্বায় কামর দিলো আরশি। কিভাবে ফেসে গেলো সে। এখন যেতে চাইলেও নিশ্চিৎ রিদ ভাইর ঘুম ভেঙে যাবে। কি করা যায়? আরশি ওড়নার এক কোন দিয়ে রিদের কানে শুরশুরি দিতে থাকে। তবুও নড়ছেনা রিদ। এবারও হতাশার নিশ্বাস ছারতে হলো তাকে।
দেখতে দেখতে আরো কিছুক্ষন কেটে গেলো। আরশি নিচু হয়ে রিদের দুই গালে চুমু দিলো। এর পর কপালে আবার গালে। হুট করেই রিদের চোখ খোলাতে যেনো আকাশ থেকে পরলো আরশি। জ্বিবে আবারও একটা ছোট্ট করে কামর দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে নিজে হাজারও বকা দিচ্ছে। ধুর আরশি কি হলো তোর আজ। পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি? নিজের হবু বরের হাতে এভাবে ধরা মানা যায়। রিদ গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– কি করছিলি?
– ইয়ে মানে, আসলে আমি ইয়ে,,,
– সারা মুখতো চুমু দিতে দিতে ভিজিয়ে পেললি, তো আমার এই হতভাগা ঠোট জোড়া কি তোর চোখে পরেনি?আসলে দুর্নিতিতে শুধু দেশ না, তোর মনটাও দুর্নিতিতে ভরে গেছে। কোথাও ষোল আনা আর কোথাও এক আনাও নাই।
আরশি আমতা আমতা করে এক দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

আরশি বৃষ্টিকে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সে কি উল্লাস।
– ভাবি, থ্যাংক ইউ সো মাচ। সবাই এইসব জানলো কি করে? নিশ্চই তুমি জানিয়েছো সবাইকে। আমি তো আরো ভয়ে ছিলাম বাবা মা কে কিভাবে বলতো। তুমি যে এতো সহজে সব মানিয়ে নিলে। ওয়াও যাস্ট ফাটাফাটি ভাবি। যাও তোমার জন্য এি উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে একটা ট্রিট ডান।
– আমিতো কাউকেই কিছু বলিনি।
– তাহলে?
– সেইদিন রাতে সব কি এমনি এমনি শেষ হয়ে গেলো? রিদ ভাইয়াকে সবাই জিগ্গেস করলো কেনো তুমি হটাৎ এমন করলে? তখন রিদ ভাই সবাইকে বুঝিয়ে বললো বিষয়টা।
– আর বাবা মেনে নিলো?
– মেনে না নিয়ে উপায় আছে?
– লুডু খেলবে ভাবি?
– না ইচ্ছে করছেনা। আর তুমি এমনিতেও চুরি করে খেলো।
– কি আমি চোর? যাও খেলবোই না তোমার সাথে। বিয়ের পর আমি আমার বরের সাথে খেলবো।
– হুম তা তো জানি বিয়ের পর তো তুমি তোমার বরের সাথেই খেলবা?
আরশি একটু লজ্জা ভঙ্গিতে বলে উঠে,
– কি খেলমু?
– বুঝনা?
– না বুঝিনা?
বৃষ্টি হেসে বলে উঠে,
– আমি লুডু খেলার কথা বলছি। তুমি কি ভাবছিলা?
আরশি লজ্জা ভঙ্গিতে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হেসে দেয়।
বৃষ্টি আরশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– তুমি কিন্তু অনেক খারাপ আছো আরশি।

আরশি আর রিদের বিয়েটা এতো তারাতারি দিবেনা রিদের বাবা। আগে তাদের বিজনেস এর সব ঠিক ঠাক হোক তার পর রিদের হাতে সব বুঝিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হবে সে। তার পর বিয়ে। সব মিলিয়ে প্রায় বছর খানেক লেগে যেতে পারে। তার পর বিয়ে নিয়ে চিন্তা।
,
,
এভাবে কেটে গেলো আরো দের বছর। এখন সব ঠিকঠাক। আজ রিদও আরশির বিয়ে হলো। সারা বাড়ি সাজানো হয়েছে। রিদ ও আরশি দু,জনকে দুই রুমে রেখে বাসর ঘর সাজাচ্ছে রিদের বন্ধুরা। শ্রাবন হাতে ঘড়ি পরে চোখে চশমা লাগিয়ে দৌড়াদৌরি করছে এদিক ওদিক। আর চার দিকে পিট পিট করে তাকাচ্ছে। বৃষ্টি শ্রাবনের পেছন পেছন দৌড়াতে দৌড়াতে হয়রান। এই কম বয়সেও শ্রাবনের ফাজলামির মাত্রাটা আকাশ ছোয়া। ঠিক মতো কথা বলতে না শিখলেও কিভাবে শয়তানি করতে হয় তা শিখে গেছে ভালো। সারাদিন চোখে চোখে রাখতে হয় তাকে। এই একটা ছেলে নিয়েই যেনো বৃষ্টির জীবন ত্যানা ত্যানা।

বাসর ঘরে বসে আছে আরশি। ফুলে ফুলে সাজানো রুম টা। রিদ দরজা খুলে ভেতরে আসতেই ঠিকঠাক হয়ে বসে আরশি। আরশি অপেক্ষায় আছে রিদ কখন এসে তার বড় ঘোমটা টা তুলে বলবে তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। এক ধম আমার স্বপ্নে আশা পরীর মতো।
রিদ এসে তার ঘোমটা তুলে থুতনিতে হাত রেখে বলে উঠে মাশাল্লাহ্। তোকে আজ ঠিক আমার স্বপ্নে আসা পেত্নির মতো লাগছেরে। রাগে মুখ লাল হয়ে যায় আরশির। এই রাগটাও যেনো রিদের মুখে ফুটে উঠা হাসির কারন।
দরজার ওপাস থেকে শ্রাবন বার বার দরজায় থাপ্পর দিচ্ছে।
– পুপি পুপি দত্তা খোলো। আমি এসে গেতি।
আরশিও রিদ দুজন তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।
আরশি রিদের দিকে চেয়ে বললো,
– আমি ওকে নিয়ে আসি? আমার সাথে ছারা ঘুমায় না।
– কি শ্রাবনকে নিয়ে আসবি তুই? তাও আবার আজ?
– সমস্যা কি তা না হলে এখন নিশ্চই হট্টগোল বাজিয়ে দিবে। আর শুনো তুমি আমায় এখন থেকে তুই তুই করে বলবে না। আমি তোমার বৌ হই।
– আচ্ছা বাবা, আমি তোকে তুমি করেই বলবো। তবুও আজ শ্রাবনকে আনিস না। কাল থেকে না হয় ওকে নিয়ে ঘুমাস? আজ বুঝিয়ে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দে।
বাইরে শ্রাবনের কান্নাকাটি শুনা যাচ্ছে। বৃষ্টি তাকে নিতে আসলে তার হাত পা ছোরাছুরি কান্না শুরু হলো। কারন সে আজ তার ফুফির সাথেই ঘুমাবে। শ্রাবনের কান্নাকাটিতে বাড়ির মানুষ জড়ো হয়ে গেছে ওখানে। এগিয়ে বৃষ্টি শ্রাবনকে নানান কিছুর লোভ দেখিয়েও মানাতে পারছেনা।
অবশেষে আরশি নিয়ে এতো শ্রাবনকে। তারাতারি ঘুম পারিয়ে ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসবে।
প্রায় তিন ঘন্টা পার হয়ে গেলো আরশি শ্রাবনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে থাকে,
– ঘুমাও বাবা।
কিন্তু শ্রাবনের চোখে আজ ঘুমই আসছেনা। খাটের এক পাশ থেকে একটা বেলুন নিয়ে খেলা করছে সে। রিদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে খাটের এক পাশে। পাশ থেকে শ্রাবন বলে উঠে,
– তাত্তু তোমাকে কি আমি ঘুম পালানি গান তুনাবো?
– বাবা এতো পট পট না করে তুই একটু ঘুমা।
– না আমি আদ ঘুমাবো না আমি তোমাদেত থাতে গপ্প কলবো।
রিদ এবার মাথা গরম করে বলে উঠে,
– গল্প না? মাথায় তুলে আছাড় দিবো তোকে।
রিদের বকা শুনে শ্রাবন উচু গলায় বলে উঠে,
– আম্মু,,,,,,
হুট করেই রিদ শ্রাবনের মুখ চেপে ধরে বলে,
– বাবা চুপ থাক চুপ থাক।
এভাবেই কেটে গেলো রিদ আরশির বাশর টা।
,
,
শ্রাবনের পাঁচ বছর পার হলো। রাতের হাত ধরে হসপিটালের বাইরে পায়চারি করছে সে। কিছুক্ষন পর ডাক্তারের ডাকে ভেতরে গেলো সবাই। দেখে রিদের কোলে একটা ফুটফুটে মেয়ে। পাশেই শুয়ে আছে আরশি। শ্রাবন বলে উঠে,
– চাচ্চু ওকে একটু আমার কোলে দাও।
রাত বলে উঠে, তুমি এখন নিতে পারবেনা বাবা ও খুব ছোট আরো পরে নিও।
– আচ্ছা তাহলে চাচ্চু তুমি একটু নিচু হও আমি ওকে দেখি।
রিদ হাটুর উপর ভর দিয়ে শ্রাবনকে দেখালো। কারন নাহলে শ্রাবন এখন হসপিটালেও একটা গন্ডোগল বাজিয়ে দিবো কান্না করে।
– এই দেখো বাবা।
শ্রাবন রিদের মেয়েটার ছোট ছোট হাতগুলো ধুরে একটা চুমু দেয়। হাসি মুখে বলে উঠে,
– ওর নাম হবে মেঘলা। কারন সে শুধু শ্রাবনের আকাশেই ভেষে উঠবে শ্রাবনের মেঘ হয়ে।
শ্রাবনের কাজে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বিশেষ করে বৃষ্টি আর রাত। এই পিচ্চি ছেলে বলে কি?

………….. সমাপ্ত………….

~~ গল্পটি নিয়ে আপনাদের মতামত জানাবেন। সুন্দর হলেও বলবেন আর ভুল হলেও ধরিয়ে দিবেন। কারণ ভুল থেকেই নতুন করে শিখা যায়। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা করি আল্লাহ্ হাফেজ।
হ্যাপি রিডিং💖💖💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১৫+১৬

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৫_এবং_১৬

হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গভির ভুমে আচ্ছন্ন আরশি। আরশির ঠিক মাথার পাশটায় বসে আছে রিদ। তাকিয়ে আছে আরশির ঘুমন্ত চেহারার দিকে। বাম গাল টা লাল হয়ে আছে। পাঁচ আঙুলের দাগ এখনো স্পষ্ট। আরশির মায়া ভরা মুখে পাঁচ আঙুলের দাগ চোখে পরলেই যেনো অন্তরাত্বা কেপে উঠে রিদের। নিজের অজান্তেই হাতটা চলে যায় আরশির গালে আঙুলের দাগ গুলোর উপর।
গালে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতেই জেগে উঠে আরশি। দোখে রিদ করুন চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। রিদকে দেখেই রাগটা এসে মাথায় ভর করলো আরশির। রিদ আরশির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠলো,
– খুব ব্যাথা পেয়েছিলি তাই না?
এবার মেজাজ টা বিগড়ে গেলো আরশির। ইচ্ছে করছে খাট থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে মেরে ফেলতে। ওহ্, খাট থেকে ফেললে তো আর মরবে না। মাথায় তুলে বারান্দা থেকে ছুড়ে নিচে পেলে দিতে। কিন্তু আফসোস টা রয়ে গেলো শুধু শক্তির অভাবে। নাহলে আজ ঠিকই বারান্দা থুকে ছুড়ে নিচে ফেলতো।
– সরি রে আরশি। ভেবেছিলাম তুই তখন দরজা বন্ধ করে নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলছিস। তার উপর আবার এভাবে ডাকাডাকি করার পরও দরজা খুললি না। সব মিলিয়ে নিজের রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারিনি আমি।
আরশি একটা নিশ্বাস ছেরে শান্ত গলায় বলে উঠে,
– রিদ ভাই, তোমাকে আমি এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেছি? আর সরি বলছইবা কেনো? দোষ টা তো আমারই, কাওকে একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলা। আমি কিচ্ছু মনে করিনি রিদ ভাই, তুমি চলে যাও এখান থেকে।
– আমায় ভুল বুঝিস না আরশি। মানুষ কখনো কখনো যা দেখে তা সত্যি হয় না। সত্যিই টা আড়ালেই থেকে যায়।
– জানো ভাইয়া, তুমি ছোট থেকেই যেভাবে আমার পাশে ছিলে এভাবে কেও আমায় সাপোর্ট করে যায় নি। এমন কি নিজের ভাইও না। যখন আমার ধিরে ধিরে বুঝার বয়স হয়েছে তখন আমি সব বুঝতাম। সব অনুভব করতে পারতাম। কিছু বুঝি আর না বুঝি এটা বুঝতাম যে কেও একজন আমাকে তার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। সব সময় আমায় আগলে রাখতো। অনুভুতি গুলো মনেই ছিলো কখনো প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু যেদিন শুনি বাবা আমার বিয়ে ঠিক পরে ফেলেছে বিশ্বাস করো সেদিন যেনো চার দিকটা শুধু অন্ধকার মনে হয়েছিলো আমার কাছে। তবুও হাজারও কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে নিজেকে শক্ত করলাম। কারণ আমি চাইনি বাবাকে কষ্ট দিতে। আমি চাইনি এই নিয়ে তোমার আর রাত ভাইয়ার ২৫ বছরে বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আমি চাইনি আমার পরিবার অন্য একটা পরিবারের কাছে লাঞ্চিত হোক। তাই না চাইতেও সেদিন তোমার সাথে এভাবে খারাপ ব্যাবহার করেছিলাম। আমি জানতাম, তোমাকে এসব বললে তুমি সব কিছু এলোমেলো করে ফেলতে। আমি চেয়েছি তুমি চলে যাও। কারণ তোমার সামনে দিয়ে আমি অন্য কারো হয়ে যাবো এটা সহ্য হতো না আমার। মনে মনে নিজেকে এটা বুঝিয়েছিলাম যে, অনেকেরই তো ভালোবাসা টা ব্যার্থতায় ছেয়ে যায়। আমারটাও না হয় ব্যার্থই থেকে যাক। তুমি আবার ফিরে আসার পর থেকেই মনটা অভিমানে ভরে ছিলো। তুমি যেদিন চলে যাচ্ছিলে সেদিন তোমার চোখের পানি সবার সামনে প্রকাশিত হয়েছিলো। কিন্তু আমি হাসি মুখে বিদায় দিয়েছি তোমায়। কিন্তু সেদিন আমার চোখ থেকে কতোটা পানি ঝরেছে তা শুধু এই অন্ধকার রুম আর ভেজা বালিশ জানে। কিন্তু পরে যখন শুনি লোকটা ফ্রট তার পর বিয়েটা ভেঙে যায়। সেই দিন আমার অনুভুতিটা ছিলো অন্য রকম। অপেক্ষা করতে থাকি কখন তুমি আসবে। তুমি ফোন দিয়ে যখন সবার সাথে কথা বলতে তখন আমি তাকিয়ে থাকতাম ওদিকে। কখন তুমি আমার সাথে কথা বলার জন্য আমাকে খুজবে। কিন্তু তুমি আমার কথা জিগ্গেসও করতে না, ফোন কেটে দিতে। আমার নাম্বার থেকে ফোন দিতে চেয়েও বসে বসে কাদতাম। কারণ তোমাকে ফোন দিওয়ার যোগ্যতাটা আমি ধরে রাখতে পারিনি। শুধু তোমার নাম্বারটার দিকে ফোন দিবো দিবো বলে তাকিয়ে থাকতাম। হুট করেই আঙুলের চাপ পরে একদিন ফোন চলে গেলো। কিন্তু সেদিন বুঝতে পারলাম তুমি আমাকে তোমার ফোন থেকেও অনেক আগেই ব্লক করে দিয়েছো।
যেদিন তুমি ফিরে এলে সেদিন আমি তোমার দেওয়া শাড়িটাই পরে তোমার সামনে গিয়েছিলাম। যা তুমি আমার কয়েকজন বন্ধবিকে পড়তে দেখে আমার জন্য নিয়ে এসেছিলে। ভেবেছিলাম ওটা পড়ে তোমার সামনে গেলে তুমি খুশি হবে। কিন্তু সেদিন তুমি আমার দিকে ফিরেও তাকাও নি। তখন ভাবতাম তুমি হয়তো অভিমান করে আছো। আর আমাকেই তোমার অভিমান ভাঙাতে হবে। কারণ আমি তখনও বিশ্বাস করতাম আমার রিদ ভাইয়া শুধু আমাকেই ভালোবেসে ছিলো আর ভালোবাসে এবং ভালোবাসবেও। কিন্তু তুমি তোমার অভিমানটাকেই বড় করে রাখলে। অন্য কাওকে জড়িয়ে নিয়েছো নিজের সাথে। বিশ্বাস করো আজ আমার কোনো অভিযোগ নেই তোমার প্রতি। আমার ভুলের প্রশ্চিত্ব আমাকেই দিতে হবে। ভালোবাসাকে ধরে রাখতে আমি ব্যার্থ। সরি আজ তোমাকে আমি বলবো, বেহায়ার মতো এতোদিন তোমাকে বিরক্ত করেছি বলে। আমি কিছু মনে করিনি। প্লিজ তুমি চলে যাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
– আমি শুধু তোকে জিগ্গেস করেছিলাম তুই আমায় ভালোবাসিস কি না। কিন্তু তুই সেদিন “না” টাকেই উত্তর হিসেবে বেছে নিলি। তুই জদি সেদিন একটিবার বলতি, তুই আমায় ভালোবাসিস তাহলে আজ সবটা অন্যরকম হতো।
– আমি আর কিছু বদলাতে চাই না রিদ ভাই। তুমি চলে যাও। তোমারও এখন কেও আছে। আর সেও তোমার কাছে এই বৃষ্টি ভেজা রাতে একান্তে সময় চায়। এমাকে একটু একা থাকতে দাও।
রিদ পকেট থেকে ফোনটা বের করে তৃনার নাম্বারে ফোন দিলো। দুই বার ফোন দিলেও সে ফোন ধরলো না। হয়তো মরার মতো ঘুমাচ্ছে এতোক্ষনে।
রিদ আবার ফোন দিতেই তৃনা ফোন ধরে ঘুম কাতর গলায় বলে উঠে,
– হ্যালো, এতো রাতে ফোন দিলি?
– দরকার ছারা তোকে কখনো ফোন দেই?
– তা দিস না, আর কখনো দিবিও না। এখন এতো রাতে কেনো ফোন দিলি তারাতারি বলে ফোন রাখ।
– আমিতো এখন ফোন দিলাম তোকে প্রেমের গল্প শুনাতে।
– এটা তোর কাছ থেকে আমি আশাও করি না। কারণ আমি জানি তুই কখনোই আমার প্রেমালাপ করতে ফোন দিবিনা। আরশি আছেনা তোর জন্য।
– বাজে বকা বন্ধ কর, বুঝতেই যখন পারছিস এখন নে আরশির সাথে কথা বলে যেই পেচটা লাগালি ওটা ছুটা।
বলেই ফোনের স্পিকার অন করে দিয় রিদ। তৃণা পুরু ব্যাপারটা খুলে বলে আরশিকে।
আরশি নিচের দিকে চেয়ে আছে। ইশ না বুঝে খারাপ ভেবে কত কথাই না বলে পেলেছিলো তাকে।
রিদ আরশির গুই গালে হাত রেখে বলে উঠে,
– এবার বিশ্বাস হলো?
আরশি মাথা নিচু ছোট্ট করে বলে উঠে,
– হুম,,,,,
– ওকে তাহলে এখন ঘুমা। গুড নাইট।
– তুমি কি এখনও আমায় আগের মতো ভালোবাসো?
আর কোনো উত্তর না দিয়েই হেটে বেরিয়ে গেলো রিদ। আরশি পেছন থেকে বলে উঠে,
– তুমি সত্যিই খুব নিষ্ঠুর রিদ ভাই।

রাত তখন ১২ টা। এখনো ঘুমায়নি রাত ও বৃষ্টি। আজ কত দিন পর কাছে পেলো একে অপরকে। বৃষ্টি তার জেলে থাকার গল্প বলছে আর রাতের টি-শার্ট ভিজিয়ে কাদছে। রাতও জড়িয়ে নিয়ে আছে বৃষ্টিকে তার বাহুডোড়ে। ১ টা বাজলো ২ টা বাজলো ৩ টা বাজলো। তাও ঘুম নেই কারো চোখে। ঘুমাতে ঘুমাতে আরো এক দের ঘন্টা পার হয়ে গেলো। কখন যে রাত পার হয়ে গেলো খেয়ালই করেনি তারা। রাতে বৃষ্টি হওয়েছিলো। কিন্তু এখন আর নেই। আজানের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরু শহর টা। চারদিকে পাখির কোলাহল। রাত বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– চলো ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে তার পর একেবারে ঘুমাই।
বিছানায় শ্রাবন ঘুমাচ্ছে। শ্রাবনের দুই গালে দুজনই চুমু দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে শ্রাবনের দুই পাশে দুজন শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রাত ও বৃষ্টি।

বাইরের সোনালি রোদ গায়ে এসে পরতেই ঘুম ভাঙে বৃষ্টির। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় বাইরে গাছের পাতা গুলো সোনালি রোদে চিক চিক করছে।
বৃষ্টি উঠে দেখে সারে ৮টা পার হয়ে গেছে। রীতি মতো মাথায় হাত দিলো বৃষ্টি। কারণ সে কখনো এতো নেলা পর্যন্ত ঘুমায় না। বৃষ্টি উঠে রাতের দিকে তাকালো। দেখে রাত শ্রাবনের দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে। আর শ্রাবনের মাথাটা রাতের বাহুর মাঝে। উঠে পর্দা গুলো সরিয়ে দিতেই সোনালি রোদ গুলো রাতের মুখটা পুরুপুরি ভাবেই স্পর্শ করে যাচ্ছে। একটা হাসি দিয়ে আবার পর্দাগুলো টেনে দিলো বৃষ্টি। কারণ সারা রাত ঘুমাতে পারেনি বেচারা এখন একটু ঘুমাক। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো বৃষ্টি।

রুদ্র চৌধুরি ততোক্ষনে অফিসে চলে গেলো। রাত কয়েকদিন এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়ি করায় রুদ্র চৌধুরিই সামলালো সব। আজও রাত ঘুমাচ্ছে তাই সে ই চলে গেলো অফিসে।
প্রায় ১০ টার দিকে রাত উঠে একটু রাগারাগি করে সবার সাথে। কেনো তাকে সকাল সকাল না জাগিয়ে বাবাকে অফিসে পাঠালো?

শ্রাবনকে কোলে নিয়ে হাটছে রাত। বৃষ্টি গিয়ে রাতের কাছে দাড়ায়। দেখে শ্রাবন রাতের কোলে ঘুমাচ্ছে। শ্রাবনের মুখে হাতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে বৃষ্টি। রাত বৃষ্টিকে থামিয়ে বলে উঠে,
– কি করছো? আমার ছেলেটাকে কি চুমু দিয়ে মেরে ফেলার প্লেন করলে নাকি।
– হুহ্ আটা শুধু আপনার না, আমারও ছেলে। আসো বাবু। বলেই শ্রাবনকে আবার চুমু দিলো বৃষ্টি।
রাত ভ্রু কুচকে বৃষ্টিকে প্রশ্ন করে উঠে,
– আচ্ছা বলোতো গাছকে যন্ত করা দরকার নাকি সেই গাছের ফলকে।
বৃষ্টি মুখের উপরই বলে দিলো,
– অবশ্যই গাছকে, কারণ গাছ থেকে আমরা অসংখয় ফল পাই।
রাত এবার একটু দুষ্টো হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– তোমার কথা আর কাজের কোনো মিল নেই। কারণ তুমি ফলকে আদর করে ভরিয়ে ফেলছো আর গাছের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছোনা। এটা কি মানা যায় বলো? হিসেবে তোমার গাছকেই বেশি আদর করা দরকার।
বৃষ্টি ভ্রু জুগল কুচকে তাকিয়ে আছে রাতের মুখের দিকে।

পাশ দিয়ে বৃষ্টি হেটে যেতেই রাত্রি চৌধুরি ডেকে বলে উঠে।
– বৌ মা এদিকে আসো তো।
– জ্বি মা বলুন।
– তোমার চুলের এই অবস্থা কেনো? পাখির বাসার মতো হয়ে আছে।
– আসলে মা,,,,
– বুঝছি বুঝছি, আমার সাথে আসো।
– কোথায়?
– গেলেই দেখবে।
বৃষ্টি নিচে বসে আছে আর খাটে বসে মাছায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছে রাত্রি চৌধুরি। রাত্রি চৌধুরির মাঝেই যেনো নিজের মা কে খুজে পায় বৃষ্টি। ইশ, সবাই যদি তার শাশুড়ির মতো হতো?

বৃষ্টি রিদ বসে বসে গল্প করছে। বৃষ্টি রিদকে বলে উঠে,
– আচ্ছা গতকাল রাতের কাহিনিটা কি হলো? একজন রাগ করে দরজা বন্ধ করে ছিলো। অপর জন আরো রেগে গালটা এল চরে লাল করে দিলো। বাহ্ দেখার মতো ছিলো দৃশ্যটা।
– মজা নিচ্ছো ভাবি?
– আরে না না। আচ্ছা কি হয়েছিলো আপনার আর আরশির মাঝে।
– আর বলোনা ভাবি, ওই যে আমার একটা বন্ধবি আসলোনা ওইদিন।
– হ্যা হ্যা তৃনা।
– সে আমার সাথে দুষ্টুমি করে একটা মেসেজ দিয়েছিলো আর তা আরশি দেখে রাগে এসে ধাম রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। আমার ভয় হলো উল্টো পাল্টা কিছু করে বসেনি তো আবার।
– বাব্বাহ্ একটা মেসেজের জন্য এতো কিছু? কি অদ্ভুত প্রেম রে বাবা আপনাদের। আচ্ছা তার পর?
– তার পর আর কি, বেচারি আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিলো।
– আচ্ছা তারপর?
– তার পর, আমি কি আর তাকে অভিমানি করে রাখবো? তৃনাকে ফোন দিলাম,আরশির সাথে কথা বলিয়ে তাকে বিশ্বাস করালাম যে তৃনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
– আচ্ছা তারপর?
– গল্প ওখানেই শেষ।
– আচ্ছা তারপর?
– তারপর আর কি?
– আচ্ছা তারপর?
– তুমি কি আমার সাথে মজা করছো ভাবি?
– আচ্ছা তারপর?
– ধুর।
,
,
সব ঠিক ঠাক। কেটে গেলো কয়েকদিন। রাত তখন ১০ টা। রিদ গাড়ি নিয়ে এসে আরশির বাসার সামনে দাড়ায়। ফোন দিয়ে বলে নিচে আসতে। আজ আকাশটাও ফুরফুরপ। কিছুটা সময় ঘুরবে দুজন মিলে। আরশিও আপত্বি না করে নিচে চলে গেলো।
রিদ ড্রাইবিং করছে আর তার কাধে মাথা রেখে আছে আরশি। রিদ ড্রাইবিং করতে করতে বলে উঠে,
– লজ্জা করেনা? একটা অবিবাহিত ছেলের কাধে মাথা রাখতে।
– না এই ব্যাপারে আমি সম্পূর্নই নির্লজ্জ।

গাড়ি চলছে একটা নির্জন রাস্তায়। হুট করেই ব্রেক চাপায় সামনের দিকে একটু ঝুকে পরে আরশি। মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে দেখে। সামনে অনেকগুলো ছেলে দাড়িয়ে আছে। সবার হাতেই একটা করে গান। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে আরশির। এরা ডাকাত নয় তো? রিদের হাতটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আরশি। একটা ছেলে আরশির হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাকে। আরশি বার বার কেদে কেটে রিদকে ডাকছে কিন্তু তার চিৎকার পৌছাচ্ছেনা রিদের কান অব্দি। একটা প্রশারিত হাসি দিয়ে, গলা থেকে হ্যাডফোনটা কানে নিয়ে গাড়ি নিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে রিদ। পেছন থেকে আরশি বার বার ডাক দিচ্ছে তাকে। এক সময় রিদের গাড়িটা আরশির চোখের আড়াল হয়ে গেলো। পেছন থেকে কেও একজন একটা কাপর দিয়ে বেধে নিলো আরশির চোখ জোড়া। ভয়ে জোড়ে জোড়ে কাদতে থাকে আরশি।

To be continue……..

~~ রি-চেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১৪

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৪

রান্না ঘরে চৈতি আর মা রান্না করছে। আরশি ওখানে গিয়ে কিছুটা সময় পার করলো তাদের সাথে। তার কাছে যে কেও একজন কিছু চেয়েছে তাও হয়তো ভুলে গেছে সে।
হটাৎ আরশির মনে পরলো, রিদ ভাইয়া তো এক গ্লাস পানি দিতে বলেছিলো সেই অনেক্ষন আগে। জ্বিভে একটা ছোট্ট কামড় দেয় আরশি। হাত দিয়ে মাথায় একটা হালকা করে চটি মেরে হাটা ধরে আরশি। আজ তোর খবর আছেরে আরশি। ভাবতে ভাবতে পানি নিয়ে হাটা ধরে আরশি। দেখে রিদ নেই। হয়তো রুমে চলে গেছে।
আরশি পানি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলে দেখে রুমেও কেও নেই। কিছুক্ষন আগে বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে হটাৎ করেই। স্তব্দ পরিবেশ গাছপালাও তেমন নরছিলোনা, মোটামুটি গরমও ছিলো বটে। কিন্তু হুট করেই শুরু হলো বৃষ্টি।
আরশি পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বেলকনির দিকে তাকাতেই দেখে রিদ পকেটে হাজ গুজে দাড়িয়ে আছে ওখানে। বাইরের বৃষ্টি ফোটার সাথে ঝাপটা বাতাশে স্নিদ্ধ চুল গুলো উড়ছে তার।
আরশি রিদের কাছে যেতেই থমকে যায়। কারণ বিছানায় রিদের পরে থাকা মোবাইল টায় একটা মেসেজের শব্দ কানে এলো তার। কৌতহলি দৃষ্টিতে ফোনটা হাতে নিলো আরশি।
দেখে ওইদিন রিদের সাথে আসা মেয়েটার মেসেজ। যাকে রিদ আরশির সামনে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলে সন্মোধন করলো। কিন্তু ওইদিন বিষয়টা ফাজলামির দৃষ্টিতে দেখে সেই বেপারে রিদকে আর কিছু জিগ্গেস করেনি সে। আরশির চোখ রিদের ফোনের স্কিনে আটকে আছে,
“” দেখছো বাইরে কতো সুন্দর আকাশ তার সবটা বৃষ্টি কনা দিয়েই ভরিয়ে তুলছে প্রকৃতিকে। ঠিক ওই ভাবে ভালোবাসার বৃষ্টি কনায় তুমিও কি ভড়িয়ে দিবে আমায়? তোমার ভালোবাসার বৃষ্টি কনা জমে বিশাল সাগরে পরিনত হবে। আর সেই সাগরে আমি বার বার ডুবে মরতে চাই। জানো আজ এই বৃষ্টি ভেজা রাতে বড্ড একা মনে হচ্ছে নিজেকে। বাবা মা ও বাসায় নেই। সেই বিকেলে ছোট ফুফির বাসায় গেছে। এখন বাসায় শুধু আমি একা। আজ একটু বেশিই একাকিত্ব ভুগছি আমি। তুমি চলে আসোনা এই একাকিত্ব দুর করে ভালোবাসার জালে মুড়িয়ে নিতে আমায়। আজ এই রাতটা হবে শুধু তোমার আর আমার।””

আরশির এক হাতে গ্লাস অন্য হাতে ফোন। মেসেজটা পড়েই যেনো সকড হয়ে দাড়িয়ে আছে আরশি। মুহুর্তেই চোখ দুটি ভিজে উঠেছে তার। যেনো কাদতে চেয়েও পারছেনা সে। সারা শরির রীতিমতো কাপছে তার। হাত থেকে পানির গ্লাসটা ফ্লোড়ে আছড়ে পরে কয়েক টুকরু আকারে ধারন করলো। পানি গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো চার দিকে। এই বৃষ্টির শব্দের মাঝেও কাচ ভাঙা শব্দটা ঠিকই কানে এলো রিদের। রুমে আসতেই দেখে আরশি তারাহুরু করে ফোনটা বিছানায় রেখে চোখের পানি মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। রিদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে এই মেয়ের আবার কি হলো?
রিদ দ্রুত হেটেই ফোনটা হাতে নিতেই চোক্ষু যুগল বর বড় আকার ধারন করে ফেলে তার। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আসছে ধিরে ধিরে। রাগে হাত পা কাপছে তার। ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে ফোনটা আছড়ে মেরে টুকরু টুকরু করে ফেলতে।
ওদিকে আরশি দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে নেয়। বিছানায় পরে বালিশে মুখ গুজে কাদতে থাকে সে।
এদিকে রাগে ফোসফোস করতে করতে তৃনার নাম্বারে সাথে সাথেই ফোন দেয় রিদ। তৃনা ফোন ধরছেনা দেখে রাগে রিদ অস্থির হয়ে উঠে, তৃনার বাচ্চা ফোন ধর।
অবশেষে দুই বার ফোন দিতেই রিসিভ করলো তৃনা।
তৃনা ফোন ধরতেই রিদ এক নিশ্বাসে অনেকটা কথা শুনিয়ে পেলে তাকে
– এই শাকচুন্নির ঘরে শাকচুন্নি এসব কি ম্যাসেজ পাঠালি তুই আমায়? তোর মন মানসিকতা এতো নিচু তা আমার ধারনার বাইরে ছিলো। ছি ছি ছি।
– আরে আরে রিদ আমার কথাটা আগে শুন।
– কি শুনাবি তুই আমায়? মেসেজে কি লিখলি এখন তা মুখে বলতে চাস?
– আমাকে বলতে দে আগে। রাকিবের সাথে ট্রুথ অফ ডেয়ার খেলার সময় আমি ডেয়ার নেওয়ায় সে আমাকে এই মেসেজটা দিয়ে বললো, এটা যে কোনো একটা ছেলেকে পাঠাতে। তার পর তাকে স্কিনসর্ট দিতে।
– এসব বাজে মেসেজ কোনো ডেয়ারের মাঝে পরে?
– ডেয়ার নিয়ে ফেসে গেলাম কি আর করবো বল? আন্দাজি কোন ছেলেকে পাঠাবো বল? তাই তোকে পাঠিয়ে ওকে স্কিন সর্ট পাঠালাম। আমি কি খারাপ কিছু করলাম বল?
– না খুব ভালো করেছেন আপনি। আর আপনার এই ভালো আমার লাইফের হো** দিছে সালির ঘরে সালি।
– কেনো রে মামা কিছু হয়েছে?
– ফোন খাটের উপর রেখে আমি বাইরে ছিলাম। আর তখন আরশি এসে মেসেজটা দেখে, গ্লাস পাতি ভেঙে চুরে কাদতে কাদতে বেড়িয়ে গেলো।
– কি বলিস রিদ। তাহলে সমস্যা তো সাংঘাতিক। দাড়া আরশির নাম্বারটা দে আমি কথা বলছি তার সাথে।
– ফোন রাখ বেয়াদব ছেমড়ি।

রিদ দৌড়ে গিয়ে দেখে আরশি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। রিদ বাইরে থেকে দরজা থাপ্পর দিচ্ছে। ভেতরে বসে বসে কাদছে আরশি। কান্না ভেজা চোখে অভিমানি মুখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
” তাহলে রিদ ভাইয়া তলে তলে এইসব করে বেড়ায়? তাহলে কি দরকার ছিলো আমার সাথে এভাবে মায়া বাড়ানোর? কেনো আমায় ভালো বাসতে শিখিয়েছে সে। তোমার ভালো মুখের আড়ালে যে এমন একটা খারাপ মানুষ লুকিয়ে আছে তা আমার ধরণার বাইরে ছিলো রিদ ভাই। আর কক্ষনো তোমার মতো খারাপ মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো না আমি। আজ থেকে সব শেষ। একটু ভালোবাসার জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছি তোমার।
কথা গুলো মনে মনে বলতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে আরশি।
ওদিকে রিদ উত্তেজিত হয়ে দরজায় জোড়ে জোড়ে আঘাত করছে।
– প্লিজ আরশি আমায় ভুল বুঝে তুই নিজের ক্ষতি করিস না। প্লিজ আরশি দরজা খোল।
এবার আরশি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে আছে।
” সে ভাবলো কিভাবে, ওর মতো খারাপ মানুষের জন্য আমি আত্মহত্যা করবো?
– আরশি দরজা না খুললে কিন্তু আমি দরজা ভেঙে ভেতরে চলে আসবো বলছি।
এবার রিদের সাথে রাত ও বাবা মা ভাবি মামা মামি সবার গলা শুনা যাচ্ছে। চুপচাপ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে আরশি।
এবার খেয়াল করলো কেও সত্যি সত্যি দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। কারণ এতোক্ষন হয়ে গেলো ওদের ডাকে কোনো রেসপন্স দেয়নি আরশি।
আরশি এবার চুপচাপ ধিরে পায়ে দরজা খুলে দিতেই রুমে প্রবেশ করলো সবাই। প্রথমেই আরশির গালে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় রিদ। উপস্থিত সবাই হা করে তাকিয়ে আছে রিদ ও আরশির দিকে।
রিদ রাগি ও করুন দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– কি শুরু করেছিস তুই? এভাবে ডাকাডাকির পরও কেও এভাবে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে? এতো গুলো মানুষকে টেনশনে রাখতে খুব মজা পাচ্ছিলি তুই তাই না?
রিদ রাগি চোখে কথা গুলো বললেও গভির একটা মায়া কাজ করছিলো তার মুখে। যেনো হারিয়ে ফেলা প্রান আবার ফিরে পেয়েছে তিনি।
গালে হাত দিয়ে হা করে রিদ ও উপস্থিস সবাই দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। রিদের এমন রুম কাপানো থাপ্পরের কোনো প্রতিবাদ করলোনা বাবা মা ভাইয়া। কেওই কিছু বলছে না।
রাত্রি চৌধুরি ও চৈতি মিলে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছিলো। আর তার পরই এতো কিছু ঘটে গেলো।
এবার নিরবতা ভেঙে রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– অনেক হয়েছে এখানেই শেষ করো এসব। অনেক বাড় বেরেছিস তুই আরশি। আর রিদ, আরশি যাই করুক তাকে এভাবে আমাদের সামনে থাপ্পর মারা তোমার উচিৎ হয়নি।
– সরি আঙ্কেল, ওর এমন কাজে প্রচুর রাগ উঠে গিয়েছিলো মাথায়।
– আচ্ছা এখানেই সব শেষ করে খেতে আসো।

রুদ্র চৌধুরির কড়া কথায় খেতে চলে গেলো আরশিও। সবাই ক্ষেপে আছে তার উপর। এখন ত্যাড়ামি করা মানে নিজের বিপদ নিজে টেনে আনা। তাই চুপ চাপ মুখ গোমড়া করে সকলের সাথে খেতে বসলো সে।
বৃষ্টিকে সবার সামনে খাইয়ে দিচ্ছে রাত। রাত এভাবে সবার সামনে কখনোই খাইয়ে দেয়নি তাকে। তাই লজ্জায় না পারছে কারো দিকে তাকাতে না পারছে চুপচাপ খেতে।
– আপনি খান না, আমি নিজে খেতে পারবো তো।
– তোমাকে এতো কথা বলতে বলছি? চুপচাপ খাও আজ কতো দিন পর এভাবে বাসায় খাবার খাচ্ছো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুমি চুপচাপ খেতে থাকো।
এতো কিছুর মাঝেও তাদের এমন কান্ড দেখে হেসে দিলো আরশি ছারা বাকি সবাই। লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি।

সবাই প্রায় ঘুমিয়ে পরেছে। গালে কারো আলতো স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় আরশির। দেখে রিদ গভির ভাবে তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আরশি। রিদ চর মারা গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
– খুব ব্যাথা পেয়েছিলি তাই না,?

To be continue………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১৩

0

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৩

– সেদিন রাত ৯ টার সময় আমার ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। রিসিভ করতেই কে জেনো বললো, আমার স্বামি এক্সিডেন্ট করেছে। সে ঠিকানা বললেই আমি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দৌড়ে সেখানে চলে যাই।
কথাটা খুব শান্ত ভাবেই বললো বৃষ্টি। তার ডিফেন্স ল-ইয়ার ফারহান রেজবি বলে উঠে,
– ওখানে গিয়ে কি দেখলেন?
– কিছুনা। সব ঠিকঠাক। রাতকে ফোন দিয়ে জিগ্গেস করলাম জানতে পারি তারা বন্ধুরা মিলে ডিনারে গেছে।
– কি বললেন, সেদিন আপনার স্বামী বললো সে ডিনারে গেছে বন্ধুদের নিয়ে? আচ্ছা সে কি আগেও এমন বন্ধুদের সাথে ডিনারে যেতো?
– হুম মাঝে মাঝে যেতো।
– ওহ্, তো এসব আমাকে আগে বলেন নি কেনো? আসলে আমি খুব ভয়ে ছিলাম কোর্টেও কিছু বলতে পারিনি।
– আচ্ছা বর্ষাকে কে মারতে পারে? আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
– আমি জানিনা। আমি শুধু জানি, আমি আপুকে মারিনি।

বর্ষার বাবা মায়ের সামনে বসে আছে ফারহান রেজবি।
– আচ্ছা খুনের দিন রাতে বর্ষা কোথায় ছিলো। বা কোথায় গিয়েছিলো?
– সেদিন সে রাত আটটার সময় ঔষধ আনতে গিয়েছিলো এই পাশের মেডিসিন শপ থেকে। তার পর আর ফেরেনি। ফোনটাও বন্ধ পেলাম। সব আত্বিয়দের বাসায় ফোন দিলেও শুনি বর্ষা কারো বাড়ি যায়নি।
– পেশের মেডিসিন শপ?
– হ্যা।
ফারহান রেজবি তার পি,এ অধিরকে বললো, চলো আপাততো এটা জানতে পেরেছি যে বর্ষা তখন কোথায় গিয়েছিলো? ওখান থেকে কিছু পাওয়া যাবে নিশ্চই।
,
,
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমরা ৩ মার্চ রাত আটটার পর থেকে, আপনার দোকারে সামনের সিসি টিভি ফুটেসটা দেখতে চাই।
– কারনটা জানতে পারি নিশ্চই।
– দেখুন এটা একটা খুনের কেস।
– স্যার ওই দিন সন্ধা সাত টার সময় আমরা শপ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। আমার ওয়াইফ অসুস্থ ছিলো তাই।
– ফুটেস তো আর আপনাদের সাথে বাড়ি যায়নি তাই না। আমরা সেই সময়ের ফুটেস দেখতে চাইছি।
– ওকে স্যার।

ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান ও ফারহান রেজবি বসে আছে একসাথে। ফুটেসে দেখা যাচ্ছে একটা ছেলে বৃষ্টিকে জোড় করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেলো।
– ছেলেটার সম্পর্কে খোজ নিয়েছি আমি। ছেলেটার নাম প্রিকি, বাবা নেই, মা আর তার এক ছোট ভাই নিয়েই তার পরিবার। শুনলাম তার মায়ের দু,টু কিডনিই ডেমেজ হয়ে গেছে। আর্থিক অবস্থাও খারাপ। মিরপুরেই ছেলেটার বাড়ি।
– ছেলেটার সাথে বর্ষার কি শত্রুতা থাকতে পারে? নাকি টাকার জন্য এসব করেছে?
– সেটা তো ছেলেটাকে ধরলেই জানা যাবে।

রাত ২ টার সময় প্রিকিকে গ্রেপতার করে পুলিশ। জিগ্গাসাবাদে অবশেষে প্রিকি স্বীকার করে নিলো যে, খুনটা সেই করেছে তবে কারো কথায়। তার মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো তাই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে সে। কিন্তু কে সে যার কথায় বর্ষাকে মেরেছে প্রিকি তা এখনো বলেনি সে। ই. কামরুল হাসান হাত থেকে লাঠিটা ফেলে হতাশার নিশ্বাস ছেরে ক্লান্তিতে ফ্যানের নিচে গিয়ে বসে।
,
,
প্রিকির সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছে ফারহান রেজবি।
– দেখো প্রিকি, তুমি কিন্তু এখন খুব ভালো ভাবেই ফেসে গেছো। এটাও প্রমানিত হয়ে গেছে যে খুনটাও তুমিই করেছো। দেখো তোমার ফ্যামিলিতে তোমার মা ও তোমার ছোট ভাই আছে। তুমি চলে গেলে ওদের কি হবে? তার চেয়ে ভালো তুমি কার কথায় খুনটা করেছো তার নামটা বলে দিলে তোমার সাজা কিছুটা কম হতে পারে তোমার অবস্থাটা চিন্তা করে।
– আমি তার নাম বলবো না, কিন্তু আপনাে আমি একটা ধাঁধাঁ দিতে পারি। আপনাকে এই ধাঁধাঁর উত্তর খুজে তাকে বের করতে পারলেই আমি আদালতে সব সত্যি বলে দিবো।
– কেমন ধাঁধাঁ।
– ধাঁধাঁ টা হলো, আমায় হত্যার পর আমার লাশটা নিজের জায়গাতে পুতে দিস না ওরে হত্যা কারি। কৌতহলি লোকদের নিজের বাড়িতে ডেকে আনিস না। নাহলে পৃথিবীর মানুষ আমার লাশ খুজতে খুজতে তোকে ও তোর অপরাধ গুলো টিকই খুজে বের করে ফেলবে।
– এটা কেমন ধাঁধাঁ?
– এটা আপনাকেই খুজে বের করতে হবে। আমি তার বেপারে আপনাকে বলেই দিয়েছি।
– ওকে থ্যাংক্স।

রাত ও রিদ বসে আছে ফারহাত রেজবির সামনে। রাত গম্ভির ভাবে বললো,
– ছেলেটা কিছু বললো?
– হুম সে বললো, আমায় হত্যার পর আমার লাশটা নিজের জমিতে পুতে দিস না ওরে হত্যাকারি। কৌতুহলি লোকদের নিজের বাড়িতে ডেকে আনিস না। তাহলে পৃথিবির মানুষ আমার লাশ খুজতে খুজতে তোকে ও তোর অপরাধ দুটুই খুজে বের করে ফেলবো।
– এটার মানে?
– মি. রাত সাহেব প্রিকি এটা আমাদের একটা ধাঁধাঁর মতো দিয়েছে। এটার মাধ্যমেই আমাদের আসল খুনিকে বের করতে হবে। তাহলেই ও সব সত্যি টা বলে দিবে।
– তো বের করতে পারলেন?
– আমি একটা উত্তর খুজে বের করেছি। সে বললো, হত্যার পর লাশটা নিজের জমিতে পুতে দিস না, তাহলে লাশটা যদি বর্ষারই হয় তাহলে বর্ষার লাসটা কোথায় ফেলে আসা হয়েছে? রাস্তার পাশে একটা বড় লিচু বাগানে। আর ওই বাগানটা হলো বর্ষার বয়ফ্রেন্ড মি. তিহান সাহেবের। যিনি আপনাদের সাথে মামলায় লড়ছে। কিন্তু আমার আইডিয়াটা যদি সত্যি হয় তাহলেও একটা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্ষা তিহানের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার সত্বেও কেনো তাকে মেরেছে আার সেই খুনের দায় মিসেস বৃষ্টির উপরই বা কেনো চাপাতে চাইছে?
রাতের কাছে এখন সব জলের মতো পরিস্কার। কারণ তিহানের সাথে বর্ষা পালিয়ে যাওয়ার পরও তিহানের ব্যাপারে কি যেনো জানতে পেরে তাকে পেলে চলে এসেছে বর্ষা। আর তিহান বিয়ে করতে চাইছিলো, আমার বোন আরশিকে আর তাও ভেঙে দিয়েছে বৃষ্টি। তিহানের ব্যাপারে সব বলে দিয়েছে সবাইকে। হতে পারে এটাই বৃষ্টির প্রতি তিহানের ক্ষোপ।

তিহানের বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। তখন রাত ৩ টা। কয়েকজন পুলিশ দিয়ে ঘুমের মাঝে এরেস্ট করে তিহান কে।
এবার সবার সামনে বেড়িয়ে আসে আসল সত্যটা। যে খুনটা তিহানই করিয়েছে। বর্ষাকে মেরে বৃষ্টিকে ফাসিয়ে দিয়েছিলো কারণ বৃষ্টির কারনে তার একটা বড় প্লেন নষ্ট হয়ে গেলো। আর তা হলো আরশিকে নিয়েই। তিহান চেয়েছিলো আরশিকে বিয়ে বরে ব্লকমেই ও কেশলে সব নিজের করে নিতে। কারণ রাতের বাবার ও তিহানের বাবা দুজনই কারো থেকে কেও কম নয়। কিন্তু তার প্লেনটা সাক্সেস হলে আরো শির্ষে পৌছে যেতো তাদের বিজনেস। কিন্তু সব নষ্ট করে দিলো বৃষ্টি।
অবশেষে সত্য প্রকাশ হওয়ার পর ছারা পেলো বৃষ্টি।

অবশেষে অনেক দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরছে বৃষ্টি। সারা রাস্তায় বৃষ্টির সাথে কোনো কথা বলেনি রাত। পেছনে বৃষ্টির সাথে বসে আছে রাত। সামনে ড্রাইবিং করছে রিদ, পাশে আরশি। রাতের বাবা রিদের বাবা ও বৃষ্টির বাবা তারা আসছে পেছনের গাড়িতে। গাড়িতে চুপ চাপ শ্রাবনকে কোলে নিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। আর বিষন্ন মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
বাসায় ফিরতেই বৃষ্টিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে রাত্রি চৌধুরি ও রিদের মা রুবিনা ও বৃষ্টির মা সাহেলা বেগম। বাসায় ফিরতেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন সাহেলা বেগম। যেনো বড় মেয়েকে হারিয়েও এতো দুঃখ পায়নি যতটা খুশি এখন হয়েছে সে।

বৃষ্টিকে একটা গোলাপি রংয়ের শাড়ি দিলো রাত্রি চৌধুরি।
– ফ্রেশ হয়ে এই শাড়ি পরে আমার সামনে আসবে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
আধা ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো বৃষ্টি। গায়ে টাওয়াল পেচিয়ে আয়নায় সামনে বসে সে। এই কয়েক দিনে কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে সে। তখনি কেয়াল করলো বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রাত। বৃষ্টি ধিরে পাশে তার পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাইরে অন্ধকার। চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে রাত। বৃষ্টির সাথে কোনো কথা বলছেনা সে।
বৃষ্টি রাতের পাশে দাড়িয়ে বলে উঠে,
– আমার উপর কি রাগ করে আছেন আপনি? আমার সাথে কোনো কথাই বলছেন না?
হুট করেই বৃষ্টিকে জড়িয়ে ঘরে রাত। যেনো গভির এক শুন্যতার নদি শুকিয়ে ছিলো রাতের মন জুড়ে। আর তা এই মুহুর্তে বৃষ্টি তার সর্বোচ্চ বর্ষনে ভরিয়ে তুলবে নিমেষেই। ৩০ মিনিটেরও অধিক সময় জড়িয়ে ধরে আছে একে অপরকে।

রিদ সোফায় বসে আছে আর সময় দেখছে। ১০ মিনিটের কথা বলে রাত রুমে গেলো সেই ১ ঘন্টা পার হয়ে গেলো এখনো বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই। ইশ বড্ড মায়া হচ্ছে তার জন্য। কিভাবে যে এতো দিন পার করেছে কে জানে? আহারে বেচারা।
পাশ থেকে আরশি এসে বসে তার পাশে। একটু নরম শুরে রিদকে বলে উঠে,
– ওগো কি ভাবছো এভাবে বসে বসে।
– ইশ আজ দিনটা জদি তোর আর আমার মানে আমাদের হতো।
আরশি একটু অবাক হয়ে তাকায় রিদের দিকে। হুট করে রিদ লাফ দিয়ে উঠে বলে,
– কিরে আরশি তুই আমায় ওগো বললি কেনো? কোন দিক দিয়ে আমি তোর ওগো লাগি?
– তুমি কি ভাবছিলা আবার বলো তো।
– মাথাটা প্রচুর ধরে আছে রে আরশি।
– টিপে দিবো?
– তোকে বলছি আমি? সব সময় শুধু গায়ে হাত দেওয়ার অজুহাত খুজিস। যা আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় তো।
আরশি একটু অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– পারবো না তোমার পানি তুমি এনে খাও।
রিদ এবার বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরশির দিকে। জ্বিভে একটা ছোট্ট কামড় দেয় আরশি।
– ইয়া মানে আমি যাচ্ছি তো।

To be continue…………