Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1429



ভালোবাসা পর্ব-০৮

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব ৮
লেখা, kashfuzjahan

in Bangladesh

– কিরে কি করসিস এখানে কি করিস?? আর আমাদের সাহেব কোথায় ( সাগর)

– ভাইকে ঘুম পাড়িয়ে আমি বাগানে এলাম। আর ভালো লাগছে না ওর এই অবস্হা। ক্লান্তু আমি ( আরশি)

– তোর জন্য একটা সুখবর আছে ( সাগর)

– আর সুখবর, এখন তো ভালো খারাপ সব মিলে একাকার হয়ে গেছে জীবনে। কি হবে আল্লাহ ভালো জানে ( আরশি)

– আমেরিকাতে একটা নতুন প্রযুক্তি তৈরী হয়েছে। ওখানে গেলে হয়তো আদ্রিয়ান ভালো হয়ে যাবে। আর কেন জানি না মনে হচ্ছে আমাদের সব সমস্যার সমাধান ওখানেই পাব। ( সাগর)

– যদি ওখানে ভাবীকে পাওয়া যাইতো?? আর পাওয়া গেলেও কি আমি কি ভাবী কে চিনতে পারব?? ( আরশি)

– আপন জনের পরিচয় চেহাড়ায় হয় না মনে হয় বুঝলি?? ( সাগর)

– আচ্ছা ঠিক আছে যাওয়ার ব্যবস্থা কর। তুমিও যাবে তো নাকি ( আরশি)

– হ্যা। তোকে একলা ছাড়া ঠিক হবে না৷ তাছাড়া আদ্রিয়ান কে কথা দিয়েছিলাম ওর পাশে সব সময় থাকব। ( সাগর)

– কথা তো অন্য কেউ ও দিয়েছিলো কিন্তু সে তো থাকল না ভাইয়ের সাথে ( আরশি)

– তুই ভুলে গেছিস যে নওশি জানে আদ্রিয়ান মৃত। তাই আর খোজ খবর নেয় নি। (সাগর)

– তাই বলে কি আমাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারত না??? ( আরশি)

– ও কি তোদের কাউকে চিনতো বল। চিনলে না যোগাযোগ করত। যাই হোক সব গুছায় নে ৩ দিনের মধ্যে আমরা যাব আদ্রিয়ানের চিকিৎসার জন্য ( সাগর)

in u.s.a

– মাম্মা মাম্মা কই তুমি?? রেডি কি তুমি?? মাম্মাাা ( আয়ান)

– এই কাম ডাউন। তুই জানিস না গার্লস দের রেডি হতে সময় লাগে। তো এমন করছিস কেন?? ( নোয়া)

– এতো রেডি হয়ে কি করবি?? ঘোস্ট আর অলওয়েজ বিং আ ঘোস্ট ( আয়ান)

– আল্লাহ এরা আবার শুরু করেছে। আদ্রিয়ান তুমি থাকলে এই লেজ বিহীন বাদর গুলান কে কিভাবে সামলাইতা একমাত্র তুমিই জানো ( নিলয় মনে মনে)

– হুম আমি রেডি চলো। ভাবীদের দেখে আসি গিয়ে। শুনেছি দুজনই ডাক্তার। পছন্দ হলেই বিয়ে পড়ায় দিব। ( নওশি)

– এই বয়সে এসে আমাদের জোকার না বানালে হতো না তাই না?? এতো করে বল্লাম জয়ের বিয়ে দে আমাকে ছেড়ে দে কিন্তু কে শোনে কার কথা ( জিসান)

– কেন?? আমার একার বলি যাবে নাকি তুমিও চলো ( জয়)

– ইয়েেেে মামুর বিয়ে হবে ( আয়ান নোয়া এক সাথে)

– ছি ছি কি লজ্জার বিষয় ( জিসান)

– লজ্জা ছাড়ো চলো বিয়ে করতে হবে। ( নিলয়)

কথা শেষ করে সকলে মেয়ে দেখার জন্য বের হয়। উদ্দেশ্য পছন্দ হলে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা একটা বাংলোর সামনে এসে হাজির হয়। মিনিট পাচেক পর দুটো মেয়ে সামনে আসে।

– আসসালামুআলাইকুম কেমন আছেন আপনারা?? ( বড় মেয়েটি)

– ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনাদের পরিচয়?? ( জিসান)

– আমি অন্তরা আর ও আমার ছোট বোন অনন্যা। পেশায় ডাক্তার ( অন্তরা)

– আমার ভাইয়েরা ব্যবসা করে। আপনাদেরকে আমাদের ভালো লেগেছে। যদি আপনাদের মত থাকে শুভ কাজ আজ ই সেরে নিতে চাই ( নওশি)

– জি সব ই ঠিক আছে কিন্তু,,,,, , ( অনন্যা)

– কিন্তু কি কোনো সমস্যা?? সমস্যা থাকলে বলতে পারেন। ( নিলয়)

– আসলে আমি আর আমার বোন হিউম্যান বডির উপর কিছু রিসার্চ করছি। যেখানে একজন মানুষের কাজ না করা বিভিন্ন বডি পার্ট কে সচল করা হয়। তা হাত, পা বা ব্রেইন ই হোক না কেন। যদি আপনারা আমাদের শিওরিটি দেন যে বিয়ের পর রিসার্চ এ কোনো বাধা আসবে না তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই ( অন্তরা)

– অবশ্যই এ বিষয়ে সম্পর্ণ সাহায্য পাবেন। যদি লাগে আমরা টাকা দিয়েও সাহায্য করব আপনাদেরকে। ( জিসান)

– তাহলে আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ( অন্তরা)

এভাবেই দুই পরিবারের সম্মতিতে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। শুভ সুচনা।

In Bangladesh

– কিরে রেডি তুই?? কতক্ষণ লাগবে?? ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে নাহলে। ( সাগর)

– আরে ভাইয়া চেচাচ্ছো কেন?? রেডি হতে তো সময় লাগে নাকি ( আরশি)

– এতো স্লো কেন তুই?? এবার শুধু আদ্রিয়ান ভালো হয়ে আসুক তোর বিয়ে দেব। ( সাগর)

– বাহ বাহ আমাকে তাড়ানোর প্লান করছো ভালো তো। ঘরে এমন ভাই থাকলে শত্রুর প্রয়োজন নেই ( আরশি)

– হয়েছে আর বলা লাগবে না। চল এবার ( সাগর)

– আচ্ছা ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে?? ( আরশি)

– হ্যা মিস অন্তরা বলেছেন পৌছানোর ৩৬ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করবেন। ( সাগর)

in u.s.a

– নোয়া দেখ আমাদের পারফেক্ট ফ্যামিলি ফটো। ( আয়ান)

– পারফেক্ট ফ্যামিলি কি আমাদের ( নোয়া)

– হ্যা দেখ সবাই আছে মামা, মামি, তুই, আমি, মাম্মি আর পাপাই ( আয়ান)

– তারপরেও কেন জানি মনে হয় আমাদের পারফেক্ট ফ্যামিলি না। ( নোয়া)

– এমন কেন?? – (আয়ান)

– রোজ রাতে দেখি মা লুকিয়ে একটা পিকচার নিয়ে কান্না করে। কিন্তু আমরা জানি না কেন এমন হয়। আর আমাদের ফ্যামিলি পারফেক্ট হলে মা কান্না করতো না। (নোয়া)

– হ্যা সেটা ঠিক। তাহলে আজ থেকে ডিটেকটিভ নোয়া আর আয়ান খুজে বের করবে মায়ের কান্না করার কারণ কি। ( আয়ান)

– ওকে লেটস স্টার্ট দ্য মিশন ( নোয়া)

চলবে????

ভালোবাসা পর্ব-০৭ + বোনাস পর্ব

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)

পর্ব ৭
লেখা kashfuzjahan

প্রায় ৮ ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে আদ্রিয়ানের। চোখ মেলে প্রথমেই নওচির খোজ করে সে। ডাক্তার বাইরে এসে জিসান কে আদ্রিয়ানের জ্ঞান ফেরার কথা বলে। শোনার সাথে সাথে তারা ভিতরে যায়,,,

– কেমন আছো আদ্রিয়ান?? ( জয়)

– মাইরটা একটু বেশি পরছে তাই কোথাও কোথাও ব্যথা করছে বাকি সব ঠিক আছে ( আদ্রিয়ান)

– সরি ইয়ার আসলে বুঝতে পারি নি। বুঝই তো এক মাত্র বোনের ব্যাপার ( জিসান)

– ব্যাপার না ভাইয়া। শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া প্রথম গিফট হিসেবে রেখে দিলাম নাহয় ( আদ্রিয়ান)

– আচ্ছা একটা কথা বলো নওশির কি আগে থেকেই সব মনে ছিল? তাহলে আমাদের বলে নি কেন?? (জিসান)

– না ভাইয়া আগে থেকে মনে ছিল না। এতোদিনে একসাথে ঘোরার সময় একটু একটু মনে পরেছে। পরে যখন আমাকে মারছিলেন তখন ওর সম্পুর্ন টা মনে পরে যায়। তাই আমিও মারার সময় বাধা দেই নি। ওর মনে পরেছে এটাই অনেক মারা গেলেও আর কষ্ট ছিল না আমার ( আদ্রিয়ান)

– অনেক ভালোবাস আমাদের বনুকে তাই না?? (জয়)

– জীবনের চেয়েও বেশি ( আদ্রিয়ান)

এই দিকে জিসানের মাথায় চিন্তার ভাজ। কারণ একদিকে আদ্রিয়ান অন্য দিকে নিলয়। কার প্রতি বিচার করবে সে? দুজনেই ভালোবাসে নওশি কে। এমন সময় জিসানের মোবাইলে একটা কল আসে।

– স্যার কিছু লোকজন এসে আমাদেরকে মেরে নওশি ম্যাম কে তুলে নিয়ে গেছে ( গার্ড)

– কি বলো। তোমরা কি করছিলে আর নিলয় কোথায়? ( জিসান)

– আসলে স্যার নিলয় স্যার এর একটা কল আসায় সে বেড়িয়ে যায়। তখনি লোক গুলো আসে। ( গার্ড)

– আমরা এখনি আসছি। আর চিন্তা করো না আমরা ডাক্তার নিয়েই আসব। ( জিসান)

মোবাইল রেখে জয়কে নিয়ে বেড়িয়ে যায় জিসান। আদ্রিয়ান কে কিছুই বলে না। কারণ ও এমনি অসুস্থ। নওশির কথা শুনলে আরও উত্তেজিত হবে যা ওর জন্য একদমই ঠিক না।

জিসানের মুখ দেখে চিন্তা বুঝতে পারে আদ্রিয়ান। কোনো কিছু হয়েছে কি?? নওশি ঠিক আছে তো?? ভাবতেই কলিজা কেপে ওঠে তার।

জিসান আর জয় পৌছানোর পরেই নিলয় চলে আসে। চিঠিটা খুলে দেখে সেখানে লেখা।

নিজেদের বোনকে বাচাতে চাইলে নিচের ঠিকানায় চলে আসুন।

ইতি
প্রত্যয়

চিঠি পেয়ে সাথে সাথেই তারা বেড়িয়ে পরে। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌছে যায় গুদাম ঘরে। দরজায় যেতেই প্রত্যয়ের লোকেরা তাদের হাত বেধে ফেলে।

– ওয়েলকাম, ওয়েকাম শালা বাবুরা ( প্রত্যয়)

– তুই আমাদের বোন কে কেন এনেছিস?? কি শত্রুতা আমাদর সাথে তোর ( জিসান)

– কোনো শত্রুতা নেই। আমার শত্রু তো আদ্রিয়ান, আর ওর প্রাণ তোমাদের বোন। তাই আর কি ( প্রত্যয়)

– কিন্তু আমরা তো তোমাদের কে অনেক ভালো বন্ধু ভাবতাম। সেটা কি? ( জিসান)

– বন্ধু?? ইজ মাই ফুট। আমার জিবনের সব কিছু কেড়ে বন্ধু হতে এসেছে? ( প্রত্যয়)

– মানে??

– ছোট বেলায় ওকে বাচানোর জন্য আমার বাবা মারা যায়। এরপর থেকে যখন যা আমার পছন্দের ছিল সব ওই নেয়। এমনকি নওশিকেও আমি আগে ভালোবপসেছিলাম তাকেও নিলো (প্রত্যয়)

– এটা ভাগ্যর ব্যাপার। ( নিলয়)

– হ্যা ভাগ্যই বটে। কতবার মারার চেস্টা করলাম। কিন্তু ও বেচে যাবেই। প্রথমে গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চাইলাম নওশি বাচালো। নওশিকে কেড়ে নিয়ে তিলে তিলে মারতে চাইলাম সাগরের জন্য বেচে গেল। আর আপনাদের দিয়েও কাজ হলো না( প্রত্যয়)

নিলয় কিছু করতে যাবে তার আগেই দেখল সাগর চুপি চুপি ভিতরে প্রবেশ করছে। তাই চুপ হয়ে যায়।

– কিন্তু অনেক হয়েছে আজ আর না। আজ নওশিকে মেরে ওর তিলে তিলে মরার ব্যবস্থা করব। বলেই গুলি করে নওশি কে।

সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে সবাই। চোখ খুলে দেখে নওশির সামনে পরে আছে আদ্রিয়ান।

কি ভাবছেন ও কোথা থেকে এলো??

জয় আর জিসান বেরোনোর পর নিজের মন কে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলোনা আদ্রিয়ান। তাই হসপিটাল থেকে চুপি চুপি বেড়িয়ে আসে সে। জিসান দের বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় সাগরকে নিয়ে রওনা দেয়। পরে গার্ড এর কাছ থেকে সব শুনে এখানে আসে।

এতোক্ষণে হাত খোলা পেয়ে আদ্রিয়ানের দিকে দৌড়ে চলে যায় জয়, জিসান আর নিলয়। অবস্থা ভালো না দেখে প্রত্যয় পালানোর চেস্টা করলে সাগর ধরে ফেলে.

– তুমি এটা কেন করলে আদ্রিয়ান কেন ( জিসান)

– বলেছিলাম বা ভাইয়া ওকে জিবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। তাই ওকে বাচাতে আমার জিবনকে দিয়ে দিলাম। ( আদ্রিয়ান)

– এটা কেন করলে তুমি। এখন কি হবে আমার? ( নওশি)

– কথা দিয়েছিলাম জিবনের শেষ পর্যন্ত পাশে থাকব। আমি আমার কথা রেখেছি। বাকি সময় টা নিলয় তোমাকে সামলাবে। কি নিলয় পারবে না??

– হ্যা, কিন্তু,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

কিছু বলার আগেই তারা বুঝতে পারে আদ্রিয়ান চলে গেছে তাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে।

ভালোবাসা (এক অনুভূতি)

বোনাস পার্ট ২
লেখা: kashfuzjahan

৭ বছর পর

-মাম্মা মাম্মা হোয়ার ইজ আয়ান’স পাপা?? মাম্মাাাা ( আয়ান)

– তোমার পাপা তো এখানেই কোথাও আছে খুজে দেখ আমাকে জ্বালাবা না ( নওশি)

– এভরিবডি ফরগেট মাই বার্থডে। মামুই কই তুই মামুইইই (আয়ান)

– আাহারে এই ছেলেটাকে কই থেকে আনছে। এতো চিল্লায়। নওশি সত্যি করে বল তো এটা কি আমাদের বাড়ির ই ছেলে নাকি কুড়ায় আনছিস ( জয়)

– আমারও একই প্রশ্ন বুঝলি? আমাদের কারোর মতো হয় নি ( জিসান)

নওশি শুধু ওদের কথা শুনছে আর হাসছে। আর আমাদের ছোট্ট আয়ান গাল ফুলান বসে আছে। মনে হচ্ছে শ্রাবনের ধারা শিঘ্রই বর্ষিত হবে।

– তোমরা আমার ছেলের সাথে কি শুরু করেছো শুনি?? বকা দিব সবাইকে(নিলয়)

– পাপাই তুমি চলে আসছ দেখ এরা আমার সাথে কি করতাছে। দে আর ভেরি ব্যাড পাপাই। বলেই কান্না শিরু করে দিলো।

– হ্যা ওরা তো পচাই। আমরা দুজনে মিলে ওদেরকে মাইর দিব। তারপরও ও আমার সোনা বেটার কান্না করা যাবে না বুঝলে ( নিলয়)

কথাটা বলেই দুজনে জিসান আর জয়ের পিছনে ছোটা শুরু করলো। নওশি ল্যাপটপে কাজ করতে করতে দেখল আয়ান দেখতে ঠিক আদ্রিয়ানের মতোই হয়েছে।
নাক, চোখ, মুখ সব কিছুই যেন আদ্রিয়ান। আর নোয়া সম্পুর্ন নওশির মতো দেখতে ব্যবহার সৌন্দর্য সব। কিন্তু সে কোথায়। কথাটা মনে হবার সাথে সাথেই

– নোয়া মামুনি কই তুমি?? একবারও যে মাম্মাম এর কাছে এলে না আজ। ( নওশি)

– আসছি মাম্মাম। বলেই ছোট্ট একটা পরী নেমে এলো।

– কি হলো বেটা আজ তো আয়ানের সাথে সাথে তোমারও জন্মদিন। আয়ান এতো মজা করছে তুমি করবা না?? ( নওশি)

– করব মাম্মাম। কিন্তু কাল যে স্কুলের প্রোজেক্ট জমা দিতে হবে। আমারটা শেষ। কিন্তু আয়ান তো আর করবে না তাই ওর টা করছিলাম। ( নোয়া)

– এই হলো আমাদের বাড়ির মেয়ের কথা। আগে পড়াশোনা তারপর সব। নওশিও এমন ছিল। আজ শিওর হয়ে গেলাম আয়ান কে কুড়ায় পাইছিস ( জয়)

– ভাই আর একবার আমার ছেলেকে কিছু বললে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে যাবে বলে দিলাম। আর আম্মাজান আপনার পড়াশোনা কি আজ শেষ হবে?? হলে আমরা ঘুরতে যাই। ( নিলয়)

– ইয়েয়েয়ে আমরা ঘুরতে যাব ( আয়ান, নোয়া এক সাথে)

– নিলয় তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল আসবে একটু আমার সাথে ( নওশি)

– হ্যা বলো ( নিলয়)

– তোমাকে কতবার বলেছি ওদের কে মাথায় না তুলতে। ওদেরকে বাবা ছাড়াই থাকতে হবে। কারণ আসলেই তো ওদের বাবা নেই ( নওশি)

– দেখ আদ্রিয়ান চলে যাওয়ার সময় তোমার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিল। আর তখন ও বা আমরা কেউই জানতাম না নোয়া আর আয়ানের কথা। আমি শুধু আমার কথা রাখছি। তোমার কাছে তো আসি না। ওদের থেকেও দুরে রাখবা? আদ্রিয়ান হলে এটা করতে পারতা?? ( নিলয়)

– তবুও আমাদের জন্য তুমি নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে তা আমি কিছুতেই মানতে পারব না। ( নওশি)

– সেটা আমার ব্যাপার তোমাকে ভাবতে হবে না। আসি ( নিলয়)

in Bangladesh

-দেখ ভাই আজকের বিকালটা কতো সুন্দর না। রোদের আনা গোনা তেমন নেই। বাগানে ফুল ফুটেছে। খুব মজা লাগছে। আগের তুই হলে দোলনায় দুলতাম একসাথে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। তোর এই অবস্থা। বাবা- মাও চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আমি যে বড্ড একা ভাই। ( বলই কান্না শুরু করে আরশি)

কিছুক্ষণ পর সে খেয়াল করে তার মাথায় কেউ হাত বুলায় দিচ্ছে। তার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মুছে উঠে দাড়িয়ে পরে আরশি।

– কিরে আবার কাদছিস?? এতো কান্না করলে হবে বল?? স্ট্রং হতে হবে না? ( সাগর)

– কি করব ভাই? একা আর কিছু সহ্য করতে পারছি না। যাইহোক ওর কোনো খোজ পেলে?? ( আরশি)

– নারে ৭ বছর ধরে ওকেই খুজছি। একরাতের মধ্যে কই যে গেল আল্লাহ জানে। ( সাগর)

– আল্লাহ জানে কি হবে?? শুধু কষ্ট হয় তোমার কথা ভেবে। বিনা স্বার্থে আমাদের জন্য কতো কিছু করছো তুমি। এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যায় ( আরশি)

– একা কই। তুই তো সব দিয়ে সাহায্য করিস। যাই হোক দেখ তোর ভাবী কি পাঠিয়েছে তোর জন্য। তোর পছন্দের পরোটা আর গরুর গোশ ভুনা। ( সাগর)

– হুম। এখন তো তোমরাই আমার সব। নাহলে অনাথের মতো পড়ে থাকতাম।( আরশি)

– পাগলের মতো কথা বলিস না। খেয়ে নে। ওকে খাইয়েছিস?? ( সাগর)

– হ্যা চিকেন স্যুপ খাইয়েছি। ( আরশি)

in u.s.a

– ও পাপা আজ তুমি আমার সাথে ঘুমাও না পাপা প্লিজ ( আয়ান)

– একটা গল্প বলবে পাপাই ( নোয়া)

– আজ না বেটা। আজ অনেক ক্লান্ত। অন্যদিন। আজ বরং তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তোমরা ঘুমাও ( নিলয়)

– ওকে পাপা ( নোয়া আর আয়ান একসাথে)

– তোমাকে দেয়া কথা কি রাখতে পেরেছি আমি আদ্রিয়ান?? আমি আামার সবটুকু দিয়ে ওদের ভালো রাখার চেষ্টা করছি। তাই তো সব ছেড়ে আজ ওদের জন্য এখানে। তুমি খুশি তো?? যেখানেই থাক ভালো থেকো ( নিলয় মনে মনে)

এমন সময় নওশি ওই রুমে প্রবেশ করে।

– নিলয় জেগে আছো? কথা ছিলো তোমার সাথে ( নওশি)

– হ্যা বলো কি বলবে ( নিলয়)

– আসলে তখনকার ব্যবহারের জন্য সরি। আমার বাচ্চারা দিন দিন তোমার উপর ডিপেন্ড করতেছে। আগেই আমাদের জন্য সব ছেড়ে এসেছো। চাইনা আমাদের জন্য তোমার আর কোনো ক্ষতি হোক। ( নওশি)

– আমার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আমি নিজের মতো ভালো আছি। এতো ভাবতে হবে না ( নিলয়)

– তারপরও,,,,,,,,,,

– একদম চুপ। আর ডিস্টার্ব করিও না ঘুমাব। ( নিলয়)

– আর ইউ শিওর ( নওশি)

– ইয়াহ আই এম। এখন ঘুমাইতে দাও। ( নিলয়)

– ওকে ঘুমাও গুড নাইট ( নওশি)

– গুড নাইট ( নিলয়)
চলবে???

ভালোবাসা পর্ব-০৬

0

ভালোবাসা ( এক অনুভুতি)
পর্ব ৬
লেখা kashfuzjahan

গত কয়েকদিনে আদ্রিয়ান আর নওশির বন্ধুত্বটা বেশ ভালো হয়েছে। নিলয় এসব পছন্দ না করলেও কিছুই বলতে পারছে না কারণ তার কাছে নওশির জীবন সবার আগে। তাও বিরক্ত হয়ে জিসানের কাছে গেল।

– ভাই নওশির এভাবে আদ্রিয়ানের সাথে মেশাটা আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না (নিলয়)

– ভালো কি আর আমার লাগছে বল। তাও মানতে হবে। আমাদের হাত পা বাধা (জিসান)

– যা করবা কর নাহলে ওকে শুট করব ( নিলয়)

– কাম ডাউন মাই এ্যান্গ্রি বয়। সহ্য কর। এতো এনকাউন্টার আর শুট করার কি দরকার তোমার। জাস্ট চিল ( জয়)

– হ্যা তোমার আর কি। তুমি তো বলেই চুপ। আমার ই ফাটটাছে। ( নিলয়)

– আহা গো আমার প্রেমিক পুরুষের ফাটতাছে ( জয়)

– শালা বউয়ের বড় ভাই নাহলে তোকে দেখে নিতাম। ( নিলয়)

– ওই তুই কি কইলি?? যা দিমু না তোরে আমার বইন ( জয়)

-বড় ভাইয়াাা দেখ কেমন করে। ( নিলয়)

– তোদের ইদুর বিড়ালের খেলা শেষ কবে হবে?? (জিসান)

– এ জন্মে না ( জয়)

– বদ শালা ( নিলয়)

এমন সময় জিসানের মোবাইলে একটা কল আসে।

– কি!! সত্যি বলছো তুমি?? তোমার কথা যদি সত্যি হয়। আর প্রমাণ ঠিকঠাক দিতে পার তো তোমাকে শুধু ৩০০ কোটি না বরং এতো টাকা দিব যে তোমার ৪ প্রজন্ম বসে খাবে। আসছি আমি ( জিসান)

– জয় একটু চলতো আমার সাথে কাজ আছে। ( জিসান)

– হ্যা দাড়াও গাড়ির চাবি নিয়ে আসি। ( জয়)

– আমিও যাই ভাইয়া ( নিলয়)

– তোর যেয়ে কাজ নেই বরং তুই নওশি কে সময় দে। (জয়)

– কিন্তু ওতো আদ্রিয়ানের সাথে। আমি কই পাব। ( নিলয়)

– আমি কল করছি তাড়াতাড়ি চলে আসবে ( জিসান)

অন্যদিকে,

বন্ধুত্বের বাইরেও আদ্রিয়ান আর নওশির সম্পর্ক এগিয়ে গেছে নিজেদের অজান্তেই। আদ্রিয়ান তার কলিজা কে কাছে পেয়ে সব ভুলে গেছে। নওশিও যেন তার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত। মেঘলাদিনে ঝড়জড় বাতাসের সাথে প্রথমবারের মতো মিলন ঘটে দুটো হৃদয়ের।

কিন্তু এতো সুখ সইবে তো আদ্রিয়ানের কপালে? কারণ সে যে সুখ হীন জীবনে অভ্যস্ত।

এক পুরোনো মসজিদের পিছনে,

– হ্যালো ইজ এনিবডি দেয়ার?? কেউ কি আছেন?? সাড়া দিন প্লিজ। ( জিসান)

– ভাইয়া তুমি শিওর তো যে এখানেই ডেকেছিলো ( জয়)

– হ্যা এই জায়গাই তো বলেছিলো ( জিসান)

– ওয়েলকাম মি. জিসান। একা আসতে ভয় পাচ্ছিলেন বুঝি। ভাইকে আনতে হলো। ( অপরিচিত)

– সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার কাজ তুমি কর ( জয়)

– হা হা হা ঠিক বলেছেন মি, জয় আমার কাজ আমি করি। বাই দ্যা ওয়ে।
যেখানে দাড়িয়ে আছেন সেখান থেকে বা দিকে ১৫০ পা গেলেই একটা পাথর দেখতে পারবেন। তার নিচে আপনাদের প্রমান গুলো আছে। ওগুলো নিয়ে পাথরটার নিচেই টাকা গুলো রেখে চলে যান। (অপরিচিত)

– কিন্তু একবার দেখা হলে ভালো হতো না কি?? ( জয়)

– আরে ছোট ভাইয়া দেখার কি দরকার?? যার যা দরকার পেয়ে গেছি। আল্লাহ হাফেজ(অপরিচিত)

খাম হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরে জয় আর জিসান। নওশি ফেরেনি দেখেও কিছু না বলে নিলয়কে নিয়ে জিসানের রুমে যায়। খাম খুলে দেখে কিছু ছবি আর ভিডিও।

যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আদ্রিয়ান আর নওশির বিয়ের ঘটনা। আর ভিডিও চালিয়ে দেখতে পেল কিভাবে পার্টিতে অপমান করেছিল নওশিকে আদ্রিয়ান।

– এতো বড় ধোকা জয় চৌধুরীর সাথে। আজ ওকে পেলে খুন করে ফেলব( জয়)

– শুধু খুন নয় কি কি যে হবে আল্লাহ ভালো জানে। আমার কলিজায় হাত দেয়া ( জিসান)

এমন সময় নওশিকে নিয়ে বাড়ি ফেরে আদ্রিয়ান। ওকে দেখেই যেন ওদের রাগ ১০ গুন বেড়ে যায়। প্রথমে নিলয় মারা শুরু করে পরে জয় আর জিসান যোগ দেয়।

– ভাইয়া ওকে কেন মারতেছো?? প্লিজ ওকে মেরো না আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে ( নওশি)

– তুই জানিস না নওশি ওর জন্য তোকে কত কষ্ট পেতে হয়েছে। সেইদিন গুলা তুই ভুলছিস আমরা না। (জয়)

– ও এমন কিছু করতে পারে না। প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও। বলেই নওশি মাথা চেপে বসে পরে।

– ওকে ছেড়ে দিব?? ওর লাশও কেউ পাবে না। ( নিলয়)

– পৃথিবী থেকে ওর নাম মিশায় দিব আজ। ( জিসান)

– বাস। ইনাফ। জয় কিছুই করে নি। যা করার প্রত্যয় করেছে। ( নওশি)

– কি বলছিস বনু তুই এসব ( জিসান)

– হ্যা ভাইয়া আমি ঠিকই বলছি। আদ্রিয়ান আমাকে প্রথমে পছন্দ করতো না। কিন্তু প্রত্যয় প্রথম থেকেই আমাকে লাভ করত। তাই যেদিন আমি আদ্রিয়ানের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি ওইদিন আমাকে প্রত্যয় প্রপোজ করে। আমি না বলায় আমাকে কিডন্যাপ করে নেয়। আর তারপর তোমরা জানো ( নওশি)

– এতো বড় সাহস আমাদের সাথে ক্রসিং করা ওকে শেষ করে ফেলব। (জয়)

– তার আগে আমার আদ্রিয়ান কে বাচাও ভাইয়া প্লিজ (নওশি)

এতোক্ষণে তারা খেয়াল করল আদ্রিয়ানের অবস্থা ভালো না। ৩ জন মিলে মারার ফলে নাক মুখ দিয়ে লালা ঝড়ছে সাথে অনবরত রক্ত বের হচ্ছে।

অবস্থা খুব খারাপ তাই এম্বুলেন্স এর অপেক্ষা না করে গাড়ি নিয়েই চলে যায় জয়, জিসান, আর নিলয়ের একটা কল আশায় সে যেতে পারে না।

চলবে??

ভালোবাসা পর্ব-০৫ + বোনাস পর্ব

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব :৫
লেখা: kashfuzjahan

আজ ৪ মাস হলো নওশি চলে গেছে আদ্রিয়ান কে ছেড়ে। সব কিছুই কেমন যেন তছনছ হয়ে গেছে। আদ্রিয়ান ও আর আগের মতো নেই। পুরো ফ্লাট জুড়ে শুধু মদের বোতল আর আদ্রিয়ান। ওর বাবা একবার এসেছিল নেয়ার জন্য কিন্তু নিয়ে যেতে পারে নি। সাগর অফিসের ফাকে ফাকে এসে সময় দেয় আদ্রিয়ানকে। আর প্রত্যয় বিদেশি ক্লাইন্ট সামলাইতে ব্যস্ত। অনেক চাপ পড়েছে বেচারার ওপর।

এর মাঝখানে ইন্টান্যাশনাল একটা কোম্পানি দেশে আসে। সাগরের সাথে কথা বলার পর জানায় তারা সাগরদের কোম্পানির সাথে ডিল করবে যদি তাদের এম ডি এসে কথা বলে তো।

এদিকে আদ্রিয়ানের ডিল করার মতো কোনো অবস্থাই নেই। শেষে অনেক কষ্টে ওকে ঠিক করে রাজি করায় প্রত্যয়। আর বলে ৩দিন পর একটা পার্টিতে কোম্পানিটি তাদের নতুন সিইও এর সাথে পরিচয় করায় দিবে। আর ওই দিন ই ডিল টাও সাইন করা হবে। প্রত্যয়ের কথায় রাজি হয় আদ্রিয়ান।

অবশেষে পার্টির দিন ৩ বন্ধু বেড়িয়ে পরে এক সাথে। নওশি চলে যাবার পর আজ প্রথম ওই ফ্লাট থেকে বেরোলো আদ্রিয়ান। সেভ করে মোটামুটি একটা লুক এ চলে এসেছে। তবে আগের মতো গ্লামার আর নেই তার চেহাড়ায়।

পার্টিতে পৌছানোর পর অনেক মেয়েই আদ্রিয়ানের নজরে আসার চেষ্টা করছে কিন্তু আদ্রিয়ানের যেন কিছুই ভালো লাগছে না। ঠিক এমন সময়

– লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান, এটেনশন প্লিজ। আমি জয় চৌধুরী, চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি এন্ড টেক্সটাইল এর এমডি। সবে মাত্র ৩দিন আগে বাংলাদেশে এসেছি এদেশে নিজেদের বিজনেস স্টার্ট করতে। আর এখানকার বিজনেস দায়িত্বের জন্য নতুন সিইও যুক্ত করতে। যে প্রথমবার এদেশে এসেছে এখানকার সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে। আর সী ইজ মাই লিটল এনজেল যার আজ জন্মদিন। প্লিজ ওয়েলকাম মাই ওয়ান এন্ড অনলি প্রিন্সেস নওশি চৌধুরী। ( জয় নওশির দ্বিতীয় ভাই)

আদ্রিয়ান এতোক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল নওশি নামটা শোনার সাথে সাথেই তার হৃদপিন্ড অস্থির হয়ে উঠল। মাথা তুলে তাকাতেই দেখে তার স্ত্রী নওশি একটা ছেলের হাত ধরে নামছে। তাকে একটা পরীর মতো লাগছে৷ ছোট্ট এনজেল।

নওশিকে দেখে আদ্রিয়ান যতটা না খুশি হলো। অন্য ছেলের হাত ধরে আছে দেখে তার মেজাজ আরও খারাপ হলো। মদের নেশায় নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ক্ষিপ্ত বাঘের মতো এগিয়ে গেল।

– তোর সাহস কি করে হয় অন্য ছেলের হাত ধরার। কিছু বলি নি জন্য মাায় চড়ে বসছিস। নাকি বেশি টাকা ওয়ালা ছেলে পেয়ে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছিস। বলেই ঠাসসস করে চড় মার নওশি কে। (আদ্রিয়ান)

– হোয়াট দ্য হেল ইজ দিস। হু আর ইউ ড্যাম। হাউ ডেয়ার টু টাচ মি ( নওশি)

– ও আচ্ছা আজ কে আমি। এতোদিন আমার সাথে ছিলি তার কিছু না। এক ফ্লাটে একরুমে কতদিন ছিলি মনে নাই তোর। নাকি বড়লোক বয়ফ্রেন্ডের সামনে নাটক করছিস। (আদ্রিয়ান)

নওশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ আদ্রিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আর ও ওঠার আগেই ৩জন ওর দিকে পিস্তল তাক করে।

– হাউ ডেয়ার ইউ। জিসান চৌধুরীর বোনের গায়ে হাত দেয়ার সাহস কি করে হয় তোর। ও আমার প্রিন্সেস। যার গায়ে কারোর ছায়া পড়তে দেই না আমরা দুই ভাই আর তুই তার গায়ে হাত তুলিস ( জিসান চৌধুরী , নওশির বড় ভাই)

আদ্রিয়ান কিছু বলছে না, শুধু নওশির দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু নওশি এমন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেন ওকে চেনেই না।

– আর একবার যদি আমার কলিজার দিকে তাকানোর দুঃসাহস দেখাস তো তোর লাশও কেউ খুজে পাবে না( তৃতীয় ছেলেটি।)

– কাম ডাউন নিলয়। হি ইজ ড্রাংক, সো হি ডোন্ট নো হোয়াট ইভার হি ইজ ডুয়িং। প্লিজ ডোন্ট স্পয়েল আওয়ার ডে। ( নওশি)

– ওকে ডিয়ার আই কান্ট ডু এনিথিং। ইউ অলসো কাম ডাউন। বাট প্লিজ টক টু মি ইন বেঙ্গলি। ( নিলয়)

– ইউ নো দ্যাট আই ডোন্ট নো বেঙ্গলী ল্যাঙ্গুয়েজ। সো হোয়াই আর ইউ রিকুয়েষ্ট মি লাইক দ্যাট( নওশি)

– ইউ নো লিটল এবাউট ইট সো প্লিজ ট্রাই ইট। ( নিলয়)

– ঠিক আছে বলব। কিন্তু কেউ হাসবা না। ( নওশি)

– জয় চৌধুরীর বোনের উপর হাসবে এমন সাহস কার আছে ( জয়)

আদ্রিয়ান তখন থেকে সব খেয়াল করল। মেয়েটি ইংলিশের পাশাপাশি ফ্রান্সের ভাষাও ব্যবহার করতেছে। আর বাংলা বলে ভাঙ্গা ভাঙ্গা।

হঠাৎ তার মনে পরল নওশি একদিন তাকে বলেছিল বাংলা সে পারে না। যদি তাকে বাংলা শেখায় তো ভালো হবে কারণ তার ভাষা আদ্রিয়ান বুঝতে পারবে না। সেদিন ভেবেছিল নওশি পাহাড়ি ভাষা বলে কিন্তু বজ মুল কারণ বুঝতে পারল। আদ্রিয়ান উঠে চলে যাবে ঠিক তখনি

– হে ইউ। কোথায় যাচ্ছেন। প্লিজ ডোন্ট গো। আজ আমার বার্থডে + এনগেজমেন্ট যাবেন না প্লিজ। ( নওশি)

নওশির কথাটা যেন আদ্রিয়ানের বুক চিড়ে ঢুকে গেল কিছু বলতে যাবে তার আগেই

– আই নো দ্যাট। আপনি ড্রাংক। তাই আপনার ব্যবহারে কিছু মনে করি নি। আমার ভাইয়াদের আর নিলয়ের হয়ে মাফ চাচ্ছি। প্লিজ ফরগিভ আস। (নওশি)

– না না মাফ তো আমার চাওয়া উচিত। কোথায় কি করা উচিত ভুলে গিয়েছিলাম ( আদ্রিয়ান নিজেকে সামলে)

– বাই দ্যা ওয়ে। যদি আপনি আমাদের মাফ করে থাকেন আর নিজের ব্যবহারে লজ্জিত হোন। তো প্লিজ জয়েন আওয়ার পার্টি (নওশি)

– আল্লাহ কোন পাপের সাজা দিচ্ছো আমাকে। নিজের চোখে নিজের কলিজা কে অন্য কারোর হতে দেখতে হবে। এর চেয়ে ওইদিন এক্সিডেন্টে মারা গেলেই ভালো হতো। ( আদ্রিয়ান মনে মনে)

এদিকে ততক্ষনে নওশির কেক কাটা শেষ। ও সবাইকে খাওয়ানোর পর আদ্রিয়ান কে কেক খাওয়াতে আসে। কিন্তু কেক খেতে গিয়ে আদ্রিয়ানের চোখে পানি চলে আসে। আর এই পানি কেন জানি নওশি কে এক অজানা কষ্ট দিচ্ছিল। শেষে নিজেকে সামলে,,

– গাইজ গাইজ গাইজ আজ আমার আর আমার ডিয়ারেস্ট এ,সি,পি নিলয়ের এনগেজমেন্ট পার্টি তে আমি মিস্টার আদ্রিয়ান খান কে রিকুয়েষ্ট করব একটা গান শোনাতে। সো মিস্টার আদ্রিয়ান প্লিজ। ( নওশি)

akho main achu leke
Otho se muskuray
Hum jaise ji rahi ha
Koyi ji k to batay

Jo tutke na tute koyi aisa dil dekhay

Hum jaise ji rahiha koyi ji k to batay

…………………….

গান টা শোনার মাঝখানে হঠাৎ নওশির মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়।

উফ ব্রো দিস পেইন এগেইন। বলেই অজ্ঞান হয়ে যায় নওশি।

চলবে???

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
বোনাস পার্ট
লেখাঃ kashfuzjahan

অনেক প্রশ্ন জমে আছে আদ্রিয়ানের মনে। কেন এমন করছে নওশি। কি হয়েছে তার সাথে। কিন্তু কে দেবে তাকে এই উত্তর। একমাত্র নওশি জানে সব। কিন্তু কিছুই যে ওর মনে নেই। ভাবতে ভাবতে হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে সে।

– মি, জয় আপনার বোন কি ড্রাগস নিত?? এতোটা পরিমানে কেউ ড্রাগস নিয়েছে আর আপনারা পরিবারের কেউ জানতেও পারেন নি। এতোটা কেয়ার লেস কি করে আপনারা ( ডাক্তার)

– না ডাক্তার আমাদের বোন কখনো ড্রাগস নেয় নি। ( জিসান)

– কি বলছেন? শুধু মাত্র অতিরিক্ত ড্রাগস নিলেই এই অবস্থা হতে পারে। এমনকি রোগীর শরীরে এখনো ড্রাগস এর পরিমান অনেক বেশি। তাছাড়া তার উপর অনেক অত্যাচার ও করা হয়েছে। (ডাক্তার)

– আমি বলছি সব কিছু ডাক্তার। আজ থেকে ৮ মাস আগে নওশি এদেশে এসেছিল এদেশের উপর রিসার্চ করতে। আসলে আমার মামা আমজাদ হোসেন আমেরিকাতে পড়াশোনার জন্য গিয়েছিল। সেখানকার মহিলাকে বিয়ে করে ওখানে সেটেল হয়। মামা বেচে থাকতে জয় আর জিসান ভাই দেশে আসত। কিন্তু নওশির দুই বছর বয়সে মামা- মামি মারা যাওয়ায় নওশি কখনো এখানে আসে নি। কিন্তু প্রথম বার এদেশে এসে রাঙ্গামাটিতে যায় ওখানকার সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে। তবে একটা সময় পর নওশির সাথে যোগাযোগ বন্ধ হলে আমি পুর্ণ পুলিশ ফোর্স কাজে লাগিয়ে খোজা শুরু করি। প্রায় ১২ দিন পর ওকে একটা লেকের ধারে খুজে পাই। কিন্তু তখন ওর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই আমেরিকাতে নিয়ে যাই। পরে একটু সুস্থ হলে এই দেশে নিয়ে আসি যাতে ও কোনো রকমে আসামিকে শনাক্ত করতে পারে। ( নিলয়)

– বুঝতে পেরেছি তবে ওকে কোনো প্রকার চাপে রাখা যাবে না ( ডাক্তার)

এদিকে আড়াল থেকে সব কথা শুনছিল আদ্রিয়ান। অনেক কষ্টে কান্না চেপে রাখে সে দ্রুত বেড়িয়ে যায় হাসপাতাল থেকে। তার নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে কারণ এতোদিন শুধু নওশিকে দোষ দিয়েছে। একবার ও বোঝার চেষ্টা করে নি নওশি কত কষ্টে আছে।

হঠাৎ জিসানের মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা কল আসে।

– আপনি কি জিসান চৌধুরী বলছেন? ( অপরিচিত)

– হ্যা, বলুন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি (জিসান)

– হা হা হা মিস্টার চৌধুরী আমি সাহায্য নিতে নয় সাহায্য করার জন্য আপনাকে কল করেছি ( অপরিচিত)

– সাহায্য?? আপনি আমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারেন ( জিসান)

– আপনার বোনের এই অবস্থার জন্য কে দায়ি তা আমি খুব ভালো করেই জানি ( অপরিচিত)

– কি!! কি বলছেন আপনি?? একবার তার নামটা বলুন দুনিয়া থেকে তার নাম মিটিয়ে দেব আমি ( জিসান)

– আহা, মিস্টার চৌধুরী এতো অধৈর্য হলে চলে?? আপনার এতো বড় উপকার করব। মিস্টি খাওয়াবেন না?? ( অপরিচিত)

রাগ টাকে কন্ট্রোল করে জিসান বলে

-কতো লাগবে বলুন ( জিসান)

– বেশি না মিস্টার চৌধুরী মাত্র ৩০০ কোটি টাকা। ( অপরিচিত)

– ৩০০ কোটি টাকা??

– আহা মিস্টার চৌধুরী আমি জানি এই টাকা আপনার কাছে কিছুই না। নিজের বোনের জন্য এতোটুকু দিতে পারবেন না?? ( অপরিচিত)

– শুধু মাত্র ৩০০ কোটি কেন ৩০০০ কোটি হলেও আমি দেব। শুধু ওই লোকটাকে আমার চাই। ( জিসান)

– আমার চাওয়া টাকা দিলেই হবে। শুধু অপেক্ষা করুন? কখন কোথায় কিভাবে সব আমি বলে দেব। আর হ্যা আমাকে কল করার দরকার নেই। প্রয়োজন হলে আমি কল দিব। ( অপরিচিত)

– আচ্ছা ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ মিস্টার চৌধুরী। ( অপরিচিত)

নওশির জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু শরীর অনেক দুর্বল তার। জয় অনেক চেষ্টা করে ওকে কিছু খাওয়াতে পারে নি। কারণ নওশির একটাই কথা মিস্টার খান এলেই ও খাবে। কারণ মিস্টার খানের কাছে অনেক প্রশ্ন আছে নওশির। নিলয় অনেক চেষ্টা করেও সাগরের নাম্বারে কন্টাক্ট করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে জিসান নিজে বেড়িয়ে পরে।

আদ্রিয়ান বাড়ি এসে সব ভাংচুর করছে। তার একটাই কথা সে বেচে থাকতে তার পরি কিভাবে এতোটা কষ্ট পেল। আর এতো কিছুর পর ও সে কিচ্ছু করতে পারছে না। সাগর ওকে সামলাতে গিয়ে হাফিয়ে পরেছে।

– মিস্টার খান আসব (জিসান)

– জি আসুন ( আদ্রিয়ান)

– আসলে হয়তো ভুল সময়ে ভুল রিকুয়েষ্ট নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। কিন্তু আমি অপারক। অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে আশা। (জিসান)

– আসলে নওশির জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু ও অনেক দুর্বল। এদিকে কিছু খেতেও চাচ্ছে না। না খেলে ঔষধ ও খেতে পারবে না আবার অসুস্থ হয়ে যাবে (জিসান)

– এমা সে কি কেন কি হয়েছে নওশির এমন কেন করছে ( আদ্রিয়ান)

– আসলে ওর নাকি আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন আছে। ওগুলোর উত্তর না পেলে ও খাবে না। তাই বলছি যদি একটু কষ্ট করে আপনার সময় আমাকে দিতেন। বিনিময়ে যা চাইবেন দিয়ে দেব (জিসান)

জিসানের কথা গুলো বলতে দেড়ি হলেও আদ্রিয়ানের বেড়োতে দেরি হয় নি।

হাসপাতালে,

– শোনা বোন আমার একটু খেয়ে নে। যা চাইবি দিব। প্লিজ। ( জয়)

– উফ ছোট ভাইয়ু বল্লাম না খাব না আমি যা বলছি তাই। নাহলে খাব না। ( নওশি)

– আচ্ছা তুই খেয়ে নে তোকে সমুদ্র দেখতে নিয়ে যাব প্রমিস (নিলয়)

– না না না। আমি খাব না। মিস্টার খান না আসলে আমি মরে গেলেও খাব না। ( বলেই মুখ ফিরিয়ে নেয় নওশি)

– কে খাবে না শুনি ( আদ্রিয়ান)

– আমি নওশি চৌধুরী খাব না ( নওশি গাল ফুলিয়ে)

– আমি দিলেও না (আদ্রিয়ান)

– ওই নিলয়ের বাচ্চা যা (নওশি)

– ওকে গেলাম তাহলে। আইসক্রিম গুলো রাস্তার কাউকে দিব। আর জিসান ভাইয়া আপনি আমাকে মিথ্যা বলে আনলেন?? নওশি তো আমার মুখও দেখল না। দিস ইজ ভেরি ব্যাড ভাইয়া। ( আদ্রিয়ান)

– হুমমম তাই তো দেখছি। আমারই ভুল। তুমি বরং যাও আদ্রিয়ান। ( জিসান)

– ওই ওই ওই আমি কি তোমাকি যেতে বলছি? (নওশি)

– তো কাকে বল্লা? (আদ্রিয়ান)

– তুমি ছাড় সবাই যাবে। (নওশি)

– উমমম ওকে থাকব তবে একটা শর্ত আছে? খাবার আর ঔষধ খেতে হবে। ( আদ্রিয়ান)

– খাওয়ায় দিবা তুমি ( নওশি)

কথাটা শুনে আদ্রিয়ান জিসানের দিকে তাকালে সে নিরব সম্মতি জানিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

– জি মিস বলেন কি কি প্রশ্ন আপনার ( আদ্রিয়ান)

– আচ্ছা আমি কি তেমাকে চিনি আগে থেকেই?? (নওশি)

– কেন বলতো ( আদ্রিয়ান)

– না মানে আসলে আমি যতদুর জানি আমি প্রথমবার এদেশে এসেছি। কিন্তু তোমার চোখ দুটো অনেক চেনা। তুমি সেদিন আমাকে যখন বকা দিচ্ছিলে মনে হচ্ছিল এই বকার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করে আছি। আর তোমার গানটা আমার মনে সব সময় বাজে। কিন্তু মনে করতে পারি না। কেন বলতো?? ( নওশি)

– একটা কথা বলি শোনো। অতীত কে মনে করতে যখন তোমার কষ্ট হয় তাহলে তো মনে করার দরকার নাই। তুমি আছো আমিও আছি তো বর্তমান কে নিয়ে ভাবি। তাছাড়া অতীত তো ফিরে আসবে না। তাহলে অতীতটা অতীতেই থাক ( আদ্রিয়ান)

– হুম ঠিক বলেছো। কষ্ট পাওয়ার দরকার নাই। বাই দ্যা ওয়ে ফ্রেন্ড হবা (নওশি)

– হ্যা হলাম। তবে ডিয়ার ফ্রেন্ড এবার তো ঔষধ খেতে হবে। ( আদ্রিয়ান)

– খাব একটা শর্তে ( নওশি)

– আবার শর্ত? তোমার কি সব কথায় শর্ত না হলে হয় না তাই না?? ওকে বলো কি শর্ত ( আদ্রিয়ান)

– আমাকে ছুয়ে ওয়াদা করো কোনোদিন ছেড়ে যাবা না। (নওশি)

– মারা যাবার আগ মুহূর্ত অবধি তোমার পাশে থাকব। (আদ্রিয়ান)

চলবে??

ভালোবাসা পর্ব-০৪

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্বঃ৪
লেখা kashfuzjahan

আদ্রিয়ান চোখ খুলে দেখতে পায় একটা হসপিটালে শুয়ে আছে সে। ডাক্তার তাকে দেখে হাসি মুখে বলে।

– অবশেষে জ্ঞান ফিরল আপনার?? যা খেলা দেখালেন ভাই। পর পর ৩টা অপারেশন করতে হয়েছে। ১২দিন পর আপনার জ্ঞান ফিরল। মানতে হবে আপনার স্তীর ভালোবাসা কে। এ পাও নড়ে নি আপনার কাছ থেকে। ভাগ্য করে বউ পেয়েছেন ভাই। এমন বউ সবাই পায় না। আজরাইল আর আপনার মাঝ খানে দেয়ালের মতো দাড়ায় ছিল। (ডাক্তার)

সব কথা শুনে আদ্রিয়ান নওশির দিকে তাকালো। পাশেই সোফাতে শুয়ে আছে নওশি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই কয়েকদিনে কি গেছে ওর উপর দিয়ে।

ফ্লাশ ব্যাক,

গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে সব কিছু কেনা শেষ করে আদ্রিয়ান। গাড়ি চালাতে চালাতে সাগরের সাথে কথা বলছিল সে হঠাৎ করে ট্রাক এসে আদ্রিয়ানের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। আর সাগর হঠাৎ এসব কিছুর শব্দ শুনে কিছু বিপদ আন্দাজ করে তাড়াতাড়ি ঘটনা স্থলে পৌছায়৷

বর্তমান,

সব ভাবতে ভাবতে নড়ে ওঠে আদ্রিয়ান, সাথে সাথেই তার ব্যথা অনুভব হয়। কারণ বেচে গেলেও শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা রয়েছে।

আদ্রিয়ানের আওয়াজ শুনেই জেগে ওঠে নওশি। তাড়াহুড়ো করে কাছে আসে সে। তারপর জিজ্ঞেস করে

আপনি ঠিক আছেন তো?? ব্যথা লাগে নি কোথাও?? খুব কষ্ট হচ্ছে?? ( নওশি)

এসব কথা শুনে হাসতে শুরু করে আদ্রিয়ান। কেউ কি করে এতোটা ভালো হতে পারে? কিছু বলতে যাবে তার আগেই ডাক্তার এসে পরে।

– মি, আদ্রিয়ান। আপনি মোটামুটি ভালোই আছেন। বাসায় যান। তারপর কিছুদিন টোটাল বেড রেস্ট। আর ঔষধ ঠিকঠাক খাবেন। আশা করি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। ( ডাক্তার)

পরেরদিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরে আদ্রিয়ান। তাই নওশি ভাবে এই কয়দিন হসপিটালে ছিল তো ওর গা মুছে দিয়ে কাপড় বদলে দেই। কিন্তু যেই কাছে গেল

– ওই ওই কি কর তুমি আমার সাথে?? কি হচ্ছে এসব? (আদ্রিয়ান)

– কই কি? শুধু আপনাকে গোসল করায় দিব। আর কাপড় বদলায় দিব। ( নওশি)

– নাাাা এটা হতে পারে নাাাা। তুমি আমার মতো একটা ইনোসেন্ট বেচারা পুরুষের ইজ্জত এভাবে নিতে পারো না। আল্লাহ সহ্য করবে না ( আদ্রিয়ান)

– পারি অবশ্যই পারি। আরও অনেক কিছুই পারি দেখবা? ( নওশি)

– একবার সুস্থ হতে দাও। তারপর দেখব কি কি পার। ( আদ্রিয়ান মনে মনে)

– ওই আবার বির বির করে কি বলো হ্যা? জোরে বলো(নওশি)

– আল্লাহ তোমাকে বিচার দিলাম। তুমি এই অত্যাচারের বিচার কর আল্লাহ (আদ্রিয়ান নওশিকে শুনিয়ে)

এবার আর নওশি কিছু বলতে পারল না। পেট চেপে হাসা শুরু করল। এভাবেই দিন যাচ্ছিল দুজনের। নওশির ভালোবাসা আর সেবা যত্নে এখন আদ্রিয়ান বেশ সুস্থ। হাটতে গেলেও তেমন সাহায্য লাগে না।
তবে নওশি তেমন হাটতে দেয় না। শুধু বিকালে বাইরে নিয়ে যায়।

এর মধ্যে একদিন প্রত্যয় আর সাগর এলো আদ্রিয়ানের ফ্লাটে। রাতের খাবার শেষে আড্ডা দিতে বসেছে ৩ বন্ধু।

– কি রে তোর তো ১০০ দিনের সময় শেষ প্রায়। এখন কি ছেড়ে দিবি নওশিকে ( প্রত্যয়)

– মানে কি বলছিস এসব( আদ্রিয়ান)

– তুই তো বলেছিলি কোন জংলি মেয়ের সাথে থাকা দি আদ্রিয়ান খানের পক্ষে সম্ভব না (প্রত্যয়)

– আগের আমি হলে হয়তো ডিভোর্স দিয়ে দিতাম। কিন্তু ও আমার জন্য যা যা করেছে তারপরও ওকে কিভাবে ছেড়ে দিব আমি তো মানুষ। ( আদ্রিয়ান)

– এসব কি বলছিস তুই তোর মাথা ঠিক আছে?? ( সাগর)

– হুম একদম। আগে পাগল ছিলাম তাই এসব বলতাম৷ কিন্তু নওশি সব পাল্টাতে সাহায্য করেছে আমায়। ( আদ্রিয়ান)

– তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। তোরা ভালো থাকলেই হলো। আজ আসি বাই ( সাগর)

এদিকে নিজের রুমে কান্না করছে নওশি। কারণ সে যে আদ্রিয়ানের অর্ধেক কথা শুনেছে।

পরের দিন সকালে,,

আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে আজ চা আর ঔষধ পেল না।তাই নওশিকে ডাকতে লাগল। অনেক ডাকার পরেও সারা পায় নি শেষে সারা বাড়ি খুজতে লাগল।

নওশিকে না পেয়ে তার মোবাইলে কল দেয় আদ্রিয়ান। কল টা পাশেই বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখে তার নাম

unwanted love

দিয়ে সেভ করা। সাথে একটা চিঠি আর একটা কাগজ। কাগজটি চেক করে দেখে সেটা একট ডিভোর্স পেপার। আর চিঠিতে লেখা,,

dear
unwanted love

না চাইতেও তোমায় বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম। জানি না কেন। তবে কাল বুঝতে পারলাম তুৃমি আমাকে ভালোবাস না। আর ডিভোর্সও দিতে পারছো না। তোমার জিবন বাচিয়েছি তাই।

কিন্তু মন খারাপ করিও না। আজ ১০০ দিন শেষ তাই আমি চলে যাচ্ছি। তুৃমি তোমার মনের মতো কাউকে বিয়ে করে নিও। আমার সাথে এডজাস্ট করতে হবে না তোমার। তোমার কষ্ট দেখতে পারব না। তাই চলে গেলাম

ইতি
জংলি বিড়াল

চলবে???

ভালোবাসা পর্ব-০৩

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্বঃ ৩

পরেরদিন সকাল বেলা উঠে আদ্রিয়ান ডাকতে থাকে মেয়েটিকে।

– জংলি বিড়াল ওই জংলি বিড়াল কই তুই ( আদ্রিয়ান)

কোনো সাড়া না পেয়ে ওর রুমের দিকে যায়। গিয়ে দেখে ঘুমিয়ে আছে সে। গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে গিয়ে দেখে বেশ জ্বর। ভালো করে খেয়াল করে দেখল কপাল আর কনুই থেকে রক্ত ঝরেছে। চোখ- মুখ দেখে বোঝা যায় সাড়া রাত অনেক কান্না করেছে মেয়েটা। নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে এখন আদ্রিয়ানের। কেন এমন ব্যবহার করতে গেল। ওই রাতের ঘটনায় তো মেয়েটার কোন দোষ ছিল না। ধরতে গেলে ওর নিজের দোষ ছিল। নেশা করে নিজেকে সামলাতে পারেনা তো কি দরকার ছিল নেশা করার।

বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে রান্না ঘরের দিকে যায়। দেশের বাইরে থাকার দরুন রান্নাটা বেশ ভালই পারে। রান্না করে এসে মেয়েটিকে ডেকে তোলে। ঔষধ খাইয়ে বাইরে যাবে এমন সময় মেয়েটি আদ্রিয়ানের হাত টেনে ধরে।

– আপনি আমাকে জংলি বিড়াল কেন বলেন?? আমি কি জংলিদের মতো দেখতে?? ( মেয়েটি)

আদ্রিয়ান এবার মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকালো। কোনো দিক দিয়েই মেয়েটি পাহাড়িদের মতো না। বরং সে যেন এক মায়া পরী।

– কি হলো বলছেন না কেন আমি কি জংলিদের মতো??( মেয়েটি)

– না মানে ইয়ে আসলে আমি তো তোমার নাম জানি না( আদ্রিয়ান)

এবার মেয়েটা বেশ শব্দ করেই হাসল,,

– আজ থেকে ২২ দিন ১৪ ঘন্টা ২১ মিনিট একটা মেয়ের সাথে আছেন আর তার নাম জানেন না?? আজব মানুষ( মেয়েটি)

– ইয়ে,, জানি না তো কি হয়েছে। তুমিও তো বলো নি ( আদ্রিয়ান বেশ রেগে)

– সারাদিন জংলি বিড়াল বলে ডাকলে নাম বলব কখন। আচ্ছা ঠিক আছে, আমার নাম নওশি।

– বাহ বেশ নাম তো প্রেমে পড়ার মতো। কিন্তু যদি একটু স্মার্ট আর পড়াশোনা জানা হতো বেশ ভালো হতো। নেভার মাইন্ড, সব শিখায় নেব ( আদ্রিয়ান মনে মনে)

– কি বিরবির করছেন। গালি দেয়ার হলে জোড়ে বলুন। মনে মনে গালি দেয়ার কি আছে?? ( নওশি গাল ফুলিয়ে)

এবার আদ্রিয়ান জোরে হেসে ওঠে। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে আরেব্বাস জংলি বিড়াল দেখি রাগও করে।

– আম্মুউউউউউ কই তুমি দেখ তোমার মেয়েকে কি কি বলতাছে। ( নওশি)

– আচ্ছা থাক ঢং করতে হবে না। গাল ফুলাইলে বিড়াল কেন জানি পেচা হয়ে যায়।( আদ্রিয়ান)

– 😡😡😡😡

– আচ্ছা শোন আজ একটু আসতে দেরি হবে। তোমার কি কি লাগবে বলো?? মানে গয়না, কসমেটিক কি কি লাগবে তোমার. ( আদ্রিয়ান)

– উমমমম একটা চকলেট, একটা আইসক্রিম, আর একটা টেডি বিয়ার (নওশি)

– ইইইহ সময় মতো বিয়ে দিলে এতো দিনে বাচ্চার মা হতো। আর দেখ বাচ্চাদের মতো আবদার করছে। (আদ্রিয়ান)

– এনে দিতে না পারলে নাই। আমি নিজে চেয়েছি?? আপনি দিতে চাইলেন তাই বলছি। এতো আনতে পারবেন না বল্লেই হয় টাকা নেই। কিপ্টা, খারুস কোথাকার (নওশি)

– এই মেয়ে এতোদিন চুপ ছিল তাই একদিনে সব কথা বলতাছে। সারা জীবন কিভাবে সামলাব আল্লাহ রহম করিও তোমার এই নাদান বান্দার উপরে। ( আদ্রিয়ান মনে মনে)

অফিসের কাজ শেষ করে ফেরার সময় নওশির কথা মতো সব নিয়ে আসে আদ্রিয়ান। সব কিছু পেয়ে নওশির খুশি কে দেখে। যেন ছোট একটা বাচ্চা সে।

এদিকে আদ্রিয়ান নওশির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। যেন এমন কোনো দৃশ্য দেখার জন্য তার এতো বছরের প্রতীক্ষা। পরের দিন নওশির জন্য নতুন বিছানা আর কিছু জিনিস এনে দেয় আদ্রিয়ান।

সেই দিনের পর আরও এক মাস কেটে গেছে। নওশি এখন আদ্রিয়ানের সব। ভালো খারাপ সব কিছু যেন নওশি। কিন্তু আদ্রিয়ান এখনো তার মনের কথা নওশি কে বলতে পারে নি। কারণ কোথাও একটা সংকোচ কাজ করে তার।

আজ তাড়াতাড়ি অফিসের কাজ শেষ করে সাগর, প্রত্যয়ের সাথে আড্ডায় বসে আদ্রিয়ান।

-ব্রেকিং নিউজ, ব্রেকিং নিউজ, ব্রেকিং নিউজ, আমাদের দি গ্রেট আদ্রিয়ান খান, যে কিনা কখনো প্রেমে পড়বে না বলেছিল সে নিজে প্রেমে পড়েছে। ( সাগর)

– ওই তুই চুপ করবি?? নাকি পাবলিক প্লেসে মারব তোকে( আদ্রিয়ান)

– কেন তুই ওকে মারবি কেন?? যেখানে তুই প্রেমে পরবি না বল্লি সেই তুই প্রেমে পড়লি তাও এক জংলি বিড়ালের ( প্রত্যয়)

– শাট আপ। ও কোনো জংলি বিড়াল না। ওর নাম নওশি। মনে থাকবে? ওর নাম নওশি।

– ওওওও নওশি?? ( প্রত্যয়, সাগর একসাথে)

– চুপ না আগে বল কিভাবে প্রপোস করব। আমি কিছিতেই পারছি না( আদ্রিয়ান)

– ওই তুই না আমার ফ্রেন্ড?? এতো ভাবিস কেন? নিজের বউকেই তো বলবি। একটা গোলাপ হাতে নিয়ে সোজা হাটু গেড়ে বলবি,, ওগো তোমাকে আমি বড্ড ভালোবাসি গো। ( প্রত্যয়)

– দুর শালা পারব না আমি। এসব হবে না আমার দারা।৷ ( আদ্রিয়ান)

– আচ্ছা তুই এখানে থাক আমাদের কেউ একজন তোর বউকে প্রপোজ করে আসি। তুই লাইভ অভিজ্ঞতা নে। পরে আবার তুই করিস( সাগর)

– ওই না, শোন, থাম। আমার বউ আমি প্রপোজ করব।যা এখান থেকে( আদ্রিয়ান)

– আচ্ছা আচ্ছা আমরা যাচ্ছি। বাসায় গিয়ে কোথাও ভুলে গেলে কল করিস মনে করায় দিব নি( প্রত্যয়, সাগর হাসতে হাসতে)

ওখান থেকে বেড়িয়ে এক গুচ্ছ গোলাপ আর কিছু বেলুন নিয়ে প্রপোজ করার উদ্দেশ্যে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয় আদ্রিয়ান কিন্তু মাঝ পথে একটা ট্রাক ধাক্কা দেয় আদ্রিয়ানের গাড়িকে।

চলবে??

ভালোবাসা পর্ব-০২

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব:২
লেখা: kashfuzjahan

ঢাকায় ফিরে মেয়েটিকে নিয়ে বাসায় না গিয়ে আলাদা একটা ফ্লাটে তোলে আদ্রিয়ান। বাসায় এনেই যেন অত্যাচার শুরু হয় আদ্রিয়ানের। মেয়েটাকে ছুড়ে দেয় মেঝেতে।

– মিস জংলি বিড়াল,, তোমার পরিবারের সবাই তো আমাকে বাধ্য করল তোমাকে বিয়ে করতে। তাই বলে ভেব না তোমার মতো জংলির সাথে আমি থাকব। ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করব তার আগে ৯০ দিন এক সাথে থাকতে হবে। আর ডিভোর্স হতে ১০ দিন মোট ১০০ দিন তুমি আমার সাথে থাকবা। তারপর যে যার রাস্তায় হাটব। ( আদ্রিয়ান)

– ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

– ও মিস জংলি বিড়াল বুঝতে পারছো আমার কথা?? যদি বুঝে থাক তো এটাও বুঝে নাও যে তোমার মুখ দেখতে চাই না। নাউ জাস্ট আউট ফ্রম হেয়ার। ( আদ্রিয়ান)

মেয়েটা কিছু না বলে রুম থেকে বাইরে চলে গেল। আদ্রিয়ান আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পরে। পরের দিন সকাল বেলা উঠে দেখে তার ফ্লাট টি সুন্দর করে সাজানে। দেখে বেশ খুশি হয় সে। কিন্তু আগের দিনের কথা মনে পরতেই তার মাথা গরম হয়ে যায়।

– জংলি বিড়াল ওই জংলি বিড়াল কই তুই। কাম হেয়ার রাইট নাও। (আদ্রিয়ান)

মেয়েটি সামনে এসে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু বলে না। এতে আদ্রিয়ানের মেজাজ আরো খারাপ হয়।

– ওই তুই কি বোবা নাকি?? কাল থেকে তুমি বলছি জন্য তোর ভাব বেড়ে গেছে না?? যা খাবার নিয়ে আয়। আই ফিল রিয়েলি ভেরি হাঙ্গরি। (আদ্রিয়ান চিৎকার করে)

মেয়েটা কোন কথা না বলে খাবার নিয়ে আসে। টোস্ট, এগ ফ্রাই আর জুস। খাবার দেখা অবাক হলেও কিছু না বলে খাবার খেয়ে বেড়িয়ে যায় আদ্রিয়ান। সন্ধ্যায় কয়েকটা 3 পিস কিনে চলে আসে। আর দিয়েই বেড়িয়ে যায়। অনেক রাতে ফিরে আসে। কিন্তু অনেক ধাক্কাধাক্কির পরও দরজা খোলেনা ভিতর থেকে। পরে রাগে গজগজ করতে করতে নকল চাবি দিয়ে দরজা খোলে সে।

ঘরে ঢুকে দেখে লোড শেডিং হয়েছে। মোম জালিয়ে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই দেখে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি বিছানায় নিয়ে ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটির জ্ঞান ফেরে।

– এই মেয়ে তুই অজ্ঞান হয়েছিলি কেন?? অন্ধকারে ভয় পাস বলেছিলি কি? একটা কল দিলে কি হতো? ওহো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোর মতো জংলি বিড়াল আবার মোবাইল ব্যবহার করে নাকি?? আল্লাহ কার পাল্লায় ফেল্লা তুমি রক্ষা কর? জংলি বিড়াল একটা ( আদ্রিয়ান)

– দুঃখিত, মাফ করবেন (মেয়েটি)

বলেই মেয়েটি পাশের রুমে চলে গেল। এদিকে মেয়েটির কন্ঠ শুনে অবাক আদ্রিয়ান। কি করে কারো কন্ঠ এতো সুন্দর হতে পারে?? যাই হোক বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে। তাই ঘুমিয়ে পড়ল। পরেরদিন ফেরার সময় একটা মোবাইল নিয়ে এলো

– আজ থেকে এটা তুই চালাবি। পারিস তো নাকি শেখায় দিতে হবে??( আদ্রিয়ান)

– পারব। কিন্তু আপনি কি আপনার ভাষা শেখাবেন আমায়?? কারণ আমার ভাষা আপনি বুঝবেন না। (মেয়েটি)

– ওরে আমার জংলি বিড়াল রে, আসছে ভাষা শিখতে, তোর জন্য তোর অঞ্চলের ভাষাই থাক। এমনিতেও ১০০দিন পর ওই জঙ্গলেই যাবি তুই। ( আদ্রিয়ান)

এর কয়েকদিন পর প্রত্যয় কল করে আদ্রিয়ানকে বলে তোদের স্বামী-স্ত্রীর জন্য একটা পার্টি এরেঞ্জ করছি আশা করি আসবি। কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে। কারণ সে চায় না এই জংলি বিড়াল কে কেউ দেখুক। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই মেয়েটিকে নিয়ে রওয়ানা হয় পার্টিতে।

লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান আজ আমি প্রত্যয় আমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু এবং বিজনেস পার্টনার আদ্রিয়ানের বিয়ের জন্য পার্টি দিচ্ছি গিভ দেম আ বিগ উইস। আর সেই সাথে আমাদের ভাবীকে বলব যাতে আমাদের কে একটা গান শোনায়।

কথাটা শোনার সাথে সাথে আদ্রয়ান প্রত্যয় কে সাইডে টেনে নিয়ে যায়।

– ওই শালা তুই কি বলস এসব? ( আদ্রিয়ান)

– কেন কি ভুল বলছি?? গান ই তো শুনব( প্রত্যয়)

– তুই জানিস ওই জংলি টা পাহাড়ি। বাংলা বলতে পারে না আর গান শোনাবে। আমার মান নষ্ট না করলে তোর হয় না?? ( আদ্রিয়ান)

– হা হা হা ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার ( প্রত্যয়)

– কি,,কি,,কিন্তু ( আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই গানের আাওয়াজ শুনতে পায়। কেউ গিটার বাজিয়ে গাইছে। পিছন ফিরে দেখে মেয়েটা

akho main asu leke

Hotho se muskuray
Hum jaise ji rahiha koyi jike to batay.

Jo tutke na tute
Koye aisa dil dekhay
Hum jaise ji rahihe koye jike to batay

…………………………………

অবাক হয়ে সবাই গান শুনছে। কারণ এতো সুন্দর গলা শুধু মাত্র শিল্পীরই হতে পারে। গান শেষে সবাই মেয়েটি কাছে যায়। এসব যেন সহ্য হচ্ছিল না আদ্রিয়ানের। কারণ এমনিই মেয়েটিকে আজ পরীর মতো লাগছে তার উপর এতো ভালো গান। সবাই ওর দিকে যাবেই।

তাই এক প্রকার জোর করেই টানতে টানতে মেয়েটিকে ঘরে নিয়ে আসে আদ্রিয়ান। তারপর মেঝেতে ফেলে দিয়ে উল্টা পাল্টা বলা শুরু করে।

– শালা জংলি বিড়াল। আসছে সবাইকে দেখাইতে যে তুই কতো সুন্দর। শালি জঙ্গলের ভুত, জীবনেও দেখছিলি এমন পার্টি। লোকের কাছে নিজেকে বিলায় দিচ্ছিস ছোট লোক কোথাকার। (নিজের মতো গালি দিয়ে ঘুমিয়ে যায় আদ্রিয়ান)

এতো কিছুর মাঝে সে খেয়াল ই করে নি মেয়েটির কপাল আর হাতের কনুই কেটে রক্ত বের হচ্ছে। তার মাঝে এমন একটা ঘরে মেয়েটাকে থাকতে দেয় যেখানে কিছুই নেই। শুধু মাটিতে চাদর পেতে শুয়ে থাকে মেয়েটি।

চলবে???

ভালোবাসা পর্ব-০১

0

ভালোবাসা – (এক অনুভুতি)
পর্ব: ১
লেখা: কাশফুজ্জাহান

মাটিতে হাটু গেড়ে বসে আছে আদ্রিয়ান। সামনে ৩জন ছেলে পিস্তল হাতে দাড়িয়ে আছে। আর তার কিছুটা দুরে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের এক্স- ওয়াইফ নওশি। কিন্তু নওশি ওর দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন ওকে চেনেই না।

আজ বিজনেস পার্টিতে এসে নওশিকে দেখেই চমকে যায় আদ্রিয়ান। এতো বড় পার্টিতে ও কিভাবে। কিছু বলার জন্য সামনে গিয়ে নওশির হাত ধরার সাথে সাথেই একটা ছেলে আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দেয়। বলে ওঠে

– জিসান চৌধুরীর বোনের গায়ে হাত দেয়ার সাহস হয় কোথা থেকে??

কথাটা শোনার পরেই আদ্রিয়ান থমকে যায়। কিছুই মাথায় আসে না তার।

৭ মাস আগে,,

আদ্রিয়ান, সাগর, প্রত্যয় মিলে ঘুরতে গিয়েছিল রাঙামাটিতে। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে।

প্রথমদিন গিয়ে বিশ্রাম করেই সময় পার করে তারা।

পরেরদিন পাহাড় দেখতে বের হয় । ঘুরেবেড়ানোর সময় আদ্রিয়ান খেয়াল করে একটা বাচ্চা ছেলে পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাই তাকে কোলে নিয়ে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে সাগর আর প্রত্যয়কে। অবশেষে সবাই একসাথে মিলে বাচ্চাটাকে বাড়িতে রাখতে যায়।

সেখানে গিয়ে সকলের আত্মীয়তায় মুগ্ধ হয় সবাই এবং আসার সময় বিংলুর ( যে ছেলেটিকে বাচিয়ে ছিল) বড় বোনের বিয়ের দাওয়াত পায় আদ্রিয়ানরা। হোটেলে ফিরে ৩জনই শুয়ে পড়ে।

– আজকের দিনটা বেশ মজায় কাটল তাই না?? ( প্রত্যয়)

– হ্যা, তবে জানা ছিল না পাহাড়ের লোকেরা এতোটা ভালো। আমি তো ওদের কে অসবভ্য ভাবতাম ( সাগর)

– শালা তোর মানুষের সাথে না মিশে কমেন্ট করার স্বভাব গেল না ( আদ্রিয়ান)

– তাহলে তুই এখানে বিয়ে কর আর আমরা এসে সবার সাথে মেশার সুযোগ পাব ( সাগর ও প্রত্যয় এক সাথে)

– আমি?? আর বিয়ে?? তাও এই জঙ্গলে? দি আদ্রিয়ান খান এখানে বিয়ে করবে?? ভাবলি কি করে?? ( আদ্রিয়ান)

– কার কপালে কে আছে বলা যায় না। হয়তো পাহাড়ি কোনো মেয়ে তোর কপালে আছে। ( সাগর)

– চুপ শালা। আদ্রিয়ান তার ভাগ্য নিজে লেখে। এখন ঘুমা নয়তো এই ৮ তলা বিল্ডিং থেকে তোকে ফেলে দিব। ভুলিস না সন্ধ্যায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে হবে।

সন্ধ্যা বেলা ফ্রেস হয়ে রেডি হয় ৩ বন্ধু। কেউ কারোর চেয়ে কম না। মাশাল্লাহ এক এক জন যেন নায়ক কেও হার মানায়। এদের মধ্যে

সাগর পড়েছে নীল পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, হাতে নীল ঘড়ি। আর চুল গুলো এলোমেলো। চেহাড়ার মায়াবী ভাবটা যেন কয়েক গুন বেড়ে গেছে। যে কোন মেয়ে এক দেখাতেই প্রেমে পড়বে।

প্রত্যয় পরেছে বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি, সাদা চুড়িদার, হাতে কালো ঘড়ি। চুল গুলো উপরের দিকে আচড়ানো। চেহাড়ায় একটা বিদেশি বিদেশি ভাব থাকায় তার সৌন্দর্য যেন আরও ১০ গুন বেশি বেড়ে গেছে।

এদিকে আদ্রিয়ান সম্পুর্ন কালো রঙে নিজেকে সাজিয়েছে। কালো চশমা। কালো পাঞ্জাবির সাথে কালো জিন্স। হাতে ঘড়ি। আর চাপ দাড়ি। সব মিলিয়ে যেন এক দেখায় নজর লেগে যাবে। বলিউডের নায়কেরাও হার মানবে তার কাছে।

তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে তিন বন্ধু বেড়িয়ে পড়ে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা পৌছে যায় বিয়ে বাড়িতে। আসরের নামাজের পরেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। শহরের বাইরে ঘুড়তে এসে মজাই পাচ্ছিল তিন বন্ধু।

হঠাৎ করে প্রত্যয়ের চোখ যায় একটা মেয়ের উপরে। মেয়েটা সবুজ রঙের একটা পোশাক পরে আছে। তার সম্পুর্ন সাজটা পাহাড়িদের মতো হলেও মনে হচ্ছে যেন এক মায়া পরী নেমে এসেছে এই বনাঞ্চলে।

কারণ,
মেয়েটির চুল যেন কালো মেঘ, চোখ দুটোতে যেন এক নীলাভ মায়া। গায়ের রং টাও অন্যদের মতো না। বরং যে কোন বাঙ্গালি মেয়ের চেয়ে বেশি ফর্সা সে। দেখে মনেই হয় না পাহাড়ি মেয়ে। যেন রাজ প্রাসাদের রাণি সে।

তাই কৌতূহল আটকাতে না পেরে বিংলুকে ডেকে মেয়েটির ব্যাপারে জানতে চায় প্রত্যয়। জানতে পারে মেয়েটি বিংলুর বোনের বন্ধু।

কথাটা শুনে প্রত্যয় যায় সাগর আর আদ্রিয়ানের কাছে। তাদের কে সব কথা বল্লে সাগর বিশ্বাস করে কিন্তু আদ্রিয়ান সবটা হেসে উড়িয়ে দেয়।

বিয়ের অনুষ্ঠান হই হই করে শেষ হওয়ার পর চাদের আলোতে বসে পরে ৩ বন্ধু। কারণ অনেক রাত হয়েছে। হোটেলে ফেরা সম্ভব না। কিছুক্ষণ পর বিংলু আার ওর বাবা এসে একটা পানীয় পান করতে দেয় আদ্রিয়ানদের কে। কারণ এটা খাওয়া নাকি ওদের ওখানকার নিয়ম।

তাই এক প্রকার জোর করেই আদ্রিয়ানরা এসব কিছু খায়। কিন্তু কিছুক্ষণ একসাথে পড়েই তারা অনেক ঘুমের অনুভব করে। তাই তারা ঘুমাতে যায়। কিন্তু আদ্রিয়ান বুঝতে পারে না সে কোথায় ঘুমিয়েছে।

সকাল বেলা,
আশেপাশের চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙ্গে প্রত্যয় আর সাগরের। ঘুম থেকে উঠে দেখে আদ্রিয়ান পাশে নেই। বাইরে কি হয়েছে দেখার জন্য বাইরে যেতেই তারা দেখতে পায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আর আগের রাতের মেয়েটা।

সকলের বক্তব্য আদ্রিয়ান আর মেয়েটা রাতে এক সাথে ছিল। তারা নিজে দেখেছে। যেহুতু তারা নিজে দেখেছে তাই কোন সাফাই দেয়া চলবে না। তাদের একটাই কথা বিয়ে করতে হবে।

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলেও বোঝা যাচ্ছে তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কারণ সে চায় না তার জন্য তার বন্ধুরা বিপদে পড়ুক।

এদিকে মেয়েটিকে দেখে প্রত্যয় অনেক কষ্ট পেলেও নিজেকে শান্ত রাখে। আর সাগর কে বলে আদ্রিয়ান কে শান্ত করতে। যেন সে কিছু না বলে এখানে। শেষে দুই বন্ধু মিলে আদ্রিয়ান কে বোঝানোর পর সে বিয়েতে বসে।

সম্পুর্ন অনিচ্ছায় আদ্রিয়ান বিয়ে করে মেয়েটিকে। আর ওইদিন রাতেই তারা রাঙামাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।

চলবে???

মায়াদেবের মায়া পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৮( Last part)
#তাহমীম

পিছন থেকে মুনিয়া আহমেদ ডাক দিলে ও নিঝুম আর শোনেনি। শোনার অপেক্ষা যে নেই তার মায়াবতী তার জন্য অপেক্ষা করছে এখনো। তার দাদু তার জন্য অপক্ষা করছে এখনো।

নিঝুম মায়াদের বাড়িতে ঢুকতেই ঐশি শিকদার নিঝুমকে দেখে চমকে উঠে
-” নিঝুম তুই!?
-” হ্যা মামুনি আমি।
মায়ার আম্মু কান্না করে দেই নিঝুমকে দেখে। নিঝুমকে ধরে কপালে একটা চুমু দেই।
ঐশি শিকদার চিল্লিয়ে
-” কে কই? তোরা দেখে যা নিঝুম ফিরে এসেছে। আমাদের নিঝুম এসেছে।

ঐশি শিকদারের কথা শুনে তিথি বের হয়ে আসে। তিথিকে দেখে নিঝুম অবাক হয়ে যায়। তিথির কোলে আমানের মতো দেখতে একটা বাচ্চা

-” তিথি তুই এইখানে?
-” আমি তো এই খানেই থাকার কথা। তোর মতো এটা আমার ও শশুর বাড়ি। কিন্তু তোর এখানো হয়নি।
-” মানে?

আমান পিছন থেকে
-” কারন তিথি আমার বউ। মায়া পালিয়ে যাবার পর বুঝতে পারি ও তোকে কতটা ভালোবাসে আর তুই মায়াকে। দাদুকে দেখেছি হাসপাতালে কতো কষ্ট করতে। আর সব হয়েছিলো আমার জন্য। আমি তোদের মধ্যে চলে এসেছিলাম। আর এসব দেখে আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তখন তিথি এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি আর বিয়ে করি।

আশিক আহমেদ আর শফিক আহমেদ নিঝুমের কাছে এসে নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে৷
নিঝুম আর কিছু না বলে

-” আমার মায়া কোথায়? ওকে কেনো দেখতে পাচ্ছি না?

বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে মুনিয়া আহমেদ বলে

-” মায়া আমাদের দুই পরিবারের কারো সাথেই থাকে না। সবার উপর খুব অভিমান জমেছে ওর। তোর দাদুকে নিয়ে সে একাই একটা ভাড়া বাসায় থাকে। আর বাসায় থেকে নিজেই একটা ছোটখাটো বিজনেস সামলায়।

আমান নিঝুমের কাধে হাত দিয়ে
-” আমি মায়াকে অনেক কষ্ট করতে দেখেছি এই পাচঁটা বছর। আমরা তো ভেবেই নিয়েছিলাম তুই আর আসবি না। তাই মায়াকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলেছিলাম তাও শোনেনি। তোর অপেক্ষায় আছে এখানো সে।

নিঝুম মায়ার বাসায় যেতে নিলেই পিছন থেকে আমান
-” আমরা ও যাবো দাঁড়া
-” তোরা আয় আমি যাচ্ছি।

নিঝুম কলিং বেল বাজাতেই মায়া এসে দরজা খোলে। মায়া নিঝুমকে দেখে আকাশ থেকে পড়ে এতো বছর পর তার মায়াদেব তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সত্যিই কি নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে সামনে! মায়া বিশ্বাস করতে পারছে না চোখকে। মিথ্যে হলে ও মায়ার দুচোখে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সত্যিই কি তার মায়াদেব এসেছে? এটা হয়তো কোন সপ্ন এখনি ভেঙে যাবে।

নিঝুম তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। মেয়েটা আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে। গাল গুলো আগের থেকে গোলাপি হয়েছে মনে হচ্ছে। কপালে ছোট একটা কালো টিপ, নিঝুমের মনে হচ্ছে নিঝুমের জন্য সাজিয়েছে তার মায়াবতী নিজেকে।

মায়া নিরবতা ভেঙে
-” কি চায়?
-” মায়া!
-” এখানে কোন মায়া থাকে না আসতে পারেন। মায়া দরজা লাগাতে যাবে তখনি নিঝুম দরজায় ধরে ফেলে। তাই মায়া দরজা ছেড়ে ভিতরে চলে যায় আর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। নিঝুম ভিতরে এসে দেখে একটা হুইল চেয়ারে বসে আছে তার দাদু। নিঝুমের চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে দাদুকে দেখে। ততক্ষনে সবাই চলে এসেছে নিঝুম আর মায়ার পরিবার।

নিঝুম হাটু গেড়ে আমির চৌধুরীর সামনে বসে -” দাদু।
আমির চৌধুরী কথা বলতে চেষ্টা করছে নিঝুমকে দেখে কিন্তু কোন ভাবেই পারছে না।
-” দাদু তোমার কিচ্ছু হবে না আমি আবার তোমায় সুস্থ করে তুলবো। ভালো ডাক্তার দেখাবো। আমাকে মাফ করে দাও আমি তোমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম
আমির চৌধুরীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
নিঝুম আমির চৌধুরীর কোলে মাথা রাখে।

-” দাদু আমি খুব স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের জন্য তোমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।
আমায় ক্ষমা করে দাও দাদু।
সবার চোখেই পানি দাদা নাতির এমন পরিস্থিতি দেখে।

কিছুক্ষন পর নিঝুম মাথা তুলে মায়া বলে ডাক দেয়। মায়া কোথায়? মায়া কি আমার সাথে খুব অভিমান করেছে?

নিঝুম দরজায় ধাক্কাচ্ছে।
-” মায়া, মায়া দরজা খোলো। দেখো তোমার মায়াদেব এসেছে। তোমার মায়াদেব শুধু তোমায় ই ভালোবাসে, সেই ছোট থেকেই। তোমায় নিয়েই যে আমার পৃথিবী ছিলো মায়া।একবার দরজা খোলো প্লিজ মায়াবতী।।

মায়া দরজার এপাশে দরজা ধরে কান্না করছে।

-” মায়া তুমি যদি এখন দরজা না খোলো আমি কিন্তু আবার আমেরিকায় চলে যাবো। মায়া প্লিজ আর দূরে রেখো না আমায়। মায়া।

মায়া চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিঝুম ডকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে
-” তবে বেশ আমি চলে যাচ্ছি আবার আমেরিকায়। তুমি ভালো থেকো মায়াদেবকে ছাড়া।

এই দিকে আমির চৌধুরী নিঝুমের এমন অবস্থা দেখে আস্তে করে নিঝুম বলে ডেকে উঠে।

নিঝুমের কোন শব্দ না পেয়ে মায়া দরজা খোলে। দরজা খোলে দেখে সবাই আমির চৌধুরীর পাশে বসে আছে। আমির চৌধুরী অস্পষ্ট ভাষায় কথা বলছে। মায়া দৌড়ে আমির চৌধুরীর কাছে যায়।
-” দাদু ভাই তুমি কথা বলতে পারছো?

আমির চৌধুরী অস্পষ্ট ভাষায় বলছে
-” নিঝুমকে মাফ করে দে দাদু ভাই। নিঝুমকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো না।

মায়া চোখে পানি নিয়ে
-” মায়াদেব কোথায় ফুপিমা?
-” ছাদে গেছে। বলেছে দশ মিনিটের ভিতরে ছাদে যেতে না হয় ও আবার ফিরে যাবে আমেরিকায়।

ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে নিঝুম। মায়া একপা দুপা করে নিঝুমের কাছে গিয়ে

-” আমেরিকায় চলে যেতে চাইলে যেতে পারে। আমি না হয় আরো পাচঁ বছর অপেক্ষা করবো। কবিতার ছন্দ মেলাবো আমার মায়াদেবের জন্য। গুন গুন করে গান গাইবো আর তার অপেক্ষা করবো। কিন্তু তবু ও তার জন্য অপেক্ষা করবো। কারন মায়া শুধু মায়াদেবেরই। ” মায়াদের মায়া”

নিঝুমের চোখে বিন্দু বিন্দু পানি নিয়ে পিছনে ফিরে আচমকা মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মায়াও এই সুযোগ হাত ছাড়া না করে লুফে নেয় সুযোগ। জড়িয়ে ধরে দুহাতে খামচে ধরে পিঠ।

নিঝুমের বুকে মাথা রেখে
-” মায়াদেব
নিঝুম চোখ বন্ধ করে
-” হুম
-” সেদিন যখন তুমি আমায় কিছু বলতে এসেছিলে কিন্তু বলতে পারোনি তারপর আমরা শপিং থেকে ফিরে দেখি ফুপিমা বসে আছে বাড়িতে মনে আছে?
-” হুম
-” ফুপিমা যখন তোমায় হাত ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলো তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো আমি জানালায় দাঁড়িয়ে তোমাদের দেখছিলাম আর তোমাদের সব কথা শুনে ফেলেছিলাম। তখনি জেনে গিয়েছিলাম তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো। আর কবে থেকে। জানো সেদিন কি খুশি লেগেছিলো আমার ? এর পর তুমি চলে গিয়েছিলে আর আমাদের বাড়ি আসোনি। আমি ভেবেছিলাম তুমি শেষ অব্দি বিয়েটা আটকাবে। কিন্তু তুমি আসোনি। আমি অস্থির হয়ে তোমাদের বাড়ি গিয়ে দেখি তুমি নেই৷ দাদু ভাইয়ের পায়ের কাছে বসে অনেক কান্না করেছিলাম। কিন্তু দাদু ভাই কিছু বলেনি তুমি কসম দেওয়াতে। তবে আমি আসার সময় দাদু ভাই তোমার ডাইরিটা আমাকে দেয়। তুমি কসম দিয়েছিলে আমায় কিছু না বলতে কিন্তু ডাইরি না দিতে তো আর কসম দাওনি। আমি অনেক ভেবেছিলাম ডাইরি খুলবো কি খুলবো না। অবশেষে বিয়ের দিন সকালে ডাইরি খুলে পড়ি। সব কটা পাতায় তোমার মায়াবতীকে নিয়ে লেখা পড়ে আমি ভিষণ কেঁদেছিলাম। এতো ভালোবাসতে তুমি আমায় আর আমি বুঝতেই পারিনি।

-” তুমি সব জেনে গিয়েছিলে তাহলে আমায় বলোনি কেন তখন?
-” বললে কি হতো? আমি জানতাম তুমি আবার সবার জন্য আমাকে না করে দিবে।বলবে আমায় বিয়ে করলে ওরা কষ্ট পাবে। জ্ঞানের বানি দিতে আমায় আমি জানি। তবু ও আমি বৌ সাজার পর যখন তুমি এলে আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো সব তুচ্ছ করে দিয়ে আমায় নিয়ে যাবে কিন্তু তা হয়নি। পরে বুঝেছিলাম তোমার দ্বারা কিছু হবে না যা করার আমাকেই করতে হবে। তাই আমি পালিয়েছিলাম যাতে কয়েকদিন পর সব ঠান্ডা হলে তোমার কাছে যেতে পারি তোমায় আপন করে নিতে পারি। কিন্তু কিছুদিন পর এসে শুনি তুমি দেশ ছেড়েই পালিয়েছো। আর দাদু ভাই অনেক অসুস্থ। তারপর থেকেই তোমার জন্য অপেক্ষার শুরু। মনে হতো এই বুঝি তুমি আসবে কিন্তু কই তুমি এলেনা এতো গুলো বছর কেটে গেলো তুমি এলেনা। তোমার উপর ভিষণ রাগ হয়েছিলো ভেবেছিলাম তুমি আসলে আর কথা বলবো না। কিন্তু পারলাম না আমি। আমার মায়াদেবের সাথে রাগ করে থাকতে।

নিঝুম মায়ার মাথাটা বুক থেকে তুলে ঠোঁটে এক আঙুল দিয়ে চেপে ধরে

-” চুপ একদম চুপ। আমি কি জানতাম আমার মায়াবতীর বিয়ে হয়নি জানলে তখনি ফিরে আসতাম। এই এতো গুলো বছর নষ্ট করতাম না তোমার থেকে আর তোমার আদরের দূরে থাকতাম না।

নিঝুমের কথা শুনে মায়া লজ্জায় নুইয়ে পড়ে।
নিঝুম মায়ার থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে। নিঝুমের কাছে আশায় মায়ার নিঃশ্বাস আরো ভারী হয়ে উঠে। নিঝুমের ঠোঁট জোরা ডুবিয়ে দেয় মায়ার ঠোটে। তাদের নিঃশ্বাস মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।

.
.
.
মায়াদেব মায়াদেব আমার বাচ্চা কোথায়? ।

নিঝুম সদ্য জন্মানো মেয়েকে নিয়ে রুমে ডুকে

-” এইতো মায়াবতী আমার কোলে। আমার ছোট্ট মায়াবতী হয়েছে।
-” আমাকে একটা চুমু দিন।
নিঝুম হা হয়ে যায়। মেয়ের মুখ না দেখে এই মেয়ে কি বলে আগে।
-” কই দিন!
নিঝুম মুচকি হেসে মায়ার কপালে ঠোট ছু্ঁয়ে দেয়।
-” এই বার আমার মেয়েকে দিন।
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মায়া। আর মায়াদেব জড়িয়ে ধরে তার মায়াবতীকে।

আপনারা সবাই মায়াদেব আর মায়াবতীর সংসারের জন্য দোয়া রাখবেন।

সমাপ্ত

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে গল্পটা একটু ভালো করে বলবেন 😌।

মায়াদেবের মায়া পর্ব-০৭

0

#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৭
#তাহমীম

মুনিয়া আহমেদ একটা শব্দ ও বের না করে নিঝুমকে হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়।

নিঝুম অবাক হয়ে

-” আম্মু কি হয়েছে এমন করছো কেন? আর দরজা বন্ধ করলে কেনো?

-” কেন এসেছিস এই খানে?
-” কি আজব আমার নানা বাড়িতে আমি আসতে পারবো না?
-” তোর দাদা আমায় সব বলেছে। তুই নাকি মায়াকে বলতে এসেছিস তুই তাকে ভালোবাসিস?
-” হ্যা আম্মু। কিন্তু……
-” তোর লজ্জা করলো না হ্যা বলতে? আমাকে কি কথা দিয়েছিলি ভুলে গেছিস? আমানের কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস? ও যদি বুঝতো তাহলে আগেই বুঝতো সুইসাইড করতো না। আমার বড় ভাইটা মারা যাবে আমানের কিছু হলে। আমার এমন সুন্দর পরিবারটাকে নষ্ট করে দিস না। এখন সবার মুখে হাসি আছে। তুই মায়াকে এইসব বলার পর আর কিছুই ঠিক থাকবে না নিঝুম। তোকে আমি ত্যাগ শিখিয়েছি মানুষকে কষ্ট দিতে শিখায়নি।

নিঝুম তুচ্ছ একটা হাসি দিয়ে
-” আম্মু ত্যাগ করতে বলছো? নিজের প্রান ত্যাগ করে কেউ বাঁচতে পারে? মায়া তো আমার প্রান আম্মু। সেই ছোট্ট থেকে আমি ভালোবাসি মায়াকে। আমি তো তাও ত্যাগ করে দিলাম। তোমার কথায় আর সবার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের প্রানও ত্যাগ করে দিলাম আর কি চাও তুমি আম্মু? আর কি চায় সবাই আমার কাছ থেকে? আমার অস্থিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে আম্মু আর কেউ তা টের ও পাচ্ছে না। তারপর ও তুমি আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছো? হ্যা আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলাম মায়াকে সব বলে দিবো কিন্তু বলতে পারিনি। সবার মুখের দিকে তাকিয়েই বলতে পারিনি। তুমি নিশ্চিন্তেই থাকতে পারো আম্মু মায়াকে আমি আর কিছুই বলবো না । আমি চলে যাবো সবার থেকে দূরে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আমি আমেরিকায় চলে যাবো।

নিঝুম আর কিছু বলার আগেই ঐশি শিকদার এসে দরজায় নক করে

-” আপা কি হয়েছে কোন সমস্যা?
মুনিয়া আহমেদ তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে
-” না ভাবি কোন সমস্যা না। নিঝুম বাড়িতে যা এলোমেলো করে এসেছে সব। তাই আরকি কিছু বাড়ির কথা বলছিলাম।

নিঝুম আর কিছু না বলে বেড়িয়ে যায় মায়াদের বাড়ি থেকে কান্না আসছে ভিষণ নিঝুমের কিন্তু ছেলেদের কাঁদা বারণ।

দুদিন হলো নিঝুম মায়াদের বাড়িতে আসছে না। মায়া অস্থির হয়ে আছে নিঝুমের জন্য। কালকে মায়ার গায়ে হলুদ আর আজকে সে অন্য একজনের জন্য অস্থির বিষয়টা সত্যিই কেমন কিন্তু মায়া আর পারছে না। মায়াদেব কি শেষ অব্দি বলবে না? মায়াকে সে ভালোবাসে!মায়া আর কিছু না ভেবে ওড়নাটা মাথায় দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নিঝুমদের বাড়ির উদ্দেশ্য।

মায়া বসে আছে আমির চৌধুরীর পায়ের কাছে। কান্না করছে আমির চৌধুরীর পায়ে ধরে। আমির চৌধুরীর চোখে ও পানি। আমির চৌধুরী সব জেনে ও কিছু বলতে পারছে না মায়াকে। কারন নিঝুম বলেছে মায়াকে কিছু বললে নিঝুমের মরা মুখ দেখবে। মুনিয়া আহমেদ নির্বাক হয়ে বসে আছে পাশেই। চেয়ে ও পারছে না কিছু বলতে। এখন যে জল অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। মুনিয়া আহমেদের নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আজ। তিনটে জীবন সে শেষ করে দিয়েছে। নিঝুম তাদের ছেড়ে চলে যাবে। মুনিয়া আহমেদের সাথে কথা বলেনা নিঝুম দুদিন হলো। মায়ার বিয়ের দিন নিঝুম চলে যাবে আমেরিকায়। মুনিয়া আহমেদও কান্নায় ভেঙে পড়ে।

গাড়িতে বসে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে মায়া বলে
-” আংকেল কেউ জিজ্ঞেস করলে আপনাকে প্লিজ বলবেন না আমি নিঝুমদের ওখানে গিয়েছিলাম।

.
.
.
মায়ার বিয়ে একটু পরেই মায়াকে সাজানো হয়েছে। নিঝুম শেষ বারের মতো দেখতে এসেছে তার মায়াবতীকে। কি অপরুপ লাগছে তার মায়াকে। ঠিক যেমনটা নিঝুম কল্পনা করতো মায়াকে ঠিক তেমন। হয়তো তার চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে। মায়া নিঝুমকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধীর পায়ে নিঝুমের কাছে এসে

-” কেমন লাগছে আমায়?
নিঝুমের চোখের কোনায় পানি টলমল করছে। তাও নিঝুম একটু হেসে
-” বেহেশতের হুরের মতো লাগছে।
বলেই মায়ার কপালে একটা চুমু দেয় আর এক মুহুর্তের জন্য না দাঁড়িয়ে চলে আসে নিচে।একটু দাঁড়িয়ে আমানকে দেখছে নিঝুম কতো খুশি আমান। নিঝুম শেষ বার উপরে তাকিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। বাড়িতে গিয়ে ব্যাগ গুলো নিয়ে রওনা দিবে সে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে আমেরিকায়।

মায়া অবাক হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। নিঝুম তার কপালে চুমু দিয়েছে পরম যত্নে৷ এই ছোঁয়ায় সে অগাধ ভালোবাসার স্পর্শ পেয়েছে। কাছে পাবার বাসনা পেয়েছে। আবদ্ধ করে রাখার ইচ্ছে পেয়েছে।

নিঝুম খুব কান্না করছে দাদার দু-হাটুতে মাথা রেখে। আমির চৌধুরী বসে আছে চেয়ারে নিস্তব্ধ হয়ে। নিঝুম ফ্লোরে বসে দাদার কোলে মাথা রেখে
-” দাদু আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে দাদু। আমি কি করবো দাদু আমার যে মনে হচ্ছে এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে। দাদু মায়া ( কথা আটকে যায় কান্নায়) দাদু আমার মায়ার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। দাদু আমার মায়া। ছোট মানুষের মতো কান্না করছে নিঝুম। আমির চৌধুরী চোখের পানি ফেলছে আর নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কিছুক্ষন পর নিঝুম উঠে দাঁড়ায়। আমি চলে যাবো দাদু আমি এই খানে থাকলে বাঁচবো না। আমার চলে যেতেই হবে। নিঝুমের পরিবার কেউই বিয়েতে যায়নি নিঝুম চলে যাবে বলে। ওরা দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে কান্না করছে নিঝুমের এই অবস্থা দেখে।

আমির চৌধুরী নিঝুমের হাত ধরে

-” দাদু ভাই যাসনা দাদু ভাই আমার যে একা লাগে এমনিতেই, তুই চলে গেলে আমি থাকবো কি করে?
নিঝুম ব্যাগ গুলো নিয়ে
-” আমার যেতেই হবে দাদু ভাই। আমি এই খানে থাকলে মরে যাবো।

হঠাৎ দরজা থেকে মুনিয়া আহমেদ চিৎকার দিয়ে নিঝুমের কাছে এসে
-” বাবা যাস না তুই। যাস না তুই বাবা। নিঝুম মুনিয়া আহমেদকে সরিয়ে বের হয়ে যায়।
নিঝুম গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দেয়।

আমির চৌধুরীর আর কোন শব্দ না পেয়ে সবাই আমির চৌধুরীর দিকে তাকাই আমির চৌধুরী চুপ হয়ে বসে আছে। অনি আমির চৌধুরীকে ধরতেই আমির চৌধুরী নিচে পড়ে যায়।

.
.
.

🍂🍂 পাচঁ বছর পর 🍂🍂

নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে এয়ারপোর্টে গাড়ির জন্য। এই পাঁচটা বছরে সে কারো সাথেই যোগাযোগ করেনি। কিন্তু হঠাৎ তার দাদুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই কাউকে না বলেই চলে আসে দেশে। নিঝুম একটা টেক্সি নিয়ে সোজা চলে যায় বাড়িতে। পাচঁ বছরে অনেক কিছু চেঞ্জ হয়ে গেছে। বাড়ির সামনে অনেক কিছুই। নিঝুম তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সব। মায়া ও হয়তো অনেক বদলে গেছে এই পাচঁ বছরে। মায়ার হয়তো বাচ্চা ও হয়েছে মায়ার মতো দেখতে। নিঝুমের বাড়ির সামনে ফুলের বাগানটা নেই বললেই চলে। কেমন ময়লা হয়ে আছে একটা ফুল ও নেই গাছ ও নেই তেমন। এই বাগানে নিঝুম আর মায়া খেলা করতো। আজকে সেই বাগান আর বাগান নেই।

নিঝুম ভাবতে ভাবতে বাড়ির ভিতরে ডুকতেই অনি নিঝুমকে দেখে ভাইয়া বলে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে । নিঝুম অনিকে ধরে
-” কেমন আছিস?
-” ভালো ভাইয়া তুমি কেমন আছো?
-” ভালো অহনা কোথায়?
-” অহনার বিয়ে হয়ে গেছে।
-” ওহ, অনেক বদলে গেছে সব, তুই ও বড় হয়ে গেছিস।

মুনিয়া আহমেদ ও ছুটে এসে নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে

-” তোর এতো অভিমান আমাদের এই ভাবে ভুলে যেতে পারলি? এই ভাবে দূরে যেতে পারলি। আমরা কতো চেষ্টা করেছি তোর সাথে যোগাযোগ করতে কিন্তু তুই তার কোন উপায় রাখিস নি। কেন করলি এমন তুই নিঝুম? আমাকে ক্ষমা করতে পারিসনি তুই?

নিঝুম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
-” কেমন আছো আম্মু?
-” আমরা কেউ ভালো নেই বাপ তোকে ছাড়া।
-” দাদু কেমন আছে আম্মু? দাদু কোথায়? আমি দাদুর সাথে দেখা করতে এসেছি।

অনি হঠাৎ করে বলে উঠে
-” দাদু নেই ভাইয়া। তুই যেদিন চলে গেছিলি তখনি দাদু স্টোক করেছিলো। আর……
-” কি বলছিস এই সব অনি নেই মানে? দাদু কোথায়? আমার দাদুর কিছু হতে পারে না। আমি সব তচনচ করে ফেলবো দাদুর কিছু হলে। আমার দাদু কোথায় বল অনি

বলেই কান্না করে হাটু গেড়ে বসে পরে ফ্লোরে।
মুনিয়া আহমেদ ছেলের এই অবস্থা দেখে বলে উঠে
-” তোর দাদু মায়ার কাছে।

নিঝুম মুখ তুলে মুনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে
-” মায়ার কাছে মানে?
-” মায়া সেদিন বিয়ে করেনি আমানকে। বাসা থেকে পালিয়েছিলো। আর এই দিকে তোর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি তোর দাদু স্টোক করে। আমরা সবাই তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। অনেক দিন হাসপাতালে ছিলো তোর দাদু। ব্রেইন স্টোক করে প্যারালাইজড হয়ে যায়। এর কদিন পরই মায়া ফিরে আসে। আর এসে দেখে তুই আমেরিকায় চলে গেছিস। তারপর মায়া তোর দাদুকে নিয়ে যায়………..
আর কিছু বলার আগেই নিঝুম উঠে দৌড়ে বের হয়ে যায় মায়াদের বাড়ি যেতে……

চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।