Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1428



চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৮

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৮

নাহার আপুর কথায় অনেক রাগ হলো আমার।নিরবকে ভাই ডাকতাম ঠিক কিন্তু ভাই মানতাম না এইটা তো ও ভালোমত জানে।
আর এখন কিনা এই মেয়ে আসে আমার জামাইকে ভাই বানাতে।

এর কি লজ্জা নেই? প্রথমে প্রেমের নাটক করে তারপর আবার নিজের বিয়েতে সেই ছেলেকে দাওয়াত দেয় আবার এখন খোঁজ খবর নিতে আসে।
আমি তবুও বললাম”তোমার কি লজ্জা নেই? তুমি কি অবস্থা করেছ তার তা তো তুমি জানো এখন আবার তার খোঁজ খবর নিতে আসো কেন?”

“খোঁজ খবর তো নেওয়াই লাগে, তাকে বিশেষ ভাবে দাওয়াত করেছি কিনা!সে যদি না আসে আমার তো খারাপ লাগবে”

আমি মুচকি হেসে বললাম”চিন্তা করো না,সে আসবে আর তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে।এখন যাই আচ্ছা?”

“কেমন সারপ্রাইজ?”চিন্তার সাথে জবাব দিল নাহার আপু

“তোমাদের কল রেকর্ডস!”বলেই একটা হাসি দিয়ে চলে আসলাম

_________
আমার ঘরের বেলকনিতে বসে আছি।পে‌ন্টিংটার মত যদি সত্যি নিরব আমার সব বিপদে ধরে ফেলত!

পেন্টিংটায় মূলত আমি আমার জন্মদিনের দিনকার কিছু মূহূর্ত এঁকেছি।
সেখানে সবার‌ সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে গিয়ে নাহার আপু পড়ে যাওয়া ধরলেই নিরব ধরে ফেলেছিল কারণ সে আপুর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।
সবাই তখন এটা দেখে তালি দিয়েছিল।বিষয়টা নিরব নাহার আপুকে ধরেছে তাই বলে নয় কারণ ওরা যে রিলেশনে আছে সেইটা হয়ত আমিই জানতাম।বিষয়টা অনেকটা সিনেমেটিক বলে সবাই তালি দিয়েছিল।
এখন সেই জায়গায় নাহার আপুকে না আমি নিজেকে এঁকেছি। হোক কল্পনায়, তবুও ভালো লাগে।

আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে দুপুরের দিকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
বাসায় এসে গোসল সেরেই নীল শাড়ি পরলাম। মেকআপ বরাবরই পছন্দ না আমার।
ভেজা চুলগুলোকে হালকা ডিজাইন করলাম।
চুড়ি যদিও পছন্দ না তবুও পরলাম।
কানের দুল গুলো চেন্জ করছিলাম তখনই মনে হলো পেছনে কে যেন আসল।
আমি পিছন ফিরে দেখলাম নিরব দরজার পাশে এসেছে।এখনও জুতা খোলায় ব্যাস্ত সে। আমাকে খেয়াল করেনি হয়ত।
আমি গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম।সেও উপরে তাকিয়েই”থ”

নিরবের কাছে মনে হচ্ছে তার স্বপ্নে দেখা সেই পরী মনে হয় তার সামনে এসেছে।
যাকে সে কল্পনা করত আজ সে বাস্তবে দাঁড়িয়ে।নীল শাড়ি,নীল কাঁচের চুড়ি, খোলা চুল।মুখে কোন কৃত্রিমতা নেই যা আছে সবটাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
কিন্তু অথৈ এসব জানল কিভাবে?

“কি হলো? ওভাবে কি দেখ?”

অথৈ এর কথায় নিরব ভাবনা ছেড়ে বাস্তবে এসে বলল”খুব সুন্দর লাগছে তোকে”

অথৈ যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।এইটা কি নিরব বলল?

“কি বললে আবার বলো”

এখন নিরবের মনে হচ্ছে কথাগুলো বলে সে ভুল করেছে।এখন অথৈ তার মাথা খাবে। তবুও সে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে বলল”বললাম যে নীল শাড়ি আর নীল চুড়ি আমার ভীষণ পছন্দ তাই এগুলো ভালো লাগছে”

নিরবের কথা শুনে অথৈ মুখটা অন্ধকার করে বলল”ওহ!ফ্রেশ হয়ে নাও”

অথৈ এর কথা শুনে নিরব আর দেরি না করে চলে গেল।নিরব যাওয়ার পর অথৈ হালকা হাসলো। এটা ভেবে যে, ইনডাইরেক্টলি সে তাকেই সুন্দর বলেছে।
তারপর ওয়াশরুমের দিকে একনজর চেয়ে সে নিরবের ডায়েরিটা হাতে নিল।
এটা সে বাসর রাতে যখন সম্পুর্ণ ঘর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল তখন নিরবের ড্রয়ার থেকে পেয়েছিল।
ডায়েরিটাও নীল রঙের। নিরবের প্রায় সবকিছু আকাশি বা নীল রঙ(জিনিসের ক্ষেত্রে)এর থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় নীল রঙটা নিরবের পছন্দের।

একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হওয়ায় নোটস আর ডায়েরি থাকাটা খুব সাধারণ ব্যাপার।
তবে বেশিরভাগ নোটস যেগুলো কাজের সেগুলো হয়ত বইয়ের সেলফ এ আছে নয়ত টেবিলের উপর।
কিন্তু এইটাই ড্রয়ারে রাখা,তাও আবার যত্ন সহকারে।প্রেম কাহিনী তো নিরব লিখবে না কারণ যারা নিজের মনের ভাব কারো কাছে প্রকাশ করতে পারে না কিংবা একতরফা ভালোবাসা হয় তারাই বেশীরভাগ ডায়েরি লিখে বলে অথৈ মনে করে।
কিন্তু ডায়েরিতে লিখেও কি? কোন লাভ তো হয় না।সে যাই হোক,যদি এটা প্রেমের না হয় তাহলে কি নিয়ে এখানে লেখা আছে সেটা জানার প্রবল আগ্রহ জাগে তার মনে আর তখনই ধীরে ধীরে জানতে পারে নিরবের কাল্পনিক সেই মেয়ের কথা। সেখানে কিন্তু ও কারো নাম উল্লেখ করে নি।

তাই নীল ড্রেসই পরে বাছাই করে দুজনের জন্য আর আজও সেভাবেই সেজেছে।
অন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পায়নি সে ডায়েরির মধ্যে।যা আছে তা হচ্ছে নিরবের কয়েকটা ইচ্ছা।
যা সে তার কাল্পনিক সঙ্গিনীকে কল্পনা করে লিখেছে।তাই অথৈ আর সেদিক পড়ে নি।
সে চায় নিরব নিজ থেকে তাকে নিয়ে সে ইচ্ছাগুলো পূরণ করুক আর অথৈ বরাবরের মতই মুগ্ধ হয়ে তা উপভোগ করুক।
তার মনে হচ্ছে দিনটি বেশি দূরে নয়।

ডায়েরিটা আবার আগের জায়গায় রেখে অথৈ চুপটি করে বসল।
নিরব এখনই শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসবে হয়ত।

অথৈ বেলকনিতে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।তার মিনিট দুয়েক পরেই নিরব বেরিয়ে আসল।
পরনে রয়েছে নীল পাঞ্জাবির উপর দিয়ে লাল কোটি আর সাদা পাজামা।
চুলে হাত বুলাতে বুলাতে নিরব এগিয়ে আসল অথৈ এর দিকে।
নিরবকে এক নজর দেখে অথৈ মুগ্ধ হলো।যতটা ভেবেছিল তার চেয়েও বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে।

নিরব ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে অথচ তার খেয়াল ই নেই।

নিরব জিজ্ঞেস করল”কি দেখিস ওভাবে?”

“তোমাকে”আনমনে উত্তর দিল অথৈ

নিরব মুচকি হেসে এগিয়ে গেল তারদিকে তারপর গ্রিলে হেলান দিয়ে বুকে দুই হাত গুজে জিজ্ঞেস করল”তাই?”

নিরবের এমন নেশাক্ত কন্ঠস্বর শুনে অথৈ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল তারপর নিরবের দিকে চেয়ে দেখল সে এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে আর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি বিদ্যামান রয়েছে।
এতেই যেন অথৈ ঘায়েল হয়ে পড়ছে তাই চট করে সে অন্যদিকে ফিরে বলল”এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? অনুষ্ঠান শেষ করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি?”
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসল আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

আরেকটু পর নিরব ঘর থেকে বেরিয়ে আসল। চুলগুলো সেট করে এসেছে সে।
দুজনে মিসেস হিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
ঠিকানা অনুযায়ী নাহারের বাসা বেশি দূরে নয় বলে দুজনে একটা রিকশা নিল।

পাশাপাশি দুজনে রিক্সায় বসে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।
অথৈ এর পিঠ পর্যন্ত ছাড়ানো কেশ গুলো বারংবার নিরবের মুখ স্পর্শ করছে।
এতে নিরবের বিরক্ত লাগছে না বরং ভালোই লাগছে।
শ্যাম্পু অথবা চুলের ঘ্রাণ যেটাই হোক নিরবের কাছে ভালো লাগছে।
অথৈ এর মুখের সামনে বারবার চুল চলে আসায় সে সরাতে সরাতে বিরক্ত হয়ে গেছে।
হয়ত চুল ছেড়ে আসতেই হত না।এই ধারণা ওর মনে রিপিট হচ্ছে।
তখনই তার ঘাড়ে সে শীতল স্পর্শ অনুভব করে।চট করে বামদিকে ফিরে দেখে নিরব ওর দুইপাশের চুলগুলো সব পিছনে আনছে তারপর হাত দিয়ে সবগুলোকে ধরে রেখে মৃদু হেসে অথৈ এর উদ্দেশ্য বলল”আর বিরক্ত করবে না,আমি এইটা ধরছি তুই তোর শাড়ি সামলা”
বলেই সামনে দিকে চোখ রাখল নিরব।
অথৈ তার আঁচলের দিকে তাকিয়ে দেখল অনেকটাই পায়ের দিকে চলে গেছে।
চুলের দিকে খেয়াল করতে গিয়ে আঁচলের দিকে খেয়ালই করে নি সে।
সেও মুচকি হেসে আঁচলটা দুই হাতে চেপে বসল।
এখন মনে হচ্ছে চুল ছেড়ে এসে ভুল করে নি সে। খোলা চুলে না আসলে এই ছোট্ট কেয়ারটা মিস করত সে।
নিরবের এই অল্প কেয়ারই হয়ত বাস্তবে অনেক রূপ ধারণ করবে।

______________
পাক্কা ১০মিনিট বাদে নিরবদের রিকশা একটা বাড়ির সামনে থামল।
হরেক রকম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে গেট আর চার তলা বাসাটাতে লাইট ঝুলানো রয়েছে হয়ত রাতের জন্য।

রিকশা ভাড়া মিটিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে গেল তারা।
এত এত মানুষ এখানে।থাকারই কথা,সরকারি চাকরিজীবীর বিয়ে বলে কথা।
যার টাকা আছে তার আত্নীয়ের আর লোক দেখানো ভালোবাসার অভাব নেই।
যেমন ভালোবাসা দেখাচ্ছে নাহার।
ভিড়ের মাঝে বারবার লোকজনের ধাক্কা খাচ্ছে অথৈ।তাই না পেরে সে নিরবকে বলল”একা একা এগিয়ে না গিয়ে আমাকে সঙ্গে নিলে কি তোমার ক্ষতি হবে?ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি তো!”
নিরব ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল অথৈ তার দিকে চেয়ে আছে আর মাঝেমধ্যে মানুষের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে।
সে অথৈ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে বলল”আস্ত বাচ্চাকে বিয়ে করেছি আমি, পুলিশ না ধরলেই হয়”
এই কথা অথৈ শুনতেই বলে উঠল “বাচ্চাদের মত কি দেখলে?এত মানুষের মাঝে ধাক্কা খাচ্ছি বলে তোমাকে ডাকলাম নাহলে অজানা জায়গায় হারিয়ে গেলে তোমাকেও খুঁজে পাব না বাড়ির রাস্তাও খুঁজে পাব না”

“সেটাই তো বাচ্চাদের কাজ।অজানা জায়গায় তারা হারিয়ে যায়, সেইজন্য একটা বড় মানুষ পাশে থাকা দরকার আর এই মূহূর্তে সে বড় মানুষটা আমি।”

“কিন্তু আমি….”

“আমার চেয়ে তুই ছোট,এইটাই শেষ কথা এবার চুপটি করে এখানে বস”একটা চেয়ার দেখিয়ে বলল নিরব।

অথৈ ওখানে বসে চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে সবটা দেখতে লাগল।
সামনেই নাহার তার বরের সাথে মহাখুশির সাথে কথা বলছে।
নিরবের সাথে কথা বলছিল বলে সে ওদের খেয়াল করে নি।
হঠাৎ তার মাথায় কালকের কথাটা আসতেই সে চট করে হালকা চিল্লিয়ে বলল”নাহার আপু!”

নিজের নাম শুনে নাহার চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখল তার সামনে কিছুটা দূরে অথৈ রয়েছে।
তার পাশেই নিরব রয়েছে।অথৈকে দেখে তার চোখ আপনাআপনি ছোট হয়ে গেল।সে তো নিরবকে দাওয়াত করেছিল তাহলে অথৈ এখানে কেন?
সে কি নিরবের সাথে এসেছে?
এই প্রশ্ন ভাবা বাদ দিয়ে সে এখন সকালের বলা অথৈ এর কথাটা নিয়ে ভাবছে।
সত্যি কি নিরবের কাছে তার আর নাহারের বলা কল রেকর্ডিংস আছে?
থাকলে তো ভারি চিন্তার বিষয়। ভেবেই নাহারের চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিল।
যদিও কখনো অশ্লীল কথাবার্তা হয়নি তাদের মাঝে তবুও যাও হয়েছে তাও কি এভাবে সকলের সামনে ফাঁস হয়ে যাবে?
তাহলে তো তার ফ্যামিলির সম্মান ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। সাথে সে হারাবে সোনার ডিম পাড়া মুরগি অর্থাৎ যার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে।
নাহারের এত্ত ভাবনার মাঝেই অথৈ তার সামনে চলে এসেছে সে খেয়াল ই করে নি।

অথৈ এসেই বলল”কি গো আপু? ভুলে গেলে নাকি। তোমাকে দুইতিনবার ডাক দিলাম তুমি শুনলেই না। তোমার সারপ্রাইজ গিফট নিয়ে এসেছি সেটাই বলতে এলাম,এখন যাই আচ্ছা?”

অথৈ যেতে নিতেই নাহার তাকে থামিয়ে ভয়ার্ত মুখে বলল”তুমি কি সত্যিই রেকর্ডিংস নিয়ে এসেছ?”

নাহারের এহেন কথা শুনে অথৈ এর বেশ লাগছে তারপরও সে বলল”সবাই তো তোমার মত না।যাই হোক,সেইটা তো গিফট করার মত বিষয় না তাই যা গিফট করা যায় তা নিয়ে এসেছি আর ওইযে যে মেয়েটা গিফট রিসিভ করছে কি যেন নাম তাকে দিয়ে এসেছি আর সারপ্রাইজ তো আমি! আমাকে দেখে অবাক হওনি?”

নাহারের ভয় কিছুটা হলেও দূর হলো অথৈ এর কথা শুনে। কিন্তু অবাক তো সে হয়েছে, কেন অথৈ এখানে এ প্রশ্নের উত্তর তো সে জানে না যেহেতু সামনে থেকেই উত্তর আসছে তাহলে ক্ষতি কি শুনতে?তাই সে বলল”অনেক হয়েছি, সত্যি করে বলোতো তুমি এখানে কেন?”

অথৈ কিছুটা লজ্জাভাব মুখে এনে বলল”জামাই যেখানে থাকবে বৌ তো সেখানেই থাকবে তাই না?”

এতক্ষণ নাহারের ভ্রু কুঁচকানো থাকলেও মুখে একটা অবাক ভাব এসেছে।আজ যে সে কত অবাক হবে!

নাহারের মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হলো”কখন!”

“ধরো দুই দিন হয়েই গেল”বলেই আর না দাঁড়িয়ে সে চলে গেল।
নাহার ভেবেছিল তার যাওয়ার পর নিরবের হাসি খুশি সব গায়ের হয়ে যাবে কিন্তু উল্টো সে বিয়ে করে বসে আছে।সে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে দেখল সে নিরবের কাছে গিয়ে দাড়াতেই নিরব ওকে কোনো কারণে বকাঝকা করছে আর অথৈ হাসছে অর্থাৎ নিরব ওকে শাসন করছে।এতটা অধিকারবোধ সে নাহারের প্রতিও দেখায় নি‌।বিষয়টা অজান্তেই নাহারের খারাপ লাগল।
এই মূহূর্তে কেন জানি নাহারের এই বিয়ে ছেড়ে ছুড়ে নিরবের কাছে যেতে ইচ্ছা করছে তবে সেটা সম্ভব না। নাহার দৃষ্টি সরিয়ে তার হবু বরের দিকে তাকালো তবুও দৃষ্টি বারবার ওদের দিকেই যাচ্ছে।
চেয়েছিল ছ্যাকা দিয়ে শান্তিতে বিয়ে করবে কিন্তু এখন নিজেই সেই ছ্যাকার ব্যাথা অনুভব করছে।

চলবে……

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৭

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৭

কালার সিলেক্ট করা আমার কাজ না।সেই কখন থেকে একটার সাথে আরেকটা মিলানোর চেষ্টা করছি কিন্তু মিলছেই না।

না,মিলছে না বললে ভুল হবে।আমি মেলাতে পারছি না। সম্পুর্ণ না মিললেও হালকা একটু মিল পাচ্ছি তবে সেটাও মনে ধরছে না।
সুতরাং নিরবকেই নির্বাচন করে দিতে হবে, বলে আমি মনে করি।

সব কাজ শেষে আন্টি একটু শুয়েছিল। আমিও ঘরে ছিলাম।ড্রেস চুজ করতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করি নি।
তাই আন্টিকে ডেকে আমি আর আন্টি খেয়ে নিলাম। নিরবের বিকালে আসার কথা। তবে আরো দেরি হতে পারে।
______
বিকালে নিরব আসলে আমি দরজা খুলে দেই।

নিরব ঢুকতেই তার প্রথমে অথৈ এর দিকে চোখ পড়ল।ও অথৈকে চিনতেই পারেনি।পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিল সে। কারণ আজ অথৈ শাড়ি পড়েছে। মিষ্টি কালার শাড়ি।

কালও সম্ভবত পরেছিল তবে সেভাবে দেখা হয় নি।দেখবেই বা কিভাবে?
চারিদিকে তেমন মানুষ না থাকলেও যে খুব কম মানুষ ছিল তাও না।
সেই অবস্থায় যদি নতুন বৌয়ের দিকে সে তাকিয়ে থাকে তবে নিতান্তই তাকে লজ্জায় পড়তে হতো।
আর যাই হোক, মুরুব্বিদের সামনে তো আর বৌ দেখতে পারবে না।

তারপর আবার কাল যখন সে রুমে আসল তখনও অথৈ চেন্জ করে ফেলেছিল। আবার রুমে আসতেই সব উদ্ভট প্রশ্ন তার মাথা হ্যাং করে দিয়েছিল।
তাই তাকে একটুও দেখা হয় নি।

এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অথৈ নিরবকে উদ্দেশ্য করে বলল”কি হলো? ভিতরে আসো।”

তা শুনে নিরব ভিতরে এলো‌।হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসতেই অথৈ বলল”কিছু খাবে এখন?”

“তুই আমাকে যেভাবে খাওয়াচ্ছিস ওভাবে খেতে থাকলে তো বেলুন হয়ে যাব”

আমি ভেবে পাচ্ছি না আমি ওকে বেশি খাওয়ালাম কখন?আরে বেশি দূরে থাক, আমি ওকে খাওয়ালামই কখন?আসলামই তো কালকে।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিরব বলল”কিরে? চুপ করে গেলি যে?”

“না ভাবছি তোমাকে খাওয়ালাম কখন”

“সকালে যে দুপুরের জন্য টিফিন দিলি ওতগুলো তো গরুও খায় না”

তা শুনে আমি বললাম”ওহ!এক বেলাতেই কাতর হয়ে গেলে?তা নিজে খেতে পারো না সেটাই বলো। খামোখা গরুর ওপর দোষ দিচ্ছ কেন?”

“অপমান করছিস?”

“অপমান করার মত কিছু বলেছি?”

নিরব মুখ বাঁকিয়ে আবারো ঘরে চলে গেল।আমি গেলাম আন্টির কাছে। নিরব কিছু নাই খাইতে পারে আন্টিতো খাইতেই পারে। কিন্তু কেউ ই কিছু খাইল না তাই আমি রুমে চলে আসলাম।নিরব তখন বলল”আম্মু খেয়েছে দুপুরে?”

“তোমার কি মনে হয়?না খাইয়ে রাখসি!”

নিরব বই পড়ছিল তখন একটা। আমার কথা শুনে আমার দিকে চেয়ে বলল”সহজ একটা কথা জিগাইলাম,সহজ করে উত্তর দিতে পারস না?”

“না পারি না”

“ঝগড়ুটে!”

“আপনি!”

‍”আগে কে করসে?”

“চুপ করে আমাকে একটু সাহায্য করলে খুশি হতাম”

নিরব ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল”কি?”

“আপনার জন্য নীল ড্রেস পছন্দ করসি, কালকে পরবেন?”

“কাল…ওহ!পরাই যায়”

“ঢং!এমন মনমরা হয়ে বলছে যেন সব দুঃখ উনারই”

নিরব ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আমি বললাম”হইসে!এখন আপনার প্রেম কত গাড় ছিল,কত ভালোবাসা ছিল,ইউ নিড টাইম এগুলো বলতে শুরু করে দিবেন না এমনেই মেজাজ খারাপ”

বলেই আমি চলে আসলাম।

নিরব অথৈর কথা হা হয়ে শুনল পুরাটা। যতগুলো কথা ও বলসে তার মধ্যে একটা কথাও আমি মনের মধ্যেও আনি নি এখন আর ও যা ঝাড়ল!বাপরে বাপ নাহারকে মনে করার টাইম ই পাব‌ না আমি, অবশ্য মনে করতে চাইও না❤️
.
.
.
যতগুলো কথা ঝেড়ে এলাম ততগুলোর একটাও আমার মনের কথা ছিল না,রাগও ছিল না। শুধু এখন উল্টা কোন রিয়েকশন না দেখায় তাহলেই হবে।
সন্ধ্যা তো হয়ে আসল ছাদের দরজা লাগিয়ে আসতে হবে। তারপর হয়তো নাস্তা বানাতে হবে।
এই টাইমে নিরবদের বাসায় কোনদিন আসলে দেখতাম আন্টি নাস্তা বানাচ্ছে। কারণটা নিরব।
ও বেশীরভাগ সময় রাতের খাবার খায় না,আন্টি বলেছিল।এখন না খাইয়ে তো রাখতে পারবে না তাই নাস্তা বানাতো।
এখন তো সে চাকরি করে, সারাদিন খাটে তাহলে নিশ্চয়ই ওর খাওয়ার কথা?
জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। নাহলে আবার নাস্তা বানাতে হবে। বানাতে হলে আন্টিকে কিছু করতে দিব না।এখন আমি আছি না!

আন্টি কি করছে এখন? ঘুমাচ্ছে হয়ত।
যাই হোক, নিরবের কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
.
.
.
.
“এই যে…”

“হুম কি?”

“নাস্তা খাবেন নাকি রাতের খাবার?”

“যেটা মন চায় বানিয়ে ফেল”

“হ্যাঁ,আপনি খুব শুনেন তো আমার কথা!
বানিয়ে ফেলব তারপর আপনি বলবেন মুড নাই তখন আমি কি করব?”

“আহা!দেখোস না কাজ করি?তার মধ্যে আবার নাস্তা নাস্তা করস কিল্লাই?”

“তো করব না?যখন পছন্দ হবে না খাবারতখন সারারাত ক্ষিদার জ্বালায় মরবা ওইটা ভাল্লাগবে?”

“নাস্তা কর 😒”

.
.
.
“ধরো তোমার নাস্তা”

আমার কথায় নিরব আমার দিকে ফিরে তাকাল।

“তুই এত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ফেলেছিস?”

“কচু করেছি! কাজের মধ্যে এত কিসের ব্যাস্ততা তোমার?২ ঘন্টা হয়েছে আমার যাওয়া,সব কাজ শেষে তারপর এসেছি আর বলে তাড়াতাড়ি। ঠিক মত সময় দেখে বলো”

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিরব আমার দিকে তাকালো।

“আমার দিকে না তাকিয়ে খাবার শুরু করো,তারপর ঘুমাও”

“আম্মু?”

“নামাজ শেষে খাবেন, তোমার তো এগুলায় খেয়াল থাকে না”

“কাজের জন্য শুনি নিই আজান,তাই বলে তো তুইও ডাক দিস নিই”
বলেই আর দেরি না করে হাত ধুতে গেল।

আমিও কিছু বললাম না। সত্যি আমার উচিৎ ছিল তাকে ডেকে দেওয়া। আমিও অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।

নিরব খাওয়া দাওয়া শেষ করে নামাজ পড়তে বসল।
আমি খেয়ে রুমে আসার পর দেখলাম রুম অন্ধকার।লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম নিরব ঘুমিয়ে গেছে।ও আজ সত্যিই ক্লান্ত ছিল হয়ত।
লাইটটা নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে আমিও তার পাশে আসলাম।তার দিকে ফিরে শুয়ে পড়লাম।
কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানি না। ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছি।

সকালে নিরবের আগেই ঘুম থেকে উঠলাম। তাকে আর আন্টিকে নামাজের জন্য জাগিয়ে নিজেও নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষ করে আন্টি আবারো শুয়ে পড়লেন আর নিরবও।আমি শুধু নিরবের বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। সকালের আকাশ-বাতাস দুইটাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর রান্নার কাজে লেগে পড়লাম।
নিরব ঘুমানোর খানিক পরেই জেগে গিয়েছিল।তারপর সেও হাঁটতে বেরিয়েছে।
আমার রান্নার মাঝে আন্টিও এসে যোগ দিয়েছেন।
নিরব ফিরে আসলে আমরা একসাথে নাস্তা করি।নিরব বেরিয়ে যায় তার কাজে।
আজ সে জলদি আসবে। অর্থাৎ হাফটাইম বলা যায়।
আম্মুর সাথে আজ দেখা করতে যাব। আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসায় আছে সেগুলো নিতে হবে।

আন্টিকে বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।যদিও রাস্তাটা লম্বা নয় তবুও পথিমধ্যে নাহার আপুর দেখা মিলল।যদিও বিষয়টা কাকতালীয়।
আমি তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলে সে আমার সামনে এসেই দাঁড়ালো।
এতে আমার বিরক্ত লাগলেও বুঝলাম সে আমাকে কিছু বলতে চায়।

সে আমাকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার আগেই বলল”তোমার ভাই কোথায়?”

ওর এই প্রশ্নে আমি রিতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এতদিন ধরে ও আমাকে জানে অথচ আমার যে কোন ভাই বোন নেই এইটা কি ও জানে না?
নাকি অন্য কিছু বলতে চাইছে?

আমি নাহার আপুর দিকে তাকিয়ে বিরক্তিভাব বজায় রেখেই বললাম”আমার কোন ভাইয়ের কথা বলছেন আপু? আমার তো কোন ভাইবোন নেই আপু।না নিজের আর না কোন কাজিন ব্রাদার। আমার যা আছে সব সিস্টার”

আমার কথায় নাহার আপু হাসি হাসি মুখে জবাব দিল”কেন? তোমার নিরব ভাই? সারাক্ষণ তো তাকেই ভাই ভাই ডাকো তাহলে ভাই থাকবে না কেন?”

চলবে….

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৬

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৬(বোনাস)

আজ আমাদের বিয়ে।যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনই নাহার আপুর বিয়ের আগে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হবে। পার্থক্য শুধু এইটুকুই যে আগের মত শুধু পরিবারের সদস্যরা থাকবে না আরো থাকবে কিছু আত্নীয় স্বজন।

নিরব আগের মত প্রাণবন্ত না থাকলেও খুব একটা মন মরা নেই।হয়ত বুঝে গেছে ভালোবাসলেই পেতে হবে এমনটা না।
_______
প্রথমবারের মত নিরবের ঘরটা এত আপন লাগছে।এখন কোন কিছু ধরতে গেলে আমাকে আর পারমিশন নেওয়া লাগবে না।সবটায় আমারও সমান অধিকার।

হ্যাঁ! বিয়ে শেষে এখন আমি নিরবের ঘরে। একটু আগেই এসেছি এই ঘরে।
যদিও বারবার দেখেছি ঘরটা তবুও কেন যেন আজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে।
অপেক্ষা শুধু নিরবের আসার।
.
.
.
যদিও খুব একটা ভারি সাজ নেই তবুও সবটা পাল্টে নিতে হবে।
কারণ এই পোষাকে শান্তিতে ঘুমাতে পারব না।

চুপচাপ সবটা পাল্টে চোখেমুখে পানি দিয়ে নিরবের বেলকনিতে আসলাম।
বসার জন্য দোলনা রয়েছে আর ছোট ছোট টব ঝুলিয়ে রাখা আছে।

শীতল হাওয়া গায়ে এসে মাঝে মাঝে লাগছে।ফ্যানের কৃত্রিম বাতাস থেকে প্রাকৃতিক বাতাস অনেক ভালো।

এই শান্ত পরিবেশে একটা গান ধরাই যায়।কি গান গাই?

তোমার ইচ্ছেগুলো,,ইচ্ছেগুলো,,
তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলেই আমায় দিতে পারো
আমার ভালোলাগা ভালোবাসা
তোমায় দেব আরো(২)

তুমি হাত টা শুধু ধরো আমি হব না আর কারো (২)
তোমার স্বপ্নগুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়োসড়ো

তোমার ইচ্ছেগুলো,,ইচ্ছেগুলো,,

নিরব কি কখনো চাইবে আমার হাতটা ধরতে?
বুক চিরে শুধু দীর্ঘশ্বাসই বেরিয়ে এলো কারণ এর উত্তর তো আমার কাছে নেই। নিরব যদি মন থেকে ভুলতে চায় তাহলে অবশ্যই পারবে,আমার বিশ্বাস।
অবশ্য খারাপ স্মৃতিকে যতদিন মনে রাখা হবে ততদিন দুঃখ দেবে।

নিরব এখনো আসলো না।আমি রুমে এসে বসলাম।ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিজেকে একবার।অতটাও সুন্দরী না আমি।তাই কি নিরব আমাকে প্রত্যাখান করত?
হতেও পারে,আবার নাও পারে। নিরবের সাথে কি আমাকে মানাবে?

আয়নার একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। রূপ লাবণ্যকে তেমন একটা মূল্যয়ন না দিলেও আজ কেন যেন সেই জিনিসটারই কমতি লাগছে।

এরই মাঝে নিরব আসল।আমি তখনও আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যাস্ত।আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরলাম আমি।

নিরবের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম”আমি সুন্দর না বলেই তুমি আমাকে প্রত্যাখান করতে তাই না?”

নিরব আমার কাছ থেকে হয়ত এই মুহূর্তে এই প্রশ্ন আশা করে নি। হঠাৎ কেন এমন প্রশ্ন করছি তাও হয়ত মেলাতে পারছে না সে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল”আমি কোনদিনই মানুষকে রূপ দিয়ে বিচার করিনি,তোকেও না।”

এই কথায় মনে অল্প একটু আশা জাগলো।আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে মাথা নিচু করে বললাম”ফ্রেশ হয়ে নাও”

নিরবও তার কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
মাথা নিচু করেছিলাম চোখের পানি আড়াল করতে। সত্যি বলতে আমি ধরেই নিয়েছিলাম সে আমাকে রূপের জন্য প্রত্যাখান করেছে আর এটা ভেবেই চোখে পানি এসে গেছিল।

বিছানায় গিয়ে চুপচাপ বসলাম আমি।এখন আমার কি করা উচিত?
নিরবের জন্য অপেক্ষা নাকি ঘুম চলে যাওয়া?

যদিও নিরবের থেকে কিছু আশা করা যায় না তবুও ভদ্রতার খাতিরে অন্তত জেগে থাকা লাগবে বলে আমি মনে করি।

আমার ভাবনার মাঝেই মিনিট দুয়েকের পর নিরব বেরিয়ে এলো।
আজও মুখমণ্ডল এ বিন্দু বিন্দু পানি লেগে আছে।কেমন দেখতে লাগছে তা নাহয় বাদই দিলাম।
তাই তার দিক থেকে দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম।
নিরব সোফায় বসে মুখ হাত মুছতে ব্যাস্ত।

যদিও গরমকাল তবুও পায়ের কাছে থাকা পাতলা কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে গেলাম।শুইতে তো বাধা নেই।

চোখে অস্থিরতা তবুও চোখ বন্ধই রাখলাম। নিরব বলল”লাইট থাকবে নাকি অফ করব?”

আমি স্লো ভয়েসে বললাম”লাইট জ্বালানো থাকলে আমার ঘুম আসে না তাই বন্ধ করে দাও।”

নিরব লাইট অফ করে আমার পাশেই শুয়ে পড়ল, কোন বাঁধা ছাড়ায়। তবে কাথাটা শুধু নিল না।
আমি ভেবেছিলাম কোন কান্ড করবে হয়ত।
যাক ভালোই!
_______
সকালে নিরবের অনেক পাশেই নিজেকে পেলাম। স্বাভাবিক ব্যপার।এক বিছানায় যেহেতু আছি সেহেতু ঘুমের মধ্যে তো আর দুরত্ব বজায় রাখতে পারব না।

আমি নিরবের দিকে একনজর তাকিয়ে তার দিকে হাত বাড়াতে গিয়েও সরিয়ে ফেললাম।
এখন ইচ্ছা থাকলেও এটা সঠিক সময় নয়।আমি চাই সে প্রথম আমাকে স্পর্শ করুক তাও আবার মন থেকে।
কোন জোর কিংবা দায়িত্ববোধ থেকে নয়।

অথৈ উঠে চলে যেতেই নিরব চোখ খুলল।আর মনে মনে বলল”তুই সত্যিই আমার জন্য পারফেক্ট অথৈ।আমিই ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলাম।
যতই নাহারের প্রতি আমার ঘৃণা আসুক আপাতত সেটা ভালোবাসার থেকে কমই দেখতে পাচ্ছি কারন এক সময় তাকে আমি কতটা চেয়েছি তা শুধু আমিই জানি।
যেদিন মনের উপর রাজত্ব করে নাহারের নাম সরাতে পারব সেদিন এই মনে শুধু তোর নামই থাকবে।”

নিরব ঘুমিয়ে ছিল ঠিকই কিন্তু ঘুমের মধ্যে কেউ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে এমনি এমনি বিরক্তিবোধ এ চোখ খুলে যায়।
এখানে যেহেতু সে একাই নেই তাহলে অথৈ ই তাকিয়ে আছে। তবুও সে চোখ খুলে নি‌‌ কারণ চোখ খুললে অথৈকে অস্বস্তিতে পড়তে হত।

অথৈ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিরব উঠে গেছে তাই সে বলল”কখন উঠেছ?”

নিরব অথৈর দিকে চেয়ে বলল”মাত্রই”

“ওহ!উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর নাস্তা করতে আসো। তোমার অফিস টাইম তো আমি জানি না। আমাকে পরে জানিয়ে দিয়ো একসময় এখন আন্টির কাছে গেলাম।”

অথৈ চলে গেলে নিরব উঠে বসে তারপর ফ্রেশ হতে যায়। অফিস টাইম ৯টা থেকে শুরু তার। এখন সবে ৮টা বাজে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই।সব আরামসে করা যাবে।

সকালেই গোসল সেরে নেয় নিরব। সারাদিন তো আর সময় পাওয়া যাবে না।যদিও এখন নতুন তবুও এখন থেকেই টাইমলি সব করতে হবে তাহলে বসের বিশ্বস্ত হওয়া যাবে আর প্রয়োজনের সময় ছুটি নেওয়া যাবে।কখন প্রয়োজন আসে বলা তো যায় না।

খাওয়া দাওয়া, গোসল আর যাবতীয় কাজ শেষে ৮:৪০ এর দিকে নিরব বেরিয়ে যায়। অফিস একটু দূরে হওয়ায় অথৈ তাকে টিফিন এগিয়ে দেয়।নিরবও হাসিমুখে গ্রহণ করে।এই হাসি যেন অথৈ এর মনে আনন্দের বন্যা জাগিয়ে তোলে।

নিরব যাওয়ার পর আমি সব কাজ আন্টির হাতে হাতে শেষ করে ফেলি। আমাদের মাঝে তেমন একটা ফর্মালিটি নেই।
বিয়ের আগে আসলেও আমি আন্টিকে যেকোন কাজে সাহায্য করতাম।
শুধু নিরবের টানে নয়। আন্টির ভালোবাসার টানে।
আমরা আমাদের বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় আমার আম্মু যেমন নিরবকে তার ছেলের মতন ভালোবাসেন তেমনি আন্টিও আমাকে তার মেয়ের মতই ভালোবাসে।
যদি আমাদের সম্পর্কগুলো এরকম না হত তাহলে বিয়ে ভাঙার পর পুনরায় বিয়ে হওয়া একটা কল্পনা মাত্র ছিল।

সব কাজ শেষে গোসল করে নিলাম।এখন আমার কাজ হচ্ছে শাড়ি পছন্দ করা।
নাহার আপুর বিয়েতে পরার জন্য।শাড়ি পড়লে একটু বৌ বৌ ফিলিং আসবে।
নিরব কি পরবে তাহলে? পাঞ্জাবি?

শাড়ি পাঞ্জাবি তো এক জোড়ার মত। নিরবের অনেক পাঞ্জাবি দেখেছি আমি।
তার পাঞ্জাবিগুলো ছিল দোকানের কালেকশনের মত‌। একদম ইউনিক!
তাহলে আমাদের মিলিয়ে পরতে হবে।আহা!কি একটা ফিলিংস।

চলবে….

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৫

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৫

আন্টির কথায় আমি মৃদু হাসলাম।তারপর আন্টি বলল”তোর মা জানে এত কান্ডের কথা”

আমি ঠোঁট উল্টে বললাম”তোমার ছেলে তোমাকে খুশি করার জন্য আমাকে কাজী অফিস গিয়ে বিয়ে করেছে আর আমিও তার কথায় তাল মিলিয়ে আম্মুকে সারপ্রাইজ দিব বলে কিছু বলি নি”

“তাহলে বাসায় চল”

“মানে কি? নতুন বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছ?”

“তা দিব কেন?আর তোদের বিয়ের কথা আমরা তিনজন ছাড়া আর কেই বা জানে?
তাই তোদের আবার বিয়ে দিব আর সেটা হবে সবার উপস্থিতিতে”

“তাহলে এখন?”

“তোদের বাসায় যাব”

আমাদের বাসায় পৌঁছে আম্মু দরজা খুলে আমাকে আন্টির সাথে দেখে ভ্রু কুচকালো।
হয়ত ভাবছে,গেলাম নিরবের সাথে আর ফিরছি আন্টির সাথে তাহলে সারপ্রাইজ কই?

“কিরে?তোর আন্টি তোর সারপ্রাইজ নাকি?কিরে হেনা?”

“আমি সারপ্রাইজ না। আমাদের ছেলে মেয়ে আমাদের আরো বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে!”

“মানে?”

“মানে ওরা বিয়ে করে ফেলেছে”

আম্মু হা করে আন্টির দিকে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল”মানে? কিভাবে”

তারপর আন্টি আম্মুকে সব বলল। আমাদের বিয়ের কথা আর বিয়ে কেন হলো এটাও।
আবার আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হবে এটাও বলল।

আন্টি যেতেই আম্মু বলল”তুই কি আসলেই রাজি?”

আমি হালকা হেসে বললাম”আমি তো আগেই রাজি ছিলাম শুধু নিরব যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক। বিয়ে ভাঙার পর তো তোমারো মুড অফ ছিল তাই যখন ও বিয়ের কথা বলল তখন আর না করতে পারি নি”

_____________
নাহার আপু তার বিয়ের কার্ড নিরবের বাসায় পৌঁছিয়েছে।নিরব তখন বাসায় ছিল না।ও আজকে জয়েন করেছে।

কার্ডটা আন্টি পেয়েছে।তারপর আমাকে জানিয়েছে।
একসপ্তাহ পরে বিয়ে তার। সেই হিসেবে আমাদের যাওয়া উচিৎ।আর সেই জন্য আন্টিকে বলেছি যাতে আমাদের বিয়েটা এই একসপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যায়।
নাহার আপুর যাতে কিছুতেই মনে না হয় তার দেওয়া ছ্যাকার জ্বালায় নিরব কষ্ট পেয়েছে।
যদিও পেয়েছে তবুও আমাদের এমনটা বোঝাতে হবে যে সে তার মতই সুখে আছে আর বিয়েও করে ফেলেছে।তাও আবার তার আগেই।
নাহলে বিয়ের খুশির সাথে এই খুশিতেও নাহার আপু গদগদ হয়ে যাবে।
.
.
.
বিকেলে নিরবদের বাসায় যাওয়ার কথা আছে আমার। মানে আমি ঠিক করেছি যাব।
আমার মনে হয়েছিল নাহার আপু শুধু কথার কথা বলেছে বিয়েতে দাওয়াত দিবে কিন্তু সত্যিই যে এরকম করবে ভাবিনি।
নিরবের উপর এর প্রভাব কেমন হবে সেটা হয়ত জানিনা তবে খুব একটা যে ভালো হবে না সেটা তো জানা আছে।

গিয়ে বেল চাপতেই নিরব এসে দরজা খুলে দিল। আমার তো হার্টবিট মিস করছে।

হয়ত মাত্রই ফিরে হাত মুখ ধুয়েছে।এখনও চেহারায় পানি জমে আছে। আমাকে দেখেই নিরব বলল”অথৈ?এই সময়?আয় ভেতরে।”

আমি ভিতরে যেতেই নিরব দরজা লাগিয়ে দিল।কি বলে কথা শুরু করব বুঝলাম না।নিরব তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল”কোন কাজ ছিল?”

নিরবের কোন টেনশন নাই তারমানে এখনো সে জানে না।
আমি বললাম”আন্টি কই?”

“রান্নাঘরে”

এইজন্যই নিরব দরজা খুলতে এসেছিল। আমি”ও” বলে রান্নাঘরের দিকে আসলাম।

আন্টি আমাকে দেখে বলল”কিভাবে নিরবকে এসব বলি বলত?”

“আমিও তো সেটাই ভাবছি। সোজাসুজি তো আর বলতে পারব না নাহলে সে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে বসে থাকবে।তারপর আবার নতুন চাকরি পেয়েছে সে।এখন ঠিকমত না গেলে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।”

আন্টি চুলাটা বন্ধ করে কাপের মধ্য চা ঢালতে ঢালতে বলল”তা তো ভাববার বিষয়”

“এক মিনিট,চা টা আমাকে দাও”

“খাবি?”

“আরে না! তোমার ছেলের জন্য কি না?”

“হুম”

“আগে বলো বিয়ের কার্ডটা কোথায় আছে বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি। তুমি শুধু তোমার ঘরে চুপচাপ বসে থাকো নয়ত বাইরে চলে যাও কিছু সময়ের জন্য।যখন ফিরে আসবে তখন দেখবে সবটা করে ফেলেছি আর বিয়ে কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করতে হবে”

“আচ্ছা ধর, এমনিতেও বাসায় মন টিকছে না।আমি বরং পাশের বাসা থেকে ঘুরে আসি”

“তাই যাও”

চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে হালকা ভাবে দরজা খুলে দেখি নিরব আছে কিনা।না দেখা যাচ্ছে না।কি গেল?আমি ঢুকে এদিক ওদিক তাকাতেই পিছন থেকে নিরবের শব্দ শোনা গেল”কারে খুজিস?”

ওর হঠাৎ কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই।হালকা সাহস নিয়ে পিছনে ঘুরে তার সোফার দিকে এগিয়ে গিয়ে চায়ের কাপটা ইশারায় নিতে বলে বললাম”তোমার ঘরে আর কাকে খুজবো?”

সে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল”আর কিছু?”

“সবসময় কি কিছু থাকা লাগবে? এমনি আসতে পারি না?”

“পারিস তো”

আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে সোফায় বসে বললাম”চা শেষ করো,কথা আছে”

“কিসের কথা?”

“আগে চুপচাপ খাও, খাইতে খাইতে কথা বলতে হয় না”

এবার নিরব চুপচাপ নিজের চা শেষ করে পাশের টি টেবিলে চায়ের খালি কাপটা রেখে বলল”বল”

“ব..বলছি তা..যে আম আমরা বিয়ে করবো কবে?”

“কালকেই না করলাম?”

“সেটা তো আর মানুষ জানে না”

“আচ্ছা তো এখন আমি কি করব?”

“আন্টি যে তারিখ ঠিক করবে, সেই তারিখে পুনরায় বিয়ে করবে”

“আচ্ছা”

‍”তুমি আমাকে মন থেকে মানো?”

“না মানার কি আছে?”

“তাহলে একটা কথা রাখবে?”

“কি?”

আমি উঠে নিরবের ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে বিয়ের কার্ড টা নিয়ে নিরবের হাতে ধরিয়ে পড়তে বললাম।সে আমাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল এটা কি?
আমি বললাম পড়লেই বুঝতে পারবে।

পুরাটা পড়ে নিরবের চোখ মুখে অন্ধকার দেখা দিল।ও চুপচাপ কার্ডটা আগের মত ভাজ করে পাশের টেবিলে রেখে দিল।

আমি চুপচাপ গিয়ে ওর পাশে বসলাম তবে আগের চেয়ে দুরত্ব কম রেখে।

“তো এখন কি চাস তুই?”

“আমি চাই আমরা ওই বিয়েতে যাই”

“আমাকে মারতে চাস তুই?আমি কিভাবে যাব? নিজেকে কন্ট্রোল করব কিভাবে?”

“তোমার এই করুণ অবস্থা, দুঃখী চেহারা দেখার জন্যই তো নাহার আপু তোমাকে দাওয়াত করেছে।এখন তুমিও যদি দেবদাসের মত কষ্ট পাও,না যাও তাহলে সে বুঝবে সে তার কাজে সফল।অন্যকে কষ্ট‌ দিয়ে সে সুখী আছে।তার এটাই মনে হবে, তুমিও কি এটাই চাও?”

“কিন্তু,,ও যখন অন্য কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলবে আমার সামনেই অন্য কারো হয়ে যাবে আমি কিভাবে নিব?”

“এইজন্যই তো আমরাও যাব As a couple”

চলবে….

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৪

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৪

ভাইয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ কেন এ কথা বলছে তাও আমার অজানা।

যে ছেলে বিয়ে করবে না বলে একমাস ধরে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলো,নানা বাহানায় আমাকে বুঝাচ্ছিল সে আমাকে চায় না আজ সেই আমাকে বিয়ে করতে চায়!

এর নিশ্চয়ই কোন না কোন বড় কারণ আছে।বড় কোন কারণ না থাকলে এত বড় সিদ্ধান্তও নেয়া যায় না।

তাহলে কি নাহার আপুর সাথে কিছু হয়েছে?
হলেও কি এত বড় সিদ্ধান্ত নিত?

আমি চট করে প্রশ্ন করলাম”নাহার আপুর সাথে কিছু হয়েছে তোমার? হলে মিটমাট করে নাও!
এভাবে বাচ্চাদের মত সিদ্ধান্ত নিচ্ছ কেন?”

আমার কথায় নিরব ভাইয়ার ফ্যাকাশে মুখটা আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেল।তারপর ভাইয়া বলল”ঠিক ধরেছিস, নাহারের সাথে ঝামেলা হয়েছে আমার। তবে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা বাচ্চাদের মত নিই নি আর না নাহার কোন বাচ্চাদের মত ক্ষমার কাজ করেছে”

“কি করেছে?”

ভাইয়া আমাকে আচমকাই জড়িয়ে ধরে বলল”তোর কথাই ঠিক ছিল অথৈ!ও আমাকে ঠকিয়েছে। আমি তোকে বিশ্বাস করি নি, তোর ভালোবাসাকে সম্মান করি নি।সবাই যখন নাহারের বিপক্ষে বলত তখন আমি হাইপার হয়ে যেতাম। একবারও ভাবতাম না যে একজন বা দুইজন হয়ত চাইবে আমরা আলাদা হই কিন্তু আমার শত্রু গুলোও বলত”ও ভালো না,দেখিস তোকে ঠকাবে।”আমি বিশ্বাস করতাম না।
জানিস?আজ আমি আমার চাকরির খুশিতে ওকে বলতে গেছিলাম”will you marry me?”
বাট তার আগেই ও নিজের বিয়ের খবর দিয়ে দিল।ওর ফ্যামিলি থেকে জোর করলে আমি কিছু বলতাম না বাট ও নিজে রাজি ছিল।একটাবারও বিয়ে আটকানোর চেষ্টা ও করে নি।আর আমাকে কি বলছে জানিস?
ওর নাকি সাজিদ নামে আগে থেকেই বয়ফ্রেন্ড ছিল আর ও সরকারি চাকরি করে আর ও ওকেই বিয়ে করবে।

আমি এতটাই স্তব্ধ ছিলাম যে ওকে কিছু বলতেও পারি নি‌।উল্টে ও আমাকে তার বিয়েতে দাওয়াত করেছে।
এর থেকে তো এটাই প্রমাণিত হয় যে ও আমাকে কখনো ভালোইবাসে নি।
আমি জানি ও যেই ছেলেকে বিয়ে করবে তার টাকার জন্যই করবে।”

তারপর ভাইয়া একটু থামলো। আমিও স্তব্ধ হয়ে সবটা শুনলাম। ভালো হয়েছে ভাইয়া ওর সত্যিটা নিজ থেকে জানতে পারলো নয়ত দেরি হয়ে গেলে যে কি হত!
যাক দেরি হলেও বুঝতে তো পেরেছে।

আমি ভাইয়াকে বললাম”তাহলে কি তুমি আমাকে নাহার আপুর বিকল্প হিসেবে চাচ্ছ?”

ভাইয়া আমার কাছ থেকে সরে দাঁড়িয়ে চোখের পানি টুকু মুছে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল”কখনোই না! তোর সাথে ওর তুলনা কখনোই হয় না। তুই আমার ব্যাপারে ভেবে আমাকে চেয়েছিস আর ছেড়েও দিয়েছিস আর ও আমার ব্যাপারে কখনো ভাবেই নি। তুই তোর মত আর ও ওর মত।আমি তোকে তোর মতই চাই”

“তুমিতো নাহার আপুকে অনেক ভালোবাসো।সে যদি কোনদিন তোমার কাছে ফিরে আসতে চায় তাহলে সেদিনই কি আমার তোমার জীবনে শেষ দিন হবে?”

“কখনোই না! ভুলের ক্ষমা হয় বিশ্বাসঘাতকতার না”

“আমি কখনো তোমার ভালোবাসা পাব?”

“চেষ্টা করব”

“আমার একটা শর্ত আছে”

আমার কথা শুনে ভাইয়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।তা দেখে আমি বললাম”তুমি আমার হচ্ছিলে না আমিও কিছু বলছিলাম না কিন্তু এখন যেহেতু নিজ থেকেই আমাকে চাইছ তাই আমাকে ভালোবাসতে না পারলেও আমি চাই তুমি আমার হয়েই থেকো, আমাকে বিশ্বাস করো তো?”

“করি।আমি রাজি”

তারপর ভাইয়া বলল”এবার আমাকে বিয়ে করা যায় তো?”

আমি মৃদু হেসে জবাব দিলাম”যায়”

“তাহলে চল”

“কোথায়?”

“কাজি অফিস”

“কাজি অফিসে বিয়ে করব?”

“কেন? সমস্যা আছে?”

“না কিন্তু সবাইকে না জানিয়ে?”

“সবাই তো রাজি ছিলই।আর আমাদের বিয়েটাতো ওরা দিতই তাহলে?”

“তবুও”

“আম্মুকে সারপ্রাইজ দিব! সেদিন বিয়েতে না করায় আম্মু কষ্ট পেয়েছিল আর সেই কষ্ট আজ তোকে হঠাৎ বিয়ে করে ঘুচিয়ে দিব”

“Good idea”

তারপর ভাইয়া মৃদু হেসে আমার হাত ধরেই সামনে এগোতে লাগলো। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। ভাইয়া আবারো পিছনে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে দেখল আমি হাতের দিকে তাকিয়ে আছি তাই ধিরে ধিরে ছেড়ে দিল।আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে গেলাম তারপর বললাম”শুনো”

ভাইয়া কিছুটা এগিয়ে ছিল আমার থেকে।আমি ডাকতেই আমার পাশে এসে বললো”কি হলো?”

আমি তার হাতটা আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃদু হেসে বললাম”এবার চলো”

সেও হাসলো তবে কিছু বলল না। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আমরা আমাদের রুমের সামনে আসতেই আমি বললাম”বাসায় কেন?”

“তোর আম্মুকে জানাতে হবে না?”

“জানাতে কেন হবে?”

“জানাবি না?”ভাইয়া অবাক হয়ে বলল

“জানাব, তবে ডিরেক্ট বিয়ের পর। আমিও আম্মুকে সারপ্রাইজ দিব। ভালো হবে না?”

“নাহ ভালোই!”

“কিন্তু হ্যাঁ, তোমার সাথে এখন বেরোচ্ছি এটা বলে যেতে হবে নয়ত আমাকে আম্মু খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাবে। একটামাত্র সন্তান কিনা!”

দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই আম্মু খুলে দিল।তারপর আমাদের একসাথে দেখে বললো”কি কথা হলো এত?”

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম”তেমন কিছু না তবে এখন আমি বেরোব ভাইয়ার সাথে”

“এই অবেলায় কোথায়?”

“সারপ্রাইজ আছে!যাই?”

আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল”তাড়াতাড়ি আসবি আর নিরব ওর খেয়াল রেখ।একা যত তিড়িং বিড়িং করে!”

ভাইয়া বিড়বিড় করে বলল”এখন তো আমাকে সারাজীবনই ওর খেয়াল রাখতে হবে”
_____________
ভাইয়াদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর ভাইয়া।ওহ সরি আমার নব বিবাহিত বর আর আমি।

তখন তো বললাম ঠিকই যে সারপ্রাইজ দিব কিন্তু এখন ভয় লাগছে আর তার কারণ হচ্ছে আন্টি যদি নিরবকে কোন কড়া কথা শুনিয়ে দেয়?
তাহলে তো ওর খারাপ লাগবে ‌আর ওর খারাপ লাগবে মানেই আমার খারাপ লাগবে।

বেল চাপতেই আন্টি এসে দরজা খুলে দিল। ওড়নায় মুখ মুছতে মুছতে আমাদের দিকে তাকালেন।হয়ত রান্না করছিলেন।

“কিরে?তোরা একসাথে?”ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল আন্টি

আমাদের কারো মুখেই কথা নেই।নিরব বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না আর আমি কি বলব খুঁজেই পাচ্ছি না।

আমাদের চুপ থাকতে দেখে আন্টি আবারো একই প্রশ্ন করলেন। এবার নিরব একদমে বলে দিল”আমরা বিয়ে করেছি আম্মু”

কথাটা শুনে আন্টি কিছুক্ষণ আমাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে বললেন”তোরা আর মশকরা করার সময় পেলি না‍? মানুষ পেলি না নাকি বিষয় পেলি না‍?”

“I’m serious ammu!”

এবার আন্টি আমাদের দিকে এমন করে তাকালেন যেন জান যায় যায় অবস্থা।তারপর বললেন”তোদের বিয়েতো এমনিতেও দিচ্ছিলাম তোরাই তো করলি না এখন আবার এগুলা কি বলিস”

এবার আমি মুখ খুললাম”আন্টি ঘরে চলো!আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছি”

“কি বুঝাবি?”

“আরে চলোই না!‍”

তারপর আন্টিকে রুমে নিয়ে এলাম।

“তোরা কি সত্যি বিয়ে করেছিস?”

“হ্যাঁ আন্টি সত্যি”

তাহলে নিরবের প্রেমিকা?ওর কি হলো?নাকি তোদের বিয়ে করার ইচ্ছাই ছিল, শুধু শুধু আমাদের টেনশন দিলি?

“ওর প্রেমিকা ওকে ঠকিয়েছে”

“কি? মানে?”

তারপর আন্টিকে আমি সবটা বললাম।এটাও বললাম যে তার ছেলে চাকরি পেয়ে নিয়েছে।
সবটা শুনে আন্টি বলল,”তাহলে তো নিরব তোকে ওর প্রেমিকা নেই বলে বিয়ে করেছে,সে যদি ফিরে আসে?”

“বিয়ে করার আগে শর্ত দিয়েছিলাম,তার জীবনে আগে যা ছিল তার পরোয়া আমি করি না কিন্তু তার বর্তমান আর ভবিষ্যত জুড়ে যেন আমিই থাকি।সেও সবটা মেনে নিয়েছে।
তুমি শুকরিয়া করো বড় কিছু হওয়ার আগেই সে সবটা জানতে পেরেছে।এজন্যই বলে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
কিন্তু ও যত বিশ্বাসঘাতকতাই করুক একটা সময় তোমার ছেলে ওকে ভালোবাসত তাই এত তাড়াতাড়ি ও ওকে ভুলতে পারবে না আর তাই আমাদের ওকে সময় দিতে হবে আর তুমিও ওকে এ নিয়ে কোন কথা বলো না।
ও যে সবটা ভুলে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছে মুভ অন করতে পেরেছে এটা কিন্তু সবাই পারে না।
ও ওর কাজের জন্য অনুতপ্ত আর এটাও ও ভালোমত বুঝেছে যে নাহার আপু বিশ্বাসঘাতক। তার কোন ক্ষমা হয় না”

“এত ভুলের মাঝেও তুই নিরবকে ক্ষমা করে দিলি? ওকে কিছুদিন শাস্তি দেওয়া উচিৎ ছিল তারপর মেনে নেয়া”

“নাগো,তখন কোন শাকচুন্নী আবার নিয়ে যেত আমার বরকে।একটার থেকে তো আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।
আর সত্যি বলতে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার প্রচুর মায়াও লাগছিল।আর আমি তো তোমাকে বলেছিলাম, যেদিন সে আমাকে মন থেকে বিয়ে করতে চায়বে সেদিন আমি আর দুবার ভাববো না।আর ক্ষমা করা তো মহৎ গুণ, তুমিও ক্ষমা করে দাও আর মেনে নাও আমাদের”

“যে আমার ছেলের জন্য বিয়ের আগে এতটা ভেবেছে সেটা তুই আর তাই তোকে আমার এত ভাললাগে”

চলবে…

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-২+৩

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০২ + ০৩

বাড়িতে আসার পর আম্মু শপিং এ যাওয়ার জন্য রেডি হতে বললো কিন্তু আম্মুকে আমি কিভাবে বলি যে যাদের জন্য তাদের এত আয়োজন তারাই একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট না।

“আম্মু”

“কি হয়েছে?আর বসে আছিস কেন যাবি না নাকি?

“বলছি যে…একটা কথা রাখবে?”

“কি কথা?”

“এই বিয়েটা না করলে হয় না?”

আমার কথা আম্মু যেন বিশ্বাসই করল না।হেসে বললো”এটা কি মজা করার সময়?আর যে মেয়ে বিয়েতে খুশি থাকে সে আবার বিয়েতে না করবে কেন?”

“আমি সিরিয়াস আম্মু‍!”

“আজব!তোর তো বিয়েতে কোন সমস্যা ছিল না।মতও আছে বলেছিলি তাহলে এখন এটা বলার মানে কি?”

“আমার এখনো মত আছে!
কিন্তু যার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছ সেই রাজি না”

“রাজি না মানে? নিরবের কথা বলছিস?নিরব রাজি না?কেন?সে তো সবার সামনে মত দিয়েছিল”

“দিয়েছিল,কিন্তু সেটা শুধুমাত্র আন্টির মন রাখার জন্য।সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।আর সে যদি আমাকে শুধুমাত্র অপছন্দ করত তাহলে বিষয়টা মানা যেত কিন্তু সে অন্য কাউকে চায় আর সেটা আমাকে বলেছে।
আমি যদি এখন কিছু না করি তাহলে সারাজীবন ও আমাকে দোষারোপ করবে আর এভাবে কি পথ চলা যায়? যেখানে অন্য কারো বসবাস।”

“হুম সব বুঝলাম, কিন্তু অন্য কাউকে পছন্দ হলে হেনাকে (নিরব ভাইয়ার আম্মু) বলতে পারত”

“সে তার মায়ের কাছে”না”বলতে পারবে না তাই বলছে না। তোমরা আমাকে বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছ কিন্তু নিরব ভাইয়া যাকে ভালোবাসে তার বাবা মা তো এভাবে বিয়ে দিবে না তাই ভাইয়া ভেবেছিল একটা চাকরি পেলেই আন্টিকে বলে দিবে কিন্তু তা আর হলো কই?
অবশ্য চাকরি পেলে হয়ত বিয়ে করেই বাড়ি ফিরত একদম।
এখন তুমিই কিছু করতে পারো, ভাইয়ার জন্য না অন্তত আমার জন্য করো।
বিয়েটা হয়ে গেলে সে আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।

এমনও হতে পারে সে আমাকে রেখে অন্য জায়গায় চলে গেছে,সে কিছুই করতে পারে!তার আগে তুমি কিছু করো”

আমার কথা শুনে আম্মুর কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিল। আম্মু কিছুক্ষণ চিন্তা করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল”তোর খারাপ লাগবে না?”

এই কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। কারণ এর যে কোন উত্তর আমার কাছে নেই!
“হ্যাঁ”আমি বলতে চাই না আর “না‍” আমি বলতে পারবো না। মিথ্যা কথা বললেই যে আমি ধরা খাই সবসময়।আমার কিছু না বলা দেখে আম্মু পাশে এসে বললো”কি করা যায় আমি দেখছি তবে নিজেকে সামলে চলিস। নিরবের অন্য কারো সাথে বিয়ে হলেও তোকে সামনে থেকে দেখতে হবে”

আম্মু চলে গেল। আমিও আমার রুমে চুপচাপ চলে আসলাম।
কত সহজেই না বলে দিলাম আমি ম্যনেজ করে নিব।করেও দিলাম।

আম্মু হয়ত ভাবছে আমার বিয়ে ভেঙে যাবে আর যার সাথে বিয়ে ভেঙে যাবে তারই বিয়ে আমাকে সামনে থেকে দেখতে হবে তাই আমার কাছে কোন উত্তর নেই। কিন্তু আম্মু তো আর জানে না এর ভিতরের জিনিসটা আমার কাছে কত গভীর!

এক বছর আগে যতটা না খুশি হয়ে ছিলাম এখন সেই খুশি দ্বিগুণ দুঃখ দিচ্ছে মনে।
সব খুশি গুলো দুঃখের নিচে চাঁপা পড়ে যাচ্ছে।
তবে এর পরের দিনগুলো আমার জন্য কেমন হবে তা আমার জানা নেই।

___________
সেই দিন বিকালেই আন্টি আমাদের বাসায় আসল।আমি ছাদে মনমরা হয়ে বসে ছিলাম তখন।

আম্মু ডাক দিয়ে বলল আন্টি নাকি এসেছে।আমি জানি এখন আন্টি আমাকে নানা প্রশ্ন করবে।

জানতে চাইবে সত্যটা। আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে আন্টিকে সবটা বোঝাতে হবে।
নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রাখতে হবে।

নিচে গিয়ে দেখলাম আন্টি একপাশে চিন্তায় ডুবে আছে।হয়ত ভাবছে তার ছেলের মধ্যে এমন কি খামতি আছে যে আমি তাকে বিয়ে করতে না করেছি!

আমি গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আন্টির পাশে বসে বললাম”কি খবর আন্টি? হঠাৎ এসময়?”

আন্টি যেন ভুত দেখার মত আমার দিকে তাকালো। তিনি হয়ত ভাবছেন আমি এত স্বাভাবিক আছি কি করে?
আন্টি নিজেকে সংযত রেখে বলল”নিরবকে কি তোর ভালো লাগে না?”

যা মনে করেছিলাম ঠিক তাই!আন্টি সেসব বিষয় নিয়েই‌ আমার সাথে কথা বলতে এসেছে।

আমি বললাম”ভালো না লাগার কি আছে? তোমার ছেলে তো হাজারে একটার মত!তা হঠাৎ এগুলো কেন জিজ্ঞেস করছ?”

“কথা কাটাচ্ছিস?”

“ম..মানে?”

“তুই আমাকে সরাসরি বল সমস্যা টা কি?সবাই তো রাজি ছিলি তাহলে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানে কি?”

আমি অসহায় চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু আমাকে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে সব সত্য বলতে বলল।
আমি মনে সাহস জুগিয়ে বলা শুরু করলাম”তুমি চাও না তোমার ছেলে ভালো থাকুক?”

“তার ভালো থাকা এখানে আসছে কেন?”

“তুমি শুধু আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তাহলেই সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে”

আন্টি বিরক্ত চোখে বললো”সে আমার ছেলে। আমার সন্তান।তার ভালো থাকা আমি চাইব না কেন?
আর চাই বলেই তো তোর সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছি যাতে করে সে তার জীবনে আরো সুখী হতে পারে।”

“তুমি কি একবারও তার বিয়েতে মত জানতে চেয়েছ?”

“তোদের সামনেই তো মত দিল”

“সেটা শুধুমাত্র তোমার মন রাখার জন্য।সে অন্য কাউকে চায়। সেটা সে তোমার মুখের উপর বলতে পারবে না কারণ তুমি আমি সবাই জানি সে তার পছন্দের মেয়ের চেয়ে তোমায় বেশি ভালোবাসে।
আর আমাকে যে সে পছন্দ করে না সেটা সে তার ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে যাচ্ছে।
তোমার কথায় হয়ত সে বিয়ে করে নিবে কিন্তু সুখি হতে পারবে না।তাই বলছি একবার তোমার ছেলের কথা ভাবো!
তার পছন্দকে একবার দেখ।”

“কিন্তু…”

“কোন কিন্তু না। তুমি এই বিয়েটা ভেঙে দাও! ভাগ্য থাকলে তো সেটা তুমি আমি রোধ করতে পারব না তাই না?
তাহলে হয়ত নিয়তি চায় না বিয়েটা হোক।আর যদি কোনদিন নিরব ভাইয়া চায় আমাকে মন থেকে বিয়ে করতে তাহলে সেদিন আমি আর দ্বিতীয়বার ভাববো না।”

“এটাই কি তাহলে তোর শেষ কথা?”

“ধরে নাও এটাই আমার তোমার কাছে শেষ আবদার।”

“তাহলে তাই হোক।”

“আন্টি?”

“হুম”

“আরেকটা কথা। বিয়ে নিয়ে বাসায় তুমি আর কথা উঠাবা না। কোন কথা উঠাবা না। তাকে নিজের মত থাকতে দাও।যদি সে নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে শুধু ছোট্ট করে উত্তর দিও।”

“জানিনা ভাগ্য কি আছে। আল্লাহ করে যেন নিরব সময় থাকতে সব বুঝতে পারে।
তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়ত এরকম ত্যাগ দিত না।যাই হোক খেয়াল রাখিস আর বিয়ে ভেঙেছে বলে আমাদের বাড়ি আসা বন্ধ করবি না যেন”

“তুমি কি মনে করেছ?এই হালকা একটা কারণে আমি আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হতে দিব?”

আন্টি হালকা হাসলো, আমিও সৌজন্য মূলক একটা হাসি দিলাম। তবে এই হাসির পিছনের দুঃখটা কেউ ই দেখল না।আর আমার জন্য এটা মোটেও ছোট বা হালকা কোন ব্যাপার না!
___________
বিয়ে যেহেতু হচ্ছে না তাই আমি আমার পড়াশোনা কনটিনিউ করলাম।
ভেবেছিলাম বিয়ের পর আর পড়ব না। কারণ নিজের বাসায় পড়া আর অন্যর বাসায় পড়া,থাকা একই ব্যপার না।
তারা যতই আমাকে ভালোবাসুক আমার পড়াশোনা নিয়ে তাদের সমস্যা না থাকলেও পাড়া পড়শি ঠিকই বিষয়টাকে ভালো চোখে দেখবে না আর নানা কথা আন্টিকে লাগাবে।তখন আমাদের সম্পর্কটা আগের মত স্বাভাবিক থাকবে না।

পড়াশোনা করতে গেলেও নিরব ভাইয়ার চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠে।

ছোটবেলা থেকে চেয়ে এসেছি, জীবনে এমন কেউ আসবে যে আমাকে তার চোখের মনির মত রাখবে, ভালোবাসবে।নিরব ভাইয়াকে দেখে আমার এমনই মনে হয়েছিল। তাকে সবসময় চাইতাম কিন্তু ভাগ্য বলেও যে কিছু হয় সেটা হয়ত ভুলে গিয়েছিলাম। ভাগ্য হয়ত চায় না আমার আর তার মিলন হোক।
.
.
.
.
এই দুইদিন অনেক টেনশনে পার হয়েছে নিরবের।নাহারকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে।
রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। সারারাত গেছে চিন্তা করতে করতে আর শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই দুইদিনে মা একবারো বিয়ে নিয়ে একটি কথাও বলেন নি।
নিরবও আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।তবে আজই যদি বিয়ে হয়?
তাই খাওয়ার টেবিলে বসে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে নিরব জিজ্ঞেস করেই ফেলল”মা বিয়ের কি খবর?”

মা একবার নিরবের দিকে তাকিয়ে প্লেটে ভাজি উঠাতে উঠাতে বললেন”কার বিয়ে?”

নিরব মায়ের ব্যবহার দেখে অবাক হলো।যিনি বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে খুশি ছিলেন তিনি জিজ্ঞেস করছেন কার বিয়ে?
এখানে কি অন্য কারোও বিয়ে নাকি?

“আমার বিয়ে”

“ওমা, তোর বিয়ে তো এখনো ঠিক করি নি বাবা।যখন তোর কাউকে পছন্দ হবে তখন বলিস। আগে একটা চাকরি তো নে!”

“কেন?অথৈ এর সাথে বিয়েটা হচ্ছে না?”অবাক হয়ে বলল নিরব

নিরবের কথা শুনে তিনি নিরবের দিকে এক নজর তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন”তোর তো তাকে পছন্দ নয় তাইনা?তাই তোর ভালোর কথা ভেবে সে বিয়েটা ভাঙিয়ে দিয়েছে।আশা করি বুঝতে পেরেছিস।
এবার জলদি খাওয়া শেষ কর।এখন ৮টা বাজে ১০ টার দিকে তো আবার তোর ইন্টারভিউ আছে”

মায়ের কথা শুনে নিরবের মনে পড়ল তার ইন্টারভিউ আছে।এই ৩-৪ দিনের টেনশনের মধ্যে তার কিছু মনেই ছিল না আর না কিছু পড়েছে। তাই সে বলল”না আম্মু আজকের ইন্টারভিউ টা দিব না এর পরের সপ্তাহে কোন ভালো কম্পানিতে জবের জন্য ট্রাই করব”

“তোর যেরকম ইচ্ছা”

নিরবের খারাপ লাগলো তার মাকে মনমরা দেখে।

অথৈকে মায়ের পছন্দ তাই হয়ত মায়ের খারাপ লাগছে কিন্তু নাহারও তো ভালো মেয়ে,মায়ের নিশ্চয়ই পছন্দ হবে তাকে। শুধু একটা চাকরি পাই।
নেক্সট উইক এ কোন ভালো জায়গায় ইন্টারভিউ দিব। তাড়াতাড়ি একটা চাকরির খোঁজ করতে হবে।আমি নাহয় আমার বিয়েটা আটকে ফেলেছি দুই দিন পর যদি নাহারের বিয়ে হয়ে যায়?
না এটা হতে দেওয়া যাবে না।

চলবে…

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৩

কেটে গেছে আরো দুই দিন।
আজ শুক্রবার।তাই বান্ধবী প্রমাকে কল দিয়ে আসতে বলেছি বাড়ির কিছুটা দূরে।
জায়গাটা অনেকটা গাছে ভরা, নিরিবিলি পরিবেশও বলা যায়।
মানুষের যাতায়াত কম।পাশ দিয়ে একটা নদীও আছে।

__________
রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি আমি আর প্রমা।মনটা অনেক প্রফুল্ল লাগছে এখন।

“এই?”

হঠাৎ প্রমার ডাকে তার দিকে তাকিয়ে বললাম”কি হয়েছে?”

“ওইটা নিরব ভাইয়া না?”

তার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিরব ভাইয়া গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনেই আরেকটা গাছে হেলান দিয়ে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তার পিছন টাই দেখতে পাচ্ছি শুধু।তবে তার লম্বা চুল দেখে চিনতে অসুবিধা হলো না যে এইটা নাহার আপু।তাই প্রমাকে বললাম”আমার আর ভালো লাগছে না চল না বাসায় ফিরে যাই?”

“খুব বেশি খারাপ লাগছে?না মানে নিরব ভাইয়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় না তো দেখা করেই যাই?”

“তোর ইচ্ছে হলে যা, আমাদের তো প্রায়ই দেখা হয়”

“আচ্ছা বাদ দে। তুই যাবি না তাহলে আমি একা গিয়ে কি করবো?চল আমিও বাসায় যাই”

পিছন ফিরতেই আমি টাস্কি খেলাম। পিছন থেকে নিরব ভাইয়ের আব্বু সাদ আঙ্কেল আসছে।আজ শুক্রবার হাট বাজারের‌ দিন।তাই হয়ত সকাল সকাল আঙ্কেলের দেখা পাওয়া গেল।
আন্টি হলে তবুও কোন কিছু হত না। আঙ্কেল যদি একবার নিরব ভাইয়াকে অন্য মেয়ের সাথে দেখেছে!

আমি জলদি প্রমার হাত ধরে আবারো নিরব ভাইয়াদের দিকে যেতে লাগলাম।

তখন প্রমা বলল”কিরে ওইদিকে কই যাস আবার? তোর না খারাপ লাগছে?”

“তুই তো বললি নিরব ভাইয়ের সাথে দেখা করবি তাহলে দেখা করেই যা”

“কিন্তু..”

“এখন চুপচাপ দেখা কর পরে সবটা বলছি”
আমার কথা শুনে প্রমাও আর কিছু বলল না।

আমি নিরব ভাইয়া দের সামনে যেতেই তারা অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
হঠাৎ আমাদের এখানে তারা আশা করে নি।

আমি নাহার আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম”আপু! তুমি একটু দূরে যাও,নিরব ভাইয়ার আব্বু আসছে!”

আমাকে দেখে নাহার আপু হয়ত কটাক্ষ করে কিছু বলত কিন্তু আমার মুখে এই কথা শুনে কিছু বলল না। কিন্তু পিছনে ফিরে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল”নিরব কিন্তু আমারই থাকবে”

আঙ্কেলের কথা বলাতে যে ভয়ের রেখা ভাইয়ার মুখে ফুটে উঠেছিল সেটাই এখন নাহার আপুর কথায় খুশিতে পরিণত হয়েছে তবে কথাটা আমার মনে দাগ কেটে গেল।

প্রমা বুঝল না কিছুই। কারণ এসব কিছুই শুধুমাত্র নিরব ভাইয়া আর আমার পরিবারের মাঝেই ছিল কিন্তু নিরব ভাইয়াই হয়ত নাহার আপুকে বলেছে কারণ সে কোন কিছুই ওর থেকে লুকায় না‌।

এরই মাঝে আঙ্কেলও আমাদের পাশে এসে গেছে।আমরা কিছু সৌজন্যে মূলক কথা বলেই আঙ্কেলকে বিদায় দিলাম।প্রমাও নিরব ভাইকে কিছু সাধারণ কথাবার্তা জিজ্ঞেস করল।

তারপর আমরা বিদায় নিতে গেলেই নিরব ভাইয়াও বলল সেও এখন বাসায় যাবে তাই আমরা একসাথেই হাঁটতে থাকলাম।

প্রমা মধ্যখানে আর আমরা দুইজন দুপাশে।আমি তার পাশে দাঁড়াতে পারি নি কারণ”সংকোচ”আর সে দাঁড়ায় নি কারণ আমি সরে এসেছি বলে।

চুপচাপ হাঁটতে হাঁটতেই হঠাৎ প্রমা বলে উঠল”আচ্ছা নাহার আপুর তখনকার কথাটার মানে কি?”

ওর এই প্রশ্ন শুনে আমি আর নিরব ভাইয়া দুজনেই দাঁড়িয়ে গেলাম।
আমাদের দাঁড়াতে দেখে প্রমাও দাঁড়িয়ে বলল”কি হলো দাঁড়িয়ে গেলি কেন?”

তখন আমরা আবারো হাঁটতে শুরু করলাম।আর বললাম”তুই তো জানিসই নাহার আপু নিরব ভাইকে কত ভালোবাসে আর আমি আর নিরব ভাইতো অনেক ক্লোজ তাই হয়ত ভুল বুঝে বলেছে”

আমার কথা প্রমার বিশ্বাস হলো বলেই মনে হয়।পরের রাস্তায় আমি সংকোচে পড়লাম কারণ এতক্ষণ প্রমা সাথে ছিল কিন্তু তার বাড়ি ডান দিকেই আর আমাদের এখন একা যেতে হবে।

আমি কিছু না বলেই চুপচাপ হাঁটতে থাকলাম।এমনি দিন হলে হয়ত বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলতাম তার,তবে আজ নিজেকে নিজের কাছেই তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

“নাহারকে সব বলেছি আমি,এত সংকোচের কিছু নেই”

“জানি আমি”

“জানিস মানে?”

“তার থেকে তো তুমি কিছু লুকিয়ে রাখো না তাই জানি”

“তাহলে এত সংকোচ কিসের?”

“একটা মেয়ের পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বিয়ে ভাঙলে সে নিশ্চয়ই আনন্দে আত্মহারা হয়ে থাকবে না‌।
না পাওয়ার চেয়ে পেয়ে হারানোর দুঃখ টা বেশি লাগে।
তবে সেই শোকে যে তোমার বিয়েতে আসব না সেটা কিন্তু মনে করো না, অবশ্যই আসব আর নিজ হাতে সবটা করব”

আমার কথার বিপরীতে নিরব ভাইয়া আর কিছু বলল না।
.
.
.
বাড়ি ফিরেই গোসল করলাম।নিরব ভাইয়া আর আমার বিয়ের খুশিতে যে পেন্টিংটা করছিলাম সেটাও বাকি থেকে গেছে।
তো কি হয়েছে? বিয়ে না হোক! সেটা তো আমি কমপ্লিট করেই ছাড়ব।
তাই সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে বেলকনিতে এসে বসলাম। আম্মু এখানে সাধারণত আসে না তাই এটা শেষ হলে এখানেই রেখে দিব।
মন খারাপ হলেও এখানে এসে এটা দেখব, হুম!

অন্যদিকে,
নিরব মন দিয়ে প্রিপারেশন নিচ্ছে।তার চাচা একটা ভালো জায়গায় ইন্টারভিউ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
যদিও জব সাইট গুলো থেকে সে প্রতিনিয়ত এগুলো খবর নিতেই থাকে।
তার মন মত সরকারি চাকরির পরিক্ষা এটা। একবার টিকে গেলেই নাহারকে প্রথমে জানাব তারপর সে কত খুশি হবে!

২৫-২৬ বারের মত নিরবকে ফোন দিয়েও নাহার পাচ্ছে না।
মেজাজ গরম হয়ে গেছে তার একেবারে।
নিরবের সাথে একবার দেখা করা উচিত নাহলে পরে ঝামেলা করবে।

কিন্তু ফোন দিয়ে কি নিরবকে পাওয়া যায়?
সে একদম মন দিয়ে পড়তে ব্যাস্ত।যদিও নাহার ছাড়া তেমন কেউ নিরবকে ফোন দেয় না তবুও সে ঠিক করেছে চাকরি হয়ে গেলেই নাহারের সাথে মন খুলে কথা বলবে সে।
তার মন বলছে চাকরিটা এবার হয়েই যাবে।

পরদিন সব কাগজপত্র গুছিয়ে মাকে সালাম করে নিরব বেরিয়ে গেল।
এর আগে কয়েকটা ইন্টারভিউ সে দিয়েছে তাই তেমন একটা নার্ভাসনেস তার মধ্যে কাজ করছে না।
প্রিপারেশনও ঠিক ঠাক আছে। শুধু কনফিডেন্ট থাকতে হবে।

পাঁচ মিনিট পর অফিসে এসে পৌঁছালো সে। সরকারি অফিস গুলো বুঝি এমনই বড় হয় প্রত্যেকটা?

তাই হবে!নয়ত কি সরকারি কর্মচারীদের বাড়ি এমনিই বড় বড় হয়?

রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ইন্টারভিউ রুমের দিকে এগুলো সে।সবাই প্রায় নার্ভস। কেউ বা বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। আচ্ছা এরা কি জানে না পরিক্ষার আধা ঘন্টা আগে থেকে ব্রেনকে রেস্ট দিতে হয়।
পড়াগুলো মাথায় সব ইনপুট হয়।জানবেই বা কিভাবে এরা তো ফার্স্টবেঞ্চার ছিল। সারাক্ষণ শুধু বইয়ে কিভাবে যে ঢুকে থাকে! একটুও ক্লান্তি বা বিরক্তি লাগে না?

দেখতে দেখতে নিরবের ডাক পড়ল।নিরব সব প্রশ্নের উত্তর সহজেই দিয়ে দিল।
তার কনফিডেন্স দেখে তারাও নিরবকে জব দিয়ে দিতে দিল আর দুয়েক দিনের মধ্যেই জয়েন হতে বলল।

নিরব “Thank you sir” বলে বেরিয়ে এলো ঠিকই কিন্তু তার নাচতে ইচ্ছে করছে এখন।

ইন্টারভিউ রুম থেকে বেরিয়ে সে তার পকেট থেকে ফোন বের করে সুইচ অন করেই দেখতে পেল নাহারের অনেকগুলো কল। দেখেই সে মুচকি হাসলো তারপর নাহারকে কল করল সে।

ওইদিকে নাহার নিরবের কল পেয়েই নিজের রুমে গিয়ে রিসিভ করল। বাসায় অনেক মানুষ তো!কেউ কিছু শুনে ফেললে তো সমস্যা!

“হ্যালো নাহার, বলছি যে এখনি আমার সাথে দেখা করতে পারবা?”

নাহারেরও যেহেতু নিরবের সাথে দেখা করার প্রয়োজন ছিল তাই সেও দ্বিমত পোষণ করল না। শুধু বলল”কোথায় দেখা করতে হবে?”

“***এখানে চলে আসো, তোমার বাসারও পাশে হবে”

পৌঁছাতেই নিরব বলল”তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে!”

“কিন্তু তোমার আর ফালতু সারপ্রাইজ আমার দরকার নেই”

এর আগেও সারপ্রাইজ বললে নিরব শুধু গিফট দিত কিন্তু এইবার যে সত্যি বড় একটা সারপ্রাইজ আছে তা নাহার শুনল না।ওর মনে হল নিরব হয়ত কোন ফালতু গিফট ই এনেছে।

“এভাবে বলছ কেন? আচ্ছা ফোন অফ ছিল তাই? আচ্ছা রাগ করো না আমার গিফট এই তোমার সব রাগ ঠান্ডা হয়ে যাবে”

“বললাম তো তোমার কোন ফালতু গিফট আমার দরকার নেই”

“এভাবে বলছ কেন?আর কারন কি?”

“কারণ আমি এই রিলেশন টা আর কনটিনিউ করতে পারছি না”

“কথাটা শুনে নিরবের কি বলা উচিৎ সে বুঝল না তবুও কোনরকম বললো”কারণটা কি জানতে পারি?”

“অবশ্যই, তার জন্যাই তো কাল থেকে ফোন করেও তোমাকে পাই না
সে যাই হোক, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলে সরকারি চাকরি করে আর সেখানে তো তুমি একটা বেকার আর এরকম রিলেশনের কোন ভবিষ্যৎ নেই”

“কিন্তু তুমি তো অথৈকে কালকেই বললে আমি শুধু তোমারই থাকবো তাহলে তুমি অন্য কারো হয়ে যাচ্ছ কেন?”

“কারণ তখন আমি বুঝি নি”

“আচ্ছা বিয়েটা তুমি ভাঙার চেষ্টা করো নি?”

“পাগল হয়েছি আমি?এত ভালো একটা ছেলেকে আমার ফ্যামিলি হাতছাড়া করবে নাকি?
সেটা তো বোকামি হবে!”

“তাহলে আমাদের ভালোবাসা?”

“কিসের ভালোবাসার কথা বলছ?যেটা কখনো ছিলই না? শোন,আমি একমাত্র সাজিদকেই ভালোবাসি।যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
সময় পেলে একদিন দেখা করিয়ে দিব।আর দাওয়াত দিতে ভুলব না চিন্তা কইরো না
আর বিয়েতে কোনপ্রকার ব্যঘাত ঘটানোর চেষ্টা করো না।”

“আচ্ছা করব না”

নাহার ঘুরে চলে যাচ্ছে আর নিরবের চিৎকার করে বলতে মন চাইছে”আমিও চাকরি পেয়েছি, চাকরির দোহাই দিয়ে হলেও আমার হয়ে থেকো।”

কিন্তু সে বলবে না কারণ সে নাহারের আসল চেহারা টা দেখে ফেলেছে যা শুধু টাকাকেই ভালোবাসে।
এখন যদি নাহার ওকে বিয়ে করতে রাজিও হয়‌ তবুও তাকে নয় কিংবা তার জন্য নয় তার টাকার জন্য করবে।

এখন অথৈ এর বলা প্রত্যেকটা কথা তার মনে পড়ছে।

সে নাহারের বিরুদ্ধে বলেছিল বলে তাকে এই নিজ হাতে চড় মেরেছি।
আমার খারাপ হবে ভেবে সে নাহারকে দূরে করার চেষ্টা করছিল কিন্তু আমি?
অথৈকে প্রত্যখান করেছি আমি। তার ভালোবাসা তার ফিলিংস আমার জন্য সত্য ছিল সেগুলোকে প্রত্যখান করেছি আমি।
হিরাকে কাঁচ ভেবে ভুল করেছি আমি।মাকে কি জবাব দিব আমি?
এত এত ভুলের মাঝে কার কাছ থেকে ক্ষমা পাব আমি?

এগুলোর একটাই সমাধান।হ্যাঁ!সেটাই করব আমি।

আরেকটা রিকশা ডেকে বাড়ির পথে রওনা হলো নিরব।
.
.
.
কলিং বেল বাজতেই নীলিমা জাহান গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।এসময় নিরবকে দেখে তিনি অবাকই হলেন। তবুও বললেন”এসময় নিরব? কোন কাজ ছিল নাকি?”

“অথৈ কোথায়?”

“হঠাৎ অথৈ এর কথা”(অবাক হয়ে)

আন্টি প্লিজ বলো!

ও তো ছাদে আছে

আচ্ছা

বলেই নিরব ছাদের দিকে গেল। নীলিমা শুধু নিরবের কার্যকলাপ দেখলেন।চোখ মুখ কেমন বিধ্বস্ত লাগছে তার। তাহলে কি সে নিজের ভুল বুঝতে পারল?
ভেবেই মুচকি হাসলেন নীলিমা।

ছাদে বসে দুরের পানে চেয়ে ছিলাম আমি। ঘরের চার দেয়ালে বন্দী থাকার চেয়ে ছাদে খোলা আকাশের নিচে মৃদু বাতাসও ঢের ভালো।

হঠাৎই পায়ের আওয়াজে পিছন ফিরেই নিরব ভাইকে দেখে অবাক হলাম।সে অনেক তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে বললো”অথৈ?একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?”

হঠাৎ এসেই প্রশ্ন শুনে কেমন যেন লাগছে। তবুও বললাম”বলো”

“আমার যে চাকরি নাই তবুও তুই কেন বিয়ে করতে রাজি হলি?”

“চাকরি তো হাতের মোয়া না যে চাইলেই পাওয়া যাবে আর এমনও না যে তুমি কোনদিন চাকরি পাবা না আর আমি কি ষাড় যে সব খেয়ে ফেলব?”

“আর‌ আমি?”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম”সেটা তো জানোই”

“অথৈ!আমি তোর কাছে কিছু চাইলে দিবি?”

“তোমার জন্য তো আমি নিজেকেই বিলিয়ে দিতে রাজি সেখানে কিছু চাইলে দিতে পারব না?বলো কি চাও”

“তোকে বিয়ে করতে চাই”

চলবে….

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০১

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০১

“পিঠ পর্যন্ত চুল, নেইলপলিশ ছাড়া নখ আর পেন্সিলকে ছেলেদের মত কানে গুঁজে তুই কি নিজেকে by any chance ছেলে প্রমাণ করতে চাচ্ছিস? আমার কিন্তু অমন হাফ মেয়ে পছন্দ না”

নিরব ভাইয়ার কথায় পিছনে ফিরে তার দিকে এক নজর তাকিয়ে নিজের দিকে একবার তাকালাম।সব তো ঠিকই আছে! তারপর তার দিকে তাকিয়ে বললাম

“কেন ভাইয়া, মেয়েদের কি পিঠ পর্যন্ত চুল থাকে না?নাকি সবাই তোমার বিশ্ব সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড এর মত কোমর পর্যন্ত চুলের অধিকারী?নাকি তার মত ময়দা সুন্দরী যে সারাক্ষণ নেইলপলিশ লাগিয়ে মুখে ময়দা লাগিয়ে ঘুরতে হবে?
আর বাকি রইল পেন্সিল কানে গুজার কথাটা,সেটা তো স্কেচ বানাচ্ছিলাম তাই!
আর তোমার অমন মেয়ে পছন্দ নাতো আমি কি করব? কোন নতুন কথা বলার থাকলে বলো নয়ত যাও!”

আমার কথা শুনে নিরব ভাইয়া রেগেমেগে চলে গেল।আমি জানি সে এখানে বিয়েটা ভাঙাতে এসেছিল কিন্তু আমি তো এত সহজে তাকে ছাড়ছি না। আচ্ছা বিস্তারিত বলি-

আমার নাম হচ্ছে অথৈ জাহান নীরা। আব্বুর নাম ইসনাথ জাহান যিনি পেশায় ব্যবসায়ী আর আম্মু নীলিমা জাহান একজন গৃহিণী।

আমার জন্মস্থান সিলেট আর এখন বর্তমান থাকি মিরপুর। আমার আম্মুর কাছ থেকে জানতে পারি ব্যবসার কাজে আব্বুর সিলেট যেতে হয়েছিল আর তখন ২-৩ বছরের মতো তারা ওখানেই ছিল কিন্তু দুজনের জন্মস্থান ই আসলে মিরপুর।

তো কাজ শেষে আম্মুরা মিরপুর ব্যক করে তখন আম্মুর এক বান্ধবীর সাথে তার আবারো দেখা হয়।

কলেজ লাইফের ফ্রেন্ডস ছিল তারা আর আম্মুর সেই বান্ধবীর বিয়ে আম্মুর বিয়ের বছর দুয়েক আগেই হয়েছিল।আর নিরব ভাইয়া তাদেরই সন্তান।

কলেজ লাইফের ফ্রেন্ডস হওয়ায় তাদের দেখাটা অনেক দিন পরেই হয়েছিল।তাই পেটের অনেক কথাও জমেছিল।

তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল যখন তারা এখানে থাকবেই তাহলে নিরব ভাইয়াদের বাড়ির আশপাশে বাড়ি নিলেই হয় এতে করে তাদের প্রায়শই দেখা হবে আর বন্ধুত্বটাও বজায় থাকবে।

তারপর আমরা মিরপুরেই নিরব ভাইয়াদের বাসার কিছুটা দুরত্বে বাসা ভাড়া নিই আর বর্তমান এখানেই আছি।

নিরব ভাইয়া আমার ৪ বছরের বড়। আমার বয়স ২০ হতে চললো আর সে জবের জন্য ট্রাই করছে।

নিরব ভাইয়াকে আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি তবে কখনো বলা হয় নি।বলা হয় নি বলতে কখনো বলিনি বা বলার চেষ্টাও করি নি।

কারণ আমি তাকে পছন্দ করলেও সে আমাকে পছন্দ করে না।তার উপর আবার তার প্রাণপ্রিয় গার্লফ্রেন্ড আছে যাকে সে তার জানের মত ভালোবাসে।

এই নিজ হাত দিয়েই তাকে কত গিফট দিলাম, তার হিসেব নেই।

পাড়ায় আমাকে আর নিরব ভাইয়াকে দেখে কেউ কখনো খারাপ মন্তব্য করেনি।সকলেই আমাদের বন্ধু হিসেবেই জানে।

বুড়ো থেকে জোয়ান সবাই এটাই বিশ্বাস করে।

আর নিরব ভাইয়া ছেলে হিসেবে বেশ।যেমন আছে রূপ তেমনি গুণ।
সব মেয়ের স্বপ্নের রাজকুমারও বলা চলে।তবে মেয়েদের সাথে তার খাতির কম আর পাড়ায় যদি মানুষ জানে তার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে সেটা কানেমুখে ছড়িয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না তাই গিফট আইটেম গুলো আমিই নাহার (নিরব ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড) আপুকে দিয়ে গেছি।

রং বেরঙের পেপার দিয়ে মোড়ানো বাক্সগুলো দেখলেই মনটা ভরে যেত তবে মন খারাপের বিষয়টা ছিল সেটা অন্যজনের জন্য জমানো ভালোবাসা ছিল।
আমার জন্য না।

আমার যখন ১৯ বছর ছিল তখন কিভাবে যেন আর কি মনে করে যেন নিরব ভাইয়া আমার বার্থডে এরেন্জ করেছিল। সেই বার্থডে আমার জন্য বেস্ট ছিল।

তো তখনই আমরা হাসি মজা করতে করতে নিরব ভাইয়া আমার মুখে কেক লাগিয়ে দিয়েছিল।সেটা ধুতেই ওয়াশরুম গিয়েছিলাম।ওয়াশরুম ছিল আম্মু আব্বুর ঘরের পাশেই।
তখন ওই ঘর থেকে ওদের কথোকথন আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। যেহেতু ওরা প্রায়শই যেকোন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেয় সেহেতু আমিও চুপচাপ মুখে পানি দিচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎই আন্টির মুখে নিরব ভাইয়ার নাম শুনতে পাই আর নিরব ভাইয়া বিষয়ক সব জিনিসেই আমার ইন্টারেস্ট আছে তাই আমি আরেকটু দেয়ালের দিকে সরে ভালোমত শোনার চেষ্টা করলাম যে আসলে তারা বলছে টা কি?
তখন আন্টিকে বলতে শুনেছিলাম তিনি নাকি এর পরের বছরই আমাকে তার বাড়ির বউ করে নিতে চান।
যদিও নিরব ভাইয়ার জব নেই তবুও তার রেজাল্ট অনেক ভালো।জব পেতে বিশেষ কোন সমস্যা হবে না।

প্রথমে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে দিয়ে তারপর ভাইয়া জব পেলেই একটা ছোট খাটো অনুষ্ঠান করা হবে। অবশ্য অনুষ্ঠানে আমার বিশেষ কিছু এসে যায় না।

সেদিন আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম যা কোন অনুষ্ঠানের থেকে কম ছিল না।
প্রায় একবছর পর্যন্ত সেই খুশি আমি নিজের মধ্যে সিমাবদ্ধ রেখেছি।
এটা জানা সত্ত্বেও নাহার আপুকে গিফট দিয়ে গেছি।
সেই টাইম টাই অনেক রাগ লাগত নিরব ভাইয়ার ওপর। আমাকে সে ছোট থেকে চিনে কিন্তু আমার প্রতি তার কোন ফিলিংস ই জাগলো না।

অবশ্য আমরা প্রায় এমন কাউকে ভালোবাসি তারা আমাদের ভালোবাসার মূল্য দেয় না।এতে অবশ্য কারো দোষও দেওয়া যায় না কারণ ফিলিংস তো আর জোর করে আনা যায় না।

এইযে আমি নিরব ভাইয়াকে ভালোবাসি সে হয়ত বুঝে নি কখনো আর নিরব ভাইয়া যে নাহার আপুকে ভালোবাসে নাহার আপু শুধু নিরব ভাইয়াকে টাইম পাস হিসেবে ইউস করে এটা সে বুঝে না‌।

যদি নাহার আপু ভালো হত তাহলে কখনোই আমি ওদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি হ্তাম না। কারণ ভালোবাসা মানেই ত্যাগ।কিংবা ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই।সেটা যে যেরকম মনে করে।

বলা হয়,ভালোবাসা নাকি অন্ধ হয় তাই নাহার আপুকে নিরব ভাইয়া এতই ভালোবাসে যে তার সম্পর্কে কেউ কোন কথা বললে গায়ে হাত তুলতেও দু বার ভাবে না।

আমার গায়েও হয়ত হাত তুলত তবে মেয়ে বলেই হয়ত ছাড়া পেয়েছি কিংবা গায়ে হাত তুললেই হয়ত আন্টির কাছে জবাবদিহি করতে হতো তাই।
কিন্তু বাসায় গিয়ে নিশ্চয়ই ভাংচুর করবে বা আমার সাথে কথাও বলবে না দুই একদিন।

আমার ভয় হতো যে নিরব ভাইয়া যদি আমাকে বিয়ে করতে না চায় তখন আমি কি করব?
কিন্তু মনে একটা আশাও ছিল যে নিরব ভাইয়া আর যাই করুক অন্তত তার মায়ের কথা ফেলবে না।আর তাই হয়েছে। মায়ের কথা না ফেললেও সে আমাকে বিয়েটা করতে মানা করছে।তার ধারণা আমি না বললেই বিয়েটা হবে না আর সে বেঁচে যাবে কিন্তু আমি তো তা হতে দিব না।

আমাদের বিয়ের ব্যপারটা এক মাস হলো নিরব ভাইয়া জেনেছে।আর তখন থেকেই নানা বাহানায় আমাকে প্রত্যখ্যান করতে থাকে। অন্য মেয়েদের সাথে তুলনা করতে থাকে।
আজও সেইজন্যই এসেছিল। Indirectly আমাকে বিয়েতে “না”বলতে বলছে সে।

আমাকে এটা বুঝাচ্ছে সে যে”আমার মত মেয়ে”সে পছন্দ করে না।

এখন তো বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহই রয়েছে।এর মধ্যে যে কি না কি করবে আল্লাহই জানে।

__________
পাঁচদিন পার হয়ে গেছে।এরপর ভাইয়ার সাথে আমার আর দেখা হয় নি।কলও করেছিলাম কিন্তু রিসিভ করেনি।করবেই বা কেন?

আমি যে এখন তার কাছে জল্লাদের মত!
যে তার ভালোবাসা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে।রাগটাও কি স্বাভাবিক নয়?

আজ অনেক অস্থির অস্থির লাগছে তাই ওদের বাসায় যাব ঠিক করলাম।

আম্মু কখনোই আমাকে ভাইয়াদের বাসায় যেতে মানা করে নি,আজও করল না তবে জলদি ফিরতে বলল। কেনাকাটা করতে হবে নাকি।বিষয়টা আমার কাছে সবসময়ের মতই বিরক্তিকর।

আজ পাঁচ মিনিটের রাস্তাও কেমন জানি পার হচ্ছে না।ভয় হচ্ছে এটা ভেবে যে আমাকে দেখে তার রিয়েকশন কি হবে?

যদি উল্টাপাল্টা কিছু আচরণ করে?

বাসায় গিয়ে বেল দুই বার দিতেই নিরব ভাইয়া এসে খুলে দিল।তার চোখ মুখ কেমন যেন শুকিয়ে গিয়েছে।
দেখে খারাপ লাগলো তবে আমি তাকে হারাতে চাই না।জানি বিষয়টা স্বার্থপরের মতো তবুও আমি তাকে হারাতে চাই না।

আমাকে দেখেই ভাইয়া আবার দরজা লাগাতে নিতেই আমি দরজায় হাত দিয়ে ফেললাম।

তাই ও দরজা লাগাতে পারলো না কিন্তু আমাকে রেখেই নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।

আমি তাড়াতাড়ি দরজাটা লাগিয়ে তার পিছন পিছন এসে তার ঘরে চলে এলাম।

সে বিছানায় চোখ বন্ধ করে বসল।আমি কি বলব বুঝলাম না কিন্তু কথা তো শুরু করতেই হবে

“আন্টি কই?”

“শপিং গেছে”

“ওও, তোমার মুখ‌ এমন দেখাচ্ছে কেন?”

“কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিবি না একদম! তুই জানিস না কার জন্য আর কি কারণে আমার এই অবস্থা?”

“ভাইয়া তুমি কেন আমার সাথে এরকম করছ?”

“ভাইয়া বলবি না একদম।সম্পর্ক গুলোও লজ্জা পাবে। তোকে তো বন্ধুর চোখে দেখতাম আমি আর সেই তুই ই আমার পিঠে ছুরি বসালি।জানতিস না তুই আমি নাহারকে কতটা চাই?
তার জন্য প্রত্যেকটা রাত জেগে পড়েছি। রেজাল্ট ভালো করেছি। নিজেকে যোগ্য করে তুলছি যাতে ওর বাবা মা কোন দিক দিয়েই বলতে না পারে”আরে এই ছেলেটা তো আমার মেয়ের যোগ্যই না”বাট এট লাস্ট তুই কি করলি?”

“বিশ্বাস করো, নাহার আপু তোমাকে ভালোবাসে না!তার অন্য ছেলেদের সাথেও রিলেশন আছে।যদি তার সাথে বিয়ে করো তাহলে তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে…..”

আমার সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই নিরব ভাইয়া আমার গালে চড় বসিয়ে দিলেন।
ঐযে বলেছিলাম নাহার আপুর ব্যাপারে কেউ বললে গায়ে হাত তুলতেও দু বার ভাবে না,সেটাই।

চড় খেয়ে আমার পুরা গা কাঁপতে লাগলো,রাগে।
তার এসব কাজে কি সত্যটা পাল্টে যাবে?

ভালোবাসি বলে আত্মসম্মান নেই নাকি। সেই আত্মসম্মান ই এই মুহূর্তে আমার কাছে ভালোবাসার থেকে বড় লাগছে কারন যে নিজেকে সম্মান দেয় না তাকে মানুষ কি সম্মান দিবে।

সেই থেকেই জবাব দিলাম”তুমি এই বিয়ে করতে চাও না তাইনা? তাহলে আমিও আর জোর করব না। তুমি মুক্ত।

আর এইযে মুখ শুকনো রেখেছ সেটা আর শুকনো রেখ না। তোমার ফেস ব্রাইটনেস কমে যাবে তখন আবার নাহার আপুর সাথে ডেট এ যাবা কিভাবে?

তোমার আন্টিকে কিছু বলতে হবে না।যা বলার বা বুঝানোর আমি করে দিব।পারলে তোমার বিয়েটাও করিয়ে দিব। ভালো থেকো।”

এটা বলার পর আর দাঁড়ালাম না সেখানে। আমার যে কোন অধিকারও নেই সেখানে থাকার।

যা ও একটা আশা ছিল সেভাবে হয়ত বিয়েটা হত। তবে আমার প্রাণবন্ত নিরবকে আমি পেতাম না।তাই নিজ হাতেই সব টা শেষ করে দিলাম।

চলবে…..

ভালোবাসা পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0

ভালোবাসা (এক অনুভূতি)
অন্তিম পর্ব
লেখা kashfuzjahan

সকাল থেকেই পুরো বাড়িতে সাজ সাজ রব। আর হবে নাই বা কেন। বাড়িতে যে দুটো বিয়ে হচ্ছে। তাই সকলেই খুব ব্যস্ত। আরশি আর নওশি পার্লারে গেছে সাজতে। অন্যদিকে নিলয় আর আদ্রিয়ান তৈরি হচ্ছে। ঠিক এই সময়

– পাপাইইইই ( আয়ান)

– বলো বেটা ( নিলয়)

– তুমি আর নতুন পাপাই তো আন্টি আর মা কে বিয়ে করছো তাই না?? ( আয়ান)

– হুম কেন বেটা ( আদ্রিয়ান)

– বড় মামুর মামি আছে। ছোট মামুর মনি আছে। তোমরাও বিয়ে করছো। তাহলে আমার বউ কোথায় পাপাই। আমি কবে বিয়ে করব। ( আয়ান)

আয়ানের কথা শুনে কাশতে থাকে নিলয়। কারণ তার কাছে এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। কি বলবে সে??

-ও পাপাই বলো না কি করব। আমার বউ কোথায়?? আমি কবে বিয়ে করব?? ( আয়ান)

– দেখ বাবা আমরা বিয়ে করছি কারণ আমরা বড় হয়ে গেছি। কিন্তু তোমার তো মাত্র ৬ ইয়ার্স ওল্ড। তোমার যখন ২৬ হবে তখন সুন্দর একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিব। কিন্তু তার আগে পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হতে হবে। ( আদ্রিয়ান)

– পড়াশোনা শেষ করলেই আমার বিয়ে দেবে তো?? প্রমিজ?? ( আয়ান)

– হ্যা রাজা মশাই অবশ্যই দিব। একদম চিন্তা করবে না কেমন?? ( আদ্রিয়ান)

– সত্যিই বলে যতই বাবার মতো হাজার জন থাকুক না কেন?? বাবা শুধু বাবাই হয় ( নিলয় মনে মনে)।

কথা শেষ হবার আগেই নিলয় আর আদ্রিয়ানের ডাক পরল কারণ বউয়েরা চলে আসছে সাথে উকিল ও এসেছে তাই তাদের নামতে হলো।

নিচে নামতে নামতে আদ্রিয়ানের নজর নওশির উপরে পড়ল। এতো বছর পর আদ্রিয়ান যেন আবার নতুন করে সেই জংলি বিড়ালটার প্রেমে পরল। গাঢ় লাল রং এর পোষাকে যেন তার সৌন্দর্যের মাধুরী কয়েকগুন বেড়ে গেছে। নামতে নামতে সিড়ি থেকে পড়েই যাচ্ছিল আদ্রিয়ান কিন্তু নিলয় সামলে নেয়। সকলে এক সাথে হেসে ওঠে।

অবশেষে সকল ইসলামি নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রি পেপার এ সাইন করে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়। আদ্রিয়ান বলে দেশে ফিরে নিলয়দের বিয়ে আবার ধুমধাম করে দেবে।৷

রাতের বেলা,,

সকলে অনেক ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পড়লেও জেগে থাকে ৮ টি চোখ। কারণ তাদের যে আজ ঘুমালে চলবে না।

– আরশি??

– হুম

– জানো আজ আমার অনেকদিনের স্বপ্ন পুরণ হয়েছে।

– যেমন

– সব সময় ভাবতাম এমন কেউ থাকবে যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে। আজ সে স্বপ্ন সার্থক

– তাই??

– হুম। তবে এটা রোমাঞ্চ টাইম। বলেই নিলয় জড়িয়ে নেয় আরশি কে।

অন্যদিকে।

– জানো আদ্রিয়ান, সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। মনে হয় ঘুম ভাঙ্গলেই সব শেষ। ( নওশি)

– হুম কখনো ভাবি নি। আবার দেখা হবে। আল্লাহ চাইলে কি না হয় বলো। ( আদ্রিয়ান)

– ঠিক। হয়তো অনেক পুর্ণ করেছিলাম তাই আবার আল্লাহ তোমাকে ফিরিয়ে দিল।

– আচ্ছা দেশে ফিরে সবার আগে কোথায় যাবে??

– রাঙ্গা মাটি, যেখান থেকে এই জিবনের শুরু ওখান থেকে।

– আচ্ছা ঠিক আছে, এখন তো একটু আদর করতে দাও। পরেরটা পরে হবে। উমমমম কাছে আস।

***
এই যে আরও কি খুজেন আমি ভালো মেয়ে আর কিছু দেখি নি। তবে শুনেছি নিলয় আর আরশির একটা মেয়ে হয়েছে আর আয়ান আগেই বলে রেখেছে ওকে বিয়ে করবে। তবে নোয়া তার পড়া শোনা বিয়ে ব্যস্ত। নওশি আর আদ্রিয়ান আর বাবু নেয় নি কারণ দেশের জন সংখ্যা এমনিই বেশি।

সমাপ্ত

ভালোবাসা পর্ব-১০+১১

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব :১০
লেখা kashfuzjahan

অন্তরার চিকিৎসা আর নওশির ভালোবাসায় আদ্রিয়ান এখন বেশ সুস্থ। কথা বলতে পারে। নওশি সব বাদ দিয়ে এখন আদ্রিয়ানকে সময় দেয়। বাচ্চারাও এখন সবার সাথে ফ্রী, যদিও এখনো তারা জানে না আদ্রিয়ান তাদের বাবা। কারণ আদ্রিয়ানই নিষেধ করেছে। বাচ্চাদের এতো বড় ধাক্কা দেয়া ঠিক হবে না। তাদেরকে বাঙ্গালীদের সব শেখানো হচ্ছে। আর সাগর এখন জয়ের সাথে পুরা আমেরিকা ঘুরে দেখছে।

অন্যদিকে,

নিজেদের অজান্তেই দুটো মন চুরি হয়ে গেছে। আজ সন্ধ্যার আড্ডায় নিলয় কে গান গাইতে বললে সে গেয়ে ওঠে

দুটি মন আর নেই দুজনার

রাত বলে আমি সাথি হব যে
ফাগুনের রাতে আমি রুপকথা হয়ে কাছে রব যে

দুটি মন আর নেই দুজনার।

ফুল বলে রঙ্গে আর ছেয় না
পাখি বলে আর গান গেয় না

আমাদের মিতালি মায়াকে
কানে কানে কত কথা কব যে।

দুটি মন আর নেই দুজনার।

গানটা শুনে সকলে মনে মনে হেসেছিল। কারণ সবাই জানে কার মন কার কাছে নেই। তাও কিছুই বলছে না। সময়ের হাতে সব ছেড়ে দিয়েছে সবাই। আল্লাহ নিশ্চয়ই কাউকে নিরাশ করে না। সকলে তার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে।

রাত ১২টা ৩০,

নিলয়ের মোবাইলে একটা মেসেজ আসে।

সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ছাদে এসো। কথা আছে।
আরশি

সবাই ঘুমানোর পর নিলয় পা টিপে ছাদে চলে যায়। আর সাথে সাথে কে যেন ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

– উ মা গো। কোন শালারে আমাকে ফালায় দেয়( নিলয়)

– আমি বে ( আরশি)

– ওহ মহা রাণি আপনি?? তা বলুন কেন ডেকেছিলেন আমাকে?? ( নিলয়)

– ওই আমার ভাতিজা-ভাতিজি তোকে পাপা কেন বলে?? ( আরশি নিলয়ের কলার চেপে)

– ছোট থেকে আমাকে দেখেছে আমার কাছে বড় হয়েছে তাই?? ( নিলয়)

– কেন?? অন্যের বাচ্চা তোকে আব্বু কেন ডাকবে?? নিজের ক্ষমতা নাই বাচ্চা জন্ম দেয়ার ( আরশি)

– একটা সুযোগ দাও দেখায় দিব। কি আছে কি নাই ( নিলয়)

– শখ কত? সর যা ( আরশি)

– আচ্ছা ( বলেই ভদ্র ছেলের মতো নিলয় যেতে লাগল।

সাথে সাথেই আরশি নিলয়ের চুল ধরে নিজের সামনে আনে।

– ওই কই যাস তুই ( আরশি)

– আল্লাহ দেখ কি হচ্ছে। একটা মাসুম বেচাড়া পুরুষের ইজ্জত হরণ করছে এই মেয়েটা। আল্লাহ বাচাও আমাকে। ( নিলয়)

– কেউ বাচাবে না তোমাকে বাছা ধন। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তারপর যাইতে পারবা( আরশি)

– জি মহা রাণি বলুন( নিলয়)

– ভালোবাসিস আমায়?? ( আরশি)

– নিজের চেয়েও অনেক বেশি ( নিলয়)

– তো প্রপোজ কি তোর বাবা করবে?? ( আরশি)

– না আমি করব ( নিলয়)

– তো কর ( আরশি)

– সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঝগড়া করার একটা তুমি চাই। হাজার নিস্তব্ধতার মাঝে যার নিশ্বাস হবে আমার একমাত্র অবলম্বন। যার কোলে মাথা রেখে নিশ্চিতে হাজার বছর কাটাতে পারব। নো ফ্লাটিং, নো চিটিং, নো টাইম পাস। তুমি কি আমার শেষ বয়সের অবলম্বন হবে?? ( নিলয়)

– ইয়েস আই উইল ( আরশি)

আরশি কথাটা বলার সাথে সাথে নিলয় আরশি কে জড়িয়ে লম্বা একটা কিস করে দৌড় দেয়। আর আরশি?? কি হলো বুঝতে না পেরে দাড়িয়ে আছে।

অন্যদিকে,

নওশি সব দেখে বেশ খুশি হলো। কারণ আদ্রিয়ান আসার পর ও অনুতপ্ত ছিলো এই ভেবে যাতে নিলয়ের সাথে কিছু ভুল না হয়।

পরেরদিন সকালে,,

আয়ানের জন্য নতুন ইলেক্ট্রনিক গিটার নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু ঠিক ভাবে চেক করা হয় নি বলে সম্পুর্ন গিটার টাই কারেন্ট হয়ে আছে। আদ্রিয়ান সব দেখেও কিচ্ছু করতে পারছে না। এদিকে আয়ান আসছে গিটারটি নিতে।

আদ্রিয়ান অনেক চিৎকার করলেও আয়ান শুনতে পায় না। শেষে অনেক কষ্ট করে নিজের পায়ে দাড়িয়ে পরে আদ্রিয়ান। আর বাচিয়ে নেয়। তার কলিজার টুকরাকে।

চলবে???

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)
পর্ব :১১
লেখা kashfuzjahan

জিসানদের বাড়িতে বিচার সভা বসেছে। আসামি নিলয় আর আরশি?? কারণ নওশি সব বলে দিয়েছে সবাইকে।

– কিরে নিলয় তুই নাকি আরশি কে প্রপোজ করেছিস?? ( জিসান)

– ভাইয়া তুই কিভাবে জানলি?? ( নিলয়)

– কিভাবে জানি সেটা ব্যাপার না। জানি সেটাই ব্যাপার। ( জিসান)

– হ্যা ভাইয়া। ( নিলয়)

– ওই তুই না নওশিকে ভালোবাসিস। এতো তাড়াতাড়ি চেঞ্জ হয়ে গেলি?? শালা গিরগিটি ও তোর চেয়ে ভালো। ( জয়)

– ভাইয়া?? এসব কি বলছে দেখ ( নিলয়)

– তাই তো ভুল কি বললো?? ( জিসান)

– বেটা আমার ভাবির লগে লাইন মারা? খাড়া হাতে পাই তোরে। ( আরশি মনে মনে)

– দেখ ভাইয়া। এতোদিন ধরে নওশির সাথে থাকার পর একটা কথা বুঝেছি নওশিকে কখনো ভালোবাসি নি আমি। ছোট বেলা থেকে ওর সাথে মিশেছি তাই একটা মায়া ছিল। ভালোবাসা না। কারণ ভালোবাসা সে তো একটা অনুভূতি। কখন কার জন্য কাজ করে বলা যায় না। এতোদিন দেখেছি নওশি কিভাবে আদ্রিয়ান এর জন্য ওয়েট করেছে। সত্যি বলতে একবার হলেও আদ্রিয়ান কে আমার হিংসা হতো এটা ভেবে যে আমাকে এতো ভালোবাসার কেউ নেই কেন?? তবে অবশেষে আরশিকে পেলাম। যে আমাকে অনেক ভালোবাসে। হয়তো পরিচয় অনেকদিনের না তবে ভালোবাসা অনেক। ( নিলয়)

– তার মানে তুমি সত্যি আমার বোন কে ভালোবাস ( আদ্রিয়ান)

– জ্বি ( নিলয়)

– যাক ভালো। তাহলে এখন সালাম টা করে ফেল আফটার অল আমি তোমার বউয়ের বড় ভাই ( আদ্রিয়ান)

– ইইই আমিও নওশির বড় ভাই আগে আমাকে সালাম কর তারপর ( নিলয়)

– সালাম করলে যদি টাকা দাও তো করব এমনিও আমার চেয়ে ৪ মাসের বড় তুমি দিবা?? ( আদ্রিয়ান)

– তুই কি লুচ্চারে ভাইয়া। ( আরশি)

– আচ্ছা আচ্ছা সব ঠিক আছে। আগে বিয়ের ডেট ঠিক করি। তারপর সব হবে। ( জিসান)

– কার বিয়ে গো মামু?? ( আয়ান আর নোয়া)

– তোমার বাবা আবার বিয়ে করবে সোনা। ( জয় মুচকি হেসে)

– কিিিি পাপাই তুমি আবার বিয়ে করবা?? ( নোয়া)

– না মানে ইয়ে ( নিলয়)

– আসলে কি বলোতো সোনা তোমার পাপার কাছে তোমার মাম্মা পুরানো হয়ে গেছে। তাই আাবার বিয়ে করছে ( জয় নোয়াকে কোলে নিয়ে)

– কিহ্ আমার মাম্মাম পুরাতন হয়েছে?? তুমিই পুরাতন হয়েছো। আমি আবার মাম্মাম কে বিয়ে দিয়ে আর একটা পাপাই আনব যাও তুমি (আয়ান)।

– এই নাহলে আমার ছেলে। পুরাই রকেট। আগায় যাও সোনা। ( আদ্রিয়ান মনে মনে)

– এখনি ছেলে খুজ আজই। আচ্ছা আঙ্কেল তুমি আমার মাম্মাম কে বিয়ে করবে?? ( আয়ান সাগরের কাছে গিয়ে)

– ইয়ে, মানে বাবাই সোনা তোমার মাম্মাম কে তো বিয়ে করতামই কিন্তু আমার তো একটা বউ আছে, আবার বিয়ে করা যায় বলো?? ( সাগর)

– আদ্রিয়ান আঙ্কেলের তো বউ নেই তাহলে উনিই আমার নিউ পাপাই হবে। কি বলিস আায়ান ( নোয়া)

– হ্যা রে আমি না ভেবেই দেখিনি। আঙ্কেল তুমিই আমার নিউ পাপাই হবে। নিলয় পাপাই বাদ। ( আয়ান)

– ঠিক আছে কিন্তু৷,,,,,,,

– কোনো কিন্তু না। রাজি না হলে কিন্তু আড়ি তোমার সাথে। ( আয়ান)

– আরে আরে আমি তো রাজি। কিন্তু তোমার মাম্মাম মানবে তো?? ( আদ্রিয়ান)

– মাম্মাম কে আমরা রাজি করাব। বলেই নওশির কাছে যায়।

ও মাম্মা প্লিজ ভালো আঙ্কেল কে আমাদের পাপাই বানাও না প্লিজ মাম্মা প্লিজ। ও মাম্মাম প্লিজ। নিলয় পাপা দেখ কি করল। এখন আমাদেরও আর একটা পাপা চাই। প্লিজ৷ ( নোয়া আদ্রিয়ান এক সাথে)

– ওকে ওকে। তোমার মামুকে ডেট ফিক্সড করতে বলো ( নওশি)

– ইয়েেেে আমরা নিউ পাপা পেয়েছি। দেখ নিলয় পাপা ওপস নিলয় আঙ্কেল আমাদের নিউ পাপা। ( আদ্রিয়ান)

– ভাগ্য যে কার সাথে কোন খেলা খেলে বোঝা মানুষের কাজ নয় ( নিলয় মনে মনে)

রাতের বেলা নিস্তব্ধ আাকাশের নিচে বসে আছে নিলয় আর আরশি। অন্য দিকে ছাদে বসে আছে আদ্রিয়ান আর নওশি।

– জানো আদ্রিয়ান। যখন জানলাম তুমি আর নেই আমি সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাই যখন আমাকে হাসপাতালে নেয় জানতে পারি আমি প্রেগনেন্ট। তোমার সেদিনের ছোয়া আমাকে পূর্ণতা আর বেচে থাকার সাহায্য করেছে। সাথে ছিলো ভাই এরা আর নিলয়। নাহলে কবে মারা যেতাম ( নওশি)

আদ্রিয়ান নওশির মুখে হাত দেয়

– ছিঃ এসব বলতে নেই। এসব কেন করেছো তুমি। তোমার জীবন বাচাতে এতো কষ্ট করলাম। আর তুমিই পাগলামি করছো। ( আদ্রিয়ান)

– কি করব বলো। মাথার ঠিক ছিলো না। ( নওশি)

– আচ্ছা ওসব ছাড়ো। পুরানো কথা বাদ এখন অনলি রোমান্স

বলেই নওশিকে জড়িয়ে ধরে আদ্রিয়ান

নিচে,,,

– বাবু ( আরশি)

– উমমম

– ওই বাবুই ( আরশি)

– হুমমম

– হারামি তোর খুব শখ আমার ভাবির সাথে লাইন মারার তাই না। দাড়া দেখাচ্ছি তোকে বলেই এলো পাথাড়ি মারতে শুরু করে নিলয় কে।

বেচাড়া নিলয়। সব সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই কারণ মেয়েরা স্বামীর ভাগ কাউকে দেয় না.

চলবে???

ভালোবাসা পর্ব-০৯

0

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)

পর্ব:৯
লেখা: kashfuzjahan

– হ্যালো জিসান শুনতে শুনতে পাচ্ছ?? আমি আজ বাসায় যেতে পারব না। ( অন্তরা)

– কেন জানতে পারি ( জিসান)

– তোমাকে বলেছিলাম না যে বাংলাদেশ থেকে একজন পেশেন্ট আসবে। আর অবস্থা খুব খারাপ। তাই ২৪ ঘন্টা খেয়াল রাখতে হবে। একদিন আমি থাকব একদিন অনন্যা। এই ক্রিটিকাল কেস অন্যদের হাতে ছাড়তে ভরসা পাই না। ( অন্তরা)

– আচ্ছা ম্যাডাম। তা আপনি আসতে পারবেন না মানলাম। আমি তো আপনার কাছে যেতে পারি। ( জিসান)

– হ্যা আসতেই পার। কিন্তু যদি দুষ্টামি না কর তাহলে। (অন্তরা)

– কিিিি আমি দুষ্ট? এটা বলতে পারলা তুমি?? (জিসান)

– তুমি কত ভদ্র আয়ান কে দেখেই বোঝা যায়। একদম তোমার কার্বন কপি। ( অন্তরা)

– ওহ আচ্ছা তাহলে থাক যাব না ( জিসান)

– থাক এতো ঢং করার কিছু নাই। চলে এসো ( অন্তরা)

– আচ্ছা এতো করে যখন বলছো আসছি। ( জিসান)

– পাগল একটা.

মোবাইলে কথা শেষ করেই অন্তরা ভিতরে যায়। রোগীকে দেখতে।

– মিস্টার সাগর, আমাদের ট্রিটমেন্ট তো চলছে। প্লিজ দয়া করে নিচে গিয়ে এই ঔষধ গুলো নিয়ে আসুন। ( অন্তরা)

ডাক্তার এর কথা মতো সাগর নিচে যায় ঔষধ নিতে। আর এইদিকে বাড়ি থেকে হসপিটাল বেশি দুরে না হওয়ায় জিসান ও পৌঁছে যায় সেখানে। সাগর ঔষধ নিয়ে ফেরার সময় জিসানের সাথে দেখা।

– আরে সাগর দেখি। এখানে কেন তুমি?? ( জিসান)

– জিসান ভাই!! কোথায় ছিলেন আপনারা?? জানেন কতো খুজেছি আপনাদের কে?? রাতারাতি কোথায় চলে গিয়েছিলেন?? ( সাগর)

– আসলে আদ্রিয়ান চলে যাবার পর ওই রাতেই আমরা আমেরিকা চলে এসে ছিলাম। যাই হোক কে অসুস্থ?? ( জিসান)

– আসুন। নিজে দেখুন কে অসুস্থ। তাহলেই বুঝতে পারবেন। চলুন এখনি ( সাগর)

এক প্রকার টানতে টানতে জিসান কে উপরে নিয়ে যায় সাগর। জিসানও কিছু না বলে চলতে থাকে। কিন্তু উপরে গিয়ে আদ্রিয়ান কে দেখে অবাক হয়ে যায় জিসান।

– আ-আ-আদ্রিয়ান ( জিসান)

– কি হলো তুমি এই পেশেন্ট এর নাম জানলে কিভাবে?? চিনো তুমি ওকে??( অন্তরা)

– চিনব না কেন এযে আমাদের আদ্রিয়ান। আমাদের নওশির আদ্রিয়ান ( জিসান)

– কি বলছে এসব। তুমি তো বলেছিলে সে মারা গেছে। তাহলে এখন কিভাবে কি?? ( অন্তরা)

– আমিও তো বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। ( জিসান)

– সব পরে জানা যাবে আগে নওশি কে ফোন করি। বলেই বেড়িয়ে যায় অন্তরা।

ক্রিং ক্রিং

– হ্যালো নওশি কোথায় তুমি কি করছো। জয় আর নিলয় কোথায়?? ( অন্তরা)

– জয় ভাই অফিসে। আমি আর নিলয় ও অফিসের জন্য বের হব। (নওশি)

– অফিসে যেতে হবে না। নিলয় কে নিয়ে এখনি হসপিটালে চলে আস। আর অনন্যা কে বলো জয় কে নিয়ে আসতে। ( অন্তরা)

– ঠিক আছে। কিন্তু কেন ভাবী?? ( নওশি)

– সারপ্রাইজ ডিয়ার ননদিনী। তাড়াতাড়ি চলে এসো ( অন্তরা)

বড় ভাবীর কথা শুনে কলিজা কেপে উঠে নওশির। না জানি কি অপেক্ষা করছে তার জন্য। ভাইয়া ঠিক আছে তো?? দুর এতো ভাবার সময় নেই। নিলয় কে নিয়ে বেড়িয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

হাসপাতালে পৌছানোর পরেই নওশির হৃদপিন্ডের কম্পন বাড়তে থাকে। বড় ভাবী কিছুই বলছে না। সবাই আসলেই বলবে। সবার মুখ ভার। কিছুক্ষণের মধ্যে জয় আর অন্যনা চলে আসে।

– আমি যেটা বলতে যাচ্ছি তার জন্য সবাই নিজেকে শক্ত করে নাও। কারণ সহ্য নাও হতে পারে ( অন্তরা)

– ভাবী কি হয়েছে বলবেন তো। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে( জয়)

– কিভাবে যে বলি বুঝতে পারছি না। তোমাদের ভাই ও চুপ করে আছে। তোমরা কিভাবে নিবে বুঝতে পারছি না ( অন্তরা)

– ভাবী ভয় না দেখিয়ে বলে ফেলুন কথাটা ( নিলয়)

– আসলে কথাটা হলো,,,,,,,,,,,,,,, আদ্রিয়ান বেচে আছে। কিন্তু ওর অবস্থা খুবই খারাপ ( অন্তরা)

কথাটা যেন কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। নওশি তো এক প্রকার দৌড়ে ভিতরে চলে গেল। তার আদ্রিয়ান পড়ে আছে। চোখ দুটো যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। কিন্তু আদ্রিয়ান কে জিবিত দেখে নওশির কেমন রিয়্যাক্ট করা উচিত বুঝতেছে না।

কিছুক্ষন পর সবাই রুমে আসল। সাথে সাগর আর আরশিও।

– আসলে সাগরের অবস্থা যতটা খারাপ তার চেয়ে ওর বেচে থাকার ইচ্ছা শক্তি কম। তাই আমাদের উচিত ওর ইচ্ছা শক্তিকে ফিরিয়ে আনা ( অন্তরা)

– কিন্তু এসব কিভাবে কি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সেদিন তো আদ্রিয়ান আমাদের সামনে,,,,,,,,,,,,,,,,,,, ( জয়)

– আমি বলছি পুরো ব্যাপারটা। আসলে ওইদিন ওখান থেকে আদ্রিয়ান কে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই কারণ আমি মানতে পারি নি ও চলে যাবে এভাবে। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করে ওকে বাচাতে পারলেও এই অবস্থা হয় ওর। তোমাদের অনেক খোজার পরেও পাই নি। আর এতোদিন আরশি ওকে দেখে রেখেছে ( সাগর)

– আচ্ছা তোমরা যদি কিছু মনে না কর একটা কথা বলছি। আদ্রিয়ানকে বাসায় নিয়ে ট্রিটমেন্ট করি ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে। ( অন্যনা)

– সে আর বলতে। আমি সব ব্যবস্থা করে নিচ্ছি। সাগর আর আরশিও সাথে চলো। ( জয়)

কথা শেষ করে সবাই চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু নিলয় ভাবছে অন্য কথা বাচ্চারা এসব মেনে নিবে কিভাবে। কারণ তারা তো ছোট থেকে ওকেই বাবা বলে যেনে এসেছে। আদ্রিয়ানের বেচে থাকাটা একদিকে যেমন ওকে আনন্দ দিচ্ছে সাথে টেনশনও বাড়ছে। কি করে সামলাবে সব কিছু। ভাবতে ভাবতে বাড়ি পৌছে যায় তারা।

টিং টং,,

কলিংবেল এর শব্দ হবার সাথে সাথেই কাজের লোক দরজা খুলে দেয়। নোয়া ড্রয়িং করতে ব্যস্ত থাকলেও আয়ান ছুটে চলে আসে।

– মামু এরা কে গো চিনলাম না ( আয়ান)

– এটা তোমার একটা আংকেল আর আন্টি। বাংলাদেশ থেকে এসেছে। ( জিসান)

– অল আর বেঙ্গলি পিপল। আর ওইটা কে চেয়ারে এভাবে বসে আছে ( আয়ান)

– উনি??? উনি তোমার,,,,,,,,,,,,,,,, ( জিসান)

– উনি তোমার আর একটা আংকেল। অসুস্থ তো পড়ে কথা বলবে। অনেক মজা করবে ( নিলয়)

– আমার কারোর দরকার নেই তুমি আছো তাতেই হবে চলো এখন হোম ওয়ার্ক করায় দিবা। বলে নিলয় কে টেনে নিয়ে গেল আয়ান।

– বাবু কে কিছু বলতে দিল না কেন নিলয়( জিসান)

– ঠিক ই তো করেছে। দেখ,,, এতোদিন ওরা নিলয়কে বাবা বলে জেনেছে। এখন যদি জানে সব আলাদা তাহলে মানতে পারবে না। ওরা অনেক ছোট। ( অন্তরা)

– ঠিকই বলেছো নিয়তি যে ওদের সাথে কি খেলা খেলছে সেই জানে।

চলবে???