Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1427



আমি যারে চেয়েছিলাম পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

1

#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৬এবং শেষ
#Arshi_Ayat

সেহরীশ কিছু বলতেও পারছে না সইতেও পারছে না।ওই কথাগুলো বলে একবারে বিপাকেই পড়ে গেলো সে।এখন ওদের বুঝাবে কি করে সেটা নিয়েই সেহরীশ টেনশনে আছে।
কিন্তু তার আগে ব্যাপারটা এখনই রুদ্ধকে জানাতে হবে।তাই সেহরীশ তৎক্ষনাৎ রুদ্ধকে ফোন দিলো।রুদ্ধ রিসিভ করতেই আতংকিত কন্ঠে বলল,’জানো কি হয়েছে?’

‘কি হয়েছে?’রুদ্ধ কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করলো।

‘তোমার বাবাকে আমার চাচা মানা করে দিয়েছে।’

‘কেনো?’কিছুটা বিচলিত শোনালো রুদ্ধ’র কন্ঠ।

সেহরীশ নিজের আহাম্মকির কথা বলল।সবশুনে রুদ্ধ হতাশ কন্ঠে বলল,’এবার কিভাবে মানাবে মানও।আমি কিছু জানি না।’

‘এভাবে বলছো কেনো?’

‘হ্যাঁ তো কি করবো এখন!ওনারা তো আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়ে বসে আছে।’

‘একটু ভাবো না রুদ্ধ।দেখো না কোনো আইডিয়া আসে কি না।’

‘আচ্ছা দেখছি।’

তারপর দু’জনে আমি ভাবলো সেহরীশ ওর চাচা চাচির কাছে ওদের সম্পর্কের কথা বলবে আর রুদ্ধ’র সম্পর্কে বুঝিয়ে বুলবে।তাহলে হয়তো বুঝতে পারেন ওনারা।প্ল্যান মতো তাই করা হলো।রাতের খাবারের পর সেহরীশ আমতা আমতা করে চাচাকে বলল,’পাপা আমি তোমাকে কিছু বলবো।’

‘হ্যাঁ বল।’

‘আসলে মানে….’

‘কি বলবি বলে ফেল।’

‘ইয়ে মানে..আমি…’

‘সেহরীশ ভয় পাচ্ছিস কেনো মা?বলে ফেল।প্রমিস বকবো না।’

এবার একটু সাহস নিয়ে সেহরীশ বলল,’পাপা আমি আর রুদ্ধ দুজন দুজনকে ভালোবাসি।আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।’
কথাটা একটানে বলে ফেললো সেহরীশ।সেহরীশে কথা শুনে রেজাউল হক কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন আর সেহরীশ ওনার সামনে দাড়িয়ে কাচুমাচু করছিলো।কিছুক্ষণ পর উনি মুখ খুলে বললেন,’কিন্তু ও তোর উপযুক্ত না।তুই ই তো বলেছিস ওর চরিত্র ভালো না।অনেকগুলো প্রেম করে।ভার্সিটিতে র্যাগ দেয়।’

‘পাপা এগুলো ও আগে করতো কিন্তু এখন করে না।একটা ভালো চাকরীও হয়েছে ওর।’

‘আচ্ছা তুই ওকে কাল আসতে বল।আমি ওর সাথে কথা বলবো।কথা বলে যদি মনে হয় ও তোর যোগ্য তাহলে ভেবে দেখা যাবে।’

‘আচ্ছা পাপা।’
তারপর সেহরীশ নিজের রুমে গিয়ে রুদ্ধকে ফোন দিয়ে সব বলল।রুদ্ধ হাসতে হাসতে বলল,’সমস্যা নেই।উনি আমাকে পছন্দ করবেন।এতো চাপ নিও না।’

‘আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে খুব।’

‘টেনশন করলে শরীর খারাপ করবে সেহের।টেনশন করিও না।ভালো কিছুই হবে।ইনশাআল্লাহ!’

‘হ্যাঁ।ইনশাআল্লাহ!’
————–
পরেরদিন সন্ধ্যায় রুদ্ধ সেহরীশদের বাসায় এলো।সেহরীশ ওকে বসার ঘরে নিয়ে গেলো সেখানে চাচা,চাচি আছে।রুদ্ধ ওনাদের মুখোমুখি একটা সোফায় বসলো।সেহরীশও চেয়েছিলো ইন্টারভিউতে থাকতে কিন্তু রেজাউল হক বললেন,’সেহরীশ যা তো নাস্তা নিয়ে আয়।’

চাচার আদেশ মেনে রুদ্ধকে ইশারায় কিছু একটা বলে সেহরীশ চলে গেলো।

রেজাউল হক নিজেই প্রথমে বললেন,’কেমন আছো?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনারা?’

‘আমারও ভালো আছি।তোমার সম্পর্কে কিছু বলো।’

রুদ্ধ একটু সৌজন্যমূলক হেসে বলল,’নাম রুদ্ধ শেখ।মা নেই।বাবা রিটায়ার্ড।আমি একমাত্র ছেলে ওনাদের।মাস্টার্স শেষ করে এখন চাকরীতে আছি।’

‘বুঝলাম।কিন্তু তোমার নামে কয়েকটা ব্যাড রেকর্ড আছে।’

‘হ্যাঁ জানি।আগে এমন ছিলাম না।আমার রিলেশন ব্রেকাপ হওয়ায় ওমন হয়ে গিয়েছিলাম।তারপর সেহেরের সহযোগীতায় এখন ওসব থেকে দূরে আছি।ইনশাআল্লাহ আর কখনো জড়াবো না।আপনাদের অনুমতি থাকলে আমি আপনাদের মেয়ের সাথে বাকিটা জীবন স্বাভাবিকভাবে কাটাতে চাই।’

রুদ্ধ’র এমন সরল স্বীকারোক্তি পেয়ে সেহরীশের চাচা চাচির মনে হলো না ছেলেটা খারাপ।তবুও আরো কিছু খোঁজ খবর নিয়ে তারপর আগাবে।

সেদিনের মতো আলোচনা সেখানেই শেষ হয়েছিলো।তারপর রুদ্ধ আর ওনার একাসাথে নাস্তা করেছে।রেজাউল হক রুদ্ধ’র কাছ থেকে ওর বাবার নাম্বারটা নিলো।
———–
এরপর তিনদিন কেটে যায় রেজাউল হক এখনো কিছু বলেন নি।এদিকে রুদ্ধ,সেহরীশ দুজনেই টেনশনে আছে।

হঠাৎ আজকে সন্ধ্যায় সেহরীশের চাচি রুমে এসে বলল,’সেহের তোকে দেখতে আসবে আজকে।একটু রেডি হয়ে নে তো!’

সেহরীশ বিষ্ময় নিয়ে বলল,’কি বলছো?তুমি জানো না রুদ্ধ’র কথা।’

‘হ্যাঁ কিন্তু ওরা শুধু তোকে দেখতে এসেছে।দেখতে এলেই তো বিয়ে হয় না।’

‘বিয়ে না হলে দেখতে আসবে কেনো?আমি যাবো না।’

‘শোন মনা জিদ করিস না।ওরা আমাদের আত্মীয়!’

সেহরীশ মুখ ভার করে রেডি হলো আর রুদ্ধকে টেক্সট করলো।তারপর পাত্র পক্ষের সামনে যেতেই ওর মুখ হা হয়ে গেলো।রুদ্ধ ওর বন্ধুরা আর ওর বাবা বসে আছে।রুদ্ধ’র মুখে হাসি।ও সেহরীশকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।এবার পুরো কাহিনিটা সেহরীশ ধরতে পারলো।এসব প্ল্যান ছিলো।সবাই এর সাথে জড়িত।অথচা কাল রাতে রুদ্ধ এমন করছিলো যেনো সে চিন্তায় মরে যাচ্ছে!এর ওর সাথে নিজের চাচা চাচিও যুক্ত আছে।এই দুঃখ এখন কাকে বলবে সেহরীশ!

সেদিন ওদের বাগদান হয়ে গিয়েছিলো।সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো সেহরীশের ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষার পর বিয়ে হবে।
————-
সকাল থেকেই বাড়িতে হইচই।বিয়ে বাড়ি বলে কথা!কাল গায়ে হলুদ ছিলো।আর আজ বিয়ে।সেহরীশকে পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিচ্ছে।একটু পরই বরযাত্রী আসবে।আফসানা হক বারবার এসে সেহরীশকে দেখে যাচ্ছেন।ওনার খুব খারাপ লাগছে।খুব আদেরর ছিলো সেহরীশ।কিন্তু বিয়ে তো হবেই।

বরযাত্রী চলে এসেছে।সেহরীশ আর রুদ্ধ কে একসাথে বসানো হলো।কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।বিয়ে পড়ানো শেষে এবার খাবার পালা।বরযাত্রীরা খেতে বসলো।আর এদিকে রুদ্ধ আর সেহরীশ একসাথে বসে ফিসফিস করে কথা বলছে।কি বলছে এটা ওরাই জানে!

হঠাৎ ভিড়ের মধ্যেই চোখ পড়লো একটা মেয়ের দিকে।রুদ্ধ একটু বিষ্মিত হলো!এটা তো মিথি।সেহরীশ রুদ্ধ’র দৃষ্টি বরাবর তাকাতেই মিথিকে দেখলো।সেহরীশ মিথিকে চেনে।রুদ্ধ’ই দেখিয়েছিলো।ওর বিষয়ে সবকিছুই জানে কিন্তু আজকে ও এখনে কেনো?সেহরীশ রুদ্ধ’র হাতে হাত রেখে বলল,’রুদ্ধ,মিথিকে ডাকবো?কথা বলবে?’

রুদ্ধ চোয়াল শক্ত করে বলল,’নাহ!আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই না।ওর সাথে আমার সব কথা শেষ।এখন তুমিই আমার ভালোবাসা আর জীবনসঙ্গী।ও কেউ না আমার।সম্পূর্ণ অপরিচিত!’

এগুলে বলে সামনে তাকাতেই দেখলো মিথি ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।রুদ্ধ’র সামনে দাড়িয়ে বলল,’কেমন আছো রুদ্ধ?’

‘এক্সকিউজ মি?কে আপনি?আর তুমি করে বলছেন কেনো?অপরিচিত ব্যাক্তিকে তুমি করে বলাটা কোন ম্যানার্স?’

রুদ্ধ হঠাৎ এমন আক্রমণাত্মক কথা শুনে মিথি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’সরি।আমি দাওয়াতে এসেছি এখানে।নতুন বর বউ দেখতে এসেছি।কেমন আছেন আপনারা?’

রুদ্ধ কিছু বলল না।তবে সেহরীশ বলল,’আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি?’

‘এইতো আছি কোনোরকম।আপনাদের জন্য শুভকামনা।নতুন জীবনের পথচলা শুভ হোক।’এটা বলেই সৌজন্য হেসে মিথি চলে গেলো।কিন্তু মিথি যাওয়ার পর রুদ্ধ’র মনে একটু খচখচানি হলো।মিথি কি ভালো নেই?হয়তো নেই!হয়তো আছে!তবে রুদ্ধ’র সেসব জানার আগ্রহ নেই।

যেতে যেতে শেষবারের মতো একবার রুদ্ধকে দেখে মিথি চলে গেলো।নিজেকে খুব অভাগী মনে হচ্ছে।মিথির বর কিছুদিন আগেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে কারণ মিথি কখনো মা হতে পারবে না।মিথির অনেক কান্নার পরও দ্বিতীয় বিয়ে আটকাতে পারে নি।মিথির বাবা মা চেয়েছিলো মিথি কে নিয়ে আসবে কিন্তু মিথিই আসতে চায় নি সে সতীনের সাথেই ঘর করবে এবং সে তার পরিণতি মেনে নিয়েছে।

‘যার যার কর্মফল সে ভোগ করবেই।’

সমাপ্ত..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)

আমি যারে চেয়েছিলাম পর্ব-০৫

0

#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

সেহরীশ ঘাবড়ে গেলো রুদ্ধের কথা শুনে।ঢোক গিলে বলল,’ক.. কি ক.. করবেন আপনি?’

রুদ্ধ হাসলো।বলল,’ভয় পেয়ো না।কিছুই করবা না আমি।অতোটাও খারাপ না যতোটা ভাবো।তবে আমি তোমার গায়ে হাত দিয়েছি বা অসভ্যতা করেছি এগুলো প্রিন্সিপালকে না বললেও পারতে।মিথ্যে কথাগুলো বানিয়ে বলার কি প্রয়োজন ছিলো।

রুদ্ধ’র কথাগুলো শুনে সেহরীশ আকাশ থেকে পড়লো।এমন কোনো কথাই তো সে স্যারকে বলে নি।যা সত্যি তাই বলেছে।এক বর্ণ মিথ্যেও বলে নি সে তাহলে রুদ্ধ এগুলো কেনো বলছে?সেহরীশ বিস্মিত হয়ে বলল,’না,এগুলো তো আমি বলি নি।আমি শুধু বলেছি আপনি নতুনদের র্যাগ দেন।এবং আমাদের নিয়ে যে কাহিনি রটেছে সেটার কথা বলেছি।এছাড়া আর কিছুই বলি নি।সত্যি!’

রুদ্ধ এক ভ্রু কুঁচকে বলল,’সত্যি?’

সেহরীশ অসহায় চাহনী দিয়ে বলল,’হ্যাঁ সত্যি।বিশ্বাস করুন।’

‘কিন্তু আমাকে তো আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড বলল তুমি আমার নামে হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ এনেছো!’

‘না,আমি কোনো হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ আনি নি।আমি তো র‍্যাগিং এর কথা বলেছি।আপনার বিশ্বাস নাহলে আমার চাচার সাথে কথা বলতে পারেন।আমার চাচাও সাথে গিয়েছিলো।’

রুদ্ধ বুঝতে পারলো এখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।ওকে ভুল ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে।তবুও রুদ্ধ বলল,’হ্যাঁ তবুও তো নালিশ করেছো।’

রুদ্ধ’র এই কথা শুনে সেহরীশ বলল,’হ্যাঁ আপনি আমাদের মতো নিরীহ,মাসুম,অবলা স্টুডেন্টদের র‍্যাগিং দিলে দোষ নাই আর আমি নালিশ করলেই দোষ?’

সেহরীশের এমন অভিযোগে রুদ্ধ’র চেহারায় মৃদু হাসির রেখা খেলে গেলো।উত্তরে বলল,’র‍্যাগিং না দিলে জুনিয়র’রা ঠিক থাকে না সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করে।’

‘কিন্তু আপনারা তো শুধু শুধু র‍্যাগিং দেন।যাদের দেওয়ার দরকার নেই তাদেরও দেন।’সেহরীশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল।

‘র‍্যাগিং দেওয়া ভালো জানো?র‍্যাগিং দিলে মন মেজাজ ভালো থাকে,শারীর ভালো থাকে।শরীরে একটা সিনিয়র সিনিয়র ভাব আসে।র‍্যাগিং না দিলে জুনিয়র’রা কিভাবে বুঝবে যে আমরা সিনিয়র!’

সেহরীশ রুদ্ধ’র যুক্তিহীন ব্যাখা শুনে মুখ বাঁকা করে মনে মনে বলল,’এহ!সিনিয়র ভাব নিতে চায় আবার!’
কিন্তু মুখে এগুলে কিছুই বলে নি।

তারপর আরো অনেক্ক্ষণ ছাদে দাড়িয়ে কথা বলল।সেদিন ওদের মধ্যে যে ভয়/ভীতি বা জড়তা সেটা চলে গিয়েছিল।দু’জনই দুজনের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে।এরপর থেকে রুদ্ধ আর ভার্সিটিতে যায় না।তবে ওদের মধ্যে প্রায়ই ফেসবুকে নাহয় সরাসরি কথা হয়।

এদিকে সব ভালোই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন ওরা দুজনই রাস্তা দিয়ে হাটছিলো কথা বলতে বলতে।আজকে রাস্তায়ই দুজনের দেখা হয়।কোনো এক কৌতুহলে সেহরীশ রুদ্ধ’র কাছে ওর অতীত সম্পর্কে জানতে চাইলো।রুদ্ধ সবই বলল।সব শুনে সেহরীশ বলল,’দেখুন একটা মেয়ের জন্য আপনি আপনার লাইফটা নষ্ট করতে পারেন না।সবাইতো আর আপনার এক্স না।এমন কেউ আছে যে হয়তো আপনাকে খুব ভালোবাসবে তার জন্য হলেও শুধরে নিন নিজেকে।প্রতিষ্ঠিত হোন।’

রুদ্ধ উদাশ গলায় বলল,’আমি তো ওকে ভুলতে পারছি না।একবছর হয়ে গেলো এখনো স্মৃতিগুলো আমায় বড্ড পোড়ায়।এমন কে আছে যে ওর নামটা আমার হৃদয় থেকে মুছে নিজের নাম গড়ে নেবে?আমিও তো চাই মুক্ত হতে।কিন্তু পারছি না!’

সেহরীশের কি হলো কে জানে।সে হঠাৎ রুদ্ধ’র হাত ধরে বলল,’আমি যদি ভালোবাসি আপানকে?’

‘তুমি ভালোবাসবে আমায়?’

‘হ্যাঁ বাসবো তবে আমায় কথা দিতে হবে আপনি নিজেকে পরিবর্তন করবেন।’

‘কথা দিলাম।’

শুরু হলো একসাথে নতুন পথচলা।সেহরীশ এর জন্য এখন আবার চাকরীর ইন্টারভিউ দেয় রুদ্ধ।আগের সব গার্লফ্রেন্ডের কাছে ক্ষমা চেয়ে ব্রেকাপ করেছে।এখন দুজনের সম্পর্ক ভালোই চলছে।রুদ্ধ চাকরী পেলে সেহরীশ ওর বাসায় রুদ্ধ’র কথা বলবে।
————–
প্রায় ৪ মাস পরের কথা….
রুদ্ধ আজকেও ইন্টারভিউতে গেছে।এই চাকরীটা হওয়ার সম্ভবনা আছে।এই চাকরীটা হলেই সেহরীশের বাসায় প্রস্তাব পাঠানো যাবে।

সেহরীশ রেডি হয়ে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো।আফসানা হক সেহরীশে রুমে আসলো।তারপর ওর পিছনে দাড়িয়ে বলল,’আজকে ভার্সিটি যাস না।তোর পাপা বন্ধুর ছেলে আসবে তোকে দেখতে।’

সেহরীশ আফসানা হকের কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’মামণি,আমি এখন বিয়ে করবো না।অন্তত ফার্স্ট ইয়ারটা শেষ হোক।’

‘আরে কে তোকে বলেছে বিয়ে করতে?দেখা শেষ হলে মানা করে দিবি।তোর পাপার বন্ধু বলে কিছু বলি নি আমি।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি আমরাও বিয়ে দিবো না।’

আফসানা হকের কথা শুনে সেহরীশ আর ভার্সিটিতে গেলো না।ওই ছেলের সাথে দেখা করতে রেস্টুরেন্টে গেলো।

দেখা করে কথাবার্তা বলে ছেলেকে বুঝালো ও এখন বিয়ে করবে না।ওর ইনিয়েবিনিয়ে না করাটা ছেলে বুঝে গেলো তাই কথা আর দীর্ঘস্থায়ী হলো না।এতে সেহরীশ অবশ্য খুশিই হয়েছে।

বসায় ফিরে রুদ্ধ’র মেসেজ চেক করতেই দেখলো ও দেখা করতে বলেছে বিকেলে।কি যেনো বলবে!’

বিকেলে আফসানা হককে বলে সেহরীশ বাইরে গেলো রুদ্ধ’র সাথে দেখা করতে।গিয়ে দেখলো রুদ্ধ আগেই চলে এসেছে।সেহরীশ রুদ্ধ’র কাছে গিয়ে দাড়ালো।বলল,’হঠাৎ এতো জরুরী তলব?’

‘দু’টো নিউজ আছে।দুটোই আনন্দের একটা দুঃখের।কোনটা আগে বেশি আনন্দের?নাকি কম আনন্দের?’

‘কম আনন্দ দিয়ে শুরু করে বেশি আনন্দ দিয়ে শেষ করো।’

রুদ্ধ সেহরীশের হাতে একটা খাম দিয়ে বলল,’আমার চাকরী হয়ে গেছে!’
রুদ্ধ’র কথা শুনে সেহরীশ খুশীতে লাফিয়ে উঠে বলল,’সত্যি!’

‘হ্যাঁ সত্যি।’

‘এবার তাহলে ট্রিট দাও।’

‘কিসের ট্রিট?বেতন পেলে দিবো।এখন গরিব আমি।’

‘আচ্ছা তাহলে এবার বেশি আনন্দের সংবাদ’টা দাও।’

‘বেশি আনন্দের সংবাদ হলো তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠিয়েছি।আমাদের বিয়ে বোধহয় হয়েই যাবে।’

সেহরীশ ভিষণ খুশী হলো।একসাথে এতোগুলো খুশীর সংবাদ মনটাকে আনন্দে ভরিয়ে দিলো।
——————
সেহরীশ নিজের রুমে বসে রুদ্ধ’র সাথে চ্যাট করছিলো।হঠাৎই আফসানা হক সেহরীশের রুমে এলো।তারপর উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,’জানিস!তোর পাপার কাছে ওই বখাটে ছেলের বাবা এসেছিলো তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।তোর চাচা মানা করে দিয়েছে।একদম ঠিক হয়েছে।ওমন ছেলের কাছে আমি তোকে দিবো না।’

আফসানা হকের কথা শুনে সেহরীশের মাথায় হাত পড়লো।ইশ!কি সর্বনাশটা হয়ে গেলো।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

আমি যারে চেয়েছিলাম পর্ব-০৪

0

#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat

রুদ্ধকে বাড়ির সামনে দেখে সেহরীশ এগিয়ে এলো।বলল,’আপনার জন্য আজকে মানুষের কাছে অপদস্ত হতে হচ্ছে আমার।পুরো ভার্সিটিতে রটে গেছে আমি আপনার প্রেমিকা।শুধু প্রেমিকা না কতো নাম্বার প্রেমিকা এটা জিগ্যেস করছে সবাই।’

রুদ্ধ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,’তো?তাতে কি হয়েছে?তোমার গায়ে ফোস্কা পড়েছে?মানুষের কথা এতো গায়ে লাগলে তো টিকতে পারবে না এই দুনিয়ায়!কয়েকদিন বলবেই তারপর নতুন ইস্যু পেলে এটা ভুলে যাবে।জাস্ট ইগনোর ইট!কাম অন!’

‘আপনার কাছে এতো সহজ মনে হলেও আমার কাছে একদমই মনে হচ্ছে না।চিনিও জানিও না এমন একটা ছেলের সাথে গুজব রটিয়ে দিলে কার ভাল্লাগবে?যত্তসব!’

এটা বলেই সেহরীশ রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।আর রুদ্ধ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোনটা বের করে তাসিনকে ফোন দিলো।তাসিন রিসিভ করতেই বলল,’দোস্ত আর কতক্ষণ লাগবে?’

‘এইতো আসছি।তুই মাঠে যা।’

‘আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।’

রুদ্ধ ফোন রেখে মাঠের দিকে হাটা ধরলো।একটু আগে আজকের দিনের শেষ টিউশনি করিয়ে বের হলো রুদ্ধ।আজ সব টিউশনি সকালে করিয়ে ফেলেছে।আজকে ম্যাচ হবে।ক্রিকেট ম্যাচ।অনেকদিন হয় বন্ধুরা একসাথে ক্রিকেট খেলা হয় না।আজকে তাসিনের অফিস বন্ধ।কিন্তু অনিমেষের ডিউটি আছে তবে ও অফিস থেকে এসে জয়েন করবে।
————
আকাশে সন্ধ্যা ভর করেছে।আস্তে আস্তে দিনের আলো নিভে যাচ্ছে ছেয়ে যাচ্ছে অন্ধকার!কিছুক্ষণের মধ্যেই মাগরিবের আজান পড়বে।সেহরীশ ঘরের দরজা বন্ধ করে পোট্রের্ট করছে।তার মামাণি আর পাপার।কয়েকদিন পরই তাদের বিবাহবার্ষিকী।ওইদিন এটা গিফট করবে বলেই এই পোট্রের্ট’টা সেহরীশ লুকিয়ে তৈরি করছে।

দরজায় কেউ নক করতেই সেহরীশ অসম্পূর্ণ পোট্রের্ট’টা আলমারিতে লুকিয়ে ফেললো।তারপর সবকিছু ঠিকঠাক করে দরজা খুলতেই দেখলো আফসানা হক পায়েসের বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।উনি সেহরীশকে দেখে বললেন,’নে পায়েসটা খেয়ে বল কেমন হয়েছে।’

সেহরীশ পায়েসের বাটি’টা একহাতে নিয়ে আরেকহাতে আফসানা হকের একহাত ধরে টেনে এনে বিছানায় বসালো নিজেও পাশে বসে বলল,’চলো,একসাথে খাই।’

আফসানা হক কিঞ্চিৎ হেসে বললেন,’আচ্ছা।’

সেহরীশ এক চামচ নিজে খাচ্ছে পরের চামচ চাচীকে খাওয়াচ্ছে।আর ফাকে ফাকে টুকটাক কথা হচ্ছে।কিন্তু হঠাৎ দরজায় বেল বাজায় আফসানা হক দরজা খুলতে চলে গেলেন।দরজা খুলতেই দেখলো রাফিন ঘামে গোসল করে ফিরেছে।ওর পিছনে আরো তিনজন ছেলেকে দেখা যাচ্ছে।রাফিন ঘরে ঢুকে ৩ টা ছেলেকে বলল,’ভাইয়া আপনারা ঘরে আসুন।’

ওরা ঘরে আসলো।রাফিন আফসানা হককে উদ্দেশ্য করে বলল,’মা,ওনাদের সাথে আজকে আমি ক্রিকেট খেলেছি।ভাইয়ারা অনেক টায়ার্ড হয়ে আছে।একটু নাস্তা দিও।’

আফসানা হক সৌজন্য হেসে বললেন,’আচ্ছা তোমরা বসো।আমি আসছি।’

আফসানা হক চলে গেলেন।রুদ্ধ,অনিমেষ আর তাসিন সোফায় বসলো।আর রাফিন ভেতরে চলে গেলো।বসার ঘরের চারপাশে চোখ বুলাতেই রুদ্ধ খেয়াল করলো একটা জলছবি।জলছবিটা তিনটা ছেলেমেয়ের।এদের মধ্যে দুইজনকে চেনা যাচ্ছে কিন্তু আরেকজন কে?ছবিটার মাঝখানে সেহরীশ চেহারা হাসার ঝিলিক।বামপাশে রাফিন আর ডানপাশের ছেলেটাকে চেনা যাচ্ছে না।তবুও রুদ্ধ আন্দাজ করে নিলো এটা হয়তো ওদেরই ভাই হবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আফসানা হক নাস্তা নিয়ে এলেন।এই ফাঁকে রাফিনও ফ্রেশ হয়ে আসলো।রাফিন আফসানা হকের সাথে ওদেরও পরিচয় করিয়ে দিলো।এরপর টুকটাক সবার মধ্যেই কথা হতে লাগলো।নাস্তা শেষে ওরা আফসানা হক আর রাফিনের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

এই এতক্ষণের মধ্যে একবারও সেহরীশ ওদের সামনে আসলো না।শুধু দরজা দিয়ে একবার উঁকি দিয়ে মানুষগুলোকে দেখে নিয়ে নিজের রুমেই বসে রইলো।

ওরা যাওয়ার পর আফসানা হক আবারও রুমে এলেন।সেহরীশ আফসানা হককে ডেকে বলল,’মামণি রাফিনকে বলো ওই ছেলেগুলোর সাথে মিশতে না ওরা ভালো না।’

আফসানা হক ভ্রু কুঁচকে বললেন,’কি বলিস!তুই চিনিস নাকি ওদের?’

‘হ্যাঁ সব ক’টা ফালতু।আমাদের ভার্সিটির ওরা।মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু তবুও ভার্সিটিতে আসে নতুন ছেলেমেয়েদের জ্বালাতন করতে।’
তারপর সেহরীশ প্রথম দিন কি কি হয়েছে রুদ্ধ কি বলেছে!সব আফসানা হককে বলল।

আফসানা হক চটে গিয়ে বলল,’তোদের স্যার’রা কিছু বলে না?এসব বেয়াদবদের ভার্সিটিতে ঢুকতে দেয় কেনো?আমি তোর পাপাকে বলবো।কাল তোরা গিয়ে নালিশ দিয়ে আসবি।আর রাফিনকেও বলছি।সর্বনাশ!ছেলেটা কাদের সাথে মিশছে!’

এগুলো বলেই আফসানা হক সেহরীশের ঘর থেকে বেরিয়ে রাফিনের ঘরে গেলো ওকে ওদের সাথে না মেশার জন্য বলতে।
————–
রেজাউল হক আর সেহরীশ আজ একসাথে বেরিয়েছে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।কাল রাতে আফসানা হক রেজাউল হককে সবটা জানিয়েছেন।সামনে সেহরীশও ছিলো।সব শুনে রেজাউল হক নিজেই রাজি হলেন নালিশ করার জন্য।তাই আজকে সকলে চাচা ভাতিজী একসাথে রওনা হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

প্রথমে সেহরীশের ডিপার্টমেন্টের হেড’কে জানানোর পর উনি বললেন প্রধান শিক্ষককে বলতে হবে।রেজাউল হক আর সেহরীশের প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ দিয়ে আসলো।উনি ওদের আশ্বস্ত করেছেন ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রেজাউল হক তর অফিসে চলে গেলেন আর সেহরীশ লাইব্রেরিতে গেলো।চমৎকার একটা উপন্যাস নিয়ে পড়তেও বসে গেলো।ক্লাস শুরু হওয়া পর্যন্ত পড়া যাবে।
—————
আজকেও বাউলা গানের আসর ছিলো বটতলায় কিন্তু দারওয়ান ওদের ঢুকতে দিচ্ছে না।জিগ্যেস করতেই বলল প্রধান শিক্ষকের নাকি কড়া না আছে।এখন থেকে ওরা আর ভার্সিটিতে আসতে পারবে না কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেনো রুদ্ধ,অনিমেষ,তাসিনসহ বাকিরা কেউই বুঝতে পারছে না।
রুদ্ধ দারোয়ানকে টাকা দিয়েছে বিষয়টা জানার জন্য!দারোয়ান তো আগেই জানতো তাই ব্যাটা টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল,’আপনাদের নামে কেউ নালিশ করেছে তাই আপনাদের ঢোকা মানা।’

রুদ্ধ চোয়াল শক্ত করে বলল,’কে নালিশ দিয়েছে সেটা জানো চাচা?’

‘না সেটা তো জানি না।’

সেদিনের মতো এতটুকু খবর নিয়ে রুদ্ধ’রা চলে গেলো।এরপর আরো কয়েকদিনও ওরা ভার্সিটির গেট থেকে ফিরে এসেছে।কিন্তু ঢুকতে দেয় না।রুদ্ধ ভিষণ রাগ লাগছে।কার এতো সাহস নালিশ দেয়!জানতে হবে! রুদ্ধ ওর কয়েকজন জুনিয়রকে দায়িত্বে রাখলো খবর নেওয়ার জন্য।জানতে পারলেই যেনো বলে।
———-
এরপর আরো কয়েকদিন কাটলো।ভার্সিটিতে কেউই আর এখন সেহরীশকে খোঁচা দেয় না।সবাই ব্যাপরটা ভুলে গেছে।সাথে সেহরীশও।আজকাল রুদ্ধ’র সাথে ওর দেখাও হয় না।কারণ সময়ই তো মিলে না কারো সাথে।

সেহরীশ ছাদে দাড়িয়ে আছে।আজ আকাশ পরিষ্কার।মেঘ নেই।এখন বিকেল।আকাশে রং বেরঙের ঘুড়ি উড়ছে।দেখতে ভালোই লাগছে।সেহরীশ আকাশ পানে চেয়ে ঘুড়ির কাটাকাটি দেখছে।ছাঁদে আর কেউ নেই।আফসানা হক শপিং এ গেছেন।সেহরীশকেও নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ও যাবে না তাই উনি একাই গেলেন।রেজাউল হক বিকেলে হাটতে বেরিয়েছেন আর রাফিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে গেছে।খালি বাসায় থেকে সেহরীশ বোর হচ্ছিলো বলে ছাদে চলে এসেছে।এখন ভাল্লাগছে।

হঠাৎ পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেহরীশ ঘুরে দাড়ালো।রুদ্ধ!হ্যাঁ রুদ্ধ’ই দাড়িয়ে আছে।রুদ্ধকে হঠাৎ দেখে সেহরীশ এক মুহুর্তের জন্য ভয় পেয়ে গেছিলো।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’আপনি?’

‘হ্যাঁ আসলাম একটা কারণ জানতে।’

এবার সেহরীশ একটু ভয় পেলো।রুদ্ধ কি কোনো ভাবে জেনে গেলো নাকি?না না ওর সাথে কথা বলা যাবে না।কিছুতেই না।এই ভেবে সেহরীশ বিনাবাক্যে চলে যেতে নিলেই রুদ্ধ পেছন থেকে ওর ওড়না ধরলো।ওড়নায় টান পড়ায় সেহরীশ পেছনে তাকিয়ে দেখলো রুদ্ধ হাসছে।তারপর রেলিং এ আয়েশি ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলল,’তোমার সাথে কথা আছে।কথা শেষ না করে এভাবে তো যাওয়া যাবে না।’
।সেহরীশ ঢোক গিলে বলল,’আ আমার ক কোনো কথা নেই।আমার ওড়না ছাড়ুন।’

‘পারলে ছাড়িয়ে নাও।কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওড়না ছাড়া হবে না।যদি কথা না বলেই চলে যেতে চাও তাহলে হয়তো ওড়না ছাড়াই চলে যাও আর নয়তো আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নাও।’

সেহরীশ আর কি করবে!আগে জানলে আজকে ছাদেই আসতো না দরকার পরলে আফসানা হকের সাথে মার্কেটেই চলে যেতো।সেহরীশ রুদ্ধর পাশে এসে দাড়ালো।রুদ্ধ সেহরীশের ওড়নাতে একবার গিট দেয় আবার খোলে।বেচারি কিছু বলতেও পারছে না সইতেও পারছে না।হুট করেই রুদ্ধ বলল,’স্যারের কাছে নালিশ করাটা কি খুব দরকার ছিলো?আমি তোমার সাথে কি কোনো অসভ্যতামি করেছি?তোমার গায়ে হাত দিয়েছি?নাহ!এগুলো কিছুই করি নি।কিন্তু তবুও তুমি আমার নামে নালিশ করলে।মিথ্যা অপবাদ দিলে।যারা আমাকে প্লে বয় বলে ওদের বলো এমন প্রমাণ দিতে যে আমি কোনো মেয়ের সাথে অসভ্যতা করেছি।হ্যা আমি কয়েকটা প্রেম করি কিন্তু সেগুলো শুধুই নাম মাত্র।আচ্ছা এবার বলো তুমি যে অপবাদটা দিলে এখন যদি তোমার সাথে অসভ্যতা করি তাহলে অপবাদটা সত্যি হয়ে যাবে!আর জানো তো আমার না মিথ্যা অপবাদ নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে না।তাই অপবাদটা সত্যিই করে দেই কি বলো?’

চলবে…

আমি যারে চেয়েছিলাম পর্ব-০৩

0

#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

সেহরীশ এবার না পেরে বলল,’আপনি আমার পিছনে হাটছেন কেনো?পাশাপাশি হাটুন।’

রুদ্ধ এক ভ্রু কুঁচকে বলল,’কেনো?

‘মনে হচ্ছে আপনি আমাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

‘আচ্ছা তাহলে আমি সামনে হাটি তুমি পিছনে হাটো কিন্তু পাশাপাশি হাটা যাবে না।তোমার বাড়ির সামনে আসলে ডাক দিও।’

‘আচ্ছা।’
এরপর দুজনের অবস্থান পরিবর্তন হলো।রুদ্ধ সামনে গেলো আর সেহরীশ পিছনে।পিছন থেকে সেহরীশ রুদ্ধকে পূর্ণদৃষ্টিতে লক্ষ করলো।আধ ভেজা স্যান্ডো গেঞ্জি আর কালো জিন্স পড়া একটা তাগড়া যুবক।ভেজা গেঞ্জির বাইরে পিঠের একাংশ বেরিয়ে আছে।তাতে দুই তিন বিন্দু বৃষ্টির ফোটা।ফর্সা না হলেও শ্যমলা ধরন।লম্বায় ৫’১০” হবে।সেহরীশ নিজের হাইট আর রুদ্ধের হাইট তুলনামূলক মেপে বুঝলো ও রুদ্ধ’র চোয়াল বরাবর হতে পায়ে।

সারা রাস্তা রুদ্ধকে আগাগোড়া গবেষণা করতে করতে এসেছিলো বলে খেয়াল নেই কখন বাড়ির গেট ছেড়ে আরো দূরে চলে এসেছে।হঠাৎ রুদ্ধ পেছন ফিরে বলল,’আর কতোটুকু?তুমি না বললে কাছেই?’

রুদ্ধের কথা শুনে সেহরীশ থতমত খেয়ে খেয়াল করলো বাড়ির গেট থেকে আরো কিছুদূর চলে এসেছে ওরা।সেহরীশ জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,’ইশ!খেয়াল ছিলো না।কখন গেট পেরিয়ে চলে এসেছি।’

রুদ্ধ দুই ভ্রু কুঁচকে বলল,’খেয়াল ছিলো না মানে?খেয়াল কোথায় ছিলো?’

সেহরীশ মুখে না বললেও মনে মনে বলল ‘আপনাকে গবেষণা করছিলাম কিন্তু এখন এটা বললে মান ইজ্জত শেষ!শুধু শেষ না পুরাই শেষ।’

তাই সেহরীশ রুদ্ধের কথার জবাব না দিয়ে আবার ইউটার্ন নিয়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগলো।বাড়ির সামনে এসে রুদ্ধের শার্ট’টা ওর হাতে দিয়ে বলল,’ধন্যবাদ কিন্তু আপনার মিথ্যা কথাটা বলা উচিত হয় নি।কতোগুলো মানুষের সামনে আমার মান ইজ্জত শেষ হয়ে গেলো।’

রুদ্ধ নিজের শার্ট নিয়ে পরতে পরতে বলল,’মান ইজ্জত শেষ হওয়ার মতো কি করলাম?’

‘নাটক করবেন না।আপনি কাল আপনার আসল নাম না বলে ‘বাবু’ বলেছিলেন।কিন্তু ওটা আপনার নামই না।’

‘হ্যাঁ!এতে তোমারই দোষ।তুমি বিশ্বাস করলে কেনো?প্রথম দেখাতেই আমার কথাগুলো বিশ্বাস করাটাই তোমার বোকামি।ধরো ভার্সিটি লাইফে এটাই তোমার প্রথম শিক্ষা।এরপর আস্তে আস্তে আরো শিক্ষা পাবে।তবে একটা কথা মনে রাখবে ভালো সবাইকেই বাসা যায় কিন্তু বিশ্বাস সবাইকে করা যায় না।বুঝলে?’

সেহরীশ মুগ্ধ হয়ে রুদ্ধের কথা শুনলো।রুদ্ধের কথাগুলোর গুরুত্ব বুঝলো।আসলেই রুদ্ধ’ই সঠিক।সেহরীশ ওষ্ঠদ্বয় প্রশ্বস্ত করে মিহি একটা হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই খেয়াল করলো,’রুদ্ধও আসছে।’

রুদ্ধকে আসতে দেখে জিগ্যেস করলে,’আপনি আসছেন যে?’

‘তোমার বাসায় যাবো।’

সেহরীশ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’কেনো?আমি কি করেছি?’

‘সেটা তোমার বাসায় গিয়েই বলবো।’

দুইতলায় এসে সেহরীশ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,’কেন আসবেন আমার বাসায় একটু বলুন না?দেখুন আমি আপনার কিচ্ছু করি নি।’

রুদ্ধ সেহরীশের কথায় হাসলো।তারপর বলল,’একটু আগে কি বলেছিলাম?ভুলে গেলে?কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে না করেছিলাম।আমি তোমার বাসায় কি করতে যাবো?আমি এই বাসায় পড়াই।তিন তলায় দুইটা ছেলেকে পড়াই।’

সেহরীশ নিজের বোকামির জন্য লজ্জা পেলো।তারপর দরজায় নক করলো।আর রুদ্ধ ওপরে চলে গেলো।

দরজা নক করতেই সেহরীশ চাচী দরজা খুললো।ওকে ভেজা জামা কাপড়ে দেখে বলল,’ভিজলি কি করে মনা?’

সেহরীশ ঘরে ঢুকে বলল,’আর বইলো না ছাতা নিতে ভুলে গেছি।ভার্সিটি থেকে বের হতেই ঝপাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।তারপরই ভিজে গেলাম।’

‘মনে করে নিবি না?দাড়া কাল থেকে আমি মনে করে দিবো।এখন তাড়াতাড়ি গোসল করে চেঞ্জ করে খেতে আয়।’

‘আচ্ছা যাচ্ছি।’
সেহরীশ নিজের ঘরে গিয়ে জামা কাপড় নিয়ে শাওয়ারে চলে গেলো।

সেহরীশের দুইবছর বয়সে ওর বাবা মা মারা যায়।ওর বাবা এক্সিডেন্টে মারা যায় আর ওর মা এর পাঁচ দিন পর একদিন ঘুমিয়ে ছিলো রাতে কিন্তু পরেরদিন আর সকালে ওঠে নি।ডাক্তার বলেছিলো ঘুমের মধ্যেই ব্রেইন স্ট্রোক করেছে।সেই থেকে সেহরীশ ওর চাচা চাচির কাছে মানুষ হয়েছে।ভাইয়ের মেয়ে বলে কখনো অবহেলা করে নি তারা।নিজেদের দুই ছেলের সাথে ওকে কখনো তুলনা করে নি।নিজের মেয়ের মতো বড়ো করেছে।সেহরীশও ওদের নিজের বাবা মায়ের মতো ভালোবাসে।সেহরীশের বড়ো চাচাতো ভাই আদিব পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে থাকে এবার আসলে ওর বিয়ে দিবে।পাত্রীও পছন্দ আছে।আর ছোটজন রাফিন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে।

শাওয়ার নিয়ে বেরুতেই দেখলো ওর চাচি আফসানা হক খাবার নিয়ে বসে আছে।উনি সেহরীশকে দেখেই বলল,’এদিকেই মাথা মুছে দেই।এতোবড়ো হয়েও ঠিকভাবে মাথা মুছতে পারিস না আমার মুছে দিতে হয়।বিয়ে দিলে কে দেবে তোর মাথা মুছে?’

সেহরীশ মুচকি হেসে বলল,’আমি বিয়েই করবো না।সবসময় তোমার কাছেই থাকবো মামণি।’

আফসানা হক হেসে বললেন,’হ্যাঁ রেখে দিবো তোকে।এবার খেতে আয়।’

‘তোমরা খেয়েছো?’

‘হ্যাঁ তোর পাপা আর আমি খেয়েছি।রাফিন প্রাইভেট পড়ে এসে খাবে।’

‘আচ্ছা।খাইয়ে দাও।’
আফসানা হক সেহরীশকে খাইয়ে দিতে লাগলো।প্রতিদিন একবেলা হলেও ওনার সেহরীশকে খাইয়ে দিতে হয়।এতে উনি বিরক্ত হন না বরং মেয়ে না থাকার অতৃপ্তিটা ঘুচে।মাঝেমধ্যে সেহরীশকে খাইয়ে দিতে দেখলে রাফিনও বায়না ধরে তারপর দুজনকেই খাওয়াতে হয়।
————–
রাতে সোয়া আট’টা।সেহরীশ পড়ছিলো।আফসানা হক দরজায় দাড়িয়ে বললেন,’আসবো?’

সেহরীশ চোখ পাকিয়ে বলল,’মামণি তুমি আমার রুমে আসতে অনুমতি চাও কেনো?সোজা চলে আসবে।মেয়ের কাছে আসতে মায়ের কোনো বাধা নেই।’

আফসানা হক দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।তারপর বললেন,’না মনা তুই এখনো ছোটো নেই।বড়ো হয়েছিস।আর এটা ভদ্রতা।’

‘তুমি পারোও বটে।’

‘হয়েছে এবার দুধের গ্লাসটা খালি কর।’

সেহরীশ একটানে শেষ করলো।আগে ও একদম দুধ খেতে চাইতো না কিন্তু আফসানা হক আস্তে আস্তে অভ্যাস করিয়েছেন।প্রথম প্রথম এক ঢোক,দুই ঢোক তারপর আস্তে আস্তে এখন পুরোটাই খায়।

দুধ খেয়ে গ্লাসটা চাচির হাতে দিয়ে দিলো সেহরীশ।আফসানা হক ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।সেহরীশ একটু হেসে আবার পড়ায় মনোযোগী হলো।
————
আজকে লেট।যথাসম্ভব দ্রুত পা চালিয়ে সেহরীশ ভার্সিটিতে পৌছালো।ক্লাসে গিয়ে দেখলো স্যার চলে এসেছে।ও অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে বসলো।

ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে আসতেই একটা সিনিয়র আপু সেহরীশের কাছে এসে বলল,’তুমি রুদ্ধ’র কয় নাম্বার গার্লফ্রেন্ড?’

‘মানে?’বেশ অবাক হয়েই সেহরীশ প্রশ্ন করলো।

‘মানে বোঝো না?কাল ভার্সিটিতে আসলে আর কালই ওই লম্পট’টা তোমাকে পটিয়ে ফেললো।আরে ভাই ভার্সিটিতে সিঙ্গেল ছেলের অভাব নাই তবুও যে কেনো ওই মেয়েবাজটার প্রমে পড়তে হয় আল্লাহ জানে!’

এটা বলেই মেয়েটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে গেলো।ক্যান্টিনের প্রায় ওর দিকে কেমন করে যেনো তাকালো।সেহরীশ আর ওখানে দাড়ালো না।বের হয়ে গেলো।ক্যাম্পাসে আসতেই আরো অনেকেই জিগ্যেস করলো ও রুদ্ধ’র কতো নাম্বার প্রেমিকা?পুরো ভার্সিটির অনেকের কাছেই রটে গেলো সেহরীশ রুদ্ধ’র প্রেমিকা।এতোদিন তো রুদ্ধ ফেমাস ছিলো তারসাথে এখন সেহরীশও ফেমাস।ভার্সিটিতে আসতে না আসতেই এভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতেই পারে নি ও।কিন্তু এগুলে কে ছড়িয়েছে?

ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় অনেকেই সেহরীশকে দেখিয়ে একজন আরেকজনকে বলছে ‘ওই দ্যাখ ওই মেয়েটাই’।

সেহরীশের ভিষণ কান্না পেতে লাগলো।মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে দু’টো চড় মারতে রুদ্ধ’কে।কিন্তু ও তো আজকে আসেই নি।

সেহরীশ দুঃখী মন নিয়ে বাসার সামনে আসতেই দেখলো রুদ্ধ ওর বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে।

চলবে…

আমি যারে চেয়েছিলাম পর্ব-০২

0

#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

সেহরীশ একটু চুপ করে থেকে আবার বলল,’ভাইয়া আপনি কোন ইয়ারের?’

রুদ্ধ চোয়াল শক্ত করে বলল,’এই মেয়ে তুমি কি ভাইয়া বলা ছাড়া কথা বলতে পারো না?’

সেহরীশ ভীরু কন্ঠে বলল,’আপনি তো সিনিয়র।তাই ভাইয়া’ই তো বলবো।’

রুদ্ধ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’না খুকুমণি আমাকে ভাইয়া বলবে না।তুমি আমার নাম ধরে ডাকবে।’

‘কিন্তু….’

‘কোনো কিন্তু নেই।আমার নাম ‘বাবু’।তুমি আমাকে বাবু বলে ডাকবে।’

‘বাবু ছাড়া কি আপনার আর কোনো নাম নেই?’

‘কেনো?বাবু নাম কি পছন্দ না?’

‘না মানে…সবার সামনে বাবু বলে ডাকলে মানুষ কি বলবে?তার চেয়ে বাবু ভাইয়া বলে ডাকি?’

রুদ্ধ সেহরীশের দিকে অগ্নী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’নো ভাইয়া।অনলি বাবু।ওকে?’

সেহরীশ মুখ কালো করে ক্ষীণ কন্ঠে বলল,’ওকে।’

রুদ্ধ মনে মনে হাসলো।ভাবলো একে আর র‍্যাগিং দেওয়া লাগবে না।তারচেয়ে ভালো ওর সাথে দু’একটা মিষ্টি কথা বলে ওকে ফার্স্ট ইয়ারের রুম দেখিয়ে দেই।

ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের সামনে এসে রুদ্ধ বলল,’সেহরীশ এই হলো তোমার ক্লাসরুম।কোনো প্রয়োজন হলে বলো।আমি তোমার সিনিয়র হলেও আমরাতো ফ্রেন্ড হতে পারি তাই না?’

সেহরীশের সাদা মনে কোনো কাঁদা নেই।সে মিষ্টি করে হেসে বলল,’অবশ্যই পারি।’

‘তো ঠিকাছে আজকে থেকে আমরা ফ্রেন্ড।’

‘আচ্ছা।’

‘আচ্ছা।তাহলে ক্লাসে যাও।’

সেহরীশ নিজের ক্লাসে এসে প্রথম সারিতে বসে পড়লো।ও বসতেই তিন চারটা মেয়ে এসে বসল ওর পাশে।তন্মধ্যে একজন বলল,’আচ্ছা।ওই ভাইয়াটা তোমার সাথে আসলো কেনো?উনি কি তোমার কেউ হয়?’

সেহরীশ বোঝানোর ভঙ্গিতে বলল,’না, না।আমি ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস খুঁজে পাচ্ছিলাম না তো!ওনাকে বলতেই উনি দেখিয়ে দিলেন।’

‘ও,কিন্তু আমরা শুনেছি রুদ্ধ নামের কেউ একজন নতুন স্টুডেন্টদের র‍্যাগিং দেয়।’

সেহরীশ বলল,’না ওনার নাম তো বাবু।ওনার নাম রুদ্ধ না।ওনার ব্যবহার অনেক ভালো।’

‘ও।আমরা আমাদের সিনিয়র আপুর থেকে শুনেছি কিন্তু তাকে কখনো দেখি নি।’

‘আচ্ছা বাদ দাও আমরা তো ক্লাসেই এখন কেউই কিছু করতে পারবে না।চলো আমরা পরিচিত হই।’সেহরীশ প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলল।কারণ কোন রুদ্ধ না যুদ্ধ কে জানে তার ভয়ে কি এখন ইঁদুরের গর্তে লুকোনো লাগবে নাকি!আসুক র‍্যাগিং দিতে মজা আমিও বুঝাবো।

আপাতত সেহরীশ তিনজন ক্লাসফ্রেন্ড পেয়ে গেলো।আজকে স্যার’রা তেমন পড়াবে না।তাই সেহরীশ তাই নতুন পাতানো বান্ধবীদের সাথে আলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

র‍্যাগিং দেওয়া শেষ এখন আর ভার্সিটি তে থেকে লাভ নেই।তাই রুদ্ধ,তাসিন,অনিমেষসহ বাকিরাও বেরিয়ে পড়লো।ওদের পড়াশেষ।শুধু মাস্টার্স এর রেজাল্ট বাকি আছে।তাও ওরা ভার্সিটিতে আসে।নতুন ছেলেপেলেদের জ্বালানোর জন্য।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে তাসিন ওর অফিসে চলে গেলো।ও পার্টটাইম একটা জব করে আর রাতে টিউশনি করায়।অনিমেষেও একই অবস্থা আর রুদ্ধ শুধু পাঁচটা টিউশনি করায় দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত।ও পার্টটাইম চাকরী করবে না।ওর ফুলটাইম চাকরী আর স্যালারি ভালো হতে হবে এমন চাকরী লাগবে।কিন্তু এমন চাকরী মিলছে না।অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দেওয়া স্বত্বেও এখনো কোনো চাকরী হয় নি।চাকরী যেনো সোনার হরিণ!

এখন ঘড়িতে ১০.০৫ বাজে।এখন থেকে দুপুর ৩.০০ টা পর্যন্ত রুদ্ধ একদম ফ্রী।এই সময়টা সে তার গার্লফ্রেন্ডদের পিছনে ব্যায় করে।তবে প্রতিদিন না।সপ্তাহে দুইদিন প্রেমিকাদের সাথে দেখা হয় আর পাঁচদিন বাসায় ঘুমায় নয়তো ছাদে ঘুড়ি ওড়ায় পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্যারাম খেলে।আজকে সে ক্যারাম খেলবে।
—————-
আজ সূর্যদেব ওঠেনি।কাঠ-কয়লার মতো মেঘ আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সকাল থেকে কিন্তু এখনো বৃষ্টি নামে নি।সেহরীশ তৈরি হয়ে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়লো।কাছাকাছি হওয়ায় হেটেই যাওয়া যায়।হেটে আসতে সাত/আট মিনিটের মতো লাগে।সেহেরীশ ভার্সিটিতে পৌঁছে নিজের ক্লাসে গিয়ে বসলো।এখনো তেমনভাবে কেউ আসে নি।আজ ও সময়ের অনেক আগেই এসেছে।কারণ কাল পুরো ভার্সিটিটা ঘুরে দেখা হয় নি তাই আজ তাড়াতাড়ি এসেছে।ব্যাগ থেকে ফোনটা নিয়ে ক্যাম্পাসে চলে এলো।শুনেছে মূল ভবনের পিছনে বটতলা আছে।ভবনের পেছনে দিকে যেতে লাগলো।এই সাইড’টা অনেক বেশি সুন্দর।সেহরীশ হাঁটতে হাঁটতে বটতলার কাছাকাছিই চলে এসেছে।সামনে কতোগুলো ছেলে মেয়ে মিলে গান গাইছে।সেহরীশ আরেকটু কাছে গিয়ে দেখলো এখানে বাউলা গানের আসর চলছে।কেউ গিটার বাজাচ্ছে তো কেউ বাশি,একতারা এগুলো বাজাচ্ছে।আর সমস্বরে গাইছে।সেহরীশ একপাশে দাঁড়িয়ে ওদের গান শুনছে।

‘দিলোনা দিলোনা, নিলো মন দিলোনা।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না গো।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না।
আমি যারে বাসি ভালো, কাজলের চেয়েও কালো ।(২)
হয় না যে তার তুলনা ।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না গো।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না।
দিলোনা দিলোনা, নিলো মন দিলোনা।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না গো।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না।

চুল কালো আঁখি কালো…কাজল কালো আরো…
কাজলের চেয়ে কালো কি বলতে কি কেউ পারো।
আমি যারে বাসি ভালো, কাজলের চেয়েও কালো।(২)
হয়না যে তার তুলনা।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না গো।
এতো যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না।’

গান শুনতে শুনতে একপর্যায়ে সেহরীশ খেয়াল করলো কালকে বাবু নামের ছেলেটাও গাইছে।ও সবার মাঝে বসে আছে।গান শেষ হতেই সবাই হাততালি দিলো।সবার হাততালি থামার পর সেহরীশ সবার সামনেই রুদ্ধ’র সামনে এসে বলল,’বাহ!বাবু কন্ঠ’টা কিন্তু সুন্দর।’

সেহরীশের কথা শুনে উপস্থিত সকলে একবার সেহরীশের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে দিলো শুধু রুদ্ধ হাসে নি।সবার হাসি দেখে সেহরীশ বেকুব বনে গেলো।সবাই হাসছে কেনো?সেহরীশ ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,’তোমরা হাসছো কেনো?আমি কি ভুল বলেছি?’

রুদ্ধ সেহরীশের অগোচরে সবাইকে ইশারায় চুপ থাকতে বলল।সবাই ওর কথামতো চুপ থাকলো।কারো কাছে জবাব না পেয়ে বেচারি অসহায় মুখে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে বলল,’আচ্ছা ওরা সবাই হাসলো কেনো?’

‘আরে ওরা পাবনা থেকে পালিয়ে আসা পাগল।কালকে রাতেই পালিয়ে এসেছিলো।তুমি কিছু মনে করো না।কি যেনো বলছিলে?’

‘বললাম আপনার কন্ঠ অনেক সুন্দর।’

‘ধন্যবাদ সেহরীশ।’

সেহরীশ ঘড়িতে একবার তাকিয়ে বলল,’আচ্ছা বাবু আমি আসি।’

সেহরীশের কথায় এবারও সবাই হাসলো।কেউ মুখ টিপে তো কেউ জোরে।সেহরীশ ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।সেহরীশ যাওয়ার পর।তাসিন বলল,’দোস্ত কাহিনি কি রে?আবার আরেকটারে পটায় ফেললি।’

রুদ্ধ হাসতে হাসতে কালকের কাহিনি বলল ওদের সবশুনে ওরা হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরেছে।

আর এদিকে সেহরীশ নিজের ক্লাসের সামনে আসতেই একজন সিনিয়র আপু ডাক দিলো ওকে।সেহরীশ গেলো।মেয়েটা সেহরীশকে বলল,’তুমি নতুন না?’

‘হ্যাঁ আপু।’

‘আচ্ছা তুমি বটতলায় রুদ্ধ ভাইয়াকে বাবু ডাকছিলে কেনো?’

সেহরীশ বুঝতে না পেরে বলল,’কোন রুদ্ধ ভাইয়া?ওনার নাম তো বাবু।উনিই আমাকে বলেছেন।’

‘আরে না।ওনার নাম রুদ্ধ শেখ।’

‘না আপু আপনার ভুল হচ্ছে।ওই ভাইয়াটার নাম বাবু।’

মেয়েটা নিজের ফোন বের করে রুদ্ধ’র আইডি বের করে সেহরীশকে দেখিয়ে বলল,’দেখো প্রোফাইল পিক’টা।নামটাও পড়ো।’

সেহরীশ দেখলো আসলেই প্রোফাইলে ওই ছেলেটার ফর্মাল ড্রেস’আপের একটা ছবি।আর বাংলার নাম লেখা ‘রুদ্ধ শেখ।’

সেহরীশের চোখে পানি ছলছল করছে।এভাবে কেউ ওকে বোকা বানালো।একটু আগে সবাই কি না কি ভেবেছে।
মেয়েটা নিজের ফোন ব্যাগে রেখে বলল,’এবার বিশ্বাস হলো?ওনার নাম রুদ্ধ।উনিসহ ওনার সব বন্ধুরা ভার্সিটির সবচেয়ে সিনিয়র।ওনাদের মাস্টার্স শেষ।তবুও ভার্সিটিতে আছে জুনিয়রদের র্যাগ দিতে।তুমি একটু সাবধানে চলবে।আর রুদ্ধ ছেলেটা ভালো না।প্লে বয়।’

এগুলো বলেই মেয়েটা চলো গেলো।আর সেহরীশের মন চাচ্ছে হাত পা ছেড়ে চৌরাস্তার মোড়ে কাঁদতে।এভাবে বলদ না বলদি হয়ে যাবে সেটা ভাবতেই পারে নি।দুঃখী মন নিয়ে সেহরীশ ক্লাসে চলে গেলো।ক্লাস শেষে বাসার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করলো।মাঝরাস্তায় আসতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো।সেহরীশ রাস্তার পাশের দোকানটায় যেতে যেতে অনেকটাই ভিজে গেলো।ওই দোকানের ছাউনিতে অনেক মানুষই দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ আশেপাশে খেয়াল করতেই দেখলে দুইটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক ওর দিকে নয় ওর শরীরের দিকে।তাকানোটা অস্বস্তিকর লাগছে।বৃষ্টির পানিতে জামা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।আবার এখন বেরও হওয়া যাবে না প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।হঠাৎ কেউ একজন পাশ থেকে কিছু একটা বাড়িয়ে দিলো।সেহরীশ তাকাতেই দেখলো রুদ্ধ ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর ও ই ওর গায়ের শার্ট’টা সেহরীশের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে।সেহরীশ শার্ট’টা নিতে চেয়েও পারলো না আজকে সকালে ওই সিনিয়র আপুর কথা মনে পড়ে যাওয়ায়।

রুদ্ধ দেখলো সেহরীশ শার্ট’টা নিচ্ছে না।তাই নিজেই শার্ট’টা ওর গায়ে জড়িয়ে দিলো।সেহরীশ কিছু বলতে নিলেই বলল,’শার্ট’টা ফেরত দিলে তোমারই ক্ষতি।ওরা তোমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাবে তাতে আমার কি!আমি তো একটু উপকার করতে চাইলাম।’

সেহরীশ রুদ্ধের কথা শুনে একবার ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে আর ফেরত দেওয়ার কথা ভাবলো না।বৃষ্টি থেমেছে।তবে এখনো গুড়িগুড়ি পড়ছে।সেহরীশ রুদ্ধের শার্ট’টা দিতে চাইলে রুদ্ধ বলল,’তোমার বাড়ি কোথায়?’

‘সামনেই।একটু হাটলেই।’

‘আচ্ছা চলো আমিও তোমার সাথে যাবো?’

সেহরীশ ভ্রু কুঁচকে বলল,’কেনো?’

‘আমার শার্ট’টা নিতে।কারণ তুমি এই অবস্থায় বাসায় যেতে পারবে না।পুরো ভিজে গেছো তুমি।আর আমার এখনো টিউশনি করাতে যেতে হবে।শার্ট ছাড়া গেলে মান ইজ্জত শেষ।সেইজন্য তোমাকে বাসায় দিয়ে আমি আমার শার্ট’টা নিয়ে যাবো।এবার বুঝলে?’

‘হ্যাঁ বুঝলাম।চলুন।’সেহরীশ আগে আগে হাঁটছে আর রুদ্ধ পিছনে।একটু পরপরই সেহরীশ পিছনের দিকে তাকাচ্ছে আর রুদ্ধের চোখে চোখ পড়ছে।চোখ পড়তেই সরিয়ে নিচ্ছে।আগে পিছে হাটার ব্যাপারটা ভাল্লাগে না সেহরীশের।হাঁটতে হলে পাশাপাশি হাটুক।

চলবে….

আমি যারে চেয়েছিলাম পর্ব-০১

0

#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০১
#Arshi_Ayat

রুদ্ধ শক্ত করে মিথির পা চেপে ধরে রেখেছে।আর কাঁদছে।এদিকে মিথি চলে যাওয়ার জন্য পা ছাড়াতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।মিথি কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলল,’এইজন্যই আমি আসতে চাই নি।ছাড়ো রুদ্ধ।একটু পর আমার বিয়ে।তোমার কথায় আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।এমন ভাবে কান্নাকাটি করছিলে যেনো আমি মরে যাচ্ছি।আরে বাবা,কে না নিজের সুখ চায়।আমি আমার সুখের জন্যই যাচ্ছি।তাই ছাড়ো আমার পা।আর এখান থেকে চলে যাও।প্লিজ!’

রুদ্ধ কান্না করুণ কন্ঠে বলল,’মিথি এটা কিন্তু কথা ছিলো না।তুমি বলেছিলে আমার সাথেই থাকবে তুমি।’

‘তুমি বলদই রয়ে গেলে।আরে রিলেশনশিপে থাকলে ওরকম দু’চারটা ইমোশনাল মিথ্যা বলতেই হয়।’

‘মিথি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।চলো না পালিয়ে যাই।আমার পরিবারের সবাই তোমাকে মেনে নিবে।’

‘তোমার পরিবার দিয়ে আমি কি করবো?আমার পরিবার খুশী থাকাই আমার সব।আমার বর জানো কি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করে।সে বি সি এস ক্যাডার।তোমার তো বি সি এস দেওয়ার যোগ্যতাও নাই।ছাড়ো এবার পা তা নাহলে এখন বাবাকে ডেকে জুতাপেটা খাওয়াবো।তখন আমার নাম নিতেও ভুলে যাবে।’

রুদ্ধ কাঁদতে কাঁদতে পা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।ও বুঝে গেছে কোনো কাজ হবে না।পাষাণীর মন গলবে না।বাম হাতের পিঠে চোখ মুছে বলল,’যাও,চলে যাও।আটকাবো না আর তবে শুনে রাখো আমাকে কাঁদিয়ে কখনো তোমার সুখ মিলবে না।আমি যতটুকু কেঁদেছি তারচেয়ে বেশী তুমি কাঁদবে।এখন যতোটা আমার তোমাকে মন পড়তে একটা সময় তারচেয়েও বেশি তোমার আমাকে মন পড়বে।মিলিয়ে নিও।’

মিথি খিলিখিলিয়ে হাসলো।যেতে যেতে বলল,’ব্রেকাপের সময় সব এক্সরাই এগুলো বলে।সমস্যা নাই।অভিশাপ দিতে থাকো।’

এটা বলে হাসতে হাসতেই মিথি ছাঁদ থেকে নিচে নেমে গেলো।আর রুদ্ধ ধপ করে ছাদের মেঝেতে বসে পড়লো।এইভাবে হেরে যাবে ভাবতেও পারে নি রুদ্ধ।ওদের সম্পর্কটা ছিলো তিনবছরের।রুদ্ধ ভার্সিটির সিনিয়র ছিলো আর মিথি জুনিয়র।অন্যান্য সিনিয়র ভাইদের মতো রুদ্ধ র‍্যাগিং দিতো না কাউকে।ও খুব শান্তশিষ্ট।তখন রুদ্ধ ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলো।আর মিথি প্রথম বর্ষ।প্রথম তিনমাস কারো সাথেই কারো দেখা হয় নি।তিনমাস পর নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো।সেই অনুষ্ঠানে যারা অংশগ্রহণ করবে তাদের প্রাকটিস হচ্ছিলো হলরুমে।সেখানে মিথিও নাচের প্রাকটিস করছিলো।মিথি ভালো নাচতে পারে।ওইদিন আবার রুদ্ধ ক্লাস শেষ ওর বন্ধু অনিমেষের সাথে হলরুমে এসেছিলো।উদ্দেশ্য হলো অনিমেষ ওর প্রেমিকার সাথে দেখা করবে আর রুদ্ধ এমনিতেই যাবে।হলরুমের শেষ মাথায় অনিমেষ ওর প্রেমিকার সাথে কথা বলছিলো আর রুদ্ধ সবার প্র্যাকটিস দেখছিলো।হঠাৎ নৃত্যরত একটা মেয়েকে দেখে রুদ্ধের চোখ আটকে গেলো।কি সুন্দর গানের তালে তালে সে নাচছে।মুগ্ধ হয়ে রুদ্ধ তাই দেখছিলো।হঠাৎ অনিমেষ ওর পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,’চল হয়ে গেছে।’

রুদ্ধ মেয়েটাকে দেখতে দেখতে অজান্তেই বলল,’আমার হয় নি।’

‘মানে?রুদ্ধ,এই রুদ্ধ।’অনিমেষ ওকে মৃদু ঝাঁকুনি দিতেই ও সম্বিত ফিরে পেলো।তারপর বলল,’আচ্ছা তুই যা আমি একটু পর আসছি।’

‘কেনো?’অনিমেষের চোখে সন্দেহ।

‘এমনিতেই।ওদের প্র্যাকটিসগুলো একটু দেখে যাই।’

‘প্রতিদিন তো তোকে শত চেষ্টা করেও আনতে পারি না আজ হঠাৎ কি হলো?’অনিমেষ এক ভ্রু নাচিয়ে বলল।

‘কিছু হয় নি তুই যা।’

‘আচ্ছা যাচ্ছি।আমি একটু লাইব্রেরিতে যাবো।তুই তাড়াতাড়ি আসিস।’

‘আচ্ছা যা।’

অনিমেষ যাওয়ার সময় রুদ্ধের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,’মেয়েটা কিন্তু সুন্দর।দেখতে থাকো তোমরও হয়ে যাবে।’

এটা বলেই ছুটে বেরিয়ে গেলো।রুদ্ধ কিছু বলতে পারলো না।আরো কিছুক্ষণ মেয়েটার প্র্যাকটিস দেখে তারপর চলে গেলো রুদ্ধ।এভাবে প্রতিদিন ক্লাস শেষে রুদ্ধ হলরুমে আসতে লাগলো।একসপ্তাহ পর অনুষ্ঠান।এই একসপ্তাহ ধরে রুদ্ধ প্রতিদিন হলরুমে গিয়েছে।প্র্যাকটিসের শেষের দিন রুদ্ধ মুগ্ধ নয়নে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।হঠাৎ মেয়েটা নাচ থামিয়ে রুদ্ধ’র সামনে এসে দাড়ালো।রুদ্ধ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।মেয়েটা রুদ্ধকে আগাগোড়া একবার দেখে বলল,’আপনি কি প্রতিদিন আমাকে দেখতেই আসেন।’

এমনিতে তো অস্বস্তি কম ছিলো না তার ওপর এই প্রশ্নটা!রুদ্ধ ঢোক গিলে বলল,’ক কই না তো!আ আমি তো এমনিই আসছি।’

‘আপনি কি তোতলা?’

হঠাৎ হঠাৎ এসব আচমকা আক্রমণে রুদ্ধের হৃৎপিণ্ড বের হওয়ার জোগাড়!ও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।তারপর বলল,’না তো।’

‘আচ্ছা।আমার নাচ দেখছেন এটা বলতেই পারতেন।আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবো না।বাই দ্য ওয়ে আপনি কোন ইয়ার?’

‘থার্ড ইয়ার।’

‘ওহ!আচ্ছা।’
এটা বলেই মিথি আবার নিজের জায়গায় চলে গেলো।এভাবেই আস্তে আস্তে যেকোনো ছুতোয় রুদ্ধ মিথিকে দেখতো।মিথিও বুঝতো।একপর্যায়ে দুজনের সম্মতিতে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো ওরা।কিন্তু রিলেশনে যাবার পর থেকেই মিথির আচার আচরণ রুদ্ধ’র ভালো লাগতো না।ও রাত বিরেতে কারো সাথে কথা বলতো।এদিকে রুদ্ধ ফোন দিলে ওর ঘুম পায়।আবার বন্ধুদের সাথে ট্যুরে চলে যায় ওকে না জানিয়েই এ নিয়ে কিছু বললেই ‘ব্রেকাপ’।প্রথম থেকেই রুদ্ধ সিরিয়াস ছিলো সম্পর্কে।তাই ব্রেকাপ শব্দটা নিতে পারতো না।তবুও নিজের মতো করে মিথিকে বোঝাতে কিন্তু মিথি বুঝতে চাইতো না।ওকে সময়ও দিতো না।রুদ্ধ’র বন্ধুরা বলেছিলো এই টক্সিক রিলেশন থেকে বেরিয়ে আসতে কিন্তু রুদ্ধ তবুও থেকেছে।তিলে তিলে কষ্ট পেয়েছে।তবুও ছাড়তে চায় নি।কিন্তু হঠাৎ একসপ্তাহ আগে মিথি রুদ্ধকে ব্লক করে দিয়েছে সব জায়গা থেকে।রুদ্ধ চেয়েও একটাবারের জন্যও যোগাযোগ করতে পারে নি।এই একসপ্তাহে প্রতিদিন ওর বাসার সামনে এসে দাড়িয়েছে কিন্তু মিথি ওর সাথে দেখা করে নি।ওর বান্ধবীর থেকে জানতে পারে মিথির বিয়ে ঠিক হয়েছে।আর ও এই বিয়েতে রাজি।রুদ্ধ কি করবে বুঝতে পারছিলো না।তারপর ওর এক বান্ধবীর মাধ্যমে অনেক কান্নাকাটি করে আজ ওর সাথে ওর বাসার ছাদে এসে দেখা করেছে।কিন্তু অনেক কাকুতি মিনতি করেও ভালোবাসা ভিক্ষা দিলো না।

রুদ্ধ মেঝে থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর নিচে চলে গেলো।বাড়িতে অনেক মেহমান।বিয়ে বলে কথা!সবার অগোচরে রুদ্ধ বেরিয়ে পড়লো।অনিমেষ,তাসিন ওরা দুইজন বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো।রুদ্ধকে চোখ মুছতে মুছতে আসতে দেখে ওরা সব বুঝে নিলো অবশ্য এটাই হওয়ার ছিলো।রুদ্ধ না মানলেও ওরা অনেক আগেই জানতো।রুদ্ধকে বলার পরও ও বুঝতে চাইতো না।

ওরা রুদ্ধকে বাসায় পৌঁছে দিলো।আজকে ওরাও ওর সাথে থাকবে।বন্ধুর বিপদের দিনে পাশা থাকাই বন্ধুত্ব।একবছর আগে যখন অনিমেষের প্রেমিকা একটা দুর্ঘটনায় মারা যায় তখন অনিমেষ একবারেই ভেঙে পড়েছিলো।ওই সময়টায় রুদ্ধ,তাসিন ওরা ভাইয়ের মতো সামলেছে ওকে।তখনও যেমন বন্ধুর প্রয়োজন ছিলো এখনো তেমন বন্ধুর প্রয়োজন আছে।

১বছর পরের কথা…..
বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে রুদ্ধ।ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে বারবার।রুদ্ধ’র খবর নেই।হয়তো আফরা,রিধি আর নাহলে মিম।এরা তিনজনই রুদ্ধের প্রেমিকা।চার নম্বর প্রেমিকার সাথে দু’দিন আগেই ব্রেকাপ হয়েছে।রুদ্ধ’র কাছে প্রেম এখন খেলনা।ভালোবাসা না।ভালোবাসা তো কবেই হারিয়ে গেছে।মিথি ধোঁকা দেওয়ার পর রুদ্ধ ভেঙে পড়েছিলো খুব কিন্তু বন্ধুদের সহোযোগিতায় খুব তাড়াতাড়ি মুভ অন করতে পেরেছে।এখনকার রুদ্ধ’র পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো।সে এখন র্যাগ দেয় জুনিয়র দেয়।জুনিয়ররা তাকে জমের মতো ভয় পায়।প্রেম চার/পাঁচটা।আগে ছিলো লাভারবয় আর এখন প্লে বয় রুদ্ধ শেখ!

রুদ্ধ আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো।তাসিন আর অনিমেষের কল আর মেসেজ।একটা মেসেজ ওপেন করতেই দেখলো লেখা আছে,’রুদ্ধ কই তুই।তাড়াতাড়ি আজকে ফার্স্ট ইয়ার’রা আসবে।যার্গ দিবি না?’

মেসেজটা পড়ে রুদ্ধ মৃদু কন্ঠে বলল,’ওহ!শীট!’তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে।হালকা নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়লো।দ্রুত ভার্সিটিতে এসে বন্ধুদের আড্ডায় চলে গেলো।সেখানে আলোচনা হচ্ছে নতুন কি কি রাইপের র্যাগ দেওয়া যায় সেটা নিয়ে।রুদ্ধ আসতেই ওকে মাঝখানে জায়গা দেওয়া হলো বসার ও নিজের সীট গ্রহণ করলো।তারপর আবারও আড্ডা জমে উঠলো।

রুদ্ধ বসে বসে চুইংগাম চাবাচ্ছে আর চারদিক দেখছে।ওর সৈন্যবাহিনী মানে বন্ধুরা যে যার মতো ফার্স্ট ইয়ার দের যার্গ দিচ্ছে।কিন্তু ও মনের মতো একজনকেও পাচ্ছে না।হঠাৎ দেখলো একটা মেয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।মেয়েটা ওর সামনে এসে বলল,’ভাইয়া ফার্স্ট ইয়ারদের রুম কোন দিকে?

রুদ্ধ ‘ভাইয়া’ শব্দটা শুনে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকালো।এসব ন্যাকা মেয়েরা ভাইয়া ভাইয়া করে মেজাজের খিল্লি করে দেয়।কিন্তু মেয়েটাকে দেখে মনে হলো এরসাথে কিছুক্ষণ মজা নেওয়া যেতে পারে।তাই মুখভঙ্গি ঠিক করে রুদ্ধ বলল,’আচ্ছা আসো খুকুমণি তোমাকে নিয়ে যাই।’

মেয়েটা রুদ্ধ’র পিছনে যেতে যেতে বলল,’আমার নাম খুকুমণি না ভাইয়া আমার নাম সেহরীশ।’

রুদ্ধ একবার সেহরীশের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে চাইলো।তারপর মনে মনে বলল,’আজকে এমন শিক্ষা দেবো ভাইয়া ডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।’

চলবে….

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

1

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:১২
:১২_ও_শেষ

এভাবেই কিছুমাস অতিবাহিত হলো।নিরবের স্বভাব আগের তুলনায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
এখন ও অনেক কেয়ার করে আমার।সব কিছুতেই তার পার্মিশন নেওয়া লাগবে।
ও নিজে চেষ্টা করেছে বলেই পরিবর্তিত হতে পেরেছে।

আজকে ছুটির দিন বলে আমরা ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
নিরব আর আমি বিকালের দিকে বের হলাম।
আধা ঘন্টা হাঁটাহাঁটির পর আমরা একটা নির্জন জায়গায় এসে পৌঁছলাম।
সেখানেই আমরা বসলাম কিছুক্ষণ। নিরবের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছি আমি।
দূরে একটা বাড়ি থেকে একটা মেয়ে বিষণ্ণ মনে বের হলো।
তাকে অনেক চেনাচেনা মনে হলো আমার।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম ওটা নাহার আপু। তবে চোখেমুখে কেমন যেন ভাব।
বাড়িটাও তাদেরই।সেদিন বিয়েবাড়ির সাজ ছিল আর আজ সাধারণ তাই চিনতে পারি নি।
আমি নিরবকে দেখালাম,সেও প্রথমে চিনতে পারে নি।

আমরা এগিয়ে গেলাম সেদিকে,যদিও নিরব যেতে চাইছিল না তবুও আমি নিয়ে এলাম কারণ তার এই অবস্থা কেন হলো তা জানার অনেক আগ্রহ জাগলো আমার মনে।

আমাদের হঠাৎ এখানে দেখে নাহার আপু অনেক অবাক হলো।
সে কিছু বলার আগেই আমি বললাম”কেমন আছো?”

“যেমন করে রেখেছ সে অবস্থায় ভালো থাকার আশা করো কিভাবে?”

তার কথা শুনে ভীষণ অবাক হলাম আমি। কিছু বুঝলামও না তাই নিরবের দিকে চেয়ে দেখলাম সেও আমার দিকে না বোঝার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম”আমি রেখেছি মানে?কেমন অবস্থায়?আর আমার সাথে কি সম্পর্ক?”

“বাহ!এখন ভালো সাজা হচ্ছে তাই না? তোমার বলাতেই তো আমি নিরবকে ছেড়ে দিয়েছিলাম, শুধুমাত্র তোমার কথায় ইমোশনাল হয়ে আজ আমার এই অবস্থা!
আমার স্বামিও আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছে!আজ নিরব আমার সাথে থাকলে আমরা কতই না সুখি হতাম কিন্তু তোমার কথা ভেবে আমি সবটা বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি”

আমি অবিশ্বাসের চোখে নাহার আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি এরকম কিছুই করিনি।আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেও অবিশ্বাসের চোখে নাহার আপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার মন বলছে সে এসব বিশ্বাস করবে না তবে কোথাও না কোথাও মনে হচ্ছে যদি ও বিশ্বাস করে ফেলে?
নাহার আপু সবটাই এমন ভাবে বলেছে যেন সবটা সত্যি, কিন্তু কিছুই সত্যি না!

নিরব বললো”এসব কি বলছ নাহার?”

“আমি ঠিকই বলছি নিরব!”বলেই সে এগিয়ে গিয়ে নিরবকে জড়িয়ে ধরল।
আমার বুকে ধক করে উঠল।নিরব শুধু আমার!
আর তার এই বুকেও শুধু আমারই স্থান, সেখানে নাহার আপু কিভাবে?
নিরব ওকে সরাচ্ছে না কেন?
ও কি বিশ্বাস করে ফেলল নাহার আপুর সবটা?

টের পেলাম চোখের কোণে জল এসে ভিড় করেছে।আমি বললাম”চলো না আমরা বাসায় ফিরি, নাহার আপু মিথ্যা বলছে,আমি এমন কিছুই করিনি”
নাহার আপু নিরবের বুক থেকে সরে এসে আমার দিকে এগিয়ে মারার জন্য হাত উঠাতেই কে যেন তার হাত ধরে ফেলল।
আমি তাকিয়ে দেখলাম একজন অচেনা মানুষ। সে নাহার আপুর হাতটা ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল”আর কত সংসার ভাঙবে তুমি?”

তার কথায় নাহার আপু দ্বিতীয় কোন প্রশ্নোত্তর করল‌ না।
ততক্ষণে নিরবও আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।সে আমার মাথাটা তার বুকে চেপে ধরে এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরল তারপর আমার উদ্দেশ্য বলল”চল বাসায় ফিরে যাই”
আমরা অগ্রসর হতেই পিছন থেকে সেই ব্যাক্তিটি বলে উঠলেন”সত্যটা শুনবেন না?”
আমি আর নিরব থেমে পিছন ফিরে ব্যাক্তিটির দিকে তাকালাম।
আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি তখনও।
ব্যাক্তিটি আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে নিরবের উদ্দেশ্য বলল”আপনার পরিচয় হয়ত “নিরব”।
আপনাকে দেখে বুঝতে পেরেছি আপনি আপনার স্ত্রীকে অনেক বিশ্বাস করেন কিন্তু তবুও পরবর্তীতে যেন এই নিয়ে কোন প্রশ্ন আপনাদের মনে না জাগ্রত হয় তাই সত্যটা জানাতে চাই।আশা করি শুনবেন।”

নিরব শুধু মাথা নাড়ল। কিছু বলল না।নিরব তখনও আগের ন্যায় আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর নাহার আপুও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
চারপাশে তখনও কোন মানুষের আশা যাওয়া দেখা যাচ্ছে না।

ব্যাক্তিটি বলতে শুরু করল”আমি নাহারের হাসবেন্ড।আপনারা হয়ত বিয়েতে দেখেছিলেন বলে ভুলে গেছেন। আমারও মনে ছিল না কিন্তু আপনার স্ত্রীকে বিয়ের দিন নাহারের সাথে কথা বলতে দেখেছিলাম বলে আজ দেখে চিনতে পারলাম।
কি কথা হয়েছিল তা তো শুনিনি তবে তারপর থেকেই নাহারের মন খারাপ থাকত। এমনিতেও সে কোন কাজ করত না।এই নিয়ে মায়ের অভিযোগের শেষ ছিলনা তবে নাহার সেগুলো আমলে নিত না।
আমি চুপচাপ সবটা শুনতাম তবে নাহারকে কিছু বলতে পারতাম না কারণ অনেক ভালোবাসতাম ওকে।
অন্য দিকে আম্মুকেও অনেক ভালোবাসি।তার বিরুদ্ধে কিছু বলারও সাহস ছিল না।
শুধু বাড়ির কাজ না করলে মায়ের তেমন একটা অভিযোগ থাকত না তবে নাহার তার নিজের কাজগুলোও করত না।
যা মায়ের জন্য বাড়তি ছিল।
আজ বুঝতে পারছি নাহারের সেই মন খারাপের কারণ টা আপনি।
কিন্তু সে এখন যেগুলো বলেছে সেগুলো মিথ্যা।আমি সবটা শুনেছি।
নাহার নিজে থেকেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।
আর আমি তাকে ডিভোর্স দিতে চাইনা, পরিস্থিতি এরকম যে আমার ভা..ভালোবাসা আমার থেকে..যাই হোক এটাই ছিল সবটা”
বলতে বলতে ভদ্রলোকের চোখের কোণে পানি এসে গেছে।

হঠাৎ নিরব আমাকে ছেড়ে নাহার আপুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল”আমি তোমাকে ভালোবাসতাম নাহার,আর এই ছেলেটা তোমাকে ভালোবাসে।
তোমার কথা বলতে গিয়ে তার চোখের কোণে পানি এসে গেছে, ভাবতে পারছো?
ও ঠিক কতটা চাইলে তার এরকম অবস্থা হতে পারে?
তোমার মত কি হবে তাতো জানিনা তবে আমি চাইব তোমরা সবটা ঠিকঠাক করে নাও নিজেদের মাঝে
ছেলেটা সত্যি চায় তোমাকে”
বলেই নিরব আমার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।আমি পিছন ফিরে দেখলাম ছেলেটা চলে যেতে চাইলে নাহার আপু হাত ধরে আটকে ফেলল।
ছেলেটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো নাহার আপুর দিকে।

নাহার আপু সরি বললো। দূর থেকে যা বুঝলাম।
হঠাৎ ছেলেটা নাহার আপুকে জড়িয়ে ধরল, আপুও কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরল।

আমি নিরবের দিকে চেয়ে বললাম”সব ঠিক হয়ে গেছে”

নিরব আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালে আমি পিছনের দিকে ইশারা করলাম।
সেও পিছন ফিরে একবার ওদের দিকে চেয়ে হাসলো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলো।
ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
আমি বললাম”যদি ওই ভাইয়াটা এসে সত্যি না বলত তাহলে তুমি আমাকে অবিশ্বাস করতে?”

“অবিশ্বাস করলে ওই ছেলের কথা শুনার আগে তোকে নিয়ে আসতাম না”

আমি কিছু বললাম না।নিরব আবারও বললো”ভালোবাসি”

আমি হেসে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললাম। এতদিনে এসে কথাটা শুনলাম ‌
“আমার উত্তর?”

“আমিও”

“আমিও কি?”ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল নিরব

“ভালোবাসি”

“”ভালোবাসা ভালোবাসি,আছি মোরা পাশাপাশি””

🥀🥀 *সমাপ্ত*🥀🥀

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-১১

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:১১

কালকের নিরবের বলা কথাটা নিয়ে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ভেবেছি আমি।
ফলাফল তেমন পাইনি শুধু ভাবতে ভালো লেগেছে।
আম্মুও অনেকটা সুস্থ এখন।
আব্বুকে বলেছি তিনি যেন এখন থেকে বাসায়ই থাকেন নয়ত তার সাথে কোন কথা বলব না তাই তিনিও রাজি।

“অথৈ!”

নাস্তা বানাতে বানাতে এগুলাই ভাবছিলাম, হঠাৎ আব্বুর ডাকে আমি রান্নাঘর থেকেই চেঁচিয়ে বললাম”কি হয়েছে?”

“নিরব এসেছে!”

নিরব এসেছে মানে কি?
আবার কি শক দিতে চায় ও আমাকে?
কালকের কথা থেকেই বেরুতে পারি নি আর আমার সামনে আসলে ও যেকোন এমন কথা বলবেই যাতে আমার ভাবনার শেষ না থাকে সেটা নিয়ে।

সে যাইহোক,আমিও এগিয়ে গেলাম বসার ঘরের দিকে। তাকে বসতে বললাম তারপর আবারো ফিরে গেলাম।
একটু পর আম্মু এসে দাঁড়ালো আমার পাশে।

“তুমি কেন এসেছ”

“সবসময় বসে থাকতে ভালো লাগে না আর আমিতো সুস্থ,সব করতে পারব”

“যখন চলে যাবো তখন কইরো, এমনিতেও তো সারাজীবন করেই যাচ্ছো”

আম্মু আর কিছু বলল না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবে ৮ টা বাজে।
নাস্তা নিয়ে টেবিলে রাখলাম আমি।
সবাইকে নাস্তা দিয়ে আমিও খেলাম।তারপর যে যার রুমে চলে গেল।
আমিও সব গুছিয়ে রুমে চলে আসলাম।
নিরব ঘরেই ছিল।আমি যেতেই ও উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
আমি তখনও আগের মত এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।
কিন্তু নিরব আমার আরো কাছে আসছে দেখে আমি পিছাতে লাগলাম।
দুই কদম পিছনে যাওয়ার পরই নিরব একটান দিয়ে আমাকে তার পাশে আনলো আর দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিল।
Main target ওর দরজা লাগানো ছিল যা বুঝলাম।

তারপর আমাকে দরজার সাথে লাগিয়ে দুই পাশে দুই হাত দিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালো সে।
তার হুটহাট আচরণে হতবাক হয়ে যাই আমি।
নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
তাই নিরব বললো”জীবনে তো এত লজ্জা পেতে দেখি নি,এত লজ্জা আসছে কোথা থেকে?”

“তোমাকেও এত কাছে আসতে দেখি নি আমি, দূরে সরো নাহলে দম আটকে মারা যাব”

“আমি কি অক্সিজেন আটকে দাঁড়িয়ে আছি নাকি?যে তোর শ্বাস আটকে যাচ্ছে”

“তোমার যে বিশাল দেহ তাতে অক্সিজেন,কার্বনডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন,হাইড্রোজেন সব আটকে যাবে”

নিরব মুখ বাঁকিয়ে সরে গেল।আমি যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

“বললে‌ নাতো সকাল সকাল কেন এসেছিলে?”

“এসে তোর খুব ক্ষতি করেছি?”

“সোজা উত্তর দিতে পারো না?”

“তোর থেকেই দেওয়া শিখেছি”

“আচ্ছা বলতে হবে না”

“বলতেসি,বলতেসি। বাসায় মন বসছিল না তাই আম্মুকে বলেছি আমার অফিস জলদি যেতে হবে আজ তাই জলদি বেরুচ্ছি”

আমি হাঁ হয়ে তার কথা শুনলাম তারপর বললাম”এত মিথ্যা কবে থেকে বলতে শিখলে?”

“একটু আধটু মিথ্যা বলতে হয়”

“যাও সরো তোমার অফিস নেই?”

নিরব ঘড়ির দিকে এক নজর চেয়ে বলল”হ্যাঁ অবশ্যই আছে,তোর জন্য দেখি আমার অফিস ও টাইম মতো যাওয়া হবে না”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম”আমি ধরে রেখেছি নাকি?”

“মানা করসি আমি?ধর”বলেই দুই দিকে হাত প্রসারিত করল নিরব‌।মানে যাকে বলে”শাহরুখ খান”পোজ আরকি

তার কথা শুনে আমি উল্টোদিকে ঘুরে বিড়বিড় করে বললাম”এর সাথে কথা বললেই লজ্জা পেতে হবে।

নিরব ততক্ষণে আমার পিছনে এসে টাইট করে জড়িয়ে ধরে টুপ করে ডান গালে একটা চুমু খেয়ে চলে যেতে যেতে বলল”সন্ধ্যায় নিতে আসব,রেডি থাকিস”

আমি শুধু কান দিয়ে শুনলাম কিন্তু বলতে পারলাম না কিছুই।অথচ তাকে বলা উচিৎ ছিল”সাবধানে যেও, আমি রেডি থাকব”
কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না।
খাম্বার মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর রুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।
ততক্ষণে নিরব বেরিয়ে চলে যাওয়ার দুই চার মিনিট পার হয়েছে।
দরজাটা লাগিয়ে রুমে আসলাম আমি।

সন্ধ্যায় নিরব নিতে আসলে আব্বু আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসলাম আমরা।
সন্ধ্যা হওয়ায় আকাশের আলো নিভতে শুরু করলেও কৃত্রিক আলোয় শহর ঝলমল করছে।
কখনো কোন ল্যাম্পপোস্ট, কোন দোকান কিংবা কোন গলির আলো।
এভাবেই শত আলোয় শহর আলোকিত।

বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে নিল নিরব। আমিও আন্টির খোঁজ খবর নিয়ে রুমে আসলাম।
তার একটুপর নিরব আসল।
এই সময়টা আমার কোন কাজ থাকেনা বলেই ফোন স্ক্রোল করি।
আজও সেটাই, তবে আমার মনে হচ্ছে নিরব এদিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু একটু আগেই সেও ফোন নিয়ে বসল।
তাহলে কি আমার মনের ভুল?

যাই হোক,সেসব পাত্তা না দিয়ে আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে থাকলাম।
পড়াশোনার প্রতি কানেক্টেড না থাকলেও আমি তাদের সাথে কানেক্টেড।
হঠাৎই বাইরে কে যেন কলিং বেল চাপ দিল।
তা শুনে দুজনেই নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর আমি নিরবকে বললাম দরজা খুলে দিতে।

সে দরজা খুলে ফিরে এলো ঠিকই তবে চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।
তাই বললাম”কে এসেছে?”

“পাশের বাসার আন্টি!‍”থমথমে মুখে বলল নিরব

“তাতে তোমার এমন অবস্থা কেন?”

“সিমা আন্টি এসেছে।আর কিছু শোনা লাগবে তোর? উনার কাজই তো হচ্ছে কখন কার ছেলে মেয়ে কি করল তার তদারকি করা,না জানি আজ কি নিউজ নিয়ে হাজির হয়েছেন”
(পাঠকদের মধ্যে কারো নাম”সিমা”হলে আমার নামে কূটনামি করবেন না 🐸।আই আর নাম খুঁজে পাই নাই।)

আমি কিছু না বলে চুপচাপ রইলাম। আমারও মেজাজ তুঙ্গে।
যাইহোক, একটু পর আন্টি হাসতে হাসতে আমাদের রুমে আসল।
তা দেখে আমরা দুজনেই নড়েচড়ে ঠিকঠাক হয়ে বসলাম।

নিরব জিজ্ঞেস করল”হাসছ কেন?আজ সিমা আন্টি কূটনামির বদলে কোন কৌতুক বলেছে নাকি?”

আন্টি হাসি থামিয়ে বলল”আমার কাছে তোদের দুজনের অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। তুই নাকি সন্ধ্যা বেলায় মেয়ে নিয়ে ঘুরছিস,সেদিনও (যখন অথৈকে নিরব রাখতে গিয়েছিল)ঘুরছিলি। তোদের মধ্যে নাকি কিছু চলে”

“তুমি কি বললে তারপর?”আগ্রহের সাথে বলল নিরব

“তারপর আর কি? বললাম জামাই-বৌ তো একসাথেই ঘুরবে এটাই স্বাভাবিক।এটা শুনে যেন উনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।উনি জিজ্ঞেস করলেন তোদের বিয়ে কখন কিভাবে হলো?
আমি বললাম ঘরোয়া ভাবে হয়েছে তাই বেশি মানুষ জানে না।”

আন্টির কথা শেষ হতেই আমি আর নিরবও হাসতে লাগলাম।নিরব হাসতে হাসতে বলল”তোমাকে আর কষ্ট করে আমাদের বিয়ের কথা কাউকে জানাতে হবে না,দেখবা কাল আমাদের বাসায় প্রেস ও এসে হাজির হবে”বলেই আবারও হাসতে থাকল নিরব।

তারপর রাত হতেই আমরা শুয়ে পড়লাম। তবে আজ নিরব পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছে আমাকে।
তার এই হঠাৎ পরিবর্তন গুলো চোখে পড়ার মতো।
তবে ভালোই লাগে।
কিছু অভ্যাস, কিছু স্মৃতি থাকুক না।

সাথে আমিও থাকি,এটাই তো চাই।
দুজন মানব জোড়া শামুকের মতো লেগে আছি কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই।
অনুভবেই অস্ত্বিত্ব গ্রহণ করি।

চলবে….

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-১০

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:১০

রাতের খাবার শেষ করে আন্টি আর আম্মুকে বিছানা ঠিক করে দিয়ে সব গুছিয়ে আমি রুমে ফিরলাম।

নিরব রুমে ছিল না।তাই বেলকনিতে এসে দেখলাম সে বসে আছে।
আমিও তার পাশের টুলটায় বসলাম।

আমার উপস্থিতি পেয়ে সে আমার দিকে ঘুরে বসল।
বেলকনি অন্ধকার থাকায় বাইরের হালকা আলোগুলোতেও বেলকনিটা সুন্দর লাগছিল।

“ঘুমাবে না?”

“হ্যাঁ”

“চলো তাহলে”

নিরব আমার কথায় উঠে দাঁড়ালো। আমিও তার পিছন হাঁটতে গেলাম কিন্তু হঠাৎই সে দাঁড়িয়ে গেল আর তার সাথে আমিও দাড়িয়ে গেলাম।
হঠাৎই সে বেলকনির লাইট জ্বালিয়ে দিল। কিছুক্ষণ অন্ধকারে থাকায় সে আলো চোখে লাগায় আমি দুই হাতে চোখ ঢেকে নিলাম।
চোখ খুলেই দেখলাম নিরব আমার করা পেন্টিংটার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিরব কি এক্সপ্রেশন দিবে এখন?
নিরব আমার দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার নাহারের জায়গা যেমন নিয়েছি তেমনি পেন্টিংটাতেও নিজেকে এঁকে ফেলেছি।
সে কি রাগ করবে?
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম”ওভাবে কি দেখ?”

“তুই এঁকেছিস?”

“হ..হুম”

তার দিকে একবারও তাকাচ্ছি না আমি। একবার এইদিকে আবার ওইদিকে তাকাচ্ছি।
তা দেখে সে ফিক করে হেসে উঠল।

তা দেখে আমি বললাম”হাসো কেন?”

আমার বিনুনি করা চুলের মাঝেও কয়েকটা অবাধ্য চুল কানের পাশ ছুঁয়ে ছিল।নিরব সেগুলোকে হাত দিয়ে কানের পাশে গুজে দিল।
তার স্পর্শে খানিকটা কেপে উঠলাম আমি। তবুও বুঝে উঠার চেষ্টা করছিলাম সে কি করছে।
হুট করেই সে বেলকনির লাইট অফ করে দিল।
আমি তা দেখে বললাম”আরে লাইট অফ করতে….

পুরো কথা শেষ করার আগেই সে আমার মাথার পিছনে এক হাত দিয়ে তার কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিল।
তার স্পর্শে পুরোই স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।
তারপর সে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে নিয়ে গেল।তারপর শুইয়ে দিয়ে বলল”লাইট অফ ই থাকবে এখন”

______________
সকালে,
নিরব আর আন্টি নাস্তা করে বিদায় নিল।আমি সামনে যায় নি একবারও।
নাস্তা দেওয়ার সময় শুধু ছিলাম।

তারপর সারাটা দিন শুধু এই ভাবনাতেই গেল যে নিরব হঠাৎ কাছে কেন আসল আমার?
এমনটা না যে আমি খুশি হই নি। কিন্তু নিরবও কি খুশি হয়েছে?
নাকি আমার প্রতি অবিচার হচ্ছে ভেবে কাছে এসেছে?
শুধু এই কারণটাই ভাবাচ্ছে আমাকে।

সন্ধ্যায় হঠাৎ নিরব ফোন দিল। এসময়টাতে সে সাধারণত অফিস থেকে ফেরে।
এমনি দিন হলে একবার সম্পুর্ন রিং হওয়ার আগেই রিসিভ করতাম তবে এখন একটা দ্বিধা কাজ করছে।

এমন ভাবতে গিয়েই প্রথমবার কল কেটে গেল। দ্বিতীয়বারের বেলায় রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে নিরবের কন্ঠ ভেসে আসল।
তবে স্বাভাবিক কন্ঠ না।উত্তেজনা বা ভয় পেলে কন্ঠ যেরকম শোনায় তেমন।
তাই ভয় লজ্জাকে একপাশে রেখে আমিও কথা শুরু করলাম।

“অথৈ?”

“বলো!”

“I..I am extremely sorry মানে আমি সেরকম করতে চাই নি, আমি মানে কিভাবে যে কি হয়েছিল আমার। তুই প্লিজ কিছু মনে করিস না!”

নিরবের কথা শুনে আমার কি বলা বা করা উচিৎ কিছুই বোধগম্য হলো না।অশ্রুকণাও যেন চোখে আসছে না।

“তুমি ভালোবেসে কাছে আসো নি আমার?”অবাক হয়ে বললাম আমি

“আম..আমি বললাম তো….(অপরাধ বোধের সাথে বলতে গিয়েও পারছে না)

“তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না! নারী দেহ ছোঁয়া সাধনার বিষয়। ভালোবেসে ছুঁতে হয়।
আমার মধ্যে ভালোবাসা ছিল কিন্তু তোমার মধ্যে? তাহলে কি ধরে নিব তুমি চাহিদার জন্য?….”

খট করে কল কেটে দিলাম আমি।আর কিছু বলতে পারলাম না। ইচ্ছা ছিল জলদি ফিরে যাব তবে এখন ইচ্ছাটাই শেষ হয়ে গেল।
যাকে এতটা বিশ্বাস, ভালোবাসা দিয়েছি সে?সে কি না!
সেও অন্যদের মত পাশে আসল শুধুই নিজের!
.
.
.
নিরব উদাসীন মনে তার বেলকনিতে বসে আছে।সে সত্যিই এরকম কিছু করতে চায়নি।
সেও চেয়েছিল ভালোবেসে অথৈকে কাছে টেনে নিতে। তাহলে কেন কেন সে পারল না?সে কি দেহের প্রতি এতই দূর্বল হয়ে গেল যে আর কিছুটা দিন অপেক্ষা করতে পারল না?
তার স্ত্রীর থেকে এত বড় অপবাদ পেয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে তার।এখন অপরাধ বোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।সে কি করবে?
ক্ষমা চাইবে?ক্ষমা চাইলেই কি পাওয়া যায়?
ক্ষমা হয়ত পাবে তবে আগের মত বিশ্বাস ভালোবাসা কি আদৌ পাবে?
কিচ্ছু ভাবতে পারছে না সে।তাই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রাখল।
তবে তখনো অথৈ এর চেহারাই ভেসে আসছে।
তাই সে রেগে বেলকনি থেকে উঠে চলে গেল আর শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল।
কি করবে এমনিতেই মাথায় আসছে না তারউপর শান্তিতে বসতেও পারছে না।
তাই সে আবারো অথৈকে কল করল।

চুপচাপ টিভির দিকে চোখ রেখে বসে আছি আমি।পাশে আব্বু বসে কার সাথে যেন কথা বলছে।
আম্মু এখন একটু সুস্থ কিন্তু তবুও তাকে ঘরেই থাকতে বলেছি।
দৃষ্টি টিভির দিকে থাকলেও মনোযোগ নেই।

হঠাৎ মোবাইলের রিং বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম”Love” উঠে আছে অর্থাৎ নিরবের কল।

হঠাৎ ফোন কেন করবে ও?
বিরক্ত লাগছে বলে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আবারো টিভির দিকে তাকালাম।

তবে পাশে যে আব্বু আছে তা আমার খেয়ালেই ছিল না। তিনি নিজের ফোনে কথা শেষ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কে কল করেছে।আমি চুপচাপ বললাম”নিরব ভাইয়া!”

আমার কথা শুনে আব্বু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বললেন”কি ধরনের কথা এগুলো অথৈ?স্বামী হয় সে তোমার আর ভাই বলছ!
কোন দরকারে ফোন করছে হয়ত,এখনই ধরো”

“কেন ধরব আব্বু? ভালো লাগছে না আমার!”

“ঝগড়া করেছ নাকি? বিয়ের দুই দিন হতে না হতেই ঝগড়া?নিজের পছন্দে বিয়ে করেছ কিন্তু!”

বলে রাখা ভালো,সব জায়গার মত আমার আব্বু এখানে ভিলেনের মত নিরব ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলেন না।যদিও সেটার কারণ নিরব ভাইয়ের চাকরি পাওয়া নিয়ে ছিল।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম”কোন সমস্যা হয় নি আব্বু!এরকম করো কেন?মাথা ব্যথা করছিল বলে ধরতে চাই নি”

বলেই টিভি অফ করে ফোন নিয়ে ঘরে চলে আসলাম।দরজাও লাগিয়ে দিলাম।
এখন আচ্ছা মত ঝগড়া করলেও কেউ টের পাবে না।

এদিকে আমার যাওয়ার পর আব্বু হালকা হাসলেন। আমার স্বভাব চরিত্র তিনি ভালই জানেন।এখন হয়ত রাগ করছি তবে সেটা বেশিক্ষণ থাকবে না।
আব্বুও ঘুমাতে চলে গেলেন।

“হ্যালো!”

“অথৈ!এত সময় লাগে?”

“কিয়ের সময়?আপনি ফোন দিসেন কেন সেইটা আগে বলেন”

“ফোনও দিতে পারব না?”অবাক হয়ে বলল নিরব

“না পারবেন না!”

“তাহলে ফোন কেটে দিচ্ছি”অভিমানের সুরে বলল নিরব

তার অভিমানি কন্ঠ আগে কখনো শুনি নিই। অভিমান তো তার সাথেই করা যায় যে আপন হয়।তাহলে কি সে আমায় আপন ভাবছে?
মুখের কোণের বিরক্তি হাসিতে পরিণত হলো তবুও সেই হাসিকে আড়াল করে বললাম”কেন?কাটবেন কেন? আগে বলবেন ফোন করার কারণ!”

“তুই আমাকে মাফ কর!আমি…আমি বুঝি নাই তোর খারাপ লাগবে”

“মাফ চাইছেন ভালো কথা তবে খারাপ লাগবে কেন?”

“ওইযে রাতে..

“তোমার কি মনে হয়?আমি না চাইলে তুমি চুপচাপ সব করতে পারতা?আমি চুপচাপ থাকতাম!”

“মানে তোর? তোর সম্মতি ছিল!?”

“তা নয়ত কি”আনমনেই বললাম আমি

নিরবের নিজেকে থাপড়াইতে মন চাইছে।ওর আগেই ভাবা উচিৎ ছিল কোন মেয়ের সম্মতি না থাকলে সে কি টু শব্দও করবে না?
তবুও তার মনের সন্দেহ দুর হলো একটু।সে আবার বললো”তাহলে রেগে ছিলি কেন?”

“তো?তুমি খুব ভালোবাসো আমাকে?”

“তুই কি ফিল করেছিস?”

“আ,, আমার বলাতে কি আসে যায়?”কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম আমি

“আমি কি রেপিস্ট?বউ এর কাছে যাব ভালোবেসে,চাহিদার জন্য না”নেশাতুর কন্ঠে বলে ফোন রেখে দিল নিরব

আমি স্তব্ধ হয়ে ফোন কানে নিয়ে বসে রইলাম।

চলবে….

চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৯

0

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৯

“এই! কিসের এত কথা তোর নাহারের সাথে হ্যাঁ?বলল একটু কথা বলে আসি আর মহারানি গিয়ে এতক্ষণ পর আসছে।বলি কি এত কথা বলছিলি হুম?”

“ওহ আল্লাহ!এত চিল্লাচিল্লির কি আছে? নাহার আপুর সাথে এমনি একটু কথা বলতে গিয়েছিলাম।সে বাদ দাও,কখন বাসায় ফিরে যাবে সেটা বলো। আঙ্কেল তো বাসায় থাকেন না বেশীরভাগ সময়,আন্টি একা আছেন হয়ত।তো আমাদের বিকালের মধ্যেই ফিরে যাওয়া উচিৎ”

“হুম,তা তো অবশ্যই। আমাদের বিকালের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে। কিন্তু আসলামই তো মাত্র। আমাদের কোন চেনা পরিচিতও নাই এখানে। কিভাবে সময় কাটাব? হঠাৎ এসে হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়া তো মানায় না”

“পরিচিত নাই কিন্তু পরিচিত হতে কতক্ষন?চলো সবকিছু সম্পর্কে পরিচিত হই এরপর গায়ের হয়ে যাব দুইজন”

“মন্দ বলিস নি, চল বাসাটা ঘুরে দেখি”
____________
বিকালে আসার কথা থাকলেও নিরব এবং অথৈ সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় ফিরেছে।

সেখানে তাদের দুজনেরই মন টিকেনি।এক তো অচেনা পরিবেশ তারপর এত অচেনা মানুষ। সবমিলিয়ে অস্বস্তিকর।
তাই তারা আবারো রিকশায় করে বাসায় ফিরার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু হঠাৎই নিরবের কি হলো কে জানে রিকশাওয়ালাকে অন্য পথে নিয়ে যেতে বলল।
অথৈ জিজ্ঞেস করলে বলল”গেলেই দেখবি কোথায় যাচ্ছি”

কিছুক্ষণ পর রিকশা থামল একটা নদীর পাশের রাস্তায়। ভাড়া মিটিয়ে নিরব অথৈ এর হাত ধরে নদীর দিকে এগিয়ে গেল।
বিকাল তখনও হয় নি। দুপুর সময় পার হয়নি বলা যায়। তবুও নদীর পাশ বলে একটু পরপর শীতল হাওয়া গায়ে লাগছে।
দুই একটা বাদাম বিক্রেতা আর ফুচকাওয়ালা বসে আছে কাস্টমারের আশায়।
ব্যাস্ত শহরে সবসময় মানুষের আনাগোনা। বিকাল হলে হয়ত জায়গাটা এখনকার মত ফাঁকা থাকবে না।এখনও দুই একজনের আশা যাওয়ায় বলে দিচ্ছে কিছুটা একলা সময় কাটানোর আশায় মানুষ এখানে আসে।দালান কোঠার ভিড়ে প্রকৃতির খোঁজে আসে।

নিরব অথৈকে ইট আর সিমেন্ট দিয়ে বানানো একটা বসার জায়গায় বসতে বলল।
তারপর দুজনের জন্য বাদাম কিনল।দুইজনে চুপচাপ চারপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে খাচ্ছে।
মাঝে মাঝে বাতাসের সাথে গাছের পাতা গায়ে এসে পড়ছে।
পা ভিজিয়ে দুজনে নদীর পাড়ে খানিকটা হেঁটে তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
এই সামান্য কাজেই যে সময় পার হয়ে গেছে তারা টেরই পায় নি।
অথৈ যেন আজ নতুন নিরবকে দেখল।ওর কাছে মনেই হয় নি নিরবের মনে অন্য কারো বসবাস।
মনে হয়েছে অন্য স্বাভাবিক জুটির মত।

নিরব আজ সবটা মন থেকেই করেছে।যদিও ওর বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সে ভাবল যখন ছুটি নিয়েইছে তাহলে সেটাকে কাজে লাগালেই পারে।আজ তার ইচ্ছার মধ্যে একটা পূরণ করল সে।
“নিজের প্রিয় মানুষের সাথে কিছু সময়”
সে যতটা ভেবেছিল সেরকম খারাপ লাগা তার মধ্যে কাজ করে নি নাহারের বিয়েতে।
কেন জানি তার খুশিই লাগছে।
অথৈ এর সাথে মূহূর্তটা উপভোগ করে তার অধিক ভালো লাগছে।
.
.
.
দুজনে যদিও গোসল করেছিল কিন্তু এখন আবারো ঘামে ভিজে গেছে বলে আবারো দুজনই গোসল করল।

মাগরিবের নামাজ শেষে দুজনেই ছাদে আসল। দুজনের হাতেই চায়ের কাপ।
আকাশ মেঘলা। রাত্রে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন বাতাস বইছে বলেই দুজনে ছাদে চা পান করতে এসেছে।
চা শেষে খালি চায়ের কাপদুটো একপাশে রেখে নিরব অথৈ এর দিকে তাকিয়ে বলল”তোর কখনো খারাপ লাগে না?”

অথৈ নিরবের দিকেই তাকিয়ে ছিল।তার প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল”কীসের জন্য?”

“এইযে তোর বিয়ে করা বর অন্য একটা মেয়েকে ভালবাসে, তোকে না”

“আজ বাসে না, একদিন তো বাসবে”

“যদি সে একদিন না আসে?”

“ভালো না বাসুক ঘৃণা তো আর করে না,ডিসরিস্পেক্ট ও করে না তাহলে এভাবেই চালিয়ে দিতে পারব”
বলেই কাপদুটো নিয়ে চলে গেল।
নিরব শুধু তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল”সেই একদিন খুব শিঘ্রই আসবে, অনেক ভালোবাসতে চাই তোকে। তোর চিন্তা ভাবনা বারবারই আমাকে মনে করায় সেদিন বিয়েটা করে ভুল করি নি”
.
.
.
কাঁথা মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে নিরব। নিচে আসার পর থেকে হাঁচি দিয়েই চলেছে সে।
সন্ধ্যায় গোসল করার ফলে এমনটা হয়েছে।
ছোট থেকেই নিরবের ঠান্ডা কাশি সামান্য কারণেই হয় আর তাই সন্ধ্যায় গোসল তার শরীর মেনে নিতে পারে নি বলে এই অবস্থা।

অথৈ বাসায় নেই।সন্ধ্যার পর তার বাসা থেকে ফোন এসেছিল।তার আম্মু খুব অসুস্থ।সেবা করার মত কেউ নেই। চোখ খোলাও রাখতে পারছেন না তিনি।
কয়েকদিন ধরেই কেমন খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন আর তার ফলস্বরূপ তিনি অসুস্থ হয়ে গেছেন।

নিরবই গিয়ে অথৈকে রেখে এসেছে।তখনও দু একবার হাঁচি দিয়েছিল সে।
অথৈ বলেছিল যাওয়ার সময় ঔষধ নিয়ে যেন সে বাসায় ফিরে কিন্তু অতিরিক্ত বিরত্ব দেখাতে গিয়ে সে বলেছিল”অল্প একটু ঠান্ডা লেগেছে,সেরে যাবে।তার জন্য আবার ঔষধ লাগবে কেন?”

কিন্তু সবার শরীর যে একই রকম হয় না, কিছু মানুষ অল্প অসুস্থ হলেই তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, বেশি হয়ে যায়।নিরব তাদেরই একজন। মিসেস হিয়া তাকে ঔষধ দিয়েছেন।
সে ঘুমিয়ে আছে এখন।আশা করা যায় একদম সকালে ঘুম ভাঙবে তার আর ঔষধ যেহেতু দ্রুত সেবন করা হয়েছে তাই রোগ শরীরে না ছড়িয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

অথৈ তার মায়ের পাশে বসে আছে। অসুস্থ হলে চোখ মুখের অবস্থা প্রচুর খারাপ দেখায়।উনারও হয়েছে তাই।

এদিকে মায়ের জন্য খারাপ লাগছে অন্যদিকে নিরব কি করছে সে চিন্তাও তার মাথায় রয়েছে।

অথৈ যাওয়ার পর থেকেই তার মা একা হয়ে গেছেন। তাকে আর একা একা খেতে ভালো লাগে না। কোন কাজে মন বসে না।
একা বাড়িতে থেকে এই চেনা বাড়িটাও অচেনা মনে হয়।
সঙ্গীহীনতার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে গেছেন।

এই অবস্থায় অথৈ তাকে কোন কথাও বলতে পারছে না।তার খুব ইচ্ছে করছে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে।
সবসময় শুধু তাকে বলত”সময়ের কাজ সময়ে করবি, নিজের যত্ন নিবি”আর আজ নিজের শরীরের প্রতি কোন যত্ন নাই।

চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন তিনি। অথৈ ফোনটা নিয়ে উঠে আসল।
লাইট নেভাতে গিয়েও নেভালো না।
নিরবকে ফোন করল তবে আন্টি রিসিভ করলেন। নিরবের অসুস্থতার খবরও দিলেন।

অথৈ জানিয়ে দিল সে দুই একদিন এখানেই থাকবে কারণ তার আম্মু অনেকটা অসুস্থ।
তার আব্বু কাল আসবে। তিনি আউট অফ টাউন।

কথা বলে ফোন রেখে দিলাম আমি। এদিকে আম্মু অসুস্থ, ওইদিকে নিরব।
আম্মুকে ছেড়ে যেতে পারব না আর নিরবের কাছে যাওয়ার কোন অজুহাতও নেই।
তাই চুপচাপ আম্মুর পাশে শুয়ে পড়লাম।
.
.
.
সকালে নিরবের ঘুম ভাঙল অনেকটা দেরিতে। পাশে কি যেন নেই মনে করতেই তার মনে হলো অথৈ নেই‌।

সে চুপচাপ উঠে হাতমুখ ধুয়ে এসে নাস্তা করে অফিস চলে গেল।
সন্ধ্যায় ফিরতেই তার মা দরজা খুলে দিল।
সে ভিতরে এসে কাপড় চেঞ্জ করে অথৈকে কোথাও দেখল না।
অথৈ বলেছিল কালকের মধ্যে চলে আসবে অর্থাৎ আজ আসার কথা ছিল কিন্তু আসে নাই তাই সে তার মায়ের ঘরে গেল।
গিয়ে দেখল তার মা ঘরে নেই। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে সে দেখল তার আম্মু থালা বাসন পরিস্কার করছেন।
সে তার মায়ের দিকে এগিয়ে গেল।

যদিও সহজ একটা কথা তবুও কিভাবে বলবে সে ভেবে পাচ্ছে না তাই চুপচাপ থাকল।
তার মা তাকে উশখুশ করতে দেখে বললেন”কিছু বললে বলে ফেল”

“অথৈ আসে নাই আম্মু?”

মিসেস হিয়া একবার নিরবের দিকে তাকিয়ে আবার থালা বাসন ধোয়ায় মনোযোগ দিয়ে বললেন”কাল রাতে ফোন করেছিল,তোর আন্টি খুব অসুস্থ তাই অথৈ চাইলেও আসতে পারবে না। ফোন করে জানিয়েছিল দুই একদিন থাকবে। তুই ঘুমিয়ে গেছিলি বলে আমি ধরেছিলাম।চাইলে দেখে আসতে পারিস,আর চাইলে কি? আমাদের দেখে আসা উচিৎ”

নিরব কিছু না ভেবেই বলল তার মাকে রেডি হতে আর সে গেল বাজারে কিছু ফলমূল কিনতে।
তার পাঁচ মিনিট পরই তারা বাসায় গিয়ে পৌঁছালো।
.
.
.
কলিং বেল চাপতেই আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।আন্টি আর নিরবকে একসাথে দেখে আমি বেশ অবাক হলাম।
না বলে হঠাৎ আসায় অবাক হয়েছি।
দুজনকেই ভিতরে আসতে বলে কিচেনের উদ্দেশ্য যেতে গেলে নিরব আমার হাতে ফলের ব্যাগটা ধরিয়ে দিল।

তারপর সে ঘরে চলে গেল আম্মুর সাথে কথা বলতে।
কিছুক্ষণ পর সে ফিরে আসল আমার কাছে।আমি তখন নাস্তা বানাচ্ছিলাম।
সে আমার পাশেই দাড়াল।
আমি তার দিকে না তাকিয়েও বুঝলাম।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি বললাম”আমাকে মিস করো নাই?”

নিরব হালকা হেসে বলল‍”করেছি”

তার হাসি মুখ দেখে অজান্তেই মুখে লজ্জা এসে ভর করল।

“তুই করস নাই?”

“উত্তরটা তো জানেন”

“বাসায় কবে ফিরবি?”

আমি অসহায় মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে চা নামিয়ে বললাম”এখনি যেতে চাই, তবে সম্ভব নয়”

নিরব হালকা শ্বাস ফেলে বলল”আঙ্কেল? আঙ্কেল কবে আসছেন?”

“আজই, দোয়া করো আম্মু যেন জলদি সুস্থ হয়ে যায়। আব্বুকে বলব এবার থেকে যেন এখানে থাকে, আর ব্যবসার কাজে যেন বারবার বাইরে না যায়।তুমিও আঙ্কেলকে বলো যেন তিনিও এখানেই নিজের বাসায় থাকেন‍”

“তাই যেন হয়”

নাস্তা শেষ করে নিরব চলে যেতে চাইলেই আমি আটকানোর জন্য বলি”আন্টি আজ থেকে যাও না!”

আন্টি হেসে বলল”সহজ ভাষায় বল কাকে থাকতে বলছিস”

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। আম্মু চোখ বন্ধ করে আছেন।
অসুস্থতার জন্য শরীর দুর্বল হওয়ায় একটু পর পর ঘুমিয়ে যান।এখনো তাই,নয়ত আরো লজ্জা পেতে হত।

আন্টি বলল”আমাকে বাসায় দিয়ে আয় তারপর ফিরে আয় আবার”

আমি আর নিরব একসাথে”না”বলে উঠলাম।
কারণ আমরা দুজনেই নারাজ।আন্টি একা থাকবেন এইটা তো মানা যায় না তাই বললাম”আন্টি তুমি আম্মুর পাশে শুয়ে যাও,একা যেও না প্লিজ!”
নিরবও আমার সাথে সহমত প্রকাশ করল।তাই আন্টিও আর “না” করলেন না।

চলবে….