Wednesday, July 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1426



জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-১০

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-১০ পর্ব
©শাহরিয়ার

— গ্রামের মেঠো পথ ধরে অটো এগিয়ে চলছে, সকলে অনেক আনন্দ করছে গান গেয়ে চলছে।

সোহান:- কেমন লাগছে বাবা?

বাবা:- সবুজ অরণ্যের মাঝে ভেজা তাজা মাটির ঘ্রাণ আহ দারুণ অনুভুতি। তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। তোদের দু’জনকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সোহান:- শুধু ধন্যবাদে কাজ হবে না। মনে আছে কি বলছিলা?

বাবা:- হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে, যা সময় হলে চেয়ে নিস।

— কথা বলতে বলতে অটো চলে আসলো চেনা সেই কাঠের তৈরী দুচালা বাড়ির গেটের সামনে। অনেক গুলো বছর কেটে গেলেও বাড়িটা সেই আগের মতই সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। কাঠ গুলো কয়েক রকম রঙ দিয়ে রাঙানো। চালটা টিনের। ভাবতে পারেন একটা কাঠের তৈরি বাড়ি যার চালটা টিনের ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে আপনি দক্ষিনের জানালা খুলে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন অনেকটা দূরে আর আপনার কানে বেজে চলেছে টিনের চালে পরা ঝুম বৃষ্টির টং টং শব্দ। হারিয়ে যাওয়া যায় সত্যিই হারিয়ে যাওয়া যায়। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বাবা বাড়ির গেটে ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। রাতে বেশ ভালোই বৃষ্টি হয়েছে যার কারণে বাড়ির কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই।

— বাবা সোহানের দিকে তাকাতেই সোহান বলে উঠলো বুঝে গেছি কি করতে হবে। বলেই সোহান যেয়ে ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বাড়িতে কেউ আছেন? তিন চার টোকা দিতেই ভিতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো কে?

সোহান:- আপনার বাসায় মেহমান এসেছে দরজা না খুললে দেখবেন কি করে?

— ফুপু এসে দরজা খুলতেই সবাই কে এক সাথে দেখে চমকে যায়। চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে থাকে। তবে তা আনন্দের পানি। ফুপু চিৎকার করে ডাকতে থাকে রাসেলের বাবা দেখো কারা এসেছে তাড়াতাড়ি উঠো। সোহান ফুপুকে জড়িয়ে ধরে কেমন আছো ফুপু?

ফুপু:- সোহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আমি ভালো আছি তোরা কেমন আছিস কত বড় হয়ে গিয়েছিস।

সোহান:- কোথায় বড় হইছি দেখ আমি তোমার সেই আগের ছোট সোহানই আছি।

ফুপু:- পাগল ছেলে একটা।

— পুরো বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সকলের মিলন মেলায়। বেশ কয়েক বছর পর ভাই বোনের দেখা। এমন মুহুর্ত যারা নিজের চোখে দেখে নাই তারা কখনোই বুঝবে না এই মুহুর্তটা কত আনন্দের। বাড়ির পরিবেশটাই মুহুর্তে বদলে গেলো এই মিলন মেলায়। বোন কি থেকে কি করবে এতো দিন পর ভাইয়ের আগমনে বুঝে উঠতে পারছিলো না। এদিকে ভাইয়েরা বোনের এমন বিচলতা দেখে বলতে শুরু করলো আরে পাগলি বোন এতো অস্থির হবার কিছু নেই। ততক্ষণে ফুপা সকলের জন্য ঘরের ভিতর থেকে চেয়ার নিয়ে হাজির হলো। সবাই বসে যখন গল্প করতে ব্যস্ত তখন ফুপু ভিতরে ঢুকে বাড়ির সব গুলো ঘর গুছাতে শুরু করে দিলো। ইকরা লক্ষ করে দেখলো ফুপুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ইকরা আড্ডার আসর থেকে উঠে ফুপুকে খুঁজতে শুরু করলো। বিছাল বড় বাড়ি অনেক গুলো ঘর কোথায় আছে ফুপু খুঁজতে খুঁজতে এক সময় দক্ষিনের শেষ কর্ণারের রুমে যেয়ে ফুপুর দেখা পায় ইকরা। ফুপুকে দেখে পেছন থেকে যেয়ে চোখ চেঁপে ধরে ইকরা।

ফুপু:- পেছনে না ঘুরেই আমি জানি এটা আমার ইকরা মা।

ইকরা:- হাত ছেড়ে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফুপু তুমি কি করে বুঝলে এটা আমি?

ফুপু:- সামনের দিকে ঘুরে পাগলি মেয়ে বলে কি? মেয়ের গায়ের গন্ধ মা চিনবে না?

ইকরা:- এতো দিন পরেও তুমি আমাকে এতোটা মনে রেখেছো?

ফুপু:- পাগলি কোথাকার।

ইকরা:- আচ্ছা ফুপু রাসেল ভাইয়া আর জুহি কোথায়?

ফুপু:- ওরা বেড়াতে গিয়েছে ওদের চাচার বাড়িতে। আমি ঘর গুলো গুছিয়ে ওদের ফোন করে দিবো চলে আসার জন্য। দুপুরের ভিতর চলে আসবে।

ইকরা:- আচ্ছা ফুপু এই ঘরটা কার জন্য এতো সুন্দর পরিপাটি করে গুছাচ্ছো?

ফুপু:- কার জন্য আবার এ ঘরে সব সময় যে থাকে তার জন্য। সোহান ছাড়া আর কে হতে পারে?

ইকরা:- এটা মোটেও ঠিক না ফুপু তুমি সব সময় সোহানকেই বেশী ভালোবাসো,এবার এ ঘরে আমি থাকবো। এতো সুন্দর ঘরটা ঐরকম ফাজিল ছেলের জন্য হতেই পারে না। একটুও গুছিয়ে রাখবে না। প্রতিদিন তোমাকে এসে গুছাতে হবে। তারচেয়ে বরং রুমটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি সব সময় গুছিয়ে রাখবো।

ফুপু:- হয়েছে তোর আর মিলুর জন্য আমি সামনের রুমটা গুছিয়েছি আরও সুন্দর করে। দু’জন দুই পাশে থাকবি। দু’জনের জন্যই একই রকম ঘর দিয়েছি তোরা ছোট বেলা থেকেই সব কিছু নিয়ে লেগে থাকিস তাই এ ব্যবস্থা করেছি।

— কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির বাহিরে বের হয়ে আসলো। ফুপু সবাইকে নিজের নিজের রুমে যেতে বললো। ছেলেরা সবাই নিজেদের রুমে চলে আসলো। মেয়েরা সকলে চলে গেলো রান্না ঘরে নাস্তা বানানোর। অল্প সময়ের ভিতর সকলে মিলে নাস্তা বানিয়ে ফেললো। নাস্তা রেডি করে ইকরা সবাইকে ডাক দিলো। সোহানের রুমে যেতেই সোহান ইকরার হাত ধরে টান দিয়ে। কিরে গ্রামে এসে দেখি আমাকে ভুলেই গেছিস।

ইকরা:- সোহানের নাক টিপে ধরে ভুলবো কেন? আসলাম কিছুক্ষণ হলো, সারা রাততো তোমার বুকের মাঝেই ছিলাম। এখন ছাড়া আর নাস্তা খেতে আসো।

— দু’জন নাস্তার জন্য বের হয়ে আসলো। এতো লোক এক সাথে খেতে হবে তাই বারান্দায় বড় করে মাদুর বিছানো হলো। সকলে গোল হয়ে সেখানে নাস্তা খেতে বসলো। অনেক দিন পর সকলে এক সাথে খেতে খেতে নানান রকম গল্প শুরু হয়ে গেলো। পুরনো দিনের গল্প।গল্প করতে করতে এক সময় বাবা বলে উঠলো আচ্ছা পুকুরে কি এখনো মাছ আছে? ইস কতদিন মাছ ধরি না।

ফুপা:- জ্বি ভাইজান অনেক মাছ আছে পুকুরে। চলেন আজ সবাই মিলেই মাছ ধরবো। অনেক দিন আপনার সাথে মাছ ধরি না।

বাবা:- হ্যাঁ চলো আজ সকলে মিলে মাছ ধরবো।

সোহান:- তোমরা মাছ ধরো আমি একটু গ্রামটা ঘুরে দেখবো ইস কত বছর পর গ্রামে আসছি না ঘুরলে চলবে?

ইকরা:- আমিও যাবো তোমার সাথে।

মিলু:- আমিও যাবো আমাকেও নিতে হবে।

সোহান:- না তোদের দু’বোনের কাউকেই নিবো না।

ইকরা:- নিবানা মানে আমাকে না নিলে তুমিও বের হতে পারবে না। আমরাও অনেক বছর পরে আসছি। আর তাছাড়া মিলুতো গ্রাম তেমন ভালো করে দেখেইনি। ও যখন এসেছিলো তখন ওর বুঝার মত বয়সই হয়নি।

সোহান:- হয়েছে এতো বাহানা দেখাতে হবে না। যেতে হলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

ফুপু:- যেখানেই যাস না কেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি।

— মিলু আপু আমাকে তুমি সাজিয়ে দিবা। কথা বলতে বলতে দু’বোন সোহানের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো। সোহান তখনো জানে না ওর সামনের রুমেই ইকরা আর মিলু থাকবে। সোহান ওরা পেছন পেছন আসছে দেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে তোরা আমার পিছু পিছু আসছিস কেন?

ইকরা:- তোমার পিছু পিছু আসবো কেন? আমরা আমাদের রুমে যাচ্ছি।

সোহান:- তোদের রুম কোনটা?

ইকরা:- কেন তোমার সামনে যে রুমটা আছে ওটাই আমাদের দু’বোনের রুম।

সোহান:- হ্যাঁ,

ইকরা:- হুম হুম।

— কথা বলতে বলতে যার যার রুমে ঢুকে পরলো। সোহান পাঞ্জাবী চেঞ্জ করে টিশার্ট পরে নিলো। আর ইকরা মিলু শাড়ি চেঞ্জ করে জামা পরে নিলো। একদম সাধারণ সাজেও ইকরাকে অপূর্ব লাগে। যে কোন কেউ ইকরাকে দেখলে মুগ্ধ হবে। বিশেষ করে ইকরার মিষ্টি হাসি আর ঠোঁটের নিচের কালো তিলটা যে কারোরো হৃদয় মুহুর্তেই গায়েল করে ফেলবে। ইকরা নিজেও চোখের নিচে কাজল নিলো সাথে মিলুকেও চোখে কাজল দিয়ে দিলো। দু’জনের সাজা শেষ হতেই সোহান বাহির থেকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো হয়েছে কিনা।

ইকরা:- দুই মিনিট ভিতরে আসো হয়ে গেছে।

সোহান:- তোরা বাহিরে আয় আমি দাঁড়াচ্ছি বলে সোহান হাঁটা শুরু করলো। দু’মিনিটের ভিতর মিলু আর ইকরা বের হয়ে আসলো।

সোহান:- ইকরার দিকে তাকিয়ে দুই বোন তো পরী হয়ে গেছিস। গ্রামের ছেলেরা সব পিছু লাগবে।

ইকরা:- কেন হিংসা হচ্ছে নাকি?

সোহান:- হিংসা জানি কার হয় মিলু?

মিলু:- উফ তোমরা কি ঘুরতে যাবে নাকি?

— তিনজন মিলে বের হয়ে গেলো গ্রাম ঘুরার জন্য। সবুজ শ্যামল অপরূপ সুন্দর্যে ঘেরা গ্রাম দেখলেই দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। দু’বোন ব্যস্ত হয়ে পরলো ছবি তুলা নিয়ে। আর সোহান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে ওদের দু’জনের চঞ্চলতা। তবে খুব বেশী সময় ওরা ঘুরতে পারলো না পুরো আকাশ কালো অন্ধকার মেঘে ঢেকে পরায় দ্রুত তিনজন বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে ইকরা বলে উঠলো ইস এতো সুন্দর মুহুর্তে বৃষ্টি না আসলে কি পারতো না? সোহান তাতে কি হয়েছে বৃষ্টিওতো তোর খুব পছন্দের। বলেই ইকরার দিকে অপলক চেয়ে রইলো। একে অপরের দিক থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছে না। এর মাঝেই শুরু হলো ঝুম বৃ্ষ্টি।

চলবে…

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৯

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-৯ম পর্ব
©শাহরিয়ার

ইকরা:- ব্যথায় কুকড়ে উঠে উফ ছাড়ো প্লীজ হাত ভেঙে যাবে।

সোহান:- আরও জোরে মোচড় দিয়ে ভেঙে যাবে যাক, তুই কার অনুমতি নিয়ে শপিং করতে বের হয়েছিলি?

— ইকরার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে, ব্যথায় কথা বলতে পারছে না। কোন রকমে বললো ছেড়ে দাও খুব কষ্ট হচ্ছে।

— সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ দিয়ে পানি পরছে দ্রুত হাত ছেড়ে দিয়ে এই সরি সরি ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দে এমনটা আর কোন দিনও হবে না।

ইকরা:- কাঁদতে কাঁদতে তুমি এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারো আমি জানতাম না। আমার কি অপরাধ সামান্য শপিং করতেইতো গিয়েছিলাম।

সোহান:- প্লীজ মাফ করে দে রাগটা কেন জানি কন্ট্রোল হচ্ছিলো না। বলেই চোখের পানি মুছার জন্য ইকরার গালে হাত দিতেই এক ঝটকায় ইকরা সোহানের হাত ছড়িয়ে দিয়ে খবরদার আমাকে স্পর্শ করবে না।

সোহান:- ইকরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাতে কান টেনে ধরে আর কখনো এমনটা হবে না।

— ইকরা সোহানের কথা শুনেও না শোনার মত করে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে সোহানের কাপড় গুলো গুছাতে শুরু করলো। সোহান প্লীজ প্লীজ মাফ করে দে।

ইকরা:- তুমি সরো আমাকে আমার কাজ করতে দাও।

সোহান:- উঠে দাঁড়িয়ে ইকরার হাত থেকে জামা টান দিয়ে নিয়ে। যতক্ষণ মাফ করবি না ততক্ষণ কাজ করতে হবে না।

ইকরা:- ঠিক আছে তোমার গুলো তুমিই গুছিয়ে নিও। বলেই হাঁটা শুরু করতেই, সোহান সামনে যেয়ে দাঁড়ালো।

সোহান:- তুই যেতে পারবি না। বললামতো আমার ভুল হইছে ক্ষমা করে দে।

ইকরা:- তোমার সব সময় ভুল হয়, কেন এমনটা করবে তুমি? আমি আর তোমাকে ক্ষমা করবো না। আমাকে যেতে দাও না হলে সত্যি সত্যি আমি এখন চিৎকার করবো।

— সোহান দু’হাত একত্রে করে প্লীজ শেষ বারের মত প্রমিস করছি আর কখনো এমনটা করবো না।

ইকরা:- মনে থাকবে না তোমার এই প্রমিস আমি জানি।

সোহান:- থাকবে থাকবে এই শেষ সত্যি বলছি।

— ইকরা আর কথা না বলে আমার সোহানের জামা গুলো গুছাতে শুরু করলো।

সোহান:- কথা বলবি না আমার সাথে?

ইকরা:- মাথা নেড়ে বুঝালো না।

সোহান:- কেন কথা বলবি না? তার মানে তুই আমাকে মন থেকে মাফ করিস নাই।

ইকরা:- শোন ছেলেদের এমন অন্যায় করাও ঠিক না আর মাফ চাওয়াও ঠিক না বুঝলা।

সোহান:- হুম বুঝলাম আর হবে না।

ইকরা:- জামা গুলো ব্যাগে ভরে দিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে মনে থাকে যেন।

সোহান:- হ্যাঁ সারা জীবন মনে থাকবে।

ইকরা:- তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে রেডি হও। সময় বেশী নেই সন্ধ্যার পর পরই বের হতে হবে। বলে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।

— কিছুক্ষণ পরেই মিলু, মা আর বড় মা সকলে ইকরার রুমে চলে আসলো। এদিকে সোহান, আর ওর বাবা চাচারা বললো ঘটনা কি সবাই এক সাথে কি করবে?

বাবা:- কি জানি আমাকে কি বলছে নাকি?

সোহান:- তাও ঠিক আচ্ছা তোমরা রেডিতো?

বাবা:- হুম আমরা রেডি এখন ওরা রেডি হয়ে আসলেই বের হতে পারি।

— সন্ধ্যার দিকেকে চার জন একই রকম শাড়ি পরে উপর থেকে নিচে নামতে শুরু করলো। অপূর্ব সুন্দর লাগছিলো সবাইকে সোহানের চোখের পলক পরছিলোই। এক দৃষ্টিতে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে। ইকরা উপর থেকে নামতে নামতে ব্যপারটা খেয়াল করলো। মনে মনে হাসছে আর বলছে পাগল একটা। নিচে নেমে আসতেই বাবা বলে উঠলো। সবাইতো পরী হয়ে গেছো।

— বাবার কথা শুনে সকলে এক সাথে হেঁসে উঠলো। ইকরা বলে উঠলো অনেক হাসা হাসি হয়েছে এবার সবাই তাড়াতাড়ি বের হও। নয়তো বাস আমাদের রেখে তার গন্তব্যে চলে যাবে। কেউ আর দেরী করলো না তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে পরলো। ঠিক সময় মত বাস কাউন্টারে চলে আসলো। সকলে বাসে উঠে নিজ নিজ সিটে বসে পরলো। সোহান বসলো ইকরা আর মিলুর পেছনের সিটে, ওদের অপর সাইটের সিট চারটায় বসলো বাবা, মা আর চাচা চাচীরা। সোহানের পাশের সিটটা খালিই রয়ে গেলো। ইকরা সোহানের দিকে ফিরে বললো দোয়া করি তোমার পাশে যেন একটা রূপসী মেয়ে বসে। যেন সারা রাত খুব গল্প করতে করতে যেতে পারো।

সোহান:- আস্তে করে তোর মাথা ফাঁটিয়ে দিবো বেশী কথা বললে চুপ করে সামনে তাকিয়ে থাকবি একবার ও পেছনে তাকাবি না। মেয়ে বসুক আর ছেলে বসুক।

— সোহানের কথা শুনে ইকরা মুচকি হাসে।

বাবা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে এবারতো বল আমরা কোথায় যাচ্ছি?

সোহান:- উহু সকাল হলেই দেখতে পাবে।

বাবা:- যদি যাবার পর জায়গাটা আমার পছন্দ না হয় তখন তোর যে কি হাল করমু আমি এটা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।

সোহান:- আর যদি তোমার পছন্দ হয় তখন কি হবে?

বাবা:- যা তোকেকে ওয়াদা করলাম যা চাইবি তাই পাবি।

সোহান:- মনে রেখো কিন্তু।

বাবা:- অবশ্যই মনে থাকবে।

— কথা বলতে বলতে সত্যি সত্যিই সোহানের পাশের সিটে একটা মেয়ে এসে বসলো। মুহুর্তেই ইকরা ঘুরে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা দারুণ দেখতে ইকরার প্রচণ্ড হিংসা হলো। চোখ বড় বড় করে সোহানের দিকে তাকালো। সোহান মুচকি মুচকি হাসতে থাকলো ইকরার রিয়াক্ট দেখে।

ইকরা:- মিলু তুই পেছনের সিটে যেয়ে বস।

মিলু:- কেন?

ইকরা:- একটা থাপ্পর দিবো কোন প্রশ্ন করলে। চুপ করে চলে যা।

— মিলু নিজের সিট ছেরে উঠে সোহানকে বললো তুমি সামনের সিটে যাও আমি এখানে বসবো। সোহান তাকিয়ে দেখলো আড় চোখে ইকরা তাকিয়ে আছে। সোহান মিলুকে সিট ছেড়ে দিয়ে সামনে ইকরার পাশে যেয়ে বসলো।

সোহান:- খুব আস্তে করে কি হিংসা হয়?

ইকরা:- চুপ একদম চুপ নয়তো খুন করে ফেলবো।

সোহান:- আরে আমার কি দোষ আমি কি মেয়েটাকে বলছি নাকি আমার পাশের সিটের টিকিট কাটার জন্য। বরং তুইতো প্রার্থনা করেছিলি আমার পাশে যেন সুন্দরি একটা মেয়ে বসে।

ইকরা:- তখন কি আমি জানতাম নাকি যে সত্যি সত্যি কোন মেয়ে তোমার পাশে বসবে।

সোহান:- আমি জানিতো তোর জ্বলে।

ইকরা:- আমার না জ্বললে কি ঐ মেয়ের জ্বলবে?

— কথা বলতে বলতে গাড়ি ছেড়ে দিলো। অল্প সময়ের ভিতর গাড়ির সব লাইট অফ হয়ে গেলো। গাড়ি এগিয়ে চলছে দু’জন খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে কথা বলতে বলতে এক সময় ইকরা সোহানের কাঁধে মাথা রেখে দু’চোখ বন্ধ করে নিলো। সোহান একটা হাত দিয়ে ইকরার চুলে বিলি কিটে দিতে এক সময় ইকরা ঘুমিয়ে পরলো। গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে তার গন্তব্যের পথে। এক সময় সোহানেরও দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসলো।

— রাত শেষে ভোরের প্রথম প্রহরের সূর্য যখন সোহানের মুখে পরলো তখন চোখ মেলে তাকাতেই ইকরার মুখটা চোখের সামনে পরলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো তখনো সকলের চোখ বন্ধ। সোহান অপলক ঘুমন্ত ইকরার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। ঘুমন্ত অবস্থায় একটা মেয়েকে যে এতো সুন্দর লাগতে পারে সোহান আগে জানতো না। অপলক চেয়ে থাকতে থাকতে এক সময় সোহান খুব আস্তে আস্তে ইকরাকে ডাক দিলো। বেশ কয়েকবার ডাক দেবার পর, ইকরা চোখ মেলে তাকালো।

ইকরা:- সোহানের কাঁধে মাথা রেখেই আমরা কি চলে এসেছি?

সোহান:- না আরও কিছুটা সময় লাগবে, এখন মাথাটা সরিয়ে নে। সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠবে।

ইকরা:- উফ সরি,

— ইকরা মাথা উঠিয়ে, জানালা খুলে দিয়ে বাহিরে তাকাতেই বাতাসে ইকরার খোলা চুল গুলো উড়তে শুরু করলো। সোহান মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো ইকরার দিকে। ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে এভাবে কি দেখছো?

সোহান:- অপ্সরি দেখছি একটা।

ইকরা:- ইস কি সব বলো তুমি।

— বলেই আবার ইকরা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আজকের সকালটা অনেক সুন্দর। কত বছর পর প্রকৃতির মাঝে আছি আমরা।

সোহান:- হ্যাঁ অনেক বছর পর, তখন তুই খুব ছোটই ছিলি যখন শেষ বার এসেছিলাম।

ইকরা:- হ্যাঁ অনেক গুলো বছর কেটে গেছে।

— দু’জন কথা বলতে বলতে গাড়ি এসে পৌঁছালো গন্তব্যস্থলে। একে একে সবাই নামতে শুরু করলো।

বাবা:- গাড়ি থেকে নেমে, জায়গাটা কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে আমার কাছে।

— সোহান আর ইকরা হাসতে হাসতে নিজের জন্মস্থানকে তোমার শুধুই চেনা চেনা লাগছে?

বাবা:- কি আমরা নীলাঞ্জনায় চলে এসেছি? সত্যিই এটা আমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ। আহ কত গুলো বছর কেটে গেলো। আচ্ছা তোরা কি ফোন দিয়েছিলি আমরা যে এখানে আসছি?

সোহান:- না সারপ্রাইজটা শুধু তোমাদের জন্যই কেন হবে? ফুপুর জন্যও থাক কিছুটা।

— অল্প সময়ের ভিতর অটো চলে আসলে সকলে অটোতে উঠে বসলো। বাবা গ্রামের মুগ্ধতায় গান শুরু করলো।

“সুন্দর, সুবর্ণ, তারুন্য, লাবন্য
অপূর্ব রূপসী রূপেতে অনন্য
আমার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন
ও দেশ, তোমারই জন্য।।
থাকবে নাকো দুঃখ দারিদ্র
বিভেদ-বেদনা-ক্রন্দন
প্রতিটি ঘরে একই প্রশান্তি
একই সুখের স্পন্দন।।”

— গান গাইতে গাইতে অটো এগিয়ে চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে…

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৮

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ৮ম পর্ব
©শাহরিয়ার

মিলু:- রুমে ঢুকতে ঢুকতে এই আপু ও ভাইয়াও এখানে আছো আমরা কোথায় বেড়াতে যাবো বলো না।

— সোহান, ইকরা দু’জনেই মনে মনে বড্ড বেঁচে গেলাম, এদিকে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে দেখে সোহানের ঠোঁটো লিপিস্টিকেে দাগ লেগে গেছে। যদি এই অবস্থা মিলু দেখে ফেলে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইকরা ইশারায় সোহারকে বললো ঠোঁটের লেগে থাকা লিপস্টিকের কথা।

মিলু:- কই আপু আমাকে বলো আমি কাউকে বলবো না।

ইকরা:- ব্যাগ থেকে একটা টিসু বের করে সোহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে, আরে পাগলী বোন আমার কাউকেই বলা যাবে না এখন যা তো আমি ভার্সিটিতে যাবো।

— মিলু মন খারাপ করে সোহান আর ইকরার সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। মিলু নিজের রুমের দিকে সোহান আর ইকরা বাড়ির বাহিরে বের হয়ে আসলো।

ইকরা:- বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।

সোহান:- কেন কি হলো?

ইকরা:- তুমি কি বোকা হচ্ছো নাকি দিন দিন?

সোহান:- মানে?

ইকরা:- যদি মিলু তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা লিপিস্টিকের দাগ দেখে ফেলতো তাহলে কি হতো বলোতো?

সোহান:- কিছুই হতো না আমি বলতাম এগুলা রঙের দাগ।

ইকরা:- ওরে চালাকরে রঙ আর লিপিস্টিকের দাগের মধ্য আকাশ পাতাল পার্থক্য এটা বুঝেননা?

সোহান:- এতো কিছু বুঝার দরকার নাই, মিলু ছোট মানুষ না, যে মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে সে নিশ্চই এসব কিছু তোর চেয়ে ভালোই বুঝে। বলেই একটা রিক্সা ডাক দিলো।

ইকরা:- রিক্সায় বসে সে হতে পারে আমার বুদ্ধি কম এটাতো সব সময়ই বলো এ আর নতুন কি? তবে বেঁচে গেছি এটাই বেশী।

সোহান:- এখন চুপ করে বসে থাক মানুষজন এমনিতেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

ইকরা:- সোহানের একটা হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে কাঁধের উপর নিজের মাথাটা রেখে দেখলে দেখুক তাতে কি হয়েছে। ভালো করে দেখুক আর জ্বলুক।

সোহান:- আরে আরে তুই কি পাগল হলি নাকি?

ইকরা:- হুম ছোট বেলা থেকেই আর তুমি এখন বুঝলে?

— দু’জন গল্প করতে করতে রিক্সা চলে আসলো ভার্সিটির গেটে। দু’জন রিক্সা থেকে নেমে ইকরাকে ভার্সিটির ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে সোহান বাড়িতে চলে আসলো আর ইকরা চলে গেলো ক্লাশ করতে।

— দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেলো। শুকবার সকাল থেকেই সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পরলো নিজেদের জামা কাপড় গুছাতে। সোহান ইকরার ঘরের দরজায় নক করতেই ইকরা ভিতরে আসতে বললো।

সোহান:- ঘরে ঢুকে কিরে তোর সব গুছানো শেষ?

ইকরা:- হুম প্রায় শেষ তোমার গুলো গুছিয়েছো?

সোহান:- না তুই যেয়ে গুছিয়ে দিয়ে আসবি।

ইকরা:- কেন আমি গুছিয়ে দিবো? আমি কি তোমার বউ নাকি যে তোমার জামা কাপড় আমি গুছিয়ে দিবো?

সোহান:- হাসতে হাসতে না হলেও হবিতো একদিন।

ইকরা:- যখন হবো তখন দেখা যাবে এখন নিজের গুলো নিজেই গুছিয়ে নিও।

সোহান:- আমিও পারবো না এখন থেকে তুই গুছিয়ে দিবি।

— দু’জন অনেকটা সময় এ নিয়ে তর্ক করলো। শেষ মেষ ইকরা রাজি হলো সোহানের কাপড় গুছিয়ে দিতে।

ইকরা:- আচ্ছা আমি শাড়ি পরবো নাকি অন্য জামা?

সোহান:- অন্য জামা পর, আর শাড়ি গুছিয়ে নে গ্রামে যেয়ে পরবি।

ইকরা:- ওকে ঠিক আছে।

— সোহান ইকরার রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসলো। কিছু সময় পর সোহান পাঞ্জাবী পরে বের হলো। বাবা আর চাচাও পাঞ্জাবী পরেছে, সকলে এক কালারের একই রকম পাঞ্জাবী পরেছে। এক সাথে নামাজে যাবার জন্য। এমন সময় ইকরা গোলাপি রঙের একটা জামা পরে হেঁটে নিচে নামছিলো। সোহান সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো অপূর্ব।

বাবা:- কিরে তাড়াতাড়ি চল দেরী হয়ে যাচ্ছে।

সোহান:- হ্যাঁ বাবা চলো।

ইকরা:- বাহ বাহ আজ তিনজন একই রকম পাঞ্জাবী পরে নামাজের জন্য যাচ্ছো দেখি।

সোহান:- কেন তোর হিংসে হয় নাকি?

ইকরা:- কেন আমার হিংসে হবে?

সোহান:- না মানে তোরও যদি একই রকম ড্রেস পরার ইচ্ছে থাকে তাহলা যা না মার্কেটিং করে নিয়ে আয় তোদের চার জনের জন্য একই রকম জামা।

— ইকরা রেগে বড় বড় চোখ করে তাকালো সোহানের দিকে, সোহান বাবা চাচার দিকে তাকিয়ে চলো তাড়াতাড়ি বের হই বোম ফাটার আগেই। বলতে বলতে সকলে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলো।

ইকরা:- মা ও মা তাড়াতাড়ি আসোতো।

মা:- কি হলো তোর আবার?

ইকরা:- চলো আমরাও শপিং করবো এক রকম জামা কিনবো।

মা:- তোর মাথা কি খারাপ হইছে? এই বুড়ো বয়সে এক করম জামা পরবো?

ইকরা:- কেন পারবে না? বাবার চেয়ে তোমার বয়স নিশ্চই বেশী না।

মিলু:- মা আপু কিন্তু কথাটা ঠিক বলছে।

সোহানের মা:- চল চল এখন ছেলে মেয়েরা যা পছন্দ করবে আমাদেরও তাই করতে হবে।

মা:- কিন্তু বুবু

ইকরা:- কোন কিন্তু চলবে না যাও সবাই পাঁচ মিনিটের ভিতর রেডি হয়ে আসো।

— সকলে তাড়াহুরো করে রেডি হয়ে আসলো। বের হয়ে পরলো শপিং এর জন্য। এদিকে নামাজ পরে তিনজন বাসায় এসে কাউকে পেলো না। এদিকে খুদায় পেট চু চু করছে সোহানের। বাসায় এসে সবাই আলোচনা করছে কোথায় গেলো ওরা। সবাই রেগে সোহানের দিকে তাকালো।

সোহান:- আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

বাবা:- তোর বুদ্ধিতেইতো ওরা বাসা থেকে বের হইছে শপিং করার জন্য।

সোহান:- আমার কি দোষ? আমি কি জানতাম নাকি ওরা সত্যি সত্যি চলে যাবে।

চাচা:- আরে থামো না তোমরা, গেছে যাক ওদেরওতো মন চায় নিজেদের মত করে একটু সাজতে। আর যেহেতু ঘুরতে যাচ্ছি নিজেদের মত করে মার্কেটিং করুক।

— সোহান নিজের রুমে এসে চার্জার থেকে ফোনটা খুলে ইকরার নাম্বারে ফোন দিলো।

ইকরা:- ফোন ধরে কি হয়েছে বলো?

সোহান:- এই তোরা কইরে?

ইকরা:- এইতো মার্কেটিং শেষ করে বের হলাম। কেন কি সমস্যা?

সোহান:- কোন সমস্যা নেই, তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়।

— ফোন রেখে নিজের মাথার চুল নিজে টানতে শুরু করলো সোহান। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর সকলে আনন্দ করতে করতে বাসায় ফিরলো। ডাইনিং এ বসে সোহান বড় বড় চোখ করে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে।

মা:- এই তোর সমস্যা কি এভাবে তুই ওর দিকে চেয়ে আছিস কেন?

সোহান:- কিছু না এমনি তাড়াতাড়ি খাবার দাও খুব খুদা লেগেছে।

মা:- দেরী হবে দেখছিস না বাহির থেকে এসেছি ফ্রেস হবো তারপর খাবি। বলেই সকলে নিজেদের রুমে চলে আসলো ফ্রেস হবার জন্য। সোহান সকলের চলে যাবার পথে চেয়ে রইলো।

বাবা:- মন খারাপ করিস না, এজন্যই বলি ব্যবসাটা বুঝে একটা বিয়ে করে নে। তাহলে বউকে যখন যা বলবি তাই করবে।

সোহান:- বাবার দিকে তাকিয়ে বাবা মা না তোমার স্ত্রী তুমি কেন মাকে বলতে পারলে না খাবার দিয়ে যেতে?

বাবা:- থতমত খেয়ে ইয়ে না মানে আমারতো এখন বয়স হয়েছে এখন অশান্তি করে কি লাভ বল। আসলে এখন বয়স হলো সংসারের শান্তি বজায় রাখার।

সোহান:- রেগে চাচার দিকে তাকিয়ে আর তুমি?

চাচা:- না মানে যেখানে সংসারে বড় ভাই চায় শান্তি বজায় থাকুক সেখানে আমি কি করে অশান্তি করবো বল? আর আমার মনে হয় এই বিষয়টা তোর ও মানা উচিৎ সংসারে শান্তি বজায় রাখার জন্য স্ত্রী লোকেরা যা বলবে তা মেনে চলতে শিখে নে।

— সোহান মনে মনে আজ ইকরাকে মজাটা বুঝাবো খুব ভালো করেই বুঝাবো ভাবতে ভাবতে সকলে নিচে নেমে আসলো।

মা:- এখন খুব খিদে লেগেছে নাকি?

সোহান:- না।

— মা আর চাচী সকলের জন্য খাবার রেডি করে দিলো। সকলে মিলে দুপুরের খাবার খেতে শুরু করলো।

ইকরা:- বড় মা আমাদের ড্রেস গুলো দারুণ হয়েছে কিন্তু। আমরা বাড়ি থেকে বের হবার আগে এক সাথে পরে বের হবো।

মিলু:- হুম আপু ঠিক বলছো, দারুণ লাগবে আমাদের সবাইকে।

সোহান:- মিলুর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে, তোকে কি কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করছে?

মিলু:- কান্না কান্না কণ্ঠে তুমি আমাকে কেন বকা দিচ্ছো?

সোহান:- কিছু না চুপচাপ খেয়ে নে।

ইকরা:- কি করবে আর কাউকেতো বলতে পারে না।

— সোহান রেগে কিছু বলবে ঠিক সে সময় বাবা বলে উঠলো আহ কি শুরু করলি তোরা? তাড়াতাড়ি সবাই খেয়ে নে সময় নেই বিকেল হয়ে আসছে। কেউ আর কোন রকম কথা না বাড়িয়ে খাবার খাওয়া শেষ করলো। সোহান টেবিল থেকে উঠতে উঠতে ইকরার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসে সব গুছিয়ে দিয়ে যা।

ইকরা:- সব কিছু গুছিয়ে সোহানের রুমের সামনে যেয়ে দরজায় ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। রুমে ঢুকে সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো বলো কি কি গুছাতে হবে?

সোহান:- তোর যা যা নিতে ইচ্ছে হয় তাই নে।

ইকরা:- কেন তুমি মুখে বলতে পারো না।

সোহান:- খাট থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে এগুলা গুছিয়ে দে।

— ইকরা খাটের উপর থেকে জামা গুলো হাত দিয়ে ধরতে যাবে অমনি সোহান ইকরার হাত চেঁপে ধরে মোচড় দিয়ে পেছনের দিকে নিয়ে এসে খুব বেড়ে গেছিস না?

চলবে..

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৭

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-৭ম পর্ব
©শাহরিয়ার

সোহান:- তাড়াতাড়ি হাঁটতো রাত হয়ে এলো।

ইকরা:- রাত হলে সমস্যা কি?

সোহান:- কোন সমস্যা নাই সারা রাত বাহিরে বৃষ্টিতে ভিজবো।

ইকরা:- আমার কোন আপত্তি নেই।

সোহান:- উফ এই মেয়েতো দেখি ভীষণ কথা বলে।

ইকরা:- কথা বলবো না তো কি করবো?

সোহান:- কিছু করতে হবে না শুধু তাড়াতাড়ি পা দু’টো চালালেই চলবে আপাতত।

ইকরা:- কখনো কি শাড়ি পরেছো? পরলে বুঝতে হাঁটতে কত কষ্ট।

সোহান:- তোকে শাড়ি পরতে কে বলছিলো?

ইকরা:- কেউ বলতে হবে নাকি? শাড়িতেই নারী তুমি কি বুঝবা, তোমার কি আর বোঝার মত মন আছে নাকি।

— ইকরার কথায় সোহান কিছুটা থমকে ইকরার দিকে তাকালো। চোখের কাজল পানিতে লেপ্টে মুখে লেগে কালো দাগ হয়ে যাচ্ছে।

সোহান:- একটু দাঁড়াতো।

ইকরা:- কেন?

সোহান:- দাঁড়াতে বলছি দাঁড়া।

— ইকরা সোহানের মুখোমুখি দাঁড়াতেই সোহান দু’হাত বাড়িয়ে দিলো ইকরার গালের দিকে। ইকরা সোহানের হাতের স্পর্শে চোখ বন্ধ করে নিলো। সোহান গালে লেগে থাকা কাজলের কালো দাগ গুলো দু’হাতে মুছে দিতে দিতে বললো তোর কাজল মুছে গেছে।

ইকরা:- চোখ মেলে তাকিয়ে দেখার মত কে আছে আমার মুছলেই কি আর থাকলেই কি?

সোহান:- তুই কি জানিস তোকে সাজলে অসম্ভব সুন্দরি লাগে?

ইকরা:- হাঁটতে হাঁটতে আগেতো কেউ বলেনি তাই জানতাম না আজই প্রথম জানলাম।

সোহান:- আচ্ছা তাই বুঝি? তা আর কি কি জানিস না তুই?

ইকরা:- জ্যামিতি বুঝি না ঐটা বুঝিয়ে দিও।

সোহান:- আচ্ছা দিবো।

ইকরা:- একটা কথা বলবো?

সোহান:- হুম বল।

ইকরা:- তুমি এখন আমার সাথে ঝগড়া করোনা কেন?

সোহান:- এখনতো তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস, তোর সাথে ঝগড়া করলে লোকে কি বলবে?

ইকরা:- আমি বড় হইছি কবে?

সোহান:- তো কি এখনো ছোট আছিস বিয়ে করিয়ে দিলে তো সংসার করার সাথে সাথে ডজন খানিক সন্তানের জননী হয়ে যাবি।

ইকরা:- এসব উল্টা পাল্টা কথা বলবা না একদম।

সোহান:- হাসতে হাসতে তোকে একটা কথা বলবো?

ইকরা:- হুম বলো।

সোহান:- না থাক অন্য আরেক দিন বলবো।

— সোহানের এমন কথায় ইকরা বড় বড় চোখ করে সোহানের দিকে তাকালো আর মনে মনে বললো ইস ভালোবাসি কথাটা বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে যখন বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। তখর রাত প্রায় আটটা বাজে। বাড়ির ভিতর ঢুকতেই সকলে ওদের দেখে হো হো করে হেসে দিলো। সোহান পকেট থেকে পলিথিনে প্যাঁচানো টিকিট গুলো ইকরার হাতে দিয়ে বললো ভালো করে রেখে দিস।

বাবা:- কোথাকার টিকেট কাটলি দেখি।

ইকরা:- না এখন দেখানো যাবে না সারপ্রাইজ তো সারপ্রাইজ থাকবে।

— সবাই আরেক বার এক সাথে হেসে দিলো। সোহান আর ইকরা যার যার রুমে চলে আসলো ফ্রেশ হবার জন্য। ফ্রেস হয়ে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে দু’জনেই আবার ফিরে আসলো রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। সবাই মিলে রাতের খাবার শেষ করে গল্প করতে শুরু করলো। গল্পের এক পর্যায় ইকরার বাবা বললো সোহান চাকরিতো হচ্ছে না এক কাজ কর আমাদের ব্যবসাটাই বু্ঝে না। আমার আর ভাইয়ার বয়স হয়েছে। এখনতো ব্যবসা তোর বুঝে নেয়া উচিৎ। আমি বলছি না এখুনি তোকে বুঝে নিতে হবে। ঘুরে আসি তারপর না হয় বুঝে নিস।

সোহান:- আমি ঐ ব্যবসার কিছু বুঝিনা।

বাবা:- তোকে বুঝতে হবে না আমরা দু’জন বুঝিয়ে দিয়ে তবেই অবসরে যাবো। তাছাড়া তোর বয়স ও হয়ে যাচ্ছে বিয়েতো দিতে হবে।

— বাবার মুখে এমন কথা শুনে সোহান কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো। বাবা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো তোর কাউকে পছন্দ থাকলে বলতে পারিস।

সোহান:- বাবা এখন এসব কথা থাকনা। সামনে অনেক সময় আছে তাছাড়া বাড়িতে দুটো মেয়েও আছে তাদেরও বিয়ের বয়স হয়েছে।

বাবা:- এসব তোকে ভাবতে হবে না, আমরা সব কিছু ভেবে রেখেছি।

— দীর্ঘ সময় নানান বিষয়ে কথা হচ্ছে ইকরা মনে মনে ইচ্ছে মত সোহানকে বকা দিচ্ছে ফাজিল একটা আমি তোকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। আর তোকেও অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে দিবো না। নানান রকম কথা মনে মনে ভাবছে ইকরা। কথা বলতে বলতে রাত প্রায় এগাড়োটা বেজে গেলো সবাই নিজেদের রুমে চলে আসলো।
সোহান বিছানায় শুয়ে ভাবছে কি করে ইকরাকে মনের কথা বলা যায় ওকে মনের কথা না বলতে পারলে বাবা অন্য জায়গায় যদি বিয়ে ঠিক করে ফেলে তখন সব শেষ হয়ে যাবে।

— ইকরা দক্ষিণা বাতাসে ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে মনে মনে মেজাজটা কি পরিমাণ গরম হয় এই ছেলেটার উপর আমি এতো ভালোবাসি কেন বুঝে না? মেয়ে মানুষ হয়ে আমি কি করে বলি ওকে কতটা ভালোবাসি। ওর জন্য কষ্ট করে সাজি, শাড়ি পরি বৃষ্টিতে ভিজি তা কি ও বুঝে না। ওর প্রতিটা কথা প্রতিটা স্পর্শে আমি ভালোবাসা খুঁজি তা কি ওর চোখে পরে না। যেভাবেই হোক ওর মুখ থেকে ভালোবাসার কথা বলাতেই হবে।

— সকালে নাস্তার টেবিলে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো আমাকে আজ ভার্সিটিতে দিয়ে আসবে আমার ক্লাশ আছে।

সোহান:- কেন তুইতো আগে একা একাই ভার্সিটিতে যাতায়াত করতি।

ইকরা:- এখন কি আমি বড় হই নাই?

সোহান:- তো কি হইছে?

ইকরা:- রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় ছেলেরা যেন কেমন করে তাকায়।

সোহান:- বোরকা পরে যাবি।

ইকরা:- বোরকা পরে গেলে কি ছেলেরা তাকায় না?

— সোহান কিছু বলতে যাবে এমন সময় বাবা বলে উঠলো আহা তোর সমস্যা কোথায় দিয়ে আসলে তোরতো আর ক্লাশ নেই। কিংবা কোন চাকরিও নেই বলেই পকেট থেকে পাঁচশত টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে এখন থেকে যতদিন তুই ব্যবসা বুঝে না নিস ততদিন এটাই তোর চাকরি এই নে অগ্রীম বেতন।

সোহান:- বড় বড় চোখ করে ইকরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কত বড় হয়েছিস দেখবোতো আমি।

ইকরা:- কিছু বললে?

সোহান:- কই নাতো।

ইকরার মা:- তোরা দু’জন সব সময় টম আর জেরির মত লেগে থাকিস কেন?

ইকরা:- তুমি বুঝবা না টম আর জেরির মাঝে অনেক ভালোবাসা তাইতো দু’জন শত ঝগড়ার পরেও একজন আরেক জনকে ছেড়ে যায় না।

মা:- তোকে বিয়ে দিয়ে দু’জনকে আলাদা করে দিবো।

— চাচীর মুখে এমন কথা শুনে যেন সোহানের হৃদয়টা কেঁপে উঠলো। চোখ দু’টো মুহুর্তেই পানিতে ছলছল করতে লাগলো নিজের চোখের পানি লুকানোর জন্য সোহান তাড়াতাড়ি নাস্তার টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসলো। ইকরা সোহানের এমন ব্যবহারের সাথে মোটেও পরিচিত না। সবাই যখন ইকরাকে বকা দেয় তখন সোহানও তাদের সাথে তাল মিলায় আজ হঠাৎ কি হলো যে এভাবে উঠে যেতে হবে? ভাবতে ভাবতে নিজেও খাবার টেবিল থেকে উঠে কিচেন থেকে চায়ের মগ নিয়ে সোহানের রুমের দরজায় যেয়ে নক করলো।

সোহান:- দরজা খোলা আছে।

ইকরা:- দরজা ঠেঁলে ভিতরে ঢুকে সোহানের দিকে চায়ের মগ এগিয়ে দিতে দিতে তুমি এভাবে চলে আসলে কেন?

সোহান:- তো কি করবো কাল থেকে শুধু বিয়া আর বিয়া এই নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না। আর সব চেয়ে বড় কথা এখনো না আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি আর না তোর লেখাপড়া শেষ হয়েছে। এখুনি কেন তাদের বিয়ে নিয়ে এতো ব্যস্ততা থাকবে?

ইকরা:- শোন ছেলে মেয়ে বড় হলে বাবা মায়ের দায়িত্বই হলো তাদের বিয়ে দেয়া।

সোহান:- এই সকাল থেকে বড় হয়েছিস বড় হয়েছিস লাগিয়ে রাখছিস কেন? কত বড় হয়েছিস শুনি? বিয়ে দিলে সংসার করতে পারবি? কি কি রান্না করতে পারিস শুনি?

ইকরা:- কিছুই পারিনা শ্বাশুরিকে বলবো তার ছেলের যা যা খাবার পছন্দ আমাকে রান্না করতে শিখিয়ে দিতে।

সোহান:- রেগে একটা থাপ্পর মারবো যা বা এখান থেকে। খুব সখ জেগেছে বিয়ে করার।

— সোহানের এমন ব্যবহারে ইকরার প্রচণ্ড কষ্ট লাগলো। নিজেরর চোখের পানি সামলে নিয়ে কোন রকমে উঠে দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে সোহানের রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সোহান মনে মনে এই যা এটা আমি কি করলাম অযথাই ওকে বকা দিলাম ওর কি দোষ আমি নিজেইতো ওকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারিনা। পাগলিটাকে কি করে এখন সামলাই।

— সকাল এগাড়োটার দিকে সোহান ইকরার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো।

ইকরা:- ভিতর থেকে দরজা খোলা আছে।

সোহান:- রুমে ঢুকে দেখতে পেলো ইকরা কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হলো। মাথা নিচু করে সরি ভুল হয়েছে আর কখনো এমন হবে না।

ইকরা:- তুমি সরি বলছো কেন? আমি সরি। আসলে ভুলতো আমারি আমিই বা তোমাকে কেন বলতে যাবো আমার সাথে ভার্সিটিতে যাবার কথা।

— বলেই ইকরা ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় সোহান ইকরার হাত টেনে ধরে।

ইকরা:- ছেড়ে দাও।

সোহান:- হাত টান দিতেই ইকরা সোহানের মুখোমুখি চলে আসে। ইকরার ঠোঁট দু’টো কাঁপতে থাকে। তোকে ছেড়ে দেবার জন্যতো ধরিনি।

ইকরা:- সোহানের বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে।

— এমন ঘটনায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় সোহান, এই কি করছিস কেউ চলে আসলে কি মনে করবে?

ইকরা:- কে কি মনে করলো তাতে আমার কি?

সোহান ইকরার দিকে অপলক চেয়ে থাকতে থাকতে কখন জানি নিজের ঠোঁট দুটো ইকরার ঠোঁটকে স্পর্শ করে ফেলে, ঠিক এমন সময় বাহির থেকে কারো আসার শব্দে দু’জন দুদিকে সরে দাঁড়ায়।

চলবে..

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৬

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ৬ষ্ঠ পর্ব
©শাহরিয়ার

ঠিক চারটার সময় ইকরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে। ডাইনিং এ বসে থাকা সোহান সেদিকে তাকিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। অপলক নিচে নামতে থাকা ইকরার দিকে চেয়ে রয়। চোখের পলক যেন কোন ভাবেই ফেলতে পারছিলো না সোহান। প্রিয় নীল রঙের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে হাতে নীল চুড়ি পরেছে। খোঁপায় গোলাপ ফুল আর চোখের পাপড়ি টানা কালো কাজলে। সোহান মনে মনে বলে উঠলো অপূর্ব। কখন যে ইকরা সোহানের সামনে চলে এসেছে সেদিকে সোহানের খেয়াল নেই। এক দৃষ্টিতে সোহান চেয়েই রয়েছে।

ইকরা:- সোহানের সামনে দাঁড়িয়ে কানের কাছে হাত নিয়ে তুড়ি মেরে এই এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

সোহান:- চমকে উঠে তোকে দেখছিলাম। ইস গোলাপের জায়গায় যদি কাঁঠ গোলাপ হতো তাহলে আরও সুন্দর মানাতো তোকে।

ইকরা:- কে এনে দিবে শুনি আমার কি আর এ বাড়িতে আপন বলতে কেউ আছে?

সোহান:- আচ্ছা যা কোন একদিন এনে দিবো এখন চল দেরী হয়ে যাবে না হলে, অনেকটা পথ যেতে হবে।

— দু’জন বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। একটি রিক্সাও দেখা যাচ্ছে না, এদিকে বাহিরে এখনো ভালো রৌদ্দের তাপ রয়েছে। সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো চল মোর পর্যন্ত হেঁটে যাই।

ইকরা:- ঠিক আছে।

— বলে সোহানের সাথে সাথে হাঁটতে শুরু করলো, কয়েক পা হেঁটে ইকরা দাঁড়িয়ে গেলো। সোহান পিছু ফিরে তাকিয়ে কি হলো?

ইকরা:- শাড়ি পরে এভাবে একা আমি হাঁটতে পারি না।

সোহান:- তাহলে কি করবো? এদিকে তো কোন রিক্সাও নেই।

— বলতে বলতে আবার ইকরার সামনে এসে দাঁড়ালো। ইকরা নিজের হাত সোহানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে। ধরে রেখো তাহলেই আমি হাঁটতে পারবো। ইকরার হাতের দিকে হাত বাড়াতেই সোহানের হার্টবিট বাড়তে শুরু করলো। তবুও সাহস করে সে হাত বাড়িয়ে ইকরার হাতটাকে হালকা করে চেঁপে ধরলো। সোহানের হাতের স্পর্শে ইকরা মিষ্টি করে হাসি ফুটিয়ে সোহানের পাশে হাঁটতে শুরু করলো আর মনে মনে বললো গাধা একটা।

সোহান:- কিছু বললি?

ইকরা:- কই নাতো।

সোহান:- ওহ আচ্ছা আমি মনে হয় ভুল শুনেছি।

ইকরা:- ইস এই অবস্থায় যদি তোমার প্রেমিকা দেখে ফেলে তুমি আমার হাত ধরে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছো, তবে তোমাকে যে কি করবে। ভাবতেই আমার কেমন জানি হাসি পাচ্ছে।

সোহান:- ইকরার কথা শুনে জোড়ে জোড়ে হাসতে হাসতে না আমার কোন প্রেমিকা আছে আর না এসব নিয়ে টেনশন আছে বরং নিজের চিন্তা কর একবার যদি তোর বয়ফ্রেন্ড দেখে ফেলে তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?

ইকরা:- হুর আমার ঐসব কিছু নাই।

সোহান:- কি বলিস সত্যিই তোর কোন বয়ফ্রেন্ড নেই?

ইকরা:- বললাম তো নেই, তোমার বিশ্বাস না হলে আমার কিছু করার নেই। ঐসব প্রেম ভালোবাসা আমার দ্বারা হবে না। আচ্ছা তুমি বলো তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ খু্ঁজে দিবো।

সোহান:- থাক লাগবে না।

ইকরা:- উহু বলোতো তুমি।

সোহান:- চোখ দুটো টানা টানা, ঠোঁটে লেগে থাকবে মিষ্টি হাসি। মায়াবী সে হাসিতে আমার মন হারাবে। তার কথায় মুক্তা ঝরবে আমি মুগ্ধ হয়ে তার দিকে চেয়ে রইবো। তার হাইট তোর মত হলে ভালো হবে একটু কম বেশী হলে সমস্যা নেই। তবে ঠিক তোর মত ঠোঁটের নিচে একটা তিল থাকা চাই তো চাই। তা না হলে আর আমার প্রেম ভালোবাসা হবে না বুঝলি।

ইকরা:- তুমি চিন্তা করো নাতো আমি ঠিকই খুঁজে এনে দিবো এমন মেয়ে।

সোহান:- সত্যি এনে দিবি?

ইকরা:- মনে মনে তোমার মাথাটা ফাঁটিয়ে দিবো। হ্যাঁ সত্যি দিবো।

— সোহান মনে মনে আস্ত মাথা মোটা একটা মেয়ে এতো করে বুঝালাম তবুও বুঝলো না। আর কি করে বুঝাবো তোকে?

— ইকরা এতো সুন্দর একটা সুন্দরি মেয়ে পাশে থাকার পরেও সে অন্য মেয়েকে নিয়ে কল্পনা করছে। ইচ্ছে করছে একটা ধাক্কা মেরে ড্রেনে ফেলে দিতে।

— দু’জনের ভাবনা জুড়ে শুধুই দু’জন অথচ কাউকে কেউ বলতে পারছে না কতটা ভালোবাসে। রিক্সায় উঠে শ্যামলীর উদ্দেশ্যে রওনা হলো দু’জন পাশাপাশি বসেও তাদের মাঝে অনেকটা গ্যাপ রেখেছে সোহান। ভাঙা রাস্তার কারণে ঝাঁকুনি লাগছে বার বার, ইকরা ঝাঁকুনিতে বার বার সামনে চলে যাচ্ছে শাড়ি পিছলে। কি করবে ভেবে না পেয়ে সোহানের হাতের ভিতর নিজের একটা হাত ঢুকিয়ে শক্ত করে চেঁপে ধরতেই সোহানের শরীর বা দিকে কিছুটা ঝুঁকে এলো। দু’জনের দেহের সাথে দেহের স্পর্শে দু’জনই কিছুটা কেঁপে উঠলো। সোহান এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ইকরার দিকে।

ইকরা:- যেন সব ভুলে গিয়েছে ভুলে গিয়েছে এখনো বলতে পারেনি সোহানকে ভালোবাসি কিংবা সোহানএ কোন দিন বলেনি ওকে ভালোবাসে তবুও নিজের মাথাটা সোহানের কাঁধে রেখে সোহানকে প্রশ্ন করলো কি দেখো এমন করে?

সোহান:- কিছুটা বিব্রত হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে, ইকরার চুলে হাত দিয়ে কি যেন একটা উড়ে এসে তোর চুলের মাঝে পড়েছিলো।

ইকরা:- তুমি মিথ্যা বলছো আমি তোমাকে চিনি তুমি মিথ্যা বললে তোমার কপালে ঘাম জমতে শুরু করে যেমনটা এখন তোমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে।

সোহান:- আরও বিব্রত হয়ে গেলো কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না, তবে কি ইকরা বুঝে ফেললো সে তাকে ভালোবাসে? নাকি ও অন্য কিছু মনে করলো। আরে না আমি কেন মিথ্যা বলবো তোকে?

ইকরা:- মানুষ অনেক কারণে মিথ্যা বলতে পারে তা ভালোর জন্যও হতে পারে আবার খারাপের জন্যও হতে পারে। নিজেকে বাঁচানোর জন্যও বলতে পারে আর অন্যকে বাঁচানোর জন্যও বলতে পারে।

সোহান:- এতো সময়ে নিজেকে বেশ ভালো ভাবেই সামলে নিয়েছে। তাই ইকরার দিকে কিছুটা ঘুরে একটা কানে হাত দিয়ে খুব বেশী পেঁকে গেছিস তাই না।

ইকরা:- উফ ছাড়ো লাগছেতো মানুষ কি মনে করবে?

সোহান:- ইকরার কান থেকে হাত সরিয়ে নিতে নিতে মানুষেরটা আমি খাই ও না পরিও না বুঝলি। যে মানুষ কি করলো তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা থাকবে।

— দু’জন গল্প করতে করতে এক সময় শ্যামলী বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলো রিক্সা। রিক্সা থেকে নেমে বাস কাউন্টারে যেয়ে সকলের জন্য টিকিট কিনে নিলো। তখন শেষ বিকেলো কিংবা সন্ধ্যার প্রথম প্রহর। সোহান ইকরার চোখে চোখে রেখে বললো কোথায় যাবি এখন?

ইকরা:- হাত বাড়িয়ে সোহানের হাত চেঁপে ধরে যেখানে নিয়ে যাবে তুমি।

সোহান:- চল পালিয়ে যাই দু’জন যেদিকে দু’চোখ যায়।

ইকরা:- সোহানকে কিল ঘুষি মারতে মারতে এই আমরা কি চোর নাকি ডাকাত পালিয়ে যাবো। আর তোমার সাথে কেন পালাবো আমি তোমার কে হই?

সোহান:- আরে থাম থাম মানুষ তাকিয়ে মজা নিচ্ছে মাফ চাই তোকে কোথাও যেতে হবে না। চল সামনের দিকে হেঁটে যাই। তারপর রিক্সা নিয়ে চলে যাবো।

— দু’জন হাঁটতে শুরু করলো। কিছুটা পথ হেঁটে আবারো রিক্সায় উঠলো। গল্প করতে করতে রিক্সা ধানমন্ডি লেকের কাছে চলে আসলো দু’জন রিক্সা থেকে নেমে একটা ফুচকার দোকানের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। পুরো আকাশ তখন কালো হয়ে আছে যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে বলে।

সোহান:- ইকরার মুখোমুখি একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে মনে হয় বৃষ্টি নামবে।

ইকরা:- খুশি হয়ে তাই, নামলে নামুক আমি ভিজবো।

সোহান:- পাগল নাকি ভিজে জ্বর বাধাবি নাকি?

ইকরা:- মোটেও না বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমার কিছুই হবে না।

সোহান:- ঐসব চলবে না, শেষে জ্বর আসলে আমাকেই সবার বকা শুনতে হবে।

ইকরা:- চুপ একদম চুপ, বেশী কথা বললে আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করবো তখন সব মানুষ জন এসে তোমার হাত পা ভেঙে দিবে।

সোহান:- কেন কেন আমি কি করছি?

ইকরা:- এই যে কোন কথা শুন না তাই।

সোহান:- আমি তোর কথা শুনবো নাকি তুই আমার কথা শুনবি?

— দু’জন কথা বলতে বলতে ফুচকা চলে আসলো।
ফুচকা খেতে খেতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। দু’জন তাড়াতাড়ি ফুচকা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। সোহান কোথাও দাঁড়ানোর জন্য জায়গা খুঁজলো। আর ইকরা বৃষ্টিতে ভেজার জন্য হাঁটতে শুরু করলো। ইকরার এমন অবস্থা দেখে সোহান মনে মনে বলে উঠলো পাগলী একটা।

ইকরা:- কই আসো না কেন?

— সোহান ইকরার সাথে হাঁটতে শুরু করলো।

সোহান:- অনেকটা পথ কিন্তু তোর হাঁটতে কষ্ট হবে।

ইকরা:- কিছু হবে না বুঝলে। আমি অনেক হেঁটেছি।

সোহান:- হেঁটেছিস কিন্তু তা জামা পরে শাড়ি পরে না।

ইকরা:- সোহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে তুমি ধরে রাখো তাহলেই হবে।

— সোহান ইকরার দিকে চেয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইকরার কপাল বেয়ে টপটপ করে বৃষ্টির পানি পরছে। পুরো শরীর বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। দু’জন গল্প করতে করতে হাঁটছে সোহান মনে মনে বলছে এই পথ যদি শেষ না হতো। তাহলে হয়তো আমিই হতাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। ইকরা মনে মনে বুঝে না কিছু এতো কাছে এক সাথে পাশাপাশি হেঁটে চলছি, একটু বেশী সময় একান্ত কাছে পাবার জন্য। অথচ সে বুঝতেই পারছে তাকে আমি ভালোবাসি কত।

চলবে…

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৫

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ৫ম পর্ব
©শাহরিয়ার

— দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রচণ্ড শব্দ করে হেসে উঠলো এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকা মিলু চিৎকার করে বলে উঠলো ভুত ভুত। মিলুর এমন কাণ্ড দেখে দু’জন আরও কিছুটা সময় হেসে তারপর নিচে নেমে আসলো। নিচে নামতেই দেখতে পেলো মিলু ডাইনিং এ বসে থরথর করে কাঁপছে আর আস্তে আস্তে কি যেন বলছে।

ইকরা:- কিরে বনু তোর কি হইছে?

মিলু:- ভুত ভুত আপু ভুত দেখেছি।

— মিলুর কথা শুনে দু’জন আবারো হেসে দিলো।

ইকরা:- কোথায় ভুত দেখেছিস?

মিলু:- ছাঁদে উঠার সিঁড়িতে দেখেছি আপু জানো না আমাকে দেখা মাত্র কি জোড়ে হাসতে শুরু করলো।

–মিলুর এমন কথায় হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাবার অবস্থা দু’জনের। সোহান আচ্ছা ছাঁদের সিঁড়ির কোথায় ছিলো ভুতটা বলতে পারবি?

মিলু:- হুম পারবো কিন্তু আমি যাবো না, আমি ভীষণ ভয় পাইছি।

সোহান:- কিছু হবে না আমরা তোর সাথে আছিতো।

মিলু:- সত্যি থাকবাতো?

সোহান:- হ্যাঁ তিন সত্যি থাকবো এখন চল।

— তিনজন ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। সিঁড়ির কাছে এসে মিলু উপরের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিলো ঐ দিকটায়।

সোহান:- চল দেখি কি আছে ঐখানে।

মিলু:- না না আমি যাবো না তোমরা যাও।

— সোহান আর ইকরা মিটমিট করে হাসতে হাসতে সেদিকে রওনা হলো। এদিকে মিলু ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। অনেকটা উপরে উঠে ইকরা আর সোহান দু’জন মিলো হা হা করে হাসতে শুরু করতেই মিলু চিৎকার করতে শুরু করলো। সোহান আর ইকরা মিলুকে বললো আরে ভয় পাস না আমরা দু’জন। নিচে নেমে এসে বললো তুই এতো ভিতু কেনরে?

মিলু:- কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ভুত।

ইকরা:- দূর কোন ভুত না আমরা দু’জন তখন হাসতে হাসতে নামছিলাম।

মিলু:- তোমরা এভাবে আমাকে ভয় দেখাতে পারলে?

সোহান:- তোকে আমরা ভয় দেখাবো কেন? তুই নিজেই ভয় পেয়েছিস আচ্ছা এটা বল এতো রাতে তুই কেন ছাঁদে যাচ্ছিলি?

মিলু:- কেন আমি কি ছাঁদে যেতে পারি না?

ইকরা:- তা পারবি না কেন? কিন্তু কেন যাচ্ছিলি এটাতো বল।

মিলু:- এমনি বিশুদ্ধ হাওয়া খাওয়ার জন্য তুমি বুঝবে না।

— বলতে বলতে মিলু নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। ইকরা সোহানের দিকে তাকালো মিলু নেমে যেতেই সোহান বললো আমার মনে হয় মিলু প্রেমে পরছে। তাইতো এতো রাতে ছাঁদে যাচ্ছিলো।

ইকরা:- তুমি কি করে বুঝলে? তুমি কি ছাঁদে বসে প্রেম করো নাকি?

সোহান:- আমার ছাঁদে বসে প্রেম করতে হবে কেন? এজন্যই বলি তোর মাথা মোটা। তুই ওর বলার ভঙ্গীমা দেখেও বুঝতে পারিস নাই।

ইকরা:- মাথায় হাত দিয়ে ওর এতো বড় সাহস, বড় বোন প্রেম করে না আর ও প্রেম করছে। আচ্ছা এটা বলো তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?

সোহান:- নারে বেকার মানুষের কাউকে ভালোবাসতে নেই।

ইকরা:- কেন? বেকাররা কি মানুষ না?

সোহান:- হাসতে হাসতে বেকাররাও মানুষ তবে বেকার মানুষ। যেমন মনে কর, একজন বেকার ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসলো। এদিকে মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়েটাকে বিয়ের জন্য চাঁপ দিচ্ছে এমন অবস্থায় মেয়েটা যখন ছেলেটাকে বিয়ের কথা বলবে তখন ছেলেটা পরিবারের কথা মেয়েটার ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে মেয়েটাকে বলবে যার সাথে পরিবার বিয়ে ঠিক করছে তাকে বিয়ে করে নেবার জন্য। কিন্তু ছেলেটা সত্যিই মেয়েটাকে ভালোবাসে। বুকের ভিতর পাথর চাঁপা রেখে মেয়েটাকে এ কথাটা ছেলেটার বলতে হয়েছে। অথচ মেয়েটা ভাববে ছেলেটা কতই না স্বার্থপর।

ইকরা:- শোন সব সময় যে ছেলেদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে এমন হবে কেন? আমি হলে ছেলেটাকে বলবো আমি তোমাকে সাহায্য করবো বিয়ের পর, যতদিন না তোমার চাকরি হচ্ছে। আমি দু’টো টিউশনি করি, না হয় আরও দু’টো টিউশনি বাড়িয়ে করবো।

— ইকরার কথা শুনে মুগ্ধ নয়নে আধো আলো আধো অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো সোহান। মুখ থেকে কোন কথাই জেনো বের হতে চাচ্ছে না সোহানের শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে এই মাথা মোটা মেয়েটার দিকে না মাথা মোটা বললে ভুল হবে কিছুটা হলেও মেয়েটার মাথায় বুদ্ধি আছে সত্যিই মেয়েটা জ্যামিতিতে যতটা কাঁচাই হোক না কেন। ভালোবাসার অংকে পুরোই পাকা। এ যেন জ্যামিতির মিলিয়ে দেয়া এক সূত্র। হয়ে যাক না জ্যামিতিক প্রেম।

ইকরা:- এমনি করে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কি কোন কিছু ভুল বলেছি?

সোহান:- বাস্তবতায় ফিরে এসে, না তুই খুব সুন্দর যুক্তি যুক্ত কথা বলেছিস। ইদ্যানিং দেখছি তোর মাথা খুলতে শুরু করেছে।

ইকরা:- আমি ছোট বেলা থেকেই খুব বুদ্ধিমতী কিন্তু তোমরা কেউ বুঝনা।

— কথাটা বলেই হেসে দিলো ইকরা, সোহানও নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না ইকরা সাথে সাথে নিজেও হাসতে শুরু করলো। আর বেশ কিছুটা সময় সিঁড়িতে বসে দু’জন গল্প করে যার যার রুমে চলে আসলো।

— ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সোহান এই প্রথম অনুভব করলো সে সত্যি সত্যি ইকরাকে ভালোবেসে ফেলেছে, ওর প্রতিটা কথায় ওর প্রতিটা হাসিতেই সোহান এখন মুগ্ধ হয়। আগের মত আর ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে না। বরং মাঝে মাঝে ইকরার খোলা চুলে হাত দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিংবা কখনো কখনো খুব ইচ্ছে করে ঠোঁটের নিচের কালো তিলটায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে।

— নিজের রুমের বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে ইকরা ভাবছো বোকা একটা। কিরে এমন বোকা মানুষ কে আমি ভালোবেসে ফেললাম। যে আমার ভালোবাসা বুঝেইনা। আচ্ছা সোহান কি অন্য কাউকে ভালোবাসে? এখন কেমন জানি বদলে যাচ্ছে আগের মত আমার সাথে ঝগড়া করে না। আমার সাথে রাগ করে না। কত সুন্দর করে ভালোবাসার কথা বলার পর সোজা বেকারের উদাহরণ দিলো। অথচ ওর চোখে আমি স্পষ্ট কারো জন্য ভালোবাসা দেখেছি। কিন্তু কে সে? সে কি আমার থেকেও অনেক বেশী সুন্দরি? সে কি আমার থেকেও তোমায় বেশী ভালোবাসবে সোহান। ভাবতে ভাবতে এক সময় দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো ইকরার।

— সকালে নাস্তার টেবিলে সকলে এক সাথে নাস্তা করতে বসছে। এ সময় মিলু সবার সামনে বলে উঠলো আমাদের বাড়িতে ভুত আছে তোমরা কি জানো?

মা:- তোরে কি দৌঁড়ানি দিছে?

মিলু:- শুধু কি দৌঁড়ানি আর একটু হলে হার্টফেইল করে মারা যেতাম।

বাবা:- কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছিস মাথাটা কি পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে?

— সবার কথা শুনে ইকরা আর সোহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।

মিলু:- আমার মাথা ঠিক আছে তোমার বড় মেয়ে আর ভাইয়ার মাথা নষ্ট হইছে কোন কারণ ছাড়াই হা হা করতে থাকে। গতকাল রাতে ছাঁদে উঠতে ছিলাম এমন সময় দু’জন ছাঁদের উপর থেকে নামছে আর এতো উচ্চ সুরে হাসা হাসি করছে যে অন্ধকারে ভয়ে আমার আত্মার পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো।

— এবার মিলুর কথা শুনে সকলে একসাথে উচ্চ সুরে হেসে দিলো। অনেক সময় হাসাহাসি করে সোহানের বাবা জিজ্ঞাসা করলো তোদের দু’জন কে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম তা কতদূর।

সোহান:- এ আর এমন কি কঠিন কাজ? টাকা দিয়ে যাও কবে বেড়াতে যাবে সেই ডেট বলো।

বাবা:- তোরা এতো ফাস্ট হয়ে গিয়েছিস তা কোথায় বেড়াতে যাবি তা বল আগে দেখি জায়গা পছন্দ হয় কিনা।

ইকরা:- উহু তা বলা যাবে না, এবারের ঘুরাঘুরিটা সম্পূর্ণ সারপ্রাইজ হবে।

বাবা:- সোহানকে বিশ্বাস না করা গেলেও ইকরাকে বিশ্বাস করা যায়। তোরা কি বলিস?

— সবাই বললো হ্যাঁ অবশ্যই করা যায়। ইকরার বাবা, কেন সোহান কে কেন বিশ্বাস করা যাবে না? অবশ্যই আমি সোহানকে বিশ্বাস করি। সোহান অবশ্যই ভালো কিছু প্লান করবে। বলতে বলতে পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে থাকলো। সোহানের বাবা আরে আরে কি করছিস আমি টাকা দিচ্ছি।

ইকরা:- দু’জনে ভাগ করে দাও সাথে আমরা দু’জন টিকেট কাটতে যাবো, সেই টাকা সাথে ফুটকা খাবার টাকাও দিবা।

— ইকরার কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। দুই ভাই মিলে টাকা দিয়ে নাস্তার টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বললো আগামি শুকবারের টিকেট কেটে আনবি। মানে মাত্র দু’দিন সময়। আর অবশ্যই গন্তব্য স্থান যেন সুন্দর হয়।

সোহান:- তা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। তোমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।

— সকলে চলে যাবার পর সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো টাকা গুলো তোর কাছে রাখ আর দুপুরের পর রেডি হয়ে থাকবি। লাঞ্চ করেই টিকেট কাটতে চলে যাবো দু’জন।

ইকরা:- আচ্ছা ঠিক আছে।

— দু’জন নিজেদের মত করে চলে গেলো রুমে। দুপুরের খাবার শেষ করতেই সোহান ইকরাকে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে একটু পরেই বের হবো।

ইকরা:- আর কি রেডি হবো? আমিতো রেডিই।

সোহান:- ইস এই পোশাকে তুই আমার সাথে যাবি। আমার একটা মান সম্মান আছেতো। আর আমি একটা ইয়ং হ্যান্ডসাম ছেলে।

ইকরা:- তোমার মাথা থাকো তুমি নিজে রেডি হয়ে নিও। ঠিক চারটার সময় আমরা বের হবো।

সোহান:- আচ্ছা।

— দু’জন নিজেদের রুমে চলে গেলো। ইকরা মনে মনে হাসছে আর বলছে পাগল একটা।

চলবে…

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৪

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-৪র্থ পর্ব
©শাহরিয়ার

— ঝুম বৃষ্টি ছাঁদের মাঝে দাঁড়িয়ে মনের সুখে বৃষ্টিতে ভিজছে ইকরা। কখন যে সোহান পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সে দিকে কোন খেয়াল নেই তার গুনগুন করে গান গেয়ে চলেছে ইকরা আজ

“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।।
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
মেঘমল্লার সারা দিনমান।
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা– মন চায়
মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥”

— গান শেষে করে পেছনে ফিরে তাকাতেই ইকরা চমকে উঠলো সোহানকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। তাড়াতাড়ি ওড়নাটা ঠিক করে নিয়ে।

ইকরা:- তুমি এখানে কখন এলে?

সোহান:- ইতস্তত করতে করতে বললো একটু আগেই তুই যখন গান গাচ্ছিলি। হ্যাঁরে তুই এতো সুন্দর গান গাইতে পারিস আগেতো বলিস নি?

ইকরা:- আরে কি বলো আমি অতো ভালো গান পারি না। আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকাটা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি।

সোহান:- সামনে গেলেতো আর এতো সুন্দর গানটা শুনতে পেতাম না। তাই ইচ্ছে করেই সামনে যাইনি।

ইকরা:- ইস তুমি খুব পঁচা বুঝলে।

সোহান:- আর তোর মাথা মোটা।

ইকরা:- এই একদম এসব বলবে না। আমি জ্যামিতি কম পারলেও অংকে কিন্তু মোটেও কাঁচা না।

সোহান:- ওহ তাই বুঝি? খুব পেকে গেছিস।

ইকরা:- এখন রাস্তা ছাড়ো আমার ঠাণ্ডা লাগছে খুব নিচে নেমে যাবো।

সোহান:- যা না যা তোকে কি আমি ধরে রেখেছি। বলেই কিছুটা সরে দাঁড়ালো।

— ইকরা যাবার জন্য পা বাড়াতেই প্রচণ্ড জোড়ে বজ্রপাতের শব্দ হলো ইকরা চিৎকার করে সোহানকে জড়িয়ে ধরলো। সোহানও দু’হাতে ইকরাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেকটা সময় সোহানের বুকের মাথা রাখার পর যখন ইকরা মাথা তুলতে যাবে তখন বুঝতে পারলো পিঠের উপর প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে সোহান চেঁপে ধরে রেখেছে।

ইকরা:- ছাড়ো মরে গেলাম। কি করছো এটা কি রোমান্টিক কোন মুভির সুটিং নাকি? যে এভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখছো? নাকি সুযোগের সৎ ব্যবহার করছো?

সোহান:- ওহ আমিওতো তাই বলি, এটা কি কোন সিনেমার সুটিং নাকি যে বজ্রপাতের শব্দে এভাবে তুই আমাকে জড়িয়ে ধরলি। নিশ্চই তুই সুবিদা নিতে চেয়েছিলি।

ইকরা:- তোমার মাথা বলে সোহানকে ধাক্কা মেরে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।

— সোহান অপলক ইকরা চলে যাওয়া দেখছে দাঁড়িয়ে আর মনে মনে বলছে কন্ট্রোল সোহান কন্ট্রোল। এভাবে একদিন তুই ধরা খেয়ে যাবি, ইকরা বুঝে ফেলবে তুই ওকে ফলো করিস ওকে ভালোবাসিস। অনেকটা সময় বৃষ্টির ভিতর ছাঁদে দাঁড়িয়ে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে এতটা সময় সন্ধ্যায় পুরো আকাশ কালো হতেই সোহান নিচে নেমে চলে আসে

— ইকরা মনে মনে লজ্জা শরম বলতে কিছুই নেই, দিন দিন বড় হচ্ছে আর লজ্জা শরমের মাথা খাচ্ছে হুটহাট যখন তখন যেখানে সেখানে চলে আসে। আসে আসুক আমিতো মানা করিনি। তাই বলে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে চুপ করে? ইস বৃষ্টিতে ভিজে শরীরের সাথে পুরো জামাটা লেপ্টে ছিলো। কি লজ্জা সব কিছু দেখে ফেলেছে। আচ্ছা সোহান যদি ছাঁদে না আসতো আমার কি ভালো লাগতো? ইস ওর বুকের মাঝে কি শান্তি। পাগলটা বুঝে না কা শক্ত করে চেঁপে ধরে মনে হয় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। একটু ভালোবেসে ধরতে পারে, একটু রোমান্টিক ভাবে ধরতে পারে। একটি হাত দিয়ে ধরে আমার থুতনিটা উপরে তুলবে আমার ভেজা চুল থেকে পানি কপাল গড়িয়ে নাকের ডোগা স্পর্শ করে যখন ঠোঁট পর্যন্ত আসবে তখন। ইস লজ্জা লজ্জা লজ্জা। না কিছুই না সে একটা আঙ্গুল দিয়ে তা মুছে দিতে দিতে বলবে তোকে খুব সুন্দরি লাগছে। হায়রে কোথায় আমার ভাবনা আর কোথায় সে পাগলের কাজ। কোন কিছুর সাথেই কোন কিছু মিলে না। আমি একাই শুধু স্বপ্ন দেখি একাই শুধু ভালোবাসি তাহারে।

— দু’জনের আবার মুখোমুখি রাতের খাবার টেবিলে সবার সাথে। পুরো পরিবার এক সাথে রয়েছে। রাতের খাবারের এই সময়টা সবার খুব প্রিয়।

সোহানের বাবা:- কোথাও বেড়াতে যাওয়া উচিৎ কি বলো তোমরা?

ইকরার বাবা:- তুমি যা ভালো মনে করো।

সোহানের বাবা:- তারপরেও সবার মতামত ছাড়া কি সম্ভব নাকি?

ইকরা:- আমার কোন সমস্যা নেই বড় আব্বু সমস্যা থাকলে তোমার ছেলের থাকতে পারে।

সোহান:- এই আমি কি তোকে বলছি আমার সমস্যা আছে? সব সময় বেশী পাকনামি করিস।

সোহানের বাবা:- আহা থাম থাম তোরা দু’জন কি শুধু সব সময় ঝগড়াই করবি নাকি? মনোযোগ দিয়ে কথা শোন এবার কোথায় যাবো তার জন্য পছন্দ মত জায়গা তোরা দু’জনই খুঁজে বের করবি। কাজ না থাকায় দুই জন খুব বেড়ে গেছিস, নে এই কাজ করবি তাও মাত্র তিন দিন সময় দিলাম। আর জায়গা পছন্দ মত না হলে টুর ক্যান্সেল। মনে থাকে যেনো কথা গুলো বলতে বণতে হাত ধুয়ে টেবিল থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলো নিজের ঘরের দিকে।

— একে একে সবার খাওয়া শেষে যার যার রুমের দিকে রওনা হয়ে চলে গিয়েছে। টেবিলে এখন শুধুই সোহান আর ইকরা পরে রয়েছে। সোহান অগ্নী দৃষ্টিতে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে দেখে ভয়ে ভয়ে ইকরা সোহানকে বললো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

সোহান:- কিছুটা রাগী রাগী ভাব নিয়েই তোর জন্য এমন কাজের দায়িত্ব কাঁধের উপর পরলো। এবার তুই খুঁজে বের কর কোথায় যাবি।

ইকরা:- আমার কি দোষ আর আমি কি তেমন কিছু চিনি নাকি? তুমিই খুঁজে বের করো না প্লীজ।

সোহান:- এই চুপ একদম চুপ এতটুও ন্যাকামি করবি না, মাথায় প্লেট দিয়ে বাড়ি দিবো।

ইকরা:- কি তোমার এতো সাহস?

সোহান:- সাহসের দেখেছিস কি?

ইকরা:- প্লেট গুছিয়ো রাখতে রাখতে কত যে সাহস আছে তা আমি ভালো করেই জানি, সাহস দেখাতে আসলে চিৎকার করবো এখুনি চাচা চাচীকে ডাকে দিবো।

সোহান:- তুই কি আর কিছু পারিস? পারিস শুধু বাবা মাকে ডাক দিতে আমিও চাচীকে ডাক দিতে পারি। তোর মুখ ভেঙে দিবে এখুনি এসে।

ইকরা:- হয়েছে এখন চিন্তা করো কোথায় যাওয়া যায়। আমি রুমে যাচ্ছি কিছুক্ষণ পর ছাঁদে যাবো ঐখানে এসে জানাইও কোথায় যাওয়া যায়।

— বলতে বলতে ইকরা উপরে উঠতে শুরু করলো। সোহান চেয়ারে বসে রইলো মাথায় কোন কিছুই ঢুকছে না কোথায় যাওয়া যায়। আর ভালো জায়গা খুঁজে বের না করলে খবর করে ছাড়বে বাবা। সবার ঘুরাঘুরি নষ্ট করা মানে পকেট খরচের জন্য একটা টাকাও বাবা দিবে না এটা নিশ্চিৎ। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সোহানও নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। রুমে এসে কোন কিছুই ভালো লাগছে না দেখে ছাঁদে উঠতে শুরু করলো। বৃষ্টির পর আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে। সেই সাথে হিম শীতল বাতাস মন জুড়িয়ে যাবার মত। চারিদিকে চোখ বুলালে মন ভালো হয়ে যাবে যে কোন মানুষেরই। নানান রকম চিন্তায় সোহান ভুলেই গেছে আসল কথা তাকে যে খুঁজে বের করতে হবে সুন্দর একটি জায়গা যেখানে এই বর্ষার মৌসুমে ঘুরতে যাওয়া যায়। যেখানে ঠিক এমনই জ্যোৎস্না রাত থাকবে চারিদিক আলোকিত হবে সে আলোয়।

ইকরা:- কখন আসছো ছাঁদে।

— ইকরার ডাকে কিছুটা চমকে উঠে সোহান পেছনে ফিরে এই অনেক সময় হয়েছে।

ইকরা:- খুঁজে পেয়েছো কোথায় যাবে?

সোহান:- সব জায়গায় তো কম বেশী ঘুরা হয়ে গিয়েছে। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সিলেট, রাঙামাটি, বিছানাকান্দি। সব জায়গায় কম বেশী ঘুরা শেষ। আমিতো তেমন কোন ভালো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। এখন তুই বল কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।

ইকরা:- এক কাজ কর নেটে ঢুকে সার্চ দিয়ে দেখো কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।

সোহান:- এইটা তুই ভালো আইডিয়া দিয়েছিস, নেটে ঢুকার আগে একবার বন্ধুদের ফোন দেই ওদের জানা শুনা থাকতে পারে ভালো জায়গা সম্পর্কে। তুইও তোর বান্ধবিদের দিয়ে দেখতে পারিস।

ইকরা:- ওকে তুমি খোঁজ নাও আমিও নিচ্ছি।

— দু’জন দু’জনের বন্ধু বান্ধবিদের ফোন দিতে লাগলো। সকলেই সেই কক্সবাজার সিলেট কিংবা সেন্টমার্টিনের কথাই ঘুরে ফিরে বলছে। দু’জনে হতাশ হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। ইকরা সোহানকে বললো আসলে বন্ধু বান্ধবিদেে দিয়ে কিছুই হবে না। তুমি বরং নেটে ঢুকে সার্চ দাও।

সোহান:- হুম তাই করবো।

— সোহান নেটে ঢুকে সার্চ দিলো মোটামুটি সব জায়গায় পরিচিত এবং যাওয়া হয়েছে এমনই সব জায়গা ঘুরে ফিরে আসছে। সোহান মন খারাপ করে ইকরার দিকে তাকালো।

ইকরা:- আচ্ছা আমরা ঘুরতে যাই কেন বলোতো?

সোহান:- কেন আবার সুন্দর পরিবেশে মন ভালো করার জন্য।

ইকরা:- ঠিক তাই, শোন তবে আমরা এবার গ্রামে দাদা বাড়িতে বেড়াতে যাবো। সকলের সাথে দেখা হলে সকলের মন ভালো হয়ে যাবে। আর সুন্দর পরিবেশে ঘুরাও হয়ে যাবে।

সোহান:- ওয়াও! অসাধারণ একটা বুদ্ধি দিয়েছিসতো। কে বলে তোর মাথা মোটা এইতো তোর মাথায় চিকন বুদ্ধি আছে।

ইকরা:- এই আবার এসব বলছো।

— দু’জন ঝগড়া করতে করতে প্রচণ্ড বাতাস শুরু হলো। দু’জন দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যেয়ে একজন আরেক জনের সাথে মাথায় মাথায় টাক খেলো। সোহান ইকরার দিকে আর ইকরা সোহানের দিকে তাকালো।

চলবে…

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৩

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ৩য় পর্ব
©শাহরিয়ার

— সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বড় বড় চোখ করে সোহানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো ইকরা। চিৎকার দিবে এমন সময় মুখ চেঁপে ধরলো সোহান।

সোহান:- চুপ একদম চুপ চিৎকার করতে চাচ্ছিস কেন?

— সোহানের হাত ইকরার মুখে থাকায় সে কথা বলতে পারছিলো না, শুধু উম উম শব্দ করতে থাকলো। সোহান যদি চিৎকার না করিস তাহলে মুখ থেকে হাত সরাবো। ইকরা চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝালো ঠিক আছে। সোহান আস্তে করে হাত সরিয়ে নিতেই। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে শুরু করলো ইকরা। বেশ কিছুটা সময় পার হবার পর।

ইকরা:- তুমি এতো সকালে আমার রুমে কেন?

সোহান:- তোর কাছে এসেছিলাম দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। এসে তোর পাশে বসে দেখতে ছিলাম অমনি তুই চিৎকার করে উঠলি।

ইকরা:- চিৎকার করবো না তো কি করবো? আল্লাহ জানে তুমি কি কি দেখেছো?

সোহান:- হাসতে হাসতে হুম অনেক কিছুই দেখেছি।

ইকরা:- কি? আমি এখুনি চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো।

সোহান:- আরে আস্তে আস্তে কিছুই দেখিনি। চেয়ারটা টেনে তোর সামনে বসতেইতো তুই জেগে উঠলি।

ইকরা:- তুমি কেন আসছো এতো সকালে আমার রুমে?

সোহান:- এখনো কি সকাল আছে নয়টা বাজে। তাড়াতাড়ি কিছু টাকা দেতো আমার একটা ইন্টারভিউ আছে।

ইকরা:- আমার কাছে কোন টাকা নেই তুমি কি আমাকে টাকা জমা দিয়ে রাখছো নাকি যে যখন তখন এসে টাকা চাইবে আর আমি দিয়ে দিবো?

সোহান:- শোন টাকার গায়ে কি লেখা আছে জানিস?

ইকরা:- না জানি না কি লেখা আছে।

সোহান:- টাকার গায়ে লেখা আছে চাহিবার মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবেন।

ইকরা:- তুমি যতই যা বলো না কেন আমি এবার তোমাকে টাকা দিচ্ছি না, মনে আছে গতবারের পাঁচশত টাকা এখনো তুমি ফেরৎ দাওনি।

সোহান:- আরে দিয়ে দিবো দিয়ে দিবো, তোর সব টাকা শুধে আসলে একেবারে দিয়ে দিবো চাকরিটা হলেই দিয়ে দিবো।

ইকরা:- পাক্কা দিবাতো?

সোহান:- তিন সত্যি দিয়ে দিবো।

— ইকরা বিছানা থেকে উঠে তুমি দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দিচ্ছি। বলে ওয়াশ রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। অল্প সময়ের ভিতর ফ্রেশ হয়ে এসে টাকা বের করে সোহানের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে টাকা কিন্তু ফেরৎ দিয়ে দিবা, না হলে তোমার বিয়ের সময়, তোমার শ্বশুর বাড়িতে এই টাকা আমি যৌতুক হিসেবে চাইবো।

সোহান:- চুপ থাক মাথামোটা এই কয় টাকা কেউ যৌতুক নেয়? আমিতো ভাবছি যার বাবার তোর মত সুন্দরি একটা মেয়ে আছে, তোর মত একটা নিজস্ব রুম আছে, যার বাবার নিজের ব্যবসা আছে নিজের বাড়ি আছে, তাকেই বিয়ে করবো।

ইকরা:- সে তুমি যা খুশি করো না কেন আমার চেয়ে সুন্দরি কাউকেই তুমি পাবা না।

সোহান:- আরে সুন্দরি লাগবে না, তোর মত হলেই হবে, একটু মাথামোটা, চুল গুলো বড় বড়, মায়াবী দু’টো চোখ। গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট। আর সে ঠোঁটের নিচে একটি কালো তিল। ব্যস তাহলেই হয়ে যাবে।

ইকরা:- ইস আমার মত খুঁজে কত সখ। জীবনেও পাবে না হুঁ।

সোহান:- আরে পাবো পাবো, না পেলে তোকে ফটোকপি মেশিনে বসিয়ে ফটোকপি করে ঘরের দেয়ালের সাথে টাঙিয়ে রাখবো।

ইকরা:- ফাজিল একটা বলেই সোহানের বুকে ঠুস ঠাস করে মারতে শুরু করলো।

— সোহান প্রতিরোধ করার বাহানায় ব ইকরার হাত চেঁপে ধরে বুকের সাথে মিলিয়ে রাখছে। ইকরা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বার বার সোহানের বুকে ঘুষি মারছে, সোহান মনে মনে মাথা মোটা কিছুই বোঝে না। আমি যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছি না পারছি বলতে আর না পারছি লুকাতে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে দু’হাতে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেঁপে ধরেছে ইকরাকে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে যখন ইকরা সোহানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো তখন সোহান বাস্তবতায় ফিরে আসলো।

ইকরা:- এই তুমি কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও নাকি? আর একটু হলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতাম।

সোহান:- নিজের কানে হাত দিয়ে সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি।

ইকরা:- তুমি ইচ্ছে করেই এমনটা করছো আমি জানি।

সোহান:- বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো নিজের এমন ভুলে। সে বিনয়ের সুরে ইকরার হাত চেঁপে ধরে বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে করিনি।

ইকরা:- না তুমি ইচ্ছে করেই এমনটা করছো, আমি জানি তুমি চাইছিলা আমি দম বন্ধ হয়ে মরি। আমি এখুনি চিৎকার করে সবাইকে ডাক দিবো।

সোহান:- মনে মনে হায়রে মাথামোটা, এই না না এমন করিস না আমি এখুনি চলে যাচ্ছি আর আসবো না। বলেই সোহান দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

— ইকরা দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে, বিছানায় শুয়ে হাসতে শুরু করলো, পাগল একটা এতো ভিতু মানুষ হয় কি করে? আচ্ছা আমি কি সোহান ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি? মোটেও অন্যায় কিছু না যদি ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু সোহান ভাইয়া যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে? উফ কি সব ভাবছি আমি। বিছানা ছেড়ে উঠে ডাইনিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলো ইকরা। ডাইনিং এ আসতেই সোহানকে দেখে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাঁপলো। সোহানের সামনা সামনি যেয়ে বসে চোখ বড় বড় করে তাকালো। সোহান মুখে খাবার নিয়ে ইকরার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো বড় বড় চোখ করে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহান কোন রকম কথা না বলে মাথা নিচু করে তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করে কোন রকমে দৌঁড়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলো। এমন অবস্থা দেখে ইকরা একাই মনে মনে হাসতে থাকলো। মনে মনে বলতে থাকলো ভিতু একটা।

— সকাল গড়িয়ে দুপুর শেষের দিকে সোহান এখনো বাসায় ফিরেনি দেখে ইকরা বার বার ডাইনিং এর সামনে যেয়ে ঘুরে আসতেছে। ইকরার এই জিনিসটা চোখে পড়ার মত। সোহান যে দিন বাহিরে থাকে সে দিন সবার খাওয়া শেষ হলেও ইকরা খায়না যতক্ষণ পর্যন্ত না সোহান বাড়িতে আসে। অপরদিকে সোহানও যেখানেই থাকুক হালকা খাবার খেয়ে থাকে আর চেষ্টা করে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফিরে আসার জন্য। সোহানও জানে ইকরা খাবে না যত সময় না সে বাড়িতে ফিরবে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইকরা। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সোহানকে আসতে দেখে ইকরার মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। ইকরা দৌঁড়ে নিচে নেমে ডাইনিং সাজানো থাকা প্লেটে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করলো। কলিং বেলটা বেজে উঠতেই দৌঁড়ে যেয়ে দরজা খুলে দিলো। সোহান ঘরের ভিতর ঢুকতেই ইকরা বলে উঠলো এতো দেরী হলো কেন?

সোহান:- যেখানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম সেখানে রিসিপসনে খুব সুন্দরি একটা মেয়ে ছিলো তার সাথে গল্প করতে করতে দেরী হয়ে গেছে।

ইকরা:- বাহ ভালোতো তাহলেতো তার সাথে পেট ভরে লাঞ্চ করে এসেছো বলেই হাঁটা শুরু করলো। আমিও বোকা অযথাই খাবার বেড়ে রেডি করছি।

সোহান:- উফ প্রচণ্ড খুদা লেগেছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ইকরা:- টেবিলে খাবার রেডি করা আছে যার ইচ্ছে হয় যেনো খেয়ে নেয়। আর খুদা লাগবে কেন? সুন্দরি মেয়ে মানুষের সাথে গল্প করেইতো পেট ভরা থাকার কথা।

সোহান:- কথা বললেই যদি পেট ভরতো তাহলে সবাই কথা বলে পেট ভরতো। খাবার খেতো না।

ইকরা:- যত সব ঢং এর কথা। খাবার বেড়ে রেখেছি খেয়ে নিলেই হয়।

— কথাটা বলেই ইকরা হাঁটা শুরু করতেই পেছন থেকে হাত ধরে টান দিলো সোহান। ইকরা চোখ বন্ধ করে ঘুরতে ঘুরতে মনে মনে বলে কি রোমান্টিক।

সোহান:- তুই খেয়েছিস?

ইকরা:- হাত ছাড়ো আমি খেলেই কার কি না খেলেই কার কি? হাত ছাড়ো না হলে চিৎকার করবো।

সোহান:- আয় এক সাথে খাবো।

ইকরা:- না তোমার সাথে খাবো না।

সোহান:- কেন খাবি না? খাবি দেখেই তো আমার আসার অপেক্ষায় বসে রয়েছিস।

ইকরা:- চুপ একদম চুপ যে মেয়ের সাথে বসে গল্প করছো যাও সে মেয়েকে নিয়ে এসে এক সাথে খেতে বসো। আমার সাথে খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

সোহান:- হাসতে হাসতে আরে এমনি বলছি, রাস্তায় খুব জ্যাম ছিলো তাই আসতে লেট হয়ে গেছে।

ইকরা:- টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আমি কি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি রাস্তায় কি হয়েছে?

সোহান:- চেয়ার টেনে বসতে বসতে আচ্ছা এতো রাগ করিস কেন? রাগলে তোকে ঠিক শাঁকচুন্নির মত লাগে।

ইকরা:- এই আমি শাঁকচুন্নি, ভুতনি, পেত্নী আরও অনেক কিছু তাতে তোমার কি? তুমি ভালো একটা দেখে বিয়ে করে নিয়ে এসো।

সোহান:- হাসতে হাসতে আচ্ছা যখন বিয়ে করবো তখন দেখিস এখন খেয়ে নে।

— ইকরা সোহানের দিকে খাবার প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে তোমার বউ আসার আগেই আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

সোহান:- তা হবে না তুই না থাকলেতো আমি বিয়েই করবো না।

ইকরা:- ওরে কি ঢং এর কথারে সময় মত দেখা যাবে।

সোহান:- হুম হুম দেখিস দেখিস। এখন খেয়ে নে না হলে ঝগড়া করবি কি করে?

ইকরা:- খবরদার উল্টা পাল্টা কথা বলবে না তাহলে মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলবো। তখন কেউ আর মেয়ে দিতে চাইবে না।

সোহান:- হাসতে হাসতে তোর বর হবে টাকলু।

ইকরা:- তোমার মাথা ফাঁটিয়ে ফেলবো উল্টা পাল্টা কথা বললে।

সোহান:- নে মাথা ফাটা।

ইকরা:- এখন না পরে খাবার সময় কাউকে মারতে নেই।

সোহান:- আমার খাওয়া শেষ তুই থাক আমি গেলাম।

ইকরা:- যাও যাও তাড়াতাড়ি আমার সামনে থেকে পালিয়ে বাঁচো।

সোহান:- রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তুই আমার থেকে বেঁচে থাক নাহলে।

ইকরা:- না হলে কি?

সোহান:- ইকরার দিকে তাকিয়ে মুখ বেংচি কেটে না হলে সময় মত বুঝবি।

— সোহানের চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে রইলো কথার কিছুই বুঝলো না একা একাই বলে উঠলো পাগল একটা।

চলবে…

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০২

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-২য় পর্ব
©শাহরিয়ার

— ইকরা চমকে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলো বাবা তার হাত চেপে ধরেছে।

বাবা:- কিরে মা এতো রেগে আছিস কেন?

ইকরা:- তোমার ছোট মেয়ে দিন দিন বড্ড বেশী ফাজিল হয়ে যাচ্ছে।

বাবা:- ওহ ছোট মানুষ একটু ফাজলামো করবেই তার জন্য মারতে হবে?

ইকরা:- সব সময় তুমি ওর আর সোহান ভাইয়ার সাপোর্ট নাও এটা ঠিক না।

বাবা:- এ কি সোহানের কপালে কি হয়েছে কি করে এমনটা হলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলি?

ইকরা:- এতো উত্তেজিত হবার কিছু নেই, দুষ্টমি করতে যেয়ে সামান্য কেটে গিয়েছে ব্যান্ডেজ করে দিছি ঠিক হয়ে যাবে। সব সময় এদের নিয়ে আমার কথা ভাবার এ বাড়িতে কেউ নেই (মনে মনে)

বাবা:- উত্তেজিত হবো না মানে কতখানি কেটে গেছে আর তুই বলছিস একটুখানি।

সোহান:- চাচা তুমি বসোতো, মা, চাচী চাচার জন্যও চা নিয়ে এসো। আমার সত্যিই তেমন কিছু হয়নি, তুমি শুধু শুধু এতো উত্তেজিত হইও না।

চাচা:- তুই বলছিস তাহলে ঠিক আছে।

— বাবার এমন কথা শুনে ইকরা রেগে টেবিল ছেড়ে উঠে সোজা ছাঁদের দিকে হাঁটা দিলো। বাবা পেছন থেকে বেশ কয়েকবার ডাক দিলেও পেছনে ফিরে তাকায়নি ইকরা। ছাঁদের ডান পাশের শেষ কর্ণারটায় যেয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যি ডোবার দৃশ্য দেখছে দাঁড়িয়ে আর মনে মনে ভাবছে কিভাবে সোহানকে জব্দ করা যায়। এমন সময় সোহান পেছন থেকে বলে উঠলো এই মাথা মোটা না খেয়ে চলে আসলি কেন?

ইকরা:- পেছনে ঘুরেই তোমার কি তাতে আমি না খেলেতো তোমার লাভ আমার ভাগেরটা সহ খেতে পারবে।

সোহান:- ইকরার ডান বাহু ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে তাই?

ইকরা:- চোখের পানি মুছতে মুছতে তাই নয়তো কি? সবাইতো তোমার পক্ষে, মা বাবা, ছোট বোন সবাই, এ বাড়িতে তো আমি একা। যেদিন থাকবো না সেদিন বুঝবে।

সোহান:- হাত দিয়ে ইকরার মুখ চেঁপে ধরে বড্ড বেশী কথা বলতে শিখেছিস। সবাই আমার পক্ষে আর আমি যে তোর পক্ষে এটা তুই কি বুঝিস?

ইকরা:- হয়েছে আর মিথ্যা বইলো না। আমিতো তোমার শত্রু, আমি না থাকলেই ভালো তোমার জন্য।

সোহান:- কত সুন্দর গৌধূলি সূর্যটাও ডুবি ডুবি করছে, তুই কাঁদছিস বলে ডুবতে পারছে না। বলেই ইকরার একটা হাত ধরে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো ছাঁদের মাঝে থাকা টেবিলটার সামনে এসে ইকরারকে একটা চেয়ারে বসিয়ে সামনা সামনি মুখ করে নিজেও একটা চেয়ার টেনে নিলো। ডান হাত বাড়িয়ে দিলো ইকরার চোখের নিচে জমে থাকা পানির দিকে মুছে দিয়ে চায়ের একটা মগ ইকরার দিকে এগিয়ে দিয়ে, মুখটা কি করেছিস জানিস?

ইকরা:- কি করেছি?

সোহান:- চোখের সব কাজল মুছে পুরো গাল কালো হয়ে গেছে। বলেই হা হা হা করে হেসে উঠলো।

ইকরা:- সত্যি?

সোহান:- চায়ের মগ থেকে ঠোঁট সরিয়ে চা খেয়ে নে। তারপর ঘরে যেয়ে আয়নাতে নিজেই দেখে নিবি।

ইকরা:- কেন তুমি বলতে পারো না? আর নিচে গেলে সবাই দেখবে তার চেয়ে বরং তুমি মুছে দাও। বলেই নিজের মুখটা সোহানের দিকে এগিয়ে দিলো।

— সোহান চায়ের মগটা টেবিলের উপর রেখে দু’হাতে ইকরার গাল দু’টো চেয়ে কালি মুছে দিতে যেতেই ইকরার ঠোঁট দু’টো সোহানের ঠোঁটের খুব কাছে চলে আসলো। ইকরার নিঃশ্বাস ছাড়ার বাতাস সোহানের নাকে মুখে এসে লাগছে। সোহান হঠাৎ করেই আজ লক্ষ করলো ইকরাকে বেশ রূপবতী লাগছে। আজ প্রথমবারের মত মনে হলো ইকরা বড় হয়ে গেছে। প্রথমবারের মত মনে হলো ইকরার ভেজা ঠোঁট দু’টো প্রভল ভাবে আকৃষ্ট করছে তাকে। সোহান একদম স্থির হয়ে ইকরার ঠোঁটের নিচের কালো তিলটার দিকে চেয়ে রইলো। এক কথায় অপূর্ব সুন্দর লাগছিলো হালকা চাঁদের আলোয় ইকরাকে।

ইকরা:- কি হলো এভাবে আছো কেন? মুছে দাও।

সোহান:- লাগবে না, এমনিতেই ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে তোকে বলে ইকরার গাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো সোহান।

— ইকরা সোহানের এমন আচরণে কিছুটা বিব্রত হলো। সোহানের দিকে তাকিয়ে কি হয়েছে তোমার?

সোহান:- কিছু না চল নিচে নেমে যাই, শুনেছি এ সময় ছাঁদে নাকি শাঁকচুন্নিরা ঘুরাঘুরি করে।

ইকরা:- হাসতে হাসতে আমিইতো শাঁকচুন্নি বলেই বেঁধে রাখা চুল গুলো খুলে দিতেই বাতাসে উড়তে শুরু করলো।

— মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো সোহান। চুল গুলো এলোমেলো উড়েই চলেছে।

ইকরা:- কি শাঁকচুন্নি দেখেছো?

সোহান:- শাঁকচুন্নি খুঁজতে এসে আমি আজ মায়াবতীকে দেখেছি। বলেই পেছন ফিরে নিচের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

— ইকরা পেছন থেকে ডেকেই চলেছে সেদিকে সোহানের কোন খেয়াল নেই। ইকরা মনে মনে পাগল হয়ে গেছে। ইকরাও আর একা একা ছাঁদে না দাঁড়িয়ে নিচে নেমে আসলো। রাতের খাবার টেবিলে খেতে বসে সোহান যতটা না খাচ্ছে তার চেয়ে বেশী সময় ধরে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে। ইকরা বিষয়টা খেয়াল করতে পেরে চোখের ইশারায় সোহানকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে।

সোহান:- মাথা নাড়িয়ে বুঝালো কিছু না।

— রাতের খাবার শেষে সবাই যখন নিজের রুমে চলে গেলো। ইকরা তখন এগিয়ে গেলো সোহানের রুমের দিকে। দরজায় হালকা হাত দিতেই দরজা খুলে গেলো। রুমে ঢুকে দেখলো সোহান ওয়াশ রুমে গেছে। ইকরা তাড়াতাড়ি টেবিলের উপর রাখা খাতায় লেখতে শুরু করলো। এভাবে তাকিয়ে কি শাঁকচুন্নি দেখো? কামড়ে দিবো তখন বুঝবে। এতো টুকু লেখেই ইকরা খাতাটা খাটের উপর রেখে দ্রুত সোহানের রুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে একা একা হাসতে লাগলো।

— এদিকে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে খাটের উপর খাতাটা দেখে চমকে উঠলো। খাতাটা হাতে নিতেই ইকরার লেখাটা চোখে পড়তেই হাসতে হাসতে নিজে নিজেই বলতে শুরু করলো মাথা মোটা একটা, মায়াবতী আর শাঁকচুন্নির মাঝে পার্থক্যই এখনো বুঝে না। দাঁড়া এখুনি তোকে মজা বুঝাচ্ছি বলেই রুম থেকে বের হয়ে সোজা ইকরার রুমের দরজায় এসে ধাক্কা দিলো। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে দরজায় নক করলো।

ইকরা:- ভিতর থেকে সব বুঝতে পেরে দৌঁড়ে দরজার সামনে এসে কে?

সোহান:- দরজা খোল।

ইকরা:- মজা করে কে আপনি?

সোহান:- আমি।

ইকরা:- আমিটা আবার কে নাম নাই।

সোহান:- এবার কিছুটা রেগে যখন গাল দু’টো লাল বানিয়ে দিবো তখন বুঝবি আমি কে।

ইকরা:- কি আজব আপনি আপনার পরিচয় দিতে পারছেন না? এতো রাতে একটা মেয়ের দরজায় এসে ধাক্কাচ্ছেন।

সোহান:- মাথা মোটা তুই দরজা খুলবি নাকি আমি ভেঙে ভিতরে ঢুকবো?

ইকরা:- এই খবরদার মাথা মোটা বলবে না।

— বলেই দরজা খুলে দিতেই সোহান অপর প্রান্ত থেকে জোড়ে ধাক্কা মারতে গেলো অমনি ইকরাকে নিয়ে ফ্লোরে পরে গেলো। পরে যেতেই সোহানের ঠোঁটে ইকরার ঠোঁট স্পর্শ করলো। সোহান অপলক ইকরার দিকে চেয়ে রইলো।

ইকরা:- ব্যথায় উফ করে উঠে বললো, তাড়াতাড়ি উঠো আমার কোমড়টা মনে হয় ভেঙেই গেলো।

সোহান:- কিছুটা লজ্জা পেয়ে নিজেকে কোন রকমে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সরি সরি আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। বলেই ইকরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।

— ইকরা সোহানের বাড়িয়ে দেয়া হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে উঠে দাঁড়ালো।

ইকরা:- আমি জানি সব তুমি ইচ্ছে করেই করেছো। তুমিতো চাওই আমি ব্যথা পাই, হাত পা ভেঙে ঘরে বসে থাকি।

সোহান:- একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি না, বললামতো আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। আর সরিতো বলছি।

ইকরা:- হয়েছে হয়েছে বুঝছি, এখন বলো এতো রাতে কেন ডাকছো?

সোহান:- কিছুনা এমনি এসেছিলাম, আচ্ছা থাক চলে যাচ্ছি।

ইকরা:- চলে যাচ্ছিা মানে আমার ঘুম ভাঙিয়ে এখন বলছো এমনি ডাকছি।

সোহান:- ইকরার দুই গাল ধরে টান দিয়ে তুই ঘুমালে কোন শাঁকচুন্নি আমার ঘরে গিয়েছিলো?

ইকরা:- উফ ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি। আমি কেন তোমার রুমে যাবো আমার কি ঠ্যাকা পরছে নাকি?

সোহান:- ইকরার গাল ছেড়ে দিতেই দেখতে পেলো গাল দু’টো লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে, তাতো আমি দেখতেই পেয়েছি খাটের উপর খাতা পেয়ে। আমার ঘরে কোন শাঁকচুন্নি ঢুকেছিলো।

ইকরা:- এই তুমি আমাকে এসব নামে কেন ডাকো? আমার নামটা কত সুন্দর।

সোহান:- ইকরার রুম থেকে বের হতে হতে তোর সাথে যে নাম যায় আমি সে নামেই তোকে ডাকি বুঝলি, এবার ঘুমিয়ে পর আমি গেলাম।

ইকরা:- দরজা লাগাতে লাগাতে তুমি আস্তো এতটা গাধা, মাথা আসলে আমার মোটা না তোমার মোটা।

— সোহান কোন রকম প্রতিবাদ না করে হাসতে হাসতে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো। ইকরা সোহানের এমন ব্যবহারে চরম আশ্চর্য হয়ে গেলো। পেছন থেকে চিৎকার করে বলতে থাকলো তাহলর তুমি সত্যি সত্যিই মাথা মোটা গাধা। সোহান পেছনে ফিরে তাকিয়ে তার ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলো। ইকরা একদম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো সোহানের দিকে। সোহান রাজ্য জয়ের হাসি হেসে হেঁটে চললো নিজের রুমের দিকে। ইকরার মাথায় কিছু না ঢুকলেও মাথাটা যে ঘুরছে তা বেশ বুঝতে পারলো।

চলবে…

জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০১

0

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা -১ম পর্ব

আপু এই আপু তাড়াতাড়ি জামা ঠিক কর সোহান ভাইয়া আসতেছে রুমে।

ইকরা:- ডিস্ট্রার্ব করিস না দেখতে পাচ্ছিস না জ্যামিতি করছি।

মিলু:- রাখো তোমার জ্যামিতি ভাইয়া রুমে ঢুকলো বলে।

ইকরা:- উফ যাতো দরজা লাগিয়ে দিয়ে আয়। আমি উঠতে পারবো না।

— দু’জনের কথা শেষ হতে না হতেই সোহান সোজা রুমে ঢুকে পরলো। রুমে ঢুকেই সোজা বিছানায় শুয়ে কিরে কি করছিস তোরা দু’জন?

ইকরা:- ওড়না ঠিক করতে করতে জ্যামিতি করছি, একটু দেখিয়ে দাওতো। কোন ভাবেই মাথায় ঢুকে না।

সোহান:- এই তুই কি ছোট মানুষ আজ বিয়ে দিলে কাল সংসার করতে হবে এখনো জ্যামিতি নিয়ে পরে আছিস।

ইকরা:- কি করবো বলো ছাত্রীকে বুঝাতে হবে কিন্তু আমি পারছি না। মিলু কি বুঝায় তাও বুঝি না।

সোহান:- আচ্ছা তোর টিউশনি কেন করতে হবে?
তোর বাবার কি কম আছে নাকি?

ইকরা:- দেখো বাবার কম আছে না বেশী আছে তা তুমি ভালো করেই জানো। কিন্তু কথা তা না অবসর টাইম পার করার জন্যই আমি টিউশনি করাই বুঝলে যদি ইচ্ছে হয় তাহলে বলো নয়তো যাও আমার রুম থেকে।

সোহান:- এই মিলু তোর বোনকে বলে দে এটা আমার চাচার টাকায় করা রুম, আমার বাপ দাদার তৈরী বাড়ি। আমার যখন যেখানে মন চায় সেখানে বসবো, সেই রুমে যাবো, যদি কারো খারাপ লাগে তাহলে সে উঠে চলে যাক।

মিলু:- উফ তোমরা থামবে? কি শুরু করলা দু’জন? আর আপু তোমার মাথায় এই সাধারণ জিনিসটা কেন ঢুকে না? কতবার বুঝিয়ে দিলাম নি পারলে করো না। ভাইয়াতো ঠিকই বলছে তোমার টিউশনি করানোর কোন দরকার নেই।

ইকরা:- মিলু তুই এখনি আমার চোখের সামনে থেকে যা নয়তো তোর মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলবো।

মিলু:- রুম থেকে বের হতে হতে ভাইয়া ঠিকই বলে সত্যিই তোমার মাথা মোটা।

— ইকরা চিৎকার করে মিলু। মিলু মুখ বেংচি কেটে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সোহান দু’বোনের কাণ্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।

ইকরা:- ফাজিল কোথাকার তোমার জন্য সবাই এখন আমাকে মাথা মোটা বলে বলেই কোল বালিশ দিয়ে সোহানকে মারতে শুরু করলো।

সোহান:- এইকি করছিস ব্যথা পাচ্ছি। ছেড়ে দে বলছি,

ইকরা:- আর কখনো বলবে আমাকে মাথা মোটা?

সোহান:- যা সত্যি তাই বলি মাথা মোটাকে মাথা মোটা বলবো না তো কি বলবো, বলেই লাফিয়ে খাটের উপর থেকে নিচে নেমে দাঁড়ায় সোহান।

— এই ভাবেই প্রতিদিন যায় ওদের দু’জনের চৌধুরী বাড়িতে এটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’জন যখনি একত্রে হবে মারামারি আর দুষ্টমিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখবে। সেই ছোট বেলা থেকেই দু’জনের সম্পর্ক এমনি করে এগিয়ে চলছে। ওদের ঝগড়ার কোন বিচার নেই, সেই ছোট বেলা থেকেই আফসার আর আমির দুই ভাই ওদের দুষ্টমি দেখতে দেখতেই বয়স বাড়িয়ে ফেলেছে। সকালে নাস্তার টেবিলে, সন্ধ্যায় চায়ের আড্ডা সব খানেই চলে ওদের দুষ্টমি। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হবার পরেও জ্যামিতিতে বেশ কাচা ইকরা। সেই সাথে বাচ্চামি স্বভাবতো রয়েছেই। মাস্টার্স কম্পিলিট করে বেকার বসে ঘরে দিন কাটাচ্ছে সোহান। ইকরার সাথে দুষ্টমি না করলে যেন দিনটাই মাটি হয়ে যায় সোহানের।

ইকরা:- হাঁপাতে হাঁপাতে আর একবার যদি আমাকে তুমি মাথামোটা বলছো তবে তোমার মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলবো।

সোহান:- হাসতে হাসতে মুখ বেংচি কেটে মাথা মোটা বলে রুম থেকে দৌঁড়ে বের হবার সময় দরজার সাথে ধাক্কা লেগে পরে গেলো

ইকরা:- ঠিক হয়েছে ভালো হয়েছে উচিৎ শিক্ষা হইছে, বলেই হা হা করে হাসা শুরু করলো ইকরা।

— সোহান ইকরার দিকে ঘুরতেই দেখতে পেলো সোহানের কপাল বেয়ে টপটপ করে রক্ত ঝড়ছে, ইকরা হাসি থামিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো আল্লাহ রক্ত বের হচ্ছে বলেই লাভ দিয়ে খাট থেকে নেমে পরলো। ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে দৌড়ে সোহানের কাছে যেয়ে বসে কপালে স্যাভলন লাগিয়ে দিতে দিতে ভালো হয়েছে না খুব?

সোহান:- তোর জন্যইতো হয়েছে।

ইকরা:- ওহ নিজে ব্যথা পাবে আর আমার দোষ দিবে। এতো বড় ছেলে একেতো কোন চাকরি করো না, তার উপর সারা দিন আমাকে জ্বালাতন করো।।

সোহান:- আমি তোকে জ্বালাতন করি না তুই আমাকে জ্বালাতন করিস?

ইকরা:- আমি তোমার ঘরে যেয়ে মনে হয় জ্বালাতন করে আসছি?

সোহান:- তো কি হয়েছে যেখানে সেখানে যখন তখন জ্বালাতন করিস।

ইকরা:- দেখবোনি বিয়ের পর তোমার বউ কতটা ভালো হয়, আমার চেয়ে ভালো জীবনেও হবে না।

সোহান:- ইকরার কান টেনে ধরে এই এখানে বিয়ের কথা আসলো কই থেকে? তোর বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে সেটা বল করিয়ে দিবো আমি এখুনি যেয়ে চাচা আর চাচীকে বলছি।

ইকরা:- উফ ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি, আর আমার বিয়ের বয়স হয়নি বুঝলে। তোমার মততো পাড়ার এ মেয়ে সে মেয়ের পিছু পিছু ঘুরি না।

সোহান:- এই তোকে কে বললোরে আমি পাড়ার মেয়েদের পিছু পিছু ঘুরি।

ইকরা:- যেই বলুক কথাটা মিথ্যা না।

সোহান:- অবশ্যই মিথ্যা হাজার বার মিথ্যা আমি কোন মেয়ের পিছু নেই ও না ঘুরিও না।

ইকরা:- ওহ তাই বুঝি?

সোহান:- হ্যা তাই।

ইকরা:- পট্টি বাঁধতে বাঁধতে জেরিনদের বাড়ির নিচে তাহলে প্রতিদিন কি করো?

সোহান:- ইয়ে না মানে রাহুল জেরিনকে পছন্দ করে তাই ওখানে যাওয়া হয়। আর কোন কিছু না।

ইকরা:- আর ফাহিমাদের বাড়ির পেছনের মাঠে প্রতিদিন কি করো শুনি?

সোহান:- মাঠে মানুষ কি করে শুনি? খেলাধুলো করে, সে জন্যই মাঠে যাই। আচ্ছা তোর বান্ধবিরা বিচার দেয় নাকি?

ইকরা:- তারা কেন বিচার দিবো? আমার কি চোখ নাই?

সোহান:- ওহ তাই বুঝি তাহলে তুই কেন ওদের বাড়িতে যাস?

ইকরা:- আমি কেন যাই মানে? আমার বান্ধবিদের বাড়ি আমার যখন ইচ্ছে তখন যেতে পারি। আমার জন্য কি কোন মানা আছে নাকি?

সোহান:- আমার জন্যও না রাস্তায় যাওয়া মানা আছে না মাঠে যাওয়া মানা আছে তাতে তোর আর তোর বান্ধবিদের কি?

ইকরা:- আমাদের কারোই কিছু না এখন তুমি যাওতো আমার রুম থেকে।

সোহান:- যাচ্ছি আর সবাই যখন বাহিরে জানতে চাইবে কি করে কপাল ফাটলো তখন আমি তোর নাম বলবো মনে রাখিস।

ইকরা:- মানে? আমি বরং ব্যান্ডেজ করে দিলাম ধন্যবাদ দিবে তা না উল্টো আমার নামে অপবাদ দিবে বলছে যাও না যেয়ে শুধু বলো তখন মজা বুঝাবো।

— সোহান ইকরার রুম থেকে বের হয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলে যেয়ে বসলো। এমন সময় ইকরার মা এসে একি এমনটা কি করে হলো ইস কতখানি ফেটে গেছে কি করে ফাটলো?

সোহান:- উফ চাচি সামান্যই ফেটেছে দরজার সাথে ধাক্কা লেগে।

মিলু:- আম্মু আমার মনে হয় ইকরা আপু মেরে ফাঁটিয়েছে, দেখছো না আবার কত সুন্দর করে ব্যান্ডেজ ও করে তিছেজ।

সোহান:- একটা থাপ্পর দিবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার বললাম ধাক্কা লেগে ফেটেছে আর ওকিনা কূটনামি শুরু করছে।

চাচী:- ইকরা এই ইকরা,

— মায়ের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি নিজের রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং এসে হাজির হলো ইকরা। পুরো বাড়িতে ইকরা একমাত্র ওর মাকেই ভয় পায়। সামনে এসে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে কি হলো ডাকছো কেন আমারে?

চাচী:- সোহানের কপাল ফাটলো কি করে?

ইকরা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে ফেটেছে।

সোহান:- দেখছো আমি বলছিলাম না এবার আমার কথা বিশ্বাস হলো?

— সোহানের কথায় ইকরা ভয় পেয়ে গেলো, ও মনে করেছে সোহান নিশ্চই বানিয়ে কিছু বলেছে ওর নামে। তাই অগ্নী দৃষ্টিতে সোহানের দিকে তাকালো ইকরা। ইকরার চাহনী দেখে মিটি মিটি হাসছে সোহান। এমন সময় সোহানের মা এসে কি হয়েছে এখানে?

চাচী:- দেখো বুবু তোমার ছেলের অবস্থা।

মা:- ঠিক হয়েছে সারা দিন শুধু বাড়িতে বসে বসে মেয়েটাকে জ্বালাতন করে।

চাচী:- বুবু তুমি এসব কি বলো শুনি বাড়িতে ছেলেটা না থাকলে পুরো বাড়ি শূন্য শূন্য লাগে।

— ইকরার মা বরাবরই সোহানের পক্ষে সোহান যতই অন্যায় করুক আর এদিকে সোহানের মা বরাবরই ইকরার পক্ষে এতে ইকরার দোষ যাই হোক না কেন।

মা:- হয়েছে তোর আর ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে হবে না। ওযে কত বড় বদমাইস আমি জানি।

চাচী:- আচ্ছা বুবু চলোতো সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি। ইকরার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে যদি আর একবার ওর সাথে ঝগড়া করছিস তাহলে বুঝবি তোর খাওন দাওন সব বন্ধ বাড়িতে।

— দু’জন চলে যেতেই ইকরা অগ্নী দৃষ্টি করে সোহানের দিকে তাকিয়ে তুমি আমার নামে নিশ্চই মিথ্যা কথা বলছো তা না হলে মা কখনোই এমনটা করতো না।

সোহান:- আমি তোর মত না যে মিথ্যা কথা লাগাবো।

ইকরা:- কি আমি মিথ্যা কথা লাগাই?

— এভাবেই শুরু হলো আবারও দু’জনের তুমুল ঝগড়া, মিলু দু’হাতে কান চেঁপে ধরে রেখেও যখন অসহ্য হয়ে গেলো, তখন চিৎকার করে বললো তোমরা দু’জন চুপ করবা। ইকরার দিকে বড় বড় চোখ করে বলে উঠলো সত্যিই তুমি মাথা মোটা।

ইকরা:- রেগে যেয়ে যেই মিলুকে থাপ্পর মারতে যাবে অমনি কেউ ইকরার হাত চেঁপে ধরে।

চলবে…

©শাহরিয়ার