আজ ভার্সিটিতে একশ বছর ফুর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান । সবাই নীল রং এর শাড়ি পড়েছে । আমিও নীল রং এর শাড়ি পড়েছি । কিন্তু সমস্যা একটাই বসার জায়গা পাচ্ছি না ।
“বইন দাড়িয়ে থেকে আমার পা ব্যথা করছে ।
“আরে জায়গা না পেলে আমি কী করব
“সেটাও কথা
তখন হঠাত্ রিমি বলে
“ঐ দেখ তিনটা সিট খালি
আমি আর ইশা সেদিকে তাকালাম ।আর খুশি মনে চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেলাম । কিন্তু যখন চেয়ার গুলোর কাছাকাছি গেলাম তখনি কোথা থেকে অগ্নি, রিয়াদ আর আরিশ এসে বসে পরে । সাথে আমাদের মুখটা কাদো কাদো হয়ে গেলো । ওরা আমাদের দিকে তাকিয়ে টেডি হাসলো আমরা মুখ বাকিয়ে চলে আসলাম ঐখান থেকে ।
সারা অনুষ্ঠান দাড়িয়েই দেখলাম আমি । রিমি আর ইশা চলে গেছিল রেডি হতে ওরা নাচবে তাই । এখন আমার পা ব্যাথা করছে । কুড়িয়ে কুড়িয়ে হাটছি তখনি কোথা থেকে অগ্নি এসে আমায় কোলে তুলে নেয় । আচমকা এমন হওয়াই আমি ভয় পেয়ে যাই ।
আমি চুপ হয়ে গেলাম কারণ এই ছেলে আমাকে ফেলে দিতে পারে এটা নিশ্চিত । কোলে তুলে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে ও গাড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে থাকে ।
গাড়ি এসে থামে বাসার সামনে । গাড়ি থেকে নামতেই অগ্নি নেমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে । আচমকাই হওয়াই আমি পুরো ফ্রিজড হয়ে গেলাম । কি করছে অগ্নি এগুলো । ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে টেডি হেসে চলে যায় । আমি কিছুক্ষণ ঐখানেই একই ভাবে দাড়িয়ে আছি । তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বাসায় চলে যাই
অন্যদিকে
অগ্নি ড্রাইভ করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । আজকে সে নিধিকে ডোজটা বেশিই দিয়ে দিছে ।
“আহারে জানটার চেহারা দেখার মতো হয়েছিল । আজকের এই লুকে আমার সামনে না আসলেই পারতে তাহলে আর আমি তোমার উপর ফিদা হতাম না । আজকের পর থেকে দেখবা আমার ভালোবাসা । বি রেডি বেবি ।পারফেক্ট কাপল হবই আমরা
এটা বলে বাকা হেসে ড্রাইভে মন দেয় । আজকে যখন নিধি নীল শাড়ি পড়েছিল তখন তাকে পরীর মতো লাগছিল আর তখনি আমাদের হিরো ওর প্রেমে পরে ।
এদিকে
বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম । আমি এখন ও একটা ঘোরের মাঝে আছি । কী হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না । তখনি নিয়ান এসে আমার মাথায় জোরে মেরে বসে বিছানায় উঠে বসে ।
আমি আর কিছু না বলে আব্বুর রুমে গেলাম ।
“আব্বু আসবো
” আরে আয়
আমি ভিতরে গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম । আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে বলে
“আমি তোমাকে না জানিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি
“কী সিদ্ধান্ত ?
“আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি ।
“হোয়াট!
“হুম আমার বন্ধুর ছেলে খুব ভালো
“তুমি আমাকে না জানিয়ে এটা কেন করলে ।
“আমি যা করেছি ভেবে চিন্তেই করেছি ।
“আমি এখন বিয়ে করবো না ।
“আমি শুধু তোমায় জানালাম । তোমার মত জানতে চাই নি । তুমি এখন আসতে পারো ।
“আব্বু…
“নিধি রুমে যাও
আমি রেগে রুমে চলে আসলাম । মানে কী আমাকে না জানিয়েই বিয়ে ঠিক করে ফেলল ।
.
.
.
অগ্নি বিরক্ত নিয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে । তার বাবা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
“ড্যাড আমি এখন বিয়ে নিয়ে ভাবছি না
“কিন্তু আমি ভেবে নিয়েছি আর কথাও দিয়ে দিয়েছি
“মানে কী আমাকে না জানিয়ে এটা করলে কেন ?
“কারণ মেয়েটা খুব ভালো
“আমি রাজি না
“আমি তোমার মত জানতে চাই নি । কালকে মেয়ে দেখতে যাবো রেডি থেকো ।
“ড্যাড
“আমি আর কিছু শুনতে চাই না গো ।
অগ্নি ঐখান থেকে চলে গেলো । ওর রাগ লাগছে খুব কিন্তু ও ওর বাবার মুখের উপর কিছু বলতেও পারবে না । কী আর করা । কিছুক্ষণ বসে ভাবলো অগ্নি কী করা যায় । তখনি তার মুখে হাসি ফোটে উঠলো
“আরে কালকে পাত্রীর সাথে আলাদা কথা বলে বিয়ে ভেঙে দিলেই তো হবে
এটা বলেই আনন্দে একটা লাফ দিলো
.
.
.
সকালে
সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছি । আজকে নাকি আমাকে দেখতে আসবে । এদিকে আমি কী করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি নি । হঠাত্ মাথায় একটা আইডিয়া আসলো পাত্রের সাথে তখন আলাদা কথা বলব তখন কিছু একটা বলে বিয়ে ভেঙে দিব ইয়াহু ।
আমি নাচতে নাচতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম । এখন নিজেকে একটু হালকা লাগছে । ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখি আম্মু বসে আছে শাড়ি নিয়ে
“আম্মু এখানে বসে আছো কেন ?
“তোকে রেডি করতে এসেছি ।
“মানে ?
“ওরা ১১ টার দিকে এখানে আসবে এখন বাজে ১০ টা
“ওহ
“হুম এখন আয় তোকে রেডি করে দেই
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে গিয়ে বসে পড়লাম রেডি হতে । আমাকে রেডি করে আম্মু চলে গেল । তার কিছুক্ষণ পর আমার বাদর ভাই আসল রুমে
“আপু আজকে তোকে পুরাই পেত্নির মতো লাগছে ।
“ঐ তুই যা এখান থেকে
“না যাবো না । আচ্ছা তুই শ্বশুর বাড়িতে চলে গেলে তোর রুমটা আমি নিবো ।
” কেন ? তুই নিবি কেন ? আর আমি আর আসবো নাকি একদম আমার রুমের দিকে নজর দিবি না ।
“আপু প্লীজ দিয়ে দে
“না
“প্লীজ এমন করছিস কেন রাজি হয়ে যা না প্লীজ
“তুই আমার রুমে কেন আসতে চয়ছিস ?
“আসলে তোর রুম থেকে আমার গার্লফ্রেন্ডের রুমটা ভালোভাবে দেখা যায় তাই বলছিলাম আর কি
আমি নিয়ানের কথা শুনে অবাক । ২০ বছর বয়সে আজ পর্যন্ত প্রেম করলাম না আর ও ১৩ বছর বয়সে গার্লফ্রেন্ড আল্লাহ আমেরে উঠায় নাও , উঠায় নাও ।
ভার্সিটি ছুটি দিয়েছে ২ ঘন্টা আগে । এই ২ ঘন্টার মধ্যে একটা সেকেন্ড ও একটু বিশ্রাম নিতে পারলাম না । কারণটা হচ্ছে ঐ কচ্ছপ টা আমাকে এটা ওটা করাচ্ছে মনে হচ্ছে এখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই কাজ করার মতো ।
আমি মুখ গোমড়া করে কাজ করছিলাম তখন আমাদের ক্লাসের ডঙ্গি মেয়ে সাথি আসে । এসে খুব ভাব নিয়ে দাড়ায় অগ্নির পিছনে ।
“অগ্নি ভাইয়া আপনি তো ঘেমে গেছেন একেবারে ।
ন্যাকা সুরে বলে সাথি । সাথির ন্যাকা কন্ঠ শুনে অগ্নির ভীষণ বিরক্ত লাগছে তা ওর মুখ দেখেয় বুঝা যাচ্ছে । সে সাথিকে কঠিন গলায় জবাব দিল
“সো হোয়াট
সাথি আবারো ন্যাকা গলায় বলে
“চলুন আপনার ঘামটা মুছে দেই
“আমার দিকে নজর দিতে হবে না চুপচাপ গিয়ে তুমি নিজের কাজ করো ।
অগ্নির কথা শুনে সাথির মুখটা এইটুকু ছোট হয়ে গেছে । এখন আমার মাথায় অগ্নিকে জ্বালানোর জন্য শয়তানি বুদ্ধি আসে । আমি নিজে নিজেই বলে উঠি
“ব্যাটা কচ্ছপ অনেক জ্বালাইছস আমাকে এখন দেখ এই নিধি তোকে কী করে
একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ওদের কাছে গেলাম । সাথি চলে যাচ্ছিল । আমি সাথির হাত ধরে তাকে আটকে দিলাম তারপর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলি
“আরে অগ্নি ভাইয়া সাথি কী এমন চেয়েছে যে আপনি ওর সাথে এমন করছেন । সিনিয়র হয়ে জুনিয়রের এইটুকু ইচ্ছে পূরণ করতে পারবেন না ।
আমার কথা শুনে সাথি অনেক খুশি হলো তা ওর চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে কিন্তু অগ্নি যে একদম খুশি হয়নি তা ওর তাকানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আমাকে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবে । আমিও কম নাকি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঐখান থেকে চলে আসলাম । এবার যাবো যেখানে ডান্স প্র্যাক্টিস হচ্ছে ঐদিকে ।
ডান্স ক্লাসে গিয়েই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল । রিয়াদ আর রিমি ঝগড়া করছে আর আরিশ এবং ইশা তাদের আটকাচ্ছে । আমি ওদের কাছে গিয়ে হা করে ওদের ঝগড়া দেখছি । আমাকে এভাবে হা করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইশা দাতে দাত চেপে বলে
“এভাবে ক্যাবলা কান্তের মতো হা করে তাকিয়ে আছিস কেন ? একে থামা এসে
“হ্যা ?
“আরে ওরে আইসা থামা
“ওহ হে
“হুম আয় ।
“ওরা ঝগড়া কেন করছে
“দুজনের রিলেশন খুব ভালো যে
“মানে ?
“ফ্ল্যাশব্যাক প্লীজ
.
.
.
ফ্ল্যাশ ব্যাক
রিমি ‘মম চিত্তে’ গানটায় নাচ করছিল । নাচের প্রতিটা স্টেপ তার দারুণ । সবাই মুগ্ধ ভাবে দেখছিল তার নাচ । কিন্তু হঠাত্ একটা স্টেপে সে পা পিছলে পড়ে যায় । এতে রিয়াদ শব্দ করে হেসে উঠে
“ঐ আপনি হাসলেন কেন ?
“আমার ইচ্ছে
“আপনার হাসার ইচ্ছে আমার পরে যাওয়ার পর কেন হয়ছে ?
“এই মেয়ে তুমি আগ বারিয়ে ঝগড়া লাগতে চায়ছো কেন ? মিস ঝগড়ুটে
“আমি ঝগড়ুটে! আপনি কী ? কানা কোথাকার
(রিয়াদ চোখে চশমা পরে তাই রিমি তাকে কানা বলে ডাকছে )
.
.
.
বর্তমান
“ও এই ব্যাপার!
“হুম বইন থামা এই রিমিকে
“ওকে ওয়েট
আমি চুপচাপ রিমির কাছে গেলাম । আর ওর কানে কানে গিয়ে বললাম
“দোস্ত রিয়াদ তোর সাথে ইচ্ছা করে ঝগড়া লাগছে যাতে ও মজা নিতে পারে আর তুই তালে তালে নাচতেছিস
আমার কথা শুনে রিমি সাথে সাথে চুপ হয়ে যায় । আর চুপচাপ গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে পরে । এটা নতুন না এর আগেও আমি একে এভাবে চুপ করিয়েছি । আমি মুচকি হেসে ওর পাশে গিয়ে বসে অন্যদের নাচ দেখতেছি ।
.
.
.
কিছুক্ষণ আগেই বাসায় আসলাম । খুব ক্লান্ত লাগছে তাই শুয়ে শুয়ে সানাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও জানি না ।
আমার ঘুম ভাঙল কিছু পরে যাওয়ার শব্দে । চোখ খোলে শব্দ যে দিক থেকে এসেছে ঐদিকে তাকালাম তাকাতেই আমার রাগ সাত আসমান উপরে উঠে গেলো । ভার্সিটিতে অগ্নি আর বাসায় এই নিয়ানের বাচ্চা আমাকে জ্বালিয়ে মারে উফ অসহ্য । ও আমাকে দেখেই দৌড় দেয় । আমি মেঝেতে তাকাতেই দেখি আমার সাধের ফ্লাওয়ার ভ্যাস টা ভেঙে ফেলছে ।
“নিয়ানের বাচ্চা
রাগে ফুসতে ফুসতে ওর রুমে গেলাম । গিয়ে দেখি ও আব্বুর লুঙ্গি পরে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে । এবার মেজাজ আর গরম হয়ে গেল
“নিয়ান ভাই আমার
আমার ডাকে নিয়ান পিছনে ফিরে তাকিয়ে তুতলিয়ে বলে
“কি ছু ব লবা আপু ?
“ওমা তুই তুতলাচ্ছিস কেন ?
“কই কিছু না তো
“ও আচ্ছা । চল আজকে সুইমিংপুলে দুই ভাই বোন সাতার প্রতিযোগীতা করবো
“সত্যি ?
“হুম ।
“ওকে তাহলে চলো
“হুম চল
আমি নিয়ানের উল্টো দিকে ঘুরে বাকা হেসে চলে আসলাম নিজের রুমে । আমাদের বাড়ির পিছনে আব্বু আমার জন্য সুইমিংপুল করেছে আসলে আমার সাতার কাটতে ভালো লাগে । আর আব্বু এমন ভাবে করেছে যা কেউই উপর কী চারদিকের কোন দিক থেকেই দেখতে পাবে না ।
সে যায় হোক আমরা দুই ভাই বোন রেডি হয়ে গেলাম সাতার কাটতে । নিয়ান আর আমি সুইমিংপুলে নামি । নিয়ান নামতেই ওকে ডুবিয়ে দেই ।
“আপু কী করছিস ?
“তুই আমার সাধের ফ্লাওয়ার ভ্যাসটা কেন ভাঙছিস ?
আবার পানিতে ডুবিয়ে উপরে তুলি
“আপু আমি ইচ্ছে করে করিনি এবারের মতো ক্ষমা করে দে প্লীজ
“এই ভুল যদি দ্বিতীয়বার হয়..
“হবে না
“ওকে চল প্রতিযোগীতা শুরু করি ।
“হুম চলো
তারপর দুই ভাই বোন মিলে প্রতিযোগীতা করলাম । প্রতিবারের মতো এবার ও আমিই জিতলাম …
তারাতারি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে গেলাম । ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি গেইটে অগ্নি দাড়িয়ে আছে । আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি উকি মারছে । কিন্তু ইনার থেকে দূরে থাকতে চাই তাই শয়তানকে সাইডে রেখে ভদ্র মেয়ের মতো গিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম ।
“হোয়াট
“আপনার খাতা
“ওহ থ্যাংকস
আমি খাতা গুলো দিয়ে চলে আসছিলাম তখনি পিছন থেকে অগ্নি আবার ডাক দেয় ।
“নিধি
“জ্বী ভাইয়া কিছু বলবেন
উনি আমার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে
“পরের বারের এসাইন্টমেন্ট গুলো তুমিই করে দিও ।
আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায় । এই ছেলে বলে কী! পরবর্তী সময় আমাকে আর খোজে পাওয়া যাবে না । আমি এক চিত্কারে না বলে ঐখান থেকে চলে আসি ।
ক্লাসে এসে দেখি রিমি আর ইশা বসে আছে গালে হাত দিয়ে । দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা চিন্তা করছে খুব গভীর ভাবে । আমি গিয়ে ওদের পিছনে দাড়িয়ে ওদের মাথায় মেরে বলি
“কীরে কী ভাবস এতো
রিমি বলে
“তুই এসাইন্টমেন্ট করে বেঁচে আছিস নাকি তাই ভাবি
ইশা বলে
“তুই বেচে আছিস । আল্লাহ আমার দোয়া শুনছে ।
আমি রেগে বলি
“ঐ তোরা চুপ থাকতে পারিস না
ব্যস লেগে গেলাম তিনজনে ঝগড়া । তখন ক্লাসে স্যার চলে আসায় চুপ হয়ে যাই ।
খুব মনযোগ দিয়ে ক্লাস করছিলাম । তখন কেউ বলে উঠে
“মে আই কাম ইন স্যার
“ইয়েস কাম ইন
গলাটা পরিচিত লাগায় সেদিকে তাকায় । তাকিয়ে দেখি অগ্নি, রিয়াদ আর আরিশ দাড়িয়ে আছে । স্যারের অনুমতি পাওয়াই তারা ক্লাসে ঢুকে ।
“সবাই কেমন আছো ?
সবাই একত্রে বলে উঠে
“ভালো
“৫ দিন পর আমাদের ভার্সিটির ১০০ বছর ফুর্তি ।সো সবাইকে পার্টিসিপেট করতে হবে । আর যারা ভার্সিটি সাজাতে সাহায্য করবে তাদের নাম আরিশ বলে দিবে ।
অগ্নির অনুমতি পেয়ে আরিশ বলতে শুরু করে ।কিছুক্ষণের মাঝে আমার নামাটাও বলে উঠলো । আমি দাড়াতেই অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো । আমি বুঝতে পারলাম এই ব্যাটা ইচ্ছে করে আমার নামটা রাখছে । একে একে সবার নাম বলা শেষ । আমার ২ পেতনি বান্ধুন্নির নাম নেয় নি । তাই তারা নাচে নাম দিবে বলে ঠিক করেছে ।
ভার্সিটি ছুটির পর
একটা রিক্সাও পাচ্ছি না । রিমি আর ইশার বাসা কাছে হওয়াই ওরা হেটে চলে গেছে । আমি একবার এদিক আরেকবার অদিক তাকিয়ে দেখি কোন রিক্সা আসছে নাকি । কিন্তু রিক্সার ‘র’ টাও দেখা যাচ্ছে না । হঠাত্ করে কোথা থেকে অগ্নি এসে আমার সামনে বাইক থামায়
“কী চাই ?
“তোমাকে ।
“মানে ?
“কিছুনা চলো তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দেই
“নো থ্যাংকস
“ভেবে বলছো তো । আজকে কিন্তু একটা রিক্সাও পাবা না
আমি কিছুক্ষণ ভেবে দেখলাম । তারপর ওর বাইকে উঠে বসলাম কিন্তু দূরত্ব রেখে ।
.
.
.
বাইক থেকে নেমে অগ্নিকে থ্যাংক ইউ বলে ই দৌড়ে বাসায় চলে আসি । কলিংবেল চাপতেই আম্মু দরজা খোলে দেয় । আমি সোজা নিজের রুমে গিয়ে দেখি সানাই বিছানায় বসে আছে । বার বার মাথা তুলে দরজার দিকে দেখছে ।
“কীরে সানাই কাকে খুজ্জিস ?
সানাই আমার কথা শুনে লাফিয়ে আমার দিকে তাকালো । আমাকে দেখে সে লাফাতে শুরু করলো । আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে ।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি নিয়ান কালার পেন দিয়ে সানাই গায়ে আকিঝুকি করছে । আমি রেগে এগিয়ে গিয়ে ওর কানে ধরলাম
“ঐ ফাজিল ছেলে তুই কী জীবনে শোধরাবি না
“আপু ছাড় ব্যাথা লগছে ।
“লাগুক । আগে বল সানাই এর গায়ে এমন আকিঁঝুকি করছিস কেন
“তোর বিড়াল আমার ড্রয়িং নষ্ট করে দিছে ।
“এদিক সেদিক ফেলে রাখছিলি নিশ্চয় ।
সে আমার কথায় মাথা চুলকায় যার মানে আমার কথায় ঠিক । এবার কানটা একটু জোরে ধরে ছেড়ে দিয়ে সানাইকে ওয়াশরুমে নিয়ে আসি । সানাইকে ওয়াশ করে ঘরে নিয়ে এসে হেয়ের ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে রুমের দিকে তাকাতেই আমার চোখ চড়ক গাছে । আমার রুমের সব জিনিস এলোমেলো । আমি জোরে এক চিত্কার দিলাম ।
“নিয়াআআন
আমি সোজা আম্মুর কাছে গেলাম । আম্মু আমাকে দেখে এক ভ্রু উচিয়ে ফেলে । আমি তা দেখে বিরক্তি নিয়ে বলি
“সবসময় কী এরকম রিয়েকশন দেওয়া জুরুরি
“না! আচ্ছা কিছু বলবি ?
“হুম
“বল
“তোমার ছেলে আমার রুম এলোমেলো করে চলে আসছে
“তো গুছিয়ে নে
“মানে তুমি ওকে কিছু বলবে না!
“ও ছোট এরকম দুষ্টুমি করবেই
“ধুর কাকে কী বলি
রাগে ফুসতে ফুসতে নিজের রুমে চলে আসি । এসে চুপচাপ সব গুছিয়ে বিছানায় শুয়ে পরি । ক্লান্তি লাগায় সাথে সাথে ঘুম চলে আসে ।
পরের দিন
আজ ভার্সিটিতে একটু তারাতারি চলে আসি । একটা গাছের নিচে বসে আছি । আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কোথা থেকে অগ্নি এসে আমার পাশে বসে পরে ।
“এই আপনি আমার পাশে বসলেন কেন উঠুন বলছি ।
“না । এখানে তো লেখা ছিল না যে এখানে নিধি বসছে সো তুমি বসতে পারবে না ।
“লেখা নেই তো কী হয়েছে আমি তো এখন মুখে বলছি উঠুন ।
“সরি পারবো না
আমি রেগে উঠে ঐখান থেকে চলে আসি । এই লোকটার সাথে তর্ক করা বৃথা । এই ছেলে এতো ঝগড়ুটে বাবা রে । আমি সোজা কেন্টিনে গিয়ে বসলাম । ঐখানে বসে কফি খাচ্ছি আর গল্পের বই পড়ছি । তখন কেউ একজন আমার ঠিক সামনের চেয়ারটাতে বসল । কিন্তু আমার তাকাতে ইচ্ছে হলো না কারণ আমি পুরোপুরি গল্পের মাঝে ডুবে আছি । কিন্তু অস্বস্তি হচ্ছে মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই না পেরে চোখ তুলে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি অগ্নি ।
“কী ব্যাপার আপনি এখানে কী করছেন ?
“কেন এখানে আসা যাবে না নাকি
“না আসা যাবে না কেন অবশ্য ই আসা যাবে কিন্তু এতো টেবিল রেখে আমার টেবিলে কেন বসলেন বাই ইনি চান্স আপনি কী আমাকে পছন্দ করেন
আমার কথা শুনে অগ্নি মুখ বাকিয়ে বলে
“চেহারার নাই চিরিবিরি আমি নাকি ওরে পছন্দ করবো ।
“কী কী বললেন আমার চেহারার খারাপ । বেটা নিজের চেহারা যায়া আয়নায় দেখিস হুহ ।
এই বলে ভেংচি কেটে ঐখান থেকে চলে আসলাম আমি । বেটা কচ্ছরের সাহস কত বড় । আমাকে বলে আমার চেহারা খারাপ দেখিস তোর বউ আমার থেকে দেখতে খারাপ হবে ।
আমি ক্লাসে এসে চুপ করে বসে রয়লাম । এখন রিমি আর ইশা থাকলে ওদের উপর রাগটা ঝাড়তে পারতাম । কিন্তু ঐ পেত্নি দুইটা আসার নামই নিচ্ছে না ..
থাপ্পড় খাওয়ার ভয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছি ভার্সিটির সিনয়র ভাই অগ্নির সামনে আর আমার ঠিক সামনে অগ্নি আর তার দুই বন্ধু রিয়াদ আর আরিশ বসে আছে । উনারা কেউ কিছু বলছে না অগ্নি আমার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে । ওরা কিছু বলছে না দেখে আমি নিজেই মুখ খুললাম ।
“এখানে স ত্যি আমার দোষ ছিল না ।
“চুপ
“আমার..
“এই চুপ
“আগে আমার
“নিধি চুপ থাকো এতে তোমার ই ভালো
“না আগে আমার…
“থাপ্পড় খেতে না চায়লে চুপ করে বসে থাকতে বলছি না ।
অগ্নির কথা শুনে আমি আবার ও গালে হাত দিয়ে বসে পড়লাম । কারণ এই লোকটার উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে ও এটা করতে পারে । ও আপনাদের আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই । সাথে কী কারণে আমাকে এখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে তাও জেনে আসি
(আমি নিধি ।পুরো নাম তানজিয়া নিধি অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি । মা বাবার বড় মেয়ে । ছোট ভাই আছে একটা নাম নিয়াদ । সে ক্লাস এইট এ পড়ে । আমরা দুই ভাই বোন টম এন্ড জেরির মতো ফাইট করি । এছাড়া আমার একটা পোষা বিড়াল আছে নাম সানাই । এই হলো আমার পরিবার । এবার গল্পে ফিরে যায় চলুন)
ভার্সিটিতে না খেয়ে চলে আসায় প্রচুর ক্ষুধা লাগে । তাই কেন্টিনে চলে যাই কিছু খেতে । সেখানে গিয়ে আমার প্রিয় খাবার নডুলস অর্ডার দিয়ে বসে ছিলাম ঠিক তখনি আমার বান্ধুবি ইশা সেখানে আসে । দুজনে ঝগড়া লেগে যায় । ঝগড়া লাগার একটাই কারণ আমার নডুলস এর বেশি অর্ধেকটাই ও খেয়ে ফেলছে । আমি তার দিকে পানি ছুরে মারতেই নিচে বসে যায় আর সেই পানি গিয়ে পরে অগ্নির শরীরে । এতেই ইনি রেগে বোম আর আমাকে এখানে এনে বসিয়ে রেখেছে ।
এবার আর সহ্য হলো না তাই বলে উঠলাম
“আমাকে এখানে এভাবে বসিয়ে রাখার মানে কী
অগ্নি আমার প্রশ্নের জবাবে কিছু না বলে ওর বন্ধুদের চলে যেতে ইশারা করে ওরাও চলে যায় । তারপর উনি আমার দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন
“পানি ছুড়াছুড়ি কোন ধরনের মজা ?
“আমি তো ইশাকে মারছিলাম অপনাকে না
“তাহলে আমার শরীরে পরল কেন ?
“বিশ্বাস করুন এতে আমার একটুও দোষ নেই ।
“কার দোষ শুনি বলো ।
আমার দিকে হালকা এগিয়ে এসে বলে
“সব দোষ ইশার ।
“ও তাই
আমার দিকে এগিয়ে বলে । আমি একটু পিছিয়ে বলি ।
“হুম
“কিন্তু পানি ছুড়েছো তো তুমি ।সো প্রকৃত দোষি তুমি ।সো শাস্তি তোমাকেই পেতে হবে ।
বাকা হেসে বলে কথাটা
” শাস্তি মানে কি সের শা স্তি ? আমি কোন দোষ করি নাই তাহলে শাস্তি কেন পাবো ।
“শাস্তি তো তুমি পাবেই
“নাআআআ
” এই চুপ
ধমক দিয়ে বলে আমি সাথে সাথে মুখে আঙুল দিয়ে দেই । যার মানে আমি একদম চুপ ।
“আমার এই এসাইন্টমেন্ট গুলো করে দিবে কালকের মধ্যেই।
এতোগুলো খাতা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় । আমি খাতা গুলোর দিকে তাকিয়ে কাদু কাদু ফেইস নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হলাম । ১ম বর্ষের স্টুডেন্ড হয়ে ৩য় বর্ষের এসাইন্টমেন্ট কিভাবে করবো । ও এই অগ্নির পরিচয় তো দেওয়া হলো না ।
(অগ্নি চৌধুরী অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে । ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যার এর ছেলে । চেহারা হিরোদের মতো হলেও এক নাম্বারের ঘাড় ত্যাড়া আর বদ মেজাজী । তবে এই ছেলেই নাকি মেয়েদের ক্রাশ । আমার ও ক্রাশ ছিল কিন্তু এখন আর নাই । অগ্নির গায়ের রং ফর্সা ।চুল গুলো কপালে ফেলে রাখে, ঠোঁটের রং হালকা গোলাপি, আর বিলায় চোখ । উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ।)
আমি খাতাগুলো নিয়ে ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছিলাম তখন রিয়াদ ভাইয়া আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আমার দিকে একটা বই এগিয়ে দিয়ে বলে
“এই বই টা নাও এসাইন্টগুলো করতে সহজ হবে ।
“থ্যাংকস ভাইয়া
” ওয়েলকাম
“আচ্ছা ভাইয়া আপনি এতো ভালো কিন্তু আপনার ঐ অগ্নি ফ্রেন্ড এতো বজ্জাত কেন । যখনি দেখি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে ।।
রিয়াদ ভাইয়া কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে যায় । কী হলো আমি হাসির কী বললাম । আমি এতো কিছু না ভেবে ক্লাসে চলে যাই । ক্লাসে যেতেই আমার ২ বান্ধুবি রিমি আর ইশা আমার কাছে আসে । আমি ইশার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় ।সে আমার তাকানোকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে রিমিও দাড়িয়ে আছে । আমি তাদের পাশ কাটিয়ে ব্যাগ নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পরি । আসার সময় রিমি আর ইশা অনেক ডাকে কিন্তু আমি পাত্তা দেই নি ।
.
.
.
কলিং বেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খোলে দেয় । আমাকে এতো তারাতারি আসতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে ।
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ?
“এতো তারাতারি চলে এলি যে
“ক্লাস হয় নি বেশি
“কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না
“তুমি আমায় বাসায় ঢুকতে দিবে প্লীজ
আম্মু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকেই দরজা থেকে সরে দাড়ায় । আমি বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে যায় । এখানে থাকলে ১০০ টা প্রশ্নের সম্মোখীন হব ।
আমি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই এসাইনমেন্টের কথা মনে পরে যায় । ছট করে উঠে বসি আর কাজে লেগে পড়ি ।
রাত ১০
কমড় আর ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে বসে থেকে । তবু এখন ও ২টা খাতা বাকী আছে । দুপুরের আর রাতের খাবার আম্মু খাইয়ে দিয়েছে । এখন আমার ঘুম পাচ্ছে কিন্তু ঘুমিয়ে গেলে আর এসাইন্টমেন্ট গুলো শেষ করতে পারবো না । উঠে রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে কফির মগ নিয়ে এসে আবার বসসলাম এসাইন্টমেন্ট গুলো করতে । এগুলো শেষ করতে করতে রাত ১টা বেজে যায় । আমি সব গুলো খাতা গুছিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লাম ।
.
.
সকালে
“এই নিধি উঠ ৯ টা বাজে ভার্সিটিতে যাবি না ।
“হুম
“কী হুম উঠ বলছি
আমি চোখ দুটো পিট পিট করে খোলে আম্মুকে দেখে আবার বন্ধ করে নিলাম । কিন্তু এসাইন্টমেন্টের কথা মাথায় আসতেই এক লাফে উঠে যায় । এক দৌড়ে ওয়াশরুমে । আমার এহেম কান্ডে আম্মু বোকা বনে গেলো । আমি তারাতারি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে গেলাম । ভার্সিটিতে এসে দেখি….
— ইকরা, সোহানের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে। দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে রইলো একদৃষ্টিতে।
ইকরা:- এই উঠো খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে আর আমার খুব খিদে লেগেছে।
সোহান:- রাগী রাগী চোখে ইকরার দিকে তাকিয়ে দিলিতো মুডটা নষ্ট করে, বলেই উঠে দাঁড়ালো।
ইকরা:- বিছানা ছেড়ে উঠে সোহানের শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে এই নাও তোমার মুড ঠিক করে দিলাম। এখন আসো খেতে বসবে।
— সোহান আর ইকরা এক সাথে খেতে বসলো, খেতে খেতে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো বাড়ির সবাই কি খেয়েছে নাকি না খেয়েই আছে কে জানে।
সোহান:- কেন বাড়ির সকলের কি পেট নাই নাকি? তাদের কি তোর মত খুদা লাগে না? শুধু তোর একাই খিদে লাগে।
ইকরা:- এমনটা না তবুও সবার জন্য মন সটফট করছে, আমরা কি ভুল করেছি বাড়ি ছেড়ে?
সোহান:- ইকরার একটা হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে দেখ যদি বাড়ি ছেড়ে না আসতাম তবে তোকে সারা জীবনের জন্য হারাতে হতো। আজ যেভাবে আমার সাথে গল্প করছিস তা আর কোন দিনও করতে পারতি না। আর সব চেয়ে বড় কথা আমরা না হয় ভুল করেছি। কই বাবা মা, চাচা তারাতো আমাদের আটকে রাখলো না। তারা বললো না ঠিক আছে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে না। আমরা আগে তোদের ফুপুর সাথে কথা বলবো তারপর তোদের নিয়ে বসবো। যা ভালো হবে আমরা তাই করবো।
ইকরা:- তারপরেও হয়তো আমি ভুল করেছি আমার একটা ছোট বোন ছিলো আমি তার কথা না ভেবেই চলে এসেছি। এখন মানুষজন আমার বোনটাকে নানান কথা বলবে। তার মনে আমার জন্য খারাপ অনুভুতি সৃষ্টি হবে।
সোহান:- তেমন কিছুই হবে না, তুই চিন্তা করিস না। মিলু সব জানে সব বুঝে ও তোর মত এতোটা বোকা না বুঝলি। আর বাবা মা চাচা চাচী হয়তো এখন আমাদের উপর রেগে আছে কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আমিতো আমার মা বাবাকে চিনি তাই না।
ইকরা:- চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তাই যেন হয়। না হলে যে এতো ভালোবাসার মাঝেও আমার কাছে সব কেমন জানি অপূর্ণ অপূর্ণ লাগছে, আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।
সোহান:- ইকরার গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার কি কম খারাপ লাগে? এখন কেঁদে কেঁদে কি চোখের নিচের কাজল গুলো মুছে ফেলবি নাকি? আর কান্না কাটি না করে খেয়ে নে।
— ইকরা ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে সোহানের দিকে তাকিয়ে তুমিও খেয়ে নাও। কথা বলতে বলতে দু’জন খেতে শুরু করলো।
— সোহানের বাবা দুপুরের খাবার খেয়ে ডাইনিং এ বসে আছে, সোহানের মা রান্না ঘর থেকে চায়ের মগ নিয়ে এসে তার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে ছেলে মেয়ে দু’টো কি খাচ্ছে না খাচ্ছে সে দিকে কারো কোন খেয়াল নেই। তোমাদের দুই ভাইয়ের তো জিদ টাই বড়।
বাবা:- আমি কি করবো বলো, আমি যে রাসেলের মাকে কথা দিয়েছি।
মা:- তুমিতো নিজের সন্তানকেও কথা দিয়েছিলে।
বাবা:- আমাকে আর পরীক্ষায় ফেলো না।
মা:- এটা পরীক্ষা নয়, আমাদের সন্তানের সারা জীবনের ব্যপার। তাদের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে সব ভু্লে ওদের বাসায় নিয়ে আসেন।
ইকরা:- এই আর কত ঘুমাবে উঠো সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
— বৃষ্টি তখনো হচ্ছে।
সোহান:- আধ খোলা চোখেই বললো কি করবো ঘুম থেকে উঠে?
ইকরা:- এই যে তোমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছি। উঠে ফ্রেস হয়ে নাও।
সোহান:- বিছানায় উঠে বসে আহ এক পশলা বৃষ্টি তুমি আর আমি। সাথে এক কাপ ধোয়া উঠা গরম চা, ভালোবাসার পূর্ণতা।
ইকরা:- ইস কি ঢং মনে হয় কোন দিন আমার হাতের চা খাওনি।
সোহান:- হুম অনেক খেয়েছি তখনতো তুই আর আমার স্ত্রী ছিলি না।
ইকরা:- ওহ তাই বুঝি?
সোহান:- হ্যাঁ তাইতো, এজন্যই আজকের চা অনেক স্পেশ্যাল এখন তুই বস আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
— সোহান উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ইকরা চায়ের মগ নিয়ে ব্যালকনিতে যেতে যেতে সোহানকে বললো সেখানে আসার জন্য। সোহান ফ্রেস হয়ে ব্যালকনিতে যেয়ে ইকরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
ইকরা:- কি মশাই আপনার মনে কি চলছে?
সোহান:- কি চলছে মানে তেমস কিছু না দু’জন পাশাপাশি বসে এক কাপ চা ভাগ করে খাবো এটাই আপাতত ইচ্ছে।
ইকরা:- তাহলে পেছন থেকে সামনে এসে চেয়ারে বসো। পেছনে দাঁড়ালে কি আর মুখোমুখি হওয়া যায়?
সোহান:- ইকরাকে ছেড়ে দিয়ে পাশাপাশি রাখা চেয়ারে বসতে বসতে তোকে খুব সুন্দর লাগছে কেন রে?
ইকরা:- এই আমি বরাবরই সুন্দর বুঝলে, আমার জন্য কত ছেলে পাগল।
সোহান:- কি?
ইকরা:- না মানে বলছিলাম আমার জন্য কত ছেলে পাগল ছিলো, কিন্তু আমিতো তোমাতে পাগল ছিলাম আছি আর সারা জীবন তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।
সোহান:- পাগলী একটা।
ইকরা:- হুম এটা তুমি ঠিক বলছো, তবে শুধু তোমার জন্যই পাগলি।
— দু’জন ব্যালকনিতে বসে গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে এই সারা রাত কি এখানেই বসে থাকবে নাকি?
সোহান:- ইহু বলেই ইকরাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। ইকরা দু’হাতে সোহানের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
— রাতের খাবার বেড়ে দিতে দিতে ইকরার মায়ের চোখ গলিয়ে পানি পড়ছে। দেখে ইকরার বাবা বললো কাঁদছো কেন?
মা:- কিছু না তুমি বুঝবে না।
বাবা:- একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, সোহানের বাবার দিকে তাকিয়ে ভাইজান আমরা কি আমাদের সন্তানদের কষ্ট দিয়ে ফেলছি না?
সোহানের বাবা:- হুম তুই ঠিকই বলছিস আমরা আমাদের জিদ পূর্ণ করার জন্য ওদের কষ্ট দিয়ে ফেলছি।
— সোহানের বাবা হাত ধুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের বোনকে কল দিলো। ফোনটা রিসিভ করতেই বলতে শুরু করলো তোকে আমার কিছু বলার আছে। সোহানের বাবা তার বোনকে সব কিছু বুঝিয়ে বললো। এবং বোনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো। কথা শেষ করে ফোন রেখে দিলো।
মিলু:- গভীর আগ্রহ নিয়ে বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ফুপু কি বললো বড় আব্বু?
বাবা:- তেমন কিছু না বললো এতো কিছু করার কিছুই ছিলো না সোহান আর ইকরা কি তার সন্তানের মত না? তারা যদি বিয়ে করে সুখি হয় এতেই সকলের সুখ। ও রাসেল কে বলে সব মানিয়ে নিবে, সোহান আর ইকরাকে বাসায় নিয়ে আসতে বললো।
মিলু:- ইয়ে বলে চিৎকার করে উঠে বললো আমি এখুনি আপুকে ফোন করে বলছি।
বাবা:- না এখন কিছু বলার দরকার নেই।
— সবাই খুশি মনে খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠে নিজেদের রুমে চলে আসলো।
— সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা বানাতে বসেছে ইকরা, তখনো বিছানায় শুয়ে আছে সোহান। এমন সময় ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলে ইকরা সোহানকে বললো দেখো কে এসেছে, সোহান হয়তো কোন বন্ধু এসেছে। বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো মিলুকে। মিলু ঘরে ঢুকে সোহানকে জড়িয়ে ধরে। সোহান মিলুকে জড়িয়ে ধরে ইকরা দেখো কে এসেছে।
ইকরা:- রান্না ঘর থেকে ছুটে আসে ছোট বোনকে দেখে বুকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।
মিলু:- আরে কান্না করছো কেন?
ইকরা:- তুই এ বাসার ঠিকানা কোথায় পেলি?
মিলু:- ভাইয়ার বন্ধুর কাছ থেকে যোগার করেছি, দেখতো বাহিরে আর কে কে আছে।
— সোহান আর ইকরা এক সাথে বাহিরে উকি মারতেই থমকে যায় বাড়ির সকলকে এক সাথে দেখে। ইকরা কান্না করে দেয়। বাবা এসে বুকে জড়িয়ে কান্না করছিস কেন? আজতো তোর কান্না করার দিন না।
ইকরা:- এসো সবাই ঘরের ভিতর ঢুকো।
— সবাই ঘরে ঢুকে বসে। ইকরা বলে সবাই বসো আমি নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসছি।
— ইকরা হেসে মিলুকে সঙ্গে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটে।
সোহানের বাবা:- আমরা না হয় একটু রাগ করেছিলাম তার জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হবে?
— সোহান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো, কিছুকক্ষ পর মাথা তুলে ভুল করেছি বাবা ক্ষমা করে দাও।
বাবা:- তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নে বাড়িতে যাবি। তোদের বাড়ি তোদের সংসার আর তোরাই যদি সে বাড়িতে না থাকিস তবে কেমন শূন্য হয়ে রয় বাড়িটা।
— ইকরা আর মিলু সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসে। নাস্তা খেয়ে সবাই নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সোহান আর ইকরা পাশাপাশি সিটে বসে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।
— পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজিয়েছে মিলু। রাতে সোহানের রুমে বিয়ের শাড়ি পরে বসে আছে ইকরা, একটু পর মিলু ঠেলে সোহানকে রুমে ঢুকিয়ে দিলো। ইকরা যেয়ে সোহানের পাশে বসে বললো কি ঘুমটা খুলবি না সারা রাত এমনি বসে রইবি?
ইকরা:- ঘুমটা সরিয়ে শাড়ির ভাজে রাখা খাতা এগিয়ে দিয়ে নাও।
সোহান:- এটা কি?
ইকরা:- কি মানে খাতা জ্যামিতি শিখাবে না?
সোহান:- মাথার চুল টেনে ধরে, মিলু এই মিলু বলতে যাবে অমনি ইকরা সোহানের মুখ চেঁপে ধরে। একদম চুপ মিলুর কি কাজ এই ঘরে?
সোহান:- তোকে জ্যামিতি শিখাবে আর আমি ঘুমাবো।
ইকরা:- কি রাতে ও আমার ঘরে এসে জ্যামিতি শিখাবে। বলেই সোহানের বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করলো।
— সোহান ইকরাকে জড়িয়ে ধরে, আজ তোকে ভালোবাসার জ্যামিকি শিখাবো। ইকরা এই কি করছো ছাড়ো বলছি, সোহান উহু আজ জ্যামিতি শিখাবো। বলেই ইকরার ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ইকরা দু’চোখ বন্ধ করে নিলো। সোহান রুমের লাইটের সুইচ অফ করে দিলো।
— মা মেয়ে দু’জন ফোনের দু’প্রান্তে কান্না করতে করতে এক সময় মা জিজ্ঞাসা করলো কেমন আছিস?
ইকরা:- হুম মা ভালো তোমরা কেমন আছো? বাবা কেমন আছে?
— কথা বলতে বলতে ইকরা আরও জানালো যে সোহানের সাথে ওর বিয়েটা হয়ে গিয়েছে কোর্টে যেয়ে। মা বললেন, যখন যা প্রয়োজন হয় তাকে জানানোর জন্য। ইকরা বললো ঠিক আছে এভাবেই অনেকটা সময় ধরে মা আর বোনের সাথে কথা বললো ইকরা। তারপর ফোন রেখে দিয়ে কিছুটা সময় নিরবে চোখের পানি ফেললো।
ইকরা মনে মনে বলছে ভালোবাসাকে জিতাতে বাবা মাকে ছেড়েছি, জানি না আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছেন। এদিকে সোহানও বাড়িতে নেই বাহিরে গিয়েছেন বন্ধুর সাথে। বাসায় শুধু ইকরা আর বন্ধুর সেই বোনটা। বিকেল প্রায় শেষের দিকে একা একা বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত লেগে এলো। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠতেই ইকরা যেয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই সোহান আর ওর বন্ধুরা ঘরের ভিতর ঢুকলো সকলের হাতে ব্যাগ। সোহান হাতের। একটা ব্যাগ ইকরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো এটা পরে আসো, আমরা নতুন বাসায় যাবো।
ইকরা:- কি আছে এর ভিতর?
সোহান:- ভিতরে নিয়ে যেয়ে দেখ কি আছে।
— ইকরা আর কথা না বলে ব্যাগটা হাতে চলে আসলো ওয়াশ রুমের ভিতর। ব্যাগটা খুলতেই একটা লাল শাড়ি বের হয়ে আসলো। ইকরা শাড়িটা বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। কিছুক্ষণের ভিতর শাড়িটা পরে বের হলো। ততক্ষণে সব বন্ধুরা এ বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। সোহান ইকরার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রয়েছে।
ইকরা:- এমন করে কি দেখো?
সোহান:- তোকে কেমন লাগছে তাই দেখছি।
ইকরা:- ইস আমার বুঝি লজ্জা লাগে না?
সোহান:- উহু তোকে নতুন বউ বউ লাগে।
— সোহানের কথা শুনে ইকরা হেসে দিয়ে বললো নতুন বউকেতো নতুন বউয়ের মতই লাগবে।
সোহান:- হুম তাইতো এখন চল নতুন বাসায় যাবো।
— দু’জন বন্ধুর বোনকে বলে সে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে তাদের নতুন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রিক্সায় বসে অপলক সোহান ইকরার দিকে চেয়ে রইলো,আজ যেন ইকরার দিক থেকে নিজের চোখ সরাতেই পারছিলো না। ইকরা লজ্জায় মুখ তুলতে পারছিলো না। অল্প সময়ের ভিতর রিক্সা নতুন বাসার সামনে চলে আসলো। দু’জন রিক্সা থেকে নেমে ঘরের দরজা খুলতেই বন্ধুরা সবাই ওদের দু’জনের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিঁটিয়ে দিতে থাকলো। ইকরার কাছে সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হতে থাকলো। সব বন্ধুরা নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিলো। সেই সাথে ওদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলো দেখিয়ে দিলো।
— সবাই চলে যাবার পর ইকরা যেয়ে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার এক কোনায় উঠে বসলো। ফুল গুলো স্পর্শ করে করে দেখছে। সোহান যেয়ে পাশে বসে কি হলো কি দেখছিস?
ইকরা:- প্রতিটা মেয়েরই এমন ইচ্ছে থাকে সুন্দর একটা বাসর ঘরের। ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সেই ঘরে থাকার। আজ আমার সে ইচ্ছে পূর্ণতা পেয়েছে। কথা গুলো বলতে বলতে ইকরার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে শুরু করলো।
সোহান:- অবাক হয়ে ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো তুই কান্না করছিস কেন? বলেই হাত বাড়িয়ে ইকরার চোখের পানি মুছে দেবার চেষ্টা করলো।
ইকরা:- আরও জোরে কান্না শুরু করে দিলো। বললো সব পূর্ণতার পরেও বাবা মা নেই আমাদের এই আনন্দের সাথে এটা ভেবেই হৃদয়টা পুড়ে যাচ্ছে।
সোহান:- চোখের পানি মুছতে মুছতে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবা মাও আমাদের খুব শিগ্রই মেনে নিবে। বলেই ইকরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যায়।
ইকরা:- ধাক্কা মেরে সোহানকে দূরে সরিয়ে দিয়ে খবরদার একদম সুযোগ নিবে না। বলে খাট থেকে উঠে দাঁড়ায়।
সোহান:- আরে আরে কি করছিস?
ইকরা:- ব্যাগ খুলে খাতা কলম বের করতে করতে আজ সারা রাত তুমি আমাকে জ্যামিতি শিখাবে। যতদিন পর্যন্ত না আমাকে জ্যামিতি শিখাতে পারবে ততদিন পর্যন্ত আমাকে ধরতে আসবে না।
— সোহান মাথার চুল টানতে টানতে কাকে বিয়ে করলাম আমি? বিয়ের রাতে স্বামী স্ত্রী সুখ দুঃখের গল্প করে তারপর রোমান্স করে আর এই মেয়ে আমাকে বলছে জ্যামিতি শিখাতে। জীবনডা মনে হয় এখানেই শেষ।
ইকরা:- হাসতে হাসেত শেষ না শেষ না মাত্রই শুরু হলো তোমার আমার নতুন জীবন। আর আমাদের শুরুটা হবে সবার চেয়ে আলাদা। কাল সকাল থেকে আমাকে রান্না করা শিখাবে, সবাই বাসায় এসে রেডিমেড রান্না খায় আর তুমি রান্না করে খাবে। উফ খাবারের কথা বলতেই মনে হলো রাতের খাবারটা খাওয়া হয়নি তোমার বন্ধুরা খাবার রেখে গেছে চলো খেয়ে নেই।
সোহান:- বিছানা থেকে উঠতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তাহলে আর কি বাবুর্চির চাকরি হলো আমার।
ইকরা:- হাসতে হাসতে খাবার গুলো প্লেটে সাজিয়ে বসলো। দু’জন মিলে এক সাথে খেতে বসলো। ইকরা প্লেট থেকে খাবার তুলে সোহানের মুখের দিকে এগিয়ে দিলো। সোহান খাবার মুখে নিতেই ইকরা বললো এক প্লেটে খাবার খেলে ভালোবাসা বেড়ে যায় বুঝলা আমরা এখন থেকে এক প্লেটে দু’জন খাবো। সোহান মাথা নেড়ে শুধু বললো হুম। ইকরা সোহানের নাক টেনে দিয়ে ওরে আমার গুলুমুলু লক্ষী বরটা। কথা বলতে বলতে দু’জন খেয়ে উঠলো।
— খাবার শেষ করে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে বললো ইস এখনো অনেক রাত বাকি ভোর হতে শোন এখন আমরা বাড়ির বাহিরে যাবো, দু’জন নিরিবিলি অনেকটা সময় হাঁটবো তারপর বাসায় ফিরে আসবো। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে এটা মাঝে মাঝে আমার বরকে সঙ্গে নিয়ে ব্যস্ত শহরের রাস্তায় হলুদ ল্যাম্পপোষ্টের নিচ দিয়ে হাঁটবো। গল্প করবো তারপর যখন ক্লান্ত হয়ে যাবো তখন বাড়িতে ফিরে আসবো। যেহেতু আজ আমাদের ফুলশয্যা রাত এই রাতটাই সব চেয়ে উত্তম হবে। সারা জীবন সরণীয় হয়ে থাকবে দু’জনের জন্য। তুমি এখন বসো আমি শাড়িটা চেঞ্জ করে আসি শাড়ি পরে হাঁটতে কিছুটা অসুবিদা হবে শাড়িটার অনেক ওজন। ইকরা উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো সোহান ফ্যালফ্যাল করি তাকিয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো কার পালায় পরলাম আমি পালিয়ে যাবারও আর কোন পথ খুলা নেই। আগে অর্ধেক পাগল ছিলো এখন দেখি পুরো পাগল হয়ে গেছে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ইকরা জামা চেঞ্জ করে ফিরে আসলো।
ইকরা:- সোহানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে কি হলো তুমি এখনো এখানেই বসে আছো চলো বের হবে।
সোহান আর দেরী না করে উঠে দাঁড়িয়ে ইকরার সাথে হাঁটা শুরু করলো, নির্জন রাস্তায় হঠাৎ হঠাৎ দু’একটা গাড়ি ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সোহান হাঁটছে আর মনে মনে বলছে আজ বুঝতে পারছি নচিকেতা কেন বলেছে তার গানে পুরুষ মানুষ দু’প্রকার জীবিত বিবাহিত। তার গানটা সত্যি সত্যি তিন সত্যি। এসব ভাবনায় ছেঁদ পরলো যখন ইকরা সোহানের হাত চেঁপে ধরে কাঁধের উপর মাথা রাখলো। হালকা বাতাসে ইকরার এলো মেলো চুল গুলো উড়ছে। সব ভাবনা গুলো নিমেষেই হারিয়ে ইকরার খোলা চুলে এসে জমা পড়লো।
ইকরা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর না সারা দিন গাড়ির শব্দ কালো ধোয়া আর এই রাতের আধারে সব কিছু কেমন নিস্তব্ধ।
সোহান:- ইকরার চুলে হাত বুলিয়ে হুম খুব সুন্দর।
ইকরা:- এই আমি কি তোমাকে আমার চুলের কথা বলছি? আমার চুল সুন্দর তা আমি খুব ভালো করেই জানি।
— কথা গুলো বলতে বলতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো। সোহান ইকরার হাত চেঁপে ধরে বললো তাড়াতাড়ি চল জোরে বৃষ্টি শুরু হবার আগেই। না হলে ভিজে যেতে হবে।
ইকরা:- ভিজলে কি হবে?
সোহান:- এতো রাতে ভিজলে নিশ্চিৎ জ্বর আসবে।
— দু’জন কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলো।
ইকরা মন খারাপ করে চুল মুছতে থাকলো ততক্ষণে অনেক জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে সোহান ব্যালকনি থেকে ইকরাকে ডাক দিলো। ইকরা চুল গুলো মুছতে মুছতে সেদিকে এগিয়ে গেলো। সাঁড়ি সাঁড়ি গাছ লাগানো ব্যালকনির সামনে গাছের পাতা বেয়ে টিনের চালের উপর পানি পরছে। টপটপ করে শব্দ হচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে দু’জন সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে। সোহান রুমের ভিতর ঢুকে দু’টো চেয়ার নিয়ে আসলো একটা চেয়ার ইকরার দিকে বাড়িয়ে দিলো আর একটা চেয়ারে নিজে বসলো। দু’জন মুখোমুখি বসে গল্প করছে আর বৃষ্টির শব্দ শুনছে। কত দিনের স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে, খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে সোহান মাঝে মাঝে তা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে ইকরা তা দেখে ভুবণ ভুলানো হাসি দিচ্ছে সেই হাসিতে বারং বার মুগ্ধ হচ্ছে সোহান। শত কষ্ট বুকে চাঁপা দিয়েও সে হাসিতে সব ভুলে যায় সোহান। প্রকৃতিও ওদের মনের কথা বুঝতে পেরে আজ আর বৃষ্টি থামছে না বরং সময়ের সাথে সাথে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। হঠাৎ করে প্রচণ্ড জোরে বজ্রপাতের শব্দে ইকরা চমকে সোহানকে জড়িয়ে ধরে। সোহানও বুঝতে পারে অন্যমনস্ক ইকরা ভয় পেয়েছে। সেও নিজের দু’হাত দিয়ে ইকরাকে বুকের সাথে চেঁপে ধরে।
— ইকরা সোহানের বুকে নিজের মুখ ঘষা দিতে দিতে খবরদার একদম সুযোগ নেবার চেষ্টা করবে না। সোহান মুখে হাসি ফুটিয়ে ইকরার পিঠের উপর থেকে একটি হাত নিয়ে এসে ইকরার চিবুক স্পর্শ করতেই। ইকরা উপরের দিকে তাকালো। দু’জনের চোখাচোখি হতেই ইকরা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। টিনের চালায় টপটপ করে বৃষ্টির পানি পরছে, সোহানের বুকে ইকরা মাথা রেখে দু’চোখ বন্ধ করে আছে। সকাল হতে এখনো অনেকটা রাত বাকি। মাঝে মাঝেই দূরে কোথাও বজ্রপাতের শব্দে ইকরা কেঁপে উঠে সোহানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। সোহানের কাছে মনে হয়না এর চেয়ে রোমান্টিক সময় হতে পরে। যে সময় ভালোবাসার মানুষটি ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে সেই সময়টা সত্যিই অসাধারণ। কথা গুলো ভেবে একা একাই মনে মনে হেসে চলেছে সোহান। মাঝে মাঝে উড়ে আসা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।
— সকাল নয়টা বেজে পনের মিনিট ইকরা ফ্রেস হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলো সোহান নাস্তা নিয়ে বিছানায় বসে আছে।
ইকরা:- এই সকাল সকাল তোমাকে ভিজে কেন বাহিরে যেতে হবে?
সোহান:- তো কি না খেয়ে থাকবি? খিদেতো তোর একদম সহ্য হয়না।
ইকরা:- তাতে কি হয়েছে? সময়ের সাথে সাথে মানুষের অনেক অভ্যাস পরিবর্তন করতে হয়।
সোহান:- হয়েছে এতো কথা না বলে খেতে বস আর তোয়ালেটা আমাকে দে।
— ইকরা একটা মুচকি হাসি দিয়ে সোহানের দিকে তোয়ালেটা এগিয়ে দিলো। সোহান হাত মুখ মুছে নিলে দু’জন এক সাথে নাস্তা খেতে বসলো। নাস্তা খেতে খেতে সোহান বললো দুপুরের জন্য কি বাজার করবো?
ইকরা:- তোমার যা ইচ্ছে হয় নিয়ে এসো, আর বেশী খরচ করবে না, এখন থেকে হিসেব করে চলবে , না তোমার জব হয়েছে কোন আর না এখানে আমার কোন টিউশনি আছে।
সোহান:- হাসতে হাসতে ঐ সব তোর চিন্তা করতে হবে না। একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিকই হবে।
— দু’জন গল্প করতে করতে খেয়ে নিলো, বৃষ্টি কমার পর সোহান বাড়ি থেকে বের হলো উদ্দেশ্যে চাকরি খোঁজা, যদি কোথাও একটা চাকরি মিলে যায়। শহরের অলি গলি ঘুরে বেরাচ্ছে সোহান। এই বন্ধু সেই বন্ধুর কাছে ফোন দিয়েই চলেছে যদি কারো কোথাও যদি পরিচিত থাকে সেই আশাতে। আজ যেন একটা চাকরি সোহানের কাছে সত্যিই সোনার হরিণ। এতোদিন না বুঝলেও সোহান আজ ঠিকই বুঝতে পারছে একটা চাকরির কত প্রয়োজন।
— সোহান চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই ইকরার ফোনটা বেজে উঠে, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে মায়ের নাম্বার, ফোন রিসিভ করতেই মা প্রশ্ন করে কেমন আছিস?
ইকরা:- জানায় ভালো আছে বাড়ির সকলে কেমন আছে, বাবা, বড় আব্বা, মিলু সবাই কেমন আছে, মা বলে সবাই ভালোই আছে কিন্তু কারোই মন ভালো নেই। বাড়ির সন্তানরা বাড়িতে না থাকলে যা হয় আরকি। সোহান কোথায় জানতে চাইলে, ইকরা জানায় সোহান বাহিরে গেছে চাকরির ইন্টারভিউ দেবার জন্য।
মা:- ইকরাকে বলে তোদের কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবি, কোন রকম সংশয় রাখবি না মনের ভিতর। তোদের বাবারা আজ রেগে আছে দেখবি অল্প দিনের ভিতর সব রাগ পানি হয়ে যাবে।
— ইকরা মাকে বলে চিন্তা না করার জন্য আর ওদের নতুন সংসারের জন্য দোয়া করার জন্য। অনেকটা সময় দু’জন কথা বলে, তারপর ফোন রেখে দেয়। দুপুরের আগে আগে সোহান বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। ফ্রেস হয়ে আসার পর ইকরা জানায় মা ফোন করেছিলো। কি কি কথা হলো ইকরা সোহানকে সব জানালো। গল্প করতে করতে দু’জন মিলে রান্না ঘরে ঢুকে পরলো, সোহান ইকরাকে রান্না করতে সাহায্য করছে। দু’জন মিলে রান্না করে নিলো।
সোহান:- রান্নার ঘ্রাণটা কিন্তু দারুণ হয়েছে তুই একদম পাকা রাঁধুনি হয়ে যাবি অল্প কিছু দিনের ভিতর।
— ইকরা দু’চোখ বন্ধ করে আছে সোহান বলে উঠলো ইস সত্যিই একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেছিস।
ইকরা:- চোখ মেলে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তুমি দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছো। বলেই সেখান থেকে বের হয়ে গেলো।
— সোহান ও ইকরার পিছু পিছু রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। দু’জনে রুমের ভিতর আসার পর ইকরা সোহানকে বললো গোসল করে নিতে। সে খাবার বেড়ে দিচ্ছে খেয়ে নেবার জন্য। সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো তুই আগে গোসল করে নে, আমারতো বেশী সময় লাগবে না, তোর হলে আমি করবো, তারপর দু’জন এক সাথে লাঞ্চ করবো।
— ইকরা আর দেরি না করে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো, দরজা লাগাতে লাগাতে সোহানকে উদ্দেশ্য করে বললো ঘুমিয়ে পরো না যেন আবার। তাহলে কিন্তু পানি নিয়ে এসে মাথায় ঢেলে দিবো। সোহান ইকরার কথা শুনে অনেকটা সময় একা একা হাসলো। ইকরা গোসল করছে এদিকে সত্যি সত্যিই ঘুমে সোহানের দুচোখ এক হয়ে গিয়েছে, ইকরার গোসল শেষ হলে ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় সোহান খাটে ঘুমিয়ে আছে, ইকরার মনে দুষ্টমি বুদ্ধি আসে, ইকরা খুব আস্তে আস্তে সোহানের মাথার কাছে যায়, তারপর ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পরা পানি গুলো সব সোহানের চোখে দেবার জন্য সে চুল গুলো সোহানের মুখের উপর ধরে। কয়েক ফোটা পানি সোহানের চোখে মুখে পরতেই সোহান লাফিয়ে উঠে। আর অমনি ইকরা সেখান থেকে সরে যেয়ে হাসতে শুরু করে।
— সোহান মুগ্ধ হয়ে ইকরার দিকে তাকিয়ে রয়, আর মনে মনে বলে মাশাআল্লাহ।
ইকরা:- তো কি হইছে তাতে? এখনকার দিনে যখন তখন বৃষ্টি হতেই পারে।
— সোহান হুম বলে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হতেই ইকরা ব্যালকনির দিকে হাঁটা শুরু করলো শত বাঁধা দেবার পরেও মন আটকে থাকে না, ব্যালকনির গ্রীলের ফাঁকা গুলো দিয়ে বিহিরে তাকাতেই নানান রকম গাছ চোখে পরে, ইকরা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে আর গাছের পাতা থেকে টিনের চালে পরা বৃষ্টির পানির ফোটা গুলো দেখছে। টপটপ করে পানির ফোটা পরছে মুহুর্তে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। নিজের অজান্তেই ইকরা একটা হাত বাড়িয়ে দিলো জানালার গ্রীলের বাহিরে। হাতের উপর বৃষ্টির পানি পরছে ইকরা গুনগুনিয়ে গান গাইছে। সোহান গোসল শেষ করে কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেদিকে ইকরার খেয়াল নেই। হঠাৎ করে সোহান যখন ইকরার ঘাঢ়ের উপর হাত রাখলো ইকরা চমকে কেঁপে ঘুরে তাকালো। গান বন্ধ করে ও তুমি কখন এলে গোসল শেষ?
সোহান:- একটা হাত দিয়ে ইকরাকে গ্রীলের সাথে হালকা চেঁপে ধরে, অনেক সময় হয়েছে এসেছে তোর দ্যান কোথায়?
ইকরা:- কোথাও না বৃষ্টি দেখছিলাম তাই খেয়াল করিনি।
সোহান:- ইকরাকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে, তোর খেয়াল থাকে কোথায়?
ইকরা:- লজ্জা মাখা মুখে জানি নাতো কোথায় থাকে।
সোহান:- একটা হাত ইকরার মুখের দিকে এগিয়ে নিতেই ইকরা চোখ বন্ধ করে নেয়। ইকরার মুখের উপর চলে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে। তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
ইকরা:- মুহুর্তে চোখ খুলে হালকা ধাক্কা দেবার চেষ্টা করে আমি সব সময় সুন্দর শুধু তোমার দেখার চোখ নেই বুঝলে।
সোহান:- ওহ তাই আমার চোখ নেই না,
ইকরা:- উহু নাইতো, এখন চলো খাবে।
সোহান:- এই দাঁড়া না আরও একটু সময় তোকে একটু দেখি ভালো করে।
ইকরা:- এই যাওতো ঢং কইরো না, খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
সোহান:- তো কি হয়েছে? খাবার একটু পরে খেলে কিছুই হবে না।
ইকরা:- ইস যদি গোসল না করতাম তাহলে ভালো হতো খুব।
সোহান:- কেন কেন?
ইকরা:- আরে বুদ্ধু তাহলে এখন বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম। ইস কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না। খুব মিস করছি সেই সব দিন গুলো। ছোট বেলাতেই ভালো ছিলাম।
সোহান:- তোকে ভিজতে মানা করছে কে শুনি?
ইকরা:- কেউ মানা করেনি, কিন্তু এখনতো বড় হয়েছি, আর তাছাড়া বিয়েও হয়ে গেছে এখন কি আর সে সব স্বাদ আললাদ মনের ভিতর পুষে লাভ আছে?
সোহান:- বাহিরে হাত বাড়িয়ে মুঠো ভর্তি বৃষ্টির পানি নিয়ে এসে ইকরার মাথায় দিতে দিতে কেন নেই? তোর বরটা আন রোমান্টিক বলে?
— কথাটা বলতেই ইকরা আর সোহান একে অপরের দিকে তাকালো। সোহান ইকরাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। ইকরা এই কি করছো পরে যাবো তো। ছাড়ো বলছি, সোহান হাসতে হাসতে এই এতোটা মোটাও তুই হসনি যে তোকে নিয়ে আমি হাঁটতে পারবো না। বলতে বলতে ইকরাকে নিয়ে এসে খাঁটের উপর শুয়িয়ে দিয়ে, ইকরার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলো সোহান।
ইকরা:- অমন করে কি দেখছো?
— সোহান কোন কথা না বলে নিজের মুখটা ইকরার মুখের কাছে নামিয়ে নিয়ে এসে “ভালোবাসি”
মিলু:- এতো বড় মেয়ে তুমি বুঝ না? আমার বলতে লজ্জা করে।
সোহান:- মিলুর কান টেনে লাজ লজ্জা বলতে কিছু নাই? সারা দিন ফেসবুকে পরে থেকে এসব শিখতেছিস।
মিলু:- উফ ভাইয়া ছাড়ো না হলে বড় আব্বার কাছে বলে দিবো তোমাদের প্রেমের কথা।
সোহান:- কান টেনে ধরেই তোর কি মনে হয় আমি ভয় পাই? মোটেও ভয় পাই না বুঝলি। এখন আপাতত বেকার সে জন্য চুপ করে আছি নয়তো কবে বিয়ে করে ফেলতাম।
— কথাটা বলেই ইকরার দিকে তাকালো সোহান, ইকরার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, সোহান ওদিকে তাকিয়েই বললো, আমি কি রাসেল ভাইয়ের মত বুড়া বয়সে বিয়ে করবো নাকি? সময় মতই বিয়ে করবো বলে মিলুর কান ছেড়ে দিলো। ইকরা কিছুটা শরম পেয়ে খাট ছেড়ে উঠে ব্যালকনির দিকে চলে গেলো।
মিলু:- এটা কি করলা ইস কান দুইটা ব্যথা করে দিছো।
সোহান:- বেশ করেছি সব সময় কেমন বড় মানুষের মত পাকনা পাকনা কথা।
মিলু:- মাথা হাতাতে হাতাতে, ঐ যে আপু অভিমান করে ঐদিকে গেছে এখন রাগ ভাঙাও।
— মিলুর দিকে তাকিয়ে সোহান সেদিকে হাঁটা শুরু করলো, পেছনে বিছানায় গা মিলিয়ে দিয়ে মিলু মিটমিট করে হেসে চলছে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে, সেই সাথে বৃষ্টিও পরছে খুব জোরে, বৃষ্টি মনে হয় আজ থামবে না। সোহান ইকরার পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে তোর আবার কি হলো এই অন্ধকারে এখানে এসে দাঁড়ালি কেন?
ইকরা:- এমনি বৃষ্টি দেখার জন্য।
— সোহান দুহাতে ইকরার দুই বাহু চেঁপে ধরে সত্যিই এমনি? ইকরা কোন উত্তর দেয় না, শুধু ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠছে, আবার প্রশ্ন করে কিরে কথা বলছিস না কেন? ইকরা নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচে নামিয়ে বোকার মত বলে রোমান্স কি? যে কোন ছেলে মেয়ে এমন প্রশ্ন শুনলে হেসে দিবে, সোহানের ও যে হাসি আসছিলো না তেমনটা নয়, তবে সোহান এটা বুঝতে পারছিলো ইকরা ইচ্ছে করেই এমনটা বলছে, এই মুহুর্তে ইকরা যতটা বোকার মত এই প্রশ্নটা করছে ইকরা ঠিক ততটা বোকা নয়। তবে এই মুহর্তে ইকরা খুব করে সোহানের কাছে ভালোবাসার স্পর্শ চাচ্ছে। সোহান একটা হাত ইকরার থুতনিতে নামিয়ে নিয়ে এসে মুখটা উপরে তুলতেই একজনের চোখে আরেক জনের চোখ পরে। ইকরার চোখের পাপড়ি গুলো বার বার উঠা নামা করছে। সোহান ইকরার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ করাতেই বাতাসে বৃষ্টি এসে দু’জনের মুখ ভিজিয়ে দিতে শুরু করলো। আকাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে এলো। হঠাৎ করে রুমের ভিতর থেকে মিলু বলে উঠলো, আর ভিজতে হবে না ঘরের ভিতর আসো নয়তো বরফ হয়ে ব্যালকনিতেই পরে রবে। দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুমের ভিতর ঢুকতেই মিলু আবার বললো তাহলে অভিমানের পালা শেষ হলো। সোহান বড় বড় চোখ করে তাকাতেই মিলু চুপ হয়ে গেলো। ইকরা আর সোহান দু’জনেই শব্দ করে হেসে দিলো।? মিলু ছোট হলেও এতোটা ছোট না তাই এ হাসির মানে বু্ঝতে ওর কষ্ট হলো না। তিনজন গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো, জুহি এসে খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিলো। সকলে এক সাথে চলে গেলো রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে খেতে ফুপু বলে উঠলো, ভাইজান রাসেলেরতো বিয়ে দেয়া দরকার একটা ভালো পাত্রী দেখা দরকার।
বাবা:- হ্যাঁ বয়সতো অনেক হয়ে যাচ্ছে আমরাও আছি দেখ ভালো পাত্রী পাস কিনা আমরা থাকতে থাকতে।
ফুপু:- বললেইতো পাওয়া যায় না তারপরও দেখি কি হয়। এমন অনেক আলোচনার মধ্যে দিয়ে সকলে মিলে রাতের খাবার শেষ করে যার যার রুমে চলে গেলো।
— সোহান নিজের রুমে শুয়ে আছে, ইকরা আর মিলু তাদের রুমে, মিলু গভীর মনোযোগ দিয়ে ফেসবুকিং করছে, এমন সময় ইকরা বললো কি করছিস?
মিলু:- কিছু না গল্প কবিতা পড়ছি কেন?
ইকরা:- না এমনি,
মিলু:- তুমি কি জানো ভাইয়ার গল্প গুলো অনেক সুন্দর আর রোমান্টিক।
ইকরা:- কোন ভাইয়া?
মিলু:- আরে কোন ভাইয়া আবার সোহান ভাইয়ার।
ইকরা:- কিন্তু মানুষটা খুবি আন রোমিন্টিক।
মিলু:- হাসতে হাসতে মোটেও না ভাইয়াও খুবি রোমান্টিক কিন্তু তুমি বুঝনা।
ইকরা:- হয়েছে আমিতো আর তোর মত এতো পাকনা বুড়ি না।
— দু’জন কথা বলছে এর ভিতর পাশের রুম থেকে সোহান ছোট করে ফেসবুকে পোষ্ট করছে অ্যাই এম ইন লাভ। মিলু ইকরাকে পোষ্টটা দেখিয়ে কমেন্টস বক্সে কমেন্টস করলো অভিনন্দন ভাইয়া। তাড়াতাড়ি ট্রিট দিও কিন্তু। সোহান সাথে সাথে রিপ্লাই দিলো ঢাকায় যেয়ে দিবো। দুই বোন বসে বসে হাসছে। রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে এক সময় সকলে ঘুমিয়ে পরলো।
— পরদিন সকালে সবাই যখন গোল হয়ে নাস্তার টেবিলে বসেছে তখন ফুপু বলে উঠলো যে গত রাতে তার দেবর ফোন করে বলেছে তাদের গ্রামে একটা মেয়ে দেখেছে। সবাই মিলে যেয়ে মেয়েটাকে দেখে আসলে কেমন হয়?
বাবা:- হুম মন্দ হয়না বলে সবার দিকে তাকালো।
— সকলে নাস্তা করে সেঁজে গুজে রওনা হলো সে মেয়েকে দেখার উদ্দেশ্যে, আগে থেকেই সে বাড়িতে জানিয়ে দিতে বলে ফুপু তার দেবর কে ফোন করে। দুপুরের আগে আগে সকলে যেয়ে সেই বাড়িতে উপস্থিত হয়। সকলে মেয়েকে দেখে মোটামুটি সকলের মেয়ে পছন্দ হয়। টুকটাক কথাবার্তা সেরে সকলে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পথে আসার পর ফুপুর দেবর জানায় একটা দিন তাদের বাড়িতে থেকে যেতে। সবাই রাজী হয়ে যায় সেখানে থাকার জন্য এক রাত।সেখানে থেকে সকলে চলে আসে। দেখতে দেখতে গ্রামে সাতটা দিন কেটে যায়। অবশেষে সকলে আজ ঢাকায় চলে আসবে। রাসেল আগের রাতেই সবার জন্য টিকেট কেটে নিয়ে এসেছে। বাসায় আজ রান্না বান্নার প্রচুর আয়োজন হয়েছে, মেয়েরা সকলে রান্না বান্না নিয়েই ব্যস্ত সকাল থেকে। ছেলেরা বসে বসে লুডু খেলছে। দুপুরের খাবারের পরেই সকলে রেডি হতে শুরু করলো। সন্ধ্যার আগে আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হবে। রাসেল বেশ কয়েকবার করে মিলু আর ইকরার রুমে এসেছে। হয়তো কিছু বলতে চায় কিন্তু কেন জানি কিছু বলতে পারে না। এদিকে ইকরা একবার জিজ্ঞাসাও করেছে, রাসেল বলে না তেমন কিছু না তোদের গুছনো কতটুকু হলো তা দেখতেই এসেছি। এভাবেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো। ফুপু অনেক কান্নাকাটি করছে, এই কয়েকদিন যেমন বাড়িটা আনন্দে মেতে ছিলো, আজ ঠিক উল্টো অবস্থা।
বাবা:- ফুপুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, কাঁদিস না রাসেলের বিয়েটা ঠিক হলেই আমরা আবার আসবো।
— সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো বাস স্ট্যান্ডের দিকে, রাসেল ও সাথে আসলো ওদের উঠিয়ে দেবার জন্য। বাসে উঠিয়ে দিয়ে রাসেল সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়িতে তেমন বেশী যাত্রী নেই, গাড়ি ছেড়ে দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। দারুণ উপভোগ করা সাতটা দিন নিয়ে বাসের ভিতর সকলের টুকটাক কথা বার্তা চলছে। এক সময় রাত বাড়তে থাকলো সকলে ঘুমিয়ে পড়লো। খুব ভোরে গাড়ি ঢাকায় এসে পৌঁছালো। সকলে গাড়ি থেকে নামলো, এর মাঝে ফুপু ফোন দিয়ে খোঁজ নিলেন বাবা জানালো। যে ভালো ভাবেই ঢাকায় চলে এসেছে।
— পরদিন থেকেই সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সোহান ইকরাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে এমন সময় ইকরা সোহানকে বললো আমাদে আগামি দিন গুলোর কথা চিন্তা করে তোমাকে বাবার ব্যবসা দেখা উচিৎ। সোহান কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো বেশতো তাই দেখবো। ইকরা খুশি হয়ে সোহানকে জড়িয়ে ধরলো।
— দু’জনের মাঝে এখন আর আগের মত ঝগড়া লাগে না। তবে দু’জন যখন বাসায় থাকে তখনি ছাঁদে উঠে একজন আরেক জনের সাথে গল্প করে। সোহান বাবা চাচাকে জানায় সে ব্যবসা বুঝে নিতে চায়। বাবা চাচা খুব খুশি হয়। এবং সোহানকে ব্যবসা বুঝিয়ে দিতে থাকে। প্রতিদিন সকালে সোহান অফিসে যাবার সময় ইকরাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে চলে যায়। অল্প দিনের ভিতর সোহান ব্যবসা বেশ ভালো ভাবেই বুঝে নেন। বাবা চাচারাও বেশ খুশি হয় সোহানের উপর। সোহান ও প্রতিদিন ছাঁদে বসে ইকরাকে বলা যে সে ব্যবসাটা বেশ সুন্দর করে বুঝে নিচ্ছে। ইকরা খুশি হয়। সোহানের হাতে হাত রেখে বলে তুমি বাবাকে বলো আমাদের বিয়ের কথা।
সোহান:- ইকরার হাত চেঁপে ধরে বলে হ্যাঁ বলবো আর কয়েকটা দিনসময় দাও আমাকে।
ইকরা:- অভিমানের সুরে ততদিনে আমার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করে দিক।
সোহান:- হাসতে হাসতে দু’জন তাহলে পালিয়ে যাবো।
— ইকরা সোহানের কথা শুনে শুধু হাসে। আর বলে তোমার মাথাটা পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে। একদিন সকালে সবাই বাসায় বসে নাস্তা করছে এমন সময় ফুপুর ফোন আসে। বাবা ফোন রিসিভ করতেই ফুপু জানায়। যে মেয়েকে তারা দেখেছিলো সে মেয়ে অন্য ছেলেকে পছন্দ করে আর তার বিয়ে সেখানেই ঠিক করেছে তারা। বাবা খুব দুঃখ প্রকাশ করে। ফুপু তখন বাবার কাছে আবদার করে ইকরাকে রাসেলের বউ বানাতে চায়। বাবা বলে যার মেয়ে তার সাথে কথা বলার জন্য। চাচা বলে আমি এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারবো না তোকে রাতে জানাবো।
— বাবা মা, চাচা চাচী সবাই মিলে কথা বলে, তারাও মোটামুটি রাজী হয়ে যায়। এদিকে ইকরা আর সোহান তার কিছুই জানে না। রাতে ফোনে কথা বলার সময় ইকরা যখন এসব শুনে তখন কান্না করে দেয়, সে তার মাকে বলে আমি এ বিয়েতে রাজী না। মা ইকরার মুখ চেঁপে ধরে বলে তোর বাপ চাচার মুখের উপর কথা বলার সাহস হলো কি করে?
— ইকরা বলে জীবনটা আমার কোন খেলনা নয়, আমাকে না জানিয়ে তোমরা কি করে কথা দাও?
— মা অনেক সময় ইকরাকে বুঝিয়ে চলে যায় আর বলে এই বিষয়ে দ্বিতীও বার যেন আর মুখ না খুলে। ইকরা কাঁদতে কাঁদতে ছাঁদের দিকে হাঁটা শুরু করে।
— ছাঁদে উঠে সোহানকে ফোন করে সোহান তখন বাসায় ফিরছিলো। ইকরার কান্নার শব্দ শুনে সোহান প্রশ্ন করে কি হয়েছে? ইকরা বলে তুমি বাসায় আসো তাড়াতাড়ি তারপর তোমাকে বলছি।
বলে ইকরা ফোন কেটে ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। ফোন কাটার পর থেকেই সোহানের মনটা কেমন জানি খারাপ হয়ে গেলো। বাড়িতে নিশ্চই বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়েছে। নয়তো ইকরা এভাবে ফোন করে কান্না করার মেয়ে নয়। ভাবতে ভাবতে সোহান বাড়িতে ঢুকে গেলো। সোজা ইকরার রুমের ভিতর ঢুকে গেলো, রুমে ইকরাকে না পেয়ে সোহান বুঝতে পারলো ইকরা কোথায় আছে। সোহান আর দেরী না করে সোজা ছাঁদে উঠে এলো।
সোহান:- ইকরার পেছনে দাঁড়িয়ে, কিরে তোর কি হইছে?
— ইকরা ঘুরে সোহানের বুকের উপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করলো। সোহান কোন কিছুই বুঝে উঠেত পারছিলো না। কি হচ্ছে। সোহান বাে বার জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে বলবিতো আমাকে।
ইকরা:- সোহানের বুক থেকে মাথা না তুলে, বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
সোহান:- কি? কার সাথে আচ্ছা তুি কান্না থামা আমার সাথে ভালো করে কথা বল।
ইকরা:- সোহানের বুক থেকে মাথা তুলে, রাসেল ভাইয়ার সাথে।
সোহান:- বললেই হলো বলা নেই কওনা নেই হুট করে বললেই বিয়ে হয়ে গেলো? তুই চাচাকে বলিস নাই তুই বিয়ে করবি না?
ইকরা:- আমি বলার চেষ্টা করছি কিন্তু মা আমাকে কোন কিছু বলারই সুযোগ দেয়নি। এখন কি করবা তুমিই ভালো জানো। বলেই ইকরা আবার কান্না করতে শুরু করলো।
সোহান:- তুই কান্না করিস না, আমিতো আছি তাইনা চল নিচে চল রাত হয়ে আসছে। আর বাবা আর চাচাকে তুই বলবি তুই এ বিয়ে করতে চাস না তারপর যা হবে আমি বুঝবো।
— সোহানের দিকে তাকাতে সোহান চোখের ইশারায় বুঝালো আমিতো আছি তোর সাথে। দু’জন নিচে নামতেই দেখতে পেলো সকলে ডাইনিং এ বসে আছে। সোহান আর ইকরা সকলের সাথে যেয়ে ডাইনিং এ বসলো।
সোহানের বাবা:- কিরে মা তোকে এমন।দেখাচ্ছে কেন?
ইকরা:- মাথা নিচু অবস্থায় বড় আব্বু আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।
— ইকরার মা ইকরার দিকে দৌঁড়ে আসলো, এসেই থাপ্পর মারতে যাবে এমন সময় সোহানের মা এসে হাত চেঁপে ধরে আহ কি করছো এসব।
মা:- যা করছি ঠিকই করছি ওর সাহস হলো কি করে এই কথা বলার।
সোহান:- চাচী তুমি এটা কেমন কথা বলছো? সারা জীবন সংসার করবে ও আর ওর সারা জীবনের ফয়সালা তোমরা কি করে করবে?
সোহানের বাবা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে আজ পর্যন্ত এ বাড়িতে আমরা যা বলে এসেছি তাই হয়েছে। আর তুই ভালো করেই জানিস আমরা কাউকে কথা দিলে তার নড়চর হয়না।
সোহান:- তোমরা ভুল করেছো বাবা, ইকরা আমি মিলু আমরা সবাই বড় হয়েছি, আমাদের জীবনের ডিশিসন আমাদের জানিয়ে নেয়া, আমাদের মতামত নিয়ে তারপর করা তোমাদের উচিৎ।
বাবা:- আমরা যে ডিশিসন নিয়েছি তা ওর ভালোর জন্যই নিয়েছি। আর সবচেয়ে বড় কথা তোমাদের ফুপু জীবনে কোনদিন আমাদের কাছে কোন কিছুর আবদার করেনি। জীবনে প্রথম সে আমাদের কাছে কিছু চেয়েছে। তাকে আমরা কোন ভাবেই ফিরিয়ে দিতে পারি না।
সোহান:- সন্তানদের জীবনের চেয়ে বড় তোমার ওয়াদা হয়ে দাঁড়ালো। আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই?
চাচা:- তোমাদের জীবনে আমরা সব রকম স্বাধীনতা দিয়েছি, যখন যা চেয়েছো দিয়েছি, সব ধরণের ইচ্ছে পূরণ করেছি, আজ আমরা ওর বিয়ে ঠিক করেছি তাতেও আমরা সকলের মত দিয়েছি। তোমাদের সমস্যাটা কোথায়?
সোহান:- সমস্যা আছে বলেই বলছি, আমরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি।
— সোহানের কথা শুনে সকলে কয়েক মিনিটের জন্য একদম নিরব হয়ে গেলো কারো মুখ থেকে যেন কোন কথা বের হচ্ছিলো না। সকল নিরবতা ভেঙে মা বলে উঠলো এসব তুই কি বলছিস?
সোহান:- হ্যাঁ মা যা শুনেছো সত্যিই বলেছি।
বাবা:- যা বলেছো দ্বিতীয় বার তোমার মুখ থেকে আর শুনতে চাই না।
সোহান:- কেন শুনবে না বলো?
বাবা:- কারণ আমি তোমার ফুপুকে কথা দিয়েছি। আর তা অনড় থাকবে কোন রকম নড়চড় হবে না।
সোহান:- বেশতো তুমিতো আমাকেও কথা দিয়েছো আমি যা চাইবো তাই দিবে। আজ আমি তোমার কাছে আমার ভালোবাসা চাচ্ছি দাও আমি যা চাচ্ছি তা দাও।
বাবা:- এসব প্রেম ভালোবাসা সব পাগলামি, দু’দিন পরেই সব চলে যাবে।
সোহান:- ভুল বাবা, বরং দু’দিন পর আমাদের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি কথা দিছো তার মানে এই নয় যে তুমি তা ফিরিয়ে নিতে পারবে না। এটা তোমাদের সন্তানদের জীবন মরণের ব্যাপার। আর তোমরা যদি আমাদের ভালো মন্দ না বুঝো তবে আমাদের অন্য পথ বেছে নিতে হবে।
— সোহানের এমন কথা শুনে সকলে মুখে হাত দিলো। বাবা চিৎকার করে বলে উঠলো তোমার এতো বড় সাহস আমার মুখের উপর কথা বলো। বের হয়ে যাও এখুনি আমার বাড়ি থেকে।
মা:- এসব কি বলছেন আপনি। সোহানের দিকে এগিয়ে যেয়ে বাবা শান্ত হো। বাবা যা করছেন তোদের ভালোর জন্যই করছেন।
সোহান:- ইকরার দিকে তাকিয়ে চল আমার সাথে।
বাবা:- চিৎকার করে তোর মত সন্তান জন্ম দিয়ে আমি ভুল করেছি, বের হয়ে যা আর কোন দিনও এ বাড়িতে পা দিবি না। আমি মনে করবো আমার কোন সন্তান নেই। তোর জন্য দুটো রাস্তাই খোলা আছে এ বাড়িতে আমাদের ছেলে হয়ে থাকতে হলে আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। নয়তো সারা জীবনের জন্য এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।
— বাবার এমন কথায় সকলে একদম স্তব্দ হয়ে গেলো। মা ছুটে এসে বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য। চাচাও কিছু বলতে চেয়ে থেমে গেলেন।
সোহান:- বেশতো চলে যাবো, তবুও তোমাদের এ অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারবো না। বলে ইকরার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। মা এসে পেছন থেকে সোহানের হাত ধরে টেনে বলে যাস নে বাবা।
— সোহান মাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা করে দিও মা। বলে হাঁটতে শুরু করে, মা ছুটে যায় একবার সোহানের বাবার কাছে একবার চাচার কাছে। হাউমাউ করে কান্না করে দু’জনই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ইকরার মা মুখে কাপড় গুজে কান্না করতে থাকে। ইকরা আর সোহান বের হয়ে আসে বাড়ির ভিতর থেকে মিলু ভাইয়া আপু বলতে বলতে দরজা পর্যন্ত দৌঁড়ে আসে। ততক্ষণে দু’জন বাড়ির বাহিরে চলে আসে। হাত নেড়ে ইকরা মিলুকে বিদায় জানায়। ওরা বের হয়ে যেতেই বাবা সোফায় বসে পরে। মা যেয়ে উনার পা জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করলো।
বাবা:- প্লীজ কান্না কাটি করো না, ওরা বাড়িতে ফিরে আসবে, কোথায় যাবে ওদের যাবার মত কোন জায়গা নেই। কিন্তু আমি রাসেলদের কি জানাবো?
মা:- কি জানাবেন মানে? আপনার জিদের জন্য আজ বাড়ির দুটো ছেলে মেয়ে বাহিরে চলে গেছে। যদি ওদের কিছু হয়ে যায় তখন কি হবে?
— নিজের স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে কথা শুনে শুধু ছলছল চোখে চেয়ে রইলো, কোন কথাই বের হলো না মুখ থেকে।
— গভীর রাত হয়ে আসে দু’জন কোথায় যাবে বুঝতে পারে না। ইকরা সোহানের হাত চেঁপে ধরে এতো রাতে আমরা কোথায় যাবো?
সোহান:- বুঝতে পারছি না, কিছু একটাতো মেনেজ করবো তুই চিন্তা করিস না।
— হলুদ ল্যাম্পপোষ্টের নিচে বসে আছে দু’জন ঢাকার রাস্তায় সারা রাত গাড়ি চলে, একটু পর পর গাড়ি হর্ণ বাজিয়ে চলে যাচ্ছে ওদের দু’জনের সামনে দিয়ে। সোহানের মাথায় চিন্তার পাহাড় ভেঙে পরেছে। কি করবে এতো রাতে সাথে একটা মেয়ে মানু্ষ। ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিয়ে এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে সব বলে। বন্ধু সব শুনে তার বাড়িতে যেতে বলে। সোহান ইকরাকে নিয়ে সে বাড়িতে চলে আসে। বন্ধু তার বোনের সাথে ইকরার থাকার ব্যবস্থা করে আর সোহান সেই বন্ধুর সাথে। এভাবেই দুজনের রাত পার হয়। পরদিন সেই বন্ধু সাথে আরও কয়েকটা বন্ধুকে ডেকে নিয়ে আসে। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় কোর্টে যেয়ে দু’জন বিয়ে দিবে। তারপর একটা ছোট বাসা ভাড়া করে দিবে সেখানেই থাকবে ওরা দু’জন আপাতত। সেই মোতাবেক সকলে মিলে রওনা হলো কোর্টের দিকে। বারোটা বিশ মিনিটের সময় সকলে মিলে কোর্টে পৌঁছে গেলো। এবং ঘড়ির কাটায় যখন সময় বারোটা চল্লিশ মিনিট তখন দু’জনের বিয়ে সম্পন্ন হলো। সকলে মিলে রওনা হলো সেই বন্ধুর বাসাতে। বাসায় আসার পর সব বন্ধুরা বললো তোরা আজ রাত পর্যন্ত এই বাসাতেই থাক, আমরা তোদের নতুন বাসা কম্পিলিট করে রাতে নিয়ে যাবো। এসব বলে সকল বন্ধুরা বিদায় নিয়ে চলে যায়।
— দুপুরের খাবার খাওয়া শেষে ইকরা মিলুর নাম্বারে ফোন দিয়ে জানালো যে ওরা বিয়ে করে নিছে। মিলু শুনে খুশি হলো। দু’জন কথা বলতে বলতে ওদের মা মিলুর রুমে চলে আসলো। মিলু তাড়াতাড়ি ফোন কাটতে চাইলে মা বললো ফোনটা তার কাছে দিতে। মিলু মায়ের দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। মা ফোন কানে লাগিয়ে কান্না করতে শুরু করলো। মায়ের কান্না শুনে ইকরাও হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
সোহান:- আমি আবার কি করলাম? কারেন্ট চলে গেছে এটা কি আমার দোষ?
জুহি:- এতো ভয়ংকর গল্প কেন বলতে হবে?
সোহান:- ভুতের গল্পতো ভয়ংকর হবেই।
— কথা বলতে বলতে ফুপু মোমবাতি নিয়ে রুমে আসলো।
ফুপু:- কিরে এতো চিৎকার করছিস কেন তোরা?
জুহি:- মা জানো না ভাইয়া কি ভয়ংকর ভুতের গল্প বলছে, তার উপর কারেন্ট চলে গেলো তাইতো ভয়ে চিৎকার করে উঠছি।
ফুপু:- পাগল মেয়ে কোথাকার। কারেন্ট আসলে সকলে খেতে আছিস।
— বলে ফুপু রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইকরা:- হয়েছে তোমাকে আর ভুতের গল্প বলতে হবে না, এবার চুপ করে বসে থাকো।
— সবাই টুকটাক কথা বলতে বলতে প্রায় ত্রিশ মিনিট পর কারেন্ট আসলে সকলে মিলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য উঠে পরলো। সবাই মিলে গোল হয়ে যেয়ে খাবার খেতে বসলো। এক সাথে রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে আসলো।
সোহান নিজের রুমের ব্যালকনিতে আর মিলু ইকরা তাদের রুমের ব্যালকনিতে গভীর রাত পর্যন্ত বসে সময় পার করে এক সময় বিছানায় যেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। গভীর রাতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলে সোহানের ঠাণ্ডায় ঘুম ভেঙে যায় এদিকে কারেন্টও নাই। কি করবে বুঝতে পারছে না। কোথাও কাঁথা বা কম্বল আছে কিনা বুঝে উঠতে পারছে না। এতো রাতে কাউকে ডাক দিবে কিনা বুঝতেও পারছে না। ফোনটা হাতে নিয়ে ইকরার নাম্বারে কল দিলো। প্রথম বার রিং বেজে কেটে গেলো। সোহান আরেক বার কল দেবার পর ইকরা ফোন রিসিভ করলো।
সোহান:- সরি তোর ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
ইকরা:- ঘুম নিয়েই কি হয়েছে বলো?
সোহান:- নাম মানে রুমের কোথাও কাঁথা বা কম্বল আছে কিনা বলতে পারিস?
ইকরা:- ঐ ঘরে মনে হয় নাই, তুমি আমার রুমের দরজার সামনে আসো আমি বের করে দিচ্ছি নিয়ে যাও।
— ফোন কেটে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে আলমারি খুলে ইকরা একটা কম্বল বের করলো ততক্ষণে সোহান দরজার সামনে চলে এসেছে। টোকা দিতেই ইকরা যেয়ে দরজা খুলে কম্বলটা এগিয়ে দিলো সোহানের দিকে। সোহান কম্বল হাতে নিতে নিতে তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর সরিও এতো রাতে জাগিয়ে তোলার জন্য।
ইকরা:- ওসব কিছু লাগবে না যাও যেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
সোহান:- হ্যাঁ তুইও ঘুমিয়ে পর শুভ রাত্রী
— সোহান কম্বল নিয়ে চলে যেতেই ইকরা দরজা বন্ধ করে আবার যেয়ে শুয়ে পরলো। সোহানও রুমে যেয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে আরামে শুয়ে পরলো।
— পরদিন সকালে সকলে আবার এক সাথে হলো নাস্তার টেবিলে। নাস্তা খেতে খেতে রাসেল বললো আজ কি তোরা ঘুরতে বের হবি?
জুহি:- কেন তোমার কি কোন কাজ আছে নাকি?
রাসেল:- না আমার কোন কাজ নেই, তোরা ঘুরতে গেলে আমি নিয়ে বের হবো।
জুহি:- ইকরার দিকে তাকিয়ে আপু কি বলো যাবে তোমরা?
ইকরা:- হুম অবশ্যই যাবো। ঘুরতে যাবো এটা বলতে হয়?
রাসেল:- ঠিক আছে তাহলে সকলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। বড় মামার দিকে তাকিয়ে মামা তোমরাও চলো খুব মজা হবে।
সোহানের বাবা:- নারে বাবা তোরাই যা আমরা বাড়িতেই রেস্ট করি।
রাসেল:- বেশতো তাহলে তোমরা রেস্ট করো।
— বলতে বলতে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তোরা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়। বলেই নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। বাকিরাও খেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে নিজেদের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। রুমের দিকে যেতে যেতে ইকরা সোহানকে বললো কি পরে বের হবো?
সোহান:- তোর ইচ্ছে যা মনে চায় পরে বের হো।
ইকরা:- কি হলো এমন করে বলছো কেন?
সোহান:- আরে কেমন করে বলছি, আচ্ছা শোন কালতো শাড়ি পরেছিলি, আজ অন্য জামা পরলেই হবে। আর আকাশের অবস্থাও ভালো না এই রোদ এই বৃষ্টি। তাই শাড়ি না পরাটাই ভালো, আর এতো মানুষের সাথে তুই অন্য জামায় পরে নিস।
ইকরা:- আচ্ছা আচ্ছা হয়েছেতো, বুঝতে পেরেছি এভাবে বলতে হবে না। অন্য জামাই পরবো। বলে ইকরা হেসে দিলো। সোহান মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো ইকরার দিকে। দু’জন নিজেদের রুমে চলে আসলো।
— দু’জনই এসে ফ্রেস হতে চলে গেলো, ফ্রেস হয়ে বের হয়ে সোহান আকাশি রঙের একটা শার্ট বের করলো সেই সাথে জিন্স প্যান্ট পরলো। এদিকে ইকরা, কালো একপা থ্রীপিস বের করলো যা কার চুপির কাজ করা ছিলো। গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মিলু বলেলে উঠলো, আপু তোকে খুব সুন্দর লাগছে ঠিক যেন আসমানের পরী জমিনে নেমে আসছে।
ইকরা:- চুপ কর কি সব বলছিস এসব?
মিলু:- আমি ঠিকই বলছি ইস আমি যদি ছেলে হতাম না তোমার প্রেমে পরে যেতাম।
মিলু:- আমি কি ভয় পাই ভাবছো আমিও আম্মুরে বলে দিবো তোমার আর সোহান ভাইয়ার কথা।
ইকরা:- কিছুটা চমকে প্রশ্ন করলো কি বলবি আমার আর সোহান ভাইয়ার কথা?
মিলু:- আমি বুঝি বুঝি সব কিছুই বুঝি তোমাদের দু’জনের মাঝে কি চলতাছে।
— মিলুর এমন কথায় ইকরা মিনিট খানেক একদম স্তব্দ হয়ে বসে ছিলো ড্রেসিং টেবিলটার সামনে তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে মিলুর কান টেনে ধরে খুব বেশী বেড়ে গেছিস সারা দিন ফেসবুক আর মেসেঞ্জার নিয়ে পরে থাকিস আর এসব শিখেছিস?
মিলু:- আপু ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি, আর সোহান ভাইয়্ খুব ভালো ছেলে তোমার জায়গায় থাকলে আমিও সোহান ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলতাম।
— ইকরা মিলুর কানের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো, ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে মিলুর দিকে তাকিয়ে বললো তুই না আমার লক্ষী বোন আমার কাছে প্রমিজ কর তুই এই সব কথা কাউকে বলবি না।
মিলু:- বলবো না বললেতো এতোদিনে বলেই দিতাম। আর আমি এতোটাও বোকা না যে নিজের বোনের ক্ষতি করবো।
— কথাটা বলেই মিলু ইকরাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো আপু অংকে কিন্তু তুমি সত্যিই পাঁকা। মিলুর মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পেলেও দু’বোন এক সাথে হেসে উঠলো। ইকরা মিলুর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে চল বের হো এখন। নয়তো দেরী হয়ে যাবে।
মিলু:- হ্যাঁ হ্যাঁ চলো,
— দুই বোন এক সাথে রুম থেকে বের হলো, এমন সময় সোহানও রুম থেকে বের হলো। দু’জনের চোখেচোখ পরতেই একে অপরের দিকে চেয়ে রইলো। দু’জনের অবস্থা দেখে মিলু খকখক করে উঠলো, মৃদু হাসি দিয়ে সোহান চোখ নামিয়ে নিলো। ইকরা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।
মিলু:- কি দু’জন দাঁড়িয়ে রইবে নাকি সামনের দিকেও যাবে। নাকি একজন আরেক জনকে বলবে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে?
সোহান:- মিলুর কান টেনে ধরে বেশী পণ্ডিত হয়ে গেছিস তাই না।
ইকরা:- সোহানের হাত টেনে ধরে এই কি করছো ছেড়ে দাও ওকে।
— সোহান মিলুকে ছেড়ে দিতেই দূর থেকে জুহি বলতে বলতে এগিয়ে আসলো কই তোমরা রেডি হলে, কাছে এসে ভাইয়া তোমাদের জন্য বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইকরা:- হ্যাঁ চল,
— সকলে মিলে হাঁটা শুরু করলো বাড়ির বাহিরে বের হতেই দেখতে পেলো রাসেল অটো দাঁড় করিয়ে রাখছে। সবাইকে দেখে যাক তাহলে তোরা এলি অবশেষে। আমিতো ভাবছিলাম তোদের রেডি হতে হতেই বেলা শেষ হবে।
সোহান:- সাজুগুজুতেই নারীরা সুন্দর, আর একটু পরিপাটি না সাজলে মেয়েদের ভালোও লাগে না।
রাসেল:- নে হয়েছে এখন তাড়াতাড়ি উঠে বস যেতে অনেকটা সময় লাগবে।
— আর কোন কথা না বাড়িয়ে সকলে অটোতে উঠে বসলো। অটোর সামনে বসলো রাসেল আর পেছনে ওরা চারজন। অটো চলতে শুরু করতেই জুহি গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো।
মিলু:- এই আপু তুমি গুনগুন করে কি বলছো? কবিতা নাকি গান?
জুহি:- কিছু না আবোল তাবোল মনে যা আছে তাই বলছি।
মিলু:- ওহ আচ্ছা। সোহানের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া একটা কবিতা বলো না শুনি। এতো সুন্দর পরিবেশ আর তোমার কবিতা শুনবো না এটা কি হয়।
সোহান:- আরে কি বলিস আমি এখন ওসব পারবো না।
রাসেল:- এই তুই কি সত্যি সত্যি কবিতা পারিস নাকি? বলনা আমিও শুনি তোর কবিতা।
ইকরা:- পারে মানে খুব সুন্দর করে বলতে পারে।
রাসেল:- আরে বল বল লজ্জা পাচ্ছিস কেন মেয়েদের মত।
— রাসেলের সাথে সাথে সকলে বলতে শুরু করলো। সোহান বললো আচ্ছা বলছি। বলেই ইকরার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো।
” অচেনা পথ, অচেনা রাস্তা,
চিরচেনা তুমি আর আমি।
চলছি একই সাথে পাশাপাশি
খুব করে ইচ্ছে থাকার পরেও ছুঁয়ে দিতে পারছি না তোমাকে।
তুমি যে আমার না বলা কবিতা।
তুমি যে আমার না গাওয়া গান।
তুমি ছিলে তুমি থাকবে চিরদিন আমারি হৃদয়ের গহিনে।
কেউ দেখবে না কেউ জানবে না
শুধু অনুভবে বুঝে নিও তুমি।
কতটা ভালোবাসি আমি”
— কিছুটা লজ্জা পেয়ে সোহান মাথা নিচু করে রাখলো। রাসেল আবার বললো তুইতো মেয়ে মানুষের মত লজ্জাও পাস দেখছি তা প্রেমটেম কিছু করিস নাকি?
মিলু:- এই বয়সে প্রেম না করলে কোন বয়সে করবে?
রাসেল:- বেশ বেশ চালিয়া যা। বয়সতো এখন তোদেরই।
সোহান:- কেন ভাইয়া তুমি কি বুড়ো হয়ে গেছো নাকি?
রাসেল:- আরে সে কথা না এখন কি আর আমার প্রেমের বয়স আছে নাকি। এখন বয়স হয়েছে বিয়ে করে সোজা সংসার জীবনে চলে যাবার।
ইকরা:- হ্যাঁ তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে করে ফেলো।
— রাসেল কোন জবাব না দিয়ে হাসছে। অল্প কিছু সময় পর অটো ইকো পার্কের সামনে চলে আসলো। সকলে নেমে পার্কের ভিতর প্রবেশ করলো। এখানে সেখানে ঘুরছে আর সকলে মিলে ছবি তুলছে। ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে গেলো। সকলে মিলে পার্কের ভিতর পর্যটন রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো। তারপর আরও কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে আবার ঘুরতে শুরু করলো। নানান রকম বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি দেখছে সেই সাথে প্রকৃতিক বাতাস সকলে দারুণ উপভোগ করছে। মাঝে মাঝে ক্লান্ত হলে সকলে মিলে এক সাথে বসে গল্পের আসর জমাচ্ছে সকলে বেশ উপভোগ করছে এই ঘুরাঘুরি। সন্ধ্যায় সকলে পার্কের ভিতর থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। সবাই যে যার মত করে নিজেদের রুমে চলে আসলো। কিছু সময় পর ফ্রেস হয়ে আবার সকলে খাবার টেবিলে আসলো। পরিবারের সকলে মিলে রাতের খাবার খেতে বসলো।
বাবা:- কিরে কেমন ঘুরলি তোরা?
সোহান:- জ্বি বাবা খুব ভালো।
বাবা:- তাতো তোদের দেখেই বুঝা যাচ্ছে কারো ভিতর কোন রকম ক্লানির দাগ দেখা যাচ্ছে না।
ইকরা:- বড় আব্বা এতো সুন্দর পরিবেশে ঘুরলে কি আর ক্লান্তি লাগে। ইস যদি আমাদের ঢাকার শহরটা এতো সুন্দর হতো। সবুজ গাছগাছালিতে ভরপুর।
সোহান:- তখন বলবি ইস হলুদ ল্যাম্পপোষ্ট খুব মিস করছি। বুঝলি আমরা যা পাই তার চেয়ে অনেক বেশী আশা করি।
বাবা:- হুম ঠিক তাই,
রাসেল:- শোন যত বেশী আশা করবি পুরোটা না পেলেও তার চেয়ে কিছুটা কম পাবি, কিন্তু আশা যত কম করবি পূর্ণতাও ততই কম হবে।
— এভাবেই যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সকলে রাতের খাবার শেষ করে যার যার মত রুমে চলে গেলো। রুমে যেয়ে যে যার মত শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। পরদিন সকালে সকলে নাস্তা করে সকলে হাঁটা শুরু করলো সেই নদীর দিকে। আজ সঙে বড়রাও যোগ দিয়েছেন বাড়ির পাশে বলে। দু’টো নৌকা ঠিক করা হলো একটাতে বড়রা আর একটায় ছোটরা যাবে। নৌকা চলছে সকলে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছে। নৌকা পাড়ে যেয়ে ভিরতেই সকলে নৌকা থেকে নেমে পরলো।
সোহানের মা:- ইস কত গুলো বছর পর নৌকায় উঠে এই কাশবনে এলাম।
বাবা:- তোমার মনে আছে সোহান সেই ছোট ছিলো যখন শেষ বার আমরা এখানে এসেছিলাম।
মা:- মনে থাকবে না আবার, স্মৃতি গুলো মধুর হয়ে চিরদিন হৃদয়ের মাঝে থাকবে। আজ ছেলে মেয়ে গুলো কত বড় হয়ে গেছে অথচ ওদের মত বয়সে আমরা শেষ এখানে এসেছিলাম।
বাবা:- হ্যাঁ দেখতে দেখতে সময় চলে যায়। আজ ওদের দেখলে আমার অতীত দিনের কথা মনে পরে।
মা:- হুম ওদের মাঝেই নিজেদের অতীত খুঁজে পাই।
— সকলে ঘুরতে শুরু করলো ছবি তুলতে শুরু করলো। সকলে এক সাথে একই ফ্রেমে বন্দী হচ্ছে। এখানে এসে যেন সকলে জীবনের স্বাদ খুঁজে পেয়েছে। শহরের বন্দী জীবন কাটিয়ে মুক্ত মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। চারি পাশের পরিবেশ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। বেহায়া মন বাচ্চামি করতে ইচ্ছে করে ভীষণ। অতীতে হারিয়ে যায় মন। সকলে মিলে দুপুর পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে আসে। যে যার রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে রেস্ট নেয়। এদিকে ফুপু মিহি আর সোহানের মা রান্না ঘরে চলে আসে রান্না করার জন্য। দুপুরের খাবার রেডি হতেই সকলে খাবার খেতে চলে আসে। খাবার খেতে বসতেই বৃষ্টি শুরু হয়।
বাবা:- ছোট বেলায় গ্রামে থাকতে এমন বৃষ্টির সময় ছুটে যেতাম আম কুড়াতে। তখন আমাদের অনেক গুলো আম গাছ ছিলো কত কত আম গাছের নিচে পরে থাকতো।
সোহান:- যাও না এখনো দেখবে রাস্তার পাশের আম গাছ গুলোয় অনেক আম পরে আছে।
— সোহানের কথা শুনে সকলে এক সাথে হেসে দিলো।
বাবা:- এখন কি আর দৌঁড় ঝাপের বয়স আছে নাকি। এখনতো বয়স তোদের।
সোহান:- আমারতো আর খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নাই যে আম কুড়াতে যাবো।
ইকরা:- ইস আমারতো ভিজতে ইচ্ছে করছে।
রাসেল:- যা না ভিজ মানা করছে কে?
ইকরা:- না না আমি এখন বাহিরে ভিজতে যাবো না উঠান যে পিছলে পরে কোমড় ভাঙার ইচ্ছে নেই।
রাসেল:- হা হা অল্প বয়সে কোমড় ভেঙে বুড়ি হবি এইতো।
— সকলে রাসেলের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। ইকরা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে পরলো। অল্প সময়ের ভিতর সকলের খাওয়া হয়ে গেলো। সোহান আর মিলু গল্প করতে করতে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘরের দরজার সামনে আসতেই মিলু বললো চলো আমাদের রুমে সবাই মিলে গল্প করবো।
সোহান:- ঠিক আছে চল।
— রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো ইকরা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরের বৃষ্টিতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মিলু বললো তুমি বসো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। মিলু ওয়াশ রুমে চলে যেতেই সোহান এগিয়ে গেলো ইকরার দিকে। পাশে দাঁড়িয়ে কিরে এতো মনোযোগ দিয়ে কি করছিস?
ইকরা:- বৃষ্টিতে ভিজছি।
সোহান:- হেসে দিয়ে এভাবে কি কেউ বৃষ্টিতে ভিজে?
ইকরা:- ভিজে ভিজে এই যে দেখ দু’হাত ভিজিয়েছি। বাকিটা মনে মনে ভিজে নিচ্ছি।
সোহান:- ইকরার দু’হাতে নিজের হাত রেখে হুম বুঝলাম। কিন্তু এভাবে ভিজলেতো জ্বর আসতে পারে সে কি তুই জানিস?
ইকরা:- আসলে কি হবে তোমারতো আর কষ্ট লাগবে না।
সোহান:- আমার কষ্ট লাগবে না কে বললো? তুই অসুস্থ হলে বুঝি আমার খুব ভালো লাগবে?
ইকরা:- লাগতেও পারে তাছাড়া আগেতো তোমার সেই ভালো লাগতো আমাকে বলতে সব নাকি আমার ন্যাকামি।
সোহান:- আরে সে সবতো বলতাম যাতে তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাস তাই।
— দু’জন কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জোরে বজ্রপাতের শব্দ হতেই ইকরা খুব শক্ত করে সোহানের হাত চেঁপে ধরলো। বাতাস বেড়ে যাবার ফলে বৃষ্টির পানি ছিঁটে এসে লাগছিলো দু’জনের মুখে। এক জন আরেক জনের দিকে অপলক চেয়ে রয়েছে। এমন সময় মিলু ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ওদের দিকে এগিয়ে যেয়ে এমন অবস্থা দেখে কাশি দিতেই দু’জন দু’জনার হাত সরিয়ে নিলো।
মিলু:- আমি কি কোন ডিস্ট্রাব করলাম?
সোহান:- কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কই নাতো।
মিলু:- নামে মানে ইয়ে।
ইকরা:- মিলুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে, তুতলাচ্ছিস কেন?
মিলু:- কই নাতো আমি বলতে চাচ্ছিলাম তোমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে ভিজবে নাকি রুমের ভিতরও আসবে?
— মিলুর কথায় দু’জন বুঝতে পারলো অনেকটাই ভিজে গেছে জামা কাপড়। তাড়াতাড়ি করে দু’জন রুমের ভিতর ঢুকে পরলো। রুমে ঢুকে ইকরা সোহানের দিকে একটা তোয়ালে এগিয়ে দিলো। সোহান হাত মুখ তা দিয়ে মুছে নিয়ে ইকরার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ইকরা তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিলো। এসব দেখে মিলু মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো আমি শুনেছি খাবার ভাগ করে খেলে ভালোবাসা বেড়ে যায়, আচ্ছা একই তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছলে কি তা বাড়ে না?
ইকরা:- মিলুর কান টেনে ধরে বেশী পাকনামি হচ্ছে তাই না?
— এমন সময় রাসেল ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কিরে তোরা কি করছিস? আর কে পাকনা হয়ে গেছে?
ইকরা:- তাড়াতাড়ি মিলুর কান ছেড়ে দিয়ে কিছু না ভাইয়া বসো এমনি দুষ্টমি করছিলাম আমরা। হঠাৎ তুমি আমাদের এদিকে?
রাসেল:- হুম ঘরে একা একা ভালো লাগছিলো না। বাহিরে বের হবো তারও কোন উপায় নেই বৃষ্টির জন্য।
মিলু:- হুম হুম কি সুন্দর ওয়েদার একা একা কি আর ঘরে থাকতে মন চায়, তাড়াতাড়ি বিয়ে করে একটা ভাবী নিয়ে আসো ভাইয়া বুঝলে।
ইকরা:- বুঝলেতো কে পেঁকেছে? এই যে এই বু্ড়িটা পেঁকেছে।
— ইকরা আর মিলুর কথায় সোহান আর রাসেল হেসে দিলো।
সোহান:- হাসতে হাসতেই বললো ওর কথায় কিন্তু যুক্তি আছে, ভাইয়ার আসলেই বিয়ে করা উচিৎ।
রাসেল:- বুঝছি তোদের এখানে আর বসে থাকা যাবে না। তোদের সব কয়টার মাথায় বিয়ের ভুত চাপছে।
— কথাটা বলেই উঠে দাঁড়িয়ে রুমে বাহিরে যেতে শুরু করলো। রাসেল চলে যেতেই সকলে হেসে দিলো।
সোহান:- দিলোতো ভাইয়াকে লজ্জা পায়িয়ে তোরা।
ইকরা:- কি আমরা না তুমি?
সোহান:- তোরা।
— তিনজন ঝগড়া করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। মিলু বললো হইছে হইছে এবার চুপ করো। দিনটা পার করলে ঝগড়া করে। কোথায় এই বয়সে একটু রোমান্স হবে তা না সারাদিন শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া।
— মিলুর কথায় সোহান আর ইকরা বড় বড় চোখ করে মিলুর দিকে তাকালো। মিলু ভয়ে ভয়ে আমি আবার কি করলাম?
মাঝি:- বেশী দেরী কইরেন না, সন্ধ্যা হয়ে এলো আর আকাশের অবস্থাও বেশী ভালো না। যে কোন সময় ঝড় বৃষ্টি শুরু হতে পারে।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে আমরা তাড়াতাড়িই চলে আসবো।
— সোহান ইকরার হাত ধরে হেঁটে চললো সামনের দিকে কাশফুল গুলো বাতাসে হেলছে ধুলছে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। শহরের বন্দী জীবনে শুধু টিভিতে আর সোস্যাল মিডিয়াতেই এতো সুন্দর জায়গা দেখতে পাওয়া যায়। আজ বাস্তবে এতো সুন্দর জায়গা দেখে ইকরার ইচ্ছেই করছিলো না এখান থেকে চলে যেতে। ইকরা ঘুরছে আর একটু একটু করে ফুল ছিড়ে উড়িয়ে দিচ্ছে। সোহান আনন্দের এই প্রতিটা মুহুর্ত নিজের ক্যামেরায় বন্দী করে নিচ্ছে। একটি মুহুর্তও হারিয়ে দিতে চাচ্ছে না সে।
সোহান:- কত সুন্দর তাই না?
ইকরা:- অনেক সুন্দর ইস আমাদের শহরটাও যদি এতো সুন্দর হতো, তাহলে কত সুন্দর লাগতো।
সোহান:- তাহলে এতো সুন্দর লাগতো না এই জায়গাটা। সব জায়গা একই রকম হলে তখন আর ঘুরতেও ইচ্ছে হতো না।
ইকরা:- হুম এটা ঠিক বলছো।
— দু’জন কথা বলতে বলতে একটা কাশফুলের পাপড়ি উড়ে যেয়ে ইকরার গালে পড়লো। সোহান এগিয়ে যেয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেই ইকরা চোখ বন্ধ করে নিলো। গাল ছুঁয়ে দিয়ে পাপড়িটা হাতে নিয়ে, কত সুন্দর কমল।
ইকরা:- চোখ খুলে ফাজিল একটা।
সোহান:- আমি আবার কি করলাম?
ইকরা:- কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলো।
সোহান:- কি তোকে আমি কিছু বলছি নাকি?
ইকরা:- তো কাকে বলছো?
সোহান:- আজবতো আমি পাপড়িটা ধরে বুঝলাম এটা কোমল তাই বললাম।
ইকরা:- বুঝি বুঝি,
সোহান:- ইকরার হাত চেঁপে ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে কি বুঝিস?
ইকরা:- উফ ছেড়ে দাও।
সোহান:- উহু আজ আর ছাড়ছি না, নিঝুম নিরব এলাকা চিৎকার করলেও আজ আর কেউ আসবে না। চারিদিক থেকে কিছুই দেখা যায় না।
ইকরা:- সোহানের বুকে ঘুষি মারতে মারতে একদম উল্টা পাল্টা কথা বার্তা বলবে না বলে দিলাম।
সোহান:- ইকরার পিঠে জোরে চাঁপ দিয়ে বুকের সাথে আরও কিছুটা চেঁপে নিলো। দু’জন দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
— ইকরা লজ্জায় দু’চোখ বন্ধ করে নিলো, সোহানকে বাধা দেবার মত শক্তি যেন নিজের শরীরে বিন্দু পরিমাণ ও নাই। তবুও অস্পষ্ট ভাবে মুখ নাড়িয়ে বলে উঠলো এমনটা কইরো না। সোহানের কানে তা এসে পৌঁছালো। সোহান ইকরার কানের কাছে হাত নিয়ে চুলের ভিতর একটা কাশফুলের ডাল ভেঙে গেথে দিয়ে হালক করে ডাক দিলো ইকরা। ইকরা চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলো সোহান অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে ছবি তুলছে। ইকরা হেসে দিলো, এমন সময় মাঝির ডাক শুনতে পেলো দূর থেকে সোহান ইকরাকে বললো চল সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চললো নৌকার দিকে। হাঁটতে হাঁটতে নৌকার কাছে এসে সোহান উঠে হাত বাড়িয়ে দিলো ইকরার দিকে। ইকরা সোহানের হাত চেঁপে ধরে নৌকা চড়ে বসলো। মাঝি নৌকা ছেড়ে দিলো, দু’জন নৌকায় বসে গল্প করছে আর একজন আরেক জনের দিকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। মাঝি তাকিয়ে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। দেখতে দেখতো নৌকা চলে আসলো ঘাটে। দু’জন নৌকা থেকে নেমে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করলো। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
ইকরা:- খুব সুন্দর জায়গা সবাইকে নিয়ে বেড়াতে আসতে হবে বেলা থাকা অবস্থায়।
সোহান:- হ্যাঁ আসা যাবে আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে তুই ঘুরে শেষ করতে পারবি না।
ইকরা:- আমার ঘুরাঘুরি শেষ না হলে আমি এখান থেকে যাবোই না।
সোহান:- তাহলে কি তোকে রেখেই চলে যাবো।
ইকরা:- ইস বললেই হয়ে গেলো।
সোহান:- তাহলে কি করবো দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা শুধু তোকে নিয়েই ঘুরবো।
ইকরা:- প্রয়োজন হলে তাই করবা।
সোহান:- খেয়ে দেয়েতো আর কোন কাজ নেই।
ইকরা:- তোমার কি এমন কাজই বা আছে? খাবা আর ঘুরবা এটাইতো তোমার কাজ।
সোহান:- কে বললো আমার কোন কাজ নেই? এই যে আমার এতো সুন্দর একটা ভালোবাসার মানুষ আছে তার দিকে তাকিয়ে আমি যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিতে পারবো।
ইকরা:- ইস কি সব বলো না তুমি।
— দু’জন কথা বলতে বলতে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়লো। সকলে তখন বসার ঘরে বসে চা নাস্তা খাচ্ছে আর গল্প করছে। ওদের দেখেও ডাক দিলো। দু’জন বললো ফ্রেস হয়ে আসছি। অল্প সময়ের ভিতর ফ্রেস হয়ে দু’জন সবার সাথে যোগ দিলো। ফুপু আর জুহি দু’জন মিলে চা আর নাস্তা এনে দিলো ইকরা আর সোহানকে।
রাসেল:- তোকেতো খুব সুন্দর লাগছে শাড়িতে ইকরা।
ইকরা:- মাথা নিচু করে ধন্যবাদ ভাইয়া।
রাসেল:- তারপর দু’জন কোথায় কোথায় ঘুরলি।
ইকরা:- এইতো নদীর পাশ দিয়ে ঘুরে আসলাম। তোমার কি অবস্থা কতদিন ঢাকায় যাওনা তোমরা।
রাসেল:- এই টুকটাক ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ততায় দিন কেটে যাচ্ছে তাই যাওয়া হচ্ছে না ঢাকার দিকে। সোহানের দিকে তাকিয়ে তোর কি অবস্থা ভাই।
সোহান:- এইতো চলছে ব্রো, কোন রকমে কেটে যাচ্ছে দিনকাল।
রাসেল:- হুম কিছুতো একটা করতে হবে। এভাবে লেখাপড়া শেষ করে বসে থাকলে মন মানুষিকতা নষ্ট হয়ে যায়।
সোহান:- হুম দেখি এখান থেকে যেয়ে কিছু একটা করা যায় কিনা।
— রাসেল কথা সোহানের সাথে বললেও সে তাকিয়ে আছে ইকরার দিকে। সোহান তা ভালো করেই খেয়াল করলো। ইকরা নাস্তা করায় ব্যস্ত থাকায় সেদিকে খেয়াল করলো না। এদিকে জুহি নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে সোহানের পাশে বসতে বসতে।
জুহি:- আমাদের সাথে নিলেওতো পারতে ভাইয়া আমরাও তোমাদের সাথে একটু ঘুরে আসতাম।
সোহান:- মুখে হাসি ফুটিয়ে তোরাতো সব সময়ই যাস, শহরেতো আর এতো সুন্দর নদী দেখতে পাওয়া যায় না, তাই আমরা দু’জন একটু ঘুরে দেখে আসলাম। তাছাড়া তোরাওতো জার্নি করে এসে রেস্ট নিচ্ছিলি তাই আর ডাক দেইনি। কাল সকলে মিলে ঘুরতে যাবো।
জুহি:- হ্যাঁ আমাদের এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর ঘুরার জায়গা আছে। আমরা সকলে মিলে ঘুরতে পারি।
সোহান:- হ্যাঁ কেন নয়।
রাসেল:- হ্যাঁ ঘুরার জন্য আমাদের গ্রামটা একদম পারফেক্ট বলতে পারিস। ছোট ছোট বেশ কিছু পার্কও আছে। এছাড়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য একটা ইকো পার্কও তৈরী হয়েছে তোরাতো ঐখানে যাসনি এর আগে। চল কাল সকলে মিলে ঘুরতে যাওয়া যাবে। কি বলিস তোরা?
ইকরা:- খাবারের থেকে মুখ তুলে হুম খারাপ হবে না, ঘুরার জন্যইতো এসেছি।
বাবা:- অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর তোরাই ঘুরতে যাস আমাদের আবার টানাটানি করিস না। এই বুড়ো বয়সে আমরা যেতে পারবো না।
রাসেল:- চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে কি যে বলো না মামা তুমি, তোমার কোথায় এতো বয়স হয়েছে? এখনো একদম ইয়ং দেখা যায় তোমাকে।
বাবা:- হাসতে হাসতে কি যে বলিস না। কোথায় যাচ্ছিস এখন?
রাসেল:- একটু বাহিরে যাবো মামা, বেশ কিছু দিন পর আমিও গ্রামে আসলাম যেয়ে সবার খোঁজ খবর নেই। সোহানের দিকে তাকিয়ে তুই কি যাবি?
সোহান:- না ভাইয়া তুমি যাও।
রাসেল:- ঠিক আছে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
— রাসেল বের হয়ে যাবার পর একে একে সকলে সেখান থেকে উঠতে শুরু করলো। জুহি, ইকরা আর মিলু্র সাথে ওদের রুমের দিকে রওনা হলো। সাথে সোহানও উঠে ওদের সাথে সাথেই হেঁটে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। সোহান রুমে ঢুকার আগে জুহি বললো ভাইয়া এই ঘরে আসো সবাই মিলে গল্প করবো। কতদিন পর তোমাদের এক সাথে পেলাম। সোহান আর নিজের রুমে না ঢুকে ওদের সাথে ওদের রুমে ঢুকলো। ইকরা ঘরে ঢুকে দক্ষিনের জানালাটা খুলে দিতেই শীতল বাতাস এসে সবাইকে স্পর্শ করলো।
জুহি:- ইস কত বছর পর এই ঘর গুলোতে মানুষ থাকছে, তোমরা চলে গেলে আবার বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে ঘর গুলো সব শূন্য পরে রবে।
সোহান:- হাসতে হাসতে এক কাজ করতে হবে তোকে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই রেখে দিতে হবে। দু’জন মিলে প্রতিদিন একটার পর একটা ঘর চেঞ্জ করবি। তাহলেই আর কোন ঘর খালি থাকবে না। আর নয়তো রাসেল ভাইকে বলবি বিয়ে করে এমনটা করতে বুঝলি।
— সোহানের কথা শুনে জুহি অনেকটা লজ্জা পেলেও বাকিরা হেসে দিলো। জুহি বললো ভাইয়া তোমার মুখে কিছুই আটকায় না।
সোহান:- হাসতে হাসতে তোর বিয়ের বয়স হইছে আর আমি বললেই দোষ তাই না?
জুহি:- আমি কি বলছি নাকি তোমার দোষ? কিন্তু একটুতো মুখ সামলে রাখো, লজ্জাতো লাগে তাই না? আচ্ছা সব বাদ চলো গল্প শুনি তুমি নাকি খুব সুন্দর গল্প লেখো?
সোহান:- আমি গল্প লেখি তোকে কে বললো? নিশ্চই মিলু বলছে বলেই বড় বড় চোখ করে সোহান মিলুর দিকে তাকালো। মিলু তখন হাসতে শুরু করলো। সাথে জুহিও ইকরাও হাসতে শুরু করলো।
জুহি:- প্লিজ ভাইয়া প্লিজ বলোনা।
সোহান:- ভয় পেলে কিন্তু তখন আমাকে কিছু বলতে পারবি না।
জুহি:- আচ্ছা ঠিক আচ্ছে।
— সোহান বলতে শুরু করলো, গভীর রাত চারিদিকে অন্ধকার কোথাও কোন মানব নেই… গল্প বলতে বলতে হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে গেলো অমনি সকলে এক সাথে চিৎকার করে উঠলো।
— ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে একাকার দু’জন, এদিকে দৌঁড়ে সোজা বাড়িতে যেয়ে পৌঁছাইছে মিলু। ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো বাড়িতে যাবে নাকি এখানে দাঁড়িয়েই ভিজবে?
সোহান:- বাস্তবতায় ফিরে এসে হুম চল।
— বলেই ইকরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, ইকরা শক্ত করে সোহানের হাত চেঁপে ধরে হাঁটা শুরু করলো। দু’জন কথা বলতে বলতে বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে আসলো। সোহান ইকরার হাত ছেড়ে দিয়ে পাশাপাশি হেঁটে বাড়ির ভিতর ঢুকলো।
ফুফু:- দু’জনকে ভিজে বাড়ির ভিতর ঢুকতে দেখে ফুপু বলে উঠলো তাড়াতাড়ি জামা কাপড় চেঞ্জ করে নে না হলে দু’জনের ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
— দু’জন দৌঁড়ে নিজেদের রুমে চলে যায়, ইকরা রুমে যেতেই দেখতে পায় মিলু জামা চেঞ্জ করে কম্বল মোড়া দিয়ে বসে আছে। মিলু বলে আপু কি ঠাণ্ডা। ইকরা বলে কোথায় এতো ঠাণ্ডা তুই অল্প ভিজেছিস তাই তোর এতো ঠাণ্ডা লাগছে। বলেই হাসতে হাসতে ঘরের সাথে এটাস্ট ওয়াশ রুমটার ভিতর চলে গেলো ইকরা। এদিকে ইকরার কথার কিছুই বুঝতে পারলো না মিলু। সোহানও নিজের রুমে এসে জামা কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেলো। দু’জনেই অল্প কিছু সময়ের ভিতর শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হলো। ইকরা বের হয়ে দেখতে পেলো মিলু কম্বলের নিচে আরাম করে ঘুমিয়ে আছে। ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে যেয়ে সোহানের ঘরের দরজায় থাক্কা মারতেই খুলে গেলো। সোহান তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। শব্দ হবার কারণে পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলো তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ইকরা ঘরে ঢুকেছে।
ইকরা:- ছেলে মানুষের এতো সময় লাগে নাকি ফ্রেস হবার জন্য?
সোহান:- আড় চোখে ইকরার দিকে তাকিয়ে কেন বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার ভিজবো নাকি?
ইকরা:- আমি এমনটা বলছি নাকি? বলতে বলতে যেয়ে খাটের উপর বসে পরলো।
— সোহান ড্রেসিং এর সামনে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খাটের উপর বসে থাকা ইকরার দিকে হাঁটা শুরু করলো। ইকরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভেজা চুলে হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই ইকরা কি করছো তুমি? সোহান কোন কথা না বলে নিজের মুখটা নিচের দিকে নামাতে শুরু করে, ইকরার মুখোমুখি হতেই ইকরা দু’চোখ বন্ধ করে নেয়। সোহান অপলক চেয়ে রয় ইকরার দিকে ঝুম বৃষ্টি আর দক্ষিনা বাতাসে ইকরার খোলা চুল গুলো হালকা হালকা উড়ে এসে সোহানের গাল স্পর্শ করে দিচ্ছে। সোহান মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রয়েছে সামনে বসা অপরূপ সুন্দরি মেয়েটার দিকে। মনে হচ্ছে এমনি করে তাকিয়ে থেকে জনম জনম কাটিয়ে দেয়া যাবে। হঠাৎ করেই ইকরা চোখ খুলে তাকাতেই সোহান অপস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।
সোহান:- চল বাহিরে যাই। সবাই হয়তো অপক্ষা করছে।
ইকরা:- হুম চলো।
— দু’জন রুম থেকে বের হয়ে বসার রুমে যেয়ে ঢুকলো। সেখানে সকলে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ফুপু অল্প সময়ের ভিতর চাল ভাজা নিয়ে আসলো। বৃষ্টির দুপুর সাথে চাল ভাজা ব্যপারটা একদমই অন্য রকম। সকলে মুঠো ভর্তি চাল ভাজা খাচ্ছে আর খুশ গল্প করছে। এদিকে ফুপুরা সকলে মিলে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো অনেক মাছ ধরা হয়েছে দুপুরে মাছ রান্না হবে। মিলুও কিছু সময় পর ঘুম থেকে উঠে বসার রুমে চলে আসলো সকলের সাথে আড্ডায় যোগ দিলো।
বাবা:- আহ কতদিন পর এমন বৃষ্টির দিনে টিনের চালের টং টং শব্দের সাথে মিলিয়ে চাল ভাজা খাচ্ছি। শহরে বৃষ্টির শব্দই পাওয়া যায় না।
ফুপা:- আপনারাতো আসেনই না। গ্রামে থাকার যে কি এক আনন্দ তা বলে বুঝাতে পারবো না।
চাচা:- সত্যিই গ্রামে আসলে মনে হয় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি কিন্তু কি করবো বলো, ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করেই আর গ্রামে আসা হয়না।
ফুপা:- তা যা বলেছেন, সত্যিই দেখতে দেখতে ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে যাচ্ছে। সকলেরই প্রায় পড়া লেখা শেষের দিকে। সামনেই বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে।
বাবা:- হ্যাঁ তাতো হবেই সকলেই এখন বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেছে।
— গল্প করতে করতে রাসেল আর জুহিও চলে আসলো দু’জনেই ভিজে গেছে। টপটপ করে শরীর থেকে পানি পরছে। দু’জন সবাইকে সালাম দিলো। রাসেল এক দৃষ্টিতে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে দেখে ইকরা অন্য দিকে চোখ ফেরালো। রাসেল আর জুহি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো ফ্রেস হবার জন্য।
— দুপুরের খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলো। এখন বৃষ্টি নেই দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে এলো। সোহান দক্ষিনের জানালার কাছে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। ইকরা দরজা খুলে কখন এসেছে সেদিকে সোহানের খেয়াল নেই। ইকরা খাটের উপর বসে সোহানকে বললো বসে থাকবে নাকি কোথাও বের হবে। সোহান চমকে ঘুরে তাকিয়ে।
সোহান:- কখন আসলি?
ইকরা:- এইতো আসলাম। বসে থাকবে নাকি বের হবে?
সোহান:- হ্যাঁ বের হবো তুই কি রেডি?
ইকরা:- হুম রেডি বললেই চলে।
সোহান:- আজ নদীর ধারে ঘুরতে যাবো তুই এক কাজ কর যেয়ে শাড়ি পরে নে।
ইকরা:- নদীতে ঘুরতে গেলে শাড়ি পরতে হবে কেন?
সোহান:- শাড়িতে তোকে অনেক সুন্দর লাগে।
ইকরা:- সেটা জানি।
সোহান:- তাহলে যা দেরী করছিস কেন?
— ইকরা আর কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। ব্যাগ খুলে খুঁজে আকাশি রঙের একটা শাড়ি বের করলো। ওয়াশ রুমে ঢুকে শাড়িটা পরে বের হতেই সোহানকে খাটের উপর দেখতে পেলো। মিলু আর সোহান গল্প করছে।
সোহান:- হয়েছে তোর?
ইকরা:- হ্যাঁ আমি রেডি চলো।
মিলু:- কোথায় যাবে তোমরা? আপু তোমাকে আজ পরীর মত লাগছে।
— মিলুর কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো ইকরা।
সোহান:- গ্রামটা একটু ঘুরে দেখে আসি। তোদের সবাইকে নিয়ে কাল যাবো আজ আমরা একটু ঘুরে আসি।
মিলু:- যাও যাও বুঝিতো আমি সব বুঝি।
সোহান:- মিলুর কান টেনে ধরে বেশী বুঝা ভালো না।
— বলেই দু’জন হাসতে হাসতে বের হলো। বাহিরে তখন কেউ নেই সবাই হয়তো নিজেদের রুমে রেস্ট নিচ্ছে তাই কাউকে কিছু বলতে হলো না। দু’জন বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলো।
ইকরা:- নদী কত দূরে?
সোহান:- বেশী দূরে না আর মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই পেয়ে যাবো।
— দু’জন হাতে হাত রেখে গল্প করতে করতে হাঁটতে শুরু করেছে। কিছু সময় হাঁটার পর নদীর কাছে চলে আসলো। নদীতে তখনো তেমন পানি হয়নি। ঘাটে সাঁরি সাঁরি নৌকা বাঁধা। চোখ জুড়িয়ে যায় নদীতে তাকালে নদীর ওপারেই কাশফুল দেখা যাচ্ছে। ইকরার মনে স্বাদ জাগে সে ফুল ছুঁয়ে দেবার জন্য। সোহান বুঝতে পারে ইকরা মনে মনে কি চাচ্ছে।
সোহান:- কিরে যাবি ঐই পাড়ে?
ইকরা:- মাথা নাড়িয়ে হুম যাবো।
সোহান:- ঘাটে বাঁধা নৌকা নিয়ে বসে থাকা মাঝিকে বলে ওদের ও পারে নিয়ে যাবার জন্য।
— সোহান নৌকায় উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় ইকরার দিকে, ইকরা শক্ত করে সোহানের ধরে উঠে আসে নৌকাতে। দু’জন মিলে হেঁটে এগিয়ে যায় নৌকার শেষ মাথার দিকে। মাঝি নৌকা চালাতে শুরু করে। বাতাসে ইকরা চুল এলো মেলো করে দেয়। দাঁড়িয়ে থাকতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে দেখে সোহান ইকরার হাত চেঁপে ধরে।
ইকরা:- আমি পানি ছুঁয়ে দিতে চাই।
সোহান:- ইকরাকে হাত ধরে বসিয়ে দেয়।
— ইকরা পানিতে হাত দিয়ে বাচ্চাদের মত উচ্ছাস করে পানি নাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে সোহানের দিকে পানি ছিটিয়ে দেয়। সোহান মুগ্ধ হয় ওর পাগলামি দেখে। এক দৃষ্টিতে সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে রয়। বাচ্চামি স্বভাব আর প্রাণ চঞ্চল এই মেয়েটাকে যে সোহান অনেক অনেক ভালোবাসে। মাঝে মাঝে সোহান ইকরাকে সাবধান করে বলে উঠে বেশী হেলা যাবে না। নয়তো পরে যেতে পারে।
ইকরা সোহানের কথা শুনে হাসে সোহান নানান রকম ভঙ্গীমায় ইকরার ছবি তুলতে থাকে। ইকরার মনে হতে থাকে সে কোন গল্পের নায়িকা। যেমনটা নাটক সিনেমায় সে দেখে আজ তার জীবনে বাস্তবতায় তেমনটাই হচ্ছে। ইকরা মনে মনে ইস এটা যদি টাইটানিকের সে জাহাজ হতো তবে সোহানকে বলতো আমাকে জড়িয়ে ধরো ঠিক যেমন করে রোজকে জড়িয়ে ধরেছিলো নায়ক জ্যাক। ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ায় ইকরা। দু’হাত মেলে ধরে ঠিক রোজের মত করে। সোহান কেন পিছিয়ে থাকবে। সেও এগিয়ে যায়য় ইকরার দিকে। বাতাসে নৌকা দোল খাচ্ছে সেদিকে কারো কোন খেয়াল নেই। সোহান যেয়ে পেছন থেকে যেয়ে ইকরার বাড়িয়ে দেয়া দু’হাতে স্পর্শ করতেই ইকরার ঠোঁট হেসে উঠে। ইকরার সব ইচ্ছে গুলো যেন বাস্তবতায় প্রাণের ছোঁয়া পেয়েছে। মাঝি এক দৃষ্টিতে ওদের দিকে চেয়ে রয়েছে, জীবনে সামনা সামনি এতো সুন্দর দৃশ্য সে তার চোখে আগে কখনো দেখেনি। ইকরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো সোহান ভালোবাসি বড্ড ভালোবাসি তোকে। ইকরা দু’চোখ বন্ধ করে নিয়ে আমিও যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বাতাসে চুল গুলো আঁচড়ে পরছে সোহানের মুখে নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত পাড়ের দিকে দু’জন চেয়ে রয়েছে নদীর অপর প্রান্তে কাঙ্খিত সেই কাশ ফুলের দিকে।