প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0
1955

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
মা খবর দেখা শেষে উঠে নিজের রুমে চলে গেছেন,আহানাও সাথে সাথে টিভিটা অফ করে রুমের দিকে চলে গেলো
রুমে এসে চুপ করে বিছানার মাঝখানে বসে পড়েছে সে
পা টা নিচে ঝুলিয়ে
শান্ত ও চুইংগামের মতন ওর পিছু পিছু এসে হাজির
আহানা চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে,শান্ত যখনই দরজাটা লাগালো
সাথেসাথে আহানা হনহনিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো তারপর কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আপনি আমাকে তখন এত ডিস্টার্ব করতেছিলেন কেন বলুন তো?”
.
শান্ত মুখটা নিচু করে আহানার বরাবর নিয়ে বললো’কেন?আমার বউকে ডিস্টার্ব করেছি তোমার গায়ে লাগছে কেন?”
.
কারণ বউটা তো আমি তাই
.
তো তুমি যে সারাদিন আমাকে ডিস্টার্ব করো সেটার কি হবে?
.
আমি অন্তত এমন করে ডিস্টার্ব করি না
.
যাই হোক,বিয়ের ১৪দিনের বাসরে দুষ্টামি করলাম একটু এখন ঘুমাও যাও
.
আহানা বিছানায় এসে কাঁথাটা টেনে শুয়ে পড়েছে
শান্ত ওয়াসরুম থেকে মুখটা ধুয়ে এসে দেখলো তার বউ তার কথামতন খাটের এক কোণায় শুয়েছে এবং ঘুমিয়েও গেছে
শান্ত পা টিপে টিপে বিছানায় উঠে বসলো তারপর মনযোগ দিয়ে আহানার মুখের দিকে চেয়ে থাকলো
.
মেয়েটা আমার অত্যন্ত কিউট একটা বউ,এরে হাত ছাড়া করা যাবে না,এরে আগলে রাখতে হবে সবসময়
কথাটা বলে শান্ত আহনার পাশে শুয়ে পড়লো সাথে আহানাকে কাছে টেনে নিলো
পরেরদিন সকাল সকাল আহানা যখন চোখ খুললো সে দেখতে পেলো টিশার্টের ৩টে বোতাম,তার নাকের সাথে বিধে আছে,আর ভেতর থেকে হার্টবিট শোনা যাচ্ছে,কিন্তু আসলে সে কোথায় সে এখনও বুঝছে না
নড়েচড়ে একটু পিছোতেই বুঝতে পারলো সে শান্তর বুকে,এতক্ষন এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলাম নাকি?
ইস রে!কি লজ্জাকর!
আহানা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিছানা থেকে উঠতে নিতেই টান খেলো তার শাড়ীর আঁচলে
পিছন ফিরে শান্তর দিকে চেয়ে দেখতে পেলো শান্তর বাম হাতে ওর আঁচলটা গিট্টু দেওয়া
আহানা কিছুটা অবাক হলো সাথে কনফিউশনে পড়ে গেলো এই গিট্টু দেওয়ার কারণ কি সেটা ভাবতে গিয়ে
তারপর একটু এগিয়ে এসে গিট্টুটা খুলতে যেতেই শান্ত তার চোখজোড়া খুলে ড্যাবড্যাব করে তাকালো
আহানাও ব্রু কুঁচকালো তারপর বললো”কি ব্যাপার?সকাল সকাল ওমন আমার আঁচল নিয়ে আপনার হাতের সাথে বাঁধলেন কেন?”
.
ওহ আচ্ছা সেটা?আমি তো সকালে বাঁধি নাই,কাল রাতেই বেঁধেছিলাম
.
কিন্তু কেন?
.
কারণ একটা কথা জানাতে,যাতে ভুলে না যাই তাই সিস্টেম করা
.
কি জানতাম?
.
রাতে শোয়ার সময় আমিই তোমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম সেটা
তুমি তো বলো আমি নাকি কেয়ার করি না,কিছু করি না
.
জড়িয়ে ধরা কেয়ার?
.
সেটার মধ্যে পড়ে আরকি,সমাস,ব্যাকরণ,সংজ্ঞা,এরকম
.
আপনি থাকেন আপনার লজিক নিয়ে
কথা ভুলে যাবে করে উনি আমার আঁচল বেঁধে রেখেছেন যেন আমি সকাল সকাল কই চলে যাব,আর ফিরবো না
আহানা শান্তকে বকতে বকতে ফ্রেশ হতে চলে গেলো

হ্যালো তাহসিন?আমার অফিসে যাওয়ার কারটা চেক করেছো?আমি এখননই নাস্তা করে বের হবো
.
স্যার কারটা সম্পূর্ণ চেক করেছি বাট একটা প্রব্লেম পেলাম,আর সেটা হলো একটা টায়ার পাঞ্চার করা,আশেপাশে এমন কিছু পেলাম না যেটা দিয়ে এটা পাঞ্চার হতে পারে
.
পাঞ্চার??আমি তো কাল যখন কার থামিয়েছিলাম তার আগ পর্যন্ত ও কার ঠিক ছিলো তাহলে পাঞ্চার হলো কি করে
.
জানি না স্যার,আমি নিউ একটা টায়ার লাগিয়ে দিয়েছি
.
ওকে ডান
.
আহানা শান্তর জন্য নাস্তা রেডি করে টেবিলে রেখে মুখ ফসকে বললো”আপনার তো গাড়ী নষ্ট,ক্যাব ডাকবেন না?”
.
শান্ত পাউরুটি মুখে দিয়ে সন্দেহের চোখে আহানার দিকে তাকালো
তারপর বললো”তুমি জানো কি করে আমার গাড়ী নষ্ট?”
.
আহানা ঢোক গিলে বললো”ইয়ে আসলে তাহসিন ভাইয়াকে দেখছিলাম আপনার কার চেক করতেছে তাই গেস করলাম”
.
ওহ!নষ্ট না জাস্ট টায়ার পাঞ্চার হয়েছে এই আর কি,তাহসিন চেঞ্জ করে দিয়েছে,আমি এখন কারে করে যেতে পারবো আলাদা ক্যাব ডাকার প্রয়োজন পড়বে না
.
কথাগুলো শুনে আহানার মনে হলো পায়ের তলার মাটি সরে গেছে,সে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো হাতে ভাজির বাটি নিয়ে তারপর বাটিটা শান্তর সামনে রেখে নিচু স্বরে বললো”প্লিস!ক্যাবে করে যান,কারে করে যাইয়েন না”
.
শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে টাইটা টানতে টানতে বললো”তাহসিন কারটা সম্পূর্ণ চেক করেছে,আই এম আউট অফ ডেঞ্জার”
.
আহানা অনেক মানা করার পরেও শান্ত অফিস চলে গেলো
তাও সেই কারে করে
আহানা তো অনেক টেনশনে আছে, কাল এত কষ্ট করে টায়ারটা পাঞ্চার করলো কিন্তু তাও কোন লাভ হল না আহানা বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে শান্তর জন্য চিন্তা করতে লাগলো
বুকের ভেতরে একটা ভয় কাজ করতেছে যে শান্তর যদি কিছু হয়ে যায়?
শান্ত যে তার সব কথার অবাধ্য এটা সে জানে তাই তো সেই টায়ার পাঞ্চার করে রেখেছিল কিন্তু তাতেও লাভ হলো না
এত টেনসান নিতে না পেরে আহানা শান্তি রহমানের রুমে এসে হাজির হয়েছে
শান্তি রহমান একটি সাদা কাপড় নিয়ে বসে বসে সেটাতে সুই সুতা দিয়ে ফুলকারি কাজ করছেন, এটা দিয়ে একটা জামা তৈরি করবেন নিতুর জন্য
.
আহানা এসব ব্যাপারে উনাকে জানাতে চায়নি কিন্তু তারপরও এখন এত টেনশন এ থাকতে না পেরে উনাকে জানাতেই হবে এই ভেবে আহানা শান্তর মায়ের রুমে এলো
চুপচাপ মায়ের পাশে বসে উনার হাতটা শক্ত করে ধরে সে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো উনার দিকে

মা আমি তোমাকে কিছু একটা বলতে চাই এ কথাটা বলার কারণ হচ্ছে শান্ত তোমার কথা শুনে সবসময়
কখনো অবাধ্য হয় না, আশা করি তুমি ব্যাপারটা বুঝে যদি উনাকে একটু বোঝাও তাহলে উনি তোমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করবে
.
শান্তি রহমান হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে??
.
আসলে বাবার আর রিয়াদ আংকেলের এক্সিডেন্ট এর পেছনে আমার আর শান্ত মনে হচ্ছে আমার চাচা মজনুর হাত আছে
উনি কালকে আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন যে উনি শান্তর কোন ক্ষতি করতে পারেন সেটা কারের দ্বারায় বা অন্য কিছু ও হতে পারে
তারপর থেকে আমি শান্তকে অনেক মানা করেছি কিন্তু সে আমার কোন মানা শুনেনি
শেষে সেই কারটাতে করেই অফিসে চলে গেছে
তুমি আজকে উনি অফিস থেকে আসলে ভালো করে বুঝিয়ে দিবে যাতে আর কারে করে অফিসে না যায় দরকার হলে অন্য কোন যানবাহনে করে যাবে কিন্তু তাও এই কারে করে যেন আর না যায়,তুমি একটু বুঝিয়ে দিও উনাকে
.
আহানার মুখে সব কথা শুনে শান্তি রহমান চোখ বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আহানার দিকে
সাত বছর আগের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো তার
তিনি ভেবে উঠতে পারছেন না তিনি ঠিক এই সময়ে কি বলবে নাকি কি করবে
এদিকে আহানা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে
কোন দিশা না পেয়ে উনি আহানার হাতটা ধরে চুপ করে থাকলেন তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলেন
এমন একটা সময়ে তার কথা বলার অনেক জরুরী কিন্তু তার কথা যে বের হবে না এটাই হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য
শুধু চোখের পানি দিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিলেন ব্যাপারটা বড়ই কষ্ট দায়ক এবং তিনি মুখ দিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না
শান্তি রহমানের কোন উত্তর না পেয়ে আহানা চুপচাপ উঠে গিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো
খুব জোরে মেঘ ডাকা শুরু হয়ে গেছে
শান্তকে নিয়ে সেই ভাবনায় পড়ে গিয়ে শান্তর রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো আহানা
আকাশ কালো হয়ে এসেছে
থেমে থেমে মেঘ ডাকছে,এবার যে বৃষ্টিটা হবে এটাকে মনে হয় নভেম্বর রেইন বলা যেতে পারে, এ বছরের শেষ বৃষ্টি মনে হয়
এই বৃষ্টি টা কিন্তু খুব ধুমধাম করে হয় অনেক জোরে আসে সবকিছু ভাসিয়ে তারপর চলে যায়,২/৩দিন টানা থাকে
আর এখন আহানার মনে হচ্ছে আহানার জীবনটা ভাসিয়ে দিয়ে না চলে যায় এই বৃষ্টিটা
সে একটু কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো বারান্দাটার
খুব জোরে মেঘ ডেকে উঠতেই আহানা আর একমুহূর্ত ও বারান্দায় দাঁড়ালো না
তাড়াতাড়ি রুমে চলে এসে ফোনটা খুঁজে বের করলো সে তারপর শান্ত কে ফোন করলো, শান্ত সবেমাত্র অফিস রুমে এসে বসেছে,ঊষার সাথে কথা বলার আগেই দেখলো তার ফোনে আহানার কল আসছে
তাই অফিসের কাজ শুরু করার আগে কল রিসিভ করলো শান্ত
.
আপনি কি ঠিকঠাকভাবে পৌঁছে গেছেন??
.
শান্ত কিছুটা হেসে বললো “কেনো?? সবে মাত্র বাসা থেকে বের হলাম আর এখন আমি অফিসে ঢুকেছি মাত্র তুমি এটা কেনো জিজ্ঞেস করছো??
আর তোমাকে তো বলেছিলাম যে আমি কারটা ভালো করে চেক করে তারপর রওনা হয়েছি,তাও তুমি কেন এখনো একই কথা ধরে বসে আছো?
এত টেনশন না করে চুপচাপ বসে থাকো, যদি বসে থাকতে ভালো না লাগে তাহলে আম্মুর কাছে গিয়ে বসে থাকো,গল্প করো
রিপার সাথে কথা বলো, কত কাজ আছে বাসায় ওসব করো তাহলে আর এই চিন্তা মাথায় আসবে না
আর আমাকে প্লিজ কাজটা করতে দাও, আমি এতদিনে অনেক কাজ ঠিকমত করতে পারিনি এখন আমি চাই না কোন কিছু উল্টাপাল্টা চিন্তা ধারা মাথায় এনে আমি আমার অফিসের কাজটা বন্ধ রাখতে
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে “ওকে বাই “বলে ফোনটা রেখে দিলো
মেঘ ডেকেছিলো এতক্ষণ কিন্তু হঠাৎ করে আবার সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে তাই হাসিমুখে ফোনটা রেখে দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো আহানা
.
শান্তর জন্য রান্না করবো!!! বিরিয়ানি তৈরি করবো
শান্ত আমার হাতের বিরিয়ানি অনেক পছন্দ করে
.
বিরিয়ানি রান্না করতে করতে দুপুর 2 টার বেশি বেজে গেছে
আহানা এবার সব কাজ শেষ করে হাত ধুয়ে -মুছে নিজের রুমে আসলো তারপর ফোনটা খুঁজে হাতে নিয়ে আবারও ফোন করলো শান্তকে,ঠিক গুনে গুনে পাঁচবার কিন্তু শান্ত রিসিভ করল না
আহানার একটু চিন্তা হলো পরে ভাবলো হয়ত অনেক কাজের চাপে ব্যস্ত আছে, কিছুক্ষণ পর শান্ত যখন দেখবে আহানা ফোন করেছে তখন সে ফোনটা কলব্যাক করবে নিশ্চয়
কালকে রিপার সাজানো বাসর ঘরটার ফুলগুলো সব শুকিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে আছে
আহানা তাই রুম পরিষ্কার করায় ব্যস্ত এখন
পরিষ্কার করতে করতে প্রায় তিনটা বেজে গেছে
আহানা যখন দেখলো শান্ত কল ব্যাক করছে না এখনও তখন সে ফোনটা নিয়ে শান্ত কে আবার ফোন করলো কিন্তু এবারও শান্ত রিসিভ করলো না
এবার আহানার প্রচুর ভয় করছে, আকাশে মেঘ আবারও কালো হয়ে গেছে এমনকি টপটপ করে বৃষ্টি পড়তেও শুরু হয়ে গেছে
আহানা এবার বাধ্য হয়ে শান্তর অফিসের মেইন নাম্বারে ফোন করলো
কিছুক্ষণ পর ঊষা রিসিভ করলো,আহানা ওকে জিজ্ঞেস করলো যে শান্ত কোথায় ফোন ধরছে না কেন??
ঊষা জানালো” শান্ত এতক্ষণ মিটিংয়ে ছিল, প্রায় 5 মিনিট হয়েছে সে অফিস থেকে বেরিয়েও গেছে”
.
আহানা খুশি হয়ে ফোনটা রেখে দিয়ে নিশ্চিন্তভাবে রান্নাঘরে গিয়ে বিরিয়ানি প্লেটে নিচ্ছে শান্তর জন্য
কিছুক্ষণ বাদেই শান্ত এসে পড়বে তাই সে জলদি তার কাজ শেষ করছে
3:30 বাজে অথচ শান্তর এখনো বাসায় ফেরার নাম নেই আজ সকাল থেকেই কেন জানিনা তার প্রতি কদমে কদমে ভয় হচ্ছে
বারবার মনে হয় শান্তর কিছু বিপদ হয়নি তো?
অপেক্ষা করতে করতে আর শান্তকে অনবরত ফোন করতে করতে এখন বাজে বিকেল 4:30 অথচ শান্তর কোন খবর নেই, না অফিসে কোন খবর আছে না তার ফোনের কোন খবর আছে
এমন কি এখন ফোনটাও অফ দেখাচ্ছে
আহানা কাঁদতে কাঁদতে বাসার গেটের কাছে এসে একবার বামে তাকাচ্ছে আবার ডানে তাকাচ্ছে
অথচ শান্তর কোনো হদিস মিলছে না
এদিকে বৃষ্টি এখন টুপটাপ করে পড়া শেষ হয়ে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে
আহানা ভিজতে ভিজতে এখনো সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে
সে বাসায় ফিরবে না,যতক্ষণ না শান্তকে সে নিজের চোখে দেখবে ততক্ষণ সে বাসায় যাবে না
শান্তি রহমান জানেন না আহানা সেই এক ঘন্টা ধরে বাসার গেটে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতেছে, তিনি নিজের রুমে আছেন এমনকি এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন
তিনি এই খবর সম্পর্কে অবগত নন
নিতু দুপুর বেলায় স্কুল থেকে ফিরে লাঞ্চ করে তার রুমে শুয়ে ও পড়েছে
রিপা তার কাজ সেরে তার বাসায় ফিরে গেছে
আহানা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তার মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা হওয়া শুরু হয়ে গেলো
অথচ তার সেদিকে খেয়াল নেই সে মাথা ধরে বাউন্ডারির দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শান্তর জন্য অপেক্ষা করছে মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে
আযান দেওয়া শেষ হয়ে গেছে অথচ শান্ত এখনও অফিসের থেকে ফিরছে না
এর আগে এমন সময় শান্ত সবসময় বাড়ি থাকে
আর আজ কিনা সে এখনো ফিরছে না, ফোনও ধরছে না চিন্তার বিষয় বটে
আহানা শান্তি রহমানের রুমের দিকে দৌড় দিবে তখনই সে শান্তর কারের আওয়াজ পেলো
একগাল হাসি নিয়ে পিছন ফিরে তাকালো আহানা
শান্তর কার বাসার ভিতরে ঢুকছে দেখতে পেয়ে আহানার মনে হলো সে তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে
এমন বৃষ্টিতে আহানাকে খালি ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শান্ত কিছুটা অবাক হল তারপর তাড়াতাড়ি করে কার থেকে বেরিয়ে এসে মাথার উপর হাত দিয়ে দৌড়ে আহানার কাছে এসে বললো”” কি ব্যাপার তুমি এমন বৃষ্টিতে ভিজতেছো কেন? এরকম বৃষ্টি হচ্ছে তুমি বাইরে কি করে দাঁড়িয়ে আছো??
তোমার জ্বর হতে পারে তুমি জানো না? এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন, আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছো না কেন?
.
আহানা রোবটের মতন দাঁড়িয়ে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে
বৃষ্টির মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে বললো” আমি আপনাকে কতবার ফোন করেছি আপনি একবারও আমার ফোন ধরেননি,অফিস থেকে বেরিয়েছেন সেই ৩টার টার সময় আর আপনার কোন খোঁজ পাইনি আমি আমার চিন্তা হয় না? আপনি কেন বুঝেন না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি? বুঝলাম আপনার কাছে আমার ভালবাসার দাম নেই তাই বলে কি আপনি আমার ভালোবাসাকে এভাবে হেনস্থা করবেন?? এমনভাবে আমাকে কষ্ট দেবেন?আমার কষ্ট পাওয়া আমার ভালোলাগা আমার খারাপ লাগাতে কি আপনার কিছু যায় আসে না? আপনার কি একবারও উচিত ছিল না আমাকে ফোন করে জানানো? আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম সেই ধারণা কি আছে আপনার?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
অফিস থেকে বেরিয়েছিলাম ৩টার সময় সেটা ঠিক তবে আসতে লেট হয়েছিলো কারণ একটা ঝামেলায় পড়েছিলাম সাথে ফোনে নেটওয়ার্ক ও ছিলো না
.
কি ঝামেলা?
.
বাসায় ঢুকে বলতেছি,এখানে বসে আলাপ করার মন মানসিকতা নেই আমার,আর আমি অনেক টায়ার্ড,সো ভেতরে চলো
.
আহানা তাও যেতে চাইলো না,শক্ত হয়ে একি জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনেও যখন দেখলো সে বিন্দুমাত্র নড়ছে না তখন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো”তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাওয়ার শক্তিটাও আমার নেই,বুঝার চেষ্টা করো আহানা,ভেতরে চলো”
.
আহানা শান্তর হাত দুটো ধরে বললো”শক্তি নেই মানে?কি হয়েছে?আমাকে বলুন এখনই”
.
বৃষ্টির কমাকমি নাই,জোরে সোরে হচ্ছে
এদিকে আহানাও নাছোড়বান্দা সে এই জায়গা থেকে কিছুতেই নড়বে না যতক্ষন না শান্ত তাকে সবটা খুলে বলছে
শান্ত কিছু না বলেই বাসার ভেতর চলে গেলো
শান্ত চলে যাওয়ায় আহানা নিচে বসে পড়লো,বাসার সামনে বাগান বাদ রেখে যতটা খালি জায়গা আছে সবটা সিমেন্ট দিয়ে ঢালায় করা
আহানা সেখানেই বসে পড়েছে,চিৎকার করে আহানা বললো”আপনি আমাকে ভালোবাসেন না শান্ত,ঠিক এই কারণে আমি আপনাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে চাইনি,অপমান হবো বলো
সেই অপমানটা করেই গেলেন আপনি,আপনি ঠিক করেননি,আমি শুধু ভালোবেসেছি,পাইনি কখনও”
.
শান্ত রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ের থেকে কোটটা খুলে ফেললো,তারপর ভেতরের হালকা নীল রঙের শার্ট আর টাইটাও খুলে ফ্লোরে ফেললো
বুকের এক পাশে কাটা দাগ,সেই ক্ষতটা থেকে রক্ত পড়তেছে এখনও
শান্ত নিচু হয়ে ড্রয়ার থেকে তুলার একটা বক্স নিয়ে সেখান থেকে তুলা নিয়ে বুকে চেপে ধরে ল্যান্ড লাইন থেকে ফোন করার জন্য সোফার রুম পর্যন্ত আসলো তারপর সেখান থেকে তাহসিনকে ফোন করে বললো”ডাক্তার নিয়ে আসতে”
কথা শেষ করে শান্ত বাসার বাইরে তাকালো একবার,আহানা কোথাও নেই,শান্ত ভেবেছিলো আহানা ওর পিছু পিছু আসবে কিন্তু না!
সে কোথায় তাহলে?
শান্ত নিজের রুমে ফিরে এসে ফ্লোর থেকে নীল শার্টটা নিয়ে পরে আবারও বেরিয়ে পড়লো,আহানাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না,কোথায় গেলো মেয়েটা!
এরকম পরিস্থিতিতে উধাও হয়ে আমাকে আরও টেনসনে ফেলে সবসময়
শান্ত আবার কারে উঠে বসে আহানাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে
আহানা যে সোজা তার মায়ের কাছে যাবে এ ব্যাপারে শান্ত ২০০%সিউর
পথে এদিক ওদিক তাকিয়েও আহানাকে দেখলো না সে
এত জলদি চলে গেলো?
অবশ্য বাসাও বেশি দূর না!
উফ বুকের ব্যাথা এত বেশি যেন ভেতর থেকে মনে হচ্ছে সুই ফোঁড়ছে,ওদিকে তাহসিন ডাক্তার নিয়ে আসতেছে এদিকে আমার বউ আবারও রাগ করেছে এঅসময়ে,কি একটা জ্বালা!
.
আহানা নিজের বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে আছে
মা আর খালা মিলে বাইরে থেকে ওকে বারবার জিজ্ঞেস করছে যে হয়েছে টা কি কিন্তু সে উত্তর দিচ্ছে না কিছুতেই
শেষে মা আন্দাজ করে বললো হয়ত শান্তর সাথে ঝগড়া হয়েছে
এসব ভাবতে ভাবতেই পিছন ফিরে তারা শান্তকে দেখলো,শান্ত জোরে জোরে সিঁড়ি বেয়ে তড়িঘড়ি করে উপরে আসতে আসতে বললো”আহানা কি এখানে?”
.
মা মাথা নাড়ালেন
.
শান্ত দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই মা আর খালা চলে গেলেন সাথেসাথে
.
আহানা প্লিস দরজা খোলো,তুমি আমাকে এত ভেজালে কেন ফেলো বলতে পারো?কি ঝামেলা হয়েছে সেটা বাসায় ঢুকে বললে কি তোমার মানসম্মান যেতো নাকি অন্য কিছু হতো?
এত জেদ কেন ধরো??আর আবার রাগ করে বাসা থেকে এই বৃষ্টির মধ্যে একা একা চলেও এসেছো
.
আহানা শান্তর কথা শুনে দরজা খুললো,শান্ত ডান হাত কোমড়ে রেখে দাঁড়িয়ে আছে,আহানা কিছু বলার আগেই শান্তর ফোন বেজে উঠলো,শান্ত রিসিভ করে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো”তাহসিন ডাক্তার নিয়ে আহানাদের বাসায় আসো,আমি সেখানে আছি”
.
ওকে স্যার
.
আহানা এগিয়ে এসে বললো”ডাক্তার কেন?কার কি হয়েছে?”
.
সেটা বলার সুযোগ দিয়েছো?একের পর এক জেদ দেখিয়েই যাচ্ছিলা তুমি,তোমাকে চড় মারি নাই এটা তোমার ভাগ্য বুঝলা?
.
আহানা বিচলিত হয়ে শান্তর পাশে বসে বললো”কি হয়েছে বলুন তো”
.
শান্ত কিছু বলার আগেই আহানার মুখের অবস্থা দেখে তার মুখের সব কথা হাওয়া হয়ে গেলো
আহানার চোখ অশ্রুতে ভরা,চোখের কাজলগুলো লেপটে গেছে,নিশ্চয় এতক্ষণ কাঁদতেছিলো
শান্ত তাই কিছু না বলেই আহানার চোখগুলো মুছে দিলো তারপর বললো”আমার হাই প্রেসার তাই ডাক্তার ডেকেছি,আর কিছু না”
.
আহানা মুখটা কালো করে বললো”আগে বলবেন না,আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে”
.
আহানা উঠে গিয়ে ফ্যানটা চালু করে শান্তকে জোর করে ধরে তার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চাদরটা টেনে দিয়ে বললো”ডাক্তার আসা পর্যন্ত শুয়ে থাকুন,এরকম অফিসের কাজ নিয়ে টেনসন করলে তো হাই প্রেসার হবেই,আর এমন টেনসন করবেন না, আমি আপনার লাঞ্চের ব্যবস্থা করতেছি
.
কথাগুলো বলে আহানা চলে গেলো,তারপর রান্নাঘরে ঢুকার সময় দেখলো তাহসিন একজন ডাক্তার নিয়ে আসতেছে এদিকে
আহানা ওদের বললো শান্ত উপরের রুমে তারপর নিজের কাজে চলে গেলো

আপনার শরীরের ক্ষতটা ঠিক কতটা গভীর এটা জানতে আপনাকে হসপিটালে এডমিট হতে হবে মিঃশান্ত
.
শান্ত খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে হাতের ঘড়ির দিকে চেয়ে বললো”ওতো সময় নেই,আপনি তাড়াতাড়ি ব্যান্ডোজ করে দিন,আর তাহসিন এসব তুলা,রক্ত পরিষ্কার করে তুমি একটা ব্যাগে ভরে নিয়ে যাও,আহানা একটা ছোট খুঁত পেলেও সন্দেহ করবে,আমি চাই না ও জানুক
.
ওকে স্যার,বাট আপনি এটা তো হসপিটালে গিয়েও করতে পারতেন,এত দেরি হয়ে গেলো ট্রিটমেন্ট করতে
.
হুম পারতাম কিন্তু কথা হলো বিষয়টা মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাবে,আর আমি সেটা চাইনি,মা জানলে মা অনেক টেনসন করবে,সাথে আহানা তো আছেই,২ঘন্টা ধরে ফোন ধরিনি বলে কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছে,এসব দেখলে ওরে সামলানো কঠিন হয়ে যাবে
.
ওকে স্যার
.
এদিকে আহানা এসে হাজির,দরজায় নক করতে করতে বললো”কি ব্যাপার দরজা লাগালেন কেন আপনারা?”
.
শান্ত জলদি করে শার্টটা পরে নিলো
তাহসিন গিয়ে দরজা খুলতেই আহানা ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো”সব ঠিক আছে তো?”
.
জি ঠিক আছে,একটু খেয়াল রাখবেন উনার,আজ আমি আসি
.
ডাক্তার আর তাহসিন মূহুর্তেই উধাও,আহানা কিছু বুঝে উঠার আগেই ওদের ছিঁটেফোটা পর্যন্ত নিঃশেষ হয়ে গেলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে হাতে থাকা খাবারের ট্রেটা শান্তর সামনে রেখে মুচকি হেসে বললো”আজ আমি নিজের হাতে আপনাকে খাইয়ে দেবো”
.
আহানা প্লেট হাতে নিতেই শান্ত এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ করে
আহানা তো অবাক,এত অবাক যে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না
শান্ত ওকে শক্ত করে ধরে বললো”আমাকে ভালোবাসো তাহলে শেষমেষ বলেই ফেললা!”
.
আহানা মনে হয় লজ্জায় মরে যবে,লজ্জা এক সাইড করে তারপর বললো”খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে”
.
শান্ত আহানাকে ছেড়ে দিয়ে হা করলো আর আহানা নিজের হাতে ওকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো
শান্তদের বাড়িতে বিরিয়ানি বানিয়েছিলো সে কিন্তু এখন এ বাড়িতে যা পেয়েছে তাই নিয়ে এসেছে আহানা

খাওয়ানো শেষ করে আহানা হাত ধুয়ে রুমে এসে দেখলো শান্ত চাদর টেনে ঘুমিয়ে গেছে ততক্ষণে
আহানা তাই রুমের লাইটটা অফ করে বারান্দার সামনের পর্দাটা টেনে দিলো তারপর পা টিপে টিপে শান্তর একপাশে বসে চেয়ে থাকলো অনেকক্ষণ
আহানার ফোনটা ভাইব্রেশন করে রাখা,৫/১০মিনিট বাদে ওর ফোনে একটা কল এসেছে
আহানা ফোন কাছে রেখেছিলো বলেই টের পেয়েছে তার ফোন এসেছে
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো”আজকের ডোজটা আশা করি যথেষ্ট, এরপর বেশি উড়ার স্বপ্ন দেখো না”তারপর লাইনটা কাটা গেলো
.
আহানা ভাবনায় পড়ে গেছে যে আজকের ডোজ মানে কি বুঝালো,শান্তর তো জাস্ট প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছিলো,আর কিছু তো!
তারপর আহানার মনে কেমন যেন ঘটকা লাগলো,সে শান্তর দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো”এমন নয় তো যে উনি আমার থেকে কিছু লুকালেন?”
আহানা এগিয়ে এসে শান্তর হাত পা সব চেক করলো কিন্তু কিছুইও সন্দেহ করার মতন পেলো না তারপর ওর নজর গেলো শান্তর নীল শার্টটার দিকে
বুকের অংশে লাল দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে,অথচ এতক্ষণ এই দাগটা ছিলো না
আহানার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে
সে জলদি করে শান্তর গায়ের থেকে চাদর সরিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো
ততক্ষণে শান্ত ও জেগে গেছে,সে ঘুম থেকে হঠাৎ উঠে আহানা ঠিক কি করতে চাইছে তা সে বুঝতে পারলো না
এদিকে আহানা শার্টের বোতাম সব গুলো খুলে যা দেখলো তাতে তার মাথা ঘুরে উঠেছে
ব্যান্ডেজ করা তারপরেও ব্যান্ডেজ ছেদ করে রক্ত বেরিয়ে তা জ্বলজ্বল করছে
আহানা মুখ হাতে দিয়ে এক চিৎকার করে পিছিয়ে গেলো
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে ভাবতেছে সে এখন আহানাকে কি করে সামলাবে
আহানা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মুখে হাত দিয়ে রেখেছে
শান্ত বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে আসতে আসতে বললো”কিছু হয়নি আহানা,আই এম ফাইন”
.
এএএএসসসব!আপনি আমাকে জানালেন না কেন,কি করে হলো এসব?”
.
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চোখ মুছে দিয়ে বললো”কিছু হয়নি,দেখো না আমি এখন তোমার সামনে সেফলি দাঁড়িয়ে আছি”
.
রক্তের একটা ফোটা বুক থেকে বেয়ে শান্তর সারা শরীর বেয়ে নিচে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো
আহানা সেটা দেখে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে গেছে তারপর কোনোরকম কান্না থামিয়ে সে উঠে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে শান্তর ডাক্তারকে ফোন করে বললো জলদি আসতে
আহানার কান্না থামছেই না,সে কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না ঠিক
শান্ত বিছানার এক কোণে দুপাশে দুহাত রেখে পা ঝুলিয়ে ফ্লোরের দিকে চেয়ে আছে
আহানা তুলা খুঁজতে ব্যস্ত,সাথে কান্না তো আছেই
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সে বলছে”যা হয়েছে সব তার দোষে হয়েছে,তার আর তার মায়ের সম্পত্তি শান্ত মজনুর থেকে নিয়ে নেওয়ায় আজ তাকে এত বড় বিপদে পড়তে হলো”
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে বললো”এটা মজনুর কাজ নাও হতে পারে,যারা এটাক করেছিলো তাদের আমি চিনি না,আর কার দ্বারা তো কোনো বিপদ হয়নি,হঠাৎ কারের সামনে এসে ওরা পথ আটকিয়েছিলো
বেশি ক্ষতি তো করতে পারেনি,
.
আহানা আবারও চোখের পানি মুছে তুলা এনে হাঁটু গেড়ে শান্তর সামনে বসে তুলাগুলো শান্তর বুকে চেপে ধরে নাক টানতে টানতে বললো”আপনার কিছু হলে আমি এমনি এমনি মরে যাবো”
.
কিছু হয়নি,আমি একদম ফিট আছি,তুমি এত টেনসন করো না আহানা
.
আহানা হাত পা ছড়িয়ে আবারও কেঁদে ফেললো,কোথায় হাই প্রেসার আর কোথায় বুকে ছুরির আঘাত
আকাশ পাতাল তফাৎ সব
আর আমি কিনা এখন জানলাম,সব আমার কারণে হয়েছে
আহানা ফ্লোর থেকে উঠে শান্তর পাশে বসে ওর বুকে হাত রেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে,লাল রক্ত, লম্বা একটা দাগ,না জানি শান্তর কত কষ্ট হচ্ছে,এই ক্ষতটা দীর্ঘমেয়াদি না তো?
উনি সুস্থ হয়ে যাবে তো??
.
শান্ত গম্ভীর একটা লুক নিয়ে আহানার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,আহানা মনে হয় আধমরা আর পুরা পাগল হয়ে গেছে
বুকে শান্তর শার্ট জড়িয়ে কাঁদতেছে সে যেখানে সয়ং শান্ত ওর সামনে বসা
তার উপর কান্না কিছু থামলে শান্তর বুকের ক্ষতটার দিকে চেয়ে আরও ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দেয় সে
শান্ত বিরক্ত হয়ে আহানার হাত থেকে ছোঁ মেরে শার্টটা নিয়ে পরতে লাগতেই আহানা বললো”পরবেন না,ক্ষতটা শার্টের সাথে লাগলে আরও ব্যাথা পাবেন”
.
তো?বসে বসে তোমার কান্না দেখার চেয়ে এটা মাচ বেটার
.
আচ্ছা কাঁদব না,তাও শার্ট পরিয়েন না
.
কথাটা বলে আহানা শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিলো
শান্ত হালকা হেসে আহানাকে কাছে টেনে বসিয়ে ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো”আহানার কান্নার জোরে আমি ফাইন”
.
আহানা তার ভেতরের কষ্টটা চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না,খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু শান্ত যে রেগে যাবে এই ভেবে সে বারবার ঢোক গিলে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে
শান্ত ভাবলো আহানা বুঝি এসময়ে তাকে কাছে পেতে চাইছে
শান্ত আহানার খোলা চুলগুলো মুঠো করে ধরলো
আহানার সেদিকে খবর নেই,সে ড্যাবড্যাব করে শান্তর বুকের ক্ষতটার অবস্থান চেক করে যাচ্ছে
শান্ত আহানার ঠোঁটজোড়ার দিকে এতক্ষণ চেয়েছিলো এখন যখন আহানা নিজ থেকে সাঁই দিচ্ছে,আজ কিস করলে নিশ্চয় চড় খাবো না?
বাইরে হালকাপাতলা বৃষ্টি,মেঘ কালো বলে অন্ধকার নেমে এসেছে চারিদিক জুড়ে
শান্ত তার মাথাটা এগিয়ে আহানার ঠোঁটজোড়ার খুব কাছে নিয়ে আসলো
আহানা এবার ক্ষত জায়গাটার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই শান্তর নাকের সাথে ওর নাকে এক ঘষা খেলো
ঠিক এসময়ে এসব আহানা কল্পনাও করতে পারেনি
এমনকি শান্ত ঠিক কি কারণে তার মুখটা এত কাছে এনেছে তা আহানার ভাবনার বাইরে
এ অবস্থায় সে কিস নিয়ে ভাবতেই পারে না কিন্তু শান্ত যে ভেবে নিয়েছে তা আহানা জানে না
শান্ত চোখ বন্ধ করে আহানকে ছুঁতে যেতেই দুম করে এক চড় খেয়ে এই জনমে কিস করার সাধ মিটে গেলো তার
গালে হাত দিয়ে পিছিয়ে খাটের সাথে লেগে গেলো সে
আহানা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো”এ অসময়ে আপনার কিস পায়???থাবড়িয়ে দাঁত সব ফালায় দিব!ভালোবাসি বলছি মানে এই নয় যে আজকেই কোলে বাচ্চা এনে দেবেন
বেয়াদব একটা!!আমি কাঁদতে কাঁদতে মরে যাচ্ছি উনি আসছেন কিস করতে!আমার ইমোশনকে রোমান্স বানাতে চান উনি!আপনি সিক বলে জাস্ট চড় মারলাম,নাহলে হাড্ডি সব! থাক আর বললাম না,চুপ করে বসে থাকুন এখানে,ডাক্তার না আসা অবদি আমি আপনার সামনেও আসবো না,কতটা খারাপ মাইন্ডেড হলে মানুষ এরকম একটা সময়ে কিস করতে চাবে”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা সোজা রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের কাছে চলে গেছে
শান্ত গালে হাত দেওয়া অবস্থায় আয়নার দিকে তাকালো
তাকে সদ্য জেল থেকে বের হওয়া কয়েদির মতন লাগছে
এরকম অবস্থা দেখে সে সাথে সাথে গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো তারপর চুপ করে বসে থাকলো,মনে মনে এটা ঠিক করলো আহানাকে আর জিন্দেগিতেও ছুঁবে না সে,তাকাবেও না
ওদিকে আহানা সোফায় পা তুলে বসে রাগ করবে নাকি শান্তর বুকের ক্ষতটার কথা ভেবে কাঁদবে তা সে ভেবে পাচ্ছে না,বিরাট একটা ভাবনায় পড়ে গেলো সে
২/৩মিনিটেই ডাক্তার এসে হাজির,আহানা বিচলিত হয়ে বললো”শান্তর বুক থেকে রক্ত যাওয়া অফ হচ্ছে না কিছুতেই, কি করা যায়?”
.
ডাক্তার আহানাকে চিন্তা করতে মানা করে রুমে এসে শান্তর ক্ষতটা চেক করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন
এদিকে রিপা আহানাকে বারবার ফোন করছে এটা জানার জন্য যে আহানা আর শান্ত দুজনের একজনও কেন বাসায় নেই,মা অনেক দুংশ্চিন্তা করছেন
.
আহানা শেষে কল রিসিভ করে বললো একটা কাজে এসেছে সে তার মায়ের বাসায়,সাথে শান্ত ও এসেছে,মাকে বলে দাও যেন চিন্তা না করে
.
ডাক্তার শান্তকে একটা ইনজেকশান দিয়ে আবারও ড্রেসিং করে দিয়ে চলে গেছেন
আহানা দূর থেকে শান্তকে দেখছে
শান্ত ডাক্তার চলে যাওয়ায় শুয়ে পড়েছে আবার,আহানা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাসলো,কেন যে আজ চড় মারলাম!
মাঝে মাঝে কি হয় বুঝি না আমি,বেচারা মনে হচ্ছে উনাকে এখন,ইস!
আহানা আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে শান্তর পাশে বসতেই শান্ত বুঝতে পেরে আরেক দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো
আহানার বুঝতে বাকি নেই যে শান্ত রাগ করেছে,রাগ করারই কথা,কিস করতে গিয়ে এই নিয়ে দুবার চড় খেলো আবার বিয়ের দিন ও চড় খেয়েছিলো
খালি চড় আর চড়
.
আহানা নিজেকে নিজেই বকতে বকতে বিছানা থেকে উঠে বেরিয়ে চলে আসলো
সন্ধ্যায় কয়েকবার গিয়ে শান্তকে সে দেখে এসেছে,ইঞ্জেকশানের প্রভাবে শান্ত বেঘোর ঘুমাচ্ছে
শেষে ডিনারের সময় হওয়ায় আহানা শান্তর কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো”শান্ত?”
শান্ত মুখ তুলে এমনভাবে তাকালো আহানার দিকে যেন এখনই কাঁচা খেয়ে ফেলবে
আহানা ভয়ে ভয়ে বললো”ভাইয়া!ডিনার টাইম হয়ে গেছে,উঠে বসুন,আমি খাবার আনছি”
.
শান্ত ঠিক হয়ে বসে গম্ভীর গলায় বললো”আমি এখন আমার বাড়ি ফিরে যাবো,এখানে থাকতে আমার ভালো লাগছে না,তোমার পার্সোনাল রুমে টিভি নাই তার উপর বারান্দায় বিন ব্যাগ ও নাই,আমি কম্পোর্টেবল ফিল করছি না
কথাটা বলে শান্ত শার্ট পরতে লাগলো
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো”আমি যাব না?”
.
শান্ত বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো”তোমাকে তো যেতে মানা করি নাই আমি”
তারপর শান্ত আরেকটা লাইন বললো গালের ভেতর রেখে,তার পুরোটাই আহানা বুঝলো,
আসলে আহানা যেন কথাটা শুনে সেরকম করেই বলেছে শান্ত
আর সেই কথাটা ছিলো”বউ হইছে প্রেম পিরিতের টাইমে চড় মারার জন্য”
.
আহানা কাঁদো কাঁদো মুখ করে শান্তর পিছু পিছু গিয়ে কারে উঠে বসেছে,শান্ত গালটা এখনও ফুলিয়ে রেখেছে
.
বাসায় আসতে আসতে প্রায়ই ১৫/২০মিনিট লেগেছে
শান্ত বাসায় ফিরে সবার আগে মায়ের রুমে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর তার সাথে কিছু কথা বলে মুড ঠিক করে রুমে ফিরে আসলো
আহানা ডাইনিংয়ে খাবার আনতেছে এক এক করে
শান্ত তার গায়ের শার্টটা চেঞ্জ করে একটা টিশার্ট পরে নিয়েছে
তারপর বিছানায় বসে টিভিটা অন করলো
আহানা করিডোর দিয়ে পা টিপে টিপে এসে দরজার কোণায় পুতুলের মতন কোনো শব্দ না করে, কোনে নড়াচড়া না করে ঠাঁই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে
শান্ত বুঝতে পেরেছে আহানা সেখানে তাও সে সেদিকে তাকাচ্ছে না ইচ্ছে করেই
আহানা প্রায়ই অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে যখন দেখলো শান্তর কোনো সাড়াশব্দ নেই তখন সে এগিয়ে এসে বললো”ডিনার করবেন না?”
.
শান্ত টিভির দিকে চোখ রেখেই বললো”খিধা পেলে গিয়ে খেয়ে আসবো,তোমায় এত টেনসন নিতে হবে না”
.
আহানার খুব কান্না পাচ্ছে,জাস্ট চড়ই তো মেরেছি তাই বলে এত রাগ দেখাবে?উনিও তো আমাকে চড় মেরেছিলেন সেটার কি হবে?আমি কি সেটা মনে ধরে বসে ছিলাম?সেই কবেই সব ভুলে গিয়েছি
.
আহানা নাক টানতে টানতে বারান্দায় থাকা বিন ব্যাগটায় গিয়ে বসলো,বিন ব্যাগের সামনের টি টেবিলটার উপর একটা গ্লাস আর একটা পার্পল কালারের বোতল
গোলগাল বোতল,দেখে জুসের বোতলই মনে হচ্ছে, তার উপর বড় বড় করে লিখা আছে “রোজ এ্যাপল ফ্রেভার”
আহানার জাম অনেক পছন্দ,কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গেছিলো বলে সে আর দেরি না করে সেই জামের জুসটা গ্লাসে ঢেলে ঢকঢক করে খাওয়া শুরু করে দিলো
.
শান্ত ভাব ধরে থাকলেও তার নজর ছিলো সম্পূর্ণ আহানার উপরেই,তাই যখন সে আড় চোখে দেখতে পেলো আহানা কি যেন খাচ্ছে সাথে সাথে তার মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগে সে একটা বিয়ারের বোতল টি টেবিলটার উপরে রেখে এসেছিলো,আহানার থেকে পাওয়া চড়টার স্মৃতি ভুলার জন্য মদটা খাবে সে ভেবে রেখেছিলো আর সেটা কিনা এখন আহানা খাচ্ছে???
শান্ত লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে সেদিকে দৌড় দিলো
সে আসতে আসতে আহানা পুরো বোতলের মদ সাবাড় করে দিয়েছে
এখন আবার বোতলটা উল্টো করে ঝাঁকাচ্ছে আরেকটু জুস পাবার আশাতে
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আহানার মুখের দিকে তাকালো
চোখ ঘোলাটে হয়ে গেছে তার
তার উপর দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে সে শান্তর দিকে
শান্তর আর বুঝা বাকি নাই যে আহানাকে পুরোপুরি নেশায় ধরেছে
আল্লাহ জানে!! এই মেয়েটা নেশার মধ্যে আমাকে আর কত চড় মারবে!! এখন এই মেয়েটাকে কি করে সামলাই!
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে রুমে ফিরে আসলো,বিছানার মাঝখানে বসে ভাবতে লাগলো আহানা এবার চড় দিতে আসলে ওরেও চড় দিয়ে বসিয়ে রাখবো আমি
.
মিনিট পাঁচেক পর আহানা বারান্দা থেকে হেলেদুলে আসলো এদিকে, হাতে মদের খালি বোতলটা
.
আহানা হেঁটে হেঁটে শান্তর পাশে এসে দুম করে বসে গেলো
তারপর বোতলটা একপাশে রেখে বললো”এই শান্ত ভাইয়া,আমাকে আরেকটা জুসের বোতল এনে দাও”
.
রিপা!!!রিপা!!লেবুর শরবত এক গ্লাস দিয়ে যাও,চিনি দিবা না তাতে,এক চিমটি লবণ দিবা
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আমি বললাম এরকম জুস,রোজ এ্যাপেল ফ্লেভারের,লেমন জুস তো চাইনি
.
সে যাই হোক,চুপ করে বসে থাকো,বেশি কথা বলবা না
.
আহানা তার ঠোঁটজোড়ার মাঝ বরাবর নিজের হাতের আঙ্গুল একটা দিয়ে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে থাকলো
শান্ত নিশ্চিন্ত হলো এই ভেবে যে আহানা সজ্ঞানে না থাকার সত্ত্বেও তাকে চড়টড় মারে নাই এখনও,কথা ক্লিয়ার আর মারবেও না
সে তো ভেবেছিলো এতদিনের চাপা সব রাগ আজ ঝাড়বে
.
আহানা এবার ঠোঁট থেকে আঙ্গুল সরিয়ে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসলো,একেবারে শান্তর গা ঘেঁষে
তারপর শান্তর গালটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে অসহায় একটা লুক নিয়ে বললো”ব্যাথা পেয়েছো ভাইয়া??খুব লেগেছে?”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে মনে মনে ভাবলো”আহানা এরকম ভাইয়া ভাইয়া বলছে কেন?মনে মনে আমাকে ভাইয়া মনে করে নাকি?”
.
আহানা হুট করে মুখটা এগিয়ে এনে শান্তর ঠোঁটটা ছুঁয়ে ফেললো
শান্তর চোখ ছিলো টিভিতে,আহানার এমন কান্ডকলাপে তার হাত থেকে রিমোট পড়ে গেলো সাথে সাথে
রিপা লেবুর জুস এনে দরজার কাছে এসে এই কান্ড দেখে পালিয়েছে,আর দাঁড়াইনি
শান্ত চোখটা এবার আহানার দিকে ফিরালো
আহানা সাথে সাথে একটু পিছিয়ে গিয়ে ঠোঁটটা হাতের উপরের পিঠ দিয়ে মুছতে মুছতে বললো”যাও,কিস কিস করে চড় খাইলা বারবার তাই দিয়েই দিলাম যাও,এবার খুশি তো তুমি শান্ত ভাইয়া?”
.
শান্ত ভূত দেখার মতন মুখ করে বসে আছে,দম বন্ধ হয়ে গেছে তার,আহানা বিছানা থেকে নেমে হেলেদুলে ওয়াসরুমে চলেও গেছে অথচ শান্ত এখনও একই জায়গায় বসে আছে
আমি কিস করতে চেয়েছিলাম বলে দুবার চড় খেলাম,আর সে মদ খেয়ে নিজ থেকেই করে দিলো!
না জানি হুস আসলে আমার কপালে কত চড় লেখা থাকবে,আমি তো ওকে বলিনি যে কিস করো,নিজ থেকেই তো করলো,কি জানি এই মেয়েটার হাবভাব একেক টাইমে একেক রকম হয়
.
আহানা মুখটা ধুয়ে মাথায় হাত দিয়ে এসে বিছানার এক কোণায় শুয়ে পড়লো,শান্ত ওর এমন হাল দেখে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে এসে দেখলো লেবুর শরবত বানিয়ে সেটা এক পাশে রেখেছে রিপা
এখন সে তার কাজ করছে
.
কি ব্যাপার রিপা?লেবুর শরবত বানানো হয়েছে,দিয়ে আসলা না কেন?
.
ইয়ে স্যার আসলে ঐ সময়ে আপনাদের দরজা খোলা ছিলো আর আমি…
.
শান্তর গাল লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেছে, লেবুর শরবতের গ্লাসটা নিয়ে সে রুমে ফিরে আসলো আর কিছু না বলে,
আহানা আজ ইজ্জতের ফালুদা করে দিয়েছে আমার
শান্ত রুমে এসে দেখলো আহানা মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে শুয়ে ওর মাকে ডাকছে
শান্ত কাছে এসে বললো”নাও এই শরবতটা খেয়ে নাও,”
.
আহানা শুধু বললো সে খাবে না,তার শরীর খারাপ লাগছে
.
শান্ত আহানার হাত দুটো ওর মাথা থেকে সরিয়ে মাথায় হাত রেখে দেখলো ধুম জ্বর,হঠাৎ করে এসময়ে জ্বর আসলো কি জন্যে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে,তাড়াহুড়ো করে পাশ থেকে চাদরটা নিয়ে আহানার গায়ে জড়িয়ে দিলো শান্ত তারপর আহানার কথাবার্তায় বুঝলো মদের নেশা কেটে গেছে,সুতরাং শরবত না খেলেও চলবে
.
কি ঝামেলা!একদিনে সব ওলট পালট করে ফেললো মেয়েটা!
আজ দুপুর বেলায় বৃষ্টিতে ভিজেছিলো খুব তাই হয়ত এত জ্বর এসেছে
আমার বুকের ব্যাথার ভেতর এখন তার সেবা করতে হবে আমায়
শান্ত আবার রান্নাঘরের দিকে ছুটলো,এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে এসে আহানাকে ডেকে তুললো সে,তারপর নিজের হাতে ওকে খাইয়ে দিলো,দুপুরবেলায় আহানা ওকে খাইয়ে দিয়েছিলো আর এখন সে আহানাকে খাবার খাওয়াচ্ছে
কত মিল,কত কো-ইন্সিডেন্স
.
আহানা খাবার খেয়ে এবার ঔষুধ খেয়ে নিলো তারপর শান্তকে বললো”আপনি খেয়ে নিয়েন”
কথা শেষ করে আহানা শুয়ে পড়েছে আবার,আর কোনো কথা বলার ইচ্ছা তার নেই,শরীর খারাপ লাগছে প্রচণ্ডরকম ভাবে
শান্ত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিশে ফিসফিস করে বললো”যদি চড় না মারো,জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়াতে পারি?”
.
আহানা মুচকি হেসে শান্তর দিকে ফিরলো,শান্ত ওকে বুকে আগলে ধরে নিজেও শুয়ে পড়লো পাশে
আহানা একটু দূরত্ব রাখলো শান্তর থেকে,কারণ না হলে শান্তর বুকের ক্ষতটায় চাপ লেগে ও ব্যাথা পেতে পারে
.
আহানা যখন ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক তখনই শান্ত ওকে রেখে বিছানা থেকে নেমে গেছিলো
তারপর গিয়ে মায়ের আর নিতুর সাথে বসে ডিনারটা করে নিলো,মাকে বললো আহানার জ্বরের কথা,তাই মা এসে আহানাকে একবার দেখে গেছেন
রাত পনে ১২টা বাজে,সবাই ঘুমে
আহানাও ঘুমে,কিন্তু শান্ত জেগে আছে,নিজের ঠোঁটটা ডান হাতের উপর এলিয়ে রেখে বিন ব্যাগে বসে এক দৃষ্টিতে সে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে,বাউন্ডারির পাশে থাকা ল্যাম্পপোস্টটার আলো এসে বরাবর গিয়ে আহানার মুখে পড়ছে
শান্তর কেমন একটা ভালোলাগা ফিল হচ্ছে এখন,আহানার থেকে পাওয়া প্রথম স্পর্শটাকে সে ভুলতেই পারছে না
আচ্ছা আহানার কি মনে আছে?
নিশ্চয় মনে নেই?কিন্তু আমার তো সেই সময়টা হুবুহু মনে আছে
ভাবতেও পারিনি মেয়েটা আজই আমার ইচ্ছাটা পূরন করে দিবে
শান্ত এবার আহানার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আরেকটা ভাবনায় এসে পড়লো আর সেটা হলো যেহেতু সব সম্পত্তি এখন আহানার নামে মজনু চাচা আহানার কোনো ক্ষতি করে বসবে না তো??
আহানা তো বাসায় একা থাকে,রিপা সারাদিন মাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে,নিতু স্কুলে থাকে,আহানার যদি কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে কেউ?
না যে করেই হোক কোনো না কোনে একটা স্টেপ আমাকে নিতেই হবে,শুধু যে আহানার লাইফ রিস্ক আছে তা কিন্তু নয়,তার সাথে ওর আম্মু,ওর খালা এমনকি আমার পরিবারের ও লাইফ রিস্ক আছে
মোটকথা আমার পুরো পরিবার রিস্কে
ভাবতে ভাবতে শান্ত বারান্দা থেকে চলে এসে পর্দা টেনে দিলো তারপর আহানার জ্বরের পরিমাপ চেক করে ওর পাশে শুয়ে পড়লো সে
আহানা হাত নাড়াচাড়া করছে বারবার,যার কারণে চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ ভেসে আসছে
শান্ত ওর পাশ দিয়ে হাত নিয়ে ল্যাম্পশ্যাডটা অন করে দেখলো আহানার হাতের চুড়ির সাথে ওর চুল আটকে গেছে আর সে ঘুমের ঘোরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে
শান্ত আরেকটু এগিয়ে এসে আহানার চুলটা ছাড়িয়ে দিলো ওর হাতের চুড়িটা থেকে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে