Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1440



প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৯+১০+১১

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আপা আজ আসি তাহলে,আবার নাহয় একদিন আসবো
.
শান্তর মা আহানার মায়ের হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালেন
আহানার মা কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললেন”আপা অনেক রাত হয়েছে,আর থেকে কি হবে?”
.
শান্তর মা বারবার মাথা নাড়াচ্ছেন
.
শান্ত তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে হাঁচি দিতে দিতে এসে বললো “থেকে যান আন্টি আমি বরং আপনার ধানিলঙ্কাকে বাসায় দিয়ে আসবো”
.
না বাবা ওকে একা রাখা যাবে না,মেয়ে মানুষ,কত বিপদ আপদ হয়,বরং আমি যাই ওকে নিয়ে
.
শান্তর মা শান্তর দিকে চোখ বড় করে তাকালেন
শান্ত অসহায় লুক নিয়ে বললো”আচ্ছা তাহলে আহানাকে নিয়েই থাকেন,কোনো সমস্যা নেই”
কথাটা বলে শান্ত নাক ডলতে ডলতে নিজের রুমে ফিরে আসলো
আহানা বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে বাইরে বের হয়ে শুনলো মা বলতেছে আজ তারা এখানে থেকে যাবে
আহানা মনে মনে ভাবলো “গন্ডারটা তো তাহলে ভালো করে জ্বালাবে”
ওপাশ থেকে জোরে জোরে হাঁচির আওয়াজ আসতেছে
মা হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে ড্রয়ার থেকে ঔষধের পাতা নিয়ে রিপার হাতে দিলো শান্তকে দিয়ে আসার জন্য
রিপা তখন বুয়াকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে কি করে মাংসে ফোড়ন দিবে
তাই সে ঔষধের পাতাটা টেবিলের উপর রেখেই কাজে মন দিলো
আহানার অপরাধবোধ ফিল হচ্ছে কারণ তার জন্যই আজ শান্ত কতবার শাওয়ার নিয়েছে আর তাই এখন ওর ঠাণ্ডা লেগেছে
তাই ঔষুধের পাতা নিয়ে সে পা টিপে টিপে শান্তর রুমের সামনে আসলো
রুমের দরজা বন্ধ,বাইরের করিডোরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার
আহানা ঢোক গিলে দুবার নক করলো দরজায়
শান্ত শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতেছিলো,দরজায় নক হতেই বিছানা থেকে নেমে একটা টিসু দিয়ে নাক মুছতে মুছতে দরজা খুলতেই দেখলো আহানা ভূত দেখার মত চেয়ে আছে ওর দিকে
.
কি চাই?আবার কাদা লাগাতে আসছো?১০০বারে শান্তি হয়নি তোমার??তোমার কারণে আমাকে সর্দি জ্বর ধরেছে,কাল অফিসে যাওয়াটা টাফ হয়ে যাবে আমার জন্য
.
😒তো আমি কি হুদাই এসব করসি নাকি
.
তোমার সাথে ঝগড়া করার মুড নাই আমার এখন বের হও এখান থেকে
.
ধরেন ঔষুধ!আন্টি আপনাকে এটা খেতে বলেছে.আমি এমনি এমনি আসিনি এখানে হুহ!
.
শান্ত প্যারাসিটামলের পাতাটা হাতে নিয়ে সেটার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে তারপর আহানার দিকে তাকালো
ছোটবেলার সব ঘটনা শান্তর মনে থাকলেও আহানার কিছু মনে নেই
কারণ তখন সে ৪বছরের ছিল,এখন ২১বছরে পা রেখে ৪বছরের ঘটনা মনে থাকার কথা না যদিও
শান্ত তখন ৮বছরের ছিল হয়ত,তাই তার স্পষ্ট সবটা মনে আছে
.
কি?এমন করে আসামিদের মতন হাসতেছেন কেন?
.
আমার টেডি স্মাইল তোমার কাছে আসামিদের হাসির মতো লাগে?
.
অবশ্যই,ঐ যে একদল আসামি আছে না,জেলে ঢুকার সময় বলে”হেহে আমি তোমাকে ছাড়বো না,হেহে!!আমি কাল পরশু বেরিয়ে পরবো হেহে! ওরকম
.
আমার সাথে কিসের তুলনা করতেছো,তুমি নিশ্চয় যুক্তিবিদ্যায় ফেল মারতা তাই না?
এসব যুক্তি দিয়ে অন্তত পাশ করা সম্ভব নাহ
.
এক্সকিউজ মি!আমার সাবজেক্ট যুক্তিবিদ্যা না ইসলাম শিক্ষা ছিল
.
ওহ আচ্ছা তাই তো বলি যুক্তিতে এত কাঁচা কেন
.
বাই!আপনার সাথে ঝগড়া করার কোনো মুড নাই আমার
.
এই দাঁড়াও দাঁড়াও
.
আবার হাত ধরসেন আমার,আপনার চরিত্র এমন ঢিলা কেন?কথায় কথায় মেয়েদের হাত ধরেন,বেয়াদব মার্কা স্বভাব
.
ছিং মার্কা পোস্ট থেকে বেয়াদব মার্কা স্বভাব! হোয়াট এ লজিক
.
একটা হলেই হলো,হাত ছাড়ুন বলছি
.
আমি ঔষুধ খাব আর তুমি খালি মুখে বসে থাকবা?তা তো হচ্ছে না
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”তো কি করবেন এখন?”
.
শান্ত চুপচাপ পাতা থেকে ঔষুধ বের করে পানি দিয়ে নিজে খেয়ে নিলো
আহানা এখনও বোকার মতন চেয়ে আছে ওর দিকে
শান্ত আরেকটা ঔষধ বের করলো তারপর দাঁত কেলিয়ে আহানার মুখ টিপে ধরে ওর মুখের ভিতর ঔষধ ঢুকিয়ে পানিও খাইয়ে দিলো সাথেসাথে
আহানা কাশতে কাশতে দূরে চলে গিয়ে বললো”আপনি একটা বেয়াদব! আপনার অসুখ বলে আপনি ঔষুধ খাইছেন ভালো কথা,আমাকে কেন খাওয়াইলেন?আমার কোনো অসুখ নাই শুধু শুধু আমাকে ওষুধ খাওয়াইলেন কেন?
.
আমি ঔষুধ খেলে তুমিও খেতে হবে,তোমার অসুখ থাক বা না থাক,ছোটবেলা থেকে এটাই চলে আসছে
.
আহানা কথা থামিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলো,এ ব্যাপারে মা একবার ওকে বলেছিলো,ছোট বেলায় শান্ত ঔষুধ খেলে আহানা খিলখিল করে হাসতো তাই সে আহানাকে জোর করিয়ে সেম ঔষুধটা খাইয়ে দিয়ে নিজে হাসতো
.
তততততততো মানে কি,আমি কি এখন হাসতেসিলাম নাকি?
.
শান্ত মুখটা বাঁকিয়ে হাত দিয়ে থুতনি ডলতে ডলতে বললো”তাই তো!!আসলে আমার মনে হয় তুমি সেই আহানা না
সেই আহানা হলে হাসতো এখন
.
শুনুন!আমার আর কাজ নাই আপনাকে প্রমাণ দেওয়ার যে আমি আহানা নাকি অন্য কেউ!ফালতু!
আর একটা কথা আপনি ঔষধ খাওয়ার সময় হাসতাম কেন জানেন? ছোট বেলায় কেন হাসতাম জানি না তবে আজও হাসি আসছিল বাট আমি হাসিনি,কারণ হুদাই ঝগড়া বাড়ানোর ইচ্ছা আমার নাই
আপনি ঔষুধ হালকা চুষে তারপর পানি দিয়ে গিলে ফেলেন বলে হাসি পাচ্ছিলো,হয়ত ছোটবেলায় ও এমন করে খেতেন তাই আমি হাসতাম,আজ হাসিনি কারণ এখন আমি যথেষ্ট বড় হয়ে গেছি
.
ইহ লে কত বলো হয়ে গেছে লে!!
.
আহানা চোখ রাঙিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো রুম থেকে
এই জন্য মানুষের ভালো করতে নেই
এই লোকটা সুন্দর করে কোনো কথায় বলতে পারে না
.
আহানা ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখলো শান্তর মা ওর মাকে আর রিপাকে নিয়ে ভিতরের রুমে আছেন
তাদের দেখা যাচ্ছে,আহানা ভিতরে ঢুকতেই ইয়া বড় হা করলো
শাড়ী আর শাড়ী,রিপা আলমারি থেকে এক এক করে বের করছে,সব সুতির শাড়ী
মা আহানাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন”দেখ না আহানা,বুবু আমাকে এত এত শাড়ী দিচ্ছে পরার জন্য,আমি মানা করলাম উনি আমার মানা শুনেনই না
.
আহানা একটা শাড়ী হাতে নিয়ে বললো”বাহ এটা তো বেশ সুন্দর,খয়েরী রঙের সুতির শাড়ী সবসময় সুন্দর হয়”
.
শান্তর মা হাত বাড়িয়ে আহানার দিকে ধরলো শাড়ীটা
.
না আন্টি!আমি শাড়ী ঠিক করে পরতে পারি না😰কখনও পরি নাই,সবসময় থ্রি পিস পরি
.
তারপরেও শান্তর মা হাত বাড়িয়ে ধরেই রেখেছেন তাই আহানা বাধ্য হয়েই শাড়ীটা হাতে নিলো
গেস্ট রুমে আহানা আর তার মা শুবে,রিপা তাই সেই রুম রেডি করতেছে
আহানা শাড়ীটা নিয়ে সেই রুমটায় আসলো,গেস্ট রুম যেমন হয় আর কি
একটা বিছানা,একটা ওয়ারড্রোব আর ড্রেসিং টেবিল
আহানা শাড়ীটা বিছানার উপর রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো
বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে সামনে তাকালো,রুমটা শান্তর মায়ের পাশের রুম বলে গন্ধরাজ ফুলের বাগানটা হালকা দেখা যাচ্ছে,
আহানা মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছে গন্ধরাজ ফুলগুলো
পরক্ষনেই ডাক পড়েছে মায়ের
সবাই খেতে বসেছে তাই আহানাকে ডাকতেছে ওর মা
মায়ের মুখে আজ কতটা দিন পর আহানা হাসি দেখেছে
মায়ের ডাকে সে ডাইনিংয়ে আসতেই দেখলো শান্ত ওর দিকে চেয়ে ব্রু কুঁচকে চেয়ার টেনে বসতেছে
.
আহানা ওর বরাবর সামনের সিটে বসলো,সেটাই খালি পেলো তাই
শান্ত লেটুস পাতার সালাদ,গাজরের স্যুপ আর মাসরুম দিয়ে একটা রেসিপি করা হয়েছে সেটা খাচ্ছে,প্রতি বৃহস্পতিবার সে এটা খায় নিয়ম করে,হেলথ ভালো থাকে
আহানা ভাতে মাংস নিয়ে নাড়িয়ে মুখে দিতে দিতে শান্তর খাওয়া দেখছে
শান্ত ফোন টিপতে টিপতে চামচ কেটে কেটে স্যুপ খাচ্ছে
নিতু আহানার পাশে বসে চামচ দিয়ে ভাত খাচ্ছে
আর মা এক লোকমা মুখে দিয়েই হাজার কথার উৎপত্তি ঘটাচ্ছেন,আসার পর থেকে ২ঘন্টা হয়ে গেছে অথচ মায়ের কথাই শেষ হচ্ছে না এখনও
.
শান্ত মাসরুম মুখে দিয়ে চোখ বড় করে আহানার দিকে তাকাতেই আহানা আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সাথেসাথে
শান্ত যে উদ্ভট খাবার তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে তাই পর্যবেক্ষন করছিল আহানা কিন্তু তা আর হলো না,শান্ত যে লুক নিয়ে তাকালো বাবারে মারে!!
আহানা আর দ্বিতীয় বার মুখ তুলে ওকে দেখতে যায়নি
শান্ত পুরো খাবার শেষ করে উঠে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে,ঔষুধ খেলো না কারণ তখন ৮টার সময় খেয়েছিলো
মা আর শান্তর মা এখনও খাচ্ছেন,নিতু এঁটো করে চলে গেছে সেও বেশি খায়নি
আহানা নিজের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়েছে,কাল তো ভার্সিটি নাই,আছে শুধু টিউশনি,যাক শান্তিতে একটু ঘুমাবো তাহলে
আহানা বালিশ টেনে শুয়ে পড়েছে
পরেরদিন ভোর হতেই অভ্যস মতন আহানা জেগে গেলো
মা পাশেই ঘুমাচ্ছেন,আহানা বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়ে এবার বাসা থেকে বের হলো
সবাই ঘুমাচ্ছে
আশেপাশে সব খানে আম গাছ খুঁজলো সে কিন্তু পেলো না
যাক বাবা ব্রাশ করবো কি দিয়ে,ধুর ধুর!
তারপর আহানার নজরে পড়লো ছাদে আমগাছের পাতা দেখা যাচ্ছে
কিন্তু আমগাছ তো এত ছোট হয় না তাহলে?
যাক গে আগে দেখে আসি ব্যাপারটা কি
আহানা এবার এক দৌড়ে ছাদে চলে আসলো,ওমা এটা দেখি মিনি সাইজের আমগাছ,টবে করা,দুটো পাতা নিলে কিছু হবে না
আহানা পাতা দুটো নিয়ে দাঁতে ঘষতে ঘষতে পুরো বাড়ি হেঁটে হেঁটে দেখছে
নিতু কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে তার রুমে
শান্তর মা নিজের রুমে হুইলচেয়ারে বসে বসেই নামাজ পড়ছেন,আহানার মাও ততক্ষণে উঠে নামাজে দাঁড়িয়েছেন
আর শান্তর রুমের দরজা বন্ধ,রুমে ঢুকলেই দরজা বন্ধ করে ফেলে,মনে হয় রুমে মণিমুক্তা লুকানো আছে,ঢং!
.
আহানা এবার বাগানের দিকে আসলো,সূর্যমুখী ফুলের বাগানটা ভোরবেলার আলোয় জাস্ট অসাধারণ লাগতেছে তা বলে বুঝানো যাবে না
আহানা পা উঁচু করে শান্তর রুমের বারান্দার দিকে একবার তাকালো,বারান্দার দরজা বন্ধ
সে এবার দাঁত কেলিয়ে বাগানটায় ঢুকে পড়লো,আহানার নিজের কাছে হাঁটতে কি ভালো যে লাগছে
দুপাশে বড় বড় ফুল আর ফুল
তার উপর জ্বালানোর মতন কেউ নেই
শান্ত গভীর ঘুমে কিন্তু তার এত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করলো ঊষা
ফোন করেই আগে ১০বার সরি বললো সে
.
আচ্ছা ফাইন,সরি বলা অফ দিয়ে আগে বলো কল কেন করেছো?
.
স্যার অফিসে আপনার থাইল্যান্ডের ক্লাইন্ট এসেছেন,ঐ যে নাম হলো জেমস স্টেভেন
.
এ সময়ে?
.
স্যার উনি কিসব ভাষায় বলতেছেন আমি কিছুই বুঝতেছি না,থাইল্যান্ডের ভাষা তো অনেক টাফ তাই না
.
আচ্ছা!উনাকে ফোন দাও
.
ওকে স্যার
.
শান্ত গুগল সার্চ করে অনেক কষ্টে জেমসের সাথে কয়েকটা কথা বললো,লোকটা ইংরেজী পারে কিন্তু বলবে না
শান্তকে পেরেশানিতে ফেলার জন্যই এত ঢং করছে
শান্ত ও নিরুপায়, ক্লাইন্ট তো ক্লাইন্ট হয়,এরে তো হাত ছাড়া করা মানে টাকা লস
তো কথা বলে সে যা বুঝলো সেটা হলো উনি এসময়ে শান্তর সাথে মিট করতে চান,এবং তিনি শান্তর বাসায় এসে বাঙালিয়ানা খাবার ও খেতে চান,শান্ত লজ্জায় পড়ে উনাকে বাসায় ইনভাইট করে ফেললো
ফোন রেখে চুল টানতে টানতে বিছানা থেকে নামলো সে
বাঙালিয়ানা রান্না খাবে, মন তো চাচ্ছে মরিচ বেটে খাওয়াই দি,কিন্তু না,শান্ত কুল ডাউন!আরামসে হ্যান্ডেল করো নাহলে ১০লাখের ডিল ক্যানচেল হবে
শান্ত বারান্দার দরজা খুলে বাইরে বের হতেই আহানার মুখ দেখলো
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে আম পাতা নিয়ে দাঁত খোঁচাচ্ছে আর মাঝে মাঝে কোমড় থেকে হাত নামিয়ে সূর্যমুখী ফুল ধরে ফুল নাড়াচ্ছে
.
উফফফফ!এই মেয়েটার মুখ দেখলাম সকাল সকাল
আজ সারাটাদিন আমার খারাপ যাবে!আবারও আমার বাগানে ঢুকছে
এই আহানা!
.
এ্যা!কে কে?
আহানা চমকে পিছন ফিরে তাকালো
শান্ত অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো”তোমার সাহস তো কম না!আবারও আমার বাগানে ঢুকছো,বের হও নাহলে এখানে এসে তোমার চুল ছিঁড়বো আমি”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে হেঁটে চলে যেতে নিতেই শান্ত বললো দাঁড়াতে
.
আবার কি?
.
এই তোমার হাতে এটা কি
.
আহানা চেয়ে বললো” আমার হাতে তো আম পাতা,কেন চোখে দেখেন না?”
.
সেটা তো দেখতেছি,কোথা থেকে নিসো এটা?”
.
কই থেকে আবার?এমন একটা এরিয়াতে থাকেন যেখানে আমগাছ নাই,ভাগ্যিস ছাদে মিনি একটা আম গাছ পেলাম,সেটার পাতা দিয়ে কাজ চালাচ্ছি আপাতত
.
কিহহহহহ!আমার আম গাছের পাতা ছিঁড়ছো তুমি!!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
বেশি না,শুধু ২টা পাতা ছিঁড়সি
.
থাকো ওখানে,আমি আসতেছি,একদম নড়বা না
.
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে বাগানে এসে দেখলো আহানা উধাও,ছিটেফোঁটা চিহ্ন ও নেই
শান্ত রেগে মেগে বাসার দিকে গিয়ে বুয়াকে বললো বিরিয়ানি রাঁধতে আজকে দুপুরের জন্য আর এখন রুটি ভাজি,ডিম এসব তৈরি করতে ওর ক্লাইন্ট আসতেছে তাই
.
আহানা বাসার বাইরে লুকিয়ে পড়ছিলো,শান্ত চলে গেছে দেখে সে ভিতরে চলে আসলো আবার
বাপরে বাপ এক বাঁচা বেঁচেছি আর একটুর জন্য জ্যান্ত কবরই দিয়ে দিতো আমাকে
একটা ক্যাব এসে থামলো শান্তদের বাসার গেটের বাইরে
আহানা পিছন ফিরে সেদিকে তাকিয়ে আছে
একটা বেলু লোক বের হয়েছে ক্যাব থেকে,পরনে কোর্ট প্যান্ট আবার ছাগইল্লা দাঁড়িও আছ দেখছি,!
লোকটা আসতেই দারোয়ান গেট খুলে দিলো
আহানা এখনও লোকটাকে দেখে যাচ্ছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত
লোকটা ভিতরে ঢুকে আহানার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো একবার
আহানার গায়ে হালকা সবুজ রঙের থ্রি পিস একটা আর হাতে আম পাতা,চুল উসকো খুসকো
লোকটা তার টাই ঠিক করে বললেন “สวัสดีคุณเจ๋ง(আপনি শান্তর কি হোন?)
.
আহানা চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো”কি?কি বললেন
এটা আবার কোন দেশের ভাষা?”
.
লোকটা হেসে বললো”ฉันชื่อเจมส์สตีเวน(আমি জেমস স্টেভেন)
.
কি কয় এই বেডা কিছুই তো বুঝি না😒
.
শান্ত দূর থেকে জ্যাকেট পরে আসতে আসতে বলতেছে”
ยินดีต้อนรับสู่บ้านของเรา Mr. James Steven(আপনাকে স্বাগতম মিঃ জেমস স্টেভেন)
.
আহানা চোখটা বড় করে ভাবলো তারে কি ঘুমে ধরলো নাকি
চোখ ভালো করে ডলে আবার ভাবলো হঠাৎ করে মানুষের মুখের ভাষা উল্টা পাল্টা শুনতেছি কেন
কানে আঙ্গুল দিয়ে খুঁচিয়ে আবারও শুনার চেষ্টা করলো সে
লোকটা এবার বলতেছে”ผู้หญิงคนนี้คือสิ่งที่คุณเป็น(এই মেয়েটা তোমার কি হয়”
.
শান্ত গুগল সার্চ করে কথাটার মানে বের করে মুচকি হাসলো তারপর বললো”ญาติของฉัน(আমার রিলেটিভ)”
.
লোকটা Ohh বলে শান্তর সাথে বাসার দিকে চলে গেলো
আহানা ব্রু কুঁচকে ভাবতেছে এলিয়েনের মত কি কথা বললো এরা এতক্ষণ ধরে কিছুই তো বুঝলাম না আমি
.
শান্ত মিঃ জেমসকে সোফায় বসতে বলে বুয়াকে ডাক দিলো
আহানা চোরের মত পা টিপে টিপে সামনে দিয়ে হেঁটে মায়ের কাছে চলে এসেছে
তারপর মাকে সবটা খুলে বলার পর থেকে মা হাসতেছে ওর কাজের কথা শুনে
শান্ত মিঃ জেমসকে নিয়ে আলোচনা করতে করতে নাস্তা করতেছে
আহানা দরজার কোণায় উঁকি দিয়ে তাদের কথাবার্তা শুনে এর অর্থ বের করায় ব্যস্ত পরে আগামাথা কিছু না বুঝে একটু একটু করে পা বাড়িয়ে সে শান্তর রুমের দিকে চললো
প্রতিদিন শান্ত দরজা লক করে রাখে কেন এতে সে রহস্যের গন্ধ পেয়েছে তাই একবার শান্তর রুমটা ভালো করে দেখবে সে
রুমে ঢুকে দরজাটা আলতো করে আটকে ফেললো আহানা
যাতে কেউ সন্দেহ না করে
তারপর চোখ বুলিয়ে রুমটা দেখায় মগ্ন হলো সে
পুরো রুমটার দেয়ালে হলুদ কালারের রঙ করা,আর বিছানার চাদরটাও পুরো হলুদ রঙের,গন্ডারটার মনে হয় হলুদ অনেক পছন্দের
আহানা এবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,তারপর নিজেকে একবার দেখে নিয়ে চুল ঠিক করে দাঁত কেলিয়ে বারান্দার দিকে চললো
শান্ত খাওয়া শেষ করে জেমসকে বসতে বলে নিজের রুমের দিকে আসতেছে
আহানা চারিদিক হেঁটে হেঁটে দেখে চলে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতেই দেখলো শান্ত আসতেছে করিডোর দিয়ে
শান্তকে আসতে দেখে চোখ বড় করে সে দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়লো জলদি করে
শান্ত রুমে এসে আলমারি থেকে একটা ফাইল বের করে তারপর অফিসে পরে যাওয়ার শার্ট বের করলো
এরপর বিছানায় সেগুলো রেখে গায়ের জামা সব এক এক করে খুলতেছে সে,রেডি হয়ে অফিসে যাবে
আহানা গভীর ভাবনায় আছে, কোনদিকে যাবে কি করবে সেটাই ভেবে যাচ্ছে সে
শান্ত গায়ের জ্যাকেটটা খুলতেই ওর মনে হলো রুমে অন্য কেউ আছে,কড়া দৃষ্টিতে সে দরজার পিছনের দিকে তাকালো
আহানা দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে
.
তুমি!!
.
আহানা শান্তর ধমকে মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো”সরি!এক্সিডেন্টলি আপনার রুমে ঢুকে পড়েছি আর এক্সিডেন্টলি আটকেও গেসি,বাই বাই
কথাগুলো বলে আহানা এক দৌড়ে পালালো
শান্ত হাতে শার্ট নিয়ে ব্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে আছে
এই মেয়েটার মাথা পুরাই নষ্ট!
.
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে ড্রয়িং রুমের সামনে দিয়ে মায়ের কাছে যাচ্ছিলো তখনই মিঃ জেমস হেসে ওর দিকে তাকালো কিছু বলার জন্য
আহানা প্রচণ্ড রেগে আছে, জেমস কিছু বলার আগেই সে বললো”তাইল্লা দোলা চুপ থাক,তোর লটরপটর ভাষা আমি বুঝবো না,হুদাই আমাকে এসব ভাষায় কিছু বলতে আসবি না,বেইল্লার ঘরের বেইল্লা!হুহ!”
কথা শেষ করে আহানা ভিতরের রুমে চলে গেলো
মিঃ জেমস থ হয়ে বসে আছেন
আহানা কি বললো তার এক শব্দ ও তিনি বুঝলেন না এখন তার মনে হচ্ছে শান্তকে যখন তিনি তার ভাষায় কথা বলেন তখন শান্তর কেমন মনে হয়,তারপরে গুগল ট্রান্সলেট বের করে আহানা যা বললো তার থেকে “বেইল্লা”শব্দটা মনে আছে তার
সেটা লিখতেই থাইল্যান্ডের ভাষায় অনুবাদ হলো বেইল্লা অর্থ বেলু
উনি তো চোখ বড় করে কিছুক্ষন চেয়ে রইলেন,এই মেয়েটা তাকে বেলু বললো!
.
শান্ত রেডি হয়ে এসে জেমসকে নিয়ে অফিসের দিকে চলে গেছে
মা আর আহানার আম্মু গল্প করতেছেন
আহানা রুমের দরজা ভালো করে লাগিয়ে শাড়ী পরা প্র্যাকটিস করতেছে
সবই ঠিক আছে কিন্তু শাড়ীর কুচি সমান সমান হয় না কেন?
আর আঁচলটা বারবার পড়ে যাচ্ছে কেন,কি ঝামেলা!
আহানা এই নিয়ে ১৭বার ট্রাই করেছে
একবার কুচি ঠিক হয় না তো একবার আঁচল পড়ে যায় আর নয়ত আরেকবার দেখে পুরা শাড়ীই সে উল্টা পরেছে
হাঁপাতে হাঁপাতে আবারও চেষ্টা করছে সে
এক দুই তিন চার!কুচি তো ঠিক হলো তবে কুচি গুছিয়ে কোমড়ে গুজে দিলে এমন ফুলে থাকে কেন?
মনে হয় যেন আমি গর্ভবতী,মাকে কত করে বললাম শিখায় দাও কিন্তু না মা তো গল্প করায় ব্যস্ত!
রিপা আপু বুয়ার সাথে রান্নাঘরে কাজ করছে তাকে জ্বালানো যাবে না
করবো তো কি করবো??
আমি বরং এক কাজ করি আমাদের বাসায় গিয়ে আমার আরেকটা জামা নিয়ে আসি তাহলেই হলো!
আহানা শাড়ীটা রেখে তার জামা পরে মাকে বলে বেরিয়ে পড়লো
বাসা থেকে একটা জামা নিয়ে ফেরত আসবে আবার
শান্তর মা বলেছে আজও এখানে থেকে যেতে
আহানা বাসায় এসে দরজা খুলে নিজের একটা জামা নিয়ে আবার বের হয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে পিছন ফিরতেই দেখলো রতন দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে,পান চিবাচ্ছে
আহানা ব্রু কুঁচকে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যেতে নিতেই রতন পথ আটকালো ওর
.
কি ব্যাপার আহানা!!কাল রাতে নাকি তোমরা বাসায় ছিলা না?তো এখন এলা তো আবার কই যাচ্ছো?
.
কোথাও না,সর আমার পথ থেকে
.
আগে আমার কথার উত্তর দাও তারপর যেতে দিব
.
আহানা রেগেমেগে রতনকে এক ধাক্কা দিয়ে বললো”আমি যেখানে খুশি সেখানে থাকবো তাতে তোর কি?বেয়াদব!জাহান্নামে যা তুই!”
.
রতন চুপ করে তাকিয়ে রইলো আহানার দিকে
আহানা আর পিছন ফিরে তাকালো না,রতনকে মনে মনে বকতে বকতে সোজা শান্তদের বাসায় ফিরে আসলো সে
রতন আজ কয়েকবছর ধরে ওকে জ্বালাচ্ছে,ওদের এলাকার এক নাম্বারের ছেঁচড়া একটা ছেলে
দালালি করে সংসার চালায়,কত মেয়েকে উঠায় নিয়ে গেছে কিন্তু সে আহানার প্রতি দূর্বল,আহানার রাগ তার ভালো লাগে সবসময়,মোট কথা আহানাকেই ভালো লাগে তার
আহানা ওকে দুচোখে দেখতে পারে না,কারণ এর চরিত্র সম্পর্কে এ টু জেট জানে সে
আহানা বাসায় ফিরতেই দেখলো শান্ত অফিস থেকে ফিরে এখন জেমসকে তার সূর্যমুখী বাগান দেখাচ্ছে
আহানা গাল ভেটকিয়ে পাশ দিয়ে চলে গেলো
রুমে এসে তার জামাটা নিয়ে পরতে নিতেই মা বললো শাড়ীটা পরিয়ে দিবে
আহানা তো মহা খুশি
মা ওকে খুব সুন্দর করে খয়েরী রঙের শাড়ীটা পরিয়ে দিলো
আহানা আয়নার সামনে নিজেকে দেখে বললো”মা আমাকে তো সেই লাগতেছে”
.
এই জন্যই তো বলে “শাড়ীতে নারী”
.
আমি আন্টিকে দেখিয়ে আসি?
.
আচ্ছা যা
.
আহানা খুশি হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে শান্তর মায়ের রুমের দিকে চললো
উনি আহানাকে দেখে মুচকি হাসলেন তারপর তার বিছানার পাশের ছোট্ট ৪তাকের ড্রয়ার থেকে একটা কাজল বের করে আহানার কানোর পাশে ফোঁটা দিয়ে দিলেন
আহানা উনাকে দেখিয়ে এবার যাচ্ছে রিপাকে দেখাতে
তখনই শান্তর সামনে পড়লো
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো”দেখছেন?আমি শাড়ী পরসি হুহ!”
.
ওহ আচ্ছা তুমি?আমি তো ভাবলাম পাগলা গারতের পাগল বাসায় ঢুকে পড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এক রুম থেকে আরেক রুমে যাচ্ছে
.
আমি পাগল?
.
যাক তাহলে স্বীকার করলে যে তুমি পাগল
.
আপনি পাগল!সাথে করে পাগল নিয়ে ঘুরেন,বেইল্লা!
.
জেমস আবারও বেইল্লা কথাটা শুনে বুঝলেন তাকে আবারও বেলু বললো আহানা
তাই সে ব্রু কুঁচকে তাকালো আহানার দিকে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”কি?বেইল্লা কইলাম যে তোর গায়ে লাগছে,বুঝছিস তোরে বেইল্লা কইসি যে?”
.
লোকটা মুখ বাঁকিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”เบลูบอกว่าฉันเข้าใจแล้ว แต่ตอนนี้เขาพูดอะไรอีก(বেলু বললো আমাকে সেটা তো বুঝলাম কিন্তু এখন আবার কি বললো)”
.
শান্ত পড়লো মহাবিপদে,কারণ তার ফোন তার রুমে,এখন জেমস কি বললো তার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না সে
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো”হয়ত আপনি বুঝেননি আপনাকে কি বলেছে কিন্তু আমি বুঝেছি”
.
কি বলেছে?
.
বলেছে”ফাটা টিশার্ট😂!”
.
শান্ত রেগে আহানার চুল টেনে ধরে বললো”ভাগো এখান থেকে,সারাদিন বাঁদরামি করে বেড়ায়”
.
আহানা নিজের চুল থেকে শান্তর হাত ছাড়িয়ে মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছে
.
বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে,তার সাথে ইলিশ মাছের দো-পেঁয়াজা,চিঁড়ি মাছের মালাইকারি,ভাত ও আছে
আহানা সব দেখে আবার মায়ের কাছে চলে আসলো

জেমস বাঙালী খাবার খেয়ে অনেক খুশি,সে খুশি খুশি চলে ও গেছে,ডিল ফাইনাল
বিকাল হয়ে গেছে,,আহানা টিভি খুলে বসে একটা মুভি দেখতেছে,নিতু পপকর্ণ নিয়ে এসে ওর সাথে বসে আলাপ শুরু করেছে
মা আর শান্তর মা বাগানের ঘুরতে গেছেন
আর শান্ত নিজের রুমে টিভি দেখছে
.
নিতু আহানার হাত ধরে সোফা থেকে নামিয়ে বললো তাকে ছবিতে যে গান চলছে সেই গানের নাচটার কপি শিখিয়ে দিতে
আহানা বললো পারবে না এখন
তাই নিতু কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে
আহানা বাধ্য হয়ে বললো তাকে কপি করতে,তারপর শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজে সে ফ্লোরে দাঁড়িয়ে মুভির নায়িকাটার মত নাচা শুরু করলো
সাথে নিতু ও নাচতেছে
দুমদুম আওয়াজ পেয়ে শান্ত টিভি অফ করলো,টিভি অফ করায় আওয়াজটা আরও জোরে শোনা যাচ্ছে,তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো আহানা নিতুকে নাচ শেখাচ্ছে
শান্ত ব্রু কুঁচকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নাটক দেখে যাচ্ছে
আহানা বলতেছে”প্রথমে ডান পা উঁচু করবি তারপর বাম পা
.
শান্ত হাসতে হাসতে বললো”তারপর ধপাসসসসস”😂
.
আহানা নাচ শেখানো থামিয়ে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো,নিতু ও হেসে দিয়েছে শান্তর সাথে সাথে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”তো আপনি শেখান তাহলে,নিজেকে কি মনে করেন?নাচের “ন” ও তো জানেন না আর আপনি আসছেন আমাকে ভেটকাইতে
.
তোমার চাইতেও জোস নাচ আমি নিতুকে শেখাতে পারবো
.
তে শেখান দেখি কেমন অস্কার জেতা নাচ শেখাতে পারেন আপনি
.
শান্ত নিজের ফোনে একটা ইংলিশ গান প্লে করে নিতুকে বললো ওরে কপি করতে
.
নিতু!!প্রথমে হাত এটা ঘুরিয়ে এখান দিয়ে এনে ওখান দিয়ে আনবা
.
তারপর ঘুরিয়ে তোমার ভাইয়ার গালে চড় বসিয়ে দিবা😂
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে রেগে এক দৌড়ানি দিলো
আহানা শাড়ীর কুচি ধরে দৌড় মেরেছে ততক্ষণো
.
এই খবরদার দৌড়াতে দৌড়াতে আমার সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ঢুকবা না বলে দিচ্ছি
.
তাহলে আমাকে দৌড়ানি দেওয়া অফ দেন
.
ফাইন,যাও মাফ করে দিলাম
.
আহানা থেমে গিয়ে বললো”মাফ?কিসের মাফ?আমি আপনার থেকে মাফ চাইনি”
.
তাহলে আজ তোমার রক্ষে নেই
.
কি করবেন?আমাকে কিছু করলে আপনার সূর্যমুখীর বাগান আমি ধংস করে দিবো
.
তারপর তোমাকে আমি ছেড়ে দিব তাই না??তোমাকেও ধংস করে দিব
.
আপনাকে আমি বিদ্দবস্ত করে দিব
.
বিদ্দবস্ত মানে?সেটা কি আবার?
.
আপনি বিদ্দবস্ত চিনেন না?
.
বিদ্দবস্ত মানে,ওহহহ আচ্ছা ইউ মিন “বিধ্বংস “??
খোদা!
এই মেয়েটা এসব কি আউলাঝাউলা কথা বলে,আমার মগজ তার জায়গা থেকে নড়ে গেছে এই মেয়েটার কথার মানে বের করতে যাইয়া
এই পাগলের সাথে আর দুলাইন কথা বললে আমিও পাগল হয়ে যাবো
.
আহানা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো”আমি পাগল হলে আপনি পাগল হোল স্কয়ার”
.
আমার মধ্যে পাগলের কি দেখলে তুমি?
.
যে মানুষ সেধে পাগলের সাথে কথা বলতে আসে সে হলো আসল পাগল
.
তাহলে তুমি স্বীকার করছো তুমি পাগল?
.
তার মানে আপনি স্বীকার করছেন আমার সংস্পর্শে এসে আপনিও পাগল হয়ে গেছেন?
.
এই তোরা দুজন থামবি??
এরকম ঝগড়া তো শত্রু শত্রু ও করে না যেটা তোরা করিস
বাপরে বাপ!!আমি আর বুবু দূর থেকে তোদের ঝগড়া দেখতেছিলাম
আমরা নিজেরাই এখন পাগল হয়ে যাবো মনে হয়
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আন্টি একটা কথা বলার ছিল আপনার সাথে
.
হ্যাঁ বাবা বলো
.
বাসায় আসুন,সোফায় বসে বলতেছি
.
আহানার মা শান্তর সাথে বাসার ভেতরে চলে গেলো
আহানা শান্তর মায়ের কাছে এসে বসেছে ঘাসের উপর আর ওর মা হুইলচেয়ারে
.
আহানার মা সোফায় বসে শান্ত গলায় বললেন “হুম বাবা বলো কি বলবে”
.
মিঃমজনু শেখ এখন চৌধুরী হয়ে গেছে আন্টি!
আমার অফিসের সাথে পার্টনারশিপ করতে চায় তাও ৫০/৫০,হাহা,আমি তো নাম শুনে কিছুক্ষণ ভাবনায় ছিলাম যে উনি কি সেই মজনু শেখ?নামটা পাল্টে চৌধুরী হয়েছেন,চিনছি কি করে জানেন আন্টি?ইন্ডাস্ট্রির নাম শুনে
আগে ছিল আয়াত লাগজারিস গ্রুপ আর এখন মজনু লাগজারিস গ্রুপ!!
আরে ভাই কপি করলি ঠিক আছে তাই বলে পুরাটা?
.
তো তুমি কি বললে?
.
আমি রাজি হয়ে গেলাম
.
এমন কেন করলে বাবা তুমি তো জানো উনি কিরকম খারাপ লোক তার পরেও কেন তুমি উনার সাথে বন্ধুত্ব করতে গেছো
.
আরে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবো তাই তো জেনেশুনে ফাঁদে পা ফেললাম
আর সে আমাকে আর আমার ফ্যামিলিকে চেনে না তাই কাজটা আরও সহজ হলো আমার জন্য,আন্টি আপনি আমাকে জাস্ট ১মাস টাইম দেন,আপনার বাড়ি -গাড়ি সব আমি ব্যাক এনে দিব
.
এটা কি সম্ভব?
.
অবশ্যই সম্ভব! তাকে তার পথ দিয়েই আক্রমণ করবো আমি,আপনি শুধু বলেন আপনাদের গাড়ী কি রঙের লাগবে আর বাড়ি কি রঙের লাগবে
.
আহানার মা মুচকি হেসে বললেন”বাবা পারলে আমাদের আগের বাসা এনে দাও,ওখানে আহানার বাবার সব স্মৃতি
বাসাটা মজনু যার কাছে বিক্রি করেছে সে বিদেশ থাকে বলে বাসাটা পড়েই আছে পরিত্যাক্ত
.
ওকে ডোন্ট ওয়ারি,আমি সেটাই এনে দিব আর ঐ মজনুর যেটা আছে সেটাও মাটিতে মিশিয়ে দিব আমি
.
আমাকে একটা আশা দিলে তুমি
ভাবতেও পারিনি আদৌ এটা ফেরত পাবো কিনা
যদি পাই তাহলে খুব ভালো হতো
.
আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন
.
আহানা উঁকি মেরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনার চেষ্টা করছে যে কি কথা হচ্ছে ওখানে
.
শান্ত কথা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো
আহানা সাথে সাথে মায়ের কাছে দৌড়ে এসে বললো “এতক্ষণ কি কথা হলো”
মা আহানাকে সবটা বুঝিয়ে বললেন,মায়ের কথা শুনে আহানা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”মঘেরমুলুক নাকি?
দলিল করা সম্পত্তি আবার ব্যাক পাওয়া যায় নাকি,পাগলের প্রলাপ”
.
আরে শান্ত অনেক জোর দিয়ে বললো হলেও তো হতে পারে
.
কচু হবে,হুদাই আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে

আহানা রেডি হচ্ছে টিউশনি করাতে যাবে বলে,রেডি হয়ে বের হতে নিতেই দেখলো শান্ত ও বের হচ্ছে বাসা থেকে
নেভি ব্লু কালারের জ্যাকেট পরে ফোনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কারে উঠলো সে
আহানা দাঁড়িয়ে ভাবলো নির্ঘাত জিএফের সাথে মিট করতে যাচ্ছে কারণ আজ তো শুক্রবার,উনার অফিস তো শুক্রবারে দুপুর পর্যন্ত থাকে রিপা আপু বলেছে আর এখন তো বিকাল
হুমম! হুহ আমার কি!
আহানা সোজা হেঁটে চললো টিউশনির দিকে,পথে রিকসা পেলে জলদি যাওয়া যাবে
এখান থেকে রিকসা নিলে ১৫মিনিট পরই চিত্রাদের বাসা,চিত্রাকে পড়িয়ে তারপর যাবে সিয়াদের বাসায় তারপর আবার ফিরে আসবে সে
চিত্রাকে একটা প্যারাগ্রাফ লিখতে দিয়ে আহানা আনমনে ভাবতেছে শান্তর জিএফটা দেখতে জানি কিরকম!আর শান্তর কি দেখে ওকে পছন্দ করলো সে?শান্তর মধ্যে তো আমি কোনো গুনই দেখি না
মনে হয় যে ওরে পছন্দ করে সে নিজেও একটা পাগল,হিহি
.
ম্যাম
.
হুম বলো চিত্রা
.
হাসতেছেন কেন ম্যাম?
.
না কিছু না এমনি,তুমি তোমার কাজ করো নাহলে চড় মেরে দিব,সারাদিন খালি বকবক!
.
আহানা কি হয়েছে?চিত্রা কি কথা শুনে না?
.
শুনে শুনে,একটু ধমক দিতে হয় আর কি,ওর রেসাল্ট দিসে না আজকে?গ্রেট কত?
.
সেটাই তো বলতে এলাম,,আহানা আমি এত খুশি কি বলবো,এই প্রথম চিত্রা ৯০এর উপর মার্কস পেয়েছে,তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব
.
যাক আমার ধমক কাজ দিয়েছে,ধন্যবাদ দিতে হবে না আন্টি
ও বড় হয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে একদিন এটাই তো চাই
.
আন্টি খুশি মনে চলে গেলেন
আহানা আবার ও ভাবনায় চলে গেলো,একবার গিয়ে শান্তর জিএফটা দেখলে ভালো হতো না?মনটা কেমন খচখচ করতেছে,অবশ্য আমি তো জানি না সে এখন কোথায়
ফলো করলে ভালো হতো,কিন্তু উনারে ফলো করতে গেলে তো আমারই টিউশন মিস যেতো
আহানা চিত্রাকে পড়ানো শেষ করে বাসা থেকে বের হতেই সিয়ার আম্মু ফোন করে জানালেন তারা আজ পার্কে ঘুরতে গেছেন তাই আজকে আহানা যেন পরাতে না আসে
আহানা তো মহাখুশি,এখন কথা হলো সে কি করবে,তার তো মন চাচ্ছে শান্ত এখন কি করতেছে সেটার সূত্র বের করতে
কিন্তু করবে তো কি করে!পরেই ওর মনে হলো রিপা জানলেও জানতে পারে যে শান্ত কোথায় গেছে
আহানা দেরি না করে বাসার দিকে ছুটলো
একটা কিউট বিকালবেলা,বেশ লাগতেছে
তার উপর রহস্য রহস্যভাব!!সূত্রের অভাব
শান্তর রহস্য বের করবো এই ভেবে বিকালটা কেন জানি আরও ভালো লাগতেছে
আহানা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে রিপাকে কথার ছলে জিজ্ঞেস করলো শান্ত কই গেছে
রিপা সাথে সাথে বলে দিলো একটা রেস্টুরেন্টের নাম
আহানা অবাক হয়ে বললো”তুমি জানলে কি করে?”
.
রিপা বললো শান্ত যাওয়ার সময় ওর মাকে বলে গেছে যে সে কোথায় যাচ্ছে
.
আহানা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবলো সে কি রেস্টুরেন্টে যাবে?নাকি যাবে না
গেলে তো অনেক ভালো হয়,শান্তর বিপক্ষে কিছু প্রমান পাওয়া যাবে এরপর থেকে শান্তকে কন্ট্রোলে আনাও যাবে
ভাবতে ভাবতে সে হাতের পার্সটার ভিতরে টাকা গুনলো
গুনে গুনে ২০টাকা আছে,২টা ১০টাকার নোট
আর রেস্টুরেন্ট টাতে যেতে ৩০টাকা লাগবে,মায়ের কাছে তো কোনো টাকা নাই,আহানার কাছে টাকা আরও আছে তবে সেগুলো তাদের বাসায়,আবার তাদের বাসায় যেতে হলে সন্ধাও হয়ে যাবে,আমি বরং আসার সময় হেঁটে আসবো
আহানা তাই একটা রিকসা নিলো কোনো মতে রেস্টুরেন্টের কাছাকাছি আসলে তারপর বাকিটা হেঁটে যাওয়া যাবে এই ভেবে
তো রিকসাআলা ওকে রেস্টুরেন্টটার এক কিলোমিটার আগেই নামিয়ে দিয়েছে
আহানা উনাকে জিজ্ঞেস করলো রেস্টুরেন্টটা কোথায় উনি বললেন “সোজা গিয়ে বাম পাশে”
আহানা এবার জোরে সোরে হাঁটা ধরেছে,হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দালানের দিকে তাকালো
মুখ খানিকটা উঁচু করেই তাকাতে হয়েছে এত বড় দালান,১৯/২০তলা হবে
ইয়া বড় দালান, ৬তলায় রেস্টুরেন্ট দেখা যাচ্ছে,মানুষ বসে গসিপ করতেছে এটাও দেখা যাচ্ছে কারণ দেয়ালের গ্লাস স্বচ্ছ
তো যেমন ভাবা তেমন কাজ,আহানা লিফটে উঠে আসতেছে সেখানে
মনে মনে সে মহা খুশি,আসার সময় নিতুর থেকে ক্যামেরাও এনেছে এটা দিয়ে ভালো মানের ছবি তুলে শান্তকে ব্ল্যাকমেইল করবে সে
রেস্টুরেন্টে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা কোণায় সে শান্তকে দেখলো
শান্ত বকবক করে কথা বলেই যাচ্ছে আর তার সামনে মনে হয় একটা মেয়ে বসে আছে,চুল দেখে মনে হয় মেয়ে,ইয়া বড় বড় চুল
আহানা লুকিয়ে লুকিয়ে শান্তদের পাশ থেকে কয়েক সিট দূরে এসে বসেছে
ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে ক্যামেরা অন করলো সে
পিছন থেকে করচ করচ করে কয়েকটা ছবি তুললো,আরেকটা তুলতে যাবে এসময়ে ওয়েটার এসে হাজির
দাঁত কেলিয়ে সে বললো অর্ডার দিতে
আহানা পড়লো মহা বিপদে,তার কাছে তো একটাকাও নেই,কি করবে এখন,রেস্টুরেন্টে এসেছে যখন কিছু তো খেতে হবে তা না হলে তো ওরা ওকে বসতে দিবে না
আহানা সবদিক ভেবে বললো ঐ যে লোকটা দেখছেন আমার ভাইয়া হয়,টাকা উনার থেকে নিয়েন,আমি এখানে আসছি আমার ভাইয়ার কাজের তদারকি করতে,এখন আপাতত আইসক্রিম দিয়ে যান একটা
ওয়েটার হেসে চলে গেলো
আহানা এবার ছবি তুলবে মেয়েটার মুখ সহ
এগোতে এগোতে অনেকটা কাছে চলে এসেছে সে
ক্যামেরা ঠিক করে ভালো করে ছবি তুলার জন্য মেয়েটার দিকে তাকাতেই আহানা ৪৪০ভোল্টের ঝটকা খেলো একটা
এটা দেখি পোলা!!!!
আহানা ইয়া বড় হা করে কাছে এসে ছেলেটার চুল ধরে দেখতে লাগলো
তারপর ছেলেটার গোফ ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো সে
শান্ত আহানাকে দেখে চমকেছে তার চেয়ে বেশি চমকেছে আহানা যখন ছেলেটার চুল আর গোফ টানাটানি শুরু করে দিয়েছে
শান্ত কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আহানাকে টেনে ছেলেটার কাছ থেকে সরিয়ে আনলো
নাহলে সে আর একটুর জন্য ছেলেটার চুল দাঁড়ি সব তুলেই নিয়ে আসতো
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে বোকার মত প্রশ্ন করে বসলো
আর সেটা হলো”আগে বলুন এটা মেয়ে না ছেলে?”
.
শান্ত ফিসফিসিয়ে বললো”তুমি এখানে কি করতেসো?”
.
আমার প্রশ্নের উত্তর দিন
.
অবিয়াসলি ছেলে,গোফ দেখো না?যেটা ধরে টানতেছিলে এতক্ষণ
.
গোফ তো দেখেছি,সাথে এক হাত লম্বা মাথার চুল ও দেখতেছি তাই কনফিউশানে আছি এটা কি আসলে
.
শান্ত ছেলেটাকে এক্সকিউজ মি বলে আহনাার হাত ধরে দূরে নিয়ে আসলো
“শুনো এটা আমার ক্লাইন্ট!উনার সাথে মিট করতে এসেছি আমি,তুমি এখানে আসছো কেন সেটা বলো?”
.
বেডা না বেডি,কইতে আপনার এত সময় কেন লাগে বুঝি না আমি
.
এটা ছেলে,কথা শুনো নাই তুমি?অনেক ছেলেরা চুল বড় রাখে এমন,আগে দেখোনি
.
বাহ তো
.
ভালো,দেখা হয়ে গেছে
যাও এখন
.
না যাবো না আমি

কেন যাবা না?
.
আমি আপনার জিএফকে দেখতে এসেছি
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে এবার পুরো বিষয়টা বুঝলো
তারপর হাত গুটিয়ে বললো”আচ্ছায়ায়ায়ায়া,এবার বুঝলাম!!আমার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করো??বাপরে বাপ হাতে দেখি নিতুী ক্যামেরাও আছে
.
😒
.
আসেন আপনাকে মিট করাই আমার জিএফের সাথে
.
না না,দরকার নাই!
.
আরে আসেন আসেন
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরে টেনে সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে পড়লো
আহানা ঢোক গিলে যেতে যেতে জানালার সাথে লেগে গেছে
.
মিট দিদার,ওর নাম দিদার উল হক,আমার ক্লাইন্ট,আর দিদার উনি হলেন পাশের বাসার আন্টি টাইপস রিলেটিভ আমার
মানে সে আজ এসেছে আমার আর আমার জিএফের গোপন পিক তুলতে
.
দিদার হেসে বললো”আর সে আমাকে তোমার জিএফ ভেবেছে?”
.
হ্যাঁ,এবং ছবিও তুলে ফেলেছে মুখ না দেখেই
.
হাহা,ভেরি ফানি,তা এই ছবি দিয়ে উনি কি করতেন?
.
সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতো
.
বাহ কি আইডিয়া!
.
ম্যাম আপনার আইস্ক্রিম
.
আহানা আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে তারপর শান্তর দিকে তাকালো,ভয়ার্ত স্বরে বললো”খাব না আমি”
.
শান্ত ওয়েটার থেকে আইস্ক্রিম নিতে নিতে বললো”মারবো না তোমাকে,মারার চেয়েও কঠোর শাস্তি দিব আমার পিছনে লাগার জন্য”
আহানার হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে শান্ত দিদারকে বিদায় দিলো
তারপর আহানার দিকে ঘুরে বসে তার হাতে থাকা কফির মগে চুমুক দিলো
আহানা আইসক্রিম খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কি করে রক্ষা পাবে সে
.
এই মেয়ে!
.
আহানা আইসক্রিম মুখে দিতেই শান্ত “এই মেয়ে” বললো তাই ওর গলায় আইসক্রিমে থাকা বাদাম আটকে গেলো
কাশতে কাশতে বললো”কি ”
.
তোমারে আমি হারে হারে চিনি
.
চিনছেন তো ভালো করছেন আবার বলার কি আছে?
.
আজ তোমার হাত পা ভেঙ্গে তার পর বাসায় নিয়ে যাবো
.
কককককেন এমন করবেন আআআআপপপনি!
.
শান্তর পিছনে কোনো গোয়েন্দা লাগলে তারে শান্ত এমনি এমনি ছাড়ে না
আর হলো কথা জিএফের আমার এসবে ইন্টারেস্ট নেই,মা যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করে নিব
.
ওহহহ
.
দেখি ক্যামেরা দেখাও
.
না,কেন দেখবেন আপনি,একদম ধরবেন না ক্যামেরা
.
তার মানে নিশ্চয় কিছু একটা গণ্ডগোল আছে,দেখি দাও আমাকে
.
না দিব না
.
শান্ত আরও এগিয়ে গেলো আহানার দিকে,আহানা ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে হাতে থাকা আইসক্রিম এক চামচ শান্তর গালে লাগিয়ে দিলো,একদম লেপটে
.
শান্ত চোখ বন্ধ করে টেবিল থেকে টিসু নিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে থেমে গেলো
আহানা বোকার মত তাকিয়ে আছে আর হাতে থাকা ক্যামেরাটা পিছনে লুকাচ্ছে
শান্ত আহানার গায়ের ওড়না দিয়ে মুখ মুছে নিলো
আহানা কোনে রিয়েক্টই করলো না কারণ এখন তার একটাই কাজ আর সেটা হলো ক্যামেরা লুকানো
.
শান্ত মুখ মুছা শেষ করে আহানার হাত চেপে ধরলো,কিছুটা জোরেই
আহানা হাত মুছড়াতে মুছড়াতে বললো”তাও ক্যামেরা দিব না আমি”
শান্তর সাথে জোরাজুরিতে পারলো না আহানা,শান্ত ক্যামেরা নিয়েই ছাড়লো তারপর দেখলো আহানা মোট ১৪টা ছবি তুলেছে সবগুলোতে শান্ত হেসে তাকিয়ে আছে সামনে বসা মানুষটির দিকে
শান্ত অফিসের কথা বলার সময় মাঝে মাঝে হেসেছিল আহানা ঠিক ওসময়টায় ছবি তুলেছে যেন ওর মা মনে করে এটা সত্যিই ওর জিএফ
আচ্ছা বাকি ছবিগুলোতে মেয়ের চুল তুলেছে সব
হায় রে!
আমাকে ফাঁদে ফেলার সব তৈরি করে নিয়েছিল বেকুবের গুষ্টিটা
.
আহানা টেবিলের নিচ দিয়ে বের হয়ে এক দৌড় মেরেছে ততক্ষণে
শান্ত সামনে তালিকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানকে ইশারা করলো
দারোয়ান আহানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে সাথেসাথে
.
আহানা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত হাসতে হাসতে আসতেছে এদিকে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৭+৮

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কে যাবে আপনাদের বাসায়??আমি??জীবনেও না
ওহ আপনি না তুমি,তুমি তো অনেক ছোট আমার থেকে,তুই বললেও হয়
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো “আন্টি আজ আমি আসি!”
.
মা ওর হাত মুঠো করে ধরে রাখলেন যেতে দিলেন না,রিপা নাস্তা নিয়ে সোফার রুমের টেবিলে রাখতেছে এক এক করে
আহানা সোফায় এসে বসতেই শান্ত চোখ বড় করে বললো”তুমি আমাদের বাসায় আসছো কি করতে?”
.
আহানা রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্তর মা ওর দিকে চেয়ে চোখ বড় করলেন তাই শান্ত আর কিছু বললো না
সোজা নিজের রুমে চলে গেলো সে
শান্তর মা আহানার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন
শান্ত নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে আলমারি খুঁজে একটা ছবি বের করলো,একটা বাচ্চা মেয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে,পাশেই সারা মুখে ৩পাউন্দের কেক মাখানো একটা ভূত দাঁরিয়ে আছে,ভূতটা শান্ত আর মেয়েটা আহানা,শান্ত যেমন আহানাকে জ্বালাতো আহানাও ওকে খুব জ্বালাতো,ছবিটাতে দুজনেই বেলু
এই বেলু হওয়ার কারনটা হলো তারা ঝগড়া লাগলেই একজন আরেকজনের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার মত অবস্থা করে ফেলতো তাই শান্তর মা আর আহানার মা মিলে দুজনকে বেলু করে রাখতো
তাহলে এই সেই মেয়েটা!!
যখন আমার সাথে ঝগড়া করতো তখনই আমার বুঝা উচিত ছিল আমার সাথে এমন করে ঝগড়া করতো এই একজনই!
এই ঝাঁঝের বোতল আবার আমার লাইফে ব্যাক করেছে তাও ম্যাচিউর হয়ে এবার তো তার জ্বালানোর লেভেল আরও হাই
অবশ্য আমিও কম না,এরে টাইট কেমনে দিতে হয় জানা আছে আমার,সবার আগে ওরে আমিই তো পানিতে ফালাইছিলাম
যাক কিছু মনে নাই ওর এটাই ভালো হয়েছে নাহলে এখন চেঁচামেচি করে কান ঝালা পালা করে দিতো
শান্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ছবিটা ল্যাম্পশ্যাডের পাশে রেখে দিলো,সেদিন কেক একটু নিয়ে শান্ত আহানার জামাতে লাগিয়েছিলো বলেই আহানা গোটা কেকটা শান্তর মাথায় চেপে লাগিয়ে দিয়েছিলো,আর আমি এই শয়তান মেয়েটাকে চিনতেই পারলাম না!

আহানা নাস্তা করে বললো এবার সে চলে যাবে,রাত হয়ে গেলে যেতে সমস্যা হবে
মা রিপাকে ইশারা করলো শান্তকে ডাক দিতে
রিপা গিয়ে শান্তর রুমের দরজায় নক করলো কয়েকবার
শান্ত ঘুমিয়ে পড়সিলো এতক্ষণে
চোখ ডলতে ডলতে এসে দরজা খুলতেই রিপা বললো মা ডাকতেছে
শান্ত বাথরুমে এসে মুখটা হালকা ধুয়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসলো
আহানা ব্যাগ হাতে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে চলে যাবে তাই
ওকে শান্তর মা থামতে বললো,কেন বললো সে বুঝতেছে না,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটাই ভেবে যাচ্ছে সে
শান্ত মায়ের চুলগুলো ঠিক করে দিচ্ছে আর আহানার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে
মা এখন এই রুমে না থাকলে হয়ত আহানাকে ধাক্কা মেরে বের করতো সে
কাদা ছোঁড়ার ব্যাপারটা মাথা থেকে যাচ্ছেই না তার
একটা মেয়ের এত সাহস কি করে হয় বুঝি না আমি
.
শান্তর মা আহানার দিকে ইশারা করে হাত দিয়ে বাড়ি বানিয়ে দেখালেন মানে আহানাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলতেছেন
শান্ত চোখ বড় করে বললো”ইমপসিবল!পারবো না আমি,এর সাথে আমার শুধু ঝগড়া লাগে,আর তখন দেখলা না কেমন করে আমার গায়ে কাদা মেরেছিল,ওর সাথে তো আমার কোনো কথাই নেই,শুধু জানে তিলকে তাল করতে
ওকে আমাদের বাড়িতে আসতে মানা করে দাও,ছোটবেলায় ও জ্বালাইতো আর এখন বড় হয়েও জ্বালাচ্ছে
.
মা চোখ বড় করে হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন,দরজার নিচে যে ছিটকিনি থাকে সেটাও লাগিয়ে দিলেন
শান্ত মাথার চুল টেনে নিজেকে ঠিক করে উঠে গিয়ে দরজার পাশে গিয়ে বললো”ওকে সরি মা,আমি ওকে দিয়ে আসতেছি,প্লিস রাগ করিও না,দরজা খুলো
শান্ত পিছন ফিরে দেখলো আহানা দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে যাচ্ছে,শান্তর সাথে বাড়ির ফিরার ইচ্ছা তার ও নাই,কোনো মতে বাসায় পৌঁছাতে পারলেই হলো তার
.
এই মেয়ে দাঁড়াও
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে এক দৌড় দিলো
শান্ত গাড়ীর চাবি না নিয়েই সেও দৌড় দিলো
মা আমাকে একটা দায়িত্ব দিসে আর এই মেয়ে ঢং করতেছে
এখন এর কিছু হইলে মা আর দরজায় খুলবে না,উফ কি ঝামেলা!
শান্ত দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছে আহানাও হাঁপিয়ে গেছে,দুজনের মাঝে এখন দূরত্ব হাফ কিলোমিটারের মত কিংবা তার চেয়ে একটু কম
আহানা জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে পিছন ফিরে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত পকেট থেকে রুমাল নিয়ে মুখ মুছতেছে
.
আহানা জোরে জোরে বললো”এত ঢং কারে দেখান?আমাকে ১০০বার বাসা থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলে এখন আবার আমার পিছু নিসেন কেন?”
.
চুপ!আর একটা কথা বললে হাতের কাছে ইটের স্তুপ আছে,ছুঁড়ে মেরে তোমার মাথার খুলি উড়িয়ে দিব
.
মারুন না,আমিও দেখি,আমার হাতের কাছেও অস্ত্র আছে

১০মিনিট পর|||||
ম্যাডাম! ম্যাডাম!!দেখে যান একটু
.
মা রিপার আওয়াজ পেয়ে দরজাটা খুলে হালকা ফাঁক করে বাইরে তাকালেন
শান্ত আর আহানা দুজন দুজনের সাথে মারামারি করতে করতে এসে নিচে বসে গেলো ফ্লোরে
দুজনেই চোখ ডলতে ডলতে মারামারি করতেছে এখনও
.
মা চোখ বড় করে হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে ওদের কাছে এসে দেখলো ওদের দুজনের সারা গায়ে বালি আর বালি
রিপা জলদি করে পানি এনে দুজনের গায়ে ঢেলে দিয়েছে তারপর টিসু দিয়েছে
আহানা চোখ মুছতে মুছতে বললো”আন্টি দেখুন না আপনার ছেলে আমার চোখে বালি মেরেছে”
.
আম্মু ওর কথা শুনবা না,আগে ও আমার গায়ে বালি মেরেছে তাই আমিও মেরেছি
.
আন্টি তার আগে উনি আমার পাশে ইট মেরেছে,ভেবে দেখুন আমার গায়ে ইটটা পড়লে আজ আমার কি হতো??
.
মা হেসে দিলেন,তার চোখের সামনে একদম শান্ত আহানার ছোটবেলাটা ফুটে উঠেছে
.
আপনারা এখনও যাননি ও মাই গড
.
কি করে যাবো রিপা??এই মেয়েটা এত ভেজাইল্লা!!আমি ভালোই ভালোই ওরে ওর বাড়িতে ড্রপ করতে চেয়েছিলাম আর সে কিনা আমার চোখে বালি মেরে দিলো
.
আপনি ভালো মানুষ তাই না?আমার চোখে কি বালি ভূতে মেরেছিলো?
লাগবে না আপনার সাহায্যের,বাই
আহানা ব্যাগ নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
মা আঙ্গুল তুলে শান্তকে ইশারা করে বললো আবার আহানাকে দিয়ে আসতে
শান্ত টিসু আরেকটা নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে আহানার সামনে দাঁড়ালো
.
এই কি সমস্যা তোমার?এরকম ভাব কারে দেখাও?একদম বালি দিয়ে গোসল করাই দিব
আমাকে ভাব দেখাতে আসলে,বেয়াদব মেয়ে একটা
.
আমি আপনার সাথে বাড়ি ফিরবো না ব্যস!
.
তুমি ফিরবে না তোমার ঘাড় ফিরবে
কথাটা বলে শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো গাড়ীর দিকে
.
হাত ছাড়ুন,আপনার সাথে থাকলে নির্ঘাত আমাকে মরতে হবে,আমি আমার জীবনকে জেনেশুনে মরতে দিতে পারি না
.
আমাকে বলতেছো?তোমাকে আমি হারে হারে চিনি,তুমি মরতে চাও না??আমি সেটা বিশ্বাস করবো
আর জীবনে যদি আমার বাসায় আসছো তো দাঁত ভেঙ্গে দিব তোমার
.
যাব না আমি আপনার সাথে
.
তো এটা আমার মাকে বলতে পারো নাই,তখন তো বোকার মত চেয়েছিলে
.
আন্টি মন খারাপ করবে তাই বলিনি
.
তোমরা এত ধরনের কথা কেমনে বলতে পারো??আমার মাথায় বাড়ি দাও একটা
.
দিব?
.
বেশি কথা কইলে মাঝপথে নামাই দিব তোমাকে!ইডিয়ট
.
আমি ইডিয়ট?তাহলে আপনি ইডিয়ট হোল স্কয়ার

ম্যাডাম!!
স্যার আর আহানা এখনও যায়নি,গাড়ীর বাইরে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতেছে
.
মা মাথায় হাত দিয়ে রিপাকে ইশারা করলো যেন তাকে বাসার বাইরে নিয়ে চলে
রিপা তাই করলো
মাকে বাইরে দেখতেই আহানা আর শান্ত ঝগড়া থামিয়ে দাঁত কেলিয়ে জলদি করে কারে উঠে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো
শান্ত কার চালাতে চালাতে আহানাকে জিজ্ঞেস করলো মা চলে গেছে কিনা
আহানা উঁকি মেরে দেখে বললো “হুম,রিপা আপু নিয়ে যাচ্ছে উনাকে”
.
হুম তাহলে কই ছিলাম আমরা?
.
আমি আপনাকে কুত্তার ফ্রেন্ড কুত্তা বলছিলাম
.
ওহ হ্যাঁ
তোমার এত বড় সাহস,তুমি তো নিজেই কুত্তা,আই মিন কুত্তি আর তোমার সংস্পর্শে এসে ভালো মানুষও কুত্তি/কুত্তায় পরিণত হবে
.
তার মানে আপনি স্বীকার করতেছেন যে আপনি কুত্তা?
.
চুপ!বেয়াদব মেয়ে একটা!আর কখনও আমাদের এরিয়ার ধারের কাছেও আসবা না
.
আপনি বলার জন্য আমি বসে নেই,আমি আর জীবনেও আপনার মুখ দেখতে চাই না,কখনও ঐ ফ্লাইওভার দিয়ে ভোর ৫টার সময় যাবেন না বলে দিলাম,আপনাকে যেন আমি আর না দেখি
.
তোমার কথায় উঠবো বসবো আমি?
.
আপনার কথায় উঠবো বসবো আমি?আন্টি রিপা আপুকে দিয়ে আমাকে ফোন করলেই আমি চলে আসবো
.
ও রিয়েলি?? তলে তলে এতো?তার মানে তুমি চাও প্রতি সন্ধায় আমি তোমাকে এভাবে বাসায় পৌঁছে দিই?
.
ও এভাবে তো ভেবে দেখিনি
.
তো ভাবো!
.
এক কাজ করা যায়,আপনি অফিস থেকে দেরি করে ফিরিয়েন তাহলেই তো হয়
.
তুমি আমার মাকে চিনো না আমার মা রিপাকে দিয়ে আমাকে কল করিয়ে বাসায় আনাবে,তাও সিকনেসের কথা বলে
তুমি আমাদের বাসায় না আসলেই তো হয়,আর ফাইন আমি ভোর ৫টায় ফ্লাইওভার দিয়ে যাব না! ডিল!!!
.
ওকে ডিল!

শান্ত সায়দাবাদ আসতেই আহানা ওকে বললো গাড়ী থামাতে
.
বাসা কই?
.
জেনে কি করবেন?
.
তোমাকে এভাবে রোডে ছেড়ে দিলে মাকে কি বলবো আমি?তোমার বিশ্বাস নাই
কেউ তোমাকে রেপ/কিডন্যাপ করতে আসলেও তার সাথে ঝগড়া লাগাই দিবা তুমি,তাও যেনতেনো ঝগড়া না,একেবারে মোক্ষম ঝগড়া
বেচারা পরে পাগল হয়ে পাবনার দিকে ছুটবে
.
কি বললেন!!
ফাইন!! আমার কি!
যদি এই ছোটখাটো বস্তির এলাকায় ঢুকতে আপনার কোনো সমস্যা না হয় তো চলুন
আহানা গাড়ী থেকে নেমে হাঁটা ধরেছে
শান্ত গাড়ী থেকে নেমে পিছন পিছন আসতেছে আহানার
আহানা একটা টিনের বাড়ির সামনে এসে থেমে বললো” ওকে যান এখন!আমার বাসা এসে গেছে”
.
কিহহহ,আর ইউ সিরিয়াস?এইটা তোমাদের বাসা?
যতদূর জানি আয়াত আঙ্কেলের তো আমাদের মতনই বাড়ি গাড়ি ছিল তাহলে এখন এটা কি?
তুমি কি সত্যিই আয়াত আঙ্কেলের মেয়ে?
.
আহানা চোখ বড় করে ব্যাগ থেকে একটা পানির বোতল বের করে ছিপি খুলে শান্তর মুখে ছুঁড়ে মারলো বোতলের সব পানি
শান্ত হাত দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো”ফাইন!প্রমান পেয়েছি আর প্রমান লাগবে না
তাই বলে পানিতে ভিজাইলা!!তোমাকে আমি!!
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু পেলো না পরে আহানাদের বাসার দরজায় গিয়ে নক করলো কয়েকবার
আহানার মা এসে দরজা খুলে শান্তকে দেখে শাড়ীর আঁচল টেনে মাথায় দিয়ে বললেন”কি চাই?”
.
এক মগ পানি
.
মা দিবা না বলতেছি
.
আহানা?তুই কখন এলি?আর উনি কে?
.
আন্টি আমাকে এক মগ পানি দিন
.
আহানা মাকে মানা করে যাচ্ছে মা কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে মগে পানি নিয়ে শান্তর হাতে দিলো
আহানা ততক্ষণে একটা নারকেল গাছের পিছনে গিয়ে লুকিয়েছে
শান্ত এগিয়ে এসে গাছের পিছন গিয়ে আহানার গায়ে পানি সব ঢেলে দিলো তারপর ফিরে আসলো
.
একি করলা বাবা,আমি তে কিছুই বুঝতেছি না
.
শান্ত নিজের রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো”আর ভিজাবা আমাকে?”
.
অবশ্যই ভিজাবো
বেয়াদব একটা!
.
আহানা কি হচ্ছে এসব?আমি তো কিছুই বুঝতেছি না
.
শান্ত আহানার মাকে সালাম দিয়ে চলে গেলো
.
আহানা ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে ঘরে ডুকে বিছানায় ধপ করে বসে পড়েছে
.
কিরে এবার তো বল কি হয়েছে আর ছেলেটা কে?
.
শান্তি আন্টির ছেলে
.
কোন শান্তি?
.
আরে রিয়াদ আঙ্কেলের ওয়াইফ
.
মা চোখ বড় করে আর এক মিনিটও দেরি না করে দরজা খুলে দৌড় দিলেন
.
আরে আরে মা কই যাচ্ছো?
.
মা কিছুটা জোর গতিতেই শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন
শান্ত সবেই গাড়ীতে ঢুকতে যাচ্ছিলো
.
কি হয়েছে আন্টি?
.
শান্ত!!কত বড় হয়ে গেছো তুমি,আমার বিশ্বাস হচ্ছে না
আমি আবার তোমাকে দেখতে পাবো ভাবিনি কখনও
.
এসব বলতে বলতে আহানার মা কেঁদে দিলেন
.
শান্ত উনার দুহাত হাত মুঠো করে ধরে বললো” কাঁদবেন না প্লিস,বাট আমি একটা কথা বুঝলাম না আপনাদের বাড়িঘরের এই হাল কেন?”
.
সে অনেক কথা,তোমার মা কেমন আছে সেটা বলো??আর সেদিন তোমার ভাই নাকি বোন হয়েছিল?সে কেমন আছে?আহারে কতটাদিন দেখি না,কত খুঁজেছি তোমাদের,সেসময়ে তোমাদের একটা সাহায্যের আমাদের অনেক দরকার ছিল!
.
কি হয়েছিল প্লিস বলুন
.
বাবা আসো আমাদের এই ছোট্ট বাসায়,কিছু মুখে দাও
বলছি তোমাকে সব
শান্ত আহানার মায়ের সাথে ওদের বাড়িতে আসতেছে
আহানা মুড়ির বোয়াম নিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে শুয়ে মুড়ি খাচ্ছে
দরজা খুলে শান্ত ভিতরে ঢুকতেই আহানা ওকে দেখতে পেয়ে ঠিকঠাক হয়ে বসে ব্রু কুঁচকে বললো”আপনি আবার??!বের হোন আমার বাড়ি থেকে”

আহানা!এটা কি রকম ব্যবহার?
.
মা তুমি জানো না উনিও আমাকে উনার বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে কতবার
.
চুপ থাক,যা চা বানিয়ে আন
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে রাগে গজগজ করতে করতে বিছানা থেকে নেমে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে
.
শান্ত চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো”চিনি দিও না”
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে থেকে মনে মনে ভাবলো আজ তোরে আমি গুড় দিয়ে চা বানাই খাওয়াবো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্ত আহানাদের রুমটা ভালো করে দেখছে
সে নিজে যে চেয়ারটাতে বসে আছে সেটা একটা কাঠের চেয়ার
তার পাশে একটা পুরনো কাঠের টেবিল আছে,সেখানে কিছু বই,কলমদানি আর একটা আয়না
সামনে একটা বিছানা তবে এটা হলো চৌকি টাইপের হেলান দিয়ে বসা যাবে না ওরকম খাট
আর কিছু নাই রুমটাতে
.
আহানার মা চোখ মুছতে মুছতে কথা শুরু করলেন
.
তোমার আয়াত আঙ্কেল মারা যাওয়ার পর আমরা যখন বাড়ি ফিরি তাকে কবর দেওয়ার পর তখন জানতে পারি সকল সম্পত্তি নাকি আহানার চাচা মজনু নিজের নামে করে ফেলেছে
কি করে করলো বুঝে উঠতে পারিনি আমি সেসময়ে
আমাকে তারা পরেরদিনই আহানাকে সহ বের করে দিয়েছিলো বাসা থেকে
আমি পুলিশের কাছেও গেছিলাম কিন্তু তারা পুলিশকে কাগজপত্র দেখিয়ে দিয়েছে আর পুলিশ আমাকে জানালো সেখানে নাকি সাফ সাফ লিখা আছে আহানার বাবা আহানার ১৮বছর হওয়াতে দেরি তাই আপাততের জন্য সকল সম্পত্তি মজনুর নামে করে রেখেছিল যেন তার আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে তিনি সম্পত্তি সামলাতে পারেন
আর মজনু ভাই কিনা আমাকে আর আহানাকে বের করে দেয় যেন আমাদেরকে তিনি চিনেও না
আহানার বাবা এমনটা করবেন না কখনও তা জানি আমি
হয় তিনি আহানাকে নমিনী করে যেতেন আর নয়ত আমার নামে করে দিয়ে যেতেন কিন্তু মজনুর নামে যে করে দিয়েছে সেটার কথা আমি ঠিক সেদিনই জানলাম,আমি এই বিষয়টায় একটুও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কারণ আহানার বাবা বিন্দু মাত্র কিছু করলেও আমাকে জানাতেন,আমাকে না জানিয়ে কিছু করতেন না তিনি তাহলে দলিলটাতে যে সই ছিল সেটা কি ছিল সেটাই বুঝতে পারলাম না আমি আজও
আমার বাবা মা কেউ নেই,পাশে পেলাম নিজের বোনকে
আমি গরীব ঘরের মেয়ে ছিলাম, আমার বোন আমার সাথে আমার বাসায় থাকত বাবা মায়ের মৃত্যুর পর থেকে
সে একটু পড়াশুনা করছে বেশি করেনি তাই সে
বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর আমরা ৩/৪দিন আমাদের বাসার দারোয়ান কাসেম চাচার বাসায় ছিলাম,আহানার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল বলেই তিনি আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন সেদিন
আমার বোন রোকেয়া অনেক চালাক চতুর সে কদিনের মধ্যেই কোনোমতে একটা গার্মেন্টসে ঢুকে যায় আর আমিও বাধ্য হয়ে গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করি
দারোয়ানের বাসা ছেড়ে একটা বাড়ি খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত আমরা এক দাদির বাসায় ছিলাম ততদিন
দাদিটা অনেক ভালো ছিলেন,আমার বোনের পরিচিত ছিল তার মেয়ে নাকি আমার বোনের সাথে গার্মেন্টসে কাজ করতো তাই আমাদের সমস্যার কথা শুনে আমাদের থাকতে দেন সেদিন
আহানার দামি দামি জামা আমি বিক্রি করে হাঁড়ি পাতিল এসব কিনলাম
ওর জন্য তখন ২/৩টা জামা ছিল অবশিষ্ট, টাকার অভাবে আমি সব বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম সেদিন
এতদিন ভালো পরিবেশে থেকে বড় হয়ে তারপর এরকম একটা অবস্থায় হুট করে এসে পড়ায় পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে আহানার বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল
.
তো আঙ্কেল নমিনী ও তো করে যেতে পারতো আহানার নামে সম্পত্তি দিয়ে
সেটা করেননি কেন??আমি সেটাই বুঝলাম না
.
বাবা আমার ও এটা মাথায় ঢুকেনি,কারণ একদিন আহানার বাবা আমাকে এই ব্যাপারটা সম্পর্কে বলেছিলেন,বলছেন আহানাকে নমিনী করে দিবেন তাহলে সম্পত্তি মজনুর নামে কি করে হলো সেটাই তো বুঝলাম না
.
ঘাফলা আছে,তখন আপনাদের পাশে কেউ ছিলো না বলে কেস জিততে পারলেন না,শিট!
.
কিছু করার নাই,আমরা এতদিনে সব মানিয়ে নিয়েছি
একা ৩জন মেয়ে আর কত লড়তে পারে?
তা তোমার মায়ের কি খবর এখন?অনেক ইচ্ছা তারে একটু দেখবো,আপন বলতে উনিই ছিলেন,তোমাকে তো সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম, কত বড় হয়ে গেছো,আমি চিনতেই পারিনি,আমেরিকা থেকে থেকে কবে এসেছো?
.
আমি সেদিনই এসেছি যেদিন বাবা আর আয়াত আঙ্কেলের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো
আমার তো আপনাদের কথা মনেই ছিল না,কারণ সেই ছোটবেলায় আপনাদের বাসায় আসা যাওয়া হতো তারপর সব ভুলে গেসিলাম
আর সেদিন লাশবাহী গাড়ী করে বাবার লাশটাই এসেছিলো,আয়াত আঙ্কেলের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না!
বাবা কার ড্রাইভ করছিলো পাশে যে আয়াত আঙ্কেল ছিল তা আমরা আজ জানলাম আহানার থেকে
মা সেই থেকে কথা বলার শক্তি হারিয়েছে!আপনাদের ছবি দেখতো আর কাঁদতো,,কত ডাক্তার দেখিয়েছি কোনো লাভ হয়নি
আমরা কয়েক মাস বাদেই আপনাদের বাড়িও গিয়েছিলাম বাট সেখানের দারোয়ান জানালো বাসাটা বিক্রি করে দিয়ে আপনারা নাকি চলে গেছেন,কোথায় গেছেন তার হদিস সে জানে না
.
এভাবে সব শেষ হয়ে আবার পুনর্জীবিত হবে ভাবতেই পারিনি
আপনি এক কাজ করুন আমার সাথে চলুন বাসায়,মা আপনাকে দেখলে অনেক খুশি হবে
.
চা রেডি😒ধরেন!
.
আহানা ঠাস করে চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রাখলো
শান্ত ব্রু নাচিয়ে মুখে এক চুমুক দিতেই কেশে উঠলো
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”মিষ্টি আরেকটু দিব?”
.
শান্ত হালকা হেসে বললো”মিষ্টি কম হইছে,নাড়তে হবে আরেকটু”
এটা বলেই শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরে সেখান থেকে আঙ্গুল একটা নিয়ে চায়ে চুবিয়ে নেড়ে নিলো
.
আম্মাগো!!!!আউচ!হাত জ্বলে গেলে আমার,হাত ছাড়ুন!
.
ব্যস পারফেক্ট
.
তোরা এখনও আগের মতই ঝগড়া করস,একটুও বদল হয়নি
.
আহানা নিজের আঙ্গুল মুখে পুরে চুষতে চুষতে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”বের হোন আমাদের বাসা থেকে”
.
শান্ত আহানার কথায় কোনো মনই না দিয়ে আহানার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো”আন্টি চলুন না আমার সাথে”
.
কিন্তু বাবা,এতো রাতে
.
তো কি হইছে?দরকার হলে আমাদের বাসায় থেকে যাবেন,এখন চলুন
.
তাহলে অপেক্ষা করো আমি শাড়ীটা বদলিয়ে আসি
মা ভিতরের রুমে গেলেন
.
আহানা শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেছে
শান্তর পরনে ব্রু টিশার্ট আর জিন্স সবই ঠিকঠাক ছেলেটার তবে স্বভাব খারাপ এই আর কি
.
চলো বাবা আমি তৈরি
.
শান্ত আহানার আম্মুর হাত ধরে হাঁটা ধরেছে
আহানা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চোরের মত চেয়ে আছে ওদের দিকে
.
মা থেমে গিয়ে বললো”আহানা বাসায় একা,আহানা যাবে না?”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”এই বিনা দাওয়াতের মেহমান!চলুন ”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বাসার দরজা আটকিয়ে ফেললো তারপর বাসার ভেতরে থেকে বললো “যাবো না”
.
না আমি আহানাকে রেখে যেতে পারবো না,একা একটা মেয়ে
.
আন্টি আপনি হাঁটা ধরেন আমি এরে আনতেছি
.
মা শান্তর কথামতন হেঁটে চললেন
শান্ত হাত কছলাতে কছলাতে বাড়ির সামনে এসে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো
.
কি?বললাম না যাবো না
.
তুমি যাবে না তোমার ২০গুষ্টি যাবে,চলো এখন!দরজা খুলো,এক নাম্বারের বেয়াদব একটা
.
আমি যাব না মানে যাব না
.
তাহলে তোমার মাকে আর দেখবা না,আমি উনাকে আমাদের বাসায় রেখে দিব,একা একা থাকো তুমি তাহলে
.
আহানা তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থেকে বললো”মা কোথায়?”
.
শান্ত ওর কথার উত্তর না দিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো
.
হাত ছাড়ুন,কথায় কথায় হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন কেন আপনি?
.
শান্ত চিকন সরু মাটির পথটা দিয়ে হেঁটে চলেছে আহানার হাত ধরে
তারপর আহানাকে কারের সামনে এনে ওর হাত ছাড়লো শান্ত
মা চোখ বড় করে আহানার কাছে এসে ওর কানে ফিসফিস করে বললেন”কি সমস্যা তোর??এরকম করিস কেন?জানিস না শান্ত কি হয় তোর?”
.
তো?কি করবো?
.
কিছু করতে হবে না চুপ থাক
.
শান্ত কারের দরজা খুলে দিয়ে বসতে বললো আহানার মাকে
উনি আহানাকে নিয়ে ভিতরে এসে বসলেন
শান্ত কার চালাতে চালাতে রিপাকে কল করে বললো ডিনার রেডি করতে আহানার মাকে নিয়ে আসতেছে সে
তারপর বাসার সামনে আসতেই আহানার মা কেমন করে যেন চেয়ে রইলেন বাসার দিকে
তার ও ঠিক এরকমই একটা রাজপ্রাসাদ ছিল
তাও এই ভেবে খুশি হলেন যে আপনজন বলতে কাউকে তো পেলো অবশেষে
শান্তর মা যখন শুনেছেন আহানার মা আসতেছে তখন থেকে তিনি দরজার কাছে এসে বসে আছেন
আহানার মা কার থেকে নামতেই শান্তর মাকে দেখে বুবু বলে চিৎকার করে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে
আহানা কার থেকে নেমেই ভ্যাত করে কেঁদে দিয়েছে ওদের দুজনের কান্না দেখে
.
এ্যা😭😭😭
.
শান্ত আহানার দিকে চেয়ে এক ভেটকানি দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
আহানা কাঁদতে কাঁদতে এসে মায়ের পিঠে হাত বুলালো
শান্তর মা কান্না থামিয়ে এবার একটু হাসলেন তারপর ভিতরে চলে গেলেন সাথে আহানার মাকে নিয়ে
মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পারছেন না অথচ এ কটা বছরে কত কথা জমিয়ে রেখেছিলেন তিনি
আহানা সোফায় বসে এদিক ওদিক দেখছে
আর তার মা মনের সব কথা শান্তর মাকে খুলে বলছেন
শান্তর মা ইশারা ইঙ্গিতে কথার তাল মেলাচ্ছেন
আহানা এবার উঠে বাসাটা একটু ঘুরে দেখতে চাইলো পরে ভাবলো ঐ লোকটার সাথে আবার দেখা হয়ে গেলে আবার আমাকে উল্টা পাল্টা বলবে তার চেয়ে বরং আমি গন্ধরাজের বাগানটা দেখে আসি
আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে বাসার পিছন দিকটায় গেলো
বাতি জ্বালানো থাকায় বাগানটা বেশ সুন্দর লাগছে এবং স্পষ্ট ও লাগছে
আহানা ফুল কয়েকটা ছিঁড়ে কানে গুজে হাঁটা ধরলো,চারপাশে বাউন্ডারি করা মাঝখানে বাসা চারিদিকে গন্ধরাজ ফুলের ঘ্রানে মৌ মৌ করতেছে
আহানার মন চাচ্ছে এখানে সারাজীবন বসে থাকতে
এখানে অনেকক্ষণ থেকে আহানা এবার বাসার সামনে আসলো,বারবার সূর্যমুখী বাগানটার দিকে নজর যাচ্ছে তার
যদিও এই ফুল তার পছন্দের তালিকায় পড়ে না তাও দেখতে ভালো বলে একটু একটু করে এগোচ্ছে সে
বাগানটার ভিতরে ঢুকে সে মাথা উঁচু করে ফুলগুলো দেখে যাচ্ছে
শান্ত বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে পা গ্রিলের উপর রেখে গান শুনছে আরামসে
হঠাৎ চোখ খুলতেই দেখলো সূর্যমুখীর বাগানটার কিছু ফুল নড়তেছে তারমানে নির্ঘাত আহানা সেখানে
শান্ত কান থেকে ইয়ারফোন খুলে এগিয়ে এসে বললো”আহানা!”
.
আহানার আর একটুর জন্য হার্ট এ্যাটাক হতো,বুকে থুথু দিয়ে পাশের বারান্দার দিকে চেয়ে বললো”ধমক দেওয়ার কি আছে?আমি কি ফুল ধরসি নাকি?”
.
ধরো নাই ছিঁড়ে ছিঁড়ে মাথায় দিসো,আমার মায়ের গন্ধরাজ ফুলের বাগানের সব ফুল দেখি মাথায় দিয়ে রাখসো তুমি
.
আপনার মা তো আমার আন্টি হয় তাই সেই অধিকারে ধরছি তাতে আপনার কি?
.
বের হও আমার বাগান থেকে তার পর বুঝাচ্ছি আমার কি
.
বের হবো না,আমার ইচ্ছা আমি এই বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখবো
.
শান্ত ভ্রুটা কুঁচকিয়ে বললো”ওয়েট আসতেছি আমি”
.
আহানা ঢোক গিলে বাসার ভিতর জলদি করে এসে সোফার পিছনে লুকিয়ে পড়েছে
শান্ত হনহনিয়ে বাগানের দিকে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো কোথাও আহানাকে পেলো না
.
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো”মা/আন্টি কেউ বলবেন না আমি কই লুকিয়েছি”
.
শান্ত ড্রয়িং রুমে এসে চারপাশটা ভালো মতন দেখে নিলো,আহানা নেই
আহানার আম্মু সোফায় বসে আছেন পাশেই হুইলচেয়ারে শান্তর মা বসে আছেন দুজনেই শান্তর দিকে ভূত দেখার মতো চেয়ে আছেন
রিপা দাঁত কেলিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসতেছে
.
আচ্ছা,আহানা ছোটবেলায় সবসময় সোফার পিছনে লুকাতো,তো আই গেস ও এখনও সোফার পিছনেই লুকিয়েছে
আহানা কথাটা শুনতে পেয়ে জিভে কামড় দিয়ে পাশে দিয়ে বেরিয়ে এক দৌড় দিলো
শান্ত ও দৌড় দিলো
.
দেখছেন আপা দুজনে এখনও সেই আগের মতনই আছে,আমি তো ভেবেছিলাম এত বছর পরেও ওদের কিছু মনে থাকবে না কিন্তু এখন তো দেখি সব মনে আছে ওদের
তা আপনার ছোটটা কই?মেয়ে হলো নাকি ছেলে সেটাই জানতে পারলাম না ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস
.
মা মুচকি হেসে রিপার দিকে চেয়ে ইশারা করলেন
রিপা গেলো নিতুকে আনতে
নিতু পা টিপে টিপে সোফার রুমে আসলো
তারপর মুচকি হেসে সালাম দিয়ে পাশে বসে পড়লো আহানার মায়ের
মহিলাটির প্রতি তার আলাদা একটা শ্রদ্ধা আছে কারণ ছোট থেকেই সে মায়ের কাছে উনাদের ছবি দেখতো
আহানার মা নিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন”কি মিষ্টি মেয়ে,একদম দেখতে শান্তর মত হয়েছে”
.
শান্তর মা মুচকি হাসলেন
.
ওদিকে আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে করিডোরের শেষ প্রান্তে এসে থেমে গেছে,আর যাওয়ার পথ নেই
শান্ত হাত মুঠো করে মুড়িয়ে মুড়িয়ে আসতেছে এদিকে
.
এই খবরদার আমাকে টাচ করবেন না বলে দিলাম
.
আমার বাগান নষ্ট করবে আর তোমাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব?তা হচ্ছে না
.
ককককি করবেন আপনি?
.
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার চুল ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলো
.
ছাড়ুন লাগতেছে আমার,কি এমন করছি যে আমাকে এরকম শাস্তি দিচ্ছেন
.
এই যে কি করছো দেখো,আমার ২টা সূর্যমুখী ফুলগাছ মাঠির গোড়া থেকে নড়িয়ে চড়িয়ে দিসো যার কারণে ওগুলা মাটিতে শুয়ে গেছে এখন এই মূহুর্তে তুমি পুঁতে দিবা এগুলা নাহলে চুল টেনে ছিঁড়ে হাতে ধরায় দিব তোমার
.
মায়ায়ায়ায়ায়ায়া
আন্টিইইইইইইই
.
লাভ নাই!তোমাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না,চুপচাপ আমার কাজ করে দাও নাহলে কাদা খাইয়ে দিব
.
আহানা ব্রু কুঁচকে মাটিতে গোল হয়ে বসে গাছগুলো পুঁতে দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে আড় চোখে শান্তর দিকে তাকাচ্ছে
মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে এর শোধ তুলবে যে করেই হোক
.
হুম পারফেক্ট,নেক্সট টাইম আমার বাগানে প্রবেশ করবা না তুমি ওকে?
এখন বের হও আমার বাগান থেকে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে চলে যাওয়ার সময় হাতের কিছু কাদা শান্তর গায়ে লাগিয়ে এক দৌড় মারলো
.
ইস!এই মেয়েটা এত দুষ্টু,আজকে আমাকে দিয়ে ১০০বার গোসল করিয়েছে,বেয়াদব!এরে হাতের কাছে পাই সিউর আমি ওরে কাদা খাওয়াবো
শান্ত আহানাকে বকতে বকতে আবার গোসল করতে চলে গেলো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৫+৬

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
এই এই গান শুরু হয়ে গেছে মনে হচ্ছে,দৌড় দে
.
রুপা আহানার হাত ধরে দৌড় দিলো
দুজনে কনসার্টের মাঝখানে চলে আসছে দৌড়াতে দৌড়াতে
আহানা মাথা উঁচু করে তাকালো সামনের দিকে,শান্তকে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললো সে
চোখটা ডলে আবারও তাকালো
নাহহহহ চোখ তো ঠিক আছে!
তাহলে এটা সেই লোকটা!আবার গানও পারে
.
কিরে?জোস না?
.
কচুর গানের মতন লাগে
.
কচুর গান মানে?
.
মানে প্রতি লাইনের সুরে আমার হাত পা চুলকাচ্ছে তাই এটা কচুর গান গাইতেছে লোকটা
যে মেইন শিল্পী তার কন্ঠেই ভাল্লাগছে,এই লোকটা গানকে কচু বানাই দিয়েছে
আমার তাই হাত পা চুলকাচ্ছে
.
ধুর এসব কি বলিস,কি সুন্দর লাগছে উনার গলায়,আহ শান্ত!!!বাই দ্যা ওয়ে নওশাদ কোথায়!আজ মিট করেই যাবো তার সাথে
ব্র্যান্ডেড লিপস্টিক দিয়ে আসছি শুধুমাত্র নওশাদের সাথে কথা বলবো বলে,তবে আগে শান্তর সাথে কথা বলার ট্রাই করবো
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে পিছন ফিরে চলে যেতে নিতেই সবার ধাক্কা ধাক্কিতে আবারও আগের জায়গায় চলে আসলো
বিরক্তি নিয়ে সে এদিক ওদিক তাকিয়ে যাচ্ছে,শান্ত গান শেষ করে দর্শক সবার দিকে তাকালো ভালো করে
তাদের মাঝে একজনকে সে চিনতে পারলো
প্রথম থেকে ৩টা সারির পরের সারি অর্থাৎ ৪র্থ সারিতে আহানা দাঁড়িয়ে আছে
মুখ বাঁকিয়ে,তার চোখ ও শান্তর দিকে
শান্ত সেদিকে চেয়ে ব্রু কুঁচকে মাইকটা হাতে নিলো
.
হ্যালো এব্রিওয়ান!!
আমি আজকে আপনাদের সাথে একটা কথা শেয়ার করতে চাই,আজ এই কনসার্টে আমার হেটার্স ও এসেছে,তাও আমার গান শুনার জন্য,থ্যাংকস টু হার!
.
সবাই চিল্লাই বলতেছে সে কে!
.
আহানা ঢোক গিলে চোরের মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,কারন কথাটা তার গায়েই লাগছে
শান্ত মুচকি হেসে স্টেজ থেকে নেমে চলে গেলো
.
বেয়াদ্দপ একটা!!আর একটুর জন্য গণধোলায় খেতাম আমি
.
এই আহানা চল না প্লিস!প্লিস!
শান্ত আর নওশাদের সাথে কথা বলবো একটু প্লিস চল না
.
আমি কেন যাবো?তুই যা
.
আমি একা গেলে কেমন দেখায় প্লিস আয় না
.
আহানা এক শর্তে রাজি হলো,শান্তর সাথে রুপা যখন দেখা করবে তখন আহানা রুপার সাথে যাবে না
রুপা তাই রাজি হলো
নওশাদ আর রিয়াজ ভিডিওতে ফোকাস করতেছে,এখন অাপলোড করবে
.
এক্সকিউজ মি🙈আপনি কি নওশাদ শেখ?
.
ইয়েস!
.
আমি রুপা রহমান,আপনার সাথে দেখা করার অনেক ইচ্ছা ছিল আমাদের!!প্লিস একটা পিক তুলতে পারি আপনার সাথে?
.
নওশাদ হেসে হাতের ক্যামেরাটা রিয়াজের হাতে দিয়ে ছবি তুলার জন্য পকেট থেকে ফোন বের করতেই ওর চোখ গেলো আহানার দিকে,দূরে সে দাঁড়িয়ে আছে
তারপর রিয়াজের হাত ধরে দূরে নিয়ে গিয়ে বললো এটা “সেই মেয়েটা না?”
.
রিয়াজ মাথা বাঁকিয়ে আহানার দিকে তাকালো,আহানা দূরের একটা পিলারের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,পরনে ঘাড়ো নীল রঙের জামা,ওড়নাটা গলায় একপাশে ঝুলিয়ে চুলগুলো সামনে দিয়ে রেখেছে আর হাতে একটা ব্যাগ
.
তুই মেয়েটার ভালো করে একটা ছবি তুলে নে,শান্তকে হাতে রাখতে হলে এই পিকগুলো কাজে লাগবে আমাদের
.
ঠিক বলেছিস
.
আচ্ছা মিস রুপা,ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমরা কি এখানে কফি খেতে যেতে পারি,5th ফ্লোরে?
.
ওয়াও তাই!!!
.
আসুন,আপনার বান্ধুবীকেও বলুন আসতে
রুপা এক দৌড়ে আহানার হাত ধরে বললো আসতে
.
ঐ লোকটা নাই তো?
.
না কোথাও তো দেখলাম না,তুই চল
.
ওকে
.
আহানা যমুনা ফিউচার পার্কের 5th ফ্লোরটা ঘুরে ঘুরে দেখতেছে
রুপা গালে হাত দিয়ে নওশাদকেই দেখে যাচ্ছে,আর রিয়াজ লুকিয়ে আহানার ছবি তুলতেছে
.
আহানা এদিকে আয়,কফি এসে গেছে
.
আহানা এসে বসতেই দূর থেকে শান্তকে দেখতে পেলো সে ফোনের দিকে তাকিয়ে আসতেছে সে,সাথে একটা ছোট মেয়ে ও আসতেছে
মেয়েটার চেহারা দেখে মনে হয় শান্তর বোনটোন হবে,চেহারায় অনেক মিল
শান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে তারপর নওশাদ রিয়াজের দিকে তাকিয়ে চেয়ার টেনে বসে গেলো
.
শান্ত গেস হোয়াট!!মিট রুপা এন্ড আহানা!!
.
কে আহানা?
.
শান্ত পাশে তাকিয়ে দেখলো আহানা দাঁতে দাঁত চেপে উঠে চলে যাচ্ছে
রুপা ওর হাত ধরে আটকিয়ে কিসব বলতেছে ওকে,মনে হয় থাকার জন্য রিকুয়েস্ট করতেছে
.
এই মেয়েটা এখানে কেন?
.
আমরা ডেকেছি,ভাবলাম তোর চেনাজানা মেয়েটা আমাদের সাথে কফি খাক,আর রুপা আমার ফ্যান তাই ফ্যানকে তো এই টুকু কদর করায় যায়
.
ফ্যান?এই মেয়েটা আমার শত্রু,আমার গান শুনতেছিলো এমন ভাব করে যেন সে লিরিক্স বুঝতেছে না
মনে হয় স্টেজে এসে আমাকে সরায় দিবে আর নিজে গান গাবে
.
ভাইয়া এই আপুটা কে?একটা ছবি তুলি?
.
নিতু!দরকার নেই,কিসের ছবি?মা কে যদি কিছু বলছো তো তোমার খবর আছে,ভুলে যাও এসব,আর তোরাও বলিহারি! এই মেয়েকে আমি চিনি এটা তোদের বললো কে?

আহানা প্লিস আমার জন্য একটু থাক!কফি খেয়েই চলে যাবো, প্লিস থাক না
.
লোকটা ভালো না,তুই বুঝিস না কেন!আমি থাকবো না
.
এ্যা এ্যা😭তুই আমার বেস্টি না,আমার মন রাখস না😭
.
ফাইন!
.
আহানা হেঁটে গিয়ে চেয়ার টেনে দুম করে বসলো
শান্ত ফোন থেকে চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো সাথে সাথে
রুপা ঢুলে ঢুলে বললো “আমি আপনাদের সবার সাথে একটা ছবি তুলি?”
.
তুলেন!
.
রুপা ছবি তুলতেছেই আর আহানা শান্তর দিকে একবার দুবার তাকাচ্ছে,এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন কাঁচা গিলে খাবে
শান্ত তো চেয়েই আছে ওর দিকে
সকালের টায়ার পাঞ্চারের কথা মাথা আসতেই মন চাচ্ছে ওরে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিতে
.
ভাইয়া আপুটা ওমন করে তাকাচ্ছে কেন তোমার দিকে?
.
মিরকির অসুখ তো তাই,জুতা শুকালে সব ঠিক হয়ে যাবে
.
আহানা চোখ রাঙিয়ে বললো”আপনার তো চোখই নষ্ট,কাঁচামরিচ কুচি করে চোখে মাস্ক হিসেবে লাগিয়ে রাখলে চোখ ঠিক হবে আপনার”
.
ও মাই গড সত্যি?
.
আহানা নিতুর প্রশ্নে কিছু বললো না,নিতুর দিকে তাকিয়েই হাতের কাছে যে কফির মগ পেলো সেটা হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে আর গিলতে পারলো না,একটুও মিষ্টি নাই,অনেক কষ্টে গিলে এখন ড্যাবড্যাব করে সেদিকে চেয়ে আছে,এই কফিতে কি ওরা চিনি দিতে ভুলে গেলো?
.
ওয়েটার!!আরেকটা কফি দিয়ে যান,,উইথ আউট সুগার,আমারটা কাকে নিয়ে গেছে
.
আহানা রাগে গজগজ করতে করতে উঠে চলে গেলো
.
আরে আহানা দাঁড়া যাইস না আরেকটু থাক
.
আহানা আর থাকলো না. চলে গেলো সোজা
.
যাক বাঁচলাম!
.
শুন শান্ত!আহানার অনেক ছবি তুলেছি আমরা,এবার আমাদের কথামত ট্রিপে যাবি তো নাহলে পিকটা আন্টির হাতে যাবে
.
গেলে যাক,আমার মা এরকম ত্যাজের মেয়েকে পছন্দ করবে না কোনোদিন
.
আহানা বাসায় এসে ব্যাগটা রেখে দৌড় দিয়ে চলে গেলো টিউশনি করাতে

মা জানো ভাইয়া আজ শপিং মলে একটা মেয়ের সাথে যে ঝগড়া করতেছিলো
.
মা মুচকি হেসে নিতুর দিকে চেয়ে ব্রু কুঁচকালো
.
মা ভাইয়া আমাকে ছবি তুলতে দেয়নি,তবে নওশাদ ভাইয়া বলতেছিলো তার কাছে নাকি ছবি আছে
কথাটা শুনে মা মাথা নাড়ালো
.
শান্ত বিছানায় হেলান দিয়ে ইউটিউবে তার গানটার ভিডিও দেখতেছে
.
স্যার আসবো?
.
রিপা?আসো
.
স্যার নিতু মামণির পরীক্ষার রেসাল্ট বের হয়েছিলো আজ
.
কি গ্রেট আসছে?
.
বাংলাতে ৫০,আর বাকি সব প্লাস আসছে কিন্তু বাংলায় নাম্বার কম আসছে
.
ও বাংলায় এত খারাপ কেন??৩টা টিচার রাখছি কি জন্যে?নিতুকে ডাকো
.
নিতু মাথা নিচু করে দূরে দাঁড়িয়ে আছে তারপর পা টিপে টিপে আসলো,শান্তর সামনে এসে দাঁড়ালো সে
.
কি ব্যাপার নিতু?এসব কি শুনছি?তুমি বাংলায় এত কম নাম্বার পেলে কি করে?
.
ভাইয়া আমাকে যে টিচার বাংলা পড়ায় উনি বেশির ভাগ ইংরেজিতে কথা বলেন,আমার বাংলা বুঝতে problem হয়
.
রিপা তুমি এক কাজ করো নিউ টিচার খুঁজো ওর জন্য,এখন যে বাংলা টিচার আছে সে বাদ
এমন একজন টিচার আনবা সে যেন শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং মার্জিত ভাবে নিতুকে বাংলায় পারদর্শী করে তুলতে পারবে
.
ওকে স্যার
আপনার কথামত আমার চেনাজানা একটা মেয়ে আছে,আমার ছোট বোনকে পড়ায়,বাংলায় অনেক ভালো,আপনি যদি বলেন তো তাকে আনাই?
.
ওকে,আনো,সমস্যা নেই,তবে সন্ধ্যা ৬টায় আসতে বলবা,আমি নিজের চেখে দেখবো কেমন পড়ায়
.
ঠিক আছে স্যার
.
রিপা রুম থেকে বেরিয়ে তার মাকে ফোন করলো
.
হ্যালো মা,আহানা কি আজকে রুনাকে পড়াতে এসেছে?
.
হুম,পড়াচ্ছে তো,কিন্তু কেন জিজ্ঞেস করছিস
.
শান্ত স্যারের ছোট বোনকেও পড়াতে হবে,বাংলায় একটু খারাপ তো তাই,আহানাকে ফোনটা দাও তো
.
আহানা মা ধরো রিপা তোমার সাথে কথা বলতে চায়
.
হ্যালো রিপা আপু
.
আহানা?কেমন আছো?
.
ভালো আছি,তুমি কেমন আছো?
.
ভালো,আসলে একটা কথা বলার জন্য ফোন করলাম,তুমি কি আমার স্যারের বোনকে বাংলা পড়াতে পারবা?
.
হুম পারবো,কখন পড়াতে হবে?
.
সন্ধ্যা ৬টা থেকে
.
আমার জন্য একটু কষ্টের হবে
.
স্যার মোটা অঙ্কের টাকা দিবে,স্যারের একটামাত্র বোন,কোনোমতে সব ছেড়ে এটায় ঢুকে যাও,তোমার কথা মাথায় আসতেই আমি তোমাকে কল করলাম
.
ঠিক আছে,আমি আসবো
.
আচ্ছা তাহলে কাল থেকে এসো কেমন!!

আহানা আজ বাসায় ফিরার সময় মায়ের জন্য তেতুল কিনলো,আচার বানাবে,মায়ের তেতুল অনেক পছন্দ,আর তেতুল খেলে মায়ের প্রেসারের কারণে মাঝে মাঝে যে মাথা ঘুরানি উঠে সেটা চলে যাবে
বাসায় আসতেই মায়ের হাতে তেতুল দিলো সে
মা তো রেগে গেলো,তেতুলের পিছনে টাকা খরচ কেন করেছে সেটাই বলে যাচ্ছেন উনি
.
আহানা মুচকি হেসে বিছানায় পা তুলে বসলো হাতে মুড়ির বোয়াম নিয়ে আর হেসে হেসে বললো”আরে মা!আমি একটা ভালো বেতনের টিউশনি পেয়েছি,রিপা আপু ফোন করে জানালো”
.
তাই নাকি,তাহলে তো ভালো
.
কিন্তু সমস্যা আছে,সন্ধ্যা ৬টায় যেতে হবে প্রতিদিন
.
সে সমস্যা নাহ,৭টায় বাসায় ফিরে আসলে আর কোনো সমস্যা নাই,তুই হ্যাঁ বলে দে
.
হুম বলছি আপুকে যে কাল থেকে আসবো
.
আমি কাঁকরোল দিয়ে ইলিশ মাছ রেঁধেছি,তোর খালা আজ ইলিশ মাছ আনছে,হাত ধুয়ে খেতে বস,মুড়ি নিয়ে বসেছিস কেন?
.
কি?কাঁকরোল??আবার ইলিশ মাছ?
যাও আজ আমি ভাতই খাবো না,তুমি জানো আমি তরকারিতে কাঁকরোল আর মাছের মধ্যে ইলিশ খাই না আর তুমি সে দুটোই একসাথ করে রাঁধলে?
.
কি করবো,বাসায় তরকারি ছিল না,গাছ থেকে কাঁকরোল ছিঁড়ে এনে রেঁধেছি
.
আমি শুধু ভাত আর ঝোল দিয়ে খাবো,আগে বলো খালা কই?
.
তোর খালা খেয়ে দেয়ে আবার চলে গেছে
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে ঝোল দিয়ে শুকনা ভাত খাচ্ছে,মা বারবার বলতেছে একটু খেয়ে দেখ,বেশ লাগছে খেতে তরকারিটা
.
না সে খাবেই না
আহানা এমন একটা জাতি যে ইলিশ মাছ পছন্দ করে না

রিপা আমার ইলিশ কই??সব দেখি মিট আইটেম,আমি না বললাম আজ ইলিশ খাবো!
.
স্যার ম্যাডাম রাঁধতেছে,আপনি একটু বসুন
.
রাঁধতেছে মানে,কেমনে রাঁধতেছে,আর তুমি মাকে যেতেই বা কেন দিলা?
শান্ত দৌড়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে
মা হুইলচেয়ারে বসেই ইনডাকশান ওভেনকে তার সামনে একটা ছোট টেবিলের উপর রিপাকে দিয়ে রাখিয়ে শান্তর জন্য ইলিশ রাঁধতেছেন
শান্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মায়ের পাশে গিয়ে বসলো
.
তারপর রিপার দিকে চেয়ে বললো “মা এসব তোমাকে দিয়ে এরেঞ্জ করালো কি করে?”
.
রান্নাঘরের সামনে এসে হাত দিয়ে ইশারা করতেছিলো তাই আমি এমন করে ব্যবস্থা করে দিয়েছি
.
আর করবা না,মায়ের শরীর ভালো না,দরকার নেই এত কিছুর
.
স্যার আপনার ইলিশ মাছ এত পছন্দের যে আজ আমি বুয়াকে দিয়ে ৪আইটেম বানিয়েছি ইলিশ মাছের আর তার পরেও ম্যাম ইলিশ মাছের আরেকটা আইটেম বানাচ্ছে
.
হুম,আমি ইলিশ দিয়ে সারাজীবন ভাত খেতে পারবো অন্য কিছু বাদেই
.
মা মুচকি হেসে শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,তারপর ডাইনিংয়ে এসে শান্তর সাথে উনিও খেতে বসলেন,রিপা চামচে করে ইলিশ মাছ ভাজাটা শান্তর পাতে দিয়ে চলে যাওয়া ধরতেই দেখলো শান্তর মা এক চামচ ইলিশ মাছ ভাজার তেল শান্তর পাতে দিচ্ছেন
রিপা হা করে চেয়ে আছে,শান্ত কিছু বলছেও না
অথচ খাবারে তেল একদম কম খায় শান্ত,কি জানি,শান্ত স্যারের পছন্দ অপছন্দের লেভেল সব উদ্ভট,আমি এতবছর ধরে এখানে জব করি,আজও বুঝে উঠতে পারি না
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আজ সারাদিন আহানার ব্যস্ততার ভিতর দিয়ে কেটেছে সব
সকালে বাচ্চাদের পড়িয়ে ভার্সিটিতে যাওয়া তারপর ভার্সিটি ছুটি হলে ২টা টিউশনি
সব শেষ করে বিকালে বাসায় ফিরে একটু ঘুমিয়ে সে এবার গেছে রিপার দেওয়া ঠিকানায়,আজ থেকে নতুন টিউশনি শুরু
.
বেশ বড় বাড়ি!ভালো বেতন পাবো মনে হচ্ছে,এটার বেতন ভালো হলে বাকি যে ২টা টিউশনি আছে সেগুলো ছেড়ে দিব,এত জার্নি ভালো লাগে না
গেটে দারোয়ান ও আছে দেখছি,রিপা আপু কত বড় উপকার করলো আমার
আহানা এগিয়ে গিয়ে বললো সে এই বাসার মেয়েকে পড়াতে এসেছে
.
ও আপনি নিতু মা মণিরে পড়াতে এসেছেন?দাঁড়ান আমি রিপা আপাকে ডাকতেছি
কথাটা বলে দারোয়ান চলে গেলো বাসার ভিতরে
.
আহানা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বাসার,বাসার সামনে একটু জায়গাও খালি নাই যেখানে সূর্যমুখী ফুল নাই
এটা আবার কেমন বাড়ি!মানুষের গোলাপ পছন্দ হয় আবার একসাথে অনেক ফুল পছন্দ হয় আর বাগান করে সেটা দিয়ে এখানে দেখি চারিদিক হলুদ আর হলুদ,আজব বাড়ি তো!
এখান থেকে একটা ফুল নিয়ে যাব যাওয়ার সময়,সূর্যমুখী ফুল আমার তেমন পছন্দ না কিন্তু এতগুলো থেকে একটা নিয়েই যেতেই পারি!দেখতে ভালোই
ওমা!!!!গন্ধরাজ ফুল
আহানা গেট খুলে দৌড় দিলো সেদিকে,বাড়ির একদম শেষ প্রান্তে গন্ধরাজ ফুলের লম্বাতে বিরাট বড় সারি,একদম হাফ কিলোমিটার হবে,এত সুন্দর লাগছে,সবুজের উপর সাদা আর সাদা,সব ফুল ফুটে আছে
বেশ লাগতেছে দেখতে
আহানা একটা ফুল নিয়ে কানে গুজে পিছন ফিরে তাকালো,গোল করে বিরাট একটা খোলামেলা বারান্দা,মনে হয় যেন বারান্দার সামনে ইচ্ছে করেই গন্ধরাজের সারির বিস্তার করা হয়েছে যাতে বারান্দায় বসে অনায়াসেই ঘ্রান নেওয়া যায়
আহানা আরও দুটো ফুল নিয়ে এগিয়ে গেলো,গন্ধরাজ ফুল ওর অনেক পছন্দের,আরেকজনের বাগান বলে বেশি নিলো না
আহানা সামনের দিকে এসে দেখলো বাসার ভেতর থেকে রিপা আসতেছে হাসিমুখে
আহানা আজ প্রথমদিন বলে ৬টা বাজার আগেই চলে এসেছে
.
যাক আহানা এসেছো তাহলে!এই এক মিনিট!সরো সরো সরে দাঁড়াও,স্যার আসতেছে
আহানা রিপার কথামত সরে দাঁড়ালো
শান্ত কার নিয়ে ঢুকেতেছে গেট দিয়ে,প্রতিদিন এসময়ে সে অফিস থেকে ফেরে
রিপা বললো স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দিবে কিন্তু পরে,স্যার এখন ফ্রেশ হতে যাবে
শান্ত ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেলো বাসার ভিতর
আহানা পাশের সূর্যমুখী ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখছে,শান্তর দিকে খেয়াল করলো না
এগুলা থেকে নাকি তেল বের হয়,আমি কি এক বোতল তেল নিতে পারবো??তাহলে রান্নার তেল কিনতে হবে না কয়েকদিনের জন্য
রিপা আহানাকে ভিতরে আসতে বলে সেই কখনই চলে গেছে
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে পা টিপে টিপে সূর্যমুখীর বাগানে ঢুকে পড়েছে
একটা ফুলের মাঝখানে হাত দিয়ে টিপেটিপে সে মাটিতে বসে পড়েছে তাও তেল বের হচ্ছে না,পরে মনে করার চেষ্টা করলো রুপাদের বাসায় ডিসকভারি চ্যানেলে দেখেছিলো সূর্যমুখীর তেল কি করে বের করে
সব ভুলে গেছে সে
খানিকটা মনে আছে,তাই নিজের বুদ্ধি দিয়ে মনমতো এবার ফুলটাকে কিলাচ্ছে সে
সূর্যমুখীর বাগানটা বরাবর যে রুমটার সামনে সেটা হলো শান্তর রুম
শান্ত রুমে ঢুকে দরজা লক করে হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে টাই খুলতে খুলতে বারান্দার পর্দা সরিয়ে বারান্দায় চলে আসলো
তারপর টাইটা রুমের ভিতরের দিকে ছুঁড়ে মেরে শার্ট খুলে ফেললো তারপর তার নজরে পড়লো বাগানের দিকে একটা সূর্যমুখী ফুল বারবার নড়তেছে
শান্ত ব্রু কুঁচকে সেদিকে চেয়ে রইলো তারপর গায়ের গেঞ্জি খুলতে খুলতে সেদিকে ভালো করে খেয়াল করলো,একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে সে গোল হয়ে মাটিতে বসে সূর্যমুখী ফুলকে বসে বসে কিলাচ্ছে
মেয়েটা কে?
.
আহানা কিছুই পেলো না, তেল তো দূরে থাক
শেষে কয়েকটা সূর্যমুখীর বিজ নিয়ে হাঁটা ধরলো
.
শান্ত দারোয়ানকে ডাক দিয়ে বললো বাগান চেক করতে
তারপর গোসল করতে চলে গেলো সে
আহানা গায়ের জামা থেকে মাটি ঝেড়ে বাসার ভিতর ঢুকতেছে
রিপা ওকে নিয়ে নিতুর রুমে চলে গেলো
নেভি ব্লু কালারের রুমটা,ছোটখাটো রুম,বড় বড় মানুষের আকারের দুটো টেডিবিয়ার আছে সেখানে,ফ্লোরে বসিয়ে রাখা
একটা গোলাপি আরেকটা নীল,একটা ছোট বিছানা আর টেবিল আর একটা আলমারি আছে সেখানে
আহানা গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো
রিপা নিতুকে ডেকে আনতে গেছে,সে তার মায়ের রুমে এখন
নিতু তার রুমে এসে সালাম দিয়ে চেয়ার টেনে বসতেই আহানাকে দেখে চমকে গেলো
আহানাও তাকে দেখে চমকে একেবারে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে
.
এটা তো সেই মেয়েটা যে কাল ঐ অসভ্য লোকটার সাথে ছিল
.
আরে তুমি আহানা আপু না?
.
আহানা ঢোক গিলে বললো”সরি,আমি ভুল করে চলে আসছি”
আহানা ব্যাগ নিয়ে এক দৌড় মারলো
রিপা গিয়ে ওকে আটকালো তখনই
.
আরে আরে কই যাও,কি হয়েছে সেটা তো বলবা,এরকম চলে যাচ্ছো কেন?নিতু কে চেনো তুমি?
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”মাফ করে দিও,আমি এই টিউশনি করাতে পারবো না!”
.
শান্ত তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে দারোয়ানের সাথে কথা বলতেছে,দারোয়ান জানালো নিতুকে যে নতুন ম্যাডাম পড়াতে এসেছে সে সূর্যমুখী বাগানে ঢুকেছিলো
.
শান্ত ঠিক আছে বলে পিছন ফিরতেই দেখলো আহানা ভূত দেখার মত তাকিয়ে আছে ওর দিকে তারপর চোখ নামিয়ে দৌড় দিলো
শান্ত কিছু বুঝে উঠতে না পরেে বললো”দাঁড়ান”
.
আহানা থেমে গিয়ে দোয়াদরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে
.
আপনি আমার বাসায় কি করতেছেন?
.
আপনাকে কেন বলতে যাবো?
.
আজব তো,আমার বাসায় আসছেন আর বলতেছেন আমাকে কেন বলতে যাবেন?
.
আমি কি করবো না করবো সেটা আপনাকে বলতে হবে?
.
আপনার কথার একটু সৌন্দর্য নাই,অলওয়েজ বিচ্ছিরি ভাবে উত্তর দেন
.
তো যখন এটা জানেন তখন আমার সাথে কথা বলতে আসেন কেন আপনি?স্টুপিড!
.
কি বললেন?আমি স্টুপিড?বের হোন আমার বাসার থেকে,বেয়াদব মেয়ে একটা,আকরাম মিয়া!! এরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করো
.
রিপা আর নিতু মুখে হাত দিয়ে চেয়ে আছে শান্ত আর আহানার দিকে
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে চেয়ে থেকে বললো”আমাকে অপমান করলে আমিও অপমান করি”
কথাটা বলে সে চলে গেলো
.
শান্ত ওর চলে যাওয়া দেখছে আর মনে মনে ভাবছে আবার ফিরে আসবে নির্ঘাত আমাকে অপমান করার জন্য
আহানা সূর্যমুখী বাগান থেকে কাদা মুঠো করে নিয়ে এগিয়ে আসতেছে
শান্ত রিপা আর নিতুর দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো”নাটক হচ্ছে এখানে?যাও এখান থেকে”
কথাটা শেষ না করতেই ওর সারা গায়ে কাদা এসে পড়লো
চোখ বন্ধ করে সে পিছন ফিরলো,তারপর রাগে গজগজ করতে করতে তাকালো
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো”চলে যাচ্ছি!আমাকে অপমান করলেন তাই আমিও করলাম,মানুষকে বলতে পারবো মিঃশান্তকে কাদা লাগিয়ে তার বাসা থেকে বের হতে পেরেছি”
.
ইউ স্টুপিড!
শান্ত এগিয়ে যেতেই মা এসে পড়লো সেখানে,হুইলচেয়ার নিজে চালিয়েই ড্রয়িং রুমে এসে পড়েছেন তিনি
.
আহানা চমকে উনার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো,উনাকে কোথায় যেন দেখেছে সে,মনে করতে পারছে না,বারবার মনে হচ্ছে মহিলাটি তার চেনা
.
মা দেখো আমি মাত্র গোসল করেছি আর এই মেয়েটা কি করেছে
.
মা আহানার দিকে চেয়ে রয়েছেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে
৭বছর আগে এই মেয়েকে তিনি দেখেছেন!আরে এ তো আহানা!!!কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারলেন তিনি,তার যে কথা বন্ধ হয়ে গেছে
তিনি শুধু মুচকি হেসে কাঁদতে কাঁদতে হাত দিয়ে আহানাকে কাছে ডাকলেন
আহানা তাকিয়ে আছে হতবম্ভ হয়ে,মনে আসতেছেই না এই মহিলাকে সে কোথায় দেখেছে,তাই এগিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো সে
শান্তর মা কাঁদতে কাঁদতে আহানাকে জড়িয়ে ধরেছেন
শান্ত,নিতু রিপা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
উনি কেঁদেই যাচ্ছেন
.
মা?তুমি উনাকে চিনো?
.
মা কাঁদার জন্য কিছু ইশারাও করতে পারছেন না,শুধু রিপার দিকে তাকিয়ে রান্নারুমের দিকে ইশারা করলেন,তার মানে কিছু আনতে আহানার জন্য
রিপা তাই করলো
আহানার এইটুকু মনে পড়লো তার আন্টি হোন ইনি,তবে কিসের আন্টি,কোথাকার আন্টি তা মনে করতে পারলো না সে
.
উনি চোখ মুছে আহানার হাত মুঠো করে ধরে আছেন এখনও,তারপর শান্তকে ইশারা করলো তাকে নিজের রুমে দিয়ে আসতে
শান্ত আবার ফ্রেশ হতে চলে গেছে
মায়ের এমন ভাব দেখে মনে হয় আহানাকে কত আগে থেকে চেনেন তিনি,কিন্তু সে তো আহানাকে চেনে না
শান্ত ফ্রেশ হয়ে এসে মাকে কোলে তুলে বিছানায় হেলান দিয়ে বসালো
মা আলমারির দিকে ইশারা করলো,তারপর হাত দিয়ে পৃষ্ঠা উল্টানোর মত করে বুঝাতে চাইলো আলমারি থেকে এমন কিছু বের করতে যেটা বইয়ের মত
শান্ত আহানার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আলমারি খুললো
আহানা বোকার মত সবদিক দেখে যাচ্ছে
আন্টির বারান্দা দিয়ে লম্বাতে গন্ধরাজের সারিটা দেখা যায়
রুমটা খয়েরী রঙ করা,বেশ দেখতে,পরিপাটি একদম
শান্ত আলমারি খুঁজে একটা হালকা পাতলা লাগেজ বের করলো,বই পেলো না
তারপর লাগেজটা নিয়ে মায়ের সামনে রাখতে গিয়ে আহানাকে ধমক দিয়ে বললো”সরুন এখান থেকে,দেখেন না এটা রাখতেছি,,পিলারের মত দাঁড়িয়ে আছে!
.
আহানা ব্রু কুঁচকে দূরে সরে দাঁড়ালো
শান্ত লাগেজটা খুলে একটা পুরোনো ফটো এলবাম বের করলো
শান্তর বাবার ফ্রেন্ডজোন নিয়ে তোলা একটা ছবি খুঁজে বের করলেন মা
১০জনের একটা ছবি,সবার গায়ে নীল কোর্ট
এলবামটা খুঁজে তারপর শান্তর বাবার গলায় হাত রাখা একটা লোককে ইশারা করে দেখালেন তিনি শান্তকে
শান্ত চিনতে পারলো না
আহানা মাথা উঁচু করে তাকিয়ে বললো”আরে এটা তো আমার বাবা”
.
শান্ত চোখ বড় করে আহানার দিকে তাকালো তারপর মায়ের দিকে তাকালো,মা মাথা নাড়িয়ে আবার কেঁদে দিলেন
শান্ত এখনও চিনতে পারলো না লোকটাকে,কি করে চিনবে,এই ছবি যখন তোলা হয়েছে তখন সে আমেরিকা ছিল
প্রায়ই ১০বছরের মতন সেখানে ছিল সে,তবে যতদূর মনে আছে তার বাবার একজন বন্ধু ছিল,আয়াত হক নাম,
ছোটবেলায় তার মেয়েকে একবার পানিতে ফেলে দিসিলাম আমি,তখন মনে হয় মেয়েটার বয়স ৪বছর ছিল
তাহলে ইনি কি সেই আঙ্কেল?
মা উনি কি আয়াত আঙ্কেল?
.
মা মাথা নাড়ালেন
.
শান্ত চোখ বড় করে আহানার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো”এই মেয়েকে ছোটবেলায় একবার পানিতে ফেলে দিসিলাম আর বড় হয়েও ফালাইছি পানিতে,কি মিল!
.
মা আহানাকে হাত দিয়ে ডেকে পাশে বসালেন
আহানা বাবার ছবিটা ধরে সাথেসাথে কেঁধে দিলো
.
মা এবার নিজের কান্না থামিয়ে আহানাকে বুকে ধরে চুপ করে রইলেন আর আহানার মাথা মুছতে লাগলেন
আহানা তার এই আন্টিকে কত দেখেছে কত রাত আন্টির সাথে সে ঘুমিয়েছে আর আজ এতবছর পর হঠাৎ দেখে সে প্রথমে চিনতেই পারলো না তাকে
শান্তর মা আহানার বাবার ছবিতে আঙ্গুল দিয়ে বারবার কি যেন বলার চেষ্টা করছেন
আহানা আন্দাজেই বললো “বাবা ও মারা গেছে”!আমরা আপনাদের অনেক খুঁজেছি,পরে বাবার লাশ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় এম্বুলেন্সের লোক থেকে জানলাম যে রিয়াদ আঙ্কেল ও কার এক্সিডেন্টে মারা গেছিলেন,সেই একই কারে বাবাও ছিলেন,তারা দুজনে একসাথে একটা জায়গায় যাচ্ছিলো,আমি আর মা আপনাদের অনেক খুঁজেছি কিন্তু আপনাদের বাসায় এসে জানলাম আপনারা গ্রামের বাড়ি চলে গেছন,ফোন ও বন্ধ ছিল আপনাদের
ওদিকে বাবাকেও কবর দিতে হতো আর আমরা আপনাদের গ্রামের বাড়ি কোথায় সেটা জানতাম না তাই আমরা চলে গিয়েছিলাম বাবার লাশ নিয়ে,এর পরে অনেকবার খুঁজেছি তাও আপনাদের পাইনি
.
শান্ত গম্ভীর গলায় বললো “আমি আমেরিকা থেকে যেদিন ফিরেছি সেদিনই সব ঘটেছে,নিতুর জন্ম আর বাবার মৃত্যু! বাবাকে একটিবার জীবিত অবস্থায় দেখলাম না আমি
বাবা কল করে বলেছিল হসপিটালে আসতেছি সেখানে দেখা হবে
বাবাকে গ্রামের বাড়ি কবর দিয়ে আমরা ২মাসের মতো সেখানে ছিলাম তারপর আবার ফিরে এসে কয়েকবছর পর নতুন বাসা নিয়েছিলাম,তাই হয়ত আমাদের পান নাই”
.
আহানা শান্তর মায়ের ইশারা বুঝতেছে না কিছুই
.
শান্ত বললো”আপনার মায়ের কি খবর সেটা জানতে চাচ্ছে মা”
.
আমার মা ভালো আছে,বাবা মারা যাওয়ার পর কত ঝড় যে গেছে আমাদের পরিবারের উপর দিয়ে,এখন ভালোই আছি,আন্টি আমাদের বাসায় আসবেন একদিন
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩+৪

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানারা সবাই শান্তদের আগেই গুহা থেকে বেরিয়ে জিপে করে চলেও গেছে
শান্ত খালি এদিক ওদিক তাকিয়ে আহানাকে খুঁজতেছে
লাস্টবার এক টাইট দিয়ে তারপর আমি ফিরবো
কিন্তু সবাই গুহা থেকে বেরিয়ে দেখলো তাদের জিপ বাদে আর কারো জিপ নেই তার মানে তারা চলে গেছে,ধুর!!
.
নওশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো”চল হোটেলে ফিরে যাই”
.
শান্ত জিপে উঠতে উঠতে বলতেছে” সূর্য আসে নাই কেন আমাদের সাথে?”
.
সে তো ঘুমাচ্ছে,বহুত টানছি উঠাতেই পারলাম না,থাক গে আমাদের কি,আজকের সব ট্রিপ মিস গেলো ওর
.
এই জিপ থেকে বাস স্টেশন গিয়ে বাসে উঠে ফিরে যাবো আমরা
.
কিন্তু শান্ত আরও দুদিন থাকলে হতো না?
.
না হতো না,মাকে দেখতে যেতে হবে আমার আর নিতু কি করছে না করছে সব দিক খেয়াল রাখতে হবে তো,এত বাইরে থাকলে তাদের খেয়াল কে রাখবে?মাকে ছাড়া এমনিতেও দূরে কোথাও গেলে আমি শান্তি পাই না
.
আচ্ছা ফাইন
কিন্তু এটা মনে রাখিস তোকে তো আমরা বছরে কটা দিনের জন্যই ফ্রি পাই শুধু নাহলে আপনি তো একজন বিজি বিজন্যাসম্যান
.
তা নয়!তোরা আমাকে বললেই আমি কিন্তু রাজি হয়ে যাই
.
তাহলে আমাদের কথা ধরে এবার বিয়েটাও সেরে নে,তুই তো আমাদের কথা খুব মানিস
.
তা হচ্ছে না, আমার মা যে মেয়েকে পছন্দ করবে সেই হবে আমার ওয়াইফ
.
আন্টির যে কবে কোনো মেয়েকে পছন্দ হবে আর কবে যে আমরা শান্তর বিয়েটা খাবো
.
আমাকে নিয়ে না পড়ে নিজেরা বিয়ে করে নিলেই তো পারেন,আপনারাও তো আমার মত ম্যাচিউর হয়ে গেছেন
বিয়ে করেন নেন
কথায় আছে টিমের একজন ফ্রেন্ড বিয়ে করে নিলে টিমের সব ফ্রেন্ডের ওয়ান বাই ওয়ান বিয়ের পালা এসে যায়
.
হাহা!১বার ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা হইছি
আমার আর মনে হয় না কাউরে চোখে ধরবে
.
নে বাস স্টেশন ও এসে গেছে,সূর্য কখন আসবে সেটা বল আগে
.
রিয়াজ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বললো”ওকে তো আমরা জিপে উঠার আগেই কল করে বলেছিলাম হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়তে, এতক্ষণে তো চলে আসার কথা”
.
সূর্য ১০মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলো
তারপর সবাই মিলে বাস ধরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো
ঢাকায় আসতে আসতে রাতের ১১টা বেজে গেছে
শান্ত বাস থেকে নামতেই একটা ছেলে বাইক নিয়ে এসে আগে ওকে সালাম দিয়ে তারপর বাইকের চাবিটা ওর হাতে দিলো
শান্ত মুচকি হেসে বললো”কেমন লাগলো তাহসান?”
.
স্যার এই বাইকটা জাস্ট ওসাম!!আপনি বললেন বাসা থেকে নিয়ে আসতে
তারপর আপনি বাইক চালিয়ে বাসায় আসবেন সায়দাবাদ থেকে তাই আনলাম,আমার তো এত ভাল্লাগছে কি বলবো!
.
তাহলে বাইকটা এখন থেকে তোমার!নাও চাবি
.
কিন্তু স্যার!
.
এত ইমোশনাল হওয়ার কিছু নাই,আমি নিউ কিনবো হাহা!!
.
স্যার এটাও তো নতুন,১০/১২দিন চালিয়েছেন শুধু
.
তাতে কি,তোমার পছন্দ হয়েছে তুমি নিয়ে যাও
.
স্যার আপনি আপাতত এটা চালিয়ে বাসায় যান তারপর না হয়
.
না,আমি রিকসা করে যাবো,আজ মন চাচ্ছে রিকসায় উঠি,বাই তাহসিন
.
তাহসিন হা করে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,শান্ত একটা রিকসা ডেকে উঠে পড়েছে ততক্ষণে

যাক বাবা!! আজ ভালোই বাজার হলো,খাটের নিচে কবেকার জমানো ১০০টাকার নোট পেয়েছিলাম হিহি,এটা দিয়েই বাজারটা হয়ে গেছে আমার
টাকাটা দিয়ে পেঁয়াজ আর আলু কিনলাম
এবার এগুলা দিয়ে রাঁধবো,মা আমার জন্য এখনও না খেয়ে আছে
আহানা এক হাতে পেঁয়াজ আর আরেক হাতে আলু নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
সায়দাবাদে যে ওভারব্রিজ আছে তার ডান পাশের মোড়ে গেলে যে টিনের ঘরগুলো আছে তার মধ্যে একটা হলো আহানাদের বাসা,গলিটা পেরিয়ে ২টা মোড় পার হলেই তাদের বাড়ি
টিনের ৩রুমের একটা বাড়ি,সামনে একটা নারকেল গাছ,তারপর সিড়ি বাসাটার সামনে,বসার সিড়ি,লাল রঙ করা
মা,খালা আর সে থাকে বাসায়,খালা সবসময় থাকে না, মাঝে মাঝে এসে থাকে
আহানা একটা ছোট্ট স্কুলে পড়ায়,এই পাড়ার সব ছোট বাচ্চাকে সে পড়ায়,যে যা পারে তাকে দেয়
তার এই কামায় থেকেই সংসারটা চলে আর তার ভার্সিটির খরচ চলে
ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত পড়ায় সে,তারপর খেয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়
ওর যখন ১৪বছর তখন বাবা কার এক্সিডেন্টে মারা যান,তখন ওরা অনেক বড়লোক ছিল,ওদের নিজেদের গাড়িও ছিল কিন্তু ওর চাচারা সব বাজেয়াপ্ত করে ওদের আজ এই অবস্থা করেছে,মাকে নিয়েই তার পৃথিবী
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই পুরো সংসারের দায়িত্ব আহানা আর তার মায়ের উপর এসে পড়েছে,এখন আর মা শরীর খারাপের জন্য কাজ করতে পারেন না বলে আহানাই সব কাজ করে,আগে মা সংসার চালাতো
আহানা একদম উল্টা পাল্টা খাতে খরচ পছন্দ করে না
বান্দরবনেও সে যেতে চায়নি,রুপা ওকে না বলেই ওর টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলো,তাই সে গেছে সেখানে,যাদের পড়াতো তাদের ও ছুটি ছিল,শীতকালের
আর বান্দরবনে যাওয়ার আরেকটা কারন ছিল সেটা হলো সুইসাইড
এখানে তো সবার সামনে সুইসাইড করা যাবে না তাই সে রুপার কথায় বান্দরবন যেতে এক পায়ে খাড়া হয়ে গেছিলো
মৃত্যুটা সে চায় কারণ!সংসারের জন্য টাকা আয় করতে গিয়ে সে ক্লান্ত!এটা কিনলো তো ওটা শেষ
মায়ের কষ্ট সে আর সহ্য করতে পারে না,সে তার সবটা দিয়ে টাকা কামাই করার চেষ্টা করে,ভার্সিটি শেষ করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশনি করায় তাও টাকাটা আসে না,যা আসে তা দিয়ে চলে না
তারা যে বাড়িটায় থাকে সেটাও ভাড়ার,তাই সে এসব থেকে চলে যেতে চায়
সে মরে গেলে তার মাকে তার খালা দেখবে,এসব ভেবেই সে মরতে চায়
কিন্তু মরতেই পারে না
এসব ভাবতে ভাবতে সে এসে পড়লো একদম শান্তর রিকসার সামনে আর দুম করে রোডে পড়ে গেলো
রিকসাআলা রিকসা বাঁকা করে আরেকদিকে নিয়ে গেছে নাহলে আজ সাত পাঁচ হয়ে যেতো
.
মামা থামান তো!
শান্ত রিকসা থেকে নেমে পিছনের দিকে এসে দেখলো আহানা হাত পায়ের বালু ঝাড়তেছে তারপর উঠে পেঁয়াজ আর আলু টোকাচ্ছে,টুকিয়ে টুকিয়ে পলিথিনে ঢুকাচ্ছে
.
আপনি!
.
কথাটা শুনে আহানা চোখ বড় করে সামনে তাকিয়ে শান্তকে দেখতে পেলো
.
আবারও মরতে এসেছিলেন তাও আমার রিকসার সামনে?বেয়াদ্দপ একটা মেয়ে তো আপনি!
.
শুনুন,আমি মরতে চায়নি,আমি হেঁটেই যাচ্ছিলাম,অন্যমনস্ক ছিলাম বলে রিকসার সামনে এসে পড়েছিলাম
.
আপনাকে আমি হারে হারে চিনি!নির্ঘাত মরতে এসেছিলেন
.
আপনার সাথে ঝগড়া করার মন মানসিকতা নাই আমার, যান এখান থেকে
.
এটা তোমার বাপের রাস্তা?
.
বাপ তুলে কথা বলবেন না একদম!আপনার বাপের রাস্তা?
.
আমার বাবা নিয়ে কিছু বলবা না!বাপের না হলেও আমার চাচার রাস্তা,হ্যাপি?
.
ইহ!!!বললেই হলো
.
আহানা!
.
আহানা ঢোক গিলে পিছন ফিরে তাকালো একজন মহিলার ধমকে
গায়ে সাদা ময়লা শাড়ী পরা একজন মহিলা এগিয়ে আসতেছেন,চোখে মুখে বয়সের ছাপ,হাতে গলায় কোনো অলংকার নেই,পায়ে ছেঁড়া জুতা সেটা আবার সেলায় করা
এগিয়ে এসে আহানার কান টেনে ধরলেন তিনি তারপর চোখ রাঙিয়ে ওকে চুপ হতে বললেন
এরপর শান্তর দিকে তাকিয়ে মুখটা অসহায়ের মত করে হাত জোড় করে ধরে বললেন”বাবা মাফ কইরা দাও,আর এমন হবে না,আমার মাইয়া অবুঝ,না জাইনা বড় বড় মানুষের সাথে লাগতে আসে,মাফ করো বাবা”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে চলে গেলো

কি সমস্যা তোর?যাকে পাবি তার লগেই ঝগড়া লাগায় দিবি??তোর এই তেজি ভাবের লায় রতন তোর জন্য পাগল হইয়া গেছে!বেশি ত্যাজ দেখাস মাইনসেরে
এসব দেখায় রতনরে পাগলা বানাইছত
.
মা!আমি কি জানি রতন কুত্তাটা আমার রাগ দেখে প্রেমে হাবুডুবু খাবে!
.
যা সর এখন,আমি ভাত রাঁইন্দা লইছি এবার তুই আলু ভাজি করে লও তারপর খামু,ঘুমাতেও তো ওইবো কত রাত ওইছে সেদিকে তোর খবর আছে,খবর কেন থাকবে সারাদিন তো ঝগড়াই করস

শান্ত বাসার সামনে এসে রিকসা থেকে নামলো,দারোয়ান ওকে সালাম দিয়ে ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে ভিতরের দিকে দৌড়ে চলে গেছে
শান্ত বাসার ভিতর পা রাখতেই একটা ৭বছরের মেয়ে দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো
শান্ত মুচকি হেসে ওকে কোলে তুলে নিয়েছে,তারপর বললো”আমার বোনটা এত রাতে ঘুমায়নি কেন?”
.
ভাইয়া আমি তো তোমাকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই কখন থেকে
.
গুড গার্ল,তা আমার বোন কি খেয়েছে কিছু?
.
হুমমম!রিপা আন্টি খাইয়ে দিয়েছে
.
তবে এখন তো তোমাকে ঘুমাতে যেতে হবে
.
হুম যাচ্ছি যাচ্ছি!
.
শান্ত জ্যাকেটটা খুলে সোফায় রেখে মায়ের রুমের দিকে গেলো,দরজাটা নক করে খুলতেই চোখ গেলো তার জানালার ধারের দিকে
সেখানে হুইল চেয়ারে বসা একজন মহিলা বসে আছেন,চোখে চশমা,হাতে একটি উপন্যাস,উনি শান্তর মা
শান্ত পা টিপে টিপে এগোচ্ছে
কিছুদূর যেয়ে যেই না মাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে
তখনই মা টের পেয়ে ওর দিকে তাকালো
শান্ত মুখটা ব্যাকা করে বললো”মা!!!দিলে তো সারপ্রাইজটা নষ্ট করে!”
.
মা মুচকি হাসলেন!তারপর শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন
শান্ত হাঁটু গেড়ে মায়ের সামনে বসলো,তারপর বললো খেয়েছো তো?
.
মা মাথা নাড়ালো
.
শান্ত হেসে বললো”আচ্ছা হ্যাঁ জানালা,, তার মানে খাওনি,আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া খাও না”
.
মা মুচকি হাসলেন,শান্ত মায়ের হুইল চেয়ারটা টেনে মাকে নিয়ে ডাইনিংয়ে চলে আসলো
তার মা বিগত ৭বছর ধরে কথা বলতে পারেন না,কত ডাক্তার দেখিয়েছে ওর চাচা,মামারা মিলে
বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মা এমন হয়ে গেছে
তখন নিতু জন্ম নিয়েছিলো!মাকে নিয়ে আমি হসপিটালে ছিলাম
হসপিটাল থেকে বের হতে না হতেই দেখলাম বাবার লাশবাহী গাড়ী হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
তারপর থেকে কোনো কথা আসে না মায়ের মুখ দিয়ে,এত বড় শক তিনি নিতে পারেননি,তবে পাশের জন কি বলে তা তিনি শুনেন এবং বুঝতে পারেন
শান্ত মায়ের হাতে খাচ্ছে আর বান্দরবনের সব বলেই যাচ্ছে
তারপর মুখ ফসকে আহানার কথাও বলে দিলো
মা তো চোখ বড় করে চেয়ে মুচকি হেসে বারবার হাত দিয়ে ওকে খোঁচাচ্ছে
.
মা শুনো,মেয়েটা কে?কি রে?আমি জানি না
জানতেও চাই না,এমনি বললাম তোমাকে আর তুমি শুরু করলা ওর পিক নিয়ে
পিক পাবো কই,আর ওকে আমি বিয়েও করবো না,এরকম ঝগড়ুটে নাছোরবান্দাকে বিয়ে করলে জীবন ত্যানত্যানা করে ফেলবে আমার
.
স্যার খুঁজে বের করেন,এমন ও হতে পারে এই মেয়েটাই ম্যাডামের পছন্দ হলো!
.
রিপা!দরকার নাই,আমাকে সুখে থাকতে ভূতে কিলায় নাই যে আমি খাল কেটে কুমির আনবো,মা আমার খাওয়া শেষ আমি যাই ঘুমাতে
শান্ত উঠে চলে গেলো
রিপা মাকে নিয়ে মায়ের রুমের দিকে গেলো,রিপা হচ্ছে নার্স,মায়ের দেখাশুনা করে,মায়ের পা অবশ হয়ে যাওয়ায় হাঁটা চলা পারেন না,২/৩বছর হলো হুট করে পায়ের সব কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেছে তার
তারপর থেকে বিছানা থেকে নামলেই হুইলচেয়ারে থাকতে হয়
.
শান্ত নিজরে রুমে এসে দরজা লাগালো,তারপর পকেট থেকে ছোট্ট একটা মদের বোতল নিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো
মা যেন না জানে,মদ খেয়ে সব সাফ করে তারপর ঘুমাবে সে
কাল থেকে আবার অফিস!

আহানা আলু ভাজি করে ভাত নিয়ে মায়ের সাথে খেয়ে নিলো
তারপর ঘুমাতে গেলো
একটা রুমে বিছানা,আরেক রুমেও বিছানা আছে,খালা আসলে সেখানে থাকে,আর আরেকটা রুম বলতে সেখানে চুলা আর একটা কাঠের মির্ছিফ আছে,হাঁড়ি পাতিলের জন্য
মা আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন,আহানা ছাড়া তার আর কেউ নেই,আত্নীয় বলতে মা বাবা ছিল তারাও এক এক করে মরে গেছে,পরিবারের আর একটা বোন বাকি আছে,রোকেয়া,তারও সংসার নেই,গার্মেন্টসে চাকরি করে,মাঝে মাঝে আমাদের সাথে এসে থাকে
শেষ সম্বল স্বামী ছিল আর সেও চলে গেলো,কত সুখের দিন ছিল সেসময়ে,কিছুর অভাব ছিল না,মজনু ভাই সব নিজের নামে কি করে নিয়েছে জানি না
আহানার বাবা মারা যাওয়ার ২দিন বাদেই আমি আমার মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম,বাধ্য হয়েছিলাম
হাতের সোনার বালা দিয়ে সব কিনেছি এই বাসার
আমি গার্মেন্টসে কাজ করে আহানাকে পড়িয়েছি এতদিন
জীবনে পড়ালেখাটাই সব!
এখন আমার মেয়ে নিজের খরচ নিজে চালাতে পারে বলেই আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি,শরীর ও আর মানে না,কতটা বছর আমি সংসারের জন্য লড়েছি,আমার আর আহানার মুখে খাবার তোলার জন্য
আর এখন ২/৩বছর ধরে কাজই করতে পারি না,মেয়েটা আমার একা হাতে টাকা কামায় করে,আর কত করবে,ওর মুখের ফ্যাকাসে ভাব দেখে আমার কষ্ট হয়
তার উপর মেয়েটা শান্তিতে থাকতেও পারে না ঐ রতনের জ্বালায়,তার কুনজর পড়েছে আমার মেয়ের উপর
ওরে বিয়ে দিয়ে দিলো আমি কি নিয়ে থাকবো সেটাই ভাবি
সবে ২১বছর,তবে আশেপাশের সবাই বলতেছে ওর নাকি বিয়ের বয়স হয়েছে,এত তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে আমি দূরে ঠেলে দিব?আর তার স্বামী যদি ভালো না হয়?
আল্লাহ!আমার মেয়েটার কপালে একটা ভালো ছেলে রেখো সে যেনো আমার মেয়েকে কখনও কাঁদতে না দেয়
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ভোর ৫টা বাজে,হাতে আম গাছের পাতা নিয়ে আহানা হাঁটতেছে তাও ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে,দাঁত ঘষতে ঘষতে বাতাসে ওড়না উড়িয়ে এবার সে ফ্লাইওভারে উঠেছে
এই সময়টা হলো আহানার সময়,সে এসময়ে নিজের মন মতো করে কাটায়,৬টা বাজা পর্যন্ত
হেলেদুলে হাঁটতেছে সে,বাসার পাশে বলেই এখানে সে হাঁটতে আসে
ভোরের আলো চারিদিকে,দু একটা গাড়ী দেখা যাচ্ছে অনেকক্ষণ বাদে বাদে দেখায় যাচ্ছে দূর পাল্লার বাস,মালবাহী ট্রাক
প্রাইভেট কার খুব কমই দেখা যায়,এসময়ে কোন বড়লোকে বাসা থেকে বের হতে যাবে!
আহানা এবার ফ্লাইওভারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো,বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে ভাবলো দুনিয়াটা কত সুন্দর তাই না?আর আমি কিনা মরতে চাই!
সুন্দর পৃথিবীটা দেখার সৌভাগ্য সবার থাকে না,যেমন আমার নেই তাই আমি চলে যেতে চাই
আহানা আম পাতার ঢালটা নাড়াতে নাড়াতে ভাবতেছিলো উল্টা পাল্টা সব ভাবনা
হঠাৎ ঢালটা গেলো হাত থেকে পড়ে
নিচু হয়ে আম গাছের ঢালটা হাতে নিতে যেতেই এবার হাতের আম পাতাটাই উড়ে গিয়ে রোডের মাঝখানে চলে গেলো
.
ধুর!এসব কি হচ্ছে,একটু শান্তিতে চিন্তাভাবনা করতে চাচ্ছিলাম তা আর হলো না!
আহানা বাম পাশে তাকালো একবার
না কোনো গাড়ী নেই,ডান পাশেও নেই,এক দৌড়ে পাতাটা নিয়ে চলে আসবো তারপর নিচে নেমে যাবো
আহানা ঢাল আর ওড়নাটা নিয়ে ফ্লাইওভারের কিনারায় রেখে মাঝখানের দিকে দৌড় মারলো

আমি বুঝি না সকালবেলায় কাজ কেন থাকবে,কোথায় ভাবছিলাম একটু ঘুমাবো,তারপর ঘুম থেকে উঠে ৯/১০টার দিকে অফিসে যাওয়া যাবে তা না সকাল সকাল কাজ এসে ঘাড়ে পড়লো আমার!
ক্লাইন্টটা ৭টার আগেই ফ্লাইট ধরে চলে যাবে লন্ডনে,তাই তার সুবিধামতন আমাকেও এখন এত ভোরবেলা মিটিংয়ের জন্য বের হতে হচ্ছে!!অসহ্যকর!
শান্ত একটা সফট মিউজিক প্লে করে সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে রোডের মাঝখানে
চোখ বড় করে দমটম সব বন্ধ করে গাড়ী থামিয়ে ফেললো শান্ত
আহানা ভয়ের চোটে এক দৌড়ে কিনারায় চলে গেছে ততক্ষণে
আমপাতাটা আর নেওয়া হলো না তার
শান্ত গালি দিতে দিতে গাড়ী থেকে নামতেই দেখলো আহানা তড়িগড়ি করে ওড়না পরতেছে
.
আপনি!!
আপনার সমস্যা কি বলুনতো!!ঘুরে ফিরে আমার সামনেই মরতে আসেন আপনি,আসলে আমি যদি জানতাম আপনি রোডে তাহলে উপর দিয়া গাড়ী চালায় দিতাম,আপনার তো মরার অনেক শখ
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চেয়ে আছে তারপর চোখটা হালকা বড় করে বললো”শুনুন,আমি মরতে চাইনি,আমি তো”
.
কাজের বাহানা দিবেন না একদম,আপনাকে আমি হারে হারে চিনি
.
কাজের বাহানা দিচ্ছিনা আমি,আমি আম পাতা নিতে গেসিলাম,ঐ যে আপনার গাড়ীর নিচে তাই দেখাতে পারছি না আপাতত
.
আর ইউ কিডিং উইথ মি?
.
নো!কিডিং কেন করবো,আপনি কি কিড?যে আপনার সাথে বাচ্চামো করবো
.
আপনার মতন বেয়াদব মেয়ে আমি আর দুইটা দেখিনি,আপনার তো মরে যাওয়াই উচিত
.
মরবো না,কি করবেন??জোর করে মারবেন?
.
হ্যাঁ,সেটাই করতে হবে,সবসময় আমার সামনেই মরতে আসেন আর আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে বাঁচাতে হয়,আজ এই খোলা ফাঁকা ফ্লাইওভার থেকে ফালাই দিয়া আমার অসম্পূর্ণ কাজটা পূর্ণ করবো
শান্ত গায়ের কোর্টটা খুলে কারের ভিতর ছুঁড়ে ফেলে এগিয়ে গেলো
আহানা ভয় পেয়ে দৌড় মারতে যেতেই শান্ত ওর হাত মুঠো করে ধরে ফেললো সাথে সাথে
.
কই পালাও চান্দু!তোমার না মরার শখ??দাঁড়াও তোমার জীবন নিচ্ছি আমি
.
আমাকে তুমি বলতেছেন কেন,আদরকদর কিছু শিখেন নাই দেখছি
.
লাইক সিরিয়াসলি??ফ্লাইওভারে সাহস ছাড়া মানুষ উঠে না,আর আপনি বলছেন আপনি আম পাতার জন্য রোডের মাঝখানে এসেছেন তাও ফ্লাইওভারের উপর আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে!!
.
হাত ছাড়ুন,দেখুন আমি মরতে চাই না,অন্তত আপনার হাতে না
.
আপনি মরতে চান নাকি মরতে চান না তা ভালো করে জানা হয়ে গেছে আমার
আমাকে আর সার্টিফিকেট দিয়ে বুঝাতে হবে না,চলুন নিজেও একটু হালকা হোন আমি আপনাকে উঁচু করে ফ্লাইওভার থেকে ফেলতেছি
.
না একদম না,বাঁচাও!!মায়ায়ায়ায়া,!!খালায়ায়ায়ায়ায়া
.
বাবায়ায়ায়ায়ায়া এটা কইবেন না?
.
বাবা এখানে নাই,যারা আছে তাদেরই তো ডাকবো
.
শান্ত আহানাকে ফালানোর জন্য শক্ত করে ধরতেই ফোনটা বেজে উঠলো তার
তারপর আহানাকে ছেড়ে ফোন রিসিভ করলো সে
.
আমার আম পাতা!!ঢালে একটা পাতাও নেই,আম পাতা ঐ একটাই ছিল কত কষ্ট করে গাছে উঠে নিয়েছিলাম
আহানা হামাগুড়ি দিয়ে কারের নিচে উঁকি দিলো,পাতাটা চাকার সামনে আর একটু চাকারের নিচে,হাত দিয়ে টান দিলে ছিঁড়ে যাবে
.
শান্ত কথা বলা শেষ করে দেখলো আহানা কোমড় উপরে তুলে মাথা রোডে লাগিয়ে রোডে শুয়ে ওর কারের নিচে উঁকিবুকি দিয়ে যাচ্ছে
.
এই মেয়েটা!!!
সরেন এখান থেকে,আপনার জন্য আমার অফিসে লেট হয়ে গেলো
.
শুনুন না,আমার আম পাতা আপনার কারের চাকার সামনে
একটু কারটা পিছনে নেন না আমি পাতাটা নিব
.
আহা!!আপনি আমার রিলেটিভ হোন নাকি বন্ধুবান্ধব? কোনটা?
আপনার জন্য আমি এত কষ্ট কেন করবো!এমনিতেও আমার অফিসে লেট হচ্ছে বাই
সি ইউ নেভার!
.
তার মানে আপনি আমার আম পাতাটা মাড়িয়ে যাবেন?
.
দরকার হলে ঘষে রোডের সাথে মিশিয়ে তারপর যাবো
.
শান্ত কারের দরজা খুলে ভিতরে বসে সিট বেল্ট লাগাচ্ছে
আহানা মুচকি হেসে ফ্লাইওভারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
শান্ত আহানার হাসির কারণ কি বুঝলো না
গাড়ী স্টার্ট দিয়ে জাস্ট ৬সেকেন্ড গিয়ে কারটা থেমে গেছে
টায়ার পাঞ্চারড,এতক্ষণ তো ঠিক ছিলো
শান্ত কার থেকে নামতেই দেখলো আহানা দাঁত কেলিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত টায়ারটা ভালো করে চেয়ে দেখলো একটা পিন আটকে আছে
.
আহানা পিছোতে পিছোতে বললো”আমপাতাটা নিতে দিলে হয়তবা আপনার টায়ার পাঞ্চার হতো না!”
.
তার মানে আপনি!!
.
আহানা এক দৌড় দিলো আর পিছনে তাকালো না
সে কারের সামনে পিনটা ছুঁড়ে মেরে ভালো মানুষের মত দাঁড়িয়ে পড়ছিল যার কারণে কার পিনের উপর দিয়ে যেতেই পিনটা টায়ারে লেগে পাঞ্চার হয়ে যায়
পিনটা দিয়ে তার জামার ছেঁড়া অংশ জোড়া তালি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল সে
.
এই মেয়েটা এত বেয়াদব,আমার জীবনে আমি এরকম মেয়ে দেখিনি,আজ নির্ঘাত দেরি হয়ে যাবে
শান্ত আপাতত ১০মিনিট অপেক্ষা করে একটা রিকসা নিয়ে অফিসে গেলো আর তাহসিনকে ফোন করে বললো যেন সে এসে এখান থেকে কারটা নিয়ে যায়

আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে ফ্লাইওভার থেকে নিচে নেমে গলির দিকে গেলো,ভালো করে মুখ ধুয়ে পড়াতে আসতে হবে আবার
কিছুদূর যেতেই সামনে পড়লো রতন,এই পাড়ার এক নাম্বারের বখাটে সে
পরনে ফ্লাওয়ার ফ্রিন্টের লুঙ্গি,আর একটা পাতলা শার্ট,দাঁত কেলিয়ে সে আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেছে
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”সামনে থেকে সরবি না লাত্তি মেরে তোর এই হাড্ডি মুখ ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো করে দিব”
.
দে না আহানা!!তোর শরীরের ছোঁয়া পাইলে আমার অনেক ভালা লাগবে,দে না দে,কলিজাটা একটু জুড়াক
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে পাশ দিয়ে চলে গেলো
একটা বেয়াদব!!এরে বিয়ে করার চেয়ে আমি বরং সেদিনই মরবো!
আহানা পুকুর ঘাটে গিয়ে মুখ ধুয়ে দৌড় মারলো বাচ্চাদের পড়াতে
ওদের পড়িয়ে তারপর ভার্সিটিতে যেতে হবে
.
শান্ত মিটিংটা শেষ করে কলার টানতে টানতে চেয়ারে এসে বসতেই শুনতে পেলো নওশাদ আর রিয়াজ,সূর্য আসতেছে তেড়ে
.
স্যার উনাদের কি ভিতরে আসতে বলবো?
.
এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে ঊষা??আসতে দাও ওদের
.
দোস্ত,গেস হোয়াট!!!
.
ঊষা কফির ব্যবস্থা করো,আমার জন্য বড় মগে দিও,,আমার মাথা ধরেছে
আর শুন নওশাদ গেস করার মুড নাই তুই বল আমি শুনি
কথাটা বলে শান্ত ল্যাপটপ টিপায় মন দিলো
.
আরেহ শুনস না,আমাদের ইউটিউব ব্লগটা একটা কন্সার্ট পার্টি দেখেছে
.
তো?
.
তো তারা তোর ভয়েস শুনে মুগ্ধ!! আজকে বিকালে যমুনা ফিউচার পার্কে যে কনসার্ট হবে সেখানে তোকে গান গাওয়ার জন্য ইনবাইট করেছে
এই দেখ আমরা তাদের সাথে কন্টাক্ট করে ইনভিটেশান কার্ড ও নিয়ে এসেছি😎
.
জি না,আমার সময় নাই,আর আমার গলা এত আহামরি না যে কনসার্টে গান গাইবো
আমার কাছে এত সময় ও নাই
.
প্লিস প্লিস রাজি হয়ে যা
তুই কনসার্টটা করলে আজকেই 200k এর মত সাবস্ক্রাইবার পেয়ে যাবো আমরা তাহলে বুঝতে পারছিস??200k প্লাস করলে আমাদের আজকেই 2M ডান হয়ে যাবে,ও মাই গড আমি তো ভাবতেই পারছি না তার উপর ১০হাজার টাকার চেক এডভান্স করেছে তারা
টাকাটা সামান্য আমাদের কাছে বাট মজা হবে এটাই অনেক,প্লিস শান্ত রাজি হ
.
না,বের হও এখান থেকে,আমার এমনিতেও অনেক কাজ
.
আন্টিকে বান্দরবনের সেই মেয়েটার পিক দেখাই দিব
.
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে রিয়াজের দিকে তাকালো
.
৩জন মিলে ওর দিকে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে
.
তোরা ওর পিক পাইলি কই?
.
মনে আছে সে ওড়ানায় করে পানি এনে তোর গায়ে ঢালতেছিলো?তখন আমাদের ক্যামেরা অন ছিল কারন তুই তখন ব্লগটা করতেছিলি,😎এন্ড আমি ভিডিওটা থেকে সেই মেয়েটার ছবি নিয়ে নিয়েছি,হুহাহাহা
.
হারামি!!তোর মত বন্ধু থাকলে আর মানুষের শত্রু লাগে না
.
আমরা এটাও জানি তোর আজকে ভোরবেলায় মিটিং ছিল
আপাতত আজ আর মিটিং নাই,ঊষা বলছে
.
আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতেছিস!
.
প্লিস শান্ত,মজা হবে একটু,চল না প্লিস,তুই আজকে গান গাইলে বিজন্যাসম্যান শাহরিয়ার শান্ত থেকে সবাই তোকে গায়ক শান্ত হিসেবে চিনবে
.
ফাইন,যা তোরা,আমি নিতুকে নিয়ে চলে আসবো
.
ইয়াহু!!!!!
.
শান্ত মাথার চুল টানতে টানতে কফি খাচ্ছে,কি একটা ঝামেলা!

হ্যালো আহানা!কিরে ভার্সিটিতে আসবি না?
.
আসবো!আমার পায়ে ব্যাথা পেয়েছি পড়ে গিয়ে,ঠিকমত হাঁটতে পারি না,তাও আসবো,তেমন একটা মারাত্মক না
.
ওকে,বাই
.
আহানা ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে
তারপর ভার্সিটিতে আসতেই রুপা ঝাপটে ধরেছে
ঝাপটে ধরার কারণ হলো তার সাথে আজ একজায়গায় যেতে হবে
আহানা বলছে তার বিকাল থেকে টিউশনি,রুপা বললো টিউশনির সময়ের আগেই ঘুরাফিরা শেষ করে বাড়ি ফিরবে
||
কন্সার্ট রেডি
মানুষে হইহই রইরই,তার উপর নওশাদ একটা পোস্ট দিয়ে চ্যানেলের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে তারা আজ যমুনা ফিউচার পার্কের কনসার্টে আসতেছে আবার শান্ত গান ও গাইবে
দলে দলে সব আসতেছে কনসার্টটায়
শান্ত বাসায় এসে রিপাকে বললো নিতুকে তৈরি করে দিতে,সে নিতুকে নিয়ে ঘুরতে যাবে
তারপর নিজের রুমে এসে একটা ব্ল্যাক টি শার্ট আর খয়েরী রঙের জ্যাকেট বের করে পরে নিলো,সাথে ব্ল্যাক জিন্স
সানগ্লাস হাতে নিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নিতুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে
ঐদিকে রুপা আহানাকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এসে সবে থেমেছে
আহানা মুচকি হেসে বললো”বাবার সাথে শেষবার এখানে এসেছিলাম!”
.
এখন আমার সাথে আসলি
.
এখান থেকে শপিং করবি?একটা হালকা গেঞ্জির দাম ৫০০০টাকা এখানে
.
জানি জানি!আসছি তো কনসার্ট দেখতে,চল!আজ নাকি কনসার্টে শাহরিয়ার শান্ত আসবে গান গাইতে
.
কে সে?
.
আরে ঐ যে Shanti Group of industry এর মালিক সে
আর সে একজন ইউটিউবার ও
.
শান্তি?কিন্তু তার নাম তো শান্ত বললি
.
হয়ত বোন বা মায়ের নামটাম হবে,শান্তর গানের গলা জাস্ট ওসাম!আর তার বেস্টফ্রেন্ডের মধ্যে একজন আছে,নাম নওশাদ শেখ!!
কি বলবো!আমি তো এই দুটোর উপর ক্রাশিত,তবে যা মনে হয় মেইন শান্তকে পটানো আমার দ্বারা পসিবল না বাট নওশাদকে পটাতে পারবো
.
তুই সারাদিন এসব নিয়েই পড়ে থাকিস!
.
আচ্ছা চল যাই
.
শান্ত স্টেজে উঠে দাঁড়িয়েছে
তার সামনে ৩০০/৪০০জনের মতন দর্শক
গিজগিজ করতেছে,সবার মুখে শান্ত নাম
শান্তর গিলটি ফিল হচ্ছে না কারণ সে একবার সিরাজগঞ্জ গেছিলো সেখানে ওর চ্যানেলের অনেক সাবস্ক্রাইভার এসেছিল হাতে ফুলের মালা নিয়ে তার সাথে দেখা করতে
সেদিনও এমন মানুষ ছিল
নিতু দূরে চেয়ারে বসে তার ভাইয়ের গানটা ভিডিও রেকোর্ড করতেছে হাতে জুস নিয়ে
পরনে সাদা ফ্রক আর জিন্সের কোটি,শান্তর বোন বলে কথা
একটু স্টাইলিশ তো হতেই হবে
শান্ত জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে গানটা শুরু করলো

চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও
চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও
তুমি তো আমার-ই, জানো না হো-ও-ওও
এ হৃদয় তোমার-ই
ও-হো-ওও
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আ..মার
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝি না কোনো কিছু যে আর
পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আমার
(C’mon, yo yo)
হৃদয়ের নীল আকাশে স্বপ্ন আমার ওড়ে
ভেঙ্গে যায় আমার-ই মন অভিমানী ঝড়ে
হৃদয়ের নীল আকাশে স্বপ্ন আমার ওড়ে
ভেঙ্গে যায় আমার-ই মন অভিমানী ঝড়ে
তুমি তো আমার-ই, জানো না হো-ও-ওও
এ হৃদয় তোমার-ই, ও-হো-ওও…
(এটা প্রেমের পাঁচফোড়ন সিজন ২ এর থিম সং
সূচনা পর্বে যেটা দিয়েছিলাম সেটা নয়)
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-১+২

0

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#সূচনা_পর্ব
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে
ফুলে বাইলা ভোমরা
ময়ূর বেশেতে সাজুইন রাধিকা
চুয়া-চন্দন-ফুলের মালা
সখিগণে লইয়া আইলা
কৃষ্ণ দিলায় রাধার গলে
বাসর হইল উজালা
বাসর হইল উজালা গো
বাসর হইলো উজালা
ময়ূর বেশেতে সাজুইন রাধিকা♥
.
জাস্ট ওসাম!!!এই ভিউর সাথে গানটা গেয়ে জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছিস শান্ত!!
.
নওশাদ ঠিক বলেছে,মনটাই ভালো হয়ে গেছে
এব্রিওয়ান!! পুট ইউর হ্যান্ডস টুগেদার
.
গাইস অনেক হইছে!
এবার আমি যাই,এমনিতেও ভোরবেলায় জাস্ট তোমাদের জন্য আমি এই আড্ডাতে নাম দিয়েছি এবং এসেছিও,এবার আমি ঘুমোতে যাই,হ্যাভ ফান
.
শান্ত প্লিস আরেকটু থাক!
.
নো ওয়ে!

আমি আর এই পৃথিবীতে থাকার যোগ্য না,আমি এই পৃথিবীতে আর বাঁচতে চাই না,এই জীবনের চেয়ে মরণ ভালো
পাহাড়ের উপরের ঘাসগুলো কেমন পিচ্ছিল হয়ে আছে ,বেছে বেছে চিম্বুক পাহাড়ের উপরে উঠসি এটা নাকি বান্দরবনের বিখ্যাত পাহাড়,লাফ দিলে নির্ঘাত মৃত্যু
আমার প্রচুর ভয় করছে কিন্তু নাহ আজ সুইসাইড করেই ছাড়বো
এই জীবন আর রাখবো না আমি
আহানা তোমাকে পারতেই হবে
কিন্তু এটা এতো পিচ্ছিল কেন এমনিতেও আমার সাহস কম তার উপর সুইসাইডের জায়গাটা এত ভয়ঙ্কর হলে কেমনে হয়,বাপরে বাপ!!!
.
আহানা পিছন ফিরে রোডের দিকে চলে গেলো
রোড শুকনা,এখান থেকে লাফ দিতে সহজ হবে,ভয় ও লাগবে না,এবার মরবোই মরবো,যে করেই হোক
আহানা চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো
আল্লাহ মাফ করে দিও আমাকে,আমি বাধ্য হয়ে এমনটা করতেসি তুমি তো সব জানো,এবার যেন ঠিকঠাক ভাবে মরতে পারি
১!২!৩!!
.
আআআআআ!
.
এএএএএএই!
.
আহানা শান্তর জ্যাকেট টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে,এই নিয়ে কতবার যে সুইসাইড করতে চেয়েছে পারতেছেই না,ভয় ও করে আবার জীবন তাকে বাঁচতেও দেয় না,মরবে কি মরবে না সেটাই ঠিক করতে পারে না সে
আজ আবার বেঁচে গেলো
.
এই?বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন,ইজ ইট ব্রেইন স্ট্রোক অর হার্ট এটাক?নাকি স্পট ডেড?কোনটা?
মরে গেছেন?না মরলে আমার বুক থেকে মাথা তুলুন নাহলে ধাক্কা মেরে সত্যি সত্যি পাহাড় থেকে ফেলে দিবো
.
আহানার হুস আসতেই শান্তকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো সে
শান্ত হাত দিয়ে নিজের থুতনির কিনারায় থাকা চাপা দাঁড়ি ঘষে জ্যাকেটের কলার থেকে সানগ্লাস নিয়ে পরতে পরতে গালটা একটু বাঁকা করলো কিছুটা তাচ্ছিল্য করেই
তারপর আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো
.
চেহারা তো মাশাল্লাহ!! তো মরার শখ জাগছে কেন?তাও আমার সামনে,আপনাকে এখন না বাঁচালে আমার জাহান্নামেও জায়গা হতো না,কেন যে হাঁটার সময় এদিকে তাকাতে গেলাম আমি!আজব সাজব মানুষ থাকে বান্দরবনে
বান্দরবনের বান্দর একটা!
.
আহানা চুপ করে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত জ্যাকেটের চেইন টানতে টানতে কিছুদূর যেয়ে থেমে পিছন ফিরে আবারও তাকালো আহানার দিকে
.
নেক্সট টাইম মরার আগে এত সময় নষ্ট করবেন না,সোজা জায়গায় দাঁড়িয়ে এক লাফ দিবেন
স্টে এন্ড জাম্প,ওকে?এই যে এমন করে!
সোজা নিচে গিয়ে পড়বেন,চোখ খুলে দেখবেন আপনি মরে গেছেন,হাত এক জায়গায় মাথা আরেক জায়গায় পা তো কোথায় পড়বে বুঝতেই পারবেন না
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”আমি বান্দরবনের বান্দর না!আমি ঢাকাইয়া মাইয়া”
.
হোয়াটএভার!যেমন করে শিখাইলাম তেমন করে সুইসাইড করেন,১০০% মরবেন,গ্যারান্টি দিতে পারি
.
কথাটা বলে শান্ত মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
আহানা শান্তর চলে যাওয়া দেখছে,তারপর পাহাড়ের নিচের দিকে তাকিয়ে বুকে থুথু দিয়ে নাউজুবিল্লাহ পড়তে পড়তে উল্টো পথে হেঁটে চলে গেলো
.
শান্ত হোটেলে ফিরে নিজের রুমে এসেই শুয়ে পড়েছে,খুব ঘুম পাচ্ছে তার,ভোরবেলা উঠা অনেক টাফ!আর শীতকাল হলে তো কথাই নেই,জাস্ট ভোরবেলার দৃশ্য দেখার জন্য নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য মিলে আমাকে এত ভোরে উঠালো আবার গান ও গাইতে হবে,ঘুমের ঘোরে কি গান গাইছি কে জানে!
এখন ঘুম হবে কোনো কথা হবে না!

ধুর!আজও সুইসাইড করা হলো না আর ঐ লোকটা যেভাবে করতে বললো আমার তো এখন আরও ভয় করছে,কি করবো!! কেমনে করবো!
.
এই আহানা!
.
কি?
.
তুই এত ভোরে কই গেসিলি??তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমার জান বের হইয়া আইছিলো
.
আমি আসলে একটু ঘুরতে গেসিলাম
.
ম্যাম যদি জানে তুই টিমের সাথে না বেরিয়ে একা বের হয়েছিলি তো ধরে কেলানি দিতো
.
হুম,ম্যাম এখনও ঘুমায়,জানা আছে আমার
.
এখন চল ঘুমাবি,আমাকে না বলে বের হবি না,তোর আম্মু আমাকে বলছে তোকে দেখে রাখতে
.
মা ফোন দিয়েছিলো?
.
না,কেন তুই ফোন নেস নি সাথে করে
.
সুইসাইড করতে আবার কেউ ফোন নেয় নাকি
.
কিছু বললি?
.
না কিছু বলিনি,চল যাই

এই শান্ত উঠ!আর কত ঘুমাবি?আরে আমরা এখন নাস্তা করে ঘুরতে বের হবো
.
তোরা যা আমি ৫মিনিটে আসতেসি
.
চল আমরা যাই
শান্তর ৫মিনিট মানে ২মিনিটেই রেডি হয়ে আমাদের আগেই রেস্টুরেন্ট পৌঁছাবে
.
হুম!
.
শান্ত ফ্রেশ হয়ে জ্যাকেট পরে বেরিয়ে পড়লো নওশাদ রিয়াজের সাথে,রেস্টুরেন্টে বসে রুটি মুখে দিতেই চোখে পড়লো ভোরবেলার সেই বান্দরবনের বান্দরটাকে
মানে আহানাকে
একটু দূরেই সে দাঁড়িয়ে আছে,তার আশেপাশে অনেকগুলো মেয়েও আছে
সে উঁকি দিয়ে পাহাড়ের নিচের দিকে তাকাচ্ছে বারবার,আবার মাথা উঁচু করে পাহাড়ের উপরেও তাকাচ্ছে
এখনও সুইসাইড করেনি??
এসব ভীতুর ডিম আবার সুইসাইডের ডিসিশান নেয়!এটা তো মেন্টাল রুগী,এরে পাবনায় ভর্তি করানো উচিত
.
কিরে শান্ত কি ভাবিস এতো?
.
নাথিং!
.
মাগো মা,সুইসাইডের অন্য পন্থা খুঁজতে হবে,পাহাড় থেকে লাফ দিলে যদি পা ভেঙ্গে যায় আর আমি না মরি?তাহলে সংসার চালাবে কে?
মরলে একেবারেই মরতে হবে আর না মরলে যেন হাত পা না ভাঙ্গে
এমন কিছু আছে যাতে সাথে সাথে মরা যাবে?
.
শান্ত!!জিপে উঠ
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির একটা হাসি দিয়ে জিপে উঠলো,আহানা এখনও শান্তকে দেখতে পায়নি সবার সাথে রেস্টুরেন্টে গেলো নাস্তা করতে
আহানাদের ভার্সিটি থেকে সবাই মিলে বান্দরবন এসেছে ঘুরতে,সব মেয়ে,ম্যাডাম ২জন আর স্যার ২জন ও এসেছেন সাথে
আর শান্ত আর তার কিছু ফ্রেন্ড একসাথে ঘুরতে এসেছে

হ্যালো তাহসিন??মাকে গিয়ে দেখে আসছো?কি অবস্থা মায়ের?
.
স্যার,, ম্যাম ইজ ফাইন,আমি নার্সকে টাইমলি ঔষুধ দেওয়ার কথা বলে আসছি
.
ওকে,কোনো কিছুতে যাতে ভুল না হয়
.
স্যার ডোন্ট ওয়ারি
.
ওকে বাই!
.
গান ধর সবাই,কেমন নিরামিষ হয়ে আছিস তোরা ব্যাপার কি??জাঁতি ধরে ধরে গান গাওয়াইতে হয়, আর সয়ং শিল্পি আমাদের সাথে থাকার পরও সে গান করে না,শান্ত কিসের রাগারাগি তোর আমাদের সাথে?
.
রাগ নয় রিয়াজ!মায়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে তার উপর তোরা ভোর বেলায় উঠিয়ে দিয়ে আমার মাথা ব্যাথা বাড়িয়ে দিয়েছিস
এখন গান গাওয়ার মুড নাই,তোরা গান কর
.
তা হচ্ছে না
আমরা টোন লাগাচ্ছি তুই গান গাইবি দরকার হলে আমরা তোর সাথে গলা মেলাবো
আর নওশাদ ইউটিউবের ব্লগটার কি হলো,আমরা জিপে উঠেছি ১০মিনিট হয়ে এসেছে আর তুই এখনও ক্যামেরা ধরলি না
.
আরেহ দেখ না আমাদের সাথে অনেকগুলো মেয়ের দলের জিপ ও আসতেছে মনে হয়
.
তোর জন্য আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিউজ কমতেছে,ক্যামেরা দে বেয়াদ্দপ!আমি ভিডিও করবো তুই শান্তর সাথে গান ধরবি
.
ফাইন,আমার এই ভাঙ্গা গলায় তোর এই ভিডিওতে কত ভিউ আসে আমিও দেখবো
.
তোর কাউ কাউ কেটে শান্তর গানটা রাখবো আর তোর কাউ কাউর টোনটা যোগ করে দিব😎
.
রিয়াজ তোরে এখন আমি জিপ থেকে ধাক্কা মেরে ফালাইবো
.
এই তোরা থামবি?আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে আর তোরা ক্যাঁচক্যাঁচ করেই যাচ্ছিস!
.
ওকে আই কোয়াইট!!রিয়াজ ভিডিও কর
.
ওকে!শান্ত গান ধর
.
!!.!!!.!!!
কৃষ্ণ প্রেমের প্রেমিক যারা
নাচে, গায়, খেলে তারা
কুল ও মানের ভয় রাখে না
ললিতা আর বিশু খা
ললিতা আর বিশু খা গো
ময়ূর বেশেতে সাজুইন রাধিকা
.
ওকে গাইজ আমরা এখন এসে পড়েছি “দেবতাখুমে”!!!
দেখো এখানে পানি আর পানি😱
.
লাইন এটা কেটে বল”দেখেন এখানে কত সুন্দর পানি!!”
তোর উল্টা পাল্টা ডায়ালগে মানুষ কমেন্ট সেকশানে ফানি কমেন্ট করে
.
শান্ত তুই আমারে ধর না হলে এই রিয়াজরে আজ আমি পানিতে চুবাবো
.
আমি বসে তোর চুবানি খাবো তাই না??
.
তোদের দুটোকে এখন আমি পানিতে চুবাই ধরেই রাখবো উঠাবো না আর!সারাদিন সাপ বেজির মতন ঝগড়াই করস তোরা!
.
“দেবতাখুমে”এসে জিপ থামলো অবশেষে,শান্ত জিপ থেকে নিচে পা রাখতেই দূরের কিছু মেয়ে জ্বলে উঠেছে
শান্ত বুঝতে পেরে মুচকি হেসে সানগ্লাস খুলতেই মেয়েগুলো এবার লাফিয়ে উঠলো
.
নওশাদ এরকম ঢুলিস না,মেয়েগুলো শান্তকে দেখে এরকম করতেসে
.
হ😒আমি তো ঢুলতেসি ঐ যে আরেক জিপে করে এক দল মেয়ে আসতেসে সেদিকে তাকিয়ে
.
শান্ত সানগ্লাসটা হাতে নিয়ে মেয়েগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেলো
.
ইসসসসস!
.
ইস!
হাউ কিউট!!
.
শান্ত গায়ের জ্যাকেট খুলে ভেলার কাছে এসে দাঁড়ালো
চিকন বাঁশ দিয়ে তৈরি ভেলা,একটা ভেলায় কমপক্ষে ১২/১৩টা বাঁশ আটকানো হয়েছে,বাঁশগুলো রঙিন,ঘাড়ো হলুদ রঙের,কমলা রঙের ও আছে
দর্শনার্থীদের বসার জন্যই বাঁশগুলোকে সুন্দর করে সেট করানো হয়েছে
নৌকার চেয়েও ভেলাতে বসতে জোস একটা ফিলিং আসে
যাদের ইচ্ছা তারা ভেলায় বসবে আর যাদের ইচ্ছা নাই তারা নৌকায় বসবে
শান্ত নিচু হয়ে জিন্সটা হাত দিয়ে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত উঠালো তারপর চশমাটা জ্যাকেটে ঢুকিয়ে জ্যাকেটটা কোমড়ে গিট্টু দিয়ে বেঁধে নিয়ে ভেলায় এসে বসে পড়লো
পা রাখতেই ভেলাটা প্রথমেই নড়েচড়ে উঠেছে,শান্ত মুচকি হেসে হাত দিয়ে পানি ছুঁয়ে দেখলো
নওশাদ ঢোক গিলে এক পা এগোচ্ছে তো ৩পা পিছাচ্ছে
রিয়াজ ওকে ধরে টেনে নিয়ে আসতেছে,তারপর ভয়টা কাটিয়ে শান্তর নৌকায় উঠে পড়েছে তারা
এবার হবে ভেলা ড্রাইভ👌
রেডি,স্টেডি,গো!!!!
দুপাশে পাহাড়,মাঝখানে সরু পানির পথ,একের পর এক ভেলা সেখান দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে
মনে হয় ট্রাফিক জ্যাম,জায়গাটা এত ফেমাস যে এখানেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি
শান্ত হাতে বাঁশ নিয়ে ভেলা বাইতে বাইতে এগোনো শুরু করে দিয়েছে
নওশাদের এবার বেশ লাগতেছে,এতই ভালো লাগতেছে যে সে বাঁশ দিয়ে পানি ডিঙাতে ডিঙাতে স্পীড বাড়িয়ে দিয়েছে ভেলার
শান্ত পিছন ফিরে বললো “তোরে সত্যি সত্যি এবার ফালাবো পানিতে”
.
সরি,এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখতে পারলাম না
.
এক কাজ কর তুই চালা,আমরা বসে বসে মনোরম দৃশ্য দেখি,তোর এই এক্সাইটমেন্টের কারণে আমরা একটা ভেলা ড্রাইভার পেয়ে গেলাম
.
মেয়েগুলো ফোন বের করে ভিডিও করতেছে,বাসায় গিয়ে জুম করে বারবার দেখবে শান্তকে
আসলে তারা শান্তকে আরও আগেও দেখেছে,ইউটিউবে তাদের একটা চ্যানেল আছে যেখানে সাবস্ক্রাইবার অনেক বেশি,বলতে গেলে ফেমাস একটা চ্যানেল,সেই সূত্রেই কম বেশি অনেকেই শান্ত,নওশাদ আর রিয়াজকে চেনে
.
আহানাদের জিপ এসে সবে থামলো দেবতাখুমে,আহানা পানির দিকে তাকিয়ে ভাবলো এখানে পড়লে তো বেশি কষ্টের মৃত্যু হবে না তাই না?আর আমি তো সাঁতারও জানি না
হ্যাঁ সুযোগ বুঝে আরেকটা ট্রাই করতে হবে,একদম মাঝখানে গিয়ে লাফ দিয়ে দিব,তার জন্য একা একটা ভেলায় উঠতে হবে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
এই রুপা শুন,তুই তিয়াসাদের সাথে উঠ আমি একা ভেলায় উঠবো
.
তোর মাথা কি ঠিক আছে?একা উঠবি?জীবনে ভেলা চালিয়েছিস?নির্ঘাত পানির মাঝখানে গিয়ে পড়বি তুই,তোর কিছু হলে আমি আন্টিকে কি জবাব দিব?
.
আরে হ্যাঁ আমি কত চালিয়েছি,,আমাদের বাসার পাশের সেই পুকুরটায় অনেকবার ভেলা চালিয়েছি আমি
তুই প্লিস আমাকে একা একটা ভেলার ব্যবস্থা করে দেস না প্লিস প্লিস
.
আচ্ছা দেখতেছি,দাঁড়া
.
রুপা ম্যামের সাথে কথা বলে অনেক রিকুয়েস্ট করলো পরে ম্যাম বললো বারতি টাকা লাগবে,কারণ উনারা একটা ভেলায় ৩জন ৩জন করে বুক করেছেন,আহানা একা উঠতে চাইলে তাকে তার ভাড়াটা দিতে হবে
.
রুপা এসে আহানাকে ব্যাপারটা জানালো,আহানা নিজের হাতের পার্সের টাকা গুনে হিসেব টিসেব করে বললো “ঠিক আছে”
ব্যস একা একটা ভেলায় উঠার বন্দবস্ত হয়ে গেলো তার
বড় করে আবারও শ্বাস নিয়ে সে ভেলায় উঠে বসলো,ভেলাটা এত নড়তেছে যে তার কলিজা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে
এখন না পারছে উঠে আসতে না পারছে চালাতে
তার সাথের সবাই ভেলা চালানো শুরু করে দিয়ে সামনেও চলে গেছে এতক্ষণে
প্রতি এক ভেলাতে ৩জন করে বসেছে সবাই
আহানা ঢোক গিলে চালানো শুরু করেছে অবশেষে
একদম কিছুদূর এসে চোখ বন্ধ করে লাফটা দিয়েই দিলো শেষমেষ
সেই ছেলেটা বলেছিল সময় নষ্ট না করতে,তাই আর এক সেকেন্ড ও দেরি করলো না আহানা
চোখ খুলে দেখলো সে মরে নাই এখনও,হাত পা সব ঠিক আছে
আসলে দেবতাখুমের শুরুতে যে পানি থাকে সেটা ওতটা গভীর না,গলার নিচ পর্যন্ত,আপনি পড়লেও ডুববেন না
আশেপাশের সবাই যারা ভেলাতে করে যাচ্ছিলো তারা আহানার দিকে বোকার মতন চেয়ে আছে
আহানা নিজেও বোকার মতন সবার চাহনি দেখে যাচ্ছে পরে যখন বুঝলো তার এবারের সুইসাইডের প্ল্যানটাও নষ্ট হয়েছে তখন সবার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো সে
যারা এতক্ষণ চেয়ে ছিল তারাও হেসে দিলো আহানার দাঁত কেলানি দেখে
আহানা কখনও লজ্জাকর কোনো সিচুয়েশনে পড়লে নিজেই হেসে দেয় যার কারণে অন্যরাও তাকে লজ্জা দেওয়ার মত কিছু বলার সাহস করে না তারাও হেসে দেয়
তো আপাতত সে ভেলাটা ধরে পানি থেকে উঠার চেষ্টা করতেছে
গায়ের হালকা হলুদ রঙের লং ফ্রকটা ভিজে গেছে,এখন তার নিজের কাছেই অনেক খারাপ লাগতেছে
মরলে মরতাম আবার বাঁচতে গেলাম কেন,সুইসাইড করতে গিয়ে যারা বেঁচে যায় তারপর যে সিচুয়েশনটা তাদের সামনে আসে সেটা অনেক লজ্জাকর,যেমন এখন আমাকে লজ্জায় পড়তে হলো,এই জামা শুকাবে কখন,কিরকম বিচ্ছিরি লাগতেছে আমাকে,ধুর!
আহানা অনেক কষ্টে ভেলায় উঠে বসলো,তারপর চুলগুলো জুটি করা থেকে খুলে পিঠের উপর ছেড়ে দিয়েছে যাতে ভেজা পিঠ না দেখা যায়
সে চায় না কেউ তাকে ভেজা জামায় এরকম বিচ্ছিরি লুকে দেখুক
ওড়নাটা গায়ে পেঁচিয়ে গাপটি মেরে সে বসে আছে কি করবে সেটাই ভাবতেছে,বাকিরা সবাই তাদের ভেলা চালানোয় বিজি হয়ে পড়েছে,এতক্ষণ সার্কাস দেখতেছিলো আই মিন আহানার কাণ্ডকারখানা দেখতেছিলো
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে বাঁশটা হাতে নিলো আবার
ভেলায় উঠার আগেই পানির গভীরতা চেক করা উচিত ছিল আমার,শুধু শুধু এখন এত কিছু হলো,টাকাও নষ্ট হলো আর ভিজেও একাকার হলাম
আহানা বাঁশ দিয়ে পানি বাইতে বাইতে যাচ্ছে,মাঝে মাঝে থেমে থেমে গায়ের ওড়না দিয়ে গা ঢাকতেছে
হঠাৎ গা ঢাকার সময় দুম করে মাথায় কি যেন পড়লো তার,একটা কালো জ্যাকেট,জ্যাকেটটা ভালো করে দেখে সে উপরে তাকালো
৩টা ছেলে পাশেই একটা ভেলায় দাঁড়িয়ে পাশে বিরাট পাহাড়টার সাথে লেগে ছবি তুলতেছে একজন আরেকজনের
তার মধ্যে একজনকে সে চিনতে পারলো
এটা তো সেই ছেলেটা যে সকালে ওকে বাঁচিয়েছিল
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর নিচে তাকালো
আহানা বোকার মতন হাতে জ্যাকেটটা নিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
ও ইচ্ছে করেই আহানার গায়ে নিজের জ্যাকেটটা ফেলেছিলো
.
তারপর গাল ফুলিয়ে বললো”জ্যাকেটটা পরে আমাকে উদ্ধার করেন,যেমন করে শিখাইলাম তেমন করে সুইসাইড করতে পারেন নাই?
জামা শুকাইলে আমাকে খু্ঁজে বের করে আমার জ্যাকেট আমাকে ফেরত দিবেন
বাই দ্যা ওয়ে আমার চোখের সামনে কোনো মেয়ে বিপদে পড়লে আমি হেল্প করি
যাই হোক আপনার মরতে মন চায় তাই তো?
এই যে এই পাহাড়টা দেখছেন এটাতে উঠে লাফ দিয়া দেন
দুম করে পানিতে পড়বেন,নিচের পাথরের সাথে মাথা ফেটে আপনি ডেড!!
নিন! জলদি করেন”
.
আহানা জ্যাকেটটার দিকে চেয়ে রেগেমেগে শান্তর গায়ে সেটা ছুঁড়ে মারলো তারপর বললো”কি সমস্যা আপনার?? আমি যেমন ইচ্ছা তেমন করে মরবো,আপনার এত কি?আরেকদিকে ফিরে থাকলেই তো হয়,আপনাকে কে বলেছিল সকাল বেলা আমাকে বাঁচাতে!”
.
কেউ বলে নাই,আমি দেখে ফেলছিলাম
তখন যদি আমি আপনাকে দেখেও না বাঁচাতাম তাহলে আমার গুনাহ হতো
.
খুব ধার্মিক গিরি দেখাচ্ছেন,তা মাথার টুপি কই?
.
শুনেন!মাথায় টুপি পরলেই সেটা ধার্মিকতা প্রকাশ করে না
.
১০০হাত দূরে থাকেন আমার থেকে,আমাকে হেল্প করতে আসবেন না একদম,ঢং দেখায় যত্তসব
.
কি বললেন?আমি ঢং দেখাই??
শান্ত রেগে আহানাকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিলো
তারপর বললো-“কিছু কিছু মেয়ে হেল্প পাওয়ারও যোগ্য না”
.
এই শান্ত এটা তুই কি করলি?আর মেয়েটা কে?চিনস নাকি?শুরুতেই এমন ঝগড়া করতেছিস কেন,আল্লাহ!!!
মেয়েটা মরে যাবে তো
.
কচু মরবে,এই মেয়ের হচ্ছে কই মাছের প্রাণ
১০০বার সুইসাইড করার ট্রাই করেছে একবারও মরে নাই,আজ ও মরবে না দেখিস
.
আহানা পানিতে বসে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
.
ওকে গাইস চলো আমরা ফিরে যাই
.
শান্ত তার হাতের জ্যাকেটটা নিয়ে আবারও আহানার গায়ে ছুঁড়ে মেরে ভেলায় বসে বাঁশ হাতে নিয়ে ভেলা বাইতে বাইতে চলে গেলো
আহানা রাগে গজগজ করতেছে,শেষে কতগুলো ছেলে ভেলা নিয়ে ওর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সিটি মারতে মারতে যাচ্ছে দেখে বাধ্য হয়ে সে জ্যাকেটটা পরে নিলো

কিরে বললি না যে মেয়েটা কে?
.
কেউ না,একটা বান্দর আর কিছু না,এটাই ওর পরিচয়
.
আহানা ভেলা থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকালো শান্তকে কোথাও দেখতে পেলো না তারপর জ্যাকেটরা হাতে নিয়ে হাঁটা ধরতেই তার ভার্সিটির সবাইকে খুঁজে পেয়ে গেলো সে
.
রুপা চোখ বড়বড় করে বললো”কিরে তোর হাতে এটা কার জ্যাকেট?”
.
কারোর না
.
কারোর না মানে?এটা আবার কেমন কথা
.
যার জ্যাকেট তার নাম “কারোর না”
.
তোর মাথা গেছে,যাই হোক আগে বল এরকম ভিজেছিস কি করে?
.
ঐ আসলে ভেলা থকে পড়ে গেছিলাম আমি
.
এই জন্যই বারবার বলছি একা একা ভেলায় উঠিস না এখন হলো তো?চল এখন,আরেক জায়গায় যাবো আমরা
.
আহানা পিছন ফিরে একবার তাকালো
শান্তকে পেলে ওর মুখে জ্যাকেটটা মেরে চলে আসবো আমি,বেয়াদব একটা ছেলে,আমাকে অপমান করলো,আমি মরি তো ওর এত কি আমাকে বাঁচানোর,বেয়াদব একটা!
.
শান্ত এসে জিপে বসেছে,নওশাদ ক্যামেরা ধরেছে ওর দিকে
শান্ত “দেবতাখুম” নিয়ে কিছু তথ্য বলে যাচ্ছে দর্শকদের
হঠাৎ বাম পাশ থেকে ওর জ্যাকেটটা এসে ওর মুখের উপর পড়লো দুম করে
শান্ত এক হাত মুঠো করে রেখেছে রাগে,কাজের সময় কেউ ডিস্টার্ব করলে মানুষটাকে খুন করতে মন চায় ওর
রেগে মুখ থেকে আরেক হাত দিয়ে জ্যাকেটটা সরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো আহানা মুখটা বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে
কোমড়ে হাত রেখে বললো”আমাকে খোঁচা মারলে আমিও খোঁচা মারবো,আমাকে অপমান করলে আমিও অপমান করবো,আমাকে পানিতে ভিজাইলে আমিও পানিতে ভিজাবো
এটা বলেই আহানা পিছন ফিরে চলে গেলো
.
শান্ত এখনও রাগী লুক নিয়ে সেদিকে চেয়ে আছে
.
কিরে শান্ত! লাস্টে বললো যে পানিতে ভিজাবে,কই ভিজাইলো
.
শান্ত তাচ্ছিল্য করে হাসি দিয়ে জ্যাকেটটা পরতে পরতে বললো”বললেই হলো আর কি,এসবের জন্য সাহস লাগে,শান্তকে টেক্কা দেওয়া এত সহজ না
.
আসতেছে রে,বামে তাকা
.
রিয়াজের কথা শুনে শান্ত বামপাশে তাকালো,আহানা হনহনিয়ে এগিয়ে আসছে,হাতে ওড়না
শান্ত ভেবেছিল পানি আনতে গেছে এখন দেখি ওড়না খুলে আসতেছে
আহানা শান্তর কাছে এসে হাত থেকে ওড়নাটা গুটিয়ে নিয়ে শান্তর মাথার উপর ধরে চিপে দিলো
ভেজা ওড়না থেকে এক গাদা পানি এসে সব শান্তর গায়ে
নওশাদ রিয়াজ মুখে হাত দিয়ে চেয়ে আছে সেদিকে
শান্ত আশ্চর্য হয়ে গেছে,এটা কি হলো!!
আহানা ওড়নাটা এবার ঝেড়ে গায়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো আর কিছু বললো না
.
রিয়াজ বললো”এই মেয়েটার সাহস কত দেখলি তোরা!
তারপর শান্তর ক্রোধ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে বললো”শান্ত থাক বাদ দে এসব,চল আমরা যাই”
.
শান্ত পকেট থেকে রুমাল নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো”এরে আমি ছাড়মু না!!মেয়েটার যে জিপ আছে ওটা ফলো কর”
.
শান্ত বাদ দে না প্লস
.
না নওশাদ”! বাদ দিব না,মেয়ে হয়ে এত সাহস দেখায় আমাকে,এরে তখন না বাঁচাইলেই হইত,এর তো মরাই উচিত!
.
এবার আহানাদের জিপ যাচ্ছে আলীর গুহার দিকে,এটাকে আলীর সুড়ঙ্গ ও বলা যায়
রহস্যময় একটা গুহা,বান্দরবন জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত গুহাটি
মাতামুহুরি ও টোয়াইন নামক একটা খালের পাশ ঘেষে গুহাটির উৎপত্তি,এই গুহা নিয়ে রহস্যের কোনো শেষ নেই,মোট মিলিয়ে ৩টি গুহা এখানে,সবগুলো একসাথে দেখতে হলে ২ঘন্টা সময় লাগতে পারে
গুহাটির আগে কিছুদূরে এসে এক এক করে সব জিপ থামতেছে
প্রথমে সিঁড়ি বাইতে হবে,তারপর পাহাড় বাইতে হবে
সবাই হাতে হাতে মশাল নিয়ে তৈরি কারণ গুহাটির ভিতর ঘুটঘুটে অন্ধকার
ভিতরে ঢুকলে সরু পথ ও আছে যার কারণে হামাগুড়ির ও প্রয়োজন পড়বে
আহানা ভয়ে ভয়ে ঢুকতেছে,সিঁড়ি শেষ হতেই অন্ধকার শুরু
কেমন স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ,গা গুলিয়ে আসতেছে,সবাই একজন আরেকজনের হাত ধরে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে ভিতরের দিকে
হঠাৎই আহানার হাত ধরে কেউ ওকে কিনারায় টেনে নিয়ে গেলো,মুখে হাত রাখায় আহানা জোরেও চিৎকার দিতে পারলো না
বুকের ভেতরটা ডিপডিপ করতেছে,আহানা তার হাতের মশালটা উঁচু করে সামনে তুলতেই দেখলো শান্ত মুখটা গম্ভীর করে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
আপনি?আবার?কি হইছে,হাত ছাড়ুন আমার
.
আপনার খুব মরার শখ তাই না?
.
ততততো?
.
তো আমি আপনাকে এই চিপায় এই খুঁটির সাথে বেঁধে চলে যাবো,এখানে থাকতে থাকতে এমনিতেই মারা যাবেন,কঙ্কাল হয়ে যাবেন একদম,ইজি না?
.
বেকুবি বন্ধ করেন,আমি কেমনে মরবো না মরবো সেটা আপনি কেন ডিসাইট করবেন,হাত ছেড়ে দিন ভালো হচ্ছে না কিন্তু
.
আমার সাথে যুদ্ধে নেমে আপনিও ভালো কিছু করেননি
.
আহানা শান্তকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে মশালটা সামনে ধরলো
খবরদার!আর একবার আমাকে ধরতে আসলো পুড়িয়ে দিব
.
শান্ত মুচকি হেসে এগিয়ে আসতেছে
আহানা ঢোক গিলে পিছোতে পিছোতে পাহাড়ের সাথে লেগে গেছে একেবারে
.
সরি বলেন আমাকে তারপর মাফ করবো কি করবো না সেটা ভাববো
.
কেন বলবো??
.
কারণ আপনি আমার সাথে মিসবিহেভ করছেন
.
আপনি কি করছিলেন মনে আছে?
আমাকে পানিতে ফেলে দিসিলেন,সেটা কি করে ভুলবো?
.
আপনি আমার হেল্পকে ঢং বলছিলেন
.
তো কি বলবো,আমি মরি না মরি আপনার এত কি?নিজের চরকায় তেল দিতে পারেন না?
.
শান্ত রেগে আরও এগিয়ে আসতে যেতেই ওপাশ থেকে ম্যাম আর বাকিরা ডাক দিলো সবাইকে একজোট ও থাকতে,এমনকি কয়েকজন এদিকে আসতেছে আহানাকে খোঁজার জন্য
আহানা সুযোগ পেয়ে ততক্ষণে চলেও গেছে সেদিকে
.
শান্ত আর এখানে সময় নষ্ট করলো না,নওশাদ আর রিয়াজের কাছে ফিরে গেলো,মেয়েটা শুধু শুধু দিনটায় নষ্ট করে দিয়েছে আমার,রাগটাও কমাতে পারলাম না
.
কিরে শান্ত?কি করলি?কেলানি দিতে পারলি?
.
না,মানুষ এসে গিয়েছিল
.
বাদ দে তাহলে চল আমরাও মশাল হাতে গুহাই ঢুকি
.
হুম
চলবে♥

আম সন্দেশ পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_১০( শেষ পর্ব)
#রিমি_ইসলাম

কিছুক্ষণ পূর্বের ঘটনা,

বলেই ঝটকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে টেনে ডাইনিংয়ে নিয়ে এলেন। সেখানে বাবা আর দাদি সোফায় বসা। মা রান্নাঘরে। তানিয়া আপু, লিনা আপু বিপরীত পাশের সোফায় বসে ফোনে মগ্ন। প্রভাত ভাই অল্প কেশে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে সবাই তাঁর দিকে তাকায়। তাঁকে আজকের মতো এতো সিরিয়াস কখনো দেখিনি।
বাবা থতমত মুখে বললো,

___’ কিছু বলার আছে?’

প্রভাত ভাই বেতাল কথায় না জড়িয়ে সোজা মূল প্রসঙ্গে চলে গেলেন।

___’ আমাদের বিয়েটা আজকে দেওয়া হোক।’

বাবা সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে ধমকের সুরে বললো,

___’ ” দেওয়া হোক” এটা কেমন ধরনের কথা? তুমি কি আমাকে অর্ডার করছ?’

বাবার চেঁচামেচিতে উপস্থিত সকলের মুখে ভয়ার্ত ভাব ফুটে উঠলো। মা রান্না ফেলে দৌড়ে এলো। তবে এত কিছুর পরও প্রভাত ভাই নির্বিকার। যাকে ঘিরে সবার উদ্বেগের সৃষ্টি, সে-ই ঠান্ডা। তিনি ফ্যাকাসে হেসে বললেন,

___’ মামা, আপনি আমাকে ভালোমতোই চেনেন। আপনার মেয়ে বাইরে কি করে না করে সব খবর জানি। এবং জানার পরেই এই সিদ্ধান্তে এসেছি বিয়েতে এক মুহূর্ত কাল বিলম্ব আমার সইবে না। আপনি এটা জানেন আমি অনেক কিছুই করার ক্ষমতা রাখি। সিদ্ধান্ত আপনার।’

বাবা ভড়কে গেলেন। অসহায়ত্ব স্পষ্ট তার চোখে মুখে। প্রভাত ভাই বাবাকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করবেন ভাবতেও পারছি না। আর আমি বাইরে এমন কোনো কুকর্ম করিনি যে তিনি তা দিয়ে ভয় দেখাবেন। তবে? এসব কিসের ইঙ্গিত?
বাবার সিদ্ধান্ত চরম ঘোষণা করে আমাদের বিয়ে আজকে দেওয়ার ব্যবস্থা হলো। ঘন্টা খানেকের মধ্যে ফুফা,ফুপি এসে হাজির। ব্যস, ঘরোয়া লোকজনের মাঝেই বিয়ের শুভ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল।

বর্তমান,

বাসর বলতে কোনো জিনিস রইল না। স্বাভাবিক ভাবে প্রভাত ভাইয়ের রুমে বসিয়ে দিয়ে লিনা আপু চলে গেছে। আমার সাথে এসেছে দাদি আর লিনা আপু। বিয়ের পর থেকে দাদির সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হয়নি। এমনকি লিনা আপুর সাথেও না। সবার মাঝে এক অদ্ভুত ব্যস্ততা লক্ষ্য করছি। হয়তো তাড়াহুড়োর বিয়েতে এমনই হয়। বিদায় বেলায় বাবার মুখে যে ক্লেশ দেখে এসেছি তা ভুলতে পারছি না। প্রভাত নামক মানুষটা আমার জীবনে আপদ থেকে দূর্ভাগ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। চাপা আর্তনাদ বুকজুড়ে ভর করছে। শব্দ করে কাঁদতে চাইছি। সবস্ত গ্লানি, কষ্ট ঝেড়ে মুছে হাল্কা হতে চাচ্ছি, পাচ্ছি না। এই ভয়ানক পরিস্থিতি আমাকে আরও দগ্ধ করছে ভেতরে ভেতরে।

প্রভাত ভাই এলেন। খুব সুন্দর করে ফ্রেশ হয়ে এসেছেন। তাঁর আসা মাত্র ঘরময় এক সুন্দর গন্ধে ছেঁয়ে গেছে। আমি ফ্রেশ হবার সুযোগ পেয়েছি তবে ইচ্ছে করেনি বলে ঠায় সেভাবেই বসে আছি। তাঁর পরনে…..মাত্র একটা প্যান্ট। গা খালি। আড়চোখে দেখে সরাসরি তাকানোর মতো দুঃসাহস দেখাতে পারছি না। যদিও এই মুহূর্ত থেকে তিনি আমার জন্য হালাল। সুতরাং তাঁর দিকে তাকানো বৈধ। তবুও এক আড়ষ্টতা ভর করেছে আমাতে। জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। আজ যে অবস্থায় আমার বিয়ে হয়েছে, সেখান থেকেই এই মানুষটা আমার মনে বিষ হয়ে উঠেছে। এই বিষ ঝাঁড়তে কতদিনে পারব জানি না।
তিনি উশখুশ করছেন। বিছানার একপাশে বসে সেখানে বোধ হয় যুতসই হলো না। তাই উঠে হেলান দিয়ে বসলেন। তারপর আবার উঠে সটান বসে বললেন,

___’ উফ…. বিয়ে না করেই ভালো ছিলাম। তোর সামনে চরম আনইজি ফিল করব এটা কখনো ভাবিনি৷ এ্যঁই একটু সহজ হ তো আমার সাথে! তুই এমন কঠিন পাথর হয়ে থাকলে আমি সহজ হব কিভাবে? তাকা আমার দিকে ঠিক মতো। দেখি তোকে কেমন লাগছে?’

আহামরি কোনো সাজ সজ্জা নেই। খুব সিম্পলভাবে সাজের পাট চুকিয়েছি। যদিও লিনা আপুর ইচ্ছে ছিল ভিন্ন। তোয়াক্কা করিনি সেসবের। জীবনটা আমার। সব তো জলাঞ্জলি দিয়েছি। প্রভাত ভাইকে বিয়ে করতে চাইনি, কিন্তু বাবার অমতেও যেতে পারিনি।
তিনি আমায় খুঁটে খুঁটে দেখে মুখ ভোতা করে বললেন,

___’ আজব! এইটা কোনো সাজ হলো? এর চেয়ে তো বাসায়-ই তুই বেশি সেজে টইটই করে ঘুরতি। বিয়েটা কি তোর কাছে ফাজলামো মনে হয়েছে?’

প্রচন্ড আক্রোশে এবার আর চুপ করে থাকা গেল না। বলেই ফেললাম।

___’ এতকিছুর পর বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে কেউ নিতে পারবে? আমি কি যন্ত্র মানব? যার শরীর আছে তবে মন নেই? একটা প্রশ্ন করি, সঠিক উত্তর আশা করছি। কেন এমন করলেন? সাদিফ নামক ছেলের সাথে কোনো সম্পর্কে না জড়িয়েও অপবাদ দিলেন। এসব কি?’

আমার বলা কাঠ কাঠ কথায় লোকটার মাঝে কোনো হেলদোল হলো না। না মুখের রঙ পাল্টালো। অতি সরল। যেভাবে বসে ছিলেন ঠিক সেভাবে থেকেই বললেন,

___’ তোকে বিয়ে করতে সব করতে পারি বলেছিলাম তো! আমি জানতাম, সাদিফ নামক ছেলে তোকে পছন্দ করে কিন্তু তুই না। সেই রাগে তোকে বিয়ে করিনি। ‘

___’ তবে কি ট্যুর ক্যান্সেলের শাস্তি হিসেবে এসব করলেন?’

প্রভাত ভাই নির্লিপ্ত গলায় বললেন,

___’ বলতে পারিস। আজ হোক বা কাল বউ তো তুই আমারই হতিস। আর এভাবে অন্যদিকে মুখ ফিরে না থেকে একটু দেখ আমার দিকে। ‘

তার গায়ে এখনো কোনো শার্ট ওঠেনি। তাকাই কিভাবে? বললাম,

___’ আগে কিছু পরে আসুন। ‘

প্রভাত ভাই ড্যাবড্যাব করে কতক্ষণ আমাকে দেখে তারপর নিজের দিকে চেয়ে বললেন,

___’ ওই তুই কি পর কেউ যে এভাবে বলছিস? যা পরবো না কিছু। কি করবি? সারারাত এভাবে মুখ ঘুরিয়ে বসে কাটিয়ে দিবি? ‘

___’ তাই দেবো। আচ্ছা, আমার বাবার মতো জমকে আপনি বিয়েতে রাজি করিয়েছিলেন কিভাবে? প্রশ্নটা আপনাকে এর আগে করেও উত্তর মেলেনি। এবার অন্তত আমার মনের কৌতুহল দমন করেন!’

প্রভাত ভাই উঠে আলমারি থেকে একটা শার্ট বের করে পরলেন। ফিনফিনে আকাশি রঙা শার্ট। তারপর আমার সামনে মুখোমুখি বসে বললেন,

___’ হয়েছে এবার? তাকা দেখি!’

আমি নিতান্ত অনিচ্ছায় চোখ তুলে চাইলাম তাঁর পানে। মুহূর্তে আমার মুখের ভাব পাল্টে গেল। লোকটাকে একটু আলাদা লাগছে। অন্যদিনের চেয়ে ভিন্ন। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। তিনি এবার চোখে চোখ রেখে আমার হাতে হাত রেখে বললেন,

___’ একটা মেয়ের বাবাকে রাজি করানো খুব কি কঠিন? তোর বাবা জমের মতন হোক হিংবা আমের মতন হোক, বাবা তো! মেয়েকে নিয়ে শত শত টেনশন আছে। মনে আছে তুই একরাত বাইরে ছিলি আমার সাথে? ভাবতে গেলে এটা কিছুই না তবে সমাজের লোকদের মুখরোচক গল্প বানানোর ভালো উৎস বটে। মামাকে বেশি কিছু বলতে হয়নি, বোঝাতে হয়নি। জাস্ট বলেছিলাম, মেয়েকে ভবিষ্যতে বিয়ে দিতে চাইলে এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। পাত্র হিসেবে ছেলে আমি মন্দ নই। ভালো ফ্যামিলি আছে। রিসেন্ট বাবার ব্যবসায় হাত দিয়েছি। আর কি চায় আপনার? তাছাড়া আরও দুইটা বড় মেয়ে আছে ঘরে। ছোট মেয়ের কোনো বদনাম ছড়ালে তাদের উন্নত ঘরে বিয়ে দিতে পারবেন?
ব্যস, এইটুকুই যথেষ্ট ছিল। ‘

আমি হা করে তাঁর কথা গিলছিলাম। আমার বাবার মতো লোককে পরোক্ষভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার!
প্রভাত ভাই, না ভাই বলাটা এখন থেকে সচীচীন হবে না। যাক গে, প্রভাত আমার আরও কাছে এগিয়ে এসে বললেন,

___’ আমাদের জুড়িটা পারফেক্ট বুঝলি! ঠিক আম-সন্দেশের মতো। আমি হলাম আমের মতো টক, মিষ্টির কম্বিনেশনে তৈরি। আর তুই একদম মুখ তিরতির করা মিষ্টির মতো। আমাদের মধ্যে এই টক ভাব না থাকলে সম্পর্কই টিকবে না। আমার একটু টক মিষ্টিতে আমাদের মধ্যে তিক্ততা এলে তোর পূর্ণ মিষ্টিতে ডুব দেবো। নিজের টকভাব কমাতে। যদিও তাৎক্ষণিক কমলেও পরে আবার চলে আসবে। তুই জানিস আমি একটু অন্যরকম। ‘

তাঁর কথায় যে কেউ হাসতে বাধ্য। আমিও এর হেরফের করলাম না। আজ থেকে শুরু আমাদের আম-সন্দেশের সংসার।

#সমাপ্ত
( কেমন লাগলো বলবেন। বর কিন্তু প্রভাতকেই রেখেছি। আর হ্যাঁ, এটার আর কোনো সিজন হবে না। তাই কেউ সিজন টু চাইবেন না প্লিজ। পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।)

আম সন্দেশ পর্ব-০৯

0

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_০৯
#রিমি_ইসলাম

প্রভাত ভাইকে পাওয়া গেল আমার রুমের সেন্টারে দাঁড়ানো অবস্থায়। তাঁর বেশভূষা এলোথেলো। চুলে শাইনি ভাবের বদলে উড়ো খড়কুটো ভাব। দেখেই মনে হচ্ছে এই ছেলে ঘুম ভেঙে সোজা এখানে চলে এসেছেন। পরনে ঢিলে ট্রাউজার, কালো পাতলা শার্ট। প্রভাত ভাই পেছনে ঘুরে তাকাননি। পেছনে আমি ছটফট করছি তাঁর সাত সকালে এখানে আসার হেতু জানতে। আর তর সইছে না। কেন মানুষটা বোবা হয়ে আছেন?
পরক্ষণেই মুখ খুলে বললেন,

___’ তোর টেনশন শেষ। বলে দিয়েছি মামাকে, আমরা কোথাও যাচ্ছি না। নাউ হ্যাপি? হোপ সো! ‘

থমথমে কালো মুখে কথাগুলো বলতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আঁটকে গেলেন তিনি। শুভ্র চেহারায় রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। সাথে চেহারায় এক অমায়িক বিষাদের ছাপ। শুধুমাত্র একটা ট্যুর ক্যান্সেল করায় এত বেদনা! না জানি কত আশা বুকে বেঁধেছিলেন! তাঁর কষ্টের কিছু অংশ তড়িৎ এসে আমায় আঘাত হানলো। প্রচন্ড খারাপ লাগতে লাগল।
তিনি এবার দৃষ্টি দিলেন আমার দিকে। টকটকে লাল চোখে নির্ঘুমতার ছায়া। চোখে চোখ একবার মিলিয়ে সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে বললেন,

___’ কি দেখছিস ওভাবে? ‘

লাগামহীন মুখে বলে ফেললাম।

___’ আপনাকে।’

পরমুহূর্তেই হতবাক হয়ে চুপসে গেলাম। এই শব্দটা বলা কি খুব প্রয়োজন ছিল? এখন তিনি কি ভাবছেন আমার সম্পর্কে?

___’ দেখে নে ভালো মতো।আমার শখের ট্যুর ক্যান্সেল করিয়েছিস তো! দেখ তোর লাইফের ট্যুর কোথায় গিয়ে থামে। বি রেডি ফর মাই নেক্সট এ্যকশান।’

চমকে তাকালাম তাঁর দিকে। আবার কি ফন্দি এঁটেছেন? প্রভাত ভাইকে শার্টের হাতা গুটিয়ে আমার দিকে এগোতে দেখে কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। এভাবে এগোচ্ছেন কেন? মারবেন নাকি? আমি পেছনে এক কদম দু’ কদম পিছাতে পিছাতে দেয়ালে ঠেকে আঁটকে গেলাম। আমার দৃষ্টিতে আরও ভয়ার্ত ভাব ফুটে উঠলো। এবার তো আর পথ নেই পালানোর! তিনি আমায় প্রচন্ড চমকে দিয়ে প্রশ্ন করলেন।

___’ তুই অন্য কাউকে পছন্দ করিস? সত্যি বলবি। ‘

তাঁর মুখে এমন কথা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কাউকে পছন্দ! আমি প্রচন্ড ইনট্রোভার্ট প্রকৃতির মেয়ে। কারো সাথে ফ্রিলি মিশতে সময় লাগে। এক ঝটকায় কাউকে আপন করতে পারি না বলে অনেকেই আমাকে অহংকারী ভাবে। নিজেকে যেমন অন্য কারো সামনে উপস্থাপন করি না। তেমনি অন্যের ব্যাপারেও খুব একটা আগ্রহ দেখাই না। আমার জীবন সঙ্গী হওয়া কি চারটে খানেক কথা! সহজে কাউকে মনে ধরলে তো!

___’ আপনার কি হয়েছে? ঠিক আছেন? আমার ব্যাপারে এমন কিছু আছে যা জানেন না?’

___’ তাহলে সাদভী কে?’

ঝটকা খেলাম প্রচন্ড। মনে পড়লো, মাস খানেক আগে সাদভী নামক এক ছেলের থেকে পাওয়া প্রপোজালের কথা। যদিও সে রিজেক্টেড লিস্টে তৎক্ষনাৎ চলে এসেছিল। তবুও পিছু ছাড়েনি ছেলেটা পুরোপুরি। মাঝে মাঝে নক দেই। কথা হয়নি কখনো। কিন্তু এর কথা প্রভাত ভাইয়ের জানবার কথা না!

আমি মুখ খুলতে যাবো তার আগেই প্রভাত ভাই আমাদের মাঝের দূরত্ব শূন্যে মিশিয়ে দাঁড়ালেন। এক ইঞ্চি জায়গাও মাঝে অবশিষ্ট নেই। তাঁর হাত দুটো দেয়ালে আবদ্ধ । দৃষ্টি আমাতে নিবন্ধ। একে অপরের নিঃশ্বাস পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছি, গুণতে পারছি। অদ্ভুত মিশ্র এক অনুভূতি। মিশ্র বলছি কারণ একই সাথে খারাপ লাগছে আবার ভালোও লাগছে।
তিনি ঘনঘন জোরালো শ্বাস ফেলছেন। ধীরে ধীরে তার কপালের সাথে আমার কপাল এক করে বললেন,

___’ কিছু হয়নি। তবে ঠিক নেই। তোকে বুঝতে চাই। পাচ্ছি না বিধায় প্রচন্ড ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি। হুড়ুম করে কোনো কান্ড ঘটিয়ে ফেলবো মনে হচ্ছে। তোকে বড় কোনো শক দেওয়া প্রয়োজন। ‘

আমি কোনো কথা না বলে শুধু তাঁর কথা শুনে গেলাম। যে পরিস্থিতিতে রয়েছি, এভাবে দম আঁটকে আছে আমার। কথা তো দূরে থাক! ঠিক মতো শ্বাস-প্রঃশ্বাস ক্রিয়াও নিতে পারছি না। এতটা কাছে আসার সুযোগ না কখনো কেউ পেয়েছে আর না আমি কাউকে দিয়েছি। তিনিই প্রথম এবং হয়তো শেষও। দ্রুত তাঁর বুক ওঠা নামা করতে করছে। এক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললেন,

___’ কখনো কোনো বেয়াদবি করিনি। তোকে পছন্দ করেছি, ডাইরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। আই নো তোর সময় লাগবে। আমাকে কতটুকু চিনিস! তাছাড়া আমি প্রথম থেকেই তোর সাথে উদ্ভট আচরণ করছি। তুই শকড্ আমি বুঝি। কিন্তু আমি সামান্য তম জায়গাও তোর মন কুঠরীতে নিতে পারিনি? পছন্দ করতে পারিসনি, ভালোবাসিস না মানলাম। তাই বলে বিশ্বাসের যোগ্যতা কি আমি রাখি না? একটা ট্যুর ই তো চেয়েছি। খারাপ কোনো টেনডেনসিতে না, তোকে আমার সাথে ইজি করতে। বুঝাতে যে আমি ছেলে এতটাও খারাপ না। তুই কি করলি? যাবি না বললি। ‘

এক টানা কথাগুলো বলে দীর্ঘ এক মিনিটের মতো বিরতি নিলেন। তারপর থেমে বলতে লাগলেন।

___’ কথা বলতে চাইলাম, এক শব্দে না বলে পার পেয়ে গেলি। আচ্ছা, কথা বললে কি তোর গায়ে ছিঁলে পড়ে যায়? আমার কথাগুলো তোর কাছে গরম তেল মনে হয়? সবসময় আমার থেকে দূরে থাকিস। ভাবিস কি নিজেকে? রাণী এলিজাবেথ? কোন অংশে কম যাই আমি? তুই আমার কেয়ারনেস দেখেছিস। আমার জিদ তোকে দেখাবো। আমার চরিত্রের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ তোকে আজ দেখাবো। মুহূর্তে তোর জীবন পাল্টে ফেলবো আমি। দেখবি? ‘

বলেই ঝটকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে টেনে ডাইনিংয়ে নিয়ে এলেন। সেখানে বাবা আর দাদি সোফায় বসা। মা রান্নাঘরে। তানিয়া আপু, লিনা আপু বিপরীত পাশের সোফায় বসে ফোনে মগ্ন। প্রভাত ভাই অল্প কেঁশে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে সবাই তাঁর দিকে তাকায়। তাঁকে আজকের মতো এতো সিরিয়াস কখনো দেখিনি।

___
বিয়ের কনে সাজে একবার নিজেকে দেখার ইচ্ছে পর্যন্ত জাগছে না। লিনা আপু আবেগে গলে ইতোমধ্যে রুম ছেড়েছে। তানিয়া আপু মাথার ওড়না ঠিক করে দিচ্ছে। তার চোখও অশ্রুসিক্ত। মুহূর্তে কি থেকে কি হয়ে গেল। প্রভাত ভাই শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে বানের জলে ভাসাবেন বুঝিনি। বিয়ের শপিং করার মতো অবকাশ বা পরিস্থিতি ছিল না বলে আম্মুর বিয়ের শাড়িতেই আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে। ভাগ্যক্রমে শাড়ির সাথে মানানসই জুয়েলারিও খুঁজে পাওয়া গেছে।
মা এসে তাড়া দিয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন বাইরে। বরবেশে অচেনা মানুষটাকে একবার দেখার আগ্রহ হলো না। মাথা নত করেই তাঁর পাশের জায়গায় গিয়ে বসলাম। কবুল বলার সময় জড় বস্তুর মতো তব্দা হয়ে ছিলাম। পাশের লোকটার ধাক্কায় সম্মোহনী ফিরে এলো। নিজেকে সামলে ঠোঁট নেড়ে মাত্র কবুল বলেই হুহু করে কেঁদে উঠলাম।

চলবে…..

আম সন্দেশ পর্ব-৭+৮

0

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_০৭
#রিমি_ইসলাম

বাবার মুখে হাসি খুঁজে পাচ্ছি না। বোঝাই যাচ্ছে আমার বিয়ের সিদ্ধান্ত তাঁর মত বিরোধীও নয়,আবার স্বাচ্ছন্দ্যেও নয়। প্রভাত ভাই কি কোনো ভাবে বাবাকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন? হতে পারে! তিনি জটিল অনেক কাজ অতি সহজেই করে ফেলতে পারেন। বাবাকে বিয়েতে রাজি করানোর মতো অসাধ্য কাজ যখন করে নিয়েছেন, তখন সব পারেন।
বাবা এক হাতে মাথা ধরে সোফায় খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে। দাদি তাঁর পাশে। আমি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে। একটু আগে বাবা আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে। যদিও জানি বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে বাবা আলাপ করবে। তবুও ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।
এভাবে বেশ খানিকটা সময় পার করে বাবা বললো,
___’ তোর বিয়ে আগামী শুক্রবার জানিস তো? না জানলেও অসুবিধে নেই। কারণ যে কান্ড ঘটিয়েছিস এরপর ওই ছেলের সাথে বিয়ে না দিয়ে পথ নেই। কথা বুঝলি? ‘

আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ ধরলাম। এরপর বাবা কিছু কথা বললো বিড়বিড় করে। বাকিটা আমাকে জ্ঞান দিয়ে। রুমে ফিরে শুয়ে থেকে ভাবলাম ঠিক কোন কারণে বাবা বিয়েতে রাজি হলো। ব্যাপারটা এখনো আমার কাছে ধোঁয়াশা।
এদিকে ফোনটা রিং হচ্ছে। অচেনা নাম্বার। আমি আননোন নাম্বার কখনো রিসিভ করি না। তবু এই নাম্বারের দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে খুব চেনা কোনো ব্যক্তি রয়েছে ফোনের ওপাশে। যার আমার ফোনটা রিসিভ না করার দরুন গলা আটকে রয়েছে। একবার নয়, পুরো বিশটা রিং বেজে একুশ বারের বেলায় রিসিভ করলাম। আর করেই বুঝলাম আমার ধারণা যথার্থ ছিল। আপনারাও হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন কে হতে পারে?

___’ তোকে কতবার ফোন করা লাগে হ্যাঁ? কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। বাইরে আই।’

আমি থতমত খেয়ে যায়। বাইরে মানে কি? গতবার একরাতের ঘটনায় আমার জীবনে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। এবার আর সেই রিস্ক নিতে চাই না।

___ ‘আমি কোথাও যাচ্ছি না।’

ফোনের বিপরীতে প্রভাত ভাইয়ের স্বচ্ছ হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। তিনি বললেন,

___’ ভয় পাস না। জাস্ট কিছু কথা বলে ছেড়ে দেব। তবে কথা না শুনলে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। হতে পারে বিয়েটা সবার মতে যেখানে খুশি খুশি আগামী শুক্রবার হবে। সেখানে মামা আজ রাতেই তোকে বিদায় করে দিবেন। ‘

ভয়ে শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো। যেন হিমালয়ের হিমশীতল বাতাসের স্রোত রক্তে বয়ে গেল। এক মুহূর্ত আর থামলাম না। লাইন কেটে ওড়না দিয়ে ভালো মতো মাথা ঢেকে নিচে নেমে এলাম। একদম মেইন গেটের সামনে, যেখানে বরাবরের মতো আজও প্রভাত ভাইয়ের গাড়ি থামানো। আমি ধীর হাতে গেইট খুলতে গাড়ি থেকে তিনি নামলেন। আমার হাত ধরে বললেন,

___’ আই, গাড়িতে বসবি। একটা কথাও বলবি না। যেথায় নিবো সেথায় তোকে যেতে হবে। ‘

আমি দু’ দফা কথা বলার সুযোগ পেলাম না। গাড়িতে একরকম জোরপূর্বক তিনি আমায় বসিয়ে দিলেন। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ছাড়লেন। মাথার ওড়না টেনে একহাত ঘোমটা দিয়ে বসে আছি। ভয়ে হার্টবিট দ্রুত হতে দ্রুততর হচ্ছে। আকাশ কুসুম ভাবনা নিয়ে বসেছি। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি? জানি না।

______
সেই ব্রীজটা। যেখানে প্রথমবার তিনি আমাকে এনেছিলেন। চোখের সামনে যেন সকল স্মৃতি ভেসে উঠলো। আবার কি আমায় ব্রীজে ঝুলিয়ে হুমকি ধামকি দেবেন? এই লোকের উপর ভরসা করা দায়।
প্রভাত ভাই আমার পাশে দাঁড়ানো। রাতের অন্ধকারে চাঁদের ফিনকি আলোয় রহস্যময়ী এক জগৎ তৈরি হয়েছে। যেখানে পাশে থাকা মানুষকে রহস্যময় মানব ভাবতে বাধ্য করছে। সত্যিই প্রভাত নামক মানুষটা বড্ড রহস্যজনক! আমি বুঝতে পারিনি তাঁকে। ভবিষ্যতেও পারব কি না জানিনা।
উনি প্যান্টের পাশ পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললেন,

___’ বল তো বিয়েটা কিভাবে হচ্ছে? আই মিন, তোর না অন্য কোথায় বলে বিয়ে ঠিক ছিল? কি হলো সেটার? ‘

আমি হতভম্ব, নির্বাক, বিহ্বল। যে সব প্রশ্ন আমার করা উচিত সেই লাইনগুলো তিনি আওড়ে নিলেন। অথচ উত্তর আমারও চাই। আমি তাঁর চোখে চোখ রাখতে চাইলাম। বুঝতে চাই তাঁর মনে কি চলছে, কিন্তু ব্যর্থ আমি। কারণ তাঁর দৃষ্টি গিয়ে বিঁধেছে দূর অসীমে। প্রশ্ন করলাম।

___’ আপনি-ই বলুন কিভাবে কি হলো? সমস্ত কৃতকর্মের দায়-দায়িত্ব তো আপনার। উত্তর জান্তাও নিশ্চয়ই আপনি!’

প্রভাত ভাই লম্বা সময় নিয়ে নিঃশব্দে হাসলেন। তাঁর চওড়া ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে সাদা দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছে। তাকালে বোঝা যাচ্ছে মানুষটা হাসছে। নয়তো টের পাওয়া মুশকিল। তিনি বললেন,

___’ এখন উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। বিয়ে হচ্ছে এটাই যথেষ্ট। আম পেয়েছিস আমের স্বাদ গ্রহণ কর। কোথ থেকে এলো, কেন এলো এসব জেনে তোর কাজ নেই। তোকে যে জন্য এনেছি সেটা বলি?’

দমে গেলাম। একবার এই ছেলে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তাঁকে নড়ানো যাবে না। হতাশ হয়ে বললাম,

___’ বলুন।’

___’ তোর কোথাও ঘুরতে ভালো লাগে? মানে লং জার্নি? লং ট্যুর, মাস্তি এইসব?’

___’ এসব কার না পছন্দ? হ্যাঁ, ভালো তো লাগে। তবে সেভাবে কোথাও যাবার সুযোগ হয়নি। ‘

প্রভাত ভাই এবার হাতে তুড়ি বাজিয়ে বললেন,

___’ ওকে, দ্যান ডান। আমরা যাচ্ছি কাল। জমিয়ে প্রেম করব, তারপর বিয়ে। বিয়ের আগে প্রেম করতে না পারলে জীবন বৃথা!’

আবারও আমার নতুন উদ্বেগ সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে এসে আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে ভর করলো। ‘আমরা যাচ্ছি ‘ এই লাইনটুকু একটি অসম্পূর্ণ লাইন। এর দ্বারা কোনো মানুষের পক্ষে কিছু বোঝা কি সম্ভব?
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

___’ কোথায় যাচ্ছি? তাছাড়া যাচ্ছি মানে কি? গেলে আপনি যাবেন। আমি বাসা থেকে একচুল নড়বো না।’

___’ তোকে কিডন্যাপ করে হলেও নিয়ে যাবো। সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার। তুই যেয়ে টুকটাক গোছগাছ শুরু কর। চল এবার ফেরা যাক। অনেক রাত হচ্ছে। আমার ঘুম পাচ্ছে। ‘

আমাকে হাত ধরে আবার গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। রাতটা বোধ হয় আমার নির্ঘুম কাটবে। এই ছেলের মাথায় না জানি কি ফন্দি ভর করেছে!

চলবে……..

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_০৮
#রিমি_ইসলাম

___’ এ্যঁই!কি হলো রে সন্ধ্যা? রাত বিরাতে রোমান্স, আহা! প্রভাত ভাই এত রোমান্টিক আগে জানলে আমিই লাইনটা সেট করে নিতাম। মিস হয়ে গেল রে, ডাহা মিস!’

লিনা আপুর উদ্ভট কথার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারলে শান্তি হতো। তাদের বলতে ইচ্ছে হলো, প্রভাত ভাই অতি ভদ্র ছেলের মতো আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। কোনো রোমান্স টোমান্স হয়নি। এমনকি গাড়িতে ফিরতি পথে আমার দিকে একঝলক দেখেননি পর্যন্ত। আর আমার বোনেরা কিনা আকাশ কুসুম কল্পনা করে বসেছে!
তানিয়া আপু আমার বাহুতে জোরে টোকা দিয়ে বললো,

___’ গোপন করছিস কেন, বল না? আমরাও একটু শুনে শুনে পাকাপোক্ত হই। কোথায় গিয়েছিলি রে তোরা? প্রভাত ভাই কি সারপ্রাইজ দিলো? বল না? মুখ দেবে বসে থাকিস না। উই আর সো মাচ কিউরিয়াস! ‘

___’ কিচ্ছু হয়নি, কোনো সারপ্রাইজ ছিল না। গাড়িতে নিয়ে গেছেন, নিজের কথা আমার ওপর ঝেড়ে আবার স্বদেহে ব্যাক করেছেন। ‘

আমার কথায় ওরা দু’জন হতাশ হলো। হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,
___’ কিছুই করেনি? একটু রোমান্টিক কথাও না?’

দাঁত চেপে বললাম,
___’ না।’

______
সকালে ডাইনিংয়ে সবার থমথমে মুখ দেখে আরো একদফা ভয় আঁকড়ে ধরলো আমাকে। বাবা তো আছে সাথে দাদির চেহারাও থমথমে। মা এর চেহারা স্বাভাবিক। বোন দুজনে মুখ টিপে হাসছে। ওই লোক নতুন করে কোন আপদ হয়ে এলেন কে জানে! খাওয়া শেষে নিজের রুমে পা বাড়ালে দাদি আমাকে হাত ধরে তাঁর রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি বিস্মিত। দাদি এমন কখনো করে না।

___’ ওই পাগলে করছে কি তুই জানিস কিছু? বলছে তোরে কিছু?’

আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। দাদি আমাকে বসতে ইশারা করায় বিছানার এককোলে বসে পড়লাম। তার বিপরীতে দাদি বসে খুব চিন্তিত গলায় বললেন,

___’ তোর বাবারে বলছে তোর সাথে ঘুরতে যাবে কই জানি। আমি বুঝতেছিনা তোর বাবা কিভাবে রাজি হইলো? ভাবলাম তুই হয়তো কিছু জানিস। তোর বাপে আমারে কিছু বলতেছে না। আমিও আগ বাড়ায়া প্রশ্ন করতে যাই নাই। ‘

ঝড়ের প্রকৃত কারণ পেয়ে গেছি। বাবা তাহলে এই কারণে থমথমে মুখ করে রেখেছে। অসহায় মুখ করে বললাম,

___’ ব্যবস্থা করো দাদি, আমি ওই লোকের সাথে কোথায় যেতে চাই না। তার ওপর একা তো ভুলেও না।’

দাদি মুখটা এগিয়ে এনে কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো।

___’ প্রভাতের সাথে একা যাইতে চাসনা কেন? ওই কি তোরে কখনো কিছু করছে? অসভ্যতা, গায়ে হাত কিংবা……….’

___’ ছিঃ না, কক্ষনো না। উনি একটু উড়নচণ্ডী, রগচটা, ভাবী। তাই বলে তুমি তো তাঁকে চেনো। এমন কাজ তাঁর স্বভাব পরিপন্থী। আর আমার সাথে তো ভুলেও একাজ করবেন না। এই বিশ্বাসটুকু আছে। একা কোথাও তাঁর সাথে যেতে চাই না শুধুমাত্র উনার টর্চার থেকে বাঁচতে। আমাকে রোবটের মতো পরিচালনা করেন। উঠতে বললে উঠতে হবে, বসতে বললে বসতে হবে। উফ, রিডিকিউলাস!’

দাদি একগাল হেসে বললো,

___’ ভয় নাই। তানিয়া, লিনা তোর সাথে যাবে। কি করে ভাবলি তোর বাবা তোরে একা ছাড়বে? এখন যা, আমি একটু আরাম করব। আমার প্রশ্ন শেষ। ‘

______
একবার যদি মনে হয় প্রভাত ছেলে খারাপ না। তো আরেকবার মনে হয় তিনি একটা রহস্যজনক মানুষ। একটা মানুষকে ঠিক চিনতেই পারছি না তবে তাঁকে আপন করবো কিভাবে? আর ভালোবাসা? সেটা কি আদৌ সম্ভব? আমি জানি, তিনি আমার ওপর প্রচন্ড রকম দূর্বল। সব করতে পারেন আমায় পেতে। কিছুটা দূর্বলতা আমারও রয়েছে তাঁর প্রতি। কিন্তু এই দূর্বলতা দিয়ে তো একটা সম্পর্কের মজবুত গঠন হয় না। যদিও দূর্বলতা থেকেই সম্পর্কের শুরু হয়। তবে শেষ অবধি তা গড়ায় কি?
এইযে কেবল প্রভাত ভাই ম্যাসেজ করলেন। তাঁর বার্তা পড়ে আমার মুখে যে এক চিলতে হাসির ঝলক এলো এটা কিসের ইঙিত? ভালোলাগার! তাঁর বাস্তবতায় ফেঁসে যাচ্ছি আমি। নিজেকে ইতোমধ্যে তাঁর অংশ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছি। কিছু পরিকল্পনা জপতে লেগেছি। বিয়ের পর এই ত্যাঁড়া লোককে কিভাবে ঠিক করবো, সংসার কিভাবে সামলাবো সব না চাওয়া আকাঙ্খা, ভাবনা এসে পাহাড় জমেছে।
আমি ফোনের ম্যাসেজগুলো একে একে পড়ে রিপ্লাই করলাম।

” Kothai jabi bol to? I can’t decide alone. Can you help? ”

” Kothaou jabo na. Apni Tania, Lina apuke sathe niye jan.”

” Jan bolchis abar jeteo bolchis? Call dile dhorbi? Kotha bolbi?”

কথা বলবো? কিন্তু কি বলবো? যাঁকে দেখলে আমার প্রতি মুহূর্ত ভয়ে কাটে কখন কি করে বসবেন এই ভাবনায়। তাঁর সাথে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে একদন্ড কথা বলার সাহস আমার নেই। তাই ঝটপট লিখে ফেললাম।

” Na.”

আর কোনো ম্যাসেজ এলো না। ফোনটা সাইলেন্টে রেখে বাইরে চলে এলাম। আমি জানি, আমার কথায় প্রভাত ভাই প্রচন্ড রেগে যাওয়ার পাশাপাশি হতাশ হবেন। তবুও আমি কোথাও যেতে চাই না। একটু সময় দরকার আমার। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে মানতে। তাঁকে বুঝতে এবং নিজেকে বুঝাতে। সম্পর্ক গড়তে সময় নিতে হয়। তাড়াহুড়োর সম্পর্কের ফিতে ঢিলে হয়।

মাকে রান্নার কাজে হেল্প করা হয় না। আমার স্বভাব মা রান্না করবে আর পাশে একটা টুল পেতে বসে গল্প করবো আমি। কখনো কখনো এমন হয় গল্পের মশগুলতায় মা তরকারিতে লবণ দিতে ভুলে যায়। তবে এই সময়টুকু বেশ কাটে আমাদের। প্রতিদিনের রুটিনে আজও ব্যতিক্রম নেই। মায়ের সাথে বসে গল্প করছি। এমন সময় হুড়মুড় করে প্রভাত ভাই রান্নাঘরে ঢুকে বললেন,

___’ সন্ধ্যা বাইরে আই, আই নিড টু টক।’

মা রান্না ভুলে হতবাক হয়ে তাঁকে দেখছে। আমি চোখ তুলে তাঁর দিকে ফিরতে তিনি আরও একবার চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন দ্রুত বাইরে আসতে। তারপর চলে গেলেন। মাঝে মাঝে এতটা অবাক হই। এই মানুষটার এত সাহসের মূল উৎস কি? একটু সাহস আমার ধার নেওয়া দরকার ছিল। তাহলে আমিও জোর গলায় সেদিন বলতে পারতাম, এই বিয়ে আমি করবো না। কক্ষনো না!

চলবে………..

আম সন্দেশ পর্ব-০৬

0

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_০৬
#রিমি_ইসলাম

এই গলার আওয়াজটা মারাত্মক এক ভাইরাস আমার জন্য। একটি নির্দিষ্ট ভাইরাস যা কেবল আমাকেই আক্রমণ করে। বারবার ভিন্ন পদ্ধতিতে। মারাত্মক! অসহ্য!

মাত্র চারপাশে ভালোমতো চোখ বুলিয়ে কাউকে পেলাম না। অথচ প্রভাত ভাই হঠাৎ দুম করে কোথা থেকে এলেন আমি জানি না। একটু ঘাড় কাত করতেই প্রথম চোখে পড়ল তাঁর চওড়া হাস্যজ্জ্বল ঠোঁটে। সব দাঁত বের করে হাসছেন। যেন তিনি বিশ্ব বিজয়ী।
আমি আতঙ্কিত হয়ে এক হাতের সাথে অপর হাত রগড়ে বললাম,

___’ আপনি কখন এলেন?’

প্রভাত ভাই দ্বিতীয় কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক হাতে আমাকে টেনে নিলেন এবং মিশিয়ে নিলেন নিজেতে। আমার কপালে পড়ছে তাঁর উষ্ণ মাতাল প্রঃশ্বাস । তাঁর এক হাতের লম্বা আঙুলগুলো আমার কপালে পড়ন্ত এলোথেলো চুলে বিচরণ করছে। ক্ষণিকে হুট করে তিনি কি করে বসবেন কেউ জানে না। তাঁর আকস্মিক স্বভাবে প্রচন্ড আড়ষ্টতা আমার দেহে ভর করেছে। নড়তে পারছি না। কথা বলতে চাইছি, পারছি না। হঠাৎ প্রভাত ভাই বললেন,

___’ ভয় করছিস? হাবা টাইপ মেয়েগুলো একটুতেই আকাশ সমান ভয় পায়। এই যেমন তুই পাচ্ছিস। আমি কখনো তোকে বকেছি না মেরেছি, না লিমিট ক্রস করেছি? বল?’

এইবার তাঁর কথায় আমি নড়েচড়ে উঠলাম এবং নিজেকে সরানোর চেষ্টা করে বললাম,

___’ সবসময় তো বকতেই থাকেন। সহজভাবে কিছু বলেছেন কখনও?’

তিনি কতক্ষণ চোখ জোড়া পিটপিট করলেন। ঠোঁট জোড়া পলকা হা হয়ে গেল তাঁর। তারপর পরই চোখ দুটো আকারে ছোট করে নিয়ে আমাকে প্রায় হাল্কা হাতে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলেন।

___’ বকা আর ভালোবাসার তফাৎ বুঝিস না বলেই এই কথা উচ্চারণ করতে পারলি। প্রচন্ড রাগ নিয়ে বলা কথাগুলোকে বকা বলে। বকা ক্ষোভ প্রকাশের একটা মাধ্যমও বটে। আর আমি তোর সাথে যা করি তা হলো ভালোবাসা, কেয়ার থেকে। এত সহজ গণিত কষতে কি তুই জীবন পার করে দিবি? যে মেয়েটা ঠুংকো ধমকেই কেঁপে ওঠে, তাকে বকবো আমি? তোকে চিনতে কি বাদ আছে আমার?’

চোখে দেখার চেয়ে কানে শোনা বাণীর ক্ষমতা বোধ হয় একটু বেশি-ই । এই মানুষটাকে দু’দিন থেকে দেখেও তাঁর প্রতি পজিটিভ কোনো কিছু ভাবতে পারিনি। তবে কি জানেন? এখন তাঁর কথাগুলো আমাকে ভেতরে গভীর নাড়া দিয়েছে। আমি তাঁকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।
মনের কোণের বেশ খানিকটা অংশ ইতোমধ্যে তাঁর কথায় বিশ্বাস করে নিয়েছে। আর যার এখনো বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে, তারাও আর পারবে না বেশিক্ষণ এভাবে থাকতে। এত অবহেলা সহ্য করেও তাঁকে আমার থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়নি। ঠিক অদম্য উচ্ছ্বাসে চলে এসেছেন। কোনো ক্লান্তি নেই। হতাশা নেই। আমাকে পাবার যে তীব্র আকাঙ্খা তা দেখেই এতদিন গলে পড়া উচিত ছিল। তবে কেন পারিনি? বিস্ময়কর!

একটু জোর গলায় প্রভাত ভাই বললেন,

___’ কি ভাবিস এত? আমাকে তো না, তবে অন্য কেউ? শোন, আমি ফিল্মের হিরোর মতো ওসব স্যাক্রিফাইস টাইস করতে পারব না। তোকে আর যাকে তুই পছন্দ করবি, মেরে শ্মশান ঘাটে ফেলে আসবো। ‘

গতবার এই প্রশ্নটা একবার করতে যেয়েও ফেরত নিয়েছিলাম। এইবার আর চুপ করে থাকলাম না। জিজ্ঞেস করেই বসলাম।

___’ আচ্ছা, আপনি শুধু আমাকে শ্মশান ঘাটে ফেলে আসার হুমকি দেন কেন? বলবেন মেরে কবর দেব। একজন মুসলিমকে তো শ্মশানে নিতে হয় না।’

প্রভাত ভাই ভ্যাবলাকান্ত হেসে মাথার চুলগুলো খানিক আউলে ঝাউলে করছেন। হয়তো এ ধরনের ভিত্তিহীন প্রশ্নের কর্তা কখনো আমি হব তা ভাবেননি। একটু ভেবে বললেন,

___’ সবাই কথায় কথায় বলে; মেরে পুঁতে দেব, জিন্দা কবর দেব, জিন্দা লাশ বানিয়ে দেব। তাই আমি একটু এর মধ্যে ভিন্নতা আনতে……ইউ নো হোয়াট আই মিন?’

বলেই নির্লিপ্ত হাসলেন। যার অর্থ এইমাত্র বলা বাক্যগুলোতে তিনি নিজেই কনফিউজড। সত্যিই মারভেলাস ক্যারেক্টার একটা!

____
এর পরের দিন রাতের ঘটনা। সদ্য বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছি। রাত বাড়ছে। আমার ঘুম ধরে না। তাই একটু দাদির সাথে গল্প করে এসেছি। গল্প করতে করতেই ঘুম চলে এলো। তৎক্ষনাৎ রুমে ফিরেছি। একটুও দেরি করলে ঘুমভাব আবার কেটে যাবে। তখনই তানিয়া এবং লিনা আপু এসে অনেকটা ঢোল পিটানোর মতো স্টিলের প্লেট আর চাচম নিয়ে হৈচৈ করে রুমে ঢুকলো। লিনা আপু প্লেটে চামচ বাজিয়ে শব্দ করছে। অন্যদিকে লিনা আপু এক হাত অদ্ভুত ভঙ্গিতে নাড়িয়ে সেটাকে সায় জানাচ্ছে। আমি দু’ কানে আঙুল পুরে বসে পড়েছি। এদের বিপরীতে কিছু বলেও কোনো কাজ হবে না। তাই নির্বাক অত্যাচারিত দর্শক হয়ে সব সহ্য করছি।
এবার এক হাত তুলে তানিয়া আপু ইশারা করতেই লিনা আপু থেমে যায়।
তানিয়া আপু লিনা আপুর উদ্দেশ্যে বললো,

___’ তুই বল। ‘

লিনা আপু কেমন লাজুক হেসে বললো,

___ ‘ তুই আমার এক মিনিটের হলেও বড়
। তুই বলবি। ‘

এরূপ ওদের মাঝে কে বলবে কে বলবে না করে তর্ক শুরু হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারছি না ওরা কি বলা নিয়ে এত তর্ক করছে।
তাই সজোর চিৎকার করে উঠে বললাম,

___’ তোমরা থামবে একটু? আসলে কি ব্যাপার ঘটেছে পরিষ্কার করে বলো। লিনা আপু তুমি বলো।’

লিনা আপু নাটুয়া ভঙ্গিতে লজ্জা পেয়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে বললো,

___’ ইশ, কিভাবে যে বলি,এখানে একজনের বিয়ে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে?

___’ বিয়ে! কার? তোমার? তাইতো বলি লিনা আপুর এত লজ্জা কেন?’, কথাটা বলতেই লিনা আপু আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।

___’ থাম, এত খুশি হস না। খবরটা আগে দিয়ে দেই। ‘

এ পর্যন্ত বলে লিনা আপু আবার একটু নাটকীয় কান্ড শুরু করলো। টেবিল থেকে একটা খাতা নিয়ে সেটা গোলগোল করে মুড়ে পাইপের মতো করে তাতে মুখ লাগিয়ে কোনো কিছু এ্যনাউন্সের ভঙ্গিতে বললো,

___’ শোনো ভাই ও বোনেরা, ওহ্ স্যরি। এখানে তো কোনো ভাই নেই। শোনো বোনেরা, আমাদের বাড়িতে বংশ পরস্পরায় বহু দিন থেকে চলে আসা রীতির প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। আত্মীয়ে আত্মীয়ে বিয়ের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটা বাবা আজ ভঙ্গ করেছেন তাঁর আদরের কন্যার মঙ্গলের কথা ভেবে। তিনি ঘোষণা দিয়েছে আগামী রোজ শুক্রবার তাঁর কনিষ্ঠ কন্যার সাথে তাঁর বোনের ছেলের বিবাহ। অর্থাৎ, সন্ধ্যার সাথে প্রভাত ভাইয়ের বিবাহ। এইবার সন্ধ্যা ঘুঘুর ফাঁদে পড়েছে। ‘

আজ সত্যি সত্যি আমার ভেতরের সাথে বাইরেও প্রচন্ড বজ্রপাত হলো। নিম্নচাপের দরুন ক’দিন থেকে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া বৈরাগী। সাথে বৈরাগী কপাল আমার। লিনা আপুর কথা যেমন বিশ্বাস করার অযোগ্য, তেমন ফেলে দেওয়ারও অযোগ্য।
ঘরে দু’ দুটো বড় মেয়েকে রেখে কোনো বাবাই তাঁর ছোট মেয়ের বিয়ে দেবেন না। তার ওপর প্রভাত ভাইকে এতদিন যখন না বলে এসেছেন। এখন তবে হ্যাঁ বলার প্রশ্ন আসে না।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বাবা তাঁর বন্ধুর ছেলের আমার বিয়ে দেওয়ার কথা দিয়ে রেখেছেন। তাহলে সেকথার বাবা কি করবেন? ফেলে দেবেন?
শত শত প্রশ্নরা মাথায় এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আবার ছিটকে সরে যাচ্ছে কোনো উত্তর না পেয়ে।

চলবে…….

আম সন্দেশ পর্ব-০৫

0

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_০৫
#রিমি_ইসলাম

কাজি বিয়ের জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে কাগজ, কলম সামনে রেখে বললেন,

___’ আপনারা প্রস্তুত আছেন?’

প্রভাত ভাই বড়সড় এক ধমক দিয়ে বললেন,

___’ এই প্রশ্ন আমার করা উচিত কাজি মিয়া। আপনার পানি খাওয়া শেষ হলে এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করবেন? এক ঘন্টা তো চুকচুক করে পানিই শুষে গেলেন।’

কাজি থতমত হয়ে হাসার চেষ্টা করে বললেন,

___’ তৈরী আছি বাবা। তাহলে শুরু করছি। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ‘

একম সময় কোথা থেকে বাবা হন্তদন্ত হয়ে এসে পড়লেন। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না সত্যিই সিনেমাটিক ব্যাপার রিয়েলে ঘটছে। বাবা এসেই কাজির সামনের টেবিলে রাখা গ্লাস এবং রেজিস্ট্রির খাতা সব ফেলে দিয়ে বললেন,

___’ আমার মেয়ের বিয়ে পড়াবে? জেলে ঢুকে পড়িও ভালো করে কেমন?’

বেচারা কাজি আজ বেমালুম ফেঁসেছে। এ যাত্রায় বাঁচলে বোধ হয় এ কম্মই ছেড়ে দিবেন। হাত জোর করে কেঁদে উঠে বললেন,

___’ সাহেব মাফ চাই। হামি এক সামান্য কাজি। কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে পড়ানোর মতো দুঃসাহস আমার নেই। বড়ই বিপদে পড়ে এসেছি। সব এই ছেলের কারসাজি। ‘

___’ বটে!’

বাবা আমাকে হাত ধরে এক রকম টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুললো। প্রভাত ভাই কোনো টু শব্দ করলেন না। সারাদিনের তাঁর নাটকীয় ঢঙ আমার বাবাকে দেখে এক মুহূর্তে ফুস হয়ে গেল। গাড়ির সিটে বসেই পাশে মাকে উদ্ধার করলাম। মা এসেছে অথচ ভেতরে ঢোকেনি! ফুপির সাথে মায়ের গলাশ গলায় ভাব। এতকাল তো সেটাই দেখে এসেছি। অথচ তার ভাবের ননদের সাথে একদন্ত কথা বলার ইচ্ছা তার নেই!
বাবা সামনের ড্রাইভারের পাশে বসেই আমাকে এক ধমক ছাড়লেন।

___’ রাতভর বাইরে থেকে এই কান্ড ঘটানো হচ্ছিল? শেষ মুহূর্তে যদি যদি তোর দাদি না বলতো তাহলে সর্বনাশ হতো! ‘

বাবার কথায় প্রথম প্রশ্ন এলো দাদি কিভাবে জানলেন? এমনও হতে পারে ফুপিই তাঁর মাকে জানিয়েছেন। বাবার ধমকে কেঁদে দিলাম। এভাবে শাসন কখনো করে না। মা তো মুখ ঘুরিয়ে বসেছে। শাড়ির আঁচলের আড়ালে তারও ফুপিয়ে কান্নার দমক টের পাচ্ছি।
বাসার পরিস্থিতি খুব সহজ। দাদি আমাকে দেখেই হাত ধরে টেনে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। হয়তো এটাই মোক্ষম হাতিয়ার সবার অগ্নিক্রোশ থেকে আমাকে বাঁচানোর।
দাদি ফেলতে ঢুকে দরজা লাগিয়ে একগাল হেসে বললেন,

___’ এই বেটি, তুই রাত আমার নাতির সাথে থাকছিস,একবার আমারে খবর দিয়ে যেতে পারতিস না?’

দাদির এমন সোজা সাপ্টা প্রতিক্রিয়ায় আমি হতভম্ব।

___’ কি… মানে তোমরা আমাকে পেয়েছ কি? যে যার মতো করে একই লাইন বলে যাচ্ছে। সত্যিই আমি নিজ ইচ্ছায় গেছি না ঘটনা তার বিপরীত সে ব্যাপারে কারো জানার আগ্রহ নেই। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো? খুশি হবে?’

___’ থাপ্পড় খাবি। কই যাবি? একটু সবির কর, যাবি তো কয়দিন বাদে একবারে শ্বশুর বাড়ি। ‘

____
জোৎস্না ভরা রাতের নীল আকাশে তারার হাট বসেছে। ছাদে এসে বসেছি অল্পক্ষণ। সাথে সঙ্গী হয়েছে তানিয়া আপু আর লিনা আপু। তারা প্রায় দুজন একই বয়সী হওয়ায় ওদের ভাব জমে খুব আর এদিকে আমি ছোট বলে তেমন কেউ পাত্তা দেয় না আমাকে। তাছাড়া এই দুইজনের সাথে ওই বিদেশি আপদের ভীষণ খাতির। একই বয়সী কিনা। তাই তানিয়া আর লিনা আপুর আমার সাথে গুরুতর কথার ধরন শুরু ওই প্রভাত ভাইকে নিয়ে এবং শেষ ও তাঁকে ঘিরে।

___’ এই তোমরা দুইজন যাওতো। কখন থেকে পকপক করছ। তোমাদের হৈহৈ এর জন্য চাঁদের চেহারা ম্লান হচ্ছে। ‘

লিনা আপু কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

___’ খুব পেকেছ না? কথায় চাঁদের চেহারা ম্লান! তোর অসুবিধা হলে তুই ভাগ।’

অনেক আবদার করেও নড়লো না ওরা। বুঝলাম এদের থেকে পরিত্রাণ নেই। কেউ আপন না।বাড়িতেও কেউ আমার শোনে না। অসহায় হয়ে নেমে যেতে নিলে ওরা হঠাৎ ঝাঁঝ করে উঠলো।
তানিয়া আপু হাসিমুখে বললো,

___ ছোট বোন রাগ করেছ? আহা বস তো একটু, জমিয়ে গল্প করবো। বস, বস!’

আমি বসলাম। কেমন খটকা লাগছে। এদের আচরণে বন্ধুসুলভ ভাব মানেই ডাল ঘোলা আছে। লিনা আপু একটু আগে আমাকে খারাপ ব্যবহার করে খেদিয়ে দিলো। সেই লিনা আপু এখন আহ্লাদী গলায় বললো,

___’ আহা, কি সুন্দর চাঁদ নারে? বসে বসে শুধু চাঁদ দেখে কি পেট ভরবে! আমরা নিচে থেকে চা বানিয়ে আনি। তারপর চায়ের সাথে গল্পের আসর আর চাঁদের হাট জমবে। তুই ভয় করিস না। তোকে দেখে রাখার বহু লোক আছে। আসছি থাক।’

লিনা আপু ঝটপট তানিয়া আপুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। এতক্ষণ ব্যাপারটা গোলমালে ঠেকছিল। এবার পুরো নিশ্চিত হলাম। কিছু একটা ঘাপলা আছে।
আমি আশেপাশে ভয়ের নজরে তাকালাম। কোথাও কেউ লুকিয়ে আমায় ভয় দেখানোর বদ ফন্দি এঁটেছে কিনা দেখতে। তবে তেমন কিছু চোখে পড়ল না দেখে হাল্কা আস্বস্ত হলাম।

___’ আমাকে খুজছিস হাবাটা?তোর চোখ ভালো থাকলে তো দেখতে পাবি! ওই কানা চোখ রেখে কি করবি? ফেলে দিস। আমি তোকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলবো। ‘

এই গলার আওয়াজটা মারাত্মক এক ভাইরাস আমার জন্য। একটি নির্দিষ্ট ভাইরাস যা কেবল আমাকেই আক্রমণ করে। বারবার ভিন্ন পদ্ধতিতে। মারাত্মক! অসহ্য!

চলবে…….