একটা মানুষের কতটা মাথা খারাপ হলে এমন আজেবাজে চিন্তা নিয়ে ঘুরে আমার জানা নেই। পুরো একটা মিস্টেরিয়াস ক্যারেক্টার!
খালি পেট আর শূন্য মাথায় হাসির দমক কমে এলো অল্পক্ষণে । নিরবে বসে শুধু একটাই চিন্তা মাথায় এলো, বাড়িতে সবাই কি ভাবছে? বেলা হয়ে উঠছে অথচ আমার স্থানান্তর ঘটেনি। দিব্যি পড়ে রয়েছি এখানে। ওদিকে প্রভাত ভাই এক মিনিটের কথা বলে বিশ মিনিট পার করে ফেলেছেন। প্রায় আরও দশ মিনিট কাটিয়ে তিনি ফিরলেন সাথে ফুপিকে নিয়ে। আমার মাথায় প্রথম যে প্রশ্নটা এলো তা হলো, ‘ নিচে কি বলেছেন প্রভাত ভাই?’ ফুপির মুখটা দেখার মতো না। প্রচন্ড আক্রোশে যেন এক্ষুনি আমার উপর দুম করে আছড়ে পড়বেন। ফুপির প্রথম প্রশ্ন হলো,
___’ সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছ তখন আমাকে একা জানিয়ে কাজ নেই। তোমার বাসায় জানে? আমি বাপু একা কোনো দায়ভার গ্রহণ করতে পারব না। যা হবে দুই পক্ষের সম্মতিতে হবে। শেষে ভাইজানের বিরূদ্ধে যেয়ে আমার বাপের বাড়ির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারব না। বুঝছ মেয়ে?’
নিতান্ত বাচ্চাদের মতো অসহায় মুখ করে ফুপির পাশে দাঁড়ানো প্রভাত ভাই। আর আমি শেকড় থেকে সবটা বুঝে ওঠার চেষ্টায় আছি। হঠাৎ ফুপি এমন কথা কেন বলছেন? উনি কি বলেছেন এমন? আমাকে ভাবতেও সময় দিচ্ছেন না কেউ। ফুপি ভাবনার মাঝে বার্তা ঢুকালেন। প্রভাত ভাইকে এক রকম আদেশ দিলেন এক্ষুনি রুম ছাড়তে। আমার সাথে একান্তে কথা বলবেন বলে। উনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে হাসিমুখে চলে গেলেন। বুঝলাম এবার মস্ত রাগের তুফান চলবে একা আমার উপর দিয়ে। সব ক্ষেত্রে বলির পাঠা আমি। আরো একটা ব্যাপার, ফুপি আমাকে “তুমি” করে ডাকছেন যে এতকাল আমাকে ” তুই” বলে এসেছেন। সম্বোধনীতেও তফাৎ এসে গেছে। ফুপি চোখ ছোট ছোট করে বললেন,
___’ তুমি রাতভর বাড়ির বাইরে, আমার ছেলের সাথে এটা কেউ জানে? ‘
মুখ ফুটে কিছু বলার অধিকার পেলাম না বলে মাথা নেড়ে না জানাতেই ফুপি ক্ষেপে উঠলেন।
___’ সর্বনাশ! শেষে বিয়ে করতে এ পর্যায়ে নামলে তোমরা? একটু ধৈর্য্য সহ্য বলে তোমাদের কিছু নেই? কি বলবো ভাইজান ফোন করলে? যদি প্রশ্ন করে সন্ধ্যা তোর ওখানে আছে তবে? সর্বনাশ, ডাহা সর্বনাশী! সাথে এই সর্বনাশী মেয়ে। আমার ছেলের মাথার মগজ পুরো খেয়েছে।’
সত্যি এবার রাগ হলো। আমার কঠিন মুহূর্তেও সহজে চোখে পানি আসে না। যা আসে সেটা হলো তীব্র রাগ আর হতাশা। দোষ করলো তাঁর ছেলে আর দুর্নাম কামালাম আমি। একটু স্বাভাবিক হয়ে মিনতির গলায় বললাম,
___’ বিশ্বাস করো ফুপি আমি কিচ্ছু করিনি। আমিতো ঘুমিয়ে ছিলাম। তোমার ছেলে আমাকে কিডন্যাপ করে সারা রাত বাইরে রেখেছে। আর এভাবে আমাকে “তুমি” বলো নাতো। শুনতে খারাপ লাগে। আগের মতো হয়ে যাও প্লিজ? “তুই” বলো একবার?’
ফুপিকে জড়িয়ে ধরতে গেলে দূর দূর করে খেদিয়ে বলে উঠলেন,
___’ এই দূরে সরো, খবরদার এই আহ্লাদ আমাকে দেখাবা না। তুই বলার যোগ্যতা তুমি রেখেছ? ‘তুই’ শব্দটা একান্ত আপনজনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাছাড়া কয়েক ঘন্টার মধ্যে যে মেয়ে আমার ছেলের বউ হবে তাকে তুই বলা সাজে না। ‘
এবারের শেষ কথাটা আরও ভয়ংকর। কয়েক ঘন্টার মধ্যে মানে কি? এটা আবার কি ধরনের কথা? কনে রাজি না, কনের বাড়ির লোকজন না অথচ বরপক্ষ তুমুল আয়োজনে লেগেছে! ফুপি আর একদন্ত থাকলেন না। চলে গেলেন। তাঁর প্রস্থানের সেকেন্ড না পেরোতে প্রভাত নামক মহা সংকট এসে হাজির। আসামীও এত হাজিরা দেয় না যতটা হাজিরা তিনি আমার সামনে দেন। তিনি এসেই বললেন,
___’ সারপ্রাইজের ওপর সারপ্রাইজ। কেমন লাগছে? আমার বাতাসে আজ শান্তি আর শান্তি! তোর শাস্তি আর শাস্তি। আমাকে না বলবি কখনো? বিয়ের পর যদি কোনো কথায় না বলেছিস তবে….প্রচন্ড গরমের সময় রুম হিটার চালিয়ে তোকে ছেড়ে দেব। তেলাপোকার মতো পালাতে দিশা পাবি না। শীতের সময় এসি ছেড়ে রাখব। রিমোট থাকবে আমার কাছে। পেঙ্গুইনের মতো লাফাতে হুঁশ পাবি না। গট্ ইট?’
কি অদ্ভুত বাজে শাস্তির ধরন! এই মানুষটা সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমাকে থ্রেড দেন। বিয়ের পর কি এ অবস্থার অবনতি দ্বিগুণ বেড়ে চলবে? থাকব কিভাবে এই ভিনগ্রহের মানুষের সাথে? অসম্ভব! এ বিয়ে হবে না। দরকার হলে পালাবো। গুপ্ত কোনো স্থানে কিছুদিন গা ঢাকা দেব। এতেও সমস্যার সমাধান না হলে অন্য কাউকে বিয়ে করে সোজা বরসমেত বাড়ি ফিরব। তবুও এই বিলেতি আপদকে বিয়ে নয়। আমার একমাত্র শ্লোগান।
” বিয়ে যদিও ফরয হয়, বিলেতি আপদকে বিয়ে তবুও নয়।”
বাহ! সুন্দর মিলেছে। প্রভাত ভাই প্রথমে একমনে ঘড়ি দেখলেন।তারপর হঠাৎ একহাত মাথায় রেখে বললেন,
___’ মাই ব্যাডনেস্, ঘড়ি ধরে দেখলাম তুই পুরো পনের মিনিট এভাবে বেখেয়ালি ছিলি। রাত দিন এত ভাবিস কাকে? হঠাৎ হঠাৎ এভাবে হারিয়ে গেলে বিয়ের পর দেখা যাবে তোকে একবার ডাকলে জবাব দিবি এক ঘন্টা পরে। কাজ হবে তাহলে? থাক আর অপমান না করি। আচ্ছা এবার ভদ্র মেয়ে হয়ে নিচে চল দেখি। আজকে আমাদের বিয়ে। শহরের সব কাজিরা প্রচন্ড ব্যস্ত। হয়রান হয়ে খুঁজে একজনকে পেয়েছিলাম তাও উনি বলেন কিনা এখন যেতে পারবেন না। কালকে বিয়ে করেন।মাথায় তুফান উঠে গেল। হাত ধরে টেনে এনেছি। কারো জন্য আমার বিয়ে আটকাবে না। ‘
বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলাম।
___’ তিন বছর কি বিদেশে গুন্ডামীর শিক্ষা নিতে গিয়েছিলেন? একবার আমাকে জোরপূর্বক ধরে আনলেন এবার কাজিকেও?’
___’ ওইসব শিখতে হয় না। পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে শিখিয়ে দেয়। তোর কণ্ঠ এত স্বাভাবিক ঠেকছে, ব্যাপার কি রে? তলে তলে পালানোর ফন্দি আঁটছিস নাতো?’
আমি মুখ ঘুরিয়ে অযেতুক মুখে অসহায়ত্ব এনে বললাম,
___’ সেই পথ খোলা রেখেছেন? পালিয়েও বাঁচতে পারব না আপনার থেকে বুঝে নিয়েছি। ‘
প্রভাত ভাই মাথা চুলকে কতক্ষণ দোটানায় পড়ে থাকলেন। হয়তো আমার আচরণগত স্বাভাবিকতা তিনি নিতে পারছেন না। সন্দেহের আড়ালে আমাকে হাসিমুখে বললেন,
___’ তাই? সত্যি বলছিস? তাহলে নিচে আয়। কোনো সাজগোজ লাগবে না। কারণ ওই সামগ্রী আমার ঘরে পাবি না। দ্রুত পদে নিচে নামবি, কবুল বলবি তারপর আমার সাথে সংসার করবি। ‘
____
কাজি ঢকঢক করে একটু পর পর পানি খাচ্ছেন আর হ্যাবলাকান্ত হেসে বলছেন।
___’ আরেক গ্লাস পানি মিলবে?’
দফায় দফায় পানির ক্লাস ফাঁকা নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ছ’ গ্লাস শেষ। ফুপি হেলেদুলে বিচ্ছিরি মুখ করে কিছু একটা বিড়বিড় করতে করতে আরেক গ্লাস পানি এনে কাজি সাহেবের সামনের ছোট্ট টি টেবিলে রাখতেই উনি হামলে পড়লেন। এক চুমুক দিতে যাবেন এমন মুহূর্তে ফুপি চোখ রাঙিয়ে বললেন,
___’ এবার পানি ফুরালে আর পাবেন না বলে দিচ্ছি। আমার বাসায় আজকে পানি সংকট।’
বেচারা কাজি কথা শুনেই চুপসে যাওয়া বেলুন হয়ে গেলেন। গুটি গুটি হাতে পানির গ্লাসটা স্বস্থানে রেখে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। পিপাসায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। তবে কাজির এহেন কান্ড দেখে আমি আর পানি চাইতে সাহস পাচ্ছি না। বেচারা যে হারে ধমক খেয়েছে সেই পালা না আমার ওপর এসে পড়ে এই ভয়ে।
বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজি তৈরি হয়ে গেলেন।
দোতলা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে প্রভাত তাকালো। পাশে বসে থাকা গাম্ভীর্য পূর্ণ মেয়েটার দিকে। এক হাত ভাঁজে তার উপর অন্য হাতের কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মুখ রাগে অস্বাভাবিক ফোলা। প্রভাত গাড়ি থেকে নেমে আদেশ করল।
___’ গাড়ি থেকে নেমে আই। পৌঁছে গেছি।’
আমি তাকালাম না। কথা শুনবার প্রয়োজন বোধটুকুও করলাম না। ভোরের আলো ফুটতে আর দেরি নেই। বাবা, মা নামাজের জন্য উঠে আমাকে জাগাতে গিয়ে দেখবে আমি নেই। খালি ঘর হন্যে হয়ে খোঁজ করবেন। তারপর এক পর্যায়ে সন্দেহের দানা মনে উঁকি দিবে। এরপরের ঘটনা আমার কল্পনাতীত।
আবার তাঁর তেজি গলার হুংকার।
___’ রাত পার হলে নামবি বলে পণ করেছিস? দ্রুত আই। কোলে নিতে হবে?’
বলা বাহুল্য শেষ বাক্যটা শুনে আর বসে থাকা সমীচীন বলে মনে হয়নি বিধায় নেমে পড়ি। হুট করে দেখা যাবে কোলে নিয়ে ফেলেছেন। এমতাবস্থায় ফুপি দেখলে এ বাড়িতেও তান্ডব পড়বে। তখন দুই বাড়ির তান্ডবে আমি পিষ্ট হবো, মাঝে থেকে সুযোগ লুফে নিবেন প্রভাত ভাই।
একতলা টপকে সোজা দোতলায় উঠে এলাম। যতদূর জানি একতলায় থাকেন ফুপিরা। দোতলা কার জন্য বরাদ্দ তা সঠিক বলতে পারব না। ওপরে এসে দরজার লক খুলে প্রভাত ভাই তাঁর একটা হাত সামনে প্রসারিত করে দিলেন। এর ভাবার্থ আমাকে প্রথম ভেতরে ঢুকতে হবে। নিদ্রাহীন এক রাতের পর কথায় শক্তি অপচয়ের মতো ধৈর্য্য যথারীতি হারিয়েছি। তাই যান্ত্রিক রোবটের মতো তাঁর কথা মেনে ভেতরে চলে যাই। তারপর ধাড়াম করে দরজা বন্ধের জোরালো শব্দে পেছনে ঘুরে তাকানোর অবকাশ টুকু পেলাম না। তার আগেই আমার দুই হাত তার বাহুডোরে চাপা পড়ে গেল। পেছন থেকে এত জোরে চেপে ধরলেন যে নড়তে পারছি না। মুহূর্তে মাথায় টোকা দিয়ে আবার ছেড়ে দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
___’ বেশি বাড়াবাড়ি কিছু ভাবিস না। ভেতরে চল। তোকে তোর ঘর দেখাব।’
বিজ্ঞ চোখে তাকিয়ে কোথাও ফুপা বা ফুপিকে না দেখে বললাম,
___’ ফুপিরা কোথায়? ‘
প্রভাত ভাই হাঁটা থামিয়ে পেছনে না ঘুরে বললেন,
___’ নিচে। ‘
___’ তাহলে আমরা ওপরে এলাম কেন? ‘
___ কারণ ওপরতলার পুরোটা জুড়ে আমার রাজত্ব। তুই হবি আমার রাজ্যের রাণী। তোকে তো আমার রাজ্য ভ্রমণই প্রথম করাবো তাই না? এরপর রাজা রাণীর রাজ্য ভ্রমণে বেরোব। দ্রুত পা চালা। তোর পা কি ছোট ছোট, এত আস্তে হাঁটিস কেন?’
তাঁর প্রতিটা কথায় খোঁচা দেওয়া স্বভাব। বিরক্তি নিয়ে তাঁর সাথে একটা রুমে এসে ঢুকলাম। সমস্ত ঘরময় সৌখিনতার ছাপ স্পষ্ট হলেও বেশ নোংরা। মেঝেতে চকলেটের প্যাকেট থেকে শুরু করে টুকরো টুকরো কাগজ, হাত ঘড়ি পড়ে আছে। বিছানার চাদর একপাশে ঝুলে পড়েছে। নাক ছিটকে বলি,
___’ বড় বড় বুলি বলা মানুষ এত নোংরা, ছিঃ! ‘
প্রভাত ভাই হন্তদন্ত হয়ে পুরো রুম গোছাতে আরম্ভ করলেন। মেঝেতে পড়ে থাকা আবর্জনা গুলো ডাস্ট বাকেটে ফেললেন। বিছানা গুছালেন নিজ হাতে। তারপর হাত দিয়ে বিছানা ঝেড়ে বললেন,
___’ এবার বস। আর বলে রাখি, আমাকে খবরদার নোংরা বলবি না। একরাতের রাগের বশত রুম আউলা ঝাউলা করেছি। ভাগ্যক্রমে আজকেই তোর আসা পড়েছে। আমি প্রচন্ড পরিচ্ছন্ন শ্রেণীর মানুষ। ‘
লম্বা হাই তুলতে তুলতে তাচ্ছিল্য টেনে বললাম,
___’ হ্যাঁ, দেখতেই পেলাম তার নমুনা। ‘
ফনা তোলা সাপের মতো ফুসে উঠে এক প্রকার তেড়ে এলেন। তারপর আমার দু’গাল তাঁর বুড়ো এবং তর্জনী আঙুল দ্বারা চেপে ধরে দাঁত কটকট করে বললেন,
___’ তুই আমার সাথে মিসবিহেভ করেছিলি । মনে পড়ে? প্রচন্ড রগরগে মাথায় বাসায় ফিরেছি। বিদেশের তিন বছরের জীবনে কেউ আমাকে ইগনোর করেনি৷ তুই করেছিস আর করছিস এখনো। রাগ কোনোভাবে কন্ট্রোল হচ্ছিল না। তাই বসে থেকে তোকে মুখের উপর যেগুলো বলতে পারিনি সেগুলো এক একটা কাগজে লিখেছি আর ছিঁড়ে নিচে ফেলেছি। চকলেট খেতে খেতে লিখছিলাম তাই….. ঘড়ির কাঁটা ঘরের ওপর ঘর ঘুরে সময় বাড়িয়ে তুলছিল। এদিকে আমার অস্থিরতা কমছিল না দেখে ওই ব্যাটাকে আছাড় মেরেছি। ব্যাটারী বোধ হয় গেছে। বুঝলি ব্যাপারটা এবার?’
গোটা একটা দিন একটা রাত শেষে প্রথমবার আমি তাঁর দিক ভালোমতো যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকালাম। সাদা বিলেত ফেরত বলায় আপনারা জল্পনায় প্রথমেই এক সাদা বাঁদরকে নিশ্চয়ই ভেবে নিয়েছেন? অবশ্যই। ইনি সাদা চামড়ার অধিকারী এতে কোনো দ্বিমত নেই। তবে কি জানেন, বিদেশে থাকলেও আমাদের দেশ আর বিদেশি মানুষের চামড়ায় বিস্তর তফাৎ থাকে। প্রভাত ভাইয়েরও আছে। তিনি গাঢ় ফর্সা। একটু সাদা আর হলুদ রঙের মিশেল রয়েছে চামড়ায়। পুরো ক্লিন সেভ না। ক’দিন আগে ছাঁটাই করা দাড়ি পুনরায় মাথা চেড়ে গজে উঠছে। মুখে ধারালো ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। উচ্চতা সঠিক করে বলা দায়। তবে তার লম্বত্বের জন্য আমাকে বেশ মুখ উঁচিয়ে কথা বলতে হয়।
তিনি এখন নাক উঁচিয়ে কপালে তিনটি বক্র রেখা ফেলে আমায় দেখছেন। একটু থতমত খেলাম। সাথে সাথে চোখ নিচে নামালাম। এভাবে তাঁকে দেখছিলাম বলে কি যাতা না ভেবে বসেন! কিন্তু সেরকম কিছুই তিনি বললেন না। মুখখানা সরল করে বললেন,
___’ জাস্ট আ মিনিট। আমি নিচে যাবো আর আসব। তুই গোটা ফ্ল্যাট ঘুরে দেখ। কোথাও কোনো চেঞ্জ আনার প্রয়োজন আছে কিনা, এইসব দেখে আমাকে জানাবি। ওকে?’
প্রভাত ভাই চলে যেতে কতক্ষণ অনড় বিছানায় ঠেস মেরে বসলাম। তারপর কি মনে করে মেঝেতে পড়ে থাকা প্রতিটা কাগজ উঠিয়ে একে একে পড়তে লাগলাম। সবটা পড়ে হাসতে হাসতে আমার নাজেহাল অবস্থা। আপনারাও একটু শুনুন।
” টিনটিনে বেহুডা মেয়ে…..আমাকে রুম থেকে তাড়িয়ে দেয়? বিয়েটা হোক, প্রতিদিন একবার লাফি মেরে ওকে ঘর থেকে তাড়িয়ে এ অপমানের শোধ তুলব।”
” অসম্ভব বাজে লাগছিল ওকে দেখতে। নাক কুঁচকে ভোতা করে রেখেছিল। বোকা একটা ছাগল!”
” বিয়ের কথা বলতেই চোখগুলো তালের মতো বড় বড় করেছিল। চোখের মনিটা লাগছিল তালের আঁটি। গিলে টুপ করে খেয়ে ফেললে কি হতো?”
” রাতেই একটা শিক্ষা পাওয়া উচিত তোর সন্ধ্যা। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না নয়তো। তোকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে বাসর করে তবে ছাড়ব। তারপর একঘন্টা নদীর পানিতে চুবিয়ে গোসল করাবো। শাস্তি শাস্তি আর শাস্তি! উফ, শান্তি! ”
” হা হা হা, তানিয়া আর লিনাও আমার সাপোর্টে। আমি আসছি। তোকে দারুণ সারপ্রাইজ দেবো। ”
একটা মানুষের কতটা মাথা খারাপ হলে এমন আজেবাজে চিন্তা নিয়ে ঘুরে আমার জানা নেই। পুরো একটা মিস্টেরিয়াস ক্যারেক্টার!
চোখ,মুখ খিঁচিয়ে দৃঢ় হৃদয়ে আল্লাহকে ডাকছি। বর্তমানে এটাই একমাত্র অস্ত্র। নিজে থেকে ওঠার চেষ্টাও যে করিনি তা না। একবার চেষ্টা করেও ব্যালেন্স বিগড়ে যাওয়ায় টাল খেয়ে পড়েই যেতে যেতে শেষ মুহূর্তে আল্লাহর সহায়ে বেঁচে গেছি। বরাবরই উঁচুতে ভয় আমার। দূর্বল মানসিকতা নিয়ে কোনো কার্যে সফলতা আসে না। যেখানে আমার মনই দূর্বল সেখানে বেঁচে ফিরব কিনা জানি না।মূল প্রশ্ন হলো, এখানে কে আনলো? পাশে দেখতে চেষ্টা করছি না। যদি পাছে পড়ে যাই! সে ভয়ে। হঠাৎ কড়মড় করে কিছু একটা চিবিয়ে খাওয়ার শব্দ কানে এলো। রাত কত গভীর যে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। মাঝরাত তো হবেই। শুনেছি এমন সময় সাধারণ মানুষ কম অতিপ্রাকৃত শক্তিদের আনাগোনা বেশি হয়। এভাবে করমড় করে চিবিয়ে কেউ খাচ্ছে মানে পরিবেশ ভয়ানক। তার উপর নির্জন ব্রীজ। না জানি কত মানুষ লাফিয়ে এখান থেকে প্রাণ দিয়েছে। নয়তো কোনো দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে অক্কা পেয়েছে। তাদের আত্মা নয়তো?
ভাবনা আসতেই এবার দোয়া ইউনুস পড়তে শুরু করি। ভাগ্য এতটাই খারাপ যে শেষে কিনা ভূতের হাতে প্রাণ যাবে? চিন্তা ধারায় আবারও ছিদ্র পড়ে ওই করমড় আওয়াজে। তারপর হো হো করে হাসির ঝঙ্কার। হাসির সুরটা কেমন পরিচিত ঠেকছে। মাথায় একজনের আবছা চেহারা স্মরণে এসে আমার ডুবে যাচ্ছে।
ঘোস্ট! সঠিক উক্তি নয়। এই মানুষের সাথে ভূতের তুলনা চলে না। ভূত বাবাজিরাও ইনাকে দেখলে মাফ চেয়ে পার পাবে না। ইতর লোক!
এমন পরিস্থিতিতে মাথা গরম করলে চলবে না। এখনো আমি ব্রীজে ঝুলন্ত। কাজেই শান্ত মেজাজে কণ্ঠে প্রফুল্লতা এনে বললাম,
___’ প্লিজ এখান থেকে নামান! মরে যাব তো! সাঁতার পারি না। পারলেও পানিতে পড়লে রক্ষা নেই। ‘
___’ তাহলে বিয়ে করবি বল? আদারওয়াইজ এভাবেই থাকবি।’
___’ ব্ল্যাকমেইল করছেন? ‘
___’ ধরে নে।’
কিছুক্ষণ নিরবতা। কি বলবো ভাবছি। অপরদিক থেকেও কোনো সাড়া নেই। লোকটা এ অবস্থায় ফেলে চলে গেল নাতো? ভীত দিশাহীন হয়ে চেঁচিয়ে বললাম,
___’ চলে গেলেন?’
ওপাশে নিরবতা। মাঝে মাঝে শুকনো পাতার মড়মড় ধ্বনি ছাড়া কিছু শুনতে পাচ্ছি না। একটু পর উর্বর পুরুষালী গলা বলে উঠলো।
___’ এভাবে তোকে রেখে গেলে বাসায় যেয়ে শান্তিতে ঘুমোতে পারি? ‘
একটু আস্বস্ত হয়ে বললাম,
___’ এইতো আপনি আমার জন্য কেয়ার করেন। তাহলে শুধু শুধু কেন কষ্ট দিচ্ছেন? নামান না দয়া করুন।’
___’ হাবা একটা, কেয়ার করি এটা এখন বুঝলি? বিয়ে কি সাধে করতে চাচ্ছি? এবার ফটফট বল দেখি তোর ডিসিশন কি? সারারাত এভাবে ঝুলবি নাকি? আর কত মশার কামড় খাওয়াবি? ‘
এ তো দেখি ভারী বিপদ! এ কুল ও কুল কোনো কুলই আমার সমর্থনে নেই। রাত বেশ গভীর। বাড়িতে আমার নিখোঁজ বার্তা দাদি জানলে হেল্প পাবো। তবে বাবা জানলে বাড়ির পাশে জ্যান্ত পুঁতে রাখবেন। উপায়হীন হয়ে করুন স্বরে বলি,
___’ আচ্ছা। দেখবো। ‘
___’ কি দেখবি?’
___’ ভেবে।’
এবার কর্তা আমার কথায় খুশি হয়েছেন। প্রভাত ভাই আমায় পাঁজকোলে তুলে সাবধানী হাতে নিচে নামালেন। হাফ ছেড়ে বাঁচি। জোরে জোরে নিঃশ্বাস টেনে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে থাকি। এতক্ষণ তো ঠিকঠাক শ্বাস নিতেও ভুলে ছিলাম। কতক পর পর শ্বাস নিয়ে আবার অনেকক্ষণ পর শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে ফুসফুসে ব্যথা ধরে গেছে। আমার ব্রিথিং প্রসেস দেখে উনিও নকল করছেন। মজার ভঙ্গিমায় নাক দিয়ে শ্বাস টানছেন তো টানছেন। এর পরপরই শ্বাস ছেড়ে হাঁপানী রোগীর ন্যায় হাঁপিয়ে কাশতে শুরু করছেন। দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে। আমাকে জ্বালানোর আর কত অভিনব কায়দা তিনি অবলম্বন করবেন?
প্রভাত ভাইয়ের হাতের ঘড়িটা চোখের সামনে ধরতেই মাথায় ঝনাৎ বজ্রপাত হলো। কেউ ভাবতেও পারবে না রাত ৩ টার সময় তাদের সর্ব কনিষ্ঠ কন্যা বাড়ির বাইরে উন্মুক্ত ঘুরছে।
কোনো এক্সকিউজ খাটবে না। কোনো গাল ভাসানো মরা কান্না দেখবে না। বাবা খুব নরম হাতে কাঠিন্য এনে হাত ধরে দরজার ওপারে রেখে বলবেন, ‘ নিজের রাস্তা মাপ যাহ। আমার দুই মেয়ে থাকলেই চলবে। একটা মেয়ে গেলে কিছু ধ্বংস হবে না, উল্টো তোর প্রতিদিনের বাহারী খচর আর তোর বিয়ের মহা খরচের হাত থেকে বাঁচবো। যা দূর হ। ‘
_____
রাত্রী মধ্যপ্রহর অতিক্রান্ত প্রায়। রাস্তা সুনসান। আকাশে ভাসা ভাসা মেঘের আড়ালে রূপোলী চাঁদ। সাঁকো পেরিয়েছি বেশ আগে। আমার হাতে এক চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছেন দেখে আমিও জম্পেশ খেয়ে যাচ্ছি। কোনো হেলদোল নেই। চিন্তা নেই। কি হবে এত চিন্তা করে! কম বয়সে অক্কা পাবো। আর টেনশন ছাড়া অনেকদিন বাঁচব। একহাতে চিপসের প্যাকেট ধরে গাড়ির সিটে মাথা ঠুকে চোখ বুজে বসে তৃপ্তির সাথে চিপস খাচ্ছি। বর্তমানের কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে থাকতে চাই। ঠিক তখনই পাশে বসা সেই সাদা বিড়ালী চামড়ার অধিকারী বলে উঠলেন।
___’ রাক্ষসী দস্যি মেয়ে, একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলো না আপনি খাবেন কিনা! সৌজন্যবোধ নেই। ম্যানারস শেখায়নি কেউ? ‘
প্রভাত ভাইয়া বকাঝকা পূর্ণ কথায় আচমকা চিপসের বদলে ঠোঁটে কামড় লেগে গেল। মুহূর্তে ঠোঁট ফুলে বোম। পিঁপড়া কামড়ালে যেমন হয়
। ফ্রন্ট মিররে দেখে নিজেই আঁতকে উঠি। কি বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে! প্রভাত ভাই মহাবিরক্ত নিয়ে বললেন,
___’ এই দেখ, মেয়েরা রাগ ভাঙানোর মার্ভেলাস আইডিয়া নিয়েই জন্মে। ইচ্ছা মতো কতক বকা দেব কি তার আগেই রাজকন্যা নিজেকে আঘাত করে আমার রাগ কর্পূরের মতো উবিয়ে দিলেন। দেখি-দেখি?
তিনি ব্যস্ত হাতে ঠোঁট নিরীক্ষণ করে বললেন,
___’ এ্যন্টিসেপটিক কিছু তো সাথে নেই। এক কাজ করি আমি নিজেই এ্যন্টিসেপটিকের ভূমিকা পালন করি। একটু চুমু খাই।’
আহাম্মক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
___’ চুমুতে এ্যন্টিসেপটিক উপাদান থাকে?’
___’ আরে লিপ থেরাপি দরকার তোর। ওতো বুঝবি না। ‘
ঝনাৎ করে তাঁর হাতটা ফেলে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসতেই উনি রেগে তাকালেন আমার দিকে। আমি এবার আর ভয় পেলাম না। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। কোনো হেলদোল নেই। অর্ধেক পথ পেরোতে হুশ ফিরলো আমরা পথ ভুল করেছি। কারণ বা’দিকের মোড় ঘুরে আমার বাড়ির পথ। কিন্তু আমরা ডান মোড়ে ঘুরলাম। তা দেখে ঝাঁঝা করে উঠি।
___’ আরে আরে, ভুল রাস্তা, বামে যান বামে যান। ‘
প্রভাত ভাইয়া লাজুক হাসিতে গলে পড়লেন। ঠিক বুঝলাম না আমার কোন বাক্য তার লাজের হেতু হলো। তিনি হাসি অটল রেখেই বললেন,
___’ এত জান জান করো না তো। আই ফিল সামথিং ডিফ্রেন্ট। আর ঠিক রাস্তায়-ই যাচ্ছি। তুমি তোমার বাসায় না। যাচ্ছ আমার বাসায় ওরফে্ তোমার হবু শ্বশুর বাড়ি।’
আকাশে ভয়ংকর মেঘের গর্জনের মতো শোনা গেলে ভালো হত। আমার মনের গর্জনের সাথে আকাশের হিংস্র গর্জন মিশে একাকার হয়ে উঠতো। প্রতিবাদী হয়ে আমায় সাহায্য করতো। সবই যেন আমার প্রতিকূলে।
___’ বল কাল রাতে তুই আমাকে ফোন করে কত প্যানপ্যান করলি..’ আমাকে বিয়ে করুন ভাইয়া প্লিজ আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। আরও কত কি! সব বলব সবাইকে? এখন মেরে নদীতে ভাসাবো যদি বিয়েতে না করেছিস তো!’
আমি পাশে দাঁড়ানো সদ্য বিলেত ফেরত সাদা চামড়ার মানুষটাকে বিস্ময় নিয়ে দেখছি। লাল ঠোঁটে চওড়া হাসির দমক। দৃষ্টি আমাতে গিয়ে স্থির। প্রভাত ভাইয়ার কথায় বড় ফুপির মুখ হা হয়ে গেল। নিজের ছেলের মুখে এমন কথা শোনার জন্য মোটেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।
এক সপ্তাহ ও হয়নি তাঁর আসা। আমাদের বাসায় তো আজই প্রথম এলেন আর এসেই এমন প্রস্তাবে সবাই রেগে গেলেন। প্রভাত ভাইয়া আবারও বললেন,
___’ আমি সন্ধ্যাকেই বিয়ে করব। মামা আপনি রাজি থাকলে ভালো, না থাকলেও কিছু করার নেই। কারণ এ বিয়েটা হচ্ছেই। তাছাড়া সন্ধ্যারও এ বিয়েতে মত আছে। বলো সন্ধ্যা?
কথাটা বলেই আমায় ইশারায় চোখ টিপে সম্মতি জানানোর হুকুম তলব করলেন। এদিকে বাবা, মা, ফুপি আর দাদির চোখ থেকে আগুনের ফুলকি বেরুচ্ছে। আমাদের বংশে আত্মীয়ে আত্মীয়ে বিয়ের নীতি এ যাবৎ নেই। কখনো হবেও না। তবুও কেন যে প্রভাত ভাইয়া এমন করছেন জানি না।
আমি দৃঢ় চিত্তে বলি, ___’ হি ইজ লায়িং বাবা। সব মিথ্যা বলছেন। আমি তাকে পছন্দ করি না আর বিয়েও করতে চাই না। ফুপি বিশ্বাস করো আমি এসবেই কিছুই জানি না। ‘
ফুপি রাগে ফুসে গটগট করে বললেন,
___’ কোনো মেয়ে নিজ থেকে না এগোলে ছেলে কিভাবে এগোয়? সন্ধ্যা তুই এভাবে আমাদের বংশের নাম ডুবাবি তা স্বপ্নেও ভাবিনি। ‘
এবার বাবা হুংকার ছেড়ে বললেন, ___’ তা কতদিনের সম্পর্ক তোমাদের? দুই পাঁচদিনের নিশ্চয়ই নয়?’
বাবার কথায় প্রভাত ভাইয়া মুখে কাঠিন্য এনে বললেন, ___’ জেনেই যখন গেছেন তখন আর কিছুই গোপন করে লাভ নেই। আনুমানিক পাঁচ/ছ ‘ মাসের মতো হবে। অনেক আগে থেকেই আমাদের কথা হতো। ‘
ডাহা মিথ্যা কথা! আমি জীবনেও তাঁর সাথে দেখা বা কথা বলিনি। জল যে তিনি আরও কত ঘোলা বানাবেন আল্লাহ জানে। সবাই টগবগে মস্তিষ্কে হনহন করে সেখান থেকে হেঁটে চলে গেলেন।
এবার আসি পরিচয় পর্বে,
আমি মেহরিন নাহার সন্ধ্যা। আর ওই বাঁদরটা আমার ফুফাতো ভাই। বড় ফুপির ছোট ছেলে। আমি ফুপির একমাত্র ভাই জবাব আহেল খানের তিন কন্যার সর্ব কনিষ্ঠ কন্যা। পড়াশোনা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ। আমার পরিবারে বাবা মা, আমি, দুইবোন আর দাদির বাস। প্রথম দিকে দাদির একমাত্র আদরের দুলালি আমি থাকলেও প্রভাত ভাইয়া আসার পর থেকে বুঝলাম আমার ধারণা পুরো ভুল। দাদির চোখের মনি ওই বাদরটা।
তিন বছর আগে প্রভাত ভাইয়া উচ্চ ডিগ্রী অর্জনের জন্য বিলেত গিয়েছিলেন। এরপর থেকেই তাঁর সাথে আমাদের কারো যোগাযোগ নেই। দেশে থাকতে তিনি যে খুব ঘন ঘন আমাদের বাসায় আসতেন তাও না। বছরে দু ‘একবার ভুলে ভালে তাঁর মূল্যবান চরণ এ বাসায় পড়ত। মূল্যবান বলছি কারণ দাদির ভাষ্যমতে প্রভাত ভাইয়া মহামূল্যবান হিরের খনি। এমন খনি নাকি জগতে মেলা ভীষণ দায়।
_____
___’ এই বাঁদর! তুই যে সন্ধ্যারে পছন্দ করিস আগে বলবার পারতি না? ওর তো বিয়া ঠিক।’
রওশন আরা বেগমের কথায় খুব একটা হেলদোল হলো না প্রভাতের। সে বিছানায় গা মেলে হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাতে ধরা আপেলে মাঝে মধ্যে ছোট্ট একটা কামড় দিয়ে চলেছে। বিয়ে ঠিক হওয়া না হওয়ায় যেন তার কোনো যায় আসে না।
___’ নানু, সন্ধ্যাকে ডাকো না! দেখতে ইচ্ছে করছে। আহা, কি সুন্দর বোকা বোকা মুখটা। দেখলেই আদর করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। বানিয়েছ একটা নাতনি। লাক্ষে একটা!’
___’ বিলেত ফেরত পোলার মুখে লাগাম নাই। বেহুদা পোলা! সন্ধ্যা পড়তে বসছে আসতে পারব না। আর তোরে যে এখনও তোর মামা এ বাড়িত রাখছে শুধু আমার মুখের দিক চাইয়া বুঝছস? নাইলে কবকার বাইর কইরা দিতো। ‘
___’ সন্ধ্যার রুম তো সেই আগেরটা আছে তাই না? সোজা গিয়ে হাতের বামের শেষ রুমটা? দাঁড়াও আমি দেখা করে আসি।’
মাথার উপর দিয়ে সব গেছে। পড়ার ছলে বই হাতে থাকলেও এখনও নিচে ঘটে যাওয়া তড়িৎ ঘটনাগুলোই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পড়া গোল্লায় গেছে। এরই মাঝে দরজায় পুনরায় ওই আপদকে দেখে রাগ কম ভয় হলো বেশি। এত কান্ড ঘটিয়ে এবার সোজা রুমে চলে এসেছেন! আল্লাহ মালুম বাবা দেখলে ভুলভাল কিছু ইঙিতে না সোজা আজই বিয়ে পড়িয়ে বাড়ি থেকে বিদেয় করে!
আমার পারমিশনের তোয়াক্কা না করেই ভেতরে ঢুকে খুব চেনা ভঙ্গিতে ড্রেসিং টেবিল সংলগ্ন চেয়ারটা টেনে নিয়ে খাটের পাশে আমার মুখোমুখি বসলেন। তারপর গালে হাত রেখে বেয়াহার মতো দেখতে লাগলেন। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে বললেন,
___’ উফ এত নড়িস কেন বল তো? একদম নড়বি না। স্ট্রেইট বসে থাক। দেখতে দে ভালোমতো। তোর কোতায় কি পরিবর্তন এসেছে। তোর থুতনিতে ওটা কি রে দেখি?
থুতনির উপর হাত রাখতে চায়তে ঝট করে সরে বসলাম। বেহায়াপনার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছেন তিনি। একে বেশি লাটে ওঠালে চলবে না। উনি বিরক্ত হয়ে হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে বিছানার শক্ত কাঠে আঘাত করে বললেন,
___’ এই হাতটা সরিয়ে দিলি তো তাই শাস্তি দিলাম। তুই আমাকে চিনিস না। কতদিন এভাবে দূরে সরাবি? আমার প্রেমে তোকে পড়তেই হবে। বিয়ের আগেই হোক কিংবা পরেই।
কড়া কয়টা কথা শুনিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি বলে শুরু করব বুঝছি না। একটু মুখে বিরক্ত নিয়ে এসে বললাম,
___’ আপনি আমার তিন বছরের বড় না হলে এখনই একটা থাপ্পড় মেরে বিদায় করতাম। ফুপির ছেলে বলে ছেড়ে দিতাম না। আপনাকে আমি বিয়ে করব না। তাছাড়া দাদির মুখে নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনেছেন আমার অলরেডি বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এসব ত্যানাপরা বৃথা চেষ্টা না করে দেশে ভালো দেখে একটা মেয়ে খুঁজে বিয়ে করে ফেলুন।’
___’ চুল টানলে মাথা আসে। ঘাড় টানলে মাথাসহ কোমর অব্দি আসে। আর তোকে টানলে পুরো তুইই আসবি। মোদ্দা কথা, তুই আমাকেই বিয়ে করবি৷ সোজা না হলে জোর করে। ‘
আমি সত্যিই অতিষ্ঠ। আর কোন বাক্যে বোঝাব! অশ্রাব্য গালিতেও বোঝ হয় এই লোকের মাথায় সুবুদ্ধি হবে না। তাঁর টর্চারে মনে হচ্ছে নিজেই বসে বসে গলা ফাটিয়ে কেঁদে মনকে হাল্কা করি। নিরাশ গলায় বললাম,
-‘ আচ্ছা আপনি আমাকে দেখেননি। সেই তিন বছর আগেই শেষ দেখা। হঠাৎ আমাতে কি এমন দেখলেন আর দেখলেনই বা কিভাবে? আজই না আমাদের বাড়িতে প্রথম এলেন?’
প্রভাত ভাই একটু বিজ্ঞের মতো আমাকে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
-‘ কই তোর চেহারা এই তিন বছরে আহামরি কিছু বদলায়নি। তাছাড়া দেখার ইচ্ছে থাকলে দূর দেশে বসেও দেখা যায়। সব বলবো। অপেক্ষা কর। বিয়েটা আগে হোক।’
-‘ রাবিশ! কক্ষণো না। বিয়ে করব না।’
কথাটা মুখ ফসকাতে দেরি কিন্তু তাঁর আক্রমণে দেরি নেই। উনি এক টানে আমায় কোলে বসিয়ে গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে আবার ধাক্কা মেরে বিছানায় বসিয়ে দিলেন। ঘটনা এত আকস্মিক ঘটলো যে আমার বোকা বনে কতক্ষণ কাটিয়ে দিলাম।
___
___’ হাবা টা ঘুমিয়ে গেছে?’
প্রভাতের এহেন কথায় তানিয়া আর লিনা ফিক করে হেসে দেয়। ওদের ফোন লাউড স্পিকারে। তানিয়া আবার একটু সন্ধ্যার রুম থেকে ঘুরে এসে বললো,
___ ‘ মরে লাশ হয়ে গেছে। এখন সারাদিন কেউ ধাক্কালেও জাগবে না। যা করার এই সময়েই করুন। পরে চান্স পাবেন না ভাই।’
___’ আসছি তবে।’
লাইন কেটে যেতেই তানিয়া আর লিনা একে অন্যের দিকে তাকায়। রাত একটা। বসে থেকে এবার পায়চারি করতে লাগল তানিয়া। অপেক্ষার পালা কি যে যন্ত্রণা! সময় নাকি বহমান অথচ অপেক্ষার বেলায় এসে আর বহমান না থেকে সহমান হয়ে যায়।
ঘড়ির কাঁটা ঠিক একটা বিশে পৌঁছাতে জানালা দিয়ে ঠুকঠুক আওয়াজ পেল ওরা। তারপর দুম করেই প্রথমে একজোড়া পা সমেত
পুরো মানুষটা এসে ঘরে ঢুকলো। প্রভাতকে দেখে ওরা দুই বোন হেসে উঠলো। চুলগুলো ভেজা এলোমেলো। গায়ে ফিনফিনে এক শার্ট। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। ওদের হাসতে দেখে প্রভাত ধমকের সুরে বললো,
___’ হাসি লাগে না? বৃষ্টির মধ্যে কখনো কোনো মিশনে গিয়েছ, যাওনি তো? তাহলে বুঝবে কি করে? প্রচন্ড বৃষ্টি। সাথে ছাতা নেই। ভিজবোই তো। তার উপর মাথায় এক্সট্রা প্রেশার। আচ্ছা এখন বলো তোমাদের বোন জেগেছে না ঘুমে?’
লিনা মুখ টিপে হেসে আবার থেমে গিয়ে বললো,
___’ চিন্তা নেই। ভোরের আগে ওর ঘুম ভাঙে না। কি করতে হবে বলুন।’
___’ আপাতত ওর রুমের বাইরে পাহারায় থাকো। কেউ আসলে সংকেত প্রেরণ করো।’
ওরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। প্রভাত বিড়ালী পায়ে সন্ধ্যার রুমে ঢুকে পড়ে। দরজা ভেজিয়ে বিছানার কাছে যেয়ে কতক সময় থমকে থাকে। বোকা মেয়েরা আসলেই সুন্দরী হয়। কথাটা যথার্থ। তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে নিজ মনে আওড়াতে থাকে, ‘ নো প্রভাত, এভাবে ওকে দেখতে থাকলে ভোর হয়ে যাবে। এদিকে কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না। সময় নষ্ট করিস না। টাইম ইজ ভেরি ভ্যালুয়েবল।’ তারপর দাঁড়িয়ে বিছানায় এক হাঁটু মুড়ে দুই হাত প্রসারিত করে আলগা হাতে তুলে নেয় সন্ধ্যাকে। শক্ত হাতে এবার বাহুডোরে চেপে মিশিয়ে নেয় বুকের মাঝে। মুচকি হেসে ওর কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় প্রভাত।
____
ঘুমের ভেতর মনে হলো উঁচু থেকে পড়ে যাচ্ছি কোনো খাদে। ঠিক এমন একটা অনুভূতি নিয়ে জেগে উঠতেই এক গগন ফাটানো চিৎকার করে উঠলাম। আমি ছিলাম আমার নিজের রুমে আরামদায়ক বিছানায়। ভুল হচ্ছে। স্বপ্ন দেখছি বোধ হয়। কারণ এখন আমি যা দেখছি না বাস্তব হতেই পারে না। আমি একটা ব্রিজের সিমেন্টের রেলিঙের উপর শুয়ে আছি। আমার শরীরের দু’পাশের বেশিরভাগ জায়গা রেলিঙের দু’পাশে বেরিয়ে আছে। হয় পড়লে সোজা পানিতে নয়তো পড়বো পাঁকা সড়কে। একদিকে পড়লে ডিরেক্টর ওপরওয়ালার কাছে। কারণ সাঁতার জানি না। জানলেও একবার পানিতে পড়লে কোনো সাঁতারই তেমন কাজে দেয় না। অপরদিকে রাস্তায় পরলে মাথা, কোমর দুটোই ফাটবে।
এমন পরিস্থিতিতে আমাকে কে এনে ছেড়ে দিলো? দয়া মায়া বলে কিছুই নেই মানুষের? জীবনে গুরুতর কোনো শত্রুর সম্মুখীন হয়নি তবে হঠাৎ কোন শত্রুর আবির্ভাব!
আবির কথা না বাড়িয়ে দাঁড়ায়। ও ভাবে জান্নাত হয়তো ওকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে যাবে৷ কিন্তু আবির দাঁড়াতেই জান্নাত ওকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে ওর বুকের সাথে নিজেকে মিশিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর খুব লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,
~ নিন এবার একটু শান্ত হন৷ আপনি বলেছেন না আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরলে আপনি শান্তি অনুভব করেন৷ নিন এবার একটু শান্তি অনুভব করে স্বাভাবিক হন৷ তাও এরকম করবেন না প্লিজ। আমার কষ্ট হচ্ছে।
আবির যেন অবাকের চরম মাত্রায়। বিশ্বাসই হচ্ছে না জান্নাত এমন কিছু করবে৷ ও ঠিকই বলেছে, আবির এখন অনেক ভালো অনুভব করছে। কখন যেন মনের অজান্তেই আবিরও জান্নাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দুজন দুজনের মাঝে একদম মিশে আছে। কোন কথা নেই। চরম নিস্তব্ধতা। জান্নাত লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ লুকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ওকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে ভাবছে, এ কেমন অনুভূতি? এ কেমন ভালো লাগা? আর এ আমি কি করছি? আর কেনই বা করছি? আমি তো এমন না। তাহলে কেন ওনাকে এতটা আপন করে নিলাম? কেন ওনার স্পর্শ আমাকে অজানা এক অনুভূতি দিচ্ছে? কেনই বা আমারও এত ভালো লাগছে? ঠিক কি আছে ওনার মাঝে? আচ্ছা উনিও কি আমার মতো সেইম অনুভূতিটা উপলব্ধি করেছেন? হয়তো করছেন।
আবিরও জান্নাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে ভাবছে, এই মেয়েটা সেই প্রথম থেকেই আমাকে ভালো করে যাচ্ছে। আর বিনিময়ে আমি শুধু ওকে কষ্টই দিচ্ছি। তবে আর না৷ আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব আমার৷ আর সেটা সারাজীবনের জন্য৷ আমি ওকে কখনো ছাড়বো না৷ ওকে শুধু আমার হয়েই থাকতে হবে। কিন্তু আমি যে কালো দুনিয়ায় বসবাস করি সেটা তো ওর জন্য দুঃস্বপ্ন। ও কিভাবে আমার সত্যটা মেনে নিবে৷ আচ্ছা আমি যদি ওকে অনেক ভালবাসি ওকি আমায় মাফ করবে না? ও কি আমাকে ভালবেসে মেনে নিবে না? আমি তো ইচ্ছা করে এ দুনিয়ায় ঢুকিনি। বাধ্য হয়েছি ঢুকতে। ও কি সবটা বুঝবে না? জানি না আমি। কিন্তু ওকে আমি হারাতে চাই না৷ কখনো না।
আবির আরও শক্ত করে জান্নাতকে ওর সাথে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত সেটা বুঝতে পেরে মনে মনে ভাবে, হয়তো আবির ওকে অনেক বেশি পছন্দ করে। নাহলে এভাবে মনের সব কথাগুলো বলে দিতে পারতো। আবির চায় না ও চলে যাক৷ আবির বলেছে ওকে সারাজীবন পাশে চায়। এর মানে আবির ওকে.. জান্নাতের মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ওরা দুজন দুজনকে নিয়ে ভাবছে। হঠাৎই দরজায় কে যেন নক করে। ওরা সাথে সাথে একে অপরেরকে ছেড়ে দেয়। দুইজনই খুব লজ্জা পাচ্ছে। আবির দ্রুত মনিটরের কাছে গিয়ে দেখে নিলয়। ও দরজা খুলে বাইরে যায়৷ আবির বাইরে আসলে নিলয় বলে,
– স্যার চার্লি আজকে রাতে ১০০টা মেয়েকে পাচার করবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। ডকের লোকদের নাকি অনেক টাকা খাইয়েছে। তাই সবাই চুপ। এখন কি করবো?
– রাশিয়া দিয়ে ডেলিভারি হয়েছে না?
– জি স্যার গতকালই।
– সবাইকে রেডি হইতে বলো। আজকে চার্লির পুরো গ্যাং শেষ করবো। অনেক সহ্য করেছি আর না। ওর জন্য অনেক ছোট ছোট মেয়েরা তাদের জীবন হারিয়েছে৷ আর না।
– স্যার একটা কথা বলি?
– বলো।
– আপনি একজন অনেক বড়ো মাফিয়া। কিন্তু আমার এ পর্যন্ত মানে আপনার সাথে যতদিন আছি, আমি আজ পর্যন্ত আপনাকে কোন খারাপ কাজ করতে দেখিনি। বরং আপনি আপনার ক্ষমতা দিয়ে সবসময় খারাপকে ধ্বংস করেছেন। যেগুলো দেশের আইনের লোকদের করা উচিৎ। কিন্তু করছেন আপনি। কেন স্যার? একজন মাফিয়া তো কখনো এমন হয় না!
আবির নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,
– তুই ভুল ভাবছিস৷ আমি আমার জন্যই এসব করছি। এই শহরের কিং বা মাফিয়া একজনই থাকবে সেটা হলাম আমি। এখনো ওরা খারাপ হলে আমার তো কিছু করার নাই। কারণ ওরা শেষ না হলে আমি সামনে আগাতে পারবো না।
– তাহলে স্যার নেহাল স্যারকে আপনি মারলেন না কেন? সেও তো মাফিয়া ছিল?
আবির চুপ হয়ে যায়। নিলয় হাসতে হাসতে বলে,
– স্যার আর কেউ না জানলেও আমি জানি, আপনি কত ভালো একটা মানুষ। আপনি কিং হয়েই দেশের সাধারণ মানুষদের আড়ালে থেকে সাহায্য করে যাচ্ছেন৷ আমাদেরও মনমানসিকতাও সেভাবে আপনি বানিয়েছেন। স্যার আপনি আমাদের সবার গর্ব৷ আপনার জন্য আজ অনেক মেয়ে বেঁচে যাবে। আমি ধন্য আপনার সাথে কাজ করে। আমার জীবন দিয়ে হলেও আপনাকে আমি রক্ষা করবো।
– চুপ কর পাগল। আমি আমার খেয়াল রাখতে পারবো। এখন থেকে তোর সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব তোদের ভাবীকে দেখে শুনে রাখা।
– কি বলেন স্যার আমাদের জান্নাত ম্যাম?
– হুম।
– ওহ! স্যার আমি অনেক খুশি। ম্যামটা অনেক ভালো। আমাদের সবার অনেক পছন্দ হয়েছে৷ আপনার জন্য একদম পার্ফেক্ট।
– হুম। এবার যা। রাতের প্রস্তুতি নে৷
– ওকে স্যার৷
– আজকে চার্লিকে নিজ হাতেই আমি শেষ করবো।
নিলয় চলে গেলে আবির আবার ওর রুমে ঢুকে৷ ঢুকে দেখে জান্নাত বসে আছে চুপচাপ করে। ওকে কেমন জানি অন্যরকম লাগছে। আবির ওর কাছে গিয়ে বলে,
– কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
জান্নাত মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে না বলে। আবির বুঝতে পারে না হঠাৎ ওর কি হলো। ও আবার জিজ্ঞেস করে,
– তুমি কি ঘুমাবে? চাইলে একটু ঘুমাতে পারো। আমি তাহলে সোফায় শুয়ে পড়ি।
জান্নাত কিছু বলে না। মাথা নিচু করে বসে থাকে। আবির কিছুই বুঝতে পারে না হঠাৎ ওর কি হলো। তাই ও ওর কাছে এসে ওকে ধরতে যাবে ওমনি জান্নাত অশ্রুতে ভরা নয়ন নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে,
~ কিং!
আবির স্তব্ধ হয়ে যায় জান্নাতের মুখে কিং শুনে। ও একদম অবাক হয়ে যায়। আবির ভাবছে তাহলে জান্নাত কি ওদের কথা শুনে ফেললো? আবির নোয়া থেকে দাঁড়িয়ে যায়। জান্নাত উঠে দাঁড়িয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে,
~ আপনি তাহলে সেই কিং? যাকে দেশে বিদেশের সবাই অনেক ভয় পায়। যে হাজার হাজার মানুষকে মেরেছে। সেই আপনি? সেদিন তাহলে শত্রুদের গুলি খেয়েই আমার কাছে আমার জীবনে এসেছিলেন? এখন সব বুঝতে পারছি আমি।
আবির মাথা নিচু করে আছে। কারণ যেটার ভয় ও করছিল সেটাই হয়ে গেল। জান্নাত আবিরের কাছে এসে ওকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ এত বড়ো একটা কথা আপনি আমাকে বলেন নি। ভাগ্য ভালো আমি একটু আগে লুকিয়ে শুনে ফেলেছি। আপনি নাকি আপনার পরিচয় যে জানে তাকে মেরে ফেলেন। নিন এবার আমাকেও মেরে ফেলেন। শেষ করে দেন৷ এত বড়ো একটা ক্রিমিনালের সাথে কিভাবে থাকবো আমি! আজকেও আবার যাবেন মানুষ মারতে।
– জান্নাত ওরা ভালো না৷ ওরা ১০০ টা মেয়েকে বাইরের দেশে পাচার করে দিচ্ছে। ওদের মেরে না ফেললে ওদের কখনো থামানো যাবে না৷
~ মানুষ মারতে খুব ভালো লাগে তাইনা? এক কাজ করুন না, আমাকেও মেরে ফেলেন। তাহলেই তো ঝামেলা শেষ।
– সেটা আমি কখনো পারবো না। কারণ তুমি আমার কাছে একটা স্পেশাল মানুষ। চেয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে নতুন একটা জীবন শুরু করবো। কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি তা চাও না৷
~ আপনার মতো মাফিয়া কখনো ভালো হবে না৷ আপনার আর হৃদয়ের মাঝে কোন তফাৎ নেই৷ ঘৃণা করি আমি আপনাকে ঘৃণা।
আবির স্তব্ধ হয়ে জান্নাতের দিকে তাকায়। ও আস্তে আস্তে জান্নাতের কাছে এসে ওকে ধরে বলে,
– কি বললে? তুমি আমাকে ওর মতো একটা জানোয়ারের সাথে তুলনা করলে? কি করেছি আমি হ্যাঁ? কতগুলো সমাজের ময়লা গুলো পরিষ্কার করেছি। এতে কি সাধারণ মানুষের লাভ হয় নি? আগে সবাই গুন্ডা সন্ত্রাসীদের ভয় পেতো। আর এখন ভয় পায় কিং কে। কিন্তু বলতে পারবা কিং কি কখনো কোন সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়েছে? কিংবা ক্ষতি করেছে?
~ আমাকে দিয়েছে। কিং আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে। আমার সাথে প্রতারণা করেছে৷ আমাকে মিথ্যা বলেছে।
আবির জান্নাতকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর উপর উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কারণ আমি তোমাকে হারাতে চাই না৷ ভালো লাগে তোমাকে। হয়তো ভালও বেসে ফেলেছি। তাই আমার যেটা ভালো মনে হয়েছে আমি সেটাই করেছি। এবং করবোও। দেখি কে কি করে৷
~ আমি চলে যাবো।
– দিব না৷
~ আমি থাকবো না আপনার সাথে।
– যেতে দিব না।
~ আমি কান্না করবো অনেক।
– আমি থামিয়ে দিব।
~ কিভাবে?
– এভাবে।
আবির জান্নাতের ঠোঁটটাকে একদম নিজের করে নেয়। জান্নাত কোন বাঁধা দেয় না। কেন দেয় না ও নিজেও জানে না। দীর্ঘ অনেকটা সময় ওরা এভাবেই থাকে। এই নতুন স্পর্শ নতুন অনুভূতি ওদের মাঝের সব দূরত্ব দূর করে দেয়। আবির ওকে ছাড়লে জান্নাত হাসতে হাসতে বলে,
~ আপনি যদি কিং হন আমি হলাম আপনার কুইন৷ আপনি কি ভাবছেন অভিনয় শুধু আপনিই করতে পারেন? জি না আমিও পারি। আপনি হয়তো জানেন না সাধারণ মানুষ আপনাকে কত ভালবাসে। কারণ সবাই অন্ধ না৷ সবাই জানে আপনি বরাবরই বড়ো বড়ো খারাপ মাফিয়াদের শেষ করে যাচ্ছেন। সবাই আপনাকে ভয় পায় ঠিক কিন্তু মনে মনে অনেক ভালবাসে এবং দোয়াও করে।
– সিরিয়াসলি? তুমি এত দুষ্টু? আমাকে এভাবে বোকা বানালা?
~ হুম। আসলে দেখতে চাচ্ছিলাম আপনি সত্যিই আমাকে চান কি না৷
আবির আবার জান্নাতের ঠোঁটটাকে নিজের করে নিয়ে ওকে ছেড়ে বলে,
– কি মনে হয়?
~ বলবো না। (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)
– বলতে হবে না৷ আমি সব বুঝি।
~ একটা কথা জানতে চাই।
– বলো।
~ আপনি কিং হলেন কিভাবে?
– আমার যখন দশ বছর তখন আমার বাবা মাকে অনেক বড়ো একটা মাফিয়া মেরে ফেলে। একদম আমার সামনে। ওই মাফিয়াটা আমাকে না মেরে কি বলেছিল জানো?
~ কি?
– তোর বাবা মাকে আমি মেরেছি। চিনে রাখ আমাকে। পারলে কোন দিন আমার মতো বড়ো মাফিয়া হয়ে আমাকে মেরে দেখাস। বলেই ও হাসতে চলে যায়। আমার বাবা একজন পুলিশ ছিল। সে ওই মাফিয়ার বিরুদ্ধে একশনে যাওয়াতে ও আমার বাবা মা দুইজনকেই আমার সামনে মারে। সাইকো ছিল ও। তবে ও অনেক বড়ো একটা ভুল করেছে আমাকে না মেরে। সেই ছোট আবিরের মাথায় অনেক বড়ো মাফিয়া হওয়ার ইচ্ছা হয়। কারণ ওই মাফিয়াকে মারতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। ছোট্ট আবির সে সুযোগটাও পেয়ে যায়৷ অন্য একটা মাফিয়া ওকে নিজের ছেলে করে নেয়৷ আর ওকে সব কিছু শেখায়৷ ব্ল্যাক স্যাডো গ্যাং এর আসল লিডার ছিল সে। কিন্তু এখন আমি। কারণ সে আর বেঁচে নেই। আত্নহত্যা করেছে। কেন শুনবে?
~ কেন?
– কারণ সে মাফিয়া হয়ে ভুল করেছে। তার পুরো জীবন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। সেদিন আমি ভাবি, মাফিয়া যখন হবো একটা ভালো মাফিয়া হবো। আর অনেক বড়ো একটা মাফিয়া। সবার প্রথম ওই মাফিয়াকে মারি। তারপর একে একে অনেক মাফিয়াকে মারতে থাকি। কারণ আমি চাইয়া কেউ স্বপ্নেও ভাবুক সে মাফিয়া হবে৷ এভাবেই আমার মাফিয়া হওয়া। মাঝে মাঝে খুব কান্না পায় নিজেকে দেখে৷ আমার একটা স্পেশাল জায়গা আছে সেখানে বাবা-মার ছবি দেখে তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদি। সারারাত কাঁদি। কেউ জানে না। কেউ বুঝে না।
~ আজকে ওই মেয়েগুলোকে বাচিঁয়ে নতুন একটা জীবন শুরু করবেন আমার সাথে? আপনি অভিনয় করবেন। আর আমি হবো আপনার সেক্রেটারি। সবসময় আপনার পাশে থাকবো।
– নাহ! তুমি আমার বউ হবে৷ সেক্রেটারির চেয়ে বউয়ের দাম বেশি৷
~ তাহলে তাই হবো৷ শুধু কিং টাকে মেরে ফেলেন চিরতরে। অনেক করেছেন সবার জন্য৷ এবার নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন৷
আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছে। ও হঠাৎ হাসতে হাসতে বলে,
– তুমি অনেক চালাক জান্নাত অনেক। তুমি জানো ঠিক কি করলে আমাকে কাবু করতে পারবে৷ কিভাবে আমাকে দুর্বল করতে পারবে৷
~ হ্যাঁ জানি। কারণ আমিও চাই না আপনাকে হারাতে। এই খারাপ মারামারি জগতে থাকলে আপনাকে হারানোর ভয়ে আমি শে…..
– চুপ। ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে। হারাতে চাই না। জানো আমরা কিন্তু একদম এক। তাই হয়তো শেষমেশ আমাদের মিল হলো।
~ বিয়া করবেন কবে সেটা বলেন। এভাবে বিয়ে ছাড়া হুটহাট আদর করলে কিন্তু চলে যাবো।
– হাহা কই যাবা?
~ তাও ঠিক। আমার তো যাওয়ার কোন জায়গাও নেই।
– আছে তো। এই যে আমার বাসাটা। কোথাও যেতে হবে না তোমাকে। এখানেই থাকবে৷ খুব তাড়াতাড়ি আবির আহমেদ বিয়ে করবে তার জান্নাতকে৷ আর অচিরেই কিং হারিয়ে যাবে৷ তবে একটা বিশাল ধামাকা করে।
কথা শেষ করেই আবির জান্নাতকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর বলে, কখনো তোমাকে ছাড়বে না৷ কখনো না। খুব ভালবাসি তোমাকে।
– সমাপ্ত।
—-> অনেকের প্রিয় অপ্রিয় গল্প ছিল এটা৷ এই গল্পটা পড়ে মনে হাতে পারে শেষ হয়েও শেষ হয় নি। আসলে কিছু গল্পের কখনো শেষ হয় না। তাই আমিও চেয়েছি এই গল্পটা যেন শেষ হয়েও না শেষ হয়ে থাকে। কারণ আবির আর জান্নাতের গল্প আবার আসবে৷ তবে ভিন্ন রূপে, ভিন্ন গল্পে। সে পর্যন্ত যারা সাথে থাকবেন এবং ছিলেন তাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ এই গল্পটা কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
#love_is_like_a_Cocktail
Writer: Abir Khan
Part: 09
জান্নাত খুব খুশি হয়ে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি হঠাৎ করে পিছন থেকে নেহাল এসে বলে,
– সরি জান্নাত তুমি এখন এই মুহূর্তে এখান থেকে যেতে পারবে না৷
নেহালের কথা শুনে জান্নাতের চেয়ে আবির বেশি অবাক হয়। জান্নাত জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
~ কেন?
– কারণ তুমি বাসায় গিয়ে কি করবে? ওখানে তোমার কেউ নেই। আর এতদিন কোন ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেও যাও নি। তারা কি তোমাকে আর পড়াতে দিবে? দিবে না। তাহলে কিভাবে বাসা ভাড়া, খাবার খরচ এত কিছু চালাবে বলো? এখন তো আরো মাসের শেষ সময়। গেলেই তো ভাড়া গুনতে হবে৷ পারবে দিতে? তার চেয়ে এখানে কি ভালো আছো না?
জান্নাত চুপ হয়ে যায়। ও ভেবে দেখে নেহালের কথাগুলো সত্য। ও এখন গেলেতো অনেক ঝামেলায় পড়বে। কিন্তু তাই বলে আবিরের কাছে ও কিভাবে থাকবে? এটা তো স্বার্থপরতা হলো। জান্নাত মাথা নিচু করে মলিন মুখে বলে,
~ সে যাই হোক। কিন্তু এভাবে এখানে থাকাটা তো আমার ঠিক না৷ মানুষ কি ভাববে? একটা মেয়ে তার স্বার্থের জন্য এখানে পড়ে আছে! আমার খুব খারাপ লাগবে ভাইয়া৷ সরি।
আবির খুব খুশি হয়েছিল। ও ভেবেছে জান্নাত হয়তো এবার আর যাবে না৷ কিন্তু ওর কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে ও যাবেই যাবে৷ আবিরের মাথাটা গরম হয়ে যায়। নেহাল কিছু বলতে নিলে আবির উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে ও চুপ হয়ে যায়। জান্নাত পিছনে ঘুরে আবিরের দিকে তাকায়৷ ওকে দেখে বেশ রাগী মনে হচ্ছে। আবির অন্যদিকে ফিরে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
আবির আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে উপরে ওর রুমে চলে যায়। জান্নাত স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। ও বুঝতে পারছে না আবির এরকম কেন করলো। আবির গেলে নেহাল জান্নাতের কাছে এসে বলে,
– শান্তি হলো এবার? দিলে তো ভাইকে কষ্ট। যাও এবার নিজের বাসায় গিয়ে পড়ে থাকো। যে তোমার জন্য এত কিছু করলো তার কাছে থাকলে এমন কি হতো? আসি। ভালো থেকো।
নেহালও চলে যায়। জান্নাত এবার বুঝতে পারে আবির আসলে চায় না ও যাক। কিন্তু কেন? জান্নাতও আবিরের পিছনে পিছনে ওর রুমে যায়। দেখে দরজা খোলা। ও একটা শুকনো কাশি দিয়ে ভিতরে যায়। গিয়ে দেখে আবির ওর সোফাতে বসে আছে গম্ভীর মুখে। খুব রাগী মনে হচ্ছে৷ জান্নাত আস্তে আস্তে ধীর পায়ে আবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির ওকে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– আবার কি চাই? বিদায় নিতে এসেছো? নিতে হবে না৷ চলে যাও।
জান্নাত শুধু অবাক হচ্ছে আবিরের অভিমান দেখে৷ এত অভিমান! কিন্তু কেন? ও তো সামান্য একটা মেয়ে। ও গেলে এমন কি হবে? জান্নাত আস্তে করে বলে,
~ আমি চলে যাই আপনি তা চান না তাইনা?
– বুঝতেই যখন পারছো তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছো?
~ কিন্তু আমার মতো সামান্য একটা মেয়ে আপনার কাছে থাকবে এটা কি ভালো দেখায়? আমার জন্য যদি আপনাকে কেউ কিছু বলে? আর কোন অধিকারে আমি এখানে থাকবো বলেন?
আবির এবার জান্নাতের দিকে ঘুরে তাকায়। জান্নাত আবিরের চোখের দিকে একবার তাকিয়ে ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। আবির ওর দিকে তাকিয়ে উঠে হেঁটে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। জান্নাত ভয়ে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে। আবির ওকে বলে,
– যাও আজ থেকে তুমি আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি। মাসিক বেতন ১ লক্ষ টাকা। থাকা খাওয়া সব আমার সাথেই৷ বলো রাজি?
জান্নাত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়৷ আবির যে ওকে রাখার জন্য এতটা অস্থির হয়ে আছে জান্নাত তা কল্পনাও করে নি। ও কিছু বলছে না দেখে আবির আবার বলে,
– যদি রাজি না থাকো তাহলে চলে যায়৷ আর কিছু বলতে হবে না। কোন জোর নেই তোমাকে। কারণ জোর করে কাউকে ধরে রাখা যায়।
কথা শেষ করেই আবির ওর রুমের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। জান্নাত মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবিরের কাছে এসে বলে,
~ আমার মতো একটা সামান্য মেয়ে যে আপনার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমি কখনোই বুঝিনি। আপনি যেহেতু চান না আমি যাই তাহলে আমি থাকবো। তবে আপনার সেক্রেটারি হয়ে। আর কোন টাকা দিতে হবে না। তিন বেলা খাবার আর একটু থাকতে দিলেই হবে। আর কিছু চাই না৷
আবির এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। জান্নাতের কথায় ওর মাথাটা আগুন হয়ে যায়। ও ভীষণ রাগী ভাব নিয়ে ঘুরে জান্নাতকে ধরে একটান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,
– কি শুরু করছো তুমি? সেই কখন থেকে নিজেকে সামান্য সামান্য বলে যাচ্ছো! তুমি মোটেও সামান্য না। তোমাকে কেন যেতে দিতে চাই না জানো? কারণ তুমি আবার আমার মতো একা হয়ে যাবা৷ এই শহরে একটা মেয়ে কখনোই একা থাকতে পারে না৷ হাজারটা জানোয়ারের নজর লাগে তার উপর। এসব জেনেও কিভাবে তোমাকে একা যেতে দেই আমি বলো? কিভাবে?
জান্নাত ভীতু চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর আবির রাগী চোখে। জান্নাতের কান্নাসিক্ত মুখখানা দেখে আবিরের রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। ও তাকিয়ে দেখে ও জান্নাতের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। জান্নাত ব্যথায় কাতরাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।আবির সাথে সাথে ওকে ছেড়ে দেয়৷ ছেড়ে দিতেই দেখে জান্নাতের সাদা ফরসা হাতে ওর পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেছে রক্ত জমে। আবির এই দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই নিজের টেম্পার হারিয়ে ফেলে। কি করেছে ও এটা! শেষমেশ অসহায় একটা মেয়েকে ও কষ্ট দিল, তাকে আঘাত করলো? আবির বড়ো বড়ো চোখে জান্নাতের হাতটা ধরে তাকিয়ে আছে৷ ওর নিজের উপর খুব রাগ উঠছে৷ ও যে হাত দিয়ে জান্নাতকে ব্যথা দিছে সে হাত দিয়ে দেয়ালে সমানে ঘুষি দিতে দিতে বলে,
– আমি শেষমেশ তোমাকে আঘাত করলাম! আজ এই হাত আমি রাখবোই না৷
জান্নাত এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে অসম্ভব ভয় পেয়ে যায়৷ ও জোরে একটা চিৎকার করে আবিরের হাত ধরে ওকে থামায়৷ আবিরের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড়ও মেরে দেয়৷ আবির মার খেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। আর জান্নাত অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
~ আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন? কি করলেন এটা? আল্লাহ! রক্ত! আপনার হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এখন কি করবো আমি? আল্লাহ!
জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু না পেয়ে, ওর ওড়না খুলে আবিরের হাতে পেচাতে থাকে। ওকে খুব অস্থির লাগছে। পেচানো শেষ হলে আবির হঠাৎই ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলে,
– প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না৷ আমার পাশে কেউ নাই৷ আমি অনেক একা। প্লিজা আমাকে ছেড়ে যেও না৷
~ যাবো না, যাবো না, যাবো না৷ প্রমিজ আমি যাবো না৷ আপনি দয়া করে শান্ত হন৷ আমাকে ছাড়ুন৷ আপনার হাতে মেডিসিন লাগাতে হবে।
– না ছাড়বো না তোমাকে আমি। তোমাকে আমার সাথে জড়িয়ে ধরলে আমি অনেক শান্তি অনুভব করি। বিশ্বাস করো আমার মনে হয় আমি আবার নতুন একটা জীবন শুরু করতে পারবো। আমি ছাড়বো না তোমাকে। তুমি নাহলে চলে যাবে৷
আবিরের কথাগুলো বাচ্চাদের মতো হলেও ওর কথার মাঝে অজানা রহস্য আর একরাশ কষ্ট জান্নাত অনুভব করে। কিন্তু কি সেই রহস্য আর কষ্ট তা ও জানে না। জানতে হলে আবিরকে ওর সামলাতে হবে। এত বড়ো একটা সেলেব্রিটি আসলেই এত একা কেন? কেউ তার পাশে নেই কেন? জান্নাতের সত্যিই সব জানতে ইচ্ছা করছে৷ ও বলে উঠে,
~ আমি কোথাও যাবো না। প্রমিজ আমি যাবো।
– সারাজীবন থাকবে?
~ হ্যাঁ থাকবো। এখন একটু সময় দেন আমাকে। নাহলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
আবির জান্নাতকে ছাড়ে। ও ছাড়া পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ মেডিকিট আছে আপনার রুমে?
– হুম। আলমারিতে। তুমি বসো আমি এনে দিচ্ছি।
আবির আলমারি থেকে মেডিকিট এনে জান্নাতের কাছে দেয়। জান্নাত দ্রুত আবিরকে বসিয়ে দিয়ে অস্থির হয়ে আবিরের হাতের ট্রিটমেন্ট শুরু করে। ও যে ওড়না ছাড়া বসে কাজ করছে তা ওর খেয়ালই নেই। কাজ শেষ হলে জান্নাত আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আর কখনো এমন পাগলামি করবেন না প্লিজ। কত গুলো রক্ত পড়েছে দেখেন৷ আমার সাদা ওড়নাটা লাল হয়ে গিয়েছে রক্তে।
জান্নাত দেখে আবির চোখ বন্ধ করে মাথা অন্যদিকে করে তাকিয়ে আছে। ও আবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ একি! আপনি চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ফিরে আছেন কেন?
– এমনিই।
~ প্লিজ বলুন? আপনি কি রাগ করেছেন আমি আপনাকে মেরেছি বলে? তাহলে আপনিও আমাকে মেরে প্রতিশোধ নিন৷ তাও রাগ করবেন না প্লিজ।
আবির বলে,
– আহ! তুমি ওড়না ছাড়া আছো তাই আমি চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। এটাও বুঝো না৷
জান্নাত নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে, হ্যাঁ আসলেই ওর বুকে কিছু নেই৷ আবির চাইলে অনেক কিছু দেখতে পারতো এতক্ষণে। কিন্তু ও সেটা না করে চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল! এত ভালো আবির? জান্নাতের মনে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে আবিরকে নিয়ে৷ আবিরের জন্য ওর সম্মান অনেক গুণ বেড়ে যায়৷ কিন্তু এখন ওকে নিজেকে ঢাকতে হবে৷ তাই ও দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ওর ব্যাগ থেকে একটা ওড়না নিয়ে সোজা ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে বলে,
~ আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি, আপনি এবার চোখ খুলতে পারেন৷
বলেই জান্নাত ওয়াশরুমে চলে যায়। আর আবির আস্তে করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সত্যিই জান্নাত নেই। এবার ও ওর হাতের দিকে তাকায়। জান্নাত খুব সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আবির এখন ওর হাতটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, ও এটা কি করলো? এভাবে একটা মেয়ের সাথে! ওর ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে৷ আবির শুধু ভাবছে ও কিভাবে এখন জান্নাতকে মুখ দেখাবে? এদিকে ফ্লোরে রক্ত দেখে আবির নিলয়কে ডাক দিয়ে দ্রুত এগুলো পরিষ্কার করতে বলে। নিলয় আবিরকে জখম দেখে অবাক হয়ে যায় আর জিজ্ঞেস করে, স্যার কি হয়েছে? স্যার কি হয়েছে? কিন্তু আবির কিছু বলে না৷ নিলয় জানে আর প্রশ্ন করা ঠিক হবে না৷ তাই ও দ্রুত ফ্লোর পরিষ্কার করে জান্নাতের রক্তাক্ত ওড়নাটাও সাথে করে নিয়ে চলে যায়৷ নিলয় রুম থেকে বের হতেই জান্নাত বের হয়। বাইরে এসে দেখে পুরো রুম পরিষ্কার। শুধু ওয়ালটায় একটু রক্ত লেগে আছে। জান্নাত দেখে আবির চুপচাপ রুমের এককোণায় বসে আছে৷ জান্নাত ওকে দেখে বুঝতে পারে আবির ওর কাজে অনুতপ্ত। জান্নাতের কানে আবিরের একটু আগে বলা প্রতিটি কথা এখনো স্পষ্ট ভাসছে৷ আবিরের স্পর্শ এখনো ওর শরীরে লেগে আছে। জান্নাত তা অনুভব করতে পারছে৷ ও আস্তে আস্তে হেঁটে আবিরের পিছনে এসে দাঁড়ায়। আবির ওকে অনুভব করে বলে,
– আমি অনেক দুঃখিত আমার আচরণের জন্য। তুমি হয়তো আর এখানে থাকতে চাইবে না৷ যাও চলে যাও। আমার মতো একটা খারাপ মানুষের কাছে কেউই থাকবে না৷ চলে যাও তুমি। (খুব কষ্ট নিয়ে কথাগুলো আবির বলল)
জান্নাত আবিরের কথাশুনে বুঝতে পারে আবির খুব কষ্ট পেয়েছে এমন আচরণ করে। ওকে এত কষ্টে দেখে জান্নাতেরও কষ্ট হচ্ছে৷ ও চায় আবির হাসিখুশি থাকুক। কিন্তু কিভাবে এখন ও আবিরকে স্বাভাবিক করবে? হঠাৎই জান্নাতের মাথায় আবিরের একটা কথা মনে পড়ে। একটু আগেই আবির সেটা বলেছে। এই একটা রাস্তাই হয়তো আবিরকে একদম স্বাভাবিক করে দিবে৷ কিন্তু এই রাস্তাটা কঠিন জান্নাতের জন্য৷ ও পারবে কিনা জানে না৷ তাও আবির ওর জন্য নিজেকে আঘাত করেছে। তাই এটুকু তো ও করতেই পারে৷ জান্নাত আর কিছু না ভেবে আবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির মাথা নিচু করে আছে৷ জান্নাত বলে,
~ দাঁড়ান।
আবির মাথা তুলে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
– কি বললে?
~ দাঁড়াতে বলেছি দাঁড়ান৷
আবির কথা না বাড়িয়ে দাঁড়ায়। ও ভাবে জান্নাত হয়তো ওকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে যাবে৷ কিন্তু আবির দাঁড়াতেই জান্নাত ওকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে ওর…
#love_is_like_a_Cocktail
Writer: Abir Khan
Part: 08
জান্নাত চোখ মেলে তাকাতেই একরাশ চিন্তা নিয়ে আবির ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– এখন কেমন লাগছে? ঘুম হয়েছে ঠিক মতো?
জান্নাত ওর মুক্তার মতো নয়ন জোড়া নিয়ে আবিরের দিকে তাকায়৷ ও মুহূর্তেই খুব লজ্জা পেয়ে যায় আবিরকে এতটা কাছে দেখে৷ সাথে সাথে ওর কপালে একটু ব্যথাও অনুভব করে। তাই ভ্রুকুচকে যায় ব্যথায়। জান্নাত কপালে হাত দিলে আবির আবার জিজ্ঞেস করে উঠে,
– বেশি ব্যথা করছে কি?
~ হঠাৎ একটু ব্যথা করে উঠলো। তবে এখন ঠিক আছি। আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ৷ (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)
আবির জান্নাতের কাছ থেকে সরে এসে ওর ফোনটা নিয়ে জানালার কাছে এসে রিয়াদকে কল দেয়৷ এই ফাঁকে জান্নাত আস্তে আস্তে উঠে বসে৷ আবিরের বিশাল বড়ো রাজকীয় রুমখানা দেখে জান্নাত হা করে বিষ্ময়কর ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে৷ ও শুনছে আবির ফোনে বলছে,
– ওর ঘুম ভেঙেছে৷ কপালে নাকি ব্যথা করছে। তুই তাড়াতাড়ি ঔষধ নিয়ে চলে আয়৷ একদম দেরি করবি না৷.. হুম আয়৷
জান্নাত অজান্তেই মুচকি হেসে দেয় আবিরকে এত চিন্তিত দেখে৷ ও ভাবতেও পারে নি এত বড়ো একটা সেলেব্রিটি মানুষের কাছে শেষমেশ ওর ঠাই হবে৷ এ যেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আবির কথা শেষ করে ঘুরতেই দেখে জান্নাত উঠে বসেছে৷ ও দ্রুত ওর কাছে এসে অস্থির কণ্ঠে বলে,
– আরে আরে উঠেছো কেন? তুমি না অসুস্থ? শুয়ে থাকো। একটু পরই ডাক্তার আসছে৷
~ আপনি শান্ত হন৷ আমি এখন একদম ভালো আছি৷ আসলে আমি একটু…(জান্নাত কেমন জানি লজ্জা পাচ্ছে)
– তুমি কি? বলো। প্লিজ একদম সংকোচ করবে না বলো।
~ একটু ওয়াশরুমে যাবো। (মাথা নিচু করে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলল)
– ওহ! সরি সরি। ওই যে ওয়াশরুম। যাও কোন সমস্যা নেই।
~ ধন্যবাদ।
জান্নাত বেড ছেড়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াতেই সাথে সাথে ওর মাথা ঘুরানি দেয়৷ ও নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে আবির খপ করে ওকে ওর বাহুডোরে ধরে ফেলে। জান্নাত এখন সম্পূর্ণ আবিরের সাথে মিশে আছে। আবির চিন্তিত স্বরে দ্রুত বলে উঠে,
– একি! কি হলো? পড়ে যাচ্ছিলে কেন?
~ হঠাৎ মাথাটা ঘুরানি দিলি। (খুব লজ্জা পেয়ে)
– কি বলো! বেশি ঘুরাচ্ছে মাথা?
~ না একটু৷
– তুমি একা বোধহয় যেতে পারবে না। আমি দিয়ে আসি।
~ আরে না না পারবো। (লজ্জায় অবস্থা খারাপ)
– আহ! বললাম তো পারবে না৷ আসো।
আবির জান্নাতের আর কোন কথা না শুনে ওকে সম্পূর্ণ কোলে তুলে নেয়৷ জান্নাত মুহূর্তেই ভীষণ অবাক হয়ে যায়৷ ও মনে মনে ভাবে, হায়! হায়! এ কি হচ্ছে? উনি কি এখন আমাকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকবে নাকি! জান্নাতের পুরো মুখ লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গিয়েছে। ও কিছু বলতেও পারছে না৷ আবিরের শরীর থেকে আসা অদ্ভুত একটা মনমাতানো ঘ্রাণ আর উষ্ণতা জান্নাতকে কেমন জানি স্তব্ধ করে দিয়েছে। এর আগে কখনো এমন এক্সপেরিয়েন্স হয় নি ওর। জান্নাত যখন এসব ভাবছিল তখন আবির ওকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের সামনে এনে নামিয়ে দেয়৷ জান্নাত হাপ ছেড়ে বাঁচে। ও তো চিন্তায় ছিল আবির আবার ওকে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমেই না ঢুকে পড়ে! আবির ওকে খুব সাবধানে নামিয়ে দিয়ে বলে,
– কিছু মনে করো না৷ একটা রিকোয়েস্ট করি৷ তুমি তো অসুস্থ তাই ওয়াশরুমের দরজাটা লাগিও না৷ আমি প্রমিজ করছি কোন ইমার্জেন্সি ছাড়া আমি এখানে আসবো না৷ কিন্তু তুমি দরজাটা দিও না৷ নাহলে ভিতরে তোমার কিছু হলে আমি বাইরে থেকে কিছুই করতে পারবো না। এগুলো সব বুলেট, বোমা প্রুফ দরজা। সো বুঝতেই পারছো।
আবিরের আকুতি মাখানো কথা, কেয়ার আর সুন্দর মুখখানা দেখে জান্নাত যেন মুহূর্তেই মুগ্ধ হয়ে যায়৷ ও আস্তে করে বলে,
~ আপনার উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। ভয় নেই আমি দরজা দিব না৷ আপনি সত্যিই খুব ভালো মানুষ। তাই তো আপনাকে সবাই এত পছন্দ করে।
– থ্যাঙ্কিউ। (হাসি দিয়ে)
বলেই আবির সোজা বারান্দায় চলে যায়৷ যাতে জান্নাত আনইজি ফিল না করে। আবির চলে গেলে জান্নাত ওয়াশরুমে যায়। সবার আগে নিজেকে বিশাল বড়ো আয়নায় একবার দেখে৷ কপালে ব্যান্ডেজ, পরনে জানোয়ারের দেওয়া সেই ড্রেসটা। এটা দেখেই জান্নাতের খুব কান্না পায়৷ ওর মন চাচ্ছে এই ড্রেসটা খুলে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলুক। কিন্তু ওর তো আর কোন জামা কাপড় নেই। সব ওর বাসায়৷ জান্নাত কি আর করবে এটা পরেই থাকে। খুব সাবধানে চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে আসে। এসে দেখে আবির এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে৷ জান্নাত এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা তোয়ালে দেখে। কিন্তু সেটা তো আবিরের৷ ও ধরতে পারবে না এটা। তাই ও আস্তে আস্তে হেঁটে বারান্দার দরজার কাছে গিয়ে বলে,
~ এই যে একটু শুনুন…
আবির এক সেকেন্ডের ভিতর পিছনে ঘুরে দেখে জান্নাত দাঁড়ানো। ও দ্রুত ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে। আবিরকে এত অস্থির দেখে জান্নাত শুধু লজ্জায় পাচ্ছে। আবির ওকে বলে উঠে,
– কোন সমস্যা? তুমি একা একা এখানে আসতে গেলে কেন? আমাকে ডাক দিতে?
~ না না ঠিক আছি৷ একটা কথা ছিল।
– হ্যাঁ হ্যাঁ বলো।
~ জি একটা তোয়ালে দেওয়া যাবে? মুখটা একটু মুছতাম।
আবির তাকিয়ে দেখে জান্নাতের মুখটা ভিজে আছে। ও দ্রুত ওর আলমারি থেকে একটা নতুন তোয়ালে বের করে জান্নাতের হাতে দেয় আর বলে,
– আমি আসলেই অনেক কেয়ারলেস। সরি। আমার এটা আগেই ভাবা উচিৎ ছিল। আজ থেকে এটা তোমার।
~ আরে প্লিজ সরি বলবেন না৷ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে আমার জন্য আপনাকে। আমিও অনেক সরি।
আবির জান্নাতকে ধরে ওর বেডের কাছে এনে দিতে দিতে বলতে থাকে,
– কপাল ফেটে মনে হয় তোমার মাথাটাও গেছে। তাই খালি উলটা পালটা বলছো৷ তোমার মাথায়…
আবির কথা শেষ করার আগেই কে যেন দরজায় নক দেয়। ও জান্নাতকে রেখে মনিটরে দেখে ওর লোক। সাথে একটা ব্যাগও। আবির দরজা খুলতেই ওর লোকটা বলে উঠে,
– স্যার আপনি যা চেয়েছিলেন নিয়ে এসেছি।
– গুড তুমি যাও।
– ওকে স্যার৷
আবির ব্যাগটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জান্নাতের কাছে এসে ব্যাগটা রেখে ও বলে,
– তুমি এবার খুব খুশি হবে৷
~ কেন?
– এই ব্যাগের মধ্যে কি আছো জানো?
~ কি?
– একটা মানুষের কাটা মাথা।
~ কি!
– আরে ভয় পেয়েও না। মজা করলাম। তোমার ওই বাসায় যত ড্রেস ছিল সব নিয়ে এসেছি। আপাতত এগুলো পরো পরে সুস্থ হলে নতুন কিনে দিব।
আবিরের কথা শুনে জান্নাত যেন খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়। ও অসুস্থ শরীর নিয়ে দ্রুত ব্যাগটা খুলে দেখে, হ্যাঁ সত্যিই ওর জামা কাপড়। জান্নাত অসম্ভব খুশি হয়ে বলে,
~ অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যে কি উপকার করেছেন বলার বাইরে৷ আমি আমার পরনের ড্রেসটা আর পরতে চাই না৷ পারলে আগুনে জ্বালিয়ে দি এটা৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আবির হাসে জান্নাতকে এত খুশি দেখে৷ মেয়েটা বড্ড মায়াবী আর মিষ্টি। জান্নাত একটা ড্রেস নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়৷ হৃদয় এর দেওয়া এই ড্রেসটাকে ও ঘৃণা করে৷ আর এক মুহূর্ত ও এই ড্রেসটা পরতে চায় না। জান্নাত ৫ মিনিট পর বের হয়ে আসে, একটা আকাশি কালারের স্যালোয়ার পরেছে। ওকে এতটা সুন্দরী লাগছিল যে আবির রীতিমতো হা করে তাকিয়ে ছিল৷ তার উপর জান্নাত ওর ঘনকালো চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছিল। আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। জান্নাত সেটা বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জা পায়৷ ও হৃদয় এর ড্রেসটা আবিরের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,
~ একটা রিকোয়েস্ট করলে রাখবেন?
– রাখবো।
~ এটা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েন৷
– ঠিক আছে।
~ জিজ্ঞেস করবেন না কেন?
– আমি সব জানি৷ হৃদয় নামে ছেলেটা তোমার সাথে কি কি করেছে সবই আমি জানি৷
আবিরের কথা শুনে জান্নাতের মুখখানা মুহূর্তেই মলিন হয়ে যায়। আবির বুঝতে পারে জান্নাতের খুব খারাপ লাগছে। তাই ও জান্নাতকে বলে,
– সবার জীবনে এমন একটা বড়ো ঢেউ আসে। কখনো কাউকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আবার কখনো কেউ বেঁচে যায়৷ তুমি বেঁচে গিয়েছো জান্নাত৷ আর মন খারাপ করো না। আমার এখানে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না৷
~ জানেন, সেদিন ওই ভাইটা না আসলে আমি হয়তো আর দুনিয়ার আলোই দেখতে পারতাম না৷
– নেহালের কথা বলছো?
~ আপনি চিনেন তাকে? (অবাক হয়ে)
– হুম। আমার ভাইয়ের মতো ও।
~ সত্যি?
– হ্যাঁ।
~ আপনারা আসলেই অনেক ভালো। কিন্তু উনি ওখানে আমাকেই বাঁচাতে গেলেন কিভাবে?
আবির চিন্তায় পড়ে যায়। জান্নাতকে কোন ভাবে জানতে দেওয়া যাবে না ওদের আসল পরিচয়। আবির একটু ভেবে বলে,
– আরে ও তো পুলিশ। ওখানে অভিজানে গিয়েছিল।
~ ওওও। আচ্ছা হৃদয় এর কি হয়েছে? আপনি জানেন?
– ও আর ওর বন্ধু এই দুনিয়াতে আর নেই। নেহালের হাতে গুলি খেয়ে মারা গিয়েছে।
~ কি! কি বলছেন এগুলা?( খুব ভয় পেয়ে)
– হ্যাঁ। ও আর ওর বাবা মিলে বাইরের দেশে মেয়েদের পাচার করে, ড্রাগস সাপ্লাই করে৷ ওদের ধরতেই নেহাল কাজ করছে৷
~ আপনি এসব কি বলছেন? ওরা এত খারাপ?
– হুম। তোমাকেও সেদিন পাচার করে দিত ওরা, যদি নেহাল না বাঁচাতো।
জান্নাত এবার কেঁদেই দেয় আবিরের কথা শুনে৷ আবির ওর কান্না দেখে কষ্ট পায়। তাই দ্রুত ওর কাছে গিয়ে বলে,
– প্লিজ কান্না করো না৷ ওরা ওদের সব পাপের শাস্তি পাবে। তুমি প্লিজ শান্ত হও?
~ কতটা বিশ্বাস করে ছিলাম ওই জানোয়ারটাকে। কিন্তু সুন্দর মানুষের আড়ালে ভিতরটা যে এত জঘন্য তা বুঝতেই পারি নি। জানেন আমার মনে হয়েছিল আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি। ও আমাকে পাওয়ার জন্য এত নিচে নেমেছে যে আমার কাছে ভাষা নেই তা বলার। ও আমার মন নিয়ে খেলেছে। জীবনে প্রথম কাউকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু….আমি ওকে ঘৃণা করি খুব খুব বেশি ঘৃণা করি।
জান্নাত খুব কষ্ট পাচ্ছিলো। আবিরের কপালের রগগুলো রাগে কষ্টে খাড়া হয়ে যায়। হাত দুটো মুঠ করে আছে ও। ওর এখন মন চাচ্ছে ওর পিস্তলটা বের করে আরমান খানের বুকটা ঝাঝরা করে দিতে। কেন ওর ছেলেকে এরকম বানালো ও? কেন? আবির জান্নাতকে এভাবে আর কাঁদতে দেখতে পারে না৷ ওর একদম কাছে গিয়ে কোন কিছু না ভেবে ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। জান্নাতও আবিরকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে অঝোরে কান্না করতে থাকে৷ খুব কান্না পাচ্ছিল ওর। এত কিছু হলো ঠিক মতো একটু কাঁদতেও পারে নি ও। আবির ওর মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অনেক কিছু ভাবছে মনে মনে। তবে একটা বিষয় ওকে খুব ভাবাচ্ছে৷ ও যখনই জান্নাতের কাছে আসে ওকে স্পর্শ করে, ওর মধ্যে কেমন জানি একটা ভালো লাগা কেমন জানি একটা অদ্ভুত শান্তি ও অনুভব করে। এর কারণ কি? ওরা দুজনই একা তাই? মাইশার কাছ থেকে কখনো ও এরকম অনুভূতি পায় নি। নাকি জান্নাত সৎ তাই? আবির বুঝতে পারছে না৷ জান্নাত অনেকক্ষণ কাঁদার পর ওর হুশ হয় ও এখন কোথায় এবং কার কাছে আছে। ও অসম্ভব মানে অসম্ভব লেভেলের লজ্জা পায়। সাথে সাথে আবিরকে ছেড়ে দূরে সরে অন্যদিকে ফিরে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলতে থাকে,
~ আল্লাহ এ আমি কি করেছি। সরি সরি। প্লিজ আমাকে খারাপ ভাববেন না৷ আমি এ ধরনের মেয়ে না৷ আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি। সরিইইইই।
আবির পিছনে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে বলে,
– জড়িয়ে তো ধরলাম আমি। সরি তো আমার বলা উচিৎ তুমি কেন বলছো?
~ আমাকে শান্ত করতেই তো…
– আচ্ছা বাদ দেও৷ চলো নাস্তা খাবে৷
~ না মানে…আমাকে একটু সময় দিন। আমি…
– আচ্ছা বুঝেছি। আমি নিচে আছি। তুমি চলে এসো।
~ আচ্ছা।
আবির ওর রুমের বাইরে এসে নিজের হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে,
– জান্নাতও তাহলে ওর মতো ধোকা খেয়েছে। মেয়েটা একদম একা আর অসহায় ঠিক ওর মতো। তাহলে কি করা উচিৎ? আরমান খান তো শেষ হয়ে যাবে। সে সাথে জান্নাতের জীবনের ঝুঁকিও শেষ। তাহলে ওকে কি করবে? আবির গভীর ভাবনায় পড়ে যায়৷ কিন্তু মন মতো একটা উত্তর খুঁজে পায় না৷ তার উপর জান্নাত যদি ওর কাছে থাকে তাহলে ও যে কিং সেটা যদি ও জানে তাহলে কি হবে? জান্নাতের সবচেয়ে জীবন ঝুঁকি ওর কাছে। আবিরের মাথা যেন কাজ করছে না আর। ও আর না ভেবে নিচে চলে আসে। জান্নাতও কিছুক্ষণ পর চলে আসে। ও নিচে আসতেই রিয়াদও চলে আসে। এসে জান্নাতের ড্রেসিং করে মেডিসিন দিয়ে চলে যায়। তারপর ওরা একসাথে নাস্তা করে।
এদিকে,
নেহাল আর নিলয় মিলে মাস্টার প্ল্যান করে। প্রথমে ওরা ঠিক করে একে একে আরমান খানের সব সিক্রেট বেইস মানে যেখানে ড্রাগস বানানো হয় আর ওর লোকজন থাকে সেসব জায়গাগুলো টাইম বোম লাগিয়ে উড়িয়ে দিবে৷ তারপর সোজা আরমানকে অ্যাটাক করবে৷ প্ল্যান অনুযায়ী ওদের স্পাইরা আরমান খানের সব সিক্রেট বেইসে বোমা লাগিয়ে দিয়ে আসে। দুপুর দুইটায় পুরো ঢাকা শহর কেঁপে উঠে। নিমিষেই আরমান খানের সব শেষ। তারপর নেহাল আর নিলয় মিলে পুরো ব্ল্যাক স্যাডো গ্যাং নিয়ে অ্যাটাক করে আরমান খানের কাছে। প্রচুর গোলাগুলির পর আরমান খান মারা যায়। সেটাও নেহালের হাতে। আবির জান্নাতকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছিল৷ ঠিক তখনই ওর ফোনে নিলয়ের ম্যাসেজ আসে। যে আরমানের পুরো গ্যাং শেষ। আবির হাসি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। জান্নাত আবিরকে দেখে বলে,
~ হাসছেন যে?
– হৃদয় এর বাবা মানে আরমান খান শেষ। তোমার আর কোন ভয় নেই। এখন আর তোমার পিছনে কোন গুন্ডা আসবে না৷
~ আপনি এত ইজি ভাবে এগুলো কিভাবে বলেন? আপনার ভয় করে না?
আবির ভেবে দেখে, আসলেই তো। ওর ভয় পাওয়া উচিৎ। এবার ও অভিনয় শুরু করে৷ ও বলে,
– আরে আমি বেশি ভয় পেলে হাসি। আসলে ভিতরে ভিতরে অনেক ভয় পাচ্ছি আমি। দেখো আমার হাত কাঁপছে।
জান্নাত আবিরকে দেখে চিন্তিত স্বরে বলে,
~ আচ্ছা আর ভয় পেয়েন না। আল্লাহ ভরসা।
– ঠিক আছে। তুমিও পেয়ো না। এবার মন দিয়ে খাও৷
~ জি।
আবির মনে মনে হাসছে৷ যে নিজের হাতে কত খারাপ মানুষকে মেরেছে তার হিসাব নাই আর সে পাবে ভয়! হাহা। জান্নাতকে অনেক ইনোসেন্ট লাগছে। আবির খেতে খেতে জান্নাতের দিকে তাকাচ্ছে। ওর পাশেই বসা। জান্নাত মন দিয়ে খাবার খাচ্ছে। মনে হয় অনেক দিন পর মেয়েটা ভালো মন্দ খাচ্ছে। কোথায় পাবে ভালো খাবার! ওর তো আবিরের মতো কেউ নেই। অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। আবির ভাবছে এই মেয়েকে সরিয়ে দিলে ও কি করবে? এদিকে জান্নাত খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছিল। এত এত মজার মজার খাবার ও জীবনেও খায় নি। ও খেতে খেতে হঠাৎ আবিরের দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখে আবির ওর দিকে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা নিয়ে ভাবছে এরকম লাগছে। জান্নাতের কেমন অস্বস্তি লাগছে। ও আস্তে করে বলে উঠে,
~ কি হলো আপনি খাবার খান না কেন?
জান্নাতের কথায় আবির ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে। আর বলে হ্যাঁ হ্যাঁ খাচ্ছি আমি। এরপর ওদের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আবির হল রুমে এসে বসে। নিলয়ও চলে এসেছে৷ এসে জান্নাতের সাথে পরিচয় হয়েছে৷ জান্নাত এখন একদম ভালো আছে। ওর খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ও ভাবে, এখন কি করবে? করার তো কিছু নাই। হঠাৎ ওর মাথায় আসে, ও ওখানে কি করছে? ওর বাসাতো এটা না৷ আর এখন তো বিপদও নেই। তাহলে ওর এখানে এভাবে আবিরের মাথার উপর থাকাটা একদম ঠিক হচ্ছে না। ওর নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। এমনিতেই আবিরকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে ও। নাহ! ও আর এখানে থাকবে না৷ এখনি ওর বাসায় চলে যাবে। এসব ভেবে ও সোজা আবিরের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। আবির ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে জান্নাত কিছু বলবে৷ তাই ও জিজ্ঞেস করে,
– কিছু বলবে? নাকি কোন কিছু লাগবে? বলো সমস্যা নেই।
~ আমি বাসায় যাবো। আপনি অনেক কিছু করেছেন আমার জন্য। আর না প্লিজ। আমি এখন ভালো আছি। আর যারা আমাকে মারতে চেয়েছিল তারাও ত নেই তাই না৷ তাহলে আমি আমার আগের জীবনে ফিরে যেতে পারবো। আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসুন প্লিজ।
আবির যেন পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ও কোন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সত্যি বলতে আবির চায় না জান্নাত যাক। কিন্তু জান্নাতের কথায়ও যুক্তি আছে৷ এখন আর ও এখানে কেন থাকবে! কোন অধিকারে থাকবে? একটা সিঙ্গেল মেয়ে এভাবে একটা সিঙ্গেল ছেলের বাসায় কেন থাকবে? জান্নাতই সঠিক। আবিরের মনটা কেন জানি খুব খারাপ হয়ে যায়৷ জান্নাতের সেবা করতে, ওকে দেখতে, ওর কথা শুনতে খুব ভালোই লাগছিল। এই তো কাল রাতেই ও এসেছে৷ কিন্তু আবিরের মনে হয় জান্নাত ওর কতদিনের চেনা৷ কিন্তু জান্নাত চায় না এখানে থাকতে। আবির কখনোই ওকে জোর করতে পারবে না। তাই ও বলে,
– ঠিক আছে চলে যাও।
জান্নাত খুব খুশি হয়ে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি হঠাৎ করে পিছন থেকে…..
#love_is_like_a_Cocktail
Writer: Abir Khan
Part: 07
জান্নাত অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। এদিক দিয়ে আরমান খানের গুন্ডারা দৌড়ে আসছে ওকে মারতে৷ কিন্তু হঠাৎই সবাই দাঁড়িয়ে যায়। কারণ যে গাড়িটার সামনে জান্নাত পড়েছে সেটা আর কেউ নয় কিং এর। হঠাৎ কিং এর জি ওয়াগান গাড়ি থেকে ডেড সাইরেন বেজে উঠে। যেটা একমাত্র কিং এর গাড়ির হর্ণ। সাইরেন শুনে আশেপাশের সব মানুষ থরথর করে কাঁপতে থাকতে থাকে ভয়ে। অনেকে তো ভয়ে পালাচ্ছে। কিং এর পিছনের গাড়িগুলো থেকে ওর লোকেরা আর্মস সহ বেড়িয়ে আসে৷ এসে কিং এর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়। এবার কিং গাড়ি থেকে নামে। সেই মুখে গোল্ডেন মাস্ক আর পরনে ডার্ক কালারের ব্ল্যাক স্যুট আর প্যান্ট। কিং গাড়ি থেকে নেমে জান্নাতের দিকে একবার তাকিয়ে আরমানের লোকদের দিকে তাকায়। ব্যাস কাজ শেষ। ওরা ভয়ে অস্র ফেলে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালাতে থাকে। এবার কিং জান্নাতের কাছে যায়। ও এখনো জানে না এটা যে জান্নাত। কিং দ্রুত জান্নাতের কাছে গিয়ে ওকে ঘুরাতেই দেখে এটা জান্নাত। এবার কিং না আবির জেগে উঠে। ও ভীষণ অবাক হয় জান্নাতকে এভাবে দেখে৷ আর সাথে প্রচন্ড রাগ আর খারাপ লাগে ওকে এভাবে দেখে৷ আবির আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে জান্নাতকে কোলে তুলে ওকে নিয়ে সোজা ওর বাসায় চলে আসে। আসার পথে ওরা ওদের সিক্রেট বেইস থেকে গাড়ি পরিবর্তন করে আবিরের নরমাল গাড়িতে করে জান্নাতকে ওর বাসায় নিয়ে আসে। আসার আগে রিয়াদকে খবর দিয়ে দেয় আবির। রিয়াদ ট্রিটমেন্ট এর জন্য যা যা প্রয়োজন সেসব নিয়ে আবিরের বাসায় চলে আসে। তারপর দ্রুত জান্নাতের ট্রিটমেন্ট করে ওকে মেডিসিন দিয়ে দেয়। আবির পুরো সময়টা জুড়ে জান্নাতের কাছেই ছিল। ও ঠিক বুঝতে পারছে না, এত গুলো গুন্ডা কেন জান্নাতের মতো মেয়ের পিছনে পড়ে আছে। রিয়াদ আবিরকে জিজ্ঞেস করে,
– দোস্ত মেয়েটা কে? আর ওর এ অবস্থা হলো কিভাবে?
– হঠাৎ কোথা থেকে যেন এসে আমার গাড়ির সামনে পড়ে৷ ভাগ্য ভালো নিলয় সময় মতো ব্রেক কষেছিল। কিন্তু একটু একটু ধাক্কা লেগে পড়ে এ অবস্থা।
– ওহ! আচ্ছা চিন্তা করিস না। ভয়ের কিছু নাই। বেশি জোরে আঘাত পায় নি। মেয়েটা বোধহয় ভয়েই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
– হুম৷ ওর হুশ আসবে কখন?
– তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে আসার কথা। না আসলে আমাকে খবর দিস৷
– আচ্ছা।
– তাহলে যাই আমি।
– আচ্ছা৷
রিয়াদ যেতে গিয়েও আবার আবিরের কাছে এসে বলে,
– তুই কি মেয়েটাকে চিনিস?
– কেন!
– না মানে অপরিচিত একটা মেয়েকে তো তুই কখনো বাসায় আনিস না৷ আবার তার উপর তোর নিজের মাস্টার বেড রুমে ওকে এনেছিস। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– হুম তোর ধারণা ঠিক। আমি ওকে চিনি৷ আমার হাতে যে গুলি লেগেছিল ওই তো আমাকে সাহায্য করেছিল।
– ওওও। আচ্ছা ওর খেয়াল রাখিস। কোন সমস্যা হলে কল দিস।
– হুম।
রিয়াদ বিদায় নিয়ে চলে যায়। জান্নাত আবিরের মাস্টার বেডে শুয়ে আছে। আবির পাশের সোফাটায় হেলান দিয়ে জান্নাতের ব্যান্ডেজ করা মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, ভাগ্যের কি খেলা, যে মেয়েটা একসময় ওর জীবন বাচিঁয়েছিল আজ সেই ওর কাছে নিজের জীবন বাঁচাতে চলে আসে। আজ আবির মানে কিং না থাকলে হয়তো জান্নাতের জীবনটাই এতক্ষণে শেষ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে আবিরের মনে হয়, এ শহরে একটা কিং আসলেই থাকা উচিৎ। রাত এখন প্রায় ১১ নাগাদ বাজে । আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন সোফাতেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘড়ির কাটা ঘুরতে ঘুরতে রাত এখন তিনটা বাজে৷ হঠাৎই জান্নাত জোরে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
~ প্লিজ কেউ আমাকে বাঁচান৷ ওরা আমাকে মেরে ফেলবে৷ কেউ বাঁচান আমাকেএএএএ……
আবিরের সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায়। ও দেখে জান্নাত হুশে এসে ভয়ে আবোল তাবোল বলছে। ও মুহূর্তেই জান্নাতের কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ওকে বলে,
– শান্ত হও জান্নাত শান্ত হও। আর ভয় নেই। কেউ তোমাকে মারতে পারবে না আর। এই যে আমি আছি।
জান্নাত আবিরকে দেখে একদম চুপ হয়ে যায়। ও মলিন মুখখানা নিয়ে আবিরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আবির ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর ভয় নেই৷ তোমাকে আর কেউ কিছু করবে না।
জান্নাত এবার নিঃশব্দে অঝোরে কেঁদে দেয় আবিরের দিকে তাকিয়ে থেকে। আবির কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না৷ এরকম পরিস্থিতিতে ও আগে কখনো পড়ে নি৷ তাই অজান্তেই ও জান্নাতকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আর বলতে থাকে,
– প্লিজ এভাবে কান্না করো না৷ তুমি এমনিই অসুস্থ। শান্ত হও৷ আর ভয় নেই৷
জান্নাত অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ তারপর একটু ভেবে বলে,
~ কিন্তু আমি আপনার বাসায় আসলাম কিভাবে? আমার পিছনে তো অনেক গুলো গুন্ডা পড়েছিল।
– হুম কিন্তু তুমি আমার গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাও। কপালে একটু আঘাতও পাও। তারপর কিভাবে যেন অজ্ঞান হয়ে যাও৷ আমি দ্রুত তোমাকে আমার গাড়িতে তুলে বাসায় নিয়ে আসি গুন্ডাগুলো ধরার আগে৷
জান্নাত মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। ওর খুব ভয় করছে, খুব খারাপ লাগছে। এই অল্প সময়ে ওর জীবনে যে এত বড়ো বড়ো ঝড় আসবে ও কখনো কল্পনাও করে নি। কিন্তু শেষমেশ যে সেই আবিরের কাছেই ওর ঠাই হবে তা জান্নাত ভাবে নি। জীবনটা কত অদ্ভুত! একের পর এক সারপ্রাইজ। প্রথম হৃদয়ের ধোকা, তারপর এই গুন্ডা আর এখন এই আবির। আবির কোন কিছু না বলেই হঠাৎ ওকে ধরে শুইয়ে দেয়৷ তারপর বলে,
– বলেছি তো আর ভয় নেই৷ এখন চুপচাপ ঘুমাও। সকালে সব কথা হবে৷ অনেক প্রশ্ন আছে তোমার কাছে আমার।
– আমি সকালে আমার বাসায় যাবো। (আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল)
– সরি। সেটা আর হবে না৷ তোমাকে এখানেই থাকতে হবে৷ কারণ তুমি এখান থেকে বের হলে ওই গুন্ডা গুলো আবার নিশ্চিত অ্যাটাক করবে৷ সো আপাতত ওই বাসার কথা ভুলে যাও। আমার লোকেরা বাড়িওয়ালার সাথে গিয়ে কথা বলে আসবে৷ তুমি কোন চিন্তা করো না৷
জান্নাত স্তব্ধ হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মাথায় এখন একটাই প্রশ্ন খুব ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আর সেটা হলো,
~ আচ্ছা আপনি এত বড়ো একটা মানুষ কিন্তু আমার জন্য এতকিছু কেন করছেন? কেন আমার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিলেন?
আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– সেদিন আমি কি জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কেন আমার এত সেবা করছো?
জান্নাত ওর উত্তর পেয়ে যায়৷ আবির আবার বলে,
– এত কিছু না ভেবে চুপচাপ ঘুমাও। সকালে কথা হবে৷
~ জি৷
– ওই গুন্ডা গুলো কার লোক ছিল খবর লাগা।
– ওকে স্যার।
কল রেখে আবির আকাশের পানে তাকিয়ে দেখে বেশ সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। পুরো নিস্তব্ধ শহরটা চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে ওর সামনে। এই নিস্তব্ধ শহরটার কিং ও৷ কিন্তু ও কত একা। ওর পাশে কেউ নেই৷ এই শহরটাই ওকে একা করেছে। আবির কখনো চায় নি এরকমটা৷ আবির চেয়েছিল এসব ছেড়ে মাইশাকে ওর এই পাশে নিয়ে জ্যোৎস্না রাতটা উপভোগ করবে৷ ওকে খুব খুব ভালবাসবে৷ কিন্তু তার কিছুই হলো না। আবির ভেবেছিল ওর পোড়া হৃদয়টাকে মাইশা ভালবাসা দিয়ে আবার ভালো করে দিবে৷ কিন্তু ও তো আরো একদম শেষ করে দিল। ওর ভিতরের আগুনটা আবার জ্বালিয়ে দিয়ে গেল মাইশা। আবির শক্ত করে ওর বারান্দার রেলিংটা ধরে আছে। এ শহরের এই নিস্তব্ধতা ওর হাতেই শেষ হবে। এরপর আবির একসময় রুমে এসে সোফাতে ঘুমিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে আরমান খানের কাছে ওর গুন্ডারা গিয়ে হাপাতে হাপাতে বলে,
– স্যার এই মেয়েটারে কিং নিয়া গেছে। তার গাড়ির সাথে ধাক্কা খাইছে মেয়েটা। জানি না বাইচা আছে কিনা৷ আমরা দেখছি রাস্তা পড়াছিল।
– হায়! হায়! এহন তো আরো ঝামেলা। কিং তো ১০০% তোগো খোঁজ লাগাইবো। যদি জানে এই কাজ আমার লোকের তাইলে আমার কি হইবো? ওই ফাইটের প্রস্তুতি নে৷ কিং যে কোন সময় আইতে পারে।
– আচ্ছা স্যার৷ আই আয়৷
পরদিন সকালে,
এখন সকাল ১১ টার মতো বাজে৷ আবির আর জান্নাত ঘুম। এদিকে আবিরের বাসায় বেল পড়ে। নিলয় সিসি ক্যামেরায় দেখে নেহাল এসেছে৷ ও দ্রুত দরজা খুলে দেয়৷ নেহাল বাসার ভিতরে ঢুকে বলে,
– ভাই কই?
– স্যার তো ঘুমাচ্ছেন৷
– কি! এত সকাল পর্যন্ত? অসুস্থ নাকি?
– না না, আসলে একটা কাহানী হয়েছে গত রাতে৷
– কি কাহানী তাড়াতাড়ি খুলে বলো।
– আসলে কাল রাতে….
নিলয় নেহালকে সব খুলে বলে। ও সবটা শুনে ভ্রুকুচকে উপরে আবিরের রুমে চলে আসে। এসে নক দেয়। দুই তিনটা নক দিতেই আবিরের ঘুম ভাঙে। আবির ঘুমাতুর চোখে উঠে মনিটরে দেখে নেহাল দাঁড়িয়ে আছে। সাথে নিলয়ও আছে। আবির জান্নাতের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সব ঠিক আছে। ও আরামে ঘুমাচ্ছে। তারপর আবির দরজা খুলে দেয়। নেহাল কোন কথা না বলে সোজা জান্নাতের কাছে চলে যায়৷ আবির আর নিলয় বোকা হয়ে যায়৷। আবিরও নেহালের কাছে এসে বলে,
– কি রে কি হইছে?
– ভাই এই তো সেই মেয়েটা যাকে আমি আরমানের ছেলের কাছ থেকে বাচিঁয়েছিলাম। তার মানে আরমান খান ওকে মারতে গতকাল গুন্ডা পাঠিয়ে ছিল।
নেহালের কথা শুনে আবির জান্নাতের দিকে তাকায়। ওর মাসুম মুখখানা দেখে আরমানের উপর আবিরের প্রচন্ড রাগ উঠে যায়৷ ওর চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে আছে৷ জান্নাতের উপর দিয়ে কি পরিমাণ ঝড় গিয়েছে এখন আবির তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। ও শুধু নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় বলে উঠে,
– বুঝে গেছি স্যার৷ আমরা রেডি৷
কিন্তু নেহাল মাঝ দিয়ে বলে উঠে,
– না ভাই এবার আপনি না আমি যাবো৷ আমার বোনটার উপর এভাবে ও কিভাবে অ্যাটাক করায়! আমি ওকে শেষ করবো। আপনি বোনের সাথে থাকেন৷ ওকে আপনার প্রয়োজন।
নেহালের কথা শুনে আবির জান্নাতের দিকে তাকায়। আসলেই ঠিক বলেছে ও৷ আবির গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– নিলয় নেহালের যেন কিছু না হয়৷
– জি স্যার৷
– ভাই আপনি আমাকে নিয়া চিন্তা করছেন?
– হুম। তুই তো আমার ভাইয়ের মতো। সাবধানে কাজ করিস।
– আপনে অনেক ভালো ভাই। অনেক ভালো। কোন চিন্তা করবেন না৷ চল নিলয়, আরমান এবার শেষ। শালা অনেক জ্বালাইছে আর না। চল।
নেহাল আর নিলয় চলে যায়৷ আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর খুব খারাপ লাগছে৷ সবাই চলে গেলে জান্নাত আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। আবির চিন্তায় পড়ে যায় যে জান্নাত আবার কিছু শুনলো নাকি! আবির ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে….
#love_is_like_a_Cocktail
Writer: Abir Khan
Part: 06
পুরো ক্লাব জুড়ে শুধু হৃদয়ের বন্ধুবান্ধব। হৃদয় জান্নাতকে নিয়ে ক্লাবে ঢুকে সোজা বারের কাছে চলে যায়৷ জান্নাত এই প্রথম কোন ক্লাবে এসেছে। তাই আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে, অনেকগুলো মেয়ে ছোট ছোট ড্রেস পরে ছেলেদের সাথে গানের তালে তালে নাচানাচি করছে গায়ের সাথে গা মিশিয়ে। ওদের ড্রেস গুলো এমন যে জামা পরা আর না পরারই সমান৷ জান্নাতের এসব দেখে খুব লজ্জা করছে। ও আরও দেখে, কতগুলো ছেলে মেয়ে একসাথে বসে শিশা টানছে, মোটা মোটা সিগারেট টেনে ধোয়া ছাড়ছে। কাচের ছোট গ্লাসে মদ ঢেলে একের পর এক খেয়েই যাচ্ছে। অনেকে আবার নাক দিয়ে সাদা সাদা কি যেন টানছে৷ এ দৃশ্য দেখে জান্নাতের গা ঘিনঘিন করে উঠে। তাই ও অন্যদিকে নজর দিতেই জান্নাতের চোখ ছানাবড়া প্রায়৷ ও দেখে একটা ছেলে আর মেয়ে যা করছে তা পাবলিক প্লেসে কেউ করে না৷ জান্নাত লজ্জায় আর তাকাতে পারে না৷ ও চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে আস্তে করে পাশে বসা হৃদয়কে বলে,
~ তুমি আমাকে এ কোথায় নিয়ে আসলে? আমি বাসায় যাবো হৃদয়। প্লিজ আমাকে যেতে দেও৷
হৃদয় জান্নাতের কথা শুনে হাসতে হাসতে ওর কাঁধে হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলে,
– আরে চিল বেবি। ইটস নরমাল। জাস্ট ইঞ্জয় ইউর সেল্ফ।
জান্নাত একটু নড়েচড়ে বসে। হৃদয় হাত সরিয়ে ফেলে৷ জান্নাত এখন মাথা নিচু করে আছে। ওর খুব খারাপ লাগছে। ও কল্পনাও করে নি হৃদয় ওকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসবে৷ জান্নাত যদি আগে জানতো নাইট ক্লাবগুলো এমন হয় তাহলে ও জীবনেও আসতো না৷ হৃদয় আবার বলে উঠে,
– আরে এমন করে বসে আছো কেন? চলো আমরাও একটু নাচানাচি করি৷ ইঞ্জয়৷
ও কথা গুলো জান্নাতের শরীরের কাছে এসে মিশে বলল। জান্নাতের কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে৷ ও এবার বলে উঠে,
~ হৃদয় প্লিজ আমি বাসায় যাবো। আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না৷
হৃদয় মিটমিট করে হাসছে। ও ওর বন্ধুদের ইশারা দেয়৷ ওরা সাথে সাথে জান্নাতের কাছে চলে আসে। আর এসে বলে,
– হেইই জান্নাত, ওয়াও! ইউ লুক ড্যামন কিউট।(রনি)
– আসলেই পুরাই জোস লাগছে তোমাকে। (শুভ)
– বান্ধবীটা কার দেখতে হবে না। হাহা। (হৃদয়)
– ব্যাটা শুধু তোর নাকি আমাদেরও। সবাই একসাথে মিলে হাহা। (জাবেদ)
জান্নাতের কাছে হৃদয়ের বন্ধুদের কথাগুলো কেমন জানি খারাপ লাগে। হৃদয় এই ফাঁকে বার টেন্ডারকে ইশারা করে আর সাথে সাথে সে জান্নাতের জন্য একটা ফ্রুটস জুস বানায়৷ আর সেটার ভিতর স্ট্রোং ড্রাগস মিশিয়ে দেয়৷ আগের প্ল্যানে ওর বন্ধুর মেশানোর কথা ছিল। কিন্তু যদি জান্নাত দেখে ফেলে তাই হৃদয় বার টেন্ডার টাকা খাইয়ে নতুন প্ল্যান করে। যাতে জান্নাতের কোন হুস না থাকে। বার টেন্ডার জুসটা হৃদয়ের দিকে এগিয়ে দেয়৷ হৃদয় জুসটা নিয়ে জান্নাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– নেও এটা খাও৷ তাহলে তোমার ভালো লাগবে৷ এটা এখানের সবচেয়ে বেস্ট ননএলকাহলিক জুস৷ খাও খাও৷
– হ্যাঁ হ্যাঁ জান্নাত খাও৷ অনেক মজা।
জান্নাতের গলা অনেক শুকিয়ে যাচ্ছিল। জুসটা ম্যাংগো জুসের মতো দেখতে হওয়ায় ও চুপচাপ খেয়ে ফেলে। খেয়ে অনেক ভালো লাগে ওর। কিন্তু খাওয়ার ৩০ সেকেন্ড পরই জান্নাত চোখের সামনে সব কিছু কেমন ঝাপসা দেখতে শুরু করে৷ ওর মাথা খুব ঘুরাচ্ছে৷ হঠাৎই ও ওর কানে শুনতে পায় হৃদয় বলছে,
– নে এবার মালটাকে ধর আর অপেক্ষা করতে পারছি না৷ শালিকে কতদিন বসে পটিয়েছি। আজকে ওরে সারারাত ধরে উপভোগ করমু আমরা। হাহা।
হৃদয়ের বন্ধুরা ওর কথার সাথে তাল মিলিয়ে হাসাহাসি করছে৷ জান্নাতের চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে৷ ওর বোঝা শেষ আজ আর ওর রক্ষা নেই৷ কতগুলো জানোয়ার ওকে আজ চিড়ে চিড়ে খাবে৷ ওকে ধর্ষণ করবে৷ জান্নাতের পুরো শরীর যেন অসর হয়ে গিয়েছে। বিন্দু পরিণাম শক্তি পাচ্ছে না৷ যদি পেতো তাহলে সবটুকু শক্তি জুগিয়ে ও এখান থেকে পালাতো। কিন্তু খুব দেরি হয়ে গিয়েছে। আর কোন রাস্তা বাকি নেই। ও একটা ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছিল, একটা ভুল মানুষকে ভালবেসেছিল। সব শেষ। জান্নাতের আর কোন উপায় নেই বাঁচার। ওর চোখ দুটো আস্তে আস্তে নিভে আসছে। কিন্তু ও অজ্ঞান হচ্ছে না৷ অজ্ঞান হলে ভালোই হয়। কারণ নিজের সুন্দর পবিত্র শরীরটা এই জানোয়ার গুলো গিলে খাবে সে দৃশ্য ও দেখতে চায় না৷ জান্নাত আস্তে আস্তে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। ও এখন জিন্দা লাশ। হৃদয় এবার বলে উঠে,
– নে ধর, এবার আমরা আমাদের কাজ শুরু করি৷
– ওকে দোস্ত৷
রনি, হৃদয় আর শুভ মিলে জান্নাতকে ধরে ক্লাবের ভিতরে ওদের জন্য বানানো স্পেশাল রুমটায় ওকে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না৷ যে যার মতো ইঞ্জয় করছিল। জান্নাতকে নিয়ে সেই রুমে ঢুকে ওকে ঠাস করে বিছানার উপর ফেলে দেয় ওরা। জান্নাত দেখতে খুব আকর্ষণীয় ছিল। ওরা ধীরে ধীরে হিংস্র পশু হয়ে যাচ্ছিল। জান্নাতের চোখ বেয়ে শুধু অশ্রু ঝরছে৷ বড়ো ভুল করে ফেলেছে। এই ভুলের মাশুলই বোধহয় ও এখন দিবে৷ হৃদয় বলে উঠে,
– তোরা বাইরের রুমে গিয়ে অপেক্ষা কর। আমার শেষ হলে তোরা আসবি।
– ঠিক আছে। একটু তাড়াতাড়ি করিস৷
– সে দেখা যাবে৷ তোরা যা তো।
হৃদয়ের বাকি বন্ধুরা বাইরের রুমে বসে অপেক্ষা করছে৷ এবার হৃদয় আর জান্নাত একটা আলাদা রুমে। হৃদয় যেন আর লোভ সামলাতে পারছে না৷ ও লোভাতুর চোখে জান্নাতের পুরো শরীরটাকে দেখছে। ও আস্তে আস্তে নিজের জামা কাপড় খুলতে শুরু করে। এদিকে রনি, শুভ আর জাবেদ মদ খাচ্ছিল। হঠাৎই মেইন ডোরে কে যেন নক করে। রনি স্বাভাবিক ভাবেই দরজা খুলে। আর সাথে সাথেই তিন/চারটা ছেলে ভিতরে ঢুকে ওদের দিকে বন্দুক তাক করে৷ তারপর পিছন থেকে কালো স্যুট পরা একটা ছেলে এসে বলে,
– মেয়েটা কই?
– ভি…ভিতরে…
ছেলেটা ওর লোকদের ইশারা দিতেই নিমিষেই রনি,শুভ আর জাবেদকে গুলি করে মেরে ফেলে। ছেলেটা ভিতরে বেড রুমের সামনে গিয়ে জোরে একটা লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে, হৃদয় পুরো উলঙ্গ হয়ে জান্নাতের ড্রেস খুলার চেষ্টা করছে। বাট এখনো পারে নি। তার আগেই এই অপরিচিত ছেলেটা রুমের মধ্যে চলে আসে। ছেলেটার সাথে ওর লোকেরাও ভিতরে চলে আসে। হৃদয়কে এরকম অবস্থায় দেখে ছেলেটা ওর লোকদের নিয়ে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে বলে,
জান্নাত ওর কানে শুনতে পায় জোরে ঠাস ঠাস করে অনেকগুলো গুলির শব্দ। ব্যাস হৃদয়ও মুহূর্তেই শেষ। রক্তে বিছানা ভেসে যাচ্ছিলো৷ ছেলেটা দ্রুত জান্নাতের কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়৷ জান্নাত আস্তে করে ছেলেটার দিয়ে তাকায়৷ আবছা আবছা করে ছেলেটাকে দেখে। কেমন পরিচিত পরিচিত মনে হয়৷ ছেলেটা জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর কোন চিন্তা নেই। আপনাকে আর কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷
কথাটা শুনেই জান্নাত অজ্ঞান হয়ে যায়৷ এরপর কি হয়েছে ওর আর কিচ্ছু মনে নেই৷
পরদিন সকালে,
জান্নাত আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। মাথাটা খুব ভার হয়ে আছে৷ ও আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর সাথে সাথে ওর সব মনে যায়৷ জান্নাত শোয়া থেকে একলাফে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ও একটা হাসপাতালের কেবিনে। নার্স ওকে উঠতে দেখে ওর কাছে এসে বলে,
হঠাৎই একটা কালো স্যুট পরা বেশ হ্যান্ডসাম আর গুড লুকিং বয় কেবিনে ঢুকে জান্নাতের কাছে এসে বলে,
– আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ আপনি একদম ঠিক আছেন। আর হ্যাঁ ওই ছেলেগুলো আপনার সাথে কোন খারাপ কিছু করতে পারে নি। তার আগেই আমরা চলে গিয়েছিলাম।
জান্নাত ছেলেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকাতেই ওর মনে পড়ে, হ্যাঁ এই সেই ছেলেটাই যে ওকে বাঁচিয়েছিল। জান্নাত আবার কান্না করে দেয়৷ ছেলেটা দ্রুত কণ্ঠে বলে উঠে,
– আহ! প্লিজ কাঁদবেন না৷ আপনি এখন সম্পূর্ণ সেইফ৷ আর কোন ভয় নেই।
~ স্যার ওনার শুয়ে থাকলে ভালো হয়৷ ম্যাম আপনি শুয়ে থাকুন৷
জান্নাত আস্তে আস্তে শুয়ে পড়লে ও কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,
~ আমি অসুস্থ হলাম কেন?
– আসলে ওরা আপনাকে অনেক স্ট্রোং একটা ড্রাগস দিয়েছে। যেটার জন্য আপনি অন্তত ৩/৪ দিন বেহুশ থাকতেন৷ তবে এখন আর ভয় নেই, আমার পার্সোনাল ডাক্তার সে ড্রাগস আপনার শরীর থেকে বের করে ফেলছে। তবে যতটুকু আছে তার জন্য আপনি অনেকটা দুর্বল৷ তাই আপনি এখন শুয়ে থাকুন। এটাই বেটার হবে৷
জান্নাত আস্তে করে বলে,
~ আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব আমার কাছে কোন ভাষা নেই৷ আপনি একটা মেয়ের জীবন বাচিঁয়েছে।
– আরে ধন্যবাদ দিতে হবে না৷ আপনি রেস্ট নিন৷
~ জি। আচ্ছা শুনুন আপনার নাম কি?
– আমি, নেহাল। মানে নেহাল চৌধুরী। ভালো থাকবেন৷ আবার কখনো হয়তো দেখা হবে৷ আসি৷
বলেই নেহাল চোখে কালো সানগ্লাস পরে চলে যায়৷ জান্নাত চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বেডে শুয়ে থাকে। কখন যেন ও ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে হৃদয়ের বাবা ছেলের কবরের সামনে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
– আমার ছেলেকে এভাবে কে মেরেছে? কেন মেরেছে আমি তা জানতে চাই।
– স্যার জান্নাত নামে একটা মেয়েরে নিয়া ছোট স্যার ক্লাবে গেসিলো আর তারপরই এই অবস্থা।
– ওই মাইয়ার কল্লাটা আমার পায়ের সামনে এনে ফেলবি। আমি আর কিছু জানি না।
– ঠিক আছে স্যার৷ ওই চল।
হৃদয়ের বাবা হলো, দেশ এবং বিদেশের সবচেয়ে বড়ো ড্রাগ ডিলার। তার নাম হলো, আরমান খান৷ তার ছেলেকে এভাবে মর্মান্তিক ভাবে হারিয়ে তিনি খুব ক্ষেপে আছেন৷ অলরেডি জান্নাতকে মারার জন্য তার লোক লাগিয়ে দিয়েছেন। জান্নাত আগের বার বাঁচলেও এবার কিভাবে বাঁচবে সেটাই এখন বড়ো প্রশ্ন!
এদিকে আবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎই নিলয় এসে বলে,
– স্যার কে যেন আরমান খানের ছেলেকে আর বন্ধুকে খুব খারাপ ভাবে গুলি করে মেরেছে।
– নেহাল মেরেছে।
– ওহ! কিন্তু নেহাল স্যার কেন মারলো? মারার কথা তো আমাদের ছিল।
– আরে আরমানের সাথে নাকি ওর কি নিয়া জানি লাগছে৷ তাই ওর ছেলের উপর কদিন যাবৎ ও নজর রাখছিল। আমিই বুদ্ধি দিয়েছিলাম ওকে। কালকে নাকি সুযোগ পেয়ে মেরে দিছে। ওর ছেলে নাকি কোন মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করতে যাচ্ছিল আর এই সুযোগে ও মেরে দিছে৷
– ওহ! ভালোই হয়েছে তাইলে। এবার আরমান খানকে খুব সহজে শেষ করা যাবে।
– হুম। একটাকেও ছাড়া যাবে না নিলয়৷
নেহাল হলো আবিরের খুব ভালো বন্ধু। ও যে কিং সেটা নেহাল জানে৷ নেহাল মেইনলি আগে মাফিয়া ছিল। কিন্তু ও কিং এর কাছে মানে আবিরের কাছে আত্নসমর্পণ করে। আবিরের বিষয়টা ভালো লাগলে ও নেহালের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলে। এবং ওকে নিজের চেহারা দেখায়। আর ওকে বলে আজ থেকে তুই আমার ভাইয়ের মতো। এখন নেহাল আর্মস এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর বিজনেস করে আবিরের পারমিশন নিয়েই৷ মাঝে মাঝে ওরা একসাথে বসে আড্ডা দেয়। নেহাল আরমান খানের উপর চেতা ছিল কারণ তার জন্য ওর ৫ কোটি টাকার আর্মস পুলিশ ধরে ফেলে। এরপরই নেহালের মাথা গরম হয়ে যায়৷ ও আবিরকে সব জানায়৷ তারপর আবির ওকে বুদ্ধি দেয় যে, আরমানের ছেলেকে কিডনাপ করে টাকা নিয়া নিতে। কিন্তু নেহাল বলে, না ওর ছেলেকেই ও মেরে ফেলবে৷ আবির আর কিছু বলে নি। কারণ এমনিতেই আরমান খানকে মরতে হবে৷ তার ছেলে বেঁচে থাকলেও সমস্যা। তাই আবিরের পারমিশনেই হৃদয়কে মারা হয়৷ আবির জানে না ও অজান্তেই জান্নাতকে বাচিঁয়ে দিয়েছে৷
এখন রাত ৯ টা বাজে৷ জান্নাতকে ডিসচার্জ করে দিয়েছে৷ ও এখন বাসায় যাবে৷ সারাদিন স্যালাইন দেওয়াতে শরীরটা বেশ সতেজ লাগছি। ও সেই রাতের পার্টি ড্রেসেই আছে এখনো৷ ওর হাতে যে ব্যাগটা ছিল সেটা নেহালের লোকেরা ওকে দিয়ে গেছে৷ যাতে ইনভেস্টিগেশন করতে এসে ও না ধরা খায়। তাই ব্যাগের মধ্যে যা টাকা ছিল সেটা দিয়েই ও এখন বাসায় যাবে৷ কিন্তু আসলেই কি পারবে ও? জান্নাত রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল হাসপাতালের সামনে৷ কিন্তু হঠাৎই অনেক গুলা গুন্ডা রাস্তা ওপার থেকে ওকে ধাওয়া করে। জান্নাত এই দৃশ্য দেখে ভয়ে জীবন বাঁচাতে জোরে দৌড় দেয়। গুন্ডা গুলো রাস্তার এপাড়ে এসে জান্নাতের পিছু নেয়৷ জান্নাত আগে দৌড় দেওয়ায় ও একটু সামনে ছিল। ও কাঁদতে কাঁদতে আর প্রচন্ড ভয়ে জোরে দৌড়াতে থাকে। এবার আর মনে হয় না জান্নাতের বাঁচা হবে বা৷ ও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যত জোরে পালানো যায়। কিন্তু ওর শ্বাস ঘন হয়ে আসছে। আর পারছে না ও৷ গুন্ডা গুলোর হাতে অনেক বড়ো বড়ো রামদা। এক কোপে ওকে দুভাগ করে ফেলবে এমন৷ জান্নাত দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় রাস্তার মাঝে এসে পড়ে আর হঠাৎই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে যায়৷ গাড়িটা সময় মতো ব্রেক কষলেও জান্নাত ধাক্কা খায়। আর সাথে সাথে রাস্তায় পড়ে মাথায় বাড়ি খেয়ে ও অজ্ঞান হয়ে যায়৷ এরপর কি হয়েছে ভাবতে থাকুন৷ জানতে হলে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষা করুন৷ সে পর্যন্ত সাথে থাকুন আবির খানের সাথে। ধন্যবাদ।
#love_is_like_a_Cocktail
Writer: Abir Khan
Part: 05
আবির আস্তে আস্তে গিয়ে যেই দরজা খুলতে যাবে ওমনি ওর কানে কেমন অদ্ভুত সব শব্দ ভেসে আসে৷ আবির জানে এসব শব্দ কেন হচ্ছে। কারণ দরজার ওপারে আদিম খেলায় ব্যস্ত কোন যুগল। ও আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ঠাস করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে যায় আর দেখে মাইশা একটা ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছে। মাইশা হঠাৎ করে আবিরকে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়৷ আর নিজেকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ছেলেটাও আবিরের দিকে ভয়ে তাকিয়ে আছে৷ কারণ আবিরের চোখ পুরো লাল টকটকে হয়ে আছে। যেন চোখে আগুন জ্বলছে। আবির আসলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যাকে এতটা বছর ধরে ভালবেসে এসেছে সে এই ভাবে ওকে ধোকা দিবে! আবির কোন দিন স্বপ্নেও ভাবে নি মাইশা এমন একটা জঘন্য কাজ করবে৷ আবির ওকে কত সম্মান করতো, কতো সাপোর্ট করতো, কতো ভালবাসতো। আবিরের চারপাশে একমাত্র মাইশাই তো ওর সব ছিল। যাকে ভালবেসে যার মাঝে আনন্দ, হাসি, ভালো লাগা সব কিছু ছিল। কিন্তু সেই মাইশা আজ ওকে শেষ করে দিল। আবির নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না৷ ও হঠাৎ হাসতে হাসতে বলে,
– অনেক চিন্তা করে ভেবেছিলাম এবার ভালো হয়ে যাবো৷ তোর সাথে নতুন করে একটা জীবন শুরু করবো৷ কিন্তু দেখ দিলি না৷ তোরা আসলে চাস না আমি ভালো হই৷ তোরা কেউ চাস না৷
আবির কথা শেষ করে ওর স্যুটের ভিতরে হাত দিয়ে একটা গোল্ডেন মাস্ক বের করে সেটা পরে নেয়৷ দেশ বিদেশ পুরো পৃথিবীর সবাই জানে এই মাস্কটা কে পরে। আবির মাস্কটা পরতেই মাইশা আর ছেলেটা অসম্ভব ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠে,
– কিং!
– ইয়েস। কিং। আমি সেই কিং যে দুনিয়ার বড়ো বড়ো মাফিয়াকে টক্কর দিয়েছে৷
আবির কথা শেষ করেই ওর পিছন থেকে একমাত্র ওর ব্যবহার করা আধুনিক ডেজার্ট ঈগল পিস্তলটা বের করে মাইশার আর ছেলেটার ঠিক কপাল বরাবর দুইটা গুলি করে৷ সাইলেন্সার লাগানো তাই কোন শব্দও হয় নি৷ মাইশা আর ওই ছেলের ডেড বডি বেডের উপর পড়ে আছে। আবির মাইশাকে এক নজর দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে৷ বাইরে এসে মাস্কটা আবার লুকিয়ে সোজা ওর গাড়ির কাছে চলে যায়। গাড়িতে উঠে নিলয়কে ফোন দেয় আবির৷ আর বলে,
– মাইশার বাসায় ঢাকার সব প্রেসদের পাঠা। বল কিং ইজ ব্যাক। আর সিসিটিভি ফুটেজটা..
– বলতে হবে না স্যার৷ সব হয়ে যাবে৷
– ওকে।
আবির ফোন রেখে গাড়ি নিয়ে সোজা ওর আন্ডারগ্রাউন্ড ফিল্ডে চলে যায়৷ যেখানে বিদেশি অনেক দামী আর্মস, বোমা, ট্যাংক আরও অনেক কিছু আছে৷ আবিরের সব লোকেরা ওখানে আছে।
দুপুর ১ টা বাজে ৩০ মিনিট,
– বস বস দ্রুত খবরটা দেখেন৷
– কেন কি হইছে?
– আগে দেখেন তো।
টিভি ছাড়তেই সব চ্যানেলে একটাই ব্রেকিং নিউজ,
– কিছুক্ষণ আগে রয়েল প্যালেস বিল্ডিং এ দুইটি লাশ পাওয়া গিয়েছে। লাশ দুটো একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে। তাদেরকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে কিং তাদেরকে মেরেছে। বিষয়টি সি আই ডি তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছে। তাহলে কি আবার কিং এর তান্ডব শুরু? জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।
– ওই কিং কি পাগল হইছে নাকি? ওয় অগোরে মারতে গেল কেন? হাহা৷
– আসলেই বস বুঝতাছি না।
– অরে মারলাম আমরা আর ও মারে কারে। তাও আবার কেমন একটা সময়। হাহা৷ অয় একটা বলদ বুঝলি। অরে এবার শেষ করমু আমি। ও একবার বাঁচছে। বাট এবার আর না৷ হাহা৷
ইয়াসের কথা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ ধাম ধাম করে চারদিকে অসংখ্য বোম ব্লাস্ট হতে থাকে। সাথে মেশিন গান এর শব্দ। ইয়াসের সাথে ছিল তারা ভয়ে এদিক ওদিক দেখতে থাকে। হঠাৎ ওদের একজন লোক দৌড়ে এসে অস্থির কণ্ঠে বলে,
– বস শেষ। কিং অ্যাটাক করছে ওর ফুল বাহিনী নিয়া। বাঁচান বস আমাদের বাঁচান৷
ইয়াসের পা দুটো থরথর করে কাঁপছে। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। ও কিছু বলতে যাবে ওমনি মেশিন গান দিয়ে ওর আশে পাশে যত লোক ছিল সব গুলোকে গুলি করে ঝাঝরা করে দেয় আবিরের লোকেরা। তারপর আবিরের এন্ট্রি হয়৷ মানে কিং এর। ইয়াস ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– কিং প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমি আর জীবনে তোর রাস্তায় আসমু না৷ প্লিজ আমাকে মাফ করে দে।
টাইগার গ্যাংকে পুরো নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে কিং। এখন শুধু বেঁচে আছে ইয়াস। কিং আস্তে আস্তে হেঁটে ইয়াসের কাছে যায়। ওর হাতের সেই স্পেশাল পিস্তলটা দিয়ে ইয়াসের পায়ে একটা আর হাতে একটা গুলি করে। ইয়াস জোরে চিৎকার করে উঠে। কিং ওর সামনে বসে হাসতে হাসতে বলে,
– তুই আমার জীবন থেকে একটা মাস কেড়ে নিয়েছিস। এই এক মাসের জন্য আমি আমার সব হারিয়েছি। কি করে ভাবিস আমি তোকে ছেড়ে দিব! নিজের ভালবাসার মানুষকে এই হাতে এই পিস্তল দিয়ে গুলি করে মেরেছি আজকে৷ তোকে ছেড়ে দিব? অসম্ভব।
বলেই আরেকটা হাতে গুলি করে কিং। ইয়াস আবার জোরে চিৎকার করে উঠে। আর বলে,
– প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে৷ আমি বুঝি নাই। প্লিজ৷ আমার জানটা ভিক্ষা দে৷
– হাহা৷ তোদের কিং ভেবেছিল ভালো হয়ে যাবে৷ কিন্তু তোরা আসলে তা আর চাস না৷ নে কিং এর উপহার। মৃত্যু৷
বলেই কিং ইয়াসেরও কপাল বরাবর আরেকটা গুলি করে নিমিষেই ওকে শেষ করে দেয়। তারপর ওর ব্ল্যাক স্যাডো গ্যাং নিয়ে বেড়িয়ে আসে কিং। আর আসার আগে পুরো জায়গাটা অনেক বড়ো একটা টাইম বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়৷ মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় জায়গাটা৷ আশেপাশে মানুষ শুধু ছোটাছুটি করতে থাকে ভয়ে। পুরো ঢাকা কেঁপে উঠে কিং এর তান্ডবে।
রাত এখন ১ টা বাজে। আবির ওর রুমে বসে আছে ওর স্পেশাল চেয়ারটায়। যেটায় শুধু কিং বসে। নিলয় আবিরের কাছে এসে বলে,
– স্যার পুরো দেশ বিদেশ সব খবর হয়ে গিয়েছে আপনার তান্ডবের। সবাই অনেক ভয় পাচ্ছে।
– ভেবেছিলাম শহরটা আর অস্থির করবো না৷ কিন্তু এবার আর আমাকে কেউ থামাতে পারবেন না নিলয়। এই শহরে এই দেশে একটাই মাফিয়া থাকবে আর সেটা হলো কিং। সবগুলাকে মেরে উড়িয়ে দিব টাইগার গ্যাং এর মতো। প্রস্তুতি নেও। রাশিয়ার এজেন্ট এর সাথে কথা বলো। ডেলিভারিতে যেন দেরি না করে।
– ওকে স্যার৷
নিলয় চলে যায়। আবিরের চোখে এখনো আগুন জ্বলছে৷ বারবার মাইশাকে অন্য সেই ছেলের সাথে দেখা দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠছে৷ যার জন্য আবিরের রক্ত আরো গরম হয়ে যাচ্ছে। ওর ভিতরের মাফিয়াকে বারবার জাগিয়ে দিচ্ছে এই বিষের মতো যন্ত্রণা। হ্যাঁ আবির হলো সেই কিং, যে বিশ্বের মধ্যে কয়েকজন বড়ো বড়ো মাফিয়ার একজন। ওর সব কাজ অস্র গোলাবারুদ নিয়ে। ওর বর্তমান টার্গেট হলো দেশে যত মাফিয়া আছে সব গুলোকে শেষ করা। পুরো দেশে শুধু ওর রাজত্ব চলবে৷ আবির কেন, কিভাবে এত তাড়াতাড়ি এত বড়ো মাফিয়া হলো তা কেউ জানে না৷ এমনকি নিলয়ও না৷ আবির যখন মাস্ক পরে তখন ও কিং হয়ে যায়৷ আর যখন মাস্ক খুলে ফেলে ফেলে তখন হয়ে যায় আবির। জনপ্রিয় নায়ক, আবির আহমেদ। কেন এই মুখোশের খেলা? উত্তরটা খুব সহজ। যাতে ওকে কেউ না চিনে। কারণ এত বড়ো জনপ্রিয় নায়ককে কেউ মাফিয়া বা কিং ভাববে না৷ এছাড়া যারা ওকে চিনতে পেরেছে বা চেনার চেষ্টা করেছে তারা কেউই আর এই দুনিয়াতে বেঁচে নেই। অবশ্য তারা সবাই খারাপ লোকই ছিল। কিং এর একটা রুলস আছে৷ ওর সাথে যে খারাপ করতে আসবে তাকেই ও শেষ করে দিবে৷ তাই ও কখনো সাধারণ মানুষদের কোন ক্ষতি করে নি আজ পর্যন্ত৷ আর পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংকে বাঘের মতো ভয় পায়৷ ওর গাড়ি দেখলে উলটো রাস্তা ফাঁকা করে দেয়৷ সবাই ওর হাতের মুঠোয়। এতটা ক্ষমতা ওর। কিন্তু আজ সব ক্ষমতাই শূন্য। ভালবাসার মানুষটা যে ধোকা দিয়েছে। অনেক বড়ো একটা ধোকা৷ আবির এখন ওর হাতে পিস্তলটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেটা দিয়ে আজ মাইশাকে।শেষ করেছে। ওর ভিতরটা যে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারছে না৷ সেদিনের পর আরও একসপ্তাহ চলে যায়। আবির এখন আপাতত মিডিয়াতে মন দিয়েছে। যাতে ওর রাগটা কিছুটা কমে। আর তাছাড়া রাশিয়া দিয়ে ডেলিভারিতে লেইট হবে তাই ও মিডিয়াতে সনয় কাটাচ্ছে৷
অন্যদিকে জান্নাত আর হৃদয়ের মাঝে এই একমাসে ভালো একটা বন্ডিং হয়ে যায়। এমন একটা বন্ডিং হয় যে, হৃদয় যা বলে জান্নাত তাই ই করে৷ আর এটাই চাচ্ছিলো হৃদয়। এই একটা সুযোগের জন্য হৃদয় এত দিন জান্নাতের পিছনে লেগেছিল। হৃদয় জান্নাতকে নিয়ে ক্যাম্পাসের একটা নিরিবিলি জায়গায় যায়৷ ওরা একসাথে বসলে হৃদয় বলে,
– জান্নাত আজকে আমাদের সম্পর্কের একমাস পূর্ণ হলো। তাই আমি চাচ্ছি সবাইকে একটা পার্টি দিব৷ আমার পরিচিত একটা ক্লাব আছে৷ আমি আমার সব ফ্রেন্ডসদের বলছি আজ রাতে ওখানে পার্টি হবে৷ সবাই আসবে তোমাকে আর আমাকে শুভেচ্ছা দিতে। তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে৷ প্লিজ না করো না।
~ হৃদয় দেখো আমি ক্লাবে যাওয়া একদম পছন্দ করিনা৷ আর কখনো যাইও নি। আমার এসব পছন্দ না৷
– জান্নাত প্লিজ। আমি আমার সব বন্ধুদের বলেছি। আর পার্টিটাতো তোমার জন্যই। তুমি না আসলে কেমন হবে বলো? আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে আমার ফ্রেন্ডদের সামনে৷ প্লিজ না করো না৷
~ হৃদয় প্লিজ এভাবে বলো না৷ আমি পারবো না৷
হৃদয় এবার মুখটা একদম কালো করে অভিমানী কণ্ঠে বলে,
– ঠিক আছে আর আসতে হবে না৷ কি এমন হবে। সবাই আমাকে ছোট করবে, হাসাহাসি করবে। করুক। তুমি তো এটাই চাও৷ ওকে এটাই হবে৷
কথা গুলো বলে হৃদয় অন্যদিকে ফিরে দুঃখী হওয়ার অভিনয় করছে। জান্নাতের খুব খারাপ লাগে। কারণ ও এখন হৃদয়কে নিয়ে অনেকটা সিরিয়াস। ওর মনে হয় ও হয়তো হৃদয়কে ভালবেসে ফেলেছে৷ তাই ও হৃদয়কে কষ্টে দেখতে পারছে না৷ জান্নাত আর না পেরে বলে,
~ আচ্ছা আমি আসবো।
হৃদয় মুহূর্তেই খুব খুশি হয়ে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
– সত্যিইই?
~ হ্যাঁ। (হাসি দিয়ে)
হৃদয় জান্নাতের হাত ধরে বলে,
– থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। এই নেও৷ এখানে একটা দামী ড্রেস আছে, এটা পরে এসো।
~ না না৷ এসব লাগবে না৷
– আরে তোমার কাছে কি ক্লাবে যাওয়ার ড্রেস আছে নাকি? নাই তো। তাই এটা নিয়ে এসেছি।
~ হৃদয় তুমিও না, অনেক পাগল।
– হুম তোমার জন্য৷ হাহা।
জান্নাত ভীষণ লজ্জা পায় আর মনে মনে অনেক খুশি হয় হৃদয় এর মতো কাউকে ওর এত কাছে পেয়ে। জান্নাত ভাবে হয়তো আজ রাতে হৃদয় ওকে প্রপোজ করবে৷ তাই এত কিছু। জান্নাত অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে৷ এরপর হৃদয় জান্নাতকে বিদায় দিয়ে ওর বন্ধুদের কাছে গিয়ে ওদের সাথে একটা বড়ো প্ল্যান করে।
– শোন মালটাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ভাও করেছি ক্লাবে আনার জন্য৷ আমি যখন ওর সাথে কথা বলবো তোরা একজন ওর ড্রিংকসে এটা ঢেলে দিবি৷ ব্যাস সারারাত ওকে আমরা মিলে ভোগ করবো আর তারপর বাইরে পাচার। ঠিক আছে?
– ঠিক আছে মামা। খেলা হবে৷
– হ৷ এরকম বলদ মেয়ে জীবনে দেখি নাই৷ হাহা৷ চল৷
জান্নাত হৃদয় এর দেওয়া দামী ড্রেসটা পরে সময় মতো ক্লাবে চলে যায়৷ ও এতটাই অবুঝ একবার ভাবলো না হৃদয় ওর সাথে খারাপ কিছু করতে পারে। আসলে বাবা-মা হারা মেয়ে তো ও তাই কেউ একটু ভালবাসলে ওর কাছে অনেক বড়ো কিছু মনে হয়৷ সেখানে হৃদয় তো অনেক ধনী আর ফেমাস বয়৷ জান্নাত নামতেই হৃদয় ওর কাছে এসে বলে,
– ও এম জি! এত সুন্দরী লাগবে তোমাকে আমি ভাবতেই পারি নি। ওয়াও।
জান্নাত লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে। ও আস্তে করে বলে,
~ এই প্লিজ লজ্জা দিবে না।
– হাহা। আচ্ছা চলো ভিতরে যাই। সবাই অপেক্ষা করছে।
~ ওকে।
হৃদয় জান্নাতের হাত ধরে ওকে নিয়ে ক্লাবে ঢুকে। জান্নাতের কেমন জানি উৎফুল্ল লাগছে৷ জীবনে প্রথম এমন কোন জায়গায় ও এসেছে৷ ভাবতেই কেমন অদ্ভুত জানি লাগছে ওর। কিন্তু জান্নাত জানে না একটু পর ও ওর সব হারাতে চলছে। এমনকি জীবনটাও৷ ওকে বাঁচানোর মতো এখানে কেউ নেই। কারণ পুরো ক্লাব জুড়ে শুধু হৃদয়ের লোক। হৃদয় জান্নাতকে নিয়ে…