প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
2007

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা সোজা গিয়ে শান্তি রহমানের পাশে এসে বসেছে,উনি নরমালি একবার তাকালো আহানার দিকে তারপর আহানার গায়ের শাড়ীটা দেখে মনে মনে হাসলেন
শাড়ীটা যে তার আলমারিতে ছিল এবং সেটা যে শান্ত নিয়ে আহানাকে দিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই উনার
শান্ত কিছুক্ষণ বাদেই সোফার রুমে এসে হাজির হলো,মায়ের সামনে এসে শক্ত গলায় বললো”মা শুনো,আমি আপাতত বিয়ে করতে চাই না,আহানাকেও না, কণাকেও না,আমাকে আমার মতো থাকতে দাও প্লিস”
এক দমে কথা শেষ করলো শান্ত,আহানা লাইনটা মুখস্থ করে নিয়েছে ততক্ষণে
তারপর সেও তার মায়ের দিকে চেয়ে বললো”মা শুনো,আমি আপাতত বিয়ে করতে চাই না,শান্তকেও না, রামিমকেও না,আমাকে আমার মতো থাকতে দাও প্লিস”
.
আহানার মা আর শান্তর মা চুপ করে চেয়ে আছেন ওদের দিকে
তারপর দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকালেন,এরপর নিরবতা!!
.
১০মিনিট হয়েছে শান্ত দাঁড়িয়ে আছ উনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অথচ উনারা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছেন,আর আহানাও ঠিক একই ভঙ্গিতে উনাদের মুখ দেখায় ব্যস্ত
.
শেষে শান্ত বললো”কি ব্যাপার?”
.
শুনো বাবা,আমি কিছু কথা বলি,আমাদের সবারই কিছু না কিছু ইচ্ছা থাকে আমাদের সন্তানদের নিয়ে
আর আমরা চাই তোমরা আমাদের সিদ্ধান্তটা মেনে নাও
যেহেতু তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও না সেহেতু যাদের সাথে আমরা ঠিক করেছি তাদেরই করে নাও,সমস্যা কোথায়?
.
মায়ের কথা শুনে আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”মা শুনো,আমার আর উনার বিয়ে…!
.
শান্ত আহানার হাত টেনে ওকে চুপ করিয়ে দিলো তারপর বললো”আমাদের সময় দাও,হুটহাট করে বিয়ের কথা বললেই তো আর বিয়ের পিরিতে বসে যাওয়া যায় না?”
.
ঠিক আছে,সময় নাও তোমরা,আজকালকার ছেলে মেয়েরা মায়েদের কথায় গুরুত্বই দেয় না,যা বুঝলাম

আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে,বিবাহিত হওয়ার সত্ত্বেও বিয়ের কথা চলছে তার আর তার স্বামীর তাও আরেকজনের সাথে
আর আমার স্বামী সব অস্বীকার করতেছে তাও আন্টির ভয়ে
আরে আন্টি তো জানলে আরও খুশি হবেন
একটু নারাজ হলেও পরে খুশি খুশি মেনে নিবেন তিনি,এটা তার কাছে একটা সারপ্রাইজ হবে আর তাকে দেখো,ভীতুর ডিম একটা!বুঝতেই চায় না

রিয়াজের বৌভাত শেষ হয়েছে সবেমাত্র,যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে
আহানা শান্ত আর তাদের মা,সাথে নিতু এক কারে উঠে বাড়ি ফিরছে,আহানার মা তো রামিম ছেলেটার গুনগান গাইতে গাইতে শেষ
কাঁচপুর ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় শান্তর মন চাচ্ছিলো কারটা ব্রিজ টিপকিয়ে পানিতে ফেলতে
তার নিজের দুবার বিয়ে করা বউ কিনা কোথাকার কোন রামিমকে বিয়ে করবে?
ঐ রামিমের নিজের বাড়ি আছে তো আমারও ৩টে বাড়ি আছে
এসব শুনানোর কি আছে?
.
মা তো নিজের ফোন থেকে কণার ছবি বের করে আহানার আম্মুকে দেখাচ্ছেন বারবার
আহানা জ্বলতে জ্বলতে শেষ,রাগী রাগী লুক নিয়ে বারবার শান্তর দিকে তাকাচ্ছে সে
.
রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরে যে যার রুমে চলে গেছে
শান্ত বাসায় ফিরার পর থেকে একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর সেটা হলো কাল আহানার মায়ের জন্মদিন আর সে আহানার মাকে সব চাইতে বেস্ট একটা গিফট দিবে বার্থডে গিফট হিসেবে,সেটারই কাজ করতেছে সে
ঐদিকে আহানা শান্তকে ফোনে কল করছে ছাদে গিয়ে,মায়ের জন্য সামনা সামনা কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে আহানা
কোনোরকম একটা বাহানা দিয়ে সে আপাতত ছাদে এসে মশার কামড় খাচ্ছে,আর তার সো কলড দুবার বিয়ে করা জামাইর কিনা খবর নাই!
শান্তি আন্টি সোফার রুমে না থাকলে এতক্ষণে হারামিটার রুমে গিয়ে মারামারি শুরু করে দিতাম,কি এমন কাজ করছে যে ৩৩বার কল করছি একবার ও ধরছে না
আগে ঠেলেও আমাদের দুজনকে এক করতে পারতো না তারা আর এখন এক হতে যেতেই ভয় পাচ্ছি তাও তাদের ভয় হচ্ছে!কি ভাগ্য!
এই জন্যই বুঝি বলে”দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না”
.
যাই হোক অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে যা দেখছি, এভাবে সারারাত মশার কামড় খেয়েও ঐ শান্তর মুখ দেখবো না,আরে এত সিরিয়াস মোমেন্টে কেউ ফোন সাইলেন্ট রাখে?
নেক্সট কি হবে তা নিয়ে ডিসকাস করার জন্য ফোন করছি,কোনো প্রেম করার জন্য না,আমার টেস্ট এত খারাপ না!

শান্ত খাটের মাঝখানে বসে অনলাইনে বার্থডে ওয়ার্ড বেলুন অর্ডার করছে আর কেক অর্ডার করছে,হঠাৎই তার বারান্দায় শব্দ হলো
ধপাসসসসস!
.
তারপর হালকা করে “ও মাগো,আমার কোমড় গেলো গো” বলার আওয়াজ আসলো
শান্ত ফোনটা সাইডে রেখে বিছানা থেকে নামতেই ওপার থেকে রণচন্ডি রুপ ধারণ করে আহানা এগিয়ে আসলো
ওড়না কোমড়ে বাঁধা আর চোখে মুখে আগুন নিয়ে
হাতে পায়ে কাদাও লেগে আছে
.
শান্ত আহানাকে দেখা শেষ করে বললো”কি হয়েছে?আমার রুমের কি দরজা নাই?এরকম লুটোপুটি খেয়ে এসেছো কেন?!
.
চুপ!আন্টি শুনে ফেলবে,সোফার রুমে উনি,আর দরজা দিয়ে আসবো মানে?আপনি জানেন মা আমাকে আপনার থেকে দূরে থাকতে বলেছে
.
তো থাকো
.
মানে কি এসবের,ভুলে গেছেন কয়বার বিয়ে করেছেন আমাকে?
.
না ভুলি নাই,কিসের জন্য এত সাত সাগর পাড়ি দিসো সেটা বলো এখন,আমার অনেক কাজ আছে
.
ভাব দেখান?কাকে দেখান?জানেন আমি আপনাকে সাড়ে ৩৩বার কল করেছি
.
সাড়ে ৩৩মানে?কল আবার সাড়ে হয় কি করে?
.
লাস্টের বার কল করে রিং ১বার হওয়ার পর কেটে দিয়েছিলাম তাই ওটা সাড়ে ধরেছি
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো”তুমি একটা উন্মাদ,যা বলার বলবা আগে বাথরুমে গিয়ে হাত পায়ের কাদা পরিষ্কার করে আসো”
.
আহানা তাই বাথরুমের দিকে গিয়ে হাত পা ধুয়ে আবার ফেরত আসলো
.
হুম বলো এবার
.
আরে কি বলবো?আপনি জানেন না?নাকি সব ভুলে গেছেন,আপনার আজকের প্ল্যান তো ফ্লপ হলো,নেক্সট কি হবে?
.
আমার আজকের প্ল্যান কার্যকর না হলেও পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে বৈকি
.
তারপর কি করবেন সেটা বলেন
.
তারপর তারা বাড়াবাড়ি করলে বিয়ের কথা বলে দিব,আবার বিয়ে করা তো একদমই সম্ভব না
.
হুম সেটাই,তাহলে যাই আমি
.
দাঁড়াও
.
কি?
.
কাল তোমার জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আহানা,অবশ্য গিফটা আন্টির জন্য তবে আই থিংক তুমি সব চাইতে বেশি খুশি হবে
.
তাই নাকি?আমাকে খুশি করতে পারবেন সেদিন যেদিন আপনি নিজের মুখে বিয়ের কথাটা বলতে পারবেন সবাইকে,তার আগে আহানা খিলখিল করে হাসবে না
.
কথাটা বলে আহানা চললো বারান্দার দিকে,টপকে নিচে নামবে
শান্ত এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো তারপর বললো”তাহলে বিয়েটাকে তুমি মানছো?তুমি চাও আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে?আমাকে পছন্দ করো নাকি?”
.
আমাকে ভূতে ধরে নাই,জাস্ট নিজের অধিকারটার জন্য এত কষ্ট করছি আমি আর কিছু না
.
শান্ত পকেটে হাত দিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো”তাহলে তো অন্য অধিকার ও প্রাপ্য তোমার”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে কথার উত্তর না দিয়ে গ্রিল টপকে নিচে নেমে চলে গেলো
.
পরেরদিন সকাল থেকে আহানার মায়ের রুম থেকে বের হওয়া বারণ,শান্ত আর আহানা মিলে ডেকোরেশন করতেছে সোফার রুমটায়,আহানা নিজের হাতে একটা কেক বানিয়েছে আর শান্ত একটা অর্ডার করেছে
এদিকে মা তো জানে তার জন্মদিন বলে ওরা এমন করছে
মায়ের তখন খুশি লাগতো যখন আহানার বাবা ছিলো
এখন আর এসবে খুশি আসে না তার
যাই হোক সকাল ১১টা অবদি আহানা আর শান্ত সবটা রেডি করে ফেললো,সাথে নিতু আর রিপা ও হেল্প করেছে
আহানা মায়ের চোখ বেঁধে সোফার রুমে এনে চোখের বাঁধন খুলে দিলো,সাথে সাথে সবাই বললো”হ্যাপি বার্থডে!!!”
মা খুশি হলেন,শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”বাহ রে,৫১% ডেকোরেশন আমি করেছি,আগে আমার মাথা মুছে দেওয়া উচিত ছিল তোমার,হুহ!”
.
তুই তো আমার মেয়ে,তোকে আবার আলাদা করে মাথা মুছে দিতে হয়?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”নাও কেক কাটো!”
.
মা কেক কেটে সবার আগে শান্তর মাকে খাওয়ালো,তারপর নিতুকে,তারপর শান্তকে,সবার শেষে আহানাকে
অবশ্য এতে আহানা রাগ করেনি,কারণ পুরো ডেকোরেশনটা তাদের খরচেই হয়েছে
আহানা এসব ভাবতে ভাবতে এরই মাঝো শান্ত বলে উঠলো উনার জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ সে রেডি করেছে
আহানার মা জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললেন”কি সেটা?”
.
তার জন্য চোখ আবারও বাঁধতে হবে
.
শান্ত দুটো ফিতা নিয়ে আসলো রুম থেকে
.
আহানা বললো “দুটো কেন?”
.
উত্তরে শান্ত বললো একটা তার
.
কেন??
.
সারপ্রাইজ দুজনেরই
চুপ থাকো না,সব আগে বলে দিলে সেটা সারপ্রাইজ থাকে?
.
আচ্ছা আচ্ছা
.
আহানাকে আর ওর মায়ের চোখে শান্ত ফিতা বেঁধে দিলো
তারপর ওদের নিয়ে কারে বসালো সে
মাকে বলে আসলো সে ঠিক কি কারণে যাচ্ছে,মায়ের চোখে মুখে খুশি ফুটে উঠলো শান্তর কথা শুনে
ওদিকে আহানা গেস করার চেষ্টা করছে ঠিক কি সারপ্রাইজ হতে পারে
তো প্রায়ই ৩০মিনিটের পথযাত্রার পর কার থামলো
শান্ত কারের দরজা খুলে আহানা আর ওর মাকে বের করলো
তারপর একটা বাড়ির সামনে নিয়ে এক এক করে ওদের চোখের বাঁধন খুলে দিলো সে
এটা সেই বাড়ি যে বাড়ি থেকে ৭বছর আগে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছিলো,যে বাড়িটার সাথে সাথে তাদের আর্থিক স্থান বদলে গিয়েছিলো
আজ সেই বাড়িটার সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে
নীল রঙের দোতলা একটা বাড়ি,সামনে শতে শতে নাম না জানা বিদেশি ফুলের বাগান,অবশ্য আগে গন্ধরাজের বাগান ছিলো সেই বাগানটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়
শান্ত নিজের মনের মতন করে বাগানটা সাজিয়ে নিয়েছে
.
বাড়ির সামনে লাল রঙের একটা গাড়ী,এটা সেই গাড়ী যেটা চালিয়ে আহানার বাবা ওকে স্কুলে দিয়ে আসতো
আহানা কারের কাছে দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো,চোখের সামনে আজও ভাসতেছে বাবা তার হাত ধরে কারে বসাতো তাকে,মা হাসতো,টাটা দিতো
সব একটা কার এক্সিডেন্টে ছারখার হয়ে গেছে
আহানার মা বাড়িতে ঢুকার আগেই পিছন ফিরে শান্তকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন,শান্ত তাকে আজ এত বড় উপহার দিবে তা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো
আহানা ততক্ষনে বাড়ির ভিতরে চলে গেছে
সোফার রুমটা একটু দূরে শুরুতেই পড়ে একটা ফুলদানি,সব যেন সেই আগের মতই,শান্ত ঠিক মনে রেখেছে বাড়িটা আগে কিরকম ছিলো
সোফায় হাত বুলিয়ে আহানা চলে যেতে নিতেই থেমে গেলো
সোফায় তাদের ছোটবেলায় আঁকিবুকির দাগ এখনও লেগে আছে,আহানা মনের অজান্তেই হাসলো
তারপর সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় গেলো নিজের রুমে,নিজের রুম দেখে আহানা কেঁদে ফেললো সাথে সাথে
তার সেই গোলাপি রঙের বিছানা,গোলাপি বিছানার চাদর,মিকি মাউসের লম্বাটে একটা পুতুল পাশে,আহানা পুতুলটা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো
মজনু চাচা তাকে পুতুলটা নিতে দেয়নি,অথচ তার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু ছিল এই পুুতলটা,পুতুলটা দামি হওয়ায় চাচা রেখে দিয়েছিলেন
আহানা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো এবার
সম্পূর্ণ বাগানের ঠিক মাঝখানে আহানার রুমের বারান্দাটা বানানো,যাতে সেখানে দাঁড়ালেই ফুলের সব সুবাস উপভোগ করা যায়
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা মুচকি হেসে বারান্দার নিচে তাকাতেই চোখ পড়লো শান্তর উপর
শান্ত যেন এতক্ষণ ওর দিকেই চেয়ে ছিলো
আন্টি বাসার ভিতরে চলে যাওয়ায় শান্তও যেতে নিচ্ছিলো ঠিক তখনই সে আহানাকে দেখতে পেয়েছে বারান্দাতে
তাই সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে আহানার চোখে মুখের হাসি দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো
আহানা শান্তর মিষ্টি হাসি দেখে মনের অজান্তেই হেসে ফেললো সে নিজেও
তারপর কি যেন মনে করে মুখ বাঁকিয়ে আবারও নিজের রুমে ফেরত গেলো
শান্ত ঠিক বুঝলো না,মুখ বাঁকানোর কারণটা কি ছিলো
তারপর সেও বাসার ভেতর দিকে চললো
আহানার মা হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বাসার প্রতিটা আসবাবপত্র দেখতেছেন আর গায়ের হালকা গোলাপি রঙের শাড়ীটার আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতেছেন
সব কিছুতে আহানার বাবার স্মৃতি আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে
সোফার রুমের সামনে যে বিরাট দেয়ালটা আছে সেটাতে মিনিমাম ৩০টার মতন ছবি ঝুলানো
সবগুলোতে আহানা,তার বাবা আর তার মা,সাথে আছে শান্ত ও তার বাবা মা
আহানার মা একটা ছবি হাতে নিলেন,ছবিটা আহানার বাবার,সেটা ধরে তিনি শক্ত চোখে চেয়ে রইলেন
শান্ত আর ওখানে দাঁড়ালো না, সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে গেলো সে
এই বাড়িতে সে কদিন আগেও এসেছিলো,সেট আপ দেখার জন্য,বাড়িটা সে মিঃ মজনুর থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ঠিক তেমন করে যেমন করে মজনু আহানার মায়ের থেকে কেড়ে নিয়েছিলো
জাস্ট মাস্টারমাইন্ড প্ল্যান করতে হয়েছে এই আর কি,এই মজনুকে পথে বসাবো আমি,আমাকে চেনে না
শান্ত মুচকি হেসে শেষ সিঁড়িটা পেরিয়ে দোতলায় পা রাখতেই আহানার সাথে এক ধাক্কা খেয়ে গেলো
আহানা মাথা মুছতে মুছতে বললো”দেখে চলতে পারেন না?”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”আমি না হয় কিছু একটা ভাবতে ভাবতে উপরে উঠতেছিলাম তাই খেয়াল ছিল না
কিন্তু তুমি কোনদিকে চেয়ে এদিকে আসতেছিলে?”
.
আহানা আবারও মুখ বাঁকিয়ে পাশ কেটে নেমে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাতের কব্জি ধরে ফেললো
.
আহানা পিছন ফিরে বললো”কি?আবার কি?”
.
কেমন লাগলো?
.
বেশ ভালো,ধন্যবাদ দিতেই পারি
.
ওয়েলকাম! বাট!
.
বাট কি?
.
এখন থেকে আলাদা হয়ে গেলাম,দুবার বিয়ে করা বউ এখন থেকে আলাদা থাকবে,আমার কেমন জানি খালি খালি লাগতেছে
.
এহহহহ,এত দরদ?আমার তো মনে হয় আপনি মনে মনে খুশি আমাকে বের করে দিয়ে
.
সেটা ঠিক বলছো,আজ থেকে আমাকে কেউ জ্বালাবে না
.
হুহ😎আর আমিও শান্তিতে থাকবো আপনার সাথে ঝগড়া করে মাথার গরম করার ঝামেলা নেই,আহা কি আনন্দ বিল্ডিংয়ে বিল্ডিংয়ে!!
.
আহানা হেলেদুলে নিচে নেমে গেলো
শান্ত উপরের রুমগুলো দেখে আবার নিচে চলে এসেছে
আহানা রান্নাঘরে গিয়ে উৎপাত করছে আর ওর মা আপাতত তার রুম দেখতে গেছেন
শান্ত রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে যা বুঝলো আহানা চা আর পাকোড়া বানাচ্ছে,নুডুলস পাকোড়া
শান্ত এগিয়ে গিয়ে চুলার পাশের তাকে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো
আহানা ওর দিকে একবার চেয়ে চায়ের পানি বসাতে বসাতে বললো”তা মাসকাবারি বাজার করলো কে?বাসা তো আজ ওপেন হলো তাই না?”
.
জি তাই,তবে এই বাসা মরুভূমির মতন ছিলো,আমি সব ঠিক করেছি ঠিক আগে যেমন ছিলো তেমন করে,বাগান দেখলে তো মূর্ছা যেতা,আমি লোক লাগিয়ে সব ঠিক করেছি,বাজার করে রেখেছি,সব সেট করে তারপর তালা মেরে আন্টিকে আনলাম
আর আমি তো চেয়েছিলাম প্রতি মাসে আন্টির নামের সেই ব্যাংক আকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে সংসার চালানোর টাকা আর কি বাট তুমি তো এমনি এমনি টাকা নিবা না তাই কি আর করার কাল থেকে অফিসে এসো,লাল কারে করে
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”কার চালিয়ে যাব ২০হাজার টাকার চাকরি করতে😂”
.
কি আর করার,আমার বউ তো এমনি এমনি টাকা নিতে চায় না
.
আর একটা কথা আমি কার চালাতে পারি না
.
আরে সমস্যা নাই,তোমাদের পুরান ড্রাইভারের সাথে আমার কথা হইছে,উনি কাল থেকে জয়েন হয়ে যাবেন
.
সত্যি?কিন্তু উনার বেতন?আমি তো পাবো ২০হাজার
.
হাসবেন্ড হিসেবে ড্রাইভারের সেলারিটা আমি বহন করতে পারি,তাই নয় কি?
.
আহানা ভাবলো অনেক তারপর আর কিছু বললো না,বাটিতে পাকোড়া নিয়ে চায়ের পাতিলে চা পাতা দিয়ে সোফার রুমের দিকে চললো
শান্ত এসে সোফায় বসে গরম গরম পাকোড়া মুখে দিয়ে টিভিটা অন করেছে
আহানার মাও এসে গেছে ততক্ষণে
মায়ের আজ খুশি ধরে না
মা বললেন শান্ত যেন ওর মাকে নিয়ে আসে,শান্ত হেসে বললো”আমি রিপাকে বলে দিয়েছি সে নিতু আর মাকে নিয়ে ক্যাবে করে আসতেছে”
.
তাই??তাহলে আজ তোমরা এখানেই থেকে যেও,খুব মজা হবে
.
মন্দ হয় না,তবে আমার অফিসের আজ অনেক কাজ,আজ রাতেই সব কাজ সারতে হবে,তাই আজ পসিবল না
.
ওহহ
.
আহানা পাকোড়া নিয়ে নিয়ে গোটা গোটা গিলছে,চিবানোর প্রয়োজনও মনে করছে না কারণ শান্তর খাওয়ার স্পিড দেখে তার কলিজা কাঁপতেছে
যে স্পিডে শান্ত পাকোড়া খাচ্ছে মনে হয় আহানার কপালে আর একটাও জুটবে না তাই সে সব সাবাড় করতেছে অনবরত
.
শান্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কপাল কুঁচকে বললো”ছোটবেলায়ও এমন করতে তুমি,তোমার জন্য আমি ঠিকমত চিপস খেতে পারতাম না,আর এখনও শুরু করে দিলে?”
.
তো কি করবো,যেভাবে রাক্ষসের মতন খাওয়া শুরু করছেন বাপরে বাপ
.
আমি না হয় একসাথে দুটো মুখে দিয়েছিলাম একবার তুমি কি করছিলে এতক্ষণ?? একসাথে ৪টা মুখে পুরে বসে ছিলে,আমি খেয়াল করিনি?
.
থাম তোরা!খাওয়া নিয়েও ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস শেষমেষ!

আহানা কোমড়ে ওড়না বেঁধে রান্নাঘরে ঢুকেছে,আজ সে বিরিয়ানি রাঁধবে,এক প্রকার পার্টি ধরে নেওয়া যায়
একে তো মায়ের জন্মদিন আরেক তো তাদের বাড়ি গাড়ি সব ফেরত এসেছে
তাই আজ আলাদা একা আমেজ আমেজ ভাব পুরো বাড়ি জুড়ে
শান্ত টিভি দেখতেছে সোফায় হেলান দিয়ে বসে
আর আহানার মা বাগানে ফুল দেখতে গেছেন
৫/১০মিনিট পর শান্তি রহমান আর রিপা,নিতুও এসে পড়েছে
আহানার মা তাদের নিয়ে বাগানের যে অংশে ছায়া সেখানে গিয়ে বসেছেন চেয়ার নিয়ে
আহানা চা নাস্তা পাঠিয়েছে,রিপা হেল্প করেছে কিছু
শান্ত আহানাকে দেখছে আবার টিভি দেখছে
মনে হচ্ছে সে বিবাহিত ব্যাচেলর
আহা!মন চাচ্ছে জোর গলায় বলতে!”ওগো বউ লেবুর শরবত এক গ্লাস পাওয়া যাবে কি?”
কিন্তু ভয় করে যদি খুন্তি ছুঁড়ে মারে?এমনিতেও একা হাতে সব সামলাচ্ছে
ভাবতে ভাবতেই আহানাকে দেখে তার ভাবনায় ইয়া বড় ছেদ পড়লো আর সেটা হলো আহানা মুচকি হেসে হাতের ট্রে তে করে এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে এদিকেই আসতেছে
সকাল সকাল জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি?না এটা স্বপ্ন না
.
আহানা এক গাল হাসি নিয়ে গ্লাসটা শান্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসে পড়লো দপ করে
শান্ত ঢোক গিলে শরবতের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো আবার আহানার দিকে তাকাচ্ছে
কিছু মিশিয়ে দেয়নি তো?
আহানা শান্তর হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে আবারও ফেরত দিলো সেটা
তারপর বললো”কিছু মিশাই নি,খেতে পারেন”
.
শান্ত তাও ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে,তাহলে আহানার এমন হাসির আর এমন পতি সেবার কারন কি হতে পারে?
.
আহানা আঙ্গুল দিয়ে শান্তর হাতে গোল গোল করে বানাতে বানাতে বললো”শুনো না””
.
শান্তর কাশি উঠে গেছে “শুনো না” শুনে,তারপর গলা একটু হাত দিয়ে ঘষে বললো”কি শুনতাম?”
.
শুধু বিরিয়ানি খেতে কেমন কেমন লাগে,একটু বাজার থেকে গিয়ে কোকাকোলা আর শশা,টমেটো নিয়ে আসেন না!!
এবার আহানার গলার আওয়াজ চওড়া হয়ে গেলো
উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী রাগী লুকে বললো”এসবও আবার বলতে হয়?মিনিমাম কমন সেন্স নাই আপনার?মাসকাবারি বাজার করে দিছেন উনি!
আমার মাথা করেছেন
এটা পেলে ওটা নাই
এখন গিয়ে এসব নিয়ে আসেন যান,সেই সকাল থেকে টিভিই দেখতেছে খালি,আজাইরা একটা!
.
শান্ত জ্যাকেটটা একটু টেনে ঠিক হয়ে বসে বললো”শান্তি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের” মালিক কিনা বাজারে যাবে শশা,টমেটো আর কোকাকোলা আনতে?”
.
তো?না পারলে লোক ধরিয়ে তাকে দিয়ে আনান,আপনার তো টাকা আর টাকা,টাকা আর টাকা
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে তাহসিনকে কল করে বললো আনতে
তারপর আবার টিভি দেখায় মন দিলো
আহানা বিরিয়ানি নাড়তে নাড়তে বলতেছে”ছেলেরা অফিসের কাজ ছাড়া আর কোনো কাজে আসে না,আরে মাঝে মাঝে ওয়াইফকে কাজে হেল্প করতে হয়,এইটুকু জ্ঞানবোধ নেই নাকি?”
.
আহানা শান্তকে বকতে বকতে পিছন ফিরতেই ভয় পেয়ে গেলো শান্তকে দেখে,শান্ত একটা ছোট বাটি আর চামচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
মুখটা গুলিয়ে বললো”একটু বিরিয়ানি দাও না,টেস্ট করে বলবো কেমন হয়েছে”
.
শুনুন!এমনিতেও লোক বেশি,তার উপর আপনি তাহসিন ভাইয়াকেও ডেকেছেন এখন আবার একটু চাচ্ছেন?দুপুরবেলায় আপনার পাতে কম দিব তাহলে”
.
আরে তাহসিন খাবে না তো,সে এক দাওয়াতে সেখান থেকে আসতেছে এখন,জিনিস দিয়ে আবারও দাওয়াতে যাবে সে
.
লোকটা এত কষ্ট করে এসব আনবে তাকে আমি এসব না দিয়ে যেতে দিব?
.
ওর মাস করা বেতন আছে আমার বাসার ছোটখাটো সব কাজ করার জন্য,বুঝেছো?
.
তার পরেও এটা ভদ্রতা!
.
ফাইন!দিও না বিরিয়ানি
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিতেই আহানা আটকিয়ে বললো”আচ্ছা দিচ্ছি,রাগ করিয়েন না”
.
শান্ত এক চামচ মুখে দিয়ে আহা আহা বলতে বলতে সোফার রুমের দিকে চলে গেছে
আহানা হাসতেছে শান্তর এমন বাচ্চামি দেখে
.
সবাই একসাথে খেতে বসেছে,শান্ত চেটেপুটে সবটা বিরিয়ানি খেলো তার প্লেটের,মনটা আরেকটু আরেকটু চাচ্ছে
আহানা বাটিতে করে এক্সট্রা বিরিয়ানি দিয়ে বললো”নিন খান”
.
শান্ত যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে,আহানার থেকে বাটিটা কেড়ে নিয়ে সেটাও খেয়ে নিলো সে
তারপর সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার বাসায় ফিরে গেছে
আহানা নিজের রুমে বসে কাঁচা কলার চিপস খাচ্ছে আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতেছে
এত মজার বিরিয়ানি সে কিনা একটুও খেতে পারলো না!!সবাই বললো অনেক মজা হইছে আর সে একটু টেস্ট ও করতে পারলো না?
নিজের ভাগের বিরিয়ানি পুরোটা শান্তকে খাইয়েছে সে
একটা রাক্ষস,একবার জিজ্ঞেস ও করেনি আহানা তুমি খেয়েছো?তুমি না বললা বিরিয়ানি কম,তাহলে এখন কি করে এক্সট্রা দিচ্ছো?
সেসব তো জিজ্ঞেসই করেনি উল্টো হাত থেকে কেড়ে নিয়ে খেয়েছে,আর আমি দুপুরবেলায় বসে এখন চিপস খাচ্ছি,পোড়া কপাল আমার!
দুবার বিয়ের পরেও বউয়ের অধিকার পেলাম না আর আজ বিরিয়ানি ও পেলাম না
এরই মাঝে ফোন বেজে উঠলো,শান্তর ফোন
৩/৪ ঘন্টার মতন হয়েছে চলে গেছে এখন আবার ফোন করছে কেন,ঢং করতে?
হ্যালো!কি সমস্যা? ফোন করেছেন কেন আবার?
.
বাপরে!এত রাগ?তা কষ্ট করে গেটের বাইরে আসতে পারবেন?
.
কি জন্যে?বিরিয়ানি আর নাই,পাতিল মেজে ধুয়ে উল্টো করে রেখে দিয়েছি ভেসিনে পানি ঝরে যাওয়ার জন্য
.
আমি কি বলছি যে বিরিয়ানি খাবো?
.
তাহলে?
.
আরে আসোই না একটু
.
ওকে
.
আহানা চিপস হাতে নিয়েই চললো,পরে ভাবলো শান্ত যে খাদক এটাও খেয়ে নিবে
তাই সে বাটিটা সোফার উপর রেখেই গেটের দিকে গেলো
শান্ত কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
বাম হাত পকেটের ভিতরে আর ডান হাতে একটা টিফিন বক্স
.
আহানা কাছে এসে বললো”কি?”
.
নাও ধরো
.
কি এটা?
.
বিরিয়ানি
.
আমি বাজারের বিরিয়ানি খাই না,শরীর খারাপ করে
.
এটা বাজারের না, এটা আমি বানিয়েছি
.
কিহহহহহহ!
.
আস্তে!এত জোরে চেঁচাও কেন?মানুষ কি ভাববে?
.
মানে সিরিয়াসলি? আপনি বানিয়েছেন?আমার বিশ্বাস হয় না
.
বিরিয়ানিতে কিশমিশ ১৩টা দিয়েছি,গুনে নিও তাহলেই বুঝবা
.
হঠাৎ বানালেন কেন?কে শেখালো?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
ইউটিউব,আর কে শেখাবে?
.
আচ্ছা,টেস্ট করে দেখি,আসুন না বাসার ভিতর
.
আহানা টিফিন বক্সটা নিয়ে বাসার দিকে ছুটলো এক দৌড়ে
শান্ত এসে সোফায় বসেছে,আহানা একটা চামচ দিয়ে বিরিয়ানি মুখে দিতেই নাকে দিয়ে কানে দিয়ে মনে হয় ধোঁয়া বের হবে এমন অবস্থা,এত পরিমাণ ঝাল দিয়েছে আরেক চামচ খেলে পুকুরে ডুব দিয়ে বসে থাকতে হবে
আহানা পুরো বাড়ি মাথায় করে পানি খেতে খেতে ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়েছে
তারপর শান্তকে এক গাদা গালিও ছুঁড়ে মেরেছে
শান্ত অসহায়ের মতন ওর মুখের দিকে চেয়ে বসে আছে
আহানা নিজের আগের বানানো কলার চিপসটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে ইচ্ছামত আবারও বকলো শান্তকে তারপর আহানার খেয়াল হলো শান্ত আসার পর থেকে বাম হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে,বিষয়টা সবেমাত্রই খেয়াল করলো সে
তাই কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো হাতটা ওমন করে লুকিয়ে রেখেছে কেন সে
শান্ত থতমত খেয়ে বললো”এমনি,স্টাইল”
.
কথাটা আহানার হজম হলো না,ফ্লোর থেকে উঠে তেড়ে আসলো চেক করার জন্য তার আগেই শান্ত সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো তার দেরি হচ্ছে সে এখন বাসায় ফিরবে
.
এক মিনিট দাঁড়ান,আমার থেকে কিছু লুকানোর ক্ষমতা আপনার নেই,দেখি আপনার হাত
.
শান্ত হাতটা ভালো করে পকেটে ঢুকিয়ে বললো”আমার লেট হচ্ছে বললাম না,পরে কথা হবে বাই”
.
আহানা শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ওর হাত টানাটানি শুরু করে দিলো দেখার জন্য
অনেক জোরজবরদস্তি করে শেষে সে দেখতে পারলো ওর হাতটা
পোড়া গেছে তাই লুকিয়ে রেখেছিলো
আহানা চোখ বড় করে চেয়ে থেকে আর জিজ্ঞেস করলো না যে এটা কিভাবে হলো,চুপচাপ সে দৌড়ে গিয়ে একটা ওয়ারড্রবের ড্রয়ার থেকে মলম খুঁজে আবার ফেরত আসলো
.
লাগবে না,নিতু লাগিয়ে দিয়েছে
.
ওটা তো শুকিয়ে গেছে,তাই আবার লাগাচ্ছি,আপনাকে কে বলেছিলো ফাজলামি করতে?রেঁধে একেবারে উদ্ধার করছে আমাকে
.
আর কত বকবা?
.
আহানা আর কিছু বললো না,মলমটা লাগিয়ে দিয়ে বিরিয়ানি এনে এক চামচ শান্তকেও খাইয়ে দিলো জোর করে
তারপর বললো “এটা একটা প্রতিশোধ নিছেন তাই না,সবাই ভাববে আমার বর কত ভালো,আমার কত কেয়ার করে,বাট বিরিয়ানির টেস্ট কেমন সেটা তো শুধু আমি জানি”
.
প্রতিশোধ না,সেটা হলে হাত পুড়াতাম না,যাই হোক তুমি বুঝবে না
বাই
.
শান্ত চলে যাচ্ছে আর আহানা থ হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর যাওয়া দেখছে,বিকাল ঘনিয়ে এসেছে
আহানা সোফার উপরে রাখা তার কাঁচা কলার চিপসটা হাতে নিয়ে আবারও নিজের রুমে ফেরত গেলো
.
শান্ত নিজের কারে বসতে বসতে হেসে দিলো হাতের দিকে তাকিয়ে
ঝাড়ি ও দেয় আবার কেয়ার ও করে,এই মেয়েটাকে আসলেই বুঝতে পারি না আমি

শান্ত নিজের বাসায় এসে তো ওর চোখ কপালে
কণা আর তার মা বাবা এসে হাজির
শান্ত হাল্কা কেশে উনাদের সালাম দিয়ে দাঁড়ালো একপাশে
মা ও বসে আছেন হাসিমুখে,বুঝাই যাচ্ছে বিয়ের কথা পাকা করতে এসেছেন তারা,উফ!!মা আমাকে না জানিয়ে এদের কেন ডাকলো আবার
কণা লজ্জায় মনে হয় মরে যাবে এই দেখে শান্তর গা জ্বলে যাচ্ছে,এর চেয়ে তো আহানার রাগী রাগী লুকটা মাচ বেটার
.
উনাদের হাতে দেখছি আংটির বক্স,শান্ত আজ তুই শেষ!
.
মা শান্তকে হাত দিয়ে কাছে ডাকলেন
শান্ত ভালো ছেলের মতন গিয়ে বসলো উনার পাশে
কণার মা বাবা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছেন শান্তর দিকে,তাদের পাগল মেয়ের যে এত ভালো চয়েস তা তাদের জানার বাইরে ছিল
অবশ্য এই নিয়ে কতবার যে কত ছেলেকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো কণা,এটা নতুন কি,তবে এবারের টা খাসা
.
শান্তি রহমান আংটির বক্সটা কণার মায়ের হাত থেকে নিতেই শান্ত দাঁড়িয়ে পড়লো,আজ যদি সবটা না বলে তো ভালো ফাঁসা ফাঁসবো,আহানা আমাকে কাঁচা গিলেই খাবে
.
শান্ত হালকা কাশ দিয়ে আবারও এদিক ওদিক তাকিয়ে পরিবেশ কেমন বুঝে নিলো,সবাই ওর মুখের দিকেই চেয়ে আছে
.
শুনো মা!!এদের ডাকার আগে আমাকে একবার জানানো উচিত ছিলো তোমার
আর আমি তো তোমাকে বলেছিলাম এসব নিয়ে না ভাবতে
আর একটা কথা এসব আজীবনের জন্য বাদ দাও,কারন আমি অলরেডি মেরিড
.
কথাটা শুনে সবাই চোখ তুলে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে ততক্ষণে
মা তো রীতিমত শকড!!!!আহানা আর শান্তকে মিলানোর জন্য উনি আর আহানার মা মিলে ওদের দুজনকে আরেকজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিলো আর শেষে এই শুনবে তা একদম ভাবেননি তিনি,ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না,শান্ত এসব কি বলতেছে,তাহলে কি সেদিন শান্তর বাবার কাজী বন্ধু মইনুদ্দিন ভাই ঠিক বলেছিলেন?শান্তর বিয়ে হয়ে গেছে
উনার ফোন পেয়ে আমি এটা বিশ্বাস করিনি,এখন তো শান্ত নিজের মুখেই বলে দিলো,উনি আমাকে জাস্ট কথাটা বলেই লাইন কেটে দিয়েছিলেন আমি তো বোবা হওয়ায় উত্তরটাও দিতে পারলাম না সেদিন,নাহলে জিজ্ঞেস করতাম ও ঠিক কাকে বিয়ে করেছে
.
শান্ত নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফেললো,তারপর আহানাকে ফোন করলো জানাতে যে সে বিয়ের কথা বলেছে মাকে
ফোনের উপর ফোন বেজে যাচ্ছে আর আহানা?সে তো তার নিজের বাথরুমের বাথটাবে মরার মত ঘুমাচ্ছে,এতদিন পর নিজের সব ফিরে পাওয়া কি মুখের কথা?আজ তো সে বাথটাবেই ঘুমাবে
মা সোফার রুমে মনে হয়,আর আহানার ফোন তার বিছানার উপর
৫/৬বার কল দেওয়ার পরও না ধরায় শান্ত ভাবলো কাল আহানা অফিসে আসলে জানাবে তখন
ওদিকে কণা শান্তর রুমের দরজা মনে হয় ভেঙ্গেই ফেলবে,তার একটাই কথা শান্ত বিয়ে করেনি,এটা সে মিথ্যা বলেছে,তার মা বাবা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে ওদের বাসা থেকে
শান্ত কানে ইয়ারফোন গুজে বারান্দায় বসে আছে চুপ করে,হাতে একটা ইংলিশ ম্যাগাজিন

পরেরদিন সকাল সকাল শান্ত অফিসে গেলো,করিডোরের দিকে যেতে যেতে একবার আহানার কেবিনের দিকে তাকালো সে,কেবিন খালি,অবশ্য ৯টা বাজেনি এখনও,কর্মচারীরা ৯টায় আসবে,তবুও অনেকেই আসতেছে এখন
.
শান্ত নিজের অফিস রুমে গিয়ে কোটটা খুলে চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে গ্লাস থেকে পর্দা সরালো
ঊষা এসে গুড মর্নিং জানাতেই শান্ত বললো”আহানা আসলে যেন এখানে আসে সাথে সাথে”
ঊষা ঠিক আছে বলে চলে গেছে
আহানা ৯টার সময় অফিসে এসে হাজির,তাদের কারে করে এসেছে সে
কি যে ভালো লাগতেছে,এতবছর কত কষ্টই না সে করেছিলো তবে সকাল সকাল মা যা বললো তাতে মেজাজটা বিগড়ে আছে,ঐ শান্তর উপর ঝাড়তে হবে তারপর শান্তি হবে
আহানা অফিসরুমে ঢুকতেই ঊষা এসে বললো শান্ত ওকে ডেকেছে
আহানা তাই সোজা ওদিকেই গেলো
.
আসবো শান্ত ভাইয়া????
.
হঠাৎ আহানার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে শান্তর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, কপাল কুঁচকে সে ফাইল গুলো থেকে চোখ উঠিয়ে ওর দিকে তাকালো,তারপর ২মিনিটের জন্য ভ্রমে চলে গেলো আহানাকে দেখে
ঘাড়ো হলুদ রঙের একটা শাড়ী, চুল ছাড়া,একদম রেডি,শান্ত ঠিক বুঝলো না,তারপর বললো”কি ব্যাপার?এত সাজগোছ কেন?”
.
আসলে ভাইয়া
.
আর একবার ভাইয়া বললে তোমার ঐ সুন্দর শাড়ীর বেহাল অবস্থা করে দিব,চিনো তো আমাকে??
.
আহানা গলায় হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বললো”কি আর করবো বলেন!!!আমার তো আজ এঙ্গেজমেন্ট,আজকের পর থেকে তো আপনি আমার ভাইয়াই তাই না?”
.
মানে?কিসের এঙ্গেজমেন্ট??কার সাথে?
.
আহানা এবার নিজের আসল রুপে আসলো, লাফ দিয়ে শান্তর সামনে থাকা কাঁচের টেবিলটার উপর গিয়ে গোল হয়ে বসে একটা পেন নিয়ে শান্তর গলায় চেপে ধরে বললো”তোর সাহস তো কম না,আবার জিগাস!কার সাথে আবার??আমার সাঙ্গাইয়ার সাথে,সাঙ্গাইয়া কাকে বলে জানিস তো!!দ্বিতীয় স্বামীকে বলে,তোরে এত করে বলছি তোর মারে বল আমরা বিবাহিত, তুই তো কবি না
তো ঠিক আছে,আমি আজ ঐ বলদা রামিমের সাথে এঙ্গেজমেন্ট করে নিমু,আর তুই আজ থেকে আমার ভাইয়া,কথা ক্লিয়ার?”
.
শান্ত তো অবাক হয়ে আহানার দিকে চেয়ে আছে,যেভাবে গুন্ডি ভাব নিছে,একেবারে আমার টেবিলের উপর বসে কলম গলায় গেঁথে কথা বলছে
.
আহানা কলমটা সরিয়ে পাশ থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেলো ঢকঢক করে তারপর টেবিল থেকে নেমে শাড়ীর কুচি ঠিক করে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত সামনে এসে দাঁড়ালো
.
আবার কি?
.
আপনি থেকে একেবারে তুই?
আগে শুনো আমার কথা
.
কি কথা শুনবো তোর??তুই তো তোর মারে বাঘের মতন ভয় পাস,তোরে আর কি কমু আমি?বিয়ের ৫/৬দিন হয়ে গেছে,তারপর আবারও বিয়ে হইছে মোট মিলিয়ে দুবার আর তুই খালি মুড মুড কস
.
এবার শুনো আমার কথা,কাল মা কণার মা বাবা আর ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছিলো একেবারে এঙ্গেজমেন্ট করানের জন্য দ্যান আমি বলছি আমি মেরিড
.
সত্যি?
.
৩সত্যি
.
ইয়াহু!!
.
আস্তে,পুরো কথা শুনো,এবার তোমার বিয়ে আটকাবে কি করে,এবার তো তোমার মায়ের জন্য আমার চিন্তা হচ্ছে
.
আপনার কি মনে হয় শান্তি আন্টি এতক্ষণে মাকে এসব জানায় নি?
.
কি বলো!মা তো কথা বলতে পারে না
.
ওহ হ্যাঁ,তাহলে এখন?
.
বিয়ে ভাঙ্গার অভিজ্ঞতা আছে?
.
ওহ ওটা সমস্যা নাই,ছেলে হাবাগোবা হলে ২মিনিটের কাজ,আর আপনার মত হলে একটু টাইম লাগবে
.
আমার মত হলে মানে?
.
মানে নাছোড়বান্দা,রাগী,বদমেজাজি
.
বাই দ্যা ওয়ে,এরকম সুন্দর করে সেজেছো কি জন্যে?তুমি চাও ঐ রামিম ছেলে তোমাকে দেখে পাগল হয়ে যাক?
.
আমাকে সুন্দর লাগছে বুঝি?
.
লাগছে বাট এমন করে যাবা না,এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেলবে,একটু ভূত ভূত টাইপের মেকাপ আছে না ওগুলা ট্রাই করো
.
এক কাজ করবো,মুখ ধুয়ে যাবো,নো মেক আপ লুক নিয়ে
.
আরে না না,তোমাকে নো মেক আপেও সুন্দর লাগে,বললাম তো ভূত সেজে যাবা
.
আপনার আইডিয়া আপনার কাছে রাখেন,ভূত সেজে গেলে মা আমাকে কেলাবে,বলবে ইচ্ছা করে বিয়ে ভাঙ্গতে চাচ্ছি
.
কি করবা তাহলে?
.
কাঁচামরিচের জুস খাওয়াই দিব,শুনলাম ছেলে নাকি কাঁচামরিচ খেলে অজ্ঞান হয়ে যায় ঝালে
.
কমাই দিও,পরে মরে যাবে
.
খাওয়াবো না তো,গায়ে ঢেলে বলবো”ওপস সরি!”
গায়ের জ্বালায় এমনিতেই অজ্ঞান হবে,জুস খাওয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না
.
এত বুদ্ধি নিয়ে থাকো কেমনে!তা কখন দেখতে আসবে?
.
সন্ধ্যাবেলায়
.
ওকে ফাইন,যাও এখন নিজের কাজে,আর চুল ছেড়ে রাখছো কেন?খোঁপা করো,দুবার বিয়ে করছো,সাধ মেটে নি?আবারও করবা?তাহলে চলো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে খোঁপা করে নিলো তারপর বললো”খোঁপা আটকানোর কাঠি তো আনি নাই”
.
শান্ত টেবিলের উপর থেকে পেন টা এনে আহানার খোঁপায় ঢুকিয়ে দিলো,তারপর বললো”যাও”
.
আহানাও চলে আসলে নিজের কেবিনে
ওদিকে শান্ত ভাবনায় আছে আহানা কি করে সামলাবে সব,তার মনে হচ্ছে দুই পরিবার একসাথে হয়ে তারপর নিজেদের মধ্যে সব আলাপ করে নিলে ভালো হতো
ওদিকে দেখতে দেখতে সন্ধাও হয়ে গেছে,আহানা বাসায়ও চলে এসেছে
মা বললো শরবত জুস যেটা ইচ্ছা সেটা তৈরি করতে,ছেলে পক্ষ এসে পড়বে
আহানা কাঁচামরিচের জুস বানালো,মা এসে জিজ্ঞেস করলো সবুজ রঙের এটা আবার কিসের জুস
.
আহানা হেসে বললো লেবু আর পুদিনা,অনেক টেস্ট আর হেলদি ও
.
আচ্ছা
.
ছেলে,,,তার মা আর ফুফু এসে পড়েছে
আহানা উঁকি দিয়ে একবার দেখলো,চেহারায় বোঝা যাচ্ছে এক নাম্বারের বলদ,ইয়া বড় চশমাও পড়েছে,এরে তো কণার সাথে মানাবে
যাই হোক এর গায়ে পুরোটা জুস ঢালবো না,হাফ ঢালবো,বেচারার চেহারা দেখে মায়া হচ্ছে
.
আহানা মাথায় ঘোমটা টেনে সেদিকে গেলো
মা বললো রামিমের সাথে বাগানের দিকে যেতে ট্রেতে জুস নিয়ে,ওখানে চেয়ার আছে সেখানে বসে খেতে আর গল্প করতে
আহানা তাই গেলো সেদিকে,রামিম আহানার থেকে চোখ সরাচ্ছে না
আহানা চেয়ারে বসে দেখলো রামিম এখনও দাঁড়িয়ে ওর দিকে হা করে চেয়ে আছে,আহানা বিরক্তি নিয়ে বললো”বসুন না এখানে,,জুস খাবেন না??”
.
হ্যাঁ খাবো তো
.
রামিম সামনের চেয়ারে বসে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো আবারও
আহানা জুসটা নিলো রামিমের গায়ে ঢালার জন্য তার আগেই রামিম ওর থেকে জুসের গ্লাসটা কেড়ে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা গিলে সাবাড় করে দিলো
আহানা মুখে হাত দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে
রামিম এবার বুঝলো সে আসলে কি খেয়েছে
ঝালের চোটে রামিম “আম্মাগো” বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলো”
দুমমমমম!
আহানা মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে
মরে গেছে নাকি?আমি জেলে যাবো না তো?
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে