Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1603



ভালোবাসার তুই পর্ব-০৫

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_05
#Writer_NOVA

ফুচকার স্টলে দুই গালে হাত রেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সামনে থাকা পোটকা মাছের দিকে।আমার সামনে একের পর এক টপাটপ ফুচকা মুখে পুরছে সাইফ।ভেবেছিলাম এবারো বাঁশ দিবো।কিন্তু মনে হচ্ছে তা আমি পেতে চলেছি।কতদিন ধরে ওর কাছে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ছিলাম। যাতে ফুচকা না খাওয়াতে হয়।কিন্তু আজ বিধি বাম!কোচিং থেকে বের হতে না হতেই একটা বিশাল দেহী পোটকা মাছ আমার সামনে হাজির।সেখান থেকে আমাকে টেনে ফুচকার স্টলে নিয়ে এসেছে। আমার সামনেই আমার ফেবারিট ফুচকা মুখে পুরছে।একটাও দিচ্ছে না।

আমিঃ পোটকা কম করে খা।যেভাবে খাচ্ছিস মনে হয় ফুচকা খাওয়ার জন্য সারাদিন না খেয়ে ছিলি।৫ প্লেটের বেশি আমি একটাও খাওয়াবো না।

সাইফঃ আমাকে অনেকদিন ঘুরিয়েছিস।তাই তুই আরো দুই প্লেট বেশি খাওয়াবি।

আমিঃ আমি পারবো না।বেশি খেতে মন চাইলে নিজের টাকায় খা।টাকা গাছে ধরে না যে ঝাঁকি দিলেই পরবো।আমার বাপে অনেক কষ্ট করে ইনকাম করে।আমার আব্বু সারাদিন খাটুনি খেটে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা আয় করে।তোকে বলে কি লাভ?তুই কি করে বুঝবি।সারাদিন তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াস।আর বাপের টাকায় ফুটানি করিস।যখন নিজে বাবা হবি তখন বুঝবি।

সাইফঃ আমাকে না বলে এসব নিজের কাজে লাগা।যখন বস্তায় বস্তায় লিপস্টিক কিনিস তখন এসব বড় বড় ডায়লগ কোথায় যায় তোর?নিজে যা করিস না তার উপদেশ অন্যকে দিস না।

আমিঃ চুপ কর। আমারটা আলাদা।আমি কি ছেলে নাকি যে তোর সাথে জোড়া হবে।একদম আমার সাথে জোড়া দিবি না।

সাইফঃ কথা বলিস না। চুপচাপ খেতে দে।খাওয়ার সময় কোন চেচামেচি আমার ভালো লাগে না।

আমিঃ আমি দুই প্লেট ফুচকা খাই।টাকা তুই দিয়ে দিস।আমি জানি তুই আমাকে ফিরিয়ে দিবি না।

সাইফঃ টাকা গাছে ধরে না যে ঝাঁকি দিলেই পরবো।আমার বাপে অনেক কষ্ট করে ইনকাম করে।নিজের টাকায় কিনে খা।

আমিঃ আমার ডায়লগ আমাকে দিচ্ছিস।(রেগে)

সাইফঃ তোর থেকেই তো শিখলাম।

আমিঃ সাইফ ভাইয়া।তুই আমার ভালো ভাইয়া,টুনটুনির ভাই, হাতির বাপ,জাদু ভাই। তুই না অনেক ভালো।

সাইফঃ কি দরকার সেটা বল?এতো সুনাম করতে হবে না।কি চাস তাই বল?

আমিঃ বুঝেই যখন গিয়েছিস তখন প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে না ভাই। আমার কাছে একটা টাকাও নেই।এখন যদি তুই আমাকে না ছারিস তাহলে আজকে আমাকে থালা-বাসন মাজতে হবে।প্লিজ ভাইয়া আজকে বিল তুই দিয়ে দিস।পরে একদিন আমি তোকে দিয়ে দিবো।

সাইফঃ তা হবে না মিস।আজকে তুই প্লেট মাজিস বা পাতিল ধোস আমার বিষয় নয়।আজকে তুই বিল দিবি ৭ প্লেটের।

আমিঃ আমার সব টাকা গেলো রে।আজকে মনে হয় ফুচকার স্টলের থেকে একটা প্লেট নিয়ে গিয়ে বাজারের চৌরাস্তায় বসতে হবে। যদি কিছু টাকা পাই।আমার লিপস্টিক কেনার টাকা বোধহয় গেলো রে।আমি আজকে শেষ। এখন মাটিতে গড়াগড়ি খেতে হবে।তাও মনে হয় এই পোটকা মাছটার দয়া হবে না।
(বিরবির করে)

আমার বুকটা কষ্ট ফাডি যাচ্ছে গো।আমি ভাবছি কিছু লিপস্টিক কিনমু।সেটা আর হলো না। দেখি আজ কাউকে খুঁজে পাই কিনা।আজকে একটাও মুরগী পাচ্ছি না। কাউকে যদি পাই তাহলে তার হাতে কৌশলে বিলটা ধরিয়ে দিবো।আল্লাহ একজনকে পাইয়ে দেও।

🍂🍂🍂

এনাজ ল্যাপটপে এক ধ্যানে মনোযোগ সহকারে কাজ করছে।নিঃশ্বাস ছারার সময় পাচ্ছে না।প্রচুর ব্যস্ত আজ সে।অন্য কোম্পানির সাথে আজ তাদের ডিল ফাইনাল করতে হবে।কিছু সময় পর একটা বিশাল রেস্টুরেন্টে তাদের বিকালের নাস্তার পাশাপাশি কোম্পানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হবে।কিন্তু এখনো অনেক কাজ কমপ্লিট হয়নি।তড়িঘড়ি করে সব ফিনিস করছে।এনাজের কেবিনে ঢুকলো ওর এক কলিগ ও ফ্রেন্ড জিসান।

জিসানঃ কি খবর তোর?
এনাজঃ কথা বলিস না তুই। আমি নিশ্বাস ছারার সময় পাচ্ছি না।আর তুই এসেছিস পিনিক মারতে।
জিসানঃ প্যারা নিস না দোস্ত। যাস্ট চিল কর।
এনাজঃ এখন প্যারা না নিলে ডিল ক্যান্সেল হয়ে যাবে।কোম্পানির অনেক লোকসান হবে।তখন আমার চাকরী চান্দের দেশে পারি দিবে।
জিসানঃ সর, আমি তোকে হেল্প করছি।
এনাজঃ লাগবে না। আমি করে নিতে পারবো।
জিসানঃ বেশি কথা বলিস না।আমার কাজ আমাকে করতে দে।

এনাজ চেয়ার খানিকটা সরিয়ে জিসানকে জায়গা করে নিলো।জিসান সামনে থাকা ফাইলগুলো নিয়ে কাজে লেগে পরলো।এনাজ ও জিসানের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক।দুজন দুজনের সাথে সব কথা শেয়ার করে।পার্সোনালি বিষয় নিয়ে একে অপরের মতামত নেয়।নোভার ব্যাপারের সবকিছু জিসানকে বলেছে এনাজ।নোভার সাথে দুই দিন দেখা হওয়ার পর কি কান্ড হয়েছে সব খুলে বলে দিয়েছে সে।জিসানকে নিজের সাথে কিছু ঘটলে না বলা পর্যন্ত এনাজের শান্তি হয় না।পেটের মধ্যে কথায় খোঁচায়।যদিও এনাজকে দেখতে ভীষণ ভদ্র মনে হয়।তবে সে অনেকটা ভিজে বিড়াল টাইপের ছেলে।যাকে মিচকে শয়তান বললেও ভুল হবে না।দেখলে যতটা গম্ভীর টাইপের ছেলে মনে হয় আসলে সে বাস্তবে ভদ্র ফাজিল বা মিচকে শয়তান। ভদ্র ফাজিলকে কেউ ধরতে পারে না।অনেক ব্যাপারে এনাজকে দেখে মনে হয় সিরিয়াস কিন্তু মনে মনে সে শয়তানির মুডে আছে।জিসান ও এনাজ বেশ খানিক সময় ধরে কাজ করছে।কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়।পুরো রুমে পিনপিনে নিরবতা।নিরবতা ভেঙে জিসান প্রথম কথা বললো।

জিসানঃ ঐ মেয়েটার কি খবর?
এনাজঃ কোন মেয়ে?
জিসানঃ ঐ যে রনির বোনের জন্মদিনে যে মেয়েটার সাথে লিপস্টিক নিয়ে তর্ক করেছিস।
এনাজঃ ও নোভার কথা বলেছিস।
জিসানঃ মেয়েটার নামও জেনে ফেলেছিস!!
(অবাক হয়ে)
এনাজঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওর নাম আমি আরো ২ বছর আগের থেকে জানি।
জিসানঃ ২ বছর মানে!!!!

আগেরবার থেকে বেশি অবাক হয়ে এনাজের দিকে তাকালো জিসান।জিসানের মুখটা বাংলা পাঁচের মতো হয়ে হা হয়ে আছে।এনাজ ওকে এভাবে দেখে ফিক করে হেসে উঠলো। প্রচুর হাসি আসছে এনাজের।কিন্তু মুখ চেপে আটকে রেখেছে। জিসান এনাজের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এনাজঃ এভাবে তাকানোর কোন ওয়ে খুঁজে পাচ্ছি না।আমি অবাক হওয়ার মতো কিছু বলি নি। নোভাকে আমি ২ বছর আগে কলেজে দেখেছিলাম।তখনই আমি ওর যাবতীয় ডিটেলস জোগাড় করে ফেলেছিলাম।

জিসানঃ ওরে ফাজিল।তলে তলে এতো কিছু। তুই ২ বছর ধরে নোভাকে চিনিস।এতো ভালুপাসা।কোথায় রাখিস ভাই?

এনাজঃ বাদ দে এসব কথা।

জিসানঃ বিয়ে কবে করবি?দাওয়াত দিস শালা।আবার একাই বউ নিয়ে পরিচয় করে দিতে আসিস না।যদি এমনটা করিস তাহলে তোকে মেরে হসপিটালে ভর্তি করে রাখবো।বিলের চিন্তা করিস না।সেটা তোর বউয়ের থেকে আদায় করে নিবো।

এনাজঃ লিপস্টিক পাগলীর থেকে টাকা আদায় করা এতো সহজ নয়।লিপস্টিক দেখলে হুশ থাকে না।ওকে হাজার বার অপমান করলে কোন রিয়েকশন হবে না।কিন্তু লিপস্টিক কে কিছু বললে বিনা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে দিবে।

জিসানঃ ভাই, এটাকে নিয়ে সংসার করবি কি করে?
এনাজঃ আল্লাহ মালুম।চল,মিটিং-এ দেরী হয়ে যাচ্ছে।

জিসানঃ কথাটা পাল্টিয়ে ফেললি।

এনাজঃ জলদী চল।দেরী হয়ে গেলো।

জিসানঃ বললি না তো।আমিও তোর মুখ থেকে বের করেই ছারবো।

এনাজ মুচকি হেসে ব্যাগ কাঁধে নিলো।জিসানও ব্যাগ নিলো।দুজন একসাথে রওনা দিলো।এনাজ বাইকের চাবি হাতের আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে রওনা দিলো গন্তব্যে।এনাজের মাথায় এখন একটা শয়তানি বুদ্ধি ঘুরছে।নতুন করে আবার নোভাকে জ্বালানোর আইডিয়া সে পেয়ে গেছে।

#চলবে

ভালোবাসার তুই পর্ব-০৪

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_04
#Writer_NOVA

কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকতে দেরী কিন্তু আমার পিঠে দুরুম দারুম কিল পরতে দেরী হলো না।কি হলো আমার সাথে সেটা বুঝতে আমার কিছু সময় লাগলো।ততক্ষণে আমার পিঠ আলু ভর্তা হয়ে গেছে। আমি পিঠ ধরে মা গো, বাবা গো বলে চিৎকার শুরু করলাম।

আমিঃ ও বাবা গো, মা গো।কে কোথায় আছো গো?আমায় বাঁচাও গো।আমার পিঠে তাল পরছে।কোন হারামী আমার পিঠে কিল দিলো রে।আজ তার একদিন কি আমার একদিন?আমার সাথে লাগতে আসার মজা ভালো হবে না।

রেগে বাঘের মতো তাকাতেই বিড়াল হয়ে গেলাম।সামনে আমার পুরো বান্ধবী টিম কোমড়ে হাত দিয়ে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ দুটো এদিক সেদিক ঘুরিয়ে একটা বলদা মার্কা হাসি দিলাম।কিন্তু মন জয় করতে পারলাম না। সামনে আমার তিন বান্ধবী শারমিন,সিফা,মৌসুমি দাঁড়িয়ে আছে। এতটা রেগে আছে যে ওদের চোখের দিকে তাকাতে পারছি না।

শারমিনঃ এই তোর আসার সময় হলো।দুই দিন ধরে তোর কোন খোঁজ-খবর নেই।

সিফাঃ তোর কি হয়েছে বল তো?

মৌসুমিঃ আমরা বড়লোক্সদের সাথে কথা বলি না।

আমিঃ ঢংগীগুলি।আমার কোন খোঁজ-খবর নিছোত।একটা কলও তো করিসনি।

আমি রেগে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা আমার দিকে দ্বিগুন রেগে তাকালো।আমি চুপ হয়ে মুখে এক আঙুল দিয়ে রাখলাম।

সিফাঃ তোর ফোন বন্ধ কেন?কতবার তোকে কল দিছি তোর ধারণা আছে।

মৌসুমিঃ তোর আম্মুর কাছে ফোন করে জানতে পারলাম তুই মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিস।তুই তো ঐ বাড়িতে গেলে আমায় ভুলে যাস।

শারমিনঃ কে তুই? যা যেখানে থেকে এসেছিস সেখানে যা।আমরা তোকে চিনিনা।

আমিঃ ওরে আমার শারু বেবি,তুমি রাগ করছো আমার সাথে। এবার বুঝতে পেরেছি ঢংগীরা।আমার সাথে অভিমান করেছো।আহারে!!! ঢং না করে ভেতরে চল।আমার ক্ষুধা লাগছে।

মৌসুমীঃ বাসা থেকে খেয়ে আসিস নি?

আমিঃ হুম খেয়েছি। এখন আবার খাবো।তোর কোন সমস্যা? আমার বাপের টাকায় খাই তোর কি রে?

মৌসুমিঃ আমি এমনি বললাম।তাই বলে এভাবে অপমান করবি।

আমিঃ অপমানের দেখছিস কি?সবে তো শুরু করেছি।এখনো আরো বাকি আছে। ঐ সিফু আমার ব্যাগটা ধর তো।আমি ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করে ঠোঁটে দিমু।ঠোঁটের লিপস্টিক হালকা হয়ে গেছে।

শারমিনঃ পৃথিবী উল্টিয়ে যাবে তারপরেও তোর লিপিস্টিক দেওয়া বন্ধ হবে না।বাসা থেকে দিয়ে আসতে আসতে খেয়ে ফেলছিস।

আমি ব্যাগ থেকে আয়না ও লিপস্টিক বের করে নিলাম।ব্যাগটা সিফার হাতে দিয়ে লিপস্টিক নিজের হাতে নিলাম।আয়নাটা মৌসুমির হাতে দিয়ে দিলাম।

আমিঃ চুপ কর।আমার আয়নাটা ধর তো।লড়াচড়া করবি না।সুন্দর করে ধর না রে।আমি তো ভালো করে দিতে পারছি না।যদি লিপস্টিক দেওয়া সুন্দর না হয় রে তোদের তিনটার খবর আছে।(রেগে)

মৌসুমিঃ বিয়ের পর কোন দিন জানি লিপস্টিকের কারণে ওর জামাইকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।বলবে তোর থেকে আমার লিপস্টিক বেশি দামী।

আমিঃ পাগল হলেও এতটা পাগল হয়নি।নিজের জামাইরে ডিভোর্স দিয়া দিমু।জাতে পাগল হলেও তালে ঠিক আছি।

সিফাঃ যাক তোর তাহলে সুমুতি হয়েছে। নিজের জামাইকে ডিভোর্স দিবি না।

আমিঃ আরে বলদী জামাইরে ডিভোর্স দিলে তো মন মতো লিপস্টিক কিনতে পারুম না।যেই ব্যাটারে বিয়া করুম তার থিকা লিপস্টিক কিনে তারে ফকির বানাই ফালামু।

মৌসুমিঃ তুই বদলাবি না।
আমিঃ হইছে এবার ভেতরে চল।

চার বান্ধবী একসাথে ভেতরে চলে গেলাম।দুই দিন ওদের ছারা ছিলাম।কিন্তু মনে হচ্ছে কতদিন পর সবার দেখা হয়েছে।

🍂🍂🍂

আজকাল অফিসের চাপ একটু বেশি এনাজের।নিশ্বাস ছারার জো নেই। কোম্পানির মালিক এনাজকে অনেক পছন্দ করে।কারণটা হলো ওর পার্সনালিটি।খুব কম সময়ে সবার মন জয় করার ক্ষমতা রাখে সে।মাথায় হাত দিয়ে কেবিনে বসে আছে। তখনি রুমে ঢুকলো কোম্পানির ম্যানেজার রুহুল আমিন সাহেব।

রুহুলঃ মাথা ব্যাথা করছে নাকি এনাজ?

এনাজঃ আসালামু আলাইকুম স্যার।কেমন আছেন?

রুহুলঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
এনাজঃ আলহামদুলিল্লাহ।

রুহুলঃ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না ভালো আছো।কি হয়েছে তোমার?

এনাজঃ কিছু না।একটু মাথা ধরছে।কিছু বলবেন স্যার।হঠাৎ এই সময়।

রুহুলঃ একটা কথা বলতেই এসেছিলাম।তোমার শরীরটা যখন ভালো না তাহলে পরে বলব।

এনাজঃ না না সমস্যা নেই। বলুন আপনি।

রুহুলঃ পারিবারিক কাজের জন্য কিছু দিন ঢাকায় যেতে হবে।তুমি যদি আমার কাজগুলো একটু সামলে নিতে।অনেক জরুরি দরকার।তা না হলে যেতাম না।তোমার ওপর ভরসা আছে আমার।তাই এই দায়িত্ব তোমাকে দিতে চাইছি। অন্য কারো ওপর তোমার মতো ভরসা করতে পারি না।প্লিজ বাবা,তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

এনাজঃ এ কেমন কথা স্যার।আপনি নিশ্চিন্তে আমার ওপর ভরসা করে যেতে পারেন।আমি অবশ্যই আপনার দেওয়া দায়িত্ব যথাযথ পালন করবো।এতটুকু আস্থা আমার নিজের ওপর আছে স্যার।

রুহুলঃ তুমি আমাকে চিন্তামুক্ত করলে বাবা।আল্লাহ তোমার ভালো করুক।আমি এখন আসছি।তুমি পিয়নকে ডেকে গরম গরম এক কাপ চা কিংবা কফি
খেয়ে নেও। মাথা ধরাটা কিছুটা হলেও কমবে।

এনাজঃ জ্বি আমি খেয়ে নিব।আমার ও আমার ছোট ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন স্যার।

রুহুলঃ আমার দোয়া সবসময় তোমাদের সাথে আছে।আর হ্যাঁ,শুনো তোমাকে বলতে হবে না।আমি এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় পিয়নকে বলে দিবো।তোমার আর কষ্ট করে বলতে হবে না।

এনাজঃ ধন্যবাদ স্যার।

রুহুলঃ ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোট করো না এনাজ।ধন্যবাদ তো তুমি পাওনা আমার কাছ থেকে। আমি নয়।

এনাজ মুচকি হাসলো।রুহুল আমিন সাহেব এনাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করলো।এনাজ তার যাওয়ার পানে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

🍂🍂🍂

পরের দিন……..

ক্লাসরুমে বসে হাই তুলছি নোভা।সাথে ওর বান্ধবী টিম।স্যার ক্লাস করছে যে টপিক নিয়ে তা ওর মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে এদিক সেদিক তাকালো।ভেনেছিলো এখন ওর বান্ধবীদের সাথে লুকিয়ে গল্প করবে।তা আর হলো না।ওরা খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে।হাই তুলে ব্যাগ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইল বের করে নিজের ঠোঁটের লিপস্টিক চেক করলো।ঠোঁটের লিপস্টিক অনেকটা হালকা হয়ে গেছে। ক্লাস চলাকালীন সবার দিকে তাকিয়ে ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করে ঠোঁটে ঘষতে শুরু করলো।এতটা মনোযোগ দিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক দিচ্ছে যে সামনে যে স্যার এসে দাঁড়িয়ে আছে সে দিকেও খেয়াল নেই।

আমি গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে লিপিস্টিক লাগাচ্ছিলাম।এমন সময় সিফা ওর হাত দিয়ে বারবার খোঁচা মারছে।আমি রেগে চিৎকার দিয়ে বললাম।

আমিঃ ঐ ছেমরি চোখে দেখস না লিপস্টিক দিতাছি।হাত দিয়ে খোঁচা মারছিস কেন?শান্তিতে কি একটু লিপস্টিকও দিতে দিবি না।তোদের এতো কি সমস্যা রে।সবাই আমার লিপস্টিকের পেছনে পরে আছিস।

সিফাঃ সামনে তাকা।(আস্তে করে)

আমিঃ ঐ ছেমরি সামনে কি দেখবো রে।আমার এতো দিকে নজর দেওয়ার টাইম নেই। আমি আগেও বলছি এখনও বললাম।আমি লিপস্টিক দেওয়ার সময় একটুও জ্বালাবিনা।শাঁকচুন্নি গুলো,আমার ভালো সহ্য হয় না।আমার লিপস্টিক পুরো নষ্ট করে দিলো।ধূর,কিছু ভালো লাগে না।

স্যারঃ আমি আয়নাটা ধরে তোমাকে লিপিস্টিক দিতে সাহায্য করি।

আমি তার দিকে না তাকিয়ে খুশি হয়ে বললাম।

আমিঃ তাহলে তো অনেক ভালো হয়।নিন আপনি আয়না ধরুন।আমি সুন্দর করে লিপস্টিক দিয়ে নেই।
স্যারঃ তোমার সাহস তো কম বড় না।স্যার কে বলো তোমার আয়না ধরতে।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার?

আমি মাথা ঘুরিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম।এতক্ষণ স্যারকে আমি এসব বলেছিলাম।আল্লাহ আমার এখন তেরটা বেজে যাবে।রক্ষা করো তুমি।আমি লিপস্টিক পেলে দীন-দুনিয়ার খবর কেন যে ভুলে যাই।

স্যারঃ এই মেয়ে ক্লাস রুম থেকে এখনি বের হয়ে যাও।
আমিঃ স্যার আমার কথাটা শুনুন।আমি বুঝতে পারিনি আপনি এখানে ছিলেন।(মাথা নিচু করে)

স্যারঃ একদম চুপ। আরেকবার কথা বললে আমি তোমার বাবা-মা কে ডাকবো।এই মুহুর্তে তুমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবে।(রেগে)

আমি চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো করে ব্যাগটা সামনে নিয়ে জাপটে ধরে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।বের হয়ে কিছু সময় উড়া ধুরা ডান্স করলাম ক্লাসের বাইরে।এখন আমি ফুচকা খেতে যাবো।সাথে কতগুলো লিপস্টিক কিনবো।বাজারে নিউ ব্রান্ডের কিছু লিপস্টিক এসেছে।স্যার আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে আমার কাজ আসান করে দিয়েছে। নাচতে নাচতে ফুচকার স্টলের দিকে রওনা দিলাম।খুশিতে সিঁড়ি দিয়ে ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নামলাম।আহা কি আনন্দ আকাশে,বাতাসে!!! আমি আজ অনেকগুলো রং-বেরঙের লিপস্টিক কিনবো।

#চলবে

ভালোবাসার তুই পর্ব-০৩

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_03
#Writer_NOVA

ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজলো ।গোসল সেরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আরেকবার চোখ দুটো এদিকে সেদিকে ঘুরালো এনাম।না,কোথাও নেই। গেলো কোথায়?ঘুম থেকে উঠেও তো দেখলো না।বারান্দায়, কিচেনেও উঁকি মারলো সেখানে নেই ।সকাল সকাল কি একটা জলজ্যান্ত মানুষ উধাও হয়ে গেল।ঠিক তখনি সদর দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো এনাজ।হাতে এক হালি ডিম দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো ছোট করে মুখে বিরক্তি নিয়ে এনাম ওর বড় ভাই এনাজের দিকে তাকালো।

এনামঃ কোথায় ছিলে তুমি??
এনাজঃ হাতে কি ডিম দেখতে পাচ্ছিস।না পেলে বল আমি দুটো তোর মাথায় ভেঙে দেখিয়ে দেই।
এনামঃ আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তুমি এতো সকাল সকাল কোথায় চলে গিয়েছিলে?সব জায়গায় খুঁজে পাই নি।
এনাজঃ আজ তোর কলেজ নেই?
এনামঃ আছে তো।সেই জন্য সকাল সকাল গোসল করে তৈরি হয়ে নিয়েছি।অনেক খুদা লেগেছে ভাইয়া।জলদী কিছু করো।আজ কি বাসায় রান্না হয়েছে?
এনাজঃ ভাত রান্না করেছি।সাথে ভেবেছিলাম ডিম ভুনা করবো আলু দিয়ে। কিন্তু ফ্রিজ খুলে দেখি ডিম নেই। তাই দোকান থেকে গিয়ে ডিম নিয়ে এলাম।ভাই তুই একটু অপেক্ষা কর।ভাতের মার ঝরাতে দিয়ে গেছি।তারাতাড়ি করে এখন ডিম ভুনা করলে হয়ে যাবে।

এনাজ জলদী করে কিচেনে গিয়ে ছোট একটা পাতিলে ডিম সিদ্ধ বসিয়ে দিলো।ভাতের মার ঝরা শেষ হয়ে গেছে। তাই পাতিল উঠিয়ে ভাত একটা ছোট বোলে বেড়ে নিলো।এনাজ আহমেদ ও এনাম আহমেদ। সম্পর্কে আপন ভাই। ৩ বছরের ছোট-বড়।বাবা-মা খুব ছোটবেলায় মারা গেছে। এনাজের বয়স ২৬ বছর আর এনামের ২৩ বছর।এনাম এখনো পড়াশোনা করেছে। এনাজ মাস্টার্সে পড়ার পাশাপাশি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে মোটামুটি ভালো পজিশনে চাকরি করে।দুই ভাই দেখতে, শুনতে মাশাল্লাহ। এতিম ছেলে হলেও দুজনের মাঝে কোন বেড হেবিট নেই। লোকজনের সাথে মেলামেশা খুব কম।এলাকার লোক ওদের দুজনকে ভালো হিসেবে জানে।দুই ভাই একটা ছোট বাসায় ভাড়া থাকে।

ডিম সিদ্ধ হতে হতে এনাজ একটা ছুরি নিয়ে আলু কুচি করে কেটে নিল।সাথে পেঁয়াজ ও মরিচ। রান্না করতে ভালোই পারে সে।বেঁচে থাকার তাগিদে রান্নাটাও শিখে নিয়েছিলো সে।খুব দ্রুত ডিমের খোসা ছারিয়ে নিলো। পেঁয়াজ লাল হয়ে এলে মশলা কষিয়ে নিলো।খুব জলদী করে রান্না শেষ করলো।এনাম তৈরি হয়ে এসে দেখলো তার বড় ভাই টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।

এনামঃ এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল ভাই!!!
এনাজঃ আমি তোর মতো এতো অলস নই।
এনামঃ এভাবে অপমান না করলেও পারো ভাই।
এনাজঃ হয়েছে কথা কম বলে জলদী খেয়ে কলেজে যা।আমার অফিসের জন্য তৈরি হতে হবে।
এনামঃ আজ এত দেরী যে??
এনাজঃ অফিসে মিটিং আছে। ১০ টায় শুরু হবে।এতো তাড়াতাড়ি গিয়ে কাজ নেই।

দুই ভাই একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো।দুপুরের খাবারটা ছারা বাকি দুই বেলা একসাথে খাবার খায় ওরা।দুই ভাইয়ের মধ্যে ভীষণ মিল।এনাম বোল থেকে ভাত বেড়ে নিয়ে এনাজকে বললো।

এনামঃ ভাই এবার একটা বিয়ে কর।তাহলে অন্ততপক্ষে আর কিছু হোক বা না হোক, সকালে তোকে এত কষ্ট করে রান্না করতে হবে না।
এনাজঃ খুব শীঘ্র একটা কাজের বুয়া রাখবো।ঢাকার শহরে কাজের মানুষ পাওয়া অনেক টাফ।
এনামঃ তুই কি বিয়ে করবি না?
এনাজঃ তুই রান্নার মানুষের চিন্তা করছিস তাই তোকে চিন্তামুক্ত করলাম।এখন বিয়ের কথা কেন বলছিস?
এনামঃ বয়স তো কম হলো না ভাইয়া।এবার তোর বিয়ে করা উচিত।তোর যদি কোন পছন্দ থাকে তাহলে তাকেই বিয়ে করে নিয়ে আয়।
এনাজঃ মেয়েটা কে?
এনামঃ কোন মেয়ে?
এনাজঃ তোর নিশ্চয়ই কোন মেয়ে পছন্দ হয়েছে। নয়তো আমাকে বিয়ের জন্য বলতি না।কোথায় এতোদিন তো এসব কথা বলিস নি।
এনামঃ আমি এমনি বলছি।তুমি নেগেটিভ মাইন্ডে নেও কেন?
এনাজঃ তোর এসব ফালতু বকবক শোনার সময় আমার নেই। আমার খাওয়া শেষ। তুই খাবার শেষ করে কলেজে চলে যা।আর হ্যাঁ,আমার বিয়ে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না।আমার যাকে পছন্দ হবে তাকেই বিয়ে করবো।বিয়েটা মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি করতে চেলেছি।

আনমনে মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেললো এনাজ।কিন্তু তার ছোট ভাই প্রথমে কিছু না বুঝলেও কিছু সময় পর জিজ্ঞেস করলো।

এনামঃ ভাই তুমি সবার শেষে কি বললে?তুমি খুব শীঘ্র বিয়ে করবো।কেউ পছন্দ আছে নাকি।প্লিজ ভাইয়া বলো না ভাবী কোথায়?আমি তাকে দেখতে চাই।

এনাজ জিহ্বায় কামড় দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো।মুখ ফসকে কি বলে ফেললো সে?ঐ লিপস্টিক পাগলী ওর রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেছে।এখন তার জন্য সবার সামনে উল্টো পাল্টা কথাও বলছে।মাত্র দুই দিনে মনের অনেক অংশ জুরে গেছে সে।

এনামঃ ভাইয়া বলো না, তোমার কেউ আছে নাকি?ভাবিকে ঘরে তুলবে কবে?প্লিজ, প্লিজ ভাইয়া। আমাকে ভাবীর সাথে দেখা করিয়ে দেও।
এনাজঃ কথা কম বল।তোর কোন ভাবী নেই।

এক মিনিট দেরী না করে হনহন করে চেয়ার থেকে উঠে রুমে চলে গেল। সেখানে গিয়ে অফিসের জন্য তৈরি হতে লাগলো।এনাম ঠোঁট উল্টে খাবারে মনোযোগ দিলো।খাবার শেষ করে যেতে নিলে পেছন থেকে এনাজ ডাক দিলো।এনাম পেছন দিকে না ঘুরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।সে এখন বড় ভাইয়ের সাথে রাগ করেছে।

এনাজঃ আমি তোদের কলেজের ঐ দিক দিয়েই যাবো।তোকে নামিয়ে দিয়ে যাবো।আমার সাথে বাইকে চলে যাস।

বাইকের চাবি নিয়ে কাঁধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিলো এনাজ।তারপর ভাইয়ের সাথে বাইকে রওনা দিলো কলেজের উদ্দেশ্য।বাইক থামলো কলেজের গেইটে।এনাম কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকে গেল। পেছন থেকে জোরে ডাক দিলো এনাজ।কোন কথা না বলে এনাম ভেতরে চলে এলো।এনাজ বাইক সাইডে রেখে দৌড়ে এনামের কাছে এলো।কাঁধে হাত রেখে বললো।

এনাজঃ কি রে কি হয়েছে তোর?রাগ করেছিস আমার সাথে। নে ধর। টাকাগুলো রেখে দে।কাজে লাগবে।
এনামঃ (নিশ্চুপ)
এনাজঃ তোর ছোট বাচ্চাদের মতো অভিমান করা এখনো যায়নি।অনেক বড় হয়েছিস।কিছু দিন পর যখন আমি তোর সাথে থাকবো না। তখন কি করবি?
অস্ট্রেলিয়া গিয়ে তোকে পড়াশোনা করে অনেক বড় হতে হবে।

এনাম হুট করে ভাইকে জরিয়ে ধরলো। কাধে মুখ গুঁজে কান্না করলো।এনাজ আলতো হাতে ধরে রেখেছে। তার মনটাও সায় দেয় না ভাইকে দূরে পাঠাতে।কিন্তু ভাইয়ের ভালোর জন্য তো পাঠাতে হবেই।এনামকে নিজের থেকে ছারিয়ে টাকাগুলো ভাইয়ের পকেটে গুঁজে দিলো এনাজ।তারপর চোখ মুছতে মুছতে গেইট দিয়ে বের হয়ে গেল।এনাম দাঁড়িয়ে ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটা নিজের জন্য একফোঁটাও ভাবে না।সবকিছু তার এনামকে ঘিরে।এনাম ভালো থাকলেই এনাজ ভালো থাকে।দুই ভাই একে অপরের আত্মার সাথে মিশে আছে। কেউ কাউকে ছারা থাকতে পারে না।

এনামঃ সবসময় আমার কথা ভাববে।নিজের দিকে একটু নজর নেই। শুধুমাত্র আমার ভালোর জন্য আমাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাবে।নিজের ভবিষ্যতের জন্য একটুও খেয়াল নেই। বড় ভাইরা মনে হয় এমনি হয়।নিজের শখ,ইচ্ছা, সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যতে গড়ে দেয়।নিজের সুখগুলোকে বিসর্জন দিয়ে ছোট ভাই-বোনের শখ পূরণ করে দেয়। বড় ভাইরা নিজের আনন্দ বিক্রি করে অন্যের আনন্দ এনে দেয়।স্যালুট তোমাকে ভাই। তুমি না থাকলে আজ আমি এতদূর আসতে পারতাম না।রাস্তায় অনাহারে, অনাদরে,অবহেলায় মরেই যেতাম।

বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চুপচাপ হেঁটে ভেতরে চলে গেল। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে নিজের ভাইয়ের সাথে থাকতে।কিন্তু তা হবে কিনা সে জানে না।অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার দিন তো ঘনিয়ে আসেছে।
কি হবে, কি করবে সেটা এনাম নিজেও জানে না।ভাইকে ছাড়া তার কিছুই ভালো লাগে না। মন খারাপ করে ক্লাস রুমে চলে গেল।

#চলবে

ভালোবাসার তুই পর্ব-০২

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_02
#Writer_NOVA

—ঐ পোটকা মাছ এদিকে আয়।

আমার ডাক শুনে প্রায় গোলুমোলু দেখতে একটা ছেলে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো।তাকিয়ে ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে গেল। চমকে বুকে দু-তিনবার ফুঁ দিলো।ছেলেটা আমার ফ্রেন্ড সাইফ।
এতক্ষণ সাইফ বাইকে বসে আশেপাশে তাকিয়ে শিস বাজাচ্ছিলো।আমার কথা শুনে সামনে এগিয়ে এসে রেগে বললো।

সাইফঃ আপনার সাহস তো কম বড় না।আমাকে পোটকা মাছ বলেন।আজকালের মেয়েগুলো একটু রাস্তা -ঘাটে একটু বেশি করে।আল্লাহ আমাকে মোটা বানাইছে আমিতো হয়নি।তাই বলে আপনি আমাকে এসব কথা বলবেন।

আমিঃ সারাদিন, সারারাত শুধু খাওয়ার ওপর থাকলে তুই মোটা হবি না তো কি হবি?
সাইফঃ কে আপনি?
আমিঃ এতক্ষণে লাইনে আইছো। ঐ পোটকা মাছ, তুই আমারে চিনস না।আমি নোভা।

সাইফঃ নোভা তুই!!!! (অবাক হয়ে)তোর এই অবস্থা কেন?তুই কাদা দিয়া ভূত সাজছিস কেন?

আমিঃ আমার বিয়া লাগছে তো।সেই খুশিতে কাদা দিয়া ভূত সাইজা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। (রেগে)

সাইফঃ কি হয়েছে আমায় বল তো?

আমিঃ ভূত কি আমি সাধে সাজছি?আমারে তো —অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ 😭।(কাঁদতে কাঁদতে)

সাইফঃ আরে কান্না করছিস কেন বলবি তো?
আমিঃ নাহ্ এই কথা পোটকা মাছেরে বলা যাইবো না।আমি সরল বিশ্বাসে সব বলে দিবো।আর পোটকায় সারা কলেজ বলে বেড়াবে।তখন আমার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ফেলবো।মান-সম্মান যতুটুক আছে সেটুকুও মনে হয় আকাশে উড়াল দিবো।এখন কিচ্ছু করার নাই।কোনরকম মিথ্যা কথা বলে কাটিয়ে দিতে হবে।আর ব্যাটা খাটাশ,ধলা ইন্দুর এনাজকে তো আমি পরে দেখে নিবো।(মনে মনে)

সাইফঃ কি রে কথা বলছিস না কেন?
আমিঃ কি আর বলবো রে পোটকা মাছ?কালকে রাতে তো অনেক বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টিতে রাস্তার পাশের গর্তগুলো ভরে টইটুম্বুর হয়ে ছিল।আমি খেয়াল না করে ঠাস করে পরে গিয়ে কাদা দিয়ে ভূত হয়ে গিয়েছি।

সাইফঃ ওহ্ এই খবর।তাহলে আজ কলেজ গিয়ে তোর কোন কাজ নেই। বাসায় চলে যা।
আমিঃ সে তো যাবোই।বলছিলাম কি সাইফ তুই না আমার ভালো ভাই,মানিক চাঁদ বন্ধু আমার।
সাইফঃ পাম না দিয়ে কি লাগবে সেটা বল।
(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

আমিঃ ধূর ছাই।ওকে যে পাম মারছিলাম সেটাও বুঝে গেল।এখন সরাসরি বললে কি আমাকে রেখেই চলে যাবে নাকি।না না তা তো হতে দেওয়া যাবে না।মাথা খাটা নোভা।পোটকা মাছকে পোটানোর চেষ্টা করতে হবে।(মনে মনে)

সাইফঃ তুই থাক আমি গেলাম।

আমিঃ আরে আরে কোথায় যাচ্ছিস।সাইফ ভাই আমার তুই যদি আমাকে একটু তোর বাইক দিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসতি।দেখছিস তো কলেজের সাদা ড্রেস এখন কাদা ড্রেসে পরিনত হয়েছে।

সাইফঃ আমি পারবো না।তোর যে কাজ করতে যাবে সেটাই তুই আমাকে বাঁশ ধরিয়ে দিবি।

আমিঃ মনে রাখিস কথাটা।পরীক্ষার সময় আমিও তোকে দেখাবো না হু হু হু।(ব্লাকমেল করে)

সাইফঃ না দেখালে নাই।যা ভাগ।পরীক্ষারটা পরীক্ষার সময় দেখা যাবে।

আমিঃ প্লিজ আমাকে দিয়ে আয় না।তুই যা চাইবি আমি তোকে তাই দিবো।

সাইফঃ আমি যা চাইবো তাই দিবি।(খুশি হয়ে)
আমিঃ হুম।

🍂🍂🍂

বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।সাইফ কিছু সময় ভেবে শয়তানি হাসি দিলো।
ওর মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে ওকে পূর্বে যত বাঁশ দিয়েছিলাম আজ তা আজ ফেরত দেওয়ার তারিখ চলে এসেছে।তাই বেশি দেরী না করে পুরো বাঁশ বাগানের মালিক আমাকে করে দিবেই দিবে।

সাইফঃ যা বেশি কিছু চাইলাম না।তিনটা বিয়ার কেনার টাকা দিস।

আমিঃ জুতার বারি চিনিস।ঘুষি মেরে মুখের নকশা বদলে ফেলবো শয়তান।সুযোগ দিয়েছি বলে যে তুই ছাইপাঁশ খেতে চাইবি তাতো হবে না। (রেগে)

সাইফঃ তাহলে দিবি না।ঠিক আছে তাহলে ১০ প্লেট ফুচকা খাওয়ালেই হবে।

আমিঃ ১০ প্লেট!!!!! (জোরে চিৎকার দিয়ে)

সাইফঃ মাত্র ১০ প্লেট ফুচকাই তো খেতে চেয়েছি।

আমিঃ সবাইকে আমি খাওয়াতে পারবো না।

সাইফঃ সবাইকে কেন খাওয়াবি।১০ প্লেট তো আমি একা খাবো।
আমিঃ এ্যাঁএএএএএএএ!!!(চোখ দুটো বড় বড় করে)
সাইফঃ এ্যাঁ না হ্যাঁ।

আমিঃ তোরে কি হুদাই পোটকা মাছ কই আমি।আল্লাহ জানে পেটের মধ্যে ড্রাম ঢুকাই রাখছোস নি।

রেগে কথাটা বলে সাথে সাথে সুর পাল্টে ফেললাম।মধুর সুরে কলা করে বললাম।

আমিঃ শোন না ভাই,আমার কাছে এত টাকা নেই। তোকে আমি ৫ প্লেট ফুচকা খাওয়াবো।

সাইফঃ তাহলে হবে না।তুই থাক,আমি বিদায় হই।

আমিঃ ঐ পোটকা তুই কি মেয়ে যে এত প্লেট ফুচকা খাবি।ফুচকা বেশি খেলে অসুখ হয়।আমি কি আমার ভাই+ বন্ধুর ক্ষতি চাইতে পারি বল।আমি তো তোর ভালোর জন্য বলছি।প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর।আমি এভাবে আর থাকতে পারছি না।কিরকম খ্যাচ খ্যাচ করছে শরীর।

সাইফঃ আচ্ছা এত করে যখন বলছিস তাহলে আমি ৫ প্লেটে রাজী আছি।চল তাহলে ফুচকা খেতে।

আমিঃ তুই কি পাগল হয়েছিস? এখন এই অবস্থায় আমি যাবো।সবাই আমাকে দেখে হাসবে।আমি তোকে আগামীকাল খাওয়াবো।

সাইফঃ আগামীকালের কথা বলে তুই আমাকে কতবার এমন করেছিস তার হিসেব আছে। আমি এবার আর ভুল করছি না।

আমিঃ আগে শুনেছিলাম হাতি ফাঁদে পরলে চামচিকাও লাথি মারে।আজ আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটছে।এখন হবে চামচিকা ফাঁদে পরলে হাতিও লাথি মারে।পোটকারে তোর ব্যবস্থা আমি পরে করবো।আগে আমি কোনমতে বাড়ি তো যাই।তারপর তোর আর ঐ এনাজকে কি করে টাইট দিবো তা আমার ভালো করেই জানা আছে।এখন কি করে, কি করি?পেয়েছি!!এই পোটকা মাছকে ইমোশনাল ব্লাকমেল করতে হবে(মনে মনে)।আমি সত্যি তোকে আগামীকাল খাওয়াবো।এখন আমার হাতে এত টাকা নেই। তুই যদি চাস তোর ফ্রেন্ডকে ফুচকার স্টলের থালা-বাসন মাজাবি।তাহলে এখনি চল।(কান্নার অভিনয় করে)

সাইফঃ আচ্ছা চল।আর কান্না করতে হবে না।তবে আগামীকাল কিন্তু আমার ফুচকা না খাওয়ালে তোর খবর আছে। সত্যি খাওয়াবি তো।নাকি আগেরবারের মতো ফুচকা খাওয়ানোর কথা বলে আমাকে দিয়েই বিল ভরাবি।

আমিঃ সত্যি তোকে খাওয়াবো।আমার লিপস্টিকের কসম।তুই তো জানিস আমি লিপস্টিক নিয়ে কোন মিথ্যা কথা বলি না।

সাইফঃ নে বাইকে উঠ।

আমিঃ সাইফ একটু লড়াচড়া কম করিস কেমন।তুই আবার আমাকে ঠেলা মারিস না।তাহলে আমি সোজা নিচে পড়ে হাত-পায়ের হাড্ডি ভেঙে বিছানায় পরে থাকবো।তোর বাইকে উঠতে আমার এমনি ভীষণ ভয় করে।এই মনে হয় তুই আমাকে ফেলে দিলি।তোর বাইকে উঠলে আমি সামনে তাকিয়ে হাতি ছারা আর কিছু দেখতে পাই না।

সাইফঃ কি বললি তুই? (রেগে)

আমিঃ আমিতো যাস্ট মজা করলাম পোটকা মাছ।

কথাটা বলে আমি একটা বেক্কল মার্কা হাসি দিলাম।তাতে কাজ হলো না।সাইফ রেগে চোখ মুখ লাল করে ফেলছে।আমিতো মনে মনে অলরেডি দুরুদ শরীফ পরে ফেলছি।এই পোটকা রেগে গেলে আমি অনেক ভয় পাই।যদি আমাকে মোয়া বানিয়ে ছুড়ে মারে কিংবা ধরে গাইল্লা ফালায় সেই কারণে ওর রাগ দেখলে আমার ডর করে।

সাইফঃ তুই আবার আমাকে পোটকা মাছ বললি।

আমিঃ সরি সরি।আর বলবো না।তোকে এখন থেকে ভাই বলে ডাকবো।দয়া করে ভাই এবার আমাকে জলদী করে বাসায় দিয়ে আয়।

সাইফঃ এই তো গুড গার্ল।ঠেলার নাম বাবাজী।

আমিঃ খবরদার তুই কিন্তু আমাকে ঠেলা দিস না।তাহলে আমি ফিনিস।রাস্তা গাড়ির চাকার সাথে পিষে যাবো।এই জীবন আর থাকবে না।

আমি চুপচাপ সাইফের পেছনে উঠে বসলাম।বারবার আল্লাহর নাম জপছি।মনে মনে আরেকদফা দুই হাতিকে বকলাম।

আমিঃ সময় খারাপ গেলে সাদা কাপড়ের থেকেও রং উঠে।এই কথা আমি আগে বিশ্বাস না করলেও এখন আমায় অবশ্যই করতে হবে।(বির বির করে)

সাইফঃ আমায় কিছু বললি নোভা?
আমিঃ না তোকে কিছু বলেনি।তোকে কি আমি কিছু বলতে পারি।তুই আমার ওনলি ভালো ফ্রেন্ড।
সাইফঃ এতো পাম দিস না।তোদের পামে পামে কোন দিন জানি আকাশে উড়ে যাই।
আমিঃ তুই কথা না বলে বাইক স্টার্ট দে।

🍂🍂🍂

বাইক এসে থামলো আমারা যে ফ্ল্যাটে থাকি সে দালানের গেইটের সামনে। সাইফকে বিদায় দিয়ে আমি ভেতরে ঢুকে পরলাম।বাসার কলিং বেল চাপতেই আমার ছোট বোন ইভা এসে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।

ইভাঃ বোইনে তোমার এই অবস্থা কেন?
আমিঃ আমি আজকে এতো খুশি ছিলাম। তোকে আর কি বলবো?সেই খুশির ঠেলায় কাদা পানিতে কয়েকটা ডুব দিয়ে আসছি।(রেগে)

কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে আম্মু কিচেন থেকে চেচিয়ে আমার ছোট বোনকে জিজ্ঞেস করলো।

আম্মুঃ ইভা, এই অসময়ে কে আসছে রে।

ইভাঃ আম্মু বোইনে আসছে।কোথা থেকে জানি কাদা দিয়া ভূত সাইজা আসছে।

আম্মুঃ কি!!! নোভা আজকে কলেজ যায়নি।

ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে আম্মু কিচেন থেকে বের হয়ে আমার সামনে দাঁড়ালো।এসে তিনিও আমাকে ইচ্ছে মতো ধুতে শুরু করে দিলো।ইভা আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।

আমিঃ ইভা তুই একবার রুমে আয়।তোকে যদি আমি দরজা আটকাইয়া না মারি। তাহলে—-

ইভাঃ তাহলে তোমার নামও নোভা নয়। এটাই বলবা তো।তোমার ডায়লগ আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।
আমিঃ আবার কথা বলিস।দাঁড়া তুই। (রেগে)

ইভাঃ আম্মু দেখো কোথা থেকে কাদা মেখে ভূত সেজে এসে এখন আমার ওপর শুধু শুধু রাগ দেখাইতাছে।

আম্মুঃ তোকে আমি কিচ্ছু বলবো না।তোর যা খুশি তাই কর।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
আম্মু কথাটা বলে কিচেনে চলে গেল।

আমিঃ পাক্কা ১৫ মিনিট বকে এখন বলে আমাকে কিচ্ছু বলবে না। তাহলে এতক্ষণ কাকে বললো?

ইভাঃ হি হি হি।একদম ঠিক হইছে।

আমি কপট রাগ দেখিয়ে রুমে এসে জামা-কাপড় নিয়ে গোসল করতে ওয়াস রুমে ঢুকে পরলাম।আমি ও ইভা ৪ বছরের ছোট-বড়।দুজনের সাথে দুজনের প্রায় সময় লেগে থাকি।তবে চোখের আড়াল হলেই দুজন দুজনের জন্য পাগল হয়ে যাই।আসলে ভাই-বোনের সম্পর্কগুলো এমনি হয়।দেখলে মনে হবে সম্পর্ক খারাপ। তবে বাস্তবে ততটা খারাপ নয়।বাবার চাকরীর সূত্রে ঢাকায় থাকা হয় ছোট বেলা থেকে। গ্রামের বাড়ি মাঝে মাঝে যাই।ঢাকার এক ছোট ফ্ল্যাটে আমাদের চারজনের ছোট পরিবার থাকি।গোসল করে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলাম।ডেসিং টেবিলের ওপর বিস্কুট রাখা দেখলাম।নিশ্চয়ই ইভার কাজ।আমাকে রুমে না দেখে চুপিচুপি এসে বিস্কুট রেখে পালিয়েছে। হাতের কাছে পেলে সবগুলোর রাগ এখন ওর ওপর ঝারতাম।সেটা বুঝতে পেরে আমার সামনে আসেনি।

বিস্কুট হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে এলাম।সকালের কথাগুলো চিন্তা করছি।আমি এনাজকে দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে ওর সামনে ঠিকই গিয়েছিলাম।আমি তার সাথে ভাব নেয়া শুরু করলাম।ধলা ইন্দুরটা আমার মনের মধ্যে থাকা শয়তানি বুদ্ধি বুঝে গিয়েছিলো।আমি তাকে ডোবায় কি ফেলবো?আমাকেই সামনে থাকা বৃষ্টি পানি ভর্তি গর্তে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে। আর আমি সেখানে পরে কাদা দিয়ে গা ভর্তি করে ফেলেছি।সব কথা মনে হতেই আমি হাতে থাকা বিস্কুটের প্যাকেট টাকে রাগে দুমড়ে মুচড়ে ভেতরে থাকা বিস্কুট গুড়ো গুড়ো করে ফেলছি।

আমিঃ আমি আপনাকে ছারবো না মোঃ এনাজ আহমেদ। এর প্রতিশোধ আমি প্রত্যেকটা পাই পাই করে নিবো।যাস্ট ওয়েট এন্ড সি।এই নিয়ে ১ম বার আমি আমার প্ল্যানে ফ্লপ হলাম।সেদিন ঐ খাটাশের জন্য পঁচা পানি দিয়ে সারামুখ কি বিচ্ছিরি হয়ে ছিলো। ভাগ্যিস মুখের ভেতরে যায়নি।এখনো ঐ দিনের কথা মনে হলে গা গুলিয়ে আসে।ওয়াক ছিঃ কিরকম একটা বাজে পরিস্থিতিতে পরেছিলাম।পরে যদি দোকান থেকে ভালো পানি কিনে মুখ না ধুতাম তাহলে আমার অবস্থা নাজেহাল হয়ে যেতো।আমি সব শোধ ফেরত দিবো আপনাকে।

প্রচুর রাগ উঠেছে নোভার।এখন জেগে থাকলে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসতে পারে সে।যার কারণে পরে তার মায়ের কাছে বকা খাবে।তাই এখন রাগ কমাতে ও মাইন্ড টাকে ফ্রেশ করতে ঘুমের প্রয়োজন।রাগ কমাতে একমাত্র এই ঘুম নামক ঔষধটাই ওর জন্য পারফেক্ট।বেশি কিছু না ভেবে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো সে।

#চলবে

ভালোবাসার তুই পর্ব-০১

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_01
#Writer_NOVA

—এই মেয়ে ঠোঁটে এত গাঢ় করে লিপস্টিক দিছো কেন?জলদী মুছো।
—এএএএএএহহহহহহ আইছে!!!কোথাকার কোন ধলা ইন্দুর?ইস,নবাবজাদা। চেনা নাই জানা নাই আমারে বলে লিপস্টিক দিছি কেন?জলদী মুছো।আমার লিপস্টিক আমি গাঢ় করে দেই নাকি হালকা কইরা দেই সেটা আমার ব্যাপার।মন চাইলে ঠোঁটে দিমু নয়তো চোখের উপরে আই সেডের মতো দিমু কিংবা গালে ব্লাসের মতো লাগাই থুমু।কার বাপের কি?আমার বাপের টাকার লিপিস্টিক আমি লাগামু এতে অন্য মানুষের চুলকানি হয় কেন?দরকার পরলে লিপস্টিক হাতে বডি লোশন হিসেবে ঘষমু,পায়ে দিয়া আলতাও পরতে পারি।আমার লিপস্টিক আমি যেমনে খুশি তেমনে লাগামু।যেখানে খুশি সেখানে লাগামু।তোর কি রে ছেমড়া?তোরটা খাই নাকি পড়ি যে তোর কথা শুনতে হইবো।বুঝি না এরকম পাগল-ছাগল কোথা থেকে আমদানি হয়।এগুলিরে কি রাস্তার জনগণ চোখে দেখে না।দেখলে তো পারে নিজ দায়িত্বে ধইরা বাইন্ধা পাবনার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে।যত্তসব ফাউল পোলাপাইন।ইচ্ছা করতাছে উষ্ঠা মাইরা নাকটা ফাটাই ফালাই।আমাকে বলে আমি লিপস্টিক দিছি কেন?

মনে মনে হাজারটা গালি দিয়ে চোখ রাঙিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম।দাঁত কটমট করছি আর ছেলেটার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছি।ছেলেটা এবার আমাকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো
—হাই আমি মোঃ এনাজ আহমেদ।
আমি কোন কথা না বলে তার দিকে ভ্রু উঁচু করে একটা ভেংচি কেটে তার দিকে তাকালাম।
উনি ইতস্তত করে নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বললো।

এনাজঃ ঠোঁটের লিপস্টিক মুছো।তুমি না মুছলে কিন্তু আমি মুছে দিবো।কি বললাম শুনতে পাওনি।হা করে কি দেখছো? (একটু ভেবে)মনে হচ্ছে তুমি চাইছো আমি নিজ হাতে তোমার লিপস্টিক মুছে দেয়🤨।আমি ঠিক ধরেছি তাই না।

শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো।হাতটা আমার ঠোঁটের দিকে বাড়িয়ে দিতেই আমি ব্যাঙের মতো দুটো লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেলাম।ছেলেটার কান্ড-কারখানায় অলরেডি আমার মাথা গরম হয়ে গেছে। আমি রেগে বললাম

আমিঃ আপনার সাহস তো কম বড় না।আপনি আমার ঠোঁট ধরতে আসেন।যেখানে আছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন। আরেকবার আমার ঠোঁটের দিকে হাত বাড়ালে হাত কেটে আরেক হাতে ধরিয়ে দিবো।আমাকে চেনেন আপনি?আমি আপনাকে কি কি করতে পারি তা আপনার ভাবনার বাইরে।আমার থেকে দূরে থাকায় আপনার জন্য মঙ্গলজনক।
এনাজঃ আই সি।এরকম একটা ধানি লঙ্কা মেয়ে আমার খুঁজছিলাম,এদেরকে জ্বালাতে আমার ভীষণ ভালো লাগে 😁(মনে মনে)। আমি তোমাকে লিপস্টিক মুছতে বলেছি।তুমি যদি না মুছো তাহলে আমি পানি দিয়ে ডলে উঠিয়ে ফেলবো।
আমিঃ হি হি হি কাজ হবে না মহাশয়।আমার লিপিস্টিক ওয়াটার প্রুফ। সারাদিন ডললেও উঠবে না।
এনাজঃ তুমি এরকম করে লিপস্টিক দিয়ে আসবে না।
আমিঃ ও হ্যালো,আমার লিপস্টিক আমি যেভাবে খুশি সেভাবে দিয়ে আসবো।আপনি কে বলার?নিজের লিমিট ক্রশ করার চেষ্টা করবেন না।(রেগে)
এনাজঃ ওহ তুমি তাহলে মুছবে না।থাক মুছতে হবে না।কি বিচ্ছিরি কালার।তোমার চয়েজ এতো খারাপ। এরকম বাজে কালারের লিপস্টিক ঠোঁটে দেও।ওয়াক ছিঃ আমার তো দেখেই ঘৃণা করছে।তুমি ঠোঁটে কি করে লাগিয়েছো?

আমি দুই হাত কোমড়ে রেখে ঝগড়া করার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তাকে বললাম।

আমিঃ এতোবড় সাহস আপনার??আমাকে নিয়ে বাজে কথা বললে আমি মেনে নিতাম কিন্তু আপনি আমার লিপস্টিক কে নিয়ে বাজে কথা বলেছেন।আপনি আমার লিপস্টিক কে অপমান করেছেন?আমাকে যা খুশি বলে অপমান করলে আমি কিছু বলতাম না।কিন্তু আপনি আমার লিপস্টিক কে অপমান করেছেন আপনাকে আমি ছারবো না।আমি নিজের থেকে বেশি আমার লিপস্টিক কে ভালবাসি।আর সেটাকে নিয়ে বাজে কথা😭😭।ছারবো না আমি আপনাকে। কিছুতেই ছারবো না।

দুই হাত মুঠ করে কান্নার ভান করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম।উনি আগের মতো ভাবলেশহীন ভাবে আমার দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।আমার বুকটা ফাডি যাচ্ছে গো🥺। আজ পর্যন্ত কেউ আমার লিপস্টিক কে এভাবে অপমান করে নি।ই-ই ই-ই 😭।

এনাজঃ ওয়েট ওয়েট।তুমি যদি আমার সামনে আসো তাহলে আমি জোর করে তোমার ঠোঁট থেকে লিপস্টিক মুছে দিবো।

আবারো ব্লাকমেল। হে আল্লাহ তুমি আমায় কোন পরীক্ষায় ফেললে।অচেনা ছেলের মুখে এসব তো সহ্য হচ্ছে না।ইচ্ছে করছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।আমি কিছু সময় ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম।
এনাজঃ বুঝি না বাবা,এরকম পাগলকে এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত কে দিয়েছে।সত্যি করে বলুন তো আপনাকে কি দাওয়াত দিয়েছে নাকি বিনা দাওয়াতে চলে এসেছেন🤨।(ভ্রু নাঁচিয়ে)

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তার দিকে তাকাতেই বুকটা কেঁপে উঠলো। এ মা, চোখ দুটো লাল টকটকে করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন?মনে হচ্ছে এখনি আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে।হু হু হু আমি কি ভয় পাই নাকি?কে হয় উনি আমার?এত সময় আমার লিপস্টিক কে অপমান করছে তখন বুঝি আমার খারাপ লাগে নি।এখন দেখো চান্দু তোমাকে অপমান করলে তোমার কেমন লাগে।রেগে আমার সামনে এসে আবারও আমার ঠোঁটের দিকে হাত বাড়াতে নিলে আমি হাতের মধ্যে জোরে একটা চড় মেরে ভেতরের দিকে ভৌ দৌড় লাগালাম।

আমি নোভা ইসলাম।এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করছি।আমি বাবা-মায়ের বড় মেয়ে। আমার ছোট বোন ইভা ইসলাম। এবার দশম শ্রেণিতে পড়ে। আমার কোন ভাই নেই।আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা একটা বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরী করে। আর মা গৃহিণী। আমি খুব ভদ্র, শান্ত শিষ্ট ও ফাজিল বৈশিষ্ট্য মেয়ে😐।আমি অনেক অনেক ভালো।নিজের প্রশংসা নিজে কমু না, আমার শরম করে🙈।ইস, কি লজ্জা, কি লজ্জা😁।কতটা ভালো সেটা ইতিমধ্যে টের পেয়েছেন সামনে আরো পাবেন।আমার লিপিস্টিক অনেক পছন্দ।কেউ আমার লিপিস্টিক নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে তাহলে আমার হুস থাকে না।আমার বান্ধবী সিফার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এসেছিলাম।এখানে এসে দেখা হয়েছে ঐ ধলা ইন্দুরটার সাথে। বান্ধবীর মাস্টার্স পড়ুয়া ভাইয়ের বন্ধু মোঃ এনাজ আহমেদ। আমি আগে কখনও দেখি নি তাকে।সাহস দেখে অবাক আমি।আমার ঠোঁট ধরতে এসেছে। ইচ্ছে করছে কষিয়ে কয়েকটা দুরুম দারুম কিল বসিয়ে দিতে। কিন্তু আমার লিপস্টিককে অপমান করেছে এত সহজে তো আমি তাকে ছারবে না।এর শোধ আমি যদি না তুলি তাহলে আমার নামও নোভা নয়।এতসময় বাইরে দাঁড়িয়ে ধলা ইন্দুরটার সাথে বকবক করলাম।ভেতরে এসে রাগে ফুঁসতে লাগলাম।আমাকে দেখে সিফা এগিয়ে এলো।

সিফাঃ কি রে তোর কি হয়েছে? এমন রাগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছিস কেন?
আমিঃ তুই আর কথা বলিস না।যত দোষ সব তোর।
সিফাঃ আমি আবার কি করলাম?(অবাক হয়ে)
আমিঃ তুই জোড়াজুড়ি না করলে আমি কখনি আজ আসতাম না।আর ঐ ধলা ইন্দুরটার সাথে এত কিছু হতো না।আমার লিপিস্টিক কে অপমান করেছে।আমিও দেখে নিবো।
সিফাঃ বলবি তো কি হয়েছে? কি বিরবির করছিস?কার কথা বলছিস?আমাকে বুঝিয়ে বল।

আমি সিফাকে একটু আগে এনাজের সাথে ঘটা যাবতীয় ঘটনা খুলে বললাম।আমার কথা শুনে সিফা হাসতে হাসতে বসে পরলো।ওকে এভাবে হাসতে দেখে আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেলো।

আমিঃ ঐ ছেমরী দাঁত বের করে ভেটকানো বন্ধ করবি।নয়তো গাট্টা মারবো মাথায়।
সিফাঃ দাঁড়া বোন। আমাকে একটু হাসতে দে।
আমিঃ তুই হাসি বন্ধ না করলে তোকে মাথায় তুলে আছাড় মারবো কিন্তু বলে দিলাম।আমার লিপিস্টিক কে অপমান করছে আর তুই হাসছিস😡।
সিফাঃ ওরে লিপস্টিক পাগলীরে।এনাজ ভাইয়া ঐ রকমি।সে মেয়েদের ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া পছন্দ করে না।তার ধারণা মেয়েদের ঠোঁট এমনিতে সুন্দর,আবার লিপিস্টিক দেওয়ার কি দরকার?তুই আজকে একটু গাঢ় করে লিপস্টিক দিয়ে এসেছিস বলে তোকে এসব কথা বলেছে।
আমিঃ সে পছন্দ করে না বলে কি আমি দিবো না।
সিফাঃ তুই কিছু মনে করিস না।এনাজ ভাইয়া ওরকমি।ভুলে যা সব।
আমিঃ তুই আমার বান্ধবী হয়ে এসব কথা বলতে পারলি🥺।আমার লিপস্টিক কে অপমান করেছে আর আমি সব ভুলে যাবো।তোর মুখে এমন কথা মানায় না।অন্য কেউ বললে আমি মেনে নিতাম। কিন্তু তুই? আমি বিশ্বাস করি না।সবাই একরকম।তুইও ঐ এনাজকে সাপোর্ট করছিস।নয়তো ভুলে যাওয়ার কথা বলতে পারতি না।আমি এখানে এক মুহুর্তেও নয়।তুইও আমাকে ধোকা দিলি😭।

আমি হাতে থাকা পার্সটা নিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে সেখান থেকে চলে এলাম।সিফা অবাক হয়ে আমার যাওয়ার পানে বোকা হয়ে তাকিয়ে আছে।
সিফাঃ আমি বললাম কি আর বুঝলো কি?এই মেয়েটা লিপস্টিক কে যতটা পছন্দ করে নিজেকেও মনে হয় না এতো পছন্দ করে।যা বাবা চলে গেল। এই নোভা শোন।নোভা, নোভা।তুই আমাকে ভুল বুঝছিস।

আমি আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে সিফার কান্ড দেখে মুচকি হাসলাম।চোখের পানির ফোঁটা টোকা মেরে ফেলে দিয়ে শয়তানি হাসি দিলাম।আমি আসলে এতখন অভিনয় করছিলাম।আমি ঐ এনাজ কে সহ্য করতে পারবো না সারা অনুষ্ঠানে। তাই অভিনয় করে সেখান থেকে চলে এলাম।কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ঘটলো বিপত্তি। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে প্লাজুর সাথে বেজে ঠাস করে পরে গেলাম।পরলাম তো পরলাম আর কোন কিছুতে নয়।একটা ভাঙা টবের ওপর পঁচা পানি রাখা ছিলো।সেখানেই পরে গেছি।ওয়াক ছিঃ ভাবা যায় এসব।ওয়াক, ওয়াক🤮।পরে গেছি সেটা বড় নয়।কেউ দেখেছি কি না সেটা বড় কথা।জলদী করে উঠে দাঁড়ালাম। আশেপাশে পাশে তাকালাম।নাহ্ বাবা।বাঁচা গেল,কেউ দেখিনি।পরে গেলে ততটা লজ্জা করে না যতটা কেউ দেখে ফেললে করে। মুখটা আমার বাজে অবস্থা হয়ে আছে।গা গুলিয়ে আসছে।হঠাৎ আমার মনে হলো পেছনে কারো জোরালো হাসির শব্দ পাচ্ছি। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে তাকাতেই দেখতে পারলাম।এনাজ পেট ধরে হাসতে হাসতে বসে পরেছে।রাগে শরীরটা ফেটে যাচ্ছে। আর শয়তানটা ৩২টা দাঁত বের করে হেসেই যাচ্ছে।

এনাজঃ একদম ঠিক হয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি।আমার কথা না শুনলে এমনি হবে।ও আল্লাহ, আমি হাসি থামাতে পারছি না।তোমার ঐ লিপস্টিক তো পঁচা পানিতে লাগলো।ওয়াক ছিঃ। কি নোংরা মেয়ে।যেমন লিপস্টিক তেমন মেয়ে।
আমিঃ বান্দর,কুমির,টিকটিকি,গরিলা,গন্ডার।আমি তোকে ছারবো না।হাসো, হাসো। বেশি করে হাসো।এক মাঘে শীত যায় না।আমিও দেখে নিবো তোমাকে।এই নোভা ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।দিন আমারো আসবে।তখন আমি ৩২ টা দাঁত বের করে হাসি দেওয়ার মজা বুঝাবো। কেথায় আমাকে ফিল্মী স্টাইলে নায়কের মতো বাঁচাবে। তা না করে ৩২ টা দাঁত বের করে টুথপেষ্টের এড দিচ্ছে। আমি আমি সব শোধ তুলে রাখলাম সময়মতো আবার সব ফেরত দিবো।আমি আবার কারো ঋণ রাখি না।সময়মতো সুদ সহ আসল ফেরত দিয়ে দেই😎।(মনে মনে)

এনাজের দিকে একটা খাইয়া ফালামু লুক দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বাসার দিকে রওনা দিলাম।পার্স থেকে টিস্যু বের করে মুখ মুছে নিলাম।পঁচা পানির কি বিচ্ছিরি গন্ধ, ওয়াক🤮।

বাসায় গিয়ে কোন কথা না বলে রুমে দরজা আটকে ফেললাম।আম্মু কিচেনের থেকে অবাক হয়ে আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
আম্মুঃ নিশ্চয়ই আজও নোভা কোন ঝামেলা পাকিয়ে এসেছে।এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারি না।এখন আমার সাথে চিল্লালে পায়ের জুতা ছুঁড়ে মারবো।

রুমে এসে আমার চোখ চড়কগাছ। আম্মুকে রেগে+চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
আমিঃ আম্মু,আম্মু, আম্মু। বলি কানে কি শুনতে পাও না।আমি যে ডাকছি।
আম্মুঃ কোথা থেকে জিদ করে এসেছেন।সেখানে নিশ্চয়ই পারেন নি।এখন যদি বাড়িতে এসে আমার সাথে শুধু শুধু চেঁচামেচি করিস তাহলে তোর কপালে ঝাড়ুর দৌড়ানি আছে। খুন্তির বারিতো ফ্রীতেই খেতে পারবি😡।
আমিঃ তুমিও শুরু করলে।ধূর,কিছু ভালো লাগে না। আমার গোলাপি লিপস্টিকের এই অবস্থা কে করেছে। আমি ডেসিং টেবিলের ওপর সুন্দর করে রেখে গিয়েছিলাম।এসে দেখি পুরো লিপস্টিক নষ্ট করে ফেলেছে।সবার কি আমার লিপস্টিকের সাথে শত্রুতা।আমার লিপস্টিক কি সবাইকে খোঁচা মারে।কে এসেছিল আমার রুমে।
আম্মুঃ আমি দিয়েছি তোর লিপস্টিক।আয় এখানে এসে দেখে যা।তোর লিপস্টিকের খবর তুই জানিস আমি নয়।(রেগে)
আমিঃ ধূর, ভাল্লাগে না।যত ঝড় সব আমার লিপস্টিকের ওপর দিয়ে যায়😤।

আমি জোরে দরজাটা বারি দিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে গেলাম।আম্মু বড় করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বললো।
আম্মুঃ বিকালে নোভার ফুপাতো বোনের মেয়ে এসেছিলো।নিশ্চয়ই ঐ ছোট্ট মেয়ে এমন অবস্থা করেছে। এখন যদি এটা নোভা জানে তাহলে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে।যাক,কোনমতে ওকে সামলানো গেল।আল্লাহ জানে মেয়েটা কেমন হয়েছে। সারা ডেসিং টেবিল ভর্তি শুধু লিপস্টিক। আর একটা অন্য সাজসজ্জার জিনিস নেই। কেউ লিপিস্টিক এতো পছন্দ করতে পারে তা আমার মেয়েকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।

আম্মু জোরে জোরে ফুঁসানোর শব্দ শুনে পেছনে তাকাতেই আমাকে দেখতে পেলো।আমি জানতাম এমন কিছুই হয়েছে। তাই দরজায় বারি দিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে আবার বের হয়ে কিচেনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আম্মুঃ আমি যাস্ট এভাবে বলছিলাম😑।
আমিঃ তুমি আর কথা বলো না।তোমরা সবাই আমার সাথে এমন করো।আমি আর এই বাড়িতে থাকবো না।

মুখ গোমরা করে ঠাস ঠাস করে পা ফেলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে রাখলাম।আসার আগে শুনতে পেয়েছিলাম আম্মু মুচকি হেসে শুধু বলেছিলো
“লিপস্টিক পাগলী”।কেটে গেছে বেশ কিছু দিন।একদিন কলেজে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম আমার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মোঃ এনাজ আহমেদ। আশেপাশে তাকিয়ে একটা পচা ডোবা দেখতে পেলাম।মনের মধ্যে আমার শয়তানি বুদ্ধি জেগে গেল।

আমিঃ দাঁড়াও মহাশয়। আমাকে পঁচা পানির মুখে পরতে দেখে খুশি হয়েছিলেন না।আপনাকে এখন আমি পঁচা ডোবায় গোসল না করাই তাহলে আমার নামও নোভা নয়। আমি আরেকবারও বলেছিলাম কথাটা😁।

শয়তানি হাসিে তার দিকে এগুতে লাগলাম।আজ তার খবর আছে।এই নোভার সাথে পাঙ্গা দিতে এসেছো।তোমাকে তো আমি হারে হারে টের পাইয়ে দিবো আমি কি?আরেকটু ওয়েট করো চান্দু। তোমাকে আজ আমি পঁচা পানি খাওয়াবো সাথে এরকম পারফিউম যুক্ত পানি দিয়ে গোসল করাবো।

#চলবে

অধিকার পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

2

#অধিকার
#শেষ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

সারারাত রুহি ঘুমাতে পারেনি,, ফজরের নামাজের পরে নাজমা একটা ঘুমের ঔষধ খাইয়েছে রুহিকে জোর করে,, মেয়েটা এতক্ষণে ঘুমিয়েছে নাজমার খুব মায়া হচ্ছে একদম নিজের নাতনির মত লাগছে মেয়েটাকে,, রুহির পাশে নাজমাও ঘুমিয়ে গেলো,,

প্রায় ৭ঃ৩০টার দিকে রহিমা এসে নাজমা কে আস্তে আস্তে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে বললো,,
-খালা খালা উঠো,, জরুরি কথা আসে,
– বলো মা,
-বাইরে আসো
– হ্যাঁ এখন বলো,,
– খালা মেয়েটা আমাদের ম্যাডাম,, ইরাদ স্যারের বউ। উনার ঠিকঠাক যত্ন করতে হবে,,
– আমি জানি,, কিন্তু তুমি জানলা কিভাবে?
– ডাক্তার ম্যাডাম ফোন করসিলো,, স্যারের সাথে নাকি ম্যাডামের ভুল বুঝাবুঝি হইসে তাই উনি রাগ করে বেড় হয়ে গেসেন বাসা থেকে। কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন এগুলো?
– আমাকে ম্যাডামই বলছে,, উনি জানতো না এই আশ্রম স্যারের।
– আচ্ছা খালা শুনেন একটা প্ল্যান আছে,,
সবটা রহিমা বুঝিয়ে দিলো নাজমা কে ,, নাজমার খুব ভালো লাগছে সবটা শুনে,, ইরাদ আর রুহি মিলে যাক এইটাই ও চাচ্ছিল এতক্ষণ ধরে,,

প্রায় ১২ঃ৩০ টার দিকে রুহির ঘুম ভাংলো,, চোখ ডলতে ডলতে ও ঘুম থেকে উঠে চারদিকে তাকিয়ে মনে পরে গেলো গতদিনের সব কিছু,, মনের ভিতরটা আবারো ভারী হয়ে গেলো,, আজ ও বাড়ি ফিরে যাবে,, সবাইকে সবটা সত্যি জানাতে হবে,, আর ইরাদের থেকে তো দূরেও চলে যেতে হবে।
রুহি ফ্রেশ হয়ে বেড় হলো বাথরুম থেকে তখন নাজমা ঘরে এসে একটা হাসি দিয়ে বললো,,

-আরে দাদু উঠে গেছো?
-জ্বী,, আচ্ছা দাদু ট্রেন স্টেশনটা কোথায়?
– কেন? আসলে আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। আজই চলে যেতে চাচ্ছি,, কিন্তু কিছু চিনি না তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।
– আজ তো যাওয়া যাবে না,
– কেন দাদু??
– আমার জন্মদিন আজকে, থাকা লাগবে তোমার ও।
– হ্যাপি বার্থডে দাদু বলে রুহি তাকে জড়িয়ে ধরে আরো বলল
– দাদু আজ যাই আমার খুব খারাপ লাগছে এই শহরে।
– আমি জানি কিন্তু এই বুড়ি কয়দিন বাচিঁ তার ঠিক ঠিকানা নেই,, এই ছোট একটা আবদার রাখতে পারবে না?
রুহি কিছুক্ষণ ভেবে থাকার জন্য রাজি হয়ে গেলো,,
“নাজমা দাদুকে দেখলে নিজের দাদুর কথা মনে পরে রুহির, খুব অমায়িক আর মায়াবী একজন মানুষ ”
– আসো দাদু নাস্তা করবে।
– খেতে ইচ্ছে করছেনা দাদু
– খেতে হবে আসো এখনি,,
– নামাজ তা পরে নিই?
– ঠিক আছে দাদি নাতনি মিলেই নামাজ পরি।
রুহি মোনাজাতে খুব কান্না করলো,,
নাজমা ও আল্লাহার কাছে বললো,,
তাড়াতাড়ি যেন এই সরল মনের মেয়েটার সকল কষ্ট দূর হয়ে ইরাদের সাথে মিল হয়ে যায়।

এদিকে ইরাদ বার বার ঘড়িতে তাকাচ্ছে আর পায়চারি করছে এই পর্যন্ত ৫বার ডেকোরেটর ফোন করেছে,, সব যেন সুন্দর মত গুছিয়ে করে,, তাড়াতাড়ি যেন সব শেষ করে,, রুহি আর ইরাদের ছবি সহ একটা বিশাল আর্ডার করেছে ইরাদ,, যেই ছবিটা রুহির মোবাইলের স্ক্রিনে ছিলো সেটাই। রুহিকে আজকে নিজের সাধ্যের মধ্যে যা আছে সেই সব কিছু দিয়ে বরণ করতে ইচ্ছে করছে ইরাদের। সময় যেন কাটছে না আজকে,,, এত দিন রুহিকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে এখন দূরে থাকতে আর ভালো লাগছেনা,,

সুরাইয়া আব্দুল্লাহ বাসায় ফিরতেই মাহিরা এক দৌড়ে তাদের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,,
– পাওয়া গেছে ওই মেয়ে কে?
-না,, (সুরাইয়া)
আব্দুল্লাহ আর সুরাইয়া কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো,,
মাহিরার এসব একদম ভালো লাগছেনা তাদের,, এমনিতেই সারা রাত ঘুমায়নি। আব্দুল্লাহ সুরাইয়া গোসল সেড়ে এক ঘুম দিয়ে দিলো,, বয়স হয়ে গেছে,, এই সময় সারারাত জাগা কষ্টকর হয়ে যায়।
মাহিরা একা বিড়বিড় করে বলছে,
-থ্যানক গড,, এই মেয়ে মরে যাক,,
দুই দিনের একটা মেয়ে আসাতে ইরাদ আমাকে কিভাবে ভুলে গেলো? আই হ্যাভ টু ফাইন্ড দিস আউট।
আপাতত গোসল করতে হবে,, ইরাদের সাথে দেখা করতে যাবো আজকে রাতে এখন একটু রূপচর্চা করা লাগবে,,
টুনি,, এদিকে আয় তো,

রাত থেকে টুনিকে বিরক্ত করে ফেলেছে মাহিরা বরাবরের মত। এটা করে দে ওটা করে দে।
টুনির কথা হলো
” ইরাদ ভাই যখন হেরে ছাইরাই দিসে তাইলে আবার আইসা আমগো জালায় কেন? দাদি যে কেন ঠাই দিসে হেরে, আর হের নতুন জামাই কই গেলো আমগো জীবনে আইসা জ্বালাতন করতাসে”
কথা গুলো বিড়বিড় করতে করতে টুনি উত্তর দিলো,,
-আইতাসি আপা।
-কি রে টুনি আমাকে আপা ডাকিস কেন?
– তাইলে কি ডাকুম?
– কেন জানিস না? ভাবী ডাকবি
– আপনি তো এহন আর ভাবী না,,
– বেশি কথা বলবিনা। তুই অনেক বেড়ে গেসিস, আমার জন্য বেসন আর লেবু নিয়ে আয়।
-আনতাসি।
মাহিরার খুব রাগ লাগছে,, কাজের মেয়ের কত বড় সাহস ওকে এভাবে মুখে মুখে উত্তর করে, ইরাদ ঠিক হোক তারপর যাকে যাকে শিক্ষা দেওয়ার তাকে তাকে মাহিরা উচিত শিক্ষা দিবে।
রাগে মাহিরা কান্না করতে শুরু করে দিয়েছে,,
সব কিছু মনে পরে গেছে শরীর রাগে কাপছে,,
রাগটা টুনির ওপরে কম তামিমের ব্যাবহার মনে পরে বেশি লাগছে আর এইজন্যই ২দিন ধরে সব কিছুই অসহ্য লাগছে মাহিরার।
তামিম ওকে ছেড়ে দিয়েছে যখন ও বলেছে ওকে বিয়ে করতে,, তামিমের উক্তি এমন ছিলো যে
” তুমি ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল না,, তোমার সাথে এভাবে রিলেশনশিপ ঠিক আছে,, আর এখন আমি তোমার সাথে থাকতে চাইনা,, কত চেষ্টা করেছে তামিমকে নিজের করার কিন্তু সে শুনে নি মাহিরার একটা ও কথা,, যার জন্য ও নিজের স্বামী কে ছাড়লো ওই মাহিরাকে ও ছেড়ে দিলো অন্য এক মেয়ের জন্য। মাহিরা নাকি বউ হবার যোগ্যতা রাখেনা, ও একটা দুশ্চরিত্রা মেয়ে,, কথাটা অনেক গায়ে লেগেছে ওর। মাহিরা তাই আবারো ইরাদের স্ত্রী হয়ে তামিমকে দেখিয়ে দিবে ও স্ত্রী হতে পারবে কি না?? এত বাজে ভাবে তামিম ওকে ছেড়ে দিবে এটা কখনোই মাহিরা ভাবতে পারেনি,, ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছীড়তে।আর ২দিন ধরে ও বুঝেছে ইরাদই ওর জন্য পারফেক্ট ছিলো,, ওকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছিলো, যত্ন নিতো,, এই ছেলে এত পাগল ছিলো ওর জন্য,, হুট করে অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলবে। এটা তো মাহিরার কল্পনাতে ও ছিলো না,, তারপরেও এত বছরের সম্পর্ক এত তাড়াতাড়ি ওকে ভুলে যাবে নাকি কিছুদিনের আগত এক মেয়ের জন্য? এটা মাহিরা হতে দিবেনা নিজের অধিকার নিজ নিয়েই ছাড়বে, এই মনোস্থ করেই ও ফিরে এসেছে আর যাওয়ার ও তো কোনো জায়গা ওর নেই। মা বাবা বলেছে তাদের সাথে থাকতে পারবেনা,, তামিম ওকে ছেড়ে দিয়েছে আছে এখন শেষ সম্বল হচ্ছে ইরাদ। ওকে ইরাদের মেনে নিতেই হবে।

-এইজে আপা নেন,,, বলে টুনি বাটিটা হাতে দিয়ে চলে গেলো মাহিরাকে।

রুহি কোন মত খেয়ে উঠলো ,, নাজমার জোরে না খেয়ে থাকতে পারলো না।
ইরাদ কি করছে এখন? ও ঠিকমতো খেয়েছে তো।মাথায় শুধু এগুলোই ঘুরছে। স্বামী সংসার সব বরই অদ্ভুত জিনিস,, যতই দূরে থাকা হয়,, স্বীকৃতি নাই বা পাওয়া হয় তারপরেও একটা টান থাকে।
অজানা একটা ভালোবাসা,, কাজ করে।
আচ্ছা ইরাদের কি একটা বার ও আমার কথা মনে পরেছে? নাকি ভালোই আছে মাহিরা কে নিয়ে? আচ্ছা আল্লাহ পাক কি আমাকে ওর জীবনে আগে দিতে পারতো না? হয়তো আজকে আমি ওর স্ত্রী থাকতাম মাঝে কেউ থাকতো না,, আচ্ছা আমি কি ওদের মাঝে এসেছি? হ্যাঁ আমিই তো,, ইরাদের মনে তো আমি জায়গা করতে পারিনি,, পারলে হয়তো দ্বিতীয়া হতাম না,, বিছানার এক কোণে শুয়ে রুহি কথা গুলো ভাবছিলো প্রায় দুপুর শেষের দিকে,,
রহিমা এসে রুহিকে জিজ্ঞেস করলো
– ঘুমিয়েছেন?
– না আন্টি
– উঠে নেন রেডি হবেন না?
– কেন? ওইজে প্রোগ্রাম আছে,, মানে খালার জন্মদিন।
– না আন্টি এভাবেই ঠিক আছি।
– না হবেনা আমার জন্মদিন উপলক্ষে তোমার সাজতেই হবে।
– দাদু আমার জামা নেই কোনো এখানে,,
– আমার তো আছে দেখো এগুলো পরে নাও
– এগুলো কেন?
– পরেন,,
রহিমা এক প্রকার অনুরোধ করেই বললো,,
রুহির কাছে যথেষ্ট অবাক লাগলো রহিমার এত সম্মান আর যত্নশীল আচরণ,, তারপরেও ভাবলো হয়তো নাজমা ওকে আদর করে তাই এমন করছে।
নিজের জন্য না হলেও নাজমার জন্য তৈরী হলো রুহি,, গোলাপি একটা জর্জেটের শাড়ি ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। এর বেশি কিছুই করার ইচ্ছে হচ্ছেনা ওর। যদিও বেশ কিছু মেকাপ আছে ব্যাগটায়।
-মাশাল্লাহ কত সুন্দর লাগছে,, আপনি একদম পরীর মত দেখতে। রহিমা বললো রুহিকে দেখে।
– ধন্যবাদ আন্টি।

আব্দুল্লাহ আর সুরাইয়া কে তৈরি হতে দেখে মাহিরা জিজ্ঞেস করলো
” কোথাও যাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ ইরাদ তো কিছু খায় নি ওকে খেতে দিবো”
“তুমি থাকো” আমরা আসছি
কথা কোনোমতে বলে সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ চলে গেলো।

ইরাদের প্রতিক্ষার পালা শেষ,, এসে পরেছি রুহির কাছে,, বিকেলের সূর্য সোনালী বরণে, আকাশে হালকা লালছে ভাব ধারণ করেছে।
সুরাইয়া বললো
“আমরা সবাই ভিতরে বসবো তুমি আর রুহি একান্তে কথা বলো সব ঠিক করো তারপর সবাই ওপরে যাবে।”
ইরাদকে দেখে রহিমা সালাম দিয়ে বললো,
-স্যার আপনি যান আমি ম্যাডামকে পাঠাচ্ছি।
ইরাদ ছাদে চলে গেলো,,
রহিমা নাজমাকে ইশারা করাতেই বুঝে গেলো ইরাদ চলে গেছে ওপরে।
-ছাদে কি সব ঠিকঠাক করেছো রহিমা?(নাজমা)
– আমিতো দেখিনাই,, কেউ গিয়ে একটু দেখে আসবে?? মামণি আপনি যাবেন??(রহিমা)
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখে আসি।
-মামণী আপনি আর আই আইসেন না,, আমরা এখনি সবাই আসতেসি আপনি যান আগে।
-ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসেন সবাই।

রুহি ওপরে এসে দেখে খুবই অবাক হলো এত সুন্দর করে সব কিছু সাজানো হয়েছে,, মনে হচ্ছে বড় কোনো ডেকোরেশন এজেন্সি দিয়ে করানো হয়েছে,, চোখ ধাধানো সৌন্দর্য,, পুরোটা লাল দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে। রুহি ভেতরে গিয়ে দেখলো তেমন কেউ নেই,, ওই মনে হয় প্রথমে এসেছে।
রেলিং এর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ও সব কিছু কত অপরূপ লাগছে কিন্তু ওর মন ফাকা ফাকা লাগছে,, আজকে ইরাদ পাশে থাকলে হয়তো সব ভালো লাগতো কিন্তু এ তো আর সম্ভব না,, ইরাদ কে ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা তবুও মনকে মানাতে হবে,,
মৃদু আওয়াজে গান চলছে,,

“পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেব, একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।

ভাবিনি কখনো, এ হৃদয় রাঙানো
ভালবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব এসে
এক পলকে পৌঁছে যাব, রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।।”

সেই দিনটার কথা মনে পরে গেলো রুহির,,
কেমন যেন অস্থির লাগছে,, মনে হচ্ছে ইরাদ এখানে কোথাও আছে।
ও যদিও জানে ইরাদ তো আসবে না এখানে তবুও এমন লাগছে কেন জানি,,
চোখ থেকে পানি পরতে শুরু করেছে ওর,,
চোখটা বন্ধ করে পানি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছে ও।
পুরুষ কন্ঠ শুরু হতেই মনে হলো এখন কেউ বুঝি সামনাসামনি গানটা করছে,, কি সুন্দর আওয়াজ,, মনটা শীতল হয়ে যাওয়ার মতো।
পেছন থেকেই আওয়াজটা এখন আসা শুরু করেছে,, ধীরে ধীরে কন্ঠটা কানের কাছে এসে পরেছে,,
রুহির পেছন থেকে অনুভব করলো কে যেন ওকে জড়িয়ে ধরেছে,, পেছনে ঘাড় ঘুরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো,, কারণ ইরাদ ওকে জড়িয়ে ধরে বাকি লাইন গুলো গাইলো,,
রুহির চোখে চোখ রেখেই।

রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে, আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এনে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং–তুলিতে আঁকব ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে

তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।।

“ভালোবাসি ঝড়ের রাতে আগত পরী,, অনেক ভালোবাসি,, ”
রুহি ইরাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
“আমিও ভালোবাসি,, অনেক বেশি অনেক”
“আমাকে আপনি ফেলে চলে গেলেন এভাবে কিচ্ছু না বলেই, আমি যে সহ্য করতে পারবোনা,,, আপনি কি একটুও বুঝতে পারেম নি?? কেন এমন করলেন আমার সাথে?? আমি পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম,,
“কাল আপনি উনাকে বলছিলেন ভালোবাসি আরো কিছু কথা আমি দরজার ওপাশে গিয়েছিলাম আপনার সাথে কথা বলার জন্যই গিফট গুলো দেখার পর,, এগুলো শুনে আমি আর সহ্য করতে না পেরে চলে যাই”
” ওগুলো মাহিরার ফোনে রেকর্ডিং ছিলো,, ম্যাসেঞ্জার থেকে ডাউনলোড করে নিয়েছিলো আমার আগের কথা ওগুলো আর গিফট তোমার জন্য এনেছিলাম আমি পিতা হতে পারবো না কখনো এই অক্ষমতার জন্য আপনার প্রতি ভালোবাসা ও প্রকাশ করিনি আমি,, আমাকে মেনে নিলে আপনি মা হতে পারবেন না কখনো…
কথাটা বলার সাথে সাথে রুহি ইরাদের মুখ চেপে ধরলো,,
“আল্লাহ যদি এটা চায় আপনি আমি কে অমান্য করার?? বাচ্চা আল্লাহার নেয়ামত যদি উনি দেয় তাহলে হবে নাহলে নাই,, এর কারনে কি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কমে যাবে? আমি মনে করিনা। আমি আপনাকে ভালোবাসি,, এর বেশি কিচ্ছু জানিনা,, আপনাকেই চাই আমি। ”
রুহি কথাটা বলে ইরাদের বুকে মুখ গুজলো,,
ইরাদ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, প্রায় অনেক ক্ষন এভাবে থাকার পরে ইরাদ বললো,,
“আমাকে রেখে যাবেন আর কখনো?”
“উহুম আর কোনোদিন যাবো না”
“ডান হাতটা দিন”
ইরাদ রুহিকে একটা সুন্দর আংটি পড়িয়ে দিলো ডায়মন্ডের। বললো,,
“আমাদের ভালোবাসার স্মৃতি এটা,, সব সময় হাতে পরে থাকবেন”
রুহি নিজের হাতে একদম প্লেইন একটা পাতলা গোল্ডের রিং খুলে ইরাদকে পরিয়ে দিয়ে বললো,,
“আর এটা আপনার,, আমার দাদা আমাকে দিয়েছিলো এটা,, উনি পরতেন সব সময় আজ আপনাকে আমি এটা দিলাম কখনো খুলবেন না”

ইরাদ মিষ্টি করে হেসে রুহিকে বললো
আচ্ছা আসেন এখন কেক কাটি,, এরপর সবাই উপরে আসলো রুহি কেক আর বাকি সব কিছু দেখে অবাক,,
ইরাদ এত কিছু ওর জন্য করেছে, সবাই জানতো এসব কিছু ভীষণ লজ্জা ও লাগছে ওর।
রাত পর্যন্ত ওরা আশ্রমেই রইলো,, সবাই ইরাদকে কত ভালোবাসে রুহির অনেক ভালো লাগছে সব কিছুই,,
একবারে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ পরেই ওরা বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যাবে,,
এমন সময় মাহিরা এসে হাজির।
সুরাইয়ার ল্যান্ডলাইনে টুনিকে আরিশা ফোন করেছিলো ওদের সাথে এসে হেল্প করার জন্য ইরাদ আর রুহির বাসর সাজানোর জন্য এমন সময় মাহিরা কথা গুলো শুনে ফেলে,, আর টুনিকে জোর করে জেনে নেয় ওরা কোথায় আছে।
মাহিরা- ইরাদ ফাইনালি এই মেয়েকে খুঁজে বেড় করেই ফেলেছো? এই মেয়ে তুমি যাওয়ার অন্য কোনো জায়গা পাওনি? আমার হাসবেন্ড এর কাছে আসছো কেন?
ইরাদ- রুহিকে নিয়ে একটা কথাও না মাহিরা,,
তুমি চলে যাও আমাদেরকে আমাদের মত থাকতে দাও।
মাহিরা- যাবো না আমি,, তুমি শুধু আমার। আমার একমাত্র অধিকার তোমার ওপরে।
রুহি- ছিলেন,,
উনি আপনার ছিলেন ততদিন যতদিন আপনি তাকে ডিভোর্স দেন নি। এখন আমার স্বামী উনি,,
মাহিরা- মানিনা এই বিয়ে,, বললেই হয়ে যাবে?
রুহি- হ্যাঁ বললেই হবে না ঠিক বলেছেন,, কাগজ কথা বলবে,, আপনার আর উনার ডিভোর্স পেপারস কথা বলবে,,
এবার মাহিরা ইরাদের সামনে গেলো এক ঝাটকায় ওকে জড়িয়ে ধরতে যাবে এমন সময় রুহি এসে মাঝে দাড়ায়,
রুহি- আমার স্বামীর সাথে পরনারীর মেলামেশা আমার পছন্দ না একদমই,, কিছু বলার থাকলে দূর থেকে বলেন,
রুহির এমন উত্তরে সেখানে থাকা প্রত্যেকের ভালো লাগলো,,
যে এত জঘন্য একটা কাজ করেছে,, এত দিন কোনো মর্ম দেয়নি এমন একটা স্বামীর,, যখন ইরাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো তখন সে অন্যজনের সাথে আবৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো,
আর সে আজ এসেছে ইরাদের কাছে ফিরতে,, এমন মানুষ কখনোই ক্ষমার যোগ্য না,,
মাহিরা করুণ হয়ে ইরাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
-আমি ভুল করেছি মানি,, কিন্তু আমার কষ্টে কি তোমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না ইরাদ?? এত কঠিন কবে থেকে হলে তুমি?? তুমি ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই ইরাদ,, আমাকে কেউ তাদের কাছে রাখতে চাচ্ছেনা, তামিম বলেছে আমি চরিত্রহিনা,, মা বাবা আমাকে রাখলে আমার কারণে নাকি তাদের মানসম্মান শেষ হয়ে যাবে তাই তারাও বলেছে কখনো যেন ফিরে না যাই,, তুমি না রাখলে আমি কোথায় যাবো? আমাকে একটা সুযোগ দাও ইরাদ? আমি আমার পুরোটা দিয়ে চেষ্টা করবো তোমাকে খুশি রাখার।
রুহি এবার কিছু বললো না ও চাচ্ছে ইরাদের মন থেকে যা আসে ও যেন তাই বলে।
রুহি শুধু ইরাদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো,,
ইরাদ- মাহিরা তোমার জন্য আমার খারাপ লাগছে,,, কিন্তু ভালোবাসাটা এখন আর নেই,, কারণ পুরোটা তুমি নিজের হাতেই শেষ করে দিয়েছো,, আর আমার প্রতি তোমার কোনো অধিকার নেই, না আছে আমার ভালোবাসার প্রতি। আধিকার জিনিসটা কখনো আপেক্ষিক থাকেনা , কিন্তু আমরা একটা সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়ে তাকে শেষ করে দেই।
আমার প্রতি এখন তোমার আর কোনো অধিকার নেই।
রুহি- আপু একটা কথা বলি, সামনের পথ চলায় হয়তো কাজে আসবে আপনার,, যতদিন একটা সম্পর্ক থাকে ঠিক ততদিনই অধিকার থাকে।
আপনি নিজের জায়গা ছেড়ে গেলে সেখানে অন্য কেউ আসবে এবং অধিকারটা তখন তার হয়ে যাবে এটা আমার কথা না এটা দুনিয়ার নিয়ম।
মাহিরা- ইরাদ এটাই তোমার শেষ কথা?
ইরাদ- হ্যাঁ আশা করবো তুমি আমাদের জীবন থেকে দূরে চলে যাবে।
মাহিরা- আমার যাওয়ার সত্যি কোনো জায়গা নেই।
সুরাইয়া – মাহিরা এখন এটা ইরাদের দেখার বিষয় না,, তোমার কথা গুলো খারাপ লাগলেও এটা সত্যি।
-তাহলে আমি চলে যাবো??
রুহি ইরাদের দিকে তাকিয়ে বললো,,
১০ হাজার টাকা দেন,,
ইরাদ ওকে দেওয়ার পরে সেটা রুহি মাহিরার হাতে দিয়ে বললো
-আপু এটা নিয়ে যান,, এর বেশি কিছু করতে পারছিনা আমরা,, আর আশা করছি আপনি আমাদের জীবনে ফিরে আসবেন না কোনোদিন।
মাহিরার খুব কষ্ট হচ্ছে,, একটা সময় ও রুহির জায়গায় ছিলো,, কষ্টে এটা নিতে ইচ্ছা করছেনা,, কিন্তু এই টাকার ওর অনেক দরকার এখন তাই ও নিয়ে চলে গেলো,,
এক অজানা গন্তব্যের দিকে,, আজ ও বাড়িঘর ছাড়া,, না কারো স্ত্রী,, না কারো মেয়ে,, না কারো প্রেমিকা। নিজের দোষেই আর ওর পরিনতি এমন।

ইরাদের খারাপ লাগলো মাহিরার জন্য,, কিন্তু রুহির হাতটা শক্ত করে ধরলো ও। কারণ অতীত কে ফিরিয়ে আনার মানে হয়না আর এই মেয়েটার সাথে ওর আগামী জীবনের পথচলা। ওর কালো অন্ধকার রাতের সমাপ্তি ঘটেছে ভোর এসে উঁকি দিচ্ছে,, এই নতুন জীবনটার মানুষটা ওকে খুব করে চায়,, ওকে আগলে রেখেছে,, ভেঙে পরতে দেয়নি,,
পুরোটা জীবন এর সাথেই ওর পার করতে হবে,, আর মাহিরার এই জীবন মাহিরাই বেছে নিয়েছে এখানে ইরাদের কিছুই করার নেই।
আব্দুল্লাহ – চল এবার নাতিবউ নিয়ে বাড়ি যাই,,
সুরাইয়া – হ্যাঁ চল চল বাড়ি যাই।
রুহি সবার থেকে বিদায় নিলো,, নাজমা কে বললো আবার আসবে দেখা করতে।

গাড়িতে আসার সময় রুহি ইরাদকে জিজ্ঞেস করলো আরিশা কি ওকে ফোন করেছিলো কি না?
– আরিশারা সব জানে রাত থেকেই।
– তাহলে আজ আসলো না যে?
– ওরা আমাদের বাসায়ই, জরুরি কাজ করছে।
– এখানে আসা থেকে বেশি কি এমন কাজ হলো তাদের?
– আমাদের বাসর ঘর সাজাচ্ছে।
ইরাদ কথাটা একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,
রুহি একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,,
“উনি যে কিসের মধ্যে কি বলে,, একদম লজ্জা নেই”
কথাগুলো রুহি মনে মনে বললো,,
কিন্তু ইরাদ উত্তর দিলো,,
– হ্যাঁ লজ্জা নেই আসলেই,, কিন্তু আমি নির্লজ্জ শুধু আপনার কাছেই।

“মনের কথা ও শুনে ফেললো এখন আর কিছুই ভাববো না” রুহি আবারো মনে মনে বললো,,

– কিছু ভাববেন না এখন আর?

রুহি এবার বড় বড় চোখ করে ইরাদের দিকে দেখছে,,
– আমার বউকে আমি বুঝি।
এবার রুহি একটা লাজুক হাসি দিলো ,,

পিয়াল আরিশা টুনি মিলে রুহিকে বরণ করে নিলো, আরিশা টুনি মিলে রুহিকে রেডি হতে সাহায্য করলো,,
রুহি লাল সেই শাড়িটাই পরলো যেটা ইরাদ ওর জন্য কাল এনেছিলো,,
ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিলো গালে ব্ল্যাশঅন দিলো,, চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে এভাবেই মনে হচ্ছে একটা লাল পরী।
ইরাদ সাদা একটা পাঞ্জাবি পরেছে,, চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করে জেল দিয়ে সেট করেছে,, খোচা খোচা দাড়ি মুখে
পিয়াল বললো,,
-একদম নায়ক লাগতেসে ভাবী তো আজকে পুরাই ঘায়েল হয়ে যাবে।
– হ্যাঁ তোরা যা এবার,, কাবাবে হাড্ডি
– কি খারাপ বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি?
– হ্যাঁ তোর বউ নিয়ে যা তুই আমাকে শান্তি মত বউকে নিয়ে বসে কথা বলতে দে।
– কত যে কথা বলবি আজকে, জানা আছে এগুলা আমাদের
এই বলেই আরিশা ঘরে ঢুকলো,,
এবং সাথে সাথে হেসে দিলো পিয়াল আর আরিশা,,
-পিয়াল বেবি চল চলে যাই,, নিউ কাপল কে আজকে রোমান্স করতে দেই।
– হ্যাঁ ডার্লিং চল।
-ইরাদ শোন তোর বউকে ঘরে দিয়ে এসেছি।
আরিশা আর পিয়াল চলে গেলো,,

রুহি বেড রুমে এসে আরো অবাক হয়েছে কারণ ওর আর ইরাদের বড় একটা ছবি বিছানার ওপরের দিকটায় লাগানো হয়েছে,, পুরো ঘরটা বেলি গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে সাজানো হয়েছে,, খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আজকের আমেজটাই যেন বলছে আজ ভালোবাসার রাত,, এক হওয়ার রাত।
রুহি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ইরাদ ঘরে এসে রুহিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,,
এতে রুহির পুরো শরীরে যেন এক প্রকার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে গেলো,, ইরাদ ওকে আস্তে করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো,, রুহি লজ্জায় ওকে ছাড়িয়ে ঘরের ভিতরে যেতে চাইলো তখন ইরাদ ওর হাত ধরে ফেললো,, কাছে টেনে নিয়ে হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,,
-আপনি যতদিন না চাইবেন ততদিন কিছু করবো না,, যতটা ইচ্ছে সময় নিতে পারেন।
রুহি ইরাদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো,, কি সুন্দর হাসি এই লোকটার দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে,, এখন তো কোনো বাধা নেই,, এখন এই মানুষটাকে ভালোবাসাই যায়,, খুব করে ভালোবাসা যায়,,
রুহি এবার ইরাদের হাত দুটো নিজের কোমড়ে দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে ঠোঁটে ঠোঁট জোড়া আলতো করে গুজে দিলো,, ইরাদ খুব অবাক হয়ে গেলো,, কিন্তু ভালো লাগছে,, ভালোবাসার গভীরতায় ডুবে যেতে,, উভয়ের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে,,
রুহি কিছুক্ষণ পরে ইরাদের ঠোঁট ছেড়ে বললো,,
“এতটা ভালো হওয়া ও কিন্তু ভালো না,,”
কথাটার অর্থ ইরাদের বুঝতে বাকি নেই,, একটা সুন্দর হাসি দিয়ে রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো,,
“একটু খারাপ হওয়াই যায় তাহলে”
রুহি লজ্জার বিছানায় মুখ গুজে দিলো,, ইরাদ ওকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে,, শাড়িটা খুলে ফেললো,,
ইরাদের প্রতিটি স্পর্শ রুহিকে নতুন করে জাগ্রত করছে,, এ যেন এক নতুন কেউ,, আজ রুহি পূর্ণতা পাচ্ছে,,
একে অপরকে ওরা আবিষ্কার করছে,,
ভালোবাসার গভীরতায় ডুবে যাচ্ছে,, যতটা সম্ভব অতটা দিয়েই আজ একে অপরকে আপন করে নিচ্ছে ওরা। ইরাদের ক্ষত বিক্ষত মনটায় এক রাশ সুখ আর শান্তি নিয়ে এসেছে ওর ঝড়ের রাতে আগত পরী,, আজ ভালোবাসায় কোনো বাধা নেই,,
আজ আছে পুরোপুরি আধিকার,, আছে ভালোবাসা,, আছে পুর্ণতা,, আছে বৈধতা।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আপনারা জানেন ইয়াসিরা আবিশা ফাৎহার গল্প মানেই গল্পের শেষে একটা ম্যেসেজ থাকে আপনাদের জন্য,, অধিকার নিয়ে আজ এতটুকু বলবো,, মাহিরার মত পুরুষ / নারী যদি কারো জীবনে থেকে থাকে তারা কখনো ২য় সুযোগ ডিজার্ভ করেনা,, তাদের থেকে সরে আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ,, ভালোবাসা ভালো কিন্তু যারা এর মর্যাদা দিতে পারেনা তাদের ভালোবাসতে নেই। তাকেই অধিকার দিন যে এর মর্যাদা রাখতে পারবে। আর একবার অধিকার হারিয়ে গেলে তা ফিরে পাওয়া যায় না। তাই সময় থাকতে বুঝে শুনে যে কোমো নির্ণয় নিন, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ( এবং ২য় সিজনে রুহির পারিবারিক সমস্যা গুলোর রহস্য উদঘাটন করা হবে এবং সমস্যা গুলোর সমাধান দেওয়া হবে)

অধিকার পর্ব-১৫

0

#অধিকার
#পঞ্চদশ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

ভোর ৫ঃ০৩ আরিশা , সুরাইয়া বা আব্দুল্লাহ কারো চোখেই ঘুম নেই,, ওরা সবাই ইরাদের বাসায় আছে,, দুঃসময়ের বন্ধু বলতে এই মানুষ গুলো বরাবরই ইরাদকে সহযোগিতা করেছে,, তাই আজকেও ওরাই পাশে আছে,, সুরাইয়া আর আরিশা ভাবছে রুহি কোথায় যেতে পারে,,
-দাদু আমার মনে হচ্ছে রুহি আশেপাশে কোথাও আসে, কারণ বাসস্টপ বা ট্রেনে কোথাও গেলে আদনান ভাই খবর জানতো,,

– হ্যাঁ আমার ও তাই মনে হচ্ছে,, কিন্তু ইরাদ পিয়াল ওরা তো ওকে পাচ্ছেনা।

-সুরাইয়া আজকে তুমি বলছিলে না রুহি কে নিয়ে ইরাদের করা আশ্রমটা দেখাবে,, ওকে আস্তে আস্তে ইরাদের ভালো মানুষী সম্পর্কে অবগত করে একটা সময় ওদের বিয়ের কথা তুলবে?

আব্দুল্লাহ কথা গুলো বলে উঠলেন পাশের সোফা থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে।

– হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু ওটা ইরাদের এখনো জানাইনি।

– রুহি ওখানেই গেছে সুরাইয়া

– দাদু আপনি সিউর কিভাবে?
– বুড়ো তো এভাবে হইনি দাদুভাই,, আর তা ছাড়া সাইক্রাইটিস্টরা একটু আচ তো করতেই পারবে তার পরিচিত মানুষদের নিয়ে,,
কারণ রুহি যেরকম সেন্সেটিভ আর বাহারি দুনিয়া কম বুঝে ওর মত একটা মেয়ে বেশি দূর পর্যন্ত এত রাতে যেতে পারবে না,,

সুরাইয়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন,, কারণ তার স্বামী কে সে ভালোভাবেই চিনেন,,
কোনো ব্যাপারে খুব বেশি একটা ধারণা বা আগে থেকে কথা আব্দুল্লাহ বলেন না,, অনেক ভেবে আর বুঝে সব সময় কথা বলে,, তাই সাথে সাথে সুরাইয়া আশ্রমে ফোন করলো,, ৪বার রিং হওয়ার পরে রহিমা ফোন ধরলো,

– আসসালামু আলাইকুম খালাম্মা
– ওয়ালাইকুম আসসালাম রহিমা কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো,, আপনি?
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ,, শোন এই সময় ফোন করলাম একটা দরকারে।
– বলেন খালাম্মা।
– তোমাদের ওখানে কি কোনো মেয়ে আসছে আজকে রাতে??
– হ্যাঁ আসছে সুন্দর মতন একটা মেয়ে বয়স ২৩-২৪ হতে পারে। নাম বললো রুহি,,
কথাটা শুনে সুরাইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে একটা হাসি দিয়ে আরিশা আর আব্দুল্লার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বললো পেয়েছে।
– ওকে যেতে দিও না কোনো ভাবেই।
– কেন খালাম্মা মেয়েটা কোনো খারাপ কাজ করছে?
– আরে না ও তোমাদের ইরাদ স্যারের ওয়াইফ।
– স্যারের বউ?
– হুম,, ওদের একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে ওকে বলো না কিছুই এখন। আমরা আসতেসি একটু পর। ম্যাডামকে যেতে দিও না কোনো মতেই।
– আচ্ছা খালাম্মা।

সুরাইয়া ফোনটা রাখলো,,আব্দুল্লাহ একটা গর্বিত হাসি দিলো,,
সাথে সাথেই আরিশা খুশিতে “- ইয়েস,, দাদাভাই ইউ আর গ্রেট ” বলেই পিয়াল কে কল করলো,,
এবং বললো রুহির খোঁজ পাওয়া গেছে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে।

ইরাদ সোজা রুহিকে আনতে যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু আরিশা মানা করলো,,
একটা প্ল্যান বানালো আরিশা, রুহি যেহেতু সুন্দর করে চাইছিলো ইরাদকে প্রপোজ করবে তাহলে সুন্দর ভাবেই করা হোক,,
-দাদু ইরাদ একটা গাধা,,
সুরাইয়া হেসেদিলো
– কেন?
– যেই শাড়ি এনেছিলো রুহির জন্য সেখানে ওর নামটা লিখলেই পারতো,, আরে তুই যখন প্রপোজ করবি প্রিপারেশন তো ভালোমতো নিবি। গাধা একটা,,
-দোষ ওর না,, মাহিরাই এমন সময় আসছে,,
– হ্যাঁ ও আবার কেন আসছিলো কে জানে? ভালো হয়েছে দাদু এখন চলে গেছে
– যায় নি।
– কি বলেন দাদু?
– হুম আমাদের বাসায় ও।
– ওর লজ্জা হবেনা? এতকিছু করার পর আবার চলে আসছে ওদের জীবনে অশান্তি করতে।

“তোমরা যাই করো আজকে ইরাদকে এগুলো বইলো না,,” কথাটা আব্দুল্লাহ বললো

সুরাইয়া আর আরিশা সম্মতি দিলো,,
ইতিমধ্যে ইরাদ ও চলে এসেছে,,
কেমন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে ইরাদকে এক রাতেই চোয়াল ভেংগে গেছে,, চোখ মুখ কালো দেখাচ্ছে। চুল উশকো খুশকো হয়ে আছে,
-পুরো দেবদাস দেখাচ্ছে,,
-আরিশা দেখ সবসময় মজা ভালো লাগেনা, রুহি কোথায় বল? ওকে নিতে যাবো।
-এখন বলবো না,, এমন শুকনো মুখে নিতে যাবি?
যত গুলো দুঃখ দিয়েছিস ওত গুলো খুশি দিয়ে আনতে যাবি। আজকে মেয়েটা এমনিতেই কত নার্ভাস ছিলো,,
-নার্ভাস কেন?
– ও আজকে তোকে প্রপোজ করতে চাচ্ছিলো কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো,,
– প্রপোজ?
– হ্যাঁ তোকে রুহি ভালোবাসে। আজকে সকালেই এই নিয়ে আমাদের কথা হয়েছিলো, সন্ধ্যা বেলায় ও তোকে বলতো মনের কথা।
কিন্তু ওই সুযোগটাই পেলো না।
– ড্যাম ইট
বলেই ইরাদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো,

-আরিশা বল কিভাবে কি করতে পারি? আমি ওকে কিছু স্মরনীয় মুহুর্ত উপহার করতে চাই।
– এই না আসলি ট্রাকে,, এখন আমার কথা সবাই শুনেন,,
আশেপাশে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে একটা পাশ রিজার্ভ করতে হবে,, কোথায় করা যায়?
– শাফিন ভাই,, আমার পরিচিত উনি কাছেই উনার রেস্টুরেন্ট সেখানেই বুকিং দিয়ে দেই।
সুরাইয়া – না এমন কিছু করো না,, রুহি যদি বুঝতে পারে ও হয়তো চলে যাবে,, তাই আমাদের এমনভাবে সব করতে হবে যাতে ও সারপ্রাইজ পায়।

আরিশা- তাহলে দাদু?? কিভাবে কি করা যায়?
সুরাইয়া -আমি ওদের কে কল দিয়ে বলি আজকে তাদের যে কারো একজনের জন্মদিন,, এইজন্য ছাদে একটা ছোট অনুষ্ঠান করে সবাই কেক কাটবে ওখানে।
পিয়াল- হ্যাঁ আর আমরা এদিকে থেকে লোক পাঠাতে পারবো যাতে সুন্দর করে ছাদটা ওরা ডেকোরেশন করে দেয়।

আরিশা- হ্যাঁ আর রুহিকেও ড্রেস পাঠিয়ে দিবো যেটা পরে ও ছাদে আসবে।

পিয়াল -তারপর ইরাদ ভাবীকে প্রপোজ করবি।

ইরাদ – ঠিক আছে। অনিককে ফোন করে বলছি তাই করতে,, কিন্তু রুহি কোথায় আমাকে কেউ তো বলবেন?

আব্দুল্লাহ- তোমার আশ্রমে,,

ইরাদ সাথে সাথে দাড়োয়ানকে ফোন করে বললো কাউকে যেন আজ আশ্রম থেকে বেড় হতে না দেয়। আর ডেকোরেশন এর জন্য লোকজন পাঠিয়ে দিলো
আর সুরাইয়া ফোন করে রহিমা কে শিখিয়ে দিলো সব কিছু,,

ইরাদ- আরিশা পিয়াল একটা হেল্প কর
পিয়াল – বল
ইরাদ – রুহির জন্য একটা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ওকে দিয়ে আসবি? আমি গেলে আসলে দেখা না করে থাকতে পারবো না এখন
আরিশা- ঠিক আছে,,
ইরাদ – এই নে ক্রেডিট কার্ড,,
আরিশা- নিবো না তোদের বিয়ের কোনো গিফট ও দেইনি এখনো,,
ইরাদ- আজকে না ,, আমি চাই আমার বউ আজকে আমার তরফ থেকে দেওয়া কোনো কিছু পরুক।
আরিশা- ঠিক আছে তাহলে,,

বেলা ১০টা বেজে গেলো সব প্ল্যানিং করতে করতে,,
নাস্তাও বানিয়ে ফেলেছে কাজের মহিলাটা সবাই নাস্তা করে নিলো,, ইরাদের গলা দিয়েই শুধু খাওয়া যাচ্ছে না,, সবাই এটা খেয়াল করলো কিন্তু কিছুই বললো না,, কারণ কারো কথাই ইরাদকে শান্তি দিতে পারবেনা,, তবুও ইরাদের জোরাজোরিতে সবাই নাস্তা করে নিলো এবং আরিশা পিয়াল বেড় হয়ে গেলো ওরা ঠিক করেছে শপিং করে সোজা রুহিকে জিনিস গুলো আশ্রমের রহিমার হাতে দেওয়াবে এরপর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একবারে বিকেলে চলে যাবে ইরাদের সাথে রুহিকে আনতে।

সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ ও সারারাত ঘুমায় নি তাদের ও রেস্ট দরকার। তারাও বাসায় যাবে এখন বিকেলে ইরাদের সাথেই রুহিকে আনতে যাবে,, কারণ রুহিকে তারাও খুব আদর করেন৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাহিরা,, এই মেয়েটাকে আগে সুরাইয়া আদর করতো খুব,, তার আচরণ গুলো সর্বদাই স্বার্থপর ছিলো তারপরেও, ইরাদের মত একটা স্বামী থাকার পরেও পরকিয়ার মত একটা জঘন্য কাজ করার কারণে আব্দুল্লাহ আর সুরাইয়া দুজনের মন থেকে উঠে গেছে মেয়েটা,, এখন মাহিরা ওদের জীবন থেকে দূরে থাকলেই সবাই শান্তি অনুভব করে।
ইরাদ- দাদা দাদু আপনারা ও বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রাম করে নেন,, অনেক বেলা হয়ে গেছে।
সুরাইয়া- হ্যাঁ দাদুভাই
আব্দুল্লাহ – তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও দাদা ভাই।
– জ্বি আচ্ছা। আপনাদের অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমি।
– এমন কিছুই না,, পাগল ছেলে। আমরা আছি সবসময় তোমার জন্য।

গেইট থেকে বেড় হতে হতে সুরাইয়া বললো,,
-মাহিরাকে বলা যাবেনা রুহির কথা।
-নাহ,, বলবো এখনো খোঁজ হয়নি।
-নাহলে আশান্তি সৃষ্টি করবে।

এদিকে মাহিরার মন অনেক খুশি সকাল থেকেই,, রাতে যদিও ঠিক মত ঘুম হয়নি,, তাতে কি? মাহিরা বুঝতে পারছে রুহি নামক বাধাটা বোধহয় আর নেই ইরাদের জীবনে,, ওকে পাওয়া গেলে তো দাদা দাদি সকালেই ফিরে আসতো,, নিশ্চয়ই ওকে আর পাওয়া যায়নি,,

(চলবে)

অধিকার পর্ব-১৪

0

#অধিকার #চতুর্দশ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

ইরাদের মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে এখন রুহি কোথায় গেলো এই সময়? রাতের বেলায় তো একা একটা মেয়ের জন্য রাস্তাঘাট নিরাপদ ও না। এর ওপরে মাহিরার আজেবাজে কথা ইরাদের ভয় লাগছে,, ইরাদ সাথে সাথেই আরিশাকে ফোন করলো,,
-রুহি তোদের বাসায়?
-এত রাতে আমার বাসায় কেন আসবে?
-ও বাড়ি ছেড়ে চলে গেসে
-কি? কেন?
ইরাদ ওদের সবটা বলল,, কথা গুলো বলতে বলতে ইরাদের গলা ধরে আসছিলো।

ওর অতীত আজকে ওর বর্তমান নষ্ট করে দিলো না তো এই একটা ভয় কাজ করছে, আর রুহি ঠিক আছে কি না এই চিন্তায় ও শেষ,,
সুরাইয়া দাদু কেও ইরাদ আজকের ঘটনা জানালো ফোন করে,, কিন্তু ইরাদ জানেনা মাহিরা ওর বাসায় না গিয়ে এখন সুরাইয়ার বাসায় বসে আছে,,মাহিরা খুব জেদি ধরনের,, ওর যেটা চাই সেটা চাই,,
এই স্বভাবটা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তা ওর ধারণাতে নেই,, ওকে সুরাইয়া অনেক বুঝালো যেন নিজের বাসায় চলে যায়,,
তবে মাহিরা যে উনার কথক শুনবে না তা আব্দুল্লাহ ভালোই বুঝতে পেরেছেন তাই সুরাইয়া কে বললেন
“ও থাকুক আসো আমরা একটু গিয়ে আসি”
তারাও কিছুক্ষনের ভিতর বাসায় আসলেন,, ইতিমধ্যে পিয়াল আরিশা ও চলে এসেছে,,সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ ওদের বিয়ের ব্যাপার কিছুই জানতেন না,, আরিশার থেকে সবটা জেনে নিলেন,,
পিয়াল- আরিশা তুমি থাকো আমি ও বেড় হই ভাবীকে খুজতে।
আরিশা- হ্যাঁ যাও ইরাদের সাথে,, ওকে সামলে রেখো।

ইরাদ এদিকে ওর খুব কাছের বন্ধু আদনান যে একজন ওসি তাকে রুহির ছবি মেইল করে দিয়ে বলেছে খুজে বেড় করতে,,
আর নিজেও বসে নেই বেড় হয়ে গেছে রুহিকে খুজতে,, রাতের বেলা না হলে ইরাদের এত ভয় করতো না,, মেয়েটা এত ইনোসেন্ট,, ওর কোনো ক্ষতি যদি হয় ইরাদ কখনো মাহিরাকে মাফ করতে পারবেনা,, মাহিরা ওর সাথে যা করেছে এইজন্য মাহিরাকে কিছুই বলেনি ও,, কিন্তু রুহির সাথে কিছু হলে যে ইরাদ সহ্য করতে পারবেনা,, নির্দোষ মেয়েটা জীবনে কম কষ্ট সহ্য করেনি,, আজ আবার ইরাদের জন্য তার এই রকম কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে এই জিনিসটা ইরাদ মেনে নিতে পারছেনা।

রুহি ঢাকা শহরের কিছুই চিনেনা,, ইরাদের সাথেই বেড় হয়েছে যতবার দরকার পরেছে,, নাহয় ড্রাইভার সাথে ছিলো,, কিন্তু এখন রাতের বেলায় ভয় হচ্ছে অনেক। কোথায় যাওয়া যায় এই কথা ভাবছে ও,, তখনই হঠাৎ মনে পরলো সুরাইয়া দাদু বলেছিলেন ওদের বাসার থেকে পরের রোডে একটা আশ্রম আছে বাচ্চা ও বৃদ্ধা মহিলাদের থাকার,, উনি প্রায় সময়ই ওখানে যান,, এই সময়ে থাকার জন্য কোনো জায়গা রুহির মাথায় আসছেনা,, ঢাকায় অনেক আত্নীয় স্বজন ও আছে ওর কিন্তু কারো বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে বা তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ইচ্ছে কোনোটাই রুহির নেই,,
তাই আজ রাতটা ওখানে থাকলেই ভালো হবে। কাল হয়তো এই শহর ও ছেড়ে দিবে ও,, কারণ যেখানে ইরাদের স্মৃতি আছে সেখানে থাকলে ও কখনো স্বাভাবিক থাকতে পারবেনা,, কত গুলো স্মৃতি আছে, কত গুলো অপূর্ণ স্বপ্ন আছে এই শহরে,, এগুলো সব পিছনে ফেলে রেখে আগে বাড়তে হবে, শুধু মাত্র ইরাদের সুখের জন্য।

রুহিকে একদম বিদ্ধস্ত লাগছে,, আশ্রমে যাওয়ার পরে তারা ওর এমন অবস্থা দেখে ওকে থাকতে দিলো। বেশ করে রহিমার খুব মায়া হলো ওকে দেখে,,
রুহি তেমন কিছু বললো না,, সেখানকার সবকিছু দেখেশোনা রহিমাই করেন,, আর তিনিই রুহিকে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন,, সাথে করে নিয়ে ওকে দেখিয়ে দিলো পূর্ব দিকের একটা বিছানা সেখানে ও থাকতে পারবে,
-খালা,, একটা জায়নামাজ হবে??
রুহির কথা শুনে রহিমা ওকে একটা জায়নামাজ দিলো আর বাথরুমের রাস্তা দেখিয়ে দিলো,, রুমের লাইট অফ ছিলো,, রুহি এসে প্রায় ঘন্টা খানিক নামাজ পরে মুনাজাতে আল্লাহর কাছে খুব কান্না করলো, আওয়াজ নাহলেও রুহির কান্না ঘরে যে আরো একজন বৃদ্ধা আছেন তিনি ঠিকি বুঝেছেন,, কিছুক্ষন পরে খাটের এক কোণায় বসে হাটুর মধ্যে মাথা গুজে রুহি নিঃশব্দে কাঁদছে,, কোনো ভাবেই মনকে শান্ত করতে পারছেনা ও,, এক নিমিষেই ওর দুনিয়া,, কত শত স্বপ্ন,, সব শেষ হয়ে যাবে ও তা কখনো ভাবতেই পারেনি। কলিজার পোড়ানি কমছেনা কোনো মতেই,, মাথাটাও ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে,,
রুহির চুপচাপ কান্নাটা বৃদ্ধার চোখে পরলো,, তার কেন যেন ইচ্ছা করলো রুহির সমস্যা শুনতে,, মেয়েটার কিছু নিয়ে অনেক মনের পীড়া আছে তা উনি ভালোই বুঝতে পারছেন।
রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় তিনি বললেন,,
-কি হয়েছে বোন তোমার?
রুহির মাথায় হাত রেখে এভাবে জিজ্ঞেস করায় ওর কেন যেন এই অচেনা বৃদ্ধাকে খুব আপন লাগলো,,
-দাদু আমার সব শেষ হয়ে গেছে আজকে,, ভুল করেছিলাম,, ভালোবাসার মত ভুল।
-প্রথম থেকে বলো দাদু,,
রুহি খুলে বললো সব কিছু,,
মহিলা বললেন,,
– হ্যাঁ তুমি আসলেই ভুল করেছো,,অনেক বড় ভুল,, নিজের স্বামী কে রেখে আসার মত ভুল করেছো তুমি।
-দাদু উনি তো আমাকে ভালোবাসেই না তাহলে আমি কেনই বা থাকবো ওখানে?
-ছেলেটা তোমাকে ভালো না বাসলে বিয়ে করতো না,, এত দিন একসাথে থেকেছো কখনো তোমাকে ছুয়েও দেখেনি। কেউ যদি কাউকে ভালো না বাসে তাহলে এরকম করতে পারে না। দুনিয়া দেখে আসছি তোমাদের থেকে অনেক বেশি,, বাস্তব জীবন সিনেমা না, পুরুষ মানুষের নিয়ত খারাপ হয় কতটা তোমার ধারণার বাইরে,, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোমার জামাই তার আগের বউকে চায় না।
-কিন্তু দাদু আমি নিজ কানে শুনেছি,, আর সেই শাড়ি আর চিরকুট? সেগুলো আমি বলতে পারছিনা, কিন্তু তোমার একবার সামনা-সামনি কথা বলে বের হওয়া দরকার ছিলো,,
আর আইনানুসারে সে তোমার স্বামী এখন। তার প্রাক্তন স্ত্রী কে যদি তার পেতেও হয় তোমাকে ছেড়ে তারপর আবার বিয়ে করতে হবে।
-তার মুখ থেকে আমি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা সহ্য করতে পারতাম না দাদু।
-রুহির এই অসহায় কান্না দেখে নাজমা বেগমের খুব খারাপ লাগলো,,
তার মেয়ে যদি ২৫ বছর আগে ক্যান্সারে মারা না যেতো তাহলে হয়তো রুহির মত একটা নাতনি থাকতো তার।
উনি বুঝতে পারছে একবার ইরাদের সাথে রুহির কথা বলা দরকার। এরকম ভুল বুঝাবুঝির মাধ্যমে একটা বৈবাহিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে তা উনি চান না।
-তোমার স্বামীর নাম কি?
-ইরাদ আহসান।
-আহসান বিল্ডার্সের এমডি?
রুহি অবাক হয়ে তাকালো নাজমার দিকে,,
ইরাদকে উনি কিভাবে চিনতে পারলো তাই ভাবছে ও।
-তোমার স্বামী আমাদের এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা, খুব ভালো মানুষ,, তার প্রাক্তন কে চিনতে পারছি এখন। উনি একটু রাগি ধরনের ছিলো,, তবে তোমার স্বামী অনেক মানিয়ে রাখতে চেষ্টা করতো। অনেক যত্নে রাখতেন।
-হুম উনি অনেক ভালো মানুষ, তাই যাকে নিয়ে ভালো থাকবেন তার সাথেই থাকুক।
এখন নাজমা আর কিছু বলছেন না কারণ তিনি চিনেন ইরাদ কেমন মানুষ,, আর মাহিরাকে কত ভালোবাসতেন তা ইরাদের আশেপাশে যারা থাকতেন বা ওকে দেখেছেন সবাই বুঝতে পারতেন।

প্রায় সারারাত ধরে রুহিকে সব গলিতে মেইন রোডে ইরাদ আর পিয়াল খুজে ফেলেছে,,
প্রায় ভোরের সুর্য ফুটে উঠতে চলেছে,, ইরাদের আর সহ্য হচ্ছেনা,, আদনান ও পেলো না রুহিকে,, কোথায় যেতে পারে ও?? আযান পরতে শুরু করেছে চারপাশে।
ইরাদ সেখানে ঢুকে গিয়ে নামাজ পরে নিলো,
মুনাযাতে আল্লাহকে বললো,,
-আল্লাহ আপনি আমাকে আমার মা বাবা থেকে দূর করে দিয়েছেন আমি মেনে নিয়েছি। আপনি মাহিরাকে আমার জীবনে রাখেন নি আমি মেনে নিয়েছি,, আমি কখনো বাবা হতে পারবো না তাও মেনে নিয়েছি,, আমি তো সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু সহ্যের তো একটা ক্ষমতা থাকে। রুহিকে তো আমি খুজি নি,, আপনিই আমার জীবনে পাঠিয়েছেন। আজকে এভাবে হঠাৎ করেই যদি রুহিকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে নেন তাহলে আমাকেও আপনার কাছে নিয়ে যান,, আমি আর অপ্রাপ্তি নিতে পারছিনা।

পিয়ালের খুব খারাপ লাগছে ইরাদের এই অবস্থা দেখে,,, মনে মনে আল্লাহ কে বলছে রুহির যেন খোঁজ পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি,,

এমন সময় আরিশা ফোন করে পিয়ালকে,,
পিয়ালের চোখে মুখে খুশি দেখা যাচ্ছে,,
ইরাদ নামাজ শেষ করতেই পিয়াল ওকে ধরে বলে
-দোস্ত আরিশা কল দিলো মাত্র,, ভাবীর খোঁজ পাওয়া গেছে।
– ও ঠিক আছে?
– হ্যাঁ একদম
ইরাদ আল্লাহকে স্মরণ করে আলহামদুলিল্লাহ বললো।

এদিকে মাহিরা ও সারারাত না ঘুমিয়ে জেগে আছে আর ভাবছে রুহিকে না পেলেই ভালো হবে,, ইরাদের জীবনে ও নিজের অধিকার আবারো ফিরে পাবে তাহলে…

(চলবে..)

অধিকার পর্ব-১৩

0

#অধিকার #ত্রয়োদশ
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

-কি হয়েছে আপনার?? শরীর খারাপ??
-মাহিরা এসেছে।
– কে?
-আপনার প্রাক্তন স্ত্রী,, সে আপনার বেড রুমে এখন।

কথাটা শুনে ইরাদ হতভম্ব হয়ে যায়। এবং সাথে সাথে ওর ঘরের দিকে পা বাড়ায়,,

রুহি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। ইরাদ ওর সাথে আর কোন কথা না বলে মাইরার কাছে চলে গেল। জিনিসটার রুহি মনে ভীষণ পীড়া দিলে। প্রায় 20 মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে,, রহিরা দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি যেন শেষ হয়ে আসছে,, হয়তো মনের এত বড় পীড়া দেখে শরীর অবশ হয়ে আসছে,,রুহি আস্তে করে মাটিতে বসে পড়ল। হঠাৎ করে ব্যাগের দিকে চোখ গেল,, একটা বক্স দেখা যাচ্ছেভীষণ সুন্দর কারুকার্য করা,, রুহি সেটা খুলে দেখল। ভেতরে একটা লাল টকটকে শাড়ি,, সাথে একটা চিরকুট লিখা ।
“কোনো দিন বাবা হতে না পারার পীড়া আমার মনেও অনেক আঘাত এনেছে কিন্তু এত কিছু হওয়ার পরেও আমাকে গ্রহণ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে প্রিয়তমা।”
ইতি,,
তোমার ইরাদ ।

রুহির কান্না এবার বেড়ে গেল। চোখের পানি এখন আর কোন বাধা মানছে না। তাহলে কি এই খবর ইরাদ ওকে দিতে চেয়েছিল? ইরাদের প্রতি রুহি ভালোবাসা,, যত্ন কিছুই কি ওর চোখে পড়েনি? ইরাদের মনে কি তাহলে মাহিরাই ছিল?? নাহ,, তারপরেও রুহি একবার ইরাদকে জিজ্ঞেস করবে এভাবে তো হতে পারেনা,, রুহি তো ইরাদের বিয়ে করা বউ। প্রাক্তন স্ত্রী কে এভাবে এনে কি আসলেই ইরাদ সুখী হতে পারবে? এত গুলো দিনে কি ও রুহি ভালোই বাসেনি? অনেক গুলো কথাই তো মাথায় ঘুরছে কিন্তু ইরাদকে ও এত কিছুই জিজ্ঞেস করবেনা
শুধু জিজ্ঞেস করবে ও কি রুহি কে ছেড়ে দিতে চায় কি না? যদি তাই হয় তাহলে ও আর এক মুহুর্ত ও থাকবেনা এখানে। কোনো অধিকার ও দেখাবে না ইরাদের ওপর।

রুহি মনে সাহস জুগিয়ে ইরাদের ঘরের দিকে পা বাড়ালো,, সামনে গিয়ে দেখে দরজা আটকানো ভিতর থেকে। কিন্তু ইরাদের আওয়াজ স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।
“তুমি জানো না মাহিরা আমি আজকে কত বেশি খুশি,, আজকের দিনটার প্রতিক্ষা আমি করে এসেছি সেই কবে থেকে,, তুমি আমার জীবনে আসবে এই প্রহর আমি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ গুনতাম,, তুমি আছো দেখেই আজ আমি আছি,, আই লাভ ইউ সো মাচ”

কথা গুলো রুহির কানে যেন সূচের মত বিধছিল,, যেও ভয়টা পেয়েছিল সেটাই তাহলে সত্যি হলো।
ইরাদ মাহিরাকে ভালোবাসে,, তাহলে রুহির এখানে আর থাকার কোনো অর্থ হয় না। ইরাদের জীবনে ও কোন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে চায়না।

রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। রুহি ছোট একটি চিরকুট লিখল ইরাদের জন্য।
যেদিন রুহি প্রথম এসেছিলো এখানে তখন নিজের পড়নের জামা জুতো যা ছিলো সেগুলো পরে নিয়ে মেইন গেইটের কাছে চলে গেলো,,
পেছন ফিরে আর একবার তাকিয়ে সব দেখে নিলো,, এসবই তো মাহিরার ছিলো,, মাঝে ও কিছুদিন এসেছিলো,, আজ আবার বিদায়ের পালা চলে আসলো,, চোখ মুছতে মুছতে রুহি বেড় হয়ে গেলো,, অজানা এক গন্তব্যে।

ইরাদ বাসায় ঢুকে যখন শুনতে পেলো মাহিরা এসেছে,, কিছু মুহুর্তের জন্য ওর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো,,
সাথে সাথেই নিজের বেডরুমে চলে গেলো আসল কারণ জানার জন্য,,
গিয়ে দেখে মাহিরা বিছানার উপরে বসে আছে,, ইরাদ কে দেখেই বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরতে চায়,
ঠিক তখনই ইরাদ একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় মাহিরাকে,,
অবাক হয়ে মাহিরা বলে,,
-ইরাদ?
-এখানে এসেছো কেন?
-আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে,,
কথাটা ইরাদের কাছে কাটার মত লাগলো,,
-চলে যাও আমার বাসা থেকে।
-তোমার বাসা? আমি কিছু না তোমার?
-না তুমি কিছু না,, যখন ছিলে তখন আমি তোমার ছিলাম আর এই বাসাও তোমার ছিলো কিন্তু এখন আমি তোমার জন্য পরপুরুষ বরং তার থেকেও বেশি পর,, কারণ আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে,,
– মানি না এই ডিভোর্স,, একটা কাগজের মধ্যেই আমাদের সম্পর্ক সীমাবদ্ধ?
– মাহিরা আমি অনেক ভালো আছি তুমি চলে গেলে খুশি হবো।
-না যাবো না,
-ঠিক আছে তাহলে থাকো আমি যাচ্ছি।
এই বলে ইরাদ ঘর থেকে যখন বেড় হতে যাচ্ছিলো তখনই মাহিরা দরজাটা লাগিয়ে দরজার সামনে বসে পরলো,,
-বেড় হতে দাও আমাকে
-দিবো না,,
এই মেয়ের সাথে কোনো উচ্চবাচ্য করবেনা ইরাদ, কারণ এর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে ওর নেই,,
কি অদ্ভুত জীবন,, এই রকম একটা সময়ের কতই না প্রতিক্ষা ছিলো ইরাদের,, এমনকি রুহি আসার পরের দিন ও মনে মনে ভাবছিলো আর কি কখনো এই ঘরে মাহিরার সাথে বসে কথা হবে? মাহিরা তো আর ওর কাছে ফিরবে না,, মাহিরাকে তখনো কত মনে পরত,, কত ইচ্ছা করতো ওর সাথে বসে কথা বলার,, সময় কাটানোর,, কিন্তু আজ মাহিরাকে আর ভালো লাগছেনা, ওর প্রতি আর কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা,,
-আমাকে তোমার মেনে নিতেই হবে,, আমি তোমাকে ভালোবাসি ইরাদ,, বাচ্চা লাগবে না আমরা একসাথে থাকলেই হবে।
এই বলে মাহিরা কান্না করতে শুরু করলো,,
-চলে যাও মাহিরা। আমি তোমাকে আর চাইনা। যে বিবাহিত থাকা অবস্থাতেই পরকিয়া করতে পারে,, অন্যজনের জন্য নিজের স্বামী কে ত্যাগ করতে পারে সে আর যাই হোক ভালোবাসতে পারে না। আর ইসলামী শরিয়াত অনুযায়ী আমরা একে অপরের জন্য হারাম হয়ে গেছি। কোনো ভাবেই আর কিছু সম্ভব না।
-সব ঠিক করে ফেলবো, তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি জানি ইরাদ আমাদের বাসর রাতের কথা গুলো তোমার মনে আছে??
দাড়াও আমার কাছে রেকর্ড করা আছে আমি শুনাচ্ছি তোমাকে,,

মাহিরা মোবাইল থেকে রেকর্ড বাজানো শুরু করলো
ফাইনালী আজ আমাদের বাসর রাত,,
তুমি জানো না মাহিরা আমি আজকে কত বেশি খুশি,, আজকের দিনটার প্রতিক্ষা আমি করে এসেছি সেই কবে থেকে,, তুমি আমার জীবনে আসবে এই প্রহর আমি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ গুনতাম,, তুমি আছো দেখেই আজ আমি আছি,, আই লাভ ইউ সো মাচ”

পুরোটা ইরাদ চুপচাপ শুনলো এরপর মাহিরার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে হাসলো,,
ইরাদের মুখে হাসি দেখে মাহিরাও হেসে বললো,
-আমি জানতাম তুমি রাগ করে থাকতে পারবেনা আমার ওপরে। এখনো আমাকে ভালোবাসো।

-ভুল বুঝলে, আমি হাসলাম এইজন্য যে আজ এগুলো শুনার পরেও তোমার প্রতি কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা আমার। আমি সত্যিই তোমাকে আর ভালোবাসি না মাহিরা। রুহিকে ভালোবাসি আমি। মেয়েটা আমার জীবনটা স্বাভাবিক করেছে। আমাকে নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে,, ওকে আমি অনেক ভালোবাসি।

-এমন করোনা ইরাদ,, আমাকে প্লিজ ভালোবাসো,, এরকম করোনা,, তোমার ভালোবাসায় শুধু মাত্র আমার অধিকার।
-বেড় হয়ে যাও,, আমি তোমাকে আর সহ্য করতে পারছিনা।

এই বলেই মাহিরাকে টেনে ইরাদ নিচে নিয়ে এলো,,
চারপাশে তাকিয়ে দেখলো রুহি নেই,, কলিজায় একটা মোচড় দিয়ে উঠলো,, সাথে সাথে মাহিরার হাত ছেড়ে রুহিকে খুজলো সারা বাড়িতে খুজেও পেলো না ওর ফোনে কল করতেই ঘর থেক বেজে উঠলো,,
ইরাদ দেখলো রুহির ফোন ড্রেসিং টেবিলের ওপরেই রাখা হাতে নিয়ে দেখলো লকস্ক্রিনে ওর আর রুহির ছবি,, ফোনটা লক করা, কি হতে পাসওয়ার্ড, রুহি দিয়ে দেখলো ওর ফেভারিট কালার দিয়ে দেখলো হচ্ছে না এরকম কয়েকবার ট্রাই করার পরে নিজের নাম দিলো “ইরাদ” সাথে সাথেই ফোনটা আনলক হয়ে গেলো,,ইরাদের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো,, রুহি যে ওকে ভালোবাসে তা আর ইরাদ এর বুঝতে বাকি নেই,, তখনই পাশে রাখা চিরকুটটা দেখে ইরাদ পড়তে শুরু করলো,,

“শুভকামনা আপনার নতুন জীবনের জন্য,, আর হ্যাঁ একটা কথা বাচ্চা জন্ম হওয়া না হওয়া মানুষের হাতে না, তা সম্পুর্ণ আল্লাহার হুকুমে হয়,, তাই নিজেকে ছোট ভাববেন না কখনো,, আপনি মানুষ হিসেবে ভীষণ ভালো,, আপনার মত লোক যে স্বামী হিসেবে পাবে সে অনেক সৌভাগ্যবান,, নিজের যত্ন নিবেন,, আপনার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমার ভীষণ ভালো কেটেছে,, কখনো আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি,, তাই আজ ও দিবো না কারণ সেগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো যা ধন্যবাদ দিয়ে প্রকাশ করা যাবেনা,, ভালো থাকবেন,,

ইতি,,
রুহি।

ইরাদ এগুলো পড়ার পরে ওর ভীষণ কষ্ট লাগলো এবং সাথে সাথে রুহির ওপরে রাগ ও হলো,
হাতে চিরকুট দেখে মাহিরা সেটা নিয়ে পরলো
– ভালো হয়েছে ইরাদ ও চলে গেছে আমিও ভুল করেছিলাম তুমিও করেছো। আসো এগুলো ভুলে নতুন করে শুরু করি। এসব বাজে মেয়ে মানুষ কে ভুলে…

-ব্যাস আর একটা কথা না,, চুপ করো নাহয় তোমার গায়ে হাত উঠে যাবে আমার। আমার স্ত্রী কে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করার অধিকার আমি বাইরের কোনো মহিলাকে দেইনি। তুমি যদি এখন আমার বাসা থেকে বেড় না হও তাহলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো….

-তুমি ওই মেয়েকে নিয়ে কিভাবে সুখী হও আমি দেখে নিবো ইরাদ।
এই কথা বলে মাহিরা বেড় হয়ে গেলো,,

ইরাদ এই সময় রুহিকে কোথায় খুজবে মাথায় সেই টেনশনই ঘুরছে,,

(চলবে..)

অধিকার পর্ব-১২

0

#অধিকার
#দ্বাদশ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

“আগে আমরা হানিমুনে এসেছি তারপর বিয়ে হয়েছে,, ব্যাপারটা কত রোমাঞ্চকর! ” কথাটা মনে মনে বলেই রুহি খিলখিল করে হেসে দিলো,,
ইরাদ ওর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে ওরা,, তারপরেও মুখে কিছু না বলে আনমনে হাসা শুধু রুহির পক্ষেই সম্ভব,, মেয়েটার মনে কখন কি চলে ইরাদের মাথায় ঢুকে না। তবে ভালোই তো লাগে এসব।
“দিনে দিনে মেয়েটা আমাকে তার প্রতি দুর্বল করে তুলেছে,, এখন ওক মুহুর্ত ও ভালো লাগেনা ওকে না দেখলে। যেমন নতুন এক শহরে এসেছি সবাই রিকশায় উঠে ঘুরে আশেপাশের প্রকৃতি দেখার জন্য আর আমি আমার বউকে দেখছি ”

পড়ন্ত বিকেলে সোনালী রোদ ঝিলমিল করছে। রাস্তার পাশের ফুল গাছ গুলোতে রঙিন ফুল ফুটেছে,, রক্তলাল বর্ণ ধারণ করা জবা গুলো রোদের আলোতে চকচক করছে,, ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে চারিদিকে, সব মিলিয়ে এক মনোরম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সারাদিন বাইরেই কেটেছে আজকে রুহি আর ইরাদের। বেশ কিছু ছবিও ওরা তুলেছে,, অবশ্য রুহির ক্যান্ডিড ছবিই ইরাদ বেশি তুলেছে নিজে থেকে, তবে একসাথে ছবি তুলতেও মিস করেনি। ওদের জড়তাও কেটে গেছে অনেকটা,, মনের অনেক কথা আছে বলার কিন্তু দুই জনেরই অসম্ভব পরিমাণে ধৈর্য্য,, ঢাকা ফিরেই মনের না বলা কথা একে অপরের সাথে বলবে।

ইরাদের ম্যানেজার লোকটা খুবই ভালো ওকে যথেষ্ট সম্মান করে আর সাহায্য করে,, যেমন যেই কাগজটা সই করার জন্য ইরাদের ঢাকা যেতে হতো সেটা তিনদিন আগেই সে সাইন করিয়ে নিয়ে গেছে। নতুন বিয়ে করেছে বলে স্যারকে সময় দিতে চাচ্ছে ওর ম্যানেজার আসিফ। রুহি ইরাদের সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত সংরক্ষণ করতে করতেই আরো পাচ দিন কেটে গেলো,, আজ রাতেই ওরা ঢাকা ফিরে যাবে। আরিশা পিয়াল ওরা আরো ২দিন আগেই বাড়ি ফিরে গেছে। রুহির সাথে আরিশার ভাব খুব হয়েছে প্রতিদিন ওদের কথা হয় টুকটাক। রুহি ভেবে নিয়েছে আরিশার সাথে মিলে একটা প্ল্যান বানিয়ে ইরাদকে প্রপোজ করবে। মনের কথা না বলে আর থাকতে পারছেনা রুহি। কিছু একটা তো ইরাদ বলবেই আর এই কয় দিনে ও লক্ষ্য করেছে ইরাদ ওর দিকে তাকিয়েই থাকে যখন ও কিছু নিয়ে ব্যাস্ত থাকে তখন ইরাদ ওকে দেখতে ব্যাস্ত থাকে,, একটা মেয়ে শত হলেও পুরুষের চোখের চাহনি বুঝতে পারে কে ওর দিকে কোনভাবে তাকায় তা কিছুটা হলেও আচ করতে পারে মেয়েরা। রুহির মনে একটা ধারণা এসেছে হয়তো ইরাদ ওকে একটু হলেও চায়।

প্রায় রাত ১০ঃ৩০ বেজে গেলো বাসায় ফিরতে ফিরতে ওদের,, বাসা একদ তকতকে ঝকঝকে,, আর হবেই না কেন? কাজের মহিলাকে রুহি বিকেলে ফোন করে বাড়ি পরিষ্কার করে রেখে যেতে বলেছিলো,, ইরাদ তখন ল্যাপটপে বসে বসে কাজ করছিল আর রুহির দিকে এক নজর দেখে অবাক ও হলো কারণ ওর প্রায় আচরণে একদম গিন্নি গিন্নি একটা ভাব চলে এসেছে। যেমন এই সময়েও ইরাদের প্রায় কাজ পরে গিয়েছিলো,, এমনিতে ইরাদের কাজের চাপ পরলে ও রাত জেগে করে কিন্তু বেশি রাত পর্যন্ত ইরাদের কাজ করা রুহির পছন্দ না তাই রাতে তাড়াতাড়ি ওরা বিকেলে ঘুরাঘুরি শেষ করে সন্ধ্যা থেকে ইরাদ ওর কাজে বসতো আর রুহি কানে হেডফোন গুজে চুপচাপ ফোন দেখতো। যে কোনো জায়গায়ই রুহি বাড়ির মত একটা পরিবেশ খুব সুন্দরভাবেই বানিয়ে নিতে পারে। মেয়েটার মধ্যে যে কাউকে খুব সহজে আপন করে নেওয়ার এক অসীম ক্ষমতা আছে।

রুহি নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো আর ইরাদও ওর ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হলো। ইরাদ ভাবছিলো রুহিকে বেড রুমে এসে থাকতে বলবে কিন্তু রুহি মাইন্ড করবে কি না এই ভেবে আর বলা হয়নি।
এদিকে রুহির মনেও একই সংকোচ,, ইরাদ যদি ওকে নিজে না বলে তাহলে ও যাবে কেমন করে?
যদি কিছু মনে করে??

এসব ভাবতে ভাবতেই রুহি মোবাইলটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে গেলো,, ওর আর ইরাদের এই কয়দিনের বেশ কিছু সুন্দর ছবি আছে,, অনেক গুলো আরিশা আর পিয়াল তুলে দিয়েছে একদম কাপল পোজ দেওয়া,, একটা ছবি হামহাম জলপ্রপাতে তোলা ক্যান্ডিড,, রুহি পানির দিকে তাকিয়ে হাসছে আর ইরাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, ওই ছবিটা রুহির সব থেকে বেশি প্রিয়,, সেটাই ও মোবাইলের ওয়ালপেপার দিয়ে রাখলো,, আর ইরাদের সাথে অন্য একটা ছবি লকস্ক্রিনে দিয়ে রাখলো।
ব্যাটারি লো হয়ে গেছে, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রুহি উঠে ফোনটা চার্জে বসিয়ে দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,,

রাত প্রায় ১২ঃ৪৫ ইরাদ হয়তো আসবেনা। তাহলে আজ রাতটা বাসায় থাকাএ অন্যদিনের মত জেগেই কাটাতে হবে আর বিছানায় গেলে ঘুম আসবে না এভাবেও। এখন ইরাদকে ছাড়া বিছানাটা খালি খালি লাগে।
” ইরাদ কি ঘুমিয়ে পরেছে কি না একবার গিয়ে কি দেখে আসবো? নাকি যাবো না? হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,, থাক সকালে যাবোনে”
রুহির মনটা খারাপ লাগছে,, শত হলেও তো ইরাদ ওর স্বামী এভাবে দূরে দূরে থাকতে ভালো লাগেনা।

-সরি একটু লেট হয়ে গেলো,, কিছু ফাইল ছিলো চেক করে আসলাম।
পেছন থেকে ইরাদের আওয়াজ পেয়ে রুহি চমকে উঠে।
-ঘুমান নি?
-না,,কাজ করছিলাম,, আসলে ঘড়ির দিকে দেখিনি,, আমার কারণে আপনার ঘুমাতে লেট হয়ে গেলো,,
– না ঠিক আছে।
রুহির মনটা ভালো হয়ে গেলো মুহুর্তের মধেই। ইরাদ তাহলে ওকে ভুলে যায় নি।ইরাদ পাশে আসায় যেন রুহির ঘুম এসে গেলো। ইরাদ ভেবে নিয়েছে রুহিকে ও নিজের সমস্যার কথা আজকে বলে দিবে সাথে এটাও বলে দিবে ও রুহিকে ভালোবাসে।
যদি রুহি চায় সংসার করতে তাহলে তো হলোই,, আর যদি না চায় তাহলে রুহির ভবিষ্যত ও নিজে সিকিউর করে সরে যাবে ওর থেকে। কারণ ওর বাবা না হতে পারা নিজেরই মেনে নিতে কষ্ট আর এটা রুহি মেনে নিবে এমন কোনো কথা তো নেই।

ইরাদ অফিসে চলে গেছে আজ সকাল সকাল রুহির ঘুম থেকে উঠার আগেই,,
রুহি উঠেই ফ্রেশ হয়ে ইরাদকে খুজলো কিন্তু পেলো না। বুঝতে পেরেছে যদিও ও অফিসে চলে গেছে।

ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশা কল দিলো ও দুই বার রিং হওয়ার সাথে সাথেই আরিশা ফোন ধরলো,,
-আসসালামু আলাইকুম আপু
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবী, কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ আপু, তুমি ভাইয়া ভালো?
– হুম আলহামদুলিল্লাহ।
– আপু আমি ভাবছি আজকে উনাকে বলে দিবো আমার মনের কথা,,
– হ্যাঁ বলে দাও ভাবী। অনেক দিন তো হলো, এভাবে আর কয়দিন চলবে?
-কিন্তু উনি যদি এটা পছন্দ না করে??
– পছন্দ করবেনা কেন ভাবী বলো তো?? তোমাদের বিয়ে কি নিজেদের অমতে হয়েছে?
রুহি সবটা খুলে বললো আরিশাকে।
-ভাবী তাহলে তোমাদের বিয়ে সেদিন রাতে হয়েছে?
-হুম। ওয়াও সো এক্সাইটিং। আমি তো জানতামই না। তোমরা আগে হানিমুনে আগে আসছো তারপর হানিমুনে গেসো।
বলেই আরিশা হেসে দিলো
রুহিও সাথে হাসলো।
-আপু আমার টেনশন লাগছে,, আর ভয় হচ্ছে।
-ভয় কেন পাচ্ছ? ইরাদ তোমাকে ভালোবাসে এটা একদম বুঝা যায়। তুমি সুন্দর একটা শাড়ি পরে ওকে সারপ্রাইজ দাও আজকে। এরপর ডিনারের পরে রাতের বেলা সুন্দর করে নিজের মনের কথা প্রকাশ করো।
-আচ্ছা।
-ঠিক আছে ভাবী বেস্ট অফ লাক।

ফোনটা রেখে রুহি ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসতেই দেখে একটা চিরকুট পাশে রাখা।
“আজ সন্ধ্যা হবে আমার ফিরতে,, আপনার সাথে একটা জরুরি কথা আছে যা এসে বলবো,, ফ্রী থাকবেন”

রুহি চিরকুটটা পরে ভাবতে লাগলো কি বলতে পারে ইরাদ। সারাদিন যেন কাটতে চাইছেনা,, বুয়াও আজ শেষ করে তাড়াতাড়ি চলে গেছে।
দুপুরের সময় সুরাইয়া দাদু আসলো,, রুহি মাত্র গোসল করে নামাজ পরে উঠেছে।
এমন সময় গেইটে নক পরতেই দেখে দাদু এসেছেন,,
-আসসালামু আলাইকুম দাদু। ভিতরে আসুন
– ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছো দিদিভাই?
– আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ
অনেক কথাই হলো আজকে দাদুর সাথে রুহির। দাদু খুব ভালো মানুষ রুহিকে খুব আদর ও করে।
এক কথা দুই কথায় রুহি মাহিরার কথা তিনি তুললেন।
রুহিকে বললেন ইরাদ কতটা মাহিরাকে ভালোবাসতো আর ওর জন্য কত পাগলামি করেছে এই পর্যন্ত। কথা গুলো রুহির মনে অনেক আঘাত করলো। কারণ ইরাদ তো এখন ওর স্বামী,,
সুরাইয়া জানেনা ওদের বিয়ের কথা তাই হয়তো ওকে সব বলেছেন। রুহির মনে কালো মেঘ এসে যেম ভর করলো,, এত ভালোবাসার মাঝে কি কিছুদিনের আগত রুহির জায়গা ইরাদের মনে হবে?? ইরাদ কি ওকে মেনে নিবে?? সবটা চিন্তাই যেন ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে সুরাইয়া বিকেলেই চলে গেছে,, রুহি তারপরেও মনে সাহস জুগিয়ে একটা ক্রিম কালারের শাড়ি পরে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিলো ঠোঁটে। ফর্সা মানুষ এই কালারে ওকে বেশ দেখাচ্ছে আর সিল্কি লম্বা কালো চূল গুলো হাত খোপা করে নিলো। কিছু কিছু চুল মুখের সামনে পরে আছে,,
ছিপছিপে গড়নের মেয়েটাকে না সাজাতেও দেখতে বেশ লাগছে,, রুহি কয়েকবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো,, হ্যাঁ এভাবেই ভালো দেখাচ্ছে,, ইরাদের বাড়ি ফেরার প্রতিক্ষা আর যেন রুহির সহ্য হচ্ছেনা।

প্রায় ঘন্টা খানিক পরে গেইটে কে যেন এসেছে রুহি তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেখলো,,
একটা মেয়ে এসেছে,, বেশ স্মার্ট,, দেখতেও সুন্দর।
রুহিকে দেখে অবাক হয়ে তাকালো
রুহি নিজে থেকে প্রশ্ন করলো,,
– জ্বি আপনি কে??
ভ্রু কুচকে মেয়েটা উত্তর দিলো
– মাহিরা,, ইরাদ কোথায়??
রুহি তো মাহিরা নাজিমকে দেখেনি, ও ভেবে নিলো তাহলে উনিই এসেছে।
– ওহ আপনি,, আসুন ভেতরে,, উনি অফিসে।
মেয়েটা কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে গেলো
কেমন যেন কর্কশতা আছে ওর মাঝে।
রুহি নিজ থেকেই বললো,,
-উনি বলেই নি আপু আপনি আজ আসবেন
-আমার হাসবেন্ড এর বাসায় আমার যখন ইচ্ছে আসবো সেটা কি কাউকে আমাদের বলা লাগবে নাকি? তুমি কে??

এমন সময় মাহিরার ফোন বেজে ওঠে। রুহির মাথায় তো আকাশ ভেংগে পরেছে একদম। এটা লয়্যার মাহিরা নাজিম না,, এটা ইরাদের প্রাক্তন স্ত্রী মাহিরা।
মেয়েটা ফোন রিসিভ করতে করতে হেটে সোজা ইরাদের বেড রুমে চলে গেলো।
রুহির বুক ফেটে কান্না আসছে,, ও কি এটা স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি??

ইরাদ কলিং বেলে চাপ দিতে যাবে তখনই দেখলোদরজা খোলা,, খানিকটা অবাক ও হলো এমন দেখে,,,
ভেতরে ঢুকে দেখে দরজা লাগিয়ে রুহির ঘরে গিয়ে দেখে
রুহি ওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে,, কেমম যেন চেহারাটা শুকনা লাগছে।
ইরাদের বুক কেপে উঠে,, হাতের কয়েকটি শপিং ব্যাগ ছিল এগুলো। মাটিতে ফেলেই ও রুহিকে জিজ্ঞেস করলো
-কি হয়েছে আপনার?? শরীর খারাপ??
-মাহিরা এসেছে।
– কে?
-আপনার প্রাক্তন স্ত্রী,, সে আপনার বেড রুমে এখন।

কথাটা শুনে ইরাদ হতভম্ব হয়ে যায়। এবং সাথে সাথে ওর ঘরের দিকে পা বাড়ায়

(চলবে…)