Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1604



অধিকার পর্ব-১১

0

#অধিকার #এগারতম_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

দরজা খুলতেই হুট করে ইরাদ এভাবে এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরবে এটা ও ভাবতে পারেনি।
-আজ আমি অনেক খুশি রুহি।
কিন্তু রুহির মধ্যে কোনো ধরনের অনুভূতি কাজ করছেনা। হাত উঠিয়ে ইরাদকে ও ধরেও নি,,
ইরাদ এত কাছে থাকার পরেও মনের দুরত্ব সবচেয়ে বেশি লাগছে ওর।
কারন এই মনের মাঝে ইরাদকে হারানোর ভয় কাজ করছে। শুধু মাথায় ঘুরছে ইরাদ কি ওকে ছেড়ে দিবে? রুহির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ইরাদ ওকে ছেড়ে দিলো, আর মনে মনে ভাবলো হয়তো এভাবে পারমিশন ছাড়া ওকে ধরাটা ও পছন্দ করেনি।
রুহি কিছুই বলছেনা, ওকে ছেড়ে দেওয়ায় হেটে হেটে বিছানায় বসে পরেছে। ইরাদ ভাবলো রুহি হয়তো টায়ার্ড খাটের অন্যপাশে বসে নিজে থেকেই বললো
-একটা গুড নিউজ আছে,,
-চলে যেতে হবে?
– জ্বি,, কাল সকালেই।
-আপনি কি করে বুঝলেন?
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রুহি চোখের পানি লুকিয়ে বললো,
-বুঝতে পেরেছিলাম আপনাকে যখন ডেকে নিয়ে গেলো।
– রুহি আমার মনে অনেক বড় একটা পাহাড় ছিলো সেটা নেমে গেলো। খুব শান্তি পাচ্ছি।
– হুম,, ঘুমিয়ে পরুন।
রুহির কথা বলতে ভালো লাগছেনা। হয়তো ইরাদ কাল বাড়ি ফিরে ওকে বলবে চলে যেতে।
এটা ইরাদের মুখে শুনার ইচ্ছে রুহির নেই। আজ ও বলে ফেলতে পারতো তাই রুহি ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো,, এমন কঠিন সত্যি ও শুনতে চায়না।
খুব কষ্ট হচ্ছে রুহির।
আস্তে করে পাশ ফিরে রুহি শুয়ে পরলো।

ইরাদের মনটা অজকে অনেক ভালো লাগছে,,, কেমন যেন একটা ঘোর লেগে আছে,,
রুহিকে তাকিয়ে দেখলো ও,, ঘুম অবস্থায় কত ভালো লাগছে ওকে। রুহির দিকে তাকিয়ে একটা নেশা কাজ করছে,, ইচ্ছা করছে ওকে আদর করতে। কলিজার ভেতরে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে এই মেয়েটাকে,, কিন্তু ও তো কথা বলতে চাইছে না এখন তাই ইরাদ উঠে বারান্দায় চলে গেলো,, এমন কেন লাগছে ওর? খুব অস্থিরতা কাজ করছে মনের মধ্যে এক ঝড় শুরু হয়ে গেছে,, রুহির থেকে দূরে থাকতে পারছেনা আর ইরাদ।
এদিকে রুহির ঘুম আসছেনা বিছানাটা খুব খালি খালি লাগছে,, ইরাদকে পাশে না দেখলে ওর ভালো লাগে না। ঘুম ও যেন আসতে চায়না।
ও উঠে ইরাদের কাছে গেলো আর মনে মনে ভাবছে,,
“যা কাল বলবে তা আজই বলুক,, সহ্য না হলেও করতে তো হবেই”

বাইরে হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এই অসময়ের বৃষ্টিতে আজকে সবাই কত খুশি হবে,, দম্পতিদের জন্য একটা ভালো সময় কাটানোর বাহানা ও হয়ে যাবে। এদিকে ইরাদ একা একা দাড়িয়ে আছে কিন্তু ওর তো মন আজ অনেক খুশি।
একে তো রুহি ওর সাথে আছে আর,, দ্বিতীয়ত
এত ভালো একটা সংবাদ পেয়েছে ও।

দরজায় হেলান দিয়ে রুহি দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, বৃষ্টি দেখে মনে মনে বলছে
“আমার ভিতরের ঝড় আল্লাহ বাইরেও দিয়ে দিলেন? চোখের পানি বাধা দিয়ে রেখেছি কিন্তু ভিতরে তো রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে। এই হৃদয়ের পোড়ানি কি করে নিভবে?”

ইরাদ ও বাইরের দিকেই তাকিয়ে রুহির কথা ভাবছে,, কিছুক্ষণ পরে পেছনে ঘুরে ওকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইরাদ সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, একদম কাছে এসে পরাতে রুহির হার্ট যেন দৌড়াতে শুরু করেছে। ইরাদের চোখ দুটো এমন লাগছে কেন? এত নেশা লাগানো,, মনের মধ্য তোলপাড় চলতে শুরু করেছে ওর।
ইরাদ আস্তে করে রুহির হাত দুটো নিজের হাতের সাথে মিশিয়ে রুহিকে ওয়ালের সাথে আটকে ধরে,,
রুহি চোখ বড় বড় করে ওকে দেখছে,, ও রুহির পুরো চেহারাটা দেখছে একটা ঘোর নিয়ে,, ইরাদের নিঃশ্বাস রুহির চোখে মুখে এসে বারি খাচ্ছে,, ইরাদের এত কাছে আসায় রুহির শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হয়ে যাচ্ছে,, দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে ওর। ছেলেটার চোখ গুলো,, হাসিটা ওকে মাতাল করে তোলে,,
“আপনি আনেক সুন্দর”
রুহি চমকে উঠে এমন কথা শুনে,,
ইরাদের ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি নিয়ে রুহির চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে ডান কানে একটা চুমু দিলো। ইরাদের এমন আচরণ রুহি কেপে উঠে এর সাথে খুব অবাক ও হয়ে যায়,, কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা, এমন কেন করছে ইরাদ??
এরপর রুহির হাত দুটো দেয়ালের সাথে মিশিয়ে এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাত ওর কোমড় জড়িয়ে দেয়,, রুহি চোখ বন্ধ করে ফেলে,, এমন কিছু ও কল্পনা ও করতে পারেনি,, ইরাদের এত কাছে আসা ওর ভালো লাগছে ইচ্ছা করছে নিজেকে উজাড় করে ওকে কাছে টেনে ভালোবাসা দিতে।পরক্ষণেই মাহিরার কথা মনে পরে গেলো। ইরাদ তাহলে এমন করছে কেন? রুহি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইরাদকে বুকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
-কি হয়েছে?
-আ আআ আপনি এএমন করছেন ক কেন?
কাপাকাপা আওয়াজে রুহি বলে,,
-আমি আপনাকে অনেক ….
এমন সময় ইরাদের ফোন বেজে ওঠে,,
স্ক্রিনে লিখা মাহিরা নাজিম,, রুহির চোখ ছলছল করছে,,
-ফোন ধরুন,,
-নাহ,, এখন আমি আপনার সাথে সময় কাটাবো।
আবারো রিং বেজে চলছে এবার ইরাদ বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করলো,,
-জ্বি আপু বলুন
“আপু” শুনে রুহি চমকে উঠে,, মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে যেন সব।
মাহিরাকে আপু বললো কেন?
ওপাশ থেকে কি বলেছে রুহি শুনতে পাচ্ছেনা,
ইরাদ বললো,,
– হ্যাঁ কোর্টের লিগ্যাল নোটিশ আপনার রুম থেকে বেড় হওয়ার পরেই পেয়েছি,, থ্যানক্স টু ইউ আপু।
আপনি না থাকলে আমার সেই দাদার দেওয়া বাড়িটা পেতাম না। ভাইয়া বাচ্চাদের সাথে আপনার দাওয়াত রইলো আপু ঢাকা ফিরলে অবশ্যই বাসায় আসবেন।
রুহির মাথায় কিছুই না ঢুকায় ও ইরাদকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো
-কে ছিল কলে?
-মিসেস নাজিম,, আপু লয়ইয়ার।
-উনি একটু আগে?
-হুম কি কাজে নাকি এসেছে এখানে আজকে হুট করেই,, আর আমাদের দেখেছেন। ই-মেইলটা পেয়ে সব বুঝে নিয়েছি কি না জানার জন্য ডেকেছিলেন,,
আসলে দাদার একটা পুরোনো বাড়ি ছিলো যেখানে আমার আব্বুরা বড় হয়েছিলো সেই বাড়িতে অন্যজন দখল দিতে চাচ্ছিলো,, একটু আগে সেটা পুরোপুরি আমাদের হয়ে গেছে এখন আর কোনো ঝামেলা নেই। শুধু আমার সাইন লাগবে আমি সেটা বুঝে পেয়েছি এই হিসেবে।

রুহির মাথায় এখন সব ঢুকেছে। “তাহলে মাহিরা নাজিম ইরাদের কেউ না। উনি তো কাজের জন্য ডেকেছিলেন। আর আমি কি না কি ভেবেছিলাম। কত গুলো সময় শুধু কথক ভেবে নষ্ট করলাম। আমি একটা গাধা”

এসব ভাবতে ভাবতে রুহি দেখে ইরাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, চোখে সেই দুষ্টুমি আর ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি। এবার রুহি একটা ঢোক চাপলো কারণ কিছু ক্ষন আগে ইরাদ যা করেছিলো তা ও কিছু মুহূর্ত ভুলে গেলেও এখন আবার মনে পরে গেলো সব কিছু। রুহি ইরাদকে না দেখার ভান করে ওকে পাশ কাটিয়ে বারান্দার ভেতরে চলে গেলো দরজা থেকে সরে। এখন বাইরের বৃষ্টিটা দেখতে ভালো লাগছে ওর। আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে আল্লাহ কে মনে মনে একটা থ্যাংক ইউ দিলো রুহি। লজ্জা ও লাগছে অনেক ইরাদ এমন করলো কেন হঠাৎ করেই।

পেছন থেকে এসে ইরাদ ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে বেশ কিছুক্ষন,,

এরপর বললো,,
“আমার বউটা?”
রুহির হাত পা এখন ঠান্ডা হয়ে আসছে,, এত আদুরে গলায় ইরাদ তো কথা বলেনা। এমন করে বউ ও বললো,,
“ছাড়ুন”
“নাহ”
“কেন?”
“আদর করি একটু?”
“উহুম”
“আপনার ঠোঁট গুলো আমার অনেক ভালো লাগে ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি”

“আ আমি ঘু ঘুমামাববো..”
“এখনই?”
“হুম”
“ঠিক আছে”
এই বলেই রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পরলো ইরাদ।
এমন ঝড়েরবেগে কোলে করে এনে বিছানায় রাখাতে রুহির শক্ত হয়ে ইরাদের দিকে তাকিয়েই আছে।
রুহির তাকানো দেখে ইরাদ রুহির গালে হাত দিয়ে বলে
“ঘুম না আসছে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ ”
বলেই রুহি পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
ইরাদ ওকে টেনে এনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো
“ওদিক ফিরে থাকলে ঘুমাতে দিবো না রাতে আজকে..”
রুহি চুপ করেই আছে।
“এদিকে ফিরে ঘুমান,, ”
“উহুম”
“তাহলে কিন্তু আজকে আর সত্যিই ঘুমাতে দিবো না”
“কেন?”
“আদর করবো,, খুব করে আর এরপর….
রুহি ইরাদের মুখ চেপে ধরে বলে
“আচ্ছা এদিক ফিরেই ঘুমাচ্ছি”
বলেই রুহি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো,, এবার ইরাদ ওকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখলো।
রুহি এভাবে থেকেই ঘুমিয়ে পরলো। এই মানুষের স্পর্শ ওকে বাচার অনুভূতি দেয় নতুন করে। সুখ দেয়, শান্তি দেয়। প্রথম যেন এতটা তৃপ্তি নিয়ে রুহি ঘুম দিলো। আর ইরাদ? ও একটু পর উঠে গোসল করলো অনেকক্ষন লাগিয়ে এরপর এসে রুহিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলো

ভোরের আলো ফুটে গেছে চারিদিকে প্রতিদিনের মত আজকেও রুহি নামাজ পরে নিলো,, ইরাদকে ডাক দিলো কিন্তু ও উঠলো না,, ঘড়িতে প্রায় ৯টা বেজে গেছে ইরাদের ওঠার কোনো নাম নেই। রুহি কিছুক্ষণ টিকটক দেখলো এরপর বসে বসে ইরাদকে দেখছে আর চকলেট খাচ্ছে প্রায় ১০ মিনিট পরে আরিশার কল আসলো।
-হ্যালো আপু..
-হাই ভাবী।
-ঘুম কেমন হইসে তোমাদের?
-আমি তো সেই কখন উঠে গেছি আপনার ফ্রেন্ড এখনো উঠে নি।
– উঠবে কিভাবে অনেক মেহেনত করিয়েছো যে রাতে।
এই বলেই আরিশা হাসা শুরু করলো।
-না আপু,,
– না মানে?
– রাতে কিছু করো নি তোমারা??
– উহুম
-ইউ মিন সিরিয়াসলি??
-এভাবে বলছো কেন আপু?
-তোমাদের পর পর দুইদিন মেডিসিন খাওয়ালাম আমি আর পিয়াল তাও কিছু করো না তোমরা আনরোমান্টিক কাপল একদম।

রুহির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,, ইরাদের আচরনের রহস্য প এতক্ষনে বুঝে গেছে,, তাহলে কি এর আগের রাতে রুহিও একই কর্মকান্ড করেছিলো?
আর এই সব কিছু ঘিরেই কি ওর আর ইরাদের বিয়ে হয়েছে??
লজ্জায় রুহির মাথা কাটা যাচ্ছে।

ইরাদ ঘুম থেকে উঠে গেছে,,
ঘড়িয়ে তাকিয়ে দেখে বলে,,
-আল্লাহ ১০টা বাজে,, আমি এতোক্ষন ঘুমালাম,, সাথে সাথেই গত রাতের কথা গুলো আধো আধো মনে পরতে শুরু করেছে ওর। পাশে রুহিকে দেখে কি বলবে এখন তাই ও বুঝতে পারছেনা।

-আচ্ছা নাস্তা করেছেন?
-উহুম
-কেন?
-আপনি উঠেন নি তাই।
-আই এম সরি।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,, রুহি লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু মনে হচ্ছে ইরাদ তাহলে ওর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখে। হয়তো ইরাদ ও ওকে ভালোবেসে ফেলেছে। কেমন যেন ফুরফুরা লাগছে।
সুন্দর করে ও সাজছে একটু পরে ইরাদের সাথেই তো ঘুরতে বেড় হবে ও।

(চলবে..)

অধিকার পর্ব-১০

0

#অধিকার #দশম_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

আমি তো পিতা হতে পারবো না কোনোদিন।
কথাটা মনে মনে বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আকাশের পানে তাকিয়ে রইল ইরাদ। রাতের গভীরতা বাড়ছে সাথে কেন যেন মনের ব্যাথাটাও বারছে,, শরীরের বাইরে ব্যাথা পেলে তা ঠিক হয়ে যায় ঔষধ খেলে,, কিন্তু এই মনের ব্যাথা উপশমের কি কোনো উপায় আছে? থাকলেও হয়তো ইরাদের জানা নেই। রুহি ঘরে এসে দেখে ইরাদ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
-ঘুমাবেন না?
ইরাদ বাইরের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো
-একটু পরে।
-ঘুম পাচ্ছেনা?
-না, আপনি ঘুমিয়ে পরুন।
-না একসাথে ঘুমাবো।
কথাটা বলেই রুহি বোকা হয়ে যায়।
তাই সাথে সাথে বলে
-আচ্ছা আসুন গল্প করি তাহলে।
-নামাজ পরবো একটু।
বলে ইরাদ ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
রুহি কিছু বুঝতে পারছেনা,, ইরাদ এমন করলো কেন? ও কি কোনো ভুল করলো? না এমন তো মনে হয়না,, সব তো স্বাভাবিকই ছিলো এতক্ষণ। হয়তো ইরাদ একটু সময় চাচ্ছে সব মেনে নিতে পারছেনা। তাই রুহি চুপ করে এসে শুয়ে পরলো। প্রায় ১০ মিনিট পর মনে হলো ইরাদ কি ওকে গ্রহণ করে নিতে চাইছে না? ও কি ইরাদের ওপরে নিজে চাপিয়ে দিচ্ছে?? এভাবে ইরাদের দিকে তাকিয়ে গানটা করায় তো ইরাদের বুঝার কথা ও ইরাদকে ভালোবাসে। তাহলে কি ও বুঝতে পেরেই নিজেকে দূর করতে চাইছে? হঠাৎ এটা মনে হয়ে কলিজার ভিতরটা একদম মোচড় দিয়ে উঠলো। ও তো ইরাদকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে,, এখন এই হৃদয় থেকে ইরাদ নামটা মুছে দেওয়া যে আর সম্ভব না। রুহির জীবনের প্রথম ভালোবাসাই তো এই ছেলেটা। এসব ভেবেই কান্না আসলো অনেক বেশি। চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরতে শুরু করলো। বালিশে মুখ গুজে রুহি খুব করে কাদলো। কিছুক্ষণ পরে ইরাদ ঘরে এসে দেখলো রুহি কান্না করছে। এমন কিছু দেখবে তা ও ভাবতেই পারেনি।
-কি হলো? কাদছেন কেন?
-…..
-বলুন আমাকে
-উহুম
-বলুন রুহি
ইরাদের খুব খারাপ লাগে রুহির কান্না দেখতে,, এটা ও সহ্য করতে পারেনা,,
-প্লিজ বলুন? আমি চেষ্টা করবো আপনার সমস্যা সলভ করার।
-আপনি আমার ওপরে রাগ?
– না তো।
-আমার তো মনে হচ্ছে,,
– না আমি আপনার ওপরে একদমই রাগ না।আমাকে আজকে সারাদিনে দেখে আপনার তাই লেগেছে?
– না লাগেনি
-তাহলে?
– কখনো রাগ করবেন না আমার সাথে,,
আমার খারাপ লাগে অনেক।
এই বলে রুহি করুণ নজরে ইরাদকে দেখছে,,
রুহির ওরকম বাচ্চাদের মত কথা বলায় একটা হাসি দিয়ে ইরাদ বললো,,
– না করবো না, এখন চোখ থেকে আর এক ফোটা পানিও যেন না পরে। হামহাম জলপ্রপাতে অনেক পানি আছে এক্সট্রা পানির আর দরকার নেই এখানে আর।
ইরাদের কথায় রুহি চোখ মুছে একটা হাসি দেয়।
-এবার ঘুমিয়ে পরুন অনেক রাত হয়েছে।
-হুম আপনিও আসুন।

শুয়ে থেকে কেউ ঘুমাচ্ছে না,,
-ঘুম পাচ্ছেনা?
-ইরাদ তেমন না,,
-তাহলে কিছু বলেন আমার ও তেমন ঘুম আসছে না,,
-আচ্ছা রুহি একটা কথা বলুন তো,, আপনার কি দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে??
-না, কেন?
-তাহলে বাসায় থাকতে প্রতিদিন দুপুরে ঘুমাতেন যে?
-রাতে ঘুমোতে পারতাম না তাই।
ইরাদ চমকে যায়,
-কেন?
-আমি রাতে একা ঘুমাতে পারিনা, এইজন্য ভয় হয় তাই রাতে জেগে নামাজ আর কুরআন শরীফ তেলোয়াত করতাম।
-আই এম সো সরি।
-আপনি কেন সরি বলছেন?
-আগে জানলে আমি সাথে থাকতাম
রুহি কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে ইরাদের দিকে তাকালো।
ইরাদ এতক্ষনে বুঝতে পারলো ও কি বলে ফেলেছে।
– আজকে তো ঘুমাতে পারেন।
– হ্যাঁ গুড নাইট
বলেই রুহি ওপাশে ফিরে হাসে।

ইরাদ একটু লজ্জা পেয়েছে তা ওর বুঝতে বাকি নেই।
কিন্তু মজাই লাগছে,,
মানুষ বিয়ের আগে প্রেম করে কত শত কিছু করে আর এদিকে ও প্রেমে পরতে না পরতেই এই সুপুরুষটার সাথে আল্লাহ ওর বিয়ের ব্যাবস্থা করে দিলো। আল্লাহ কে প্রতি মুহুর্তে রুহি শুকরিয়া করতে ভুলে না। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে ইরাদ এত ফর্মাল আচরণ করে যে কিছু বলার মত রুহি পায় না,, এরকম থাকলে কিভাবে ওকে নিজের মনের কথা বুঝাবে? তাই বুঝে পায় না। নাকি আরো সময় নিবে?
হ্যাঁ আরো সময় নেওয়া দরকার।ঢাকা ফিরেই এই ব্যাপারে ইরাদকে ও বলবে এখন শুধু ইরাদের সাথে সময় কাটাবে। ইরাদকে একটু সময় দিতে হবে তো। ওর প্রেমে পরার। ওকে ভালো মত পর্যবেক্ষণ করার। সবাই কি ওর মত হুটহাট প্রেমে পরে? এই জিনিসটা রুহি ভালোই বুঝতে পারছে। আর ইরাদের জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। হয়তো ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে ওর সময় লাগতে পারে, আর ওই মেয়েকে ইরাদ অনেক ভালোবাসতো আরিশার থেকে সবই শুনে নিয়েছে ও। এসব ভাবতে ভাবতে রুহি ঘুমিয়ে পরলো।

ইরাদ ভেবে নিয়েছে ঢাকা ফিরে ও রুহিকে বলবে ও ওর অক্ষমতার কথা। রুহি যদি চলে যেতে চায় ও নিজের ভালোবাসার কথা বলবেনা। কারণ সবার জীবনের একটা স্বাভাবিকতা আছে। ওকে আল্লাহ অক্ষম করেছে বলে এই মেয়েটাকে তো মা হওয়া থেকে ও বঞ্চিত করতে পারেনা। আর আপাতত সময়ের জন্য ও ভেবে নিলো কিছু ভালো মুহূর্ত কাটিয়ে নেই রুহির সাথে। সামনে ও নাও থাকতে পারে আমার পাশে। এই সময় গুলোই তখন আমার জীবন কাটানোর সংগী হবে।

ভোরের আলো ফুটে গেছে রুহি উঠে গোসল করে নিয়েছে নামাজ পরতে হবে, আজকে ইরাদের ঘুম ভাংছে না,, রুহি নামাজ শেষে ইরাদকে ডাক দিলো
-ইরাদ উঠুন,, নামাজ পরতে হবে।
-আরো একটু ঘুমাই।
-না না,, এখনই উঠতে হবে।
ইরাদ ঘুমের ঘোরে রুহিকে চোখ বন্ধ করেই টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
রুহি চোখ বন্ধ করে ফেলে,, ভালো লাগছে সকাল সকাল ইরাদের উষ্ণ ছোয়া।
রুহি বাধা দিচ্ছেনা,, এমন সময় দরজায় নক পরলো।
– কেউ এসেছে।
ইরাদ তো ঘুমিয়েই গেছে রুহি ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলতেই দেখে ছোট্ট রাশি এসেছে।
-ওরে বাবা,, আমার আম্মুটা উঠে গেছে?
-কোলে কোলে
রুহি সাথে সাথে রাশিকে কোলে তুলে নিলো।
বাচ্চাটার সাথে রুহির বেশ ভাব হয়েছে।
রাশিকে কোলে নিয়েই ও রান্না ঘরে গেলো
দেখে রাফিয়া ওর জন্য দুধ বানাচ্ছে।
-ভাবী আমাকে দাও
– না সোনা, তোমার কষ্ট করতে হবেনা। চাচিকে জালাচ্ছো কেন রাশি আম্মুর কোলে আসো?
– নাআআআ বলেই রাশি কান্না শুরু করে দিলো।
-ভাবী থাকুক আমার কাছে। এমনিতেই তো চলে যাবো আজ। আমাকে দাও খাইয়ে দেই।

রুহি ওকে কোলে নিয়ে ঘরে চলে আসলো ।
কিছুক্ষন পরে ইরাদ চোখ খুলে দেখে সোফায় বসে রুহি আর রাশি খেলছে একদম মা মেয়ে মনে হচ্ছে দুইজন কে। রাশি বাচ্চাটা খুব মায়া লাগানোর মত একটা বাচ্চা। ইরাদকে উঠতে দেখে ওর কোলে চলে গেলো নেমে।
– চাচ্চু চাচ্চু কোলে
ইরাদ ওকে কোলে নিয়ে দুই গালে দুটো চুমু দিলো এরপর রুহির কোলে দিয়ে গোসল করে এসে নামাজ পরে নিলো।

সকালের নাস্তার পর ওরা সবাই বের হয়ে গেলো হোটেলে ফিরার জন্য।
পাহাড় থেকে নামতেই ইরাদ ওর ব্যাগটা পিয়ালের হাতে দিয়ে বললো ধর,,
রুহি আপাতত মাটির দিকে খুব গভীর ভাবে মনোযোগ দিয়ে রেখেছে কোনো জোক আবার পায়ের কাছে আসলো কি না সেটা দেখতেই ও ব্যাস্ত।
এমন সময় হুট করেই ইরাদ ওকে কোলে তুলে নিলো।
পিয়াল- আজকেও রোমাও জুলিয়েট এর শুরু হয়ে গেছে।
আরিশা- স্টপ ইট। নিজে তো এমন করবানা আবার ওদের পিছু লাগতেসো।
পিয়াল- সরি সরি।

হাটতে হাটতে কিছু চাকমাদের সাথে ওদের দেখা হলো। সবাই ওদের দেখে মিটিমিটি হাসছে।
ইরাদের এদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
রুহির আজকে একটু বেশিই লজ্জা লাগছে।
ইরাদ এমনভাবে ওকে এসে কোলে তুলে নিলো যেন এটা ওর অধিকার। রুহি যেন ওরই। তাই এটা রুহিকে জিজ্ঞেস করার ও কোনো প্রয়োজন অনুভব করেনি ও।

জিপে বসে বসে ইরাদ গেমস খেলছে,,
আরিশা- খুদা পেয়েছে আসো সবাই খেয়ে নেই। ইরাদ ফোন রাখ।
ইরাদ- তোরা খা,, আমি একটু পরে খাবো।
সবাই চিপস নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
রুহি প্যাকেট ছিড়ে একটা ইরাদের মুখের সামনে ধরলো
ইরাদ ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালো,
-খান,,
-আপনি?
-আমিও খাচ্ছি।
এরকম করে রুহি নিজেও খেলো ইরাদকেও খাইয়ে দিলো।
পিয়াল- দেখেন আমার মিসেস। ভাবী ওকে এভাবে যত্ন করে দেখেই যত্ন পায়।
আরিশা- হ্যাঁ হ্যাঁ থাক আমিও কম যত্ন করিনা তোমার। আর নতুন বিয়ে দেখেই ভাবী এরকম করে খাইয়ে দিচ্ছে বুঝলা?
তানি আর নিপন তেমন কিছু বলেনা ওরা শুধু হাসছে।
ইরাদ- না, উনি আগে থেকেই আমার খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুর প্রতি অনেক যত্নশীল।
ইরাদের কথায় রুহি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। এভাবে মানুষের সামনে বলে ওকে লজ্জা দেওয়ার কি আছে?
এবার সবাই একসাথেই হেসে দিলো।

হোটেলে ফিরতে ফিরতে ওদের রাত হয়ে গেলো,,
পিয়াল ইরাদকে একটা পানির বোতল দিয়ে বললো,, -ক্লান্ত লাগছে না? এটা খেয়ে নে।
-ইরাদ আর নিপন কথা বলছিলো সেই খেয়ালেই ইরাদ সব গুলো পানি গড-গড করে খেয়ে নেয়।

-আরিশা আজকে মনে হয় ইরাদ বলে দিতে পারবে ও ভাবীকে ভালোবাসে। যাস্ট ওয়েট ফর টু আওয়ারস।
– গুড জব মাই হাসবেন্ড।
এই কথা বলেই ওরা হাসাহাসি করতে থাকে।
সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথেই ডিনার করে নেয় রাত প্রায় ১০টা বাজে যার যার ঘরে চলে যায়।

রুহি খাটের ওপরে বসে আছে আর ইউটিউবে দেখছে
-কিভাবে বুঝা যায় একটা মানুষ আপনার প্রেমে পড়েছে কি না? এই বিষয়ে রুহি বেশ সিরিয়াস ও রিস্ক নিতে চাচ্ছেনা একদমই।
আর ইরাদ বারান্দায় বসে অফিসের একটা ডিলের জরুরি ফাইল দেখছে ল্যাপটপে। কিছুক্ষণ আগেই ইরাদের ম্যানেজার ওকে ফোন করে বলেছে ঠিক কাজ হচ্ছে কি না একবার দেখে দিতে তাই করছে ও।

সেই সময়ই দরজায় একটা নক পরে,,
ইরাদ বারান্দায় থাকায় রুহিই উঠে দরজা খুলে
দেখে হোটেল স্টাফ এসেছে।
-ম্যাম স্যারের সাথে একজন ভদ্রমহিলা দেখা করতে চাচ্ছেন।
-এত রাতে দেখা করা এলাইড?
– একচুয়ালি ম্যাম উনি এখানে আজকেই উঠেছেন।
-কি নাম?
– মিস মাহিরা নাজিম।
রুহি নামটা শুনে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর যেন পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে।
-এই সময়ে মাহিরা কেন এসেছে? ও কি চায় ইরাদের কাছে?
পিছন থেকে ইরাদ জিজ্ঞেস করলো।
– কে এসেছে?
রুহির গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেড় হচ্ছেনা।
শরীরে কোনো শক্তিও লাগছেনা।
রুহির আওয়াজ না পেয়ে ইরাদ উঠে আসে।

-জি বলুন?
– স্যার আপনার সাথে মিস মাহিরা নাজিম নামের একজন ভদ্র মহিলা দেখা করতে চাচ্ছে।
-কোথায় উনি?
– ৫০৯ তে আছেন
-আপনি যান আমি আসছি।
-রুহি দরজা লক করে রাখুন।
এই বলেই ইরাদ ওই অবস্থায় সাথে সাথে বেড় হয়ে গেলো।
রুহি দরজাটা লক করে ওখানেই মাটিতে বসে পরলো।
হাত পা একদম অবশ লাগছে৷ মনে হচ্ছে কেউ যেন কলিজাটা কেটে ফেলেছে।
ইরাদ কিভাবে পারলো ওকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে? শত হলেও তো রুহি ওর স্ত্রী।
একটা বার কি ওকে জিজ্ঞেস করা উচিত মনে হয়নি ইরাদের? এভাবে করে প্রাক্তনের কাছে রাতের বেলা চলে যাওয়ার কোনো মানে হয়? ইরাদ কি তাহলে রুহি কে চায় না একদমই? তাহলে এত যত্ন এত আদরের কি দরকার ছিলো? কেন এত মায়ায় ফেলে ওকে রেখে গেলো ইরাদ?
প্রায় ১০ মিনিট পরে ইরাদ ঘরে আসে
রুহি দরজা খুলতেই ওকে জড়িয়ে ধরে বলে
আজকে আমি অনেক বেশি খুশি…

(চলবে)

অধিকার পর্ব-০৯

0

#অধিকার #নবম_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

“আমার মত একটা মেয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করতে পারে এক রাতের মধ্যে”
মনে মনে কথাটা বলে রুহি শিউরে ওঠে।
সোফায় পা তুলে বসে রুহি চকলেট খাচ্ছে,,
ইরাদ গোসলে গেছে একটু পর ওরা ঘুরতে বেড় হবে।
এমন না যে ইরাদের সাথে বিয়ে তে রুহির মন খারাপ বা এটা খারাপ লাগছে কিন্তু ওর বিয়ের সময়ের কোনো কথাই তো ওর মনে পড়লো না।
এটা কি ঠিক? বিয়ে নিয়ে মেয়েদের কত শত প্ল্যান থাকে আর রুহির নাকি একটা ছবিও নেই।
তবুও ইরাদ ওর স্বামী,, যার সাথে কাল পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক ছিল না,, আর সেই ছেলেটাই রুহির সাথে সবচেয়ে পবিত্র একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেছে,, এটা ভেবে যেন রুহির চেহারার চমকই বেড়ে গেছে সকাল থেকে।

আরিশা কল দিলো রুহিকে
-হাই নিউলি ওয়েডেড ব্রাইড
-হাই আপু
-শুনো তোমার হাতে কাল মেহেদী দেখিনি আজকে কিছু ইন্সট্যান্ট মেহেদী পাঠিয়েছি,, লাস্ট টাইম ইন্ডিয়া গিয়ে তোমার ভাইয়া আর আমি কিনে এনে ছিলাম। ওগুলো আলরেডি ডিজাইন করা তুমি জাস্ট ডিজাইনটা হাতে বসিয়ে দিলেই হয়ে যাবে ৫ মিনিটে।
-আপু কি দরকার ছিলো কষ্ট করার?
-ইশশ, যা বলো না? কষ্টের কি হইসে?
-তাড়াতাড়ি বউ সেজে আসো সুন্দরীতমা
-আচ্ছা আপু রাখছি
রুহির খুব লজ্জা লাগছে,,

ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসে গেছে,, গ্রে কালারের প্যান্ট হোয়াইট শার্ট দেখতে একদম সুপুরুষ। যে কোনো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ এমনটাই হয়তো কল্পনায় থাকে,, আজ রুহির কল্পনা সত্যি হয়ে গেছে। রুহি খাটে বসে হাতে মেহেদী লাগাতে ব্যাস্ত আর ইরাদকে দেখছে চুপিচুপি ড্রেসিং টেবিলের আয়নার মাধ্যমে। ইরাদ রুহিকে দেখে হাসছে মিটিমিটি,, রুহির যে সাজগোজের এত শখ তা ইরাদ জানতোই না, কাল যদি রুহিকে ওমন সুন্দর করে সাজতে না দেখতো। সাজে যদি কেউ দক্ষ নাহয় তাহলে ওত সুনিপুণভাবে কেউ রেডি হতে পারেনা।

আজ কথা খুব একটা মুখে নাহলেও দুইজন দুইজনের পাশে থাকাটায়ই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করছে। দুইজনের চেহারা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে,, আজ সকাল থেকেই চেহারার নূর বেড়ে গেছে ওদের৷ মানুষিক শান্তি থাকলে যে চেহারার নূর বাড়ে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ এই দুইটা মানুষ।

রুহির কথার মাধ্যমে ভাংলো ওদের মৌনতা
-এইযে শুনুন,,
-জ্বি
-কোথায় যাবো এখন?
-চা বাগান দেখবেন আজ? নাকি হামহাম জলপ্রপাতে নিয়ে যাবো যদি চান?

রুহির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো,,
-সত্যি?? আমাকে হামহাম জলপ্রপাত দেখতে নিয়ে যাবেন?
-হুম নিয়ে যাবো। আজ যাবেন?
উচ্ছাসিত কন্ঠে রুহি বলল,
– হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাবো আজকেই।
-ঠিক আছে চলুন তাহলে।

রুহি লাগেজ খুলে যেন ওর মন খারাপ হয়ে গেলো কারণ বেশির ভাগ শাড়ি নিয়ে এসেছে ও আর কিছু সালোয়ার কামিজ। যা পরে ও কিভাবে যাবে জলপ্রপাতে?
ইরাদ রুহির গাল ফুলানো দেখে বুঝে গেলো সে এখন কি নিয়ে চিন্তা করছে।
ইরাদ একটা প্যাকেট বের করে রুহির হাতে দিয়ে বলে
-এটা পরে নেন আজকে।
রুহি প্যাকেট খুলে দেখে একটা গাড়ো কমলা রঙের টি-শার্ট, বেগুনি প্যান্ট আর বেগুনী জ্যাকেট।
রুহির খুশি দেখে কে!
-কাল তো আমরা এগুলো কিনি নি,, কখন নিলেন ?
-কালই নিয়েছি যখন আপনি আন্টির সাথে ছিলেন, আরো কয়েকটা সেট আছে চাইলে অন্যটা পরতে পারেন।
-উহুম৷ এটাই পরবো আমি।

নিচে লবিতে ইরাদ, রুহি, পিয়াল, আরিশা, তানি আর নিপন একসাথে হলো
তানি আর নিপন পিয়াল আরিশার ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস। যথেষ্ট মিশুক।
আজক সবাই মিলে একসাথেই দু’টি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেটের শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দীর হামহাম জলপ্রপাতে যাবে।
ওরা পাচজনই আগে সিলেট এসেছে কিন্তু রুহির প্রথম বার সিলেট ভ্রমণ এটা। ও কিছুই জানেনা এই সম্পর্কে। পিয়ালের পরিচিত একটা জিপ আছে ওরা সেটাই ভাড়া করে পানসি রেস্টুরেন্ট থেকে বেশ কিছু খাবার দাবার নিয়ে বেড় হয়ে গেলো,, শ্রীমঙ্গল এর
বিখ্যাত সব চা বাগান গুলোর মাঝে দিয়ে ওরা সব গুলো পথ পাড়ি দিচ্ছিল,, এতটা প্রাকৃতিক সবুজ শ্যামলা সৌন্দর্য দেখে প্রায় সবার মন ভালো হয়ে গেলো কিন্তু রুহি দেখছিলো একদম বিস্মিত ভাবে সব কিছু। এত সুন্দর আগে কখনো ও দেখেনি ওর চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ দেখাচ্ছে। সবাই তো সবার মত ব্যাস্ত কিন্তু ইরাদ শুধু দেখছে রুহিকে,, ওর বউ এই মেয়েটা। দুনিয়ার পেচঘোচ, গোলক ধাধা সব কিছু থেকে দূরে যার মন। এই বাচ্চা মেয়েটা যত মায়া লাগাতে পারে তা মনে হয় বিরল।

যখন ওরা ট্রাকিং এর রাস্তায় এসে থেমেছে তখন রুহি ইরাদকে জিজ্ঞেস করে,,
-এসে গেছি আমরা? কিন্তু হামহাম জলপ্রপাত দেখতে পাচ্ছি না কেন?
রুহির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো,,
ইরাদ তখন মুচকি হাসি দিয়ে বললো
-আরো পথ বাকি এখান থেকে ট্র্বাকিং শুরু হবে,,,
-আরো বাকি?? কতটুকু??
-এই মাত্র শুরু হলো আসল রাস্তা যাওয়ার।
বলে আরিশা হেসে দিলো।
রুহি কিছু বুঝতে পারলো না।
সবার সাথে হাটা শুরু করলো,,
কিছুদুর যাওয়ার পরে তানির পায়ে জোক ধরলো,, রুহির চোখে পরলো ও এক চিতকার দিলো
এটা দেখে পিয়াল সাথে সাথে লবণ বেড় করে দিলো
নিপন পিয়ালের হাত থেকে লবণ নিয়ে তানির পায়ে দিয়ে দিলো এদিকে রুহি ভয়ে পুরো শেষ।।
তানি- ভয় পেয়ো না। এখানে আসলে এরকম হয়।
আরিশা- হ্যাঁ ভাবি।
ওদের কথা শুনে রুহি কান্না করছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে। আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে অসহায়ের মতো।
ইরাদ- কি হয়েছে আপনার?
রুহি- ভয় হচ্ছে অনেক। আমি জোক খুব করে ভয় পাই,, এখন আমাকেও যদি ধরে??
পিয়াল- ধরবেই তো ভাবি। বলে হো হো করে হাসলো,,
রুহির চোখমুখ দেখে বলল
আরিশা- এই এগুলো বলে ভয় দেখায়াও না
রুহি- আমি সত্যি জানতাম না এখানে এগুলো থাকবে এত করে।
রুহির কথা শুনে ইরাদ কিছু না বলেই রুহিকে হুট করে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে হাটতে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
– চল সবাই বেশি দেরি হয়ে যাবে নয়তো।
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
ইরাদ সামনের দিকে তাকিয়ে হাটছে,, সবটা মনোযোগ ওদিকেই আর রুহি ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওকেই দেখছে।
ভয় যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে।
সবাই যাচ্ছে প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সামনে একটা হাটু সমান পানির ডোবা আসলো
এই পথে আরিশা আর তানি ভাবছিলো হয়তো নিপন আর পিয়াল ওদের কোলে নিয়ে পার করে দিবে কিন্তু ওদের বলা সত্যেও ওরা তা করলো না।
রাগে আরিশা তো পিয়ালকে বকা শুরু করে দিয়েছে
-বিয়ের এত বছরে জীবনে ও এভাবে কোলে নিয়ে আমাকে এই রাস্তা গুলো পার করিয়ে দিসো??
-নিজে পারো তুমি এই সব রাস্তায় নিজেকেই সামলাতে পারিনা, আর তাছাড়া ইরাদের মত আমার এত শক্তি নেই আমাদের।
নিপন ও তানির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো পিয়াল ঠিক বলছে।
আর এদিকে রুহির লজ্জা লাগছে অনেক৷ ইরাদ মিটিমিটি হাসছে রুহি চোখ নামিয়ে রেখেছে,, চোখে চোখে ওদের কথা হয়,, যা মন দিয়ে অনুভব করতে হয়,, মুখ দিয়ে প্রকাশ করা লাগে না।
রুহি মনে মনে ভাবছে আল্লাহ এত ভালো একটা স্বামী ওকে উপহার দিয়েছে,, আল্লাহকে লাখোকোটি শুকরিয়া করলেও কম হবে।
আর ইরাদ ভাবছে এমন একটা লক্ষ্মি বউকে আজীবন এভাবে আগলে রাখতেও ওর কষ্ট নেই।

এভাবেই একটা সময় ওরা হামহাম জলপ্রপাতে চলে আসলো,,
ইরাদের গলায় এক হাত রেখে অন্য হাতে ঝর্নার দিকে তাক করে রুহি আদুরে গলায় বলে,,
-ওখানে যাবো আমরা?
-হুম যাবো।
এমন সময় পিয়াল বলে
-ভাবী এখন নামবেন আপনার জামাইয়ের কোল থেকে?? নাহয় আমাদের বউরা আমাদের গলা টিপে মেরে ফেলবে।
এই কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।
ইরাদ রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– নামাবো?
-হুম,,
রুহি সবচেয়ে বেশি উচ্ছাসিত,, বাচ্চাদের মত খিলখিল করে হাসছে আর আরিশা, তানি ওদের সাথে পানিতে ভিজছে
ইশারা দিয়ে কয়েকবার ইরাদকে ডেকেছে
ও বলেছে কিছুক্ষণ পরে আসবে,,
ইরাদ চুপচাপ দাড়িয়ে রুহিকে দেখছে
ওর যেন আর কিছুই আবিষ্কার করতে ইচ্ছা করে না
এখন শুধু রুহিকেই দেখতে ইচ্ছা করে ওকে ভালো রাখতে ইচ্ছা করে। ইরাদের এভাবে রুহিকে দেখা পিয়ালের চোখ এড়ালো না,,
– সত্যি একটা বলবি ইরাদ?
– হ্যাঁ জিজ্ঞেস কর
-তুই এই বিয়েতে খুশি তো?
– হ্যাঁ খুশি,, রুহিকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি অনেক। মেয়েটা আমাকে একটা শান্তি দেয়,, যা আমি অন্য কোথাও পাইনি। মাহিরা যাওয়ার পরে আর বাচার ইচ্ছা ছিলো না, তখন ও আমাকে বাচতে সাহায্য করেছে।
– এখনো কি মাহিরা কে…..?
– না এখন আর ভালোবাসি না ওকে।
– হয়তো আমি ওকে সুখী করতে পারিনি তাই তো চলে গেছে, আর যে আমাকে ছেড়ে ভালো আছে সে ভালো থাকুক কষ্ট পেয়ে কিই বা হবে?
-ভাবিকে কবে প্রপোজ করেছিলি?
-এখনো করিনি
– কি বলিস?
-হুম করবো শীঘ্রই।
ইরাদের কথায় পিয়াল খুব খুশি হলো।

বেশ অনেকক্ষণ পানিতে খেলে রুহি ক্লান্ত হয়ে গেছে,, ইরাদকে উদ্দ্যেশ করে রুহি জানতে চাইলো
-আজকের মত ঘোরাঘুরি শেষ না?
-উহুম,,একটা জিনিস বাকি
-এখানে আর কি আছে ঘুরে দেখার?
-আসুন দেখাচ্ছি।
এই বলে রুহিকে একটা সাইডে নিয়ে গেলো ইরাদ,, সেখানে ছিপছিপে পানি পাহাড়ের হালকা ছায়া ও আছে,, রুহির হাত ধরে ওকে সেই হালকা হালকা পানির মধ্যে বসার ইশারা দিয়ে ইরাদ বলে,
-পাখির কথা,, ঝর্ণার কথা,, আকাশের বাতাসের সবার কথা শুনতে চান?
-হুম চাই
সেই পানিতে হেলান দিয়ে রুহি শোয়ার পরে ইরাদ ওকে চোখ বন্ধ করতে বললো,,
রুহি চোখ বন্ধ করে শুনতে পাচ্ছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ,, বাতাসের শো শো আওয়াজ,, পানির কলকল শব্দ। সব কিছু যেন খুব রুহির সাথে কথা বলছে,, আন্তর থেকে সবটাই রুহি অনুভব করতে পারছে।
চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ও হাসছে মিটিমিটি,, আর ইরাদের হাতের কব্জিটা মুঠো করে ধরে রেখেছে।
প্রায় ৫-৭ মিনিট পরে ও চোখ খুলে বসলো,,
-ভালো লেগেছে?
-হুম অনেক।
-এখন বেড় হই?
-জ্বি
-কিন্তু এত দেরি হয়ে গেছে আমরা যাবো কিভাবে?
-আজকে রাতটা তাহলে হামহামেই থাকেন ভাবী?
কথাটা বলে পিয়াল হাসছে।
রুহি অবাক হয়ে ইরাদের দিকে তাকালো,,
-থাকা যাবে?
-হুম যাবে,, থাকবেন?
-জ্বি আবশ্যই
-কিন্তু কোথায় থাকবো?
-আমাদের এক বন্ধুর বাসা ওইদিকের পাহাড়ে চাইলে আজ রাত ওখানে থাকতে পারি আমরা।
-ওকে থাকবো আমরা
বলেই রুহি খুশি হয়ে আরিশা কে জড়িয়ে ধরলো।
আরিশা হেসে বলে
-আমাকে না ধরে তোমার জামাইকে ধরো,, ওরই প্ল্যান এগুলো।
-বউকে খুশি করতে জানে ইরাদ ভাই
কথাটা তানি বললো,,,

শায়ানের বাসা সামনের একটা পাহাড়ে,, বাসাটা বেশ বড় আর খুব সুন্দর করে সাজানো এখানে ৬টা রুম আছে রান্নাঘর আর বসার ঘর বাদে। শায়ান চাকমা না এটা ওদের শখের বাড়ি,, মাঝে মাঝে ঘুরতে আসে বউকে নিয়ে এ ছাড়া একটা কাজের লোক আছে ও দেখাশোনা করে। এখন শায়ান আর রাফিয়া আর ওদের বাচ্চা রাশি (৩ বছর) এখানে ছিল বিধায় ওরা থাকতে আসতে পেরেছে,
সবাই এসে চেঞ্জ করে নিয়েছে।
রুহি কালো একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে আর ইরাদ কালো একটা শার্ট আর কালো প্যান্ট। ওরা একরকম কাপড় নিয়ে ঢুকেনি চেঞ্জ করতে কিন্তু মিলে গেছে,, সবাই ভেবেছে ওরা ম্যাচিং করে পরেছে ইচ্ছা করে তাই দুষ্টুমি করলো কিছুক্ষন।

রাতে সবাই ডিনার করে নিলো,,
শায়ান রাশিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসলো সবাই এখন আড্ডা দিবে বাড়ির বাইরের দিকটায়।
বেশ ঠান্ডা লাগছে তাই কিছু কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে পিয়াল,,
আরিশা- আসো গানের কলি খেলি?
তানি- হ্যাঁ আসো
রাফিয়া- আমি পারি না গান করতে
পিয়াল- তোমার বর তো পারে তোমারটা ও গেয়ে দিবে তুমি শুধু গানের নাম বলে দিলেই হবে
ইরাদ- রুহি আপনি খেলবেন?
রুহি- হ্যাঁ খেলবো,, মজা হবে।
পিয়াল- গাইস,,, একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
সবাই সবার মতামত নেয় আর এদিকে দেখো নতুন দম্পতি নিজেদের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত।
রুহি লজ্জায় শেষ।
আরিশা- তুমি আজকে কি শুরু করলে বলো তো? তোমার কথায় বেচারি লজ্জা পাচ্ছে।
পিয়াল-সত্যিই তো বলেছি।
ইরাদ- হ্যাঁ ভালো করসি। আমার বউয়ের সাথেই তো কথা বলছি। তোর কি?
ইরাদের কথা শুনে রুহি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
এত সুন্দর লাগলো “আমার বউ” কথাটা রুহির কাছে।
যেন বার বার কানে বাঝছে পুরো কথাটা। এই প্রথম ইরাদ বললো ওকে আমার বউ। আত্না ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার মত কথাটা লাগলো,, পুর্ণ তৃপ্তি কাজ করছে মনে।

গোল হয়ে সবাই বসেছে,, রুহি আর ইরাদ মুখোমুখি একটা সময় গানের কলি খেলতে খেলতে রুহির কাছে আসলো “প”
রুহি কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো এরপর
গাইতে শুরু করলো..

“পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালোবাসা
সবই যে তোমায় দেবো, একটাই এই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে

(এই লাইন গুলো যখন শুরু করলো সম্পুর্ণ ৬টি লাইন ইরাদের দিকে তাকিয়েই গাইলো)

ভাবিনি কখনো
এ হৃদয়ে রাঙানো
ভালোবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে
দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াবো আমি

সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলবো হেসে
এক পলকেই পৌঁছে যাবো
রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে

রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে
আকাশে হারিয়ে
যত্নে রেখো গো তুমি

সেই মেঘেরই আঁচল
এনে আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং তুলিতে আঁকবো ঘর
রুপ কুমারীর দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে

পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালোবাসা
সবই যে তোমায় দেবো, একটাই এই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালোবাসি তোমাকে”

সবাই করতালি দিলো রুহির গান শুনে।
পিয়াল- দেখেছিস ভাবী কত ভালোবাসে তোকে?
ইরাদ- তোর এখন লাভগুরু সাজতে হবেনা।
ইরাদের ভালো লাগছে,, রুহি কি ওকে ভালোবাসে? কেন যেন এখন মনে হচ্ছে হ্যাঁ রুহি ওকে ভালোবাসে। মনে হচ্ছে রুহিকে বলে দেওয়ার উচিত “ভালোবাসি তোমাকে”

এরই মাঝে রাশি ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে দিলো,, সবাই ওকে কান্না থামানোর চেষ্টায় ব্যাস্ত কিন্তু না,, সে কারো কথাই শুনতে রাজি না,,
যেই রুহি ওকে কোলে নিলো তখনই কান্না থেমে গেলো একদম। ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রুহি বের হলো ঘর থেকে।
রাফিয়া- ভাবী তুমি কিভাবে পারলে? আমার মেয়ে ও কিন্তু ওকে ঠান্ডা করতে আমিও পারিনা মাঝে মাঝেই।
-আমি বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসি, আমার বেশির ভাগ ফ্রি সময়ই কলেজে ওঠার পর বাচ্চাদের ওয়ার্ডে পার করতাম, ওদের একটু ট্যাকনিক্যালি হ্যান্ডেল করলেই হয় ভাবী।
রাফিয়া- শিখিয়ে দিও আমাকে
-আচ্ছা ঠিক আছে।

সবাই স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমাতে চলে আসলো কিন্তু হঠাৎ ইরাদের মনে পড়ে গেলো,
“রুহি বাচ্চা ভালোবাসে”
আর আমি তো পিতা হতে পারবো না কোনোদিন।
কথাটা মনে মনে বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আকাশের পানে তাকিয়ে রইল ও।

(চলবে!)

আধিকার পর্ব-০৮

0

#আধিকার
#অষ্টম_প্রহর
লিখাঃ Yasira_Abisha (Fatha)

অবিবাহিত অবস্থায় এক বিছানায় রুহির সাথে থাকতে অস্বস্তি লাগছে ইরাদের,, কেমন যেন অস্বাভাবিকতা কাজ করছে।
তারপরেও ড্রিমলাইট অন করে বিছানায় গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই বুকে নরম কিছু অনুভব করতে পারলো ইরাদ,, তাকিয়ে দেখলো
রুহি হাত রেখেছে ওর বুকে
আর ওর দিকে কেমন এক দৃষ্টিতে রুহি তাকিয়ে আছে,,, ড্রিমলাইটের আবছা আলোতে রুহির চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
ইরাদ কিছু না বলে আস্তে করে হাতটা সরিয়ে দিয়ে অন্য পাশে ফিরতে চেষ্টা করে তখন রুহি ওকে হাত দিয়ে টেনে ধরে বাধা দিয়ে,,
ঠোঁট ভেটকিয়ে জিজ্ঞেস করে
– দেখতে ভাল্লাগেনা আমাকে? অন্য দিকে ফিরছো কেন? বলো?
রুহির কথা শুনে ইরাদ ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
চোখ বড় বড় করে তাকায় ওর দিকে,
ইরাদকে তাকাতে দেখে রুহি একটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
-বলো না?
-অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরুন।
-পরে,, এখন খুদা পেয়েছে।
-আচ্ছা খাবার অর্ডার দিন ফোন আছে ওই পাশে,,
আদুরে কন্ঠে রুহি বলে
-এই খাবার না,,
-তাহলে?
-চুমু খাবো তোমার থেকে।

এমনিতেই মেয়েটাকে ইরাদের ভালো লাগতে শুরু করেছে, তার মধ্যে এমন কথা বার্তা একদম ভালো লাগছেনা শুনতে,,
তাই রাগে ইরাদ বলে উঠে
-আপনি আমার স্ত্রী না সে এসব উল্টাপাল্টা আবদার করে বসেছেন।
কথাটা রুহির ইগোতে লাগলো অনেক বেশি,,
সাথে সাথে উঠে রুমের বাইরে চলে গেলো
ইরাদ অবাক হয়ে গেলো এমন করছে কেন মেয়েটা,,
নিচে রুহি রিসিপশনে চলে এসেছে
-ম্যানেজার,, ম্যানেজার আমার একটা কাজি লাগবে এখন
-সরি, ম্যাম বাট কাজি এত রাতে?
-আমি বিয়ে করবো ইরাদকে।
লবিতে কয়েক জন স্টাফ আর এক দম্পতি দাঁড়িয়ে আছে,,
ইরাদ রুহির পিছু পিছু চলে এসেছে এসব শুনে ও পুরপুরি চমকে গিয়েছে আর বলে
-একচুয়ালি আমার ওয়াইফের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে একটু তাই ও বলেছে আবার বিয়ে করতে হবে ওকে,, আমি বুঝিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
রুহি কিছুই বলছেনা
-রুহি চলেন।
-না যাবো না, বিয়ে করতে হবে এখনি

সেই মাঝ বয়সী দম্পতি একসাথেই এগিয়ে এসলো
মহিলাটা বললো রুহিকে
-আপনি চাইলে আমরা আপনার সাহায্য করতে পারি,, আমার স্বামী বিয়ে পড়ানোর কাজ করতেন একটা সময় উনি কাজী।
ইরাদের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো এবং সাথে সাথে বললো,,
-না থাক দরকার নেই উনার রাগ এমনিতেই কমে যাবে,,
ইরাদের কথায় ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে রুহি
মহিলার কথা শুনে বলে
– এখানে এই অবস্থায়ই আমাদের বিয়ে দেন,,
-রুহি বিয়ে করবে কিভাবে? সাক্ষী লাগবে,, কিন্তু এখানে তো কেউ নেই সাক্ষী দেবার
ইরাদের মাথায় এর থেকে বেশি আর কোনো বুদ্ধি আসলো না,,
-পিয়াল ভাই আর আরিশা আপুকে ডাক দেন
ইরাদ কিছু শুনছেনা দেখে রুহি নিজের মোবাইল দিয়েই আরিশাকে কল দিয়ে নিচে আসতে বললো,,
এদিকে কাজী সাহেব ও প্রস্তুত,,
আরিশা আর পিয়াল ব্যাপারটা খুব ইঞ্জয় করছে,,
রুহির চোখ খুশিতে চকচক করছে,,
আর ইরাদের মাথায় খেলছেনা রুহি এমন কেন করছে??
কিছুসময়ের মধ্যেই ওদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
ঘোরে থাকতে থাকতেই রুহি আজ ইরাদের স্ত্রী হয়ে গেলো। একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো ওরা
পবিত্র একটা বন্ধন। রুহি কেন এত পাগলামি করলো কি আসল কারণ হতে পারে এটা ইরাদের মাথায় নেই। বিয়ে তো ছেলে খেলা না,, যে মেয়ে মুখ ফুটে পছন্দ করে কিছু খেতে পর্যন্ত চায় না আজ সে জোর করে বিয়ে করে নিলো।

রুহিকে পাশে শুতে বলে ইরাদ ও শুয়ে পরলো
রুহি ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো
-এবার দাও না খেতে।

ইরাদ বুঝেছে রুহি কি চাইছে কিন্তু ও কিছু না বলেই এবার রুহির হাত সরিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পরতে নেয়, রুহি এবার রাগে ইরাদের পেটের উপরে উঠে বসে।
ইরাদের অস্বস্তি বেড়ে গেছে অনেকাংশ,, মেয়েটা করছে কি আর কি আবলতাবল বলছে এসব,,
-ইরাদ আমাকে ভাল্লাগেনা তোমার?
রুহির এখন একরকম অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে যা দেখে ইরাদের মনে হচ্ছে ওকে নিরুৎসাহিত করতে হবে,, তাই উত্তরটাও তেমনিভাবেই দিলো ইরাদ
– না লাগেনা একটুও,, এবার সড়ুন।
-ভালো মত দেখেছো আমাকে কখনো?
-দেখার ইচ্ছেই নেই
কথাটায় রুহির খুব রাগ উঠে গেলো
একটানে শাড়ির আঁচলটা টেনে ফেলে দিলো ও
ইরাদ এবার নিজের চোখ ঢেকে ফেললো হাত দিয়ে,,
– কি করছেন আপনি?
– তুমি আমাকে দেখছো না কেন?
-ভালো লাগেনা তাই
এবার কোল থেকে সড়ে রুহি শাড়ির সাথে ব্লাইজটাও খুলে ফেলে দিলো মাটিতে,,
ইরাদ চোখে হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে এইজন্য রুহির মন খারাপ হয়ে গেলো সে কান্না শুরু করে দিলো। ইরাদ কান্নার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে,, এবার আর কিছু বলতে পারছে না। মেয়েটাকে দেখলে এমনিতেই হার্টবিট কেমন যেন দ্রুত উঠানামা করতে থাকে। আর এমন রাতের বেলা হুট করে বিয়ে এরপরেই এই অবস্থায় ওকে এরকম কামনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে দেখে নিজেকে আর সামলে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
ইরাদকে তাকাতে দেখে রুহি আবারও জিজ্ঞেস করলো
-সত্যি কি একটুও ভালো লাগেনা আমাকে?
ইরাদ এবার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে ফেললো
-লাগে, ভালো লাগে অনেক।
রুহি এবার একটা হাসি দিয়ে এক ঝাটকায় ইরাদকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে লেপ্টে গেলো,, ইরাদের বুকে আস্তে আস্তে মুখ ঘষে চলছে ও
ইরাদ ওকে ধরছেনা।
রুহির হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে,, ইরাদ তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে,,
-তাহলে একটুও আদর করো না কেন আমাকে ইরাদ? আমি যে কত বাহানা খুজে বেড়াই তোমার থেকে একটু আদর পাওয়ার,,
ইরাদ এসব কথাতে অনেক বেশি দুর্বল অনুভব করছে রুহির প্রতি,,
তারপরেও তার হাত দুটো একদম সংযত করে রেখেছে,,
ইরাদের একটা হাত নিয়ে রুহি ওর উনমুক্ত কোমড়ে রেখে বললো,,
-আদর করো আমাকে।
-…
-আমাকে এভাবে দেখে আদর করতে ইচ্ছা করছেনা তোমার? আমি তো আমার সর্বোস্ব দিয়ে তোমাকে চাইছি। বিয়েও করেছি এখন তো আমি তোমার বউ,, আমাকে আদর দিচ্ছো না কেন?
ইরাদ এবার এর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে রুহিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের টি-শার্টটা খুলে ফেলে রুহিকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে, গালে, গলায়, কানে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো,, রুহিও একই কাজ করছে,, কেমন একটা গভীর মোহনীয়তায় ডুবে যাচ্ছে দুইজন,, রুহির ফর্সা চেহারা উত্তেজনা,, ভালো লাগা সব মিলিয়ে লাল হয়ে গেছে। ঠোঁট দুটো কাপছে,, সারা শরীর গরম হয়ে গেছে,, ইরাদ আজকে ওকে নতুন করে আবিষ্কার করছে,, প্রতিটি স্পর্শ ইরাদের মনে আর রুহির পুরো শরীরে একটা কম্পন তৈরি করে চলছে,, কেমন যেন একটা নেশা আছে রুহির ঠোঁটে,,
ইরাদ যখন রুহির ঠোঁটে চুমু দিতে যাবে তখন হঠাৎ করেই মনে পড়লো যাই হোক মেয়েটা ওর স্ত্রী হলেও এভাবে মোহোর ঘোরে থেকে সবকিছু করে ফেলা ঠিক না,, এতে রুহির অনেক বড় ক্ষতি হবে,, যদি শুধু মাত্রই এটা রুহির শারীরিক চাহিদা হয়ে থাকে? যদি ইরাদের মনে ওকে নিয়ে যেমন একটা টান কাজ করে ওর মনে এমন কিছু কাজ না করে থাকে?? তাহলে কাল সকালে রুহি ইরাদকে মাফ করতে পারবেনা,, আর ইরাদ চায় না রুহি ওকে খারাপ ভাবুক। কিন্তু রুহির এমন আচরণ,, এরকম স্পর্শ,, এরকম কথা সব মিলিয়ে ওকে পাগল করে দিচ্ছে,, কোনো ভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছেনা আর।
-আদর দাও,, থেমে যাচ্ছো কেন? হুম?
ইরাদ এবার দাঁড়িয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো,, রুহি ওর গলা জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হেসে দিলো।
ইরাদ সোজা ওকে বাথরুমে নিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে বেড় হয়ে যেতে চাইলো,, এই শীতে একমাত্র ঠান্ডা পানিতে গোসল যদি রুহিকে শান্ত করতে পারে এই আসায়।
শাওয়ার ছাড়তেই রুহি একটানে ইরাদকেও ভিজিয়ে দিলো অনেক ক্ষন চোখ বন্ধ করে ইরাদের বুকে মাথা দিয়ে দাড়িয়ে রইলো রুহি।
ইরাদের অনেক শান্তি লাগছে রুহির মাথাটা ওর বুকে নিয়ে রাখতে।
রুহি এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে,, ইরাদ ওকে কাপড় এনে দিয়েছে,, এখন ও নিজেই চেঞ্জ করে নিয়েছে,, একটা আকাশি সালোয়ার কামিজ পরে বেড়িয়ে এসেছে বাথরুম থেকে। আর ইরাদ ও চেঞ্জ করে নিয়েছে,,
ওদের কাপড় গুলো ইরাদ বারান্দায় নেড়ে দিয়ে রুমে এসলো রুহি আধশোয়া অবস্থায় বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে।
ইরাদ বিছানায় এসে শুয়ে পরেছে,,
রুহি ওকে দেখে এবার আস্তে করে ওর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো,,
-ঠান্ডা লাগছে অনেক
এখন ইরাদ কোনো বাধা দিচ্ছেনা। বরং হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রুহির মাথায়,, ব্ল্যাংকেটটা ওদের ওপরে টেনে আকড়ে ধরলো রুহিকে,,
মেয়েটা এত শান্তি দেয় কেন আমাকে? ওর চোখ ও যেন আমার সাথে কথা বলে। রুহি ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইরাদের অনেক ভালো লাগছে রুহিকে বুকে নিয়ে। মনে একরাশ সুখ,, এসে জমা হয়েছে। কিন্তু অনুভূতি গুলো এমন কেন? ইরাদ কি প্রেমে পড়লো আবারও??
কে যেন বলেছিলো প্রেম জীবনে একবারই আসে?
উক্তিটি ইরাদের আজকে মিথ্যা মনে হচ্ছে,, কারণ আজকে হঠাৎ করেই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে ইরাদ। এই প্রেম যেন নিজেকে পূর্ণতা দিচ্ছে,, আগুনে পানি ঢেলে দিয়েছে,, মনের সব দুঃখ কষ্ট মুছে দিয়েছে,, স্বস্তি আর সজীবতা এনে দিয়েছে।
এ মেয়ে না যেন একটা আদুরে বাচ্চা যে ইরাদকে বাধ্য করেছে নিজের প্রেমে পরতে।
বেশ করে যখন রুহি ঠোঁট জোড়া বাচ্চাদের মত করে বলছিলো
-আমাকে তোমার ভালো লাগেনা?
কথাটায় অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারলাম যে হ্যাঁ তোমাকে আমার ভালো লাগে,, একটু বেশিই লাগে। যা ভালোবাসায় রূপ নিয়ে নিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই ইরাদও রুহিকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো,,

১০টার দিকে রুহির ঘুম ভাংলো,, চোখ খুলেই নিজেকে ইরাদের বুকে আবিষ্কার করলো রুহি,, ইরাদ ঘুমের মধ্যেও স্মাইল করছে। মনে হচ্ছে খুব আরামের একটা ঘুমে সে আছে,,
রুহির মাথাটা একদম ঝিমঝিম করছে। আর ও এই অবস্থায় ইরাদের বুকে শুয়ে আছে।
অনেক লজ্জা লাগছে,,
গায়ের জামাও অন্যটা পরা।
কিছুই বুঝতে পারছেনা,, কেমন যেন ভয় ভয় করছে,, কাল রাতে কি ইরাদ ওকে?
না ইরাদ তো এমন না।
তবে কি ও নিজেই?
কিন্তু ওর তো কিছু মনেই পরছেনা।
কিছুই মনে আসছেনা কেন?
রুহি এবার উঠে তাড়াতাড়ি নামাজটার কাজা পরে নিলো ফ্রেশ হয়ে এসে,,
মোনাজাতে কান্না করতে শুরু করলো,, ও তো কখনো চায়নি বিয়ের আগে এমন কিছু করতে কিন্তু নিজেকে এই অবস্থায় দেখে ওর মনে অনেক কথাই আসছে। ইরাদকে ও ভালোবাসে ঠিকি কিন্তু বৈধতা দিয়ে ওকে নিজের সবটা দিতে চায় রুহি।
মনের ভিতরে এক অজানা ভয় বিরাজ করছে রুহির। এমন কষ্ট থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়ই হচ্ছে সত্যিটা জানলে।
রুহিকে নামাজে কাদতে দেখে ইরাদের ঘুম ভেংগে যায়।
সাথে সাথে উঠে বসে,,
রুহি নামাজ শেষে ইরাদের দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-রাতে কি আ আমাদে..
-আপনার কিছু মনে নেই?
-রুহি,, উহুম আমি মেডিসিন খাওয়ার পরে ঘুমাতে গিয়েছি বেডে এরপর থেকে আর কিছুই মনে আসছেনা ।
-আপনি কিসের মেডিসিন খেয়েছিলেন কালকে?
-নামটা দেখিনি, মাথা ঠান্ডা রাখার একটা মেডিসিন ছিলো সম্ভবত।
-আরিশার ব্যাগ থেকে দিয়েছিলো?
-হুম
ইরাদের আর বুঝতে বাকি নেই সেটা যৌন উত্তেজক কোনো ঔষধ ছিলো,,
রাতের বিয়ের ঘটনাটা রুহিকে খুলে বললো ইরাদ কিন্তু এর বেশি কিছুই বললো না।
ইরাদ চায় না রুহিকে ও বিয়ে করেছে দেখে রুহি জোর পূর্বক স্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করুক।
মন থেকে যদি মানতে পারে তাহলেই ইরাদ ওকে গ্রহণ করবে আর যদি রুহি ওকে ছেড়ে যেতে চায় তাতেও ইরাদের কোনো সমস্যা নেই।
রুহি খুশিতে লজ্জায় ভয়ে কান্না করে দিলো
-কান্নার মত কিছু হয়নি। আপনি যা ডিসিশন নিবেন তাই হবে। সব আগের মতই আছে ভয় পাবেন না।

রুহি মনে মনে ভাবছে কাল রাতে যা যা হলো ইরাদকি এগুলো মেনে নিতে পেরেছে? নাকি সমাজের জন্য বাধ্য হয়েছে??
আমার কি একটা সরি কি বলা উচিত?
ইরাদ উঠে বাথরুমে যাচ্ছে এমন সময় রুহি
বলে
” সরি কাল রাতের জন্য ”
ইরাদ রুহির দিকে তাকিয়ে হাসলো, তারপর চলে গেলো।
এই হাসির অর্থটা কি? আর কেনোই বা
এত সুন্দর হাসি এই ছেলেটার?
একদম কলিজায় লাগে রুহির।

ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসেছে রুহি বারান্দায় বসে আছে ওদের কফি চলে এসেছে,,
কফি হাতে রুহির কাছে গেলো ইরাদ,,
শ্রীমঙ্গল এত সুন্দর করে ইরাদকে ওর ভালোবাসা বুঝিয়ে দিবে এটা ইরাদ জীবনেও ভাবেনি।
ইচ্ছে করছে রুহিকে বলতে
” ভালোবাসি ঝড়ের রাতে আগত হুরপরী
অনেক ভালোবাসি তোমাকে
আমার হয়ে থাকবে আজীবন??”
কিন্তু রুহির মনের খবর না জেনে যে কিছু বলতে পারছেনা ইরাদ।
আর এদিকে কফিতে একবার রুহি চুমুক বসাচ্ছে আর অন্যদিকে ইরাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে
“দিনে দিনে তো তোমার প্রেমে পাগল করে ফেলছো মিঃ ইরাদ,, তোমার মনে একটা ছোট জায়গা দিবে আমাকে??”

প্রেম ক্রমান্বয়ে দুই জনের মনেই বেড়ে চলছে,,
নিখাঁদ ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে,, বিয়ে হয়েছে ঠিকি কিন্তু কাজ করছে একটা জড়তা।
প্রেমটা কি তাহলে বিয়ের পরেই হবে ওদের?
রুহি আর ইরাদ দুজনেই ভাবছে অপর পাশের মানুষটার বাম পাশের ছোট হৃদয়ে কি একটু খানি জায়গা পাওয়া যাবে??
নতুন দিনের সূচনায় আজকে একজোড়া নতুন পবিত্র প্রেমিক জুটির জন্ম হলো,, বৈধ প্রেম।
সামনে ভাগ্য কি রেখেছে তাদের জন্য এর কোনো আভাস নেই,, মনে আছে একরাশ ভালোবাসা আর একসাথে ভালো থাকার একটা অদম্য ইচ্ছা…

অধিকার পর্ব-০৭

0

#অধিকার #সপ্তম_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

বেশ কিছুক্ষণ ইরাদের বুকে মুখ গুজে রুহি কান্না করলো,, এই কান্না কোনো সাধারণ কান্না নয় বরং,,
এক ঝাটকায় নিজের পরিবারকে হারানোর, এই কান্না এক জোর পুর্বক অধিকার আদায়ের দাবিতে একটা মেয়েকে তার স্বাভাবিক হাসিখুশি জীবন থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার কান্না,,
ইরাদ বুঝতে পারছে এই মেয়েটা ছোট থেকেই সব কিছু হারিয়ে আসছে,, তার মনের মাঝে অনেক ব্যাথা লুকিয়ে আছে যা সে হয়তো প্রকাশ করতে পারেনা। যা কিছু ঘটে গেছে তাতে তার তো কোনো দোষ নেই, সে কেনো ভয় নিয়ে বাচবে? তাকে একটা স্বাভাবিক জীবন ইরাদ দিবে। তাকে সব রকম দুঃখ থেকে ইরাদ নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে বাচিয়ে রাখবে। কেন এমন লাগছে ইরাদ জানে না কিন্তু এই অনুভুতিটা মন্দ না। বরং একটা দ্বায়িত্ব আর সুখ দিচ্ছে ওকে। বেচে থাকার একটা টান লাগছে এই দুনিয়ায়।

.

রুহির কান্না কমে এসেছে কিছুটা, তবুও ইরাদের বুকে লেপ্টে আছে ও,, কেন যেন কথা গুলো বলতেও ওর ভয় হয়,,
ইরাদ আলতো করে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই জিজ্ঞেস করলো,,
-শপিং মলের ছেলেটা কে ছিলো?
-সে ছেলেটা আমাকে পছন্দ করতো কলেজে থাকতে। আমার ওকে একদম পছন্দ ছিলো না কখনো যদিও দাদা বেচে থাকতে আমাকে বিরক্ত করার সাহস পেতো না কিন্তু দাদা মারা যাওয়ার পরে আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করতো। আমি চাচুর কাছে বিচার দিতে পারতাম কিন্তু ওর মত আরো অনেকে ছিলো যারা পছন্দ করতো,, এদের নামে বিচার দেওয়া মানেই এক্সট্রা এটেনশন দিয়ে ফেলা,, যা আমি কখনো করতে চাইনি। নাহয় আমার বাড়ি থেকে বেড় হওয়াই বন্ধ করে দিতো। কারণ আমার বাসায় অনেক রেস্ট্রিকশন ছিলো, আর আমাকে নিয়ে সবাই অনেক টেনশনে থাকতেন।
-হুম বুঝতে পেরেছি বলেই ইরাদ নিজের বাহুডোরের বাধন হালকা করে দিলো,, রুহি সরে বসলো,,
এমন সময় মাগরিবের আযান পরতে শুরু করলো চারিদিকে।
রুহি- ইশশ! আযান দিচ্ছে আমরা এখনো শাওয়ার ও নেইনি।
ইরাদ- হ্যাঁ,, আমি যাচ্ছি একবারে নামাজ পরে তারপর তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নামছি। আপনি ও ফ্রেশ হয়ে নেন।
এই বলেই ইরাদ চলে গেলো

.

রুহি আগে ওজু করে নামাজ পরে,,
তারপরে গোসল সেড়ে এসেছে একটা লাল রঙের জর্জেট শাড়ি পড়ে।
ফর্সা ধবধবে শরীরে লাল রং একদম এগুনে তৈরি কোনো পরীর মত লাগছে,,
গিসারে হঠাৎ প্রব্লেম হওয়ায় ঠান্ডা পানিতে গোসল করার ফলে গাল গুলো গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে,, কোমর অবধি ভেজা চুল গুলো খোলা অবস্থায় সামনে দিয়ে ডান পাশে এনে রেখেছে, যা আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে রুহিকে।বেশ মনোযোগ দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক মিনিট ধরে ব্লাউজের ব্যাকের হুকটা লাগানোর চেষ্টা করছে সে,, কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। এমন সময় ইরাদ আসে ওর ঘরে, এমন সুন্দরী দেখে যে কেউ একবার থেমে ওকে দেখতে থাকবে, হোক সে পুরুষ বা নারী। ইরাদ একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো রুহির থেকে। এই প্রথম রুহিকে শাড়িতে দেখলো সে,, তাও লাল শাড়িতে। একদম মনে হচ্ছে বউ বউ। বেশ করে নাকের একপাথরের বড় একটা স্টোনের নোসপিন আর নাকের সেই পাশের তিলটা চেহারাকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলেছে,, কে এই অপরূপার সৌন্দর্য বেশি বৃদ্ধি করেছে তা একটা প্রতিযোগিতা করেও হয়তো স্থির করা যাবেনা।
ইরাদ তাড়াতাড়ি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো -হয়েছে আপনার??
-না, এই হুকটা লাগাতে পারছিনা। একটু হেল্প করবেন।
ইরাদ রুহির ব্লাউজের হুকটা লাগিয়ে দিতে এগিয়ে এসলো,,
ইরাদের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই রুহি কেমন যেন কেপে উঠলো। এই হাতের স্পর্শ তো ওর হৃদয়ের স্পন্দন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়,, কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে,, যখন রুহি তাকিয়ে আয়নায় একসাথে ওদের দেখলো কেমন যেন পূর্ণতা লাগছে দেখতে। এক হয়ে গেলে কি মন্দ লাগবে ওদের ২জন কে? মনে তো হচ্ছেনা। আয়না তো বলছে বেশ লাগছে একসাথে। ইরাদ অন্য দিকে তাকিয়েই হুকটা লাগিয়ে দিলো।
-আমাকে নেকলেসের হুকটাও একটু লাগিয়ে দিবেন??
না চাইতেও রুহির ঘাড়ে, গলায় ইরাদের তাকাতে হলো, একটু অস্বস্তি লাগছে তবুও চেইনটা লাগিয়ে দিয়ে পেছন ফিরে রুহিকে বললো
-আজকে ওভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য আমাকে মাফ করবেন।
-হুম, ঠিক আছে।
-আপনি আস্তে ধীরে রেডি হন সমস্যা নেই আমি ব্যাগ গুলো গাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি ড্রাইভারকে দিয়ে। আমরা একবারে এশার নামাজ পরে রওনা দিবো।
রুহি আয়নায় নিজেকে দেখতে আর ভাবছে ইরাদের কত ফর্মালিটি,, একদম ঢং,,
ওকে ধরেছে বলে সরি বলছে। কিন্তু ওর মনে যে একদম গেথে গেছে ও। কোনো পারমিশন ছাড়াই এটা কি ঠিক করেছে? এই অধিকার কি রুহি ওকে দিয়েছিলো?? তাহলে সেই হিসেব কে করবে? রুহির জীবনে ইরাদই প্রথম পুরুষ যে ওকে এভাবে স্পর্শ করেছে আর ও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করেছে।৷ আজকে আয়নায় এভাবে ব্লাক সুটে ইরাদকে ওর সাথে দেখে ও বুঝে গেছে ওদের জুটিতে ও মানায়।মনে হচ্ছে এত দিনে নিজের স্বপ্নের পুরুষের দেখা মিলেছে এই ছেলেটাকে ছাড়া ওর জীবনটা চলবে না। ওকে যে নিজের স্বামী হিসেবে চাই রুহির। এই নাটকে নিজেকে ইরাদের স্ত্রী হিসেবে বলতেই ওর এত ভালো লাগছে তাহলে বাস্তবে এমন হলে কতই না ভালো লাগবে। কথা গুলো ভেবে একা একাই লাজুক হাসি দিচ্ছে রুহি। মন যেন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ইরাদকে নিয়ে। এই স্বপ্ন অনেক বেশি রঙিন,, যার গাঢ় রঙ হৃদয়কে রঙিন করে তুলেছে অদৃশ্য এক রংধনুতে।

এশার নামাজ শেষ করে রুহি ঘর থেকে বেড় হলো বেশ সুন্দর করে সেজেছে আজকে,, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, গালে হালকা ব্লাশঅন, চোখে মাশকারা,, লম্বা সিল্কি চুল গুলো খোলা,, নাকে হোয়াইট সেই নোস্পিনটাই আছে,, গলায় পাতলা একটা চেইন কানে সুন্দর ২টা টপ পরেছে, এক হাতে একটা ঘড়ি আর এক হাতে একটা হোয়াইট ব্রেসলেট,, মেয়েটার সাজের ধরন এত সুন্দর,, অন্য কোনো ছেলে যদি ইরাদের জায়গায় থাকতো এতদিন রুহির সাথে কাটিয়ে রুহির প্রেমে হাবুডুবু খেতো। কিন্তু ইরাদ ওকে এমন কিছুই বলেনা। বরং এত খেয়াল রাখার পরেও একটা দুরত্ব রেখে চলার চেষ্টা করে। রুহিকে বেড় হতে দেখে একটা স্মাইল দিলো ইরাদ
কিন্তু রুহি ইরাদকে দেখছে,, ব্লাক সুট পরেছে ও ব্যাকব্রাশ করা চুল জেল দিয়ে রেখেছে ফর্সা চেহারা,, খোচাখোচা দাড়ি,, মোবাইলে কি যেন দেখছিলো সে,, রুহিকে আসতে দেখে একটা স্মাইল দিয়ে আবারো ফোনে মনোযোগ দিলো। আবার একটু পর বাকা হয়ে উল্টোদিকের সোফায় বসে পরলো,,
রুহি দাঁড়িয়ে ভাবছে কিছু একটা করা দরকার এই ছেলেটার মুখে নিজের একটু প্রশংসা শুনতে খুব করে ইচ্ছা করছে। কি করা যায়? রুহি এগিয়ে গিয়ে ইরাদকে বললো,,
-আপনাকে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে।
-ধন্যবাদ
এই বলেই মোবাইলটা রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
-এটা আপনার নিউ ফোন,, এত দিন বাসায় থাকতেন তখন ফোন নিতে চাননি আমি কিছু বলিনি,, কিন্তু এখন নিতে হবে।
-ফোন দিয়ে কি করবো?
– আমার সাথে কথা বলবেন।
কথাটা শুনে রুহি ইরাদের দিকে তাকালো
ইরাদ নিজের কথায় নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে বলে
-আই মিন বাসার বাইরে যাচ্ছি দরকার হতেই পারে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
রুহি মুচকি হাসলো কথাটা ওর ভালো লেগেছে।

গাড়িতে বসে আছে ইরাদ আর রুহি,,
রুহি মনে মনে বলছে,, মানুষ না চাইতেও কত কম্পলিমেন্ট দিতো আমাকে আর এদিকে উনি আমার দিকে ঠিক মত তাকিয়েও দেখেনা। কঠিন একটা। রুহি একটু একটু রাগ ইরাদ বুঝতে পারছে কিন্তু কারণটা ধরতে পারছেনা ঠিকভাবে।
তবে ড্রাইভারের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করাটাই ইরাদের কাছে ঠিক মনে হলো,,

শাহিনদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো ইরাদকে অনেক পছন্দ করে এই সুবাদে রুহিকেও তাদের পছন্দ হয়েছে অনেক, তাদের বাসায় ডিনার করে ইরাদ রুহি হেলিকপ্টারে করে মাত্র ২৮ মিনিটের মাথায় সিলেটে এসে পরলো। ঢাকার তুলনায় শ্রীমঙ্গল খুব সুন্দর,, গাছগাছালির সমারোহ,, বেশ ঠান্ডাও পরে গেছে এখানে একটা স্নিগ্ধ সুষমা ভরা পরিবেশ,, থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে,, যেন চারিদিকের সবকিছু একত্রে নতুন জুটিকে বরণ করে নিচ্ছে এবং হোটেলে ঢুকতেই ওরা স্পেশালি দুইজনকে বরণ করে নিলো। ম্যানেজার যখন বললো “ওয়েলকাম মিস্টার & মিসেস ইরাদ”
রুহির খুব ভালো লাগলো
“মিসেস ইরাদ” শব্দটা বার বার মনে হচ্ছে কানে বারি খাচ্ছিলো।
সব গুলো ফর্মালিটি কমপ্লিট করে যখন ওরা রুমে যাবে লবি থেকে তখনই ইরাদের ছোট বেলার স্কুলের বন্ধু আরিশা আর পিয়ালের সাথে দেখা হয়,, ওরা কলেজে থাকতে প্রেম করে বিয়ে করেছিলো আজ তারাও ভ্যাকেশনে এই হোটেলে উঠেছে ,, এভাবে দেখা হওয়ায় তিন জনই খুব খুশি হয়ে যায়। রুহির সাথেও পরিচয় করে নেয় আরিশা নিজে থেকেই
আরিশা-মেয়েটা কে? তোর ওয়াইফ?
রুহি- হুম
ইরাদের আগেই রুহি উত্তর দিয়ে দেয়।
আরিশা আর পিয়াল অনেক খুশি হয় খবরটা শুনে।
আরিশা- মেয়েটা অনেক মায়াবী ইরাদ।
ইরাদ- থ্যানক্স দোস্ত
পিয়াল- তোরা কোন রুমে উঠেছিস?
ইরাদ- ৫০৪ এ আর তোরা?
পিয়াল- হানিমুন সুইটে রাইট?
ইরাদ-হুম
আরিশা-তোমার নাম কি ভাবী? আর বিয়ে কবে হয়েছে?
রুহি- আমার নাম রুহি,, আজ সকালেই।
পিয়াল আরিশা একসাথেই বলে উঠে
“ওয়াও”
আরিশা শোন কিছু কথা বলার আছে এই বলেই পিয়াল একটানে সাইডে নিয়ে গেলো ওকে।
কিছুক্ষন পরে দুইজন হাসতে হাসতে বললো
পিয়াল- ইরাদ তোদের রুমটা দেখে তারপর আমরা চলে যাই কি বলিস??
ইরাদ বুঝেছে ওরা কোনো দুষ্টুমি করতে পারে কিন্তু আবার ভাবলো এখন কিই বা করবে,, মনে কিছু প্রশ্ন থাকলেও ওদের সাথে করে নিয়ে গেলো
ইরাদ- হ্যাঁ আয়।
চার জন মিলে ইরাদদের রুমে গেলো
খুব সুন্দর করে রুমটা সাজানো হয়েছে,, ফুল হোয়াইট একটা রুম,, রাউন্ড বেড,, একটা সোফা,, টিভি বার সব কিছুই আছে এখানে,, এর ওপরে রেড রোজ দিয়ে সাজানো,, একদম রোমান্টিক একটা আমেজ তৈরি হয়ে আছে,, যে কারোই নেশায় ধরে যাবে এই ঘরে আসলে।
পিয়াল ইরাদকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ও মাহিরার সাথে ইরাদের ডিভোর্স এর কথা জানতো কিন্তু রুহির ব্যাপারে কিছুই জানে না তবে এই ব্যাপারে কিছু জানতে না বরং,, আর আজকে যেহেতু ওদের ফুলসজ্জা এই রাতটা যেন সুন্দর করে কাটায় এই বুদ্ধি দিতেই মূলত ইরাদকে পিয়াল এনেছে। আর আরিশা এদিকে রুহির সাথে সোফায় বসেছে
রুহি মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে,, কারণ রুহির ডিনারের পর থেকেই মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব হচ্ছিলো
-কি হয়েছে ভাবী?
– আপু মাথাটা হালকা ঝিমঝিম করছে, দেখি উনি ফ্রী হলে একটা ফ্রেনজিট এনে খেতে হবে তাহলে ঠিক হয়ে যাবো।
-আমার কাছেই তো আছে,, পিংক মেডিসিনটা না?
-জ্বি
-দাড়াও দিচ্ছি।
রুহি আরিশার কাছ থেকে নিয়ে মেডিসিনটা খেয়ে নিলো নাম না দেখেই।
এবার আরিশা বলতে শুরু করলো
-ভাবী ইরাদকে আমরা ছোট থেকে চিনি,, ও অনেক কোমল মনের একটা ছেলে ওকে কখনো কষ্ট দিও না। ও অনেক ভালো। ভালোবেসেই মাহিরাকে ও বিয়ে করেছিলো,, মাহিরা ওকে ছেড়ে যাওয়ার পরে আমরা ভেবেছিলাম ও মনে হয় জীবনটা আর গুছাতে পারবেনা। মাহিরা তামিম নামের এক ছেলের সাথে বিবাহিত থাকা অবস্থায় পরকিয়া করতো,, এমন একটা পাগলের মত ভালোবাসে যে স্বামী তাকে রেখে। শুধু মাত্র ইরাদ ওকে সময় দিতে পারতো না দেখে।
জানো ইরাদের মুখেও এগুলো শুনিনি। মাহিরা নিজেই এই কথা ডিভোর্স এর সময় অভিযোগের সুরে বলেছিলো। মাহিরার প্রতি একটা নোংরা মনোভাব কারো হোক ইরাদ ডিভোর্স এর সময় ও এটা চায় নি,, এমন কেয়ারিং ছেলে কে ফেলে ও চলে যায়,,
যারা ওদের পার্সোনালি চিনতাম সবাই শুধু বলেছিলাম মাহিরার থেকেও যেন আল্লাহ পাক ভালো কাউকে ইরাদের জীবনে এনে দেয়। তোমাকে আল্লাহ পাক পাঠিয়েছে। তুমি ওকে অনেক ভালোবাসা দিও,, ও তোমাকে অনেক ভালো রাখবে ভাবি।
কথা গুলো শুনে রুহির কাছে ইরাদের ডিভোর্স এর ব্যাপারটা পুরো ক্লিয়ার হয়ে গেলো।
এখন তো ইরাদের ওকে দূরে ঠেলে দেওয়ার কারণটাও মাথায় ঢুকছে,, হয়তো ইরাদ ভয় পায়,, সম্পর্কের প্রতি হয়তো একটা ভয় বাসা বেধে গেছে ওর মনে। কিন্তু রুহির মনে কোনো ভয় নেই আর।
ইরাদ ভালো,, ওর মনটা ভালো।
ও কোনো অন্যায় করেনি যার ফলে ওর ওয়াইফ চলে গেছে।
বরং ওই মেয়ে না গেলে হয়তো আজকের এই ইরাদকে রুহি পেতো না।
আরিশার হাত ধরে রুহি বললো
-আমি আপনার বন্ধুকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসা দিয়ে রাখবো। ইনশাআল্লাহ অনেক যত্নে রাখবো। তার জীবনের কালো অধ্যায় গুলো ভুলিয়ে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করবো।
-শুনে অনেক খুশি হলাম,, আচ্ছা ভাবী তোমার কি ওর সাথে লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়েছিলো? নাকি ধীরে ধীরে প্রেমে পড়েছো?
-ধীরে ধীরে প্রেমে পড়েছি, আর আজকে বুঝতে পেরেছি তাকে আমি অসম্ভব পরিমাণে ভালোবাসি।
এই বলেই রুহি একটা লাজুক হাসি দিলো।
এরপর রুহি আর আরিশা ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ করে নিলো।
এদিকে পিয়াল আর ইরাদ চলে এসেছে।
আরিশা- পিয়াল সময় হয়ে গেছে এসে পরো ডার্লিং।
ইরাদ- যা যা তোর বউ ডাকছে।
পিয়াল- কাজ হইসে আরিশা?
আরিশা- একদম,, এবার চল।
পিয়াল যাওয়ার সময় ইরাদকে বেস্ট ওফ লাক বলে চলে গেলো,,
রুহি লজ্জায় একদম কুকড়ে যাচ্ছিলো পিয়াল আর আরিশায় দুষ্টুমিতে।
ওরা যাওয়ার পরে
ইরাদ রুহিকে বললো
-আপনি চেঞ্জ করে নেন
– আমি এখন চেঞ্জ করবো না একটু ঘুমাই,,
-তাহলে আমি চেঞ্জ করে আসি,, আপনি বিছানায় শুয়ে পরুন, আমি সোফায় থাকছি।
-সমস্যা নেই মাঝে কোল বালিশ দিয়ে দিচ্ছি আপনি ওপাশে শুয়ে পরুন। সোফায় শুয়ে ঘুম হবেনা ঠিক মত।
-না সমস্যা নেই।
-যা বলেছি তাই করবেন। এই বলেই রুহি গিয়ে শুয়ে পরলো।
ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসেছে রুহি কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ওপাশে মুখ করে,, ইরাদ ওর দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল, এমন একটা পরিবেশে এই মেয়েটার সাথে কেমন যেন লাগছে,, মনের ভিতর আনচান করছে। রুহির প্রতি ওর একটা মায়া কাজ করে এটা ইরাদ বুঝে কিন্তু আজকে ওকে বার বার তাকিয়ে দেখতেই ইচ্ছে করছে সেই সকাল থেকেই, বেশ করে বিকেলে সবটা শুনার পর থেকেই মেয়েটার প্রতি যত্ন আর টানটা চক্রবৃদ্ধি আকাড়ে যেন প্রতি সেকেন্ডে বেড়ে চলছে,,
মনে মনে নিজেই নিজেকে বলা শুরু করলো
“এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হচ্ছে না ইরাদ,, এভাবে মেয়েটাকে দেখা ঠিক না। রাতে যখন ও রেডি হয়ে এসেছিলো ঠিক সোকেজের গ্লাসে রুহিকেই দেখে যাচ্ছিলি তুই,, মেয়েটা যদি বুঝতে পারে তোকে কি ভাববে? বিশ্বাস করেছে তোকে আর তুই কি না ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখিস,, কিন্তু না চাইতেই তো এমন হচ্ছে ইরাদ তো ইচ্ছে করে এমন করেনা”
এসব ভাবতে ভাবতেই মনে হলো
” অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে ঘুমাই এখন বাকিটা কাল ভাববো”
লাইট অফ করে ড্রিমলাইট অন করে দিলো ইরাদ,, বিছানায় গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই বুকে নরম কিছু অনুভব করতে পারলো ইরাদ তাকিয়ে দেখলো
রুহি হাত রেখেছে ওর বুকে
আর ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,, ড্রিমলাইটের আবছা আলোতে রুহির চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
ইরাদ কিছু না বলে আস্তে করে হাতটা সরিয়ে দিয়ে অন্য পাশে ফিরতে চেষ্টা করে তখন রুহি ওকে হাত দিয়ে টেনে ধরে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
ঠোঁট ভেটকিয়ে জিজ্ঞেস করে
– দেখতে ভাল্লাগেনা আমাকে? অন্য দিকে ফিরছো কেন? বলো?
রুহির কথা শুনে ইরাদ ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
চোখ বড় বড় করে তাকায় ওর দিকে…

(কেমন হচ্ছে জানাবেন, চলবে…)

অধিকার পর্ব-০৬

0

#অধিকার #ষষ্ঠ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

“আমি আবিশা সিকদার রুহি,, চিটাগং শহরে আমার জন্ম,, মা বাবার একমাত্র সন্তান ছিলাম তারা আমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসতেন,, কিন্তু এই সুখ বেশি দিন আমার সহ্য হয়নি,, আমার যখন ৯ বছর বয়স তখনই মা বাবা এক্সিডেন্টে মারা যায়,,
কিন্তু পুরো বংশে প্রথম মেয়ে আমি এবং শেষ পর্যন্ত আমার বাবা চাচাদের কারো ঘরেই আর কোনো মেয়ে সন্তান জন্ম হয়নি।
এইকারনে সবার অনেক আদরের ছিলাম।
দাদা দাদুর আর বড় চাচা-চাচির চোখের মণি ছিলাম সব সময়।
আমার দাদা সেই এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন আর জমিদার পরিবারের হওয়ার সুবাদে দাদা চাইতেন না আমরা কখনো আলাদা থাকি,, আমাদের সব ডিসিশন উনিই নিতেন,, এইজন্য সবার বাড়ি একদম পাশাপাশি ছিলো। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন বড় চাচার ছেলে সাকিব (ও আমার ৫ বছরের বড় ছিলো) ওকে চাচির বোনের কাছে লান্ডানে পড়তে পাঠিয়ে দিয়েছিলো,, ওর যাওয়ায় মত ছিলো না তাই ও অভিমানে বলেছিলো আর কখনো দেশে ফিরবে না। দাদু মারা যাওয়ার ১বছর পরে প্রায় ৬ মাস আগে,, সে হঠাৎ দেশে ফিরে আসে কারণ বড় চাচুর ও হার্টের অসুখ ধরা পরেছিলো,,

.

সেদিন মাত্র আমার ফাইনাল প্রফের লাস্ট এক্সাম শেষ হয়েছিলো,, আমি খুব খুশি ছিলাম,, এই এক্সামটা নিয়ে সব গুলো অনেক ভালো হয়েছিলো,
বাসায় ফিরে দাদুমনির খোঁজ করতেই কাজের মেয়েটা বলে দাদু নাকি বড় চাচার বাসায় গিয়েছে,, আমিও একপ্রকার দৌড়ে চাচুর বাসায় গিয়েছিলাম,,
তখনই বড় হওয়ার পর সাকিব প্রথম আমাকে দেখে ,, স্বাভাবিক ভাবেই কথা বার্তা হয় তার সাথে আমার সাথে তার। আমি বুঝতে পারিনি ওর মনে আমাকে নিয়ে কি রকম চিন্তা ভাবনা কাজ করছে?
সাকিব সবার বড় ছিলো আর দূরে থাকতো বিধায় আমাদের কারো সাথেই তার তেমন ভাব হয়নি। আমি অন্যান্য কাজিনদের সাথেই বড় হওয়ার ওদের সবার আদরের ছিলাম। আমি খুব সহজে সবার সাথে মিশতে পারতাম সাকিবের সাথেও ভাব করে নিয়েছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যে সাকিবকে সবাই মিলে ঘুরিয়ে শহর দেখাই,, ও নিজে থেকেই আমাকে বলতো ঘুরতে নিয়ে যেতে আমি আর অন্যভাইরা মিলে নিতাম ওকে,,
একদিন নাস্তার টেবিলে সবাই বসা তখন দাদু আমাকে প্রতিদিনের মত খাইয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে
“সাকিব কেমন রুহি সবটা বলতো??”
“আগে তোমারা বলো চাচি কেন বলতো ভাইয়া কথা বলতে জানেনা বেশি,, তারপর উনি জেদি। উনি কত্ত ভালো জানো তোমরা?? নিজে থেকেই আমাকে বলে ঘুরতে নিয়ে যেতে,, কত কথা বলে আমার সাথে,, এমনকি আমাকে কাল ভাইয়া একটা শাড়ি ও কিনে দিয়েছে। ভাইয়া অনেক সুইট।”
আমি এই কথাটা স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলাম,, কারণ সাকিব আমার কাছে অন্য সব ভাইদের মতই ছিলো। তাকে আমি নিজের ভাই মনে করেছিলাম,, কিন্তু চাচু আমার সাথে সাকিবের বিয়ে ঠিক করে ফেলবে আমি তা ভাবতে পারিনি।
সাকিব নাকি চাচির কাছে বলেছিলো সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। এইজন্য চাচা চাচি আর দাদি সবাই খুশি হয়েছিলো,, যে আমাকে অন্য কোনো ঘরে দিতে হবেনা তাদের কোনো টেনশন থাকলো না।
বিকেলে দাদুমণি মিষ্টি সহ আমাকে এসে এই খবর শুনায় আমি হতবাক হয়ে যাই।
এমন কিছু আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি,, তখন অনেক কষ্ট হয়।

আমি সাথে সাথে চাচুর বাসায় যাই দেখি সবাই অনেক চিন্তিত, চাচু বসে আছে ডাক্তার তাকে চেক করছেন,
ডাক্তার- উনাকে কোনো রকম টেনশন দিবেন না। উনার অবস্থা ওত ভালোনা,, তাই বেশি এক্সাইটেড হওয়া উনার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে সবাই খেয়াল রাখবেন।
ডাক্তার যাওয়ার পরে শুনলাম চাচু বিয়ের প্রিপারেশন নিয়ে ভাবছিলেন কিভাবে কি করবেন এসব নিয়ে সে অসুস্থ হয়ে পরেছেন।

আমি কিছু না বলে বাসায় চলে আসি,, সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম,, যারা এতো ভালোবেসে বড় করেছে তারা সবাই আজকে অনেক খুশি কিন্তু আমি তো মন থেকে সাকিব কে নিয়ে কিছু ভাবতে পারছিনা। তখন মা কে অনেক বেশি মিস করেছিলাম,, এত জীবনে চাচা চাচি দাদা দাদি কেউ মা বাবার অভাব বুঝতে দেন নি। কিন্তু সে রাত টা আমার জন্য পাহাড়ের মত কঠিন লাগছিলো।
পরদিন থেকেই বাসায় বিয়ে বিয়ে একটা আমেজ তৈরি হয়ে গিয়েছিলো,, আমি চুপচাপ সবার সব দেখছিলাম। দাদা আমাকে অনেক ভালোবাসতো উনি চাইতেন আমি উকিল হই কিন্তু ডাক্তার হওয়া আমার স্বপ্ন ছিলো বিধায় আমাকে মেডিকেলে পড়িয়েছিলেন। আজকে উনি যদি বেচে থাকতেন তাহলে হয়তো আমাকে সাকিবের সাথে বিয়ে দিতেন না। কিন্তু আজকে কাউকেই বলতে পারছিনা। এদিকে মুটামুটি সাকিবের ফ্রেন্ড অফিসের কলিগস সবাইকেই জানানো হয়ে গেছে যে সে আমাকে বিয়ে করছে।
এনগেজমেন্ট হতে আর ৩দিন বাকি চাচু আমাকে ডেকে বলেন
– মা তোমার শরীর খারাপ? এমন লাগছে কেন আমার মেয়েটাকে? কিছুদিন ধরে?
-না, চাচু।
-চাচু না আমাকে আজকে থেকে বাবা ডাকবে।
এটা শুনে আমি কেদে উঠি।
চাচু আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আসলে?
তখন আমি চাচুকে বলি এই বিয়ে আমি করতে চাইনা।
উনি কিছুক্ষনের জন্য চুপ থাকেন
এরপর আমাকে বলেন
– করতে হবে না তাহলে, তুমি আমার মেয়ে আমার ভাইয়ের শেষ স্মৃতি। তোমার মন যদি সাকিবকে না চায় তাহলে জোর করে বিয়ে দিবো না আমরা।

সেদিন রাতেই চাচা সবাইকে বলে আমার মেয়ে এখম বিয়ে করতে চায় না,, তাই সাকিবের সাথে ওর বিয়ে টা হবেনা। তবে সাকিব বড় হয়ে গেছে ওর জন্য একটা ভালো মেয়ে দেখে আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে দিবো,,প্রথমে চাচি দ্বিধা করলেও পরে সম্মতি দিলো।
আমি খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সব ঝামেলা শেষ।
বরাবর রাতে আমি কখনো একা ঘুমাতে পারিনা,,ভয় হয় দেখে সবসময় হয় দাদা দাদু নাহয় চাচা চাচির সাথে রাতে ঘুমাতাম। সেদিন দাদুর রাতে খুব জ্বর হয়েছিলো তাই চাচিও রাতে আমাদের বাসায় থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝ রাতে তার জ্বর এত বেড়ে যায়,, যে চাচি আমাকে বলে তোমার চাচুকে ডেকে নিয়ে আসো।
চাচির কাছ থেকে চাবি নিয়ে,, রাত তখন ২ঃ৪৫ এর মত ছিলো আমি চাচুর বাসায় ঢুকে তার রু রুমেএ…”

কথাটা বলতে রুহি যেন আঁতকে উঠল,, চোখে মুখে, স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছে ইরাদ।
রুহির হাত কাপছে…
ইরাদ নিজের অজান্তেই ওর হাত আলতোভাবে ধরে বলল
-কি হয়েছে তারপর??
-রুমে গিয়ে দেখি সাকিব চাচুকে বালিশ চাপা দিয়ে বলছে “আমি রুহিকে চাইসি আপনি দিলেন না,, এখন এই দুনিয়ায় আপনার আর দরকার নাই,, আমার চাওয়া পূরণ নাহলে সবার পরিনতি এমন হবে”
চোখেমুখে তার হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। আমার চাচুর হাত পা তখন নিথর হয়ে পরে আছে আলরেডি।
আমি সামনে গিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই,, আর চাচুর পালস চেক করে দেখি উনি আর আমাদের মাঝে নেই। তখনই উঠে সাকিবের গালে একটা চড় লাগিয়ে কাদতে কাদতে বলি ” তুমি মানুষ নাকি পশু?? এটা কি করল তুমি?? আমার চাচু…”
“আমি তোকে ভালোবাসি তোর জন্য অমানুষ হইসি”
“আমি সবাইকে এখনি বলে দিবো, তোকে পুলিশে দিবো দ্বারা”

তখন ও সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরে এরপর আমার মুখ বেধে টেনে হিচড়ে গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে যায়।

আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি এরপর যখন হুস ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখি একটা রুমে আমি চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় বন্দী। রুমটা একদম পর্দা দিয়ে বন্ধ,, কেউ নেই আশেপাশে। অনেক চিতকার করেও লাভ হলোনা।
একে তো নিজের চাচাকে হারানোর দুঃখ ২য়ত সেই খারাপ লোকটাকে শাস্তি দিতে না পারার দুঃখ।
অনেকক্ষণ পরে সেই জানোয়ার টা আসলো।
এতক্ষণে আমার শরীরে কোনো শক্তি আর নেই আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি নিজেকে চেয়ার থেকে মুক্ত করার কিন্তু পারিনি।
সামনে এসে সাকিব আমাকে বলে
“বাসায় মিথ্যা একটা চিঠি দেখিয়েছি আর বলেছি তুই বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালিয়ে গেছিস,, আর এটা পড়ে আব্বু মরে গেসে” সবাই তোকে আর দেখতেও চাচ্ছেনা। দে হেইট ইউ রুহি৷ আর তোর কথা কেউ মানবেনা কারণ আমাকে তুই বিয়ে করতে চাস না এইজন্য বানিয়ে কিছু বলতেই পারিস। এরকম অনেক হিন্ট আমি ২দিনে সবাইকে দিয়ে দিসি। ২দিন তোকে আমি প্যাথেটিন দিয়ে ফেলে রাখসিলাম। নাও মাই ওয়ার্ক ইস ডান। তাই এখন তোর একটাই ওয়ে আছে আমাকে বিয়ে করে চল বাসায় আমি বলবো তোকে বুঝিয়ে নিয়ে আসছি,, তোকে যেন মেনে নেয়।”
ও এটা বলার সাথে সাথে আমি ওর মুখে থুথু দেই এরপর ও আমাকে অনেক অনেক মারে।
এভাবে আরো এক দিন কেটে যায়।
আমি বুঝতে পারি আমার শরীরে আর কোনো শক্তি নেই। পরদিন একই সময় ও আবার আসে,, আজকে ওর চেহারায় হাসি।
রুমে ঢুকে আমাকে বলে,
“তুই এভাবে না হোক অন্যভাবেই নাহয় আমার হবি,, আজকে তোর সাথে বাসর করে ফেলবো তারপর বিয়ে না করে কই যাবি? আর বিয়ে না করলে নাই করলি আমার সমস্যা নাই”
কথাটা শুনে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে যায় আর আমার মাথায় বুদ্ধি আসে কিন্তু গলা দিয়ে কথা বলার শক্তি নেই,, আমি ওকে আস্তে আস্তে বলি “দাড়াও আমি তোমাকে বিয়ে করবো”
এটা শুনে ও সাথে সাথে হাটু গেড়ে আমার সামনে এসে বসে
“কি বললে??”
“বিয়ে করবো তোমাকে এভাবে কিছু করোনা প্লিজ”
ওর চোখ চকচক করছে খুশিতে।
“কখন করবি?”
“আমাকে একটু সুস্থ হয়ে দাও তারপর”
ও খুশি হয়ে আমাকে খেতে দিলো,,আমি খেয়ে ওকে হাসি মুখে কিছু ভিটামিন এর নাম দিলাম আমাকে ওগুলো ও এনে দিলো।
আমি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম ওকে আমার টেকনিকালি হ্যান্ডেল করতে হবে। তাই ঠিক মত খেয়ে আমি সুস্থ হই। এরপর ও বলে
চল বিয়ে করি সেদিন প্রথম আমি বেড় হই এতদিন পরে,, আশেপাশের সব অচেনা মানুষ, পরিবেশ।
কিছুক্ষণ পর দেখি কাজি অফিস,,
যখন ঢুকতে যাবো আমরা তখন দেখি রাস্তার পাশে ইট রাখা অনেক গুলো একটা হাতে তুলে সাহস করে নিয়ে সাকিবের মাথায় আঘাত করি।
এরপর ও সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।
ওর পকেট থেকে হাতিয়ে যা কিছু টাকা পাই তা নিয়ে আমি পালিয়ে যাই।
সব কিছু দেখে আমি অবাক আমাকে শিফট করে রাজশাহী জেলাতে এনে ফেলেছে। সেসময় ঢাকার ট্রেন ছিলো,, আমি উঠে পরি কিছু না বুঝেই। কারণ সাকিব যদি এসে পরে তাহলে আমাকে ও শেষ করে দিবে।
তারপর সেদিন রাতেই ঢাকা আসি আমি। কিন্তু রাস্তায় খারাপ ছেলেরা আমাকে বিরক্ত করছিলো,, আমি এতটা সময় বৃষ্টি তে ভিজার ফলে জ্বর হয়ে যায়। আর তাদের ভয়ে দৌড়াতে থাকি,,তখনই আপনার বাসার দিকে চোখ পরে,, দেখি কোনো দাড়োয়ান ছিলো না। আমি বাচার জন্য ভিতরে ঢুকে পরি,, আর আপনি গেইট খুলতেই কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে যাই,, আমার জীবন টায় আমি শুধু হারিয়েই এসেছি সবকিছু তারপরেও মেনে নিয়েছিলাম,, আর যখন সাকিব আসে তখন আর ভালো কিছুই হয়নি আমার সাথে। আমি জানিনা আমার কি হবে এই জীবন এখন অর্থহীন।”

পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ জানালা দিয়ে রুহির ওপরে পরছে ও নিচের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিলো,, কতটা অসহায় লাগছে ওকে,,মনের কষ্টে হু হু করে কাদে চলছে ও,,

আর রুহির জীবন বৃত্তান্ত শুনে ইরাদের কলিজায় লাগছে। মেয়েটার চোখের পানি ওর সহ্য হচ্ছেনা।
কেন যেন ইরাদের ওকে অনেক আপন লাগছে,, নিজে থেকেই ইরাদ রুহিকে জড়িয়ে ধরলো
-ভয় পেয়ো না, আমি আছি। আর কেউ কখনো তোমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না কোনোদিন।
কান্না করোনা।
রুহি আস্থা পাচ্ছে, পরম আস্থা পাচ্ছে ইরাদের বুকে,,
চোখ বুঝে ও একটা শান্তি পাচ্ছে।
দুই জন আষ্ঠেপৃষ্ঠে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,, রুহির ইচ্ছে করছে সারাজীবন এই বুকে থেকেই কাটিয়ে দিতে পারবে ও।

(চলবে..)

অধিকার পর্ব-০৫

0

#অধিকার #পঞ্চম_প্রহর

হুট করেই মেয়েটা আমাকে চেপে ধরে গালে একটা কিস করবে তাও শপিং মলে এত মানুষের ভিড়ে,, এটা আমি ভাবতেই পারিনি কখনো।
কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু হওয়াতে আমি চমকে উঠি।
এবং এতেও শেষ না,,
আমাকে কিস করে
“আই লাভ ইউ মাই হাব্বি ইউ আর ডা বেস্ট”
বলে জড়িয়ে ধরে রেখেছে রুহি।
পাব্লিক প্লেসে সব মানুষের নজর আমাদের ২জনের দিকেই পরে আছে।
মেয়েটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো?
কি থেকে কি করছে আর কিই বা বলছে এসব?
পরক্ষণেই মনে পড়লো হতে পারে কাউকে দেখানোর জন্য এমন করলো কি না?
তাকে এত গুলো মানুষের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করে,,
আমি নিজেকে তার বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে তাকে দাড় করালাম আমার সামনে,,
পাশ থেকে একটা ছেলে রুহির দিকে তাকিয়ে সামনে এসে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-ওহহ,, ফাইনালি বিয়ে করেই ফেলেছো?
আমার এক হাত পেচিয়ে ধরে রুহি বললো
-হুম, এমন চার্মিং একটা ছেলে দেখে যে কেউ পাগল হয়ে বিয়ে করবে,, আমিও করে ফেললাম।
-তো এই ড্রেসে কেন? জামাই এমন নিরামিষ ভাবে রাখে তোমাকে?
-না, আমরা একটু আগে কোর্ট ম্যারেজ করেছি।
দেখেছো কত গুলো শপিং ব্যাগ আমার উনার হাতে? এগুলো আমার জন্য করেছে মাত্র আরো বাকি আছে। বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিলো মেয়েটা।
তার কথা শুনে কেমন যেন রাগ হয়ে গেলো ছেলেটা মুহুর্তের মধ্যেই,, আর আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছেলেটা যেন স্ক্যান করলো,, তারপর কিছু না বলেই চলে গেলো,,
সে যাওয়া তে যেন রুহি হাফ ছেড়ে বাচলো।
এবার আমার হাত ছেড়ে সে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখি,,
আমার কোম্পানির বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর মিঃ আসাদ সাহেব এগিয়ে আসলো,
পেছনে তার স্ত্রী আর বড় ছেলে শাহিন ও তার স্ত্রী উপস্থিত হাতে অনেক গুলো ব্যাগ।
কিছুমাস আগেই তার ছেলের বিয়ে হয়েছে,, হয়তো পারিবারিক সময় কাটানোর জন্য সবাই একত্রে বেড়িয়েছে। এমন সময় তাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম কিছু শুনে ফেললেন কি না?
তিনি এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,,
-কংগ্রাচুলেশনস ইরাদ। আই এম সো হ্যাপি ফর ইউ,,
ইরাদ টু বি অনেস্ট তোমার ডিভোর্স নিয়ে আমাদের অনেক মন খারাপ ছিলো,, প
যেই ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো।
তিনি সব শুনে ফেলেছেন।
আমার ডিভোর্স হওয়ার কথা সবাই জানতো, এতে সবার মনই খারাপ হয়েছিলো বেশ করে আমার ম্যানেজারের। তার মাধ্যমেই আসাদ সাহেবের সাথে আমার পরিচয় হয়।
এখন উনি মুরুব্বী মানুষ তাকে এত কাহিনী খুলে বলার মতন ও না। আর একটা মেয়ে একটা ব্যাচেলর ছেলের সাথে থাকে এটা শুনে খারাপ ভাববে যে কেউ। মাহিরা যাওয়ার পরে থেকে বিজনেসের অবস্থা ও তো খারাপ হয়ে গেছে উনি যদি এসব শুনে আমার সাথে ডিল ক্যান্সেল করে দেয় আমার অবস্থা মাটিতে পরে যাবে।
সব মিলিয়ে মনে হলো যেই নাটকটা একটু আগে রুহি করেছে সেটা আমারও কন্টিনিউ করতে হবে।
-থ্যানক্স এ লট আংকেল,
এবার রুহি আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে,,
আন্টি রুহিকে জড়িয়ে ধরে পাশ থেকে বললো, কি সুন্দর একটা বউ মাশাল্লাহ,, আমার মনটাই ভরে গেলো ওকে দেখে,, আজকে মাত্র বিয়ে করেছো বাবা আমাদের তরফ থেকে তো একটা গিফট পাওনা রইলো।
– না, আন্টি আমাদের জন্য দুয়া করবেন প্লিজ তাহলেই হবে।
-না না, তোমার আন্টি একদম ঠিক বলেছেন। তোমাদের হানিমুন ট্রিপটা আমাদের তরফ থেকে গিফট রইলো।
শাহিন সিলেটের ওই রিসোর্টটার নাম যেন কি? তুমি আর বউমা ঘুরে আসলে যে?
-বাবা গ্রেন্ড সুলতান।
-তোমার ভাইয়ার জন্য ১ সপ্তাহের বুকিং দিয়ে দাও পেমেন্ট সহ।
আংকেলের কথা শুনে শাহিন কল দিয়ে দিলো
এদিকে আমি আংকেল কে মানা করাতেও উনি আমার কথা শুনলেন না।
বরং বললেন বিয়ে হয়েছে বিধায় আগামী এক মাস পরে যাতে ব্যাবসার কাজে হাত দেই। এই একমাস উনি কোনো কাজের কথা শুনতে চান না আমার মুখে,,
শাহিন- আব্বু আজকে রাতের বুকিং দিয়ে দিলাম।
মিঃ আসাদ- গ্রেট জব আর আমাদের প্রাইভেট জেটটা আজকে রাতে ইরাদ আর ওর ওয়াইফকে দিয়ে আসুক। কি বলো মিসেস?
রুনিমা বেগম- একদম ঠিক বলেছেন এটাই ভালো হবে।
এখন এই মুশকিল থেকে কোনো ভাবেই বেড় হওয়ার রাস্তা আমার সামনে আর নেই।
রুহির দিকে তাকিয়ে দেখি সে আসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এরপর আন্টি রুহিকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে শাড়ি টুকটাক গহনা কিনতে হেল্প করলো,,
রুহি কিছুই নিতে চাচ্ছিলো না, সেই প্রথম শপিংমল এ আসার পর থেকেই,,
কিন্তু আন্টির সামনে তো এমন করলে তারা বুঝে যাবে,, তাই তাকে ইশারায় রিকুয়েষ্ট করে বললাম যেন মানা না করে,,
সব শেষে গাড়ীতে এসে বসলাম আমি আর রুহি, এতক্ষনে যেন আমরা হাফ ছেড়ে বাচলাম।
কিছু ক্ষন নিরবতার পর দুইজনই একসাথে সরি বলে উঠি, আবার ১ মিনিটের মতো ২ জন চুপ থাকার পর আবার একসাথেই বলি
“আমি আসলে….”
এবার রুহি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কান ধরে, আর আমি বলি “আমাকে মাফ করে দেন আসলে আপনার কথা তারা শুনে ফেলে আর তিনি আমার ইনভেস্টর তাই আমি…
রুহি- আপনার সরি বলতে হবেনা,, আমি বুঝতে পেরেছি।
ইরাদ- আচ্ছা আপনি কি আমার সাথে যাবেন সিলেটে? আমি তাদেরকে মানা করতে পারিনি।
রুহি- হুম যাবো,, এটা কোনো ব্যাপার না। আর আজকে আপনি ওই ছেলেটার সামনে চুপ থেকে আমার অনেক উপকার করেছেন,, আমি আপনার কৃতজ্ঞতা কখনো ভুলবো না। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ইরাদ কিছু বলছেনা, কারণ ওর এখন অনেক টেনশন লাগছে অফিসে সবাই জানাজানি হলে কিরকম হবে? মুলত ইরাদ জানে কিছুদিন পরেই মেয়েটা চলে যাবে,, তখন মানুষের সামনে কি বলবে ইরাদ, তাই বুঝে পাচ্ছেনা।
রুহি ভাবছে ইরাদকে তার সত্যিটা আজ জানিয়ে দিতে হবে। তার জীবনের যে অনেক গুলো লুকানো সত্যি আছে যেগুলো এই মানুষটার জানা দরকার,,
আজকে রুহি জানতে পেরেছে ইরাদের ডিভোর্সই তার ম্লান হওয়ার পেছনে দ্বায়ী।
ইরাদ এখন সিংগেল, তার জীবনে কেউ নেই, রুহির ভালো লাগছে ইরাদকে। কিছুদিন থেকেই ইরাদের প্রতি তার একটা আকর্ষণ কাজ করছে,, সে বুঝতে পারছেনা, এমন কেন হচ্ছে কিন্তু আজকে যখন সবার সামনে নিজেকে ইরাদের স্ত্রী বলেছে এরপর থেকেই মনে একপ্রকার শান্তি অনুভব করছে রুহি।
ইরাদকে স্পর্শ করে তার যেমন অনুভূতি হয়েছে তা যেন স্বর্গীয়। এরকম শিহরিত আগে কখনো রুহি হয়নি। আজ এমন কিছু ও করে বসবে তা নিজেও জানতো না,, কিন্তু আবির?আজ আবিরকে এটা দেখানো অনেক বেশি দরকার ছিলো। তবে ইরাদ কি রাগ হয়েছে ওর ওপরে? রাগ হতেও পারে। রুহি তো ইরকদের কোনো ফিলিংস

.

গাড়ি চলছে এদিকে ২ জনই চুপ করে আছে,, রুহি আজ ভেবে ফেলেছে এই ছেলেটাকে নিজের মনের জমানো সব দুঃখ কষ্ট, মান অভিমান সব কিছু বলে দিবে। ইরাদের বাড়িতে রুহি এসেছে প্রায় ১০ দিনের মত হয়ে গেছে। এই কয়দিনে ইরাদের সাথে তার দরকারী কথা বার্তা হলেও ইরাদ তাকে অনেক সম্মান করে,, তার জ্বর সাড়া পর্যন্ত অনেক বেশি যত্ন করে রেখেছে। তাকে সব কিছু থেকে আগলে রেখেছে।
এতদিন পরে আজ ইরাদের জোরাজোরিতে রুহি শপিং এর উদ্দেশ্য নিয়ে ওর সাথে বের হয়েছে। আর এরই মাঝে এত সব ঘটে গেলো। দুনিয়া অনেক ছোট,, রুহি চায় না বাইরের মানুষের থেকে ইরাদ সব কিছু জেনে নেক। রুহি তার সবটুকু দিয়ে ইরাদকে বিশ্বাস করে।

বাড়িতে আসার পরে ইরাদের ফোনে মেসেজ আসলো আজ রাতে ১১টার দিকে তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।
-রুহি, আপনার রুমে আলমারির ওপরে লাগেজ আছে সেটা নামিয়ে প্যাকিং করে নিবেন
আমারটা আমি করে নিচ্ছি। ১১ টায় হেলিকপ্টার এ উঠবো,, ১২টার মধ্যে আল্লাহ চাইলে পৌঁছে যাবো,,
-ঠিক আছে।

রুহি জামা কাপড় বের করে সব সাজিয়ে রেখেছে বিছানায়,,
ইরাদ ওকে একজন মেয়ে মানুষের দরকারী সব সামগ্রী কিনে দিয়েছে আরও কতদিন আগেই তবে আজকে একদম নতুন বউদের মত সব শপিং হয়েছে তার।
সব কিছু তো ভালোই লাগছে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখনই যখন রুহি তাকিয়ে দেখে এত ওপরে রাখা লাগেজ,,এটা সে নামাবে কিভাবে?
একটা চেয়ার নিয়ে সে চেষ্টায় লেগে গেলো লাগেজ নামানোর,, আর নিজের সাথে নিজেই কথা বলা শুরু করে দিলো….

.

ইরাদের কাপড় প্যাক করা শেষ,,আর সে ভেবে ফেলেছে যার যা ভাবার ভাবুক,, তার জীবনে আগে অনেক মানুষকে মূল্য দিয়েছে, কিন্তু এখন তো রুহি মেয়েটা ছাড়া তার আগে পিছে কেউ নেই, এই আহ্লাদী মেয়েটার জন্য ইরাদের একটা টান কাজ করে মনের অজান্তে,, যেটা ইরাদও জানে না,, তার মায়ের একটা কথা মনে করেই মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো ইরাদের মা সবসময় বলতেন ” কাউকে খুশি রাখতে গিয়ে যদি নিজের একটু সমঝোতা করতে হয় তাহলে পিছপা হবেনা বাবা” আর মানুষের কথার তোয়াক্কা ইরাদ আর করবেনা তাই রুহি যতদিন থাকবে সে থাকুক যাকে যা ইচ্ছে বলুক। ইরাদ এটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করবেনা। মেয়েটার কোনো সমস্যা আছে দেখেই সে এমন করে।
হঠাৎ মনে হলো রুহির লাগেজ যেই উপরে এটা ও নামাতে পারবেইনা কোনো ভাবে। নিচে গিয়ে রুহির রুমের পাশে দাড়াতেই ইরাদ শুনতে পেলো রুহি একা একা কথা বলছে…

“কেন যে রুহি তুই ছোট বেলায় কমপ্ল্যান খেতি না, আজকে দেখে নে এই তোর পরিনতি ওপর থেকে লাগেজটাও নামাতে পারছিস না। চেষ্টা কর রুহি চেষ্টা কর। এইটুকুর জন্য যদি ইরাদকে ডাক দিতে হয়, তোর কি মান সম্মান থাকবে কিছু?”
খুব করে সে চেষ্টা করছে কিন্তু ডাবল তাকের সেই আলমারীর ওপরে শুধু মাত্র ইরাদের মত লম্বা ছেলেরই হাত যাবে,,
ইরাদ রুহির কান্ডকারখানা দেখে হাসে প্রতিদিন,,
আজকেও মিটিমিটি হাসছে ইরাদ, হঠাৎ করেই রুহির পা পিছলে পরে যেতে নেয় তখনই ইরাদের কোলে এসে পরে। এবার সে ভয়ে কুঁকড়ে ইরাদকে ঝাপটে ধরে রেখেছে। রুহি চোখ না খুলেও বুঝে গেছে এটা নিশ্চয়ই ইরাদ,, ওর লাইফ সেভিয়ার। কলিজার ভিতর একদম ধকধক করছে রুহির,,
যে ওকে সব কষ্ট থেকে আগলে রেখেছে সে এখনো ওকে ব্যাথা পেতে দেয়নি এটা ও জানে আর এই হাতের স্পর্শ প্রতিবার ওকে শিহরিত করে তোলে। ও এই হাতের স্পর্শ চিনে গেছে, ওর অন্তর পর্যন্ত এই স্পর্শ গিয়ে নিজের দাগ কেটে রেখে যায়।

ইরাদ – এখন চোখ খুলতে পারেন। আর আমাকে ডাক দিলে আপনার মান সম্মান চলে যেত না।
রুহি ইরাদের কোলে থেকেই বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলেছে,,
ইরাদ- এখন মন খারাপ করতে হবেনা আমি লাগেজ নামিয়ে দিচ্ছি,, চুপ করে বসুন আপনি।
এই বলে রুহিকে কোল থেকে নামিয়ে খাটের পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো ইরাদ,,
রুহি এই মুহুর্ত গুলো অনেক বেশি ইঞ্জয় করে।
ইরাদের শাসন গুলো ওর অনেক ভালো লাগে।
২জন মিলে রুহির লাগেজ প্যাক করে ফেলেছে।
-রুহি আজকে কিন্তু আসাদ আংকেলের বাসায় ডিনার করতে হবে, তাদের বাসায়ই হেলি প্যাড আছে সেখান থেকেই একবারে সিলেটে চলে যাবো আমরা।
-ঠিক আছে। কিন্তু আপনাকে কিছু কথা বলার আছে আমার অতীত নিয়ে।
আমি আজকে আমার এই ২৩ বছর জীবনের কালো অধ্যায় গুলো আপনার কাছে তুলে ধরতে চাই।

#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

অধিকার পর্ব-০৪

0

#অধিকার
#চতুর্থ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

আমি মানুষ চিনতে কাচা হলে ও,, এই মেয়েটার একটা জিনিস মনে হয় বুঝতে পারছি,, সে ভিষণ পরিমাণে আহ্লাদী। তার কথা বলা, আচার আচরণে, ভাব ভংগিমায় তা স্পষ্ট ভাবেই ফুটে উঠেছে। বেশ করে তার বর্তমান আচরণ গুলো দেখলে যে কেউ এটা বলতে বাধ্য হবে,,
.
ইরাদ- দুপুরে খেয়েছেন?
ঘুমো ঘুমো কন্ঠে উত্তর দিলো,
রুহি- উহুম।
-ঠিক বুঝতে পারছি না।
-দুপুরে খাইনিইইইইইই
-কেন?
-ঘুমি দিবো তাই
-খেয়ে ঘুমান।
-উহুম,পরে খাবো। ঘুমাই ইট্টু খানি,,
এই বলেই মেয়েটা আবার ব্ল্যাংকেট মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো,,
আমি ঘর থেকে বেড় হয়ে গেলাম, একটু হাসি পেলো তার এমন কান্ড দেখে।

.

আমার ঘরে এসে শুয়ে আছি,, খুব ইচ্ছে করছে মাহিরাকে দেখতে। কিন্তু সে যেদিন ডিভোর্স পেপারস দিয়েছিলো সেদিন আমি এতটাই ভেঙে পরেছিলাম যে আত্নহত্যার মত জঘন্যতম অপরাধ ও করতে চলে গিয়েছিলাম। তখন যদি আব্দুল্লাহ দাদাভাই আর সুরাইয়া দাদু উপস্থিত না থাকতেন বাসায়,, তাহলে হয়তো আমি মরেই যেতাম।
সেদিনই তারা মাহিরার সব গুলো ছবি তুলে স্টোর রুমে রেখে দিয়েছিলো,, আর আমার মোবাইল থেকেও সব ডিলিট করিয়ে দিয়েছিলো। আমি পাগলের মত হাউমাউ করে শুধু কেদেছিলাম। কলিজাটা ফেটে যাচ্ছিলো আমার।
আচ্ছা ভালোবাসার মানুষ হারালে কি অনেক কষ্ট হয়? নাকি আমারই এমন লাগে?
এর থেকে কি মরে গেলে কষ্ট কম লাগে?
এখন অনেক বেশি খারাপ লাগছে এখন,
কত দিন হয়ে গেলো মাহিরার ঘুমন্ত মুখটা দেখিনা.. কত দিন হয়ে গেলো মাহিরার সাথে কথা হয়না..
আচ্ছা আমি কি আর কোনোদিন মাহিরার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পারবো না??
কখনো কি আমরা আর একসাথে পাশাপাশি বসে একান্ত সময় কাটাতে পারবো না??
কিন্তু আমিতো এখন আর তার আপন না। সে তো আর আমার কেউ না। আমি তার জন্য পরপুরুষ। সে আমার জন্য পরনারী। আমরা অনেক অনেক দূরের। আর কখনো এই জনমে আমরা এক হতে পারবো না। আচ্ছা আমার মধ্যে কি সমস্যা ছিলো?? আমি বাবা হতে পারবো না এটা জানার আগেই আমার বউটা আমাকে রেখে অন্য জনকে তার মন দিয়ে ফেলেছিল..
হয়তো আমি যে তাকে কতটা ভালোবাসি এটা বুঝাতেই পারিনি।
হয়তো তামিম আমার চেয়ে বেশি তাকে বুঝতে পারে।
কিন্তু আমি জানি, আমার থেকে বেশি তামিম তাকে ভালোবাসতে পারেনা। কারণ আমার ভালোবাসা ছিলো সবার মত ছিলো না। আমার ভালোবাসা ছিলো নিখাঁদ। আমি চাই মাহিরা সুখী হোক।
আমার মন থেকে তাকে আমি আজও বেড় করতে পারছিনা। যদিও আমি জানি সে আমাকে ধোকা দিয়েছে। আমার তাকে ভালোবাসা উচিত না।

আচ্ছা আমি কি একবার তাকে একটা ফেইক আইডি খুলে দেখবো? আমার যে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে ওকে..
একবার দেখতে তো ক্ষতি নেই।
নাকি আমার অবস্থা এমন হয়ে যাবে যে দেখলে আবার তার কন্ঠ শুনতে ইচ্ছা করবে?
তখন কি করবো? আমি এই ৩ মাসে একটা বার ও তো মাহিরার সাথে কথা বলিনি অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। এমন করলে আমার হবেনা। নিজেকে বুঝিয়ে রাখতেই হবে। মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে,,
পুরুষ মানুষের তো কাদতে হয়না, আমিও কাদবো না,, তবে ২দিন ধরে যে ব্যাস্ততা ভর করেছে তা আমার জন্য ভালো হয়েছে।

.

কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছি আমার খেয়াল আসছে না,, মাত্র চোখ খুললাম।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ৯টা বাজে।
মেয়েটা খেয়েছে কি না কে জানে? একবার দেখে আসি,, অসুস্থ মানুষ।
নিচে এসে তার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই দেখি সে তার বেডরুমে বসে নামাজ পড়ছে,,
কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে! হু হু করে মোনাজাতের সময় কি যে কান্না করছে,, একদম কাল রাতের মত কান্না,,
মনে হচ্ছে তার মনেও না বলা একটা কষ্ট আছে, না বলা অভিযোগ নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছে,,
তার মনেও একটা ঝড় আছে, যেই ঝড়কে সে কোনো মতে দমিয়ে রেখেছে।
নামাজ শেষ করে সে চোখ মুখ মুছে উঠে আমার সাথে চোখাচোখি হতেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো, মনে হলো এইমাত্র একটা হাসির মুখোশ সে পরে নিলো।
আমি তাকিয়ে বললাম
– ওড়না দিয়ে কেন নামাজ পড়লেন?
ওয়ারড্রোবের ২য় ড্রওয়ারেই জায়নামাজ আছে।
-জ্বি, আমি জানতাম না তাই।
-আচ্ছা, দুপুরে তো খান নি?
-ওপস, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম খাওয়ার কথা।
-মানুষ খাওয়ার কথা ও ভুলে যায়?
-হুম, অনেক সময় মানুষ নিজের অসত্বিত্ত ও ভুলে যায়। সেই তুলনায় খাওয়ার কথা ভুলে যাওয়া বড় ব্যাপার না।
কথাটা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো সে।
আসলেও তো কথা টা ঠিক। আমি তো নিজেই ভুক্তভোগী।
তারপর আমাকে আবার কিছু বলতে না দিয়ে সে নিজেই বলল
-চলুন এখন খেতে আসেন।
অনেক দেরী হয়ে গেছে।
দুপুরে তো ঠিক মত খান নি।
আর আমিই বা যা দিয়েছি
এও কোনো খাবার দুপুরের??
এর মধ্যে আবার অর্ধেক খেয়েছেন.. টিফিন বক্স দেখে তো আমার একদম রাগই লাগছিলো। কিন্তু কি করার?
তখন তো আপনি ঘুমি দিচ্ছিলেন,,

এত গুলো কথা বলতে বলতে সে আমার আগে আগে ডাইনিং এ চলে এসেছে।
আমি মুচকি হাসছি।
তার কথা শুনে,, যে কোনো মানুষের মায়া কাজ করবে,,
আমার যথেষ্ট কিউট লাগছে একে।
ইশারা দিয়ে আমাকে টেবিলে বসতে বলে প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
ইরাদ- অপনি বসুন।
রুহি- আপনি শেষ করুন তারপর খাই, আপনি আমাকে থাকতে দিয়েছেন আপনার বাসায়। এখন যদি আমি ঠিক মত আপনার যত্ন না করি কি ভাবে হবে? নাহ এমন করলে তো চলবে না।
-রুহি,, শুনুন,, খেতে বসুন।
– হ্যাঁ আগে আপনি খান,,
এবার আমি উঠে দাঁড়িয়ে সোজা রুহিকে একটানে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললাম
-চুপ,, একদম চুপ একটা কথা বলবেন না আর।
আমি অসুস্থ না, আপনি অসুস্থ আর আগে আপনি খেয়ে নেবেন এখন। তারপর মেডিসিন নিবেন এরপর আমি খাচ্ছি। আর একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো? আপনি খান নি কেন কিছু এখনো?
আর আপনি অসুস্থ, সময় মত না খেলে হবেনা।
সে অসহায় হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখে একদম পানি চলে এসেছে।
তবুও খাচ্ছেনা।
এবার আমি আর কড়া কন্ঠে কথা বললাম না
আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম
-কি হয়েছে, কাদছেন কেন? আমাকে বলুন।
-আমি আসলে নিজের হাতে খেতে পারিনা। ভালো লাগেনা। তাই খিদে পাচ্ছিলো না আর একা একা খাওয়ার অভ্যাস ও তো নেই আমার এইজন্য।
কথা গুলো বলেই বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না শুরু করে দিলো সে।
– আরে আরে কাদছেন কেনো? সরি সরি। আমি তো জানতাম না।
দেখি কোনো ভাবেই সে কান্না থামাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে পুরোনো কোনো স্মৃতি মনে পরে গেছে তার।
তাই আমি একটু ইতস্তত বোধ করলেও ভাত মেখে নিজ হাতে তার মুখের সামনে তুলে ধরলাম।
-হা করুন।
সে আমার দিকে প্রশ্ন বোধক নজরে তাকিয়ে থেকে হা করলো।
তারপর তাকে খাওয়াতে খাওয়াতে একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম
-আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
মুহুর্তেই তার চেহারা আবার ম্লান হয়ে গেলো,,
যেন তাকে এই প্রশ্ন টা জ্বরের থেকে বেশি কাবু করে ফেলেছে,,
আমি নিজেই বোকা হয়ে গেলাম তাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে,,
কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে সে আমাকে বললো
-আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ।
আমি কিছু বলতে বা মনে করতে চাইনা।
তার আওয়াজে ফুটে উঠলো তার মনের বেদনা।
তাকে খাওয়ানোর পরে ঔষধ খাইয়ে আমার সামনে বসিয়ে রেখে আমিও খেয়ে নিলাম।
মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে।
মাঝে শুধু একটা প্রশ্ন করলো আমাকে
-আচ্ছা আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
-আমার কেউ নেই আমি একা।
তার পর থেকে আবারও পিন ড্রপ সাইলেন্স।

এদিকে রুহিকে যখন ইরাদ খাইয়ে দিয়েছিলো তখন সে ভালোভাবে ইরাদকে দেখেছে,, এর আগে ওত ভালোভাবে রুহির ওকে দেখা হয়নি,,
বেশ করে ইরাদের খাওয়ার সময়ও সে ইরাদের দিকে ভালো মত তাকিয়ে ছিলো,, যেন খুটিয়ে খুটিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো।
খাওয়া শেষে ইরাদের কড়া নির্দেশ রুহি চুপচাপ বসে থাকবে চেয়ারে আর ইরাদ নিজে সব কিচেনে রেখে আসবে। যেই কথা সেই কাজই হলো।
রুহি চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মত সব শুনলো,,
আর তা ছাড়া কাল তো বুয়ার ও ছুটি শেষ তাই কাজের চাপ ও নেই একদমই।
রাতে খাওয়া শেষে যে যে তার রুমে চলে এসেছে।
সারা বাড়িতে ২ জন মাত্র মানুষ কিন্তু কারো চোখেই ঘুম নেই, ঘড়ির কাটায় ১০ঃ৩০ টার মত বেজে গেছে।
২জনই একে অপরের কথা ভাবছে,, না চাইতেও কি যেন তাদের একে অপরের কথা ভাবাচ্ছে,,

এদিকে আকাশ আজকে স্বচ্ছ, চাঁদ আজকে ঝকমক করছে,, আলোতে মুখোরিত চারিদিক।
রুহি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে শো শো বাতাস বইছে,,
সে ভাবছে ছেলেটা অনেক গম্ভীরমুখো,,, কিন্তু হলেও মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো,, তা নাহলে তার সাথে পরিচয় না থাকা স্বত্তেও থাকতে দিয়েছে,, এত যত্ন করছে। আজকালের দিনে এমন লোক হয়?
অজানা অচেনা কারো জন্য এতটা করে?
তবে এত সুন্দর ছেলেটা ,,বড় বড় চোখ, মুক্তোর মতো মানিক, সরু নাক, সুন্দর কালো চুল- ব্যাক ব্রাশ করা, জীম করা ফিগার,, ফর্সা, বেশ করে একটু রাগলে আরো আকর্ষণীয় দেখায়। আর তার,, কি সুন্দর মুচকি হাসি,, দেখলে দেখতেই ইচ্ছে করার মতন,, আচ্ছা তাকে প্রাণ খুলে হাসলে কেমন লাগবে?? ভালোই লাগবে মনে হয়?
হ্যাঁ তা তো লাগবেই। কিন্তু কেন সে এত ম্লান থাকে?
কেনই বা সে এতটা গম্ভীর হয়ে থাকে?কোনো বড় কারণ কি আছে এর পেছনে? মন বলছে হ্যাঁ। কারণ এত ভালো মনের মানুষ কখনো এতটা গম্ভীর হয়না,,
তার কি মনে কোনো কষ্ট আছে? যা সে নিজের মত করে চেপে রেখেছে? একা একটা মানুষ উনি। মনে অনেক কষ্ট জমা থাকতেই পারে।
আচ্ছা যেই মানুষটা আমার জন্য এত করছে আমার কি উচিত তার মনটা ভালো রাখার? হ্যাঁ আমার মনে হয় উচিত।
রুহি নিজের সাথে প্রায় এভাবে কথা বলে। আজও বললো।

ইরাদের আজ রাতেও ঘুম নেই চোখে কিন্তু আজ সে পুরোনো স্মৃতি মন্থন করছেনা,,
বরং ভাবছে রুহির কথা,,
-মেয়েটার জীবনে কোনো বড় ধরনের কষ্ট আছে,, যা ইরাদ ভালোভাবেই বুঝেছে কিন্তু তার একটা বাচ্চা বাচ্চা মন আছে,, এই মনটা কি মরে যেতে দেওয়া উচিত? ইরাদের ইচ্ছে করছেনা। কারন মেয়েটা কাল থেকে এসে কত কিছু করছে এই অসুস্থ শরীর নিয়েও। তার কতটা কৃতজ্ঞতা বোধ কাজ করে মনে। ইরাদ তো তেমন কিছুই করেনি তার জন্যে তারপরেও মেয়েটা কত লক্ষি,, বেশ করে তার আচার আচরণ কতটা ভদ্র। ছোটদের মত ছলা কলা করে । এই মেয়েটার মনে কষ্ট না থাকলে সে অনেক ভালো থাকতে পারতো,, আর এরকম একটা মানুষের দরকার অনেক এই কঠিন দুনিয়ায়। যে কালো অন্ধকারের মাঝেও নিজের স্বচ্ছতা দিয়ে আলোকিত করে তুলবে,, এবং একজন্য তাকে মন খুলে বাচতে দিতে হবে তো। আর এই সুখ টুকু ইরাদের মনে হচ্ছে দেওয়া উচিত,, কারণ ইরাদের বিরান মরুভূমির মতো জীবনের মধ্যে মেয়েটা একটা ঠান্ডা সাগর হয়ে এসেছে,, তার হাসি দেখলে একটা তৃপ্তি কাজ করে ইরাদের,, কাঠ ফাটা রোদে একটা ছায়ার মত লাগে মেয়েটাকে,, যে ৩ মাসে একটাবার ও হাসেনি তাকে একটু হাসাতে পেরেছে মেয়েটা তার আচরণের মাধ্যমে, এই কথা গুলো মনের কোনে উঁকি দিচ্ছে ইরাদের কারণ কথা গুলো তো অস্বিকার করার মত না,, আর যেই জীবনের বাচার কোনো অবলম্বন নেই সে কি পারে না একজনের সাহারা হতে? আর এই মানুষটা শান্তিপূর্ণ করে ফেলে আশপাশ শুধু মাত্র নিজের উপস্থিতির মাধ্যমে।
আমার জীবনের তো কোনো গতি নেই তবে একটা নিষ্পাপ মনের মেয়েকে ভালো রাখার জন্য আমার যা যা করা দরকার আমি আমার সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করে যাবো,,
নাই বা থাকলো কোনো অধিকার,, নাই বা হলাম আপন কেউ, নাই বা কোনো সম্পর্ক হলো আমাদের কিন্তু অধিকারের আশা না করেই তার ভালো রাখার একটা কারণ হতে চাই, পবিত্র একটা কারণ। এই সিদ্ধান্ত আজ ইরাদ নিয়ে ফেললো।

কালকে পর্যন্ত দুইটা অচেনা মানুষ আজকে নিজেদের ভালো রাখার কথা ভাবছে। নতুন দিনের সূচনায় তারা নিজেদের ভালো থাকা আর একজনের মধ্যে খুঁজে বেড় করবে। কিন্তু কোনো অধিকারের আশায় না। অধিকারবিহীন একটা সুখ নিয়ে আসতে চাচ্ছে ২টা মনভাঙা মানুষ একে অপরের জন্য শুধু একটু ভালো থাকার আশায়। ঘন কালো মেঘের মাঝে এক চিলতে সোনালী ঝিকিমিকি রোদ এনে দেওয়ার আশায়।

(অধিকারের আসল প্লট এখনো শুরু হয়নি পুরোপুরি,, মাত্র তো ইরাদ রুহি নিজেদের নিয়ে ভাবা শুরু করছে,, টান অনুভব করছে,, সামনে আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।)

অধিকার পর্ব-২+৩

0

#অধিকার
#দ্বিতীয়_প্রহর_এবং_তৃতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha #Fatha

কোনো মেয়ে হঠাৎ করে যদি একটা অচেনা ছেলের বুকে আছড়ে পরে বাচ্চাদের মত কান্না করতে থাকে,, এতে যে কোনো মানুষেরই অবাক লাগবে, আর যদি এটা নিজের সাথে ঘটে তাহলে তো আর কিছু বলারই বাকি থাকেনা,
আমি আপাতত বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।
এবং মেয়েটি আমাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে,, তার হাত পা কাপছে,, তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো কিন্তু তার সুযোগ ও নেই,, কারণ কান্না করতে করতেই কিছু মুখে শব্দ করছে,, সে কি যেন বলতে চাচ্ছে,,
কিন্তু এত কান্নার মাঝে সব যেন অস্পষ্ট ভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। যার ফলে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ করে সে অজ্ঞান হয়ে গেলো আমার বুকে থাকা অবস্থাতেই।
আমি ভেবে পাচ্ছিনা কি করবো ২-৩ মিনিটের মাথায় কি থেকে কি ঘটে গেলো। এমতাবস্থায় আমি মেয়েটিকে ভেতরে নিয়ে এসে একটা গেস্ট রুমে শুইয়ে দিলাম। মেয়েটার চেহারা একদম গোলাপি হয়ে আছে,, তার গায়ের সমস্ত কাপড় ভেজা। মেয়েটা যে একদম ফর্সা বুঝা যাচ্ছে কিন্তু হাতে গলায় অনেক গুলো লাল দাগ কিছু কিছু দাগ একদম নীল বর্ণ ধারণ করেছে।
বুঝা যাচ্ছে কেউ তাকে অনেক বেশি পরিমাণে মেরেছে। সে যখন আমাকে ধরে রেখেছিলো তখন তার গা একদম গরম ছিলো হয়তো অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজার ফলে তার জ্বর এসেছে।

তাকে বেশ কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না,, তার সেন্স নেই একবারেই।
এমন অবস্থায় আমি পরে গেলাম মহা মুশকিলে,,
তার জ্বর বাড়ছে ক্রমাগত,, বাইরে বৃষ্টি ও যেন থামার নাম নিচ্ছেনা, কিছুক্ষণ পড়ে মনে পড়লো পাশের বাসায় এক বয়ষ্ক দম্পতি থাকেন তারা উভয়ই ডাক্তার দাদা ভাই আব্দুল্লাহ , আর সুরাইয়া দাদু।
তারা আমাকে ছোট থেকেই অনেক ভালোবাসেন, আমার আর মাহিরার বিয়েতেও উনারা অভিভাবকের মত সব করেছিলেন,, এবং আমার এই দুর্দিনে, মাহিরা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পরে,, কেউ খোঁজ না নিলেও দাদু আর দাদা আমার খোঁজ ঠিকি রেখেছিলেন।
আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে সুরাইয়া দাদুকে ডেকে আনাই শ্রেয়।
যেই কথা সেই কাজ,
মেয়েটিকে বাসায় লক করে এই বৃষ্টির মধ্যেই আমি প্রায় দৌড়ে গেলাম দাদুর বাসায়..

দরজায় নক করতেই সুরাইয়া দাদু নিজে এসে দরজা খুললেন.. চশমা পরতে পরতে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে চিনতে পেরেই একটা হাসি দিয়ে দাদু বললেন

-আরে দাদু ভাই যে,,
সে কি? তুমি তো একদম ভিজে গিয়েছো! তাড়াতাড়ি ভেতরে আসো !
-দাদু আমার সাথে একটু বাসায় চলুন,, অনেক জরুরি দরকার,
-কেন? কি হয়েছে?
দাদুকে পুরো ঘটনা বললাম।
-দাদু আগে চলুন প্লিজ।
-দাড়াও ছাতাটা আর কিছু ঔষধ নিয়ে আসি, আর হ্যাঁ সাথে টুনিকেও (দাদুর কাজের লোক) নিয়ে যাই,
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম।

দাদু রুমে ঢুকে মেয়েটার অবস্থা দেখে আমার দিকে একবার তাকায় আর একবার মেয়েটার দিকে।
তারপর মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে দেখে আমাকে বললেন
-দাদুভাই, এর অনেক জ্বর,, জামা পালটে দিতে হবে,, কোনো জামা আছে বাসায়?
– হ্যাঁ ঘরে পরার কিছু জামা আছে মাহিরার,, সে ওগুলো রেখে গিয়েছে,,
-এনে দাও আমাকে।

একটা বাসন্তি রঙের সালোয়ার-কামিজের সেট আর হেয়ার ড্রাইয়ার নিয়ে দাদুর হাতে দিয়ে আমিও রুমে
এসে চেঞ্জ করে নিলাম।

.

ইতি মধ্যে মেঘের বিরাট বর্ষন কমে গেছে, বাইরে হিমেল হাওয়া বইছে,, তবে হালকা হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে ,, পরিবেশে এক প্রকার শান্তি বিরাজ করছে,, মনে হচ্ছে সব ধরনের আবর্জনা স্তূপ মুছে গেছে,, সব পরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে,, সব কিছু এখন সঠিকভাবে হবে,, কি যেন আজকের আকাশ বাতাস কিছু বলতে চাইছে,,

কিছুক্ষণ পরে নিচে এসে দাদুকে দেখি মেয়েটাকে ঠিকঠাক করে দিয়েছেন, টুনি পাশে বসে মাথায় জ্লপট্টি করে দিচ্ছে।

-ইরাদ, ওর অনেক জ্বর দাদুভাই, জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত জলপট্টি করা লাগবে।
আর মেয়েটাকে দেখে যা বুঝলাম মনে হচ্ছে সে ভালো ঘরের,, চেহারাটাও কত নিষ্পাপ।

ইরাদ শুধু মনোযোগ দিয়ে দাদুর কথা গুলো শুনে ভেদটা বুঝতে চেষ্টা করছে। সে তো মেয়েটার দিকে দরকারের খাতিরে শুধু তাকিয়ে দেখেছিলো একবার,,
আসলে তার দেখার কোনো ইচ্ছেও নেই, মাহিরা ছাড়া যে ইরাদের মনে কোনো চেহারা কখনো ধরেনি। আর সে নিজে থেকে কাউকে দেখতেও চায় নি, এমনকি আজও চায় না।

-খেয়াল করেছো দাদুভাই ওর কানে গলায় খুব মার্জিত আর রুচিসম্মত গহনা। গলায় একটা চেইন, কানে টোপের মত এর ছোট ঝুমকা করে ২ জোড়া দুল, ২ হাতে ৩টা করে একদম পাতলা স্বর্ণের আংটি
গহনা গুলো পুরোনো দিনের… খাটি স্বর্ণের এই ডিজাইন গুলো। এবং পায়ের নূপুর গুলো দেখো এই ডিজাইন আমাদেরও আগের সময়ের।

ইরাদ দাদুর সাথে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলো,,
এর কিছুক্ষন পর মনে হলো দাদুকে অনেক ক্ষন ধরে রেখে দিয়েছে, উনার তো বাসায় যাওয়া উচিত বয়ষ্ক মানুষ, দেরী হয়ে যাচ্ছে,,

– আচ্ছা দাদু আমি আছি,, চলুন আপনাকে আমি দিয়ে আসি বাসায় এরপর আছি এখানেই চিন্তা করবেন না।
-ঠিক আছে। কিছু দরকার পরলে আমাকে কল দিও, বোকার মতন কষ্ট করে আসতে হবেনা।
-জ্বি অবশ্যই দাদু।

রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে আমি মেয়েটার রুমেই খাটের পাশে ইজি চেয়ারে বসে আছি,, এতক্ষণ জ্বলপট্টি করছিলাম। মনের যন্ত্রণা অনেক বড় যন্ত্রণা
মনে পরে গেলো মাহিরার যখন শরীর একটু খারাপ হতো আমি সারা সারা রাত জেগে থাকতাম। ওকে কত যত্ন করতাম। কত ভালোবেসে আগলে রেখেছিলাম। আমার বাচার অবলম্বন ছিলো আমার বউটা।
.
মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠলো, তার কপালে হাত দিয়ে দেখলাম,, এখন জ্বর কমে গেছে , দাদু বোধহয় তাকে ইঞ্জেকশন দিয়েছে এইজন্যই কমে গেছে,, কিন্তু আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, হঠাৎ মনে পড়লো আমি কালরাত থেকে আজ সারাদিন না খাওয়া হয়তোবা এইজন্যই এমন লাগছে। আর এমনিতেই আমার মাইগ্রেন এর ব্যাথা আছে। সব মিলিয়ে খুব অসহ্য লাগছে। মাসের বাজার কেয়ার টেকার ছেলেটা এসে করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিমাসেই কিন্তু কিছু করে খাওয়ার মত এনার্জি পাচ্ছিনা তাই উঠে ফ্রিজ থেকে ব্রেড নিয়ে বাটার দিয়ে খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলাম।
মেয়েটিকে এসে আরো ২বার ডাক দিলাম কিছু খাওয়ার জন্য কিন্তু এতক্ষণে মনে হচ্ছে সে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে ঘুমাচ্ছে। তাই আর ডাক দিলাম না।
টেবিলে ব্রেড, বাটার আর জ্যাম রেখে দিলাম।
আর পাশে ইজি চেয়ারটায় বসে পরলাম কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম নিজেও বলতে পারিনি।

ঘুম ভাংলো সকাল ৮টায়, ঝলমলে আকাশ, সোনালী রোদ যেন ঝিকঝিক করছে, আলাদা একটা সৌন্দর্য্য আজকের দিনে মিশে আছে।
মাথাটা বেশ হালকা লাগছে,, তবে শরীরটা ব্যাথা ব্যাথা করছে,, হঠাৎ নিজেকে চেয়ারে আবিষ্কার করে একটু হকচকিয়ে যাই, পরক্ষণেই মনে পড়ে রাতের কথা।
তখনই বিছানায় তাকিয়ে দেখি মেয়েটা নেই, খাবারের জায়গায় খাবার রাখা। জ্বলপট্টিটা আমার মাথায় দেওয়া। তারপর মনে হলো স্বপ্ন দেখেছিলাম কি না?

কিন্তু সব জিনিস পত্র দেখে মনে তো হচ্ছেনা আমি স্বপ্ন দেখছিলাম তাহলে মেয়েটি কোথায় গেলো?
ওয়াশরুমে ঢুকে দেখলাম নেই এখানেও তারপরে ফ্রেশ হয়ে বেড় হলাম।
তারপর ঘরের সাথের ব্যালকনিটায় গেলাম তোয়ালেটা নেড়ে দেওয়ার জন্য,,
পেছন থেকে ঝুনঝুন শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে ইশারা দিয়ে ডাক দিচ্ছে তার সামনে আসার জন্য।

এই ঘরটার দরজার উল্টো দিকে বড় গ্লাস দেওয়া ব্যালকনি আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে,, আজকের বাইরে ঝলমলে রোদটা সম্পুর্ণ দরজার দিকে পরছে আর মনে হচ্ছে ঘুমো ঘুমো চোখে একটা হলদে পরি দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা অসম্ভব পরিমাণে সুন্দর। যাকে একবার দেখলে পরের বার মানুষ ফিরে তাকিয়ে দেখবে,, লম্বা লম্বা চুল, দৈর্ঘ্য আঁখি পল্লব, বাচ্চাদের মত ইনোসেন্ট চেহারা, দুধে আলতা গায়ের রঙ। যে কোনো পুরুষ মানুষের মনে তোলপাড় তৈরি করার জন্য এই মেয়ের চোখের চাহনি যথেষ্ট। তবে ইরাদের মনে এরকম কিছু হচ্ছেনা। কারণ সে তো মন ভাংগা একজন মানুষ। যে এখন অনুভূতি শুন্য।

.

আমি কিছু না বলে তার সামনে যেতেই,, সে হেটে হেটে ডাইনিং এ চলে এসেছে, চেয়ার টেনে আমাকে বসতে বলে নিজেও অন্য একটা চেয়ারে বসলো। টেবিলে তাকিয়ে দেখি হরেক রকমের নাস্তার আয়োজন করে রেখেছে মেয়েটা। পরোটা, ভাজি, অমলেট, চা এগুলো দেখে আমি আবারও অবাক।
সে কখন ঘুম থেকে উঠলো আর এগুলো করলো?
আমিতো কিছুই জানিনা, যদিও আমার ঘুম অনেক পাতলা কিন্তু অনেক দিন পরে কাল ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর কারণে মনে হয়ে জাগনা পাইনি। আমি এসব ভাবছিলাম তখন,,
সে আমাকে ইশারা দিয়ে খেতে বলছে।
এতক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়েটা হয়তো কথা বলতে পারেনা। মনে মনে খুব খারাপ লাগছে একটা মানুষ কথা বলতে পারে না, না জানি কত কষ্ট হয়। যাক এসব ভেবে কাজ নেই তাকেও আমি খেতে বললাম। দেখি সে খাবার নিচ্ছেনা। চোখ দুটো ছলছল করছে,, আমি তার প্লেটে খাবার দিলাম।
-আপনার এখন খেতে হবে,, নাহয় কালকের মত জ্বর হবে।
মেয়েটি কিছু বলছেনা।
আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই একদমই তবে এখন না খেলে আবার মাথাটা ধরে বসবে, অফিসে যাওয়াটা মিস হয়ে যাবে তাহলে। এটা আমি কোনো ভাবেই করতে পারিনা,,
খাবার খুবই সুস্বাদু হয়েছে, সে খাচ্ছিলো না তারপরেও বার বার বলে খাওয়ালাম।
আমরা উভয়ই খাওয়া শেষ করলাম।

এরপর মেয়েটা উঠে যাচ্ছিলো কিচেনের দিকে আমি অবাক হচ্ছি তার কর্মকাণ্ড দেখে তার ব্যাবহার দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়ি, এই পরিবেশ, আমি সবই তার চিরচেনা,, তাকে আমি বাধা দিলাম।
বসতে বললাম এবং তার ঔষধ এনে দিলাম খেতে।
সে খেয়ে নিলো,,

-আমি একটা কাগজ আর কলম নিয়ে তার সামনে দিয়ে বললাম আপনি কে? কোথা থেকে এসেছেন পরিবারের কারো ফোন নাম্বার থাকলে এখানে লিখুন। আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যাবস্থা করছি।
কিছুক্ষন মেয়েটা নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,, বুঝলাম সে কান্না করছে, তার নাক গাল একদম লাল হয়ে গেলো।

মেয়েটা এবার আমাকে আরো অবাক করে কিছুক্ষন পরে বলে উঠলো
-আমি কি কিছু দিন আপনার বাসায় থাকতে পারি?
সব কাজ করে দিবো বিনিময়ে।

এবার আমি শক খেলাম একটা বড় ধরনের।

(চলবে, নেক্সট না লিখে কেমন হয়েছে সেটা জানাবেন প্লিজ)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কপি করবেন না কেউ, এবং কপি পোস্ট দেখলে আমাকে জানাবেন প্লিজ

#অধিকার #তৃতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha #Fatha

-আমি কি কিছু দিন আপনার বাড়িতে থাকতে পারি? বিনিময় সব কাজ করে দিব।
.
একরাতের পরিচয় যদি হঠাৎ করে কোন রূপবতী মেয়ে এমন প্রস্তাব দিয়ে বসে একটা যুবককে এতে যে কেউ তখন অপ্রস্তুত হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা যেই মেয়েকে এতক্ষণ ধরে বাকপ্রতিবন্ধী ভাবছিলাম আমি সেই মেয়ের মুখেই এমন একটা কথা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম।
সে মুখ ফুটে আমাকে এমন কিছু বলবে আমি একদমই আশা করিনি।
রাত থেকে মেয়েটা আমাকে একটার পর একটা শক দিয়ে চলছে,, আর এখন আমি প্রতিত্তোরে কি বলবো তাই বুঝে পাচ্ছিনা।

আমার মনে অনেক গুলো কথা ঘুরপাক খাচ্ছে,,
প্রথমত, একজন অপরিচিত মানুষকে কোনো মতেই বাড়িতে থাকতে দেওয়ার মত বিশ্বাস করা যায় না, তার ওপরে একে দেখে কোনো রকমেই কাজের মেয়ে বা নিম্নবিত্ত পরিবারের মনে হচ্ছেনা।
আর এসব ভাবতে ভাবতেই আমি পরে গেলাম মহা বিপাকে।
এদিকে মেয়েটি নিঃশব্দে কাঁদছে।
হতেও পারে সে আসলেই বিপদে, কিন্তু যদি এমন কিছু না হয়, যদি তার মতলব ভিন্ন থাকে?
শহরে এখন ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে চোরের, ডাকাতেরা তাদের মতলব সিদ্ধ করে থাকে।
.
আপাতত ডাইনিং স্পেসের পরিবেশটা বেশ থমথমে হয়ে আছে। একদম পেনড্রপ সাইলেন্ট হয়ে আছে সব। মেয়েটি একবার ও চোখ তুলে তাকাচ্ছেনা।
কিছুক্ষণ পরে সে বলে উঠে
-দেখুন, আমি চোর বা ডাকাত নয়, আমি সত্যিই কাজ করবো সব আপনার বাসার এর বিনিময়ে শুধু আমাকে থাকতে দিবেন। টাকা পয়সা লাগবেনা। আমার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ও নেই। আমার বাইরে বেড় হওয়ার ও কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি যখন বেড় হবেন তখন আমাকে তালাবদ্ধ করে রেখে গেলেই হবে।

এক নিঃশ্বাসে সব গুলো কথা সে বলে শেষ করলো।
এবার আমার জবাবের অপেক্ষায় সে অসহায় দৃষ্টিতে বাচ্চাদের মত তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
তাকে একদম একটা ছোট্ট বাচ্চা মনে হচ্ছে।
একটু আগেও তার ঘুমের রেশ কাটে নি। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে তার চোখে কোনো ঘুম নেই,, একটা জবাবের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে।

মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছিলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, যদি সে আসলেই বিপদে পড়ে থাকে আর আমি এই মুহূর্তে তাকে বেড় করে দেই, তাহলে তার অনেক বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন ও হতে পারে,, আর আমার আগে পিছে তো কেউই নেই,, আমাকে কি করেই বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে??
আগে মাহিরা ছিলো মনের মধ্যে একটা ভীতি ছিলো, তাকে আগলে রাখতে হবে, তার জন্যে হলেও আমার বাচতে হবে। কিন্তু এখন এমন আর কিছুই নেই। আর বেশি থেকে বেশি কি হবে? ডাকাতি, আমাকে মেরে ফেলা? আসল কথা হচ্ছে
যদি আমি মারাও যাই কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে তাতেও দুঃখ থাকবেনা। তার একমাত্র কারণ হলো আমার মনটা আরো ৩ মাস আগেই মরে গেছে।
এখন একটা জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে আছি।
এই দেহের মৃত্যু হয়ে গেলেও ভালো।

– আপনি থাকতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই,,
কথাটা বলার সাথে সাথেই মেয়েটার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। এবং সে চেয়ার থেকে উঠে কিছু না বলে প্লেট গুলো নিয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো,, আমি থম ধরে টেবিলেই বসে আছি,, এর মাঝে এসে সে সুন্দর করে টেবিল গোছালো, আমি তাকে দেখে একটু অবাক হই।
কেমন যেন এক ভিন্ন প্রজাতির মানুষ মেয়েটি।
হঠাৎ ঘড়িতে টিংটং আওয়াজ হচ্ছে তাকিয়ে দেখি ১০টা বেজে গেছে। আমার মিটিং আছে একটা ১০ঃ৩০ টা বাজে।
তাড়াতাড়ি করে উঠে চলে গেলাম উপরে,, আমার ঘরে,, মেয়েটি রান্না ঘরে ছিলো আমি তাকে নিচে রেখেই এসেছি।
তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে তোয়ালে আনতে ভুলে গেছি। আমার এই বদঅভ্যাস আর ভালো হলো না,, প্রায় প্রতিদিনই এমন হয়।
আলরেডি আমি শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছি এখন কি আর করার?
একবারে গোসল শেষ করেই বাথরুম থেকে বেড় হতে হবে।
শাওয়ার শেষ হওয়ার পরে
বাথরুমের দরজা খোলার সময় দেখি হ্যান্ডেলের মধ্যে তোয়ালেটা ঝুলিয়ে রাখা।
বুঝতে পারলাম মেয়েটি রেখে গেছে হয়তো।
কারণ ছুটা বুয়া তো ৩দিনের ছুটিতে গেছে।

শরীর মুছে তোয়ালে পরে ঘরে আসলাম দেখি খাটের ওপরে আমার নেভি ব্লু কালারের একটা শার্ট, ব্লাক ফর্মাল প্যান্ট আর ব্ল্যাক একটা টাই রাখা।
অনেক গুলো কাপড় আয়রণ করিয়ে আনানোর পরে নিচেই রয়ে গিয়েছিল ওখান থেকেই, বেছে এই কাপড় গুলো এনে দিয়েছে সে।
এবার আর অবাক হলাম না।
তার কারণ হলো সে আমাকে অবাক করার কর্মকাণ্ড করছে প্রায় ১৮-২০ ঘন্টা ধরেই।
রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম। মেয়েটিকে আশেপাশে কোথাও দেখছি না, হয়তোবা রেস্ট করছে।
এমনিতেই তার শরীর বেশ খারাপ ছিলো।
মেইন গেট দিয়ে বের হবো ঠিক তখনই পেছন থেকে চামচ জাতীয় কিছু পরার শব্দ হলো।
তাকিয়ে দেখি হলদে পরী হাতে একটা টিফিন বক্স নিয়ে দাড়িয়ে আছে তার হাত থেকেই চামচটা পরেছে।
মুখে একটা প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে সে আমার দিকে এগিয়ে এসে টিফিন বক্সটা আমার হাতের সামনে ধরে বললো
-বাইরে যাওয়ার সময় ডাক দিতে হয়না, তাই অভিনব একটা পদ্ধতি দিয়ে ডাক দিলাম। আই হোপ আপনি মাইন্ড করেন নি।
-না,ঠিক আছে।
-অফিসে যাচ্ছেন?
-হুম
-এটা নিয়ে যান
-কিন্তু এটা?
-দুপুরের জন্য খাবার।
-দরকার ছিলো না।
-নিন, ধরুন। বেশি কিছুই করিনি। কাল থেকে আর এমন হবেনা।
-আমি বাইরেই খাই ক্ষুধা পেলে, আর কখনোই লাঞ্জ বাসা থেকে নিয়ে যাইনা।
মনে মনে বললাম মাহিরা থাকতে দুপুরে লাঞ্চ কখনো বাসা থেকে নেওয়া হতো না, অভ্যাস আছে আমার।
-এখন থেকে নিবেন।
আমি আর কথা বাড়ালাম না।

আর শুনুন, গেইটটা তালাবদ্ধ করে যান। আমি তার দিকে একবার তাকালাম তারপর গেইট লক করে বেড় হয়ে গেলাম।

.

মিটিং আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে, দুপুর ১টার মত বাজে সবাই লাঞ্চ ব্রেকে গেছে,,
আমি আমার কেবিনে বসে কাজ করছিলাম এরই মধ্যে লাঞ্চ বক্সটির দিকে নজর পরলো,,
খুলে দেখি বক্সের মধ্যে এগ স্যান্ডউইচ আর ২পিস চিকেন ফ্রাই সাথে একটা চিঠি।
সেই কাগজের মধ্যে লিখা, যেটা আমি সকালে মেয়েটির সামনে রেখেছিলাম।

“অনেক অনেক ধন্যবাদ মিস্টার …… আমাকে আপনার বাসায় আশ্রয় দেবার জন্য। আর সরি আজকে এরকম লাঞ্চ দেওয়ার জন্য। আসলে অল্প সময়ের মধ্যে করেছি তো, কাল থেকে ইনশাআল্লাহ সব ঠিকঠাক হবে।”

চিঠি দেখে মনে পরলো তার নামই তো জানা হলো না এখনো। আর মিস্টার লিখার পর এতগুলো ডট ডট দেখে মনের অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো আমার মুখে।
অনেক দিন পরে দুপুরে খাবার খেলাম, আর মেয়েটার হাতের রান্না এক কথায় প্রশংসনীয়

২ঃ৩০ মিনিটের দিকে সুরাইয়া দাদুর কল আসলো।
– আসসালামু আলাইকুম দাদু
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ইরাদ, ভালো আছো দাদুভাই?
-জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ দাদু। আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো
-দাদুভাই শুনো, মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে? তাকে একটা ইঞ্জেকশন দিতে হবে নাহয় আবার জ্বর বাড়তে পারে রাতে। সে তোমার এখানে আছে এখনো?
-জ্বি, দাদু।
এরপর দাদুকে সব কথা বললাম।
-দেখো দাদুভাই এভাবে সবাইকে বিশ্বাস করা ঠিক না, তবে আমি তো আর এভাবেই বুড়ি হয়ে যাইনি। ডাক্তারি করে জীবনে বহু মেয়ে ছেলে দেখেছি এখন কথা বললেই কিছুটা আচ করতে পারি কে ভালো? আর কে মন্দ?
তাই তুমি চিন্তা করো না একটু পরে তোমার বাসায় যাচ্ছি তখন বুঝা যাবে মেয়েটি কি রকম?
আমারও জরুরি কাজ শেষ করে বাকি গুলো পি.এ. বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
আমি আসতে আসতেই দেখি দাদুও এসে হাজির।

বাড়ি ঢুকে দেখি কি সুন্দর তকতকে ঝকঝকে করে সুন্দর ভাবে বাড়ি গুছিয়ে রেখেছে মেয়েটা। যেন পরী এসেও এতটা পরিষ্কার আর গোছানো দেখে মনের খুশিতে নেচে উঠবে।
দাদু মিটিমিটি হাসছে হয়তো তার কাছে ভালো লাগছে এরকম দেখে।
-আমি ফ্রেশ হয়ে আসি দাদু।
-আচ্ছা, আমি মেয়েটার সাথে কথা বলি।

আমি ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ উপরেই ছিলাম, প্রায় আধা ঘণ্টা পরে নিচে এসে দেখি গেস্ট রুম থেকে হাসির শব্দ আসছে,
দরজার কাছে গিয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই,,
কারণ দাদুকে দেখলাম সে বিছানায় বসা এবং মেয়েটা তার পায়ে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে হাসছে,, খিলখিল করে। আমি যে কতক্ষণ ধরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি এটা না দাদু, না মেয়েটির চোখে পড়লো। কারণ তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। যদিও দাদুই বেশি বলছে আর মেয়েটা বাচ্চাদের মত ইনোসেন্ট লুক দিয়ে হাসছে আর কথা গুলো শুনছে।
আর দাদু তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সে শুধু ঘরের কাজেই পরিষ্কার নয়, বরং নিজেও যথেষ্ট পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে তাকে দেখে আচ করত
এ পারলাম,, কেননা সে হলদে পরী থেকে এখন আবার বেগুনী পরী হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার কালকে পরে আসা জামাটা, চেঞ্জ করে আবার পরে নিয়েছে,, হয়তো কাজ শেষ করে গোসল সেড়ে ফেলেছে।

আমাকে দেখে দাদু বলে
– ইরাদ, দাদুভাই আমি চলে যাই তাহলে এখন,, তুমি আমাকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দাও।
আর মাঝেই আমাকে দেখে মেয়েটা উঠে বসে পরে।
-জ্বি দাদু।
আমি বুঝেছি দাদু কেন আমাকে ডাক দিলো গেইট পর্যন্ত।

গেইটের কাছে এসে দাদু আমাকে বললো,
– মেয়েটা আসলে দেখতে যেমন মন থেকে তেমন না।
বরং এর থেকেও বেশি ভালো।
তাকে নিঃসন্দেহে আমার মনে হয় বাড়িতে জায়গা দেওয়া যায় দাদুভাই। তুমি তাকে রেখে ভালো করেছো।
তবে ও এখনো অনেক বেশি দুর্বল। আমি ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি।
দাদুকে বিদায় দিয়ে তার ঘরে আসলাম,,

বাইরে আকাশে হালকা হালকা মেঘ জমেছে,, পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে আছে,, ব্যালকনির দরজাটা খোলা,, হিমেল হাওয়া এসছে,, সব কিছুতে এক অদ্ভুত ভালোলাগা আর স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
ব্ল্যাংকেট গায়ে পেচিয়ে দেখি সে ঘুমিয়ে আছে।
সিল্কি চুলগুলো কিছু কিছু চোখে মুখে পরে আছে,, মেয়েটাকে অপরূপ দেখাচ্ছে, এমন ইনোসেন্ট লাগছে কারোই তাকে ঘুম থেকে জাগাতে ইচ্ছে করবে না কিন্তু
সে খেয়েছে কি না তা তো জানাও হলো না,,
এই জন্য আস্তে আস্তে ডাক দিলাম,,

-এইযে শুনছেন?
আপনি খেয়েছেন?
-……….
কোনো সাড়া শব্দ নেই…
-এইজে??
-রুহি,
আমার নাম রুহি।
এইজে বলে ডাকবেন না। নাম ধরে ডাক দিবেন কেমন?
এই বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সে উঠে বসলো

চলবে

অধিকার পর্ব-০১

0

#অধিকার #প্রথম_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)

আমার স্ত্রী আমার সাথে থাকলে কখনো মাতৃত্বের সুখ পাবেনা। তাই রিপোর্ট পাওয়ার ঠিক দুই ঘণ্টার ব্যবধানে সে আমাকে রেখে চলে যায়।
সত্যি বলতে এতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই কারণ একজন অক্ষম পুরুষ কে তার স্ত্রী ফেলে যেতে পারে। আর কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই তার সঙ্গীর সুখ চাই সে পুরুষ এটা মেনে নিবে।
.
যখন ডাক্তার এই রিপোর্ট দিয়েছেন,, তারপর থেকে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছিলাম না, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত পুরো পথটায়।

ঘন্টা খানিক হবে, মাহিরা বেডরুমে দরজা লক করে রেখেছিলো, আমি সোফায় বসে ভাবছিলাম কি করে মাহিরা কে বলবো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা, আমি নিজেই মাহিরা কে বলতে চাচ্ছিলাম “তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও”
আমার মনে হচ্ছিলো সে নিজে এরকম কিছু করবেই না তাই আমাকেই তাকে মানাতে হবে। আমার মাহিরা তো পুরো একটা বাচ্চাদের মত, অল্পতেই কষ্ট পেয়ে বসে, এই জিনিসটা কিভাবে সে নিবে।
কিন্তু কিছুক্ষন পরে দেখি সে বাইরে বেড়িয়ে এসেছে সাথে তার লাগেজ প্যাক করে ফেলেছে এবং আমাকে এসে মাহিরা নিজে বলল
“তোমার সঙ্গে থাকা আমার আর সম্ভব নয়, আমি চলে যাচ্ছি, ইরাদ শুনো শারীরিক সম্পর্ক করে সুখ দিতে পারলে আর গিফট দিয়ে মন ভুলিয়ে রাখতে পারলেই হয়না বাচ্চা দিতেও পারা লাগে। কিছু থেকে কিছুনা তুমি আমাকে আহ্লাদ দেখাও এসবে কিছু হয়না ইরাদ”

কলিজার ভিতর পুরে যাচ্ছিল। তার মুখে এরকম কথা শুনে। কিন্তু এটাই তো সত্যি আমি তো এটাই বলতে চাচ্ছি লাম ওকে “যে চলে যাও সুখী হও ”
তবুও কেন এত মন জ্বলে যাচ্ছিলো?
এখন যে আমার শক্ত হতে হবে । এতে সে থেমে ছিলো না,, আরো নানান কথা আর অভিযোগ তুলে ধরছিলো সে,,
আমি সব চুপচাপ শুনছিলাম মাথা নিচু করে,,

বরাবরই মাহিরা অভিযোগ করলে আমি মাথা নিচু করে শুনে যেতাম,, ওকে যে অনেক ভালোবাসি কখনো কষ্ট দিয়ে কথা বলতেই পারিনি,, আজ ও তাই করছিলাম কিন্তু কষ্টটা তখনই লেগেছিলো, যখন তার মুখেই জানতে পারলাম, সে আমার সাথে থাকা অবস্থায় পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছিল।

-আমি তামিমকে ভালোবাসি এখন তোমার প্রতি আমার আর কোনো রকম ইন্টারেস্ট কাজ করেনা ইরাদ।
-মাহিরা, তুমি একজন বিবাহিত নারী, কি বলছো এসব?
-এখন কিসের বিবাহ আর কিসের কি? একটা সংসার বেধে রাখতে হলেও বাচ্চা লাগে। আমাদের কোনো বাচ্চা নেই আর না আমার আছে কোনো পিছুটান। তোমার মত একটা পুরুষের সাথে আমার আর থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। সারাদিন যখন কাজে ব্যাস্ত থাকতে,, আমাকে সময় দিতে পারতে না তখন তামিমই ছিলো আমার জন্য। ওর সাথেই আমি সময় কাটাতাম, আমাকে সে ভালোবাসা দিয়েছে, তাই আমি আজকে শুকরিয়া করি আল্লাহার কাছে সে আমাকে সত্যিটা বলার সাহস আর সুযোগ দিয়েছেন তিনি।

এগুলো বলে সে চলে গেলো একটা বার ও পেছনে ফিরে তাকায়নি। আমি মাটিতে বসে পরেছিলাম
মাহিরার কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,,

সেই মুহূর্তের কষ্টটা কাউকে বলে বোঝানোর মত নয়,কারণ একদিন দুইদিন তো নয় , আমরা তো দু’বছর প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। আড়াই বছর আমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল , ভালবাসতে তাকে আমি কখনো কার্পন্য করিনি। তার বলা প্রত্যেকটা কথা আমি শুনেছি। তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছি সর্বদা। তারপরেও কেন? সে এভাবে আমাকে ধোকা দিল। আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি ছিল?
এসব ভাবতে ভাবতে ইচ্ছে করছিলো নিজের এই জীবনটা শেষ করে দেই কিন্তু তখনই আযানের ধ্বনি আমার কানে আসে, হঠাৎ মনে হলো না আত্নহত্যা মহা পাপ তাহলে তো দুনিয়া আখিরাত কিচ্ছু পাবো না আমি,, নিজের জন্য না হলেও তো আল্লাহার ধর্ম কর্ম করার জন্য আমার বেচে থাকতে হবে। নাহলে যে আমার মৃত মা বাবার আত্না কষ্ট পাবেন।

পুরোপুরি তিনমাসের প্রসেস আজকে শেষ হলো। আমার স্ত্রী এখন আর আমার নেই। সে আমার প্রাক্তন স্ত্রী হয়ে গিয়েছে। কোর্ট থেকে সারাদিন পড়ে বাড়ি ফিরলাম। শেষ বারের মত মাহিরার চেহারাটা দূর থেকে দেখেছিলাম। তাকে তামিম ছেলেটা পাশে খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছিলো,,
কেন যেন বাড়ি ফেরার পর থেকেই হাত-পা নিস্তেজ হয়ে আসছে। আবহাওয়াটা আজকে বেশ গরম ছিলো, আষাঢ় মাস কেউ বলবে না, কোনো রকমে গোসল টা সেড়ে আসলাম, মাগরিবের আযানের মধুর ধ্বনি চারিদিকে ছড়িয়ে পরছিলো,, আযান শেষে নামাজ পড়ে কোনো মতে এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম, মনের ভিতরটা হাহাকার করছে, সব কিছু আসহ্য লাগছে। বাসায় আমি একা থাকি,, মা বাবা যাওয়ার পরে আর কেউ নেই আমার এখন কোনো কাজের লোকও তেমন রাখিনা,, মাহিরা যাওয়ার পরে ড্রাইভার, কুক ২জনই বাদ দিয়ে দিয়েছি, শুধু আছে একজন ছুটা বুয়া যে সব কিছু দিনে এসে করে চলে যায়, আমি সারাদিন অফিসেই পরে থাকি রাতে এসে বাসায় ঘুমাই শুধু,, এখানে যে প্রতিটি কোণায় কোণায় মাহিরার স্পর্শ, আমি এসব ভুলে কি করেই বা থাকবো,, আল্লাহকে প্রতি মুহুর্তে বলি আমাকে তুমি শান্তি দাও এই কষ্ট আর যে নিতে পারিনা।

কিছুক্ষন পরে মোবাইলটা বেজে উঠলো, সেটা ড্রেসিংটেবিল এর সামনে ছিলো আমি উঠে যেতে যেতে কলটা কেটে গেলো। কলটা ব্যাক করবো তখন দেখি ফোনের চার্জ শেষ, চার্জে দিয়ে ফোন আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম মুশোল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে ঠিক ভাবে কিছু দেখাও যাচ্ছেনা।
এই গরম, এই ঝড়, আল্লাহ পাক মহান কখন কি হয় কেউ তা বলে বুঝাতে পারেনা আসলে। এসবই ভাবছিলাম হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম, ডুপ্লেক্স বাড়ি হবার কারণে আমার বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো ওপর থেকে নিচে নেমে দরজা খুলতে।
দরজাটা খুলার সাথে সাথেই একটা মেয়ে কান্না করতে করতে আমার বুকে ঝাপটে পড়লো,, সে আমাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেন তার অনেক দিনের হারানো কিছু সে ফিরে পেয়েছে।
কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে এমন কিছি ঘটে যাওয়াতে আমি সম্পুর্ণ স্তব্ধ হয়ে যাই।

চলবে