Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1605



সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_২০_Last_Part
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

~~~~পাঁচ মাস পর~~~~

বাড়ির সবার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে সামান্তা আর আরুহি৷ আজ তাদের বাড়ির বাকি দুই ছেলের গায়ে হলুদ৷
মাথা বার বার চক্কর দিচ্ছে পাশাপাশি বমি বমি ভাবও আরুহি৷ সে দৌড়ে কিচেনে গিয়ে তাকের উপর থেকে তেঁতুলের আচারের বৈয়াম নামালো৷ তারপর কয়েকটা তেঁতুল মুখে দিয়ে আবারো চলে গেলো কাজে৷ আদিল আর আদনান বাড়ি ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে৷ আহিল আর আদিব তাদের হবু বউদের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত৷
🍁🍁🍁🍁
সামান্তা হলুদ বেটে আরুহির হাতে দিলো৷আহিল আর আদিব কে নিচে এনে স্টেজে বসানো হলো৷প্রথমে ওদের মা তারপর সবাই হলুদ লাগালো৷ আরুহি হলুদ লাগাতে গিয়ে আবারো তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো৷ সে এক হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে কোনরকমে দুই ভাইকে হলুদ লাগিয়ে সোফায় ধপ করে বসে পরলো৷ আদিলও আরুহির কাছেই ছিলো সে আরুহির পাশে এসে বসে পরলো৷

আদিলঃকী হয়েছে আরুহি তুমি ঠিক আছো৷
.
হুমমম৷
.
কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি ঠিক নেই৷ আগেও দেখলাম কিচেনে দৌড়ে গেলে আর এখন মাথা চেপে ধরে চলে এলে কী হয়েছে বলতো৷
.
জানিনা সকাল থেকেই মাথা কেমন চক্কর দিচ্ছে আর কেমন বমি বমি ভাব হচ্ছে৷
.
কাল ডক্টর দেখাবো৷ রেডি থেকো৷
.
কাল তো ভাইয়াদের বিয়ে৷ আমি পরে যাবো ডক্টরের কাছে৷
.
আরুহি সোফা থেকে উঠে গেলো ডালা আনার জন্যে৷ ডালা এনে সামান্তার হাতে দিতে যাবে ওমনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলো৷
সবাই যে যার কাজ ফেলে আরুহির কাছে দৌড়ে এলো৷ আদিল ওকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলো বেচারা বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে৷ আদনান ডক্টরকে কল করে আসার জন্য বললো৷
🍁🍁🍁
বেশ কিছুক্ষন ডক্টর আরুহিকে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে আদিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন৷ আদিল ডক্টরের হাসির মানে বুঝতে না পেরে ওর মায়ের দিকে তাকালো৷ ওর মায়ের মুখেও হাসি৷

আদিলঃডক্টর একচুয়েলি বলবেন কী আরুহির কী হয়েছে৷
.
কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার আদিল খান আপনার স্ত্রী মা হতে যাচ্ছে আর আপনি বাবা৷
.
আদিল ডক্টরের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলো৷ তারপর ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো৷
.
মা, মা দেখো আমাদের ছোট্ট আরুহি আমার আরুহি মা হতে যাচ্ছে আমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছে৷
আদিলের মাও ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন৷
🍁🍁🍁
পিট পিট করে চোখ খুললো আরুহি৷তার কাছে এতো মানুষ দেখে ঘাবড়ে গেলো সে৷

আরুহিঃআব,তোমরা সবাই কাজ ফেলে এখানে কেনো???
.
মাঃতুমি যে খুশির খবর শুনিয়েছো তারপর তো তোমার কাছেই থাকবো আমরা সারাক্ষণ৷
.
মানে?
.
মানে আমাদের আরুহি আরেকটা ছোট্ট আরুহিকে জন্ম দিতে যাচ্ছে৷
,.
আরুহি কথাটা শুনে কেঁদে দিলো৷ মা হওয়ার অনুভূতিটা শুধু একজন মা’ই ভালো বুঝে৷

আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো৷ এখন শুধু সামান্তা আদনান আর আদিল আরুহির কাছে আছে৷

সামান্তাঃসিরিয়াসলি ইয়ার তুই মা হবি আর আমি ফুপি, বিশ্বাস কর আমি খুব খুব খুশি ফাইনালি আমিও ফুপি হতে যাচ্ছি৷
.
আরুহিঃআমারও কিন্তু ফুপি হওয়ার খুব ইচ্ছে৷ শুধু তুই হলেই চলবে নাকি আমি ওতো ফুপি হতে চাই৷
.
আদনানঃখুব শীগ্রই তুইও ফুপি হবি৷ এই সামু চলতো৷
.
আদনান সামান্তাকে নিয়ে চলে গেলো৷ আদিল আস্তে আস্তে এসে আরুহিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে থুতনি কাঁধে রাখলো৷

আদিলঃআমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা তুমি মা হতে যাচ্ছো তাও আমার সন্তানের মা৷ আমার অস্তিত্ব বেড়ে উঠবে আস্তে আস্তে তোমার গর্ভে৷ বাবা হওয়ার অনুভূতিটা যে কী সেটা তুমি বুঝবে না জানেমান৷
🍁🍁🍁
দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরও ছয়, সাত মাস৷ এই ছয় সাত মাসে ফারিহা আর রিংকি সব সময় আরুহির যত্ন করেছে দেখাশোনা করেছে৷ সামান্তাও প্রেগন্যান্ট৷আরুহির ডেলিভারির টাইমও এসে পড়েছে৷ আদিল একবারের জন্যও আরুহিকে চোখের আাড়াল করেনি সব সময় পাশে পাশে থেকেছে৷ আর আরুহি মুড সুয়িং এর কারনে আদিলকে অনেক জ্বালিয়েছে৷আর আদিলও আরুহি যা বলেছে সেটাই করেছে৷
সকাল থেকেই আরুহি বায়না করেছে সে নাকি ডেইরি মিল্ক খাবে৷ আদিল প্রথম বিরক্তি বোধ করলেও পড়ে এনে দিয়েছে তা না হলে তার একটা চুলও মাথায় থাকবেনা৷

আদিলঃএই যে এতো চকলেট খাওনা তাতে দাঁতে পোকা হবে৷ আর বেবি তোমাকে নিয়ে হাসবে৷ আর সবাইকে বলবে তার মায়ের দাঁতে পোকা৷
.
আরুহি আদিলের দিকে তাকিয়ে সে হাত থেকে চকলেট ফেলে দিলো৷ আদিল মনে করেছে সে ওর উপর রাগ করেছে৷ আরুহির কাছে এসে চকলেটটা নিতেই আরুহি আদিলের ঘাড়ে খামচি মেরে ধরলো৷ আদিল অনেক কষ্টে আরুহির হাত ছাড়িয়ে ওর মুখের দিকে তাকালো৷ আরুহির চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে গেছে নিঃশ্বাসও ভারি হয়ে এসেছে৷ সে শক্তে বিছানার চাদর মুঠো করে ধরলো৷

“আরুহি,,আরুহি কী হয়েছে তোমার৷
.
আরুহি অনেক কষ্টে অস্ফুট স্বরে বললো,আদিল আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে৷ পেইন উঠে গেছে আমার৷

আদিল আর দেড়ি না করে আরুহিকে দ্রুত কোলে নিয়ে নিলো৷ সবাইকে চিৎকার করে ডেকে একজায়গায় করলো আর বললো আরুহির পেইন উঠে গেছে ওকে এক্ষুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে কথাটা বলে সে আর এক মুহুর্ত দেড়ি না করে হসপিটালের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো আদিলের পিছন পিছন সবাইও ছোটলো৷
🍁🍁🍁
আরুহিকে কোলে নিয়ে দ্রুত কেবিনে ঢুকে পরলো আদিল৷ আহিল আগেই বুক করে রেখে দিয়েছিলো৷ওকে কেবিনে রেখে আদিল বেড়িয়ে আসলো৷ সবাই করিডোরে রাখা চেয়ারে বসে আছে আর আদিল সারা করিডোর জোড়ে পায়চারি করছে৷

প্রায় দুই ঘন্টা পর বাচ্চার চিৎকারের আওয়াজ শুনা গেলো৷ আদিল দৌড়ে দরজার কাছে চলে গেলো৷ একজন নার্স তোয়ালে পেছিয়ে কোলে করে বেবি নিয়ে আসলো৷
.
এই নিন আপনার বেবি৷ আপনি ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছেন৷
.
আদিল বেবিকে না নিয়ে আগে জিজ্ঞেস করলো আরুহি কেমন আছে৷ নার্স একটু মুচকি হেসে বললো যে বেবির মা ভালো আছে৷ আদিল তার সন্তানকে কোলে নিয়ে চুমুতে ভরিয়ে দিলো৷ আস্তে আস্তে সবাই বেবিকে কোলে নিলো৷ সবাই বলছে বেবি নাকি একেবারে তার মায়ের মতো হয়েছে৷

আদিলঃআমার প্রিন্স তার মায়ের মতো হয়েছে আর আমার প্রিন্সেস হবে তার বাবার মতো৷

আদিল তার ছেলেকে নিয়ে আরুহির কাছে গেলো৷ আরুহি চোখ বুঁজে আছে হাতে ক্যানেলার লাগানো৷ আদিল আরুহির পাশে টুলে বসে পরলো৷ তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো৷ আরুহিও আদিলের দিকে চোখ মেলে তাকালো৷আর চোখের ইশারায় বললো তার ছেলেকে তার কাছে দেওয়ার জন্য৷ আদিল তার ছেলেকে পাশে রেখে আরুহিকে ধরে বসালো৷ তারপর কোলে বাচ্চাকে দিলো৷ বাচ্চাটাও মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আরুহি ছেলের সারা মুখ আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে চোখের কার্নিশ বেয়ে পানিও গড়িয়ে পরছে৷ আর আদিল তা মুগ্ধ হয়ে দেখছে আর আরুহির ফিলিংস বুঝার চেষ্টা করছে৷ আরুহি আদিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,ধন্যবাদ আমাকে একটা ছোট্ট আদিল দেওয়ার জন্য৷

“আমি তোমায় কোথায় দিলাম দিয়েছোতো তুমি আমাকে৷ ”
আদিল আরুহির কপালে একটা চুমো দিলো৷ ওমনি ওদের ছেলেও কেঁদে দিলো৷

আরুহিঃওরে দুষ্টো এখন থেকেই বাবার সাথে হিংসা করছো৷
.
একেবারে মায়ের মতোই হইসে৷
.
কচু হইসে৷

আদিল হেসে তার বউ বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরলো৷

[বেঁচে থাকুক আদিল আরুহির ভালোবাসা]

~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~~

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৯

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৯
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সকালে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আরুহির৷ পাশে তাকিয়ে দেখলো আদিল ওর পাশেই ঘুমিয়ে আছে৷ আরুহি উঠে আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো৷ শরীর খুব দুর্বল মনে হচ্ছে যেনো এখুনি পড়ে যাবে৷ দরজা খুলে ওপারে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো আরুহি৷ নিলা আরুহির গলা টিপে ধরে রুমে ঢুকে গেলো৷আরুহি ওর হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে বাট পারছেনা৷

নিলাঃখুব শখ ছিলো তোর আদিলের সাথে সংসার করার তাইনা কিন্তু তুই তোর এই শখ পূরন করতে পারবিনা৷ কাল মারতে পারিনি তো কী হয়েছে আজ তোকে আমি মেরে তবেই যাবো৷ নিলা এবার দুই হাত দিয়ে আরুহির গলা টিপে ধরলো৷ আরুহি তার হাতের কাছের টব ফ্লোরে ফেলে দিলো যাতে এটার শব্দে আদিল ঘুম ভেঙে উঠতে পারে৷

কিছু ভাঙার শব্দে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো আদিল৷ ওর সামনেই নিলা ওর আরুহির গলা টিপে ধরেছে৷ আদিল তারাতাড়ি আরুহিকে ছাড়িয়ে নিজে নিলার গলা টিপে ধরলো৷

আদিলঃএখনো যাসনি তুই?হাউ ডেয়ার ইউ! কালই বলেছিলাম তোকে যে আমার কলিজার গায়ে হাত দিবে তাকে আমি জ্যান্ত পুতে দিবো তবুও তুই আমার কলিজার গায়ে হাত দিলি৷ যদি মনে করে থাকিস যে কাল তোকে ছেড়ে দিয়েছিলাম বলে আজও ছেড়ে দিবো তাহলে তুই ভুল ভাবছিস তোকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো৷
আদিল এমন ভাবে গলা টিপে ধরেছে যেনো এখুনি নিলার প্রান তার দেহ ছেড়ে পালিয়ে যাবে৷ আরুহি ভয়ে আদিলের হাত ধরে ওকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আদিল আরও শক্তে চেপে ধরেছে৷ আরুহি এবার আর চোখে কিছু দেখতে পারছেনা খালি সরষে ফুল দেখছে৷ সে আস্তে আস্তে আদিলের হাত ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পরলো৷ আদিল নিলাকে ছেড়ে আরুহিকে তারাতাড়ি কোলে নিয়ে খাটে রাখলো৷

সকাল সকাল আদিলের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে সামান্তা আর আদনান দৌড়ে এলো৷

আদনানঃকী হয়েছে আদি আর এই ব্লাডি এখনো যায়নি ও এখানে কী করছে৷আর রুহির বা কি হয়েছে?
.
আদিলঃআরুহি অজ্ঞান হয়ে গেছে৷
.
আদনানঃনিশ্চয় এই মেয়েকে দেখে ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে৷
.
আদিলঃনা আদনান এই মেয়ে আমার আরুহিকে আবারও মারতে এসেছিলো৷ যদি আমি ঘুম থেকে তখন না উঠতাম তাহলে ও এতক্ষণে আমার আরুহিকে প্রানে মেরে ফেলতো৷
.
আদনানঃকীহ!!!! এই মেয়ে কাল বোধহয় চড় কম পরে গিয়েছিলো তাই এবার আরও চড় খাওয়ার শখ হইসে তোর৷ কিন্তু এবার আমরা তোকে শাস্তি দিবোনা যা শাস্তি দেওয়ার আইন দিবে তোকে আইনের হাতে তুলে দিবো৷

সামান্তা নিলার সামনে এসে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো৷ “লজ্জা হওয়া উচিৎ তোর৷ তোর বুঝার দরকার যে যা তোর নয় সেটা তুই জোর করে নিতে পারবিনা৷ অন্যের স্বামীকে কেড়ে নেবার জন্য এই খেলা শুরু করেছিস৷ ভাবলি কী করে যে তুই এতোকিছু করবি আর আদিল ভাইয়া তোকে মেনে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবে৷ তোর ভাগ্য ভালো যে রুহির কিছু হয়নি তা না হলে তোকে আজ আমি নিজেই মেরে কুচি কুচি করে মালদ্বীপের সব মাছকে খাওয়াতাম৷ তোর তো ফাঁসি হওয়া দরকার ফাঁসি৷ তোর মতো মেয়ে যাতে আর কারও না হয়৷ তা না হলে কোন মেয়ে তার স্বামীর ঘরে সুখে সংসার করতে পারবেনা৷ অতল গভীরে তলিয়ে যাবে তারা৷ এতটাি গভীরে তলিয়ে যাবে যেখান থেকে ফিরে আসা ইম্পসিবল৷”
কথাটা বলে সামান্তা আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো৷
“তুই আমার অনেক বড় কিন্তু আজ আমি বাধ্য হয়ে তোকে চড় মেরেছি কেনো মেরেছি বেশ ভালোই বুঝতে পারছিস কারন তুই তোর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস৷ আজকের পর থেকে তুই আমাদের কেউ না৷ কোনো সম্পর্ক নেই তোর সাথে৷তুই একটা ক্রিমিনাল৷
.
আদিলঃআদনান আমরা শীঘ্রই বাংলাদেশে ফিরছি সো সব রেডি কর৷ আজই আমরা চলে যাবো৷ যতক্ষণ না এই ব্লাডিকে শাস্তি দিতে পারছি ততক্ষণ আমার মনের জ্বলন্ত আগুন নিভবে না
আদিল আরুহির কাছে গিয়ে পানির ছিটে দিলো৷ বেশ কয়েকবার দেওয়ার পর আরুহির জ্ঞান ফিরলো৷
সামান্তা কিছু খাবার এনে আরুহিকে খাইয়ে দিয়ে কিছু মেডিসিনও হাতে ধরিয়ে দিলো৷
🍁🍁🍁🍁
সন্ধ্যায় ফ্লাইট৷ আদিলের কথা অনুযায়ী সবাই আজই বাংলাদশের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে৷ আদিল একবারো আরুহির সাথে কথা বলেনি৷ আরুহি কষ্ট হলেও বুঝতে পারছে কথা না বলার কারন৷ সত্যি তো নিলাকে আমাদের সাথে এনে সবার হানিমুনের আনন্দটাই মাটি করে দিয়েছি৷ আমি দুবার বিপদে পড়েছি আর দুবারই আদিল আমাকে বাঁচিয়েছে আজ উনার কথা অমান্য করে নিলাকে আমাদের সাথে আনার কারনে আমি নিজেই মৃত্যুর মুখে পরেছিলাম৷ নিজের প্রাণ নিজের দোষে একটুর জন্য হারাতে যাচ্ছিলাম৷মানুষ একজন আরেকজনকে কীভাবে খুন করতে পারে৷ যদিও ক্রিমিনালদের দ্বারা সবই সম্ভব৷ আদনান আর সামান্তাও মুখ ভাড় করে রেখেছে খুব কষ্ট হচ্ছে আরুহির সবাইকে দেখে৷
🍁🍁🍁🍁
বাংলাদেশে এসে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০টা হয়ে গেলো৷ আদিল নিলার হাত ধরে টেনে বাসার ভিতরে নিয়ে গিয়ে ছুড়ে মারলো৷ তারপর ফোন বেড় করে কাকে যেনো কল করলো৷ তখন বাড়ির সবাই ডিনারে বসে ছিলো ওদেরকে ফিরে আসতে দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো৷ আহিল আর আদিবও সবাইকে দেখে এগিয়ে এলো৷ আদিব দৌড়ে এসে আরুহিকে জড়িয়ে ধরলো৷

আদিবঃবোন তুই ঠিক আছিস৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ ভাইয়া৷
.
চাচীমনিঃআদিল কী হয়েছে তোমরা ফিরে এসেছো কেনো৷ আর কাল ওতো আসতে পারতে আজই কেনো৷
.
আদিলঃযদি আজ না আসতাম তাহলে তোমার গুনধর বোনঝি আরুহিকে প্রাণেই মেরে ফেলতো৷
.
বাবাঃমানে৷
.
আদিল সবাইকে সবটা খোলে বললো৷

আদিলের মা সব শুনে নিলাকে পরপর দুটি চড় মারলেন৷
“বেড় হয়ে যা আমার বাসা থেকে তোদের মতো ক্রিমিনালদের আমার বাসায় কোনো জায়গা নেই৷সামান্তা ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দে৷
.
মাঃআমি তোমাকে আমার নিজের মেয়ের মতোই মনে করতাম কিন্তু তুমি এটা কী করলে আমার মেয়ের সাথে৷ কী ক্ষতি করেছিলো আমার মেয়ে তোমার৷ শুনো তোমাকে আমি কোনদিনও ক্ষমা করবোনা কোনদিন না৷
.
আহিল আর আদিবও নিলাকে ইচ্ছেমতো অপমান করলো৷ নিলা মাথা নিচু করে সবটা শুনছে৷

প্রায় আধা ঘন্টা পর পাঁচ ছয় জন পুলিশ খান বাড়িতে ঢুকে গেলো৷ আদিলই তাদের কল করে আসার জন্য বলেছে৷ নিলা পুলিশদের দেখে ভয় পেয়ে গেলো৷

অফিসারঃহ্যালো মিস্টার আদিল খান আমরাতো আপনার মুখ থেকে সবই শুনেছি এখন আমরা প্রমান ছাড়া তো আর আাসামীকে গ্রেফতার করতে পারিনা৷
.
আদিলঃআমাদের নিজের চোখে দেখার চেয়ে বড় কোনো প্রমান হতেই পারেনা অফিসার৷ আমরা কী প্রমাণের জন্য ছবি তুলে রাখবো নাকি৷ এই যে আপনারা প্রমান প্রমান করেন না সব খুনের কিন্তু প্রমান থাকেনা৷ আর আপনারা প্রমান না পেয়ে এটাকে মিথ্যা মামলা বলে দামাচাপা দিয়ে দেন আর ক্রিমিনাল শান্তিতে জীবনযাপন করে৷ কিন্তু এটা আমি হতে দিবোনা৷ ওই যে মেয়ে দেখছেন এটাই কালপ্রিট৷ ও দুবার আমার স্ত্রীকে মারার ট্রাই করেছে৷
.
সামান্তাঃকে বলেছে প্রমান নেই৷ আমার কাছে আছে তো৷
সামান্তা ওর ফোন বেড় করে একটা ভিডিও প্লে করলো যেটাতো নিলা বলছে,,,বেশ করেছি৷ ওর তো মৃত্যু হওয়ারই ছিলো৷ ওর কারনে আমি আদিলকে পাইনি৷ আমার আফসোস হচ্ছে দুবার চেষ্টা করেও ওকে মারতে পারলাম না৷
.
আদিবঃকী পুলিশ আরও প্রমান চাই নাকি৷ ক্রিমিনাল তো নিজের দোষ নিজেই স্বীকার করছে৷
.
নিলা দৌড়ে পালিয়ে যেতে নিতেই লেডি পুলিশ ওকে ধরে নিলো৷ তারপর সবার সম্মতিতে পুলিশ ওকে গ্রেফতার করে নিয়ে চলে গেলো৷ নিলা কিচ্ছু করতে পারলো না৷

পরিবেশ একেবারে ঠান্ডা যে যার রুমে চলে গেলো৷ আদিল ও আরুহির দিকে না তাকিয়ে চলে গেলো৷
আরুহি আদিলের পিছন পিছন সেও গেলো৷

আরুহি আদিলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে বাট আদিল আরুহিকে এভয়েড করছে৷

“তুমি আমাকে এভয়েড করছো কেনো?প্লিজ কথা বলো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তো৷
,
তবুও আদিল আরুহির সাথে কথা বলছেনা৷

“কথা বলবেনা তো৷ আমার মরে যাওয়াই উচিত ছিলো তাহলে এটলিস্ট কেউ রাগ করে মুখ ফুলিয়ে রাখতো না৷

আদিল আরুহির দিকে চোখ গরম করে তাকালো৷ আরুহি আদিলের তাকানো দেখে চোখ নামিয়ে নিলো৷ আদিল আরুহি কে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷

আদিলঃআমার কী রাগ করাটা উচিত নয় বলো৷ আজ তোমার কারনে আমি আমার কলিজাকে হারিয়ে ফেলতাম যদি তুমি মরে যেতে তাহলে আমিও এমনি এমনি মরে যেতাম,আর যদি তোমার মুখে মরার কথা শুনি তাহলে আমার চাইতে কেউ খারাপ হবেনা দেখো৷
.
আদিল আমাকে তুমি করে বলছে৷(মনে মনে)

আদিল একটু মুচকি হেঁসে বললো,
“এটাই ভাবছো তো যে তোমাকে তুমি করে বলছি৷ কী করবো তখন তো আমার বোন ছিলে তাই তুই করে বলতাম কিন্তু এখন আমার বউ এখন তো একটু ভদ্র হতেই হয় তাই-না৷

উত্তরে আরুহিও একটু মুচকি হাসলো৷

চলবে♥️♥

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৮ ( বোনাস পার্ট)

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৮_বোনাস_পার্ট
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

নিলা বালি থেকে উঠে দৌড়ে পানির মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লো৷ সারা শরীর তার বালুতে মাখামাখি হয়ে গেছে৷
আদনান আর সামান্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক ডাব থেকে দুজনে পাইপ দিয়ে ডাবের জল খাচ্ছে৷ খাওয়ার মধ্যেই আদনানের মুঠোফোন বেজে উঠলো

আদনানঃআমার শাশুড়ী মায়ের কল এসে গেছে৷
.
আদনান হানিমুনে গেলে ছবি তুলে তো পাঠালে না৷
.
ঔ আসলে ছবি তোলা হয়নি দুটো তুলেছি৷ দাঁড়াও এই দুটোই পাঠাচ্ছি৷
দুটো ছবিই নিলার৷ একটার মধ্যে আরুহি ওকে নাকানি চুবানি দিচ্ছে আরেকটাতে মুখ থুবরে পড়ে আছে৷

সামান্তাঃশুধু আমরাই মজা নিবো নাকি সবারই মজা নেওয়ার অধিকার আছে হিহি৷
🍁🍁🍁
আরুহি আর আদিল দোলনায় আরও কিছুক্ষণ বসে পাড়ে চলে আসলো৷ সন্ধ্যাও হয়ে গেছে৷ সবাই রিসোর্টে ফিরে গেলো৷

আদিলঃ আরুহি তুই আগে চেঞ্জ করে নে তারপর আমি৷
.
আচ্ছা৷
আরুহি বাথরুমে চলে গেলো৷

“আআআআআআ
.
আরুহির চিৎকার শুনে আদিল দৌড়ে বাথরুমের কাছে চলে গেলো৷

“আরুহি কী হয়েছে তোর৷ ওপেন দ্যা ডুর৷
.
আরুহি দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো৷ কাপড় যেমন তেমন ওই আছে৷
.
একি তুই ড্রেস চেঞ্জ করিসনি৷
.
কীভাবে করবো৷ সব দেখা যায় গ্লাস দিয়ে আমি এখানে কাপড় চেঞ্জ করবোনা প্লিজ৷
.
ধুর এটা দিয়ে দেখা যায় না৷
.
সত্যি
.
পাক্কা৷
🍁🍁🍁
আরুহি চেঞ্জ করে আসার পর আদিল চলে গেলো চেঞ্জ করার জন্য৷ বেড়িয়ে এসে খাটের দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো৷

এই মেয়েটা কে?আর আমার রুমেই বা কী করছে৷ আরুহি কোথায়৷
.
মেয়েটি আদিলকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো৷
.
তুমি এতো হ্যান্ডসাম কেনো?
.
আরুহির কন্ঠ শুনে ঘুরলো আদিল একি এটাতো আমার আরুহি বাট ও এমন ড্রেস পড়েছে কেনো৷
একটা গেঞ্জি আর জিন্সের প্যান্ট গলায় স্কার্ফ পেছানো৷
.
তুই এসব কী পরেছিস৷
.
কেনো সবাই যা পড়ে৷
.
হুম৷
.
তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমরা এখন বীচের রাতের দৃশ্য দাড়িঁয়ে দাড়িয়ে দেখবো৷
🍁🍁🍁
সবাই রিসোর্টের পাশে দাঁড়িয়ে বীচ দেখছে৷ জ্যোৎস্নার আলো পরছে পানিতে৷ ঢেউ বালির কাছে আসতেই বালি নীল রং ধারন করছে৷ যেনো মনে হচ্ছে কেউ হীরে এনে রেখেছে এমন ভাবে চিকচিক করছে৷ এখানে সবাই আছে শুধু নিলা ছাড়া৷

সামান্তাঃএকি নিলা আপু কোথায়৷
.
আরুহিঃআমি দেখছি৷
আরুহি নিলার রুমে চেক করলো কিন্তু না সে কোথাও নেই৷ আরুহি হাঁটতে হাঁটতে রিসোর্টে একেবারে শেষ প্রান্তে চলে গেলো৷ ঠিক তখুনি দুটো হাত ওকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো৷

আরুহি নিজেকে পানির উপরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু সে পারছেনা ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে৷

এতো সময় হয়ে গেলো অথচ আরুহি এখনও আসছেনা দেখে আদিল এবার বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো৷

আদিলঃআদনান আরুহি তো এখন আসেনি৷ কোনো বিপদ হয়নি তো ওর৷
.
আদনানঃহ্যাঁ তাইতো৷চলতো গিয়ে দেখি৷
.
আদনান আর আদিল ওকে রুমে না পেয়ে আরেকটু সামনে চলে এলো৷ তখনি ওদের কানে পানিতে সাতার কাটলে যে শব্দটা করে সেরকম শব্দ পৌঁছালো৷
ওরা দৌড়ে সেখানে চলে গেলো৷
গিয়ে দেখলো নিলা হাত তালি দিয়ে হাসতেছে৷
ওরা আর নিলার দিকে না তাকিয়ে আরেকটু সামনে গেলো৷

নিচে তাকাতেই দেখলো কে যেনো পানিতে একেবারে ঘুর্ণিঝড় তুলে ফেলছে৷ আদিলের আর তাকে চিনতে বেশি সময় লাগলোনা৷
সেও ঝাপিয়ে পড়লো পানিতে৷ আরুহিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো কিন্তু সেও তাল সামলাতে পারছেনা পানি অনেক গভীর৷ আদনান দৌড়ে বড় দড়ি এনে পানিতে ফেললো৷ আদিল এক হাত দিয়ে আরুহিকে ধরলো আরেক হাত দিয়ে দড়ি৷আরুহি কোনো রেসপন্স করছেনা পুরো ভর আদিলের উপর ছেড়ে দিছে৷ আদিল অনেক কষ্টে দড়ি ধরে উপরে উঠলো৷

আদনান আরুহিকে কোলে নিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেলো
আরুহিকে চিৎকার করে ডাকছে সামান্তা আর আদনান কিন্তু আরুহির কোনো রেসপন্স নেই৷

আদনানঃরুহি বোন আমার প্লিজ চোখ খোল প্লিজ৷
.
সামান্তাঃরুহি চোখ খুলছিস না কেনো৷ তুই উঠছিস না কেনো৷ আদনান রুহি উঠছেনা কেনো ওকে আমরা হারিয়ে ফেলবো নাতো৷
.
আদনানঃনা আমার রুহির কিচ্ছু হবেনা ওর কিচ্ছু হতে দিবোনা আমি৷

আদনান পাগলের মতো রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ রিসোর্টের সবাইকে জিজ্ঞেস করছে ডক্টর আছে কী না৷ কিন্তু কোন ডক্টর নেই৷ আদনান সুপারি গাছের সাথে হেলান দিয়ে কাঁদতে থাকলো৷ আরুহিকে খুব ভালোবাসে সে৷ চোখের মনি আরুহি৷ যদি আজ আরুহির কিছু হয়ে যায় তাহলে মা বাবার সামনে কীভাবে দাঁড়াবে সে৷ আদনানের চোখ মুখ একদম লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে৷ আদনান আরুহির রুমের দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে৷ সে দেখলো আদিল একটা লোককে নিয়ে রুমে ঢুকছে৷ লোকটাকে দেখে আদনানের মনে আশার আলো জাগলো৷ সে দৌড়ে আরুহির রুমে চলে গেলো৷

আদিল লোকটার কথা অনুযায়ী আরুহির পেটে চাপ দিয়ে যাচ্ছে৷ প্রতিটা চাপে আরুহির মুখ দিয়ে পানি বেরুতে লাগলো৷ আদিল এখনও চাপ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন আর পানি আসছেনা৷ লোকটি আদিলের কাঁধে হাত রেখে বললো,,
“আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি আর সেখানকার ডক্টর আমি৷আমার সাথে আমার স্ত্রী আর বাচ্চা কাচ্চা এসেছে কেউই সাতার জানেনা তাই আমি সাথে করে অনেকগুলো ইনজেকশন এনেছি যাতে কেউ পানিতে পড়ে গিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে এই ইনজেকশনটা দিতে পারি৷ আর এই ইনজেকশন দিলে আপনার স্ত্রীরও জ্ঞান আসবে ইনশাআল্লাহ, এখন যদি আপনি বলেন তো আমি পুশ করতে পারি৷
.
আদিলঃহ্যাঁ ডক্টর নিশ্চয়৷
.
লোকটি ইনজেকশন দিয়ে চলে গেলেন আর বলে গেলেন তিন ঘন্টা পর ওর জ্ঞান ফিরবে৷

আদিল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরুহির দিকে৷ চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে৷ আদনান আর সামান্তারও সেম অবস্থা৷
🍁🍁🍁
প্রায় চার ঘন্টা পর আরুহির জ্ঞান ফিরলো৷ সে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা৷ গায়ে অনেক জ্বর৷ উঠতে চাইলে আদিল ওকে আবার শুয়ে দিলো আর ঘুমাতে বললো৷

আরুহি চোখ বুজার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো৷
.
আদিলঃসামান্তা ওকে দেখে রাখিস আমি আর আদনান একজনের সাথে দেখা করে আসছি৷
.
আদিল আর আদনান চলে গেলো নিলার রুমে৷নক করার বেশ কিছুক্ষন পর এসে নিলা দরজা খুলে দিলো৷

“আরে তোমরা এতো রাত্রে এখানে কেনো?
আদিল রুমে ঢুকেই নিলার গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলো৷

আদিলঃ”আমি প্রমিস করেছিলাম আমি আর কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলবো না কিন্তু তুই আমায় তুলতে বাধ্য করলি৷ আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তুই তোকে আমি ছাড়বোনা৷
আদিল ওকে একের পর এক চড় দিয়েই যাচ্ছে বেচারির ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরছে৷ আদিল থেমে গেলে আদনানও নিলার গালে চড় বসিয়ে দিলো৷
.
আদনানঃতুই আমার চোখের মনি আমার নিজের বোন তাকে এভাবে মৃত্যুর মুখে টেলে দিলি৷ সামান্যর জন্য রুহি বেঁচে গেলো৷ যদি আমার বোনের আজ কিছু হতো তাহলে এই মালদ্বীপে তোকেই মেরে বালিতে পুতে দিতাম৷ কথাটা বলে আদনান আরও কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলো৷
জানিস কখনো কারও গায়ে হাত তুলিনি কিন্তু আজ তুই যা করলি সেটার জন্য তুলতে বাধ্য হলাম৷ আদিল একবার আমর বোনের গায়ে হাত তুলেছিলো ওকে তো অপমান করেছিলামই সাথে সবাই কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম আর সেই জায়গায় তুই আমার বোনকে মারার চেষ্টা করেছিলি৷আমরা পৌছাঁতে আরেকটু দেড়ি করলেই আমার বোন এতক্ষনে,, আদনান আর কিছু বললো না ফুপিয়ে কেঁদে দিলো৷

আদিল নিলার হাত ধরে টেনে বাইরে ছুরে মেরে দরজা লক করে দিলো৷

নিলাঃএকি দরজা বন্ধ করলে কেনো৷?
.
আদিলঃকারন আজ সারা রাত তুই রিসোর্টের বাইরে থাকবি আর সকালে উঠে যাতে তোকে আর এখানে না দেখি তা না হলে একেবারে খুন করে ফেলবো বলে দিলাম৷
.
আদনান আর আদিল চলে গেলো৷ নিলাও আর কোনো উপায় না পেয়ে সুপারি গাছের নিচে চলে গেলো৷
🍁🍁🍁
আদিল রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই আদিবের কল তাও অডিও না ভিডিও৷ আদিবের ফোন দেখে আদিল কিছুটা ঘাবড়ে গেলো৷ তাও সে কল রিসিভ করলো৷

আদিবঃআদিল ভাইয়া আমার বোন কোথায় ও নাকি পানিতে পরে গিয়েছিলো৷আমার বোনকে দেখাও প্লিজ ওকে না দেখলে আজ রাতে ঘুমাতে পারবোনা আমি৷
.
আদিল আদিবকে দেখালো৷ আদিব আরুহিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো৷
.
আদিবঃআচ্ছা রাখছি আমি৷
.
আদিলঃশুন বাড়ির কাউকে এ বিষয়ে বলবি না৷ আমরা বিডিতে ফিরে সবাইকে বিষয়টা বলবো৷
.
আদিবঃআচ্ছা৷
.
আদিল ফোন রেখে সামান্তার দিকে তাকালো৷
“আদিবকে তুই বলেছিস তাইনা৷ ”
.
সামান্তাঃহ্যাঁ আদিব ভাইয়া ফোন করেছিলো আর বলেছিলো রুহির কাছে ফোন দিতে আদিব ভাইয়া রুহির সাথে কথা বলতে চায়৷তাই আমি বাধ্য হয়ে বলে ফেলেছি৷
.
আদিলঃঠিকাছে তোরা এখন শুয়ে পড় যা৷
.
আদনান আর সামান্তা চলে গেলে আদিল দরজা বন্ধ করে আরুহিকে জড়িয়ে ধরে সেও ঘুমিয়ে পড়লো৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৭

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৭
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

পরের দিন 🍁🍁🍁

নিলাঃশুনলাম তোমরা নাকি মালদ্বীপে হানিমুনে যাবে৷
.
আদিলঃহ্যাঁ যাবো তো৷ নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে হানিমুনে তো যেতেই হবে নাকি৷
.
নিলাঃআমিও যাবো৷ অলরেডি আমি টিকিটও কেটে ফেলসি৷
.
সামান্তাঃতুমি কেনো যাবে৷ হানিমুন তো তোমার নয়৷ আমাদের যাওয়ার কথা তুমি বরং পরে তোমার হাসবেন্ড কে নিয়ে যেয়ো৷
.
নিলাঃবেশি বকবক করিসনা৷ তোরা মালদ্বীপে গিয়ে এঞ্জয় করবি আর আমি বিডিতে বসে বসে চিপস খাবো নাকি৷
.
আদিলঃহ্যাঁ সেটাই খেয়ো৷ তবুও তুমি আমাদের সাথে আসবা না৷
.
নিলাঃআরুহি দেখোনা৷ আমি মানছি আমি তোমার সাথে তখন রাগের বশে মিস বিহেভ করে ফেলেছি তার জন্য আ’ম রিয়েলি স্যরি৷ প্লিজ আদিলকে বলো আমাকেও তোমাদের সাথে নিতে৷(ইনোসেন্ট ফেস করে)
.
আরুহিঃসত্যি তো উনাকে নিলে কী এমন হবে নিলা আপু তুমি যাবে আমাদের সাথে৷
.
আদিলঃআরুহি!!!
.
আরুহিঃহ্যাঁ নিলা আপু যাবে৷
.
নিলা কথাটা শুনে খুশি মনে চলে গেলো৷
আদিলঃআরুহি এটা তুই কী করলি৷কেনো ওকে আমাদের সাথে আসতে বললি৷ দেখ ও যদি সেখানে গিয়ে উল্টা পাল্টা কিচ্ছু করে তাহলে সেটার দায়ভার কিন্তু তোকেই ভোগ করতে হবে৷
.
আরুহিঃসেটা মালদ্বীপে গেলেই দেখা যাবে৷
🍁🍁🍁🍁🍁
পরের দিন🏝️🏝️

আমাদের সকালের ফ্লাইট৷ প্লেনে বসে আছি আমরা কাপল আর নিলা৷ জীবনের প্রথম প্লেনে উঠলাম বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে৷ আদিলের তেমন ভয় করছেনা উনি অনেকবার প্লেনে উঠেছেন৷ আরেকটু পরেই প্লেন আকাশে উড়াল দিবে৷ সবাই সিট বেল্ট লাগাচ্ছে৷ আদিল নিজেরটা লাগিয়ে আমারটাও লাগিয়ে দিলো৷

প্লেন চলছে তার আপন গতিতে কত সুন্দর জানালা দিয়ে মেঘ দেখা যাচ্ছে৷ গ্লাস না থাকলে সাথে করে এক টুকরো মেঘ নিয়ে যেতাম৷
আদনান ভাইয়া সামান্তাকে জুস খাওয়াচ্ছে৷ যেনো মনে হচ্ছে দুই বছরের বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে হিহি৷
🍁🍁🍁
আমরা মালদ্বীপের যে রিসোর্টে উঠেছি সেটা বীচের কাছেই৷ রিসোর্টটা আসলেই খুব সুন্দর৷ কী সুন্দর চারিদিকে নীল স্বচ্ছ পানি আর পানি৷ আমাদের রুমের সামনে আবার ছোট্ট সুইমিংপুলও আছে৷ রিসোর্টে বাঙালীদের দেখাই যাচ্ছেনা সবাই ফরেইনার আর কী ড্রেস রে ভাভা৷

আদিলঃ পানি দেখা শেষ হয়ে থাকলে এবার ভিতরে চলুন ম্যাডাম৷ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে তারপর আমরা সবাই বেরুবো সী বিচ দেখার জন্যে৷ এর এখানের চারিপাশ রাত্রে দেখবো৷
🍁🍁🍁
ওয়াও রুমটাতো দেখছি আরও বেশি সুন্দর৷

ফ্রেশ হয়ে বসে রইলাম৷ বেশ কিছুক্ষন পর আদিল খাবার নিয়ে আসলো৷ সব নাম না জানা খাবার৷ চোখেও কোনদিন দেখিনি৷আস্ত আস্ত মাছ ভাজা৷ শামুক আর নুডুলসে্র মতোও কী জেনো আছে৷

আদিলঃএমা এগুলো কী৷
.
এগুলো মালদ্বীপের বিখ্যাত ফিস৷ অর্ধেক কাঁচা করে ভেঁজেছে কিন্তু খেতে সেই৷ অনেক রকমের মশলা দেয় এটাতে যার কারনে এর স্বাদ আরও দ্বিগুন বাড়ে৷একটু খেয়ে দেখ৷
.
আমি এক চামচ মুখে দিয়ে দেখলাম না সত্যিই খাবারটা অনেক টেস্টি৷
আদিলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলাম৷
🍁🍁🍁
সামান্তাঃঔ এসব আমি খাবোনা৷ দূরে সরাও আমার খিদে পেয়েছে আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো ভাত৷
.
স্যরি জান এখানে ভাত পাওয়া যায়না৷
.
ওয়াট তাহলে কী এই ফরেইনার গুলো এসব মাছ,শামুক, কেঁচো খায় নাকি৷ ওয়াক
.
দেখ সামু এসব শামুক কেঁচো না এটা খেয়ে দেখ খুব মজা৷
.
মজা মাই ফুট৷ এসব তুমিই খাও আমি খাবোনা আমি ভাত চাই
.
নিলাঃসামু পাগলামো করিস কেনো সত্যিরে খাবারটা আমিও প্রথম খাচ্ছি খুব ইয়াম্মি৷
.
আদনান সামান্তার মুখে টিপে ওর মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো৷ সামান্তা যতক্ষণ না খাবে ততক্ষণ সে এভাবেই মুখ টিপে ধরে রাখবে৷

সামান্তা খাওয়ার পর আদনান ওর মুখ ছাড়লো৷ সামান্তা আদনানের হাত থেকে প্লেট ছো মেরে নিয়ে গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে৷
.
আগে বলবে তো খাবারটা কি যে ইয়াম্মি৷ আল্লাহ মন চাইতেছে মালদ্বীপের সব ফিস একসাথে খেয়ে ফেলি৷
.
আদনান ওর দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে৷

কী হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো৷ আমার পেটে ব্যাথা করবে তো৷
.
তুই তিন প্লেট খাবার একসাথে খেয়ে ফেললি আমাকে একটু দিলিনা৷
.
স্যরি গো আমার না খুব খিদে পেয়েছিলো তোমার কথা একটুও স্মরণ ছিলোনা৷
🍁🍁🍁
আদিল আর আরুহি একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছিলো৷ আদনান কোথা থেকে এসে প্লেটটা নিয়ে নিজে গাপুসগুপুস করে খেতে লাগলো৷ সব খেয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে একটা বড় ঢেকুর তুললো৷

আরুহিঃএটা কী হলো৷
.
আদনানঃকী আর হবে আমার খুদে পেয়েছে তাই খেয়েছি শুধু কী তোরাই খাবি আমি খাবোনা৷
.
আদিলঃনিজে না তিন প্লেট খাবার নিলে ওসবের কী হলো৷
.
আদনানঃ আমি কী শখ করে তোদের খাবার খাইসি নাকি যে খাবারগুলো নিসিলাম সব তোর রাক্ষস বোন খেয়ে ফেলসে আমাকে একটুও দেয়নাই৷
.
আদিলঃখাবার আবার নিয়ে আসলেই তো হতো৷
.
আদনানঃসব নাকি শেষ
🍁🍁🍁
রুমের সামনের সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসে আছি৷ কোথা থেকে একটা ফরেইনার দলা চামড়ার একটা মেয়ে এসে পাশে বসে পড়লো৷

হাই ওয়াটস্ ইওর নেম?
.
আরুহি৷
.
ওয়াও নাইস নেম৷ মাই নেম ইজ জ্যাকি৷ বাট ওয়ার আর ইউ ফ্রম?
.
বাংলাদেশ৷ এন্ড ইউ৷
.
ইংল্যান্ড৷
.
ওরে ব্রিটিশ বান্দরনি৷
.
আর ইউ সেয়িং সামথিং?
.
নট৷
.
বাই নাইস টু মিট ইউ৷
🍁🍁🍁
বিকেলে সবাই বীচে এসেছি৷ বীচটা আসলেই খুব সুন্দর৷ অনেক গুলো নারকেল গাছও আছে৷ নেটের দোলনাও আছে৷ সামান্তা সেখানে একবার বসছে তো আরকে বার নামছে তার নাকি ভয় করে৷
আদিল আর আদনান ভাইয়া গেছে ডাব আনার জন্যে৷

নিলাঃআরুহি চলো পানির মধ্যে খানে যাই৷
.
আরুহিঃনা আমি সাতার জানিনা
.
নিলাঃআরে এটা বেশি ডিপ নয়৷ দেখতে পাচ্ছোনা মাছ দেখা যাচ্ছে মাটিও দেখা যাচ্ছে৷ আমি ওতো সাতার জানিনা চলো একসাথে যাই৷

আমি নিলা আপুর সাথে গেলাম৷ একটা জিনিস লক্ষ করছি সে পানির মধ্যে হাটার সময় এক পা আগে রাখছে আরেক পা পিছে৷ বিষয়টা আমার কাছে খটকা লাগলো৷ আমিতো স্বাভাবিকই হাটছি৷ দেখতে দেখতে অনেক গহীনে এসে গেছি৷ পানির মধ্য খানেও দোলনা আছে৷ এসব যে কে এখানে রাখে আল্লাহ মালুম৷
হঠাৎই নিলা আপু আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে পানিতে ফেলে দিলো৷ আমিও কম না উল্টো তার হাত ধরে তাকেই ঘুরিয়ে ফেলে দিলাম৷তারপর চুলে ধরে কয়েকটা নাকানি চুবানি দিয়ে দূরে টেলে দিলাম৷ বজ্জাত মাইয়া আমাকে ফেলতে চাইছিলো৷ পা দিয়ে জায়গাটা চেক করে দেখলাম এখানে আমার পা মাটির নাগাল পাচ্ছেনা মানে জায়গাটা ডিপ৷ শয়তান মাইয়া এই ছিলো ওর আসল উদ্দেশ্য৷তবুও বেটি সাতার কেটে আবার আগের জায়গায় চলে আসলো৷ সেখানে আর না দাঁড়িয়ে একেবারে পাড়ে চলে গেলো৷

আরুহিকে এতো দূরে দেখে আদিল ডাব পাড়ে ফেলেই দৌড়ে আসলো৷

“আরুহি ঠিক আছিস তুই৷
.
হুম৷
.
আমি সব দেখেছি কীভাবে ও তোকে গভীরে ফেলে দিতে চাইছিলো৷ আমি ফার্স্টই তোকে বলেছিলাম যে ওকে নিয়ে আসিস না৷
.
ওতো আমায় ফেলতে পারেনি উল্টো ওকে আমি ফেলে দিয়েছি৷সাথে নাকানি চুবানিও দিয়েছি৷
.
যাইহোক এই দোলনায় উঠবি৷
.
যদি ছিড়ে যায়৷
.
ধুর পাগলী এটা ছিঁড়বে কেনো৷
.
আদিল দোলনায় উঠে আমাকেও উপরে তুলে তার কোলে বসিয়ে দিলো৷ পানির মধ্যখানে বসে আছি আমরা দুজন৷পায়ের নিচ দিয়ে রং বেরংয়ের মাছ সাতার কাটছে৷ অনেকটায় আবার এসে আমাদের পায়ে কিস করছে৷ কী সুন্দর লাগছে৷ মন চাচ্ছে সবকটাকে কোলে তুলে নেই৷
🍁🍁🍁
সামান্তাঃনিলা আপু তুমি দোলনায় উঠো আমি ধাক্কা দিচ্ছি৷
.
নিলাঃআস্তে দিবি কিন্তু৷
.
ওকে৷ নিলা দোলনায় উঠে বসলো৷ সামান্তা দোলনাটা টেনে জোড়ে ধাক্কা মারলো৷ এমন ভাবে মারলো নিলা মুখ থুবরে বালিতে পরে গেলো৷

ঔ সামান্তা তুই আমাকে এভাবে কেনো ধাক্কা মারলি৷ বলেছিলাম না আস্তে দিবি৷
.
এটা রুহিকে পানিতে ফেলার ফল৷

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৬

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৬
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

দেখতে দেখতে জীবন থেকে কীভাবে দু’বছর কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না৷এই দু’বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও আমাদের ভালোবাসার কোন পরিবর্তন হয়নি৷ আজ আমার আর আদিল ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে আর আমি এখন বাসরঘরে বসে তার জন্যই অপেক্ষা করছি৷রিমু আপুও আমাদের সাথে স্বাভাবিক হয়ে গেছে৷সবাই অপমান করতো বেচারিকে ওর এমন ব্যবহারের জন্য কেউ ওকে ভালোবাসতো না৷ সবাই এভয়েড করতো৷ তাই আপু আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে৷ খুব নম্র ভদ্র হয়ে গেছে৷কয়দিন আগে তারও বিয়ে হয়েছে৷ অদ্রিতা আপুর একটা ছেলে হয়েছে আর আয়েশা আপু প্রেগন্যান্ট৷আদিব ভাইয়াও একজন সার্জন হয়ে গেছে৷ আর আহিল ভাইয়া সিবিআই৷ বড় আব্বু উনার কথা রেখেছেন আমাদের জোড়া জোড়া বিয়ে দিয়েছেন৷ সামান্তাও এখন হয়তো বাসরঘরে বসে আদনান ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছে৷
দরজা খুলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার৷ তাকিয়ে দেখলাম আদিল ভাইয়া এসেছে৷ আমি খাট থেকে নেমে এগিয়ে গেলাম সালাম করবো বলে৷ ভাইয়ার সামনে গিয়ে নিচে ঝুকতেই ভাইয়া দুইকদম পিছিয়ে গেলো৷

“ভাইয়া সালাম করবো তো৷ পা সরাচ্ছো কেনো??
.
প্রথমে ভাইয়া ডাকা অফ কর৷
.
কেনো ভাইয়াকে তো ভাইয়াই ডাকবো৷ আসো আসো সালাম করবো৷
.
এখন আমি আর তোর ভাই নই স্বামী তাই আদিল বল৷
.
আদিল৷
.
“হুম৷ এখন ঠিক আছে৷”
আদিল এগিয়ে এসে আমায় কোলে তুলে নিলো৷

“আরে আরে কী করছো নামাও নিচে নামাও সালাম করবো তো৷
.
এসবের আর দরকার নেই জান৷
🍁🍁🍁🍁
সকালে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো সামান্তা৷ আদনানকে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো৷

“ওই সামুর বাচ্চা ঘুমাতে দে৷ বিয়ে হতে না হতেই কী শুরু করছিস৷(চোখ বুঝে ঘুম ঘুম কন্ঠে)
.
ওই আদনানের বাচ্চা আমার শাড়ি গায়ে দিয়ে ঘোমাচ্ছো কেনো৷
.
তাহলে তোর গায়ে কী৷
.
“কেনো আমার গায়ে তো আমার ড্রেসই”৷
সামান্তা আদনানকে দু-হাত দিয়ে টেনে তুললো৷
আদনান তাকিয়ে দেখলো সত্যি ওর গায়ে সামান্তার শাড়ি প্যাচানো৷
.
আসলে কাল রাতে আমার খুব ঠান্ডা লাগছিলো৷ তুই ব্লাঙ্ককেট তোর কাছে নিয়ে গেছিলি৷ আমি টেনে একটুও আনতে পারিনি৷ তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশে তোর শাড়ি তাই শাড়ি দিয়ে প্যাচিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
.
কাল থেকে তুমি সোফায় ঘুমাবা আর আমি খাটে৷তোমার টানাটানির জন্য আমি ঘুমাতে পাড়িনা৷
.
তোর শখ থাকলে তুই গিয়ে সোফায় থাক৷ আমি আমার খাট তোর জন্য সেক্রিফাইজ করতে পারবোনা৷
.
তাহলে আমি গিয়ে রুহির কাছে ঘুমাবো৷
.
রুহি এখন আর সিংগেল না মিংগেল হয়ে গেছে সো এখন ওর কাছে শুতে গেলে তোকে লাত্তি মেরে আবার আমার কাছেই পাঠাবে৷
🍁🍁🍁🍁
সকাল সকাল আদিলকে আমার খুব কাছে দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেলো৷ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে আর মৃদু বাতাসে উড়ছে৷ ছেলেরাও এতো সুন্দর হয়৷ ভাবতেই আনন্দ লাগছে যে সে এখন থেকে আমার স্বামী৷
ওপাশের রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে৷ নিশ্চয় এই দুজন ঝগড়া লাগছে৷ আল্লাহ্ বিয়ের পরের দিনই কী শুরু করসে আল্লায় জানে৷
আমি ফোন হাতে নিলাম সামুকে ফোন দিবো৷ আজ ও আর আমি সবার জন্য নাস্তা বানাবো৷ ফোন হাতে নিয়ে উঠতেই আদিল আমাকে টেনে ওর বুকের ওপর ফেলে দিলো৷

“তুমি কখন জাগলে?
.
যখন তুই খুব মনোযোগ দিয়ে আমায় দেখছিলিস তখন৷ এমন ভাবে দেখছিলিস আমার খুব লজ্জা করছিলো৷
.
আচ্ছা ছাড়ো আমি আমার স্বামীকে দেখেছি কার বাপের কী৷ আর তোমারই বা এতো লজ্জা এলো কোথা থেকে৷
.
হুম সেটাই৷ কার বাপের কী৷
🍁🍁🍁🍁
আমি আর সামান্তা মিলে নাস্তা বানিয়ে ডাইনিংয়ে রাখছি৷ আদিল আর আদনান ভাইয়া সোফায় বসে আছে৷
রিংকি আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে সিড়ি বেয়ে দৌড়ে নিচে নামলো৷

রিংকিঃএই দেখি দেখি৷
.
সামান্তাঃকী দেখবি৷
.
রিংকিঃতোদের গলা দেখি
.
আরুহিঃকেনো দেখবি৷
.
রিংকিঃআরে এমনি৷
হুম তোদের গলায় এই লাল লাল দাগ কিসের৷

কথাটা শুনে আমি আদিল আর আদনান ভাইয়ার দিকে তাকালাম ওরা একজন আরেকজনের দিকে চুরের মতো তাকাচ্ছে৷

আরুহিঃপিঁপড়া কামড় দিসিলো৷ তাই না সামু৷
.
রিংকিঃহ্যাঁ পিঁপড়া অনেক বড় পিঁপড়া৷
.
আরুহিঃসর তো আমাদেরও সময় আসবে৷
🍁🍁🍁🍁
আমি আর সামু মিলে খাবার সার্ভ করছি৷ মা আর চাচীমনি আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিয়েমিটিয়ে হাসছেন৷

মাঃবাহ আমাদের সামান্তা আর আরুহি তো দেখছি খুব সংসারী হয়ে গেছে৷ কী সুন্দর একরকম শাড়ি পড়েছে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে৷ খুব ভালো লাগছে৷

চাচীমনিঃহুম আমার মনে হয় এখন আমরা একটু অবসরে যেতে পারবো৷ আর কাজ কর্ম করতে হবেনা৷

বাবাঃশুধু কী তোমারই অবসরে যাবে আমরা দুই ভাই ওতো অবসরে যাবো৷

মাঃকীভাবে?

বড় আব্বুঃকেনো এখন থেকে আদনান আর আদিল বিজনেস দেখাশুনা করবে৷ সামাম্তা আর আরুহি সংসার সামলাবে আর আদনান আদিল ওরা দুই ভাই অফিস৷

মাঃকী তোমরা অফিসে যাবে তো৷

আদনানঃহ্যাঁ মা যাবো৷ এখন তো বউ আছে সংসার আছে বাচ্চা কাচ্চা হলে তাদেরকে কী খাওয়াবো তাই না আদিল?

আদিলঃহুম৷

আদিব সবার দিকে ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে আর আহিল নাক ফুলিয়ে নিজের খাবার শেষ করছে৷

মাঃকী হলো আদিব আহিল তোমরা মুখ এরকম করে রেখেছো কেনো৷

আদনানঃহ্যাঁ তোরা এমন হুতুম পেঁচার মুখ করে রয়েছিস কেনো৷

আদিবঃহ্যাঁ এখন তো আমাদের তোমাদের কাছে হুতুম পেঁচার মতোই মনে হবে৷ বউ পাইছো না এখন তো আমরা কেউ না৷

আদিলঃওহ্হহ বুঝতে পারসি৷ তোরাও বিয়ে করবি তাইতো৷ কিন্তু এখন না৷ আহিল তুই সিবিআইতে আগে জয়েন কর আর আদিব তুই ডক্টর তাই তোর কাজ হসপিটালে থাকা রোগ্যকে আরোগ্য করা৷ আরও পরে তোদের বিয়ে দিবো৷

বড় আব্বুঃআগে তোমরা প্রতিষ্ঠিত হও তারপর আমরা তোমাদের বিয়ে নিয়ে ডিসকাস করবো৷
🍁🍁🍁🍁
সোফায় বসে আমরা সবাই গল্প করছি৷ আদনান ভাইয়া বাবা, মা,বড় আব্বু,চাচীমনি তাদের বিয়ের গল্প বলছে বাবা আর বড় আব্বু নাকি একসাথে বিয়ে করেছিলেন৷হঠাৎই আমার চোখ পড়লো মেইন ডুরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের দিকে৷ দেখে বেশ স্মার্ট মনে হচ্ছে৷বেশ কিছুক্ষণ লাগলো ওকে চিনতে৷

আরুহিঃআরে এটাতো নিলা আপু৷
.
আমার কথা শুনে সবাই থাকালো৷ নিলা দৌড়ে এসে আদিলকে জড়িয়ে ধরলো৷

নিলাঃআদিল কেমন আছো৷ আর কেমন দিলাম সারপ্রাইজ৷
.
আদিলঃভেরি ব্যাড৷ তুমি আসবে আগেতো বলোনি৷
.
নিলাঃবললে সারপ্রাইজ দিতাম কী করে৷
.
নিলা আমার সাথে আর সামুর সাথে হ্যান্ডশেক করলো৷

নিলাঃআচ্ছা আমি বুঝতে পারছিনা সামান্তা আর আরুহি একরকম শাড়ি পড়েছে তাও বিবাহিত মেয়েদের মতো৷
.
আহিলঃও তোমাকে তো বলাই হয়নি সামান্তা আর আরুহির বিয়ে হয়ে গেছে৷
.
নিলাঃমাই গড৷ তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তা তোমাদের হাসবেন্ড কোথায় আর কী করে তারা৷
.
আদিবঃহাসবেন্ড তোমার পাশেই আছে৷
.
নিলাঃওয়াট৷ বাট কোথায়??
.
আহিলঃআদিল আর আদনান৷
.
নিলাঃকীহ্ আদিল বিয়ে করে ফেলেছে তাও আরুহিকে কিন্তু কেন?খালামনি তো আমাকে বলেছিলো আমার সাথে আদিলের বিয়ে দিবে তাহলে আরুহির সাথে কেনো?আর এই মেয়ের মধ্যে কী এমন দেখলো যে ওকে বিয়ে করে নিলে৷ওর চেয়ে তো আমিই অনেক সুন্দর৷

আদিবঃহ্যাঁ চাচীমনি বলেছিলো কিন্তু কথাতো আর দেয়নি৷ আর সবসময় রুপের এতো অহংকার করো কেনো৷ আমার বোন তোমার চেয়ে কোন অংশে কম নয়৷
.
নিলাঃদেখা আছে৷৷
.
আদিলঃনিলা আমার আরুহিকে পছন্দ তাই আরুহিকে বিয়ে করেছি ওকে আমি ভালোবাসি৷ আর তুমি কানাডায় থাকো আই হোপ তোমার জন্য ছেলের অভাব নেই৷
.
নিলাঃহ্যাঁ অভাব নেই কিন্তু তোমার মতো ছেলেদের অভাব আছে৷ কেনো তুমি ওকে বিয়ে করলে আদিল কেনো৷
.
আদিলঃআমার মনে হয়েছে তাই বিয়ে করেছি৷ তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই৷ নিজের সীমায় থেকো৷ সীমা লঙ্ঘন করোনা৷
চল আরুহি৷
আদিল আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো৷

আদিলঃআরুহি তুই নিলার কথায় একদম কিছু মনে করিস না৷এই মেয়ে গায়ে পরা টাইপের৷অহংকারী৷
.
আমি মাথা নাড়ালাম৷ কিন্তু সত্যি বলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে৷

আদিল ল্যাপটপ নিতে নিতে বললেন,জানিস রুহি বাবা আমাাদের হানিমুনের জন্যে মালদ্বীপের টিকিট কেটেছে৷
.
ওয়াও রিয়েলি৷
.
জ্বী ম্যাডাম৷
.
আমার খুব শখ মালদ্বীপে যাওয়ার৷ সেখানকার পরিবেশ, ওয়েদার,ন্যাচার খুব সুন্দর বিশেষ করে পানি৷
.
হুম৷
🍁🍁🍁
খালামনি আদিল বিয়ে করেছে তাও আরুহিকে কিন্তু কেনো আমি ওর চাইতে খারাপ নাকি৷
.
নিলা আমার ছেলে ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে৷ আর আদিল কাকে বিয়ে করবে না করবে সেটা ও নিজে ডিসাইড করবে৷ বিয়ে তো সে করবে আমরা না৷ তাই আমার মনে হয় তোমার এসব বিষয়ে নাক না গলানোই ব্যাটার৷ তাছাড়াও আরুহি আমার নিজের মেয়ের মতোই সামান্তাকে আর ওকে আমি কোনদিন আলাদা চোখে দেখিনি৷ তাই আরুহি আমার পুত্রবধূ হওয়াতে আমার কোন আপত্তি নেই৷ আই হোপ আমি কী বলছি তুমি বুঝতে পারছো৷
🍁🍁🍁
আদিল আর আরুহি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে৷ বাতাসে আরুহির আঁচল উড়ছে চুল উড়ছে আর সেটা আদিল মুগ্ধ হয়ে দেখছে৷ টব থেকে একটা কাঠগোলাপ এনে চুলের একপাশে গুজে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো৷

“তোকে এই রুপে খুব সুন্দর লাগছে রুহি৷আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি৷ ”
আদিল কথাটা বলে আরুহির কানে চুমো দিলো৷

আরুহিও মুচকি হেসে আাকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো৷

আদিলঃআই লাভ ইউ৷
.
আই লাভ ইউ টু৷

চলবে♥️

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আসল ভিলেন কিন্তু এসে গেছে😒😒)

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৫

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৫
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রিংকি এক হাত দিয়ে তার চোখ মুচছে আরেক হাত দিয়ে ব্যাগে কাপড় ঢুকাচ্ছে৷
রিংকির এই অবস্থা কেনো

আরুহিঃরিংকি কী হয়েছে তোর? তুই কাপড় কেনো ব্যাগে ঢুকাচ্ছিস? আজ চলে যাবি নাকি? কিন্তু তোর তো আরও চার পাঁচ দিন পারে যাওয়ার কথা৷
.
রিংকিঃছাড় রুহি আমি আর তোদের বাড়িতে থাকবোনা৷ আমি এক্ষুনি আমার নিজের বাড়ি চলে যাচ্ছি৷
.
আরুহিঃআহিল ভাইয়া জানে যে তুই চলে যাচ্ছিস৷
.
রিংকিঃসে জানলেই কী আর না জানলেই কী৷
.
আরুহিঃদেখ রিংকি আজ বিয়ে তাই এসব পাগলামু একদম করিস না৷ আর কী হয়েছে সেটাতো এটলিস্ট বলবি৷
.
রিংকিঃকী বলবো আমি৷ আমি যে কাল রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলাম সেটা আদিব ভাইয়া ভিডিও করেছে সে নাকি দেওয়ালের ওপারে ছিলো৷ সেটা দেখে সবাই হাসছে আদনান ভাইয়া আমাকে যেখানে দেখছে সেখানেই বলছে ধপাস ধপাস৷ তাছাড়াও একজন আমাকে খুব কটু কথা শুনিয়েছে৷
.
আরুহিঃআমি দেখছি৷ কিন্তু কিছুতেই আজ বাড়িতে যাবিনা৷
.
ওকে এতো জোড় কেনো করছিস রুহি৷ ও যাবেনা শুধু এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করছে৷
.
আরুহিঃএসব তুমি কী বলছো রিমু আপু৷ ও কার এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করবে৷

রুহিঃকার আবার আহিলের৷ আমি জানি সব কিছু৷ আর কী বলতো ও এতো বড় বাড়ি দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি তাইতো আহিলের গলায় ঝুলে পড়লো৷ আর আহিলেরও বা কী চয়েজ একেই চয়েজ করলো৷ ও কী আমার থেকে সুন্দরী নাকি৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ সুন্দর তোমার চেয়ে শতগুণ সুন্দর নিজেকে আয়নায় দেখেছো কখনো পুরা বান্দরনির মতো লাগে তোমাকে৷
.
রিমুঃউফফ কাম অন রুহি তোর ঝগড়া করার স্বভাবটা একদমি গেলোনা৷ কোথায় এতদিন পর আসলাম একটু ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবি তা না বান্ধবীর পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করছিস বাই দ্যা ওয়ে আমি আদির কাছে যাচ্ছি দেখি আমার জান্টুসটা কী করছে৷
.
আদিল ভাইয়ার কথা শুনে ধক করে উঠলো আমার বুক৷ এই রিমু আপু যখন এসেছে তখন নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল পাকাবে৷

রিংকিঃদেখলি রুহি তোর ফুফুর মেয়ে আমাকে লোভী মিন করলো৷ আমি থাকবোনা এখানে৷
.
আরুহিঃরিংকি রিমু আপু এমনই৷ তুই থাক আর ওকেও জ্বলতে দে৷
🍁🍁🍁🍁
দুপুর ১২টা বেজে ২০ মিনিট সবার সাজগোছ কমপ্লিট৷ আমরা লেহেঙ্গা পড়েছি আর ছেলেরা শার্ট কোট৷ সবাইকেই খুব সুন্দর লাগছে৷ রিমু আপু তার লেহেঙ্গা ধরে ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে৷ যেনো বুঝা যাচ্ছে হাঁটু পানির মধ্যে হাঁটছে৷
এসেই তার ভাব মারা শুরু হয়ে গেলো৷

রিমুঃআদিল আমাকে কেমন লাগছে৷
.
আদিলঃএক্সকিউজ মি আমার কাজ আছে আমি ঔদিকে যাচ্ছি৷
..
রিমুঃএই আদিলটা সব সময় আমার সাথে এমন করে৷ আদনান আমাকে কেমন লাগছে৷
.
আদনানঃওয়াও ইউ আর সো,,,সামান্তার চোখ রাঙানো দেখে আদনান একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো,,একচুয়েলি ইউ আর সো আগলি৷
.
রিমুঃওয়াট৷ আমি আর আগলি ওহ মাই গড৷ আর ইউ কিডিং উইথ মি আদনান৷
রিমু আহিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে রিংকির দিকে তাকিয়ে আছে৷ রিমু বিরক্তি নিয়ে রিংকির দিকে এগিয়ে গেলো৷

রিংকিঃএই মেয়ে তুমি এখনও যাওনি৷
.
রিংকিঃস্যরি এটা আপনার বাড়ি নয় যে আপনি বললেই আমি চলে যাবো৷
.
আরুহিঃও কেনো যাবে ও আমাদের গেস্ট সো রেসপেক্ট হিম৷
.
সামান্তাঃতোমার এতো সমস্যা কেনো হচ্ছে বলোতো আমায়৷ আসলে কী চাও তুমি এটলিস্ট বলতো৷ এই জন্য শুধু মাত্র এই জন্য আমরা কেউ তোমাকে পছন্দ করিনা৷ তুমি আসলেই আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টি করো৷ যেমন আছো ঠিক তেমন থাকবা৷
.
রিমুঃওহ্ কাম অন সামু এখন কী তোর কাছ থেকে আমায় এডভাইস নিতে হবে নাকি৷ তুই ও না৷ তোর এই সাধারন বান্ধবীর জন্য আমার সাথে তর্কে জড়াচ্ছিস৷
.
আহিলঃকাকে তুমি সাধারন বলছো রিমু আমার রিংকি কিন্তু সাধারণের মধ্যেই অসাধারন৷ নেক্সট টাইম যদি ওর সাথে এভাবে কথা বলতে দেখি তাহলে আমার চাইতে কেউ খারাপ হবেনা গট ইট৷
.
রিমুঃহলো তো তোদের এবার শান্তি৷আর ওদের চার ভাইয়ের জন্য মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি৷ আদিলও প্রেম করছে তাও তোর সাথে বিশ্বাস করতে পারছিনা৷ কী করে বিশ্বাস করবো বলতো ওই আদিল তো এক নাম্বারের লুজার একটা৷ছয় মাস আমার সাথে রিলেশনে ছিলো তারপর হঠাৎই একদিন আমায় ফোন করে বললো আমার সাথে নাকি সে কোনো সম্পর্ক রাখবেনা৷ তার নাকি আরেক মেয়েকে মনে ধরেছে৷ ভাবতে পারছিস রুহি৷ আর এটাও বলেছে আমার সাথে নাকি এতদিন টাইম পাস করেছে৷ দেখ ও তোর সাথেও টাইম পাস করছে কী না৷
.
“কে কার সাথে টাইম পাস করছে রিমু৷
.
আদিল ভাইয়ার কন্ঠ শুনে তার দিকে তাকালাম আমি৷ ভাইয়ার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে৷মুখে রাগ স্পষ্ট৷

আসলে আদিল,,,

আদিল রিমুর গালে চড় দিতে গিয়েও থেমে গেলো৷ দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করলো৷
“আহিল কী বলে গেছে শুনিসনি৷আমি তোর সাথে কখন রিলেশনে গিয়েছিলাম৷ আর কোন মেয়েকে মনে ধরেছে আমার৷ যদি কোন মেয়েকে আমার মনে ধরে থাকে তাহলে সেটা শুধুমাত্র আরুহি৷ আর আজ বিয়ে তাই সিন ক্রিয়েট করতে চাইছিনা৷ তা না হলে আজ আমি তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিতাম৷
আদিল হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷
.
রিমুঃকত সাহস ওর ও আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিবে আমি এর আগেই চলে যাবো৷ বিয়ে শেষ হলেই চলে যাবো৷ থাকবোনা আর এই জাহান্নামে৷
🍁🍁🍁🍁
বর যাত্রী চলে এসেছে৷ সবাই তাদের আপ্যায়ন করায় ব্যস্ত৷ রিমুর কাজ পড়েছে বরের ভাই আর তার বন্ধুদের শরবত দিয়ে আসা৷ ট্রে হাতে শরবত নিয়ে গেলো উপরে৷ সবাইকে শরবত দেওয়া শেষ হয়ে গেলে চলে আসতে নিবে ওমনি ওর ওরনায় টান পড়লো৷ রিমু পিছনে একবার তাকিয়ে আর কোন কিছু না ভেবে ঠাসসস করে চড় বসিয়ে দিলো বরের ভাই আকাশের গালে৷ সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ একটায় মুখে সবেমাত্র শরবত দিয়েছিলো এমন ভাবে হা করে তাকিয়ে আছে তার মুখ দিয়ে যে গলগল করে রক্তের মতো শরবত পড়ে পাঞ্জাবী ভরে যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই৷

রিমুঃমেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করার শখ জাগে তাই না৷শুন তুই যদি মনে করিস আমি তোর মতোই লুচ্চি তাহলে ভুল ভাবছিস৷ আমি এসব অসভ্যতামী একদম পছন্দ করিনা৷ বরের ভাই আমাদের গেস্ট তাই আজকে ছেড়ে দিলাম তা নাহলে ঠাসস করে চড় মেরে তোর এক গাল আরেক গালে ঢুকিয়ে দিতাম হতচ্ছাড়া৷কোন সাহসে আমার ওরনা ধরে টান দিয়েছিস৷ ছাড় বলছি৷
.
আকাশঃআমি কোন দুঃখে আপনার ওরনায় ধরে টান দিতে যাবো৷আর চড় তো অলরেডি একটা দিয়েছেনই আবার বলছেন বরের ভাই গেস্ট তা নাহলে চড় বসিয়ে দিতেন৷ গেস্টদের সম্মানও করতে জানেন না দেখছি৷ কেউ গেস্টকে চড় দিয়ে আপ্যায়ন করায় সেটা প্রথম দেখলাম৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখেন তো৷আপনার ওরানাটা আসলে কে ধরেছে৷

রিমু এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার ওরনা সেন্ট্রার টেবিলের কোনার সাথে আটকে আছে৷ রিমু ওরনাটা ছুটিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললো “স্যরি৷ বলে সে দ্রুত চলে গেলো৷

রাহুলঃআচ্ছা এই মেয়ে চড় দিলো একজনকে আর স্যরি বললো সবার দিকে তাকিয়ে যেন মনে হচ্ছে চড়টা একজনকে না আমাদের সবাইকে দিসে৷

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৪

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

দেখতে দেখতে আরও চারদিন কেটে গেলো৷ আগামীকাল অদ্রিতা আপুর বিয়ে৷ রিংকি কালই চলে এসেছে৷ আজ সকাল থেকে কাজের পর কাজ৷ দুপুরে হলুদ অনুষ্ঠান আর সন্ধ্যায় মেহেদী অনুষ্টান৷
আমি, সামু, রিংকি, ফারিহা, আয়েশা আপু আমরা কাঁচা হলুদ আর টিয়া কালার পারের সুতি শাড়ি পড়েছি৷ শাড়িতেই নারী কথাটার আবারো প্রমাণ পেলাম৷ আসলেই সবাইকে শাড়ি পড়াতে খুব ভালো লাগছে৷ আরও বেশি ভালো লাগছে রিংকি আর ফারিহাকে দেখে৷ ওরা দুজন নিজের বাড়ির মতো হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে দেখে মনেই হচ্ছেনা এটা ওদের বাড়ি নয়৷

ফারিহা আর রিংকি পাটায় হলুদ বাটছে৷ আর আমি আর সামু বসে বসে ডাল থেকে মেহেদী পাতা আলগা করছি৷ ওরা হলুদ বাটার পর আমরা মেহেদী পাতা বাটবো৷
ফারিহা আর রিংকি হলুদ বেটে বাটিতে রেখে চলে গেলো৷ আমার ফোনে চার্জ না থাকায় উপরে গেলাম হঠাৎই একটা হাত আমায় টেনে নিয়ে গেলো৷ চিনতে অসুবিধা হলোনা কার হাত এটা৷
আদিল ভাইয়া আমাকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন৷

আরুহিঃকী??? কী সমস্যা৷
.
নাথিং ডিয়ার৷
.
“তাহলে এভাবে চেপে ধরেছো কেনো ছাড়ো নিচে সবাই ওয়েট করছে সবাইকে হলুদ লাগাতে হবেতো লেইট হয়ে যাচ্ছে৷”
আদিল তবুও ছাড়ছেনা আরও হেসে তাকিয়ে আছে৷

“আরে ছাড়ো না রে৷
.
উম,,হুম৷
.
আদিল ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটা বাটি থেকে হলুদ এনে আমার দুই গালে মাখিয়ে দিলো৷

“এবার যা৷ ”
,
আমি দৌড়ে নিচে এলাম৷ ফোনও আর চার্জে দেওয়া হলোনা ধূর ধূর৷

সামু, রিংকি, ফারিহা তিনজন সোফায় বসে বসে গল্প করছে৷ আমি এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে
“এমা সবার গালেই হলুদ লাগানো শুধু ফারিহা বাধে৷ হুম বুঝতে পারসি৷

আরুহিঃতোদের গালে হলুদ লাগানো কেনো৷ নিশ্চয় স্পেশাল মানুষে স্পেশাল ভাবে লাগিয়েছে৷
.
সামান্তাঃঠিক বলেছিস৷ কিন্তু তোকে তো ভাইয়া রুমে টেনে নিয়ে গিয়ে হলুদ লাগিয়েছে৷কী ঠিক বললাম তো৷
.
আরুহিঃতুই কী করে জানলি৷
.
সামান্তাঃআদিল ভাইয়া জীবনেও কারও সামনে তোকে হলুদ লাগাবেনা তাই৷
.
আরুহিঃকিন্তু তোদের কী করে লাগালো৷
.
সামান্তাঃএইতো আমি আর রিংকি সোফায় বসেছিলাম কোথা থেকে ওরা দুই ভাই এসে আমাদের গালে চট করে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো৷
.
রিংকিঃশুধু কী তাই ওই আহিল বেটাতো আমার চোখেও হলুদ লাগিয়ে দিয়ে চলে গেসে৷ চোখ এখনও জ্বলতেসে৷
.
ফারিহা মন খারাপ করে উঠে চলে গেলো৷ এই মেয়ের হাবভাব কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা৷ কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি আদিব ভাইয়া কথা বলতে চায় ওর সঙ্গে বাট সে ভাইয়াকে ইগনোর করে৷ কেনো করছে সেটাও জানিনা৷
🍁🍁🍁🍁
ফারিহা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে যেতেই আদিব দরজা টেলে ভিতরে চলে গেলো৷

ফারিহাঃকী সমস্যা৷ এভাবে একা একটা মেয়ের রুমে কেনো ঢুকছেন আপনি৷
.
তোমার কী সমস্যা সেইটা বলো৷ কেনো ইগনোর করছো আমায়৷
.
ইগনোর করতে যাবো কোন দুঃখে৷ আপনার সাথে আমার ইমার্জেন্সি কথা থাকলে তো কথা বলবো৷ হুদাই কথা বলতে যাবো কেন আজব৷
.
মিথ্যা বলোনা রমনী৷ তোমায় মিথ্যা কথায় একদম মানায় না৷ তাই সত্যি কথাটা বলোতো৷
.
কী বলবো আমি৷ যান না যান নিজের গার্লফ্রেন্ডের কাছে যান আমার কাছে এতো কৈফিয়ত চাইতে কে বলেছে আপনাকে৷ আমার পিছনে না ঘুরে বরং তাকে টাইম দিন৷
.
আমি কী একবারো বলেছি যে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে৷
.
আপনি না বললে কী হবে আপনার ভাইতো বলেছে না কী৷ আর বললে তো সত্যিটাই বলবে মিথ্যাটা তো আর বলবেনা৷ তাই সরুন এখান থেকে আমি চেঞ্জ করবো৷
.
ফারিহা আমার কথা শুনো ভাইয়া তখন মিথ্যা কথা বলেছে৷ হ্যাঁ আমি মানছি যে ওদের তিনজনের পছন্দ করে রাখা আছে৷ কিন্তু আমার নেই৷ তখন চারজনের কথা না বললে বড় চাচ্চু মেয়েটাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিতো৷ আচ্ছা এখন এই কথাটা বলো যে এই কথা শুনে তোমার মনে এতো কষ্ট লাগলো কেনো৷
.
ফারিহা আদিবের থেকে পিছন ঘুরে বললো,,জানিনা৷

“কেনো জানোনা সোজা বলে দাও যে তুমি আমায়,,,
.
কী আমি তোমায়??
.
তুমি আমায় ভালোবাসো৷
.
মোটেওনা আমি আপনাকে ভালোবাসিনা৷
.
আচ্ছা তাহলে তো বেশ ভালো আমি এসেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে হলুদ লাগাবো বলে কিন্তু তুমিতো আর,,যাইহোক নিচে একটা মেয়েকে দেখলাম খুব কিউট একেই না হয় হলুদ লাগাবো গেলাম আমি৷ আদিব রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফারিহা এগিয়ে এসে ওর কলার চেপে ধরলো৷

“হাউ ডেয়ার ইউ৷ আর একবার যদি আপনার মুখে আমি অন্য মেয়ের নাম শুনি তাহলে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো বলে দিলাম৷
.
ওরে বাবা এতো রাগ৷ তাহলে স্বীকার করছো যে তুমি আমাকে৷
.
হ্যাঁ ভালোবাসি৷
আদিব মুচকি হেসে ফারিহার গালে হলুদ লাগিয়ে চলে গেলো৷ ফারিহা গাল থেকে হলুদ এনে দেখে হাসছে৷ তার বাটা হলুদই তার গাল ছুয়েছে৷
🍁🍁🍁
সবাই পানি আনার জন্যে বাসার পাশের পুকুরে গেছে আমরা সবাইও আছি৷ আমার আর রিংকির কোমড়ে কলসি৷ আজ আমাদের পিওর বাঙালী লাগছে৷
সবাই পুকুর থেকে পানি নিয়ে চলে গেছে৷ কিন্তু আমি আর রিংকি এখনো কলসিই ভরতে পারছিনা৷ পুকুর অনেক পিচ্ছিল হয়ে গেছে যার জন্যে পা রাখাই যাচ্ছেনা৷ আমি রিংকির হাত ধরে পানি নেওয়ার জন্য একটু ঝুকে গেলাম কিন্তু আমার আর পুরোপুরি ঝুকা হলোনা তার আগেই রিংকি আর আমি দুজনই পুকুরে পড়ে গেলাম৷ শাড়ি খুলে গিয়ে মুখে পেছিয়ে গেছে৷ পুকুর অতটা গভীর নয় তাই আমাদের অসুবিধে হচ্ছেনা৷ কোনমতে পাড়ে উঠে শাড়িটা পেছিয়া পানি না নিয়েই দৌড়ে বাসার দিকে চলে গেলাম৷ রিংকি দুই হাত দিয়ে শাড়ি ধরে দৌড়াচ্ছে বেচারি যে মাটির কলস নিয়ে গেছিলো সেটাও ভেঙে ফেলসে৷ দৌড়াতে দৌড়াতে ধপাস করে মাটিতে পরে গেলো৷ সারা শরীর ধুলায় মাখামাখি৷ কোনমতে একে তুলে আবারও দৌড়াতে লাগলাম৷ ইশ কেউ দেখে ফেললে ইয়া কী লজ্জা কী লজ্জা৷ আমি আর রিংকি বাসার পিছন দিক দিয়ে ঢুকলাম যাতে কারও চোখে পড়তে না হয়৷
🍁🍁🍁🍁
আরুহিঃমা গো কোমড় আমার গেলো৷ আমি আর মেহেদী পাতা বাটতে পারবোনা আল্লাহ্ গো৷ এত শক্ত আগে জানলে বাটতেই বসতাম না৷
.
রিংকিঃতারাতাড়ি বাট নোখে মেহেদী দিতে হবে তো৷
.
আরুহিঃপারবোনা নিজে বাট পারলে৷
.
রিংকিঃআমরা যখন হলুদ বাটসিলাম তখন তো তুমি লাগাইছিলা আমি কী তখন এই কথা বলসি৷
🍁🍁🍁
মেহেদী পর্ব শেষ করে সবাই এখন ড্যান্স করার কথা ভাবতেছে৷ ড্যান্স করার জন্য খুব সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে৷আদনান,আদিল,আহিল,আদিব ওরা ওদের পার্টনার কে নিয়ে স্টেজে গেলো কাপল ড্যান্স করবে সবাই৷ আদনান সামান্তাকে রেখে এগিয়ে গিয়ে গান প্লে করলো৷

হায়ে গারমী৷
“না এইটা না৷ ”
.
ডিজে ওয়ালা বেবি তেরি গানা চালাদো৷
“এইটা ঠিক আছে৷ ”

আদিল গানটা শুনে নাক মুখ কুঁচকে এগিয়ে এসে এসব গান চেঞ্জ করে বাংলা গান প্লে করলো৷

🎼তোমার নামে রোদ্দুরে, আমি ঢুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কতদূরে এখনও,
.
আমার পোড়া কপালে,আর আমার সন্ধ্যে সকালে
তুমি কেনো এলে জানিনা এখনও
(সবাই গানের তালে তালে স্লো মোশনে ড্যান্স করছে)
.
ফন্দি আঁটে মন পালাবার,বন্দী আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই,তোমাকে চাই
যদি মিথ্যা মানতে চাও তোমাকই চাই৷
(ড্যান্সের তালে তালে আমি আদিল ভাইয়ার খুব কাছাকাছি যাচ্ছি যা আগে কোনদিন যাইনি৷ ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গানের তালে তালে ড্যান্স করছে৷)

ড্যান্স করার মধ্যেই ধপাস করে একটা আওয়াজ হলো৷ আমরা সবাই ড্যান্স বাদ দিয়ে এগিয়ে এসে দেখলাম ফারিহা মেঝেতে পরে আছে পায়ে হাত দিয়ে৷ রিংকি বেচারিকে টেনে দাঁড় করালো৷

আরুহিঃফারিহা ঠিক আছো তুমি৷
.
কী ঠিক থাকবো হ্যাঁ তোমার ভাইয়ার জন্য আমি পা মচকে পড়ে গেসি৷ আর এই যে হিটলার খুব তো মাধুরী, নোরা ফাতেহিকেও ড্যান্সে হারিয়ে দিতে পারেন এটাই আপনার ড্যান্সের নমুনা৷ সবাই কত সুন্দর হাত ধরে ধরে ড্যান্স করছিলো৷ আর এই আদিব আমাকে এক হাত দিয়ে না দু-হাত দিয়ে ঘুরানো শুরু করছে এর নাচের তালে মনে হলো পৃথিবী সূর্যের চারপাশে না ঘুরে আমার চারপাশে ঘুরতেছে৷ হিল জুতো টাল সামলাতে পারলাম না আমি তাই পা মচকে পড়ে গেলাম৷ আচ্ছা আমি যাচ্ছি তোমরা নাচো৷

ফারিহা নিজের রুমে চলে গেলো৷ আদিব ভাইয়া এখনও তাকিয়ে আছে৷
আমরাও আর না নেচে সোফায় বসে পড়লাম৷ আদনান ভাইয়া আবারো গিয়ে হিন্দি গান প্লে করলো৷

“ওহ্ ইকতো কাম জিন্দেগানি৷ উসেপে কাম হে জাবানি৷
এটাকে বলে গান আহা৷

আদিল গান বন্ধ করে ফেললো৷ নিরব পরিবেশের জন্য নিরব গানই মানায় এসব উল্টা পাল্টা গান নয়৷

আদনানঃআচ্ছা গান বন্ধ করেছিস তো কী হয়েছে আমাকে বন্ধ কর৷ পারবিনা আমি তো গান গাইবই
.
মুক্কাল্লা মোকাবলা লেলা ওহো লেলা৷ মে লেলা তের মজনু,তু বানজা মেরি লেলা৷
তারপর যেন কী ধূত মনে নাই

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১২+১৩

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আদিল ভাইয়া শপিংয়ে না গিয়ে আমাকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে এলো৷আমি গাড়ি থেকে নেমে ভাইয়ার দিকে না তাকিয়েই দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলাম৷ এরপর ভাইয়ার দিকে তাকালেও আমার লজ্জা লাগবে৷ আজকের কথা যতবারই মনে হচ্ছে ততবারই ব্লাশিং হচ্ছি৷ দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলাম৷ আজ আর ওত সহজে ভাইয়ার সামনে যাবোনা বাবা৷
🍁🍁🍁
আদিল নিজেকে আয়নায় দেখছে আর মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷ সে ভাবতেই পারছেনা আরুহি ওকে এতো তারাতাড়ি মনের কথা বলে দিবে৷
মনের সুখে শাওয়ার সেরে ছাঁদে গেলো৷ আজ সে তার অনুভূতি প্রকৃতির সাথে শেয়ার করবে৷
ছাঁদের রেলিঙে পিঠ টেকিয়ে চারপাশ দেখছে আদিল৷ আর আজকের কথা মনে হলেই মাঝেমধ্যে মুচকি হাসছে৷
🍁🍁🍁🍁
রাতে বসে বসে কাসেম বিন আবুবাকারের প্রেম ও বিরহ উপন্যাসটা পড়ছিলাম৷ কোথা থেকে আদিব ভাইয়া দৌড়ে এসে বললো,বিনোদন দেখবি চল৷

“বিনোদন, কিসের বিনোদন?
.
চল গেলেই দেখতে পাড়বি৷
.
আমি উপন্যাসটা রেখে আদিব ভাইয়ার পিছু পিছু গেলাম৷ ভাইয়া সোজা আদনান ভাইয়ার রুমে ঢুকলো৷ আমি গিয়ে যা দেখলাম তাতে ৪৪০ ভোল্টের শক না খেয়ে পাড়লাম না৷ আদনান ভাইয়া আর আহিল ভাইয়া আয়েশা আপু আর অদ্রিতা আপুর থ্রি_পিস পড়ে নাচতেছে৷

আদনানঃওহো ইস্কমে দিলবার দেদিনা,দেদিনা মাই দেদিনা৷
.
আদিবঃও আল্লাগো এই পাগল দুইটায় এসব কী উল্টা পাল্টা গান গাইছে৷
.
আহিলঃজানে মন দুই জীবন
.
আরুহিঃ হিন্দির মাঝে বাংলা কোথা থেকে আসলো৷ তাও তুই জীবন না দুই জীবন হাহাহা৷
.
আদনানঃমে ইতনি সুন্দর হুমে কিয়া কারু কারু কারু কারু৷

সামান্তার হাসির আওয়াজ পেয়ে পাশে তাকাতেই দেখলাম সে দরজার চিপায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছে আর হাসছে৷ সে ভিডিওগুলো রিংকিকে দিবে৷

ভাইয়ারা ইচ্ছামতো নেচে তারপর থামল৷ তারাতাড়ি করে ড্রেস খুলে ফেললো৷ আহিলের চোখ গেলো আদনানের ড্রেসের দিকে৷ বেচারা নাচতে নাচতে ড্রেসের সেলাই ছুটিয়ে ফেলসে৷

আহিলঃভাইয়া ড্রেসের সেলাইতো ছুটে গেসে এখন কী করবা৷ অদ্রিতা আপুর যে রাগ তোমাকে বিনা মশলাতেই কাচা চিবিয়ে খাবে৷
.
আদনানঃপ্লিজ ভয় দেখাস না৷ রুহি প্লিজ বোন আমার ড্রেসটা সেলাই করে দে৷
.
আরুহিঃআমি কেনো দিবো তোমার উড বি ওয়াইফাই আছেতো তাকে বলো৷
.
সামান্তাঃআমি পারবোনা আমি গেলাম৷ নাচার সময় খেয়াল ছিলোনা হুহ৷
.
আরুহিঃআমিও গেলাম৷
.
আদনান না পেড়ে শেষে একটা সুই সুতা নিয়ে বসলো৷ তারমধ্যে আবার গোল্ডেন কালার ড্রেসের সাথে কালো সুতা দিয়ে সেলাই করছে৷ ইয়া বড় বড় সেলাই৷
সেলাই করে আবার আগের জায়গায় রেখে দিয়েছে৷
🍁🍁🍁
আদনান ভাইয়ার রুম থেকে আসার সময় আদিল ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো আমার৷ আমি ভাইয়ার পাশ কেটে যেতেই ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে উনার সামনে দাঁড় করালেন৷

“কী সমস্যা তোর৷
.
কোনো সমস্যা নেই৷
.
তাহলে কেনো ইগনোর করছিস আমায়৷
.
কই ইগনোর করছি৷
.
চল আমার সাথে৷
আদিল ভাইয়া আমাকে নিয়ে ছাঁদে গেলেন৷ আকাশে আজ খুব বড় চাঁদ উঠেছে৷

রুহি দেখ কী সুন্দর চাঁদ৷ আমার খুব শখ ছিলো তোকে নিয়ে ছাঁদে বসে চাঁদ দেখবো আর গল্প করবো৷আজ আমার নিজেকে খুব হাল্কা লাগছে৷
.
কেনো??
.
কারন আমি এখন তোর মনের খবর জানি৷
.
কিন্তু আমিতো জানিনা৷
.
কথাটা বলার সাথে সাথেই আদিল ভাইয়া আমার সামনে হাটু ভেঙে বসে পরলো৷ তারপর আমার একটা হাত ধরে বলতে শুরু করলো,,

আজ এই চাঁদ এই প্রকৃতি শাক্ষী থাকবে তোর আমার ভালোবাসার৷ সমস্ত কিছুকে শাক্ষী রেখে আজ আমি বলছি আমি তোকে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি৷ হৃদয়ের সমস্তটুকু দিয়ে ভালোবেসে যাবো তোকে যতদিন বাঁচবো৷ সবসময় ছায়ার মতো পাশে থাকবে৷ কিন্তু আমি একা থাকলেইতো আর হবেনা তোকে ওতো আমার পাশে থাকতে হবে৷ কী থাকবি তো৷

আমি ভাইয়ার কথা শুনে মাথা নাড়ালাম যে আমি উনার পাশে থাকবো৷
ভাইয়া আমার হাতে একটা চুমো দিয়ে উঠে দাঁড়ালো৷ ছাঁদের কোনায় টবে রাখা ফুল গাছ থেকে একটা কাঠ গোলাপ এনে আমার কানের পাশে গুজে দিলো৷ তারপর মুচকি হেসে আমাকে ইশারা করলেন আমি যাতে চাঁদের দিকে তাকাই৷আমিও ভাইয়ার ইশারা অনুসরন করে চাঁদের দিকে তাকালাম৷ আসলেই খুব সুন্দর লাগছে আজকের চাঁদটা৷ মনে হচ্ছে আজকে আমাদের দুজনকে আলোকিত করার জন্যই চাঁদটা উদিত হয়েছে৷ আমি আর ভাইয়া আরও কিছুক্ষণ ছাদে থেকে রুমে চলে এলাম৷ কাল থেকে আবার মেহমান আসা শুরু হবে৷
🍁🍁🍁🍁
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আদিব ভাইয়া আর সামু বসে বসে টিভি দেখছি৷ টিভিতে তখন জীবন সাথী সিরিয়াল চলছে৷

আদিবঃট্রাস্ট মি৷ আমার কপালে যে থাকবে আমি থাকেই বিয়ে করবো৷
.
আদিব ভাইয়ার কথা শুনে আমি আর সামু ফিক করে হেসে ফেললাম৷

আরুহিঃভাইয়া তোমার কপালে যে আছে থাকেইতো তোমায় বিয়ে করতে হবে৷ মানে কোন না কোন ভাবে বিয়ে হবেই হবে৷
.
সামান্তাঃএক্সাক্টলি৷ আর তোমার বাম পাঁজরের হাড় দিয়েই আল্লাহ্ তায়ালা তোমার জীবন সাথীকে সৃষ্টি করেছে৷
.
আদিবঃহয়েছে হয়েছে জানি আমি৷

হঠাৎই আদিবের চোখ পড়লো একটা মেয়ের দিকে৷ মেয়েটি বাসার চারিদিক দেখছে আর হাঁটছে৷ হাতে আাবার বড় ব্যাগও রয়েছে৷

“স্টপ৷”

আদিব ভাইয়ার কথা শুনে আমি আর সামু দুজনেই তাকালাম৷ একি এটাতো শপিংয়ের মেয়েটা যে ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করছিলো৷ এ এখানে কী করছে৷

আদিবঃএক্সকিউজ মি৷ এখানে কী চাই৷ এটা আমার বাসা পাবনার পাগলাগারদ নয়৷
.
আদিব ও আমার বন্ধুর মেয়ে৷ ভদ্র ভাবে কথা বলো৷
.
শুনলেন আপনি কী যেনো নাম আপনার ওহ হ্যাঁ মনে পরেছে আদিব৷ মিষ্টার আদিব ভদ্র ভাবে কথা বলবেন আমার সাথে৷ বাই দ্যা ওয়ে আমার রুমটা কোনদিকে একটু বলবেন প্লিজ৷ আমি অনেক টায়ার্ড৷
.
হ্যাঁ নিশ্চয়৷ কিচেনের পাশের রুমটা আপনার জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে মিস ফারিহা৷
.
ওয়াও কি কিউট আমার নামটাও আপনার মনে আছে দেখছি৷ প্লিজ হ্যান্ডসাম আমার অরিজিনাল রুমটা দেখিয়ে দিন৷
.
ফারিহার কথা শুনে আদিব ভাইয়া আগুন ছাড়াই মমের মতো গলে গেছে৷
.
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয় আসুন আসুন আমি দেখিয়ে দিচ্ছি আপনার রুম৷ আপনার মতো মেহমান আসাতো আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার৷ দিন আপনার ব্যাগটা দিন আমি রুমে দিয়ে আসি৷

চলবে♥️

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আদিব ভাইয়া ফারিহাকে নিয়ে উপরে চলে গেলো রুম দেখাবে বলে৷ আমি আর সামু এদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে টিভি দেখায় মনোযোগ দিলাম৷ আদনান ভাইয়াও কোথা থেকে ড্যাংড্যাং করে বাসায় ঢুকছে৷
৮ম সিড়ি বা ৯ম সিড়িতে পা দিয়েছে কী না সন্দেহ ঠিক তখুুনি অদ্রি আপুর বাড়ি কাঁপানো চিৎকার কানে এলো৷ আদনান ভাইয়া আর উপরের সিড়িতে পা না রেখে আরও দুই সিড়ি নিচে নেমে এলো৷

আরুহিঃকাম সারছে রে৷
.
আদনান ভাইয়া আমার আর সামুর দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকালো৷ আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভাইয়ার পাশ কেটে উপরে চলে গেলাম৷

অদ্রি আপু সাপের মতো ফুসফুস করে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে৷ হাতে আবার ড্রেসটাও আছে৷ ড্রেসটা দেখেই আমার হাসি উঠে গেলো৷

অদ্রিতাঃরুহি আমার ড্রেসের এই অবস্থা কী করে হলো৷ কাল খালি ড্রেসটা কিনে এনেছি৷
.
আরুহিঃআমি কী করে জানবো আপু৷ আমি বা সামু কেউ ওইতো তোমাদের ড্রেস পড়িনা৷
.
অদ্রিতাঃদেখ আমার ড্রেসের কী অবস্থা৷ সেলাই ছুটে গেসে আবার কালো সুতা দিয়ে সেলাইও করা আছে৷
.
আরুহিঃএকি আপু তোমার ড্রেস থেকেতো ছেলেদের শরীরের স্মেল আসছে৷
.
অদ্রিতাঃকী তার মানে আমার ড্রেস কোনো ছেলে পড়েছে৷ কিন্তু কে সে??
.
সামান্তাঃআমি জানি সে কে৷
সামান্তা তার ফোন থেকে আহিল আর আদনান ভাইয়ার পাগলের মতো নাচাটা প্লে করলো৷
আপু ভিডিওটা দেখে আধা পাগলের মতো আদনান ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার মুখের উপরে ড্রেসটা ছুঁড়ে মারলো৷

অদ্রিতাঃআদনান!!!!!!কালকের মধ্যে সেম ড্রেস চাই আমার৷ আর যদি না পাই তাহলে তোর সব শার্ট প্যান্টে আগুন ধরিয়ে দিবো বলে দিলাম৷
.
আদনানঃআচ্ছা৷ যাইহোক ড্রেসটা যখন আমারই এখন তাহলে আরেকটু ইচ্ছে মতো নেচে নেই৷ আদনান টি-শার্টের উপরেই ড্রেসটা পড়ে নিলো৷গলায় আবার রেলিঙে রাখা ওরনাও লাগিয়েছে৷ ৷

আদনানঃওহো ডিংকা চিকা, ডুংকা চিকা,ডোংকো চিকা রে লা লা লাা
“ওহো দিদি তেরা ননদ দিবানা৷ ইন্নি সনি কিউ, লাগ্গে তু মেনু, মে তেরি হগায়ি হজা মেরি তো৷ সারি সারি রাত কারদিয়া ফারিয়া লাগদিয়া কুরিয়াবে হটি৷

আদনান ভাইয়ার আবুল মার্কা গান শুনে অদ্রি আপু যা রাগ করেছিলো সেটা এক নিমিষেই উধাও৷

আদনানঃদিলবার দিলবার হো দুলবার দুলবার৷ সাকি সাকু রে সাকি সাকু৷ ও সারাপি কে সারাপি
.
সবাইঃহাহাহাহা৷
.
“আদনান৷”

হঠাৎ বড় আব্বুর কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আমরা৷ তিনি ভ্রু কুচকে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ কিন্তু ভাইয়ার সেদিকে মন নেই সে-তো নাচতে আর গাইতে মন দিয়েছে৷

আনানঃওহ জারা জারা টাচ মি,টাচ মি৷
.
বড় আব্বু ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলেন৷

ফারিহা নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এসে আদনানের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিলো৷ সে আদিব ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো৷

ফারিহাঃআমার কী মনে হয় মিষ্টার আদিব,পাবনায় পাগলাগারদ না হয়ে আপনাদের বাড়িতে হলে খুব ভালো হতো৷ আমাকে তে পাগল বলেছিলেন তাহলে আপনার ভাইয়ের এই অবস্থা কেনো৷ হাহাহাহাহাা
.
আদিবঃএই যে আমার ভাই ড্যান্স করছে বুঝেছেন৷ এটা আনকমন ড্যান্স যা সবাই পাড়েনা৷ আমার ভাইয়া যদি ইন্ডিয়া বেষ্ট ড্যান্সারে নাম দিতোনা তাহলে সেখানের বিচারক নোরা ফাতেহিকেও হার মানিয়ে আসতো৷
.
ফারিহাঃঠিক বলেছেন আপনার ভাইয়া তো নোরা ফাতেহির আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স৷
.
আদিবঃহুম আমিও ড্যান্স জানি মাধুরীও আমার সাথে ড্যান্সে পারবেনা৷
.
ফারিহাঃরাইট পারবে নাইতো৷ আপনারা যে পাগলের মতো ড্যান্স করেন সেভাবে যদি ওরা ড্যান্স করে তাহলে এদের প্রেস্টিজের বারোটা বাজবে৷
.
আদিবঃহুহ
.
আদনানঃবরবাদ হয়েছি আমি তর অপেক্ষায়
.
সামান্তাঃআচ্ছা৷
.
ভাইয়া আরও কতোক্ষন নেচে তারপর থামল৷

আদনানঃএকি আমি এতো সুন্দর ফ্রিতে পারফরম্যান্স দেখালাম অথচ তোমরা কেউ হাত তালি দিচ্ছোনা কেনো৷
.
অদ্রিতাঃভাই তোর নাচ দেখে যে আমরা অজ্ঞান হইনি সেটাই অনেক৷
🍁🍁🍁🍁🍁
ডিনারে সবাই উপস্থিত আছে শুধু আদিল ভাইয়া ছাড়া৷ রুমে দেখছিলাম তেখন ল্যাপটপে কী করছে হয়তো কাজ করছে৷ আমার পাশে তাকাতেই দেখলাম আদিল ভাইয়া আমার পাশে রাখা চেয়ারে বসে আছে৷ এটাই ফাকা ছিলো৷

“একি ভাইয়া কখন এলো৷”

আদিলঃযখন তুই ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গেছিলিস ঠিক তখন(ফিসফিসিয়ে)
.
আমি ভাইয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম৷ আমি তো কথাটা মনে মনে বলেছিলাম ভাইয়া কীভাবে জানলো৷

বড় আব্বুঃঅদ্রিতার বিয়ে দিয়ে আমরা ঠিক করেছি আয়েশার বিয়েও দিয়ে দিবো৷ যেহেতু আমাদের বাসায় ছেলে মেয়েরা সব জোড়া জোড়া তাই ভাবছিলাম অদ্রিতার সাথে আয়েশার বিয়েও দিয়ে দিবো৷ কিন্তু আমাদের আয়েশার জন্য পছন্দ করে রাখা ছেলেটি এখনো বাহিরের কান্ট্রিতে আছে তাই ওদের একসাথে বিয়ে দিতে পারবোনা৷ তাতে কী আমাদের বাসায় তো আরও তিন জোড়া ছেলে মেয়ে৷ ওদের দু বোনের বিয়ে দিয়ে আমরা আদিল আর আদনানের একসাথে বিয়ে দিবো৷ আর আদিব আহিলের একসাথে সামান্তা,আরুহির একসাথে৷ আহিলের জন্য আমি মেয়ে দেখেছি৷ আই হোপ আহিলের মেয়েটাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি হবেনা৷
.
কথাটা শুনে আহিল তার সামনে রাখা প্লেট হাত দিয়ে টেলে দূরে সরিয়ে দিলো৷

আহিলঃএসব কথা উঠছে কোথা থেকে আর আদিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া ওরা আমার বড় ভাই এদের এখনো বিয়ে হয়নি৷আর তুমি আমার জন্য মেয়ে দেখছো৷ আমি করতে পারবো না বিয়ে৷
কথাটা বলে আহিল খাবার না খেয়ে চলে গেলো৷

বড় মাঃছেলেটার কী হলো বলতো না খেয়ে চলে গেলো৷ আর এমন রিয়েক্টই বা কেনো করছে৷
.
বাবাঃআর এইযে বাকি তিনজন তোমাদের আপত্তি নেইতো৷
.
আদিলঃআসলে বাবা আমরা বিয়ে করতে পারবোনা আমরা চারজনেরই মেয়ে পছন্দ করে রাখা আছে৷
.
ফারিহার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে অবাক দৃষ্টি নিয়ে আদিব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷
.
বড় আব্বুঃতোমরাতো দেখছি খুব শেয়ানা হয়ে গেছো৷ তোমাদের যা ইচ্ছা তাই করো৷ এখন আবার কিছু বললে সবাই খাবার রেখে চলে যাবে৷
🍁🍁🍁🍁
এক্সকিউজ মি, মিস্টার আদিব আপনি না বলেছিলেন আপনি সিংগেল৷ তাহলে আপনার ভাইযে ডাইনিংয়ে বসে বললো আপনাদের চারজনেরই পছন্দ করে রাখা মেয়ে আছে৷

আদিব নিজের রুমে যাচ্ছিলো পথে ফারিহার কথা শুনে থমকে গেলো সে৷

হ্যাঁ ঠিকইতো বলেছে৷
.
তাঁর মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে৷
.
হ্যাঁ থাকাটাই স্বাভাবিক নয় কী??
.
তাহলে আমায় কেনো মিথ্যা বললেন৷
.
এমনি৷
.
“মিথ্যুক চুরেল কোথাকার৷ ”
ফারিহা ঝাড়া দিয়ে চলে গেলো৷
.
এ মেয়ের আবার কী হলো৷
🍁🍁🍁🍁
এদিকে ফারিহা এসে রুমে বসে কাঁদছে৷

ও আল্লাহ গো এ আমার কী সর্বনাশ হলো গো৷ এই আদিব বেটার ছবি আব্বুর ফোনে প্রথম দেখেই ক্রাশ খাইসিলাম৷ তারপর কাল শপিংয়ে দেখে ইচ্ছে করে বেটার সামনে গেলাম৷ এতো এতো কিছু করলাম কিন্তু এখন কী শুনছি আমি এই খবিশটার নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে৷

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১১

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১১
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছি আজ দুইদিন হয়ে গেছে৷ অদ্রিতা আপুর বিয়ের আর মাত্র ছয় দিন বাকি আছে৷ অথচ এখনো কোন কেনাকাটা হয়নি৷ তাই আজ সবাই শপিংয়ে এসেছি৷ আমাদের সবার কেনাকাটা কমপ্লিট অথচ আদিব ভাইয়া মেয়েদের মতো একটার পর একটা ড্রেস দেখেই যাচ্ছে৷ ভাইয়াকে শপিংয়ে নিয়ে এলে এই সমস্যা প্রথমে জীবনেও কিছু চয়েজ করবেনা পরে আসার সময় হাতের কাছে যা পাবে তাই কিনবে চয়েজ হোক বা না হোক৷আদিব ভাইয়া প্যান্ট হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছে৷ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ভাইয়ার হাত থেকে প্যান্ট ছো মেরে নিয়ে নিলো৷

“আরেহ্ বাহ প্যান্টটা তো দারুণ!!! আমি এইটা নিবো৷
.
এই যে মিস অচেনা এটা আমি আগে চুজ করেছি ওকে তাই প্যান্টটা দিয়ে দিন আমি নিবো এটা৷
.
আমার নাম আছে তাই অচেনা অজানা বলে ডাকবেননা৷
.
তা কী নাম আপনার শুনি৷
.
আমার নাম ফারিহা ইসলাম মেঘা৷ সবাই ফারিহা বলে ডাকে৷
.
আচ্ছা৷ প্যান্টটা এবার দিয়ে দেন৷
.
বললাম তো আমি এটা নিবো কথা কানে যায়না আপনার৷
.
আর ইউ মেড৷ আপনি তো হান্ড্রেড পারসেন্ট মেড তা না হলে ছেলেদের প্যান্ট কোনো মেয়েরা নেয় নাকি৷বাইরে দোকানের নাম দেখেননি বড় বড় করে লিখা আছে জেন্টস৷ আর আমি এখুনি এই মুহুর্তে পাবনায় ফোন দিচ্ছি আর তাদের বলছি যে আপানাদের পাগলাগারদ থেকে একটা পাগল পালিয়ে এসেছে৷ আর সে এখন মর্ডান হওয়ার চেষ্টা করছে৷
.
আমার কথা বললে নিজের কথাটাও একটু বইলেই কেমন৷আপনি নিজে ওতো পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ ইউ নো ওয়াট এক পাগল আরেক পাগলকে খুব সইজেই চিনে ফেলে৷ আর আপনি ওতো একটা পাগল আর আমার কী মনে হয় জানেন আপনি পাবনার পাগলাগারদে ছিলেন তাই আমি কোথা থেকে এসেছি সেটা খুব সহজেই বুঝতে পেরে গেছেন,রাইট৷ আশ্চর্য আমি কী একবারো বলেছি যে আমি এটা আমার জন্য নিবো৷ এটাতো আমি আমার ভাইয়ার জন্য নিবো গিফ্ট করবো বলে৷ পাগল আমি না আপনি৷ পাগলা কোথাকার৷
.
হেই ইউ মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ৷ আমার মতো হ্যান্ডসাম ড্যাশিং বয়কে আপনার কাছে মেড মনে হচ্ছে৷ ওহ মাই গডন্যাস৷কোথায় যাই আমি৷
.
লিসেন,এক কাজ করেন আপনার ড্যাশিং হ্যান্ডসাম বরং আপনার পকেটে রাখেন৷ এসব অন্য মেয়েকে দেখাবেন কেমন৷ যত্তসব৷
.
আদিবও মেয়েটির হাত থেকে প্যান্ট টান মেরে নিয়ে নিলো৷

“মামা এটার দাম কত৷
.
চার হাজার পাঁচশো৷
.
এই নিন পাঁচহাজার বাকি পাঁচশো অন্য একদিন এসে নিয়ে যাবো৷
.
আয়েশাঃহুম তারপরও আদিব পাঁচশো টাকা ছাড়বেনা৷
.
মামা এটার মতো সেম আরেকটা হবে৷
.
না আর নেই একটাই ছিলো৷
.
মেয়েটা আদিবের দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
আপনাকে আমি দেখে নিবো৷
.
কচু দেখবে৷
.
আদিব ভাইয়াকে আমরা এই প্রথম কোনো মেয়েদের সাথে ঝগড়া করতে দেখেছি তাও মেয়েদের মতো৷ এতোদিন তো আহিল ভাইয়া মেয়েদের সাথে ঝগড়া করতো এবার আদিব ভাইয়া হিহিহিহি৷
🍁🍁🍁🍁
শপিং করা শেষ অথচ সামান্তা আর আদনান ভাইয়ার কোনো খুঁজ নেই৷ এই দুজন ভালোই প্রেম করছে৷ শুধু প্রেম নাই আমার কপালে৷ তাতে কী আমার জন্যও এমন কেউ আসবে যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসবে ওদের সবার ভালোবাসাকেও হার মানাবে৷ যে আমাকে একমুহূর্তের জন্যও একা ছাড়বেনা ছায়ার মতো পাশে থাকবে৷ প্রটেক্ট করবে৷ আচ্ছা আমি যা ভাবছি সত্যি যদি এমন কেউ আসতো৷ আমার কেন জানিনা এসব মনে হলেই আদিল ভাইয়ার কথা মনে পড়ে৷ শুধু এটাই মনে হয় আমার সব চাওয়া পাওয়া আদিল ভাইয়াকে ঘিরে৷ভাইয়াকে না দেখলে একদম ভালো লাগেনা আমার৷ এই দুইদিন আমি ভাইয়ার চেয়ে আড়ালে আড়ালে থেকেছি৷ তাও আমাদের প্রায়ই চোখাচোখি হয়েছে৷ যখনই ভাইয়ার দিকে তাকাই তখুনি দেখি ভাইয়ার মুখে মিষ্টি হাসি লেগে আছে৷ প্রতিটি রাত আমি ভাইয়াকে নিয়ে ভাবি এখন৷ ভাইয়ার হাসি মাখা মুখ চোখ বুঝলেই অন্ধকার এক দেয়ালে বিশাল ছবির মতো ভেসে উঠে যেটা শুধুমাত্র আমিই দেখি৷ এগুলো কী শুধুই অনুভূতি নাকি ভালোবাসা৷
আদিব ভাইয়ার ধাক্কাতে হুস আসলো আমার৷

আদিবঃতুই এখানে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিস৷
আদনান ভাইয়া আর সামান্তাকে পেয়েছিস???
.
না তো আচ্ছা আমি সামনে এগিয়ে দেখছি৷ তা আয়েশা আপু আর অদ্রিতা আপু কোথায়৷
.
ওরা জুয়েলারি কিনছে৷
.
আচ্ছা
আমি এগিয়ে গেলাম সামনে রাস্তা ঘাটের দিকে ভালো করে তাকাচ্ছি কিন্তু কোথাও কেউ নেই৷ রোডের বাম পাশে তাকাতেই দেখলাম সামু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসছে৷ আর ওর পিছুপিছু আদনান ভাইয়া৷
সামু আমাকে দেখে দৌরে এসে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দিলো৷

“সামু কী হয়েছে তোর? আর ইউ ওকে?
.
রুহি,, রুহি আদিল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে৷
.
কীহ!!!! কিন্তু কিভাবে৷
.
কার দিয়ে৷ ভাইয়ার সারা শরীর জখম হয়ে গেছে৷ ভাইয়ার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল৷
.
আদিল ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার৷ সামুর কাছ থেকে হসপিটালের নাম জেনে আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলাম হসপিটালে৷ পিছন থেকে সামু অনেকবার ডেকেছে কিন্তু পাত্তা দেইনি আমি৷ আমার মনে হচ্ছে আমার কলিজা কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে৷ কেন এমন হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি আর বুঝতে চাইওনা৷
আমি সারা হসপিটালের করিডোর দিয়ে দৌড়াচ্ছি আর ডক্টর নার্সকে পেলে জিজ্ঞেস করছি তারা কেউ আদিল নামের কাউকে এডমিট করেছে কী না৷ কিন্তু সবাই না করছে৷
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা৷ আদিল ভাইয়া কোথায় থাকতে পারে৷ আমি পিছন ঘুরতেই কারও বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম মুখ মুখ তুলে ব্যাক্তিটির চেহারা দেখে চমকে উঠলাম আমি৷আদিল ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ একেবারে সুস্থ শরীরে৷ তারমানে সামু তখন যে বললো ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে৷ কিন্তু ভাইয়াতো আমার সামনে সুস্থ শরীরে দাঁড়িয়ে আছে৷একেবারে ফিট৷ তারমানে সামু মিথ্যা বলেছে৷ কিন্তু কেন?

ভাইয়া তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করেছো?
.
হ্যাঁ৷
.
তাহলে তুমি যে আমার সামনে সুস্থ শরীরে দাঁড়িয়ে আছো৷
.
তোর কী মনে আমি মরে যাই৷
.
ভাইয়ার মুখে মরার কথা শুনে খুব কষ্ট লাগলো আমার৷ এসব কী বলছে ভাইয়া৷ আমি কখনো এসব ভাবতে পারি নাকি৷
.
সামান্তা যে বললো তুমি এক্সিডেন্ট করেছো আর সারা শরীর নাকি জখম হয়ে গেছে আর তোমার অবস্থা নাকি ক্রিটিকাল৷
.
হুম আমি এক্সিডেন্ট করেছি৷ শুধু হাতে আর বুকে একটু ব্যাথা পেয়েছি৷তবে হসপিটালে এডমিট হইনি৷ সামান্তা মিথ্যা বলেছে তোকে৷
.
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হাতের দিকে তাকালাম সত্যি হাতে ব্যান্ডেজ করা৷ সাদা শার্টও রক্তে লাল হয়ে আছে অনেক জায়গায়৷ যা আগে আমার চোখে পড়েনি৷ আমি আর কিছু না ভেবে ভাইয়ার বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম৷ চোখ থেকে পানি ঝর ঝর করে পরছে৷ বেশ কিছুক্ষন পর এভাবেই থাকার পর অনুভব করলাম ভাইয়া আমার পিটে হাত রেখেছে৷

তুই যে আমার জন্য এতো পাগল সেটা যদি আজ এক্সিডেন্ট না করতাম তাহলে জানতেই পারতাম না৷ ভাগ্যিস মারা যাইনি নাহলে তোর পাগলামুটা যে দেখতে পারতাম না৷
.
প্লিজ স্টপ টকিং ননসেন্স,ইট হার্টস টু হেয়ার ইউ ডাই৷ ড্যাম ইট!!!!
.
আমার মুখে মরার কথা শুনলে তোর কষ্ট হয়৷ কিন্তু কেনো??
.
কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি৷
কথাটা বলার সাথে সাথেই ভাইয়া আমায় টাইট করে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমার যখন মনে হলো আবেগের বশে আমি কী বলে ফেলেছি সাথেসাথেই আমি ভাইয়াকে ছাড়িয়ে দূরে সরে এলাম৷
.
ছিঃ রুহি৷ সত্যি তুই পাগল হয়ে গেছিস৷ নিজের মনের অনুভূতিগুলো প্রকাশ না করলে কী এমন হয়ে যেতো৷ এখন ভাইয়া কী ভাববে আমাকে৷ ধুর ধুর৷

“হয়েছে নিজেকে আর গালাগাল করতে হবেনা৷ তা আমার কাছ থেকে উত্তর নিলি না তো যে আমি তোকে ভালোবাসি কী না৷
.
তার দরকার নেই আমি জানি৷
.
কী জানিস??
.
জানি এটাই তুমিও আমাকে ভালোবাসো৷
কথাটা বলে হনহনিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে৷ ভাগ্যিস তেমন কেউ ছিলোনা৷ লাঞ্চ টাইম হওয়াতে সবাই লাঞ্চ করায় ব্যাস্ত৷
আমি সিএনজিতে উঠতে যেতেই ভাইয়া আমাকে টেনে নিয়ে কারে বসিয়ে দিলেন৷ আমি এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ ভাইয়ার দিকে আর তাকাতে পারবোনা৷ ভিষন লজ্জা করছে৷

আদিল ড্রাইভ করছে আর আরুহির দিকে তাকাচ্ছে৷
সামু মিথ্যা কথা বলে এক কাজ ভালোই করেছে৷ রুহি আমি তোকে সবার আগেই মনের কথা বলতাম কিন্তু তোর কাছে যে আমি অপরাধী ছিলাম৷ সেদিনের পর থেকে তোর সামনে যেতেও আমার লজ্জা করতো৷ কি অন্যায়টাই না করেছিলাম রাগের বশে তোর সাথে৷ আমি এটাই চাইছিলাম যাতে তুই আমাকে তোর মনের কথা বলিস৷আর আমি এই কয়েকদিন ধরেই দেখছি তুই আমার দিকে তাকিয়ে সাথেসাথে চোখ সরিয়ে নিস৷ কিন্তু সেটা ঘৃণার নয় লজ্জার৷ অনেকদিন তোর থেকে দূরে দূরে থেকেছি কিন্তু আর নয় খুব শীঘ্রই তোকে আমার করে নিবো রুহি৷

চলবে♥️

সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১০

0

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১০
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

বিছানাকান্দির বড় বড় পাথরের উপরে বসে আছি সবাই৷ ভেজা শরীর নিয়ে তো আর গাড়ি করে যেতে পারবোনা৷ কাপড় কিছুটা শুকালে তারপর যাবো৷ আদিল ভাইয়া আমার পাশে একটা পাথরে বসে আছে৷ আমি একবারো ভাইয়ার দিকে তাকাইনি৷ সামান্তা আর আদনান ভাইয়া একজন আরেকজনের দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি আর আহিল ভাইয়ারও সেম অবস্থা৷
“আশ্চর্য এদের মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলো কী তাহলে আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রুপান্তরিত হচ্ছে৷”

আদিব ভাইয়া পাথরের উপর বসে বসে পানিতে ঢিল ছুড়ে মারছে৷ আর অসহায় দৃষ্টি নিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে আছে৷

আরুহিঃভাইয়া পানিতে কিন্তু কোনে জলপরী নেই যে তোমার ঢিল ছুড়া দেখে পানির উপরে এসে তোমাকে দেখে পাগল হয়ে তোমার গলায় ঝুলে পড়বে৷
.
আদিবঃসব সময় বাজে কথা বলিস কেনো৷ একটা গার্লফ্রেন্ড পাওয়ার জন্য দোয়া ওতো করতে পারিস৷ ভালো করে চেয়ে দেখ আমাদের আশেপাশে কতো রোমান্টিক কাপল ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ (আদনান ভাইয়াদের দিকে ইশারা করে৷)
.
আরুহিঃহুম সেটা আর বলতে৷
🍁🍁🍁🍁🍁
গাড়িতে সবাই বসে আছি৷ ফ্রন্ট সিটে বসেছে আহিল ভাইয়া আর রিংকি৷ আর ব্যাক সিটে আমি,আদিব ভাইয়া সামান্তা আর আদনান ভাইয়া৷
আদিব ভাইয়া এদের সবার দিকে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে৷

আরুহিঃকী হয়েছে ভাইয়া??(ফিসফিসিয়ে)
.
আদিবঃআজ কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই বলে৷ দেখ এরা কী সুন্দর একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে৷
.
আরুহিঃচিন্তা মাত কারো ভাইয়া৷ খুব শীগ্রই তোমার গার্লফ্রেন্ড আসতে চলেছে৷
🍁🍁🍁🍁🍁
রাত দশটা বাজে৷ সামান্তা আর রিংকি গল্প করছে৷ আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিসোর্টের বাইরের দৃশ্যটা দেখছি৷ চাঁদের আলোতে রিসোর্টের চারপাশ আরও সুন্দর লাগছে৷ নিচে তাকাতেই দেখলাম কে যেন দাঁড়িয়ে আছে সবুজ ঘাসের উপরে৷ সাদা শার্ট কালো জিন্স এই দুই কালার তো আদিব ভাইয়া পড়ে৷ ভাইয়া এতো রাত্রে এখানে কী করছে নিশ্চয় গার্লফ্রেন্ডের ভুত ঘাড়ে চেপেছে৷

আমি নিচে চলে গেলাম ভাইয়ার কাছে৷ পিছন থেকে ভাইয়ার কাঁধে হাত রাখলাম আমি৷ ভাইয়াও আমার হাতে হাত রেখে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন৷

একি এটাতো আদিল ভাইয়া৷

আদিলঃরুহি তুই এতো রাত্রে এখানে কী করছিস??
.
কই এতো রাত দেখতে পাচ্ছোনা রিসোর্টের মানুষগুলো এখনও জীবিত আছে৷
.
তো তোর কী মনে ওরা মরে যেত?
.
আমি ঘুমানোর কথা বলছি৷ ওরা ঘুমায়নি৷
.
ভাইয়া আমার হাত উনার কাঁধ থেকে নামিয়ে উনার দুইহাত দিয়ে মুঠো করে ধরলেন৷

“রুহি তুই আমাকে ক্ষমা করেছিস? দেখ আমি আর এমন কোনদিন করবো না৷তোর কথা না বলা মেনে নিতে পারছিনা আমি৷
.
আমারও মনে হচ্ছে ভাইয়াকে ক্ষমা করে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া উচিত৷আমি ভাইয়ার হাতের উপরে হাত রেখে মুচকি হাসলাম৷ ভাইয়া উনার দু-হাত আমার কানের দুপাশে রেখে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন৷ আমি এখনো যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি৷ ভাইয়ার আচরনগুলো খুব ভাবাচ্ছে আমায়৷ কী হয়েছে ভাইয়ার আগেতো এমন করতে দেখিনি কোনদিন৷ আমারও কেন জানিনা খারাপ লাগেনি৷ কপালে হাত রেখে মুচকি হেসে চলে এলাম সেখান থেকে৷
🍁🍁🍁
সামান্তা আমি তোকে কিছু বলতে চাই বস আমার পাশে
.
ভাইয়া তুমি এতো রাত্রে আমাকে ডেকে আনলে কী দরকার বলোতো৷
.
কই বেশি রাত হয়নি মাত্র ১০টা বাজে সবাই জেগে আছে৷
.
কী দরকার বল??
.
আদনান পিছন ঘুরে পকেটে দুইহাত গুজে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,

“সামু আমি তোকে ভালোবাসি৷তোর জন্য আমার মনে যে সুপ্ত অনুভূতিগুলো ছিলো সেগুলো সিলেটে এসে ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে৷কারণ সিলেটে এসে আমরা প্রায়ই খুব কাছাকাছি থেকেছি৷ আর কালই আমরা সিলেট থেকে চলে যাচ্ছি৷ তাই আমার মনে হলো সিলেটে থাকতেই আমার মনের কথাটা তোকে বলি৷আর আমি এটাও জানি যে তুইও আমাকে ভালোবাসিস৷ আর আমাকে মাফ করিস আমি তোকে বোনের চোখে দেখতে পারলাম না৷

সামান্তা মাথা নিচু করে সব শুনছে৷ কিছু বলতে পারছেনা৷ওর মন বলছে আদনানের কথায় সাড়া দিতে কিন্তু মুখ খোলে কিচ্ছু বলতে পারছেনা৷
আদনান সামান্তার দুই কাঁধে হাত রেখে রাখলো,,
.
সামু ইউ সে সামথিং৷আমি জানি আমি যা করছি সেটা ঠিক না কিন্তু মনকে কে বুঝাবে৷ মন যে কারও কথা শুনেনা৷
.
তবুও সামান্তা কিছু বলছেনা মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছে আদনান সামান্তার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যেতে নিতেই
সামান্তা মুখ তুলে তাকালো তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,

ভ,,ভাইয়া আমিও তোমাকে ভালোবাসি অনেক
আদনান মুচকি হেসে চলে গেলো৷ সামান্তা এক জায়গাই দাঁড়িয়ে আছে আর মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷
🍁🍁🍁🍁
রুমে কেউ নেই বলে রিংকি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাচছে৷ওর নাচার মধ্যেই কোথা থেকে আহিল চলে এলো৷ রিংকির এমন অবস্থা দেখে সে তারাতাড়ি পিছন ফিরলো৷ রিংকি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আহিলের দিকে তাকালো তারপর তারাতাড়ি খাটে রাখা ওরনা গায়ে দিয়ে আহিলের দিকে এগিয়ে গেলো৷

“আহিল ভাইয়া আপনি এখানে৷
.
ওই আসলে রুহি তোমাকে নিচে ডাকছে৷
.
ও আচ্ছা চলুন৷
.
আহিল আর রিংকি নিচে গেলো কিন্তু কোথাও আরুহি বা সামান্তা নেই৷

“ভাইয়া এখানে তো কেউ নেই৷
.
আমি এখানে তোমাকে কাউকে খুঁজার জন্য আনিনি৷ আমার মনের অনুভূতিগুলোকে খুঁজার জন্য এনেছি৷
.
ভাইয়া এসব আপনি কী বলছেন৷
.
হুম আমি ঠিকই বলছি,,আচ্ছা রিংকি আমাকে দেখলে কী তোমার অন্যরকম ফিলিং হয় না৷ আমি জানি হয়৷ আমার মনে যে অনুভূতিগুলো আছে সেই অনুভূতিগুলো তোমার মধ্যেও আছে
.
“আপনি আমাকে এসব কেন বলছেন৷
.
কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি শুনেছো তুমি৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ এতদিন বুঝতে পারিনি কিন্তু এই দুইদিন ধরেই আমার মনে হচ্ছে তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ৷ তোমার কি মতামত তুমি সেটা জানিয়ো৷ আমি তোমাকে চাপ দিবোনা আমাকে তুমিও ভালোবাসো কথাটা বলার জন্য৷ তুমি টাইম নাও যত টাইম লাগে৷

রিংকির আহিলে কথা শুনে চোখে পানি চলে এসেছে যাকে ছয় মাস ধরে ভালোবেসে এসেছে আজ সেই ভালোবাসার কথা বলছে৷ রিংকি গুটিগুটি পায়ে আহিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো৷

“যদি বলি আমার টাইম নেওয়ার দরকার নেই আমি আজই আমার মতামত বলবো তাহলে???
.
আহিল কথাটা শুনে রিংকির দিকে তাকিয়ে রইলো৷

রিংকি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,আমিও আপনাকে ভালোবাসি আপনার অনেক আগে থেকেই৷ কথাটা বলে সে একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে গেলো৷ আহিল চাঁদের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারলো৷
🍁🍁🍁🍁🍁
রুমে এসে পায়চারি করছি আমি৷ রিংকি আর সামুর ব্যাপার কিছুই মাথায় ঢুকছেনা৷ দুইটা খাটের দুইদিকে শুয়ে আছে আর মাঝেমধ্যে মুচকি হাসছে৷

আরুহিঃএই তোদের কী হইসে বলতো৷
.
সামান্তাঃআগে বল তোর কী হয়েছে??
.
আরুহিঃআব আমার ক,,কই কিছু হয়নি তো৷
.
সামান্তাঃআমরা সব দেখেছি তাই লুকিয়ে কোন লাভ নেই৷ আদিল ভাইয়া তোকে প্রপোজ করেছো তাইনা৷ শুন রুহি আজ আমার কাছে মনে হচ্ছে প্রপোজ ডে কারন আমাদের চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই আজকে প্রপোজ করেছে৷
.
আরুহিঃমানে??
.
সামান্তাঃমানে হলো আহিল ভাইয়া রিংকিকে প্রপোজ করেছে আর আদনান ভাইয়া আমাকে এন্ড আদিল ভাইয়া তোকে৷
.
আরুহিঃতোরা ভুল ভাবছিস৷ আমাদের মধ্যে তেমন কিচ্ছু হয়নি আর ভাইয়াও আমায় প্রপোজ করেনি আর কেনই বা করবে৷ আহিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া তোদের প্রপোজ করেছে কারন ওরা তোদের ভালোবাসে কিন্তু আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসিনা৷
.
রিংকিঃকিন্তু আমরা যে দেখলাম তোরা একজন আরেকজনের হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিলিস৷
.
আমি ওদের দুটোকে সব কিছু খুলে বললাম৷ সামু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,বুঝলাম আদিল ভাইয়ার মনে তোর জন্য ফিলিংস আছে শুধু সেটাই না ভাইয়া তোকে ভালোবাসে কিন্তু তুই সেটা বুঝতে পারছিসনা৷
.
আরুহিঃকচু বাসে এসব একদম না৷ঘুমুচ্ছি আমি৷
🍁🍁🍁
আদনান আর আহিল আদিল,আদিবকে ওদের প্রপোজের কথা বলছে৷ আদিল ওদের কথা শুনে হাসছে কিন্তু আদিব ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে৷ শেষে না পেরে হাতের কাছে বাটি ছিলো সেটাই আহিলের মাথায় ছুঁড়ে মারসে৷

আদিবঃওই চুরেল তোরে না কইসিলাম আমরা একসাথে প্রেম করবো তাহলে এবার তুই আমারে রেখে নিজে প্রেম করছিস৷ মীর জাফর কোথাকার৷

আহিলঃদেখ ভাই অনেকদিন ধরে তোর লাগি অপেক্ষা করছি কিন্তু তোর তো কোন মেয়েকে পছন্দই হয়না৷
.
আদিবঃতোরা সব সিংগেল থেকে মিংগেল হইয়া ডাবল হয়ে যাবি৷ আর আমি সিংগেল সিংগেলই থাকবো৷
.
আদিলঃশুধু তুই না আমিও সিংগেল আছি৷ ওরা দুজন একসাথে প্রেম করবে আর তুই আর আমি একসাথে৷

চলবে♥️