Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1602



লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১৬

রাকিবের সামনে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে তৃষ্ণা।
হাতের মেহেদী লেপ্টে গেছে অনেক আগেই। কপালের দিকটায় জখম হয়ে নীলচে কালো বর্ণ।
হাত- পা বাধা অবস্থায় পড়ে থাকা তৃষ্ণার মুখে গোঙানির শব্দ।
নিজ বাসায় বন্দী তৃষ্ণার মুখে এক গ্লাস পানি ছুড়ে মারলো রাকিব।
তাকে টেনে হিচড়ে উঠিয়ে চেয়ারে বসিয়ে কল দিলো আরশাদকে।

এত কোলাহলের কারণে আরশাদ ফোন রিসিভ করেনি।রঙ্গান এবং সে ব্যস্ত মেয়ের বাড়ির লোককে আপ্যায়ন করায়।
কোথাও তৃষ্ণাকে না দেখে তুষার এগিয়ে গিয়ে তৃষ্ণাকে খুঁজতে লাগলো।
আশেপাশে কিংবা পুরো বাসা খুঁজেও যখন তৃষ্ণাকে খুঁজে পেলো না তুষার তখন ছাদে ফিরে এসে বাবার হাত ধরে বলল,

“বাবা আমার বুকের মাঝে এমন ফাকা ফাকা লাগছে কেন?আমার কলিজা কই?”

“কী হয়েছে?”

“বাবা তৃষ্ণা কোথায়?”

মুহূর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়ির পরিবেশ হটাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল।আরশাদ ফোনে বার বার কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
ঘরে ফিরে এসে দেখলো বিছানার নিচে ফোন বন্ধ হয়ে পরে আছে। ফোনের ডিসপ্লে ভেঙেছে, মনে হচ্ছে কেউ খুব জোরে পা দিয়ে আঘাত করেছে।
আরশাদের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো তৃষ্ণা বুঝি তার থেকে দূরে চলে যাবে বলে কোথাও চলে গিয়েছে।পর মুহূর্তে মনে হলো তৃষ্ণা এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন মেয়ে নয়। নিজের ভাইয়ের বিয়ের দিন এমন কিছু করবে বা এমন সিদ্ধান্ত নিবে।

যেহেতু তৃষ্ণার ফোন এ বাড়িতেই বন্ধ হয়েছে তাই ট্রেস করেও লাভ হবে না।রঙ্গান আশেপাশের রাস্তার সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে বেরিয়েছে। যখন সে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তুষার তার হাত ধরে বলল,

“আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজা আমার থেকে আলাদা করে নিয়েছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না।দেশের অবস্থা ভালো না। না জানি কেমন আছে রে আমার বোন। খুঁজে এনে দে। বিনিময়ে যা চাইবি দিবো।”

“তোর কলিজায় হাত দিয়েছে বলছিস?আমার তো সম্মানে। আরশাদের অস্তিত্বে। চিন্তা করিস না খুব দ্রুত ঘরের সম্মান ঘরে ফিরিয়ে আনবো।”

সিসিটিভি ফুটেজে তেমন কিছুই পাওয়া গেল না।তবে এটা নিশ্চিত তৃষ্ণা বাড়ির বাহিরে যায়নি।আরশাদ নিজের ফোন হাতে ব্যস্ত ছিল।হুট করেই তার ফোনে আবার কল এলো। ব্যস্ত থাকায় আরশাদ কেটে দিলে তার ফোনে আসে একটি এম এম এস।
যেখানে তৃষ্ণা চেয়ারে বাধা অবস্থায় এবং রাকিব অভব্য ভাষা ব্যবহার করে নানান ধরনের কথা বলছে।

রঙ্গান ফিরে এসে কিছু বলার পূর্বেই আরশাদ বলল,

“রাকিব আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য… ”
“তোমার থেকে না।ওকে জেলে পাঠিয়েছিল তৃষ্ণা। তাই তৃষ্ণাকে অপহরণ করেছে। আমার উচিৎ ছিল যেদিন ও তৃষ কে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল সেদিন ওকে শাস্তি দেওয়ার। আবার বুঝতে পারলাম” আগুন এবং শত্রুর শেষ রাখতে নেই।তবে তৃষ্ণা এবাড়িতেই আছে। ওকে বাহিরে নিয়ে যায়নি।”

“কোথায়?”

“জানি না।তবে আমরা পুরো বাসা তল্লাশী করবো।বিশেষ করে বদ্ধ ঘরগুলো।”

সেই মুহূর্তে রাকিবের কল এলো।সে নিজ থেকে জানালো কোথায় আছে। সবাই যখন বাড়ির পিছনে পৌঁছেছে রাকিব পালানোর চেষ্টা করলো না।
সে শুধু হেসে বলল,

“আমি পালালেও আমাকে ঠিক ধরে নিবি তোরা।কিন্তু আমার কাজ আমি করে ফেলেছি।আরশাদ দেখ! দুই ঘন্টা তোর বউয়ের সাথে আমি একা।ভাবতে পারছিস?আমি কী কী করতে পারি?এখন।হয়তো পুলিশের অত্যাচারে আমি স্বীকারোক্তি দিবো আমি কিছুই করিনি শুধু মাথায় আঘাত লাগায় তোর বউ মরার মতোন পড়ে আছে কিন্তু তুই তো জানিস সত্যিটা কী?এমন মেয়ের সাথে সংসার করবি?”

রাকিব এরপর আর কোনো কথা বলতে পারেনি।রঙ্গানের থাপ্পড়ে সে কানে হাত দিয়ে বসে পড়লো।তুষার এগিয়ে গিয়ে ততক্ষণে তৃষ্ণার বাধন খুলে ফেলেছে।
কোনো ভাবেই বোনকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটলো ঘরের দিকে।আরশাদ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল শূন্য ঘরটায়।

মানসিক ভাবে যে ধাক্কাটা লেগেছিল তৃষ্ণার কিংবা শারিরীক! সব’টা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছে তৃষ্ণার। এই সময়টায় সবাই তাকে সাপোর্ট করেছে। সব’চে করেছে আরশাদ।
সেরাতে কী হয়েছিল কেউ জিজ্ঞেস করেনি।অভিশপ্ত সন্ধ্যের কথা কেউ তৃষ্ণাকে মনে করাতে চায় না।তবে তৃষ্ণা নিজ থেকে সবটা বলেছিল।আরশাদ বেরিয়ে যাওয়ার পর রাকিব ঘরে প্রবেশ করে। তার পরণেও কনে পক্ষের পোশাক ছিল।ওয়াশরুমে যাবে বলে তৃষ্ণার সাহায্য চায়।তাই তৃষ্ণা তার ঘরেরটা ব্যবহার করতে বলে।পিছন ফিরে ফোন হাতে নিচ্ছিলো তখন ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখে লোকটা তার দিকে ফুলদানি তুলেছে।পিছন ফিরে তাকাতেই বাড়িটা তার কপাল বরাবর আঘাত করে। এরপর তার আর কিছুই মনে নেই।

আরশাদ তার কৃতকর্মের জন্য তৃষ্ণার কাছে শেষ একটা বার সুযোগ চেয়েছে।
রাকিবের কাজে সে সন্দেহ তো দূর তৃষ্ণাকে জিজ্ঞেস অবধি করেনি।কারণ তার বিশ্বাস রাকিবের মতোন কাপুরষ এর কোথায় বার বার ভাঙার নয়। সে ভুল করেছিল তবে পাপ করবে না।

প্রতিটি মানুষ তৃষ্ণার কাছে অনুরোধ করেছে আরশাদকে একটা বার সুযোগ দেওয়ার। কারণ প্রতিটা সম্পর্ক একটা দ্বিতীয় সুযোগ প্রাপ্য।
তৃষ্ণা কিছু বলেনি। গত কয়েকদিনে তার সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে উঠেছে।
সকল স্মৃতি আরশাদের চেষ্টায় পুনরায় উজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে তৃষ্ণা নিজেকে জিজ্ঞেস করে,
“আরশাদকে মাফ করে দেওয়ার কারণ কী এটাই যে সে রাকিবকে বিশ্বাস করেনি?”
এমন হলে কী সে আরশাদের উপর অন্যায় করছে না?
রঙ্গানকে সব’টা বলার পর রঙ্গান বলেছিল
“না। একটি সম্পর্কে বিশ্বাস আয়নার মতোন।তুই তার প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছিস তাই আয়নাও তোকে বিশ্বাস করছে।একটা সুযোগ সবার প্রাপ্য।”

আরশাদ প্রেমিক স্বামী হওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে এমন সব পাগলামো করে ফেলে তৃষ্ণা তাকে ভালো না বেসে পারে না।
দুঃস্বপ্নের মতোন ভুলে যেতে চায় সেই কয়েকটা দিন।
প্রতিদিন সকালে আরশাদ ঘুম থেকে উঠে তৃষ্ণার কপালে ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে যখন বলে,

“আমার ভালোবাসা একঝাক বোলতার মতোন।আমি চাই এই এক ঝাক বোলতা তোমায় পুরোদিন আমার কথা ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দিক।”

“বোলতা?আর কিছু পেলে না?এখন বুঝি আমার হাত দিয়ে মাছের আঁশটে গন্ধ আসে না?কম দামী জিনিস পরলে মানে লাগে না?”

“না। কারণ ক্ষয় যাওয়া ভালোবাসায় প্রেমের প্রলেপ দিচ্ছি।ভালোবাসতে বাসতে প্রেমটা উবে গিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিলাম প্রেমিকের অনুভূতি।”

অনেকদিন পর আজ তৃষ্ণা কলেজে এসেছে।পুরো ব্যস্ততম দিন পার করে ফিরছিল আরশাদের সাথে।
বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি। তাই সি এনজি নিয়ে ফিরছিল তারা।তৃষ্ণা পাশে বসতেই আরশাদ সেই চিরচেনা গন্ধ পেল।যে গন্ধটা কেবল তৃষ্ণার থেকেই পায় সে। তৃষ্ণার হাত নিজ হাতে আবদ্ধ করে মনে মনে বলল,

“ভাগ্যিস! সময় থাকতে ভুল বুঝতে পেরেছিল।নিয়তি তাকে আরেকবার সুযোগ দিয়েছে। না হলে কী হতো?আজকের এই মুহূর্ত কী কখনো স্মৃতির পাতায় জমা হতো?”

তৃষ্ণা তার দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী ভাবছে?
আরশাদ তৃষ্ণার ডান হাতের উল্টো পাতায় আলতো চুমু দিয়ে বলল,
” নাউ আই ফিল ইন লাভ উইথ মাই বেটারহাফ।”

(সমাপ্ত)

কিছু কথাঃ ডিভোর্স কোনো সমস্যার সমাধান নয়। একটি সম্পর্কে উভয়কেই কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়। ডিভোর্স এর পর যাকে বেছে নিবেন সে আপনাকে সুখী রাখবে এমন নাও হতে পারে। সম্পর্ককে একটা শেষ সুযোগ দিয়ে দেখুন।যদি সুযোগের পর মানুষটা না বদলায় তবে সিদ্ধান্ত নিন।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১৫

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৫

“কী বললি?মেয়ের বয়স চল্লিশ?তুষারের সাথে ওই মেয়ের পরকীয়া? আরে ওটা মেয়ে না তো!ওইটা বুড়ি, তিন বাচ্চার মা সে আবার মেয়ে বা মহিলাও বলা চলে না সে আস্ত একটা বুড়ি। মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি হয় আর সে চল্লিশ?ঝুনা বুড়ি।
শেষ মেষে তুষার এক ঝুনা বুড়িকে?”

রঙ্গানের এমন কথায় বেশ বিরক্ত হলো তৃষ্ণা।কোথায় সে নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলছিল আর কই সে তুষারকে ক্ষেপানোর জন্য এসব বলছে।সামনেই একটু দূরে তুষার দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, তাকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে সে এসব বলছে।

“তুমি থাকো তো! আমি যাচ্ছি।”

এবার রঙ্গান বসে থাকা অবস্থায় তৃষ্ণার বেনুনী তার হাতে প্যাঁচিয়ে নিয়ে একদম তার পাশে বসালো তৃষ্ণাকে।
তৃষ্ণা রঙ্গানের গা ঘেঁষে বসে পড়েছে। তখন তৃষ্ণাকে আরেক দফা বিরক্ত করার উদ্দেশ্য রঙ্গান বলল,

“কী ব্যাপার? তুই কী আমার কোলে বসবি না কী?’

” চুল ছাড়ো। ব্যথা লাগছে।”

“লাগুক। এতে যদি তোর বিরিং কিছুটা কমে।”

“লোকে দেখলে কী বলবে?বাড়িতে এত মানুষ! আমি তোমার সাথে পরকীয়া করছি।”

“নাউজুবিল্লাহ্। মেয়ের অভাব পড়ছে কী?যে তোর মতো বুড়িকে বিয়ে করবো?”

“আমি বুড়ি?”

“চল্লিশ বছরের দামড়ি বুড়ি যদি নিজেকে তোর সমান বলে তোর সাথে নিজের কম্পেয়ার করে তবে তুই বুড়ি।”

“আমার কী দোষ? আমি বুঝি না সে নিজেও একজন প্রফেশনাল আমিও তাই। তাকে মানুষ কম চিনে, স্টুডেন্ট বলো কিংবা অন্যকেউ।তার পরিচিতি কম বলে কী সে আমাকে সব সময় এমন বলতে পারে?
হ্যাঁ বুঝলাম তার কাজের অভিজ্ঞতা বেশি কিন্তু আমার কাজের চাহিদা বেশি।
সে সবসময় আমার নামে এর কাছে ওর কাছে বদনাম করবে আবার আমি কিছু বললে সবাই আমাকে কথা শোনাবে, আমি কেন সহ্য করি না, এদিকে সেই অভব্য মহিলা যে নিজ থেকে আগে লাগতে আসে সেটা সবাই ভুলে যায় তখন।”

রঙ্গান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে একটু উচ্চস্বরে হেসে দিয়েছে। এদিকে অন্যমনস্ক তৃষ্ণা হঠাৎ হাসির শব্দ শুনে কিছুটা ভড়কে গিয়ে তার হেঁচকি উঠে গেছে।

তার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে রঙ্গান বলল,

“সে তোর কলিগ মাত্র। পাত্তা দিস না।৩০ বছরের পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে মহিলার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে।
আমি যাচ্ছি, প্রিন্সিপালের থেকে তোর ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে আসবো।কেমন?এবার বল কী খাওয়াবি?”

“আগে ছুটি।ছুটি মঞ্জুর করে দিয়েছিল তবে এই অভব্য মহিলা গিয়ে বলেছে আমি আগেও ছুটি নিয়েছি এখন ছুটি নেই কী করে?
না কোনো মেডিকেল ইস্যু না অন্য কোনো জরুরী কারণ।ভাইয়ের বিয়ের জন্য ছুটি?
হাফ ডে করেও তো বিয়ে এটেন্ড করা যায়৷”

“বলেছি তো,উনার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে। চিন্তা করিস না।”

এবার তুষার এগিয়ে এসে বলল,
“কথা হয়েছে,ছুটি মঞ্জুর করে দিবে। একটা আবেদন করতে বলল এই আরকি।অফিশিয়াল ব্যাপার স্যাপার।”

“ব্যস হয়ে গেল।আর কী?”

“তবে বলো কী খাবে?”

তুষার এবং রঙ্গান একে অপরের দিকে তাকিয়ে দু জনেই এক সঙ্গে বলল,

“কড়া করে দুধ চা। সাথে চানাচুর মাখা।”

আরশাদ অফিসের কাজে ইদানীং খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝের দুদিনের বিরতিতে অনেক কাজ জমেছে।
দ্রুত হাতে কাজ শেষ করছে সে। কিছুক্ষণ পর মিটিং শুরু হবে তার।
প্রথমে মা কে কল দিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলে নিলো সে।
তৃষ্ণাকে কল দিতেই তৃষ্ণা রিসিভ করে বলল,।
“আমি গোসলে।”
“আসবো?”
“কোনো প্রয়োজন?”
“আপনাকে আমার সবসময় প্রয়োজন।”
“আমি গোসলে।”
“ফোন সাথে কেন?”
“মাত্র ভাই কল দিয়েছিল।তাই।”
“কী খাবে বলো!”
“কিছুই না।”
“বাজারে কিছুই না পাওয়া যায় না।”
“বিরক্তির একটা সীমা থাকে।”
“প্রিয়তমা, ভালোবাসা এবং বিরক্তির কোনো সীমা থাকে না।”

“আপনার মিটিং শুরু হবে। দশ মিনিটে। পানি খেয়ে নিবেন।চশমা পরে প্রেজেন্টেশন দিবেন।আর হ্যাঁ সব ভালোয় ভালোয় হবে।”

“দ্যাটস্ মাই লেডি। আচ্ছা রাখছি।”

“হুম।”

ফোন রেখে আরশাদ মিনিট দুই জিরিয়ে নিলো।চোখ বন্ধ করে।প্রতিবার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে জড়ানোর আগে সে তৃষ্ণার সাতে ফোনে কথা বলে নেয়৷ কারণ তৃষ্ণা তার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে সব সময়।মনটা ভালো থাকে, এদিকে কাজেও শান্তি। তবে মাঝের করা ভুলগুলো সে কী করে শুধরাবে?
সে চেষ্টা করছে তার ভুলগুলো শুধরে নিতে কিন্তু কোনো অনুতপ্ততা তার মনকে শান্তি দিচ্ছে না।
যাইহোক না কেন সে তৃষ্ণাকে ছাড়তে রাজি নয়। তার করা ভুলের শাস্তি সে যেকোনো কিছু মাথা পেতে নিবে শর্ত একটাই
তৃষ্ণা তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।”

রঙ্গান এবং তুষার কলেজ থেকে তৃষ্ণার ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে এসেছে। তুষার মনে হচ্ছে তার বিয়ে নিয়ে একটু বেশিই খুশি ।
নিজের বিয়ের কাজ সে নিজ হাতে করছে।
আর তার দাদী তাকে বার বার ধমকে বলতেছে,

“ও লো ছেরা শরম নাই?নিজের বিয়ার কাম নিজেই করতাছো?”

তুষার হেসে বলল,।
“দাদী আমার বুইড়া বেটি কাম করবো তাইলে কোনো ছেমড়ি?দাদী তুমি আরেকটু জোয়ান হইলা না কেন?তাহলে বিয়াটা আমি তোমারেই করতাম।”

“ও লো মুখ পোড়া। সাহস দেখছোনি?হাত পা বাইন্ধা বাইড়ামু কিন্তু।”

ছাদে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে উচ্চস্বরে গান বাজছে।
এমন গান কে বাজাচ্ছে তাকে দেখার খুব শখ হচ্ছে তৃষ্ণার। আপাতত সে পারছে না কারণ তার হাতে মেহেদী পরানো হয়েছে। তার শ্বশুরের কথায় সে দুহাত ভর্তি মেহেদী লাগিয়েছে। কারণ উনি বলেছে যে তৃষ্ণার মেহেদী রঙা হাতে না কী তৃষ্ণাকে পুতুল পুতুল লাগে।

আরশাদ ঘরে এসেছে। ক্লোজেট থেকে নিজের কাপড় বের করার সময় সে গুনগুনিয়ে গান গাইছে,

“পাশের বাড়ির চ্যাংরা পোলা প্রেম করিতে চায়
হিন্দি গানের তালে আমায় ডাকে ইশারায়।”

এই গানটাই বাজছে উপরে।আর তৃষ্ণার মেজাজ গরম হচ্ছে তার।
তৃষ্ণা আরশাদকে ধমকে বলল,

“এমন গান কে বাজাচ্ছে?”
“কে আবার তোমার ভাই।”
“বিয়ের খুশীতে ওর মাথাটা একদম গেছে।”
“বউ যে কী জিনিস! জানলে খুশী হতো না।দেখি হা করো।”
“কী এটা।”
“কিছুই না।”
“এটা খিচুড়ি।”
“হুম তোমার প্রিয়টা। নাও হা করো খাইয়ে দিচ্ছি।”
‘খাবো না।”
“তৃষ! খাবারের সাথে রাগ আমার পছন্দ না তুমি জানো।আমিও দুপুরে খাইনি।একসাথে খাবো বলে।”

তৃষ্ণা আরশাদের এই কণ্ঠস্বর খুব ভালো করে চিনে।আরশাদ যখন গুরুত্ব দিয়ে কোনো কথা বলে তখন তার কন্ঠস্বর এমন হয়।

খাওয়া শেষ করে আরশাদ তাকে পানি খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। তৃষ্ণা উঠে দাঁড়িয়েছে, তার পরণে হলুদ শাড়ি। এর মানে হচ্ছে সে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য একদম তৈরী।
আরশাদ কিছু না বলে তৈরী হতে চলে যায়। ফিরে এসে তৃষ্ণার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলল,

“আমি জানি না আমি কী করলে তুমি আমাকে মাফ করবে। তবে আমি চাই তুমি আমাকে মন থেকে মাফ করো।তবে এটা মনে রেখো তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মেনে নিবো কিন্তু আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে না।”

তৃষ্ণা আরশাদের কথায় দাম্ভিকতার হাসি হেসে বলল,

“আগামী বুধ বার আমাদের ডিভোর্স নিয়ে কোর্টে যাচ্ছি। আশা করি সেদিন আপনার ভুল ভেঙে যাবে।”

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১৪

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৪

রঙ্গান দাঁড়িয়ে আছে ভিজে চুপসে দরজার সামনে। তার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণা।

“মহারাজ্ঞী?আমার কি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি আছে?”

“এই কাঁদা পায়ে?”

“আমি আপনার সামান্য বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। আমাকে এই মার্জনা করুন।”

“না, মোটেও তুমি আমার বেতনভুক্ত নও।”

“তবে আজন্ম আপনার দাস হয়ে থাকবো।এবার অনুমতি দিন।”

“দাস নয়, পুরুষ মানুষ এর জন্য দাস শব্দটা আমার কাছে বড্ড দৃষ্টি কটু।তুমি বরং এক সাম্রাজ্যের সম্রাট হও বৎস৷”

“তবে আপনি হন সেই সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী।আপনি কি রাজি?”

“বেটার লাক নেক্সট জন্ম।এজন্মের জন্য আপাতত বুকড।”

তৃষ্ণার জবাবে রঙ্গান দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে এমন ভঙ্গি করলো যেন কেউ বিষাক্ত তীর দিয়ে তার হৃৎপিন্ডকে এফোড় ওফোড় করে দিয়েছে।

আর তৃষ্ণা খিলখিল করে হাসছিল যেন ভরা যৌবনা নদীতে মাঝি তার বৈঠা দিয়ে ছপাৎ ছপাৎ শব্দে এগিয়ে চলেছে।

তৃষ্ণার দাদী পানের জন্য সুপুরি কাটার সময় সব’টা খেয়াল করে মনে মনে বললেন,

“ও ছুড়ি তুই সোনা থুইয়া কাচের পিছনে ছুটলি।কিন্তু কাঁচ তো তোরে সামলাবো না,আরো ভাইঙ্গা গিয়া তোর মন ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।”

তুষারের বিয়েতে এক উল্টো কাজ হয়ে গেলো।আশেপাশের মানুষ নয় তার দাদী ছি ছি করছিলেন। কারণ বিয়ের আগে মেয়ে তার পরিবারের সাথে এসেছে বিয়ের পাকা কথা দিতে। একে তো তাদের প্রেমের বিয়ে আবার এর মাঝে মেয়ে নিজে এসেছে বিয়ে কথা বলার জন্য আসা পরিবারের সাথে।
এই বিষয় কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

পুরো বিষয়টি সামাল দিলো আরশাদ। সে সম্পূর্ণ দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে বলল,

“দাদীজান, আমিই নিয়ে আসতে বলেছি কারণ দেশের যা অবস্থা এর মধ্যে বাসার সব মানুষ আসবে এখানে। এই মেয়েটাকে কোথায় রেখে আসবে?
আর তাছাড়া যে দিন কয়েক পর এই বাড়ির বউ হয়েই আসবে সে যদি দিন কয়েক আগে আসে এতে সমস্যা নেই।
তৃষ্ণাকে নিয়েও তো বিয়ের আগে আমাদের বাসায় কত অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ধরে নিন এটাও একটা অনুষ্ঠান। ইনফ্যাক্ট, সব কথা পাকা হলে আমরা আংটি বদল করে রাখতে পারি।”

তৃষ্ণার দাদী আরশাদকে পছন্দ করেন না এমন নয় তবে যখন জানতে পেরেছে আরশাদ তার বন্ধুর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে হলেও তৃষ্ণার সাথে খারাপ আচরণ করেছে
তখন থেকে কেন যেন তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখতে পারছেন না তিনি।
তবুও এক ঘর ভর্তি মানুষের সামনে আরশাদকে কিছুই বললেন না,
কারণ আজ সকালেই সবার সাথে কথা হয়েছে আপাতত তৃষ্ণা এবং আরশাদের বিয়ে ভাঙ্গনের কথা কনে পক্ষকে জানানোর প্রয়োজন নেই।
এতে করে তুষারের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।

তাছাড়াও আরশাদ এখনো এই বাড়ির মেয়ের জামাই।আর এই বাড়ির মেয়ের জামাইদের সাথে কখনো কেউ খারাপ ব্যবহার করার দুঃসাহসিক বেয়াদবির কাজ এ অবধি কেউ করেনি।

আরশাদ এভাবে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য তৃষ্ণার বাবা তার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলেন।
কনে পক্ষের সাথে মোটামুটি কথা ঠিক হলেও কিছু কথা নিয়ে বেশ ঝামেলা হলো।এর মধ্যে অন্যতম হলো তারা চাইছেন বিয়ের কাবিন হিসেবে দশ লক্ষ টাকা। কিন্তু তুষারের বাবা নারাজ। কারণ তার ছেলের সামর্থ্য নেই সে নগদ এতগুলো টাকা দিতে পারবে। কিন্তু কনেপক্ষের কথা এটা তাদের মেয়ের লাইফ সিকিউরিটি।

কথা-কাটাকাটির এক সময় বিয়ে না হওয়া অবধি চলে যায়। তখন কনে এসে সরাসরি তুষারকে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি কতটা দিতে পারবেন?”

“পাঁচ জমানো আছে আমার।”

“লাখ?”

“জি।”

“তবে আমার বিয়ের কাবিন করুন পঞ্চাশ হাজার টাকা।”

কনের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।ধমকে উঠেছে তার মামা।এসব কী বলছে?মাথা ঠিক আছে?

“দশ লাখ টাকায় আমার জীবন যাবে না।তাছাড়া আমি তো আর ডিভোর্সের চিন্তা করে বিয়ে করছি না। আমার পুরো জীবনের সব দায় দায়িত্ব শরীয়ত মতে আমার স্বামীর উপর থাকবে। শুধু লোক দেখানো বড় অংকের টাকা দিয়ে লাভ নেই।সে আমার সারা জীবনের দায়িত্ব নিচ্ছে। এটাই অনেক।”

যেখানে কনে এই কথা বলেছে সেখানে আর কারোর কিছুই বলার থাকে না তবে তুষার বলল,

“আপনারা অনুমতি দিলে কাবিনে পাঁচ লাখ লিখুন।এবং আমি বিয়ের রাতেই উশুল করবো কারণ যে মেয়ে আমাকে এতটা বিশ্বাস করতে পারে
তার পরিবারের খুশীর জন্য আমি এটুক করতেই পারি।”

কিছুক্ষণের মাঝে তাদের কাবিন হয়ে গেল।নবনীতাকে তৃষ্ণা লাল শাড়ি পরিয়ে হালকা সাজে সাজিয়েছে। আজ তার খুব করে নিজের বিয়ের কথাগুলো মনে পড়ছে।

এইতো মাস আর কয়টা হবে?তাদের বিয়ের এক বছর এখনো পূর্ণ হয়নি।সেদিন তার চোখেমুখেও ছিল উপচে পড়া খুশি অথচ আজ?

ভালোবাসা রঙ বদলায় না,
ধীরেধীরে ভালোবাসা ক্ষয় যায়।

পুরো দিন ব্যস্ততায় কাটিয়ে রাতে বিছানায় ধপাশ করে শুয়ে পড়লো তৃষ্ণা। আরশাদ একপাশে বসে ল্যাপটপে কি যেন করছিল।
তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছে৷
তার মনে হঠাৎ কুবুদ্ধি উদয় হলে সে তৃষ্ণাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“মনে হলো খাটে এক আস্ত কাঁঠাল পড়েছে।”

তৃষ্ণা একবার মুখ তুলে চেয়ে আবার বালিশে নাক গুজলো।কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ আরশাদ পুনরায় বলল,

“শোনো যেখানে সেখানে এই কাঁঠালের মতোন ধড়াস করে বসবে না।মানুষ কী ভাববে বলো তো?
অবশ্য দিন দিন একটু মোটা হচ্ছো। ঠিক আছে সমস্যা নেই বিয়ের পানি পড়লে মেয়েরা একটু মোটা হয়৷”

আরশাদের কথায় তেড়েমেরে উঠে বসলো তৃষ্ণা। হিসহিসিয়ে বলল,

“বাড়ি আমার, ঘর আমার, বিছানা আমার, বালিশ আমার। যা ইচ্ছে করবো আপনি বলার কে?
আর আপনি এখানে কেন?নিজ বাড়িতে যান। ওখানে গিয়ে থাকুন।”

আরশাদ ল্যাপটপ বন্ধ করে তৃষ্ণার কাছাকাছি এসে বলল,

“শ্বশুর বাড়ি আমার, বউ আমার, আমার যা ইচ্ছে বলবো। তুমি বলার কে?”

“শ্বশুরের মায়েরে বাপ।”

তৃষ্ণার মুখের কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরশাদ।
“এই তুমি এই কথার মানে জানো?কত বার বলেছি হুটহাট এসব কথা বলতে নেই।এগুলোর মানে বড্ড বাজে।”

“হলে হবে। আমার কী?”

“তুমি পাগল।”
“যান তো যান।ঘুমাতে দেন।”

তৃষ্ণা যখন গভীর ঘুমে, আরশাদ তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“ভালোবাসা ক্ষয় হয় তৃষ্ণা। আমি এই ক্ষয়টা পুষিয়ে দিবো।আমি জানি আমার এতটা ধৈর্যশীল নই তবে এটাও ঠিক সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরলে তা রোধ করা খুব কঠিন।

আমি আবার একবার প্রেমিক হবো তোমার।
ঠিক ভালোবাসায় ভুলিয়ে দিবো তোমার মনকে।
কারণ আমি তোমার প্রেমিক হবো, তোমার প্রেমিক স্বামী।কারণ তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।”

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১২+১৩

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#পর্ব-১২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

“আমি কী তোকে মিথ্যে বলছি আরশাদ?এই দেখ ছবি। আমি যখন ওইদিক দিয়ে আসি দেখি দুজনে দাঁড়িয়ে আছে। কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি হচ্ছে। তারপর তৃষ্ণাই আগে হাত বাড়িয়ে দিলো আর রঙ্গান হাত ধরলো। তারপর বাইকে করে চলে গেল।”

“কখন দেখেছিস?”

“কিছুক্ষণ আগে। বড়জোর ঘন্টাখানেক আগে।”

আরশাদ কিছুই বলল না, সিগারেট ধরালো। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দিতে দিতে বলল,

“তোর কী মনে হয় রাকিব?”

“কী মনে হতে পারে?”

“ওদের মধ্যকার সম্পর্ক?”.

” এইভাবে হাত ধরাধরি? সরি টু সে,কিন্তু আমার বউকে আমি তো দিবো না।”

“আমার জায়গায় থাকলে তুই কী করতি?”

“সত্যি বলবো?”

” জিজ্ঞেস যখন করেছি সত্যিটাই জানতে চাই।”

“চুলের মুঠি ধরে বাসা থেকে বের করে দিতাম।আর পরদিন সোজা তালাক।”

“আর বউ যদি ফিনফিনে শাড়ি পড়ে সুগঠিত শরীর দেখিয়ে রাতভর পার্টি করে?”

“আর যাই হোক ওই বউ নিয়ে সংসার হয় না।”

“একদম ঠিক।তাহলে চল।”

“কোথায়?”

“এই তো এডভোকেট আব্দুল মোতালেব এর কাছে।”

“ডিভোর্স স্পেশালিষ্ট? আমি তো জানি তুই কাগজ রেডিই করেছিস।”

“করেছি আমার জন্য। তোর টা তো এখনো বাকী।”

“মানে?”

“খুব সোজা। তুই তো আমাদের ব্যাচের শেয়াল পন্ডিত অথচ এই সোজা কথার মানে বুঝলি না?”

“ঝেড়ে কাশি দে। কি বলতে চাইছিস?”

“তৃষ্ণা, রঙ্গানের হাত ধরেছে বলে তুই বলছিস আমার ওকে তালাক দিয়ে দেওয়া উচিৎ।”

“রাস্তাঘাটে মান-সম্মান খোয়াতে না চাইলে দিয়ে দেওয়া উচিৎ।”

“তবে তোর উচিৎ তাই করা।তোর বউকে তালাক দেওয়া।”

“কি সব বলছিস?পিনিকে আছিস?”

“ছিলাম।শোন তোদের কাছে সাপ্তাহিক রিল্যাক্স মানে সুইমিং পুলের পানিতে নেমে ছেলে মেয়ে একত্রে গোসল করে নেশায় মত্ত থাকা।কে কার বউকে কীভাবে স্পর্শ করছে, কই কই স্পর্শ করছে সেসব তোরা দেখিস না।
তোরা ওই নীতিতে চলিস

‘তোর বউ আমার বউ, আমার বউ তোর বউ।’

কিন্তু আমি না। হ্যাঁ আমার অনেক দোষ। বিগত চারটে মাস আমার ছোট্ট পাখির বাসায় কি না বয়ে গেল।যে মেয়েটা আমার সব সেই মেয়েকে আমি সেসব মেয়ের সাথে তুলনা করতেছিলা।

শালা কি বলবো আমরা কাপুরুষের জাতটাই এমন। নিজের ঘরের হীরেকে চিনি না, বাইরের বালির প্রশংসায় মেতে থাকি।

তুই একটা কথা বল তো!
কোটি টাকার সম্পত্তি তুই কাউকে এমনিই ধরতে দিবি?
না তো!দামী ফোনটাই দিবি না কারো হাতে। অথচ দেখ

আমার তৃষ্ণা আমার সারাজীবনের সম্পদ।

আর বললি না?টাকা ও কোথায় পেল?

নিজের গয়না বন্ধক দিয়েছে। বিয়ের গয়না।কখনো ভেবেছিস?
আমার বাবার জন্য ওর দায় পড়ে নেই কিন্তু ও দিয়েছে। স্টুডেন্ট লাইফ থেকে বিন্দু বিন্দু টাকা জমিয়ে যে টাকাটা ফিক্সড ডিপোজিটে রেখেছিল তা ভেঙেছে। এরপর আর কিছু বলার থাকে?”

“এসব দেখে তুই গলে গেছিস?চকচক করলেই সোনা হয় না।”

“কিন্তু তৃষ্ণা তো সোনা নয়। ও আমার সেই সম্পদ যাকে আমি পায়ে ঠেলে দিয়েছিলাম।তৃষ্ণার মিতব্যয়ী স্বভাব যা আমার আগে খুব পছন্দ ছিল কিন্তু হঠাৎ তোর কথায় সে স্বভাব আমার গলায় ফাঁসির ফান্দার মতো লাগছিল কেন?
কারণ জানিস?কারণ হচ্ছে তুই আমার মধ্যে সেসব ঢুকিয়েছিলি।
আজ দেখ তৃষ্ণার ওই বাজে স্বভাব,টাকা না খরচ করার স্বভাবের জন্য আমার বাবা আজ ঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পেরেছেন।

তোর সাথে তো বাবার রক্তের গ্রুপ মিলেছিল, তুই তো দিতে এলি না। ”

“কারণ আমি নেশা করি। আমার রক্ত আরো ক্ষতিকর।”

“শুধু তোর রক্ত নয়, তুই নিজেও আমার সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।”

“আমি এতটাই ক্ষতিকর যখন তবে বেশ আমি যাচ্ছি। আর তোকে বিরক্ত করবো না।”

“তোর ফোনটা নিয়ে যা।আর ছবিটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখ পাশে তুষার দাঁড়িয়ে। তৃষ্ণার ভাই।”

“তুষার না থাকলে কী তুই আমাকে বিশ্বাস করতি?”

“না, কারণ যে একবার ঠেকে শিখে সে বারবার ভুল করে না।তৃষ্ণা আমার জন্য সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত।রহমতকে পায়ে ঠেলে, কষ্ট দিয়ে যা শাস্তি পাওয়ার আমি পেয়েছি। আর নয়। আমি জানি না তুই এমন কেন করেছিস তবে শুধু বলব

” বন্ধুবেশে শত্রু হেমলকের থেকেও বিষাক্ত।”

রাকিব চলে যাওয়ার পর আরশাদ নিজ চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে সাথে সাথে নিভিয়ে ফেলল সে। তৃষ্ণাকে কল দিচ্ছে সে।
কল ধরলো আরশাদের মা।
তৃষ্ণা তার বাবার সাথে দেখা করতে সি আই সি ইউ এর ভিতরে গিয়েছে।

ফোন রেখে আরশাদ মনে মনে চিন্তা করলো,

“আজ যাই হোক না কেন, সব কিছুর জন্য সে মাফ চাইবে সবার কাছে। ভুল যা করছিল আর কখনো হবে না।”

কলেজ থেকে ফেরার পথে তৃষ্ণা দেখল তার বাবা তার জন্য অপেক্ষা করছে। সামনে পূজোর প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। ভীড় বলেই সে মেয়েকে নিতে এসেছে।

বিকেলে সবাই যখন হাসপাতালে ছিল তখন সম্পূর্ণ কথা তুষার তার মা-বাবাকে জানায়। তারা কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সব’টা তৃষ্ণার উপর দিয়ে দিয়েছে।
সবার সামনেই তৃষ্ণা তার মতামত জানিয়ে দিলো,

“সে আরশাদ কে ডিভোর্স দিচ্ছে। কারণ তাদের কেস ইতিমধ্যে কোর্টে উঠেছে।”

চলবে

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৩

আরশাদ তৃষ্ণার সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল তার বসার ঘরে। অফিস থেকে ফিরে সে ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র বসেছে। সে মুহুর্তে তার মা তাকে কল দিয়ে সব’টা জানায়। তবে এখন তার বাবাকে কিছু জানাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তৃষ্ণার কাছে আজ কোর্ট থেকে কাগজ পাঠিয়েছে। সেটা সে হাতে পেয়েছে এবং তুষারকে নিয়ে সে এক উকিলের সাথেও কথা বলেছে।
তৃষ্ণা না কী নিজেও চায় দ্রুত ডিভোর্সটা হয়ে যাক।

ফোনটা রেখে মানিব্যাগটা হাতে নেয় রঙ্গান। সেখানে দেখা যাচ্ছে তৃষ্ণাকে।
সোনালী পাড়ের হালকা গোলাপি শাড়িতে।
ছবিটা কবে কার হবে?আরশাদ চিন্তা করছে।হ্যাঁ এটা তার প্রেমে পড়ার বছরের ছবি।
এই ছবিটাও লুকিয়ে তোলা। তৃষ্ণাদের কলেজ ফাংশানে তার হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে।
কারো সাথে কথা বলার সময় হাসতে হাসতে ফুল কপালে ঠেকায়।
তখন তুলেছিল ছবিটা।

সে সময় থেকেই ছবিটা তার মানিব্যাগে থাকে।
এরপর মানিব্যাগ বদলেছে অনেকগুলো কিন্তু বদলায়নি এই ছবিটা।তার সর্বক্ষণের সাথী।

তৃষ্ণার প্রতি তার ভালোবাসা তার প্রতি তৃষ্ণার ঘৃণার বা অভিমানের সমানুপাতিক।
ভালোবাসায় অভিমান সমানুপাতিক হলে সম্পর্কটা টিকে না। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় শেষ পরিণতির দিকে।

তৃষ্ণার প্রতি তার সকল ভালোবাসার এখন কোন মূল্য কেউ দিবে না, শুধু তার করা কিছু ভুলের কারণে।

এসব চিন্তা ভাবনায় কখন দুচোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছিল নিজেও জানে সে। ঘুম ভাংলো তখন রাত অনেক।নিজ হাতে কফি বানিয়ে ফেসবুকের ডাটা অন করতেই ম্যাসেজে ভরে যেতে লাগলো ইনবক্স।
একটাই ম্যাসেজ

“রাকিব কে পুলিশে ধরেছে। সাইবার ক্রাইমের জন্য। জানিস কিছু?”

আরশাদ কিছুটা অবাক হয়ে রইল।এরপর কল দিলো ওর বন্ধু ফারদিন কে।ফারদিনের কাছ থেকে সব’টা শুনে আরশাদ কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল। কারণ রাকিবের বিছানো সুন্দর মায়াজালে সে এভাবে তার নিজের সংসার বিসর্জন দিয়ে দিলো?

তবে কী সত্যি?বন্ধু নির্বাচনের কোনো বয়স হয় না?
পিঠ পিছনে ছুড়ির আঘাতগুলো কাছের মানুষ করে?
তারা এতটা হিংসে পরায়ণ? শুধু নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য অন্যকে এভাবে ব্যবহার করে?

পরদিন সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।ঢাকের শব্দে বৃষ্টি নিজ তালে নৃত্য করছে। পূজোর আগমনী বার্তায় হিন্দুপাড়া গুলো নতুন বউয়ের সাজে সাজতে ব্যস্ত৷
তবে এই বৃষ্টির দিনে সবার একটাই আবদার থাকে। তা হলো কী করে আরাম আয়েশে থাকা যায়।

কিন্তু সে আয়েশ হয়নি তুষারের। রোগীর সাথে থাকার ব্যবস্থা নেই তাই হাসপাতালেই একটা কেবিন ভাড়া করেছে তারা। সেখানে আরশাদের মা ছিল রাতে। তাকে খাবার দিতে গিয়েছিল সে। কিন্তু মাঝপথে দেখা গেল আরশাদ আর তার মা আসছে। তাই আবার সে ফিরে এসেছে বাসায়।

খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।গরম গরম খিচুড়ি সাথে বেগুন ভাজা আর কষা মাংস।
তৃষ্ণা সবাইকে পরিবেশন করছিল।তুষারের দিকে এসে দেখলো তার চুলে এখনো পানি। লেবুর বাটিটা টেবিলের উপর রেখে সে নিজ ওড়নায় ভাইয়ের মাথার চুল মুছে দিচ্ছে।
আরশাদের মা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কে বলবে এটা ছোটো বোন?
যে কী না বড়ভাইকে এভাবে যত্ন করে?
মেয়ে তো তার নিজের আছে অথচ সে আর খবর রাখে কোথায়?
বিয়ের আগে ভাইকে এভাবে যত্ন খুব কম করতো তবে বিয়ের পর তাও যেন নেই। না হলে তার বাবা এতদিন ধরে হাসপাতালে, পরের মেয়ে এত খেয়াল রাখছে, কই সে তো নিজে একবারো এলো না।
অবশ্য না আসার পিছনে তৃষ্ণা কারণ।
তার ননদ আরশাদ বিয়ে করলো না, এদিকে ছেলের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে মেয়েকে সবার সামনে হেনস্থা হতে হলো তাকে।
ছেলের বৌয়ের জন্য সম্পর্ক টান পোড়নে মেয়েটা তার হারিয়েই গেল।
ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার অন্তর থেকে।

তৃষ্ণা সবার সামনে আরশাদের সাথে কথা বলছে না আবার তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে না।আর পাঁচ জনের সাথে যে ব্যবহার করছে আরশাদের সাথেও ঠিক একই ব্যবহার করছে সে৷
আরশাদ চাইছিল তার সাথে একা কথা বলার সুযোগ। তৃষ্ণার পরিবার অবশ্যই তৃষ্ণাকে সাপোর্ট করছে কিন্তু তাদের সংসার নষ্ট হোক তারা এটা চায় না।
তৃষ্ণার একটাই কথা,

“রাকিবের মতোন বন্ধু যদি আবার ফিরে আসে? তবে কী করবে?আবার সোনালীর মতোন কেউ এলে?আবার আমাকে তালাক দিতে চাইবে, নেশা করে ঘরে ফিরবে, আমাকে মারধর করবে, মুখের উপর ডিভোর্স লেটার সাইন করে ফিক্কা মারবে। এসব করার জন্য ওকে আমি আবার সুযোগ দিবো?
তোমাদের কাছে বেশি হলে বলো আমি চলে যাবো।আমাকে সরকার থেকে কোয়ার্টার দিবে কী না সে খোঁজ নিবো। না নিলে অন্য কোথাও বদলি হয়ে শহর ছেড়ে যাচ্ছি যদি এত সমস্যার কারণ হয়ে থাকি।
তোমরা মেয়ে বিয়ে দিয়েছো মানে গাছ কেটে ফেলেছো।তো আমার দায় দায়িত্ব তোমাদের নিতে হবে না।
তোমরা চিন্তা করো না তোমার ছেলের বউ এসে অন্তত ডিভোর্সী ননদের জ্বালাতন সহ্য করবে না।তার আগেই আমি আমার ব্যবস্থা করে নিচ্ছি।বাবা মায়ের কাছে, ভাইয়ের কাছেই আমি বেশি সেখানে আরশাদ পরের ছেলে। তার কী দায় পড়েছে আমাকে ভাত কাপড় দিয়ে পালতে?
হ্যাঁ সে আমার দায়িত্ব নিতে বাধ্য কিন্তু বিনিময়ে আমি তার রাগ ক্ষোভের ডাস্টবিন হতে পারবো না। আমার নিজস্ব মতামতকেই আমি প্রাধান্য দিবো।কারণ আমি মানুষ, আমার নিজের মতামতের প্রতি তোমাদের সম্মান জানাতেই হবে। তোমরা চাইলেও, তোমরা না চাইলেও।”

গতকালের বলা কথাগুলো আরশাদ ফোনেই শুনতে পেয়েছিল। আচ্ছা নিজ ভুল বুঝতে পারার পর কী আর করবে সে?

আরশাদ খুব ভালো করেই জানে,

ভালোবাসার অধিকার আদায় করে নিতে হয়। মানুষ সব উপেক্ষা করতে পারে, ভালোবাসার জ্বালাতন উপেক্ষা করতে পারে না।

আরশাদ অপেক্ষা করছে কখন সে কথা বলতে পারবে অথচ তৃষ্ণা ফোনে ব্যস্ত। রঙ্গানকে কল দিয়ে এটা ওটা আনতে বলছে কারণ আজ তুষারের প্রেয়সীর বাড়ির লোক আসবে৷ কথা বলতে বলতে হাত চালিয়ে কাজ করছিল সে।
ওদিকেই তাকিয়ে আছে আরশাদ। হঠাৎ তার কানে এলো তৃষ্ণার দাদী যেন কী সব বলছে তৃষ্ণাকে নিয়ে।
একটু ধ্যান ওদিকে দিতেই সে শুনতে পেল,

“ওই মেয়েই তো প্রেম কইরা নিলো, বাপ ভাইয়েও মাইনা নিলো। নইলে রঙ্গান আমার কলিজায় তৃষ্ণারে মাথায় কইরা রাখতো।
তালাকের কথা মুখেও আনতো না। আমার বাছায় বুক দিয়া আগলাই রাখতো আমার নাতনীরে।
আমি আল্লাহ্ এর কাছে চাইতেছি ওর লগে ডাইভূস টা হইয়াই যাক। এক বছর হয় নাই বিয়ার৷ এখনি পোলায় ওই কথা কেমনে কয়?
ডাইভূস হইলেই রঙ্গানের সাথে চার হাত এক কইরা দিমু।দেহি এইবার আমারে কে আটকায়।”

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১১

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১১

সোনালীর সামনে বসে আছে তৃষ্ণা। মেয়েটার অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল তৃষ্ণার।

“আপনি কে?”
“আমি তৃষ্ণা। আরশাদের স্ত্রী।”
“আপনাদের ডিভোর্স হয়নি?”
“এখনো হয়নি। তবে…”
“তবে কী?”
“হয়ে যাবে। চিন্তার কিছুই নেই।”

তৃষ্ণার পাশে বসে থাকা তুষার বিস্ফোরক চোখে তাকিয়ে আছে তার বোনের দিকে।পাশে বসে তার বোন শান্ত চোখে কথাগুলো বলে ফেলল।
এই কী সেই তৃষ্ণা? যে রাতের পর রাত পাহারা দিয়েছিল আরশাদকে। যখন সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল।সেবার আরশাদ ক্যাম্পাস থেকে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল খাগড়াছড়ি। ফেরার পথে ওদের বাস এক্সিডেন্ট হলো।
আরশাদের পায়ের হাড়ে চির ধরেছিল।
হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাকে। তৃষ্ণার তখন অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষা চলে। টানা চার ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে সে চলে যেত হাসপাতালে।
আরশাদের পাশের বেডে একটু খানি জায়গায় আরশাদের মায়ের সাথে ভাগাভাগি করে থাকতো।
পুরো কেবিনে ছোট্ট এক সংসার সাজিয়ে ফেলেছিল সে।
দিনে একবার বাসায় এসে গোসল করে খাবার নিয়ে ছুটতো হাসপাতালে।
আরশাদ তখন পুরোপুরি তৃষ্ণার উপর নির্ভরশীল।

প্রচন্ড বৃষ্টিতে আরশাদের মা বাসা থেকে আর যেতে পারেনি হাসপাতালে।
রাত তখন এগারোটা। আরশাদ হঠাৎ তুষারকে কল দিয়ে বলল,

“একটু আসবেন?”

তুষার বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দ্রুত ছুটে এসেছিল।কেবিনে ঢুকে দেখে তৃষ্ণা ঘুমিয়ে আছে। আরশাদ বসে বসে একটা ইংরেজি নোবেল পড়ছিল।
কেবিনে কোথাও আরশাদের মা কে না দেখে তুষার ভেবেছিল হয়তো ওয়াশরুমে কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরশাদ বলল বৃষ্টির কারণে সে আসতে পারেনি।

“তুমি আমায় আসতে বললে কেন?”

“আপনি তৃষ্ণার ভাই। সত্যি বলতে তৃষ্ণার জন্যই।
যদি আমি না পারি আমার লোভ কে সামলাতে!”

“এই ভাঙা পা নিয়ে?”

“মনে শয়তানি ঢুকলে শরীরে অসুরের শক্তি ভর করে।”

তুষার সে রাতেই এমনকি ঠিক সেই মুহুর্তে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল

তৃষ্ণাকে বিয়ে আরশাদের কাছেই দিবে।

ওয়েটার এসে ডাক দেওয়াতে ঘোর কাটে তুষারের। কি চলছে আরশাদ এবং তৃষ্ণার জীবনে?কোনো ঝড় বইছে কী?
আর তার সামনে বসে থাকা মেয়েটিই বা কে?
আজ সকালে বাসায় ফেরার পর যখন তুষার ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন তৃষ্ণা এসে দরজায় নক করে।
তার সাথে যেতে হবে বললে তুষার ঝটপট তৈরী হয়ে নেয়।
এত বছরেও বোনকে কোথাও তারা একা ছাড়েনি। ভেবেছিল হয়তো কলেজে যাবে ছুটির ব্যপারে কিন্তু তারা এসেছে বাসার কাছাকাছি একটা রেস্তোরাঁয়। কেন যেন আজ তৃষ্ণা বোরখা পরেনি৷
পরণে তার ধূসর রঙের সালোয়ার সাথে লম্বা কোটি। পনিটেইল করে বাধা চুল ছড়িয়ে আছে পুরো পিঠ ঝুড়ে।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তৃষ্ণা সামনে থাকা মেয়েটিকে বলল,

“এত অল্প দিনের সম্পর্কে এতটা বিশ্বাস কিভাবে?”

“ভালোবাসার মূল স্তম্ভই তো বিশ্বাস।”

“কিন্তু আপনার ভালোবাসা তো নোংরামি ছাড়া কিছুই দেখছি না।”

“আমি আরশাদকে…….. ”

“আমি জানতে ইচ্ছুক নই। তবে শুনুন। মাত্র মাস কয়েকের সম্পর্কে আপনি কাউকে আপনার খোলামেলা ছবি দিবেন, তার সাথে বার বার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখবেন,সেগুলো গোপনে ভিডিও ধারণ করে যদি আপনাকে কেউ ব্ল্যাকমেইল করে এর দায়ভার অন্য কেউ কেন নিবে?”

“আমি নিরুপায়।”

“একজন নারী কখনো নিরুপায় হয় না।আপনার সাথে যা হয়েছে দুজনের সম্মতিতে হয়েছে। সে আপনাকে জোড় করেনি। তাছাড়া তার স্ত্রী আছে জানা স্বত্তেও আপনি তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক রেখেছেন।এর দায়দায়িত্ব আপনার উপরেই বর্তায় মিস সোনালী।”

“আপনি কী সম্পূর্ণ দোষ আমার দিচ্ছেন?”

“মোটেও না।আমি শুধুই আপনার ভুলগুলো বললাম।আপনি একটা ভুল ধামাচাপা দিতে আরো অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন।আপনার জন্য আজ আমার সংসার নষ্টের পথে।এর দায়ভার কে নিবে একটু বলবেন আমাকে?”

“আপনার স্বামীর কোনো দোষ নেই।”

“আমি কীভাবে ধরে নিবো তার দোষ নেই?যে ছেলে তার বন্ধুর কথায় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে তার কোনো দোষ নেই?”

“আপনি বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করুন।”

“দুঃখিত আমার আর সময় হবে না।আপনি সাহায্য চেয়েছিলেন আপনি পাবেন।এই নিন, এই নাম্বারে কল দিয়ে শুধু বলবেন আমার নাম টা বলে সমস্যার কথা বলবেন।আশা করি সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত পেয়ে যাবেন।”

“আরশাদ সত্যি আপনাকে ভালোবাসে। ও শুধুই ওর বন্ধুর ষড়যন্ত্রের স্বীকার।”

“আজ ষড়যন্ত্রের স্বীকার, কাল যে আবার হবে না এর কী নিশ্চয়তা?আমি আমার মানসিক শান্তি নিয়ে খেলতে পারবো না।”

“ডিভোর্সটা কী সত্যি করে ফেলবেন।”

“হ্যাঁ।”

তুষার বিল মিটিয়ে তৃষ্ণাকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে। তৃষ্ণা কিছুই খায়নি৷ এখন প্রথমে তাকে খাওয়ানো প্রয়োজন। রঙ্গানকে ম্যাসেজ করে পূর্বেই আসতে বলেছে সে।রঙ্গানের জন্য অপেক্ষা করছিল দুই ভাইবোন।

“তোকে দেখলেই আমার গলা শুকায় কেন রে?”

রঙ্গানের কথায় চোখ ছোট করে তার দিকে তাকায় তৃষ্ণা। তুষার ততক্ষণে বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত কারণ তৃষ্ণার প্রিয় বিরিয়ানি আনতে যাবে।
কিন্তু রঙ্গান ইশারায় দেখালো সে সাথে করেই নিয়ে এসেছে৷
তুষার, তৃষ্ণা বাইকে করে এসেছিল। তৃষ্ণা ভাইয়ের বাইকে উঠতে যাবে তখন রঙ্গান বলল,

“আমি কী ডেলিভারি ম্যান?ফুড পান্ডার খাবার সার্ভিস দিতে এসেছি?”

তুষার বলল,

“দে ভাই দে। আমি নিয়ে যাচ্ছি তুই তৃষ কে নিয়ে আয়।”

“যেতে পারি, এক শর্তে।”
“কী?”
“আজকেই ভাইয়ের বিয়ের কথা বাবাকে জানাতে সাহায্য করবে?”

রঙ্গান হাত এগিয়ে হ্যাণ্ডশেক করে বলল,

“ডিল।”

বাসায় ফিরে রঙ্গানকে সবটা বলল তুষার। আরশাদের বন্ধু রাকিবের সাথে সোনালীর সম্পর্ক।
রাকিব বিবাহিত। এখন সে সোনালীকে তার খোলামেলা ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে আরশাদকে বিয়ে করার জন্য।ওর সাথে সম্পর্কে যাওয়ার জন্য। এতে রাকিবের দুটো লাভ।

রঙ্গান জিজ্ঞেস করল
“কী?”
“এটা সেই রাকিব যে তৃষ্ণার পিছনে ঘুরতো এবং আমি ওর একটা দাঁত ভেঙেছিলাম তৃষ্ণাকে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল বলে৷

এক প্রতিশোধ নিবে। আর দুই আরশাদ যেহেতু ওর জালে ফেসেছে তাই ও চাইলে বিয়ের পর যখন তখন সোনালীকে ব্যবহার করতে পারবে।”

“আরশাদ এসব জানে?”
“না।”

ঠিক সে মুহূর্তে তৃষ্ণার ফোন বেজে উঠলো। রঙ্গান ফোন রিসিভ করে আরশাদকে জানালো তৃষ্ণা গোসলে৷

আরশাদ ফোন কেটে দিলো কোনো জবাব না দিয়েই।
তার পাশে বসে থাকা রাকিব বলল,

“ঘন্টা খানেক আগেই দেখলাম ওই পোলার লগে হাত ধইরা বের হতে রেস্তোরাঁ থেকে।আবার এখন কীসের গোসল?আরশাদ বিশ্বাস কর ঠিক আছে কিন্তু তোর বিশ্বাসটা অন্ধবিশ্বাস। সব’চে বড় কথা তুই যে এত খুশি যে তৃষ্ণা তোর বাবার চিকিৎসার খরচ নিজে সবটা ম্যানেজ করছে। দেখিস তো খোঁজ নিয়ে? দেখবি ওই পুলিশ ব্যাটায় টাকা দিছে।”

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১০

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১০

কার্ডিয়াক আই সি ইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণা। তার শ্বশুরের অপারেশন শেষ কিন্তু তাদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।
আরশাদ ছুটে এসেছে এই কথা শুনে। তার চুল দিয়ে এখনো টপটপিয়ে পানি পড়ছে।
চোখ দুটো মারাত্মক লাল হয়ে আছে। এই এক সমস্যা আরশাদের৷ একটু রাত জাগলে বা শরীরের উপর দিয়ে ধকল গেলে তার চোখ হয়ে যায় রক্তবর্ণের।

“ডক্টর কোনো কমপ্লিকেশন?”

আরশাদের কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে ডক্টর জানালেন,

“চিন্তা করবেন না।আগামী ৬-৭ ঘন্টায় জ্ঞান চলে আসবে। জ্ঞান ফিরলে আপনাকে জানাবো। তখন এসে দেখে যেতে পারবেন।”

সবাই স্বস্তির শ্বাস ফেলল।এবার আরশাদ তাকালো তৃষ্ণার দিকে। তার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
চোখের নীচের কালি জানান দিচ্ছে তার বিশ্রাম প্রয়োজন।

আরশাদ এবার তৃষ্ণার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাদের চলে যেতে বলল।
যেহেতু এখানে থেকে তাদের কোনো কাজ নেই তাই তারা চলে গেল।

বাবার সাথে বাসায় ফিরে তৃষ্ণা ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে। তার নিজস্ব রুমে ঢুকে প্রথমে কোনো ভাবে গোসল করে ফিরে এসে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। তার চেনা পরিচিত আপন ঘরের চার দেয়ালে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নেয় সে।বারান্দায় লাগানো কোনো ফুল থেকে আসছে মিষ্টি গন্ধ। ফুলটার গন্ধ সে চিনে কিন্তু নাম মনে পড়ছে না। এখন তার উঠে যেতেও ইচ্ছে করছে না।
পাশ ফিরে বালিশ বুকে নিয়েই সে তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে। তার যখন ঘুম ভেঙেছে তখন রাত ফুরিয়ে ভোর হবে বলে। রাত তিনটে, ক্ষুধার জ্বালায় সে বসে থাকতে পারছে না। ওড়না নিয়ে খাবারের রুমের দিকে গিয়ে দেখতে পায় তার মা ভাত নামাচ্ছে চুলো থেকে।
হাত দিয়ে চুলগুলো খোপা করে তৃষ্ণা জিজ্ঞেস করলো,

“এখন ভাত রান্না করো কার জন্য?”

“ওই যে এক নবাবজাদি আছে না? তার জন্য।”

“নবাবজাদী যে এখন খেতে আসবে তা আপনি জানেন কীভাবে?”

“২৫ বছর পেলে তারপর বিয়ে দিছি। নারী নক্ষত্র সব জানি।”

টেবিলে বসে তৃষ্ণা দেখতে পেল তার মা তার জন্য শুটকী ভর্তা,সজের পাতা ভর্তা এবং গরম ধোঁয়া উঠা ভাত নিয়ে বসে আছেন।

এমন খাবার দেখে তৃষ্ণার আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেয়ে নেয়।খেতে খেতে হঠাৎ তার মনে হয় আঞ্জুমের কথা। আঞ্জুম কেন এটা বলল?
সে একবার চিন্তা করে মা কে কী জিজ্ঞেস করবে?
আবার ভাবে মা যদি না বলে?রঙ্গান ভাই জানলেই বা কী বলবে?

তৃষ্ণাকে ভাবুক চেহারায় দেখে তার মা তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করলেন,

“খাওয়ার সময় এত কীসের চিন্তা?”

“তেমন কিছু না।”
“বলে ফেলো।”

তৃষ্ণা তখন ধীরেধীরে মা কে সব’টা বললে তার মা বলল,

“রঙ্গানের মায়ের লিভার সিরোসিস। প্রায় লাখ লাখ টাকার খরচ এই চিকিৎসায়। এখন তারা চায় রঙ্গান সব টাকা দিক।কারণ তার মা বলে।
কিন্তু তুই তো জানিস রঙ্গান কেমন।ওর হাতে টাকা থাকে কই?ও এক সাথে ৫০ জন বৃদ্ধার খরচ একা চালায়। ও যদি ওর মা কে টাকা দেয় তবে সেই পঞ্চাশ জন না খেয়ে থাকবে।
আঞ্জুম হচ্ছে রঙ্গানের সৎ বোনের জা। তাই সে সব জানে। হয়তো রঙ্গান টাকা দেয়নি তাই সে এমন বলেছে।”

“একে বারেই দেয়নি?”

“ও ছেলেকে তুই জানিস না?দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কী বলতো! ওদের চাহিদা পূর্ণ করতে পারছে না বলে এত সমস্যা।”

এক মগ চা হাতে নিজের ঘরে ফিরে এলো তৃষ্ণা। তার শাশুড়ি মা পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছেন।
নানা জল্পনা কল্পনায় তৃষ্ণা কল দিলো আরশাদের ফোনে।
বালিশের নিচ থেকে বেজে উঠেছে ফোন।
চায়ের মগে চুমুক দিয়ে তৃষ্ণা ফোন হাতে নিলো। কপালের দিকটায় আবেগী ভঙ্গিতে একটু আঘাত করে সে আরশাদের ফোন দিয়ে৷
নিজের ফোন টেবিলের উপর থেকে নিয়ে কল দেয় তার ভাইকে।
একবার কল হতেই রিসিভ করে সে। মনে হয় ফোন হাতেই ছিল।

“প্রেম করছিলে?”
“বেশি পেকেছিস?”
“পাকতে পাকতে ঝুনা নারকেল হয়ে গেছি।”
“তাই তো দেখছি।”
“ডক্টর কিছু বলেছে?”
“না।”
“কোথায় তোমরা?গাড়ির শব্দ কীসের?”
“চা খেতে বেরিয়েছিলাম।”
“চা খাওয়া যায় না।”
“এই একদম চুপ।বইন্যা এখন শুরু করিস না।”
“আচ্ছা। আরশাদ কই?”
“কেন?প্রেম করবি?লজ্জা করে না?বড় ভাইয়ের ফোনে কল দিয়ে প্রেম করতে চাস?”

“না করে না।ফোন দাও তো।”

“ওর ফোনে কল দে। আমি ঘুমাবো।”

“রাস্তায় ঘুমাবা?দেও নইলে বাবাকে তোমার বিয়ের কথা বলবো না।”

“আচ্ছা দিতেছি।তোর জ্বালায় মনে হয় দেশ ছাড়ি চলি যাই।”

“লাভ নাই, লাভ নাই। ছোটো সে তরী। তোমার কুকামে গিয়াছে ভরী।”

বলেই তৃষ্ণা হাসতে থাকে। ততক্ষণে ফোন উঠেছে আরশাদের কানে। সে চুপচাপ শুনছিল হাসি।

“আসসালামু আলাইকুম।”

হঠাৎ সালাম শুনে তৃষ্ণা কিছুটা অবাক হয়ে কান থেকে ফোন নামিয়ে নেয়। কল কী কেটেছে না কী কনফারেন্স হয়েছে দেখার জন্য। কিন্তু না এমন কিছুই হয়নি। পুনরায় ফোন কানে নিয়ে তৃষ্ণা বলল,

“ওয়ালাইকুম আস সালাম।হঠাৎ সালাম?”
“তোমার হাসিটা আমায় শান্তি দিলো তাই এই সালামের মাধ্যমে চাইছি তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”

“বাবা কেমন আছে?জ্ঞান ফিরেছে?”
“হ্যাঁ। ভালো আছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ।”

টুকটাক কথা শুরুর আগেই হঠাৎ টুং ম্যাসেজের শব্দ হয় আরশাদের ফোনে।
লক খুলে ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই তৃষ্ণা দেখল,

সোনালী ইভা নামের মেয়ে আইডি থেকে অনেকগুলো ম্যাসেজ। লাস্ট ম্যাসেজে মেয়েটা আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছে।

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-০৯

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৯

রঙ্গান তৃষ্ণার মাথায় হাত রেখে বলল,

“নিজের খেয়াল রাখিতে শিখ এবার। ঠিক মতোন খাবার খেয়ে নে। তুই অসুস্থ হলে আন্টি আরো ঘাবড়ে যাবে।”

“ভাই খুব ভয় লাগছে। অপারেশন এখনো শেষ হলো না যে।”

“সময় লাগবে কিছুটা। শোন আমি বাহিরে যাচ্ছি। দেখি আরশাদ কোথায়।”

“একটা উপকার করবে?”

তৃষ্ণার হাতে ছোট্ট একটা দই ধরিয়ে দিয়ে রঙ্গান বলল,

“ওকে খাওয়াতেই নিয়ে যাচ্ছিরে। তোর বলতে হবে না। কিছু না খেলে ও নিজেও পড়ে যাবে।যাইহোক তুই খেয়ে নে।”

ততক্ষণে তৃষ্ণার মা খাবার নিয়ে এসেছে। রঙ্গান চলে যাওয়ার আগে তৃষ্ণার মাথায় পুনরায় হাত রাখে। পরম স্নেহ তৃষ্ণা অনুভব করে এই স্পর্শে।
খুব কী ক্ষতি হতো রঙ্গান তার আপন ভাই হলে?

“রঙ্গান এখন কই যাচ্ছো?”
তৃষ্ণার মায়ের প্রশ্নে রঙ্গান জবাব দিলো,

“এই তো সামনে।”
“একটা মার দিবো। এখন খাওয়ার সময় আর তুমি পালাচ্ছো?এসো খাবে এসো। আরশাদ কই?”
“আমি তাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম কাকী।”
“যেতে হবে না। কল দাও। আসো খেয়ে নিবে আসো।আমি আরশাদের মা কে নিয়ে আসছি।তৃষ্ণা যেতে দিস না কিন্তু ওকে। ও একবার গেলে আর খেতে আসবে না।”

তৃষ্ণার পরিবার এখনো জানে না আরশাদ এবং তৃষ্ণার ঝামেলা সম্পর্কে।
তারা জানে আট দশটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতোন এখনো ঠিক সম্পর্কটা।
আরশাদ ফিরে এলে রঙ্গান ইচ্ছে করেই সরে বসে। তৃষ্ণার পাশে আজ অনেকদিন পর বসেছে আরশাদ৷
এখন তো সময় হয় না, একদিকে বাবার অপারেশন এর জন্য টাকার ব্যবস্থা অন্য দিকে মায়ের খেয়াল রাখা আবার বাবাকে সাহস জুগানো সব যেন তৃষ্ণা একাই করে চলেছে।
আজ।আরশাদ বুঝতে পারছে অপচয় না করে যদি কিছু টাকা জমাতো!
কথায় কথায় বন্ধুদের ট্রিট না দিয়ে যদি একটু সামলে চলতো!
তবে হয়তো আজ তৃষ্ণার পাশে বসতে এতটা খারাপ লাগতো না।
তৃষ্ণার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় আরশাদ।
এই কদিনেই তৃষ্ণা কেমন শুকিয়েছে।
হিজাব পরেনি আজ। হয়তো গরমে খুলে ফেলেছে।
বোরখা পরে বসে আছে সে৷। তার সামনে বসে তার মা খাবার বেড়ে দিচ্ছে এবং আরশাদের মা কে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে।
ভাতের প্লেটে ভাত হাতে নিয়ে আনমনে বসে থাকা তৃষ্ণার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো আরশাদ।
দু লোকমা ভাত মুখে দিতে হু হু করে কেঁদে উঠেছে সে।
আকস্মিক ঘটনায় বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই।
মুখে সামনে ভাত তুলেছিল তৃষ্ণা। হাতের ভাত প্লেটে রেখে আরশাদের পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,

“কি হয়েছে? কি হলো?খারাপ লাগছে।”

আরশাদ কে স্বান্তনা দিতে রঙ্গান উঠে এসে বলল,

“কিছু কিছু সময় পরিস্থিতি আমাদের হাতের মুঠোয় থাকে না। যেমন এখন তোমার নেই।
বিশ্বাস রাখো, স্থির হও যা তোমার ছিল আজন্ম কাল থাকবেই। শুধু একটু যযত্নশীল হতে হবে।”

তৃষ্ণা তখনো বেকুল কন্ঠে জিজ্ঞেস করছিল।
রঙ্গান বেশ বুঝতে পারে আরশাদ অনুতপ্ত এবং যেহেতু তৃষ্ণার পরিবার কিছু জানে না তাই সে কথা কাটিয়ে নেয় এই বলে যে,

“আংকেল অপারেশন থিয়েটারে। এখন ওর মনের অবস্থা তো তুই বুঝিস। আমরা জানি যে কোনো সময় যে কোনো কিছুর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

তৃষ্ণা হাত সরিয়ে নেয় নিজের ভাতের প্লেট থেকে। আরশাদের ভাতের প্লেট কাছে টেনে নিয়ে লোকমা ভাত তার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল,

“উই উইল ম্যানেজ। না?”
আরশাদ শক্ত হাতে তৃষ্ণার হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

আরশাদের বাবার অপারেশন ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। আরশাদ তার মা কে তৃষ্ণাদের বাসায় পৌঁছে দিতে গেছে।
তৃষ্ণার ভাই, রঙ্গান,তৃষ্ণার বাবা এবং তৃষ্ণা রয়েছে হাসপাতালে।
আজ রাতে আরশাদ এবং তৃষ্ণার ভাই থাকবে। যদিও কিছুর প্রয়োজন হবে না তবুও কারণ নিজেদের মনের শান্তির জন্য৷
আরশাদ ফিরে এলে তৃষ্ণা তার বাবার সাথে চলে যাবে।ওয়েটিং সিটে ভাইয়ের কাধে মাথা দিয়ে কথা বলছিল তৃষ্ণা।
আগামী দিন সাতেকের জন্য তার ছুটি প্রয়োজন।
কিন্তু দরখাস্ত করতেই হবে তাই আগামীকাল যেতে হবে।

কথা শেষ করে তৃষ্ণা ভাইকে বলল,

“ঘাড় ব্যথা করছে ভাইয়া। চোখ জ্বালা করছে৷”

“আজ পানি খেয়েছিস?একটু অনিয়ম হলেই কষ্ট হয় তোর। একটু সামলে থাকবি না। বোস এখানে আমি পানি নিয়ে আসি। সাথে কিছু খাবার।”

“না, যেও না।থাকো আমি একটু চোখ বন্ধ করে থাকি। ও ফিরলেই তো বাসায় চলে যাবো।”

কথার মাঝে রঙ্গান এবং তৃষ্ণার বাবা চলে আসে। রঙ্গানের ডিউটি আটটা থেকে৷ কিছুক্ষণ পর তাকে চলে যেতে হবে। তারা গিয়েছিল পাশের কফি শপে।
তৃষ্ণার বাবা তৃষ্ণা কে জিজ্ঞেস করলে তার ভাই সব বলে।
রঙ্গান অনুমতি চায় তৃষ্ণাকে পাশের কফিশপে নিয়ে যেতে। ভদ্রলোক বলেন তোমরা তিনজন যাও আমি আছি।

ভালবাসার সময় তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।

ঘামের জলে ভিজে সাবাড়
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।

কাজের মাঝে দিন কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।

নদী আমার বয় না পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।

কফিতে চুমুক দিয়ে তৃষ্ণা জিজ্ঞেস করলো,

“রুদ্র বাবুর কবিতা, এখনো মনে আছে তোমার?”

রঙ্গান মৃদু হাসে। চোখের ইশারায় দেখায় পাশের এক টেবিলে বসে থাকা দুজন কে।
তাদের দিকে তাকিয়েই সে বলল,

“প্রথম প্রেমের অনুভূতি কিংবা প্রথম প্রেমের বেঈমানী। সব সময় মনেই থাকে।”

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-৭+৮

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৭

আরশাদ যখন হাসপাতালে পৌঁছেছে তখন তাকে জানানো হয় রোগীর অবস্থা আশংকাজনক।
রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।

যখন সে ধীরে ধীরে কেবিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন জানতে পারে গতকাল রাতে আনা বাইক এক্সিডেন্টে ভর্তি রোগী মারা গেছেন।

অন্য জনের অবস্থা আশংকাজনক। আরশাদ এই রক্ত জিনিসটা নিতে পারে না। তার প্রচন্ড গা গুলিয়ে উঠে এসবে।
এইতো বছর দুয়েক আগের কথা।তৃষ্ণাকে সে নিয়ে গিয়েছিল ভ্যাক্সিন দিতে। পালিত বিড়াল কামড়ে দিয়েছিল তৃষ্ণাকে। খুব একটা রক্ত না পড়লেও কেউ রিস্ক নিতে চায়নি। ভ্যাক্সিন দিতে গিয়ে তৃষ্ণা নড়ে চড়ে বসতেই হালকা রক্ত বেরিয়ে আসে সুঁচের আঘাতে।
ব্যস সেই রক্ত দেখেই আরশাদের পৃথিবী উল্টো পাল্টা লাগছিল।আজ চোখের সামনে রক্তাক্ত মানুষ দেখেও নিজেকে সামলে নিতে পারলো না।

গতকালকের নেশা এখনো কাটলেও মাথায় একটা ভারী ভাব রয়েই গেছে। এর মাঝে এত মানসিক চাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরশাদ যখন তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলো তখন কোথা থেকে তৃষ্ণা এসে তাকে দু হাতে আগলে নিলো।

তৃষ্ণাকে দেখে আরশাদ কিছুটা স্বস্তি পেয়ে তার হাত আঁকড়ে ধরে পাশের ওয়েটিং সিটে বসে।

“তোমার কী শরীর খারাপ লাগছে।”

তৃষ্ণার প্রশ্নে আরশাদ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। এরপর তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে দেখে তার পরণে বাসার পোশাক।
সালোয়ার কামিজ পরে আছে। তৃষ্ণার ওড়নায় সে নিজের মুখ মুছে, চশমাটা মুছে নিয়ে বলল,

“উহুম।পানি হবে তোমার কাছে? ”

“হুম।”

“এখানে কেন?কার কী হয়েছে?”

“তুমি রাতে কোথায় ছিলে?”

“ওয়েস্টার্ন রিসোর্টে।”

“ওহ্।”

“বললে না তো!”

“কি?”

“আশ্চর্য! কার কী হয়েছে?বাবা- মা কোথায়?”

“মা আছে সামনে। বাবার কার্ডিয়াক এট্যাক হয়েছে।”

“মানে?বাবার এট্যাক হয়েছে আর তুমি আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি?”

“তোমার ফোন বের করে দেখো। জবাব পেয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর বাবাকে একটা পরীক্ষা করাতে নিবে। হার্টে ব্লক আছে কী না দেখার জন্য।”

“বাবার সাথে দেখা করবো।”

“এখন প্রয়োজন নেই।”

ভারী পুরুষালী কন্ঠে কেউ আরশাদকে নিষেধ করে।
সামনে তাকিয়ে দেখে রঙ্গান দাঁড়িয়ে আছে। আরশাদের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের দিকেও যায়নি রঙ্গান। তৃষ্ণা কে বলল,

“তৃষ, আপাতত প্রয়োজন নেই দেখা করার। চাচা হাইপার হলে সমস্যা হবে। তুই চল ও এখানেই অপেক্ষা করুক।চল আমার সাথে।”

আরশাদের জবাবের অপেক্ষা না করে রঙ্গান চলে যায় কেবিনের দিকে।

গতকাল বিকেল থেকে রাত আটটা অবধি রঙ্গান অপেক্ষা করছিল আরশাদদের বাসায়। আরশাদ আসবে তার সাথে কথা বলবে এবং কী সমস্যা জানার চেষ্টা করবে। কিন্তু আরশাদের ফিরেনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরেও যখন আরশাদ ফিরেনি তখন রঙ্গান ডিউটিতে চলে যায়।
আরশাদের বাবা গতকাল সন্ধ্যে থেকেই কিছুটা অসুস্থ ছিল।তবে তৃষ্ণার অবস্থা দেখে কিছু বলেনি। রঙ্গান, বা আরশাদের বাবা চেষ্টা করেছে গতকালের সন্ধ্যে যেন অনেকটা আনন্দের মাঝে কাটে।

রাত যত গভীর হতে থাকে ব্যথাটা বাড়তে থাকে। ছেলের প্রতি জমা অভিমানের কারণেই সে অসুস্থতার কথা জানায় নি।
তিন পাওয়ারের টেনিল খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু রাত দুটোর দিকে তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। ধীরে ধীরে ঘামতে থাকে সে।
উঠে বসে, দাঁড়িয়ে কোনো ভাবেই যখন শান্তি পাচ্ছিলো না তখন গোসল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঠিক সে সময় আরশাদের মা জেগে উঠে। বুঝতে পেরে তৃষ্ণাকে এক ডাক দিতেই তৃষ্ণা দ্রুত চলে আসে। দুজন মেয়ে মানুষ মাঝ রাতে অসুস্থ মানুষকে নিয়ে কোথায় যাবে বুঝতে পারছিল না।কারণ তাদের একমাত্র ছেলের ফোন তখন বন্ধ।
বাধ্য হয়েই তৃষ্ণা তার ভাই এবং রঙ্গান কে কল দেয়।তৃষ্ণার ভাই আগে পৌঁছে গেলেই তাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসে তৃষ্ণা।
কিছুক্ষণ পর রঙ্গান আরশাদের মা কে নিয়ে পৌঁছায়৷

গতকাল অবধি যা হয়েছে তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ ছিল না তৃষ্ণার আরশাদের প্রতি তবে আজ চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে।
জন্ম নিচ্ছে তীব্র অভিমানের।

ডক্টর জানালেন হার্টে ৯৮% এর দুটো ব্লক রয়েছে। দ্রুত সার্জারী করাটাই উত্তম। এটি অবশ্যই ব্যয়বহুল হবে।
পেশেন্টের যা অবস্থা তাতে যত দ্রুত হয় তত ভালো।

রঙ্গান তখন ছিল না।জরুরী কাজে বেরিয়েছে। তৃষ্ণা এবং আরশাদ যখন জানতে পারলো তখন দুজন চুপচাপ ছিল।
আরশাদ নিজে জানে তার কাছে এত টাকা নেই। বাবা পেনশনের টাকায় নিজ ইচ্ছেয় বাড়ি করেছে। এই মুহূর্তে এত টাকার জোগাড় করা আদৌও কী সম্ভব?

অফিস থেকে এক দিনের ছুটি নিয়েছিল আরশাদ৷ আগামীকাল তাকে অফিসে যেতে হবে। চেষ্টা করবে লোন নেওয়ার। তাছাড়া আর উপায় তো নেই। পুরোদিন আরশাদ চিন্তা করেছে সে সময়ে অসময়ে কতই না টাকা নষ্ট করেছে৷ এইতো গত পরশু সে হাজার বিশেক টাকা নষ্ট করেছে মাত্র বন্ধুদের কে বিয়ার খরচ দিয়ে।অথচ আজ বিশ হাজার টাকা থাকলেও অনেকটা এগিয়ে যেত।

অফিস শেষে যখন আরশাদ বাবার কাছে হাসপাতালে গেল তখন রিসিপশন থেকে তাকে জানানো হলো তার বাবাকে কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে। কারণ কাল দিন পর তার অপারেশন।

এবং তার হাতে একটি রিসিট দিয়ে বলল সই দিতে।

“টাকা কখন পেমেন্ট হলো?”

“উনার ছেলের স্ত্রী মিসেস তৃষ্ণা ওয়াহেদ কিছুক্ষণ পূর্বে আপাতত দুই লক্ষ টাকা পে করেছে। বাকীটা অপারেশন এর দিন করবে বলেছে।”

আরশাদ রিসিট হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।তৃষ্ণার কী আদৌও কোনো প্রয়োজন ছিল তার বাবার জন্য এসব করার?যেখানে তাদের ডিভোর্স ফাইল হয়েছে।

চলবে

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#পর্ব-৮
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

ওয়েটিং সিটে বসে প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিল তৃষ্ণা। শাশুড়ি মায়ের কাঁধে মাথা রেখে।ক্লান্তিতে তার দুচোখ আর সঙ্গ দিচ্ছে। আরশাদের মা কিছুটা চেপে বসে তৃষ্ণাকে একটু ভালো ভাবে বসে থাকতে দিলো। তার সামনের সিটে বসে থাকা ভদ্র মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,

“আপনার মেয়ে?”
“জি।”
“বিয়ে দিয়েছেন?কিছু না মনে করলে একটা কথা বলি? ”
“বলুন।”
“আমার কাছে ভালো একটা সম্বন্ধ আছে। ছেলে ভালো, চাকরি করে, বাবা মায়ের এক ছেলে।”
“আচ্ছা।”
“যদি রাজি থাকেন তো….. ”
“ছেলে বিয়ে করিয়ে এনেছি এই মেয়ে।”
“ঠিক বুঝলাম না।”
“আমার ছেলের বউ।”

আরশাদের মায়ের জবাবে ভদ্র মহিলা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন।
বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললেন,

“ছেলের বউকে কেউ মেয়ে বলে পরিচয় দেয় না।”

“দেয় না, তবে আমি এবং আমার স্বামী দেই।কারণ এই মেয়েটা তো আমাদের মা-বাবা বলে ডাকে। তবে কেন সে আমার সন্তান নয়?”

“আপনার মতো সবাই চিন্তা করলে!”

কথোপকথনের মাঝে রঙ্গান এসে আরশাদের মায়ের হাতে কফি দিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আরশাদের বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হবে। আজ তাই রঙ্গান ছুটি নিয়েছে। আরশাদ তখন রক্ত দিতে এসেছে তাদের সাথে ব্যস্ত।
প্রথমে চিন্তা করেছিল রক্ত কিনে আনবে। কিন্তু এর বিরোধিতা শুরু করে তৃষ্ণার বাবা।
কারণ রক্ত কেনা-বিক্রি করা উভয় হারাম।
তৃষ্ণার ভাই ডোনার নিয়ে এসেছে।

রঙ্গান চলে যাওয়ার পর ভদ্রমহিলা আবার বললেন,

“এটা আপনার ছেলে? মা-শাহ্-আল্লাহ্ , ছেলে তো বেশ সুন্দর।”

“জি, এটাও আমার ছেলের মতোন।”

সোনালী এইবার দিয়ে সতেরো বার কল দিয়েছে। আরশাদ প্রতিবার কেটে দিচ্ছে। আজ রাকিবের বাসায় তাদের ছোট্ট একটা গেট টুগেদার রয়েছে। সেখানে যাবে কী না এর জন্য। কিন্তু আরশাদ আগেই মানা করে দিয়েছিল।সে যতই খারাপ ছেলে বা সন্তান হয়ে থাকুক না কেন? এতটাও না যে তার বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে সে আড্ডা দিতে পারবে।
পৃথিবীর সব থেকে বাজে সন্তানের পক্ষেও এটা সম্ভব নয়।
বিগত কয়েকদিন যাবত একটা অপরাধবোধ তাকে ঘুমোতে দেয় না। সে জানে না সে রাতে নেশা করে এসে কী কী করেছিল বাসায় তবে এটা নিশ্চিত তার বাবার অসুস্থতা এই কারণেই অনেকটা বেড়েছে।

যদি রাতে রিসোর্টে না থাকতো তবে হয়তো বাবাকে আরো আগে হাসপাতালে নিতে পারতো।
ডোনারকে ভিতরে রেখে এসে বাহিরে দাঁড়িয়ে কল রিসিভ করে আরশাদ।
ফোনের অপরপাশে তখন হাই ভলিউমে হিন্দি গাল চলছে।

“কী মশাই আজ আসবেন না?”

“না।”
“কেন?”
“রাকিব বলেনি?আমার বাবার আজ সার্জারী আছে।”

“অহ আচ্ছা, জানতাম না। আংকেল এখন কেমন আছে?”

“অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

“আপনি কী আমার প্রতি রেগে আছেন?”

“জি না।”

“সেদিন দুপুরে কোথায় হাওয়া হয়েছিলেন?দুপুরের পর আপনাকে পেলাম না।”

“রিসোর্টেই ছিলাম।কিছুটা ক্লান্তি ছিল তাই ঘুমিয়েছিলাম।”

“আমি আপনার খোঁজ করেছিলাম কিন্তু আপনি নিরুদ্দেশ ছিলেন।”

“জি। মাঝেমধ্যে নিরুদ্দেশ হতে হয়।”

“একটা কথা বলবো?”

“বলুন।”

“আমাদের মাঝে সম্পর্ক কী?”

“আমরা দুজনেই রাকিবের বন্ধু। রাকিব আমার বন্ধু ঠিক তেমনি আপনি রাকিবের। তাই বলতে পারেন বন্ধু।”

“যদি বলি এর থেকে…… ”

“কিছু মনে করবেন না সোনালী আমি ব্যস্ত। রাখছি।”

আরশাদ কল কেটে দিয়ে পা বাড়ায় বাহিরের দিকে। ভুল একবার করাই শ্রেয়। বার বার নয়। কারণ এবার সময় এসেছে ভুল শুধরে নেওয়ার।

The fog is now dead.

The last point of which is the deficit in the universe.

The first rays of the sun came to the earth and disappeared.

But why so many evenings around?

Love! Why aren’t you and I together?

“সামিয়ার লেখা এখনো পড়িস?”

রঙ্গানকে পাশে বসতে দিয়ে তৃষ্ণা বলল,

“পড়া হয় মাঝেমধ্যে। বেশ ভালো লিখে কিন্তু মেয়েটা।”

“হুম।”

“ভাই জানো অনেকেই এখানে মনে করছে শাশুড়ি মায়ের মেয়ে আমি আর তুমি আমার প্রেমিক।”

বলেই মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে সে। তার হাসির দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে রঙ্গান বলল,

“কোন ভাইরাস এই চিন্তা ভাবনা করে?”

“রিসিপশনের মেয়েটা আরো অনেকে।”

তৃষ্ণার হাসি ততক্ষণে থেমেছে কারণ রঙ্গান তার ডান হাত নিজের দু হাতে আবদ্ধ করে বলছিল,

“তুই আমার বোন নয়। তোকে আমি বোন বলে পরিচয় দেই না কারণ তুই বোনের থেকে অনেক বেশি তবে তুই আমার প্রেয়সীও না।প্রেয়সীর থেকে অনেক নিচে। আমার দিক থেকে যদি প্রেমিকের এক ইঞ্চি এক তরফা ভালোবাসা তোর প্রতি থাকতো
তবে আজ তুই আমার স্ত্রী হতে বাধ্য থাকতি।এবং আরশাদ কখনোই আমাদের মাঝে আসতে পারতো না।”

তৃষ্ণা মুচকি হেসে বলল,

“সত্যি কী তাই?”

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-৫+৬

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৫

আমার মা যখন পাশের বাড়ির কাকুর সাথে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে তখন আমার বয়স মাত্র সাত বছর।
সাত বছর হলেও স্পষ্ট মনে আছে সেদিন স্যান্ডো গেঞ্জির সাথে নীল হাফ প্যান্ট পরেছিলাম।
বাবার ইনকাম খুব সীমিত ছিল, মায়ের ইচ্ছে তখন আকাশচুম্বী।গনগনে আগুনের মতোন ছিল আমার মায়ের শরীরের রঙ।রূপের আগুনে যে কাউকে পুড়িয়ে ফেলতো সে।
বাবা সামান্য ব্যবসায়ী। তবে ছিলেন সৎ এবং এক কথার মানুষ। মায়ের সব আবদার মেটাতে হিমশিম খেলেও মুখে হাসি দেখতাম। কিন্তু মা রইলেন না। কারণ দিনের বেলা তার ঘরে পরপুরুষের অগাধ চলাফেরায় একটা ঝামেলা ছিলাম মাত্র।

তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। চারের ঘরের নামতা ভুল করায় মা আমাকে বিবস্ত্র করে গেটের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।

আজ পুরো আঠারো বছর পর, আমার মায়ের কিন্তু সেই রূপ নেই। চামড়া কুঁচকে গেছে। মাথায় চুলে সাদা রং।
আশ্চর্য হলেও সেই মা এখন আমার বাবার জন্য কাঁদে৷ বিগত সতেরো বছর সময় ধরেই কাঁদছে সে।

অথচ আমার বাবা বেচারা কতই না কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছেড়েছেন।

কফির কাপে চুমুক দিয়ে চুপচাপ বসে রইল তৃষ্ণা। সামনে বসে থাকা সুদর্শন যুবক সম্পর্কে তার কেউ নয় কিন্তু অনেক কিছু।
একটা সময় তার কাছে টিউশন পড়তো তৃষ্ণা।
ব্যক্তিটার চোখে মুখে আলাদা এক জ্যোতি উপচে পড়ছে। সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে তৃষ্ণা বলল,

“রঙ্গান ভাই আমি এসব জানি।”

“তুই কী জানিস আমার নামের মানে কী?”

“তুমি মানেই তো রঙ, রংধনুর সাত রঙ৷ তাই হয়তো তুমি আশেপাশে থাকলে প্রত্যেকটা মানুষ বড্ড সুখী হয়।”

“আরশাদ কেন এমন করছে?তুই তো ওকে ভালোবাসিস৷”

“সোনাতেও খাঁদ পড়ে আর রইল ভালোবাসা….. ”

“সময় দে।”

“ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়েছে ও।”

“চাচাজান জানে?আর তোর ভাই?”

“না, কিছু বলিনি।”

“কী করতে চাইছিস?”

“জানি না।”

“আজ কী তোর অফ ডে?”

“টিচারদের অফডে হয় না।আজ সরকারি ছুটি।”

“তোদের ছুটি, আমার কী?আমার তো ভাই ছুটি নেই।রাতে ডিউটি।”

“তোমার কাছে রিভলবার আছে?”

“আছে।”

“সিভিলেও রাখো?”

“নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। কেন?আত্নহত্যা করবি না কী?দেখ ভাই ওসব ন্যাকামো আর না। সেবার কিন্তু বহুত প্যারা দিয়েছিলি।”

“চল তোকে ফুচকা খাওয়াই। তারপর আরশাদের সাথে দেখা করে সব’টা মিটমাট করিয়ে দিয়ে আসবো।তোদের কী যে হয় মাঝেমধ্যে!”

রঙ্গান কথাটা বলে বিল পে করতে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে বলল,

“এক তরফা কষ্ট পেতে কেন চলে আসো প্রতিটা ডাকে?”

আমি যদি ঘড়ি চিনতে পারতাম,
ঘড়ির জুয়েল বদলাইতাম,
ঘড়ির জুয়েল বদলাইবো
কেমন যাই মিস্ত্রীর কাছে?
মন আমার দেহঘড়ি
সন্ধান করি, কোন মিস্ত্রী বানাইছে……

রঙ্গান যেন নিজের মাঝে নিজেই আস্ত এক দুনিয়া।কারোর কোনো কথা তাকে আঘাত করতে পারে না।কী সুন্দর না জীবনটা?কে বলবে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা রাতভর ডিউটি করে বিশ্রাম না নিয়ে ছুটে এসেছে তার একটা মাত্র কলে!

আপন মনে তখনো গান গেয়েই চলেছে রঙ্গান।গ্রামের বাড়ি একই এলাকার হওয়ায় তাদের পরিবারের সাথে বেশ ভালো সখ্যতা রয়েছে। এমনকি আরশাদ- তৃষ্ণার বিয়েতে দুই পরিবারের কাছে ঘটকের কাজ সে করেছিল।অথচ সচরাচর কেউ কী বুঝে?
সবার জীবনে রঙ লাগানো এই রঙ্গান নামের মানুষটার পুরোটা জীবন রঙহীন।

“দাঁড়িয়েই থাকবি?”
“বাইক এনেছো?”
“না গরুর গাড়ি। চলবে ম্যাম?”
“হুম।”
“মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“হয়তো।”
“তোর কী দাঁতে পোকা?”
“আমি ঠিক আছি। আমাকে হাসাতে এমন লেইম জোক্স বলিয়ো না।”
“আচ্ছা তবে চল।”

নিজে হেলমেট পড়ে একটা এগিয়ে দিলো তৃষ্ণার দিকে।তৃষ্ণা তখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে।শুধু মনে মনে ভাবছিল

“এমন একটা মানুষকে স্বপ্ন ফিরিয়ে দিতে পারলো কী করে!”

তৃষ্ণাকে বাসায় না দেখে তেমন একটা অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনি আরশাদ। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে তাদের আড্ডা স্থানে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। তাই পূর্ব প্ল্যান অনুযায়ী ছোটো একটা গেট টুগেদার হবে পাশের পিকনিক স্পটে।

বাসা থেকে বেরিয়ে বাইক নিয়ে প্রথমে আরশাদ চলে গেল ডিলারের কাছে। কচকচে কয়েকটা হাজার টাকার নোট বিনিময়ে নিলো

আরশাদ কোনো জবাব দেয় না। ফোন বের করে বার বার দেখছিল তৃষ্ণা কল দিয়েছে কী না।
কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও তৃষ্ণার কোনো কল এলো না।কিছুটা মন খারাপ হলেও সে নিজেই নিজেকে বলল,

সাত বছরের অভ্যেস সময় তো লাগবে। তৃষ্ণার অভ্যেস ছাড়তে পারলেই সোনালীকে আপন করে নিতে পারবে।

তৃষ্ণার মতো ব্যাকডেটেড মেয়ের সাথে আর যাই হোক বর্তমানে তাল মিলিয়ে চলা যায় না। সবার সাথে চলতে হলে সোনালীর মতোন খোলামেলা মনের মেয়ে প্রয়োজন। বুঝতে দেরি হলেও রাকিব তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে।
এসব ভেবেই কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো আরশাদ। কারণ সামনে সোনালী তার ভবিষ্যৎ আর তৃষ্ণা প্রাক্তন।

চলবে

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৬

রঙ্গান হাতে একটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণার সামনে।
তৃষ্ণা নাক সিটকে বলল,

“এসব খেতে তোমার কেমন লাগে ভাই?”
“দারুণ লাগে।”
“ভালো লাগে?”
“হুম। তাইতো বললাম দারুণ লাগে।”
“তুমি কী জানো দারুণ একটা নিনার্থক শব্দ?”

“মানে?”

“মানে হচ্ছে না বোধক শব্দ হচ্ছে দারুণ। ভালো লাগার ক্ষেত্রে তুমি কখনো দারুণ ব্যবহার করতে পারবে না।করতে হবে খারাপ লাগার ক্ষেত্রে।”

তৃষ্ণার কথা শুনে বুকের কাছটায় আড়াআড়ি ভাবে হাত রেখে কপাল কুঁচকে রঙ্গান বলল,

“তুই প্রফেশনে টিচার। আমি জানি। তাই বলে এমন ছোটো খাটো বিষয়ে ভুল ধরিস না।”

“নিত্য দিনে ব্যবহার করছি।ভুলগুলো না শোধরালে কি হবে?”

“হয়েছে। বুঝেছি, তুমি ভীষণ ভালো কথা বলেছো। হয়েছে এবার থামো।”

“এই তো আবার ভুল বললে। ভীষণ শব্দটাও তো নিনার্থক।”

রঙ্গান হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,

“আমার দাদী। মাফ চাই। হয়েছে। এই আমি মুখ বন্ধ করলাম।আর কিছুই বলবো না।চল তোর বাসায় যাবো।তোর শাশুড়ি মায়ের হাতের কড়া লিকারের দুধ চা খাই না অনেক দিন।”

“চা খাওয়া……..

তৃষ্ণা কথা শেষ করার পূর্বে রঙ্গান ওর মুখে জোর করে হাওয়াই মিঠাই ঠেলে দিয়ে বলল,

” আর একটা কথা বলবি তো ভালোবাসার গুলি দিয়ে এক্ষুণি ক্রসফায়ার করে দিবো।”

আরশাদ নিজের প্রতি নিজের রাগে ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে।
সে কী করে এমন ভুল করতে পারলো?
ভুলে ভুলে সে সোনালীকে তৃষ্ণা বলে ডাক দিতে পারলো?

তার মন মস্তিষ্কে তৃষ্ণা ছেয়ে আছে। অবচেতন মন বার বার কেন তৃষ্ণাকে খুঁজছে।
রেস্ট রুমে এসে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আরশাদ।
ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেলো বেলা তখন তিনটে বেজে দশ মিনিট।

বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আরশাদ ভাবতে লাগলো
জীবন এর মানে আদৌও কী?
সংসার মানেই বা কী?

ছোটো বেলা থেকে দেখেছে বাবা সারা দিন অফিস থেকে ফিরে এসে প্রথমে মায়ের মুখ দেখতো।
মায়ের যতই কাজ থাকুক না কেন বাবা আসার সময় হলে সে চিরুনিটা টেনে নিয়ে সামনের চুলগুলো আঁচড়ে নিতো।
হাত মুখ ধুয়ে চোখে পড়তো হালকা কাজল।শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে অপেক্ষা করতো স্বামীর জন্য।
আরশাদের বাবাও যেন কম ছিল না। তিনি সন্তানদের জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে আসতেন। এর কোনো ভুল হয় নি।
চাকরির শেষ দিন অবধি সে তার স্ত্রী সন্তানদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছেন।
যখন নতুন নতুন কোণ আইসক্রিমগুলো এদেশে এলো তখন তার বাবা তাদের জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসার পর কী না কান্ড ঘটিয়েছিল তার মা।
ভেবেছিল কিছুক্ষণ পর খাবে, এদিকে আইসক্রিম গলে বিচ্ছিরি অবস্থা। দুই ছেলে মেয়ের আইসক্রিম খাওয়া তখন শেষ। স্ত্রী খেতে পারেনি বলে তার বাবা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হয়েছিল।
ভিজে চুপচুপে হয়ে যখন আইসক্রিম হাতে ফিরেছে তখন বাড়ির সবাই প্রায় ঘুমে। পরীক্ষা থাকায় আরশাদ পড়ায় ব্যস্ত ছিল।পানির জন্য উঠে এসে দেখলো
তার মা তার বাবার মাথার চুল নিজের আঁচল দিয়ে মুছে দিচ্ছে,হালকা স্বরে কঠিন দৃষ্টিতে চলছে শাসন।

আর তার বাবা আইসক্রিম বাড়িয়ে দিয়েছে তার মায়ের মুখের সামনে।

তবে কী ওটাই ভালোবাসা, ভালো থাকার টনিক ছিল?
মায়ের গায়ের ঘামে ভেজা গন্ধ,মাছের আঁশটের গন্ধ তো কখনো বাবার কাছে অসহ্য লাগেনি। কখনো মা যদি কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেত বাবা তখন নিজ হাতে খাইয়ে দিতো।

তৃষ্ণাও তো ঠিক তার মায়ের মতোন। আরশাদ যখন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে তখন কোথা থেকে যেন দৌড়ে আসে। হাতে থাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি।
আরশাদ যে অবধি তার মাথায় হাত না রাখে সে অবধি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
আরশাদ ভালোবেসে সে কাজটা এতদিন করতো।কিন্তু যখন থেকে রাকিব ওদের সাথে মিশতে শুরু করেছে তখন থেকে সে যেন তার তৃষ্ণাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

তৃষ্ণার তৃষ্ণায় আজ জান পরাণ বেরিয়ে যাচ্ছে আরশাদের।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল টের পায়নি।
যখন ঘুম ভাংলো তখন মনে হলো তার সারা শরীর ভিজে আছে। হ্যাঁ সে ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে আছে।

হাত ঘড়িতে সময় দেখতে পেল রাত একটা বেজে বারো মিনিট।
ইচ্ছে হচ্ছিলো এক্ষুণি সে বাসায় চলে যাবে। কিন্তু বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। যাওয়া সম্ভব নয়।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও আরশাদকে থেকে যেতে হলো।

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আনমনে আরশাদ গেয়ে উঠলো।,

“তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখের সন্ধানে যাও—
আমি তােমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে, আর কিছু নাহি চাই গাে
আমারো পরাণো যাহা চায়।
তুমি তাই, তুমি তাই গো…….
আমারো পরাণো যাহা চায়।”

সকাল হতে না হতেই আরশাদ ছুটলো তার বাড়ির দিকে। ফ্ল্যাটে এসে দেখতে পেলো তালা ঝুলছে তাদের দরজায়। পাশের ফ্ল্যাটের লোককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো সবাই হাসপাতালে।
কারণ আরশাদের জীবন থেকে হয়তো ততক্ষণে ভালোবাসার একটা অংশ মুছে যাচ্ছে।

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-৩+৪

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#পর্ব-৩
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

সকাল সকাল শাশুড়ি মায়ের চিৎকার, রাগীস্বরে কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তৃষ্ণা।
আজ নতুন নয়, এ বাসার নিত্যদিনের কাহিনী এসব। শাশুড়ি তার বউয়ের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে আর শ্বশুর খবরের কাগজ পড়তে পড়তে মুচকি হাসে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তৃষ্ণা এগিয়ে গেল খাবার টেবিলের পাশে।
তার শাশুড়ি সাদা ভাতের প্লেট এবং ডিম ভাজি নিয়ে বসে আছেন।বলা বাহুল্য অপেক্ষা করছে তৃষ্ণার জন্য।
তৃষ্ণা এগিয়ে যেতেই বলল,

“এই মেয়ে, কোনো বাহানা না।চুপচাপ এসে বসো বলছি।”

হিজাবে ক্লিপ লাগাতে লাগাতে তৃষ্ণা বলল,

“মা সত্যি আজ সময় নেই। আমার বাস ধরতে হবে৷ আমি রুটি রোল করে নিয়ে যাচ্ছি তাতেই হয়ে যাবে। পরে না হয়…… ”

“নাও হা করো। রুটি নিতে নিষেধ করেছে কে?নিয়ে যাও। আগে ভাত খেয়ে নাও।”

“আপনি হাটুর ব্যথা নিয়ে আবার ভাত চড়িয়েছেন?”

“আতুরঘরে তিন দিন থাকার পরেই আমার শাশুড়ি আমাকে ধান বানতে দিয়েছিল।হাটুর ব্যথা নিয়ে ভাত রান্না তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়।”

এই পর্যায়ে শ্বশুর বললেন,

“তোমার কপাল দেখো, তোমার শাশুড়ি তোমাকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে।”

“কেন দিবো না।ও কী কম করে আমাদের জন্য?এই কাজের মেয়ের রান্না খেতে কষ্ট হয় বলে নিজে রান্না করে। আমি দু মুঠো ভাত খাইয়ে দিলেই কী এমন হয়?”

তৃষ্ণার চোখে হঠাৎ পানি এলেও প্রকাশ করলো না সে। তাগাদা দিয়ে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। এতটা সুখ বুঝি তার পরাণে লাগেনি আগে৷

পরীক্ষা শেষ করে টিচার্স রুমে প্রবেশ করতেই তৃষ্ণার ফোন বেজে উঠলো।
কথা শেষ করে তৃষ্ণা খেয়াল করলো আড্ডা জমে উঠেছে সবার মাঝে।
গরম চা’য়ের কাপে চুমুক, সমুচার মুড়মুড় শব্দে।
বিষয় বস্তু বয়স্ক শ্বশুর শাশুড়ি। তাদের কথা বলতে বলতে একেকজন নাট ছিটকাচ্ছে।
মিসেস রহমান বললেন,

“মিস বিশ্বাস করবেন না আমার সাহেবের বাবা টয়লেট ফ্ল্যাশ করতে জানে না। কি যে অবঘেন্না।”

অংকের ম্যাম বললেন,

“আমি পিতপিতে স্বভাবের সেই আমার শাশুড়ি যত্রতত্র কফ ফেলে, ভুরভুর করে গ্যাস ছাড়ে। আর পারি না।ভেবেছি বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দিবো। কারণ বাসায় রাখলে আমার সন্তানের লেখাপড়া হচ্ছে না।”

একসময় তৃষ্ণাকে জিজ্ঞেস করে তার পরিবারের কথা। সে কবে তার শ্বশুর শাশুড়ি কে বৃদ্ধাশ্রমে দিবে। যেহেতু সবাই মোটামুটি এমনটাই করার ভাবছে তাই সবাই মিলে যে কোনো একটা জায়গায় দিলে বিষয়টা মন্দ হয় না।

তৃষ্ণা তাদের কথায় প্রথমে অবাক হয় তারপর বিরক্ত তবুও কন্ঠে নমনীয়তা রেখে বলল,

“আমার মা-বাবা সাথেই থাকবে।কারণ সংসারটা আমার শাশুড়ির আমিই বা এলাম কদিন হলো।তাছাড়া তারা যাই হোক বর্তমানে আমার অভিভাবক আমার স্বামীর মা-বাবা।”

তার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মিসেস রহমান বললেন

“যাক আর বছর দুই। তখন এই নীতি কথা থাকবে না।”

“জানেন মিস, আমার এক ভাই। আমার ভাইয়ের সাথেই বাবা-মা থাকে। যদি তাদের কে ভাই বৌ না রাখে তখন আমি কী জোর করতে পারবো?আমার বাবা মা বৃদ্ধাশ্রমে থাকবে এটা আমি ভাবতেও পারি না।যদি নিজের বাবা-মা কে না দিতে পারি তবে অন্যের বাবা-মা কে পাঠানোর চিন্তা করা কী উচিৎ?

আপনি বললেন না?সন্তানের পড়াশোনা ক্ষতি হচ্ছে অথচ আপনার স্বামীও কারো সন্তান। সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কতই না আত্মত্যাগ করেছে তারা। অথচ শিক্ষিত হয়ে, চাকরি পেয়ে কী লাভ হলো তাদের?যদি তাদের বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয়?
আজ যে সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আজ তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে চাচ্ছেন,আগামী দিনে আপনার ভবিষ্যৎ কী?

ধরেন আপনি এলাকার একজন মানুষ যার অনেক জমিজমা আছে, অন্য একজন ব্যবসায়ী। সেই ব্যবসায়ী শুধুই আপনাকে কটাক্ষ করে কারণ সে মনে করে তার মতোন ভালো আর দুটো নেই। কিন্তু দিনে দিনে তার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিচ্ছে কারণ বাজারে নতুন একজন এসেছে। সে আর কেউ নয় আপনি।যে নিজের জমিতে ফসল ফলিয়ে নিজেই সব করছেন।আপনার লাভ লোকসান আপনার নিজের কাছেই রইল।অপর দিকে ব্যবসায়ীকে অন্যের থেকে ফসল কিনে, নানা উপায়ে প্রচারণা করে এরপর ব্যবসা করতে হচ্ছে।
কিন্তু এতে সে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
কারণ লাভের পরিমাণ খুব অল্প।ঠিক তেমনি শ্বশুর শাশুড়ি হচ্ছে জমি। যে আমাদের আগলে রাখছে তাদের সব’টা দিয়ে। তাদের অবহেলা করে আমরা কী সুখী হতে পারি?
আজ আমি বৌ কাল তো শাশুড়ি হবো।
হ্যাঁ মানি অনেক শাশুড়ি বৌকে অত্যাচার করে তাই বলে তো আর সবাই সমান নয়। বরফ মিশ্রিত
ঠান্ডা পানিও ধীরেধীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গরম হয়ে যায়। আর রইল বাকী মানুষের মন!”

আরশাদ চিন্তিত মুখে বসে আছে। তার পাশে বসে আছে রাকিব,আসিফ,শাকিল সহ আরো দুই একজন।
রাকিব জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে আরশাদকে বোঝানোর জন্য।
তৃষ্ণা যায় না আরশাদের লাইফ স্টাইলের সাথে। কর্পোরেট দুনিয়ায় একটা ভালো পদে চাকরি করা ছেলের বউ নিয়মিত যাতায়াত করে সামান্য বাসে।কালেভদ্রে বেড়াতে যায় না। দামী পোশাক পরে খুব কম।সব’চে বড় কথা ড্রিংকস করে না।
ইদানীং কালের কোনো মেয়ে আছে না কী?এই সোসাইটিতে? যে ক্লাবে যায় না। যত্তসব ন্যারো মেন্টালিটির কাজ।

রাকিবকে থামিয়ে দিয়ে শাকিল আরশাদকে জিজ্ঞেস করলো,

“তুই আমাকে বল,তুই কেন ডিভোর্স চাইছিস?”

“কারণ আমি ফেড আপ। ওর মিডেলক্লাস ন্যারো মেন্টালিটির কারণে আমি ফেড আপ হয়ে আছি।”

“কী রকম?”

“রাকিব তো বলল।”

আরশাদের জবাবে নিঃশব্দে হাসে শাকিল। কাধে হাত রেখে সে ধীরে ধীরে বলল,

“আলোতে নিলে চোখ ধাধানো আলো কিন্তু কাঁচেও পাওয়া যায় কিন্তু হীরে সব সময় ঝলমলিয়ে উঠে না।তাই কাঁচ আর হীরের মধ্যে পার্থক্য নিজে নিজে বুঝতে শিখেনে। না হলে হীরে হারিয়ে কাঁচে হাত কেটে বসবি।”

রাত তখন সাড়ে বারোটা। আরশাদ ফিরেছে নেশায় বুদ হয়ে। ঘরে ফিরেই নিজের স্বাক্ষর করা ডিভোর্স পেপার ছুড়ে দিলো তৃষ্ণা সামনে। জঘন্য ভাষায় গালি দিয়ে বলল

“এই মুহুর্তে স্বাক্ষর করে বেরিয়ে যা ফকিন্নির বাচ্চা।”

চলবে।

#লাভ_উইথ_মাইবেটারহাফ
#পর্ব-৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

প্রেমের সম্পর্কের বিয়েতে যখন ভাঙ্গন ধরে তখন আশেপাশের মানুষ মুখ লুকিয়ে অট্টহাসি হাসে।
ভকভক শব্দে বমি করে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছে আরশাদ। পাশেই কাঠ কাঠ মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আরশাদের বাবা।
ছেলের বেগতিক অবস্থা দেখেও এগিয়ে যায়নি তার মা। সে শক্ত হাতে নিজের বুকের সাথে তৃষ্ণার মাথা চেপে ধরে আছেন।
তৃষ্ণা তখন থরথর করে কাঁপছে।
ঘাড়ের পিছনে, কাধে অসহ্য ব্যথা হচ্ছে। মাথার ভিতর শ’ টনের বোঝা, শ্বাস নিচ্ছে।

খুব ধীর গতিতে। চোখের সামনে বেহুশ অবস্থায় পড়ে আছে তার স্বামী। আশেপাশে ছড়িয়ে আছে ডিভোর্স পেপার এর তিনটে পাতা।ঠোঁটের বা পাশে জমাট বাধা রক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করলো তৃষ্ণা। কেমন শুকিয়ে জমে আছে রক্ত।
আরশাদের হাতে থাকা ঘড়িতে লেগে তার ঠোঁটে আঘাত লাগার পর শাশুড়ি মা তাকে যে ধরেছে আর ছাড়ার নাম নেই।

কিন্তু তাকে তো উঠতে হবে। এই পরিবেশে থাকা সম্ভব নয়। শাশুড়ীকে ছাড়িয়ে সে উঠে বসলো,চুলগুলো হাত খোপা করে এগিয়ে গেল আরশাদের দিকে।
এতক্ষণ চুপ করে থাকা তার শ্বশুর এবার বজ্রকন্ঠে তাকে ধমকের সুরে বলল,

“ঘরে যাও। ওকে ধরার প্রয়োজন নেই।সে কোনো স্বর্ণপদক জিতে আসেনি।বন্ধুদের সাথে মাতলামো করে এসেছে।
তোমার জন্য তালাক নামা বানিয়ে এনেছে।
ওর সেবা করার কোনো দরকার নেই।যাও ঘরে যাও। বিশ্রাম নাও, কাটা জায়গা পরিষ্কার করো।
ওকে থাকতে দাও ওখানেই। নেশা কেটে গেলে তখন বুঝতে পারবে ও কোথায়, তুমি ছাড়া ওর স্থান এ বাড়িতে কোথায়।”

শ্বশুর মশাইয়ের কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল তৃষ্ণা। কিছুক্ষণ পর বলল,

“বাবা এখানে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে। সারা রাত নিজের করা বমির মধ্যেই গড়াগড়ি খাবে। দূর্গন্ধ ছড়াবে।”

“এই ময়লা না হয় পরিষ্কার করলে, দূর্গন্ধ তুমি সরিয়ে দিলে কিন্তু ও নিজের ব্যক্তিগত জীবনে যে ময়লা ঘাটছে, সেই দূর্গন্ধ কীভাবে দূর করবে?”

“সে যদি আমাকে বাধতে না চায় আমি কীভাবে বাধবো নিজেকে তার সাথে?”

তৃষ্ণা দাঁড়ায় না, দ্রুত চলে যায় ওয়াশরুমে৷শাশুড়ি সাহায্যে আরশাদ কে ঘরে নিয়ে পরিষ্কার করে তাকে। বিছানায় যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আরশাদ, তৃষ্ণা তখন ব্যস্ত স্মৃতির চিঠিগুলো পড়তে।

আরশাদের সাথে প্রেমটা হুট করে হয়নি।
হয়েছিল বুঝে,শুনে,মেপে মেপে। কারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের আবেগে ভেসে বেড়ালে চলে না। তাদের পদক্ষেপ নিতে হয় অনেক ভেবে চিন্তে।
দশ টাকার বাদাম কিনেও পার্কে আড্ডায় সময় নষ্ট করা যায় না, বিকেলটা থাকে দুটো এক্সট্রা টিউশনির জন্য।
মাস শেষে দুজনের দেখা, প্রিয় মানুষের জন্য রান্না করে নিয়ে আসা খাবার দুজনে ভাগ করে খাওয়ায় এক তৃপ্ততা আছে যা পাওয়া যায় না রেস্টুরেন্টের বার্গার কিংবা অন্য কোনো খাবারে।

একই এলাকায় বাসা ছিল দুজনের। তৃষ্ণা মায়ের জন্ম দিনে সোনার দুল উপহার দিবে বলে তখন বিকেলে টিউশনি করাতো।
ফিরতে রাত হতো না তবে সন্ধ্যে হতো।সেই সন্ধ্যে বেলা কখনো তৃষ্ণার বাবা বা ভাই এগিয়ে নিয়ে আসতো তাকে। বিড়ালছানার মতো একটা মেয়ে চুপচাপ হেটে যেত বাবা বা ভাইয়ের পাশে। রাস্তায় কুকুর দেখলে বাবা বা ভাই তাকে আগলে নিয়ে যেত এমন ভাবে যেন সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া বাচ্চা মেয়ে।
একদিন সন্ধ্যেবেলা তুমুল বৃষ্টি। টিউশনি থেকে বেরিয়ে বাবা বা ভাই কাউকে না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তৃষ্ণা। বৃষ্টির থামার নাম নেই, হয়তো এজন্য কেউ আসতে পারেনি। কিন্তু এমন তো হয় না, কেউ না কেউ তো আসেই।সন্ধ্যে হচ্ছিলো তৃষ্ণা ধীরে ধীরে এগুতে থাকে বাসার দিকে। কিন্তু রাস্তার মাঝে কয়েকটা কুকুরের ঝগড়া দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে যায়। সদ্য কলেজে পড়া তৃষ্ণার চোখে মুখে ভয় দেখে টং দোকান থেকে এগিয়ে আসে আরশাদ।কোনো কথা না বলেই চলতে থাকে তার আগে।তৃষ্ণা তাকে চেনে না এমন নয়, এলাকার ভাই হিসেবে চিনে, সে বুঝতে পারে লোকটা তাকে সাহায্য করছে যা এখন তার খুব প্রয়োজন তাই চলতে থাকে তার পিছন পিছন।
বাকী রাস্তা কেউ কোনো কথা বলেনি,বাসার কাছাকাছি আসতেই তাদের সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ায়। রিক্সায় ছিল তৃষ্ণার বড় ভাই। কোনো কথা না বলেই বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমি কতটা ভয় পেয়েছি তোকে না পেয়ে। একা আসতে গেলি কেন?বৃষ্টির সময় যদি বিপদ হতো?”

এরপর আরশাদকে দেখে কৃতজ্ঞতার সুরে তাকে বলল,

“ভাই তুই বড্ড উপকার করলি।দাদী আছাড় পড়ে পা ভেংগে ফেলেছে। আমরা সবাই হাসপাতালে ছিলাম।ওকে আনতে যাবো তখন বৃষ্টি। তবুও যেতে যেতে দেখি এসে পড়েছে।
এগিয়ে দিয়ে গেলি এর জন্য অনেক ধন্যবাদ।”

“উল্টো কেনো ভাবলেন না? আমি তো ক্ষতিও করতে পারতাম?”

“চা মামার কাছে যখন জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম তখন সে বলল কুকুরের ঝগড়ার কথা। তাছাড়া তোকে অবিশ্বাস করার কিছুই নেই।”

রাত পেরিয়ে ভোর হচ্ছে। তৃষ্ণা সালোয়ার কামিজ পাল্টে শাড়ি পরেছে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সে কিছু একটা মনে মনে আওড়াচ্ছে।

আরশাদের যখন ঘুম ভাংলো তখন বেলা প্রায় অনেক।ঘরটা ফাঁকা ঠিক যেমন লাগছে তার মাথার ভিতরটা। এ সময় তৃষ্ণা কখনো বিছানায় থাকে না কিন্তু বাসায় থাকে। বার কয়েক ডাক দেওয়ার পরও কোনো খোঁজ না পেয়ে আরশাদ বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে ঘরে ফিরে এসে দেখলো,

ঘরের কোথাও তৃষ্ণা নেই, না আছে তৃষ্ণার কোনো স্পর্শ। হুট করে তৃষ্ণা যেন মিলিয়ে গেছে যেমনটা মিলিয়ে যায় এক রাশ নিস্তব্ধতায় দীর্ঘশ্বাস।”

চলবে।

error: ©<b>গল্পপোকা ডট কম</b>