Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1602



লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-৫+৬

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৫

আমার মা যখন পাশের বাড়ির কাকুর সাথে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে তখন আমার বয়স মাত্র সাত বছর।
সাত বছর হলেও স্পষ্ট মনে আছে সেদিন স্যান্ডো গেঞ্জির সাথে নীল হাফ প্যান্ট পরেছিলাম।
বাবার ইনকাম খুব সীমিত ছিল, মায়ের ইচ্ছে তখন আকাশচুম্বী।গনগনে আগুনের মতোন ছিল আমার মায়ের শরীরের রঙ।রূপের আগুনে যে কাউকে পুড়িয়ে ফেলতো সে।
বাবা সামান্য ব্যবসায়ী। তবে ছিলেন সৎ এবং এক কথার মানুষ। মায়ের সব আবদার মেটাতে হিমশিম খেলেও মুখে হাসি দেখতাম। কিন্তু মা রইলেন না। কারণ দিনের বেলা তার ঘরে পরপুরুষের অগাধ চলাফেরায় একটা ঝামেলা ছিলাম মাত্র।

তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। চারের ঘরের নামতা ভুল করায় মা আমাকে বিবস্ত্র করে গেটের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।

আজ পুরো আঠারো বছর পর, আমার মায়ের কিন্তু সেই রূপ নেই। চামড়া কুঁচকে গেছে। মাথায় চুলে সাদা রং।
আশ্চর্য হলেও সেই মা এখন আমার বাবার জন্য কাঁদে৷ বিগত সতেরো বছর সময় ধরেই কাঁদছে সে।

অথচ আমার বাবা বেচারা কতই না কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছেড়েছেন।

কফির কাপে চুমুক দিয়ে চুপচাপ বসে রইল তৃষ্ণা। সামনে বসে থাকা সুদর্শন যুবক সম্পর্কে তার কেউ নয় কিন্তু অনেক কিছু।
একটা সময় তার কাছে টিউশন পড়তো তৃষ্ণা।
ব্যক্তিটার চোখে মুখে আলাদা এক জ্যোতি উপচে পড়ছে। সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে তৃষ্ণা বলল,

“রঙ্গান ভাই আমি এসব জানি।”

“তুই কী জানিস আমার নামের মানে কী?”

“তুমি মানেই তো রঙ, রংধনুর সাত রঙ৷ তাই হয়তো তুমি আশেপাশে থাকলে প্রত্যেকটা মানুষ বড্ড সুখী হয়।”

“আরশাদ কেন এমন করছে?তুই তো ওকে ভালোবাসিস৷”

“সোনাতেও খাঁদ পড়ে আর রইল ভালোবাসা….. ”

“সময় দে।”

“ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়েছে ও।”

“চাচাজান জানে?আর তোর ভাই?”

“না, কিছু বলিনি।”

“কী করতে চাইছিস?”

“জানি না।”

“আজ কী তোর অফ ডে?”

“টিচারদের অফডে হয় না।আজ সরকারি ছুটি।”

“তোদের ছুটি, আমার কী?আমার তো ভাই ছুটি নেই।রাতে ডিউটি।”

“তোমার কাছে রিভলবার আছে?”

“আছে।”

“সিভিলেও রাখো?”

“নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। কেন?আত্নহত্যা করবি না কী?দেখ ভাই ওসব ন্যাকামো আর না। সেবার কিন্তু বহুত প্যারা দিয়েছিলি।”

“চল তোকে ফুচকা খাওয়াই। তারপর আরশাদের সাথে দেখা করে সব’টা মিটমাট করিয়ে দিয়ে আসবো।তোদের কী যে হয় মাঝেমধ্যে!”

রঙ্গান কথাটা বলে বিল পে করতে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে বলল,

“এক তরফা কষ্ট পেতে কেন চলে আসো প্রতিটা ডাকে?”

আমি যদি ঘড়ি চিনতে পারতাম,
ঘড়ির জুয়েল বদলাইতাম,
ঘড়ির জুয়েল বদলাইবো
কেমন যাই মিস্ত্রীর কাছে?
মন আমার দেহঘড়ি
সন্ধান করি, কোন মিস্ত্রী বানাইছে……

রঙ্গান যেন নিজের মাঝে নিজেই আস্ত এক দুনিয়া।কারোর কোনো কথা তাকে আঘাত করতে পারে না।কী সুন্দর না জীবনটা?কে বলবে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা রাতভর ডিউটি করে বিশ্রাম না নিয়ে ছুটে এসেছে তার একটা মাত্র কলে!

আপন মনে তখনো গান গেয়েই চলেছে রঙ্গান।গ্রামের বাড়ি একই এলাকার হওয়ায় তাদের পরিবারের সাথে বেশ ভালো সখ্যতা রয়েছে। এমনকি আরশাদ- তৃষ্ণার বিয়েতে দুই পরিবারের কাছে ঘটকের কাজ সে করেছিল।অথচ সচরাচর কেউ কী বুঝে?
সবার জীবনে রঙ লাগানো এই রঙ্গান নামের মানুষটার পুরোটা জীবন রঙহীন।

“দাঁড়িয়েই থাকবি?”
“বাইক এনেছো?”
“না গরুর গাড়ি। চলবে ম্যাম?”
“হুম।”
“মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“হয়তো।”
“তোর কী দাঁতে পোকা?”
“আমি ঠিক আছি। আমাকে হাসাতে এমন লেইম জোক্স বলিয়ো না।”
“আচ্ছা তবে চল।”

নিজে হেলমেট পড়ে একটা এগিয়ে দিলো তৃষ্ণার দিকে।তৃষ্ণা তখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে।শুধু মনে মনে ভাবছিল

“এমন একটা মানুষকে স্বপ্ন ফিরিয়ে দিতে পারলো কী করে!”

তৃষ্ণাকে বাসায় না দেখে তেমন একটা অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনি আরশাদ। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে তাদের আড্ডা স্থানে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। তাই পূর্ব প্ল্যান অনুযায়ী ছোটো একটা গেট টুগেদার হবে পাশের পিকনিক স্পটে।

বাসা থেকে বেরিয়ে বাইক নিয়ে প্রথমে আরশাদ চলে গেল ডিলারের কাছে। কচকচে কয়েকটা হাজার টাকার নোট বিনিময়ে নিলো

আরশাদ কোনো জবাব দেয় না। ফোন বের করে বার বার দেখছিল তৃষ্ণা কল দিয়েছে কী না।
কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও তৃষ্ণার কোনো কল এলো না।কিছুটা মন খারাপ হলেও সে নিজেই নিজেকে বলল,

সাত বছরের অভ্যেস সময় তো লাগবে। তৃষ্ণার অভ্যেস ছাড়তে পারলেই সোনালীকে আপন করে নিতে পারবে।

তৃষ্ণার মতো ব্যাকডেটেড মেয়ের সাথে আর যাই হোক বর্তমানে তাল মিলিয়ে চলা যায় না। সবার সাথে চলতে হলে সোনালীর মতোন খোলামেলা মনের মেয়ে প্রয়োজন। বুঝতে দেরি হলেও রাকিব তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে।
এসব ভেবেই কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো আরশাদ। কারণ সামনে সোনালী তার ভবিষ্যৎ আর তৃষ্ণা প্রাক্তন।

চলবে

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৬

রঙ্গান হাতে একটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণার সামনে।
তৃষ্ণা নাক সিটকে বলল,

“এসব খেতে তোমার কেমন লাগে ভাই?”
“দারুণ লাগে।”
“ভালো লাগে?”
“হুম। তাইতো বললাম দারুণ লাগে।”
“তুমি কী জানো দারুণ একটা নিনার্থক শব্দ?”

“মানে?”

“মানে হচ্ছে না বোধক শব্দ হচ্ছে দারুণ। ভালো লাগার ক্ষেত্রে তুমি কখনো দারুণ ব্যবহার করতে পারবে না।করতে হবে খারাপ লাগার ক্ষেত্রে।”

তৃষ্ণার কথা শুনে বুকের কাছটায় আড়াআড়ি ভাবে হাত রেখে কপাল কুঁচকে রঙ্গান বলল,

“তুই প্রফেশনে টিচার। আমি জানি। তাই বলে এমন ছোটো খাটো বিষয়ে ভুল ধরিস না।”

“নিত্য দিনে ব্যবহার করছি।ভুলগুলো না শোধরালে কি হবে?”

“হয়েছে। বুঝেছি, তুমি ভীষণ ভালো কথা বলেছো। হয়েছে এবার থামো।”

“এই তো আবার ভুল বললে। ভীষণ শব্দটাও তো নিনার্থক।”

রঙ্গান হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,

“আমার দাদী। মাফ চাই। হয়েছে। এই আমি মুখ বন্ধ করলাম।আর কিছুই বলবো না।চল তোর বাসায় যাবো।তোর শাশুড়ি মায়ের হাতের কড়া লিকারের দুধ চা খাই না অনেক দিন।”

“চা খাওয়া……..

তৃষ্ণা কথা শেষ করার পূর্বে রঙ্গান ওর মুখে জোর করে হাওয়াই মিঠাই ঠেলে দিয়ে বলল,

” আর একটা কথা বলবি তো ভালোবাসার গুলি দিয়ে এক্ষুণি ক্রসফায়ার করে দিবো।”

আরশাদ নিজের প্রতি নিজের রাগে ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে।
সে কী করে এমন ভুল করতে পারলো?
ভুলে ভুলে সে সোনালীকে তৃষ্ণা বলে ডাক দিতে পারলো?

তার মন মস্তিষ্কে তৃষ্ণা ছেয়ে আছে। অবচেতন মন বার বার কেন তৃষ্ণাকে খুঁজছে।
রেস্ট রুমে এসে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আরশাদ।
ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেলো বেলা তখন তিনটে বেজে দশ মিনিট।

বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আরশাদ ভাবতে লাগলো
জীবন এর মানে আদৌও কী?
সংসার মানেই বা কী?

ছোটো বেলা থেকে দেখেছে বাবা সারা দিন অফিস থেকে ফিরে এসে প্রথমে মায়ের মুখ দেখতো।
মায়ের যতই কাজ থাকুক না কেন বাবা আসার সময় হলে সে চিরুনিটা টেনে নিয়ে সামনের চুলগুলো আঁচড়ে নিতো।
হাত মুখ ধুয়ে চোখে পড়তো হালকা কাজল।শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে অপেক্ষা করতো স্বামীর জন্য।
আরশাদের বাবাও যেন কম ছিল না। তিনি সন্তানদের জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে আসতেন। এর কোনো ভুল হয় নি।
চাকরির শেষ দিন অবধি সে তার স্ত্রী সন্তানদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছেন।
যখন নতুন নতুন কোণ আইসক্রিমগুলো এদেশে এলো তখন তার বাবা তাদের জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসার পর কী না কান্ড ঘটিয়েছিল তার মা।
ভেবেছিল কিছুক্ষণ পর খাবে, এদিকে আইসক্রিম গলে বিচ্ছিরি অবস্থা। দুই ছেলে মেয়ের আইসক্রিম খাওয়া তখন শেষ। স্ত্রী খেতে পারেনি বলে তার বাবা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হয়েছিল।
ভিজে চুপচুপে হয়ে যখন আইসক্রিম হাতে ফিরেছে তখন বাড়ির সবাই প্রায় ঘুমে। পরীক্ষা থাকায় আরশাদ পড়ায় ব্যস্ত ছিল।পানির জন্য উঠে এসে দেখলো
তার মা তার বাবার মাথার চুল নিজের আঁচল দিয়ে মুছে দিচ্ছে,হালকা স্বরে কঠিন দৃষ্টিতে চলছে শাসন।

আর তার বাবা আইসক্রিম বাড়িয়ে দিয়েছে তার মায়ের মুখের সামনে।

তবে কী ওটাই ভালোবাসা, ভালো থাকার টনিক ছিল?
মায়ের গায়ের ঘামে ভেজা গন্ধ,মাছের আঁশটের গন্ধ তো কখনো বাবার কাছে অসহ্য লাগেনি। কখনো মা যদি কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেত বাবা তখন নিজ হাতে খাইয়ে দিতো।

তৃষ্ণাও তো ঠিক তার মায়ের মতোন। আরশাদ যখন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে তখন কোথা থেকে যেন দৌড়ে আসে। হাতে থাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি।
আরশাদ যে অবধি তার মাথায় হাত না রাখে সে অবধি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
আরশাদ ভালোবেসে সে কাজটা এতদিন করতো।কিন্তু যখন থেকে রাকিব ওদের সাথে মিশতে শুরু করেছে তখন থেকে সে যেন তার তৃষ্ণাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

তৃষ্ণার তৃষ্ণায় আজ জান পরাণ বেরিয়ে যাচ্ছে আরশাদের।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল টের পায়নি।
যখন ঘুম ভাংলো তখন মনে হলো তার সারা শরীর ভিজে আছে। হ্যাঁ সে ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে আছে।

হাত ঘড়িতে সময় দেখতে পেল রাত একটা বেজে বারো মিনিট।
ইচ্ছে হচ্ছিলো এক্ষুণি সে বাসায় চলে যাবে। কিন্তু বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। যাওয়া সম্ভব নয়।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও আরশাদকে থেকে যেতে হলো।

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আনমনে আরশাদ গেয়ে উঠলো।,

“তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখের সন্ধানে যাও—
আমি তােমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে, আর কিছু নাহি চাই গাে
আমারো পরাণো যাহা চায়।
তুমি তাই, তুমি তাই গো…….
আমারো পরাণো যাহা চায়।”

সকাল হতে না হতেই আরশাদ ছুটলো তার বাড়ির দিকে। ফ্ল্যাটে এসে দেখতে পেলো তালা ঝুলছে তাদের দরজায়। পাশের ফ্ল্যাটের লোককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো সবাই হাসপাতালে।
কারণ আরশাদের জীবন থেকে হয়তো ততক্ষণে ভালোবাসার একটা অংশ মুছে যাচ্ছে।

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-৩+৪

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#পর্ব-৩
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

সকাল সকাল শাশুড়ি মায়ের চিৎকার, রাগীস্বরে কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তৃষ্ণা।
আজ নতুন নয়, এ বাসার নিত্যদিনের কাহিনী এসব। শাশুড়ি তার বউয়ের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে আর শ্বশুর খবরের কাগজ পড়তে পড়তে মুচকি হাসে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তৃষ্ণা এগিয়ে গেল খাবার টেবিলের পাশে।
তার শাশুড়ি সাদা ভাতের প্লেট এবং ডিম ভাজি নিয়ে বসে আছেন।বলা বাহুল্য অপেক্ষা করছে তৃষ্ণার জন্য।
তৃষ্ণা এগিয়ে যেতেই বলল,

“এই মেয়ে, কোনো বাহানা না।চুপচাপ এসে বসো বলছি।”

হিজাবে ক্লিপ লাগাতে লাগাতে তৃষ্ণা বলল,

“মা সত্যি আজ সময় নেই। আমার বাস ধরতে হবে৷ আমি রুটি রোল করে নিয়ে যাচ্ছি তাতেই হয়ে যাবে। পরে না হয়…… ”

“নাও হা করো। রুটি নিতে নিষেধ করেছে কে?নিয়ে যাও। আগে ভাত খেয়ে নাও।”

“আপনি হাটুর ব্যথা নিয়ে আবার ভাত চড়িয়েছেন?”

“আতুরঘরে তিন দিন থাকার পরেই আমার শাশুড়ি আমাকে ধান বানতে দিয়েছিল।হাটুর ব্যথা নিয়ে ভাত রান্না তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়।”

এই পর্যায়ে শ্বশুর বললেন,

“তোমার কপাল দেখো, তোমার শাশুড়ি তোমাকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে।”

“কেন দিবো না।ও কী কম করে আমাদের জন্য?এই কাজের মেয়ের রান্না খেতে কষ্ট হয় বলে নিজে রান্না করে। আমি দু মুঠো ভাত খাইয়ে দিলেই কী এমন হয়?”

তৃষ্ণার চোখে হঠাৎ পানি এলেও প্রকাশ করলো না সে। তাগাদা দিয়ে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। এতটা সুখ বুঝি তার পরাণে লাগেনি আগে৷

পরীক্ষা শেষ করে টিচার্স রুমে প্রবেশ করতেই তৃষ্ণার ফোন বেজে উঠলো।
কথা শেষ করে তৃষ্ণা খেয়াল করলো আড্ডা জমে উঠেছে সবার মাঝে।
গরম চা’য়ের কাপে চুমুক, সমুচার মুড়মুড় শব্দে।
বিষয় বস্তু বয়স্ক শ্বশুর শাশুড়ি। তাদের কথা বলতে বলতে একেকজন নাট ছিটকাচ্ছে।
মিসেস রহমান বললেন,

“মিস বিশ্বাস করবেন না আমার সাহেবের বাবা টয়লেট ফ্ল্যাশ করতে জানে না। কি যে অবঘেন্না।”

অংকের ম্যাম বললেন,

“আমি পিতপিতে স্বভাবের সেই আমার শাশুড়ি যত্রতত্র কফ ফেলে, ভুরভুর করে গ্যাস ছাড়ে। আর পারি না।ভেবেছি বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দিবো। কারণ বাসায় রাখলে আমার সন্তানের লেখাপড়া হচ্ছে না।”

একসময় তৃষ্ণাকে জিজ্ঞেস করে তার পরিবারের কথা। সে কবে তার শ্বশুর শাশুড়ি কে বৃদ্ধাশ্রমে দিবে। যেহেতু সবাই মোটামুটি এমনটাই করার ভাবছে তাই সবাই মিলে যে কোনো একটা জায়গায় দিলে বিষয়টা মন্দ হয় না।

তৃষ্ণা তাদের কথায় প্রথমে অবাক হয় তারপর বিরক্ত তবুও কন্ঠে নমনীয়তা রেখে বলল,

“আমার মা-বাবা সাথেই থাকবে।কারণ সংসারটা আমার শাশুড়ির আমিই বা এলাম কদিন হলো।তাছাড়া তারা যাই হোক বর্তমানে আমার অভিভাবক আমার স্বামীর মা-বাবা।”

তার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মিসেস রহমান বললেন

“যাক আর বছর দুই। তখন এই নীতি কথা থাকবে না।”

“জানেন মিস, আমার এক ভাই। আমার ভাইয়ের সাথেই বাবা-মা থাকে। যদি তাদের কে ভাই বৌ না রাখে তখন আমি কী জোর করতে পারবো?আমার বাবা মা বৃদ্ধাশ্রমে থাকবে এটা আমি ভাবতেও পারি না।যদি নিজের বাবা-মা কে না দিতে পারি তবে অন্যের বাবা-মা কে পাঠানোর চিন্তা করা কী উচিৎ?

আপনি বললেন না?সন্তানের পড়াশোনা ক্ষতি হচ্ছে অথচ আপনার স্বামীও কারো সন্তান। সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কতই না আত্মত্যাগ করেছে তারা। অথচ শিক্ষিত হয়ে, চাকরি পেয়ে কী লাভ হলো তাদের?যদি তাদের বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয়?
আজ যে সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আজ তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে চাচ্ছেন,আগামী দিনে আপনার ভবিষ্যৎ কী?

ধরেন আপনি এলাকার একজন মানুষ যার অনেক জমিজমা আছে, অন্য একজন ব্যবসায়ী। সেই ব্যবসায়ী শুধুই আপনাকে কটাক্ষ করে কারণ সে মনে করে তার মতোন ভালো আর দুটো নেই। কিন্তু দিনে দিনে তার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিচ্ছে কারণ বাজারে নতুন একজন এসেছে। সে আর কেউ নয় আপনি।যে নিজের জমিতে ফসল ফলিয়ে নিজেই সব করছেন।আপনার লাভ লোকসান আপনার নিজের কাছেই রইল।অপর দিকে ব্যবসায়ীকে অন্যের থেকে ফসল কিনে, নানা উপায়ে প্রচারণা করে এরপর ব্যবসা করতে হচ্ছে।
কিন্তু এতে সে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
কারণ লাভের পরিমাণ খুব অল্প।ঠিক তেমনি শ্বশুর শাশুড়ি হচ্ছে জমি। যে আমাদের আগলে রাখছে তাদের সব’টা দিয়ে। তাদের অবহেলা করে আমরা কী সুখী হতে পারি?
আজ আমি বৌ কাল তো শাশুড়ি হবো।
হ্যাঁ মানি অনেক শাশুড়ি বৌকে অত্যাচার করে তাই বলে তো আর সবাই সমান নয়। বরফ মিশ্রিত
ঠান্ডা পানিও ধীরেধীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গরম হয়ে যায়। আর রইল বাকী মানুষের মন!”

আরশাদ চিন্তিত মুখে বসে আছে। তার পাশে বসে আছে রাকিব,আসিফ,শাকিল সহ আরো দুই একজন।
রাকিব জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে আরশাদকে বোঝানোর জন্য।
তৃষ্ণা যায় না আরশাদের লাইফ স্টাইলের সাথে। কর্পোরেট দুনিয়ায় একটা ভালো পদে চাকরি করা ছেলের বউ নিয়মিত যাতায়াত করে সামান্য বাসে।কালেভদ্রে বেড়াতে যায় না। দামী পোশাক পরে খুব কম।সব’চে বড় কথা ড্রিংকস করে না।
ইদানীং কালের কোনো মেয়ে আছে না কী?এই সোসাইটিতে? যে ক্লাবে যায় না। যত্তসব ন্যারো মেন্টালিটির কাজ।

রাকিবকে থামিয়ে দিয়ে শাকিল আরশাদকে জিজ্ঞেস করলো,

“তুই আমাকে বল,তুই কেন ডিভোর্স চাইছিস?”

“কারণ আমি ফেড আপ। ওর মিডেলক্লাস ন্যারো মেন্টালিটির কারণে আমি ফেড আপ হয়ে আছি।”

“কী রকম?”

“রাকিব তো বলল।”

আরশাদের জবাবে নিঃশব্দে হাসে শাকিল। কাধে হাত রেখে সে ধীরে ধীরে বলল,

“আলোতে নিলে চোখ ধাধানো আলো কিন্তু কাঁচেও পাওয়া যায় কিন্তু হীরে সব সময় ঝলমলিয়ে উঠে না।তাই কাঁচ আর হীরের মধ্যে পার্থক্য নিজে নিজে বুঝতে শিখেনে। না হলে হীরে হারিয়ে কাঁচে হাত কেটে বসবি।”

রাত তখন সাড়ে বারোটা। আরশাদ ফিরেছে নেশায় বুদ হয়ে। ঘরে ফিরেই নিজের স্বাক্ষর করা ডিভোর্স পেপার ছুড়ে দিলো তৃষ্ণা সামনে। জঘন্য ভাষায় গালি দিয়ে বলল

“এই মুহুর্তে স্বাক্ষর করে বেরিয়ে যা ফকিন্নির বাচ্চা।”

চলবে।

#লাভ_উইথ_মাইবেটারহাফ
#পর্ব-৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

প্রেমের সম্পর্কের বিয়েতে যখন ভাঙ্গন ধরে তখন আশেপাশের মানুষ মুখ লুকিয়ে অট্টহাসি হাসে।
ভকভক শব্দে বমি করে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছে আরশাদ। পাশেই কাঠ কাঠ মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আরশাদের বাবা।
ছেলের বেগতিক অবস্থা দেখেও এগিয়ে যায়নি তার মা। সে শক্ত হাতে নিজের বুকের সাথে তৃষ্ণার মাথা চেপে ধরে আছেন।
তৃষ্ণা তখন থরথর করে কাঁপছে।
ঘাড়ের পিছনে, কাধে অসহ্য ব্যথা হচ্ছে। মাথার ভিতর শ’ টনের বোঝা, শ্বাস নিচ্ছে।

খুব ধীর গতিতে। চোখের সামনে বেহুশ অবস্থায় পড়ে আছে তার স্বামী। আশেপাশে ছড়িয়ে আছে ডিভোর্স পেপার এর তিনটে পাতা।ঠোঁটের বা পাশে জমাট বাধা রক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করলো তৃষ্ণা। কেমন শুকিয়ে জমে আছে রক্ত।
আরশাদের হাতে থাকা ঘড়িতে লেগে তার ঠোঁটে আঘাত লাগার পর শাশুড়ি মা তাকে যে ধরেছে আর ছাড়ার নাম নেই।

কিন্তু তাকে তো উঠতে হবে। এই পরিবেশে থাকা সম্ভব নয়। শাশুড়ীকে ছাড়িয়ে সে উঠে বসলো,চুলগুলো হাত খোপা করে এগিয়ে গেল আরশাদের দিকে।
এতক্ষণ চুপ করে থাকা তার শ্বশুর এবার বজ্রকন্ঠে তাকে ধমকের সুরে বলল,

“ঘরে যাও। ওকে ধরার প্রয়োজন নেই।সে কোনো স্বর্ণপদক জিতে আসেনি।বন্ধুদের সাথে মাতলামো করে এসেছে।
তোমার জন্য তালাক নামা বানিয়ে এনেছে।
ওর সেবা করার কোনো দরকার নেই।যাও ঘরে যাও। বিশ্রাম নাও, কাটা জায়গা পরিষ্কার করো।
ওকে থাকতে দাও ওখানেই। নেশা কেটে গেলে তখন বুঝতে পারবে ও কোথায়, তুমি ছাড়া ওর স্থান এ বাড়িতে কোথায়।”

শ্বশুর মশাইয়ের কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল তৃষ্ণা। কিছুক্ষণ পর বলল,

“বাবা এখানে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে। সারা রাত নিজের করা বমির মধ্যেই গড়াগড়ি খাবে। দূর্গন্ধ ছড়াবে।”

“এই ময়লা না হয় পরিষ্কার করলে, দূর্গন্ধ তুমি সরিয়ে দিলে কিন্তু ও নিজের ব্যক্তিগত জীবনে যে ময়লা ঘাটছে, সেই দূর্গন্ধ কীভাবে দূর করবে?”

“সে যদি আমাকে বাধতে না চায় আমি কীভাবে বাধবো নিজেকে তার সাথে?”

তৃষ্ণা দাঁড়ায় না, দ্রুত চলে যায় ওয়াশরুমে৷শাশুড়ি সাহায্যে আরশাদ কে ঘরে নিয়ে পরিষ্কার করে তাকে। বিছানায় যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আরশাদ, তৃষ্ণা তখন ব্যস্ত স্মৃতির চিঠিগুলো পড়তে।

আরশাদের সাথে প্রেমটা হুট করে হয়নি।
হয়েছিল বুঝে,শুনে,মেপে মেপে। কারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের আবেগে ভেসে বেড়ালে চলে না। তাদের পদক্ষেপ নিতে হয় অনেক ভেবে চিন্তে।
দশ টাকার বাদাম কিনেও পার্কে আড্ডায় সময় নষ্ট করা যায় না, বিকেলটা থাকে দুটো এক্সট্রা টিউশনির জন্য।
মাস শেষে দুজনের দেখা, প্রিয় মানুষের জন্য রান্না করে নিয়ে আসা খাবার দুজনে ভাগ করে খাওয়ায় এক তৃপ্ততা আছে যা পাওয়া যায় না রেস্টুরেন্টের বার্গার কিংবা অন্য কোনো খাবারে।

একই এলাকায় বাসা ছিল দুজনের। তৃষ্ণা মায়ের জন্ম দিনে সোনার দুল উপহার দিবে বলে তখন বিকেলে টিউশনি করাতো।
ফিরতে রাত হতো না তবে সন্ধ্যে হতো।সেই সন্ধ্যে বেলা কখনো তৃষ্ণার বাবা বা ভাই এগিয়ে নিয়ে আসতো তাকে। বিড়ালছানার মতো একটা মেয়ে চুপচাপ হেটে যেত বাবা বা ভাইয়ের পাশে। রাস্তায় কুকুর দেখলে বাবা বা ভাই তাকে আগলে নিয়ে যেত এমন ভাবে যেন সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া বাচ্চা মেয়ে।
একদিন সন্ধ্যেবেলা তুমুল বৃষ্টি। টিউশনি থেকে বেরিয়ে বাবা বা ভাই কাউকে না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তৃষ্ণা। বৃষ্টির থামার নাম নেই, হয়তো এজন্য কেউ আসতে পারেনি। কিন্তু এমন তো হয় না, কেউ না কেউ তো আসেই।সন্ধ্যে হচ্ছিলো তৃষ্ণা ধীরে ধীরে এগুতে থাকে বাসার দিকে। কিন্তু রাস্তার মাঝে কয়েকটা কুকুরের ঝগড়া দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে যায়। সদ্য কলেজে পড়া তৃষ্ণার চোখে মুখে ভয় দেখে টং দোকান থেকে এগিয়ে আসে আরশাদ।কোনো কথা না বলেই চলতে থাকে তার আগে।তৃষ্ণা তাকে চেনে না এমন নয়, এলাকার ভাই হিসেবে চিনে, সে বুঝতে পারে লোকটা তাকে সাহায্য করছে যা এখন তার খুব প্রয়োজন তাই চলতে থাকে তার পিছন পিছন।
বাকী রাস্তা কেউ কোনো কথা বলেনি,বাসার কাছাকাছি আসতেই তাদের সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ায়। রিক্সায় ছিল তৃষ্ণার বড় ভাই। কোনো কথা না বলেই বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমি কতটা ভয় পেয়েছি তোকে না পেয়ে। একা আসতে গেলি কেন?বৃষ্টির সময় যদি বিপদ হতো?”

এরপর আরশাদকে দেখে কৃতজ্ঞতার সুরে তাকে বলল,

“ভাই তুই বড্ড উপকার করলি।দাদী আছাড় পড়ে পা ভেংগে ফেলেছে। আমরা সবাই হাসপাতালে ছিলাম।ওকে আনতে যাবো তখন বৃষ্টি। তবুও যেতে যেতে দেখি এসে পড়েছে।
এগিয়ে দিয়ে গেলি এর জন্য অনেক ধন্যবাদ।”

“উল্টো কেনো ভাবলেন না? আমি তো ক্ষতিও করতে পারতাম?”

“চা মামার কাছে যখন জিজ্ঞেস করতে গেছিলাম তখন সে বলল কুকুরের ঝগড়ার কথা। তাছাড়া তোকে অবিশ্বাস করার কিছুই নেই।”

রাত পেরিয়ে ভোর হচ্ছে। তৃষ্ণা সালোয়ার কামিজ পাল্টে শাড়ি পরেছে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সে কিছু একটা মনে মনে আওড়াচ্ছে।

আরশাদের যখন ঘুম ভাংলো তখন বেলা প্রায় অনেক।ঘরটা ফাঁকা ঠিক যেমন লাগছে তার মাথার ভিতরটা। এ সময় তৃষ্ণা কখনো বিছানায় থাকে না কিন্তু বাসায় থাকে। বার কয়েক ডাক দেওয়ার পরও কোনো খোঁজ না পেয়ে আরশাদ বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে ঘরে ফিরে এসে দেখলো,

ঘরের কোথাও তৃষ্ণা নেই, না আছে তৃষ্ণার কোনো স্পর্শ। হুট করে তৃষ্ণা যেন মিলিয়ে গেছে যেমনটা মিলিয়ে যায় এক রাশ নিস্তব্ধতায় দীর্ঘশ্বাস।”

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-০২

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ২

সাত বছরের এক কন্যা সন্তান রেখে প্রবাসী স্বামীর জমানো সকল টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে গৃহবধূ।
ফেসবুকে এমন কিছু একটা শিরোনাম পড়ে মেজাজ গরম হয়ে গেল তৃষ্ণার৷
পুরো খবর পড়ে জানতে পারলো
বিয়ের পর স্বামী বিদেশ চলে যায় মাস খানেকের মধ্যে। এরপর বার দুয়েক ছুটিতে এসেছিল।স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রেখেছিল অনেক টাকা।স্বামী বিদেশ থাকার কারণেই স্ত্রীর হাতে উঠেছিল স্মার্ট ফোন।কথা বলার সুবিধার্থে কখনো কখনো ইমু, কখনো ম্যাসেঞ্জারে কথা হতো দম্পতির।
সেখান থেকেই কোনো ভাবে পরিচয় হয় এক ছেলের সাথে। প্রথমে আলাপচারিতা, বন্ধুত্ব পরবর্তীতে পরকীয়া।
মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে বার বার ছেলের সাথে মিলিত হয়েছে স্ত্রী। একসময় স্বামীর বাড়ির লোক কিছুটা সন্দেহ করলে পরদিন সকালবেলায় নিজ গহনা এবং জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় স্ত্রী।

খবরটা পড়ে বেশ মেজাজ গরম হয়ে আছে তৃষ্ণার। আরশাদ সেই কখন থেকে চেষ্টা করছে সে বলবে তৃষ্ণা কে বলবে ডিভোর্স এর কথা৷ দুজনের মিউচুয়ালে হলে ঝামেলা কম হবে কিন্তু সাহস হচ্ছে না।
কিছুক্ষণ আগে তন্দ্রাঘোরে সে দেখছিল তৃষ্ণাকে সব বলেছে কিন্তু তৃষ্ণা রাজি নয়। উল্টো তার নামে মামলা দিবে বলেছে। স্বপ্নটা দেখে ঘেমে নেয়ে অস্থির আরশাদ।
হাতে সিগারেট নিয়ে তৃষ্ণার পাশে বসে বলল,

“এত রেগে আছো কেন?”
“মেজাজ গরম হচ্ছে।”
“কেন?”
“পরকীয়া কিংবা ডিভোর্স দাম্পত্য জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান নয়।”

“যখন দুজন মানুষ একত্রে থাকতে না পারে তখন তারা কী করবে?”

“কিছুটা আত্নত্যাগ না করলে সংসার করা সম্ভব হয় না।”

তৃষ্ণার কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে আরশাদ। এখন সময় হয়েছে, সুযোগ আছে কথাটা বলার। বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা এশট্রে সিগারেট রেখে তৃষ্ণার সামনাসামনি বসে। কিছুটা তার দিকে ঝুকে বসতেই তৃষ্ণা মুখ সরিয়ে নিয়ে বলল,

“ভুলেও চুমু খাবে না।”

তৃষ্ণার কথায় নাক ফুলিয়ে হাসে আরশাদ। তৃষ্ণাকে পিছন ফিরিয়ে বসে হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে থাকে তার কাধের দিকটায়।

“তো ম্যাম বলুন তো! আপনার কাছে আমাদের সংসার কেমন?”

“পারফেক্ট নয়। তবে চেষ্টা করি। তোমার সাথে আমার অনেক কিছু মিলে না।আমার যা পছন্দ তুমি পছন্দ করো না কিংবা তোমার যা পছন্দ আমি করে অভ্যস্ত নই তবুও তো চেষ্টা করি।”

“যেমন?”

“যেমন আমার বৃষ্টি পছন্দ না অথচ তুমি বৃষ্টি পছন্দ করো। তোমার মন রাখতেই আমি বার বার বৃষ্টিতে ভিজি এবং আমার চা পছন্দ তোমার কফি। তুমি বৃষ্টিতে ভিজে এসে আমার জন্য হলেও এক কাপ চা নিয়ে বসো।”

“আর?”

“এই যে!এখন করতেছো?তুমি জানো আমার কাধে পিঠে হঠাৎ করেই ব্যথা হয়। ঝিম ধরে থাকে আর তুমি ঠিক এই ভাবেই আমাকে স্বস্তি দাও।”

“যদি আমাদের মাঝে কখনো ডিভোর্স শব্দটা আসে?”

আরশাদের কথায় একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তৃষ্ণা । কয়েক মুহূর্ত চুপ থেক্র বলল,

“আমি জানি আমি তোমাকে ঠিক মতো সময় দিতে পারছি না।আমার সময়টা প্রয়োজন। বাবা মা অসুস্থ তার উপর এক্সাম চলে বাচ্চাদের। কাজের মেয়েটাও এত কিছু বুঝে না কিন্তু আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।বাকীটা যা থাকে কপালে।”

আরশাদ কিছু বলে না, খুব শক্ত করে তৃষ্ণার মাথাটা চেপে ধরে বুকের বা পাশে।
এইতো ফাকা ফাকা জায়গাটা পূর্ণ লাগছে।
না সে তৃষ্ণাকে ছাড়তে পারবে না।
হঠাৎ ম্যাসেজের শব্দে ঘুম ছুটে যায় আরশাদের। ম্যাসেঞ্জারে তার বন্ধুদের সাথে থাকা চ্যাটগ্রুপ থেকে অনবরত ম্যাসেজ আসছে।
সবার এক প্রশ্ন
“বলেছিস ডিভোর্স দিয়ে দিবি?”

আরশাদ ছোটো করে জবাব দেয়,

“না।”

তখন অনেকেই এংরি রিয়্যাক্টে ভরিয়ে দিলো তার ম্যাসেজ। রাকিব তখন বলল,

“ভাই তোর বউ কি তোর স্ট্যাটাসের সাথে যায়?তুই কেন আমাদের কথা শুনছিস না?”

“ও সবার থেকে আলাদা।”

“আলাদা না ফকিন্নি স্বভাবের। দেখিস না ওর চাল চলন? আমাদের যখন হ্যাং আউট হয় তখন তোর ভাবী কী তোদের সাথে মেশে না?
অথচ তোর বউ আসবে হিজাব পরে, থাকবে দূরে দূরে। একটু রাত হলেই তাগাদা দিবে। এই কী পুরুষ মানুষের জীবন?”

“দেখ ওর চাল চলন নিয়ে কিছু বলবি না। আমার স্ত্রী। ওর সম্বন্ধে কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলিস।”

“এটাই সমস্যা ও তোর স্ত্রী। আর তুই আমাদের জিগরি দোস্ত। তাই বলতেছি ছাড় ওরে। হাজার মেয়ের লাইন লাগবে।”

আরশাদ কোনো ম্যাসেজের রিপ্লাই করে না। নিজের হাতে ঘুমিয়ে থাকা তৃষ্ণার মাথা সরিয়ে বালিশে রাখে।তার মনের চলে দু মন দু দশা।
সে কী আদৌও সুখে আছে? না সুখ নামের অভিনয় করছে?

সকাল হতে না হতেই শুরু হয়েছে তৃষ্ণার। কাজের মেয়েকে দিয়ে সকালে বাবা-মা কে চা নাস্তা বানিয়ে দিয়েছিল।মায়ের বাতের ব্যথাটা বেড়েছে না হলে শাশুড়ি মা নিজেই সকালের নাস্তায় তৃষ্ণাকে সাহায্য করে। শ্বশুর মশাই চা তো খেয়েছেন কিন্তু তার মুখের অভিব্যক্তি ভালো ছিল না।কিন্তু সে সকালের চা-নাস্তা অনেক আনন্দের সাথে খায়।
তার জন্য রাখা চায়ের কাপে চুমুক দিতেই বুঝতে পারলো যাচ্ছে তাই চা হয়েছে।
বাবা এসবে অভ্যস্ত নয়৷ তবুও তৃষ্ণার কষ্ট হবে বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো?
কান্না দলা পাকিয়ে উঠে এলো গলা অবধি। তাই তৃষ্ণা কষ্ট হলেও দ্রুত নিজ হাতে সকালের খাবার বানিয়ে ফেলল।
গোসল সেরে যখন তৃষ্ণা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিল তখন আরশাদ হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে টানতেই তৃষ্ণা বলল,

“আমার এমনিতেই দেরী হচ্ছে। বাস পাবো না।এখন এসব করো না তো।”

তৃষ্ণার কথায় বিরক্তি স্পষ্ট আরশাদের অপমানিত দু চোখে জমছে রাগ। গতকাল রাতে বলা বন্ধুদের কথাগুলো মনে হলো।
ওরা বলেছে প্রয়োজনে ওরা ডিভোর্স এর পর কাবিনের টাকা যদিও তৃষ্ণা মাফ করে দিয়েছে সেই টাকা পরিশোধ করতে সাহায্য করবে।
তবুও ওকে রাখার দরকার নেই। কারণ ও আসলেই যোগ্য নয়।

বিছানা ছেড়ে উঠে আরশাদ আইনজীবী কে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিলো কাজ সব করে রাখতে। আজ সে তালাক নামায় সই করে সরাসরি পাঠাবে তৃষ্ণার কাছে।

চলবে।

লাভ উইথ মাই বেটার হাফ পর্ব-০১

0

#লাভ_উইথ_মাই_বেটার_হাফ
#পর্ব-১
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

“আমি আমার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি।”

বাম হাত দিয়ে টেবিলের উপর থাকা পেপার ওয়েট হাতে নিয়ে কথাটা বলল আরশাদ।
টাইয়ের নব ঢিলে করে একটু আরাম করে বসতে চাইলো সে। তবে তার চোখে মুখে অস্বস্তি ফুটে উঠেছে।

আরশাদ বসে আছে একজন ডিভোর্স আইনজীবীর সামনে। মধ্যবয়স্ক আইনজীবী তাকে জিজ্ঞেস করলেন,

“কেন?”

“কারণ আমি আর ওকে জাস্ট নিতে পারছি না।”

“পরকীয়ায় আসক্ত আপনার স্ত্রী?”

“না না। তৃষ্ণা ওমন মেয়েই নয়। ও যথেষ্ট ভালো মেয়ে।”

“তবে?আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন?”

আইনজীবীর এমন কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে আরশাদ।
হাতের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,

“এমন কিছুই নয়। আমাদের প্রেমের বিয়ে। দীর্ঘ সাত বছর সম্পর্ক থেকে বিয়েতে।”

“তবে?”

“সেদিন তৃষ্ণার সাথে বাজারে গিয়েছিলাম। ও পাঁচ টাকার হিসেব মিলাতে না পেরে অস্থির হয়ে গিয়েছিল।পুরো রাস্তা হিসেব না মিলাতে পেরে আমার সাথে কথা বলেনি।”

“বাহ্ মশাই। আপনার স্ত্রী তো বেশ কড়া হিসেবি।”

“বিয়ের আগে ওর এই স্বভাবটা ভালো ছিল কিন্তু ইদানীং অসহ্য হয়ে উঠেছে।”

“তাই আপনি তাকে তালাক দিয়ে দিচ্ছেন?”

“সে তো আমার টাকার হিসেব নেয় না।সে নিজের টাকা খরচ করতে সে বার বার ভাবে৷”

“তাহলে আপনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আপনি নিজের টাকা নিজে খরচ করুন।”

“সমস্যাটা হচ্ছে ও আমার ক্লাসের সাথে যাচ্ছে না।হ্যাঁ আমরা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করতাম। ছাত্র জীবনে আমাদের এই পাঁচ দশ টাকা ছিল মাস শেষের সম্বল তবে এই না এখনো সেভ করেই চলবো।”

“কথাটা শেয়ার করুন তার সাথে। ডিভোর্স সমাধান নয়।”

“চেষ্টা করিনি এমন নয়। তাকে নিয়ে আমি কোনো পার্টিতে যেতে পারি না।তার বাসায় থাকলে তার দুহাতে থাকে মাছ মাংসের আঁশটে গন্ধ।ছুটির দিনে দুপুরবেলা তাকে কাছে পেতে চাইলে তার গা থেকে আসে ঘামের গন্ধ। কারণ সে রান্নায় ব্যস্ত।”

“আপনার স্ত্রী কী করেন?”

“কলেজ শিক্ষিকা।”

“সন্তানাদি আছে আপনাদের?”

“আমাদের বিয়ে হয়েছে সবে ন’মাস।”

“ঠিকাছে। আপনি প্রয়োজনীয় কাজ সেরে রেখে যান।যথা সময় আপনার স্ত্রীর কাছে লিগ্যাল নোটিশ চলে যাবে।”

চেম্বার থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরায় আরশাদ।সিগারেটের ধোয়ায় যেন উড়িয়ে দিতে চায় তার মনের সকল অবসন্নতা।
চোখ বন্ধ করে অনুভব করে সিগারেটের শেষ টান।তারপর বাইকে উঠে বসে চলে যায় তার গন্তব্যে।

পরীক্ষার খাতা নিয়ে বসেছে তৃষ্ণা। কলেজের মিডটার্মের পরীক্ষার খাতা দেখছিল।তখন শাশুড়ী এসে বললেন,

“পায়ের ব্যথা বেড়েছে। কালো জিরা, সরিষার তেল গরম করে এনে দিবে?”

পুরো দিন ক্লান্তি তখন তৃষ্ণার দু পায়ে। তবুও উঠে গেল তেল গরম করতে। সাথে বসিয়ে দিলো চায়ের পানি। শ্বশুর -শাশুড়ীর জন্য চা নাস্তা আর গরম তেল নিয়ে চলল তাদের রুমের দিকে।

আরশাদ যখন ফিরেছে তৃষ্ণা তখন রাতের রান্নায় ব্যস্ত। কাতল মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট।
আরশাদের পায়ের শব্দ পেয়েই সে ছুটলো চা নিয়ে। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত কোনো রকমে ধুয়ে চায়ের কাপ নিয়ে এসেছে সে। আরশাদের যে আবার মাছের আঁশটে গন্ধ মোটেও পছন্দ নয়।
কিন্তু পাজি মাছের গন্ধ কী একবার সাবান জলে যায়?

যতই রাগ অভিমান থাকুক না কেন তৃষ্ণার মুখ দেখলে সব রাগ পড়ে যায় আরশাদের। সে ভেবেছিল উকিল কে কল দিয়ে না করে দিবে। মানিয়েই নিবে কিন্তু চা’য়ের কাপ হাতে নেওয়ার সময় আবার সেই আশঁটে গন্ধ।

আরশাদ কিছু না বলে চুপচাপ চায়ের কাপ হাত নেয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় আজ রাতেই তৃষ্ণাকে সব জানাবে।
রাত যখন গভীর হচ্ছে তৃষ্ণা ব্যস্ত খাতা দেখায়।
অনবরত বেজে চলেছে আরশাদের ফোন। তার বন্ধু রুমন কল দিচ্ছে বার বার।
ওয়াশরুম থেকে ফিরে আরশাদ ফোন হাতে নিয়ে বাহিরে চলে যায়।

“বলছিস তালাকের কথা?”

“এখনো বলিনি।”

“কবে বলবি?আর মেলামেশা করিস না ওর সাথে। বাচ্চা পেটে থাকলে….. ”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি জানি।”

“আচ্ছা আমি রাখি তুই ওকে সব বলে দে। তালাক দিবি যে। সম্মতিতে হলে ভালো না হলে নাই।”

“আচ্ছা রাখ।”

বাহির থেকে ফিরে এসে আরশাদ দেখতে পেল তৃষ্ণা বিছানা ঠিক করে রেখেছে। হয়তো ওর খাতা দেখা শেষ। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে আরশাদের পাশ দিয়ে বাহিরে গেল তৃষ্ণা। বেলি ফুলের হালকা সৌরভ ভাসছে ঘর জুড়ে। ফিরে এসে এক গ্লাস গরম দুধ আরশাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে মুচকি হাসে তৃষ্ণা।
তবে আজ তার হাসিতে ভুলবে না আরশাদ।দুধের গ্লাস টেবিলে রেখে আরশাদ তৃষ্ণার হাত ধরে বলল,

“আমাদের এইবার ডিভোর্সটা নিয়ে নেওয়া উচিৎ। কারণ এভাবে আমি আর তোমাকে নিতে পারছি না।”

চলবে

ভালোবাসার তুই পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#ভালোবাসার_তুই
#Last_Part
#Writer_NOVA

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।সারা বাড়ি সাজ সাজ রব।আজ আমার বিয়ে।বাসায় হৈ চৈ,চিল্লাচিল্লিতে আমার মাথা ধরে আছে।বুকের ভেতরটা মোচড় দিচ্ছে। আজই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো ভাবতেই দুচোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।নিজের রুমে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুঁজে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছি। হঠাৎ মাথায় কারো আলতো পরশ পেলাম।মাথা উঁচু করতেই আব্বুকে দেখতে পেলাম।আব্বুকে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো করে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।

আব্বুঃ কান্না করিস না মা।আমি জানি তোর অনেক খারাপ লাগছে।তবে তোকে শক্ত হতে হবে।আমি তো জানি আমার মা কিছুতেই ভেঙে পড়বে না।তুই না আমার স্ট্রং ডটার। তুই যদি কাঁদিস তাহলে কি আমার ভালো লাগবে বল।মা রে, এনাজ অনেক ভালো ছেলে।আমি সত্যি চিন্তামুক্ত হবো ওর হাতে তোকে তুলে দিলে।ও তোকে অনেক ভালো রাখবে।ওর চোখে আমি তোকে হারানোর ভয় দেখেছি।যার চোখে আমার মেয়েকে হারানোর ভয় আছে তাকে কখনও কষ্ট দিয়ে দূরে সরিয়ে দিস না।তাহলে হয়তো নিজে জীবনেও সুখী হতে পারবি না।

আমিঃ আমি তোমাদের ছাড়া কোথাও যাবো না আব্বু। আমি যে তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না।এই বাড়ির সবকিছু ছেড়ে যেতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।(কিছুটা ভেবে) আমি একা একা কি করে সামলাবো সব?আমিতো কিছুই করতে পারি না।রাত ১২ টায় ঘুমিয়ে দিন ১২ টায় উঠি।উঠেই দেখি মুখের সামনে খাবার হাজির।বাসায় কোন কাজ করতে হয় না।আমার জামাই বাড়ি গিয়ে তো কত কাজ করতে হবে।এসব ভেবেই আমার বুক ফেটে চিৎকার আসছে।

আব্বুঃ এই রে বজ্জাত মেয়ে। আমরা চিন্তা করছি তোর।আর তুই চিন্তা করছিস শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হবে বলে।তার জন্য এতোদিন তুই বিয়ে করতে রাজী হসনি।আল্লাহ কি পাঁজি মেয়ে দিলে আমায়।

আব্বুর কথা শুনে আমি কান্নার মাঝেও খিলখিল করে হেসে উঠলাম।আমি ইচ্ছে করে এসব কথা বলেছি।কারণ আমি স্পষ্ট আব্বুর চোখে পানি দেখেছি।আমি চাই না আব্বু কান্না করুক।

আব্বুঃ মা রে ঐ বাড়িতে গিয়ে আর যাই করিস ছেলে দুটোর সাথে কোন অশান্তি করিস না।তোর শ্বশুর, শ্বাশুড়িও নেই যে তোকে জ্বালাবে।ওদের সাথে মিলেমিশে বাস করিস।তাতেই আমি খুশি হবো।আমি তো আজ আমার কলিজার টুকরো টাকে অন্যের ঘরে পাঠাচ্ছি। বড় মেয়ে সব বাবার আদরের।

আমিঃ আব্বু তুমি একটুও চিন্তা করো না।তোমাদের সম্মানহানী হয় এমন কাজ তোমার মেয়ে কখনোই করবে না।তুমি দেখো তোমার এই দুষ্ট মেয়েটা ঠিক সংসারী হয়ে যাবে।সবার খেয়াল রাখবে।সবকিছুর সাথে ঠিক খাপ খাইয়ে নিবে।

ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু কিছুতেই পারছি না।একসময় ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।আব্বু শক্ত করে আমার মাথাটা তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।আমি ও আব্বু দুজনেই কাঁদছি।কারো চোখের বাঁধ ভাঙছে না।অনেকক্ষণ কান্না করার পর আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে, কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে, চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।আব্বু চলে যাওয়ার পর রুমে ঢুকলো আমার তিন বান্দরনী। এসেই দুষ্টামী শুরু করলো।

ইভার মুখটা আজ ফোলা ফোলা। দেখে মনে হচ্ছে অনেক কান্না করছে। যেই বোনটা আমাকে সবসময় বলতো, তুমি কবে শ্বশুর বাড়ি যাবা আর কবে আমি তোমার থেকে শান্তি পাবো।সেই বোনটার চোখেও আজ পানি।রুমের এক কোণে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাত বাড়িয়ে ডাকতেই দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললো।

ইভাঃ বোইনে আর কিছু দিন থেকে যাও না।তুমি না থাকলে আমার একটুও ভালো লাগবে না।আমি সারাক্ষণ কার সাথে ঝগড়া করবো।আম্মুর কাছে কার নামে বিচার দিবো।রাতে ঘুমের ঘোরে কাকে কোল বালিশ বানাবো।তোমায় অনেক মিস করবো।প্লিজ তুমি আজকে যেও না।(কাঁদতে কাঁদতে)

আমিঃ ধূর,বোকা মেয়ে। কাঁদছিস কেন?আমি তো আগামীকালই চলে আসবো।আমি না থাকলে একটুও দুষ্টুমী করিস না।আম্মু, আব্বু কে দেখে রাখবি।আমার পছন্দের খাবারগুলো বানিয়ে রাখবি।আমি হুট করে তোর দুলাভাই কে নিয়ে খেতে চলে আসবো।একদম কান্না করিস না।আমার ভীষণ খারাপ লাগে।

দুই বোন দুজনকে শক্ত করে ধরে রেখেছি।আজ তো ছেড়ে না দিলেও চলে যেতে হবে।পার্লারের মেয়েরা সাজাতে চলে আসায় ইভা বের হয়ে গেলো।ওকেও তো তৈরি হতে হবে।শতহোক বড় বোনের বিয়ে বলে কথা।সিফা,মৌসুমি ও শারমিন আমার পাশে বসে মন ভালো করার চেষ্টা করতে লাগলো।

🍂🍂🍂

নিজের বিয়ে হলে কি হবে?কাজ তো কম নয়।সবকিছুর তদারকি করছে এনাজ।এনামের ভরসায় যে কাজগুলো রেখেছিলো সেগুলো লাটে উঠেছে। উঠবে না কেন? এনাম তো সারাক্ষণ কানে মোবাইল গুঁজে নিতুয়ার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।গাড়ি সাজানোর লোকের কাছে কল করে তাদের জলদী আসতে বললো এনাজ।জিসান রুমে ঢুকে জোরে একটা চিৎকার দিলো।কারণ এনাজ এখনো বরের বেশে তৈরি হয়নি।

জিসানঃ এনাজ তুই তো এখনো কিছুই করিস নি।আমাদের কিছু সময়ের মধ্যে বের হতে হবে।

এনাজঃ আস্তে চেঁচায় ভাই।গতকাল থেকে কাজ করতে করতে আমি টায়ার্ড।প্রচন্ড মাথা ধরেছে।এখনো কত কাজ বাকি।গাধা(এনাম) টাকে বলেছিলাম যে কাজ তুই করতে পারবি সেটা কারো আশায় না রেখে করে নিবি।গাধায় আমার জন্য সব কাজ রেখে দিয়েছে। আগে যদি জানতাম নিজের বিয়ে তে এতকাজ করতে হবে তাহলে এত ভেজাল না করে ঘরোয়াভাবে করে নিতাম।

জিসানঃ আরে প্যারা নিস না ভাই।যাস্ট চিল কর।আজকে ভাবী এসে মাথায় ঔষধ দিয়ে টিপে দিবে।দেখবি ভালো হয়ে যাবে।আরে আজকেই শুধু কষ্ট করে নে।কাল থেকে তো তোর জন্য ভাববার মানুষ হয়ে যাবে।ভাবীর ভালোবাসায় সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস তুই। (এক চোখ মেরে)

এনাজঃ তোর এসব নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা দূরে রাখিস।ভালো হয় যা।ভালো হতে টাকা-পয়সা লাগে না।আর আমার বউ নিয়ে তোর এতো মাথা না ঘামালেই চলবে।

জিসানঃ আমি পজিটিভলি বলেছি কিন্তু তুই যদি নেগেটিভ নিস আমার কিছু করার নেই।

এনাজঃ তুই কি এখন বাইরে যাবি?

জিসানঃ হ্যাঁ,কেন?

এনাজঃ তুই বাইরে গেলে পাঠা-টাকে কান ধরে আমার রুমে দিয়ে যাস তো।একটু পর বরযাত্রি বের হয়ে যাবে।কিন্তু ওর তৈরি হওয়ার কোন নাম-গন্ধও নেই। নিশ্চয়ই কোন চিপাচিপায় বসে নিতুয়ার সাথে প্রেম করছে।এই গাধাটাকে নিয়ে আমার আরেক জ্বালা।দিনকে দিন শুধু গর্ধব হচ্ছে। কমোন সেন্সগুলো ওর মাথা থেকে ছুটি নিয়ে পালিয়েছে।

জিসানঃ তোর মাথা ব্যাথার সাথে সাথে কি পুরোই গেছে নাকি।কখন থেকে এনাম কে বকেই যাচ্ছিস।

এনাজঃ ওকে এখন সামনে পেলে পিটুনি দিবো।বকাটা তো কম হয়ে গেছে। আজকের দিনেও কি ওর এসব নিয়ে পরে থাকলে হবে।আমি একা কয়দিক সামলাবো বল।তোর ওপর তো চাপ পরে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে একটা কাজ করলে একটাই কমে।সেটা ওকে বোঝাবে কে?

জিসানঃ আচ্ছা তুই হাইপার হোস না।আমি খুঁজতে যাচ্ছি। পেলে তোর কাছে পাঠিয়ে দিবো।

এনাজ জিসানের সাথে কথা বলতে বলতে আলমারি থেকে বিয়ের যাবতীয় কাপড়চোপড় বের করলো।গাঢ় লাল রংয়ের শেরওয়ানি,পায়জামা,পাগড়ি,
মোবাইল আরো বেশ কিছু জিনিস বিছানার উপর রেখে ওয়াসরুমে গোসল করতে চলে গেল।জিসান রুম থেকে বের হলো অন্য কাজ ঠিকমতো চলছে কিনা তা দেখার জন্য ও এনামকে খুঁজে আনার জন্য। এনাজ গোসল শেষ করে বের হয়ে শেরওয়ানি পরছে।হঠাৎ মনে হলো ওর শেরওয়ানি কেউ ঠিক করে দিচ্ছে। পেছন ঘুরে দেখতে পেলো এনাম একটা শুকনো হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাস, এনাজের রাগ পানি।ভাইয়ের হাসি মাখা মুখটা দেখলে এনাজ রাগ করে থাকতে পারে না।

এনাজঃ এই তোর আসার সময় হলো।তুই এখনো রেডি না হয়ে কি করছিস?
এনামঃ আসলে ইয়ে মানে ভাইয়া।
(আমতা আমতা করে)
এনাজঃ হয়েছে আর মাথা চুলকাতে হবে না।আমি জানি তুই এতক্ষণ নিতুয়ার সাথে কথা বলেছিস।বিয়ের ভেজালটা চলে গেলেই আমি নিতুয়ার বাবার সাথে কথা বলে তোদের বিয়েটা সেরে ফেলবো।এখন দয়া করে জলদী রেডি হয়ে আমাকে উদ্ধার কর।
এনামঃ ধন্যবাদ ভাইয়া।(এনাজকে জড়িয়ে ধরে)
এনাজঃ হয়েছে আর ভাব নিতে হবে না।ছাড় আমাকে।অলরেডি দেরী হয়ে গেছে।
এনামঃ ভাইয়া আমি একটা জিনিস চিন্তা করছি🤔।
এনাজঃ কি?
এনামঃ তুমি ভাবীর মতো লিপস্টিক পাগলীকে সামলাবে কি করে?না মানে যা উড়নচণ্ডী স্বভাবের।
এনাজঃ মুখে লাগাম দে তুই। বড় ভাবী মায়ের সমান।তাই ওকে মিন করে এসব কথা না বললেই তোর মঙ্গল।
এনামঃ তবে তুমি যাই বলো ভাইয়া।ভাবীকে দেখলে আমার বাদশাহর একটা গান মনে পরে যায়।
এনাজঃ কি গান?(চোখ দুটো ছোট ছোট করে)
এনামঃ এ লাড়কি পাগল হে, পাগল হে, পাগল হে।
এনাজঃ দাঁড়া ফাজিল। তোর একদিন কি আমার একদিন।পিঠের মধ্যে মারবো কষিয়ে একটা।

এনাজ হাত উঁচু করে মারতে উদ্যত হলেই এনাম দৌড়ে পালালো।এনাজ ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠলো। এনাম অবশ্য গানটা খারাপ বলেনি।লিপস্টিক পাগলীর পাগলামি ও তার মায়াবী চোখ দুটো দেখেই তো সে তাকে ভালোবেসেছে। অনেক অপেক্ষা করেছে এই দিনের জন্য।অবশেষে আজ তার ভালোবাসার পূর্ণতা পাচ্ছে। নিজের ভালোবাসার_তুই টাকে স্বকৃতি দিয়ে ঘরে তুলছে।কয়জন এমন ভাগ্যবান আছে যে তার ভালোবাসার_তুই টাকে আপন করে পায়।

🍂🍂🍂

যথানিয়মে আমারও এনাজের বিয়ে হয়ে গেল।আমি ভাবতেই পারছি না যাকে আমি মাত্র একমাস আগে চিনতাম না সে আজ আমার স্বামী।গাঢ় লাল রং-এর ভারী লেহেঙ্গা পরে,বিশাল বড় একটা ঘোমটা টেনে বাসরঘরে বসে আছি। বাড়ির জন্য মনটা অনেক আনচান করছে।খুব খারাপ লাগছে।আম্মু,আব্বু, ইভাকে ছাড়া এখন থাকতে হবে।
সবাইকে জরিয়ে ধরে ইচ্ছে মতো কান্না করেছি।ইভাতো আমাকে ছাড়তেই চাইছিলো না।পোটকা মাছকে আজ বিয়ের দিনও মন মতো জালিয়ে এসেছি।আসার আগে বলেও এসেছি ভাবিস না সাইফ আমার বিয়ে হয়ে গেছে বলে তোকে জ্বালাবো না।বরং আগের থেকে আরো বেশি জ্বালাবো।বাপের বাড়ি ছারছি পড়াশোনা তো নয়।এক আকাশ বিষন্নতা ঘিরে রেখেছে। রুমের চারিদিকে গোলাপের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে।

আমিঃ ধূর ভালো লাগে না।ঐ ধলা ইন্দুর আসে না কে?আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। মোবাইল থাকলে এখন এরকম করে বোরিং সময় পার করতে হতো না।আল্লাহ এতো মশা কেন?একটা কয়েলও জ্বালায়নি এরা।এনাজ সাহেব যে এত কিপ্টা আমার জানা ছিলো না।মশার বাচ্চা, তোদের আমি ভর্তা বানামু।নীরিহ, অবলা একটা মেয়েকে একা পেয়ে তোরা এমন রক্তের পার্টি দিচ্ছিস।তোদেরও আমি দেখে নিবো।বুঝি না এই মশার সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা।পুরো রুমে একটা থাকলেও আমাকেই কামড়াবে।আজ যদি ঐ ধলা ইন্দুর আমার সাথে স্বামীর অধিকার খাটাতে আসে তাহলে মাথা ফাটিয়ে দিবো।

আমি বিরবির করে মশার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলছি।ঘোমটা টা টেনে ফেলে দিয়েছি বহু আগে।ভীষণ গরম লাগছে।সাথে অস্বস্তি তো আছেই। শরীরের মধ্যে মনে হচ্ছে লেহেঙ্গার পাথরগুলো চুলকাচ্ছে। বিরক্তিকর লাগছে আমার।এতক্ষণে আমি ঘুমিয়ে পান্তা ভাত হয়ে যেতাম।কিন্তু এনাজের কোন চাচী না মামি আমায় বারবার সাবধান করে দিয়েছে আমি যেনো ঘুমিয়ে না যাই।মশার ঘ্যান ঘ্যান শুনতে শুনতে বিরক্ত। আমার কাছে অপেক্ষা করতে সবচেয়ে বেশি জিদ লাগে।আমি কারো জন্য অপেক্ষা করতে রাজী নই।কিন্তু অন্যকে অপেক্ষা করাতে ভীষণ পছন্দ করি।বসে বসে রাজ্যের কথা ভেবে ফেলেছি।খট করে দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকালাম।তাকিয়ে দেখলাম মহারাজ এসেছে। আমি রেগে দুই হাতে লেহেঙ্গা উঁচিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম।

আমিঃ এই যে মিস্টার। সমস্যা কি আপনার?এত সময় লাগে রুমে আসতে।আমি সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।আর আপনি এখন এলেন।আপনাকে যদি এরকম ভারী লেহেঙ্গা, সাজ,জুয়েলারি পরিয়ে মশার ঘ্যান ঘ্যানানির মধ্যে রেখে দিতাম তাহলে বুঝতে পারতেন কেমন লাগছে এতক্ষণ।আমি অপেক্ষা করতে করতে বোর হয়ে যাচ্ছি আর উনি এখন এলেন।

এনাজ আমার অনেকটা সামনে এসে স্লো ভয়েজে অদ্ভুত কণ্ঠে বললো।

এনাজঃ আমার থেকে বেশি অপেক্ষা করেছো সুইটহার্ট। আমি তো তোমার জন্য সেই দুই বছর আগের থেকে অপেক্ষা করেছি।আমি এই দুইটা বছর যে ঠিক কতটা অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য তুমি তা কল্পনাও করতে পারবে না। প্রতি মুহুর্তে মনে হচ্ছে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।তোমাকে মনে হয় আমি পাবো না।আমার ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে করাতে তোমার বিয়ে হয়ে যাবে।আমি সত্যি অনেক ভয়ে ভয়ে ছিলাম এতদিন।আজ আমার ভয়ের অবসান ঘটলো।

কথাগুলো বলে এনাজ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এতটা জোরে ধরেছে মনে হচ্ছে আমার হাড্ডিগুলো সব ভেঙে যাবে।ভীষণ অস্বস্তি লাগছে।একে তো ভারী লেহেঙ্গা তার ওপর জড়িয়ে ধরছে।আমি আজকে শুটকি মাছ হয়ে যাবো।তাছাড়া এনাজের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝি নি।আমি কোনমতে নিঃশাস নিয়ে বললাম।

আমিঃ ছাড়ুন আমাকে।আমার অনেক অস্বস্তি লাগছে।প্রচুর গরম লাগছে তো।আপনি এভাবে ধরে থাকলে আমি গাইল্লা যামু।

এনাজ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো।

এনাজঃ তুমি এখনো এগুলো পড়ে আছো কেন?জলদী গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।

🍂🍂🍂

আমি কথা না বাড়িয়ে সুতি থ্রি পিস নিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে পরলাম।আমাকে যখন এনাজ জড়িয়ে ধরেছিলো তখন অন্য রকম একটা ভালো লাগা প্লাস অস্বস্তি ছিলো।আমি মুচকি হেসে ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে তাকে কোথাও পেলাম না।হঠাৎ রুমের লাইট বন্ধ হয়ে গেল।ডিম লাইট জ্বলে উঠলো।সামনে তাকিয়ে দেখি এনাজ এক বক্স লিপস্টিক নিয়ে আমার সামনে আজও হাঁটু গেড়ে বসে আছে। আমি তো লিপস্টিক দেখে খুশিতে আত্মহারা। আমি দৌড়ে গিয়ে লিপস্টিকের বক্সটা নিতে নিলে তিনি অন্য দিকে সরিয়ে ফেললো।

আমিঃ কি হলো এটা?

এনাজঃ আমি কিন্তু সেদিন উত্তর পাইনি।উত্তর দিলে এই পুরো বক্স লিপস্টিক তোমার।

আমিঃ কি উত্তর দিবো😒?

এনাজঃ তোমার মন যা চায় তাই।

আমিঃ দেখুন আপনি আমার স্বামী। এখন হাজার চেষ্টা করলেও এটা আমি অস্বীকার করতে পারবো না।সুতরাং আমি সত্যি কথাই বলবো।আমার একটু সময় লাগবে।তবে হ্যাঁ খুব তাড়াতাড়ি আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলবো।কারণ আমার সব ভালোবাসা আমার স্বামীর জন্য তুলে রেখেছি।ততদিন আমাকে আমার ওপর ছেড়ে দিন।আমার বিশ্বাস আপনাকে আমি খুব শীঘ্রই মানিয়ে নিতে পারবো।

অন্য দিকে ঘুরে কথাগুলো বলে একটা বড় দীর্ঘ শ্বাস ছারলাম।আমি ভয়েও এনাজের দিকে তাকাইনি।যদি রেগে গিয়ে সেদিনের মতো ডেসিং টেবিলের কাচ ভেঙে ফেলে।চোখ পিটপিট করে তার দিকে তাকাতেই আবছা আলোতে দেখতে পেলাম এনাজ আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার সামনে এলো।সামনে এসে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।তার স্পর্শে আমি পুরো জমে গেছি।আমার হাতে পুরো লিপস্টিকের বক্সটা দিয়ে বাম হাতের অনামিকায় একটা হার্ট শেপ আংটি পরিয়ে দিলো।

এনাজঃ তোমার এই সহজ সরল স্বীকারক্তিতে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।আমি কথা দিচ্ছি তুমি যতদিন পর্যন্ত আমার সাথে মানিয়ে না নিতে পারবে ততদিন তোমার,কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না।গত দুই বছর অপেক্ষা করতে পেরেছি এই কয়েকটা দিন আর কি সমস্যা।

আমিঃ আপনি তখন থেকে গত দুই বছর, দুই বছর কেন বলছেন?আপনার সাথে আমার দেখা হলো মাত্র কিছু দিন ধরে।(চোখ মুখে বিস্ময় ফুটিয়ে)

এনাজ আমাকে গত দুই বছরের যাবতীয় ঘটনা সংক্ষেপে খুলে বললো।কিভাবে আমাকে প্রথম দেখেছে,কলেজ ফাঁকি দিয়ে আমার পিছু নিয়েছে।আরো নানা কথা।ডায়েরির কথাও বাদ যায়নি।তাছাড়া দুজনের নামের সাথে কানেকশন জুড়ে রেখে “নোভানাজ” নামের কথাও বললো।আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। আমাকে কেউ দুবছর আগের থেকে ভালোবাসতো আর আমি তা ক্ষুণেরঘরেও টের পাইনি।তবে আমার কাছে তার রাখা “নোভানাজ” নামটা অনেক অনেক পছন্দ হলো।

আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। তার কথায় আমার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছি।আমি বোধ হয় জলদী তাকে ভালোবেসে ফেলবো।আমাকে কোলে করে খাটে বসিয়ে দিলো।লিপস্টিক বক্স থেকে লিপস্টিক বের করতে লাগলো।

আমিঃ আপনি লিপস্টিক বের করছেন কেন?
(অবাক হয়ে)

এনাজঃ আমি নিজ হাতে তোমার ঠোঁটে দিয়ে দিবো তাই। আমাদের কাছে আসাটা কিন্তু এই লিপস্টিকের কারণেই হয়েছে সুইটহার্ট।

আমিঃ আপনি তো লিপস্টিক দেওয়া পছন্দ করেন না।আমি যতদূর জানি।

এনাজঃ আগে করতাম না এখন করি।তাও আমার লিপিস্টিক পাগলীর জন্য।

এনাজ হাতের লিপিস্টিক টা রেখে হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো।

এনাজঃ অনেক ভালবাসি তোমায় লিপস্টিক পাগলী।প্লিজ কখনো আমায় ছেড়ে যেও না।আমি যে ভালোবাসার_তুই টাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।

আমি আলতো করে তার পিঠে আমার হাত রাখলাম।এনাজ আমাকে ছেড়ে পাশে থাকা একটা গোলাপ কানের কাছে গুঁজে দিলো।তারপর লিপস্টিক নিয়ে আমার ঠোঁটে দিতে লাগলো।আমি মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। হালকা গ্রে কালার টি-শার্টে তাকে আজ অপূর্ব লাগছে।হয়তো আগে এতটা কাছ থেকে তাকে দেখা হয়নি বলে এমনটা মনে হচ্ছে। আমার নিজের ওপর আস্থা আছে খুব দ্রুত তাকে ভালবেসে, আমার ভালোবাসার_তুই হিসেবে গ্রহণ করে নিবো।কারণ তার ব্যক্তিত্ব আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি যে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছি সে দিকে তার খেয়াল নেই। তিনি খুব মনোযোগ সহকারে আমার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে ব্যস্ত।

__________________(সমাপ্ত)___________________

ভালোবাসার তুই পর্ব-১০

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_10
#Writer_NOVA

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। বৃষ্টির দিন আমার একটুও ভালো লাগে না।বৃষ্টি দেখলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।কিন্তু কেন, সেটা আমি জানি না।বৃষ্টির দিন দেখলে মনে একরাশ বিষন্নতা ও একাকিত্ব ঘিরে ধরে।তবে বৃষ্টির দিনে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে ও গল্পের বই পড়তে আমি ভীষণ ভালোবাসি।কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুড অফ করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকি।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।ক্লাশ রুমের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুই হাত ভাজ করে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। হঠাৎ করে তিনটা হাত এসে আমার কাঁধে হাত রাখলো।চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পারলাম মৌসুমি, সিফা ও শারমিন দাঁড়িয়ে আছে।

শারমিনঃ কি রে তোর কি হয়েছে? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?মন খারাপ নাকি?

সিফাঃ বৃষ্টির দিন তোর কি হয় বলতো?আমি খেয়াল করে দেখেছি তুই বৃষ্টি দেখলেই মন খারাপ করে ফেলিস।

আমিঃ আমার বৃষ্টির দিন একটুও ভালো লাগে না। অনেক বিরক্তিকর এই দিন।চারিদিকে কাদায় মাখামাখি, রাস্তাঘাট পানি দিয়ে পরিপূর্ণ। কোথাও যাওয়া যায় না।সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকো।একটু বের হলেই ধপাস করে আছাড় খেতে হয়।মোট কথা বোরিং ও ডিজগাস্টিং একটা দিন।

মৌসুমিঃ এতো অভিযোগ তোর বৃষ্টির দিন নিয়ে। দেখবি তোরও একদিন ভালো লাগবে।

আমিঃ ভালো লাগার দিন হারিয়ে গেছে। স্কুলে থাকলে বৃষ্টির দিন অনেক ভালো লাগতো।তাও স্কুলে যেতে হবে না অথবা ক্লাশ কম হবে সেই খুশিতে।প্রায় সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যাতে অনেকদিন বৃষ্টি থাকে।বাইরে গিয়ে সবাই মিলে একসাথে বৃষ্টিতে
দৌড়-ঝাপ করতাম।সেই ছোটবেলাটা এখনও রঙিন।স্মৃতির পাতায় অমলিন থাকবে সেই মুহূর্তগুলো।অনেক মিস করি সেই দিনগুলো।আফসোস করি আবার যদি ফিরে পেতাম সেই রঙিন মুহূর্তগুলো।ছোট বেলা ভাবতাম কবে বড় হবো?কিন্তু এখন ভাবি কেন বড় হলাম।ছোট বেলাটা উঁকি দিয়ে বলে, কি রে বড় না হতে চেয়েছিস।এখন কেমন লাগে?দীর্ঘ শ্বাস ছাড়া আর কোন উত্তর দিতে পারি না আমি।

সিফাঃ সত্যি সেই দিনগুলো অনেক আনন্দদায়ক ছিলো।কিছুই বুঝতাম না।তবে দিনগুলো ছিলো অন্য রকম ভালো লাগা।আজ ছুটে যেতে ইচ্ছে করে সেই ছোট বেলায়।

শারমিনঃ যত বড় হচ্ছি তত নিজের প্রতি তিক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণটা হলো পৃথিবীর স্বার্থপরতা গুলো চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে শুধু স্বার্থের খেলা।

মৌসুমিঃ নোভা,তুই কি বৃষ্টিতে ভিজিস?না মানে অনেকে আছে বৃষ্টি পছন্দ না করলেও বৃষ্টির সময় মন খারাপ করলে বৃষ্টি স্নান করে।

আমিঃ আমার বৃষ্টির দিন মন খারাপ হয় মৌসুমি। মাথা খারাপ নয়।আমার বৃষ্টির পানি যে কোন জন্মের শত্রু আল্লাহ জানে। সামান্য কয়েক ফোঁটা পানি আমার মাথায় পরলে অটোমেটিক মাথা ব্যাথা স্টার্ট হয়ে যায়।যদি একটু বেশি পানি মাথায় পরে তাহলে ঠান্ডায় আক্রমণ করবে।আর বৃষ্টি স্নান করলে এক সপ্তাহ জ্বরের কারণে বিছানার থেকে উঠতে পারবো না।শুধু শুধু কি আমি বৃষ্টি পছন্দ করি না।

সিফাঃ তোর মাথা দেখছি অনেক ভি আই পি।
মৌসুমিঃ মানুষটাও তো ভি আই পি।আর তার মাথা কি সাধারণ হবে।

শারমিনঃ দেখছিস নোভা।তোকে পাম দিয়ে ওরা পুরা ফুলায় ফেলতাছে।

আমিঃ হুম অনেক ফুলছি।একটু পর বাস্ট হবো।

মৌসুমিঃ বিয়ের শপিং শেষ?

আমিঃ আমি কি জানি?যার বিয়ে তাকে জিজ্ঞেস কর।

সিফাঃ তাহলে কাকে জিজ্ঞেস করছি🙄?

শারমিনঃ আমরা কিন্তু তোর বিয়েতে দুই দিন আগে যাবো।তুই দাওয়াত দিলে দে নয়তো না দে।

আমিঃ আমি ভিক্ষুক দেখেছি।কিন্তু তোদের মতো এরকম ভিক্ষুক দেখিনি।এসব ব্যবসা কবে শুরু করলি?

মৌসুমিঃ কি বললি তুই?

আমিঃ আমি ভুল কিছু বলিনি।

তিনজন চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালো।আমি মিটমিট করে হাসছি।সামনে এগিয়ে এসে ইচ্ছে মতো আমাকে মারতে লাগলো।

🍂🍂🍂

এনাজের অফিসের কাজ শেষ হয়ে গেছে ঘন্টাখানিক আগে।আজকাল অফিসের কাজের চাপ কমে আসছে।তারপরেও সে অফিস ফাঁকি দেয় না।সামনে বিয়েতে তো অনেক দিন ছুটি নিতে হবে।তাছাড়া বিয়ের কত কাজ বাকি আছে। যদিও আত্মীয়স্বজন তার বেশি নেই। টাকা থাকলে দূর সম্পর্কের মামা,চাচাও খবর রাখে।কিন্তু টাকা না থাকলে নিজের আপনজনও খবর রাখে না।জানালা দিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। বৃষ্টি তার খারাপ লাগে না।অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।রুমের সামনে জিসান এসে দরজায় কড়া নারলো।

জিসানঃ আসবো??
এনাজঃ তুই আবার পারমিশন নিতে পারিস।
জিসানঃ ভেতরে তো আসতে দে ভাই।
এনাজঃ অনুমতি নেওয়ার কি প্রয়োজন আদোও আছে জিসান?
জিসানঃ বেশি বকবক করিস তুই। ভেতরে আসার পারমিশনটা দে।
এনাজঃ তুই আমার কাছে পারমিশন চাইছিস।ঢং না করে চলে আয়।তোর পারমিশনের কোন দরকার নেই।
জিসানঃ ধন্যবাদ ভাই।

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বললো জিসান।ভেতরে ঢুকে এনাজের পাশের চেয়ার টান দিয়ে বসে পরলো।

এনাজঃ এমন ব্যবহার করলি কেন?তুই তো কখনও আমার পারমিশন নেস না।আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠলো?

জিসানঃ আজ সূর্য উঠেইনি।তোর রুমের অপজিটে কোম্পানির বস দাঁড়িয়ে ছিলো।তার দৃষ্টি আমার দিকে স্থির ছিলো।এই মুহূর্তে যদি আমি তোর রুমে পারমিশন না নিয়ে আসি তাহলে আমার জব নিয়ে টানাটানি পরে যাবে।তাই এরকম বিহেভিয়ার।

এনাজঃ আমারো খোটকা লেগেছিলো। আমি ভাবলাম তোর মাথা আবার আউট হয়ে গেলো নাকি।
জিসানঃ তা ভাই,বিয়ের খবর কি?

এনাজঃ আর খবর।তোরা ছাড়া আমি একা কিছু করতে পারবো নাকি?কিছুই বুঝি না।বিয়ে তো জীবনে প্রথম করছি।কোন আইডিয়া নেই। গার্ডিয়ান থাকলে এসব নিয়ে আমার কোন টেনশন করতে হতো না।

জিসানঃ এমনভাবে বলছিস যেনো আমার ৪/৫ টা বিয়ে হয়েছে। আমার ভালো আইডিয়া আছে এই ব্যাপারে।এখনো কপালে একটাই জুটলো না আর ৪/৫ টা। ভেবেই হাত-পা কাঁপছে। এক বউয়ের জ্বালায় বেঁচে থাকার ইচ্ছে মরে যাবে।আর তো ৪/৫ টা।আল্লাহ এসব ভাবতেই আমার গরম লাগছে।আর যদি বাই চান্স তোর বউয়ের মতো পাগল-ছাগল হয়।তাহলে আমার জীবন তেজপাতা টু ধনিয়া পাতা হয়ে যাবে।বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা চান্দের দেশে পারি দিবে।

এনাজঃ তুই কিন্তু আমার নোভাকে অপমান করছিস।আমার হবু বউয়ের নামে কোন ফালতু কথা কিন্তু আমি এলাউ করবো না জিসান।
জিসানঃ শালা তুই এখনি বিয়ে না হতেই বউয়ের পক্ষ টানা শুরু করেছিস।আর তো দিন পরেই রয়েছে। ভালো ভালো খুব ভালো।

এনাজ মুখ গম্ভীর করে কিছুটা রাগী স্বরে কথাটা বলেছিলো।যা দেখে জিসান অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে এনাজ ফিক করে হেসে উঠলো।

এনাজঃ আমি মজা করছিলাম ইয়ার। তুই সিরিয়াস ধরে নিয়েছিস।
জিসানঃ যা শালা।আমায় তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।
এনাজঃ তবে একটা কথা সত্য। নোভা একটু পাগলী টাইপের মেয়ে।প্রচুর লিপস্টিক পাগলী।ওর এসব পাগলামি গুলো দেখেই আমি ওর প্রতি আরো বেশি উইক হয়ে গিয়েছি।ওর পাগলামিগুলো আমায় বাধ্য করে ওকে ভীষণ ভালোবাসতে।
জিসানঃ প্রেমের মরা জলে ডুবে না।তোকে দেখে আমার গানটা মনে পরে যাচ্ছে।
এনাজঃ বৃষ্টি কমে আসছে।আমার এখন বের হতে হবে।আজ একটু নোভার কলেজের দিকে যাবো।গতকাল রাতে এতগুলো কল করলাম কিন্তু ধরেনি।তার হিসেব চুকাতে হবে।
জিসানঃ যা যা জলদী যা।দিন তো তোদেরি।আমাকে একটু তোর শালিকার সাথে সেটিং করে দিস।আমারও তো বিয়ে করতে হবে তাই না।বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তবু বাবা-মা বোঝে না।এবার তোর শালিকা বিয়ে করে ঘরে তুলবো।রাতে আর কত একা ঘুমাবো বল।এবার একটা বিয়ে করতেই হয়।

জিসান এক চোখ মেরে টিটকারি মারলো এনাজকে।এনাজ হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

🍂🍂🍂

কলেজ ছুটি হতেই বাসার দিকে রওনা দিলো নোভা।বৃষ্টির বেগটা অনেকটা কমেছে। কিন্তু বিধি বাম! বাস স্টেন্ড পর্যন্ত যেতেই ঝুপঝুপ করে বৃষ্টির তেজ বেড়ে গেল।বাধ্য হয়ে নোভাকে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়াতে হলো।এনাজ বাইক করে কলেজের দিকেই আসছিলো।হঠাৎ করে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় নোভা যে ছাউনিতে দাঁড়িয়েছে সেই ছাউনিতে এসে বাইক পাশে রেখে দাঁড়ালো। মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে চারিদিকে চোখ বুলচ্ছে এনাজ।দুটো মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে তার পুরো পৃথিবী থেমে গেল।এই চোখগুলো তার অনেক চেনা।যতবার দেখে ততবারই এর প্রেমে পরে যায়।এনাজের মনে এখন একটা গানই গিটার বাজিয়ে শোনাচ্ছে।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

ঐ তোর মায়াবী চোখ লা লা লা লা লা
লা লা লা লা লা আঁচল হয়ে যাবো।

ঐ তোর মায়াবী চোখ, কাজল হয়ে যাবো
আর উরলে হাওয়ায় তোর,আঁচল হয়ে যাবো।
আমার হয়ে যা তুই, আমি তোর হয়ে যাবো

একবার ডেকে যা তুই, বারবার চলে যাবো
তোর দুষ্টমিতে আজ, আমি ইচ্ছে মিশাবো
আমার হয়ে যা তুই, আমি তোর হয়ে যাবো

ঐ তোর মায়াবী চোখ, কাজল হয়ে যাবো।
আর উরলে হাওয়ায় তোর,আঁচল হয়ে যাবো।

মনে মনে ছেয়ে আছে আষাঢ়ের ঘোর,
নেমে আয় রাত হয়ে, ঘুমোলে শহর
আকাশ হয়ে যা তুই, সাগর হয়ে যাবো
আজ ঢেউ হয়ে যা তুই, পাথর হয়ে যাবো

আমার হয়ে যা তুই, আমি তোর হয়ে যাবো
একবার ডেকে যা তুই, বারবার চলে যাবো
তোর দুষ্টমিতে আজ, আমি ইচ্ছে মিশাবো

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

এই গানটা মনের মাঝে ঘন্টা বাজিয়ে বারবার মনে হচ্ছে এনাজের।নোভা আশেপাশে থাকলে ওর মাঝে অন্য রকম অনুভূতির কাজ করে।হয়তো এটার নামই ভালোবাসা।এনাজের ভালোবাসার_তুই টাকে ঘিরে হাজারো স্বপ্ন বুনছে মনে মনে।বৃষ্টির বেগটা বেড়েই যাচ্ছে। চারিদিকে ঝুম বৃষ্টির কারণে সাদা হয়ে আছে।নোভা এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে।তার আর কোনদিকে হুশ নেই। নয়তো সে এতক্ষণে এনাজকে দেখে ফেলতো।এনাজ ধীর পায়ে নোভার পিছনে এসে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো।কিন্তু তারপরেও নোভার কোন হুশ নেই। কি জানি এক ধ্যানে ভাবছে সে।এনাজ যে ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাও দেখিনি।

#চলবে

রিচেইক দেওয়া হয়নি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।

ভালোবাসার তুই পর্ব-০৯

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_09
#Writer_NOVA

ডান কানে মোবাইল ধরে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক উঁকি মারছে এনাম।যদিও সে জানে তার বড় ভাই এনাজ এখন কিচেনে রাতের রান্না করছে।তবুও গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে ওর ভীষণ ভয় করছে।এনাম ও নিতুয়া অনেক দিনের সম্পর্ক।নিতুয়ার বাড়িতে বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে। কিন্তু এনাম তো আর তার ভাইয়ের আগে বিয়ে করতে পারে না।তাই এনাজের বিয়ের জন্য উঠে-পরে লাগছে।

নিতুঃ কি ব্যাপার চুপ হয়ে গেলে যে?তোমার ভাইয়ের বিয়ের কি খবর?কবে তোমার ভাই বিয়ে করবে আর কবে আমাদের বিয়ে হবে।

এনামঃ ভাইয়ার বিয়ের ১০-১২ দিন বাকি আছে। কিন্তু ভাইয়ার বিয়ের পর আমরা বিয়ে করতে পারবো না।আমাকে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে।নয়তো বিয়ের পর তোমাকে খাওয়াবো কি?

নিতুঃ খুব ভালো ডিসিশন নিয়েছো।তুমি অস্ট্রেলিয়া যাবে এক দিক দিয়ে আমার বিয়ে হয়ে যাবে আরেক দিক দিয়ে। তখন কপাল চাপড়িয়ো।তুমি যখন তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ফিরবে তখন দেখবে আমি বাচ্চা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি নয়তো শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পাতিল মাজছি।

এনামঃ তাহলে আমি এখন কি করবো?তুমিই বলো কি করতে পারি?তোমার কথা মতো ভাইয়াকে বিয়ের জন্য রাজী করালাম।যাতে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার মতো ক্যারিয়ারহীন ছেলেকে মেয়ে দিবে কে?তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নিতুঃ তোমার বুদ্ধি-সুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে এনাম।আমাকে তোমার বাগদত্তা বানিয়ে তারপর তুমি অস্ট্রেলিয়া যাও।তাহলে তোমাকে হারানোর ভয় আমার থাকবে না।তোমার ক্যারিয়ার গঠনের পর তুমি দেশে এসলে বিয়ে করে নিবো।

এনামঃ দেখা যাক কি হয়?তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না।আমি সব ম্যানেজ করে নিবো।তুমি শুধু আমাকে একটু সময় দাও।

নিতুঃ নাও আমার কোন সমস্যা নেই। তবে এতটা সময়ও নিয়ো না যাতে করে আমাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলো।

দুজন আরো নানা বিষয় নিয়ে কথা বললো।কথা শেষ করে মোবাইলের আলোটা অফ করতেই এনামের কানে জোরে টান পরলো।এনাম ঘুরে এনাজকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো।

এনামঃ ভাইয়া ছাড়ো আমার লাগছে।
এনাজঃ এই জন্য তুই আমার বিয়ের জন্য এতো পাগল হয়ে গিয়েছিলি।আমার মনে একটা খোটকা লেগেছিলো।তখন অবশ্য আমি সেটাকে পাত্তা দেই নি।এখন দেখছি আমার মনের খোটকা টাই সঠিক হলো।
এনামঃ তুমি সব শুনে ফেলেছো😐।
এনাজঃ অফ কোর্স।তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এনামঃ তাহলে এর সলিউশন তুমি খুঁজে দিবে।
এনাজঃ ওকে। তুই নিশ্চিন্তে থাক।আমি সব ব্যবস্থা করছি।তুই যাতে খুশি আমিও তাতে খুশি।

এনাম অবাক হয়ে এনাজের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সহজে তার ভাই মেনে যাবে সেটা সে কখনি ভাবেনি।শক্ত করে ভাইকে জরিয়ে ধরলো এনাম।

এনাজঃ নিশ্চয়ই তুই ভাবছিস আমি এতো সহজে মেনে নিলাম কেন?
এনামঃ হুম।

এনাজঃ তোর ভাবীকেও আমি ২ বছর ধরে ভালোবাসি।তোর অবস্থায় আমিও এতোদিন ছিলাম।অবশ্য তোর নিতুর মতো নোভা যদিও আমায় ভালোবাসে না।কিন্তু আমিতো বেসেছি।আমি ঠিক যে পরিস্থিতিতে ছিলাম সেই পরিস্থিতিতে আমার ভাইকে পরতে দিতে চাই না।

এনামঃ তার মানে ভাইয়া।তুমি ভাবীকেই এতোদিন ভালোবাসতে?তোমার ডায়েরীতে যেই মেয়েটার নাম সেটা ভাবীর।(অবাক হয়ে)

এনাজঃ তুই বুঝি আজকে জানলি?(ভ্রু নাচিয়ে)

এনামঃ আমি ভাবীর নাম জানতাম না।তার মায়ের মুখে কয়েকবার শুনেছিলাম।কিন্তু তখন বিষয়টা অতটা গুরুত্ব দেইনি।এখন মনে এলো।তুমি তো হেব্বি জিনিয়াস।

এনাজঃ কেন?

এনামঃ নিজের নামের সাথে কি সুন্দর করে ভাবীর নাম জুড়ে রেখেছো।নামটা মিলিয়েছো বেশ।এমন ভাবনাগুলো কোথায় পাও।”নোভানাজ” নামটা যাস্ট ওয়াও।তোমার মাথায় খেললো কিভাবে নামটা?আমিতো পড়তে চেয়েছিলাম ডায়রীটা।কিন্তু তুমি ছোঁ মেরে আমার থেকে ডায়েরিটা নিয়ে লোকআপে রেখে দিলে।একটু পড়তে পারি নি।

এনাজঃ বড়দের ব্যাপারে নাক না গোলানোই ভালো।তোকে তো চোখের সামনে নোভাকে দেখালামই।

এনামঃ কিন্তু ভাইয়া, ভাবী কিরকম জানি পাগলী টাইপের।সবসময় ছটফট, ছটফট করে।

এনাজঃ আমার লিপস্টিক পাগলী।এরকম পাগলী টাইপের মেয়েরা না অন্যর মন চুরি করতে পারে খুব সহজে।আর তাদের মনটা থাকে অনেক সহজ-সরল।কোন প্যাচ নেই।

এনামঃ তুমি কি এর মধ্যে ভাবীর সাথে কথা বলেছো?

এনাজঃ দুই দিন কোম্পানির কাজে অনেক ব্যস্ত ছিলাম।নোভার কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি।দেখি আজ একটা কল করবো।

এনামঃ অনেক খুদা লেগেছে। চলো খেতে যাই।

এনাজঃ হুম চল।খাবার খাওয়ার পর তোর ভাবীর সাথে কথা বলবো।

🍂🍂🍂

এনাজ সেদিন নোভার সামনে এসে শয়তানি হাসি দিয়েছিলো।যা দেখে নোভা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
মনে করেছিলো এই বুঝি এনাজ ওর ওপর রাগ ঝারবে।কিন্তু নোভাকে অবাক করে দিয়ে এনাজ ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।নোভার কাঁধে নিজের একটা হাত রেখে শক্ত করে জরিয়ে নিলো।তারপর ধরে ধরে বাইকের সামনে নিয়ে এলো।সাবধানে বাইক চালিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলো।

নোভা সেদিন বাসায় এসে ব্যাঙের মতো দুটো লাফ দিয়ে লুঙ্গি ডান্স গান ছেড়ে উড়াধুরা ডান্স করছে।এতো গুলো লিপস্টিক পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো।কি থেকে কি করবে তা ভাবতেই পারে নি।নোভার মা দেখে খুব খুশি হয়েছে। কারণ সে ধরে নিয়েছে তার মেয়ে এনাজকে অনেক পছন্দ করেছে। পছন্দ না করলে তো আর বাসায় এসে এরকম করে খুশিতে নাচতো না।লিপস্টিক পাগলী তো পুরো বক্সের লিপস্টিক সারা বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে সেখান থেকে একটা একটা করে নিজের ঠোঁটে পরখ করে দেখছে।ঘুমের সময়ও সারা বিছানায় লিপস্টিক বিছিয়ে রেখেছিলো।ইভাকে একটা লিপস্টিকও ধরতে দেয়নি।লিপস্টিক বক্সটা ঘুমের ঘোরে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছিলো।যাতে কেউ নিতে না পারে।

🍂🍂🍂

বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে বড়ইয়ের মিষ্টি আচার খাচ্ছি আমি।আজ রাতে ভাত খাবো না।সবসময় রাতে খাবার খেতে বিরক্ত লাগে।আম্মু এসে এক গাদা বকা দিয়ে চলে গেল।কিন্তু আমার কোন রিয়েকশন নেই। আমি খুব মনোযোগ সহকারে আচারের দিকে তাকিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাচ্ছি। শেষ পর্যত আম্মু বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বিদায় নিলো। আম্মু বের হওয়ার কিছু সময় পর ইভা এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।

ইভাঃ বোইনে, আম্মু গ্লাস খালি করে দিতে বলছে।
আমিঃ তা আমাকে বলতাছিস কেন?তুই গ্লাস খালি করে নিয়ে যা।
ইভাঃ তুমি খেয়ে খালি করে দেও।
আমিঃ ওয়াক ছিঃ আমি খাবো না।দুধে গন্ধ লাগে আমার।
ইভাঃ কথা না বলে এক নিশ্বাসে দুধটুকু শেষ করে দেও।নয়তো আমি আম্মুকে বলে দিবো তুমি দুধ খাওনি।
আমিঃ তুই গ্লাস খালি চাচ্ছিস তো।দে আমার কাছে।আমি গ্লাসের দুধটুকু বেসিনে ফেলে দিয়ে তোকে খালি গ্লাস দিচ্ছি।
ইভাঃ ভালো হবে না কিন্তু। আমি আম্মুর কাছে বিচার দিবো।
আমিঃ যা দে।তোকে মানা করছে কে?
ইভাঃ আম্মু দেখো বোইনে দুধ খেতে চাইতাছে না।বসে বসে আচার গিলতাছে।আমি দুধ খেতে বলছি কিন্তু বোইনে আমারে বলে সে নাকি বেসিনে দুধ ফেলে দিবে।তুমি কিছু বলো।
আমিঃ কুটনি বুড়ি।আম্মুকে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলা হচ্ছে। তোর মতো বোন থাকলে আর শত্রুর দরকার নেই। হু হু দিন আমারো আসবে।

আম্মু পাশের রুম থেকে চেচিয়ে বললো
আম্মুঃ নোভা ভালোই ভালোই গ্লাসের দুধ শেষ কর।নয়তো আমি এসে জোর করে খাইয়ে দিবো।আমার যেনো ২য় বার বলতে না হয়।এই বুড়ি বয়সে আমার হাতে মার খাস না।দুদিন পর পরের বাড়ি যাবে।আর সে বলে কিনা এটা খাবো না ঐ টা খাবো না।আল্লাহ জানে তোর মতো মেয়েকে নিয়ে এনাজ সংসার করবে কিভাবে?ওর জীবনটা বোধহয় শেষ করে দিবি।

আমিঃ তুমি কি আমার মা নাকি শ্বাশুড়ি। এরকম শ্বাশুড়ি দের মতো কথা-বার্তা বলা শুরু করলে কেন?

আমি রেগে কটমট করে তাকাতেই ইভা একটা মেকি হাসি দিয়ে ভ্রু নাচালো।যার মানে হলো, কি বোইনে কেমন দিলাম।আমার কথা না বলার মজা তো বুঝে গেছো তাই না।

আমিঃ তোকে আমি দেখে নিবো।কুটনি বুড়ি একটা।
ইভাঃ ভালো করে বলছিলাম ভালো লাগে নাই।এখন আম্মুর বকা খেয়ে ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নিবে।তুমি কি বকা না খেয়ে কোন কাজ করতে পারো না।
আমিঃ চুপ কর।

কিছু সময় পর ইভা এসে আমার সাথে ভাব ধরতে লাগলো।এতক্ষণ সে আমার হাতের আচার খেয়াল করেনি।আমার পাশে বসে ভাব জমানোর জন্য মিষ্টি কন্ঠে বললো।

ইভাঃ বোইনে তুমি না কত ভালো।আমার ১০ টা না ৫টা না একটা মাত্র বড় বোন।তোমাকে আমি কত ভালোবাসি।
আমিঃ এত কলা করে লাভ নেই। আমি তোকে আচার দিবো না।
ইভাঃ লাগবো না তোমার ঐ নষ্ট আচার।
আমিঃ আচ্ছা ভালো।যা ভাগ।
ইভাঃ প্লিজ একটু দেও।
আমিঃ দিতে পারি তবে এক শর্তে। তুই গ্লাসের দুধ খেয়ে শেষ করবি।আম্মুকে বলবি না আমি যে খাইনি।তাহলে তুই আচার পাবি।
ইভাঃ আমি একটু আগে এক গ্লাস শেষ করে এলাম।
আমিঃ কি বলছি শুনিস নি।রাজী থাকলে খা না থাকলে আমার সামনের থেকে ভাগ।

আমি আরো কিছু বলার আগে মোবাইলটা বেজে উঠলো।আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করলাম না।পরপর কয়েকবার বাজলো কিন্তু আমি রিসিভ না করে মোবাইল অফ করে রাখলাম।মাঝে মাঝে এরকম আননোন নাম্বার থেকে অপরিচিত ব্যক্তি কল করে খুব ডিস্টার্ব করে।তাই আমি আননোন নাম্বার থেকে কল আসলে ধরি না।আল্লাহ তায়ালাই জানে এসব ফালতু লোক আমার মোবাইল নাম্বার পায় কোথায়।

কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম।তবে আমার একটু ঘুম আসছে না।কারণ চোখের মধ্যে বারবার এনাজের মুখটা ভেসে উঠছে।এনাজ যখন কাঁপা কাঁপা হাতে আমার গালের দিকে ওর হাতটা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো।তখন ওর মুখটা অনেক ইনোসেন্ট দেখা যাচ্ছিলো।এখনো চোখে ভাসছে দৃশ্যটা।

#চলবে

ভালোবাসার তুই পর্ব-০৮

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_08
#Writer_NOVA

৮ দিন পর……..

রেস্টুরেন্টের ভেতর মুখ গোমড়া করে ভয়ে ভয়ে বসে আছি।আমি একা নই সাথে ধলা ইন্দুরও আছে।দেখতে আাসার দিন যা ভয় দেখিয়েছিলো।তাতে এখন আমার এনাজের দিকে তাকাতেই ভয় করে।আমার এই ভয় পাওয়া মুখটা দেখে যে উনি বেশ মজা পাচ্ছে তা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। আমি কিছুতেই আসতে চাইনি।আব্বু জোর করে আমাদের কথা বলতে পাঠিয়েছে। মুখোমুখি বসে আছি দুজনে।কখন থেকে এক ধ্যানে আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমার অনেক অস্বস্তি লাগছে।আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে তার ধ্যান ভাঙানোর চেষ্টা করছি।

আমিঃ এরকম করে হা করে কি দেখছে?নিজের কাছে বিরক্তি লাগছে।কোন মেয়ে কি জীবনে দেখে নি নাকি।আমি বুঝতে পারছি না আব্বু-আম্মু কি দেখে যে দুই সপ্তাহ পর এটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে আল্লাহ জানে। হু হু আমায় তো চিনো না চান্দু।আমি বিয়ের আগে পালাবো😎।কিন্তু তাতে তো আমার বাবার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।সবাই আব্বুকে অপমান করবে।আমি তা হতে দিতে পারি না।আমার আব্বুকে কেউ আমার জন্য আঙুল তুলে কটু কথা শুনাবে। তাহলে আমি কিরকম মেয়ে হলাম।আব্বুর বড় মেয়ে আমি।আমাকে নিয়ে আব্বু অনেক আশা করে।আর আমি কিনা তার মাথা নিচু করার কথা ভাবছি।আমার খুশি না হোক আব্বু-আম্মুর খুশির জন্য হলেও এই বিয়েটা করতে হবে।নোভা তোর মনে রাখতে হবে সবসময় বাবা-মা যা করে সব আমাদের ভালোর জন্য করে।(মনে মনে)

নোভা মনে মনে বহু কথা ভেবে মন খারাপ করে ফেললো।অপরদিকে এনাজ এক দৃষ্টিতে নোভার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ২ বছর আগে ঠিক এই মায়াবী চোখের পাগল হয়েছিল। নোভার চেহারার মধ্যে ওর চোখ দুটো অনেক মায়াবী। এনাজ দুই বছর আগে নোভাকে দেখেছিলো।সেদিন আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা থাকলেও চোখ দুটো খোলা ছিলো।সেই চোখের মায়ায় পরে ভালোবেসে ফেলেছিলো।কিছু দিনের মধ্যে পুরো চেহারা দেখে ও তার সমস্ত তথ্য জোগাড় করে ফেলেছিলো।তারপর থেকে প্রায় সময় লুকিয়ে লুকিয়ে সেই চোখ দেখেছে সে।ভাবতেও অবাক লাগে এনাজের কাছে, আজ সে মেয়ে তার হবু বউ।

এনাজঃ আমি তো ওর হবু চোখের দিকে তাকিয়ে সারাজীবন কাটাতে পারবো।এই মায়াবী চোখ দুটো আমায় এতো কাছে টানে কেন?যা দেখে আমি বারবার প্রেমে পরে যাই।যেদিন তোমায় দেখেছিলাম সেদিন মনে মনে শপথ করেছিলাম তোমাকে আমি বিয়ে করে নিজের করে নিবো।সারাদিন তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিবো।(মনে মনে)

আমিঃ ও হ্যালো মিস্টার। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিবেন নাকি?

এনাজঃ হুম এভাবেই সারাদিন কাটাতে চাই। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে। (আনমনে)

কথাটা বলে আমার দিকে উনি অবাক হয়ে মুখটাকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি তার থেকে দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে বললাম।

আমিঃ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

এনাজঃ আমি মনে মনে যে কথাটা বললাম ও সেটা প্রকাশ্যে কিভাবে বললো?(আনমনে)

আমিঃ আমি আবার প্রকাশ্যে কি বললাম?এই মিয়া আপনার মাথা কি গেছে?

এনাজঃ আমি আবার কি করলাম?

আমিঃ আপনি কি করেন নি তা বলেন।ওয়েটার সেই কখন কফি দিয়ে গেছে। কফি ঠান্ডা হয়ে শরবত হয়ে গেছে। আর আপনার কোন হুশ নেই। হা করে আমাকে গিলছেন।(ধমকের সুরে)

এনাজঃ তুমি খাচ্ছো না কেন?আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছো যে।নিজে না খেয়ে আমাকে ঝাড়ি মারছো।

আমিঃ চেহারার দিকে এরকম হা করে এত থাকলে আমি খাবো কি করে?আমার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে আমি খেতে পারি না।

🍂🍂🍂

এনাজ চোখ নামিয়ে কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। উনার এরকম শান্ত ভঙ্গিতে কফি খাওয়াটা আমার কাছে কোন ঝড় আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেদিনের পর থেকে আমার এনাজকে ভালোই ভয় করে।আমি উনাকে ঝারি দিয়েছি বলে কি উনি আমার সাথে আবার রাগ দেখাবে নাকি।আল্লাহ আমাকে বাচিও।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

এনাজঃ নোভা, তোমার কিরকম ছেলে পছন্দ?

আমিঃ হঠাৎ এমন প্রশ্ন? (চোখ দুটো ছোট করে)

এনাজঃ তুমি কি সোজা কথায় উত্তর দিতে পারো না।এতো কথা বলো কেন?

আমিঃ বলছি,এতো ধমক দেন কেন? ১ম আমার ভিলেন টাইপের ছেলে অনেক পছন্দ।তবে সাইকো টাইপের ছেলে নয়। আর ২য় ছেলে হলো বিবাহিত, যার আগের বউ একটা ছোট কিউট বাচ্চা রেখে মারা গেছে। অনেক ইচ্ছা আমার স্বামীর ২য় বউ হওয়ার।আগের বউ অবশ্যই মৃত হতে হবে।আর আমার স্বামীর যাতে আগের ঘরের কোন ছোট ফুটফুটে বাচ্চা থাকে।ছেলে হোক কিংবা মেয়ে। আমার তাতে কিছু আসে যায় না।তবে বাচ্চার বয়স কয়েক মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত হতে হবে।৩ বছরের বেশি বয়স হলে চলবে না।কারণ তিন বছরের বেশি হলে বাচ্চা বুঝে যাবে আমি তার আপন মা নই।কারণ তিন বছরের পর থেকে বাচ্চাদের জ্ঞান হওয়া শুরু করে।ওরা বুঝতে পারে কে আপন কে পর।আর আমি ঐ বাচ্চাটাকে এমন ভাবে লালন-পালন করবো যাতে কেউ বলতে ও বুঝতে না পারে আমি তার সৎ মা।আমি সৎ মা নামক বস্তুটা কখনও তাকে বুঝতে দিতে চাই না।সবাই জেনো বুঝে নেই সব মেয়ে এক নয়।কিছু মেয়ে আছে যারা সতিনের সন্তানকে নিজের সন্তানের চোখে দেখে।কিন্তু আফসোস!!! সবাই তো আমার মতো বুঝে না। আমার এই দুই রকম ছেলে চাই। হয় ভিলেন টাইপের নয় বিবাহিত। যার ২য় বউ হয়ে তার ছোট বাচ্চাকে নিজের সন্তানের মতো আদর-স্নেহে মানুষের মতো মানুষ করবো।পুরো রেডিমেড ফ্যামিলী আর কি😁।

বিঃ দ্রঃ আমারও এই দুরকম ছেলে ভীষণ পছন্দ। উপরের প্যারায় যা বলছি সব আমার মনের কথা।উপরোক্ত মন-মানসিকতা পুরোটাই আমার।জানি না কে কি ভাববেন?তাতে আমার কিছু আসে-যায় না🙃।

এনাজঃ অদ্ভুত পছন্দ তো।আই লাইক ইট।আফসোস তোমার দুই টাইপের পছন্দের মধ্যে আমি একটাতেও নেই। তাই মনে হয় আমাকে বিয়ে করতে চাইছো না।

আমিঃ হুম তবে এখন আর আপনাকে বলে কি হবে?১৫ দিন পর তো আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে।আপনিতো চাইলেও আমার পছন্দের ছেলে খুঁজে দিবেন না।আমাকে জোর করে বিয়ে করে নিবেন। (কান্নার অভিনয় করে)

এনাজঃ এই মেয়ে তোমাকে কি বলেছি আমি তোমার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।এত বেশি বোঝো কেন?কম বুঝলে হয় না।(ধমক দিয়ে)

আমিঃ আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না।আমি ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে। আর আপনি ইদানীং আমাকে অনেক ভয় দেখান।আমি কিন্তু কান্না করে দিবো এখন।আপনি একটুও ভালো না। অনেক পঁচা। এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ😭।

এনাজঃ আরে করছো টা কি?কেউ শুনলে কি বলবে?চুপ করো প্লিজ। তুমি কি শুরু করলে?

আমিঃ আপনি আমায় বকলেন।ই-ই ই-ই 😭।

আমি কথাটা বলে হাত-পা ছুঁড়ে মেঝেতে বসে কান্না শুরু করলাম।আসলে অভিনয় করছি।যাতে সে বিরক্ত হয়ে আমাকে বাসায় চলে যেতে বলে।কিন্তু তিনি তা না করে আমাকে আলতো করে গালে হাত রেখে বললো।

এনাজঃ তুমি প্লিজ কান্না করো না।মানুষ খারাপ বলবে।উঠে পরো।তুমি যদি এখন না উঠো তাহলে আমি কোলে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিবো।আর যদি তুমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো উঠে বসো তাহলে তোমাকে আমি অনেকগুলো লিপস্টিক দিবো।

🍂🍂🍂

লিপস্টিকের কথা শুনে আমি চোখ মুখ মুছে ভালো মেয়ের মতো চেয়ারে বসে পরলাম।মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটিয়ে তরিঘরি করে তাকে বললাম।

আমিঃ কই আমার লিপস্টিক দিন?

এনাজঃ কিসের লিপস্টিক? তুমি বাচ্চাদের মতো করে কান্না করছিলে।আর আমি তোমার কান্না থামানোর জন্য বললাম।বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য তো কত কিছু বলি আমরা কত কিছু দিতে চাই ।তাই বলে সবসময় কি সবকিছু আমরা দেই।

এনাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বলে আরাম করে চেয়ারে বসলো। আমি রাগে লুচির মতো ফুলছি।আমাকে ঢপ দিলো খাটাশটা।আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।কিছু সময় পর এনাজের কোন শব্দ না পেয়ে পেছনে তাকিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলাম।এনাজ এক হাঁটু গেড়ে বিশাল এক বক্স লিপস্টিক নিয়ে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এনাজঃ অনেক দিন ধরে তোমাকে কথাটা বলবো বলবো ভাবছি।জানি না তুমি কথাটা কিভাবে নিবে।তবুও আমি আজ বলবো।কারণ এটা আমার মনের কথা।দুই বছর নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছি।কিন্তু আজ আর লুকিয়ে রাখতে চাই না।#ভালোবাসার_তুই টাকে নিজের করে নিতে চাই।মনের সব কথা জানিয়ে দিবো তোমাকে।ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে নোভা।অনেক পছন্দ করি তোমাকে।তোমার ঐ টানা টানা চোখের মায়ায় আমি বহু আগে পরেছিলাম।যেই মায়া আমাকে মোহ দ্বারা ঘিরে রেখেছে।সবাই তো গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে। কিন্তু আমি তোমার প্রিয় লিপিস্টিক দিয়ে প্রপোজ করলাম।আই লাভ ইউ।আই এম রিয়েলি লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি??প্লিজ এনসার মি।

আমি হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা মোঃ এনাজ আহমেদ কি মেয়াদ উত্তীর্ণ গাজা সেবন করেছে নাকি।আমাদের দেখা হলো কিছু দিন আগে।আর উনি বলছেন দুই বছর আগে আমাকে দেখেছে।তাছারা যেই লিপিস্টিক নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিলো আজ সেই লিপিস্টিক দিয়ে আমাকে প্রপোজ করছে।পনের দিন পর আমাদের বিয়ে। আমাকে জোর করে বিয়ের জন্য রাজী করে এখন জিজ্ঞেস করছে উইল ইউ মেরি মি? এতো ঢং যে কোন ছেলে করতে পারে তা আমার জানা ছিলো না।

এনাজঃ কি ভাবছো?আমি জানি তুমি ভাবছো তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে রাজী করে আমি এখন আবার কেন জিজ্ঞেস করছি কেন উইল ইউ মেরি মি? এম আই রাইট???

আমিঃ 😲😲

এনাজঃ আই এম সরি।তখন হঠাৎ করে খুব রাগ উঠে গিয়েছিলো।আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো।আমি তো তোমার জন্য যোগ্য। কিন্তু তারপরেও তুমি আমাকে মুখের উপর মানা করে দেওয়ায় আমার মাথা খুব গরম হয়ে গিয়েছিলো। তাই এমন করেছি।আই এম সরি ডিয়ার।তাই এখন ভালো করে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি আমাকে তোমার স্বামী হওয়ার সুযোগ দিবে।তুমি যদি লিপস্টিক বক্সটা নেও তাহলে আমি ধরে নিবো তুমি রাজী।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

আমি কোন কথা না বলে আস্তে করে উঠে চলে গেলাম।ইচ্ছে করছে লিপস্টিকের বক্সটা নিয়ে দৌড় দিতে।কিন্তু বক্স নিলে তো ভেবে নিবে আমি তাকে মেনে নিয়েছি।কিন্তু লিপস্টিকের বক্সটাকে ফেলে চলে যেতে বুকটা ফাডি যাচ্ছে। তাকে কিছু দূর গিয়ে আবার দৌড়ে চলে এলাম।এনাজ নিচের দিকে মন খারাপ করে এখনো হাঁটু গেড়ে বসে আছে। আমি চিলের মতো ছোঁ মেরে লিপস্টিকের বক্সটা নিয়ে সেকেন্ডের মাঝে দৌড় দিলাম।

এনাজঃ কি হলো এটা??(অবাক হয়ে)

আমি লিপস্টিকের বক্স নিয়ে দৌড় দিতে গিয়ে একটা চেয়ারের সাথে বেজে ঠাস করে নিচে পরে গেলাম।
এনাজ এগিয়ে এসে একটা টেডি স্মাইল দিলো, আমার মুখের সামনে ঝুকে এক হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।তার মুখ ও আমার মুখের মাঝে বেশ কয়েক ইঞ্চির দূরত্ব।

চলবে।
রিচেইক দেইনি।রিচেইক দিতে অনেক আলসেমি লাগে😐।তাই ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন😌😌।

ভালোবাসার তুই পর্ব-০৭

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_07
#Writer_NOVA

আম্মু ও আমার ছোট বোন কিচেনে কাজ করছে। আমি সামনেও যায়নি।আসলে তাদের কাজ কমাতে গেলে উল্টো বাড়িয়ে ফেলবো তাই।সোফার ওপর পা তুলে মোবাইলে মুভি দেখছি।আমার ফেবারিট ভিলেনের মুভি।আমার মুভিতে নায়কের থেকে ভিলেনদের বেশি ভালো লাগে।সবাই নায়ক/নায়িকা দেখে মুভি দেখে, আর আমি ভিলেন দেখে মুভি দেখি।
আমার না ভিলেন টাইপের ছেলে অনেক পছন্দ। আপনাদের বলছি কাউকে বলেন না কিন্তু। কোলিং বেলটা দুই বার বাজলো।কিন্তু আমার উঠতে একটুও মন চাইছে না।আমার মতো এতো অলস ও কুঁড়ে দুটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।অবশ্য এটা আমার মায়ের আদর্শ বাণী।আমি জানি মায়ের বাণী সবসময় সঠিক হয়।আরেকবার কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে আমার আম্মু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।

আম্মুঃ ঐ নোভা কানে কি শুনতে পাস না।কখন থেকে কলিং বেল বেজে যাচ্ছে। কানে কি বয়রা বাঁশ ঢুকছে।এতো আলস কেন তুই? জমিদারের বেটি।সবসময় এমন ভাব দেখায় জেনো তাকে বিয়ে করতে রাণী এলিজাবেথের পুত্র আসবে।ঘরের কোন কাজ-কর্ম তো করবেই না।বসে বসে খাবে।সামান্য একটু নড়াচড়া করতেও তোর কষ্ট লাগে।শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবি আল্লাহ জানে। আল্লাহ আমার এই কুঁড়ে মেয়েটাকে একটু সুমতি দেও।তুই কি এখনো বসে আছিস?জলদী গিয়ে দরজা খুলে দে।মেহমান চলে এসেছে মনে হয়।তারা কি এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে?তোকে যদি এসে আমি সোফায় পাই তাহলে গরম খুন্তির বারি পিঠে পরবে বলে দিলাম।এখনো সময় আছে জলদী করে উঠে দরজা খুলে দে।

আমিঃ আল্লাহ উপর থেকে দড়ি ফালাও আমি উঠে যাই। নয়তো মাটি ফাঁক করো ঢুকে পরি।সামান্য একটা জিনিস নিয়ে তুমি আমাকে পুরো রচনা শুনিয়ে দিলে।আমি বলে সহ্য করলাম।অন্য কেউ হলে করতো না।কালে কালে কতকিছু যে দেখবো?তোমার সাত কপালের ভাগ্য আমার মতো একটা মেয়ে পাইছো।

আম্মুঃ আহারে কি এমন ভাগ্যটা আমার!! তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
ইভাঃ আম্মু তোমার কপালটারে তুমি নিজেই একটা চুমু দেও।বোইনের মতো এমন একটা মেয়ে
পেয়েছো বলে।
আমিঃ ঐ চুপ থাকিস ইভুনি। নয়তো তোর পিঠে দুরুম দারুম কিল বসিয়ে দিবো।
আম্মুঃ তুই এখনো বকরবকর করছিস।দরজা খুলিস নি।যদি আরেকটু দেরী হয় রে তোর সব লিপস্টিক আমি ডাস্টবিনে ফেলবো।
আমিঃ খবরদার বলছি আম্মু। আমার লিপস্টিকের পিছনে লাগবে না।আমার লিপস্টিক তোমার কি ক্ষতি করেছে।সামান্য দরজা খোলা নিয়ে টর্নেডো হয়ে গেলো। এখুনি খুলছি।কিন্তু তুমি আমার লিপস্টিকের কিছু করো না।

সোফায় মোবাইলটা রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো নোভা।মাথাটা এখন হাই হিটে গরম হয়ে আছে। ওর মা ওকে লিপস্টিক নিয়ে কথা শুনিয়েছে।আর ওর মন কি ভালো থাকতে পারে।আনমনে বিরবির করতে করতে দরজা খুললো নোভা।কিন্তু দরজা খুলে যাকে দেখলো তাতে সে অবাক হওয়ার পাশাপাশি রেগেও গেল।

চোখ দুটো ছোট ছোট করে আমি মোঃ এনাজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছি। ব্যাটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি শেষ পর্যন্ত আমাদের বাসায় চলে এসেছে। ছেঁচড়া কোথাকার?নিশ্চয়ই বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পোলাও মাংসের ঘ্রাণ পেয়েছে। তাই কোন ফন্দি আঁটে খেতে চলে এসেছে। আমি বেশ জোরে ধমকের সুরে চেচিয়ে উঠলাম।আমাকে নাকানিচুবানির কথা আমি এখনো ভুলি নি হু হু হু।

আমিঃ আআআআআপপপপপনি!!!! আপনার সাহস তো কম বড় না।আমার পিছু নিয়ে আমার বাসায় চলে এসেছেন।এতো বেহায়া, বেশরম কেন আপনি?ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমারতো আপনাকে দেখে লজ্জা করছে।আপনি কোর্ট-প্যান্ট পরে অন্যের বাসায় ডেং ডেং করে নাচতে নাচতে চলে এসেছেন।সাথে আবার কোন ফকির নিয়ে এসেছেন।নিজেদের বাসায় কি কিছু নেই নাকি?দুজন মিলে অন্যের বাসায় খেতে চলে এসেছেন।কিছু আনছেন আমাদের জন্য নাকি খালি হাতে লুঙ্গি ডান্স দিতে দিতে এসে পরছেন।

আমার কথায় এনাজের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখতে পারলাম না।আমাকে পাশ কাটিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভেতরে ঢুকে পরলো।আর সাথে থাকা ছেলেটা মুখটাকে বাংলা পাঁচের মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় এনাজের ভাই হবে।চেহারা অনেকটা এনাজের সাথে মিলে।আমি দরজার থেকে দৌড়ে এনাজের সামনে দুই হাত কোমড়ে গুঁজে দাঁড়ালাম।

আমিঃ আপনি ভেতরে ঢুকলেন কেন?অচেনা মানুষ আমাদের বাড়িতে এলাউ নয়।এখনি বেরিয়ে যান।নয়তো আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো।

এনাম গুটিগুটি পায়ে ওর ভাইয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো।
এনামঃ ভাইয়া কে এই মেয়েটা?তুমি চিনো নাকি?তোমাকে কত কথা শুনিয়ে দিলো।
এনাজঃ আরে মেয়েটা পাগল। মাথায় সমস্যা আছে।যাকে না তাকেই এসব কথা বলে।মাথার কয়েকটা স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে। ওর কথা তুই কিছু মনে করিস না। পাগলের সুখ মনে মনে, কাগজ কুড়াইয়া টাকা গুণে।চুপচাপ থাক।নয়তো বা তোর মাথা খেয়ে ফেলবে।
(নিচু স্বরে)

আমিঃ এই আপনি উনাকে কি বললেন?আপনি নিশ্চয়ই আমার নামে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছেন।আপনাকে আমি হারে হারে চিনি।ব্যাটা বজ্জাত, ধলা ইন্দুর একটা।

এনাজ এবারও আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আরাম করে পায়ের ওপর পা তুলে সোফায় বসে পরলো।এমন একটা ভাব করছে আমাকে চিনেই না।জীবনে দেখেওনি।সাথে তার ভাই ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পরলো।আমি ভেতরে ভেতরে বেশ মজা পাচ্ছি। কেউ আমাকে ভয় পেলে নিজেকে অনেক বড় বড় মনে হয়😎।মিটমিট করে হাসছি আমি।

নোভাকে এভাবে হাসতে দেখে এনাজ মনে মনে নতুন দাবার গুটি চালছে।

এনাজঃ বেশি করে হাসো।এখনো আমার আরেক রূপটাকে তো দেখো নি হবু বউ। একবার তুমি বিয়ে করতে মানা করে দেও তারপর আমার আরেক রূপ দেখবে।এখন যত পারো উড়তে থাকো।আর কয়েকটা দিন পর আমি তোমাকে আমার নিজের কাছে নিয়ে আসবো।তখন সবকিছু ছকের মাঝে থাকবে।যাস্ট ওয়েট মাই কুইন।(মনে মনে টেডি স্মাইল দিয়ে)

আমিঃ এই এভাবে হাসছেন কেন?
আম্মুঃ নোভা, কার সাথে এমন তর্ক করছিস?
আমিঃ আম্মু দেখে যাও।কোথা থেকে এরকম আবর্জনা চলে এসে।

আম্মু আঁচলে হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বের হয়ে এলো।এনাজকে দেখে ভীষণ খুশি। এনাজ আম্মুকে দেখে সুন্দর করে একটা সালাম দিলো।
এনাজঃ আসালামু আলাইকুম আন্টি।
আম্মুঃ অলাইকুম আস সালাম। আরে এনাজ বাবা কেমন আছো?
এনাজঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
আম্মুঃ আমিও ভালো আছি।এটা কি তোমার ছোট ভাই?
এনাজঃ জ্বি আন্টি।আমার ছোট ভাই মোঃ এনাম আহমেদ।
এনাজ ওর ছোট ভাই এনামের দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে কিছু একটা ইশারা করলো।এনাম ভয় পেয়ে জলদী করে আম্মুকে সালাম দিলো ও কুশল জিজ্ঞাসা করলো।

আম্মুঃ নোভা যা তো জলদী করে শরবত করে নিয়ে আয়।এই ছেমরি এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আমি মুখ ঝামটা মেরে কিচেনে চলে গেলাম।আসার সময় দেখলাম এনাজের মুখে শয়তানি হাসি।টুপ করে একটা চোখ মেরে দিলো।আমি রাগে বিরবির করতে করতে কিচেনে চলে এলাম।দাঁড়াও ব্যাটা আমাকে চোখ মারা। এখন যদি ঐ চোখ থেকে আমি পানি ঝরাতে না পারি তাহলে আমি নিজেকে বড় ভাবতে পারবো না।হলুদ,মরিচের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে স্পেশাল শরবত করলাম।রং টা আরো গাঢ় করার জন্য কতগুলো জর্দা রং গুলে দিলাম।একটা গ্লাস ভালো করে চিনি, লেবু ও ট্যাং দিয়ে গুলে নিলাম।মিটমিট করে হেসে সোফার সামনের টি-টেবিলে ট্রে রেখে এনাজের হাতে শরবত তুলে দিলাম।

আমিঃ এনাজ মহাশয় আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?এই রে বুঝে গেলো না তো।

মানে মানে সেখান থেকে কেটে পরলাম।রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বসে আছি।কিছু সময় পর কারো শব্দ পেয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে হালকা করে উঁকি দিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ। এনাম ওর ভাইয়ের ঝাল দেওয়া শরবত খেয়ে ফেলেছে।বেচারার অবস্থা নাজেহাল। ফর্সা মুখটা টুকটুকে লাল হয়ে গেছে।ইস্ এনাজের ছোট ভাইটা ভুলে আমার স্পেশাল শরবত খেয়ে নিয়েছে।আমি মোটেও ঐ এনাম নামক ছোট বাচ্চাটাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি ভয়ে রুমে এসে দরজা আটকে বসে রইলাম।এখন বের হলে আম্মুর ঝাড়ুর দৌড়ানি খেতে পারি।দুপুরে খাবার খেতেও বের হলাম না।আমি যখন জানলাম আমাদের বাসায় আব্বু দুই ভাইকে দাওয়াত করেছে তাতে আমার একটু সন্দেহ হলো।কিছু সময় পর আমার সন্দেহ সঠিক হলো।ইভা এসে গোপন তথ্য সূত্রে জানালো এনাজ আমাকে দেখতে এসেছে। এই খবরটা শুনে আমি ঠিক কতটা রেগে গেছি তা বলার মতো নয়।

আধা ঘন্টা পর আব্বু ডাকলো আমায়।গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বের হলাম।ঠিক তখনি কানে বেশ জোরে টান অনুভব করলাম।পাশে তাকিয়ে আম্মুকে আবিষ্কার করলাম।আমি সামনের দাঁতগুলো দেখিয়ে আম্মুকে ইমপ্রেস করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।

আম্মুঃ শরবতে কি মিশিয়েছিলি?
আমিঃ আআআআমমমি কককিছু করি নি।
আম্মুঃ আবারো মিথ্যে কথা বলছিস।
আমিঃ আমি বেশি কিছু না হলুদ, মরিচ আর লবণ জর্দা রং মিশিয়েছি😁।
আব্বুঃ নোভা কোথায় রে তুই?
আমিঃ আম্মু, আব্বু ডাকছে। কানটা ছারো।
আম্মুঃ এখন বেঁচে গেলি। পরে ঠিক ধরবো।

আম্মু রাগ করে সামনের থেকে চলে গেলো।আমি ধীর পায়ে আব্বুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আব্বু আমাকে এনাজের সাথে পার্সোনালি কথা বলার জন্য আমার রুমে পাঠালো।আমি আগে আগে চলে এলাম আমি দরজার আড়ালে কিচেন থেকে ময়লার ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।এনাজ ঢুকতেই আমি ওর ওপর ময়লা ঢেলে দিলাম।কিন্তু এবারও বিধি বাম!! এনাজ ভেবে আমি ইভার গায়ে ময়লা ফেলে দিয়েছি। ইভা তার জন্য আমাকে সারা বাড়ি একবার চক্কর দেওয়ালো। হয়রান হয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই দেখলাম এনাজ আমার খাটে আরাম করে বসে আছে।

আমিঃ আপনি এখানে কি করছেন?
এনাজঃ আঙ্কেল কেন আমাকে তোমার এখানে আসতে বলেছে সেটা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়।
আমিঃ দেখুন মোঃ এনাজ আহমেদ। আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আপনাকে আমার একটুও পছন্দ নয়।আপনি আব্বুকে মানা করে দিবেন।
এনাজঃ কিছু দিনের মধ্যে তুমি আমাকে বিয়ে করবে।ভালো করে বলছি রাজী হয়ে যাও।নয়তো আমি আঙুল বাঁকা করতে বাধ্য হবো।

হাত মুঠ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সে। মুখের রংটাও বিবর্ণ হচ্ছে। আমি উল্টো দিকে ঘুরে এক নিশ্বাসে বললাম।

আমিঃ আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি আপনাকে সহ্য করতে পারি না।

হঠাৎ কাচ ভাঙার শব্দ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম।এনাজের চোখ মুখ রাগে লাল বর্ণ ধারণ করছে।আমার সাধের ডেসিং টেবিলের আয়নার বারোটা বেজে গেছে। রাগে এনাজের কপালের রগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল ও সাপের মতো ফোঁসানোর আওয়াজ পাচ্ছি। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছি।এ আমি কিরকম রূপ দেখছি এনাজের!! আমার তো ভয়ে অলরেডি হাত-পা কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিয়েছে।শুধু মাত্র বিয়েতে রাজী হয়নি বলে এমন হিংস্র রূপ।বাবা গো বাবা🥶🥶!!

#চলবে

রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর
দৃষ্টিতে দেখবেন।

ভালোবাসার তুই পর্ব-০৬

0

#ভালোবাসার_তুই
#Part_06
#Writer_NOVA

বাসার ভেতর গুণগুণ করে গান গাচ্ছিলাম আর রুম গুচ্ছাছিলাম।আজ নাকি বাসায় কে আসবে?কে আসবে কে জানে?আম্মু, আব্বুকে জিজ্ঞেস করছিলাম কে আসবে?তাদের এক উত্তর আসলেই দেখতে পারবে।আমি খুঁজে পাচ্ছি না আসবেটা কে??আম্মু সুন্দর করে রেডি হতে বলছে।মনে একটু খোটকা লাগছে।বাসার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমায় কেউ দেখতে আসবে।কিন্তু সিউর হতে পারছি না বলে চেচামেচিও করতে পারছি না।আন্দাজে চেচামেচি করে কি মায়ের হাতে ঝাড়ুর দৌড়ানি খাবো নাকি।হালকা মেরুন রঙের একটা থ্রি পিস পরে বের হয়ে এলাম।ডেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি আর বিরবির করছি।

আমিঃ সবাইকে মাথার মাঝখানে সিঁথি করলে দেখা যায় চিকনি ক্যাটরিনা।আর আমাকে লাগে কামের বেডি জরিনা।নাহ চুল ছারবো না।মাথায় হিজাব পরবো। যদি আজ আমায় কেউ দেখতে আসে তাহলে তার খবর আছে। আমার ছোট বোনটা কোথায়?এই বাসার বার্তাবাহক তো আমার ছোট বোন। ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো আমার উত্তর পেয়ে যাই। কিন্তু ইভাতো আম্মুর সাথে কিচেনে কাজ করছে। ধূর,ভালো লাগে না।ইভাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করি দেখি ঘটনা কি?পানি কোন দিকে গড়িয়েছে?

বেশ কিছু সময় হাতের নখ কামড়িয়ে সারা রুম পায়চারি করছি।মাথায় কিছু ঢুকছে না।মাথার মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।কাজের সময় মাথাটা হ্যাং হয়ে যায়। গলা ফাটিয়ে ইভাকে বেশ কয়েক বার ডাক দিলাম।

আমিঃ ইভা, ইভা একটু এদিকে আয় তো।
ইভাঃ কেন কি হয়েছে? আমি তোমার কোন লিপস্টিক ধরিনি।তুমি তোমার লিপস্টিক যেখানে রাখছো সেখানেই আছে।
আমিঃ এই মেয়েটা,দুই লাইন বেশি না বুঝলে হয় না।ওকে কি আমি লিপস্টিকের কথা জিজ্ঞেস করেছি।মাঝে মাঝে মনে হয় তুলে আছাড় মারি।
(বিরবির করে)
ইভাঃ বোইনে কেন ডাকো?
আমিঃ তুই এদিকে এসে শুনে যা।কিচেনের থেকে শুধু শুধু গলা ফাটাইস না।

৫ মিনিট পর ইভা এসে হাজির।এসেই আমাকে একটা মুখ ঝামটা দিলো।যার মানে আমি বুঝলাম না।

ইভাঃ কি হয়েছে বল?
আমিঃ এদিকে এসে চুপ করে বস।তোর সাথে আমার কথা আছে।
ইভাঃ যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।আমার কাজ আছে।
আমিঃ ওরে আমার কামিনীরে।কাজ করে উল্টায় ফেলে দিচ্ছো সব।
ইভাঃ তোমার ঝগড়া করতে মন চাইলে পাশের বাসার ঝগড়ুটে মহিলার সাথে যোগ দেও।আমায় ডিস্টার্ব করো না।
আমিঃ তোর সাথে ফালতু পেচাল পারার সময় নেই আমার।সরাসরি সোজা পয়েন্টে চলে আসি।আজ বাড়িতে কে আসবে রে?
ইভাঃ যে আসার সে আসবে।তোমার কি?আমি তোমাকে বলবো না। (ভাব দেখিয়ে)
আমিঃ একদম ভাব নিবি না।ভাব নিলে আমার ফোন ধরা বন্ধ করে দিবো।
ইভাঃ পারোই তো এই ভয় দেখাতে।যাও যাও ভাগো এখান থেকে।তোমার ফোন না ধরলে আমার কিছু আসবে,যাবে না।
আমিঃ মনে রাখিস কথাটা।
ইভাঃ ধূর কি যে বলো না।আমি কি কিছু বলছি।তুমি আমায় ফোন ধরতে দিও। আমি তোমায় বলছি কে আসবে।
আমিঃ ব্লাকমেল আমি ভালোই করতে পারি।তাই আমার সাথে কোন ঝামেলা করো না।জলদী করে বলে দেও তো ছোট বাবু।
ইভাঃ আব্বুর অফিসে একসাথে কাজ করে সে আসবে।
আমিঃ ওহ্ আচ্ছা। আমি ভাবলাম কি না কি।তাহলে নিশ্চয়ই আঙ্কেলরা আসবে।তুই এখন যেতে পারিস।

ইভা কিচেনের দিকে চলে গেল।আমি নিশ্চিন্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুক চালাতে লাগলাম।

🍂🍂🍂

এনাজ ওয়াস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ওর ভাইয়ের বেরুবার নামও নেই। এনাজ পুরো রেডি হয়ে ভাইয়ের অপেক্ষা করছে। আজ এনাজ মেয়ে দেখতে যাবে।কিন্তু মনে হচ্ছে এনাজ নয় এনাম যাবে নিজের জন্য পাত্রী দেখতে।এনাজ বাইরে থেকে চেচিয়ে ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো।

এনাজঃ এনাম, আমার মনে হচ্ছে আজ তুই মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস।একটু কম সেজে যাস।নয়তো মেয়ে আমাকে পছন্দ না করে তোকে করে ফেলবে।তখন তো আবার আরেক বিপদ।
এনামঃ তোমার বউ তোমারি থাকবে।আমি নজর দিবো না।বড় ভাবী মায়ের সমান।তোওবা,তোওবা ভাইয়া কি বলো এসব।

ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে একদমে সব কথা বললো এনাম।মুখে তার বিশ্ব জয় করা হাসি।অবশেষে সে তার বড় ভাইকে বিয়ের জন্য মেয়ে দেঝতে রাজী করাতে পেরেছে।তবে এনাম তো জানে না এনাজের পছন্দের মেয়েকেই আজ তারা দেখতে যাচ্ছে।

এনাজ যে কোম্পানিতে চাকরী করে নোভার বাবাও সেই কোম্পানিতে একসাথে কাজ করে।নোভার বাবার এনাজকে ভীষণ পছন্দ করে। মনে মনে তার বড় মেয়ের জন্য এমন একটা ছেলেই খুজতো।এনাজ যেদিন থেকে জেনেছে নোভার বাবা ওর কোম্পানিতে কাজ করে সেদিন থেকে নিজের ব্যাপারে আরো সচেতন হয়ে গেছে। জিসানকে দিয়ে কিছু দিন আগে নোভার বাবার কাছে এনাজ বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো।এতে জেনো উনি হাতে চাঁদ পেলেন।উনিও কিছু দিন ধরে এনাজকে কথাটা বলবে করে ভাবছিলো।এনাজের প্রস্তাব তাই সে মানা করেনি।

এনাজঃ তুই এখানে থাক। আমি বাইক বের করছি।
এনামঃ আচ্ছা যাও।তবে তাড়াতাড়ি।

এনাজ বের হয়ে গেলো।টেবিল থেকে ঘড়ি নিয়ে পরতে লাগলো।হঠাৎ চোখ গেলো টেবিলে থাকা নীল মলাটের এক মোটা ডায়রীর দিকে।চোখ, মুখে বিস্ময় নিয়ে এনাম ডায়েরীটা হাতে নিলো।

এনাজঃ এটা কি ভাইয়ার ডায়েরী?এখানে কি করছে?আমি তো আগে কখনও দেখিনি।ভাইয়ার পার্সোনাল ডায়েরি হবে।আমি কি খুলে দেখবো ভেতরে কি আছে?অন্যর অনুমতি ছারা পার্সোনাল কিছু ধরা ঠিক নয়।তারপরেও তো মনটা আনচান করছে।কি আছে এই ডায়েরিতে।আমি তো জানি প্রায় রাতে ভাইয়া ডায়েরি লিখে। সেটা কি এই ডায়েরিটা।কি আছে এর মাঝে?আসলে নিষিদ্ধ জিনিসের ওপর আমাদের কৌতুহলটা বেশি থাকে। যেটা মোটেও ঠিক নয়।

মানুষ কৌতুহল প্রেমি।যেটা আমাদের ধরতে মানা করা হবে সেটার দিকে কৌতুহল বেশি থাকবে।সেটা যদি হয় কারো পার্সোনাল বিষয়। তাহলে তো আরো বেশি জেঁকে বসবো।কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারে এমন মানুষ খুব কম আছে। হাজারো দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে এনাম ডায়েরিটার দিকে তাকিয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত মনের সাথে যুদ্ধ করে ডায়েরিটা খুললো।১ম পেইজে বড় বড় অক্ষরের লেখাগুলো দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল এনাম।১ম পেইজে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লেখা ছিলো (“”NOVANAJ””)নিচে বাংলায় লেখা (“”নোভানাজ””)।যেটার অর্থ বুঝতে এনামের কিছু সময় লাগলো।

এনামঃ ভাইয়ার নাম ANAJ তাহলে প্রথম নামটা কি?

কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে পুরো নামটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো এনাম।কারণ সাথের নামটাও সে পেয়ে গেছে। একজনের নামের শেষ অক্ষর দিয়ে তার ভাইয়ের নাম শুরু হয়েছে।তাই তার ভাই মাঝের A দিয়ে দুটো নামের সাথে কানেকশন জুড়ে রেখেছে।

এনামঃ বাহ্ বাহ্।ভাইয়ার বুদ্ধির তারিফ করতে হয় তো।নিজের নামের সাথে তার নামটাও কিভাবে বুদ্ধি করে জুরে রেঝেছে।একজনের নামের শেষ তো আরেকজনের শুরু। কিন্তু এই নোভাটা কে?ভাইয়া তাহলে এই মেয়েটাকে ভালোবাসে। ভালো না বাসলে তো নিজের নামের সাথে জুরে দিতো না।ওরে বাপরে!ভাইয়া কাউকে ভালবাসে আর আমি জানি না।ভাইয়া দেখছি তলে তলে টেম্পু না চালিয়ে বাস চালানো শুরু করে দিয়েছে। এই জন্য বিয়ে করতে রাজী হচ্ছিল না।
পরের পেইজ উল্টিয়ে দেখিতো কিছু আছে কিনা।

পরের পেইজ উল্টানোর আগেই কেউ ছোঁ মেরে হাতের থেকে ডায়েরিটা নিয়ে গেল।এনাম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে এনাজ চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এনাম এর বিনিময়ে শুধু একটা ৩২ পাটি দাঁত বের করে বেক্কল মার্কা হাসি উপহার দিলো।

#চলবে

error: ©<b>গল্পপোকা ডট কম</b>