Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1475



কেবিন নং থার্টি সিক্স পর্ব-০৪

0

#কেবিন_নং_থার্টি_সিক্স
পর্ব: ০৪
জাহান আরা

পরের দিন গেলো আমার সবকিছু আবার ও চিন্তাভাবনায়।ঘটনাগুলো আবারও ভাবতে লাগলাম শুরু থেকে।
কোথাও একটা অসঙ্গতি রয়ে গেছে,আমি ধরতে পারছি না।
কি সেটা?
ভাবতে ভাবতে রুমে পায়চারী করছি।
হঠাৎ করেই আমার ফোন বেজে উঠলো,ঠিক তখনই আমার মাথায় এলো অসঙ্গতিটা কোথায় ছিলো।
ফোন নিয়ে দেখি ভাবী কল দিয়েছে।

কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভাবীর বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।বুঝতে পারলাম কোনো কারনে ভাবীর মন খারাপ।
নিজের ভিতরের কষ্টকে লুকিয়ে বেশ হাসিখুশি ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কি হয়েছে ভাবী তোমার?”

“আমারই তো সব জ্বালারে বোন।”

“কি হয়েছে,আমাকে বলো ভাবী?”

“তুমি কেনো এরকম করে ওবাড়ি চলে গেলে কাজল,কিসের টানে?”

“ভাবী তুমিও এই কথা বলছো?”

বেশ অবাক হলাম আমি ভাবীর মুখে এরকম কথা শুনে। অনন্ত ভাবী তো জানে আমি অভ্রকে কতো বেশী ভালোবাসি।

ভাবীর কান্নার শব্দ শুনে আমি খুবই অবাক হলাম।কি হয়েছে ভাবীর?

কান্না বন্ধ করে ভাবী বললো,”কাজল,আমার তো বোন নেই তুমি জানো,তুমি নিজেই আমার বোন,কখনো তোমাকে আমি ননদীর চোখে দেখি নি।যখন তুমি অভ্রকে ভালোবাসতে অভ্র তোমাকে ভালোবাসতো,তখন থেকে তোমাকে ফুল সাপোর্ট আমি দিয়েছি,তুমি যা বলেছো,যেভাবে বলেছো আমি শুনেছি,সেভাবে করেছি।”

“হ্যাঁ ভাবী,আমিও সেটা স্বীকার করি,কিন্তু এখন কি হয়েছে?”

“বোন রে,আমি যে তোমার এই কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।আমার বুকের ভিতর এক আকাশ কষ্ট জমে আছে।বারবার মনে হয় আমি সুখে স্বামীর সংসার করছি আর আমার বোনটা কষ্টে আছে,তুমি ওই বাড়ি থেকে চলে আসো কাজল,তোমার পুরো জীবন এখনো পড়ে আছে সামনে,এভাবে তোমার জীবন নষ্ট করো না।নতুন করে সব শুরু করো আবার।”

ভাবীর কথাগুলো তীরের মতো এসে আমার বুকে বিঁধতে লাগলো।মুহুর্তেই আমার হৃৎপিন্ড তীরের আঘাতে যেনো ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।কি বললো ভাবী এটা?
কিভাবে বললো ভাবী?
আবার নতুন করে সব শুরু করবো আমি?
কি শুরু করবো আবার নতুন করে?

প্রেম করবো?
যেই প্রেম আমাকে আমার অভ্র শিখিয়েছে,সেই প্রেম আমি অন্য কারো সাথে করবো আবার?
নাকি সংসার করবো?
সংসার আর কি করবো নতুন করে?
সংসার করার শখ আমার মিটে গেছে আজীবনের জন্য।
এই দেহ আবার অন্য কাউকে দিবো?
এতোটাই সহজ সবকিছু?

ভাবতেই হাসি পায় আমার।

আমার চুপ করে থাকা দেখে ভাবী আবারও জিজ্ঞেস করলো,”কিছু বলো কাজল?”

“কি বলবো ভাবী?কিভাবে সম্ভব ভাবী এটা বলো?
আমি কিভাবে অন্য কাউকে মেনে নিবো?
ভালোবেসেছি একজন কে,সংসার করলাম একজনের সাথে,সে নেই বলে এখন অন্য কাউকে ভালোবাসবো?
ভাবী,ভালোবাসা কি এতোটাই ঠুনকো?
আর এতোই পরিবর্তনশীল?

ভাবী,কিভাবে বিশ্বাস করবো,অন্য কাউকে বিয়ে করলে সে আমাকে অভ্রর মতো ভালোবাসবে?
অভ্রর মতো করে আমাকে বুঝবে,আমার যত্ম নিবে?
তুমি কি সেই নিশ্চয়তা আমাকে দিতে পারবে?”

ভাবী চুপ করে রইলো।

“ভাবী,মৌষলপর্বে বসুদেবের মৃত্যুর পর তাঁর চার স্ত্রী দেবকী, ভদ্রা, মদিরা ও রোহিণী সহমরণে যায়।এক সময় সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিলো। রাজা রামমোহন রায় দক্ষ হাতে সতীদাহপ্রথা বিলুপ্ত করেছেন।এযুগে যদি সতীদাহ প্রথা থাকতো তবে আমিও অভ্রর সাথে সহমরণে যেতাম।সে আমার বড় সৌভাগ্য হতো ভাবী।

আমি বড় অভাগী ভাবী।আমি তো অভ্রর সাথে সহমরণে যেতে পারি নি,ছোট একটা জীবন কি আমি অভ্রর স্মৃতি নিয়ে জীবন কাটাতে পারবো না?
কতোদিন বাঁচবো ভাবী আর?
অভ্রর যে ভালোবাসা পেয়েছি তা নিয়ে বাকী জীবন কাটাতে পারবো,বরং তোমরা নতুন করে সব শুরু করতে বললেই আমার আরো কষ্ট হবে।
আমাকে এরকম কিছু কখনো বলো না আর ভাবী।”

“তুই কেনো এতো ভালোবাসতে পারিস রে কাজল,কেনো এতো পাগল তুই?
তুই যেভাবে সুখী হোস বোন,তাই থাক,আমি আর বলবো না বোন কিছু।”

অতি আবেগের সময় ভাবী আমাকে তুই করে বলে,এখন ভাবী অনেক কিছু বলবে আমি জানি।
ফোন কেটে দিলাম আমি।আমার মাথায় এখন অন্যকিছু ঘুরছে।

অভ্রর সেদিন রাতে একটা কল এসেছিলো!

প্রচুর গোয়েন্দা গল্প পড়ার কারনে হঠাৎ করেই আমার মনে পড়ে গেলো বিষয়টা নিশ্চয় পরিকল্পিত। সেদিন রাতে যেই ব্যক্তি কল দিয়েছে অভ্রকে,সে নিশ্চয় কোনো না কোনোভাবে ডাকাত দলের সাথে যুক্ত।

আলমারি খুলে দ্রুত অভ্রর ফোন বের করলাম।
ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে তাকাতেই চোখ ভিজে গেলো নিজের অজান্তেই।
অভ্রর আর আমার একটা ক্যান্ডিড ছবি।কলেজের ল্যাবে তোলা একটা ছবি।অভ্র গালের নিচে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,আমি একটা জার হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি।বাতাসে আমার চুল উড়ছে,চোখে খয়েরী ফ্রেমের চশমা,পরনে সাদা এপ্রোন।অভ্রর পরনে কালো শার্ট,নীল জিন্স।

আমার খুব প্রিয় ছিলো ছবিটি,তাই অভ্র ছবিটি ওয়ালপেপারে রেখেছে।
এই ছবিটি তোলার দিনের কথা আমার মনে পড়ে গেলো।
সেদিন অভ্রর সাথে বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো।হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে অভ্র কলেজের সামনে চলে আসে আমাকে পিক করার জন্য,কিন্তু এসে দেখে আমি নেই।অগত্যা অভ্র কলেজের ভিতরে চলে যায়।ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আমি ল্যাবে আছি।
সেকেন্ড ইয়ারের প্রাকটিক্যাল ক্লাস নিচ্ছি।বলে রাখা ভালো,অভ্রকে কলেজের সব স্যার,ম্যাডামেরা চিনতো আমার হবু বর হিসেবে।
সহজেই তাই অভ্র ল্যাবে যেতে পারলো।গিয়ে দেখে আমি মহা ব্যস্ত,দম ফেলার ও ফুরসত পাচ্ছি না।অগত্যা বেচারা গালের নিচে হাত দিয়ে বসে বসে আমাকে দেখতে থাকে।সেই মুহুর্তে কলেজের ফটোগ্রাফার ল্যাবে আসে আমার সাথে অনুষ্ঠানের ছবি তোলা নিয়ে কথা বলতে।এরকম একটা ভিউ দেখে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারে না সে।তুলে ফেলে ছবিটি। পরবর্তীতে আমাদের বিয়েতে বড় করে বাঁধাই করে ছবিটি আমাকে গিফট করে সে।সেদিন আমি আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলাম।

পুরোনো স্মৃতি ভাবতে ভাবতে আবারও কেঁদে ফেলি আমি।
কোথায় চলে গেলো অভ্র আমাকে রেখে!

অভ্রর কথা ভাবলেই আমার মনে পড়ে যায় চোখের সামনে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া একজন মানুষের কথা।জীবন্ত একজন মানুষ যে কি-না কিছু সময় আগেও আমার সাথে ছিলো।

না,আর পারছি না ভাবতে।মাথায় ভোঁতা এক ধরনের ব্যথা হচ্ছে,ভীষণ ভার ভার লাগছে মাথা,দুচোখ জ্বলে যাচ্ছে।
বুকের ভিতর একটা প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে আমার।এই আগুন নিভবে কবে?
কে জানে!

ফোন থেকে সেদিনের কল হিস্টোরি বের করলাম।লাস্ট কল এসেছে একটা রবি নাম্বার থেকে।
কলটির রেকর্ডিং অপশনে গেলাম।রেকর্ড প্লে করতেই নিশ্চিত হলাম এটা আসলেই প্ল্যান করা ছিলো।কেননা যেখানে ঘরেই ফুল নেটওয়ার্ক থাকে,সেখানে অভ্র কল রিসিভ করে কথা বলা মাত্রই ওপাশের লোকটি বললো,স্যার কথা ক্লিয়ার শুনতে পাচ্ছি না,আপনি একটু বের হয়ে কথা বলেন,নেটওয়ার্ক প্রবলেম করছে।

অবাক হলাম আমি,এই বাসায় সবসময় ফোর জি থাকে,সেখানে রুমে নেটওয়ার্ক প্রবলেমের কথাটা বলার কারন কি হতে পারে?
নিশ্চয় অভ্রকে ঘর থেকে বের করার জন্য,যাতে ওদের কেউ একজন নিশ্চিন্তে বাসায় ঢুকতে পারে।

দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে আমার কোনো অসুবিধা হলো না।
নাম্বারটা নিজের ফোনে নিয়ে ডায়াল করলাম আমি।যদিও সন্দেহ ছিলো ফোনটা অফ থাকবে।

আমার ধারণাই সত্যি হলো।সুইচ অফ বলছে ফোনের।একটা ক্লু তো পেয়েছি,এই নাম্বারটা কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা তা থেকেই খুঁজে বের করতে পারবো কে ছিলো সেই লোক।

অনেক দিন পরে নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম আমি।কেমন যেনো নিশ্চিন্ত অনুভব করছি আজ।অন্তত কানাগলিতে আর ঘুরতে হবে না খুনীদের ধরার জন্য।এখন শুধু নেহাল আসার অপেক্ষা। নেহাল আসলেই ওর মামাকে দিয়ে এই নাম্বারের ডিটেইলস বের করে জানা যাবে সবকিছু।
ফোনে অভ্রর একটা ছবি বের করে কয়েকটা চুমু খেলাম,তারপর আস্তে করে অভ্রকে বললাম,”আর অল্প কয়দিন সোনা,আমি শীঘ্রই খুঁজে বের করবো ওদের।আমার পরনের লাল শাড়ি কেঁড়ে নিয়েছে যারা,আমাকে বিধবা করেছে যারা,বিনা কারনে তোমাকে হত্যা করেছে যারা,তাদের শাস্তি আমি নিজ হাতে দিবো।”

অনেক রাত হয়ে গেছে,ঘুমাতে হবে,কাল থেকে কলেজে জয়েন করবো।বাসায় বসে থাকলে কষ্ট আরো বাড়বে,নেহাল ঠিকই বলেছে।
অভ্রর একটা ছবি বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম।বিয়ের পর অভ্রকে কথা দিয়েছি সারাজীবন অভ্রকে আমার বুকে ঘুমাতে দিবো,এখন অভ্র নেই,কিন্তু তবুও ওকে দেওয়া কথার বরখেলাপ আমি করতে পারছি না।
মৃত্যুর পর যদি দেখা হয় কখনো,অভ্র যাতে না বলতে পারে আমি ওকে দেওয়া কথা রাখি নি।

চলবে…..???

কেবিন নং থার্টি সিক্স পর্ব-০৩

0

#কেবিন_নং_থার্টি_সিক্স
পর্ব:০৩
লিখা:জাহান আরা

দরজায় টোকা পড়তেই অভ্র খানিকটা বিরক্ত হলো।এরকম রোমান্সের সময় আবার কে এলো বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
অভ্র দরজা খুলতেই রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো ৫ জন মানুষ। সবার মুখে মুখোশ পরা।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি,অভ্র দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।সম্বিৎ পেতেই আমি চিৎকার করে উঠি,কে আপনারা? কি চা…

আমার কথা শেষ হবার আগেই একজন এসে আমার মুখ বেঁধে দিলো।”

এটুকু বলে একটা লম্বা শ্বাস নিলাম।এর পরের ঘটনা আমি কাউকে বলতে পারবো না কি হয়েছিলো আমার সাথে।সেটা ভাবলেই আমার ইচ্ছে করে পুড়িয়ে দিতে এই শরীরটা কে।

ওপাশ থেকে নেহাল জিজ্ঞেস করলো,”তারপর কি হলো?”

নেহালের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে নিজের অজান্তে দুচোখ ভিজে গেলো বুঝতে পারি নি।চোখ মুছে নিলাম পরনের সাদা শাড়ির আঁচল দিয়ে।
বাহিরে কোথাও একটা পাখি অনেকক্ষণ ধরে ডেকে চলেছে। সেই ডাক ও যেনো কান্নামাখা।সেই পাখিটিও যেনো কারো বিরহে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে,করুণ সুরে অন্য কাউকে ডাকছে।কিন্তু যাকে ডাকছে সে আসছে না।
আচ্ছা এই পাখিটিও কি আমার মতো নিজের ভালোবাসার মানুষ হারিয়েছে?
তার ছোট্ট বুকেও নিশ্চয় একবুক জ্বালা?

নেহাল আবার জিজ্ঞেস করলো,”তারপর কি হলো?”

“সবগুলো লোকের পরনে কালো শার্ট-প্যান্ট ছিলো। সবাই খুব লম্বা। সাথে থাকা রশি দিয়ে ওরা আমাকে আর অভ্র কে বেঁধে ফেললো।তারপর আমাকে বললো,রুমে যা আছে,টাকা পয়সা,স্বর্ণালংকার সব বের করে দিতে।
আমার দুচোখ তখন কান্নায় ভিজে যাচ্ছে। অভ্রর দিকে তাকাতেই দেখলাম অভ্র চোখ দিয়ে ইশারা করছে আমাকে সব বের করে দেয়ার জন্য।
আমি আলমারির সামনে যেতেই আমার হাতের বাঁধন খুলে দিলো।
কাঁপা কাঁপা হাতে আমি আলমারি থেকে সব বের করে দিলাম।বিয়েতে স্বর্ণ দিয়েছিলো শাশুড়ি আম্মা ১০ ভরি,অভ্র একটা ডায়মন্ডের নেকলেস সেট গিফট করেছিলো বাসর রাতে।তাও দিয়ে দিলাম।২ লক্ষ টাকা ছিলো,দুদিন আগেই অভ্র ব্যাংক থেকে তুলে এনেছিলো,সেই টাকা ও দিয়ে দিলাম ওদের হাতে।
তোর মনে আছে,তুই আমাকে একটা রিং দিয়েছিলি,আর একটা লকেট,সবসময় ওগুলো আমার পরা থাকতো। সেই লকেট আর রিং ওরা কেঁড়ে নিলো।
আমার হাত আবার বেঁধে দিলো ওরা,তারপর নিয়ে গেলো বাহিরে ডাইনিং রুমে।
আমাকে আর অভ্রকে ডাইনিং রুমে দাঁড় করিয়ে ওরা একে একে আব্বা আম্মা,বড় ভাবী,ছোট আপা সবার রুমে ঢুকলো।
সবার থেকেই স্বর্ণালংকার,টাকা সব বের করে নিলো।
সবাইকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এলো।
কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই একজন হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে এক কোপ বসিয়ে দিলো অভ্রর ঘাড়ে।
আমার বুক ফেটে চিৎকার আসছিলো কিন্তু চিৎকার করতে পারছিলাম না মুখের বাঁধনের জন্য।মনে মনে আল্লাহকে বলছিলাম,আল্লাহ বাঁচাও আমার স্বামীকে। কেনো ওকে মেরে ফেলছে আল্লাহ,আমাকে বিধবা করো না।

চোখের সামনেই কুপিয়ে টুকরো করতে লাগলো ওরা অভ্রকে,আমার তখন আর সহ্য করার ক্ষমতা ছিলো না।জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম।”

নেহাল চুপ করে রইলো শুনে,আমার প্রচন্ড বুক ব্যথা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর নেহাল জিজ্ঞেস করলো, “তুই আজকাল কি করছিস,সময় কাটাচ্ছিস কিভাবে?”

নেহালের প্রশ্ন শুনে আমার মনে পড়লো আমি যে একটা কলেজের রসায়ন টিচার,ডিপার্টমেন্ট হেড।
কতো দিন আমি কলেজে যাই না!
আশ্চর্য,এতো দিন আমার মনেও ছিলো না আমি আসলে কিছু করতাম।
আমার চুপ করে থাকার মানে বুঝতে পারলো নেহাল,তারপর বললো,”এভাবে থেকে কি লাভ হবে বল?
কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখ,তাহলে অন্তত ডিপ্রেশন থেকে কিছুটা রিলিফ পাবি,কিছু সময়ের জন্য সব ভুলতে পারবি।বাসায় বসে থাকলে যন্ত্রণা কুঁড়ে কুড়ে খাবে।বারবার সেই কালো স্মৃতি মনে পড়বে।কাল থেকে কলেজে জয়েন কর।”

“আচ্ছা,দেখি।”

“অনেক রাত হয়েছে,এবার ঘুমানোর ট্রাই কর।আগামী পরশু দেখা হবে তোর কলেজে।
রাখছি,আল্লাহ হাফিজ।”

নেহাল ফোন রেখে দিতেই আমার বুকের ভিতর আবারও চিনচিনে ব্যথা টের পেতে লাগলাম।এই রুমেই তো অভ্র ছিলো আমার সাথে।এই বিছানায়!
এই সেই ড্রেসিং টেবিল,যেখানে অভ্র আমাকে কাজল পরিয়ে দিয়েছে।
আজ সব কিছু আছে শুধু অভ্র নেই!

অভ্র নেই কথাটা আজও আমার বিশ্বাস হয় না।মনে হয় যেনো এখনই অভ্র হাসপাতাল থেকে ফিরবে।ফিরার আগে আমাকে কল দিয়ে বলবে,আমি বের হচ্ছি কাজল,তুমি প্রিপেয়ার্ড তো,আজ কিন্তু কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

এটুকু বলেই হাহাহা করে হাসবে।বিয়ের পর অভ্র যেখানেই যেতো কোনো কাজে,বাসায় ফেরার আগে আমাকে কল দিয়ে এই কথা বলতো।বলে নিজেই অট্টহাসিতে ভেঙে পড়তো।
আর ওদিকে আমি লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম।

ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকেই মিথ্যে অপেক্ষা করে বসে রইলাম,এখনই অভ্র কল দিবে,ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠবে “অভ্র” নামটা।

আমার মিথ্যে অপেক্ষারা আর শেষ হবে না এই জন্মে,আর কখনোই অভ্রর কল আসবে না।তবুও তো মন বুঝতে চায় না।জেনেও মন অপেক্ষা করে।

বুকের ভিতর যেনো আগুন জ্বলছে। সেই আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে আমাকে।এই যে আগুন বুকের ভিতর,এই আগুন নিভবে সেদিন,যেদিন অভ্রকে যেভাবে খুন করেছে,সেভাবে খুনীদের ও খুন করবো আমি।

চলবে……???

কেবিন নং থার্টি সিক্স পর্ব-০২

0

#কেবিন_নং_থার্টি_সিক্স
পর্ব:০২
লিখা:জাহান আরা

রাত সাড়ে দশটায় অনাকাঙ্ক্ষিত কল টি এলো।অচেনা নাম্বার দেখে প্রথমে রিসিভ করি নি,কিন্তু বারবার ফোন বাজতে থাকায় অগত্যা রিসিভ করতে হলো।
ওপাশ থেকে বিষাদময় একটা কণ্ঠস্বর বলে উঠলো,”কাজল!কাজললতা! ”

এক মুহূর্ত লাগলো আমার বুঝতে কে কল দিয়েছে,বুঝতে পারার সাথে সাথেই বুকের ভিতরের ক্ষতটা যেনো কেউ খুঁচিয়ে তুললো।
গলায় ফাঁস হয়ে বসা কান্নারা বের হওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছে তবুও তাদের দমিয়ে রাখলাম অনেক চেষ্টা করে।
আমার যেনো কিছুটা অভিমান হলো।এতোদিন পর কেনো নেহাল কল দিলো!
ও কি জানতে পারে নি এতোদিন?

আমি আর নেহাল সেই স্কুল লাইফ থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড। দুজনের বাসা পাশাপাশি হওয়াতে স্কুল কলেজ সবখানেই দু’জন একসাথে ছিলাম।সবাই ভাবতো আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। বিষয়টা নিয়ে আমরা দু’জন ও খুব মজা নিতাম।কেউই ওদের ভুল ভাঙাতে যেতাম না।
ক্লাসের সবার বদ্ধমূল ধারণা ছিলো এটা।তবে কখনো আমাদের বাসা থেকে কেউ কিছু সন্দেহ করে নি বা বাঁধা দেয় নি।

একপর্যায়ে যখন ক্লাসের সবাইকে অভ্রর কথা জানালাম তখন সবাই কিছুটা অবাক হয়।
কেউই ভাবতেই পারে নি আমার আর নেহালের মধ্যে শুধুই ফ্রেন্ডশিপ রয়েছে।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবারও বললো,”কাজল!কাজললতা!লতা!রাগ করে থাকিস না দোস্ত আমার,আমি আসলেই এতোদিন কোনো খবর পাই নি,এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো অথচ আমি কারো থেকেই খবর পাই নি।আজ দুপুরে জানতে পেরেছি,জানতে পারার সাথে সাথেই আমি বাংলাদেশের টিকিট কেটে ফেলেছি দোস্ত।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্তে করে বললাম,”ওহ আচ্ছা।”

“এখনো রেগে আছিস আমার উপর?”

“না রাগবো কেনো?”

“আমি জানি দোস্ত,তোকে আমার চাইতে বেশি ভালো করে কে চিনে?
কেউ না,১১ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের,বন্ডিং কি এতোই খারাপ না-কি বল?”

“হু,এজন্যই আমার বিয়েতে আসার ও সময় হয় নি তোর,আর আমাকে তো কল দেওয়াটাই ভুলে গেছিস তুই।”

“কি করবো বল দোস্ত,আমি ছেলে তুই মেয়ে,এটাই প্রধান বাঁধা,আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এটা তুই জানিস,আমি জানি,আমরা মানি,কিন্তু সবাই তো এই সম্পর্ক টা সহজভাবে নিবে না,আমি আসলে চাই নি তোর কোনো ক্ষতি হোক আমার দ্বারা। তাই যোগাযোগ রাখি নি।অভ্র ভাই তো এমনিতেই কিছুটা কনজারভেটিভ,অন্তত আর কেউ না জানুক আমি তো জানি অভ্র ভাইকে তুই কতোটা ভালোবাসতি আর উনি তোকে কতোটা ভালোবাসতো।আমাকে নিয়ে তোর সংসারে কোনো অশান্তি হোক তা আমি চাই নি।আগেই সাবধানতা অবলম্বন করেছি তাই।তোর জন্য আমার সবসময়ই দোয়া ছিলো,আজীবন থাকবে।”

অভ্রর নাম শুনতেই আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।কেঁদে ফেললাম।ওপাশ থেকে নেহাল কিছুটা সময় দিলো আমাকে নিজেকে সামলে নেয়ার।তারপর বললো,”কিভাবে কি হয়েছে আমাকে খুলে বল,আমি আসছি দেশে,আমার ছোট মামা পুলিশ কমিশনার,আমি মামাকে বলবো অভ্র ভাইয়ের মামলার তদন্তের কথা।”

নেহালের কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম।সেদিনের সব স্মৃতি আজও আমার মনে আছে।বিন্দুবিসর্গসহ সব স্মৃতি মাথায় রয়ে গেছে।

“রাত দশটার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আর অভ্র আমাদের রুমে চলে আসি।রাত ১১ টার দিকে অভ্রর কল আসে,ওর কোনো এক পেশেন্ট কল দিয়েছিলো সম্ভবত। ঘরে নেটওয়ার্ক সমস্যা হওয়ায় অভ্র মেইন ডোর খুলে বাগানে চলে যায়। যাওয়ার সময় দুষ্ট হাসি হেসে আমাকে বলে যায়,রেডি থাকো বউ,আসছি।
অভ্রর কথা শুনে আমি ও হেসে উঠি।ও বের হতেই আমি উঠে পরনের শাড়ি পালটে সিঁদুর লাল রঙের শাড়িটা পরে নিই, শাড়িটি অভ্রর খুব প্রিয় ছিলো।
দুই হাত ভর্তি রেশমি চুড়ি পরি,একটু হালকা সাজগোজ করি। কাজল পরতে গিয়ে ও আর পরি না।আমি জানি অভ্র নিজ হাতে আমাকে কাজল পরিয়ে দিতে কতোটা পছন্দ করে।

বাহিরে ডাইনিং রুমে কিছু একটা ধাক্কা খাওয়ার শব্দ পাই হঠাৎ করে। কিন্তু তখন ততটা পাত্তা দিই নি,ঘরে দুইটা বিড়াল আছে।বড় ভাসুরের মেয়ে রাইফার পোষা।মেয়েটা সারাদিন দুই বিড়ালের সাথে কাটায়।
তখন যদি একবার উঠে এসে চেক করতাম অথবা অভ্রকে জিজ্ঞেস করতাম তবে হয়তো এই দূর্ঘটনা হতো না।
১০ মিনিট পর অভ্র রুমে এলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,কে কল দিয়েছে?
অভ্র বললো, কল দিয়েছে এক লোক,আমার পুরনো পেশেন্ট ছিলো,তার কথা শেষ হতেই চায় না।কোনোমতে বলে এসেছি ভাই দিনে কথা বলবো,আমি প্রথমত ছুটিতে আছি এখন,দ্বিতয়ত এখন আমার ঘুমের সময়,আপনার সাথে দিনে কথা বলবো।

অভ্রর কথার মাঝখানেই বাহিরে আবারও কিছু শব্দ হলো,দরজা খোলার শব্দের মতো।
অভ্র একটু জোরে ডাকলো,বাবা না-কি?

ওপাশ থেকে জবাব এলো,হু!

শ্বশুর আব্বার রাতে ঘুম না এলে বাগানে হাটার অভ্যাস,উনি প্রায় এরকম করেন।তাই আর কেউ সন্দেহ করলো না।
কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারি নি সেটা শ্বশুর আব্বা ছিলো না।ছিলো ডাকাতের মধ্যে একজন,যে কি-না দরজা খুলে দিচ্ছিলো অন্যদেরকে।

অভ্র আমার সামনে বসে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক।তারপর বললো,আমার যদি কখনো ফাঁসির আদেশ হয়,আমি শেষ ইচ্ছে জানাতে হলে বলবো তোমাকে এই শাড়িটি পরে যেনো ১ ঘন্টার জন্য আমার সামনে বসিয়ে রাখে,আমি যেনো দুচোখের তৃষ্ণা মেটাতে পারি তোমাকে দেখে।

অভ্রর কথা শুনে আমি কিছুটা লজ্জা পাই।আমার ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খায় অভ্র।তারপর ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে কাজল নিয়ে আমাকে কাজল পরিয়ে দিলো।

বাহিরের রুমে কারো পা টিপে হাটার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, অভ্রকে বলতেই অভ্র বিড়াল বলে উড়িয়ে দিলো।আরো গভীরভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তখনই দরজায় নক করার শব্দ শুনতে পেলাম।

চলবে…..???

কেবিন নং থার্টি সিক্স পর্ব-০১

0

#কেবিন_নং_থার্টি_সিক্স
পর্ব: ০১
লিখা: জাহান আরা

বিয়ের ৭ দিনের মাথায় আমি বিধবা হলাম।৪ বছর ধরে ভালোবেসে যাকে বিয়ে করেছি সেই ভালোবাসার মানুষ কে হারিয়ে ফেললাম চোখের পলকে। আমার চোখের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হলো আমার ভালোবাসার মানুষকে।
একঘর মানুষ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম কিভাবে জীবন্ত একটা মানুষকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে।

মা বাবা ভাই বোন স্ত্রী সবার সামনেই খুন হলো আমার স্বামী।
নিজের রক্তাক্ত স্বামীকে দেখতে দেখতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ি।
দুই হাতের মেহেদী রঙ এখনো ফ্যাকাশে হয় নি,নাকে দেওয়া ডায়মন্ডের নাকফুলটি ঝিকঝিক করে তার সৌন্দর্য প্রকাশ করছে সেই মুহূর্তেই নিজের বৈধব্যকে প্রকাশ করার জন্য খুলে ফেললাম নাকের নাকফুল।
দুই হাত ভর্তি রেশমি চুড়ি ছিলো,তার মধ্যে চিকন দু’খানা সোনার বালা।
খুলে ফেললাম সেই বালা,চুড়ি।

বিয়েতে পরার জন্য অনেকগুলো রঙিন শাড়ির মধ্যে একটি সিঁদুর লাল রঙের শাড়ি ছিলো আমার স্বামী অভ্রর প্রিয় শাড়ি।
ভাগ্যক্রমে সেদিন সেই লাল শাড়ি পরনে ছিলো,সেই শাড়ি খুলে পরতে হলো একটা সাদা শাড়ি।

এই জগৎ আমার মিথ্যা মনে হয়।সব মিথ্যে অভ্র ছাড়া। আমার অভ্র তো আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো,কেনো এভাবে আমার অভ্রকে মেরে ফেললো?
যে স্বপ্ন দেখে স্বামীর সংসারে এসেছি সেই স্বপ্ন আজন্মের জন্য স্বপ্নই রয়ে গেলো। মাঝখান থেকে ফাঁকি দিয়ে অভ্র চলে গেলো।
অভ্রর মৃত্যুর পর আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়ি।২ বার সুইসাইড করতে গিয়েও ব্যর্থ হই।
প্রথম বার হাসপাতালে নিয়ে যায় ঘুমের ঔষধ খাওয়ার পর,দ্বিতীয় বার গলায় ফাঁস দিতে গেলে দরজা ভেঙে শ্বশুর বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে আমাকে।

আমার শাশুড়ী আমার এই অবস্থা দেখে আরো বেশি ভেঙে পড়েন।বাবার বাড়ি থেকে বাবা মা ভাইয়া আপুরা এসে অনেক চেষ্টা করলো আমাকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু প্রাণ সয় না আমার এই বাড়ি ছাড়তে।
যদিও জানতাম এখানে আমার কিছু নেই।
প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর শুধু কান্না করে আল্লাহ কে জিজ্ঞেস করতাম,কি এমন অপরাধ ছিলো আল্লাহ,কেনো এভাবে অভ্রকে মেরে ফেললো ওরা?
কেনো আমার হাতের মেহেদীর রঙ উঠার আগেই বিধবা হয়ে গেলাম?
কেনো?
কি দিবে আমার এই প্রশ্নের উত্তর?
আমার বুক ফাঁটা কান্না শুনে বাসার সবাই কাঁদতো।আশেপাশের সবাই আসতো আমাকে সান্ত্বনা দিতে।
কিন্তু কিভাবে আমি শান্ত হবো?
আমি তো জানি আমি কাকে হারিয়েছি?
আমাকে কেনো খুন করলো না,আগে আমাকে মেরে ফেলতো তারপর আমার অভ্রকে মারতো।কিভাবে আমি বাঁচবো?
কাকে নিয়ে বাঁচবো আমি?

অভ্রর মৃত্যুর পর পুলিশ এলো।সবাইকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো।
পুলিশ এসে আমার জবানবন্দি নিলো।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম আমি পুলিশ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করলো,কাউকে আমি চিনতে পেরেছি কি-না! এই ঘটনার সাথে কোনোভাবে আমি জড়িত কি-না। এমন ও তো হতে পারে আমি পরকীয়া করছি,অভ্র বাঁধা দেয়ায় মানুষ ধরিয়ে ওকে খুন করাই,এবং সবাইকে বিভ্রান্ত করার জন্য ডাকাতির নাটক সাজাই।

কি নিষ্ঠুরভাবে তারা কথাগুলো বলে গেলো।তাদের বল প্রতিটি কথা ছুরির মতো ভিতরে গিয়ে আমার কলিজা ফালাফালা করে দিলো।

১ মাস ধরে পুলিশের আসা যাওয়া,জিজ্ঞাবাদের পর ওরা জানালো,তদন্ত চলছে,আসামীদের ধরতে পারলে জানানো হবে আমাদের।
আমি জানতাম কিছুই হবে না আর।আস্তে আস্তে ওরাও ভুলে যাবে অভ্র হত্যার কথা।তাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই,প্রতিদিন হাজারটা মামলার ভিড়ে একটা অভ্র হত্যার কথা মনে না থাকাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু আমার কাছে তো অভ্র একজনই,সে আমার ভালোবাসা। সবাই ভুলে যেতে পারে কিন্তু আমি কিভাবে ভুলবো। এ যে একটা গভীর ক্ষত,কিছুতেই সারবে না।

২ মাস পর বাবার বাড়িতে এলাম।একপ্রকার জোর করেই ভাইয়ারা তুলে নিয়ে আসলো।বাবার বাড়ি আসার পর কষ্ট আরো বেশি হতে লাগলো আমার।সারাদিন আশেপাশের মহিলারা আসে,সবাই বারবার জিজ্ঞেস করে কিভাবে কি হয়েছিলো।
সবার কাছে একটা গল্পমাত্র,আমার কাছে তো জীবনের একটা কালো অধ্যায়।
যার ব্যথা সে-ই বুঝে,বাকীরা তো গল্প খোঁজে!

আমার কাটা গায়ে লবনের ছিঁটার মতো লাগতো যখন সবাই আমাকে দেখে আহ,উহ,আহারে মেয়েটার কপাল পোড়া,অভাগী,পোড়াকপালি বলে আফসোস করতো।

বড়ভাবী বিষয়টা খেয়াল করে সবার আগে,৭ দিনের মাথায় ভাবী বাড়িতে বিশেষ করে আমার কাছে মহিলাদের আসা বন্ধ করে দেয় দক্ষ হাতে।
যেই এসে বলতো,”কাজলের সাথে একটু দেখা করতে এসেছি,আহারে মেয়েটাকে একটু দেখতে এসেছি” তাকেই ভাবী মুখের উপর বলে দিতো,”দেখা করে কি করবেন?
ওর জামাইকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন আপনারা?
তাহলে দেখা করার দরকার নাই,ও মেন্টালি সিক এখন।”
ভাবীর এরকম চাঁচাছোলা জবাবের জন্য আশেপাশের সব মহিলার কাছে ভাবী বেয়াদব বউ বলে পরিচিত হয়ে গেলো দুই দিনের মাথায়।
তাতে ভাবী একটুও কষ্ট পায় নি।রিলেশনের সময় সবার আগে অভ্রর কথা আমি ভাবীকে জানিয়েছি,ভাবী আস্তে আস্তে সবাইকে ম্যানেজ করে দিয়েছে বাসায়।
যখনই আমি কান্না করতাম ভাবী,আপুরা ছুটে আসতো আমাকে সান্ত্বনা দিতে। সারাক্ষণই কেউ না কেউ সাথে থাকতো আমার।

কিন্তু কিছুতেই আমি মনকে শান্ত করতে পারতাম না।
কান্না যেনো গলার কাছে এসে দলা পাকিয়ে থাকতো। বুকের উপর যেনো একটা দশ মণ ওজনের পাথর বসে আছে সবসময়। ইচ্ছে করতো বুক কেটে ভিতর থেকে সব জ্বালা যন্ত্রণা বের করে দিই।
১০ দিন বাবার বাড়িতে থাকার পর ভিতরের জ্বালাপোড়া আরো বেড়ে গেলো। শাশুড়ী আম্মাকে কল দিয়ে বললাম,”মা’গো,তোমার কাজ করে দেয়ার জন্যও তো একটা দাসীবাঁদী দরকার হয়,আমাকে না হয় তোমার দাসী হিসেবে রেখে দাও মা,খাওয়া পরা ছাড়া কিছু দিতে হবে না,তবুও আমাকে নিয়ে যাও তোমার বাড়ি,ওখানে আমার জামাইয়ের সব স্মৃতি মা।ছোট একটা জীবন আমার কেটে যাবে মা ওর স্মৃতিচারণ করে,আমাকে তাড়িয়ে দিও না মা,ঠাঁই দাও একটু।”

শাশুড়ী আম্মা কান্নার জন্য কথা বলতে পারলেন না।কোনোমতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললেন,”তুই চলে আয় মা,আমার দরজা তোর জন্য আজীবন খোলা থাকবে।”

সেদিন রাতেই বাবা মা ভাইয়া আপু সবার কথা উপেক্ষা করে চলে এলাম বাবার বাড়ি থেকে। ভাবী আপুরা অনেক চেষ্টা করলো আমাকে নিবৃত্ত করতে। কিন্তু পারে নি কেউ।
রাত সাড়ে আটটায় আমি শ্বশুর বাড়ি চলে এলাম।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম,মৃত্যু ছাড়া আর এই বাড়ি ছেড়ে যাবো না।
এখন আমার একমাত্র কাজ হচ্ছে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করা ওদের।

চলবে……..

পুতুল ছেলেটি পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

1

#পুতুল_ছেলেটি
#Last_Part
#Writer_NOVA

৫ দিন পর………

টিনের ঘেরা দেওয়া এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীলাভ ও সাহিয়া।তাদের মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে।ঢুকবে কি ঢুকবে না।ছোট টিনের গেইটের সামনে বিগত পাঁচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঢোকার সাহস হচ্ছে না। হাতে একটা ছোট ল্যাগেজ।সাহিয়ার এবার রাগ উঠে গেলো।এতদূর যার্নি করে এসে কার ভালো লাগে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে।তাই সাহিয়া কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকে গেলো।পেছনে পেছনে নীলাভ।

মিনারা খাতুন চুলোয় রান্না চড়িয়েছেন।আজ তাদের বাড়ি মেহমান আসবে বলে।পাশের বাড়ির মাইশার মা এসে তাকে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। হাবিবুর রহমান ছোট নাগ বারান্দায় পায়চারি করছেন।এতক্ষণে তো ওদের চলে আসার কথা। কিন্তু এখনো আসছে না কেন।হঠাৎ টিনের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকালো।তাকিয়েই সাহিয়া ও নীলাভকে দেখতে পেলো।অনেকটা দৌড়ে সে ওদের দিকে চলে এলো।এসেই নীলাভকে জড়িয়ে ধরলো।

হাবিবুরঃ তোমরা চলে এসেছো বাবা।আসতে তোমাদের কোন সমস্যা হয়নি তো বাবা।মাহিমের মা, ও মাহিমের মা। কোথায় তুমি? দেখো কে এসেছে।

নীলাভ ও সাহিয়া দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হাবিবুর রহমানের দিকে।উনাকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার ছেলে ফিরে এসেছে। রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বের হলো মিনারা খাতুন।

মিনারাঃ বাজান,তোমরা আইয়া পরছো।মেলা(অনেক) খুশি হইছি তোমগো দেইখা।এরে এমনে দাঁড়ায় রইছো কেন ঘরে চলো।মাইয়াডারে তো চিনলাম না।(বিস্মিত চোখে)

সাহিয়াঃ আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন? আমি সাহিয়া।উনার হবু বউ।

মিনারাঃ ওয়ালাকুমুস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো মা?মাশাআল্লাহ, আমার বাজান দেহি পরীর মতো একখান মাইয়া পছন্দ করছে।চলো, চলো ঘরে চলো।কতদূর থিকা আসছো।হাত-মুখ ধুইয়া ফ্রেশ হইয়া নেও।

হাবিবুরঃ তোমাদের আইতে কোন কষ্ট হয় নাই তো।আমি ভাবছিলাম তুমি বোধহয় আসবাই না।আমারে হয়তো মাফ করতে পারো নাই।তুমি আমার চোখ খুইলা দিছো বাপ।তাই তোমারে একবেলা দাওয়াত কইরা ভালো-মন্দ না খাওয়াইলে আমি যে মইরাও শান্তি পাইতাম না।কালকে যহন রবিন কল কইরা কইলো তোমরা আমাদের বাড়িতে আসবা।আমার যে কি খুশি লাগতাছিল।তোমার সাথের জন কই?তারে যে দেখতাছি না।(এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে)

নীলাভঃ আকিবের একটু কাজ আছে।তাই আসতে পারেনি।

মিনারাঃ হইছে,এসব কথা এখন রাখেন।পোলা,মাইয়া দুইডারে একটু রেস্ট নিতে দেন।(ধমকের সুরে স্বামীকে কথাটা বললেন তিনি)

নীলাভ গত এক মাস আগের হাবিব সাহেবের সাথে আজকের হাবিব সাহেবকে কিছুতেই মিলাতে পারছে না।আকাশ পাতাল তফাৎ খুঁজে পাচ্ছে।এ যেনো কল্পনীয় ঘটনা।কিংবা স্বপ্ন। ঘুম ভেঙে গেলেই হারিয়ে যাবে বহুদূর। মিনারা খাতুন ওদের ভেতরে নিয়ে গেলো।হাবিবুর রহমান কাউকে ডাকলেন।

হাবিবুরঃ শান্ত ঐ শান্ত কোথায় গেলি?

টিনের চালার ঘর থেকে ২১ বছরের একটা যুবক দৌড়ে তার কাছে এলো।এর নামই শান্ত।

শান্তঃ চাচাজান আমারে ডাকতাছেন?

হাবিবুরঃ কোথায় থাকস তুই? তোরে আজকাল খুইজা পাই না কে?বাড়িতে যে মেহমান আইছে সেই খেয়াল আছে তোর।যা গিয়া বড় পুকুর থিকা মাছ ধরনের ব্যবস্থা কর।বড় পুকুর থিকা সবচেয়ে বড় মাছটা ধইরা আনবি।পুকুরে জাল ফালানের ব্যবস্থা কর।একেবারে টাটকা লাফাইন্না মাছ রান্না করে খাওয়ামু আমার মেহমানরে।আর শোন,ওদের আপ্যায়নের জানি কোন ত্রুটি না হয়।তোরে কসাইয়ের দোকান থিকা যে মাত্র জবাই দেওয়া গরুর গোশত কিইনা আনতে বলছিলাম, তুই আনছস তো?

শান্তঃ জে চাচা আনছি।আপনে যে যে বাজারের লিস্ট দিছিলেন সব আনছি।এহন খালি পুকুরে বড় তাজা মাছটা ধরনের আর রানধনের বাকি।

হাবিবুরঃ কথা না কইয়া জলদী যা।আমিও আইতাছি।তুই জাল ফেলানের ব্যবস্থা কর।

শান্ত তড়িঘড়ি করে চলে গেল পুকুরে মাছ ধরতে।হাবিবুর রহমানও পুকুরের দিকে চললেন।আজ পুকুরের সবচেয়ে বড় মাছ দিয়ে নীলাভ ও সাহিয়ার আপ্যায়ন করবে।

💗💗💗

এই পর্যন্ত হয়তো কিছুই বুঝতে পারেন নি।আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। চার দিন আগে ধুমধাম করেই সাজিয়ার বিয়ে হয়েছে। গত দুই দিন আগে এক বিকেলে রবিন নামের ছেলেটা, যাকে হাবিবুর রহমান একসময় নীলাভকে মেরে ফেলতে বলেছিলো।সেই ছেলেটা নীলাভকে খুঁজে পায়।সে অনেক জোর করে হাবিবুর রহমানের বাসায় যাওয়ার জন্য।

নীলাভ ও আকিব প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে হাবিবুর রহমান সাহেব ভালো হয়ে গেছে। সে এখন গ্রামের মানুষের সেবা করে।যার থেকে যা আত্মসাৎ করেছিলো সব ফেরত দিয়ে দিয়েছে। তাই নীলাভ দাওয়াত রাখে।কিন্তু আকিবের কাজ থাকায় সে আসতে পারবে না। তাছাড়া সে এখন তিশার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।সাহিয়াকে জানাতেই সাহিয়া এক পায়ে রাজী হয়ে যায়।কারণ সাহিয়াতো গ্রাম অনেক পছন্দ করে।অবশেষে আজ সকাল ভোরে তারা হাবিবুর রহমানের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।দীর্ঘ ৫ ঘন্টার যার্নি শেষ করে অবশেষে তারা এখানে পৌঁছায়। কি অদ্ভুত তাই না।যাকে মারার জন্য একসময় হন্যি হয়ে খুজতো।আজ তাকেই দাওয়াত করে এনেছে। নীলাভ ও সাহিয়া দুদিন তাদের বাড়ি থাকবে।আপনাদের হয়তো মনে হতে পারে এটা হাবিবুর রহমানের কোন চাল বা শয়তানি।কিন্তু না।তিনি সত্যিই ভালো হয়ে গেছে।

দুপুরে খাওয়ার টেবিলে……..

সবাই একসাথে খেতে বসেছে।মিনারা খাতুন খুশি মনে ওদেরকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। তার কাছে মনে হচ্ছে তার এক ছেলে এক মেয়ে বহুদিন পর বাসায় এসেছে। তিনি দুজনের খাবারের প্লেটে নানা কিছু দিয়ে পুরো ভর্তি করে ফেলেছেন।

মিনারাঃ আরেকটু তরকারি দেই।গ্রামের তাজা সবজি দিয়ে রান্না করছি।তোমরা আসবা শুইনা আমগো গ্রামের সবজি চাষী রফিকের খেতের থিকা তাজা সবজি কিইনা আনছে মাহিমের আব্বায়।সবকিছু তাজা।কোন ফরমালিন নাই।

সাহিয়াঃ আন্টি, এতকিছু কি করে খাবো।আপনি কম করে হলেও ১২-১৫ পদের খাবার রান্না করেছেন।এগুলো দুইদিন খেলেই আমি ফুলে পুরো ঢোল হয়ে যাবো।আপনি চিন্তা করেন না।আমরা অল্প অল্প করে সব খেয়ে নিব।আপনিও বসে পরেন।

হাবিবুর রহমান মাছের তরকারির বাটিটা হাতে নিয়ে বড় রুই মাছের মাথাটা নীলাভের প্লেটে তুলে দিলেন।

নীলাভঃ আরে আরে করছেন কি চাচা?আমি এতবড় মাথা খেতে পারবো না।আপনি নেন,আমাকে কেন দিচ্ছেন?

হাবিবুরঃ কথা কম বলে খেতে থাকো।তোমাদের জন্য পুকুর থিকা ফরমালিন মুক্ত তাজা মাছ ধরছি।আগে ধইরা রাখি নাই।তাজা,ফালাইন্না মাছ রান্নার স্বাদই আলাদা। আর তোমারে দিমু না তো কারে দিমু মাথাডা কও তো।তোমগো বয়সে আমরা এরকম মাছের মাথা দুইডাও একসাথে খাইতে পারছি।আর তোমরা একটা দেখলেই ডরাও।এর জন্যই তো তোমগো শরীরের এই অবস্থা। এর শহরের সবকিছুতো ফরমালিনে ভরপুর।স্বাদ-পদ কিছুই লাগে না। কিন্তু গ্রামের খেতের তাজা সবজি,ঘরের ধানের চাল,পুকুরের তাজা মাছ,বাড়ির পাশের মাচার তাজা পুই শাকের যে কি স্বাদ।তা এখন খাইলেই বুঝবা।

মিনারাঃ পোলাপাইন দুইডারে চুপ করতে কইয়া নিজেই বকবক শুরু করলো।কথা কইয়েন না তো।ওগো রে খাইতে দেন।বাবা,তোমারে আরেকটু ভাত দেই।তুমি দেখতাছি কিছুই খাইতাছো না।এই ভাত কিন্তু আমগো ঘরের ধানের চাউলের।দেখতে মোটা মোটা হইলেও খাইতে অনেক স্বাদ।

নীলাভঃ আপনার চিন্তা করতে হবে না চাচী।আমাদের যা লাগে তা আমরা হাত দিয়েই নিয়ে নিবো।আপনি খেতে বসেন তো।

হাবিবুরঃ রাইতে কিন্তু ঘরের ধানের চাউল দিয়া পিঠা বানাইবা।ওগোরে জিগায় নিয়ো।কি পিঠা পছন্দ করে।আমার মেহমানের কোন অযত্ন আমি কিন্তু সহ্য করুম না।মনে রাইখো মাহিমের মা।

মিনারাঃ আপনে ভাবলেন কেমনে ওগোরে আমি পিঠা না খাইয়া যাইতে দিমু?আমি রাতে ঝাল কইরা হাঁসের গোশত রান্ধুম।আর সাথে থাকবো ছিট পিঠা।

সাহিয়াঃ এতকিছুর কোন দরকার নেই। আমরা তো দুই দিন আছি।গ্রামে ঘুরবো ফিরবো।তাছাড়া আপনাদের খাবারের আপ্যায়ন দেখে আমরা অলরেডি শক খেয়ে আছি।আরো পেলে তো এখান থেকে যেতেই ইচ্ছে করবে না।

মিনারাঃ না গেলে তো আমি খুশি হমু।আমার দুই পোলা-মাইয়া সবসময় আমার সাথে থাকবো।

হাবিবুরঃ বাবা আরেকটু গোশতের তরকারি দেই??

নীলাভঃ আর লাগবে না চাচা।আপনি না খেয়ে আমার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরছেন।

সবাই একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো।হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রীর ব্যবহার দেখে সাহিয়া, নীলাভ দুজনেই মুগ্ধ হচ্ছে। চিনে না জানে না অথচ আপ্যায়নের কোন ত্রুটি রাখেনি।নীলাভের অনেক ভালো লাগলো।কতদিন পর বাবা-মায়ের মতো করে কেউ এভাবে যত্ন করলো।

💗💗💗

ছোট দুটো টিনের ঘর, আরেকটা টিনসেট পাকা দালান।অথচ বাড়িতে মানুষ মাত্র তিনজন।হাবিবুর রহমান,মিনারা খাতুন আর জমিজমা দেখাশোনার জন্য শান্ত।হাবিব সাহেব পড়ালেখা করিয়ে একমাত্র ছেলে মাহিমকে বড় করেছিলো।তাদের সাথে গ্রামে থাকবে।কিন্তু ছেলে তাদের বিদেশে পড়ালেখা করতে গিয়ে সেখানকার মেয়ে বিয়ে করে স্যাটেল হয়ে গেছে। সপ্তাহে একদিন বাবা-মাকে কল করে। তাও যেনো কথা বলার সময় হয় না।দীর্ঘ কয়েক বছর সন্তানকে না পেয়ে সাহিয়া ও নীলাভকে পেয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুশিতে আটখানা। তারা ভাবেনি নীলাভ সব ভুলে এখানে আসবে।কিন্তু আবারো তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে নীলাভ এসেছে। সত্যিটা ছেলেটার মধ্যে জাদু আছে। নয়তো এরকম খারাপ মানুষকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতো না।আর সেও হয়তো কখনো ভালো হতো না।

সপ্তাহখানিক আছে সাহিয়া ও নীলাভের বিয়ের।কিন্তু গ্রামে ঘোরার ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না সাহিয়া।একপ্রকার যুদ্ধ করে সবাইকে রাজী করে নীলাভের সাথে এসেছে। সাজিয়া ও তুরাগ কক্সবাজার গিয়েছে হানিমুনে। তোরাব আর বিয়ে নিয়ে কোন ঝামেলা করেনি।সে হয়তো বুঝতে পেরেছে জোর করে সাহিয়াকে পাবে না। নদীর কিনারা ঘেঁষে হাঁটছে সাহিয়া ও নীলাভ। পড়ন্ত বিকেলে গ্রামটাকে অপরুপ সৌন্দর্য মুণ্ডিত মনে হচ্ছে ।

নীলাভঃ কি অবাক ব্যাপার তাই না?যে মানুষগুলো একসময় আমাকে ও আকিবকে দেখতে পারতো না।তারাই আজ আমাদের কত আদর যত্ন করে আপ্যায়ন করছে।পৃথিবী সত্যি অনেক অনেক অদ্ভুত। তবে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমার লাখো কোটি শুকরিয়া। তিনি আমার কথা শুনছেন।আমি তার হেদায়েতের জন্য দোয়া করেছিলাম।আর আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেছে।

সাহিয়াঃ উনারা এমন খুশি হয়েছে যে আমরা তাদের ছেলে-মেয়ে।গ্রামের মানুষগুলো সত্যিই অনেক আপ্যায়নমুখর হয়।চলো ঐদিকটায় যাই।উঁচু মাটির টিলা দেখা যাচ্ছে। ঐখানকার সবুজ ঘাসে বসে কথা বলা যাবে।

শো শো করে বাতাস বইছে। গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশ। মাঝে মাঝে রাস্তার থেকে ভ্যান গাড়ির টুং টাং শব্দ ভেসে আসছে।খেতে কাজ করছে কৃষক। মাঝি নৌকা চালাচ্ছে। দূর থেকে নানা পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে। সাহিয়া চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিশ্বাস নিলো।যার মধ্যে নেই কোন ভেজাল বা বিষাক্ত ধোঁয়া । চারিদিকে গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ। নীলাভ মুগ্ধ চোখে সাহিয়াকে দেখছে।এই মেয়েটা এক ঝলকে ওর জীবনে এসে অনেক কিছু বদলে দিলো।একে ছাড়া এখন ওর জীবন অসম্পূর্ণ মনে হয়।হঠাৎ সাহিয়া চোখ খুলতেই নীলাভের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।

সাহিয়াঃ কি দেখছো?

নীলাভঃ তোমাকে!!!(আনমনে)

সাহিয়াঃ প্রপোজ করলে অজ্ঞান হয়ে যাও আবার আমাকে দেখো।(মুখ টিপে হেসে)

নীলাভঃ একবার অজ্ঞান হয়েছি বলে বারবার হবো নাকি?তুমি সেদিন যে শর্কড দিয়েছিলে যে কোন ছেলে অজ্ঞান হতে বাধ্য। প্রথম থেকেই তুমি শর্কের ওপর রেখেছো।(মুখ গোমড়া করে)

সাহিয়াঃ তুমি বলেই অজ্ঞান হয়েছো।অন্য কেউ জীবনেও হতো না। এই প্রথম নিজের চোখে দেখলাম হবু বউয়ের থেকে প্রপোজ পেয়ে একটা ছেলে মানুষ অজ্ঞান হলো।তোমার যে কি সাহস তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। এই সাহস নিয়ে তুমি সাংবাদিকতা করো কিভাবে?কোথায় তুমি আমায় প্রপোজ করবে।তাতো করলেই না।আমি করেছি বলে অজ্ঞান।ভাবা যায় এগুলো।ধূর,আমিও না কি বলছি।তুমি জীবনে আমায় প্রপোজ করতে পারবে নাকি?(ভেংচি কেটে)

নীলাভঃ তুমি কি বোঝাতে চাইছো?আমি তোমাকে প্রপোজ করতে পারবো না।এমন কিছু কি?(কপাল কুঁচকে)

সাহিয়াঃ অবশ্যই।তোমার এত সাহস নেই যে আমাকে প্রপোজ করবে।তাই এত হাইপার হয়ো না।

সাহিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে গ্রামের পরিবেশ দেখতে মন দিলো।নীলাভের সম্মানে সাহিয়ার কথাগুলো বেশ লেগেছে। তাই সে কিছু একটা করার চিন্তা করতে লাগলো।সেদিন যখন সাহিয়া নীলাভকে অজ্ঞান অবস্থায় পরে থাকতে দেখলো।দৌড়ে ওকে এসে ধরলো।তারপর পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়েছে।সেদিনের কথা আকিবকে বলতেই আকিব ও সাহিয়া দুজনেই নীলাভকে রাগায়।নীলাভ এতে মনে মনে বেশ অসম্মান হয়।তাই সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে সাহিয়াকে প্রপোজ করবে।কিন্তু সেরকম সুযোগ এর মধ্যে পাইনি।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সেই সুযোগ এসে গেছে। বেচারা কি শর্কড না হয়েছিল যে শর্কডের ঠেলায় অজ্ঞান হয়ে গেছে।

সাহিয়াঃ নীলাভ দেখো ঐ যে একটা নৌকা। চলো আমরা নৌকা দিয়ে নদীতে ঘুরি।আমার অনেক শখ নৌকা দিয়ে ঘোরার।নীলাভ তুমি কি শুনছো?নাকি আবার অজ্ঞান হয়ে ———

সাহিয়া একা একা কথা বলতে বলতে পেছন দিকে ঘুরলো।পেছনে ঘুরে পুরো অবাক।কারণ নীলাভ হাতের মুঠ ভর্তি করে কতগুলো ঘাসফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে আছে।

নীলাভঃ আমি তোমার মতো মুখের ওপর ভালোবাসি বলতে পারি না।আমি অনেক লাজুক।অন্য দশটা ছেলের মতো নই।আমার অনুভূতিগুলো খুব সহজে সবার মতো প্রকাশ করতে পারি না। আমি খুব চাপা স্বভাবের ছেলে।তবে আমিও তোমাকে অনেক পছন্দ করি।অনেক বেশি ভালোবাসি।আমি এতদিনে এতটুকু বুঝে গেছি,তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছি।সেদিনই আমার মনে ভালোবাসার ঘন্টা বেজে গেছে। তুমি আমাকে পুতুল ভেবে যখন নানা কথা বলছিলে তখন আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার কথা শুনছিলাম।না চাইতেও ঘনঘন আমার হৃৎপিণ্ডটা উঠানামা করছিলো।তোমায় দেখলেই আমার মনটা পালাই পালাই করতো।তাইতো না চাইতেও তোমার থেকে পালিয়ে বেড়াতাম।আমি আর কথা বাড়াতে চাইছি না। শুধু বলবো অনেক ভালোবাসি তোমায়।তুমি সারাজীবনের জন্য আমাকে স্বামী হিসেবে ঠিক এরকম করেই ভালোবেসো।আমার আর কিছুই চাই না। ভালোবেসে আগলে রেখো তোমার এই পুতুল ছেলেটি কে।

সাহিয়াঃ হ্যাঁ এরকম করেই তোমাকে ভালোবাসবো।কারণ তুমিই আমার সেই পুতুল_ছেলেটি।যার জন্য আমি নিজের মনে ভালোবাসার দেখা পেয়েছি।তুমিও আমার কাছে আমার পুতুল_ছেলেটি হয়েই থেকো।আমারও আর কিছুর প্রয়োজন নেই।

সাহিয়া, নীলাভের হাত থেকে ঘাসফুল গুলো নিলো।নীলাভ উঠে দাঁড়াতেই সাহিয়া ওকে জড়িয়ে ধরলো। আজ নীলাভ শর্কড হলো না। বরং পরম আবেশে সেও সাহিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। তাদের ভালোবাসা অবশেষে পূর্ণতা পেলো।দুজন দুজনকে ভালোবাসি বলতে পারলো।

___________________(সমাপ্ত)__________________

আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা অবশেষে শেষ হয়ে গেলো।গল্পটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হওয়াতে অনেকে হয়তো আমার ওপর রাগ করবেন। কিন্তু আমি গল্পটাকে এভাবেই ভেবে রেখেছিলাম।হুট করে শুরু হয়ে হুট করে শেষ। এটা যেহেতু ভিন্ন থিমের গল্প ছিলো তাই ভিন্নভাবে শেষ করেছি।সব গল্পই তো বিয়ে কিংবা বাচ্চা দিয়ে শেষ করি।তাই এই ভিন্ন ভাবে শেষ করলাম।আমি জানি না গল্পটা শেষটা ঠিক কতটা আপনাদের মন মতো হয়েছে। যদি এন্ডিংটা ভালো না হয় তাহলে আমি দুঃখীত।এই গল্পের মুল থিমটা ছিলো পুতুলের মতো দেখতে একটা ছেলেকে নিয়ে। যে কিনা সকল কাজকে শ্রদ্ধা করতে।তাকে গল্পের মধ্যে ছয়টা কাজ করতে দেখা যায়।পিৎজা ডেলিভারি বয়,কফি হাউসের ওয়েটার, চা ওয়ালা,ফ্যাক্টেরীর এজেন্ট, ডেকোরেশনের লোক এবং সাংবাদিক। একজন উচ্চ শিক্ষিত ছেলে হয়েও কোন কাজকে অসম্মান করেনি।কোনটা নিজের অবসর কাটাতে কোনটা অন্যকে সাহায্য করতে সে করেছে। সে অনেক কাজ পাগল ছেলে ছিলো।এক দন্ড নিজেকে বিশ্রাম দিতে না।সে বলতো অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তাই নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতেই পছন্দ করতো।আমাদের উচিত নীলাভের মতো প্রত্যেক কাজকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা।কোন কাজই ছোট নয়।

অনেক কথা হলো।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং ঘরে থাকবেন।বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।আপনার অসাবধানতায় কিন্তু আপনার পরিবার বিপদে পরতে পারে।নতুন গল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে।ততদিন নিজের খেয়াল রেখেন।মনে রাখবেন আপনার কিছু হলে কিন্তু আমার একটা রিয়েক্ট কমে যাবে🥺।যাস্ট ফান।সিরিয়াসলি নিয়েন না।আল্লাহ হাফেজ🥰।

❤️ NOVA❤️

পুতুল ছেলেটি পর্ব-১৪

0

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_14
#Writer_NOVA

এর মধ্যে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন।আজ সাজিয়ার গায়ে হলুদ।ওরা যে দালানে থাকে সেটাকে পুরো মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। ছাদে করা হবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।সেখানে স্টেজ করা হচ্ছে। নীলাভও বিগত কিছু দিন ধরে ডেকোরেশনের কাজে যুক্ত হয়েছে। ডেকোরেশনের সব দায়িত্ব ওর হাতে।বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামলো বলে।সিঁড়ি থেকে শুরু করে পুরো ছাদ ঠিক আছে কিনা তাই ঘুরে ঘুরে দেখছে নীলাভ। আর সব মেয়েরা হা করে ওকে দেখছে।একটা রুম ক্রস করে যেতে নিলেই ঝড়ের গতিতে একজন এসে নীলাভকে টেনে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।নীলাভ জানে সাহিয়া ছাড়া কারো এত দুঃসাহস হবে না।

নীলাভঃ হোয়াট ইজ দিস সাহিয়া?আমাকে এখানে টেনে আনার মানে কি?

কিছুটা বিরক্ত সহকারে বললো নীলাভ। কিন্তু সেই বিরক্তি সাহিয়া একটুও গায়ে মাখলো না। বরং সামনে এগিয়ে এসে দুই হাতে নীলাভের গলা জড়িয়ে ধরলো।

সাহিয়াঃ প্রেম করবো,তাই নিয়ে এসেছি ।

নীলাভঃ ছাড়ো সাহিয়া আমার কাজ আছে। আমি এখন ডেকোরেশনের লোক হয়ে এবাড়িতে এসেছি।

সাহিয়াঃতুমি আমার হবু স্বামী। তার জন্য এখানে এসেছে। তোমার কাজের পরিচয় অন্য জায়গায় দিয়ো।আমার কাছে নয়।আর হ্যাঁ,আরেকবার সাহিয়া বললে ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিবো সাংবাদিক সাহেব।আমাকে তুমি হিয়াপাখি বলে ডাকবে।

সাহিয়ার মুখে সাংবাদিক সাহেব শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলো নীলাভ। তার মানে কি তার শ্বশুড় আব্বা সব বলে দিয়েছে নাকি সাহিয়াকে।কিছুটা জড়তা নিয়ে নীলাভ বললো।

নীলাভঃ কে সাংবাদিক??

সাহিয়াঃ হয়েছে এখন আর সাধু সাজতে হবে না। আমি জেনে গেছি তুমি একজন সিক্রেট সাংবাদিক। তাই আর ঢং করো না। আমার প্রথম থেকে সন্দেহ হয়েছে তুমি কোন সাধারণ মানুষ নও।তোমার মধ্যে ঘাপলা আছে। তাই হলো।তুমি হলে গভীর জলের মাছ। তবে আমিও তো সাংবাদিকদের হবু বউ।তাই আমি গভীর জলের মাছকে ধরতে পানিতে কিছুটা আন্দাজই ডুব মেরেছিলাম।আর আমি সেই মাছটাকে ধরেও ফেললাম।

নীলাভঃ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। (ভ্রুকুটি কুঁচকে)

সাহিয়াঃ না বোঝার তো কিছু নেই। আমি তো বাংলায় বলছি।হিব্রু ভাষা ব্যবহার করিনি।

সাহিয়া গলার থেকে হাত সরিয়ে নিলো।তারপর নীলাভের এক হাত ধরে ওকে খাটে বসালো।মোবাইল থেকে সেদিনের ভিডিও বের করলো।সেটা দেখে নীলাভের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।

নীলাভঃ তুমি এটা কোথায় পেলে?

সাহিয়াঃ আমিতো আগে থাকতে ঐ রুমে মোবাইল ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিলাম।এখন যদি এটা আমি সব নিউজ চ্যানেলে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেই।তাহলে কেমন হবে?(ভ্রু নাচিয়ে)

সাহিয়ার কথায় নীলাভ এক গালে হাসলো।তারপর আরাম করে দুই হাত মেলে খাটে শুয়ে পরলো।এমন একটা ভাব ধরে আছে জেনো কিছুই শুনেনি।নীলাভের এমন ভাবলেশহীন কান্ডে সাহিয়া অবাক হলো।

সাহিয়াঃ কিছু বলছো না যে।আমি কিন্তু সত্যি ছেড়ে দিবো।তুমি আমায় অনেক ঘুরিয়েছো।

নীলাভঃ তুমি যদি চাও তোমার হবু বরের বিপদ হোক।তাহলে অবশ্যই ছেড়ে দিবো।অকালেই সাদা শাড়ি পরতে মন চাইলে দিতে পারো।আমি মানা করবো না। আর আমার বিশ্বাস আছে তুমি এমনটা করবে না।

সাহিয়াঃ ধূর,তাকে ব্লাকমেইল করতে গিয়ে নিজেই ব্লাকমেইলের স্বীকার হয়ে গেলাম।এখন তো আমি দিতেও পারবো না। আমাকে ভয় দেখাবে, তোমার পুতুল ছেলের বিপদ হবে।(বিরবির করে)

সাহিয়ার বিরবির করে খাটের এক কোণায় বসে পরলো।নীলাভ শোয়া থেকে উঠে বসে মিটমিট করে হাসছে।তখুনি ওর চোখ গেলে দেয়ালের দিকে।চোখ, মুখ কুঁচকে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। পুরো দেয়াল ভর্তি নীলাভের অসংখ্য ছবি।নীলাভ বিস্ময় নিয়ে সাহিয়াকে জিজ্ঞেস করলো।

নীলাভঃ আমার এতো ছবি তুমি পেলে কোথায়?

সাহিয়াঃ আকিব ভাইয়ার থেকে নিয়েছি।(মুখ গোমড়া করে)

নীলাভঃ দেয়ালে টানিয়ে রেখেছো কেন?

সাহিয়াঃ আমার হবু স্বামীর ছবি আমি যেখানে খুশি সেখানে টানিয়ে রাখবো। তোমার কি?(রেগে)

নীলাভঃ না বিষয়টা সেটা নয়।ঘরে জীব,জন্তু,মানুষের ছবি থাকলে ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারে না।তাই তুমি এগুলো দেয়াল থেকে খুলে ফেলবে।

সাহিয়াঃ কালকে লাগালাম।আর আজকেই খুলে ফেলবো।আচ্ছা, তুমি যখন বলছো খুলে ফেলবো।

সাহিয়া বসা থেকে উঠে ছবিগুলোর সামনে এসে দাঁড়ালো। নীলাভ ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওকে অবাক চোখে দেখতে লাগলো।একটা মানুষ ঠিক কতটা ভালোবাসলে এরকম পাগলামী করে। আর সাহিয়া ছবিগুলো মনোযোগ সহকারে দেখছে।

💗💗💗

ছাদে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সবাই এখন হলুদ দিতে ব্যস্ত।।নীলাভের পরনে আজ কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবী,কলা পাতা রঙের পায়জামা।সাহিয়াও ওর সাথে ম্যাচিং করে সেম কালার শাড়ি পরেছে।আকিবের পরনে বেগুনি রঙের পাঞ্জাবী।

আকিবের চোখ দুটো খুঁজে যাচ্ছে সাহিয়ার মামাতো বোন তিশাকে।সকাল বেলা তিশার সাথে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে দেখা হয়েছে। এক ঝুড়ি ফুল নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নিলেই একজনের সাথে ধাক্কা লাগে আকিবের।আর সামনের ব্যক্তিটা পরে যেতে নিলে তাকে ধরে ফেলে আকিব।সাথে সাথে ঝুড়িটা পরে যায়।দুজন দুজনের দিকে এক ধ্যানে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।সেই দেখার পর থেকে আকিবের চোখ দুটো শুধু তিশাকেই খুঁজে। তিশাও আকিবকে দেখলে মুচকি মুচকি হাসে।

নীলাভঃ কি রে কাকে খুঁজছিস?

আকিবঃ কা কা কাউকে নননা তততো।(তুতলিয়ে)

নীলাভঃ ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো।আর আমি জিজ্ঞেস করলে বলো কিছু না তো।আমি কিন্তু খবর পেয়েছি। তাই ভাব না নিয়ে মেয়েটাকে দেখাস।

আকিব লজ্জা পেয়ে গেলো।বোকার মতো মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বললো।

আকিবঃ আসলে একটা মেয়েকে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে লাভ এট ফার্স্ট সাইড।আমার একটা ব্যবস্থা করে দে।

নীলাভঃ ওরে বাটপার,ওরে চিটার।তলে তলে এতোদূর।তাছাড়া তোকে আমি হেল্প করবো না। কারণ তুই সাহিয়াকে আমার ছবি দিয়েছিস।আমাকে বললে আমি দিতাম।আরো স্টাইলিশ ও হ্যান্ডসাম ছবিগুলো দিতাম।কিন্তু তুই তো সব হাবলা মার্কা ছবি দিয়েছিস।

আকিবঃ তোরা হবু জামাই,বউ আমাকে থ্রেটের ওপরে থ্রেট দিচ্ছিস।তোর সাহিয়া গতকাল সকালে কল দিয়ে বাপরে কি থ্রেট। বলে কিনা আমি যদি তোর ছবি না দেই তাহলে আমার নাকি জীবনেও বিয়ে হবে না।এমন দোয়া করে দিবে।ভেবেছিস কিরকম জঘন্য ব্যাপার-স্যাপার।আমার বিয়ে না হলে আমার ফিউচার ছেলে-মেয়েগুলো কাকে বাবা বলে ডাকবে?

নীলাভঃ তাই বলে ঐরকম আবুল মার্কা ছবি।😕

আকিবঃ আমি ইচ্ছে করে এমন ছবি দিয়েছি।যাতে তোর শিক্ষে হয়।নিজে তো এমন একটা ভাব নিয়ে থাকিস জেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারিস না।তাই ওরকম বিচ্ছিরি ছবি তোর সাথে যায়।আমি এখন তিশাকে রাজী করিয়ে খুব শীঘ্রই বিয়ের পিড়িতে বসছি।তোকে চাচ্চু বানাতে হবে তো😜।

আকিব একটা চোখ মেরে শিস বাজাতে বাজাতে অন্য দিকে চলে গেল। নীলাভ ওর যাওয়ার পানে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। তখনি একটা ছোট বাচ্চা ছেলে নীলাভের হাতে একটা চিরকুট গুঁজে অন্য দিকে দৌড় দিলো। নীলাভ চিরকুট দেখে ভ্রু কুঁচকালো।অনেকক্ষণ ধরে সাহিয়াকে দেখছে না।একসাথে দুজন হলুদ দিয়ে সেই যে হাওয়া হয়েছে। আর তাকে দেখা যায়নি।চিরকুটটা খুলতেই নিচের কথাগুলো লেখা দেখতে পেলো।

“বাগানে এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি”
(ইতি তোমার হিয়াপাখি)

নীলাভ ছাদ থেকে নেমে বাগানে গেলো।সেখানে গিয়ে অবাক।সবকিছু খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। এগুলো কে করলো?এটা তো ওদের করার কথা ছিলো না। নীলাভ আশেপাশে সাহিয়াকে খুঁজতে লাগলো। তখনি পেছন থেকে ওর হাতে টান অনুভব করলো।পেছনে ঘুরে দেখে সাহিয়া একটা বিশাল বড় ফুলের তোড়া নিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।

সাহিয়াঃ প্রিয় হবু বর প্লাস আমার পুতুল ছেলে।আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আমি প্যাচগোচের ধারের কাছেও যাই না।তাই সরাসরি প্রপোজ করে দিলাম।তুমি তো জীবনেও আমায় প্রপোজ করবে না।ভীষণ লাজুক ছেলে। তাই আমিই করে দিলাম।এতো লজ্জা আসে কোথা থেকে তোমার? প্রেমে পরলে নাকি মানুষ অনেক বেহায়া হয়ে যায়।আমি কথাটা আগে বিশ্বাস না করলেও এখন করি।কারণ আমি তোমার প্রেমে অন্ধ,বয়রা,বেহায়া সবই হয়েছি।জানি তুমি মনে মনে এটা ভাবছো যে দুই সপ্তাহ পর আমাদের বিয়ে। এখন প্রপোজ করার মানেটা কি?আসলে সবকিছু তো আমিই শুরু করেছি।তাই ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে আমিই প্রপোজটা সেরে ফেলি।আমি তোমার থেকে সবদিক থেকে এগিয়ে। তুমি তো আজও আমায় হিয়াপাখি বলেই ডাকতে পারলে না।আর তুমি করবে প্রপোজ। তাহলে তো পৃথিবী উল্টে যাবে।আর পেঁচাল পারতে পারবো না। তবে তুমিই সেই ব্যাক্তি যাকে আমি প্রথম ও শেষ ভালোবেসেছি।এখন জলদী করে আই লাভ ইউ টু বলে দেও দেখি পুতুল ছেলে।

নাহ, এতকিছুর শর্কড নীলাভ এবার আর একসাথে সহ্য করতে পারলো না।সাহিয়ার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে তো নীলাভ কম শর্কড হয়নি।কিন্তু এবারের মতো শর্কড সে কখনো হয়নি। তাই অজ্ঞান হয়ে ঢলে নিচে পরে গেলো😂।সাহিয়া উল্টো দিকে ঘুরে মনের কথা প্রকাশ করছিলো।নীলাভের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পেছনে ঘুরে চোখ কপালে তুলে ফেললো।দৌড়ে নীলাভের সামনে এসে দেখলো নীলাভ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে আছে। লোও ঠেলা,বেচারা এত শর্কড পেয়েছে যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে🤣।

#চলবে

পুতুল ছেলেটি পর্ব-১৩

0

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_13
#Writer_NOVA

সাহিয়াদের ড্রয়িং রুমে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।তানজিল আনজুম নীলাভের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নীলাভ মেঝের দিকে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে। আকিব তীক্ষ্ম নজরে তানজিল সাহেবের গতিবিধি লক্ষ্য করছে।আর সাহিয়া হাতের নখ খুটতে খুটতে সকলের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। নিশিতা রহমান ও সাজিয়া রান্নায় ব্যস্ত।অনেক কষ্ট করে আজ নীলাভকে আসতে রাজী করেছে সাহিয়া।বেচারা নীলাভ বেশ ভয় পাচ্ছে তানজিল সাহেবের গম্ভীর মুখ দেখে। থমথমে পরিবেশ ভেঙে তানজিল আনজুম প্রথম কথা বলে উঠলেন।

তানজিলঃ তোমার নাম নীলাভ??

নীলাভঃ জ্বি আঙ্কেল।

তানজিলঃ পরিবারে কে কে আছে?

নীলাভঃ আকিব ছাড়া আর কেউ নেই। ও আমার ভাই,বন্ধু, অভিভাবক সবকিছু।

নীলাভের কথায় আকিব অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। ও ভাবতেই পারেনি নীলাভ ওকে এভাবে পরিচয় করে দিবে।তানজিল সাহেব বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকালেন।

তানজিলঃ আমি ঠিক বুঝলাম না।

নীলাভঃ বাবা-মা, দুজনেই ছিলেন জন্মগত অস্ট্রেলিয়ান। আমিও অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী। দাদা বাংলাদেশী ছিলেন।সেখানকার মেয়ে বিয়ে করে ঐ দেশেই স্যাটেল হয়ে যান।সেখানেই বাবার জন্ম ও বেড়ে উঠা।একসময় বাবা আমার মা কে বিয়ে করেন।মা ছিলেন উচ্চ বংশীয় মহিলা।তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের। আমার জন্মের ৪ বছর পর আমার ছোট ভাই নীলের জন্ম।আমারা কখনও বাংলাদেশ দেখি নি।আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশে ঘুরতে আসি।অনেক এক্সাইটেড ছিলাম।দুই দুন ঢাকায় ঘুরে পাহাড় দেখতে বের হয়েছিলাম।কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় এসে আমাদের গাড়ি খাদে পরে যায়।ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গেলেও আমার বাবা-মা, ছোট ভাই নীলকে চোখের সামনে জ্বলেপুড়ে যেতে দেখি।গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পরতেই আগুন ধরে যায়।তারপর সেখান থেকে আমায় উদ্ধার করে এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হয়।

এতটুকু বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নীলাভ।সাহিয়ার চোখ দুটো টলমল করছে।সে কখনো ভাবতে পারেনি হাসি,খুশি এই ছেলেটার পেছনের অতীতটা এতটা ভয়ানক।নীলাভ চোখের পানি মুছে নিলো।আকিব এক ধ্যানে পায়ের সামনে থাকা পাপোশটাকে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে খুটছে।

তানজিলঃ তারপর কি হয়েছিল?(আগ্রহের সাথে)

নীলাভঃ এতিমখানা আমার ভালো লাগে নি।তাই বছর খানিক থেকে পালিয়ে এসেছিলাম।তখন আমি বাংলা ভেঙে ভেঙে বলতে পারি।সাহস করে ঢাকায় চলে আসলাম।সেখানকার এক হোটেলে কাজ নিলাম।সেই হোটেলের মালিক ভালো ছিলো।তাই আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলো।পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলাম।নানা কাজ করে নিজের পড়াশোনা ও খাবারের খরচ চলে যেতো।তার মধ্যে আকিবের সাথে পরিচয়।আমরা দুজন খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো।তারপর থেকে দুজন একসাথে থাকি।তাই এখন আমার সবকিছুই আকিব।আর হ্যাঁ,এখন আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলা এখন আমার মাতৃভাষা না হলেও আমি অনেক পছন্দ করি।

তানজিলঃ পড়াশোনা কমপ্লিট করতে পেরেছো?

নীলাভঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। মাস্টার্স পাশ করেছি আরো দুই বছর আগে।

তানজিলঃ কি কাজ করছো বর্তমানে?

নীলাভঃ নির্দিষ্ট কোন কাজ নেই। যখন যা পাই তাই করি।কখনো কফি হাউসের ওয়েটার,কখনো পিৎজা ডেলিভারি বয়,কখনো কোন ফ্যাক্টেরীর এজেন্ট। আমি কোন কাজকে ঘৃণা করি না। সব কাজ আমার কাছে সমান।আমি ছোট, বড় সকল কাজকে শ্রদ্ধা করি।মানুষ হিসেবে আমাদের সবার এটা করা দরকার বলে আমি মনে করি।

💗💗💗

তানজিল সাহেব নীলাভের কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন।অন্য কেউ হলে হয়তো মান-সম্মানের ভয়ে এই কাজগুলোর কথা বলতোই না।কিন্তু নীলাভ সাহসের সাথে বুক ফুলিয়ে তা বললো।যেটা তার অনেক বেশি ভালো লাগলো।তাছাড়া ছেলেটার কথার মধ্যে জাদু আছে।খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। দেখতে কোন অংশে পুতুলের থেকে কম নয়।সব দিক দিয়ে পার্ফেক্ট।মনে মনে সাহিয়াকে তানজিল সাহেবে হাজার বার ধন্যবাদ জানালো।মেয়ের চোখ আছে বলতে হবে।তাই তো এরকম হিরের টুকরো ছেলে পছন্দ করেছে। সাজিয়া একগাদা ফল-মূল, চা,বিস্কুট, চানাচুর এনে সামনে রাখলো।তারপর অপজিট পাশের সোফায় বসে পরলো।

সাজিয়াঃ খাবার নেও তোমরা।

নীলাভঃ এগুলো আবার কিসের জন্য করতে গেলেন আপু।আমরা তো এখন চলে যাবো।

সাহিয়াঃ বললো আর হয়ে গেলো।রাতের খাবার না খেয়ে বাসা থেকে যেতে পারবে না। এসেছো তো চোরের মতো রাতের বেলা।কেন বিকেলে আসলে কি হতো?

আকিবঃ আঙ্কেল, আপু কিছু একটা নেন।সাহিয়া, তুমিও নেও।

তানজিলঃ আমি এখন আর কিছু খাবো না। তাহলে রাতের খাবার মাইনাস।তোমরা নেও।

নীলাভ চায়ের কাপ হাতে তুলে নিলো।আর আকিব পিরিচ থেকে এক টুকরো আপেল তুলে নিলো।ওদের জোড়াজুড়িতে সাজিয়া একটা বিস্কুট নিয়ে মুখে পুরলো।তানজিল সাহেব এক দৃষ্টিতে নীলাভকে লক্ষ্য করছে। নীলাভের চা খাওয়া শেষ হতেই সে বললো।

তানজিলঃ নীলাভ,আমার সাথে একটু রুমে এসো তো।তোমার সাথে আমি একা কিছু কথা বলতে চাই।

তানজিল সাহেবের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেলো।কি কথা বলবেন তিনি?তাহলে কি সাহিয়ার সাথে তার বিয়ে দিবে না।মানা করে দিবে ওকে।ও কোন বড় কাজ করে না বলে।সবার মনে প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। সাহিয়ার চোখে স্পষ্ট নীলাভকে হারানোর ভয় দেখা যাচ্ছে। আকিব ও অনেকটা ভয়ে ভয়ে আছে। যদি উনি নীলাভকে মানা করে দেয়।নীলাভ খুব শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে এমনটাই হওয়ার ছিলো।সাহিয়া ভয়ে তার বোনের দিকে তাকালো। সাজিয়া চোখের ইশারায় বুঝালো।ভয়ের কোন কারণ নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।তানজিল সাহেব ও নীলাভ উঠে এক রুমে চলে গেল। সাহিয়া সেদিক যাওয়ার আগেই ঠাস করে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো।

প্রায় ২০ মিনিট পর দরজা খুলে দুজনে বের হয়ে এলো।দুজনের মুখ খুশিতে ঝলমল করছে।অপরদিকে সাহিয়া এতক্ষণ চিন্তায় চিন্তায় শেষ। তাদের দুজনকে হাসি,মুখে দেখে সাহিয়া বেশ অবাক হলো।সে ভেবেছিলো তার বাবা নীলাভকে মেনে নিবে না।তাহলে দুজনের মুখ মনমরা থাকবে।কিন্তু সেখানে উল্টো। তার মধ্যে তানজিল সাহেব খুশিমনে সাহিয়াকে বললো।

তানজিলঃ আলহামদুলিল্লাহ, তোর পছন্দ করা ছেলে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। এবার বিয়ের ডেট ফাইনাল করে দেই।

সাহিয়া কথাটা শুনে কি রিয়েকশন দিবে তাই ভুলে গেলো।দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আকিব এসে নীলাভকে জড়িয়ে ধরলো।এই মুহুর্তে সবাই খুব খুশি। নিশিতা রহমান দূর থেকে তার পাগলী মেয়ের কান্ড দেখে সামনে এগিয়ে এলো।

তানজিলঃ ধূর,পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেন?তুই এতো ভালো একটা ছেলে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করেছিস।আমি কি মানা করতে পারি।সাজিয়াকেও তো ওর পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছি। তোরা যার সাথে খুশি থাকবি তার হাতেই তো আমরা তুলে দিবো।তোরা খুশি থাকলেই আমরা খুশি।

নিশিতাঃ সাহিয়া কান্না করছিস কেন?তুই যদি ভালো কিছু পছন্দ করিস তাহলে আমরা মানা কেন করবো বল।তোরা যাতে ভালো থাকবি তাতে আমরাও ভালো থাকবো।

সাহিয়াঃ থ্যাংকিউ সো ম্যাচ বাবাই।আমি ভাবতেই পারি নি যে আমার পছন্দের পুতুল ছেলে তোমারও পছন্দ হবে।অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে।তুমি পৃথিবীর বেস্ট বাবাই। (কাঁদতে কাঁদতে)

নীলাভ অবাক চোখে সাহিয়ার কান্ড দেখছে।একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে তাকে পাওয়ার আনন্দে কাঁদে। নিজেকে এখন তার অনেক লাকি মনে হচ্ছে। কারণ সে সাহিয়ার মতো একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে। নীলাভ মুখে যতই স্বীকার না করুক।সে কিন্তু সাহিয়াকে অনেক ভালোবাসে।

তানজিলঃ আমি তাহলে দুই মেয়ের বিয়েটা একসাথে দিতে চাইছি।কি বলো তোমরা?

নীলাভঃ আসলে আঙ্কেল আমার এর মধ্যে একটু কাজ আছে। তাই আমি চাইছি আপুর বিয়ের পর আমাদের বিয়েটা হোক।আমাদের বিয়েই আপনার কোন খরচ করতে হবে না। আমার সাধ্যমত সব দিয়েই আমি সাহিয়াকে আমার ঘরে তুলবো।

তানজিলঃ আচ্ছা, তুমি যা বলবে তাই হবে।

নিশিতাঃ অনেক কথা হয়েছে। এখন সবাই খেতে চলো।সাহিয়া এবার কান্না অফ কর।আর আমার হবু মেয়ের জামাই ও তার ভাইয়ের জন্য খাবার বেড়ে দে।আমরা সবাই একসাথে খেতে বসবো।

💗💗💗

সবাই একসাথে খাবার খেয়ে নিলো।খাবার শেষ হতেই নীলাভ ও আকিব চলে এলো।বাসায় আসার পর আকিবের মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তানজিল সাহেব নীলাভের সাথে কি কথা বললো।যার কারণে কোন দ্বিধা ছাড়া রাজী হয়ে গেলো।

আকিবঃ নীলাভ, আমার একটা প্রশ্ন ছিলো।

নীলাভঃ আমি জানি।তুই জিজ্ঞেস করবি, আমার হবু শ্বশুর আব্বা আমার সাথে কি কথা বললো।যার কারণে তিনি কোন অমত ছাড়া রাজী হয়ে গেলো।

আকিবঃ হ্যাঁ,আমি এটাই জিজ্ঞেস করতাম।

নীলাভঃ শোন তাহলে।

নীলাভ, আকিবকে সব খুলে বললো।যা শুনে আকিব পুরো অবাক।ও ভাবেনি তানজিল সাহেবে ওদের সিক্রেটটা ধরে ফেলবে।কি সিক্রেট ধরে ফেলেছে ওদের।সেটা জানতে হলে আমাদের ফ্লাশব্যাক জানতে হবে।চলুন আমরাও ফ্লাশব্যাক থেকে ঘুরে আসি।

ফ্লাশব্যাক………….

নীলাভ রুমে ঢোকার পর পরই তানজিল সাহেব দরজাটা আটকে দিলো।যেটা দেখে নীলাভ কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।ভয়মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

নীলাভঃ আঙ্কেল, দরজা বন্ধ করলেন কেন?

তানজিলঃ আরে ঋয় পেয়ো না।আমি তোমার কাছ থেকে একটা সত্যি জানতে চাই।

নীলাভঃ কি সত্যি?

তানজিলঃ তুমি কি এসব কাজ ছাড়াও অন্য কোন সিক্রেট কাজ করো।

নীলাভঃ হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন আঙ্কেল?

তানজিলঃ আমি তোমাকে একদিন বিখ্যাত নিউজ পেপার “বাংলাদেশের খবর” অফিসে দেখেছিলাম।তাই তোমাকে আজ দেখে আমার একটু সন্দেহ হয়েছে। তুমি যদি সিক্রেট সাংবাদিক হিসেবে কাজ না করতে তাহলে আমার কাছে এটাও বলতে।

নীলাভঃ হ্যাঁ আঙ্কেল। আপনি ঠিক ধরেছেন। আমি ও আকিব সিক্রেট সাংবাদিক হিসেবে ঐ নিউজ পেপারের অফিসে কাজ করি।আমারা আত্মগোপন করে বড় বড় শিল্পপতি,নেতা,মন্ত্রীদের কালো ধান্দা, ইলেগাল ব্যবসার খবর জোগাড় করি।যেটা নিউজ পেপারে ছাপা হয়।তাছাড়া সেটা অজ্ঞাত ব্যাক্তি হিসেবে পুলিশ ও টিভি চ্যানেলের কাছে তথ্য পৌঁছে দেই।গত দুই সপ্তাহের আগে আমিনুর রহমানের মদের ফ্যাক্টেরী সিল গালা ও তাকে গ্রেফতারের কথা তো শুনেছেন।সেগুলো আমরা করেছি।

তানজিলঃ আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো।তুমি গভীর জলের মাছ।আজ পুরো সিউর হলাম।তোমার সাংবাদিকতায় তো বেশ ভালো ইনকাম আসে।তাহলে বাকি কাজগুলো কেন করো।

নীলাভঃ আলহামদুলিল্লাহ, আমরা দুজন ত্রিশ হাজারের ওপরে বেতন পাই।সারা মাসের খরচ রেখে বাকি সিংহভাগই একটা এতিমখানায় ও বৃদ্ধাশ্রমে দান করে দেই।আর বাকি কাজগুলো করার কারণ হলো, আমার কাজ ছাড়া বসে থাকতে ভালো লাগে না। যতটুকু অবসর সময় পাই বাকি কাজগুলো করি।আমি সকল কাজকে যেমন শ্রদ্ধা করি তেমনি ভালোবাসি।তাই এসব কাজ করি।

তানজিলঃ তোমার কথা শুনে আমার মন ভরে গেলো বাবা।অনেক বড় হও তুমি। সেই দোয়া করি।তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারলে আমি ধন্য।এরকম একটা ছেলেকে আমার মেয়ে নিজে পছন্দ করেছে।আমার তো আপত্তি করার প্রশ্নই উঠে না।

নীলাভঃ আঙ্কেল, এসব কথাগুলো কাউকে বলেন না প্লিজ। এমনকি সাহিয়াকেও নয়।যখন সময় হবে আমি নিজে ওকে জানিয়ে দিবো।

তানজিলঃ তুমি নিশ্চিন্তে থাকো বাবা।আমি কাউকে বলবো না।

দুজন খুশি মনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কিন্তু কেউ তো জানে না রুমে আগের থেকে ক্যামেরা ফিট করা ছিলো।যা প্রথম থেকে সব ভিডিও হয়েছে।আর ক্যামেরাটা অন্য কেউ ফিট করেনি।এটা সাহিয়া করেছে। কারণ ও আগের থেকে এরকম কিছু হবে তা ধরে নিয়েছিলো।যার কারণে নিজের মোবাইলে ভিডিও ওন করে লুকিয়ে রেখেছিলো।

ফ্লাশব্যাক এন্ড……………..

#চলবে
রি-চেইক দেওয়া হয়নি😐।ভূল-ত্রুটি
ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 🥰🥰

পুতুল ছেলেটি পর্ব-১২

0

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_12
#Writer_NOVA

আকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আকিব।চোখের কোণা বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে।তার মাকে আজ বড্ড মনে পরছে।মা থাকলে হয়তো তার ছেলের সাফল্যে অনেক খুশি হতো।বাবা নামক নরপশুর কথা মনে পরে না। পরলেও রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।মানুষটার প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছু খুঁজে পায় না।কারণ তার বাবায় তার মা কে তার কাছে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ মুছে, হাসি মুখে ঘুরলো আকিব।

নীলাভঃ কাঁদছিস কেন?

আকিবঃ কোথায় না তো?(কৃত্রিম হাসি দিয়ে)

নীলাভঃ আমার কাছে মিথ্যে বলছিস?

আকিব এবার নিজেকে আটকাতে পারলো না। নীলাভকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো।নীলাভ কিছু বললো না।মাঝে মাঝে মন খুলে কাঁদতে দিতে হয়।তাতে মনের বোঝা হালকা হয়।কাঁদতে কাঁদতে আকিব বললো।

আকিবঃ আজ মা কে খুব মনে পরছে রে।সে আজ আমাকে এই পজিশনে দেখে খুব খুশি হতো।জানিস,
মৃত্যুর আগে আমি মায়ের চোখে বাঁচার আকুলতা দেখতে পেয়েছি। আমার জন্য বাঁচতে চেয়েছিলো।কিন্তু আল্লাহ তাকে নিয়ে গেলো।আমার জন্য তাকে ছেড়ে যেতে পারলো না।

নীলাভঃ আল্লাহ মানুষের যতটুকু হায়াত রেখেছে ততটুকু বাঁচতে পারবে।এক মিনিট বেশিও নয় কমও নয়।তাই কান্না না করে তার জন্য নামাজ পরে দোয়া কর কাজে দিবে।আমি তো চোখের সামনে নিজের বাবা,মা,ছোট ভাইরাকে পরপারে চলে যেতে দেখলাম।তখন তো তাদের আটকাতে পারিনি। তাদের মৃত্যু ছিলো এভাবে।তাই তো সেদিন বাবা যেতে রাজী না হলেও আমরা জোর করে বাবাকে রাজী করেছিলাম।

আকিবঃ বাবা প্রচুর জুয়া খেলতো।রাত নেই, দিন নেই মায়ের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করতে।যখন তখন গায়ে হাত তুলতো।মা আমার জন্য মাটি কামড় দিয়ে সব মেনে নিতো।সে চাইতো না আমি বাবা ছাড়া বড় হই।প্রায় নানাবাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলতো।মা দুইবার মামাদের হাতে,পায়ে ধরে টাকা এনে দিয়েছিলো।যদি তার নির্যাতনটা কমে সেই আশায়।কিন্তু তার লোভ দিনকে দিন বেড়ে যেতে লাগলো।আবারো ২০ হাজার টাকা আনার জন্য মা কে চাপ দিতে লাগলো।কিন্তু মা এবার আনতে চায়নি। কারণ মামাদের অবস্থা ভালো ছিলো না। একমাত্র বোন হওয়ায় তারা অনেক হেল্প করেছে।সেবার টাকা আনতে না পারায় বাবা ইচ্ছে মতো মাকে মেরেছে। রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে চলে যায়।আমি তখন মাত্র ৮ বছরের ছেলে।জীবন সম্পর্কে কিছুই বুঝতাম না। মা সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করেছিলো।আর বলেছিলো সে চলে গেলে আমি যাতে অনেক দূরে চলে যাই।হাসপাতালে নিতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন সকালে মা আমাকে একা করে চলে গেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। মাথা ফাটিয়ে ফেলেছিলো মায়ের। মায়ের কথা মতো আমি সব ছেড়ে চলে এলাম এখানে।বিশ্বাস কর নীলাভ, এখনো আমার চোখে আবছা ভাবে সেই সেই বিষাক্ত স্মৃতিগুলো ভাসে।আমার মায়ের বাঁচার আকুতি।

নীলাভঃ জীবন বড় অদ্ভুত আকিব।এখনো গ্রামের অনেক ছেলেরা এই ঘৃণিত কাজগুলো করে।কথায় কথায় গায়ে হাত তুলে।তারা ভাবে এতেই তাদের পুরুষের বীরত্ব প্রকাশ পায়।নারীকে অবলা ভেবে তারা তাদের শক্তি দেখায়।কিন্তু তারা একবারও ভাবে না এই নারীরা ছাড়া তারা অচল।জুয়ার মতো বাজে খেলার জন্য তারা শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা আনতেও দ্বিধাবোধ করে না।

আকিবঃ তার শাস্তি হয়েছিল। মামারা কেস করেছিলো।৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। কিন্তু মানুষটা নাকি এখনো বদলায়নি।নর্দমার কীট কি কখনো ভালো হয়।তাকে নিজের বাবা ভাবতেও আমার ঘৃণা হয়।তার কথা মনে হলেই মাথায় চিনচিন রাগ উঠে।

নীলাভঃ তার শাস্তি নিশ্চিয়ই আল্লাহ করবে।তার বিচারে কেউ নিরাশ হয় না।তিনি সর্বত্তম বিচারকারী।তার কাছে অন্যায়ের কোন নিস্তার নেই। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখ।আর আন্টির জন্য বেশি বেশি করে নামাজ পড়ে দোয়া করবি।আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি না ফেলে জায়নামাজে বসে মোনাজাতে ফেলিস।তাহলে কাজে দিবে।

আকিবঃ হ্যাঁ,তুই ঠিক বলেছিস।আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। সে আমাকে তোর মতো একটা বন্ধু মিলিয়ে দিয়েছে। যে আমাকে সর্বদা সৎ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করিস।আমাকে সাপোর্ট করিস।

নীলাভঃ হয়েছে আমার গুণগান গাইতে হবে না। প্রশংসা সবসময় মানুষের আগেচরে করতে হয়।সামনাসামনি করলে সেটাকে পাম মারা বলে।আর দোষ বলতে হয় সামনাসামনি। যাতে সে তার দোষ গুলো জেনে নিজেকে শুধরে নিতে পারি।কিন্তু আমরা দোষ বলি আগেচরে।যেটা গিবতের শামিল।এখন এটা নিয়ে আলোচনা নয়।বিকেল তো হয়ে এসেছে। চল বৃদ্ধাশ্রম থেকে ঘুরে আসি।দেখবি মনটা এভাবেই ভালো হয়ে গেছে।

আকিবঃ আচ্ছা চল।অনেকদিন যাওয়া হয় না।

নীলাভ ও আকিব তৈরি হতে চলে গেল। মন বেশি খারাপ থাকলেই তারা বৃদ্ধাশ্রম থেকে ঘুরে আসে।এতে ওদের অনেক ভালো লাগে। যাওয়ার আগে তাদের জন্য খাবার ও উপহার নিতে ভুলে না।বৃদ্ধাশ্রমের মানুষগুলো ওদের পেলে ছারতেই চায় না।একসাথে রাতের খাবার খেয়ে তবেই ফিরতে দেয়।দুনিয়াটা সত্যিই বড় অদ্ভুত। কারো বাবা-মা নেই বলে কাঁদে। আর কেউ তাদের বোঝা ভেবে ফেলে রেখে যায়।

💗💗💗

পরেরদিন………

দুপুরে রোদটা আজ বেশি তেজ নেই। তারপরেও একটা ভাপসা গরমে সবাই অতিষ্ঠ। সাহিয়া কলেজ থেকে হেঁটে ফিরছে।রিকশা ইচ্ছে করে নেয়নি।কারণ রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে নীলাভকে খুঁজবে। দুদিন ধরে সে লাপাত্তা। তার কোন খোঁজ খবর নেই। আজ পেলে তার ৩৬০° সত্যিই বাজাবে।

সাহিয়াঃ আমার থেকে কতদিন পালিয়ে বাঁচবে পুতুল ছেলে।আমি তো তোমাকে পাকড়াও করবোই করবো।একবার সামনে পাই তোমাকে। আমাকে দূরে ঠেলে দেওয়া জন্মের মতো ঘুচিয়ে দিবো।আমাকে তো চিনো না। তোমার কথা আমি কত সাহস করে বাবাইকে বললাম।আর তুমি লাপাত্তা। দাঁড়া ব্যাটা।তোমার মজা যদি আমি না দেখাই তাহলে আমি নাম পাল্টে ফেলবো।আমার মন বলছে আজ তোমার সাথে দেখা হবে।যদি দেখা হয় তাহলে তুমি আজকে গেলে পুতুল ছেলে।

সাহিয়া নিজের মনে বিরবির করতে করতে রাস্তা চলছে।সে অনেকটা রেগে আছে।হঠাৎ সামনে চোখ যেতেই নীলাভকে দেখতে পেলো।একটা ভ্যান গাড়ি ভর্তি নানা প্যাকেট জাতীয় খাবার।নীলাভের এক হাতে ছোট একটা ডায়েরি, অপর হাতে কলম।সে একটা ফুড স্টোরের দোকানদারের সাথে কথা বলছে।আর অর্ডার কাটছে।কথা শেষ হতেই দুই কাটন বিস্কুট দিয়ে অন্য দিকে চললো।সাহিয়া দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পরলো।নীলাভ ওর সামনে দিয়ে যেতে নিলে ওর এক হাত টেনে দেয়ালের আড়ালে নিয়ে এলো।

নীলাভঃ আরে কে আপনি?আমার হাত ধরেছেন কেন?ছাড়ুন আমায়।

সাহিয়াঃ একদম ঢং করবে না পুতুল ছেলে।নয়তো ঘুষি মেরে মুখের আদল বদলে দিবো।

নীলাভঃ ম্যাম, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি পুতুল ছেলে নই।

সাহিয়াঃ আরেকবার ম্যাম বললে রাস্তার মানুষের হাতে গণধোলাই খাওয়াবো।কল মি হিয়া।তোমার হিয়াপাখি।তুমি আমাকে হিয়াপাখি বলে ডাকবে।আর আপনি বললে অবস্থা খারাপ করে দিবো।

সাহিয়া সামনে এসে নীলাভের টি-শার্টের কলার ধরে কথাগুলো বললো।নীলাভ বড়সড় একটা শুকনো ঢোক গিললো।অভিনয় করেও লাভ হলো না।সাহিয়ার ধমক শুনে ভিজে বিড়াল হয়ে গেলো। আজ তার ৩৬০° নির্ঘাত বাজবে।

নীলাভঃ আমার কলার ছাড়ুন।এটা কোন ধরনের অসভ্যতামী?রাস্তার মানুষ দেখলে খারাপ বলবে।

সাহিয়াঃ একদম চুপ।তোমার কোন কথা শুনবো না।তুমি আমাকে কল করোনি কেন?দুই দিন ধরে তোমার কলের অপেক্ষা করতে করতে আমি বুড়ি হতে চললাম।আর তোমার কোন খবর নেই।

নীলাভঃ কলারটা ছাড়ুন।(শান্ত গলায়)

সাহিয়াঃ ছাড়বো না, কি করবে?

নীলাভঃ নিজেই ছাড়িয়ে নিবো।

নীলাভ এক ঝাটকায় ওর কলারটা ছাড়িয়ে নিলো।ছেলেরা আর যাই করুক নিজের কলারে অন্য কারো হাত সহ্য করতে পারে না। রাগ উঠে যায়। কিন্তু নীলাভ রাগের জন্য ছাড়ায়নি।রাস্তার মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে। তার জন্য সাহিয়ার হাত সরিয়ে দিয়েছে।

সাহিয়াঃ তুমি কোথায় ছিলে এই দুই দিন?

নীলাভঃ একটু কাজ ছিলো।আজ আবার একজনের বদলে ফুড ফ্যাক্টরী থেকে অর্ডার কাটতে এসেছি।আরো অনেকগুলো দোকান বাকি আছে। আমি এখন যাচ্ছি।

সাহিয়াঃ কোথায় যাচ্ছো?

নীলাভঃ বাসায়,বাকি অর্ডার বিকেলে কাটবো।

সাহিয়াঃ চলো আমিও যাবো।

নীলাভঃ মানে!!!!!( অবাক হয়ে)

সাহিয়াঃ মানে, আমি তোমার বাসায় যাবো।যাতে করে তুমি আবার লাপাত্তা হলে সোজা তোমার বাসায় গিয়ে উঠতে পারি।

নীলাভঃ বিনা দাওয়াতের মানুষ আমি আমাদের বাসায় নেই না।সেধে সেধে কেউ গেলে তাকে ছোঁচা উপাধি দেই।(মুখ টিপে হেসে)

সাহিয়াঃ একদম ফাইজলামি করবে না পুতুল ছেলে।আমি যেহেতু বলেছি তোমার বাসায় যাবো তার মানে যাবো।আর কোন কথা নেই। আমার হবু বরের বাসা আমাকে তো জানতে হবে।যাতে করে আমি আগের থেকে সংসারের সবকিছু প্ল্যান করতে পারি।

নীলাভঃ হবু বর???

সাহিয়াঃ বাবাই কে তোমার কথা বলেছি।বাবাই তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে।তোমার সাথে কথা বলবে।তোমাকে বাবাইয়ের পছন্দ হলে আমাদের বিয়ের কথা পাকা।আর সেজন্য তোমাকে আমি হারিকেন দিয়ে খুঁজছি। কিন্তু তোমার খোঁজ নেই।

সাহিয়া এক প্রকার জোর করেই নীলাভের বাসায় যেতে লাগলো।নীলাভ অবাক হয়ে আছে। এই মেয়ে তো সবকিছুতে তার দুই ডবল আগে। নীলাভ আগে চলছে।সাহিয়া পেছনে।সাহিয়া এগিয়ে এসে নীলাভের এক হাতের ধরে হাঁটতে লাগলো।নীলাভ চোখ দুটো বড় বড় করে সাহিয়ার দিকে তাকালো। সাহিয়া এই সুযোগের অপেক্ষা করছিলো।নীলাভের হাত ছেড়ে তার ওড়না দিয়ে নীলাভের মুখের ঘাম মুছে দিলো।তারপর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে নীলাভের হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। নীলাভ এখন ঘোরের মধ্যে আছে। ডোজটা আজ একটু বেশি হয়ে গেছে। সাহিয়া মিটমিট করে হাসতে হাসতে পথ চলছে।আর নীলাভ শর্কড।

#চলবে

পুতুল ছেলেটি পর্ব-১১

0

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_11
#Writer_NOVA

আনজুম পরিবারে ছোটোখাটো একটা মিটিং বসেছে বলা যায়। মিস্টার তানজিল আনজুম সবার সাথে কি এক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে।সবার থেকে একটা বিষয়ে মত নিতে চায়।তাই রাতের খাবার খেয়ে সাহিয়া ও সাজিয়া তাদের বাবা-মায়ের রুমে এসেছে। রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা।তানজিল সাহেব তার দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

সাহিয়াঃ বাবাই, কি বলবে জলদী বলো। আমার ঘুমে ধরেছে।বেশি সময় এভাবে বসে থাকতে পারবো না।

নিশিতাঃ হিয়া, এসব কি?নিশ্চয়ই তোমার বাবা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলবে।তাই তোমাদের ডেকেছে।

সাজিয়াঃ আমিও তো বুঝলাম,বাবাই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ডেকেছে। কিন্তু বাবাই তো কিছুই বলছে না।

তানজিল সাহেব দুই মেয়ের বিরক্তি দেখে ঈষৎ হাসলেন।তারপর শান্ত কণ্ঠে বললেন।

তানজিলঃ কিছু দিন পর আমার বড় মেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।তার নিজস্ব একটা সংসার হবে।বিশাল বড় দায়িত্ব তোমার কাঁধে পরবে সাজিয়া।তাছাড়া তুমি হলে সংসারের বড় বউ।সবদিকে তোমার নিখুঁত নজর থাকতে হবে। মনে রেখ আমি শুধু তোমাকে নয় আমার কলিজার টুকরো কে বিদায় দিচ্ছি।প্রত্যেক বাবার কাছে তার বড় সন্তান প্রিয়।তবে সে যদি হয় বড় মেয়ে তাহলে তো কথাই নেই।কিন্তু তোমরা দুজনেই আমার কাছে সমান। তোমাদের জন্য সারাজীবন আমাদের দরজা খোলা থাকবে।তবে প্রথম প্রথম শ্বশুর বাড়ি গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। কারো কোন অভিযোগ করার সুযোগ দিবে না। তুমি যদি সবাইকে নিয়ে ভালোমতো থাকতে পারো তাহলেই আমর ও তোমার মায়ের শান্তি।

সাজিয়াঃ হ্যাঁ বাবাই, আমি সর্বস্ব দিয়ে তা করার চেষ্টা করবো।তোমাদের কে নিয়ে যেনো কেউ কোন কটু কথা না বলতে পারে।বরং সবাই জেনো বলতে পারে আমার বাবা-মা আমাকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছে। তোমাদের বদনাম হোক এমন কোন কাজ আমি কখনো করবো না।

নিশিতাঃ আমাদের বিশ্বাস আছে।আমরা জানি আমাদের মেয়ে কখনই তার বাবা-মায়ের সম্মানহানির কোন কাজ করবে না।

সাহিয়াঃ এই কথার জন্য ডেকেছিলে।আমি ভাবলাম কি না কি😕??

তানজিলঃ না, এই কথার জন্য ডাকিনি।আমি উত্তরায় ফ্ল্যাটের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে যে জমিটা কিনিছিলাম।এখন চিন্তা করছি সেটা আপাতত রেখে দিবো।ঐটা কমপ্লিট করতে আরো ১০-১৫ লাখ টাকা লাগবে।ফ্ল্যাট ও সাজিয়ার বিয়ে দুটো একসাথে সামলাতে পারবো না। তাই কাজ স্টপ রেখেছি।বড় মা-মণির বিয়ের পর ঐ কাজ শুরু করবো।

সাহিয়াঃ যেমনটা তুমি ভালো মনে করো তেমনটাই করো।আমি যাচ্ছি ঘুমাতে।আল্লাহ হাফিজ।

তানজিলঃ কোথায় যাচ্ছিস হিয়া মা-মণি?আমি তো এখনো আসল কথাই বলিনি।

সাহিয়াঃ তাহলে এতক্ষণ কি বললে?🙄

তানজিলঃ তোদেরকে বিষয়গুলো জানিয়ে রাখলাম।আসল কথা হলো—-(আমতাআমতা করে)

সাহিয়াঃ কি জলদী বলো?আমার ঘুমে দু-চোখ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

তানজিলঃ তুই এখানে চুপটি করে আমার পাশে বস তো।তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।

💗💗💗

সাহিয়া ভ্রু কুঁচকে তার বাবার পাশে বসলো।সে কিছুই বুঝতে পারছে না। তার বাবা আসলে কি জরুরি কথা বলবে।

তানজিলঃ আসলে হয়েছে কি মা-মণি।তোরাব তোকে অনেক পছন্দ করেছে।ওর বাবা-মায়ের ও তুই অনেক পছন্দের। তাই তারা চাইছে তাদের দুই ছেলের জন্য আমার দুই জান্নাত নিতে।আর তুরাগ ও সাজিয়ার বিয়ের দিনই তোর আর তোরাবের বিয়ে দিতে।তাতে এক খরচে দুটো বিয়ে হয়ে যায়।এখন আমরা সবাই রাজী।তোরাব ছেলে হিসেবে খারাপ নয়।তোর মতামত জানতে চাইছি।

সাহিয়া রেগে আইটেম বোম হয়ে গেলো।তোরাবের সাহস দেখে সে অবাক হচ্ছে। তলে তলে এতকিছু করে ফেললো আর সাহিয়া তা টেরও পেলো না। চোখ, মুখ শক্ত করে সাহিয়া বললো।

সাহিয়াঃ আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না বাবাই।(কঠিন গলায়)

তানজিলঃ কেন মা-মণি?

নিশিতাঃ ছেলে হিসেবে তোরাব খুব ভালো। ওকে বিয়ে করতে মানা করছিস কেন?তারা নিজ থেকে তোকে তাদের ছোট ছেলের বউ করতে চাইছে। আর তুই মানা করছিস।

সাজিয়াঃ তোরাব কোন দিক দিয়ে খারাপ হিয়া?তুই ওকে বিয়ে করতে মানা করছিস যে?

সাহিয়াঃ দিদিয়া, আমি কি বলেছি তোরাব খারাপ?

সাজিয়াঃ না বলিসনি।তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কি?

সাহিয়াঃ আমি একজনকে অনেক পছন্দ করি।বিয়ে করলে তাকেই করবো।অন্য কাউকে নয়।

সাহিয়া চোখ বন্ধ করে ওড়না খামচে ধরে সাহস করে একদমে তার মনের কথা বলে দিলো।সবাই অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

তানজিলঃ ছেলেটা কে,কি করে,তার পরিচয় কি?

সাহিয়াঃ আমি খুব শীঘ্রই তাকে তোমাদের সাথে পরিচয় করে দিবো।আমার বিশ্বাস তাকে তোমাদেরও পছন্দ হবে।সে তোরাবের থেকে দুই ডবল বেশি ভালো।তার পার্সনালিটি আমার অনেক ভালো লেগছে।সে সবার থেকে ভিন্ন।

তানজিলঃ এক দিন সময় করে তুমি তাকে নিয়ে এসো। আমি তার সাথে কথা বলবো।

সাহিয়া খুশিতে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।এখন তার নাচতে ইচ্ছে করছে। তার বাবা যে এত জলদী রাজী হয়ে যাবে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি।তানজিল সাহেব ঠিক করে রেখেছেন। বিয়ের বিষয় নিয়ে তিনি তার মেয়েদের কোন জোর করবেন না। ওদের যেই ছেলেকে পছন্দ হবে তাকেই দেখে,শুনে, খবর নিয়ে ভালো মনে হলে তার হাতেই মেয়েকে তুলে দিবেন।তাইতো সাজিয়ার বিয়ে তার পছন্দের ছেলের সাথে দিচ্ছেন।মেয়েরা যার সাথে থেকে খুশি। তিনিও তাতে খুশি।কিন্তু তার মতো মন-মানসিকতার মানুষ খুব কম পাওয়া যায়। বেশিরভাগ বাবা তাদের পছন্দের ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে অনেক জোর-জবরদস্তি করে।যেটা তানজিল সাহেবের পছন্দ নয়।তবে বাবা-মা যা করে অবশ্যই ভালোর জন্য করে।সবার বাবা এক নয়।

সাহিয়াঃ থ্যাংকিউ বাবাই।অনেক অনেক থ্যাংকিউ।

তানজিলঃ আমার মেয়েরা যার সাথে খুশি থাকবে।আমি খুশিমনে তার হাতেই তুলে দিবো।তবে তার আগে আমাকে ছেলেটাকে যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। আমি তুরাগের পরিবারকে বিষয়টা জানিয়ে দিচ্ছি।

নিশিতাঃ কিন্তু উনারা যদি কোন ঝামেলা করে।মানে সাজিয়ার সাথে তুরাগের বিয়েটা না দিতে চায়।

সাজিয়াঃ তুমি চিন্তা করো না মা।আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলবো কথাটা।আমার বোন যেখানে খুশি থাকবে আমরা সেখানেই তাকে দিবো।জোড় করে অন্য কোথাও নয়।

সাহিয়া এবার তার বাবাকে ছেড়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। সে যে কি পরিমাণ খুশি। এখন ওর চিন্তা নীলাভকে রাজী করে বাসায় আনার।অবশ্য খুব জলদী সে এই কাজটাও সফল হয়ে যাবে।

💗💗💗

নীলাভ খুব মনোযোগ সহকারে কোলে ল্যাপটপ রেখে আপনমনে কাজ করছে।পাশে কফির মগ।আকিব বসে বসে ফেসবুকিং করছিলো। মাঝে মাঝে নীলাভের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো।রাত ১২টা বাজতে চললো।সেই রাত ১০ টা থেকে ল্যাপটপে ডুব দিয়ে আছে নীলাভ।কিন্তু এখনো উঠেনি।এবার আকিব বেশ বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

আকিবঃ নীলাভ, এই নীলাভ।তুই কি ঘুমাবি না?

নীলাভঃ হুম,একটু কাজ আছে।সেগুলো সেরেই ঘুমিয়ে পরবো।তুই জেগে আছিস কেন?ঘুমিয়ে পর।

আকিবঃ ল্যাপটপের ঐ সামান্য আলোতেও যে আমি ঘুমাতে পারবো না। সেটা কি তুই জানিস না।তুই কি এমন কাজ করছিস রে?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। দুই ঘন্টার ওপরে হলো ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছিস।নীলাভ, আমি তোকে কিছু বলছি।তুই কি আমার কথা শুনছিস।

নীলাভঃ হ্যাঁ, বল। আমি শুনছি।তুই যদি এভাবে ঘুমাতে না পারিস তাহলে আরেকটু ওয়েট কর।

ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই নীলাভ আকিবের কথার উত্তর দিলো।আকিব জানে এখন এসব কথা বলেও কোন লাভ হবে না। তারপরেও বললো।রাগে হাতের মোবাইল রেখে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।কিন্তু ঘুম আসছে না। কাঁথার থেকে কচ্ছপের মতো মাথা বের করে বললো।

আকিবঃ ভাই,এবার একটু ঘুমা।আমাকেও একটু ঘুমাতে দে।বাকি কাজ সকালে করিস।এই নীলাভ, তুই কি ভুলে গেছিস।

আকিব এক লাফে উঠে বসলো।ও খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে শেষের কথাটা বলে উঠে বসেছে।নীলাভ কিঞ্চিত বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

নীলাভঃ কি ভুলে গেছি?

আকিবঃ সাহিয়া যে টাকার মধ্যে ওর মোবাইল নাম্বার লিখে দিয়েছিলো।রাতে যে তোকে কল করতে বলেছিলো।তুই কি তা ভুলে গেছিস।

আকিবের কথায় নীলাভের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। কাজের চাপে সাহিয়ার কথা মাথা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে গিয়েছিল। এখন আকিব মনে করায় ওর মনে হলো।

নীলাভঃ এই রে আকিব😰!!!! আমি তো ভুলেই গেছিলাম ওর কথা।তুই তো জানিস, কাজের সময় আমার দুনিয়াদারিতে হুশ থাকে না।

আকিবঃ একদম ভালো হয়েছে। এবার বুঝবি মজা।সাহিয়া বলেছিলো ওকে কল না করলে তোর ৩৬০° বাজাবে।এবার সেই ৩৬০° এর জন্য তৈরি হো।তোর ব্যন্ড বাজালে আমি কিছু বলবো না। উল্টো ওর সাথে যোগ দিবো।তোকে তখন আমি চিনবোই না।

নীলাভঃ তুই তো ব্যাটা বন্ধু নামের শত্রু।তুই থাকলে আর আমার শত্রুর প্রয়োজন নেই। আচ্ছা, এখন কল করলে কি হবে?

আকিবঃ তোর বুদ্ধিসুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে? রাত ১২ টা বাজে ওকে কল করবি?

নীলাভঃ তাহলে কি করবো🤢?

আকিবঃ তুই কি করবি আমি কি জানি?তোর বিষয় তুই দেখ।আমি ঘুমালাম। অনেক ঘুমে ধরেছে।

আকিব বেশ কয়েকবার হাই তুলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।নীলাভের বারবার সাহিয়ার হুমকির কথা মনে পরছে।সেটা ভেবে আর কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারলো না।তাই কাজ রেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।তারপরেও সারা মাথায় সাহিয়ার চিন্তা ভিরছে।কে জানে সামনে পেলে কি করবে ওকে।

অন্যদিকে আকিব মিটমিট করে হাসছে।যাক বাবা অবশেষে ওর বুদ্ধি কাজে লাগলো।এখন সে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।আকিব ভালো করেই জানে এখন কিছুতেই নীলাভকে দিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করাতে পারবে না। তাই বুদ্ধি খুঁজতে লাগলো।একসময় সাহিয়ার কথা মনে হলো।আর জলদী করে নীলাভের মনে সাহিয়ার চিন্তা ঢুকিয়ে দিলো।নীলাভ কিছু নিয়ে সিরিয়াসলি চিন্তা করলে কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। সে কথা মনে হতেই আকিব এই ট্রিকটা কাজে লাগলো।

#চলবে

রি-চেইক দেওয়া হয়নি।তাই ভূল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। 🥰🥰

পুতুল ছেলেটি পর্ব-১০

0

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_10
#Writer_NOVA

দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে অনেক আগে।আছরের নামাজ পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সাহিয়া।ওরা যেই দালানে থাকে তার পাশেই মেইন রোড।বারান্দায় দাঁড়ালে রাস্তার সবকিছু দেখা যায়।ওদের বাসার বরাবরি আফজাল সাহেবের একটা ছোট চায়ের দোকান।তিনি খুব বৃদ্ধ মানুষ।সাহিয়া,সাজিয়া তাকে দাদু বলে সম্বোধন করে। ছেলে তিনটার বিয়ে দিয়েছে। তারা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।বাবা-মায়ের কোন খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না।নিজের খরচ চালাতে আফজাল সাহেব কারো কাছে হাত পেতে ভিক্ষা না করে এই ছোট চায়ের দোকান খুলেন।বিকেল হলে বেশ ভীড় দেখা যায়।তার চায়ের খ্যাতি পুরো মহল্লায় আছে।তাই বৃদ্ধ, মধ্যবয়স্ক,যুবক সবাই তার দোকানে চা পান করতে আসে।বিকেল হলে তিনি একা হাঁপিয়ে ওঠেন চা বানাতে বানাতে।তাই ১৫ বছর ছেলে লিপু কাজ করে।কিন্তু সে ভারী অলস টাইপের ছেলে।দোকানে আসা লোকদের সাথে আড্ডায় মেতে যায়। কিছু সময় পর পর আফজাল সাহেবের ডাকে ছুটে আসে।

গুণ গুণ করে গান গাচ্ছে।এর এদিক সেদিক দেখছে সাহিয়া।হঠাৎ আফজাল দাদুর দোকানের দিকে চোখ গেলো।অনেক মানুষের ভীড় দেখা যাচ্ছে। এটা নিত্য দিনের ব্যাপার।কিন্তু এরপর যা দেখলো তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।অবাক চোখে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে ছুট লাগালো দোকানের দিকে। যাওয়ার আগে সাজিয়াকে ডেকে বললো।

সাহিয়াঃ দিদিয়া, তুমি কি আমার সাথে যাবে?ও দিদিয়া,আমি ডাকছি শুনছো তুমি? আমার সাথে যাবে তুমি?

সাজিয়া, তুরাগের সাথে কথা বলছিলো।সাহিয়ার ডাকে উত্তর দিলো।

সাজিয়াঃ কি হয়েছে হিয়া?কোথায় যাবি?

সাহিয়াঃ অনেক দিন ধরে আফজাল দাদুর চা খাওয়া হয় না।আমার অনেক খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি কি যাবে আমার সাথে?

সাজিয়াঃ চা খেতে মন চাইলে ঘরে বানিয়ে খা।বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। দোকানে অনেক মানুষ। ছেলেদের মাঝে গিয়ে চা খাওয়ার কোন মানে হয় না।

সাহিয়াঃ আমি এতো জ্ঞান বিতরণ শুনতে চাইনি।তুমি যাবে কি না তা জিজ্ঞেস করেছি।যেতে চাইলে হ্যাঁ বলবে, না যেতে চাইলে না বলবে।এত কথা শোনানোর কি দরকার?ধূর,কাউকে যেতে হবে না। আমি একাই চলে যাচ্ছি।

সাহিয়ার কথা সাজিয়ার কান দিয়ে ঢুকলো না। কারণ সে আবারো তুরাগের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।পা টিপে টিপে আস্তে করে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো সাহিয়া।তার মা দেখলে আচ্ছা বকুনি দিবে।সিঁড়ি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে নেমে গেল।

💗💗💗

আকিব নিজের মনে মনে নীলাভকে বকছে আর কাজ করছে।কোথায় ভেবেছে আজ কোন কাজ নেই আরামে ঘুমাতে পারবে।তা না করে এখন কাজ করতে হচ্ছে। এই ছেলেটার যে কখন কি হয় তা এতবছর একসাথে থেকেও বুঝতে পারলো না।আফজাল সাহেব নীলাভকে সব দেখিয়ে দিচ্ছে। আর নীলাভ চা বানাচ্ছে। আকিব চা ভর্তি কাপ সবার সামনে নিয়ে পরিবেশন করছে।

আজ লিপু আসেনি।তাছাড়া আফজাল সাহেবের শরীরটাও ভালো না।তাই আজ দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যেতে চেয়েছিলো।তখনই আকিব ও নীলাভের সাথে দেখা।ওরা এই রাস্তা দিয়ে একটা কাজ সেরে ফিরছিলো।এদিক দিয়ে আসার সময় খেয়াল করলো আফজাল সাহেব তার দোকান বন্ধ করছে।তাই ওরা তাকে জিজ্ঞেস করে সব কথা জানতে পারলো।তাই নীলাভ ঠিক করলো আজকের বিকেলে তাকে সাহায্য করবে।যা ভাবা তাই কাজ। নীলাভ চা বানাতে লেগে পরলো।

নীলাভঃ হা করে কি দেখছিস?চায়ের কাপগুলো দিয়ে আয়।কাজের কাজ কিছু করিস না।দুই মিনিট কাজ করলে পাঁচ মিনিট রেস্ট নিস।

আকিবঃ গত আধা ঘণ্টা কাজ করে মাত্র বসলাম।আর তুই বলিস আমি দুই মিনিট কাজ করে পাঁচ মিনিট রেস্ট নেই 😤।(রেগে)

নীলাভঃ কথা কম বল।তুই যে কি কাজ করছিস তাতো আমি দেখতেই পারছি।

আকিবঃ আমি তো জানি তুই এখানে কাজ করছিস কেন?কি ভেবেছিস, আমি কিছু বুঝি না?তুই যে সাহিয়াকে দেখার জন্য এখানে কাজ করছিস তা আমি ভালো করেই জানি।নয়তো তুই সর্টকার্ট রাস্তা ছেড়ে এই রাস্তা দিয়ে কেন এলি?

নীলাভঃ ফালতু কথা কম বল আকিব।আমার কাছে এই রাস্তা কম দূরে মনে হয়েছে।তাই আমি এই রাস্তা দিয়ে এসেছি। কাউকে দেখার জন্য নয়।

আকিবঃ ঐ সব ভাব আমার সাথে নিস না।তুই স্বীকার না করলেও আমি জানি। তুই সাহিয়াকে দেখতেই এসেছিস।

নীলাভঃ আমাকে রাগাস না।আরো মানুষ এসে পড়েছে। তাদের চায়ের কাপ দিয়ে আয়।(ঝাড়ি মেরে)

আকিবঃ হুম পরিসই তো ঐ ঝাড়ি মারতে।কখনো আমার কাছে স্বীকার করতে পারলি না।আমি জানি তুই সাহিয়াকে অনেক ভালোবাসিস।তোর হাব-ভাবে তাই বোঝা যায়। এখন আবার তাকে এক পলক দেখার জন্য এখানে ছুটে এসেছিস।

নীলাভঃ হ্যাঁ,তুই তো সবজান্তা সমসের।তুই জানবি না তো কে জানবে?তুই যা বলবি তাই ঠিক ভাই। এখন দয়া করে চায়ের কাপ দিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার কর।

নীলাভ চায়ের পাত্রের ফুটন্ত গরম পানিতে চা-পাতি, চিনি দিতে মনোযোগ হলো।আকিব বির বির করে নীলাভকে আবারো একদফা বকে নিলো।তারপর ট্রে হাতে নিয়ে সবাইকে চা পরিবেশন করতে লাগলো।

💗💗💗

সাহিয়া দৌড়ে রাস্তার অপর পাশে এসে দাঁড়ালো। তখন সে নীলাভকে চায়ের দোকানে দেখেছে।এখনও এসে দেখলো নীলাভ কেটলি থেকে কাপে চা ঢালছে।ছেলেটাকে যত দেখে তত অবাক হয়।কাজ ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। এখন আফজাল দাদুকে তার কাজে সাহায্য করছে।এরকম ছেলে খুব কম দেখা যায়।যে নিজের কাজের পাশাপাশি অন্যের কাজে হেল্প করে।চেনা নেই, জানা নেই , এমনকি জীবনেও দেখা হয়নি।সেই আফজাল দাদুর কাজে সাহায্য করছে নীলাভ।ওর কাজের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি দেখে সাহিয়া আরো বেশি করে ওর প্রেমে পরে যাচ্ছে।

সাহিয়াঃ আমি এখন দোকানে যাই কি করি?এতগুলো ছেলের মাঝখানে আমি একটা মেয়ে। বিষয়টা তো খারাপ দেখায়।কে বলেছিলো আজকে এত মানুষ হতে।আমি আমার পুতুল ছেলেটির হাতে চা খাবো।আর আজই সবাইকে এসে হানা দিতে হলো।কি আর করার?একটু অপেক্ষা করি।যদি ভিড় কমে।

সাহিয়া দাঁড়িয়ে রইলো।পনের মিনিট হয়ে গেছে। কিন্তু লোক কমার বদলে বেড়েই যাচ্ছে। সাহিয়া দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভিড় কমছে না।আরো দশ মিনিট পর কমে গেল।দোকানের সামনের টুলে দুজন বসে আছে। সেটা দেখে সাহিয়া খুশিতে এক দৌড় দিয়ে এসে সেই টুলে বসলো। তারপর জোরে চেঁচিয়ে বললো।

সাহিয়াঃ এক কাপ চা দেও তো।চিনি কম দিবে।

মেয়ের কন্ঠ পেয়ে আকিব ও নীলাভ দুজনেই চমকে সামনে তাকালো।তাকিয়ে সাহিয়াকে দেখে আরেক দফা চমকে গেলো।

সাহিয়াঃ আশ্চর্য, আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা?আমি কি এলিয়েন নাকি?আমার পুতুল ছেলের হাতের স্পেশাল চা খাবো।ও পুতুল ছেলে, জলদী জলদী করে আমায় চা তৈরি করে দেও।আমি বেশি সময় বসে থাকতে পারবো না।

আকিবঃ নে নীলাভ,তোর জুলিয়েট চলে এসেছে। আরে রোমিও এখানে আর জুলিয়েট আসবে না তা কি হয়?কত ভালোবাসে তোকে।আর তুই মেয়েটার ভালোবাসা বুঝেও না বোঝার ভান করিস।নীলাভ,
এবার তোর প্রিয় মানুষটার জন্য গরম গরম এক কাপ চা বানিয়ে ফেল।স্পেশাল হওয়া চাই। স্পেশাল মানুষ বলে কথা।

আকিবের টিটকারি মিশ্রিত কথা শুনে নীলাভ ওর দিকে খাইয়া ফালামু লুক দিলো।আকিব চুপ হয়ে গেলো। আকিব আস্তে কথা বলায় সাহিয়া শুনতে পায়নি।সে এখন পা দুলিয়ে রাস্তার দুই পাশে চোখ বুলচ্ছে।যদি কোন পরিচিত কেউ চলে আসে তাহলে ওর ব্যন্ড বাজবে।নীলাভ এই মেয়ের বাচ্চামো যত দেখছে তত শর্কড হচ্ছে। ও কখনো ভাবেনি সাহিয়া ওকে দেখে এখানেও চলে আসবে।

সাহিয়াঃ কিগো চা কি দেবে?নাকি চলে যাবো।

💗💗💗

সাহিয়ার কথার উত্তর আফজাল সাহেব দিলেন।সে সাহিয়াকে তার বাচ্চামো স্বভাবের জন্য অনেক
পছন্দ করে।

আফজালঃ সে কি দাদুভাই?চা না খেয়ে চলে যাবে কেন?একটু বসো। ওরা তো বানিয়ে দিচ্ছে।

সাহিয়াঃ কেমন আছো তুমি দাদু?তোমার শরীর কি ঠিক হয়েছে?

আফজালঃ আলহামদুলিল্লাহ, আগের থেকে একটু ভালো আছি।আজকে শরীরটা অনেক দূর্বল লাগছিলো।তাই দোকান বন্ধ করে দিচ্ছিলাম।তখন আল্লাহ আমার জন্য এই দুই নাতিকে পাঠিয়ে দিলো।

সাহিয়াঃ দেখতে হবে তো কার পুতুল ছেলে😎।আমার পুতুল ছেলে বলে কথা।(ভাব নিয়ে)

সাহিয়া কথাটা বলে নীলাভের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নীলাভ ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাহিয়া একটা বোকা হাসি দিলো।যেটা দেখে নীলাভ মাথা নিচু করে চায়ে কন্ডেস মিল্ক মেশাতে মনোযোগ দিলো।চা বানানো শেষ হতেই আকিব গিয়ে চায়ের কাপ দিলো।

সাহিয়াঃ যে চা বানিয়েছে আমি তার হাত থেকে চায়ের কাপ নিবো। তোমার থেকে নয়।তাই তুমি ভাগো।আর তাকে গিয়ে বলো চায়ের কাপ আমার কাছে দিয়ে যেতে।

সাহিয়ার কথা শুনে আকিব অবাক।ঠোঁট উল্টে ছোট বাচ্চাদের মতো করে অভিমানি সুরে সাহিয়া কথাটা বলেছে।আকিব এসে নীলাভের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিলো।

আকিবঃ যে বানিয়েছে তার হাত থেকে নিবে।যাও তুমি গিয়ে দিয়ে আসো।(ঠাট্টার সুরে)

নীলাভ বড় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চায়ের কাপ নিয়ে দোকানের বাইরে বেরিয়ে এলো।মেয়েটার বাচ্চামো দেখতে দেখতে এবার বোধহয় সে পাগল হয়ে যাবে।সাহিয়ার দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিতেই সাহিয়া খুশিমনে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে নীলাভের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো।নীলাভ আবার নিজের কাজে ফিরে গেল।সাহিয়া এক ধ্যানে নীলাভের দিকে তাকিয়ে চা শেষ করলো।নীলাভ কাজের মাঝে বারবার আড়চোখে ওকে খেয়াল করেছে। সেটা বুঝতে পেরে সাহিয়া মিটমিট করে হাসলো।চা শেষ হতেই নীলাভের হাতে একটা চকচকে দশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলো।রাস্তা দিয়ে এক দৌড় দিলো।যেতে যেতে নীলাভের দিকে তাকিয়ে বললো।

সাহিয়াঃ টাকার মধ্যে আমার মোবাইল নাম্বার আছে।রাতে কল দিও।আমি তোমার কলের অপেক্ষায় থাকবো।যদি কল না করো তাহলে তোমার ৩৬০ ডিগ্রি বাজাবো।মনে রেখো কথাটা।

সাহিয়া গেইটের ভেতরে ঢুকে অদৃশ্য হয়ে গেলো।আর ওর কথা শুনে নীলাভ পুরো থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। টাকার দিকে তাকিয়ে দেখলো।সেখানে কালো কালি দিয়ে স্পষ্ট মোবাইল নাম্বার লিখা আছে। আকিব তো সাহিয়ার কান্ড দেখে হতবাক।

আকিবঃ মেয়েটা দেখছি তোর থেকেও দুই ডবল আগে।তোকে অনেক ভালোবাসে নীলাভ।

আকিবের কথার বিনিময়ে নীলাভ মুচকি হাসলো। তারপর টাকার নোট-টাকে একটা ভাজ দিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো।নীলাভের এই কান্ড দেখে আকিব চোখগুলোকে রসগোল্লা বানিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।

#চলবে