পুতুল ছেলেটি পর্ব-১৪

0
842

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_14
#Writer_NOVA

এর মধ্যে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন।আজ সাজিয়ার গায়ে হলুদ।ওরা যে দালানে থাকে সেটাকে পুরো মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। ছাদে করা হবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।সেখানে স্টেজ করা হচ্ছে। নীলাভও বিগত কিছু দিন ধরে ডেকোরেশনের কাজে যুক্ত হয়েছে। ডেকোরেশনের সব দায়িত্ব ওর হাতে।বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামলো বলে।সিঁড়ি থেকে শুরু করে পুরো ছাদ ঠিক আছে কিনা তাই ঘুরে ঘুরে দেখছে নীলাভ। আর সব মেয়েরা হা করে ওকে দেখছে।একটা রুম ক্রস করে যেতে নিলেই ঝড়ের গতিতে একজন এসে নীলাভকে টেনে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।নীলাভ জানে সাহিয়া ছাড়া কারো এত দুঃসাহস হবে না।

নীলাভঃ হোয়াট ইজ দিস সাহিয়া?আমাকে এখানে টেনে আনার মানে কি?

কিছুটা বিরক্ত সহকারে বললো নীলাভ। কিন্তু সেই বিরক্তি সাহিয়া একটুও গায়ে মাখলো না। বরং সামনে এগিয়ে এসে দুই হাতে নীলাভের গলা জড়িয়ে ধরলো।

সাহিয়াঃ প্রেম করবো,তাই নিয়ে এসেছি ।

নীলাভঃ ছাড়ো সাহিয়া আমার কাজ আছে। আমি এখন ডেকোরেশনের লোক হয়ে এবাড়িতে এসেছি।

সাহিয়াঃতুমি আমার হবু স্বামী। তার জন্য এখানে এসেছে। তোমার কাজের পরিচয় অন্য জায়গায় দিয়ো।আমার কাছে নয়।আর হ্যাঁ,আরেকবার সাহিয়া বললে ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিবো সাংবাদিক সাহেব।আমাকে তুমি হিয়াপাখি বলে ডাকবে।

সাহিয়ার মুখে সাংবাদিক সাহেব শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলো নীলাভ। তার মানে কি তার শ্বশুড় আব্বা সব বলে দিয়েছে নাকি সাহিয়াকে।কিছুটা জড়তা নিয়ে নীলাভ বললো।

নীলাভঃ কে সাংবাদিক??

সাহিয়াঃ হয়েছে এখন আর সাধু সাজতে হবে না। আমি জেনে গেছি তুমি একজন সিক্রেট সাংবাদিক। তাই আর ঢং করো না। আমার প্রথম থেকে সন্দেহ হয়েছে তুমি কোন সাধারণ মানুষ নও।তোমার মধ্যে ঘাপলা আছে। তাই হলো।তুমি হলে গভীর জলের মাছ। তবে আমিও তো সাংবাদিকদের হবু বউ।তাই আমি গভীর জলের মাছকে ধরতে পানিতে কিছুটা আন্দাজই ডুব মেরেছিলাম।আর আমি সেই মাছটাকে ধরেও ফেললাম।

নীলাভঃ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। (ভ্রুকুটি কুঁচকে)

সাহিয়াঃ না বোঝার তো কিছু নেই। আমি তো বাংলায় বলছি।হিব্রু ভাষা ব্যবহার করিনি।

সাহিয়া গলার থেকে হাত সরিয়ে নিলো।তারপর নীলাভের এক হাত ধরে ওকে খাটে বসালো।মোবাইল থেকে সেদিনের ভিডিও বের করলো।সেটা দেখে নীলাভের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।

নীলাভঃ তুমি এটা কোথায় পেলে?

সাহিয়াঃ আমিতো আগে থাকতে ঐ রুমে মোবাইল ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিলাম।এখন যদি এটা আমি সব নিউজ চ্যানেলে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেই।তাহলে কেমন হবে?(ভ্রু নাচিয়ে)

সাহিয়ার কথায় নীলাভ এক গালে হাসলো।তারপর আরাম করে দুই হাত মেলে খাটে শুয়ে পরলো।এমন একটা ভাব ধরে আছে জেনো কিছুই শুনেনি।নীলাভের এমন ভাবলেশহীন কান্ডে সাহিয়া অবাক হলো।

সাহিয়াঃ কিছু বলছো না যে।আমি কিন্তু সত্যি ছেড়ে দিবো।তুমি আমায় অনেক ঘুরিয়েছো।

নীলাভঃ তুমি যদি চাও তোমার হবু বরের বিপদ হোক।তাহলে অবশ্যই ছেড়ে দিবো।অকালেই সাদা শাড়ি পরতে মন চাইলে দিতে পারো।আমি মানা করবো না। আর আমার বিশ্বাস আছে তুমি এমনটা করবে না।

সাহিয়াঃ ধূর,তাকে ব্লাকমেইল করতে গিয়ে নিজেই ব্লাকমেইলের স্বীকার হয়ে গেলাম।এখন তো আমি দিতেও পারবো না। আমাকে ভয় দেখাবে, তোমার পুতুল ছেলের বিপদ হবে।(বিরবির করে)

সাহিয়ার বিরবির করে খাটের এক কোণায় বসে পরলো।নীলাভ শোয়া থেকে উঠে বসে মিটমিট করে হাসছে।তখুনি ওর চোখ গেলে দেয়ালের দিকে।চোখ, মুখ কুঁচকে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। পুরো দেয়াল ভর্তি নীলাভের অসংখ্য ছবি।নীলাভ বিস্ময় নিয়ে সাহিয়াকে জিজ্ঞেস করলো।

নীলাভঃ আমার এতো ছবি তুমি পেলে কোথায়?

সাহিয়াঃ আকিব ভাইয়ার থেকে নিয়েছি।(মুখ গোমড়া করে)

নীলাভঃ দেয়ালে টানিয়ে রেখেছো কেন?

সাহিয়াঃ আমার হবু স্বামীর ছবি আমি যেখানে খুশি সেখানে টানিয়ে রাখবো। তোমার কি?(রেগে)

নীলাভঃ না বিষয়টা সেটা নয়।ঘরে জীব,জন্তু,মানুষের ছবি থাকলে ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারে না।তাই তুমি এগুলো দেয়াল থেকে খুলে ফেলবে।

সাহিয়াঃ কালকে লাগালাম।আর আজকেই খুলে ফেলবো।আচ্ছা, তুমি যখন বলছো খুলে ফেলবো।

সাহিয়া বসা থেকে উঠে ছবিগুলোর সামনে এসে দাঁড়ালো। নীলাভ ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওকে অবাক চোখে দেখতে লাগলো।একটা মানুষ ঠিক কতটা ভালোবাসলে এরকম পাগলামী করে। আর সাহিয়া ছবিগুলো মনোযোগ সহকারে দেখছে।

💗💗💗

ছাদে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সবাই এখন হলুদ দিতে ব্যস্ত।।নীলাভের পরনে আজ কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবী,কলা পাতা রঙের পায়জামা।সাহিয়াও ওর সাথে ম্যাচিং করে সেম কালার শাড়ি পরেছে।আকিবের পরনে বেগুনি রঙের পাঞ্জাবী।

আকিবের চোখ দুটো খুঁজে যাচ্ছে সাহিয়ার মামাতো বোন তিশাকে।সকাল বেলা তিশার সাথে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে দেখা হয়েছে। এক ঝুড়ি ফুল নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নিলেই একজনের সাথে ধাক্কা লাগে আকিবের।আর সামনের ব্যক্তিটা পরে যেতে নিলে তাকে ধরে ফেলে আকিব।সাথে সাথে ঝুড়িটা পরে যায়।দুজন দুজনের দিকে এক ধ্যানে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।সেই দেখার পর থেকে আকিবের চোখ দুটো শুধু তিশাকেই খুঁজে। তিশাও আকিবকে দেখলে মুচকি মুচকি হাসে।

নীলাভঃ কি রে কাকে খুঁজছিস?

আকিবঃ কা কা কাউকে নননা তততো।(তুতলিয়ে)

নীলাভঃ ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো।আর আমি জিজ্ঞেস করলে বলো কিছু না তো।আমি কিন্তু খবর পেয়েছি। তাই ভাব না নিয়ে মেয়েটাকে দেখাস।

আকিব লজ্জা পেয়ে গেলো।বোকার মতো মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বললো।

আকিবঃ আসলে একটা মেয়েকে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে লাভ এট ফার্স্ট সাইড।আমার একটা ব্যবস্থা করে দে।

নীলাভঃ ওরে বাটপার,ওরে চিটার।তলে তলে এতোদূর।তাছাড়া তোকে আমি হেল্প করবো না। কারণ তুই সাহিয়াকে আমার ছবি দিয়েছিস।আমাকে বললে আমি দিতাম।আরো স্টাইলিশ ও হ্যান্ডসাম ছবিগুলো দিতাম।কিন্তু তুই তো সব হাবলা মার্কা ছবি দিয়েছিস।

আকিবঃ তোরা হবু জামাই,বউ আমাকে থ্রেটের ওপরে থ্রেট দিচ্ছিস।তোর সাহিয়া গতকাল সকালে কল দিয়ে বাপরে কি থ্রেট। বলে কিনা আমি যদি তোর ছবি না দেই তাহলে আমার নাকি জীবনেও বিয়ে হবে না।এমন দোয়া করে দিবে।ভেবেছিস কিরকম জঘন্য ব্যাপার-স্যাপার।আমার বিয়ে না হলে আমার ফিউচার ছেলে-মেয়েগুলো কাকে বাবা বলে ডাকবে?

নীলাভঃ তাই বলে ঐরকম আবুল মার্কা ছবি।😕

আকিবঃ আমি ইচ্ছে করে এমন ছবি দিয়েছি।যাতে তোর শিক্ষে হয়।নিজে তো এমন একটা ভাব নিয়ে থাকিস জেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারিস না।তাই ওরকম বিচ্ছিরি ছবি তোর সাথে যায়।আমি এখন তিশাকে রাজী করিয়ে খুব শীঘ্রই বিয়ের পিড়িতে বসছি।তোকে চাচ্চু বানাতে হবে তো😜।

আকিব একটা চোখ মেরে শিস বাজাতে বাজাতে অন্য দিকে চলে গেল। নীলাভ ওর যাওয়ার পানে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। তখনি একটা ছোট বাচ্চা ছেলে নীলাভের হাতে একটা চিরকুট গুঁজে অন্য দিকে দৌড় দিলো। নীলাভ চিরকুট দেখে ভ্রু কুঁচকালো।অনেকক্ষণ ধরে সাহিয়াকে দেখছে না।একসাথে দুজন হলুদ দিয়ে সেই যে হাওয়া হয়েছে। আর তাকে দেখা যায়নি।চিরকুটটা খুলতেই নিচের কথাগুলো লেখা দেখতে পেলো।

“বাগানে এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি”
(ইতি তোমার হিয়াপাখি)

নীলাভ ছাদ থেকে নেমে বাগানে গেলো।সেখানে গিয়ে অবাক।সবকিছু খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। এগুলো কে করলো?এটা তো ওদের করার কথা ছিলো না। নীলাভ আশেপাশে সাহিয়াকে খুঁজতে লাগলো। তখনি পেছন থেকে ওর হাতে টান অনুভব করলো।পেছনে ঘুরে দেখে সাহিয়া একটা বিশাল বড় ফুলের তোড়া নিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।

সাহিয়াঃ প্রিয় হবু বর প্লাস আমার পুতুল ছেলে।আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আমি প্যাচগোচের ধারের কাছেও যাই না।তাই সরাসরি প্রপোজ করে দিলাম।তুমি তো জীবনেও আমায় প্রপোজ করবে না।ভীষণ লাজুক ছেলে। তাই আমিই করে দিলাম।এতো লজ্জা আসে কোথা থেকে তোমার? প্রেমে পরলে নাকি মানুষ অনেক বেহায়া হয়ে যায়।আমি কথাটা আগে বিশ্বাস না করলেও এখন করি।কারণ আমি তোমার প্রেমে অন্ধ,বয়রা,বেহায়া সবই হয়েছি।জানি তুমি মনে মনে এটা ভাবছো যে দুই সপ্তাহ পর আমাদের বিয়ে। এখন প্রপোজ করার মানেটা কি?আসলে সবকিছু তো আমিই শুরু করেছি।তাই ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে আমিই প্রপোজটা সেরে ফেলি।আমি তোমার থেকে সবদিক থেকে এগিয়ে। তুমি তো আজও আমায় হিয়াপাখি বলেই ডাকতে পারলে না।আর তুমি করবে প্রপোজ। তাহলে তো পৃথিবী উল্টে যাবে।আর পেঁচাল পারতে পারবো না। তবে তুমিই সেই ব্যাক্তি যাকে আমি প্রথম ও শেষ ভালোবেসেছি।এখন জলদী করে আই লাভ ইউ টু বলে দেও দেখি পুতুল ছেলে।

নাহ, এতকিছুর শর্কড নীলাভ এবার আর একসাথে সহ্য করতে পারলো না।সাহিয়ার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে তো নীলাভ কম শর্কড হয়নি।কিন্তু এবারের মতো শর্কড সে কখনো হয়নি। তাই অজ্ঞান হয়ে ঢলে নিচে পরে গেলো😂।সাহিয়া উল্টো দিকে ঘুরে মনের কথা প্রকাশ করছিলো।নীলাভের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পেছনে ঘুরে চোখ কপালে তুলে ফেললো।দৌড়ে নীলাভের সামনে এসে দেখলো নীলাভ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে আছে। লোও ঠেলা,বেচারা এত শর্কড পেয়েছে যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে🤣।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে