Tuesday, July 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1411



Khatarnak Isq Part-10

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_10.
_______________________
প্রতিটা চ্যানেলে।খবরের কাগজে কাল রাতের ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনা স্থানে পুলিশ কর্মকর্তারা কাউকেই এলাউ করছে না। কে বা কারা পুরো পরিবাবের লোকদের এমন নির্মম ভাবে খুন করেছে তদন্ত করছে পুলিশ। কিন্তু তাঁদের ধারণা এই খুন কোনো মানুষের দ্বারা করা সম্ভব নয়। জন্তুজানোয়ার করেছে। যেহেতু তারা জঙ্গলের পাশেই বসবাস করতো।

আলফি আগের চেয়ে অধিক পরিমাণে চিন্তিত! সারাটা রুম জুড়ে পায়চারি করছে। পাশের সোফায় ইয়ান বসে ছিল।তার চোখেমুখে লেপ্টে আছে চিন্তার ছাপ। জিনান কাগজ হাতে নিয়ে আলফির রুমে প্রবেশ করে বলল,
-“দেখেছো এগুলো কি? আজ, কি দিন দেখতে হচ্ছে আমাদের। কিভাবে তারা মানুষদের হত্যা করছে। একবার দেখো ভালো করে।” বলেই পেপারের কাগজ ছুঁড়ে মারল মাটিতে।

ভীষণ রাগ হচ্ছে জিনান রহমানের। আলফি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। এখন কী করা উচিত বুঝতে পারছে না আলফি।

-“এভাবে বসে থাকলে হবে না আলফি। আরলেন কে মারতে হবে।”রেগে বললেন জিনান।

আলফি চুপ……।

-“কী বলছি তুমি কী শুনতে পেয়েছো?” কিছুটা ধমকের স্বরে বলে জিনান।

আলফি অগ্নিশর্মার মতো দাঁড়িয়ে বলে,
-“আজই শেষ করবো এলেনকে!ওর মৃত্যু আমার হাতেই হবে।” কথাটা শুনে ইয়ান ও জিনান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলফি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনছে।
.
.
ভ্যাম্পায়ার কিংডম……….

-“এগুলো হবে,আমি আগেই জানতাম।স্যাম নেকড়েদের সাথে মিলে এমনটা করছে যাতে শাহজাদীর ভুল ধারণা হয়,আমরা এসব করছি।” কিং এবিল হুংকার দিয়ে বলে।

এলেন,এরোন,ইয়াঙ্ক পাশে বসেছিল। ভ্যাম্পায়ার সদস্য রা সামনে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিল।

-“কিভাবে স্যামকে খুঁজছো তোমরা! এত বড় তান্ডব বাঁধিয়ে স্যাম নিশ্চই চুপ করে থাকবে না। অন্য প্লান অবশ্যই ভাবছে। আর এদিকে! শাহজাদী কায়রা কী করছে কোনে খবর পাচ্ছি না। তাকেও খুঁজে বের করতে পারোনি তোমরা।”

সবাই চুপ করে কিংয়ের কথা গুলো শুনছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।

-“খোঁজ করো! ভালো করে খোঁজ করো তোমরা। স্যামকে না মারলে আমাদেরি বিপদ হবে। জ্বীন রাজ্য আমাদের আয়াত্তে আসবে না। পাবো না জ্বীনি তলোয়ার।”

-“তার কোনো দরকার নেই ড্যাড! জ্বীনদের রাজ্যে আক্রমণ করার স্বপ্ন ছেড়ে দেও। তাঁদের কে তাঁদের মতো থাকতে দেও।জ্বীনরা যখন আমাদের ক্ষতি করছে না। তখন আমরা কেন তাদের ক্ষতি করতে যাব।” ফোনের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বললো এলেন।

এলেনের কথা গুলো শুনে কিং অবাক হয়। শুধু কিং নয়। কোষাগারে উপস্তিত সব ভ্যাম্পায়ার রা অবাক হয়। সবার নজর এলেনের দিকে। কিং এবিল এলেনের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলে,
-“আরলেন! তুমি কী হুঁশে আছো? কী বলছো এসব?”

এলেন বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে দু পা হেঁটে ভ্যাম্পায়ার সদস্যদের সামনে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-“আজ থেকে জ্বীন ও মানুষের কোনো ক্ষতি আপনারা কেউ করবেন না। আমরা যেমন আমাদের প্রিয় মানুষদের নিয়ে বসবাস করি। তারাও তাঁদের প্রিয় মানুষ,আত্মীয়-সজনদের নিয়ে বসবাস করে। তাঁদের যদি কারো মৃত্যু হয় বা কোনো ক্ষতি হয়। তাহলে তাঁদের ঐ পরিবারের কী হবে ভেবে দেখুন একবার।আমরা অনেক মানুষের রক্ত খেয়েছি। জ্বীনদের দেখলেই হত্যা করেছি। অথচ,আজ পর্যন্ত জ্বীন ও মানব জাতি রা কেউ আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। কারণ,তারা আমাদের মতো পাথরের দিলের দালাল নয়। তাঁদের মধ্যে মানবতা,মনুষ্যত্ববোধ আছে। যেটা আমাদের মধ্যে নেই। আজকের পর থেকে কোনো নিরীহ মানুষ, জ্বীন বা অন্য কোনো প্রজাতি লোকদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। নিজেদের রক্তের পিপাসা জন্তুজানোয়ার,পশু-পাখী দের রক্ত খেয়ে মিটাবেন। আপনাদের দ্বারা যদি কারো ক্ষতি হয় তাহলে এই প্রিন্স আরলেন তাঁর মৃত্যু দিয়ে ক্ষতি পূরণ করবে। মাইন্ড ইট!”

কথাটা বলে এলেন হন হন করে রাজ কোষাগার থেকে বের হয়ে যায়। সবার চোখেমুখে অন্যরকম খুশির ঝলক প্রকাশ পাচ্ছে। এলেনের ডিসিশনে এরোন, ইয়াঙ্ক হ্যাপি। কিন্তু কিং হ্যাপি হতে পারছেন না। তার মনে এলেনের প্রতি ভয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমাট বাঁধছে। হঠাৎ করে এলেনের পরিবর্তনে তিনি বিপদের লক্ষ্মণ টের পাচ্ছেন।
.
.
-“আমার কাজ সফল হয়েছে। শাহজাদী কায়রা ঠিক প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। ভ্যাম্পায়ার দের উপর তিনি প্রতিশোধ নিবেই। এটাই তো চেয়েছিলাম আমি। ” কথাটা বলে জোরে জোরে হাসতে লাগল স্যাম।

নেকড়ে রাও তাঁর কথায় খুশি হয়।নেকড়েদের কোনো রাজা ছিল না। আজ থেকে স্যাম তাঁদের রাজা। নেকড়ে রা সবাই স্যামকে রাজা হিসাবে মেনে নিয়েছে।

-“শোনো সবাই? রাতে সবাই বের হবে শিকার করতে। মানুষদের মেরে খেয়ে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে একাজ তোমরা করেছো।”

সবাই স্যামের কথায় সহমত হয়। বেশ খুশি হয় আগের মতো আর ভয় ভয় থাকতে হবে না। নতুন রাজাকে পেয়ে সবাই হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে।
___________________
গভীর রাত। কোলাহল বিহীন রাতের আকাশটা বেশ স্বচ্ছ লাগছে। আকাশে আজ বড় কাঁসার থালার মতো চাঁদ ওঠেছে। ফকফকা চারদিক। একদিন হলো আলফির সাথে দেখা হয়না এলেনের। আর যাই হোক আলফির কাছ থেকে দূরে থাকা অসম্ভব। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর কথা গুলো ভাবছে। এলেন ধীরে ধীরে হাঁটছিল।বাতাসের গতিতে দৌড় দিতে যাবে তখনি কারো পায় এসে বুকের মাঝখান বরাবর লাগে। দূরে ছিটকে পড়ে এলেন। গাছের সাথে পিঠে ধাক্কা লাগে। এলেন বুকে ও পিঠে ব্যাথা অনুভব করছে। এমন ভাবে কে ওঁকে ধাক্কা দিল সেটা দেখার জন্য এলেন বাতাসের বেগে দৌড় দিয়ে আসতে নিলেই ফের কেউ ওর পিঠে লাথি মারে। এলেন একটি মোটা গাছের ডালের সাথে বারি খেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। ডান হাতের উল্টো পিঠে গাছের ডাল গেথে যায়। যার কারণে বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষত স্থান থেকে চুই চুই করে রক্ত ঝড়ছে। এলেন বুকে হাত রেখে ওঠে দাঁড়ায়। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্ত বের হচ্ছে।

এলেন বাম হাত ক্ষত স্থানে রাখতেই ক্ষত সেরে যায়। এলেন চারদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকে কে ওঁকে সামনে ও পেছন থেকে আঘাত করছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় এলেন কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। চোখ লাল হয়ে যায় এলেনের। হঠাৎ ঝড়ের বেগে একটি গাছের টুকরো উঁড়ে এসে মাথায় লাগে। এলেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ব্যাথায় কপাল কুঁচকে ফেলে এলেন। ওঠতে নিলে উঁড়ে এসে একটি সাদা পালক এলেনের পাশে পড়ে। এলেন পালকটির দিকে তাকিয়ে হাতে ওঠিয়ে নেয়। বুঝে যায় এটা কার এবং কিসের পালক। এলেন পালকটি হাতে নিয়ে জোরে চিৎকার করে বলে,
-“শাহজাদী কায়রা! আড়াল থেকে আঘাত না করে সামনে আসুন। মোকাবেলা করুন আমার সাথে।”

এলেনের কথাটা শেষ হতে না হতেই জোরে জোরে বাতাস বইতে থাকে চারদিক। বাতাসে ডাল-পালা ভেঙে পড়ছে। গান নইয়ে নইয়ে যাচ্ছে। এলেন চোখ মেলে রাখতে পারছে না। এক হাত দিয়ে চোখ ডেকে ফেলে। তখনি এলেনের সামনে থেকে বড় পাখা আলা সাদা রঙের গাউন পড়া একটি মেয়ে নেমে এলো। মেয়েটির শরীর থেকে এক অদ্ভুত আলো ছড়াচ্ছিল। যার কারণে চারদিক চাঁদের আলোর চেয়ে বেশি আলোকিত হয়ে ওঠেছে। এলেন চোখের উপর থেকে হাত সরাতেই কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। শাহজাদী আর কেউ নয়,আলফি!
আলফি মনের মধ্যে রাগ-ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে আছি এলেনের দিকে। মনে হচ্ছে চোখের দৃষ্টিতে ভষ্ম করে দিবে এলেনকে।

এলেন হাত সামনের দিকে তুলে নরম ভঙ্গিতে বলে,
-“আ…আলফি!”

-“হ্যাঁ! আমি শাহজাদী কায়রা। যাকে তোরা হন্য হয়ে খুঁজছিস।” হুংকার দিয়ে কথাটা বলেই আলফি এলেনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাখা ভেতরে নিয়ে জোরে জোরে আঘাত করতে থাকে।
এলেনের নাক দিয়ে কালো রক্ত বের হচ্ছে।
আলফির তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না। হাত মুঠ করে নাকে,মুখে,বুকে আঘাত করতে থাকে। জোরে জোরে লাথি মেরে গাছের উপর ফেলে। এলেনের গাল,মুখ শরীরের অনেকটা অংশ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আলফির রাগ সান্ত হয়নি। আরো মারছে এলেনকে। এলেন শুধু তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে নয়ন ভরে দেখছে। এ দেখা যেন শেষ হবার নয়।
এত মারছে তারপরও এলেনের মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। নরম ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আলফির দিকে। আলফি মেরে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছে এলেনকে। লাস্টের দিকে আলফি এলেনকে ধাক্কা মেরে গাছের সাথে ঠেস দিয়ে ধরে।
হাত নিচের দিকে নামিয়ে জ্বীনি তলোয়ার এনে এলেনের বুকে গেথে দিতে যাবে তখনি আলফির নজর পড়ে এলেনের নীল চোখ জোড়ার উপর। আলফি থমকে যায়। এলেনের চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে গেছে অন্য জগতে। চোখ সরাতে পারছে না এলেনের চোখের দিক থেকে।

নজর বন্দি হয়ে যায় এলেনের নীল চোখের উপর। আলফির আগের কথা মনে পড়ে যায়। কিস,জড়িয়ে ধরা,এলেনের দুষ্টুমি,হাসি। হাত কাঁপছে আলফির। নিমিষেই হাতের তলোয়ার উধাও হয়ে যায় হাত থেকে। এলেনের প্রচুর কষ্ট হচ্ছে তবুও,আলফির এমন কাণ্ডে এক চিতলে হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে। আলফি জোরে জোরে নিশ্বাস টেনে পিছিয়ে যাচ্ছে। কেন জানি বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। চোখ জোড়া টলমল করছে। রাগের মাথায় অনেকটা আঘাত করেছে এলেনকে। যেটা দেখে আলফির রূহ কাঁপছে। আলফি আর দাঁড়িয়ে না থেকে ঘায়েব হয়ে যায়। এলেন এটা দেখে হাসে। হেসে হেসে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে।নিজের শরীরের ঘাঁ ঠিক করা সম্ভব নয়।

তখনি সেখান থেকে একজন নেকড়ে যাচ্ছিল। এলেনকে মাটিতে পড়ে গোঙাতে দেখে নেকড়েটি খুশি হয়। এলেন কে মারার এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না নেকড়েটি। হাতের ধারালো নখ দিয়ে এলেনের পিঠে আঘাত করতে যাবে তখনি এরোন সেখানে উপস্থিত হয়। রূপ পাল্টে নেকড়েটিকে মারতে থাকে, অনেক মারে। এক পর্যায় নেকড়েকে দু ভাগ করে দূরে ছুঁড়ে মারে। স্বাভাবিক রূপে ফিরে এসে এলেনের কাছে আসে।

-“দোস্ত,কিভাবে হলো এসব? কে করেছে?”

এলেনের মুখ দিয়ে কোনে কথা বের হচ্ছে না। শুধু চোখের ইশারায় মাইন্ড পড়তে বলে। এরোন নীল আলোর রশ্মি ছুঁড়ে দেয় এলেনের দিকে। মাইন্ড পড়ে ফেলে এলেনের। এরোন অবাক হয়ে যায়। আলফি শাহজাদী কারয়া এটা দেখে। এলেন ইশারায় এরোনকে ওর মাইন্ড ডিলেট করতে বলে। আর না হলে কিং এবিল মাইন্ড পড়ে বুঝে যাবে কে করেছে ওর এমন অবস্থা। এরোন এলেনের মাইন্ড ডিলেট করে দেয় বুকে হাত দিয়ে। এলেন নিশ্চুপ হয়ে যায়। এরোন এলেনকে পাঁজরা কোলে নিয়ে বাতাসের বেগে ভ্যাম্পায়ার কিংডমে ফিরে আসে।
রিচুয়াল কক্ষে এলেনকে রেখে কিং এবিল কে দ্রুত ডেকে নিয়ে আসে। এবিল এলেনের এমন অবস্থা দেখে থমকে যায়। তার মনের ধারণা সঠিক হয়। বিপদ এলেনের উপরে দিয়েই গেছে।

-“কে করল এটা? আরলেন? মাই সন কথা বলো?” অস্থির হয়ে এলেনকে ডাকছেন।

-“এটা বলার সময় নে কিং। এলেনের চিকিৎসা শুরু করুন। অবস্থা অনেক খারাপ এলেনের।”

-“হ্যাঁ,হ্যাঁ… আমি রেড বুক বের করছি তুমি সব ব্যাবস্থা করো। ইয়াঙ্ক এসো আমার সাথে।” দ্রুত তারা পাশের দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়ায়। এরোন এলেনের শার্ট খুলে ফেলে। পাশে ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে সাজাতে শুরু করে।

এবিল ছোট্ট ছুঁড়ি দ্বারা হাতের আঙুল কেটে একটি গর্তে ফেলে। সাথে সাথে খটখট আওয়াজ তুলে পাথরের দরজা খুলে যায়।বেরিয়ে আসে একটি রেড বুক। এবিল বুকটি বের করে আরো এক রক্তের ফোঁটা বইয়ের উপর ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে রেড আলো ছড়িয়ে বইটি খুলে যায়। গম্ভীর কন্ঠে কেউ কথা বলে ওঠে বইয়ের ভেতর থেকে।

-“কেন ডেকেছিস আমায়? কি হয়েছে বল শুনি?”

-“ফাদার এলেনের অবস্থা অনেক খারাপ। আপনি প্লিজ এলেনকে সুস্থ করে দিন।” করুন স্বরে বলে কিং এবিল।

-“এটা তো হবারি ছিল। তোর কুকর্মের ফল আজ তোর ছেলে পেয়েছে।”

-“আমি জানি! তাই আমি আগের সব অন্যায় মেনে নিলাম। আপনি শুধু আমার ছেলেকে ভালো করে দিন। আগের মতো করে দিন ফাদার।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছে,মানুষ ও জ্বীনের কোনো ক্ষতি আমি করব না।”

-“শুধু তাদের নয়! কারো ক্ষতি করে তুই সুখে থাকতে পারবি না। প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়েই নিবে। এটাই নিয়ম। যেটা এখন তোর ছেলের উপর দিয়ে গেছে। ”

-“ফাদার মাফ করে দিন। আমি আর কোনো খারাপ কাজ করবো না। দয়া করুন ফাদার! দয়া করুন।”

-“বেশ! আমি তোর ছেলেকে ঠিক করে দেবো। কিন্তু আরলেন সাধারণ ভ্যাম্পায়ার থাকবে না। ভ্যাম্পায়ার মন্সটার হয়ে যাবে। অধিক পরিমাণ শক্তিশালী হবে। যার শক্তির কাছে বড় বড় শক্তিও হার মানতে বাধ্য হবে।”

-“ফাদার আপনি যা কারার করুন শুধু আরলেনকে ঠিক করে দিন।” হাত জোর করে বলে কিং।

-“ঠিক আছে।” কথাটা বলে ফাদার এলেনের বুকে লাল রশ্মি ছুঁড়ে দেয়। এলেন ছটফট করতে থাকে। সারা শরীর লাল বর্ন ধারণ করে এলেনের। শরীরের রগ সব ফুলে ওঠছে। জলন্ত মোমবাতি গুলো দুপ করে নিভে যায়। রুমটির ভেতরে বাতাস বইতে থাকে।
.
.
আলফি বাসায় এসে বিছানার নিচে বসে কান্না করতে থাকে। কেন? কী কারণে কান্না করছে আলফি সেটা জানে না। শুধু এলেনের ক্ষতবিক্ষত শরীরের কথা মনে পড়তেই অটোমেটিক চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিজের প্রতি রাগ,ঘৃণা জন্মাচ্ছে। কেন? করণ নেই কোনো।
.
.
.
.
.
.
Continue To…….

Khatarnak Isq Part-09

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_09.
_______________________
রাতে….

আলফি ইয়ানের সাথে সময় কাটিয়ে রুমে ফিরে আসে।গেট লক করে পিছনে ফিরতেই বিছানার আয়েস করে শুয়ে থাকতে দেখে এলেনকে। এলেনকে দেখে আলফি সকড না হবে দু হাত বগলদাবা করে দাঁড়ায়। এলেন ওর হাতের ফোনটা পকেটে রেখে ওঠে দাঁড়িয়ে সুইট স্মাইল দিয়ে বলে,
-“কী সকড হও নি?”

আলফি মাথা আস্তে করে এপাশ,ওপাশ দুলায়। যার উত্তর ‘না’।

-“তাহলে?”

-“তাহলে,গেট আউট!”

-“হেই তুমি আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলছো? জানো তুমি আমি কে?”

-“অবশ্যই জানি!”

-“বলো তাহলে?”

-“ঘাটিয়া,রক্তচোষা হিংস্র ভ্যাম্পায়ার।”

-“আরো একটি আছে?”

-“কী?”

এলেন চট করে বিছানা থেকে নিচে নেমে আলফির দিকে দু তিন কদমে এগিয়ে আসছে। আলফি স্ট্যাচুর মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এলেন আলফির কাছে এসে চেহারার সামনে ঝুঁকে বলে,
-“লাভার বয়!”

আলফি বিরক্তিকর আচরণ করে। বিরক্ত ভাব নিয়েই বলে,
-“মোটেও মানাচ্ছে না।”

-“মানিয়ে দেখাই?” কথাটা বলে নিচের ঠোঁট কামড় দিয়ে ধরে এলেন।

-“আপনি যে একটা বেহায়া,সেটা নিশ্চয়ই জানেন?”

-“হুম! বাট তোমার কাছে বেহায়া হলে সমস্যা নেই।”

-“বের হয়ে যান রুম থেকে।”গেটের দিকে ইশারা করে বলে আলফি।

এলেন গম্ভীর একটা মুড নিয়ে জ্যাকেটের চেইন খুলে চট করে আলফির কোমড় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আলফি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এলেনের দিকে। এলেন আলফির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলফি চোখের পলক ফেলে কপাল কুঁচকে তাকায়। কী আছে ঐ চোখে? আমি কেন হারিয়ে যাচ্ছি? চোখ ফেরানো মুশকিল হয়ে পড়েছে আলফির। এলেন আলফির চোখের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
-“জানি না কী হয়েছে? তোমার সাথে দেখা হবার পর থেকে আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। এই এলেন মানুষের রক্ত খেতো। যখনি নেশা জাগত!
কিন্তু তোমাকে দেখার পর এই এলেন পুরো চেঞ্জ হয়ে গেছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখেছি। ভালোবাসা কী বুঝেছি। তোমার কাছে আসলে জানি না কী হয় আমার।”

আলফি কথা গুলো শুনে এলেনের চোখের দিক থেকে নজর সরাতে পারছে না। এলেন আলফির দিকে তাকিয়ে থাকার এক পর্যায়ে ফিক করে হেসে দেয়। আলফির কপালে ভাজ পড়ে। এলেন হাসতে হাসতে আলফিকে ছেড়ে দেয়।

আলফির রাগ হচ্ছে এখন। কিছু বলতেও পারছে না। সহ্য করতে হচ্ছে মুখ বুঁজে। এলেন হাসি থামিয়ে বলে,
-“তুমি মনে করেছো আমি এগুলা বলবো? উঁহু! যে কোনো মানুষের রক্ত খেতে পারি আমি। তোমারটাও….।” বলেই এলেন ঝড়েরবেগে আলফিকে পিছন দিক ঘুরিয়ে ধরে।

এলেনের চোখ লাল বর্ন ধারণ করে। সামনের দাঁত দুটি বড় হয়ে যায়। আলফি নিজেকে এত জোর দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না। দেখার পালা এলেন কী করে। আগের মতো এলেন আলফির ঘাড়ে যতবার কামড় দিতে যায় ততবার ফিরে আসে। এবারও কোনো শক্তি এলেনকে বাঁধা দিচ্ছে। এলেনের মাথায় রাগ চটে বসে। এত চেষ্টা করার পরও আলফির ঘাড়ে কামড় বসাতে পারেনি। এলেন রাগের বশে আলফির হাত ধরে টেনে বিছানার উপর ছুঁড়ে মারে।আলফি বিছানার উপর উপুর হয়ে পড়ে। এলেন আগের রূপে ফিরে এসে বারান্দা থেকে চলে যেতে নিলে বলে যায়,
-“যা বলেছিলাম সব সত্যি ছিল। বাট……।”

বাকিটা না বলেই বাতাসের বেগে উধাও হয়ে যায়।আলফি ওঠে বসে বারান্দায় এসে দেখে এলেন নেই। আলফি নিজের রূপ পরিবর্তন করতেই পিছন থেকে দুটি সাদা রঙের পাখা বেরিয়ে আসে। উড়ে যায় আকাশে। এলেনকে খুঁজতে থাকে। আলফি জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। নিচে নেমে আসতেই আলফি এলেনকে খুঁজে পায়।।ওর সাথে এরোনও ছিল। এলেন একটি বাদুড়কে ধরে তার রক্ত চুষে খাচ্ছিল। খাওয়া শেষে বাদুড়টিকে দূরে ছুঁড়ে মেরে উপরের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। চিৎকারের শব্দ সারা জঙ্গল ছড়িয়ে পড়ে।

-“এলেন! শান্ত হ দোস্ত।”

এলেন জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে আগের রূপে ফিরে আসতে আরম্ভ করে। স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসে। এরোন এলেনের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“কী হয়েছে দোস্ত! এগুলো কী? তুই মানুষের রক্ত ছেড়ে পশুপাখি দের রক্ত খাচ্ছিস কেন?”

এলেন উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“বুঝতে পারছি না কী হয়েছে আমার। যখন থেকে আমার মুলাকাত আলফির সাথে হয়েছে…পুরো চেঞ্জ হয়ে গেছি। কেন? কী কারনে এমটা হচ্ছে। আই ডোন্ট নো!”

এরোন চুপ করে এলেনের কথা শুনছে। এলেন আরো বলে,
-“আজকেও আমি চেষ্টা করেছি আলফির রক্ত খাওয়ার। পারিনি! আলফি কে? কেন আমি অন্য মানুষের মতো ওর রক্ত খেতে পারছি না…..।”

-“আলফি কী তাহলে শাহাজাদী কায়রা? ”

-“জানি না।”

কিছুক্ষণ চুপ করে রয় দু জনেই। তারপর এরোন এলেনের পাশে এসে বলে,
-“তুই কী আলফিকে ভালোবাসিস? ”

এলেন কেনো উত্তর দেয় না। চলে যায় সেখান থেকে। এরোনও চলে আসে। আলফি আড়াল থেকে বের হয়। ওদের কথোপকথন সব শুনেছে। আলফি এলেনের এমন ব্যবহার দেখে আশ্চর্য!
ওর জন্য কিভাবে এমন পরিবর্তন হলো আলফি নিজেও ভেবে পাচ্ছে না। জ্বীন রাজ্যে যাওয়া দরকার। আলফি উড়ে যায় আকাশে। জ্বীন রাজ্যে চলে আসে। কিছুক্ষণ রাজ কোষাগারে থেকে চলে আসে বাসায়। সকালে আগের ন্যায় কলেজে আসে।
গাড়ি থেকে নামতেই মাঠে ছাত্র-ছাত্রী দের ভীড় দেখতে পায়। আলফি অবাক হয়। সেখানে এনা,লিনা,ম্যারি,জন,জি-তাও দাঁড়িয়ে ছিল। এনা ভয়ে জনের হাত ধরে রেখেছে। আলফি দ্রুত পায়ে হেঁটে ওদের কাছে আসে। জিজ্ঞেস করে,
-“কী হয়েছে? ভীড় কেন?”

-“দেখে আয়।” লিনা বলে।

আলফি কিছু বলে না। ভীড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখে একটি মেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। সম্ভবত মৃত। আলফির নজর পড়ে মেয়েটির ঘাড়ের দিকে। যেটা দেখে আলফির বুঝতে দেরি হয় না মেয়েটি কিভাবে মারা গেছে। রাগে আলফি স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে এলেন কোথায় আছে বুঝার ট্রাই করে। আলফি ওর শক্তি প্রয়োগ করে বুঝতে পারে এলেন কোথায় আছে। কলেজের বাস্কেট বল খেলাঘরে। আলফি ওদের কিছু না বলেই দ্রুত সেখানে আসে। এসে দেখে এলেন একা একা বাস্কেট বল খেলছে। আলফি এলেনের সামনে এসে হাত থেকে বল নিয়ে ছুঁড়ে অন্য পাশে ফেলে দেয়। তারপর এলেনের বুকের উপর দু হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বলে,
-“আপনাদের ভ্যাম্পায়ারের লোকরা ঔ মেয়েটিকে মেরেছে। আর কত দিন? আর কত দিন আপনারা এভাবে নিরীহ মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকতে চান? তাঁদেরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আছে তাঁদের হাজারো স্বপ্ন। একটি জীবনের মূল্য অনেক বেশি! যেটা আপনাদের মতো রাক্ষস ভ্যাম্পায়ার রা বুঝবে নাহ!” লাস্টের কথাটা চিল্লিয়ে বলে আলফি।

এলেন চুপ করে ঘাড় নিচের দিকে নামিয়ে আলফির কথা গুলো শুনছিল। আলফি আরো বলে,
-“আপনাদের হার্ট নেই। নেই মমতা মাখা হৃদয়। আছে শুধু পাথর দিল। যেটা দিয়ে পারেন শুধু মানুষের রক্ত খেতে। প্রিয় মানুষটিকে কেঁড়ে নিতে। ঐ মৃত মেয়েটি কারো মেয়ে,কারো বোন,কারো ভালোবাসার মানুষ ছিল। যদি জানতে পারে সে এখন আর দুনিয়াতে নেই। তখন কী সিচুয়েশন দাঁড়াবে ভাবতে পারছেন? বুঝতে পারছেন তাঁদের কী হবে? অবশ্য! বুঝবেন কী করে। আপনাদের তো…….!”

আলফি আর কিছু বলতে চায় না। ঘৃণা লাগছে ভ্যাম্পায়ারদের উপর। দ্রুত চলে আসে বাহিরে। আলফি চলে যাওয়ার পর এরোন এলেনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এলেন কাজটা কিন্তু স্যামের ছিল। তবে, আলফি ঠিক বলেছে। আমি আগে থেকেই তোকে এসব বিষয় বলেছিলাম। কিন্তু তুই আমার কথা শুনিসনি। তোর জন্য আমিও অনেক নিরীহ মানুষকে মেরেছি। তাঁদের কাছ থেকে তাঁর প্রিয় মানুষটিকে কেঁড়ে নিয়েছে।” এতটুকু বলে এরোন থেমে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলে,
-“দোস্ত,চাইলেই তুই সব কিছু বদলাতে পারিস। কত বছর ধরে এই জ্বীনদের সাথে আমাদের যুদ্ধ চলছে। এগুলো আটকাতে পারিস। দোষটা কিন্তু আমাদের ছিল। সব জানা আছে তোর। আগামীতে তুই হবি আমাদের কিং..। এবার একটু ভাব। তোর হাতেই এখন সব কিছু।”

বলে এরোনও চলে যায়। এলেন একা দাঁড়িয়ে থাকে।
.
ক্যান্টিনে ওরা সবাই এক সাথে বসে আছে। সবার মন খারাপ। কলেজে এমন একটা ঘটনা ঘটবে এটা সবার ধারনার বাহিরে ছিল। পাঁচদিন কলেজ বন্ধ থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মধ্যে ভয় ডুকে গেছে। তাই প্রিন্সিপাল স্যার এই আদেশ দিয়েছে। সবাই মুখ ভার করে বসে আছে। আলফি ওঠতে লিনে এনা বলে,
-“কোথায় যাচ্ছিস?”

-“বাসায় যাচ্ছি।”

-“কেন? আরেকটু বোস।”

-“নাহ! ভালো লাগছে না।” বলেই আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।
.
.
-“কিং আর জ্বীন রাজ্যের শাহজাদী কায়রাকে আমি আমার হাতের মুঠোয় আনতে চাই। কিন্তু তার জন্য তোমাদের সাহায্য প্রযোজন।” স্যাম নেকড়ে দের বলে কথা গুলো।

নেকড়ে মানবরা সবাই জড়ো হয়েছে স্যামের সামনে। সবাইকে স্যাম তাঁর নির্দেশ পালন করতে বলে। নেকড়েদের বাধ্য করায় তার আদেশ পালন করার জন্য।

-“এখন থেকে মানুষের মাংস খেয়ে নিজেদের খুদা মিটাবে। ভ্যাম্পায়ার, জ্বীনদের সাথে লড়াই করবে। নিজেদের বল শক্তি তাঁদের দেখাবে। দেখাবে তাদের চেয়ে তোমরাও কম শক্তিশালী নও। ”

সবাই স্যামের কথায় সায় দেয়। স্যাম নেকড়েদের আরো অনেক কিছু বলে উসকাতে থাকে। নেকড়ে রা স্যামের কথা মেনে নেয়।
.
.
-“ইয়ান,কি করবো বুঝতে পারছি না। দিন দিন অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। শুধু মাত্র ভ্যাম্পায়ারদের কারণে।” আলফি উত্তেজিত কন্ঠে কথাটা বলে।

-“জানি,তবে কিছু একটা করতে হবে আমাদের। ”

-“কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।”

-“নিজেকে শান্ত করো। মাথা গরম করলে হবে না।”

-“কিভাবে করবো? মাঝে মাঝে মন চায় ভ্যাম্পায়ার কিংডমে গিয়ে সব ভ্যাম্পায়ারদের মেরে দেই।”

-“এটা সম্ভব না আলফি। ভুলে যেও না। কিং ও আরলেন অনেক শক্তিশালী।” জিনান কথাটা বলতে বলতে ড্রইংরুমে আসেন।

-“চাচ্চু ঠিক বলেছে। তোমার একার পক্ষে তাদের সাথে লড়াই করা সম্ভব না।”

-“তাহলে কী করবো মামা। ওরা নিরীহ মানুষকে……।”

-“জানি! বলতে হবে না। যাহ করার আস্তে ধীরে করতে হবে। কিং কে মারার আগে আরলেনকে মারতে হবে। আরলেনকে মারবে তুমি আলফি।”

কথাটা শুনে কেন জানি আলফির মনের মধ্যে ধুক করে ওঠে। আলফি হ্যাঁ,না কিছু বলে না। চুপ করে বসে থাকে।

-“আলফি! আমি কি বলেছি শুনেছো?”

-“হ্যাঁ! মামা শুনেছি।”

-“আজ থেকে মিশন চালু করে দেও। যে ভাবেই হোক আরলেন কে মারতেই হবে। তাহলেই কিংয়ের অর্ধেক শক্তি কমে যাবে।”

আলফি এবারও জিনানের কথায় কিছু বলে না। চুপ করে রয়।

-“আলফি….।”

-“মামা আমি বুঝতে পেরেছি। আর বলার দরকার নেই।” কথাটা বলে আলফি উপরে চলে আসে।

ইয়ান,জিনানা তারা তাদের মধ্যে কথপোকথন চালিয়ে যায়।

আলফি বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আজ থেকে এলেনের সাথে প্রথম দেখা হবার মুহূর্ত গুলো ভাবতে থাকে আলফি।ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যায় অন্য জগতে। সেখানে শুধু এলেনের বিচরণ।
.
.
রাতে…

নেকড়েদের সাথে নিয়ে স্যাম তার শিকারে বের হয়েছে। জঙ্গল থেকে একটু দূরে একটি চৌচালা ঘর ছিল। সেখানে চারজন দাম্পত্যি বসবাস করতো। স্যাম সেই বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। প্রথমে স্যাম তাঁদের রক্ত চুষে খেয়ে নেয়। তারপর নেকড়ে রা তাঁদের শরীরের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে থাকে। বাসাটি জঙ্গলের ভেতরে থাকায় তাঁদের কষ্টের আর্তচিৎকার কারো কান অব্ধি পৌঁছায়নি। সারা জঙ্গল ছড়িয় পড়ে তাঁদের আর্তচিৎকার। কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। বুঝা যাচ্ছে তারা আর বেঁচে নেই। নেই তাঁদের নিথর দেহ খানা।
.
.
.
.
.
.
Continue To……..

Khatarnak Isq Part-08

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_08.
_______________________
একের পর এক মানুষের রক্ত পান করে স্যাম অনেকটা শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। আগে শুধু মেয়ে মানুষের রক্ত পান করতো।এখন ছোট,বড়,অর্ধবয়ষ্ক যাকে পাচ্ছে তাকেই শিকার বানাচ্ছে।
এদিকে এলেন,এরোন ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে হন্য হয়ে খোঁজ করছে স্যামকে। আলফির কাছেও স্যামের খবর পৌঁছে গেছে। নিরীহ মানুষকে মারার কথা শুনে আলফি চুপ থাকতে পারে না।
আলফি দিনের বেলা জঙ্গল ভ্রমণ করতে বের না হলেও।রাতে ঠিক বের হয়।আজকেও তাঁর ব্যতিক্রম হলো না। একাই বের হয়েছে। পুরো আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। ঘুরে ঘুরে দেখছে। কথা হলো, স্যামকে খুঁজতে হবে। যে-ভাবেই হোক! আলফি ফাঁদ পাতে স্যামকে ধরার জন্য। মাটিতে নেমে এসে মানুষের ভেশ নিয়ে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। বেশিদূর হাঁটতে হয় না। কিছুটা রাস্তা অতিক্রম করার পরই স্যাম রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ায়। আলফি স্যামকে দেখে ভয় পাওয়ার নাটক করে। ভীতু ফেইস নিয়ে স্যামের দিকে তাকায়।
স্যাম তীক্ষ্ণ চোখে আলফির দিকে তাকিয়ে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসছে। রক্ত খাওয়ার নেশা মাথায় এতটা জেঁকে বসেছে সামনে থাকা ব্যাক্তিটির কথা এক বারও ভাবল না। ভেবে দেখল না এত রাতে,এই ঘন জঙ্গলে এই সুন্দরী রমনী কোথা থেকে আসলো। রক্ত খাওয়ার নেশা নিয়ে আলফির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আলফি মনের মধ্যে ক্ষোভ নিয়ে সরল ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।

স্যাম তাঁর আসল বীভৎস ফেইস নিয়ে চোখের পলকের মধ্যে আলফির উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে নিলে সামনে ইয়ান এসে দাঁড়িয়ে গলা চেপে ধরে। আলফিকে পাশে সরিয়ে ইয়ান স্যামকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে চলে আসে। দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। আলফি নিজে সেখানে যেতে নিলে তখনি কোথা থেকে এলেন উপস্থিত হয় ওর সামনে৷ কপাল কুঁচকে আলফিকে জিজ্ঞেস করে,
-“হেই! এত রাতে তুমি এখানে কী করছো? তোমার বাড়ি কোথায়?”

আলফি বুঝতে পারে রূপ বদলানোর কারণে এলেন আলফিকে চিনতে পারেনি। আলফি তারি ফায়দা উঠায়। নেকা কান্নার ভান ধরে বলে,
-“আমাকে একটি লোক এখানে নিয়ে এসেছে ক্লাব থেকে। আমার খুব ভয় করছে। প্লিজ আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। মম-ড্যাড আমার জন্য চিন্তা করছে।”

-“আচ্ছা,কাঁদতে হবে না। চলো আমার সাথে।”

এলেনের এমন সৎ ব্যবহার দেখে আলফির মনটা হালকা হয়ে যায়।

আলফি চোখ মুছার অভিনয় করে বলে,
-“চলুন!”

দুজনেই সামনের দিকে হাঁটা ধরলে জঙ্গলের ভেতর থেকে হিংস্র হুংকারের শব্দ ভেসে আসে। এলেন পিছনে ফিরে তাকিয়ে বুঝতে পারে ভেতরে কিছু একটা হচ্ছে। মেয়েটির কথা তখন মাথায় আসে না। এলেন জঙ্গলের দিকে হাঁটা ধরতেই আলফি কান্নার ভঙ্গিতে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-“প্লিজ আমাকে রেখে যাবেন না। আমার খুব ভয় করছে।”

-“তুমি এখানে দাঁড়াও,দেখে আসি সেখানে কী হচ্ছে!”

-“না প্লিজ যাবেন না।” করুন স্বরে কথাটা বলে আলফি।

-“তুমি জাস্ট পাঁচ মিনিট ওয়েট করো আমি এখনি আসছি…..!”

কথাটা শেষ করার আগেই আলফি এলেনকে ঝাপটে ধরে। অস্থির হয়ে বলে,
-“প্লিজ যাবেন না। প্লিজ! আমার খুব ভয় করছে।”

আলফি কোনোভাবেই চায় না এলেন সেখানে যাক। সেখানে গেলে এলেন ঠিক স্যামকে সেদিনের মতো বাঁচিয়ে নিবে। কিন্তু আলফি সেটা চায় না। তাই যে করেই হোক এলেনকে আটকে রাখতে চায়। এলেন মেয়েটির এমন কাণ্ডে আশ্চর্য না হয়ে পারে না। অন্য কোনো মেয়েকে গাঁ ঘেঁষতে দিলেও এই মেয়েটি ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটা করবে এলেনের জানা ছিল না।

-“কী করছো? ছাড়ো আমাকে।” দূরে সরাতে সরাতে বলে এলেন।

আলফি এলেনের কাছে ঘেঁষে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে।

-“এই মেয়ে,করছোটা কি? ছাড়ো…।”

-“নাহ!”

-“আরে…..।” এলেন বাকিটা বলতে পারে না। থেমে যায়। সুন্দর একটি সুভাস এলেনের নাকে আসে। যেটা মেয়েটির গাঁ থেকে পাচ্ছে। এলেন কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যায়। সুবাস টা খুব চেনা চেনা লাগছে। এলেন চোখ বন্ধ করে কিছু একটা উপলব্ধি করতে থাকে। পরক্ষণে চোখ মেলে আলফির চুলের মুঠি ধরে তীক্ষ্ণ নজরে তাকায়। আলফি ভয় না পেলেও,ভয় পাওয়া ফেইস নিয়ে এলেনের দিকে তাকায়। এলেন আলফির গলার কাছে নাক এনে স্মেইল নিতে থাকে। আলফি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে হাত মুঠো বদ্ধ করে। এলেন স্মেইল নিতে নিতে আলফির কানের কাছে এসে স্লো ভয়েসে প্রশ্ন করে,
-“হু আর ইউ?”

প্রশ্নটা শুনে আলফি এলেনকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। এলেন সেদিনের মতো দু কদম পিছনে চলে যায়। ধাক্কা দেওয়ার ফলে এলেনের সন্দেহ টা আরো একটু তীব্র হয়। দু কদম আলফির দিকে এগিয়ে এসে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“বলো কে তুমি?”

কী বলবে আলফি ভেবে পাচ্ছে না। ধরা পড়ার ভয়তে আলফি এলেনের মুখের উপর একটি রুমাল ছুঁড়ে মারে। চোখ জোড়া ডেকে যায় এলেনের।এলেন রুমালটা মুখ থেকে সরাতেই সেই অচেনা মেয়েটি উধাও হয়ে যায়,সাথে রুমালটিও। এলেন চারদিক তাকিয়ে আর খুঁজে পায় না।মেয়েটি যে কোনো সাধারণ মানুষ নয় সেটা এলেন ভালো করেই বুঝতে পারে। সন্দেহ জাগে মনে।সেটাও আলফির প্রতি। দেরি না করে বাতাসের বেগে আলফিদের বাড়িতে আসে। বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ধীরে দরজার ছিটকানি খুলে ভেতরে আসে। সারা রুম অন্ধকার। আলফির বেডের পাশে এসে দাঁড়িয়ে স্পেশাল পাওয়ার দিকে দেখতে থাকে আলফি বেডে আছে কি না। যখন বুঝতে পারে আলফি শুয়ে আছে তখন এলেন বেশ অবাক হয়। কেন জানি মনের সন্দেহ টা মিটছে না। বেড়ে যাচ্ছে। এলেন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এটা ওটা ভেবে চলে আসে রুমের বাহিরে। জঙ্গলের মেয়েটির কথা ভাবে। তারপর সেদিনের শাহজাদী কায়রার কথা ভাবে। কিন্তু কিছুর হিসাব মিলছে না। হুট করে এলেনের জঙ্গলের সেই হুংকারের কথা মনে পড়ে। এলেন দেরি না করে দ্রুত চলে আসে সেই স্থানে। এসে দেখে সেখানের কয়েকটা গাছপালা উপড়ে পড়া। ডাল ভেঙে ঝুঁলে আছে। দেখে মনে হচ্ছে এখানে যুদ্ধ হায়েছে বেশ বড় সড়ো। এলেন শক্তি দিয়ে বুঝার ট্রাই করে এখানে কিছুক্ষণ আগে কী হয়েছিল? চোখ বন্ধ করে ভাঙা গাছের ডাল স্পর্শ করে দেখছে। এলেন বুঝে যায় এখানে একটু আগে কি হয়েছিল। স্যাম এখনো মারা যায়নি। এটাও বুঝতে পারে এলেন। রাগে রাজ্যে ফিরে আসে।
.
.
-“স্যামকে মারতে পেরেছো?”আলফি ইয়ানকে জিজ্ঞেস করে।

-“নাহ! মারামারির এক পর্যায়ে স্যাম পালিয়ে যায়।”

-“এটা….। যে করেই হোক স্যামকে মারতে হবে। আর না হলে স্যাম মানুষকে মেরে ওর রক্তের পিপাসা মেটাবে।” রাগে উত্তেজিত হয়ে বলে আলফি।

-“এত টেনশন কোরো না। স্যামকে খোঁজার ব্যবস্থা করছি আমি।”

আলফি কিছু বলে না। নিজ কক্ষে ফিরে আসে। নিজে নিজে বলতে থাকে।
-“কিছুতেই এলেনকে জানতে দেওয়া যাবে না আমি শাহজাদী কায়রা।আমি জানি এলেন আমাকে সন্দেহ করছে। আমাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। তবে…..?” আলফি কিছু একটা ভেবে শুয়ে পড়ে।

ভ্যাম্পায়ার কিংডম…….

-“কোনো খবর পেয়েছো স্যামের?” কিং এবিল জিজ্ঞেস করে এলেন ও এরোনকে।

-“ড্যাড,জ্বীনের সাথে স্যামের লড়ায় হয়েছে। সেই লড়াইয়ে স্যাম বেঁচে যায়।”

-“কী দিন এসেছে। স্যামের জন্য এখন আমাদের লড়াই জ্বীনদের সাথে হচ্ছে। যেই জ্বীনরা আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারত না।”

-“কিং এসব হয়েছে তাঁদের শাহজাদী ফিরে আসার কারণে। শাহজাদী ফিরে আসার কারণে ওদের পাওয়ার ভেড়ে গেছে।” ইয়াঙ্ক বলে।

-“হুম,তুমি ঠিক বলেছো। আরলেন,যে করেই হোক শাহজাদী কায়রাকে খুঁজে বের করো।”

-“কিন্তু সে কি মানুষের সাথে থাকবে? সে তো জ্বীন রাজ্যে থাকবে।” এরোন বলে।

-“উঁহু! সে মানুষের সাথেই থাকে। জ্বীন রাজ্যে নয়।” এলিব বলে।

-“কিন্তু কেন?”

-“আমার ধরনা মতে কায়রা ছোট্ট থেকে মানুষের সঙ্গে থেকেছে। সে এই ঘোলা পরিবেশে বসবাস করে। জ্বীন রাজ্যে না।” এবিল বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বলে।

-“তাকে খোঁজার উপায়?” এরোন প্রশ্ন করে।

-“তাঁর শরীর থেকে মানুষের স্মেইল আসবে না। তাঁর রক্ত কেউ খেতে পরবে না।”

বিয়ার খেতে খেতে এলেন তাঁদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আলফির সাথে প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত দেখা করার মুহূর্ত গুলো ভাবছে। ওর ড্যাডের কথার সাথে আলফির কিছুটা মিল পাচ্ছে এলেন। ক্যান ফেলে ওঠে চলে আসে কক্ষে। মনে মনে ডিসাইট করে নেয় কাল থেকে আলফির উপর কঁড়া নজর রাখবে।
.
.
সকালে…..

আলফিকে আজ ইয়ান কলেজে পৌঁছে দেয়৷ আলফি ক্লাস রুমে এসে বসতেই এনা আলফিকে উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“আলফি শুনেছিস! এই দুই দিন পাঁচ ছয়জন মানুষের মৃত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাও পূর্ব দিকের জঙ্গলটা থেকে।”

এনার মুখ থেকে কথা কেঁড়ে নিয়ে লিনা বলে,
-“সেই জঙ্গলটা অনেক ভয়ংকর। অনেক ধরনের জন্তুজানোয়ার সেখানে বসবাস করে ।”

-“হুম,তারপর?” আলফি জিজ্ঞেস করে।

-“তারপর,সেখানের রাস্তাটা দিয়ে যদি কেও যায় তাহলে ফিরে আসার চান্স খুব কম থাকে।” ম্যারি ভয় জড়িত কন্ঠে বলে।

-“তারপর? ” আলফি বলে।

-“তারপর,সে মারা যায়!”

-“তারপর!”

-“আমাদের সবার মাথা। হয়েছে!” জন দাঁত কেলিয়ে করে।

আলফি মুখের উপর হাত দিয়ে জোরে হাসতে লাগল। ওর হাসি দেখে ওরা সবাই সরু চোখে তাকিয়ে আছে। এমন মনে হচ্ছে ওরা আলফিকে জোক্স শুনিয়েছে। যেটা শুনে আলফি হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে। তবে, আলফির কাছে বিষয়টা,মার কাছে মাশির বাড়ির গল্প বলার মতো লাগছে।আলফির আগে থেকেই সব জানা।

-“আলফি তুই মানুষের দুর্দিনে হাসছিস?” লিনা বলে।

-“আরে না! আমি তো আমার তারপর,তারপর কথাটা শুনে হাসলাম।”

জি-তাও আলফির উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই স্যার চলে আসে ক্লাসে। সবাই ক্লাসে মনোযোগ হয়।
তিন পিরিয়ডের পর আলফির মনে হতে থাকে এলেন ওর আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে। আলফি এলেনের উদ্দেশ্যে মনে মনে বলে,
-“বেহায়াপনা ছেড়ে ক্লাস রুম থেকে চলে যান এলেন মামু।”

কথাটা এলেন ঠিক শুনে ফেলে। স্পেশাল শক্তি দিয়ে ক্লাস রুমের সব কিছু স্টপ করে দেয়। যে যেভাবে আছে সবাই ঠিক ঐভাবেই বসে থাকে। শুধু আলফি বাদে। কারণ আলফির উপর এলেনের শক্তি প্রয়োগ হয়নি। কিন্তু তবুও আলফি মূর্তির মতো বসে থাকে। যাতে এলেন বুঝতে পারে আলফিও স্ট্যাচু হয়ে গেছে সবার মতো। এলেন দরজাটা বন্ধ করে দেয়। যাতে বাহিরের কেউ না দেখতে পায়। আলফির খুব হাসি পাচ্ছে স্যারকে দেখে। স্যার চক হাতে নিয়ে সামনের দিকে হাত উঁচু করে ধরে রেখেছে। কথা বলার এক পর্যায় এলেন স্ট্যাচু করে ফেলেছে যার কারণে মুখটা বাঁকানো। হাসতে পারছে না আলফি। এর জন্য বেশ কষ্ট হচ্ছে। এলেন বাতাসের বেগে আলফির মুখের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর পাশে বসেছিল এনা। এনাকে সিট থেকে দূরে সরিয়ে পাশে বসে এলেন।

-“কী বলেছিলে যেনো? এলেন মামু? আচ্ছা তাহলে মামু যখন বলেছো তখন আমার ভাতিজিকে একটু আদর করে দেই। কি বলো ভাতিজি!” হেসে হেসে বলে এলেন।

আলফি ভেতরে ভেতরে অবাক হয়ে যায়। সামনে কি করবে সেটা এখন দেখার পালা। এলেন আলফিকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা একটা করে চুমো দিচ্ছে আর বলছে,
-“আয়…ভাতিজি আয়। আয়… ভাতিজি আয়।”

যতবার বলছে,ততবার আলফির গালে চুমো খাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে রাগের চোটে আলফি ফেটে যাচ্ছে। এটার জন্য আলফি মোটেও প্রস্তুত ছিল না। আর এলেন তো কিস দিয়েই যাচ্ছে। পরের কলি টুকু বলার আগেই ঘন্টা পড়ে যায়। এলেন আলফির কাছ থেকে সরে এসে অদৃশ্য হয়ে সব আগের মতো করে দেয়। স্যার যখন শুনলো ঘন্টা পরে গেছে তখন ক্লাস রুম থেকে চলে যায়। আলফি তো রাগে ফোসফাস করছে। সোজা হয়ে বসে আছে। এনা ব্যাক গুছিয়ে আলফির দিকে তাকিয়ে দেখে আলফি সোজা হয়ে বসে আছে। কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“আলফি কী হলো যাবি না?”

আলফি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
-“যাব!”

-“চল তাহলে,ব্যাক গুছা।”

আলফি চুপ করে ব্যাগ গুছাতে থাকে। বাহিরে গিয়ে এলেনের খবর নিতে চাইলেও আলফি শান্ত থাকে। এলেনকে জানাতে চায় না কিছু। এলেন দু তিনজন মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল। আলফি দেখেও না দেখার ভাব ধরে এনাদের সাথে চলে যায় ক্যান্টিনে। ইয়ান আলফিকে নিতে আসে। ইয়ান গাড়ি থেকে বের হতেই এলেনের নজর ওর উপর পড়ে। ইয়ান এলেনকে দেখেছে। কিন্তু পাত্তা দেয় না। আলফি কোথায় আছে এটা জানে ইয়ান। ক্যান্টিনে এসে আলফির বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয়। তারপর আলফি ইয়ানের সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ির কাছে চলে আসে। এলেনের রাগ হয় আলফিকে অন্য একজন ছেলের সাথে দেখে। কিন্তু সেটা মনের মধ্যে পুষে রাখে।

আলফি চলে আসে বাসায়। ক্লাস রুমের কথা মনে পড়তেই রাগ,হাসি দুটোই পাচ্ছে আলফির। প্রথমে হাসতে হাসতে বিছানার শুয়ে পড়ে। আর তারপর এলেনের গালে কিস করার কথা ভাবে।
আলফি নিজে নিজে ব্ল্যাশিং হয়।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……

Khatarnak Isq part-07

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_07.
_______________________

ভ্যাম্পায়ার কিংডম……..

এলেন রাজ কোষাগার থেকে দ্রুত গতিতে ভেতরে যাওয়ার সময় সিংহাসনে বসা এবিল এলেনকে ডাক দেয়।

-“আরলেন,কি হয়েছে? তুমি এত রেগে আছো কেন?”

এলেন থেমে গিয়ে জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“ড্যাড,তুমি বলা শর্তেও স্যাম একটি মেয়ের ব্লাড খেতে চেয়েছিল। কিন্তু রক্ত পান করার আগেই শাহজাদী কায়রা চলে আসে। স্যামকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি গিয়ে বাঁধা দেই। শাহজাদী চলে যায়।”

এটুকু বলে এলেন থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবিল দাঁড়িয়ে গিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,
-“এত বড় সাহস স্যামের! ফের আমার নির্দেশ ভঙ্গ করেছে। ওর মৃত্যু নিশ্চিত! স্যামকে ধরে নিয়ে এসো।” কথাটা শুনে কিছু ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে বের হয়ে যায়। এলেন রাগে হনহন করে কক্ষে চলে আসে। কিং এবিল নিজেকে সান্ত করে সিংহাসনে বসে।

এলেন কক্ষে এসে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। চোখটা বন্ধ করতেই হঠাৎ হাতে কারো হাতের স্পর্শ পায়। চোখ মেলে তাকায়। লিসারকে ওর পাশে দেখতে পায়। হাত ওর হাতের উপর রাখা। এলেন ভীষন রেগে যায়। ওঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-“বিনা পারমিশনে আমার রুমে কেন এসেছো? বের হয়ে যাও রুম থেকে।”

লিসার আর দেরি করে না। এলেনের ধমক শুনে দ্রুত রুম ত্যাগ করে। এলেন আগের ন্যায় সোফায় গা এলিয়ে দেয়। লিসার এলেনকে লাইক করে। কিন্তু এলেন লিসারকে একদমই পছন্দ করে না।

এদিকে স্যাম ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে জঙ্গলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। রাত তখন অনেক গভীর। নিজের ঘাঁ ঠিক করতে পারছে না। ঠিক করতে হলে রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু এখন রক্ত পাওয়া মুশকিল। দু,তিন কদম পা এগোতেই একটি কার দেখতে পায়। স্যাম ইচ্ছে করে রাস্তার পাশে শুয়ে পড়ে। এবং হেল্প বলে চিল্লাতে থাকে। গাড়ির ব্যাক্তি স্যামকে মানুষ মনে করে জখম অবস্থায় দেখে গাড়ি থামিয়ে দেয়। গাড়ি চালকটি ছিল একজন অর্ধবয়স্ক লোক। লোকটি দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে স্যামের কাছে আসে। স্যামকে ধরে কিভাবে তাঁর এমন অবস্থা হলো তা জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু স্যামের সেদিকে লক্ষ ছিল না। লোকটির হাত ধরে টেনে গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। লোকটি আর্তচিৎকার ভেসে যায় দূর বহু দূরে।
.
.
সকালে…

আলফি নাস্তা সেরে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কলেজে পৌঁছে ক্লাস রুমে আসতেই এনা দের সাথে দেখা হয়ে যায়। ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর ক্লাসে টিচার আসে। সবাই ক্লাসে মন দেয়। কিন্তু হঠাৎ আলফির এলেনের কথা মনে পড়ে। আজকে কলেজে আসার সময় এলেনকে দেখেনি। এখন আশেপাশে আছে বলে মনে হচ্ছে না আলফির। এলেনের কথা মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে চায়। কিন্তু যখনি কালকের কিসের কথা মনে পড়ে তখনি আলফি আনমনা হয়ে যায়। আলফি এগুলা নিয়ে মাথা খামাতে চায় না। ভ্যাম্পায়ার আর পরী! কখনো সম্ভব না। আলফি সব চিন্তাভাবনা পাশে রেখে ক্লাসে মন দেয়। কিছুক্ষণ পর ক্লাস শেষ হয়ে যায়। একে একে চারটি ক্লাস শেষ হয়। সবাই ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আলফি একটি ম্যাথ নিয়ে বসে আছে। সেটা শেষ করে বের হবে শুনে এনা,ম্যারি,জন,লিনা,জি-তাও ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যায়।পাঁচ মিনিট পর আলফির ম্যাথ শেষ হয়ে যায়। ব্যাগে খাতা,কলম ঢুকিয়ে বের হতে নিলেই পিছন থেকে ওড়না টান পড়ে। ঘুরে তাকাতে গেলেই ঝড়ের বেগে দেয়ালের সাথে হালকা মিশিয়ে ধরে এলেন। আলফি আগে থেকেই যানত এটা এলেন ছাড়া আর কেউ না। তাই ঘাবড়ানোর কোনো কারণ ছিল না। এলেন আলফির দিকে মৃদু হেসে তাকায়।আলফির কেন জানি মনটা হালকা লাগছে। রাগ হীন নজরে এলেনের দিকে তাকায়।

এলেন আলফির নরম ভঙ্গিতে তাকানো দেখে বলে,
-“মনে হচ্ছে আমার জন্য এতক্ষণ ওয়েট করছিলে?”

-“হোয়াই?”

-“সেটা তো তুমি জানো?”

-“নো!”

-“ইয়েস!”

-“নো!”

-“ইয়েস!”

-“ন….!”

-“ওয়েট,ওয়েট…। প্রমান করার জন্য একটি গেম খেলি চলো।”

আলফি এলেনকে পাশে সরিয়ে বলে,
-“কোনো গেম গেলব না। আপনি আমার কাছ থেকে দূরে থাকুন প্লিজ!”

চলে যেতে নিলে এলেন আলফির সামনে এসে বলে,
-“হোয়াই?”

-“যথেষ্ট কারণ আছে। তাঁর মধ্যে একটি কারণ আপনি ভ্যাম্পায়ার। ”

-“তাতে কি?”

-“এটাই বড় কারণ।”

-“মোটেও না। অভয় রাজ যদি ভ্যাম্পায়ার হয়ে একটি মানুষের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি কেন পারব না।”

-“আমি প্রিয়া নই! আর আপনিও…..।”

-“অভয় নই! তাই তো?”

-“জী।”

-“সমস্যা কী? ওদের কাহিনী আলাদা হবে। আমাদেরটাও আলাদা হবে।”

-“আমাদেরটা ওদের কাহিনী থেকে আরো বেশি ভয়ংকর হবে। যাকে এক কথায় বলা যায়……..।”

-“Khatarnak_Isq.” ভ্রু উঁচু করে বলে এলেন।

নামটা শুনে আলফি এলেনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। আসলেই ওদের ভালোবাসাটা শুধু অসম্ভব নয়। পুরোই খাতারনাক হবে। আলফি আর কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে নেয়। কিন্তু এলেনের কথা শুনে থেমে যায়।

-“তুমি মানুষ নও আলফি। এটা আমার বিশ্বাস। তবে,তুমি যাই হও না কেন জাস্ট আমার।”

আলফি ঝাঁড়ি দিয়ে বলে,
-“নট পসিবল! দূরে থাকুন আমার কাছ থেকে।” আর দেরি না করে ক্লাস রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে যায় আলফি।

এলেন আলফির কথা শুনে বাঁকা হাসে। আলফি দ্রুত গাড়িতে বসে বাসায় চলে আসে। এনাদের সাথে দেখা করে না। তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে আসে। শাওয়ার শেষ করার পর হঠাৎ পিঠে ব্যাথা অনুভব করে। যেখান থেকে পাখা বের হয় ঠিক সেই স্থানে ব্যাথা অনুভব করছে। আলফি জামা পড়ে বের হয়ে আসে। মাথার ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে নিচে আসে। রান্না ঘর থেকে কিছু একটা পোঁড়া পোঁড়া গন্ধ আসছে। কী সেটা দেখার জন্য আলফি কিচেনে আসে।এসে দেখে কলা পাতায় মাছ ভাজছে ইয়ান। এখন কিচেন থেকে গন্ধ নয়,সুন্দর একটা স্মেইল আসছে। ইয়ান আলফির উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে তাকিয়ে বলে,
-“শাহজাদী আপনি এখানে?”

-“আচ্ছা আপনার সমস্যা কী?”

-“কোনো সমস্যা নেই তো? আমি একদম ঠিকঠাক আছি।”

-“ঠিক নেই! আপনি আমাকে শাহজাদী বলে ডাকবেন না। নাম ধরে ডাকবেন?”

-“যদি আপনি পারমিশন দেন তাহলে,কায়রা বলে ডাকতে পারি?”

-“অবশ্যই! ”

-“ঠিক আছে। সবার সামনে আলফি। আর আড়ালে কায়রা বলে ডাকব।”

-“আমার কোনো সমস্যা নেই।”

-“আপনি অনেক ভালো কায়রা।”

-“হাহ! হলো না।”

-“তুমি অনেক ভালো কায়রা।”

আলফি হেসে দিয়ে বলে,
-“এবার ঠিক আছে।”

ইয়ানও হেসে দেয়। আলফি ইয়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,”এলেনের দিকে তাকালে যেই ফিল আমি পাই। সেটা ইয়ানের দিকে তাকালে কেন পাই না? এটার মূল কারন কী?”

-“কী ভাবছো কায়রা?”

-“তেমন কিছু না। ভাবছি মাছ ভাজাটা খুব টেস্ট হবে।”

-“খেয়ে দেখতে পারো।”

-“অবশ্যই! দেখবো।”

আলফি ইয়ানের সাথে অনেকক্ষণ রান্নাঘরে সময় কাঁটায়। তারপর এক সাথে খাবার খায়। এই কয়েক ঘন্টায় ইয়ানের সাথে অনেকটা ফ্রী হয়ে গেছে আলফি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আলফি ইয়ানের সাথে বসে কথা বলছিল। এদিকে এলেন আলফির ফোনে কল দিয়েই যাচ্ছে বার বার। কিন্তু আলফি ফোন ধরছে না। ধরবেই বা কী করে। ফোন ছিল রুমে। আর আলফি ড্রইংরুমে বসে ইয়ানের সাথে কথা বলছিল।
এলেনের রাগ হচ্ছে। এত বার কল দেওয়ার পরও ফোন ধরছে না। এলেন আলফিদের বাসায় আসতে নিলে এরোন পথ আটকে দাঁড়ায়। এলেনকে বলতে থাকে,
-“দোস্ত কিছু একটা কর! লিনা আমাকে দেখলেই খালি হাসে।”

-“কেন?” টেরা চোখে তাকিয়ে বলে এলেন।

-“সেটাই তো জানি না।”

-“কেন রে গাদা! তুই লিনার মাইন্ড পড়তে পারিস না?”

-“ধুর! আমার সরম করে।” লজ্জা ভঙ্গিতে বলে এরোন।

এরোনের লজ্জা ভঙ্গি দেখে খিলখিল করে হাসতে শুরু করে এলেন। এরোন এলেনের দিকে সরু চোখে তাকায়।

-“তুই যে কেন মানুষ হয়ে পয়দা হলি না।” হেসে হেসে বলে এলেন।

-“ভুলে ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছি!এটাই বলতে চাস তাই তো।” কিছুটা রেগে বলে এরোন।

-“ইয়াপ।” হেসে হেসে।

-“দোস্ত থাম! একটু আইডিয়া দে।”

-“ওকে থামলাম। আইডিয়া নিবি?”

এরোন খুশি মুডে বলে,
-“হুম,হুম।”

এলেন বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে দ্রুত বলে,
-“লে,আইডিয়া।”

নিমিষেই এরোনের মুখ কালো হয়ে যায়। এটা দেখে এলেন আরো জোরে জোরে হাসতে শুরু করে।
এরোন রাগ নিয়ে বলে,
-“তোর আইডিয়ার দরকার নেই।” বলে চলে যেতে নিলে এলেন ওর কাঁধে হাত রেখে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে আসে কক্ষ থেকে। তখনি একজন ভ্যাম্পায়ার এসে এলেন ও এরোনকে বলে যায় কিং তাঁদের ডাকছে। এলেন,এরোন ভ্যাম্পায়ার টির কথা শুনে তাড়াতাড়ি কিংয়ের কক্ষে আসে।
এবিল তাঁর কক্ষে চিন্তিত হয়ে পায়চারী করছিলেন।

-“কী হয়েছে ড্যাড?”

এবিল বলে,
-“স্যাম কাল রাত থেকে অনেক মানুষের রক্ত পান করেছে। এভাবে যদি মানুষের রক্ত পান করতে থাকে তাহলে স্যাম অনেক শক্তিশালী হয়ে যাবে। আর এই খবর যদি শাহাজাদী জানতে পারে। কী হবে বুঝতে পারছো তোমরা?”

-“এরোন চল,স্যামকে খুঁজে বের করতে হবে।”

-“হুম,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব!”

-“ড্যাড তুমি টেনশন কোরো না।”

-“স্যামকে দেখা মাত্রই মেরে ফেলবে।” এবিল বলে।

-“হুম।”

এলেন,এরোন চলে আসে রাজ্যের বাহিরে। সারা এড়িয়া জুড়ে খুঁজতে থাকে। সাথে কিছু ভ্যাম্পায়ারদেরও লাগিয়ে দেয় স্যামকে খোঁজার জন্য।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……..

Khatarnak Isq Part-06

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_06.
_______________________
আলফি রাতে আর বাসা থেকে বের হয় না। ঘুমিয়ে যায়। সকালে ওঠে দেখে ইয়ান সব নাস্তা তৈরি করে রেখেছে। টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে রেখেছে। আলফি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে এত পদের খাবার দেখে কিছুটা অবাক হয়। পিছন থেকে ইয়ার পানির জগ নিয়ে আসতে আসতে বলে,
-“গুড মরনিং শাহজাদী।”

আলফি ইয়ানের কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা জবাব দেয়,
-“এগুলো আপনি রান্না করেছেন?”

-“জী শাহাজাদী!”

-“কেন? আমি নিজে রান্না করতে পারতাম।”

-“আপনাকে এসব কাজে মানায় না। আমিই রান্না করব এখন থেকে। ”

আলফি কিছু বলার আগে জিনান নিচে নেমে আসে। চেয়ারে বসতে বসতে আলফি ও ইয়ানকে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলে। আলফি আগে বসে। তারপর ইয়ান বসে। খাবার খাওয়ার সময় কেউ কারে সাথে কথা বলে না।আলফি খাওয়া শেষ করে উপরে চলে আসে। রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হয়ে যায়। কলেজে এসে গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় জেনিফার আলফিকে ইচ্ছা করে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। আলফি মাটিতে বসে পড়ে। জেনিফার বান্ধবী রা খিলখিল করে হাসতে থাকে। আলফি বসা অবস্থায় চোখ রাঙ্গিয়ে জেনিফার দিকে তাকায়। এলেন প্রিন্সিপালের কক্ষে বসে এই দৃশ্য দেখছিল। রাগ হলেও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ,এলেন দেখতে চায় আলফি কী করে। ইয়ান মাঠের গাছটির পিছনে দাঁড়িয়ে দেখছিল। রাগ ইয়ানেরও হচ্ছে জেনিফার উপর। আলফি চোখ সরিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে গায়ের জামাটা একটু ঝেড়ে হাঁটা ধরল। জেনিফা পিছন থেকে আলফির গলার স্কাফ টেনে ধরে। এবার ইয়ান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। বের হতে নিলেই ‘ঠাসস’ করে একটা শব্দ শুনতে পায়। ইয়ান থেমে যায়। মাঠে বসে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের নজর এখন জেনিফার উপর। জেনিফা গালে হাত দিয়ে এলেনের দিকে চক্ষু চোখে তাকিয়ে আছে। এলেন তাঁর চেয়ে আরো কঁড়া চোখে জেনিফার দিকে তাকিয়ে আছে। রাগী ভাব নিয়ে আঙুল তুলে বলে,
-“নেক্সট টাইম এমন ভুল করলে……..।” বাকিটা না বলে আলফির হাত ধরে নিয়ে আসে কলেজের ভেতরে। আলফি এখনো সকড আছে। এলেন যে এমন একটা কাজ করবে সেটা ওর ধারনা ছিল না।
আলফি পিছন থেকে এলেনের দিকে তাকিয়ে আছে। এলেন আলফিকে একটি নিরিবিলি গলিপথে নিয়ে হাত টেনে এলেনের মুখোমুখি নিয়ে এসে রাগ নিয়ে বলে,
-“প্রতিবাদ করতে শিখো। যে যা করবে মুখ বন্ধ রেখে……..।”

বাকিটা বলার আগে থামিয়ে আলফি বলে,
-“আমাকে জ্ঞান দেওয়ার কোনো দরকার নেই।” বলেই হাত ছাড়িয়ে নেয়। আবার বলে,
-“আপনাকে কে বলেছে জেনিফার গালে থাপ্পড় দিতে। আমি? কই না তো!…..নিজের লিমিট মতো থাকুন। আর আমার লাইনে এডজাস্ট হওয়ার ট্রাই করবেন না।” শেষের কথা বলে আলফি চলে যায়।

এলেন ফিক করে হেসে দেয়। মনে মনে বলে,
-“অলরেডি হয়ে গেছো।”

আলফি ক্লাস রুমে এসে বসতেই এনা,লিনা,ম্যারি ঠেসে ধরে একটার পর একটা প্রশ্ন শুরু করে দিয়েছে। আলফি পাগলেম হয়ে যায়। শেষে চিল্লিয়ে বলে,
-“তেমন কিছু নেই এলেন আর আমার মাঝে। এবার চুপ থাক তোরা।”

এই কথাটা বলার পরও এনা,লিনা,ম্যারি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে আলফির দিকে। আলফি ওদের তিন জনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোরা কি চাস আমি ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যাই।”

ম্যারি বলে,
-“নাহ! বোস।”

-“আমার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকা।”

আলফির কথা মতো ওরা তিনজন সামনের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হয়ে যায়। ক্লাস করার সময় আলফির মনে হতে থাকে কেউ ওর আশেপাশে আছে। ও’কে কাছ থেকে দেখছে স্পর্শ করছে। কিন্তু কে সেটা ঠিকমতো বুঝতে পারছে না।
প্রতিটা ক্লাস করার সময় আলফির এমন ফিল হতে থাকে। লাস্টের ক্লাসের সময় আলফি সবার আড়ালে স্পেশাল পাওয়ার প্রয়োগ করে বুঝতে পারে এটা আর কেউ নয় এলেন। আলফি রাগীভাব নিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার বোর্ডে অংক লিখার সময় আলফি চট করে দাঁড়িয়ে গিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে। স্যার আলফিকে নিষেধ করে না। যেতে বলে। আলফি বের হয়ে যায় ক্লাস রুম থেকে। ওয়াশরুমের সামনে আসতেই আলফি পিছন থেকে এলেনের কলার চেপে ধরে দেয়ালে ঠেসে ধরে। এলেন অদৃশ্য থেকে সঠিক রূপে ফিরে আসে। আলফির এমন ব্যবহারে এলেন বেশ মজা পাচ্ছে। আলফি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“সমস্যা কী? অদৃশ্য হয়ে আমার সাথে মজা করা হচ্ছে?”

এলেন কিছু বলার আগে আলফির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ‘হুঁশশ’ বলে চুপ করিয়ে দেয়। আলফির কানে কানে বলে,
-“কথা বোলো না। কেউ এদিকে আসছে।” এটা বলে এলেন আলফিকে নিয়ে দেয়ালের পিছনে লুকিয়ে পড়ে। দুজনকে এভাবে যদি কেউ দেখে ফেলে সমস্যা হতে পারে। তাই আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। কিন্ত আলফি আড়ালে লুকাতে চায় না। এখান থেকে বের হতে নিলে এলেন আলফির দু বাহু চেপে ধরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ধরে রাখে। আলফি রাগের চোটে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময় এলেন আলফির ঠোঁট জোড়া তাঁর আয়ত্তে করে নেয়। আলফি কিছু বলতে পারে না। চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়।পাথর হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর এলেন যখন বুঝতে পারে কারো পায়ের আওয়াজ আসছে না,চলে গেছে বুঝতে পারে। তখন এলেন আলফিকে ছেড়ে দু কদম দূরে সরে দাঁড়ায়। আলফি তখনো চোখ জোড়া বড়ো বড়ো করে রেখেছে। এলেন একটা ঠান্ডা মুড নিয়ে বলে,
-“ভুলটা কিন্তু আমার ছিল না। আগে কিন্তু তুমি আমাকে দেয়ালে ঠেসে ধরেছিলে। আর,তারপর যা হয়েছে সেগুলো হিসাবের খাতায় যোক হয়েছে।” আলফির চেহারার সামনে গিয়ে স্লো ভয়েসে ‘বাই’ বলে দ্রুত জাগা প্রস্থান করে এলেন। এলেন যাওয়ার পর আলফি ঠান্ডা রিয়াকশনে ক্লাস রুমে ফিরে আসে। চুপটি করে সামনের দিকে পলক হিন ভাবে তাকিয়ে রয়। এনা আলফির এমন রিয়াকশন দেখে দেয় জোরে ধাক্কা। এক ধাক্কায় আলফির হুঁশ ফিরে আসে।

-“হয়েছে টা কী? এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছিস কেন?” এনা বলে।

আলফি চোখের পকল ফেলে তখনকার কথা মনে করে। সামনে থাকা খাতা রাগে দু হাত দিয়ে মুচড়িয়ে ধরে।

-“বলবি তো কী হয়েছে? ”

-“ক্লাসে মন দে।” কথাটা বলে আলফি খাতা মুচড়ে ধরে রাখে।

এনা আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। এলেন খুশি মুডে প্রিন্সিপালের কক্ষে ফিরে আসে। এরোন এলেনকে খুশি মুডে দেখে জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই এরোন নীল রশ্মি এলেনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে মাইন্ড পড়ে ফেলে। এরোন হা হয়ে যায়। এলেন বুঝতে পারে এরোন ওর মাইন্ড পড়েছে। তাই এরোনের মুখটা বন্ধ করে বলে,
-“পারলে করে দেখা।”

এরোন বলে,
-“এটা অসম্ভব! প্রথম মিটে কিস…। নো নো নো।”

-“তাহলে আর কি করার। আমি প্রেম করি আর তুই বসে বসে দেখ।”

-“না।”

-“তাহলে তুইও যা,প্রেম কর।”

-“না।

-“তাহলে বসে বসে দেখ।”

-“না।”

-“তাহলে..মর তুই।”বলেই বের হয়ে যেতে নিলে এরোন এলেনের সামনে এসে বলে,
-“আমার একটা ব্যবস্থা করে দে লিনার সাথে ইটিশ-পিটিশ করার।”

-“দিবো নে। এবার চল ঘুরে আসি।”

-“কোথায়?”

-“আরে আয় না।”
____________________
আলফি বাসায় আসার পর ইয়ান আলফির রুমে আসার পারমিশন চায়। আলফি পারমিশন দেয় ইয়ানকে ভেতরে আসার। ইয়ান নরম কন্ঠে বলে,
-“শাহাজাদী,আমি যদি ভুল না হই। তাহলে এলেন নামের ছেলেটি ভ্যাম্পায়ার।”

-“হুম।”

-“তাঁর হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে আপনাকে পছন্দ করে।”

আলফি কপাল কুঁচকে ইয়ানের দিকে তাকায়।বলে,
-“এত সব আপনার না বুঝলেও চলবে। আর আমি আমার কথায় অটুট আছি। শাস্তি ভ্যাম্পায়ার দের পেতেই হবে। সে এলেনই বা হোক না কেন।”

-“জী,শাহাজাদী আপনি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আসুন।”

-“হুম।”

ইয়ান চলে যাওয়ার পর আলফি গেট লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এক দৃষ্টিতে নিজের প্রতি ছবি দেখতে থাকে। আনমনে ঠোঁটে হাত চলে আসে আলফির। সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয়। নিজের কথায় অটুট থাকতে চায় আলফি। ভালোবাসা জীবনে জড়াতে চায় না। দূরে রাখতে চায়। অনেক দায়িত্ব আছে।
.
রাতে……

স্যাম তাঁর কক্ষে ছিল। হঠাৎ তাঁর রক্ত খাওয়ার নেশা জাগে। ফ্রিজ খুলে দেখে রক্তের ব্যাগ নেই। ব্লাড খেতে হলে এখন বাহিরে বের হতে হবে। স্যাম দেরি করে না। চলে আসে ক্লাবের সামনে। যে কোনো একটি মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে জঙ্গলে নিয়ে যেতে হবে। ক্লাবের ভেতরে এসে মানুষের রক্তের গন্ধ পেয়ে রূপ পাল্টে যাচ্ছে স্যামের। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি মেয়ের কাছে আসে। তাঁকে কোনোভাবে পটিয়ে অধিক মদ্যপান করিয়ে বাহিরে নিয়ে আসে। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না। হাওয়ার বেগে জঙ্গলে নিয়ে আসে। চুলের মুঠি ধরে ঘাড়ে কামড় বসাতে যাবে তখনি আলফি বুকে জোরে লাথি মারে। স্যাম অনেকটা দূরে গিয়ে ছিটকে গাছের সাথে বারি খায়। আলফি ততক্ষণে মেয়েটিকে স্পেশাল পাওয়ার দিয়ে আড়াল করে ফেলে। আলফি ওর নিজের রূপ পরিবর্তন করে স্যামের কাছে এসে কলার ধরে উপরে জাগিয়ে ফেলে। স্যাম আলফির দিকে তাকিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। একি দেখছে? একি তাহলে শাহাজাদী কায়রা? কথাটা ভাবতে ভাবতে আলফি ততক্ষণে ছুঁড়ে দূরে ফেলে দেয়। হাওয়ার বেগে স্যামের কাছে এসে ঘুষি মারতে শুরু করে।
কলার ধরে আবারও দূরে ফেলে দেয়। এবার আলফি হাত নিচের দিকে নামিয়ে জ্বীনি তলোয়ার নিয়ে আসে। সামনের দিকে তাক করে। স্যামের দিকে ছুটে যেতে লাগল। স্যাম এমন দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে দু হাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেলে।

তলোয়ার স্যামের বুকে গেথে দিতে যাবে তখনি এলেন এসে শক্তির মাধ্যমে তলোয়ার আঁটকে ধরে। আলফি বার বার চেষ্টা করছে তলোয়ার আগে বাড়াতে। কিন্তু পারছে না। ডানে তাকিয়ে দেখে এলেন হিংস্র নজরে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আলফি তোয়াক্কা করে না। তলোয়ার শক্ত করে ধরে অন্য পাশে সরিয়ে নেয়। ফের আঘাত আনতে যাবে আবারও আটকে ফেলে এলেন। আলফি রাগে তলোয়ার সরিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। সেই চিৎকারের গতিতে এলেন দূরে ছিটকে পড়ে। এরি মাঝে আলফি গায়েব হয়ে যায়। এলেন হাওয়ার বেগে এসে দেখে মেয়েটি উধাও। চার দিক বাতাসের বেগে দৌঁড়ে খুঁজতে থাকে। কোথাও খুঁজে পায় না শাহজাদী কে। এলেন দৌঁড়ে এসে স্যামের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করে,
-“কেন শাহজাদী তোকে মারতে চেয়েছিল? কী করেছিস তুই?”

স্যাম চুপ করে থাকে। এলেন চিল্লিয়ে বলে,
-“বল……!”

স্যাম ভয় পেয়ে কাঁপা কন্ঠে বলে,
-“আমি একটি মেয়েকে জঙ্গলে নিয়ে এসে রক্ত……। ”

বাকিটা বলার আগেই এলেন বুঝে য়ায়। রাগের বশে ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করে। এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে স্যামকে।তারপর আহত অবস্থায় স্যামকে ফেলে চলে যায়। স্যাম রক্তাক্ত অবস্থায় জঙ্গলে পড়ে থাকে। এলেন চলে আসে আলফির বাড়িতে। এলেনের সন্দেহ হচ্ছে আলফির উপর। আলফিও হতে পারে শাহজাদী। জানালার কাছে এসে দেখে আলফি ঘুমিয়ে আছে। এলেন এটা দেখে রাগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। সন্দেহটা কমে যায়। চলে যায় সেখান থেকে। এলেন চলে যাওয়ার পর আলফি চোখ মেলে তাকায়। জঙ্গলে এলেনকে দেখার পর আলফি মেয়েটিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসে রুমে এসে বিছনায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। সরু নিশ্বাস ফেলে ঘুমিয়ে যায়। ইয়ান সবটা দূর থেকে দেখেছে। কিন্তু কিছু করেনি।
.
.
.
.
.
Continue To……

Khatarnak Isq Part-05

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_05.
_______________________
সকালে যে যার ব্যাগ গুছিয়ে বাসায় ফিরে আসে। বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা বেজে যায়। সবাই এই সামার ভ্যাকেশন টা খুব সুন্দর ভাবে কাটিয়েছে। কারো কোনো শিকায়েত নেই। আলফি ফ্রেশ হয়ে টিভি অন করে বসে পড়ে নিউজ দেখতে। আলফি দেখতে চায় আজ কোনো মানুষের লাশ পাওয়া গিয়েছে নাকি। কিন্তু নিউজে এসব কিছু বলে না। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিউজটি দেখে। অন্য চ্যালেন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে, কিন্তু এমন কোমো নিউজ আলফির নজরে পড়ে যায়। আলফি টিভি বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে একদিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হলো কি করে? এর মধ্যে অন্যকোনো কারণ লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেটা কি হতে পারে? কথা গুলো নিজের মনের মধ্যে আঁকে। হঠাৎ করে সব স্বাভাবিক হওয়ার কারণে আলফির মনে ঘটকা লাগছে।

আলফি এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে বিছানায় বসে। আচমকা নিচ থেকে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেল। আলফি জানে ওর মামা বাসায় নেই। তাহলে নিচে কিসের শব্দ হলো তা দেখানর জন্য আলফি নিচে চলে এলো। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আলফি ড্রাইনিং টেবিলের উপর নজর পড়ে।সেখান থেকে একটি কাঁচের গ্লাস ফ্লোরে পড়ে ভেঙে টুকরো হয়ে আছে। তার পাশেই একটি বিড়াল চুপটি করে বসে আলফির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। বিড়ালটি যে গ্লাসটি ভেঙেছে সেটা আলফি বুঝতে পারে। এই বিড়ালটিকে দেখে আলফির সেদিনের জঙ্গলের বিড়ালের কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু সেই বিড়ালটি ছিল পুরো সাদা হলেও লেজের কিছু অংশ কালো ছিল। আর এখন দেখা বিড়ালটি ছিল পুরো সাদা। বলতে গেলে দুধের মতো। আলফি বিড়ালটিকে দেখে কিছু একটা সন্দেহ করে।
গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“কে তুমি? আসল রূরে ফিরে আসো?”

আলফির কথা বিড়ালটি শুনেই নিজ রূপ ধারণ করতে শুরু করে। চোখের পলকের মধ্যে বিড়াল থেকে মানুষে পরিনত হয়। সাদা শট পাঞ্জাবি ও কাবলি পায়জামা পড়া একটি সুদর্শন ছেলে আলফির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটির চেহারা দিয়ে নূরের আলো বের হচ্ছে। আলফি দেখে অবাক হয় কিছুটা। কারণ এত সুন্দর যুবক আলফির নজরে আগে কখনো পড়েনি। ছেলেটি হালকা ঝুঁকে মিষ্টি কন্ঠে বলে,
-“আমি আফরান বিন ইয়ান। ইমতিয়াজ আমার আব্বাজান। আমি তাঁর পুত্র।”

-“আপনি এখানে কেন?”

-“আমি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। আব্বাজান বলেছে এখন থেকে আমি এখানে থাকব।”

-“কেন?”

-“শাহজাদী,আপনি যদি না চান আমি এখানে থাকি। তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। আসলে আব্বাজান আপনার সাথে থেকে,আপনার দেখাশুনা করতে বলেছে। যেহেতু আপনি আমাদের শাহজাদী।”

আলফি কিছু বলতে গিয়েও বলল না।কথা ঘুরিয়ে বলে,
-“আপনি থাকতে পারেন এখানে। আমার কোনো সমস্যা নেই।”

-“শুকরিয়া শাহজাদী কায়রা। আপনি আমাকে ইয়ান বলে ডাকতে পারেন।”

-“হুম।”

-“আপনি নিশ্চয় আমার বড়।”

-“জী,শাহাজাদী। ”

-“তাহলে নাম ধরে ডাকা যাবে না। কারণ বড়দের নাম ধরে ডাকা যায়েজ নেই।”

-“আপনি শাহজাদী। আমি আপনাকে আমার নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিলাম। দয়া করে আপনি না করবেন না।”

আলফি কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
-“ঠিক আছে।”

-“শুকরিয়া শাহাজাদী।”

-“আচ্ছা আপনি এখন বিশ্রাম নিন কামরায় গিয়ে।”

-“জী।” ইয়ান চলে যায় নিচের একটি কক্ষে।
আলফি চলে আসে ওর রুমে।
রুমে এসে ফোন হাতে নিতেই এনার ছয়টি মিসড কল দেখতে পায়। আলফি দ্রুর এনাকে কল দেয়।
এনা তড়িঘড়ি করে বলে,
-“কোথায় ছিলি আলফি। কতবার কল দিলাম।”

-“নিচে ছিলাম। শুনতে পাইনি। কি হয়েছে বল?”

-“আরে আমি একদম ভুলে গিয়েছি আজ আমার মম,ড্যাড এর Wedding anniversary. সকালে বাসায় এসে মমের কাছে জানতে পারি। এখন তারা কোনো আয়োজন করবে না বলেছে। কিন্তু আমি তাঁদের এক মাত্র সন্তান হয়ে যদি চুপ থাকি কেমন দেখায় বিষয় টা। তাই আলরেডি সব কিছুর আয়োজন শুরু করে দিয়েছি। কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনদের ইনভাইট করেছি। এখন তুই সন্ধ্যার পর তাড়াতাড়ি চলে আছিস। না করিস না প্লিজ।”

-“আচ্ছা আসবো। ওদের বলেছিস?”

-“হ্যাঁ। বলে দিয়েছি।”

-“রাখ তাহলে।”

-“রাখি,তুই আসবি কিন্তু।”

-“আসবো আসবো।”

কথাটা শুনে এনা ফোন কেঁটে দিল। আলফি ফোন বিছানার উপর রেখে ভাবতে থাকে কোন ড্রেস পড়ে যাবে। আর কী গিফট দিবে তাঁদের। আলফি গিফটের ব্যাপার মামার উপর ছেড়ে দেয়। তাকে ফোন দিয়ে গিফটের কথা বলে।
__________________________
ভ্যাম্পায়ার কিংডম……

টেনিস বল নিয়ে খেলছে এলেন। বার বার দেয়ালের পিঠে মারছে,আর ক্যাচ ধরছে। এরোন ফোন হাতে নিয়ে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে। ফোন কেটে বলে,
-“এলেন!”

-“বল।” কিছুটা তীক্ষ্ণ স্বরে উত্তর দেয় এলেন।

-“কি ব্যাপার,রেগে আছিস মনে হচ্ছে? ও,বুঝেছি কাল রাত থেকে তাজা ব্লাড খেতে পারিসনি তাই।”

এলেন চুপ। যার উত্তর এরোন পেয়ে যায়।
-” দোস্ত রেগে থাকিস না। আজ তোকে আমি নিজে তাজা ব্লাড খাওয়াবো।”

এলেন তারপরও কোনো কথা বলে না।

-“কী হয়েছে বলবি তো?”

-“নাথিং…।” বলেই বল ফেলে রুম ত্যাগ করে এলেন।

-“হলো কী বুঝলাম না।” বিড়বিড় করে বলে এরোন।
.
.
সন্ধ্যার সময়…

আলফি একাই আসে পার্টিতে। ইয়ানকে নিয়ে আসে না। আজ আলফি সিল্কের শাড়ী পড়েছে। তাঁর সাথে হালকা সাজ হেব্বি মানিয়ে ওঁকে। ভেতরে এসে গিফটের প্যাকেট এনার মম,ড্যাডের হাতে দিয়ে, তাঁদের উইস করে লিনাদের কাছে চলে আসে। ওদের কাছে এসে আলফি কিছুটা অবাক হয়। কারণ এনা,লিনা,ম্যারিও শাড়ী পড়েছে। খুশি হয়ে যায় চারজন। কথা বলতে থাকে একে অপরের সাথে। কিছুক্ষণ পরে সেখানে উপস্থিত হয় এলেন ও এরোন। তাঁদের কেও ইনভাইট করেছিল এনা।

আলফির চোখ পড়ে এলেনের দিকে। এলেনের নজরও আলফির উপর পড়ে। আলফি এলেনের দিকে ক্ষোভ নিয়ে তাকালেও। এলেনের চোখে কোনো রাগ,ক্ষোভ ছিল না। বরং আলফিকে দেখে মনে মনে বেশ খুশি হয়। এনা ওদের দুজনকে এক স্থানে বসতে দেয়। সামনে হালকা নাস্তা দেয় খাওয়ার জন্য। এলেন শুধু ড্রিঙ্কের গ্লাস হাতে নিয়ে পান করছে আর আলফির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।

-“ওয়াও,এলেনকে আজ কত সুন্দর লাগছে। আমি তো পাগল হয়ে যাব।” খুশি মুডে বুকে হাত রেখে বলে ম্যারি।

জন পিঞ্চ মেরে বলে,
-“যাক,এখন এলেনের চেহারা ঠিক আছে চুল গুলো কালো করার কারনে। আগে তো লাল বানর,সাদা বানর দেখাতো।”

ম্যারি জনের বুকে গুঁতো দিয়ে বলে,
-“চুপ,এলেন যেই স্টাইল করুন না কেন। ওঁকে ভালো লাগে আমার কাছে। মুখ সামলে কথা বল।”

-“লেগেছে বুকে। ”

-“উঁফ! অন্য লোকের জন্য আমাদের মাঝে ঝগড়া হচ্ছে কিন্তু। চুপ কর।” আলফি রাগ নিয়ে বলে ওদের।

-“ওকে,চুপ।”

এনার কিছুক্ষণ পর ডাকদিয়ে সবাইকে নিয়ে যায়।কারণ এখন কেক কাঁটবে। ভালো ভাবে কেক কাঁটা হলো। সবাই প্রিজ,চামিচ হাতে কেক খেতে ব্যস্ত। এনা বক্সে গান অন করে দেয়। ফুল মিউজিক শুনে জন,জি-তাও আরো অনেকেই ডান্স করছে। এনা,ম্যারি,লিনাও ওদের সাথে ডান্স করছে। আলফি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। এলেন সবাইকে উপেক্ষা করে শুধু আলফির দিকে তাকিয়ে আছে। এই বিষটা সবার চোখে এড়িয়ে গেলেও আলফির চোখে এড়ায়নি। ভীষণ রাগ হচ্ছে আলফির। এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণে বিব্রতবোধ করছে।
আর এদিকে এরোন রাগে নাক ফুলিয়ে লিনা ও জি-তাও এর দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ লিনা জি-তাও এর সাথে ডান্স করছে। যেটা দেখে এরোন ঠিক থাকতে পারছে না।

-“কোরিয়ানের বাচ্চা। দোস্ত আমাকে ধরে রাখ। আর নয়তো কোরিয়ানের বাচ্চাকে চুষে শেষ করে দিব।” মনে মনে এলেনের উদ্দেশ্যে কথাটা বলে।

এলেন এরোনের লাস্টের কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। এরোন দ্রুত বলে,
-“রক্ত চুষে,রক্ত চুষে খাব বলেছি।”

এলেন ওপর নিয়ে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। সামনে তাকাতেই অজানা রাগ এসে এলেনের মনে বাসা বেঁধেছে। কারণ,আলফি জনের সাথে কাপল ডান্স করছে। বার বার জন আলফির গায়ে টার্চ করছে। এলেন কিছুক্ষণ বসে থেকে এসব দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। ওঠে দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে আলফির হাত টেনে জনের থেকে দূরে নিয়ে এসে হাত ছেড়ে চলে যায় পার্টি থেকে। এমন অবাক করা কাণ্ডে আলফি,জন ‘থ’ হয়ে যায়৷ একটু আগে যা হলো সব মাথার ওপর দিয়ে গেল ওদের। আলফির এখন বেশ রাগ হচ্ছে। এমন করার কোনো মানেই হয় না। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি। যে যার মতো ডান্স করছে তাই। আগের বার ইচ্ছাকৃত ভাবে টার্চ করেছে। কিছু বলেনি। এবার টার্চ করলে প্রত্যেক টা টার্চের মুল্য দিতে হবে। মনে মনে ঠিক করে আলফি। আলফিও পার্টি ছেড়ে বাহিরে চলে আসে। এসে রাগী ভাব নিয়ে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে এলেনকে খুঁজতে শুরু করে। কোথাও নেই এলেন। দু কদম সামনে যেতেই এলেন বাতাসের বেগে আলফিকে বাড়ির পিছনের দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আলফি চমকে গিয়েও নিজেকে সামলে নিতে সক্ষম হয়। এলেনের দিকে কপাল কুঁচকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। আর এলেন হিংস্র নজরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে এতটা রাগ আলফির উপরে কেন হচ্ছে আদৌও কি তার কারণ এলেনের জানা আছে। নাকি অজানা?

আলফি আর টলারেট করতে পারে না। জোরে ধাক্কা মেরে এলেনকে পিছনে সরিয়ে দেয়। এলেন দু তিন কদম দূরে সরে গিয়ে আলফির দিকে অবাক চোখে তাকায়। আজ পর্যন্ত এলেনের শক্তির কাছে সবাই হার মানতে বাধ্য। আর সেখানে কি না একটি মেয়ে এলেনকে ধাক্কা মেরে দু তিন কদম দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ভাবতেই এলেনের অবাক লাগছে।
এলেনের রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে যায় আলফির ধাক্কার কারণে। কপাল কুঁচকে আলফির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-“তুমি কে?”

-“ইনসান!”

-“নাহ! তুমি কোনো মানুষ নও।”

-“সেটা মানা,না মানা আপনার ব্যাপার। আমার নয়।”
বলেই চলে যেতে নিলে ফের বলে,
-“ভালো হবে যদি আপনি আমার কাছ থেকে দূরে থাকেন।”

চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই এলেন আলফির হাত ধরে ফেলে পেছন থেকে। হাত ঘুরিয়ে এনে আলফিকে এলেনের বুকে এনে ফেলে। আলফি এবার বেশ অবাক হয়। এলেন এক দৃষ্টিতে আলফির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।এলেনের নীল চোখের মনির দিকে যে একবার তাকায়,সে আর চোখ ফিরাতে পারে না। আলফিও একি কাজ করল। এলেনের চোখের দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। কিন্তু চোখের মায়ায় পড়তে চায় না আলফি। এবারও ধাক্কা দিয়ে এলেনকে দূরে সরিয়ে দেয়।

রাগে আলফি আঙুল তুলে বলে,
-“লজ্জা হওয়া উচিত আপনার। আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছি। কথাটা কি কান অব্ধি পৌঁছায় নি আপনার?”

-“নো! আর পৌঁছাবেও না। নজর পড়ে গেছে কারো উপর।” কথাটা বলতে বলতে এলেন মুচকি হেসে আলফির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়।

আলফি এলেনের কথার মানে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। আরো চোখ টিপ মেরে কথাটা ভালো করে বুঝিয়ে গেছে। রাগে হাত মুঠো বদ্ধ করে নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। ফিরে আসে বাসায়। গেটের ভেতরে প্রবেশ করতেই ইয়ানের মুখোমুখি হয়। ইয়ান নরম কন্ঠে বলে,
-“শাহজাদী রেগে আছেন কেন? কিছু হয়েছে কি?”

-“নাহ!” বলতে বলতে চলে আসে কক্ষে।

ইয়ান কিছু বুঝতে পারে না। তাই বিষটা নিয়ে ঘাটায় না।
.
.
.
.
.
.
Continue To………

Khatarnak Isq Part-04

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_04.
_______________________
রাতের আঁধার নেমে পুরো জঙ্গল অন্ধকারে পরিনত হয়েছে। আকাশে অর্ধেক চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে চারদিক। শাঁ শাঁ করে বাতাস বইছে। সেই বাতাসের বেগ দেখে মনে হচ্ছে ঝড় শুরু হবে। এগারোটার দিকে আলফি,জন,ম্যারি,লিনা,এনা,জি-তাও ওরা সবাই ঘুমাতে চলে চায়। সারাদিন ঘুরাফেরা ও খাটাখাটুনি করার ফলে শরীর ক্লান্ত ছিল। যার কারণে বিছানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যায়। সবাই ঠিকিই ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু আলফি জেগে ছিল।একটি টর্চ লাইট হাতে নিয়ে টেন্টের ভেতর থেকে বের হয়ে এলো। জন দের টেন্টের দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে হাঁটা শুরু করল। বিদঘুটে অন্ধকার। চাঁদের আলোয় ও টর্চের আলোয় যে টুকু দেখা যাচ্ছিল তাতেই আলফি সুন্দর ভাবে নির ধিদায় পথ পাড়ি দিচ্ছিল। আলফির মনে ছিল না ভয়ের ছিড়ে ফোঁটা। কারণ আলফি জানত সে মানুষ না। আস্তে আস্তে হেঁটে আলফি চলে আসে ছোট একটি পাহাড়ের কাছে। পিছনে ছিল তার চেয়ে আরো বড় পাহাড়। এই পাহাড় দুটি আলফি বন্ধুদের সাথে জঙ্গল ঘুরে দেখার সময় দেখেছে। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে এই পাহাড় দুটি আলফি বাদে ওর বন্ধুরা কেউ দেখেনি।এতে আলফির অবাক লাগলেও তেমন একটা গুরত্ব দেয় না। কারণ আলফি জানে দুনিয়াতে যেমন ভালো মানুষ আছে তেমন খাবার মানুষ আছে। তেমনি কিছু অদ্ভুত প্রাণী,অদ্ভুত বস্তুও আছে লুকিয়ে আছে। কেউ দেখতে পায় তো কারো কাছে অজানা। আলফি প্রথম যখন ওর বন্ধুদের পাহাড়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিল তখন ওরা দেখতে পাচ্ছে না বলেছে। এটা বলার সাথে সাথে আলফি আর কথা বাড়ায় না অনেক দূরে এসেগেছে বিধায় টেন্টে চলে আসে।

আলফি এখন ছোট পাহাড়টির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, পিছনের পাহাড়টির কাছে আসে। পাহাড়টির দিকে তাকাতেই আলফি চমকে যায়। দু পা পিছিয়ে যায়। কারণ স্বপ্ন দেখা অদ্ভুত পাহাড়টির সন্ধান আজ খুঁজে পেল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পাহাড়ের ভেতরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু আলফি জানে পাহাড়ের প্রথম কদম কি হবে। তাই ভেতরে যাওয়ার সাহস করলেও ধমিয়ে যায়। কিন্তু ভেতরে তো যেতেই হবে। আর না হলে রহস্যের উদঘাটন হবে কি করে? টর্চ হাতে দু তিন কদম সামনে এলো। আল্লাহর নাম নিয়ে ডান পা রাখতেই পাহাড়টি কাঁপতে লাগলো। আলফি এবার ভয় পায় না। সামনে কি হবে সেটা ওর জানা আছে। পাহাড় কাঁপা অবস্থায় দৌঁড়ে ভেতরে চলে আসে। আর পেছন থেকে মাটি ভেঙে ভেঙে সরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আলফি যতোটুকু পেরেছে দৌঁড়ে একদম ভেতরে চলে আসে। হঠাৎ থেমে যায় একটি সবুজ আলোর রশ্মি দেখে। এদিকে পেছনে তাকিয়ে দেখে পাহাড়টি ভেঙে যাচ্ছে, জোরে কাঁপছে। আলফি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। দাঁড়িয়ে থাকলে ভেঙে পাহাড়ের নিচে তলিয়ে যাবে।

দিকদিশা না পেয়ে সবুজ আলোর রশ্মির উপর হাত রাখল। এবার আরো জোরে জোরে পাহাড়টি কাঁপতে লাগলো। আলফি ভয় পেয়ে যায়। ভাবছে কেন হাত দিল সবুজ রশ্মির উপর। দু হাত দিয়ে কান চেপে মাটিতে বসে পড়ল। মনের মধ্যে ভয়।আজ মৃত্যু নিশ্চিত!

অন্যপ্রান্তে পাহাড়ে পা রাখতেই একটি লোকের কাছে তার আলামত চলে যায়। তাঁর ঠোঁটে জয়ের হাসি ফুটে ওঠে। দেরি না করে তার পিছনের পাখা দ্বারা উড়ে আসতে থাকে পাহাড়ের কাছে।

কিছুক্ষণ পর সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। পাহাড়ের কাঁপনি থেমে যায়। পায়ের নিচে মাটি ঠিকঠাক ছিল।আলফি আস্তে করে চোখ তুলে তাকায়। টর্চ লাইট টা খুঁজতে শুরু করে। ওর থেকে কিছুটা দূরে টর্চ লাইট খুঁজে পায়। হাতে নিয়ে সামনের দিকে তাক করে। সেখানে পাহাড়ের সবুজ রশ্মিটা বন্ধ হয়ে গেছে। যেটা কিছুক্ষণ আগে জ্বলছিল। আলফি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। ওখানে একটি হাতের পাঞ্জা আর্ট করা ছিল। আলফি ওর হাতের পাঞ্জা ও সেই আঁকা পাঞ্জার দিকে তাকাল। সেম,সেম মনে হচ্ছে। আলফি ওর হাত সেই আর্ট করা পাঞ্জার উপর রাখতে চায়। সময় নষ্ট করে না। আজ সব রহস্যের উদঘাটন করবেই। তাতে যদি প্রান যায় যাক! ভয়কে জয় করে হাত রাখল সেখানে। চট করে আলফি ছিঁটকে পাশের পাহাড়ের সাথে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। আলফি ব্যাথা পায় বুকে। জড়োসড়ো হয়ে কাত হয়ে যায়। এদিকে পাথরের ভেতর থেকে একটি মাজারি আঁকারের তলোয়ার বেরিয়ে এলো। তলোয়ারের আলোয় পাহাড়টি চারদিক আলোকিত হয়ে যায়। আলফি ওঠে বসে হাত চেহারার উপর দিয়ে রাখে। এত আলোতে তাকানো যাচ্ছে না। আস্তেধীরে হাত সরিয়ে তলোয়ারটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায়। সাদা চকচকে তলোয়ার। মাথায় রুপর ডিজাইন আর্ট করা।আলফি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ওঠে দাঁড়িয়ে ধীরে পায়ে তলোয়ারটার কাছে এগিয়ে আসে। ঘোরের মাঝে আছে আলফি। একি ভাবে তাকিয়ে তলোয়ারটি স্পর্শ করতে গিয়ে আবার ছিঁটকে পাহাড়ের পাশে পিঠে বারি খায়। মাটিতে পড়ে যায়। এবারও ব্যাথা পায় বুকে। বুকে হাত রেখে আস্তে ওঠে বসে। ওঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করে। পাহাড় ধরে ওঠে দাঁড়িয়ে ফের তলোয়ারটির কাছে আসে। তলোয়ারের পাশে একটি ছোট্ট আরবি অক্ষরের চারটি লেখা ভেসে ওঠছে বার বার। ভালো করে তাকিয়ে অক্ষরটি পড়ার চেষ্টা করছে। আলফি কলেজে পড়ালেখা করলেও ছোট্টোবেলার ওর মামা জিনান ওঁকে আরবি পড়িয়েছে। যার দরুণ আলফি আরবি হরফ পড়তে পারে। দ্বিতীয় বার লেখাটি ভেসে ওঠতেই আলফি পড়ে ফেলে। সেখানে লেখা ছিল ‘রক্ত’। আলফি বুঝতে চেষ্টা করে রক্তটা কিসের জন্য লেখা হয়েছে।

মিলাতে থাকে। তখনি মাথা নাড়া দিয়ে ওঠে। তলোয়ার স্পর্শ করার পর ছিঁটকে দূরে পড়ে গিয়েছিল। যার মানে এটা দ্বারায় তলোয়ার স্পর্শ করতে হলে রক্তের প্রয়োজন। আলফি মিলাতে সক্ষম হয়। আশেপাশে ছোট্ট ধারালো পাথরের টুকরো খুঁজতে শুরু করে। আর পেয়েও যায়। ডান হাতের তালুর উপর পাথরের টুকরো দিয়ে টান দিতেই কেঁটে যায়। আলফি চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। তারপর তাকিয়ে দেখে রক্ত বের হচ্ছে। রক্তমাখা হাত দিয়ে তলোয়ারটির মেইন পার্ট জোরে চেপে ধরে। এবার আর ছিটকে পড়েনি বরং তলোয়ারটির ভেতর থেকে সাদা রঙের ধোঁয়া বের হয়ে আলফির শরীরের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে। আলফির শরীর ধোঁয়ার কারণে জ্বলষে যাচ্ছে। উপরের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। আলফির পিঠের মেরুদণ্ড থেকে দুটি সাদা রঙের পাখা মতো পালক বের হতে শুরু করে। আস্তে আস্তে বের হতে হতে দুটি বিশাল বড় সাদা পাখা বেরিয়ে আসে। আলফির চিৎকারে পাহাড়টির মাঝখান ভরাবর ফাটল ধরে যায়। আলফি পাহাড় চিঁড়ে আকাশে উড়ে যায়। উপরে ওঠতে থাকে,আরো উপরে উড়তে থাকে। ডান হাতে ছিল তলোয়ার। আলফি হুঁশ ফিরে আসে। নিজের দিকে তাকিয়ে পিঠে পাখা দেখে অবাক হয়। হাতের তলোয়ারটি অন্য হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখতে থাকে। নিচে তাকিয়ে দেখে জমিন থেকে অনেকটা উপড়ে উড়ে আছে পিছনের পাখার দ্বারা। আলফির এখন আর ভয় করছে না। আলফি বুঝে যায় সে কে?’পরী’। নিজের বিষয় আজ সত্যিটা জানতে পেরে আলফি বেশ খুশি। তলোয়ার হাতে নিয়ে এদিক,সেদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। খুব ভালো লাগছে আলফির।

কিন্তু বেশিক্ষণ উড়তে পারেনি। চলে আসে সেই পাহাড়ের কাছে। জমিনে পা রাখতেই আলফির পাখা দুটি ঘায়েব হয়ে যায়।

-“শাহজাদী!”

কারো নরম কন্ঠের স্বর শুনে আলফি পিছনে ফিরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে একজন অর্ধবয়স্ক লোক ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে মুক্তর মতো পানি চিকচিক করছে। হাঁটু গেড়ে বসে মাথা নিচু করে রাখে। আলফি বেশ অবাক হয় তাঁর এমন কাণ্ডে। এবংকি আশেপাশে তার মতো আরো অনেকেই এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে মাথা নিচু করে। আলফি বুঝতে পারছে না এরা কারা? আলফির মতো ডানাকাটা পরী রাও এসে ঝুঁকে পড়ে। আলফি আর চুপ থাকতে পারে না। তাদের উদ্দেশ্যে জোরে জোরে বলে,
-“আপনারা কেন এভাবে ঝুঁকে আছেন? আর কে শাহজাদী?”

কেউ কোনো উত্তর দেয় না। একি ভাবে ঝুঁকে বসে রয়।আলফি কিছুটা ধমকের স্বরে বলে,
-“আপনারা ওঠে দাঁড়ান।”

এই কথাটা শুনে সবাই ওঠে দাঁড়ায়। প্রথম আসা ব্যাক্তিটি একটু সামনে এসে বলে,
-” আপনি আমাদের জ্বীন রাজ্যের শাহজাদী। আমরা আপনার গোলাম। ”

-“আমি শাহজাদী? আপনি আর ওরা কারা?” সবার উদ্দেশ্যে বলে।

-“আমি ইমতিয়াজ। জ্বীন রাজ্যের সদস্য।আর আপনি শাহজাদী,ইফ্রিত জ্বীনের বংশধর। শুধু আপনি একা নয় আমরাও ইফ্রিত জ্বীন।”

-“আমার বাবা,মা কী ইফ্রিত জ্বীন ছিল?”

-“জ্বী!”

-“আমি শাহজাদী কি করে হলাম?”

-“আপনার বাবা ছিল জ্বীন রাজ্যের বাদশা। আপনি তাঁর কন্যা। এখন আপনি আমাদের শাহজাদী। জ্বীন রাজ্যের ভার এখন আপনার হাতে।”

-“আমার?”

-“হ্যাঁ।আপনার হাতে। আপনার জন্য এতটা বছর অপেক্ষা করেছি। জ্বীন রাজ্যের সিংহাসন পুরো খালি ছিল। এখন আপনি রাজ্যের ভার নিয়ে আমাদের ন্যায় দিন।”

-“ন্যায়?”

-“জি,আপনি আসুন আমাদের সাথে।” কথাটা বলতে বলতে হাওয়ার বেগে একটি সুরঙ্গ তৈরি করল ইমতিয়াজ। আলফির হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। ভেতরে যাওয়ার পর সবাই আলফিকে দেখে ঝুঁকে সালাম দেয়। আলফি সবার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখতে পাচ্ছে। ইমতিয়াজ নামের জ্বীনটি আলফিকে নিয়ে এসে একটি সিংহাসনের সামনে দাঁড় করায়।

ইমতিয়াজ নরম ভঙ্গিতে আলফিকে বলে,
-“আপনি আসোন গ্রহণ করুন শাহজাদী।”

আলফি তার কথা মতো বসে পড়ে সিংহাসনে। একটি মেয়ে কাশার থালার ভেতর হিরের মুকুট নিয়ে আসে। ইমতিয়াজ থালা থেকে মুকুটটি নিয়ে আলফির মাথায় পড়িয়ে দেয়। জ্বলজ্বল করা মুকুট আলফির মাথায় অনেক সুন্দর লাগছে। শাহজাদীর মতো লাগছে আলফিকে। ইমতিয়াজ জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“নতুন শাহজাদী কায়রাকে সবাই স্বাগতম জানাও। ”
সবাই মাথা হালকা ঝুঁকে স্বাগতম জানায়। আলফির মনে খটকা লাগে। ইমতিয়াজকে প্রশ্ন করে,
-“কায়রা কে?”

-“আপনি? এটাই আপনার আসল নাম। কায়রা মেহজাবিন।”

আলফির কাছে সবটা খোলাসা হলো।তখন ওর মামা জিনানের কথা মনে পড়ে,
-“আমার মামা জিনান কি মানুষ?”

-“না,সেও জ্বীন।”

-“তিনি….।”

-“আমি এখানে কায়রা।” জোরে চিল্লিয়ে বলে জিনান।

-“মামা।”

জিনান কায়রার কাছে এসে চোখের পানি মুছে বলে,
-“এই দিনটি দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আজ পূরন হলো। এই রাজ্যের শাহজাদী তুই।”

-“সেটা ঠিক আছে মামা। তবে আমি জানতে চায় কী চলছে দুনিয়াতে। আমার বাবা,মা কি গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে নাকি তাঁদের কে কেউ মেরে ফেলেছে?”

ইমতিয়াজ বলে,
-“আমি সব বলছি। আপনি আপনার কক্ষে আসুন।”

কায়রাকে ওর মামা জিনান ও ইমতিয়াজ ওর নিজ কক্ষে নিয়ে আসে। সেখানের বিছানায় পাশে ছোট্ট সিংহাসনে কায়রাকে বসতে বলে।কায়রা সেখানে বসলে ইমতিয়াজ সব কিছু সংক্ষেপে খুলে বলে ।
কায়রার বাবা,মা গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়নি। তাঁদের কে ভ্যাম্পায়ার কিংডমের রাজা এবিল ও তাঁর লোকরা মেরেছে। এবংকি জ্বীন রাজ্য দখল করতে চেয়েছিল। জ্বীনি তলোয়ার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। যেই তলোয়ারের মালিক এখন কায়রা নিজে। কায়রা সবটা বুঝতে পারে। ভ্যাম্পায়ারদের উপর রাগ-ক্ষোভ জাগে কায়রার মনে। বাকি কথা না বলতে দিয়ে কায়রা থামিয়ে দেয়। আসোন ছেড়ে ওঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“বুঝেছি,আর বলতে হবে না। এতদিন পুলিশ কর্মকর্তারা মেয়ে-ছেলে, কিশোর-কিশোরিদের রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে লাশ উদ্ধার করেছিল।সেগুলো ভ্যাম্পায়ার দের হাতে শিকার হয়ে মারা যাওয়ার নিরীহ মানুষ গুলো।”

-“হ্যাঁ, শাহজাদী। প্রতি রাতে মেয়েদেরকে ওরা তাঁর শিকার বানায়। আমার হাত দিয়ে কত নিষ্পাপ জীবনকে মাটি চাপা দিয়েছি তার হিসাব নেই।” ইমতিয়াজ করুন স্বরে বলে কথাটা।

-“আর না। এখন ভ্যাম্পায়ার দের মৃত্যুর দিন এসে গেছে। আমি নিজে ওদের শাস্তি দেবো।” কায়রা রাগী কন্ঠে কথাটা বলে।

-“তুই পারবি কায়রা। কারণ জ্বীন রাজ্যের সব জ্বীন,পরীর থেকে তুই বেশি শক্তিশালী। তুই পারবি আমাদের জ্বীন রাজ্যকে রক্ষা করতে।” জিনান কায়রার মাথায় হাত রেখে বলে।

-“আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো। এই জ্বীন রাজ্যের জ্বীন জাতি ও মানুষদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখবো।আমার উপর ভরসা রাখতে পারো মামা।”

-“ফজরের আজান পড়েছে। সকাল হতে চলল। কায়রা তুই ফিরে যা টেন্টে।”

-“হ্যাঁ মামা। আমাকে যেতে হবে।”

-“শাহাজাদী আপনি আপনার খেয়াল রাখবেন।”

-“জী শুকরিয়া। ” বলেই কায়রা কিছুক্ষণের মধ্যে উধাও হয়ে যায়।

চলে আসে টেন্টে। ভেতরে এসে ঘুমিয়ে যায়।
.
.
ভ্যাম্পায়ার কিংডম…….

এবিল গুপ্তচরের মধ্যমে জানতে পারে জ্বীন রাজ্যের শাহজাদীকে তারা ফিরে পেয়েছে। রাগে তার মাথার রগ টনটন করছে। রাজ কোষাগারে সব ভ্যাম্পায়ার দের ডেকে আনতে বলে ইয়াঙ্ককে। এবিল চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-“সবাই শোনো,এখন থেকে কেউ মানুষের রক্ত খাবে না। মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। জ্বীন রাজ্যের শাহজাদী ফিরে এসেছে। তোমাদের যদি মানুষের ক্ষতি বা রক্ত খেতে দেখে ফেলে তাহলে মৃত্যু হবে শাহজাদীর হাতে। তাই সবাই সতর্ক ভাবে থাকবে।”

এবিলের কথা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, এলেন বাদে। এলেন ফোনে গেম খেলছিল। শাহজাদী বা শাহদাজাদা আসুক না কেন,তাতে এলেনের কিছু যায় আসে না। সব ভ্যাম্পায়ার দের চেয়ে এলেন ও এবিল শক্তিশালী। তাই ওর কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এলেন কথার মাঝে ওঠে চলে যেতে নিলে এবিল ডাক দেয়,
-“তুমি কি আমার কথা শুনতে পাওনি আরলেন?”

-“শুনেছি ড্যাড,বাট তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”

-“সাবধানে থেকো তুমি।”

-“সেটা আমাকে না বলে তোমার ভ্যাম্পায়ার দের বলো।”বলেই চলে যায় এলেন। পিছু পিছু এরোনও চলে যায়।

সকালে…….
.
.
.
.
.
.
Continue To………..

Khatarnak Isq part-03

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_03.
_______________________
আজ রাতেও একি স্বপ দেখে ঘুম ভেঙে গেছে আলফির। বাকি রাত টুকু না ঘুমিয়ে কাঁটিয়ে দিয়েছে। কাল রাতের ঘটনা ও স্বপ্নের কথা ভাবতে ভাবতে আলফি আনমনা হয়ে যায়। ব্রেকফাস্ট তৈরি করার পর দুধ গরম করছিল। আনমনা হয়ে থাকার কারণে দুধ উতলে পড়ে যাচ্ছে সেটা খেয়াল করেনি। যখন খেয়াল করল তখনি তড়িঘড়ি করে চুলা অফ করে দুধের পাতিল নামাতে গিয়ে হাত চুলার ভেতরে চলে যায়। এখন অবাক করা কাণ্ড! হাতে আগুন লাগার ফলেও হাত পুড়ে যায় নি। না জ্বলসে গেছে! হাত ঠিক ঠাক ছিল। আলফি অবাক হয়ে যায়। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে জ্বলন্ত চুলার আগুনের দিকে। আলফি বুঝতে পারছে না। ওর সাথে এটা কী হচ্ছে। দুধের পাতিল চুলার উপর থেকে নিচে নামিয়ে ডান হাত ধীরে ধীরে আগুনের দিকে এগিয়ে দিল। পুরো জলন্ত আগুনের উপরে হাত রাখা। এবারও আশ্চর্যের বিষয়! হাত পুরো অক্ষত ছিল। না করছে জ্বালাপোড়া,না হাত জ্বলসে গেছে। আলফি এক ভাবে হাত চুলোর উপর ধরে রেখেছে। কেন জানি আলফির খুব ভালো লাগছে আগুন। মন চাইছে সর্ব অঙ্গ-পতঙ্গ আগুনের মধ্যে বিলিন করে দিতে। কিন্তু ওর ধারণা ছিল সব কিছু অক্ষত থাকবে। কিছুই হবে না ওর। চুলার উপর হাত রেখে আলফির নিজের কাছে ভালো লাগছে। ঠোঁটে এক চিতলে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণে হাসি মিলিয়ে যায়। চট করে হাত সরিয়ে নেয়। চোখ পিটপিট করে চুলার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে।
-“এটা কি আদৌও সম্ভব? কে আমি? কেন আমার হাত আগুনের মধ্যে দিয়েও পুঁড়ছে যাচ্ছে না। ঠিকঠাক আছে…..।”

-“আলফি..।” জিনান জোরে চিল্লিয়ে ডাকছে।

আলফি আর ভাবার সময় পায় না। চুলা বন্ধ করে দুধ গ্লাসে ঢেলে ড্রইং রুমে চলে আসে।

-“আমি এসে গেছি মামা।”

-“তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও। হাতে বেশি সময় নেই। অফিসের টাইম হয়ে যাচ্ছে।”

-“হুম!”

আলফি আনমনা হয়ে কোনোমতে নাস্তা শেষ করে। তারপর মামার সাথে খাবার খেয়ে বের হয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।
.
.
এলেন ও এরোন অনেক আগে থেকেই কলেজ এসে প্রিন্সিপালের কক্ষে এসে বসে আছে। এরোন কলেজে আসার কারণ টা জানে। তাই এলেনকে এই বিষয় নিয়ে কোনে প্রশ্ন করে না। আর এখানে এরোনেরও যথেষ্ট কারণ আছে কলেজে আসার। কাল রাতে জঙ্গলে লিনাকে দেখে ওর ভালো লাগে। বলতে গেলে এরোন লিনাকে পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু সেটা এলেনের কাছ থেকে লুকিয়েছে।

-“এরোন,বের হয়ে দেখ। আলফি মেয়েটি এসেছে কি না।”

-“দেখছি! ওয়েট,নাম জানলি কি করে?”

এলেন এরোনের দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে বলে,
-“কাল রাতে ওর বান্ধবী রা মেয়েটির নাম ধরে এত বার ডেকেছে। সেটা কী তুই শুনতে পাসনি?”

-“নাহ!”

-“মাঝে মাঝে ভাবি তুই কেন ভ্যাম্পায়ার হলি? গরু,ছাগল,ভেড়া আরো অনেক প্রাণী আছে সেগুলো তো হতে পারতি!” ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে এলেন।

-“ইনসাল্ট করছিস?”

-“এটা বুঝতে এতক্ষণ লাগলো।”

-“আরলেন!”

এলেন এরোনের দিকে রাগী ভাব নিয়ে তাকায়। পরক্ষণে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
-“থ্যাংকস,সুন্দর করে আমার নাম ধরে ডাকার জন্য। এবার তুমি আসতে পারো।”

-“কিচ্ছু বলব না। সময় হলে আমিও একটি একটি করে শোদ নিবো।”

-“একটি কেন? দুটি করে নিস।”স্বাভাবিক ভাবে চেয়ারে বসে দুলতে দুলতে বলে এলেন।

এরোন রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। বাহিরে বের হয়ে দেখে আলফি নামের মেয়েটি গাড়ি থেকে নামছে। এরোন একটু আড়ালে দাঁড়ায়। ওর বান্ধবীদের আলফির কাছে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তারপর ওরা কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে যায়। এরোন এলেনের কাছে চলে আসে।

-“আলফি এসেছে?” এলেন প্রশ্ন করে।

-“হুম,লাইব্রেরীতে গেছে বই কালেক্ট করতে।”

-“ওকে।” বলেই এলেন ওঠে দাঁড়ায়। বের হতে নিলে এরোন প্রশ্ন করে।

-“তুই কী আলফির রক্ত খেতে যাচ্ছিস?”

-“যদি পারি,তাহলে অবশ্যই খাব। আমি আবার কোনো কাজ আদুরা রাখি না।” বলেই কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়।
.
আলফি লাইব্রেরীতে একা ছিল। আর কোনো ছাত্র -ছাত্রী ছিল না। তাক থেকে একের পর এক বই বের করে দেখছে। শেষের তাকের কাছে এসে একটি বই বের করে হাতে নিতেই ওর মনে হতে লাগল ওর পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। আলফি পিছনে ঘুরতে যাবে ঠিক সেই সময় এলেন আলফিকে বইয়ের তাকের সাথে চেপে ধরে। আলফির মুখ বইয়ের তাকের সাখে লেগে বই চার পাঁচটা অন্য পাশ থেকে পড়ে যায়৷ মুড়ামুড়ি করতে থাকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য। এলেন আলফির দু হাত কাল রাতের মতো চেপে ধরেছিল। যার কারণে আলফির কাল রাতের ব্যাক্তির কথা মনে পড়ে যায়। আলফি জোরে বলতে যাবে তার আগেই এলেন আলফির কানে স্লো ভয়েসে বলে,
-“আমি কাল রাতের সেই ব্যাক্তি! যে তোমাকে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে গিয়েছিল।”

-“কেন নিয়ে গিয়েছিলেন? আর এখন কেন আমাকে এভাবে চেপে ধরে রেখেছেন?”

-“উঁহু! প্রশ্ন তুমি নয়। আমি তোমাকে করবো। হু আর ইউ?”

প্রশ্নটা শুনে আলফির মুড়ামুড়ি বন্ধ করে দেয়। চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। বুঝতে পারছে না এই ছেলেটি কিভাবে জানলো সে মানুষ না।

-“বলো,তুমি কে? কেন আমি তোমার রক্ত খেতে পারছি না। হোয়াই?” একটু জোরে চিল্লিয়ে বলে এলেন।

রক্ত খাবার কথা শুনে আলফি ঘাবড়ে যায়। তারপরও নিজেকে সামলে নেবার ট্রাই করে।

-“বলো বলছি।”

-“বলব না।” ঝাড়ি দিয়ে বলে আলফি।

কথাটা শুনে রাগে এলেনের চোখ লাল হয়ে যায়। দাঁত বড় হয়ে বের হয়ে আসে ঠোঁটের বাহিরে। ঘাড় চেপে ধরে কামড় বসাতে যাবে।কিন্তু কালকের মতো কোনো ভাবে ঘাড়ে কামড় বসাতে পারছে না। যতবার হা করে কামড় দিতে যাচ্ছে ততবার এলেন দমে যাচ্ছে। বাঁধা সৃষ্টি করছে কোনো এক শক্তি ওঁকে। আলফির উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে। ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ায় এলেন। আলফি ওঠে বসে পিছনে ঘুরে তাকায়। লম্বা কালো জ্যাকেট পড়া একটি ছেলেকে উল্টো দিকে গুঁড়ে দাঁড়াতে দেখে। আলফি মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই এলেন ঝড়ের বেগে আলফির মুখের সামনে এসে ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“তোমার রহস্য আমি খুঁজে বের করবোই। তোমার বিষয় কিছু না বললেও।আর……হুঁশশশশশশ।” মুখে আঙুল দিয়ে বলে এলেন। যার মানে ওর বিষয় যা জেনেছে চুপ থাকার জন্য।

এলেন আলফিকে ঠেঙিয়ে ঝড়ের বেগে লাইব্রেরী থেকে চলে যায়। আলফি ঢোক গিলে ওঠে দাঁড়ায়।এত দ্রুত যে ভ্যাম্পায়ার রা দৌঁড়াতে পারে তা আলফির জানা আছে। আলফি বুঝে গেছে এলেন কোনো মানুষ নয়। রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার। লাইব্রেরীতে বসে না থেকে ক্লাস রুমে চলে আসে আলফি। কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হয়ে যায়। আলফি এলেনকে ঠিকিই চিনতে পেরেছে। কালকের ঝুলে থাকা মেয়েটিকে এলেন বাঁচিয়েছে ওর শক্তি প্রয়োগ করে। জানার ইচ্ছে ছিল এলেনের ব্যাপারে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ওর বিষয় জেনে যাবে সেটা আলফির জানা ছিল না।
অন্যমনস্ক হয়ে আলফিকে বসে থাকতে দেখে ম্যারি হালকা ধাক্কা দেয়। আলফি ম্যারির দিকে তাকালে,ম্যারি স্যারের দিকে ফোকাস করতে বলে।
আলফি সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে স্যারের লেকচার শুনতে থাকে।
.
.
এলেন ও এরোন কলেজ থেকে বের হয়ে ইমতিয়াজ কে খুঁজতে বের হয়। জঙ্গল থেকে শুরু করে। অনেক জাগা খোঁজ করে। কিন্তু ওরা খুঁজে পায় না।
এক দিকে এলেনের রাগ হচ্ছে আলফির উপর। আরেক দিকে ইমতিয়াজকে খুঁজে পাচ্ছে না। রাগে এলেন হিংস্র রূপ ধারন করে। জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করে বাতাসের বেগে দৌঁড়াতে থাকে। দৌঁড়ে কোথায় যাচ্ছে তা ওর জানা নেই। এরোন এলেনের রাগের কারণ ওর মাইন্ড পড়ে জানতে পারে। তাই এলেনকে কিছু বলে না। এরোন ঠিক মতোই জানে এলেনের রাগ আপনা-আপনি কমে যাবে। তাই একা ছেড়ে দিয়ে অন্য পথে চলে যায়।
.
আলফি আজ আর এনাদের বাসায় আসেনি। কলেজ থেকে ডিরেক্ট বাসায় চলে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে গোসল সেরে যোহরের নামাজ আদায় করে। আজ দুপুরে ওর মামা বাসায় আসবে না। কাজের চাপে অফিসে লাঞ্চ করবে ফোন করে বলে দিয়েছে। তাই আলফি খাবার খেয়ে রুমে চলে আসে ঘুমাতে। বিছানায় শোভার সাথে সাথে ঘুমিয়ে যায়। বাকি রাত জাগার কারণে ঘুমাতে বেশি সমস্যা হয় না।

সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমা আকাশে। চারদিক অন্ধকার নেমে আসছে। আলফি টিমটিম করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। লাফ দিয়ে ওঠে বসে। আছরের নামাজ কাজা হয়ে গেছে। দ্রুত ওঠে ফ্রেশ হতে হতেই মাগরিবের আজান দিয়ে দেয়। ওজু করে মাগরিবের নামাজও পড়ে নেয়।
এক কাপ কফি বানিয়ে খেয়ে পড়তে বসে।
________________________
রাত বাজে এগারোটা। স্যাম একটি সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে ক্লাব থেকে বের হয়। স্যামের গাড়িতে ওঠিয়ে বসায় মেয়েটিকে। গাড়ি চালিয়ে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। মেয়েটি কিছু বলে না। কারণ মেয়েটি মাতাল ছিল। সেন্স ছিল না।
সুনসান একটি এড়িয়ায় নিয়ে এসে গাড়ি থামিয়ে দেয়। মেয়েটি ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে সিটে হেলান দিয়ে। স্যাম মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। আজকে রাতের ডিনার এই মেয়েটির রক্ত খেয়ে সারবে। রক্ত পান করে রাজ্যে ফিরে যাবে। গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে মেয়েটিকে কাছে নিয়ে এসে সরু ধারালো দাঁত দিয়ে কামড় বসিয়ে দেয় ঘাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির আর্তনাদ চিৎকার পুরো জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ে। রক্ত খাওয়া শেষ হলে মেয়েটিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায় স্যাম। রক্তশূণ্য নিথর দেহ পড়ে থাকে মাটিতে। গাড়িটি আড়াল হতেই একটি লোক এসে মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়ায়। পরনে ছিল সাদা পোশাক। মেয়েটির নিথর দেহ দেখে তাঁর রূহ কেঁপে ওঠে। তার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়।মেয়েটির সামনে বসে কোলে তুলে নেয়। এবং একটি কবরস্থানের মতো একটি জাগায় নিয়ে এসে মেয়েটিকে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। সেখান থেকে চলে যেতে নিলে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকায়। বিড়বিড় করে বলে,
-“কবে শেষ হবে এই রক্তের খেলা। কবে ধ্বংস হবে ভ্যাম্পায়ার রা। কবে খুঁজে পাবো আমাদের শাহজাদিকে ।” দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি।
.
.
সকালে……

আজ কলেজ বন্ধ। ওদের সামার ভ্যাকেশনে যাওয়ার দিন। সবাই কালকে রাতেই প্লান করে রেখেছিল। নর্থ সাউথের একটি জঙ্গলে যাবে ওরা সবাই। সেখানে বিশাল বড় পাহাড়-পর্বত আছে। এই জায়গাটির খবর আলফি নিজে ওদের দিয়েছে। নেটে সার্চ করে বের করেছে আলফি। সেখানে গিয়ে একদিন থাকবে। সবাই ব্যাক গুছিয়ে আলফিদের বাড়িতে আসে। একটি মাইক্রো নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে।

-“আহহ! কি যে খুশি লাগছে আমার।” ম্যারি বলে খুশি মুডে।

-“আমারও!” লিনা বলে।

-“সেম!” জি-তাও বলে।

সবাই খুব খুশি তা দেখেই মনে হচ্ছে। কিন্তু আলফির কেন জানি মনটা খচখচ করছে। মনে হচ্ছে আজকে ওর সাথে কিছু একটা হবে। হোক সেটা ভালো বা খারাপ। জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। কারো সাথে তেমন একটা কথা বলছে না। কারণ জিজ্ঞেস করলে বাহানা দিচ্ছে। ‘সব ঠিক আছে’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছে।
.
.
এলেন,এরোন কলেজে এসে জানতে পারে আজ কলেজ বন্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের সামার ভ্যাকেশনের জন্য। এলেন,এরোন এটাও জানতে পারে আলফিরাও সামার ভ্যাকেশনে গিয়েছে। কিন্তু কোথায় গিয়েছে সেটা জানে না। তাই চলে আসে রাজ্যে। এলেনর খুব রাগ হচ্ছে। এমনেতেও কাল রাতে কোনো মানুষের রক্ত খেতে পারেনি বিধায় রাগের মাত্রা একটু বেশিই বেড়ে আছে। তাই এখন তাজা ব্লাডের খুব প্রয়োজন। কিন্তু এরোন এলেনকে বাহিরে যেতে নিষেধ করে বলে,
-“আমার কাছে যা ব্লাড আছে আপাতত সেটা খেয়ে রাগ কন্ট্রোল কর। এখন দিনের বেলা, বুঝতে পারছিস।”

এলেন এরোনের কথাটা বুঝতে পারে। থেমে যায়। সোফায় বসে পড়ে। এরোন ব্লাডের ব্যাগ নিয়ে এসে এলেনকে দেয়। এলেন গ্লাসে না ঢেলেই খেতে শুরু করে। কিছু রক্ত ঠোঁট বেয়ে চুঁই চুঁই করে বেয়ে বেয়ে পড়ছে। ব্লাডের ব্যাগ পুরো খালি করে ফেলে। চোখ বন্ধ করে রাখে এলেন। আলফির কথা মনে করতে থাকে। হঠাৎ এলেন ওর ঠোঁটে কারো আঙুলের স্পর্শ পায়। চোখ মেলে তাকায়। দেখে পাশে লিসার বসে এলেনের ঠোঁট থেকে বেয়ে পড়া রক্ত আঙুল দিয়ে তুলে নিয়ে নিজের মুখে নিয়ে খাচ্ছে। আঙুল মুখ থেকে বের করে মুচকি হেসে বলে,
-“রক্তটা আগের তুলনায় এখন বেশি টেস্টি লাগছে। কেন জানো?”

লিসারের নেকা নেকা কথা শুনে এলেনের রাগ যে টুকু কমেছিল, সে টুকুও বেড়ে গেছে। ওঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-“গেট আউট! আউট লিসার।”

লিসার মুখ বাঁকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। তখনি পাশ থেকে এরোন হাসতে হাসতে আসে এলেনের কাছে। এলেন রাগে ফোসফোস করছে। এরোনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই এরোন মুখে হাত রেখে হাসি থামায়। এলেন টেবিলের উপর থাকা ফুলের টপটা লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
.
.
বারোটার দিকে ওরা জঙ্গলে পৌঁছে যায়। সেখানে নেই কোনো বাড়ি ঘর,নেই কোনো থাকার ব্যবস্থা। সারা জাগায় দালানের চেয়ে বড় বড় গাছ-গাছালিতে ভরপুর। সরু রাস্তার পাশে থামে ওরা। গাড়ি থেকে নেমে ওরা সবাই চারদিক টা ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল। জায়গাটা বেশ সুন্দর ছিল। অনেকটা দূরে বড় বিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছিল। আলফি কিছুক্ষণ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। পরক্ষণে ওদের সবাইকে টেন্ট লাগাতে বলে। সবাই টেন্ট লাগাতে শুরু করে। রান্নার কাজ আলফি ও ম্যারি সারছে। ওদের কাজ সারতে সারতে তিনটা বেজে যায়। ততক্ষণে রান্না ও টেন্ট লাগান শেষ। খুব খিদে লাগার কারণে সবাই খাওয়া শুরু করেছে। ভাত আর ভাজা মুরগী। সবাই খুব এনজয় করছে। সেলফি নিচ্ছে। খাওয়া-দাওয়ার শেষ করে সবাই ঘুরতে বের হয়। কারণ যেটুকু সময়ের জন্য এখানে এসেছে। সেটুকু সময় খেয়েদেয়ে আয়েস করে কাঁটাতে চায় না। জঙ্গলের প্রকৃতিটা কাছ থেকে দেখে মজা নিতে চায়। উপভোগ করতে চায় সামার ভ্যাকেশন টা। পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে । যত দেখছে তত মন ছুঁয়ে যাচ্ছে ওদের। কিন্তু আলফির মনে হচ্ছে,জঙ্গল দিনের বেলা এতটা সুন্দর দেখাচ্ছে। না জানি রাতের বেলায় কতটা ভয়ানক দেখা যাবে?
.
.
.
.
.
Continue To…….

Khatarnak Isq Part-02

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_02.
_______________________

পুরো কলেজ নিস্তব্ধ। ক্লাস হচ্ছে প্রতিটা কক্ষে। আলফিদের ক্লাস রুমে টিচার বই হাতে পড়া বুঝাচ্ছে। সবাই মন দিয়ে শুনছে। হঠাৎ-ই বাহিরে সোরগোল শুরু হয়ে যায়। হৈচৈ করছে সবাই। ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে কলেজ মাঠে যেতে শুরু করল সবাই। আলফিদের ক্লাস থেকেও ছাত্র-ছাত্রী রা বের হতে লাগল বাহিরে। কী হয়েছে তা দেখার জন্য। ক্লাস টিচার বের হবার পর আলফি,ম্যারি,লিনা,এনা,জয়,জি-তাও বের হয়ে গেল। মাঠে এসে সবাই ভিড় জমিয়েছে। সবার নজর ছিল ছয়তলা ভবনটির উপরে। একটি মেয়ে ছাদের রেলিঙ ধরে ঝুলে আছে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য জোরে জোরে চিৎকার করছে। সবাই এই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে যায়। বেশ অবাক হচ্ছে সবাই মেয়েটিকে ঝুলে থাকতে দেখে? সবার রূহটা যেনো কেঁপে ওঠছে বার বার। কিছুক্ষণ আগেও পুরো ক্যাম্পাস টা নিরিবিলি ছিল। আর এখন চিৎকার চেঁচামেচিতে ভরপুর। স্যারেরা সবাই ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেন ফোন দিচ্ছে। তাঁদের গাফলতি দেখে আলফি মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য চলে যেতে নিলে এনা হাত ধরে টেনে ধরে বলে,
-“কোথায় যাচ্ছিস?”

-“মেয়েটিকে বাঁচাতে।”

-“কোনো ধরকার নেই।”

আলফি এনার কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায়। প্রশ্নবোধক চাহনি তাকিয়ে আছে এনার দিকে।তখনি ম্যারি ওদের হাতের ইশারায় ওপরে তাকাতে বলে। সবাই ওপরে তাকিয়ে দেখে একটি সুদর্শন ছেলে মেয়েটির হাত বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে কপালে আসা চুল গুলো উড়ছে। সবাই চুপ হয়ে যায়। হৈচৈ থেমে যায়। স্যারদের চেহায়ার চিন্তা ছাফটা দূর হয়ে যায়। সবাই নজর বন্দী করে রেখেছে উপরের দিকে। ছেলেটি কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক হাঁটল। তারপর মেয়েটির হাত ধরে টেনে ওঠানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মেয়েটি একদম শেষ রেলিঙ ধরে ঝুলে ছিল । যার কারণে ওপরে তুলতে বেশ কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও ছেলেটি হাল ছাড়েনি। রেলিঙের উপর ওঠে মেয়েটির হাত ধরে টেনে উপরো তুলল। এক এক করে রেলিঙের উপরে ওঠতে গিয়ে মেয়েটি হাত কিছুটা ছীলে গেছে। তারপরও ছেলেটির হাত ছাড়েনি।ছেলেটি শক্তি প্রয়োগ করে মেয়েটিকে ওপরে টেনে তুলে। মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগল। ছেলেটিকে কিছু বলতে যাবে তখনি সে চলে যায়। নিচের সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছেলেটি নিচে নেমে আসে। স্যাররা সবাই ছেলেটির দিকে এগিয়ে যায়। আর কিছু ছারী ও ম্যাডাম মেয়োটিকে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। সবাই ছেলেটির দিকে খুশি মুডে তাকিয়ে আছে।
আলফি সন্দেহ চোখে তাকায়। কেন জানি তার কাছে মানুষ নয়,অন্য কিছু মনে হচ্ছে ছেলেটিকে। আলফি সন্দেহজনক ভাবে এনাকে জিজ্ঞেস করে,
-“এই ছেলেটি কে?”

এনা খুশি মুডে বলে,
-“আরলেন জর্জ। সবাই এলেন বলে ডাকে। এই কলেজের ছাত্র ছিল। এখন তার পড়ালেখা কমপ্লিট। সব মেয়েদের ক্রাশ। দেখ মেয়েরা কিভাবে তাকিয়ে আছে। এলেনের ড্যাড ধনীদের মধ্যে একজন। ভাই-বোন নেই। এলেন একা।”

-“হইছে চুপ কর..। আর বলতে হবে না।” জয় বলে।

-“কেন? তোর জ্বলছে।” এনা আড়চোখে তাকিয়ে বলে।

-“নাহ! লাল বান্দর,সাদা বান্দর মেয়েদের ক্রাশ হয় কিভাবে বুঝি না।”

-“স্টাইল তুই কি বুঝবি। তুই তো চুপই থাক।”

ওদের মাঝে তর্ক শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এতে আফলির কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। এখনো আলফি এলেনের দিকে তাকিয়ে আছে। এলেন স্যারদের সাথে কথা বলে সেখান থেকে চলে যায়। আলফি পিছন থেকেও নজর স্থির করে রেখেছে এলেনের দিকে ।

-” আলফি! কার স্বপ্নে ডুবে আছিস?” ম্যারি কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে প্রশ্ন করে।

আলফি চোখ সরিয়ে ব্যাপারটা সামলে বলে,
-“কোথাও না।”

-“আজ আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। ভুলে গেছিস? নাকি মনে আছে?” এনা বলে।

-“না,মনে আছে।” আলফি বলে।

-“তাহলে চল। ক্লাস আর হবে না।”

-“কিন্তু মেয়েটি ঐখানে কিভাবে ঝুলে ছিল,সেটা জিজ্ঞেস করব ওঁকে।”

-“তার দরকার নেই। চল এখান থেকে। ”

-“আরে দাঁড়া…..।”

টেনে ক্লাস রুমের ভেতরে নিয়ে গেল আলফিকে।
এক সাথে সবাই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আলফি এনার সাইকেলে চড়ে যেতে লাগল।সবাই আজ ওদের বাসায় বসে পড়া কমপ্লিট করবে।
এনাদের বাসায় ওর মা-বাবা নেই। বেরাতে গিয়েছে এনার নানা বাড়ি। বাসায় শুধু এনা একা ছিল।
.
.
ভ্যাম্পায়ার কিংডম…….

এরোন রুমে বসে ব্লাড ব্যাগ থেকে ব্লাড গ্লাসে ঢালছিল খাওয়ার জন্য। ব্লাডের ব্যাগ পাশে রেখে গ্লাস হাতে নিতে যাবে তখনি এলেন এসে ছোঁ মেরে গ্লাসটা নিয়ে নেয়। এবং খেতে শুরু করে। এলেনের এমন কাণ্ডে এরোন টেরা চোখে ওর দিকে তাকায়। এলেন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খাচ্ছে।

-“শালা ভালো হ..!”

-“এ জীবনে হবো বলে মন হচ্ছে না।”

-“জানি তো,এই কথাই বলবি।”

এলেন সাইলেন্ট মুডে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে আবার ব্লাড খেতে লাগল। এরোন ব্লাড ব্যাগ হাতে নিয়ে খাচ্ছে। এলেন তৃতীয় চুমুক দিতেই বলে ওঠল,
-“নাহ,একদম ভালো লাগছে না। তাজা ব্লাড খেতে হবে।”

-“যেটুকু খেয়েছিস,সেটুকু ফেরত দে।”

-“এখন কি বমি করতে হবে আমায়।”

-“থাক ভাই,আর লাগবে না।”

-“বাহিরে যাব চল।”

-“কেন?”

-“তাজা মানুষের ব্লাড খাবো।”

-“আচ্ছা চল।”
.
.
রাতে……

ম্যারি,লিনা,আলফি ওরা তিন জনে সাইকেল নিয়ে বাসায় ফিলছিল। আলফি এনার সাইকেল নিয়েছে এসেছে। কালকে ফেরত দিবে। ম্যারি, লিনা ওরা নিজেদের সাইকেল নিয়ে এসেছে। আড্ডা দিতে দিতে রাত নয়টা বেজে যায়। বেশ দেরি হয়ে গেছে। জি-তাও,জন অনেক আগেই বাসায় চলে গেছে। এখন উপায় না পেয়ে ওদের একা একা যেতে হবে। তিনজনে পাশাপাশি সাইকেল চালাচ্ছে,আর টুকটাক কথা বলছে। মেইন রাস্তা থেকে সুনসান রাস্তায় চলে আসে। সেই রাস্তার পাশে ছিল ঘন জঙ্গল। ওদের মনে ভয় কাজ করছিল না। কথা বলতে বলতে অনেকটা রাস্তায় পার হয়ে আসে। হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে একটি বিড়ালকে দেখতে পায়। বিড়ালটি অনেক কিউট ছিল। ওরা সাইকেল থামিয়ে বিড়ালটির দিকে ও নিজেদের দিকে তাকাতে লাগল। আলফি আগে নেমে দাঁড়ায়। তারপর ম্যারি ও লিনা নেমে সাইকেলের স্ট্যান ফেলে আলফির দিকে এগিয়ে যায়। আলফি আগে আগেই হেঁটে বিড়ালটির কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে কোলে তুলে নিয়েছিল বিড়ালটিকে। গাঁয়ে সাদা লোম গুলো ফুলের মতো দেখাচ্ছে। লিনা আলফির হাত থেকে নিয়ে আদর করে দিচ্ছে। তিনজন বেশ কিছুক্ষণ বিড়ালটিকে আদর করে রাস্তার পাশে রেখে যায়। চাইলেই ওরা সাথে করে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু ওদের তিনজনের বাড়ি বিড়াল নট এলাউ! তিনজন আফসোস করে হেঁটে চলে যেতে নেয়। ম্যারি,লিনা সাইকেলের কাছে আসতেই থমকে যায়। কারণ আলফি ওদের সাথে নেই। পিছনে ফিরে দেখে উধাও হয়ে গেছে আলফি। ওরা ঘাবড়ে যায়। চারদিক তাকিয়ে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না ওঁকে।

-“লিনা কোথায় গেল আলফি?”

-“আমাদের সাথেই তো ছিল।”

-“এটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় যাবে আলফি।”

-“আমার খুব ভয় করছে।”

-“আলফি…..আলফি।” জোরে চিৎকার করে নাম ধরে ডাকছে লিনা।

-“আলফি….। আলফি..।”

-“কোনো রেস্পন্স পাচ্ছি না। ফোনের ফ্লাশলাইট অন কর।”

-“তুই কি জঙ্গলে যাবি আলফিকে খুঁজতে?” ভয় ভয় জিজ্ঞেস করে ম্যারি।

-“এ ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। আলফিকে একা রেখে যেতে পারব না। না খোঁজ করে কাউকে বলতেও পারব না।”

-“তাহলে চল,জঙ্গলের ভেতরে খোঁজ করি।”

-“চল! সময় নষ্ট না করে।”

দু’জনে আলফির নাম ধরে ডেকে হাত ধরে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে চলল।
.
অন্যপাশে…

আলফির পেছন থেকে দু’হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে রেখেছে । আলফি চেষ্টা করছে নিজেকে মুক্ত করার। কিন্তু অচেনা ব্যাক্তির শক্তির কাছে আলফি কিছুই না। আলফি ঘুরে দাঁড়ান। অচেনা ব্যাক্তির চেহারা দেখতে পারছে না। চাঁদের আলোয় পিছনের ব্যাক্তির চেহারা স্পষ্ট না হলেই আবছা আবছা বোঝা যাচ্ছে এটা এলেন। চোখ লাল,ঠোঁট বেয়ে সরু দাঁত বের হাওয়া। রক্তের পিপাসায় কাতর হয়ে গেছে এলেন। আর ফোস করতে চায় না। এক হাত ছেড়ে দিয়ে দুই আঙুল কানের নিচে রাখতেই আলফি চেতনা হারিয়ে ফেলে। এলেন এই সুযোগে আলফির ঘাড় কাত করে ওপরের দিকে মাথা তুলে ঘাড়ে কামড় বসাতে যাবে কিন্তু কিছুতেই কামড় বসাতে পারছে না। যতবার কামড় দিতে যাচ্ছে ততবার ফিরে আসতে। কেন জানি কোনো কিছু এলেনকে বাঁধা দৃষ্টি করছে। কী? সেটা এলেন জানে না। কিছুক্ষণ এমন কাণ্ড ঘটার পর এলেন ধাক্কা দিয়ে আলফিকে চিৎ করে মাটিতে ফেলে দেয়। রাগ হচ্ছে! চাঁদের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
চোখ বন্ধ করে নিজের আসল রূপে ফিরে আসে এলেন। আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ফোনের ফ্লাশলাইট অন করে হাঁটু গেড়ে বসে অচেনা মেয়েটির মুখের উপর ধরতেই এলেন থমকে যায়। কিছুক্ষণের জন্য অচেনা মেয়টির মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত এমন কোনো মায়াবতী মেয়ের উপর এলেনের নজর পড়েনি। অনেক সুন্দরী মেয়ের রক্তের স্বাদ গ্রহণ করেছে। এট ফাস্ট এই অচেনা মেয়েটির কাছে হার মেনে গেল এলেন। এখন একটি মাত্র প্রশ্ন এলেনের মাথায় নাড়াচাড়া দিয়ে উঠছে,”কে এই অচেনা মেয়েটি?”

জঙ্গলের অদ্ভুত প্রাণির চিৎকারের শব্দ শুনে ম্যারি ও লিনা ভয়তে কেঁপে ওঠে। এক পাশে হাতে হাত রেখে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরেটু এগিয়ে যেতেই চাঁদের আলোয় কারো পা দেখতে পায়।

-“ওটা কি! কারো পা মনে হচ্ছে। ”

-“হ্যাঁ! চ,,,চল গিয়ে দেখি।”

-“না! যদি কোনো প্রাণি হয়।”

-“দূরে দাঁড়িয়ে দেখব। আয় চল।”

-“চল।”

ধিমি পায়ে এগিয়ে এসে ফোনের ফ্লাশলাইট ফেলতেই আলফির চেহারা স্পষ্ট দেখতে পায় । ম্যারি,লিনা দৌঁড়ে আলফির কাছে এসে বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে ডাকতে লাগল। আলফির কোনো হুঁশ নেই।

-“সেন্সলেস হয়ে গেছে।”

-“পানি লাগবে। আমার ব্যাগের ভেতরে পানি আছে।” বলেই লিনা কাঁধের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে আলফির মুখে ছিটাতে লাগল। কিছু সময় অতিবাহিত হবার পরিই আলফির জ্ঞান ফিরে আসল। আলফি ঘাড়ে হাত রেখে ধীরে ধীরে ওঠে বসল। লিনা,ম্যারি আলফিকে প্রশ্ন করতে লাগল। কিন্তু আলফি থম মেরে বসে আছে।

-“আচ্ছা,এখন জঙ্গল থেকে বের হই। পরে সব কিছু জানা যাবে নে।” ম্যারি কথাটা বলতে বলতে আলফিকে টেনে তুলল।

তিন জনে জঙ্গল থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু আলফি বার বার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে পেছনে কেউ আছে। লিনা এটা দেখে আলফির হাত ধরে দ্রুত জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসে। সাইকেলের কাছে এসে ম্যারি তাড়া দিয়ে বলে,
-“তাড়াতাড়ি সাইকেলে ওঠ! এখান থেকে চল। জায়গাটা মোটেও ভালো না।”

লিনা,ম্যারি সাইকেলে চড়ে বসে সামনে এগিয়ে যেতেই পিছনে ফিরে দেখে আলফি চুপচাপ পিছনে তাকিয়ে হেনডেল ধরে বসে আছে।

-“আলফি! তাড়াতাড়ি আয় বোন।” চিল্লিয়ে বলে লিনা।

আলফির হুঁশ ফিরে আসে। সাইকেল চালিয়ে ওদের কাছে চলে এলো। তিনজনে বেশ দ্রুত সাইকেল চালাচ্ছে।লিনা,ম্যারি ভাবছে কতক্ষণে বাসায় যাবে। আর আলফি ভাবছে অন্য কিছু। অনেকক্ষণ পর যে যার বাড়িতে পৌঁছে গেল। এবং রাস্তায় আলফি বলে দিয়েছে আজকের ঘটনা যেন কাউকে না বলে। ওরা সেটাই করে। বাড়িতে এসে কোনো একটা বাহানায় দেরি হবার কথা এড়িয়ে যায়।

কিন্তু আলফি খাবার টেবিলে ওর মামার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।

-“এত দেরি কেন হলো? কোনো কারণ?”

-“না মামা। একটু পড়ার চাপ বেশি ছিল তাই দেরি হয়ে গেল।”

-“সাইকেলে কেন এসেছো?”

-“সব সময় তো গাড়িতে চড়ি। তাই আজকে সাইকেলে আসলাম।”

-“তুমি আর সাইকেলে যাতায়াত করবে না।”

-“কেন মামা?”

-“প্রশ্ন করবে না। তুমি কে সেটা ভালো করেই জানো।”

-” মামা আমি আরো জানতে চাই আমি কে? আমার মধ্যে কিছু শক্তি আছে। সেই শক্তির সম্পর্কে আমি অজানা।”

-“আস্তে আস্তে সব যেনে যাবে। শুধু কিছু সময়ের প্রয়োজন। ”

-“সময়টা কবে হবে মামা। যত বড় হচ্ছি নিজের প্রতি জানার আগ্রহটা আরো দ্বিগুণ ভেড়ে যাচ্ছে। তবে, এটা জানি। আমি কোনো সাধারন মানুষ নয়।”

-“ব্যাস! বাকিটা আর জানতে হবে না। খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে চলে যাও।” বলেই টেবিল ছেড়ে ওঠে গেলেন জিনান রহমান।

আলফি মাথা নত করে ভাতের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে। হাত ধুয়ে আলফিও রুমে চলে আসে। দরজা খুলে বারান্দায় এসে জঙ্গলের কথা ভাবতে থাকে।
-“যে আমাকে পেছন থেকে ধরে রেখেছিল সে মানুষ নয়। তার হাত ভীষন ঠান্ডা ছিল। আমার হাতে যে কালো দাগ গুলো পড়েছিল,সেগুলো আমার শরীরের শক্তির কারণে মিশে গেছে। কেন আমাকে এভাবে ধরেছিল। এত দ্রুত কিভানে ম্যারি,লিনার কাছ থেকে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে গেল? কি উদ্দেশ্য ছিল তার।আমাকে মেরে ফেলা,নাকি অন্য কিছু? ” নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে আলফি।
.
.
ভ্যাম্পায়ার কিংডম……..

-“এটা কিভাবে সম্ভব এলেন! একটা মেয়ের রক্তের স্বাদ তুই নিতে পারলি না।” এরোন উত্তেজিত হয়ে হেঁটে হেঁটে বলছে।

এলেন কিছু একটা ভেবে বলে,
-“সেম,আমিও বুঝতে পারছি না। কে এই মেয়ে? তার শরীর থেকে রক্তের গন্ধ আমি পাচ্ছিলাম না। বরং নিজেকে কন্ট্রোল করতে সক্ষম হয়েছি। হাউ ইট’স পসিবল!”

-“কিং কে বলতে হবে বিষয়টা।”

-“নাহ! ড্যাডকে বলার আগে আমি নিজে মেয়েটির উপর নজর রেখে দেখতে চায় সে কে? জানতে হবে আমার মেয়েটি কী মানুষ? নাকি অন্য কিছু?”

-“যা করার কর। বাট আমাদের কিন্তু একটা দায়িত্ব দেওয়া আছে ইমতিয়াজকে খোঁজার।”

-“মনে আছে।”

-“মাথায় রাখিস।”

-“ব্লাড নিয়ে আয়।”

-“হ্যাঁ,হ্যাঁ এখন এটা খেয়ে কাজ চালাতে হবে।”

-“রাইট!”
.
.
.
.
.
.
.
Continue To………….

Khatarnak Isq Part-01

0

#Khatarnak_Isq.[Impossible_Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_01.
_______________________
একটি ছেলে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে নাইট ক্লাবের ভেতরে। কিছু মেয়েরা ছেলেটির দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।
কালো শার্ট ও জ্যাকেট,কালো রঙের জিন্স,ডান কানে ছোট্ট গোল কালো রঙের ইয়ার রিং। চুল গুলো সোনালি রঙের। ঘাড়ে বাদুরের কালো রঙের ট্যাটু আর্ট করা। গায়ের রং দুধের মতো সাদা। শার্টের দুটি বোতাম খোলা। যার কারণে উনমুক্ত ফর্সা বুক দেখা যাচ্ছে। সামনের ছোট সাদা চুল গুলো কঁপালে পড়ে ভ্রু ডেকে আছে। প্রচণ্ড হ্যানসাম ছেলেটি। গম্ভীর মুড নিয়ে হেঁটে একটি টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায় সে। সেখান থেকে একটি ওইসকির বোতল নিয়ে গ্লাসে ঢেলে মুখে দিতে যাবে ঠিক তখনি শট ড্রেস পড়া একটি মেয়ে এসে ছেলেটির কানে কানে বলে,
-“হেই এলেন লেট্’স গো টু দ্যা রুম।”

এলেন মুচকি হাসে। মেয়েটি নেশাক্ত চোখে এলেনের দিকে তাকিয়ে হাসি মাখা মুখে এলেনের হাত ধরে হাঁটা ধরলে এলেন মেয়েটিকে ক্লাবের বাহিরে নিয়ে আসে। মেয়েটি কিছু বলে না। খুশি খুশি এলেনের সাথে হাঁটতে লাগলো। এলেন ক্লাবের বাহিরে এসে থেমে যায়। মেয়েটির দিকে ঘুরে তাকায় । মুখের সামনে ঝুঁকে আস্তে করে বলে,
-“ক্লোস ইউর আইস।”

মেয়েটি মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ন্যায়। কিছুক্ষণ পর আবার আস্তে করে মেয়েটির কানেকানে বলে,
-“ওপেন ইউর আইস।”

মেয়েটি চোখ মেলে তাকায় । ঘাবড়ে যায় সে। কারণ এখন সে নিজেকে জঙ্গলে আবিষ্কার করছে। ভীত চোখে এলেনের দিকে তাকায় । এলেনের ঠোঁটে রহস্যময় হাসি । যেই হাসির মানে,সামনে বিপদের লক্ষন। মোটেও সুবিধাজনক লাগছে না এলেনকে। উপায় না পেয়ে মেয়েটি এলেনকে ধাক্কা দিয়ে দৌঁড়ে পালাতে লাগল। কিন্তু মেয়েটি দৌঁড়ে বেশিদূর যেতে পারেনি। আচমকা এলেন মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়ায়। থেমে যায়। এত দ্রুত এলেনকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে অবাক হয়ে যায় মেয়েটি। অন্য দিকে দৌঁড় দিতে নিলে এলেন খপ করে মেয়েটির হাত ধরে ফেলে। ওর কাছে টেনে নিয়ে মেয়েটির পেছন থেকে চুলের মুঠি ধরে রাখে। মেয়েটি এলেনের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে । মানুষের রক্তের গন্ধে এলেনের আসল রূপ প্রকাশ পায়। ঠোঁটের কোণার দাঁত দুটি বড় আঁকার ধারন করে । চোখের মনি দুটি লাল হয়ে যায়।মেয়েটি ভয়পেয়ে চিৎকার দিয়ে থাকে। কিন্তু তার চিৎকার জঙ্গলের ভেরতেই সীমাবদ্ধ। এলেন দ্রুত মেয়েটির ঘাড় কাত করে গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। সর্বশক্তি দিয়ে মেয়েটি জোরে চিৎকারের দেয়। চিৎকারের শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে জঙ্গলের চার দিক ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গল হালকা কেঁপে ওঠে। বিশাল বড় একটি গাছ থেকে কিছু বাদুর ডানা ঝাপটে ওড়ে যায়।
_______________________
জোরে চিৎকার দিয়ে বিছানার উঠে বসে আলফি। তিরতির করে গাঁ থেকে ঘাম ঝড়ছে। শরীরও থরথর করে কাঁপছে। বিছানার পাশেই ছোট একটি টেবিল রাখা। তার উপর সাদা রঙের একটি টেবিল লাইট, কাঁচের জগ আর গ্লাস রাখা। রীতিমতো শরীরের কাপুনির জন্য জগ থেকে পানি ঢেলে খাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। ভয়ংকর সপ্ন দেখেছে আলফি। আজ এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঘুমাবার পর এই একি সপ্ন দেখছে। ঘড়ির দিকে তাকায় আলফি। আগের রাত গুলোর মতো আজও তিনটের দিকে ঘুম ভেঙে গেছে । ঠিক এই টাইমেই সপ্নের কারণে ওর ঘুম ভেঙে যায়। চোখ বন্ধ করে সপ্নটির কথা মনে করতে থাকে।

ঘন জঙ্গল। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার । আকাশে গোল প্লেটের মতো চাঁদ ভেসে বেড়াচ্ছে। আলোকিত চারদিক। দূর থেকে কোন একটি পেঁচা ও অদ্ভুত প্রানীর ডাক শুনা যাচ্ছে । আরো কিছু দূর পা চালিয়ে হেঁটে চলল আলফি। হঠাৎ-ই থমকে দাঁড়ায়। ওর সামনে বড় একটি কালো রঙের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পাহাড়ের আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে। হুট করেই অদ্ভুত বিকট শব্দ শুনতে পায়। পিছনে ঘুরে তাকায় আলফি। কিচ্ছু দেখতে পায় না। ভয়তে রূহ বার বার কেঁপে উঠছে। সাহস নিয়ে আবারও পাহারটির দিকে ফিরে তাকায়। না চাইতেই পাহারটির ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে ওর। পাহাড়ের মুখটি ছিল বিশাল বড়। অনায়াশে ভেতরে যাওয়া যাবে। কিন্তু পাহাড়ের ভেতরে বেশ অন্ধকার । হাতে লাইট নেই যে আলোর দরুণ পাহাড়ের ভেতরে যাবে। তারপরও মনে সাহস জুটিয়ে ছোট ছোট পা ফেলে হেঁটে চললো পাহাড়ের দিকে।গুহার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মন বলছে ভেতরে যেতে,আবার বলছে ভেতরে গেলে বিপদের সম্মুখীন হবে। দুটানায় পড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে মন স্থির করে। তারপর চোখ খুলে ডান পা রাখতেই পাহারটি কাঁপতে লাগলো। এমন ভাবে কাঁপছে পাহাড়ের উপর থেকে ছোট ছোট পাথরের টুকরো গুলো খষে খষে জমিনে পাড়ছে। এদিক, সেদিক দুলছে আলফি। কিছুক্ষণ পর কাঁপনি থেমে যায়। সব কিছু নরমাল,ঠিক আগের মতো। আলফি ডানে বামে তাকাল । বুকে ফু দিল। বাম পা আগে রাখতেই সামনের মাটি ফাঁকা হয়ে যায়। পা ফষকে পড়ে গেল পাহাড়ের নিচে। জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল আলফি………!

এটুকু দেখেই আলফি চোখ মেলে তাকায়। এখন আবার ভয় লাগছে। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পানির খুব প্রয়োজন । কাঁপা কাঁপা হাতে পানির জগ থেকে পানি ঢেলে পান করল। গ্লাস রেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে।

-“জানি না কেন বার বার এই একই সপ্ন দেখছি আমি। কী আছে ঐ অন্ধকার পাহাড়ের গুহার ভেতরে? এই সপ্নের রহস্য কী? সবটা অজানা!”

বিড়বিড় করে বলে আলফি। আজ রাতও নির্ঘুম কাটিয়ে দিতে চায় সে। বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দরজা খুলে বাহিরে আসে। আজ আকাশে চাঁদ নেই। পুরো শহর একেবারে নিস্তব্ধ । সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু আলফির চোখের ঘুম উধাও। ছোট নিশ্বাস টেনে কার্ণির ধরে দাঁড়ায়।
.
.
.
সকাল সাতটা বাজে। আলফি নাস্তা তৈরি করে ওর মামা জিনান কে ডাকতে তার রুমে প্রবেশ করল। জানালার পর্দা সরাতেই উষ্ণ মিষ্টি রৌদ্দ এসে জিনানের চোখে পড়ল। আলফি ওর মামার দিকে তাকায়। তিনি নড়েচড়ে চোখ মেলে তাকায়। মুচকি হেসে আলফির উদ্দেশ্যে বলে,
-“গুড মরনিং আলফি ।”

-“গুড মরনিং মামা । নাস্তা রেডি,তাড়াতারি ওঠো।”

-“জি।”

বিছানা থেকে নেমে জিনান ওয়াশরুমে দিকে পা বাড়ায়। আলফি বিছানা গুছাতে শুরু করে। গুছানো শেষ হলে নিচে চলে আসে। টেবিলে খাবার দেওয়ার সময় আলফির চোখ পড়ে দেয়ালে। সেখানে দু জন ব্যাক্তির ছবি টাঙান। একজন মহিলা,আরেক জন পুরুষ। তাদের চেহারার সাথে আলফির চেহারা কিছুটা মিল আছে। জিনান নিচে নেমে আলফিকে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সরু নিঃশ্বাস টেনে মাথার হাত রেখে বলে,
-“আলফি।”

আলফির ধ্যান ভাঙ্গে। তাকে দেখে খাবার ভাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জিনান আলফিকে জিজ্ঞেস করে,
-“খুব মিস করিস?”

আলফি ওর মামার দিকে মমতাময় দৃষ্টিতে তাকায়।বলে,
-“মম,ড্যাডকে মিস করাটা কী স্বাভাবিক নয়?”

-“স্বাভাবিক! কিন্তু ইদানিং মিস একটু বেশি করছো? তার কী কোনো যথেষ্ট কারণ আছে? ”

আলফি বড়ো নিশ্বাস ফেলে । বলে,
-“মামা,খুব একা মনে হয় নিজেকে। এমন মনে হয় আমি একাকীত্বে ভুগছি। কারো সাথে মিশতে মন চায় না,কথা বলতে মন চায় না। নিজেকে একাকিত্বের মাঝে বিলিন করে দিতে মন চায়।”

জিনান আলফির হাত ধরে একটি চেয়ারে বসিয়ে পাশের চেয়ারে বসে বলে,
-“নিজেকে একা মনে করবে না কখনো। যখন তুমি নিজেকে একা মনে করবে তখন একাকীত্বতা চার দিক থেকে তোমাকে ঘিরে ধরবে। নিজেকে সব সময় প্রকৃতির মাঝে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করবে। কলেজের সবার সাথে মিশবে,কথা বলবে,সময় কাটাবে। দেখবে সবাই তোমাকে আপন করে নিবে। তোমার একাকীত্ব দূর হয়ে যাবে। কী ঠিক আছে? ”

আলফি মাথা উপর,নিচে নাড়ায়,তার উত্তর ‘হ্যাঁ’।
জিনান মৃদু হেসে বলে,
-“সামার ভ্যাকেশনে কোথায় যাবে বলো?আমি তোমাকে নিয়ে যাব?”

-“আমার কলেজের ফ্রেন্ড দের সাথে জঙ্গলে ক্যাম্পিং এ যাব। তাই…..।”

-“ওকে,ওকে আমি তোমাকে যেতে নিষেধ করব না। যাচ্ছো কবে?”

-“পরশু বিকেলে।”

-“ঠিক আছে যাও । এখন কলেজে যাবে?”

-“হ্যাঁ।”

-“আচ্ছা,নাস্তা সেরে রেডি হয়ে নেও। আমি অফিসে যাওয়ার আগে তোমাকে কলেজে ড্রপ করে দেব।”

-“হুম।”
‌.
.
.
.
ভ্যাম্পায়ার কিংডম……

গতকাল রাত্রে একদল ভ্যাম্পায়ার ছয়টা জ্যান্ত মানুষ ধরে নিয়ে এসেছে ভ্যাম্পয়ার রাজ্যে । একটা নারী,দুইটা কিশোর -কিশোরী, আর বাকি গুলো যুবক। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে আজ যেন রক্তের উৎসব চলছে।ওদেরকে একটা রক্তের গর্তে বেঁধে স্যাম ও তার দলের লোকরা আনন্দ করছে, নাচছে, গান করছে। গর্তে তাজা ও শুকনো রক্তের ভ্যাঁপসা গন্ধ। যন্ত্রণায় মানুষ গুলো ছটফট করছে।
স্যাম ভ্যাম্পায়ারদের থামিয়ে চিৎকার করে একটা যুবতী মেয়েকে দেখিয়ে বলে উঠলো,
-“এই সুন্দরী নারীর রক্ত আমি পান করতে চাই।
লিসার,এই সুন্দরী মেয়েটিকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”

লিসার নামের একজন ভ্যাম্পায়ার মেয়েটির কাছে এগিয়ে গেলো।রক্তের গন্ধ পেলেই ভ্যাম্পায়ার দের আসল রুপ প্রকাশ পায়।স্যামেরও তাই হলো। আঙুল বড় বড় নখ আর মুখের ভিতর দুপাশে চারটা লম্বা দাঁতে স্যামকে কেমন বীভৎস দেখাচ্ছে। নখ দিয়ে মেয়েটির গলা ছিদ্র করতে গেলেই কিং এবিল এর উপস্থিতি টের পেয়ে থেমে যায়। স্যাম,লিসার সহ প্রত্যেকটা ভ্যাম্পায়ার কিং এবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো মানুষকে ধরে এনে রাজ্যে হত্যা করে রক্ত পান করবে। কিং এবিল এটা পছন্দ করেন না। মানুষের রক্ত খাবে,যত খুশি তত। কিন্তু সেটা প্রাশাদের বাহিরে । মানুষের রক্তের ভ্যাঁপসা গন্ধ তিনি সহ্য করতে পারেন না। ভীষন রাগ হয় তার। মাথা নিচু করে সকল ভ্যাম্পায়ার রা দাঁড়িয়ে আছে।

কিং এবিল কিছুক্ষণ মানুষ ও রক্তের গর্তের দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর ক্ষিন নজরে স্যামের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলেন,
-“স্যাম,তুমি আমার নিয়ম ভঙ্গ করেছো। এর জন্য তোমার ও বাকি ভ্যাম্পায়ার দের শাস্তি হবে,সেটা তুমি নিশ্চয় জানো?”

কিংয়ের কথায় স্যাম,লিসার বাকি ভ্যাম্পায়ার রা ভয়তে মাথা নত করে রাখে।
স্যাম ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বলে,
-“কিং ভুল হয়ে গেছে।ক্ষমা চাচ্ছি। মাফ করে দিন।”

-“ক্ষমা আমি করব না। শাস্তি পেতেই হবে তোমাকে।”কিছুটা রাগী কন্ঠে বললো ।

-“মাফ করে দিন কিং। আর এমন ভুল হবে না।” হাত জোর করে বলে স্যাম ।

-“মাফ করতে পারি এক শর্তে।”

-“কী শর্ত! বলুন কিং? ”

-“এই মানুষ গুলোকে যেখান থেকে ধরে নিয়ে এসেছো। সেখানে রেখে আসবে।”

-“জি,কিং।”

-“আর হ্যাঁ! এমন ভুল দ্বিতীয় বার হলে,তোমার মৃত্যু নিশ্চিত ।”

স্যাম মাথা নিচু করে রাখে। কিং এবিল চলে যায় কক্ষ থেকে । স্যাম ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে । ভ্যাম্পায়ার দের আদেশ দেয় মানুষ গুলোকে তাদের স্থান ফিরিয়ে দিতে ।
.
এবিল তার ছেলে আরলেনের কক্ষে আসে। আরলেন তার কক্ষে বসে ফোন টিপছিল আর ব্লাড খাচ্ছিল।

এবিল তার সাথে করে মন্ত্রী ইয়াঙ্ক কে নিয়ে প্রবেশ করেন। আরলেন কিং কে দেখে ফোন বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“হাউ আর ইউ ড্যাড?”

-“ফাইন! তুমি কি কাল ক্লাবে গিয়েছিলে আরলেন?”

-“ওহ! ড্যাড,কত বার বললাম আমাকে এলেন বলে ডাকো। আরলেন নামটা বিগ হয়ে যায়। আমি এই নামটা টলারেট করতে পারি না।” বিরক্ত নিয়ে এলেন কথাটা বলল।

কিং এবিল কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
-“নাম নিয়ে কথা বলতে আসিনি আমি। তোমার নামটা আমি রেখেছি। আরলেন বলেই ডাকব আমি। এখন প্রশ্নের উত্তর দেও আমার!”

-“হ্যাঁ,গিয়েছিলাম।”

-“কাউকে পেলে?”

-“নো ড্যাড!”

-“বাট ইমতিয়াজ কে খুঁজতেই হবে আমাদের।”

-“ড্যাড,আমি আছি। খোঁজে বের করবই জ্বীনের চিলড্রেনকে।” কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে এলেন।

-“কাজটা তোমার একার নয়।এরোন,স্যাম,লিসার কেও দেওয়া হয়েছে। ”

-“ওদের কথা জানি না।বাট আমি ট্রাই করব ইমতিয়াজকে খুঁজে বের করার।”

-“গুড মাই সন। ইয়াঙ্ক চলো।” বলেই কক্ষ ত্যাগ করেন তিনি।

রাগী ভাব নিয়ে এলেন ব্লাড খেতে আরম্ভ করেন।
.
.
.
জিনান আলফিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়। আলফি কলেজের ভেতরে প্রবেশ করার সময় একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। মেয়েটি আলফিকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছে,সেটা মেয়েটির চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে । মেয়েটির মুখে ছিল শয়তানি হাসি । আলফি মেয়েটির দিকে তাকায়। মেয়েটি দু হাত গুজে দাঁড়ায়। ওর পাশে আরো কয়জন ছেলে,মেয়ে এসে দাঁড়াল। আলফি ওর পড়ে যাওয়া ব্যাগটি তুলে নিয়ে হাঁটা ধরল। কারণ,ওর কোনো ইচ্ছে নেই ওদের সাথে কথা বলার। বড়লোক ঘরের মেয়ে জেনিফা । সবার সাথেই ঝগড়া,মারামারি করে থাকে। কেউ কিছু বলে না ও’কে । আলফির সাথে জেনিফার কোন শক্রতা নেই।
আলফি ছোট থাকতেই ওর মম,ড্যাড কার এক্সিডেন্ট মারা যায়।ভাগ্যক্রমে আলফি ওর মামা জিনানের কাছে থাকার কারণে বেঁচে যায়। তারপর থেকেই ওর মমের এক মাত্র ভাই জিনানের কাছেই বড় হয় । আলফির মামা একটি ছোট প্রাইভেট কম্পানিতে জব করেন। তিনি এখনো বিয়ে করেন নি। তার অবশ্য কোনো কারণ নেই। তিনি এভাবেই থাকতে চান। আলফি কয়েকবার জোর করেছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। আলফি বেশ সুন্দরী ছিল। চোখ দুটো মায়াবী। গায়ের রং শ্যামলা ।একবার কোনো ছেলে ওর দিকে তাকালে চোখ ফেরানো মুশকিল হয়ে যায় । আলফির চেহারার প্রতি বড়ো হিংসা জেনিফার। যার কারণ আলফিকে অপমান করার কোনো ত্রুটি রাখে না। সুযোগ পেলেই অপমান করে। আর আলফি বেচারা মাথা নিচু করে জেনিফার অপমান সহ্য করে যায়। ক্লাসরুমে পা রাখতেই জয়,এনা,লিনা,ম্যারি,জি-তাও এর সাথে দেখা হয়ে যায়। ওরা আলফির বেস্ট ফ্রেন্ড।এক সঙ্গে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। জয়,লিনা,এনা,ম্যারি লন্ডনের বাসিন্দা হলেও।জি-তাও কোরিয়ান। জি-তাও কোরিয়ান থেকে এখানে এসেছে তার পরিবারের সাথে। ওরা বাংলা ও ইংলিশ ভাষা পারলেও। জি-তাও এতটা পারে না। তবে এখানে এসে ওদের থেকে অনেকটা বাংলা ভাষা শিক্ষেছে।

ম্যারি আলফির হাত ধরে টেনে বেঞ্চে বসিয়ে বলে,
-“আলফি আজকেও কি জেনি হারামি তোকে ধাক্কা দিয়েছে?”

-“ছাড় তো ওসব কথা। এখনি স্যার এসে পড়বে।” আলফি ব্যাগ কাঁধ থেকে বেঞ্চে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলে।

-“কিছু বলব বমি।” জি-তাও বলে।

ওর কথাটা শুনে সবাই জি-তাও এর মুখের দিকে তাকায়। জয় জি-তাও এর কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“বলি না,আমি হবে।”

-“মিস্টেক!”

-“বলো জি-তাও।” আলফি বলে।

-“ওঁখে(ওঁকে) আমরা পিঠিয়ে(পিটিয়ে) কলেজ ছাড়া হরবো(করবো)।”

জি-তাও এর টেনে টেনে বলা কথা শুনে আলফি বাদে সবাই হাসতে লাগল। জি-তাও ওদের মুখের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-“চুপ কর। এভাবে হাসার কি আছে। জানিসই তো জি-তাও বাংলা ভাষা ঠিক মতো বলতে পারে না।” আলফি কিছুটা ধমকের স্বরে বলে ওদের।

সবাই চুপ হয়ে যায়। লিনা বলে,
-“জাস্ট চিল দোস্ত,আমরা মজা করেছি।”

জয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্লাস টিচার এসে পড়ে। সবাই চুপ হয়ে যায়। এবং ক্লাসে মন দেয়।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……